08-09-2023, 08:34 PM
- "কিন্তু কি স্যার? আমি আপনাদের সব শর্তে রাজি। শুধু আমার চাকরিটা যেন না যায়, সেটা একটু দেখবেন।
- "দেখবো দেখবো সব দেখবো। আমরাও তোমাকে দেখবো, তুমিও আমাদেরকে দেখবে। তাহলেই তো পারস্পরিক মেলবন্ধনটা বজায় থাকবে। আমাদের ফ্যাক্টরির পেছনে পশ্চিম পাড়ার 'সুর এবং ছন্দম' কলেজের গানের দিদিমণি রেবতী ম্যাডামকে মনে আছে তোমার? গত বছর আমাদের কোম্পানির অ্যানুয়াল ফাংশনে গান গাইতে এসেছিলেন উনি। তোমার সঙ্গে তো ভালোই আলাপ হয়েছিলো। একসঙ্গে ছবিও রয়েছে তোমাদের দু'জনের। মনে পড়েছে?
- "হ্যাঁ স্যার, মনে পড়েছে। কিন্তু আমাকে কি করতে হবে?
- "তুমি কাল এয়ারপোর্টে নেমে বাড়িতে না গিয়ে সোজা অফিসে আসবে। ওখানকার ফ্যাক্টরিতে যে রিপোর্ট সাবমিট করেছো, সেটা আমার চেম্বার এসে আমাকে দেবে। বাকিটা আমি ম্যানেজ করে নেবো। এটা গেলো অফিশিয়াল পার্ট। এবার লাগেজপত্তর অফিসে রেখে সোজা চলে যাবে 'সুর এবং ছন্দম' কলেজের সামনে। ওখানে রেবতী ম্যাডাম তোমার জন্য অপেক্ষা করবে। ওনাকে নিয়ে ডক্টর প্রমোদের নতুন যে প্রাইভেট ক্লিনিকটা হয়েছে, সেখানে যাবে। ওকে ক্লিনিকে পৌঁছে দিয়ে তোমার ছুটি, তারপর বাড়ি চলে যাবে। এই কাজটা যদি তুমি করতে পারো, তাহলে তোমার চাকরি খাওয়ার ক্ষমতা কারোর বাবার থাকবে না। এমনকি এই জুলাইতে প্রমোশনটাও পেয়ে যেতে পারো, তার সঙ্গে ডবল ইনক্রিমেন্ট। এবার বলো, করতে পারবে কিনা এই কাজটা!"
- "স্যার এই কাজটা করার সঙ্গে আমাদের কোম্পানির, আই মিন আমার চাকরির কি সম্পর্ক? তাছাড়া ওই রেবতী ম্যাডামকে আমি কেনো নিয়ে যাবো ক্লিনিকে? উনি তো একাই যেতে পারেন। তাছাড়া ওনার কি হয়েছে, সেটাও তো আমি জানিনা .."
- "আরে বাবা, কাজটা করার সঙ্গে তোমার চাকরির কোনো সম্পর্ক নেই। উনার গলব্লাডারে কি একটা সমস্যা হয়েছে। সেটা দেখাতেই উনি আসতে চান ডক্টর প্রমোদের নতুন ক্লিনিকে। ওখানে তো অনেক বিভাগের ডাক্তাররা বসে। ডক্টর কুন্ডুর কাছে অ্যাপয়েন্টমেন্ট নেওয়া আছে ওনার। নতুন ক্লিনিকটা উনি চেনেন না, তাই প্রমোদ বলেছে অফিস থেকে একজন গিয়ে উনাকে নিয়ে গিয়ে পৌঁছে দেবে। এই পৌঁছে দেওয়ার কাজটাই তোমাকে করতে বলা হচ্ছে। এতে এত প্রশ্নের কি আছে বুঝতে পারছি না! তোমাকে তো কাউকে খুন করতে বলা হয়নি। তুমি ওনাকে চেনো এবং উনিও তোমাকে চেনেন, তাই পাঠানো হচ্ছে তোমাকে। তুমি না করতে চাইলে না করবে, কাজটা অন্য কেউ করে দেবে। এতে অসুবিধার কিছু নেই।"
- "না না স্যার, আপনি একদম চিন্তা করবেন না। আমি অবশ্যই উনাকে পৌঁছে দেবো ক্লিনিকে।"
এরপর আরও দু-একটা অফিসিয়াল কথাবার্তা হওয়ার পর ফোন রেখে দিলো রবার্ট।
তখন হার্জিন্দারের মুখে ডক্টর প্রমোদের নামটা শোনার পর থেকেই বুকের ভেতরটা কিরকম যেন ধুকপুক করছিলো নন্দনার। সেদিন তিনজনের মধ্যে ওই লোকটাকেই তার সব থেকে বেশি ভয় লেগেছিলো। 'ডাক্তারবাবু যদি তাকে সত্যি সত্যি ফোন করে, তাহলে সে কি কথা বলবে ওই লোকটার সঙ্গে?' এইসব সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতে রাতের খাওয়ার সেরে বিছানার উপর এসে বসলো নন্দনা।
ঘড়িতে সাড়ে ন'টা বাজে। আজ একটু তাড়াতাড়িই ডিনার হয়ে গেছে তাদের। বাপ্পা তার মায়ের পাশে বসেই পরীক্ষার পড়া পড়ছিলো। এমন সময় পাশে রাখা মোবাইলটা বেজে উঠলো তার। ফোনটা তুলে নিয়ে দেখলো একটা আননোন নম্বর থেকে ফোন এসেছে। কলটা রিসিভ করে কাঁপা কাঁপা গলায় "হ্যালো .." বললো নন্দনা।
- "আমি ডক্টর গঞ্জালভেস বলছি .."
ফোনের অপরপ্রান্তে প্রমোদের গুরু গম্ভীর গলা শুনে পিলে চমকে গেলো নন্দনার। গলাটা একটু ঝেড়ে নিয়ে দু'একবার ঢোঁক দিলে বললো, "হ্যাঁ, ব..বলুন!"
- "ডিনার করছিলে নাকি?"
- "না, খাওয়া হয়ে গেছে। একটু আগে খেয়ে উঠলাম।"
- "গুড, তাড়াতাড়ি ডিনার করে নেওয়া হেল্থের পক্ষে ভালো। এখন কি করছো? টিভি দেখছো, না শুয়ে আছো?"
- "টিভি আমি খুব একটা দেখি না। ছেলের দু'দিন পর ইতিহাস পরীক্ষা, ও পড়ছে আমি পাশে বসে আছি।"
- "কালকের জন্য স্পেশাল কিছু মেনুর প্রিপারেশন করে রাখোনি?"
