Posts: 248
Threads: 17
Likes Received: 218 in 107 posts
Likes Given: 10
Joined: Apr 2019
Reputation:
34
11-06-2023, 02:28 PM
আয়নার ওপারে থাকা এক অন্য মানুষের গল্প শোনাবো আপনাদের !
ছেড়ে যাবো না | প্রমিশ |
সঙ্গে থাকুন |  
গল্প শুরুর আগে
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
মায়ের ঘরের আয়নার সামনে
দাঁড়িয়ে কাজল তাকিয়ে থাকে
নিজের প্রতিবিম্বের দিকে |
আয়ত চোখের বিনুনি করা
বিম্বিত মেয়েটির দিকে ভাবে
সে কি এত সুন্দর ?
বাম স্তনে নখের আঁচড়টা চোখে
পরতেই কাজলের ফর্সা মুখটা
গোলাপি হয়ে যায় |আরও খুটিয়ে
দেখে নিজের মায়া তনু | বুকের
মাঝে কিশোরী স্তন, সরু কোমর,
জানুসন্ধির সলাজ ত্রিকোণ
কাজলের ছুঁয়ে দেখতে মন
হয় | কিন্তু কাজল জানে যাদু-
আয়নার সামনে কোনো প্রত্যঙ্গ
স্পর্শ করা যায় না |
কিন্তু কাজল জানে যাদু-
আয়নার সামনে কোনো প্রত্যঙ্গ
স্পর্শ করা যায় না |স্থির জলাশয়ে
গড়ে ওঠা প্রতিবিম্ব যেমন সামান্য
আলোড়নেই ভেঙে টুকরো টুকরো
হয়ে যায়, যাদু-আয়নার সামনে
নিজের কোনো অঙ্গ স্পর্শ করলে
রেণুর মত গুঁড়ো-গুড়ো হয়ে
মিলিয়ে যায় মায়াবিম্ব |
কিন্তু কাজল জানে যাদু-
আয়নার সামনে কোনো প্রত্যঙ্গ
স্পর্শ করা যায় না |স্থির জলাশয়ে
গড়ে ওঠা প্রতিবিম্ব যেমন সামান্য
আলোড়নেই ভেঙে টুকরো টুকরো
হয়ে যায়, যাদু-আয়নার সামনে
নিজের কোনো অঙ্গ স্পর্শ করলে
রেণুর মত গুঁড়ো-গুড়ো হয়ে
মিলিয়ে যায় মায়াবিম্ব |
আত্মমুগ্ধ নার্সিসাসের মত কাজল
চেয়ে থাকে নিজের নারী অবয়বের
দিকে | তার কিশোরী দেহের
সকল পুরুষ চিহ্ন একে একে মুছে
যেতে থাকে |(চলবে  
•
Posts: 248
Threads: 17
Likes Received: 218 in 107 posts
Likes Given: 10
Joined: Apr 2019
Reputation:
34
আয়নার ওপারে (কাজলের কথা)
#[এক]
দুর্গাপুরের মায়া বাজারে কাজলদের রেডিমেড কাপড়ের দোকান | দোকানটা কাজলের বাবার হলেও কাজলের কাকা গোপাল দোকানটা চালায় |কাজলের বাবা কলকাতায় কাজ করেন | তিনমাস হল কাজলের পিসির ছেলে মন্টু রাতে দোকানে ঘুমায় | মন্টু আর কাজল দুজনেই মাতৃহারা |কাজলের বাবা মানে মন্টুর বড় মামা তাকে এখানে রেখেছেন |কাজল আর মন্টু এক কলেজে পড়লেও কাজল দুই ক্লাস নীচে পড়ে | ছোটো মামার বিয়ে হয়েছে এক মাস | তারপর থেকে রাতে খাওয়া হলে মন্টু সাইকেল নিয়ে দোকানে যায় রাতে ঘুমাতে | সদ্যবিবাহিত ছোটো মামা নববধূর সাথে ঘুমাবে এটাই স্বাভাবিক| বিয়েতে যেসব আত্মীয় -স্বজন এসেছিল তারা কয়েক দিন পরেই চলে গেছে, কাল বাবাও কলকাতা চলে গেছেন | কাজলকেও তাই মায়াবাজারে দোকানে মন্টুর সাথে ঘুমাতে যেতে হবে ||
