14-10-2023, 02:56 PM
ঘুম থেকে উঠে মুখের সামনে চা আর চিকেন পকোড়া পেয়ে কেউ, বিশেষ করে ইউসুফ আর পাঞ্জাবীটা ছায়ার অনুপস্থিতি নিয়ে মাথা ঘামালো না। ঘাসের কোলে রেখে যাওয়া পদচিহ্ন আর মোমের আলোয় কম্পন তুলে অপরাহ্ন শেষে এক সময় এলো সেই কাঙ্ক্ষিত সন্ধ্যেবেলা। কাঁধে একটা বড়সড়ো কিটব্যাগ নিয়ে বাড়িতে ঢুকলো ছায়া, ঘড়িতে তখন সাড়ে ছ'টা।
"কিরে? এতক্ষণ কোথায় ছিলিস? আর তোর কাঁধে ওই ব্যাগে করে কি নিয়ে এলি রে?" বাড়িতে পা রাখতে না রাখতেই ছায়ার উদ্দেশ্যে প্রশ্ন করলো ইউসুফ। "এখানে অতিথি হয়ে এসেছো, অতিথি হয়ে থাকো। বেশি মাতব্বরি করার চেষ্টা করো না। এই বাড়িটা ডাক্তারবাবুর। আমাকে প্রশ্ন করার একমাত্র অধিকার ওনার আছে, আর কারোর নয়। এই ব্যাগে কি আছে জানতে চাও? এই ব্যাগে তোমাদের জন্য মৃত্যুর পরোয়ানা নিয়ে এসেছি। দেখবে?" রুদ্রমূর্তি ধারণ করে দাঁত মুখ খিঁচিয়ে কথাগুলো বললো ছায়া। হঠাৎ করেই পাল্টে যাওয়া ছায়ার এই রূপ দেখে কিছুটা থতমতো খেয়ে গিয়ে ওখান থেকে সরে পড়লো ইউসুফ। এই পরিস্থিতির সাক্ষী হয়ে আমিও যে খুব কম অবাক হয়েছি তা নয়, তবে বিধর্মীটার পলায়ন দেখে মনে মনে বেশ খুশি হলাম।
সাতটার কিছু আগে ওরা এলো। প্রথমেই ঢুকতে দেখলাম প্রমোদ আর রবার্টকে। সকালে শুধুমাত্র শর্টস আর খালি গায়ে দেখা দুই মানিকজোড়কে স্যুটেড-বুটেড হয়ে আসতে দেখলাম। এতক্ষণ ওরা কোথায় ছিলো, কি করছিলো, পোশাক পাল্টালোই বা কি করে? কিছুই বোধগম্য হলো না আমার। তারপর প্রবেশ করলো রজত আর নন্দনা। ওরা ঢোকার সঙ্গে সঙ্গে কোথা থেকে যেন রজনীগন্ধার সুবাস নাকে এলো আমার। ক্রিম কালারের ব্লেজার আর ওই একই রঙের প্যান্ট পরিহিত একদম অন্যরকম দেখতে লাগা রজতের হাতের মুঠোয় আমার বউয়ের হাতটা ধরা ছিলো। ওকে এক ঝটকায় নিজের আরও কাছে টেনে নিয়ে রজত বললো, "লেডিস এন্ড জেন্টলম্যান, আই হ্যাভ অ্যান অ্যানাউন্সমেন্ট .." ঠিক সেই মুহূর্তে ওর হাতে একটা হাল্কা চাপড় মেরে আমার স্ত্রী নিজের চোখদুটো বড় বড় করে মৃদুস্বরে বললো, "উঁহু তুমি নয়, এই শুভ খবরটা আমি দেবো সবাইকে।"
নন্দনার দিকে দৃষ্টি গেলো আমার। ওর রূপে মুগ্ধ আমি আজ। সিঁদুর, চন্দন আর অলঙ্কারে সেজেছে নন্দনা। জমকালো লাল বেনারসি, তার সঙ্গে লাল রঙের স্লিভলেস ব্লাউজ। ঠিক যেন নববধূর সাজ। ওকে দেখে আমার কেন জানি না মনে হলো, নতুন রূপে নতুন জীবনে পদার্পণ করতে চলেছে ও। আমার কথা না হয় বাদই দিলাম, আমি ছাড়া ঘরের বাকি পুরুষেরা এমনকি ঝুমাও চোখ ফেরাতে পারছিলো না নন্দনার দিক থেকে। কিন্তু একটা ব্যাপারে ভীষণ অবাক হলাম আমি; যে রজতকে আজ সকালেও ওকে 'আপনি' বলতে শুনেছি, তাকে এখন 'তুমি' করে বলছে আমার বউ?
"তোমাদের সবার সামনে আমার একটা ছোট্ট কথা বলার আছে। তবে কথাটা সংক্ষিপ্ত হলেও, এর মূল্য আমার জীবনে অপরিসীম। দেখো, আমাদের জীবন বড়ই অনিশ্চিত। উপর থেকে কখন কার ডাক এসে যাবে কেউ বলতে পারে না। আমি মনে করি যে ক'দিন বাঁচবো, সে ক'দিন জীবনটাকে উপভোগ করবো। তাই আমি একটা খুব গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে চলেছি আমার ভবিষ্যৎ জীবনের ব্যাপারে। নিতে চলেছি বা এখানে তোমাদের পারমিশন নিতে এসেছি, এটা বললে ভুল বলা হবে। আসল কথা হলো আমরা, মানে আমি আর রজত দু'জনে মিলে একটা কাজ করে ফেলেছি। সেটা এখন এসে তোমাদের জানাচ্ছি। রূপনগরের জাগ্রত মা বগলামুখীর মন্দিরে আজ দুপুরে আমরা দু'জনে, মানে আমি আর রজত বিয়ে করেছি। বুঝতে পেরেছি এই কথাটা শুনে তোমরা ভীষণ অবাক হয়ে গেছো! কিন্তু আমার কথাগুলো একটু মন দিয়ে শোনো তাহলে বুঝতে পারবে। দেখো, বিয়ে বলতে এটা জাস্ট ঠাকুরের সামনে আমাকে সিঁদুর পড়িয়েছে রজত। অনুষ্ঠান করেও আমাদের বিয়ে হয়নি বা রেজিস্ট্রি ম্যারেজও হয়নি। তাছাড়া আমি তো এখন বিবাহিতা। আগের বিয়েটা না ভাঙলে নতুন করে তো আর বিয়ে করতে পারবো না! তবে অনেক ভেবে, নিজের মনের সঙ্গে অনেক দ্বন্দ্ব করে অবশেষে আমি ঠিক করেছি, এবার থেকে ওর সঙ্গেই থাকবো আমি। কিন্তু রজত বললো, এখনই সরকারি সিলমোহর দেয়া সম্ভব না হলেও ও আমাকে মন্দিরে বিয়ে করে নিজের বউ হিসেবে ঘরে নিয়ে যেতে চায়। তাই আমিও রাজি হয়ে গেলাম। এখান থেকে বাড়ি ফিরে আমি হাওড়া শিবপুর চলে যাবো ওর সঙ্গে। ওখানে এখন কাউকে জানাতে বারণ করেছি। এমনকি ওর ছেলে ঋষিও এ ব্যাপারে কিছু জানে না, ওখানে গিয়ে একেবারে সবাইকে চমক দেবো আমরা। এবার তোমরা একে একে তোমাদের বক্তব্য বলতে পারো।" রজতের একটা হাত শক্ত করে নিজের হাতের মুঠোর মধ্যে ধরে খুব স্বাভাবিকভাবে অথচ দৃঢ়ভঙ্গিতে কথাগুলো বললো নন্দনা।
"আমার বলার আছে, আমার বলার আছে, আমার অনেক কিছু বলার আছে। কি পাগলামি করছিস কি তুই বোন? তোর স্বামী এখানে দাঁড়িয়ে রয়েছে, ওই ঘরে তোর ফুটফুটে সন্তান শুয়ে রয়েছে। এই কথাগুলো বলতে তোর মুখে একবারও বাঁধছে না? ছিঃ বোন ছিঃ , এতটা অধঃপতন হয়েছে তোর? তুই জানিস ওই রজত নামের লোকটা কত বড় শয়তান? আরে, বিবাহিতা নারীদের নিজের কথার জালে, প্রেমের জালে ফাঁসিয়ে বিয়ে করার টোপ দিয়ে প্রেগন্যান্ট করে দেওয়াটা ওর একটা খেলা কিংবা ওর একটা নেশা বলতে পারিস। ও আমার সঙ্গেও ঠিক এই কাজগুলোই করেছে। তোকে তো আমি সব খুলে বলেছি, তাহলে তুই কেন বুঝতে পারছিস না বোন? কেন আমার মতোই আবার ভুল করলি তুই? তুই কি জানিস ও আসলে অশ্লীল ছবির প্রযোজক। সেই সব ছবিতে ও মুখোশ পড়ে অভিনয় করে। আর ওই যে ইউসুফ বলে ওই '. ছেলেটা দাঁড়িয়ে রয়েছে, ওই ছেলেটাও মুখোশ পড়ে অভিনয় করে সেই ছবিগুলোতে। মুখোশ বলতে চোখটা খালি ঢেকে নেয়। তোমরা সবাই শুনলে অবাক হয়ে যাবে, এইরকম বেশ কয়েকটা ছবিতে ড্রাগের নেশা করিয়ে আমার চোখটা ঢেকে দিয়ে আমাকেও জোর করে অভিনয় করিয়ে নিয়েছে। তোকে দিয়েও ওই শয়তানটা তাই করাবে। জীবনটা নরক বানিয়ে দেবে তোর। ফিরে আয় বোন, ফিরে আয়। যা হয়ে গেছে, সবকিছু ভুলে আবার নতুন করে শুরু কর .." উত্তেজিত হয়ে কথাগুলো বললো ক্রন্দনরতা ঝুমা।
