Thread Rating:
  • 167 Vote(s) - 3.41 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Romance ছিন্নমূল ঃ কামদেব
পঞ্চনবতি অধ্যায়




দুটো খাট আলমারি সহ কিছু আসবাব পত্র লরিতে তোলা হল,এছাড়া বাসনপত্র বাক্সপেটরা।প্রথমে কথা হয়েছিল পানুবাবুও ট্রেনে একসঙ্গে যাবে।পানুবাবুই আপত্তি করলেন এতটাকার মালপত্র বিশ্বাস করে ছেড়ে দেওয়া ঠিক হবেনা পানুবাবু লরিতেই যাবেন। পানুবাবু লরিতে উঠে বসতে পাঞ্চালী বলল,কাকু মনে আছে তো উত্তরায়ন?
হ্যা-হ্যা ড্রাইভার চেনে।তুমি চিন্তা কোরো না।
লরি স্টার্ট করতে চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে।সুখর কথা মনে পড়ল একা একা কি করছে কে জানে।রোজ রোজ হোটেলে খাওয়া সময় মত খাচ্ছে কিনা ভেবে মন খারাপ হয়।সিড়ি বেয়ে উপরে উঠীল পাঞ্চালী।আজ আর চেম্বারে বসবে বলে দিয়েছে।ঘর ফাকা একটা টুল টেনে বসতে পিয়ালী মিত্র এক কাপ চা নিয়ে মেয়েকে দিয়ে দাঁড়িয়ে রইলেন।
চায়ে চুমুক দিয়ে পাঞ্চালী বলল,কিছু বলবে?
ভাবছি মনুটা একা একা কিযে করছে।পিয়ালী দেবী বললেন।
মামণির কথায় গা জ্বলে যায়।জামাইয়ের চিন্তায় ঘুম আসছে না।বলল,দেখো মামণি তোমার মনু একজন প্রফেসার কলেজে পড়ায়,বাচ্চা ছেলে নয়--।
কলেজে পড়ায় তো কি হয়েছে বাচ্চারও অধম।বিষয় বুদ্ধি বলতে কিছু নেই।দীপার কাছে শুনিস নি নাওয়া-খাওয়া সব বলে বলে করাতে হয়। কথা বললে বোঝা যায়--।
ওর সঙ্গে আমি পড়তাম দিনের পর দিন রোজ দেখা হতো আর তুমি একদিন কথা বলেই সব বুঝে গেছো?আচ্ছা তোমার এত চিন্তা কেন বলতো?
তুই বুঝবি না মা হলে বুঝতে পারতিস।পিয়ালী দেবী অন্য ঘরে চলে গেলেন।
এর মধ্যে মা হওয়ার কথা আসছে কেন পাঞ্চালি বুঝতে পারেনা। সেদিন দুপুরের কথা মনে পড়তে পাঞ্চালীর ঠোটে লাজুক হাসি।বাচ্চা--বাচ্চুসোনা সেদিন সকালে  যা করেছে মামণিকে তো এসব বলা যাবেনা।ঐখানে মুখ দিয়ে যা করছিল ঘেন্না-পিত্তি বলে কিছু নেই।সারা শরীরে শিহিরণ খেলে গেল।কখন দেখা হবে পাঞ্চালীর মন উচাটন।রোদ পড়লেই বেরিয়ে পড়তে হবে।ট্রেনের যা অবস্থা।একবার ফোন করার কথা কি ভেবে করল না।খেয়ে দেয়ে একটু বেলায় করলেই হবে।এখন হয়তো ব্যস্ত আছে বাচ্চু সোনা।
এন সি এস অর্থাৎ নরেশ সরকার সিনিয়ার ইংরেজী শিক্ষক।এস আর বি সম্পর্কে ছাত্রছাত্রীদের প্রশংসা তার কানে এসেছে।এটা তার পছন্দ নয়।নতুন এসেছে তেমন আলাপী নয় অল্প স্বল্প কথা হয়েছে মাঝে মাধ্যে।ঘণ্টা বাজতে ক্লাস থেকে বেরিয়ে করিডোর ধরে স্টাফ রুমের দিকে ধীর পায়ে হাটতে থাকেন এন সি এস।নজরে পড়ল ক্লাস থেকে বেরিয়েছে এসআরবি ছাত্রীরা ঘিরে ধরে কথা বলছে।বিরক্ত হয় এনসিএস মুখ বেকিয়ে ওদের অতিক্রম করে স্টাফ রুমে ঢুকে গেলেন। 
এসআরবি স্টাফ রুমে ঢুকে একপাশে বসতে নরেশ বাবু বললেন,মি বোস কিছু মনে নাকরলে একটা কথা জিজ্ঞেস করি?
