15-06-2023, 10:29 AM
I'm the King of Dark
&
I rule over all Devils
WRITER'S SPECIAL "ধূসর পৃথিবী"
|
15-06-2023, 10:29 AM
I'm the King of Dark
&
I rule over all Devils
17-06-2023, 08:12 AM
(17-06-2023, 12:11 AM)Mahin1ooo Wrote: আজকে কি আপডেট আসবে! লেখা চলছে, আজকে না হলেও কালকে দেওয়ার চেষ্টা করবো। I'm the King of Dark
&
I rule over all Devils
17-06-2023, 07:08 PM
আজকে আপডেট আসবে নাকি ভাই
আর যে অপেক্ষা করতে পারতেছি না
17-06-2023, 08:29 PM
(17-06-2023, 07:08 PM)Mahin1ooo Wrote: আজকে আপডেট আসবে নাকি ভাই চেষ্টা করছি দেওয়ার আজ না হলে কাল আসবেই। I'm the King of Dark
&
I rule over all Devils
17-06-2023, 08:52 PM
—͟͟͞͞?⁀➷ᏁᎪᎥm_Ꮓ ᭄✭✭
"The End Is The Beginning And The Beginning Is The End."
17-06-2023, 09:47 PM
I'm the King of Dark
&
I rule over all Devils
17-06-2023, 11:56 PM
দ্বিতীয় খণ্ড ১৭তম পর্ব আজকাল আর কোনো কিছু ভালো লাগে না অভিরূপবাবুর কোনো কিছুতেই মন বসে না, নেহাত বড়ো ছেলের অ্যাক্সিডেন্টের জন্য সে অফিসে আসতে পারছে না তাই অভিরূপবাবু কেই আসতে হয় কিন্তু রোজই বিকেলের মধ্যে অফিসের কাজ সেরে এই যাদবপুরে একটা পার্কে যান তিনি। একা একাই যান কখনো ড্রাইভার থাকে আবার কখনো থাকে না গিয়ে একাই চুপচাপ বসে থাকেন। তার ছোটো ছেলের স্মৃতির সাথে জড়িয়ে আছে এই পার্ক এখানেই সে আসতো তার সাথে। ছোটো ছেলে অনিকেত যাকে তিনি কিছু বছর আগে দুর্ঘটনায় হারিয়ে ফেলেছেন কিন্তু সম্প্রতি তাকে ফিরে পাওয়ার একটা ক্ষীণ আশা দেখা গেছে। সুপ্রতিমবাবু যদিও বলেছেন যে তিনি খুঁজবেন কিন্তু প্রায় দু সপ্তাহ হয়ে গেল এখনো কোনো খবর আসেনি তাঁর কাছ থেকে। মাঝে মাঝে অধৈর্য্য হয়ে ওঠেন অভিরূপবাবু কিন্তু পরক্ষণেই মনে পরে সুপ্রতিমবাবু একজন নগরপাল তাঁর অনেক কাজ, অনেক দায়িত্ব শুধুমাত্র তাঁর ছেলেকে খুঁজতে বসলে চলবে না। এসবই বোঝেন অভিরূপবাবু কিন্তু তবুও তার মন ধৈর্য্য ধরে না। তিনি শুনেছেন লোকে বলে অনি তার নিজের ছেলে নয় তার মনের মধ্যে ভয় কাজ করে অনিও কি এই কথা শুনেছিল? তার থেকেও বড়ো কথা যদি শুনেও থাকে তাহলে কি বিশ্বাস করেছিল এই মিথ্যাটা? অনি যদি বিশ্বাস করেও থাকে তবুও অভিরূপবাবু একবার অন্তত একবার ছেলের সামনে গিয়ে দাঁড়াতে চান, তার ছেলে যদি রাগ দেখায় অভিমান করে তবুও তিনি ছেলের সামনে দাঁড়াতে চান। সন্তান বাবা-মায়ের উপরে অভিমান করবে না তো কি বাইরের লোকের উপর করবে? তাছাড়া সন্তানের কাছে তাদের মা যতটা কাছে থাকে বাবা ততটা থাকেন না, বাবাদের ভাগ্যটাই এরকম, তারা সন্তানদের থেকে দূরেই থেকে যান যতই কাছে আসতে চান না কেন পারেন না, কিন্তু অভিরূপবাবুর ভাগ্যটা একটু আলাদা তিনি জানেন অনি ছোটো থেকেই তার মতো হতে চাইতো তার মতো হাঁটা চলা, নকল করতো, কিছু কিছু অঙ্গভঙ্গিও তার মতো হয়ে গিয়েছিল এমনকি তাদের দুজনের... "আপনি এখানে একা বসে আছেন? শরীর ভালো?" হটাৎ অপ্রত্যাশিত প্রশ্নে ভাবনার সুতো ছিঁড়ে গেল অভিরূপবাবুর, তিনি দেখলেন পার্কের যে বেঞ্চটাতে তিনি বসে আছেন সেখানে তার পাশে আরও একজন যুবক এসে বসেছে এবং সেই প্রশ্নটা করেছে। অভিরূপবাবু প্রথমে বুঝতে পারলেন না যে তিনি জেগে আছেন না স্বপ্ন দেখছেন, যার খোঁজ না পেয়ে তার মন অধৈর্য্য হয়ে উঠেছে চেহারা বদলে গেলেও যার স্পর্শ তাকে তার ছেলের কথা মনে করাচ্ছে সে এখন তার পাশে বসে আছে, এইসময় এখানে যুবকটিকে দেখে চমকেই গিয়েছিলেন অভিরূপবাবু তার মন এখন চাইছে এখনই সামনের যুবকটিকে বুকের সাথে জড়িয়ে তার তৃষ্ণার্ত হৃদয়ের তৃষ্ণা নিবারণ করতে, যুবকটির চোখের দিকে তাকিয়ে তার বারবার মনে হতে লাগলো যে এই চোখ তার অনিকেতের ছাড়া আর কারো হতেই পারে না। "আপনার শরীর ভালো? এখানে একা কি করছেন?" অভিরূপবাবুকে একদৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে আবার প্রশ্ন করে আদিত্য। তার কথায় অভিরূপবাবুর চমক ভাঙে, নিজের মনটাকে কোনোমতে নিয়ন্ত্রণ করে তিনি বলেন, "তুমি?" "আপনি বোধহয় আমাকে চিনতে পারছেন না আমি সেদিন আপনার বাড়িতে গিয়ে একটা কাণ্ড করে এসেছিলাম" "আমি চিনতে পেরেছি তোমাকে কিন্তু তুমি নিজের নামটা বলোনি এখনো?" আদিত্য একটু চুপ থেকে বললো, "আদিত্য..আদিত্য ব্যানার্জী" "ভালো আছো? আর তোমার স্ত্রী? আর কোনো ঝামেলা করেনি তো ওরা?" "হ্যাঁ, ও ভালো আছে, আর না এখনও পর্যন্ত কোনো ঝামেলার মুখোমুখি হইনি কিন্তু আপনি এখানে এভাবে একা?" "আমি এখানে প্রায়ই আসি কিন্তু তুমি এখানে? আগে তো দেখিনি?" "আমি এখানে একটা কাজে এসেছিলাম ফেরার সময় ভাবলাম এই পার্কে কিছুক্ষণ বসে যাই, ছোটোবেলার অনেক স্মৃতি জড়িয়ে আছে এই পার্কে" "আমারও অনেক স্মৃতি জড়িয়ে আছে আমার ছেলে আসতো আমার সঙ্গে" "অরুণাভ বাবু এখন আসেন না কেন?" কথাটা শুনে অভিরূপবাবু তার দিকে তাকালেন দেখে অনেকটা কৈফিয়ত দেওয়ার ভঙ্গিতেই আদিত্য বলে, "আমি ওনার অ্যাক্সিডেন্টের কথা শুনেছি, সেদিন দেখলামও কিন্তু তবুও এখানে তো আসতেই পারেন, ওনারও তো স্মৃতি আছে এখানে?" "অরুণাভ নয়, আমার ছোটো ছেলে আসতো এখানে আমার সঙ্গে" "তিনি এখন কোথায়?" "হারিয়ে ফেলেছি, জানিনা কোনোদিন ফিরে পাবো কি না... তুমি বলো তোমারও স্মৃতি আছে বললে কারো সঙ্গে আসতে?" "হ্যাঁ, আমার বাবার