- "কালকের জন্য? মানে? আমি ঠিক আপনার কথা বুঝতে পারলাম না স্যার।"
- "সেকি, আমি তো বাংলাতেই বললাম। না বুঝতে পারার তো কথা নয়? তোমার পতিদেব তো কালকে আসছে, তাই বলছিলাম ওর জন্য কোনো স্পেশাল মেনু অ্যারেঞ্জ করে রাখছো কিনা আগের থেকে .."
ডক্টর প্রমোদের মুখে কথাগুলো শুনে আকাশ থেকে পড়লো নন্দনা। আগামীকাল তার স্বামী অফিস ট্যুর থেকে ফিরছে অথচ সে-ই জানেনা? তার স্বামীর অফিসের ডাক্তারের কাছ থেকে তাকে শুনতে হলো এই কথা? সেদিন ফোনে স্বামীর সঙ্গে কথা না বলে ছেলেকে ফোনটা ধরিয়ে দিয়েছিল বলে এত রাগ পুষে রেখেছে তার উপর মানুষটা? নাকি তার ভাসুরের বলা কথাগুলোই ঠিক? সে এখন তার স্বামীর কাছে घर की मुर्गी दाल बराबर হয়ে গেছে! "আ..আপনি কোথা থেকে খবর পেলেন? অফিস থেকে নিশ্চয়ই!" মৃদুকন্ঠে জিজ্ঞাসা করলো নন্দনা।
- "তোমার কথা শুনে মনে হচ্ছে তুমি খবরটা জানতে না, আমার থেকেই প্রথম শুনলে। আমি কি ঠিক বললাম?"
"আজ্ঞে, হ্যাঁ স্যার। আপনার থেকেই প্রথম শুনলাম। ও আমাকে জানানোর প্রয়োজন বোধটুকু করেনি .." কথাটা বলেই ফোঁপাতে শুরু করলো নন্দনা। সেটা দেখে, "কি হয়েছে মাম্মাম? তুমি কাঁদছো কেনো?" পাশে বসে থাকা বাপ্পা প্রশ্ন করে উঠলো। "ও কিছু নয় সোনা, চোখে কিছু একটা পড়েছে। তুমি মন দিয়ে পড়ো। অন্যদিকে কান দিও না।" এইটুকু বলে ছেলেকে বিরত করলো সে।
ক্রন্দনরতা নন্দনার ভরসার একমাত্র মানুষ হয়ে উঠতে এই সুবর্ণ সুযোগের সদ্ব্যবহার করে সান্তনা দেওয়ার ভঙ্গিতে প্রমোদ বললো, "কেঁদোনা নন্দনা, তোমার কষ্টটা আমি বুঝি। নিজের স্বামীর আসার খবর যদি বাইরের কারো কাছ থেকে শুনতে হয়, তাহলে সেটা তার স্ত্রীর কাছে শুধু দুঃখেরই নয়, অপমানেরও বটে। তবে তুমি যদি মনে করো, চিরন্তন এটা তোমার উপর রাগ বা অভিমান করে করেছে, তাহলে তুমি ভুল করছো। আর একটা কথা, খবরটা মোটেও আমি অফিস থেকে পাইনি। অফিসের ট্যুর তো ওর সাতদিনেই শেষ হয়ে গিয়েছিলো। ওর আসার খবরটা গতকাল রাতে ও নিজে ফোন করে আমাকে দিয়েছে। যদিও এর পেছনে ওর নিজেরই একটা স্বার্থ রয়েছে। তবে সেটা আমাকে জিজ্ঞাসা করো না প্লিজ, আমি বলতে পারবো না।"
উল্টোদিকের মানুষটার মনে উপর্যুপরি সন্দেহের আগুন জ্বালিয়ে দিয়ে তারপর সাইলেন্ট মোডে চলে যাওয়ার অভিনয় করার প্রমোদের এই পুরনো চাল একশো শতাংশ সফল হলো। কাঁদো কাঁদো গলায় নন্দনা বলে উঠলো, "প্লিজ ডাক্তারবাবু, আমার কাছ থেকে কিছু লুকাবেন না। আমার দিব্যি রইলো, সব কথা খুলে বলুন আমাকে।"
- "কথাগুলো বললে আমার বন্ধুর প্রতি বিশ্বাসভঙ্গ করা হবে। কিন্তু মেয়েদের কান্না আবার আমি একদম সহ্য করতে পারি না তাই বলতে বাধ্য হচ্ছি। 'বন্ধু' শব্দটা বললাম বলে অবাক হলে, তাইতো? তোমার ধারণা ছিলো হার্জিন্দার তোমার স্বামীর সব থেকে কাছের মানুষ এই ফ্যাক্টরিতে। সেটা ঠিক নয়, ও আমাকে নিজের সবথেকে কাছের বন্ধু মনে করে, তাই সব কথা শেয়ার করে। তাছাড়া আমার সাহায্যও তো ওর লাগে মাঝেমধ্যে। এই যেমন ধরো, হঠাৎ করেই জুট ইন্সপেকশনের নাম করে বাইরে ক'দিন ঘুরে আসা। এতে তোমার স্বামীর রথ দেখা এবং কলা বেচা দুটোই হয়ে যায়। মানে আমি বলতে চাইছি, নিজের বান্ধবীকে নিয়ে অফিস ট্যুরে গেলো, তারপর সাত দিনের জায়গায় দশ দিন কাটিয়ে একজন শান্তশিষ্ট পত্নীনিষ্ঠ ভদ্রলোক হয়ে বাড়িতে ফিরে এলো। আমি মালিকপক্ষের লোক, তাই ট্যুরে যাওয়ার সুবিধাটা ওকে আমি করে দিই। চিরন্তনের দাদা একদম ঠিক কথাই বলেছে .. এবারের ট্যুরে সঙ্গে করে ও আমাদের পশ্চিম পাড়ার 'সুর এবং ছন্দম' নামের ওই কলেজটার গানের দিদিমণি রেবতী ম্যাডামকে সঙ্গে করে নিয়ে গেছে। তোমাকে না বলার জন্য ও আমার কাছে প্রমিস করিয়ে নিয়েছিলো, তাই বলতে পারিনি। তাছাড়া তোমার সঙ্গে তো আমার পরিচয়ও ছিলো না এতদিন। কিন্তু এখন তোমার কান্না দেখে নিজেকে আর আটকাতে পারলাম না। এর আগেও অনেকবার সঙ্গে করে ওই গানের দিদিমণিকে নিয়ে গেছে তোমার স্বামী। এবার এত তাড়াতাড়ি চলে আসার কারণ, কাল রাতে প্রেগন্যান্সি কিট দিয়ে পরীক্ষা করে দেখা গেছে মাগী দুই মাসের পোয়াতি। এখন এখানে এসে পেটটা তাড়াতাড়ি খসাতে চায়, সেজন্যই আমাকে ফোন করেছিলো। কাল এয়ারপোর্ট থেকে রেবতীকে নিয়ে সোজা আমার ক্লিনিকে যাবে চিরন্তন। সেখানে কাজকর্ম মিটিয়ে তারপর বাড়িতে ফিরবে। এটাই তোমার হোয়াটসঅ্যাপ নাম্বার তো? তোমাকে ছবি তুলে প্রমানস্বরূপ পাঠিয়ে দেবো কাল সকালে।"