সুখ হেসে বলল,অবশ্যই করবেন মনে করব কেন?
ক্লাস শেষ হতে ছেলে মেয়েরা বেরিয়ে এসে আপনাকে ঘিরে ধরে কি এমন কথা বলে?
পড়াশুনার কথাই বলে।ওদের মনে কিছু প্রশ্ন থাকে--।
কই আমাকে তো ওভাবে ঘিরে ধরে প্রশ্ন করেনা?
সুখ একটু ইতস্তত করে বলল,আপনাকে স্যার হয়তো মানে ভয় পায়।
রাইট।এই কথাই আমি বলছিলাম।শিক্ষককে যদি ভয় না পায় তাহলে আপনি ক্লাস ম্যানেজ করবেন কি করে?নরেশবাবু সুযোগ পেয়ে জোর দিয়ে কথাগুলো বলে বেশ তৃপ্তি বোধ করেন।
স্টাফ রুমে সবার নজর সেদিকে ঘুরে গেল।
সুখ সবার দিকে একবার চোখ বুলিয়ে নিয়ে দ্বিধা জড়িত গলায় বলল,স্যার আপনি সিনিয়ার মোস্ট শিক্ষক আপনার কাছে আমার অনেক শেখার আছে।আমি সবে অধ্যাপনায় ঢুকেছি তবু বলতে বাধ্য হচ্ছি আমি যতদূর জেনেছি বুঝেছি তাতে মনে হয় ছাত্র-শিক্ষকের মধ্যে যদি ভয়ের প্রাচীর থাকে তাহলে কম্যুনিকেট করতে সেই প্রাচীর বাধা হয়ে দাড়াবে।শিক্ষক-ছাত্রের সম্পর্ক হওয়া উচিত বন্ধুর মত।যাতে তারা ভয় সঙ্কোচের বাধা পেরিয়ে মনে খুলে নিজের কথা শেয়ার করতে পারে।ভয় তো মানুষ ভুতকেও পায়--।
হয়েছে হয়েছে।নরেশবাবু বাধা দিয়ে বললেন,এখানেও আপনি ক্লাস নেওয়া শুরু করলেন নাকি?
ছি ছি কিযে বলেন আমার এখন শেখার সময়--।
নরেশ বাবু উঠে দাড়িয়ে বললেন,আপনাকে বলাই আমার ভুল হয়েছে।আপনি বন্ধুর মতো না শ্ত্রুর মিশবেন আপনার ব্যাপার-- আমার এখন ক্লাস আছে।বলে গজগজ কোরতে কোরতে স্টাফ রুম ছেড়ে বেরিয়ে গেলেন। সুখ একটু অপ্রস্তুত বোধ করে।অমলবাবু বললেন,নরেশবাবুকে ভূত বলা আপনার ঠিক হয়নি।
আমি তো ওকে ভূত বলিনি।আমাকে তো কথাটা শেষ করতেই দিলেন না।আমি বলতে চেয়েছি ভূতের ভয়ে আতঙ্কিত হয়ে শেখার মত মানসিকতা থাকেনা। 
ঘণ্টা পড়তে একে একে সব বেরিয়ে যেতে সীমিন্তিনী কাছে এসে মুখ টিপে হেসে বললেন,আপনি সুন্দর কথা বলেন।
সুন্দর-অসুন্দরের কথা নয় আমার যা ধারণা সেকথাই বলেছি।
এখন ক্লাস নেই আপনার?
এর পরের পিরিয়ডে আছে।
এসবি পাশে বসে বললেন,আপনার সঙ্গে ভালো করে আলাপই হয়নি।আগে কি করতেন?
