Thread Rating:
  • 186 Vote(s) - 3.33 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Misc. Erotica অঘটনঘটন পটিয়সী (নতুন আপডেট ৩২ )
আপডেট ২২ লেখাটার অপেক্ষায় ?
[+] 1 user Likes Luck by chance's post
Like Reply
Do not mention / post any under age /rape content. If found Please use REPORT button.
আপডেট ২২

পাহাড় থেকে আমরা যখন একটা পাথর ফেলে দেই সেটা তখন আর আমাদের নিয়ন্ত্রণে থাকে না। আমরা আশা করতে পারি চলার পথে এটি নির্দিষ্ট টার্গেট কে পিষে দিয়ে যাবে তবে এর বাইরে কিছু ঘটবে কিনা সেটা আমরা আর নিয়ন্ত্রণ করতে পারি না। বাতাসের গতিপথ, পথে থাকা প্রতিবন্ধক, অসমান ভূমি অনেক কিছু যেগুলো শুরুতে আমাদের হিসাবের বাইরে ছিল সেটা হয়ত শেষ পর্যন্ত সেই পাথরের গতি পথের নিয়ন্ত্রক হয়ে দাঁড়ায়। এই সূত্রটা মাহফুজ ভুলে গিয়েছিল। আর তাই আরশাদের ঘটনা টা শুরু করলেও এর পরিণতি কই দাঁড়াবে সেটা মাহফুজের হিসাবে ছিল না।




মোখলেস পেপারটা সামনে রাখার পর থেকে আরশাদ এক রকম বাকশূণ্য হয়ে বসে থাকলেন কয়েক মিনিট। মোখলেস আরশাদের অবস্থা দেখে কোন কথা না বলে চুপচাপ অফিস থেকে বের হয়ে গেল। আরশাদ টের পেলেন ঘামছেন উনি অফিসের এসির ভিতর বসেও। প্রতিদিন অফিসে ঢোকার দশ মিনিট পর অফিস স্টাফ সকালের ফাইল গুলো নিয়ে আসে সাইন করানোর জন্য। আরশাদ সাহেব সেই ফাইল গুলো আধা ঘন্টার ভিতর ক্লিয়ার করে দেন। আজকে কেউ আসছে না রুমের ভিতর যদিও আধা ঘন্টা হয়ে গেছে অফিসে ঢোকার। আরশাদ সাহেব টের পেলেন অফিসের সবাই খবরটা দেখেছে। তাই তার মন মেজাজ কি সেটা না জেনে ভিতরে ঢুকতে ভয় পাচ্ছে। আরশাদ সাহেব নিজের অনুভূতি কি সেটা ঠিক নিজেই বুঝে উঠতে পারছেন না। এক রকম শূণ্য শূণ্য লাগছে মাথার ভিতর আর বুকের ভিতর অস্থিরতা। এমনকি ভিতরের খবরটাও ভাল করে পড়েন নি শিরনাম ছাড়া। এক রকম হতভম্ভ হয়ে বসে আছেন। ঘড়ির দিকে তাকালেন। সাড়ে এগারটা বাজে। প্রায় এক ঘন্টা হয় অফিসে এসেছেন কিন্তু টের পান নি সময় কোথায় দিয়ে চলে গেছে। টেবিলে সামনে রাখা পানির গ্লাসটার দিকে তাকালেন, কখন যে পুরো গ্লাস শূণ্য করে ফেলেছেন সেই খেয়াল নেই।


আরশাদ সাহেব বুঝতে পারছেন এই রিপোর্টটা একটা ঝড় তুলতে পারে। প্রায় সাত আট বছর ধরে এক অফিসে কোন বদলি ছাড়া টিকে থাকা কঠিন। তার উপর লাস্ট প্রমোশনের পর ঢাকায় থাকা তার সব ব্যাচমেটকে যে যখন ঢাকার বাইরে পাঠানো হল তখন তিনি একমাত্র ঢাকায় টিকে গিয়েছিলেন। এতে অনেকের চক্ষুশূল হয়েছিলেন। তার উপর বেশ কয়েক বছর ধরে ঢাকা কর অঞ্চল-৭ এর মত লুক্রেটিভ পোস্টিং ধরে রাখার কারণে অনেকেই যে মনে মনে তার উপর হিংসা পুষে রেখেছে সেটা তিনি জানেন। এখন এইসব লুকানো হিংসা, রাগ কিভাবে বের হয়ে আসে সেটা ব্যাপার। আরশাদ যত শান্ত ভাবে সব ভেবে সামাল দেওয়ার কথা ভাবছেন ততই চিন্তা এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে। খেয়াল করে দেখলেন হাত কাপছে। বেশি উত্তেজনার সময় সাধারণত তার হাত কাপে। আরশাদ বুঝতে পারছেন এই পত্রিকার রিপোর্ট তার ভিতরে একটা ভিত নাড়িয়ে দিয়েছে।


কাপা কাপা হাতে পেপার টা নিয়ে পড়তে শুরু করলেন। শিরনাম ঢাকা কর অঞ্চল-৭, দূর্নীতির স্বর্গরাজ্য। বেশ সুলিখিত রিপোর্ট। প্রতিটা সরকারি অফিসের নিচের দিকে কিছু কমন দূর্নীতি হয়। টাকার বিনিময়ে পিয়ন বা অফিস স্টাফরা খবর বের করে দেওয়া, ফাইলের সিরিয়াল এগিয়ে দেওয়া এমন কিছু কাজ করে। বাংলাদেশে এমন কোন অফিস নেই যেখানে এই ধরনের কাজ গুলো হয় না। রিপোর্টের শুরুটা এভাবে। বেশ ভাল ভাবে রিপোর্টার তুলে ধরেছে কিভাবে কোন কাজে আসলে ঘন্টার পর ঘন্টা বসে থাকা লাগে কিন্তু কিছু চা-পানি খাওয়ার জন্য বখশিশ দিলে সেই কাজ কিভাবে নিমিষে মিনিটের ভিতর হয়ে যায়। আরশাদ একটু হাফ ছাড়েন। রিপোর্টের প্রায় অনেকটুকুই শেষ। এখনো পর্যন্ত তার ব্যাপারে কোন কথা আসে নি। হ্যা, এই অফিসের প্রধান হিসেবে এইগুলা তার দেখার কথা কিন্তু তৃতীয়, চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের দূর্নীতির জন্য তার কিছু হবে না এটা উনি বুঝেন। বড় জোর হেড অফিস থেকে ঝাড়ি শোনা লাগবে অথবা একটা লিখিত দাপ্তরিক আদেশ আসবে যাতে এইসব দূর্নীতির ব্যাপারে কঠোর হন। সবে মাত্র দম ফেলেছেন তখন খেয়াল করলেন রিপোর্টের পরের অংশ শুরু হয়েছে তাকে নিয়ে। এই প্যারার শুরুটা রিপোর্টার বেশ ভাল ভাবে করেছে। “শুধু নিচে নয় বরং মাথাতেও ধরেছে পচন”। তিনি কিভাবে অদক্ষ হাতে এই অফিস সামলাচ্ছেন আর যেই কারণে এখানে কর্মচারীরা এত দূর্নীতি করতে পারছে তার ফিরিস্তি। আরশাদ সাহেব অবাক হলেন। এমন কোন সরকারী অফিস নেই যেখানে এইসব দূর্নীতি নেই। এই সব ব্যাপারে বেশি কড়াকড়ি করলে তৃতীয় আর চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী ইউনিয়ন অফিস অচল করে দিবে। এটা সবাই জানে। এই রিপোর্টার জানার কথা। তার পরেও এমন ভাবে  লিখেছে যেন উনি অফিসের বড়কর্তা হিসেবে একদম অচল। তার অদক্ষতাই এর প্রধান কারণ। সাংবাদিকদের উপর ক্ষেপে থাকেন। এরা কলম হাতে পেয়ে যা তা লিখে, ইচ্ছামত। পড়তে পড়তে এর পরের অংশে এসে চমকে উঠলেন। সাংবাদিক নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন জুনিয়র স্টাফের বরাতে জানাচ্ছে, আরশাদ সাহেব নিজে এইসব দূর্নীতিগ্রস্ত কর্মচারী এবং অফিসারদের সামলে রাখেন না কারণ তিনিও এদের দলে। নিজের দূর্নীতি আড়াল করতে তিনি বাকিদের ব্যাপারে কোন কথা উঠান না। একদম মিথ্যা কথা। রাগ বাড়ছে আরশাদ সাহেবের। নিশ্চয় কেউ রিপোর্ট করিয়েছে। এর পরের প্যারা পড়তে গিয়ে রীতিমত বিষম খেলেন। সেখানে বলা তার পিছনে আছে বাংলাদেশ রাজস্ব বোর্ডের একজন মেম্বার এবং বাংলাদেশ সরকারের একজন উচ্চপদস্থ আমলা। যাদের দাপটে উনি এত কিছুর পরেও এই অফিসে এত বছর টিকে আছেন। আরশাদ সাহেব বিষম খেলেন কারণ এই তথ্যটা ঠিক। তার মূল খুটির জোর বাংলাদেশ রাজস্ববোর্ডের একজন মেম্বার। এটি সরকারের সচিব পদমর্যাদার একটি পোস্ট। এছাড়া আরেকজন উচ্চ পদস্থ আমলা তাকে ব্যাকিং দেন, যিনি সরকারের প্রিয়পাত্র। যদিও পত্রিকায় তাদের নামধাম আসে নি কিন্তু রিপোর্টের ধরণ দেখে আরশাদ বুঝে গেছেন রিপোর্টার ব্যাপারটা জানে। কে দিল রিপোর্টার কে এই খবর? তার কোন ব্যাচমেট বা কলিগ যে তার উপর ইর্ষান্বিত? হবে সম্ভবত। তার সার্ভিসে লোকেরা সবাই জানে তার পিছনে এই দুই জন যতদিন আছে ততদিন তাকে সরাসরি কিছু করা কঠিন। তবে পত্রিকা এভাবে সরাসরি তাকে এই দুইজনের সাথে লিংক করায় একটু বিব্রত আর ভয় পেয়ে গেলেন আরশাদ। পত্রিকার রিপোর্ট যদি তার দুই ওয়েল  উইশার কে সংকিত করে তাহলে হয়ত তারা কিছুটা পিছু হটবেন। সরাসরি এই মূহুর্তে হেল্প করতে পারবেন না। অন্তত এই রিপোর্ট প্রকাশ হবার পর তার ভাল ব্যাকিং দরকার এই পোস্টিং টিকিয়ে রাখতে। রিপোর্টের শেষ লাইন পড়ে কাশি উঠে গেল আরশাদের। কাশতে কাশতে আবার পড়লেন। এটা একটা সিরিজ হতে যাচ্ছে। তিন পর্বের। নেক্সট পর্ব আসবে দুই দিন পর। আর সেই পর্বে নাকি আলোচনা করা হবে আরশাদ সাহেবের দূর্নীতির ফিরিস্তি। এতক্ষণ পর্যন্ত মাথায় এই যত বুদ্ধি এসেছিল এই রিপোর্টের ব্যাড ইম্প্যাক্ট থেকে বাচার সব যেন এই এক লাইনে তছনছ হয়ে গেল। আগামী দুই দিন পর এই রিপোর্টে কি আসবে সেটা ভাবতে থাকলেন আরশাদ। উনি নিয়মের বাইরে গিয়ে কাজ করেন এবং তার জন্য কিছু সুযোগ সুবিধা নেন কিন্তু এটাকে দূর্নীতি বলতে নারাজ তিনি। অন্য অনেক অফিসারের অত সবার কাছ থেকে সুযোগ নেন না তিনি এবং সবাই কে সুযোগ দেন না। উনি রাঘব বোয়াল ছাড়া কার সাথে খেলেন না। আবার সব রাঘব বোয়ালের সাথেও খেলেন না। খুব ধীরে সুস্থে বেছে বেছে তিনি ক্লায়েন্ট নেন। এমন ভাবে কাজ গুলো করেন যাতে কেউ না জানে। তাই এই পত্রিকা আগামী রিপোর্টে কি বলবে সেটা নিয়ে তার টেনশন হতে থাকে। একবার মনে হয় হয়ত পত্রিকার রিপোর্টার জেনে গেছে তার ভিতরের গোমড়। আবার মনে হয় কীভাবে সম্ভব। এমনকি তার অফিসের পিয়ন, স্টাফ এরা পর্যন্ত জানে না। সাধারণত কোন অফিসার ঘুষ খেলে সবার প্রথমে জানে এরা। কোন ভাবেই হিসাব মিলাতে পারেছেন না আরশাদ। একবার মনে হয় যেভাবে অফিসের পিয়নদের ঘুষ খাওয়ার দায় তার উপর চাপিয়েছে সেরকম আজগুবি কিছু লিখবে। সেটা লিখলে ভাল তাহলে পুরো রিপোর্টের সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে বাদ সিনিয়র অফিসারদের বুঝ দেওয়া যাবে। আবার যদি সত্যি সত্যি পত্রিকাটা তার সব গোমড় ফাস করে দেয় তাহলে কি হবে ভাবতেই তার হাত পা ঠান্ডা হয়ে যায়। সারাজীবন নিজের একটা সৎ ইমেজ গড়ে তুলেছেন। আজকের এই রিপোর্ট সেটায় একটা ধাক্কা। তবে সেটাও সামাল দেওয়া সম্ভব। তবে পরের রিপোর্টে যদি সত্যি সত্যি তার ভিতরের ডিলিংস নিয়ে কিছু লেখে তাহলে একদম তার এতদিনের সাজানো ইমেজ ভেংগে পড়বে। এরপর অফিসে যে জেরার মধ্যে দিয়ে যেতে হবে তা তো আছেই। একদম চাকরির উপর গিয়ে পড়বে সব। আরশাদ আবার ঘড়ির দিকে তাকালেন। দেড়টা বাজে। সময় আবার কোথা দিয়ে দৌড়ে বের হয়ে গেল টের পান নি। এই একটা রিপোর্ট তার সব হিসাব নিকেশ উলট পালট করে দিয়েছে। চারদিকে অন্ধকার দেখতে থাকেন আরশাদ সাহেব।
Like Reply


খবর টা বের হবার পর থেকে যে আরশাদ খালি টেনশনে আছে সেটা না। মাহফুজও চিন্তার মাঝে আছে। কারণ এই খবরটা কেমন প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে তার উপর নির্ভর করবে ওর প্ল্যানের পরের অংশের বাস্তবায়ন। খবরটা আগের দিন রাত বারটার পরেই পত্রিকার অনলাইন ভার্সনে চলে এসেছিল। সকালে ঘুম থেকে উঠে বাইরে গিয়ে পত্রিকা দেখেছে মাহফুজ। প্রথম পাতার নিচের দিকে এসেছে। ভাল কভারেজ পাওয়ার কথা নিউজটা। কিন্তু কোথায় এর প্রতিক্রিয়া কেমন হচ্ছে সেটা মাহফুজ জানার কোন উপায় বের করতে পারছে না। বিশেষ করে আরশাদ আর  নুসাইবার প্রতিক্রিয়া জানা জরুরী। মাহফুজ খবরটা আবার ভাল করে পড়ল। অমিত আজাদ ভাই বেশ ভাল করে রিপোর্ট টা করেছে। অমিত ভাইয়ের রিপোর্টিং অবশ্য সব সময় ভাল। বেশ গুছিয়ে লিখেছে আরশাদ সাহেবের অফিসের দূর্নীতির কথা। প্ল্যান অনুযায়ী এটা প্রথম রিপোর্টিং। মাহফুজ জানে ধীরে ধীরে যে ঔষুধ কাজ করে সেটা সবচেয়ে ভাল কাজ করে। তাই অমিত ভাইয়ের সাথে প্ল্যান করে রিপোর্টিং টা তিন কিস্তির করা হয়েছে। প্রথম কিস্তিতে সরাসরি আরশাদ সাহেবের দূর্নীতির কথা কম বরং তার অফিসের সামগ্রিক চিত্র আছে। দ্বিতীয় কিস্তিতে থাকবে আরশাদ সাহেবের নানা সম্পদ্দের খবর আর তৃতীয় পর্বে থাকবে আরশাদ সাহেবের সাথে কোন কোন রাঘব বোয়াল জড়িত। এটাই মোটামুটি আউটলাইন। তবে দ্বিতীয় আর তৃতীয় পর্বে আসলে কিভাবে লিখবে অমিত ভাই সেটা মাহফুজ জানে না। এই পর্বের রিপোর্টিং দেখে এটা বুঝছে যে পরে আর বড় বড় ধামাকা আসতে যাচ্ছে। তবে এই ধামাকা আরশাদ নুসাইবার উপর কি প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে সেটা নিয়ে মাহফুজ খুব চিন্তিত। সেই জন্য সকাল সকাল সিনথিয়া কে ফোন দিয়েছিল। সিনথিয়া কে জিজ্ঞেস করেছিল নানা কথার মাঝে ওদের বাসার সবাই ভাল আছে কিনা। সিনথিয়া বলেছিল হ্যা। মাহফুজ এমনিতে মাঝে মাঝে সিনথিয়ার বাসার সবার খোজ নেয় তাই সিনথিয়া অন্য কিছু ভাবে নি। তবে মাহফুজ টের পেয়েছে নুসাইবাদের খবর এখন সিনথিয়া পর্যন্ত আসে নি। আসলে সিনথিয়া ওকে না বলে থাকতে পারত না। আর মাহফুজ যেহেতু এই রিপোর্টিং এর সাথে ওর সংযোগ গোপন করে রেখেছে তাই অমিত ভাই আর ও ছাড়া কেউ এখানে ওর ইনভলভমেন্ট জানে না।  


সিনথিয়া কে জিজ্ঞেস করল নুসাইবা আর আরশাদের খবর কি? সিনথিয়া বলল আছে ভাল। কয়েকদিন কোন যোগাযোগ হয় নি। তুমি তো দুই দিন আগে দাওয়াত খেয়ে এলে কি বলল বল। মাহফুজ ঐদিন দাওয়াত খেয়ে আসার পর সাবরিনার সাথে হোটেলে কাটানো সন্ধ্যার কারণে ক্লান্ত ছিল। তাই তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পরেছিল। এরপরের দিন ছিল শনিবার। ইংল্যান্ডে ছুটির দিন। সিনথিয়া তার বিলাতি কাজিনদের সাথে ঘুরতে বের হয়েছিল। তাই সিনথিয়া সময় দিতে পারে নি। আজকে রোববার। তাই সিনথিয়া জানতে চাইছে কেমন হল মাহফুজের নুসাইবা আর আরশাদের বাসায় দাওয়াত খাওয়া। সিনথিয়ার প্রশ্নে মাহফুজের সেদিনের কথা মনে পড়ে গেল। সংগে সংগে মুখটা কেমন যেন তিতা হয়ে গেল। দাওয়াত দিয়ে বিয়ের ফাদে ফেলার কথা মনে পড়ল মাহফুজের। মাহফুজ চুপ করে আছে দেখে সিনথিয়া আবার প্রশ্ন করল। মাহফুজ বলল কি বলব বল। গেলাম, দাওয়াত খেলাম আর চলে আসলাম। সিনথিয়া মাহফুজের উত্তর দেবার ভঙ্গিতে বুঝল কিছু একটা গড়বড় হয়েছে। তাই বিভিন্ন ভাবে প্রশ্ন করে আসল কথা জানার চেষ্টা করল। সিনথিয়ার নিজের অবশ্য সন্দেহ হয়েছিল। নুসাইবা ফুফু এত তাড়াতাড়ি সহজে কিছু মেনে নেবার লোক না যদি না কোন দরকার থাকে। তাই মাহফুজ কে একদম এভাবে বাসায় দাওয়াত করে খাওয়ানোর ব্যাপারে নুসাইবা খানিকটা সন্দিহান থাকলেও ভেবছিল হয়ত মাহফুজ ওদের কে পিকনিক আয়োজনে হেল্প করা আর জগন্নাথ ভার্সিটিতে গেস্ট করে নিয়ে যাওয়ায় ওর উপর প্রসন্ন হয়ে এই দাওয়াত করেছে। সিনথিয়ার মনে হয়েছিল এটা বুঝি গ্রিন সিগনাল। তাহলে কিছুদিন পর নুসাইবা ফুফু কে ধরা যাবে বিয়ের কথা নিয়ে। যাতে  উনি ফ্যামিলির বাকিদের রাজি করাতে ভূমিকা নেন। তবে সিনথিয়ার জোরাজুরির মাঝে মাহফুজ যখন অল্প অল্প করে সব বলল তখন ফোনের অপর প্রান্তে সিনথিয়া বরং ফুসছে। মাহফুজ কে তখন বরং বলতে হল কুল ডাউন। আমি সব সামলে নিব। সিনথিয়া তখন বলছে হাউ ডেয়ার দে আর। জানে উনারা তোমার সাথে আমার একটা রিলেশন আছে সেখানে অন্য একটা মেয়ে কে এভাবে তোমার পিছনে লেলিয়ে দেবার কি মানে হয়। মাহফুজ বলল নুসাইবা ফুফু যতই আফসানা কে আনুক আমি তো তোমার পিছু ছাড়ছি না। সিনথিয়া এবার প্রশ্ন করে আফসানা কে? মাহফুজ বলে আরে, তোমার ফুফু যে মেয়েটাকে এনেছিল যাতে আমি তার প্রেমে পড়ি। এইবার সিনথিয়া যেন আর বারুদের মত জ্বলে উঠে। একবেলা দেখা হওয়ার পর নামও মনে রেখেছ দেখি। একটু গলা  বাকিয়ে ভেংগানোর মত করে বলল, আফসানাআআআ। নামের বাহার দেখ। আবার সেই নাম মনেও রেখেছে একজন। মাহফুজ বুঝল না বুঝেই আগুনে ঘি দিয়ে দিয়েছে ও। তাই অনেকটা আত্মসমপর্ণের ভঙ্গিতে  বলল, আরে। তুমি তো জান আমার নাম ধাম ভাল মনে থাকে পলিটিক্সের অভ্যাসের কারণে। এটার সাথে আর কিছু নেই। সিনথিয়া এবার জিজ্ঞেস করল, এই আফসানা দেখতে কেমন? মাহফুজ বুঝল এটা একটা ট্রিক কোশ্চেন। যেই উত্তর দিক না কেন ধরা খাওয়ার চান্স আছে ওর। তাই একটু কথা এড়িয়ে যাবার চেষ্টা করল। বলল, অত খেয়াল করি নি। সিনথিয়া এবার কড়া গলায় বলল, খুব আফসানার রূপে গলে আছ তাই না। মাহফুজ অবাক হবার ভংগিতে বলল, আরে বললাম না অত খেয়াল করি নাই। সিনথিয়া বলল নাম মনে আছে আর দেখতে কেমন এটা মনে নাই। আমাকে পলিটিক্স শেখাও  তাই না। মাহফুজ বুঝল ভুল হয়ে গেছে। নাম আর চেহারা মনে রাখা পলিটিক্সের একটা টেকনিক। এই কথা ও হাজারবার সিনথিয়া কে বলেছে। তাই আফসানার নাম মনে আছে চেহারা মনে নাই এটা বলে বোকামি করেছে। মাহফুজ এবার তাই কথা আবার অন্যদিকে ঘুরানোর চেষ্টা করল। মাহফুজ বলল, আরে, আফসানা ঐখানে থাকবে এটা কি আমি জানতাম? নাকি আমি আফসানা কে আগে থেকে চিনতাম? আফসানা কে তো চিনে তোমার ফুফু নুসাইবা। বাংলাদেশ ব্যাংকের কি একটা কাজে আফসানাদের ঐখানে গিয়ে পরিচয় হয়েছিল। উনিই আফসানা কে দাওয়াত দিয়ে এনেছে ঐদিন। আর প্ল্যানটাও আমার ধারণা উনার। আফসানা কে সামনে এনে তোমার রাস্তা থেকে আমাকে সরানো। তবে আমি কি আর তোমার মত সুন্দরী কে ছেড়ে আফসানার পিছনে যাই? সিনথিয়া এবার বলল, তার মানে আফসানা যদি আমার থেকে সুন্দরী হত তাহলে যেতে? মাহফুজ দেখল এতো জলে কুমীর ডাংগায় বাঘ। ভেবেছিল সিনথিয়ার রূপের প্রশংসা করে রাগ কমাবে বরং এই রাগ যেন সাপের মত প্যাচিয়ে ধরছে কথার মারপ্যাচে। মাহফুজ বলে, দেখ সৌন্দর্য কি খালি চেহারায় হয়? তোমার ব্যক্তিত্ব, মন সব মিলিয়ে যে সিনথিয়ার দেখা আমি পেয়েছি এমন কাউকে কি আর কোথাও খুজে পাব? তোমার সাথে দেখা হবার আগে আমি একজন খালি ছাত্রনেতা ছিলাম যার সম্ভাবনা ছিল কিন্তু ভবিষ্যত কেমন হবে যার কোন ধারণা ছিল না। তুমি আমাকে শিখিয়েছ কিভাবে মাথা ঠান্ডা রাখতে হয়। দূরের প্ল্যান করে আস্তে আস্তে আগাতে হয়। তুমি আমার প্রতি যে আস্থা রেখেছ সেটা আমার কনফিডেন্স লেভেল কিভাবে বাড়িয়েছে সেটা তোমার কোন ধারণা নেই। বিশ্বসুন্দরী কে নিয়ে আসলেও সে আমাকে এমন কিছু দিতে পারবে না যা তুমি আমাকে দিয়েছ।


