Thread Rating:
  • 185 Vote(s) - 3.33 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Misc. Erotica অঘটনঘটন পটিয়সী (নতুন আপডেট ৩২ )
আপডেট ২০




আরশাদ সাহেবের মন আজকে ভাল। মোটামুটি বেশ ভালভাবেই পিকনিকটা শেষ হয়েছে। এলমনাই এসোশিয়েশনের ভিতর প্রতিপক্ষ গ্রুপটা নানা বাগড়া দেবার চেষ্টা করলেও শেষ পর্যন্ত ঠিকঠাক ভাবেই পিকনিক করা গেছে। পিকনিক শেষে সবার সাথে কথা বলে মনে হয়েছে সবাই বেশ সন্তুষ্ট। এলমনাই এসোশিয়েশনের আগামী কমিটিতেও সেক্রেটারি পদটা মোটামুটি নিশ্চিত ধরে নেওয়া যায়। সাধারণত এই পদে আরেকটু সিনিয়র ব্যাচের লোকেরা আসে। তবে ট্যাক্স ক্যাডারে ভাল পোস্টিং এবং ভাল পরিমাণ টাকা ঢালায় এর আগের বার সেক্রেটারি হতে পেরেছে। এইবার টাকা ঢাললেও লোকে পারফর্মেন্স দেখতে চাইছে যেহেতু একবার অলরেডি সেক্রেটারি হিসেবে দায়িত্ব পালন করে ফেলেছেন। পিকনিকটা এই দিকে দিয়ে একটা বড় সাকসেস। তবে মনের ভিতর একটা খচখচ করছে। পিকনিকে বিকালের দিকে নুসাইবা একটা সিনক্রিয়েট করেছে। মাহফুজ ছেলেটাকে ভীষণ বকাঝকা করেছে। সামান্য লেমনেডের জন্য এত বকা দেওয়া ঠিক হয় নি। তবে নুসাইবা যখন ক্ষেপে যায় ঠিক তখন ওর সামনে কিছু বাধা দেওয়া খুব একটা বুদ্ধিমানের কাজ না, আগের অভিজ্ঞতা থেকে এটা জানে আরশাদ। তাই তখন চুপ করে ছিল। যদিও মাহফুজ ছেলেটাকে বাজিয়ে দেখার জন্য কাজ দিয়েছিল আরশাদ তবে এখন মনে হচ্ছে ছেলেটা কাজের আছে। বেশ ভালভাবেই পিকনিকের দ্বায়িত্ব পালন করেছে। অন্তত পিকনিক আয়োজনে হেনস্তা হতে হয় নি। আরশাদ ভাল করেই জানে প্রতিপক্ষ উত পেতে ছিল পিকনিক আয়োজনে ভুল ধরার জন্য। এই জন্য মাহফুজ ছেলেটার জন্য একটু খারাপ লাগছে। মাহফুজ অত ক্লাস নিয়ে সচেতন না। নুসাইবা যেমন ওর ভাতিজির জন্য একদম উচু ক্লাসের পাত্র চায়, আরশাদ সেখানে এগুলা নিয়ে অত চিন্তিত না। আরশাদের মতে টাকাই ক্লাস ঠিক করে দেয়। ভাল বংশের গরীব ছেলের চাইতে নিচু বংশের বড়লোক ছেলে ভাল। তবে নুসাইবা যা বলে তার অমতে যাবার খুব একটা ইচ্ছা এসব ক্ষেত্রে নাই আরশাদের। তাই মাহফুজ কে বাজিয়ে দেখছিল এমন কোন খুত  বের করা যায় কিনা যেটা দিয়ে বাদ দিয়ে দেওয়া যায় সম্ভাব্য পাত্রের খাতা থেকে। তবে এই কয়দিনের অভিজ্ঞতা বলে মাহফুজের ভবিষ্যত উজ্জ্বল হবার কথা, অন্তত ব্যবসার ক্ষেত্রে। ট্যাক্স ক্যাডারের অফিসার হবার কারণে চাকরির শুরু থেকে নানা পদের মানুষের অর্থনৈতিক লেনদেন দেখার সৌভাগ্য হয়েছে আরশাদের। আরশাদ মাহফুজের ট্যাক্স ফাইল ঘেটে, এই কয়দিন মাহফুজের কাজকর্ম ভালভাবে পর্যবেক্ষণ করে সিদ্ধান্তে এসেছে যে, মাহফুজের ব্যবসায়িক বুদ্ধি ভাল। প্রতি বছর ইনকাম ট্যাক্স ফাইলে ইনকাম সোর্সের উত্তরত্তোর সমৃদ্ধি সেটাই ইন্ডিকেট করে। একটু খুটিয়ে খুটিয়ে প্রশ্ন করে এবং দুই একজনের কাছে খোজ নিয়ে বুঝেছে মাহফুজ ভাল কানেক্টেড। এত কম বয়সে সরকারী দলের যুব সংগঠনের ঢাকার অর্গানাইজিং সেক্রেটারি। যেখানে যুব সংগঠনের একটা পদ পেতে চল্লিশ বছর বয়স হয়ে যায় সেখানে মাহফুজ ত্রিশ বছরের মধ্যে অর্গানাইজিং সেক্রেটারির পদ বাগিয়েছে। একটাও মামলা নেই ওর নামে। খুব ক্লিন ইমেজ। সব মিলিয়ে এ ছেলের রাজনীতির ভবিষ্যত উজ্জ্বল। এছাড়া সিনথিয়াও এই ছেলের প্রতি ভাল পরিমাণে দূর্বল। তাই সরাসরি খারাপ ব্যবহার করে লাভের থেকে লসের পরিমাণ বেশি হবার সম্ভাবনা। আর এই জীবনে লাভ লসের হিসাবে বেশি দক্ষ আরশাদ। তাই জানে অনেক সময় পছন্দ না হলেও অনেক ব্যাপার সহ্য করে নিতে হয় তাহলে আখেরে লাভের পরিমাণ বেশি হবে।


নুসাইবা অনেক বুদ্ধিমান হলেও এই একটা ব্যাপারে বেশ বোকা। পছন্দ অপছন্দ খুব সহজে বুঝিয়ে দেয়। অনেক সময় লাভের জন্য চুপ করে থাকতে হয় এই ব্যাপারটা সহজে মাথায় কাজ করতে চায় না নুসাইবার। আরশাদ যেমন বেশ বুদ্ধিমানের মত মানুষ কে তার বর্তমানের অর্থনৈতিক অবস্থান দিয়ে মাপে, নুসাইবা সেখানে মানুষ কে মাপে পারিবারিক আভিজাত্যের পুরাতন রীতিতে। আরশাদের তাই মনে হয় নুসাইবা বুঝি আজকের বিকালের মাহফুজের উপর আউটবাস্টটা করেছে জেনে বুঝেই। হয়ত মাহফুজ কে অপমান করে ওর সাথে সিনথিয়ার সম্পর্ক টা বিষিয়ে তুলতে চাইছে। তবে এতে উলটো ফল হবার চান্স আছে। আরশাদ তাই নুসাইবা কে জিজ্ঞেস করে, আজকে বিকালে এত রেগে গেলে কেন? আরশাদের কাছে এই প্রশ্ন শুনে নুসাইবা কি উত্তর দিবে ভেবে পায় না। আজকে বিকাল থেকেই মনের ভিতরটা একটু খচখচ করছে, মাহফুজের সাথে  ব্যবহারটা কি আসলেই উচিত ব্যবহার হয়েছে কিনা। তবে দুপুরে ওর বান্ধবীদের কথা মাহফুজ শুনে ফেলার পর থেকেই নুসাইবার মাথা অপমানে দপদপ করছিল। এমন না যে নুসাইবার বান্ধবীদের সাথে মজা করে না, বিভিন্ন জিনিস নিয়ে একে অন্য কে টিজ করে না। কিন্তু সেই সব জিনিস ঘটে আড়ালে, পরিচিত কেউ দেখে না, কার বিব্রত হবার সম্ভাবনা নেই। আজকে বান্ধবীরা যদিও জেনে  বুঝে করে নি কিন্তু ওদের কথায় নুসাইবা চরম বিব্রত হয়েছে। তার উপর সেটা মাহফুজের সামনে হওয়ায় বিব্রত হওয়ার পরিমান আর বেশি। পরে রুমে ঢুকে বন্ধুদের ভাল ঝাড়ি দিয়েছে। তারপরেও নুসাইবার রাগ কমছিল না। বিকালে মাহফুজ কে দেখে নুসাইবার মনে হচ্ছিল মাহফুজ বুঝি ওকে দেখে মুচকি মুচকি হাসছে তাই আর বেশি করে ক্ষেপে গিয়েছিল। ঠিক সেই সময় লেমনেডের ঘটনাটা ঘটায়, পুরো রাগ গিয়ে ঝেড়েছে মাহফুজের উপর। কিন্তু এই কথা তো আরশাদ কে বলা যায় না। প্রথমত, ওর বান্ধবীরা কি মজা করে বলেছে সেটা আরশাদ কে বলা ঠিক হবে না। আর দ্বিতীয়ত, আরশাদ সব সময় নুসাইবা কে ওর এই পাগলাটে রাগের জন্য কথা শোনায়। তাই ঠিক মেজাজ হারিয়ে এইরকম ঝাড়ি দিয়েছে এটা বলে আরেকদফা উপদেশ বাণী শুনতে চায় না এই মূহুর্তে নুসাইবা। তাই নুসাইবা উত্তর দিল, এরকম একটা ভুল করলে ভাল করে ঝাড়ি দিতে হয় নাহলে এইসব কম বয়েসী ছোকড়ারা মাথায় উঠে। আরশাদ এবার ঠান্ডা মাথায় নুসাইবা কে বুঝাতে শুরু করে। কেন সব সময় মাথা গরম করতে হয় না। কেন অনেক সময় গরম মাথায় সিদ্ধান্ত না নিয়ে ঠান্ডা মাথায় ভাবলে আর ভাল সমাধান বের হয়। সিনথিয়ার সাথে মাহফুজের একটা সম্পর্ক আছে এটা তো তারা দুইজনেই বুঝতে পারছে। এই অবস্থায় মাহফুজের সাথে খারাপ ব্যবহার করলে সিনথিয়া মাহফুজের পক্ষ নিবে, প্রেমে সাধারণত সবাই এমন করে। মাহফুজ কে যদি নুসাইবার নিতান্ত পছন্দ না হয় তবে এমন সরাসরি কিছু না করে আড়াল থেকে খেলা  উচিত যাতে মাহফুজ বা নুসাইবা দুইজনে দুইজনকে আস্তে আস্তে অপছন্দ করতে শুরু করে। নুসাইবা একবার আরশাদের কথায় পালাটা উত্তর দিতে গিয়েও চুপ করে যায়। আরশাদ যা বলছে এর যুক্তি আছে। ওর নিজের যে মাথা গরম এটা সে নিজেই জানে। এইজন্য অনেক সময় ভোগান্তিতে পড়তে হয়। আর সিনথিয়া-মাহফুজের ব্যাপারে মাথা গরম করে কিছু হবে না। আর সত্য বলতে কি আজকে মাহফুজের উপর রাগ লেমনেড বা সিনথিয়ার সাথে ওর সম্পর্কের ব্যাপারে না। ওর বান্ধবীদের কথা গুলো যে পরিমাণ বিব্রত করেছে ওকে তারপর কার উপর রাগ ঝাড়া যায় এটা বুঝছিল না। তার উপর ওর মনে হচ্ছিল মাহফুজ মনে মনে এইসব ভেবে হাসছে। তাই মাহফুজের উপর রাগ ঝাড়া হয়ে গেছে। যদিও এখন বুঝছে একটু বেশি হয়ে গেছে। তাই আরশাদ কে নুসাইবা বলে তোমার কথা একদিন দিয়ে ঠিক। তবে যা বলার বলে তো ফেলেছি। এখন উপায় কি?  


