Thread Rating:
  • 100 Vote(s) - 2.84 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
WRITER'S SPECIAL "ধূসর পৃথিবী"
(20-07-2023, 04:27 PM)InciBinsy Wrote: সুবিচার বই কি? সব চরিত্র তোমার সৃষ্টি। তাদের অন্ত ও তোমারই হাতে। সুতরাং চরিত্ররা তো তোমার কাছেই বিচার চাইবে॥

সহমত পোষণ করলাম। কারন মনেন দাই চরিত্র গুলো বানিয়েছে দাদাই লিখেছে "আদ্রি অপেক্ষা করবে আদির জন্যে সারা জীবন" । এখন মনেন দাদা যদি চরিত্রের শেষ পর্যায় কি হবে/অপেক্ষার প্রহর শেষ হবে কি না? এইসবএর ইতি না টানে তাহলে চরিত্র গুলো তো আক্ষেপ নিয়ে বসে থাকবে আর দাদাকেই প্রশ্ন করবে।


My pain is constant and sharp, and I do not hope for a better world for anyone. ArrowNamaskar


[+] 1 user Likes Patrick bateman_69's post
Like Reply
Do not mention / post any under age /rape content. If found Please use REPORT button.
(20-07-2023, 04:27 PM)InciBinsy Wrote: সুবিচার বই কি? সব চরিত্র তোমার সৃষ্টি। তাদের অন্ত ও তোমারই হাতে। সুতরাং চরিত্ররা তো তোমার কাছেই বিচার চাইবে॥
এটা ভালো বলেছো তবে আবার ওই একই কথা বলতে হবে দেখা যাক শেষ পর্যন্ত কি হয়?
(20-07-2023, 07:14 PM)Patrick bateman_69 Wrote: সহমত পোষণ করলাম। কারন মনেন দাই চরিত্র গুলো বানিয়েছে দাদাই লিখেছে "আদ্রি অপেক্ষা করবে আদির জন্যে সারা জীবন" । এখন মনেন দাদা যদি চরিত্রের শেষ পর্যায় কি হবে/অপেক্ষার প্রহর শেষ হবে কি না? এইসবএর ইতি না টানে তাহলে চরিত্র গুলো তো আক্ষেপ নিয়ে বসে থাকবে আর দাদাকেই প্রশ্ন করবে।

প্রশ্ন করতেই পারে কিন্তু উত্তর সময় দেবে দেখা যাক।
I'm the King of Dark
                &
I rule over all Devils
               devil2 devil2
Like Reply
Update kobe pabo dada
[+] 1 user Likes Jaguar the king's post
Like Reply
(22-07-2023, 10:30 AM)Jaguar the king Wrote: Update kobe pabo dada

দেখছি। লেখা হলেই দেবো  Namaskar
I'm the King of Dark
                &
I rule over all Devils
               devil2 devil2
Like Reply
Update তাড়াতাড়ি দেওয়ার চেষ্টা করবেন
—͟͟͞͞?⁀➷ᏁᎪᎥm_Ꮓ ᭄✭✭
"The End Is The Beginning And The Beginning Is The End."
[+] 1 user Likes Naim_Z's post
Like Reply
(22-07-2023, 10:14 PM)Naim_Z Wrote: Update তাড়াতাড়ি দেওয়ার চেষ্টা করবেন

অবশ্যই করবো  Namaskar
I'm the King of Dark
                &
I rule over all Devils
               devil2 devil2
Like Reply
(22-07-2023, 06:36 PM)Monen2000 Wrote: দেখছি। লেখা হলেই দেবো  Namaskar

সাপ্তাহিক ধারাবাহিকীর আজ সময় - গুণমানে তুমি আপোষ করবে না জানি। তবু চেষ্টা করো যদি আজ এবারের পর্বদুটো দেওয়া যায়॥
[+] 1 user Likes InciBinsy's post
Like Reply
(23-07-2023, 09:05 AM)InciBinsy Wrote: সাপ্তাহিক ধারাবাহিকীর আজ সময় - গুণমানে তুমি আপোষ করবে না জানি। তবু চেষ্টা করো যদি আজ এবারের পর্বদুটো দেওয়া যায়॥

চেষ্টা অবশ্যই করবো  Namaskar
I'm the King of Dark
                &
I rule over all Devils
               devil2 devil2
Like Reply
অধীর আগ্রহে প্রতীক্ষারত॥
[+] 1 user Likes InciBinsy's post
Like Reply
Update pabo na
[+] 1 user Likes Jaguar the king's post
Like Reply
(23-07-2023, 08:09 PM)InciBinsy Wrote: অধীর আগ্রহে প্রতীক্ষারত॥
চেষ্টা করছি যত তাড়াতাড়ি দেওয়া যায় সেটার
(23-07-2023, 09:36 PM)Jaguar the king Wrote: Update pabo na

চেষ্টা করছি যত তাড়াতাড়ি দেওয়া যায় সেটার
I'm the King of Dark
                &
I rule over all Devils
               devil2 devil2
Like Reply
আজ আর আপডেট আসবে Smile Smile
[+] 1 user Likes Arpon Saha's post
Like Reply
Aj ke r pelam nah
[+] 1 user Likes Jaguar the king's post
Like Reply
(23-07-2023, 11:37 PM)Arpon Saha Wrote: আজ আর আপডেট আসবে Smile Smile
লেখা কমপ্লিট হয়নি দুঃখিত  Namaskar
(24-07-2023, 12:16 AM)Jaguar the king Wrote: Aj ke r pelam nah

আসলে একটু ব্যাস্ত ছিলাম লেখা হয়নি পুরোটা, চেষ্টা করছি তাড়াতাড়ি দেওয়ার  Namaskar
I'm the King of Dark
                &
I rule over all Devils
               devil2 devil2
Like Reply
অপেক্ষা করতে করতে মানুষ এক সময় অতিষ্ট হয়ে যায় । এতো দেরি করলে দাদা তোমার রিডার রাও এমন যেনো না হয় এটাই কাম্য কিন্তু সবাই তো মানুষ এ প্রাণীর ধর্য বড়ই কম তো বুঝতেই পারছো । এখন আমার নিজের কথা বললে কি : আমি দাদা তাড়াতাড়ি আপডেট না পেলে কিছু কিছু আংশিক অংশ ভুলে যাই আমি। তো আবার পড়তে হয় আগের পার্ট তারপরে নিউ পার্ট পড়তে হয় । কিন্তু ধীরে ধীরে এই জিনিস যদি হতেই থাকে তাহলে মনে হবে ধুর আবারও আগের পার্ট পড়তে হবে । So, আপডেট দিলে একটু ফাস্ট try করো দাদা এইটা এক মাত্র চাওয়া । অন্যদের খবর জানি না but ami ei Story ses na obdi pore মরবো না এই তোমায় বলে দিলাম আপডেট তোমাকে দিতে হবে হিহি ।


My pain is constant and sharp, and I do not hope for a better world for anyone. ArrowNamaskar


[+] 1 user Likes Patrick bateman_69's post
Like Reply
(24-07-2023, 01:11 AM)Patrick bateman_69 Wrote: অপেক্ষা করতে করতে মানুষ এক সময় অতিষ্ট হয়ে যায় । এতো দেরি করলে দাদা তোমার রিডার রাও এমন যেনো না হয় এটাই কাম্য কিন্তু সবাই তো মানুষ এ প্রাণীর ধর্য বড়ই কম তো বুঝতেই পারছো । এখন আমার নিজের কথা বললে কি : আমি দাদা তাড়াতাড়ি আপডেট না পেলে কিছু কিছু আংশিক অংশ ভুলে যাই আমি। তো আবার পড়তে হয় আগের পার্ট তারপরে নিউ পার্ট পড়তে হয় । কিন্তু ধীরে ধীরে এই জিনিস যদি হতেই থাকে তাহলে মনে হবে ধুর আবারও আগের পার্ট পড়তে হবে । So, আপডেট দিলে একটু ফাস্ট try করো দাদা এইটা এক মাত্র চাওয়া । অন্যদের খবর জানি না but ami ei Story ses na obdi pore মরবো না এই তোমায় বলে দিলাম আপডেট তোমাকে দিতে হবে হিহি ।
অসুবিধার জন্য ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। কিন্তু আমার দিকটাও বোঝার চেষ্টা করো অফিস, বাড়ির সব চাপ সামলে লিখতে হয় তাই একটু দেরী হয়ে যায়‌।
আর মরবে কেন? তুমি দীর্ঘজীবী হ‌ও।
Namaskar Namaskar
I'm the King of Dark
                &
I rule over all Devils
               devil2 devil2
[+] 1 user Likes Monen2000's post
Like Reply
Tahole ki aj o pabo na
Like Reply
[Image: Picsart-22-12-06-20-20-08-119.jpg]




                   দ্বিতীয় খণ্ড
                   ২৫তম পর্ব




"হ্যালো"

"দাদা আমি থানা থেকে বলছি"

"থানা থেকে? তা হটাৎ থানা থেকে আমাকে কেন?"

