Thread Rating:
  • 100 Vote(s) - 2.84 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
WRITER'S SPECIAL "ধূসর পৃথিবী"
(01-08-2023, 05:30 PM)Dodoroy Wrote: Darun update

thanks
I'm the King of Dark
                &
I rule over all Devils
               devil2 devil2
Like Reply
Do not mention / post any under age /rape content. If found Please use REPORT button.
একটা আক্ষেপ রয়ে যাবে যদি আদ্রির শেষ পর্যায় কি হবে এটা দেখতে না পাই । ও যে অপেক্ষা করে আছে, তার অপেক্ষার প্রহর শেষ হবে কি?


My pain is constant and sharp, and I do not hope for a better world for anyone. ArrowNamaskar


[+] 1 user Likes Patrick bateman_69's post
Like Reply
(02-08-2023, 03:56 PM)Patrick bateman_69 Wrote: একটা আক্ষেপ রয়ে যাবে যদি আদ্রির শেষ পর্যায় কি হবে এটা দেখতে না পাই । ও যে অপেক্ষা করে আছে, তার অপেক্ষার প্রহর শেষ হবে কি?

তুমি দেখছি অদ্রিজার কথা ভুলতেই পারছো না  Big Grin
যদিও ওর কথা আমার মাথাতেও আছে, দেখা যাক কি হয়
I'm the King of Dark
                &
I rule over all Devils
               devil2 devil2
[+] 1 user Likes Monen2000's post
Like Reply
(02-08-2023, 04:23 PM)Monen2000 Wrote: তুমি দেখছি অদ্রিজার কথা ভুলতেই পারছো না  Big Grin
যদিও ওর কথা আমার মাথাতেও আছে, দেখা যাক কি হয়

মেয়েটা বড্ড দুষ্ট মিষ্টি ছিল ।


My pain is constant and sharp, and I do not hope for a better world for anyone. ArrowNamaskar


[+] 1 user Likes Patrick bateman_69's post
Like Reply
(03-08-2023, 12:49 AM)Patrick bateman_69 Wrote: মেয়েটা বড্ড দুষ্ট মিষ্টি ছিল ।

চরিত্রটা পছন্দ হয়েছে জেনে ভালো লাগছে
I'm the King of Dark
                &
I rule over all Devils
               devil2 devil2
Like Reply
Update kobe pabo dada
[+] 1 user Likes Jaguar the king's post
Like Reply
(03-08-2023, 11:29 PM)Jaguar the king Wrote: Update kobe pabo dada

লেখা হলেই পাবেন  Namaskar
I'm the King of Dark
                &
I rule over all Devils
               devil2 devil2
Like Reply
Update kobe pabo dada
[+] 1 user Likes Jaguar the king's post
Like Reply
(05-08-2023, 09:33 PM)Jaguar the king Wrote: Update kobe pabo dada

লেখা চলছে হলেই দেবো  Namaskar
I'm the King of Dark
                &
I rule over all Devils
               devil2 devil2
Like Reply
Update please
[+] 1 user Likes pratim's post
Like Reply
(05-08-2023, 10:31 PM)pratim Wrote: Update please

লেখা হলেই দেবো।  Namaskar
I'm the King of Dark
                &
I rule over all Devils
               devil2 devil2
Like Reply
Kobe dada
Like Reply
Update kokhon pabo
Like Reply
Update ki pabo na aj
Like Reply
[Image: Picsart-22-12-06-20-20-08-119.jpg]



                     দ্বিতীয় খণ্ড
                     ২৯তম পর্ব




বিকেলের দিকে বাড়িতে ঢুকে একটু চমকেই যান মনোজিৎবাবু সাথে অবাকও কম হন না, ড্রয়িংরুমে সোফায় তার মেয়ে মৌমিতা বসে আছে। এমনিতে এই বাড়িতে মৌমিতার যাতয়াত অস্বাভাবিক নয় সে যখন খুশি আসে না বলেই আসে আজ‌ও বলে আসেনি কিন্তু চমকানোর কারনটা অন্য কারনটা মৌমিতার মুখের ভাব কোনো কারনে প্রচণ্ড ভয় পেয়েছে মেয়েটা।

"কি রে কি হয়েছে মৌ? ভয় পেয়েছিস মনে হচ্ছে?" জিজ্ঞেস করেন মনোজিত বাবু।

"তোমার সাথে একটু কথা আছেহ ফ্রেশ হয়ে এসো"

ফ্রেশ হতে বেশী সময় নিলেন না মনোজিত বাবু মেয়েকে তো ভালো করেই চেনেন বেশী দেরি করলে এক্ষেত্রে একটা হুলস্থুল কাণ্ড করে বসবে। তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে ড্রেস চেঞ্জ করে মেয়ের সামনে বসলেন তিনি,

"এবার বল কি হয়েছে? এত ভয় পেয়েছিস কেন?"

"যা আমি ভাবছি সেটা যদি সত্যি হয় তাহলে তোমারও ভয় পাওয়াই উচিত"

"কি ভাবছিস সেটা তো বলবি নাকি?"

"আমার মনে হচ্ছে অনিকেত বেঁচে আছে"

"কি?" বলেই হো হো করে হাসা শুরু করেও মেয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে থেমে যান মনোজিত বাবু বলেন "তুই ক্ষেপেছিস নাকি? ও কোত্থেকে আসবে এখন? ও তো কবেই মরে ভূত হয়ে গেছে ডেথ সার্টিফিকেট পর্যন্ত ইস্যু হয়েছে ওর নামে ভুলে যাচ্ছিস? তুই আর অরুণাভ‌ই তো ওকে."

"আমি জানি" বাবাকে থামিয়ে বলে ওঠে মৌমিতা "আমি জানি আমরা কি করেছিলাম কিন্তু তবুও মনে হচ্ছে ও বেঁচে আছে যে কোনো ভাবেই হোক সেদিন ও বেঁচে গিয়েছিল আর চেহারা পাল্টে প্রতিশোধ নিতে এসেছে"

"কি চেহারা পাল্টে? আচ্ছা যদি চেহারা পাল্টে গিয়েই থাকে তাহলে তুই চিনলি কিভাবে?"

"ওর চোখ দেখে"

"চোখ দেখে?" মনোজিত বাবু আরও অবাক।

"পুরো অনিকেতের চোখ, কথা বলার ধরন অনিকেতের তাছাড়া."

"তাছাড়া?"

"সেদিন বললো ও নাকি আমাদের মুখোশের আড়ালে আসল চেহারা জানে"

"কে ছেলেটা? কোথায় থাকে?" বাবার কথা শুনে মৌমিতা তাকায় শান দেওয়া ছুরির ন্যায় চকচক করছে মনোজিত বাবুর চোখ, মৌমিতার বুঝতে বাকী র‌ইলো না তার বাবা এই মুহূর্তে কি ভাবছে, সেই দৃষ্টি দেখেই বোধহয় কিছুটা সাহস ফিরে পেল সে বললো,

"তুমি কি ওকে খুন করার কথা ভাবছো?"

"যদি সত্যিই আমাদের ব্যাপারে জেনে থাকে তাহলে তো ওকে সরাতেই হবে"

"আগে ওর সম্বন্ধে ভালো করে খোঁজ নিয়ে নিলে হতো না? কারণ ছেলেটা অভিরূপ ব্যানার্জীর খুব ঘনিষ্ঠ হয়ে গেছে ওর কিছু হলে উনি চুপ থাকবেন না তাই যা করার খুবই সাবধানে করতে হবে"

"খোঁজ নেওয়ার কিছু নেই ও অনিকেত হোক বা না হোক আমাদের ব্যাপারে যদি বিন্দুমাত্রও কিছু জেনে থাকে তাহলে ওকে মরতেই হবে। ছেলেটা কে আর কোথায় থাকে?"

"যে ছেলেটা সুশান্তর বিয়ের অনুষ্ঠানের দিন আমাদের বাড়িতে এসে সুশান্ত আর মনোজকে মেরেছিল মনে আছে?"

মনোজিত বাবুর মুখ রাগে লাল হয়ে গেল মৌমিতা বুঝতে পারলো তার বাবার মনে পরেছে সে বলতে থাকে "সেই ছেলেটাই তবে ও এখন থাকে মালঞ্চের ওই দিকে যেখানে অভিরূপ ব্যানার্জী জমি কিনে বাড়ি বানিয়েছেন"

"ছেলেটা অভিরূপ ব্যানার্জিকে কিছু জানিয়ে দেয়নি তো?"

"এটা আমি শিওর জানিনা"

"তবে তো দুজনকেই শেষ করতে হবে"

"দুজন নয় তিনজন"

"তিনজন?"

