Thread Rating:
  • 100 Vote(s) - 2.84 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
WRITER'S SPECIAL "ধূসর পৃথিবী"
Waiting bro
Like Reply
Do not mention / post any under age /rape content. If found Please use REPORT button.
Aj ki asbe ?
Like Reply
[Image: Picsart-22-12-06-20-20-08-119.jpg]



                 দ্বিতীয় খণ্ড
                 ৩৩তম পর্ব




"কি হলো অনিকেত তুই খাচ্ছিস না কেন? চিকেনটা তানিয়ার রান্না খেয়ে দেখ"

"সেটাই তো চিন্তার"

প্রিয় শিষ্যের পরিচয় পেয়ে সহজে তাকে ছাড়তে চান না সুপ্রতিমবাবু তার কাছে এসে থাকতে বলেন অন্তত পিয়ালীকে তার বাড়িতে রাখতে বলেন যাতে দেখাশোনা ভালো হয় আর ওর সুরক্ষাও হয় কিন্তু উত্তরে আদিত্য জানায় গ্ৰামে তার অনেক কাজ আছে আর গ্ৰামের লোকেরা তাদের খুব ভালোবাসে সবসময় চোখে চোখে রাখে, ওরা এইসময় ওখান থেকে চলে এলে ওরা কষ্ট পাবে তাই সেটা সম্ভব নয়, তখন সুপ্রতিমবাবু আদিত্য ও পিয়ালীকে ডিনারে নিমন্ত্রণ করেন তাঁর নিজের বাড়িতে এতে অবশ্য আদিত্য আপত্তি করেনি।

সুপ্রতিমবাবুর বাড়ির গেটের সামনে কয়েক মুহুর্তের জন্য থমকে দাঁড়িয়ে বাড়িটার দিকে তাকিয়ে দেখতে থাকে সে,

"কি হলো দাঁড়িয়ে পড়লে?" স্বামীকে এইভাবে দাঁড়িয়ে পড়তে দেখে প্রশ্ন করে পিয়ালী।

"ছোটোবেলার কথা মনে পরছে, আজ কতবছর পরে এই বাড়িতে পা দিচ্ছি একসময়ে এখানে প্রায় পুরো দিনটাই কাটাতাম"।

ভিতরে ঢুকে আদিত্য আর পিয়ালী ড্রয়িংরুমে বসলো, তানিয়া এসেছে ওদের সঙ্গে ও রান্নার ওখানে গেছে পিয়ালী যেতে চেয়েছিল কিন্তু তানিয়া যেতে দেয়নি, সুপ্রতিমবাবু আর দিগন্ত একটু পরে আসবেন একটা কাজ সেরে।

ড্রয়িংরুমে আদিত্য একটা ম্যাগাজিন তুলে পাতা উল্টিয়ে দেখতে লাগলো আর পিয়ালী একদিকের দেওয়ালে কিছু ছবি দেখে সেগুলো দেখতে উঠে গেল।

"এই মেয়েটা তো তানিয়া, ছেলেটা কে? স্যারের ছেলে?"

পিয়ালীর গলা শুনে আদিত্য ম্যাগাজিন থেকে চোখ তুলে দেখে দেয়ালে টাঙানো একটা ছবি দেখিয়ে প্রশ্নটা করেছে পিয়ালী, কিন্তু সোজাসুজি উত্তর না দিয়ে পিয়ালীর সঙ্গে একটু মজা করার লোভ সামলাতে পারলো না আদিত্য,

"কেন ছেলেটাকে পছন্দ?"

"সবসময় তোমার ইয়ার্কি? এমনি কৌতূহল হলো তাই জিজ্ঞেস করছি, বলো না স্যারের ছেলে?"

"আগে বলো পছন্দ কি না?"

"না, আমার শুধু আমার বরকেই পছন্দ আর কাউকে না"

"কেন ছেলেটা হ্যাণ্ডসাম না?"

"তুমি না মাঝে মাঝে খুব বাজে বকো, তোমাকে জিজ্ঞেস করাই আমার ভুল হয়েছে"

"এই শোনো, বলো না, ছেলেটাকে হ্যাণ্ডসাম লাগছে কি না?"

"না"

"সত্যি বলছো?"

"হ্যাঁ"

"অবশ্য হ্যাণ্ডসাম লাগলেও তোমার ভাগ্য বদলাতো না"

"মানে?"

"মানে উনি স্যারের ছেলে নন, কিন্তু ছেলের চেয়ে কম‌ও নন। উনি হলেন তোমার বরের‌ই বাল্য সংস্করণ আইমিন প্লাস্টিক সার্জারির পূর্ববর্তী সংস্করণ"

"এটা তুমি?" পিয়ালীর স্বরে বিস্ময়।

"আজ্ঞে ম্যাডাম, একটা মার্শাল আর্ট কম্পিটিশনে জেতার পরে তোলা। নীচের মেডেল, ট্রফি আর সার্টিফিকেটগুলো দেখো আমার নাম পাবে মানে অনিকেত ব্যানার্জী নামটা"।

"তুমি মার্শাল আর্ট চ্যাম্পিয়ন?"

"ছিলাম, স্যার‌ই শিখিয়েছিলেন"

"উনি মার্শাল আর্ট জানেন?"

"বর্তমানে এই শহরের পুরো পুলিশ ডিপার্টমেন্টে ওনার সমকক্ষ কেউ আছে বলে মনে হয় না"

"একটা কথা বলবো?"

"বলো"

"এখন ছেলেটাকে হ্যাণ্ডসাম লাগছে" ছবিটা আরেকবার দেখে মন্তব্য করে পিয়ালী, কিন্তু আদিত্যর দিকে তাকিয়ে দেখে তার মুখ গম্ভীর, পিয়ালী স্বামীর পাশে এসে বসে,

"কি হয়েছে তোমার? আবার ছোটোবেলার কথা মনে পড়ছে?"

"না, আমি অন্য কথা ভাবছি"

"কি কথা জানতে পারি?"

"আজ আমি যা করলাম সেটা ঠিক না ভুল বুঝতে পারছি না, স্বামী হিসেবে আমার কর্তব্য তোমাকে প্রোটেক্ট করা কিন্তু যারা তোমার উপর অ্যাটাক করলো আমি তাদের‌ই ছেড়ে দিয়েছি"

পিয়ালী আলতোভাবে আদিত্যর একটা হাত নিজের হাতে নিয়ে বললো, "তোমার জায়গায় যে কেউ থাকলে সেও এক‌ই কাজ করতো। আর তাছাড়া তুমি ভুল কিছু করোনি বরং আমাদের এইসময়ে মায়ের আশীর্বাদ পেলাম এটাই অনেক, ওনার ছেলেকে জেলে দিলে হয়তো ওর শাস্তি হতো কিন্তু তার সঙ্গে আরও অনেকের কষ্টের কারণ হতাম আমরা তাই ওসব নিয়ে ভেবোনা"

"মাঝে মাঝে আমি ভাবি যে আমি তোমার মতো বুদ্ধিমতী ব‌উ পেলাম কিভাবে?"

"প্রেমালাপটা পরে করে এখন এগুলো খেয়ে ফেল দেখি"

হঠাৎ তানিয়ার গলার আওয়াজে দুজনেই চমকে উঠলো, দেখলো তানিয়া হাতে একটা ট্রে তে কফি আর পকোরা নিয়ে আসছে। ট্রে টা টেবিলে রেখে একটা প্লেট পিয়ালীর হাতে দিয়ে বললো "নাও খাও, আর চিন্তা নেই তোমার হেলথের কথা ভেবে সেরকম কম তেলেই এগুলো ভাজা হয়েছে"

"সে ঠিক আছে কিন্তু স্যার আর দিগন্ত আসুক তারপর একসাথে খাওয়া যাবে"

আদিত্য কথা বললো আর কথা শেষ হবার প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই দরজার কাছ থেকে সুপ্রতিমবাবুর গলা পাওয়া গেল,
"তুই কবে থেকে এইসব ফর্মালিটি করছিস তাও এই বাড়িতে এসে?"

"ফর্মালিটি নয় স্যার, ভাবছিলাম সবাই একসাথে বসে খাবো, কতবছর পরে এখানে বসে খাবো তাই আরকি, আপনি তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে আসুন"।

কফি আর পকোরা সহযোগে টিফিন করতে করতে সবাই হাসিঠাট্টা করছিল কিন্তু হঠাৎ সুপ্রতিমবাবুর একটা প্রশ্নে আদিত্য বিষম খেয়ে থেমে গেল,

"এবার বাকি কথা বল, এতবছর কোথায় ছিলি? আর এটা কার চেহারা নিয়ে ঘুরছিস, চেহারা পাল্টালি কেন?"

আদিত্যর বুঝতে বাকি র‌ইলো না যে তার স্যার সবকিছু শুনেই ছাড়বেন তাই সেও জবাব দিতে শুরু করলো,

"একজন ভালো মানুষের বাড়িতে ছিলাম, আর তারপর ওই নারায়ণতলা গ্ৰামে আছি। চেহারা একজন সাহসী ছেলের যে ক্রাইমের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছে"

"কিন্তু তার চেহারা তুই নিলি কেন?"

"এর দুটো কারণ এক আমি নিজের পরিচয় নিজের অস্তিত্ব ভুলে যেতে চাইছিলাম আর দুই এক মাকে তার পুত্রশোক থেকে বাঁচানোর জন্য, যদিও শেষপর্যন্ত পারিনি"

"যখন বেঁচে গিয়েছিলি তখন কলকাতায় ফিরলি না কেন?"

"ফিরেছিলাম, প্রায় একমাস পরে হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়ে ফিরেছিলাম"

"ফিরেছিলি? তবুও একবার আমার সাথে দেখা করা গেল না তাই তো?"

"অপরাধ নেবেন না স্যার, কিন্তু কোনো ছেলে যদি দেখে তার পরিবার পরিচিত সবাই একমাসের মধ্যে তার মৃত্যুকে ভুলে গিয়ে বিয়ের অনুষ্ঠানে মেতে উঠেছে তাহলে সেই ছেলের জীবনে আর কি থাকে বলতে পারেন?, সেইমুহুর্তে আমার মনে হচ্ছিল কেন বেঁচে গেলাম? ইচ্ছা করছিল সবকিছু ছেড়ে কোথাও দূরে চলে যেতে যেখানে কেউ আমাকে চিনবে না জানবে না"

"কিন্তু আমার কাছে এলি না কেন?"

"বললাম না সেই মুহুর্তে একটাই ইচ্ছা করছিল সবকিছু ছেড়ে চলে যেতে, এখানে ফিরেও নিজেকে ওই গ্ৰামেই আটকে রেখেছিলাম অনেক পরে পিয়ালীর সাথে দেখা হয়, বলতে পারেন ওই আবার আমাকে স্বাভাবিক করে তোলে"।

"আমার ইচ্ছা করছে এখন তোকে আড়ং ধোলাই দিতে"

"আপনার অধিকার আছে দিতেই পারেন, তবে এটাও ঠিক অনেকবার মনে হয়েছে ফিরে এসে সবাইকে বলি আমি বেঁচে আছি অন্তত আপনাকে বলি কিন্তু তারপর ভেবেছি কি দরকার সবার কাছে অনিকেত তো মরেই গেছে তাকে আবার বাঁচিয়ে তুলে কোনো লাভ নেই, সেদিন ইচ্ছা হচ্ছিল যে আপনি আমাকে চিনতে পারেন কি না দেখার তাই বলে ফেলেছিলাম"


খেতে বসে আদিত্য দেখে সব তার পছন্দের খাবার‌ই তৈরি হয়েছে বিউলির ডাল, আলুপোস্ত, মাছের ডিমের বড়া, চিকেন সামনে আপাতত এটুকুই তবে আদিত্য ভালো করেই জানে শেষপাতে দ‌ই, পাঁপড়, চাটনি এগুলো আসবেই। সে কি কি খেতে ভালোবাসে সেটা তার মা শ্রীতমাদেবী জানেন তেমনি জানেন সুপ্রতিম বাবু আর তানিয়া, বেশিরভাগ দিন‌ই সে এখানেই খেত।

নর্থবেঙ্গলে থাকাকালীন আদিত্যর অভিনয় করতে হতো বলে ওর পছন্দের খাবার খেতে হতো তবে মাঝে মাঝে বললে উমাদেবী করে খাওয়াতেন।

খাবার টেবিলে সামনে সুপ্রতিমবাবু টেবিলের একপাশে আদিত্য আর দিগন্ত ওকেও নিমন্ত্রণ করে নিয়েছিলেন সুপ্রতিমবাবু আর অপর পাশে পিয়ালী এবং তানিয়া, ওদের দুজনের মধ্যে বেশ ভাব হয়ে গেছে এখন।

"এতকিছু করালেন কখন স্যার?" খাবার টেবিলে মেনু দেখে প্রশ্ন আদিত্যর।

"ফোন করে দিয়েছিলাম একজন আসেন আমাদের রান্না করে দিতে তিনিই করেছেন আর তানিয়া তো এসেই গিয়েছিল চিকেনটা ও করেছে"।

খেতে খেতে টুকটাক কথা হচ্ছে বিশেষ করে তানিয়া এবং পিয়ালীর মধ্যে। আদিত্যর সাথে ওর কিভাবে আলাপ তারপর বিয়ে সবকিছুই তানিয়া জানতে চায় পিয়ালীও মোটামুটি ভাবে বলছে।

খেতে খেতে হঠাৎ চিকেনটা নিতে গিয়েও একটু থেমে যায় আদিত্য যেটা কারোরই চোখ এড়ায় না, সুপ্রতিমবাবু বলেন, 

"কি হলো অনিকেত তুই খাচ্ছিস না কেন? বললাম না চিকেনটা তানিয়ার রান্না খেয়ে দেখ"

"সেটাই তো চিন্তার" ছোট্ট উত্তর আদিত্যর।

"তানিয়া কিন্তু সত্যিই খুব ভালো রান্না করে" এতক্ষণে হবু ব‌উএর ওকালতি করার ঢঙে কথা বলে দিগন্ত।

"বিয়েটা হোক, তারপর বুঝবে কত ভালো রান্না করে"

আদিত্যর উত্তর শুনে দিগন্ত প্রথমে আদিত্য তারপর তানিয়ার দিকে তাকিয়ে আবার খাওয়ায় মনোনিবেশ করে।

"চিন্তা করিস না, ওতে নেই" আদিত্য তখনও দোনোমনো করছে দেখে কথা বলে তানিয়া, "যদিও ভেবেছিলাম দি‌ই কিন্তু পরে ভাবলাম অতিথি হয়ে এসেছিস দরকার কি? তাই ওটা খেতে পারিস?"

"আমাকে অতিথি বানিয়ে দিলি,গ্ৰেট"

"কি করবো বল, তুই তো আর আমাদের আপন ভাবিস না, আমরা তো তোর নিজের কেউ ন‌ই এতবছর বেঁচে থেকেও আমাদের জানাসনি এমনকি বিয়ে করলি সেটাতেও ডাকলি না"

"দেখ তুই দরকারে ওটা দে আমি খেয়ে নেবো কিন্তু এরকম কথা শোনাস না"

"কিসের কথা হচ্ছে?" আবার মিনমিন করে জিজ্ঞেস করে দিগন্ত, কিন্তু সুপ্রতিমবাবু "ওদের মাঝে ঢুকো না দিগন্ত, তুমি খেতে থাকো" বলে আবার নিজে খাওয়ায় মন দেন।

"দিগন্ত এখনো খায়নি না?" আদিত্য তানিয়াকে জিজ্ঞেস করে।

"না, এখনো ডোজ দি‌ইনি, তবে কখনো যদি বেশি বাড়াবাড়ি দেখি তাহলে দিয়ে দেবো"

"দিগন্ত ভায়া একটু সাবধানে থেকো"

"আমি কিন্তু সত্যিই কিছু বুঝতে পারছি না" ভয়ার্ত স্বরে কথা বলে দিগন্ত।

"এই তানিয়া কিসের কথা বলছো বলোতো?" পিয়ালীও জিজ্ঞেস করে।

"বলবো?" আদিত্যকে জিজ্ঞেস করে তানিয়া,

"আমি বারণ করলেও তুই যে চেপে রাখবি না সেটা আমি ভালো করে জানি, তবে দিগন্তকে ছেড়ে দে"

"বললাম না দরকার পরলে দেবো নাহলে না"

"ভায়া দিগন্ত, তোমার কপালে শনি আইমিন শনির ফিমেল ভার্সন কি হবে, যাইহোক সেটাই নাচছে যদি বাঁচতে চাও তো বলো টিপস দিতে পারি"

"অ্যাঁ"

"অ্যাঁ করে লাভ নেই, টিপস চাও কি না বলো?"

"চাই"

"প্রথমত, তানিয়ার সঙ্গে কখনও কোনো বিষয়েই লজিক নিয়ে কথা বলবে না, ও জিনিসটা ওর মাথার উপর দিয়ে যায়, দ্বিতীয় কখনো ওকে হারিয়ে সে তর্কে হোক বা অন্য কিছুতে বড়াই করবে না, তৃতীয় ও যদি ভুল করেও তাহলে সেটা তোমার ভুল হবে এটা মেনে নেবে"

"অ্যাঁ"

"আর যদি এগুলো করেছো তাহলে সেইদিন এবং তার পরের কয়েকটা দিন বাইরে খেয়ে থেকো, মানে ঘরে খাবার পেলেও খেতে যেয়ো না"

"কেনো?"

"তোমার ঝাল খাওয়ার অভ্যাস আছে? মানে খুব ঝাল"

"না, আই হেট ঝাল" একটা ঢোঁক গিলে কথা বলে দিগন্ত।

"হয় ঝাল খাওয়া অভ্যাস করো আর নাহলে যেগুলো বললাম মেনে চলো"

"তুমি ওর খাবারে ঝাল দিতে?" হাসতে হাসতে তানিয়াকে জিজ্ঞেস করলো পিয়ালী।

"কি করবো বলো, আমাকে খুব জ্বালাতো অথচ আমি কাউকে বলে ওর কিছু করতে পারতাম না কি মা কি ড্যাডি কেউই ওকে কিছু বলতো না যা বলার সব আমাকে, তাই বাধ্য হয়ে ওর খাবারে মেশাতাম, আর তুমি জানো ও কি করতো? সেই খাবারের অর্ধেক আমাকে খাওয়াতো"

তানিয়ার কথা শুনে সুপ্রতিমবাবু আর পিয়ালী হো হো করে হেসে ওঠেন দিগন্ত ভয়ার্ত দৃষ্টিতে তার হবু ব‌উএর দিকে তাকিয়ে আছে আর আদিত্য দিগন্তের ভয়ার্ত মুখটা দেখছে। তানিয়া বলতে থাকে,

"তবে এটাও ঠিক আমার সবরকম দরকারে ওকে আমি পাশে পেয়েছি একজন দাদা, একজন বন্ধুর মতো সবসময় ও আমার পাশে থাকতো। যখন আমার মা মারা যায় তখন আমি কাঁদিনি কারণ সবাই ছোটো থেকে শিখিয়েছিল কাঁদলে লোকে দুর্বল ভাববে, আমি কাঁদিনি সবাই সান্ত্বনা দিতে এলে বলছিলাম আমি ঠিক আছি। সব আত্মীয় প্রতিবেশীরা চলে গেলে আমি একা আমার রুমে এসে বিছানায় চুপ করে বসেছিলাম কিন্তু কাঁদিনি, একসময় অনিকেতদা এসে আমার পাশে বসলো আমি ওকেও বললাম আমি ঠিক আছি, ও কি বললো জানো? 'কাঁদতে চাইলে কেঁদে নে, কেউ জানবে না' আমি জানতাম ও কাউকে বলবে না, সেদিন ওর হাত জড়িয়ে ধরে ওর কাঁধে মাথা রেখে খুব কেঁদেছিলাম কতক্ষণ জানিনা তবে অনেকক্ষণ অনেকক্ষণ, ও পুরোটা সময় চুপ করে আমার পাশে বসেছিল। তারপর যখন আমার কান্না থামলো তখন ও কি করলো জানো? ও প্রথমে জিজ্ঞেস করলো 'হয়েছে না আরও কাঁদবি?' যখন আমি বললাম যে না আর কাঁদবো না তখন উঠে গায়ের শার্টটা খুলে আমার মুখে ছুঁড়ে দিয়ে বলে 'নোংরা করে দিয়েছিস শার্টটা, এটা কেঁচে পরিষ্কার করে আয়রন করে ফেরত দিবি' বলে রুম ছেড়ে বেরিয়ে যায়"

"এ মা সত্যি?" বিস্ময় প্রকাশ করে পিয়ালী, তানিয়া বলতে থাকে,

"হ্যাঁ, তবে সেই শার্টটা আমি আর ফেরত দি‌ইনি ওটা এখনও আমার কাছে আছে"

"তার মানে ঝগড়া সত্বেও তোমাদের মধ্যে মিল ছিল?" আবার প্রশ্ন পিয়ালীর।

"বললাম না ও আমার দাদা আমার বেস্টফ্রেণ্ড ছিল, সবসময় আমি ওকে পাশে পেতাম শুধু নিজের সময়েই আমাদের পর করে দিল"

"তুই আবার শুরু করলি? চুপচাপ খা। কি করো দিগন্ত একটু শাসন করতে পারো না?" ধমকের সুরে কথা বলে আদিত্য।

"আমি করবো শাসন? তাহলেই হয়েছে" এতটুকু বলে আবার খেতে শুরু করে দিগন্ত।


খাওয়ার পরে চলে আসার সময় সুপ্রতিমবাবু অবশ্য থাকতে বলেছিলেন কিন্তু আদিত্য রিসর্টের কাজ আছে বলে চলে এসেছে যদিও আসার আগে কথা দিতে হয়েছে যে নিয়মিত আসতে হবে, আদিত্য দিগন্তকে লিফট দিতে চেয়েছিল কিন্তু দিগন্ত ক্যাব নিয়ে নেবে বলে আর আসেনি।

নিজের রুমে একাকী ছটফট করছিলেন অভিরূপবাবু সেই ঘটনার পর থেকে বেশ কিছুদিন হয়ে গেল তিনি আর নারায়ণতলা গ্ৰামে জাননি, আসলে তিনি আদিত্য বা বলা ভালো অনিকেতের মুখোমুখি হতে চাইছিলেন না অথচ তার মন অনিকেতের সঙ্গে একবার কথা বলার জন্য অস্থির হয়ে উঠেছে, বেশ কয়েকবার ফোন করবেন ভেবে ফোন হাতে নিয়েও আর করেননি বেশ কয়েকবার ভেবেছেন গ্ৰামে গিয়ে দেখা করে আসবেন কিন্তু পরক্ষণেই আবার ভেবেছেন যদি অনিকেত কথা না বলে? ছেলে যে তাঁর কতটা অভিমানী এটা তো তিনি ভালো করেই জানেন এবং এর প্রমাণ‌ও তিনি পেয়েছেন একলা ঘরে ছটফট করছেন।

কোথায় ভেবেছিলেন ছেলেকে বুঝিয়ে ওর রাগ ভাঙিয়ে বৌমা আর নাতি নাতনি সহ একসাথে থাকবেন, কিন্তু এখন বোধহয় মুখ দেখাই হবে না। অভিরূপবাবু ছোটো ছেলের ছবিতে হাত বোলাতে থাকেন সেদিন ঝোঁকের মাথায় ছেলের ছবিটা সরিয়ে ফেলতে চেয়েছিলেন কিন্তু পরে শ্রীতমাদেবী আর স্বর্ণেন্দু বাবু কোনোমতে তাঁকে নিরস্ত করেন, সেই ছবিটাই এখন তাঁর হাতে।

"জামাইবাবু, কি করছো একা ঘরে চলো একটু হেঁটে আসি"

ঘরে ঢুকেই বললেন স্বর্ণেন্দু বাবু। এমনিতেও এবাড়িতে স্বর্ণেন্দু বাবুর আসা যাওয়ার কোনো নির্দিষ্ট সময় নেই যখন খুশি তিনি আসেন কিন্তু সেদিনের পরে তিনি কদিন আসতে পারেন নি এবার সেটা তাঁর কাজের জন্য না তিনি নিজেই আসেননি সেটা বলা মুশকিল।

আজ এসে প্রথমেই অভিরূপবাবুর কাছে এসে তাকে রুমে একাকী বসে থাকতে দেখে তিনি একটু হেঁটে আসার কথা বললেন,

"চলো জামাইবাবু চলো"

"না, স্বর্ণেন্দু আমার ভালো লাগছে না"

"মন যাতে ভালো হয় সেইজন্যই তো যেতে চাইছি, চলো একটু ঘুরে আসি দেখবে মন ভালো হয়ে যাবে"

স্বর্ণেন্দু বাবু একপ্রকার জোর করেই অভিরূপবাবুকে টেনে ওনার রুম থেকে নীচে নিয়ে এলেন, আর নীচে আসা মাত্র‌ই অরুণাভ তাদের সামনে এসে দাঁড়ালো,

"তোমার কি হয়েছে বলো তো বাবা, সেদিন থেকে দেখছি কিছু তো হয়েছে নিজেকে ঘরে বন্দী করে রেখেছো" অরুণাভর প্রশ্ন তার বাবাকে,

"তোমার মতো ছেলে থাকলে তাকে ঘরেই থাকতে হয়, কারণ লোককে দেখানোর মতো মুখ তার থাকে না" সোজা জবাব দেন অভিরূপবাবু, উপস্থিত শ্রীতমাদেবী, মৌমিতা মণিদেবী নির্বাক দর্শক।

"কেন কি করেছি আমি?"

"সেটা তুমি ভালো করেই জানো, আমার মুখ থেকে আর নাইবা শুনলে"

"তোমার দেখছি নিজের ছেলের থেকে ওই বাইরের ছেলের উপরে বেশি বিশ্বাস"

"কারণ আমি জানি ও সত্যি কথা বলছিল আর শুধু ওর কথা তো নয় তোমার বিষয়ে আরো অনেক কথা আমি শুনেছি সবাই মিথ্যা বলছে সেটা তো হতে পারে না, কথায় আছে যা রটে তার কিছুটা তো ঘটে"

"সবাই মিথ্যা বলছে"

"তাই নাকি? তা সবার এত কিসের দায় যে তোমার বিরুদ্ধেই মিথ্যা বলতে হচ্ছে?"

"হিংসা, আমি এত বড়ো বাড়ির ছেলে এত বড়ো পরিবারের ছেলে, এত বড়ো বিজনেস আমাদের"

"আমার বিরুদ্ধে তো কেউ বলে না, আমার কথা ছাড়ো অনিকেতের বিরুদ্ধেও কখনো কাউকে খারাপ কিছু বলতে শুনিনি, এমনকি এখনো যারা ওকে চিনতো তারা ওর প্রশংসা করে এবং সেটা ওর নিজের ব্যাবহারের জন্য, ওর বাড়ির পরিচয়ের জন্য নয় ও তো তোমার মতোই বড়ো বাড়ির ছেলে ছিল তাহলে তোমার বিরুদ্ধেই সবার হিংসা কেন?"

"অনি মরে গেছে বাবা"

"মরে গেছে নাকি?" অভিরূপবাবু অর্থপূর্ণ দৃষ্টিতে ছেলের দিকে তাকান তারপর আবার বলতে শুরু করেন, "একটা সত্যি কথা বলোতো অনি কিভাবে খাদে পড়লো?"

অভিরূপবাবুর প্রশ্ন শুনে অরুণাভ এবং ওর কিছুটা পিছনে দাঁড়িয়ে থাকা মৌমিতা দুজনেই চমকে উঠলো যেটা অভিরূপবাবুর দৃষ্টি এড়ালো না।

"তোমাকে তো বলেছি ও ড্রিংক করেছিল তারপর খাদের ধার বরাবর হাঁটতে গিয়ে পড়ে গেছে"

"তাই?"