"দাদা কলকাতা থেকে একজন এসেছেন তিনি তোমার খোঁজ করছেন"

কথাটা শুনে একটু অবাক হয় আদিত্য কলকাতা থেকে এখানকার থানায় এসে তার খোঁজ কে করবে? সে জিজ্ঞেস করে "তুমি ঠিক বলছো আমাকেই খুঁজছে তো? নাকি অন্য কাউকে?"

"না দাদা তোমাকেই খুঁজছে তোমার ছবি দেখালো?"

"আচ্ছা? আর কি বললো?"

"কিছু না বড়োবাবুকে বললো তোমার কাছে নিয়ে যেতে"

"উনি জানলেন কিভাবে আমি এখানে থাকি?"

"উনি খবর নিয়েই এসেছেন, কলকাতার লালবাজার থেকে এসেছেন অনেক উঁচু পোস্টের অফিসার তাইতো বড়োবাবু কিছু বলতে পারলেন না তবে আমাকে ইশারা করে তোমাকে জানাতে বললেন"

"লালবাজারের অফিসার, নামটা কি জানো?"

"হ্যাঁ দাদা সুপ্রতিম দাশগুপ্ত"।

ভূতের মুখে রাম নাম শুনলেও বোধহয় এতটা চমকাতো না আদিত্য, সে আবার জিজ্ঞেস করলো  "কি নাম?"

"সুপ্রতিম দাশগুপ্ত"।


রাগে নিজের মাথার চুল ছিঁড়তে ইচ্ছা করে সুপ্রতিমবাবুর অনেক ভেবেও অনেক খুঁজেও কিছুতেই ধরতে পারছেন না জানেন ক্রিমিনাল কে কিন্তু অনেক চেষ্টা করেও কোথাও এমন ক্লু পাচ্ছেন না যেটা ধরে এগোলে তিনি পথের হৃদিশ পাবেন।

লোকটার বুদ্ধি আছে মানতেই হবে শুধু বুদ্ধি নয় সাথে দূরদর্শিতা এবং নিষ্ঠুরতা। তার প্রতিদ্বন্দ্বীর পরবর্তী চাল কি হতে পারে সেটা আগে থেকেই আন্দাজ করতে পারে তার উপরে পুলিশ ডিপার্টমেন্টে নিজের লোক ঢুকিয়ে রেখেছে বলে সব খবর‌ই পাচ্ছে সাথে মিশেছে লোকের মনে ভয় কেউ তার বিরুদ্ধে সাক্ষী দিতে রাজী নয় সব মিলিয়ে সুপ্রতিমবাবুর থেকে সর্বদা দু পা এগিয়ে চলেছে।

"এই সময় যদি অনিকেত পাশে থাকতো ঠিক কিছুনা কিছু উপায় বার করতো"

স্বগোতোক্তি করে ওঠেন সুপ্রতিমবাবু যদিও ঘরে আর কেউ না থাকায় কেউ শুনতে পায় না, এতক্ষণ সোফায় বসে চিন্তা করছিলেন এবার উঠে দেয়ালে টাঙানো ছবিগুলোর কাছে আসেন তার দৃষ্টি একটা ছবির উপরে স্থির বা বলা ভালো একটা ছবির ভিতরে থাকা একটা ছেলের ছবির দিকে নিবদ্ধ তার যোগ্যতম এবং প্রিয়তম শিষ্য অনিকেতের ছবি।

"আজ তোর স্যারের তোকে খুব দরকার রে অনিকেত তুই থাকলে এভাবে বারবার হেরে যেতাম না"

ছবিটাকেই বলতে থাকেন সুপ্রতিমবাবু তারপর আরও কিছু বলতে গিয়ে থেমে যান যেন কিছু একটা মনে পরেছে, তাড়াতাড়ি পকেট বার করে একটা নম্বর ডায়াল করেন,
"হ্যালো, স্বর্ণেন্দু?"

"বাব্বা কোন দিকে সূর্য উঠেছে আজ? পুলিশ কমিশনার আমাকে ফোন করেছে"

"ইয়ার্কি কোরো না"

"ঠিক আছে বলো কি হয়েছে?"

"যে ছেলেটাকে তোমরা অনিকেত বলে ক্লেম করছো"

"কে আদিত্য? ওর কি হয়েছে?"

"ও কোথায় থাকে বলছিলে? মানে গ্ৰামটার নাম?"

"নারায়ণতলা। ওই তো বাসন্তী হাইওয়ে ধরে আরো কিছুটা এগিয়ে যেতে হবে"

"তুমি শিওর যে ওই অনিকেত?"

ক্ষণিকের নিস্তব্ধতা কিন্তু সুপ্রতিমবাবুর মনে হচ্ছে যেন কত যুগ একসময় স্বর্ণেন্দু বাবুর উত্তর ভেসে আসে, 

"সুপ্রতিম ও অনি কি না সেটা একমাত্র ও নিজে স্বীকার না করলে কনফার্ম বলা যাবে না কিন্তু বিশ্বাস করো এমন কিছু কথা ও বলেছে যার পরে আর সন্দেহ থাকে না সেটা ও স্বীকার করুক আর নাই করুক। কিন্তু কেন বলোতো তুমি হটাৎ ওর কথা জিজ্ঞেস করছো কেন?"

"ভাবছি একবার গিয়ে দেখা করে আসবো"

"চলে যাও, ওখানে একটা রিসর্ট আছে আনন্দ নিকেতন একবেলা কাটিয়ে এসো মন মেজাজ চাঙ্গা হয়ে যাবে একদম ফ্রেশ হয়ে যাবে আর ওখানেই ও কাজ করে না থাকলেও কাউকে বললেই দেখিয়ে দেবে ওর বাড়ি"

"ঠিক আছে থ্যাংকস"

ফোনটা রেখে আরেকটা নম্বরে ডায়াল করেন সুপ্রতিমবাবুকিন্তু নম্বর বিজি বলায় ফোন কেটে মুখে একটা বিরক্তিসূচক শব্দ করে একটা মেসেজ পাঠালেন বোধহয় মেয়েকে তারপর কিছুক্ষণের মধ্যেই তৈরি হয়ে নিজের গাড়িতে করে বেরিয়ে গেলেন।


নারায়ণতলা থানাটা খুব বেশি বড়ো নয় একটা গ্ৰামের থানা আর কতো বড়োই বা হবে, থানার যিনি ভারপ্রাপ্ত অফিসার অর্থাৎ বড়োবাবু তিনি এই গ্ৰামের‌ই লোক, এই গণ্ডগ্ৰামে বাইরে থেকে অফিসার খুব একটা আসতে চায় না বা এলেও কিছুদিনের মধ্যেই বদলি নিয়ে চলে যায় তাই একপ্রকার বাধ্য হয়েই গ্ৰামের একজনকে এখানের দায়িত্ব দিয়ে রাখা হয়েছে, কনস্টেবল গুলোর বেশীরভাগ গ্ৰামের বাকীরাও খুব একটা দূরের নয়।

থানায় তেমন কোনো কাজ না থাকায় থানার বড়োবাবু প্রায়ই দুপুরে খাবার পরে চেয়ারে বসেই একটু ঝিমিয়ে নেন তার এই আয়েশের সময়ে কেউ বিঘ্ন ঘটাক এটা তিনি মোটেই বরদাস্ত করেন না। 

আজ‌ও দুপুরে একটু খাবার পরে একটু ঝিমোচ্ছেন এমন সময় কেবিনের বাইরে একটা গোলমাল শুনে চটকা ভেঙে গেল একটু বিরক্তি সহকারে হাঁক দিলেন "বাইরে গোলমাল কিসের?"