সঙ্গে আসতাম" অভিরূপবাবুর মুখ একটু গম্ভীর হয়ে গেল তার ভিতরে উত্তেজনা ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পাচ্ছে তিনি বললেন, "তিনি এখন আসেন না?" "আসেন হয়তো কিন্তু আমার সঙ্গে না" "তুমি আসো না কেন তাঁর সঙ্গে?" "আমি তাঁর থেকে আলাদা হয়ে গেছি, হারিয়ে ফেলেছি আমার পরিবারকে" অভিরূপবাবুর উত্তেজনা আরও কিছুটা বৃদ্ধি পেলো কিন্তু সেটা বুঝতে না দিয়ে একদম স্বাভাবিক স্বরে জিজ্ঞেস করলেন "হারিয়ে ফেলেছো? মানে কিভাবে? কবে?" "একটা ঘটনার পরে আমি তাদের থেকে আলাদা হয়ে গেছি এখন তাদের সবার কাছে আমি মৃত" অভিরূপবাবুর মধ্যে এবার শুধু উত্তেজনা নয় তার সঙ্গে উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে ছেলেকে ফিরে পাওয়ার আকাঙ্খা, তিনি বললেন "তুমি ফিরে যাচ্ছো না কেন?" "আমি ফিরে গেলে আমার বাবা-মায়ের কষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়াবো তাই ফিরি না" "সন্তান বাড়ি ফিরলে বাবা-মা আনন্দ পান, কষ্ট পান না" "আমি বাড়ি ফিরলে এমন কিছু সত্য কথা প্রকাশ পাবে যেগুলো জানলে ওনারা কষ্ট পাবেন, সেগুলো ওনাদের না জানাই ভালো। আমি কয়েকজনের মুখে শুনেছিলাম যে আমি নাকি ওনাদের নিজেদের সন্তান নয়, কুড়িয়ে পাওয়া ছেলে জানিনা কথাটা সত্যি কি না তবে সত্যি মিথ্যা যাই হোক জেনেশুনে ওনাদের কষ্ট দিই কিকরে?জেনেশুনে ওনাদের কষ্টের কারণ হবো কিভাবে?" অভিরূপবাবু যেন আবার একটা তীক্ষ্ণ শলাকার খোঁচা খেলেন, তার এই মুহূর্তে ইচ্ছা করছে একে জড়িয়ে ধরে চিৎকার করে বলতে যে 'তুই আমার নিজের ছেলে, আমার নিজের সন্তান' কিন্তু তিনি অতিকষ্টে নিজেকে সংবরণ করে বললেন, "সত্যিটা নাহয় বাড়ি গিয়ে বাবা-মার কাছেই শুনে নিও একবার ফিরেই দেখো না কে বলতে পারে হয়তো তুমি যা ভাবছো তোমার সেই ধারণা ভুল প্রমাণিত হলো" "আমি ফিরলেও এখন তারা আমাকে চিনতে পারবেন না" "এটা কেন বলছো জানতে পারি? কারণ বাবা-মা তার সন্তানের প্রতিটি স্পর্শ চিনতে পারেন, অনুভব করতে পারেন" "বিশ্বাস করুন আমি তাদের সামনে গিয়ে দাঁড়ালেও তারা আমাকে চিনতে পারবেন না। সেদিন যেমন ম..আইমিন আপনার স্ত্রীর হাত থেকে মিষ্টি খেলাম সেরকম যদি আজ আমার মায়ের সামনে গিয়ে খাই বা আজ যেমন আপনার পাশে বসে আপনার সাথে গল্প করছি সেরকম আমার বাবার পাশে গিয়ে বসিও তবুও তারা আমাকে চিনতে পারবেন না" কথাটা বলেই আদিত্য অভিরূপবাবুর দিকে তাকিয়ে তার দৃষ্টি দেখেই বুঝতে পারলো সে মস্ত বড়ো ভুল করে ফেলেছে, নিজের আবেগের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে প্রয়োজনের থেকে একটু বেশীই বলে ফেলেছে অভিরূপবাবু একদৃষ্টে তাকে দেখছেন বোধহয় তার ভিতরের অনিকেতকে স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছেন কিন্তু এখন বলে ফেলা কথা ফেরানোর উপায় নেই তবুও কথা ঘোরানোর জন্য বা বোধহয় নিজের বাবাকে খবরটা দেওয়ার জন্যই বললো, "একটা কথা জিজ্ঞেস করবো?" "অভিরূপবাবু সেইভাবেই তাকিয়ে থেকে বললেন "কি?" "আপনি যখন প্রথম বার শুনলেন যে আপনি বাবা হতে চলেছেন তখন আপনি কি কি করেছিলেন?" প্রশ্নটা শুনে অভিরূপবাবুর ভ্রুদুটো একটু কুঁচকে গেল দেখে আদিত্য তাকে বলে, "আসলে আমি বাবা হতে চলেছি আমার স্ত্রী প্রেগনেন্ট। প্রথমবার তাই কিছুই জানা নেই আর কেউ বলে দেওয়ারও নেই তাই জিজ্ঞেস করছিলাম যে এইসময় একজন স্বামী হিসেবে বা বাবা হিসেবে কি কি করা উচিত আর উচিত নয়" অভিরূপবাবুর মুখ এই দুঃখের মাঝেও এই খবর শুনে দুঃখটা ঢেকে গিয়ে খুশীতে উজ্জ্বল হয়ে উঠলো, "কনগ্ৰাচুলেসন" "থ্যাংক ইউ" তারপর যেন নিজের অভিজ্ঞতা থেকে ছেলেকে উপদেশ দিচ্ছেন এমনভাবে বলতে শুরু করলেন, "শোনো এইসময় স্ত্রীর মানে.. কি যেন নাম বৌমার?" "পিয়ালী" "হ্যাঁ, পিয়ালী ওর কাছে থাকবে সবসময় ওকে বেশিরভাগ সময় দেবে,বাড়িতে যদি সিঁড়ি থাকে তাহলে সিঁড়িতে যেন ওঠানামা না করে, সাবধানে হাঁটাচলা করে ওকে সবসময় পুষ্টিকর খাবার খাওয়াবে.." অভিরূপবাবু বলে চলেন আর আদিত্য চুপ করে শুনতে থাকে একটা সময় অভিরূপবাবুর কথা শেষ হয় আদিত্য একটু হেসে বলে, "বাব্বা এত কিছু?" "বাবা হচ্ছো দায়িত্ব নিতে শেখো এইকথা বললে হবে? এ তো কিছুই না আরও আছে, তোমার মা.. মানে আমার স্ত্রী জানে তুমি এক কাজ করো বৌমাকে নিয়ে বাড়ি চলে এসো" মাঝখানে অভিরূপবাবুর মুখে 'তোমার মা' শুনে চমকে উঠেছিল আদিত্য কিন্তু পরক্ষণেই অভিরূপবাবু কথা ঘোরানোয় কিছুটা আশ্বস্ত হয়, ব্যানার্জী ভিলায় যাওয়ার কথায় আদিত্য বলে "ওখানে যাওয়াটা বোধহয় ঠিক হবে না, আপনি ভুল বুঝবেন না কিন্তু ওখানে ওরা থাকবেন আমার ওয়াইফ কম্ফর্টেবল ফিল করবে না" "ঠিক আছে এক কাজ করো তোমার ঠিকানাটা দাও আমিই আমার ওয়াইফকে নিয়ে যাবো" এইকথার উত্তর আদিত্যর কাছে ছিল না সোজাসুজি মানা করতে পারলো না বাবা কষ্ট পাবে ভেবে তবুও খুব দ্রুত ভেবে হাতঘড়িটার দিকে তাকিয়ে বললো, "সন্ধ্যা হয়ে এসেছে এবার আপনার ফেরা উচিত, সাউথ কলকাতার রাস্তা এখন সেফ নয় অলরেডি পাঁচ পাঁচটা ডাকাতি হয়ে গেছে, তার উপরে জায়গাটা বড্ড নির্জন হয়ে গেছে কেউ এসেছে না একাই এসেছেন?" অভিরূপবাবুর বুঝতে বাকী রইলো না যে তার ছেলে তাকে নিজের ঠিকানা দিতে চায় না, এ যে তার ছেলে অনিকেতই এবিষয়ে তাঁর আর কোনো সন্দেহ নেইমনে মনে তিনি বললেন "তুমি যখন নিজের বাবাকে