আরশাদ বলে ড্যামেজ কন্ট্রোল। এখন ড্যামেজ কন্ট্রোল করতে হবে আগে। নুসাইবা বলে সেটা তো বুঝলাম। তবে আবার বলো না মাহফুজ কে স্যরি বলতে হবে ফোন দিয়ে। আরশাদ বলে আরে নাহ। ওকে দাওয়াত দিব বাসায়। আমাদের জগন্নাথে ইউনিভার্সিটিতে স্পীকার করে নিয়ে গেল, আবার এলমনাই এসোশিয়েশনের কাজটা করে দিল। এই জন্য দাওয়াত দিব। নুসাইবা জিজ্ঞেস করে, দাওয়াত দিলেই আসবে? আমি যে বকা দিলাম। আরশাদ বলে এমনিতে হয়ত আসত না তবে এখন আসবে। নুসাইবা জিজ্ঞেস করে কেন? আরশাদ বলে ভেবে দেখ। সিনথিয়া কে যদি সত্যি ভালবাসে তাহলে তার একমাত্র ফুফু ফুপার দাওয়াত কখনোই অগ্রাহ্য করবে না। আর যদি না আসে তাহলে আমরা যেমন ভেবেছি সিনথিয়ার উপর ওর ফিলিংস এত শক্ত না। তারমানে ধীর ধীরে সিনথিয়া আর ওর রিলেশন এমনিতে শেষ হয়ে যাবে। আর আমরা খালি ওকে দাওয়াত দিব এমন না। সিনথিয়াকে বলব মাহফুজ কে দাওয়াত দিচ্ছি। সরাসরি না বললেও এমন ইংগিত দিবা সিনথিয়া কে যাতে মনে হয় মাহফুজ কে পাত্র হিসেবে দেখার জন্য এই দাওয়াত। তাহলে সিনথিয়া মাহফুজের উপর এক্সট্রা প্রেশার ক্রিয়েট করবে দাওয়াতে আসার জন্য যদি সিনথিয়ার মনে মাহফুজের প্রতি সত্যিকারের সফট কর্ণার থাকে। নুসাইব ইম্প্রেস হয়। বলে তুমি আসলেই জিনিয়াস। তবে মাহফুজ যদি সত্যি সত্যি দাওয়াত এক্সেপ্ট করে আসে। তাহলে কি হবে। আরশাদ বলে কিছুই হবে না। আমরা চমৎকার ব্যবহার করব। তুমি এমন ব্যবহার করবে যেন কিছুই হয় নি। আমি ভাল ভাল কথা বলব প্রশংসা করব। ভাল করে রান্না বান্না করবে। নুসাইব একটু অবাক হয়ে বলে তাহলে? আরশাদ বলে তুমি কি চাও আসলে। ওদের প্রেমটা ভাংগতে তাই না? সেই জন্য মাহফুজ কে আমাদের আর ভাল করে বুঝতে হবে। এই দাওয়াত সেই সুযোগ দিবে আমাদের। ওকে আমরা যত জানব তব আমাদের পরের স্টেপ এক্সিকিউট করা সহজ হবে। নুসাইবা এইবার  উত্তর দেয়- আসলে মাহফুজ ছেলেটা হয়ত খারাপ না কিন্তু ওর ফ্যামিলি ব্যাকগ্রাউন্ড ঠিক আমাদের লেভেলের না। সিনথিয়া বাচ্চা মানুষ তাই আবেগে অনেক কথাই বলতে পারে। কিন্তু আমাদের তো অভিজ্ঞতা হয়েছে। তাই আমাদের কিছু করা উচিত না। আবার সরাসরি কিছু বললে তো উলটো ফল  হতে পারে। আরশাদ, নুসাইবার প্রশ্নের সমাধান দেয়- তোমার কাজিনের প্রেমের সময় আমরা কি করেছিলাম মনে আছে? নুসাইবার ঠোটে  হাসি ফুটে উঠে। পুরাতন কাহিনী মনে পড়তেই সব ব্যাপারটা পরিষ্কার  হয়ে যায় ওর কাছে। আরশাদ আসলেই জিনিয়াস। নুসাইবা বলে আর বলতে হবে না। আমি বুঝে গেছি। ইউ আর এ জিনিয়াস।
Like Reply
Do not mention / post any under age /rape content. If found Please use REPORT button.


মাহফুজের মনের ভিতর অস্থিরতা কমছে না। এইভাবে সবার সামনে অপমান হতে হবে উপকার করতে গিয়ে এটা মেনে নিতে পারছে না। মাহফুজ চোখের সামনে ঝুলতে থাকা ক্যালেন্ডারের পাতা দেখছে। একদিন হয়ে গেল অপমানের। ছোটকাল থেকে একটা জিনিস খুব ভাল করে ওর মাথায় ঢুকিয়ে দিয়েছিল ওর বাবা, কেউ অপমান করলে সহজে ছাড় না দিতে। আজকে হোক, কালকে হোক আর এক বছর পরে হোক অপমানের শোধ তুলে বুঝিয়ে দিতে হয় সৈয়দ বংশের ছেলেদের কেন সমঝে চলতে হয়। গতকাল সিনথিয়ার সাথে কথার সময় অল্প করে বলেছিল ওর ফুফুর কান্ড। কীভাবে সামান্য একটা লেমনেডের জন্য ওর সাথে এমন খারাপ  ব্যবহার করল। সিনথিয়াও অবাক হয়েছে।  নুসাইবার মাথা গরম এটা সে জানে তবে এভাবে মাহফুজের সাথে এই সামান্য ব্যাপার নিয়ে রাগারাগি করবে সেটা সিনথিয়া ভাবতে পারে নি। সিনথিয়ার কথা শুনে তেতে উঠেছিল মাহফুজ। রাগারাগি মানে? রাগারাগিতে তো দুইপক্ষ থাকে, কিন্তু নুসাইবা যা করেছে পুরাটাই একপাক্ষিক। শুধু সিনথিয়ার ফুফু না হলে আর বিয়ের ব্যাপারে অত সিরিয়াস না হলে পালটা উত্তর দেবার ক্ষমতা ওর ছিল। তবে  বাবা ওকে অপমানের প্রতিশোধ নিতে শিখালেও আরেকটা জিনিস মাহফুজ নিজেই শিখেছে ঠেকে ঠেকে। কোন লক্ষ্য স্থির করলে কোন ভাবেই সেটা থেকে বিচ্যুত হওয়া যাবে না। মাহফুজের মূল লক্ষ্য সিনথিয়ার সাথে রিলেশন। তাই ভিতরের রাগটা দমিয়ে রেখেছে। তবে শোধটা তুলবেই আজকে, কালকে না হয় আগামী বছর।

ফোন বেজে উঠল। সিনথিয়ার কল। আজকে কয়েক ঘন্টা পর পর সিনথিয়া কল দিয়ে খোজ খবর নিচ্ছে। সিনথিয়া বুঝেছে ব্যাপারটা মোটেই ভাল হয় নি। সিনথিয়া নিজেও খুব ক্ষেপে আছে ওর ফুপুর উপর। এমনিতে ফুফু কে দারুণ ভালবাসে তবে এই ব্যাপারটা মেনে নিতে পারে নি। তবে সিনথিয়া নিজেও যথেষ্ট ঠান্ডা মাথার মেয়ে তাই কোন আউটবাস্ট করে নি। তবে মাহফুজের যাতে মনের কষ্ট লাঘব হয় তাই একটু পর পর কথা বলে যাচ্ছে। ফোন ধরতেই সিনথিয়া বলল, মন ভাল হয়েছে বেবি। মাহফুজ বলল না। সিনথিয়া জিজ্ঞেস করল আমার উপর রাগ করে আছ? মাহফুজ তোমার উপর রাগ করব কেন, তবে তোমার ফুফুর উপর রাগ করে আছি। সিনথিয়া বলল, আমিও। ফুফু এভাবে কেন করল এটা আমার মাথায় ঢুকছে না। মাহফুজ বলে আমারো। সিনথিয়া বলে তবে একটা কারণ হতে পারে, গতকাল থেকে ভেবে ভেবে আমার মাথায় খালি এই একটা কারণ আসছে। মাহফুজ জিজ্ঞেস করে কি কারণ? সিনথিয়া বলে আমি তো আগেই বলেছি ফুফু আমাদের বিয়ের ব্যাপারে কেমন বেশি কনজারভেটিভ। আমার মনে হয় তুমি আমাকে পছন্দ কর এটা টের পেয়ে আর রাগ আটকে রাখতে পারে নি। এমনিতেও ফুফু মেজাজ কন্ট্রোল করতে পারে না। এইটা উনার একটা বদগুণ। বাড়ির আদরের ছোটমেয়ে, একমাত্র মেয়ে। দাদা-দাদী থেকে বাবা-চাচারা সবাই মাথায় তুলে রেখেছে আদর দিয়ে তাই মেজাজ কন্ট্রোল করা শিখে নি। মাহফুজ বলে তোমাদের বাড়ির ব্যাপারটা কি বল তো? সব মেয়েরাই কি রাগের খনি নাকি? সিনথিয়া হাসতে থাকে। মাহফুজ একটু ইজি হয়েছে টের পায়। বলে কেন? আমি কি খুব রাগী? মাহফুজ বলে তুমি কত রাগী এইটা তো আমি খালি দেখি। বাইরের পৃথিবীর চোখে তুমি শান্ত লক্ষী লিটল এঞ্জেল আর আমি খালি জানি ভিতরে ভিতরে কতটা ডেভিল তুমি। খিল খিল করে হেসে উঠে সিনথিয়া। বলে, আর আপু? সাবরিনার কথা উঠতেই একটু থমকে যায় মাহফুজ। কি উত্তর দিবে। দুই সেকেন্ডে আবার সামলে উঠে। বল, তোমার আপু তো কথাই বলে না রাগের চোটে। অফিসের সবাই এত ভয়ে থাকে যে কি বলব। সিনথিয়া বলে তুমি তো ঠিক আপু কে জয় করে নিয়েছ। সিনথিয়ার কথায় ভিরমি খাবার যোগাড় হয় মাহফুজের। জয় করে নিয়েছি মানে? সিনথিয়া বলে, বারে, তুমি আপু কে যেভাবে প্রজেক্টে হেল্প করেছ আমি সিওর আপুর কাছে  তোমার অনেক ক্রেডিট পয়েন্ট জমা হয়েছে। পরে যখন তোমাকে আপুর সামনে হাজির করব তখন সেই পয়েন্ট গুলো কাজে লাগবে। মাহফুজের বুকটা ধক করে উঠে। সিনথিয়া যদি জানত মাহফুজ কিভাবে ওর অর্জন করা ক্রেডিট গুলো সাবরিনার উপর খরচ করছে তাহলে আতকে উঠত। এটা ভাবতেই মাহফুজের মনে নতুন একটা চিন্তা  উদয় হল। কীভাবে সাবরিনার সাথে ওর সম্পর্কে অগ্রগতি সিনথিয়া কে জানানো যায়। আর কীভাবেই বা সাবরিনা কে বলা যায় ও সিনথিয়া কে ভালবাসে। গত কিছুদিন ধরে অনেকবার ভাবছে এটা নিয়ে। তবে মনে হচ্ছে অসমাধানযোগ্য সমস্যা এটা। সিনথিয়া সাবরিনা কে নিয়ে সেক্সটকে অংশ নিলেও বাস্তবের ঘটনা শুনলে কতটুকু মেনে নিতে পারবে? আবার সাবরিনা যখন দেখবে মাহফুজের সিনথিয়ার প্রেমিকা তখন ওর কনজারভেটিভ মন কতটুকু মেনে নিতে পারবে। মাহফুজ মাথা থেকে এই কঠিন চিন্তা দূর করার চেষ্টা করে। তাই জিজ্ঞেস করে তুমি জেবা বলে কাউকে চেন? তোমার ফুফা ফুফুদের পরিচিত। উনাদের ডিপার্টমেন্টের ছোটবোন।


সিনথিয়া জিজ্ঞেস করে কোন জেবার কথা বলছ? জেবা আন্টি? রিয়াদ আংকেলের ওয়াইফ জেবা আন্টি? মাহফুজ বলে ভদ্রমহিলার জামাই এর নাম তো জানি না। তবে এটা জানি তোমার ফুপার স্কুলের ফ্রেন্ড। সিনথিয়া বলে তাহলে জেবা আন্টি হবে। জিজ্ঞেস করছ কেন উনার কথা? মাহফুজ বলে না জেবার গলায় কিছুটা স্লেষের আভাস পেয়েছিল আরশাদ আর নুসাইবার প্রসংগে। এড়িয়ে গিয়ে বলে, নাহ পিকনিক আয়োজন করতে গিয়ে পরিচয় হয়েছিল। তা ফুফা ফুফুর কেমন পরিচিত। সিনথিয়া বলে রিয়াদ আংকেল তো ফুপার একদম ছোটকালের বন্ধু। দুইজনের খুব খাতির। আর জেবা আন্টিকেও তো নুসাইবা ফুফু খুব পছন্দ করে। মাহফুজ মনে মনে ভাবে জেবা যে অতটা পছন্দ করে না এটা এখনো এরা কেউ টের পায় নি তাহলে। মাহফুজ প্রশ্ন করে তার মানে উনারা তোমার ফুফা ফুফু দুইজনের সম্পর্কে খুব ভাল করে জানে?  সিনথিয়া বলে অফকোর্স। না জানার কিছু নেই।  উনারা খুব ভাল ভাবে একে অন্যের পরিচিত। রিয়াদ আংকেল আর জেবা আন্টির পরিচয় তো উনারাই করিয়ে দিয়েছে। সেই সূত্রে এই বিয়ের ঘটক আসলে উনারা। আর ফুফা ফুফুর তো বাচ্চাকাচ্চা হয় নি তাই রিয়াদ আংকেলের ছেলে মেয়ে দুইটাকে খুব আদর করে উনারা। আর ফুফুদের বাসায় কোন দাওয়াত থাকলে সেখানে খুব কমন মেহমান থাকে রিয়াদ আংকেল আর জেবা আন্টি। মাহফুজ মনে মনে ভাবে ওর আন্দাজ সঠিক। নুসাইবা আরশাদ সম্পর্কে খোজ বের করার জন্য জেবাই আসল লোক।