"ওই ছেলেটার সাথে একটা মেয়ে ছিল মনে আছে? যার জন্য আমার ভাইকে মার খেতে হয়েছিল ওকেও শেষ করতে হবে"

"ঠিক আছে তাই হবে, ওই মেয়েটার জন্য আমার ছেলেকে মার খেতে হয়েছিল সবার সামনে অভিরূপ ব্যানার্জী আমাকে অপমান করেছিল ওকেও মারবো"

"কিন্তু সাবধানে, ওই গ্ৰামের লোক ওকে খুব ভালোবাসে তাই সহজ হবে না কাজটা"

"চিন্তা করিস না, দুজন শিকারীকে ডেকেছি একটা বিশেষশিকার করার জন্য নাহয় আরও নতুন দুটো শিকার অ্যাড হলো লিস্টে"

"বিশেষ শিকারটা কে?"

"প্রীতম"

"প্রীতম আঙ্কেল?"

"হ্যা, ওর বাড়বাড়ন্ত কমানো দরকার আর তাছাড়া ওকে আমি যতটা চিনি যেকোনো মুহূর্তে ও আমাকে আর মনোজকে রাস্তা থেকে সরিয়ে দেবে ও কিছু করার আগে আমি অ্যাটাক করবো"

"বেশ, অরুণাভকে হাতে রাখা কঠিন না আমার পক্ষে প্রীতম আঙ্কেল, সুশান্ত, অভিরূপ ব্যানার্জী এদের সরিয়ে দিতে পারলেই ব্যানার্জী ক্রিয়েশনস্ আমাদের হাতের মুঠোয়"

"একদম ঠিক"

"কিন্তু শিকারী দুটো কাজের তো?"

"ওদের মতো খুনে খুব কম‌ই আছে, শার্প শ্যুটার তো বটেই সাথে বক্সিং এ চ্যাম্পিয়ন একসময়ের"

"গ্রামে কিন্তু সাবধানে করতে হবে বললাম না পুরো গ্ৰাম ওই ছেলেটার পাশে, একবার ওরা টের পেলে ছাড়বে না"

"কিচ্ছু হবে না"

"তবুও সাবধানের মার নেই, ওরা বিশ্বস্ত তো?"

"হ্যাঁ, আমার হয়ে অনেকবছর কাজ করছে খুব বিশ্বস্ত"

"বাই চান্স ধরা পরলে মুখ খুলবে না তো?"

"না, খুলবে না, কিন্তু ছেলেটার ছবি চাই তো"

"সে ব্যাপারটা আমি দেখছি আগামীকাল অরুণাভকে নিয়ে ওর বাবার ওই গ্ৰামের বাড়িতে যাওয়ার কথা হয়েছে সেখানে ওকে খুঁজে ওর বাড়ি আর ওর ছবি তুলে আনবো আমি"

"নিয়ে আয় তারপর ওদের কিভাবে সরাতে হয় সেটা আমি দেখছি"।


নারায়ণতলা গ্ৰামে একটু সকাল সকাল‌ই পৌঁছে যায় অরুণাভ সঙ্গে তার দুই ছেলেমেয়ে এবং মৌমিতা। এখানে আসাটা অবশ্য শুধু দুই স্বামী স্ত্রীর না ছেলেমেয়ের‌ও অপছন্দ কিন্তু এখন একপ্রকার বাধ্য হয়েই আসতে হয়েছে, অরুণাভ অবশ্য রাজী হচ্ছিল না কিন্তু মৌমিতার কথা ফেলতে পারেনি তাই শেষপর্যন্ত রাজী হয়েছে যদিও মৌমিতা অরুণাভকে পুরো সত্যি বলেনি শুধু বলেছে যে ও ছেলেটার বিষয়ে একটু খোঁজখবর করতে চায় আর সেটা ওখানে না গেলে হবে না।

সকাল সকাল বাড়িতে ছেলে বৌমার আগমন দেখে যারপরনাই বিস্মিত হয়েছেন অভিরূপবাবু এবং শ্রীতমাদেবী কারণ একে তো ছেলে বৌমার এখানে আসার কথা ছিল না তার উপরে এই জায়গাটা যে ওদের অপছন্দ এটা বুঝতে ওদের বাকী নেই।

"কি ব্যাপার তোমরা এখানে? সব ঠিক আছে তো?" অভিরূপ বাবু ছেলেকে প্রশ্ন করেন কিন্তু উত্তরটা দেয় মৌমিতা "কেন বাবা আমরা কি এখানে আসতে পারি না?"

"সেটা নয় কিন্তু এই জায়গাটা তো তোমাদের পছন্দ নয় তাই বলছি, তা আসতে কোনো অসুবিধা হয়নি তো?"

"না,বাবা কোনো অসুবিধা হয়নি" এবারে উত্তর দেয় অরুণাভ।

"বেশ তাহলে হাতমুখ ধুয়ে নাও, তোমার মা ব্রেকফাস্ট রেডি করছেন আজ আবার তোমার মামা মামীর আসার কথা তারাও চলে এলেন বলে" বলতে বলতে স্বর্ণেন্দু বাবু ও সুদেষ্ণা দেবীও চলে এলেন এবং বলাইবাহুল্য একসাথেই সবাই ব্রেকফাস্ট করলেন।

"আচ্ছা বাবা আপনাদের এই জায়গাটা ভালো লাগে?" ব্রেকফাস্ট করতে করতে প্রশ্ন করে মৌমিতা।

"কেন লাগবে না? একদম প্রাকৃতিক পরিবেশ, প্রকৃতির ঠাণ্ডা হাওয়া বাতাস, চারিদিকে গাছপালা, বাগান ভালো না লাগাটাই আশ্চর্যের অবশ্য তোমরা ছোটো থেকে শহরে বড়ো হয়েছো তোমাদের ভালো নাই লাগতে পারে" অভিরূপবাবু উত্তর দেন।

"জামাইবাবু মনে আছে তো আজ কি?"
স্বর্ণেন্দু বাবু কথার মাঝে প্রশ্ন করেন।

"আছে আছে সব হবে, মোড়লমশাইকে বলে রেখেছি"

"কিসের ব্যাপারে কথা বলছো মামা?" অরুণাভ জিজ্ঞেস করে।

"মাছ ধরার ব্যাপারে, তোর বাবার সাথে আমার কম্পিটিশন হবে আজ"

"মাছ ধরবে তোমরা?" অরুণাভ অবাক।

"তোর কোনো ধারণা নেই মাছ ধরায় কি আনন্দ, তুই তো আর শিখিসনি তবে অনিকে শিখিয়েছিলাম। সে আজ থেকে প্রায় সতেরো কি আঠারো বছর আগেকার কথা তখন চিংড়িঘাটার ওখানে আমার একজন মক্কেল থাকতেন তার বাড়ি গেলেই অনি যেত আমার সাথে ওখানে তিন চারটে বড়ো বড়ো ভেরী আছে যেখানে মাছ চাষ হয় তো ওই মক্কেল‌ই ব্যবস্থা করে দিতেন মাছ ধরার, একেবারে হাতে ধরে চার বানানো থেকে শুরু করে ছিপ গোটানো শিখিয়েছিলাম ওকে বেশীদিন নেয়নি শিখতে খুব তাড়াতাড়ি মাছ ধরায় এক্সপার্ট হয়ে গিয়েছিল"।

অনিকেতের কথায় অভিরূপবাবু ঈষৎ গম্ভীর হয়ে গেলেন সেটা স্বর্ণেন্দু বাবুর দৃষ্টি এড়ালো না তিনি বললেন "জামাইবাবু আয়্যাম সরি অনির কথাটা তোলা উচিত হয়নি তোমার কষ্ট হবে আমার খেয়াল রাখা উচিত ছিল"

"না না স্বর্ণেন্দু সেরকম কিছু নয় আসলে ভাবছি ছেলেটার গুণ কম ছিল না কিন্তু আমি বাবা হয়ে কিছুই দেখতে পেলাম না বা বলা ভালো কোনোদিন দেখার চেষ্টাই করলাম না তাই হয়তো আমার থেকে দূরে চলে গেছে ও"

অভিরূপবাবু কোনোমতে নিজেকে সামলে নিলেও অরুণাভ কিন্তু রেগে গেল আজ এত বছর পরেও ছোটো ভাইয়ের প্রশংসা তার সহ্য হয় না। মৌমিতা অরুণাভর এই অবস্থাটা খেয়াল করলো সে আস্তে করে ওর হাতে চাপ দিয়ে রাগটা কন্ট্রোল করতে বললো।

ব্রেকফাস্ট করে আরও কিছুক্ষণ নিজেদের মধ্যে গল্প করে অভিরূপবাবু এবং স্বর্ণেন্দু বাবু মাছ ধরতে গেলেন সঙ্গে বাকীরাও গেলেন দেখতে, ওখানে গিয়ে আরেকবার মোড়লমশাই এর সঙ্গে কথা বললেন যে একটা মাছ তারা কিনবেন ন্যায্য দাম দিয়েই কিনবেন মোড়লমশাই এর অবশ্য আপত্তি করার কিছু নেই, কিছুক্ষণের মধ্যেই দুই শালা জামাইবাবু উপযুক্ত আয়োজন করে নিজেদের জন্য জায়গা বেছে নিয়ে ছিপ নিয়ে বসে গেলেন মাছ ধরতে।

"তুমি আবার কোথায় যাচ্ছো বৌমা?"