নিজের পরিচয় নিজের ঠিকানা দেবে না ঠিক করেছো তবে তাই হোক কিন্তু আমিও তোমার বাবা তোমার ঠিকানা আমি খুঁজে বার করবোই তারপর তোমার সামনে গিয়ে দাঁড়াবো দেখি কিভাবে তাড়িয়ে দাও আমাকে" অভিরূপবাবু শুধুমাত্র "ঠিকই বলেছো, আচ্ছা আমি আসছি এখানে আবার যদি আসো তাহলে দেখা হবে" বলে উঠে চলে গেলেন, আর তিনি চলে যেতেই আদিত্যর চোখের জলের বাঁধ ভেঙে গেল অঝোরে জল ঝরতে থাকে, সেও নিজের মনেই বলতে থাকে "আয়্যাম সরি বাবা, তোমার অনিকে ক্ষমা করে দিও আমি জানি আমার কথায় তুমি কষ্ট পেয়েছো কিন্তু আমার কিছু করার নেই আমার পরিচয় আমার ঠিকানা না জানাই তোমার আর মায়ের জন্য ভালো হবে, কতটা অভাগা দেখো আমি এতবছর পরে দুবার তোমার সামনে এলাম অথচ একবারও তোমাকে জড়িয়ে ধরতে পারলাম না, কোনো গাছ থেকে যদি কোনো পাতা ঝরে পড়ে যায় তাহলে সেটা আর গাছে লাগে না ব্যানার্জী পরিবার যদি একটা গাছ হয় তাহলে আমি সেই ঝরে পড়ে যাওয়া পাতা যে আর কখনো কোনোদিনও গাছের সঙ্গে জোড়া লাগবে না"। 'আআআআআআঃ' একটা আর্তনাদ শুনে চমকে উঠলো আদিত্য কেউ একজন চিৎকার করে উঠেছে কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে অন্য কেউ তার মুখ চেপে সেই চিৎকার বন্ধ করে দিল। একটা অজানা আশঙ্কায় আদিত্যর বুক কেঁপে উঠলো, আওয়াজটা এসেছিল পার্কের গেটের দিক থেকে আদিত্য ওই দিকে দৌড় লাগালো। অভিরূপবাবুর বুঝতে অসুবিধা হলো না তার ছেলে এখন তাকে নিজের পরিচয় আর ঠিকানা কোনোটাই দেবে না তাকেই খুঁজে বার করতে হবে এটাকে তিনি একটা চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়ে পার্ক থেকে বের হয়ে গেলেন। নিজের গাড়ির কাছে গিয়ে ড্রাইভারকে না দেখতে পেয়ে তাকে ফোন করেন, একটু পরেই দৌড়ে ড্রাইভার এলে তাকে গাড়ি স্টার্ট করতে বলে আরেকবার পিছনে ফিরে বোধহয় নিজের ছেলেকেই দেখার চেষ্টা করলেন কিন্তু তিনি যেখানে আছেন সেখান থেকে দেখা যাচ্ছে না তিনি এবার গাড়িতে উঠতে গেলেন কিন্তু হটাৎই পিছনে কেউ যেন ধারালো কিছু দিয়ে আঘাত করলো সঙ্গে সঙ্গে অভিরূপবাবু আর্তনাদ করে উঠলেন কিন্তু পিছনের আঘাতকারী তার মুখ চেপে ধরলো, লোকটা গাড়ির কাছ থেকে টেনে কয়েকপা পিছিয়ে আনলো, অভিরূপবাবু আচমকাই ডানহাতের কনুই দিয়ে লোকটার পাঁজরে আঘাত করলে লোকটা অভিরূপবাবুর মুখ ছেড়ে একটু পিছিয়ে যায়। অভিরূপবাবু সভয়ে দেখেন আততায়ীরা সংখ্যায় প্রায় ছ-সাত জন প্রত্যকের মুখ ঢাকা, তিনি তাড়াতাড়ি এগিয়ে গাড়ির দরজা খুলে উঠতে গিয়ে দেখেন দরজা বন্ধ, ড্রাইভার ভিতর থেকে দরজাগুলো লক করে দিয়েছে। ইতিমধ্যে আততায়ীরা অভিরূপবাবুকে ঘিরে ফেলেছে তাদের প্রত্যেকের হাতে একটা করে ধারালো ছুরি ডুবন্ত সূর্যের আলোতেও চকচক করছে, রক্তপানের জন্য তারা উৎসুক। পরপর কয়েকটা ছুরির আঘাত অভিরূপবাবুর শরীরকে ফালাফালা করে দিল, লোকগুলো ছুরি গুলো আড়াআড়ি চালাচ্ছে ফলে অভিরূপবাবুর শরীর কেটে গিয়ে রক্ত বেরোতে থাকে, কয়েকজনের টা অভশ্য গায়ের পোশাক ভেদ করে চামড়া মাংস এ গেঁথে আবার বেরিয়ে আসছে, এবং গলগল করে রক্ত বেরোচ্ছে। ইতিমধ্যে অভিরূপবাবু দেখলেন তার ড্রাইভার গাড়ি থেকে বেরিয়ে এসেছে তার হাতেও একটা ছুরি চলে এসেছে মুখে একটা ক্রুর হাসি, অভিরূপবাবু আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারছেন না ইতিমধ্যে তার পুরো শরীর রক্তে ভিজে লাল হয়ে গেছে তার চোখ দুটো বন্ধ হয়ে আসছে, মৃত্যু যে তার কাছে এগিয়ে আসছে এটা বুঝতে বাকী রইলো না আধবোজা চোখেই তিনি দেখলেন তার ড্রাইভার হাতের ছুরিটা তার পেটে গেঁথে দিতে উদ্যত হয়েছে কিন্তু সে আঘাত করার আগেই আরেকজন লোক হুমড়ি খেয়ে তার উপরে পরে, অভিরূপবাবু আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারেন না মাটিতে বসে পড়েন তার পিঠ গাড়ির সাথে লেগে থাকায় সেখানে রক্তের দাগ লেগে যায়, একটাই কথা তার মাথাতে এলো শেষ সময়ে কি একবার ছেলের মুখটা দেখতে পারবেন না? তার চেতনা ধীরে ধীরে লোপ পেতে থাকে পুরোপুরি জ্ঞান হারাবার আগে প্রায় বুজে আসা চোখে তিনি দেখলেন লোকগুলোর সাথে একটা ছেলের লড়াই শুরু হয়েছে, তিনি জানেন এই ছেলে তারই ছেলে, তার ছেলে এসেছে, শরীরের যন্ত্রনার মাঝেও ঠোঁটের কোণে একটা ক্ষীণ হাসির রেখা ফুটে ওঠে ছেলের মুখে বাবা ডাক শুনে হাতটা বাড়িয়ে শেষবারের মতো ছেলেকে ছোঁয়ার চেষ্টা করলেন তিনি কিন্তু পারলেন না শরীর অত্যন্ত দুর্বল, হাত নড়াচড়া করতে রাজী হলো না চোখও আর খোলা থাকতে রাজী নয় অভিরূপবাবু ধীরে ধীরে চোখ বন্ধ করলেন, শেষবারের মতো শুনলেন ছেলেটা তাকে ডাকলো নাম ধরে নয় বা অন্য কিছু বলেও নয় ছেলেটা তাকে ডাকলো 'বাবা' বলে। চিৎকারটা শুনেই আদিত্যর বুক ভয়ে কেঁপে উঠলো সে তাড়াতাড়ি উঠে পার্কের গেটের দিকে দৌড়াতে থাকে, সে আর অভিরূপবাবু যে বেঞ্চটায় বসেছিল সেটা থেকে পার্কের গেট একটু দূরে ফলে তার গেটের কাছে পৌঁছাতে একটু সময় লাগলো গেট থেকে বেরিয়ে একটু এদিকওদিক তাকাতেই সে ঘটনাটা দেখতে পেলো আর বুঝলো তার আশঙ্কাই সত্যি। আদিত্য দেখে কয়েকজন মুখ ঢাকা লোক ছুরি হাতে তার বাবাকে ঘিরে রেখেছে আর ড্রাইভার ছুরির আঘাত করতে উদ্যত, তার বাবা গাড়িতে হেলান দিয়ে কোনোমতে দাঁড়িয়ে আছেন, ওনার পুরো শরীর রক্তে ভেসে যাচ্ছে। আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারলো