Thread Rating:
  • 100 Vote(s) - 2.84 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
WRITER'S SPECIAL "ধূসর পৃথিবী"
আজকের আপডেটে মনটা ভরে গেছে আবার এমন মুহূর্তে ইতি  টেনেছেন কি আর বলবো।অপেক্ষা ছাড়া আর কিছু করার নাই।

লাইক & রিপু done
—͟͟͞͞?⁀➷ᏁᎪᎥm_Ꮓ ᭄✭✭
"The End Is The Beginning And The Beginning Is The End."
[+] 1 user Likes Naim_Z's post
Like Reply
Do not mention / post any under age /rape content. If found Please use REPORT button.
(18-06-2023, 09:32 AM)Bumba_1 Wrote:
বরাবরের মতোই অনবদ্য  Namaskar
thanks
(18-06-2023, 10:26 AM)Naim_Z Wrote: আজকের আপডেটে মনটা ভরে গেছে আবার এমন মুহূর্তে এটি টেনেছেন কি আর বলবো।অপেক্ষা ছাড়া আর কিছু করার নাই।

লাইক & রিপু done

thanks Namaskar
I'm the King of Dark
                &
I rule over all Devils
               devil2 devil2
Like Reply
এক কথায় অসাধারণ দাদা
[+] 1 user Likes Ari rox's post
Like Reply
(18-06-2023, 05:06 PM)Ari rox Wrote: এক কথায় অসাধারণ দাদা

ধন্যবাদ
I'm the King of Dark
                &
I rule over all Devils
               devil2 devil2
Like Reply
কোনো জবাব নেই............... ফ্যান্টাস্টিক..............
[+] 1 user Likes MNHabib's post
Like Reply
(24-12-2022, 11:02 PM)Monen2000 Wrote:
                                                                                                  [Image: Picsart-22-12-06-20-20-08-119.jpg]


                                  ২য় পর্ব  

নবাগত ছেলেটা এবারে চ্যাংড়া ছেলেগুলোর দিকে এগিয়ে এসে যে ছেলেটা প্রীতি নামের মেয়েটার হাত ধরে আছে তার মুখোমুখি দাঁড়ায়। 

যে ছেলেটা প্রীতি নামের মেয়েটার হাত ধরে ছিল সে প্রীতিকে বলে "তাহলে এ তোমাকে বাঁচাবে মামনি?, ও একা আর আমরা এতজন তুমি সত্যিই মনে করো যে ও তোমাকে ছাড়িয়ে নিয়ে যাবে? কি রে তুই বাঁচাবি?" শেষের প্রশ্নটা অবশ্য প্রীতির পরিচিত ছেলেটিকে করা, পাশের একজন ছেলে বলে "তুই কে বে?"। 
উত্তরটা প্রীতি দেয় "ও আমার দাদা"।
"দাদা?" ছেলেগুলো আবার হাসতে থাকে, লিডার ছেলেটা অর্থাৎ যে ছেলেটা হাত ধরে রেখেছে সে নবাগত ছেলেটিকে উদ্দেশ্য করে বলে "তুই জানিস আমি কে?", এতক্ষণ নবাগত ছেলেটি  চুপ করে থাকলেও এবার মুখ খোলে "তুই যদি এক বাপের ব্যাটা হোস তাহলে ৫ মিনিট এইভাবে ওর হাত ধরে থাক", পাশ থেকে একজন কিছুটা এগিয়ে এসে হুমকির সুরে বলে "কেন বে কি করবি? তুই."
কথাটা শেষ হলো না কারণ চোখের পলকে নবাগত ছেলেটি একপাশে একটু কাত হয়ে একটা পা সোজা মাটি থেকে সমান্তরালে তুলে পাশের ছেলেটার চোয়ালে লাথি চালায়, ছেলেটা ছিটকে মাটিতে পড়ে যায় এবার বাকি কয়েকজন এগিয়ে আসে কিন্তু লিডার ছেলেটি এখনো হাত ধরে রেখেছে, কিন্তু বেশিক্ষণ না কয়েকটা ঘুষি আর লাথি খেয়ে নিজের সঙ্গীদের এখানে ওখানে ছিটকে পড়ে যেতে দেখে পাঁচ মিনিট হবার আগেই প্রীতির হাত ছেড়ে দেয়।
প্রীতি নামের যুবতীটি এবার এতক্ষণ ওর হাত ধরে রাখা ছেলেটিকে বলে "হয়ে গেল? দম শেষ?", বলে উত্তরের অপেক্ষা না করেই দাদার কাছে যায়,
"ওখানে গাড়ি রাখা আছে তোরা যা আমি আসছি" দাদার কথা শুনে প্রীতি ওর বান্ধবীদের নিয়ে দাদার দেখানো দিকে চলে যায়।
যে ছেলেটি এতক্ষণ প্রীতি নামের যুবতীটির হাত ধরে ছিল সে বলতে যায় "আমার ভুল হয়ে গেছে আমাকে.." কিন্তু কথাটা শেষ করার আগেই মুখে সজোড়ে ঘুষি খায়, তার নাক ফেটে গলগল করে রক্ত বেরোতে থাকে, সে নাকে হাত চেপে মাটিতে বসে পড়ে, কিন্তু নবাগতছেলেটা কলার ধরে তুলে আবার তলপেটে পরপর কয়েকটা ঘুষি মেরে মাটিতে ফেলে দেয়।
এতক্ষণে নবাগত ছেলেটা আবার মুখ খোলে বলে "আজ ছেড়ে দিচ্ছি কিন্তু নেক্সট টাইম যদি আদিত্য সিংহ রায়ের বোনের দিকে চোখ তুলে দেখিস তাহলে তোদের আর কেউ জ্যান্ত দেখতে পাবে না, কথাটা মনে রাখিস"। আদিত্য সিংহ রায় নামটা শুনেই ছেলেগুলোর শুধু নয় ওখানে উপস্থিত সবাই ভয়ার্ত চোখে একবার আদিত্যকে একবার পরস্পরের দিকে তাকাতে থাকে।
পুরো উত্তরবঙ্গে এমন হয়তো কেউ নেই যে স্বল্পভাষী, সদাগম্ভীর, সদারাগী আদিত্য সিংহ রায়ের নাম শোনেনি, চেহারার সাথে হয়তো অনেকেই পরিচিত নয় কিন্তু নাম সবাই শুনেছে। আদিত্য ছেলেগুলোকে ছেড়ে পাশের একটা চায়ের দোকানে যায়, দোকানিকে বলে "এক প্যাকেট গোল্ডফ্লেক দিন", দোকানির থেকে প্যাকেট নিয়ে দাম মিটিয়ে প্যাকেট থেকে একটা সিগারেট বার করে মুখে দেয় তারপর পকেট থেকে লাইটার জ্বালিয়ে ধরায়, একটা টান দিয়ে কিছুটা ধোঁয়া ছেড়ে যেদিকে একটু আগে প্রীতি ও তার বান্ধবীরা গেল সেদিকে হাঁটা দেয়।