"ম..মানে কি বলতে চাইছো তুমি? তুমি কি আমাকে সন্দেহ করছো" অরুণাভ তোতলাতে থাকে,

"করলেই বা কি এখন তো লাভ নেই, এটা সেই সময়ে করা উচিত ছিল এখন আফশোষ হয় সেইসময় যদি পুলিশকে তদন্ত করতে দিতাম তাহলে হয়তো সত্যিটা জানতে পারতাম"

"যবে থেকে ওই আদিত্যর সাথে তোমার পরিচয় হয়েছে তবে থেকে তুমি আমাকে সহ্য করতে পারো না"

"এতদিন অনির উপরে তোমার বিদ্বেষ ছিল এখন আদিত্যর উপরে, কি করবে আবার ওকে মারতে লোক পাঠাবে? সেটা ভুলেও করতে যেও না কারণ সেক্ষেত্রে সুপ্রতিমবাবুর হাত থেকে তোমাকে আমিও বাঁচাতে পারবো না"

"বাঁচাতে পারবে না নাকি বাঁচাতে চাও না?"

"যেটা তুমি মনে করো, কিন্তু কথাটা মাথায় রেখো" অভিরূপবাবু কথাটা বলে স্বর্ণেন্দু বাবুকে নিয়ে বেরিয়ে গেলেন।


"জামাইবাবু মাথা ঠান্ডা করো, তুমি সবসময় শান্ত মাথার লোক তুমি যদি এভাবে রেগে যাও তাহলে তো খুব মুশকিল"

হাঁটতে বেরিয়ে অভিরূপবাবুর রাগী থমথমে মুখ দেখে মন্তব্য করলেন স্বর্ণেন্দু বাবু।

"তুমি আমার মনের অবস্থাটা বুঝতে চাইছো না স্বর্ণেন্দু, সেদিন থানায় অনির কথাগুলো শুনেছিলে তো তুমি, ওর মনে কত অভিমান জমে আছে আন্দাজ করতে পারো? আমি তো ভেবে পাচ্ছি না ওর সামনে দাঁড়াবো কিভাবে?"

"সত্যি বলতে সেটা আমিও ভাবছি"

"স্বর্ণেন্দু পিয়ালী প্রেগনেন্ট ওর গর্ভে যে আছে সে আমাদের নিজেদের রক্ত, আমাদের পরিবারের সদস্য আর ওকেই মারার জন্য লোক পাঠিয়েছিল অরু আর আমরা কি করলাম ওকে ছাড়িয়ে আনলাম"

"জামাইবাবু যা হয়ে গেছে সেটা নিয়ে আর ভেবে লাভ নেই ,এর থেকে অনিকে কিভাবে বোঝাবে সেটা ভাবলে ভালো হয়"

"তুমি বলো আমার তো কিছুই মাথায় আসছে না এখন তো মনে হচ্ছে আমি অনির সন্তানের মুখ‌ও দেখতে পারবো না"

"এরকম কেন বলছো?"

"স্বর্ণেন্দু কোন বাবা চাইবে যে, যে তার স্ত্রী আর সন্তানকে মারতে চেয়েছিল তার বাবাকে নিজের সন্তানের মুখ দেখাতে?"

"জামাইবাবু, অনি আর যাই করুক এটা করবে না, ও আমাদের উপরে রেগে থাকতে পারে কিন্তু এতটাও নয় যে ও ওর সন্তানের মুখ‌ই দেখতে দেবে না"

"না দিলেও ওকে কিছু বলার নেই স্বর্ণেন্দু, ওর জায়গায় ও ঠিক"

"আমি ভাবছিলাম যদি আমরা গিয়ে ওর সঙ্গে দেখা করি তাহলে হয়তো ওর সঙ্গে কথা বললে ও হয়তো বুঝবে আমাদের অবস্থাটা"

"আর ওকে গিয়ে কি বলবে? অরুণাভ আমাদের ছেলে তাই ওর সাত খুন মাফ, এবং ও যদি আবার এক‌ই অন্যায় করে তাহলেও ওকে ছেড়ে দিতে হবে এই বলবে?"

"জামাইবাবু এরকম কেন বলছো? চলো না একবার গিয়ে দেখা করিই না"

"বেশ যাবো তাহলে"।



"রেডি থেকো যেকোনো দিন কিন্তু ছুটতে হতে পারে"

বিকেলে বাড়ির বাগানে বসার জায়গায় একটা মোড়ায় বসা পিয়ালীর পেটে হাত বোলাতে বোলাতে মন্তব্য করে আদিত্য, তার গলার স্বরে খুশী এবং উত্তেজনা দুটোই স্পষ্ট, আদিত্য পিয়ালীর সামনে নীচে বসে আছে কখনো সে পিয়ালীর পেটে হাত বোলাচ্ছে আবার কখনো কান পেতে কিছু শোনার চেষ্টা করছে, যেটা দেখে পিয়ালী হেসেই অস্থির।

বাদশা এতক্ষণ চুপচাপ পিয়ালীর পাশে বসে ছিলহ পিয়ালী মাঝে মাঝে একটা হাত ওর মাথায় বুলিয়ে আদর করছিল আর সারমেয়টা মনিব পত্নীর এই আদরটা উপভোগ করছিল হটাৎ সে বাইরের গেটের দিকে তাকিয়ে গর্জন করে ওঠে, এই গর্জন শুনে পিয়ালী কিছুটা অবাক হলেও আদিত্য গর্জনের মানে বুঝতে পারে সে বাদশার দৃষ্টি অনুসরণ করে গেটের দিকে তাকিয়েই অবাক বিস্ময়ে বলে ওঠে "আপনি?"।


অভিরূপবাবু ও শ্রীতমাদেবী গ্ৰামে এসেছেন স্বর্ণেন্দু বাবু সঙ্গে আসতে চেয়েছিলেন কিন্তু কয়েকটা কাজ এসে যাওয়ায় আসেননি তবে হাতের কাজগুলো সেরেই চলে আসবেন বলেছেন, গ্ৰামে আসা ইস্তক অভিরূপবাবু অনেক চেষ্টা করেও অনিকেতের মুখোমুখি হতে সাহস পাননি, তিনি জানেন অনিকেত তাকে অপমান করবে না কিন্তু তার সেই অভিমানে পূর্ণ দৃষ্টি তিনি সহ্য করতে পারছেন না।

তিনি ঠিক করলেন স্বর্ণেন্দু বাবু এলে একসাথে যাবেন কিন্তু তাঁকে অবাক করে দিয়ে অরুণাভ সপরিবার এসে গেল, অভিরূপবাবুর অবাক হবার যথেষ্ট কারণ আছে কিন্তু তিনি মনের ভাব গোপন করার চেষ্টাও করলেন না গাড়ি থেকে নামতেই ছেলেকে জিজ্ঞেস করলেন, "তোমরা এখানে?"

"ভাবলাম উইকেণ্ডটা তোমাদের সাথে এই গ্ৰামে কাটানো যাক"

"নাকি আমাদের উপরে গোয়ান্দাগিরি করতে এসেছো যে আদিত্যর সাথে আমাদের কি কথা হয় সেটা জানতে?"

সত্যিটা ধরা পরে যাওয়ায় অরুণাভ কিছুটা গম্ভীর হয়ে গেল কিন্তু মৌমিতা কথা ঘোরানোর জন্য বলে "না বাবা, আপনাকে তো আগের বার এসেও বললাম এই গ্ৰামটা আমার সত্যিই ভালো লেগেছে তাই আমিই বললাম এখানে এসে থাকতে"

"থাকতে চাও ভালো তবে কারো সঙ্গে ঝামেলা কোরো না"

"না বাবা চিন্তা নেই কারো সঙ্গে ঝামেলা করবো না"

মৌমিতা আশ্বাস দিল বটে তবে ওর কথা বলার ঢঙটা অভিরূপবাবুর ভালো লাগলো না যদিও তিনি মুখে আর কিছু বললেন না।

বিকেলে গ্ৰাম দেখার নাম করে মৌমিতা বেরিয়ে পরলো একাই বেরোলো উদ্দেশ্য যদিও গ্ৰাম দেখা নয় আদিত্যকে দেখা। বাড়িটা চেনাই ছিল তাই অসুবিধা হলো না কাউকে জিজ্ঞাসা করারও দরকার হলো না, বাড়ির গেটের সামনে আসতেই থমকে দাঁড়িয়ে পরলো সে, যা দেখলো তাতে তার পুরো শরীর জ্বলে উঠলো। গেট থেকে ভিতরে পোর্টিকো এবং লন এবং বাগানের অনেকটাই দেখা যাচ্ছে।

স্পষ্টত‌ই আদিত্য আর পিয়ালীকে একসাথে দেখতে পেল মৌমিতা দুজনে হেসে হেসে কথা বলছে, মাঝে মাঝে আদিত্য মেয়েটার পেটে হাত দিচ্ছে আবার কান পাতছে, স্বভাবতই দৃশ্যটা সহ্য হলোনা মৌমিতার, রাগে হিংসায় তার হাত নিশপিশ করতে থাকে কি করবে ভাবতে গিয়ে পায়ের কাছে একটা পায়রার ডিমের সাইজের পাথর পরে থাকতে দেখে সেটা হাতে তুলে নেয় সে ঠিক করে এটা দিয়েই মেয়েটার মাথা ফাটিয়ে দেবে সেইমতো পাথরটা ছোঁড়ার জন্য প্রস্তুত‌ও হয় কিন্তু মোক্ষম সময়ে মেয়েটির পাশে বসা কালো কুকুরটা তার দিকে মুখ ফেরায় এবং গর্জন করে ওঠে ফলে দ্রুত হাত থেকে পাথরটা মাটিতে ফেলে দেয় মৌমিতা।

আদিত্য বাদশার দৃষ্টি অনুসরণ করে গেটের দিকে তাকিয়েই অবাক বিস্ময়ে বলে ওঠে "আপনি?"। এবার পিয়ালীও গেটের বাইরে দাঁড়ানো মৌমিতাকে দেখে সেও অবাক হয়।

"এসেছিলাম গ্ৰামে তাই ভাবলাম একটু ঘুরে দেখি" মৌমিতা আমতা আমতা করে জবাব দেয়।

"গ্ৰাম দেখতে বেরিয়েছিলেন ভালো" আদিত্য শান্ত স্বরে কথা বলে যদিও তাঁর তীক্ষ্ণ দৃষ্টি মৌমিতাকে জরিপ করতে থাকে।

"অ্যাক্চুয়ালি তোমার সাথে দেখা করতে এসেছিলাম বললেও ভুল বলা হবে না" গেট থেকে ভিতরে ঢুকে আদিত্য এবং পিয়ালীর কাছে এসে উত্তর দেয় মৌমিতা।

"আমার সাথে?" আদিত্য আরও অবাক হয়।

"সেদিন তোমাকে দেখেছিলাম খালি গায়ে মাটি কোপাতে, মানতেই হবে এখনো সেই জিনিসটা আছে তোমার মধ্যে যেটা কলেজ লাইফেও ছিল, মেয়েরা ঘুরঘুর করতো তোমার আশেপাশে"

মৌমিতার কথা শুনে আদিত্য এবং পিয়ালী পরস্পরের দিকে দৃষ্টি বিনিময় করে, মৌমিতা সেটা লক্ষ্য করেই আবার ঠেস দেওয়া স্বরে বলতে শুরু করে "তোমার ওয়াইফ জানে সেটা? আইমিন তোমার অতীতের কথা, তোমার আসল নাম" এতটুকু বলে মৌমিতা একটু থেমে আদিত্য এবং পিয়ালীর মুখের ভাবটা বোঝার চেষ্টা করে তারপর আবার বলতে শুরু করে "তুমি বলোনি ওকে যে তোমার সাথে আরো একজনের আইমিন একটা মেয়ের রিলেশন ছিল? এগুলো তো বলতে হয় আদিত্য নাকি আমি তোমাকে বলবো অনিকেত"।

মৌমিতার মুখে নিজের আসল নামটা শুনে আদিত্য কিছুটা চমকে উঠলেও দ্রুত নিজেকে সামলে নিল, নিজের নাম শুনে তার চকিত দৃষ্টি মৌমিতার দৃষ্টি এড়ায়নি সে ঠোঁটের কোণে শয়তানি হাসি নিয়ে বলতে থাকে "এবার এটা বোলো না যে তুমি অনিকেত না, আদিত্য কারণ আমি জানি যে তুমি অনিকেত আর আমি কিভাবে জানলাম সেই প্রশ্নে বলি তোমাকে আমি যতটা চিনি ততটা বোধহয় তোমার এই ওয়াইফ‌ও জানে না, ইনি ওয়াইফ তো নাকি অন্য কিছু"

"মিসেস ব্যানার্জী" প্রায় গর্জন করে ওঠে আদিত্য, "ডোন্ট ক্রশ ইওর লিমিটস" কিন্তু পিয়ালী তার কাঁধে হাত রেখে তাকে শান্ত হতে ইশারা করে নিজে মুখ খোলে,

"আমার আর ওর মধ্যে কি রিলেশন সেটা যদিও আপনাকে বলার কোনো বাধ্যবাধকতা আমাদের নেই তবুও বলি ও আমার হাজবেন্ড। আর আমার হাজবেন্ড আমাকে সব বলেছে ওর অতীতের কথা"

"তাই নাকি? কি কি বলেছে জানতে পারি?"

"নিশ্চয়ই, ওর সাথে একটা মেয়ের সম্পর্ক ছিল সেই মেয়েটি ওকে চিট করে ওর দাদার সাথে রিলেশনে জড়ায় শুধু তাই নয় সেই মেয়েটি ওর দাদার সাথে মিলে ওকে মারার জন্য খাদ থেকে ফেলে দেয়, আর কিছু শুনতে চান?"

এতক্ষণ মৌমিতার মুখে একটা শয়তানি হাসি ছিল কিন্তু এখন পিয়ালীর উত্তর শুনে রাগে লাল হয়ে গেল চোখ থেকে হিংস্রতা ঠিকরে বেরোচ্ছে পারলে সে এখনই পিয়ালীকে ছিঁড়ে টুকরো টুকরো করে ফেলে, কিন্তু আশ্চর্যভাবে নিজেকে সামলে রেখেছে কিন্তু রাগ সামলাতে পারছে না, চিবিয়ে চিবিয়ে বলে, "যা বলছো সেটা প্রমাণ করতে পারবে?"

"কোনটা? ওকে খুন করতে চাওয়ার টা? বাবা আইমিন অভিরূপ ব্যানার্জী যদি জানতে পারেন যে ওনার ছেলে বেঁচে আছেন তাহলে কি আর কিছু প্রমাণের দরকার হবে? তখন ওর মুখের কথাই যথেষ্ট নয় কি? আর ও ওনার ছেলে কি না এটা জানার জন্য শুধু একটা ডিএনএ টেস্ট দরকার আর কিছু না"

রাগের মাঝেও মৌমিতার মুখে আবার একটু হাসি দেখা যায় সে বলে, "তোমার কি মনে হয় অভিরূপ ব্যানার্জী তাঁর বড়ো ছেলে অরুণাভর কথা বিশ্বাস না করে তোমাদের কথা বিশ্বাস করবে? সেদিন থানায় কি হয়েছে মনে নেই? ওনার কাছে ওনার বড়ো ছেলে সত্যবাদী যুধিষ্ঠিরের প্রতিরূপ উনি সর্বদা ওকেই বিশ্বাস করেন"

"তাহলে দেখাই যাক উনি কার কথা বিশ্বাস করেন? ওনাকে গিয়ে সবটা বলি তাহলে?"

পিয়ালীর এই কথায় চকিতের জন্য মৌমিতার মুখে একটা ভয়ের রেখা এসেই মিলিয়ে গেল সেটা লক্ষ্য করছি বোধহয় আদিত্য এবার মুখ খুললো,

"আমাদের কথা উনি বিশ্বাস করবেন কি না সেটা পরের কথা কিন্তু প্রমাণ পেলে পুলিশ নিশ্চয়ই করবে আর সেই প্রমাণ আমার কাছে আছে"

মৌমিতার মুখে ভয়ের রেখা আরও স্পষ্ট হলো আদিত্য মনে মনে খুশী হলো সেটা দেখে সে বলতে থাকে,

"এবং সত্যি বলতে আমি যদি চাইতাম তাহলে আপনাদের সত্যিটা দশবছর আগে আপনার আর অরুণাভ ব্যানার্জীর বিয়ের দিনেই সবার সামনে আনতে পারতাম তখন হয়তো আপনাদের ওয়েডিং নাইট টা জেলে কাটাতে হতো অবশ্যই আলাদা আলাদা কারণ জেলে জেন্টস এবং লেডিসদের আলাদা রাখা হয়, কিন্তু আমার সেরকম কোনো ইচ্ছা নেই তার থেকে আপনারা আপনাদের মতো থাকুন আর আমরা আমাদের মতো থাকি।"

মৌমিতা একবার আদিত্য আর একবার পিয়ালীকে দেখতে থাকে আদিত্য আবার বলে, "আরেকটা কথা কেউ যদি আমার আর পিয়ালীর ক্ষতি করতে চায় তাহলে তাকে আমার এই বাদশা খুব একটা পছন্দ করে না কাজেই পরের বার থেকে আমাদের পাথর ছোঁড়ার চেষ্টা করার আগে একটু সাবধান থাকবেন বলা তো যায় না হয়তো বাদশা সেই হাতটাই কামড়ে শরীর থেকে আলাদা করে দিল, নমস্কার"

মৌমিতা আর দাঁড়ালো না দুজনের দিকে আরও একবার হিংস্র দৃষ্টি দিয়ে বেরিয়ে গেল।
Like Reply
[Image: Picsart-22-12-06-20-20-08-119.jpg]



                দ্বিতীয় খণ্ড
                ৩৪তম প‍র্ব




মৌমিতা আর দাঁড়ালো না দুজনের দিকে আরও একবার হিংস্র দৃষ্টি দিয়ে বেরিয়ে গেল। 

মৌমিতা চলে যাওয়ার পর পিয়ালী গম্ভীর মুখে আদিত্যকে জিজ্ঞেস করে,
"কি ব্যাপার বলোতো এনার আবার কি হলো?"

"জানিনা, তবে আমি একে আমাদের ধারেকাছেও চাই না"

"একটা কথা বলোতো"

"কি?"

"তোমার মধ্যে কি এমন ছিল যেটার জন্য মেয়েরা তোমার পিছনে ঘোরে"

"আমি তো আমার ব‌উকেও আমার পিছনে ঘুরতে দেখি না"

"ইয়ার্কি না, নর্থবেঙ্গলে থাকতেও শুনেছি ওখানকার মেয়েরাও তোমার পিছনে ঘুরতো"

"আমি কিভাবে জানবো ওরা কেন ঘুরতো?"

"ওই যে বললো তোমার পিছনে অনেক মেয়ে ঘুরতো তাদের মধ্যে কজনের সঙ্গে তুমি.."

আদিত্য গম্ভীর হয়ে পিয়ালীর দিকে তাকালো বললো "তুমি আমাকে অবিশ্বাস করছো?"

আদিত্যর মুখের ভাব দেখে পিয়ালী আর গম্ভীর হয়ে থাকতে পারলো না হেসে ফেললো তারপর আদিত্যর দুটো গাল ধরে একটু কাছে টেনে ওর ঠোঁটে নিজের ঠোঁট ছোঁয়ালো, কিছুক্ষণ পরে আদিত্য বললো, "নর্থবেঙ্গল বলতে মনে পরলো তোমার জন্য একটা গিফট আছে"

"আমার জন্য, কি গিফট?"

"চলো ভিতরে চলো, এই বাদশা ভিতরে চল"

আদিত্য পিয়ালীকে ধরে ধরে আস্তে আস্তে ভিতরে ড্রয়িংরুমে এনে বসালো তারপর রুমে গিয়ে একটা প্যাকেট এনে ওর হাতে দিল।

"এটা কি?" পিয়ালী জিজ্ঞেস করলো,

"খুলেই দেখো"

প্যাকেটের ভিতরের র‍্যাপারে মোড়া জিনিসটা খুলতেই পিয়ালী বাকরুদ্ধ হয়ে গেল, জিনিসটা একটা বাঁধানো ছবি আর ছবিতে পিয়ালীর হারিয়ে যাওয়া পুরো পরিবার আছে অর্থাৎ পিয়ালী ওর বাবা, মা এবং দাদা সবাই একসাথে।

"এটা কোথায় পেলে?" অশ্রুসিক্ত চোখে প্রশ্ন করে পিয়ালী,

"নর্থবেঙ্গল থেকে আনিয়েছি" পিয়ালীর চোখের জল মুছিয়ে দিয়ে জবাব দেয় আদিত্য।

"নর্থবেঙ্গল থেকে?"

"ওখানে এখনও আমার কিছু যোগাযোগ আছে, এখনো এমন কয়েকজন আছে যারা আমার বিশ্বস্ত আমার কথা শোনে, তবে এটার জন্য অনেক খোঁজ করতে হয়েছে এটা মানছি। তোমার পছন্দ হয়েছে?"

"থ্যাংক ইউ, থ্যাংক ইউ"।



কিছুদিন নিরুপদ্রবেই কেটে গেল আদিত্য এবং পিয়ালীর, মাঝখানে একবার অভিরূপবাবুরা এসেছিলেন কথা বলতে কিন্তু আদিত্য স্পষ্ট জানিয়ে দেয় ওই বিষয়ে আর কথা বলতে সে ইচ্ছুক নয় তবে ভবিষ্যতে যদি আবার এরকম কাজ করেন অরুণাভ তবে কি হবে বলা মুশকিল তার পক্ষে। এরপর অবশ্য অভিরূপবাবু বা স্বর্ণেন্দু বাবু কারোরই কিছু বলার ছিল না তবে আদিত্যর তরফ থেকে আগের মতোই স্বাভাবিক ব্যাবহার দেখে তারা কিছুটা যে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছিলেন একথা হলফ করেই বলা যায়। 

আসল বোমাটা ফাটালেন সুপ্রতিমবাবু, একদিন সকাল সকাল ফোন করলেন তিনি আদিত্য তখনও ঘুমের ঘোরে কিন্তু যা খবর দিলেন সুপ্রতিমবাবু তাতে ঘুম নষ্ট হতে সময় লাগলো না,
"অনি, প্ল্যান সাকসেসফুল একটা রাঘব বোয়াল জালে ধরা পড়েছে"।


নিজের বাড়িতে নিজস্ব রুমে বসে ব্যাবসার হিসাব মেলাচ্ছিলেন মনোজিত বাবু, অনেক বলেও ছেলেকে ব্যাবসার কাজে লাগাতে পারেননি তিনি তাই এখনো তাকেই সব দেখতে হয়, তার ছেলে শুধু ফূর্তি করতেই ব্যাস্ত ব্যাবসায় তার মন নেই, একটা হিসাব কিছুতেই মিলছিল না তাই বারবার চেক করছিলেন এমন সময় তার ফোনটা বেজে উঠলো কিছুটা বিরক্তি নিয়েই ফোনটা হাতে নেন, নাম্বারটি অচেনা দেখে বিরক্তিটা কয়েকগুণ বেড়ে যায় তার তবুও না কেটে কানে দেন,

"হ্যালো"

গলা শুনে চমকে ওঠেন মনোজিত বাবু যে দুজনকে পাঠিয়েছিলেন আদিত্যকে মারার জন্য সেই দুজনের একজন। এদের কথা তার মন থেকে একপ্রকার বেরিয়েই গিয়েছিল, হঠাৎ এতদিন পরে এরা কেন ফোন করলো সেটা তিনি বুঝতে পারলেন না তাই সরাসরি সেই প্রশ্ন‌ই করলেন,

"এতদিন পরে হটাৎ ফোন করলে কেন?"

"দরকার আছে তাই ফোন করেছি"

"কি দরকার তাড়াতাড়ি বলে ফেলো, আমার অনেক কাজ"

"টাকা লাগবে আমাদের"

"টাকা? কিসের টাকা?"

"আপনার কাজটা করতে গিয়ে জখম হয়েছি তার ট্রিটমেন্টের টাকা"

"শূয়োরের বাচ্চা, কাজটা তো করতে পারিস নি আবার টাকা কিসের?"

"মুখ সামলে কথা বলুন, আপনি যাকে মারতে পাঠিয়েছিলেন সে নিজেও এক্সপার্ট ফাইটার এটা আপনি বলেছিলেন? সে আমাদের দুজনকেই মেরে হাল খারাপ করে দিয়েছে"

"তার জন্য আমি কি করতে পারি?"

"আপনাকে টাকা দিতে হবে"

"আর যদি না দি‌ই?"

"তাহলে পুলিশের কাছে গিয়ে যা বলার তা বলবো বাকিটা পুলিশ আর আপনি বুঝবেন?"

"ব্ল্যাকমেইল করছিস?"

"ধরে নিন তাই"

"তুই যে পুলিশের হাতে ধরা পরে যাসনি তার প্রমাণ কি?"

"প্রমাণ আপনি এখনো জেলে না, বা পুলিশের তাড়া খেয়ে ঘুরছেন না"

"কত টাকা লাগবে?"

"আপাতত দুজনের জন্য পাঁচ লাখ দিন"

"পাঁচ লাখ তোর মাথা খারাপ হয়ে গেছে"

"আমার মাথা একদম ঠিক আছে তবে টাকা না দিলে খারাপ হতে পারে তখন আবার."

"ঠিক আছে আমার একটু সময় চাই"

"আবার সময় কিসের? এইটুকু টাকা আপনার কাছে হাতের ময়লা সেটা আমি জানি, আজ রাতেই চাই"

"তুই.."

"সময় আর লোকেশন এস‌এম‌এস করে দিচ্ছি"

"আমি তোদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে পাঠিয়ে দিচ্ছি"

"ব্যাংক অ্যাকাউন্ট পুলিশ ব্লক করে দিয়েছে তাই ক্যাশ দরকার"

"অত টাকা ক্যাশ এত তাড়াতাড়ি কোথায় পাবো?"

"আপনার বাড়িতে এর থেকে বেশী ক্যাশ থাকে"

"বেশ, তুই টাইম আর লোকেশন পাঠিয়ে দে"

"দিচ্ছি, আর একটা কথা নিজে আসবেন এবং একা আসবেন যদি সঙ্গে কেউ থাকে তাহলে টাকা হয়তো আপনার বেঁচে যাবে কিন্তু আপনি পুলিশের থেকে বাঁচতে পারবেন না"।

ফোনটা কাটার পরেও কিছুক্ষণ থম মেরে বসে র‌ইলেন মনোজিত বাবু এটা তার কাছে একেবারেই অপ্রত্যাশিত, কেউ তাকে ব্ল্যাকমেইল করে টাকা চাইছে এটা তিনি ভাবতেই পারেন না তাও এতদিনের বিশ্বস্ত লোক, তবে মনোজিত বাবু নিজেও তো সোজা লোক নন তিনি নিজে নিজেই বলতে থাকেন, "আমার থেকে টাকা নিবি এত শখ? টাকা তো দেবোই না উপরন্তু তোদের দুটোকেই যমের দুয়ারে পাঠানোর ব্যাবস্থা করছি"।

একটু পরেই টুং করে একটা আওয়াজের সঙ্গে মনোজিত বাবু আবার মোবাইল খুলে সময় আর লোকেশন দেখে নিলেন তারপর একটা ফোন করে দরকারি কথা বলে নিলেন।

রাত প্রায় দুটোর সময় ধাপার একটা নির্জন জায়গায় গিয়ে উপস্থিত হলেন মনোজিত বাবু, এই জায়গা এবং এই সময়টাই ঠিক হয়েছিল। একাই এসেছেন গাড়ি চালিয়ে গাড়িটা একটা জায়গায় থামিয়ে নামলেন গাড়ি থেকে। প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই আবার ফোন এলো, ফোনটা ধরে কানে দিলেন তিনি,
"টাকা এনেছেন?"

