16-10-2023, 03:14 AM
(This post was last modified: 03-11-2023, 01:37 PM by Nirjon_ahmed. Edited 4 times in total. Edited 4 times in total.)
এই থ্রেডে আমার ছোট থেকে মাঝারি গল্পগুলো থাকবে।
১। পল্টনের ল কলেজ (সমাপ্ত)
২। একজন সার্জিও রামোসের ডিফেন্সিভ মিস্টেক (সমাপ্ত)
[আমার গল্পগুলোর প্রধান চরিত্রের নাম নির্জনই রাখছি প্রতিটা গল্প-উপন্যাসে। কারণটা সহজ। গল্পগুলো নানা সাইটে ঘুরে বেড়ায়। অনেক সাইটের এডমিন লেখকের নামটা পর্যন্ত দেয় না। লেখক, হোক সে যতো নিম্নমানেরই, লিখুক যে যতো "হিডিয়াস" বিষয় নিয়েই, সর্বদা চায় তার লেখা লোকে পড়ুক, সাথেসাথে জানুক তার নামটাও। সেটাই যেহেতু হচ্ছে না, তাই বাধ্য হয়ে এই কাজ করছি। ডিটেকটিভ (বা মিস্ট্রি) জনরার উপন্যাসটার কিংবা অন্য যে উপন্যাস বা গল্পগুলো লিখছি বা লিখেছি বা লিখবো, সেগুলোর প্রধান চরিত্রের সাথে এ গল্পের প্রধান চরিত্রের কোন মিল নেই। তারা অন্য মানুষ, তাদের গল্প আলাদা পৃথিবীর। গুলিয়ে ফেলবেন না যেন!
কম্পিউটার কাছে না থাকায়, ফোনে লিখছি। ভাই বানানভুল কিংবা তথ্যগত ত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। ভুলগুলো ধরিয়ে দিলে কৃতজ্ঞ থাকবো।
-নির্জন আহমেদ]
পল্টনের ল কলেজ
এখন শরৎ না হেমন্ত নির্জন জানে না কিন্তু রোদের যে তেজ কমেছে, এ নিয়ে সন্দেহ নেই। দূর্গা পূজা শুরু হয়েছে, তারমানে শরতই হবে। ঘর থেকে বেরুলেই আর গা জ্বলে যাচ্ছে না, বরং লাগছে ভালোই। এদিকে আবার অকাল বৃষ্টিও হচ্ছে।
নির্জন যখন পল্টন মোড় থেকে একে ওকে জিজ্ঞেস করে ল কলেজটার সামনে এলো, তখন জোহরের আজান শুনতে পেলো কাছের কোন মসজিদ থেকে।
"দুর্বাল। এখন তো নামাজ-খাওয়ার জন্য বন্ধ থাকবে অফিস! থাক বসে এখন!"
আসার কথা ছিলো আগেই। কাল যখন ঘুমাতে গিয়েছিলো প্রতিজ্ঞা করেছিলো দশটার মধ্যেই উঠে সাড়ে দশটা কিংবা এগারোটার মধ্যে হাঁটতে হাঁটেতে কলেজ রিসেপশনে হাজির হবে।
কিন্তু কয়েক কোটিবারের মতো এবারও ব্যর্থ হলো নির্জন। উঠলো এগারোটায়। তারপর পল্টনে পৌঁছতে পৌঁছতেই একটা।
কলেজ তো না, একটা বিল্ডিং। বাইরে একটা বড়ু চন্ডীদাসের আমলের সাইনবোর্ডে লেখা "নদীমাতৃক ল কলেজ (জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে, স্থাপিত ১৯৮১"। বিল্ডিং এর দেয়ালের হলুদ রঙ চটা; দেয়ালে রাজনৈতিক দলের মহাসমাবেশের পুরাতন পোস্টার, যৌনশক্তি বর্ধক ঔষুদের বিজ্ঞাপন। কলেজটা দেখে মন খারাপ হলো নির্জনের। অবশ্য এর বেশি কিছু আশা করেনি ও। ঢাকার বেশিরভাগ কলেজ স্থাপিত বোধহয় দুইকাঠা জমিতে। বাচ্চারা খেলা তো দূরে থাক, নড়তে পর্যন্ত পারে না। সেখানে এটা তো পোস্ট গ্রাজুয়েটদের জন্য সার্টিফিকেট প্রদানকারী কলেজ!
কাছে কোথাও সমাবেশ হচ্ছে বোধহয় কোন। "করতে হবে", "দিতে হবে", "অধিকার" শব্দগুলো কানে আসছে বারংবার। নির্জনের কান পেতে শুনতে ইচ্ছে করলো না।
একটা সিগারেট জ্বালিয়ে ভাবছিলো কী করবে। দুপুরের খাওয়াটা সেরে নেয়া যায় এরমধ্যে। তবে হলের বাইরে খেলেই ওর পকেটে টান পড়ে। আশেপাশে কোথাও নিশ্চয়ই ৪০/৫০ টাকায় ভাত পাওয়া যাবে না। সে যুগ দশবছর আগেই শেষ হয়ে গেছে। এখন হোটেলে ঢুকলে পানির বিলই আসে ৩০ টাকা!
