Posts: 928
Threads: 9
Likes Received: 1,804 in 406 posts
Likes Given: 939
Joined: Sep 2021
Reputation:
618
(05-05-2023, 06:02 PM)Patrick bateman_69 Wrote: Dada apni to bujben na dada ami pura obsessed hoye gesi ei story te . Ettu khani boro update diben asha kori :"(
ধন্যবাদ
কিন্তু ভাই আমাকেও কাজের চাপ সামলে লিখতে হয় আর এটা তো মুখস্থ বা কপি করে লেখা নয়, মাথা খাটিয়ে ভেবে লিখতে হয় তাই সময় লাগবে আর বড়ো আপডেট দেখা যাক।
I'm the King of Dark
&
I rule over all Devils
•
Posts: 491
Threads: 0
Likes Received: 351 in 292 posts
Likes Given: 376
Joined: Aug 2022
Reputation:
8
Dada update pabo na?
My pain is constant and sharp, and I do not hope for a better world for anyone.
Posts: 928
Threads: 9
Likes Received: 1,804 in 406 posts
Likes Given: 939
Joined: Sep 2021
Reputation:
618
(07-05-2023, 11:25 PM)Patrick bateman_69 Wrote: Dada update pabo na?
পাবেন, লেখা হলেই দেবো
I'm the King of Dark
&
I rule over all Devils
Posts: 928
Threads: 9
Likes Received: 1,804 in 406 posts
Likes Given: 939
Joined: Sep 2021
Reputation:
618
দ্বিতীয় পার্ট
৬ষ্ঠ পর্ব
বানতলা পার করে সোজা চলতে থাকে আদিত্যর বাইক ইতিমধ্যে পিয়ালী বেশকয়েকবার আদিত্যর পিঠের উপর ঘুমে ঢুলে পরেছে কিন্তু পরক্ষণেই আবার সজাগ হয়ে আশেপাশে এমনকি পিছনেও দেখছে এভাবে কয়েকবার হবার পর আদিত্য বলে, "আপনি নিশ্চিন্তে একটু চোখ বুজে ঘুমিয়ে নিতে পারেন, আর কেউ আমাদের পিছু করছে না তাই ভয়ের কিছু নেই"।
পিয়ালী আদিত্যর পিঠে মাথা রেখে বললো, "আপনি নিশ্চিত রাতের ওই লোকগুলো পিছু করছে না?"
"কাল রাতে ওরা পালিয়ে গেলেও ওদের যা অবস্থা আমি করেছি তাতে আগে হাসপাতালে যেতে হবে সেখান থেকে ছাড়া পেয়ে তারপর ওদের যে পাঠিয়েছে তাদের কাছে গিয়ে সব বললে পরে সেই মহাশয় নতুন লোক সেট করবেন তাই কাজটা সময়সাপেক্ষ"।
"কিন্তু ওরা যদি আনন্দ নিকেতনের খোঁজ পেয়ে যায় তাহলে?.. আমার জন্য সবটা নষ্ট হবে"
"সেটা আপনাকে ভাবতে হবে না ওটা আমি বুঝবো আমার উপর ছেড়ে দিন, এবার নিশ্চিন্তে ঘুমোন পৌঁছে আমি ডেকে দেবো ওখানে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে ব্রেকফাস্ট করবেন আর কদিনের জন্য ছুটি নিয়ে নেবেন"
"আমি কারো অধীনে কাজ করিনা তাই কারো থেকে ছুটি নেওয়ার দরকার হবে না আর আমার হাতে এখন কোনো কেস নেই"
"গুড, আর নিজের বান্ধবীদের আবার বলে বসবেন না যে এখানে আছেন"
"ওকে"
"ঘুমোন"
পিয়ালী আর কোনো কথা না বলে আদিত্যর পিঠে মাথা রাখলো আর একটু পরেই তার চোখে ঘুম নেমে এলো।
আদিত্য পিয়ালীকে নিয়ে আনন্দ নিকেতনের মেইন গেট দিয়ে না ঢুকে অন্য দিক দিয়ে নিজের তাঁবুর পাশের গেট দিয়ে ঢুকলো পিয়ালী তখনও ওর পিঠে মাথা রেখে ঘুমিয়ে আছে আদিত্য আলতো স্বরে ডাকলো,
"উঠে পরুন.. মিস সরকার.."
"উমমম"
"উঠে পরুন আমরা এসে গেছি"
পিয়ালী আস্তে আস্তে চোখ খুলে চারিদিকে একবার তাকিয়ে বাইক থেকে নামলো আদিত্য নেমে নিজের তাঁবুর দিকে একপা এগোতেই একটা ক্রুদ্ধ কণ্ঠস্বর শুনে দুজনে চমকে উঠলো,
"এই যে এখন আসার সময় হলো বলি কাল সারাদিন কোথায় ছিলে? একটা ফোন করেই খালাস?"
দুজনে তাকিয়ে দেখে এক বৃদ্ধ বয়স আন্দাজ ৬৫ হবে তিনি রিসর্টের দিক থেকে এসে দাঁড়িয়েছেন তিনিই কথাগুলো বলছেন, পিয়ালী দেখলো আদিত্য বৃদ্ধের কথার কোনো উত্তর না দিয়ে চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে, প্রথমে পিয়ালীর একটু খারাপ লাগলো তার মনে হলো এই বৃদ্ধ এখানে থাকার জন্য আদিত্যর উপরে হয়তো রেগে আছেন তাই ওকে কথা শোনাচ্ছেন কিন্তু একটু পরেই তার সেই ভুল ভেঙে গেল সে বুঝতে পারলো এই বৃদ্ধ আদিত্যকে বকছেন তার কারণ আদিত্যর প্রতি তার অপত্য স্নেহ, একসময় বৃদ্ধ থামলেন তার দৃষ্টি পিয়ালীর দিকে, এবার তার স্বর পুরো বদলে গেল আদিত্যকে উদ্দেশ্য করে বললেন, "যাক এতদিনে তাহলে সুবুদ্ধি হলো তোমার? খুব ভালো কতবার বলেছি ঘরে একটা বউ না থাকলে চলে না, আমি বুড়ো হয়েছি কোনদিন কত্তাবাবুর পিছনে পিছনে চলে যাবো তার ঠিক নেই সেদিন বুঝবে."
বৃদ্ধ আরও কিছু বলতে যাচ্ছিলেন কিন্তু এবার আদিত্য তাকে থামালো "অখিল জ্যেঠু আপনি যা ভাবছেন তা নয়"
"তা নয় মানে.. ও তোমার."
"না, উনি আমার পরিচিত দুদিন আগে এই রিসর্টে এসেছিলেন আর উনিই পার্স ফেলে গিয়েছিলেন,আর মিস সরকার উনি অখিল জ্যেঠু... এই আনন্দ নিকেতন এবং এখানে থাকা সবার গার্জেন"
এবারে বৃদ্ধ পিয়ালীর দিকে তাকিয়ে বললো "আমার ভুল হয়ে গেছে মা,আমি বুঝতে পারিনি আমকে ক্ষমা করে দাও"
"এমা ছিঃছিঃ একি বলছেন আপনার ক্ষমা চাওয়ার কিছু হয়নি" পিয়ালী সশব্যাস্ত হয়ে উঠলো এবং ঝুঁকে বৃদ্ধকে একটা প্রণাম করলো, বৃদ্ধ "ভালো থাকো মা,সুখে থাকো" আশীর্বাদ করে আবার বলতে শুরু করলেন,
"আর বোলো না মা এই ছেলের জন্য আমার বড্ড চিন্তা নিজের জন্য একটুও চিন্তা করে না ছেলেটা"
"জ্যেঠু উনি আপাতত এখানেই থাকবেন ওনার একটু বিপদ হয়েছে তাই আমি নিয়ে এসেছি আপনি ব্যাবস্থা করুন" আদিত্য বৃদ্ধকে থামিয়ে কথাটা বললো, তাতে বৃদ্ধ আবার ঝাঁঝিয়ে উঠলেন, "সেটা তোমাকে ভাবতে হবে না ব্যাবস্থা হয়ে যাবে কিন্তু সকাল থেকে তোমার কিছু খাওয়া হয়েছে নাকি কিছুই পেটে পরেনি?"
"না জ্যেঠু সত্যিই কিছু খাওয়া হয়নি আর ওনারও না"
পিয়ালীকে দেখালো আদিত্য, তাতে বৃদ্ধ বললেন "ঠিক আছে তাড়াতাড়ি হাতমুখ ধুয়ে নাও, তা এখানে পাঠিয়ে দেবো কি?"
"এখানেই দিন আজকে" আদিত্যর কথা শুনে বৃদ্ধ চলে গেলেন, পিয়ালী বৃদ্ধর পিছনে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বললো,
"আপনাকে বড্ড ভালোবাসেন উনি"
"উনি সবাইকেই ভালোবাসেন, যান যতক্ষণ না আপনার নিজের রুমের ব্যবস্থা হচ্ছে ততক্ষণ আমারটাই ইউজ করুন ভিতরে ওয়াশরুম আছে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিন"।
দেশপ্রিয় পার্কে মনোজিত বাবুর বাড়ির ড্রয়িংরুমে কয়েকজন লোক দাঁড়িয়ে আছে তাদের কারো মাথায় ব্যাণ্ডেজ, কারো হাতে প্লাস্টার আবার কেউ পায়ে প্লাস্টার বাঁধা অবস্থায় ক্রাচ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে সবাই মাথা নীচু করে দাঁড়িয়ে আছে। তাদের সামনের সোফায় মনোজিত বাবু আর প্রীতমবাবু বসে আছে আর মনোজ উত্তেজিত স্বরে কথা বলছে "তোরা এতজন মিলে একটা মেয়েকে তুলে আনতে পারলি না?"
"কি করবো দাদা? পুরো দিন ফলো করেছি কিন্তু একা পাইনি সবসময় ওর সাথে একটা ছেলে ছিল" একজন মিনমিন করে উত্তর দিল তাতে যেন মনোজ আরও রেগে ওঠে,
"চুপ কর.. একটা ছেলে ছিল, ওই ছেলেটাকে শেষ করে মেয়েটাকে নিয়ে আসতে পারলি না?"
লোকগুলো আর কোনো কথা না বলে মাথা নীচু করে রইলো এবার প্রীতমবাবু বললেন "কিন্তু রাতে মেয়েটির মেস থেকে তুলে আনতে পারলি না?"