জেবা আকতার। সরকারি একটা ব্যাংকে সিনিয়র অফিসার হিসেবে আছেন। এমনিতে সাদাসিদে নরমাল মধ্যবিত্ত বাংগালী মহিলা। গায়ের রঙ শ্যামলা। খুব সুন্দরী নন আবার অসুন্দর বলেও এড়িয়ে যাওয়া যাবে না। অত্যন্ত পরিবার অন্তপ্রাণ। এক ছেলে আর এক মেয়ে। মেয়েটা ক্লাস ফোরে পড়ে আর ছেলেটা ক্লাস সিক্সে। জামাই রিয়াদ আহমেদ একটা দেশী কর্পোরেট হাউজে আছে জিএম পজিশনে। আরশাদ আর নুসাইবার ফ্যামিলির সাথে জেবাদের দারুণ খাতির। তবে আর সব ক্লোজ বন্ধুবান্ধব কাপলের মত মনে মনে জেবা আরশাদ আর নুসাইবার উপর জেলাস। কোন মেয়ে না চায় তার স্বামী কে উপরে দেখতে। কিন্তু জেবার হাজব্যান্ড রিয়াদ সব সময় আরশাদের কথা শুনে চলে। তার উপর রিয়াদ যে কোম্পানিতে চাকরি করে তাদের মালিক মহলের সাথে আরশাদের যোগাযোগ আছে। আরশাদ তাদের বলে কয়ে রিয়াদের রিসেন্ট প্রমশোন করিয়েছে। তাই রিয়াদ যেন আর কৃতজ্ঞতায় নুয়ে পড়ে আরশাদ কে দেখলে। মনে মনে বিরক্ত হয় এইসব দেখলে জেবা। পরিশ্রম তো কম করে না রিয়াদ। বছরের বার মাস রোদ বৃষ্টি সব ঠেলে রাত নয়টা পর্যন্ত অফিসে পড়ে থাকে। প্রমোশন এমনিতেই পাওনা ছিল রিয়াদের। হয়ত আরশাদ একটু বলেছে তাই বলে পুরো কৃতিত্ব তো কোনভাবে আরশাদের  হতে পারে না। তার উপর নুসাইবার প্রতি ইর্ষা কাজ করে জেবার। বয়সে ওর থেকে দুই  বছরের  বড় কিন্তু দেখলে মনে হয় ওর থেকে সাত আট বছরের ছোট বুঝি। এমন না যে জেবা কে খুব বয়স্ক দেখায় বরং নুসাইবা কে কম বয়স্ক দেখায়। সবাই নুসাইবার রূপের প্রশংসা করে। কিন্তু কেউ বুঝতে চায় না দুই বাচ্চা হলে শরীরে সেটার ছাপ পড়ে। বাচ্চাহীন নুসাইবা কে দিয়ে কি সৌন্দর্য মাপা যায়? বাচ্চা থাকলে বুঝা যেত এভাবে বয়স ধরে রাখতে পারে কিনা। এছাড়া ফ্রেন্ড সার্কেলে আর এক ডিপার্টমেন্টের হওয়ায় অনেক অনুষ্ঠানে কমন দাওয়াত থাকে দুই কাপলের। সবখানে সবাই যেভাবে নুসাইবা কে নিয়ে মেতে থাকে এটা মোটেই পছন্দ না জেবার। তার উপর সবখানেই নুসাইবার একটা খবরদারি ভাব আছে। এমনিতে ওকে খুব স্নেহ করে কিন্তু এইসব কারণে জেবা নুসাইবার প্রতি জেলাস থাকে ভিতরে ভিতরে। তবে বাইরে কখনো কিছু প্রকাশ করে না।


মাহফুজ তাই যখন প্রায় একটা অনুমানের বশে জেবা কে টার্গেট করে তখন অনেকটা না জেনেই আসল লক্ষ্যে হিট করার মত হয় ব্যাপারটা। পিকনিকের সময় জেবার কাছ থেকে মাহফুজ একটা ভিজিটিং কার্ড চেয়ে নিয়েছিল যদি কোন দরকার হয় সেই জন্য। এখন মানিব্যাগ থেকে কার্ডটা বের করে দেখতে থাকে। ঢাকার একটা ব্যস্ত এলাকার সরকারি ব্যাংকের একটা ব্রাঞ্চে বসে জেবা। একবার ফোন করার কথা ভাবলেও পরে ভাবে সরাসরি গিয়ে দেখা করি। দেখা যাক কি হয়। আর সব সরকারি ব্যাংকের মতন এই ব্যাংকটাও একরকম। ভিতরে আলো কম। মানুষজন গিজ গিজ করছে। বেশির ভাগ এসেছে বিদ্যুৎ বা গ্যাসের টাকা জমা দিতে। লোকেরা লাইন ধরে আছে। ভিড়ের মধ্যে মাত্র একটা ফ্যান মাথার উপর ঘুরছে। এত লোকের নিশ্বাস দূর করতে পারছে না ফ্যানটা তাই ঘরের ভিতর একটা গুমোট আবহাওয়া। ঢুকবার দরজায় একজন বুড়ো সিকিউরিটি ম্যান একটা ইংরেজ আমলের দোনলা বন্দুক নিয়ে বসে আছে। সো টিপিক্যাল সরকারি ব্যাংক গুলো। চোখ বন্ধ করে সব ব্যাংকে এক রকম অবস্থা বলে দেওয়া যায়। বুক পর্যন্ত উচু কাঠের টেবিল আর তার উপর কাচের দেয়াল। দেয়ালের ঐপাশে ব্যাংকের লোকেরা কাজ করছে। মাঝে মাঝেই খট খট শব্দে সিল মারার শব্দ পাওয়া যাচ্ছে, টাকা জমা দিলেই রসিদে দ্রুত সিল মারছে কাউন্টারে বসা লোকেরা। কাউন্টারে বসা লোকদের মাঝে জেবা কে দেখা যায় না। মাহফুজের মনে পড়ে জেবা সিনিয়র অফিসার। ক্যাশ কাউন্টারে বসবার কথা না। তাই ভিড় এড়িয়ে অফিসের ভিতরে যাবার কথা ভাবে। দরজার মুখে পিয়ন আটকায়। জিজ্ঞেস করে কই যাবেন। মাহফুজ জেবার ভিজিটিং কার্ডটা দেখিয়ে বলে ম্যাডামের কাছে যাব। পিয়ন আবার জিজ্ঞেস করে এপয়ন্টমেন্ট আছে? মাহফুজ এবার ওর ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানির ভিজিটিং কার্ডটা দিয়ে বলে ম্যাডাম কে দেখান দেখালেই চিনবে। অল্প একটু পরেই পিয়ন বলল ভিতরে যান। ভিতরে ঢুকে ডান পাশ থেকে সেকেন্ড রুম ম্যাডামের।


যদিও পিয়ন রুম বলেছে আসলে  বড় একটা রুম কে কাঠের পার্টিশান দিয়ে কয়েকটা রুম করা। জেবার রুমের মুখে দাড়াতেই জেবার মুখে একটা হাসি ফুটে উঠল। বলল, আরে আসুন আসুন, কি ব্যাপার এইখানে? মাহফুজ বলল, নাহ কাছেই একটা কাজে এসেছিলাম। আপনি বলেছিলেন এই ব্রাঞ্চে বসেন। তাই ভাবলাম দেখা করে যাই। জেবা বলে, বসেন বসেন। মাহফুজ বসতেই দুইজনের কথাবার্তা শুরু হল। জেবার সাথে পরিচয়ের পর মাহফুজ একটা  ব্যান্ড দল খুব কম টাকায় ভাড়া করতে সাহায্য করেছিল জেবা কে অনুষ্ঠানের জন্য। সেখান থেকে জেবার সাথে ভাল একটা খাতির গড়ে উঠেছে। কথায় কথায় জেবা বলল পিকনিকের জন্য স্যরি ভাই। মাহফুজ না  বোঝার ভান করে বলল কেন। জেবা একটু লজ্জিত ভাবে বলল, পিকনিকের দিন  বিকাল বেলা খেলার মাঠের ঘটনার জন্য। আপনি আমাদের জন্য এত করলেন আর তার বদলে এত কথা শুনতে হল। মাহফুজ টের পেল ওর মুখ লাল হয়ে উঠছে। জেবা  বলছে, মানুষের একটা কমনসেন্স থাকা উচিত। একটা লেমনেডের জন্য কেউ এতগুলা কথা শোনায় বলেন? আপনি তো দেখেছেন গান গাওয়ার জন্য যথেষ্ঠ ভলান্টিয়ার পাওয়া যাচ্ছে না দেখে আমাকে কি বলল। আরে কেউ যদি সেচ্ছায় না আসে তাহলে কি আমি বাসা থেকে গিয়ে ধরে আনব। নিজে সেক্রেটারির বউ হয়েছে বলে ভাবে উনি নিজে বুঝি সেক্রেটারি। মাহফুজ বলল, হু। জেবা বলে চলেছে আপনার ব্যাথাটা আমি কিছুটা হলেও বুঝি। মাহফুজ উত্তর না দিয়ে আবার মাথা নাড়ায়। আসলে জেবা এতদিন পর এই ব্যাপারে কথা বলার মত কাউকে পেয়েছে। ওর স্বামীর কাছে নুসাইবা বা আরশাদ কার নামে টু শব্দ করা যায় না। আর বাকি পরিচিত যারা নুসাইবা বা আরশাদ কে চিনে সবাই কমবেশি নুসাইবার রুপমুগ্ধ। তাদের বললে কথা নুসাইবাদের কানে পৌছে যাবে দ্রুত। তাই চুপ করে সব বুকে চেপে রাখতে হয়। মাহফুজ কে ঐদিন বকা খেতে দেখে এবং মাহফুজের সাথে একটা খাতির জমে উঠায় জেবার মনে হয় এতদিন ধরে মনের ভিতর চেপে রাখা ক্ষোভ শেয়ার করার জন্য মাহফুজ উপযুক্ত ব্যক্তি। মাহফুজ মনে মনে ভাবে ওর উদ্দ্যেশ সফল। এখন খালি ভিতরের কথা বের করতে হবে।


জেবা কথা বলতে বলতে বলে আজকে আমার সাথে লাঞ্চ করে যান। মাহফুজ ভদ্রতা বশত না করে। জেবা জোর করে বলে আরে প্রথম দিন আমার অফিসে এসেছেন। আপনি পিকনিকে যা হেল্প করেছেন এর পর আপনাকে অফিসে আসার পর খালি মুখে যেতে দেওয়া খারাপ দেখায়। আর আমাদের অফিসের কাছেই খুব ভাল একটা বিরিয়ানির দোকান আছে। পিয়ন কে  বলে দিচ্ছি দুই প্যাকেট বিরিয়ানি নিয়ে আসবে আমাদের জন্য। খেতে খেতে কথা বলা যাবে। মাহফুজ এইবার আর না করে না। কারণ জেবার পেট থেকে আর কথা বের করা দরকার। জেবার সাথে কথা চালাতে থাকে মাহফুজ। জিজ্ঞেস করে বাসার সবাই কেমন আছে? জেবা উত্তর দেয় ভাল। মাহফুজ অভিজ্ঞতা থেকে জানে বিবাহিত মেয়েদের মন জয় করার একটা কমন টেকনিক হল তাদের বাচ্চাদের নিয়ে কথা বলা, বাচ্চাদের প্রশংসা করা। পিকনিকে জেবার দুই বাচ্চা কে দেখেছিল মাহফুজ। কিউট বাচ্চা। তাই মাহফুজ বাচ্চা দুইটার কথা জিজ্ঞেস করে। জেবার চোখ ঝলমল করে উঠে। বাচ্চাদের নানা গুণগাণ গাইতে থাকে। কথায় কথায় বলে এখন বাচ্চা দুইটা নিয়ে খালি একটাই চিন্তা। ছোট মেয়েটাকে অলরেডি ভিকারুননেসায় ভর্তি করিয়ে দিয়েছে। ঢাকায় মেয়েদের জন্য বেস্ট স্কুল। এখন ছেলেটাকে একটা ভাল স্কুলে ভর্তি করতে পারলে হয়। গভর্মেন্ট ল্যাবরটরি স্কুল বাসা থেকে কাছে হয়, ভাল স্কুল। কিন্তু কিছুতেই নাকি ভর্তি করাতে পারছে না। এই বছর ভর্তি পরীক্ষা দিয়েছিল কিন্তু টিকে নি। তবে না টিকলেও নাকি অনেকে বিভিন্ন কোটা এবং লবিং এর জোরে বাচ্চাদের ভর্তি করিয়ে ফেলছে। উনারা চেষ্টা করেছেন তবে সফল হন নি। মাহফুজ বুঝল এইবার আসল খোচা দেবার সময়। মাহফুজ তাই জিজ্ঞেস করল, কেন আরশাদ সাহেব হেল্প করেন নি? উনি না আপনার হাজব্যান্ডের প্রমোশনে হেল্প করেছিল। জেবার মুখ কাল হয়ে যায়। জেবা বলে শুনেন আমার হ্যাজব্যান্ড কাজ করেছে বলেই প্রমোশন পেয়েছে এমনি এমনি না। এই কথা টা আমি তাকে বুঝাতে পারি না। আর আরশাদ ভাই কি এমনি এমনি হেল্প করেছে। উনি করেছে উনার স্বার্থে। আমার হ্যাজব্যান্ডের কোম্পানির সাথে উনার ডিলিংস আছে ট্যাক্স আর ভ্যাট সারচার্জ নিয়ে। সেটা ঠিক রাখার জন্য একজন লোক দরকার উনার ভিতরে। আমার জামাই হচ্ছে সেই লোক। আর কোম্পানি দেখেছে এমনিতেই তারা প্রমোশন দিত তখন আরশাদ সাহেব বলায় এমন ভাব করছে যেন তার কথাই রেখেছে। আমার ভাল মানুষ জামাইটা এইসব কিছু ঠিক মত বুঝে না। আরশাদ ভাই কি আর এমনি এমনি হেল্প করার মানুষ। উনি গল্প গুজব হাসি ঠাট্টার জন্য ভাল, আড্ডায় ভাল কোম্পানি। কিন্তু স্বার্থ ছাড়া উনি কাউকে এক বিন্দু হেল্প করে না। এই সহজ কথাটা এত বছরেও রিয়াদ কে বুঝাতে পারলাম না। মাহফুজ মনে মনে খুশি হয়। যে তথ্য খুজছিল তার প্রথম সূত্র পাওয়া গেল। রিয়াদ সাহেবের কোম্পানির সাথে আরশাদের একটা আন্ডারহ্যান্ড ডিলিং আছে। গুড। জেবা বলে আমরা আরশাদ ভাই কে  বলেছিলাম, উনি দুই একটা কল করেছিল তবে কাজ হয় নি। ঢাকার ছেলেদের সেরা স্কুলে নিয়ে কেমন লবিং হয় বুঝেন তো। মন্ত্রী, এমপি্‌, সচিব, আইজির তদবিরে ভরে থাকে। সেখানে ট্যাক্সের কমিশনারের এক ফোনে কি হয়। উনি হয়ত অন্য কাউকে ধরে করাতে পারত তবে সেটা উনি করেন নাই। মাহফুজ বুঝে জেবার কন্ঠে ক্ষোভ। মাহফুজ বলে এটা তো ঠিক করে নায়। বেস্ট ফ্রেন্ডের ছেলের জন্য এতটুকু তো করতে পারতেন। জেবা বলে এইবার বুঝেন কি অবস্থা। জেবার কথা শুনে হঠাত করে মাহফুজের মাথায় একটা বুদ্ধি আসে। জেবার ছেলে কে গর্ভমেন্ট ল্যাব স্কুলে ভর্তি করতে সাহায্য করলে কেমন হয়। গর্ভমেন্ট ল্যাভ নিউমার্কেট থানা এলাকায়। এই এলাকার ওদের মূল দলের সভাপতি ওদের ফ্যামিলি ফ্রেন্ড। মাহফুজ চাচা বলে ডাকে। মাহফুজ কে খুব স্নেহ করেন। এইসব বড় স্কুলে মন্ত্রী এমপিদের তদবির চললেও সাধারণত যে এলাকার স্কুল সেই এলাকার পার্টির সভাপতি বা সেক্রেটারির অনুরোধ স্কুলের হেডমাস্টার ফেলতে পারবে না। মাহফুজ তাই জেবা কে বলে আমি যদি আপনার একটা উপকার করি নিবেন? জেবা জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকায়, বলে কিসের কথা বলছেন। মাহফুজ বলে আমি চেষ্টা করে দেখতে পারি আপনার ছেলে কে গর্ভমেন্ট ল্যাবরেটরি স্কুলে ভর্তি করানো যায় কিনা। জেবা অবিশ্বাসের দৃষ্টিতে জিজ্ঞেস করে পারবেন আপনি? মাহফুজ বলে দেখেন না। পলিটিক্স করি, ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি চালাই। আমাদের অনেক ধরনের লোকের সাথে খাতির আছে, খাতির রাখতে হয়। তাই একটু চেষ্টা তো করাই যায়। সফল না হলে তো আর ক্ষতি নেই তবে সফল হলে আপনার ইচ্ছা পূরণ হবে। আপনার ছেলে একটা ভাল স্কুলে যাবে। জেবা একদম খুশিতে গদ গদ হয়ে যায়। মাহফুজ বলে আমাকে দুই দিন সময় দেন। আমি আপনাকে কোন ভাল খবর শুনাতে পারি কিনা দেখি।