একজন কনস্টেবল একজন মধ্যবয়স্ক লোককে নিয়ে ভিতরে ঢুকলো বললো "স্যার ইনি আপনার সঙ্গে দেখা করতে চাইছেন আমরা বারবার বললাম যে উনি এখন ব্যাস্ত কিন্তু তবুও উনি জোর করছেন"

"কে আপনি? কি চাই আপনার?" জিজ্ঞেস করলেন থানার বড়োবাবু।

"এই গ্ৰামে আদিত্য নামে কেউ থাকে?"

মুহূর্তে বড়োবাবুর চোখমুখ সচকিত হয়ে উঠলো তিনি আপাদমস্তক আগন্তুককে জড়িপ করে বললেন " কে আদিত্য?"

"যিনি আনন্দ নিকেতনে কাজ করেন"

"ওহ্ তা তার সঙ্গে আপনার কি দরকার? কে আপনি?"

"কি দরকার সেকথা আপনাকে বলতে বাধ্য ন‌ই"

"আলবাত বাধ্য"

"একদমই না, বরং আপনি বাধ্য আমাকে ওর সম্বন্ধে ইনফরমেশন দিতে"

"তাই নাকি? তা কে আপনি?" বড়োবাবুর মুখে ব্যাঙ্গাত্মক স্বর কিন্তু আগন্তুক আর কোনো কথা না বলে নিজের আইডি কার্ডটা দেখান আর তৎক্ষণাৎ বড়োবাবুর হাবভাব আমূল বদলে যায় দ্রুত চেয়ার থেকে উঠে একটা স্যালুট ঠুকে সাফাই দেওয়ার ভঙ্গিতে বলেন "আমি দুঃখিত স্যার আসলে আপনাকে এই সিভিল ড্রেসে ঠিক চিনতে পারিনি"

"এবার আদিত্যর ইনফরমেশন দেবেন?"

"ক কি জানতে চান বলুন?"

"এক এক করে জিজ্ঞেস করছি উত্তর দিন"

"বলুন স্যার"

"ওর পুরো নাম কি?"

"আদিত্য... আদিত্য ব্যানার্জী"

"এখানে কবে থেকে আছে?"

"এখানে?"

"মানে এই গ্ৰামে"

"তা বছর দুই-তিন হবে"

"তার আগে কোথায় ছিল?"

"সেটা জানিনা, ডাক্তারবাবু হয়তো জানতেন"

"জানতেন?"

"ডাক্তারবাবু মারা গেছেন তো"

"ওকে দেখে আপনার কেমন ছেলে মনে হয়?"

"ডাক্তারবাবু ওকে নিয়ে এসেছিলেন এখানে, খারাপ ছেলে হবে কেমন করে? খুব ভালো ছেলে"

"এখানে ওর সাথে আর কে থাকে?"
"কেন? বৌমা থাকে আদিত্যর সাথে মিলেছে ভালো বৌমাও খুব ভালো মেয়ে"

"আর কেউ থাকে না?"

"না, দুজনেই থাকে আর একটা কুকুর আছে ওদের"

"ওদের বাড়িটা কোথায়? আমাকে নিয়ে যাবেন চলুন"

শেষের কথাটা শুনে থানার বড়োবাবুর মুখ গম্ভীর হয়ে গেল তিনি দৃঢ় স্বরে বললেন,

"আপনি আমার থেকে অনেক উঁচু পোস্টের অফিসার তাই আপনার কথা শুনতে আমি বাধ্য শুনবো‌ও কিন্তু একটা কথা বলে রাখছি আদিত্যকে এই গ্ৰামের সবাই খুব ভালোবাসে তাই ওর কোনো ক্ষতি কিন্তু গ্ৰামের কেউ সহ্য করবে না"

"আপনি আমাকে থ্রেট করছেন?"

"সাবধান করছি"

"চলুন"

"আপনি চলুন আমি আসছি"

আগন্তুক উঠে বাইরে বেরিয়ে গেল থানার বড়োবাবু চেয়ার ছেড়ে উঠে প্যান্টটা একটু উপরে তুলে বেল্টটা একটু টাইট করে নিলেন তারপর কেবিন থেকে বেরিয়ে এলেন বাইরে বেরোনোর আগে একজন কনস্টেবলকে চাপা স্বরে বললেন,

"তাড়াতাড়ি আদিত্যকে ফোন করে বলো লালবাজার থেকে সুপ্রতিম দাশগুপ্ত এসেছেন এখন ওর বাড়ি যাচ্ছে"

"কিন্তু স্যার উনি অত বড়ো পোস্টে আছেন আমরা কি কিছু করতে পারবো?"

"অন্তত ওকে আগে থাকতে সাবধান তো করতেই পারি, শহুরে অফিসার না জানি কি মতলবে এসেছে?"

কথাটা বলে বড়োবাবু আর দাঁড়ালেন না বেরিয়ে গেলেন,তিনি বেরিয়ে যেতেই কনস্টেবলটি মোবাইল বার করে নাম্বার ডায়াল করে।


ফোনটা রাখার পরে আদিত্যর চিন্তামগ্ন মুখটা দেখে পিয়ালীর মনে একটু কোনো অজানা বিপদের ভয় জেগে ওঠে সে ভয়ার্ত গলায় জিজ্ঞেস করে, "লালবাজার থেকে কে আসছে তোমার খোঁজে?"

পিয়ালীর প্রশ্নে আদিত্যর হুঁশ ফেরে সে আবার মুখে হাসি ফুটিয়ে বলে "তুমি ভয় পেয়েছো মনে হচ্ছে? কি ব্যাপার বলোতো? এখন এত ভয় পাও কেন? সেই পিয়ালী কোথায় গেল যাকে প্রথম দেখার দিনে পারলে আমাকে জ্যান্ত পুঁতে ফেলে? সেই সাহস দেখেই তো প্রেমে পড়েছিলাম আমার মুখ থেকে সিগারেট নিয়ে ফেলে দেয় আবার থ্রেট করে যে যেখানেই দেখবে এক‌ই কাজ করবে এবং করেও সেই সাহস কোথায় গেল?"

পিয়ালী একটু লজ্জা পায় তবে তার মনের ভয়টা তখনও যায়নি সে বলে "তখন ভাবতাম যাই হয়ে যাক ড্যাডি আছেন তিনি থাকতে ভয় কিসের? তারপর সব হারালাম মা, ড্যাডি দাদা কিন্তু এখন তোমাকে হারাতে পারবো না তাই ভয় পাই, তুমি আর আমাদের এই হবু সন্তান তোমরাই এখন আমার সব"

আদিত্য একহাতে পিয়ালীর চোখের উপরে চলে আসা চুলের সরু গোঁছাটাকে সরিয়ে কানের পিছনে নিয়ে গিয়ে অপর হাতে পিয়ালীর থুতনিটা ধরে আলতোভাবে নাড়িয়ে বললো "আমার কিছু হবে না, ভয় পেয়ো না"

"কিন্তু কে আসছে? লালবাজার থেকে?"

"সুপ্রতিম দাশগুপ্ত"

"কমিশনার?"

"তুমি চেনো?" আদিত্য একটু অবাক হয়,

"আলাপ নেই তবে কোর্টে বেশ কয়েকবার দেখেছি এবং শুনেছি খুব অনেস্ট অফিসার"

"হ্যাঁ সেটা ঠিক"

"কিন্তু উনি এখানে তোমার কাছে আসছেন কেন? আর তোমার ঠিকানা জানলেন কিভাবে?"

"ঠিকানা বোধহয় মামা দিয়েছে কিন্তু আসছেন কেন সেটা উনি না এলে বোঝা যাবে না"

"তোমাকে টেনসড্ লাগছে কেন?"

"শুধু টেনশন না সাথে ভয়‌ও আছে"

"আদিত্য সিংহ রায় ভয়‌ও পায়?"

"মশকরা হচ্ছে? তুমি জানোনা উনি কি করতে পারেন?"

