20-06-2023, 12:05 PM
আমার পড়া বেস্ট একটা গল্প? চালিয়ে যান
Abir Roy
WRITER'S SPECIAL "ধূসর পৃথিবী"
|
20-06-2023, 12:52 PM
Can you share the link of 1st part of this story please.
20-06-2023, 03:06 PM
(20-06-2023, 12:05 PM)Abir999 Wrote:ধন্যবাদ (20-06-2023, 12:52 PM)skx1965 Wrote: Can you share the link of 1st part of this story please. একসাথেই দেওয়া হয়েছে, পেজ ১ থেকে শুরু করুন ওটা খণ্ড ১ শুরু হয়েছে। আলাদা থ্রেড নেই। I'm the King of Dark
&
I rule over all Devils
22-06-2023, 08:09 AM
(21-06-2023, 11:59 PM)Abir999 Wrote: দাদা কতোদিন পর পর আপডেট দিবেন আপনি? কাজের চাপে লেখার সময় হয় না তবে চেষ্টা করি সপ্তাহে একসাথে অন্তত দুটো পর্ব আপডেট দিতে I'm the King of Dark
&
I rule over all Devils
22-06-2023, 12:52 PM
Dada ar kotodin wait korabe?
My pain is constant and sharp, and I do not hope for a better world for anyone.
22-06-2023, 04:05 PM
(22-06-2023, 12:52 PM)Patrick bateman_69 Wrote: Dada ar kotodin wait korabe? একটু সময় লাগবে, তবে দেবো চিন্তা নেই I'm the King of Dark
&
I rule over all Devils
23-06-2023, 09:41 AM
আজকে কি আপডেট দেবেন
—͟͟͞͞?⁀➷ᏁᎪᎥm_Ꮓ ᭄✭✭
"The End Is The Beginning And The Beginning Is The End."
23-06-2023, 03:27 PM
I'm the King of Dark
&
I rule over all Devils
24-06-2023, 12:02 AM
(23-06-2023, 03:27 PM)Monen2000 Wrote: না, শনিবার কি রবিবার আসবে ধন্যবাদ দাদা সময়টা বলে দেওয়ার জন্য না হলে প্রতিদিন এসে চেক করা লাগে Abir Roy
25-06-2023, 08:54 AM
I'm the King of Dark
&
I rule over all Devils
25-06-2023, 02:35 PM
ভাই আজকে আপডেট দেওয়ার কথা আছে
—͟͟͞͞?⁀➷ᏁᎪᎥm_Ꮓ ᭄✭✭
"The End Is The Beginning And The Beginning Is The End."
25-06-2023, 10:22 PM
দ্বিতীয় খণ্ড ১৯তম পর্ব আদিত্যর বাড়ি ফিরতে ফিরতে অনেক রাত হয়ে গেল পিয়ালী তখনও শুধু যে জেগে তাই নয় না খেয়ে অপেক্ষা করছিল, ঘরে ঢুকতেই হামলে পড়লো, "কি গো কোথায় ছিলে এতক্ষণ? এত রাত হলো?" আদিত্য চুপ করে জুতো খুলতে থাকে উত্তর দেয় না পিয়ালী আবার জিজ্ঞেস করে, "উত্তর দিচ্ছো না, তুমি ঠিক আছো? আমার ফোন ধরছিলে না কেন? কি হয়েছে বলো না" "প্লিজ এখন ঘ্যান ঘ্যান কোরো না আমার ভালো লাগছে না, ফোন ধরিনি তার মানে ব্যাস্ত ছিলাম সিম্পল" আদিত্য ঝাঁঝিয়ে ওঠে পিয়ালী আদিত্যর এই রূপ দেখে হতভম্ব হয়ে যায় আদিত্য তেমনি ঝাঁঝিয়ে বলে "খাবার বাড়ো আমি ফ্রেশ হয়ে চেঞ্জ করে আসছি" বলে ওয়াশরুমে চলে যায়, স্নান করে ড্রেস চেঞ্জ করে আদিত্য যখন খাবার টেবিলের সামনে আসে তখন দেখে পিয়ালী চুপচাপ খাবার গুলো গরম করে টেবিলে এনে সাজিয়ে ফেলেছে, সে এবার থালায় ভাত বাড়ছে কিন্তু মাথা নীচু। স্নান করে মাথাটা ঠান্ডা হওয়ায় আদিত্য নিজের ভুলটা বুঝতে পারে সে পিছন থেকে গিয়ে পিয়ালীকে জড়িয়ে ধরে, পিয়ালী শুধু বলে "খেয়ে নাও" আদিত্য পিয়ালীকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে ওর থুতনি ধরে মুখটা উপরে তুলে দেখে ওর দুচোখে জল। আদিত্য পিয়ালীর চোখদুটো মুছে কপালে একটা চুমু দিয়ে বলে, "আয়্যাম সরি" পিয়ালী তবুও কোনো কথা বলে না সে আবার মাথা নিচু করতে চায় কিন্তু আদিত্য করতে দেয় না, সে পিয়ালীর মুখটা সোজা করে ধরে থাকে এবার পিয়ালী আদিত্যর চোখের দিকে তাকায় আদিত্য আবার বলে, "পিয়ালী আয়্যাম রিয়েলি সরি, নিজের ব্যার্থতার রাগটা এভাবে তোমার উপর দেখানো উচিত হয়নি, বিশেষ করে তোমার এই অবস্থায়। তুমি জানোনা আজ কি হয়েছে?" "সেটাই তো জানতে চাইছিলাম, কিন্তু তুমি এখন আমার থেকে কথা লুকোচ্ছো। তুমি আমার উপর ঝাঁঝালে এতে আমার যত না কষ্ট হয়েছে তার থেকে বেশি কষ্ট এটা ভেবে হচ্ছে যে তুমি এখন আমার থেকে কথা লুকোচ্ছো, আমরা একে অপরকে প্রমিস করেছিলাম না যে কখনো কোনো কথা লুকোবো না" আদিত্য একটা চেয়ার টেনে তাতে পিয়ালীকে বসিয়ে নিজে ওর সামনে মেঝেতে বসে কোলের উপর রাখা পিয়ালীর হাতদুটো ধরে বলে, "আমি তোমার থেকে কথা লুকোইনি পিয়ালী আমি জাস্ট তোমাকে টেনশনে ফেলতে চাইনি" "তুমি আমার থেকে দূরে গেলে আমার এমনি টেনশন হয়, তার উপরে আমার জন্য কিছু গুণ্ডা তোমার পিছনে পড়ে আছে" "তোমাকে বলেছি না ওদের ভয় পাওয়ার কিছু নেই, আমি আছি তো তোমার সাথে" "আমার তোমাকে নিয়েই ভয় হয়" "আমাকে নিয়ে ভয় পাওয়ার কিচ্ছু হয়নি, আমার কিছু হবে না" "তোমার ফিরতে এত রাত হলো কেন?" "শুনেই ছাড়বে?" "হুমম" "প্রমিস করো প্যানিক করবে না, তাহলে বলবো" "করছি" আদিত্য একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বিকেল থেকে হাসপাতালের পুরো ঘটনা খুলে বলে, বলতে বলতে ওরও দুচোখ জলে ভিজে যায় তারপর বলে, "আমার দুর্ভাগ্যটা দেখেছো পিয়ালী, আমার পাশে আমার বাবা বসে আমার কথা মনে করছেন অথচ আমি ওনাকে নিজের পরিচয় দিতে পারছি না, ওনাকে বাবা বলে জড়িয়ে ধরতে পারছি না" এবারে পিয়ালী স্বামীর চোখের জল মুছিয়ে দেয় আদিত্য বলতে থাকে, "আমি উপস্থিত থাকতে আমার বাবার শরীর থেকে রক্ত বেরোলো আরেকটু দেরী হলে তো.....