"সেখানেই তো গিয়েছিলাম কিন্তু সেখানেও ওই ছেলেটা আবার সামনে চলে আসে আর আমাদের এই অবস্থা করেছে"
"চুপ কর 'একটা ছেলে এই অবস্থা করেছে' বলতে লজ্জা লাগে না তোদের?" মনোজ আবার গর্জে ওঠে "তোরা না নিজেদের সাউথ কলকাতার বড়ো বড়ো মস্তান বলিস আর একটা ছেলে একা মেরে তোদের হাতপা ভেঙে দিল?"
"হ্যাঁ দাদা বিশ্বাস করুন"
"চোপ" এবার মনোজিত বাবু গর্জে উঠলেন "সবকটা অকর্মার ঢেঁকি, মাল খেয়ে গাড়ি চালিয়ে বোধহয় কোথাও ঠুকে এই অবস্থা করেছে আর এখন গাঁজাখুরি গল্প শোনাচ্ছে"
"না স্যার বিশ্বাস করুন"
"চুপ কর" আবার ধমকে ওঠেন মনোজিত বাবু,"এখনো দাঁড়িয়ে আছিস কেন দূর হয়ে যা এখান থেকে"
মনোজিতবাবুর ধমক খেয়ে লোকগুলো একে একে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে গেল।
"মেয়েটি বোধহয় বুঝতে পেরেছে খবর নিয়েছি ভোর হতে না হতেই মেস ছেড়ে কোথাও চলে গেছে আর মেসের কাউকে বলে যায়নি" এতক্ষণে প্রীতমবাবু কথা বললেন। উত্তরে মনোজ প্রায় হিংস্র স্বরে বললো,
"যাবে কোথায় ঠিক খুঁজে বের করবো"
"আপাতত ওকে ছেড়ে দাও মনোজ, ওর বিষয়ে পরে ভাবা যাবে কোর্টে তো আসবে তখন ভাববে এখন আমাদের সামনে অন্য বিপদ" প্রীতমবাবু কথা বললেন।
"কিরকম বিপদ?" মনোজিত বাবু জিজ্ঞেস করলেন।
"বিপদের নাম অভিরূপ ব্যানার্জী, আমাদের ব্যাপারে খোঁজখবর শুরু করেছে জানিনা ওর মাথায় কি চলছে সবকিছু জেনে গেলে আমাদের জন্য খুব খারাপ হবে, ও আমাদের ছাড়বে না"
"তাহলে তো যা করার তাড়াতাড়ি করতে হবে।"
"ঠিক বলেছেন মনোজিতবাবু কিন্তু প্রবলেমটা হলো এখন অরুণাভ আমাদের সাথ দেবে না, অভিরূপ ব্যানার্জীর কিছু হলে ও আমাদের ছাড়বে না আগে ওর ব্যবস্থা করতে হবে"
"কি ব্যবস্থা করবেন?"
"আপনি বলেছিলেন আপনি মৌমিতাকে বলবেন ওকে বোঝাতে, বলেছিলেন?"
"বলেছিলাম"
"ও কি বললো?"
"বললো, কথা বলবে অরুণাভর সঙ্গে"
"তাতে কোনো লাভ হবে বলে মনে হয় না যতটা আমি অরুণাভকে চিনেছি ও মানবে না"
"তাহলে বাপ ব্যাটা দুটোকেই একসাথে শেষ করবো" মনোজ আবার হিংস্র স্বরে কথাটা বললো আর প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই ওর গালে একটা থাপ্পড় এসে পরলো, সবাই চমকে উঠে দেখে মৌমিতা এসেছে আর সেই থাপ্পড়টা মেরেছে রাগে সে ফুঁসছে, সবাই নিজেদের মধ্যে কথা বলতে এতটা ব্যাস্ত ছিল যে মৌমিতার আসাটা খেয়াল করেনি, রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে সে বললো,
"কি বললি আরেকবার বল.. জিভ টেনে ছিঁড়ে ফেলে দেবো"
"মৌ তুই এখানে এইসময়?" মনোজিতবাবু মেয়ের এই হটাৎ আবির্ভাবে হতচকিত হয়ে গেছেন, মৌমিতা বাবার উপরে ঝাঁঝিয়ে উঠলো,
"কেন তাতে খুব অসুবিধা হয়ে গেল তাই না?"
"না..আসলে মানে." মনোজিতবাবু আমতা আমতা করতে থাকেন"
"বাবা মনোজ তোমার সামনে অরুণাভকে মারার কথা বলছে আর তুমি চুপ করে শুনছো?"
"তাতে কি হয়েছে? তোর বর আমাদের কাজে বাধা দিচ্ছে" মনোজ তেজের সাথে কথা বলে তাতে মৌমিতা আরও রেগে যায় সে একপ্রকার হুংকার ছাড়ে
"অরুণাভর গায়ে যদি একটা আঁচড়ও পরে তাহলে তোকে আমি খুন করবো"
"বাব্বা মৌমিতা, খুব দরদ হয়েছে দেখছি" প্রীতমবাবু খোঁচা মারার মতো কথাটা বললেন,
"ঠিক বলেছেন আঙ্কেল খুব দরদ কারণ ওই অরুণাভ আমার হাজবেন্ড আমার সন্তানদের বাবা তাই ওর কোনো ক্ষতি আমি বরদাস্ত করবো না"।
"তাহলে তোমার হাজবেন্ডকে বোঝাও যাতে আমাদের পথে বাঁধা হয়ে না দাঁড়ায়"
"অরুণাভর যা ইচ্ছা ও সেটাই করবে, তবে আপনি সাবধানে থাকুন নাহলে বিপদে পরতে পারেন"
"মানে? কি বলতে চাইছো তুমি?"
"মনোজ আমার ভাই ও ভুল করলে ওকে আমি শাষণ করতে পারি, দরকার পরলে ওকে একটা নয় পাঁচটা থাপ্পড় মারতে পারি কিন্তু কেউ যদি আমার ভাই বা আমার স্বামীর ক্ষতি করার চেষ্টা করে তাহলে আমি তাকে শেষ করে দিতে দুবার ভাববো না"
"আমার ক্ষতি কি বলছিস তুই দিদি?" থাপ্পড়ের জন্য প্রথমে দিদির উপর একটু রেগে গেলেও এখন রাগ কমেছে সে দিদিকে প্রশ্নটা করে, উত্তরে মৌমিতা তাকে একটা প্রশ্ন করে,
"তুই কোনো মেয়ের সম্বন্ধে খোঁজ নিয়েছিলি ওনার কাছে?"
"হ্যাঁ, কিন্তু.."
"মেয়েটা উকিল, তাও হাইকোর্টে প্র্যাকটিস করছে ওর থেকে দূরে থাক আর ওর পিছনে যাস না, আর আপনি.. যেটা বললাম মনে রাখবেন আমার হাজবেন্ড আর ভাইয়ের ক্ষতি করার চেষ্টাও করবেন না, আপনার আর আপনার ছেলের প্ল্যান আমার জানতে বাকি নেই" শেষের কথাটা প্রীতমবাবুকে উদ্দেশ্য করে বলা তাতে প্রীতমবাবুও শীতল অথচ ক্রুর স্বরে বললেন,
"আমাকে থ্রেট করছো?"
"যেটা ভাববেন, আপনি তো ভালো করেই জানেন যে কাউকে মেরে ফেলতে আমার হাত কাঁপে না"
"এই কথাটা যদি অভিরূপ ব্যানার্জী জানতে পারে কি হবে ভেবে দেখেছো? যদি তিনি জানতে পারেন যে.."
"যান বলে দিন" প্রীতমবাবুকে কথা শেষ করতে না দিয়ে মৌমিতা বলে ওঠে, "যান বলে দিন আমরা জেলে যাবো তো? তার আগে হয় আপনাকেও শেষ করবো আর নাহয় আপনার কীর্তিও ফাঁস করে আপনাকে নিয়ে জেলে যাবো"
"আমার কীর্তি?"
"অভিরূপ ব্যানার্জীর বিশ্বাসের সুযোগ নিয়ে দিনের পর দিন 'ব্যানার্জী ক্রিয়েশনস্' এর অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা সরানো তো আছেই তাছাড়া আরও কত কি করেছেন সব ভুলে গেছেন নাকি?"
প্রীতমবাবু এতদিন এদের অসহায়ত্ব উপভোগ করতেন তিনি ভাবতেও পারেননি যে একদিন তাকেও মুখের উপর জবাব পেতে হবে তিনিও ক্রুদ্ধ দৃষ্টিতে মৌমিতার দিকে তাকিয়ে রইলেন মৌমিতাও পাল্টা একইভাবে তাকিয়ে রইলো, মনোজিতবাবু পরিস্থিতি গরম হচ্ছে অনুভব করে সেটা স্বাভাবিক করার উদ্দেশ্যে বললেন, "আচ্ছা আচ্ছা নিজেদের মধ্যে ঝামেলা করে লাভ নেই, আমরা সবাই পার্টনার একই নৌকায় আছি নৌকা ডুবলে আমরা সবাই ডুববো"।
প্রীতমবাবু কিন্তু আর বসলেন না ক্রুদ্ধ স্বরে "আমার কাজ আছে আমি আসছি" বলে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে গেল।
নিজের গোপন আড্ডায় গিয়ে রাগে ফেটে পরলেন প্রীতমবাবু রীতিমতো চেয়ার টেবিল হাতের সামনে যা পেলেন সেগুলোতে কখনো লাথি মেরে আবার কখনো আছড়ে ফেলে ভাঙতে থাকেন তিনি, তার কিছু অনুচর সেখানে ছিল কিন্তু মালিকের এই রাগী রূপ দেখে সামনে যেতে সাহস পায় না।
"আমাকে থ্রেট করলো... আমাকে... খুব সাহস হয়েছে মৌমিতা তাই না?" নিজে নিজেই গজরাতে থাকে প্রীতমবাবু, "আমাকে জেলে পাঠাবে? তার আগে তোমাদের সবকটাকে আমি পৃথিবী থেকে বার করে দেবো, আর সবার আগে অরুণাভকে.. দেখি কিভাবে আটকাও আর আমার কি করতে পারো.. এই কে আছিস?"
এতক্ষণ মালিকের রাগের ভয়ে কেউ সামনে যায়নি কিন্তু এখন মালিক নিজে ডাকছে তাই না গেলেও বিপদ, কয়েকজন একসাথে এলো, "হ্যাঁ স্যার বলুন"
"তোদের একটা কাজ করতে হবে.. না একটা নয় অনেকগুলো তবে একটা একটা করে, পারবি?"