না আদিত্য দৌড়ে লোকগুলোর কাছে গিয়ে একজনকে পিছন থেকে লাথি মারে লোকটা হুমড়ি খেয়ে আঘাত করতে উদ্যত ড্রাইভারের উপরে পরে এবং দুজনেই ভূপতিত হয়। আদিত্য লোকগুলো আর অভিরূপবাবুর মাঝখানে দাঁড়িয়ে পড়ে। অভিরূপবাবুর উপরে আক্রমণ করা লোকগুলো বোধহয় এই অপ্রত্যাশিত বাঁধার জন্য তৈরী ছিল না তারা কিছুটা হকচকিয়ে যায় কিন্তু সেটা মুহুর্তের জন্য পরক্ষনেই তারা আদিত্যকে আক্রমণ করে, এদিকে এতদিন দূরে থাকলেও এইমুহূর্তে নিজের বাবার রক্তাক্ত শরীরটা দেখে আদিত্যর ভিতরের অনিকেত বেরিয়ে আসে, কেউ যেন মহাপ্রলয়রুদ্রের ধ্যানসমাধি ভাঙিয়ে তাকে জাগিয়ে তুলে মহাবিধ্বংসকে আমন্ত্রণ করেছে কারণ এরপর আদিত্য ওরফে অনিকেত যা করলো সেটাকে প্রলয়রুদ্রের বিধ্বংসী তাণ্ডবলীলা ছাড়া আর কিছু বলা যায় না, যে তাণ্ডবের মধ্যে পরে অভিরূপবাবুর উপরে আক্রমণকারীরা নিজেরাই ক্ষতবিক্ষত হতে থাকলো, কারো হাত কনুই থেকে ভাঙলো তো কারো কনুই আর কবজির মাঝখান ভেঙে গেল তো কারো পা ভেঙে শরীরে ঝুলে গেল তো কারো হাতের ছুরি তারই পেটে ঢুকে গেল, আবার কারো পাঁজর ভেঙে গেল আদিত্যর লাথি খেয়ে। অবশেষে লোকগুলো পিছু হটতে বাধ্য হলো পালানোর চেষ্টা করলো হয়তো ব্যার্থই হতো কারণ তখনও আদিত্য ওদের মারতে উদ্যত হয়তো ওদের মেরেই ফেলতো যদি না একটা গোঙানির শব্দ শুনে পিছনে তাকিয়ে দেখে বাবা কোনোমতে হাতটা তুলে তাকে ডাকছে পরক্ষণেই হাতটা নেমে গেল। এই সুযোগে লোকগুলো কোনোমতে একে অপরের সাহায্যে নিজেদের আনা গাড়িতে উঠে পালিয়ে গেল আর আদিত্য দৌড়ে নিজের বাবার কাছে এলো। "বাবা বাবা চোখ খোলো বাবা" ছেলের ডাকেও অভিরূপবাবুর জ্ঞান ফিরলো না আদিত্য তাড়াতাড়ি ওনার কবজি ধরে নাড়ী বোঝার চেষ্টা করে, দেখে ক্ষীণ নাড়ীর স্পন্দন তখনও আছে, একবার চারিদিকে অসহায়ের মতো তাকায় আদিত্য কেউ কোথাও নেই যে কজন ছিল তারা এই মারামারি, রক্তারক্তি কাণ্ড দেখে চম্পট দিয়েছে। আদিত্যর বুঝতে বাকি থাকে না যে এখন অন্য কারো সাহায্য সে পাবে না যা করার তাকেই করতে হবে সে তাড়াতাড়ি গাড়ির ড্রাইভার সিটের কাছে যায়, সৌভাগ্যবশত ড্রাইভারটি গাড়ি থেকে নামার সময় চাবি লাগিয়ে রেখে নামে, আদিত্য তাড়াতাড়ি ড্রাইভার সিটে গিয়ে পিছনের দরজার লকগুলো খুলে আবার বেরিয়ে এসে অভিরূপবাবুকে ধরে তুলে কোনোমতে পিছনের সিটে শুইয়ে দেয় তারপর দ্রুত ড্রাইভিং সিটে বসে গাড়ি স্টার্ট দেয়। "ডক্টর ডক্টর এমার্জেন্সী" অভিরূপবাবুকে কাছেই একটা বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে পাগলের মতো ডাক্তারদের ডাকতে থাকে আদিত্য, অভিরূপবাবু তখন স্ট্রেচারের উপরে রক্তাক্ত ও অচেতন অবস্থায় শায়িত। সন্ধ্যার সময় এমার্জেন্সীতে ভিড় অনেকটাই কম, আদিত্যর ডাকাডাকিতে একজন যুবক ডাক্তার বেরিয়ে এলেন আদিত্য তাকেই ধরলো, "ডক্টর, আমার বাবা.. আমার বাবা কয়েকজন আততায়ী ছুরি মেরেছে" ডাক্তারটি একটু দেখেই কয়েকপা পিছিয়ে গেলেন, "ইটস্ আ পুলিশ কেস, পুলিশে ইনফর্ম করেছেন? আগে সেটা করুন" "আমি সব করবো, আপনি আমার বাবাকে বাঁচান প্লিজ" হাতজোড় করে কাতরভাবে অনুরোধ করে আদিত্য, কিন্তু আদিত্যর নরম স্বর দেখেই বোধহয় আরও মাথায় চড়ে বসতে যায় যুবক ডাক্তারটি, আদিত্যর অনুরোধে কর্ণপাত না করে বেশ চড়া সুরেই বলে, "আপনাকে বললাম না এগুলো পুলিশ কেস পুলিশ না এলে আমরা কিছু করতে পারবো না এটা হাসপাতালের নিয়ম" মুহুর্তের মধ্যে আবার প্রলয়রুদ্র জেগে উঠে ভৈরবরূপ ধারণ করলেন, আদিত্য চোখের পলকে ডাক্তারটির শার্টের কলার ধরে পিছনের দেয়ালের সঙ্গে ঠেসে ধরে কিছুটা শূন্যে তুলে ধরলো, আদিত্যর চোখ থেকে যেন আগুন ঝরতে থাকে, "আগে মানুষের জীবন না আগে রুলস? বেশ আমি পুলিশকে ডাকছি আপনি ওয়েট করুন কিন্তু এইসময়ে যদি আমার বাবার কিছু হয় তাহলে আগে আপনাকে, এই হসপিটালকে আর আপনার পুরো পরিবারকে খুঁজে আগুনে পোড়াবো তারপর আমার বাবার কাজ, এবার আপনি ডিসাইড করুন পুলিশের জন্য ওয়েট করবেন না ট্রিটমেন্ট শুরু করবেন?" আদিত্যর এই আকস্মিক পরিবর্তনে যুবক ডাক্তারটি কিছুটা হকচকিয়ে যায় সে কিছু বলতে পারে না, একজন স্টাফ বোধহয় আদিত্যকে বাঁধা দিতে আসছিল কিন্তু আদিত্যর অগ্নিদৃষ্টি দেখে আর এগোতে সাহস পায় না। "কি হচ্ছে টা কি এখানে?" একটা ভারী গলা শুনতে পেয়ে আদিত্য সেদিকে তাকিয়ে দেখে আরেকজন ডাক্তার তবে ইনি আগেরটির তুলনায় একটু বয়স্ক। আদিত্য এবার আগের ডাক্তারটিকে ছেড়ে নতুন ডাক্তারটির কাছে যায়, "আমার বাবাকে কয়েকজন ছুরি মেরেছে কিন্তু উনি ট্রিটমেন্ট না করে নিয়ম দেখাচ্ছেন" নতুন ডাক্তারটি বোধহয় অভিরূপবাবুকে চেনেন তিনি শায়িত অবস্থায় দেখে "আরে এ তো মিস্টার ব্যানার্জী" বলে তাড়াতাড়ি এসে নাড়ী দেখলেন, নাড়ীর স্পন্দন তখনও আছে দেখে উনি তাড়াতাড়ি ওনাকে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যেতে আদেশ দিলেন তারপর যুবক ডাক্তারটির দিকে তাকিয়ে "তোমাকে পরে দেখছি" বলে চলে গেলেন, যাওয়ার আগে আদিত্যকে একটা প্রশ্ন করলেন,"ওনার অনেক ব্লাড লস হয়েছে, হয়তো ব্লাড দিতে হতে পারে ওনার ব্লাড গ্ৰুপ জানেন?" "ও পজিটিভ" একটুও না ভেবে উত্তর দেয় আদিত্য, ডাক্তারটি চলে যান আর আদিত্য অস্থিরভাবে পায়চারি করতে থাকে এইসময়ে বারকয়েক পিয়ালীর ফোন এলেও সে রিসিভ না করে কেটে দেয়। খানিক পরে একটা