জেবা খুশিতে আত্মহারা। ছেলের ভাল স্কুলে এডমিশন নিয়ে এমনিতেও খুব চিন্তিত ছিল। রিয়াদ তেমন কোন খোজ রাখে না ছেলে মেয়ের পড়াশুনা নিয়ে, বলে এই বয়সে এত চাপ দেওয়া ঠিক না। কিন্তু একটা ভাল স্কুল যে কত পার্থক্য করে দিতে পারে ওদে সন্তানদের জীবনে এই জিনিসটা  বুঝে না। তাই যত ক্ষীণ হোক একটা সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে এটাতেই দারুণ খুশি হয়ে যায় জেবা। এরমধ্যে বিরিয়ানি এসে পড়েছে। দারুন সুগন্ধ বিরিয়ানীর। খেতে খেতে তাই মাহফুজের সাথে কথা হয়। মাহফুজ খুব সুক্ষ ভাবে আরশাদ নিয়ে প্রশ্ন করতে থাকে। জেবা তখন এমনিতে খুশির ঠেউয়ে ভাসছে তার উপর এতদিনের ক্ষোভ বের করতে পারছে তাই দেদারছে অনেক কথা বলে যায়। জেবার হাজবেন্ডে যে কোম্পানিতে চাকরি করে তাদের মালিকের পুরো ট্যাক্সের ব্যাপারটা আরশাদ দেখে। আরশাদের সাথে কোম্পানির মালিকের পরিচয় করিয়ে দিয়েছিল রিয়াদ। কিভাবে কত টাকা কম দেওয়া যায় সব ফাকফোকড় দেখিয়ে দেয় আরশাদ। আর সাধারণত বড় ট্যাক্স পেয়ারদের র‍্যান্ডম চেক হয়, আরশাদ নিশ্চিত করে রিয়াদের কোম্পানি মালিকের যাতে র‍্যান্ডম চেক না হয় বা হলেও সেই চেক যেন কিছু খুজে না পায়। তবে সবচেয়ে বড় লাভটা কোম্পানি কে আরশাদ দেয় ভ্যাটের ক্ষেত্রে। ওদের ফ্যাক্টরিতে প্রতি মাসে একটা ইন্সপেকশন যায় টোটাল কত পণ্য উতপাদন হচ্ছে সেটা দেখার জন্য। আরশাদ বছরের পর বছর নিশ্চিত করছে যারা ইনসপেকশনে যায় তারা যেন উতপাদনের পরিমাণ কম দেখায়। ফলে ভ্যাট হিসেবে সরকার কে অনেক কম টাকা দিতে হবে। মাহফুজ বিরিয়ানী খেতে খেতে মাথায় সব নোট করে রাখে। এরপর আর খোজ লাগাতে হবে এইসব তথ্যের উপর ভিত্তি করে। মাহফুজ আগুন আর উস্কে দেয়। বলে আমি ভেবেছিলাম আরশাদ সাহেব খুব সৎ লোক। জেবা মুখ বাকায়। বলে সবাই জানে সৎ। কিন্তু আমি তো জানি কি ব্যাপার। আমার স্বামীর সাথে সব শেয়ার করে। আপনি কি মনে করেন আমার হাজব্যান্ডের কোম্পানি কে এমনি এমনি ট্যাক্স ভ্যাট লুকাতে সাহায্য করে? টু পাইস কিছু পায় না? সারা দুনিয়ার কাছে যেভাবে ভদ্র সাজে তখন এইসব ভাবলে আমার গা জ্বলে যায়। কত সম্মান উনাদের, দুইজনে সরকারী বড় চাকরি করে বলে। আর আমার হাজব্যান্ড রাত দিন খেটে মরছে কিন্তু তার তেমন সম্মান নাই বন্ধু মহলে জানেন। আমি আর নুসাইবা আপা তো এক ডিপার্টমেন্টে পড়েছি। আপার থেকে ভাল ছাত্রী ছিলাম। মধ্যবিত্ত ফ্যামিলির মেয়ে তাই তাড়াতাড়ি বিয়ে করতে হল, জামাই বেসরকারী চাকরি পছন্দ করে না তাই সরকারী ব্যাংকে ঢুকলাম। নুসাইবা আপা এখন বাংলাদেশ ব্যাংকে আছে দেখে সবাই মনে করে আমি বুঝি আন্ডারকোয়ালিফাইড। কিন্তু কেউ বুজে না আমি পরিস্থিতির চাপে এখানে। বিয়ের পর পর দুইটা বাচ্চা হয়ে গেল, সেটা সামলিয়ে ক্যারিয়ার এতদূর এনেছি কি এমনি এমনি। নুসাইবা আপার বাচ্চা নেই তাই উনি ক্যারিয়ারে যত সময় দিতে পারেন আমি পারি না, এটা কেউ বুঝতে চায় না। আপা আমার থেকে খারাপ ছাত্র হয়েও বিদেশে একটা মাস্টার্স করে এসছে। পারত আমার মত দুইটা বাচ্চা থাকলে। সবাই এখন ভাবে আপা কত ব্রিলিয়ান্ট। মাহফুজ বুঝে ঠিক জায়গায় আঘাত করতে পেরেছে। তাই কিছু না বলে চুপচাপ শুনে। জেবা বলে চলেছে আপা এমন একটা ভাব করে উনার স্বামীর মত স্বামী দুনিয়াতে নেই। এত সৎ, অনেস্ট। কিন্তু এটা ভাবে না ঢাকায় এমন আলিশান ফ্ল্যাট কিভাবে হল। প্রতি বছর বাইরে একটা ফরেন ট্যুর করে সেই টাকা কি সরকারি চাকরির স্যালারিতে হয়। এইসব কি আমরা বুঝি না। খালি বন্ধুত্বের খাতিরে কিছু বলি না। এইভাবে সেইদিন জেবার মুখ থেকে আর কিছু দরকারি কথা বের করে। মাহফুজ বুজে জেবা কে ওর আর দরকার হতে পারে। তাই ওর ছেলের জন্য কিছু একটা করবে এই কথা দিয়ে সেদিনকার মত  বের হয়ে পড়ে। বের হয়ে মাহফুজ ভাবে আরশাদের সম্পর্কে খোজ নিতে গিয়ে সততার গল্প এত শুনেছে যেন আরশাদের সততা লক্ষীন্দরের ঘর, দূভের্দ্য। তবে লক্ষীন্দরের ঘরে একটা ফাক আছে সেটা সোলায়মান শেখ আগেই  বলেছিল তবে ফাকটা বের করতে পারে নি, জেবাই ওকে দেখিয়ে দিয়েছে ফাকটা কোথায়। আগে জেবার ছেলে কে একবার ভর্তি করিয়ে নেই। তারপর জেবা কে দিয়েই বের করা যাবে লক্ষীন্দরের ঘরে আর কোথায় কোথায় ছিদ্র আছে।
Like Reply


জেবার সাথে কথা হবার পর থেকেই মাহফুজ দুই দিন ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। সামনে কয়েকটা টেন্ডার আছে, সেগুলোর কাজ নিয়ে দৌড়াদৌড়ি করতে হচ্ছে কিছু। তবে এর মধ্যে মাহফুজ জেবা কে দেওয়া কথা রাখবার চেষ্টা করেছে। নিউ মার্কেট থানার ওদের দলের সভাপতির সাথে দেখা করেছে। মাহফুজ কে একদম ছোটবেলা থেকে চিনে। ওর বাবার  বন্ধু মানুষ। কিছুক্ষণ কথাবার্তা হবার পর মাহফুজ ওর উদ্দ্যেশ ব্যাখ্যা করল। ওর পরিচিত একজনের ছেলের গভমেন্ট ল্যাবরেটরি স্কুলে ভর্তির ব্যবস্থা করে দিতে হবে। ভদ্রলোক বললেন এখন তো ভর্তির সিজন না, পরের বছর আসতে তাহলে চেষ্টা করে দেখবেন। তবে মাহফুজ হাল ছাড়ল না, বলল চাচা এইটা একটু করে দিতে হবে। আমি আপনার ভরসায় আছি। ছেলের বাবা-মা আমার পরিচিত। ছেলের ভর্তির ব্যাপারে খুব মন খারাপ। উনারা তেমন কাউকে চিনে না যে তার সাহায্য নিবে। আমাকে বলছে তখন আমার আপনার কথা মাথায় আসছে। আমি জানি কেউ পারলে একমাত্র আপনি পারবেন। এইভাবে কিছুক্ষণ অনুরোধ করার পর একটু মন গলল ভদ্রলোকের। মাহফুজের সামনেই স্কুলের হেডমাস্টার কে ফোন দিল। হেডমাস্টারের সাথে কথায় কথায় উনি বললেন আগামী পরশু উনার কাছে একটা ভর্তির রিকোয়েস্ট নিয়ে উনার এক ভাতিজা যাবে এই রিকোয়েস্ট টা একটু অনার করতে হবে। মাহফুজ শুনে বুঝল ঐদিকে হেডমাস্টার কিছু একটা বলার চেষ্টা করছে। এইবার সভাপতি বলল, হেডমাস্টার স্যার এই বছর আমি তো একটাও ভর্তির রিকোয়েস্ট পাঠাই নাই। এই একটা পাঠাচ্ছি একটু অনার করেন। আপনার সব দরকারে তো আমি কাজে আসি। বড় বড় মন্ত্রী এমপিরা তো আর এসে আপনার স্কুলের ছোটখাট সমস্যা সমাধান করে দেয় না। গত মাসে স্কুলের সামনে রিক্সা স্ট্যান্ড সরানো নিয়ে যে ঝামেলা হল সেটা কে সামলিয়েছে বলেন? এইসব শুনে সম্ভবত হেডমাস্টার তদবির মেনে নিলেন। ফোন রেখে মাহফুজ কে বললেন, তোমার কাজ হয়ে গেছে। আগামী পরশু ঐ প্যারেন্টস কে নিয়ে সকাল সকাল স্কুলে দেখা করবা। আমার রেফারেন্স দিবা। এরপর কি হয় আমাকে জানাবা। মাহফুজ অনেক ধন্যবাদ দিয়ে বের হয়ে আসল।