আমার রাগ হচ্ছে কিসে জানো? লোকগুলো আমার হাত থেকে বেঁচে গেল নেহাত বাবাকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হতো তাই নাহলে.." আদিত্য আর বলতে পারে না রাগে দুঃখে কথা বন্ধ হয়ে যায়, পিয়ালী জিজ্ঞেস করে, "উনি এখন কেমন আছেন?" "শরীরে অতগুলো আঘাত, অনেক রক্ত বেরিয়েছে, তুমি জানো কথায় কথায় আমি বলে বসি যে তুমি মা হতে চলেছো শুনে ওনার কি আনন্দ কিন্তু কি অবস্থা দেখো নিজের নাতি বা নাতনিকে কাছে পাবেন না উনি" "কেন পাবেন না? পরিচয় না দাও কিন্তু ডেলিভারীর পরে আমরা গিয়ে ওনাকে দেখিয়ে ওনার আশীর্বাদ নিয়ে আসতে পারি তো?" আদিত্য কিছুক্ষন পিয়ালীর দিকে তাকিয়ে থাকে তারপর বলে, "এটা দারুণ বলেছো তো আমার মাথাতেই আসেনি, আমার আসল পরিচয় না জানুন উনি কিন্তু একজন পরিচিত হিসেবে তো দেখা করা যেতেই পারে" "ঠিক, সেটাই হবে নাও এবার খেয়ে নাও কাল তো আবার যাবে হাসপাতালে?" "না, আমি যতই বারণ করি পরিবারের সবাই জানবেই, কালকে সবাই আসবে হয়তো টোবো আসবে আমি গেলে যতই লুকিয়ে থাকি ও ঠিক আমাকে খুঁজে নেবে, এছাড়া আরো একজন তো আছেন যার চোখ থেকে বারবার লুকোনো যাবে না আর ধরা পরলেই সব সত্যি কথা বের করে তবে ছাড়বেন?" "কে কার কথা বলছো?" "আছেন একজন যিনি ব্যানার্জী পরিবারের কেউ নন কিন্তু আমার কাছে সম্মানীয়, শ্রদ্ধেয়"। "চলো এবার খেয়ে নাও নাহলে আবার ঠান্ডা হয়ে যাবে" "তুমি এখনও খাওনি কেন?" "বিয়ের পর তোমাকে ছাড়া খেয়েছি কখনও?" "পিয়ালী এটা ইয়ার্কি নয় এই অবস্থায় কেউ না খেয়ে থাকে?" "ডিনার করিনি এটা ঠিক কিন্তু আমি খালি পেটে নেই, যে যখন পারছে একগাদা ফল নিয়ে আসছে, কেউ কেউ তো ধুয়ে কেটে দিচ্ছে তাই খেয়েছি পেট মোটামুটি ভর্তি আছে" "তা হোক, তবুও" "চিন্তা কোরো না আমি আমাদের সন্তানের পুরো যত্ন নিচ্ছি" "ঠিক আছে এখন আমি তোমাকে খাইয়ে দিচ্ছি" আদিত্য নিজে খাবার টানতে গিয়ে দেখে বাদশা এসে দাঁড়িয়েছে আদিত্য বুঝতে পারে ও না থাকায় বাদশাও খায়নি তাই প্রথমে নিজের প্রিয় পোষ্যটিকে খাবার দিয়ে তারপর একটা প্লেটেই রুটি ডাল নিয়ে প্রথমে একটু ছিঁড়ে ডালে ভিজিয়ে পিয়ালীর মুখে দেয়, তারপর নিজে কিছুটা মুখে দেয়। "পিয়ালী আয়্যাম রিয়েলি সরি, তোমার উপর ওইভাবে কথা বলা উচিত হয়নি আমার" "ইটস্ ওকে, তুমি একবার আমাকে বলে দিলে আমার টেনশন হতো না, আসলে আমি আমার সবকিছু হারিয়েছি এখন তোমাকে হারাতে চাই না তাই তুমি একটু দূরে গেলেই আমার টেনশন হয়" "আমি কখনও তোমার থেকে দূরে যাবো না, প্রমিস" আদিত্য পিয়ালীকে খাইয়ে দিতে থাকে সাথে নিজেও খেতে থাকে, খাওয়া শেষ হলে আদিত্যই পরিষ্কার করে নেয় তারপর পিয়ালীকে দুহাতে কোলে তুলে উপরে নিজেদের রুমে নিয়ে যায় যেতে যেতে বলে, "কালকেই বেডরুমটা নীচে শিফট করিয়ে আনবো তোমাকে সিঁড়ি চড়তে হবে না" "এই আইডিয়াটা কি বাবা দিয়েছেন?" পিয়ালী দুহাতে স্বামীর গলা জড়িয়ে আছে সেই অবস্থাতেই হাসতে হাসতে জিজ্ঞেস করে, "হ্যাঁ, সেটা বলতে পারো" দুজনে উপরে নিজেদের রুমে ঢুকে যায় আর বাদশা পিছনে পিছনে এসে ওর জন্য তৈরি রুমে ঢোকে। আদিত্যর ধারণাই ঠিক সাবধান করা সত্বেও অভিরূপবাবুর উপর আক্রমণের খবরটা লুকিয়ে রাখা গেল না সকাল ভোরের সূর্য উদয় হবার আগেই হাসপাতালে আত্মীয় স্বজন পরিচিতরা উপস্থিত হয়ে গেল এছাড়া হাসপাতাল চত্বরেও টিভি মিডিয়া, নিউজ পেপারের রিপোর্টারে ভরে গেল পরিস্থিতি এমন দাঁড়ালো যে শেষপর্যন্ত স্বর্ণেন্দু বাবু বাধ্য হলেন সুপ্রতিমবাবুকে বলে পুলিশ পিকেটিং করাতে। সুপ্রতিমবাবু নিজেও চলে এসেছেন হাজার হোক অভিরূপ বাবু শহরের গণ্যমান্য লোক এবং এবং তাঁর উপরে আক্রমণ তিনি দূরে থাকবেন কিভাবে? মুখে যাই বলুন মন থেকে সুপ্রতিমবাবু যথেষ্ট শ্রদ্ধা ও সম্মান করতেন অভিরূপবাবুকে, কারণ তিনি জানেন লোকটার দুটো এমন গুণ আছে যেটা এখন চট করে কারো মধ্যে দেখা যায় না একটা হলো লোকটা সৎ আর দ্বিতীয় লোকটা পরোপকারী এই শহরের কত লোক যে তার দ্বারা উপকৃত হয়েছে তার ইয়ত্তা নেই। মিডিয়া কিন্তু সুপ্রতিমবাবুকে পেয়ে ছেঁকে ধরলো, 'এবার তো শহরের একজন গণ্যমান্য লোকের উপরে আক্রমণ হয়েছে, পুলিশ কি করছে?' 'কাউকে কি ধরা গেছে? নিদেনপক্ষে শনাক্ত বা কোনো ক্লু পাওয়া গেছে?' 'পুলিশের এই নিরন্তর ব্যার্থতার কারণ কি?' 