কাজল তাতে অখুশী নয়, বরং তার একটু উত্তেজনা হচ্ছে | কারন কাজলের একটা গোপোন দিক আছে | সে মেয়েদের জিনিস ভালোবাসে | মেয়েদের রংচঙে লেস দেওয়া পোষাক, প্রসাধনী তাকে টানে | সব সুন্দর সুন্দর জিনিস ভগবাধ শুধু মেয়েদের জন্য তৈরী করেছেন, এটা তার মেয়েদের প্রতি ভগবানের পক্ষপাত বলেই মনে হয় | কাজল নিজে খুব ফর্সা, এত ফর্সা যে মেয়েরা তাকে হিংসা করে | কাজলের দৈহিক গড়ন মেয়েদের মত | সে লম্বা চুল রাখে, মেয়েদের মত কথা বলা নকল করে | এজন্য তাকে মেয়েলী বলে ছেলেরা খেপায় | কাজলের তাতে কিছু যায় আসে না | তাকে ছেলেদের পোষাক পরতে হয় বলে তার দুঃখ হয় | তাই মায়াবাজারে তাদের রেডিমেড কাপড়ের দোকানে তাকে শুতে যেতে হবে জেনে সে রোমাঞ্চিত | কারন দোকানটায় মেয়েদের সুন্দর সুন্দর পোষাকের মাঝে সে থাকতে পারবে | নিজে পরতে না পারুক, অন্ততঃ সেগুলো ছুতে পারবে (চলবে)
•
Posts: 248
Threads: 17
Likes Received: 218 in 107 posts
Likes Given: 10
Joined: Apr 2019
Reputation:
34
বুলাদির বাড়ি যাবে বলে কাজল
বাড়ি থেকে বের হয় | সরস্বতী পূজার
দিন কলেজে ফাংশন হবে, তাতে
কাজলের নাচের প্রোগ্রাম আছে |
পথে যেতে যেতে কাজল মনে মনে গানটা
গায়~
বসন্তে ফুল গাঁথলো আমার
জয়ের মালা।
বইল প্রাণে দখিণ-হাওয়া
আগুন-জ্বালা।।
পিছের বাঁশি কোণের ঘরে
মিছে রে ওই কেঁদে মরে-
মরণ এবার আনলো আমার
বরণডালা।।
যৌবনেরই ঝড় উঠেছে
আকাশ-পাতালে।
নাচের তালের ঝঙ্কারে তার
আমায় মাতালে।
কুড়িয়ে নেবার ঘুচল পেশা,
উড়িয়ে দেবার লাগল নেশা,
আরাম বলে 'এল আমার
যাবার পালা'।।
বুলাদির নাচের কলেজ আছে, কিন্তু কাজল কলেজে নয়, বুলাদির বাড়ি যাবে |
বুলাদির সাথে তার বন্ধুত্বের সম্পর্ক | মেয়েলি হওয়ার কারনে কাজলকে অনেক ছেলের টিটকিরি শুনতে হয়, কিন্তু মেয়েদের সাথে সে সহজে মিশতে পারে |
বেল বাজাতেই বুলাদি দরজা খুলে,
-" ও মা,এখন যে আমাকে বেরুতে হবে ভাই|"
কাজল থমকে দাঁড়ায়| বুলাদি হাত ধরে টানে, "ভিতরে আয়, কড়াইশুটির ঘুঘনি করেছি"
কড়াইশুটির ঘুঘনি কাজলের অত্যন্ত প্রিয়, তার উপর বুলাদির রান্না অমৃত|
পরিতৃপ্তির সাথে খেতে খেতে কাজল বলে,"আমার নাচের কী হবে?"
চুলগুলো পাকিয়ে সযত্নে খোপা করতে করতে বুলাদি বলে,"অনেক সময় আছে,সেই সরস্বতী পুজো...আর শরত্ সদনে এই নাচটা
ভালোই করেছিলি|"
কাজল একটু লজ্জা পায়, বলে,"আগামী সপ্তাহ থেকে কলেজে রিহ্যার্সাল শুরু হবে|"
বুলাদি চোখ পাকিয়ে বলে,"ধুসস্...তোর রিহ্যার্সাল লাগবে না",তারপর চোখটা একটু সরু করে কাজলের হাত ধরে বলে,"রঞ্জন বলে ছেলেটাকে মনেআছে তোর?"