মাহফুজ যখন জেবার ছেলের জন্য তদবিরে ব্যস্ত নুসাইবা তখন ওর পরের প্ল্যান নিয়ে কাজে ব্যস্ত। নুসাইবা ওর এক কাজিনের প্রেম ভেংগেছিল খুব সুক্ষ উপায়ে। সেই প্রেমে নুসাইবাদের ফ্যামিলির কেউ রাজি ছিল না। কিন্তু যত  বাধা দেওয়া হচ্ছিল সেই বাধায় যেন আর উপচে পড়ছিল প্রেমের জোয়ার। তখন সবার হয়ে নুসাইবা এমন এক চাল দিয়েছিল যাতে কিস্তিমাত। নুসাইবার মতে এক প্রেম ভাংগার উপায় হল আরেক প্রেম। যারা প্রেম করছে তাদের সামনে এমন কোন ছেলে বা মেয়ে হাজির কর যে আর বেশি আকর্ষণীয়, যার আকর্ষণ তারা ফেলতে পারবে না। এরপর যখন হালকা হালকা কেমিস্ট্রি কাজ করবে তখন প্রেমিক প্রেমিকার মনে সন্দেহ জাগিয়ে দাও একে অন্য কে নিয়ে। আস্তে আস্তে নতুন কেমিস্ট্রি আর মনে জাগা নতুন সন্দেহ মিলে পুরাতন প্রেম ভেংগে দিবে। কার আর এখানে নতুন কিছু করতে হবে না। যা হবার নিজেই হবে। কার আর এখানে জোর করে কিছু করতে হবে না। সাপ মরবে তবে লাঠি ভাংগবে না। নুসাইবা বাংলাদেশ ব্যাংকের কাজ করতে গিয়ে নানা ব্যাংক ভিজিট করতে হয় অফিসিয়াল কারণে। সেখানে এক মেয়ের সাথে পরিচয় হয়েছে, সাবরিনার বয়সী। দারুণ সুন্দরী, স্মার্ট, সেক্সি। আফসানা। মাঝে মাঝেই কথা হয়। একদিন কথায় কথায় নুসাইবা বলেছিল আমি খুব ভাল তেহারি রান্না করি। সেটা শুনে আফসানা বলেছিল আপা একদিন আপনার বাসায় যেতে হবে সেই তেহারি খেতে। এখন নুসাইবা সেই তেহারিকেই টোপ হিসেবে ব্যবহার করবে বলে ভাবছে। মাহফুজকেও দাওয়াত দিবে সেই তেহারি খাবার জন্য। নুসাইবা দেখেছে সম বয়সী ছেলে মেয়েরা সুন্দরি মেয়ে বা হ্যান্ডসাম ছেলে থাকলে সেখানে ফ্ল্যার্টিং এর সুযোগ ছাড়তে পারে না যদিও তাদের প্রেম থাকে। নুসাইবা এই অনুমানের উপর ভিত্তি করেই এই চালটা চালছে। নুসাইবা মনে মনে আশা করছে আফসানা আর মাহফুজের মধ্যে একটা কেমিস্ট্রি জমে উঠবে। সেই আশা নিয়েই মাহফুজের ফোন নাম্বারে ডায়াল করল নুসাইবা।


নুসাইবার ফোন পেয়ে অবাক হয়ে গেল মাহফুজ। কি কারণে ফোন করেছে এই ভদ্রমহিলা। আপাতত উনার সাথে কোন কথা বলার ইচ্ছা নেই মাহফুজের। কারণ মাহফুজ জানে ভিতরের রাগ এখনো টগবগ করছে, এই মূহুর্তে উনি যদি আবার কিছু উলটা পালটা বলে বসে তাহলে মাহফুজের পক্ষে মুখ আটকে রাখা সম্ভব হবে না। সেই ক্ষেত্রে যে ঝামেলা হবে সেটা ওর নুসাইবা আর আরশাদ কে রাজি করানোর সম্ভাবনা একদম বন্ধ করে দিবে। তাই ফোনটা বেজে বেজে বন্ধ হয়ে যেতে দিল। এর দুই মিনিট পর আবার ফোন এল নুসাইবার। মাহফুজ এবারো সতর্ক। ফোন ধরবে কি ধরবে না। দোমনা করতে করতে মাহফুজ ফোনটা রিসিভ করে ফেলল। ফোন ধরে হ্যালো বলতেই ওপাশ থেকে নুসাইবার আন্তরিক গলা। কি ব্যাপার মাহফুজ কোন খোজ খবর নেই কয়েকদিন। মাহফুজ উত্তর দেয় না, একটু ব্যস্ত ছিলাম। নুসাইবা বলে আমার উপর রাগ করে আছ নাকি? মাহফুজ কি উত্তর দিবে খুজে পায় না। নুসাইবা বলে আরে তুমি সিনথিয়ার বন্ধু। আমি সিনথিয়ার ফুফু মানে তোমারো ফুফু। আমাকে এখন থেকে ফুফু ডাকবে বুঝলে। আর ফুফুরা একটু বকাঝকা করলে কি মন খারাপ করে থাকতে হয়। নুসাইবার গলা খুব আন্তরিক, সেখানে কোন ক্ষোভ বা অন্য কোন উদ্দ্যেশের সন্ধান পেল না মাহফুজ। তাই আর বেশি কনফিউজড। আর যেভাবে কর্তৃত্বের সাথে নুসাইবা কথা বলছে যেন মাহফুজের অনেকদিনের পরিচিত। মাহফুজ তাই কিছু বলার সুযোগ পেল না। নুসাইবা বলে চলছে, শোন ঐদিন আমার মাথা একটু গরম ছিল তাই তোমাকে কিছু কথা বলে ফেলেছি কিছু মনে কর না। নুসাইবার আচমকা ফোন আর এরকম আন্তরিক ব্যবহারে একদম কনফিউজড হয়ে থাকা মাহফুজ বলে, জ্বী, না, না। আমি রাগ করে নেই। ব্যস্ততার কারণে আপনাদের কে আর ফোন দিতে পারি নি। এটা যখন মাহফুজ বলছে তখন মাহফুজ নিজেই বিশ্বাস করতে পারছে না যে সে এটা বলছে। নুসাইবা যেন একটা যাদু করে ফেলেছে মাহফুজ কে। নুসাইবা  তখন তুমি সিনথিয়ার বন্ধু এই জন্য তো তোমার সাথে  একটু অভিভাবক সুলভ কথা বলেছি। যদিও আমার ঐভাবে বলা উচিত হয় নি। তোমরা এখন অনেক বড়। মাহফুজ অবাক হয় এমন ভাবে নুসাইবা কথা বলছে যেন অনেকদিনের পরিচয় মাহফুজের সাথে আর যেন অনেক ছোটকাল থেকে চিনে ওকে। নুসাইবা ওকে বলে, শোন আসলে যে কারণে তোমকে ফোন দিয়েছি। আগামী শুক্রবার দুপুরে তোমার আমার  বাসায় দাওয়াত। মাহফুজ কিছু বুঝে উঠার আগেই টের পেল, সে ফোনে উত্তর দিয়েছে হ্যা, অবশ্যই আগামী শুক্রবার চলে আসব। নুসাইবা বলে, ওকে তখন দেখা হবে। তোমার আংকেল আর আমি তোমার জন্য অপেক্ষা করব। নুসাইবা ফোন রাখার পর মাহফুজ ভাবতে থাকে কি হল। সিনথিয়া মাঝে মাঝে বলে ওর ফুফু যাদের সাথে ভাল তাদের সাথে সব চাইতে চার্মিং। তখন ওনার চার্ম অগ্রাহ্য করা যায় না। জেবার বলা আরেকটা কথা মনে পড়ে, নুসাইবা আপা এত আন্তরিক ভাবে কথা বলে না। তখন অনেক সময় পুরাতন দেওয়া বকা গুলো আর মাথায় থাকে না। মাহফুজ বুঝে ও নুসাইবার ট্রিকে পড়ে গেছে। এখন বাসায় দাওয়াত দিয়ে, খাবার খাইয়ে ঐদিনের অপমানটা মুছে ফেলবে। এত মাহফুজের খুব একটা সমস্যা নাই। এইভাবে বাসায় দাওয়াত দেওয়া মানে মাহফুজ কে কিছুটা হলেও মেনে নেওয়া। তাই এই অপমানের বদলে যদি কিছুটা সামনে এগুনো যায় লক্ষ্যের দিকে তাতে তার সমস্যা নেই। তবে ওর মেজাজ খারাপ হয় এটা ভেবে আর বাকি সবার মত ও নুসাইবার ট্রাপে পড়েছে। নুসাইবা সবাই কে বকঝকা দিয়ে, খারাপ ব্যবহার করে পরে মিষ্টি মিষ্টি কথা বলে ভুলিয়ে দেয়। ওর সাথেও সেইম জিনিস করল। আর রাজনীতিতে এত অভিজ্ঞ মাহফুজ এইসব জানা স্বত্তেও কিছু বলার আগে ট্রাপে পরে নুসাইবার দেখানো পথে চলল। মেজাজটা খারাপ হল আর। মাহফুজ এতদিন গর্ব ভরে ভেবে এসেছে সবাইকে কথার যাদুতে ভুলানো ওর বৈশিষ্ট্য, আজকে নুসাইবার যাদুতে তাই কাবু হয়ে মাহফুজের মেজাজ খারাপ হয়। দিস ওম্যান ইজ সামথিং, সামথিং ডিফরেন্ট।
Like Reply


সাবরিনা নিজেও জানে না ওর জীবনটা আজকাল কোন দিকে চলছে।  ওর সারাজীবন টা মনে মনে ছক কষাছিল। ভাল রেজাল্ট, ভাল চাকরি, ভাল বিয়ে আর বিয়ের পর জামাই এর সাথে অনেক অনেক ঘোড়াঘুড়ি আর এডভেঞ্চার। সব ঠিক ছিল। ভাল রেজাল্ট, ভাল চাকরি, ভাল বিয়ে। শুধু এডভেঞ্চারটা অনুপস্থিত ছিল জীবনে। এটা নিয়ে আপসোস ছিল কিন্তু তাই বলে যে রাস্তায় এখন চলছে সে পথে চলবে কখন স্বপ্নেও ভাবে নি। সারাজীবন তুচ্ছ সব নিয়ম মানা, বাবা মায়ের একান্ত বাধ্যগত, ভাল আর মন্দের মাঝে কড়া তফাত করে চলা জীবনে কোথাও লেখা ছিল না এক্সট্রামেরেটিয়াল রিলেশন। সাবরিনা নিজের দিকে তাকালে কোনভাবেই মেনে নিতে পারে না এই এক্সট্রামেরেটিয়াল রিলেশন কে। ওর পক্ষে কোন ভাবেই এমন কিছুতে জড়ানো সম্ভব এটা মেনে নিতে কষ্ট হয়। কিন্তু এটা সত্য সেটাও অস্বীকার করতে পারে না। সাবরিনার মনে হয় এর একমাত্র উত্তর মাহফুজ। হ্যান্ডসাম, চার্মিং এমন ছেলে কম ঘুরে নি ওর পিছনে। এমন কি সিংগেল লাইফেও খুব একটা পটে নি এমন সব মানুষদের কথায়। তবে মাহফুজের ভিতর কিছু একটা আছে যেটা ওকে কাবু করে ফেলেছে। সাবরিনা মাহফুজের সাথে ওর প্রত্যেকটা এনকাউন্টার চিন্তা করে। মাহফুজকেও পুরো দোষ দিতে পারে না। ওর কোন ভাবেই মনে হয় না ঘটনা গুলো প্ল্যান করা। সোয়ারিঘাটের রাতে অফিসের পলিটিক্স, গোডাউনে গন্ডগোল আর সেই নরকের কীট গুলো এতগুলো জিনিস নিশ্চয় মাহফুজের পক্ষে প্ল্যান করা সম্ভব না। লালমাটিয়ার মাঠের সন্ধ্যা? অথবা কনসার্টের তাবুর ভিতরের ঘটনা? সাবরিনাই বরং নিজে মাহফুজের সাহায্য চেয়েছিল কনসার্টে। সেই তাবুর ভিতরের ঘটনা গুলো ভাবতেই লজ্জায় শিহরণে লাল হয়ে যায় সাবরিনা। খেয়াল করে দেখে ওর হাতের লোম গুলো দাঁড়িয়ে গেছে। মনে হচ্ছে যেন সব চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছে। লালবাগ কেল্লার সেই বৃষ্টি। এটা নিশ্চয় মাহফুজ ঘটায় নি। ঘটালে বুঝতে হবে মাহফুজের অলৌকিক কোন শক্তি আছে। আর মাঝ নদীতে সেই কার্গো শিপে সন্ধ্যা? এটাই খালি সাবরিনার মনে হয় মাহফুজের প্ল্যান করা। তবে এটা প্ল্যান করা থাকলেও বা কি? তারো অনেক আগেই তো সাবরিনা মাহফুজের কাছে হেরে বসে আছে।