"স্যার কবে আপনার হুকুম তামিল হয়নি বলুন? কি করতে হবে বলুন?"
"ন্যাকামি করিস না" গর্জে উঠলেন প্রীতমবাবু, তারপর একটু থেমে বললেন, "এবারের কাজগুলো অত সহজ নয়"
"বলেই দেখুন না স্যার"
প্রীতমবাবু কিছুক্ষণ চুপ করে রইলেন বোধহয় নিজেকে শান্ত করে মনে মনে প্ল্যানটা ছকে নিলেন আর তারপর সবাইকে ভালো করে বুঝিয়ে দিলেন কি করতে হবে।
"হয়ে যাবে স্যার, চিন্তা করবেন না" সবাই একযোগে বলে উঠলো।
"হওয়া চাই.. নাহলে তোদের কাউকে আস্ত রাখবো না" আবার গর্জে উঠলেন প্রীতমবাবু।
"এসব কি করছেন?"
"দেখতেই তো পাচ্ছেন কি করছি?"
"এসবের দরকার নেই"
"দরকার আছে, এটা তো আপনার রুম এখানে আপনি থাকেন আর এটা এরকম অপরিচ্ছন্ন করে রেখেছেন?"
আনন্দ নিকেতনে আসার পর থেকে যেন পিয়ালীর সময় আর কাটতে চায় না তাকে একটা আলাদা গেস্টরুম খুলে দেওয়া হয়েছে সেখানেই সে থাকে কিন্তু সমস্যা হলো আদিত্যর কথা মেনে সে কোর্টে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে আর এরফলেই তার সমস্যা হয়েছেহ সারাদিন করার মতো কোনো কাজ নেই তার হাতে কোর্টে বা নিদেনপক্ষে তার চেম্বারে গেলেও তার সময় কেটে যায় কেউ না কেউ ঠিক আসে আর নিতান্তই না এলে আইনের বইগুলো আবার পড়তে শুরু করে বা নিজের বান্ধবীদের সাথে গল্প করে, কিন্তু এখানে সেসব বন্ধ আদিত্যই বারণ করেছে আর পিয়ালী সেটা মেনেও নিয়েছে আদিত্যর উপরে তার বিশ্বাস আছে যে সে যখন বলেছে তখন তার ভালোর জন্যই বলেছে।
কিন্তু ওই যে এক সমস্যা যে এতদিন একা থাকতো সবকাজ নিজে হাতেই করতে হতো কিন্তু এখানে কেউ তাকে কিছু করতে দেয় না, কয়েকবার এখানে যারা কাজ করে তাদের সঙ্গে হাতে হাতে কাজ করতে চেয়েছিল কিন্তু সবাই এইবলে বারণ করেছে যে অখিল বাবু তাহলে ওদের আস্ত রাখবেন না।
শেষপর্যন্ত আর কোনো উপায় না দেখে আদিত্যর তাঁবুতে এসে ঢুকেছে আর যা ভেবেছিল ঠিক তাই একদম অগোছালো হয়ে আছে, আগের বার যখন এসেছিল তখনও একইরকম ছিল আর এখনো একইরকম আছে, তাই সে আদিত্যর পার্মিশন ছাড়াই ছড়ানো ছিটানো জিনসপত্রগুলো গোছাতে লাগলো, একদিক দিয়ে সুবিধা হয়েছে এইসময় আদিত্য তাঁবুতে ছিল না রিসর্টের অফিসে ছিল কিছু ফাইল আর হিসাব দেখছিল আর বাদশাও ওর সাথেই ছিল সেইজন্যেই পিয়ালী ঢুকতে পেরেছে নাহলে পারতো না আর একে তো আদিত্যর থাকার জায়গাটা একটা তাঁবু তাতে লক করার জায়গা নেই দুই এখানে সবাই পরিচিত আর বিশ্বাসী লোক এবং তৃতীয় তাঁবুতে অন্য লোকের নিয়ে নেবার মতো জিনিস কিছুই নেই তাই তাঁবু খোলাই থাকে।
পিয়ালী ঢুকে গোছগাছ শুরু করেছে এমন সময় আদিত্য ফিরে এলো, আর ঢুকে পিয়ালীর কাণ্ড দেখে প্রশ্নটা করে,
"এসব কি করছেন?"
"দেখতেই তো পাচ্ছেন কি করছি?" পিয়ালী আদিত্যর দিকে না তাকিয়েই উত্তর দেয়,
"এসবের দরকার নেই"
"দরকার আছে, এটা তো আপনার রুম এখানে আপনি থাকেন আর এটা এরকম অপরিচ্ছন্ন করে রেখেছেন?"
"আমি একা থাকি আমার এতেই চলে যায় অসুবিধা হয় না"
"অসুবিধা হয় না বলে এরকম থাকবেন?" পিয়ালী কথার সাথে সাথে আদিত্যর জামাকাপড়গুলো সুন্দর করে ভাঁজ করে রাখতে থাকে।
"ঠিক আছে অনেক করেছেন আর করতে হবে না, এবার ছাড়ুন"
"কেন বলুন তো? আমাকে তাড়াতে চাইছেন কেন?"
"তাড়াতে চাইছি না শুধু আপনার এই কাজ বন্ধ করতে বলছি"
পিয়ালীর গোছানো প্রায় শেষ হয়ে গেছে বাকিটুকুও দ্রুত শেষ করে আদিত্যর দিকে ফিরে বললো, "এবার দেখুন তো কেমন লাগছে,ভালো লাগছে?"
"তা লাগছে কিন্তু আপনাকে এসব করতে বলেছেটা কে?"
"কে আবার কেউ না? খালি বসে ছিলাম তাই করলাম আমার খালি বসে থাকতে ভালো লাগে না"
"আমি বুঝতে পারছি কিন্তু আমি আপনার ভালোর জন্যই আপনাকে কাজে যেতে বারণ করেছি"
"আমি তো আপনার কাছে কোনো এক্সপ্ল্যানেশন চাইনি, আমি জানি এবং বিশ্বাসও করি যে আপনি যেটা করেছেন এবং যা বলেছেন সেটা আমার ভালোর জন্যই, কিন্তু কতদিন? কতদিন এইভাবে থাকবো?"
কথা বলতে বলতে দুজনে আদিত্যর তাঁবুর বেতের মোড়াদুটো বাইরে নিয়ে এসে তার উপরে বসলো আদিত্য বললো,
"দেখুন আপনি এখানে থাকলে আমার বা আমাদের কারো কোনো অসুবিধা নেই কিন্তু মনে হচ্ছে আপনার অসুবিধা হচ্ছে, কোর্টের ওখানে কেউ আছে নাকি যার সঙ্গে দেখা হচ্ছে না বলে মন খারাপ?"
পিয়ালী কিছুক্ষণ আদিত্যর দিকে তাকিয়ে রইলো তারপর বললো "না কোর্টের ওখানে নেই"
"তাহলে কোথায় আছে বলুন তাকে নিয়ে আসছি"
"তার দরকার নেই"
"কেন?"
পিয়ালী কিছুক্ষণ চুপ করে একদৃষ্টিতে আদিত্যর দিকে তাকিয়ে রইলো তারপর যে কথাটা সে বলবেনা ভেবেছিল যেটা এতদিন ধরে শুধুমাত্র তার মনের ভিতরেই ছিল সেটাই ঝর্ণার ধারার মতো সব বাধা ডিঙিয়ে বেরিয়ে এলো,
"যদি বলি সেই মানুষটা আপনি?"
কথাটা শুনে আদিত্য প্রথমে একটু চমকে গেল তারপর তার গলার স্বর একটু কঠিন হলো সে বললো,
"ইয়ার্কির একটা লিমিট থাকা উচিত আর এসব বিষয় নিয়ে ইয়ার্কি করাও ঠিক নয়"।
পিয়ালী আর থাকতে পারলো না তার ভিতরের কথাটা বলেই ফেললো,
"ইয়ার্কি নয় সত্যি... আই লাভ ইউ"
"হোয়াট?" আদিত্য মোড়া থেকে উঠে দাঁড়ায় তার মুখ শুধু গম্ভীর আর কঠিন নয় হটাৎই রাগে লাল হয়ে ওঠে, তাকে উঠতে দেখে পিয়ালীও উঠে দাঁড়ায় তার বুক দুরুদুরু করতে শুরু করেছে কিন্তু এখন আর ফেরার উপায় নেই। আদিত্য এখন পিয়ালীর দিকে পিছন ফিরে দাঁড়িয়ে আছে কিন্তু পিয়ালী তার জোরে জোরে নিঃশ্বাস পরার শব্দ শুনতে পারছে সে আবার বলে,
"আই রিয়েলি লাভ ইউ....আদিত্য.."
"গেট লস্ট" আদিত্য রাগে ফেটে পরলো "হাউ ডেয়ার ইউ... সাহস কিভাবে হয় আপনার? খেলছেন না আমার সঙ্গে? হ্যাঁ?"
"আদিত্য এসব তুমি কি বলছো? খেলছি মানে?" পিয়ালী ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে কথাটা বলে, তাতে আদিত্য আরও রেগে যায়,
"শাট্ আপ। খুব ভালো করেই জানেন কিভাবে ছেলেদের মন নিয়ে খেলতে হয় তাইতো? আর হবে নাই বা কেন একজন ক্রিমিনালের মেয়ে তো.. এইসবই শিখবেন"।
আদিত্যর শেষ কথাটা যেন পিয়ালীর বুকে কুঠারাঘাত করে সে স্তম্ভিত হয়ে যায় কথা বলার ক্ষমতাও হারিয়ে ফেলেছে, ওদিকে আদিত্য বলে চলেছে
"দুদিন ভালো করে কথা বলেছি আর অমনি সুযোগ পেয়ে গেলেন তাই না? আর সুযোগ পেতেই সেটা নিলেন"
"আয়্যাম সরি" এতক্ষণে পিয়ালী আস্তে আস্তে কথা বলে "আমি সত্যিই বুঝতে পারিনি যে."