-"কোন রঞ্জন?"
বলেই কাজলের মনে পরে শরত্ সদনে তার নাচের মুগ্ধ ছেলেটির কথা,
তার সাথে কথা বলতে চেয়েছিল, কিন্তু বুলাদির অনেক অনুরোধেও কাজল রাজি হয়নি|
কাজলকে লজ্জায় রাঙা হয়ে উঠতে দেখে বুলাদি বলে,"রঞ্জনকে এখোনো বিশ্বাস করাতে পারিনি যে তুই সত্যি মেয়ে নোস !"(চলবে)
•
Posts: 248
Threads: 17
Likes Received: 218 in 107 posts
Likes Given: 10
Joined: Apr 2019
Reputation:
34
আয়নার ওপারে (দুই)
এক এক জনের কাছে জীবনের মানে এক এক রকম|
মুম্বাইয়ের শিবাজী পার্কে এক বহুতল আবাসনের তিন কামরার এক ফ্ল্যাটে বসে নয়না ভাবছিল তার কাছে জীবন মানে এক অন্ধগলি |
অন্ধ কিন্তু অন্ধকার নয়|আলো ঝলমলে জীবনের স্বপ্ন নিয়ে যে গলিপথে চলা শুরু করেছিল নয়না, কিছুটা চলার পরেই বুঝতে পারল সে পথ এখানেই শেষ, যেখানে সে উপস্থিত হয়েছে|
নয়নার আসল নাম সায়ন| বাড়ি মেদিনীপুর শহরে|দুই বছরেই পিতৃহীন হয়| মা,দাদা, আর তাকে নিয়ে তিন জনের সংসার| যে বয়সে একটা বুঝতে পারে, সে 'ছেলে' বা একটা মেয়ে
বুঝতে পারে, সে 'মেয়ে' , সেই বয়সে পৌচে নয়না বুঝতে পারে দৈহিক গড়নে পুরুষ হলেও সে আসলে একটি মেয়ে|
সমাজে ছেলেদের আর মেয়েদের জন্য আলাদা আলাদা ভূমিকা নির্দিষ্ট আছে| দৈহিক
গড়নের সাথে
নির্ধারিত ভূমিকা মিলিয়ে চলতে না পারলে সমাজ টিটকিরি দেয়| পুরুষ-দেহ নিয়ে জন্মানো কেউ যদি নারীর ভূমিকা বেছে নিতে চায় তবে সে মেয়েলী, চলতি কথায় 'মগা' , আর বিপরীতটা হলে সে 'পুরুষালি'|দ্বিতীয়টা সমাজ
ক্ষমা করলেও প্রথমটা সহ্য করে না| পুরুষতান্ত্রিক সমাজে পুরুষ 'উন্নত জীব'| তাই নারীর পুরুষালি আচরণ মানে উপর দিকে ওঠা | পুরুষের মেয়েলী আচরণ পুরুষ জাতির অপমান| এক ধরনের অবতরণ|
•
Posts: 248
Threads: 17
Likes Received: 218 in 107 posts
Likes Given: 10
Joined: Apr 2019
Reputation:
34

সমাজ ভাবে পুরুষ দেহ নিয়ে জন্মেছে যখন তখন পুরুষের জন্য সমাজ নির্ধারিত ভূমিকা সে পালন করবে না কেন? তার হাটা-চলা,ভাব-ভঙ্গি,পছন্দ-অপছন্দ
মেয়েদের মত বলে টিটকিরির কারণ হয়| ভাবা হয় নিশ্চই ইচ্ছে করে সে এই আচরণ করছে| অবিভাবকরা কখোনো তিরস্কার,দৈহিক শাস্তি ইত্যাদির মাধ্যমে
ছেলেটির
সংশোধনের
চেষ্টা করেন| তারা ভাবতেও পারেন না মস্তিষ্কের এক বিশেষ বৈশিষ্টের জন্যই,যা তার জন্মগত, সে এমন আচরণ করে| এরা আসলে পুরুষ দেহে আবদ্ধ এক নারী !