কিছুই না।এই আমার প্রথম চাকরি।
আমি আগে একটা কলেজে ছিলাম।তখনই মি.বেরার সঙ্গে আমার বিয়ে হয়।এবার আপনি একটা বিয়ে করে ফেলুন।আমার এক ননদ আছে ওর রান্নার হাত চমৎকার।বলুন তো কথা বলতে পারি।
সুখ হাসল।
হাসলেন যে,ভাবছেন বিয়ে করেন নি কি করে জানলাম?শুনুন প্রথম কথা আপনি হোস্টেলে থাকেন।দ্বিতীয়ত আপনার উদাসীন ভাব এলোমেলো জীবন যাপন।নারী সস্পর্শে আসলে ছেলেদের মধ্যে উড়ু উড়ু ভাব থাকেনা।খুটো ছাড়া গরু এলোমেলো ঘুরে বেড়ায় এরতার ক্ষেতে মুখ দেয় সেজন্য গরুকে খুটোতে বেধে রাখতে হয়--।
এসআরবিকে অন্যমনষ্ক দেখে এসবি জিজ্ঞেস করলেন,কি ভাবছেন বলুন তো?
স্যার অকারণ আমার উপর রেগে গেলেন--।
ছাড়ুন তো--জেলাস! ছাত্রদের মধ্যে আপনার জনপ্রিয়তা দেখে ওর গাত্রদাহ বুঝলেন না।শুনুন মি.বোস  বয়সে আপনি আমার অনেক ছোটো হলেও আমার কলিগ।আপনার সঙ্গে সব কথা শেয়ার করা যায়।
একটা কথা বলব?
একটা কেন যত ইচ্ছে বলুন।
আমি যদি আপনাকে সীমাদি বলি আপত্তি করবেন?
আপত্তি করব কেন।নাম তো ডাকার জন্য।সীমা বললেও আপত্তি করব কেন?
অমলবাবু আমার কথার ভুল ব্যাখ্যা করলেন।আমি কি স্যারকে ভূত বলেছি?
ওর নামই অমল মনে ভর্তি মল।জানেন এক ছাত্রী একটা সোনার চেন গলায় এসেছে নীচে পানের মত পেনড্যাণ্ট।বুকে হাত দিয়ে পেন্ড্যাণ্টটা নিয়ে জিজ্ঞেস করল,এটা কি সোনার?সোনা না পিতল তোমার কি দরকার।মেয়েদের বুকে হাত দিতে খুব ভাল লাগে?
সুখর এসব কথা ভাল লাগেনা বলল,বাদ দিন এসব--। 
বাদ দেবো মানে জানেন আমাকেও টারগেট করেছিল।আপনি আবার কাউকে বলবেন না।আমি নতুন জয়েন করেছি।একদিন কলেজে আসছি হঠাৎ একটা রিক্সা এসে আমার পাশে দাড়ালো।তাকিয়ে দেখলাম অমলবাবু,আমাকে রিক্সায় উঠতে বললেন।সরল মনে রিক্সায় উঠে বসলাম।কিছুক্ষন যাবার পর খেয়াল করি আমার পাছায় চাপ দিচ্ছে।ভীষণ রাগ হল বললাম,বুড়ো বয়সে একী ভীমরতি।অমনি আমতা আমতা করতে লাগল।পাছা টিপলে আমার জাত চলে যাবে বলছি না কিন্তু আমারও একটা পছন্দ-অপছন্দ থাকতে পারে।যেকেউ টিপবে আমি এ্যালাও করব কেন? 
সুখ ভাবে নিজের বিয়ের কথা কিভাবে বলবে।মেয়েরা একটু পরচর্চা ভালবাসে।এদিক দিয়ে পাঞ্চালী অন্য রকম তার মুখে অন্যের নিন্দে শোনেনি।
কি ব্যাপার বলুন তো আমি এক নাগাড়ে বকে যাচ্ছি আপনি তো কোনো কথাই বলছেন না।অবশ্য আমিও বেশি কথা বলা ছেলেদের পছন্দ করিনা।ছেলেরা হবে গম্ভীর ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন--।
সীমাদি আজ আমার বউয়ের আসার কথা মানে--।
আসার কথা মানে কোথায় আসবে?