কথাগুলো শোনার পর নন্দনার এতক্ষণ ধরে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কান্নাটা ক্রমশ হাউ হাউ করে কাঁদায় পরিণত হলো। "এসব কি বলছেন ডাক্তারবাবু? আমি তো ভাবতেই পারছি না ও এতটা নিচে নামতে পারে! কি করবো আমি?" ক্রন্দনরতা নন্দনা কথাগুলো বলে তার ছেলে বাপ্পাকে বুকে জড়িয়ে ধরলো। তারপর তাকে চোখের ইশারায় বইপত্র বন্ধ করে শুয়ে পড়তে বললো।
- "পুরুষরা চিরকাল অন্যায় করে যাবে আর সেই অন্যায়ের শিকার হয়ে নারীরা সবসময় কাঁদবে কেনো, আমাকে বলতে পারো? এখন কাঁদার সময় নয়, তোমার স্বামীকে ছেড়ে চলে যাওয়ারও সময় নয়, আবার স্বামীর কাছে কৈফিয়ত চাওয়ারও সময় নয়। কারণ তুমি ওকে কিছু জিজ্ঞাসা করলে ও তোমাকে বানিয়ে বানিয়ে হাজারটা মিথ্যা কথা বলবে। তুমি তো কোনো অপরাধ করোনি, তাই স্বামীর কাছে থেকেই ওকে দেখিয়ে দাও অবহেলা কাকে বলে, মানুষকে ইগনোর করা কাকে বলে। নিজের শর্তে বাকি জীবনটা কাটাও কিন্তু সংসার না ভেঙে। কারণ, তোমাদের একটা সন্তান হয়ে গেছে। সেদিনকে আমরা তোমার কোয়ার্টারে যাওয়ার পর এবং চলে আসার পর তুমি মনে মনে গিলটি ফিল করছিলে সেটা আমি ভালো করেই জানি। তাই আমি শুধু তোমার স্বামীর চরিত্রটা তোমাকে চিনিয়ে দিলাম। যাতে ভবিষ্যতে তুমি আর অপরাধবোধে না ভোগো!"
- "হুঁ .. আপনি ঠিকই বলেছেন, ওরকম মানুষের জন্য নিজেকে সব সময় ঠিক প্রমাণ করার দায় এখন থেকে আমার আর নেই।
- "যাগ্গে, চিরন্তনের কথা বাদ দাও। আচ্ছা, ওর দাদা কাল কখন এসেছিলো তোমার কোয়ার্টারে?"
- "উনি ওর নিজের দাদা নয়, দূর সম্পর্কের দাদা। বেলার দিকে এসেছিলেন উনি .."
- "তারপর?"
- "তারপর মানে?"
"শালা, হামলোগ তুমহে চুতিয়া বানা রাহা হ্যায় .. ইয়ে তো ঠিক হ্যায়। লেকিন ওহ আদমি ঝুট কিঁউ বোলা, ইয়ে সমঝমে নেহি আরাহা হ্যায়।" বিড়বিড় করে কথাগুলো বললো ডক্টর প্রমোদ। "কি..কিছু বললেন ডাক্তার বাবু? আমি ঠিক শুনতে পেলাম না .." জানতে চাইলো নন্দনা।
- "আমি বললাম, যে তোমার স্বামীর ব্যাপারে এতগুলো কথা বললো তোমাকে, তোমার সেই ভাসুরকে তো একটু কাল্টিভেট করতে হচ্ছে। কি করে লোকটা? রাতে ছিলো নাকি চিরন্তনের ওই দাদা তোমার কোয়ার্টারে?"
- "উনি তন্ত্রসাধনা করেন, তারাপিঠে থাকেন। মাঝে মাঝে বিভিন্ন আত্মীয়দের বাড়িতে ঘুরে বেড়ান। উনার টাকার কোনো অভাব নেই। হ্যাঁ মানে উনি রাতে ছিলেন, ভোরবেলা চলে যান।"
- "তন্ত্রসাধনা করে তোমার ভাসুর? একটা তান্ত্রিক তোমার বাড়িতে কাল সারারাত ছিলো? যে আবার নাকি তার ভাইয়ের ব্যাপারে এ কথাগুলো তোমাকে বলেছে! তা, চিরন্তন জানে ওর দাদা কাল ছিলো কোয়ার্টারে?"
- "না জানে না, আর ওঁকে কিছু বলারও দরকার নেই। কারণ উনিও তো সবকিছু আমাকে বলে করেন না।"
- "দ্যাট'স লাইক এ গুড গার্ল। আমি এই নন্দনাকেই তো দেখতে চাই। ঠিক আছে, আমি কিছু বলবো না ওই ব্যাপারে তোমার হাজব্যান্ডকে। তবে তুমিও কিন্তু আমি যে কথাগুলো তোমাকে বললাম, সেগুলো জিজ্ঞাসা করো না চিরন্তনকে। সেদিনকে যে পড়ে গেলে, তারপর থেকে তোমার কোমরের ব্যথা এখন কেমন আছে?"
- "আগের থেকে অনেকটাই কমেছে।"
- "কাল রাতে এক্সারসাইজ ভালোই হয়েছে। কি বলো!"
- "মানে?"
- "কিছু না, বাদ দাও। বলছিলাম ছেলে শুয়ে পড়েছে, না এখনো পড়ছে?"
- "শুয়ে পড়েছে .."
- "আর তুমি?"
- "আমি বসে আছি, একটু পরে ঘুমাতে যাবো।"
- "মানে আমি ফোনটা রেখে দিলেই তুমি ঘুমোতে চলে যাবে?"