"তোর দাদা যে এত হ্যাণ্ডসাম সেটা তো বলিসনি কখনো?" গাড়ির দিকে যেতে যেতে এক যুবতী প্রশ্ন করে প্রীতিকে, কিন্তু প্রীতি কিছু বলার আগেই আরেক যুবতী উত্তর দেয় "তোর ওই গোমরামুখোকে হ্যাণ্ডসাম মনে হচ্ছে?"।
"হ্যাঁ সে একটু রাগী আর গম্ভীর অ্যাংরি ইয়াংম্যান টাইপের কিন্তু হ্যাণ্ডসাম হান্ক সাথে অ্যাকশন হিরো, এই প্রীতি তোর দাদার কোনো সেটিং আছে নাকি?
আগের যুবতীটি আবার বলে হাঁটতে হাঁটতে কথাটা বলে তারা সবাই এখন একটা জিপের কাছে চলে আসে কিন্তু জিপে না উঠে বাইরেই জিপে হেলান দিয়ে দাঁড়ায়, "কেনো রে প্রেম করবি নাকি?" আগের যুবতীটির গলায় এবার বিদ্রুপ, একটু থেমে আবার বলে "ওমন গোমরামুখোর সাথে প্রেম করতে পারবি?"।
"আমার দাদার সাথে তোর প্রবলেমটা কি বলতো অদ্রিজা?" প্রীতি একটু অসহিষ্ণুভাবে কথাটা বলে , এই অদ্রিজা নামের যুবতীটিও দেখতে ফর্সা বয়স প্রীতির মতোই ২৫ এর আশেপাশে, ছিপছিপে গড়ন মাথায় লম্বা চুল সেটা গুটিয়ে ছোটো করে ক্লিপ দিয়ে মাথার পিছনে আটকানো, নাকে একটা ছোটো গোল রিং পড়ে আছে, কপালের মাঝখানে একটা ছোট্ট কালো টিপ, দুকানে ঝুমকো, মুখে একটা চুইংগাম চিবোচ্ছে।
"কেনো রে গায়ে লাগছে বুঝি?"
কিছুটা বিদ্রুপের স্বরে প্রত্যুত্তর দেয় অদ্রিজা, জবাবে প্রীতি কিছুটা ক্ষুন্ন স্বরে বলে 
"আমার দাদার নিন্দে করছিস আর আমার গায়ে লাগবে না?"।
"যেটা সত্যি সেটাই বলেছি আজ থেকে তো দেখছি না তোর দাদাকে,  যখনই তোদের বাড়ি এসেছি দেখা হয়েছে প্রতিবারই দেখি সেই এক‌ই রকম রাগী আর গম্ভীর"।
"কিন্তু দাদা যে কত ভালো মনের মানুষ সেটা তুই বুঝবি না"।
"ওরকম গোমরামুখোকে দেখলে কেউই ভালো বলবে না"।
"তুই ফের দাদার নিন্দা করছিস? দেখ অদ্রি এখানে এভাবে দাদার নিন্দে করছিস তাতে তোর‌ই কিন্তু বিপদ হতে পারে"।
"কেন রে তোর দাদার ভয়ে? নাকি তোর ভয়ে? শোন পুরো নর্থ বেঙ্গল তোর ভয় পেলেও আমি পাইনা"।
"ভয় পেলেই ভালো করতি"
"কেন রে মারবি আমাকে? নাকি তোর দাদা মারবে?"
"তুই আমার বেস্টি তার উপর আমাদের প্যারেন্টসরাও একে অপরের অনেক পুরনো বন্ধু কাজেই আমি তোকে কিছু না বললেও তোর পিছনে যে আছে সে ছেড়ে কথা বলবে না"।
অদ্রিজা এবং বাকি মেয়েরা একটু অবাক আর কৌতূহলী হয়ে পিছনে জিপের দিকে চাইলো আর তৎক্ষণাৎ প্রত্যেকেই  "ওরে বাবা রে" বলে দু পা পিছিয়ে এল,সবার চোখেমুখে তখন ভয়ানক আতঙ্ক কারণ জিপের ভিতর থেকে উঁকি মারছে এক ভয়ংকর, হিংস্র কালো সারমেয়র মাথা তার জ্বলজ্বলে দুটো চোখ যেন রাগে আগুনের ভাটার মতো জ্বলছে সে যুবতীদের দিকে বিশেষ করে অদ্রিজা নামক যুবতীটির দিকে তাকিয়েই রগে গররররররর করছে যেন সে বুঝেছে এই মেয়েটি তার মনিবের নিন্দা করছিল আর সে এক্ষুনি তাকে ছিঁড়ে খাবে।
প্রীতি বাদে অদ্রিজা সহ বাকি যুবতীরা তখন আতঙ্কিত চোখে স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে আছেহ প্রীতির ঠোঁটে বাঁকা হাসি। একটা যুবতী কোনোমতে জিজ্ঞেস করে "এএটা কি?"।
"ও বাদশা, দাদার পোষা কুকুর, দাদার একমাত্র বন্ধু বডিগার্ড বিশ্বস্ত  ছায়াসঙ্গী যা বলতে চাস ও তাই, শুধু তাই নয় কেউ দাদার ক্ষতি করতে চাইলে এমনকি নিন্দা পর্যন্ত করলে সেটা ও সহ্য করে না"।
বাদশা তখনও সমানে গর্জন করে যাচ্ছে তার দৃষ্টি সোজা অদ্রিজার দিকে কিন্তু ভাগ্য ভালো বাদশা জিপ থেকে নামছে না নাহলে এতক্ষণে একটা রক্তারক্তি কাণ্ড হয়ে যেত।
"বাদশা" যুবতীদের পিছনে মনিবের ডাকটা শুনে বাদশার গর্জন কমে কিন্তু গরগরানি থামে না, সবাই পিছনে ফিরে দেখে আদিত্য হেঁটে আসছে, কাছে এলে অদ্রিজার সাথে একটা চোখাচোখি হয় তারপর জিপের ড্রাইভার সিটের দরজা খুলে নিজের পোষ্যটির গলায় হাত বোলাতে থাকে "কি হয়েছে ওদের ভয় দেখাচ্ছিলে কেন?"।
বাদশা মনিবের আদর পাওয়ায় কিছুটা শান্ত কিন্তু গরগরানি একেবারে থামেনি অবলা প্রাণীটা যদি কথা বলতে পারতো তাহলে নিশ্চয়ই বলতো "ওরা তোমার নিন্দা করছিল তাই তো আমার রাগ হয়েছিল, তুমি তো জানো তোমার কেউ নিন্দে করলে সেটা আমার সহ্য হয় না"।
"যেমন মনিব তেমন তার কুকুর"।
কথাটা বললো অদ্রিজা, এতক্ষণে কিছুটা স্বাভাবিক হয়েছে সে যদিও গলার স্বরে বোঝা যাচ্ছে যতই রাগ দেখানোর চেষ্টা করুক তাতে এখনো ভয় মিশে আছে সে আবার জিপের কাছে এল একটু থেমে আবার শুরু করে সে "মনিব যেমন সবসময় গম্ভীর আর রাগী,সবসময় সবাইকে ভয় দেখিয়ে বেড়ায়, কুকুরটাও হয়েছে ঠিক তেমনি"।
আদিত্য কোনো উত্তর না দিয়ে নিজের পোষ্যটির গলায় হাত বোলাতে থাকে ওদিকে অদ্রিজার মুখ থেকে কথার মেশিনগান থামার নাম‌ই নিচ্ছে না "সবসময় হাসিখুশি থাকতে হয় আনন্দ করতে হয় তা না গোমরামুখো হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে আরে বাবা পৃথিবীটা কত রঙিন সেটা এই ধরনের মানুষরা জানেই না তা."
অদ্রিজা আরও কিছু বলতে যাচ্ছিল কিন্তু তার আগেই আদিত্য হটাৎ বাদশাকে ছেড়ে অদ্রিজার দিকে ফিরলো তারপর ওর সামনে এগিয়ে গেল, অদ্রিজা পিছনে হটে যাচ্ছিল কিন্তু পারলো না জিপে পিঠ ঠেকে গেল, আদিত্য দুটো হাত অদ্রিজার দুদিকে বাড়িয়ে ওকে নিজের বাহুর ঘেরাটোপে বন্দী করে বললো "আপনার কাছে জীবনটা নিছক মজার বা আনন্দের জিনিস হতে পারে কিন্তু সবার কাছে সেটা নাও হতে পারে, কারো কারো পৃথিবী রঙিন হয় না তাদের পৃথিবী থেকে সব রঙ উবে গেছে তাদের পৃথিবীটা ধূসর হয়ে গেছে যদিও সেটা আপনার বোঝার ক্ষমতা নেই"।
দুজন কিছুক্ষণ পরস্পরের দিকে তাকিয়ে র‌ইলো, দুজনেই সটান একে অপরের চোখের দিকে তাকিয়ে আছে একজনের চোখে আগ্নেয়গিরির উত্তপ্ত আগ্নেয় লাভা থাকলে অপরজনের চোখে সাগরের শীতল ঠাণ্ডা জলরাশি একজন চাইছে সামনের জনকে পুড়িয়ে ছাই করে দিতে তো অপরজন চাইছে আগুনকে নিভিয়ে ঠাণ্ডা করে দিতে।
"দাদা"
প্রীতির ভয়ার্ত স্বর শুনে নিজেকে সামলে নেয় আদিত্য, বাকি যুবতীরাও কিছুটা হকচকিয়ে গিয়েছিল। অদ্রিজাকে নিজের বাহুর ঘেরাটোপ থেকে মুক্ত করে দু পা পিছিয়ে এসে বলে "ছাইয়ের তলায় চাপা পড়ে থাকা লুকোনো আগুনকে খুঁচিয়ে জাগিয়ে তুলতে নেই মিস চক্রবর্তী তাতে নিজের‌ও পুড়ে ছাই হয়ে যাওয়ার চান্স থাকে, আগুন থেকে দূরে থাকুন আমার থেকে দূরে থাকুন জস্ট স্টে অ্যাওয়ে ফ্রম মি আপনাকে আগেও বলেছি আজ আবার বললাম" কথাটা বলে জিপের ড্রাইভার সিটে উঠে বসে আদিত্য সিংহ রায়।
প্রীতি গিয়ে ড্রাইভারের পাশের সিটে দাদার পাশে গিয়ে বসে কিন্তু বাকি মেয়েরা গাড়িতে ওঠে না তারা দাঁড়িয়েই থাকে তাই দেখে আদিত্য প্রীতিকে জিজ্ঞেস করে "তোর বন্ধুরা যাবে না?"
প্রীতি একবার ঘাড় ঘুড়িয়ে বন্ধুদের দিকে তাকিয়ে বলে "কি রে তোরা দাঁড়িয়ে আছিস কেন উঠে আয়", কিন্তু তবুও সবাই দাঁড়িয়ে থাকে, প্রীতি এবার বুঝতে পারে ব্যাপারটা ও একটু হেসে বলে "ভয় পাস না দাদা আছে বাদশা কিছু করবে না উঠে আয়",এবারএকটু ভয়ে ভয়েই সবাই উঠে জিপের পিছনে বসে।
এনজেপি ছেড়ে গাড়ি দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলে গাড়িতে ওঠা ইস্তক সবার মুখ একেবারে বন্ধ হয়ে গেছে এমনকি অদ্রিজার‌ও তারা এখন চুপ করে বসে বাদশার দিকে ভয়ার্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আর বাদশা, সে প্রীতির কোলে বসে কখনো সামনে দেখছে তো আবার কখনো পিছনে বসা অদ্রিজার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখছে। পরপর কয়েকটা গ্ৰাম পেরিয়ে একটা ছোটো নদী পার হয়ে এল ওরা তারপর একটা বাঁক নিয়ে কাঁচা রাস্তা ধরলো, রাস্তাটা একটা জঙ্গলের ভিতর দিয়ে গেছে যেতে যেতে জিপের পিছনের সিটে বসা যুবতীরা যেভাবে ভয়ার্ত দৃষ্টিতে আশেপাশের জঙ্গলের দিকে তাকাচ্ছিল তাতে স্পষ্টতই বোঝা যাচ্ছে তারা কিছু একটার ভয় পাচ্ছে।
সামনের আয়নায় সেটা দেখে প্রীতি আবার একটু হেসে বলে "তোরা কিসের ভয় পাচ্ছিস  ম্যানইটারের? ভয় পাস না আপাতত ওরকম কোনো খবর নেই আর থাকলেও আমার দাদা ক্র্যাকশট ওর হাতের গুলি ফসকায় না"।
যদিও রাস্তায় কয়েকটি ছাগলকে ঘাস খেতে দেখা ছাড়া আর কোনোরকম ইটারের সাথেই সাক্ষাৎ হয়নি নির্বিঘ্নেই জঙ্গল পার হয়ে গ্ৰামে ঢুকলো তারপর কিছুটা যেতেই সিংহ রায় প্যালেসের বিরাট লোহার গেটবন্ধ ফটক চোখে পড়লো সেটা দিয়ে ঢুকে পোর্টিকোর উপর দিয়ে প্যালেসের দরজার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো।
দরজায় দাঁড়িয়ে আছেন এক মহিলা বয়স ৫০ এর আশেপাশেই মাথায় কাঁচাপাকা মেশানো চুল খোপা করে বাঁধা, সিঁথিতে সিঁদুর, কপালে সিঁদুরের টিপ গায়ে হলুদ তাঁতের শাড়ি আর কালো হাফস্লিভ ব্লাউজ, দুহাতে শাখা-পলা, গলায় একটা সোনার হার চোখেমুখে খুশী ঝিলিক মারছে ইনিই অতীন্দ্র বাবুর স্ত্রী উমা দেবী আদিত্য আর প্রীতির মা।
