Thread Rating:
  • 80 Vote(s) - 3.29 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
WRITER'S SPECIAL সৃষ্টি (সমাপ্ত)
(01-09-2023, 02:53 PM)Baban Wrote: এই থ্রেডের সাফল্যে আমি দারুন খুশি। ♥️

সেই প্রথম সাহস করে এমন জায়গায় ছোটদের জন্য গল্প লিখেছিলাম। অচেনা অতিথি বলে। জানিনা কেন কিন্তু লিখেছিলাম। দেখলাম পাঠক কিন্তু সেটাও পড়লো। হয়তো আমি কি এমন আলাদা সৃষ্টি করেছি সেটা জানতে। কামউত্তেজক গপ্পের বাইরেও কি এমন লিখেছে সেটা দেখতে। তারপর থেকে বন্ধু, ভূমি, দূরত্ব, ও খোকন, কাগজের নৌকা, তুমি আছো এতো কাছে তাই (যেটা তোমার সবচেয়ে ভালো লেগেছিলো) আরও এসব লেখার পাগলামি শুরু। 

তারপরে এলে একদিন তুমিও। একঝাঁক দুর্দান্ত সব গল্পের ঝুলি নিয়ে। যার কিছু তোমার ছোটবেলার, কিছু মনের কথার আর কিছু সমাজকে আয়না দেখাতে। এমন কি নাটক পর্যন্ত। তোমার  এই থ্রেডও পাঠকের মন কাড়তে সফল হলো। একের পর এক নানান সব দারুন লেখা। এ বলে আমায় দেখ তো ও বলে আমি কম নাকি? পড়তে পড়তে ডুবে যেতে হয়। প্রত্যেকটা সৃষ্টি অনবদ্য ♥️

আমার জানা নেই আমি আর তুমি ছাড়া এই পাগলামি আর কেউ করেছে কিনা। এখানে কিনা ছোটদের গপ্পো লিখছি। তবে এমন পাগলামির জন্য আমরা গর্বিত  [image]

তখন আমার মনে হয়েছিল এগুলোকে নন ইরোটিক না বলে আলাদা নাম দিলে কেমন হয়? সারিটকে রিকোয়েস্ট করে তখন নতুন কয়েকটা প্রেফিক্স যোগ করাতে বললাম। কারণ এগুলো আমাদের নিজেদের কাছে সবচেয়ে আগে স্পেশাল।

এটার নাম দিলাম রাইটার্স স্পেশাল। সারিট এরও পছন্দ হলো নামটা। সবই তো তোমার জানা। আজ এতদিন পরেও যখন আমি দেখি সত্যি এই স্পেশাল লেখা গুলো নিজের দাম পেলো , এতো এতো ভালোবাসা পেলো ও পাচ্ছে তখন মনে হলো গসিপির জন্য, পাঠকদের জন্য কিছুতো করতে পেরেছি। ওটাই অনেক। 

একদমই ঠিক বলেছো। পানু গল্প অনেক আসতে থাকবে। এটা তো তারই সাইট। কিন্তু তার মাঝেও আমাদের মতো কিছু পাগলা যেন পাগলামি চালিয়ে যায়। আসতে থাকুক তোমার আরও সব সৃষ্টি। যা ভিন্ন হয়েও এক আর এক হয়েও কত ভিন্ন। লিখতে থাকো আরও আরও সব স্পেশাল গল্প। সৃষ্টিতে ভোরে উঠুক এই থ্রেড ❤

অনেক অনেক অভিনন্দন।  [image]

[Image: Thank-you-PNG128.png]

একদমই তাই, আর তুমি তোমার লেখা যে গল্পগুলোর কথা বললে সেগুলো তো এক একটা রত্ন! আমি বরাবরই ভীষণ স্বচ্ছ মনের মানুষ। আমার যা মনে, সেটাই বাইরে। তাই এই কথা নির্দ্বিধায় বলতে পারি .. তোমার ওই গল্পগুলোকে দেখেই এইরকম একটা এডাল্ট সাইটে সৃষ্টি থ্রেডটা আনার সাহস পেয়েছিলাম। ভেবেছিলাম বাবানের মতো অত ভালো না হোক, খারাপ করেই না হয় লিখবো আমার মনে যা আসে তাই।
[+] 2 users Like Bumba_1's post
Like Reply
Do not mention / post any under age /rape content. If found Please use REPORT button.
(01-09-2023, 03:45 PM)Bumba_1 Wrote:
একদমই তাই, আর তুমি তোমার লেখা যে গল্পগুলোর কথা বললে সেগুলো তো এক একটা রত্ন! আমি বরাবরই ভীষণ স্বচ্ছ মনের মানুষ। আমার যা মনে, সেটাই বাইরে। তাই এই কথা নির্দ্বিধায় বলতে পারি .. তোমার ওই গল্পগুলোকে দেখেই এইরকম একটা এডাল্ট সাইটে সৃষ্টি থ্রেডটা আনার সাহস পেয়েছিলাম। ভেবেছিলাম বাবানের মতো অত ভালো না হোক, খারাপ করেই না হয় লিখবো আমার মনে যা আসে তাই।

তাহলে তো বলতে হয় ওগুলো এখানে লিখে আমি ভুল কিছু করিনি। নইলে তোমার এসব সাংঘাতিক লেখা অজানাই থেকে যেত আমাদের কাছে। ছোট্ট বুম্বাকেও জানা যেত না আর তার এডভেঞ্চার গুলোও রহস্য থেকে যেত। হনুমনের লাফালাফি থেকে সংগীতের প্রতি তার ভালোবাসা ও পরিবারের তার প্রতি ত্যাগ ও অবশ্যই ভালোবাসা কতটা তা বড়ো বুম্বার বুকেই থেকে যেত।

আর এ গুলো যদি খারাপ করে লেখা হয়, আমিও এমন খারাপ গল্পরই অপেক্ষায় থাকবো। নাই বা বাড়ালাম নিজের গল্প পড়ার কোয়ালিটি লেভেল। এই অনেক। ওসব সহ্য হবেনা।

অনেক ধন্যবাদ ওগুলো পড়ে মতামত দেবার জন্য। নইলে আর লেখাও হতোনা, আর আমার কিছু কথা যা ছিল মনে.... মনেই রয়ে যেত।  Big Grin
[+] 1 user Likes Baban's post
Like Reply
(01-09-2023, 02:09 PM)Bumba_1 Wrote:
আমার এরোটিকা থ্রেডগুলোর মধ্যে কোনোটা ২ লক্ষ ভিউজ অতিক্রম করতে চললো, কোনোটা ৩ লক্ষ ভিউজ অতিক্রম করতে চললো, কোনোটা ৪ লক্ষ ভিউজ অতিক্রম করতে চললো, আবার কোনোটা ৫ লক্ষ ভিউজ অতিক্রম করতে চললো। কিন্তু এসব নিয়ে আমি কোনোদিনই আদিখ্যেতা বা হ্যাংলামো করিনি। কারণ, প্রথমতঃ ওগুলো আমার কাছে স্বাভাবিক। আমি যৌন রসাত্মক গল্প লিখছি, আর লোকজন সেটা পড়বে না, এটা হতেই পারে না। আর দ্বিতীয়তঃ গল্পগুলো আমি নিজেকে আনন্দ দেওয়ার জন্য বা নিজের মনের পুষ্টির জন্য লিখিনা/লিখিনি কোনোদিন। কিন্তু এই সৃষ্টি থ্রেডটা আমার কাছে ভীষণ স্পেশাল। এই থ্রেড যখন খুলেছিলাম, তখন শুধুমাত্র নিজের জন্যই খুলেছিলাম। নিজের ভালোলাগার বিষয়, কিছু পুরনো স্মৃতি, কিছু গল্প, কিছু কবিতা, কিছু অঙ্কন, এমনকি নাটক পর্যন্ত লিখেছি এখানে। সব থেকে বড় কথা কিশোর সাহিত্যের উপর বেশ কিছু গল্প এবং কবিতা আছে আমার এখানে। এইরকম একটা out & out এডাল্ট সাইটে এই থ্রেড যে কয়েকদিনের মধ্যেই হারিয়ে যাবে, সেটাই ভেবেছিলাম। আজ সে এক লক্ষ ভিউজ অতিক্রম করেছে। আমি মন থেকে খুশি হয়েছি এবং এটা বুঝতে পেরেছি .. বড়দের হোক কিংবা বাচ্চাদের, লেখা ভালো হলে লোকে তা পড়বেই।

(01-09-2023, 02:53 PM)Baban Wrote:
এই থ্রেডের সাফল্যে আমি দারুন খুশি। ♥️

সেই প্রথম সাহস করে এমন জায়গায় ছোটদের জন্য গল্প লিখেছিলাম। অচেনা অতিথি বলে। জানিনা কেন কিন্তু লিখেছিলাম। দেখলাম পাঠক কিন্তু সেটাও পড়লো। হয়তো আমি কি এমন আলাদা সৃষ্টি করেছি সেটা জানতে। কামউত্তেজক গপ্পের বাইরেও কি এমন লিখেছে সেটা দেখতে। তারপর থেকে বন্ধু, ভূমি, দূরত্ব, ও খোকন, কাগজের নৌকা, তুমি আছো এতো কাছে তাই (যেটা তোমার সবচেয়ে ভালো লেগেছিলো) আরও এসব লেখার পাগলামি শুরু। 

তারপরে এলে একদিন তুমিও। একঝাঁক দুর্দান্ত সব গল্পের ঝুলি নিয়ে। যার কিছু তোমার ছোটবেলার, কিছু মনের কথার আর কিছু সমাজকে আয়না দেখাতে। এমন কি নাটক পর্যন্ত। তোমার  এই থ্রেডও পাঠকের মন কাড়তে সফল হলো। একের পর এক নানান সব দারুন লেখা। এ বলে আমায় দেখ তো ও বলে আমি কম নাকি? পড়তে পড়তে ডুবে যেতে হয়। প্রত্যেকটা সৃষ্টি অনবদ্য ♥️

আমার জানা নেই আমি আর তুমি ছাড়া এই পাগলামি আর কেউ করেছে কিনা। এখানে কিনা ছোটদের গপ্পো লিখছি। তবে এমন পাগলামির জন্য আমরা গর্বিত  [image]

তখন আমার মনে হয়েছিল এগুলোকে নন ইরোটিক না বলে আলাদা নাম দিলে কেমন হয়? সারিটকে রিকোয়েস্ট করে তখন নতুন কয়েকটা প্রেফিক্স যোগ করাতে বললাম। কারণ এগুলো আমাদের নিজেদের কাছে সবচেয়ে আগে স্পেশাল।

এটার নাম দিলাম রাইটার্স স্পেশাল। সারিট এরও পছন্দ হলো নামটা। সবই তো তোমার জানা। আজ এতদিন পরেও যখন আমি দেখি সত্যি এই স্পেশাল লেখা গুলো নিজের দাম পেলো , এতো এতো ভালোবাসা পেলো ও পাচ্ছে তখন মনে হলো গসিপির জন্য, পাঠকদের জন্য কিছুতো করতে পেরেছি। ওটাই অনেক। 

একদমই ঠিক বলেছো। পানু গল্প অনেক আসতে থাকবে। এটা তো তারই সাইট। কিন্তু তার মাঝেও আমাদের মতো কিছু পাগলা যেন পাগলামি চালিয়ে যায়। আসতে থাকুক তোমার আরও সব সৃষ্টি। যা ভিন্ন হয়েও এক আর এক হয়েও কত ভিন্ন। লিখতে থাকো আরও আরও সব স্পেশাল গল্প। সৃষ্টিতে ভোরে উঠুক এই থ্রেড ❤

অনেক অনেক অভিনন্দন।  [image]