ফুটপাতটা দিয়ে লাখলাখ লোক চলছে বলে আর চলতে চলতে নির্জনকে কেউ কেউ, ইচ্ছাকৃতই কিনা কে জানে, ধাক্কা দিয়ে যাচ্ছে বলে সিগারেটটায় শেষ টান দিয়ে ঢুকে পড়ল ভেতরে।
"কেউ তো থাকবে ভেতরে!", ভাবলো নির্জন।
না, কেউ নেই।
রিসেপশনে, যদি এটা রিসেপশন হয়, একটা "নামাজের বিরতি" সাইন টাঙানো। কলেজ করিডোরে কেমন অন্ধকার ভাব, অথচ বাইরে শরতের মেঘলা আলো ঝলমল করছে। তার মনে হলো, কোন ফ্রেন্স এক্সপেরিমেন্টাল সিনেমার বিষন্ন জগতে পা দিয়েছে ও।
নির্জন বসে পড়লো সামনের চেয়ারগুলোতে। দরজাবন্ধ অফিসের পাশে সারিসারি ক্লাসরুম। কিন্তু একটা ছাত্রও নেই। ক্লাস কি কেউ করে?
"এক্সকিউজ মি, ভাইয়া আপনি কি এখানকার ছাত্র?"
ফোনে মগ্ন ছিলো নির্জন। তাকালো চোখ তুলে। আপাদমস্তক * ঢাকা এক মেয়ে। মুখেও *। * কি? নির্জন জানে না * কী। *-* শব্দজোড় জানা আছে শুধু ওর।
"না। ছাত্র নই, তবে হতে চাইছি!", বলল নির্জন।
"ও!"
কয়েক সেকেন্ডের নীরবতা।
"আমি একবার এসে ফিরে গেছি। এখনও দেখছি কেউ নাই!", হতাশা মেয়েটির গলায়।
"কখন এসেছিলেন?"
"নয়টা। গুগোলে দেখাচ্ছিলো ৯টা থেকে ৫টা অফিস খোলা। এসে দেখি বাইরের দরজাতেই তালা মারা!"
নির্জন হাসলো। বললো, "আপনার উন্নতি হয়েছে! প্রথমবার এসে দেখেছেন দরজা বন্ধ, এখন এসে দেখছেন দরজা খোলা কিন্তু কেউ নেই! আরেকবার একঘণ্টা পর আসুন কাউকে না কাউকে পেয়ে যাবেন। এরা তো ২ বছরের কোর্স তিন বছরে করায়। শিক্ষার্থীদের তাই ধৈর্যশক্তিরও পরিচয় দিতে হয়। এভাবে অনিয়মিত অফিস টফিস খুলে, ভর্তি প্রক্রিয়া জটিল করে এরা ধৈর্যশীলদের বেছে নেয়। যাদের বেশি তাড়া, যারা একটু অস্থির, তারা এমনিই ঝড়ে যাবে এখানে!"
মেয়েটি হাসলো। অন্তত নির্জনের মনে হলো হাসলো। মাস্কে একটু ভাঁজ পড়লো বলে মনে হলো ওর।
"কখন আসবে জানেন?"
"আমার অভিজ্ঞতা আপনার চেয়ে কম। আপনি তো তাও একবার এসেছেন, আমি আজই, এখনই প্রথম এলাম! জানি না কখন আসবে। লিখে দিয়ে গেছে তো নামাজের বিরতি!"
মেয়েটি বসল একটা চেয়ারে, মাঝে একটা চেয়ার খালি রেখে।
"আপনি ভর্তি হবেন?", জিজ্ঞেস করল নির্জন।
"হ্যাঁ। আরেকটা কলেজে গেছিলাম। ওরা ৮০ হাজার চাইছে। এখানে শুনছি কম লাগে।"
মোবাইলটা পকেটে চালান করলো ও। কথা বলার যখন মানুষ পাওয়া গেছে, তখন মোবাইল চালানোর মানে নেই কোন।
বলল, "এখানেও কম লাগে না বোধহয়। ষাট হাজারের নিচে কেউ সার্টিফিকেট বেচবে না!"
"আপনার কি মাস্টার্স শেষ? মাস্টার্স চলাকালীন এই কোর্স করা যায় না শুনছি!"
বলল নির্জন, "একপ্রকার তাই। আপনার?"
"আমারও। জব করছি একটা। ভাবলাম একটা ডিগ্রি নিয়ে নেই। এলএলবি ডিগ্রি থাকলে অনেক স্কোপ খুলে যায়!"