জিপ থামতেই প্রীতি এক লাফে নেমে দৌড়ে গিয়ে মাকে জড়িয়ে ধরলো মা-মেয়ের দুজনের মুখেই আনন্দের বাঁধ ভেঙেছে, তারপর একে একে প্রীতি বন্ধুদের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয় হটাৎ উমাদেবী জিজ্ঞেস করেন "লাটসাহেব আবার কোথাও গেলেন"।
যুবতীরা কিছুটা থতমত খেয়ে যায় কিন্তু প্রীতি হো হো করে হেসে ওঠে কিছু বলার আগেই আদিত্য এসে মায়ের সামনে দাঁড়ায়, ছেলেকে দেখে যেন তেলেবেগুনে জ্বলে ওঠেন উমা দেবী "এইযে লাটসাহেব এতদিনে দর্শন দেবার দয়া করলেন?"
জোঁকের মুখে নুন পড়লে যা হয় তেমনি আদিত্য কোনো উত্তর না দিয়ে চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকে, কিন্তু উমাদেবী বলে চলেন "মুখটা দেখো মনে হচ্ছে পুরো তরাইয়ের জঙ্গল গজিয়ে উঠেছে আজ‌ই ওই জঙ্গল সাফ করবে তুমি"। "মা.." আদিত্য এবার একটু প্রতিবাদ করতে যেতেই আরো গর্জে ওঠেন উমাদেবী "একটা থাপ্পড় মারবো... যা বলছি করবে চুল দাঁড়ি কাটছো না কেন? কেউ মারা গেছে?"
"মা, বলেছি না আমার সামনে এসব বলবে না"
এবার প্রতিবাদ করে আদিত্য আর সঙ্গে সঙ্গে পাশ থেকে বাদশাও একবার ভৌ করে ডেকে ওঠে কিন্তু তার উদ্দেশ্যে উমাদেবী এবং এই ডাক গর্জন বা ধমক কোনোটাই নয় সে যেন বলছে "আমার মনিবকে বকছো কেন?"। উমাদেবী যেন বুঝতে পারলেন এবার তার ধমকের উদ্দেশ্য বাদশা "অ্য্যাই হতচ্ছাড়া বাদশা তুই কাকে কি বলছিস? মনিবের ভক্ত হয়েছে বলি সারাদিন কিছু খেয়েছিস? নাকি মনিব নিজেও খায়নি আর তোকেও খেতে দেয়নি?, চলো এবার খেয়ে আমাকে উদ্ধার করবে চলো আর তুমি আগে চেহারার জঙ্গল সাফ করে এসো, একেবারে ছোটো করে চুল ছাটবে আর দাঁড়ি গোঁফ পুরো পরিষ্কার করে কামাবে"। শেষের কথাটা অবশ্য আদিত্যকে বলা, সে আরেকবার আপত্তি করতে গিয়েছিল কিন্তু মায়ের রাগী দৃষ্টির সামনে আর কিছু না বলে চুপচাপ বেড়িয়ে যায় বাদশাও চুপ করে মনিবের পিছু পিছু চলে যায়।
"দেখো হতচ্ছাড়া কুকুরটা আবার পিছনে যাচ্ছে"
উমাদেবীর এই অগ্নিমূর্তি দেখে প্রীতির সঙ্গের যুবতীরা হতবাক হয়ে গেছে যে লোকটা আর তার পোষ্যকে সবাই ভয় পায় সেই লোকটা যে মায়ের সামনে এরকম নরম হয়ে যায় এটা তারা বিশ্বাস করতে পারছে না, কিন্তু উমাদেবী পরক্ষণেই আবার হাসিমুখে সবাইকে ভিতরে ডাকেন তারপর ওদের মুখের অবস্থা বুঝে বলেন "আমার ছেলে ওরকম‌ই নিজের দিকে খেয়াল নেই, আর কুকুরটাও হয়েছে সেরকম ওকে না ধমকালে নিজের খেয়াল রাখবে না তোমরা কিছু মনে কোরো না"।
"তোমার ধমকেও তো দাদার গোমরামুখ কাটছে না" 
প্রীতি হাসতে হাসতে কথাটা বললো, সঙ্গে সঙ্গে উমাদেবী মেয়েকে ধমক দিলেন "খবরদার প্রীতি একদম দাদাকে গোমরামুখো বলবি না"। "এটা আমার কথা নয় অন্য অনেকের কথা" প্রীতি লক্ষ্য করলো কথাটা শুনে অদ্রিজা লাল হয়ে গেল।
অনেকরাতে বিছানা ছেড়ে উঠে পড়ে আদিত্য আজ‌ও তার চোখে ঘুম নেই অনেকক্ষণ এদিক ওদিক করে বিছানা থেকে নেমে আসে, গায়ে খালি একটা ট্রাউজারস পরা ,এবার তার উপর একটা স্যাণ্ডো গেঞ্জি চাপিয়ে দরজা খুলে বাইরে বেরিয়ে সিঁড়ির দিকে যায় উদ্দেশ্য খোলা ছাদে গিয়ে খানিকক্ষণ খোলা হাওয়া আর একটা সিগারেট খাবে। সিংহ রায় প্যালেসটার বয়স প্রায় ৭০-৮০ বছর হয়ে গেল কিন্তু এখনো যে মাথা উঁচু করে টিকে আছে তার কারণ এবাড়িতে বসবাসকারী সিংহ রায়রা নিয়মিত বাড়ির পরিচর্যা করেন নিয়মিত পরিদর্শন করা হয়, বাড়িটা  পুরনো হলেও অনেক জায়গায় নতুনত্বের ছাপ বাকি জায়গাগুলোতেও অবহেলার চিহ্নমাত্র নেই। প্যালেসের একদম উপরে পুরোটা জুড়েই রেলিং ঘেরা ছাদ, সিমেন্টের গাঁথনির উপরে নানা রকম মূর্তি বসানো আছে সেগুলোর বয়স‌ও বাড়ির সমান, কার্ণিশ ঘেঁষে বেশকিছু ফুলগাছের টব লাগানো ছাদ থেকে চারিদিকে অনেকটাই দৃশ্যমান হয় বাড়ির সামনের দিকে গ্ৰামটা দেখা যায় তেমনি পিছনে দূরে জঙ্গল এবং পাহাড়‌ও দেখা যায়।
আদিত্য একদম উপরে তিনতলার কয়েকটা ঘরের একটায় থাকে একা তার নীচের দোতলায় অতীন্দ্র বাবু।আর।তার স্ত্রী এবং আরেকটা ঘর প্রীতির যেটায় এখন প্রীতি ও তার বন্ধুরা আছে অবশ্য তার জন্য একটা চৌকির ব্যাবস্থাও করা হয়েছে। তিনতলার উপরে আর ঘর নেই ছাদে যাওয়ার সিঁড়ি ছাদে দরজা লাগানো আর সিঁড়ির পাশে কিছুটা জায়গা জুড়ে গুদাম ঘর।
ছাদের কার্ণিশের কাছে গিয়ে একটা সিগারেট ধরায় সে আজকাল রাতে তার তেমন ঘুম হয় না বৃদ্ধ বয়সে অনেকেরই চোখে ঘুম থাকে না এটা সে শুনেছে কিন্তু সে বৃদ্ধ হয় এখনো ৩০ ও হয়নি তবুও। নিদ্রাদেবী তাকে পরিত্যাগ করেননি শুধু তাকে নিয়ে খেলছেন যেমন কোনো অভিমানী প্রেমিকা খেলা করে তার প্রেমিকের সাথে, নিদ্রাদেবীর অভিমান হয়েছে আদিত্যর উপরে কারণ তাকে নিজের কাছে পেতে পেতেও হাতছাড়া করতে হয়েছে।
নিদ্রাদেবী এসেছিলেন আদিত্যকে নিয়ে চিরনিদ্রায় চলে যেতে চিরকালের জন্য নিজের কাছে রেখে দিতে কিন্তু পারেন না কাপ আর ঠোঁটের দূরত্বটা রয়ে গেছে তাই হয়তো আর সহজে ধরা দেননা তিনি, এটা এখন আদিত্যর গা স‌ওয়া হয়ে গেছে। সিগারেটে টান দিতে দিতে কখনো আকাশের চাঁদ তো কখনো বাড়ির পিছনের দূরের পাহাড় জঙ্গলের দিকে তাকিয়ে থাকে ভাবতে থাকে নিজের ফেলে আসা জীবনের কথা।
কি চেয়েছিল সে আর কি হয়েছে আজ পুরো নর্থবেঙ্গল জুড়ে তার নাম ছড়িয়ে আছে অথচ সে তো এই নাম পরিচয় চায়নি একটা সাধারণ জীবন চেয়েছিল সে যেখানে আর পাঁচজন সাধারণ মানুষের মতোই হেসেখেলে জীবন কাটাবে কিন্তু এখন তার জীবনটা ওই দূরের অন্ধকারাচ্ছন্ন জঙ্গলের মতো অন্ধকারে ভরে গেছে, ওখানে যেমন মাঝে মাঝে পূর্ণিমার চাঁদের আলো আলোকিত করে তার জীবনেও কয়েকজন আলোকিত করে রেখেছে তবে জঙ্গল জানে পূর্ণিমার আলো তার প্রতিদিনের নয় মাঝে মাঝে হারিয়ে ফেলবে আবার ফিরে পাবে কিন্তু আদিত্য সেও ভয় পায় তার জীবনের এই আলো প্রদানকারীদের হারিয়ে ফেলতে কারণ সে জানে তার জীবন ওই অন্ধকার জঙ্গলের থেকেও অন্ধকার সে হারিয়ে ফেললে আর ফিরে পাবে না।
হটাৎ পাশে বাদশার গরগরানি শুনে তন্ময়তা ভেঙে জেগে ওঠে আদিত্য তাকিয়ে দেখে বাদশা কার্ণিশের উপরে সামনের দুটো পা তুলে দাঁড়িয়ে আছে তার দৃষ্টি সটান নীচের দিকে হিংস্র দৃষ্টি দিয়ে তাকিয়ে আছে সে যে দৃষ্টি শিকারীর চোখে থাকে শিকারের গন্ধ পেলে।
যেদিকে বাদশা তাকিয়ে আছে সেটা বাড়ির পিছন দিক এদিকে একটা বাগান আছে কিছুটা অংশ জুড়ে বিভিন্ন রকম ফুলগাছ লাগানো কিছুটা জুড়ে সবজি আর কিছুটা ফলের গাছ লাগানো আছে,বাগানের দেখাশোনা করার জন্য দুজন মালি রাখা আছে তারাও ওখানেই থাকে ওদিকে কোয়ার্টার, বাথরুম করা আছে এছাড়া সবসময়ের জন্য কাজের লোক সনাতন যে অতীন্দ্র বাবুর থেকেও বছর কয়েকের বড়ো হবেন তিনি থাকেন একলা মানুষ বিয়ে থা করেননি, সিংহ রায়রাই তার পরিবার অতীন্দ্র বাবু ডাকেন সনাতন দা বলে, আদিত্য আর প্রীতি তাকে সনাতন জ্যেঠু বলে ডাকে
মালিদের আর সনাতন জ্যেঠুর কোয়ার্টারের সামনে ইলেকট্রিক লাইট থাকে কিন্তু এত রাতে নিভিয়ে তারা ঘুমিয়ে পড়েছে বাগানেও কয়েকটা লাইটপোস্ট বসানো আছে কিন্তু তাতে লাইট জ্বলছে না এতক্ষণ আদিত্য দেখলেও অতটা মাথা ঘামায়নি বোধহয় তার অবচেতন মন নিঃসঙ্গ আর অন্ধকার চাইছিল সেও এই অন্ধকারে অন্য জগতে বিচরণ করছিল কিন্তু বাদশার ডাকে সে বাস্তব জগতে ফিরে আসে,প্রথমটায় আদিত্য বুঝতে পারে না বাদশা ওদিকে কি দেখছে,  অন্ধকারে একটু চোখটা সয়ে আসতেই বুঝতে পারে এইজন্যই তো সে বাদশাকে কাছে রেখেছে সে যা বুঝতে পারেনি বাদশা পেরেছে,বাগানের অন্ধকারে কয়েকটা কালো মূর্তি চুপিসারে আস্তে আস্তে এগিয়ে আসছে মূল বাড়িটা লক্ষ্য করে।
লোকগুলোর হাতে টর্চ মাঝে মাঝে সেটা জ্বালিয়ে রাস্তা দেখে নিচ্ছে, মুখে কালো কাপড় বাধা আস্তে আস্তে এগোচ্ছে ,এরা যে বন্ধু বা শুভাকাঙ্ক্ষী নয় সেটা বুঝতে আদিত্যর খুব একটা বেগ পেতে হলো না, বাদশা বোধহয় একটা ডাক ছাড়তে যাচ্ছিল কিন্তু আদিত্য বাঁধা দেয়
"উঁহু কোনো আওয়াজ নয় বাড়ির সবাই জেগে যাবে, চল নীচে চল ওদের সাথে মোলাকাত করে আসি"।
আদিত্য সিঁড়ি দিয়ে দ্রুত নীচে নামতে শুরু করে সাথে বাদশা, নামতে নামতে বাদশাকে বলে "নর্থবেঙ্গলে তোর দাপট কমে যাচ্ছে রে, সবাই জানে যে তুই এই বাড়িতে পাহারা দিস তার পরেও ওরা ঢুকতে সাহস করেছে, তোর আর মানসম্মান র‌ইলো না'।
