04-11-2023, 11:11 PM
দারুন চলছে
Adultery ছায়া
|
05-11-2023, 04:12 AM
প্রিয় পাঠকবৃন্দ, ছায়া উপন্যাসের কাহিনী নিয়ে পাঠকবৃন্দের মাঝে নানা রকম প্রশ্নের কোতুহল জন্মেছে। উপন্যাস শেষ হওয়া অবধি এই কোতুহল থাকবে। মানুষের ছোট্টো এই জীবনে নানা রকম বিচিত্র ঘটনা ঘটে যায়। এই ছোট সময়ের জীবনে প্রতি টা মানুষের জীবনে নাটক বা মুভির মতো অনেক গুলো ছোট বড় চরিত্র নিয়ে তার জীবন গঠিত হয়। আর এই চরিত্র গুলোর সাথে নানা রকম ঘটনা আর স্মৃতি থাকে সবার জীবনের। ছায়া উপন্যাসেও অসংখ্য ছোট বড় চরিত্র নিয়ে ছায়ার জীবন গঠিত। এই সমস্ত চরিত্রের কি ঘটনা রয়েছে তা জানতে হলে অবশ্যই উপন্যাস শেষ হওয়া অবধি অপেক্ষা করা লাগবে।
10-11-2023, 01:16 AM
(This post was last modified: 26-11-2023, 03:47 PM by Rupuk 8. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
পর্ব -২৬
মাহীন তার রুম থেকে বের হয়ে ডাইনিং রুমে ঢুকে ডাইনিং টেবিলের চেয়ারে বসলো। সুপ্রিয়াদি আমার খাবার টা দিয়ে যেও। নিয়ে আসছি দাদাভাই। সুপ্রিয়া খাবার দিয়ে আবার কিচেনে চলে গেলো। ছায়া কিচেন থেকে বের হয়ে এসে ডাইনিং টেবিলের চেয়ারে বসলো। মাহীন তোমার কোচিং ক্লাস গুলো সব ঠিকমতো করছো তো? হ্যা কাকিমা। তোমার যদি কোনো বিষয়ে বুঝতে অসুবিধা হয় তাহলে দেবনাথ বাবুকে জানাবে। ঠিক আছে কাকিমা। কাকুকে দেখছি না কাকিমা বাসায় নেই নাকি। হ্যা সকাল সকাল বেরিয়ে গেছে নাস্তা না করে সারাক্ষণ খালি বিজনেস নিয়ে পড়ে থাকে। নিজের শরীরের প্রতি কোনো রকম খেয়াল আছে তার। কত করে বললাম নাস্তা করে বের হও বলে কিনা বাহিরে খেয়ে নিবে আমার কোনো কথা শুনে তোমার কাকু। ছায়া চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়িয়ে তার রুমের দিকে গেলো। মাহীনের সকালের নাস্তা খাওয়া শেষ। চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়িয়ে নিজের রুমের দিকে গেলো মাহীন। রুমে ঢুকে বিছানায় বসতেই সকাল বেলার আলসেমি কাটানোর জন্য সিগারেটের নেশার ভূত মাথায় চেপে বসলো মাহীনের । বিছানা উঠে দাঁড়িয়ে মানিব্যাগ টা টাওজারের পকেটের মধ্যে ঢুকিয়ে রুম থেকে বের হয়ে গেলো মাহীন। বাসার দরজার দিকে এগিয়ে এসে দরজা টা খুলে সুপ্রিয়াকে ডাক দিলো মাহীন, সুপ্রিয়াদি দরজা টা লাগিয়ে দাও আমি একটু বাহিরে যাচ্ছি। দাদাভাই আপনি যান আমি লাগিয়ে দিচ্ছি। মাহীন বাসা থেকে বের হয়ে দ্রুত গতিতে সিড়ি বেয়ে নিচে নেমে বিল্ডিং থেকে বের হয়ে গেলো। বিল্ডিং থেকে খানিকটা দূরে এসে টঙ্গয়ের টুলে বসে এক কাপ চা আর একটা সিগারেট নিয়ে। সিগারেটে আগুন ধরিয়ে টানতে লাগলো মাহীন। সিগারেটের ধোয়ায় কুণ্ডলী আশপাশটা ভরে গেল। আর দুষিত বায়ুতে নিঃশ্বাস টানতে হচ্ছে দেখে খুব বিরক্ত লাগলো মাহীনের। আর আনমনে ভাবতে লাগলো কেন যে আমার মত মানুষগুলো সিগারেট খায়? অযথাই কেন যে আশপাশের পরিবেশটাকে দূষিত করে? আমার মত বোকাগুলো এর মাঝে কি সুখ খুঁজে পায় আমারও বুঝে আসেনা। তবুও সিগারেটের নেশা ছাড়ে না সবাই অপদার্থের মত খেয়ে যায়। মাহীন সিগারেট টানতে টানতে বর্ষাকে ফোন করলো। কয়েকবার রিং হওয়ার পর কল টা রিসিভ করলো বর্ষা। হ্যালো বর্ষাদি। হ্যা বল মাহীন। কেমন আসো তুমি? আমি ভালো আসি। তোর কি খবর। আমিও ভালো আসি। বর্ষাদি হোস্টেলে থাকতে তোমার কোনো সমস্যা হচ্ছে নাতো? নারে ভালোই আসি আমি। কোনো সমস্যা হলে আমাকে জানাবে কিন্তু। হ্যা অবশ্যই। বর্ষাদি তুমি কবে ফ্রী আসো কাকু আর কাকিমা তোমাকে বাসায় নিয়ে যেতে বলেছেন। আচ্ছা আমার যেদিন ক্লাস থাকবে না , সেদিন তোকে ফোন করে জানাবো। ঠিক আছে তাহলে আমাকে ফোন দিও তোমাকে হোস্টেল থেকে বাসায় নিয়ে যাবো। আচ্ছা ঠিক আছে, আমি এখন রাখছি মাহীন ক্লাসে স্যার চলে