"বোন? কে বোন? কিসের বোন? তুই তো এই রূপনগরে আসার পর থেকেই আমাকে নিজের শত্রু বানিয়ে ফেলেছিলিস। আজ যাকে বা যাদেরকে শয়তান বলছিস, এখানে আসার পর থেকে তো দেখছি তাদের পদলেহন করে চলছিস তুই। প্রতি পদক্ষেপে আমার সর্বনাশ চাইছিস। মনে মনে সংকল্প করেই এসেছিলিস, যাতে এদের হাতে আমি সম্পূর্ণভাবে নষ্ট হয়ে যাই। এমনকি এতটাই বিষ ছিলো আমার জন্য তোর মনের মধ্যে, যে আমাকে নির্দয়ভাবে মারতেও তোর হাত কাঁপেনি। সবকিছুই তুই করেছিলিস এই লোকগুলোকে খুশি করার জন্য। তুই কি মনে করিস, আমি এতটাই বোকা? এগুলোর কিছুই বুঝিনি? আসলে তোকে রিজেক্ট করে এরা আমাকে বেছে নিয়েছে, তাই তোর রাগ হচ্ছে। আর রজতের ব্যবসার কথা সবকিছু আমি জানি। এই ব্যবসাতে যখন লাভ অনেক, তখন করুক না! তাতে আমার আপত্তির তো কিছু নেই! আর নীল ছবিতে অভিনয় করার প্রসঙ্গে এইটুকু বলতে পারি, ওইসব তোকেই মানায়। সেই জন্যেই ওরা তোকে দিয়ে অভিনয় করিয়েছে ওই ধরনের ছবিতে। আমি রজতের বউ হতে চলেছি, এটা ভালো করে নিজের মাথায় ঢুকিয়ে নে।" তাচ্ছিল্য সহকারে নিজের দিদির কথার উত্তর দিলো নন্দনা।
এ আমি কি শুনছি, এ আমি আমার স্ত্রীর কি রূপ দেখছি? না না, ওকে এখন থেকে আমার স্ত্রী বা আমার বউ বলে সম্বোধন করাটা যুক্তিযুক্ত হবে কিনা, সেটাও তো বুঝতে পারছি না! আমার মাথা কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে। মাথার ভেতরটা কিরকম যেন দপদপ করছে। আমি কি আস্তে আস্তে পাগল হয়ে যাচ্ছি? আমি বরাবরই ভীষণ শান্ত-শিষ্ট এবং ধৈর্যশীল ব্যক্তি। চট করে উত্তেজিত হই না। কিন্তু আজকে এখানে যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে, তাতে নিজের প্রতি ধীরে ধীরে নিয়ন্ত্রণ হারাতে শুরু করে দিয়েছি আমি, সেটা বেশ বুঝতে পারছিলাম। চোখ দিয়ে অঝোর ধারায় জল গড়িয়ে পড়ছিলো আমার, কিন্তু কিছুতেই আটকাতে পারছিলাম না। এটা কি সত্যি নাকি এক ভয়ঙ্কর দুঃস্বপ্ন? নিজের গায়ে চিমটি কেটে দেখলাম, বাস্তবের মাটিতে দাঁড়িয়ে রয়েছি আমি। এতক্ষণ ধরে যা দেখলাম, যা শুনলাম সবকিছুই সত্যি। অবশেষে ধৈর্যের বাঁধ ভাঙলো আমার। প্রচন্ড জোরে চিৎকার করে উঠে বললাম, "চরিত্রহীনা .. এই যদি তোমার মনে ছিলো, তাহলে ওদের সঙ্গে সঙ্গমের সময় বাধা দিচ্ছিলে কেন বারবার? নাকি পুরোটাই তোমার অভিনয় ছিলো? আমার কথা না হয় বাদই দিলাম। তোমার একটা আট বছরের সন্তান রয়েছে, ভুলে গেলে তার কথা? তোমার এই হঠকারী সিদ্ধান্তের ফলে ওর ভবিষ্যৎ যে ধ্বংস হয়ে যাবে, সেটা বুঝতে পারছো তুমি? নাকি তোমার মাথায় স্বামী-সন্তান সবকিছু ভুলে এখন শুধু কামের আগুন জ্বলছে? একটা কথা আমি বলে দিচ্ছি এখানে সবার সামনে। তোমার বলা কথাগুলো যদি সত্যি হয়, তাহলে বাপ্পার কি হবে জানিনা, তবে এখান থেকে আমি আর ফিরবো না। এখানে এখনই সবার সামনে আত্মহত্যা করবো আমি।"
কথাগুলো বলে নন্দনের দিকে এগোতে যাবো, সেই সময় পাশ থেকে এসে হার্জিন্দার আমার কলারটা চেপে ধরে বললো, "দূর হাটো বেহেনচোদ .. নেহি তো মার কে অপাহিজ বানা দেঙ্গে .."
দেখলাম, ঠিক সেই মুহূর্তে আমাদের দিকে এগিয়ে এসে আমার কলারটা ওর হাত থেকে জোর করে ছাড়িয়ে দিয়ে হার্জিন্দারের দুই গালে সপাটে দুটো চড় মেরে নন্দনা বললো, "তোর সাহস হয় কি করে জানোয়ার, আমার সামনে এঁর গায়ে হাত তোলার বা এনাকে কটু কথা বলার? এতদিন যা করার করেছিস, এবার থেকে আর ওইসব নয়। এখানে এরপর যা হবে, বা যা কিছু বলা হবে, সবকিছু করবো এবং বলবো আমি, অন্য কেউ নয়।"
"তুমহারি ইতনি হিম্মত, তুমি আমার গায়ে হাত তোলো? আব দেখো তুমহারা কেয়া হাল কারতা হুঁ ম্যায়!" এই বলে পাঞ্জাবীটা নন্দনার দিকে এগোতে গেলে ওদের দুজনের মাঝখানে দীর্ঘকায় এবং সুঠাম চেহারার রজত এসে দাঁড়িয়ে হুঙ্কার দিয়ে বললো, "ভুলে যেওনা বানচোদ, ও এখন থেকে আমার স্ত্রী। ওর সম্পর্কে একটাও বাজে কথা বললে বা ওকে অপমান করার চেষ্টা করলে, এখানে কুকুরের মতো গুলি করে মারবো তোমাকে।" রজতের মুখে কথাগুলো শুনে চমকে উঠে দু'পা পিছিয়ে দাঁড়ালো হার্জিন্দার।
"দেখো, এখানে তো যা বলার বলে দিয়েছো, অনেক নাটক হয়েছে। এবার বেডরুমে চলো, আমাদের যে আর তর সইছে না। তুমি বলেছিলে আমাদের তিনজনের সাথে একসঙ্গে .. হেহেহে .." পাশ থেকে ফোড়ন কেটে কথাগুলো বললো প্রমোদ।
"মোটেও আমি সেই কথা বলিনি। নিজেদের বলা কথাগুলো আমার মুখে বসাবেন না দয়া করে। আমি শুধু আমার বর্তমান স্বামী, মানে রজত ছাড়া আপনাদের দু'জনকে আমার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হওয়ার অনুমতি দিয়েছি, ব্যাস এইটুকুই। একটু সবুর করুন না, এখন তো সবে সন্ধ্যে এরপর পুরো রাতটাই পড়ে রয়েছে। কিন্তু ওঁর সঙ্গে একটু আগে ওই জানোয়ারটা যা ব্যবহার করলো, তাতে আমার রাগ এখনো কমেনি। আমি যে কথাগুলো বললাম বা যে সিদ্ধান্তের কথা জানালাম, সেটা শুনে তো উনার রাগ হতেই পারে। তাই বলে বাইরের লোকের এত বড় সাহস হয় কি করে, আমাদের মাঝখানে ঢোকার? আমি বলছি না এর জন্য ওকে কোনো শাস্তি দিতে। তবে সকালের কথা মনে আছে তো? আমার ব্রা আর প্যান্টিটা জোর খুলে সম্পূর্ণ নগ্ন অবস্থায় আমাকে সমুদ্রসৈকতে হাঁটতে এবং দৌড়াতে বাধ্য করেছিলো ওই হার্জিন্দার। তারপর আমার অন্তর্বাসগুলো ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছিলো নৌকার পেছনে ওই জঞ্জালের মধ্যে। ভাগ্যিস মিস্টার রবার্টের ছেড়ে রাখা ওই হাউসকোটটা পড়েছিলো সী-বিচের উপর! না হলে আমার কি অবস্থা হতো বুঝতে পারছেন? আমি চাই এখন হার্জিন্দার গিয়ে ওখান থেকে আমার অন্তর্বাসগুলো তুলে নিয়ে আসুক। তবেই আমি বেডরুমে ঢুকবো আপনাদের সঙ্গে। এটাই আমার আব্দার।" সোফার হাতলে নিজের কোমরটা ঠেকিয়ে কথাগুলো বললো নন্দনা।