কথাগুলো এমনভাবে বলে যেমন ভাবে কেউ তার বন্ধু বা পরিচিতকে নিজের শব্দের দ্বারা খোঁচা মেরে রাগীয়ে মজা নেয়, একদম নীচের তলাটা আসলে ড্রয়িংরুম সেখানে দুটো দরজা একটা বাড়ির মেইন গেট অপরটা পিছনদিকে বাগানে যাওয়ার জন্য দুদিকেই দরজার ওপারে বারান্দা এবং তারপর অল্প কয়েকটা সিঁড়ি আছে, আদিত্য পিছনের দরজা দিয়ে বেরিয়ে বারান্দায় আসে তারপর দরজাটা বাইরে থেকে বন্ধ করে বাদশাকে বলে "তুই এখানে থাক কেউ ঢুকতে চাইলে তাকে সামলাবি আমি এগিয়ে যাচ্ছি"।
সিঁড়ির মুখে একপাশে একটা সুইচবোর্ড আছে আদিত্য একটা সুইচ টেপায় সিঁড়ির মুখে উপরে একটা লাইট জ্বলে উঠলো, ফলে আদিত্যর কাউকেই দেখতে অসুবিধা হলো না, জনা পাঁচেক লোক এসেছে। ততক্ষণে আগন্তুকরা প্রায় চলে এসেছে কিন্তু হটাৎ করে লাইট জ্বলে ওঠায় হকচকিয়ে যায় এবং পরক্ষণেই দেখে তাদের সামনে বিকটাকৃতি সারমেয় এবং তার মনিব সাক্ষাৎ যম আদিত্য দাঁড়িয়ে আছে। তারা ভাবতেই পারেনি যে এইভাবে বাঁধা পাবে, ভাবতেই পারেনি যে এতরাতে আদিত্য জেগে থাকবে এবং তাদের সামনে এসে দাঁড়াবে তারা জানে আদিত্যর সামনে তারা পাঁচজন কিছুই না তারসাথে আদিত্যর পিছনে সাক্ষাৎ কালান্তক দাঁড়িয়ে আছে।
লোকগুলো পরস্পরের মুখ চাওয়াচাওয়ি করছে দেখে আদিত্য নীচু স্বরে বলে "কে পাঠিয়েছে তোদের প্রতাপ সরকার?"
কিন্তু লোকগুলো কিছু না বলে চুপ করে আদিত্যর দিকে তাকিয়ে থাকে, আদিত্য আবার কথা বলে "আর তোরাও বোকার মতো চলে এলি মরতে"।
লোকগুলো একথার‌ও উত্তর দেয় না উল্টে তাদের হাতে ধারালো ছুরি, চপার এইসব অস্ত্র চলে আসে, সেটা দেখে বাদশা গরগারানি শুরু করলে আদিত্য বলে "উঁহু বাদশা আওয়াজ নয়", তারপর সামনের লোকগুলোকে উদ্দেশ্য করে বলে "খুব ভালো করেছিস আগ্নেয়াস্ত্র আনিসনি ওতে আওয়াজ হয় তাতে সবার ঘুম ভেঙ্গে যেত আর আমি চাইনা সেটা হোক"।
একজন হটাৎ ছুরি তুলে আক্রমণ করে আদিত্য এরমধ্যেই সিঁড়ি দিয়ে নেমে এসেছে সে চকিতে আঘাতটা এড়িয়ে যায় কিন্তু পরক্ষণেই আরেকজন এগিয়ে আসে চপার নিয়ে এবারে আদিত্য তার বুকে একটা লাথি মারে লোকটা ছিটকে মাটিতে পড়ে, এবারে বাকিরা সবাই একসাথে আক্রমণ করে প্রথমে বেশ কিছুক্ষণ আদিত্য ওদের পাল্টা আঘাত করতে পারে না শুধু ওদের আঘাতগুলো এড়িয়ে নিজেকে বাঁচাতে থাকে।
এরমধ্যেই একজন একটু স্লো হলে সেই সুযোগটা আদিত্য নেয় তাকে এক ঘুষিতে ছিটকে দেয় কিন্তু আরেকজনের ছুরি আড়াআড়িভাবে তার পিঠের একটা জায়গায় লাগলো সঙ্গে সঙ্গে সেখান থেকে রক্ত বেরিয়ে গায়ের গেঞ্জিটা লাল হয়ে গেল।
মনিবের রক্তপাত দেখে বাদশা একবার গর্জন করে ওঠে পরক্ষণেই আদিত্য ধমক লাগায় "বাদশা"। বাদশা চুপ হয়ে যায় আবার লড়াই শুরু হয় কিন্তু এবার আদিত্য আরও বেশী আক্রমণাত্মক লোকগুলোর কয়েকজন আদিত্যর হাতে ঠ্যাঙানি খেয়ে মাটিতে পড়ে আছে এরই মধ্যে একজন ছুরি হাতে আক্রমণ করলো আদিত্য পরপর দুবার এড়িয়ে গেল কিন্তু তৃতীয় বারে মাথাটা এড়িয়ে লোকটাকে ডান পা দিয়ে লাথি মারতে গেলে চকিতে ছুরিটা আদিত্যর হাঁটুর কিছুটা উপরে গেঁথে দেয় ,যন্ত্রনায় আর্তনাদ করতে গিয়েও দাঁতে দাঁত চেপে সহ্য করে সে বা হাঁটু ভাঁজ করে মাটিতে বসে পড়ে অপর পায়ে হাত চেপে ধরে কিন্তু আওয়াজ করে না, তখনই মালিদের কোয়ার্টারের দিক থেকে একজন চিৎকার করে ওঠে,
"ছোটোবাবুকে মেরে ফেললো রে, সনাতন দা বড়ো বাবু..."
চিৎকারে মুহূর্তে কোয়ার্টারের দিকের আলো জ্বলে ওঠে কিন্তু তার আগেই বাদশা লোকটার উপরে ঝাঁপিয়ে পড়েছে তার উদ্দেশ্য আততায়ীর টুঁটি কিন্তু না পেরে প্রথমে লোকটার কবজি ও তারপরে একটা পা কামড়ে ধরেছে, লোকটাও আর্তনাদ করে ওঠে পালাতে চেষ্টা করে কিন্তু পারে না সনাতন আর দুজন মালি লাঠিসোটা নিয়ে বেরিয়ে এসে ওদের ঘিরে ধরে, বেঁধে ফেলেছে এদের মধ্যে যাকে বাদশা আক্রমণ করেছে তার অবস্থা অত্যন্ত খারাপ বাদশা তার পায়ের অনেকটা জায়গা কামড়ে খুবলে নিয়েছে সে আবার কামড়াতে যাবে কিন্তু আদিত্য "বাদশা" ডাক দেওয়ায় ছেড়ে দৌড়ে মনিবের কাছে আসে।
প্যালেসের পিছনের দরজায় দরজায় ঠকঠক আওয়াজ শুনে একজন গিয়ে তাড়াতাড়ি দরজা খুলে দেয় অতীন্দ্র বাবু আর উমাদেবী বেরিয়ে আসেন আর এসেই ছেলেকে জখম ও রক্তাক্ত অবস্থায় দেখে উমাদেবী তাড়াতাড়ি আর্তনাদ করে ছুটে ছেলের কাছে আসেন, অতীন্দ্র বাবুও আসেন আর তাদের পিছনে আসে প্রীতি ও তার বন্ধুরা। অতীন্দ্র বাবু আর সনাতন মিলে আদিত্যকে ধরে ড্রয়িংরুমে নিয়ে এসে বসান, উমাদেবী রীতিমতো কান্নাকাটি শুরু করেছেন।
প্রীতি দাদার পরিচর্যা শুরু করেছে তাকে তার বন্ধুরা হেল্প করছে তারা সবাই ডাক্তারি পাশ করেছে কাজেই এসব নতুন নয়, কোনোমতে ছুরিটা বার করে তুলো চেপে ধরে তারপর আঘাতের জায়গাটা ভালো করে পরিষ্কার করে ব্যাণ্ডেজ বেঁধে দেয়, এরপর এক‌ইভাবে পিঠেও আঘাতের জায়গাটায় ব্যাণ্ডেজ লাগিয়ে দেয় আদিত্য লক্ষ্য করে গম্ভীরমুখে তার শুশ্রূষা করলেও প্রীতির চোখে জল এদিকে উমাদেবীর কান্না থামছেই না, অতীন্দ্র বাবু যদিও নিজেকে সামলে রেখেছেন কিন্তু মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে ছেলেকে এই আহত দেখে তার‌ও কম কষ্ট হচ্ছে না।
ব্যাণ্ডেজ বাঁধা হয়ে গেলে আদিত্য কথা বলে প্রথমে প্রীতির বন্ধুদের উদ্দেশ্যে ধন্যবাদ জানিয়ে তাদের ঘুমাতে যেতে বলে,সবাই চলে গেলেও একজন রয়ে যায় অদ্রিজা, সে রান্নাঘরের দিকে যায়। আদিত্য মায়ের দিকে তাকিয়ে বলে "মা আমি ঠিক আছি তুমি কেঁদোনা"।
"তুই বাইরে গিয়েছিলি কেন? যদি তোর কিছু হয়ে যেত?"
উমাদেবী ধমক লাগান ছেলেকে যদিও কান্না থামেনি, আদিত্য দুহাতে মায়ের চোখের জল মুছে দেয় তারপর বলে "আমি ঠিক আছি আর আমি না গেলে ওরা ভিতরে ঢুকে আসতো"
"তাই বলে একা যাবি?"
এবার প্রীতিও ধমকের সুরে বলে, এর‌ই মাঝে বাদশাও একবার ভৌ করে ডেকে ওঠে সেও আদিত্যকে ধমক দিচ্ছে, অতীন্দ্র বাবুও বলেন যে একা আদিত্যর বাইরে যাওয়া ঠিক হয়নি আদিত্য বোনকে কাছে টেনে বলে "তুইও কাঁদছিস, তোকে বলেছি না তুই কখনো কাঁদবি না"।
"তোর কিছু হয়ে গেলে কি হতো?"
কাঁদতে কাঁদতে কথাটা বলে প্রীতি, আদিত্য বোনের চোখের জল‌ও মুছিয়ে দেয় বলে "আমার বোন ডাক্তার তাহলে আমার কিছু হ‌ওয়া জাস্ট ইম্পসিবল ছিল"। ইতিমধ্যে সনাতন দা এসে জানায় পুলিশ আসছে ওদের নিয়ে যেতে, আদিত্য জানায় বাগানের লাইটগুলো সকালে চেক করে নিতে।
"এই দুধটা খেয়ে নিন আপনার অনেক রক্তপাত হয়েছে"
রান্নাঘর থেকে হলুদ দেওয়া গরম দুধ একটা বড়ো পিতলের গ্লাসে এনে আদিত্যর সামনে ধরে অদ্রিজা বোঝাই যায় যে এ বাড়ির সবকিছু তার অতি পরিচিত, এটা অবশ্য অস্বাভাবিক কিছু নয় অদ্রিজার বাবা সুবিমল চক্রবর্তী আর অতীন্দ্র বাবু দুজনে বাল্যবন্ধু আবার উমাদেবী এবং অদ্রিজার মা চারুলতা দেবীও বান্ধবী ফলে দুই পরিবারের মধ্যে যোগাযোগ অনেক পুরনো, সুবিমল বাবু একজন ডাক্তার তিনি বেশ কিছু বছর দিল্লিতে কাটিয়েছেন তখন দুই পরিবারের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকলেও সম্প্রতি সুবিমল বাবু পরিবার নিয়ে নিজের রাজ্যে ফিরে উত্তরবঙ্গের একটা হাসপাতালে জয়েন করেছেন এবং এখানেই একটা বাড়ি কিনে পাকাপাকি বসবাস শুরু করেছেন ফলে দুই পরিবারের যোগাযোগ আবার শুরু হয়েছে। দুই পরিবারের মেয়ে প্রীতি ও অদ্রিজা প্রায় সমবয়সী দুজনেই ডাক্তারি পড়তে দিল্লিতে গিয়েছিল কিন্তু যখনই ছুটিতে বাড়ি আসতো অদ্রিজার এবাড়িতে নিত্য যাতায়াত ছিল কাজেই এবাড়ির অন্দরমহলের সাথে সে ভালোই পরিচিত।
"কি হলো নিন দুধটা খেয়ে নিন"
আবার আদিত্যকে বলে অদ্রিজা, কিন্তু আদিত্য দুধ নেয় না গম্ভীরমুখে বলে "আমার দরকার নেই আমি ঠিক আছি"। অদ্রিজা কিছু বলার আগেই উমাদেবী আবার ধমক লাগান "চুপচাপ দুধটা খেয়ে নাও নাহলে কিন্তু.."
"মা.."
"চুপচাপ খেয়ে নাও"
আদিত্য আর কোনো কথা না বলে অদ্রিজার হাত থেকে দুধের গ্লাসটা নেয় মা কিছু বললে আদিত্য সেটা ফেলতে পারে না তাই অনিচ্ছা সত্ত্বেও আস্তে আস্তে দুধটা খেতে থাকে। এইসময় বাইরে একটা গাড়ি থামার আওয়াজ শোনা যায় এবং একটু পরেই হন্তদন্ত হয়ে ঢোকেন সুবিমল বাবু এবং চারুলতা দেবী।
সুবিমল বাবুর অবশ্য বিশেষ কিছুই করার ছিল না আঘাতের জায়গাটা পরিষ্কার করা থেকে শুরু করে ব্যাণ্ডেজ বাঁধা সবকিছুই হয়ে গিয়েছিল তবুও উনি একবার চেক করে নিলেন এবং আদিত্যকে একটা ইঞ্জকশন দিলেন টিটেনাসের, সাথে ব্যাথার জন্য পেইনকিলার দুধ খাওয়া শেষে আবার সবাই ধরে আদিত্যকে ওর রুমে নিয়ে এসে বিছানায় শুইয়ে দেয় পিঠে আঘাতের জন্য চিৎ হয়ে না শুয়ে কাত হয়ে শোয়।