সিনথিয়ার রাগ এবার একটু পড়ে আসে। বলে আসলে সব দোষ নুসাইবা ফুফুর। আব্বুদের এক কাজিনের বিয়েও ভাংগানি দিয়েছিল এমন ভাবে। আমরা তখন অবশ্য বেশ ছোট। তাই সব জানি না, তবে পরে হালকা পাতলা যা শুনেছি উনারা এমন একজনের সাথে কাজিনের লাভ ইন্টারেস্টের পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন যার সাথে সেই লাভ ইন্টারেস্টের পড়ে প্রেম হয়ে গিয়েছিল। ফলে কাজিনের প্রেম আপনা আপনি ভেংগে যায়। এই কথা অবশ্য সবাই জানে না। আম্মু কে একদিন বলছিল নুসাইবা ফুফু তখন আমি শুনে ফেলেছিলাম। চিন্তা কর। কি ইভিল প্ল্যান। নুসাইবা ফুফুর মত এমন ভদ্র মানুষ কে দেখলে মনেই  হবে না উনার মাথা দিয়ে এসব বুদ্ধি বের হয়। অবশ্য আমার ধারণা এখানে আরশাদ ফুফাও কিছুটা হেল্প করেছে। নুসাইবা ফুফুর মধ্যে একটু ক্লাস নিয়ে বাড়াবাড়ি রকমের সচেতনতা আছে এর বাইরে তেমন খারাপ কিছু আছে আমার কখনো মনে হয় নি। এর আগে যখন উনাদের কাজিনের ঘটনা শুনেছি তখন বেশ ছোট দেখে এর ভালমন্দ নিয়ে এত চিন্তা করি নি। কিন্তু তুমি বলার পর মনে হচ্ছে নুসাইবা ফুফু তখন কত খারাপ একটা কাজ করেছিল। ভালবাসা নিয়ে এইভাবে খেলে ভালবাসা ভাংগা একদম ইভিল একটা ব্যাপার। পুরো শয়তানি বুদ্ধি। আজকে তুমি যদি সত্যি সত্যি এই আফসানা মেয়েটার প্রেমে পড়ে যেতে? তাহলে আমার কি হত? আমি হয়ত ঠিক ভাবে বুঝতেও পারতাম না কোথা দিয়ে কি হল। তোমাকে আর ঐ মেয়েটাকে গালিগালাজ করে ফাটিয়ে ফেলতাম, আর ঘর  বন্ধ করে বুক ভাসিয়ে কাদতাম। ফুফু হয়ত তখন ঠিক ভাল মানুষের মত এসে আমার মাথায় হাত বুলাতো। সান্তনা দিয়ে বলত রাগ করিস না, দেশে কি ভাল ছেলের অভাব। তোকে আমরা মাহফুজের থেকে ভাল একটা ছেলের সাথে বিয়ে দিব। ফুফু কি এইটা একবারো চিন্তা করে নি যে আমার পড়াশুনার মাঝে এমন একটা খবর শুনলে আমি পড়াশুনা সব বাদ দিয়ে দেশে চলে আসতাম। আমার মাস্টার্সটা একদম শেষ হয়ে যেত। নুসাইবা ফুফু পড়াশুনা কে এত দাম দেয়, নিজেই বাইরে থেকে একটা মাস্টার্স করে এসেছে। আর তার ভাতিজির ব্যাপারে এই খেয়ালটুকু করল না। খালি তোমাদের পরিবার আমাদের পরিবারের সমান না এই চিন্তা থেকে। ভেবে দেখছ কত বড় স্বার্থপর একটা কাজ। উনার মাথার ভিতর থাকা একটা মান্ধাতার আমলের ধ্যানধ্যারনার জন্য উনি তিন তিনটা জীবন নিয়ে খেলতে চাইছেন। আমি, তুমি আর আফসানা। এইটা কে তুমি কি বলবে? মাহফুজ টের পায় ওর ভিতরে থাকা রাগটা এখন সিনথিয়ার ভিতরেও সংক্রমিত হয়েছে। নুসাইবা কে খুব ভালবাসে সিনথিয়া, এটা প্রায় সময় কথায় টের পেয়েছে মাহফুজ। তবে আজকে যখন সিনথিয়া এই কথা গুলো বলছে তখন ওর কথায় একটা তীব্র রাগের ঝাঝ পাচ্ছে মাহফুজ।


সিনথিয়া বলে ধর যদি ফুফু তোমাকে সরাসরি আফসানার কথা জিজ্ঞেস করত? তোমার কি আফসানা কে পছন্দ নাকি? অথবা আফসানাই যদি সরাসরি তোমাকে প্রস্তাব দিয়ে বসত তাহলে কি করতে? মাহফজ টের পায় আবার ট্রিক কোশ্চেন। তাই একটু হালকা উত্তর দিয়ে উড়িয়ে দিতে চায়। বলে তোমার ফুফু প্রশ্ন করলে বলতাম আফসানা তো আপনার মত সুন্দর না, আপনার মত সুন্দর হলে অবশ্যই বিয়ে করে ফেলতাম। আর আফসানা আমাকে জিজ্ঞেস করলে বলতাম আমি পরীর মত সুন্দর আর শিশুর মত কোমল হৃদয়ের একটা মেয়ে কে ভালবাসি। তাই আমার পক্ষ্যে অন্য কার ভালবাসা গ্রহণ করা সম্ভব না। সিনথিয়া ফোনের ভিতর হেসে দেয়। বলে, ইউ আর রিয়েলি এ ট্রিকি ওয়ান। এইভাবে উত্তর দিলে আসলেই মজা হত। মাহফুজ বলে কাকে? আফসানা কে? সিনথিয়া বলে আরে নাহ। আফসানারটা আমি বুঝছি। তুমি আমাকে তেল দেবার জন্য বলছ বাট ফুফু কে তুমি এই উত্তর দিলে ফুফু কেমন আতকে উঠত সেইটা ভেবে হাসতেছি। উনি যে ইভিল প্ল্যান করছে অবশ্য এর জন্য উনার আর বড় শাস্তি হওয়া দরকার। মাহফুজ বলে কেন নুসাইবা ফুফু আতকে উঠত? সিনথিয়া বলে আরে বুঝ নি এই কয়দিন কথা বলে। উনি এমনিতে খুব প্রিম এন্ড প্রপার যাকে বলে। সীমা লংঘন করে এমন কিছু উনি বলতে  বা শুনতে ইচ্ছুক না। বিভিন্ন রকম আদব কায়দা মানার ব্যাপারে উনি খুব সচেতন। উনার সামনে ভুলেও কেউ বাল শব্দটা বলে ফেললে যে পরিমান বকাঝকা শুনতে হবে তাকে। আমাদের ড্রাইভার একদিন গাড়ি চালানোর সময় হঠাত করে সামনে একটা রিক্সা কোন সিগনাল না দিয়ে চলে আসলে, বেচারা অভ্যাসের বসে বলে ফেলেছিল, বালের রিক্সা। এরপর মনে হয় দশ মিনিট ধরে লেকচার শোনা লাগছে ড্রাইভার ভাইয়ের। আর এখন যদি ভাতিজির প্রেমিক বলে আপনার মত সুন্দরী কাউকে বিয়ে করব তাহলে উনার জন্য এটা কত বড় ঘটনা তুমি  বুঝবা না। আমাদের ফ্যামিলিতে ছোটবড় সবার একটা স্থান আছে, কেউ কার স্থান অতিক্রম করে না। যতই আমি ফ্রি হই না কে ফুফুর সাথে একটা লেভেলের পর আর কিছু বলতে পারব না বা দুষ্টমি করতে পারব না। সেখানে আমার প্রেমিক যদি বলে আপনার মত সুন্দরী কাউকে বিয়ে করব সেটা উনার জন্য একটা শক। মাহফুজ বলল কেন? সিনথিয়া হাসতে হাসতে বলল কারণ তুমি একটা বদ এবং তোমার মাথায় সব বদ বদ চিন্তা ঘুরাফিরা করে। মাহফুজ বলে এখানে আমি আবার বদ কি বললাম আর  বদ কি চিন্তা করলাম। সিনথিয়া হাসতে হাসতে বলে নিজের কথা নিজেই খেয়াল করে দেখ। মাহফুজ বলল, কেন আমি তো প্রশংসা করার জন্য বললাম। এমন ভাবে বললাম যাতে উনি ভাবে উনাকে সুন্দরী বলছি। আর উনার মত সুন্দরী কাকে জিজ্ঞেস করলে তোমার কথা বলতাম। তাহলে সাপ মরত লাঠিও ভাংগত না। সিনথিয়া এখনো হাসছে, বলে উহু। ফ্রয়েডের নাম শুনেছ না। মাহফুজ বলে এই যে দিলে একটা খোটা? তোমার বোন আর ফুফুর মত মনে করিয়ে দিলে আমি তোমাদের মত ভাল স্কুল বা ভার্সিটিতে পড়ি নি। সিনথিয়া বলে, উহু মোটেই সেটা না। আমার সাথে এইসব ইমোশনাল চাল দিলে  হবে না বুঝছ। মাহফুজ হাসে,বলে বুঝলাম। ফ্রয়েড কে না চিনার কারণ নাই। এখন কি আমার স্বপ্ন ব্যাখ্যা দিবা নাকি? আমি তো আমার কোন স্বপ্নের কথা বলি নাই। বাস্তবে এই প্রশ্ন হলে কি বলতাম সেটা বলেছি।


সিনথিয়া বলে আমি সেটা জানি। তবে সবাই খালি ফ্রয়েডের অল্প কিছু দিক জানে। তার স্বপ্ন ব্যাখ্যা, যৌনতার সাথে ব্যক্তিত্বের সম্পর্ক এইসব। ফ্রয়েড কিন্তু খালি এইসব বলে থেমে যায় নি। এগুলো যদিও তার জনপ্রিয় ব্যখ্যা। মাহফুজ হাসতে হাসতে বলে একদম ক্লাস লেকচার দেবার মত করে বলছ। সিনথিয়াও মজা করে উত্তর দেয়, কেন জাননা আমার মা টিচার। মায়ের কাছ থেকেই তো শিখেছি। মাহফুজ হাসে। সিনথিয়া বলে ফ্রয়েডের মানুষের আচরণ ব্যাখ্যা দেওয়ার একটা পয়েন্ট ছিল আমরা অবেচেতন মনে যা ভাবি তা বিভিন্ন ভাবে আমাদের কথায়, আচার আচরণে প্রকাশ পায়। অবচেতন মনের ইচ্ছা যে খালি স্বপ্নে বিভিন্ন রূপে দেখা দিবে সেটা না। মাহফুজ বলে এটার সাথে আমার কথায় কি সম্পর্ক? সিনথিয়া বলে আছে আছে, ভেবে দেখ। মাহফুজ বলে তুমি বুঝিয়ে বল। সিনথিয়া বলে তুমি কি বলেছিল? আফসানা আপনার মত সুন্দর না, আপনার মত সুন্দর হলে বিয়ে করে ফেলতাম।  মাহফুজ বলে হ্যা। সিনথিয়া বলে এর মানে তুমি তোমার বউ এর চরিত্রে নুসাইবা ফুফু কে চিন্তা করেছ। তার মত কেউ যদি তোমাকে প্রেমের প্রস্তাব দেয় তাহলে তুমি সানন্দে সেই প্রস্তাব গ্রহণ করবে। মাহফুজ আবার একটু সংশয়ে পড়ে যায়। সিনথিয়া মাঝে মাঝে ওকে এমন কনফিউজড করে দেয় যে ঠিক কি উত্তর দিবে বুঝে উঠতে পারে না। একমাত্র সিনথিয়া ওর সাথে এটা করতে পারে। মাহফুজ কনফিউজড হয়ে চুপ করে থাকে। সিনথিয়া বলে কি চুপ কেন? উত্তর নেই মুখে। মাহফুজ বলে আরেহ না, এমন কিছু না। সিনথিয়া হেসে বলে তোমার মত কুত্তা নুসাইবা ফুফুর মত সুন্দরী কে দেখে একবারো বউ বা প্রেমিকা পজিশনে চিন্তা কর নি সেটা হতেই পারে না। আই নো ইউ মিঃ মাহফুজ। মাহফুজ না  না করে উঠে। সিনথিয়া হেসে দেয়। মাহফুজের এরকম কনফিউজড অবস্থা ওর দারুণ পছন্দ। মাহফুজের ব্যক্তিত্ব, স্ট্রং পার্সনালিটি যেমন মাহফুজের মেইন এট্রাকশন ঠিক তেমনি মাঝে মাঝে ওর সামনে মাহফুজের এই কনফিউজড আচরণ সিনথিয়ার দারুণ প্রিয়। ওর মনে হয় মাহফুজের মত এমন স্ট্রং একটা ছেলে খালি ওর সামনে মাঝে মাঝে কথা খুজে পাচ্ছে না। শি লাইকস ইট। তাই আরেকটু মজা করতে চায় সিনথিয়া। আর আজকে রোববার এমনিতেও ছুটির দিন চলছে। বাসায় আর কোন কাজ নেই। তাই মাহফুজ কে আরেকটু ঘাটাতে মন চায় ওর।


সিনথিয়া গলা শক্ত করে বলে এটা বল না নুসাইবা ফুফুর সৌন্দর্য কখনো খেয়াল কর নি। মাহফুজ জানে এটা ট্রিক কোশ্চেন, যাই উত্তর দিক ধরা খাওয়া নিশ্চিত। তাই চুপ করে থাকে। সিনথিয়া বলে ফুফুর মত সুন্দর কম মানুষ পাবে এই বয়সে। ফুফু চল্লিশ হল মাত্র কিন্তু দেখে কিন্তু মনে হয় না। মাহফুজ চুপ করে আছে দেখে সিনথিয়া যেন আর মজা পায়। তাই খেলার মাত্রা আরেকটু বাড়ায় সিনথিয়া। বলে ফুফু যে সুন্দরী কখন টের পেয়েছি জান। যখন আমার বয়স মোটে দশ এগার। তখনো আমি বড় হওয়া শুরু করি নি তখন ফুফুর সাথে কোথাও গেলে সবাই ফুফুর দিকে যেভাবে মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকত তাতে বুঝা যেত ফুফু সৌন্দর্যের আকর্ষণ। ভার্সিটিতে থাকতে একদিন ফুফু আমাকে ভার্সিটিতে নামিয়ে দিতে গিয়েছিল সেদিন আমার ছেলে বন্ধুরা যেভাবে ফুফু কে চোখ দিয়ে গিলে খাচ্ছিল তাতেই বুঝা যাচ্ছিল ফুফুর সৌন্দর্যের আকর্ষণ বয়সের সাথে কমে নি বরং বেড়েছে। তুমিই তো আমার ফেসবুকে ফুফুর ছবি দেখে বলেছিলে হট, বল নি বল? মাহফুজ অস্বীকার করতে পারে না। বলে হ্যা। সিনথিয়া যেন এবার নিজের খেলায় নিজেই ভাল করে মজে উঠেছে। সিনথিয়া তাই বলে খালি ছেলেদের কথা কি বলব। সেদিন আমাদের বান্ধবীরাও চোখ ফেরাতে পারছিল না। আমার বান্ধবী আসফিয়া কে তো চিন। কি বলেছিল জান? তোর ফুফুর মত ফিগার আমারদের নেই। ঐ বয়সে এর অর্ধেক ফিগার ধরে রাখতে পারলে হাজার হাজার চোখ আটকে থাকবে শরীরে। এইবার বুঝ তাহলে কেন বাচ্চা না হবার পরেও আরশাদ ফুফা আর কোথাও তাকায় না। কারণ ফুফুর এই ফিগার, এই সৌন্দর্য, ব্যক্তিত্ব। ফুফু ইজ টোটাল প্যাকেজ। এর বাইরে কি আর আরশাদ ফুফা চিন্তা করতে পারে। আমি জানি তুমিও আর বাকি সব পুরুষের মত। ফুফুর এই ম্যাগনেটিক সৌন্দর্য তুমি এড়াতে পারবে না। মাহফুজ এবারো চুপ। সিনথিয়া বলে ভয় পেও না। ইউ কেন লুক, আই ডোন্ট মাইন্ড। মাহফুজ বলে নুসাইবা ফুফু কে আমি এই নজরে কিভাবে দেখব বল, তোমার ফুফু উনি। সিনথিয়া বলে আই নো, আই নো। নুসাইবা আমার ফুফু বাট উনি একটা খারাপ কাজ করছেন। নিজে প্রেম করে বিয়ে করে আমার প্রেমে বাগড়া দেবার চেষ্টা করছেন। এটা উনি ঠিক করেন নি, এই জন্য উনার পানিশমেন্ট হওয়া দরকার। আই এম রিয়েলি রিয়েলি ম্যাড উইথ হার দিস মোমেন্ট। তুমি আমার রাগ হলে কি কর মাহফুজ? মাহফুজ বলে রাগ ঠান্ডা করার চেষ্টা করি। সিনথিয়া বলে আমার রাগ ঠান্ডা করার সবচেয়ে ভাল উপায় কি? মাহফুজ বলে তোমার কথা শুনা। সিনথিয়া বলে তাহলে এখন আমার কথা শুন আর আমার মেজাজ ঠান্ডা কর। আমার বয়ফ্রেন্ড কে কেউ চুরি করে অন্যখানে দিয়ে দিতে চাইবে আর আমার মাথা ঠান্ডা থাকবে এটা হতেই পারে না। নুসাইবা ফুফু খুব ক্লাস সচেতন, খুব ইমেজ সচেতন। উনার থেকে বছর দশেকের ছোট একটা ছেলে উনার দিকে অন্য দৃষ্টিতে তাকাবে এটা উনি মেনেই নিতে পারবেন না। আর যে ছেলে উনার ভাতিজি কে ভালবাসে সে ছেলে তার দিকে কেমন কেমন দৃষ্টিতে তাকাবে এটা শুনলে উনি রেগে মেগে ফায়ার হয়ে যাবেন। রেগে গেলে ফুফু কোন কথা বলতে পারেন না। চোখ গুলো বড় বড় করে তাকিয়ে থাকেন। নাক ফুলিয়ে ফোস ফোস করে নিশ্বাস নেন। আমি চাই উনার এখন সেই অবস্থা হোক। আমাকে যেমন রাগিয়ে দিয়েছেন ঠিক সেরকম যেন উনার অবস্থা হয়। মাহফুজ মনে মনে বলে আমিও তো সেটাই চাইছি। সিনথিয়া বলে আজকে আমি সেই কাজটাই করব যাতে ফুফু রেগে যায়। যদিও ফুফু এখানে নাই তবে আমাদের তো ভেবে নিতে সমস্যা নাই ফুফু সামনে আছে। আমরা ফুফু কে দেখছি। আমি উনার আপন ভাতিজি নিজের জামাই কে দেখাচ্ছি নিজের ফুফু কে। নিজের ফুফুর শরীর কে। উনি দেখুক উনার তুমি কিভাবে ফুফু শ্বাশুড়ির দিকে লোভাতুর দৃষ্টিতে তাকাচ্ছ। দেখে উনার রাগে শরীর জ্বলে যাক। এটাই উনার পানিশমেন্ট। আই ওয়ান্ট টু টিচ দিস বিচ এ লেসন। যদিও এটা আমাদের ইমাজিনেশন তাও অন্তত এখানে হলেও আই ওয়ান্ট টু টিচ হার এ লেসন। মাহফুজ আবার মনে মনে বলে আমিও তো তাই চাইছি। তবে মুখে বলে ওকে, আই এম ওকে উইথ দিস।


মাহফুজ বুজে সিনথিয়া এই মূহুর্তে প্রচন্ড রেগে আছে। যখন সিনথিয়া প্রচন্ড রেগে থাকে তখন ওর মেজাজের কোন ঠিক ঠিকানা থাকে না। তাই নুসাইবার উপর দিয়ে এই রাগ ঝাড়তে চাচ্ছে। তবে যেটা সিনথিয়া নিজেও বুঝে উঠতে পারছে না আর মাহফুজ নিজেও বুঝছে না সেটা হল সিনথিয়ার ভিতরে চাপা পড়া যৌন আকাঙ্ক্ষা। সিনথিয়া একটু আগে মাহফুজ কে ফ্রয়েডের তত্ত্ব বুঝালেও ফ্রয়েডের আরেকটা ব্যাখ্যা সিনথিয়ার মনে ছিল না। মানুষের অবদমিত যৌন আকাঙ্ক্ষা অনেক সময় এগ্রেশনের মাধ্যমে বের হয়। সেটা সেক্সুয়াল থেকে বিহেভিয়েরাল এগ্রেশন দুইটার যে কোন মাধ্যমে হতে পারে। সিনথিয়া এই মূহুর্তে যেটা করছে সেটা ক্লাসিক সেক্সচুলায়ল এগ্রেশন। পার্টনারের দূর্বল জায়গা কে এক্সপ্লয়েট করা আর যার উপর রাগ তাকে সেক্সুয়াল ফ্যান্টাসির জন্য ইউজ করা। সিনথিয়া দেশ ছেড়েছে প্রায় ছয় মাস। এর মাঝে মাহফুজের সাথে ফোন সেক্স আর মাঝে মাঝে নিজের মাস্টারবেটিং সেশন গুলো ছাড়া সিনথিয়ার সেক্সুয়াল রিলিজের কোন মাধ্যম নাই। সিনথিয়া এমনিতে সব সময় ওয়ান ম্যান ওমেন। রিলেশনের ক্ষেত্রে এমনিতে অন্য দিকে তাকানোর নজির ওর নাই কখনো। তাই বিলাতে আসার পর অন্য কোথাও সেক্সুয়াল রিলিজের মাধ্যম খুজে নি। আর মাহফুজের উপর ওর ভালবাসাটা আসলেই নিখাদ। সিনথিয়া দেখেছে ওকে যারা এই পর্যন্ত ভালবেসেছে তাদের একদল ভালবেসেছে ওর ফ্যামিলি স্ট্যাটাস, ওর ক্লাস এইসব দেখে। আরেকদল ভালবেসেছে ওর ফিগার দেখে। আসল সিনথিয়া কে বুঝার চেষ্টা করে নি কেউ। মাহফুজ একমাত্র পুরুষ যে আসল সিনথিয়ার মন বুঝার চেষ্টা করেছে। বেশির ভাগ বাংগালী পুরুষরা যেখানে বউ যদি তার থেকে উচ্চশিক্ষিত হয় তখন থ্রেট ফিল করে সেখানে মাহফুজ ব্যতিক্রম। সিনথিয়ার পড়তে আসার ব্যাপারে সব সময় খুব সাপোর্টিভ তাই মাহফুজের প্রতি ওর ভালবাসার সাথে সাথে একটা আন্ডারস্ট্যান্ডিং আছে। একটা ভালবাসা শুধু মনের টানের উপর টিকে থাকতে পারে না সাথে একটা  আন্ডারস্ট্যান্ডিং থাকতে হয়।  সিনথিয়া জানে ওদের সম্পর্কের জোরের জায়গাটা এটা। তাই কখনো আশেপাশে অন্য রিলেশনে জড়িয়ে এই সম্পর্কটা নষ্ট করতে চায় নি। তাই শুধু ফোন সেক্স আর মাস্টারবেশনের উপর আছে এই কয় মাস। তবে গত এক মাসে সেটাও কমে এসেছে পরীক্ষা আর পড়াশুনার চাপে। তাই ভিতরে ভিতরে জমা হতে থাকা যৌনতার আগুন আর তার উপর নুসাইবার কান্ড সব মিলে যেন ছাইচাপা আগুনে ঘি ঢেলে দেওয়া হয়েছে। আজকে তাই অনেক দিন ধরে না হওয়া সেক্স সেশন যেন পূর্ণগতিতে চালু করতে চাইছে সিনথিয়া।