মৌমিতাকে মাছ ধরার জায়গা ছেড়ে অন্য দিকে যেতে দেখে প্রশ্ন করেন শ্রীতমাদেবী, এতক্ষণ মৌমিতা সবার সাথে অভিরূপবাবু ও স্বর্ণেন্দু বাবুর মাছ ধরার প্রতিযোগিতা দেখছিল কিন্তু এখন ছেলেমেয়েকে শাশুড়ির জিম্মায় রেখে 'একটু ঘুরে আসছি' বলে এগোতেই শ্রীতমাদেবী প্রশ্ন করেন।

"এই একটু গ্ৰামটা ঘুরে আসছি মা"

"গ্ৰাম ঘুরতে যাবে?"

"হ্যাঁ, বাবা তখন বললেন এখানকার প্রাকৃতিক পরিবেশ সুন্দর তাই ভাবলাম একটু ঘুরে দেখে আসি, আমি তো এমনিতে কখনও গ্ৰাম দেখিনি তাই"

"কিন্তু.."

মৌমিতা বুঝতে পারলো তার শাশুড়ির চিন্তার কারণটা, গৃহ প্রবেশের পূজোর দিন যখন এসেছিল তখন গ্ৰামের লোকেদের সাথে একটু ঝামেলা হয়েছিল সেটা মনে করেই তিনি চিন্তিত কিন্তু মৌমিতার যাওয়াটা দরকার সে আজ এই গ্ৰামে এক বিশেষ কাজে এসেছে সে একটু হেসে শ্রীতমাদেবীকে আশ্বস্ত করার উদ্দেশ্যে বললো "চিন্তা করবেন না মা আমি কারো সঙ্গে কোনো ঝামেলা করবো না" বলে শ্রীতমাদেবীকে আর কিছু বলার অবকাশ না দিয়ে দ্রুত পায়ে হেঁটে চলে গেল।


গ্ৰামের পথে ঘুরতে ঘুরতে কয়েকজনকে জিজ্ঞাসা করে আদিত্যর বাড়ির ঠিকানা জেনে নিতে কোনো অসুবিধা হলো না মৌমিতার। যাদের জিজ্ঞাসা করলো তাদের দৃষ্টি দেখেই সে বুঝতে পারলো যে সেদিনের কথা এরা ভোলেনি মুহুর্তের জন্য মৌমিতার বুকটা একটু কেঁপে উঠলেও বাইরে প্রকাশ করলো না কিন্তু যে কোনো কারনেই হোক গ্ৰামবাসীরা মৌমিতার সাথে কোনো খারাপ ব্যবহার করলো না।

মৌমিতা প্ল্যান করেই এসেছে যে সে ভালো করে আদিত্যর বাড়ি ওর আশেপাশের অবস্থা দেখে যাবে এবং আদিত্যর একটা ছবি তুলে নিয়ে যাবে যাতে তার বাবার প্রেরিত লোক ঠিক লোককে খুঁজে পায়।

নিজের পরিকল্পনা অনুযায়ী সে আদিত্যর বাড়ির কাছে পৌঁছায়, সেখানে পৌঁছে সে চারিপাশে দেখতে থাকে হঠাৎ এক জায়গায় তার চোখ আটকে যায়।
কিছুটা দূরে কয়েকজন লোক মাটি কোপাচ্ছে বোধহয় গাছ লাগাবে কারণ কাছে কয়েকটা গাছের চারা রাখা আছে, মৌমিতা লোকগুলোর দিকেই দেখতে থাকে হটাৎ তার  দৃষ্টি একটি বিশেষ লোকের উপরে স্থির হয়ে যায় লোকটি মৌমিতার দিকে পিছন ফিরে খালি গায়ে মাটি কোপাচ্ছে কোমর থেকে একটা ট্রাউজার্স পরা যেটা পায়ের নীচ থেকে কিছুটা উপরে ওঠানো আছে কিন্তু কোমরের উপরে খালি গা ঘামে ভিজে চমৎকার দেহসৌষ্ঠব। লোকটা একবার পাশে ঘাড় ঘুরিয়ে পাশে দাঁড়িয়ে থাকা একজনের সঙ্গে কথা বলে আর তখনই মৌমিতা চিনতে পারে তাকে যার খোঁজে সে এখানে এসেছে যার চোখের দৃষ্টি তার মনে ভয়ের সঞ্চার করেছে যার দৃষ্টির সাথে আরো একজনের দৃষ্টির আশ্চর্য মিল রয়েছে, অনিকেত.. অজ্ঞাতেই মৌমিতার মুখ থেকে উচ্চারিত হয় নামটা।

মৌমিতা আর কোনো দিকে দৃষ্টি ফেরাতে পারে না, নিজের এখানে আসার উদ্দেশ্য ভুলে একদৃষ্টিতে আদিত্য ওরফে অনিকেতের দিকে তাকিয়ে রয়েছে। ভয় প্রতিশোধের বদলে বর্তমানে তার মনে যে ভাবটা জেগেছে সেটা কাম ছাড়া আর কিছু নয়, নিজের স্বামী, ছেলেমেয়ে সব ভুলে এক বিকৃত কামসাগরে ডুবে যাচ্ছে মৌমিতা কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় এতে তার কোনো হেলদোল নেই সে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তো আছে।

তাকিয়ে থাকতে থাকতে হাতের মোবাইলের লক খুলে ক্যামেরাটা চালু করে সে পরপর কয়েকটা ছবি তুলে নেয় এর মাঝে অনিকেত আরো কয়েকবার পাশের লোকের সাথে কথা বলেছে ফলে মুখের‌ও কয়েকটা স্ন্যাপ তুলে নেয় আচমকা গেট থেকে একটা মেয়েকে বেরিয়ে এসে দাঁড়াতে দেখে মৌমিতা মেয়েটিকে সে চেনে এর আগে দেখেছে একে সঙ্গে নিয়েই অনিকেত এসেছিল তার ভাইকে মারতে আর এখানে পূজোর দিন এই মেয়েটাই অনিকেতের সঙ্গে ছিল অনিকেতের ব‌উ।


ষড়রিপু অর্থাৎ মানব জীবনের প্রধান ছটা শত্রুর প্রথম নামটাই হলো কাম, এই কামের তাড়নায় অনেক সাধু ব্যাক্তিও অসাধু পথে অগ্ৰসর হন পুরুষ কিংবা নারী কামের নিবৃত্তিতে অনেকেই অসৎ পন্থা অবলম্বন করেন, আর এই কাম যখন বিকৃত রূপ ধারণ করে তখন সেই বিকৃত কামের প্রভাবে প্রভাবিত পুরুষ কিংবা নারীর হিতাহিত জ্ঞান থাকে না তার লোকলজ্জা সমাজের ভয় থাকে না বা সেই জ্ঞান টুকুও লুপ্ত হয়ে যায় তার মনের মধ্যে তখন একটাই চাহিদা সেটা হলো এই বিকৃত কামের নিবৃত্তি আর এর জন্য সে যা খুশি তাই করতে পারে এবং কেউ যদি তাদের সেই চাহিদা পূরণের পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায় তাহলে তার ক্ষতি করতেও এরা দুবার ভাবে না।

আদিত্য ওরফে অনিকেতের বর্তমান জীবন সম্বন্ধে খোঁজ করতে এসে তার সুপুরুষের ন্যায় নগ্ন দেহসৌষ্ঠব দেখে মৌমিতার মনেও মুহূর্তে এই কাম বিকৃত রূপ ধারণ করে সে এখানে আসার উদ্দেশ্য বিস্মৃত হয় এমনকি সে যে বিবাহিত অন্য একজনের স্ত্রী বা দুই সন্তানের জননী একথা আর তার মনে থাকে না তার এখন একটাই লক্ষ্য নিজের এই বিকৃত কামনা পূরণ করা।