এসেছে। তুমি ভার্সিটিতে নাকি বর্ষাদি? হ্যা রে। আচ্ছা ক্লাস করো। কল টা কেটে দিয়ে বিল চুকিয়ে বাসার পথ ধরলো মাহীন। প্রথমে তোমাদের সবাইকে অভিনন্দন জানিয়ে আমি ক্লাস শুরু করছি। বর্ষার আজকে ভার্সিটিতে প্রথম ক্লাস। বর্ষার ডিপার্টমেন্টের একজন প্রফেসর ক্লাস নিসছেন। ভবিষ্যতে তোমাদের সফল হতে হলে অবশ্যই মনের মধ্যে আশা থাকা লাগবে। আশা কথাটি সম্ভাবনার প্রতীক । আশা আছে বলেই জীবনে প্রাণের সঞ্চার আছে। হতাশাগ্রস্ত জীবন মানুষকে তিলে তিলে শেষ করে দেয়। শত প্রতিকূলতার মধ্যে থেকেও আশা পরিত্যাগ না করে সামনের দিকে এগিয়ে চলাই হলো সফলতার চাবিকাঠি।
10-11-2023, 03:20 AM
পর্ব -২৭
দুপুরের খাবার খেয়ে বিছানায় উপর শুয়ে ফোন টিপতে টিপতে কখন যে চোখ টা লেগে গেছিলো বুঝতে পারেনি মাহীন। ফোনের শব্দে ঘুম টা ভেঙ্গে গেলো মাহীনের। ঘুম ঘুম চোখে ফোন টা হাতে নিয়ে কল টা রিসিভ করলো মাহীন। কিরে শালা কতক্ষণ ধরে ফোন করছি তোকে। ফোন ধরিস না কেন। ভাই ঘুমিয়ে পড়েছিলাম একটু তুই ফোন করছিলি বুঝতে পারিনি। ১০ মিনিটের মধ্যে আমি তোর বাসার নিচে আসছি তুই তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে বাসার নিচে নাম এটা বলেই ফোন টা কেটে দিলো অভি। মাহীন বিছানা উঠে দাঁড়িয়ে বাথরুমে ঢুকে পড়লো। একটু পর বাথরুম থেকে বের হয়ে দ্রুত রেডি হয়ে তার রুম থেকে বের হয়ে গেলো মাহীন। ছায়া ডইং রুমের সোফায় বসে টিভি দেখছিলেন। মাহীন দেখে ছায়া বললো কোথাও যাচ্ছো নাকি মাহীন? হ্যা কাকিমা আমার এক বন্ধুর ছোট বোনের আজকে জন্মদিন উপলক্ষে সন্ধ্যায় ওর বাসায় ছোটখাটো একটা পার্টির আয়োজন করবে। সেখানে যাওয়ার জন্য বন্ধুর মা আমাকে আর আমার সব বন্ধুকে ইনভাইট করেছে না গেলে রাগ করবেন। ওহ্ সামনে তোমার টেস্ট পরীক্ষা এটা সবসময় মাথায় রাখবে। এসবে সময় নষ্ট করার থেকে পড়াশোনায় বেশি মনোযোগী হওয়া উচিত তোমার। তুমি তো আর এখন ছোট নেই নিজের ভালো টা তোমার নিজকে বুঝতে হবে। তুমি যখন যাওয়ার জন্য মন স্থির করে নিয়েছো সেখানে তো আর আমার বলার কিছু নেই। বেশি লেট করবে না তাড়াতাড়ি বাসায় ফিরে আসবে। ঠিক আছে কাকিমা। বাসার দরজা খুলে মাহীন বের হয়ে গেলো। দ্রুত গতিতে সিড়ি বেয়ে নিচে নেমে গেলো মাহীন। বিল্ডিং থেকে বের হয়ে মাহীন দেখলো অভি আজকে আর লেট করেনি সত্যি সত্যি ১০ মিনিটের মধ্যে অভি চলে এসে দাড়িয়ে আছে তার জন্য। কিরে শালা মেয়ে মানুষের মতো তোরও রেডি হতে এতো সময় লাগে। আরে না আমার রেডি হতে সময় লাগেনি আমি ইচ্ছা করে একটু দেরি করে আসছি। ভাবলাম তোর আসতে সময় লাগবে। তুই তো সবসময় ৫ মিনিটের কথা বলে ১৫ মিনিট পর আসিস তাই একটু দেরি করে বের হইলাম বাসা থেকে। সব দিন এক নাকি রে মাঝে মধ্যে এমন হয়। এবার কথা বলা বাদ দিয়ে বাইকের পিছনে উঠে পড়। শুন অভি আবিরের বাসায় যাওয়ার আগে আমাকে একটু মার্কেটে নিয়ে চল। মার্কেটে কেনো? আরে ওর ছোট বোনের জন্মদিন খালি হাতে তো আর যাওয়া যায় না কিছু একটা গ্রিফট তো সঙ্গে করে নিয়ে যাওয়া লাগবে। ঠিকই বলেসিস তুই, আমিও কিছু একটা কিনে নিবো চল। কিছুক্ষণ পর মাহীন আর অভি একটা গ্রিফট শপের সামনে এসে থামলো। মাহীন নাম আমার চলে এসেছি এই গ্রিফট শপ থেকে কিছু একটা কিনে নিয়ে যায় চল। হুম চল ভিতরে যেয়ে দেখি কি কেনা যায়। তুই ভিতরে ঢুক আমি বাইক টা পার্কিং করে আসছি। আচ্ছা। মাহীন গিফট শপের ভিতরে ঢুকলো। মাহীন গিফট শপের ভিতরে ঢুকে দেখতে পেলো নানা রকমের সব গিফট সামগ্রী রয়েছে এই শপে। ছোট থেকে বড় সাইজের পুতুল সারি সারি করে সাজানো এই শপে। মাহীন এই অনেকগুলো পুতুলের মধ্যে থেকে একটা পুতুল পছন্দ করলো আবিরের ছোট বোনকে গিফট দেওয়া জন্য। অভি বাইক পার্কিং করে চলে আসলো। মাহীন পছন্দ করতে পারলি কি