উত্তরায়নে বাড়ী ভাড়া নিয়েছি--।
মিসেস নিশ্চয়ই গৃহ বধূ চাকরি করলে আসা সম্ভব হতো না।মি.বেরার সরকারী চাকরি অনেক ধরে করে উত্তর বঙ্গে বদলি হয়ে এসেছেন।
ও ডাক্তারী করে।স্পেশাল সাব্জেক্ট ছিল গাইনোকোলজি।
এসবি চোখ বড় বড় করে তাকালেন বললেন,আপনি তো সাংঘাতিক লোক মশায়!হাসতে হাসতে মানুষ খুন করতে পারবেন।
ঘণ্টা বেজে গেছে মল্লিকা আচার্য ঢুকে ওদের দেখে বললেন,কি ব্যাপার এসআরবি-এসবি বেশ ভালই জোট বেধেছে।
সীমন্তিনীর  কথাটা শুনতে ভালো লাগে বললেন,মিসেস আচার্য শুনেছেন এস আর বির ওয়াইফ একজন ডাক্তার?
তাই নাকি এতো সুখবর। এখানে কোথায় বসছেন?
উত্তরায়নে বসবেন।
সুখর ক্লাস আছে উঠে ক্লাসের দিকে রওনা হল।
খাওয়া দাওয়ার পর মেঝেতে মাদুর পেতে শুয়ে পড়ল পাঞ্চালী।কাকু এতক্ষনে অনেকদূর চলে গেছে।শুনেছে ট্রেনের চেয়ে বাই রোড গেলে সময় কম লাগে।মনে হয় সাতটা-আটটার মধ্যে পৌছে যাবে।নর্থ বেঙ্গলে আগে কখনো যাওয়া হয়নি।মনুটা কোথায় ভাড়া নিয়েছে কে জানে। মামণি বলছিল নাওয়া-খাওয়া সব বলে বলে করাতে হয়। সেদিন সকালে উদ্যোগী নাহলে হয়তো কিছুই হতোনা।পাশে যুবতী বউ নিয়ে একটা মানুষ কিভাবে ভুশ-ভুশ করে ঘুমোতে পারে ভেবে অবাক লাগে। ফোন করতে গিয়ে ঘড়ি দেখে বিরত হোক।ফোন করলেই বলে ক্লাসে যাচ্ছি।আর একটু বেলায় ফোন করবে।একবার যাই তোমার ক্লাস করা বের করছি। 
পারুলকে নিয়ে পিয়ালী মিত্র জিনিসপ্ত্র গোছগাছ করছেন।মেয়েটা যদি একটু সাহায্য করে।পারুল বলল,ঐ খানে খুব শীত না?
ওখানে শীত হবে কেন?শীত হচ্ছ পাহাড়ে।তোমার যা গুছিয়ে নেও।ওখানে গিয়ে এটা আনিনি ওটা আনিনি বোলো না।
পাঞ্চালী মোবাইলের বাটন টিপে কানে লাগালো।ওপাশ থেকে সাড়া পেয়ে বলল,আজ হোস্টেলে থাকতে হবেনা,উত্তরায়নে থাকবে....হ্যা জানি বিছানাপত্র নেই...যা বলছি শোনো একটা রাত...হ্যা জুলুম করছি তোমাকে যা বলেছি করবে...যখনই পৌছাই তুমি উত্তরায়ণে থাকবে ব্যাস।পাঞ্চালী ফোন রেখে নিশ্চিন্ত হল।ও জানে মনুর পক্ষে অবাধ্য হওয়া সম্ভব নয়।
 পিয়ালী দেবী ঢুকে বললেন,তুই এখনো শুয়ে আছিস তাহলে বেরোবি কখন? 
 
Like Reply
Do not mention / post any under age /rape content. If found Please use REPORT button.
সুখ পাঞ্চালির আবার মিলনের অপেক্ষায় আছি...........