"তারমানে আপনি প্রাক্টিস করবেন না?", জিজ্ঞেস করলো ও।
"না। প্রাকটিসের ইচ্ছা নাই। আসলে আমাদের কোম্পানিতে ল অফিসার নেয়। আমার পদে ছিলো এক ভাই, উনি আইন পড়ে সেই পদে যোগ দিছেন। বেতন প্রায় দুইগুণ। তাই ভাবলাম, আমিও করে ফেলি! আপনি?"
জবার দেয়ার আগে ভাবলো নির্জন। সত্যিই কি ও চায় উকিল হতে? বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করা এলএলবিধারীরা ওর মতো পাসকোর্স-উকিলকে তখন কি বলবে? বটতলার বিশেষণটা ব্যবহার করবে না কি?
বলল, "হ্যাঁ। আমার আপনার মতো অপশন নেই হাতে!"
"মানে?"
"মানে আমি ফুল টাইম বেকার আপাতত। এলএলবি পাশ করার আগে চাকরি না পেলে ওকালতি না করে উপায় থাকবে না!"
"ও!"
"ও" বলাটা বোধহয় মেয়েটার স্বভাব। কথায় কথায় ও বলে থামছে। চ্যাট করার সময় Hmm লিখে ম্যাসেজ দেয়ার মতো!
"মুখ না দেখে একটা মানুষের সাথে কতক্ষণ কথা বলা যায়?", ভাবলো নির্জন। মনে পড়ল তখনই শবনমের কথা। একসাথে ৫-৬ বছর পড়লো, অথচ শবনমের মুখ কোনদিন দেখতে পায়নি নির্জন। তবে শবনমের হাইট, ফিগার ও চোখ চেনা ওর। রাস্তাঘাটে, এমনকি নিউওমার্কেটের ভিড়েও, চিনতে অসুবিধা তাই হয়নি কোনদিন।
"শুনছি, উকিলদের শুরুটা খুব বাজে হয়। অনেক স্ট্রাগল করতে হয়!", সামনের ঘড়িটার দিকে তাকিয়ে বলল মেয়েটি।
নির্জন হাসলো একটু। বলল, "আগে তো ভর্তি হই! তারপর এসব ভাববো। পরিস্থিতি দেখে তো মনে হচ্ছে, এরা আমাদের ভর্তি করাতেই অনিচ্ছুক!"
"সেটাই! কতক্ষণ হয়ে গেলো, একটা বান্দারও দেখা নাই। বিরক্তিকর!"
"বাইরে একটা চায়ের দোকান আছে। চলুন চা খেয়ে আসি। "আসল গরুর দুধের চা" পাওয়া যায় লিখে রেখেছে একটা কাগজে।"
"নকল গরুর দুধও আছে নাকি মার্কেটে?"
নির্জন মাথা নাড়লো শুধু সামান্য হেসে।
২
এতোটাও আশা করেনি নির্জন। মেয়েটি চা খাচ্ছে *ের নিচে কাপ ঢুকিয়ে! এতো কষ্ট করতে হচ্ছে দেখে অপরাধবোধ হলো নির্জনের। এভাবে খাবে জানলে চায়ের কথা বলতো না ও।
নির্জন অবশ্য আশাই করেনি মেয়েটি চায়ের প্রস্তাবে রাজি হবে।
“বাইরে খেলে আপনার দেখছি যথেষ্ট ঝামেলা হয়। বিরক্ত লাগে না?”, জিজ্ঞেস করেই ফেললো নির্জন।
মেয়েটি বোধহয় লজ্জা পেলো। বলল, “আগে লাগতো, এখন অভ্যাস হয়ে গেছে। তাছাড়া বাইরে কিছু খাইও না বেশি।“
চায়ে চুমুক দিয়ে বলল আবার মেয়েটি, “চায়ের সাথে সিগারেট কিন্তু খুব বেশি ক্ষতিকর, জানেন তো?”
নির্জন হেসে বলে, “জানি। তবে আমি জীবনের অলরেডি এতো বেশি ক্ষতি করে ফেলেছি, এটা সে তুলনায় কিছুই করছে না!”।
“ও!”
মেয়েটি আর কিছু জানতে চাইলো না বলে কৃতজ্ঞতা বোধ করল নির্জন।
একটা মিছিল আসছিলো কোন এক ইসলামি দলের। ইসরাইলের গাজা আক্রমণের প্রতিবাদে মিছিল। ঝান্ডায় আরবিতে কিছু লেখা।
নির্জন বলল, “ইসরাইল গাজার হামলা করলে বোধহয় এদেশের ইসলামি দলগুলা খুশীই হয়””
মেয়েটি বলল, “মানে?”
“মানে এরা তো রাস্তাঘাটে নামতে পারে না। নামলেই পিটান খায়। আর ওদের দাবি পিটান খাওয়ার মতোই অবশ্য। কিন্তু ইসরাইল গাজায় বা পশ্চিম তীরে আক্রমণ করলেই সরকার আর এদের বাধা দিতে পারে না। বাধা দিলে তো লোকে ভাববে, সরকার প্রোইস্রাইলি! এরা একটু নিজেদের শক্তি দেখা পারে!”