- "হ্যাঁ মানে না মানে তা নয়, দু-একটা কাজ করে তারপর শুতে যাবো।"
- "কি কাজ করবে?"
- "এ আবার কি রকম প্রশ্ন ডাক্তারবাবু! কত রকমের কাজ থাকে মানুষের। শোওয়ার আগে প্রতিদিন ক্রিম মাখি আমি। সদর দরজাটা ঠিকঠাক বন্ধ হয়েছে কিনা দেখতে হবে, এরপর ঘরের সমস্ত আলো নেভাতে হবে, তারপর বাথরুম থেকে ঘুরে এসে জল খেয়ে শুয়ে পড়বো।"
- "বাহ্ বাহ্ খুব ভালো। তারমানে তুমি নাইট ক্রিম মাখো! রাতে কি শাড়ি পড়ে ঘুমাও?"
- "না .."
- "তাহলে, নাইটি?
- "হুঁ .."
- "ওই আমরা যেদিনকে গেছিলাম, সেদিন যেরকম নাইটি পড়েছিলে সেরকম নাইটি?"
- "না মানে ওটা তো ওইদিনকে ভুল করে .. এমনি সাধারণ নাইটি হয় সেরকম।"
- "এমনি সাধারণ নাইটি মানে? স্লিভলেস তো? আচ্ছা হার্জিন্দার যেদিন তোমাকে বাথরুমে নাইটি পরা অবস্থায় দেখেছিলো, সেইরকম নাইটি?
- "কি জানি, হবে হয়তো .."
- "হবে হয়তো মানে? তোমার কি কয়েক লক্ষ নাইটি রয়েছে? নাকি ঘটনাটা এক বছর আগে ঘটেছিল যে তোমার মনে নেই! এখন স্লিভলেস নাইটি পড়ে রয়েছো তো?"
- "হুঁ .."
- "কালার?"
- "কেন বলুন তো?"
- "আমি মজা করার জন্য তোমাকে এত রাতে নাইটির কালার জিজ্ঞাসা করছি না। আমি একজন ডাক্তার, কথাগুলো যখন বলছি, নিশ্চয়ই তার একটা কারণ আছে। যেটা প্রশ্ন করছি সেটার উত্তর দাও। কি রঙের নাইটি পড়ে রয়েছো এখন?"
- "নীল রঙের .."
- "ডিপ ব্লু না লাইট ব্লু? গাঢ় না হাল্কা নীল?"
- "একটু গাঢ় আছে .."
- "রাতে কখনো ডিপ কালারের কিছু পরে শোবে না। এতে ঘুম ভালো হয় না। বিছানার চাদর, বালিশের ওয়ার থেকে শুরু করে জামাকাপড় এমনকি আন্ডার গার্মেন্টস লাইট কালারের রাখবে সবসময়। আচ্ছা ইনারের কথা বলতে মনে পড়লো তুমি রাতের বেলায় নাইটির নিচে ব্রা আর প্যান্টি পরে শোও তো?"
কোনো উত্তর এলো না ফোনের অপরপ্রান্ত থেকে। এক সেকেন্ড দুই সেকেন্ড তিন সেকেন্ড করে প্রায় কুড়ি সেকেন্ড অতিবাহিত হয়ে গেলো। "কি হলো ঘুমিয়ে পড়লে নাকি? আমি যেটা জিজ্ঞাসা করলাম, তার উত্তর দাও। তোমার কথা মেনে নিয়ে আমি রাজি হলাম যে তোমার বরকে তার দাদার আসার ব্যাপারে এবং থাকার ব্যাপারে কিচ্ছু বলবো না। অথচ তুমি আমার প্রশ্নের ঠিকঠাক উত্তরই দিতে চাইছো না।" বিরক্তি প্রকাশ করে কিছুটা উচ্চকণ্ঠে কথাগুলো বললো ডক্টর প্রমোদ।
- "হ্যাঁ প..পড়েছি .."
- "প্যান্টি পড়ে ভালোই করেছো। কারণ তোমাদের বাড়িতে যা সাপের উপদ্রব! বলা যায় না নাইটির তলা দিয়ে গর্তের মধ্যে ঢুকে যেতে পারে। আচ্ছা গর্তের চারপাশে কি জঙ্গল হয়েছে, নাকি পরিষ্কার? যাগ্গে যাগ্গে, বাদ দাও ওসব কথা। একজন ডাক্তার হিসেবে তোমাকে বলছি, রাতে শোওয়ার সময় কোনোদিন ব্রা পড়ে শোবে না। আমি কখনোই বলছি না রাতে ব্রা পড়ে শুলে ব্রেস্ট ক্যান্সার হবে। কিন্তু শতাংশ হিসেবে এর সম্ভাবনা ০.১% হলেও এটাও বেস্ট ক্যান্সারের একটা কারণ। তাছাড়া আষ্টেপৃষ্ঠে সবসময় বুবস দুটোকে বেঁধে না রেখে মাঝে মাঝে ওদেরও মুক্ত বিহঙ্গের মতো ছেড়ে দেওয়া উচিৎ। এতে যে রক্ত চলাচল স্বাভাবিক হয় শুধু তাই নয়, ব্রেস্টের শেপটাও ঠিক থাকে।"
- "ও আচ্ছা .."
- "ও আচ্ছা মানেটা কি? তুমি কি আমার কথাগুলো এক কান দিয়ে শুনে আরেক কান দিয়ে বের করে দিলে? খোলো, এখনই খোলো ব্রেসিয়ারটা।"
- "এখন, মানে এখন কি করে খুলবো? এখন তো কথা বলছি আপনার সঙ্গে .."
হঠাৎ করেই ফোনটা কেটে গেলো। তারপর কয়েক মুহূর্তের মধ্যেই আবার ফোনের রিংটোন বেজে উঠলো। নন্দনা ভালো করে তাকিয়ে দেখলো এবার হোয়াটসঅ্যাপে কল করেছে ডাক্তারবাবু। কিন্তু ঘটনাটা এত তাড়াতাড়ি ঘটলো, এবং অ্যান্ড্রয়েড ফোনের ব্যবহার সম্পর্কে অতটা চৌকস না হওয়া নন্দনা বুঝতে পারলো না ওটা অডিও কল নাকি ভিডিও কল। সে ভাবলো ফোনটা কেটে যাওয়ার পর ডাক্তারবাবু হয়তো তাকে আবার ফোন করে, না পেয়ে হোয়াটসঅ্যাপে ভয়েস কল করেছে। তাই বিছানার উপর বসে থাকা অবস্থাতেই কলটা রিসিভ করে ফেললো মূর্খ নন্দনা।
- "দেখবো দেখবো সব দেখবো। আমরাও তোমাকে দেখবো, তুমিও আমাদেরকে দেখবে। তাহলেই তো পারস্পরিক মেলবন্ধনটা বজায় থাকবে। আমাদের ফ্যাক্টরির পেছনে পশ্চিম পাড়ার 'সুর এবং ছন্দম' কলেজের গানের দিদিমণি রেবতী ম্যাডামকে মনে আছে তোমার? গত বছর আমাদের কোম্পানির অ্যানুয়াল ফাংশনে গান গাইতে এসেছিলেন উনি। তোমার সঙ্গে তো ভালোই আলাপ হয়েছিলো। একসঙ্গে ছবিও রয়েছে তোমাদের দু'জনের। মনে পড়েছে?