Like Reply
সীমান্তিনী ম্যামের চরিত্রটা একটু এলোমেলো লাগলো। হ্যাঁ নতুন চরিত্র প্রথমবারের মতো দৃশ্যায়ন হল, দেখতে গেলে প্রথমবারেই সবকিছু বলা সম্ভব না।
একজন বিবাহিত মহিলা একজন অন্য একজন পর পুরুষের কাছে; বিশেষ করে একেবারেই অপরিচিত একজন যে কিছুদিন হলো কলেজে জয়েন করেছে। এ ধরনের একজনের কাছে অমল বাবু ও তার মধ্যে ঘটনাটা ব্যাখ্যা করার বিষয়টা একটু অন্যরকম লাগলো।
দ্বিতীয়ত সীমান্তিনী দেবী তার বোনের সাথে সুখের বিয়ের প্রস্তাব দিচ্ছে, অথচ তার কাছেই নিজেকে এমন ভাবে বর্ণনা দিচ্ছেন যেন অমলবাবুর জায়গায় সুখ তার পাছা টিপলে তার জাত যেত না। আই মিন তারও ইচ্ছা করে পর পুরুষের কাছে নিজেকে মেলে দেওয়ার...
আর যাই হোক একজন বাঙালি মহিলার মধ্যে সাধারণত এ ধরনের চরিত্র দেখা যায় না। সব দিক মিলিয়ে গল্পটা সুন্দর ছিল
একজন বড় মিথ্যাবাদী, একজন বড় জাদুকরও
Like Reply
Ushodharan Update....
Like Reply
মনুটা যখন চাটছিল
কিযে ভাল লাগছিল
[+] 2 users Like poka64's post
Like Reply
দাদা আশা করি ভাল আছেন। প্লিজ দাদা নতুন কিছু সুরু করুন।আপ্নার লিখা না পেলে সাইট এ ঢুকতে ইছে করে না।ভাল থাকবেন।
Like Reply
আজও আপডেট নেই !
Like Reply
আজকেও আপডেট নেই !
[+] 1 user Likes আমিও_মানুষ's post
Like Reply
দাদা, বড় আপডেট চাই
Like Reply
অনেক দিন কোনো আপডেট নাই।
Like Reply
এই গল্পে আপডেটের চেয়ে মানুষের মন্তব্য বেশি। যেন কিছু লোক আপডেট আসার আপেক্ষা করে আর আসলেই প্রশংসা সুচক মন্তব্য লিখতে বসে পরে। আপডেট যতটুকুই আসুক না কেন। এত ছোট আপডেট লেখক দেন মাঝে মধ্যে যেন গল্পটা লেখার কোন আগ্রহই তার নাই। লেখকের কাছে অনুরোধ বড় আপডেট দিন যেন গল্পটা পড়তে আমরা (পাঠকরা) মজা পাই।
[+] 1 user Likes Damphu-77's post
Like Reply
ষণ্ণবতি অধ্যায়




সুখর শেষ পিরিয়ডে ক্লাস নেই।ক্লাসের পর  চোখে মুখে জল দিয়ে অধ্যক্ষের ঘরের দিকে এগিয়ে গেল।স্যারকে জানানো দরকার মনে হল।দরজা দিয়ে মুখ ঢুকিয়ে বলল,আসতে পারি স্যার?
হ্যা আসুন আসুন।বসুন মি বোস।কেমন লাগছে আমাদের কলেজ?
সামনের চেয়ারে বসে হেসে বলল,ভালোই লাগছে। স্যার যেকথা বলতে এসেছিলাম, আমার ফ্যামিলি কাল-পরশু এসে যাবে।আমি হোস্টেল ছেড়ে দেবো।
হ্যা খুব ভাল কথা।হোস্টেল ছাত্রদের জন্য প্রয়োজনে এক-আধজনকে বাধ্য হয়ে রাখতে হয়।আপনার  বাড়ী তো  রঙ হয়ে গেছে ইলেক্ট্রিকের কাজও শেষ।আপনি গেছিলেন ওদিকে? 