মেয়েটি বলল, “ব্যাপারটা খুব দুঃখজনক। পৃথিবীতে যতোদিন ইসরাইল থাকবে, নিশ্চিহ্ন হবে না, ততোদিন শান্তি আসবে না পৃথিবীতে!”
ধোঁয়া ছুঁড়ে নির্জন বলল, “এটাই সমস্যা, জানেন? এই পরস্পরকে নিশ্চিহ্ন করে দেয়ার ইচ্ছাটা! এ কারণেই যুদ্ধ থামবে না কোনদিন!”
মেয়েটি বোধহয় একটু ক্ষেপে গেলো। বললো, “আপনি বলতে চাইতেছেন, ওরা এতো অত্যাচার করবে, নির্যাতন করবে, .রা কিছু করবে না?”
“ করবে না কেন? অবশ্যই করবে। কিন্তু করছে না কিছু। সৌদি নাকি ওদের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক করবে। ওমান, আর ইউএই তো স্বীকৃতি দিয়ে শুনেছি রাষ্ট্রদূতও নিয়োগ দিয়েছে। প্যালেস্টাইন কার সে তর্কে যাচ্ছি না। মোট কথা, হামাস ইস্রাইলকে ধ্বংস করতে চায়। এটা ইম্পসিবল কারণ ওদের আমেরিকার-ইউরোপের ব্যাকিং আছে। হামাস যতোবার আক্রমণ চালাবে, ততোবার রুখে দেবে ওরা৷ পাল্টা আক্রমণে লাখলাখ লোক মরবে, বাস্তুহারা হবে, শিশু মরবে। লাভ কী? সমঝোতা তার চেয়ে ভালো!”
“সমঝোতা করে কী লাভ হইছে কোন? পশ্চিম তীরে কী করছে দেখেছেন? ওদের সাথে কম্প্রমাইজের প্রশ্নই আসে না!”
নির্জন বলল, “তাহলে এভাবে প্রাণ হারাতে হবে। যে বাচ্চাগুলা মারা গেলো গাজায় তারা কি ধর্ম বোঝে? রাষ্ট্র বোঝে? তাদের জীবন কেন গেল? সমঝোতা না করলে এমন হাজার শিশুর জান যাবে। প্যালেস্টাইনের যাবে, ইস্রাইলের যাবে। অকারণ রক্তপাত!”
ব্যাপারটা নিয়ে আরও কিছুক্ষণ কথা বললো ওরা। ইউএনের অক্ষমতা, পশ্চিমা মিডিয়ার পক্ষপাতিত্ব, ইউরোপের ফাঁকা মানবতা এসব ব্যাপারে ওরা প্রায় একমত। তবে হামাসকে নিয়ে দুজনের মত দুমেরুতে।
ততক্ষণে দুই কাপ করে চা শেষ। আর ঘড়ির কাঁটা ২টা পেরিয়ে গেছে।
মেয়েটি হেসে উঠলো হঠাৎ। বলল, “একটা মজার ব্যাপার খেয়াল করছেন?”
“কী?”
“আমরা একসাথে চা খাচ্ছি, তর্ক বিতর্ক করতেছি, অথচ কেউ কারও নাম জানি না!”
“তাই তো! খেয়ালই করিনি। আমি নির্জন। আপনি?”
“আমার নাম ফাহমিদা!”
ফেরার পথে ফাহমিদা জিজ্ঞেস করল, “চাকরি করবেন বললেন। চেষ্টা করতেছেন না?”
“চেষ্টা তো করছিই। তবে আমার চেষ্টার উপর ভরসা নাই। তাই ল ভর্তি হচ্ছি। আর কিছু না হোক গ্রামের মূর্খ চাষারা জমি নিয়ে মাথা ফাটাফাটি করলে তাদের ছিবড়ে নিতে পারবো!”
সশব্দে হাসল ফাহমিদা। বলল, “ভালো বলছেন। তার উপর বিয়ে রেজিস্ট্রি, এটা ওটা বিক্রি- এইসবের জন্য এক্সট্রা টাকা তো আছেই। কী বলেন?”
রিসেপশনে এক মাঝবয়সী বসে। প্রশ্নের জবাবটবাব দিলেন। ভাবভঙ্গি এমন, যেন ওদের সাথে কথা বলে তিনি পরম দয়া দেখাচ্ছেন। নির্জন কতো টাকা লাগবে জিজ্ঞেস করতেই খিঁচিয়ে উঠে বলল, “নোটিশ বোর্ডে সব কিছু লেহা আছে, দেখেন না?”