- "হ্যাঁ স্যার, মনে পড়েছে। কিন্তু আমাকে কি করতে হবে?
- "তুমি কাল এয়ারপোর্টে নেমে বাড়িতে না গিয়ে সোজা অফিসে আসবে। ওখানকার ফ্যাক্টরিতে যে রিপোর্ট সাবমিট করেছো, সেটা আমার চেম্বার এসে আমাকে দেবে। বাকিটা আমি ম্যানেজ করে নেবো। এটা গেলো অফিশিয়াল পার্ট। এবার লাগেজপত্তর অফিসে রেখে সোজা চলে যাবে 'সুর এবং ছন্দম' কলেজের সামনে। ওখানে রেবতী ম্যাডাম তোমার জন্য অপেক্ষা করবে। ওনাকে নিয়ে ডক্টর প্রমোদের নতুন যে প্রাইভেট ক্লিনিকটা হয়েছে, সেখানে যাবে। ওকে ক্লিনিকে পৌঁছে দিয়ে তোমার ছুটি, তারপর বাড়ি চলে যাবে। এই কাজটা যদি তুমি করতে পারো, তাহলে তোমার চাকরি খাওয়ার ক্ষমতা কারোর বাবার থাকবে না। এমনকি এই জুলাইতে প্রমোশনটাও পেয়ে যেতে পারো, তার সঙ্গে ডবল ইনক্রিমেন্ট। এবার বলো, করতে পারবে কিনা এই কাজটা!"
- "স্যার এই কাজটা করার সঙ্গে আমাদের কোম্পানির, আই মিন আমার চাকরির কি সম্পর্ক? তাছাড়া ওই রেবতী ম্যাডামকে আমি কেনো নিয়ে যাবো ক্লিনিকে? উনি তো একাই যেতে পারেন। তাছাড়া ওনার কি হয়েছে, সেটাও তো আমি জানিনা .."
- "আরে বাবা, কাজটা করার সঙ্গে তোমার চাকরির কোনো সম্পর্ক নেই। উনার গলব্লাডারে কি একটা সমস্যা হয়েছে। সেটা দেখাতেই উনি আসতে চান ডক্টর প্রমোদের নতুন ক্লিনিকে। ওখানে তো অনেক বিভাগের ডাক্তাররা বসে। ডক্টর কুন্ডুর কাছে অ্যাপয়েন্টমেন্ট নেওয়া আছে ওনার। নতুন ক্লিনিকটা উনি চেনেন না, তাই প্রমোদ বলেছে অফিস থেকে একজন গিয়ে উনাকে নিয়ে গিয়ে পৌঁছে দেবে। এই পৌঁছে দেওয়ার কাজটাই তোমাকে করতে বলা হচ্ছে। এতে এত প্রশ্নের কি আছে বুঝতে পারছি না! তোমাকে তো কাউকে খুন করতে বলা হয়নি। তুমি ওনাকে চেনো এবং উনিও তোমাকে চেনেন, তাই পাঠানো হচ্ছে তোমাকে। তুমি না করতে চাইলে না করবে, কাজটা অন্য কেউ করে দেবে। এতে অসুবিধার কিছু নেই।"
- "না না স্যার, আপনি একদম চিন্তা করবেন না। আমি অবশ্যই উনাকে পৌঁছে দেবো ক্লিনিকে।"
এরপর আরও দু-একটা অফিসিয়াল কথাবার্তা হওয়ার পর ফোন রেখে দিলো রবার্ট।
★★★★
তখন হার্জিন্দারের মুখে ডক্টর প্রমোদের নামটা শোনার পর থেকেই বুকের ভেতরটা কিরকম যেন ধুকপুক করছিলো নন্দনার। সেদিন তিনজনের মধ্যে ওই লোকটাকেই তার সব থেকে বেশি ভয় লেগেছিলো। 'ডাক্তারবাবু যদি তাকে সত্যি সত্যি ফোন করে, তাহলে সে কি কথা বলবে ওই লোকটার সঙ্গে?' এইসব সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতে রাতের খাওয়ার সেরে বিছানার উপর এসে বসলো নন্দনা।
ঘড়িতে সাড়ে ন'টা বাজে। আজ একটু তাড়াতাড়িই ডিনার হয়ে গেছে তাদের। বাপ্পা তার মায়ের পাশে বসেই পরীক্ষার পড়া পড়ছিলো। এমন সময় পাশে রাখা মোবাইলটা বেজে উঠলো তার। ফোনটা তুলে নিয়ে দেখলো একটা আননোন নম্বর থেকে ফোন এসেছে। কলটা রিসিভ করে কাঁপা কাঁপা গলায় "হ্যালো .." বললো নন্দনা।
- "আমি ডক্টর গঞ্জালভেস বলছি .."
ফোনের অপরপ্রান্তে প্রমোদের গুরু গম্ভীর গলা শুনে পিলে চমকে গেলো নন্দনার। গলাটা একটু ঝেড়ে নিয়ে দু'একবার ঢোঁক দিলে বললো, "হ্যাঁ, ব..বলুন!"
- "ডিনার করছিলে নাকি?"
- "না, খাওয়া হয়ে গেছে। একটু আগে খেয়ে উঠলাম।"
- "গুড, তাড়াতাড়ি ডিনার করে নেওয়া হেল্থের পক্ষে ভালো। এখন কি করছো? টিভি দেখছো, না শুয়ে আছো?"
- "টিভি আমি খুব একটা দেখি না। ছেলের দু'দিন পর ইতিহাস পরীক্ষা, ও পড়ছে আমি পাশে বসে আছি।"
- "কালকের জন্য স্পেশাল কিছু মেনুর প্রিপারেশন করে রাখোনি?"