"তুমি ভুলে যাচ্ছো তোমার ব‌উ একজন উকিল, হ্যাঁ এখন প্র্যাকটিস করিনা ঠিকই কিন্তু উনি যদি বিনা কারনে তোমাকে কোনো কেসে ফাঁসাতে চেষ্টা করেন তাহলে নিজের স্বামীকে বাঁচানোর জন্য দরকার হলে আবার কেস লড়বো"

"এই তো আমার বীরাঙ্গনা ব‌উ, কিন্তু ভয়টা অন্য কারনে  চলো এবার ভিতরে চলো"

আদিত্য ধরে ধরে পিয়ালীকে বাড়ির ভিতরে নিয়ে যায় খানিক পরেই বাড়ির গেটের বাইরে পুলিশের জিপ থামার শব্দ হয়। আদিত্য বাইরে বেরিয়ে আসে দেখে জিপ থেকে দুজন নামলেন একজন থানার বড়োবাবু আর অপরজন.. স্যার অস্ফুটেই আদিত্যর মুখ থেকে ডাকটা বেরিয়ে আসে।

বড়োবাবু সুপ্রতিম বাবুকে নিয়ে পোর্টিকোর উপর দিয়ে হেঁটে এগিয়ে আসেন আদিত্যকে দরজার কাছে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বলেন, "এই তো আদিত্য বাড়িতে আছো দেখছি, বৌমা কেমন আছেন?"

"ভালো"

"এই যে ইনি সুপ্রতিম দাশগুপ্ত তোমার সঙ্গে দেখা করতে এসেছেন লালবাজার থেকে"

"উনি আমাকে চেনেন অফিসার আর তাছাড়া আমার মনে হয় আপনি কাউকে দিয়ে আগেই ওকে খবর পাঠিয়েছেন যে আমি আসছি"

সুপ্রতিমবাবুর কথায় বড়োবাবুর মুখ শুকিয়ে গেল আদিত্য একটু হেসে তাকে আশ্বস্ত করলো, "কাকাবাবু উনি পুলিশ কমিশনার ওনার চোখে ফাঁকি দেওয়া একট বেশীই কঠিন" তারপর সুপ্রতিমবাবুর দিকে ফিরে হাত জোড় করে বললো "নমস্কার, আসুন"।

আদিত্য দুজনকেই ভিতরে নিয়ে গিয়ে সোফায় বসতে বললো বসার পরে যথারীতি পিয়ালী শরবত নিয়ে এলো দুজনের জন্য আদিত্য পরিচয় করিয়ে দিল, "আমার স্ত্রী পিয়ালী"

"নমস্কার" পিয়ালী‌ও ছোট্ট করে নমস্কার করলো এবং সুপ্রতিম বাবুও পাল্টা নমস্কার করলেন। 

শরবত খাওয়া হলে আদিত্য সরাসরি আসল কথায় চলে গেল,
"এবার বলুন আমাকে খুঁজছিলেন কেন?"

সুপ্রতিমবাবু একদৃষ্টিতে আদিত্যকে নিরীক্ষণ করছিলেন আদিত্যর প্রশ্ন শুনে শান্ত স্বরেই উত্তর দিলেন "আপনার সাথে দেখা করতে চাইছিলাম তাই"

"প্রথম কথা আমাকে তুমি করে বললে বেশি খুশি হবো, আমি আপনার থেকে অনেকটাই ছোটো আর দ্বিতীয় কথা কেন দেখা করতে চাইছিলেন সেটাই তো জানতে চাইছি"

"কয়েকটা প্রশ্নের উত্তর জানার ছিল"

"বলুন"

"অভিরূপবাবু মানে অভিরূপ ব্যানার্জীর উপর যেদিন অ্যাটাক হয় সেদিন তুমি বোধহয় ওখানে ছিলে এবং তুমিই ওনাকে বাঁচিয়ে হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিলে তাইতো?"

এবার আদিত্য সুপ্রতিমবাবুর দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে বোধহয় তার মনের ভাবটা বোঝার চেষ্টা করে তারপর উত্তরটা দেয়,

"আপনি সত্যিটা জানেন তাই অস্বীকার করবো না কিন্তু এখন এসব জিজ্ঞেস করছেন কেন?"

"সেদিন তুমিই বোধহয় স্বর্ণেন্দুকে ফোন করে খবরটা দিয়েছিলে তাইতো?"

"আপনি ঠিক কি জানতে চাইছেন বলুন তো?"

"আমাকে ডেকে পাঠিয়েছিলে কেন? মানে অন্য কোনো অফিসার না কেন?"

সুপ্রতিমবাবু একটু চুপ থেকে কথাটা বলেন উত্তরে আদিত্য‌ও একটু চুপ র‌ইলো বোধহয় উত্তরটা মনের মধ্যে গুছিয়ে নিল,

"আপনার সম্বন্ধে অনেক শুনেছিলাম যে আপনি খুব অনেস্ট অফিসার তাই ডাকিয়েছিলাম আর তাছাড়া তখন এই কেসটা মানে ডাকাতির কেসটার তদন্ত আপনি করছিলেন"

"তুমি জানলে কিভাবে যে স্বর্ণেন্দুর সাথে আমার যোগাযোগ আছে?"

"এ আর এমন কি কঠিন স্বর্ণেন্দু বাবু যে পুলিশের হয়ে কেস লড়েন এটা তো পুরো কলকাতা শহর জানে"।

আবার কিছুক্ষণ আদিত্য এবং সুপ্রতিমবাবু পরস্পরের দিকে নীরবে তাকিয়ে থাকে যেন একজন অপরজনের ডিফেন্স ভাঙতে চাইছে কিন্তু অপরজনের জমাট ডিফেন্স ভাঙতে পারছে না, সুপ্রতিমবাবুর সব প্রশ্নের উত্তর‌ই যেন আদিত্য আগে থেকেই তৈরী করে রেখেছে। 

পিয়ালী এইসময় ট্রে তে করে চা নিয়ে এলো, এমনিতে এই অবস্থায় ঘরে রান্না না করলেও টুকটাক চা কফি করে গেস্ট এলে তো করেই। চায়ের কাপে একটা ছোট্ট চুমুক দিয়ে আবার প্রশ্ন করা শুরু করলেন,

"তুমি আমাকে বলেছিলে অভিরূপবাবুর উপরে ওই অ্যাটাক কোনো ডাকাতি না বরং উল্টোটা ডাকাতিটা আসলে আই‌ওয়াশ, তোমার এরকম ধারণার কারণটা জানতে পারি?"

"সেদিন আমি ওখানে ছিলাম ওদের উদ্দেশ্য লুটপাট হলে ওরা অভিরূপ বাবুকে জখম করেই তা করতে পারতো কিন্তু না ওরা ওনাকে মারতে চাইছিল"

"হয়তো সাক্ষী রাখতে চাইছে না তাই"

"ওদের মুখ ঢাকা ছিল অভিরূপবাবু বেঁচে থাকলেও ওদের শনাক্ত করতে পারতেন না তাছাড়া ওনার ড্রাইভার ওদের দলে ছিল দ্বিতীয়ত এর আগের ডাকাতিগুলোর খবর পড়েছি অনেকেই বেঁচে আছেন, যদি সাক্ষী না রাখতে হয় তাহলে তো সবাইকেই মারা উচিত ছিল, তাই নয়কি?"

"তোমার এরকম ধারণা কেন হলো যে এরাই আগের ডাকাতির সঙ্গে যুক্ত"

"বললাম যে আগের ডাকাতিগুলোর খবর পড়েছি আপনার প্রেস কনফারেন্সে ডিটেইলস যা বলেছেন শুনেছি তার থেকেই অনুমান করেছি খর তাছাড়া এক‌ই সঙ্গে এক‌ই এরিয়ায় দুটো ডাকাতির দল? একটু আনকমন"

"তুমি দুজনের নাম বলেছিলে যারা এই ক্রাইমের সাথে যুক্ত থাকতে পারেন তাদের চেনো?"

আবার আদিত্য একটু চুপ থাকে তারপর বলে, "হটাৎ একথা কেন জানতে পারি?"

"কোনো প্রমাণ ছাড়াই তাদের নাম করলে তাই জিজ্ঞেস করলাম"

আদিত্য যেন একটু অন্যমনস্ক হয়ে যায় সেই অবস্থাতেই বলে "চিনি, অনেক পুরনো পরিচয়"

"কিভাবে চেনো?"