'মিস্টার ব্যানার্জীকে প্রথম কে ডিসকভার করলো, কে হাসপাতালে নিয়ে এলো' এরকম আরও প্রশ্নবাণ সুপ্রতিমবাবুর দিকে ধেয়ে আসতে থাকে, অন্য কোনো অফিসার হলে হয়তো এতক্ষণে মেজাজ বিগড়ে যেত কিন্তু সুপ্রতিমবাবু যথেষ্ট ঠান্ডা মাথার মানুষ চট করে রাগেন না বা রাগলেও বাইরে প্রকাশ করেন না আজও তাই করলেন ঠান্ডা মাথায় মেপে প্রতিটা প্রশ্নের উত্তর দিতে থাকেন, 'পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে সময় হলেই আপনারা জানতে পারবেন, এখনো পর্যন্ত কাউকে ধরা না গেলেও এবারে একজনকে শনাক্ত করা গেছে সে মিস্টার ব্যানার্জীর ড্রাইভার শহরের প্রতিটা থানায় তার ছবি পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে খুব শীঘ্রই আমরা তাকে ধরে ফেলবো, আপনাদের যখন মনে হচ্ছে পুলিশ ব্যার্থ তখন তার কারণটাও আপনারাই বলুন, মিস্টার ব্যানার্জীকে কে ডিসকভার করে এখানে নিয়ে এসেছে তার পরিচয় এখন দেওয়া সম্ভব নয় তার সেফটির জন্য....' নিজের মোবাইলে নিউজ চ্যানেল চালিয়ে সুপ্রতিমবাবুর দেওয়া মিডিয়ার প্রশ্নের উত্তরগুলো শুনছিল আদিত্য, অনেক রাতে ঘুমাতে গেলেও আদিত্যর চোখে ঘুম আসছে না যদিও রক্ত দেওয়ার ফলে শরীর কিছুটা দুর্বল কিন্তু তাও চোখে ঘুম নেই, পিয়ালী অবশ্য ঘুমিয়ে আছে। আদিত্যকে জড়িয়ে ধরে ওর বুকের উপর মাথা রেখে নিশ্চিন্তে ঘুমাচ্ছে পিয়ালী। আদিত্য একহাতে ঘুমন্ত স্ত্রীর মাথায় হাত বোলাতে থাকে কিন্তু মাথায় অজস্র চিন্তা সে যতই সুপ্রতিমবাবুকে মনোজিত বাবু আর প্রীতমবাবুর নাম বলে আসুক কিন্তু প্রমাণ ছাড়া উনিও কিছু করতে পারবেন না আর প্রমাণ যে ওরা রাখবে না এটা সে নিশ্চিত বিশেষ করে প্রীতমবাবু ব্যানার্জী পরিবারের কেউ তার আসল রূপ জানে কি না সে জানে না তবে তার পিসেমশাইটিকে চিনতে তার অন্তত বাকি নেই। চিন্তা করতে করতে কখন যে ভোর হয়ে গেছে টেরই পায়নি আদিত্য পিয়ালী তখনও ঘুমাচ্ছে আদিত্য আর তাকে ডাকে না তেমন কোনো কাজ নেই যে ভোর ভোর উঠতে হবে এমনিতেও কাল অনেক রাত হয়েছে ঘুমাতে, পিয়ালী ঘুমের মধ্যে একটু নড়ে ওঠে তারপর আদিত্যকে আরও আঁকড়ে ধরে ঘুমাতে থাকে। আদিত্য বিছানার পাশে টেবিলের উপরের ড্রয়ারটা আসতে করে খুলে ইয়ারবাডটা বার করে কানে লাগায় তারপর মোবাইলের ব্লুটুথ কানেক্ট করে নিউজ চ্যানেল গুলো চালায়, সে ভালো করেই জানে এই শহরে তার বাবার জায়গা ঠিক কোথায় তাঁর উপরে হামলার কথা বাড়ির কেউ বেশীক্ষণ গোপন রাখতে পারবে না ফলে মিডিয়া আসবেই যাকে বলে ব্রেকিং নিউজ। সুপ্রতিমবাবুর কথাগুলো শুনে একটু বিরক্ত হয় আদিত্য অত্যন্ত ডিপ্লোমেটিক উত্তর, সে আশা করেছিল অন্তত ড্রাইভারটিকে এতক্ষণে ধরতে পারবেন তিনি কিন্তু কোথায় কি? বিরক্ত হয়ে মোবাইল বন্ধ করে দেয় সে এই লোকটার উপরে অনেক আশা ছিল কিন্তু.. ঠিক আছে দেখা যাক আরও কদিন সুপ্রতিম দাশগুপ্ত যে হাল ছাড়বার লোক নয় এটা তার থেকে ভালো আর কে জানে। অবশ্য এখন পুলিশের উপর ভরসা করা ছাড়া তার কিছু করারও নেই করতে পারতো যদি সে অনিকেত থাকতো এই শহরে এমন কিছু লোকের সাথে অনিকেতের পরিচয় ছিল যারা তার এক কথায় পুরো শহর চষে ফেলতো কিন্তু এখন সে আদিত্য তারা ওর কথা শুনবে কেন? যদি নিজের পরিচয় দেয়ও তাহলেই বিশ্বাস করবে কেন? নাঃ সুপ্রতিম স্যারের উপর ভরসা করা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। "আপনারা কি করছেন টা কি? শহরে পরপর এতগুলো ডাকাতি হয়ে গেল আর আপনারা এখনো কাউকে অ্যারেস্ট পর্যন্ত করতে পারলেন না" সুপ্রতিমবাবুকে দেখেই তর্জন গর্জন শুরু করলেন প্রীতমবাবু ভাবখানা এমন যেন সবদোষ সুপ্রতিমবাবু ও পুলিশের, উপস্থিত সবাই বেশকিছুটা অবাক ও বিস্মিত হয়েই তাকিয়ে থাকে। সুপ্রতিমবাবু অবশ্য অবাক বা বিস্মিত কোনোটাই হন না তিনি তো জানেন যে 'চোরের মায়ের বড়ো গলা' সবসময়েই হয়ে থাকে, তিনি শান্ত স্বরে জবাব দেন, "চিন্তা করবেন না এবার পড়বে" "সে তো তিন মাস ধরেই বলে যাচ্ছেন কিন্তু কাজের বেলায় তো তার ছিঁটেফোঁটা নমুনা দেখতে পেলাম না" "এবার পারবেন" "দেখা যাক" সুপ্রতিমবাবু অভিরূপবাবুর সঙ্গে দেখা করে কয়েকটা কথা বলে চলে গেলেন, অভিরূপবাবুর বন্ধুবান্ধব আর অন্যান্য পরিচিত যারা দূর থেকে এসেছিলেন তারা একে একে চলে গেলেন। প্রীতমবাবু মণিমালা দেবী ব্যানার্জী ভিলায় ফিরে গেছেন, স্বর্ণেন্দু বাবু ও সুদেষ্ণা দেবী একটু বাড়িতে গেছেন আবার পরে আসবেন, সুনন্দা আর মৈণাকও এসেছিল ওরাও ফিরে গেছে। কেবিনটা এখন মোটামুটি ফাঁকা অভিরূপবাবুর বেডের একদিকে শ্রীতমাদেবী বসেছিলেন আর অপরদিকে এখন অরুণাভ বসে আছেন তার মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে বাবার এই অবস্থা দেখে ভিতরে ভিতরে ভেঙে পড়েছে কিন্তু বাইরে প্রকাশ করতে চাইছে না আর আছে অরুণাভর স্ত্রী মৌমিতা। অভিরূপবাবু ছেলের মনের অবস্থা কিছুটা বুঝতে পারলেন তার এই ছেলে খারাপ কাজ হয়তো কিছু করেছে কিন্তু বাবার প্রতি ভালোবাসা এখনো কিছুটা আছে এতে তিনি নিশ্চিত। আর ছেলের মুখ দেখে এটাও বুঝতে পারলেন যে ছেলে কিছু খায়নি তাই একপ্রকার জোর করেই তাকে খেয়ে আসতে বললেন। মৌমিতা আর অরুণাভ কেবিন থেকে বেরিয়ে যেতেই অভিরূপবাবু স্ত্রীকে জিজ্ঞেস করলেন, "ডাক্তার কি বলছে এখান থেকে বেরোবো কবে?" শ্রীতমাদেবী স্বামীর উপর একটু বিরক্ত হলেন রাগও হলো, বললেন "কেন এত তাড়া কিসের? ডাক্তার যখন ঠিক মনে করবে তখন ছুটি দেবেন" "তাড়া আছে, ছেলেকে খুঁজতে হবে অনিকে খুঁজতে হবে" "শোনো আমিই তোমাকে চাপ দিয়েছিলাম অনিকে খুঁজতে বলেছিলাম কিন্তু এখন আগে তোমার শরীর, আগে সুস্থ হও তারপর ওকে খুঁজো। কিন্তু এখন আমার একটা সন্দেহ হচ্ছে ও যদি