- "কালকের জন্য? মানে? আমি ঠিক আপনার কথা বুঝতে পারলাম না স্যার।"
- "সেকি, আমি তো বাংলাতেই বললাম। না বুঝতে পারার তো কথা নয়? তোমার পতিদেব তো কালকে আসছে, তাই বলছিলাম ওর জন্য কোনো স্পেশাল মেনু অ্যারেঞ্জ করে রাখছো কিনা আগের থেকে .."
ডক্টর প্রমোদের মুখে কথাগুলো শুনে আকাশ থেকে পড়লো নন্দনা। আগামীকাল তার স্বামী অফিস ট্যুর থেকে ফিরছে অথচ সে-ই জানেনা? তার স্বামীর অফিসের ডাক্তারের কাছ থেকে তাকে শুনতে হলো এই কথা? সেদিন ফোনে স্বামীর সঙ্গে কথা না বলে ছেলেকে ফোনটা ধরিয়ে দিয়েছিল বলে এত রাগ পুষে রেখেছে তার উপর মানুষটা? নাকি তার ভাসুরের বলা কথাগুলোই ঠিক? সে এখন তার স্বামীর কাছে घर की मुर्गी दाल बराबर হয়ে গেছে! "আ..আপনি কোথা থেকে খবর পেলেন? অফিস থেকে নিশ্চয়ই!" মৃদুকন্ঠে জিজ্ঞাসা করলো নন্দনা।
- "তোমার কথা শুনে মনে হচ্ছে তুমি খবরটা জানতে না, আমার থেকেই প্রথম শুনলে। আমি কি ঠিক বললাম?"
"আজ্ঞে, হ্যাঁ স্যার। আপনার থেকেই প্রথম শুনলাম। ও আমাকে জানানোর প্রয়োজন বোধটুকু করেনি .." কথাটা বলেই ফোঁপাতে শুরু করলো নন্দনা। সেটা দেখে, "কি হয়েছে মাম্মাম? তুমি কাঁদছো কেনো?" পাশে বসে থাকা বাপ্পা প্রশ্ন করে উঠলো। "ও কিছু নয় সোনা, চোখে কিছু একটা পড়েছে। তুমি মন দিয়ে পড়ো। অন্যদিকে কান দিও না।" এইটুকু বলে ছেলেকে বিরত করলো সে।
ক্রন্দনরতা নন্দনার ভরসার একমাত্র মানুষ হয়ে উঠতে এই সুবর্ণ সুযোগের সদ্ব্যবহার করে সান্তনা দেওয়ার ভঙ্গিতে প্রমোদ বললো, "কেঁদোনা নন্দনা, তোমার কষ্টটা আমি বুঝি। নিজের স্বামীর আসার খবর যদি বাইরের কারো কাছ থেকে শুনতে হয়, তাহলে সেটা তার স্ত্রীর কাছে শুধু দুঃখেরই নয়, অপমানেরও বটে। তবে তুমি যদি মনে করো, চিরন্তন এটা তোমার উপর রাগ বা অভিমান করে করেছে, তাহলে তুমি ভুল করছো। আর একটা কথা, খবরটা মোটেও আমি অফিস থেকে পাইনি। অফিসের ট্যুর তো ওর সাতদিনেই শেষ হয়ে গিয়েছিলো। ওর আসার খবরটা গতকাল রাতে ও নিজে ফোন করে আমাকে দিয়েছে। যদিও এর পেছনে ওর নিজেরই একটা স্বার্থ রয়েছে। তবে সেটা আমাকে জিজ্ঞাসা করো না প্লিজ, আমি বলতে পারবো না।"
উল্টোদিকের মানুষটার মনে উপর্যুপরি সন্দেহের আগুন জ্বালিয়ে দিয়ে তারপর সাইলেন্ট মোডে চলে যাওয়ার অভিনয় করার প্রমোদের এই পুরনো চাল একশো শতাংশ সফল হলো। কাঁদো কাঁদো গলায় নন্দনা বলে উঠলো, "প্লিজ ডাক্তারবাবু, আমার কাছ থেকে কিছু লুকাবেন না। আমার দিব্যি রইলো, সব কথা খুলে বলুন আমাকে।"
- "কথাগুলো বললে আমার বন্ধুর প্রতি বিশ্বাসভঙ্গ করা হবে। কিন্তু মেয়েদের কান্না আবার আমি একদম সহ্য করতে পারি না তাই বলতে বাধ্য হচ্ছি। 'বন্ধু' শব্দটা বললাম বলে অবাক হলে, তাইতো? তোমার ধারণা ছিলো হার্জিন্দার তোমার স্বামীর সব থেকে কাছের মানুষ এই ফ্যাক্টরিতে। সেটা ঠিক নয়, ও আমাকে নিজের সবথেকে কাছের বন্ধু মনে করে, তাই সব কথা শেয়ার করে। তাছাড়া আমার সাহায্যও তো ওর লাগে মাঝেমধ্যে। এই যেমন ধরো, হঠাৎ করেই জুট ইন্সপেকশনের নাম করে বাইরে ক'দিন ঘুরে আসা। এতে তোমার স্বামীর রথ দেখা এবং কলা বেচা দুটোই হয়ে যায়। মানে আমি বলতে চাইছি, নিজের বান্ধবীকে নিয়ে অফিস ট্যুরে গেলো, তারপর সাত দিনের জায়গায় দশ দিন কাটিয়ে একজন শান্তশিষ্ট পত্নীনিষ্ঠ ভদ্রলোক হয়ে বাড়িতে ফিরে এলো। আমি মালিকপক্ষের লোক, তাই ট্যুরে যাওয়ার সুবিধাটা ওকে আমি করে দিই। চিরন্তনের দাদা একদম ঠিক কথাই বলেছে .. এবারের ট্যুরে সঙ্গে করে ও আমাদের পশ্চিম পাড়ার 'সুর এবং ছন্দম' নামের ওই কলেজটার গানের দিদিমণি রেবতী ম্যাডামকে সঙ্গে করে নিয়ে গেছে। তোমাকে না বলার জন্য ও আমার কাছে প্রমিস করিয়ে নিয়েছিলো, তাই বলতে পারিনি। তাছাড়া তোমার সঙ্গে তো আমার পরিচয়ও ছিলো না এতদিন। কিন্তু এখন তোমার কান্না দেখে নিজেকে আর আটকাতে পারলাম না। এর আগেও অনেকবার সঙ্গে করে ওই গানের দিদিমণিকে নিয়ে গেছে তোমার স্বামী। এবার এত তাড়াতাড়ি চলে আসার কারণ, কাল রাতে প্রেগন্যান্সি কিট দিয়ে পরীক্ষা করে দেখা গেছে মাগী দুই মাসের পোয়াতি। এখন এখানে এসে পেটটা তাড়াতাড়ি খসাতে চায়, সেজন্যই আমাকে ফোন করেছিলো। কাল এয়ারপোর্ট থেকে রেবতীকে নিয়ে সোজা আমার ক্লিনিকে যাবে চিরন্তন। সেখানে কাজকর্ম মিটিয়ে তারপর বাড়িতে ফিরবে। এটাই তোমার হোয়াটসঅ্যাপ নাম্বার তো? তোমাকে ছবি তুলে প্রমানস্বরূপ পাঠিয়ে দেবো কাল সকালে।"