প্রশ্নের উত্তরে গাড়ি থেকে একটা ব্যাগ বের করে সেটা থেকে কয়েকটা বাণ্ডিল বের করে অদৃশ্য কারো উদ্দেশ্য দেখান তিনি। একটু পরে অন্ধকার থেকে দুটো মূর্তি খোঁড়াতে খোঁড়াতে তার কাছে এল, মনোজিত বাবুও চুপচাপ টাকার ব্যাগটা ওদের হাতে দিলেন, টাকাটা নিয়ে ওরা ফিরে যাবে এমন সময় মনোজিত বাবু বললেন "তোরা আমার বিশ্বস্ত ছিলি, তোদের থেকে এরকম ব্যবহার আশা করিনি"

"কি করবো বলুন, বাধ্য হয়ে করেছি। আশা করছি আপাতত এতেই চলে যাবে"

"তার প্রয়োজন হবে না"

"তার মানে?"

মনোজিত বাবু উত্তর দিলেন না চকিতে চারটে বাইক এসে মনোজিত বাবু সহ তিনজনকে ঘিরে ধরলো, বাইক থেকে চারজন আরোহী নেমে পিস্তল নিয়ে দুজনের দিকে তাক করে দাঁড়ালো, মনোজিত বাবু বললেন "আমি দ্বিতীয় সুযোগ কাউকে দিইনা তোদের দেবো ভাবলি কিকরে? আমাকে তোরা বাধ্য না করলেই পারতি আমি তোদের একজনকে মারতে পাঠিয়েছিলাম কিন্তু তোরা সেটা না করে উল্টে আমার কাছে টাকা চাইছিস এবার টাকা তো পাবিই না বরং এখানেই তোদের মেরে ফেলে রেখে যাবো"

মনোজিত বাবু ভেবেছিলেন লোকদুটো তার কথা শুনে ভয় পাবে বা অন্তত তার হাতে পায়ে ধরবে কিন্তু উল্টে তাদের মুখে হাসি দেখে তিনি নিজেই অবাক হয়ে গেলেন হটাৎ রাতের নিস্তব্ধতা ভেদ করে পরপর কয়েকটা পিস্তলের আওয়াজ হলো এবং মনোজিত বাবুর সঙ্গে আসা চারজন পিস্তলধারীর হাত থেকে পিস্তল ছিটকে মাটিতে পরলো এবং সেটা তারা কুড়িয়ে আনার আগেই চোখের নিমেষে অসংখ্য পুলিশ তাদের সবাইকে ঘিরে ফেললো, মনোজিত বাবু একবার পিছন ফিরে পালাতে চাইলেন কিন্তু পারলেন না এক বজ্রকঠিন কন্ঠস্বর শুনে থেমে যেতে বাধ্য হলেন, "পালানোর চেষ্টা করে লাভ নেই মনোজিত বাবু পালাতে পারবেন না আপনাকে পুরো ঘিরে ফেলা হয়েছে এখান থেকে পালাতে চেষ্টা করলেই আপনাকে গুলি করা হবে"

মনোজিত বাবু আর পালানোর চেষ্টাও করলেন না একজন পুলিশ এসে তাকে হাতকড়া পড়াতে এলে তিনি চেঁচিয়ে উঠলেন "আমার অপরাধ কি?"

"থানায় চলুন সব বলবো, সেখানে লম্বা লিস্ট তৈরী আছে"

কণ্ঠস্বর যেদিক থেকে আসছে সেদিকে তাকিয়েই মনোজিত বাবু ভয়ে বিস্ময়ে হতবাক হয়ে যান, কারণ তিনি দেখেন এই কণ্ঠস্বর স্বয়ং সুপ্রতিম দাশগুপ্তর।


থানায় নিয়ে এসে জরুরি কয়েকটা কাজ সারতে সারতেই প্রায় সকাল হয়ে গেল, কাজ সেরেই প্রিয় ছাত্র এবং এই প্ল্যানের মাস্টারমাইণ্ড অনিকেত ওরফে আদিত্যকে খবরটা জানানোর জন্য ফোন করেন সুপ্রতিমবাবু। সুপ্রতিমবাবু যে মনোজিত বাবুর পিছনে আছেন এটা আদিত্য ভালো করেই জানতো এবং এটাও জানতো কোনো প্রমাণ ছাড়া তাকে ধরা যাবে না বা ধরলেও বেরিয়ে যাওয়ার চান্স আছে ,তাই যখন সে শুনলো যে দুজন তাকে মারতে এসেছিল তারা গ্ৰামবাসীদের ধোলাই থেকে কিছুটা সুস্থ হয়ে উঠেছে তখন‌ই সে এই প্ল্যানটা বলে খুবই সাধারণ প্ল্যান আদিত্য ভালো করেই জানতো মনোজিত বাবুর মতো লোক ব্ল্যাকমেইলিং এ দমে যাবে না বরং যে ব্ল্যাকমেইল করছে তাকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেবার চেষ্টাই করবে, তাই সে ওই দুজনকে দিয়ে ফোন করিয়ে টাকা চাওয়ায় এবং শেষে ক্যামেরা এবং অডিও রেকর্ডার লাগিয়ে মনোজিত বাবুর সামনে পাঠায় বাকিটা পুলিশ করেছে।

"অনি, প্ল্যান সাকসেসফুল একটা রাঘব বোয়াল জালে ধরা পড়েছে"।

"কনগ্ৰাচুলেশনস্ স্যার, আপনার ইচ্ছা তাহলে পূরণ হলো"

"পুরোটা নয় অর্ধেক যেদিন আরেক বোয়ালকে তুলতে পারবো সেদিন বলতে পারবো যে ইচ্ছা পূরণ হয়েছে"

"এনাকে নিয়ে এখন কি করবেন ঠিক করেছেন?"

"তোর মাথায় কিছু আছে বলে মনে হচ্ছে?"

"এর পুলিশ কাস্টডি পাবেন কোর্ট থেকে?"

"ঠিক মতো কেসটা সাজালে পেতে অসুবিধা হবার কথা নয়"

"তবে তাই করুন, আর তারপর এর পেট থেকে কথা বের করার চেষ্টা করুন। দুজনে ক্রাইম পার্টনার তাই এর কাছ থেকে অনেক খবর পাবেন যেগুলো আরেকটাকে ধরতে কাজে লাগবে"

"ভেরী গুড আইডিয়া আমিও এরকমই ভাবছিলাম"

"তাহলে আর কি লেগে পড়ুন"

"ওদিকে সব ভালো?"

"হ্যাঁ, যে কোনোদিন পিয়ালীকে নিয়ে ছুটতে হবে"

"এবার যদি খবর দিতে ভুল হয়েছে তাহলে দেখ কি করি"

"হবে না স্যার, এবার ভুল হবে না"

"ঠিক আছে চল এখন রাখছি"

"ওকে স্যার"।


এরপর সুপ্রতিম বাবু যে যে কাজগুলো করলেন আর যে ভাবে এবং যে গতিতে করলেন সেটা একাধারে যেমন অভাবনীয় তেমনি চমকপ্রদ। সুপ্রতিম বাবু ঠিকই অনুমান করেছিলেন, কোর্ট থেকে মনোজিত বাবুর পুলিশ কাস্টডি পেতে খুব একটা অসুবিধা হয়নি অবশ্য ওনার আরও একটা সুবিধা হয়েছিল এই যে মনোজিত বাবু স্বর্ণেন্দু বাবুকে ওনার কেসটা নিতে বলা সত্বেও উনি নেননি এবার সেটা বন্ধুর সঙ্গে দূরত্ব না বাড়াতে চাওয়ার কারণেই হোক বা অন্য যে কারনেই হোক কিন্তু তিনি বিরুদ্ধে না থাকায় পুলিশের কাজটা যে সহজ হয়েছিল সেটা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।

পুলিশ কাস্টডিতে পুলিশের জেরার সামনে প্রথম প্রথম শক্ত থাকার চেষ্টা করলেও বেশীক্ষণ থাকতে পারলেন না মনোজিত বাবু একটা সময় পরে হড়হড় করে ভিতরের কথা বলতে শুরু করেন তিনি, এর ফলে যেটা হয় সেটা হলো পুলিশের জালে একের পর এক মাথা ধরা পরতে থাকে।

এদিকে মনোজিত বাবু ধরা পরার পরেই প্রমাণ গুণলেন প্রীতমবাবু এবং অচিরেই তিনি বুঝতে পারলেন পুলিশের হাত তার গলা পর্যন্ত প্রায় পৌঁছে গেছে এবার তার যেটা সমস্যা হলো তিনি অভিরূপবাবুকে কিছু বলতেও পারছেন না কারণ বললেই অভিরূপবাবু নিজে পুলিশ ডেকে ধরিয়ে দেবেন বাধ্য হয়েই একটা সময় তিনি অরুণাভর কাছে গিয়ে সাহায্য চাইলেন কিন্তু অরুণাভ সরাসরি সাহায্য করতে অস্বীকার করলো এবং মুখের উপরে সেকথা জানিয়ে দিল এমনকি প্রীতমবাবু যখন তার কাছে থাকা অনিকেতকে খাদে ফেলে দেওয়ার ভিডিও প্রকাশ করে দেওয়ার হুমকি দিল তখন‌ও অরুণাভ রাজী হলো না, থানা থেকে যেভাবে তার মা তাকে ছাড়িয়ে এনেছে তার পর তার মনে দৃঢ় বিশ্বাস জন্মে গেছে যে যাই হয়ে যাক সে তার মাকে বুঝিয়ে ঠিক বেঁচে যাবে অত‌এব সে সরাসরি প্রীতমবাবুকে জানিয়ে দিল নিজের রাস্তা নিজে দেখে নিতে।

এরপর অবশ্য প্রীতমবাবুর কাছে আর কোনো রাস্তা খোলা থাকে না গা ঢাকা দেওয়া ছাড়া কারণ তিনি ভালো করেই বুঝতে পারছিলেন যেকোনো সময় পুলিশ তার সামনে এসে দাঁড়াবে অত‌এব 'যঃ পলায়তি সঃ জীবতি' প্রীতমবাবু গা ঢাকা দিলেন।

মনোজিত বাবুর বয়ান এবং তার বয়ানের উপরে ভিত্তি করে ধৃতদের বয়ানের সাহায্যে প্রীতমবাবু পর্যন্ত পৌঁছাতে পুলিশের বেশী সময় লাগলো না তার নামে ওয়ারেন্ট‌ও বের করতে অসুবিধা হলো না কিন্তু অসুবিধা হলো তাকে ধরার আগেই তিনি চম্পট দিয়েছেন এদিকে তার স্ত্রী অর্থাৎ মণিমালা দেবী এবং তার ছেলে সুশান্ত মুখ খুলতে নারাজ, ফলে মনোজিত বাবুকে পুলিশ ধরতে ব্যার্থ হলো, তার সম্ভাব্য গা ঢাকা দেওয়ার সব জায়গায় তল্লাশি আরেও প্রীতমবাবুকে ধরা গেল না বদলে বাধ্য হয়েই পুরো শহরে তার নামে হুলিয়া জারি করে দিল পুলিশ।

গ্ৰামে থেকেও সব খবর‌ই পাচ্ছিল আদিত্য সুপ্রতিম বাবুই দিচ্ছিলেন তাকে আসলে তিনি ভালো করেই জানেন তার এই ছাত্রটির মাথায় মাঝে মাঝে এমন সব উদ্ভট আইডিয়া এসে উপস্থিত হয় যেটা আর কেউ সহজে ভাবতেও পারবে না ফলে অনেক ক্ষেত্রেই তাকে আদিত্যর সাহায্য নিতে হচ্ছিল, প্রীতমবাবুকে ধরতে ব্যার্থ হয়েও তিনি তাই আদিত্যকেই ফোন করলেন,

"পাখি পালিয়েছে রে, ধরতে পারলাম না"

"এত হতাশ হচ্ছেন কেন স্যার, ওনার পাসপোর্ট টাসপোর্ট সব ব্লক করেছেন তো?ব্যাংক অ্যাকাউন্ট সীল করেছেন?"

"সেগুলো করেছি তবে, ওনার ছেলে আর স্ত্রী মানে তোর পিসি মনে হচ্ছে জানে ও কোথায় আছে"

"এতে আর আশ্চর্য কি? মণি পিসি বরাবরই ওনার হাজবেন্ডের পক্ষে থাকেন আর সুশান্ত‌ও বাপের মতোই, হ্যাঁ হয়তো এখনো ক্রাইমে অতটা হাত পাকেনি তবে এক‌ই গোত্রের দুজন"

"তাহলে?"

"আপনার মুখে এরকম হতাশার সুর মানায় না স্যার, মাথা খাটান"

"তুই আছিস কি করতে? মাথা খাটানো তোর কাজ"

"কলকাতায় জালি পাসপোর্ট যেখানে যেখানে তৈরী হয় সেখানে সেখানে নজরদারি বসান, আর আমার প্রিয় পিসি আর তার ছেলের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টগুলোর ডিটেইলস জোগাড় করুন"

"প্রথমটা হয়ে যাবে কিন্তু দ্বিতীয়টা কেন? ওগুলো সীল করাতে বলছিস? ব্যাপারটা ইল্লিগ্যাল আর তাছাড়া ওদের বিরুদ্ধে কোনো কেস নেই কি কারণে করবো?"

"ধুর, সীল করতে কখন বললাম ওগুলো চব্বিশ ঘন্টা ট্র্যাক করুন এর সাথে দুজনের উপরেও দৃষ্টি রাখুন"

"এই জন্যই তোকে এতদিন মিস করছিলাম, তুই যেটা করতে চাইছিস সেটা আমার মাথায় সত্যিই আসেনি"

"কি করতে বললাম বলুন তো?"

"ওদের দুজনের উপরে নজর রাখলে যদি ওদের কেউ প্রীতমের সাথে দেখা করতে যায় তো তখন ধরা যাবে"

"হুমম আর ব্যাংক অ্যাকাউন্ট?"

"প্রীতমের টাকার দরকার হবে যদি ছেলে বা ওয়াইফের অ্যাকাউন্ট থেকে তুলতে চেষ্টা করে তো লোকেশন ট্র্যাক করা যাবে"

"এই তো আমার স্যারের মতো কথা, আমি কোথায় ভাবলাম এইসব আপনার মাথায় আসবে তা না"

"বয়স হচ্ছে তো, কি আর করবো বল?"

"সেটাই, বুড়ো হয়ে গেছেন আপনি, যাইহোক কাজে লেগে পড়ুন আর ধৈর্য্য ধরুন একটা না একটা ভুল তো করবেই"

"অনি একটা কথা বলার ছিল"

"আবার? বলুন বলুন শুনি"

"জেরায় মনোজিত বাবু একটা কথা বলেছে"

"কি কথা?"

"অনি.. তোকে মারার কাজটা অরুণাভ আর মৌমিতা করলেও মেইন প্ল্যানটা প্রীতমের ছিল"

"তাই নাকি? হটাৎ আমার পিছনে পরেছিল কেন সেটা বলেনি?"

"তুই নাকি ওদের সম্বন্ধে কিসব জেনে গিয়েছিলি তাই?"

"আচ্ছা বুঝলাম"

"কি জেনে গিয়েছিলি তুই?"

অফিসের টাকার গরমিল করেছিল আরেকজনের সঙ্গে মিলে ওদের কনভার্সেসন শুনে নিয়েছিলাম, এছাড়া আরো টুকটাক কিছু জেনে গিয়েছিলাম"

"তোর বাবাকে বলিসনি?"

"বলার সুযোগ হয়নি, বাবার কাছে আমার কথা শোনার মতো সময় প্রায় ছিল না যেটুকু থাকতো সেটাও অরুণাভর জন্য বলা হতো না"

"তাই তোকে সরানোর প্ল্যান করেছিল কিন্তু কাজটা করিয়েছে অরুণাভ আর মোমিতাকে দিয়ে"

"বরং উল্টো ওদের মোটিভটাকে নিজের স্বার্থে ব্যাবহার করেছিলেন এতে ওনার নিজের হাত পরিষ্কার থাকলো অথচ কাজটাও হয়ে গেল, বাদ দিন ওসব কথা আর ভালো লাগে না"।

"ঠিক আছে আমি কিছু আপডেট পেলে জানাবো"

"ওকে স্যার"।


অভিরূপবাবু এখন শহরে কম আর গ্ৰামে বেশী থাকেন আগে গ্ৰামে হয়তো মাসের মধ্যে ছয়-সাত দিন থাকতেন আর বাকিটা শহরে কিন্তু এখন উল্টো শহরে থাকেন ছয় কি সাত দিন আর বাকিটা গ্ৰামে। আদিত্যর সাথে প্রায়‌ই দেখা হয় কথা হয় ওনারা আসেন পিয়ালীকে দেখতে, আদিত্য এবং পিয়ালী কারো তরফ থেকেই সেদিনের ঘটনা নিয়ে আর কোনো উচ্চবাচ্য হয়নি তারা স্বাভাবিক ব্যাবহার‌ই করছে তাই অভিরূপবাবু এবং শ্রীতমাদেবীও আবার সহজ ভাবে মিশতে শুরু করেছেন।

একদিন সন্ধ্যার একটু পরে আদিত্য আর পিয়ালী ঘরেই আছে আর আছে একটা বাচ্চা ছেলে গ্ৰামের‌ই বয়স দশ কি এগারো এরকম বেশ কয়েকটা ছেলে মেয়ে আছে যারা সময় হলেই চলে আসে আদিত্য দাদা আর পিয়ালী দিদির সাথে গল্প করতে বা কাউকে ওদের মা পাঠিয়ে দেয় কিছু খাবার দিয়ে যেতে। এরকমই একটা বাচ্চা ছিল সে এসেছিল আদিত্যর থেকে আঁকা শিখতে, পিয়ালী কাছেই বসে মোবাইলে প্রেগন্যান্সি এবং তার পরবর্তী লাইফ সম্পর্কে কিছু পড়ছিল, হঠাৎ আদিত্যর ফোন বেজে উঠলো গ্ৰামের‌ই একটা ছেলের ফোন,

"হ্যালো দাদা"

"বল"

"তোমরা ঠিক আছো দাদা?"

"কেন বলতো, হটাৎ?"

"আসলে কয়েকজন খোঁজ করছিল?"

"আমার?"

"না বললো, ব্যানার্জীদের, যারা স্বামী স্ত্রী থাকে"

"লোকগুলো দেখতে কেমন রে?"

"ঠিক ভালো লাগলো না, গ্ৰামে দেখিনি আগে আর রিসর্টে এলে তোমার বাড়ির খোঁজ করবে কেন?"

আদিত্য কিছু একটা চিন্তা করলো হটাৎ বিদ্যুৎ ঝলকের মতো ভাবনাটা ওর মাথায় এলো আর সঙ্গে সঙ্গে ওর পুরো শরীরে ভয়ের শিহরণ খেলে গেল যদিও তা ক্ষণিকের, পর মুহুর্তেই নিজেকে শক্ত করে কর্মপন্থা ঠিক করে নিল, ছেলেটিকে জিজ্ঞেস করলো, "তুই এখন কোথায় রে? থানার কাছে?"

"হ্যাঁ, একদম কাছে না হলেও বেশি দূরে নয় বড়োবাবুকে নিয়ে আসবো?"

"আয় সাথে আরো কিছু কনস্টেবলকে নিয়ে আয় তবে আমার বাড়িতে না, আরেক ব্যানার্জী বাবু আছেন না যাকে তোরা শহরে বাবু বলিস?"

"তাই তো দাদা ওনার নাম‌ও তো ব্যানার্জী"

"তাড়াতাড়ি ওনার বাড়িতে আয়, আমি যাচ্ছি ওখানে"

"ঠিক আছে দাদা"

ফোন রেখে আদিত্য বাচ্চাটাকে পিয়ালীর সাথে থাকতে বলে বেরোনোর উদ্যোগ করলো, গেট থেকে বেরোনোর আগে পিয়ালী বললো "বাদশা তুই সঙ্গে যা"

"দরকার নেই বাদশা তোমার সঙ্গে থাকুক"

"না, আমার মনটা বড্ড কু ডাকছে, বাদশা তোমার সঙ্গে যাক"

"পিয়ালী ও তোমার সঙ্গে থাকুক তোমার সেফটির জন্য"

"এখন আমার আবার কি হবে, তুমি বাদশাকে নিয়ে যাও আর তাড়াতাড়ি ফিরে এসো, প্লিজ আমার কেমন লাগছে তাই বলছি"

"ঠিক আছে তবে সাবধানে থাকো আমি তাড়াতাড়ি ফিরে আসছি" বলে দ্রুত পায়ে বেরিয়ে গেল।


অভিরূপবাবু এবং শ্রীতমাদেবী ঘরেই ছিলেন শ্রীতমাদেবী টিভি দেখছিলেন এবং অভিরূপবাবু মোবাইলে কিছু কাজ করছিলেন, বাইরে আকাশে বেশ মেঘ জমে আছে ঝিড়িঝিড়ি বৃষ্টিও হচ্ছে বিকেলের দিকে এক পশলা বৃষ্টি হয়েছিল।

এইসময় বাইরে বেশ একটা আওয়াজ দুজনেরই কানে গেল যেন কারো পায়ের আওয়াজ যেন কেউ পা টিপে টিপে হাঁটতে গিয়ে অসাবধানে আওয়াজ করে ফেলেছে,আর প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই ঘরের ভিতরে টোবো চেঁচানো শুরু করে দিল সে এতক্ষণ চেন দিয়ে বাঁধা ছিল কারণ নাহলেই সে ছুটে বাইরে বেরিয়ে যেত বৃষ্টিতে ভেজার জন্য বৃষ্টিতে ভিজতে সে খুব পছন্দ করে তাই বৃষ্টির সময় তাকে বেঁধে রাখতে হয়।

বাইরে আওয়াজ শুনে এবং টোবোর চেঁচামেচিতে অভিরূপবাবু এবং শ্রীতমাদেবী দুজনেই একটু অবাক হলেন এইসময় বৃষ্টির মধ্যে কারো আসার কথা নয়, অভিরূপবাবু শ্রীতমাদেবীকে ভিতরে থাকতে বলে বাইরে উঠোনের লাইট জ্বালিয়ে নিজে গেট খুলে বাইরে এলেন দেখতে আর গেট খোলা মাত্র একটা শক্ত হাত টেনে তাকে বাইরে এনে মাটিতে ফেললো, পরে যাওয়ায় পায়ে একটু আঘাত লাগায় অভিরূপবাবুর মুখ থেকে একটু আর্তনাদ হয়েছিল আর সেটা শুনেই শ্রীতমাদেবীও বাইরে বেরিয়ে এলেন, এসে দেখলেন চার-পাঁচ জন লোক কালো পোশাক পরে দাঁড়িয়ে আছে।

"আপনারা কারা? কি চাই?" স্বামীকে মাটিতে পরে থাকতে দেখে দ্রুত তার কাছে এসে ভয়ার্ত স্বরে প্রশ্ন করলেন কিন্তু উত্তরে একজন শ্রীতমাদেবীকে হাত ধরে টেনে তুলে একদিকে ঠেলে ফেলে দিল, শ্রীতমাদেবীও চোট পেয়ে আর্তনাদ করে উঠলেন, অভিরূপবাবু কোনোমতে "শ্রী" বলে উঠে স্ত্রীর কাছে যাচ্ছিলেন কিন্তু একজন তার পাঞ্জাবীর কলার টেনে ধরলো, অভিরূপবাবু সভয়ে দেখলেন লোকটার ডান হাতে কিছু একটা চকচক করে উঠলো, অভিরূপবাবুর অবস্থা এমনই যে তিনি চেঁচিয়ে যে সাহায্য চাইবেন সেই অবস্থাও নেই লোকটার ডান হাতটা একটু পিছনে গিয়ে দ্রুত এগিয়ে আসতে লাগলো, অভিরূপবাবু চোখ বুজলেন কিন্তু হটাৎ একটা কুকুরের গর্জন সাথে একটা মানুষের আর্তনাদ কানে এলো আর একটা ছোট্ট ধাক্কার মতো খেয়ে কিছু একটার উপর পরলেন, না পরলেন না একজোড়া হাত তাকে জড়িয়ে ধরে আছে।

অভিরূপবাবু চোখ খুললেন এবং যাকে সামনে দেখলেন তাকে দেখে তার মনের মধ্যে এক‌ইসঙ্গে আনন্দ এবং অবাকভাব দুটোই হলো কারণ একটু আগের প্রায় জীবনের অন্তিম মুহূর্তে তার অবচেতন মন একেই মনে করছিল, চোট লেগে ক্ষণিকের জন্য শ্রীতমাদেবী বোধহয় সেন্সলেস হয়ে গিয়েছিলেন এখন বৃষ্টির জলের ফোঁটা চোখেমুখে পড়তেই আবার সেন্স ফিরে এলো, ধড়মড়িয়ে তিনি ওঠার চেষ্টা করলেন স্বামীকে খোঁজার চেষ্টা করতে গিয়ে দেখলেন তার স্বামীকে জড়িয়ে ধরে আছে আদিত্য না আদিত্য না তাদের ছেলে অনিকেত।

আদিত্য ওরফে অনিকেত বাবাকে ছেড়ে দাঁড় করালো তারপর "মাকে নিয়ে ভিতরে যাও আর সুপ্রতিম স্যারকে কল করে ডাকো" বলে লোকগুলোর দিকে এগিয়ে গেল, অভিরূপবাবু যন্ত্রচালিতের মতো নিজের স্ত্রীর কাছে গিয়ে তাঁকে ধরে ভিতরে নিয়ে গেলেন, যেতে যেতে দুজনেই একটা হুঙ্কার শুনতে পেলেন "আমার বাবা মায়ের গায়ে হাত দিয়েছিস তোরা"

আদিত্য হুঙ্কার দিয়েই সামনের একজনকে সজোরে লাথি মারলো সে ছিটকে কিছুটা দূরে পরলো, আর যে একটু আগে অভিরূপবাবুকে মারতে গিয়েছিল তার একটা হাত বাদশা কামড়ে ক্ষতবিক্ষত করে দিয়েছে সে সেই হাত ধরেই মাটিতে গড়াগড়ি খাচ্ছে যন্ত্রনায়, বাদশা তাকে ছেড়ে আরেকজনের উপরে হামলা করেছে আর বাকীদের পেরে ফেলতে আদিত্যর বেশী সময় লাগলো না অবশ্য ইতিমধ্যে লোকাল থানার বড়োবাবু কয়েকজন কনস্টেবল এবংকয়েকজন গ্ৰামবাসী এসে গিয়েছিল তাই যারা অভিরূপবাবু এবং শ্রীতমাদেবীকে মারতে এসেছিল তাদের পালানোর আর সুযোগ হলো না।

গ্ৰামের স্বাস্থ্যকেন্দ্রের একজন ডাক্তার গ্ৰামে না হলেও কাছেই থাকেন আদিত্য ফোন করে তাকে অবিলম্বে আসতে বললো, কিছুক্ষণের মধ্যেই তিনিও এসে গেলেন এবং অভিরূপবাবু ও শ্রীতমাদেবী ছাড়াও বাদশার কামড়ে জখম হ‌ওয়া দুজনের প্রাথমিক চিকিৎসা শুরু করে দিলেন। 

ইতিমধ্যে অভিরূপবাবু টোবোকে ছেড়ে দিলে সেও এসে লোকগুলোর উদ্দেশ্যে কয়েকবার হাঁক ছেড়ে আদিত্যর পায়ে পায়ে ঘুরছে, আদিত্যর একদিকে টোবো আর অপরদিকে বাদশা ঘুরছে।

একটু পরেই সুপ্রতিমবাবুও চলে এলেন আদিত্য তাকে মোটামুটি সবটা বললো, বলাইবাহুল্য সুপ্রতিমবাবু লোকগুলোকে জিজ্ঞেস করলেন কে তাদের এইকাজ করতে পাঠিয়েছে এবং যথারীতি লোকগুলো প্রথমে চুপ থাকলো তারপর আবার কয়েক ঘা দিতেই মুখ খুললো কিন্তু কে তাদের পাঠিয়েছে এই প্রশ্নের উত্তরে তারা যে নামটা বললো সেটা শুনে গ্ৰামবাসীদের হয়তো তেমন প্রতিক্রিয়া হলো না কিন্তু সুপ্রতিম বাবু, আদিত্য এবং সর্বোপরি অভিরূপবাবু ও শ্রীতমাদেবীর মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পরলো, কারণ তারা নামটা নিয়েছিল "অরুণাভ ব্যানার্জী"র।

লোকগুলোকে আপাতত লোকাল থানায় নিয়ে যাওয়া হলো আর অভিরূপবাবু এবং শ্রীতমাদেবীকে ঘরে নিয়ে যাওয়া হলো, গ্ৰামের একজন মেয়ে মাঝে মাঝে এসে শ্রীতমাদেবীর হাতে হাতে কাজ করে দিত আদিত্য তাকে ডেকে দুজনের সঙ্গে থাকতে বললো।

 গ্ৰামবাসীরা চলে গেলে আদিত্য আর সুপ্রতিমবাবুও থানায় গেল যেতে যেতে দুজনের মধ্যে কথা হলো,

"শেষপর্যন্ত অরুণাভ এই কাজ করলো?"