(01-09-2023, 03:45 PM)Bumba_1 Wrote:
একদমই তাই, আর তুমি তোমার লেখা যে গল্পগুলোর কথা বললে সেগুলো তো এক একটা রত্ন! আমি বরাবরই ভীষণ স্বচ্ছ মনের মানুষ। আমার যা মনে, সেটাই বাইরে। তাই এই কথা নির্দ্বিধায় বলতে পারি .. তোমার ওই গল্পগুলোকে দেখেই এইরকম একটা এডাল্ট সাইটে সৃষ্টি থ্রেডটা আনার সাহস পেয়েছিলাম। ভেবেছিলাম বাবানের মতো অত ভালো না হোক, খারাপ করেই না হয় লিখবো আমার মনে যা আসে তাই।

(01-09-2023, 04:03 PM)Baban Wrote:
তাহলে তো বলতে হয় ওগুলো এখানে লিখে আমি ভুল কিছু করিনি। নইলে তোমার এসব সাংঘাতিক লেখা অজানাই থেকে যেত আমাদের কাছে। ছোট্ট বুম্বাকেও জানা যেত না আর তার এডভেঞ্চার গুলোও রহস্য থেকে যেত। হনুমনের লাফালাফি থেকে সংগীতের প্রতি তার ভালোবাসা ও পরিবারের তার প্রতি ত্যাগ ও অবশ্যই ভালোবাসা কতটা তা বড়ো বুম্বার বুকেই থেকে যেত।

আর এ গুলো যদি খারাপ করে লেখা হয়, আমিও এমন খারাপ গল্পরই অপেক্ষায় থাকবো। নাই বা বাড়ালাম নিজের গল্প পড়ার কোয়ালিটি লেভেল। এই অনেক। ওসব সহ্য হবেনা।

অনেক ধন্যবাদ ওগুলো পড়ে মতামত দেবার জন্য। নইলে আর লেখাও হতোনা, আর আমার কিছু কথা যা ছিল মনে.... মনেই রয়ে যেত।  [image]

बस करो यार, रुलायेगा क्या तुम दोनों?  party2.gif 

[Image: Shocked-Open-Asianpiedstarling-size-restricted.gif]

[+] 2 users Like Sanjay Sen's post
Like Reply
[Image: Polish-20230925-144030839.jpg]

|| মড়ক ||

কাহিনী এবং প্রচ্ছদঃ- বুম্বা

সন্তানের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য তাদের সুস্থভাবে বেড়ে ওঠাটা অত্যন্ত জরুরী। একের অধিক কিংবা নিদেনপক্ষে দু'টি সন্তান হলে, তারা পরস্পরের সঙ্গে এডজাস্ট করতে, নিজেদের কাজ এবং কাজের ফল এই দুটোই ভাগ করে নিতে সক্ষম হয়। কিন্তু একটিমাত্র সন্তান থাকলে, সেক্ষেত্রে সেই সন্তানের লালন-পালন অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়ে এবং স্বাভাবিক ভাবেই অভিভাবকের দায়িত্বও বেড়ে যায়। একমাত্র সন্তান অনেক সময় একাকীত্বে ভুগতে পারে, তাই তাদের ওপর বিশেষ নজর দেওয়াটাও জরুরি। আবার ছেলেমেয়েদের অত্যধিক নিরাপদে রাখার সিদ্ধান্ত গ্রহণের ফলেও হীতে বিপরীত হতে পারে। অন্যদিকে একমাত্র সন্তান হওয়ায় মা-বাবার অধিক স্নেহ-ভালোবাসা তাদের বিপথে চালনা করতে পারে। এমনকি একমাত্র সন্তানের প্রতি অভিভাবকের অত্যধিক প্রত্যাশাও তাদের ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

নিজেদের একমাত্র সন্তান থাকলে হয়তো প্রত্যেক মা-বাবাই ওভার প্রোটেক্টিভ হয়ে পড়েন। সন্তানের চলা-ফেরা, ওঠা-বসা থেকে শুরু করে তাদের প্রতিটি কাজে অথবা সিদ্ধান্তে হস্তক্ষেপ করতে শুরু করেন তাঁরা। এই যেমন ধরা যাক, সেই সন্তানের বাবা হয়তো ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার হতে চেয়েছিলেন, কিংবা তার মা সঙ্গীতশিল্পী বা নৃত্যশিল্পী হওয়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন। কিন্তু সময় ও পরিস্থিতির চাপে পড়ে তা হয়ে উঠতে পারেননি। অনেক ক্ষেত্রেই তাঁরা নিজেদের এই স্বপ্নপূরণের গুরুদায়িত্ব সন্তানের কাঁধে চাপিয়ে দিয়ে নিশ্চিন্তবোধ করেন। তাঁরা নিজেদের ইচ্ছাপূরণের জন্য সন্তানের ওপর চাপ দিতে থাকেন। এর ফলে দুটো জিনিস ঘটতে পারে। প্রথমতঃ সেই সন্তান মানসিক অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়তে পারে। দ্বিতীয়তঃ অভিভাবকের এই সিদ্ধান্তের ফলে তাদের সন্তানের মধ্যে আত্মবিশ্বাসের অভাব দেখা দেয়। তারা নিজের ইচ্ছা মতো সিদ্ধান্ত নিতে পারে না, তাই নিজেদের চারদিকে একটা অদৃশ্য দেওয়াল তুলে দিয়ে পরিবার তথা সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।

তবে একটা তৃতীয় সম্ভাবনাও থেকে যায়। যেটা আমার ক্ষেত্রে ঘটেছিলো। আমার বাবা এইসব ব্যাপারে মাথা না ঘামালেও, মা চিরকাল আমার বিষয় সমস্ত সিদ্ধান্ত নিয়ে এসেছেন। আমি কোন স্ট্রিম নিয়ে পড়াশোনা করবো, আমার কি কি সাবজেক্ট থাকবে, কেরিয়ার গড়ার ব্যাপারে লক্ষ্যমাত্রা কিরকম হওয়া উচিৎ , এমনকি এক্সট্রা কারিকুলার এক্টিভিটিস কি কি থাকবে .. এই সবকিছুই নিয়ন্ত্রণ করতেন আমার মা। গড়পড়তা আর পাঁচটা ছেলেমেয়ের মতো আমি অবশ্য কখনো হীনমন্যতায় ভুগিনি, আবার কখনো আত্মবিশ্বাসের অভাবও দেখা দেয়নি আমার মধ্যে। তার বদলে আমি সর্বদা এটাই মনে করতাম .. আমার জন্মদাত্রী কখনো আমার ক্ষতি চাইবেন না, অথবা আমার সম্পর্কে ভুল সিদ্ধান্ত নেবেন না। আমাকে উনি আমার থেকে বেশি চেনেন। তাই দেখিনা, ওনার কথা শুনে চললে, আখেরে তো আমার লাভও হতে পারে!

সমাজে আজ আমি একজন সফল ব্যক্তি কিনা বলতে পারবো না বা আমার বলা উচিতও নয়; তবে যারা নিজেদের উপর চাপিয়ে দেওয়া তাদের অভিভাবকের সিদ্ধান্ত মেনে নিতে না পেরে প্রতিবাদ করেছিলো কিংবা প্রতিবাদ না করতে পেরে ভিতরে ভিতরে গুমড়ে মরেছিলো, তারা আজ হারিয়ে গিয়েছে। তবে আমার বাবা-মায়ের নেওয়া বিশেষ করে মায়ের নেওয়া কিছু সিদ্ধান্ত যে বুমেরাং হয়ে যায়নি, একথা বললে মিথ্যা বলা হবে। এই যেমন, মাধ্যমিকে স্টার মার্কস নিয়ে পাস করার পর আমার ইচ্ছে ছিলো ইংরেজি সাহিত্য নিয়ে পড়াশোনা করবো। তাই আর্টস নিতে চেয়েছিলাম আমি। কিন্তু মায়ের ধারণা ছিলো .. ছেলেরা সাহিত্য নিয়ে পড়াশোনা করলে আর ছেলে থাকে না, মেয়ে হয়ে যায়। আর কমার্স? সেটা তো * স্তানিরা (পড়ুন অবাঙালি) পড়ে! বাঙালির ছেলে কমার্স নিয়ে পড়তেই পারেনা। অগত্যা সাইন্স নিতে হলো আমাকে। যদিও ছেলেদের আর্টস এবং কমার্স পড়ার ব্যাপারে মায়ের এই ধারণার সঙ্গে আমি একমত নই বরং এই ধারণার তীব্র বিরোধিতা করি আমি। কিন্তু সেই সময় প্রতিবাদ করার মতো ক্ষমতা আমার ছিলো না।

কিছু জায়গায় হোম ইউনিভার্সিটির যেরকম কোটা সিস্টেম চলে (সব জায়গায় মোটেও চলে না, কিছু কিছু জায়গার কথা বলা হচ্ছে)। অর্থাৎ ছাত্র বা ছাত্রীটি গ্রাজুয়েশনে সেই অর্থে ভালো রেজাল্ট না করলেও হোম ইউনিভার্সিটির স্টুডেন্ট হওয়ার দরুন মাস্টার্সে চান্স পেয়ে যায়। আমি যে কলেজে পড়তাম, সেই কলেজে এইরকম কোনো সুযোগ-সুবিধা পাওয়া যেত না। মাধ্যমিকে স্টারমার্কস, অর্থাৎ ৭৫ শতাংশের উপর নম্বর না পেলে সেই ছাত্রটির ভাগ্যে সাইন্স নিয়ে পড়ার সুযোগ হতো না আমাদের কলেজে। তাকে অন্য কোনো কলেজে চলে যেতে হতো।

মাধ্যমিকে স্টার পাওয়ার পর এবং মায়ের ইচ্ছায় সাইন্স নেওয়ার পর সৌভাগ্য অথবা দুর্ভাগ্যক্রমে ওই কলেজেই রয়ে গেলাম আমি। কলেজ ভালো হওয়ার জন্য হায়ার সেকেন্ডারিতে স্বাভাবিকভাবেই বিভিন্ন কলেজের ভালো ভালো সব ছেলেরা ভর্তি হয়েছিলো আমাদের কলেজে।  এর ফলে পুরনো বন্ধুদের পাশাপাশি অনেক নতুন বন্ধুও পেয়ে গেলাম আমি। তবে ছিপি (এটা ওর কোডনেম, ওকে এই নামে কেন ডাকা হতো, এটা এখানে আলোচ্য বিষয় নয়) ছিলো আমার সবচেয়ে কাছের বন্ধু।

প্রত্যেক ক্লাসে দেখবেন বুড়োভামের মতো দেখতে দু-একটা ছেলে থাকে .. এরা হলো জন্মবুড়ো। এদের কৈশোর নেই , যৌবন নেই , এরা জাস্ট জন্মেই বুড়ো হয়ে গেছে। সেরকম দু-এক পিস বুড়ো** মাল আমাকে এবং আমার বন্ধুদের চারআনার জ্ঞান দিয়ে বুঝিয়েছিলো যে, ইলেভেনে পড়াশুনা করার দরকার নেই। দীর্ঘদিন ফাঁকি মেরে একদম সেই টুয়েলভে টেস্টের পর পড়াশুনা করলেই হবে। মানে এতদিন ফুলটুস মস্তি! অ্যাকচুয়ালি তারা আমাদের জাহান্নমে যাবার রাস্তা দেখিয়েছিলো, সেটা তখন আমরা বুঝতে পারিনি।

যাইহোক, ইলেভেনের ক্লাস শুরু হওয়ার প্রথম ক'দিন স্বপ্নের মতো কাটতে লাগলো। ক্লাসে যেন বন্ধুদের সঙ্গে গল্প ফুরোতেই চায় না। কি ঢপের চপ পড়াশুনা হচ্ছে, সেই নিয়ে কারোর কোনো মাথাব্যাথা নেই। একদিন নিখিলেশ স্যার ক্লাসে গ্রেটেস্ট ইনটিজর ফাংশন পড়াচ্ছেন, পড়াতে পড়াতে তিনি কথাপ্রসঙ্গে একসময় বললেন, "এটা 'বিউটিফুল ফাংশন' , কারণ এটার গ্রাফ সিঁড়ির মতন দেখতে।" পরেরদিন কোনো এক উজবুককে এই বক্স ফাংশন থেকে প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করায় সে উত্তর দিলো, ''স্যার , ওই যে কাল বলেছিলেন 'বিউটিফুল ফাংশন' .. এটা তো তাই .." ব্যাস আর যায় কোথায়? দমাদ্দম চপেটাঘাত পড়লো কয়েকটা। ফিজিক্সের সৌগত স্যার অঙ্ক দিয়েছেন ক্লাসে। যার বয়ানে .. একটি ব্যাঙ কুয়োতে পড়ে যাবার গল্প ছিলো। গোটা ক্লাসে বদ ছেলেপিলের দল মাস্টারমশাইকে বারবার প্রশ্ন করে গেলো যে, "স্যার ব্যাঙটার কি হলো? সে কি কুয়ো থেকে উঠতে পারলো? উঠে কোথায় গেলো?" শেষে অত্যন্ত বিরক্ত হয়ে স্যার বলেছিলেন, "তোমাদের ক্লাস আমি আর নেবো না কাল থেকে। হেডস্যারকে বলে সেকশন চেঞ্জ করাবো। কিচ্ছু হবে না তোমাদের দ্বারা।" এইরকম খুনসুটিতে ভরা খুব মজার সময় কাটছিলো আমাদের। কিন্তু, জীবনে সবকিছুই তো ক্ষণস্থায়ী!