"সেটার এখানে কোনো প্রয়োজন নেই, অনেক পুরনো কথা"

"মাঝে মাঝে বর্তমান আর ভবিষ্যত বোঝার জন্য অতীতে ডুব দেওয়ার প্রয়োজন হয় বৈকি"

"অবশ্যই হয় এবং আপনার সেটা করাই উচিত এই দুজনের অতীত ঘাটুন কে বলতে পারে আপনি যা খুঁজছেন সেটা পেলেও পেতে পারেন"

"তুমি অন্তরালে থাকতে চাইছো কেন? মানে সেরকমই তো বলেছিলে"

"আমি এখানেই ঠিক আছি শহরের জীবন আর ভালো লাগে না তাই বলেছিলাম যে আমাকে নিয়ে আর টানাটানি না করতে, আপনাকেও রিকোয়েস্ট করছি আমাকে এসবের মধ্যে আর জড়াবেন না"।

"কিন্তু তুমি আমাদের অনেক হেল্প করতে পারো, আমাদের দরকার তোমার মতো একজনকে তোমার সেদিনের কথার আসল মানে বুঝতে একটু সময় নিলেও বুঝেছি এবং সেই পথেই ওদের ধরতে পেরেছিলাম"

"কিন্তু তাতে লাভটা কি হলো? কিছু না"

সুপ্রতিমবাবুর মুখ আজ এখানে আসার পরে এই প্রথম ছোটো হয়ে গেল আদিত্য‌র দৃষ্টি সেটা এড়ালো না সে বললো "আপনি বোধহয় ওদের একটু হাল্কাভাবে নিয়েছিলেন"

"নি‌ইনি কিন্তু আমার নিজের টীমেই বিশ্বাসঘাতক ছিল একজন সিনিয়র হিসেবে এর থেকে লজ্জার কি হতে পারে?"

"আপনার লজ্জা পাওয়ার কিছু নেই কিন্তু এখন যদি আপনি লজ্জা পেয়ে পিছিয়ে আসেন তাহলে সেটা অবশ্য‌ই ভুল করবেন। টীম লিডার হিসেবে নিজের টীমের সবার প্রতি বিশ্বাস থাকাটাই ঠিক কাজ এটা তার দোষ যে আপনার বিশ্বাসের মূল্য দিতে জানে না"

"তুমি হেল্প করো পুলিশে জয়েন করো"

"না স্যার, আমি এই ঠিক আছি"

"আমি সত্যিই হেল্প চাই, হেল্প চাইতাম না যদি একজন আমার পাশে থাকতো কিন্তু সে নেই তাই চাইছি"

"আপনার কারো হেল্প দরকার নেই আপনি একাই যথেষ্ট তবে আপনার কথাটাই আপনাকে বলছি অতীতে ডুব দিন যত ছোটো‌ যত অপ্রাসঙ্গিক মনে হোক কিচ্ছু এড়িয়ে যাবেন না"

"বলছো?"

"যেখানেই দেখো ছাই উড়াইয়া দেখো তাই, পাইলেও পাইতে পারো অমূল্য রতন"

সুপ্রতিমবাবুকে দেখে মনে হলো এতক্ষণে আবার একটু স্বাভাবিক হলেন তিনি আবার জেরা করার ঢঙে বললেন " লাস্ট একটা কথা"

"বলুন"

সুপ্রতিমবাবু একটা চিঠি আর একটা পুরনো খাতা বার করে তার একটা বিশেষ পৃষ্ঠা খুলে টেবিলের উপরে রাখলেন সবার দৃষ্টি এই দুটোর দিকে এমনকি পিয়ালী ও বড়োবাবু‌ও এতক্ষণ চুপ করে দুজনের কথোপকথন শুনলেও তারাও এবার চিঠি এবং খাতাটা দেখতে থাকেন। 

আদিত্য‌ অবশ্য একবার‌ই সেদুটোর দিকে তাকিয়ে আবার সুপ্রতিমবাবুর দিকে তাকায় সুপ্রতিমবাবু যেন গুপ্ত কথা ধরে ফেলেছেন এমন ভাবে বলতে থাকেন, 
"একটা আশ্চর্য জিনিস জানতে পারলাম জানো?"

এবার বাকীরাও তার দিকে তাকায় আদিত্য কোনো কথা না বলে তাকিয়ে থাকে সুপ্রতিমবাবু বলে চললেন, 

"এই খাতাটা আমার মেয়ের বেশ পুরনো ওর কলেজের শেষ সময়ের। কিন্তু এই পৃষ্ঠা থেকে পরপর কয়েকটা পৃষ্ঠায় লেখাটা ওর না এটা অন্য আরেকজনের লেখা আমার এক স্টুডেন্ট ছিল তার, আর এই চিঠিটা তোমার লেখা যেটা তুমি অভিরূপবাবুর উপর অ্যাটাকের পরে আমাকে লিখেছিলে"

এতটুকু বলে সুপ্রতিমবাবু আবার একটু থেমে আদিত্যর মুখের দিকে তাকালেন তাকিয়ে ওর মুখের এক্সপ্রেশন থেকে মনের ভাব বুঝতে চেষ্টা করলেন তারপর আবার শুরু করলেন,

"আশ্চর্যের বিষয় হলো এই দুটো হ্যাণ্ড রাইটিং এ অবিশ্বাস্য রকমের মিল আছে যেন দুটো এক‌ই লোকের লেখা আমি এখানে আসার আগে আমাদের পুলিশ ডিপার্টমেন্টের  হ্যাণ্ড রাইটিং এক্সপার্টকে দেখিয়ে এনেছি সেই রিপোর্ট দিয়েছে সে অবশ্য জোর দিয়েই বলছে যে দুটো এক‌ই লোকের লেখা শুধু একটা, আশ্চর্য না?"

এতটা বলে সুপ্রতিমবাবুর দৃষ্টি সোজা আদিত্যর দিকে সেও সোজা তাকিয়ে আছে সুপ্রতিমবাবুর দিকে সাথে পিয়ালী এবং বড়োবাবুর দৃষ্টিও আদিত্যর দিকে যদিও বড়োবাবুকে দেখে একটু হতভম্ব মনে হচ্ছে।

একটু পর আদিত্য খুবই স্বাভাবিক গলায় উত্তর দেয়, "খুবই আশ্চর্যের বিষয় কিন্তু তবুও আশ্চর্য হ‌ওয়া যায় কি? জানেন‌ই তো 'There are more things in heaven and Earth, Horatio, Than are dreamt of in your philosophy'"।


সুপ্রতিমবাবু চলে যাবার পর যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচে আদিত্য যেভাবে জেরা করছিলেন তিনি বিশেষ করে শেষে এসে যেভাবে চিঠি ও তার পুরনো লেখা মিলিয়ে দেখার কথা বলবেন এটা সে ভাবতেও পারেনি পারলে হয়তো অন্য চিঠিটা লিখতো না কিন্তু এখন কিছু করার নেই যদিও যতটা পেরেছে স্বাভাবিক ভাবে স্যারের প্রশ্নের উত্তর দিয়েছে।

"কি গো কি ভাবছো?"

আদিত্যকে চুপচাপ চিন্তিত দেখে পিয়ালী প্রশ্ন করে যতক্ষণ সুপ্রতিমবাবু ছিলেন সে কথা বলেনি কিন্তু এখন স্বামীকে চিন্তিত দেখে আর থাকতে পারলো না আদিত্য সোফায় তার পাশে বসে বলে "কিছু না"
বলার পরেই আদিত্য পিয়ালীর দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারে তার মনে একাধিক প্রশ্ন জমা হয়ে আছে আদিত্য বাধ্য হয়েই বলে "এমন কিছু ভাবছি না তাই চিন্তা করার কিছু নেই"

"ওই খাতায় ওটা কি সত্যিই তোমার হ্যাণ্ড রাইটিং?"

"হ্যাঁ"

"ওটা ওনার মেয়ের খাতা?"

"তুমি জেলাস মনে হচ্ছে"

"মোটেই না, আমি শুধু জানতে চাইছি"

"হ্যাঁ ওটা ওনার মেয়ে তানিয়ার খাতা ওকেও তুমি চিনতে পারো তানিয়াও এখন পুলিশে জয়েন করেছে"

"তানিয়া দাশগুপ্ত তাইনা?"

"হুমম"

"নামটা সত্যিই চেনা চেনা লাগছে"

"বললাম তো ও এখন পুলিশ অফিসার হয়েছে"

"তোমরা একসাথে পড়তে?"

"একসাথে পড়তাম ঠিক না। তোমাকে বলেছিলাম মনে আছে যে একজন আছেন যিনি যদি জানতে পারেন যে আমি বেঁচে আছি অথচ ওনাকে জানাইনি তাহলে সবার আগে আমাকে ঠ্যাঙাবেন?"

"হ্যাঁ আছে তা উনিই কি এই সুপ্রতিম বাবু?"