অন্য সমস্যা দেখা দেয় একজন নার্স বেরিয়ে এলে আদিত্য ব্যাগ্ৰভাবে বাবার কথা জিজ্ঞেস করলে নার্সটি জানান, 'হাসপাতালের ব্লাডস্টোরেজে ও পজিটিভ ব্লাড আর নেই একটাই বোতল ছিল যেটা অলরেডি দিয়ে দেওয়া হয়েছে, কাছাকাছি যে ব্লাডব্যাংক আছে সেখানেও খোঁজ নেওয়া হয়েছে সেখানেও নেই, তিনি আরও বলেন যদি ফ্যামিলির কারো এই ব্লাডগ্ৰুপের রক্ত থাকে তো' আর বলতে হয় না আদিত্যকে তার নিজের ব্লাডগ্ৰুপ তার বাবার গ্ৰুপই ও পজিটিভ, সঙ্গে সঙ্গে সে বলে "আমার ব্লাড গ্ৰুপ ও পজিটিভ এবং আমার কোনো রোগ নেই আমি সম্পূর্ণ ফিট আমার রক্ত নিন" ঘন্টাখানেক পরে আদিত্য অচেতন অভিরূপবাবুর পাশে বসে আছে তার চোখ থেকে অনবরত জল ঝরছে। অভিরূপবাবুর শরীরের আঘাতের জায়গাগুলো পরিষ্কার করে ব্যাণ্ডেজ করে দেওয়া হয়েছে ভাগ্য ভালো ইন্টারনাল ড্যামেজ হয়নি কিন্তু অত্যন্ত রক্তপাতের জন্য তার অবস্থা খারাপের দিকে গিয়েছিল তবে এখন অনেকটাই স্থিতিশীল তাকে এখন ইঞ্জেকশন দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে রাখা হয়েছে। রক্ত দেওয়ায় আদিত্যর নিজের শরীরেও দুর্বলতা এসেছে যদিও সেটাকে সে গুরুত্ব দিতে নারাজ, সে অচেতন বাবার পাশে বসে কখনো তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে তো আবার কখনো চুপ করে মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। কিছুক্ষণ পরে একজন নার্স চেক করতে এসে তাকে বলে "আপনি এবার বাড়ির লোকদের খবর দিন আর পুলিশেও জানানো দরকার, প্লিজ এবার অন্তত হাসপাতালের নিয়মটা.." "ঠিক আছে আমি করছি" নার্স চেক করে বেরিয়ে গেলে আদিত্য অভিরূপবাবুর কেবিনের বাইরে এসে দাঁড়ায় সেখানে এখন অল্প কয়েকজন লোক আছে, অন্যান্য পেশেন্টদের বাড়ির লোক। "কি রে তোর জামাইবাবু তো এখনো ফিরলো না একটু দেখ না আবার ফোন করে" "জামাইবাবুর ফোনটা বন্ধ দিদি" "তাহলে একটু এগিয়ে গিয়ে দেখোনা" ব্যানার্জী ভিলায় শ্রীতমাদেবীর কপালে চিন্তার রেখা তাঁর স্বামী এখনো ফেরেননি এত রাত কখনো করেন না, তার উপরে ফোনটাও বন্ধ করে রেখেছে মানুষটা। পরিচারক পরিচারিকা ছাড়া এইমুহূর্তে বাড়িতে মানুষ বলতে শ্রীতমাদেবী, তার ভাই স্বর্ণেন্দু বাবু এবং তাঁর স্ত্রী সুদেষ্ণা দেবী। বাড়ির অন্যরা অর্থাৎ শ্রীতমাদেবীর ননদ মণিমালা দেবীর স্বামী প্রীতমবাবু কয়েকদিনের জন্য বাইরে গেছেন, বাকিরা অর্থাৎ সুশান্ত তার স্ত্রী, মণিমালা, শপিংএ গেছে আর অরুণাভ আর মৌমিতা ওদের ছেলেমেয়ে সহ এক বন্ধুর পার্টিতে গেছে। তাই দিদিকে সঙ্গ দিতে স্বর্ণেন্দু বাবু সস্ত্রীক চলে এসেছেন এমনিতেও এবাড়িতে তার অনায়াস যাতায়াত লেগেই থাকে। স্বামী ফিরছে না দেখে এবং তার ফোন বন্ধ দেখে একসময় ভাইকে কথাটা বলেন, এবং তাতে সায় দেন সুদেষ্ণা দেবী, স্বর্ণেন্দু বাবুরও যে চিন্তা হচ্ছে না সেটা নয়, তাঁর জামাইবাবু যে রোজ বিকেলে যাদবপুরে যান এটা তিনি জানেন কিন্তু সন্ধ্যার মধ্যেই ফিরে আসেন অথচ আজ আসছেন না ব্যাপার কি? এমনিতেও সাউথ কলকাতা জুড়ে কয়েকমাস ধরে ডাকাতি শুরু হয়েছে। স্বর্ণেন্দু বাবু ঠিক করেন এবার পুলিশে খবর দেবেন কিন্তু তার আগেই একটা অচেনা নম্বর থেকে তার ফোনে ফোন আসে, "হ্যালো, স্বর্ণেন্দু বাবু কথা বলছেন? অ্যাডভোকেট স্বর্ণেন্দু মুখার্জি?" এক পুরুষ কণ্ঠ ভেসে আসে। "বলছি, আপনি কে?" "আমি কে সেটার থেকেও ইম্পর্টেন্ট হলো আমি কি বলতে চাইছি" "মানে কি বলতে চাইছেন আপনি? তার আগে বলুন আপনি কে?" "আমি আপনাদের শত্রু নই কাজেই যা বলছি সেটা শুনুন কিন্তু এখনই রিয়্যাক্ট করবেন না" "আপনার কথার মানে আমি কিছুই বুঝতে পারছি না" "আপনার জামাইবাবু মানে অভিরূপবাবুর একটা অ্যাক্সিডেন্ট হয়েছে" "হোয়াট?" "রিয়্যাক্ট করবেন না, প্লিজ চুপচাপ শুনে যান আপনি এখনই আপনার দিদিকে নিয়ে যাদবপুরে জে.সি.রায় মেমোরিয়াল হসপিটালে চলে আসুন আর কাউকে কিচ্ছু বলবেন না ওনার সেফটির জন্যই বলছি" "ম....মা" "নিজেকে সামলান, উনি এখনও আউট অফ ডেঞ্জার নন প্লিজ আপনার দিদিকে নিয়ে চলে আসুন আর কাউকে কিচ্ছু বলতে হবে না, আর পারলে আপনার বন্ধু সুপ্রতিমবাবুকে ডেকে নিয়ে আসুন, শুধুমাত্র ওনাকেই ডাকবেন আর কোনো পুলিশকে নয়"। "কার ফোন ছিল রে ভাই ওরকম আঁতকে উঠলি কেন?" ফোনটা কেটে যাওয়ার পরেও হতভম্ব ভাবটা কাটাতে একটু সময় নিলেন স্বর্ণেন্দু বাবু, তিনি বুঝে উঠতে পারলেন না যে ঠিক কি হলো তার সাথে, কেউ কি কোনো প্র্যাংক করলো? কিন্তু সেটাই বা কিভাবে সম্ভব তার সাথে এরকম প্র্যাংক করবে এরকম পরিচিত কেউ নেই আর যদি প্র্যাংক না হয় যদি সত্যি সত্যিই জামাইবাবুর অ্যাক্সিডেন্ট হয়ে থাকে তখন? মানুষটির শত্রুর তো অভাব নেই ফোনের ওপাশে যে ছিল সেও ওরকমই একটা কিছু বললো সবথেকে বড়ো কথা লোকটির আওয়াজ শুনে মনে হলো না যে সে প্র্যাংক করছে উল্টে কাঁদছে বলেই মনে হলো। ভাইকে চুপ করে বসে থাকতে দেখে চিন্তিত মুখে প্রশ্ন করলেন শ্রীতমাদেবী, "কার ফোন ছিল রে ভাই ওরকম আঁতকে উঠলি কেন?" দিদির ডাকে সম্বিৎ ফিরলো স্বর্ণেন্দু বাবুর এইমুহূর্তে দিদিকে কিছু জানানো যাবে না খবরটা সহ্য করতে পারবে কি না শিওর নন তাই জোর করে মুখে একটা হাসি এনে বললেন, "তুই চল আমার সাথে এক জায়গায় যেতে হবে" "কোথায় তোর জামাইবাবু ঠিক আছে তো?" "চল না, বড্ড কথা বলিস তুই" "কিছু একটা নিশ্চয়ই হয়েছে, নাহলে তুই আঁতকে উঠলি কেন? বল না তোর জামাইবাবু কোথায়?