"শাট্আপ এণ্ড লস্ট আমি আপনার মুখও দেখতে চাই না"
আদিত্যর কথা শুনে পিয়ালী একমুহূর্ত আদিত্যর দিকে তাকিয়ে থাকে তাকে দেখলেই বোঝা যাচ্ছে যে সে অনেক কষ্টে তার চোখের জল আটকে রেখেছে, সে আর কিছু না বলে এক দৌড়ে সেখান থেকে চলে যায় আর আদিত্য রাগে একটা বেতের মোড়ায় লাথি মেরে ছিটকে ফেলে দেয় তারপর অপরটায় বসে মাথাটা দুহাতে ধরে নীচু করে রাখে।
একটু পর পর পিছন থেকে কেউ একটা হাত আদিত্যর কাঁধে রাখে সঙ্গে সঙ্গে আদিত্য মাথা তোলে "আপনাকে বললাম না.." ঝাঁঝিয়ে কথাটা বলে উঠে ঘুরে দাঁড়িয়েই থমকে যায় সে সামনে পিয়ালী দাঁড়িয়ে নেই তার বদলে আছেন বৃদ্ধ অখিল বাবু আদিত্যর ডাকে অখিল জ্যেঠু।
"জ্যেঠু আপনি?"
"তোমার সঙ্গে কিছু কথা ছিল"
"বসুন" বলে আদিত্য যে মোড়াটায় সে বসে ছিল সেটা এগিয়ে দেয়, বৃদ্ধ সেটাতে বসলে আদিত্য অপরটা কুড়িয়ে এনে নিজে বসে, বৃদ্ধ বলতে শুরু করেন,
"কত্তাবাবু যেদিন তোমাকে এখানে আনার কথা বললেন তখন প্রথমে আমার একটু আপত্তি ছিল সেটা সবসময়ই হয় কারণ অনেকেই ওনাকে ঠকিয়েছে তবুও ওনার এই স্বভাবটা পাল্টায়নি কিন্তু উনি শুনলেন না তোমাকে এখানে নিয়ে আসলেন ধীরে ধীরে তুমি ওনার বিশ্বাসের একজন হয়ে উঠলে একটা সময় পর অবশ্য আমিও বুঝলাম তোমাকে নিয়ে আমি ভুল ছিলাম আর বিশ্বাস করো তাতে আমি খুশীই হয়েছি। ধীরে ধীরে উনি তোমাকে আনন্দ নিকেতনের দায়িত্ব দিলেন এবং স্বীকার করছি যে তুমি সেই দায়িত্ব ভালো ভাবেই পালন করেছো"।
"আয়্যাম সরি জ্যেঠু কিন্তু আপনি বলতে কি চাইছেন আমি বুঝতে পারছি না" বৃদ্ধ থামতেই আদিত্য প্রশ্ন করে, বৃদ্ধ একটু হেসে আবার শুরু করেন
"কত্তাবাবু তোমাকে নিজের ছেলের মতোই ভালোবাসতেন আমাকে বারবার বলতেন 'অখিল ছেলেটাকে কোনোদিন এখান থেকে তাড়িয়ে দিও না, ছেলেটার কেউ নেই', আমি জিজ্ঞেস করেছিলাম 'আপনি কিভাবে জানলেন আপনাকে বলেছে?'।
তিনি বললেন 'সবকথা কি আর মুখে বলতে হয়? ওর মুখ দেখে আমি বুঝতে পেরেছি যে ওর মনে কিছু একটা কষ্ট আছে যেটা ও নিজে একা একা বয়ে চলেছে'।" বৃদ্ধ বোধহয় হাঁফিয়ে গিয়েছিলেন তাই একটু থামলো আর এতটুকু শুনে আদিত্য বৃদ্ধর দিকে তাকালো কোনো কথা বললো না, একটু থেমে বৃদ্ধ আবার শুরু করলেন,
"আমি তখন অতটা বুঝতে পারিনি কিন্তু ধীরে ধীরে আমিও বুঝতে পেরেছি সেটা মাঝে মাঝে ভেবেছি তোমাকে জিজ্ঞেস করবো তুমি বিব্রত হতে পারো এই ভেবে আর করিনি, কিন্তু আজ আমি তোমাদের কথাগুলো শুনলাম, এদিকে তোমাদের খাওয়ার কথা জিজ্ঞেস করতে এসেছিলাম আর তখনই শুনলাম, মেয়েটা যে তোমাকে ভালোবাসে সেটা আমি সেদিনই বুঝেছিলাম যেদিন তুমি ওকে নিয়ে এলে, ওর চোখ বলে দিচ্ছিল তুমি হয়তো ধরতে পারোনি আর আমি এটাও বুঝতে পেরেছি যে কোথাও না কোথাও তুমিও ওকে পছন্দ করো, তাহলে ওকে ফেরালে কেন? তোমার অতীতের জন্য? কিন্তু তাতে তো ওই মেয়েটার কোনো দোষ আছে বলে মনে হয় না, তাহলে?"
আদিত্য বৃদ্ধর প্রশ্নের জবাব না দিয়ে মাথা নীচু করে রাখে বৃদ্ধ আদিত্যর মাথায় একবার স্নেহভরে হাত বুলিয়ে বলেন,
"প্রত্যেক মানুষের জীবনেই একটা অতীত থাকে কিন্তু মানুষ যদি সেটা নিয়েই পরে থাকে তাহলে তো জগত চলবে কিভাবে?"
"আমার অতীত সম্বন্ধে আপনি কিছুই জানেননা জ্যেঠু"
"আমার জানার প্রয়োজনও নেই কারোরই প্রয়োজন নেই তুমি এখন আনন্দ নিকেতনের একজন এখানে তুমি নতুন মানুষ নতুন জীবন তোমার.. তাই বলছি অতীত নিয়ে পরে থেকো না তাতে তুমিও কষ্ট পাবে আর যারা তোমাকে ভালোবাসে তারাও পাবে, তোমাকে নতুনকে কাছে আসতে দিতে হবে নিজের জীবনে জায়গা দিতে হবে, ওই মেয়েটাকে তোমার কাছে আসতে দিতে হবে, আদিত্য জীবন সম্পর্কে আমার অভিজ্ঞতা তোমার থেকে বেশী আমি তোমাকে খারাপ কিছু বলবোনা..তুমি যাও ওর কাছে ও কিন্তু কষ্ট পেয়েছে"।
"আর ওকে কষ্ট আমি দিয়েছি"
"তাহলে আগে গিয়ে ক্ষমা চাও, ক্ষমা চাইলে কেউ ছোটো হয়ে যায় না"
"আর ও যদি আমাকে ক্ষমা না করে?"
"করবে... ওকে বোঝাও যে তুমি ওকে যা বলেছো সেগুলো ওর জন্য নয় সেগুলো তোমার অতীতের স্মৃতি"
"আর ও যদি আমার অতীতের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করে?"
"তাহলে বলবে দেখবে মনটা হালকা হবে, যাও ওর কাছে"। কথা শেষ করে বৃদ্ধ উঠে চলে গেলেন আদিত্য তখনও বসে রইলো।
নিজের ঘরে ঢুকেই পিয়ালী কান্নায় ভেঙে পরলো সে আদিত্য এইরকম রিয়েক্ট করবে আদিত্যর কথাগুলো তার ভিতরে একের পর এক আঘাত করেছে সে ঠিক করলো আর সে এখানে থাকবে না চলে যাবে এখান থেকে এমনিতেও আদিত্য তার মুখ দেখতে চায় না।
বেশ কিছুক্ষণ কাঁদার পরে নিজেকে কিছুটা সামলে নিল পিয়ালী উঠে নিজের জিনিসগুলো গোছাতে শুরু করলো বেশি জিনিস সে আনেনি যে মেসে থাকতো সেখানে আর যাওয়া হয়নি তার, স্যুটকেস গুছিয়ে ঘর থেকে বেরিয়েই থমকে গেল সামনে আদিত্য দাঁড়িয়ে আছে,
"আয়্যাম সরি" ছোট্ট করে বললো আদিত্য কিন্তু পিয়ালী কোনো উত্তর না দিয়ে পাশ কাটিয়ে এগোতে যেতেই আদিত্য পাশে সরে তার পথ আটকালো আবার বললো "আয়্যাম রিয়েলি সরি"।
"একজন ক্রিমিনালের মেয়েকে সরি বলছেন? তার দরকার নেই কারণ আপনি কোনো ভুল করেননি সত্যিই তো আমি একজন ক্রিমিনালের মেয়ে"
আদিত্য বুঝতে পারলো পিয়ালী রেগে রয়েছে শুধু রাগ নয় কিছুটা অভিমানও হয়েছে তাই এইধরনের কথা যে সে বলতে পারে এবিষয়ে আদিত্য একপ্রকার নিশ্চিত ছিল তাই সে চুপ করে শুনলো তারপর পিয়ালী থামতে আবার বললো, "আয়্যাম সরি"
"হোয়াই... কেন সরি আপনি?" এবারে পিয়ালী রাগে ফেটে পরলো, "আপনার সরি বলার কিছু নেই আপনার জায়গায় আপনি ঠিক, আপনাদের চোখে হয়তো একজন ক্রিমিনালের মেয়েকে ভালোবাসা অপরাধ, বা আপনারা হয়তো মনে করেন যে একজন ক্রিমিনালের মেয়ে ভালো হতে পারে না তার কাউকে ভালো লাগতে পারে না সে কাউকে ভালোবাসতে পারে না কিন্তু এটা ভুল.. এটা ভুল মিস্টার আদিত্য সিংহ রায়"।
পিয়ালীএকটু থামলো তার জোরে জোরে নিঃশ্বাস পরতে থাকে আর আদিত্য চুপ করে শুনতে থাকে পিয়ালী আবার শুরু করে,
"একজন ক্রিমিনালের মেয়েও ভালো হতে পারে তারও কাউকে ভালো লাগতে পারে সেও একজনকে ভালোবাসতে পারে সেও স্বপ্ন দেখতে পারে কারণ সেও একজন মানুষ আপনি তাতে বাধা দিতে পারেন না। আপনি আমার ভালোবাসাকে অপমান করেছেন আর আপনার সেই অধিকার নেই, আমাকে ভালো নাই লাগতে পারে আপনি আমাকে ভালো নাই বাসতে পারেন আপনি আমাকে একজন ক্রিমিনালের মেয়ে বলে ঘৃণা করতেই পারেন কিন্তু তাতে আমার ভালোবাসা মিথ্যা হয়ে যায় না, আমার আপনাকে ভালোবাসা আপনার চোখে মিথ্যা হতে পারে অপরাধ হতে পারে কিন্তু আমার কাছে সেটা নয়, আমি আপনাকে প্রথমদিন দেখার পর থেকেই পছন্দ করি, ভালোবাসি আর সেটা আমার কাছে কোনো ভুল নয় কোনো অপরাধ নয়, কিন্তু আপনাকে এসব কথা বলার কোনো বাধ্যবাধকতা আমার নেই আপনি আমার জন্য যা করেছেন তার জন্য ধন্যবাদ, আপনি বলেছেন যে আপনি আমার মুখ দেখতে চান না.. তাই হবে আর কখনও আপনি আমার মুখ দেখবেন না, ভালো থাকবেন"।
পিয়ালী আদিত্যর পাশ কাটিয়ে চলে যাচ্ছিল কিন্তু আদিত্যর কথা শুনে আবার দাঁড়িয়ে পরলো, পিয়ালী যতক্ষণ বলছিল আদিত্য চুপ করে শুনছিল এবার সে কথা বলতে শুরু করে,
"আপনার মনে হয় আমি আপনাকে ঘৃণা করি? আচ্ছা একটা কথা বলুন তো আপনাকে যদি আমি ঘৃণাই করি তাহলে আপনার পার্স ফেরত দেবার অছিলায় আপনার সাথে দেখা করতে গিয়েছিলাম কেন? কি মনে হয় আপনার? এখানে কেউ কোনো জিনিস ফেলে গেলে প্রত্যকেকে সেটা ফেরত দেওয়ার জন্য আমি যাই? নাকি তার জন্য অন্য ব্যবস্থা আছে, কোনটা?"