"গাঁড় মারিয়েছে! এ আবার কি ধরনের শর্ত? তুমি বলো ওর মুখে দুটো জুতো মারছি। কিন্তু বাইরেটা ঘুটঘুটে অন্ধকার। এই সময় ওখানে গিয়ে বিনা আলোতে ও কি আর খুঁজে পাবে তোমার ব্রা আর প্যান্টি? তাছাড়া ওগুলো তো নোংরার মধ্যে ফেলা হয়েছিলো, নোংরায় মাখামাখি হয়ে যাওয়া ওই জিনিসগুলো ফিরে পেয়ে তুমি কি করবে বলো? ওর থেকে হাজারগুন দামী ইনারের সেট কিনে দেবো তোমাকে ডার্লিং!" কিছুটা অবাক হয়েই কথাগুলো বললো রবার্ট।
"ঠিক আছে, ও যখন বলছে তখন যাক না হার্জিন্দার। ও তো আর আকাশের চাঁদ চায়নি, কিংবা ওদেরকে ওকে মেরেও ফেলতে বলেনি। সকালে আমার বউয়ের সঙ্গে পাঞ্জাবীটা যে দুষ্টুমি করেছিলো, সেটার জন্য ওকে একটু শিক্ষা দিতে চাইছে আমার সেক্সি বউটা। এর বেশি তো আর কিছুই নয়!" নিজের স্বভাবসিদ্ধ গম্ভীর গলায় জানালো রজত।
"আমার বউ" এই শব্দটা শোনার পরে চমকে উঠলাম আমি। এত তাড়াতাড়ি 'বউ বদল' হয় বুঝি! ক্ষমতা আর অর্থবল থাকলে বোধহয় হয়। বুকের ভেতরটা হু হু করে উঠলো আমার। ঠিক সেইসময় ছায়া বলে উঠলো, "হুমদো পাঞ্জাবীটার সঙ্গে ওই . ছেলেটাকেও পাঠাও বৌদিমণি। ওরও একটু শিক্ষার দরকার আছে। স্বামীর শরীর খারাপ বলে ওকে দেখতে বিকেলবেলা একটু বাড়ি গিয়েছিলাম। তারপর এখানে ফিরতে না ফিরতেই, আমাকে যা নয় তাই বললো ছোকরা!"
প্রমোদ, রজত এবং রবার্ট এরা তিনজনেই যখন নন্দনার 'হ্যাঁ' তে 'হ্যাঁ' মিলিয়েছে, তখন হার্জিন্দার আর ইউসুফের কোনো আপত্তিই ধোপে টিকলো না। কিছুক্ষণ গাঁইগুঁই করে বেরিয়ে গেলো ওরা দু'জন।
"এবার তো চলো ডার্লিং, বেডরুমে! তোমার সব শর্ত তো মেনে নিলাম আমরা।" প্রমোদের করা এই উক্তিতে খিলখিল করে হেসে উঠে নন্দনা বললো, "শর্ত বলছো কেন ডাক্তার? আমি ভালোবেসে তোমাদের কাছে কিছু চাইলে, তোমরা দেবে না? আমিও তো ভালোবেসে আমার সবকিছু উজাড় করে দিচ্ছি তোমাদেরকে, ঠিক কিনা বলো? আমি এখন বেডরুমে শুধু তোমাদের দু'জনের সঙ্গে সময় কাটাতে চাই। সেখানে আমার বরকেও ঢোকার অনুমতি দেবো না আমি। আমার বেচারা বরটা এখানে সোফার উপর একা একা বসে থাকবে, তাই ওকে একটু আদর করে দিই যাওয়ার আগে .." এই বলে চকাস করে রজতের গালে একটা চুমু খেলো নন্দনা।
নন্দনার এই কার্যকলাপ দেখে আমি যতটা অবাক হচ্ছিলাম এবং লজ্জায়, দুঃখে, ঘৃণায়, ক্ষোভে মাটির সঙ্গে মিশে যাচ্ছিলাম, ততটাই উল্লাসে মেতে উঠছিলো ঘরে উপস্থিত বাকি তিন দূর্বৃত্ত। নন্দনার কোমরটা জড়িয়ে ধরে ওকে নিজের কাছে টেনে নিয়ে প্রমোদ বললো, "একদম ঠিক কথা বলেছো বৌমা, সরি ডার্লিং। তুমি যেমন ভালবেসে সব কিছু দিচ্ছ আমাদেরকে। তেমনি আমাদেরও কর্তব্যের মধ্যে পড়ে, ভালোবেসে তোমার সমস্ত দাবি মেনে নেওয়া।"
"আমি এমন কিছু অনৈতিক দাবি করিনি বা ভবিষ্যতেও করবো না, যা তোমাদের মেনে নিতে কষ্ট হয়। কারণ আমিও তোমাদের ভালবাসতে শুরু করেছি। আচ্ছা ভালো কথা, দুপুরবেলা কথা প্রসঙ্গে বলছিলে না, শুধুমাত্র আমাকে পাওয়ার জন্য হায়দ্রাবাদে যেভাবে তোমরা চিরন্তনকে ফাঁসিয়েছিলে। সেই কথাগুলো ওকে একটু শুনিয়ে দাও। এমনিতেই জ্বলে-পুড়ে যাচ্ছে বেচারা। তোমাদের কথাগুলো শুনলে আরও আগুন জ্বলবে ওর মনের ভিতর। আর আমি তো সেটাই চাই।" মুচকি হেসে প্রমোদের গলা জড়িয়ে ধরে এইরূপ উক্তি করলো নন্দনা।
নন্দনার কথা শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে যে কথাগুলো প্রমোদ বললো, সেগুলো আক্ষরিক অর্থে নিজের কানে ওর মুখ থেকে এর আগে না শুনলেও; রূপনগরে আমার পরিবারকে নিয়ে আসার প্রস্তাব যেদিন ও আমাদের বাড়িতে দিয়ে এসেছিলো, সেদিনই আমি বুঝতে পেরে গিয়েছিলাম, এই সবকিছুই ও করছে আমার স্ত্রীকে পাওয়ার জন্য। গোয়ানিজটার বলা একটা কথাও নতুন মনে হলো না আমার। তাই এগুলো শুনে প্রচন্ড ধাক্কা খেয়ে ভেঙে পড়ার মতো অবস্থাও হলো না আমার। কারণ, আমার হৃদয়টা তো একটু আগেই টুকরো টুকরো হয়ে ভেঙে গিয়েছে নন্দনার এই পাল্টে যাওয়ার রূপ দেখে। কিন্তু প্রমোদ কথাগুলো বলার মাঝে একটা জিনিস লক্ষ্য করলাম, নন্দনা ছায়াকে ইশারা করে কিছু একটা বললো। ঘাড় ঘুরিয়ে দেখলাম ছায়া মাথা নাড়িয়ে চোখের পাতা ফেলে ওর ইশারার প্রতুত্তর দিলো।
"বাহ্ দারুন বললে ডাক্তার। তোমার কথাগুলো শোনার পর, ওর মনের যা অবস্থা হয়েছে সেটা ভেবেই খুব আনন্দ লাগছে আমার। আচ্ছা সেদিন সন্ধ্যেবেলা আমাদের বাড়িতে যে কাগজটা সই করাতে নিয়ে এসেছিলে ওকে দিয়ে, সেটা এখন কোথায় গো? ছিঁড়ে ফেলে দিয়েছো নাকি?" প্রমোদের কথাগুলো শেষ হওয়ার পর নন্দনার এই উক্তিতে প্রথমে কিছুক্ষণ অবাক হয়ে ফ্যালফ্যাল করে ওর মুখের দিকে তাকিয়ে থাকলো প্রমোদ। তারপর উচ্চস্বরে হেসে বলে উঠলো, "পাগল নাকি? ওই কাগজ কেউ নষ্ট করে, নাকি ছিঁড়ে ফেলে? দেখো এখন সবকিছুই সবার সামনে পরিষ্কার হয়ে যাওয়া ভালো। তাছাড়া তুমি যখন আমাদের দলে এসেই গেছো, তখন আর লুকোছাপা করে লাভ কি? তোমার স্বামী, থুড়ি তোমার প্রাক্তন স্বামীকে আমাদের বিজনেস পার্টনার বানানোর যে কথা বলেছিলাম, সেগুলো সব ঢপের চপ .. হাহাহাহা। ওর বউকে যখন আমরা পেয়ে গেছি তখন আর ওকে শুধু শুধু আমাদের কাঁধে বয়ে বেড়িয়ে নিয়ে কি লাভ হবে? এখান থেকে ফিরেই কাগজটা পুলিশের হাতে দেবো। ব্যাস তারপরে কেল্লাফতে। তোমার স্বামীর সরি সরি, প্রাক্তন স্বামীর শ্রীঘরে যাওয়া আর কেউ আটকাতে পারবে না। শালা সব দোষ করলাম আমরা, মানে আমি আর রবার্ট, আর শাস্তি পাবে ওই গান্ডু চিরন্তন .. হাহাহাহা। ব্যাপারটা ভীষণ মজার না?"