বিদ্রুপ
,তিরস্কার,আর ঘৃণার সাথে
লড়াই করতে করতে সায়ন মাধ্যমিক পাশ করেছিল| রেজাল্ট ভালো হওয়া সত্বেও,টিউশনির খরচ টানতে পারবেনা বলে কলা বিভাগে ভর্তি হয়|
পড়াশোনার সাথে চলে সায়নের আত্মানুসন্ধান| ইন্টারনেটের দৌলতে সে জানতে পারে সে একা নয়| সারা পৃথিবীতেই অনেক মানুষ এই ধরনের সমস্যার শিকার| চিকিত্সা বিজ্ঞানে এর নাম 'gender identity disorder'
সভ্যতার প্রাচীন কাল থেকে আজ পর্যন্ত এর ব্যপ্তি| দক্ষিণ এশিয়ার দেশ গুলোয় অর্থাত্ ভারতীয় উপমহাদেশে এরা সমাজ থেকে আলাদা হয়ে দলবদ্ধ হয়ে বাস করে| এদের বলে 'হিজরা সমাজ'| এরা
•
Posts: 248
Threads: 17
Likes Received: 218 in 107 posts
Likes Given: 10
Joined: Apr 2019
Reputation:
34
ওষুধ ব্যবহার করে নিজের জন্মের ত্রুটি শোধরাতে চায়| কখোনো হরমোন ট্যাবলেট ব্যবহার করে স্তন গ্রন্থি বারাবার জন্য, কখনো হাতুড়ে চিকিত্সক দিয়ে পুরুষাঙ্গ ছেদন করায়|
উগ্র নারী সাজে উচকিত ভাবে প্রকাশ করতে চায় নারীত্ব|
সায়ন জানে ইউরোপ এবং পৃথিবীর অনেক দেশে বৈজ্ঞানিক চিকিত্সা পদ্ধতির মাধ্যমে এই রোগের চিকিত্সা হয়| স্তন নির্মানের জন্য 'mamoplasty' বা যোনি নির্মানের জন্য 'vaginoplasty'
অপারেশন করে এই
সব মানুষের জন্বগত ত্রুটি মেরামত করা হয়| কিন্তু এগুলো অত্যন্ত ব্যয় বহুল পদ্ধতি| মালয়েশিয়ায় অতেক্ষাকৃত কম খরচে এই অপারেশন করানো যায়| কিন্তু সেও কম টাকা নয়
সায়ন এত টাকা পাবে কোথায়?
একটা কম্পিউটার কোর্স করা ছিল, মাসে পাঁচ হাজার বেতনের একটা চাকরি নিয়ে সায়ন চলে আসে কলকাতায়| এক বছরের মধ্যেই দ্বিগুন বেতনে ওই কোম্পানিরই মুম্বাই শাখায় একাউন্টস বিভাগে কাজের প্রস্তাব পায়| কিন্তু মুম্বাইয়ে এসে সায়ন বুঝতে পারে
মুম্বাই শহরে বেঁচে থাকার খরচ
দ্বিগুনেরও বেশী| কাজের চাপ তিনগুন| বাড়ির কোনো দায় নেই সায়নের|দাঁতে দাঁত চেপে লড়ে যায় সায়ন| কিন্তু এভাবে কি কোনো দিন তার অপারেশনের খরচ জমাতে পারবে?
তবু সায়ন স্বপ্ন দেখে| স্বপ্ন নিয়ে বাঁচে ,যেভাবে আর সব মানুষ বাঁচে|
কিছুদিনের মধ্যেই সায়ন বুঝতে পারে কোম্পানির হিসাবে গরমিল করে টাকা রোজগারের সুযোগ রয়েছে||অ ন্ততঃ মাসে পাঁচ-ছয় হাজার হলে সে নিজেই হরমোন চিকিত্সাটা সুরু করতে পারে| তার বয়স এখন উনিশ|
পুরুষ হরমোনের বিষক্রিয়া তার দেহে প্রকট| কোম্পানির তহবিল তছরুপের মাধ্যমে সে মাসে আট-দশ হাজারের বন্দোবস্ত করে ফেলে| তার হরমোন চিকিত্সা শুরু হয়|
•