পিয়ালী দাঁড়িয়ে পরলো সে একটু অবাক হলো এইকথাটা এতদিন তার মাথায় আসেনি আদিত্য আবার তাকে একটা প্রশ্ন করে,
"আপনি কখনো ভেবেছেন যে আমি যদি আপনাকে ঘৃণাই করি তাহলে যে সেদিন আপনার জন্মদিনে আপনার একবার বলাতেই আপনার সাথে পুরো দিনটা কাটালাম সেটা কি করতাম?"
পিয়ালীর রাগ কমতে থাকে আর অবাকভাব বাড়তে থাকে সে সত্যিই এই কথাগুলো ভাবেনি এতদিন তার মাথাতেও আসেনি কিন্তু এখন তার মাথায় এলো এই আদিত্যই তাকে পাহারা দেবার জন্য সারা রাত তার মেসের বাইরে জেগে বসে ছিল, এই আদিত্যই তার বাবার মৃত্যুর পরে সমস্তরকম কাজকর্ম করেছে এমনকি ডেথ সার্টিফিকেটটা পর্যন্ত যত্ন করে রেখেছিল"।
"কেন করেছিলেন ওসব?" অবশেষে পিয়ালী মুখ খোলে।
"কারণ আমি আপনার সাথে থাকতে চাইছিলাম"
"কেন?"
"কারণ আমিও আপনাকে পছন্দ করি, আর সেটা আজ থেকে নয় অনেকদিন থেকে, কিভাবে হলো জানিনা কারণ আমি এই জিনিসটা থেকে নিজেকে দূরে রাখছিলাম নিজের মনটাকে পাথরে পরিণত করেছিলাম অথচ একদিন অজান্তেই সেই পাথরে প্রাণের স্পন্দন দেখা দিল আর সেটা সেদিন বুঝতে পারলাম যেদিন শুনলাম অ্যাক্সিডেন্টে আপনি মারা গেছেন... আপনার কোনো ধারণা নেই সেদিন আমার মধ্যে কি চলছিল, তারপর সেদিন যখন এখানে আপনাকে আবার দেখলাম সেদিন কতটা খুশী হয়েছি আপনাকে বোঝাতে পারবোনা" আদিত্য থামলো সে যে নিজের মনের সাথে খি পরিমাণ যুদ্ধ করে কথাগুলো বললো সেটা পিয়ালী বুঝতে পারলো না, তার রাগ এখন প্রায় কমে গেছে তার বদলে সে বিস্ময় এবং এক অদ্ভুত ঘোরের মধ্যে ঢুকে যেতে থাকে, আদিত্য থামতেই সে জিজ্ঞেস করে "তাহলে একটু আগে আমার সাথে ওরকম করলেন কেন?"
পিয়ালীর রুমটা যেখানে সেখান থেকে একটু দূরেই একটা বসার জায়গা আছে আদিত্য সেদিকে হাঁটতে শুরু করলে পিয়ালীও স্যুটকেস রেখে পিছু নেয়, দুজনে সেখানে গিয়ে বসে পিয়ালী আবার বলে, "কি হলো বলুন আমার সাথে ওরকম করলেন কেন?"
"কারণ আমার ভাগ্যটা অন্যান্যদের তুলনায় একটু বেশীই খারাপযখনই কাউকে ভালোবাসতে শুরু করি বা তাকে আঁকড়ে ধরে বাঁচতে চাই তখনই আমাকে তার থেকে দূরে চলে যেতে হয় এই যেমন ধরুন কতগুলো বছর আমি সিংহ রায়দের নিজেদের লোক না হয়েও ওদের মধ্যে ছিলাম কিন্তু যখনই আমার মনে হতে লাগলো যে এবার আর ভাবনা নেই এদের নিয়েই বেঁচে থাকবো তখনই আমার সত্যিটা সবার সামনে চলে এলো আর আমি ওদের থেকে দূরে হয়ে গেলাম, আমি চেয়েছিলাম যাতে অন্তত বন্ধু হিসেবে আপনার সাথে থাকতে পারি, আমি আপনাকে হারাতে চাইছিলাম না। আপনার বাবার প্রতি আমার কোনো রাগ বা ঘৃণা নেই উল্টে একটা আফশোষ আছে যে আমি ওনাকে বাঁচাতে পারিনি আমার পৌঁছাতে একটু দেরী হয়ে গিয়েছিল"।
"তাহলে আমাকে আমার বাবার বিষয়ে ওই কথাগুলো বললেন কেন?"
"ওগুলো আপনার জন্য ছিল না, কিন্তু হটাৎ আপনি প্রপোজ করায়... এক মুহূর্তে আমার অতীত আমার চোখের সামনে ভেসে আসে আর মাথায় রাগ উঠে যায় রাগের মাথায় বলে ফেলেছি, তার জন্য দুঃখিত, সরি"।
"অতীত? আপনার অতীত মানে?" পিয়ালী প্রশ্ন করে।
উত্তরে আদিত্য আবার একটা প্রশ্ন করে, "সেদিন যখন আমি আপনাকে বললাম যে আমি আদিত্য সিংহ রায় নই তখন আপনার একবারো মনে হয়নি যে আমি যদি আদিত্য সিংহ রায় না হই তাহলে আমি কে? কেন আদিত্য সেজে অতগুলো দিন কাটালাম?"
সত্যি এটাও পিয়ালীর মাথায় আসেনি আসলে পিয়ালী আবার আদিত্যকে কাছে পেয়ে সেটা নিয়েই খুশি ছিল বেশি কিছু ভাবতে চায়নি সে শুধু তার ভালোবাসার মানুষটার সাথে কাটানো সময়টা উপভোগ করতে চেয়েছে কিন্তু এখন আদিত্যর কথায় তার মাথাতে প্রশ্নটা এলো, কিন্তু সে বললো, "আপনিই তো বলেছিলেন যে অতীন্দ্রবাবু আপনাকে নিয়ে গিয়েছিলেন"।
"কিন্তু তার আগেও তো আমার একটা জীবন ছিল একটা পরিচয় ছিল সেটা কি হতে পারে, একথা মাথায় আসেনি?"।
"না আসেনি, কারণ আপনি অতীত নিয়ে আমার কোনো মাথাব্যথা নেই আমি শুধু আপনাকে ভালোবেসেছি"।
"আমার সম্পর্কে কিছু না জেনেই?"
"হ্যাঁ, ভালোবেসে ফেলেছি আর এটা কোনো অন্যায় নয়"।
I'm the King of Dark
&
I rule over all Devils
Posts: 928
Threads: 9
Likes Received: 1,804 in 406 posts
Likes Given: 939
Joined: Sep 2021
Reputation:
618
দ্বিতীয় পার্ট
৭ম পর্ব
আদিত্য কয়েকমুহূর্ত চুপ করে রইলো তারপর বললো, "কিন্তু আমার একটা অতীত আছে যেখানে এমন কিছু আছে যেগুলো কেউ জানেনা কেউ না অতীন্দ্রবাবু কিছুটা জানতেন পুরোটা নয়... পুরোটা একজনই জানে... বাদশা ওই অবলা জীবটাই যবে থেকে আমার কাছে এসেছে কখনো আমাকে ছেড়ে যায়নি সবসময় আমার সাথে ছিল আমার সব কথা শুনেছে এমনকি আমার প্রাণও বাঁচিয়েছে, ওই সবটা জানে কিন্তু কোনোদিন কাউকে বলতে পারবে না"।
"আর আমি জানতেও চাই না"
"কেন আমার কথায় ভালোবাসা শেষ হয়ে গেছে?"
"আপনার প্রতি আমার ভালোবাসা কোনোদিন শেষ হবে না"
"তাহলে আপনার আমার অতীতটা জানা উচিত...কারণ সেখানে একজন ছিল"
"মেয়ে?"
"হ্যাঁ, একটা মেয়ে" পিয়ালীর মুখ একটু ছোটো হয়ে গেল আদিত্য বলতে থাকে, "একটা মেয়ে যে এসেছিল আমার জীবনে, আমার জীবন আমার মন নিয়ে খেলতে কিন্তু আমি তাকে ভালোবেসেছিলাম কতই বা বয়স ছিল তখন ওই ১৮-১৯ হবে কিন্তু কোনোদিন সেই ভালোবাসা আমার জীবন শেষ করে দেবে"
"মানে?"