গল্পটা কেমন লাগছে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন, এবং যদি ভালো লাগে তাহলে লাইক এবং রেপু দিয়ে উৎসাহিত করবেন, আর যদি খারাপ লাগে তাহলেও সেটা কমেন্ট করে জানাবেন।
Like Reply
(18-06-2023, 08:32 PM)MNHabib Wrote: কোনো জবাব নেই............... ফ্যান্টাস্টিক..............

ধন্যবাদ
I'm the King of Dark
                &
I rule over all Devils
               devil2 devil2
Like Reply
Darun,,,r wait krte prchi na.....
Chaliye jao tumi....
Sera dichho kintu.....
clps
Like Reply
(12-04-2023, 10:15 PM)Monen2000 Wrote: [Image: Picsart-22-12-06-20-20-08-119.jpg]


                            দ্বিতীয় পার্ট
                      ১ম পর্ব


"উমা, ও চলে গেছে আর আসবে না"

সময় প্রবাহমান সে নিজে স্বাধীনভাবে চলতেই থাকে কারো জন্য থামে না, কেউ তাকে থামাতে পারে না সে তার আপন খেয়ালে আপন গতিতে চলতে থাকে চলতেই থাকে তার বিরাম নেই। স্বামীর মুখে শোনা কথাগুলো আজ‌ও কানে ভাসে উমাদেবীর স্বামীর কথাটা আজ‌ও তাকে কষ্ট দেয়, সে চলে যাওয়ার প্রায় একবছর হতে চললো সামনে থেকে দেখে সবাই ভাববে যে সবকিছুই আবার আগের মতোই চলছে এইজন্যই তো বলে সময় আর জীবন কারো জন্য থেমে থাকে না, যার নাম এতদিন পুরো নর্থবেঙ্গলে সবার মুখে মুখে থাকতো সে চলে যাওয়ার কিছুদিনের মধ্যেই যেন সবাই তাকে ভুলে গেল, সবার জীবন আবার নিস্তরঙ্গভাবে চলতে থাকে এমনকি সিংহ রায় আর চক্রবর্তী পরিবারের সদস্যদের‌ও আপাতদৃষ্টিতে দেখলে কিছুই পরিবর্তন চোখে পরবে না, কিন্তু এই দুই পরিবারের সদস্যরা জানে তাদের জীবনে কতটা পরিবর্তন এসেছে।
যেমন অতীন্দ্রবাবু ছেলেকে হারিয়েছিলেন অনেক বছর আগে কিন্তু তারপর সেই জায়গা অনেকটাই পূরণ করেছিল সে এমন একজন ছিল যাকে তিনি চোখ বন্ধ করে ভরসা করতেন কিন্তু মুহূর্তের দুর্বলতায় একদিন সেই ভরসার দেয়ালে চিড় ধরলো আর তারপর সেই দেওয়াল ভেঙে পরলো। যেদিন সে চলে গেল সেদিন অনেক চেষ্টা করেও নিজের চোখের জল আটকাতে পারেননি তিনি, একান্তে আজ‌ও নিজেকে দোষী ভাবেন অতীন্দ্রবাবু সেদিন যদি তার বিশ্বাসের ভিত দুর্বল না হতো তাহলে হয়তো তাকে আটকাতে পারতেন কিন্তু এখন আর উপায় নেই সে চলে গেছে।
তারপর  উমাদেবী, সাত সাতটা বছর তিনি বুঝতেই পারেননি যে তার ছেলে আর নেই যে তার সামনে আছে সে তার ছেলে নয়, যখন তিনি জানলেন তখন বেমালুম সাত বছরের কথা ভুলে গেলেন আর যখন তার ভুলটা ভাঙলো তখন অনেক দেরী হয়ে গেছে সে চলে গেছে। তিনি জানতে চেয়েছিলেন তার বিষয়ে, জানতে চেয়েছিলেন কেন তাকে নিয়ে এসেছিলেন অতীন্দ্রবাবু উত্তরে তার স্বামী অতীন্দ্রবাবু তাকে জানালো যে তাকে তিনিই নিয়ে এসেছিলেন যাতে উমাদেবী ছেলের শোকে অসুস্থ না হয়ে পড়েন। এখন তার খুব ইচ্ছে করে তাকে একবার বুকে টেনে নিতে যেমনটা এই সাতবছর করতেন কিন্তু সেটা হ‌ওয়ার নয় কারণ তখন সে চলে গেছে, সে যে তার ছেলে নয় এটা জানার পরে কত কথা শুনিয়েছেন এমনকি থাপ্পড় পর্যন্ত মেরেছিলেন, ছেলেটা মুখ বুজে সব সহ্য করেছে এমনকি প্রীতির কিডন্যাপের পিছনেও তাকে সন্দেহ করেছিলেন অথচ সেই তার মেয়েকে উদ্ধার করে তার কাছে ফিরিয়ে দিয়ে চলে গেল। যাওয়ার আগে একবার দেখা পর্যন্ত করে যায়নি এতটাই অভিমান হয়েছিল তার, উমাদেবী স্বামীর মুখে শুনেছেন যে ছেলেটার খুব অভিমান, সেই অভিমানেই হয়তো সে চলে গেছে আর এখন সেই অভিমান ভাঙিয়ে তাকে ফেরত নিয়ে আসার কোনো উপায় নেই।
পরিবর্তন এসেছে প্রীতি আর নীলাদ্রির জীবনেও, উমাদেবীর মতো প্রীতিও জানতো না যে তার দাদা অনেক আগেই মারা গেছে যখন জানলো তখন তার মনে রাগ আর ঘৃণা স্থান নিল, কত‌ অপমান‌ই প্রীতি করেছে তাকে অথচ আজ সে না থাকলে তাকে হয়তো কোনো নিষিদ্ধপল্লীতে থাকতে হতো, আজ যখন প্রীতি হাসপাতাল থেকে বাড়ি আসে তখন মাঝে মাঝে তার মনে হয় এখনই হয়তো সে এসে বলবে "তোর মুখ শুকনো কেন বলেছি না তুই শুধু হাসবি কোনো সমস্যা থাকলে আমাকে বল আমি আছি তো", কিন্তু না আজ আর কেউ বলে না আর কখনো কেউ বলবে না আর কখনও কেউ তার মাথায় স্নেহ মাখানো ভরসা দেওয়ার হাত রাখবে না কোনোদিন‌ও না। এক দাদাকে তো অনেক আগেই হারিয়েছে কিন্তু এখন এই দাদাকেও হারিয়ে ফেলেছে তার দাদার শূন্যতা সে পূরণ করেছিল কিন্তু তার শূন্যতা পূরণ হবে না।
কেউ তাকে দোষারোপ না করলেও নীলাদ্রি জানে যা হয়েছে সেটা তার জন্যই হয়েছে সেই একজন মায়ের থেকে তার ছেলেকে আর একজন বোনের থেকে তার দাদাকে কেড়ে নিয়েছে, সে চাইলে আলাদাভাবে তার সাথে কথা বলতেই পারতো কিন্তু সেটা না করে তাকে সম্পূর্ণ ভুল বুঝে একের পর এক ভুল করে গেল যেগুলো শোধরানোর কোনো উপায় তার জানা নেই। আজ‌ও একটা অপরাধবোধ তাকে কুঁড়ে কুঁড়ে খায় আজ‌ও সে অতীন্দ্রবাবু, উমাদেবী আর প্রীতির চোখে চোখ রেখে কথা বলতে পারে না। নিজের বন্ধুর প্রতি ভালোবাসা দেখাতে গিয়ে সে আরেক বন্ধুকে হারিয়ে ফেলেছে, বন্ধুই তো ছিল সে, তার ভালোবাসার মানুষটিকে অক্ষত অবস্থায় তার কাছে তো সেই ফিরিয়ে দিয়েছিল, যাওয়ার আগে মনোহরবাবু আর মলয়ের বিরুদ্ধে সমস্ত প্রমাণ সে নীলাদ্রির হাতে তুলে দিয়ে যায় এমনকি তার "আইনের ফাঁক‌ও আছে" পরামর্শ টার আসল মানে বুঝতে পেরে সেটা মেনে সে মনোহরবাবু আর মলয়ের এনকাউন্টার করে প্রীতি আর সিংহ রায়রা শুধু নয় আরও অসংখ্য লোকের জীবন নিরাপদ করেছে কিন্তু তবুও তার মনে শান্তি নেই, তাকে খোঁজার জন্য নিজস্ব সোর্স কাজে লাগিয়েও তার খবর পায়নি, অতীন্দ্রবাবুকেও জিজ্ঞেস করেছিল তার সম্বন্ধে কিন্তু প্রতিবার‌ই অতীন্দ্রবাবু এক‌ই কথা বলেছেন "আমি ওর কাছে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ যে ওর আসল পরিচয় কখনো কাউকে দেবো না, তাই ওর পরিচয় বা ওর অতীত কখনো কাউকে বলতে পারবো না" তবুও নীলাদ্রি চেষ্টা করে যাচ্ছে তাকে খুঁজে বার করার।
এদের ছাড়া আরও একজন আছে যার জীবনে বিরাট পরিবর্তন এসেছে যদিও সেটা বাইরে থেকে দেখে বোঝার উপায় নেই আর তিনি হলেন ডক্টর সুবিমল চক্রবর্তীর মেয়ে ডক্টর অদ্রিজা চক্রবর্তী। তার বাবা সুবিমলবাবু ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠেছেন, স্বামীকে ফিরে পেয়ে  চারুলতা দেবীও সুস্থ হয়ে উঠেছেন সবকিছু ফিরে পেলেও অদ্রিজার মুখের হাসি ফিরে আসেনি যেটা নিজের বাবার মৃত্যুসংবাদ শুনে চলে গিয়েছিল। কিন্তু এখন বাবাকে ফিরে পেলেও সে তাকে হারিয়ে ফেলেছে যে তার বাবাকে ফিরিয়ে দিয়েছে যাকে সে প্রথম দেখাতেই তার হৃদয় সমর্পণ করেছিল, সেই কবে কিছু বছর আগে প্রথম দেখা সদাগম্ভীর, সদারাগী মানুষটাকে তখন অবশ্য জানতো যে সে প্রীতির দাদা সেই ভালোলাগা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেতে থাকে কিন্তু কখনো বলা হয়নি, বলতে সাহস হয়নি। তার রাগ তার গাম্ভীর্য তার অ্যাটিটিউড সবকিছুই ভালো লাগতো অদ্রিজার। যখন জঙ্গলের ভিতর থেকে কোলে তুলে নিয়ে এলো সে অদ্রিজা একদৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল তার রাগী মুখের দিকে তার মনে হচ্ছিল যদি সময় ওখানেই ওভাবেই থেমে যেত কিন্তু সেটা হয়নি আর তারপর তার বাবার হত্যার অভিযোগ উঠলো তার বিরুদ্ধে, এটাও সামনে এলো যে সে আদিত্য সিংহ রায় নয়, সবার মতো অদ্রিজা‌ও ভুল বুঝলো তাকে এমনকি গায়ে হাত পর্যন্ত তুলেছিল কিন্তু সেই তার বাবাকে তার কাছে ফিরিয়ে দিল, ফিরিয়ে দিয়ে নিজে চলে গেল, আজ‌ও নিজের বন্ধ রুমের ভিতরে একাকী নিঃসঙ্গ অবস্থায় বিছানার বালিশে তার কান্নার শব্দ চাপা পরে যায়। আজ‌ও অদ্রিজার খালি একটাই চাওয়া একটাই প্রার্থনা জীবনে যেন তার সাথে অন্তত একবার আবার দেখা হয় যাতে সে অন্তত ক্ষমাটুকু চাইতে পারে, অদ্রিজা জানেনা যে তার এই ইচ্ছা কোনোদিন পূরণ হবে কি না। তবে অপেক্ষা করতে দোষ কি? অদ্রিজা জানে সে যা ভুল করেছে তাতে এজীবনে তাকে হয়তো পাবে না কিন্তু সে নিজেকে অন্য কারো হতে দেবে না এইজন্মে না হোক কোনো না কোনো জন্মে তো তাকে পাবেই অদ্রিজা ততদিন অপেক্ষা করবে সে।
সময় যত এগোতে লাগলো নর্থবেঙ্গল থেকে ধীরে ধীরে এই নকল আদিত্য সিংহ রায়ের স্মৃতি ফিকে হয়ে আসতে থাকে তার অস্তিত্ব শুধুমাত্র গুটিকয়েক লোকের স্মৃতিতেই থেকে গেল। সে কোথা থেকে এসেছিল কোথায়‌ই বা চলে গেল এটা নিয়ে কারো কোনো ভাবনা নেই, যে ছেলেটা সাত সাতটা বছর এখানে কাটিয়ে এদের‌ই একজন হয়ে উঠেছিল সে যেন এক মূহুর্তেই হারিয়ে গেল।