সিনথিয়া তাই এবার কড়া গলায় জিজ্ঞেস করে ফুফুর কি তোমার সবচেয়ে ভাল লাগে। মাহফুজ যদিও আস্তে আস্তে সিনথিয়ার খেলাটা বুঝে উঠতে পারছে তবে এখনো একটু সংশয়ে আছে। তাই সেফ খেলে, বলে উনার ব্যক্তিত্ব। সিনথিয়া এখন পুরো খেলার মুডে। বলে, মিথ্যা বলো না একদম। আমি জানি তুমি নুসাইবা ফুফুর কি সবচেয়ে ভালবাস। মাহফুজ যেন এবার একটু একটু করে খেলায় ঢুকছে। বলে, কি পছন্দ আমার? সিনথিয়া বলে প্রথমবার যখন ফোন সেক্সে তুমি আপু আর ফুফুর কথা এনেছিলে মনে আছে? তখন কি বলেছিলে? মাহফুজ মনে করতে পারে না। সিনথিয়া বলে পোদওয়ালি। হ্যা, তুমি আমার লক্ষী ইভিল, ভাইদের আদরের মিষ্টি ফুফু কে বলেছিলে পোদওয়ালি। যে ফুফু সব রকম ব্যাপারে খুব প্রিম এন্ড প্রোপার তাকে রাস্তার ছেলেদের ভাষায় বলেছিলে পোদওয়ালি। সিনথিয়ার কথা শুনে মাহফুজের বাড়াটা প্যান্টের ভিতর তড়াক করে  উঠে। ফুফুর পোদের দাবনা ফাক করে দেখতে চেয়েছিলে মনে আছে? মাহফুজ  বলে হ্যা। সিনথিয়া বলে এইতো গুড বয়। মনে পড়েছ তাহলে। ফুফুর শাস্তি কি হবে আসলে জান। তোমার হাতে যদি ফুফুর পোদের দলাই মলাই হত সেটা হত উপযুক্ত শাস্তি। আমার ভদ্র রাগী ফুফুটা লজ্জায় কিছু বলতে পারত না। তুমি আমার পাছায় আদর করার সময় আমি যেভাবে উত্তেজনায় চেচাতে থাকি ভাব ফুফু কি করবে। আমার থেকে বড় পোদ কিন্তু লজ্জা সংস্কারের ভয়ে কিছু বলতে পারবে না। তুমি পোদ মালিশ করবে, ভিতরটা চাটবে আর ফুফু উত্তেজনায় কুই কুই করবে। শব্দ লুকিয়ে রাখার জন্য বালিশে মুখ চেপে রাখবে নিজেই পাছাটা উলোটে। মাহফুজের মনে হয় বাড়া বুঝি এখনি ফেটে পড়বে। সিনথিয়ার মত আর কেউ ওকে নিয়ে এমন খেলতে পারে না। বাকি সাবার সাথে ও খেলে কিন্তু সিনথিয়া বুঝি ওর সাথে খেলে। সিনথিয়া বলে একবার কাপড় কিনতে গিয়ে ট্রায়ল রুমের সামনের আয়নায়  নিজেকে দেখে কি বলেছিল জান? বলেছিল দেখ তো সিনথিয়া আমার পেছন টা কি বেশি বড়? কি শব্দ পেছন টা? এমনকি পাছা, নিতম্ব, এসের মত শব্দ বলতেও বাধে ফুফুর। সেই ফুফুর নিতম্ব নিয়ে খেললে কি হবে বুঝ? আর তুমি যেভাবে পাছায় আগুন জ্বালাতে পার আমি নিশ্চিত ফুফুর পাছায় তুমি চাইলেই আগুন জ্বালাতে পারবে। আর ফুফু সেই আগুনে জ্বলবে কিন্তু শব্দ করতে পারবে না। তোমাকে প্রতিটা অপমানের শোধ তুলবে পাছার উপর। ঠাস, ঠাস, ঠাস। চড়িয়ে লাল করে দিবে পাছা। আমার ফুফুটা কিছুই বলতে পারবে না। তুমি নুসাইবা ফুফুর উপর শোধ তুলবে। শো হার হু ইজ দ্যা কুইন বিচ। আই এম। এন্ড শো হার নো ওয়ান ক্রসেস মি। আমার সাথে এইসব করলে তুমি কি করবে দেখিয়ে দাও নুসাইবা ফুফু কে। মাহফুজ টের পায় অন্য পাশে সিনথিয়া মাস্টারবেট করছে। সিনথিয়ার গলার স্বর গাড় হয়ে আসছে। ঘন ঘন শ্বাস পড়ছে কথা জড়িয়ে আসছে। মাহফুজ জানে এটা। মাহফুজ তাই প্যান্টের ভিতর হাত দেয়। সিনথিয়া বলছে ফুফু কে কি শাস্তি দিতে হবে আর জান? সারাদিন তোমার ফ্লাটে কাপড় ছাড়া আটকে রাখতে হবে। যাতে কোথাও যেতে না পারে। হাটবে তোমার সামনে কাপড় ছাড়া। উফ কি বড় দুধ ফুফুর। সেগুলো দুলবে। বাচ্চা ছাড়াই কি বড় দুধ দেখ। তুমি মাঝে মাঝে বল না বদ দুধওয়ালিরা আসলে ট্যাংকার। আমার ফুফুও ট্যাংকার, বাচ্চা ছাড়া দুধের ট্যাংকার। এই ট্যাংকার তুমি সারাদিন আদর করবে, খাবে। মাহফুজের শ্বাস আটকে আসছে। পুরো গতিতে হাত চলছে বাড়ায়। খাও মাহফুজ খাও। চুষে চুষে খাও। কামড়ে কামড়ে খাও। টিপ। জোরে জোরে টিপ। দাগ ফেলে দাও। টিপে টিপে ফুফুর সব দেমাগ বের করে দাও। চুষে চুষে ফুফুর সব ইভিল বুদ্ধি বের করে দাও। দেখুক আমাদের মাঝে আসলে কি হয়। কিভাবে আমরা খেলি। তুমি দেখিয়ে দাও আমার মাহফুজ কত বড় খেলোয়াড়। এই খেলোয়াড় কিভাবে ফুফুর সব দেমাগ নিংড়ে নিবে দেখিয়ে দাও। মাহফুজ এইবার আজকে প্রথমবারের মত মাঠে নামে। বলতে থাকে, নুসাইবা দেখ আমি তোমার কি অবস্থা করি। তোমার দুধের সাথে কিভাবে খেলি। তোমার পাছার উপর কিভাবে আমার সিল মারি। ঐদিকে সিনথিয়ার গলা দিয়ে গো গো শব্দ বের হচ্ছে। মাহফুজ একের পর এক বলে চলে কিভাবে নুসাইবার শরীরে আগুন জ্বালাবে কিভাবে বাধ্য করবে ওর অনুগত হতে। এসবের মাঝেই ফোনের ওপাশ থেকে একটা চিৎকার আসে। মাহফুজ, মাহফুজ আমার হচ্ছে। সিনথিয়ার শব্দে মাহফুজও আর ধরে রাখতে পারে না। সাদা তরলে হাত বিছানা ভেসে যায়। ফোনের দুই পাশে দুই মহাদেশে ক্লান্ত দুইজন চরম উত্তেজনার পর তখন চুপচাপ শুয়ে থাকে। দুইজনের মাথাই তখন নুসাইবা কে শায়েস্তা করার উপায় ঘুরছে। একজন কল্পনায় আরেকজন বাস্তবে।
Like Reply


সিনথিয়ার সাথে সেশনটা মাহফুজের মাথা একটু ঠান্ডা করলেও ভিতরে ভিতরে ওর কৌতুহলটা একদম যাচ্ছে না। খবরটা পাবলিশ হওয়ার পর নুসাইবা বা আরশাদের প্রতিক্রিয়া কি হল সেটা জানার কৌতুহল ক্রমশ বাড়ছে ওর। সিনথিয়া যেহেতু এখনো কিছু জানে না তার মানে এই খবরটা এখনো ফ্যামিলি লেভেলে আসে নি। সময় কম। আগামী রিপোর্ট বুধবার প্রকাশিত হবে। এখন রবিবার বিকালবেলা। বুধবারের আগে নুসাইবা আর আরশাদের সাথে পত্রিকার এই রিপোর্টের ব্যাপারে একটা কনটাক্ট স্থাপন করতে হবে। একমাত্র তখন ত্রাতা হিসেবে মাঠে নিজের ভূমিকা স্টাবলিশ করার একটা ভাল সুযোগ হাতে আসবে মাহফুজের। রাজনীতির মাঠের নিয়ম হচ্ছে যদি তাড়া থাকে তাহলে অনেক সময় নিজ থেকে উদ্যোগ নিতে হয়। এই যেমন মাহফুজ নিজ থেকে উদ্যোগ নিয়ে একটা কৃত্রিম সংকট তৈরি করেছে আরশাদ আর নুসাইবার জন্য। এখন ভিতরের খবর বের করার জন্য ওকে আবার প্রোএক্টিভ হতে হবে। নিজ থেকে কোন উদ্যোগ নিতে হবে। সেই উদ্যোগের প্রথম টার্গেট সিনথিয়া কোন খবর দিতে পারল না তাই মাহফুজ ভাবছিল কি করা যায়। ঠিক তখন মনে হল এই নামটা এতক্ষণ মাথায় আসে নি কেন। পরিবারের সাথে মানুষ এইসব ব্যাপারে ডিসকাস না করলেও ঠিক বেস্ট ফ্রেন্ডের সাথে করবে। মাহফুজ তাই ফোনের ভিতর জেবার নাম্বার খুজতে থাকে। আরশাদ রিয়াদের সাথে অবশ্যই কথা বলবে এই ব্যাপারে। আর মাহফুজ টের পেয়েছে রিয়াদ তার অনেক গোপন কথাই জেবার সাথে শেয়ার করে।


মাহফুজ যখন জেবার নাম্বার খুজছে ফোনে ঠিক সেই মূহুর্তে জেবাও মাহফুজের কথা ভাবছিল। দুপুরে লাঞ্চ ব্রেকে ম্যানেজারের রুমে গিয়েছিল কথা বলতে। ম্যানেজারের রুমে কয়েকটা পত্রিকারর সৌজন্য কপি থাকে সব সময়। জেবা তাই প্রতিদিন একবার করে গিয়ে ম্যানেজারের সাথে কথা বলে আসে আর এই ফাকে পত্রিকা গুলো চেক করে। সরকারী চাকরির পরীক্ষার জন্য নিয়মিত পত্রিকা পড়তে গিয়ে অভ্যাস হয়ে গিয়েছে। যদিও বাসায় একটা পত্রিকা রাখা হয় তাই ম্যানেজারের রুমে অন্য পত্রিকাগুলো হালকা চেক করে। ইন্টারেস্টিং কোন খবর পেলে বসে একটু পড়ে। অনেক সময় পড়তে না পারলে অফিস ছুটির সময় ম্যানেজারকে বলে সেই পত্রিকাটা  বাসায় নিয়ে যায়। এই নিয়ে অবশ্য ম্যানেজার বেশ হাসাহাসি করে। বলে, জেবা কি আবার বিসিএস দিচ্ছেন নাকি। জেবা অবশ্য লজ্জায় লাল হয়ে যায়। তবে ওর অনাড়ম্বর জীবনে অল্প কিছু স্বাদ আহলাদের মধ্যে এটা একটা। এমনিতেই জেবা পড়াশুনায় কখনো খুব উজ্জ্বল ছিল না। যা কিছু করেছে পড়াশুনায় তার যতটা না মেধা তার থেকে বেশি চেষ্টার বলে। বাকি পরিশ্রমী ছাত্রদের মতন জেবা ভাল রেজাল্ট করলেও তেমন একটা গূরুত্ব পায় নি বন্ধু মহলে কখনো। সবাই ভাবত এমন গরুর মত পড়লে ওরাও পারবে জেবার মত রেজাল্ট করতে। জেবা তাই সব সময় চেষ্টা করেছে নতুন নতুন কিছু করে সবার কাছে নিজের গূরুত্ব বাড়াতে। পত্রিকায় পড়া দেশ বিদেশের খবর গুলো জেবার কাছে তাই এক ধরনের চেষ্টার অংশ। অফিসের লাঞ্চের ফাকে আড্ডা বা বন্ধুদের সাথে কথা বার্তায় তাই হঠাত করে আমেরিকার নির্বাচন বা বাংলাদেশের বাজেট নিয়ে দুই একটা তাক লাগানো কথা বলে মাঝে মাঝে। পরিচিত সার্কেলে জেবার তাই বিবিসি বলে সুনাম আছে। যদিও মাঝে মাঝে বন্ধুরা টিজ করার জন্য বলে কিন্তু জেবা এটাকে এক ধরনের সম্মান হিসেবেই ধরে। এইযে ব্যাংকের নয়টা পাচটা অফিস সংসার সব করেও অন্য সবার মত ছোট্ট একটা গন্ডিতে নিজেকে বেধে ফেলে নি বরং দেশ বিদেশের সব খবর রাখে তাতে ওর নিজের মনে একটা সুক্ষ অহংকার আছে। আজকে তাই এরকম ম্যানেজারের রুমে রাখা পত্রিকা গুলো চেক করতে গিয়ে হঠাত করেই ওর চোখে পড়ে, ঢাকা কর অঞ্চল ৭- দূর্নীতির স্বর্গ রাজ্য। জেবা আরেকবার খবরটা পড়ে। নাহ ঠিক আছে ওর পড়া। পত্রিকার নামটা দেখে ভাল করে। দৈনিক নতুন সময়। নতুন বের হয়েছে এই পেপারটা কিন্তু ভাল করছে। ওদের রিপোর্টিং ভাল হয়। জেবার বুক হঠাত করে কাপতে থাকে। আজকেই ছেলের নতুন স্কুলে ক্লাস শুরু করেছে। এই দিনে কি আরেকটি ভাল খবর পাবে? জেবা দ্রুত রিপোর্টটা পড়ে। পড়া শেষ হতেই বুকের ভিতর কাপন আর বাড়ে। বিশ্বাস হতে চায় না ওর। আরেকবার রিপোর্টটা পড়ে। একদম শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত। প্রতিটা শব্দ ধরে ধরে। জেবা পড়তে পড়তে মনে মনে বলে, ঘুঘু তুমি বারবার খেয়ে যাও ধান এইবার তোমায় ধরিব পরাণ।  আরশাদ আর নুসাইবা মিলে এতদিন যে একটা পাক পবিত্র সৎ ভাব ধরে ছিল এইবার বুঝি সেটার খোলস ভেংগে পড়ল। স্বামী কে ফোন করতে গিয়েও করল না জেবা। ওর যে উত্তেজনা সেটা ও লুকাতে পারবে না এই মূহুর্তে। ওর স্বামী যে পরিমাণ আরশাদ ভক্ত তাই এই খবরে জেবার এমন উত্তেজনা দেখলে ক্ষেপে উঠবে। বলবে, সব মিথ্যা রিপোর্টিং। আর তুমি মানুষের কষ্ট দেখে আনন্দ পাচ্ছ কেন। জেবা তাই অনেক কষ্ট করে নিজেকে সামলায়। তবে এমন খবর কার সাথে শেয়ার করতে ইচ্ছা করছে। এমন কেউ যে ওর মনের আনন্দটা বুঝতে পারবে। জেবার তখনি মনে পড়ে মাহফুজের কথা। পারফেক্ট। মাহফুজের সাথেই এই কথা শেয়ার করা যায়। আর মাহফুজকেও তো জানানোর দরকার আছে ওকে এমন অপমান করা নুসাইবা বেটির আদরের জামাই কি জিনিস। ঠিক তখন জেবার ফোন বেজে উঠে। ফোনে নাম দেখে জেবা মনে মনে বলে ছেলেটার মনে হয় মনের কথা বুঝার ক্ষমতা আছে। নাহলে ঠিক এই মূহুর্তে কেউ ফোন করে।



মাহফুজ ফোন দিয়ে বরাবরের মত কুশল বিনিময় করে। জেবা কেমন আছে, রিয়াদ ভাই কেমন আছে, বাসায় বাচ্চারা কেমন আছে। মাহফুজের কাছে মনে হয় ফোনে জেবা বুঝি আজকে একটু বেশি খুশি। আজকে ছেলের নতুন স্কুলের প্রথম দিন হয়ত তাই এমন খুশি  বুঝি। ছেলের কথা উঠতেই মাহফুজ কে ধন্যবাদ দেয় জেবা। এত চেষ্টা করেও যা হচ্ছিল না সেই কাজটা এত সহজে করে দেবার জন্য জেবা বারবার থ্যাংক্স বলে। মাহফুজ ভদ্রতা বশত বলে আরে এতে এত থ্যাংক্স বলার কিছু নেই আমি ছোট একটা হেল্প করেছি মাত্র। আপনাদের মত ভাল মানুষদের একটু হেল্প করতে পারলে আমার নিজের কাছেই ভাল লাগে। মাহফুজ তাড়াতাড়ি এই ভদ্রতাসূচক কথাগুলো শেষ করে আসল কথায় যেতে চাচ্ছিল। তবে মাহফুজ কিছু জিজ্ঞেস করার আগেই জেবা বলল মাহফুজ ভাই আপনি ফোন দেবার আগে আপনার কথাই ভাবছিলাম। মাহফুজ হেসে বলে তাই নাকি। জেবা বলে হ্যা। মাহফুজ বলে যাক এই পৃথিবীতে কেউ অন্তত আমার কথা ভাবে। জেবা একটু থতমত খায়। জেবা সাধারণত এমন কথা শুনে অভ্যস্ত না। জেবা দেখতে সুশ্রী তবে নজর কাড়া সুন্দরী না। তাই উপর ড্রেস এর ব্যাপারে সব সময় বেশ কনজারভেটিভ ছিল জেবা। শরীর যাতে বোঝা না যায়। এছাড়া স্কুল, কলেজ, ভার্সিটিতে সব সময় পড়াশুনা নিয়ে ব্যস্ত ছিল। এই হিসাবে জেবা হল ক্লাসের সেই সব ছাত্রছাত্রীদের দলে যারা মাঝারি থেকে একটু ভাল রেজাল্ট করে সব সময় কিন্তু সারাদিন পড়াশুনা নিয়ে থাকে। সিরিয়াস স্টুডেন্ট তকমা ওর কপালে তাই শুরু থেকে লেগে ছিল। ফলে ছেলেরা নরমালি যেমন ক্লাসমেটদের সাথে ফ্লার্ট করে জেবা সেটা পায় নি কখনো। আর অফিসেও জেবা খুব সিরিয়াস কাজকর্মে তাই অন্য কলিগরাও তেমন একটা ফ্লার্ট করার চেষ্টা করে না। তাই মাহফুজের হালকা ফ্লার্টে জেবা একটু ইতস্তত বোধ করে কারণ এর উত্তর কিভাবে দিতে হবে সেটা ওর জানা নেই। মাহফুজ বলে জেবা আপা কি মাইন্ড করলেন নাকি, ছোটভাইরা কি একটু হাসি ঠাট্টাও করতে পারবে না। জেবা যেন এবার কথা খুজে পায়। বলে, আরে না, না। কিছু মনে করি নি। আপনি ভাল মানুষ। আপনি এইসব ঠাট্টা করলে ঠিকাছে। মাহফুজ বলে তা কি কারণে ভাবছিলেন আমার কথা। জেবা বলে বিশ্বাস করবেন না একটা খবর। পত্রিকায় খবরটা পড়ার পর থেকেই আপনাকে বলব বলব ভাবছিলাম। মাহফুজ মনে মনে ভাবে, বাহ ভাগ্য দেখি সুপ্রসন্ন। আকার ইংগিতে কথা বলার আগেই তো মনে হচ্ছে জেবা খবরটা দেখে ফেলেছে। মাহফুজ তাও না বুঝার ভান করে বলে কি খবর আপা? আরে বিশ্বাস করবেন না আজকে কি দেখছি পত্রিকায়। মাহফুজ জিজ্ঞেস করে কোন পত্রিকায় আপা? দৈনিক নতুন সময়। প্রথম পাতায় দেখেন কি লিখেছে। মাহফুজ পত্রিকাটা হাতে ধরে আছে তবু বলে আমি তো দৈনিক নতুন সময় পড়ি না। বাসায় রাখা হয় না এই পত্রিকা। দেখতে গেলে বাইরে গিয়ে কিনতে হবে। অনেক সময় লাগবে। জেবা আর উত্তেজনা ধরে রাখতে পারে না। মাহফুজ কবে পত্রিকা কিনবে, কবে সেই পত্রিকা পড়বে আর কবে এই নিউজ নিয়ে দুইজন আলোচনা করবে সেটার জন্য অপেক্ষা করতে জেবা আর রাজি নয়। অনেক দিন নুসাইবা আর আরশাদ সারা জগতের চোখে মাথা উচু করে ঘুড়ে বেড়িয়েছে। ওদের জন্য ফ্রেন্ড সার্কেল, ডিপার্টমেন্ট এলমনাই এসোশিয়েশন, কোন বন্ধুদের বাসায় দাওয়াত। জেবা আর জেবার জামাই ভাল চাকরি করার পরেও সব জায়গায় নুসাইবা আর আরশাদ সবচেয়ে বেশি গূরুত্ব পায়। জেবার তাই মনে হয় এইটাই একটা সুযোগ পরিচিত মহলে প্রেসটিজের দিক দিয়ে এক নাম্বার কাপল হবার। আর এত বড় একটা খবর কার সাথে শেয়ার করতে না পারলে পেট ফেটে মারা যাবে মনে হয় জেবার। আর মাহফুজের থেকে ভাল কে  হতে পারে এই ব্যাপারে। যেভাবে পিকনিক আয়োজনের সময় ছোটখাট প্রত্যেকটা ব্যাপারে ভুল ধরেছে আর খেলার মাঠে সামান্য লেমনেড নিয়ে অপমান করেছে তাতে মাহফুজের ভিতরে যে প্রচন্ড রাগ জমেছে এটা জেবা মাহফুজের সাথে কথাতে বুঝেছে। চারপাশে সবাই যখন  নুসাইবায় মুগ্ধ তখন এই একমাত্র ব্যক্তি যে নুসাইবার সৌন্দর্য আর ব্যক্তিত্ব ভেদ করে দেমাগী নুসাইবার আসল রূপ বুঝছে। ফলে মাহফুজ এই ব্যাপারে ওর উপযুক্ত বিচিং পার্টনার। দুইজনে মিলে গসিপ করার জন্য আজকের পত্রিকার থেকে ভাল আর কি হতে পারে।