"এই ভালোবাসা আমার থেকে সবকিছু কেড়ে নিয়েছে আমার জীবন তছনছ করে দিয়েছে.. আজ পৃথিবীতে আমার কোনো অস্তিত্ব নেই, বেঁচে থেকেও আমি বেঁচে নেই,আমি মৃত.. আ ওয়াকিং ডেড। এই ভালোবাসার জন্য আজ আমার বাবা মা থাকতে বাবা ম নেই, পরিবার থাকতে পরিবার নেই, বাড়ি থাকতে বাড়ি নেই, আমি নিজের লোকেদের কাছে যেতে ভয় পাই, তাদের নিজের পরিচয় দিতে ভয় পাই, আজ আমি নিজের নামটা পর্যন্ত ব্যবহার করতে ভয় পাই এমনকি সুযোগ পেতেই নিজের চেহারাটা পর্যন্ত বদলে ফেলেছি"।
এতটুকু বলে আদিত্য পিয়ালীর দিকে তাকালো তার কপালে ভ্রুকুটি, আদিত্য বুঝলো ব্যাপারটা বললো, "এটা আমার নিজের চেহারা নয় এটা আদিত্যর চেহারা ওর সাথে আমার গায়ের রঙ আর তখন হাইটের একটা মিল ছিল তাই অতীন্দ্রবাবু প্লাস্টিক সার্জারি করে আমার চেহারাটা বদলে আদিত্যর চেহারা করে দেন"
"তুমি রাজী হলে?" পিয়ালী আবার আপনি থেকে তুমিতে ফিরে এসেছে।
"বললাম না এই ভালোবাসা আমার থেকে সব কেড়ে নিয়েছে এমনকি বেঁচে থাকার ইচ্ছেটাও, শুধু এতদিন ছিলাম অতীন্দ্রবাবুর কথায় যাতে ওনার স্ত্রী সুস্থ থাকেন ছেলেকে পেয়ে আর এখন বাদশার জন্য, ও না থাকলে কি করতাম ঠিক নেই... তুমি জানতে চাও আমার অতীত? তাহলে শোনো"
আদিত্য তার অতীত বলতে শুরু করলো পিয়ালী চুপ করে শুনতে লাগলো, আদিত্য পুরো ঘটনাই বলেছিল শুধু কয়েকটা বাদে বাকি নাম গোপন রেখে
আদিত্যর অতীত:
আদিত্য এই কলকাতারই ছেলে এখানেই জন্ম বেড়ে ওঠা... এখানেই ওর পরিবার সে, মা বাবা আমার দাদা আর ছিলেন পিসি, পিসেমশাই এবং তাদের ছেলে অর্থাৎ তার ভাই।
আদিত্যর বাবা-মায়ের দুজন ছেলে কিন্তু স্বভাবে কিছুটা আলাদা আদিত্যর দাদা পড়াশোনায় এক্সট্রা অর্ডিনারি ব্রিলিয়ান্ট, এছাড়া খেলাধুলা, আবৃত্তি, কথাবার্তা, চালচলন আচার-ব্যবহার সবেতেই দারুণ সবসময় হাসিখুশি ও একদম যাকে বলে আদর্শ ছেলে।
আর আদিত্য কিছুটা উল্টো অগোছালো, কিছুটা রাগী, ঠোঁটকাটা বা যা মুখে আসে বলে দেয়। আদিত্যর দাদা সবার পছন্দের সবার কাছের কলেজকলেজের টীচারদের থেকে শুরু করে আত্মীয়-স্বজন, পাড়া প্রতিবেশী এমনকি আমাদের বাবা-মায়েরও, সবার আদরের আর আদিত্য.. সে বরাবরই দাদার ছায়ায় ঢাকা থাকতো, ওর জন্য কারো সময়ই ছিল না।
এটা ঠিক যে আদিত্যর বাবা-মা আমাকে কখনও কোনো জিনিসের অভাব হতে দেননি কিন্তু ওর জন্য তাদের কাছে সময় ছিল না। বাবা ব্যাবসা নিয়ে ব্যাস্ত থাকতেন আর মা ঘরের কাজ নিয়ে, বাকি সময় দাদার জন্য।
যখন একটু বড়ো হলো বুঝতে শিখলো তখন খারাপ লাগতো, রাগ হতো আর সেই রাগটা তুলতো দিদির উপরে।
দিদি মানে আদিত্যর আরেকটা কাজিন। ওকেই বিরক্ত করতো আর ও আদিত্যর মায়ের কাছে নালিশ করতো ফলে বকা... তবুও ওকেই বিরক্ত করতো, একটা সময় পর সেসবও বন্ধ করে দেয়। নিজের একটা আলাদা দুনিয়া তৈরি করে নেয় সে, আদিত্যর দিকে নজর দেওয়ার মতো কেউ ছিল না ওর সম্পর্কে কারো যেন কোনো আগ্ৰহ নেই আদিত্য কোথায় যাচ্ছি, কি করছি সে সম্বন্ধে কেউ কিছু জানতে চাইতো না তাই ওরও সুবিধা হয়েছিল মাঝে মাঝে রাতে বাড়ি ফিরতে দেরী হলে মা চিন্তা করতো, বাবাও অপেক্ষা করতো।
এর মানে কিন্তু এই নয় যে আদিত্যর বাবা মা ওকে ভালোবাসতো না, হয়তো বাসতো আসলে কখনো বুঝতে পারেনি কখনো ওনাদের সেইভাবে কাছে পায়নি যেভাবে ওর দাদাকে পেতে দেখেছে আর একটা সময় পরে তো নিজেই দূরে থাকতে শুরু করে আলাদা থাকতে শুরু করে।
নিজের দুনিয়ায় শুধু কুকুরদের প্রবেশাধিকার ছিল ছোটোবেলায় পড়েছিল যে কুকুর খুব প্রভুভক্ত হয় তাদের সাথে বন্ধুত্ব করলে তারা কখনো ছেড়ে যায় না, আদিত্য তাই কুকুরদের সাথেই বন্ধুত্ব করলো ওদের পাড়ায় যত কুকুর ছিল সবার সাথে তার পরিচয়, সে তাদের সাথে ঘুরতো তাদের খাওয়াতো আবার তারা আদিত্য কথা শুনতো রাতে বাড়ি ফিরতে দেরী হলে তারা ওকে একা রাস্তায় পাহারা দিতে দিতে বাড়ি পৌঁছে দিত এইভাবেই জীবন কাটছিল তারপর একদিন একজন এল আদিত্যর জীবনে...একটা মেয়ে।
আদিত্যদের পাড়াতেই থাকতো আগে কখনো কথা হয়নি আদিত্য তো এমনিতেও একাই থাকতো তার উপর কখনো কোনো মেয়ের সাথে কথা বলেনি ওই দিদি ছাড়া।
মেয়েটা আদিত্যর কলেজেই ভর্তি হয়েছিল ওর ক্লাসেই, একদিন সন্ধ্যার দিকে আদিত্য ওর কুকুর বাহিনীর সাথে ঘুরে পাড়ায় ঢুকছে দেখলো পাড়ার বাইরে কয়েকজন ছেলে ওকে আর ওর কয়েকজন বান্ধবীকে ঘিরে রেখেছে বুঝতে অসুবিধা হলো না যে ওরা ওদের ইভটিজিং করছে।
অন্য কোনো ছেলে হলে কি করতো ঠিক নেই কিন্তু আদিত্য ওদের সাহায্য না করে পারলো না আর এটাই ওর জীবনের প্রথম ভুল ছিল"।
হ্যাঁ ভুল কারণ ওটার ফলেই আদিত্যর জীবনের গতিপথ পাল্টে গেল, সেদিন ওটা না করতো তাহলে হয়তো জীবনটা অন্যরকম হতো। যাইহোক, ওই ছেলেগুলো কিছুদিন আগে আদিত্যর দিদির সাথেও একই কাজ করেছিল তখন আদিত্য ওর কুকুরদের নিয়ে ওদের তাড়া করিয়েছিল ফলে সেদিনও যখন আদিত্য ওর বাহিনী নিয়ে ওদের সামনে গেলো তখন ওরা ভয়েই বোধহয় আস্তে আস্তে সরে গেল, তখনও আদিত্য বুঝতে পারেনি যে যা করলো তাতে ওর পুরো জীবন তছনছ হয়ে যাবে। পরদিন থেকে ওই মেয়েটা আদিত্য পিছনে পরে গেল কলেজে, ক্যান্টিনে ওর পাশে বসতো তারপর ধীরে ধীরে পরিচয় হলো আর সেখান থেকে বন্ধুত্ব, আদিত্যর সাথে ঘোরা, ওর সাথে কুকুরদের খাওয়ানো সব করতে লাগলো তারপর সেইদিনটা এলো, ১৪ই ফেব্রুয়ারি ভ্যালেন্টাইনস ডে ছিল যেদিন মেয়েটাই আদিত্যকে প্রপোজ করলো আর আদিত্যও বোকার মতো এক্সেপ্ট করলো, হয়তো.. হয়তো কেন নিশ্চয়ই সেও ওর প্রতি দুর্বল হয়ে পরেছিল আর এটাই আদিত্যর জীবনের দ্বিতীয় ভুল।
সময় গড়াতে থাকে ধীরে ধীরে ওদের দুজনের রিলেশনের কথা ওদের পরিবারের সবাই জানলো ঠিক হলো আদিত্য আগে নিজের পায়ে দাঁড়াবে তারপর ওদের বিয়ে দিয়ে দেওয়া হবে, আদিত্যদের নিজস্ব ব্যাবসা তাই অসুবিধাও ছিল না, কিন্তু আদিত্য কখনোই ওদের ব্যাবসা বা টাকা ইনকামের দিকে চোখ দেয়নি তার প্রয়োজনও মনে করেনি ওর বাবা আর দাদাই দেখতো, কখনো কিছুর অভাব ছিল না যখনই আদিত্য টাকার দরকার হতো তখনই বাবা, মা, দাদা যখন যার কাছে ইচ্ছা চেয়ে নিতো একটা সময় ঠিক হলো ওর দাদাই ওদের ব্যাবসার হাল ধরবে আদিত্যর অবশ্য তাতে কোনো আপত্তি ছিল না, ও মনে করতো নিজেরই তো দাদা আবার কোম্পানিও ওদের সেটা ও দেখুক কি দাদা কি যায় আসে?