মানুষটার কিছু হয়নি তো?" "দিদি তোকে বলছি তো যেতে হবে গিয়ে শাড়ীটা চেঞ্জ করে আয়" "না ,তুই এখনই আমাকে নিয়ে চল" "তোর শাড়ীর অবস্থা দেখ এটা পরে বাইরে যাওয়া যায় না, যা তাড়াতাড়ি চেঞ্জ করে আয়, সুদেষ্ণা তুমিও চেঞ্জ করে চলো" দুই মহিলা শাড়ী পাল্টাতে যেতেই স্বর্ণেন্দু বাবু সুপ্রতিমবাবুকে ফোন করলেন, "হ্যালো সুপ্রতিম?" "বলো, কি হয়েছে?" "কোথায় তুমি?" "আর বলো না আবার সেই ডাকাতি" "মানে?" "যাদবপুরে একটা পার্কের সামনে কয়েকজন নাকি এক ভদ্রলোককে অ্যাটাক করে আশেপাশের কয়েকজন ওই দেখে পালিয়ে যায়,তারপর লোকাল থানায় খবর দেয় কিন্তু পুলিশ এসে কাউকে পায়নি শুধু একটা জায়গায় রক্তপাত হয়েছে সেই চিহ্ন ছাড়া, কিন্তু তুমি কেন ফোন করেছো?" "লোকগুলো বলেছে কার উপর অ্যাটাক হয়েছে?" "না, ওরা ভয়ে পালিয়ে গিয়েছিল অত খুঁটিয়ে দেখেনি" "আমার মনে হয় আক্রান্ত লোকটি আমার জামাইবাবু" "হোয়াট, এটা কি বলছো তুমি?" "আমার জামাইবাবু রোজ বিকেলে ওই পার্কে যান, সন্ধ্যার মধ্যে ফিরে আসেন আজ ফেরেননি একটু আগে একটা ফোন এসেছিল বললো জামাইবাবুর একটা অ্যাক্সিডেন্ট হয়েছে তাড়াতাড়ি হসপিটালে যেতে, দিদি আর আমাকে যেতে বললো আর কাউকে বলতে বারণ করলো আর হ্যাঁ বললো তোমাকে যেন নিয়ে যাই" "কোন হসপিটালে?" "জে.সি.রায় মেমোরিয়াল" "ঠিক আছে তোমরা আসো, আমি তো কাছেই আছি আমি চলে যাচ্ছি" "শোনো শুধু তোমাকেই যেতে বলেছে আর কোনো পুলিশকে নয়" "ঠিক আছে, তোমরা আসো" স্বর্ণেন্দু বাবু ফোন রেখে দেখেন সামনে আরেক বিপদ তার দিদি কখন যেন এসে সব কথা শুনে নিয়েছেন, "কি বললি ওনার অ্যাক্সিডেন্ট হয়েছে আর তুই.. আমি এক্ষুনি যাবো ওনার কাছে" শ্রীতমাদেবী কান্নায় ভেঙে পড়েন, সুদেষ্ণা দেবী কোনোমতে ধরে সামলে আছেন, স্বর্ণেন্দু বাবু কোনোমতে দিদিকে শান্ত করে তাড়াতাড়ি বেরিয়ে গাড়িতে ওঠেন। I'm the King of Dark
&
I rule over all Devils
17-06-2023, 11:57 PM
দ্বিতীয় খণ্ড ১৮তম পর্ব স্বর্ণেন্দু বাবুরা হাসপাতালে পৌঁছে দেখেন সুপ্রতিমবাবু অলরেডি সেখানে পৌঁছে গেছেন, শ্রীতমাদেবী তো সারা রাস্তা কাঁদতে কাঁদতে এসেছেন এখানে এসে তার কান্না আরো বেড়ে যায়, কোনোমতে তাকে বুঝিয়ে কান্না থামিয়ে কেবিনের ভিতরে নিয়ে যাওয়া হয়, অভিরূপবাবুর জ্ঞান তখনও ফেরেনি। শ্রীতমাদেবী আর সুদেষ্ণা দেবীকে ভিতরে রেখে স্বর্ণেন্দুবাবু বাইরে সুপ্রতিমবাবুর কাছে আসেন, সুপ্রতিমবাবুই প্রথম কথা বলেন "তোমাকে কে ফোন করেছিল?" "অচেনা নম্বর একটা মেল ভয়েস ছিল কেন বলোতো?" "এখানে এসে আমি ডাক্তারদের সাথে কথা বলে একটা জিনিস জানলাম" "কি জিনিস?" "একজন ছেলে মিস্টার ব্যানার্জীকে এখানে নিয়ে আসে, সে নিজেকে মিস্টার ব্যানার্জীর ছেলে বলে পরিচয় দেয়, এমনকি এক ডাক্তারকে নাকি রীতিমতো থ্রেট করেছিল" "কেন?" "ডাক্তারটি বলেছিল যতক্ষণ পুলিশ না আসবে ততক্ষণ ট্রিটমেন্ট শুরু হবে না" "অ্যাডমিট ফর্মে নাম.." "তাতে এ ব্যানার্জী লেখা" "কিন্তু অরু তো এখানে নেই" "সেটাই ভাবছি তাহলে কে ছেলেটা? এটার উত্তর বোধহয় অভিরূপবাবুর জ্ঞান ফিরলে জানা যাবে" জ্ঞান ফিরতে অবশ্য আর বেশি দেরী হলো না একটু পরে একজন নার্স চেকআপ করতে এসে দেখেন অভিরূপবাবুর আস্তে আস্তে জ্ঞান ফিরছে, তৎক্ষণাৎ ডাক্তারকে খবর দেওয়া হলে তিনি চলে আসেন এবং শ্রীতমাদেবী ও সুদেষ্ণা দেবী কেবিন থেকে বেরিয়ে আসেন। একটু পরে নার্স বেরিয়ে এসে জানান অভিরূপবাবুর জ্ঞান ফিরেছে কিন্তু উনি অনি বলে কাউকে খুঁজছেন, তাঁর পার্মিশন নিয়ে একে একে শ্রীতমাদেবী, সুদেষ্ণা দেবী ও স্বর্ণেন্দুবাবু ঢুকলেন সুপ্রতিম বাবু শুধু বাইরে দাঁড়িয়ে রইলেন তাঁর মাথায় কয়েকটা কথা ঘুরছে যেমন, অভিরূপবাবুর উপর কারা অ্যাটাক করলো এবং কেন? তাকে বাঁচিয়ে এখানে কে আনলো? সেই নিশ্চয়ই স্বর্ণেন্দুকে ফোন করেছিল, কিন্তু সে স্বর্ণেন্দু আর তার বন্ধুত্বের কথা জানলো কিভাবে? বাড়ির আর কাউকে বলতে বারণ করেছে কেন? তাকেই বা এখানে ডেকে আনার কারণ কি? সুপ্রতিম বাবু বুঝতে পারছেন কিছু প্রশ্নের উত্তর অভিরূপবাবুর থেকে জানতে হবে তাই এবার তিনিও কেবিনের ভিতরে ঢুকলেন, ঢুকে শুনতে পেলেন ডাক্তার বলছে, "ধন্যি ছেলে আপনার মিস্টার ব্যানার্জী, আপনাকে এখানে নিয়ে এসে রীতিমতো হল্লা করে দিয়েছে আমাদের একজন ডাক্তারকে তো থ্রেট দিয়েছিল যে আপনার কিছু হলে উনি এই হাসপাতাল জ্বালিয়ে দেবেন" "আমাদের ছেলে? মানে?" শ্রীতমাদেবীর গলায় বিস্ময় "হ্যাঁ, মিসেস ব্যানার্জী ছেলেটি তো তাই বললেন ইনফ্যাক্ট ওনার জন্যেই মিস্টার ব্যানার্জীকে আমরা বাঁচাতে সক্ষম হয়েছি। ওনার অনেক ব্লাড লস হয়েছিল আপনাদের ছেলেই তো নিজের ব্লাড ডোনেট করলো ভাগ্যিস বাবা আর ছেলের ব্লাডগ্ৰুপ সেম" "আমার ব্লাডগ্ৰুপ আপনারা কিভাবে জানলেন?" আস্তে আস্তে কথা বললেন অভিরূপবাবু। "আপনার ছেলেই তো বললেন ও পজিটিভ কিন্তু আমাদের স্টোরেজে ছিল না তখন উনি বলেন ওনারও সেম ব্লাড গ্ৰুপ আমরা বাধ্য হয়েই ওনার ব্লাড নিই, কোথায় উনি? ওনার কিন্তু একটু রেস্টের দরকার অনেকটাই রক্ত দিয়েছেন" "কিন্তু আমার ছেলে তো.." শ্রীতমাদেবী কিছু বলতে যাচ্ছিলেন কিন্তু অভিরূপবাবু তাকে থামিয়ে দিয়ে ডাক্তারের উদ্দেশ্যে বললেন "থ্যাংক ইউ ডক্টর"। ডাক্তারটি চলে গেলে উপস্থিত সবাই