জেবা বলে আমি আপনাকে ওয়াটসএপে দুইটা ছবি পাঠাচ্ছি। আপনি পড়েন। পড়ে দশ মিনিট পর আমাকে ফোন দেন। এরপর কথা বলি। মাহফুজ তাড়াতাড়ি কথা শুরু করতে চায় তাই সে বলে আপা আপনি বলেন না। আমি শুনি, পড়া লাগবে না। জেবা বলে আরে পড়েন তাহলে কথা বলতে আর মজা হবে। আর আমি এখন অফিসে আছি। একটু বাইরে বের হচ্ছি আমি কয়েক মিনিট পর ম্যানেজার কে বলে তাহলে অফিসের বাইরে দাঁড়িয়ে কথা বলতে পারব। এখানে কাঠের পার্টিশান সবার কথা সবাই শুনে। এই বলে দৈনিক আজকের সময়ের প্রথম পাতার নিচের অংশ আর সেই খবরের ভিতরের পাতায় বাকী অংশের ছবি তুলে মাহফুজ কে পাঠাল। মাহফুজ অলরেডি এই খবর কয়েকশত বার পড়ে ফেলেছে। তবে সংগে সংগে জেবা কে ফোন করল না। জেবা ভাবুক মাহফুজ এই প্রথমবারের মত খবরটা পড়ছে। এদিকে জেবা অফিস থেকে কাজের কথা বলে আধা ঘন্টার জন্য বাইরে এসেছে। ওদের অফিসের থেকে দুই মিনিট দূরে একটা ছোট পার্ক আছে। সেখানে এসে একটা বেঞ্চে বসেছে। এখনো রোদের তেজ আছে আশেপাশে।  বিকালবেলা হাটতে আসা মানুষের ভীড় শুরু হয় নি এখনো। একটু দূরে কলেজ পালানো কিছু ছেলেমেয়ে বসে আড্ডা দিচ্ছে। অন্যদিকে এক ঝালমুড়িওয়ালা অলস বসে আছে খদ্দরের অভাবে। জেবার তর সইছে না মাহফুজের সাথে কথা বলার জন্য। জেবা ঘড়ি দেখে পনের মিনিটের  বেশি হয়ে গেছে। এতক্ষণ লাগে এই খবরটা পড়তে? জেবা ভাবে মাহফুজ বুঝি ওর মত দুই তিনবার পড়ছে খবরটা। আসলেই অবিশ্বাস্য। রিয়াদের কাছ থেকে ওর অফিসের সাথে আরশাদের ডিল থেকে বুঝেছিল কিছু গড়বড় আছে তবে সেটা এভাবে একটা ন্যাশনাল নিউজ পেপারে এসে যাবে এটা স্বপ্নেও ভাবে নি জেবা। এবার দেখা যাবে এত মানসম্মান, গর্ব কই যায় নুসাইবার।
Like Reply
মাহফুজ ফোন রিসিভ করেই জেবা বলল, পড়লেন নিউজটা? মাহফুজের প্রথমবার খবরটা পড়ার অভিনয় করতে হচ্ছে তাই মাহফুজ বলল, ক্যান ইউ বিলিভ ইট? জেবা বলল, আমি আগেই বলেছিলাম গড়বড় আছে আরশাদ ভাইয়ের মধ্যে। নাহলে কেউ এই চাকরি করে লাখ লাখ টাকার জুয়া খেলতে পারে। অবশ্য সেই কথা তো ওনার বৌ এর সামনে বলা যাবে না। আরেক আমার স্বামী। যে কিনা বন্ধুর জন্য পাগল। সবার সব কিছু দেখে কিন্তু বন্ধুর বেলায় চোখ বুঝে থাকে। মাহফুজ বলে আমার তো বিশ্বাস হচ্ছে না। জেবা বলে আপনাকে আমার অফিসে যেদিন আসলেন ইংগিত দিয়েছিলাম না। রিয়াদের অফিসের সাথে উনার কিছু ডিলিংস আছে। তবে আমি ভেবেছিলাম সেটাই বুঝি একমাত্র। এখন তো মনে হচ্ছে আর অনেক কিছু আছে। আরে অফিসের জুনিয়র কলিগরা কখন ঘুষ খাওয়ার সাহস পায়? যখন অফিসের বস নিজেই ঘুষ খায়। তারা জানে তখন বস তাদের কিছু বলতে পারবে না। মাহফুজ বলে হ্যা। তবে আমি ঐ অফিসের কয়েকজন কে জিজ্ঞেস করেছিলাম কেউ তখন কিছু বলে নি। জেবা বলে হ্যা জানি। আপনি ঐদিন বলেছিলেন। কিন্তু দেখেন এত টাকার জুয়া খেলা তো আর বেতনের টাকা দিয়ে হয় না। আর আগও বলেছিলাম ঢাকার আশেপাশে উনার অনেক সম্পত্তি। মাহফুজ বলে এটা কি আপনি শিওউর? জেবা একটু ক্ষেপে  উঠে। সব সময় সবাই ওর উপর ডাউট দেয়। সবাই কি ভাবে জেবা অবলা নারী। আশেপাশের কোন খবর রাখে না। জেবা বলে দেখেন আপনাকে ঐদিন যখন বললাম আপনি বিশ্বাস করলেন না। আজকে পত্রিকার রিপোর্টটা দেখেন। দেখলেই বুঝবেন। এরপর আমার দেওয়া খবর গুলোর সাথে রিপোর্ট মেলান। মাহফুজ মনে মনে ভাবে আপনার দেওয়া খবর গুলোই তো এই রিপোর্ট করতে সাহায্য করেছে। জেবা বলে দামী ফ্ল্যাট, ঢাকার আশে পাশে গোপন সম্পত্তি, ইউরোপে ট্যুর। এইসব কি সরকারী বেতনের টাকায় হয়। মাহফুজ বলে হ্যা, তা অবশ্য ঠিক। পত্রিকায় এইবার যখন এসেছে তখন নিশ্চয় ঠিক খবর। জেবা বলে জানেন, আমার অনেক দিনের আফসোস কেউ আরশাদ ভাই আর  নুসাইবা আপা কে ঠিক করে জাজ করে না। তারা যা বলে আশেপাশে সবাই মেনে নেয়। তারা যা করে সবাই তাতে গুণমুগ্ধ হয়। দেখেন, ঐদিন আপনাকে খেলার মাঠে এত কথা বলল কেউ একটা টু শব্দ পর্যন্ত করল না। আপনি মন খারাপ করে চলে গেলেন আর সবাই নুসাইবা আপার সাথে এমন ভাবে কথা বলা শুরু করল যেন কিছুই  হয় নি। মাহফুজ নিজের ভিতর পুরাতন রাগটা টের পেল। ঐদিন মাঠের অপমানটা যেন এখনো যায় নি বুকের ভিতর থেকে। মাহফুজ চিবিয়ে চিবিয়ে উত্তর দিল এইসব ব্যাপার কি ভুলা যায় জেবা আপা। জেবা বুঝে ঠিক জায়গায় আঘাত করেছে ও। জেবা তাই বলে আসলে পুরুষ মানুষ বেশির ভাগ একটা জিনিস খেয়াল করে। মেয়েদের রূপ। আমি অবশ্য আপনার কথা বলছি না। আপনি অন্য রকম। কিন্তু বেশির ভাগ ছেলেরা মেয়েদের রূপ আর ফিগার এই দুইটার আড়ালে মেয়েদের আর কোন দোষ গুণ দেখে না। আমি যদি সেদিন ঐরকম একটা কাজ করতাম তাহলে সবার সামনে আমাকে পাচ মিনিটের মধ্যে এসোশিয়েশনের লোকেরা মাফ চাইয়ে ছাড়ত। এইজন্য এত দেমাব বেটির বুঝছেন। নুসাইবা আপার দেমাগ এই জন্য। উনিও বুঝে ছেলেরা কি চায়। সবার সাথে কেমন হেসে হেসে কথা বলে। জেবার সব সময় মানুষের সাথে সহজে মিশতে পারে না। তাই নুসাইবার এই হাসি হাসি করে সবার সাথে কথা বলা আর সবার এতে গলে পড়া একদম অসহ্য লাগে। মাহফুজ বুঝে জেবা ক্ষেপে উঠেছে। আর ঝড়ুক ওর রাগ তাই চুপ করে থাকে মাহফুজ। জেবা এতদিন নুসাইবার পাশে থেকে থেকে অন্যদের কাছ থেকে পাওয়া সব অগ্রাহ্য, অবহেলার জন্য নুসাইব কে মনে মনে দায়ী করে এসেছে। ভিতরে জমে জমে সেই ক্ষোভ এখন বিস্ফোরণের জন্য প্রস্তুত। অনেক দিনের এত অবহেলা যেন মনের ভিতর তৈরি করেছে বিষাক্ত ক্ষোভ। এর আঘাতে নুসাইবা কে ছন্নছাড়া করে দিতে চায় জেবা। হিংসার মত শক্তিশালী রিপু আর নেই তা যেন প্রমাণ করছে জেবা আবার। জেবা বলে আমাদের রেজাল্ট প্রায় এক কিন্তু দেখেন সবাই নুসাইবা আপাকে ব্রিলায়ান্ট বলবে। কারণ কিছুই না উনি সুন্দরী। উনি বিদেশে পড়াশুনা করে এসেছেন। আরে আমি কি বিদেশে পড়তে যেতে পারি না? পারি কিন্তু দুই দুইটা বাচ্চা হয়েছে বিয়ের পর পর তাহলে বলেন কিভাবে আমি সময় দিব বাইরে পড়তে যাবার। বাংলাদেশ ব্যাংকে উনি চাকরি করে আর আমি নরমাল সরকারি ব্যাংকে চাকরি করি বলে সবাই আমাকে ইনফেরিওর ভাবে। কিন্তু কেউ এটা ভাবে না আমার পাশ করার পর পর তিন বছর বাংলাদেশ ব্যাংক কোন সার্ক্কুলার দেয় নি নতুন নিয়গের। আর যখন দিল তখন আমি প্রথম বাচ্চা নিয়ে প্রেগনেন্ট। এরপর সেই বাচ্চা যখন দুই বছর তখন আবার প্রেগনেন্ট। এই দুই বাচ্চা কে সময় দিতে গিয়ে নিজের পিছনে সময় দিতে পারলাম না। সরকারী চাকরির বয়সটাই চলে যাচ্ছিল। তাই এর মাঝে ঘর সামলিয়ে এই ব্যাংকের চাকরি যোগাড় করেছি। কিন্তু কেউ সেই সব নিয়ে প্রসংশা করবে না। কারণ আমি সুন্দরী না। আমি সবার সাথে হেসে হেসে কথা বলতে পারব না। আমার আত্মীয় স্বজন সব বড় বড় জায়গায় চাকরি করে না। আমি শরীর দুলিয়ে মানুষের মন দুলাতে পারব না। গড় গড় একটানে কথা গুলো বলে হাফাতে থাকে জেবা। আমার মত দুই বাচ্চা হলে পর পর শরীরের এই গড়ন থাকত? পাড়ত এই চাকরি যোগাড় করতে? যে স্বামী কে নিয়ে এত দেমাগ জানেই না সেই স্বামী গোপনে গোপনে জুয়া খেলে। বলেন কি মানে এই দেমাগের। আর আমিও ঠিকঠাক করে ফ্যাশন করে কাপড় পড়লে এখনো অনেক ছেলে আমার কথায় কথায় হ্যা বলবে। মাহফুজ বলে আপা আপনি এমনিতেই বিউটিফুল। জেবা বলে থ্যাংকিউ ভাই। আপনি আমার থেকে বয়েসে ছোট। এইসব কথা বলা ঠিক হচ্ছে না বাট না বলেও পারছি না। আপনি আর আমি সেইম লোকের দেমাগের আঘাতে আহত। মাহফুজ মনে মনে বলে ঠিক এই কারণেই তো আপনাকে আমার দরকার।



মাহফুজ বলে সব অহংকারীর একদিন পতন হয় জেবা আপা। নুসাইবা ম্যাডামের এই গর্ব দেখবেন কেমন করে ধবসে পড়ে। জেবার মনের কথাটাই যেন বলেছে মাহফুজ। জেবা বলে ন্যাশনাল নিউজ পেপারে এসেছে এই খবর এখন নিশ্চয় লোকের চোখের পর্দা সড়বে। মাহফুজ বলে দেখবেন লোকেরা এইবার  বুঝবে আপনি ফেলনা কোন জিনিস নন। রিয়াদ ভাই তো আর এইভাবে টাকা কামাই করে না। আপনিও ঘর সংসার সামলিয়ে সুন্দর করে চাকরি করছেন। জেবা বলে, তবু একটু সন্দেহ হয় জানেন। মানুষ যেভাবে নুসাইবা আপা আর আরশাদ ভাইয়ের গুণমুগ্ধ দেখবেন এই ব্যাপারে কেউ কিছু বলবে না। মাহফুজ দেখে এই ওর সুযোগ। মাহফুজ বলে আপনাদের পরিচিতদের মধ্যে এমন লোক আছে না যারা এর খবর অন্যকে বলে বেড়ায়? জেবা হেসে বলে এমন লোক নেই এমন কোন সার্কেল কি আছে। মাহফুজ বলে আপনি কথাচ্ছলে এমন দুই একজনের কাছে পত্রিকার রিপোর্টের কথা বলেন। দেখবেন আগুনের বেগে তাড়াই আপনাদের পরিচিত সব মহলে এই খবর ছড়িয়ে বেড়াচ্ছে। তখন নুসাইবা ম্যাডাম আর আরশাদ সাহেবের কি অবস্থা হয়। আমাদের দেশে সবাই হাতি গর্ত পড়লে লাথি দিতে চায়। দেখবেন লোকেরা ফোন করে করে খোজ নিচ্ছে রিপোর্টের ব্যাপারে উনাদের কাছে। প্রতিবার এই রিপোর্ট নিয়ে কথা বলতে গেলে উনাদের কাটা ঘায়ে নুনের ছিটার মত হবে ব্যাপারটা। জেবা ব্যাপারটা চিন্তা করে খুশি হয়ে উঠে। ঠিক কথা বলেছে মাহফুজ ভাই। লোকটা ব্রিলিয়ান্ট। সব ব্যাপারে কিছু না কিছু কাজের কথা বলে। জেবা কৌতুহল থেকে জিজ্ঞেস করে আপনার কি মনে হয় এই রিপোর্টে আরশাদ ভাইয়ের কিছু হবে। মাহফুজ বলে এটা বলা কঠিন। কারণ উনার পিছনে কারা আছে তাদের খুটির জোর কেমন সেটার উপর নির্ভর করছে। আর পত্রিকা তো বলেছে পরের কিস্তিতে উনার উপর বিস্তারিত রিপোর্ট করবে। সেটা পড়লে বুঝা যাবে উনি গদি রাখতে পারবেন কিনা। জেবার মনের মধ্যে হিংসা কাজ করলেও বাস্তবে একদম খারাপ মানুষ না। বলতে গেলে আমাদের দৈনন্দিন জীবনে দেখা অন্য অনেকের মত সাধারণ ভাল মানুষ যাকে এই মূহুর্তে হিংসা গ্রাস করে আছে। জেবার মনের মধ্যে ভাল স্বত্তাটা আবার মাথা চাড়া দিয়ে উঠে। জেবা তাই বলে জানেন আমি চাইনা এটার জন্য আরশাদ ভাইয়ের চাকরি যাক বা নুসাইবা আপার কিছু হোক কিন্তু আমি চাই সবাই জানুক  উনারা কি। মিথ্যা মিথ্যা অহংকার যেন আর না করতে পারে। মাহফুজ এবার পরের চাল দেয়। বলে আরশাদ সাহেবের জায়গায় আমি থাকলে এই রিপোর্ট বন্ধ করার চেষ্টা করতাম। কারণ পরের রিপোর্ট কত বড় ক্ষতি করবে কে জানে। জেবা সংশয়ের সাথে বলে এটা ইজি  হবে না। মন্ত্রী এমপিরা পর্যন্ত তাদের  বিরুদ্ধে রিপোর্টিং বন্ধ করতে পারে না। আর এটা জাতীয় পত্রিকা এত সহজ হবে না। মাহফুজ বলে এইসব জিনিস সহজ না আবার খুব একটা কঠিন না। আরশাদ সাহেব জাতীয় নেতা না ফলে এই রিপোর্ট বন্ধ হলে কেউ কথা বলবে না। আবার পরের পার্টে যদি ড্যামেজিং কিছু থাকে তাহলে আর বড় ক্ষতি হবে উনার। জেবা বলে আপনি কি করতেন এই জায়গায়। মাহফুজ বলে ধরেন ঢাকা রিপোটার্স ইউনিটের যুগ্ম সম্পাদক হাবিব ভাই কে আমি চিনি। আমি পলিটিক্সের কারণে জানি উনি এমন অনেক রিপোর্টিং এর ব্যাপারে দুই পক্ষের মধ্যস্ততা করতে সহায়তা করেন। আমি হলে হাবিব ভাইয়ের মাধ্যমে ট্রাই করতাম। জেবা কি যেন ভাবে। তারপর বলে আপনাকে যদি আরশাদ ভাই অনুরোধ করে তাহলে আপনি আপনার পরিচিত হাবীব ভাইয়ের মাধ্যমে ঐ রিপোর্টার কে এপ্রোচ করবেন? মাহফুজ মনে মনে বলে, এই তো আসল জায়গায় আসছে ঘুঘু। মাহফুজ উত্তর দেয় হ্যা। জেবা বলে কেন করবেন? নুসাইবা আপা আপনাকে এত অপমান করল আর আরশাদ ভাই সেটা দেখেও কিছু বলল না। তারপরেও আপনি উনাদের এই উপকার করবেন? মাহফুজ বলল দেখেন জেবা আপা আমার পলিসি ভিন্ন। আমাকে অপমান করার পর যদি আমার থেকে উপকার নেওয়া লাগে সেটা উনাদের সারা জীবন গলার কাটা হয়ে থাকবে। আমার সামনে আর কখনো এরপর মাথা উচু করে কথা বলতে পারবে না। কারণ উনাদের এই গোপন সমঝোতার আমি হব স্বাক্ষী। তাই কখনো আমাকে কিছু বলতে পারবে না। কাউকে অপমান করার জন্য সবার সামনে ডেকে বকতে হয় না। অনেক সময় এমন নীরবে অপমানের প্রতিশোধ নেওয়া যায়। ভাবতে পারবেন আপনার দেমাগী নুসাইবা আপা এরপর থেকে সব সময় আমাকে আপ্যায়ন করতে হবে। মিষ্টি করে কথা বলতে হবে। আমাকে যত বার দেখবে ততবার নিজেদের কৃতকর্মের কথা ভেবে মাথা নিচু করে থাকবে। ভাবুন। এর থেকে বড় প্রতিশোধ আর কি হয়। জেবা মাহফুজের কথা শুনে খুশি হয়ে উঠে। মনে মনে ভাবে এরকম হলে খারাপ হয় না। আরশাদ ভাইদের বড় কোন ক্ষতিও হল না আর নুসাইবা আপার দেমাগ ভেংগে গেল।  মাহফুজের প্রতি আবার আস্থায় মনটা ভরে উঠল জেবার। মাহফুজ ভাইকে দিয়েই নুসাইবা আমার দেমাগ ভাংগতে হবে।




নুসাইবা গত দুই ধরে প্রচন্ড অস্থিরতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। রোববার অন্যদিনের মত সকালে অফিসে গেছে। একটা মিটিং ছিল এইএমএফ এর প্রতিনিধি দলের সাথে বাংলাদেশ ব্যাংকের। সেই মিটিং এ বাংলাদেশ দলের সদস্য হিসেবে ছিল  নুসাইবা। গূরুত্বপূর্ণ মিটিং। মিটিং শেষে অফিসে বসে কয়েকটা ফাইল চেক করছিল। লাঞ্চের আগে দিয়ে নুসাইবার মনে হল ডিরেক্টর স্যারের সাথে দেখা করে আসি। ওর ডিভিশনের যিনি ডিরেক্টর উনি নুসাইবা কে খুব স্নেহ করেন। উনার অফিসে যাবার আগে একটা বড় হলরুমের ভিতর দিয়ে যেতে হয়। সেখানে অনেক জুনিয়র অফিসাররা কাঠের পার্টিশন দিয়ে বসে। সেটা পার হবার সময়  নুসাইবা খেয়াল করল সবাই মনে হয় ওর দিকে তাকিয়ে আছে। ওর দিকে অফিসের জুনিয়র কলিগ এমনকি সিনিয়র কলিগরা আড়চোখে তাকায়। যখন খেয়াল করছে না তখন ওর শরীরের দিকে নজর দেয়। বাংলাদেশে সব খানে কাজ করতে গেলে এমন হবেই। নুসাইবা এগুলো কে আজকাল আর গায়ে মাখে না। কেউ যদি খুব বেশি আগ বাড়িয়ে কিছু না করে তাহলে খালি দেখতে চাইলে নুসাইবা কিছু বলে না আর। কতজন কে বলবে? বলতে গেলে অফিসের ছেলে কলিগদের আশি পার্সেন্ট কে ধরতে হবে। বরং মনে মনে ভাবে সরকারী অফিসে এগুলো কম। প্রাইভেট অফিসে চাকরি করলে এইসব ঝামেলা আর বেশি পোহাতে হত। তবে আজকে মনে হচ্ছে যেন সবাই ওকে দেখছে। এমন কি মেয়ে কলিগরা। নুসাইবা বুঝে উঠতে পারে না। ওর মনে হয় হয়ত ভুল ভাবছে। ও ক্রস করে যাওয়ার পর মৃদু একটা গুঞ্জন উঠল যেন আলোচনার। নুসাইবা কি হল বুঝতে পারে না। ডিরেক্টর স্যারের রুমে ঢোকার পর সালাম দিতেই স্যার বললেন, নুসাইবা তুমি ঠিক আছ তো? আর ইউ অলরাইট? এইবার নুসাইবা সত্যি সত্যি একটু অবাক হয়। কি হল স্যারের? ডিরেক্টর স্যার বলেন নুসাইবা বস। নুসাইবা বসতেই বলে শোন এই সব পত্রিকার খবরে খুব একটা মাথা ঘামিয়ো না। অনেক সময় টাকা খেয়ে ভুলভাল রিপোর্ট করে। আমার অনেক  বন্ধুদের বিরুদ্ধেও এমন রিপোর্ট হয়েছে। একটু শক্ত মনে হ্যান্ডেল করতে পারলে আর কিছু হবে না। নুসাইবা অবাক হয়ে যায়। কি রিপোর্ট? কিসের রিপোর্ট? ডিরেক্টর স্যার আবার বলেন, তোমার হাজবেন্ডের সাথে কথা বলেছ? হাউ ইজ হি হ্যান্ডলিং দ্যা রিপোর্ট? নুসাইবা পুরো পাজলড। এখানে কিসের রিপোর্ট এর কথা বলছে স্যার আর সেখানে আরশাদের কি ভূমিকা। স্যার আবার বললেন, প্রতিবার ট্যাক্স ফাইলের সময় আরশাদ সাহেব যেভাবে আমাকে হেল্প করেন তাতে বলতেই হবে হি ইজ ভেরি মাচ এ জেন্টলম্যান। এইসব রিপোর্ট নিশ্চয় অফিস পলিটিক্সে কেউ করিয়েছে। নুসাইবা একদম বিস্ময়ে হতবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে কিসের কথা বলছেন স্যার। ডিরেক্টর বুঝেন নুসাইবা এখনো রিপোর্টের খবর জানে না। তাই সামনে থাকা পত্রিকাটা এগিয়ে দেন। নুসাইবা উনার সামনে বসে দুই বার রিপোর্টটা পড়ে। পত্রিকার নামটা পড়ে। নতুন পত্রিকা বাট বেশ ভাল করছে। নুসাইবার চোখ মুখ গাল লাল হয়ে উঠে। ডিরেক্টর ব্যাপারটা খেয়াল করেন। উনি নুসাইবা কে স্নেহ করেন। তাই বলেন, আজকে তুমি হাফ বেলা অফ নাও। ছুটির দরখাস্ত দেওয়া লাগবে না। আমি দেখব। আই থিংক এই মূহুর্তে তোমার সাপোর্ট দরকার হবে আরশাদ সাহেবের। ডিরেক্টর স্যার কে সালাম দিয়ে অফিস থেকে বের হয়ে আবার ঐ হলরুমের ভিতর দিয়ে নিজের অফিসে ফিরতে হয় নুসাইবা কে। আসার সময় আবার সেই চোরা চাহনি, ফিসফাস গুঞ্জন। আগেরবার না জানলেও এইবার নুসাইবা জানে এই ফিসফাস আর চোরা চাহনির মানে। এই অফিসের অনেকের ট্যাক্স ফাইলের কাজে আরশাদ হেল্প করে দিয়েছে। তাই আরশাদ বেশ পরিচিত মুখ ওদের ডিপার্টমেন্ট। নুসাইবার মনে হয় ওদের সবার চোখে বুঝি ওর আর আরশাদের সম্মান ভেংগে ধূলোয় মিশে গেছে। সবার সামনে দিয়ে হেটে যাবার সময় নুসাইবার মনে হয় লজ্জায় আর অপমানে লাল হয়ে গেছে ও। ওয়াক অফ শেইম (walk of shame) কথাটা এতদিন ধরে জানলেও আজকে মনে হয় সেই কথাটার মানে উপলদ্ধি করতে পারছে।