"হ্যাঁ, ছোটোবেলায় ওনার থেকে মার্শাল আর্ট শিখেছিলাম"

"উনি মার্শাল আর্ট জানেন?"

"পুরো লালবাজারের পুলিশ ডিপার্টমেন্টে এখনো ওনার মতো হ্যাণ্ড টু হ্যাণ্ড কমব্যাট এক্সপার্ট আর কেউ আছে কিনা সন্দেহ। যদিও প্রথমে আমাকে শেখাতে রাজী হননি শেষে আমার জেদের জন্য শেখালেন। তারপর আমি আর তানিয়া শিখতে থাকি তো একবার প্র্যাকটিস করতে গিয়ে তানিয়ার হাতে চোট লাগে তখনই ও এইচ‌এস দেবে তার‌ই কিছু নোটস আমি কপি করে দি‌ই খাতায়, সেই লেখা যে এতদিন রেখে দিয়েছেন জানতাম না"

"তা এই তানিয়া কি?.."

"আবার জেলাস? না হে প্রিয়তমা সে শুধুই মিত্র" কথাটা বলে আদিত্য পিয়ালীকে কাছে টেনে ওর ঠোঁটে নিজের ঠোঁট লাগায়।


নারায়ণতলা থেকে বাড়িতে ফিরেও সুপ্রতিমবাবুর মনে কি একটা যেন খচখচ করতে থাকে, যেন তার চোখের সামনেই আছে অথচ তিনি দেখতে পারছেন না এবং সেটা এই আদিত্য‌র কথার মধ্যেই লুকিয়ে আছে, ছেলেটার মুখের হাবভাব ভালো করে লক্ষ্য করেছেন এমন কিছু দেখেননি যাতে মনে হয় এই ছেলে অন্য কিছু বলতে চাইছে স্বাভাবিক ভাবেই তার সব প্রশ্নের উত্তর দিয়েছে অবশ্য মনের ভাব গোপন করতে অনিকেত পারতো না কিন্তু সময়ের সাথে সাথে মানুষ আরও অনেক কিছু শেখে এই ছেলে যদি অনিকেত হয় তাহলে সেও নিশ্চয়ই শিখেছে তবুও কিছু একটা খচখচ করছে তার মনের ভিতরে যদিও আসার আগে আবার বলে এসেছেন যাতে অন্তত এসে তাকে হেল্প করে ছেলেটা ওদের ব্যাপারে অনেক কিছু জানে কিন্তু যে কোনো কারনেই হোক আর এসবে জড়াতে চাইছে না কিন্তু একজন নাগরিক হিসেবে তার উচিত এইসব ক্রিমিনালদের ধরতে সাহায্য করা দেখা যাক সে করে কি না?


নারায়ণতলা গ্ৰামের মোড়ল ভেবেছিলেন গ্ৰামে জমি কেনার ব্যাপারটা অভিরূপ বাবুর মনের খেয়াল শহরে ফিরে গেলেই তিনি এসব নিয়ে আর ভাববেন না ভুলে যাবেন কিন্তু বাস্তবে দেখা গেল সেটা নয় অভিরূপবাবু নিয়মিত যোগাযোগ রেখে চলেছেন মোড়লের সাথে শেষে সত্যি সত্যিই মোড়ল বাধ্য হলেন দু পক্ষের যোগাযোগ করিয়ে দিতে বলাই বাহুল্য যে জমিটা তিনি দেখিয়েছিলেন অভিরূপবাবুকে সেটাই তিনি কিনে নিলেন এবং আইনি ব্যাপার মিটে গেলে তিনি জমিতে বাড়ি তৈরির প্রস্তুতি শুরু করে দিলেন।

প্রথমেই একদিন ঘটা করে ভিত পূজো করলেন সেদিন পুরো গ্ৰামের সবার নিমন্ত্রণ ছিল ভোজের জন্য এমনকি আদিত্য আর পিয়ালীর‌ও তাদের অবশ্য পূজাতেও যেতে বলেছিলেন কিন্তু তারা যায়নি। 

আদিত্য বেশ বুঝতে পারছে তার বাবা শুরু থেকেই গ্ৰামের সবার সাথে মিশে যেতে চাইছেন, সেটা অবশ্য খারাপ কিছু নয় তার বাবা যে ভালো এবং সৎ মানুষ এটা তার থেকে ভালো এই গ্ৰামের আর কে জানবে?
কিন্তু তিনি কেন শহর ছেড়ে এখানে এই গণ্ডগ্ৰামে এসে বাড়ি বানিয়ে থাকতে চাইছেন সেটাই সে বুঝতে পারছে না, তার দাদা অরুণাভ যে বাবার কতটা আদরের কতটা কাছের এটা সে ভালো করেই জানে, তাহলে কি এমন হলো যে বাবা দাদার থেকে আলাদা হতে চাইছেন?

সত্যিটা জেনে গেছেন কি? কিন্তু তাই বা কিভাবে সম্ভব হবে? সেদিনের ঘটনা যে কজন জানতো তাদের কেউই বলবে না তাহলে? অন্য কোনো সমস্যা? আদিত্য‌ কিছুই বুঝতে পারছে না।

এদিকে পূজো উপলক্ষ্যে কলকাতা থেকে প্রায় সবাই এসেছেন জায়গাটা রীতিমতো গমগম করছে পূজোর সমস্ত আয়োজনের দায়িত্ব গ্ৰামবাসীদের‌ই দিয়েছেন অভিরূপবাবু, মোড়লের সঙ্গে যোগাযোগটা ভালো হয়ে যাওয়ায় অসুবিধা হচ্ছে না আর তাছাড়া কলকাতা থেকে যারা এসেছেন তাদের বেশিরভাগই এখানে এসে আয়োজনের কাজে হাত লাগাবে এই ভরসা স্বয়ং অভিরূপবাবুর নেই অগত্যা গ্ৰামবাসীরাই ভরসা আর গ্ৰামবাসীরাও খুশীমনে দায়িত্ব কাঁধে তুলে মিলে মিশে কাজ করে চলেছেন।

আদিত্য আর পিয়ালী পূজোর জায়গায় না গেলেও ওখান থেকে একজন ঠিকই চলে এসেছে তার কাছে, মৈনাক আর সুনন্দার মেয়ে পিউ এখানে এসেই তার সুপারম্যান আঙ্কেলের কাছে চলে এসেছে অবশ্য একা নয় সুনন্দা দিয়ে গেছে তার কাছ থেকেই আদিত্য জেনেছে যে কে কে এসেছে অভিরূপবাবুদের প্রায় পুরো পরিবার অর্থাৎ অরুণাভ, মৌমিতা তাদের দুই ছেলে মেয়ে, মণিমালা দেবী সাথে প্রীতমবাবু ও এসেছেন শুধু তাদের ছেলে বৌমা আসেননি আর ওদিকে মৌমিতার বাবা অর্থাৎ মনোজিৎবাবু আর তার ছেলে আসেনি।

প্রীতমবাবু এসেছেন এই খবরটাই আবার আদিত্যর কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলে দেয় গ্ৰামের সবাই নির্বিরোধী মানুষ সবাই মিলে মিশে শান্তিপূর্ণভাবে থাকে সেখানে এই লোকটার নজর যদি গ্ৰামের উপরে পরে তাহলে তাদের শান্তিপূর্ণ জীবন যে অশান্তিতে ভরে যাবে এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই, প্রীতমবাবু এসেছেন মানে খবর ঠিক মনোজিত বাবুর কাছে চলে যাবে আর দুজনের মতলব যে সোজা থাকে না এটা সে ভালো করেই জানে এছাড়া অরুণাভ‌ও আছে সেও যে এই দুজনের থেকে কম না এটাও সে জানে, আদিত্য ঠিক করলো পরে মোড়লমশাই এর সাথে এই বিষয়ে কথা বলে নেবে।

প্রায় পুরো দিনটা আদিত্য নিজের বাড়িতেই কাটালো মাঝে একবার নিয়মমাফিক রিসর্টে গিয়েছিল সেখানের কাজ সেরে আবার বাড়িতে।বাড়িতে আসার পরে পিউ আসায় আবার কিছুটা সময় ওর সঙ্গে একটু কাটলো তারপর একজনকে ডেকে ওকে পাঠিয়ে দিয়ে আবার চুপচাপ বসে থাকে।

"ওরা তোমার পরিবার আদিত্য আমাদের পরিবার আমাদের অন্তত একবার ওখানে যাওয়া উচিত অন্তত তোমার যাওয়া উচিত" আদিত্যকে চুপচাপ থাকতে দেখে পিয়ালী কথাটা বললো,

"তোমার ওখানে যেতে ইচ্ছে করছে?"