অভিরূপবাবুর দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকেন, "তুমি ঠিক ছিলে শ্রী, সেদিন বাড়িতে যে এসেছিল সে আর কেউ নয় আমাদের অনি আর আজ ওই আমাকে বাঁচিয়েছে" আস্তে আস্তে বললেন অভিরূপবাবু, এবার সুপ্রতিম বাবু একটা প্রশ্ন করলেন, "মিস্টার ব্যানার্জী আমি জানি আপনার এই অবস্থায় আপনাকে প্রশ্ন করাটা ঠিক হবে না তবুও করছি আপনার উপরে অ্যাটাক কারা করলো?" শ্রীতমাদেবী একটু অবাক এবং বিরক্ত ভাবে সুপ্রতিমবাবুর দিকে তাকিয়ে আছেন দেখে স্বর্ণেন্দু বাবু পরিচয় করিয়ে দিলেন, "দিদি ও সুপ্রতিম, কলকাতার নগরপাল এবং আমার বন্ধু। যে ফোন করে জামাইবাবুর খবরটা দেয় সেই ওকে ডাকতে বলে" এবার অভিরূপবাবু কথা বলেন "ওনার আরও একটা পরিচয় আছে সেটা হলো উনি আমাদের অনির গুরু" এবার শ্রীতমাদেবী মুখের বিরক্তি ভাবটা চলে গেলেও কান্নার ভাবটা রয়েই গেল, অভিরূপবাবু এবার সুপ্রতিমবাবুর দিকে তাকিয়ে বলেন, "সুপ্রতিমবাবু ওদের মুখ ঢাকা ছিল, তবে একজনকে চিনি আমার ড্রাইভার ও ওদের দলে ছিল, কিন্তু ওদের পরে সুপ্রতিমবাবু আপনি আগে অনিকে খুঁজে বার করুন" "মিস্টার ব্যানার্জী আমার এখন ফাস্ট প্রায়োরিটি ওই ডাকাতদের খুঁজে বের করা" সুপ্রতিমবাবুর কথার উত্তরে অভিরূপবাবু কিছু বলতে যাচ্ছিলেন কিন্তু দরজায় নক হওয়ায় চুপ করে গেলেন, দরজা ঠেলে ভিতরে ঢুকলো একজন স্টাফ সে সুপ্রতিমবাবুকে একটা কাগজের টুকরো দিয়ে বললেন "স্যার একজন এটা আপনাকে দিতে বললেন" "আমাকে?" "হ্যাঁ স্যার, এই কেবিনটা দেখিয়ে বললেন এই কেবিনে একজন পুলিশ অফিসার আছেন তাকে এই চিঠিটা দিতে" "কে চলুন তো আমাকে দেখাবেন" সুপ্রতিমবাবু স্টাফটির সঙ্গে বেরিয়ে গেলেন এবং একটু পরেই ফিরে এসে বললেন "পেলাম না, আচ্ছা স্বর্ণেন্দু তোমাকে যে নম্বর থেকে ফোন করা হয়েছিল ওটাতে রিং করো তো" স্বর্ণেন্দু বাবু তাই করলেন ফোনে নম্বরটা ডায়াল করে স্পিকার চালু করলেন, একটা মহিলা কণ্ঠ ভেসে এলো "হ্যালো" "হ্যালো, এই নম্বর থেকে আমার ফোনে একটা ফোন এসেছিল" "এই নম্বর থেকে... হ্যাঁ মনে পরেছে একটা ছেলে করেছিল" "একটা ছেলে?" "হ্যাঁ বললো, ওনার একজন হাসপাতালে অ্যাডমিট তাই বাড়ির লোককে খবর দিতে হবে কিন্তু ওনার ফোনটা চার্জ নেই বন্ধ হয়ে গেছে, তাই আমার থেকে ফোন নিয়ে করলেন" "আচ্ছা ধন্যবাদ" ফোনটা কেটে কেবিনে উপস্থিত প্রত্যেকে চুপ করে পরস্পরের মুখ চাওয়াচাওয়ি করতে থাকেন শুধু সুপ্রতিমবাবু চিঠিটা খুলে পড়ে নিলেন, তার কপালে চিন্তার ভাঁজ দেখে অভিরূপবাবু জিজ্ঞেস করলেন, "কার লেখা? অনির? কি লেখা আছে?" "মিস্টার ব্যানার্জী এতে লেখকের নাম লেখা নেই তবে যা লিখেছে সেটা আপনাদের না শোনাই বোধহয় ভালো হবে" "চিঠিটা যদিও আপনাকে লেখা তবুও যদি অসুবিধা না থাকে বলুন" সুপ্রতিমবাবু চিঠিটা স্বর্ণেন্দু বাবুর দিকে বাড়িয়ে দিলেন তিনি জোরে জোরে পড়তে শুরু করলেন, সুপ্রতিম স্যার, আপনাকে দেখেই বুঝেছি কাজের চাপে যতটা ভালো থাকা যায় ততটাই আছেন বোধহয় তার থেকেও কম তাই ওসব ছেঁদো কথায় সময় নষ্ট করছি না সরাসরি আসল কথায় যাচ্ছি। চিঠি লিখছি তাই বুঝতেই পারছেন সামনে আসতে চাইছি না, ফোন করতে পারতাম কিন্তু আপনার নাম্বার আমার কাছে নেই কিন্তু আপনাকে ডেকে আনার উদ্দেশ্যই হলো কিছু কথা জানানো, সামনাসামনি বলতে পারলে আরও ভালো হতো কিন্তু সেটা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। এতক্ষণে তো আপনি বুঝতেই পেরেছেন যে শহরে আরেকটা অ্যাটাক হয়েছে এবং সেটা হয়েছে খোদ অভিরূপ ব্যানার্জীর উপরে, উনি জ্ঞান ফিরলে হয়তো আরও জানবেন যে ওনার ড্রাইভারও এর সঙ্গে জড়িত ছিল, স্বভাবতই আপনারা ড্রাইভারকে খুঁজতে চেষ্টা করবেন সে করুন ভাগ্য ভালো থাকলে তাকে পেয়েও যেতে পারেন অন্তত লাশও পেতে পারেন আর ভাগ্য খারাপ থাকলে কিছুই না। যে কথাগুলো বলার জন্য আপনাকে ডেকে এনেছি সেগুলোর স্বপক্ষে আমার কাছে কোনো প্রমাণ নেই তাই হয়তো বলা উচিত হবে না কিন্তু আমি জানি আপনাকে বললে সেটা ভুল হবে না বরং আপনার কাজের সহায়তা করাই হবে। স্যার, আমি নিশ্চিত যে আজকে অভিরূপবাবুর উপরে এই অ্যাটাক কোনো সাধারণ ডাকাতির ঘটনা নয় বরং এটা পূর্বপরিকল্পিত আততায়ীদের উদ্দেশ্যই ছিল অভিরূপবাবুকে হত্যা করা তাকে লুঠ করা নয়, এবং আমার অনুমান যদি সত্যি হয় তাহলে বিগত কয়েকমাস ধরে শহরে যে ডাকাতির ঘটনা চলছে সেটা আসলে ছিল আজকের ঘটনার নেট প্র্যাকটিস বা পুলিশের তদন্তকে অন্যপথে চালিত করার প্রয়াস আর বোধহয় এতে তারা সফলও হয়েছে। আজ আততায়ীরা অভিরূপবাবুকে হত্যা করতে এসে নিজেরাই উল্টে জখম হয়েছে, আপনি অবিলম্বে পুরো দক্ষিণ কলকাতায় তল্লাশির ব্যবস্থা করুন, জানি কাজটা একটু কঠিন কিন্তু বিশ্বাস করুন আপনি কোনো না কোনো সূত্র পাবেনই হয়তো আততায়ীদেরকেও পেয়ে যেতে পারেন ,ওদের কয়েকজনের পা ভেঙেছে কয়েকজনের হাত আবার কেউ নিজেদের ছুরিতেই আহত হয়েছে অতএব বুঝতেই পারছেন কি করতে হবে? আর যদি মেইন কালপ্রিটদের কথা বলেন তবে তারা সকলেই আপনার পরিচিত এবং ব্যানার্জী পরিবারের পরিচিতও, প্রমাণ নেই তাই নামগুলো বলা ঠিক হবে কি না জানিনা তবে আপনাকে বলছি এইরকম প্ল্যান খুব বেশি লোকের মাথায় আসবে না যাদের মাথায় আসবে তাদের মধ্যে প্রীতমবাবু একজন দ্বিতীয় মনোজিত বাবু, আমার স্থির বিশ্বাস এই ডাকাতি এবং আজকের ঘটনার পিছনে এই