"আমিও আপনার মতো অবাক হয়েছি স্যার, বাবা মায়ের মনের অবস্থা যে কি? প্রচণ্ড আঘাত পেয়েছেন তাঁরা"

"কিন্তু হঠাৎ অরুণাভ এই কাজটা করলো কেন বলতো?"

"অরুণাভর নামটা শুনে আমি অবাক হয়েছি এটা ঠিক তবে আমার কেন যেন মনে হচ্ছে এটা অরুণাভর কাজ নয় ইচ্ছা করে ওর নামটা ব্যবহার করা হচ্ছে"

"তোর হটাৎ এরকম মনে হচ্ছে কেন?"

"অরুণাভ এতদিন যা করেছে তার থেকে অভিরূপ ব্যানার্জী এই নামটার প্রভাব ওকে বাঁচিয়েছে, যে ওকে বাঁচায় ও তাঁকেই কেন মারতে চাইবে?"

"মানুষের মনে যখন শয়তান জেগে ওঠে তখন সে সবকিছু করতে পারে আর ওর মধ্যে শয়তান জাগানোর লোক তো ওর সঙ্গেই থাকে একজন না দুজন"

"মৌমিতা আর মনোজের কথা বলছেন? কিন্তু স্যার অরুণাভ বোকা নয় ও যথেষ্ট বুদ্ধি রাখে ও ভালো করেই জানে বাবা এবং মায়ের কিছু হয়ে গেলে মামাও ওর হেল্প করবে না অন্যদের কথা তো ছেড়েই দিলাম, না স্যার এটা অরুণাভর কাজ নয়"

"তবে কার কাজ? প্রীতমের?"

"হতে পারে এক কাজ করি চলুন ওই লোকটাকেই আবার জিজ্ঞেস করি তবে এবার সামনে বাদশা থাকবে"।

আদিত্যর অনুমান যে নির্ভুল তা থানায় গিয়ে লোকটাকে আবার জেরা করতেই প্রমাণিত হলো, লোকটা একেই বাদশার কামড় খেয়ে ভয়ে ভয়ে ছিল আবার বাদশা সামনে আসতেই ভয়ে সত্যি কথা বলতে শুরু করলো সে জানালো প্রীতমবাবুই ওদের পাঠিয়েছিল আর বলে দিয়েছিল যদি ধরা পরে তাহলে যেন অরুণাভর নামটা নেয়,
মোটিভ অবশ্য অভিরূপবাবুকে ফোন করেই জানা গেল অভিরূপবাবু জানালেন কিছুদিন আগে প্রীতমবাবু তাকে ফোন করে সাহায্য চায় কিন্তু অভিরূপবাবু তা করতে অস্বীকার করায় সে ফোনেই রীতিমতো হুমকি দেয় যে সে দেখে নেবে সবাইকে শেষ করে দেবে।

এরপর অভিরূপবাবু আরও একটা বিষয় জানান সেটা হলো শুধু প্রীতমবাবু নয় এখানে আসার আগে ছেলে অরুণাভর সঙ্গেও তার কথা কাটাকাটি হয়েছিল কারনটাও যথেষ্ট গুরুতর, তার বাবাকে সাহায্য করতে অস্বীকার করায় এবং ক্রিমিনাল বলায় সুশান্ত রেগে যায় এবং মামার সঙ্গে তর্কে জড়িয়ে যায় তখনই কথায় কথায় সে বলে, "মামা ক্রিমিনাল শুধু আমার বাবা নয় তোমার ছেলেও, সেই তোমার আরেক ছেলেকে পাহাড় থেকে ঠেলে ফেলে মেরেছে আর ওটা অ্যাক্সিডেন্টের নাম দিয়েছে"

কথাটা শুনে অভিরূপবাবু স্তম্ভিত হয়ে গেলেও শ্রীতমাদেবী বিশ্বাস করতে চাননি তখন সুশান্ত মোবাইলে তোলা ভিডিওটি তাদের দেখিয়ে দেয় এরপর অবশ্য অবিশ্বাস করার আর প্রশ্ন থাকে না, অভিরূপবাবু এই ঘটনায় যে প্রচণ্ড আঘাত পান সেটা আর না বললেও চলে আরও বেশি আঘাত পান যখন অরুণাভ স্বীকার করে যে সে ছোটো থেকেই অনিকেতকে ঘৃণা করতো তাই সুযোগ পেয়েই তাকে সরিয়ে দিয়েছে, অভিরূপবাবু এতটাই ভেঙে পড়েন যে সেখানে আর একদণ্ড থাকেননি সোজা গ্ৰামে চলে এসেছেন, গ্রামে এসে অবশ্য কাউকেই কিছু বলেননি, এতকিছু শুনে আদিত্য নিজেই বিস্ময়ে বাকরুদ্ধ হয়ে যায় এটা ভেবে যে এইকদিন সে তার বাবা মাকে দেখে কিছুই বুঝতে পারেনি যে তাদের ভিতরে এইরকম ঝড় চলছে।

পুরো ঘটনা জানতে পেরে সুপ্রতিমবাবু ও আদিত্য দুজনেই হতবাক হয়ে যান তবে অভিরূপবাবু যে ছেলে তাকে মারতে লোক পাঠিয়েছে এটা জেনে ভেঙে পরেছেন সেটা বুঝতে পেরেই সুপ্রতিমবাবু তাকে সত্যিটা জানান যে অরুণাভ না তাকে মারতে লোক পাঠিয়েছিল তার বোনের হাজবেন্ড প্রীতমবাবু, এটা শুনে যদি তার মনের কষ্ট কিছুটা কমে যে অন্তত তার ছেলে এইকাজ করেনি।

বিপদ যখন আসে তখন একসাথে দল বেঁধে আসে বাবা মাকে বাঁচিয়ে আদিত্য একটু রিল্যাক্স হয়েছিল কিন্তু সে ভাবতেও পারেনি বিপদের পরবর্তী ধাক্কাটা তার জীবনে আসবে। থানায় সে আর সুপ্রতিমবাবু বসে একটু চা খেতে খেতে কথা বলছিল পরবর্তী কর্মসূচি ঠিক করছিল এমন সময় বৃষ্টিতে ভিজে জলকাদায় মাখামাখি হয়ে একটা বাচ্চা থানায় ঢোকে সাথে একজন লোক, আদিত্য দুজনকে দেখে অবাক হয় কারণ বাচ্চাটিকে সে পিয়ালীর কাছে রেখে এসেছিল আর লোকটি বাচ্চাটির বাবা, সে বাচ্চাটিকে জিজ্ঞেস করে,

"কি রে তুই এখানে? তোকে বললাম যে আমি যতক্ষণ না ফিরি দিদির কাছে থাকতে"

"সব্বোনাশ হয়ে গেছে আদিত্য" জবাবটা দিল বাচ্চাটির বাবা, আদিত্যর বুকটা ধড়াশ করে উঠলো, "কি হয়েছে? পিয়ালী ঠিক আছে?"

"পিয়ালী দিদিকে কয়েকজন লোক ধরে নিয়ে গেছে?" বাচ্চাটি কোনোমতে কথা শেষ করলো।
I'm the King of Dark
                &
I rule over all Devils
               devil2 devil2
Like Reply
clps clps clps   ........  PEACH less WRITING .......
 

         no .... word to say ...

yourock yourock yourock yourock yourock



waiting for next update sir
[+] 1 user Likes sona das's post
Like Reply
Amon suspense e sesh krlen, uff charam. Thanks for the update.
[+] 1 user Likes Dodoroy's post
Like Reply
ধরাশ তো আমার বুকেও হলো।
মনে করেছিলাম বলবো যে অনির অভিমান যেন সহজে না ভাংগে।কিন্তু এমন পরিস্থিতি আনলো যে অভিমান শেষ হয়ে গেল।
দু সপ্তাহের আপডেট এতো ছোট মানতে পারছিনা।জলদি জলদি পরবর্তী আপডেট চাই।
লাইক ও রেপু দিলাম।


-------------অধম
Like Reply
(27-08-2023, 10:38 PM)sona das Wrote: clps clps clps   ........  PEACH less WRITING .......
 

         no .... word to say ...

yourock yourock 



waiting for next update sir
thanks thanks
(27-08-2023, 11:06 PM)Dodoroy Wrote: Amon suspense e sesh krlen, uff charam. Thanks for the update.
thanks thanks
(27-08-2023, 11:23 PM)অভিমানী হিংস্র প্রেমিক। Wrote: ধরাশ তো আমার বুকেও হলো।
মনে করেছিলাম বলবো যে অনির অভিমান যেন সহজে না ভাংগে।কিন্তু এমন পরিস্থিতি আনলো যে অভিমান শেষ হয়ে গেল।
দু সপ্তাহের আপডেট এতো ছোট মানতে পারছিনা।জলদি জলদি পরবর্তী আপডেট চাই।
লাইক ও রেপু দিলাম।


-------------অধম

ধন্যবাদ।
মোবাইল ঠিক হবার পরে যেটুকু লেখা হয়েছে দিয়ে দিয়েছি।  Namaskar
I'm the King of Dark
                &
I rule over all Devils
               devil2 devil2
[+] 1 user Likes Monen2000's post
Like Reply
2 week por 2ta update? :"( . Moumitar pov dekhaio or moner vitore je ki cholche god jane


My pain is constant and sharp, and I do not hope for a better world for anyone. ArrowNamaskar


[+] 1 user Likes Patrick bateman_69's post
Like Reply
বরাবরের মতই দূর্দান্ত আপডেট ৷ পরবর্তী আপডেটের অপেক্ষায় রইলাম ৷ like & repu added.
[+] 1 user Likes bad_boy's post
Like Reply
Mon bol6e monen bhai ses kore di6e story ta .
[+] 1 user Likes Jaguar the king's post
Like Reply
(28-08-2023, 04:02 AM)Patrick bateman_69 Wrote: 2 week por 2ta update? :"( . Moumitar pov dekhaio or moner vitore je ki cholche god jane
মোবাইল ঠিক হবার পরে যেটুকু লেখা হয়েছে দিয়েছি।
কি চলছে সেটা জানার জন্য সঙ্গে থাকো আর একটু অপেক্ষা করো
(28-08-2023, 08:01 AM)bad_boy Wrote: বরাবরের মতই দূর্দান্ত আপডেট ৷ পরবর্তী আপডেটের অপেক্ষায় রইলাম ৷ like &  repu added.
ধন্যবাদ  Namaskar
(28-08-2023, 11:30 AM)Jaguar the king Wrote: Mon bol6e monen bhai ses kore di6e story ta .

গল্প অযথা টেনে বড়ো করা আমার পছন্দ না, তাই সময় হলে শেষ হতো হবেই। তবে এখনও কিছুটা বাকি আছে
I'm the King of Dark
                &
I rule over all Devils
               devil2 devil2
Like Reply
Fantastic update. I have no words for it. Eagerly waiting for next update.
[+] 1 user Likes skx1965's post
Like Reply
Next update kobe pabo?


My pain is constant and sharp, and I do not hope for a better world for anyone. ArrowNamaskar


[+] 1 user Likes Patrick bateman_69's post
Like Reply
দেরি করে পড়ার জন্য দুঃখিত।
এই মুহূর্তে এই ফোরামের অন্যতম সেরা চলমান উপন্যাস।বরাবরের মতোই লাইক এবং রেপু রইলো।   congrats
[+] 1 user Likes Bumba_1's post
Like Reply
(31-08-2023, 09:06 PM)skx1965 Wrote: Fantastic update. I have no words for it. Eagerly waiting for next update.
thanks thanks
(31-08-2023, 09:10 PM)Patrick bateman_69 Wrote: Next update kobe pabo?
লেখা চলছে হলেই দেবো।
(31-08-2023, 09:11 PM)Bumba_1 Wrote: দেরি করে পড়ার জন্য দুঃখিত।
এই মুহূর্তে এই ফোরামের অন্যতম সেরা চলমান উপন্যাস।বরাবরের মতোই লাইক এবং রেপু রইলো।   congrats

ধন্যবাদ দাদা
I'm the King of Dark
                &
I rule over all Devils
               devil2 devil2
Like Reply
Update kobe pabo dada
Like Reply
[Image: Picsart-22-12-06-20-20-08-119.jpg]



                 দ্বিতীয় খণ্ড
                 ৩৫তম পর্ব




"পিয়ালী দিদিকে কয়েকজন লোক ধরে নিয়ে গেছে?" বাচ্চাটি কোনোমতে কথা শেষ করলো,

"হোয়াট?" আদিত্যর মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়লো, বাচ্চাটির বাবা আবার বলতে থাকে, "হ্যাঁ, ছেলে তো ভয়ে আমার কাছে এসে জানায় আমি দৌড়ে গিয়ে দেখি তারা চলে গেছে তখন ছুটে শহরে বাবুর বাড়িতে যাই ওখানে গিয়ে শুনি তুমি এখানে তাই ছুটতে ছুটতে এখানে এলাম"।

কথাটি শুনে আদিত্য ছুট লাগায় বাড়ির উদ্দেশ্যে পিছনে সুপ্রতিমবাবু, বাচ্চাটি এবং তার বাবা। বাড়িতে ঢুকতেই আদিত্য বুঝতে পারলো সত্যিই সর্বনাশ হয়ে গেছে ড্রয়িংরুমে চেয়ার ছাড়াও আরো কিছু জিনিস মেঝেতে পরে আছে, নীচের কার্পেটটা গুটিয়ে আছে, বাচ্চাটি কাঁদতে কাঁদতে এসে আদিত্যকে ছড়িয়ে ধরে বলতে থাকে "আমি চেষ্টা করেছিলাম দাদা কিন্তু পারিনি"।

এইটুকু বাচ্চা যে পারবে না এতে আর আশ্চর্যের কি তবুও সে যে চেষ্টা করেছে এই অনেক সুপ্রতিমবাবু বাচ্চাটির বাবাকে বললেন "একবার ফোন তো করতে পারতেন ওকে?"

"আমার ফোনে চার্জ ছিল না বন্ধ হয়ে গেছে"

"আদিত্য রিল্যাক্স পিয়ালীর কিচ্ছু হবে না আমি পুরো শহরের ট্রাফিককে জানিয়ে দিচ্ছি প্রতিটা গাড়ি সার্চ করতে"

"ওরা কি পিয়ালীকে বাঁচিয়ে রাখবে?" অপ্রকৃতিস্থের মতো বললো আদিত্য।

"আদিত্য শক্ত হ, এইসময় তুই এরকম ভেঙে পরলে চলবে না" ধমকে ওঠেন সুপ্রতিম বাবু, তিনি তৎক্ষণাৎ হেডকোয়ার্টারে ফোন করে ব্যাপারটা জানিয়ে দিলেন, বাচ্চাটি তখনও আদিত্যকে জড়িয়ে কাঁদছে আদিত্য ওর মাথায় হাত বুলিয়ে একটা ফার্স্ট এড বক্স এনে বাচ্চাটির বাবার হাতে দিয়ে বললো "ওর একটু চোট লেগেছে এই ফার্স্ট এড বক্স থেকে ব্যাণ্ডেজ করে দিন"।

"দাদা তুমি আমার উপর রেগে নেই তো.. আমি সত্যিই চেষ্টা করেছিলাম" বাচ্চাটা আদিত্যকে জড়িয়ে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে বললো, আদিত্য ছেলেটির সামনে হাঁটু গেঁড়ে বসে তার চোখের জল মুছিয়ে বললো, "একদম না, বাবা তোমাকে ওষুধ লাগিয়ে দেবে তারপর বাবার সাথে বাড়ি চলে যেও" তারপর উঠে বাচ্চাটির বাবাকে বললো "ওষুধ লাগানো হয়ে গেলে ওকে বাড়ি নিয়ে যাবেন"।

"একমিনিট" সুপ্রতিমবাবু ফোন করতে গিয়েছিলেন এখন এসে বাচ্চাটিকে বললেন, "বাবু ওখানে কতজন ছিল একটু মনে করে বলতে পারবে?"

বাচ্চাটি যা বললো তা মোটামুটি এরকম 'পাঁচ ছয় জন ছিল একটা গাড়ি করে এসেছিল, আদিত্য ফিরবে বলে পিয়ালী দরজা খোলাই রেখেছিল হঠাৎই লোকগুলো ঘরের ভিতরে ঢুকে পরে এবং পিয়ালীকে নিয়ে যেতে চায়, বাচ্চাটি বাধা দিতে চেয়েছিল কিন্তু পারেনি তখন ওরা পিয়ালীকে তুলে গাড়িতে উঠিয়ে নিয়ে যায়, পিয়ালীর মুখটা চেপে ধরেছিল একজন তাই সে চেঁচাতে পারেনি'।

সবশুনে সুপ্রতিমবাবু বাচ্চাটি আর ওর বাবাকে যেতে দিলেন আদিত্য পাথরের মতো দাঁড়িয়ে আছে দেখে সুপ্রতিমবাবু বললেন "অনি এইসময় এরকম থাকলে চলবে না, তুই যদি এরকম করিস তাহলে তো মুশকিল আমি হেডকোয়ার্টারের মাধ্যমে শহরের সব ট্রাফিক সিগন্যাল আর চেকপোস্ট গুলোতে খবর করে দিয়েছি প্রতিটা গাড়ির চেকিং করে তবেই ছাড়বে, কিন্তু কারা এইকাজ করতে পারে বলে তোর মনে হয়?"

"শিওর ন‌ই তবে অনুমান.." এতটা বলেই আদিত্যকে থামতে হলো কারণ তখনই তার মোবাইল বেজে উঠলো, আদিত্য ফোনটা রিসিভ করে এবং স্পিকার অন করে ধরলো,
"হ্যালো অনি" একটা পরিচিত মেয়ের কণ্ঠ শোনা গেল, "ব‌উকে হারিয়ে খুব ভেঙে পরেছো নিশ্চয়ই?"

"পিয়ালী কোথায় মৌমিতা?"

"আপাতত আমার কাছে"

"ওকে কেন তুলে নিয়ে গেলে ও তো তোমার কোনো ক্ষতি করেনি"

"করেছিল তো সেদিন আমাকে থ্রেট করলো, অপমান করলো তাছাড়া আগে আমার ভাইয়ের বিরুদ্ধে কেস লড়ছিল মনে নেই?"

"কি চাও তুমি?"

"কি চাই? উমমম সেটা না হয় ফেস টু ফেস বসে বলবো, চলে এসো তোমাদের গ্ৰামের বাইরে যে বাসস্ট্যাণ্ডটা আছে ওখানে আমার গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে, আরেকটা কথা একাই এসো আমি জানি এতক্ষণে তোমার সেই স্যার আইমিন সুপ্রতিম দাশগুপ্তর কাছে খবর চলে গেছে কিন্তু ফোর্স নিয়ে আসবে না তাহলে আর কোনোদিন এই মেয়েটিকে দেখতে পারবে না"

"ঠিক আছে আসছি"

"কুকরটাকে নিয়ে আসতে পারো যদি ওকে মরতে দেখতে চাও"

"একাই আসছি"

ফোনটা কাটতেই সুপ্রতিমবাবু রাগে ফেটে পরলেন "হাউ ডেয়ার শি ইজ, ও তোর থেকে কি চায় কিছু গেস করতে পারিস?"

"আমাকে মারতে চাইবে আর কি? আমাকে যখন চিনতে পেরেছে তখন এটা তো করবেই"

"ও তোকে চিনতে পারলো কিভাবে?"

"জানিনা, আমি যাই স্যার"

"যাই মানে? তোর মাথা খারাপ হয়েছে নাকি যে একা যাবি?"

"শুনলেন না কি বললো অন্য কাউকে নিলে ও পিয়ালীকে মেরে ফেলবে"

"আমি শুনেছি, কিন্তু তোকে আমি একা যেতে দেবো না"

"জেদ করবেন না স্যার"

"জেদ তুই করছিস"

"ওদের কাছে পিয়ালী আছে আমি রিস্ক নিতে পারবো না স্যার আমি বাঁচি কি মরি আই ডোন্ট কেয়ার কিন্তু পিয়ালীর বাঁচাটা জরুরী"

"তুই এত বোকা হয়ে গেলি কবে থেকে?" সুপ্রতিমবাবু ধমকে ওঠেন তার প্রিয় শিষ্যকে " তোর কি মনে হয়, তুই একা যাবি ওরা তোকে মারবে আর পিয়ালীকে ছেড়ে দেবে?"

"তাহলে কি করবো বলুন?"

"কিছু একটা প্ল্যান করতে হবে যাতে পিয়ালী আর তুই দুজনেই বেঁচে ফিরতে পারিস"

"আমার মাথা কাজ করছে না স্যার"

"সেটা বললে তো হবে না"

এইসময় বাইরে কিছু হ‌ইচ‌ই শোনা গেল আদিত্য এবং সুপ্রতিমবাবু দুজনেই বাইরে বেরিয়ে এলেন দেখলেন জনা কুড়ি গ্ৰামবাসী হাতে লাঠিসোটা নিয়ে জমা হয়েছে আর তাদের নেতৃত্ব দিচ্ছেন অখিলবাবু এবং মোড়লমশাই।

"আপনারা?" অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে আদিত্য,
"এসব কি শুনছি আদিত্য? বৌমাকে নাকি কারা তুলে নিয়ে গেছে?"

"আমাদের গাঁয়ের মেয়ে ব‌উএর গায়ে হাত, তুমি শুধু নামটা বলো আদিত্য দা কেটে টুকরো টুকরো করে ফেলবো"

প্রায় প্রত্যেকেই উত্তেজিত হয়ে আছে আদিত্য ওদের কি বলবে ভেবে পেল না ওকে চুপ দেখে অখিলবাবু জিজ্ঞেস করলেন "আদিত্য কি হয়েছে বলো? বৌমাকে কারা ধরে নিয়ে গেছে আর কেন?"

"অখিল জ্যেঠু আপনাকে বলেছিলাম মনে আছে যে আমার জীবনের একটা অতীত আছে, সেই অতীতের কালো অন্ধকার থেকে কয়েকজন উঠে এসেছে আবার ওরাই পিয়ালীকে নিয়ে গেছে"

"কেন ওরা কি চায়?"

"ওরা আদিত্যকে মারতে চায়" সুপ্রতিমবাবু উত্তরটা দিলেন

"কেন, আদিত্যর সাথে তাদের কি শত্রুতা?"

"আদিত্য, বাল্মীকি কে সবাই চেনে জানে কিন্তু দস্যু রত্নাকর কে কজন জানে? কজন মনে রেখেছে? তোমার জীবনে যদি কিছু থেকেও থাকে তো." অখিলবাবু বললেন কিন্তু তাকে থামতে হলো আদিত্য কথা শুরু করেছে,

"আমি বাল্মীকিও ন‌ই আবার রত্নাকর‌ও ন‌ই, আমি আপনাদের থেকে আমার অতীত লুকিয়েছি এটা ঠিক কিন্তু সেটা এইজন্য নয় যে সেখানে কোনো আমার কোনো অপরাধ আছে বরং এইজন্য যে সেটা আমার জন্য কষ্টের"

"আদিত্য আমি সেইভাবে কথাটা বলিনি, আমি বলতে চেয়েছি তুমি আগে কি ছিলে না ছিলে সেটা নিয়ে আমাদের কোনো মাথাব্যথা নেই, তুমি এই গ্ৰামে আসার পরে যা করেছো সেটাই আমরা জানি, আর এখন তুমি আমাদের একজন এবং বৌমাও কাজেই তুমি আমাদের সবকিছু খুলে বলো"

"আপাতত এটুকু জেনে রাখুন ওরা আগেও একবার ওকে মারতে চেয়েছিল কিন্তু এতদিন পরে বুঝতে পেরেছে যে ব্যার্থ হয়েছে তাই আবার চেষ্টা করছে, আর এবার ওরা পিয়ালীকে সামনে রেখেছে কারণ ওরা জানে পিয়ালী আদিত্যর দুর্বলতা তাই ওকে সামনে রেখে ওর উপরে আঘাত হানতে চায়" সুপ্রতিমবাবু আবার উত্তর দেন।

"আঘাত করাচ্ছি, আদিত্য আমরা সবাই তোমার সাথে আছি"

"ধন্যবাদ, তবে এখন আমাকে একাই যেতে হবে"

"আদিত্য এটা তুমি কি বলছো?"

"ঠিক বলছি, ওরা ফোন করেছিল বলেছে আমি একা না গেলে ওরা পিয়ালীকে মেরে ফেলবে"

"কিন্তু" সুপ্রতিমবাবু আবার কিছু বলতে চান কিন্তু আদিত্য তাকে থামিয়ে বলতে শুরু করে, "একটা প্ল্যান আমার মাথায় এসেছে"

"কি বল?"

"আমি আগে যাবো, একাই যাবো। কিন্তু তারপর আপনি যাবেন যদি অসুবিধা না থাকে তো ফোর্স নিয়ে যাবেন, আমি নিজের জন্য ভাবিনা কিন্তু পিয়ালীকে বাঁচানো দরকার"

"বোকার মতো কথা বলিস না তোকে খুঁজবো কিভাবে? তারজন্য লোকেশন ট্র্যাকার লাগবে"

"তার দরকার নেই, আমার কাছে জীবন্ত ট্র্যাকার আছে"

"জীবন্ত ট্র্যাকার?"

'ভৌ' হটাৎ বাদশার ডাকে সুপ্রতিমবাবু ওর দিকে তাকালেন, আদিত্য বাদশার সামনে হাঁটু মুড়ে বসে ওর গায়ে মাথায় হাত বোলাতে বোলাতে বললো " তোর উপরেই এখন সব আমাকে আর পিয়ালীকে খুঁজে বার করে স্যারকে নিয়ে আসতে হবে তোকে, পারবি তো?"