কিন্তু এটা শোনার পর থেকে মেয়েটি কেমন যেন পাল্টে যেতে লাগলো প্রথমে আদিত্য অতটা গুরুত্ব দেয়নি বিশ্বাস করতো মেয়েটিকে কিন্তু সে ভুলে গিয়েছিল যে বিশ্বাসের মধ্যেই বিষ বাস করে।
বুঝতে পারেনি যে ওর পিছনে অন্য একজনের সাথে রিলেশনে জড়িয়ে গেছে মেয়েটা কখনো আদিত্যর মাথাতেই আসেনি যে ও এরকম করতে পারে। একদিন মেয়েটা বললো গ্যাংটকের রুমটেক মঠে নাকি লামাদের নাচ হবে সেটা দেখতে যেতে চায়, আদিত্য আপত্তি করেনি, দুজনের বাড়ি থেকেও কেউ আপত্তি করেনি দুজনেই গেল সেখানে আর তারপর এলো সেই রাত।
গ্যাংটকে পৌঁছে একটু ঘোরাঘুরি করলো পরদিন রাতেই ছিল লামা ডান্স দুজনেই গিয়েছিল দেখতে, আদিত্য এর আগে কখনো জিনিসটা দেখেনি তাই মন দিয়ে দেখছিল মঠে বেশ ভিড় হয়েছিল একটা সময় মেয়েটি বললো সে মঠের পিছনে খোলা জায়গায় যাচ্ছে এখানে ভিড়ে নাকি ওর সাফোকেশন হচ্ছে নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। আদিত্য কিছু বলার আগেই উঠে চলে গেল আদিত্যও সঙ্গে সঙ্গে গেলো কিন্তু ভিড়ের জন্য বেরোতে একটু পিছিয়ে পরলো বাইরে এসে দেখে মেয়েটি নেই, মঠের পিছনে দিকে গিয়ে খুঁজলো কিন্তু পেলো না সেদিন রাতে কুয়াশা ছিল তাই একটা সময় পরে প্রচণ্ড চিন্তা হচ্ছিল যে মঠের পিছনে যে খাদটা আছে ওখানে যায়নি তো? তাই আদিত্যও ওখানে গিয়ে খুঁজতে থাকে এমন সময় হঠাৎ পিছন থেকে মাথার পিছনে কেউ সজোড়ে মারলো, মুহূর্তের জন্য চোখে অন্ধকার দেখলো তারপর নিজেকে সামলিয়ে পিছনে তাকিয়ে দেখতে পেলো আঘাতকারীকে.. ওই মেয়েটা নয় একটা ছেলে মেয়েটির নতুন প্রেমিক আদিত্যর পিছনে যার সঙ্গে ও রিলেশনে ছিল এবং যার সঙ্গে মিলে ও আদিত্যকে মারার জন্য ওখানে নিয়ে এসেছে।
প্রথমে বিশ্বাস হচ্ছিল না কিন্তু তারপরই মেয়েটা সামনে এলো তখন আদিত্যর বুঝতে বাকি রইলো না যে সাফোকেশন টাফোকেশন মিথ্যে, আদিত্যকে মঠ থেকে বার করে ফাঁকা জায়গায় নিয়ে আসার প্ল্যান ছিল ওটা মেয়েটা জানতো ও বেরিয়ে গেলে আদিত্য ওকে খুঁজতে আসবে, আর এটাই ওরা চাইছিল, ওরা জানতো ওখানে আদিত্য সাহায্য করার কেউ থাকবে না।
আদিত্য বারবার ওদের অনুরোধ করতে থাকে যে ওকে না মারতে, বারবার বলতে থাকে যে 'আমি তো তোমাদেরকোনো ক্ষতি করিনি তাহলে আমাকে মারবে কেন?', মেয়েটিকে বলে 'তুমি তো বলেছিলে আমাকে ভালোবাসো তাহলে আমাকে মারছো কেন?'
উত্তরে মেয়েটা হিংস্র কণ্ঠে জবাব দেয় 'আমি তোমাকে ভালোবাসি কে বলেছে? তোমার মতো ছেলেকে কোনো মেয়ে ভালোবাসতেই পারে না, তোমার মধ্যে সেরকম কোনো কোয়ালিটি নেই তুমি য়কারো ভালোবাসার যোগ্য নও তোমাকে কেউ ভালোবাসতে পারে না' আরো বলে 'তুমি না মরলে ওরা এক হতে পারবে না তাই তোমাকে মরতেই হবে'।
আদিত্য একবার শেষ চেষ্টা করে 'ঠিক আছে আমি তোদের মাঝে আসবো না, কিন্তু আমাকে মারিস না', কিন্তু এতে ওইদুজনের দুজন মনে কোনো পরিবর্তন আসে না। 'এভাবে হবে না' কথাটা বলেই মেয়েটিই প্রথমে খাদের ধারে দাঁড়ানো আদিত্যর দিকে দুপা এগিয়ে এসেই তাকে এক ধাক্কা মারে, টাল সামলাতে না পেরে প্রথম আদিত্য আঃ করে একটা আর্তনাদ করে উল্টে পড়ে যায়। চকিতে ঘটনাটা ঘটে যাওয়ায় দ্বিতীয় যুবকটি কিছুটা হতবিহ্বল হয়ে যায় সে বড়ো বড়ো চোখে যুবতীটির দিকে তাকিয়ে থাকে, যুবতীটি সেটা দেখে বলে 'তুমি দেরী করছিলে তাই আমি করে দিলাম'। দ্বিতীয় যুবকটি একটু হেসে উত্তর দেয় 'তা ঠিক করেছো কিন্তু এরপর কি করতে হবে মনে আছে তো?'।
'আছে' মেয়েটি আরও কিছু বলতে যাচ্ছিল কিন্তু একটা গোঙানির আওয়াজ পেয়ে দুজনেই চমকে ওঠে, নীচে খাদের দিকে তাকিয়ে দেখে খানিক আগেই ধাক্কা দিয়ে যাকে ফেলে দেয় সে আস্তে আস্তে উপরে উঠে আসার চেষ্টা করছে, খাদটা খাড়া খাড়া নামেনি একটু ঢালু হয়ে নেমেছে মাঝে মাঝে কিছু ঝোপঝাড় আবার কখনো কখনো পাথর খামচে ধরে উঠে আসছে, আরও কিছুটা এগিয়ে আসতেই তার মুখটা দৃশ্যমান হয় উপরে থাকা দুজনের তারা অবাক হয়ে দেখে যে উঠে আসছে তার কপাল ফেটে রক্ত পড়ছে এছাড়াও গালে থুতনিতে কয়েক জায়গায় ছড়ে গেছে।
আদিত্য প্রায় খাদের উপরে উঠে এসেছে কিন্তু একদম উপরের ধারে হাত রাখতেই উপরে থাকা দুজন নীচের আদিত্যর দুটো হাত পা দিয়ে মাড়িয়ে ধরলো, আদিত্য ব্যাথায় একটা আর্তনাদ করে ওঠে। 'তুই এখনো বেঁচে আছিস? তোকে মরতেই হবে' নিজের ডান পা দিয়ে আদিত্যর বা হাতটা মাড়াতে মাড়াতে হিংস্র কণ্ঠে বলতে থাকে উপরে থাকা যুবকটি। নীচের যুবকটি কেঁদে ওঠে 'আমি সত্যি বলছি আমি তোদের মাঝখান থেকে চলে যাবো, কিন্তু আমাকে মারিস না'। আদিত্য আরও কিছু বলতে যাচ্ছিল কিন্তু হটাৎ মুখে একটা লাথি খেয়ে আঃ করে থেমে যায়, লাথিটা মেরেছে মেয়েটি, তার একটা পা তখনও আদিত্যর ডান হাত মাড়িয়ে রাখা আছে, হিংস্র কণ্ঠে সে বলে 'তুমি বুঝতে পারছো না তোমাকে মরতেই হবে, তুমি না মরলে আমরা একসাথে থাকবো কিভাবে?' আদিত্য ব্যাথায় কঁকিয়ে উঠে কোনোমতে বলে 'আমি তো বলছি আমি তোমাদের মাঝখান থেকে সরে যাবো', কিন্তু উত্তরে মেয়েটির কণ্ঠ আরও হিংস্র হয়ে ওঠে 'আমরাই তোমাকে সরিয়ে দেবো'। এবার উপরের যুবকটিও লাথি মারতে থাকে, আদিত্য তাও বাঁচার চেষ্টা করতে থাকে কিন্তু দুজনের ক্রমাগত লাথিতে আর পারে না, তাছাড়া তার দুটো হাত উপরের দুজনে মাড়িয়ে রেখেছে সে আর থাকতে পারে না ধরে থাকতে একটা চিৎকার করে সে নীচে পড়ে যায়, তার আর্তনাদ আশেপাশের কুয়াশা আবৃত অন্ধকারে মিলিয়ে যায়'।
বর্তমান সময়:
"তারপর কি হলো? তোমাকে বাঁচালো কে?"
আদিত্য থামতেই ওর একটা হাতের উপরে নিজের একটা হাত রেখে আস্তে করে একটু চাপ দিয়ে প্রশ্ন করে পিয়ালী, "তোমার বাড়ির লোক জানতে পারেনি? মেয়েটার কি হলো?"
"আমার ভাগ্যে ওখানে মৃত্যু ছিল না তাই বেঁচে গিয়েছিলাম"
"তুমি যখন বেঁচে গিয়েছিলে তখন বাড়ি ফিরে গেলেনা কেন?"
"গিয়েছিলাম কিন্তু.."।
"কিন্তু?"