দুজনের মস্তিষ্ক রয়েছে। এটা ভাববেন না যে আমি কোনো ব্যাক্তিগত আক্রোশের জন্য এটা বলছি এটা আমার অনুমান তবে বোধহয় ভুল করছি না, যদি আক্রমণের কারণ বলেন তবে প্রথমেই যে কারণটা ধরা যায় সেটা হলো প্রতিশোধ, কিছুদিন আগে ব্যানার্জী ভিলায় এক বহিরাগত দম্পতির সামনে ওনাদের দুষ্কর্মের জন্য কথা শোনান মিস্টার ব্যানার্জী যেটাকে ওনারা যে ভালো ভাবে নেওয়ার লোক নয় এটা আপনার মতো বুদ্ধিমান এবং বিচক্ষণ পুলিশ অফিসার নিশ্চয়ই বুঝতে পারেন। এবার কি করতে হবে সেটা আপনিই ঠিক করুন আরেকটা কথা, আমাকে খোঁজার চেষ্টা করবেন না কারণ তাতে লাভের থেকে ক্ষতি হবার সম্ভাবনা বেশী তাই আমাকে অন্তরালেই থাকতে দিন। ইতি, এক বন্ধু চিঠি পড়া শেষ হলে অভিরূপবাবুকে গম্ভীর দেখে সুপ্রতিমবাবু বলেন, "আপনাকে আগেই বলেছি যে চিঠিটার বক্তব্য আপনার জানা ঠিক হবে না" "এটা আমার অজানা নয়" "আপনিও ওদের সন্দেহ করেন?" "ওদের কুকীর্তির অনেক খবর পেয়েছি কিন্তু প্রমাণ পাইনি" "আপনি কি চান আমি তদন্ত করি?" "আপনি আগে অনিকে খুঁজুন, যদি এটা সত্যি হয় যে এই ডাকাতিগুলো আমার উপরে অ্যাটাকের জন্য হচ্ছিল তবে আপাতত সেগুলো বন্ধ থাকবে বলেই মনে হয়" "কিন্তু জামাইবাবু আমার এখনো মনে হয় তোমরা ভুল করছো এই ছেলে অনি নয়, অনি এরকম আমাদের থেকে লুকিয়ে থাকবে কেন?" "সেটাই তো জানতে হবে, আর আজ আরও প্রমাণ পেয়েছি যে ওই অনি" "কি প্রমাণ?" "ভুলে যাচ্ছো ডাক্তার কি বললেন? ছেলেটা আমার ব্লাডগ্ৰুপ জানতো" "তাতে কি প্রমাণ হয়?" "তুমি আমার ব্লাডগ্ৰুপ জানো? জানোনা তুমি কেন তোমার দিদিও জানেন না আমি অনেক আগে একবার ব্লাডটেস্ট করিয়েছিলাম তখনই জেনেছিলাম আমার ব্লাডগ্ৰুপ তারপর আর করাইনি দরকার হয়নি। তাই আমার ব্লাডগ্ৰুপ খুব একটা কেউ জানে না কিন্তু অনি জানতো, একবার ওরও ব্লাডটেস্ট করাতে হয়েছিল তখনই আমি ওর ব্লাডগ্ৰুপ জেনে নিয়েছিলাম আমিই বলেছিলাম ওকে যে ওর আর আমার ব্লাডগ্ৰুপ এক, ও শুনে খুব আনন্দ পেয়েছিল যে আমার আর ওর ব্লাডগ্ৰুপ এক" "মিস্টার ব্যানার্জী এই চিঠিকে আপনি গুরুত্ব দেবেন কি না জানিনা তবে আমি কিন্তু দেবো তাই এবার অন্তত তদন্তে বাঁধা দেবেন না" সুপ্রতিম বাবু বললেন, উত্তরটা দিলেন শ্রীতমাদেবী "আপনি আপনার ইচ্ছামত তদন্ত শুরু করুন কেউ বাধা দেবে না এবার অপরাধীদের শাস্তি দরকার" "ধন্যবাদ মিসেস ব্যানার্জী" কথাটা বলে সুপ্রতিম বাবু বেরিয়ে গেলেন। তিনি বেরিয়ে যেতেই শ্রীতমাদেবী স্বামীকে বললেন "এবার চুপ করে একটু রেস্ট নাও" কিন্তু অভিরূপবাবু বললেন, "শ্রী অনিকে খুঁজতেই হবে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব" "ঠিক আছে এখন রেস্ট নাও" "আজ অনি নিজের পরিচয় না দিলেও একটা সুখবর দিয়েছে কিন্তু কি দুর্ভাগ্য দেখো ঠিকমতো সেলিব্রেট করতে পারছি না" "কি খবর?" "ওর সাথে ওই মেয়েটাকে মনে আছে?" "হ্যাঁ কিন্তু.." "ওই মেয়েটি আমাদের বৌমা এবং সে সন্তানসম্ভবা, ব্যানার্জীদের নতুন বংশধর আসছে হয় নাতি নয়তো নাতনী"। I'm the King of Dark
&
I rule over all Devils
18-06-2023, 12:47 AM
আজকের বাবা দিবসে অনিকেত ও অভিরুপ বাবুর কথোপকথন টা হৃদয়পর্শী ছিল।
18-06-2023, 01:29 AM
(17-06-2023, 11:57 PM)Monen2000 Wrote:
18-06-2023, 03:12 AM
অসাধারণ...
তবে অনি এতো তাড়াতাড়ি নিজেকে রিভিল করবে সেটা আশা করিনি। তবে সেটা কি ওর আবেগের বশে নাকি লেখক দ্রুত ইতি টানতে চাইছেন কোনটা হবে সেটাই মনে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি করছে৷ ভালো মন্দ দুদিকেই এবার রথী মহারথীরা যোগ দিয়েছে তাই এবার যুদ্ধের মাঠ জমজমাট। হাত বাড়িয়ে ছুঁই না তোকে, মন বাড়িয়ে ছুঁই।
দুইকে আমি এক করি না, এক কে করি দুই।।
18-06-2023, 06:00 AM
Bangla Cinemar moto abr pyalir er sathe kharap kisu na hoilei hoy :"(
Story jeno ato taratari ses na hoy dada. Kharap der kono punishment hoccce na eita dekhe khub e kharap lagtese.like repu added ar moumitar naki ki jeno nam or ki kono kisui hobe na ? Punishment to oro pawa uchit sob theke boro betrayer to oi silo My pain is constant and sharp, and I do not hope for a better world for anyone.
18-06-2023, 09:18 AM
(18-06-2023, 01:33 AM)sona das Wrote: (18-06-2023, 01:34 AM)sona das Wrote: (18-06-2023, 07:10 AM)Dodoroy Wrote: Darun update, chaliye jan ধন্যবাদ I'm the King of Dark
&
I rule over all Devils
18-06-2023, 09:24 AM
(18-06-2023, 12:47 AM)Arpon Saha Wrote: আজকের বাবা দিবসে অনিকেত ও অভিরুপ বাবুর কথোপকথন টা হৃদয়পর্শী ছিল।ধন্যবাদ (18-06-2023, 01:56 AM)Boti babu Wrote: মন ভরে যাওয়া আপডেট। চালিয়ে যাও লাইক রেপু এডেড।ধন্যবাদ (18-06-2023, 03:12 AM)nextpage Wrote: অসাধারণ...একজন পিতৃভক্ত ছেলে কতক্ষণই বা নিজেকে বাবার থেকে লুকিয়ে রাখবে? বাবাকে সামনে পেলে ভিতরের কথা বেরিয়ে আসাটাই স্বাভাবিক নয় কি? (18-06-2023, 06:00 AM)Patrick bateman_69 Wrote: Bangla Cinemar moto abr pyalir er sathe kharap kisu na hoilei hoy :"(দেখা যাক ভবিষ্যতে কি হয়? কে শাস্তি পায় আর কে বেঁচে যায়? I'm the King of Dark
&
I rule over all Devils
|
« Next Oldest | Next Newest »
|