বাকি প্রশ্ন ফাহমিদাই করলো।
বের হওয়ার সময় ফাহমিদা বলল, “এখানে ভর্তি হলে এই বুড়ার খাইস্টা মুখটা প্রায় প্রায়ই দেখা লাগবে!”
১। পল্টনের ল কলেজ (সমাপ্ত)
২। একজন সার্জিও রামোসের ডিফেন্সিভ মিস্টেক (সমাপ্ত)
[আমার গল্পগুলোর প্রধান চরিত্রের নাম নির্জনই রাখছি প্রতিটা গল্প-উপন্যাসে। কারণটা সহজ। গল্পগুলো নানা সাইটে ঘুরে বেড়ায়। অনেক সাইটের এডমিন লেখকের নামটা পর্যন্ত দেয় না। লেখক, হোক সে যতো নিম্নমানেরই, লিখুক যে যতো "হিডিয়াস" বিষয় নিয়েই, সর্বদা চায় তার লেখা লোকে পড়ুক, সাথেসাথে জানুক তার নামটাও। সেটাই যেহেতু হচ্ছে না, তাই বাধ্য হয়ে এই কাজ করছি। ডিটেকটিভ (বা মিস্ট্রি) জনরার উপন্যাসটার কিংবা অন্য যে উপন্যাস বা গল্পগুলো লিখছি বা লিখেছি বা লিখবো, সেগুলোর প্রধান চরিত্রের সাথে এ গল্পের প্রধান চরিত্রের কোন মিল নেই। তারা অন্য মানুষ, তাদের গল্প আলাদা পৃথিবীর। গুলিয়ে ফেলবেন না যেন!
কম্পিউটার কাছে না থাকায়, ফোনে লিখছি। ভাই বানানভুল কিংবা তথ্যগত ত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। ভুলগুলো ধরিয়ে দিলে কৃতজ্ঞ থাকবো।
-নির্জন আহমেদ]
পল্টনের ল কলেজ
এখন শরৎ না হেমন্ত নির্জন জানে না কিন্তু রোদের যে তেজ কমেছে, এ নিয়ে সন্দেহ নেই। দূর্গা পূজা শুরু হয়েছে, তারমানে শরতই হবে। ঘর থেকে বেরুলেই আর গা জ্বলে যাচ্ছে না, বরং লাগছে ভালোই। এদিকে আবার অকাল বৃষ্টিও হচ্ছে।
নির্জন যখন পল্টন মোড় থেকে একে ওকে জিজ্ঞেস করে ল কলেজটার সামনে এলো, তখন জোহরের আজান শুনতে পেলো কাছের কোন মসজিদ থেকে।
"দুর্বাল। এখন তো নামাজ-খাওয়ার জন্য বন্ধ থাকবে অফিস! থাক বসে এখন!"
আসার কথা ছিলো আগেই। কাল যখন ঘুমাতে গিয়েছিলো প্রতিজ্ঞা করেছিলো দশটার মধ্যেই উঠে সাড়ে দশটা কিংবা এগারোটার মধ্যে হাঁটতে হাঁটেতে কলেজ রিসেপশনে হাজির হবে।
কিন্তু কয়েক কোটিবারের মতো এবারও ব্যর্থ হলো নির্জন। উঠলো এগারোটায়। তারপর পল্টনে পৌঁছতে পৌঁছতেই একটা।
কলেজ তো না, একটা বিল্ডিং। বাইরে একটা বড়ু চন্ডীদাসের আমলের সাইনবোর্ডে লেখা "নদীমাতৃক ল কলেজ (জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে, স্থাপিত ১৯৮১"। বিল্ডিং এর দেয়ালের হলুদ রঙ চটা; দেয়ালে রাজনৈতিক দলের মহাসমাবেশের পুরাতন পোস্টার, যৌনশক্তি বর্ধক ঔষুদের বিজ্ঞাপন। কলেজটা দেখে মন খারাপ হলো নির্জনের। অবশ্য এর বেশি কিছু আশা করেনি ও। ঢাকার বেশিরভাগ কলেজ স্থাপিত বোধহয় দুইকাঠা জমিতে। বাচ্চারা খেলা তো দূরে থাক, নড়তে পর্যন্ত পারে না। সেখানে এটা তো পোস্ট গ্রাজুয়েটদের জন্য সার্টিফিকেট প্রদানকারী কলেজ!
কাছে কোথাও সমাবেশ হচ্ছে বোধহয় কোন। "করতে হবে", "দিতে হবে", "অধিকার" শব্দগুলো কানে আসছে বারংবার। নির্জনের কান পেতে শুনতে ইচ্ছে করলো না।
একটা সিগারেট জ্বালিয়ে ভাবছিলো কী করবে। দুপুরের খাওয়াটা সেরে নেয়া যায় এরমধ্যে। তবে হলের বাইরে খেলেই ওর পকেটে টান পড়ে। আশেপাশে কোথাও নিশ্চয়ই ৪০/৫০ টাকায় ভাত পাওয়া যাবে না। সে যুগ দশবছর আগেই শেষ হয়ে গেছে। এখন হোটেলে ঢুকলে পানির বিলই আসে ৩০ টাকা!