দুম করে ইলেভেনের হাফ-ইয়ারলি পরীক্ষা চলে এলো। আমাদের কলেজের লাইব্রেরিতে যিনি থাকতেন তাঁকে কেউ 'স্যার' বলতো না , সবাই সমর দা বলে ডাকতো। 'দাদা' বললে উনি বেজায় রেগে যেতেন আর পুরনো বছরের প্রশ্ন দিতেন না। কলেজের ফুটবল টিমের অধিনায়ক ছিলাম আমি। ইন্টারকলেজ কম্পিটিশনে ক্লাস এইট থেকেই কলেজকে প্রচুর ট্রফি এনে দিয়েছিলাম। তাছাড়া গানের গলাটাও মন্দ ছিলো না বলে কলেজের বার্ষিক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে উদ্বোধনী সঙ্গীতটা গাওয়ার জন্য আমারই ডাক পড়তো বরাবর। তাই আমি পাজির পা-ঝাড়া হলেও, আমার প্রতি খুব একটা বিরূপ হতেন না কলেজের মাস্টারমশাইরা। তার উপর ওই লাইব্রেরিয়ানকে সমর দা থেকে 'স্যার' সম্বোধনে শিফট করে গিয়ে, ওঁর কাছ থেকে পুরোনো দশ বছরের প্রশ্ন জোগাড় করে করে ফেলেছিলাম আমি।

অঙ্কের প্রশ্ন দেখে তো আমার মাথায় হাত! কিছুই বুঝতে পারছি না , এগুলো আদৌ আমাদের সিলেবাসের কিনা, তাও ধরতে পারছি না। সারা বছর ফাঁকি মেরে কাটালে যা হয় আর কি! প্রিয় বন্ধু ছিপিকে ফোন করেকথাগুলো বলাতে ছিপি বললো, "চাপ নেই, একসঙ্গে বসবো। হলে গিয়ে সব নামিয়ে দেবো।" কি নামাবে, কার নামাবে .. কিছুই বুঝতে পারলাম না। ছিপি পরীক্ষার সময় জামার ভেতর একটা সাদা রঙের দাদু গেঞ্জি (হাফ স্লিভ) পরে আসতো। যেখানে লেখা ছিলো ..  'ভগবান আমার সহায়'। যদিও আসল সময়ে ভগবান সহায় হননি কোনোদিন। পরীক্ষার আগের দিন সারারাত জেগে পড়তাম আমি। মাথামুণ্ডু কিছুই বুঝতাম না , তবুও পড়তাম , গাঁতিয়ে যেতাম , ভুলে গেলে আবার গাঁতাতাম।

প্রথম পরীক্ষা বাংলা, যে পরীক্ষা আজ অবধি কেউ খারাপ দেয়নি। তারপর বাকি পরীক্ষা থেকেই থরহরি কম্প শুরু হয়ে যেতো সকলের। আমি কেমিস্ট্রিতে খুব দুর্বল ছিলাম। পরীক্ষাহলে আমার সামনে ছিপি বসেছে। আমি কিছুই লিখতে পারছি না। এদিকে ছিপি হুলিয়ে লিখছে পাতার পর পাতা। এতো পাতা নিচ্ছে যে ওকে রাগের চোটে একবার স্বগোতক্তি করে 'পাতাখোর' বলেই ফেললাম! তারপর নিজের রাগ প্রশমিত করে বললাম , "ভাই দেখা একটু , আমি ফেল করে যাবো রে!" ছিপি বললো, "আমি সব বানিয়ে লিখছি।" কেমিস্ট্রিতে আবার বানিয়ে লেখা যায় নাকি? এটা কি হিস্ট্রি নাকি? আমি ছিপির খাতার দিকে চোখ রাখলাম। এমা, এ তো সত্যি বানিয়ে লিখছে! যে প্রশ্ন আসেনি, সেই প্রশ্নের উত্তর লিখছে খাতা ভরাবে বলে! ছিপির হাতের লেখা ছিলো মুক্তোর মতো, দামী বিয়েরকার্ডে যেমন লেখা থাকে। আমাদের কলেজের কেমিস্ট্রির স্যার অঞ্জন বাবু ছিলেন ওর হাতের লেখার ভক্ত। পরীক্ষা শেষ হওয়ার বেশ কিছুদিন পর তিনি একদিন ছিপিকে রাস্তায় ডেকে বললেন, ''তোমার হাতের লেখাটা ভারী সুন্দর। পরীক্ষায় যে প্রশ্ন আসেনি, তুমি তারও উত্তর লিখেছো! আমি কিছু নম্বর সেখানে দিয়েছি তোমাকে।" ছিপি সেবার ৫০ এর মধ্যে ৩৪ পেয়েছিলো। খাতা দেখার পর জানা গেলো এই প্রাপ্ত নম্বরের মধ্যে কুড়ি নম্বর সে পেয়েছিলো এমন প্রশ্নের উত্তর লিখে, যেগুলো পরীক্ষায় আসেনি! "শালা কুত্তা .." ছিপির উদ্দেশ্যে এই উক্তিটা আপনা আপনিই বেরিয়ে এসেছিলো আমার মুখ দিয়ে, তবে এবার স্বগতোক্তি করে নয়।

যাইহোক , এবার অঙ্ক পরীক্ষার খাতা দেখানো দিনের কথা বলা যাক। নিখিলেশ স্যার প্রশ্নপত্র সেট করলে তাও কিছু লেখা যেতো , কিন্তু রাজশ্রী ম্যাডাম প্রশ্নপত্র তৈরি করলে ভয়ে সবার ইয়ের কালি শুকিয়ে যেতো .. পেনের। রাজশ্রী ম্যাডামের তৈরি করা অঙ্কের পেপার ছিলো সাক্ষাৎ যমদূত! দেখতে ওনাকে যতই ফিল্মের হিরোইনদের মতো হোক না কেনো, অঙ্ক পরীক্ষায় এতো কঠিন প্রশ্ন করতেন যে বলার কথা নয়! সোজা অঙ্ক একটাও নেই। কোনোমতে পরীক্ষা দিয়ে ছিপিকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, "কি রে, কেমন হলো?" ছিপি বলেছিলো , "কাল দোলার সঙ্গে ব্রেকআপ হয়ে গেলো, তাই পরীক্ষাটাও ভালো হয়নি।" ছিপি আট পেয়েছিলো অঙ্কে। ক্লাসের সবাই মনে করলো, ব্রেকআপের পরে পরীক্ষা দিয়েছে , আট পেয়েছে , এটাই অনেক। হ্যান্ডেল (এটাও একজনের কোডনেম, এর কারণও বলা যাবে না) বললো , "আমারও সিঙ্গেল ফিগার হয়েছে।" সিঙ্গেল ফিগার শুনে আন্দাজ করতে পারেনি কেউ, হ্যান্ডেল পঞ্চাশে এক পেয়েছে। সকলের ধারণা ছিলো এটাই বোধহয় সবথেকে লোয়েস্ট নম্বর হয়েছে। কিন্তু পরীক্ষার খাতা দেখতে দেখতে হঠাৎ লম্বকর্ণের বুকফাটা কান্না শুনে সবাই চমকে উঠলাম। ও কাঁদতে কাঁদতে বলছিলো, "ম্যাডাম আমাকে কিচ্ছু দেয়নি , কিচ্ছু দেয়নি ..'' বেচারা শূন্য পেয়েছিলো।

"তুই তো সবার নম্বর দেখে মজা নিচ্ছিস, তুই নিজে কত পেয়েছিস রে?" ছিপির কথায় করুন করে হেসে খাতাটা ওর দিকে বাড়িয়ে দিয়েছিলাম। চার পেয়েছিলাম .. পঞ্চাশের মধ্যে। তবে বাকিরা ইলেভেনের হাফ-ইয়ারলি পরীক্ষায় অঙ্কের প্রাপ্ত নম্বরের ট্র্যাডিশন পরবর্তীতে ভেঙে ফেললেও, আমি ভাঙতে পারিনি। আসল পরীক্ষাতে অঙ্কের ফার্স্ট পেপারেও চার পেয়েছিলাম আমি, একশোর মধ্যে। হ্যাঁ আপনারা ঠিকই ধরেছেন, এখানে বোর্ড এক্সামিনেশনের কথাই বলা হচ্ছে। তবে এই 'চার' পাওয়ার ব্যাপারটা এখন ওপেন সিক্রেট। বর্তমানে এখানে মোটামুটি যারা আমাকে চেনে এবং আমার ফেসবুকে রয়েছে, তারা সকলেই এই বিষয়টা সম্পর্কে ওয়াকিবহাল। তবে অঙ্কের ফার্স্ট পেপারে চার পেলেও সেকেন্ড পেপারে সত্তরের উপর নম্বর পেয়েছিলাম আমি। এক্সাক্টলি সংখ্যাটা মনে নেই। আসলে ভালো নম্বর তো মনে থাকে না বা লোকে মনে রাখতে দেয় না! খারাপগুলোই মনে করাতে থাকে বারবার। যাইহোক, ফিজিক্স আর বাংলাতে বিশেষ সুবিধা করতে না পারলেও কেমিস্ট্রি, বায়োলজি এবং ইংরেজিতে লেটার পেয়েছিলাম আমি। কেমিস্ট্রিতে কি করে লেটার পেয়েছিলাম ভগবান জানে! খাতা যিনি দেখেছিলেন, তিনি নিশ্চয়ই নিষিদ্ধ কিছু সেবন করেছিলেন আমার খাতা দেখার আগে। ফিজিক্স, কেমিস্ট্রি, ম্যাথমেটিক্স ছিলো আমার প্রথম তিনটি সাবজেক্ট, আর বায়োলজি ছিলো ফোর্থ সাবজেক্ট। অঙ্কের সেকেন্ড পেপারে সত্তরের উপর পেলেও, ফার্স্ট পেপারে চার পাওয়ার জন্য দুই পেপার মিলিয়ে আশির উপর নম্বর উঠলো না। স্বভাবতই ম্যাথমেটিক্স ফোর্থ সাবজেক্ট হয়ে গেলো আমার।