আজ একবার যাব ভাবছি।স্যার বাকী টাকাটা আমি কাল-পরশু দিয়ে দেবো।
ঠিক আছে।দেখুন মি বোস সুপ্তিরা টাকার জন্য বাড়ি ভাড়া দিচ্ছে না আপনাকে আগেও বলেছি। নিয়মিত ঝাড়পোছ হবে মূলত মেন্টেন্যান্সের জন্য ভাড়া দেওয়া--।
হ্যা স্যার আমরা যত্ন নিয়ে ব্যবহার করবো।
শুনুন মি বোস টাকা আমাকে দিতে হবে না।প্রিন্সিপাল মশায় একটা কাগজে কি লিখে এগিয়ে দিয়ে বললেন,এখানে জমা করে দেবেন।
সুখ কাগজটা নিয়ে দেখল লেখা সুপ্তি মজুমদার এসবিআই পার্ক এভেনিউ ইউএসএ,এ্যাকাউণ্ট নম্বর।কাগজটা ভাজ করে পকেটে রেখে দিল। কিভাবে টাকা জমা করতে সুখ জানে না প্রিন্সিপাল মশায়কে সেকথা বলে না।পাঞ্চালী নিশ্চয়ই এসব জানবে।
প্রিন্সিপাল সাহেব উদাস গলায় বলতে থাকেন,সুপ্তির বাবা দীনেশ আমার বিশেষ বন্ধু ছিল।যখন বেচে ছিল প্রায়ই আমি কলতানে গিয়ে আড্ডা দিতাম।
হঠাৎ না বলেকয়ে চলে যাবে ভাবতেও পারিনি।অনেক যত্ন নিয়ে বানিয়েছিল কলতান।পিছনে ছোট্ট বাগান পাখিদের কলতান শোনা যেতো ঘরে বসে।সুপ্তি অবশ্য পড়াশুনা করেছে দার্জিলিং কনভেণ্টে।একটা দীর্ঘশ্বাস শোনা গেল প্রিন্সিপালের গলায়। 
ছুটির ঘণ্টা বাজলো,ছেলে মেয়েদের শোরগোল শোনা গেল।প্রিন্সিপাল সাহেব বললেন,কোনো অসুবিধে হলে বলবেন।
সুখ উঠে দাঁড়িয়ে বলল,আমি তাহলে আসি স্যার?
যেতে গিয়ে ফিরে এসে বলল,স্যার একটা কথা।
প্রিন্সিপাল চোখ তুলে তাকালেন।
গ্যারেজ ঘরটা যদি চেম্বার হসেবে ব্যবহার করি আপত্তি নেইতো?
ভ্রু কুচকে প্রিন্সিপাল বললেন,সাবলেট করবেন?
না না মানে আমার স্ত্রী ডাক্তার ওই বসবে।
ডাক্তার এতো খুবই ভালো কথা অবশ্যই বসবে।পাড়ার লোকে উপকৃত হবে।
আসি স্যার?  
        কলেজ ছুটি হয়ে গেছে।অধ্যাপকরা বেরোবার জন্য তৈরী হচ্ছেন। সুখ বেরিয়ে গেট অবধি এসে ইতস্তত করে।পাঞ্চালীর এই একটা দোষ বলা ঠিক হবেনা বরং বলা যায় স্টাইল।সব কিছু আগে খুলে বলবে না।আসবাব পত্র  বিছানা কিছুই নেই ফাকা বাড়ি।অব্যবহৃত পড়ে ছিল অনেককাল।হঠাৎ সন্ধান পেয়ে গেল।অনেক শখ করে বানিয়েছিলেন বাড়ীটা স্বামী স্ত্রী থাকতেন একমাত্র মেয়ে এ্যামেরিকায় থাকে।ভদ্রমহিলা বিধবা হবার কিছুকাল পর মেয়ে মাকে নিজের কাছে নিয়ে যায় সেই থেকে ফাকা পড়ে আছে বাড়ীটা। খালি মেঝেতে শোওয়া যায়। আসবে তো কাল সকালে রাতে ওখানে থাকার কি দরকার।হোস্টেলে ছিল না কোথায় ছিল পাঞ্চালী জানবে কিভাবে একবার ভাবলো।পরক্ষণে মনে হল এটা প্রতারণা পাঞ্চালীর সঙ্গে এমন করতে মন সায় দিল না।যাক একটা তো মোটে রাত।পার্কে শুয়েও রাত কাটাতে হয়েছে তাকে।  
কি ব্যাপার এখানে দাঁড়িয়ে,কারো জন্য অপেক্ষা করছেন?
সুখ ফিরে দেখল এসবি বলল,না না কার জন্য অপেক্ষা করবো।
হোস্টেলে গিয়ে কি করবেন? 