ফুটপাতটা দিয়ে লাখলাখ লোক চলছে বলে আর চলতে চলতে নির্জনকে কেউ কেউ, ইচ্ছাকৃতই কিনা কে জানে, ধাক্কা দিয়ে যাচ্ছে বলে সিগারেটটায় শেষ টান দিয়ে ঢুকে পড়ল ভেতরে।
"কেউ তো থাকবে ভেতরে!", ভাবলো নির্জন।
না, কেউ নেই।
রিসেপশনে, যদি এটা রিসেপশন হয়, একটা "নামাজের বিরতি" সাইন টাঙানো। কলেজ করিডোরে কেমন অন্ধকার ভাব, অথচ বাইরে শরতের মেঘলা আলো ঝলমল করছে। তার মনে হলো, কোন ফ্রেন্স এক্সপেরিমেন্টাল সিনেমার বিষন্ন জগতে পা দিয়েছে ও।
নির্জন বসে পড়লো সামনের চেয়ারগুলোতে। দরজাবন্ধ অফিসের পাশে সারিসারি ক্লাসরুম। কিন্তু একটা ছাত্রও নেই। ক্লাস কি কেউ করে?
"এক্সকিউজ মি, ভাইয়া আপনি কি এখানকার ছাত্র?"
ফোনে মগ্ন ছিলো নির্জন। তাকালো চোখ তুলে। আপাদমস্তক * ঢাকা এক মেয়ে। মুখেও *। * কি? নির্জন জানে না * কী। *-* শব্দজোড় জানা আছে শুধু ওর।
"না। ছাত্র নই, তবে হতে চাইছি!", বলল নির্জন।
"ও!"
কয়েক সেকেন্ডের নীরবতা।
"আমি একবার এসে ফিরে গেছি। এখনও দেখছি কেউ নাই!", হতাশা মেয়েটির গলায়।
"কখন এসেছিলেন?"
"নয়টা। গুগোলে দেখাচ্ছিলো ৯টা থেকে ৫টা অফিস খোলা। এসে দেখি বাইরের দরজাতেই তালা মারা!"
নির্জন হাসলো। বললো, "আপনার উন্নতি হয়েছে! প্রথমবার এসে দেখেছেন দরজা বন্ধ, এখন এসে দেখছেন দরজা খোলা কিন্তু কেউ নেই! আরেকবার একঘণ্টা পর আসুন কাউকে না কাউকে পেয়ে যাবেন। এরা তো ২ বছরের কোর্স তিন বছরে করায়। শিক্ষার্থীদের তাই ধৈর্যশক্তিরও পরিচয় দিতে হয়। এভাবে অনিয়মিত অফিস টফিস খুলে, ভর্তি প্রক্রিয়া জটিল করে এরা ধৈর্যশীলদের বেছে নেয়। যাদের বেশি তাড়া, যারা একটু অস্থির, তারা এমনিই ঝড়ে যাবে এখানে!"
মেয়েটি হাসলো। অন্তত নির্জনের মনে হলো হাসলো। মাস্কে একটু ভাঁজ পড়লো বলে মনে হলো ওর।
"কখন আসবে জানেন?"
"আমার অভিজ্ঞতা আপনার চেয়ে কম। আপনি তো তাও একবার এসেছেন, আমি আজই, এখনই প্রথম এলাম! জানি না কখন আসবে। লিখে দিয়ে গেছে তো নামাজের বিরতি!"
মেয়েটি বসল একটা চেয়ারে, মাঝে একটা চেয়ার খালি রেখে।
"আপনি ভর্তি হবেন?", জিজ্ঞেস করল নির্জন।
"হ্যাঁ। আরেকটা কলেজে গেছিলাম। ওরা ৮০ হাজার চাইছে। এখানে শুনছি কম লাগে।"
মোবাইলটা পকেটে চালান করলো ও। কথা বলার যখন মানুষ পাওয়া গেছে, তখন মোবাইল চালানোর মানে নেই কোন।
বলল, "এখানেও কম লাগে না বোধহয়। ষাট হাজারের নিচে কেউ সার্টিফিকেট বেচবে না!"
"আপনার কি মাস্টার্স শেষ? মাস্টার্স চলাকালীন এই কোর্স করা যায় না শুনছি!"
বলল নির্জন, "একপ্রকার তাই। আপনার?"
"আমারও। জব করছি একটা। ভাবলাম একটা ডিগ্রি নিয়ে নেই। এলএলবি ডিগ্রি থাকলে অনেক স্কোপ খুলে যায়!"