মার্কশিট নিয়ে বাড়ি আসার পর, আমাকে পিটিয়ে মা আমার শরীরের সমস্ত কলকব্জা ঢিলা করে দেওয়ার প্ল্যান করলেও, বাবার জন্য সেদিন সেটা সম্ভব হয়নি। বাবা বাধা দিয়ে বলেছিলো, "ওকে এখন শুধু শুধু মেরে কি হবে? আজ বলতে বাধ্য হচ্ছি, এই সবকিছু হয়েছে তোমার জন্য। যে ছেলের অঙ্কের প্রতি এত ভীতি, তার প্রধান সাবজেক্ট ম্যাথামেটিক্স রাখলে এটাই তো হবে! বাকি সাবজেক্টগুলোতে দেখেছো, আমাদের ছেলে কতটা ভালো মার্কস পেয়েছে? দোহাই তোমার, তুমি ওকে এবার ইংলিশ অনার্স নিতে দাও! সায়েন্সের স্টুডেন্ট হয়েও কিন্তু ইংলিশে লেটার পেয়েছে আমাদের ছেলে।"

কিন্তু আমার মাতৃদেবী কোনোদিনই কারোর কথা গ্রাহ্য করেননি। তাই বাবার এই কথাটাও ধোপে টিকলো না। মায়ের ইচ্ছেতেই কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্গত পশ্চিমবঙ্গের একটি প্রথম সারির কলেজে জুলজি অনার্স নিয়ে ভর্তি হলাম আমি। এতদিন আমি পড়াশোনা করতাম ঠিকই, তবে সেটা সাবজেক্টকে ভালোবেসে নয়। কিন্তু কোচ যখন প্রিয় হয়ে যায়, তখন সেই খেলাকে ভালোবেসে নিজেকে প্রমাণ করার একটা তাগিদ চলে আসে। কলেজে ভর্তি হওয়ার পর আমাদের জুলজি ডিপার্টমেন্টের পিকেবির প্রেমে পড়ে গেলাম আমি। নাহ্ , উনি কোনো মহিলা নয়, উনার নাম পীযুষ কুমার বন্দোপাধ্যায়। উনার পড়ানোর প্রেমে পড়ে গিয়েছিলাম আমি। সেই থেকেই জুলজি সাবজেক্টের প্রতি ভালোবাসা জন্মায় আমার, তার সঙ্গে ভালো রেজাল্ট করে নিজেকে প্রমাণ করার ইচ্ছেটাও প্রবল হয়ে ওঠে। এরপর আমাকে আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি।

★★★★

যাক সে কথা, যে গল্পটা বলতে আজ এখানে এসেছি, তার জন্য আবার কলেজজীবনে ফিরে যেতে হবে আমাকে। বাংলা পড়ার জন্য ক্লাস ইলেভেনে আবির বাবুর কাছে প্রাইভেটে ভর্তি হয়েছিলাম। একটা দশ ভাই বারোর ঘরে একগাদা ছেলে পড়াতেন। না না ভুল বললাম, শুধু ছেলে নয়, মেয়েও ছিলো সেই গোয়ালে। স্যার সারাক্ষণই খচে থাকতেন, অবশ্য তার পিছনেও কারণ ছিলো। আমরাও তো কেউ আর ধোয়া তুলসীপাতা ছিলাম না!

যে গোয়ালে আমরা পড়তাম, সেই ঘরের দেওয়ালে কোনো এক সাধুবাবার ছবি দেওয়া ক্যালেন্ডার ছিলো। কিছুদিন পর থেকেই সেই ছবি বদলাতে লাগলো। সাদা দাড়ি ধীরে ধীরে নীল কালিতে নীলবর্ণ ধারণ করতে শুরু করলো। শিল্পীর কালি ফুরিয়ে গেলে , অন্য কেউ কালো কালি দিয়ে দাড়ি কালো করে দিতো। এরপর একদিন সাদা চুল লাল হয়ে গেলো, তারপর পরিবর্তন হয়ে চুল সবুজ হলো (না না, এখানে রাজনীতি ঢোকানোর চেষ্টা করবেন না একদম)। সাধুবাবার কানে একাধিক দুল এঁকে দিলো কেউ, কিংবা ঝুমকো। মাথায় সিংও বাদ গেলো না। ক্যালেন্ডারে 'সোনামণি মেডিসিন' এর উপরের  সাদা অংশে নানান কল্পিত কাপেলের নাম :-  ঈপ্সিতা + চেঙ্গিস , দেবা + শীলা , দিপু + অর্চিতা।

বয়স্ক আবীর বাবু চোখে ভালো দেখতেন না। অনেকদিন পর সেই বদলে যাওয়া সাধুবাবার ছবি দেওয়া ক্যালেন্ডার দেখে ওঁর প্রায় যায় যায় অবস্থা । তিনি ওটা চেঞ্জ করে কোনো এক দেবদেবীর ছবি দেওয়া ক্যালেন্ডার ঝুলিয়ে দিলেন ওই জায়গায়। দেখে মনে হলো, সেই দেবদেবীর প্রিওয়েডিং ফটোশুটের ছবি! স্যার ভেবেছিলেন, সাধুবাবার ছবি না দিয়ে সাধুবাবার উপরমহল অর্থাৎ সরাসরি দেবদেবীর ছবি দিলে বদমায়েশি করবো না আমরা। কিন্তু , সেখানেও কেউ একজন ভগবানের উদ্দেশ্যে প্রতিবাদপত্র লিখে দেয় :-  "তুমি নেই আমি জানি। তুমি থাকলে আমি অঙ্কে চার আর ফিজিক্সে পাঁচ পেতাম না। তুমি থাকলে শ্রেয়া আমাকে রিজেক্ট করতো না। তুমি থাকলে আমার বাপ আমাকে এক টাকার বেশি পকেট মানি দিতো। তুমি থাকলে এই বুড়োভামেরর কাছে আমরা পড়তে ঢুকতাম না।"

আমরা যখন টুয়েলভে উঠলাম, তখন অনেকেই অনেকের উপর চাপ খেয়েছিলো। সেসব চাপ খুব সাঙ্ঘাতিক। দেবাশীষ রুমির প্রেমে পড়ে সাতবার 'সাথী' নামের বাংলা সিনেমাটা দেখেছিলো। কলেজ শেষে রোজ রুমির বাড়ি ফেরার রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকতো ওকে একবার দেখবে বলে। অনির্বাণ কলেজে না গিয়ে সারা দিন গঙ্গার ধারে বসে থেকে একটা সাত টাকার ধোসা আর গোটা কয়েক বিড়ি খেতো। রাজিব শ্রীময়ীকে রাস্তায় দেখলেই সাইকেল থেকে পড়ে যেতো। মৃন্ময় সাইকেল চালাতে পারতো না। চিত্রাকে লাইন মারতো, আর চিত্রা ওকে পাত্তা দিতো না । ফলে, কোনো বন্ধুর সাইকেলে চড়ে প্রায়শই মৃন্ময় জোরে জোরে কাঁদতে কাঁদতে বাড়ি ফিরতো।

যদিও আমরা কেউ প্রেম করবো এমনটা ভাবিনি। তবে বাবাই নামে আমাদের এক বন্ধু পরমার সঙ্গে প্রেম করে ফেললো। কলেজে যাওয়া ছাড়া বাবাই সবসময় পায়জামা পাঞ্জাবি পড়তো। এদিকে বাবাইয়ের বাড়ি হেব্বি কড়া। টিউশনি ছাড়া বাইরে বেরোতে দেয় না। পরমার সঙ্গে দেখা করবে বলে টিউশনির ব্যাচ কামাই করতে লাগলো। কামাই করার জন্য একটাই কারণ দেখাতো বাবাই .. 'ওঁর কোনো এক আত্মীয় মারা গেছে'। সুযোগ বুঝে কোনো সময় ওদের নিজের বাড়ি আর মামাবাড়ি যে বিশাল একান্নবর্তী পরিবারের অন্তর্গত .. সে কথা শুনিয়ে রেখেছিলো মাস্টারমশাইকে। ফ্যামিলিতে বেশী মেম্বার মানেই, বেশী ছুটি পাবে। ফলে, এক বছরে কুড়িটা কামাই মানে পাঁচটা মামা , ছয়টা মামী, তিনটে কাকী, দুটো কাকা, একটা দাদু , একটা দিদা, দুটো পিসেমশাইয়ের মৃত্যু সংবাদ দিলেই চলবে। ক্লাস টুয়েলভের শেষের দিকে একদিন বাবাইকে স্যার জিজ্ঞাসা করলেন, "কি রে, আগেরদিন এলি না?" বাবাই দুঃখ দুঃখ মুখ করে উত্তর দিলো, "স্যার আমার বড়মাসি মারা গেছিলেন, তাই আসতে পারিনি।" আবির বাবু কয়েক মুহূর্ত চুপ করে রইলেন। তারপর বললেন, "হ্যাঁ রে বাবাই, তোর পরিবারে কি মড়ক লেগেছে গত এক বছর ধরে? তোর মা-বাবা আর তুই ছাড়া বর্তমানে আর কেউ বেঁচে আছে তোদের পরিবারে?"

[Image: Images-3-1.jpg]

[Image: Animation-resize-gif-f3b601eb23d95beeb4e...911ac0.gif]


[+] 5 users Like Bumba_1's post
Like Reply
একটা অদ্ভুত ভালোলাগায় ভোরে গেলো বুকটা। সেই ছোটবেলা, কলেজ লাইফ, ফাঁকিবাজি।, পড়াশোনার প্রতি হটাৎ করে ভালোবাসা বৃদ্ধি, ক্লাসে বাংলা পড়ার সময় জানলার বাইরে তাকিয়ে লাইন দিয়ে কাকেদের দলের বাড়ির ছাদে বসে থাকা দেখা, মাঠে খেলতে গিয়ে গদাম করে পায়ে বন্ধুর ঠ্যাং বাবাজির ধাক্কা, একটু হালকা মস্তানি আর একগাদা বন্ধুত্ব। একটু লুকিয়ে ঐসব নিয়ে আলোচনা আর ভূগোলের সেই আঁকা গুলো আহা। আর সেই কবিতাটা -

ইতিহাসে পাতিহাঁস
ভূগোলতে গোল
অংকেতে মাথা নেই
হয়েছে পাগল 

কিংবা ইফ যদি ইস হয়
বাট কিন্তু নট নয়
হোয়াট মানে কি?

জানে কাহা গ্যায়ে ও দিন ❤

অপূর্ব লেখা ♥️
[+] 1 user Likes Baban's post
Like Reply
লেখাটা পড়ার পর থেকে আমি হাসতে হাসতে মরে যাচ্ছি। Big Grin আচ্ছা, ওই ক্যালেন্ডারে ভগবানের বিরুদ্ধে যে ছেলেটি প্রতিবাদপত্র লিখেছিল, সেটা তো তুমিই, নাকি? অংকে চার আর ফিজিক্সে পাঁচ  Lotpot Lotpot হিহিহিহি

[Image: Images-2-2-1.jpg]

[+] 1 user Likes Somnaath's post
Like Reply
(25-09-2023, 04:33 PM)Baban Wrote: একটা অদ্ভুত ভালোলাগায় ভোরে গেলো বুকটা। সেই ছোটবেলা, কলেজ লাইফ, ফাঁকিবাজি।, পড়াশোনার প্রতি হটাৎ করে ভালোবাসা বৃদ্ধি, ক্লাসে বাংলা পড়ার সময় জানলার বাইরে তাকিয়ে লাইন দিয়ে কাকেদের দলের বাড়ির ছাদে বসে থাকা দেখা, মাঠে খেলতে গিয়ে গদাম করে পায়ে বন্ধুর ঠ্যাং বাবাজির ধাক্কা, একটু হালকা মস্তানি আর একগাদা বন্ধুত্ব। একটু লুকিয়ে ঐসব নিয়ে আলোচনা আর ভূগোলের সেই আঁকা গুলো আহা। আর সেই কবিতাটা -

ইতিহাসে পাতিহাঁস
ভূগোলতে গোল
অংকেতে মাথা নেই
হয়েছে পাগল 

কিংবা ইফ যদি ইস হয়
বাট কিন্তু নট নয়
হোয়াট মানে কি?