ভাবলে আগের সাবরিনার সাথে এই সাবরিনার একমাত্র পার্থক্য মাহফুজ। এই ছেলেটা ওর পুরো জীবন উলট পালোট করে দিল। মাহফুজ হয়ত প্ল্যান করে কিছু করে নি তবে যা করেছে তাতে সাবরিনার সারা জীবনের হিসাব নিকেষ উলটে গেছে। একটা ডাবল লাইফ লিড করছে যেন সাবরিনা। সবার সামনে সেই আগের নিয়ম মানা, ক্যারিয়ারে সচেতন, হ্যাজবেন্ডের প্রতি কেয়ারিং, বাবা মায়ের বাধ্য মেয়ে সাবরিনা। আর ভিতরে ভিতরে যেন পাশার দান উলটে গেছে। মাহফুজ একের পর এক কিস্তিমাত করছে আর সাবরিনা যেন নীরব দর্শকের মত দেখছে। না, না, খালি দেখছে কই সেই একি খেলায় ত সাবরিনা নিজেও খেলছে। অনিচ্ছাস্বত্তে কি? সাবরিনা নিজেই ভাবে অনিচ্ছা স্বত্তে হলে কি একটা রেস্টুরেন্টের ভিতর এই কাজ করতে দিত মাহফুজ কে ও? নাকি নিজে এমন কিছু করত রেস্টুরেন্টের টয়লেটে? ছি ছি। নিজেই ভেবে পায় না কোথায় চলছে আজকাল ও। কোথায় এর শেষ গন্তব্য? কোন ভাবেই ওর সংসার ভাংগতে চায় না সাবরিনা। আজকাল তাই সাদমানের অতিরিক্ত টেক কেয়ার করে। অন্য সময় যে সব জিনিসে সাদমান কে ঝাড়ি দিত আজকাল তাতে কিছুই বলে না বরং বলে ওকে, নো প্রেবলেম। সাদমান যে এতে অবাক হয় মাঝে মাঝে টের পায় সাবরিনা। তাই সাদমানের সন্দেহ এড়াতে নিজের সাদমানের প্রতি এই অতিরিক্ত কেয়ারিং হওয়াটা আটকে রাখে। তবে পারে না সব সময়। মনের ভিতর থাকা গিল্ট ফিলিংস যেন সাদমানের প্রতি কেয়ারিং করে তুলে আর। এর একটাই উপায় মাহফুজ কে জীবন থেকে ঝেড়ে ফেলা। সেই চেষ্টাও কি এই কয়দিনে কম করেছে সাবরিনা। কিন্তু পারছে কই।



সেই একদম শুরুতে লালমাটিয়ার পর থেকে যত মাহফুজ কে ঝেড়ে ফেলতে চাইছে মাহফুজ যেন তত আষ্ঠেপিষ্ঠে বেধে ফেলছে সাবরিনা কে। ওর মনের ভিতর জমিয়ে রাখা যত এডভেঞ্চার যা ও ওর স্বামীর সাথে করতে চাইছিল মাহফুজ যেন সেই সব অপূর্ণ এডভেঞ্চারের স্বাদ ওকে দিয়ে ছাড়বে। এই কয় মাসে কতবার মাহফুজের নাম্বার ফোন থেকে ডিলিট করেছে, ব্লক করেছে ঠিক ততবার নাম্বার নতুন করে সেভ করেছে, আনব্লক করেছে। নিজে থেকে মাহফুজ কে আগ বাড়িয়ে কল বা মেসেজ না দিলেও যাতক পাখির মত অপেক্ষা করে মাহফুজের কল বা টেক্সটের। লোকটার কি ভারী দরাজ গলা। শুনলে একদম শরীরের ভিতর টা পর্যন্ত কেপে যায়। টেক্সটে যা লিখে? তা পড়তে কেন এত ভাল লাগে। এমন দারুণ কিছু কি লিখে? মাঝে মাঝে কবিতা পাঠায়। লোকটা কবিতা পড়ে এটা ভেবে অবাক হয়, ছবি তুলে, মুভি দেখে। প্রথম দেখায় যা ভেবেছিল সব কিছুর উলটা। সাদমান তো এগুলো কিছুই করে না। আর মাঝে মাঝে রাতের বেলা যে মেসেজ গুলো পাঠায়? ইশ, ছি। কি নোংরা কথা লেখে। মনে হয় ডিলিট করে দেই।  নাম্বার টা ব্লক করে দেই। কিন্তু কেন জানি পারে না। শত শতবার পড়ে নোংরা মেসেজ গুলো। কি ভাল লাগে। শরীরে সব গুলো শিরায় যেন রক্ত প্রবাহ বেড়ে যায়। বিশেষ বিশেষ শিরায় আর বেশি। গত পরশু রাতে পাঠানো মেসেজ টা। “তোমার শরীরের গন্ধ আমায় স্বপনেও তাড়া করে। ঘাড়ের কাছে তোমার গন্ধ বড় বেশি কমনীয়, তোমার পারফিউম সেটাকে যেন মোহনীয় করে তুলে। তোমার বুকের কাছে নাক ডুবিয়ে ঘ্রাণ নিলে সেটা আরেকটু কড়া, যেন ঠিক তোমার মত। তোমার বগলের ঘ্রাণ একদম ঝাঝালো। নাকে গেলেই আর নিজে কে ঠিক রাখতে পারি না। আর আর নিচে তোমার দুই পায়ের মাঝে। ঐটাই আসল তুমি। ঐ গন্ধটাই আসল তোমার গন্ধ। কোন পারফিউম না, তোমার শরীরে গন্ধ আর ঘাম মিলে সেটাই তোমার আসল গন্ধ। সেটা নাকে আসলেই মনে হয় মাথা ডুবিয়ে খেয়ে নিই তোমার পায়ের ফাকের মাঝে সব কিছু”। সদ্য তরুণ প্রেমে আক্রান্ত হয়ে শরীরের যৌন তাড়নায় যেন প্রেয়সি কে বার্তা দিচ্ছে। অন্য সময় হলে হেসেই উড়িয়ে দিত। কিন্তু মাহফুজের এই মেসেজটা যে ওর ভিতরে কি রকম প্রতিক্রিয়া তৈরি করেছে সেটা সাবরিনা নিজেও বিশ্বাস করতে পারে নি। রাতে একবার মাস্টারবেট করে ঘুমিয়েছিল মেসেজ পড়ে। ভোর রাতে টয়লেটে যাবার জন্য উঠে আবার মেসেজ টা পড়ে ঘুমন্ত সাদমানের উপর ঝাপিয়ে পড়েছিল। মেসেজ টা সেই শেষ রাতে আবার পড়ার পর শরীরে যে তাপ উৎপন্ন হয়েছিল সেটা ঠান্ডা করবার জন্য কোন হাত না বরং ওর দরকার ছিল রক্ত মাংসের একটা পেনিস। ঘুমন্ত সাদমান একটু অবাক হলেও মানা করে নি। এমন আহবান কোন ছেলেই বা পায়ে ঠেলতে পারে। সেই রাতে প্রথমবারের মত সাদমানের সাথে ওর সেক্সের সময় ভ্যাজাইনাল অর্গাজম হয়েছিল। পেনিসটা সাদমানের থাকলেও মাহফুজের আত্মা যেন ভর করেছিল সাদমানের পেনিসে। তাই মনে হয় সাবরিনার। সেই পেনিস যেন বার বার সাবরিনার ভিতরে ধাক্কা দিচ্ছিল আর বলছিল তোমার এই গন্ধের জন্য সব করতে পারি। আজকেও অফিসে বসে বসে কাজের ফাকে এই মেসেজটা যখন আবার পড়ছিল তখন যেন নিজেকে ধরে রাখতে পারে নি। টের পাচ্ছিল ওর ভিতরে যেন পরিচিত শিরশিরে অনুভূতিটা তলপেটে থেকে আর নিচে নেমে আসছে। ওর প্যান্টি যে ভিজে যাচ্ছিল সেটা যেন টের পাচ্ছিল।  তাই তাড়াতাড়ি এরপর অফিসের টয়লেটে বসে যখন ফিংগারিং করছিল তখন অর্গজমটা যেন ছিল সুনামির মত। ছড় ছড় করে ওর ভিতরের সব পানি যেন বের করে এনে টয়লেটে ফেলছিল। সাবরিনা ভাবে ওকি আস্তে আস্তে স্লাট হয়ে যাচ্ছে। এভাবে অফিসের টয়লেটে বসে মাস্টারবেট করার কথা জীবনেও ভাবে নি ও। তবে কত কিছুই তো নতুন হচ্ছে ওর জীবনে। সব হিসাব কেমন যেন উলটা পালটা হয়ে গেছে। ও কি ভীষণ হর্নি হয়ে গেছে? নাহলে সামান্য একটা মেসেজ পড়ে কেউ এমন করে? সাদমানের উপর সেই ভোররাতে ঝাপিয়ে পড়ে? না অফিসে বসে মাস্টারবেট করে। সাবরিনা হিসাব করে গত তেইশ দিনে মাহফুজের সাথে ওর সরাসরি দেখা হয় নি। মাহফুজ ওকে স্পর্শ করে নি। মাহফুজের স্পর্শ না পেয়েই কি সাবরিনা এমন আচরণ করছে? স্লাটের মত আচরণ? সারাক্ষণ হর্নি থাকছে? সাদমানের সাথে কখনো কখনো এক বিছানায় শুয়েও এক মাস কিছু হয় না, কই তাতে তো কিছু হয় না ওর। মাহফুজ যেন একটা ড্রাগ। এইসব ভাবতে ভাবতে যেন একরকম অটোপাইলট মোডে চলে গেল সাবরিনা। মাহফুজ কে মেসেজ পাঠালো। অনেক দিন দেখা হয় না। চলুন এই শুক্রবার দেখা করি। মেসেজটা পাঠানোর কয়েক সেকেন্ড পর সাবরিনা যেন নিজের উপর নিজের নিয়ন্ত্রণ ফেরত পেল। ভাবল ডিলিট করে দিবে মেসেজটা।  খেয়াল করে দেখে মোবাইলে পাঠিয়েছে। তাই ডিলিট করলেও লাভ নেই, অলরেডি মাহফুজের মোবাইলে বার্তা পৌছে গেছে। কিভাবছে লোকটা ওকে। হর্নি স্লাট। ছি। এক মিনিট দুই মিনিট এইভাবে করে পাচ মিনিট চলে গেল। কোন উত্তর নেই। সাবরিনা কয়েক সেকেন্ড পর পর মোবাইল চেক করছে। কি ভাবছে লোকটা এই মেসেজ পেয়ে। সারাজীবন ভাল মেয়ের তকমা পাওয়া ওর সব ইমেজ বুঝি এখনি ভেংগে পড়ল। নিজের মনের মধ্যেই আবার যুক্তি দেয় ভাল মেয়ের তকমা তো অনেক আগেই ভেংগে গেছে তোমার সাবরিনা। আর কেউ না জানুক মাহফুজ তো জানে তোমার ভিতরে কে বাস করে। সাবরিনা নিজেই আবার ভাবে নিজে নিজে আমি তো কিছু করি নি। যা করার মাহফুজ করেছে আমি খালি সারা দিয়েছে। এইবার তো আমি নিজেই পাঠিয়েছি আমন্ত্রণ। ঘড়ির দিকে আবার তাকায়। দশ মিনিট চলে গেছে। কোন উত্তর নেই। নখ কামড়ায়। মেসেজটা পাঠানো একদম ঠিক  হয় নি। ঠিক সেই সময় টুং করে শব্দ এল। মেসেজ এসেছে। মেসেজ খুলতেই মাহফুজের বেশ বড় একটা উত্তর। হ্যা, অনেকদিন দেখা হয় না। ব্যস্ত ছিলাম এই কয়েক সাপ্তাহ। তাই আপনার অফিসের ঐদিক যাওয়া হয় নি। এই শুক্রবার দুপুরে একটা দাওয়াত আছে। চলুন তাই বিকালে দেখা করি। আমি আপনাকে শুক্রবার টাইম আর প্লেস মেসেজ করে দিব। মেসেজটা দেখে সাবরিনার একদিন উত্তেজনা হয় আবার লজ্জাও হয়। এইভাবে দেখা করতে না চাইলেও চলত। তবে যা করার করে ফেলেছে। সাবরিনা ভাবে, ইউ গট ইউর ইনভাইটেশন হর্নি স্লাট।
Like Reply