একটু দূরে একটা বড়ো গাছের আড়ালে দাঁড়িয়ে একদৃষ্টিতে সে সামনের সুপুরুষ যুবকটির দিকে তাকিয়ে থাকে। এই সময় গেট থেকে পরিচিত যুবতীকে বেরিয়ে আসতে দেখেই প্রচণ্ড রাগে ফোঁস করে ওঠে মৌমিতা, কিন্তু নিজের রাগটা অনেক কষ্টে নিয়ন্ত্রণ করে মোবাইলের ক্যামেরার ফোকাশ এবার মেয়েটির দিকে পরপর কয়েকটা ছবি সেভ হয়ে যায় মোবাইলের মেমোরিতে তারপর আবার যেদিক থেকে এসেছিল সেদিকেই হাঁটা লাগায় মৌমিতা।


ঝুটঝামেলা হীন ভাবে বেশ ভালোই দিন কাটছে আদিত্য ও পিয়ালীর দুজনে দিনের বেশিরভাগ সময়টাই পরস্পরের সঙ্গে হাসি ঠাট্টা এবং নিজেদের আগত সন্তানের বিষয়ে কথা বলতে বলতে কাটায়, পিয়ালীর বেবি বাম্প এখন যথেষ্ট বড়ো হয়েছে নিয়মিত চেকআপ‌ও চলছে দুজনেই খুব খুশি ওরা ভাবতেও পারেনি তে এইভাবে ওদের খুশির জীবনে অকস্মাৎ মেঘহীন আকাশ থেকে বজ্রপাতের মতো বিপদের বজ্রপাত হবে।
গ্ৰামের সবার প্রিয় ডাক্তারবাবুর যে বাড়িতে আদিত্য এবং পিয়ালী থাকে সেখানে ওদের নিজস্ব বাগান তো আছেই এবার আদিত্য ঠিক করলো মূল ফটকের বাইরে দুপাশে কিছুটা জায়গায় ফুলের গাছ লাগাবে।

সেইমতো একদিন গ্ৰামের আরও কয়েকজনকে সঙ্গে নিয়ে কাজে লেগে যায় মাটি খুঁড়ে গাছ লাগানোর উপযুক্ত জমি তৈরী করে অনেকগুলো গাছ লাগায় ওরা সত্যি কথা এগুলোর খুব একটা দরকার নেই তবুও গ্ৰামের প্রায় সবাই বৃক্ষরোপণ করে থাকে গাছ যে সবার জীবনে কতটা দরকারি এটা আদিত্য‌ই তাদের বোঝায় তারপর থেকেই মূলত এটা চলে তবে শুধু গাছ লাগানো নয় রীতিমতো গাছের যত্ন‌ও করে সবাই মিলে।

কাজ শেষ হতে হতে দুপুর হয়ে যায় আদিত্য তার সঙ্গের ছেলেগুলোকে বিদায় করে বাড়ির ভিতরে ঢোকে, তার সারা হাত পায়ে মাটি লেগে রয়েছে তাই ওই অবস্থায় আর ঘরের ভিতরে ঢোকে না বাড়ির ভিতরের বাগানে এক জায়গায় কলঘর করা আছে যেখান থেকে পাইপের সাহায্যে পুরো বাগানের গাছে জল দেওয়া হয় আদিত্য সেখানে গিয়ে কল খুলে ভালো করে স্নান করে তারপর পিয়ালীর আনা পোশাক পরে ভিতরে ঢোকে, খেয়েদেয়ে স্বামী স্ত্রী যথারীতি একটু ভাতঘুম দেবার জন্য বেডরুমে যায়।

বিকেলে আবার দুজনে বাগানে এসে বসে আদিত্য লক্ষ্য করে পিয়ালীর মুখটা একটু শুকনো হয়ে আছে একটু অবাক হয় সে সকালেই বেশ হাসিখুশি ছিল এর মধ্যে আবার কি হলো? কথাটা জিজ্ঞেস করলো আদিত্য,

"কি হয়েছে তোমার? এই সুন্দর মুখটা এরকম বাংলার পাঁচের মতো করে রেখেছো কেন?"

পিয়ালী আদিত্যর মুখের দিকে তাকায় একটু পরে বলে "তোমাকে একটা কথা জিজ্ঞেস করবো?"

"করো"

"তোমার পিঠে একটা দাগ আছে ওটা কিসের দাগ? আমি অনেকদিন দেখেছি কিন্তু জিজ্ঞেস করিনি"

"আমার পিঠে? বার্থমার্ক হবে হয়তো। আমার শুধু মুখের প্লাস্টিক সার্জারী হয়েছে পুরো বডির না" আদিত্য একটু হেসে উত্তর দেয় কিন্তু পিয়ালীর মুখে হাসি নেই সে বলে "ওটা বার্থমার্ক নয়"

"তাহলে জানিনা"

"ওটা কোনো আঘাতের দাগ" পিয়ালী লক্ষ্য করে কথাটা শুনে আদিত্যর মুখ থেকে হাসিটা কয়েক মুহুর্তের জন্য মিলিয়ে গেল যদিও অচিরেই আবার ফিরে এলো। আদিত্য হেসে বলে "আঘাতের দাগ? কি জানি মনে পরছে না"

"আমি জানি তোমার মনে আছে কিন্তু আমাকে বলতে চাইছো না, ওটা কিভাবে হয়েছে আদিত্য?"

"পিয়ালী এসব জেনে কি হবে? ছাড়ো না সবকথা জানতে নেই"

"আমি আন্দাজ করতে পারছি তুমি কেন বলতে চাইছো না ওটা আমার বাবার আঘাতের চিহ্ন, তাই না?"

"পিয়ালী বললাম তো সবকথা জানতে নেই"

"তার মানে আমার আন্দাজ‌ই ঠিক তাইতো? প্লিজ বলো আমাকে"

"তোমার জেনে কোনো লাভ নেই বিশ্বাস করো"

"তবুও আমি জানতে চাই"

আদিত্য একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে তারপর বলে "পিয়ালী তোমার বাবার পাঠানো লোকেদের সাথে লড়ার সময় ওটা লাগে"

"কবে?"

"তোমার সাথে আমার প্রথম দেখা কোথায় হয়েছিল মনে আছে?"

"ওই দিনটা আমি কোনোদিন ভুলবো না আমাদের বাড়িতে তুমি এসেছিলে"

"হুমম, আমি কি বলেছিলাম মনে আছে?"

পিয়ালী ভ্রু কুঁচকে মনে করার চেষ্টা করলো একটু পরে ভ্রু দুটো আবার স্বাভাবিক হ‌ওয়ায় আদিত্য বুঝলো পিয়ালীর মনে পরেছে পিয়ালী বলে "মনে পরেছে তোমাদের বাড়িতে আগের রাতে কয়েকজন হামলা করেছিল তাই তুমি."

"সেদিনই আইমিন সেই রাতে লাগে"

পিয়ালীর মাথা নীচু হয়ে যায় আদিত্য এবার সত্যিই অবাক হয় জিজ্ঞেস করে "আবার কি বলো বললাম তো যা জানতে চাইছিলে?"

পিয়ালী এবার মাথা তোলে ওর চোখে জল, বলে "আমার আজ‌‌ও ভাবতে কিরকম লাগে যে আমি একজন ক্রিমিনালের মেয়ে"

"অ্যাই সত্যি করে বলোতো তোমার কি হয়েছে? তোমার মাথায় এইসব উদ্ভট চিন্তা কে ঢুকিয়েছে? এইজন্যই আমি তোমাকে বলতে চাইনি"

"উদ্ভট নয় সত্যি, আমার বাবা তো একজন ক্রিমিনাল ছিলেন"

আদিত্য পিয়ালীর চোখের জল মুছিয়ে বলে, "পিয়ালী উনি যেরকম‌ই ছিলেন না কেন সেটা এখন কোনো ম্যাটার করে না কারণ উনি আর বেঁচে নেই আর মৃত্যুর পর কেউ ক্রিমিনাল থাকে না। আর একটা কথা তোমাকে আগেও বলেছি আজ আবার বলছি অতীত নিয়ে বসে থেকে কাজ নেই, তোমার বর্তমান পরিচয় তুমি আমার স্ত্রী অবশ্য যদি আমাকে ছেড়ে যেতে না চাও"

পিয়ালী আদিত্যকে জড়িয়ে ধরে ওর বুকে মুখ লোকায় বলে "আমি কক্ষণো তোমাকে ছেড়ে যাবো না"

"ব্যাস তাহলে তো মিটেই গেল, আমাদের দুজনেরই অতীতে যাই হয়ে যাক না কেন সেটা ভুলে যাওয়াই উচিত এখন এই জীবনটাই আমাদের বর্তমান এবং আমাদের ভবিষ্যৎ এই তোমার গর্ভে,বুঝতে পেরেছো?"