জানে কাহা গ্যায়ে ও দিন ❤

অপূর্ব লেখা ♥️

হ্যাঁ, এই কবিতাগুলো আমরাও বলতাম। তবে আমরা তো পাজির পা-ঝাড়া ছিলাম, তাই এগুলোর সঙ্গে আরও বিভিন্ন কবিতা বলতাম। ক্লাস এইট থেকে আমাদের হয় সংস্কৃত, না হয় ফ্রেঞ্চ .. এই দুটোর মধ্যে যে কোনো একটা নিতেই হতো। আমি যদিও ফ্রেঞ্চ নিয়েছিলাম তবুও বাকি বন্ধুদের সঙ্গে সংস্কৃত ভাষার বাপ বাপান্ত করে ছেড়ে দিতাম। 

[Image: Ee9f4f167c2a81b00e014f2d06c6106f.gif]

আমাদের মধ্যে যারা ভদ্র সভ্য মানুষজন, তারা বলতো .. 
নরঃ নরৌ নরাঃ
বেঞ্চির উপর দাঁড়া

আর যারা আমার মতো অভদ্র অসভ্য মানুষ, তারা বলতো ..
নরঃ নরৌ নরাঃ
বাঁড়া ধরে দাঁড়া

(25-09-2023, 05:29 PM)Somnaath Wrote: লেখাটা পড়ার পর থেকে আমি হাসতে হাসতে মরে যাচ্ছি। [image] আচ্ছা, ওই ক্যালেন্ডারে ভগবানের বিরুদ্ধে যে ছেলেটি প্রতিবাদপত্র লিখেছিল, সেটা তো তুমিই, নাকি? অংকে চার আর ফিজিক্সে পাঁচ  [image] [image]  হিহিহিহি

এই না না যাঃ, আমি ফিজিক্সে মোটেও পাঁচ পাইনি। দুটো পেপার মিলিয়ে একশো কুড়ির উপরে পেয়েছিলাম। আর ক্যালেন্ডারে ওই কথা কে লিখেছিলো, এখন আর ঠিক মনে নেই। অনেকদিন আগেকার কথা তো!   Tongue
Like Reply
down memory lane  Heart Heart
[+] 1 user Likes Chandan's post
Like Reply
লেখাটা পড়ার পর কত পুরনো স্মৃতি মনে পড়ে গেল। অনেক অনেক ধন্যবাদ আমাদের এরকম একটা লেখা উপহার দেওয়ার জন্য।  thanks

[Image: Shocked-Open-Asianpiedstarling-size-restricted.gif]

[+] 1 user Likes Sanjay Sen's post
Like Reply
(25-09-2023, 03:13 PM)Bumba_1 Wrote:
|| মড়ক ||

কাহিনী এবং প্রচ্ছদঃ- বুম্বা

 আবির বাবু কয়েক মুহূর্ত চুপ করে রইলেন। তারপর বললেন, "হ্যাঁ রে বাবাই, তোর পরিবারে কি মড়ক লেগেছে গত এক বছর ধরে? তোর মা-বাবা আর তুই ছাড়া বর্তমানে আর কেউ বেঁচে আছে তোদের পরিবারে?"


last line ta jabbor!!!
[+] 1 user Likes xanaduindia's post
Like Reply
(25-09-2023, 11:05 PM)Chandan Wrote: down memory lane  [image] [image]

absolutely 

(26-09-2023, 10:08 AM)Sanjay Sen Wrote: লেখাটা পড়ার পর কত পুরনো স্মৃতি মনে পড়ে গেল। অনেক অনেক ধন্যবাদ আমাদের এরকম একটা লেখা উপহার দেওয়ার জন্য।  [image]

you're most welcome  welcome 

(26-09-2023, 11:22 AM)xanaduindia Wrote: last line ta jabbor!!!

[Image: Ee9f4f167c2a81b00e014f2d06c6106f.gif]
Like Reply
[Image: Polish-20231016-100543081.jpg]

|| মহিষাসুরমর্দিনী ||

আমরা সবাই যদিও 'মহিষাসুরমর্দিনী' কেই মহালয়া বলি, কিন্তু মহালয়া হল আসলে তিথি। মহিষাসুরমর্দিনী হল আকাশবাণী থেকে সম্প্রচারিত একটি জনপ্রিয় বাংলা বেতার অনুষ্ঠান।
১৯৩২ খ্রিস্টাব্দ থেকে আজও সম্প্রচারিত হওয়া দীর্ঘতম অনুষ্ঠান। প্রথমে সরাসরি সম্প্রচার করা হত মহিষাসুরমর্দিনী। কিন্তু ১৯৭২ সালের পর তা আর সম্ভব হয়ে ওঠেনি। তাই ১৯৬৬ সালের সংগৃহীত রেকর্ডটাই এখন বাজানো হয়। এত বছরেরও অনুষ্ঠানটি বিন্দুমাত্র মর্যাদা হারায়নি।
আসুন স্মৃতির সরণি বেয়ে স্মরণ করি মহিষাসুরমর্দিনীর সেই তিন প্রধান রূপকারকে - বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র, বানীকুমার এবং পঙ্কজকুমার মল্লিক..!! আর জেনে নেই মহিষাসুরমর্দিনী সম্পর্কিত বেশ কিছু অজানা কাহিনী..

১৯২৭ খ্রিস্টাব্দের ২৬ আগস্ট মুম্বই-এর ইন্ডিয়ান ব্রডকাস্টিং কোম্পানি নামে একটি বেসরকারি সংস্থা ১নং গার্স্টিন প্লেসে একটি ভাড়া বাড়িতে রেডিও স্টেশন স্থাপন করে। সংস্থার অধিকর্তা ছিলেন এক ব্রিটিশ কর্মকর্তা - নাম স্টেপলটন । প্রতিভার সমাবেশ ঘটেছিল শুরুর দিন থেকেই। পরিকল্পনা হয় ‘ভারতীয়’ ও ‘ইউরোপিয়ান’ এই দুই ভাগে হবে অনুষ্ঠান।  ভারতীয় প্রোগ্রামের ডিরেক্টর হিসেবে দায়িত্ব নিলেন নৃপেন্দ্রনাথ মজুমদার। কিছু দিনের মধ্যেই এলেন বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র ও বৈদ্যনাথ ভট্টাচার্য (বাণীকুমার)। যোগ দিলেন রাইচাঁদ বড়াল, হীরেন বসু। ঘোষক ও সংবাদ-পাঠক হিসেবে মোহনবাগানের ১৯১১ সালের ঐতিহাসিক শিল্ডজয়ী দলের হাফব্যাক রাজেন সেনগুপ্ত আগেই এসেছিলেন। ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে গেলেন পঙ্কজকুমার মল্লিক। বেতারকেন্দ্র থেকে একটি নিজস্ব মুখপত্র প্রকাশিত হবে, সম্পাদনার জন্য এলেন প্রেমাঙ্কুর আতর্থী। ‘বেতার জগৎ’ প্রথম প্রকাশিত হল ১৯২৯-এর সেপ্টেম্বর মাসে।

প্রেমাঙ্কুর আতর্থী একদিন বললেন, যা যা অনুষ্ঠান চলছে, তার পাশাপাশি কিছু অভিনবত্ব আনাও দরকার। লেখালেখির জন্য বাণী রয়েছে, রাই সুর দিক, বীরেন শ্লোক আওড়াক্‌…ভোরবেলায় লাগিয়ে দাও, লোকজন ভালোই নেবে। কথাটা নৃপেন মজুমদারের মনে ধরল। বাণীকুমার ভাবতে বসে গেলেন। একমাস বাদে দুর্গাপুজো। বীরেন ভদ্র বললেন, যদি পুজোকে কেন্দ্র করেই কিছু করা হয় তাতে চণ্ডীপাঠ অবশ্যই থাকবে। কেবল একটা ব্যাপারে একটু কিন্তু রয়ে গেল। বীরেন্দ্রকৃষ্ণ তো কায়স্থ, তিনি চণ্ডীপাঠ করলে, সবাই মেনে নেবেন তো? সেই সময় এই দ্বিধাগ্রস্ততা অস্বাভাবিক নয়। নৃপেনবাবু বললেন, একটা প্রোগ্রাম হবে তার আবার বামুন কায়েত কি? আমরা কি হিঁদুর মন্দিরে গিয়ে পুজো করছি? এই প্রোগ্রামে যারা বাজাবে তারা তো অর্ধেক ., খুশী মহম্মদ, আলি, মুনশি – সবাই তো বাজাবে, তা হলে তাদের বাদ দিয়ে ',দের ডেকে আনতে হয়। বাণীকুমার তখন হেসে উঠে বলেছিলেন যে, যাই হোক না কেন, তিনি বীরেনবাবু ছাড়া আর কাউকে এ কাজের জন্যে ভাববেনই না। বীরেনবাবু বাংলার সঙ্গে সংস্কৃত ভাষ্যকেও সুর বলে বাজনার সুরের সঙ্গে মিলিয়ে দিলেন। এক অন্য রূপ পেল স্তোত্রপাঠ, যা আমরা আজও শুনি। উস্তাদি যন্ত্রসঙ্গীতের সুরের সঙ্গে মিলে গেল চণ্ডীপাঠের সুর – এক অপূর্ব ধর্মীয় মেলবন্ধন।

গীতিআলেখ্য ‘মহিষাসুরমর্দিনী’ প্রথম প্রচারিত হয় ১৯৩২ সালে ষষ্ঠীর দিন। তবে তার আগের বছর, বাণীকুমার (বৈদ্যনাথ ভট্টাচার্য) ‘শ্রীশ্রীচণ্ডী’-র বিষয়বস্তু নিয়ে ‘বসন্তেশ্বরী’ নামে একটি কাব্য রচনা করেছিলেন। সে বছরই চৈত্র মাসে বাসন্তীপুজোর সময়ে ‘বসন্তেশ্বরী’ প্রচারিত হয়। তাতে সুর দিয়েছিলেন পণ্ডিত হরিশচন্দ্র বালী। অংশ নিয়েছিলেন বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ও বাণীকুমারও। সঙ্গীত পরিচালনায় ছিলেন রাইচাঁদ বড়াল। এমনই এক সময় সকলে মিলে ঠিক করলেন দুর্গাপুজোর ষষ্ঠীর সকালে এমন একটা অনুষ্ঠান করলে কেমন হয়? সেই শুরু। ১৯৩২ সালে প্রথম প্রচারিত হয় ‘মহিষাসুরমর্দিনী’। বাণীকুমার এই রচনায় সহায়তা পেয়েছিলেন পণ্ডিত অশোকনাথ শাস্ত্রীর। কয়েকটি গানে সুর দিয়েছিলেন পণ্ডিত হরিশচন্দ্র বালী ও রাইচাঁদ বড়াল। তবে বেশির ভাগ গানে সুর দিয়েছিলেন পঙ্কজকুমার মল্লিক।

১৯৩২ সালে মহাষষ্ঠীর সকালে ‘প্রত্যুষ প্রোগ্রাম’ শিরোনামে এই অনুষ্ঠান প্রথম সম্প্রচারিত হয়। পরের বছর হয় ‘প্রভাতী অনুষ্ঠান’ নামে, ১৯৩৬-এ ‘মহিষাসুর বধ’, ১৯৩৭ সালে শিরোনাম হয় ‘মহিষাসুরমর্দিনী’। তবে প্রথম দু’বছর মানে ১৯৩২ ও ১৯৩৩ সালে অনুষ্ঠানটি মহাষষ্ঠীর ভোরে সম্প্রচারিত হয়ে, ১৯৩৪ সাল থেকে মহালয়া-র ভোরে সম্প্রচারিত হতে থাকে। মাঝে কয়েক বার আবার অদলবদল হলেও অবশেষে মহালয়ার ভোরেই সম্প্রচার স্থায়ী হয়।