গর্ভমেন্ট ল্যাবরেটরি স্কুলের হেডমাস্টারের সাথে কথা বলে বের হয়ে যেন বিশ্বাস হতে চাইছে না জেবার। ওর ছেলে কে ভর্তি করিয়ে নিবে বলেছে। আর যে পরিমাণ খাতির যত্ন করল সেটা অবিশ্বাস্য। ওর জামাই কে কিছু বললেই দৌড় দেয় আরশাদ ভাইয়ের কাছে। আরশাদ ভাই পর্যন্ত ওর জামাই এর দৌড় এটা জেবা বুঝে। তাই আরশাদ যখন তদবির করে ব্যর্থ হয়েছিল তখন খুব মন খারাপ হয়েছিল জেবার। ছেলেটাকে কি ভাল স্কুলে ভর্তি করানো হবে না? প্রথম সন্তানের উপর মায়েদের একটা মায়া থাকে। ছেলের উপর জেবার তাই একটু বেশি মায়া। বান্ধবীরা যখন সবাই যার যার ছেলে মেয়েদের ভাল স্কুলে ভর্তি করানোর গল্প করে তখন জেবা বেশি কথা বলে না। যদিও ওর মেয়ে ভিকারুননেসা স্কুলে আছে। তাও জানে মেয়ের কথা বললেই ছেলের প্রসংগ আসবে, তখন কি বলবে? ছেলে কে একটা নরমাল সরকারি স্কুলে পাঠায়? আজকে তাই যখন আরশাদের কোন সাহায্য ছাড়া ছেলে কে ভর্তি করাতে পারল তখন জেবার জি কি আনন্দ লাগছে। হেড মাস্টার কথা দিয়েছে। আগামী সাপ্তাহে পুরাতন স্কুল থেকে টিসি নিয়ে এসে এখানে চলে আসলে ভর্তি করিয়ে নেবে। জেবার সাথে মাহফুজ আছে। ছেলেটাকে কি বলে ধন্যবাদ দিবে বুঝে উঠতে পারছে না। ওর স্বামী রিয়াদের এত আরশাদ ভাইয়ের ন্যাওটা হওয়া মেনে নিতে পারে না। সব বউয়ের মত জেবাও চায় ওর স্বামী মাথা উচু করে দাড়াক, সবাই বলুক কত সফল ওর জামাই। একটা এত বড় কোম্পানির এই বয়সে জিএম হয়েছে। কয় জন হতে পারে। কিন্তু না, উনি এত আরশাদ ভাইয়ের কথা শুনে যে সবাই আরশাদ ভাই কে আর বড় মনে করে। জেবার মনের ভিতর থেকে এই জিনিসটা নিয়ে ক্ষোভ যায় না। সেখানে এই মাহফুজ কেমন করে এত কম বয়স হওয়া স্বত্তেও ওর ছেলের ভর্তির ব্যবস্থা করে দিল। ছেলেটা খারাপ না। এই বয়সে কেমন ব্যবসা সামলাচ্ছে, রাজনীতি করছে। আর রাজনীতিতে নিশ্চয় ভাল করছে নাহলে অল্প কয়েকদিনে কোন টাকা খরচ না করে কীভাবে ওর ছেলেকে ভর্তি করিয়ে দিল। ছেলেটার আরশাদ ভাইদের মত ঠাটবাট নেই, জাকজমক নেই কিন্তু কাজে একদম হান্ড্রেট পার্সেন্ট। ওর হাজব্যান্ডকে গতকাল রাতে যখন বলল একজন ওদের ছেলে কে স্কুলে ভর্তির ব্যাপারে সাহায্য করবে এবং আগামীকাল সকালে সেই জন্য ওদের গর্ভমেন্ট ল্যাবরেটরি স্কুলে যাওয়া লাগবে। তখন ওর হাজব্যান্ড রিয়াদ হেসেই উড়িয়ে দিল সব।  বছরের মাঝখানে মন্ত্রী এমপি হওয়া ছাড়া অথবা চার পাচ লাখ টাকা ডোনেশন দেওয়া ছাড়া ছেলে কে ভর্তি করানো সম্ভব না। তাই রিয়াদ বলল তোমার ইচ্ছা হলে তুমি যাও, আমার স্কুলে গিয়ে শুধু শুধু অপমান হওয়া ইচ্ছা নেই। রিয়াদের এত আত্মবিশ্বাসে জেবার তাই মনে একটা সংশয় তৈরি হয়েছিল আসলেই কি পারবে মাহফুজ। আরশাদ ভাইয়ের মত উচ্চপদস্থ সরকারী কর্মকর্তা আর ওর স্বামীর মত বড় করপোরেট কর্মকর্তা যেখানে পারে নি সেখানে মাহফুজের মত কমবয়সি একটা ছেলে কি পারবে? তাই আজকে সকালে সংশয় নিয়ে হাজির হয়েছিল স্কুলের সামনে। মাহফুজ আসতে একটু দেরি করায় ভাবছিল আজকে যদি সত্যি সত্যি মাহফুজ না আসে তাহলে পরে রিয়াদ কত হাসাহাসি করবে এটা নিয়ে। নিশ্চয় আরশাদ ভাই আর নুসাইবা আপা কে বলবে। আর তিন জন মিলে সব সময়ের মত ওকে নিয়ে হাসবে। মাহফুজ একটু পরে আসায় তাই বুকের ভিতর থেকে একটা পাথর নেমে গিয়েছিল। স্কুলের হেডমাস্টার যখন মাহফুজের কাছে ওদের রেফারেন্সের নাম শুনল তখন যেভাবে খাতির যত্ন করল সেটাতে মাহফুজের উপর থাকা বাকি সন্দেহটুকু উবে গিয়েছিল অনায়েসে। হেডমাস্টার বললেন আগামী সাপ্তাহে টিসি নিয়ে দেখা করতে, ভর্তি হয়ে যাবে। একটা ফর্ম ধরিয়ে দিয়েছে অলরেডি কিছু জরুরি তথ্য পূরণ করে রেখে যাবার জন্য। অর্থাৎ ব্যাপারটা অফিসিয়াল। এখন তাই স্কুল থেকে বের হবার পর মনে হচ্ছে যেন আকাশা উড়ছে। হেডমাস্টারের অফিস থেকে বের হয়েই হাজবেন্ড কে ফোন দিয়েছিল। রিয়াদ শুনে বিশ্বাস করতে চাইল না, মেসেঞ্জারে তাই সংগে সংগে ফর্মের ছবি তুলে পাঠাল। রিয়াদ যেন একদম অবাক হয়ে গেল। রিয়াদ কে মাহফুজের সাথে ফোনে কথা বলিয়ে দিল। রিয়াদ বার বার ধন্যবাদ দিচ্ছিল এই উপকারের জন্য। এই যুগে সহজে কেউ কার উপকার করতে চায় না সেখানে এত স্বল্প পরিচিত একজন এই উপকার টুকু করেছে এটাই যেন মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছিল রিয়াদের। এখনো তাহলে পৃথিবীতে ভাল লোকেরা বাস করে। বার বার করে ফোনে বলল ওদের বাসায় আসতে। জামাই এর সাথে কথা বলে মাহফুজ কে তাই এখন ধানমন্ডি দুইয়ের স্টার কাবাবে নিয়ে আসছে জেবা। মাহফুজ প্রথমে না না করলেও পরে মেনে নিল কারণ জেবার কাছ থেকে কথা বের করতে হলে আর বেশি সময় কাটাতে হবে জেবার সাথে।



স্টার কাবাবে যখন এসে ঢুকল তখন দুপুর বারটা। ঠিক লাঞ্চের ভীড়টা শুরু হয় নি। অনেকে লেট ব্রেকফাস্ট করে বের হচ্ছে। ঢাকায় অনেক বছর ধরে অল্প দামে যে কয়টা রেস্টুরেন্ট মান ধরে রেখেছে তার একটা এই স্টার কাবাব। লাল জামা পড়া ওয়েটার এসে কোণার একটা টেবিলে বসিয়ে দিয়ে গেল। মাহফুজ নিল লেগরোস্ট আর পরোটা আর জেবা নিল কাচ্চি। ওয়েটার বলে গেল বিশ মিনিটের মত লাগবে খাবার আসতে। এর মধ্যে দুই জনে দুইটা কোকের বোতলে চুমুক দিতে দিতে কথা বলছে। ছেলের এডমিশন করাতে পেরে জেবার মনে আজকে আনন্দের ধারা। মাহফুজ তাই সুযোগ বুঝে একটা খোচা দিল। আপনি না বললেন এর আগে অনেক চেষ্টা করেছেন, আমি তো কয়েকদিনেই ভর্তি করিয়ে দিলাম। জেবা বলে আসলে আমি কি করব বলেন, আমি তো চেষ্টা করেছি। আর আমাদের চেষ্টা মানে তো বুঝেন আরশাদ ভাই। আরশাদ ভাইয়ের জানাশোনা তো কম নেই। আগেই বেশ কয়েকবার বিভিন্ন জিনিসে হেল্প করেছে কিন্তু এইবার পারে নি। মাহফুজ যেন কথা প্রসংগে কথা বলছে এমন ভাবেই জিজ্ঞেস করে, আরশাদ সাহেবের কি আসলেই বেশ ভাল জানাশোনা লোকজন আছে। জেবা বলে আপনি এমনি দেখলে বিশ্বাস করবেন না, তবে উনার জানাশোনার পরিধি অনেক ভাল। নাহলে চিন্তা করেন আমার হাজব্যান্ডের মালিকের সাথে উনার খাতির হয়। উত্তরটা জানা থাকলেও শিওউর হওয়ার জন্য মাহফুজ জিজ্ঞেস করে আপনার হাজব্যান্ড জানি কোথায় জব করেন। জেবা বেশ গর্ব ভরে বলে, সানরাইজ গ্রুপে। মাহফুজ জানে সানরাইজ গ্রুপ দেশের বেশ প্রভাবশালী একটা শিল্প গ্রুপ। গত দশ বছরে এদের বেশ বড় একটা ব্যবসায়িক উত্থান হয়েছে। এই গ্রুপের মালিক যে এইবার ওদের দলের কাছ থেকে একটা উপ-নির্বাচনের নমিনেশন চাইছে সেটা পার্টি অফিসে নিয়মিত আলোচনার বিষয়বস্তু। মাহফুজ তাই পরের প্রশ্ন করে, এত খাতির হল কীভাবে? জেবা এই উত্তর দেবার আগে আশেপাশে তাকায়। গলাটা একটু সামনে বাড়িয়ে ফিস ফিস করে বলে কাউকে বলবেন না কিন্তু। মাহফুজ আশেপাশে তাকায়। আশেপাশের দুই তিন টেবিলে কেউ নেই। লাঞ্চের ভীড় শুরু হয় নি এখনো। আর ফ্যানের শব্দ, দূরের টেবিলে একদল কম বয়েসী ছেলেমেয়েদের হইচই আড্ডা সব মিলিয়ে ওদের কথা কেউ খেয়াল করে শুনতে পারবে কিনা সন্দেহ। মাহফুজ তাও জেবা কে আশ্বস্ত করে। জেবা এবার গলার স্বর আর নামিয়ে এত শব্দের ভিতর এমন করে কথা বলতে থাকে যা শুনতে মাহফুজের কষ্ট হয়। তবু মাহফুজ চেয়ার একটু সামনে এগিয়ে কথা শুনার চেষ্টা করে। কথার সারমর্ম আসলে যা দাঁড়ায় সেটা হল, আরশাদ সানরাইজ গ্রুপের সব রকম ট্যাক্স ফাকির ফন্দি ফিকির বের করে দেয়, কিভাবে ইনকাম ট্যাক্স থেকে শুরু করে ভ্যাট ফাকি দিতে হবে সব। মাহফুজের মন খুশি হয়ে উঠে এইরকম একটা ইনফরমেশন দরকার ছিল ওর। মাহফুজ বলে বিশ্বাস হয় না আমার। আপনি যদিও আপনার অফিসে ইংগিত দিয়েছিলেন তবে আরশাদ সাহেব কে দেখলে বিশ্বাস করা যায় না।