"মজার মানে! তোমার কথাগুলো শুনে আমি ভেতরে ভেতরে যে কি পরিমান তৃপ্তি অনুভব করছি, তোমাদের কাউকে বলে বোঝাতে পারবো না। যাইহোক অনেক বাজে কথা হয়েছে, আমারও আর তর সইছে না, চলো না গো! তোমরা দু'জন আমাকে নিয়ে চলো এবার বেডরুমে।" প্রমোদের গালে ছোট্ট একটা টোকা মেরে ন্যাকামি করে কথাগুলো বলে ছায়ার দিকে তাকিয়ে নন্দনা বললো, "তোকে দেওয়া কাজগুলো ঠিকঠাক করছিস তো?"
"ওকে আবার তুমি কি কাজ দিয়েছো বৌমা, মেরা মতলব ডার্লিং?" অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করলো প্রমোদ।
"ও মা, সে কি কথা! এটাও বুঝতে পারলে না? বিয়ে না হয় আমি রজতকে করেছি; কিন্তু ফুলশয্যা তো আমি আজ তোমাদের তিনজনের সঙ্গেই করবো! আমাদের বাঙালিদের মধ্যে একটা নিয়ম আছে, জানো? ফুলশয্যার রাতে বরের জন্য নববধূ একগ্লাস দুধ নিয়ে ঘরে ঢোকে। কিন্তু এখানে তো একটা গ্লাসে হবে না, দুটো গ্লাস লাগবে। সেই দুই গ্লাস দুধের ব্যবস্থা করার কথা বলেছিলাম আমি ছায়াকে।" আদুরে গলায় কথাগুলো বললো নন্দনা।
নন্দনার কথা শেষ হওয়া মাত্রই ওকে নিজের কোলে তুলে নিয়ে বেডরুমের দিকে যেতে যেতে রবার্ট বললো, "ও আচ্ছা, এই ব্যাপার। ছায়া, তাড়াতাড়ি দুটো গ্লাসে দুধ ভরে নিয়ে আয় আমাদের রুমে। আজ রজতের নববিবাহিতা বউয়ের হাত থেকে দুধ খাবো আমরা। তারপর ওর দুটো দুধের ট্যাঙ্কি খালি করবো .. হেহেহে।"
রবার্ট আর প্রমোদ নন্দনাকে নিয়ে বেডরুমে ঢুকে যাওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই দেখলাম ছায়া ওদের ঘরে ঢুকে দুটো দুধের গ্লাস দিয়ে এলো। ছায়া বেরোনোর সঙ্গে সঙ্গে ভেতর থেকে দুম করে দরজাটা বন্ধ করে দিলো ওরা।
ওইদিকে দরজা বন্ধ হলো, আর এইদিকে যেন আমার বুকে দুমদুম করে কেউ প্রহার শুরু করে দিলো। মাটির মধ্যে ধপ করে বসে পরে দু'হাত দিয়ে নিজের মুখটা চেপে ধরে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছিলাম আমি। শান্তিরঞ্জন, সৈকত আর ঝুমা এই তিনজন যেন স্ট্যাচু হওয়ার প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ হয়েছিলো। সোফার ঠিক পেছনে জড়ভরতের মতো চুপচাপ দাঁড়িয়েছিলো তিনজন।
আমার কাঁধে সেইমুহূর্তে একটা হাতের স্পর্শ পেলাম। মাথা তুলে তাকিয়ে দেখলাম, আমার কাটা ঘায়ে নুনের ছিটে দিতে সেখানে উপস্থিত হয়েছে রজত। "কি করবে বলো, সবই ভবিতব্য। আসলে কুকুরের পেটে যেমন ঘি সহ্য হয় না, ঠিক তেমনই নন্দনাকে বিয়ে করার পর থেকে তুমি তোমাদের বৈবাহিক সম্পর্কটা হজমই করতে পারোনি। ওকে ঠিকঠাক স্বামীর আদর দিতে পারোনি। প্রকৃত পুরুষের ভালোবাসা আর আদর যে কি জিনিস, সেটা আমাদের সঙ্গে পরিচয় হওয়ার পর ও জানতে পেরেছে। তাইতো আমাদেরকে ও বেছে নিয়েছে, তোমাকে রিজেক্ট করে। দেখো এখন বেশি দুঃখ পেয়ে লাভ নেই, কথায় বলে আপনি বাঁচলে বাপের নাম। এবার এইসব বউ হারানোর সেন্টিমেন্ট মাথা থেকে সরিয়ে নিজের কথাটা একটু ভাবো। নন্দনাকে উল্টেপাল্টে খাওয়ার পর প্রমোদ আর রবার্ট যখন ওই ঘর থেকে বেরোবে, তখন ওদের মুড ভালোই থাকবে। সেই সময় তুমি গিয়ে ওদের দু'জনের পা জড়িয়ে ধরে বলবে যাতে তোমাকে পুলিশে না দেয় ওরা। আমার বিশ্বাস, ওরা এখন মুখে যাই বলুক না কেন, কল্পতরু হয়ে তোমার এই মনোবাঞ্ছা পূর্ণ করবে। তবে হ্যাঁ, পুলিশের হাত থেকে বাঁচার পর নিজের শহরে আর থাকা চলবে না তোমার। বাচ্চাকে নিয়ে দূরে কোথাও চলে যাও। বাপ্পাকে ওর মা নন্দনার চোখের সামনে থেকে সরাতে পারলে, ওকে আরও ভালোভাবে ব্যবহার করতে পারবো আমরা। বুঝতে পারছো তো আমার কথাগুলো? নাকি শুধু গাধার মতো শুনে যাচ্ছ? তোমার ছেলে বাপ্পাকে নিয়ে এখান থেকে কেটে পড়বে। ওই যে একটা খ্যাপাচোদা দাঁড়িয়ে আছে সোফার পেছনে; হ্যাঁ, আমি ওই শান্তির ছেলে শান্তিরঞ্জনের কথাই বলছি। ওকে তো শাড়ির দোকান করে দিয়েছি আমি, ওর সঙ্গে বিজনেসে লেগে যাও। তোমার যা বদনাম হয়েছে, তাতে তুমি জুটমিলে আর চাকরি পাবে না কোনোদিন। বুঝলে তো আমার কথাগুলো? কাল ভোরবেলা বাপ্পাকে নিয়ে এখান থেকে সোজা নিজের কোয়ার্টারে গিয়ে, ওখান থেকে যেখানে খুশি চলে যেও। তোমার যাতে হাজতবাস না হয়, সেই চেষ্টা আমি করবো।" রজতের কথাগুলো শেষ হওয়ার পর, ওর মুখের দিকে অশ্রুসিক্ত চোখে করুনভাবে তাকিয়ে রইলাম আমি।
ঠিক সেই মুহূর্তে, বেডরুমের দরজা খুলে বেরোলো নন্দনা। ওর দিকে তাকিয়ে দেখলাম ওর পোশাক পরিচ্ছদ সবকিছুই ঠিক হয়েছে। মাথার চুলগুলো সব অবিন্যস্ত আর চোখদুটো টকটকে লাল। চোখের দৃষ্টিতে যেন আগুন ঝরছে নন্দনার। এরকম অদ্ভুত দৃষ্টি ওর চোখে আমি আগে কখনো দেখিনি। ক্রমশ যেন অচেনা হয়ে উঠছিলো আমার কাছে ও।
"কিরে? এতক্ষণ কোথায় ছিলিস? আর তোর কাঁধে ওই ব্যাগে করে কি নিয়ে এলি রে?" বাড়িতে পা রাখতে না রাখতেই ছায়ার উদ্দেশ্যে প্রশ্ন করলো ইউসুফ। "এখানে অতিথি হয়ে এসেছো, অতিথি হয়ে থাকো। বেশি মাতব্বরি করার চেষ্টা করো না। এই বাড়িটা ডাক্তারবাবুর। আমাকে প্রশ্ন করার একমাত্র অধিকার ওনার আছে, আর কারোর নয়। এই ব্যাগে কি আছে জানতে চাও? এই ব্যাগে তোমাদের জন্য মৃত্যুর পরোয়ানা নিয়ে এসেছি। দেখবে?" রুদ্রমূর্তি ধারণ করে দাঁত মুখ খিঁচিয়ে কথাগুলো বললো ছায়া। হঠাৎ করেই পাল্টে যাওয়া ছায়ার এই রূপ দেখে কিছুটা থতমতো খেয়ে গিয়ে ওখান থেকে সরে পড়লো ইউসুফ। এই পরিস্থিতির সাক্ষী হয়ে আমিও যে খুব কম অবাক হয়েছি তা নয়, তবে বিধর্মীটার পলায়ন দেখে মনে মনে বেশ খুশি হলাম।