প্রথম কয়েক বছর সঙ্গীত পরিচালনায় পঙ্কজ মল্লিকের সঙ্গে ছিলেন  রাইচাঁদ বড়াল। এ ছাড়াও ছিলেন পণ্ডিত হরিশ্চন্দ্র বালী, সাগির খাঁ প্রমুখ।  যদিও অধিকাংশ গানের সুরারোপ পঙ্কজবাবুর। যেমন ‘বিমানে বিমানে আলোকের গানে…’  পণ্ডিত হরিশ্চন্দ্র বালী, ‘শান্তি দিলে ভরি…’ উস্তাদ সাগির খাঁ এবং ‘নিখিল আজি সকল ভোলে …’ গানটিতে রাইচাঁদ বড়াল প্রমুখ সুর প্রয়োগ করেন। প্রথম দিকে এক ঘণ্টার হিসেবে অনুষ্ঠান শুরু হলেও কোনো কোনো বছর দু’ ঘণ্টা পর্যন্ত চলেছে ‘মহিষাসুরমর্দিনী’। পরে দেড় ঘণ্টায় স্থায়ী হয়। ১৯৭২ সালে স্থায়ী ভাবে রেকর্ড হওয়ার আগে পর্যন্ত এই অনুষ্ঠানের রূপকল্পের ক্ষেত্রে বহু পরিবর্তন ঘটেছে। এমনকি ১৯৪৪ ও ১৯৪৫ বছর দু’টিতে সঙ্গীত পরিচালক পঙ্কজ মল্লিকের সঙ্গে বেতার-কর্তৃপক্ষের মনোমালিন্য হওয়ায় তিনি অনুপস্থিত ছিলেন। সে বার সঙ্গীত পরিচালনার কাজ সামলেছিলেন হেমন্ত মুখোপাধ্যায়। তিনি অবশ্য গানের সুর এক রেখেছিলেন। কিন্তু ১৯৪৫ সালে সম্পূর্ণ নতুন একটি অনুষ্ঠান হয়। সেটির যৌথ সঙ্গীতপরিচালক ছিলেন বিজনবালা ঘোষদস্তিদার ও শচীন দাশ মতিলাল। কিন্তু সেই অনুষ্ঠান একেবারেই জনপ্রিয় হয়নি। ‘মহিষাসুরমর্দিনী’ ও পঙ্কজকুমার মল্লিক-এর একই সঙ্গে প্রত্যাবর্তন ঘটে  ১৯৪৬ সালে, একই সঙ্গে  ১৯৩২ থেকে যে লাইভ সম্প্রচার চলছিল তা প্রথম বারের মতো ছেদ পড়ে কারণ, ওই বছর ১৬ অগস্ট থেকে কলকাতায় ভয়াবহ দাঙ্গা শুরু হয়, বেতার কর্তৃপক্ষ অত রাতে শিল্পীদের নিয়ে আসার ঝুঁকি নেননি ৷ ওই একটি বছর বাদ দিলে লাইভ সম্প্রচার একটানা চলে ১৯৬২ অবধি। এর পর রেকর্ডিং করা অনুষ্ঠান শোনানো হলেও, রেকর্ডারের অনুন্নত মানের জন্য ২-৩ বছর অন্তর নতুন করে রিহার্সাল দিয়ে রেকর্ডিং করা হত, তবে শেষবার স্থায়ী রেকর্ডিং হয় ১৯৭২ সালে। ১৯৬৩ থেকে ১৯৭২ এই কয়েকবছরের মধ্যে ৬ বার মোট রেকর্ডিং করা হয়, এবং ১৯৬৬ সালের রেকর্ডিং HMV কে দেওয়া হয়, যেটা আমরা বিভিন্ন জায়গায় শুনতে পাই |

প্রসঙ্গত, ১৯৭৬ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর, দেশে তখন জরুরি অবস্থা চলছে, মহালয়ার ভোরবেলা আকাশবাণী কলকাতা কেন্দ্র থেকে বেজে উঠল না চিরাচরিত ‘মহিষাসুরমর্দিনী’। তার জায়গায় নতুন অনুষ্ঠান  ‘দেবীং দুর্গতিহারিণীম্’। বাণীকুমার, বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র, পঙ্কজ কুমার মল্লিক সবাই বাদ। পরিবর্তে ধ্যানেশনারায়ণ চক্রবর্তীর লেখা আলেখ্য, শ্যামল গুপ্ত-র লেখা গান, হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের সুর আর প্রধান ভাষ্যপাঠক উত্তমকুমার। কিন্তু পত্র-পত্রিকায় সমালোচনার ঝড়, জনরোষ, চার পাশের প্রবল চাপে জনসাধারণের চাহিদাকে মর্যাদা দিতে সেই বছরই ষষ্ঠীর দিনই সম্প্রচারিত হয় ‘মহিষাসুরমর্দিনী’।

‘মহিষাসুরমর্দিনী’ শুরু থেকে স্থায়ী ভাবে রেকর্ড করে রাখার আগে পর্যন্ত বহু খ্যাতনামা শিল্পীরা গান গেয়েছিলেন, যেমন জগন্ময় মিত্র, রাধারানি দেবী, সাবিত্রী ঘোষ, ধনঞ্জয় ভট্টাচার্য, পান্নালাল ভট্টাচার্য, শচীন গুন্ত, বাঁশরী লাহিড়ি, শৈলেন মুখোপাধ্যায়, কল্যাণী মজুমদার, অখিলবন্ধু ঘোষ প্রমুখ। ‘মহিষাসুরমর্দিনী’-তে প্রতিভাবান যন্ত্রশিল্পী-সমাবেশও ঘটেছিল। বাজাতেন মুনশি (সারেঙ্গি), আলি (চেলো), খুশী মহম্মদ (হারমোনিয়াম), তারকনাথ দে (বেহালা), সুরেন পাল (ম্যান্ডোলিন), সুজিত নাথ (গিটার), দক্ষিণামোহন ঠাকুর (এসরাজ), শান্তি ঘোষ (ডবল বাস্), অবনী মুখোপাধ্যায় (বেহালা), রাইচাঁদ বড়াল (পিয়ানো)। সঙ্গীত-আয়োজনের কাজ করেছেন সুরেন্দ্রলাল দাসের পরিচালিত ‘যন্ত্রীসংঘ’, পরবর্তীকালে দায়িত্ব সামলেছেন ভি. বালসারা।

আকাশবাণী বেতার কেন্দ্রের এখনও পর্যন্ত সর্বাধিক জনপ্রিয় কালজয়ী গীতিআলেখ্য এই ‘মহিষাসুরমর্দিনী’,যা যুগে যুগে শ্রোতাদের প্রশংসা ধন‍্য।

- ★★ -

তথ্যসূত্রঃ- আকাশবাণী

[Image: Animation-resize-gif-f3b601eb23d95beeb4e...911ac0.gif]


[+] 5 users Like Bumba_1's post
Like Reply
অনেক কিছু জানলাম, শুনলাম - ভালো লাগলো 

[Image: Images-2-2-1.jpg]

[+] 1 user Likes Somnaath's post
Like Reply
who are they?
Like Reply
(16-10-2023, 12:09 PM)Somnaath Wrote:
অনেক কিছু জানলাম, শুনলাম - ভালো লাগলো 

Namaskar   Namaskar  

(16-10-2023, 02:34 PM)Chandan Wrote: who are they?

বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র, পঙ্কজকুমার মল্লিক এবং সম্ভবত বাণী কুমার। ভুল বললে কেউ শুধরে দেবেন।
[+] 1 user Likes Bumba_1's post
Like Reply
আমি এক জায়গায় পড়েছিলাম ১৯৫৬ সালের রেকর্ডিং এইচএমভি কে দেওয়া হয়। আসলে এসব নিয়ে অনেক দ্বিমত রয়েছে। তবে লেখাটা পড়ে সত্যিই সমৃদ্ধ হলাম।  Namaskar


[Image: Shocked-Open-Asianpiedstarling-size-restricted.gif]

[+] 1 user Likes Sanjay Sen's post
Like Reply
(17-10-2023, 10:08 AM)Sanjay Sen Wrote: আমি এক জায়গায় পড়েছিলাম ১৯৫৬ সালের রেকর্ডিং এইচএমভি কে দেওয়া হয়। আসলে এসব নিয়ে অনেক দ্বিমত রয়েছে। তবে লেখাটা পড়ে সত্যিই সমৃদ্ধ হলাম।  [image]


হতে পারে
Like Reply
[Image: Polish-20231018-191418049.jpg]


|| হামারি আধুরি কাহানি ||

কাহিনী এবং প্রচ্ছদঃ-  বুম্বা

মাঝরাতে হঠাৎ যেন একটা কিসের শব্দে ঘুম ভেঙে গেলো। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলাম প্রায় পৌনে দু'টো। বাথরুমে যাচ্ছিলাম, কি মনে হলো, কান পাতলাম পাশের দরজায়। ফিসফিস নয়, রীতিমতো স্বাভাবিক গলাতেই কথা বলছে অপর্ণা। কিন্তু কার সঙ্গে? নিঃশ্বাস বন্ধ করে কানটাকে দরজার একেবারে গায়ে ঠেসে নিয়ে দাঁড়ালাম। শুনতে পেলাম কথা বলার ফাঁকে ও মাঝে মাঝে হেসে উঠছে। আবার থামছে, আবার কিছু বলছে, আবার হাসছে। তাহলে কি ঘরের মধ্যে কেউ রয়েছে? নাকি মোবাইলে কথা বলছে? নাহ্ , ভাবতে পারছি না আর। দেখতে ইচ্ছে করছে নিজের চোখে। ও তো আমার পাশেই শুয়েছিলো এতক্ষন! কখন যে নিঃশব্দে উঠে গিয়েছে, খেয়ালই করিনি। নক করবো দরজায়? ডাকবো?

"অপর্ণা .. এই অপর্ণা .. তুমি কি ভেতরে?" আমার গলার আওয়াজ পেয়েই ঘরের ভেতর থেকে আসতে থাকা কথাগুলো হঠাৎ থেমে গেলো। সবকিছু নিঃস্তব্ধ হয়ে গেলো মুহূর্তের মধ্যে‌। তারমানে, এতক্ষণ ধরে আমি ঠিকই ভাবছিলাম। ঘরের মধ্যে নিশ্চয়ই কেউ রয়েছে। আচ্ছা, আমার গলার আওয়াজ পেয়ে ও কি নামলো বিছানা থেকে? নামার পর ও কি সত্যিই দরজা খুলবে? নাকি কী-হোলে চোখ রেখে দেখতে চাইবে কে ডাকছে বাইরে থেকে?