জেবা যেন এবার ক্ষেপে উঠল। সবাই যেভাবে আরশাদ কে পূজা করে মাহফুজ সেই দলে যোগ দিবে এটা ভাবতেই পারে না যেন জেবা। তাই জেবা বলে, আরে চেহারা দেখলে কি মানুষ চেনা যায়। আমি জানি। আমার হাজব্যান্ড এইসব কাজে মিডলম্যান। তাই তো উনাকে জিএম পদ দেওয়া হয়েছে। আরশাদ ভাই কবে ট্যাক্সের লোকেরা আসবে, ভ্যাটের লোকেরা কবে ফ্যাক্টরি চেক করবে সব বলে দেয়। কাকে কিভাবে পটাতে হবে। কিভাবে বিদেশ থেকে মেশিনারিজ আনার সময় আন্ডারভ্যালু করে কম টাকা দিতে হবে সব রাস্তা দেখায়ে দেয় আরশাদ ভাই। মাহফুজ এবার পরের চাল দেয়। জিজ্ঞেস করে, এত সাহায্য করলে তো অনেক টাকা থাকার কথা। নিশ্চয় বিনা পয়সায় এই কাজ করে দেয় না আরশাদ সাহেব। উনাদের ফ্ল্যাটে আমি গেছি। ফ্ল্যাটটা দামী তবে বছর বছর এমন কাজ করে দিলে তো এরকম দশটা ফ্ল্যাট কিনতে পারত। জেবা আবার আশেপাশে তাকায়। মাহফুজ কে বলে আপনি কিন্তু কাউকে বলবেন না। আপনি আমার ছেলের এত বড় একটা  উপকার করে দিয়েছেন তাই আপনার সাথে শেয়ার করতেছি। মাহফুজ বলে আরে আমি এই তথ্য দিয়ে কি করব। আমি তো খালি কৌতুহলের জন্য জানতে চাচ্ছি। আরশাদে সাহেব কই কি করল সেইটা দিয়ে আমি কি করব বলেন। আমার ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের কোম্পানি আর অল্প কিছু টেন্ডারের ব্যবসা। সাথে অল্প স্বল্প পলিটিক্স করি। আমার মত চুনোপুটি  উনি আর সানরাইজ কোম্পানির মত বিগশট কি করে সেটা দিয়ে কি করব বলেন। জেবা শুনে মাথা নাড়ায়। অন্তত একজনের চোখে আরশাদের সম্মান নামাতে পারলে দোষ কি। খুব একটা ক্ষতি তো আর মাহফুজ করতে পারবে না। জেবা তাই আর ফিসফিস করে বলে, আরশাদ ভাইয়ের গোপনে গোপনে অনেক সম্পত্তি। ঢাকার আশেপাশে অনেক জায়গায় উনি জায়গা কিনে রেখেছেন, নামে বেনামে। এই বলে আবার আশেপাশে তাকায় জেবা। মাহফুজ জেবার অনুকরণ করে ফিসফিস করে জিজ্ঞেস করে সত্যি? জেবা উত্তর দেয়, সত্যি। একদম সত্যি। মাহফুজ বলে বাবা, এতো অনেক বিশাল ব্যাপার। জেবা এবার আবার বলে, আরেকটা কথা বলব। এটা আর গোপন। মাহফুজ উত্তেজনা চাপতে পারে না। জিজ্ঞেস করে এর থেকে গোপন কিছু আছে। জেবা মাথা নাড়ায়। মাহফুজ বলে, বলেন বলেন। আজকে তো আপনি একের পর এক ব্রেকিং নিউজ দিয়ে যাচ্ছেন। জেবা হালকা হাসি দেয়। এইবার বলে এই কথা কিন্তু কেউ জানে না। এমন কি নুসাইবা আপাও জানে না। আমার হাজব্যান্ড একদিন মুখ ফসকে আমার সামনে বলে ফেলেছিল। পরে অনেক জোরাজুরি করায় বাকিটা বলেছে। মাহফুজ ভিতরের  উত্তেজনা চেপে জিজ্ঞেস করে কি। জেবা বলে, আরশাদ ভাইয়ের জুয়ার অভ্যাস আছে। উনি নিয়মিত ক্লাবে গিয়ে জুয়া খেলেন। ওটাতে নাকি উনি মাসেই দশ এগার লাখ টাকা খরচ করেন। মাহফুজ ভিতরে ভিতরে উত্তেজনায় ফেটে পড়ে। টার্গেট ঠিক জায়গায় লেগেছে। সোলায়মান শেখের দেওয়া তথ্য যে সঠিক এটা বুঝা যাচ্ছে । মাহফুজের চোখ না চাইতেই বড় বড় হয়ে যায়। জবা মাহফুজের উত্তেজনা টের পায়। তবে উত্তেজনার কারণটা বুঝতে পারে না, জেবা ভাবে হয়ত আরশাদের মত এমন ভাল মানুষ চেহারার লোক জুয়া খেলে এটা মাহফুজ বিশ্বাস করতে চাইছে না। জেবা তাই ওর কথার সত্যতা প্রমাণ করার জন্য বলে, বিশ্বাস করেন। এইটা এমন গোপন কথা যে কেউ জানে না, আমি  বুঝছ আপনার বিশ্বাস হচ্ছে না, আমি যখন শুনছি তখন আমারো বিশ্বাস হয় নায়। মাহফুজ আরেকবার টোকা দেয়, যদি আর কিছু খবর বের হয়। নুসাইবা ম্যাডাম জানে না কিন্তু আপনি জানেন। এইটা কিভাবে পসিবল। জেবা বলে আরে এইটাই তো ব্যাপার। নুসাইবা আপা কেমন কড়া আপনি তো দেখছেন। এইসব জুয়াফুয়া নুসাইবা আপা একদম দেখতে পারে না। আর নুসাইবা আপা কে আরশাদ ভাই ভাল ভয় পায়। তাই এইসব লুকায়ে রাখে। মাহফুজ আবার জিজ্ঞেস করে সেটা বুঝলাম তা আপনার হাজব্যান্ড কে বলল কেন। জেবা বলে আমার হাজব্যান্ড তো উনার বেস্ট ফ্রেন্ড। মাহফুজ বলে তাহলে কি উনারা দুইজন একসাথে জুয়া খেলে। জেবা বলে আরে নাহ, আমাদের এত টাকা কই। আর আমার হাজব্যান্ড জুয়াটুয়া ধরলে ঘর থেকে বের করে দিব না। মাহফুজ বলে তাহলে? জেবা বলে আসলে উনি যেখানে খেলে সেইটা খুব বড়লোকদের জায়গা। উনার যত বিল হয় সব কিছুর টেক কেয়ার করে সানরাইজ গ্রুপ। সেই কারণে আমার হাজবেন্ড কে  উনার জানাইতে হইছে। আর কোম্পানি আমার হাজবেন্ড কে দ্বায়িত্ব দিছে এইসব জিনিস গোপন রেখে সব বন্দোবস্ত করতে। যাতে উনার এই খেলার খোবর গোপন থাকে কিন্তু টাকাটা ঠিক সময়ে পৌছে যায়। মাহফুজ জিজ্ঞেস করে কি নাম ক্লাবটার। জেবা বলে নামটা জানি না ভাই। আমার হাজবেন্ড বলে নায়। মাহফুজ জিজ্ঞেস করে আপনি কখনো নুসাইবা ম্যাডাম কে বলেন নাই ব্যাপারটা। জেবা বলে মাথা খারাপ নাকি। শুনলে সংগে সংগে চিৎকার চেচামেচি করে দুনিয়া মাথায় তুলবে। তখন আমি এই খবর নুসাইবা আপা কে বলেছি শুনলে আরশাদ ভাই রিয়াদের সাথে সম্পর্কছেদ করবে। আর আরশাদ ভাইয়ের দুঃখে রিয়াদ আমাকে ঘরছাড়া করবে। মাহফুজ হাসল। জেবা বলল আমি কিন্তু সিরিয়াস। এইটা একবার ফাস হলে নুসাইবা আপা আরশাদ ভাইয়ের খবর করে ছাড়বে।




মাহফুজ পয়েন্ট টা মাথায় টুকে রাখল। সেদিন খাবার মাঝে আর বেশ কিছু কথা বের হল জেবার মুখ দিয়ে। তবে সেগুলো কাজে লাগানো যাবে পরে। মাহফুজের মাথায় খালি ঘুরছে জেবার দেওয়া সানরাইজ কোম্পানি আর জুয়া খেলার কথা। সানরাইজ কোম্পানির মালিকের ছেলে সামনে জাতীয় সংসদে সদ্য খালি হওয়া একটা আসনে উপনির্বাচনে প্রার্থী হতে যাচ্ছে। এর থেকে ভাল সময় আর  হয় না জেবার দেওয়া তথ্য গুলো কাজে লাগানোর জন্য। সোলায়মান শেখের দেওয়া তথ্যের পর থেকে মাথার ভিতর যে প্ল্যানটা ঘুরছিল সেটার একটা পরিণতি দেখতে পাচ্ছে মাহফুজ। মাথার ভিতর কতদিন ধরে প্ল্যানটার খুটিনাটি চেক করেছে। প্ল্যানের প্রতিটা খুটিনাটি নিয়ে ভাবার সময় মাথার ভিতর খালি ঘুরেছে, সব কুছ ইয়াদ রাখখা যায়েগা। একদম চোখের সামনে যেন সব দেখতে পাচ্ছে। বিশেষ করে নুসাইবা পিকনিকে ওকে অপমান করার পর থেকে এই প্ল্যানটা নিয়ে আর অনেক ভেবেছে। সব খুটিনাটি ভেবে ভেবে কর্মপরিকল্পনা গুলো সাজিয়েছে। এইসব ব্যাপারে একদম সদা সতর্ক মাহফুজ। একটা পা ভুল কদম দেওয়া যাবে না। তাহলে সব কেচে যাবে। ওর দরকার ছিল খালি কিছু সঠিক ইনফরমেশনের। জেবা আজকে তার কিছু দিয়েছে। এখন এগুলো চেক করে দরকারি তথ্য গুলো কাজে লাগাতে হবে। গত কয়েকদিন ধরে এই প্ল্যানটার একটা নামও দিয়েছে মাহফুজ, অপারেশন নুসাইবা। এখন সময় খালি ঠিক জায়গায় ঠিক টোপটা ফেলার। অপারেশন নুসাইবা ইজ অন।
Like Reply
সুপ্রিয় পাঠকবৃন্দ, আজকে লিখতে লিখতে চেক করে দেখলাম  এই পর্ব পর্যন্ত মোট এক লক্ষ পয়তাল্লিশ হাজারের বেশি শব্দ লিখে ফেলেছি আমি আমার এই উপন্যাসে। আমার জন্য এটা একটা বড় অর্জন। হিসাব করলে এই শব্দ সংখ্যায় প্রায় ২৯০ পেজের কাছাকাছি বা তার থেকে বেশি পেজের একটা বই হয়ে যায়  অলরেডি। আপনাদের দেওয়া মন্তব্য, লাইক, রেপু এবং পাঠানো মেসেজ গুলো আসলে এই দীর্ঘ লেখায় আমার জ্বালানি হিসেবে কাজ করেছে। তাই আপনাদের ধন্যবাদ।

এই উপন্যাস যারা নিয়মিত পড়ছেন কিন্তু এখনো মন্তব্য করেন নি, তাদের কাছ থেকে আশা করি এই উপন্যাস নিয়ে মতামত অচিরেই শুনতে পাব এই উপন্যাসের পাতায়। যারা উপন্যাসটি পড়ছেন কিন্তু একাউন্ট না থাকায় কোন মন্তব্য জানাতে পারেন নি, আশা করি তারা কোন একদিন একটা একাউন্ট খুলে তাদের মনের অনুভূতি জানিয়ে দিবেন অধমের এই উপন্যাসে। আর সব শেষে যারা নিয়মিত সাথে থাকছেন তাদের সবার জন্য একটাই কথা, আই লাভ ইউ ম্যান।
Like Reply
আহহহ,দাদা।।।এক কথায় অসাধারণ।।।কিভাবে আপনার হাতের লিখা আর গল্পের প্রসংশা করবো তার ভাষা নাইই।।।।সেরা বস সেরা।।।
[+] 1 user Likes Ari rox's post
Like Reply
এক কথায় অসাধারণ, অপূর্ব। বর্ননা বড়ই অসাধারণ ও আকর্ষনীয়। এর পরের অংশ পড়ার জন্যে মুখিয়ে থাকলাম।
[+] 1 user Likes pradip lahiri's post
Like Reply
সাসপেন্সে রেখে দিলেন,,,,,, পরের পর্বে ধামাকা হবে মনে হয়।
[+] 1 user Likes crazy king's post
Like Reply
যেই দিন থেকে আপনার "বন্ধু" গল্পটি পড়েছি সেদিন থেকে আপনার ফ্যান হয়ে গেছি। তবে আফসোস গল্পটি অসমাপ্তই রয়ে গেছে। আশা করি কখনও আবার শুরু করবেন।,,,,,

তবে এই গল্পটাও,,,, অনবদ্য হচ্ছে।
[+] 1 user Likes rahul32155's post
Like Reply
অসাধারণ লেখনী বরাবর!!! পরবর্তী আপডেট একটু তাড়াতাড়ি আশা করি আমি সহ সকল পাঠক
[+] 1 user Likes Monika Rani Monika's post
Like Reply
খুব সুন্দর হচ্ছে। প্রতিটা নতুন পর্বই যেন তার পূর্ববর্তী পর্বকে হারিয়ে দিচ্ছে, আপনি লেখক হিসেবে আমার খুবই পছন্দের একজন ব্যক্তি। অবিরাম ভালোবাসা রইল। আপনার কলম চলতে থাকুক এভাবেই। LOVE YOU MAN
[+] 1 user Likes Wonderkid's post
Like Reply
(10-07-2023, 01:17 PM)কাদের Wrote: সুপ্রিয় পাঠকবৃন্দ, আজকে লিখতে লিখতে চেক করে দেখলাম  এই পর্ব পর্যন্ত মোট এক লক্ষ পয়তাল্লিশ হাজারের বেশি শব্দ লিখে ফেলেছি আমি আমার এই উপন্যাসে। আমার জন্য এটা একটা বড় অর্জন। হিসাব করলে এই শব্দ সংখ্যায় প্রায় ২৯০ পেজের কাছাকাছি বা তার থেকে বেশি পেজের একটা বই হয়ে যায়  অলরেডি। আপনাদের দেওয়া মন্তব্য, লাইক, রেপু এবং পাঠানো মেসেজ গুলো আসলে এই দীর্ঘ লেখায় আমার জ্বালানি হিসেবে কাজ করেছে। তাই আপনাদের ধন্যবাদ।

এই উপন্যাস যারা নিয়মিত পড়ছেন কিন্তু এখনো মন্তব্য করেন নি, তাদের কাছ থেকে আশা করি এই উপন্যাস নিয়ে মতামত অচিরেই শুনতে পাব এই উপন্যাসের পাতায়। যারা উপন্যাসটি পড়ছেন কিন্তু একাউন্ট না থাকায় কোন মন্তব্য জানাতে পারেন নি, আশা করি তারা কোন একদিন একটা একাউন্ট খুলে তাদের মনের অনুভূতি জানিয়ে দিবেন অধমের এই উপন্যাসে। আর সব শেষে যারা নিয়মিত সাথে থাকছেন তাদের সবার জন্য একটাই কথা, আই লাভ ইউ ম্যান।

Bro apni omanush level er writer. I have been wondering- Bangladeshi lon actor actress ke Mahfuj, Sabrina, Sinthia ar Nusaiba charactergulote imagine kora jay? Thanks
[+] 1 user Likes Manfrombd's post
Like Reply
কাহিনী একদম জমে ক্ষীর!! এই উপন্যাস লম্বা রেসের ঘোড়া, এতে কোনো সন্দেহ নাই।
[+] 1 user Likes bluesky2021's post
Like Reply
(10-07-2023, 09:59 PM)Manfrombd Wrote: Bro apni omanush level er writer. I have been wondering- Bangladeshi lon actor actress ke Mahfuj, Sabrina, Sinthia ar Nusaiba charactergulote imagine kora jay? Thanks

Sabrina - Boobli
Nusaiba - Keya
Sinthia - Bobby
[+] 1 user Likes behka's post
Like Reply
কাদের ভাই আপনি আসলেই জিনিয়াস । আহ্ কী চমংকার লেখা, যেন সবকিছু চোখের সামনে ঘটতেছে । পরবর্তী আপডেট যত তাড়াতাড়ি সম্ভব দিয়েন ।

ভালো থাকবেন ।
[+] 1 user Likes farhn's post
Like Reply
ফাটাফাটি, মশাই সাসপেন্স আর কতো।
[+] 1 user Likes Luck by chance's post
Like Reply
ফাটাফাটি, দারুণ. বরাবরের মতই সুন্দর। আর কিছু বলার ভাষা নেই।
[+] 1 user Likes Dodoroy's post
Like Reply
Darun update
[+] 1 user Likes Kuasha660's post
Like Reply
Wow.. darun hocche .. Thanks..
[+] 1 user Likes adnan.shuvo29's post
Like Reply




Users browsing this thread: 16 Guest(s)