কলকাতার নিউ আলিপুরের ব্যানার্জি বাড়িতে আজ‌ও অন্যান্য দিনের সকালের মতোই ব্যাস্ততার ছাপ বাড়ির কর্তা অভিরূপ ব্যানার্জি আর ছেলে অরুণাভ ব্যানার্জি অফিসে যাবে, অভিরূপ বাবুর বয়স ৫৮ আর অরুণাভর বয়স ৩১ বছর, ছোটোরা অর্থাৎ অরুণাভ‌র ছেলে মেয়ে যাদের বয়স একজনের ৫ বছর আর অপরজনের বয়স ৩ বছর তারা কলেজে যাবে, এছাড়া অভিরূপ বাবুর বোন মণিমালা দেবী এবং তাঁর স্বামী প্রীতম‌ও এই ব্যানার্জি বাড়িতেই থাকেন আর থাকে তাদের ছেলে সুশান্ত যার বয়স অরুণাভর থেকে বছর দুই তিন ছোটো সেও অরুণাভ‌র সাথেই কাজ করে। ব্যানার্জি পরিবারের নিজস্ব বিজনেস ব্যানার্জি ক্রিয়েশনস্‌এই কাজ করে প্রত্যেকে। অভিরূপ ব্যানার্জি তার নিজের হাতে গড়ে তোলেন কোম্পানিটি এতদিন তিনিই কোম্পানির মাথায় বসে সবকিছু পরিচালনা করেছেন তবে এবার হয়তো নিজের ছেলের হাতে ব্যাটন তুলে দেবেন।
বাড়ির মহিলারাও নিজেদের কাজে ব্যাস্ত বাড়ির কর্ত্রী শ্রীতমা ব্যানার্জি অর্থাৎ অভিরূপ বাবুর স্ত্রী রান্নার দিকটা দেখছেন, মণিমালা দেবী বৌদিকে সাহায্য করছেন এবং বাড়ির ব‌উ মৌমিতা অর্থাৎ অরুণাভ‌র স্ত্রী ছেলে মেয়েকে কলেজের জন্য তৈরি করছে, মৌমিতার বয়স ৩০ এর মতো ছিমছাম চেহারা গায়ের রং খুব ফর্সা না হলেও কালো‌ও না।
শ্রীতমাদেবী কাজ করছেন যদিও কিন্তু ওনার মুখ আজ একটু গম্ভীর এমনিতে বেশ শান্ত হাসিখুশি স্বভাবের মহিলা কিন্তু আজ একটু গম্ভীর, সবার খাবারের ব্যাবস্থা হয়ে যাওয়ায় মণিমালা দেবী কিচেন থেকে বেরিয়ে যাচ্ছেন কিন্তু তিনি থমকে গেলেন এটা দেখে যে শ্রীতমাদেবী তখন গ্যাসের উপরে দুধ জ্বাল দিতে বসালেন এবং সে দুধের পরিমাণ অনেকটাই, একটু অবাক হলেন মণিমালা দেবী জিজ্ঞেস করলেন
"এত দুধ কিসের জন্য বৌদি?"
"পায়েস বানাবো" শান্ত কণ্ঠে উত্তর দেন শ্রীতমাদেবী।
"কেন, কোনো পূজো আছে নাকি?"
"না অন্য দরকার আছে"
"দরকার? দাদা খেতে চেয়েছেন বুঝি?"
"না, ঠাকুরঝি তোমার দাদার জন্য না দরকারটা অন্য, তুমি এক কাজ করো আজ সবাইকে তুমি খেতে দাও আমি এদিকের কাজটা সারি আর তুমিও খেয়ে নিও আমি পরে খেয়ে নেবো"।
"বৌদির কি হয়েছে রে দাদা?" ব্রেকফাস্ট টেবিলে খাবার সার্ভ করতে করতে অভিরূপ বাবুকে প্রশ্নটা করলেন মণিমালা দেবী। গৌরবর্ণ শান্ত সৌম্য প্রকৃতির অভিরূপ বাবু খাবারে হাত‌ও দিলেন না তিনি শান্তস্বরেই বলেন "কি আর হবে, পায়েস করতে ইচ্ছে হয়েছে করছে বোধহয় কোথাও পূজো দিতে যাবে তাই আর তুই তো জানিস পূজো দিতে গেলে ও মন্দিরের বাইরে থাকা মানুষগুলোকে কিছু না কিছু খাইয়ে আসে"।
বাকি সময়টা আর কেউ কোনো কথা বললো না খাওয়া হয়ে গেলে একে একে সবাই বেরিয়ে গেল এমনকি মণিমালা দেবীও তার নাকি কোথায় কি একটা কাজ আছে। সবাই বেরিয়ে গেলে অভিরূপবাবু কিচেনে স্ত্রীর কাছে গেলেন, শ্রীতমাদেবী তখনও পায়েস রান্নায় ব্যাস্ত, স্বামীর দিকে না তাকিয়েই বললেন "কি হলো তুমি তো কিছুই খাওনি, কিছু হয়েছে?"
"তুমিও তো খাওনি"
"আমি পরে খেয়ে নেবো"
"ঠিক আছে তাহলে আমিও তখন খাবো"
শ্রীতমাদেবী আর কিছু না বলে পায়েস তৈরীতে মনোনিবেশ করলেন, একটুক্ষণ চুপ থেকে অভিরূপবাবু স্ত্রীকে ধরে নিজের দিকে ঘুরিয়ে বললেন "শ্রী, তুমি যেমন ওর মা আমিও কিন্তু ওর বাবা আজ যে ওর জন্মদিন সেটা সবাই ভুলে গেলেও তুমি ভোলোনি আর আমিও না"।
কথাটা শুনে কয়েক মুহূর্ত থমকে থাকলেন শ্রীতমাদেবী আর তারপর‌ই স্বামীর বুকে কান্নায় ভেঙে পরলেন, কাঁদতে কাঁদতে বললেন "তোমার মনে আছে?"
"আমি ওর বাবা আমি ভুলে যাবো এটা হতে পারে? প্রতিবছর তুমি ওর জন্মদিনে পায়েস বা কিছু ভালো রান্না করে গরীব মানুষ দের বা কুকুরদের খাওয়াও ঠিক যেমন অনি সবাইকে খাওয়াতো। অনিও তো ওদের পাশে থাকতো দেখাশোনা করতো" অভিরূপ বাবু শান্ত স্বরে বলেন। শ্রীতমা দেবীর কান্না আরও বেড়ে যায় কাঁদতে কাঁদতেই বলেন "আজ ওর জন্মদিন, ছেলেটা পায়েস খেতে খুব ভালোবাসতো ঘুরতে যাওয়ার আগে পায়েস খেতে চেয়েছিল বলেছিলাম ফিরে এলে করে খাওয়াবো কিন্তু আমার ছেলেটা আর ফিরলো না আট বছর হয়ে গেল... কেন ওকে যেতে দিলাম? সেদিন যদি ওকে যেতে না দিতাম তাহলে আমার অনি আমার কাছেই থাকতো" শ্রীতমাদেবী স্বামীকে দুহাতে আঁকড়ে ধরেন, অভিরূপ বাবু স্ত্রীর মাথায় হাত বুলোতে বুলোতে বলেন "কিন্তু ও যদি তোমাকে এইভাবে কষ্ট পেতে দেখতো তাহলে খুব কষ্ট পেতো তাই নিজেকে সামাও"।
"কিভাবে সামলাবো... আমার ছেলে আমার কাছে নেই"।
"তবুও নিজেকে সামলাতে হবে শ্রী, তুমি তো জানো অনি সবসময় তোমাকে হাসিখুশি দেখতে চাইতো"
"আমার ছেলেটা আমাকে ছেড়ে কেন চলে গেল?" শ্রীতমাদেবীর কান্না থামে না, অভিরূপবাবু স্ত্রীর মাথায় হাত বোলাতে বোলাতে বলেন,
"ছিঃ শ্রী এভাবে কেউ কাঁদে? আজ না অনির জন্মদিন ওর জন্মদিনে তুমি কাঁদবে?"