সাতটার কিছু আগে ওরা এলো। প্রথমেই ঢুকতে দেখলাম প্রমোদ আর রবার্টকে। সকালে শুধুমাত্র শর্টস আর খালি গায়ে দেখা দুই মানিকজোড়কে স্যুটেড-বুটেড হয়ে আসতে দেখলাম। এতক্ষণ ওরা কোথায় ছিলো, কি করছিলো, পোশাক পাল্টালোই বা কি করে? কিছুই বোধগম্য হলো না আমার। তারপর প্রবেশ করলো রজত আর নন্দনা। ওরা ঢোকার সঙ্গে সঙ্গে কোথা থেকে যেন রজনীগন্ধার সুবাস নাকে এলো আমার। ক্রিম কালারের ব্লেজার আর ওই একই রঙের প্যান্ট পরিহিত একদম অন্যরকম দেখতে লাগা রজতের হাতের মুঠোয় আমার বউয়ের হাতটা ধরা ছিলো। ওকে এক ঝটকায় নিজের আরও কাছে টেনে নিয়ে রজত বললো, "লেডিস এন্ড জেন্টলম্যান, আই হ্যাভ অ্যান অ্যানাউন্সমেন্ট .." ঠিক সেই মুহূর্তে ওর হাতে একটা হাল্কা চাপড় মেরে আমার স্ত্রী নিজের চোখদুটো বড় বড় করে মৃদুস্বরে বললো, "উঁহু তুমি নয়, এই শুভ খবরটা আমি দেবো সবাইকে।"
নন্দনার দিকে দৃষ্টি গেলো আমার। ওর রূপে মুগ্ধ আমি আজ। সিঁদুর, চন্দন আর অলঙ্কারে সেজেছে নন্দনা। জমকালো লাল বেনারসি, তার সঙ্গে লাল রঙের স্লিভলেস ব্লাউজ। ঠিক যেন নববধূর সাজ। ওকে দেখে আমার কেন জানি না মনে হলো, নতুন রূপে নতুন জীবনে পদার্পণ করতে চলেছে ও। আমার কথা না হয় বাদই দিলাম, আমি ছাড়া ঘরের বাকি পুরুষেরা এমনকি ঝুমাও চোখ ফেরাতে পারছিলো না নন্দনার দিক থেকে। কিন্তু একটা ব্যাপারে ভীষণ অবাক হলাম আমি; যে রজতকে আজ সকালেও ওকে 'আপনি' বলতে শুনেছি, তাকে এখন 'তুমি' করে বলছে আমার বউ?
"তোমাদের সবার সামনে আমার একটা ছোট্ট কথা বলার আছে। তবে কথাটা সংক্ষিপ্ত হলেও, এর মূল্য আমার জীবনে অপরিসীম। দেখো, আমাদের জীবন বড়ই অনিশ্চিত। উপর থেকে কখন কার ডাক এসে যাবে কেউ বলতে পারে না। আমি মনে করি যে ক'দিন বাঁচবো, সে ক'দিন জীবনটাকে উপভোগ করবো। তাই আমি একটা খুব গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে চলেছি আমার ভবিষ্যৎ জীবনের ব্যাপারে। নিতে চলেছি বা এখানে তোমাদের পারমিশন নিতে এসেছি, এটা বললে ভুল বলা হবে। আসল কথা হলো আমরা, মানে আমি আর রজত দু'জনে মিলে একটা কাজ করে ফেলেছি। সেটা এখন এসে তোমাদের জানাচ্ছি। রূপনগরের জাগ্রত মা বগলামুখীর মন্দিরে আজ দুপুরে আমরা দু'জনে, মানে আমি আর রজত বিয়ে করেছি। বুঝতে পেরেছি এই কথাটা শুনে তোমরা ভীষণ অবাক হয়ে গেছো! কিন্তু আমার কথাগুলো একটু মন দিয়ে শোনো তাহলে বুঝতে পারবে। দেখো, বিয়ে বলতে এটা জাস্ট ঠাকুরের সামনে আমাকে সিঁদুর পড়িয়েছে রজত। অনুষ্ঠান করেও আমাদের বিয়ে হয়নি বা রেজিস্ট্রি ম্যারেজও হয়নি। তাছাড়া আমি তো এখন বিবাহিতা। আগের বিয়েটা না ভাঙলে নতুন করে তো আর বিয়ে করতে পারবো না! তবে অনেক ভেবে, নিজের মনের সঙ্গে অনেক দ্বন্দ্ব করে অবশেষে আমি ঠিক করেছি, এবার থেকে ওর সঙ্গেই থাকবো আমি। কিন্তু রজত বললো, এখনই সরকারি সিলমোহর দেয়া সম্ভব না হলেও ও আমাকে মন্দিরে বিয়ে করে নিজের বউ হিসেবে ঘরে নিয়ে যেতে চায়। তাই আমিও রাজি হয়ে গেলাম। এখান থেকে বাড়ি ফিরে আমি হাওড়া শিবপুর চলে যাবো ওর সঙ্গে। ওখানে এখন কাউকে জানাতে বারণ করেছি। এমনকি ওর ছেলে ঋষিও এ ব্যাপারে কিছু জানে না, ওখানে গিয়ে একেবারে সবাইকে চমক দেবো আমরা। এবার তোমরা একে একে তোমাদের বক্তব্য বলতে পারো।" রজতের একটা হাত শক্ত করে নিজের হাতের মুঠোর মধ্যে ধরে খুব স্বাভাবিকভাবে অথচ দৃঢ়ভঙ্গিতে কথাগুলো বললো নন্দনা।
"আমার বলার আছে, আমার বলার আছে, আমার অনেক কিছু বলার আছে। কি পাগলামি করছিস কি তুই বোন? তোর স্বামী এখানে দাঁড়িয়ে রয়েছে, ওই ঘরে তোর ফুটফুটে সন্তান শুয়ে রয়েছে। এই কথাগুলো বলতে তোর মুখে একবারও বাঁধছে না? ছিঃ বোন ছিঃ , এতটা অধঃপতন হয়েছে তোর? তুই জানিস ওই রজত নামের লোকটা কত বড় শয়তান? আরে, বিবাহিতা নারীদের নিজের কথার জালে, প্রেমের জালে ফাঁসিয়ে বিয়ে করার টোপ দিয়ে প্রেগন্যান্ট করে দেওয়াটা ওর একটা খেলা কিংবা ওর একটা নেশা বলতে পারিস। ও আমার সঙ্গেও ঠিক এই কাজগুলোই করেছে। তোকে তো আমি সব খুলে বলেছি, তাহলে তুই কেন বুঝতে পারছিস না বোন? কেন আমার মতোই আবার ভুল করলি তুই? তুই কি জানিস ও আসলে অশ্লীল ছবির প্রযোজক। সেই সব ছবিতে ও মুখোশ পড়ে অভিনয় করে। আর ওই যে ইউসুফ বলে ওই '. ছেলেটা দাঁড়িয়ে রয়েছে, ওই ছেলেটাও মুখোশ পড়ে অভিনয় করে সেই ছবিগুলোতে। মুখোশ বলতে চোখটা খালি ঢেকে নেয়। তোমরা সবাই শুনলে অবাক হয়ে যাবে, এইরকম বেশ কয়েকটা ছবিতে ড্রাগের নেশা করিয়ে আমার চোখটা ঢেকে দিয়ে আমাকেও জোর করে অভিনয় করিয়ে নিয়েছে। তোকে দিয়েও ওই শয়তানটা তাই করাবে। জীবনটা নরক বানিয়ে দেবে তোর। ফিরে আয় বোন, ফিরে আয়। যা হয়ে গেছে, সবকিছু ভুলে আবার নতুন করে শুরু কর .." উত্তেজিত হয়ে কথাগুলো বললো ক্রন্দনরতা ঝুমা।