অনি হয় তাহলে তোমার এই অবস্থা দেখেও এলো না কেন তোমাকে দেখতে?" "শ্রী ওর মাথায় কেউ ঢুকিয়েছে যে ও আমাদের নিজেদের ছেলে নয় আরও ঢুকিয়েছে যে ও এলে আমরা কষ্ট পাবো" "একথা তোমাকে ও বলেছে?" "সরাসরি না কিন্তু যা বলেছে তার মানে এটাই, আরও একটা অদ্ভুত কথা বললো" "কি কথা?" "বললো ও ফিরে এলে এমন কিছু সত্যি প্রকাশ পাবে যাতে আমরা দুজন কষ্ট পাবো" "মানে?" "সেটাই তো বুঝতে পারছি না তার জন্যই তো ওকে খোঁজা দরকার" "তুমি ওর ঠিকানাটা নিলে না কেন?" "চেয়েছিলাম দেয়নি, তুমি ঠিকই বলেছো বড্ড অভিমান ছেলেটার তার উপরে ওর ধারণা ও আমাদের ছেলে না, শুধু এটুকু বললো যে বৌমা প্রেগনেন্ট" "এখন কিভাবে খুঁজবে?" "সুপ্রতিমবাবুকে বলেছি ওকে খুঁজতে কিন্তু একটা বিষয়ে ভাবনা হচ্ছে" "কি বিষয়ে?" "ও ফিরে এলে কি এমন সত্যি প্রকাশ পাবে যাতে আমরা কষ্ট পাবো?" "তোমার কি মনে হয়?" "আমার ভয় হয় যে সুপ্রতিমবাবুর সন্দেহটাই হয়তো ঠিক" "কি সন্দেহ করেন উনি?" "উনি অরু আর মৌমিতাকে সন্দেহ করেন" "কি?" শ্রীতমাদেবী চমকে ওঠেন, অভিরূপবাবু বলতে থাকেন, "উনি সন্দেহ করেন অরু আর মৌমিতাই অনিকে খাদে ঠেলে ফেলেছিল" শ্রীতমাদেবী বাকরুদ্ধ হয়ে যান স্বামীর মুখে এই কথা শুনে। ক্রমাগত মিডিয়ার একই কচকচানি শুনতে শুনতে বিরক্ত হয়ে যায় আদিত্য সেই এক কথা ক্রমাগত পুলিশের উপরে দোষারোপ করে যাচ্ছে মাঝে অবশ্য অভিরূপবাবুর শারীরিক অবস্থা উন্নতির পথে এটুকু খবর দিয়ে আবার যে কে সেই বিরক্তির সাথে মোবাইলটা বন্ধ করে রিসর্ট থেকে বেড়িয়ে বাড়ির দিকে হাঁটা দেয় আদিত্য, রিসর্টে আজ তেমন কাজ নেই তাই একটু তাড়াতাড়িই ঘরে ফিরে যাচ্ছে সে, এই অবস্থায় পিয়ালীকে বেশীক্ষণ একা থাকতে দিতে চায় না আদিত্য গতকাল প্রায় সারাদিন একা ছিল মেয়েটা তার উপরে বাড়িতে ঢুকেই ওর উপরে ঝাঁঝিয়ে কথা বলেছিল আদিত্য সেই নিয়ে মনে একটা অনুশোচনা এখনো রয়ে গেছে। বাড়িতে ঢুকে দেখে পিয়ালী নীচে ড্রয়িংরুমে একটা সোফার উপর শুয়ে একটা বই পড়ছে আর গেটের কাছে বসে প্রভুপত্নীর সতর্ক পাহারায় মোতায়েন আছেন স্বয়ং বাদশা মশাই। স্বামীকে ঘরে ঢুকতে দেখে পিয়ালীর মুখে হাসি ফুটে উঠলো তাড়াতাড়ি উঠে বসে বইটা বন্ধ করে সামনে টেবিলের উপর রাখলো। আদিত্য স্ত্রীর কাছে গিয়ে প্রথমে ওর কপালে একটা চুমু দিল তারপর বললো "বসো আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি ওরা আবার চলে আসবে" "কারা আসবে?" পিয়ালী একটু অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে কিন্তু আদিত্য উত্তর না দিয়ে উপরে চলে যায় একটু পর ফ্রেশ হয়ে চেঞ্জ করে ফিরে এসে পিয়ালীর পাশে বসে তারপর যে বইটা পিয়ালী পড়ছিল সেটা হাতে নেয়, "কি বই পড়ছো দেখি আইনের?" "না নভেল" "বাব্বা এ যে দেখছি রোমান্টিক নভেল, বইটা তো বেশ পুরনো মনে হচ্ছে" "হ্যাঁ, কলেজে থাকতে কিনেছিলাম তখন থেকেই আমার কাছে আছে" "কাটখোট্টা উকিলরা আবার রোমান্টিক বইও পড়ে?" উত্তরে পিয়ালী আদিত্যর বাহুতে একটা জোড়ে চিমটি কাটলো আর অদিত্য 'উঃ' করে আর্তনাদ করে উঠলো। "কারা আসবে বললে না তো?" "কেন কাল বললাম তো বেডরুমটা উপর থেকে টেম্পোরারি নীচে আনবো" "কেন?" "যাতে তোমাকে সিঁড়ি ভাঙতে না হয়" বলতে বলতেই গ্ৰামের কয়েকজন ছেলে এসে গেল ওদের বলাই আছে কি করতে হবে তারা জানে কোনটা বেডরুম এর আগে এই রুমে জিনিসপত্রগুলো এরাই ঢুকিয়েছিল,ছেলেগুলো উপরে চলে গেল। "যে ছেলেটা অভিরূপ ব্যানার্জীকে বাঁচিয়েছে সে কে সে বিষয়ে কোনো খবর পেলেন?" নিজের ক্রাইম পার্টনার প্রীতমবাবুর উদ্দেশ্যে প্রশ্নটা করেন মনোজিত বাবু। প্ল্যান ফেল হতেই মিটিং বসেছে, মিটিংয়ের জায়গা চিরাচরিত মনোজিত বাবুর বাড়ি, সেখানেই গুম মেরে বসে আছেন প্রীতমবাবু দেখে প্রশ্নটা করেন মনোজিত বাবু কিন্তু প্রীতমবাবু কোনো উত্তর দিলেন না দেখে আবার প্রশ্ন করেন তিনি, "ও মশাই খবর পেলেন কিছু? ওদিকে অভিরূপ ব্যানার্জী তো বেঁচে গেলেন এবং ভালোও হয়ে উঠছেন তা কিছু বললেন?" "বললো অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিল কে বাঁচিয়েছে মুখ দেখেনি" "আর কিছু বললো না?" "বললে তো ঠিকই বলতাম" "কিছু সন্দেহ করেনি তো?" "সেটাই ভাবছি, তা না হলে সুপ্রতিম দাশগুপ্ত ওখানে কেন?" "এক কাজ করলে হয় না?" প্রীতমবাবু জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে নিজের ক্রাইম পার্টনারের দিকে তাকান মনোজিত বাবু বলে চলেন, "এখনো তো কিছুদিন হাসপাতালেই থাকতে হবে শুনলাম, তো ওখানেই শেষ করে দেওয়া যায় না?" "মাথায় কি গোবর ভরা আছে নাকি?" খেঁকিয়ে ওঠেন প্রীতমবাবু ওনার মুখের দিকে তাকিয়ে তটস্থ হয়ে যান মনোজিত বাবু, প্রীতমবাবু বলতে থাকেন, "কি শুনছেন? বললাম না সুপ্রতিম দাশগুপ্ত এই কেসে জড়িয়ে পড়েছে, লোকটা সম্বন্ধে কিছু জানা নেই নাকি? আপনার কি মনে হয় ও অভিরূপ ব্যানার্জীর সেফটির বন্দোবস্ত করেনি? না জানি কত পুলিশ সিভিল ড্রেসে পাহারা দিচ্ছে" "যে ছেলেটা বাঁচালো তার সম্বন্ধে কিছু জানতে পেরেছেন?" "না, হাসপাতালের কন্ট্রোল রুমে লোক