দিবি? হ্যা আমি এই পুতুল টা দিবো ভাবছি তুই কি দিবি দেখ। আংকেল আপনার শপে চকোলেট বক্স হবে গ্রিফট করার জন্য? হ্যা অবশ্যই আছে। শপের দরজার ওদিকে দেখো অনেক চকোলেটের বক্স রাখা আছে দেখো কোনটা তোমার পছন্দ হয়। আচ্ছা আংকেল। অভি তুই কি চকোলেটের বক্স গ্রিফট দিতে চাচ্ছিস নাকি? হ্যা রে আমার তো মনে হয় এটাই দেওয়া ভালো হবে। হুম আমারও তাই মনে হয়। মাহীন একটা চকোলেটের বক্স পছন্দ করে দে তো। গোলাকার বক্স নাকি চারকোনা আকারের বক্স টা নিবো কোনটা ভালো লাগছে তোর কাছে। আমার কাছে তো দুটো ভালো লাগছে হাহাহা। ধুর ফাজলামো বাদ দিয়ে ভালোভাবে বল কোন টা ভালো লাগছে। গোলাকার টা তাহলে নে এটা সুন্দর লাগছে দেখতে। ঠিক আছে। আংকেল আমার এই চকোলেট বক্স টা আর নিচের সারির লাস্টের পুতুল টা প্যাকেট করে দিন। বিল মিটিয়ে শপ থেকে বের হয়ে গেলো মাহীন আর অভি। মাহীন তুই একটু দাঁড়া আমি বাইক টা পার্কিং থেকে নিয়ে আসছি। কিছুক্ষণ পর অভি চলে আসলো মাহীন উঠে পড়।
15-11-2023, 02:12 AM
(This post was last modified: 15-11-2023, 11:25 AM by Rupuk 8. Edited 5 times in total. Edited 5 times in total.)
পর্ব -২৮
ছায়া কফির মগ টা হাতে নিয়ে বারান্দায় দাঁড়িয়ে পড়ন্ত বিকেলের সূর্যাস্ত দেখছিল। এমন সময় ছায়ার ফোনে কল আসলো। ফোনের শব্দ শুনতে পেয়ে ছায়া বারান্দা থেকে রুমে ঢুকলো। ফোন টা হাতে নিয়ে ফোনের স্কিনে দেখলো আলিয়া দিদি ফোন করেছে। কল টা রিসিভ করলো। হ্যালো ছায়া। হ্যা বলুন দিদি। অনেক বার শমিককে ফোন করালাম ধরলো না। শমিক বাসায় নাই? না দিদি সকাল সকাল বেরিয়ে গেছে এখনও বাসায় ফেরেনি। এখন কি আর ওর শরীর আগের মতো আছে যে যেমন খুশি তেমন ভাবে ঘুরে বেড়াবে। এখন তো ওর রেস্ট নেওয়া উঠিত বিজনেস নিয়ে মাথা ঘামানো বাদ দিয়ে। আমি তো ওকে নিষিদ্ধ করি এসব বিজনেস নিয়ে মাথা ঘামানো কি দরকার আছে তোমার, কিন্তু আমার কথা তো শুনে না আপনার ভাই দিদি। এজন্য তো তোমাকে ওরে আমেরিকা নিয়ে আসতে বললাম দেশে থাকলে তোমার কথা শুনবে না এভাবেই চলাফেরা করবে ঠিকমতো চিকিৎসা করবে না পরে আরও অসুস্থ হয়ে পড়বে। তোমার পাসপোর্ট হয়ে গেলে তাড়াতাড়ি ইমারজেন্সী ভিসির জন্য অ্যাপলিকেশন করো। আর শমিক বাসায় ফিরলে আমাকে ফোন করতে বলবে। রাখছি এখন। ঠিক আছে দিদি। আমেরিকার হেনটেট শহরে থাকেন ছায়ার বড় ননাস আলিয়া সেন গুপ্ত। আলিয়া দেবীর স্বামী সুশান্ত সেন গুপ্ত ভারতীয় বংশোদ্ভূত আমেরিকান নাগরিক। সুশান্ত সেন গুপ্ত হেনটেট সিটি পুলিশে ইন্সপেক্টর হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। আলিয়ার দেবীর মা আর সুশান্তর বাবুর মা দুজন কলেজে পড়া অবস্থায় খুব ভালো বান্ধবী ছিলেন। কলেজ পাস করে সুশান্ত বাবু কলকাতা থেকে আমেরিকায় চলে আসে উচ্চশিক্ষার জন্য। সুশান্ত বাবু পড়াশোনা শেষ করে প্রথমে একটি কোম্পানিতে চাকরি শুরু করে। সুশান্ত বাবু চাকরি শুরু করার পর তার মা বিয়ের জন্য চাপাচাপি শুরু করে দেয়। সুশান্ত বাবুর মায়ের অনেক আগে থেকে আলিয়াকে পছন্দ ছিলো তার ছেলের বউ করার জন্য। মায়ের চাপাচাপিতে শেষ পযন্ত সুশান্ত বাবু রাজি হয় বিয়ে করতে। আলিয়ার দেবীর মায়ের কাছে গিয়ে সুশান্ত বাবুর মা বলেন। আমার একটা আবদার আছে তোর কাছে পূরণ করবি? কি আবদার শুনি? আমি আলিয়াকে আমার বাড়ির লক্ষী করতে চায় তোর কি অমত আছে? এতে অমতের কি আছে, এতো আমার সৌভাগ্য রে সুশান্ত মতো ভদ্র ছেলে আমার মেয়ে জামাই হিসেবে পাওয়া। আলিয়ার মত তো জানা দরকার তুই বললে তো হবে না। ওর আবার কিসের মত আমি যা বলবো তাই। তুই বিয়ের আয়োজন শুরু কর। ধুমধাম করে সুশান্ত বাবু আর আলিয়া দেবীর বিয়ে হয়েছিল। বিয়ের পর আলিয়া দেবীকে নিয়ে সুশান্ত বাবু আমেরিকায় চলে আছে। বিয়ের