"তারমানে আপনি প্রাক্টিস করবেন না?", জিজ্ঞেস করলো ও।
"না। প্রাকটিসের ইচ্ছা নাই। আসলে আমাদের কোম্পানিতে ল অফিসার নেয়। আমার পদে ছিলো এক ভাই, উনি আইন পড়ে সেই পদে যোগ দিছেন। বেতন প্রায় দুইগুণ। তাই ভাবলাম, আমিও করে ফেলি! আপনি?"
জবার দেয়ার আগে ভাবলো নির্জন। সত্যিই কি ও চায় উকিল হতে? বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করা এলএলবিধারীরা ওর মতো পাসকোর্স-উকিলকে তখন কি বলবে? বটতলার বিশেষণটা ব্যবহার করবে না কি?
বলল, "হ্যাঁ। আমার আপনার মতো অপশন নেই হাতে!"
"মানে?"
"মানে আমি ফুল টাইম বেকার আপাতত। এলএলবি পাশ করার আগে চাকরি না পেলে ওকালতি না করে উপায় থাকবে না!"
"ও!"
"ও" বলাটা বোধহয় মেয়েটার স্বভাব। কথায় কথায় ও বলে থামছে। চ্যাট করার সময় Hmm লিখে ম্যাসেজ দেয়ার মতো!
"মুখ না দেখে একটা মানুষের সাথে কতক্ষণ কথা বলা যায়?", ভাবলো নির্জন। মনে পড়ল তখনই শবনমের কথা। একসাথে ৫-৬ বছর পড়লো, অথচ শবনমের মুখ কোনদিন দেখতে পায়নি নির্জন। তবে শবনমের হাইট, ফিগার ও চোখ চেনা ওর। রাস্তাঘাটে, এমনকি নিউওমার্কেটের ভিড়েও, চিনতে অসুবিধা তাই হয়নি কোনদিন।
"শুনছি, উকিলদের শুরুটা খুব বাজে হয়। অনেক স্ট্রাগল করতে হয়!", সামনের ঘড়িটার দিকে তাকিয়ে বলল মেয়েটি।
নির্জন হাসলো একটু। বলল, "আগে তো ভর্তি হই! তারপর এসব ভাববো। পরিস্থিতি দেখে তো মনে হচ্ছে, এরা আমাদের ভর্তি করাতেই অনিচ্ছুক!"
"সেটাই! কতক্ষণ হয়ে গেলো, একটা বান্দারও দেখা নাই। বিরক্তিকর!"
"বাইরে একটা চায়ের দোকান আছে। চলুন চা খেয়ে আসি। "আসল গরুর দুধের চা" পাওয়া যায় লিখে রেখেছে একটা কাগজে।"
"নকল গরুর দুধও আছে নাকি মার্কেটে?"
নির্জন মাথা নাড়লো শুধু সামান্য হেসে।
২
এতোটাও আশা করেনি নির্জন। মেয়েটি চা খাচ্ছে *ের নিচে কাপ ঢুকিয়ে! এতো কষ্ট করতে হচ্ছে দেখে অপরাধবোধ হলো নির্জনের। এভাবে খাবে জানলে চায়ের কথা বলতো না ও।
নির্জন অবশ্য আশাই করেনি মেয়েটি চায়ের প্রস্তাবে রাজি হবে।
“বাইরে খেলে আপনার দেখছি যথেষ্ট ঝামেলা হয়। বিরক্ত লাগে না?”, জিজ্ঞেস করেই ফেললো নির্জন।
মেয়েটি বোধহয় লজ্জা পেলো। বলল, “আগে লাগতো, এখন অভ্যাস হয়ে গেছে। তাছাড়া বাইরে কিছু খাইও না বেশি।“
চায়ে চুমুক দিয়ে বলল আবার মেয়েটি, “চায়ের সাথে সিগারেট কিন্তু খুব বেশি ক্ষতিকর, জানেন তো?”
নির্জন হেসে বলে, “জানি। তবে আমি জীবনের অলরেডি এতো বেশি ক্ষতি করে ফেলেছি, এটা সে তুলনায় কিছুই করছে না!”।
“ও!”
মেয়েটি আর কিছু জানতে চাইলো না বলে কৃতজ্ঞতা বোধ করল নির্জন।
একটা মিছিল আসছিলো কোন এক ইসলামি দলের। ইসরাইলের গাজা আক্রমণের প্রতিবাদে মিছিল। ঝান্ডায় আরবিতে কিছু লেখা।
নির্জন বলল, “ইসরাইল গাজার হামলা করলে বোধহয় এদেশের ইসলামি দলগুলা খুশীই হয়””
মেয়েটি বলল, “মানে?”
“মানে এরা তো রাস্তাঘাটে নামতে পারে না। নামলেই পিটান খায়। আর ওদের দাবি পিটান খাওয়ার মতোই অবশ্য। কিন্তু ইসরাইল গাজায় বা পশ্চিম তীরে আক্রমণ করলেই সরকার আর এদের বাধা দিতে পারে না। বাধা দিলে তো লোকে ভাববে, সরকার প্রোইস্রাইলি! এরা একটু নিজেদের শক্তি দেখা পারে!”