পাঠিয়েছিলাম ফুটেজ দেখতে কিন্তু দেখায়নি, সুপ্রতিম দাশগুপ্ত বলেছে ওর পার্মিশন ছাড়া কাউকে কোনো ফুটেজ দেখানো যাবে না" "একটা ছেলে একা আমাদের এতগুলো লোককে পিটিয়ে এরকম অবস্থা করে দিল অথচ ছেলেটা কে কিছুই জানতে পারছি না"। "বারবার হেরে যাচ্ছি, ওদিকে অরুণাভ বেঁচে গেল আর এদিকে অভিরূপ ব্যানার্জী" "এখন কি করবেন ভেবেছেন? আমার মনে হয় আপাতত কিছুদিন চুপচাপ থাকাই ভালো" "তার আগে ড্রাইভারটার ব্যবস্থা করতে হবে, পুলিশ ওকে পাগলা কুকুরের মতো খুঁজছে ও যেন জ্যান্ত পুলিশের হাতে না পড়ে" "পড়বে না তার ব্যবস্থা হয়ে গেছে, পুলিশের হাতে ওর লাশ পড়বে" "বাকীদেরও একই অবস্থা করতে পারলে ভালো হতো, নিশ্চিন্ত থাকা যেত" "ওকথা মুখেও আনবেন না তাহলে ওদের লোকজন আমাদের আস্ত রাখবে না, আমি ওদের শহরের বাইরে বার করে দেওয়ার ব্যবস্থা করছি তবে মার খেয়ে যা অবস্থা হয়েছে আরও কিছুদিন এখানেই লুকিয়ে থাকতে হবে" "ঠিক আছে তবে দেখবেন পুলিশ যেন ওদের খোঁজ না পায়" "পাবে না, সেবিষয়ে নিশ্চিন্ত থাকুন"। পুলিশের উপরে বিরক্তি আর রাগটা ক্রমাগত বাড়তে থাকে আদিত্যর, চার পাঁচদিন হতে চললো অথচ এখনো পুলিশ কাউকে ধরতে পারেনি এমনকি ড্রাইভারটিকে পর্যন্ত নয়। প্রায় সর্বক্ষণই আদিত্য নিউজ চ্যানেল চালিয়ে রাখে যদি কোনো খবর পায় কিন্তু না কিচ্ছু না। "তোমার মন ওখানে যেতে চাইছে তো একবার দেখে এসো গিয়ে" স্বামীকে মনমরা অবস্থায় দেখে আর থাকতে না পেরে বলে পিয়ালী, আদিত্য একটু শুকনো হেসে জবাব দেয়, "খবর পাচ্ছি তো বাবা ঠিক আছেন হয়তো আর দুএকদিনের মধ্যেই হাসপাতাল থেকে ছুটি দিয়ে দেবে" "তোমার মুখ দেখে বুঝতে পারছি যে তোমার খুব কষ্ট হচ্ছে" আদিত্য স্ত্রীকে ধরে নিজের কাছে টানে পিয়ালীও আস্তে করে স্বামীর আরও কাছে ঘেঁষে আসে, আদিত্য কিছু না বলে পিয়ালীর পেটে আলতো করে নিজের একটা হাত রাখে যেন নিজের আগত সন্তানকে অনুভব করে। পিয়ালী আবার বলে, "আমাদের জন্য চিন্তা কোরো না আমরা নিজেদের খেয়াল রাখবো তুমি গিয়ে একবার বাবাকে দেখে এসো, নাহয় লুকিয়েই দেখে আসো" "তাতে আরও বেশি সমস্যা হবে" "কেন?" "যতটা আমি সুপ্রতিম স্যারকে চিনি তাতে উনি এখন অসংখ্য পুলিশকে সিভিল ড্রেসে বাবাকে পাহারা দিতে লাগিয়ে রেখেছেন, ওদের হাতে ধরা পড়লে হয় আমাকে ওদের ঠেঙিয়ে পালিয়ে আসতে হবে আর না হয় স্যারেণ্ডার করতে হবে সেক্ষেত্রে আবার হয় আমার পরিচয় প্রকাশ করতে হবে আর নাহয় ওনারা আমাকেই ক্রিমিনাল ভেবে জেলে পুরে দেবেন" "আমি তোমাকে যতটা চিনি তাতে এটা বুঝতে পারছি যে তুমি ওসবে ভয় পাওয়ার ছেলে না, কারনটা অন্য কিছু" আদিত্য কিছুক্ষণ পিয়ালীর দিকে তাকিয়ে থাকে তারপর একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে, "ওখানে এই ষড়যন্ত্রের মাস্টারমাইণ্ড থাকবে আর ভালো মানুষের অভিনয় করতে ওনার জুড়ি মেলা ভার" "তাতে প্রবলেম কি?" "প্রবলেম এটাই যে ওনাকে আর ওনার ওই অভিনয় দেখে যারা ওনার সত্যিটা জানেনা তারা ভুলে যাবে কিন্তু যারা চেনে তারা না, যেমন আমি। আমি যদি ওখানে যাই তাহলে হয়তো নিজের উপর কন্ট্রোল হারিয়ে একটা খুনোখুনি কাণ্ড করে ফেলবো, আমি একা থাকলে কেয়ার করতাম না কিন্তু এখন তুমি আছো আর তার থেকেও আমাদের আগত সন্তানের দায়িত্ব আছে আমার উপর" "তাই বলে তুমি কিছু করবে না?" "আমার হাতে কিছু নেই আমি চাইলেও কিছু করতে পারবো না আমার সেই ক্ষমতাই নেই যা করার সুপ্রতিম স্যারকেই করতে হবে" পিয়ালী এবার আদিত্যর মুখটা নিজের দিকে ঘুরিয়ে একদৃষ্টিতে দেখতে থাকে, আদিত্য একটু অবাক হয়েই জিজ্ঞেস করে "কি দেখছো?" "দেখছি একজন মানুষ কিভাবে নিজের মনের দুঃখ কষ্ট লুকিয়ে দিনের পর দিন হাসিমুখে থাকতে পারে" "আমাকে খুশী থাকার সবথেকে বড়ো কারণটা তো তুমি দিয়েছো" আদিত্য আবার পিয়ালীর পেটে হাত রাখে। ভোর বেলাতেই দুঃসংবাদটা পেলেন সুপ্রতিমবাবু শুধু দুঃসংবাদ বললে হয়তো ভুল হবে চরম দুঃসংবাদ কারণ সম্প্রতি অভিরূপবাবুর উপর আক্রমণকারীদের মধ্যে একমাত্র যাকে শনাক্ত করা গিয়েছিল অভিরূপবাবুর সেই ড্রাইভারের লাশ পাওয়া গেছে পার্কসার্কাস ওভারব্রিজের ঠিক নীচে রেললাইনের উপরে। ট্রেনে কাটা তো পরেছেই তারসাথে দেখে যা মনে হচ্ছে তাতে পুলিশের ধারণা আগে ওভারব্রিজ থেকে নীচে পরেছে তারপর ট্রেনের তলায় গেছে। খবরটা শুনে নিজেকেই ধিক্কার দিচ্ছিলেন সুপ্রতিমবাবু একটা মাত্র লীড ছিল সেটাও হাত থেকে গেল, ক্রাইমের আসল মাথা যে অত্যন্ত ধূর্ত সেবিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই তবে এবার সুপ্রতিমবাবুর আশা ছিল যে এবার অন্তত তিনি সফল হবেন কিন্তু কোথায় কি? আবার যে তিমিরে ছিলেন সেখানেই ফিরে এসেছেন। সাথে মিডিয়া তো যেন ওঁত পেতে বসেই ছিল এবার আরো তীব্র আক্রমণ চালালো পুলিশের উপরে আজ সুপ্রতিমবাবুকে এসব সহ্য করতেই হবে কোনো উপায় নেই তিনি এবং তার পুলিশ ডিপার্টমেন্ট আবার ব্যার্থ হয়েছেন। টেবিলের উপরে দুহাতে মাথা চেপে ধরে বসে থাকেন তিনি, হটাৎ কিছু একটা মনে পড়ায় সোজা হয়ে বসেন যেন একটা জটিল গোলকধাঁধায় একটা