কথাগুলো শোনার পর নন্দনার এতক্ষণ ধরে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কান্নাটা ক্রমশ হাউ হাউ করে কাঁদায় পরিণত হলো। "এসব কি বলছেন ডাক্তারবাবু? আমি তো ভাবতেই পারছি না ও এতটা নিচে নামতে পারে! কি করবো আমি?" ক্রন্দনরতা নন্দনা কথাগুলো বলে তার ছেলে বাপ্পাকে বুকে জড়িয়ে ধরলো। তারপর তাকে চোখের ইশারায় বইপত্র বন্ধ করে শুয়ে পড়তে বললো।
- "পুরুষরা চিরকাল অন্যায় করে যাবে আর সেই অন্যায়ের শিকার হয়ে নারীরা সবসময় কাঁদবে কেনো, আমাকে বলতে পারো? এখন কাঁদার সময় নয়, তোমার স্বামীকে ছেড়ে চলে যাওয়ারও সময় নয়, আবার স্বামীর কাছে কৈফিয়ত চাওয়ারও সময় নয়। কারণ তুমি ওকে কিছু জিজ্ঞাসা করলে ও তোমাকে বানিয়ে বানিয়ে হাজারটা মিথ্যা কথা বলবে। তুমি তো কোনো অপরাধ করোনি, তাই স্বামীর কাছে থেকেই ওকে দেখিয়ে দাও অবহেলা কাকে বলে, মানুষকে ইগনোর করা কাকে বলে। নিজের শর্তে বাকি জীবনটা কাটাও কিন্তু সংসার না ভেঙে। কারণ, তোমাদের একটা সন্তান হয়ে গেছে। সেদিনকে আমরা তোমার কোয়ার্টারে যাওয়ার পর এবং চলে আসার পর তুমি মনে মনে গিলটি ফিল করছিলে সেটা আমি ভালো করেই জানি। তাই আমি শুধু তোমার স্বামীর চরিত্রটা তোমাকে চিনিয়ে দিলাম। যাতে ভবিষ্যতে তুমি আর অপরাধবোধে না ভোগো!"
- "হুঁ .. আপনি ঠিকই বলেছেন, ওরকম মানুষের জন্য নিজেকে সব সময় ঠিক প্রমাণ করার দায় এখন থেকে আমার আর নেই।
★★★★
- "যাগ্গে, চিরন্তনের কথা বাদ দাও। আচ্ছা, ওর দাদা কাল কখন এসেছিলো তোমার কোয়ার্টারে?"
- "উনি ওর নিজের দাদা নয়, দূর সম্পর্কের দাদা। বেলার দিকে এসেছিলেন উনি .."
- "তারপর?"
- "তারপর মানে?"
"শালা, হামলোগ তুমহে চুতিয়া বানা রাহা হ্যায় .. ইয়ে তো ঠিক হ্যায়। লেকিন ওহ আদমি ঝুট কিঁউ বোলা, ইয়ে সমঝমে নেহি আরাহা হ্যায়।" বিড়বিড় করে কথাগুলো বললো ডক্টর প্রমোদ। "কি..কিছু বললেন ডাক্তার বাবু? আমি ঠিক শুনতে পেলাম না .." জানতে চাইলো নন্দনা।
- "আমি বললাম, যে তোমার স্বামীর ব্যাপারে এতগুলো কথা বললো তোমাকে, তোমার সেই ভাসুরকে তো একটু কাল্টিভেট করতে হচ্ছে। কি করে লোকটা? রাতে ছিলো নাকি চিরন্তনের ওই দাদা তোমার কোয়ার্টারে?"
- "উনি তন্ত্রসাধনা করেন, তারাপিঠে থাকেন। মাঝে মাঝে বিভিন্ন আত্মীয়দের বাড়িতে ঘুরে বেড়ান। উনার টাকার কোনো অভাব নেই। হ্যাঁ মানে উনি রাতে ছিলেন, ভোরবেলা চলে যান।"
- "তন্ত্রসাধনা করে তোমার ভাসুর? একটা তান্ত্রিক তোমার বাড়িতে কাল সারারাত ছিলো? যে আবার নাকি তার ভাইয়ের ব্যাপারে এ কথাগুলো তোমাকে বলেছে! তা, চিরন্তন জানে ওর দাদা কাল ছিলো কোয়ার্টারে?"
- "না জানে না, আর ওঁকে কিছু বলারও দরকার নেই। কারণ উনিও তো সবকিছু আমাকে বলে করেন না।"
- "দ্যাট'স লাইক এ গুড গার্ল। আমি এই নন্দনাকেই তো দেখতে চাই। ঠিক আছে, আমি কিছু বলবো না ওই ব্যাপারে তোমার হাজব্যান্ডকে। তবে তুমিও কিন্তু আমি যে কথাগুলো তোমাকে বললাম, সেগুলো জিজ্ঞাসা করো না চিরন্তনকে। সেদিনকে যে পড়ে গেলে, তারপর থেকে তোমার কোমরের ব্যথা এখন কেমন আছে?"
- "আগের থেকে অনেকটাই কমেছে।"
- "কাল রাতে এক্সারসাইজ ভালোই হয়েছে। কি বলো!"
- "মানে?"
- "কিছু না, বাদ দাও। বলছিলাম ছেলে শুয়ে পড়েছে, না এখনো পড়ছে?"
- "শুয়ে পড়েছে .."
- "আর তুমি?"
- "আমি বসে আছি, একটু পরে ঘুমাতে যাবো।"
- "মানে আমি ফোনটা রেখে দিলেই তুমি ঘুমোতে চলে যাবে?"
- "হ্যাঁ মানে না মানে তা নয়, দু-একটা কাজ করে তারপর শুতে যাবো।"
- "কি কাজ করবে?"