কে যেন খুব জোরে জোরে ধাক্কা দিয়ে আমার ঘুম ভাঙিয়ে দিলো। তাকিয়ে দেখি অপর্ণা। তারমানে, আমি এতক্ষণ ঘুমোচ্ছিলাম? এতক্ষণ যা কিছু দেখছিলাম, শুনছিলাম সবকিছুই কি আমার কল্পনা? "কি হয়েছে?" ওকে জিজ্ঞাসা করে জানলার বাইরে তাকিয়ে দেখি ঘুটঘুটে অন্ধকার। "ও বলছে, ওর দরজার বাইরে নাকি শব্দ হচ্ছিলো .." আমার দিকে তাকিয়ে বললো অপর্ণা।

"কার দরজায়?" অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করলাম আমি। "ওই যে, যার দরজায় তুমি এতক্ষণ আঁড়ি পাতছিলে!" আমার দিকে তাকিয়ে খিলখিল করে হেসে কথাগুলো বললো অপর্ণা।

ভালো করে তাকিয়ে দেখলাম ওর দিকে। হাল্কা গোলাপী রঙের একটা নাইটি পড়ে রয়েছে ও। সেবার ডায়মন্ড প্লাজা থেকে আমিই তো কিনে দিয়েছিলাম এটা ওকে। "আমি? কই না তো! আমি তো ঘুমাচ্ছিলাম, তুমিই তো আমাকে ডাকলে! হয়তো ইঁদুর কোনো পোকা বা অন্যকিছু দেখে, তাড়া করতে গিয়ে আওয়াজ করে ফেলেছে। যাও, তুমি গিয়ে শুয়ে পড়ো .. নাকি আমার পাশে শোবে?" খাটের পাশে টেবিলের উপর রাখা বোতল থেকে কিছুটা জল ঢকঢক করে খেয়ে নিয়ে কথাগুলো বলে অপর্ণার দিকে তাকাতে গিয়ে দেখলাম মাঝরাতে একা বসে রয়েছি আমার বিছানায়, কেউ কোত্থাও নেই।

এখন আর চমকে যাই না, কিংবা অবাকও হই না। অপর্ণা চলে যাওয়ার পর থেকে এটা এখন রোজ রাতের ঘটনা। ওইটুকু সময়েই তো ও আসে আমার কাছে, ওইটুকু সময়েই তো ওকে কাছে পাই আমি!

★★★★

অফিস যাওয়ার পথে সেদিন দেখা হলো আরতি বৌদির সঙ্গে।  ন'টার শেওড়াফুলি লোকাল .. মোটামুটি ফাঁকাই থাকে। প্রথমে চিনতে পারিনি। দেখি, এক মহিলা বারবার তাকাচ্ছে আমার দিকে। বয়স, আমাদের থেকে বেশ কিছুটা বড়ই হবে, প্রায় চল্লিশ ছুঁই ছুঁই বা হয়তো পেরিয়ে গিয়েছে। ভালো করে দেখলাম সাজগোজ একটু উগ্র। আমার মনে হলো, বয়সটাকে যেতে দিতে চাইছে না ওই মহিলা। পঁয়ত্রিশ ছত্রিশের মধ্যে আটকে রাখতে চাইছে।

লক্ষ্য করলাম, আমার দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে মুচকি হাসলো মহিলাটি। কিছুটা অপ্রস্তুতে পড়ে গেলাম আমি। কারণ আমিও তো, ওঁর দিকে তাকিয়ে দেখছিলাম। তৎক্ষণাৎ নিজের চোখটা সরিয়ে নিয়ে, কয়েক সেকেন্ড পর আবার আড়চোখে ওই দিকে তাকাতেই দেখলাম, মহিলাটি তখনো আমার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছে। তবে কি বাজে কিছু? মানে, যেমন হয় এই লাইনে। আর বেশি কিছু না ভেবে, খবরের কাগজটা খুলে ধরলাম আমার মুখের সামনে।

হঠাৎ শুনি, কে যেন ডাকছে আমার নাম ধরে। মুখের সামনে থেকে কাগজটা সরিয়ে দেখলাম ঠিক আমার উল্টোদিকের সিটে এসে বসেছে মহিলাটি। আমার দিকে তাকিয়ে হাসিমুখে বললো, "কি রে, তখন থেকে ডাকছি, চিনতে পারছিস না আমাকে? আরে, আমি আরতি বৌদি।" সত্যিই তো! আমরা যে পাড়ায় আগে থাকতাম, আমাদের দুটো বাড়ির পরে ঘোষেদের বাড়ির একতলাটায় ভাড়া এসেছিলো এরা। বছর দুয়েক ছিলো, তারপর কোথায় যেন চলে গেলো। আমরাও নতুন বাড়ি করে এখানে চলে এলাম, ভুলেই গিয়েছিলাম ওদের কথা।

অফিসের তাড়া ছিলো, তবুও হাওড়ায় নেমে বেশ কিছুটা সময় দিতে হলো আরতি বৌদিকে। "তোকে কিন্তু আমি এক দেখাতেই চিনতে পেরেছি। আগের থেকে একটু মোটা হয়েছিস আর দাড়িগোঁফ কমিয়ে ক্লিন শেভড হয়ে গেছিস। তবে যাই বলিস, তোর আগের চেহারাটাই আমার বেশি পছন্দের। লম্বা ছিপচিপে চেহারা, গালে হাল্কা দাড়ি, জিন্সের প্যান্ট আর হাতা গুটিয়ে পড়া পাঞ্জাবি .. এখনো আমার চোখের সামনে ভাসে, জানিস!" দেখলাম, হঠাৎ করেই ভ্যানিটি ব্যাগ থেকে ক্ষয়ে যাওয়া লিপস্টিকের একটা টিউব বের করে, সেটাকে ঠোঁটের পাতায় ভালো করে লাগিয়ে নিয়ে আবার বলতে শুরু করলো বৌদি, "তবে শুধু আমার নজর যে তোর উপর ছিলো, তা নয়। তুইও কিন্তু আমাকে .. আচ্ছা, দোলের দিনের ওই ঘটনাটা মনে আছে তোর? ক্লাবের পেছনটায় রঙ মাখানোর ছলে যেভাবে হঠাৎ করে আমার ব্লাউজের ভিতর হাত ঢুকিয়ে বুক দুটো ডলে দিয়েছিলিস। ভাগ্যিস সেই সময় ওখানে কেউ এসে পড়েনি, তাহলে কেলেঙ্কারি হয়ে যেত। ইশ্ , কথাগুলো ভাবলেই আমার শরীরের ভেতরটা এখনো কিরকম যেন শিরশির করে ওঠে .."

"ছাড়ো না বৌদি, অত দিনের পুরনো কথা তুলে এখন কি লাভ? তাছাড়া আমার তখনকার কথা আর সেভাবে কিছু মনেও পড়ে না। তুমি কোথায় যাবে? আমার অফিস ডালহৌসিতে, ওইদিকে গেলে তোমাকে ড্রপ করে দেবো। আসলে আমার একটু তাড়া আছে .." আরতি বৌদিকে মাঝপথে থামিয়ে দিয়ে কিছুটা বিরক্তি প্রকাশ করে কথাগুলো বললাম আমি।

"না রে, লাভ লোকসানের জন্য আমি কিছু বলছি না। একটু স্মৃতি রোমন্থন করছিলাম। ডালহৌসির দিকে যাবো না, আমি হাওড়া ময়দানের দিকে যাবো। আমার গন্তব্য, না থাক ঠিকানাটা না হয় নাই বা বললাম! তোর মতো তো গর্ব করার মতো কাজ আমি করি না।   আজ পরপর দুটো অ্যাপয়েন্টমেন্ট রয়েছে, তবে একটু বেলার দিকে।  তাই তোর সঙ্গে দাঁড়িয়ে একটু কথা বলছিলাম।" বৌদির কথাগুলো শুনে, কেন জানি না বোকার মতো প্রশ্ন করে ফেললাম, "কিসের অ্যাপয়েন্টমেন্ট? তুমি কি কোনো ইনসিওরেন্স কোম্পানির সঙ্গে যুক্ত?"

আমার কথাগুলো শুনে প্রচন্ড জোড়ে হেসে উঠলো আরতি বৌদি। তারপর নিজেকে সামলে নিয়ে আমার চোখের দিকে তাকিয়ে বললো, "আগে তো তুই ভীষণ চৌকস ছিলিস। এখন এরকম ভোঁতা হয়ে গেছিস কেনো রে? আমাদের ফ্যামিলিতে আর্নিং মেম্বার বলতে তো একমাত্র তোর দাদাই ছিলো! ফ্যাক্টরির এক্সিডেন্টে তোর দাদার হাতদুটো চলে যাওয়ার পর থেকে রোজগার একেবারেই বন্ধ হয়ে যায়। প্রভিডেন্ট ফান্ডের ওই দুটো টাকা দিয়ে আর কতদিন চলবে বল? তাই নেমে পড়লাম এই লাইনে। কোনো ইন্সুরেন্স কোম্পানিতে নয় বকুরাম, আমি একটা এসকর্ট সার্ভিসের সঙ্গে যুক্ত। প্রেম করে বিয়ে করেছিলাম তোর দাদাকে। কি ভেবে সংসার করতে এসেছিলাম, আর কোথায় পৌঁছে গেলাম! চলি রে, তোর অনেকটা সময় নষ্ট করে দিলাম। চিন্তা করিস না, এরপর থেকে পুরনো কথা আর বলবো না তোর সামনে। এমনকি তোকে দেখলে চিনতেও হয়তো পারবো না। যেটা আমাদের দু'জনের জন্যই হয়তো মঙ্গল।"

আমাকে দাঁড় করিয়ে রেখে হাওড়া স্টেশনের জনস্রোতে মিশে গেলো আরতি বৌদি। কিছুক্ষণ কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে ওখানে দাঁড়িয়ে থেকে, তারপর অফিসের উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম আমি।

★★★★

রাতে একলা রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে নিজের ছায়া দেখছিলাম। পিছনের আলো, সামনের আলো বা পাশের কোনো বাড়ির জানলা থেকে ছিটকে বের হয়ে আসা কোনো আলোর রেখা পড়ে একটা শরীরের অন্তত তিন-চারটে ছায়ার সৃষ্টি হয়। একটা কোনো ছায়া যখন লম্বা হতে হতে অস্পষ্ট হচ্ছে তখন আরেকটা ছায়া স্পষ্ট হয়ে নতুন করে সেই জায়গা দখল করে নিচ্ছে। ছায়া কিন্তু বয়সের চিহ্ন রাখেনা। পঁচিশ কিংবা বাহান্ন .. সবই একরকম।

আরে, কে এটা আমার পাশে? একেবারে আমার মতোই হাঁটা আমার মতোই হাতের এপাশ ওপাশ, মাথা ঘোরানো। কলেজ থেকে ফিরতে থাকা সবে গোঁফ-দাড়ি গজানো কোনো ছেলেই তো মনে হচ্ছে! একেবারে কিচ্ছু না থেকে বড় হতে হতে এসকেএস এর লাস্ট ক্লাস ফাঁকি দিয়ে তাড়াহুড়ো করে হাঁটা সেই ছেলেটা।

কাঁধে চামড়ার ব্যাগ, সঙ্গে একজন কলেজফেরৎ তন্বী। নীলশাড়ি .. কোথাও বৃষ্টি নামবে আচমকা। আর সঙ্গে সঙ্গে ও উধাও হবে এক নিমেষে। যেন কাউকে দেরি করানোর জন্য, যেন কারও আশায় আশায় সে আসছে। শুধু একজন কারও জন্য সব ফেলে যে ট্রেন ধরেছে, বৃষ্টি আজ তাকে সুযোগ করে দিচ্ছে। তার আসার কারণেই তো ভেজা পথঘাট, বন্ধ জানলা। তার জন্য বাতাস হঠাৎ হঠাৎ আছড়ে পড়ছে ওর শরীরে। শাড়ির আঁচল ও যেন সামলাতে পারছে না কিছুতেই।

দরজা ধাক্কা দিতে হলো না, খুললো এমনিতেই। দেখি অপর্ণা বসে রয়েছে বিছানার উপর। ওকে বললাম, "নীল শাড়ি পরা একটি মেয়ে এই এক্ষুনি ..!"

অপর্ণা বললো, "ধ্যাত, শাড়ি আবার কোথায় দেখলে? ইলেভেন টুয়েলভেও তো আমি স্কার্ট পড়েই কলেজে যেতাম। তুমি কি ওর পিছন পিছন .. আচ্ছা দেখলে ওর সঙ্গে কাউকে রাস্তায়?"