কি আর পোশাক বদলে একটু হাটতে বেরবো।
হাটতে হাটতে আসুন না একদিন আমার ওখানে।
হ্যা একদিন দাদার সঙ্গে আলাপ হবে।
আর দাদা! দাদার ফিরতে ফিরতে রাত হয়ে যায়।আপনার ওয়াইফ কি এখানে প্রাকটিস করবেন?
ডাক্তার যখন চুপচাপ বসে থাকবেনা।ওর বাবাও নামকরা ডাক্তার দেবাঞ্জন মিত্র--।
হ্যা নাম শুনেছি কিছুদিন আগে মারা গেলেন কাগজ বেরিয়েছিল।ওয়াইফ ড মিত্রের মেয়ে?
ওর ভাইও ডাক্তার অবশ্য বিদেশে থাকে।
অমলবাবুকে আসতে দেখে সীমন্তিনী বললেন,ঐ আসছে,আমি যাই। আপনার সঙ্গে কথা বলছি দেখে আপনাকে-আমাকে জড়িয়ে গল্প তৈরী করবে।সীমন্তিনী চলে গেলেন।রাস্তায় নেমে রিক্সায় চেপে বসলেন সীমন্তিনী।ম্যারেড জানলে অমলবাবুর কথাটা বলতেন না।অবশ্য বললেই বা কি হয়েছে বানিয়ে তো বলে নি।লোকটার খুব ছোকছোকানি।এসবি কি মনে করেছে কে জানে।ছেলেটাকে বেশ অন্যরকম মনে হয়।এক্টু চাপা স্বভাবের নিজের কথা বলতে সঙ্কোচ।যদি বাসায় আসে সঙ্কোচ কাটিয়ে দেবেন।  
সুখ হোস্টেলে ফিরে পোশাক বদলায়।'কলতান' বাড়ীর নামটা অদ্ভুত।পাঞ্চালী শুনে জিজ্ঞেস করেছিল,ওখানে গোলমাল হয় নাকি?সুখ হোস্টেল ছেড়ে বেরিয়ে পড়ল।হোস্টেলে ছেলেদের জন্য রান্না হয়।বললে হয়তো এক থালা ভাত তাকেও দিত কিন্তু সুখ বাইরে খায়।স্যার বললেন রঙ হয়ে গেছে সুখ উত্তরায়নের দিকে হাটতে থাকে।গাড়ীর চেয়ে এই রাস্তায় রিক্সার চলাচল বেশী।ধীরে ধীরে আলো কমে আসে।সুখ মনে মনে স্থির করে আজ আর হোস্টেলে ফিরবে না তাড়াতাড়ি কোনো হোটেলে খেয়ে কলতানে ঢুকে পড়বে।নতুন রঙ হয়েছে মনে হয়না মশার খুব উপদ্রব হবে। 
সারাদিন না খেয়েছিল।মোমোর কথা মনে পড়ল।কলেজে বেরোবার আগে তাকে খাইয়ে বের হতো।একা একা কি করছে কে জানে।চোখ ঝাপসা হয়ে এল।তালুর পিছন দিয়ে চোখ মুছে এদিক ওদিক তাকালো।মোমোকে একা রেখে কলেজের চাকরিটা করবে না ভেবেছিল।মোমোর জোরাজুরিতে সিদ্ধান্ত বদল করতে হয়।মোমোর জন্যই তাকে বিয়ে করতে হল।নিজের চেয়েও তার চিন্তা মনুর জন্য।মনুর নাড়ি নক্ষত্র মোমো জানে।পাঞ্চালী কিছুই জানে না সেজন্য তার মনে সারাক্ষন এক অপরাধ বোধ তাকে তাড়িয়ে ফিরছে।পাঞ্চালী আসবে শোনার পোর থেকেই একটা অস্বস্তি বহন করছে।আবার পাঞ্চালীর মূখোমুখী হতে হবে।কলতানের কাছাকাছি এসে পড়েছে।নজরে পড়ে সামনের রাস্তায় দাঁড়িয়ে একটা ট্রাক।ট্রাকের উপর দুটী ছায়ামূর্তি বিড়ি টানছে।সুখর বিরক্তিতে কুচকে যায়।একেবারে কলতানের সামনে ঐটা কি পার্কিং করার জায়গা?সুখ দ্রুত হাটতে থাকে।
রাস্তায় আলো জ্বলে উঠেছে। গোপাল্পুর থেকে চলে আসার পর মোমোর আশ্রয়ে বেশ নিশ্চিন্তে কাটছিল।যেন ছিন্নমূল নরম মাটী খুজে পেয়েছে।মোমোর মমতা মাখানো চোখদুটো চোখের উপর ভেসে ওঠে। এখানে আসার পর একবারও ফোন করেনি।সেও চেষ্টা করে মোমোর সঙ্গে কথা বলতে পারেনি।বলছে নম্বর চেক করতে। নর্থ বেঙ্গল থেকে কলকাতায় ফোন করা যায়না নাকি?কলকাতায় গিয়ে কড়া করে ওকে বলতে হবে,আমাকে পাঠিয়ে দিয়ে দিব্যি আছো?