কয়েক বছরের মাথায় গ্রীন কার্ড পেয়ে যান সুশান্ত বাবু। আমেরিকান নাগরিকত্ব পাওয়ার পর হেনটেট সিটি পুলিশে যোগ দেন সুশান্ত বাবু। আলিয়া আর সুশান্ত দম্পতির একমাত্র মেয়ে মিমি সেন গুপ্ত। মিমির বয়স ২৭ বছর। মাইক্রোবাইলজি নিয়ে মাস্টার্স করছে। মিমি আধুনিক মর্ডান তরুণী আমেরিকান কালচারে ছোট থেকে বেড়ে উঠেছে সে। তার রক্তে আমেরিকান কালচার মিশে গেছে। অসাধারণ সুন্দরী মিমি গায়ের রং ধবধবে ফর্সা। টানা টানা নীল রঙের দুটো চোখ। গোলাপি ঠোঁট। নিয়মিত জিম করে শরীরে কোনো রকম মেদ নেই। মিমি এখনও বিয়ে করনি। আমেরিকান কালচার আর ভারতীয় কালচারে আকাশ পাতাল তফাৎ। ভারতে সচারাচর খুব অল্প বয়স থেকে মেয়েদের বিয়ের দেওয়ার রেওয়াজ যুগের পর যুগ ধরে চলে আসছে। ভারতীয় সমাজে বিয়ে না করে কোনো মেয়ে যদি পড়াশোনা শেষ করতে করতে বয়স একটু বেশি হয়ে যায় লোকমুখে নানা আজেবাজে কথা শুনতে হয় সেই মেয়েকে। তাই অনেক মেয়ে অল্প বয়সে বিয়ের পিরিতে বসে পড়ে। কিন্তু আমেরিকায় এর উল্টো চিত্র এখানকার মেয়েরা আগে নিজে প্রতিষ্ঠিত হতে চায় বিয়ে নিয়ে তাদের কোনো মাথা ব্যথা নেই। অনেকে তো বিয়ে না করেই বছরের পর বছর বয়ফ্রেন্ডের সাথে লিভিং ইন রিলেশনে থাকে বাচ্চাকাচ্চা হয়ে যায় তারপরও বিয়ে করে না। বিয়ে ছাড়াই এখানে স্বামী স্ত্রী মতো করে সংসার করতে থাকে। মাহীন গ্রামের ছেলে এর আগে কোনো দিন এরকম জন্মদিনের পার্টিতে যায়নি। বাইক টা পার্কিং করে। মাহীনকে সঙ্গে করে আবিরের বাসার দরজার সামনে এসে কলিংবেলে টিপ দিলো অভি। কিছুক্ষণ পর আবির দরজা খুলে দিলো।
15-11-2023, 10:41 AM
গল্প এখন বেশ আকর্ষনীয় পর্যায়ে আছে, পড়ে খুব ভালো লাগছে, এর পরের আপডেটের জন্যে অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় রইলাম। ধন্যবাদ।
24-11-2023, 11:12 AM
আর কি আপডেট আসবে না?
24-11-2023, 11:36 AM
অনেক দিন কোন আপডেট পাওয়া যাচ্ছেনা, অনুরোধ রইল আপডেট দেওয়ার।
27-11-2023, 02:23 AM
(This post was last modified: 28-11-2023, 12:22 AM by Rupuk 8. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
পর্ব -২৯
কিরে অভি তোদের আসতে এতো সময় লাগলো । সেই কখন ফোন করে বললি আসছি, ভিতরে আয়। মাহীন আর অভি আবিরের বাসার ভিতরে ঢুকলো। রনি কি এসেছে রে আবির? হ্যা তোদের আগেই রনি চলে এসেছে। তোদের আসতে এতো দেরি হলো কেন? একটু মার্কেটে গিয়েছিলাম রে আবির ওখানে একটু দেরি হয়ে গেছে। মার্কেটে আবার কিসের জন্য গিয়েছিলি রে অভি? গ্রিফট কিনতে। ধুর তোরাও না এসবের কোনো দরকার ছিলো। রনি অনেকক্ষণ ধরে আমার রুমে একা বসে আছে। তোরা দুজন আমার রুমে গিয়ে বস, আমার একটু কাজ আছে শেষ করে আসছি। আচ্ছা ঠিক আছে তুই তোর কাজ শেষ করে আয়। মাহীন আর অভি আবিরের রুমের ভিতরে ঢুকলো। কিরে রনি একা একা বসে কি করসিস। কি আর করবো তোদের জন্য অপেক্ষা করছিলাম। শালা তোদের আসতে দেরি হবে আগে বলবি না, তাহলে আমিও দেরি করে বাসা থেকে বের হতাম। একটু মার্কেটে গিয়েছিলাম রে, গ্রিফট কিনতে তাই আসতে একটু দেরি হলো নাহলে অনেক আগেই চলে আসতাম। ওহ্ অনুষ্ঠানের দিন তাড়াহুড়ো হবে সময় পাবো না দেখে আমি কালকে সন্ধ্যার দিকে মার্কেটে গিয়ে একটা কালার পেন্সিল বক্স কিনে নিয়ে এসেছিলাম গ্রিফট দেওয়ার জন্য। বাহ্ তুই দেখছি অনেক ফাস্ট আমাদের থেকে হাহাহা। মানুষের জন্মগ্রহণের দিনটি একটি বিশেষ দিন। সচরাচর কেক কেটে, বেলুন দিয়ে ঘর সাজিয়ে, বন্ধুবান্ধব , আত্মীয়, স্বজন পাড়া প্রতিবেশী সবাইকে ইনভাইট করে সবার সাথে আনন্দে প্রিয় মানুষটির জন্মদিন পালন করতে চায় সবাই, সেটা যে বয়সী মানুষের জন্মদিন হোক না কেন। তবে সবাই কিন্তু উদযাপনটা একইভাবে করে না। কিছুটা সাদৃশ্য থাকলেও