কুলাঙ্গার ছেলে - লম্পট
পর্ব - ৬
শেষ বিকেলের পড়ন্ত রোদে ছাতে এসে বসে হালকা মেজাজে সিগ্রেট টানার মধ্যে একটা চরম বিলাসিতা আছে সেটা মনে হয় প্রত্যেক ধুম্রপায়ী স্বীকার করতে বাধ্য। পশ্চিম আকাশের গোধূলী সূর্য্যের রঙ পুরো আকাশকে লাল আভায় ভরিয়ে দিয়েছে। নীচের পৃথিবী ঈষৎ ব্যস্ততায় ভরে আছে আর তারই ফাঁকে সেই নির্মল সৌন্দর্য্যসুধা পান করতে করতে দু'আঙ্গুলে সিগ্রেটটা ধরে আস্তে আস্তে টান দেওয়ার মধ্যে একটা রাজসিক ব্যাপার রয়েছে। সারাদিনের ক্লান্তি যেন ধোঁয়ার সাথে বেরিয়ে যায়!
সেদিন ঠিক সেরকমই রাজসিক আনন্দ স্বাদ নিচ্ছিলাম। অন্যদিন ক্রিকেট খেলতে পুরনো ইকলেজবাড়ির মাঠে যাই কিন্তু আজ কেন জানি ইচ্ছে করল না। দুপুরে একটা টেনে ঘুম দিয়ে বিকেল নাগাদ উঠে এককাপ গরম চা খেয়েই ছাতে উঠে গেলাম সিগ্রেটের প্যাকেটটা নিয়ে। তারপর কার্নিশে আলতো হেলান দিয়ে ধীরে ধীরে সিগ্রেটটা জ্বালিয়ে সুখটান দিতে থাকলাম।
"ছোটবাবু!" চমকটা ভাঙল ডাক পেয়ে। ঘাড় ঘুরিয়ে দেখলাম মিনতি। একটু থমকে গলাটা ঝাড়লাম, "কিছু বলবে বৌদি?" মিনু হাসল, "না না ভাবছিলাম চা খেয়ে তুমি কোথায় গেলে। সেদিন তো এমন ভয় পেলে যে আমাকে দেখলেই পালিয়ে যাচ্ছ।"
আমি একটু আড়ষ্ট কণ্ঠে বললাম, "পালিয়ে যাচ্ছি না বৌদি। কিন্তু সেদিন মায়ের কাছে ধরা পড়তে পড়তে বেঁচেছি। আমি খুশী হব যদি ঐ বিষয়ে আমরা আর কোন কথা না বলি।"
মিনতি আমার আপত্তি ফ্যুৎকারে উড়িয়ে দিল, "আরে থাম ছোটবাবু। এত ভীতুর ডিম হয়ে নিজের মাকে চোদাবে কেমন করে!"
"ছিঃ! বৌদি! এরকম বল না।" মিনতি ঘাড় নাড়ল, "আচ্ছা ঠিক আছে ছোটবাবু বলব না। কেন বলতে যাব বল। কী স্বার্থ আছে আমার এতে। আমি তো আর অত লেখাপড়া শিখিনি গো। তাই ভদ্দরলোকের ভাষা আদব কায়দা জানিনা। যা সত্যি মনে হয়, যেটা মুখে আসে সেটাই বলি। কিছু মনে কর না ছোটবাবু আসলে আমার ভিতর বাইরে একইরকম। আজ দেখছি তো কয়েকমাস। তাই আর কী!"
আমার মিনতির কথাগুলো শুনে একটু খারাপ লাগল, ওকে আশ্বাস দেওয়ার সুরে বললাম, "তা কেন হবে। আমি তো জানি তুমি মোটেও খারাপ চাও না আর তুমি খুবই সরল মনের বৌদি। কিন্তু বিষয়টা মানে বুঝতে পারছ তো কী বলব সংবেদনশীল আর কী!"
মিনতি হাসল, "কী জানি ছোটবাবু। আমি তো শুধু ভাবছিলাম মেয়েমানুষের জীবন কেমন হয়। এই যেমন ধর, তোমার মা! কত্ত সুন্দরী দেখতে! এখনও কেমন ডবকা গতর কিন্তু কেমন একলা থাকে! তোমার বাপ সেই যে কবে গেছে এখন আসে নাই। রোজ রাতে একলা বিছানায় শুতে হয়। এট্টু যে মরদের আদর পাবে তার অল্প যো নাই। আর এখন কত্ত কী করে মেয়েলোকগুলা, বাড়িতে সাধু সেজে হোটেলে পরপুরুষের গাদন খাচ্ছে। কেউ জানতে অব্দি পাচ্ছে না। শুধু তোমার মায়ের মত বউগুলা সারাজীবন কষ্ট করে করে শেষ হয়। না পায় বরের সুখ না অন্য কারও।"
আমি কিছুক্ষণ চুপ করে থাকলাম। এতকাল এভাবে সত্যিই ভাবিনি। আমার মা হলেও দিনের শেষে তো একজন নারী। পুরুষের সান্নিধ্য কে না চায় কিন্তু আমার বাবা তো কর্ম্মসূত্রে বাইরে থাকে। সত্যিই তো, মাঝে মাঝে পরকীয়া সত্যিই প্রয়োজন।
মিনতি মনে হয় আমার মন পড়ার চেষ্টা করছিল। বলল, "তুমি বা আমি কী চাই সেসব ছেড়ে দাও ছোটবাবু। তোমার মা কী চায় সেটাই আসল। যদি তোমার মা অন্যের বিছানায় যেতে চায় তাহলে তুমি কী বাধা দেবে ছোটবাবু? তখন ভাববে না তো, এটা অন্যায়!"