"জানো আমার এখনো কেন যেন মনে হয় সেদিন ওখানে এমন কিছু হয়েছিল যেটা অরু আমাদের থেকে লুকিয়ে যাচ্ছে" ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে বলেন শ্রীতমাদেবী।
"এসব তুমি কি বলছো শ্রী, অরু কেন লুকোবে অনি ওর ভাই তাছাড়া মৌমিতাও তো ছিল ,ও তো অনিকে ভালোবাসতো"।
"ভালোবাসা না ছাই দেখলে না মাস কাটতে না কাটতেই অনিকে ভুলে অরুকে বিয়ে করে নিল" শ্রীতমাদেবীর গলায় ক্ষোভ, অভিরূপবাবু তখনও শান্তস্বরে বলেন "শ্রী এসব কি বলছো তুমি, আমরা সবাই জানি অনিকে হারানোর পরে মৌমিতার অবস্থা কেমন ছিল শেষে অরু‌ই ওকে বুঝিয়ে আবার স্বাভাবিক অবস্থায় ফেরত নিয়ে আসে"।
"আমি ওসব কিছু জানিনা, আমার ছেলে আমার কাছে নেই ওদের সাথে ঘুরতে গিয়েছিল কিন্তু ওদের সাথে ফেরেনি"।
"ওটা একটা অ্যাক্সিডেন্ট ছিল শ্রী"।
"জানো আমার কেমন যেন মনে হয় যে আমার অনি বেঁচে আছে"।
"এ তুমি কি বলছো শ্রী, অনি বেঁচে থাকলে নিশ্চয়ই ফিরে আসতো, ও বেঁচে থাকলে আমিও কম খুশী হতাম না অনি তো আমার‌ও ছেলে কিন্তু এটা আমাদের মেনে নিতেই হবে যে অনি আর নেই"
"না গো আমি ওর মা আমি ওকে দশমাস পেটে ধরেছি আমার ভুল হবে না, আমার এখনো মনে হয় অনি বেঁচে আছে কিন্তু এমন কিছু হয়েছে যার জন্য ও বাড়ি আসছে না তুমি তো জানো ছেলেটা আমার বড্ড অভিমানী, মুখে কাউকে কিছু বলবে না সব সহ্য করবে কিন্তু নিজেকে সরিয়ে নেবে"।
"কিন্তু অভিমান কেন? কার উপরে?"
"আমি জানিনা আমার খালি মনে হয় যে অনি বেঁচে আছে, আমি তো মা আমি বুঝতে পারি ও বেঁচে আছে কিন্তু খুব কষ্টে আছে"।
"শ্রী এটা তোমার মনের ভুল ধারণা, অনি আর নেই যদি থাকতো তাহলে আমিও কম খুশী হতাম না ও তো আমারও ছেলে, কিন্তু ও আমাদের ছেড়ে চলে গেছে যদি ও বেঁচে থাকতো তাহলে কক্ষনো আমাদের ছেড়ে দূরে থাকতো না, ওই দেখো তোমার পায়েস হয়ে গেছে এবার চলো আমিও যাবো তোমার সাথে"। স্ত্রীর কান্না থামাতে কিছুটা সফল হলেও অভিরূপবাবু জানেন তার কান্না থামানোর কেউ নেই যদিও সে কান্না তার ভিতরে সেটা কেউ দেখতে পাবে না, একজন মায়ের কাছে সন্তান হারানোর দুঃখ যতটা একজন পিতার কাছে তার থেকে কিছুমাত্র কম নয়।
দক্ষিণ কলকাতার ঢাকুরিয়া এলাকার বিধান রায় লেন নামে অভিজাত এলাকা হলেও এখানে অনেক মধ্যবিত্তরাও বসবাস করে, তবে খুবই শান্তিপূর্ণ এলাকা প্রত্যেকের সঙ্গেই প্রত্যেকের সদ্ভাব রয়েছে। পুরো পাড়াটার ভিতর দিয়ে রাস্তা চলে গেছে এগুলো পাড়ার ভিতরের রাস্তা বলে গাড়ি চলাচল তেমন নেই তবে পাড়ার বেশ কিছু লোকের নিজস্ব গাড়ি আছে তারাই সেগুলো চালায় আর মাঝে মাঝে কিছু শর্টকাট নেওয়া বাইরের গাড়ি চলে আসে, প্রায়ই রাস্তা দিয়ে বিভিন্ন ফেরিওয়ালা বা ভ্যানে করে সবজিওয়ালারা আসে, এলাকার লোকেরা তাদের থেকে প্রায়শই জিনিস নিয়ে নেয়।
আজ‌ও একটা ভ্যানে সবজিওয়ালা এসেছে তার সামনে বেশ ভিড় জমে উঠেছে দরদাম করে সবজি কিনছে, নিজেদের মধ্যে গল্পগুজব করছে এমন সময় হটাৎ একটা ভয়ার্ত চিৎকার শুনে সবাই চমকে উঠলো,
"আরে বাচ্চাটাকে ধরো ধরো"
সবাই চমকে উঠে দেখে একটা ৫-৬ বছরের বাচ্চা মেয়ে একটা লাল বলকে আনতে প্রায় রাস্তার মাঝখানে চলে গেছে আর উল্টোদিক থেকে একটা মারুতি অস্বাভাবিক দ্রুতগতিতে এগিয়ে আসছে, গাড়িটা বাচ্চাটার আরও কাছে চলে এসেছে সবাই চিৎকার করছে কিন্তু কেউ সাহস করে যাচ্ছে না একজন ছাড়া, একটা ৩২-৩৩ বছরের তরুণ সেদিকে এগোতে যাবে কিন্তু ততক্ষণে গাড়িটা একদম গায়ে উঠে এসেছে সবাই আর্তনাদ করে উঠলো কিন্তু চোখের পলকে রাস্তার ওপাশ থেকে আরেক শক্তসমর্থ তরুণ ছেলে এক দৌড়ে বাচ্চাটাকে কোলে তুলে রাস্তার এপাশে চলে এল আর গাড়িটা নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফুটপাতের উপরে কিছুটা উঠে থেমে গেল।
লোকগুলো গাড়িটাকে ধরতে সেদিকে ছুটে গেলেও গাড়িটাকে ধরতে পারলো না গাড়ির চালক ততক্ষণে আবার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে গাড়ি নিয়ে হাওয়া হয়ে গেল। সবাই তখন গাড়িটার পিছনে ধাওয়া করা ছেড়ে দিয়ে তরুণ ছেলেটার কাছে এল সে বাচ্চাটাকে কোলে নিয়ে দুহাতে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে দাঁড়িয়ে আছে, বাচ্চাটিও আকস্মিক এই ঘটনায় ভয় পেয়ে কান্না জুড়ে দিয়েছে। সবার আগে একটু আগের ছেলেটা এগিয়ে এল এসেই বাচ্চাটিকে নিজের কোলে নিয়ে নিল বোঝাই যাচ্ছে ইনি‌ই বাচ্চাটির বাবা।
"বাচ্চাকে সামলে রাখতে পারেন না?"
কথাটা শুনে বাচ্চার কান্না থামানোর চেষ্টা করতে করতে আগন্তুক ছেলেটির দিকে তাকালো সে ছেলেটির বয়স আন্দাজ করতে না পারলেও এটা বুঝলো বয়স বেশি নয় ফর্সা গায়ের রঙ, মাথায় ব্যাকব্রাশ করা লম্বা চুল ঘাড় হয়ে কাঁধ পর্যন্ত নেমে এসেছে এছাড়া মুখ লম্বা দাঁড়ি গোঁফে আবৃত,শরীরে ফোলানো পেশীর আধিক্য না থাকলেও বেশ সুগঠিত চেহারা চুল দাঁড়ি গোঁফ উসখোখুসখো হলেও জামাকাপড় এবং জুতো বেশ পরিপাটি এছাড়া হাতের ঘড়িটাতেও রুচির ছাপ স্পষ্ট।
"থ্যাংক ‌ইউ"
"বাচ্চাকে সামলে রাখতে না জানলে রাস্তায় নিয়ে বের হন কেন?"
আগন্তুকটি আবার গরম স্বরে বলে উঠলো এবার আশেপাশের অন্যান্যরাও তাতে সায় দিল কেউ কেউ গাড়িটির অজ্ঞাত চালকের উদ্দেশ্যে বিশেষ বিশেষ শব্দ প্রয়োগ করতে থাকে ততক্ষণে বাচ্চা মেয়েটির কান্না থেমে গেছে বোধহয় বাবার কোলে আসার পরে তার ভয় অনেকটাই কেটে গেছে।
"আসলে আমি ঠিক খেয়াল করিনি, যদিও করা উচিত ছিল, ভুলটা আমার‌ই, থ্যাংকস অ্যাগেইন"
"এবার থেকে সামলে রাখবেন"
"আপনাকে এই এলাকায় আগে কখনো দেখিনি, এখানে নতুন?"
আগন্তুকটি চলে যাচ্ছিল প্রশ্ন শুনে ঘুরে দাঁড়ালো আশেপাশের ভিড় কিছুটা খালি হয়ে গেছে যে যার মতো উপদেশ দিয়ে চলে গেছে, এবার আগন্তুকটি বললো,
"আমি নতুন এসেছি"
"কোথায় এসেছেন, কাদের বাড়িতে?"
"কারো বাড়িতে নয় ঘুরতে ঘুরতে চলে এসেছি"
"ঘুরতে ঘুরতে?"
"কিছুটা তাই"
"মানে ঠিক বুঝলাম না"
"আসলে একটু দরকারে এসেছিলাম"
"আসুন পাশেই আমার বাড়ি, একটু বসে যান"
"আমি.. মানে" 
আগন্তুক ইতস্তত করছে দেখে বাচ্চাটির বাবা বলেন "আপনি আমার মেয়ের প্রাণ বাঁচিয়েছেন তাই আপনার সাথে ওর একপ্রকার আত্মীয়তা হয়ে গেছে তাই আর হেজিটেট করবেন না আসুন"
এবারে আগন্তুক আর ইতস্তত করলো না পাশেই ফুটপাতের উপরেই একটা ছোটো লোহার গেট ঠেলে ভিতরে ঢুকলো তারা। বেশ ছিমছাম বাড়িটা মেইন গেট থেকে ঢুকেই ড্রয়িংরুম তারপর ভিতরে তিনটে রুম একপাশে কিচেন। ড্রয়িংরুমে একটা সোফায় বসলো আগন্তুকটি আর তার সামনে একটা চেয়ারে মেয়েকে কোলে নিয়ে বসলো অপর যুবকটি, বললো
"এবার বলুন এখানে কি দরকারে এসেছিলেন বা কাদের বাড়ি ঘুরতে এসেছেন? দেখি সাহায্য করতে পারি কি না"
"আসলে আমি অনেকবছর পরে কলকাতায় এসেছি এখানে একজনের সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলাম"
"কাদের কথা বলছেন বলুনতো?"
"ব্যানার্জী দের, আপনি বলতে পারবেন তারা কোন বাড়িটায় থাকেন? আসলে অনেক বছর বাদে এসেছি তো এই পাড়াটা মনে আছে এই বাড়িটাই মনে আছে কিন্তু এখন খুঁজে পাচ্ছি না"