এরপর থেকে গত দুই দিন নুসাইবার প্রচন্ড অস্থিরতার মধ্য দিয়ে সময় যাচ্ছে। অফিসে যাচ্ছে কিন্তু কাজ করতে পারছে না। বাসায় আসছে কিন্তু ঘুমাতে পারছে না। আরশাদ কে দেখলে আর মেজাজ খারাপ হয়ে যাচ্ছে। এরপর আছে বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়স্বজন আর কলিগদের ফোন আর অজস্র প্রশ্ন আর উপদেশ। প্রতিবার এইরকম একটা ফোন কল রিসিভ করা মানে মনের ভিতরটা আর বিষিয়ে উঠা। তাই বেশির ভাগ সময় ফোন বন্ধ করে রাখছে নুসাইবা। আরশাদ কে যেন বুঝে উঠতে পারছে না। সেইদিন রিপোর্ট বের হবার পর সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত আরশাদ একবারও ফোন করে নি নুসাইবা কে। আবার বাসায় এসে এমন ভাব করছিল যেন কিছুই হয় নি। সব স্বাভাবিক। একটু পর আর নিতে পারে নি নুসাইবা। আরশাদের সামনে পত্রিকাটা রেখে জিজ্ঞেস করেছিল এটার মানে কি? আরশাদের চোখে মুখে তখন হতবিহবল দৃষ্টি। চুপ হয়ে থাকা আরশাদ কে তখন রাগী চোখে আরেকবার জিজ্ঞেস করেছিল নুসাইবা বল এটা কি সত্যি। আরশাদ যেন এরপর সম্বিত ফিরে পায়। বারবার বলতে থাকে এটা মিথ্যা। টাকা খেয়ে নিশ্চয় রিপোর্ট করেছে। অথবা নিশ্চয় ওর অফিসের কোন কলিগ  হিংসার বসে ভুলভাল খবর দিয়ে রিপোর্ট করিয়েছে। আর আজকাল সরকারি অফিসারদের দূর্নীতির খবর শুনলে সাংবাদিকরা ভাল করে চেক না করে ছাপিয়ে দেয় কারণ লোকে এইসব নিউজ খায় ভাল। দেখ ভাল করে এখানে আমার কোন স্টেটমেন্ট নিয়েছে কিনা। একটা ভাল রিপোর্টার অন্তত যার বিরুদ্ধে রিপোর্ট করছে তার সাথে যোগাযোগ করে তার মতামত নেয় আর সেটা রিপোর্টে ছোট করে ছাপে। এটা শুনে একটু শান্ত হয় নুসাইবা। হ্যা এটাও সত্য বটে। রিপোর্টে কোনখানে আরশাদের আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ রাখে নি। ভাল রিপোর্টিং এমন নয় সেটা নুসাইবাও জানে। কিন্তু আরশাদের সারাদিন ধরে এতবড় খবর গোপন রাখা, ওর প্রশ্ন শুনে একটা হতবিহবল দৃষ্টি সব কেমন যেন ওর ভিতরের হিসাব কে মিলতে দেয় না। ওর মনে হয় আরশাদ কিছু লুকাচ্ছে না তো। কিন্তু আরশাদ সারাজীবন যেভাবে ওর পাশে থেকেছে। বিপদে আপদে ওর সমর্থন দিয়েছে সেখানে আরশাদ কি এতবড় জিনিস ওর থেকে লুকাতে পারে? নুসাইবা ওদের  নিজেদের দিকে তাকায়। হ্যা ওদের একটা দামী ফ্লাট আছে। ঢাকায় বেশ কিছু জমি আছে। প্রায় বছর দেশের বাইরে ঘুরতে যায়। কিন্তু আরশাদ তো বলে এসেছে এগুলো ওর শেয়ার বাজারের টাকায় করা। আরশাদের বাবার যথেষ্ট টাকা ছিল। উনার মৃত্যুর পর পাওয়া টাকাটা নাকি আরশাদ শেয়ারে খাটিয়েছে। আর ওর পজিশনের জোরে প্রায় নাকি ভিতরের অনেক খবর ও আগে থেকেই জানে। কোন শেয়ার এর দাম পড়বে আর কোন শেয়ারের দাম বাড়বে। হ্যা এটাও নৈতিকভাবে হয়ত ঠিক না কিন্তু এটা সরাসরি ঘুষ খাবার যে ইংগিত দিয়েছে এই রিপোর্ট অত খারাপ না। সারাজীবন নুসাইবা জেনে এসেছে ঘুষ খায় একদম বদমাশ মাতাল লম্পট সরকারি অফিসাররা। যাদের বউদের অনেক ডিমান্ড। ওর কোন ডিমান্ড নেই। আর আরশাদ তো মোটেই লম্পট, বদমাশ না। মাঝে মাঝে হালকা ড্রিংক করে বাট সেটা মাতলামি করার মত কিছু না। হালকা অকেশনাল ড্রিংক।  সাপ্তাহে একবার বা কখনো দুইবার বন্ধুদের সাথে নাকি আড্ডা দিয়ে ক্লাবে একটু খেয়ে আসে। তবে কখনোই মাতাল দেখে নি আরশাদ কে। আরশাদ ওর লিমিট জানে। এটাই আসল ব্যাপার সব কিছুতে আরশাদ ওর লিমিট জানে। আরশাদ কখনোই এরকম ঘুষ খেতে পারে না। তবে আরশাদের ওর কাছে থেকে ব্যাপারটা লুকানো আর এই ব্যাপারে কথা উঠলেই চোরা দৃষ্টিতে ওকে লক্ষ্য করার চেষ্টা নুসাইবা এ পুরো নিসন্দেহ হতে দেয় না। আর নুসাইবার চরিত্রের একটা দিক হল কোন জিনিসের পুরোটা না জানা পর্যন্ত ও শান্ত হতে পারে না। কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। মানুষজনের এই হাজার হাজার প্রশ্ন আর দৃষ্টি কে উপেক্ষা করতে হলে  নুসাইবার নিজের মনের ভিতর আগে একমত হতে হবে আরশাদ ঘুষ খায় না। যদিও আরশাদ বারবার নানা যুক্তি দিয়ে ওকে বলেছে তবু ওর নিজের মনের শান্তির জন্য ওকে  নিশ্চিন্ত হতে হবে।
Like Reply

পত্রিকার রিপোর্ট  বের হবার পর অবস্থা যতটা গুরুতর ভেবেছিলেন আরশাদ ঘটনা তার থেকে বেশি গুরুতর হয়ে দাড়াচ্ছে। তাকে সরকারের যে উচ্চ পদস্থ আমলা আর রাজস্ব বোর্ডের যে মেম্বার ব্যাকিং দেয় দুইজনের সাথেই কথা বলেছে রিপোর্ট বের হবার পর। তাদের দুই জনের উপদেশ হচ্ছে একদম চুপ করে থাকতে। কেউ জিজ্ঞেস করলে প্রথমেই বলতে এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা। পরিচিত বন্ধুবান্ধবদের দিয়ে ফেসবুকে পোস্ট দেওয়াতে যে এটা মিথ্যা নিউজ। মানহানিকর। তবে আসল ব্যাপার হল পরের রিপোর্টে কি আসবে সেটা। উনারাও এই বিষয়ে চিন্তিত। আর যেহেতু উনাদের কথা ইংগিত করা হয়েছে তাই উনারাও একটু সংকিত। কারণ কেউ শুধু শুধু এমন একটা জিনিসের সাথে নিজের নাম জড়াতে চাইবে না। তবে তাদের আচরণে আরশাদ টের পেয়েছে উনারা একটু গা বাচিয়ে চলতে চাইছেন। যদি সত্যি সত্যি কিছু ঘটে এই রিপোর্টের কারণে তাহলে যেন তাদের নিজেদের ডুবতে না হয় আরশাদের সাথে। আকার ইংগিতে এটা বুঝিয়েছেন উনারা দুইজনেই পরের রিপোর্টের উপর অনেক কিছু নির্ভর করবে। উনাদের থেকে তেমন একটা সাড়া না পেয়ে ভাল খাতির আছে এমন দুই একজন রাজনৈতিক নেতার সাথে কথা বলেছেন কিন্তু দূর্নীতির রিপোর্টের সাথে কেউ এমনি এমনি নাম জড়াতে চায় না। তাই তারাও এড়িয়ে গেছেন। সানরাইজ গ্রুপের সাথে যোগাযোগ করতেই গ্রুপের মালিক বলেছেন সাবধান হতে। যাতে কোন ভাবেই তার বা তার ছেলেদের বা তার গ্রুপের কথা সামনে না আসে। সামনে তার ছেলে নির্বাচনে দাঁড়াবে এমন সময় এই রকম একটা রিপোর্ট বের হলে পরে নমিনেশন পাওয়া কঠিন হবে। আরশাদ কে সরাসরিই বললেন যেভাবেই হোক তার গ্রুপের নাম যেন না আসে সামনে। আর যদি আসে তাহলে সানরাইজ গ্রুপ তার কোন দ্বায়িত্ব  নিবে না। সানরাইজ গ্রুপ এতদিন তাকে যেভাবে হেল্প করেছে সেই হেল্প বজায় থাকবে যদি আরশাদ মুখ বন্ধ রাখে এবং সানরাইজ গ্রুপের নাম রিপোর্টে না আসে সেটা ব্যবস্থা করে। আরশাদ বলে আপনাদের অর্থ আর ক্ষমতার জোর অনেক আপনারা চেষ্টা করলে আর দ্রুত কাজটা হবে। সানরাইজ গ্রুপের মালিক বলেন দৈনিক আজকের সময় আমাদের বিরোধী পক্ষের পত্রিকা। এই পত্রিকার উপর আমাদের কোন ক্ষমতা নেই। বরং আমরা যদি কিছু করার চেষ্টা করি তারা টের পেয়ে যাবে আমরা জড়িত আপনার সাথে। তখন আর বেশি করে রিপোর্ট করবে। বলা যায় না প্রথম পাতায় লিড নিউজ করে দিতে পারে। তাই আরশাদ কে বলে সে যেন ব্যাপারটা সামলায়। টাকা যা লাগে সেই ব্যবস্থা করবে সানরাইজ গ্রুপ। কিন্তু তাদের নাম আসা যাবে না। আর যদি এসেই যায় তাহলে সেটার পরিণতি ভোগ করতে হবে। আরশাদ কথার মাঝে সুক্ষ থ্রেটের ইংগিত পায়। সানরাইজ গ্রুপের মালিকের উত্থানের পিছনে নানা রকম ভয়ংকর গল্প বাজারে আছে। ঠান্ডা মাথায় যেভাবে উনি এই কথা গুলো বললেন তাতে আরশাদের শিরদাড়া বেয়ে শীতল স্রোত নেমে যায়। আরশাদের মনে হয় বাজারে প্রচলিত গল্প গুলো হয়ত আসলে সত্য। তাই আরশাদ আর বেশি চিন্তিত হয়ে পড়ে।


আরশাদ তখন চিন্তায় দিশেহারা। রোববার রিপোর্ট বের হয়েছে আজকে সোমবার দুপুর। কি করা যায় কোন কুল কিনারা করতে পারছে না। আরশাদের সব সময়ের কাছের বন্ধু রিয়াদ। ওর সাথে কথা বলে এই বিষয়ে। রিয়াদ নিজেও চিন্তিত। রিয়াদ কে অফিসে ডেকে বলে দেওয়া হয়েছে যেন বন্ধু কে বুঝিয়ে বলে এই ব্যাপারটা এমন ভাবে সামাল দিতে যাতে সানরাইজ গ্রুপের কার নাম না আসে। নিজের চাকরির ব্যাপারটাও জড়িত এতে। কারণ রিয়াদ আরশাদের ক্লোজ ফ্রেন্ড এটা ওর কোম্পানি জানে। তাই আরশাদ যদি সানরাইজ গ্রুপের নাম  বাইরে রাখতে না পারে তাহলে সেটার ইফেক্ট ওর উপর এসে পড়বে। দুই জন মিলে অনেক চিন্তা করেও কিছু বের করতে পারে না। এদিকে শুরুতে জেবা অনেক খুশি হলেও এখন খানিকটা চিন্তিত হয়ে পড়েছে রিয়াদের কাছে ওর কোম্পানির প্রতিক্রিয়া শুনে। তার মানে আরশাদের কিছু হলে রিয়াদও বাচতে পারবে না। চাকরির উপর দিয়ে যাবে। জেবার মনে হয় এটা অন্যায়। বারবার আরশাদরা সম্মান পায়। আর যেবার নিজেদের দোষের কারণে ধরা পড়তে গেল তখন নির্দোষ ওদের এর সাজা পেতে হবে ওদের জন্য। নুসাইবার উপর রাগটা এবার আর বাড়ে। ওর হাজবেন্ড কে বলবে কি বলবে না এইটা নিয়ে ভাবতে ভাবতে জেবা রিয়াদ কে বলার সিদ্ধান্ত নিল। কারণ মাহফুজ যদি সত্যি সত্যি পত্রিকার সাথে সেটিং করতে পারে তাহলে রিয়াদ  বেচে যাবে আবার নুসাইবা মাহফুজের কাছে ছোট হয়ে যাবে। জেবার মনে হয় সারা বছর যেভাবে আমার উপর দিয়ে ছড়ি ঘুরায় এইবার এইটা করতে পারবে না। স্বামীর চাকরি বাচানোর থেকে নুসাইবা যে মাহফুজের কাছে ছোট  হয়ে যাবে এটাই যেন বেশি আনন্দের মনে হয় জেবার। তাই রিয়াদ কে ফোন দিয়ে বলে, মাহফুজের সাথে ওর দেখা হয়েছিল আজকে অফিসে। সেখানে আরশাদের কথা উঠেছিল কথা প্রসংগে। মাহফুজ বলেছে ঢাকা রিপোর্টাস ইউনিটের যুগ্ম সম্পাদক হাবিব সাদরুল্লাহ নাকি মাহফুজের পরিচিত। উনি নাকি এইসব ব্যপার ডিল করার ব্যাপারে ওস্তাদ। ফোন কাটতেই আরশাদ জিজ্ঞেস করে জেবা কি বলছিল ফোনে। রিয়াদ সাধারণত জেবার কথায় খুব একটা ভরসা করে না। কিন্তু শেষবার মাহফুজ ছেলেটা যেভাবে অসাধ্য সাধন করে ওর ছেলেকে স্কুলে ভর্তি করিয়ে দিল তাতে এইবার আর জেবা কে অগ্রাহ্য করার সাহস হয় না। আসল ব্যাপার গতকাল থেকেই আরশাদের সাথে ফোনে অনেকবার কথা হয়েছে কি করা যায় তা নিয়ে। আজকে তাই সরাসরি আরশাদের সাথে দেখা করতে এসেছে। তবে অফিসে দেখা করে নি। সেগুনবাগিচার ভিতরে সুন্দর একটা ভাতের রেস্তোরা হয়েছে সচিবালয়ের দিকে যাবার রাস্তায়। আশেপাশের সরকারি অফিসের লোকেরা এখানে প্রায় খেতে আসে। সেখানেই বসেছে লাঞ্চের জন্য আজকে দুইজন। এখানে ঘন্টা দুয়েক বসেও কোন উপায় বের করতে পারছে না। দুই জনেই মোটামুটি নিরুপায়। একদিকে রিপোর্টের কারণে চাকরিতে সাসপেন্ড হবার ভয় অন্যদিকে সানরাইজ গ্রুপের নাম যাতে কোন ভাবেই প্রকাশ্য না আসে সেটার চাপ। দুইয়ে মিলে আরশাদ একদম দিশেহারা। কেউ সাহায্য করছে না। যাকে ফোন দিচ্ছে সেই নানা অযুহাত দেখাচ্ছে। কয়েকজন তো ফোন ধরাই বন্ধ করে দিয়েছে। রিয়াদও চাকরির ভয়ে দিশেহারা। এই সময় মানুষ যে কোন সম্ভাব্য উপায় ট্রাই করে দেখতে রাজি হয়। তার উপর মাহফুজ কয়েক দিন আগেই একটা অসাধ্য সাধন করেছে। তাই রিয়াদ মাহফুজের সাথে সাংবাদিক হাবিব সাদরুল্লাহর যোগাযোগের কথা জানাল আরশাদ কে। জেবা এই বুদ্ধি দিয়েছে শুনলে অন্য সময় আরশাদ হেসে উড়িয়ে দিত। জেবা ওদের কাছে এখনো ডিপার্টমেন্টের ফার্স্ট ইয়ারের লজ্জায় নত ছিপছিপে তরুণী। যার কথা এত গুরুত্ব দিয়ে নেবার কিছু নেই। কিন্তু এই মূহুর্তে আরশাদ জেবার কথা অগাহ্য করতে পারে না। একে তো পরামর্শটা খারাপ না। আর আরশাদ জানে মাহফুজ ক্যাপাবল ছেলে। অনেক কিছুই করতে পারে এই ছেলে। আরশাদ তাই রিয়াদ কে বলে তুই খোজ নে কেমন পাওয়ারফুল এই সাংবাদিক হাবিব সাদরুল্লাহ। আমিও খোজ নিচ্ছি। প্রায় এক ঘন্টা অনেক খানে ফোন দিয়ে দুইজনেই শিওর হয় হাবিব সাদরুল্লাহ পাওয়ারফুল লোক সাংবাদিক মহলে। গোপন সেটেলমেন্টের জন্য উনি বিখ্যাত। সবাই এটা জানলেও কেউ কিছু করতে পারে না তার বিরুদ্ধে কারণ সরকারি এবং বিরোধী দুই দলের সাথেই তার ভাল খাতির। এমন লোক খুব কম। যদি কেউ এই সেটেলমেন্ট করতে পারে তাহলে হাবিব সাদরুল্লাই পারবে। আর হাবিব সাদরুল্লার কাছে পৌছানোর একমাত্র উপায় তাদের এখন মাহফুজ। আরশাদ তাই ফোনে মাহফুজের নাম্বারটা ডায়াল করে।



নুসাইবা রান্না বান্না করছে। আরশাদ জরুরী ফোন দেবার কারণে অফিস থেকে এক ঘন্টা আগেই বের হয়ে গিয়েছে। বাসায় এসে দেখে আরশাদ বেশ কিছু বাজার করে নিয়ে এসেছে এবং কাজের  বুয়াকেও ফোন দিয়ে আনিয়ে রেখেছে। নুসাইবা কি হয়েছে জিজ্ঞেস করতে আরশাদ বলল তুমি তো জান পত্রিকার রিপোর্টটার কারণে অফিসে আমি চাপে আছি। এইটা একটা মিথ্যা রিপোর্ট কিন্তু মানুষ তো আর তা বিশ্বাস করবে না। সবাই খালি খারাপটা  বিশ্বাস করতে চায়। তা যাদের সাথে কথা বললাম তারা সবাই বুদ্ধি দিল যদি পত্রিকার সাংবাদিকে বুঝিয়ে বলতে পারি তাহলে ভাল হয়। আর আমি খবর নিয়ে দেখলাম এই ব্যাপারে মাহফুজ সবচেয়ে ভাল হয়। ঢাকা রিপোর্টাস ইউনিয়ের যুগ্ম সম্পাদক খুব প্রভাবশালী। উনার সাথে মাহফুজের  নাকি পরিচয় আছে। মাহফুজ পারবে আমাদের হেল্প করতে ব্যাপারটা একটা সুরাহা করতে। তাই এই ব্যাপারে কথা বলার জন্য মাহফুজ কে রাতের খাবারের জন্য ডেকেছি। মাহফুজ আসবে রাত নয়টার দিকে। তার আগে প্লিজ তুমি কিছু ভালমন্দ রান্না কর। নুসাইবা আরশাদের কথা শুনে অবাক হয়ে যায়। এই কিছুদিন আগেই মাহফুজ কে দাওয়াত দিয়েছিল ওরা একটা ফাদে ফেলার জন্য আর আজকে সেই মাহফুজ কে দাওয়াত দিতে হল নিজেদের ফাদ থেকে উদ্ধারের সাহায্য চাওয়ার জন্য। পাশার দান যেন উলটে গেছে। আর আরশাদের এই সিদ্ধান্তও নুসাইবার মনে খচ খচ করতে থাকল। সাধরণত যে কোন বড় সিদ্ধান্ত নেবার আগে আরশাদ ওর সাথে কথা বলে কিন্তু এই মাহফুজ কে দাওয়াত দেওয়া বা সাংবাদিকের সাথে কথা বলার চেষ্টা করা কিছুই আরশাদ তাকে বলে নি। এই দুই দিনে আরশাদ তেমন কিছুই শেয়ার করছে না ওর সাথে এই ব্যাপারে। এযেন অন্য এক আরশাদ কে দেখছে নুসাইবা। তবে এই মূহুর্তে বিপদ থেকে উদ্ধার পাওয়া প্রথম কাজ। তাই নুসাইবা আর তর্ক করল না। তবে পরে এই ব্যাপারে আরশাদ কে জিজ্ঞেস করতে হবে সেটা মাথায় রাখল।