অনেক ভিন্নতাও আছে জন্মদিন উদযাপনের ক্ষেত্রে। নানা রকমের খাবারের আইটেম বাড়িতে তৈরি করেছেন আবিরের মা বিরিয়ানি , মিষ্টি, পিঠা আর কিছু খাবার বাহিরে থেকে কিনে নিয়ে এসেছেন। সব কিছু আয়োজন করা সহজ মনে হলেও সব মিলিয়ে এতোকিছু আয়োজন করা বেশ কষ্টসাধ্য। আবিরের মা রিচি মিত্র সকাল থেকে খুব ব্যস্ত কিভাবে কি করবে বুঝে উঠতে পারছে না। একা হাতে তাকে সব কিছু দেখাশোনা করা লাগছে। আবিরের বাবা বীরন্দ্র নাথ বাবু আর্মির সৈনিক খুব একটা ছুটি পান না বছরের বেশিভাগ সময় পরিবার ছেড়ে বর্ডারে থাকতে হয়। আবিরের দাদুও আর্মির সৈনিক ছিলেন, অবসরে যাওয়ার পর শান্তিনগরের এই জমিটা কিনে বাড়িটি বেঁচে থাকতে বানিয়েছিল তিনি। রিচি মিত্রর ছোট মেয়ে রিতু ক্লাস ফোরে পড়ে আর বড় ছেলে আবির কলেজে পড়ে, আবিরের বাবা খুব একটা ছুটি পান না। ছেলে-মেয়ে নিয়ে এই বাড়িতে থাকেন রিচি মিত্র। রিচি মিত্র ছোট মেয়ের জন্মদিন উপলক্ষে মেয়ের কলেজের বান্ধবীদের এবং বান্ধবীর মায়েদেরও ইনভাইট করছেন অনুষ্ঠানে আসার জন্য। একটু পর আবির তার রুমে আসলো সবাই চলে এসেছে, তোরা সব ডইং রুমে আয় কেক কাটা হবে এখন। আবির সাথে ওরা তিনজন আবিরের রুম থেকে বের হয়ে ডইং রুমে আসলো। মোমবাতিতে শিখা প্রজ্জ্বলনের পর ফুঁ দিয়ে নিভিয়ে কেক কাঁটার সময় সবাই হাততালির সাথে বলে উঠলো জনপ্রিয় সেই লাইনটি “হ্যাপী বার্থ ডে টু ইউ রিতু” ছুড়ি দিয়ে কেক কেটে আবিরের ছোট বোন রিতুর মুখে কেক দেয়ার মাধ্যমে জন্মদিনের অনুষ্ঠান শুরু হলো। পরবর্তীতে কেকের বাকী অংশ টুকরো টুকরো করে আমন্ত্রিত অতিথিদেরকে দেওয়া হলো। উপস্থিত অতিথিরা রিতুকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়ে তাদের সঙ্গে করে নিয়ে আসা গ্রিফট রিতুর হাতে দেয়। আমন্ত্রিত অতিথিরা একে অপরের সাথে কুশল বিনিময় করছে। রিচি দেবী সবাইকে খাওয়া দাওয়া করে নেওয়ার জন্য আহবান জানানো। মাহীনকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে আবিরের মা মাহীনের কাছে এসে জিজ্ঞেস করলো কি গো সবাই খাচ্ছে, তুমি দাঁড়িয়ে আসো কিসের জন্য। আন্টি আমি পরে খাচ্ছি এতো মানুষের মধ্যে আমার খেতে অস্বস্তি লাগছে। আচ্ছা ঠিক আছে। অতিথিদের প্রায় সবার খাওয়া দাওয়া শেষের দিকে। রাত ভালোই হতে চলছে একে একে অতিথিরা সবাই বিদায় নিয়ে বাড়ি ফিরতে লাগলো। অভি আর রনি খাবার খাওয়া শেষ হয়ে গেছে মাহীনের সামনে এসে ওরা দুজন দাড়ালো। কিরে শালা মাহীন একা একা দাঁড়িয়ে কি করছিস তোকে বললাম আমাদের সাথে খেয়ে নে। এতো মানুষের মধ্যে কি শান্তি মতো খাওয়া যায় বল। এমন সময় আবির এসে হাজির হলো। সবাই ভালো মতো খাওয়া দাওয়া করেছিস তো? আমি আর রনির খাওয়া শেষ ভাই। মাহীনের এখনও বাকী আছে। মাহীন তুই এখনও খায় নাই। নারে আবির এই বোকাচণ্ডীর নাকি সবার মাঝে খেতে অস্বস্তি লাগে। আচ্ছা সমস্যা নাই এখন আর কেউ নেই সবাই চলে গেছে। মাহীন তুই ডাইনিং টেবিলে বস আমি মাকে খাবার দিতে বলছি। অভি আর রনি তোরা দুজন আমার রুমে গিয়ে বস আমি আসছি। মাহীন ডাইনিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলো, একটু পর প্লেট ভর্তি খাবার নিয়ে আসলো রিচি দেবী কি বেপার তুমি দাঁড়িয়ে আসো কেনো বসো। মাহীন ডাইনিং টেবিলের চেয়ারে বসলো। খাবার ভর্তি প্লেট টা মাহীনের সামনে রেখে পাশের চেয়ারে বসলো রিচি দেবী। নাও খাওয়া শুরু কর একদম লজ্জা পাবে না। আমার সামনে খেতে বোধহয় লজ্জা পাচ্ছো আমি তাহলে উঠি। না আন্টি আপনি বসুন আমার জন্য উল্টো আপনার কষ্ট হয়ে গেলো আমি খাচ্ছি। না কিসের কষ্ট তুমি শান্তি মতো খাও কিছু লাগলে আমাকে বলবে আমি কিচেনে আসি। ঠিক আছে আন্টি। রিচি মিত্র চেহারা বেশ মিষ্টি হাসলে তাকে আরও সুন্দর দেখায়। খাওয়া শেষ করে হাত ধুয়ে আবিরের রুমে ঢুকলো মাহীন। অভি চল আমরা বের হই রাত তো অনেক হলো বাসায় যাওয়া যাক। মাহীন ঠিকই বলেছে আবির আমরা তাহলে বের হই এখন। আচ্ছা যা রাত হচ্ছে তোদের আর আটকাবো না। রনি তুই একটু পর বের হো ওরা যাক তোর বাসা তো আর আমার বাড়ি থেকে বেশি দূরে না। আচ্ছা ঠিক আছে। রুম থেকে বের হয়ে আবিরের মায়ের কাছে থেকে বিদায় নিয়ে আবিরের বাসা থেকে বের হয়ে গেলো। মাহীন আর অভি।