'ভৌ' পোষ্যটি যেন বললো 'পারবো, আমাকে পারতেই হবে'

"কিন্তু আদিত্য ওরা যদি বৌমাকে মেরে ফেলে থাকে?" অখিলবাবু আবার বললেন,
"তাহলে জগতের কোনো শক্তিই ওদেরকে আমার হাত থেকে বাঁচাতে পারবে না, আপনাদের কাছে একটা অনুরোধ র‌ইলো হতে পারে যে পিয়ালী বেঁচে গেল কিন্তু আমি পারলাম না"

"আদিত্য"

"জ্যেঠু, যদি এরকম হয় তাহলে আপনারা পিয়ালীকে দেখবেন ওর আমি ছাড়া কেউ নেই আমার কিছু হয়ে গেলে ও পুরো একা হয়ে যাবে"

"ফের যদি এরকম ফালতু কথা বলেছিস তো এক থাপ্পড় মারবো তোকে" সুপ্রতিম বাবু আবার ধমক দেন

"না স্যার আগের বার বেঁচে গিয়েছিলাম বলে যে এবারেও বাঁচবো তার কোনো মানে নেই তবে আপনাকেও এক‌ই অনুরোধ করবো যদি আমার কিছু হয়ে যায় তাহলে ওকে দেখবেন"

আদিত্য এরপর আবার বাদশার গায়ে মাথায় হাত বুলিয়ে বললো, "তোকেও এক‌ই কথা বলছি যদি আমার কিছু হয়ে যায়" 'ভৌ' সারমেয়টি একবার ডেকে আদিত্যর হাত ছাড়িয়ে দু পা পিছিয়ে গেল যেন সে রেগে গেছে তার মনিব এরকম কথা বলছে বলে, আদিত্য আবার ওকে টেনে আদর করতে করতে বলে "রাগ করিস না বাবু বোঝার চেষ্টা কর যদি, আমি না ফিরি তাহলে তোর উপরেও দায়িত্ব থাকবে পিয়ালীকে দেখাশোনা করার"

বাদশা যেন মনিবের কথা বুঝছে তার চোখ দিয়ে জল বেরোচ্ছে সে আদিত্যর কাছে ঘেঁষে দাঁড়ালো আদিত্য আবার বলে "তবে পিয়ালীকে বাঁচাতে গেলেও তোর সাহায্য দরকার তুই ঠিক সময়ে সবাইকে নিয়ে আসবি তো?"

'ভৌ' সারমেয়টি যেন বললো 'আসবো, আমি আসবো'।


নির্দিষ্ট বাসস্টপে গিয়ে একটু দাঁড়াতেই একটা টাটা সুমো ওর সামনে এসে দাঁড়ালো সেটা থেকে চারজন লোক নেমে প্রথমে আদিত্যকে ভালো করে সার্চ করলো প্রথমে তারপর ওর চোখদুটো ভালো করে বেঁধে গাড়িতে তুলে গাড়ি স্টার্ট করলো।

ঘড়ি ধরে কতক্ষণ সেটা আদিত্য ঠিক বুঝতে পারলো না তবে বেশকিছুক্ষণ পরে গাড়িটা থামলো তারপর ওকে টেনে নামিয়ে দুদিক থেকে দুজন ধরে কিছুটা হাঁটিয়ে নিয়ে যেতেই পরিচিত গলার স্বর শুনতে পেলো,

"ওয়েলকাম অনি, ওয়েলকাম"।

একজন এবার চোখদুটো খুলে দেওয়ায় দেখতেও পেলো কণ্ঠের অধিকারিনি কে, মৌমিতা দাঁড়িয়ে আছে তার সামনে, এবার একটু আশেপাশে চোখ বুলিয়ে নিল যা বুঝলো তাতে মনে হলো কোনো পুরনো ভাঙা কারখানা জাতীয় কোথাও নিয়ে এসেছে ওকে, মৌমিতা ছাড়াও আরো কয়েকজন গুণ্ডা প্রকৃতির লোকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলো সে।

"কেউ তোদের ফলো করেনি তো?"

এবার আরও একটা পরিচিত পুরুষ কণ্ঠ শুনে তাকিয়ে দেখে মৌমিতার ভাই তাকে যারা নিয়ে এসেছে তাদের প্রশ্ন করছে তাদেরই একজন উত্তর দিল,

"না, দাদা কেউ ফলো করেনি"

"তোরা শিওর তো?"

"একদম"

"পিয়ালী কোথায়?" সময় নষ্ট না করে শুরুতেই পিয়ালীর কথা জিজ্ঞেস করে আদিত্য, উত্তরে মৌমিতা আর মনোজ পরস্পরের দিকে একবার তাকিয়ে আবার আদিত্যর দিকে তাকালো ওদের দুজনের ঠোঁটেই শয়তানি হাসি লেগে আছে, আদিত্য আবার জিজ্ঞেস করে, "পিয়ালী কোথায়?"

একজন গুণ্ডা প্রকৃতির লোক ওর কাছে এসে বলে, "তোর ব‌উ? আমরা ওর সাথে ফূর্তি করে মেরে ফেলেছি"

এরপর যা ঘটলো সেটা চোখের পলক ফেলার মধ্যেই শুধু মট করে একটা শব্দ আর লোকটা কাটা কলাগাছের মতো মাটিতে পরে গেল, এই দেখে আরেকজন এগিয়ে এলো কিন্তু এবার আদিত্যর শরীরটা কোমরের উপর থেকে একদিকে কাত হয়ে ওর একটা পা মাটি থেকে সোজা উপরে উঠে লোকটার চোয়ালে আঘাত করলো আর সেও অনুরূপ ভাবে পরে গেল।

"তোমার ব‌উ বেঁচে আছে, এখনও পর্যন্ত"

তাড়াতাড়ি কথাটা বললো মৌমিতা সঙ্গে সঙ্গে মনোজ‌ও বললো, "কিন্তু ফের যদি আমাদের কারো গায়ে হাত তুলিস তাহলে ও বাঁচবে না"

"ও কোথায়?"

উত্তরে মৌমিতা একজনকে ইশারা করায় সে চলে গেল একটু পরে মৌমিতা আদিত্যকে চোখ দিয়ে একটা দিকে দেখালো আদিত্য সেদিকে তাকিয়ে দেখে একটু আগের লোকটা একটা হুইলচেয়ার ঠেলে নিয়ে আসছে আর হুইলচেয়ারে বসা আছে পিয়ালী, ওর মাথাটা একদিকে কাত হয়ে আছে, আদিত্য তাড়াতাড়ি ওর দিকে এক পা বাড়াতেই লোকটা তাড়াতাড়ি একটা ছুরি বার করে পিয়ালীর গলায় ধরলো, আদিত্য একটু থেমে লোকটার দিকে তাকিয়ে দুটো হাত উপরে তুলে সমর্পণের ভঙ্গিতে আস্তে আস্তে পিয়ালীর কাছে গেল,

"পিয়ালী" তাড়াতাড়ি পিয়ালীর মুখটা ধরে নিজের দিকে ফেরাতেই রাগে আদিত্যর পুরো শরীর জ্বলে উঠলো, পিয়ালীকে মারধর করা হয়েছে ওর দুই গালে কারো হাতের দাগ লাল হয়ে আছে এছাড়া ওর ঠোঁটের এক কোণে কিছুটা রক্ত শুকিয়ে লেগে আছে।

"পিয়ালী, পিয়ালী" আদিত্যর ডাকেই বোধহয় পিয়ালী আস্তে আস্তে চোখ খুলে সামনে স্বামীকে দেখতে পেয়ে কেঁদে উঠলো, আদিত্য কি করবে কি বলবে ভেবে না পেয়ে ওকে জড়িয়ে ধরলো।

"এ যে দেখছি টুরু লাভ" মনোজের ব্যাঙ্গাত্মক কটূক্তি শুনে ওর দিকে ফিরে বললো, "কে ওর গায়ে হাত দিয়েছে?"

প্রশ্নটার সাথে আদিত্য মনোজের দিকে তেড়ে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই পিয়ালীর কাছে দাঁড়ানো গুণ্ডাটা আবার পিয়ালীর গলায় ছুড়ি ধরে বললো, "একদম না তাহলে.."

আদিত্য বাধ্য হয়ে থেমে গেল নিজেকে কিছুটা কন্ট্রোল করে সে মৌমিতা আর মনোজকে জিজ্ঞেস করলো, "কি চাই তোমাদের?"

"প্রতিশোধ"

একটা নতুন কণ্ঠস্বর জবাব দিল তবে কণ্ঠস্বরটা নতুন হলেও আদিত্যর কাছে অপরিচিত নয়, একটু আড়াল থেকে বেরিয়ে এসে ওর সামনে দাঁড়ালেন প্রীতমবাবু।

প্রীতমবাবুর এখানে থাকাটা আদিত্যর কাছে অপ্রত্যাশিত হলেও সে খুব একটা অবাক হলো না সে শান্ত স্বরে জিজ্ঞেস করলো "আপনি?"

"এমন ভাব করছিস যেন আমাকে চিনিস না? আমি তোর পিসেমশাই রে অনিকেত ব্যানার্জী" শেষের নামটা অবশ্য রাগ আর ঘৃণার সঙ্গেই উচ্চারণ করলেন প্রীতমবাবু।

"আমার স্ত্রীকে এখানে নিয়ে এসেছেন কেন?"

"কারণ তাহলেই তোকে হাতের মুঠোয় পাবো তাই"

"এবার তো আমি চলে এসেছি এবার ওকে ছেড়ে দিন"

"আমাদের মুখ দেখে কি আমাদের গাণ্ডু মনে হয়? ওকে ছেড়ে দি‌ই আর তারপর তুই আমাদের সবার গাঁড় মারবি তাইতো?"

"আপনার সাথে এত লোক আর আমি একা তবুও ভয় কেন?"

"এখানে যারা আছে তারা যে তোর সামনে কিছুই নয় এটা আমি ভালো করেই জানি, তোর এই ব‌উ আমাদের ইনসিওরেন্স"

"আমার থেকে কিসের প্রতিশোধ চান আপনি? আমি তো আপনার কোনো ক্ষতি করিনি?"

"আমার ছেলের গায়ে হাত তুলেছিলি, অভিরূপ ব্যানার্জীকে মারার জন্য আমার প্রতিটা প্ল্যানে তুই বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিস আর বলছিস কিছু করিসনি?"

কথাটা বলে প্রীতমবাবু আদিত্যর গালে একটা চড় মারলেন, এবার মনোজ এগিয়ে এসে "আমার গায়েও হাত তুলেছিলি" বলে আদিত্যর কলার ধরে পেটে পরপর কটা ঘুষি মারলো,আদিত্য জানে এখন তাকে মার খেতে হবে কারণ সে হাত তুললেই পিয়ালীর জীবন বিপদে পড়ে যাবে তাই সে চুপচাপ মার সহ্য করতে থাকে কিন্তু পিয়ালী স্বামীকে মার খেতে দেখে কেঁদে ওঠে "আদিত্য চলে যাও এখান থেকে, কেন এলে এখানে চলে যাও" কান্নার সঙ্গে পিয়ালীর কথাগুলো আদিত্য শুনলেও জবাব দেয় না।

এবার আদিত্যর উপরে মনোজ সহ প্রায় সবাই চড়াও হয় লাথি ঘুষি চলতে থাকে, ওদিকে পিয়ালী কাঁদতে থাকে, "ছেড়ে দাও ওকে ছেড়ে দাও আদিত্য" কিন্তু ওর কথায় কারো ভ্রুক্ষেপ নেই তারা আদিত্যকে মারতে ব্যাস্ত এমনকি আদিত্য মাটিতে উবুড় হয়ে পরে যাওয়ার পরেও লাথি থামে না।

কিছুক্ষণ চলার পর অবশ্য থামে কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে সে আস্তে আস্তে অতি কষ্টে উঠে দাঁড়ায়, ওকে উঠে দাঁড়াতে দেখে প্রীতমবাবু ব্যাঙ্গোক্তি করেন "আরিব্বাস তোর তো ক‌ইমাছের জান রে অনিকেত, অরুণাভ আর মৌমিতা পাহাড় থেকে ফেলে দিল মরলি না আবার এখন এত মার খাওয়ার পরেও একা একাই নিজের পায়ে উঠে দাঁড়ালি, শাবাশ"

"এইজন্যই তোমাকে এত ভালো লাগে"

আদিত্যর কাছে এসে ওর গালে নিজের গাল ঘষতে ঘষতে বলে মৌমিতা, "আচ্ছা অনি তুমি যখন বেঁচেই গিয়েছিলে তাহলে ফিরলে না কেন? তোমার আমার কাছে ফেরা উচিত ছিল। আগেকার দিনে জমিদাররা রক্ষিতা রাখতেন আমি না হয় তোমাকে সেরকমই হিসেবে রেখে দিতাম" কথাটা বলে মৌমিতা দু পা সরে গিয়ে হো হো করে হাসতে থাকে, রাগে আদিত্যর হাত নিশপিশ করতে থাকে কিন্তু সে নিরুপায়, তবুও সে বলে "তোমাকে আমি খারাপ মেয়ে ভেবছিলাম কিন্তু এখন দেখছি তুমি মানসিক ভাবে অসুস্থ তোমার মস্তিষ্কের চিকিৎসা দরকার, মৌমিতা"

"কি করবো বলো আমি এরকমই আর তুমি এইরকম আমাকেই তো ভালোবেসেছিলে"

"আমি তোমাকে কোনোদিন‌ও ভালোবাসিনি ওটা আমার মনের ভ্রম ছিল যেটা এখন কেটে গেছে"

"এই মেয়েটিকে পেয়ে? ওর মধ্যে এমন কি আছে অনি যে তুমি আমাকে ভুলে গেলে? আর আমি? আমি তো তোমাকে চাই, আমার সব চাই অনি, টাকা, মান, সম্পত্তি, ক্ষমতা সব চাই। অরুণাভ আমার স্বামী হ্যাঁ, আমার মনে ওর জন্য একটা সফট কর্ণার আছে স্বীকার করছি, কিন্তু তোমাকেও আমার হয়ে থাকতে হবে"।

"তুমি অরুণাভর সঙ্গে থাকার জন্য আমাকে চিট করেছিলে, এবং তারপর তুমি ওর সাথে ছিলে তোমাদের দুটো সন্তান আছে সব পেয়েছিলে তুমি কিন্তু নিজের দোষে কিচ্ছু রাখতে পারলে না এখন তোমার জায়গা হবে হয় জেলে আর না হয় পাগলা গারদে কারণ ওই যে বললাম তুমি মানসিক ভাবে অসুস্থ এবং বিকৃত, আর তোমার এই সঙ্গীরা এদের জায়গা হবে জেলে"

"তবে রে?" কথাটা বলে মনোজ আদিত্যকে একটা লাথি মারলো আর এটাই সে একটা মোক্ষম ভুল করলো কারণ আদিত্য এমন জায়গায় দাঁড়িয়ে ছিল যে সে লাথি খেয়ে পিছনে গিয়ে করলো পিয়ালীর কাছে দাঁড়ানো গুণ্ডাটার গায়ে সে তখন পিয়ালীকে ছেড়ে একটু এগিয়ে এসে আদিত্যর মার খাওয়া দেখছিল, আদিত্য ওর গায়ে পরেই বিদ্যুৎ গতিতে ওর ছুরি ধরা হাতটা ধরে মুড়িয়ে ওর পিছনে গিয়ে হাতটা ভাজ করে লোকটার বুকেই ঢুকিয়ে দিল ব্যাপারটা এত তাড়াতাড়ি ঘটে গেল যে লোকটা বাধা দেওয়ার কোনো সুযোগই পেল না।

আর এই ঘটনায় বাকিরাও মুহুর্তের জন্য হতচকিত হয়ে গেল তারা ভাবতেই পারেনি যে আদিত্য এইভাবে প্রত্যাঘাত করবে, আদিত্য‌ও পিয়ালীকে গার্ড করে দাঁড়িয়ে আছে তার ঠোঁটে এখন হাসি। 

প্রীতমবাবুররা হতচকিত হলেও এবার তারা পাল্টা আক্রমণ করলো তারা অর্থাৎ প্রীতমবাবুর আদেশে তার পোষা গুণ্ডাগুলো আদিত্যর দিকে এগিয়ে এলো কিন্তু ওরা আদিত্যর কাছে পৌঁছনোর আগেই পরপর কয়েকটা গুলি কয়েকজনের পায়ে এসে বিঁধলো এবং সঙ্গে সঙ্গেই তারা পায়ে হাত দিয়ে বসে পরলো আর বাদশা একটা গর্জন করে আর একজন গুণ্ডার উপরে ঝাঁপিয়ে পরলো দেখতে দেখতে সুপ্রতিমবাবু আর তার সঙ্গে আসা কিছু সংখ্যক পুলিশ এসে ঘিরে ধরলো।

মুহুর্তের মধ্যে যেন একটা খণ্ডযুদ্ধ বেঁধে গেল পুলিশের সাথে প্রীতমবাবু এবং তার পোষা গুণ্ডাদলের, আদিত্য অবশ্যই পুলিশের দলের হয়ে লড়ছে হটাৎ সে খেয়াল করলো এই সুযোগে প্রীতমবাবু চুপিচুপি পালানোর চেষ্টা করছেন। 

"বাদশা" আদিত্যর ডাক শুনে এবং মনিবের হাতের ইশারা দেখে সে ছুটে গিয়ে প্রীতমবাবুর একটা পা কামড়ে ধরলো প্রীতমবাবু যন্ত্রণায় আর্তনাদ করে উঠলেন, স্যার" আদিত্যর ডাকে সুপ্রতিমবাবু আদিত্যর দিকে তাকিয়ে তার চোখের ইশারায় ব্যাপারটা লক্ষ্য করলেন এবং পরমুহূর্তেই তার হাতে একটা পিস্তল এসে গেল যেটা তিনি প্রীতমবাবুর অপর পা লক্ষ্য করে চালালেন এবং বলাইবাহুল্য প্রীতমবাবুও পায়ে হাত দিয়ে একটা আর্তনাদ করে বসে পরলেন তার আর পালানো হলো না।বাদশা তখন তাকে ছেড়ে দিয়ে আদিত্যর কাছে এসে দাঁড়িয়েছে।

আদিত্য একটু রিল্যাক্স হয়ে বাদশার মাথায় আদরের হাত বুলিয়ে পিয়ালীর দিকে তাকাতেই তার বুকটা ধড়াশ করে উঠলো এবং সঙ্গে সঙ্গে সে ছুট দিল কিন্তু সে পিয়ালীর কাছে পৌঁছনোর আগেই মৌমিতা ওর কাছে গিয়ে ওর পেটে লাথি মারতে গেল কিন্তু পিয়ালী কোনোমতে তার শরীরের সর্বশক্তি একত্রিত করে হুইলচেয়ারটা পাশে ঘুরিয়ে দিল ফলে মৌমিতার লাথিটা হুইলচেয়ারের পাশে লাগলো ফলে সেটা উল্টে পরে গেল আর সেইসঙ্গে পিয়ালীও একটা আর্তনাদ করে পরে গেল তবুও মোমিতা থামলো না সে পিয়ালীর সামনে গিয়ে আবার তার পেটে লাথি মারতে গেল কিন্তু এবার আদিত্য সেখানে পৌঁছে ওর একটা হাত ধরে একটা হ্যাঁচকা টান মেরে সরিয়ে দিল আর একটা লেডি অফিসার এসে ওকে ধরে ফেললো, এবং এই লেডি অফিসারটি যে তানিয়া সেটা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।

পিয়ালী তখনও কাতরাচ্ছে আদিত্য তাড়াতাড়ি পিয়ালীর কাছে বসলো ভয়ার্ত দৃষ্টিতে সে দেখলো পিয়ালীর দু পায়ের মাঝ থেকে হলুদাভ রক্তমিশ্রিত তরল বের হচ্ছে, "পিয়ালী পিয়ালী" আদিত্য ভয়ার্ত কণ্ঠে ডেকে উঠলো।

"অনি ওকে হাসপাতালে নিয়ে যা এক্ষুনি" সুপ্রতিমবাবু প্রায় হুকুমের স্বরে বললেন

আদিত্য আর দেরী না করে তখনই পিয়ালীকে দুহাতে কোলে তুলে নিয়ে বেরিয়ে এল, পুলিশের একটা গাড়িতে উঠে বসলো ড্রাইভারকে আর বলতে হলো না সে তক্ষুনি গাড়িতে উঠে গাড়ি ছোটালো বাদশাও অবশ্য তার মনিবের সঙ্গে এলো, একটু পরেই মেইন রাস্তায় এলো তারা, পিয়ালী তখনও প্রসব যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে সেটা দেখেই আদিত্য ড্রাইভারকে বললো "একটা তাড়াতাড়ি চালান ভাই", শুনে ড্রাইভার গতি বাড়ালো একটা জিনিস পিয়ালী খেয়াল করলো যেখানে তাকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল সেই জায়গাটা তাদের গ্ৰামের বাইরে খুব একটা দূরে নয়, তার বুঝতে অসুবিধা র‌ইলো না যে তাকে নিয়ে আসার সময় ইচ্ছা করে গাড়ি ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে আনা হয়েছিল।

জায়গাটা চেনা হ‌ওয়ায় সহজেই সবথেকে কাছের হাসপাতালের কথা জানিয়ে সেখানে নিয়ে যেতে বললো, একটু পরেই হাসপাতালে পৌঁছে কোনোমতে একটা স্ট্রেচার এনে তাতে পিয়ালীকে তুলে এমার্জেন্সীর ভিতরে নিয়ে গেল, ওখানে উপস্থিত ডাক্তাররা পিয়ালীর অবস্থা দেখে সঙ্গে সঙ্গে তাকে ভিতরে নিয়ে গেল।

একটু পরেই সুপ্রতিমবাবু, তানিয়াও চলে এলো অবশ্যই ড্রাইভারের থেকে জেনে নিয়েছেন তারা, এখানে এসে আদিত্যকে সান্ত্বনা দিতে থাকে, কথার মাঝে সুপ্রতিমবাবু জানান প্রীতমবাবু সহ প্রত্যেকেকেই গ্ৰেফতার করা হয়েছে, সুপ্রতিমবাবু আদিত্যকে আরও একটা কথা বললো গ্ৰামে জানিয়ে দিতে ওনারা সুপ্রতিম বাবুর সঙ্গে আসার জেদ করছিল অনেক কষ্টে তাদের শান্ত করে এসেছেন" ওনার কথা শুনে আদিত্য অখিলবাবু কে ফোন করে সব জানায় এমনকি পিয়ালীর অবস্থার কথাও জানায়, অখিলবাবু হাসপাতালের ঠিকানা জেনে নিয়ে বলেন তিনি আসছেন।

ওটির ভিতরে পিয়ালীর ট্রিটমেন্ট চলছে আর বাইরে আদিত্য সহ বাকিরা পায়চারী করছে, সুপ্রতিমবাবু মাঝে একবার বললেন গিয়ে সে যাতে তার আঘাতের জায়গায় ওষুধ লাগিয়ে আসতে কিন্তু আদিত্য রাজী হলো না সে পিয়ালীর সুস্থতা নিয়ে নিশ্চিন্ত না হয়ে কোথাও যেতে রাজী নয়।

অনেকক্ষণ পরে ডাক্তার ওটি থেকে বেরিয়ে এলেন কিন্তু তার মুখ দেখেই সবাই বুঝতে পারলো খবর ভালো না,

"আমার ওয়াইফ কেমন আছেন ডাক্তার?" জিজ্ঞেস করলো আদিত্য

"মিস্টার ব্যানার্জী,  আয়্যাম ভেরী সরি টু সে অবস্থা সত্যিই খুব ক্রিটিক্যাল, আমরা আমাদের বেস্ট চেষ্টা করছি তবে.."

"তবে?"

"মিস্টার ব্যানার্জী আমরা ডাক্তাররা সবসময় চেষ্টা করি যাতে সব পেশেন্টকেই সুস্থ করে বাঁচিয়ে তুলতে পারি, কিন্তু সবসময় আমরা যে সফল হ‌ই না"

"আপনি কি বলতে চাইছেন ডক্টর?"
"অবস্থা খুব ক্রিটিক্যাল তার উপরে ওনার পেটে বাচ্চা রয়েছে, এই অবস্থায় দুজনের প্রাণ‌ই সঙ্কটজনক" এতটা বলে ডাক্তার একটু থামলেন আদিত্য বুঝলো তার আরও কিছু বলার বাকী আছে তাই সে চুপ করে অপেক্ষা করতে লাগলো, ডাক্তার আবার শুরু করলেন
"আমরা ভয় পাচ্ছি যে হয়তো আমরা আপনার ওয়াইফের যা অবস্থা তাতে ওনার সাথে না ওনার বাচ্চাটাও...তাই বলছিলাম আপনি যদি চান তাহলে আমরা আগে সিজার করে বাচ্চাটাকে বাঁচানোর চেষ্টা করতে পারি"

"আর ইউ কিডিং উইথ মি?" আদিত্য যে রেগে গেছে সেটা ওর গলার স্বরেই বোঝা গেল।

"এ আপনি কি বলছেন ডক্টর?" সুপ্রতিমবাবু আদিত্যকে থামিয়ে কথা বললেন "আপনি একজন ডাক্তার হয়ে এরকম কথা বলছেন?"

"দেখুন মা এবং বেবী দুজনেই যদি সুস্থ এবং বেঁচে যায় তাহলে বিশ্বাস করুন আমরাও কম আনন্দিত হবো না কিন্তু এক্ষেত্রে সেটা সত্যিই কঠিন"

"কিন্তু ডক্টর আপনারা তো ট্রাই করবেন" এবার কথা বললো তানিয়া, সে আদিত্যকে ধরে রেখেছে

"অবশ্যই আমরা চেষ্টা করবো, কিন্তু যদি সিচুয়েশন আমাদের হাতের বাইরে চলে যায় তাই জিজ্ঞেস করছিলাম যে আপনি যদি চান তাহলে আমরা আপনার সন্তানকে বাঁচানোর চেষ্টা করতে পারি"

"আর আমার ওয়াইফ?"

"ওনার অবস্থা সত্যিই আশঙ্কাজনক, তাই.."
"আপনি একজন হাজবেন্ড এবং বাবার কাছে তার স্ত্রী এবং বেবীর মধ্যে যে কোনো একজনকে বেছে নিতে বলছেন, রিয়েলি ডক্টর?" আদিত্য আবার কথা বলে।

"আয়্যাম সরি,কিন্তু আমি আপনাকে পরিস্থিতিটা জানালাম, আপনার ওয়াইফ বলছিলেন যাতে আমরা আপনার বেবীকে বাঁচাই তবুও আমরা আপনার ডিসিশনটা জানতে এসেছি"

"ইনি কি বলছেন স্যার? আমি কিভাবে.."

"ডক্টর কোনো চান্স নেই?" আদিত্যকে সান্ত্বনা দিতে দিতে জিজ্ঞেস করলেন সুপ্রতিমবাবু।

"আমার ডাক্তারী জীবনে আমি বেশ কয়েকটা কেস এমন দেখেছি যেটাকে মীরাকল ছাড়া আর কিছু বলা যায় না, আমি মনেপ্রাণে চাই এক্ষেত্রেও সেরকম কিছু হোক, কিন্তু"

"সেভ মাই ওয়াইফ ডক্টর" নিজের কান্নাটাকে চেপে কথা বলে আদিত্য।

"আপনি ভেবে বলছেন তো কারণ যদি আমরা আপনার ওয়াইফ এবং বাচ্চাটিকে বাঁচাতে সফল হ‌ই তাহলে তো ভালোই কিন্তু যদি সেটা না হয় তাহলে হয়তো ভবিষ্যতে আর কোনোদিন সে মা হতে পারবে না"

"সেভ মাই ওয়াইফ"

ডাক্তার বোধহয় বুঝলো আদিত্যর মনের অবস্থাটা তিনি আদিত্যর কাঁধে একটা হাত রেখে বললেন "আপনাকে শক্ত হতে হবে তবে বিশ্বাস করুন আমরা আপ্রাণ চেষ্টা করবো যাতে মা এবং বেবী দুজনকেই সুস্থ অবস্থায় বাঁচিয়ে তুলতে পারি, আরেকটা কথা অনেকসময় ওষুধের থেকে প্রার্থনা বেশী কাজ দেয় সো লেটস্ প্রে"

"প্রার্থনার কাজটা আমাদের উপরে ছেড়ে দিন ডক্টর আপনি আপনার কাজটা করুন আমরা মা এবং বেবী দুজনকেই সুস্থ এবং জীবিত চাই"

নতুন গম্ভীর কণ্ঠস্বরে ডাক্তার সহ সবাই চমকে উঠলো সবাই তাকিয়ে দেখে অভিরূপবাবু উপস্থিত হয়েছেন সঙ্গে শ্রীতমাদেবী, স্বর্ণেন্দু বাবু, সুদেষ্ণা দেবী, সুনন্দা, মৈনাক, অখিলবাবু এবং পিউ। একসাথে সবাইকে দেখে অবাক হবারই কথা, ডাক্তার‌ও হয়েছিলেন তবে তিনি যে অভিরূপবাবুকে চেনেন সেটা তার পরের কথাতেই বোঝা গেল,

"মিস্টার ব্যানার্জী আপনি এখানে?"