"শুধু টাইটেল বললে তো বলা মুশকিল, আরও কিছু ডিটেইলস বলুন"
"ওনাদের একটা ব্যাবসা আছে ব্যানার্জী ক্রিয়েশনস্ নামে"
আগন্তুকের কথা শুনে সামনের যুবকটা একটু সোজা হয়ে বসলো তারপর বললো "ব্যানার্জী ক্রিয়েশনস্‌? আপনি ওনাদের কিভাবে চেনেন?"
এবার আগন্তুক যুবকটিও একটু চুপ করে গেল তারপর বললো "আমি আগে যখন এসেছিলাম তখন ওনারা আমাকে একটা হেল্প করেছিলেন তাই ভাবছিলাম দেখা করে থ্যাংকস বলবো"
"আচ্ছা, হ্যাঁ আপনি ঠিকই বলেছেন ওনারা আগে এখানেই মানে এই বাড়িতেই থাকতেন ইনফ্যাক্ট এই বাড়িটাও ওনাদের কিন্তু ওনারা তো এখন এখানে থাকেন না"
"ওহ্ কোথায় থাকেন বলতে পারবেন?"
"তুমি আবার কাকে নিয়ে এলে মৈনাক?"
তৃতীয় একটি নারীকণ্ঠ পেয়ে দুজনেই দরজার দিকে তাকিয়ে দেখলো সেখানে এক তন্বী যুবতী দাঁড়িয়ে আছে বয়স ৩০-৩২ হবে, এর‌ও ছিমছাম স্লিম চেহারা পরনে প্রিন্টেড সালোয়ার কামিজ। যুবতীকে দেখেই বাচ্চা মেয়েটি "মাম্মা" বলে একছুটে তার কাছে গেল, যুবতীকে দেখে নবাগত তরুণটি কেমন যেন অদ্ভুদভাবে একদৃষ্টিতে যুবতীটির দিকে তাকিয়ে র‌ইলো।
"এই যে ব্রাদার, মানছি আমার গিন্নী সুন্দরী কিন্তু তাই বলে বাইরের কেউ একদৃষ্টিতে ওকে দেখবে এটা কিন্তু আমি বরদাস্ত করবো না"
নবাগত তরুণটিকে একদৃষ্টিতে নিজের স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে কথাটা বললো মৈনাক নামের তরুণটি, কথাটা শুনে নবাগত তরুণটি নিজেকে সামলে নিল তারপর শান্ত কণ্ঠে বললো,
"দুঃখিত আপনি ভুল বুঝছেন আসলে.."
"আসলে?"
"আসলে ওনাকে দেখে একমুহূর্তের জন্য মনে হলো... মনে হলো আমার দিদি দাঁড়িয়ে আছে তাই একটু হকচকিয়ে গিয়েছিলাম"
 যুবতী ঘরে ঢুকে তার স্বামীর পাশে আরেকটা চেয়ারে বসে একদৃষ্টিতে কিছুক্ষণ নবাগত তরুণটিকে নিরীক্ষণ করে তারপর আবার স্বামীকে বললো "ইনি কে?"
"মাম্মা আজ জানো কি হয়েছে? আজ না একটা গাড়ি আমার কাছে চলে এসেছিল"
যুবতীর প্রশ্নে মৈনাক কিছু বলার আগেই বাচ্চা মেয়েটি কথা বললো মেয়ের কথা শুনে যুবতী যেন চমকে উঠলেন ভয়ার্ত স্বরে বললেন "তারপর? তোমার লাগেনি তো?" তারপর রাগী স্বরে স্বামীকে উদ্দেশ্য করে বললেন "মেয়েকে একটু সামলেও রাখতে পারো না?"
যুবতীটির স্বামী চুপ করে আছে কিন্তু বাচ্চা মেয়েটি আবার বলতে থাকে "জানো মাম্মা তারপর এই আংকল সুপারম্যানের মতো আমাকে কোলে তুলে নেয়"
এবার যুবতীটি আবার নবাগত তরুণটির দিকে তাকায় তবে এবার তার দৃষ্টি আগের তুলনায় অনেক শান্ত "অনেক ধন্যবাদ আপনাকে"।
"ইটস্ ওকে, আসলে ওই গাড়িটা যে চালাচ্ছিল খুব সম্ভবত সে ড্রাংক ছিল তাই..তবে বাচ্চাকে সামলে রাখাই উচিত ছিল ওনার"
"হ্যাঁ, আচ্ছা আপনি বলছিলেন আমাকে আপনার দিদি বলে মনে হচ্ছিল..তো...মানে...আসলে আমি বলতে চাইছি যে আপনার দিদি কোথায়? "
"হারিয়ে গেছে"
"ওহ সরি"
"না.. আসলে উনি ঠিকই আছেন কিন্তু আমি ওদের থেকে হারিয়ে গেছি"
স্বামী-স্ত্রী দুজনেই পরস্পরের মুখ চাওয়াচাওয়ি করলো দেখা বোঝা যাচ্ছে ওরা নবাগত তরুণটির কথা ঠিক বুঝতে পারেনি, একটু পরে যুবতী আবার জিজ্ঞেস করলো,
"মানে ঠিক বুঝলাম না"
"ও লম্বা কাহিনী বাদ দিন"
"আপনি ব্যানার্জীদের খুঁজছিলেন কেন?"
"বললাম তো ওনারা একবার আমাকে হেল্প করেছিলেন তাই ধন্যবাদ জানাতাম"
"কিছু মনে করবেন না কিন্তু সবাইকে তো ওনাদের অ্যাড্রেস দেওয়া যায় না কারণ ওনাদের শত্রু কম নেই এই শহরে আর তাছাড়া দিলেও আপনি দেখা করতে পারবেন না সিকিউরিটি ঢুকতে দেবে না"
"আই ক্যান আণ্ডারস্ট্যাণ্ড"
"সুনন্দা তুমিই নিয়ে যাও তোমার তো ঢুকতে বাধা নেই, আফটার অল তোমার পিসির বাড়ি"
এতক্ষণে আবার মৈনাক কথা বললো অবশ্য স্বামীর কথা শুনে সুনন্দা যেভাবে কটমট করে স্বামীর দিকে তাকালো তাতে ওনার মনোভাব বুঝতে বাকি র‌ইলো না নবাগত তরুণটির, সে বললো
"পিসির বাড়ি মানে?"
"হ্যাঁ ব্রাদার, আমার এই গিন্নীটি হলেন ব্যানার্জী ক্রিয়েশনস্ এর মালিক মিস্টার অভিরূপ ব্যানার্জীর ওয়াইফ মিসেস শ্রীতমা ব্যানার্জীর ভাই অ্যাডভোকেট স্বর্ণেন্দু মুখার্জীর মেয়ে"
কথাটা শুনে আবার তরুণটি অবাকদৃষ্টিতে সুনন্দার দিকে তাকায় অবশ্য এবার শুধু সুনন্দার দিকেই নয় একইসাথে বাচ্চা মেয়েটির দিকেও তাকিয়ে থাকে, সে এখন কিছুটা দূরে মেঝেতে একটা খেলনা নিয়ে খেলছে। কিন্তু স্বামীর কথা শুনে সুনন্দা রেগে আবার কটমট করে তার দিকে তাকিয়ে আছে তার পরিচয় দিয়ে দেওয়ার জন্য সে কিছুটা ক্ষুব্ধ কিন্তু ভদ্রতার খাতিরে কিছু বলতে পারছে না, সেটা বুঝতে পেরেই নবাগত তরুণটি বললো
"ঠিক আছে তার দরকার নেই শুনেছি তারা অনেক সময় বাইরে অনেক জায়গায় গিয়ে গরীব দুঃখীদের সাহায্য করেন তেমনই যদি কখনো দেখা হয়ে যায় তাহলে তখন ধন্যবাদ জানিয়ে দেবো, আজ উঠি"
"আপনার নাম টা বলে যান আমি কথা বলে রাখবো"
সুনন্দার কথায় কোনো উত্তর দিল না তরুণটি সে যেন শুনতেই পায়নি এমনভাবে সোফা থেকে উঠে পড়লো, দেখাদেখি উঠলো বেরোনোর সময় নবাগত তরুণটির পা আলতোভাবে সুনন্দার গায়ে লাগায় সঙ্গে সঙ্গে সে বললো "সরি পা লেগে গেল" বলে ঝুঁকে প্রণাম করতে যেতেই সুনন্দা দুপা পিছিয়ে গেল,
"এ মা কি করছেন?"
"আপনার গায়ে পা লেগেছে আমার"
"তাতে কি, ঠিক আছে এসবের দরকার নেই"
"বললাম যে আপনার সাথে আমার দিদির মিল আছে, আপনাকে আমি দিদির চোখে দেখছি আর দিদির পায়ে হাত দিতে লজ্জা কি?"
বলে আবার ঝুঁকে প্রথমে সুনন্দা আর তারপর ভদ্রতার জন্যই মৈনাককে প্রণাম করলো তরুণটি তারপর আর কাউকে কিছু বলার অবকাশ না দিয়েই ঘর ছেড়ে বেরিয়ে গেল দুই স্বামী-স্ত্রী আবারও কিছুটা হতভম্ব হয়ে পরস্পরের দিকে তাকিয়ে র‌ইলো।
রাতে ডিনারের পরে ঘুমানোর আগে ব‌ই পড়া অনেকদিনের অভ্যাস মৈনাকের, ব‌ই না পড়লে তার ঘুম আসে না আজ‌ও সে একটা রোমান্টিক নভেল পড়ছিল। পড়া শেষে ঘুমাতে যাবে কিন্তু তখনও সুনন্দাকে আসতে না দেখে অবাক হলো,বিছানা ছেড়ে বেডরুমের বাইরে ড্রয়িংরুমে আসতেই সে সুনন্দাকে দেখতে পেলো একটা চেয়ারে বিষন্নভাবে একটা হাতে মুখ ঢেকে চুপ করে বসে আছে।
একটু অবাক হলো মৈনাক সুনন্দা এমনিতে খুবই হাসিখুশি থাকে সে সুনন্দার কাছে গিয়ে ও্য সামনে বসলো,
"সুনন্দা, কি হয়েছে?"
ডাক শুনেও সুনন্দা মুখ তুলছে না দেখে মৈনাক আবার ডাক দিল এবারে সুনন্দা মুখ তুললো মৈনাক অবাক হয়ে দেখলো সুনন্দার চোখে জলের দাগ, স্ত্রীর চোখে জল দেখে মৈনাকের অবাকভাবটা আরও বেড়ে গেল সে স্ত্রীর চোখের জল মুছে দিয়ে মোলায়েম স্বরে জিজ্ঞেস করলো, "কি হয়েছে?"
"ওই ছেলেটা.."
"কোন ছেলেটা?"
"ওই যে সকালে এসেছিল"
"তোমার পুরনো অ্যাডমায়ার নাকি?"
স্বামীর ইয়ার্কিটা না বুঝে রেগে স্বামীর দিকে তাকালো সুনন্দা বললো "একটু তো লজ্জা করো, ছেলেটা আমাকে দিদি বলেছে"
মৈনাক বুঝলো তার স্ত্রী এখন ইয়ার্কির মুডে নেই তবুও পরিস্থিতি হাল্কা করার জন্য বললো "আমি তো জানি আমার এই সুন্দরী ব‌উটি শুধু আমার‌ই, আমি তো ইয়ার্কি করছিলাম তো কি হয়েছে ওর?"
"কি যেন নাম বললো?"
"এই রে নামটা তো বলেনি, কেন কি হয়েছে?"
"ওই ছেলেটা যখন আমার পায়ে হাত দিল তখন কেমন যেন একটা অদ্ভুত ফিলিংস হলো, যেন মনে হলো.."
"কি মনে হলো?"
"মনে হলো যেন খুব কাছের একজন পায়ে হাত দিয়েছে"
"কাছের একজন?"
"হ্যাঁ, যেন মনে হলো অনি আমার পায়ে হাত দিয়েছে"
"অনি মানে তোমার ওই কাজিনটি যে ঘুরতে গিয়ে অ্যাক্সিডেন্টে মারা যায়?"
"হ্যাঁ, জানিনা কেন মনে হলো আমার"
"দেখো আমার সাথে কখনো তোমার এই ভাইটির আলাপ হয়নি তাই আমি ওকে চিনি না, কিন্তু ও তো মারা গেছে তাহলে?"
"সেটাই তো ভাবছি"
"হয়তো এটা তোমার মনের ভুল"
"তাই কি?"
"একদমই,  এবার চলো ঘুমানোর সময় হয়ে গেছে"।
Like Reply
Next update tahole kobe pabo dada?


My pain is constant and sharp, and I do not hope for a better world for anyone. ArrowNamaskar


[+] 1 user Likes Patrick bateman_69's post
Like Reply
(19-06-2023, 06:32 AM)Patrick bateman_69 Wrote: Next update tahole kobe pabo dada?

এই তো দিলাম, আবার লেখা হলেই দেবো।
I'm the King of Dark
                &
I rule over all Devils
               devil2 devil2
Like Reply
প্রতিবারের মতোই আবারও দুর্দান্ত আপডেট ৷ পরবর্তী আপডেটের অপেক্ষায় রইলাম ৷ Like & Repu added.
[+] 1 user Likes bad_boy's post
Like Reply
(19-06-2023, 08:49 AM)bad_boy Wrote: প্রতিবারের মতোই আবারও দুর্দান্ত আপডেট ৷ পরবর্তী আপডেটের অপেক্ষায় রইলাম ৷ Like & Repu added.

ধন্যবাদ   Namaskar
I'm the King of Dark
                &
I rule over all Devils
               devil2 devil2
Like Reply
Only on word FANTASTIC.
[+] 1 user Likes skx1965's post
Like Reply
(19-06-2023, 12:46 PM)skx1965 Wrote: Only on word FANTASTIC.

thanks thanks
I'm the King of Dark
                &
I rule over all Devils
               devil2 devil2
Like Reply
বাহ। বালের লেখক তুমি
[+] 1 user Likes Rohan raj's post
Like Reply
ওফ্ফ করা মনেন ভাই
বাবার কাছে প্রমাণ হয়েই গেল যে এইটা তার ছোট ছেলে অনিকেত
পরের পর্বে কি হবে কিছুই বুঝা যাচ্ছে না 



Your Big Fan
yourock yourock yourock
Can't waiting for the Next Part 
[+] 1 user Likes Mahin1ooo's post
Like Reply
(19-06-2023, 10:36 PM)Rohan raj Wrote: বাহ। বালের লেখক তুমি
Namaskar
বুঝতে পারছি হয়তো আপনার ভালো লাগেনি আর সেটাই স্বাভাবিক কারণ এই গল্পে যৌণতা নেই। তবুও নিজের মনের কথা সোজাসুজি বলার জন্য ধন্যবাদ
(19-06-2023, 11:02 PM)Mahin1ooo Wrote: ওফ্ফ করা মনেন ভাই
বাবার কাছে প্রমাণ হয়েই গেল যে এইটা তার ছোট ছেলে অনিকেত
পরের পর্বে কি হবে কিছুই বুঝা যাচ্ছে না 



Your Big Fan
yourock yourock yourock
Can't waiting for the Next Part 

বোঝা গেলে তো হয়েই গেল, তাহলে মজা কোথায়?
I'm the King of Dark
                &
I rule over all Devils
               devil2 devil2
Like Reply
(20-06-2023, 12:09 AM)Monen2000 Wrote: Namaskar
বুঝতে পারছি হয়তো আপনার ভালো লাগেনি আর সেটাই স্বাভাবিক কারণ এই গল্পে যৌণতা নেই। তবুও নিজের মনের কথা সোজাসুজি বলার জন্য ধন্যবাদ

বোঝা গেলে তো হয়েই গেল, তাহলে মজা কোথায়?

বোঝা গেলেও বোঝা যায়না এটাইতো থ্রিলার গল্পের মজা
—͟͟͞͞?⁀➷ᏁᎪᎥm_Ꮓ ᭄✭✭
"The End Is The Beginning And The Beginning Is The End."
[+] 1 user Likes Naim_Z's post
Like Reply
(20-06-2023, 12:46 AM)Naim_Z Wrote: বোঝা গেলেও বোঝা যায়না এটাইতো থ্রিলার গল্পের মজা

একদম তাই।
I'm the King of Dark
                &
I rule over all Devils
               devil2 devil2
Like Reply




Users browsing this thread: 2 Guest(s)