ছোট্ট সুড়ঙ্গপথের সন্ধান পেয়েছেন, পেয়েছেন বললে বাড়িয়ে বলা হবে সেই ছেলেটাই দিয়ে গেছে যে অভিরূপবাবুকে বাঁচিয়ে এনেছিল, সে অনিকেত হোক বা না হোক পথটা সেই দেখিয়ে গেছে এতদিন চোখের সামনে ছিল তবুও দেখতে পাচ্ছিলেন না কারণ তিনি সোজা পথটা ধরে চলার চেষ্টা করছিলেন ফলে আসল পথটা দেখেও দেখেননি। "কি বোকা আমি এতক্ষণ এটা মাথাতেই আসেনি, ছেলেটা আমাকে বলে দিয়েছিল তবুও মাথা থেকে বেরিয়েই গিয়েছিল" নিজেকেই একপ্রকার বকা দিয়ে সুপ্রতিমবাবু তাড়াতাড়ি ফোন করে কাউকে নিজের কেবিনে ডাকলেন ড্রাইভারের পোস্টমর্টেম রিপোর্ট সহ তারপর ফোন রেখে উত্তেজিত ভাবে দুহাত ঘষতে থাকেন এরপর মোবাইল খুলে অভিরূপবাবুর দেওয়া আদিত্যর ফুটেজটা থেকে আদিত্যর মুখটা ভালো করে দেখতে থাকেন একটা সময় পরে স্বগোতোক্তি করেন, 'এখন আমারও মনে হচ্ছে মিস্টার এবং মিসেস ব্যানার্জী হয়তো ঠিক, এটাই অনিকেত কারণ এইরকম ভাবে একসাথে দুটো পথের হৃদিশ দেওয়া অনিকেতের পক্ষেই সম্ভব ছিল, ও বুঝতে পেরেছিল যে আমরা প্রথমটা ধরেই এগোবো আর বাঁধা পাবো তাই দ্বিতীয় পথের হৃদিশও বলে দেয়'। I'm the King of Dark
&
I rule over all Devils
25-06-2023, 10:23 PM
দ্বিতীয় খণ্ড ২০তম পর্ব একটু পরেই একটা ফাইল নিয়ে কেবিনে ঢুকলেন মিস তানিয়া সেনগুপ্ত যিনি একজন দক্ষ পুলিশ অফিসারের সাথে সাথে সুপ্রতিমবাবুর মেয়েও বটে তাকে ঘরে ঢুকতে দেখে সুপ্রতিমবাবু জিজ্ঞেস করলেন, "ওটা পোস্টমর্টেম রিপোর্ট? কি আছে রিপোর্টে?" "পেটে মাত্রাতিরিক্ত অ্যালকোহল পাওয়া গেছে আর মৃত্যু খুলি ফেটে হয়েছে" "মানে আমি যা সন্দেহ করেছিলাম ঠিক তাই, আগে লোকটাকে মাতাল করে কেউ বা কারা ওভারব্রিজ থেকে ফেলে দেয় ফলে তৎক্ষণাৎ মৃত্যু এবং তারপর ট্রেনে কাটা, খুব সম্ভবত ট্রেন আসার মুহুর্তে ঠেলে ফেলা হয়" "কিন্তু ও নিজেও তো নেশার ঘোরে পরে গিয়ে থাকতে পারে?" "সম্ভাবনা হয়তো আছে কিন্তু এই কেসে এটা পসিবল না" "কেন?" "দিন দিন তোমার ব্রেন ভোঁতা হয়ে যাচ্ছে কেন? অবশ্য আমি নিজেই তো এতবড়ো জিনিসটা দেখতে পাইনি তোমাকেই বা বলি কিভাবে? যে লোককে পুলিশ পুরো শহরে হন্যে হয়ে খুঁজছে সে লোক মাতাল হয়ে কি রাস্তায় ঘোরাঘুরি করবে? এটা তুমি বিশ্বাস করো?" "কিন্তু ওকে ঠেলে ফেলবে কে? ওর সঙ্গীরা?" "হতে পারে তবে আসল মাথা অন্য লোক" "আসল মাথা?, মানে এই ডাকাতির পিছনে কোনো একজনের হাত রয়েছে?" "এখানেই তো চালাকি লোকটার, এটা আসলে কোনো ডাকাতির কেসই নয় আমাদের ইনভেস্টিগেশনকে ডাইভার্ট করার জন্য ডাকাতির রূপ দেওয়া হয়েছে" "তারমানে কয়েকমাস ধরে যে ডাকাতির ঘটনাগুলো ঘটছিল সেগুলো আসলে" "প্রস্ততি ছিল আসল লক্ষ্য ছিল অভিরূপবাবু, তাঁকে মার্ডার করাই ওদের উদ্দেশ্য ছিল হয়তো সফলও হয়ে যেত কিন্তু ওদের প্ল্যান ফেল হয়ে যায় একটা ছেলের জন্য যে অভিরূপবাবুকে বাঁচিয়ে হাসপাতালে নিয়ে আসে এবং লোকগুলো পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়" "তাহলে ড্রাইভারটিকে মারলো কেন?" "কারণ ও শনাক্ত হয়ে গেছে ওদের বোধহয় অন্য প্ল্যান ছিল ওকে নিয়ে যদি অভিরূপবাবু বেঁচে না যেতেন তাহলে কি করতো বলা মুশকিল কিন্তু এখন পুলিশ ওকে খুঁজছে আর ও ধরা পরলে লোকটার সমস্যা তাই ওকে সরিয়ে দেওয়া হলো" "লোকটা কে কিছু আন্দাজ করেছেন?" "কে হতে পারে সেটা আন্দাজ করেছি, কিন্তু প্রমাণ নেই তাই বলাটা ঠিক হবে না, পুলিশ ডিপার্টমেন্টে ওর লোক থাকা আশ্চর্য নয় কোনোভাবে যদি জানতে পারে আমরা সন্দেহ করছি সতর্ক হয়ে যাবে তখন ওকে ধরা আরও কঠিন হয়ে যাবে" "তাহলে তো খুব মুশকিল হলো এবার, একটাই লীড ছিল সেটাও গেল" "বরং উল্টো, এতে বাকি পুরো দলটা ধরা পরার চান্স বেশী" "কিভাবে?" "এর আগের প্রতিটা ডাকাতির সময় লোকগুলো অক্ষত পালিয়ে গিয়েছিল কিন্তু এইবার সেটা নয় এবারে ওরা ঘায়েল হয়েছে, তুমি এক কাজ করো তানিয়া পুরো শহরেই বিশেষ করে সাউথ কলকাতায় তোমার ইনফর্মারদের অ্যাক্টিভ করে দাও, বলো খবর নিতে কোথাও কোনো ডাক্তারখানায় কেউ হাত ভাঙা বা পা ভাঙা নিয়ে এসেছে কি না বা জখম অবস্থায় সেলাই ব্যাণ্ডেজ করিয়েছে কি না?" "ঠিক আছে আমি নিজে প্রতিটা হাসপাতালে যাচ্ছি কিন্তু." "উঁহু শুধু হাসপাতালে নয়, শহর জুড়ে অনেক ছোটোখাটো ডাক্তারি ক্লিনিক আছে সেখানে বিশেষ করে যেসব ডাক্তারি ক্লিনিকে তেমন পেশেন্টদের আসা যাওয়া নেই সেখানে আর তুমি যেও না ধরা পরে যাবে, ইনফর্মার লাগাও ওরা সাধারণ লোকদের মাঝে মিশে যেতে পারে" "কিন্তু লোকগুলো যদি গুরুতর আহত হয়ে থাকে তাহলে হাসপাতালে খুঁজলেই তো সুবিধা হবে" "না, হতে পারে লোকগুলো হাসপাতালে গেলই না, কোনো ক্লিনিক থেকে ডাক্তার ডেকে কাজটা করিয়ে নিল বিনিময়ে টাকা দিয়ে দিল তাই সব জায়গায় খোঁজ নাও, সাথে এটাও খোঁজ নাও শহরের কোনো বাড়িতে একাধিক লোক একসঙ্গে অসুস্থ বা আহত হয়েছে কি না এবারে খোঁজ পেতেই হবে তানিয়া এবারে ওদের ধরতেই হবে" "ঠিক আছে আমি ইনফর্মারদের কাজে লাগিয়ে দিচ্ছি"। সকালে ব্রেকফাস্টের সময় কফি খেতে খেতে মোবাইলে নিউজ দেখছিল আদিত্য