আচমকা একজন বয়স্ক লোক সামনে এসে তাকে গভীরভাবে লক্ষ্য করেন।ভদ্রলোককে কোথায় যেন দেখেছে মনে হল বলল,কিছু বলবেন?
তুমি মানে আপনি মাস্টারমশায়ের ছেলে না?
হ্যা মনে পড়েছে সুখ বলল,আপনি পানুবাবু গোপাল নগরে থাকতেন?
ডাক্তারদিদি মালপত্তর পাঠিয়েছেন।পান্নাবাবু লরি দেখিয়ে বললেন।
পাঞ্চালী কেন কলতানে থাকতে বলেছিল এবার পরিষ্কার হয়ে গেল।সুখ কলতানের দরজা খুলেদিতে ওরা একে একে মালপত্তর নামাতে থাকে।সুখর কথা মতো কোনটা কোথায় থাকবে সেইভাবে রাখতে থাকে।সুখর মাথায় এখন অন্য চিন্তা।
আচ্ছা আপনারা কখন বেরিয়েছেন?
এই ভোরবেলা বেরিয়েছি।ওরা আজ সন্ধ্যের ট্রেনে উঠবে--।
খাওয়া-দাওয়া?
পথে হোটেলে খেয়ে নিয়েছি।
রাতে তো খাওয়ার ব্যবস্থা কোরতে হয়।তার পকেটের যা অবস্থা কিভাবে কিকরবে বুঝতে পারেনা।ওর কাছে হয়তো টাকা আছে তবু ভদ্রতার খাতিরে তো তার বলা উচিত।মাল পত্তর সব সাজিয়ে রেখেছে।ঐ লোকগুলোর সঙ্গে পান্নাবাবু বেরিয়ে গেলেন।সুখ ঠিক করল যা টাকা আছে একজনের কোনো মতে হয়ে যাবে।আজ রাতটা সে উপোস করে কাটিয়ে দেবে।কিছুক্ষন পর পান্নাবাবু ফিরে এসে এক গোছা টাকা হাতে দিয়ে বললেন,এই টাকা বেচেছে।
সুখ স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে বলল, রাত হয়েছে চলুন আমরা খেয়ে আসি।
 
Like Reply
Just awesome, অসাধারন, অপূর্ব, পড়ে খুব ভালো লাগলো। এর পরের অংশ পড়ার জন্যে অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় রইলাম।
Like Reply
Sir do you know what problem your updates brings with it!!!! Waiting for the next update! Keep posting
Like Reply
Darun
Like Reply
Awesome
Like Reply
আদরের মোমোর স্মৃতি ভাসে সদা সুখের মনে, সে যে ভালোবেসেছিলো তাকে নিঃস্বার্থ ভাবে.............
Like Reply
সুখে বিভোর পান্চালী
আবার হবে কামকেলি
[+] 2 users Like poka64's post
Like Reply
(10-08-2023, 08:42 AM)poka64 Wrote: সুখে বিভোর পান্চালী
আবার হবে কামকেলি

কবে ?
[+] 1 user Likes buddy12's post
Like Reply
(11-08-2023, 12:30 PM)buddy12 Wrote: কবে ?

কামদা চাহিবে যবে
[+] 1 user Likes poka64's post
Like Reply




Users browsing this thread: 23 Guest(s)