মেয়েটি বলল, “ব্যাপারটা খুব দুঃখজনক। পৃথিবীতে যতোদিন ইসরাইল থাকবে, নিশ্চিহ্ন হবে না, ততোদিন শান্তি আসবে না পৃথিবীতে!”
ধোঁয়া ছুঁড়ে নির্জন বলল, “এটাই সমস্যা, জানেন? এই পরস্পরকে নিশ্চিহ্ন করে দেয়ার ইচ্ছাটা! এ কারণেই যুদ্ধ থামবে না কোনদিন!”
মেয়েটি বোধহয় একটু ক্ষেপে গেলো। বললো, “আপনি বলতে চাইতেছেন, ওরা এতো অত্যাচার করবে, নির্যাতন করবে, .রা কিছু করবে না?”
“ করবে না কেন? অবশ্যই করবে। কিন্তু করছে না কিছু। সৌদি নাকি ওদের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক করবে। ওমান, আর ইউএই তো স্বীকৃতি দিয়ে শুনেছি রাষ্ট্রদূতও নিয়োগ দিয়েছে। প্যালেস্টাইন কার সে তর্কে যাচ্ছি না। মোট কথা, হামাস ইস্রাইলকে ধ্বংস করতে চায়। এটা ইম্পসিবল কারণ ওদের আমেরিকার-ইউরোপের ব্যাকিং আছে। হামাস যতোবার আক্রমণ চালাবে, ততোবার রুখে দেবে ওরা৷ পাল্টা আক্রমণে লাখলাখ লোক মরবে, বাস্তুহারা হবে, শিশু মরবে। লাভ কী? সমঝোতা তার চেয়ে ভালো!”
“সমঝোতা করে কী লাভ হইছে কোন? পশ্চিম তীরে কী করছে দেখেছেন? ওদের সাথে কম্প্রমাইজের প্রশ্নই আসে না!”
নির্জন বলল, “তাহলে এভাবে প্রাণ হারাতে হবে। যে বাচ্চাগুলা মারা গেলো গাজায় তারা কি ধর্ম বোঝে? রাষ্ট্র বোঝে? তাদের জীবন কেন গেল? সমঝোতা না করলে এমন হাজার শিশুর জান যাবে। প্যালেস্টাইনের যাবে, ইস্রাইলের যাবে। অকারণ রক্তপাত!”
ব্যাপারটা নিয়ে আরও কিছুক্ষণ কথা বললো ওরা। ইউএনের অক্ষমতা, পশ্চিমা মিডিয়ার পক্ষপাতিত্ব, ইউরোপের ফাঁকা মানবতা এসব ব্যাপারে ওরা প্রায় একমত। তবে হামাসকে নিয়ে দুজনের মত দুমেরুতে।
ততক্ষণে দুই কাপ করে চা শেষ। আর ঘড়ির কাঁটা ২টা পেরিয়ে গেছে।
মেয়েটি হেসে উঠলো হঠাৎ। বলল, “একটা মজার ব্যাপার খেয়াল করছেন?”
“কী?”
“আমরা একসাথে চা খাচ্ছি, তর্ক বিতর্ক করতেছি, অথচ কেউ কারও নাম জানি না!”
“তাই তো! খেয়ালই করিনি। আমি নির্জন। আপনি?”
“আমার নাম ফাহমিদা!”
ফেরার পথে ফাহমিদা জিজ্ঞেস করল, “চাকরি করবেন বললেন। চেষ্টা করতেছেন না?”
“চেষ্টা তো করছিই। তবে আমার চেষ্টার উপর ভরসা নাই। তাই ল ভর্তি হচ্ছি। আর কিছু না হোক গ্রামের মূর্খ চাষারা জমি নিয়ে মাথা ফাটাফাটি করলে তাদের ছিবড়ে নিতে পারবো!”
সশব্দে হাসল ফাহমিদা। বলল, “ভালো বলছেন। তার উপর বিয়ে রেজিস্ট্রি, এটা ওটা বিক্রি- এইসবের জন্য এক্সট্রা টাকা তো আছেই। কী বলেন?”
রিসেপশনে এক মাঝবয়সী বসে। প্রশ্নের জবাবটবাব দিলেন। ভাবভঙ্গি এমন, যেন ওদের সাথে কথা বলে তিনি পরম দয়া দেখাচ্ছেন। নির্জন কতো টাকা লাগবে জিজ্ঞেস করতেই খিঁচিয়ে উঠে বলল, “নোটিশ বোর্ডে সব কিছু লেহা আছে, দেখেন না?”
বাকি প্রশ্ন ফাহমিদাই করলো।
বের হওয়ার সময় ফাহমিদা বলল, “এখানে ভর্তি হলে এই বুড়ার খাইস্টা মুখটা প্রায় প্রায়ই দেখা লাগবে!”