"বোন? কে বোন? কিসের বোন? তুই তো এই রূপনগরে আসার পর থেকেই আমাকে নিজের শত্রু বানিয়ে ফেলেছিলিস। আজ যাকে বা যাদেরকে শয়তান বলছিস, এখানে আসার পর থেকে তো দেখছি তাদের পদলেহন করে চলছিস তুই। প্রতি পদক্ষেপে আমার সর্বনাশ চাইছিস। মনে মনে সংকল্প করেই এসেছিলিস, যাতে এদের হাতে আমি সম্পূর্ণভাবে নষ্ট হয়ে যাই। এমনকি এতটাই বিষ ছিলো আমার জন্য তোর মনের মধ্যে, যে আমাকে নির্দয়ভাবে মারতেও তোর হাত কাঁপেনি। সবকিছুই তুই করেছিলিস এই লোকগুলোকে খুশি করার জন্য। তুই কি মনে করিস, আমি এতটাই বোকা? এগুলোর কিছুই বুঝিনি? আসলে তোকে রিজেক্ট করে এরা আমাকে বেছে নিয়েছে, তাই তোর রাগ হচ্ছে। আর রজতের ব্যবসার কথা সবকিছু আমি জানি। এই ব্যবসাতে যখন লাভ অনেক, তখন করুক না! তাতে আমার আপত্তির তো কিছু নেই! আর নীল ছবিতে অভিনয় করার প্রসঙ্গে এইটুকু বলতে পারি, ওইসব তোকেই মানায়। সেই জন্যেই ওরা তোকে দিয়ে অভিনয় করিয়েছে ওই ধরনের ছবিতে। আমি রজতের বউ হতে চলেছি, এটা ভালো করে নিজের মাথায় ঢুকিয়ে নে।" তাচ্ছিল্য সহকারে নিজের দিদির কথার উত্তর দিলো নন্দনা।
এ আমি কি শুনছি, এ আমি আমার স্ত্রীর কি রূপ দেখছি? না না, ওকে এখন থেকে আমার স্ত্রী বা আমার বউ বলে সম্বোধন করাটা যুক্তিযুক্ত হবে কিনা, সেটাও তো বুঝতে পারছি না! আমার মাথা কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে। মাথার ভেতরটা কিরকম যেন দপদপ করছে। আমি কি আস্তে আস্তে পাগল হয়ে যাচ্ছি? আমি বরাবরই ভীষণ শান্ত-শিষ্ট এবং ধৈর্যশীল ব্যক্তি। চট করে উত্তেজিত হই না। কিন্তু আজকে এখানে যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে, তাতে নিজের প্রতি ধীরে ধীরে নিয়ন্ত্রণ হারাতে শুরু করে দিয়েছি আমি, সেটা বেশ বুঝতে পারছিলাম। চোখ দিয়ে অঝোর ধারায় জল গড়িয়ে পড়ছিলো আমার, কিন্তু কিছুতেই আটকাতে পারছিলাম না। এটা কি সত্যি নাকি এক ভয়ঙ্কর দুঃস্বপ্ন? নিজের গায়ে চিমটি কেটে দেখলাম, বাস্তবের মাটিতে দাঁড়িয়ে রয়েছি আমি। এতক্ষণ ধরে যা দেখলাম, যা শুনলাম সবকিছুই সত্যি। অবশেষে ধৈর্যের বাঁধ ভাঙলো আমার। প্রচন্ড জোরে চিৎকার করে উঠে বললাম, "চরিত্রহীনা .. এই যদি তোমার মনে ছিলো, তাহলে ওদের সঙ্গে সঙ্গমের সময় বাধা দিচ্ছিলে কেন বারবার? নাকি পুরোটাই তোমার অভিনয় ছিলো? আমার কথা না হয় বাদই দিলাম। তোমার একটা আট বছরের সন্তান রয়েছে, ভুলে গেলে তার কথা? তোমার এই হঠকারী সিদ্ধান্তের ফলে ওর ভবিষ্যৎ যে ধ্বংস হয়ে যাবে, সেটা বুঝতে পারছো তুমি? নাকি তোমার মাথায় স্বামী-সন্তান সবকিছু ভুলে এখন শুধু কামের আগুন জ্বলছে? একটা কথা আমি বলে দিচ্ছি এখানে সবার সামনে। তোমার বলা কথাগুলো যদি সত্যি হয়, তাহলে বাপ্পার কি হবে জানিনা, তবে এখান থেকে আমি আর ফিরবো না। এখানে এখনই সবার সামনে আত্মহত্যা করবো আমি।"
কথাগুলো বলে নন্দনের দিকে এগোতে যাবো, সেই সময় পাশ থেকে এসে হার্জিন্দার আমার কলারটা চেপে ধরে বললো, "দূর হাটো বেহেনচোদ .. নেহি তো মার কে অপাহিজ বানা দেঙ্গে .."
দেখলাম, ঠিক সেই মুহূর্তে আমাদের দিকে এগিয়ে এসে আমার কলারটা ওর হাত থেকে জোর করে ছাড়িয়ে দিয়ে হার্জিন্দারের দুই গালে সপাটে দুটো চড় মেরে নন্দনা বললো, "তোর সাহস হয় কি করে জানোয়ার, আমার সামনে এঁর গায়ে হাত তোলার বা এনাকে কটু কথা বলার? এতদিন যা করার করেছিস, এবার থেকে আর ওইসব নয়। এখানে এরপর যা হবে, বা যা কিছু বলা হবে, সবকিছু করবো এবং বলবো আমি, অন্য কেউ নয়।"
"তুমহারি ইতনি হিম্মত, তুমি আমার গায়ে হাত তোলো? আব দেখো তুমহারা কেয়া হাল কারতা হুঁ ম্যায়!" এই বলে পাঞ্জাবীটা নন্দনার দিকে এগোতে গেলে ওদের দুজনের মাঝখানে দীর্ঘকায় এবং সুঠাম চেহারার রজত এসে দাঁড়িয়ে হুঙ্কার দিয়ে বললো, "ভুলে যেওনা বানচোদ, ও এখন থেকে আমার স্ত্রী। ওর সম্পর্কে একটাও বাজে কথা বললে বা ওকে অপমান করার চেষ্টা করলে, এখানে কুকুরের মতো গুলি করে মারবো তোমাকে।" রজতের মুখে কথাগুলো শুনে চমকে উঠে দু'পা পিছিয়ে দাঁড়ালো হার্জিন্দার।
"দেখো, এখানে তো যা বলার বলে দিয়েছো, অনেক নাটক হয়েছে। এবার বেডরুমে চলো, আমাদের যে আর তর সইছে না। তুমি বলেছিলে আমাদের তিনজনের সাথে একসঙ্গে .. হেহেহে .." পাশ থেকে ফোড়ন কেটে কথাগুলো বললো প্রমোদ।
"মোটেও আমি সেই কথা বলিনি। নিজেদের বলা কথাগুলো আমার মুখে বসাবেন না দয়া করে। আমি শুধু আমার বর্তমান স্বামী, মানে রজত ছাড়া আপনাদের দু'জনকে আমার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হওয়ার অনুমতি দিয়েছি, ব্যাস এইটুকুই। একটু সবুর করুন না, এখন তো সবে সন্ধ্যে এরপর পুরো রাতটাই পড়ে রয়েছে। কিন্তু ওঁর সঙ্গে একটু আগে ওই জানোয়ারটা যা ব্যবহার করলো, তাতে আমার রাগ এখনো কমেনি। আমি যে কথাগুলো বললাম বা যে সিদ্ধান্তের কথা জানালাম, সেটা শুনে তো উনার রাগ হতেই পারে। তাই বলে বাইরের লোকের এত বড় সাহস হয় কি করে, আমাদের মাঝখানে ঢোকার? আমি বলছি না এর জন্য ওকে কোনো শাস্তি দিতে। তবে সকালের কথা মনে আছে তো? আমার ব্রা আর প্যান্টিটা জোর খুলে সম্পূর্ণ নগ্ন অবস্থায় আমাকে সমুদ্রসৈকতে হাঁটতে এবং দৌড়াতে বাধ্য করেছিলো ওই হার্জিন্দার। তারপর আমার অন্তর্বাসগুলো ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছিলো নৌকার পেছনে ওই জঞ্জালের মধ্যে। ভাগ্যিস মিস্টার রবার্টের ছেড়ে রাখা ওই হাউসকোটটা পড়েছিলো সী-বিচের উপর! না হলে আমার কি অবস্থা হতো বুঝতে পারছেন? আমি চাই এখন হার্জিন্দার গিয়ে ওখান থেকে আমার অন্তর্বাসগুলো তুলে নিয়ে আসুক। তবেই আমি বেডরুমে ঢুকবো আপনাদের সঙ্গে। এটাই আমার আব্দার।" সোফার হাতলে নিজের কোমরটা ঠেকিয়ে কথাগুলো বললো নন্দনা।