"ডক্টর, আমি এখানে কেন সেকথা পর হবে আগে যেটা বললাম আমার মা এবং বেবী দুজনকেই চাই, আপনি কি করবেন আমি জানিনা যদি অন্য কারো গাইডেন্স এবং হেল্পের দরকার হয় তো বলুন আমি শহরের বেস্ট ডাক্তারদের এখানে নিয়ে আসার ব্যাবস্থা করছি"

"মিস্টার ব্যানার্জী আপনি তো আমাকে.."

"আমি আপনাকে ইনসাল্ট করছি না ডক্টর আপনার সাথে আমার ব্যাক্তিগত পরিচয় না থাকলেও আপনার দক্ষতার উপরে আমি বিশ্বাস করছি"

"মিস্টার ব্যানার্জী আমি ওনাকেও বলেছি আপনাকেও আশ্বস্ত করছি আমরা আমাদের বেস্টটা দেবো, সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো, তবে কখনো কখনো ডাক্তারের হাতযশের থেকে বেশী কিছু দরকার হয় পেশেন্টের" একথা বলে ডাক্তার আবার ওটির ভিতরে চলে গেলেন।

অভিরূপবাবু এখানে আসায় সুপ্রতিমবাবু তানিয়া এবং আদিত্য খুবই অবাক হয়েছে তিনজনেই কিছু না বলে চুপ করে অভিরূপবাবুর দিকে তাকিয়ে থাকে, আর অভিরূপবাবু আদিত্যর কাছে এসে বললেন,
"আমাদের পরিবারে সবসময়েই বাড়ির মেয়ে ব‌উদের কথা আগে চিন্তা করা হয়, নিজের বাড়ি নিজের পরিবারের থেকে এত বছর দূরে থাকার পরেও যে তুমি তোমার পারিবারিক শিক্ষা ভুলে যাওনি সেটা দেখে ভালো লাগলো"।

"মিস্টার ব্যানার্জী আপনারা এখানে?"

সুপ্রতিমবাবু জিজ্ঞেস করলেন, আদিত্য যদিও চুপ করে র‌ইলেন কিন্তু সুপ্রতিমবাবুর প্রশ্নের উত্তরটা স্বর্ণেন্দু বাবু দিলেন,

"জামাইবাবুরা গ্ৰামে এলে প্রায় প্রতিদিন রাতেই আমি ফোনে কথা বলি, আজ‌ও সেরকমই ফোন করেছিলাম আর তখন দিদি আমাকে ওদের উপরে অ্যাটাকের কথাটা জানায় আর তার পরেই আমি গ্ৰামে আসার জন্য র‌ওনা দিয়ে দি‌ই, গ্ৰামে ঢুকে এক জায়গায় জটলা দেখে সেখানে জিজ্ঞেস করে পিয়ালীর কিডন্যাপের কথাটা জানতে পারি আর তখন জামাইবাবুকে গিয়ে জানাই তারপর আর কি জামাইবাবু অখিলবাবুর সঙ্গে কথা বলে সবটা জানেন আর তারপর এখানে আসি"

"কিন্তু পিয়ালীর এই অবস্থার জন্য কে দায়ী সেটা নিশ্চয়ই অখিলবাবু বলেননি আসলে উনি জানেননা তাই বলেননি"

"কে দায়ী? কে করেছে এটা?" গম্ভীরভাবে জিজ্ঞেস করলেন অভিরূপবাবু।

"বিশ্বাস করবেন তো আমার কথা? তাহলে শুনুন পিয়ালীর এই অবস্থার জন্য দায়ী আপনার বোনের হাজবেন্ড প্রীতমবাবু, এবং আপনার ছেলে অরুণাভর স্ত্রী মৌমিতা এবং তার ভাই মনোজ। এরাই পিয়ালীকে কিডন্যাপ করে অনিকে ডেকে পাঠিয়েছিল আর যখন আমরা পৌঁছাই তখন আর কোনো রাস্তা নেই বুঝে পিয়ালীকে মাটিতে ফেলে দিয়ে ওর পেটে লাথি মারতে গিয়েছিল সে"।
I'm the King of Dark
                &
I rule over all Devils
               devil2 devil2
Like Reply
[Image: Picsart-22-12-06-20-20-08-119.jpg]



                 দ্বিতীয় খণ্ড
                 ৩৬তম পর্ব



সুপ্রতিমবাবুর কথা শুনতে শুনতে অভিরূপবাবুর ফর্সা মুখ রাগে লাল হয়ে উঠলো, অভিরূপবাবুকে যারা চেনেন তারাও তার এই রাগী মুখ কখনো দেখেছেন বলে মনে হয় না একটু পরে অভিরূপবাবু গম্ভীর স্বরে বললেন, "সুপ্রতিমবাবু, ওদের আপনি গ্ৰেফতার করেছেন?"

"হ্যাঁ, করেছি কেন কি করবেন?"

"আমি কিছু করবো না এবার নয়, এবার আপনি ওদের যথোপযুক্ত শাস্তির ব্যাবস্থা করুন কঠিন থেকে কঠিনতম শাস্তির ব্যাবস্থা করুন"

"আপনি সত্যি বলছেন?"

"বলছি, এবার নয় এবার আমি আইনের কাজে বাধা দেবো না"

"শুনে খুশি হলাম"

শ্রীতমাদেবী এতক্ষণ চুপ করে দাঁড়িয়েছিলেন এবার আদিত্যর সামনে এসে দাঁড়ালেন একদৃষ্টিতে চেহারা বদলে যাওয়া নিজের ছেলেকে দেখতে থাকেন আদিত্য‌ও পাল্টা তাকিয়ে থাকে তার মায়ের দিকে, একটা সময় পর শ্রীতমাদেবী কথা বললেন,

"একবার‌ও নিজের মাকে বলা যায় না তাই না? নিজের মায়ের কাছ থেকেও কথা লুকোতে হয়?"

"কেন বলবে? ওর কাছে তো আমরা ওর বাবা মা ন‌ই" আদিত্য কিছু বলার আগে অভিরূপবাবু কথা বলেন, "ও তো ভাবছে ওকে আমরা কুড়িয়ে পেয়েছি ও কিভাবে জানবে ও হবার পরে যখন আমি ওকে প্রথম কোলে নিয়েছিলাম তখন ও হেসে উঠেছিল, ছোটোবেলায় যখন কাঁদতো যখন কেউ ওর কান্না থামাতে পারতো না তখন আমি ওকে কোলে নিতেই ওর কান্না থেমে যেত" তারপর অভিরূপবাবুও আদিত্যর কাছে এসে দাঁড়ালেন তারপর বললেন, "তুই তো ভাবিস আমরা তোর বাবা মা ন‌ই তাহলে কেন বারবার আমাদের বাঁচাতে ছুটে আসিস? কেন নিজের রক্ত দিয়ে আমার প্রাণ বাঁচিয়েছিলি? উত্তর দে"

আদিত্য তবুও চুপ করে থাকে সে কি উত্তর দেবে ভেবে পেল না আসলে অভিরূপবাবু যা জানতে চাইছেন তার উত্তর দেওয়া যায় না, বাবা মায়ের উপরে রাগ অভিমান যতই থাকুক তাদের বিপদে দেখলে কোন সন্তান চুপ করে থাকতে পারে। আদিত্য বা অনি যাই বলা হোক তার বাবা মায়ের উপরে অভিমান থাকলেও তাদের বিপদে দেখে সেও চুপ থাকতে পারেনি।

আদিত্য মুখ না খুললেও অভিরূপবাবু বলতে থাকেন "সন্তানকে হারানোর কষ্ট একমাত্র বাবা মাই বুঝতে পারে আর কেউ না, তোকে হারিয়ে আমাদের কি অবস্থা হয়েছিল তোর কোনো ধারণা আছে? তুই শুধু ফিরে বাইরে থেকে সবাইকে দেখে কিছু না শুনে কিছু না জেনে চলে গেলি, আর এত বছর পরে ফিরেও দূরে থাকলি, নিজের পরিচয় দিলি না। কারণ তুই শুধু নিজের রাগ নিয়ে ছিলি ওটাই তোর কাছে বড়ো হয়েছে আর কিচ্ছু না কিচ্ছু না"

অভিরূপবাবু অনেক কষ্টে কান্নাকে আটকে রেখেছেন কিন্তু শ্রীতমাদেবীর কান্না আটকালো না তিনি আঁচলে চোখ মুছতে লাগলেন আদিত্য আর থাকতে পারলো না সে শ্রীতমাদেবীকে কাছে টেনে জড়িয়ে ধরলো, বহুবছর বাদে নিজের মাকে জড়িয়ে ধরলো এতে শ্রীতমাদেবীর কান্না আরও বেড়ে গেল তিনি নিজের ছেলের বুকে মাথা রেখে কান্নায় ভেঙে পরলেন।

আদিত্য অভিরূপবাবুর দিকে তাকিয়ে দেখে তিনি অন্য দিকে তাকিয়ে আছেন, নিজের বাবার থেকেও আর দূরে থাকতে পারলো না আদিত্য মায়ের চোখ মুছিয়ে তাকে ছেড়ে বাবার কাছে গিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরলো, অভিরূপবাবু এতক্ষণ নিজেকে সামলে রাখলেও আর পারলেন না এবার তিনিও ছেলেকে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পরলেন সাথে আদিত্য‌র দুচোখ থেকেও এতদিনের জমে থাকা রাগ অভিমান জলের ধারা হয়ে বেরিয়ে আসতে লাগলো।

হটাৎ প্যান্টে টান পড়ায় আদিত্য নীচে তাকিয়ে দেখে পিউ ওকে ডাকছে, আদিত্য হাঁটু মুড়ে তার সামনে বসলে সে তার ছোট্ট হাত দিয়ে আদিত্যর চোখ মুছিয়ে দিতে থাকে বলে, "কেঁদো না মামু মামীর কিচ্ছু হবে না, মামী ভালো হয়ে যাবে"

"কি বললে তুমি আমাকে?"

"মামু, মাম্মা বলেছে তোমাকে মামু বলে ডাকতে তুমি আমার ছোটো মামু হ‌ও"
আদিত্য এবার পিউকে বুকে টেনে ওকে জড়িয়ে ধরলো।

"একদিক থেকে ভালো, সবার উপরে রাগ থাকলেও নিজের ভাগ্নির উপরে রাগ নেই" সুনন্দার কথায় আদিত্য ওর দিকে তাকালো কিন্তু কিছু বললো না।

স্বর্ণেন্দু বাবু এবার বললেন, "নিজের বাবা মাকেই নিজের পরিচয় দিসনি সেখানে আমি তো আশাই করতে পারি না যে আমাকে দিবি, আজ তোর সাথে তোর সুপ্রতিম স্যারের খুব ভাব কিন্তু তুই ভুলে গেছিস এই আমি আমি তোকে ওর বাড়ির ঠিকানা দিয়েছিলাম তোকে সাঁতার থেকে শুরু করে সাইকেল চালানো, মাছ ধরা সব আমি আমি শিখিয়েছিলাম, তোকে কাঁধে বসিয়ে আমি পুরো চিড়িয়াখানা ঘুরিয়েছিলাম, তুই ব‌ই পড়তে ভালোবাসিস তাই আমি তোকে তোর জন্মদিনে 'ফেলুদা সমগ্ৰ' দিয়েছিলাম"

স্বর্ণেন্দু বাবু আর কিছু বলতে পারলেন না নিজের ভাগ্নেকে জড়িয়ে ধরলেন, তার কথাগুলো সব ঠিক ছোটো থেকেই অনিকেতকে তিনি সত্যিই ভালোবাসতেন অরুণাভ নিজের দরকার ছাড়া মামার কাছে খুব একটা আসতো না আর অনি সে মামার কাছেই আসতে পছন্দ করতো মামার লাইব্রেরী থেকে ব‌ই নিয়ে পড়তো মামার বড়ো আদরের ছিল সে তাই তার তো কষ্ট হবারই কথা।

সময় যত ব‌ইতে থাকে আদিত্য সহ উপস্থিত সবার মনে উদ্বেগ আশংকার চোরাস্রোত বয়ে যেতে থাকে, সময় আর যেন শেষ হতে চায় না অবশেষে একটা সময় ওটির দরজা খুলে বেরিয়ে এলেন ডাক্তার আর বেরোনো মাত্র সবাই তাকে ঘিরে ধরলো,সবার মনের জিজ্ঞাসাটা বোধহয় অনুমান করে নিলেন, তিনি বললেন

"কনগ্ৰাচুলেশনস্ মিস্টার আদিত্য আপনি বাবা হয়েছেন আপনার স্ত্রী একটি মেয়ের জন্ম দিয়েছেন, আপনারা একটু পর গিয়ে তাকে দেখতে পারেন"

ডাক্তারের কথা শুনে সবার মুখ খুশীতে উজ্জ্বল হলেও একমাত্র আদিত্যর মুখে কোনো হাসি দেখা গেল না সে জিজ্ঞাসা করলো, "আমার ওয়াইফ কেমন আছে ডক্টর?"

আদিত্যর প্রশ্ন শুনে এবার বাকিদের মুখ‌ও গম্ভীর হয়ে গেল তারাও উৎসুক ভাবে ডাক্তারের জবাবের প্রতীক্ষায় তার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে, ডাক্তার কিছুক্ষণ আদিত্যর দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে আস্তে আস্তে বলেন, "আমার এত বছরের ডাক্তারী জীবনে আমি সবসময়ই দেখেছি যে পেশেন্টের হাজবেন্ড তার সন্তানের খবর শুনে ওয়াইফের কথা একপ্রকার ভুলেই যান পরে জিজ্ঞাসা করেন, কিন্তু এই প্রথম আপনাকে দেখলাম যিনি নিজের সন্তানের থেকেও নিজের ওয়াইফের ব্যাপারে বেশি চিন্তিত, আপনার ওয়াইফের ক্রিটিক্যাল কণ্ডিশনটা কেটেছে কিন্তু এখনো জ্ঞান ফেরেনি, আমরা অবজারভেশনে রেখেছি"

"ভয়ের কিছু নেই তো ডক্টর?" তানিয়া জিজ্ঞেস করলো পরিচয়ের দিন থেকে তার সঙ্গে পিয়ালীর একটা গাঢ় বন্ধুত্ব হয়ে গেছে, ডাক্তার তার কথার জবাবে বললেন, "সেরকম কিছু আশংকা তো করছি না, আপনাদের ভালোবাসা এবং প্রেয়ারের জন্য হোক বা সন্তানের কান্নার আওয়াজ শুনেই হোক উনি আমাদের চিকিৎসায় সাড়া দিতে শুরু করেছেন"

"তাহলে জ্ঞান ফিরছে না কেন ডক্টর?" আদিত্য জিজ্ঞেস করে,

"উনি এখনো ট্রমার মধ্যে আছেন আর শরীর‌ও প্রচণ্ড দুর্বল তাই তবে আমরা আশা করছি খুব তাড়াতাড়ি ওনার জ্ঞান ফিরে আসবে"

"আমি কি ওকে গিয়ে দেখতে পারি এখন?"

ডাক্তার আরও একবার অবাক দৃষ্টিতে আদিত্যর দিকে তাকিয়ে থাকেন তারপর বলেন "নিজের সন্তানকে দেখার আগে আপনি ওয়াইফকে দেখতে চান আপনাদের এই ভালোবাসার জন্যই বোধহয় তিনি মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এসেছেন, ঠিক আছে তবে সবাই না যাওয়াটাই ভালো আপনি যেতে পারেন ওনাকে ওটি থেকে শিফট করার পর আপনি গিয়ে দেখবেন"।

আদিত্য ভিতরে গিয়ে দেখে পিয়ালী বেডে চোখ বুজে শুয়ে আছে ওর এক হাতে স্যালাইনের নল সেট করা, আদিত্য বেডের একপাশে রাখা একটু টুলে বসলো তারপর পিয়ালীর একটা হাত নিজের দুহাতের মধ্যে রেখে প্রথমে ওর হাতে একটা চুমু দিল তারপর অচেতন পিয়ালীকে উদ্দেশ্য করেই বলতে থাকে, "প্লিজ আমাকে ছেড়ে যেও না প্লিজ, আমাকে ক্ষমা করে দাও আমি তোমাকে প্রোটেক্ট করতে পারিনি কিন্তু প্লিজ আমাকে ছেড়ে যেও না, ফিরে এসো আমার কাছে প্লিজ"

আদিত্য এভাবেই পিয়ালীর পাশে বসে থাকলো, বাকীরা গিয়ে আদিত্যর নবজাতিকা মেয়েটিকে দেখে এলেও আদিত্য গেল না তাকে বারবার বলা সত্বেও সে পিয়ালীর কাছ থেকে নড়লো না, কেউ আর কথা বাড়ালো না সবাই বুঝতে পারলো যে এইমুহুর্তে আদিত্যর কাছে পিয়ালীর প্রায়োরিটি বেশী তাই সে যতক্ষণ না জ্ঞান ফিরে পাচ্ছে ততক্ষণ আদিত্য নিজের মেয়ের‌ও মুখ দেখবে না।

আর‌ও প্রায় ঘন্টাদুয়েক পরে পিয়ালীর মধ্যে ধীরে ধীরে জ্ঞান ফেরার লক্ষণ দেখা গেল চোখের পাতা নড়া, হাতের আঙুল নড়া ইত্যাদি আদিত্য তখনও পিয়ালীর একটা হাত চেপে ধরে ওর মুখের দিকে তাকিয়ে রয়েছে, পিয়ালীর হাত ধরে থাকায় ওর আঙুল নড়াটা টের পেল আদিত্য আর সঙ্গে সঙ্গেই ডাক্তারকে ডেকে পাঠালো।

আরো কিছুক্ষণ পরে ডাক্তার বেশ কিছুক্ষণ ধরে চেক্‌আপ করার পরে ফাইনালি পিয়ালীর পুরোপুরি জ্ঞান ফিরলো, তার চিকিৎসারত ডাক্তারটিকে দেখে মনে হলো তিনি যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচলেন, এবারও অবশ্য প্রথমে আদিত্য‌ই গেল দেখা করতে, সে ঢুকতেই পিয়ালী তার দিকে তাকিয়ে একটা ক্ষীণ হাসি হাসার চেষ্টা করলো, পিয়ালীর কাছে গিয়ে সে প্রথমে তার কপালে একটা চুমু দিল তারপর আস্তে আস্তে বললো,

"আয়্যাম সরি, আমার জন্যই আজ তোমার এই অবস্থা, আমার জীবনের কালো ছায়া তোমার উপরে পরেছে আয়্যাম সরি"

"আদিত্য" অতিকষ্টে ক্ষীণ স্বরে পিয়ালী ডাকে তার স্বামীকে আদিত্য তার দিকে তাকালে সে এক‌ইরকম ক্ষীণ স্বরে বলে "আমার বেবী? আমার বেবী কোথায়?"

এই উত্তর অবশ্য আদিত্যকে দিতে হলো না তার আগেই সুনন্দা কেবিনে ঢুকলো সে ঢোকার আওয়াজে আদিত্য এবং পিয়ালী দুজনেই দরজার দিকে তাকালো সুনন্দার কোলে তোয়ালে জড়ানো কিছু আছে, সেটা দেখে পিয়ালী উঠে বসতে চেষ্টা করলো কিন্তু দুর্বল শরীরে পারলো না তখন আদিত্যর দিকে তাকাতে সে আস্তে করে ধরে উঠে বসালো, উঠে বসে সুনন্দার দিকে দুহাত বাড়াতে সুনন্দা শিশুটিকে পিয়ালীর কোলে দিল আর আদিত্যকে বললো, "এবার অন্তত নিজের মেয়ের মুখ দেখ এই শিশুর কি দোষ যে ওর বাবা ওর মুখ দেখবে না?"

সুনন্দার কথা শুনে পিয়ালী আদিত্যর দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকালো আর আদিত্য অপরাধীর দৃষ্টিতে ওর দিকে, এবার আদিত্য পিয়ালীর কোল থেকে শিশুটিকে নিজের কোলে নিল এক অদ্ভুত অনুভূতি তার সারা শরীর জুড়ে বয়ে চললো তার ঠোঁটে হাসি থাকলেও চোখে জল শিশুটি চোখ বুজে ঘুমিয়ে আছে সে শিশুটিকে উদ্দেশ্য করে বলতে থাকে,

"আয়্যাম সরি আমি তখন তোর মুখ দেখিনি এর জন্য তুই দায়ী নোস, আসলে আমি তোর মাকে হারাতে চাইনি তাই তোর মায়ের কাছে আগে এসেছিলাম আমাকে, তোর বাবাকে ক্ষমা করে দে মা, তোর বাবা তোকে খুব খুব ভালোবাসে আমার শ্রীমা"

"দারুণ নামটা দিলি তো" সুনন্দা কথাটা বললো "একটা জিনিস খুব ফর্সা হয়েছে, তোরা দুজনেই ফর্সা তাই কার গায়ের রঙ পেয়েছে বলা মুশকিল"

"এই অনি দা বাইরে এসে দেখ কি শুরু হয়েছে" তানিয়া ভিতরে এসে বললো আদিত্য একটু অবাক হয়ে নিজের মেয়েকে পিয়ালীর কোলে দিয়ে বাইরে এসে যা দেখলো তাতে সে হাসবে না কি করবে ভেবে পেল না সে দেখে তার বাবা, মামা, স্যার এবং অখিল জ্যেঠু পরস্পরের গলা জড়িয়ে নাচতে শুরু করেছে আর জামাইবাবু অর্থাৎ মৈনাক মোবাইলে ভিডিও করছে, এবং তার মা আর মামী তাই দেখে হাসছে। তাকে দেখে পিউ তার সামনে এসে বললো "মামু আমি বোনকে দেখবো কেউ আমাকে ভালো করে দেখতে দিচ্ছে না"

আদিত্য ওকে কোলে তুলে নিল তারপর ওর দুগালে দুটো চুম্বন দিয়ে বললো, "আগে বলবে তো কে তোমাকে দেখতে দিচ্ছে না দিতেই হবে" এই বলে সে পিউকে ভিতরে পিয়ালীর কাছে নিয়ে গেল, বোনকে দেখে তার মুখে হাসি ফুটে ওঠে, একে একে সবাই কেবিনের ভিতরে আসে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে, সবাই পিয়ালীর সাথে কথা বলছে, বাচ্চাটিকে নিয়ে আনন্দ করছে একসময় আদিত্যর চোখ গেল দরজার কাছে দুটো প্রাণী চুপ করে বসে আছে আর তাদের দিকে তাকিয়ে দেখছে।

আদিত্য নিজের শিশুকন্যাটিকে আবার কোলে নিয়ে ওদের কাছে গেল তারপর ওদের সামনে হাঁটু মুড়ে বসে ওদের সামনে বাচ্চাটিকে দেখিয়ে বলতে থাকে, "টোবো এতগুলো বছর আমি না থাকলেও আমার কথা শুনে তুই বাবা মায়ের খেয়াল রেখেছিস, আমি ফিরে আসার পরে আমার পাল্টানো চেহারা সত্বেও আমাকে চিনতে ভুল হয়নি তোর, আর বাদশা তুই, তুই না থাকলে হয়তো আমিও বাঁচতাম না তুই আমার প্রাণ বাঁচিয়েছিস এমনকি আজ‌ও তুই না থাকলে আমি পিয়ালীকে আর আমার মেয়েকে বাঁচাতে পারতাম না তোরা দুজনেই আমার খুব কাছের তোরা দুজনেই আমার বন্ধু আমার ভাই আমার ছেলে সবকিছু এতদিন তোরা আমার আর আমার বাবা মায়ের খেয়াল রেখেছিস এবার থেকে তোদের আরও একটা দায়িত্ব বেড়ে গেল তোদের নতুন বন্ধু বা বোন যাই বলিস এবার থেকে তার‌ও খেয়াল রাখতে হবে পারবি তো?"

দুটো পোষ্য‌ই সামনের দুটো পা ভাজ করে উপরে তুলে ধরলো যেন বলতে চাইলো 'অবশ্যই পারবো'।


পিয়ালী সুস্থ হলে হাসপাতাল থেকে তাকে ডিসচার্জ করে দেওয়া হলো শিশু কন্যাকে নিয়ে যখন সে নারায়ণতলা গ্ৰামে ফিরলো তখন সেখানে রীতিমতো উৎসবের আমেজ, অখিলবাবুর সৌজন্যে গ্ৰামের সবাই জেনে গেছে তাদের গ্ৰামের নতুন অতিথির কথা তবে আতুর না কাটা পর্যন্ত কেউ আদিত্যর ঘরে এলো না আর আতুর কাটতেই পুরো গ্ৰামের সবাই হাতে কিছু না কিছু নিয়ে চলে এলো আদিত্য আর পিয়ালীর মেয়েকে দেখতে, কেউই অবশ্য বারণ করলো না, সবাই মেয়েকে দেখছে আর আশীর্বাদ করে যাচ্ছে।

এর মাঝে একদিন মণিদেবী আর সুশান্ত এসে হাজির অভিরূপবাবুর এখানের বাড়িতে তাদের দাবি প্রীতমবাবুকে যেভাবেই হোক জেল থেকে ছাড়িয়ে আনার ব্যবস্থা করতে হবে, অভিরূপবাবু যথারীতি তাতে রাজী হলেন না তিনি স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন প্রীতমবাবু যা করেছেন তাকে ক্রাইম বলে এবং তার যা শাস্তি সেটা তাকে ভোগ করতে হবে, মণিদেবী এবং সুশান্ত রীতিমতো তর্ক করতে শুরু করে এমনকি এটাও বলে যে ক্রাইম তো অরুণাভ‌ও করেছে তাহলে শাস্তি তার বাবা পাবে কেন?