উত্তরে পিয়ালী আরো জোরে আদিত্যকে জড়িয়ে ধরে কিন্তু মুখে কিছু বলে না।


রাতে অরুণাভ ঘুমিয়ে পরার পরে মৌমিতা আস্তে করে ফোনটা চালু করে। রাতটা তাদের একপ্রকার বাধ্য হয়েই নারায়ণতলা গ্ৰামে কাটাতে হচ্ছে কারণ বিকেলের পর থেকে মূষলধারে বৃষ্টি শুরু হয়েছে তাই শ্রীতমাদেবী আর যেতে দেননি, অসুবিধার কিছু নেই এক্সট্রা ঘর অভিরূপবাবু হিসাব করেই বানিয়েছেন এই বাড়িতে, অভিরূপবাবু এবং শ্রীতমাদেবী একটা রুমে, স্বর্ণেন্দু বাবু এবং সুদেষ্ণা দেবী একটা রুমে আর ছেলেমেয়ে নিয়ে অরুণাভ এবং মৌমিতা একটা রুমে।

পাশে অরুণাভ এবং ছেলেমেয়েরা গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন কিন্তু মৌমিতার চোখে ঘুম নেই সে মোবাইলে সকালে তোলা আদিত্য ওরফে অনিকেতের ছবিটা বার করে দেখতে থাকে কখনো জুম করে আবার কখনো নরমালি একটার পর একটা ছবি দেখতে থাকে আঙুলের টোকায় পরপর স্ক্রিন জুড়ে একটার পর একটা ছবি আসছে আর যাচ্ছে ছবিগুলো দেখতে দেখতে মৌমিতার মন আবার বিকৃত কামনায় ভরে ওঠে, কয়েকবার ছবিতে আদিত্যর নগ্ন শরীরে আলতোভাবে আঙুল বোলায় মৌমিতা যেন খোদ আদিত্যর শরীরেই বোলাচ্ছে। সরাতে সরাতে একসময় আদিত্যর ছবি শেষ হয়ে তার ওয়াইফের ছবি আসে আর সঙ্গে সঙ্গে মৌমিতার মুখ হিংস্র হয়ে ওঠে সে আবার আদিত্যর ছবি নিয়ে আসে স্ক্রিনে।

একবার দুবার বারবার আদিত্যর ছবিগুলো দেখতে থাকে মৌমিতা চেহারাটাই যা পাল্টে গেছে আর কিচ্ছু না, মৌমিতার মনে পরে গ্যাংটকে খাদে ঠেলে ফেলে দেওয়ার সময় অনিকেতকে বলেছিল "তোমার মতো ছেলেকে কোনো মেয়ে ভালোবাসতেই পারে না, তোমার মধ্যে সেরকম কোনো কোয়ালিটি নেই", কিন্তু সেটা যে কত বড়ো মিথ্যা এটা মৌমিতা খুব ভালো করেই জানে, নেহাত টাকা আর সম্পত্তির লোভে আর তার বাবার কথায় সে অরুণাভকে বিয়ে করেছে নাহলে হয়তো অনিকেতের সঙ্গেই থাকতো অবশ্য বিয়ের পরে হয়তো একটু হলেও ফিলিংস এসেছে অরুণাভর জন্য।
অরুণাভ স্মার্ট, হ্যাণ্ডসাম, চার্মিং, ড্যাশিং, পড়াশোনাতেও দারুণ, কথাবার্তাতেও দারুণ নিজের কথা দিয়ে যে কারো মন জয় করতে পারে তার উপরে বড়োলোক পরিবারের ছেলে, উচ্ছাকাঙ্খী, অপরদিকে অনিকেত ও এক‌ই পরিবারের ছেলে সাথে পড়াশোনাতেও খারাপ না, ও হ্যাণ্ডসাম শুধু তিনটে জিনিস ওর মধ্যে ছিল না এক উচ্চাকাঙ্ক্ষা দুই কারো মন যুগিয়ে কথা বলার ধার ধারতো না যেটা মুখে আসতো সেটাই বলতো আর তিন বড়োলোক পরিবারের ছেলে হয়েও টাকা পয়সার প্রতি বিন্দুমাত্র লোভ ছিল না খুবই সাধারণভাবে ঘোরাফেরা করতো।

কিন্তু অনিকেতের মধ্যে আরো একটা জিনিস ছিল যেটা অরুণাভর ছিল না এখনও নেই অনিকেতের মধ্যে এক অদ্ভুত আকর্ষণ ছিল ওর কথাবার্তা, সবসময়ের জন্য রাগী রাগী ভাব, গম্ভীর মুখ, অ্যাটিটিউড সবকিছু সত্ত্বেও যে কারনে ওকে উপেক্ষা করা কঠিন ছিল। যখন মৌমিতার সাথে ওর রিলেশন ছিল তখন মোমিতা এই ব্যাপারটা অনুভব করেছে কি একটা অদৃশ্য আকর্ষণ যেন টানছে ওকে শুধু ওকে নয় অনেক মেয়েই অনিকেতের প্রতি আকর্ষিত হতো কিন্তু অনিকেত সবার থেকে দূরে থাকতো কাউকেই নিজের কাছে আসতে দিত না শুধু মৌমিতাকে দিয়েছিল।

'আর সেই অনিকেত এখন মৌমিতাকে ভুলে অন্য একজনের সঙ্গে আছে' অতীতের স্মৃতি থেকে বর্তমানে ফিরে এসে নিজের মনেই কথাটা বললো মৌমিতা তারপর একবার পাশে ঘুমানো ছেলেমেয়ে ও স্বামী অরুণাভর দিকে তাকিয়ে দেখলো ওরা অঘোরে ঘুমাচ্ছে, মৌমিতার দৃষ্টি আবার মোবাইলে আদিত্যর ছবির দিকে ফেরে অস্ফুটস্বরে যেন আদিত্যকেই বলছে এমনভাবে বলতে থাকে, "আমাকে ভুলে কিভাবে অন্য একজনকে নিজের জীবনে আনলে অনি? ঠিক আছে এনেছো যখন তখন সরিয়ে দিতে অসুবিধা কোথায়? কোনো অসুবিধা নেই। আজ এতবছর পরেও তোমার প্রতি সেই আকর্ষণ ফিল করছি যেটা প্রথম দেখায় করেছিলাম আর তুমি তো জানোই যে মৌমিতার কিছু পছন্দ হলে সেটা মৌমিতার হয়ে যায় তখন সেটার উপরে আর কারো কোনো অধিকার থাকে না তোমার উপরেও এখন আর কারো অধিকার নেই অধিকার আছে শুধু আমার, চিন্তা কোরো না ওই মেয়েটাকে খুব তাড়াতাড়ি তোমার জীবন থেকে.. না না শুধু জীবন থেকে না পুরো পৃথিবী থেকেই সরিয়ে দেবো তারপর তুমি আমার হবে...." কথাটা বলেই হাসতে যাচ্ছিল মৌমিতা কিন্তু কোনোভাবে নিজেকে সামলে নেয়।


কয়েকদিন হলো আদিত্যর মনে কেমন যেন একটা খটকা লাগছে কিসের যেন একটা অস্বস্তি যেন কেউ ওকে ফলো করছে বা ওর উপরে নজর রাখছে কিন্তু প্রথমে সেটাকে আমল দেয়নি 'এই গ্ৰামে তার শত্রু কেউ নেই কে তাকে ফলো করবে ভেবেছে' কিন্তু ওর এই ধারণা যে অমূলক নয় সেটা কিছুদিনের মধ্যেই বুঝতে পারলো।

এমনিতে 'আনন্দ নিকেতন' রিসর্টে আগের থেকে ভিড় একটু বেশি হচ্ছে লোকজন আসছে কেউ সকালে এসে সেদিনই ফিরে যাচ্ছে কেউ কয়েকদিন থাকছে, এদের অনেকেই গ্ৰামের পরিবেশ উপভোগ করতে আসে শহরের কৃত্রিম পরিবেশ ছেড়ে বিশুদ্ধ প্রাকৃতিক পরিবেশে এসে কটা দিন হাঁফ ছেড়ে বাঁচে। সাধারণত আদিত্যর এই গেস্টদের সাথে কোনো যোগাযোগ সরাসরি থাকে না তাদের রিসর্টের ম্যানেজার এবং স্টাফরাই সামলায়।

কিন্তু এই রিসর্টে কয়েকজন গেস্টকে দেখে আদিত্যর প্রথম একটু খটকা লাগে কিছুই না যেন ওর সিক্সথ সেন্স সতর্ক করে দিতে চাইছে। দুজন মধ্য তিরিশের ছেলে কিছুই না ওরা রিসর্টের ভিতরে ঘুরছিল আদিত্য‌ও একবার পুরো রিসর্টটা ঘুরে দেখে নিচ্ছিল হঠাৎই আদিত্যর সাথে ওদের চোখাচোখি হতেই ওরা চোখ নামিয়ে অন্য দিকে চলে গেল আদিত্যর কেন যেন মনে হলো ওরা ওকেই দেখছিল।