আরশাদের কাছ থেকে ফোন পাবার পর মাহফুজ আর নিজের হাসি থামাতে পারছে না। আরশাদ ফোন দিয়ে নানা কথা বলার পর আসল কথায় আসল। বলল তুমি তো আমার বন্ধুর বউ জেবা কে চিন, তুমি নাকি ওকে  বলেছে সাংবাদিক হাবীব সাদরুল্লাহ কে তুমি চিন। মাহফুজ বলে হ্যা। আরশাদ বলে তুমি তো তাহলে আমার রিপোর্টের কথা শুনেছ। মাহফুজ একটু মজা নেবার কথা ভাবে, বলে কোন রিপোর্ট আংকেল। আরশাদ বলে ঐযে দৈনিক আজকের সময় পত্রিকায় আমার নামে একটা ভুলভাল রিপোর্ট করেছে সেটার  ব্যাপারে আরকি। তুমি যদি একটু হেল্প করতে সাংবাদিক হাবিব সাদরুল্লাহর সাথে একটু যোগাযোগ করিয়ে দিতে। মাহফুজ বুঝে মাছ বড়িশি গিলেছে। মাহফুজ চিন্তা করেছিল সরাসরি যদি অমিত ভাইয়ের সাথে যোগাযোগ করায় তাহলে সন্দেহ হবে। কারণ যে রিপোর্টার রিপোর্ট করেছে তাকেই মাহফুজ একদম ভালভাবে চিনে এটা বেশি কাকতলীয় শোনায়। তার থেকে অন্য ভায়া একটা মাধ্যমে আসতে হবে। হাবিব ভাইয়ের এইসব সেটেলমেন্টের হাত ভাল। তার কাছে প্রথমে নিতে হবে। উনি তখন অমিত ভাইয়ের সাথে যোগাযোগ করিয়ে দিবেন। ফলে আরশাদ বা অন্য কার সন্দেহ হবে না এইখানে মাহফুজের কোন ভূমিকা আছে বরং আরশাদ মাহফুজের প্রতি কৃতজ্ঞ থাকবে। মাহফুজ তাই বলে আংকেল তাহলে আমি হাবিব ভাইয়ের সাথে যোগাযোগ করে দেখি। উনি কি বলে। আরশাদ বলে তাহলে আজকে রাতে আমাদের বাসায় তুমি খাও। তোমার দাওয়াত। তখন বিস্তারিত এই বিষয়ে আর কথা হবে। মাহফুজ বলে অবশ্যই আংকেল। মনে মনে ভাবে দুই দিন আগে আমাকে ফাদে ফেলার জন্য ডাকছিল আজকে নিজেরা ফাদ থেকে বের হবার জন্য ডাকছে। এবার আরশাদ বলে শোন বাসায় আসলে নুসাইবার সামনে এই সেটেলমেন্টের ব্যাপার গুলো একটু কম করে বলো। বিশেষ করে যদি সাংবাদিক সাহেব কিছু চান সেটা আমি দিতে রাজি কিন্তু সেটা নুসাইবার সামনে বল না। তাহলে ও ঝামেলা করবে। মাহফুজ টের পায় আর অস্ত্র ওর হাতে আপনা আপনি আসছে। মাহফুজ বলে আংকেল চিন্তা করবেন না। ফুফুর সামনে আমি কিছুই বলব না।


মাহফুজ আজকে একটু দেরি করেই নুসাইবাদের বাসায় যায়। জানে ওরা খুব সময় মানে কিন্তু আজকে ক্ষমতা ওর হাতে। তাই ইচ্ছা করেই নয়টার দাওয়াতে সাড়ে নয়টার সময় যায়। দরজা খুলে আরশাদ। একটা পাঞ্জাবী পড়ে আছে, ভিতরে নুসাইবা দাঁড়িয়ে আছে একটা মেরুন কালারের সালোয়ার কামিজ পড়ে। নুসাইবা দেখতেই মাহফুজ অস্বস্তিতে পড়ে যায়। গতকাল সিনথিয়ার সাথে সেক্স টকের কথা মনে পড়ে যায়। সিনথিয়া যেভাবে ওর ফুফু কে বর্ণনা করছিল সব মনে পড়ে যায়। একটু আগে গোসল করেছে নুসাইবা রান্না শেষে। চুল এখনো হালকা ভেজা। গোসলের পরের স্নিগ্ধতা এখনো চেহারা জুড়ে। গায়ের কাপড় ভেজা শরীরে সেটে আছে। মাহফুজের মনে পড়ে প্রথম যেদিন এই  বাসায় এসেছিল সেদিন কিভাবে নুসাইবার পাজামা তার পাছার খাজে আটকে ছিল বসা থেকে দাড়ানোর পর। মাহফুজ টের পায় ওর শরীরের উত্তেজনা বাড়ছে। আরশাদ আর নুসাইবা দুইজন একসাথে মাহফুজের উলটো দিকের সোফায় বসেছে। আরশাদ পত্রিকার রিপোর্টিটা কতটা মিথ্যা এইসব বলছে। মাহফুজ হ্যা হ্যা করে উত্তর দিচ্ছে। আরশাদের পাশে বসে নুসাইবা মনযোগ দিয়ে কথা শুনছে। নুসাইবা এক পায়ের উপর আরেক পা রেখে পা ক্রস করে বসেছে। মাহফুজ মনে মনে  হাসে। মেয়েরা যখন সামনে আড়াল থাকে না তখন এভাবে পা ক্রস করে বসে। যাতে পায়ের ফাক দিয়ে কিছু দেখা না যায় উলটো দিকের লোকের জন্য। মাহফুজ ভাবে সিনথিয়ার কথা ঠিক। নুসাইবা সব সময় প্রিম এন্ড প্রপার। এইযে আরশাদ ওর বিপদের কথা বলছে এর মাঝেও নুসাইবা ঠিক পা ক্রস করে বসেছে যেন মাহফুজের চোখে হঠাত করে কিছু না পড়ে। তবে এভাবে বসলে কামিজ খানিকটা উপরে উঠে আসে। আর ফ্যানের বাতাসে সেটা আর উপরে উঠে এসেছে সেটা আর নুসাইবা খেয়াল করে নি। মাহফুজ দেখে নুসাইবার থাইয়ের শেপ বোঝা যাচ্ছে এখন। মাহফুজ চোখ সরাতে পারে না। জোর করে চোখ কে টেনে উপরে তুলে। আবার সমস্যা। এইভাবে ক্রস করে পা ভাজ করে সাথে একটু ঝুকে বসলে বুবসের সাইজ আর বড় মনে হয়। ফ্যানের বাতাসে ওড়ান একপাশে সরে গেছে। তাই নুসাইবার বড় দুধ আর বড় মনে হয়। মাহফুজ নিজের চিন্তা কে কন্ট্রোল করার চেষ্টা করে। তবে ওর মনে হয় সিনথিয়া ওর পাশে বসে আছে আর কানে কানে বলছে টিচ হার এ লেসন মাহফুজ। টিচ হার। মাহফুজের মনে হতে থাকে এই জামার নিচে উদ্ধত দুধ গুলো কি নুসাইবার মত দেমাগী। কি রঙ ওদের? বোটার কালার কি? এরিওলা টা কেমন? সবারিনা যেমন নাভিতে হাত দিলে পাগল হয়, সিনথিয়ার যেমন ঘাড়ের পিছনে একটা সেনসেটিভ স্পট আছে, নুসাইবার কি তেমন কিছু আছে। মাহফুজ যত নিজের চিন্তা কে কন্ট্রোল করতে চেষ্টা করে ততই যেন সেই চিন্তা আর বেশি করে বেপরোয়া হয়ে উঠে।


খাবার টেবিলে বসে মাহফুজ অতিরিক্ত খাতির যত্ন টের পায়। এমনকি তিন চারদিন আগে দাওয়াতে যখন এসেছিল তার থেকেও বেশি। নুসাইবা বার বার উলটো দিকের চেয়ার থেকে উঠে ওর পাতে বিভিন্ন আইটেম তুলে দিতে থাকে। প্রতিবার আইটেম তুলে দেবার জন্য ঝুকলেই মাহফুজের দৃষ্টি নুসাইবার দুধের দিকে চলে যেতে থাকে। মাহফুজের মনে হয় আজকে যেন ও এক টিএনজার যে কোন এক কামদেবীর সামনে এসে পড়েছে হঠাত করে। তাই টিএনজারদের মত তার চোখ অবাধ্য হয়ে ছুটছে সেই কামদেবীর শরীরের প্রতিটা ভাজের আবিষ্কারের নেশায়। খেতে খেতে এবার আরশাদ বলে আমার পুরো ব্যাপারটা তো শুনলে। এবার তুমি বল সাংবাদিক হাবিব সাদরুল্লার সাথে তোমার কি কথা হল। মাহফুজ এবার বলতে থাকে পুরো প্ল্যানটা কিভাবে আরশাদে কে  নিয়ে রিপোর্টটা ডিল করা হবে। আসলে পুরো ব্যাপারটা তো আগে থেকেই সাজানো। হাবিব সাদুল্লাহ অবশ্য সেটা জানে না। তাই তাকে ফোন দিয়ে মাহফুজ যখন আরশাদের ব্যাপারটা বলল তখন হাবিব বলল কে রিপোর্ট করছে বললা? অমিত আজাদ। তাইলে তো ব্যাপারটা কঠিন হয়ে গেল। ও সহজে এইসব ডিলে রাজি হয় না। ওরে রাজি করাতে গেলে অনেক সময় লাগে। বড় বেশি নখরাবাজি করে ছেলেটা। টাকা ঠিক খায় তবে বহুত বাহানা করে দাম বাড়ায়। মাহফুজ বলে আপনি একটু ট্রাই করেন। পরের রিপোর্ট বের হবে এক দিন পর। আপনি যদি আজকে কালকের মধ্যে ম্যানেজ না করতে পারেন তাহলে পরে লাভ নাই। আর যার কেস সে সুবিধামত খরচ করতে রাজি আছে। চাকরির ব্যাপার। আর আমার আত্মীয় মানুষ। হাবিব বলেন ঠিকাছে তোমার আত্মীয় বললা এই জন্য ট্রাই করে দেখতে পারি। তবে কথা দিতে পারছি না। হাবিবের সাথে কথা হতেই মাহফুজ অমিত কে মেসেজ পাঠায় মিশন ইজ অন। এর দুই ঘন্টা পর সাংবাদিক হাবিব ফোন দেয় মাহফুজ কে। বলে, বড় আশ্চর্য ঘটনা। আজকে আধা ঘন্টার মধ্যে দেখি অমিত রাজি হয়ে গেল। আমিও বুঝলাম না। জিজ্ঞেস করতে বলল, ওর নাকি কি একটা কারণে কিছু টাকার দরকার। এই রিপোর্ট থেকে টাকা আসবে সেটা বুঝেই নাই তাই অন্য অনেকের কাছে টাকা ধার চাইছিল। এখন এই সুযোগ পাওয়ায় রাজি হয়ে গেছে একদম। তোমার আত্মীয় লাকি। মাহফুজ মনে মনে হাসে। এই বাহানাটা আগে থেকেই ঠিক করা ছিল অমিত ভাইয়ের, সেটা মাহফুজ জানে। তাই মাহফুজ বলে ব্যাপারটা মোটামুটি ম্যানেজ হইছে। কালকে একটা মিটিং হবে হাবিব ভাইয়ের একটা অফিস আছে পুরান পল্টনে। সেখানে দুপুর এগারটার দিকে। সেখানেই মিটিং করে কনভিন্স করতে হবে আপনার রিপোর্টার অমিত আজাদ কে। এই রিপোর্টার মেইনলি পলিটিক্যাল  নিউজ করে। আমার সাথে বেশ কয়েকবার কথা হইছে মাসুদ চাচার ঐখানে। খুব শার্প এই জার্নালিস্ট। তাই আপনি খুব বেশি দরাদরি না করে রাজি হয়ে যাইয়েন। নুসাইবা মাহফুজের কথা শুনে অবাক হয়ে যায়। কি বলছে এই ছেলে? দরাদরি না করে রাজি হয়ে যাইয়েন? নুসাইবা কে আরশাদ বলেছে সে নাকি এই সাংবাদিকের সাথে মিটিং করে তাকে বুঝাবে কেন এই রিপোর্টে ওর সম্পর্কে যা আছে তা ভুল, কেন অফিসের অন্য অনেকের দুর্নীতির দায়ভার ওর না। কিন্তু মাহফুজের কথা শুনে মনে হচ্ছে কিছু একটা লেনদেনের ব্যাপার আছে। নুসাইবা জিজ্ঞেস করে কি দরাদরির কথা হচ্ছে? আরশাদ আতকে উঠে। মাহফুজ বুঝে সামলে নিতে হবে ব্যাপারটা। বলে ফুফু আসলে আংকেল যেন ঐখানে এই ভুল রিপোর্টিং এর জন্য রাগারাগি না করে সেটা বললাম আরকি। তার উপর যদি আংকেল সেখানে তাকে ক্ষমা চাইতে বলে তাহলে হয়ত রাজি হবে না। খালি খালি তাই এইসব দাবি যাতে না করে সেটা  বললাম আরকি। নুসাইবা ঠিক বিশ্বাস করে উঠতে পারে না। ওর মনে হয় আরশাদ আর মাহফুজের ভিতর বুঝি চোরা চাহনির আদান প্রদান হল।


রাতে খাওয়া শেষে মাহফুজ যখন বিদায় নিতে চায় তখন আরশাদ বলে ওকে আমি নিচে নামিয়ে দিয়ে আসি। লিফট দিয়ে নিচে নামতেই আরশাদ বলে শোন টাকার আদান প্রদানের ব্যাপারটা একদম গোপন রাখতে হবে নুসাইবার কাছ থেকে। মাহফুজ বলে চিন্তা করবেন না আংকেল। আরশাদ একদম ছলছল চোখে মাহফুজের হাত জড়ায়ে ধরে বলে আমি তোমার কাছে একদম ঋনী হয়ে থাকব এই ব্যাপারটার জন্য। মাহফুজ বুঝে এটাই উপযুক্ত সময় কথাটা তোলার জন্য। বলে আংকেল আমার একটা অনুরোধ ছিল। আরশাদ কিছু না ভেবেই বলে, বলে ফেল। আমি করে দিব এখনি। মাহফুজ বলে আংকেল আপনি হয়ত আন্দাজ করছেন আমি সিনিথিয়া কে পছন্দ করি। সিনথিয়াও আমাকে পছন্দ করে। আপনি আমাদের হেল্প করেন একটু। ওর বাসার সবাই কে রাজি করাতে। আরশাদ একটু থমকে যায়। জানে ও  হ্যা বললে সবার প্রথম বাধা হবে নুসাইবা। তবে ভাবে হয়ত এই উপকারের পর নুসাইবা রাজি হতেও পারে। আরশাদ বলে আই উইল ট্রাই মাই বেস্ট। আমি কখনো প্রেমের বাধা না। তবে নুসাইবা যাতে বাধা না দেয় সেই জন্য ওকে আমি রাজি করাবো। আরশাদ কি তখনো জানে এই কথা দেওয়ার পরিণতি কি হবে?
Like Reply


আজকে বুধবার। নুসাইবার কোন হিসাব মিলছে না। মংগলবার অফিস থেকে আসার পর আরশাদ বলল সেই সাংবাদিক নাকি মিটিং এর সময় রাজি হয় নি রিপোর্ট সরিয়ে নিতে। ওরা অনেক প্রমাণ দেখানোর পরেও নাকি সেই সাংবাদিক অবিচল। পরে যে সাংবাদিক মিডিয়েট করার জন্য মাঝখানে ছিল সে নাকি পরে আরশাদ আর মাহফুজ কে বলেছে এই সাংবাদিক আগেই কার কাছে টাকা খেয়ে রেখেছে। আর টাকা খেয়েই রিপোর্ট করছে। আরশাদের দাবি অফিসে ওর শত্রুদের কেউ। কিন্তু আজকে সকালে যখন পত্রিকা বাসায় আসল দুই জনেই প্রথমে পেপার এর উপর হুমড়ি খেয়ে পড়ল। যদিও ওরা দৈনিক নতুন সময় রাখে না কিন্তু সেই দিনের জন্য হকার কে বলে রেখেছিল। আজকেও রিপোর্টের দ্বিতীয় কিসস্তি এসেছে। তবে সেটা একদম ভিতরের পাতায়। দেশ বাংলা নামে এক সেকশনে। তবে রিপোর্ট পড়ে আরশাদ কে মনে হল না খুব একটা অখুশি। আগের দিন যখন নুসাইবা কে বলছিল যে মিটিং ব্যর্থ হয়েছে তখনো নুসাইবার মনে হচ্ছিল আরশাদ আর আগের মত চিন্তিত না। যেন সব দুশ্চিন্তা নেমে গেছে। কিন্তু আবার রিপোর্ট এসেছে পত্রিকায়। সেটাই নুসাইবা বুঝতে পারছে না। আরশাদ কে কয়েকবার জিজ্ঞেস করেছে কিন্তু আরশাদ সব উদ্ভুত উত্তর দিয়েছে। বলল, আমি সৎ আমি কেন ওদের ভয় পাব। যা ইচ্ছা লিখুক। তাহলে আগে কেন চিন্তা করছিল? সেই মিটিং এ এমন কি হল যাতে আরশাদের চিন্তা চলে গেল? এই রিপোর্ট পড়েও আরশাদ কেন অত চিন্তিত না। এইসব ভাবতে ভাবতে আজকে অফিসে এসেছে। অফিসে এসেই আবার আজকের রিপোর্টটা পড়তে শুরু করেছে। সকাল থেকে এই অবধি মনে হয় বিশ বারের বেশি পড়া হয়ে গেছে। আস্তে আস্তে কিছু সন্দেহ মাথায় আসছে নুসাইবার। আগেরবারের রিপোর্টটাও পাশাপাশি রেখে তাই পড়ল। নুসাইবার মনে হচ্ছে ঘাপলা আছে কিছু। দুই রিপোর্টের কোয়ালিটি অনেক ফারাক। দ্বিতীয় রিপোর্ট যেন হাওয়ার উপর লেখা। আরশাদের বিরুদ্ধে অদক্ষতা, অযোগ্যতা আর দুর্নীতির অভিযোগ আনা হয়েছে কিন্তু কোন প্রমাণ দেওয়া হয় নি। খালি এই শব্দ গুলি ঘুরে ফিরে লেখা হয়েছে। আগের তুলনায় এই রিপোর্ট অনেক ছোট। মাত্র ভিতরের পাতায় এক কলামের তিন ভাগের এক ভাগে শেষ। কোন স্পেসিফিক উদাহারণ বা কিছুই বলা হয় নি। একই সাংবাদিক তিন দিনের ভিতর এমন বাজে মানের রিপোর্ট কিভাবে লিখল? এখানে ভিতরে ভিতরে কিছু হয় নি ত।  আরশাদ কি ওকে কোনভাবে ধোকা দিচ্ছে। আরশাদ কে জিজ্ঞেস করে এই মূহুর্তে কিছু বের করা যাবে কিনা বুঝতে পারছে না। আরশাদ অন্য সব সময়ের থেকে ভিন্ন ব্যবহার করছে। সব সময় ওর কথায় খুব অনুগত থাকে। নরমালি খুব কম রাগারাগি হয় ওদের মাঝে। হলেও সেখানে বেশির ভাগ সময় সরব থাকে নুসাইবা। কিন্তু গত তিন চারদিনের মধ্যে বেশ কয়েকবার ঝগড়া হয়ে গেছে ওদের মাঝে। আর প্রতিবার নুসাইবার সাথে সমান তালে ঝগড়া করেছে আরশাদ। প্রথমে মনে হচ্ছিল বুঝি এই রিপোর্টের প্রেসারে এমন করছে। কিন্তু আজকের এই রিপোর্ট পড়ার পর থেকে নুসাইবার মনে সন্দেহ হচ্ছে এই রিপোর্টের ব্যাপারে প্রশ্ন করলেই কেন রেগে যাচ্ছে আরশাদ। কি আছে এই রিপোর্টের পিছনে। কতটুকু সত্য এটা? কে উত্তর দিবে এসবের। নুসাইবার মনে হয় খালি একজন ওকে এই প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবে।


নুসাইবার ফোন দেখে মাহফুজ অবাক হয় না। আরশাদ আগেই সতর্ক করে দিয়েছিল এমন কিছু হতে পারে। আসলে অমিত ভাইয়ের ঐখানে সব সেটিং হয়েছে। অমিত ভাই রিপোর্ট পুরো বাদ দিতে পারবে না তাহলে সম্পাদকের কাছে জবাব দিতে পারবে না। তবে যেটা করবে সেটা হল রিপোর্টের ভিতর আসল মাল মসলা কিছুই রাখবে না। হাবিজাবি অভিযোগ দিয়ে ভরিয়ে রাখবে। আর ভিতরের পাতায় যাতে খবরটা আসে সেটার ব্যবস্থা করবে। আরশাদ বলে এইটা নুসাইবা কে জানানোর দরকার নেই। ও জানুক আমি আপোষ করি নি। রিপোর্ট  বের হোক। এই রিপোর্ট বের হলে আমার আর লাভে। আগের পর্বের ব্যাপারে লোকের সন্দেহ বাড়বে। কারণ এই পর্বের ভুল ভাল দেখিয়ে বলা যাবে আগের পর্বের নিউজ ভুয়া। আর নুসাইবা জানবে আমি আপোষ করি নি। এমনিতে ভুল রিপোর্ট এসেছে। তবে নুসাইবা যেমন একগুয়ে ও ঠিক তোমাকে ফোন দিবে জানার জন্য। তুমি অস্বীকার করবে সব। মাহফুজ বলে ঠিকাছে। আরশাদ কথা দিয়েছে ওর আর সিনথিয়ার ব্যাপারটা দেখবে। এটা জন্য মাহফুজ কে মুখ বন্ধ রাখতে হবে। তাই নুসাইবার ফোন পেয়ে আরশাদ খুব একটা অস্থির হয় না। হ্যালো ফুফু বলতেই নুসাইবা বলে তুমি কই আছ? আরশাদ বলে ফুফু আমি আমার বিজনেসের একটা কাজে আছি। নুসাইবা বলে শোন সন্ধ্যা ছয়টার দিকে তুমি সাবলাইম রেস্টুরেন্টে চলে আস। চিন তো কোথায় এটা? মাহফুজ একবার সিনথিয়া সহ গিয়েছিল।  হোটেল রেডিসন গার্ডেনের সাথের একটা রেস্টুরেন্ট। খুব পশ। বড়লোকদের জায়গা। তবে ওদের স্টেক দারুণ। কন্টিনেন্টাল খাবারও দারুণ বানায়। নুসাইবা বলে ঠিক সন্ধ্যা ছয়টার সময় থাকবে কিন্তু। আর আগে গেলে আমার নামে টেবিল বুক করা থাকবে। নাম বলে বসে পড়। ঠিকাছে ছয়টার সময় দেখা হবে। মাহফুজ কে কোন কথা বলার সুযোগ  না দিয়ে ফোনটা রেখে দেয় নুসাইবা। মাহফুজ আবার টের পায় নুসাইবা হ্যাজ সাম ম্যাজিকাল পাওয়ার। এই পুরো সময় ফোনে এমন ভাবে কথা বলল যেন পুরো পরিস্থিতি ওর কন্ট্রোলে। নিজের উপর একটু মেজাজ খারাপ হল। আরেকটু শক্ত হতে হবে।