আমি ঘাড় নাড়লাম, "মোটেও না। যদি আমার মা স্বেচ্ছায় পরকীয়া করে মানে অন্যের বিছানায় যেতে চায় তাহলে আমি কেন বাধা দেব। কিন্তু প্রশ্ন হল আমার মা কী সেধে যেচে পরকীয়া করতে যাবে?"
মিনতি উত্তর দিল, "না ছোটবাবু যাবে না। তোমার মা হল ভদ্রবাড়ির বউ। তার উপর সতীলক্ষ্মী। দরকার হলে শরীরের গরমে জ্বলে ছাই হয়ে যাবে তবু অন্য পুরুষের দিকে তাকাবে না।"
আমি দীর্ঘশ্বাস ফেললাম, "সেটাই হল আসল কথা বৌদি। এটাতে আমাদের কিছুই করার নেই। যদি আমার মা নিজে থেকে করে, আমি বাধ সাধব না কিন্তু তার ইচ্ছের বিরুদ্ধে আমি তার সতীত্ব নষ্ট হতে দিতে পারি না। সেটা ;., হবে বৌদি আর সেটা খুবই ঘৃণ্য যেটা পৃথিবীর কোন মানুষের পক্ষে সমর্থন করা সম্ভব নয়!"
মিনতি কিছু বলল না। অনেকক্ষণ আমরা দু'জনে চুপচাপ থাকলাম। সূর্য্য অস্ত যেতে বসেছে। পাখীগুলো কিচ্-মিচ্ শব্দ তুলে নীড়ে ফিরছে। সন্ধ্যার অন্ধকার নেমে আসছে পৃথিবীর বুকে। সেই আলো-আঁধারীর মুহূর্তে হঠাৎ মিনতি বলে উঠল, "কিন্তু ছোটবাবু ইচ্ছা নিয়ন্ত্রণ করা যায়। মানে যদি ভিতরে সুপ্ত ইচ্ছা থাকে কিছু সেটার অর্গল খুলে দেওয়া যায়।"
আমি অবাক হলাম, "কী বল! সেটাও সম্ভব হয় নাকি! "
মিনতি বলল, "হ্যাঁ গো হ্যাঁ। আমি একজন ফকিরকে চিনি যে মানুষের মনের ভিতর লুকিয়ে থাকা ইচ্ছেকে বার করে আনার বিদ্যে জানে।"
আমি দোনোমোনো করে বললাম, "তন্ত্র-ফন্ত্র নাকি? ধুস! ওসব আজগুবি ব্যাপার। ওসব বাস্তবে হয় না। মিথ্যা ব্যবসার বেসাতি।"
মিনতি তীব্রকণ্ঠে প্রতিবাদ করে বলল, "খুব হয়। সবাই ভণ্ড হয় না। দু'একজন আছে যাদের কাছে অলৌকিক ক্ষমতা আছে। এরা বশীকরণ, মারণ-ঊচাটন, বাণমারা এসব খুব সহজেই করতে পারে।"
আমি হাসতে হাসতে বললাম, "মিনতি তোমার মাথা পুরাই নষ্ট হয়ে গেছে। শোন আজ অব্দি ওগুলো শুধু গল্পেই হয়।"
মিনতি রেগে গেল, "আচ্ছা ঠিক আছে তোমার যদি বিশ্বাস না হয় তাহলে একদিন চল আমার সাথে ফকির বাবার কাছে।"
আমি একটু ভাবলাম, "এইসব বস্তির মেয়েরা খুব সরল হয়। এদের মনে অন্ধ বিশ্বাস জাগানো সোজা। তবে আমি একজন শিক্ষিত হয়ে এসব তো মানতে পারি না।"
বললাম, "ঠিক আছে চল। কাল যাব তোমার ঐ ফকির বাবার কাছে। কী নাম বললে?"
মিনতি হেসে বলল, "ফকির আনোয়ার শেখ।"
আমি ভুরু কুঁচকে বললাম, " . ফকির নাকি?"
মিনতি হাসল, "ফকির তো .ই হয়! কাল তো যাচ্ছ। দেখবে একবার ফকির বাবাকে। দেখলেই মনে ভক্তি জাগবে।"
আমি ঘাড় নাড়লাম। কিছু বললাম না।
(চলবে)
বিঃ দ্রঃ ৬ নম্বর পর্ব দিলাম। ভাল লাগলে লাইক ও রেপুটেশন দিয়ে পাশে থাকবেন। আপনার গল্প কেমন লাগছে কমেন্ট করে বলবেন। মাথায় কোন আইডিয়া থাকলে জানাবেন। পছন্দ হলে গল্পে ঢুকিয়ে দেব।