বাইক উঠে বস মাহীন। অভি
তাড়াতাড়ি
চল এমনিতেই
অনেক রাত হয়ে গেছে। প্যারা নিস না কিছুক্ষণের মধ্যে, তুই তোর বাসার নিচে থাকবি
খানিকক্ষণ পর মাহীন তার বিল্ডিংয়ের নিচে এসে পৌঁছালো। বাসায় যা তাহলে ভাই
কালকে আবার
দেখ হবে।
সাবধানে যাস অভি। আচ্ছা
ঠিক আছে ভাই বিল্ডিংয়ে ঢুকে
মাহীন দ্রুত গতিতে সিড়ি বেয়ে
তিন তলায় উঠে
বাসার
কলিংবেলে টিপ দিলো । কিছুক্ষণ পর ছায়া দরজা খুলে দিলো । মাহীন বাসার ভিতরে প্রবেশ করলো ছায়া কিছুই বললো না। মাহীন তার রুমে ঢুকে পড়লো।
27-11-2023, 04:08 AM
(This post was last modified: 28-11-2023, 07:33 PM by Rupuk 8. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
পর্ব-৩০
মানুষের জীবন স্বাভাবিক গতিতে কখনও চলে না সময়ের সাথে এর গতি উল্টপাল্ট হয়ে যায়। পরের দিন সকাল ৬টার সময় বাড়ির সামনের সবজি ক্ষেতে পানি দেয়ার জন্য মোটর চালাতে যান মাহীনের বাবা তপন বাবু। এসময় তিনি মোটরের তারে বিদ্যুতায়িত হয়ে কাপতে থাকেন। এ অবস্থায় তিনি চিৎকার দিয়ে মাটিতে পড়ে যান। তপন বাবুর চিৎকার শুনতে পেয়ে বাড়ির ভিতর থেকে দৌড়ে এসে সবজির ক্ষেতে চলে আসেন মাহীনের মা অনুরাধা দেবী। মাহীনের মা অনুরাধা দেবী তপন বাবুকে পড়ে থাকতে দেখে, তপন বাবুকে উদ্ধার করার জন্য এগিয়ে যান তার কাছে এসময় তিনিও বিদ্যুতায়িত হয়ে যান। প্রতিবেশীরা মাহীনের মা-বাবাকে সবজির ক্ষেতে পড়ে থাকতে দেখে উদ্ধার করে গ্রামের একটি হাসপাতালে নিয়ে আসলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদের দুজনকে মৃত ঘোষণা করেন। শমিক বাবুকে আজকে বাসাতেই ছিলেন। সকাল সকাল তার ফোনে একটা কল আসলো। কল টা রিসিভ করামাত্রই এই রকম ভয়ংকর দুঃসংবাদ শোনার পর তিনি নিস্তব্ধ হয়ে পড়েন। ছায়া তার জন্য রং চা করে নিয়ে এসে সামনে দিলেন। আমার এখন শরীর ভালো লাগছে না ছায়া, চা খাবো না তুমি চায়ের কাপ টা নিয়ে যাও। কেনো গো হঠাৎ তোমার আবার শরীর খারাপ লাগছে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাবো তোমাকে। ধুর এসবের দরকার নেই একটা দুঃসংবাদ আছে। দুঃসংবাদ মানে কি বলতে চাচ্ছো তাড়াতাড়ি বলতো আমার হাত-পা কাঁপছে। শমিক বাবুকে ফোন করে জানানো সমস্ত ঘটনা খুলে বললো ছায়া দেবীকে। ছায়া দাঁড়িয়ে ছিলেন শমিক বাবুর মুখ থেকে সব কথা শোনা মাত্র বসে পড়লেন। ছায়া দেবী তার নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছে না এসব তিনি কি শুনছেন। কয়েক মিনিট শমিক বাবু আর ছায়া দেবী কোনো কথা বলেন না একে অপরের সাথে তারা দুজন নিস্তব্ধ হয়ে বসে রইলেন। মাহীন জানলে ওর কি অবস্থা হবে বুঝতে পারছো ছায়া। মাহীনকে এখনই কিছু জানানোর দরকার নেই তুমি বাপ্পীকে গাড়ি নিয়ে আসতে বলো। মাহীনকে নিয়ে আমরা রওনা হই। হুম তুমি ঠিকই বলেছো। আমি যায় মাহীনকে ঘুম থেকে ডেকে তুলি ততক্ষণে তুমি রেডি হয়ে নাও। আচ্ছা ঠিক আছে। ছায়া তার রুম থেকে বের হয়ে মাহীনের রুমের দিকে গেলো। দরজার কাছে গিয়ে নক করতে লাগলো এই মাহীন…... মাহীন…..মাহীন….