"গাঁড় মারিয়েছে! এ আবার কি ধরনের শর্ত? তুমি বলো ওর মুখে দুটো জুতো মারছি। কিন্তু বাইরেটা ঘুটঘুটে অন্ধকার। এই সময় ওখানে গিয়ে বিনা আলোতে ও কি আর খুঁজে পাবে তোমার ব্রা আর প্যান্টি? তাছাড়া ওগুলো তো নোংরার মধ্যে ফেলা হয়েছিলো, নোংরায় মাখামাখি হয়ে যাওয়া ওই জিনিসগুলো ফিরে পেয়ে তুমি কি করবে বলো? ওর থেকে হাজারগুন দামী ইনারের সেট কিনে দেবো তোমাকে ডার্লিং!" কিছুটা অবাক হয়েই কথাগুলো বললো রবার্ট।
"ঠিক আছে, ও যখন বলছে তখন যাক না হার্জিন্দার। ও তো আর আকাশের চাঁদ চায়নি, কিংবা ওদেরকে ওকে মেরেও ফেলতে বলেনি। সকালে আমার বউয়ের সঙ্গে পাঞ্জাবীটা যে দুষ্টুমি করেছিলো, সেটার জন্য ওকে একটু শিক্ষা দিতে চাইছে আমার সেক্সি বউটা। এর বেশি তো আর কিছুই নয়!" নিজের স্বভাবসিদ্ধ গম্ভীর গলায় জানালো রজত।
"আমার বউ" এই শব্দটা শোনার পরে চমকে উঠলাম আমি। এত তাড়াতাড়ি 'বউ বদল' হয় বুঝি! ক্ষমতা আর অর্থবল থাকলে বোধহয় হয়। বুকের ভেতরটা হু হু করে উঠলো আমার। ঠিক সেইসময় ছায়া বলে উঠলো, "হুমদো পাঞ্জাবীটার সঙ্গে ওই . ছেলেটাকেও পাঠাও বৌদিমণি। ওরও একটু শিক্ষার দরকার আছে। স্বামীর শরীর খারাপ বলে ওকে দেখতে বিকেলবেলা একটু বাড়ি গিয়েছিলাম। তারপর এখানে ফিরতে না ফিরতেই, আমাকে যা নয় তাই বললো ছোকরা!"
প্রমোদ, রজত এবং রবার্ট এরা তিনজনেই যখন নন্দনার 'হ্যাঁ' তে 'হ্যাঁ' মিলিয়েছে, তখন হার্জিন্দার আর ইউসুফের কোনো আপত্তিই ধোপে টিকলো না। কিছুক্ষণ গাঁইগুঁই করে বেরিয়ে গেলো ওরা দু'জন।
★★★★
"এবার তো চলো ডার্লিং, বেডরুমে! তোমার সব শর্ত তো মেনে নিলাম আমরা।" প্রমোদের করা এই উক্তিতে খিলখিল করে হেসে উঠে নন্দনা বললো, "শর্ত বলছো কেন ডাক্তার? আমি ভালোবেসে তোমাদের কাছে কিছু চাইলে, তোমরা দেবে না? আমিও তো ভালোবেসে আমার সবকিছু উজাড় করে দিচ্ছি তোমাদেরকে, ঠিক কিনা বলো? আমি এখন বেডরুমে শুধু তোমাদের দু'জনের সঙ্গে সময় কাটাতে চাই। সেখানে আমার বরকেও ঢোকার অনুমতি দেবো না আমি। আমার বেচারা বরটা এখানে সোফার উপর একা একা বসে থাকবে, তাই ওকে একটু আদর করে দিই যাওয়ার আগে .." এই বলে চকাস করে রজতের গালে একটা চুমু খেলো নন্দনা।
নন্দনার এই কার্যকলাপ দেখে আমি যতটা অবাক হচ্ছিলাম এবং লজ্জায়, দুঃখে, ঘৃণায়, ক্ষোভে মাটির সঙ্গে মিশে যাচ্ছিলাম, ততটাই উল্লাসে মেতে উঠছিলো ঘরে উপস্থিত বাকি তিন দূর্বৃত্ত। নন্দনার কোমরটা জড়িয়ে ধরে ওকে নিজের কাছে টেনে নিয়ে প্রমোদ বললো, "একদম ঠিক কথা বলেছো বৌমা, সরি ডার্লিং। তুমি যেমন ভালবেসে সব কিছু দিচ্ছ আমাদেরকে। তেমনি আমাদেরও কর্তব্যের মধ্যে পড়ে, ভালোবেসে তোমার সমস্ত দাবি মেনে নেওয়া।"
"আমি এমন কিছু অনৈতিক দাবি করিনি বা ভবিষ্যতেও করবো না, যা তোমাদের মেনে নিতে কষ্ট হয়। কারণ আমিও তোমাদের ভালবাসতে শুরু করেছি। আচ্ছা ভালো কথা, দুপুরবেলা কথা প্রসঙ্গে বলছিলে না, শুধুমাত্র আমাকে পাওয়ার জন্য হায়দ্রাবাদে যেভাবে তোমরা চিরন্তনকে ফাঁসিয়েছিলে। সেই কথাগুলো ওকে একটু শুনিয়ে দাও। এমনিতেই জ্বলে-পুড়ে যাচ্ছে বেচারা। তোমাদের কথাগুলো শুনলে আরও আগুন জ্বলবে ওর মনের ভিতর। আর আমি তো সেটাই চাই।" মুচকি হেসে প্রমোদের গলা জড়িয়ে ধরে এইরূপ উক্তি করলো নন্দনা।
নন্দনার কথা শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে যে কথাগুলো প্রমোদ বললো, সেগুলো আক্ষরিক অর্থে নিজের কানে ওর মুখ থেকে এর আগে না শুনলেও; রূপনগরে আমার পরিবারকে নিয়ে আসার প্রস্তাব যেদিন ও আমাদের বাড়িতে দিয়ে এসেছিলো, সেদিনই আমি বুঝতে পেরে গিয়েছিলাম, এই সবকিছুই ও করছে আমার স্ত্রীকে পাওয়ার জন্য। গোয়ানিজটার বলা একটা কথাও নতুন মনে হলো না আমার। তাই এগুলো শুনে প্রচন্ড ধাক্কা খেয়ে ভেঙে পড়ার মতো অবস্থাও হলো না আমার। কারণ, আমার হৃদয়টা তো একটু আগেই টুকরো টুকরো হয়ে ভেঙে গিয়েছে নন্দনার এই পাল্টে যাওয়ার রূপ দেখে। কিন্তু প্রমোদ কথাগুলো বলার মাঝে একটা জিনিস লক্ষ্য করলাম, নন্দনা ছায়াকে ইশারা করে কিছু একটা বললো। ঘাড় ঘুরিয়ে দেখলাম ছায়া মাথা নাড়িয়ে চোখের পাতা ফেলে ওর ইশারার প্রতুত্তর দিলো।
"বাহ্ দারুন বললে ডাক্তার। তোমার কথাগুলো শোনার পর, ওর মনের যা অবস্থা হয়েছে সেটা ভেবেই খুব আনন্দ লাগছে আমার। আচ্ছা সেদিন সন্ধ্যেবেলা আমাদের বাড়িতে যে কাগজটা সই করাতে নিয়ে এসেছিলে ওকে দিয়ে, সেটা এখন কোথায় গো? ছিঁড়ে ফেলে দিয়েছো নাকি?" প্রমোদের কথাগুলো শেষ হওয়ার পর নন্দনার এই উক্তিতে প্রথমে কিছুক্ষণ অবাক হয়ে ফ্যালফ্যাল করে ওর মুখের দিকে তাকিয়ে থাকলো প্রমোদ। তারপর উচ্চস্বরে হেসে বলে উঠলো, "পাগল নাকি? ওই কাগজ কেউ নষ্ট করে, নাকি ছিঁড়ে ফেলে? দেখো এখন সবকিছুই সবার সামনে পরিষ্কার হয়ে যাওয়া ভালো। তাছাড়া তুমি যখন আমাদের দলে এসেই গেছো, তখন আর লুকোছাপা করে লাভ কি? তোমার স্বামী, থুড়ি তোমার প্রাক্তন স্বামীকে আমাদের বিজনেস পার্টনার বানানোর যে কথা বলেছিলাম, সেগুলো সব ঢপের চপ .. হাহাহাহা। ওর বউকে যখন আমরা পেয়ে গেছি তখন আর ওকে শুধু শুধু আমাদের কাঁধে বয়ে বেড়িয়ে নিয়ে কি লাভ হবে? এখান থেকে ফিরেই কাগজটা পুলিশের হাতে দেবো। ব্যাস তারপরে কেল্লাফতে। তোমার স্বামীর সরি সরি, প্রাক্তন স্বামীর শ্রীঘরে যাওয়া আর কেউ আটকাতে পারবে না। শালা সব দোষ করলাম আমরা, মানে আমি আর রবার্ট, আর শাস্তি পাবে ওই গান্ডু চিরন্তন .. হাহাহাহা। ব্যাপারটা ভীষণ মজার না?"