উত্তরে অভিরূপবাবু জানান শাস্তি অরুণাভ‌ও পাবে সেটা আইনের হাতে হোক বা অন্য কোনো ভাবে আর প্রীতমবাবু ক্রইম করতে গিয়ে হাতেনাতে প্রমাণসহ ধরা পড়েছেন তাই চাইলেও তাকে ছাড়িয়ে আনা যাবে না তিনি আরো জানান অনিকেতকে ফেলে দেবার যে ভিডিওটা সেদিন তারা দেখিয়েছিল সেটা এতবছর লুকিয়ে রেখে তারা যে অরুণাভর থেকে সবরকম সুযোগ সুবিধা নিয়েছে এটা তার বুঝতে বাকী নেই।

একথার পরে অবশ্য তাদের কিছু বলার থাকতে পারে না তবুও তারা আরো একচোট হম্বিতম্বি করে চলে গেল।
আর একদিন খোদ অরুণাভ এসে হাজির তাকে দেখেই অভিরূপবাবু এখান থেকে চলে যেতে বলেন কিন্তু সে উল্টে আদিত্যকে অভিরূপবাবুর পাশে দেখে সে তার উপরে চড়াও হয় আদিত্য‌ই তার বাবাকে তার কাছ থেকে কেড়ে নিয়েছে এবং এখন তার লক্ষ্য ব্যানার্জী ক্রিয়েশনস্ এর দখল নেওয়া এটাও বলে উত্তরে অভিরূপবাবু তাকে আদিত্যর আসল পরিচয় দেন অর্থাৎ সেই যে অনিকেত সেটা তাকে বলেন এবং ব্যানার্জী ক্রিয়েশনস্ এ তার‌ও সমান অধিকার রয়েছে এটা স্পষ্ট ভাবে বুঝিয়ে দেন এবং এরপরেও সে যদি বেশি বাড়াবাড়ি করে তাহলে তাকে জেলে দেওয়া হতে পারে এই কথা বলেন ড় এতে অরুণাভ আরও চটে যায় সে আদিত্যকে যাচ্ছেতাই ভাষায় অপমান করতে থাকে কিন্তু আদিত্য চুপ করে তার সব কথা শোনে তারপর শান্ত অথচ স্পষ্ট এবং দৃঢ়ভাবে জানায় চাইলে সে অরুণাভকে জেলে দিতে পারে এটা ঠিক তবে সে দিচ্ছে না কারণ যতই রেগে থাকুন তাকে জেলে দিলে সবথেকে বেশি কষ্ট তাদের বাবা মায়ের হবে আর দুই দুটো ছোটো ছোটো বাচ্চাকে সে তাদের বাবার থেকে দূরে করতে চায় না কারণ যখন অলরেডি তাদের মা নিজের কৃতকর্মের জন্য জেলে আছে।

এরপরেও অরুণাভর হম্বিতম্বি কমছে না দেখে অভিরূপবাবু বাধ্য হয়ে ঘোষণা করেন ব্যানার্জী ক্রিয়েশনস্ এর দুটো ভাগ করে একভাগ তিনি অরুণাভর নামে দেবেন আরেকভাগ অনিকেতের নামে, কিন্তু অনিকেত স্পষ্ট জানিয়ে দেয় ব্যানার্জী ক্রিয়েশনস্ এ তার কোনো আগ্ৰহ নেই, সে অনিকেত ব্যানার্জীর জীবনটা অনেক আগেই পিছনে ফেলে এসেছে এখন সে আদিত্য ব্যানার্জী তাই অনিকেতের অধিকার ছিল এমন কিছুই আর সে চায় না তাই ব্যানার্জী ক্রিয়েশনস্ এর ভাগ করতে হবে না ওটা অরুণাভ এবং তার সন্তানদের জন্যই থাক।

আদিত্যর এই কথা শুনে অভিরূপবাবু অবাক হলেও ছেলের জন্য গর্বে চার বুক ভরে যায় তবে তিনি অরুণাভকে জানিয়ে দেন ব্যানার্জী ক্রিয়েশনস্ সে পাবে সাথে তাদের শহরের বাড়িটা এবং আরও কিছু সম্পত্তি‌ও কিন্তু আর কিছু না গ্ৰামের বাড়ি সহ আরও কিছু অল্প জায়গা সে পাবে না আর সবথেকে বড়ো যেটা সেটা হলো এখন থেকে অভিরূপবাবু আর শ্রীতমাদেবী এই গ্ৰামেই পার্মানেন্টলি থাকবেন অরুণাভ যেন তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টাও না করে।

এই কথায় অরুণাভ যারপরনাই হতবাক হয়ে যায় সে যাই করুক বাবার জন্য তার মনে ভালোবাসা আছে তাই সে বারবার অভিরূপবাবুকে বোঝাতে চেষ্টা করে যাতে তিনি নিজের সিদ্ধান্ত বদল করে তার সঙ্গে শহরের বাড়িতে গিয়ে থাকেন কিন্তু অভিরূপবাবু তার সিদ্ধান্তে অটল থাকেন শেষপর্যন্ত আদিত্যর কথায় এবং অরুণাভর দুই সন্তানের কথা ভেবে তিনি অরুণাভ এবং তার দুই সন্তানকে মাঝে মাঝে এখানে আসার অনুমতি দেন।


মাস চারেক পরে,

আবার আনন্দ হ‌ইহট্টগোল শুরু হয় তবে এবারের কারণ তানিয়া আর দিগন্তের বিয়ে, অবশ্য তাদের বিয়ে আগে থেকেই ঠিক ছিল এবং বাগদান‌ ও আশীর্বাদ হয়ে গিয়েছিল কাজেই দিগন্তর বাবা মা আর দেরী করতে রাজী হচ্ছিলেন না। বলাইবাহুল্য সুপ্রতিমবাবু মেয়ের বিয়ের ভার তার পুত্রসম শিষ্য আদিত্যর কাঁধে দিয়ে একপ্রকার নিশ্চিন্ত হলেন, দিগন্তর সঙ্গে তো আদিত্যর পরিচয় ছিল‌ই এবার তার বাবা মায়ের সঙ্গেও আদিত্যর পরিচয় হলো আদিত্য দেখে খুশি এবং নিশ্চিন্ত হলো যে দুজনেই সজ্জন মানুষ, এমনকি আদিত্য যখন তাদের বললো যে বিয়ের পরে যদি তানিয়া কোনো রকম অন্যায় করে তাহলে দরকারে তাকে ডাকতে সে এসে তাকে শাসন করবে তখন দিগন্তর মা স্পষ্ট জানান সেটা হবে না তানিয়া এখন তাদের ঘরের ব‌উ তাদের মেয়ে কাজেই তাদের বাড়ির মেয়েকে শাসন করার অধিকার শুধুমাত্র তাদের সাথে এটাও জানান তানিয়ার উপরে তাদের পুরো বিশ্বাস আছে যে সে কখনো কোনো অন্যায় করতেই পারে না।

নির্দিষ্ট দিনেই তানিয়া এবং দিগন্তর বিয়ে নির্বিঘ্নে সম্পন্ন হলো কিন্তু ধাক্কাটা এলো রিসেপশনের দিন, ধাক্কাটা এলো আদিত্যর জন্য এবং সেটা এমন যেটা আদিত্য কল্পনাতেও ভাবতে পারেনি।

তানিয়া এবং দিগন্তের রিসেপশনে অভিরূপবাবু এবং শ্রীতমাদেবী ছাড়াও স্বর্ণেন্দু বাবু সুদেষ্ণা দেবী, সুনন্দা আর মৈনাকের‌ও নিমন্ত্রণ ছিল আদিত্য আর পিয়ালীর তো ছিল‌ই, দিগন্তর বাবাও যেহেতু পুলিশ অফিসার তাই তার সঙ্গে স্বর্ণেন্দু বাবুর যথেষ্ট পরিচয় আছে আর অভিরূপবাবুকে তো কলকাতার প্রায় সবাই চেনে, আর দিগন্তর সাথে তো আদিত্যর সম্পর্ক একপ্রকার বন্ধুত্বের পর্যায়ে চলে গেছে সে নিজে তার বন্ধুদের সাথে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছে আদিত্য আর পিয়ালীর শ্রীমা অর্থাৎ আদিত্য পিয়ালীর মেয়ে আবশ্য তাদের কাছে নেই সে কখনো সুনন্দার কোলে আবার কখনো শ্রীতমাদেবীর কোলে আবার কখনো অভিরূপবাবু বা স্বর্ণেন্দু বাবুর কাছে মানে সবার কোলেই ঘুরছে।

একসময় দিগন্ত আদিত্য আর পিয়ালীকে ডেকে নিয়ে গেল তার এক বিশেষ বন্ধু এবং তার স্ত্রীর সাথে পরিচয় করিয়ে দেবার জন্য যারা তার বিয়েতে আসতে পারেন কিন্তু অনেকবার বলায় রিসেপশনে এসেছে।

"আদিত্য এই হলো আমার অনেকদিনের বন্ধু ও ব্যাচমেট নীলাদ্রি, নীলাদ্রি সান্যাল আর এই হলো ওর ওয়াইফ প্রীতি সান্যাল আর এই হলো আমার বন্ধু এবং আমার ওয়াইফের দাদা আদিত্য ব্যানার্জী আর ওর ওয়াইফ পিয়ালী ব্যানার্জী"

হ্যাণ্ডশেকের জন্য হাতটা বাড়িয়ে দিয়েই আদিত্য স্থির হয়ে যায় এক‌ই অবস্থা নীলাদ্রি এবং প্রীতির আদিত্য দেখে প্রীতির পাশে ওর হাত ধরে বছর তিনেকের একটা ছেলে দাঁড়িয়ে আছে। এদিকে দিগন্ত বলতে থাকে,

"জানো আদিত্য নীলাদ্রি একজন রাফ এণ্ড টাফ পুলিশ অফিসার আর ও এখন নর্থবেঙ্গলের একটা জায়গায় পোস্টেড আছে, ওই এলাকায় এখন ক্রাইম প্রায় নেই একটা সময় প্রচুর ছিল এমনকি হিউম্যান ট্রাফিকিং পর্যন্ত নীলাদ্রি নিজে হাতে ওই দলের হেডকে এনকাউন্টার করে শেষ করে"

"খুব ভালো" ছোট্ট জবাব আদিত্যর তারপর সে আর তাদের সামনে দাঁড়ায় না সেখান থেকে সরে পরে, একটু পরে যে লজে দিগন্তর রিসেপশনের অনুষ্ঠান হচ্ছিল তার ছাদে গিয়ে দাঁড়ায় সে, ছাদের কার্ণিশে দুহাতে ভর দিয়ে দূরে তাকিয়ে থাকে তার চোখের সামনে নর্থবেঙ্গলে কাটানো তার জীবনের আটটা বছরের ছবি ফুটে ওঠে।

"এখানে চলে এলে, কিছু হয়েছে?" আদিত্যর পাশে দাঁড়িয়ে প্রশ্ন করে পিয়ালী, শেষ দুজনের সঙ্গে পরিচয়ের সময় আদিত্যর মুখের অবাক ভাব পিয়ালীর দৃষ্টি এড়ায়নি আদিত্য যদিও তার প্রথম প্রশ্নের উত্তর দিল না তবুও সে আবার প্রশ্ন করে "ওই দুজনকে তুমি চেনো তাই না? কে ওনারা?"

এইবার আদিত্য কথা বলে, "ওই মেয়েটি হলো অতীন্দ্র স্যারের মেয়ে মানে আসল আদিত্যর বোন"

"আর তোর কেউ না? তোর বোন না?"

পিছনে প্রীতির পরিচিত কণ্ঠস্বর শুনে চকিতে ফিরে তাকায় সে দেখে প্রীতি দাঁড়িয়ে কাঁদছে ওর পিছনে সেই বাচ্চা ছেলেটি ওর বাবার হাত ধরে দাঁড়িয়ে আছে, আদিত্য প্রীতির কথায় কোনো উত্তর দেয় না প্রীতি আবার জিজ্ঞেস করে "কি রে বল আমি তোর কেউ না? আমি তোর বোন না?"

"তুই আমার কাছে চিরকাল আমার বোন হয়ে থাকবি কিন্তু আমি তো তোর দাদা ন‌ই"

এবারে আদিত্য কথা বলে, প্রীতি কাঁদতে কাঁদতে বলে, "মানছি আমি একটা ভুল করেছিলাম ভুল না অন্যায় করেছিলাম তাই তুই আমাকে একেবারে পর করে দিলি?"

"পর আমি করেছি?"

"তাই নয় তো কি? আমি যদি তোর নিজের বোন হতাম তাহলে কি এভাবে পর করতি? তাহলে হয়তো কান মুলে গালে দুটো থাপ্পড় মেরে শাসন করতি, কিন্তু আমি তো তোর নিজের বোন না তাই হয়তো সেটা না করে চলে এসেছিস"

"তোকে থাপ্পড় মারার অধিকার কি আমার ছিল? সত্যি বলতো কে কাকে পর করেছে? আটটা বছর আমি তোদের সঙ্গে ছিলাম কখনো তোর এমন মনে হয়েছে যে আমি পরের মতো আচরণ করছি? হয়েছে?"

প্রীতি চুপ করে থাকে তবে তার দুচোখ দিয়ে অবিরাম জল পরছে আদিত্য বলতে থাকে, "তোকে আমি সবসময় নিজের বোন মনে করেছি"

"তাহলে ছেড়ে চলে এলি কেন?"

"কারণ সেখানে আর আমার প্রয়োজন ছিল না"

প্রীতি এবার ছুটে এসে আদিত্যর বুকে ঝাঁপিয়ে পড়ে তাকে জড়িয়ে তার বুকে মাথা রেখে কাঁদতে কাঁদতে বলে, "আমার ভুল হয়ে গেছে দাদা আমাকে ক্ষমা করে দে, প্রীতিকে এইভাবে কাঁদতে দেখাটা আদিত্যর জন্যও কষ্টকর হয়ে যাবে উঠলো, একটা সময় পরে সে প্রীতির মাথায় স্নেহের হাত বুলিয়ে বললো,

"কাঁদিস না তোকে বলেছিলাম না যে তুই কখনো কাঁদবি না"

"আমাকেও ক্ষমা করে দাও আদিত্য" কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে থাকা নীলাদ্রি এবার কথা বললো কিন্তু আদিত্য তার কথায় কোনো উত্তর না দিয়ে বাচ্চা ছেলেটির দিকে তাকিয়ে থাকে নীলাদ্রি সেটা খেয়াল করেই বলে, "ও নীলাভ তোমার ভাগ্নে" তারপর বাচ্চাটিকে বলে "বাবু যাও ওর কাছে, চিনতে পারছো তো ও কে?"

বাচ্চাটি একবার তার বাবার দিকে তাকায় তারপর আদিত্যর দিকে এগিয়ে আসে আদিত্য প্রীতিকে ছেড়ে বাচ্চাটির সামনে বসে বাচ্চাটি বলতে থাকে "আমি তোমার ছবি দেখেছি,মা বলেছে তুমি আমার মামা হ‌ও"

"তোমার মা আর কি বলেছে?"

"বলেছে তুমি হারিয়ে গেছো, কোথায় হারিয়ে গিয়েছিলে তুমি?"

"আমি হারাইনি তো আসলে আমি তোমার সাথে লুকোচুরি খেলছিলাম দেখছিলাম যে তুমি আমাকে খুঁজে পাও কি না?"

"আমি তো তোমাকে খুঁজে নিয়েছি এবার আমার গিফট ক‌ই?"

"কি গিফট চাও তুমি?"

"চকোলেট অনেক চকোলেট, দেবে?"

"অবশ্যই দেবো তবে এখন তো আমার সঙ্গে নেই আমি পরে তোমাকে অনেক চকোলেট এনে দেবো, ঠিক আছে?" আদিত্যর কথা শুনে বাচ্চাটি একগাল হাসি নিয়ে ওর গলা জড়িয়ে ধরে।

"মায়ের খুব শরীর খারাপ রে দাদা" প্রীতির কথা শুনে আদিত্যর চোখের সামনে উমাদেবীর সদা হাস্যময় ফর্সা সুন্দর মুখখানি ভেসে ওঠে, আদিত্য উঠে প্রীতির দিকে তাকালে সে বলতে থাকে, "খাওয়াদাওয়া ছেড়েই দিয়েছে, ঘুম‌ও ঠিক মতো হচ্ছে না, মায়ের কি হয়েছে কিচ্ছু বোঝা যাচ্ছে না সবরকম টেস্ট করে দেখা হয়েছে কিন্তু শরীর খারাপের কোনো কারণ খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না আমি ছাড়াও আরো অনেক বড়ো বড়ো ডাক্তার দেখেছে কেউ কিচ্ছু বুঝতে পারছে না, একজন তো বলেই দিল এভাবে চলতে থাকলে মা আর বেশিদিন বাঁচবে না"

"আদিত্য" প্রীতি থামলে নীলাদ্রি বলতে শুরু করে, "আদিত্য তুমি আমাকে ওনাদের দেখাশোনার দায়িত্ব দিয়ে এসেছিলে কিন্তু সবাই সব দায়িত্ব পালন করতে পারে না আমি তোমাকে কথা দিয়েছিলাম কিন্তু আমি কথা রাখতে পারিনি, আমি ক্ষমাপ্রার্থী"

"একবার যাবি দাদা? চল না একবার মায়ের কাছে। মা কলকাতাতেই আছে" প্রীতি আবার বলে কিন্তু আদিত্য তাও চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে দেখে পিয়ালী বুঝতে পারে ওর মনে কিছু নিয়ে একটা দ্বন্দ্ব চলছে তাই সে এগিয়ে এসে তার কাঁধে একটা হাত রাখে আদিত্য বুঝতে পারে সে কি বলতে চায়, আদিত্য জিজ্ঞেস করে "কলকাতার কোথায়?"


ডানলপ থেকে সোজা দক্ষিণেশ্বরের দিকে আসা রাস্তাটা ধরে সোজা এসে দক্ষিণেশ্বর রেল স্টেশনের নীচ দিয়ে বা দিকে একটা ছোটো রাস্তায় কিছুটা গিয়ে একটা আকাশী রঙের বাড়ির সামনে ক্যাবটাকে থামায় প্রীতি, গাড়িটাকে ছেড়ে সবাই নামে সবাই বলতে আদিত্য, পিয়ালী, নীলাদ্রি, প্রীতি আর নীলাভ এবং অবশ্যই প্রীতির কোলে শ্রীমা। এখানে আসার সময় পিয়ালীর কোলে থাকলেও গাড়িতে প্রীতি বলে, "আমি একটু কোলে নেবো?"

উত্তরে পিয়ালী বলে, "এ মা কেন নেবে না অবশ্যই নেবে এই নাও" বলে শ্রীমাকে প্রীতির কোলে দেয় সেই থেকে সে তার নতুন পিসির কোলেই আছে, গাড়ি থেকে নেমে আদিত্য একবার বাড়িটা দেখে নিয়ে জিজ্ঞেস করে "নর্থবেঙ্গল ছেড়ে এখানে?"

"মা কলকাতার মন্দির গুলো দেখতে চাইছিলেন দক্ষিণেশ্বর, কালীঘাট, তারাপীঠ, তারকেশ্বর, বেলুড় মঠ এইসব তাই মাকে নিয়ে এখানে আসি মাসখানেক আগে"

"একটা জিনিস শুধরে দিচ্ছি দক্ষিণেশ্বর আর কালীঘাট বাদে বাকীগুলো কলকাতায় না, টেকনিক্যালি ওগুলো কলকাতার বাইরে"

"আয়" বলে প্রীতি বাড়ির ভিতরে ঢুকলো, পিছন পিছন বাকিরা বেল বাজাতে একজন মহিলা এসে দরজা খুলে দিল, ভিতরে ঢুকে আদিত্য দেখে ড্রয়িংরুমে একটা টেবিলের সামনে চেয়ারে দরজার দিকে পিছন ফিরে বসে আছেন তার অতি পরিচিত এবং তার প্রাণ রক্ষাকারী অতীন্দ্র সিংহ রায়, আদিত্যর অতীন্দ্র স্যার।


বর্তমান অতীন্দ্র সিংহ রায় কে দেখে বোঝার উপায় নেই যে এই লোকটি নর্থবেঙ্গলের একসময়ের দাপুটে জমিদার বংশের লোক এবং নিজেও বর্তমানে নর্থবেঙ্গলের একজন গণ্যমান্য লোক।

স্ত্রীর অসুস্থতায় লোকটার প্রায় পাগল পাগল অবস্থা মুখে কয়েকদিনের না কাটা দাঁড়ি, মাথায় চুল উসকোখুসকো, যারা তাকে চেনেনা তারা তাকে এই অবস্থায় দেখে বিশ্বাস‌ই করবে না যে এই লোকটি নর্থবেঙ্গলের সবথেকে সম্ভ্রান্ত লোক।

স্ত্রী উমার শরীর নিয়ে তার চিন্তার শেষ নেই কম ডাক্তার দেখানো হয়নি এমনকি তাদের মেয়েও ডাক্তার কিন্তু কেউ তার রোগের কারনটা ধরতে পারছে না, এদিকে দিনের পর দিন প্রাণাধিক প্রিয় স্ত্রীকে ষা খেয়ে না ঘুমিয়ে ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যেতে দেখছেন অথচ কিছু করতে পারছেন না, যখন উমাদেবী কলকাতার মন্দিরগুলো দেখতে চাইলেন তখন এককথায় রাজী হয়ে গেলেন তিনি উদ্দেশ্য ছিল মন্দির দর্শনের সাথে এখানের বড়ো বড়ো হাসপাতালে চিকিৎসা করানো কিন্তু কোনো লাভ হচ্ছে না, একজন ডাক্তার অবশ্য বলেছেন যে তার স্ত্রীর অসুস্থতা যতটা না শারীরিক তার থেকে বেশি মানসিক এর বেশী তিনিও কিছু বলতে পারেননি।

কলকাতায় আসার আগে এজেন্ট মারফত দক্ষিণেশ্বরের কাছে একটা বাড়ি কিনে সেখানেই নিয়ে আসেন কিছুদিন পরে নাতিকে নিয়ে আসে মেয়ে এবং জামাই। এখানে এসে একজন আয়া রেখেছেন যিনি স্ত্রীর দেখাশোনা করবেন আর একজন রান্না এবং ঘরের অন্যান্য কাজ করার জন্য আছে।

ড্রয়িংরুমে বসে স্ত্রীর কথাই চিন্তা করছিলেন অতীন্দ্র বাবু মেয়ে এবং জামাই তাদের এক বন্ধুর বিয়ের রিসেপশনে গেছে, যেতে যদিও চায়নি এমনকি বিয়েতেও যায়নি কিন্তু অতীন্দ্র বাবুই একপ্রকার জোর করে রিসপশনে পাঠিয়েছেন এই বলে যে না গেলে খারাপ দেখায়। কি করবেন কোন ডাক্তার দেখাবেন এই চিন্তাই করছিলেন তিনি এমন সময় তার স্ত্রীর রুম থেকে খাবারের প্লেট হাতে বেরিয়ে এলেন আয়াটি অতীন্দ্র বাবু দেখলেন প্লেটে যেরকম খাবার ছিল সেরকমই আছে অর্থাৎ তার স্ত্রী খাননি, এইসময় কলিংবেল বাজলে তিনি বুঝলেন মেয়ে জামাই ফিরে এসেছে।

আয়াটি অতীন্দ্র বাবুকে বললেন "ম্যাডাম কিছুতেই খেতে রাজী হচ্ছে না স্যার, আমি অনেক চেষ্টা করেছি অনেক বুঝিয়েছি কিন্তু উনি জেদ করে আছেন যে খাবেন না এবার ছোটো ম্যাডাম এলে তো আমাকে বকবেন"

"ওর কথায় কিছু মনে করবেন না" অতীন্দ্র বাবু কথা বলেন "আমার‌ই দুর্ভাগ্য এইসময়ে যে উমাকে খাওয়াতে পারতো সে কাছে নেই"

"তিনি কে স্যার? ডাকুন তাকে ম্যাডামের খাওয়াটা খুব দরকার খাবার না খেলে তো ওষুধ‌ও দিতে পারছি না এভাবে চললে তো.."

আয়াটি কথা শেষ করলেন না কিন্তু অতীন্দ্র বাবু বুঝতে পারলেন সে কি বলতে চাইছে তিনি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন "সে কোথায় আছে জানলে কি আর না ডেকে থাকতাম? সেও যদি জানতো তাহলে ঠিক আসতো আর না এলেও তার পা ধরে নিয়ে আসতাম"

"স্যার"

অপ্রত্যাশিত অথচ পরিচিত আওয়াজ শুনে অতীন্দ্র বাবু লাফিয়ে চেয়ার থেকে উঠে পিছনে ফিরলেন, নিজের চোখকেই বিশ্বাস করতে পারছেন না তিনি, যাকে তিনি এই কবছরে দিনরাত্রি মনে করেছেন, স্ত্রীর অসুস্থতায় যার অভাব প্রতিনিয়ত অনুভব করেছেন সে তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে।

"আদিত্য" একবার ডেকে প্রায় ছুটে এসে তিনি জড়িয়ে ধরলেন তাকে, যেন স্ত্রীর অসুস্থতার অব্যার্থ প্রতিকার পেয়ে গেছেন এইভাবে অতীন্দ্র বাবু আদিত্যকে আঁকড়ে ধরলেন, আদিত্য‌ও জড়িয়ে ধরলো অতীন্দ্র বাবুকে

"মা কেমন আছে?" আদিত্যর প্রশ্নে অতীন্দ্র বাবু ভেঙে পরলেন, "ভালো নেই একদম ভালো নেই জানিনা আর কতদিন.." অতীন্দ্র বাবুও কথাটা শেষ করতে পারলেন না আদিত্যকে আর কিছু বলতেও হলো না সে এবার জিজ্ঞেস করলো, "কোথায় মা?"
I'm the King of Dark
                &
I rule over all Devils
               devil2 devil2
Like Reply
[Image: Picsart-22-12-06-20-20-08-119.jpg]



                 দ্বিতীয় খণ্ড
                 ৩৭তম পর্ব



অতীন্দ্র বাবু ঘরটা দেখিয়ে দিলেন আদিত্য ওনাকে ছেড়ে সেই ঘরের দরজার সামনে গিয়ে একটু দাঁড়ালো অবশ্য যাওয়ার আগে আয়ার হাত থেকে খাবারের প্লেটটা নিয়ে নিয়েছে। দরজার সামনে একটু দাঁড়িয়ে যেন মনে মনে সাহস সঞ্চয় করে নিল ভয়টা অভশ্য তার নিজের জন্য নয় তার ভয় তাকে দেখে যদি উমাদেবী আবার উত্তেজিত হয়ে বেশী অসুস্থ হয়ে পড়েন সেটার, তবুও সে ঘরের ভিতর ঢুকলো।

ঘরে ঢুকে দেখে উমাদেবী জানালার একপাশে বসে জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছেন, দরজাটা তার পিছন দিকে থাকায় তিনি যেমন দেখতে পেলেন না ঘরে কে ঢুকেছে তেমনি আদিত্য দেখতে পেলনা তার মুখ। নি দেখলেও ঘরে কেউ ঢোকার আওয়াজ পেলেন উমাদেবী কিন্তু তবুও দরজার দিকে না তাকিয়েই বললেন,

"বললাম না আমার খেতে ইচ্ছা করছে না আমি খাবো না তোমরা শুনছো না কেন?"

আদিত্য একটু ভয়ে ভয়েই জবাব দিল, "যখন তোমার কথা কেউ শুনছে না তখন তোমার উচিত তাদের কথা শোনা"

গলার আওয়াজ চিনতে পেরে উমাদেবী ফিরে তাকালেন আর তাকানো মাত্র আদিত্য চমকে উঠলো এ কাকে দেখছে সে? এই কি সেই করুণাময়ী উমাদেবী যার স্নেহ মমতার পরশ সে দীর্ঘ আটবছর পেয়েছিল কোথায় দেবীর মতো স্নেহ মমতায় ভরা মুখ কিন্তু এখন চোখের নীচে কালি পরেছে মুখটাও শুকনো লাগছে, শরীর যে যথেষ্ট অসুস্থ এটা আর বলে দিতে হয় না।

"তুমি এখানে?" গম্ভীর স্বরে প্রশ্ন করেন উমাদেবী কিন্তু আদিত্য এতটাই হতবাক হয়ে গেছে যে তার মুখ দিয়ে কোনো কথা বের হলো না, উমাদেবী আবার বলেন, "তুমি এখানে কি করছো? কে নিয়ে এসেছে তোমাকে এখানে চলে যাও, চলে যাও এক্ষুনি"

"চলে যাবো কিন্তু আগে তোমাকে খেতে হবে" অতিকষ্টে সাহস সঞ্চয় করে কথা বললো আদিত্য।

"আমি খাবো না"

"খেতে তো তোমাকে হবেই" আদিত্যর সাহস ক্রমাগত বাড়তে থাকে।

"তোমার কথায় নাকি?"