পরদিন আদিত্য আর ওদের দেখতে পায় না কিছুদিন পর আবার তবে এবার অন্য তিনজন, সেদিন রিসর্ট থেকে বেরিয়ে বাড়ির দিকে যেতে যেতে কয়েকজন গ্ৰামবাসীর সাথে কথা বলছিল হটাৎ রাস্তায় ওদের দেখতে পায় আদিত্যর মনে হলো ওরা যেন ওকে ফলো করছে।

এরপর দুদিন পরে রিসর্টের কাজ সেরে বাড়ি ফেরার জন্য বেরোলো তবে কি মনে হ‌ওয়ায় সোজা পথটা না ধরে একটু ঘুরপথ ধরলো। পথে কয়েকজন লোকের সাথে দেখা হলো তারপর আবার জনহীন রাস্তা, চলতে চলতে আদিত্য স্পষ্ট বুঝতে পারলো কেউ তার পিছু নিয়েছে তবে তৎক্ষণাৎ পিছনে না ফিরে বা কোনো ভুল পদক্ষেপ না নিয়ে স্বাভাবিক ভাবেই চলতে থাকে যেন সে কিছুই বুঝতে পারেনি কিছুদূর যাবার পরে একটা মোড় পেরিয়ে পথের পাশে একটা লুকোনোর জায়গা পেয়ে সেখানে লুকিয়ে দেখতে থাকে।

একটু পরেই বুঝতে পারে তার অনুমান ঠিক দুজন বেশ শক্তপোক্ত পেশীবহুল লোক তার পিছু নিয়েছিল, তবে এরা নতুন আজ সকালেই রিসর্টে দেখেছে চেক আউট করার সময়। লোকগুলো এই পর্যন্ত এসে আদিত্যকে আর খুঁজে না পেয়ে দাঁড়িয়ে গেছে চারিদিকে তাকাচ্ছে।

"আমার পিছু নিয়েছিলেন কেন? কে পাঠিয়েছে আপনাদের?"

আড়াল থেকে বেরিয়ে এসে জিজ্ঞেস করে আদিত্য, লোকগুলো চমকে ফিরে তাকায় কিন্তু উত্তর দেয় না তারপর একবার চারিদিকে চোখ বুলিয়ে কেউ আছে কিনা দেখে নেয় আদিত্য শান্ত স্বরে আবার জিজ্ঞেস করে,

"কি হলো বলুন কে পাঠিয়েছে আপনাদের?"

লোক দুজন উত্তর না দিয়ে কোমরের পিছনে লুকানো পিস্তল বার করে কিন্তু ততোধিক ক্ষিপ্রতায় মাটি থেকে দুটো পাথরের টুকরো তুলে দুজনের দিকে ছুড়ে মারে নির্ভুল লক্ষ্যে পাথরদুটো দুজনের হাতে লেগে ওদের হাত থেকে পিস্তল দুটো মাটিতে ফেলে দেয় কিন্তু দুজন‌ই দ্রুত ঝুঁকে আবার পিস্তল দুটো মাটি থেকে তুলতে গেলে আদিত্য দৌড়ে ওদের কাছে গিয়ে একটু লাফিয়ে দুপায়ে দুজনকে লাথি মারে এতে দুজনেই কিছুটা দূরে ছিটকে পরে এবং আদিত্য‌ও মাটিতে পরে। এবার দুজন উঠে পিস্তল তোলার চেষ্টা না করে আদিত্যর দিকে এগিয়ে আসে আদিত্য‌ও মাটি থেকে উঠে লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত হয়।


লালবাজারে নিজের কেবিনে বসে কাজ করছিলেন সুপ্রতিমবাবু যদিও যাই করুন না কেন সবসময় তার মাথায় এখন একটাই চিন্তা কিভাবে কলকাতার দুজন বড়ো ক্রিমিনাল যারা ভালো মানুষের মুখোশ পরে ঘুরছে তাদের ধরে শাস্তি দেওয়া যায়। ইনফর্মারদের খবর অনুযায়ী বেশ কিছু জায়গা রেড করেছেন ধরপাকড় করেছেন কিন্তু সব চুঁনোপুটি কিছুতেই রাঘববোয়াল দের ধরতে পারছেন না। হটাৎ ফোন বেজে ওঠায় একটু বিরক্ত হন কিন্তু নাম্বারটা দেখে কৌতূহলী হয়ে ওঠেন তিনি নাম্বার পরিচিত পথের হৃদিশ যে দিয়েছে তার নাম্বার অবশ্য সত্যিই পরিচিত না অপরিচিত সেটা এখনো বুঝতে পারেননি,

"হ্যালো"

"আদিত্য বলছি স্যার"

"আদিত্য?"

"চিনতে পারছেন না? আমি."

"বলো, হঠাৎ ফোন করলে, নতুন কোনো কিছু মনে পরেছে নাকি?"

"দুজনের ছবি পাঠাচ্ছি চেক করুন কোনো ক্রিমিনাল রেকর্ড আছে কি না? বা আপনার দুজন অতিপ্রিয় বন্ধুর সাথে লিংক আপ আছে কি না?"

"বন্ধু?"

"প্রীতমবাবু আর মনোজিত বাবু। যেভাবে ওদের পিছনে পরেছেন তাতে বন্ধু ছাড়া আর কি বলবো বলুন?"

কথাটা শুনে সুপ্রতিমবাবুর বুকের ভিতরটা আরেকবার মোচড় দিয়ে ওঠে ঠিক এভাবেই তার সাথে মজা করতো অনিকেত, প্রায়ই কোনো ক্রিমিনালকে ধরলে বলতো 'আরিব্বাস তাহলে এই আপনার সেই বন্ধু' বা কখনও বলতো 'শেষ পর্যন্ত নিজের বন্ধুর হাতে হাতকড়া দিয়েই ছাড়লেন?'

"শুনছেন স্যার?"

সুপ্রতিম বাবু চমক ভেঙে কথা বলেন "হ্যাঁ, শুনছি বলো"

"ছবি দুটো দেখুন তারপর কথা বলছি"

ফোন কেটে দেয় আদিত্য সুপ্রতিমবাবু হোয়াটস্অ্যাপ চেক করেন আদিত্যর নাম্বারটা খুলে দেখেন দুটো ছবি এসেছে, ডাউনলোড করে ছবি ওপেন করতেই চমকে ওঠেন তিনি, দুজনের মুখ‌ই চেনা চেনা লাগে তার যদিও একজনের মুখ মেরে ফাটিয়ে দেওয়া হয়েছে এবং অপরজনের নাক, রক্ত বেরোচ্ছে তবুও পরিষ্কার চেনা যাচ্ছে।

পুলিশ ডাটাবেস থেকে দুজনের পরিচয় বের করতে বেশী সময় লাগে না সুপ্রতিমবাবুর দুজনেই পেশাদার ক্রিমিনাল যদিও আগে একসময় বক্সিং চ্যাম্পিয়ন ছিল পরে কোনো কারনে ক্রাইমের পথে চলে যায় একাধিক ক্রাইম আছে ওদের নামে বেশ কয়েকবার পুলিশের হাতে ধরাও পরে কিন্তু তেমন কোনো পোক্ত প্রমাণ না পাওয়ায় ছাড়া পেয়ে যায় এমনকি অনেক খুনের ক্ষেত্রেও ওদের নাম জড়িয়ে যায় কিন্তু সেই এক‌ই সমস্যা কোনো প্রমাণ নেই কোথাও সাক্ষী আদালতে পাল্টি খায় তো সাক্ষী খুঁজেই পাওয়া যায় না। সুপ্রতিমবাবু চিন্তায় পরে যান আদিত্য ওদের খবর জানলো কিভাবে? ওরা দুজন কি তবে আদিত্যর পিছনে পরেছে? কিন্তু কেন? ছেলেটার বাড়িতে গর্ভবতী স্ত্রী আছে, সুপ্রতিমবাবু আর স্থির হয়ে বসে থাকতে পারেন না তক্ষুনি কেবিন থেকে বেরিয়ে নিজের গাড়ি করে র‌ওনা দেন ড্রাইভারকে অবশ্য সঙ্গে নেন না ডিপার্টমেন্টে কাউকে বিশ্বাস করা ক্রমশ কঠিন হয়ে উঠছে তার পক্ষে।
I'm the King of Dark
                &
I rule over all Devils
               devil2 devil2
Like Reply
[Image: Picsart-22-12-06-20-20-08-119.jpg]