খবর বলতে 'বিকেলে অভিরূপ ব্যানার্জীকে ডিসচার্জ করে দেওয়া হবে তবে রেস্টে থাকতে হবে' আর দ্বিতীয় খবরটা হলো ড্রাইভারের লাশ পাওয়া গেছে এটাই, পিয়ালীও পাশে বসে দেখছিল ড্রাইভারের খবরের সময় সে একবার স্বামীর মুখের দিকে তাকিয়ে দেখে আদিত্যর মুখে উদ্বেগের কোনো চিহ্নমাত্র নেই কোনো তাপউত্তাপ নেই দিব্যি সে যেন নিশ্চিন্ত মনে কফি খাচ্ছে যেন কিছুই হয়নি কিন্তু পিয়ালী বুঝতে পারছে ওর মাথায় কিছু একটা চলছে একটার পর একটা চিন্তা চলছে তবে বাইরে থেকে বোঝার উপায় নেই বা এটাও হতে পারে আদিত্য পিয়ালীকে বুঝতে দিতে চাইছে না। "এভাবে তাকিয়ে আছো, কিছু বলবে?" মোবাইলের দিকে চোখ রেখেই জিজ্ঞেস করে আদিত্য" "এবার কি হবে?" "কিসের?" "একমাত্র ড্রাইভারকেই শনাক্ত করা গিয়েছিল কিন্তু ও অ্যাক্সিডেন্টে মারা গেল" "তুমি বলেছিলে তুমি ক্রিমিনাল লয়্যার এই তোমার বুদ্ধি?" "আমি লয়্যার, গোয়েন্দা নই" "এটা বোঝার জন্য তার দরকারও হয় না শুধু একটু কমন সেন্স আর ব্রেণের দরকার হয়,অবশ্য দুটোই তোমার আছে কিন্তু এখন আর কাজে লাগাও না। এটা না অ্যাক্সিডেন্ট না সুইসাইড এটা মার্ডার, লোকটাকে প্ল্যান করে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে যাতে পুলিশ ওর মাধ্যমে আসল লোকের কাছে পৌঁছাতে না পারে, যাকে পুলিশ হন্যে হয়ে খুঁজছে সে কখনোই মাতাল হয়ে ওভারব্রিজে ঘোরাঘুরি করবে না" "এবার তাহলে পুলিশ কি করবে বলে তোমার মনে হয়?" "সুপ্রতিম স্যারকে চিঠিতে হিন্ট দিয়েছিলাম তবে উনি খেয়াল করেছেন কি না জানিনা" "তার মানে তুমি জানতে এরকম হবে?" "এটাই আশা করেছিলাম ইনফ্যাক্ট এটা না করলেই আমি বেশী অবাক হতাম, তাও তো ড্রাইভারের লাশ পাওয়া গেছে যদি আমি ওদের জায়গায় থাকতাম তাহলে সেটাও পাওয়া যেত না" পিয়ালী চুপ করে আছে দেখে আদিত্য একটু হেসে বলে, "মেইন কালপ্রিট যে সে যেমন ধূর্ত তেমনি নিষ্ঠুর, এখন আমার চিন্তা বাকিদের নিয়ে ওর কি প্ল্যান? এতগুলো লোককে একসাথে কি শেষ করবে নাকি অন্য কিছু ভাবছে?"। হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়ে বাড়ি ফিরে যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচেন অভিরূপবাবু, অবশ্য সেইসঙ্গে আবার আত্মীয়, পরিচিত বন্ধুদের আগমন হয়েছে যেসকল আত্মীয় পরিচিত বছরে এক আধবারও দেখা দিতেন কি না সন্দেহ তারাও এসে বোঝাতে চেষ্টা করছে তাদের কত চিন্তা কত ভাবনা অভিরূপবাবুর প্রতি, অভিরূপবাবু সব বুঝেও না বোঝার ভান করে থাকেন মুখে একটা প্রসন্নতার হাসি। আত্মীয় পরিচিতদের এই ভিড় কিছুটা খালি হলে এবার অভিরূপবাবুর কাছে আসে একটি বাচ্চা মেয়ে ইনি স্বর্ণেন্দু বাবুর নাতনী অর্থাৎ সুনন্দা এবং মৈনাকের মেয়ে। কিন্তু বাচ্চা মেয়েটি দাদুর কাছে এসে হুড়োহুড়ি করবে এই আশংকায় সুনন্দা একটু ধমক দিতেই অভিরূপবাবু সুনন্দাকে ধমক দেন। সন্ধ্যায় অভিরূপবাবু, শ্রীতমাদেবী, স্বর্ণেন্দু বাবু, সুদেষ্ণা দেবী, মণিমালা দেবী, সুনন্দা এবং মৈনাক নিজেদের মধ্যে হাল্কা মেজাজে হাসিঠাট্টা করছে আসলে অভিরূপ বাবুকে হাসিখুশি রাখার চেষ্টা। প্রীতমবাবু এইসময়ে বাড়ি থাকেন না আজও নেই, সুশান্ত এবং ওর স্ত্রীর দৈনন্দিন আমোদ প্রমোদে বাধা নেই ওরা ওসব নিয়েই ব্যাস্ত, অভিরূপবাবুর উপরে আক্রমণের পরে অরুণাভ আবার অফিস যেতে শুরু করেছে হুইলচেয়ার নিয়েই যাচ্ছে, অফিসের কাজ তো বন্ধ রাখা যায় না, বাড়ির বৌ মৌমিতা ছেলেমেয়েদের নিয়ে ব্যাস্ত, ওদের কলেজ, টিউশন ছাড়াও আরও অন্যান্য অ্যাক্টিভিটিজের ক্লাসে ভর্তি করা হয়েছে কলেজ ছুটি থাকলেও বাকিগুলো বন্ধ থাকে না, মৌমিতাই এখন ওদের ওখানে নিয়ে যাওয়া এবং নিয়ে আসার কাজটা করে। কথা বলতে বলতে হটাৎ মৈনাক বললো, "আচ্ছা ডাক্তার তো এখন পিসুকে রেস্ট নিতে বলেছে, তো এখান থেকে কোথাও গিয়ে ঘুরে আসতে পারেন তো এই শহরের কোলাহল থেকে দূরে কোথাও" "এটা দারুণ বলেছো তো জামাই, কিন্তু কোথায় পাঠানো যায় বলোতো?" স্বর্ণেন্দু বাবু জামাইয়ের কথায় সমর্থন জানান। "তার আবার দরকার কি? এই নিজের ঘরেই তো ঠিক আছি" অভিরূপবাবু মৃদু আপত্তি জানান, কিন্তু স্বর্ণেন্দু বাবু তাকে থামিয়ে বলে ওঠেন, "দরকার আছে, এখানে থাকলে বিভিন্ন বিষয়ে তুমি মাথা ঘামাতে থাকবে দেখা গেল কোনোদিন দুম করে অফিসে চলে গেলে, ওটা হচ্ছে না আগে পুরো সুস্থ হবে তারপর অন্য কাজ, আর সুস্থ হবার জন্য এখন তোমার এখান থেকে দূরে গিয়ে কমপ্লিট রেস্টে থাকতে হবে, কি দিদি তাই তো?" "সে তো যাওয়া যায় কিন্তু যাবো কোথায়? মৈনাক তো বললো শহর থেকে দূরে কোথাও এরকম কোনো জায়গা জানা আছে নাকি মৈনাকের?" শ্রীতমাদেবী ভাইয়ের কথার উত্তরে বললেন। "ঠিক আছে যেতে আমি রাজী কিন্তু গেলে সবাই মিলে যাবো" অভিরূপবাবু সম্মতি জানান, এইসময় অরুণাভ এবং মৌমিতা ছেলেমেয়েদের নিয়ে একসাথেই ঘরে ঢোকে এবং ঢুকতে ঢুকতে কিছু কথা হয়তো তাদের কানে এসেছে, সেই কারণেই বোধহয় অরুণাভ জিজ্ঞেস করে, "কোথায় সবাই মিলে যাবেন বাবা?" "আয় অরু এই দেখনা এরা চাইছে আমি হাওয়া বদলে যাই তাই বলছিলাম গেলে সবাই মিলে