সন্ধ্যা ছয়টার পাচ মিনিট আগে সাবলাইম রেস্টুরেন্টে গিয়ে মাহফুজ দেখে নুসাইবা আগে থেকে এসে বসে আছে। হালকা মিউজিক বাজছে। একটা পশ রেস্টুরেন্ট ভাব। তবে বাংলাদেশে ডিনারের ক্রাউড আসা শুরু করে রাত আটটার পর থেকে। তাই রেস্টুরেন্ট প্রায় ফাকা। কোণার এক টেবিল দুই বিদেশি বসে আছে। মাহফুজ আন্দাজ করে সাথে লাগোয়া হোটেল রেডিসন ব্ল এর গেস্ট। টেবিলে বসতেই নুসাইবা মাহফুজের নানা খবরা খবর জিজ্ঞেস করে। মাহফুজ মনে মনে ভাবে জেবার কথা ঠিক আছে চাইলে নুসাইবা কথার যাদুতে মানুষ কে মুগ্ধ করতে পারে। এই কয়দিন আগে একবার ওকে অপমান করল, পিকনিকের সময় অহেতুক ভুল ধরে খাটিয়ে মারল, পরে আবার আফসানা কে ডেকে প্রেমে ফেলাতে চাইল। কিন্তু আজকে যখন ওর সাথে হেসে হেসে কথা বলছে মাহফুজ চাইলেও সেই রাগ গুলো তুলে ধরতে পারছে না। নুসাইবার কথার সাথে সাথে সেই রাগ যেন পানি হয়ে যাচ্ছে। কথা বলতে বলতে নুসাইবা খাবারের অর্ডার দিল। মাহফুজ আর নুসাইবা যে যে যার যার পছন্দের ডিশ অর্ডার দিল। মাহফুজ স্টেক আর নুসাইবা অদ্ভুত নামের এক ফ্রেঞ্চ ডিশ। আসার পর দেখা গেল সেটা আসলে একটা মাছের গ্রেভি টাইপ  উইথ রাইস। মাছ ভাত যাকে বলে। মনে মনে হাসল মাহফুজ। বড় বড় দোকানের অদ্ভুত নাম কিন্ত আসলে খাবার সব একই পরিবেশনা যা ভিন্ন। সমাজের মানুষের মত। টাকায় মানুষের সাজসজ্জা আলাদা হয় কিন্তু ভিতরের মানূষ সব এক। বড়লোক আর গরীব, শিক্ষিত আর অশিক্ষিতদের মাঝে পার্থক্য নেয়। ষড়রিপুর তাড়নায় সবাই ছুটছে। মাহফুজ প্রস্তুত হয়ে এসেছিল রিপোর্টিং নিয়ে প্রশ্ন করলে কি উত্তর দিবে কিন্তু নুসাইবা যেন সেই বিষয়ের কথা ভুলেই গেছে। মাহফুজের ব্যবসা, রাজনীতি নিয়ে অনেক খুটিনাটি প্রশ্ন করছে। একবার মাহফুজের মনে হল, ওর আচরণে মুগ্ধ  হয়ে কি নুসাইবা সিনথিয়ার সাথে ওর সম্পর্কে রাজি হয়ে গেল। এখন বাজিয়ে দেখছে ওকে। মাহফুজ তাই আরেকটু সতর্ক হয়ে ওর ব্যবসা পলিটিক্স নিয়ে উত্তর দিতে থাকল। যত ভালভাবে দেওয়া যায়। তবে নুসাইবা যে আসলে কথার ফাদে মাহফুজ কে অন্য মনস্ক করে আসল খবর বের করতে চাইছে সেটা বুঝল একটু পর। হঠাত করে একদম কোন সংকেত ছাড়াই জিজ্ঞেস করল, আচ্ছা সেদিন আরশাদ আর তুমি যে কথা বলতে গেলে সেখানে কি হল? মাহফুজ তখন নিজের ব্যবসা রাজনীতি নিয়ে ভাল ভাল কথা বলতে ব্যস্ত ঠিক সেই সময় কথার মাঝে এই প্রশ্ন একটু হকচকিয়ে দিল মাহফুজ কে। তবে মাহফুজ সামলিয়ে নিয়ে আরশাদের ঠিক করে দেওয়া উত্তর দিল। নুসাইবা মাহফুজের উত্তর শুনে বুঝল কিছু গড়বড় আছে। মাহফুজ আর আরশাদের উত্তর হুবুহু এক, যেন এক জায়গা থেকে মুখস্ত করে বলছে। এক ঘটনা একাধিক জনের কাছে শুনলে সব সময় ভিন্ন ভিন্ন বয়ান পাওয়া যায়। সবাই যার যার পয়েন্ট অফ ভিউ বলে। এক রকম বয়ান তখন হয় যখন সবাই এক জায়গা থেকে মুখস্ত করে। নুসাইবার এই প্রশ্নের সঠিক উত্তর জানা দরকার। আরশাদের সাথে ওর এত  বছরের সম্পর্কে এই প্রথম আরশাদ কে ওর অচেনা মনে হচ্ছে। ওর মনে হচ্ছে ওর আর আরশাদের মাঝে সিক্রেট আছে। আরশাদ সব কিছু শেয়ার করছে না। ওর মনের শান্তির জন্য জানা দরকার আসলেই কি কথা হয়েছিল? আরশাদ কি আসলেই ঘুষ খায়? পত্রিকার রিপোর্ট কি সত্য? ওরা কি রিপোর্টার কে টাকা দিয়ে আসলেই কিনে নিয়েছে? এতদিন ধরে আরশাদের যে ইমেজ মনের মাঝে ওর সেটা কি মিথ্যা? আরশাদ কে নিয়ে ওর এত গর্ব কি আসলে মরীচিকা। নুসাইবা এখন উত্তর জানার জন্য ডেসপারেট। তাই টেবিলের ওপাশ থেকে হাত বাড়িয়ে মাহফুজের ডান হাতটা দি হাতের মাঝে নিয়ে শক্ত করে ধরে। মাহফুজ চমকে উঠে নুসাইবার কাজে। এই প্রথম নুসাইবার শরীর ওর শরীর স্পর্শ করল। কি নরম কোমল একটা হাত। তবে এই নরম হাতের মাঝেও এক উষ্ণতা আছে। মাহফুজের সারা শরীরে কেমন যেন একটা শিরশিরে অনুভূতি খেলা করে। চারপাশে তাকায়। রেস্টুরেন্ট এখনো প্রায় ফাকা। ঐ বিদেশীরা চলে  গেছে। কিন্তু আরকটা টেবিলে একা একজন বসে বসে মেনু দেখছে। নুসাইবা বলে আমার দিকে তাকাও। মাহফুজ তাকায়। কি গভীর একটা চোখ। নুসাইবার চোখে তখন অনেক প্রশ্ন। মাহফুজের হাত নিজের দুই হাতের মুঠির ভিতর নিয়ে শক্ত করে আকড়ে ধরে নুসাইবা। যেন শক্ত কোন অবলম্বন ধরে উঠে দাড়াতে চাইছে। প্রশ্ন করে, সত্যি করে বল কি হয়েছিল সেদিন? ঐ মিটিং এ কি কথা হয়েছিল? প্রথম রিপোর্টে যা লিখেছে ঐ সাংবাদিক তা কি সত্যি? মাহফুজ আবার সেই সাজানো উত্তর দিতে শুরু করে। নুসাইবা যেন এবার একটু ক্ষেপে উঠে। মাহফুজের হাত আর শক্ত করে দুই মুঠির মধ্যে চেপে ধরে। নুসাইবার হাত থেকে উষ্ণতা মাহফুজের শরীরে যেন বইতে থাকে। নুসাইবা বলে দেখ ছেলে আমি জানি তুমি বানানো কথা বলছ। আরশাদ ঠিক এক কথা বলেছে। সাজানো কথা না হলে দুই জনের বর্ণনা এত মিল হয় না। আমি তোমার উপর ভরসা করে আছি। মাহফুজ নুসাইবার চোখের দিকে তাকিয়ে ভাবতে থাকে। ওর মাথার ভিতর নানা হিসাব নিকেশ চলছে। নুসাইবা যে ওদের মিথ্যা ধরে ফেলেছে সেটা টের পেয়েছে তবে এখন এর থেকে বের হবার উপায় কি ভাবছে মাহফুজ। আরশাদ কথা দিয়েছে সিনথিয়ার ব্যাপারটা দেখবে তাই সরাসরি স্বীকার করতে পারছে না। আবার যদি স্বীকার না করে তাহলে নুসাইবা কখনোই মাহফুজ কে ক্ষমা করবে না। ফলে সিনথিয়ার সাথে রিলেশনে সব সময় উনি কাটা হয়ে থাকবেন। ড্যাম। এতো উভয় সংকট। যেকোন ভাবেই সিনথিয়ার সাথে ওর রিলেশনের জন্য এটা একটা বাধা। নুসাইবা মাহফুজের দিকে তাকিয়ে ওর চোখে দ্বিধা দেখতে পায়। আরশাদ কি কোন ভাবে মাহফুজ কে  হাত করেছে? আরশাদ বুদ্ধিমান সেটা নিয়ে কোন কালেই সন্দেহ ছিল না নুসাইবার। তবে সব সময় ও ভাবত আরশাদের বুদ্ধির ধার বুঝি অন্যরা টের পাচ্ছে। ওর সাথে আরশাদ সব সময় খুব শান্ত শিষ্ট, সব কিছু ওর সাথে কনসাল্ট করছে। ভুল কিছু করলে স্বীকার করে স্যরি বলছে। এই কয়দিন ধরে নুসাইবার মনে হচ্ছে আরশাদের এগুলো সব বুদ্ধির খেল না তো। বাসায় নুসাইবার সব কথা মেনে নিয়ে বাইরে এইসব করে বেড়াচ্ছে। কিন্তু নুসাইবাদের তো এমন নয় টাকার অভাব। দুইজনের ফ্যামিলি ব্যাকগ্রাউন্ড ভাল। ভাল ইনকাম করে দুইজন মিলে। তাহলে আরশাদের কেন এত টাকার দরকার? নুসাইবার মনে হয় এই এপার্টমেন্ট ঢাকায় বিভিন্নখানে জমি, বিদেশ ট্যুর সব কি এই ঘুষের টাকায় কেনা? ওর এগুলো জানা দরকার। অন্তত নিজের সাথে বোঝাপড়ার জন্য হলেও দরকার। মাহফুজ আসলে কি চায় সেটা নুসাইবা জানে। তাই নুসাইবা তার আসল চাল দেয়। নুসাইবা মাহফুজের হাত আকড়ে ধরে বলে, দেখ তুমি সিনথিয়া কে  পছন্দ কর আমি জানি। তুমি যদি আজকে সত্য কথা বল তাহলে আমি সিনথিয়া আর তোমার ব্যাপারে বাধা হয়ে দাড়াব না যদি সিনথিয়াও তোমাকে চায়।


মাহফুজ দ্বিধায় পড়ে যায়। যে উদ্দ্যেশের জন্য এত প্ল্যান। এত কর্মজজ্ঞ সব কি এত সহজে হাতে ধরা দিবে?  নুসাইবা কি এত সহজে রাজি হয়ে যাবে? আর যদি নুসাইবা রাজি হয় তাহলে মাহফুজ এখন কি করবে? আরশাদ কে দেওয়া কথা কি ভাঙ্গবে? মাহফুজের মাথার জোর হিসাব নিকেশ চলছে তখন। রাজনীতিতে থেকে থেকে একটা জিনিস শিখেছে মাহফুজ। মাঝে মাঝে পালটি দিতে হয়। তবে সেটা সব সময় করলে মানুষের কাছে আর আস্থাভাজন হওয়া যায় না। সারাজীবনে এই কাজ করতে হয় একবার বা বড়জোর দুইবার। এমন সময় করতে হয় যাতে লাভের পরিমাণটা হয় সর্বোচ্চ। মাহফুজের মনে হয় নুসাইবার অফারটা সেরকম একটা ব্যাপার। মাহফুজ ভিতরে ভিতরে ঠিক করে কি বলবে। নুসাইবা কে  বলে ফুফু আমি বলব কি কথা হয়েছে সেদিন কিন্তু আপনি আমাকে কথা দিতে হবে আপনি এই ব্যাপারে আরশাদ আংকেল কে কিছু বলবেন না। কারণ আপনি বললে উনি বুঝে ফেলবে আমি বলেছি আপনাকে। কারণ আপনার পরিচিত আর আমি ছিলাম সেদিন মিটিং এ। আপনি যদি আমার কথা শুনে উনার সাথে কথা বলতে চান তাহলে এমন ভাবে বলবেন যাতে আপনি এই ইনফরমেশন কিভাবে পেয়েছেন সেটা উনি না বুঝেন। বুঝলে সমস্যা হবে আমার। উনি বড় সরকারি চাকরি করে, পাওয়ারফুল লোক। আমি উনার শত্রু লিস্টে নিজের নাম উঠাতে চাই না। নুসাইবা মাথা নাড়ে। বলে, তুমি আমাকে বল সব। একদম ডিটেইলে। তোমার নাম যাতে না উঠে বা তোমার কোন সমস্যা না হয় আমি সেটা দেখব। মাহফুজ এবার একটু একটু করে  বলতে থাকে। মিটিং এ কিভাবে সলুউশন হল। কত টাকার আদান প্রদান হয়েছে। কেন পত্রিকার রিপোর্টিং বন্ধ হল না টাকা দেওয়ার পরেও। কেন সেকেন্ড রিপোর্ট এত বাজে ভাবে লেখা হল। আরশাদ পত্রিকায় খবর বের হবার পরেও কেন এত খুশি। প্রায় পনের মনিট ধরে মাহফুজ পুরো মিটিং এর ব্যাপারটা বলল, আসলে যতটুকু বলা যায় আরকি। ওর সাথে অমিত ভাইয়ের আগের যোগাযোগ গোপন রেখে ততটুকু বলল। মাঝে মাঝে নুসাইবা প্রশ্ন করে নানা বিষয়ে আর শিওউর হল। সব বলা শেষে নুসাইবার দিকে তাকাল মাহফুজ। নুসাইবার মুখের ভাষা পড়া যাচ্ছে না। অনুভূতিহীন হয়ে আছে মুখটা। কয়েক মিনিট চুপচাপ বসে থাকল দুইজন। নুসাইবা বিল মিটিয়ে উঠে পড়ল একটু পর। যাওয়ার সময় মাহফুজ কে খালি বলল আসি আজকে। পরে কথা হবে। মাহফুজ দেখল নুসাইবার চেহারায় তখন ঘোরগ্রস্ত দৃষ্টি যেন আশেপাশে কি হচ্ছে তার কোন খেয়াল নেই।
Like Reply


মাহফুজের সাথে সাইলাইম রেস্টুরেন্টে কথা বলার পর থেকে প্রায় এক সাপ্তাহ চলে গেছে। নুসাইবা এক প্রকার ঘোরে আছে এখনো। মাহফুজের কথা থেকে এতটুকু বুঝতে পেরেছে টাকার আদান প্রদান হয়েছে সেই সাংবাদিকের সাথে তাই এত বাজে রিপোর্টিং। লজিকালি চিন্তা করলে মানুষ সাংবাদিক কে টাকা সাধবে তখনি যখন সে নিজে দোষী। দোষ ঢাকার জন্য তখন সে টাকা ঢালবে। অন্য সময় অল্প কিছুতেই মাথা গরম করে চিৎকার চেচামেচি করে চারপাশের সবাই কে অস্থির করে দেয় নুসাইবা। তবে এইবার একদম  উলটো। থম করে চুপ মেরে আছে। আসলে নুসাইবা বুঝে উঠতে পারছে না কি করবে ও। ওর জীবনে সবচেয়ে বড় শক্তিশালী জায়গা ছিল ওর ম্যারেজ আর আরশাদ সেখানে ভিত্তিস্তম্ভ। আরশাদের উপর যতটা বিশ্বাস করে ও ততটা বিশ্বাস নিজের বাবা-মা ছাড়া আর কাউকে করে নি কখনো। তাই ওর কাছ থেকে এত বছর ধরে এত কথা লুকানো, গোপনে গোপনে ঘুষ খেয়ে সেই ঘুষের টাকা কে শেয়ার বাজারের লাভের টাকা বলে চালানো। সব মিলিয়ে আরশাদের যে অনেস্ট পার্সনের একটা ইমেজ এত বছর ওর মনের ভিতর ছিল সব যেন ভেংগে গেছে। কার সাথে এটা নিয়ে কথা বলবে ও? কথা বলবার মত তো কেউ নেই। দুই ভাই বিদেশ থাকে। বড় ভাই দেশে থাকলেও চাকরিতে এত ব্যস্ত নিজের বাসায় পর্যন্ত ঠিক করে সময় দেয় না। সেখানে ওর জীবনের দুঃখ শোনার সময় কই ভাইয়ার। সাফিনা ভাবী কে কি বলবে? ভাবী এত পছন্দ করে ওদের। ভাবী কে বলতে ইচ্ছা করে না। ভাবীর সামনে নিজেদের গোপন কথা গুলো আর তুলতে ইচ্ছা করে না। ওর বেস্ট ফ্রেন্ড ছিল নাফিসা। সেও এখন দেশের বাইরে সেটেলড ডিভোর্সের পর। ওকে কি বলা যায়? ডিভোর্সের পর নাফিসা যখন বিয়ে ব্যাপারটা নিয়ে একদম বিরক্ত তখন বারবার নুসাইবা নিজের বিয়ের উদাহারণ দিয়ে বলেছে সব বিয়ে এক রকম না। এখন আবার আরশাদের এই কথা ওকে বললে কি করবে নাফিসা? নিশ্চয় একচোট হাসবে। মানুষের হাসির মুখোমুখি হবার ইচ্ছা আপাতত ওর নেই। তাই কাউকেই বলে না। কিন্তু ভিতরে ভিতরে এই কথা চাপা পড়ে ওকে আর কষ্ট দিতে থাকে। এদিকে আরশাদ টের পায় নুসাইবা ঠিক আগের মত ব্যবহার করছে না। এক ধরণের শীতলতা আচরণে। আরশাদ বুঝে ওর সাংবাদিক সম্পর্কিত  ব্যখ্যা পুরোপুরি বিশ্বাস করে নি নুসাইবা। কারণ এই কয়দিনে নানা রকম খুটিনাটি প্রশ্ন করেছে সেই রিপোর্ট আর মিটিং নিয়ে। প্রশ্ন গুলো এত টু দ্যা পয়েন্টে সেটা এড়িয়ে যাওয়াই কঠিন। এটাক ইজ দ্যা বেস্ট ডিফেন্স। তাই আরশাদ এই বিষয়ে কথা উঠলেই রেগে গিয়ে বলছে তুমি কি আমাকে বিশ্বাস কর না। একটা ফালতু সাংবাদিক কোথায় কি লিখল সেই কারণে আমাকে অবিশ্বাস করছ। এত বছর ধরে চিন তুমি আমাকে। আরশাদ যতবার রেগে যাচ্ছে নুসাইবা ততবার কোন প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে না। শান্ত চোখে সেই সময়টা ওকে পর্যবেক্ষণ করছে। এতে আর বেশি কনফিউজড হয়ে যাচ্ছে আরশাদ। নুসাইবা শান্ত হয়ে বসে থাকার মেয়ে না। এত বছর যতবার আরশাদ রাগ দেখিয়েছে ততবার আর কয়েকগুণ রাগ দেখিয়েছে নুসাইবা। নুসাইবার রাগ বেশ বিখ্যাত ওদের ফ্যামিলিতে। রেগে গেলে কি বলে আর কি করে তার কোন ঠিক ঠিকানা থাকে না। সেখানে এইবার গত কয়েকদিনে নুসাইবা আরশাদ রাগার পরেও পালটা রাগছে না কেন সেটা বুঝতে পারে না আরশাদ। এই না বুঝতে পারাটা আর বেশি অস্থির করে তুলে ওকে ভিতরে ভিতরে।


নুসাইবা নিজেই নিজের শান্ত থাকার ক্ষমতা দেখে অবাক হয়। কত তুচ্ছ ব্যাপারে চিৎকার চেচামেচি করে মাথায় তুলেছে কিন্তু এইবার কিভাবে আর কেন চুপ আছে এটার ব্যখ্যা সে নিজেও জানে না। আসলে আরশাদের ব্যাপারটা ওর জন্য এতবড় শক হয়ে এসেছে যে এর রিএকশন কিভাবে দেখাবে সেটাই বুঝে উঠতে পারছে না নুসাইবা। একবার মনে হয় মাহফুজ কি ওকে সব ভুল বলল। আরশাদ যা বলেছে সেটা ঠিক? কিন্তু চিন্তা করলে দেখা যায় লজিক্যালি মাহফুজ যে ব্যাখ্যা দিয়েছে সেটাই ঠিক। হঠাত করে একটা রিপোর্টিং এর মান আগের রিপোর্টিং এর মানের চেয়ে এত খারাপ হতে পারে না। যে রিপোর্টিং নিয়ে আরশাদ রাতে ঘুমাতে পারছিল না সেই রিপোর্ট এর পরের পার্ট বের হবার পর আরশাদ এত খুশি খুশি থাকত না যদি না ব্যাপারটা আগে থেকেই ফিক্স করা হয়ে থাকে। পাতানো ম্যাচের মত। আর দোষী না হলে কখনো সাংবাদিক কে টাকা অফার করত না আরশাদ। কিন্তু এই ঘুষ আসলে কিভাবে খায় আরশাদ? টাকা কোথায় যায়? মাহফুজ কিছু কিছু ইংগিত দিয়েছে। কিন্তু নুসাইবার এত কিছুর পরেও সেটা বিশ্বাস হতে চাইছে না। জমি গুলো কি আসলেই শেয়ারের টাকায় কিনা নাকি ঘুষের টাকায়। রিয়াদ ভাই জানতে পারে কিন্তু তাকে প্রশ্ন করে লাভ নেই। বন্ধুর ব্যাপারে তার অটল আনুগত্য। মাহফুজ বলেছে আরশাদ নাকি ঢাকার কোন এক এলিট ক্লাবে জুয়া খেলে। বিশ্বাস হতে চায় না। জুয়া আর আরশাদ, মনে হয়ে দূর দূর পর্যন্ত এই এই দুইজনের মাঝে সম্পর্ক নেই। কিন্তু মাহফুজ বলেছে এই ব্যাপারে নাকি ঐ সাংবাদিকের কাছে প্রমাণ ছিল। আরশাদ বড়াবড় শান্ত, কোন এডভেঞ্চারাস কিছু নেই ওর মাঝে। বই পড়ে আর সিনেমা দেখে নুসাইবার মনে হয়েছিল জুয়াড়িরা সব পাড় মাতাল না হলে এড্রোলিন জাংকি। উত্তেজনার নেশায় ছুটে বেড়ায়। ওর চেনা পৃথিবীর বাইরের কিছুর সাথে যেন ওর মোলাকাত  হয়েছে। তাই নুসাইবা হিসাব মিলাতে পারে না। নুসাইবা তাই আবার মাহফুজ কে ফোন দেয়। আশ্চর্য হলেও সত্য এই ছেলেটাই খালি এখন নুসাইবার মনের অবস্থা কিছুটা আচ করতে পারছে, আর এই ছেলেটাই আরশাদের গোপন ব্যাপার গুলো জানে। তাই ওর সাথে কথা বলা ছাড়া মন হালকা করার আর কোন উপায় নুসাইবার কাছে নেই। কার সাথে এই মূহুর্তে কথা বলতে না পারলে পেট ফেটে মারা যাবে ও মনে হয়  নুসাইবার