- "এ আবার কি রকম প্রশ্ন ডাক্তারবাবু! কত রকমের কাজ থাকে মানুষের। শোওয়ার আগে প্রতিদিন ক্রিম মাখি আমি। সদর দরজাটা ঠিকঠাক বন্ধ হয়েছে কিনা দেখতে হবে, এরপর ঘরের সমস্ত আলো নেভাতে হবে, তারপর বাথরুম থেকে ঘুরে এসে জল খেয়ে শুয়ে পড়বো।"
- "বাহ্ বাহ্ খুব ভালো। তারমানে তুমি নাইট ক্রিম মাখো! রাতে কি শাড়ি পড়ে ঘুমাও?"
- "না .."
- "তাহলে, নাইটি?
- "হুঁ .."
- "ওই আমরা যেদিনকে গেছিলাম, সেদিন যেরকম নাইটি পড়েছিলে সেরকম নাইটি?"
- "না মানে ওটা তো ওইদিনকে ভুল করে .. এমনি সাধারণ নাইটি হয় সেরকম।"
- "এমনি সাধারণ নাইটি মানে? স্লিভলেস তো? আচ্ছা হার্জিন্দার যেদিন তোমাকে বাথরুমে নাইটি পরা অবস্থায় দেখেছিলো, সেইরকম নাইটি?
- "কি জানি, হবে হয়তো .."
- "হবে হয়তো মানে? তোমার কি কয়েক লক্ষ নাইটি রয়েছে? নাকি ঘটনাটা এক বছর আগে ঘটেছিল যে তোমার মনে নেই! এখন স্লিভলেস নাইটি পড়ে রয়েছো তো?"
- "হুঁ .."
- "কালার?"
- "কেন বলুন তো?"
- "আমি মজা করার জন্য তোমাকে এত রাতে নাইটির কালার জিজ্ঞাসা করছি না। আমি একজন ডাক্তার, কথাগুলো যখন বলছি, নিশ্চয়ই তার একটা কারণ আছে। যেটা প্রশ্ন করছি সেটার উত্তর দাও। কি রঙের নাইটি পড়ে রয়েছো এখন?"
- "নীল রঙের .."
- "ডিপ ব্লু না লাইট ব্লু? গাঢ় না হাল্কা নীল?"
- "একটু গাঢ় আছে .."
- "রাতে কখনো ডিপ কালারের কিছু পরে শোবে না। এতে ঘুম ভালো হয় না। বিছানার চাদর, বালিশের ওয়ার থেকে শুরু করে জামাকাপড় এমনকি আন্ডার গার্মেন্টস লাইট কালারের রাখবে সবসময়। আচ্ছা ইনারের কথা বলতে মনে পড়লো তুমি রাতের বেলায় নাইটির নিচে ব্রা আর প্যান্টি পরে শোও তো?"
কোনো উত্তর এলো না ফোনের অপরপ্রান্ত থেকে। এক সেকেন্ড দুই সেকেন্ড তিন সেকেন্ড করে প্রায় কুড়ি সেকেন্ড অতিবাহিত হয়ে গেলো। "কি হলো ঘুমিয়ে পড়লে নাকি? আমি যেটা জিজ্ঞাসা করলাম, তার উত্তর দাও। তোমার কথা মেনে নিয়ে আমি রাজি হলাম যে তোমার বরকে তার দাদার আসার ব্যাপারে এবং থাকার ব্যাপারে কিচ্ছু বলবো না। অথচ তুমি আমার প্রশ্নের ঠিকঠাক উত্তরই দিতে চাইছো না।" বিরক্তি প্রকাশ করে কিছুটা উচ্চকণ্ঠে কথাগুলো বললো ডক্টর প্রমোদ।
- "হ্যাঁ প..পড়েছি .."
- "প্যান্টি পড়ে ভালোই করেছো। কারণ তোমাদের বাড়িতে যা সাপের উপদ্রব! বলা যায় না নাইটির তলা দিয়ে গর্তের মধ্যে ঢুকে যেতে পারে। আচ্ছা গর্তের চারপাশে কি জঙ্গল হয়েছে, নাকি পরিষ্কার? যাগ্গে যাগ্গে, বাদ দাও ওসব কথা। একজন ডাক্তার হিসেবে তোমাকে বলছি, রাতে শোওয়ার সময় কোনোদিন ব্রা পড়ে শোবে না। আমি কখনোই বলছি না রাতে ব্রা পড়ে শুলে ব্রেস্ট ক্যান্সার হবে। কিন্তু শতাংশ হিসেবে এর সম্ভাবনা ০.১% হলেও এটাও বেস্ট ক্যান্সারের একটা কারণ। তাছাড়া আষ্টেপৃষ্ঠে সবসময় বুবস দুটোকে বেঁধে না রেখে মাঝে মাঝে ওদেরও মুক্ত বিহঙ্গের মতো ছেড়ে দেওয়া উচিৎ। এতে যে রক্ত চলাচল স্বাভাবিক হয় শুধু তাই নয়, ব্রেস্টের শেপটাও ঠিক থাকে।"
- "ও আচ্ছা .."
- "ও আচ্ছা মানেটা কি? তুমি কি আমার কথাগুলো এক কান দিয়ে শুনে আরেক কান দিয়ে বের করে দিলে? খোলো, এখনই খোলো ব্রেসিয়ারটা।"
- "এখন, মানে এখন কি করে খুলবো? এখন তো কথা বলছি আপনার সঙ্গে .."
হঠাৎ করেই ফোনটা কেটে গেলো। তারপর কয়েক মুহূর্তের মধ্যেই আবার ফোনের রিংটোন বেজে উঠলো। নন্দনা ভালো করে তাকিয়ে দেখলো এবার হোয়াটসঅ্যাপে কল করেছে ডাক্তারবাবু। কিন্তু ঘটনাটা এত তাড়াতাড়ি ঘটলো, এবং অ্যান্ড্রয়েড ফোনের ব্যবহার সম্পর্কে অতটা চৌকস না হওয়া নন্দনা বুঝতে পারলো না ওটা অডিও কল নাকি ভিডিও কল। সে ভাবলো ফোনটা কেটে যাওয়ার পর ডাক্তারবাবু হয়তো তাকে আবার ফোন করে, না পেয়ে হোয়াটসঅ্যাপে ভয়েস কল করেছে। তাই বিছানার উপর বসে থাকা অবস্থাতেই কলটা রিসিভ করে ফেললো মূর্খ নন্দনা।
~ পরবর্তী আপডেট কিছুক্ষণের মধ্যেই আসছে ~