যাবো" "ঠিকই বলেছে আপনার এখন কোথাও গিয়ে হাওয়া বদল করে সুস্থ হয়ে আসতে পারেন কিন্তু আমার যাওয়া বোধহয় হবে না, অফিসে কাজ বেড়েছে কাউকে তো থাকতেই হবে" "আর এদের ক্লাস বাদ দিয়ে আমিও কোথাও যেতে পারবো না তার থেকে আপনারাই ঘুরে আসুন" মৌমিতাও তার মতামত দিয়ে ছেলেমেয়েদের নিয়ে রুমে চলে যায়, অরুণাভও আস্তে আস্তে নিজের রুমে যায়, ওদের কথা শুনে অভিরূপবাবুর মুখের হাসিটা আস্তে আস্তে মিলিয়ে যায় শ্রীতমাদেবী স্বামীর মুখটা লক্ষ্য করেন তিনি বুঝতে পারেন তার স্বামীর মনের অবস্থাটা কষ্ট তো হবেই নিজের ছেলে কাছে থেকেও কাছে নেই তার কাছে বাবার জন্য সময় নেই, এইসময়ে মণিমালা দেবীর কথা বলেন, "দাদা আমার আর ওর বাবারও বোধহয় যাওয়া হবে না আর সুশান্ত আর বৌমারও না ওরা দুইজন তো কাজে যাবে ছুটি পাবে না, ওর বাবাও যাবে আর এদিকে অরু আর বৌমাও থাকবে ওদের খাওয়াদাওয়ার ব্যাবস্থা করার জন্য তো কাউকে থাকতে হবে তার থেকে ভালো তোমরা সবাই ঘুরে এসো" এইবলে মণিমালা দেবী উঠে চলে যান। অভিরূপবাবুর মুখে এতক্ষণ যে ঔজ্জ্বল্য ছিল সেটা মুছে যায় মনে মনে তিনি ভাবেন, 'এই না হলে পরিবার কারো কাছে কারো জন্য সময় নেই, ছেলে বাবার সাথে সময় কাটাতে চায় না, নাতি-নাতনি দাদুর কাছে আসার সময় পায় না, বোন সেও তার নিজের স্বামী সন্তান নিয়ে ব্যাস্ত আর ওদিকে আরেক ছেলে তার মনে এতটাই অভিমান ভরে আছে যে সে দূরে লুকিয়ে আছে, তার মাথায় একটা মিথ্যা এমনভাবে গেঁথে আছে যে সে কাছে এসেও নিজের পরিচয় দেয় না, নিজের ঠিকানা দেয় না। সেখানেও নিজের নাতি বা নাতনি আসবে হয়তো কিন্তু তিনি হয়তো তাদের মুখও দেখতে পারবেন না' অভিরূপবাবুর বুকটা কষ্টে একটু মোচড় দিয়ে ওঠে তিনি শুকনো মুখে বলেন, "থাক কারোরই যখন যাওয়ার সময় হবে না তখন যাওয়ার দরকার নেই" "কেন পিসু আমরা তো আছি আমরা কি তোমার কেউ নই?" সুনন্দা বলে ওঠে। "অবশ্যই তাই আমরা তো আছি কিন্তু পিসু এমন করছে যেন আমরা ওনার কেউ নই, আর কেউ না হোক আমি তো পরই" মৈনাক স্ত্রীকে সমর্থন করে বলে। "মৈনাক, পিউ দিদি সামনে না থাকলে তোমাকে আমি.." অভিরূপবাবু কিছু বলতে গিয়ে বাঁধা পান, স্বর্ণেন্দু বাবু তার আগেই কথা বলেন, "ঠিকই তো বলেছে জামাইবাবু আমরা কি কেউ নই তোমার?" "স্বর্ণেন্দু তুমিও? আমি কি সেটা বলেছি নাকি?" "তাহলে এই তো তুমি বললে যে." "আরে বাবা আমি বলেছি কারো যখন সময় হবে না, তোমার কথাই ধরো তোমার সময় হবে?" "আমার তো সময়ই সময়, অ্যাডভোকেটরা কি ভ্যাকেশনে যায় না?" "তাহলে তোমার সময় হবে?" "আলবাত হবে, আগে ফ্যামিলি তারপর অন্য কাজ" "বেশ তবে সুনু আর মৈনাক তোদের সময় হবে তো? পিউ দিদির কলেজ টিউশন" "ওসব আমরা ম্যানেজ করে নেবো, মাঝে মাঝে কোথাও ঘুরতে গেলে মন তাজা থাকে, আমরা রাজী" সুনন্দা জবাব দেয়। "কিন্তু যাওয়া কোথায় হবে? দীঘা না পুরী নাকি অন্য কোথাও?" সুদেষ্ণা দেবী জিজ্ঞেস করেন। "ওসব জায়গায় যাওয়া যায় তবে ওখানে বড্ড লোকের ভিড়, যদি সবার আপত্তি না থাকে তবে আমি একটা জায়গার হৃদিশ দিতে পারি" "কোথায় জামাই তাড়াতাড়ি বলো" "আনন্দ নিকেতন রিসর্টে" "কোথায়? রিসর্ট? সেটা কোথায়?" স্বর্ণেন্দু বাবু প্রশ্ন করেন, উত্তরে মৈনাক মোবাইলে কয়েকটা ছবি বার করে সবাইকে দেখতে দিয়ে বলে, "আমার এক বন্ধু কয়েকদিন আগে ওখান থেকে ঘুরে এসেছে ওই ছবিগুলো দিয়েছে ছবিগুলো দেখুন খালি, একেবারে শান্ত গ্ৰাম্য পরিবেশ আমার বন্ধুটি তো ঘুরে এসে এখানকার কথাই বলে যাচ্ছে, যেরকম থাকার ব্যাবস্থা সেরকম, খাওয়া দাওয়া। ওরা তো আবার যাবে বলেছে শীতকালে ওখানে নাকি ফায়ারক্যাম্পিং করা হয়"। "সেসব ঠিক আছে কিন্তু জায়গাটা কোথায়?" "ঘটকপুকুর মালঞ্চ থেকে বাসন্তী হাইওয়ে ধরে আরও কিছুটা গেলে নারায়ণতলা বলে একটা গ্ৰাম আছে ওখানে, আমি তো শোনার পর থেকেই ঠিক করে রেখেছিলাম যে এবার শীতকালে যাবোহ কিন্তু এখন ভাবছি আগে একবার ঘুরে এলে মন্দ হয় না" "বেশ, তবে তাই যাওয়া হোক কিন্তু কবে যাওয়া হবে?" "আমি আগে ওখানে কথা বলে দেখি কবে রুম পাওয়া যায়, জায়গাটা অফবিট হলেও অনেকেই একরাতের জন্য ঘুরতে যায়, তবে বুকিং পেয়ে যাবো বলেই মনে হয়" "তা এখনই করে দেখো না, নাম্বার নাওনি তোমার বন্ধুটির থেকে?" সুনন্দা স্বামীকে ভর্ৎসনার সুরে বলে, উত্তরে মৈনাক একটা বোকা হাসি দিয়ে মোবাইলটা নিয়ে একটা নম্বরে ফোন করে কিছুক্ষণ কথা বলার পরে ফোনটা কেটে জানায়, "ওখানে এখন হালকা রেনোভেশনের কাজ চলছে তবে ট্যুরিস্টদের যেতে বাধা নেই, বুকিংও পাওয়া যাবে কবে যাবেন বলুন তো আমি আবার ফোন করে বুকিং করে ফেলছি", ঠিক হলো দুদিন পরেই অভিরূপবাবু, শ্রীতমাদেবী, স্বর্ণেন্দু বাবু, সুদেষ্ণা দেবী, মৈনাক, সুনন্দা এবং পিউ এইকজনই যাবে, প্রাথমিকভাবে তিনদিন থাকা হবে পরে যদি ভালো লাগে তবে আরও বাড়ানো হবে, সেইমতো মৈনাক আবার ফোন করে বুকিং করে ফেললো। I'm the King of Dark
&
I rule over all Devils
25-06-2023, 11:20 PM
I'm the King of Dark
&
I rule over all Devils
|
« Next Oldest | Next Newest »
|