"মজার মানে! তোমার কথাগুলো শুনে আমি ভেতরে ভেতরে যে কি পরিমান তৃপ্তি অনুভব করছি, তোমাদের কাউকে বলে বোঝাতে পারবো না। যাইহোক অনেক বাজে কথা হয়েছে, আমারও আর তর সইছে না, চলো না গো! তোমরা দু'জন আমাকে নিয়ে চলো এবার বেডরুমে।" প্রমোদের গালে ছোট্ট একটা টোকা মেরে ন্যাকামি করে কথাগুলো বলে ছায়ার দিকে তাকিয়ে নন্দনা বললো, "তোকে দেওয়া কাজগুলো ঠিকঠাক করছিস তো?"
"ওকে আবার তুমি কি কাজ দিয়েছো বৌমা, মেরা মতলব ডার্লিং?" অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করলো প্রমোদ।
"ও মা, সে কি কথা! এটাও বুঝতে পারলে না? বিয়ে না হয় আমি রজতকে করেছি; কিন্তু ফুলশয্যা তো আমি আজ তোমাদের তিনজনের সঙ্গেই করবো! আমাদের বাঙালিদের মধ্যে একটা নিয়ম আছে, জানো? ফুলশয্যার রাতে বরের জন্য নববধূ একগ্লাস দুধ নিয়ে ঘরে ঢোকে। কিন্তু এখানে তো একটা গ্লাসে হবে না, দুটো গ্লাস লাগবে। সেই দুই গ্লাস দুধের ব্যবস্থা করার কথা বলেছিলাম আমি ছায়াকে।" আদুরে গলায় কথাগুলো বললো নন্দনা।
নন্দনার কথা শেষ হওয়া মাত্রই ওকে নিজের কোলে তুলে নিয়ে বেডরুমের দিকে যেতে যেতে রবার্ট বললো, "ও আচ্ছা, এই ব্যাপার। ছায়া, তাড়াতাড়ি দুটো গ্লাসে দুধ ভরে নিয়ে আয় আমাদের রুমে। আজ রজতের নববিবাহিতা বউয়ের হাত থেকে দুধ খাবো আমরা। তারপর ওর দুটো দুধের ট্যাঙ্কি খালি করবো .. হেহেহে।"
রবার্ট আর প্রমোদ নন্দনাকে নিয়ে বেডরুমে ঢুকে যাওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই দেখলাম ছায়া ওদের ঘরে ঢুকে দুটো দুধের গ্লাস দিয়ে এলো। ছায়া বেরোনোর সঙ্গে সঙ্গে ভেতর থেকে দুম করে দরজাটা বন্ধ করে দিলো ওরা।
★★★★
ওইদিকে দরজা বন্ধ হলো, আর এইদিকে যেন আমার বুকে দুমদুম করে কেউ প্রহার শুরু করে দিলো। মাটির মধ্যে ধপ করে বসে পরে দু'হাত দিয়ে নিজের মুখটা চেপে ধরে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছিলাম আমি। শান্তিরঞ্জন, সৈকত আর ঝুমা এই তিনজন যেন স্ট্যাচু হওয়ার প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ হয়েছিলো। সোফার ঠিক পেছনে জড়ভরতের মতো চুপচাপ দাঁড়িয়েছিলো তিনজন।
আমার কাঁধে সেইমুহূর্তে একটা হাতের স্পর্শ পেলাম। মাথা তুলে তাকিয়ে দেখলাম, আমার কাটা ঘায়ে নুনের ছিটে দিতে সেখানে উপস্থিত হয়েছে রজত। "কি করবে বলো, সবই ভবিতব্য। আসলে কুকুরের পেটে যেমন ঘি সহ্য হয় না, ঠিক তেমনই নন্দনাকে বিয়ে করার পর থেকে তুমি তোমাদের বৈবাহিক সম্পর্কটা হজমই করতে পারোনি। ওকে ঠিকঠাক স্বামীর আদর দিতে পারোনি। প্রকৃত পুরুষের ভালোবাসা আর আদর যে কি জিনিস, সেটা আমাদের সঙ্গে পরিচয় হওয়ার পর ও জানতে পেরেছে। তাইতো আমাদেরকে ও বেছে নিয়েছে, তোমাকে রিজেক্ট করে। দেখো এখন বেশি দুঃখ পেয়ে লাভ নেই, কথায় বলে আপনি বাঁচলে বাপের নাম। এবার এইসব বউ হারানোর সেন্টিমেন্ট মাথা থেকে সরিয়ে নিজের কথাটা একটু ভাবো। নন্দনাকে উল্টেপাল্টে খাওয়ার পর প্রমোদ আর রবার্ট যখন ওই ঘর থেকে বেরোবে, তখন ওদের মুড ভালোই থাকবে। সেই সময় তুমি গিয়ে ওদের দু'জনের পা জড়িয়ে ধরে বলবে যাতে তোমাকে পুলিশে না দেয় ওরা। আমার বিশ্বাস, ওরা এখন মুখে যাই বলুক না কেন, কল্পতরু হয়ে তোমার এই মনোবাঞ্ছা পূর্ণ করবে। তবে হ্যাঁ, পুলিশের হাত থেকে বাঁচার পর নিজের শহরে আর থাকা চলবে না তোমার। বাচ্চাকে নিয়ে দূরে কোথাও চলে যাও। বাপ্পাকে ওর মা নন্দনার চোখের সামনে থেকে সরাতে পারলে, ওকে আরও ভালোভাবে ব্যবহার করতে পারবো আমরা। বুঝতে পারছো তো আমার কথাগুলো? নাকি শুধু গাধার মতো শুনে যাচ্ছ? তোমার ছেলে বাপ্পাকে নিয়ে এখান থেকে কেটে পড়বে। ওই যে একটা খ্যাপাচোদা দাঁড়িয়ে আছে সোফার পেছনে; হ্যাঁ, আমি ওই শান্তির ছেলে শান্তিরঞ্জনের কথাই বলছি। ওকে তো শাড়ির দোকান করে দিয়েছি আমি, ওর সঙ্গে বিজনেসে লেগে যাও। তোমার যা বদনাম হয়েছে, তাতে তুমি জুটমিলে আর চাকরি পাবে না কোনোদিন। বুঝলে তো আমার কথাগুলো? কাল ভোরবেলা বাপ্পাকে নিয়ে এখান থেকে সোজা নিজের কোয়ার্টারে গিয়ে, ওখান থেকে যেখানে খুশি চলে যেও। তোমার যাতে হাজতবাস না হয়, সেই চেষ্টা আমি করবো।" রজতের কথাগুলো শেষ হওয়ার পর, ওর মুখের দিকে অশ্রুসিক্ত চোখে করুনভাবে তাকিয়ে রইলাম আমি।
ঠিক সেই মুহূর্তে, বেডরুমের দরজা খুলে বেরোলো নন্দনা। ওর দিকে তাকিয়ে দেখলাম ওর পোশাক পরিচ্ছদ সবকিছুই ঠিক হয়েছে। মাথার চুলগুলো সব অবিন্যস্ত আর চোখদুটো টকটকে লাল। চোখের দৃষ্টিতে যেন আগুন ঝরছে নন্দনার। এরকম অদ্ভুত দৃষ্টি ওর চোখে আমি আগে কখনো দেখিনি। ক্রমশ যেন অচেনা হয়ে উঠছিলো আমার কাছে ও।
~ পরবর্তী আপডেট কিছুক্ষণের মধ্যেই আসছে ~