ঘুম ভেঙ্গে গেলো মাহীনের ছায়ার ডাকে হ্যা কাকিমা। মাহীন তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে বের হয়ে আসো আমরা এক জায়গায় যাবো এখন। মাহীনের রুমের দরজার সামনে থেকে সরে এসে কিচেনের দিকে গেলো ছায়া। কিচেনে ঢুকে সুপ্রিয়াকে ছায়া বললো আজকে আমার আর তোর দাদা বাবুর জন্য সকালের নাস্তা বানানোর দরকার নেই শুধু মাহীনের জন্য বানালেই হবে। ঠিক আছে দিদিমণি। কিছুক্ষণ পর মাহীন ফ্রেশ হয়ে রুম থেকে বের হয়ে আসলো। ছায়া ডাইনিং টেবিলে বসে ছিল সুপ্রিয়া মাহীনের খাবার টা দিয়ে যা। নিয়ে আসছি দিদিমণি। সুপ্রিয়া মাহীনের খাবার প্লেট টা টেবিলের উপর রেখে আবার কিচেনে চলে গেলো। মাহীন ডাইনিং টেবিলের চেয়ারে বসে তারপর খাওয়া শুরু করলো। কাকিমা তুমি কোথায় যাওয়ার কথা বলছিলে তখন আমাকে ডাকার সময়। খাবার টা খেয়ে শেষ কর আগে। মাহীনের খাওয়া শেষ হতেই শমিক বাবু এসে হাজির হলেন। মাহীন তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে আয় তো দেরি করিস না। কোথায় যাচ্ছি কাকু আমরা কাকিমাও তো কিছুই বললো না। আজকে আমার তো কলেজও আছে, কোথাও গেলে ক্লাসগুলো তো মিস হয়ে যাবে। মাহীন শুন কথা বলার মতো সময় নাই এখন, তুই তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে আয় আমরা বের হবো এখন। মাহীন কিছু বুঝতে পারছে না তার কাকিমা আর কাকু কিছুই বলছে না শুধু বলছে এক জায়গায় যাবো রেডি হয়ে নিতে। মাহীন আবার তার রুমে ঢুকে পড়লো। ছায়া তুমিও রেডি হয়ে নাও সময় নষ্ট করা ঠিক হবে না আমাদের তাড়াতাড়ি ওখানে পৌঁছাতে হবে। হুম ছায়া তার রুমে ঢুকলো রেডি হওয়ার জন্য। একটু পর মাহীন তার রুম থেকে বের হয়ে আসলো। মাহীন চল আমরা নিচে গ্যারেজে গিয়ে দাঁড়ায় তোর কাকিমা আসুক। হ্যা চলো যাওয়া যাক। বাসা থেকে বের হয়ে মাহীন আর শমিক বাবু সিড়ি বেয়ে নিচে নেমে গেলো। নিচে গ্যারেজে নেমে মাহীন দেখলো শমিক বাবুর ড্রাইভার বাপ্পী গাড়ি নিয়ে চলে এসেছে। মাহীন গাড়িতে উঠে বস। মাহীন গাড়ির সামনের ড্রাইভারের পাশের সিটে উঠে বসলো। খানিকক্ষণ পর ছায়া তার রুম থেকে বের হয়ে আসলো সুপ্রিয়া…. এই সুপ্রিয়া… হ্যা দিদিমণি বলো, শুন আমরা গ্রামের বাড়িতে যাচ্ছি কয়েকদিন ওখানে থাকবো। হঠাৎ গ্রামের বাড়িতে কিসের জন্য যাচ্ছো দিদিমণি। এখন সমস্ত ঘটনা খুলে বলার সময় আমার হাতে নেই রে সুপ্রিয়া ফিরে এসে তোকে সব বলবো। যে কয়েকদিন না ফিরে আসি সে কয়েকদিন তোর না আসলেও চলবে। আমি ফিরে আসলে তোকে ফোন করে জানিয়ে দিবো কবে থেকে আসা লাগবে। আমি বের হচ্ছি। আচ্ছা দিদিমণি সাবধানে যেও। ছায়া বাসা থেকে বের হয়ে সিড়ি বেয়ে নামতে লাগলো। নিচে নেমে গ্যারেজে এসে ছায়া দেখলো সবাই গাড়ির মধ্যে বসে, তার আসার জন্য অপেক্ষা করছে। দ্রুত গাড়ির সামনে গিয়ে, সিটে উঠে বসলো ছায়া।
27-11-2023, 11:24 PM
Excellent update
01-12-2023, 03:47 PM
(This post was last modified: 01-12-2023, 08:08 PM by Rupuk 8. Edited 3 times in total. Edited 3 times in total.)
পর্ব-৩১
শান্তিনগর শহর থেকে মাহীনের পদ্মপুর গ্রাম ৮ ঘন্টার পথ। মাহীনের গ্রামের বাড়িতে পৌঁছাতে দুপুর হয়ে গেলো ছায়াদের। গাড়িটা এসে মাহীনের বাড়ির সামনে থামলো। শমিক বাবু প্রথমে গাড়ি থেকে নামলেন তারপর একে একে ছায়া আর মাহীন গাড়ি থেকে নেমে পড়লো। গাড়ি থেকে নেমে মাহীন বেশ অবাক হলো, কাকু আর কাকিমা তাকে গ্রামের বাড়িতে কেন নিয়েছেন। কাকু তোমরা আমাকে বাড়িতে কেন নিয়ে এলে? ভিতরে চল মাহীন। বাড়ির সামনে অনেক লোকজন ভিড় করে দাঁড়িয়ে আছে। মাহীন কিছুই বুঝতে পারছে না এতো লোকজন কেনো তার বাড়ির সামনে ভিড় করছে। শমিক বাবু মাহীনকে সঙ্গে নিয়ে বাড়ির ভিতরে ঢুকলো। বাড়ির ভিতর ঢুকেও মাহীন দেখলো অনেক লোকজন দাঁড়িয়ে আছে পা রাখার মতো জায়গা নেই। এতো মানুষ কিসের জন্য এসেছে তার বাড়িতে মাহীন বুঝতে পারছে না। লোকজন সবাই মাহীনের মুখের দিকে তাকিয়ে রয়েছে। লোকজনের ভিড় ঢেলে শমিক বাবু