"আমার শুধু তোমার সাথে থাকতে ইচ্ছা করে কিন্তু আমি তোমার কথা বলছি"

"আমি অন্য কথা ভাবছি"

"কি?"

"মানুষের মন কতটা লোভ আর হিংসায় পরিপূর্ণ হলে সে নিজের লোকের‌ও ক্ষতি করার আগে দুবার ভাবে না"

"অরুণাভ আর ওই মেয়েটার কথা ভাবছো?"

"শুধু ওরা নয় সাথে মনোজিৎ এবং প্রীতম বাবুও"

"প্রীতমবাবু?"

"শুধু তোমার দাদার নাম প্রীতম নয় পিয়ালী ও তো সত্যিই ভালো ছেলে ছিল আমি আমার পিসেমশাই এর কথা বলছি ওনার নাম‌ও প্রীতম, এবং তার মতো অকৃতজ্ঞ বেইমান আমি দুটো দেখিনি.. অ্যাক্চুয়ালি দেখেছি" একটু থেমে আদিত্য বলতে থাকে

"এই প্রীতমবাবু আগেবাবার সাথে ওনার কোম্পানিতে কাজ করতেন, ফ্যামিলি কেউ নেই তারপর ওনার সাথে আমার পিসির বিয়ে হয় এবং তখন থেকেই ব্যানার্জী ভিলাতেই থাকেন কিন্তু ব্যানার্জীদের নামের আড়ালে এমন কোনো ক্রাইম নেই যেটা উনি করেন না এবং এই ব্যানার্জীদের হাত মাথায় আছে বলেই পুলিশ ওনাকে ছুঁতে পারেন না অবশ্য প্রমাণ‌ও রাখেন না"।

"কিন্তু বাবা বুঝতে পারেন না?"

পিয়ালীর মুখে অভিরূপবাবুর উদ্দেশ্যে 'বাবা' ডাকটা শুনে তার দিকে তাকিয়ে থাকে পিয়ালী একটু হেসে বলে "উনি না জানুন যে আমি ওনার ছেলের ব‌উ কিন্তু আমি তো জানি যে উনি আমার শ্বশুরমশাই তাই বাবা ডাকটা ভুল নয়"

আদিত্য পিয়ালীকে নিজের আরো একটু কাছে টেনে বলে "হয়তো বোঝেন হয়তো না আমি ঠিক জানিনা আর বুঝলেও হয়তো পিসির জন্যই কিছু বলেন না"

"কিন্তু এতে তো ওনার সাহস বেড়ে যাবে"

"কিন্তু আমাদের কিছু করার নেই"

"আছে"

"কি বলতে চাইছো?"

"তুমি সুপ্রতিম স্যারকে সাহায্য করো"

"তুমি জানো তুমি কি বলছো?"

"আদিত্য আমি একজন লয়্যার ক্রাইম আমার পছন্দ হয় না আর কোনো ক্রিমিনাল ক্রাইম করেও প্রমাণের অভাবে খোলা ঘুরে বেড়াবে এটা আমার আরোই সহ্য হয় না তাই বলছিলাম তুমি সুপ্রতিম স্যারকে সাহায্য করো উনি তোমার কাছে অনেক আশা নিয়ে এসেছিলেন এটা তুমিও বুঝেছো"

"আমি তোমাকে একা ছেড়ে যেতে চাই না"

"তুমি কোথায় যাবে? ওনাকে সাহায্য করে ফিরে আসবে আর আমি একা কোথায়? সবাই তো থাকেই আমার সঙ্গে, করবে ওনাকে হেল্প?"

"কি ব্যাপার বলোতো তুমি ওনাদের শাস্তি দিতে চাইছো কেন?"

"আমি আমার লাস্ট কেসটার কথা ভুলতে পারছি না"

"কোনটা? ওই যেটা ইনকমপ্লিট রয়ে গেছে?"

"হ্যাঁ, মেয়েটার কান্নাটা আমার এখনো চোখে ভাসে"

একটু চুপ থেকে আদিত্য বলে "কিন্তু আমি যদি বেশীক্ষণ স্যারের কাছাকাছি থাকি তাহলে উনি কিন্তু ধরে ফেলবেন যে আমি অনিকেত"

"তাতে কি তুমি তো আর ক্রিমিনাল ন‌ও"

"ওখানে কিন্তু তানিয়াও থাকবে"

"তুমি কি আমাকে জেলাস করতে চাইছো?"

"দেখতে চাইছি"

"না আমি জেলাস ন‌ই"

"আমি ওনার যা হেল্প করার অলরেডি করেছি"

"সত্যি বলছো? কখন? কিভাবে?"

"উনি ক্লু চেয়েছিলেন আমি রাস্তা দেখিয়েছি এখন ওই রাস্তায় ওনাকেই চলতে হবে সেখানে আমি ওনাকে হেল্প করতে পারবো না"

"কিন্তু উনি যদি বুঝতে না পারেন?"

"আশা করি পারবেন, শুধু মার্শাল আর্ট না পুলিশ ডিপার্টমেন্টে ওনার মতো বুদ্ধিমান এবং বিচক্ষণ অফিসার‌ও কম‌ই আছে"

"কিন্তু তুমি নিজে গেলে হয়তো"

"আমার থেকে উনি আরও ভালো ভাবে কাজটা করতে পারবেন" 

"নাকি আমার জন্য যেতে চাইছো না?"

"দুটোই" কথাটা বলে  আদিত্য তার কপালে একটু চুম্বন দেয় শুধু।
I'm the King of Dark
                &
I rule over all Devils
               devil2 devil2
Like Reply
[Image: Picsart-22-12-06-20-20-08-119.jpg]



                  দ্বিতীয় খণ্ড
                  ২৬তম পর্ব


বারবার ডাকা সত্বেও আদিত্য পূজোর জায়গায় গেল না শেষপর্যন্ত শ্রীতমাদেবী নিজে ওদের দুজনের জন্য প্রসাদ আর খাবার নিয়ে এলেন যদিও ততক্ষণে রিসর্ট থেকেও খাবার চলে এসেছে।

"তুমি গেলে না কেন? এতবার ডাকা হলো তবুও না কেন?"

খাবার দিতে এসে শ্রীতমাদেবীর প্রথম প্রশ্নটাই এটা উত্তরে আদিত্য শান্ত স্বরে জবাব দেয়, 

"ওখানে অনেক লোকের ভিড় আর আমার ভিড় বেশী পছন্দ হয় না"

"কিন্তু আমরা আশা করেছিলাম তোমরা যাবে"

"ওখানে যাইনি তো কি হয়েছে কাছেই তো ছিলাম"

"তবুও, তুমি আমাদের আপন জন সেটা ভেবেই ডেকেছিলাম"

শ্রীতমাদেবীর মুখে 'আপন জন' শুনে আদিত্য মুহুর্তের জন্য চমকে উঠলো কিন্তু পরক্ষনেই নিজেকে সামলে নিল তারপর যথাসম্ভব নিজেকে শান্ত রেখে বললো,

"আমাকে আপন জন ভেবেছেন এটাই আমার জন্য অনেক তবে ওখানে আপনাদের আসল আপন জনেরা ছিল সেখানে আমি গেলে হয়তো তাদের খারাপ লাগতে পারতো"

"কক্ষণো না, তুমি ওদের ভুল বুঝছো"

"হয়তো, তবুও আমার ওখানে যাওয়াটা আমার ঠিক মনে হয় নি তাই যাইনি, এতে আপনি প্লিজ মন খারাপ করবেন না, আপনারা তো এখানেই থাকবেন বলে বাড়ি বানাচ্ছেন এরপর তো পাশাপাশিই থাকবো"

শ্রীতমাদেবী আর কোনো কথা বললেন না তিনি বুঝতে পারলেন তার ছেলের মনে নিজের পরিবারের প্রতি এখনো অভিমান জমে আছে, তিনি শুধুমাত্র "খাবার এনেছি এটা অন্তত খেয়ে নিও" বলে চলে গেলেন।


সময় নিজের মতো বয়ে যেতে থাকে ভিত পূজোর পরে অভিরূপবাবু দ্রুত বাড়ি বানানোর কাজে হাত দিলেন অবশ্য এখনো নিউ আলিপুরের বাড়িতেই থাকেন মাঝে মাঝে এখানে এসে দেখে যান বাকি সময়টা মোড়লমশাই দেখাশোনা করেন, ওনার সাথেও প্রায় বন্ধুত্ব হয়ে গেছে, আদিত্য জানে তার বাবার অনেক গুণের মধ্যে এটা একটা তিনি খুব সহজেই লোকের সঙ্গে মিশে যেতে পারেন তাদের কাছে টেনে নিতে পারেন।


"ড্যাডি তুমি কি করতে চাইছো বলোতো? সব পুরনো কেসের ফাইলগুলো ঘাঁটছো কেন?"