গত সাত আটদিনে সাবলাইম রেস্টুরেন্টের পর তিনবার মাহফুজের সাথে নুসাইবার কথা হয়েছে ফোনে। প্রতিবার প্রায় এক ঘন্টার কাছে। কথার প্যাটার্ন এক। প্রতিবার নুসাইবা ফোন করে সেই মিটিং, আরশাদের ঘুষ খাওয়া এগুলো নিয়ে নানা প্রশ্ন করে মাহফুজ কে। মাহফুজ যতটা নিজেকে আড়াল করা যায় ততটা করে প্রশ্নের উত্তর দেয় যাতে সন্দেহের তীর ওর দিকে না আসে। প্রতিবার কথার শেষের দিকে নুসাইবা একদম চুপ হয়ে যায় আর ফোন রেখে দেয়। মাঝে মাঝে কথার মাঝখানে বলে জান মাহফুজ আমার একদম বিশ্বাস হচ্ছে না আরশাদ এগুলো করেছে। মাহফুজ বলে আমি জানতাম আপনি বিশ্বাস করবেন না তাই বলতে চাই নি। নুসাইবা বলে না না, আমি ভাবছি লজিক্যালি তোমার কথা ঠিক। আর এই ব্যাপারে কিছু জিজ্ঞেস করলেই আরশাদ যেভাবে রিএক্ট করছে তাতে আমার সন্দেহ আর শক্ত হচ্ছে। এইবার তাই নুসাইবার ফোন দেখে মাহফুজ ভাবে একই কারণে ফোন দিয়েছে বুঝি। বার বার এক কথা বলতে একটু বিরক্ত লাগে তবে মাহফুজ জানে নুসাইবা সন্তুষ্ট রাখতে পারার উপর সিনথিয়ার সাথে ওর রিলেশন নির্ভর করছে। আর আরেকটা ব্যাপারও অবশ্য আছে। নুসাইবার সাথে কথা বলতে মাহফুজের ভাল লাগছে। নুসাইবার কথায় একটা ম্যাচিওর ব্যাপার আছে। সিনথিয়া যেখানে অনেক চাইল্ডিশ। সাবরিনা অনেক বেশি রিজার্ভড। সেখানে নুসাইবা ম্যাচিওর এবং ঠিক কথা বার্তায় অত চুপচাপ না। একটা প্রাণোচ্ছল  ব্যাপার আছে। এটা মাহফুজের ভাল লাগছে। আর গলার স্বরটা ফোনে সুন্দর শোনায়। কথায় কথায় নুসাইয়াব বলেছিল আরশাদের সাথে প্রথম কথা হয়েছিল ডিপার্টমেন্টের প্রোগ্রামের কবিতা আবৃত্তি করা নিয়ে। আরশাদদের  ব্যাচ ছিল সেবার আয়োজক  ব্যাচ। আর নুসাইবা কবিতা আবৃত্তি করতে চেয়েছিল। গলা শুনলেই বুঝা যায় এই গলা কবিতা প্রাকটিস করা। মাহফুজের ভাল লাগে। এই ব্যাপারটা অবশ্য মাহফুজ স্বীকার করতে চায় না। প্রতিবার নুসাইবার সাথে কথা বলার সময় মাহফুজের গায়ে কাটা দিয়ে উঠে। শরীরে যেন রক্ত প্রবাহের বেগ বেড়ে যায়। সিনথিয়ার ওর ফুফু কে নিয়ে বলা কথা গুলো মনে পড়ে যায়। খুব অস্বস্তি হতে থাকে আবার ভাল লাগে। দ্বৈত এই অনুভূতি মাহফুজ কে একরকম দুলাতে থাকে। এইসব ভাবতে ভাবতে ফোন রিসিভ করে। হ্যালো বলতেই নুসাইবা ঐপাশ থেকে মাহফুজ কে বলে। শোন মাহফুজ আমাকে হেল্প করতে হবে। মাহফুজ বলে জ্বী বলেন। নুসাইবা বলে আমার আর প্রুফ লাগবে আরশাদের ব্যাপারে। মাহফুজ কয়েক সেকেন্ড ভাবে এরপর বলে, আংকেল ঘুষ খায় কিনা সেটা তো আসলে প্রমাণ করতে পারবে দূর্নীতি দমন কমিশন নাহলে পুলিশ। আমি তো এই দুইটার কোনটার মধ্যে না। নুসাইবা একটু দম নেয়। মাহফুজের কথায় যুক্তি আছে। তবে ভেবে বলে তুমি আমাকে আরশাদের জুয়া খেলার প্রমাণ যোগাড় করে দাও। তাহলেই হবে। জুয়া খেললে সহজেই বুঝা যাবে এই টাকা সৎ উতস থেকে আসে নি। কারণ সরকারি চাকরির বেতনে এই টাকা হবে না। মাহফুজ মুচকি হাসে। ওর প্ল্যান এভাবে রেজাল্ট আনবে সেটা মাহফুজ নিজেও ভাবে নি। মাহফুজ বলে আমাকে একটু সময় দেন ব্যবস্থা করছি। আর আপনি না বলেছিলেন আংকেল প্রতি সাপ্তাহে একবার অন্তত দুইবার আড্ডা দিতে বের হয় বন্ধুদের সাথে। আমার মনে হয় আংকেল সেদিন গুলাতে যায়। এখন আপনি আসলে কি করতে চান সেটা বলেন। নুসাইবা সংগে সংগে বলে ফলো করব ওকে আমরা। মাহফুজ জিজ্ঞেস করে, আমরা? নুসাইবা বলে হ্যা তুমিও সাথে থাকবে আমার। প্লিজ। এই হেল্পটুকু কর। মাহফুজ মনে মনে ভাবে ইন্টারেস্টিং ব্যাপার হবে। নুসাইবার এত দেমাগ আবার ভেংগে পড়তে দেখবে সামনা সামনি। খারাপ হয়
না ব্যাপারটা। তাই মাহফুজ বলে, ওকে। আপনি আমাকে তাহলে আগে থেকে জানাবেন কোন দিন আংকেল আড্ডা দিতে বের হবে।






মাহফুজের সাথে কথা বলার পর থেকেই নুসাইবা ভাবছিল কি করা যায়। তাই আরশাদ কে বলল এই শুক্রবার আমি বড় ভাইয়ার ঐখানে যাব। অনেকদিন সাফিনা ভাবীর সাথে কথা হয় না। তুমি যাবে? আরশাদ বলে তুমি যাও। ভাবীর সাথে আড্ডা দিলে মন ফ্রেশ হবে। আমিও দেখি এই শুক্রবার ভাবতেছি বন্ধুদের সাথে একটু কার্ড খেলব, আড্ডা দিব। এই কয়দিন যত প্রেসার গেল আমাদের দুইজনের আসলে একটু রিফ্রেশ হওয়া লাগবে। নুসাইবা জিজ্ঞেস করে ড্রিংক করবা তুমি বন্ধুদের সাথে। আরশাদ বলে তুমি তো জান আমি খুব বেশি ড্রিংক করি না। হালকা। সোশ্যাল ড্রিংকার যাকে বলে। খেলার সময় না করলে ঠিক আড্ডা জমে না। নুসাইবা কথা বাড়ায় না। বুঝে এই শুক্রবার আরশাদ কে ফলো করার উপযুক্ত সময়। তাই মাহফুজ কে সব জানায়। মাহফুজ বলে আপনি রেডি থাকবেন আমি সব করব। দুপুরে খাবার পর সাফিনাদের বাসায় যাবার কথা বলে নুসাইবা বের হয়ে পড়ে। আরশাদ বলে আমি আর দুই ঘন্টা পর বের হব। নুসাইবা বাসা থেকে বের হয়ে একটু দূরে অপেক্ষা করতে থাকে। কিছুক্ষণ পর মাহফুজ আসে। মাহফুজ আজকে এক সিএনজি ভাড়া করে এনেছে। পরিচিত ড্রাইভার। যতক্ষণ থাকবে পরে সেই অনুযায়ী ঘন্টা হিসেবে টাকা দিবে। মাহফুজ জানে ঢাকা শহরে এই সিএনজি গুলো হল কাউকে ফলো করার সবচেয়ে ভাল বাহন। পুরো শহরে লাখে লাখে এই সবুজ সিএনজি অটো। তাই কেউ বুঝতেই পারবে না ফলো করলে। কারণ রাস্তায় হাজার  হাজার সিএনজি পাশাপাশি চলে এক সময়। আর যানযটের ভিতর দিয়েও বেশ ভাল এগুতে পারে। দুইজন ওদের বাসার উলটো দিকে সিএনজিতে অপেক্ষা করতে থাকে। নুসাইবা সিএনজির ভিতরে থাকে যাতে কেউ ওকে না চিনতে পারে। গায়ের ওড়না এমনভাবে মুখে প্যাচিয়ে রেখেছে যাতে মুখ ঢেকে থাকে। মাহফুজ দেখে ওড়না দিয়ে মুখ ঢাকতে গিয়ে বুকের কাছ থেকে ওড়না সরে গেছে। মাহফুজ চাইলেও নজর সরাতে পারে না। উদ্ধত বুক দুইটা যেন সব নজর কেড়ে নিচ্ছে। নুসাইবার মাহফুজের দিকে খেয়াল নেই। এক দৃষ্টিতে এপার্টমেন্ট কমপ্লেক্সের গেটের দিকে তাকিয়ে আছে। বেশ কিছুক্ষণ পর আরশাদ নিচে নেমে আসে। বেশ ফিটফাট করে সেজে আছে। আড্ডা দিতে যাবার সময় এমন ফিটফাট করে ইন করে ড্রেস পড়ে না সাধারণত আরশাদ। ওর বন্ধুরা এমন করলে ক্ষেপায় ওকে। তাই নুসাইবা বুঝে আরশাদ বন্ধুদের ঐখানে যাচ্ছে না। ওদের ড্রাইভার ছুটিতে। আরশাদ তাই রাস্তায় দুই এক মিনিট দাঁড়িয়ে থাকে আর মোবাইল চেক করে। একটু পরে একটা কার এসে থামে সামনে। মাহফুজ বলে সম্ভবত উবার ডেকেছে। মাহফুজদের সিএনজি আরশাদের উবার কে ফলো করতে থাকে। শুক্রবার ছুটির দিন লাঞ্চের পর পর রাস্তা ফাকা থাকে। তাই গাড়ি দ্রুত বেগে চলছে। সিএনজি সমানতালে ফলো করছে। মাহফুজ টের পায় ওর শরীর নুসাইবার শরীরের সাথে লেগে যাচ্ছে। এই সিএনজি গুলো ভিতরে এমনিতেও একটু চাপা। তারপর চারপাশে এরকম একটা ঘেড় দেওয়া থাকায় আর কাছে সরে বসতে হয়। নুসাইবার শরীরের উত্তাপ টের পায় মাহফুজ। মাহফুজ টের পায় ওর প্যান্টের ভিতর যেন একটু একটু করে জাগছে কেউ। উবার প্রধানমন্ত্রীর অফিস ক্রস করে সামনে যাচ্ছে। মাহফুজ জানে জুয়া খেলার জন্য আরশাদ উত্তরা রেস্টহাউজ এন্ড বারে যাবে। তাই এটাই রাস্তা হবার কথা। নুসাইবার দিকে তাকায় মাহফুজ। এক দৃষ্টিতে সামনে তাকিয়ে আরশাদের গাড়ি কে দেখছে। যেন জীবন মরণ এর উপর নির্ভর করছে। তবে মহাখালী ফ্লাইওভার থেকে নেমে একটু সামনে এগুতেই উবার রাইট টার্ন নিল। বনানীর একটা গলিতে ঢুকছে গাড়ি। মাহফুজ একটু অবাক হয়। এখানে কই যাচ্ছে? নুসাইবা জিজ্ঞেস করে এখানেই কি সেই ক্লাব। মাহফুজ বলে নাহ তো। পালটা জিজ্ঞেস করে, এখানে কি উনার কোন বন্ধু থাকে যার বাসায় আড্ডা দিবে। নুসাইবাও বলে না। দুইজনেই ভাবতে থাকে কোথায় যাচ্ছে গাড়ি। এই গলি সেই গলি ঘুরে গাড়ি অবশেষে একটা বড় এপার্টমেন্ট কমপ্লেক্সের সামনে থামে। গাড়ি ভিতরে ঢুকে না। আরশাদ নেমে ভাড়া মেটায়। মাহফুজদের সিএনজি একটু সেফ দূরুত্বে দাঁড়ায় যাতে বুঝা না যায়। আরশাদ ভিতরে ঢুকে পড়ে। মাহফুজরা বাইরে অপেক্ষা করে। এক ঘন্টা যায় আরশাদের বের হবার কোন নাম নেই। মাহফুজ একবার এপার্টমেন্ট কমপ্লেক্সের গেটের কাছে গিয়ে দারোয়ানদের কে জিজ্ঞেস করে আরশাদের কথা কিন্তু তারা কোন ইনফরমেশন দিতে অস্বীকার করে। মাহফুজ আবার ফেরত আসে সিএনজিতে। নুসাইবা জিজ্ঞেস করে কি ব্যাপার? মাহফুজ  বলে কোন খবর বের করতে পারে নি। দুইজনেই বসে থাকে। সময় গড়ায়। দুই ঘন্টা। তিন ঘন্টা। চার ঘন্টা। মাহফুজ এবার বলে চলুন চলে যাই, উনি মনে হয় আর থাকবে। কিন্তু নুসাইবা বলে নাহ আজকে দরকার হলে সারা রাত ফলো করব। নুসাইবা আজ জানবেই কি করছে ওর অজান্তে আরশাদ। মাহফুজ চুপ করে যায়। ফোনে ফেসবুক ঘাটে। মাঝে পরিচিত দুই একজনের সাথে কিছু দরকারি কথা সারে ফোনে। পুরোটা সময় নুসাইবা সিএনজিতে বসে এক দৃষ্টিতে এপার্টমেন্ট কমপ্লেক্সের গেটের দিকে তাকিয়ে থাকে। মাহফুজ নুসাইবা কে দেখে। নুসাইবার সৌন্দর্য নিয়ে কখনো কোন প্রশ্ন ছিল না। এত কাছে নুসাইবার শরীর এখন মাহফুজের মনের উপর তাই প্রভাব বিস্তার করে। সিএনজিতে অনেকক্ষণ বসে বসে কামিজ গায়ে একদম সেটে গেছে। পাছাটা সাইড থেকে ভাল করে দেখলে বুঝা যাচ্ছে। এইসব ভাবতে ভাবতেই আরশাদ বের হয়ে আসল চার ঘন্টা পর। দুই এক মিনিটের মধ্যে আরেকটা উবার এসে হাজির। এবার মাহফুজরা আবার ফলো করতে থাকল। উবার আবার মেইন রাস্তায় উঠে এসে উত্তরার দিকে যেতে থাকে। নুসাইবা জিজ্ঞেস করে এটাই কি সেই ক্লাবের রাস্তা। মাহফুজ হ্যা বলে। নুসাইবা মাহফুজের হাটু খামচে ধরে সামনে তাকিয়ে থাকে। নুসাইবা এখন ঘোরে। বনানীর এই ফ্লাট বাড়িতে কি করছিল এতক্ষণ আরশাদ? আর এখন কি সত্যি সত্যি জুয়ার আড্ডায় যাচ্ছে? কিছুক্ষণ পর উবার আবার একটা গলিতে ঢুকল মেইন রাস্তা থেকে। মাহফুজ জানে এটা পরিচিত রাস্তা। এই গলি কোথায় নিয়ে যাবে। তাই নুসাইবা কে বলে এই গলিতেই একটু পর উত্তরা রেস্টহাউজ এন্ড বার। নুসাইবা মাহফুজের হাটুর উপর ধরে রাখা হাতটা চাপ বাড়ায়। মাহফুজ কিছু বলে না কিন্তু প্যান্টের ভিতর উষ্ণতা টের পায়। এক সময় উবার উত্তরা রেস্টহাউজের সামনে থামে। ভাড়া চুকিয়ে ভিতরে ঢুকে যায় আরশাদ। নুসাইবার মনে হয় ওর সারা পৃথিবী যেন ভেংগে পড়েছে। এতদিনের জানা আরশাদ বুঝি সত্যিকারের আরশাদ না। এতদিন ধরে মনের ভিতর চেপে রাখা আবেগ যেন আর ধরে রাখতে পারে না। ঝরঝর করে কেদে দেয় সিএনজির ভিতর। সিএনজিওয়াল পিছন ফিরে তাকায় কিছু বলে না। মাহফুজ বলে চাচা উলটা ঘুরান। যেখান থেকে প্রথম ম্যাডাম কে তুলছিলেন সেখানে চলেন। সিএনজি আবার ঢাকার রাস্তা ধরে ফিরে চলে। সন্ধ্যা হয়েছে। ছুটির দিন সন্ধ্যায় ভীড় বাড়ে। সিএনজি তাই সিগনালের জ্যাম গুলো ঠেলে ধীরে ধীরে এগুয়। নুসাইবা অঝোরে কেদেই যাচ্ছে। কাদতে কাদতে হেচকি উঠে যাচ্ছে ওর। কি করবে বুঝতে পারে না মাহফুজ। কি করা উচিত ওর। কান্নারত কাউকে জড়িয়ে ধরে সান্তনা দিতে হয়। মাহফুজ তাই পিঠের পিছ দিয়ে হাত নিয়ে নুসাইবা কে জড়িয়ে ধরে। আরেক হাত মাথায় রেখে বলতে থাকে কাদবেন না, সব ঠিক হয়ে যাবে। এতদিন আবেগ ভিতরে চেপে রেখে নুসাইবা এমনিতেও পাগল হয়ে যাচ্চিল। আজ কেদে কেদে আবেগ হালকা করছে এইসময় মানুষের স্পর্শ, সহানুভূতির কথা যেন আর দূর্বল করে দেয় নুসাইবা কে। মাহফুজের কাধে মাথা হেলিয়ে দেয়। এক হাত দিয়ে মাহফুজ কে ধরে আর জোরে কাদতে থাকে। সব দুঃখ আজকে চোখের জলে ভাসিয়ে দিতে চায়। ওর চেনা পৃথিবী যেন কয়েক ঘন্টায় অনেক বদলে গেছে। এতদিন সন্দেহ করেছে আজকে চোখে দেখে যেন চেনা পৃথিবী ভেংগে পড়েছে। তাই মাহফুজ কে জড়িয়ে ধরে কেদে কেদে নিজের ভিতরটা শান্ত করতে চায়। মাহফুজ টের পায়  নুসাইবার শরীরের উত্তাপ যেন আর ভাল করে ওর শরীরে ছড়িয়ে পড়ছে। নিজের জীবনের দুখের কারণে ভেংগে পড়া একজন নারীর শরীরের ব্যাপারে অশ্লীল কোন চিন্তা করতে মাহফুজের বাধে কিন্তু মনের ভিতর থাকা দুষ্ট চিন্তা গুলো যেন আস্তে আস্তে জয়ী হতে থাকে। নুসাইবার চোখের পানিতে মাহফুজের শার্টে ঘাড়ের কাছে ভিজে যাচ্ছে। মাহফুজ নুসাইবার পিঠের উপর সান্তনার জন্য হাত বুলায়। পিঠের উপর ব্রায়ের স্ট্রাপ টের পায়। ওর প্যান্টের ভিতর নতুন একটা অস্তিত্ব যেন জানান দিচ্ছে। মাহফুজ পিঠে হাত বুলায় আর টের পায় ওকে জড়িয়ে ধরার কারণে নুসাইবার নরম বুক গুলো এক সাইডে ওর শরীরে একদম পিশে যাচ্ছে। নুসাইবা তখন খালি আশ্রয় চায়, সহানুভূতি চায়। ওর মনে আর কিছু নেই। কিন্তু মাহফুজের মনে সব দুষ্ট চিন্তা ঘুরছে। নুসাইবার নরম শরীর ওর মনে আগুন ধরাচ্ছে। মাহফুজের মনের ভিতর যেন সিনথিয়া বলে উঠে ইউ ফাকিং বাস্টার্ড। নুসাইবা ফুফুকেও তুমি ছাড়বে না দেখছি। মাহফুজ যতই মনকে কন্ট্রোল করতে চায়, শরীর তত জয়ী হয়ে যায় যেন। মাহফুজ যেন নতুন এক সম্ভাবনা দেখতে পায়। নুসাইবার কাছে যেখানে চেনা পৃথিবী ভেংগে পড়ছে মাহফুজের কাছে সেখানে নতুন সম্ভাবনার দুয়ার হাতছানি দিচ্ছে। ঢাকার রাস্তায় সবুজ সিএনজি যানযট ঠেলে এগুতে এগুতে যেন দুইজন ভিন্ন ভিন্ন মানুষকে এক গন্তব্যের দিকে এগিয়ে  নিয়ে যেতে থাকে।
Like Reply
গত দুই সাপ্তাহ অফিসে ভীষণ ব্যস্ততার পর আজকে একটা রিপোর্টের ফাইনাল কপি সাবমিট করতে পেরেছি। এরপর সারাদিন শুধু এই আপডেটের কাজ করে আপডেটের বাকি অংশ শেষ করেছি। আশা করি আপনাদের ভাল লাগবে। আর পড়ে কেমন লাগল জানাবেন অবশ্যই। আপনাদের অনুভূতি জানতে পারলে আমার পরিশ্রম উসুল হবে। হ্যাপি রিডিং।
Like Reply
A masterpiece. Apni takchen Sir
[+] 1 user Likes Dodoroy's post
Like Reply
অসংখ্য ধন্যবাদ।
[+] 1 user Likes crazy king's post
Like Reply
প্রথমত আপনার আপডেটের সাইজ দেখে মন ভালো হয়ে গেছে আর আপনার লেখা পড়ে মনটা আরো ভালো হয়ে যায় । প্রতি পর্ব আগের পর্ব থেকে আরো বেশি চমংকার হয়। আপনার ফ্যান হয়ে গেছি ভাই ।

ভাই যাই ই হোক লেখা থামিয়েন না। পরবর্তী আপডেটের জন্য অধির আগ্রহে থাকলাম।

লাইক, রেপু দিয়ে দিছি ।
[+] 1 user Likes farhn's post
Like Reply
কি বলবো? বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছি, গল্পে শুধু চমক আর চমক। লেখক কাদের ভাইকে যতই ধন্যবাদ দেই, কমই হয়ে যাবে। ধন্যবাদ এর সাথে রেপু + লাইক দিলাম।
[+] 1 user Likes bluesky2021's post
Like Reply
অসাধারণ হচ্ছে
[+] 1 user Likes Ari rox's post
Like Reply
ভাই অসাধারণ।।।। একদম ফাটাফাটি।।। ভাই একটু কষ্ট হলেও পরের আপডেটটা তারাতারি দিয়েন। ???
[+] 1 user Likes rtb14's post
Like Reply
গল্প পড়ার আগেই লাইক রেপু দিলাম ।কারণ আপনি অসাধারণ তাই গল্প  ও অসাধারন হবে জানি।

[+] 1 user Likes rizvy262's post
Like Reply
রহস্য আর রহস্য ।আহ পরাণ টা ভরে গেছে। এই নাহলে গল্প ধণ্য আপনি লেখক সাহেব। এখন শুধু একটাই  আবদার যদি  ব্যবস্থা না থাকে তাহলে পরবর্তী পর্ব তাড়াতাড়ি দিবেন। এটা আপনার ছোট ভাই হিসাবে বললাম।

[+] 1 user Likes rizvy262's post
Like Reply
অনেক ভালো হয়েছে ভাই। অনেক বড় আপডেট দিয়েছেন।
ধন্যবাদ আপনাকে, চালিয়ে যান।
[+] 1 user Likes Rancon's post
Like Reply
খুটিনাটি বিষয়গুলাও খেয়াল করে লিখসেন। অনেক ধন্যবাদ। তবে সাস্পেন্স-এর ভিতরে রাখলেন। আপনার উপন্যাসটি অসাধারন হচ্ছে।
[+] 1 user Likes Amipavelo's post
Like Reply
আরশাদের বনানীর ব্যাপারটা রহস্যে থাকল। জানার অপেক্ষায় থাকলাম।  

লেখকের লেখার ধরন নিয়ে সবার কাছে  পরিচিত হয়েছেন। লেখকের কাছে দাবী থাকল তিনি যেন মূলধারার সাহিত্যেও কিছু লেখালেখি করেন। বর্তমান সময়ের বাস্তবতা এত নিখুঁতভাবে বর্ণনা করছেন যে তিনি মুললধারার সাহিত্যেও সাড়া জাগাতে পারবেন।  রাজনীতির অলিগলি, সরকারী-বেসরকারী অফিসগুলোর কার্যকলাপ, শিক্ষাপ্রতিস্ঠানের কার্যক্রম, অপরাধ জগত সবমিলিয়ে দুর্দান্ত লেখা ক্ষমতা লেখকের আছে। লেখকের বড় গুণ প্রতিটা বিষয় বিস্তারিতভাবে উল্লেখ করা। বড় হলেও লেখা পড়তে মজা পাই। 

এটা বিবেচনায় রাখবেন বলে বিশ্বাস করি।
[+] 3 users Like sexybaba's post
Like Reply




Users browsing this thread: 18 Guest(s)