মাহীনকে নিয়ে সামনের দিকে গেলো। বাড়িতে প্রচুর ভিড়। উঠোনে অনুরাধা দেবী আর তপন বাবুর লাশ শুইয়ে রাখা আছে। লাশের পাশে বসে ছিল মাহীনের বড় পিসি সুধা দেবী। মাহীনকে আসতে দেখে সুধা দেবী দাঁড়িয়ে গেলো তারপর মাহীনের কাছে গিয়ে জরিয়ে ধরে চিৎকার করে কাদঁতে লাগলো। মাহীনের চোখের সামনে লাশ হয়ে শুয়ে আছে তার বাবা-মা। মাহীনের মাথায় উপর বাজ পড়লো। সে কি কোনো দুঃস্বপ্ন দেখছে নাকি সত্যি দেখছে। এখনও মাহীনের বিশ্বাস হচ্ছে না তার বাবা-মা আর বেঁচে নেই। মাহীন ভিড়ের ফাঁক গলে অনুরাধার লাশের পাশে গিয়ে দাঁড়ায়। মাহীনের মনে হতে থাকে অনুরাধা এখনই উঠে বসবে। আর বলবে-মাহীন বাবা আমার কেমন আসিস তুই? কত দিন পর তোর মুখ টা দেখছি। তোকে এতো শুকনা দেখাচ্ছে কেন ঠিকমতো খাওয়াদাওয়া করিস না নাকি। শুকনো মুখে ছায়া লাশের পাশে দাঁড়িয়ে আছে । মাহীন চুপ করে বসে পড়ে লাশের পাশে। বিকালের দিকে ভিড়ের মধ্যে গুঞ্জন উঠে-লাশ বেশীক্ষণ রাখা ঠিক হবেনা।এইবার লাশ বের করা হোক।কয়েজন মিলে লাশ খাটিয়ায় তোলে।বল হরি,হরি বল-শব্দগুলি জোড়ালো হওয়ার সাথে সাথে চারিদিকে কান্নার রোল ওঠে।সুধা পিসি উঠোনে পড়ে হাঁউ মাউ করে কাঁদতে থাকে। ছায়া সুধার কাছে গিয়ে সুধাকে সান্তনা দেওয়ার চেষ্টা করে। খাটিয়ায় করে লাশ দুটো গ্রামের শ্মশান ঘাটে নিয়ে যাওয়া হলো। শ্মশান ঘাটে পাশাপাশি দুটো কাঠের চিতায় শুয়ানো হলো মাহীনের বাবা আর মাকে। শমিক বাবু মাহীনের হাত ধরে চিতার সামনে নিয়ে আসলেন। মরদেহ দুটোর মুখাগ্নি করলো মাহীন। চিতার আগুন দাউদাউ করে জ্বলছে। শেষকৃত্য সম্পন্ন করে শ্মশান ঘাট থেকে মাহীনকে সঙ্গে নিয়ে বাড়ি ফিরলেন শমিক বাবু। পরের দিন শ্রাদ্ধের আয়োজন করেছিল শমিক বাবু। মাহীনের সব আত্মীয় স্বজনদের এবং পাড়া প্রতিবেশীদের দাওয়াত করা হয়েছেছিল সবাই এসেছিলেন। তিন দিনের মতো পদ্মপুর গ্রামে ছিলেন ছায়া, শমিক বাবু আর মাহীন। মাহীন আরও কিছুদিন গ্রামে থাকতে চেয়েছিল। কিন্তু ছায়া থাকতে দেয় নি, ছায়া মাহীনকে বললো, আমি তোমার বাবা-মাকে কথা দিয়েছিলাম। তোমাকে ভালোমতো পড়াশোনা শিখিয়ে একজন শিক্ষিত মানুষ হিসেবে গড়ে তুলবো। তোমার বাবা-মার স্বপ্ন তোমাকেই পূরণ করতে হবে। মানুষের জীবনে কিছু মহামূল্যবান জিনিস থাকে, সেগুলো একবার হারিয়ে গেলে চাইলও দ্বিতীয়বার পাওয়া সম্ভব না। জীবন সবসময় তোমাকে দিবে না, মাঝে মধ্যে তোমার কাছে থেকে কেড়েও নিবে। এটার নামই জীবন এই সময় ধৈর্য ধারণ করতে হবে ভেঙ্গে পড়লে চলবে না, উঠে দাঁড়িয়ে আবার সামনে দিকে এগিয়ে যেতে হবে আর সামনে তোমার টেস্ট পরীক্ষা এখানে থাকলে পড়াশোনার ক্ষতি হবে। আমাদের সঙ্গেই ফিরে চলো, ছায়ার কথায় শেষ পযন্ত মাহীন তাদের সাথে ফিরে যেতে রাজি হয়। মানুষ যা চায়, তার চেয়েও বেশি হারায়। আহ জীবন। কত সুন্দর তার বৈচিত্র্য, কত গভীর তার দুঃখ। শান্তিনগরের বাসায় ফিরে আসার পর থেকে এক সপ্তাহের বেশি হলো মাহীন বাসা থেকে কোথাও বের হয়নি নিজের রুমে মধ্যে সারাদিন থাকে। ছায়াও বুঝতে পারছে মাহীন মানসিক ভাবে ভেঙ্গে পড়েছে। এই পরিস্থিতি থেকে বের হতে ওর আরও কিছু দিন সময় লাগবে। কাল রাতে শমিক বাবু, ছায়াকে বললো ছায়ার পাসপোর্ট হয়েছে গেছে, পাসপোর্ট অফিস থেকে ফোন করেছিল পাসপোর্ট নিয়ে আসার জন্য। আজকে পাসপোর্ট অফিস হয়ে তারপর কলেজে যাবে ছায়া। এক সপ্তাহ পরে, মাহীন আবার কলেজ যাওয়া শুরু করেছে। ইন্দানিং মাহীন আর খুব একটা বাহিরে আড্ডা দিয়ে সময় নষ্ট করে না। মাহীনের অনেক পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে। পড়াশোনায় নিজে থেকে মনোযোগী হয়েছে ছায়ার আর কিছুই বলা লাগে না।
21-10-2024, 10:10 PM
ar ki update ashbe?
|
« Next Oldest | Next Newest »
|