সুপ্রতিমবাবুর মেয়ে তানিয়ার প্রশ্ন তার বাবাকে, আদিত্যর সঙ্গে দেখা করে আসার পর থেকেই তিনি এই কাজটা শুরু করেছেন নিজের দৈনন্দিন কাজের ফাঁকে বিগত কয়েকবছরে কলকাতার বুকে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন সলভ বা আনসলভ্‌ড কেসের ফাইলগুলো আবার খুঁটিয়ে দেখছেন কি খুঁজছেন সেটা তিনি নিজেও ঠিক জানেন না তবুও দেখে চলেছেন তানিয়া এটা অনেকদিন ধরেই খেয়াল করেছে তাই আর থাকতে না পেরে প্রশ্ন করলো বাবাকে।

"ক্লু খুঁজছি বুঝলি?" একটা ফাইল রেখে আরেকটা হাতে নিয়ে উত্তর দেন সুপ্রতিম বাবু।

"কিসের ক্লু?"

"দুই ক্রিমিনালকে ধরার"

"আর এই দুজন ক্রিমিনাল কারা?"

"যারা এই শহরে ডাকাতির আড়ালে অভিরূপ বাবুকে খুন করতে চেয়েছিল"

"তুমি ভালো করেই জানো তুমি যাদের পিছনে পরেছো তারা গভীর জলের মাছ অত সহজে ধরা দেবে না তার সাথে ওদের গায়ে ব্যানার্জী পরিবারের স্ট্যাম্প লেগে আছে"

"সেইজন্যই তো অন্য রাস্তা নিয়েছি"

"এই পুরনো ফাইলগুলোতে তুমি কি খুঁজে পাবে? আর আদৌ পাবে কিনা শিওর হচ্ছো কিভাবে?"

"যেখানেই দেখো ছাই উড়াইয়া দেখো তাই, পাইলেও পাইতে পারো অমূল্য রতন কথাটা জানিস তো?"

"ড্যাডি এসব ছাড়ো? তুমি যদি ওদের ধরেও ফেলো তাহলেও ওরা ছাড়া পেয়ে যাবে অভিরূপ ব্যানার্জী ওদের ছাড়িয়ে নেবেন"

"তোকে এইজন্য পুলিশ অফিসার বানিয়ে ছিলাম? যাতে তুই নিজের কাজ না করে আগেই হার মেনে নিস?"

"আমি শুধু তোমাকে সত্যিটা মনে করিয়ে দিচ্ছি, অনিকেত দার সঙ্গে ওনারা কি করেছিলেন ভুলে গেছো?"

মেয়ের মুখে অনিকেতের নামটা শুনে মনের মধ্যে থাকা খচখচানিটা আবার চাগাড় দিয়ে ওঠে সুপ্রতিমবাবুর, তানিয়াও তার বাবার মুখের এই ভাব পরিবর্তন লক্ষ্য করে সে সন্দিগ্ধ স্বরে জিজ্ঞেস করে,

"আবার কি ভাবছো বলোতো? আর কোথায় গিয়েছিলে সেটা কিন্তু এখনো বলোনি তুমি ওখান থেকে আসার পরেই তোমার মধ্যে এই চেঞ্জটা দেখতে পাচ্ছি"

"তোকে বলবো ভাবছিলাম কিন্তু."

"কিন্তু যদি তুই বিশ্বাস না করিস তাই বলিনি"

"কি বলোতো শুনি?"

"তোর মনে আছে যেদিন অভিরূপ ব্যানার্জীর উপরে অ্যাটাক হয় সেদিন একটা ছেলে ওনাকে বাঁচিয়েছিল"

"হ্যাঁ, তুমি বলেছিলে। সে ছেলে তোমাকে একটা চিঠি লিখে চলে যায় সামনে আসেনি"

"হ্যাঁ, তবে আরও একটা কাজ করেছিল সেটা বোধহয় তুই জানিস না"

"কি কাজ?"

"ব্যানার্জী ভিলায় ঢুকে সবার সামনে সুশান্ত আর মনোজকে উত্তমাধ্যম দিয়েছিল"

"কবে? এটা তো জানতাম না"

"কারণ কেউ পুলিশ কেস করেনি"
"বলছো কি? এত সহজে হজম করে নিল?"

"বাধ্য হয়ে কারণ কেস করলে ওনারাও ফেঁসে যেত"

"যাইহোক তো এই ছেলেটা কে? আর তার সাথে তোমার কি সম্পর্ক?"

"অভিরূপ বাবুরা মনে করেন ওই ছেলেটাই অনিকেত"

"হোয়াট?"তানিয়া আকাশ থেকে পরে "কিন্তু মনে হয় মানেটা কি? ওনারা চিনতে পারছেন না?"

"ছেলের চেহারা আলাদা"

"তাহলে হয়তো ওনারা ভুল করছেন বা অন্য কোনো প্ল্যান করছেন"

"তুই এখনো ওনাদের উপরে রেগে আছিস?"

"ওনারা অনিকেতদার সঙ্গে যেটা করেছে সেটা আমি কোনোদিন‌ও ভুলবো না"

"তুই অনিকেতের খুব ক্লোজ ছিলি আমি জানি কিন্তু ওনাদের দিকটাও ভেবে দেখ, নিজের ছেলের উপরে সন্দেহ করবে কিভাবে যেখানে সবার চোখে সে সোনার টুকরো ছেলে"

"সে তুমি যাই বলো, অনিকেত দা শুধু আমার দাদা নয় আমার বেস্ট ফ্রেন্ড ছিল আমার সব প্রবলেম বুঝতো যখনই হেল্প চাইতাম কখনো না করেনি একবাক্যে রাজী থাকতো আর সেই অনিকেত দার খুনিদের ওনারা গার্ড করে বাঁচিয়ে দিলেন"

"কিন্তু এখন অভিরূপবাবু অনেকটাই পাল্টে গেছেন বিশেষ করে এই আদিত্যর সাথে দেখা হবার পরে ওনাদের ধারণা ওই অনিকেত কোনো কারণে ওর চেহারা পাল্টে গেছে"

"তুমি ওর সাথে দেখা করতে গিয়েছিলে?"

"হ্যাঁ"

"কি মনে হয় ওনাদের অনুমান ঠিক?"

"ঠিক বুঝতে পারছি না কিন্তু কিছু একটা রয়েছে যেটা আমার দেখা উচিত অথচ দেখতে পারছি না বুঝতে পারা উচিত অথচ বুঝতে পারছি না আর সেটাই কাঁটার মতো খচখচ করছে"

"ও যদি অনিকেত দা হয় তাহলে সামনে আসছে না কেন নিজের পরিচয় দিচ্ছে না কেন?"

"সেটাই তো বুঝতে পারছি না তবে ওই বলেছে পুরনো কেসগুলো আবার স্টাডি করতে কিছু না কিছু পাবোই"

"ঠিক আছে তুমি করো আর কিছু হেল্প লাগলে বলো"

"ওকে মাই ডটার"

"ড্যাডি আমাকে একবার এই আদিত্যর কাছে নিয়ে যাবে?"

"যাবো তবে আগে নিঃসন্দেহ হ‌ই যে ওই অনিকেত তারপর"

"আর সেটা বুঝবে কিভাবে?"

"সেটাই তো ভাবছি বারবার মনে হচ্ছে ও বলেছে আমাকে কিন্তু আমি ধরতে পারছি না"।
I'm the King of Dark
                &
I rule over all Devils
               devil2 devil2
Like Reply
খুব ভালো লাগছে তাই আসায় আছি পরের
[+] 2 users Like Ahid3's post
Like Reply




Users browsing this thread: 7 Guest(s)