                   দ্বিতীয় খণ্ড
                   ৩০তম পর্ব




পুলিশ ডাটাবেস থেকে দুজনের পরিচয় বের করতে বেশী সময় লাগে না সুপ্রতিমবাবুর দুজনেই পেশাদার ক্রিমিনাল যদিও আগে একসময় বক্সিং চ্যাম্পিয়ন ছিল পরে কোনো কারনে ক্রাইমের পথে চলে যায় একাধিক ক্রাইম আছে ওদের নামে বেশ কয়েকবার পুলিশের হাতে ধরাও পরে কিন্তু তেমন কোনো পোক্ত প্রমাণ না পাওয়ায় ছাড়া পেয়ে যায় এমনকি অনেক খুনের ক্ষেত্রেও ওদের নাম জড়িয়ে যায় কিন্তু সেই এক‌ই সমস্যা কোনো প্রমাণ নেই কোথাও সাক্ষী আদালতে পাল্টি খায় তো সাক্ষী খুঁজেই পাওয়া যায় না।

সুপ্রতিমবাবু চিন্তায় পরে যান আদিত্য ওদের খবর জানলো কিভাবে? ওরা দুজন কি তবে আদিত্যর পিছনে পরেছে? কিন্তু কেন? ছেলেটার বাড়িতে গর্ভবতী স্ত্রী আছে, সুপ্রতিমবাবু আর স্থির হয়ে বসে থাকতে পারেন না তক্ষুনি কেবিন থেকে বেরিয়ে নিজের গাড়ি করে র‌ওনা দেন ড্রাইভারকে অবশ্য সঙ্গে নেন না ডিপার্টমেন্টে কাউকে বিশ্বাস করা ক্রমশ কঠিন হয়ে উঠছে তার পক্ষে।


"করেছো টা কি? ওদের পেলে কোথায়? আর এই অবস্থা করলে কিভাবে?"

দুজনের অবস্থা দেখে অবাক বিস্ময়ে হতবাক হয়ে প্রশ্ন করেন সুপ্রতিম বাবু। গ্ৰামে পৌঁছানোর আগেই আদিত্যকে ফোন করে তার আসার কথা জানিয়ে দিয়েছিলেন তিনি সেইমতো আদিত্য জায়গামতো দেখা করে সুপ্রতিম বাবুকে দেখা করে গ্ৰামের মন্দিরের পিছনের আমবাগানে নিয়ে যায় সেখানে গিয়ে তিনি দেখেন দুজনকে একটা গাছের সঙ্গে বেঁধে রাখা হয়েছে আর তাদের ঘিরে কয়েকজন লাঠি হাতে দাঁড়িয়ে আছে আর দাঁড়িয়ে আছে আদিত্যর সবথেকে বিশ্বস্ত বন্ধু বাদশা, দুজনের অবস্থাই একেবারে কাহিল চুপচাপ বাঁধা অবস্থায় মাটিতে বসে আছে, বোঝাই যাচ্ছে রীতিমতো উত্তমাধ্যম ঠ্যাঙানো হয়েছে ওদের।

"করেছো টা কি? ওদের পেলে কোথায়? আর এই অবস্থা করলে কিভাবে?"

সুপ্রতিমবাবুর প্রশ্নের উত্তরে আদিত্য একটু হাসে তারপর সবকথা খুলে বলে রিসর্টে অন্য দুজনকে দেখা তারপর ওকে ফলো করা থেকে আজ ওর পিছু নিয়ে মারতে চাওয়া সবকিছু,

"তুমি একা ওদের এই অবস্থা করেছো?" সুপ্রতিমবাবু জিজ্ঞেস করেন

"প্রথমে একাই লড়ছিলাম কিন্তু তারপর এই এরা দেখতে পেয়ে চলে আসে, ওদের সৌভাগ্য বাদশা সেইসময় আমার সঙ্গে ছিল না নাহলে ওদের হয়তো হাসপাতালে নিয়ে যেতে হতো আমাকে মারার চেষ্টা করার জন্য বাদশা ওদের ছাড়তো বলে মনে হয় না, বাদশাকে পরে এনেছি" আদিত্য ওর সঙ্গের লাঠি হাতে দাঁড়িয়ে থাকা লোকগুলোকে দেখিয়ে কথাটা বলে

"কিন্তু কেন? মানে ওরা তোমাকে মারতে চাইছিল কেন"

"ওদের কাজটা করতে পাঠানো হয়েছিল"

"কে?"

"সেটা বলছি তবে আগে বলুন ওদের পরিচয় জেনেছেন?"

"ওরা দুজন দুটি রত্ন"

"তাই নাকি?"

"হুমম, তুমি সত্যিই ওদের চিনতে পারোনি?"

"না, কোনো সেলিব্রেটি নাকি ওরা?"

"একপ্রকার বলতে পারো একসময় কলকাতার বক্সিং চ্যাম্পিয়ন ছিল তারপর অবশ্য ক্রাইমের সাথে জড়িয়ে পরে"

"বক্সিং চ্যাম্পিয়ন? কবে?"

"২০১৭ তে"

"তার মানে প্রায় ছ বছর আগে, ওই সময়টা আমি কলকাতার বাইরে ছিলাম কলকাতার খবর খুব একটা রাখতাম না"

"কোথায় ছিলে?"

"আমি ন..." কিছু বলতে গিয়েও থেমে যায় আদিত্য কথা ঘুরিয়ে বলে "আমার কথা ছাড়ুন আপনি আপনার দুই বন্ধুর সাথে ওদের কোনো লিংক‌আপ খুঁজে পেয়েছেন?"

"সেরকম কিছু নয় আসলে এরা প্রফেশনাল, টাকার জন্য ক্রাইম করে কিন্তু কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি তাই"

"আমি কিন্তু পেয়েছি"

"কি?" চমকে ওঠেন সুপ্রতিম বাবু, "কি প্রমাণ?"

আদিত্য দুটো পিস্তল সযত্নে সুপ্রতিমবাবুর হাতে দিয়ে বলে, "এতে ওদের ফিঙ্গারপ্রিন্ট পেতে পারেন এটা দিয়েই আমাকে মারতে চেয়েছিল আর এটা ছাড়া ওদের স্বীকারোক্তি আছে"

"স্বীকারোক্তি?"

আদিত্য নিজের মোবাইলে একটা ভিডিও চালু করে সুপ্রতিমবাবুর হাতে দেয় ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে গাছে বাঁধা অবস্থায় এই দুজন স্বীকারোক্তি দিচ্ছে কিন্তু ওরা কিছু একটা দেখে ভয় পাচ্ছে, ভিডিওটা দেখে মোবাইলটা ফেরত দিয়ে সুপ্রতিম বাবু জিজ্ঞেস করলেন, "ওদের দেখে মনে হচ্ছে ওরা কিছু একটা দেখে ভয় পাচ্ছে সেটা কি তোমার এই.."

"হ্যাঁ স্যার বাদশা, খুব কম লোক‌ই আছেন যারা বাদশার সামনে নিজের নার্ভ ঠিক রাখতে পারবেন সে যতই এক্স বক্সিং চ্যাম্পিয়ন হোক না কেন?"

সুপ্রতিম বাবু হো হো করে হেসে বললেন "কিন্তু আদিত্য আদালতে এই স্বীকারোক্তি গ্ৰহনযোগ্য নাও হতে পারে, আর শুধুমাত্র এই ভিডিওর জেরে ওই ক্রিমিনালটিকে ধরা একটু কঠিন"

আদিত্য এবার দুটো মোবাইল সুপ্রতিমবাবুর হাতে দিয়ে বললো "সেটা জানি স্যার, তবে এই মোবাইল দুটোয় দুটো নম্বর থেকে অনেকবার কল এসেছে আর এরাও করেছে চেক করে দেখুন কারো না কারো তো লিংক পাবেন‌ই"

"আর এদের কি করবে?"

"সেটা আপনি ঠিক করুন, তবে আমার কথা যদি শোনেন তাহলে বলি ওদের অ্যারেস্ট করবেন না আইমিন অফিশিয়ালি তবে আন‌অফিশিয়ালি রাখুন পুলিশ ডিপার্টমেন্টের বাইরে আপনার নিশ্চয়ই বিশ্বস্ত লোক আছে"

"আমি বুঝতে পারছি তুমি কি বলতে চাইছো, কিন্তু.."

"ওরা এখানে রিসর্টে এসেছিল এবং যদি খুব ভুল না করে থাকি সেটাও ভুয়ো পরিচয়ে এবং অলরেডি চেক‌আউট করে গেছে তাই তারপর ওরা কোথায় গেছে কি করেছে হু কেয়ারস্‌?"