"ঠিক তাই, তুমি তো ভালো করেই জানো আমার কথা না শুনলে কিভাবে শোনাতে হয় সেটা আমি ভালো করেই জানি"

"তোমার কথায় নাকি? ভুলে যেও না তুমি আমার ছেলে ন‌ও"

"আমি ভুলিনি, আমি তোমার ছেলে না হতে পারি কিন্তু তুমি আমার মা আর একথা আমি আগেও বলেছি" একথা বলে আদিত্য তার কাছে এগিয়ে গেল, কিন্তু উমাদেবী "আমি কিন্তু খাবোনা বলছি, কি হলো শুনছো কোথায় তুমি?" বলে অতীন্দ্র বাবুকে ডাকতে থাকেন কিন্তু কেউ ঘরের ভিতরে এলো না, আদিত্য এক গ্ৰাস নিয়ে উমাদেবীর মুখের সামনে ধরলো কিন্তু উমাদেবী সেটা না খেয়ে বললেন, "কেন এরকম করছিস?" আদিত্য খেয়াল করলো উমাদেবী এতক্ষণ তুমি করে কথা বলছিলেন এবং এখন তুই করে বলছেন কিন্তু দুটো ক্ষেত্রেই তার গলার স্বরে এক অন্য রকম ভাব আছে উমাদেবী বলে চললেন, "আমি মরে গেলে তোর কি?"

"আমার আবার কি? কিছুই না কিন্তু স্যারের লটারি লেগে যাবে" আদিত্যর দুষ্টুবুদ্ধিটা উমাদেবী ধরতে পারলেন না তিনি একটু অবাক হয়ে বললেন, "মানে ওনার আবার কি হবে?"

"হবে না? ধরো তুমি মরে গেলে এদিকে তোমার মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে তাহলে কি দাঁড়ালো অত বড়ো বাড়িতে উনি একা এখন যদি আবার কাউকে বিয়ে করে আনেন তুমি কিছু করতে পারবে?"

"উনি বিয়ে করবে? এ তুই কি বলছিস?"

"ঠিকই বলছি, এই তো একটু আগেই দেখলাম ফোনে কার সঙ্গে হেসে হেসে কথা বলছেন"

"তবে রে, বুড়োর তো বেশ শখ জেগেছে দেখছি"

"তবেই বলো এরকম সুন্দরী ব‌উ থাকতে বাইরের দিকে চোখ দিচ্ছে"

"দেখাচ্ছি মজা" বলে উমাদেবী দরজার দিকে এক পা এগোতেই বাধা দেয় সে বলে, "করছো কি এভাবে কি তুমি আটকাতে পারবে?"

"তাহলে কি করি বলতো?"

"সব‌ই তো তোমার দোষ"

"মানে?"

"এই দেখো না খেয়ে না ঘুমিয়ে নিজের শরীরটাকে খারাপ করছো এটা তোমার দোষ না?"

"তাতে কি আমি মরে গিয়ে ভূত হয়ে বুড়োর ঘাড়ে চাপবো"

"ভূতেদের শরীর থাকে না তুমি চাপলেও ওনার কিস্যু হবে না আমার কথা যদি শোনো তাহলে বলি বেঁচে থেকে বুড়োর ঘাড়ে চেপে থাকো যাতে তোমার জায়গা কাউকে দিতে না পারেন"

উমাদেবী কিছুক্ষণ চুপ করে কিছু ভাবলেন তারপর বললেন "ঠিক বলেছিস, আমি বেঁচে থেকেই বুড়োর ঘাড়ে চেপে থাকবো"

"একদম, নাও এবার খেয়ে নাও"

এবার আর উমাদেবী আদিত্যকে বাধা দিলেন না তার হাতে খেতে লাগলেন একটু পরে তিনি বললেন, "বলছিস আমি তোর মা আর আমার একটা থাপ্পড়ে দেখা না করেই ছেড়ে চলে গেলি? এতটাই রাগ আমার উপরে?"

"আমি তোমার থাপ্পড়ের জন্য যাইনি"

"তাহলে?"

"যে চোখে আটটা বছর ভালোবাসা, স্নেহ দেখেছিলাম সেই চোখে আমি ঘৃণা দেখতে চাইনি সেই শক্তি আমার ছিল না তাই চলে গিয়েছিলাম"

"তাহলে আজ কেন ফিরে এলি?"

"তুমি অসুস্থ জানার পর আর থাকতে পারিনি"

উমাদেবী আর কোনো কথা না বলে আদিত্যকে বুকে টেনে নিলেন কাঁদতে কাঁদতে বললেন "আর কখনো আমাকে ছেড়ে যাবি না তো"

"না যাবো না"

কথায় কথায় প্রায় খাওয়া শেষ হয়ে গিয়েছিল অল্প‌ই বাকী ছিল কিন্তু উমাদেবী আর খেতে চাইছিলেন না তখন আদিত্য তাকে বললো "খেতে তো হবেই, খেয়ে নাও তারপর একটা সারপ্রাইজ আছে"

"কি সারপ্রাইজ?"

"আগে পুরোটা খাবে তারপর ওষুধ খাবে তারপর"

এরপর উমাদেবী চুপচাপ খেয়ে নিলেন তারপর আদিত্য আয়াটিকে ডেকে ওষুধ খাইয়ে দিলে, এবার উমাদেবী আদিত্যর কাছে আবার সারপ্রাইজের কথা জিজ্ঞেস করলে আদিত্য পিয়ালীকে ঘরে ডেকে আনে তারপর উমাদেবীকে বলে, "মা ও পিয়ালী আর ওর কোলে শ্রীমা"

উমাদেবীকে আর কিছু বলতে হয় না তিনি পিয়ালীকে কাছে টেনে প্রাণ ভরে আশীর্বাদ করেন এবং নিজের হাতে থাকা একজোড়া সোনার চুরি খুলে ওর হাতে পরিয়ে দেন এবং তারপর নিজের গলায় থাকা আরেকটা সোনার চেন খুলে বলেন "এটা আমার শ্রীমার জন্য এটা সে পরবে"

অতীন্দ্র বাবু, প্রীতি আর নীলাদ্রি ঘরে ঢুকে উমাদেবীকে হাসতে দেখে অবাক হয়ে যায় যেটা তারা এত দিন ধরে করতে পারছে না সেটা আদিত্য কয়েক মিনিটেই করে দিয়েছে, অতীন্দ্র বাবু ডাক দেন "উমা?"

উমাদেবী স্বামীর দিকে তাকিয়ে বলেন "খুব শখ না তোমার? কিন্তু আমি অত সহজে নিজের জায়গা ছাড়বো না আর এখন তো আমার ছেলে ব‌উমা আর নাতনী‌ও এসে গেছে"

অতীন্দ্র বাবু কিছু না বুঝে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যান আদিত্য উমাদেবীর কাছে ব্যাপারটা স্বীকার করে যে সে অতীন্দ্র বাবুর সম্পর্কে যেটা একটু আগে বলেছে সেটা মিথ্যা ছিল"
শুনে উমাদেবী বলেন "আমি জানি কিন্তু তবুও আমি ওনাকে জানিয়ে রাখলাম যে আমি নিজের জায়গা ছাড়বো না" তারপর স্বামীর দিকে তাকিয়ে বলেন "আমি যত তাড়াতাড়ি ছেলে বৌমা আর নাতনীকে নিয়ে আমার বাড়িতে ফিরতে চাই তুমি ব্যাবস্থা করো"

"মা..আমি নর্থবেঙ্গলে যেতে পারবো না"

আদিত্যর কথা শুনে সবার মুখ আবার ছোটো হয়ে যায় উমাদেবী কাঁদো কাঁদো স্বরে বলেন "বুঝেছি আমার উপরে এখনো রেগে আছিস আর তাছাড়া ওনার মুখে শুনেছিলাম তোর নিজের বাবা মা এখানে থাকে তাই আর আমাদের সাথে যাবি না তাইতো? আমি তো এখন পর"

আদিত্য উমাদেবীর চোখের জল মুছিয়ে বলে, "আমার বাবা মা এখানে থাকে এটা ঠিক কিন্তু আমার না যেতে চাওয়ার পিছনে অন্য কারণ আছে"

"কি কারণ?"

"মা, তার আগে একটা কথা আমি আবার বলছি শুনে রাখো আমার কাছে আমার মা আর তোমার মধ্যে কোনো তফাৎ নেই আর কখনো বলবে না যে আমি তোমাকে পর ভাবি তুমিও আমার মা"

"তাহলে যাবি না কেন?"

"এখানে আসার পরে আরও একজন ভালো মানুষের সাথে আমার পরিচয় হয় অবশ্যই ওই বাদশার জন্য, ওই ভালো মানুষটি আমাকে নিজের বাড়িতে নিয়ে যান সেখানে থাকতে দেন। মারা যাওয়ার আগে উনি আমাকে বিশ্বাস করে একটা কাজের দায়িত্ব দিয়ে যান আর আমিও ওনাকে কথা দি‌ই যে আমি আজীবন ওনার বিশ্বাসের মর্যাদা রাখবো, আর তুমি তো জানো আমি কাউকে কোনো কথা দিলে সেটা রাখি"

"তার মানে আমি তোর সাথে থাকতে পারবো না?"

"তা কেন? আপাত যতদিন না পুরো সুস্থ হচ্ছো ততদিন আমার কাছে থাকবে আর তারপর যদি নর্থবেঙ্গলে ফিরেও যাও তখনও যখনই তোমার আমাদের দেখতে ইচ্ছা করবে বলবে আমরা চলে যাবো, আমার‌ই বলতে ভুল হয়েছে আমি ওখানে পার্মানেন্টলি থাকতে পারবো না কিন্তু যাবো তো অবশ্যই ওই জায়গা আমার বড়ো প্রিয়, কতদিন ওই পাহাড় ওই জঙ্গল দেখি না"

"তুই সত্যি বলছিস তুই যাবি?"

"যদি তুমি তাড়িয়ে না দাও, দেবে না তো তাড়িয়ে?"

উমাদেবী আবার আদিত্যকে বুকে টেনে নিলেন। সত্যি সত্যিই উমাদেবীকে নিজের কাছে এনে রাখলো আদিত্য অভিরূপবাবু আর শ্রীতমাদেবীর সাথে অতীন্দ্র বাবু আর উমাদেবীর পরিচয় করিয়ে দিল এবং এটাও বললো যে অতীন্দ্র বাবুই তাকে বাঁচিয়েছিলেন, অভিরূপবাবু এবং শ্রীতমাদেবী দুজনেই কৃতজ্ঞতা জানাতে ভুললেন না।

উমাদেবী সুস্থ হলে তারা আবার নর্থবেঙ্গলে ফিরে গেলেন  এবার আদিত্য আর পিয়ালীও সঙ্গে গেল দুজনেই খুশী আদিত্য খুশী আবার তার প্রিয় পাহাড়, জঙ্গল দেখবে বলে আর পিয়ালী খুশী আবার তার জন্মশহরে ফিরছে বলে। সিংহ রায় প্যালেসে ঢোকার আগে উমাদেবী পিয়ালীকে বাড়ির বৌএর মতো বরণ করে নিলেন।

আদিত্য গিয়ে একবার এখানের সেই হরি কাকার সঙ্গে দেখা করে এলো এছাড়া বাড়ির অন্যান্যরা তো আছেই। অতীন্দ্র বাবুরা ফিরেছে শুনে সুবিমল বাবুরাও তিনজন দেখা করতে এলেন, সবাই তখন ড্রয়িংরুমে বসে গল্প করছিল বহুদিন পরে সুবিমল বাবু তার প্রাণ রক্ষাকারী আদিত্যকে কাছে পেয়ে জড়িয়ে ধরলেন চারুলতা দেবীও আদিত্যকে ধন্যবাদ দিলেন সাথে ঝর সাথে যে খারাপ ব্যবহার করেছিলেন তার জন্য ক্ষমাও চাইলেন, আদিত্য খেয়াল করলো তাদের পিছনে অদ্রিজা একদৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে দেখছে কিন্তু কোনো কথা বলছে না।

"কেমন আছেন মিস চক্রবর্তী? নাকি মিসেস বলতে হবে?"

অদ্রিজা জবাব দিতে যাচ্ছিল কিন্তু তখনই তার দৃষ্টি পরে উমাদেবীর কোলে থাকা বাচ্চাটির দিকে এবং তার পাশে বসা পিয়ালীর উপরে, আদিত্য সেটা দেখে বলে, "পরিচয় করিয়ে দি‌ই ও হলো পিয়ালী আমার ওয়াইফ আর ও শ্রীমা আমার মেয়ে"

কথাটা শুনে অদ্রিজার মুখ থেকে হাসিটা মিলিয়ে যেতে দেরী হলো না কিন্তু তবুও সে বাচ্চাটির কাছে এসে বললো, "সুন্দর দেখতে হয়েছে" তাকে দেখে আদিত্যর মনে, হলো যেন সে কিছু একটা গোপন করে গেল।


রাতে নিজের সেই পুরনো ঘরে ফিরে আদিত্য কিছুটা নস্টালজিক হয়ে পড়লো পিয়ালী জিজ্ঞেস করলে সে সেকথা গোপন‌‌ও করলো না এইঘরে থেকেই যে সে পিয়ালীর মৃত্যু সংবাদ পেয়ে ছুটে গিয়েছিল সেকথাও বললো। আরেকটু রাত হলে সে ছাদে গেল যে জায়গাটা তার অতি প্রিয় ছিল তার একাকিত্বের সাক্ষী এই ছাদ। 

পিয়ালী উমাদেবীর কাছে মেয়ের জন্য দুধ গরম করে নিয়ে গেছে, প্রীতি সহ প্রায় সবাই সেখানে আছে তাই আদিত্য একা হতেই ছাদে চলে এলো।
ছাদে এসে সে পায়চারি করতে থাকে কতদিন পরে সে এলো হটাৎ অন্ধকারে কারো ফুঁপিয়ে কান্নার আওয়াজ কানে এলো তার একটু অবাক হলো সে অন্য কেউ হলে হয়তো ভূত ভেবে চিৎকার শুরু করে দিত কিন্তু আদিত্য সেসব করলো না সে ছাদের লাইটটা জ্বালালো, এমনিতে সে আগেও যখন ছাদে আসতো তখন লাইট জ্বালাতো না অন্ধকারেই থাকতো আজ‌ও তাই করেছিল কিন্তু কান্নার আওয়াজ শুনে লাইট জ্বালালো দেখলো ছাদের ছক দিকে কার্ণিশে হেলান দিয়ে একটি মেয়ে কাঁদছে, হটাৎ লাইট জ্বলে ওঠায় মেয়েটি মুখ তুলে তাকাতেই আদিত্য অবাক হয়ে যায়,

"মিস চক্রবর্তী আপনি এখানে? আর এই অন্ধকারে বসে কাঁদছেন কেন?"

"কিছু না এমনি"

"এমনি কেউ কাঁদে না হয় খুব আনন্দে কাঁদে নতুবা খুব দুঃখে আপনার কোনটা?"

"কি হবে আপনার জেনে?

অদ্রিজার গলার স্বর আদিত্যকে একটু অবাক করে অদ্রিজা ঝাঁঝালো স্বরে বলতে থাকে "কোনোদিন জানতে চেয়েছেন আমার কি হয়েছে?" অদ্রিজার কথা আদিত্যকে অবাক করলেও সে শান্ত গলায় বলে "আপনার কথা আমি কিছুই বুঝতে পারছি না"

"বুঝতে হবে না আপনাকে, আমাকে একটু একা থাকতে দিন"

"আপনার যদি সত্যিই কোনো প্রবলেম হয় বলতে পারেন যদি পারি তো হেল্প করবো"

"পারবেন না আপনি"

"বলেই দেখুন না"

"না, আমার প্রবলেম আমার কষ্ট সেটা আমার‌ই থাক"

"কষ্ট কারো সাথে শেয়ার করলে কমে আপনি আমার সাথে শেয়ার নাই করতে চান কিন্তু আপনার বাবা মায়ের সাথে করুন বা আপনার ফ্রেন্ড মানে প্রীতির সাথে করুন বা যদি বয়ফ্রেন্ড থাকে তাহলে তার সাথেও করতে পারেন"

"আমার বয়ফ্রেন্ড নেই"

"ওহ তাহলে বাকীদের কারো সাথে মনের কথা শেয়ার করুন দেখবেন মন হাল্কা হয়ে যাবে"

"আমাকে একটু একা থাকতে দিন প্লিজ, আপনার ওয়াইফ বোধহয় আপনার জন্য ওয়েট করছে"

আদিত্য আর কোনো কথা না বলে ছাদ থেকে নেমে নীচে চলে আসে। সে চলে আসার পরে পিছনে অদ্রিজা কান্নায় ভেঙে পড়ে, কাঁদতে কাঁদতে বলতে থাকে, "তুমি সুখে থেকো আদিত্য কষ্টটা নাহয় আমার জন্যই থাক, তুমি কোনোদিন‌ও জানবে না যে অদ্রিজা তোমাকে কতটা ভালোবাসে সেকথা কেউ জানবে না কাউকে জানানোর নয়, ভগবানের কাছে এই প্রার্থনা‌ই করি যেন তুমি চিরকাল সুখে থাকো"।

অদ্রিজার কথাগুলো আদিত্য না শুনলেও  ছাদের গেটের বাইরে অন্ধকারে দাঁড়িয়ে থাকা একজন ঠিকই শুনলো যদিও তার শোনার কথাটা কেউ জানলো না।


দশ বছর পরে,

একটা চেঁচামেচির শব্দে আদিত্যর ঘুম ভেঙে গেল রাতে কাজ সেরে অনেক দেরীতে শুয়েছিল ফলে এখন তাড়াতাড়ি ঘুমটা ভাঙায় একটু রেগেও গেল নিজের মনেই বললো, "কোন শালা সংসারে সুখের কথা বলে এর থেকে তো সন্ন্যাসী হয়ে গেলেই ভালো হতো", সঙ্গে সঙ্গে বিছানা থেকে না উঠে আরও কিছুক্ষণ বিছানায় শুয়ে আবার ঘুমানোর চেষ্টা করলো কিন্তু ঘুম আর আসবে না বুঝতে পেরে উঠে পরলো, ফ্রেশ হয়ে বাইরে ব্রেকফাস্ট টেবিলে এসে দেখলো রান্নাঘরে দুজন মহিলা হাতে হাত মিলিয়ে সব তৈরি করছে আর ব্রেকফাস্ট টেবিলে একটা দশ বছরের মেয়ে এবং বছর আট নয়ের ছেলে বসে আছে মেয়েটি পরম স্নেহে ছেলেটির চোখের জল মুছিয়ে দিচ্ছে।

"তোরা একটু শান্তিতে ঘুমোতে দিবিনা আমাকে তাই না?" ছেলে আর মেয়েটিকে উদ্দেশ্য করে বলে আদিত্য, ছেলেটিও সমানভাবে উত্তর দেয়,

"আমার কি দোষ বাড়িতে এরকম একটা আতঙ্কবাদী রেখেছো তো কি হবে? আচ্ছা বাবা সত্যি করে বলোতো এই আতঙ্কবাদীটাকে কোত্থেকে জোটালে?"

"দুটোই নর্থবেঙ্গল থেকে এসেছে" আদিত্যর মুখ থেকে কথাটা বেরিয়ে গেল কিন্তু পরক্ষণেই নিজেকে সামলে বললো,
 "আতঙ্কবাদী সেটা আবার কে?"

"ওই যে তোমার দু নম্বর ব‌উ আমাকে সবসময় আতঙ্কে রাখে"

"ওটা তোর মা হয় রে হতভাগা"

"তাহলে আমাকে সবসময় ঠেঙায় কেন?"

"ঠেঙানোর কাজ করলে ঠেঙানি খেতেই হবে" রান্নাঘর থেকে সদ্য তৈরি হ‌ওয়া খাবারের পাত্রটা এনে টেবিলে রেখে মন্তব্য করে এক মহিলা তারপর আদিত্যর দিকে তাকিয়ে বলে, "আমরা দুইজন আতঙ্কবাদী? শুনেছো দিদি আমরা দুজন আতঙ্কবাদী"

অপর মহিলাটিও রান্নাঘর থেকে আরেকটা পাত্র নিয়ে এসে বলে, "শুনেছি, বাপ ব্যাটা দুজনেই সমান অবশ্য শুধু বাপ ব্যাটা কেন মেয়েটাও হয়েছে বাপের মতো" তারপর ছেলেটিকে বললো "অভীরেন্দ্র মাকে কেউ এসব বলে?"

"বড়োমা তুমি তো আমাকে অভী বলে ডাকো তাহলে আজ আবার অভীরেন্দ্র কেন" ছেলেটি জিজ্ঞেস করলো,

"কেন নামটা তোর পছন্দ নয়?" আদিত্য জিজ্ঞেস করে।

"অভী নামটা স্মার্ট লাগে শুনতে"

"তোর নামটা তোর ঠাকুর্দা আর ঠাকুর্দাসম দুজনের নাম মিলিয়ে রাখা হয়েছে তোর দিদির টাও দুই ঠাকুর্মার নাম মিলিয়ে রাখা

হয়েছে আর নামটা তোদের পছন্দ নয়?"
"সেটা কে বললো আমি বললাম নামটায় স্মার্টনেস আছে কিন্তু পুরো নামটায় একটা রাজা রাজা ভাব আছে, আই লাইক ইট আচ্ছা বাবা দাদু আর ঠাকুমা কবে ফিরবে?"।

"অভী আগে আমার কথার উত্তর দাও মায়ের সঙ্গে এভাবে কেন কথা বলছো? বারণ করেছি না?"

অভী চুপ করে থাকে মহিলাটি বলতে থাকে, "তুমি আমার কথা শুনবে না তো? ঠিক আছে আমি তোমার সঙ্গে কথাই বলবো না আর"

"সরি বড়োমা আর হবে না" বাচ্চা ছেলেটি মাথা নীচু করে বলে,

"সরিটা আমাকে না মাকে বলো"

"সরি মা, আমি তো মজা করছিলাম আর কখনো এরকম বলবো না"

"মনে থাকে যেন"

"থাকবে বড়োমা"

"ঠিক আছে, এখন দুজনে তাড়াতাড়ি খেয়ে নাও, কলেজ যেতে হবে" দ্বিতীয় মহিলাটি বললেন।

"বাবা আজ কলেজ যাবো না" ছেলেটি আবদারের সুরে বললো।

"হ্যাঁ বাবা আজ তো দিদিয়া আর ভাই আসবে" এবার মেয়েটিও ভাইকে সমর্থন করে বললো।

"ওরা আসবে বিকেলে ওদের কলেজ কলেজ সেরে, কাল রবিবার কাল ওদের সঙ্গে যত ইচ্ছা ঘুরবি, খেলবি আজ কলেজে যা" আদিত্য ছেলেমেয়ে দুটোকে বললো।

"চল দিদিয়া যাই, বাপটাও আমাদের কষ্ট বুঝবে না নিজে ছোটোবেলায় কষ্ট করেছে আর এখন আমাদের দিচ্ছে" ছেলেটি বললো।

"কিরকম পাকা পাকা কথা শিখেছে, এসব কির থেকে শিখেছিস অভী?" প্রথম মহিলা ছেলেটিকে জিজ্ঞেস করে কিন্তু সে উত্তর দেওয়ার আগে দ্বিতীয় মহিলা উত্তর দেয়, "কার থেকে আবার শিখবে,বাপ ছাড়া? পুরো বাপের কপি হয়েছে"

"আমি তোদের মতো কখনো কলেজ বাদ দিতাম না আর তোদের দুই মাকে দেখ একজন লয়্যার আর একজন ডাক্তার, বুঝলি? এখন খা"।

"আচ্ছা মা তুমি বলেছিলে বাবা নাকি একবার তোমাকে জঙ্গলে একা ছেড়ে এসেছিল? তারপর কি করলে বলো না?" ছেলেটি আবার জিজ্ঞেস করে।

"ওই কথা তুই অনেকবার শুনেছিস"

"আচ্ছা তাহলে এটাই বলো যে তোমাদের দেখা কিভাবে আর কোথায় হয়েছিল?"

"অভী কলেজ তোকে যেতেই হবে তাই এখন গল্প শোনার বাহানা করে লাভ নেই, ওসব লম্বা ঘটনা পরে শুনে নিস, এখন খেয়ে রেডি হয়ে নে একটু পরেই গাড়ি চলে আসবে" আদিত্য ছেলেকে বলে।


ছেলেমেয়েরা খেয়ে কলেজে চলে গেলে আদিত্য ব্রেকফাস্ট টেবিলেই বসে ল্যাপটপে কাজ করতে থাকে, হটাৎ তার ফোন বেজে ওঠে,
"হ্যালো"

"কেমন আছো অনি?" এক মহিলার কণ্ঠ ভেসে আসে আর সেটা শোনামাত্র আদিত্যর বুকটা ধড়াশ করে ওঠে এতবছর পরেও সে কণ্ঠস্বরটা চিনতে পেরেছে তার মুখ শুকনো হয়ে যায় তার মুখ থেকে কথা বের হয় না কিন্তু ওপাশ থেকে আওয়াজ আসতে থাকে, "বলেছিলাম না ফিরে আসবো এসেছি কিন্তু তোমার তো দেখছি ভাগ্য ফিরে গেছে দু-দুটো ব‌উ, ছেলে মেয়ে নিয়ে সুখের সংসার,  কিন্তু কতদিন সুখ থাকবে অনি?" এরপর একটা অট্টহাসি দিয়ে ফোন কেটে যায়।

ফোনটা কাটার পরে সে তক্ষুনি একটা নম্বরে ফোন করে কিন্তু নাম্বারটা বিজি বলায় ফোনটা রেখে চেয়ার ছেড়ে উঠে দেয়ালে টাঙানো একটা ছবির সামনে যায় ছবিতে আদিত্যর সাথে একটা বিকটদর্শন কালো কুকুর দাঁড়িয়ে আছে আদিত্য যেন সেই কুকুরটাকেই বলতে থাকে, 

"এবারের লড়াইটা তোকে ছাড়াই লড়তে হবে রে বাদশা, তোকে খুব মিস করছি আমি এইসময় তুই যদি পাশে থাকতি তাহলে কাউকে ভয় পেতাম না, তোকে খুব দরকার রে আমার"

"ভৌ" একটা ডাক শুনে আদিত্য পিছনে ফিরে দেখে একটা কালো কুকুর দাঁড়িয়ে আছে প্রায় পুরোটাই ছবির কুকুরটার অনুরূপ শুধু আকার কুকুরটার চেয়ে একটু ছোটো আর বয়সটাও কম, কুকুরটা এসে আদিত্যর পায়ে মুখ ঘষতে থাকে আদিত্য বসে ওর মাথায় আদরের হাত বোলাতে থাকে এবার আবার একটা ফোন আসে উঠে নামটা দেখে ফোনটা রিসিভ করে আদিত্য,
"বল অনি কি হয়েছে?"

"স্যার, শী ইজ ব্যাক"।




শেষে কিছু কথা: ধূসর পৃথিবীর এই খণ্ড এখানেই শেষ করলাম, যখন শুরু করেছিলাম তখন থেকে আজ পর্যন্ত যতজন পাশে ছিলেন তাদের সবাইকে ধন্যবাদ জানাই। এই লেখাটা কেমন লাগলো সেটা অবশ্যই জানাবেন।
ধন্যবাদ
I'm the King of Dark
                &
I rule over all Devils
               devil2 devil2
Like Reply




Users browsing this thread: 7 Guest(s)