"কাকে দেখবো? কোথায়?" অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করলাম আমি।

"কেনো, তুমিই তো এইমাত্র বললে, যে তুমি নাকি .. ও আমাকে বলেছে, ওর খুব ভয় করছিলো। বৃষ্টির জন্য আটকে গিয়েছিলো কলেজে। ফাঁকা রাস্তায় ও নাকি স্পষ্ট পায়ের আওয়াজ শুনতে পাচ্ছিলো। অনেক পেছন থেকে খুব জোরে জোরে হেঁটে কেউ যেন ওকে ধরে ফেলতে চাইছে।" খিলখিল করে হেসে উঠে বললো অপর্না।

অপর্ণার কথা শুনে ভাবলাম, তারমানে আমি নিশ্চিত ছিলাম। ওর সঙ্গে একজন কেউ ছিলো। তার মানে আগের দিন রাতেও ওর ঘরে ওই যে ফিসফিস শব্দ, সেখানেও কেউ ছিলো। এবার থেকে আর কড়া নাড়বো না ওর ঘরে, ওকে আর ডাকবো না। শুধু কান লাগিয়ে শুনবো। কিন্তু অপর্ণাকে কিছু বুঝতে দিলে হবে না। আমাকে সব কিছু করতে হবে চুপি চুপি। আচ্ছা আমি কি ধীরে ধীরে পাগল হয়ে যাচ্ছি?

অফিস থেকে ছুতোনাতায় বেরিয়ে পড়তে ইচ্ছে করে আজকাল, বেরিয়েও পরি। 'এখন কোথায় যাচ্ছি' 'কি দরকারে যাচ্ছি' কেউ জানতে চাইলে, কিছু বলার চেষ্টা করে আর সময় নষ্ট করি না। কোনোমতে সহকর্মীদের প্রশ্নবাণ সামলে বেরিয়ে পড়ি। অপর্ণার কলেজ ছুটির সময় হয়ে গিয়েছে, আগে থেকেই দাঁড়িয়ে থাকতে হবে কলেজের গেটের পাশে। আমার স্থির বিশ্বাস আমার আগে ওখানে দাঁড়িয়ে রয়েছে কেউ। হয়তো অপর্ণাও ছল করে ক্লাস ফাঁকি দিয়ে বেরিয়ে আসবে রাস্তায়। তারপর হয়তো দুজনে হাত ধরে ..! আজ একেবারে কলেজের গেট থেকে ধরতে হবে ওদের। এক মুহূর্তের জন্যও চোখের বাইরে রাখা যাবে না।

দু এক ফোঁটা বৃষ্টি পড়লে পড়ুক, দুপাশের জানলা দিয়ে যে খুশি মুখ বাড়াক, আমাকে জানতেই হবে কে রয়েছে অপর্নার সঙ্গে। বাঁদিকে মিতুলদের বাড়ি পার হলেই চেনা ঘর, দরমার বেড়া টিনের চাল, পেয়ারা গাছ তলায় লেজ নাড়াতে থাকা কালো কুকুরটা। উঠুন, তারপর উঠোন ছড়িয়ে ডোবা। ডাক পাখির ছানাগুলো একেবারে অদৃশ্য থেকে ডাকতেই থাকবে ''কুবকুব কুবকুব'' করে।

প্যান্টের পকেটে হাত দিয়ে সিগারেটের প্যাকেটটা বের করে ধরাতে গেলাম। হাত দুটো অসম্ভব কাঁপছে আমার। একটার পর একটা দেশলাই কাঠি নষ্ট হয়ে চলেছে। আচ্ছা, ঘরে ঢোকার আগে অপর্ণা কি তাকাবে একবার আমার দিকে পিছন ফিরে? ওই একটি বারের জন্য চোখের উপর চোখ .. মনের তৃপ্তি হবে আমার। অনেকদিন ধরে, অনেক বৃষ্টি আর বাতাস মাথায় নিয়ে, অনেক রাস্তা পার করে এসেছি আমি। আর টেনে নিয়ে যেতে পারছি না নিজেকে। বুকের ভেতরটা কাঁপতে থাকে আমার। এতদিনের সুখের স্মৃতিগুলো এবার ভুলে যেতে ইচ্ছে করে। এবার বোধহয় তোমার কাছে যাওয়ার সময় হয়েছে আমার।

[Image: Images-3-1.jpg]



|| পাঠক বন্ধুদের উদ্দেশ্যে ||

কালের যাত্রার ধ্বনি শুনিতে কি পাও?
তারি রথ নিত্য উধাও।
জাগিছে অন্তরীক্ষে হৃদয়স্পন্দন
চক্রে পিষ্ট আধারের বক্ষ-ফাটা তারার ক্রন্দন।
ওগো বন্ধু,
সেই ধাবমান কাল
জড়ায়ে ধরিল মোরে ফেলি তার জাল
তুলে নিল দ্রুতরথে
দু’সাহসী ভ্রমনের পথে
তোমা হতে বহু দূরে।
মনে হয় অজস্র মৃত্যুরে
পার হয়ে আসিলাম
আজি নব প্রভাতের শিখর চুড়ায়;
রথের চঞ্চল বেগ হাওয়ায় উড়ায়
আমার পুরানো নাম।
ফিরিবার পথ নাহি;
দূর হতে যদি দেখ চাহি
পারিবে না চিনিতে আমায়।
হে বন্ধু বিদায়।
কোনদিন কর্মহীন পূর্ণো অবকাশে
বসন্তবাতাসে
অতীতের তীর হতে যে রাত্রে বহিবে দীর্ঘশ্বাস,
ঝরা বকুলের কান্না ব্যাথিবে আকাশ,
সেইক্ষণে খুজে দেখো, কিছু মোর পিছে রহিল সে
তোমার প্রাণের প্রানে, বিস্মৃতি প্রাদোষে
হয়তো দিবে সে জ্যোতি,
হয়তো ধরিবে কভু নামহারা স্বপ্নে মুরতি।
তবু সে তো স্বপ্ন নয়,
সব চেয়ে সত্য মোর সেই মৃত্যুঞ্জয় –
সে আমার প্রেম।
তারে আমি রাখিয়া এলাম
অপরিবর্তন অর্ঘ্য তোমার উদ্দেশ্যে।
পরিবর্তনের স্রোতে আমি যাই ভেসে
কালের যাত্রায়।
হে বন্ধু বিদায়।
তোমায় হয় নি কোন ক্ষতি।
মর্তের মৃত্তিকা মোর, তাই দিয়ে অমৃতমুরতি
যদি সৃষ্টি করে থাক তাহারি আরতি
হোক তবে সন্ধ্যা বেলা-
পূজার সে খেলা
ব্যাঘাত পাবে না মোর প্রত্যহের ম্লান স্পর্শ লেগে;
তৃষার্ত আবেগবেগে
ভ্রষ্ট্র নাহি হবে তার কোন ফুল নৈবদ্যের থালে।
তোমার মানস ভোজে সযত্নে সাজালে
যে ভাবরসের পাত্র বাণীর ত’ষায়
তার সাথে দিব না মিশায়ে
যা মোর ধূলির ধন, যা মোর চক্ষের জলে ভিজে।
আজও তুমি নিজে
হয়তো বা করিবে বচন
মোর স্মৃতিটুকু দিয়ে স্বপ্নবিষ্ট তোমার বচন
ভার তার না রহিবে, না রহিবে দায়।
হে বন্ধু বিদায়।
মোর লাগি করিয় না শোক-
আমার রয়েছে কর্ম রয়েছে বিশ্বলোক।
মোর পাত্র রিক্ত হয় নাই,
শুন্যেরে করিব পূর্ণো, এই ব্রত বহিব সদাই।
উ’কন্ঠ আমার লাগি কেহ যদি প্রতীক্ষিয়া থাকে
সে ধন্য করিবে আমাকে।
শুক্লপখক হতে আনি
রজনী গন্ধার বৃন্তখানি
যে পারে সাজাতে
অর্ঘ্যথালা কৃষ্ণপক্ষ রাতে
সে আমারে দেখিবারে পায়
অসীম ক্ষমায়
ভালমন্দ মিলায়ে সকলি,
এবার পূজায় তারি আপনারে দিতে চাই বলি।
তোমারে যা দিয়েছিনু তার
পেয়েছ নিশেষ অধিকার।
হেথা মোর তিলে তিলে দান,
করূন মুহূর্তগুলি গন্ডুষ ভরিয়া করে পান
হৃদয়-অঞ্জলি হতে মম,
ওগো নিরূপম,
হে ঐশ্বর্যবান
তোমারে যা দিয়েছিনু সে তোমারই দান,
গ্রহণ করেছ যত ঋণী তত করেছ আমায়।
হে বন্ধু বিদায়।

- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর


বিদায় বন্ধুরা। ভবিষ্যতে আর দেখা হবে কিনা, সেটা সময় বলবে। বিদায় বেলায় অন্তত একটা তৃপ্তি নিয়ে যাচ্ছি এই ভেবে যে, আমার প্রত্যেকটি থ্রেডের পাশে সমাপ্ত এই শব্দটি লেখা রয়েছে। যাওয়ার আগে নিজের online status on করে দিয়ে গেলাম। তার কারণ, আমার অবর্তমানে কেউ যেন বলতে না পারে .. আমি চলে গিয়েও রয়ে গিয়েছি। ভালো থেকো তোমরা সবাই। আর এই ফোরামকে, বিশেষ করে বাংলা বিভাগটাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য ভালো ভালো গল্প লিখতে থাকো।

[Image: Animation-resize-gif-f3b601eb23d95beeb4e...911ac0.gif]


[+] 5 users Like Bumba_1's post
Like Reply
শেষ বারের মতো হয়তো আবারো মোদের মগজের সাময়িক মিলের উদাহরণ রেখে গেলে। যেটা এই মাত্র ছেড়েছি তার একটা ছোট্ট ব্যাপারের সাথে আবারো এই অসাধারণ গল্পের কি অদ্ভুত মিল। দুজনের ভাবনার মাঝে কোথাও হয়তো...... যাকগে এই সৃষ্টি থ্রেডে তোমার নিজের সৃষ্টি করা প্রতিটা লেখা আমাদের নানাভাবে খুশি করেছে, অনেক কিছু বুঝিয়ে গেছে, আবার অনেক কিছু জানতেও পেরেছি। এই লেখাতেও সেই একই জাদু খুঁজে পেলাম।

শেষের লাইন গুলো কি বীভৎস অথচ কি অদ্ভুত সুন্দর। জীবনটাকে লেখার মাধ্যমে আয়নায় রূপান্তরিত করতে লেখকরাই পারে। গর্ব কোরো হে লেখক যে তুমি তা বারবার করতে পেরেছো।

নিজের খেয়াল রেখো। আর সব ঠিক হয়ে যাবে। আবার বুম্বা আসিবে ফিরে এই গসিপির বুকে। এই সৃষ্টি থ্রেড থেমে থাকবেনা। আরও অনেক লেখা আসবে এখানে। যা সেই বুম্বা লিখবে আমাদের জন্য। ❤❤❤


কটা লাইন তোমার জন্য -

এই সমাজের অন্ধকারকে ঠেলে এগিয়ে যাবার ক্ষমতা আমার নেই, তাই আলোর সাহায্য নিয়ে আমি পায়ে হেঁটে এগোই। আমি ভীতু নই কিন্তু আমি অসহায়। তবু আমি হারবো না। কলম জোরে তুফান তুলে সমস্ত অন্ধকার কাটিয়ে আমি এগিয়ে যাবো নতুনদের জাগাতে। আমি যে লেখক।
[+] 1 user Likes Baban's post
Like Reply
বিদায় বেলায় এই সৃষ্টি থ্রেডের সেরা রত্নটি উপহার দিয়ে গেলে ভাই আমাদের  Heart শেষের কয়েকটি লাইন পড়ে চোখে জল এসে গেল। থাক, আর কিছু বলতে পারছিনা এই মুহূর্তে।

[Image: Shocked-Open-Asianpiedstarling-size-restricted.gif]

Like Reply




Users browsing this thread: 1 Guest(s)