সুপ্রতিম বাবুর মুখে আবার হাসি দেখা গেল তিনি মোবাইল বার করে কাউকে ফোন করলেন।


এরপর আবার বেশ কিছুদিন খুব ভালো কাটলো কোথাও কোনো গণ্ডগোল নেই মাঝে একবার সুপ্রতিমবাবু ফোন করে জানালেন নাম্বারদুটোর ডিটেইলস বার করেছেন ওই দুজনের একজন মনোজিতবাবু আর অপরজন মনোজ মনোজিতবাবুর ছেলে, সুপ্রতিমবাবু আরও জানালেন বক্সার দুজনের থেকে আরো ইনফরমেশন বার করার চেষ্টা চালাচ্ছেন তিনি এবং মনোজিতবাবু এবং মনোজের উপরে নজর রাখার জন্য আরো কয়েকজন লোক লাগিয়েছেন কিছু না কিছু সূত্র তো পাবেন‌ই।

আদিত্যর মাথায় চিন্তা বেড়ে যায় মনোজিতবাবু হটাৎ ওর পিছনে পরলেন কেন? তবে কি সেই পুরনো রাগ? আদিত্য পিয়ালীকে এই বিষয়ে কিছু জানায় না বেকার বেকার ওকে চিন্তায় ফেলে লাভ নেই তবে আদিত্য এখন আরও বেশি সময় পিয়ালীর সঙ্গে কাটাতে থাকে।

আদিত্যকে মারার জন্য নিজের পাঠানো দুজন লোকের থেকে কোনো খবর না পেয়ে অধৈর্য্য হয়ে পরেন মনোজিত বাবু, তার বুঝতে বাকি রাখে না দুজন ব্যার্থ হয়েছে কিন্তু তিনি কিছুতেই ভেবে পান না কিভাবে ব্যার্থ হলো, আজ পর্যন্ত ওই দুজন কখনও ব্যার্থ হয়নি তার উপরে এখন ওদের ফোন‌ও বন্ধ একাধিকবার ফোন করেও লাইন পান না তিনি।

"তোমাকে বলেছিলাম ওই মেয়েটাকে শেষ করতে আর তুমি অনিকেতকে মারার জন্য লোক পাঠিয়েছো, কেন?"

হন্তদন্ত হয়ে ঘরে ঢুকে নিজের বাবাকে প্রশ্ন করে মৌমিতা, মনোজিতবাবু নিজের মেয়েকে এইসময়ে এখানে দেখে একটু অবাক হন আরও অবাক হন মৌমিতার কথা শুনে কারণ তিনি যে আদিত্য বা তার মেয়ের কথায় অনিকেতকে মারার জন্য লোক পাঠিয়েছেন এটা মৌমিতার জানার কথা নয়, অবশ্য মৌমিতার পিছনে মনোজকে দেখেই তিনি বুঝতে পেরেছেন যে ভাইবোনের মধ্যে এই নিয়ে কথা হয়েছে।

"কি হলো বলো তোমাকে বারবার বলা সত্ত্বেও তুমি অনিকেতকে মারতে পাঠিয়েছিলে কেন?"

"হটাৎ ওর উপরে তোর এত দরদ কেন? তুই ভুলে যাচ্ছিস তুই নিজে বলেছিস যে ও আমাদের সম্পর্কে অনেক কিছু জানে আর ও যদি সত্যিই অনিকেত হয় তাহলে তো ওকে শেষ করাটা খুবই জরুরী"

"অনিকেতকে আমি সামলে নেবো তুমি মেয়েটাকে শেষ করতে পারবে কি না বলো? তোমার ওই লোকদুটো কোথায়?"


"ওদের ফোন সুইচড অফ কোনো খবর নেই"
"ওরা অনিকেতকে মারতে পারেনি"

"তুই কিভাবে জানলি?"

"অরুণাভর সঙ্গে ওর বাবার কথা হয়েছে, ওনারা তো ওখানে আছেন আর ওনাদের সঙ্গে ওর যা ভাব তাতে ওর কিছু হলে এত সহজভাবে কথা বলতেন না"

"তাহলে ওরা গেল কোথায়? পালানোর বান্দা তো ওরা নয়"

"দেখো অনিকেত হয়তো মেরে হাত পা ভেঙে কোথাও ফেলে দিয়েছে"

"হোয়াট?"

"হ্যাঁ, তোমাকে বলা হয়নি অনিকেত দারুণ ফাইটার, অভিরূপ ব্যানার্জীকে ওই বাঁচিয়েছিল"

"কি?" মনোজিতবাবু হতবাক হয়ে যান "তুই কিভাবে জানলি?"

"আমার শাশুড়ি অরুণাভকে মুখ ফসকে বলে ফেলেছিল আর নিজের চোখেই তো দেখেছিলে যেদিন মনোজ আর সুশান্তকে ঠ্যাঙাতে এসেছিল সেদিন আমাদের সিকিউরিটি দের একাই কিরকম ঠেঙিয়েছিল তো তোমাদের ওই দুজনকে সামলানো তো কোনো ব্যাপার‌ই না, ওখানে ওর সাথে তো পুরো গ্ৰামের লোক আছে"

"চিন্তা নেই ওরা মুখ খুলবে না তাই ওদিক থেকে নিশ্চিন্ত"

"ট্রাস্ট মি অনিকেত ওদের মুখ খুলিয়ে নেবে"

"আমি বুঝতে পারছি না তুই হটাৎ ওই ছেলেটার এত প্রশংসা করছিস কেন? কি হয়েছে তোর?"

"ছাড়ো তোমার জেনে কাজ নেই, তোমাকে আর কিছু করতেও হবে না যা করার আমি‌ই করবো ওই মেয়েটাকে আমিই শেষ করবো" কথাটা বলে মৌমিতা দ্রুত ঘর ছেড়ে বেরিয়ে যায়।


আদিত্য পিয়ালীর সামনে যতই স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা করুক পিয়ালী ঠিকই বুঝতে পারে আদিত্যর মাথায় চিন্তা চলছে, তবে আদিত্য সবমময় তাকে হাসিখুশি রাখার চেষ্টা করছে নিয়মিত চেক‌আপ করাচ্ছে একটা ডেট‌ও মিস করছে না অবশ্য গ্ৰামের স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চেক‌আপের ভালো ব্যবস্থা না থাকায় টাউনের হাসপাতালে যেতে হয় আর টেস্টগুলোর জন্য অনেক প্রাইভেট ক্লিনিক আছে।

এখন অবশ্য চেক‌আপে গেলে বাইক নিয়ে যায় না,ক্যাব বুক করে নেয় তবে আজকের চেক‌আপে ক্যাব বুক করেনি গ্ৰামের একজনের গাড়ি আছে সে ওলা এবং উবের দুটোতেই রেজিস্ট্রেশন করে চালায় তবে সে কিছুদিনের ছুটি নিয়ে ঘুরতে যাওয়ায় ওর গাড়িটা চেয়ে রেখেছিল ওটাতেই পিয়ালীকে নিয়ে টাউনের ক্লিনিকে এসেছে কিছু টেস্ট করাতে। পার্কিং এরিয়ায় গাড়ি পার্ক করে বাদশাকে গাড়ি পাহারার দায়িত্বে রেখে ওরা বহুতল বিল্ডিংয়ের উপরে উঠে গেল নির্দিষ্ট ফ্লোরের উদ্দেশ্যে।
I'm the King of Dark
                &
I rule over all Devils
               devil2 devil2
Like Reply
very nice yourock yourock yourock yourock yourock
[+] 1 user Likes sona das's post
Like Reply
Very nice updates as usual. Waiting for next part. Like & repu added.
[+] 1 user Likes bad_boy's post
Like Reply
(06-08-2023, 11:46 PM)sona das Wrote: very nice yourock yourock yourock yourock yourock
thanks thanks
(07-08-2023, 12:00 AM)bad_boy Wrote: Very nice updates as usual. Waiting for next part. Like & repu added.

thanks thanks
I'm the King of Dark
                &
I rule over all Devils
               devil2 devil2
Like Reply
এবার মৌমিতার চরিত্র আরও ঘবির হয়ে উঠেছে। কি চায় মৌমিতা? অনির সামনে গিয়ে কি বলবে? মৌমিতা আবার অনিকে পেতে চায়? মৌমিতা যেভাবে পিয়ালিকে দেখে জ্বলে পুড়ে যাচ্ছে মনে হচ্চে পিয়ালিকে নিজের হাতেই মেরে ফেলবে । দেখা যাক, পিয়ালীকে দেখে আরো কত জ্বলে মৌমিতা । এবার অনিকে পেতে কি কি করে!

৫+রেপু অ্যাডেড+লাইক।
•মৌমিতার pov দেখানোর জন্যে ধন্যবাদ। এ মৌমিতার চরিত্রের ভিতরে আরও কি কি লুকিয়ে আছে দেখার বাকি ।


My pain is constant and sharp, and I do not hope for a better world for anyone. ArrowNamaskar


[+] 3 users Like Patrick bateman_69's post
Like Reply




Users browsing this thread: 1 Guest(s)