আদিত্য আবার অতীতে ডুব দেয়,
আদিত্যর অতীত:
আদিত্য যখন আবার জ্ঞান ফিরে পেয়ে চোখ খুললো তখন হাসপাতালে, বেডে শুয়ে আছে, ওঠার চেষ্টা করতেই বুঝলো সেটা সম্ভব নয় একটু ধাতস্থ হয়ে সে চারিদিকে তাকিয়ে থেকে বোঝার চেষ্টা করলো যে সে কোথায়? নিজের অবস্থাও বুঝতে অসুবিধা হলো না হাত তুলতে গিয়ে দেখলো নাড়াতেই পারছে না।
"এখন কেমন লাগছে?" মোলায়েম স্বরটা তখনই প্রথম কানে আসে পাশে তাকায় দেখে এক মধ্যবয়স্ক ভদ্রলোক বসে আছেন, বয়স ৪৫ এর আশেপাশে, মাথায় কাঁচা-পাকা মেশানো ঢেউ খেলানো চুল, গোঁফ দাঁড়ি পরিষ্কার করে কামানো, চোখে ফ্রেমহীন আয়তাকার চশমা, গায়ে একটা বড়ো কোট। "এখন কেমন লাগছে?" আবার প্রশ্ন করেন ভদ্রলোক।
"আআআমি কোথায়?" কোনোমতে কথা বলে আদিত্য। "তুমি হাসপাতালে, তোমাকে কেউ খাদ থেকে ফেলে দিয়েছিল" শান্ত কণ্ঠে উত্তর দেন ভদ্রলোক, এবারে আদিত্য অনুভব করে যে তার মাথা এবং কানের দুপাশ থেকে থুতনি পর্যন্ত ব্যাণ্ডেজ জড়ানো কপালেও বাধা আছে, চোখের নীচে ব্যাণ্ডেজ এছাড়া হাতেও প্লাস্টার শরীরের আরও অনেক জায়গায় ব্যাণ্ডেজ অনুভব করে সে। "তোমার নাম কি? বাড়ি কোথায়?" জিজ্ঞেস করেন ভদ্রলোক।
"আমার বাড়ি কলকাতায়" উত্তর দেয় সে,
"তুমি গ্যাংটকে এসেছিলে কেন, বেড়াতে?" আবার প্রশ্ন করেন ভদ্রলোক, "হ্যাঁ" ছোট উত্তর আদিত্যর।
"একটা প্রশ্ন করবো?" জিজ্ঞেস করেন ভদ্রলোক, শুনে একটু অবাক হয় আদিত্য, ভদ্রলোক এতক্ষণ বিনা অনুমতিতে প্রশ্ন করছিলেন এখন হটাৎ অনুমতি চাইছেন কেন সেটা বুঝতে পারে না সে বলে "করুন"।
"তোমাকে ওরা মারতে চাইছিলো কেন?" ভদ্রলোকের প্রশ্নে চমকে যায় আদিত্য, সে উত্তর না দিয়ে চুপ করে থাকে, ভদ্রলোক বলেন "রুমটেকের মনাস্ট্রিতে আমিও গিয়েছিলাম সেদিন, তারপর হটাত একটু হালকা হতে পিছনের খালি জায়গাটায় গিয়েছিলাম হটাৎ একটা চিৎকার শুনে সেদিকটায় যাই, কুয়াশার জন্য তাড়াতাড়ি দৌড়ানো সম্ভব ছিল না, ওখানে গিয়ে দেখি দুজন চলে যাচ্ছে পিছন দিক থেকে দেখে চিনতে পারিনি, টর্চের আলোয় আশেপাশে খুঁজতে থাকলাম যে চিৎকারটা কোথা থেকে এসেছিল কিন্তু কাউকে দেখতে পাইনি হটাৎ খাদের ধারে একটা পাথরের উপর একটু রক্ত চোখে পড়ে সন্দেহ হয় যে হয়তো একটু আগে দেখা দুজন কাউকে এখান থেকে ফেলে দিয়েছে, আমি জানতাম যে খাদটা একদম খাঁড়া নামেনি ধাপে ধাপে নেমেছে অথচ কুয়াশার জন্য ঠিকঠাক দেখা যাচ্ছে না তবুও আস্তে আস্তে কিছুটা নীচে নেমে দেখি এক জায়গায় একটা জ্যাকেটের কিছুটা ছেঁড়া অংশ আটকে আছে আরো একটু নামতেই তোমাকে দেখতে পেলাম একটা আগাছার ঝোপের উপরে পড়ে আছো, মাথা ফেটে রক্ত পড়ছে, প্রথমে ভেবেছিলাম তুমি মারা গেছো তারপর বুঝলাম অজ্ঞান হয়েছো, তাই তড়িঘড়ি তোমাকে এখানে নিয়ে এলাম"। ভদ্রলোক এক নাগাড়ে বলে একটু থামলেন তারপর বললেন "কিন্তু ওরা তোমাকে মারতে চাইছিলো কেন?"।
আদিত্য চুপ করে আছে দেখে ভদ্রলোক আবার বলেন "তোমাকে তুমি বলছি বলে কিছু মনে কোরো না, আসলে তুমি অচেতন অবস্থায় নিজেই বলছিলে 'যে আমাকে মারিস না আমি তোদের মাঝখান থেকে সরে যাবো' অবশ্য অনধিকার চর্চা করছি বলে কিছু মনে কোরো না"।
"আপনি আমাকে তুমিই বলুন আমি আপনার থেকে অনেক ছোটো, আমাকে বাঁচানোর জন্য আপনাকে ধন্যবাদ বলা উচিত কিন্তু পারছি না আপনি আমাকে না বাঁচালেও পারতেন" উত্তর দেয় আদিত্য।
"একথা বলতে নেই" ভদ্রলোক বলেন।
"যার নিজের লোক তাকে মারতে চায়, যে মেয়েটাকে সে ভালোবাসতো যার সাথে বিয়ে করে সে সারাজীবন কাটাতে চেয়েছিল সেই যখন ঠকায় সে যখন অন্য কারো সাথে থাকবে বলে তাকে খুন করতে চায়, খাদ থেকে ধাক্কা মেরে ফেলে দিতে হাত কাঁপে না তখন একজন মানুষের জীবনে বেঁচে থাকার আর কোনো কারণ থাকতে পারে কি?" আদিত্যরচোখ থেকে জল গড়িয়ে পড়ে।
"কিন্তু এবার তুমি কি করবে? কলকাতায় ফিরবে?" জিজ্ঞেস করেন ভদ্রলোক।
"হ্যাঁ, ওদের সামনে আমি গিয়ে দাঁড়াবো, আপনি আমাকে আরেকটু হেল্প করবেন আমাকে কলকাতায় পৌঁছে দেওয়ার ব্যাবস্থা করবেন?" ভদ্রলোককে অনুরোধ করে আদিত্য।
"অবশ্যই করবো, আমি নিজে তোমাকে নিয়ে যাবো কিন্তু আগে তুমি পুরো সুস্থ হয়ে ওঠো তারপর, এখন তোমার জ্ঞান ফিরলেও তুমি চলাফেরা করার অবস্থায় নেই" আশ্বস্ত করেন ভদ্রলোক তারপর একটু থেমে বলেন "ওই দেখো এত কথা হলো এখনো নিজের পরিচয় দেওয়া হয়নি আমি অতীন্দ্র সিংহরায়, এটুকুই আপাতত যথেষ্ট"।
প্রায় একমাস লেগেছিল আদিত্যর মোটামুটি ঠিক হতে, যদিও তখনও শরীরের অনেক জায়গায় ব্যাণ্ডেজ, মুখে আঘাতের চিহ্ন, ক্রাচ ছাড়া হাঁটতে পারে না সেই অবস্থাতেই অতীন্দ্র বাবু আর আদিত্য ট্যাক্সি করে কলকাতার ঢাকুরিয়ায় ব্যানার্জি বাড়ির সামনে এলো তখন আদিত্যর মুখ মাস্ক দিয়ে ঢাকা, চোখে কালো চশমা, কপালে তখনও ব্যাণ্ডেজ বাধা, বা হাতটা প্লাস্টার, মুখটা ঢেকে রাখার একটা কারণ নীচে পড়ে যাওয়ার সময় তার মুখে পাথরের আঘাতে গভীর ক্ষত হয়েছে যেগুলোর দাগ কোনোদিন মুছে যাবে না, আদিত্যর মুখের এই দাগগুলোর জন্য এখন তার মুখটা বিভৎস হয়েছে, আয়নায় নিজের মুখটা দেখার পরে সে দোনামোনায় ভুগতে শুরু করেছিল যে এই মুখ নিয়ে বাড়িতে আসবে কি না কিন্তু শেষ পর্যন্ত অতীন্দ্র বাবু বোঝানোয় আসতে রাজী হয়েছে, যদিও ট্যাক্সি থেকে নামেনি, অতীন্দ্র বাবুই একপ্রকার জোর করেই ট্যাক্সি থেকে নামান তারপর ট্যাক্সির ভাড়া মিটিয়ে দিয়ে বাড়ির ভিতরে ঢোকেন, আদিত্য এক হাতে ক্রাচ ধরে কোনোমতে হেটে ভিতরে ঢোকে, অতীন্দ্র বাবু বাড়ির সামনে একজনকে জিজ্ঞেস করে জানেন বাড়ির সবাই পিছনে কাছেই মাঠে আছেন সেখানে অনুষ্ঠান চলছে।
কি অনুষ্ঠান জিজ্ঞেস করতে অপর এক মহিলা অদ্ভুত স্বরে বলেন,
"বিয়ের অনুষ্ঠান"
"বিয়ে?" অতীন্দ্রবাবু অবাক হন
"হ্যাঁ, বিয়ে। বড়োলোকদের ব্যাপারস্যাপার বুঝিনা দেখলে গা জ্বলে যায়, একমাস আগেই বাড়ির ছোটোছেলে ঘুরতে গিয়ে অ্যাক্সিডেন্টে মারা গেছে আর এর মধ্যেই বাড়ির বড়ো ছেলে বিয়ে করছে"।
অতীন্দ্র বাবু আর কোনো কথা না বলে আদিত্যকে নিয়ে সেদিকে যান। বাড়ির পিছনে কিছুটা গেলে একটা মাঠ আছে সেখানে কিছুটা জায়গা জুড়ে প্যাণ্ডেল করা হয়েছে সেখানে কিছু লোকের ভিড়, কয়েকজন মহিলা নিজেদের মধ্যে কথা বলছে যার সারমর্ম একটু আগের মহিলার মতোই
"সত্যিই কি দিনকাল পরলো দেখো, ছোটোভাই মরতে না মরতেই বড়োভাই বিয়ের পিড়িতে বসে পরলো"
"কিন্তু এটা তো হয়না তাই না? অন্তত একবছর তো অশৌচ মানতেই হয়?"
"আরে রাখো বড়োলোকদের আবার মানা না মানা, কথায় আছে মানলে অনেক কিছুই আর না মানলে কিছুই না, ওই শ্রাদ্ধের দিনই ঠাকুরমশাই বিধান দিয়েছিলেন যে অপঘাতে মরলে নাকি অশৌচ কাটানো যায়, তাই করেছেন"
"কিন্তু তাই বলে ব্যানার্জী বাবু আর তার বউ মেনে নেবেন? হাজার হোক ওনাদের ছেলে মরেছে"
"ধুর ওই ছেলের প্রতি টান ছিল নাকি? ওদের বাড়িতে যে বউটা কাজ করে সে বলেছে ছোটোছেলের প্রতি তেমন টান ছিল না"
"এ আবার হয় নাকি? বাবা মা তো?"
"কে জানে? দেখো গিয়ে হয়তো কুড়িয়ে পাওয়া ছেলে তাই মরলেও কোনো দুঃখ নেই"
"বাদ দাও, আমাদের কি? এসব বড়োলোকদের ব্যাপারে আমাদের মাথা ঘামিয়ে দরকার নেই"
আদিত্য হঠাৎ কাউকে দেখে যেন নিজেকে আরও কিছুটা গুটিয়ে নেয় অতীন্দ্রবাবুর পিছনে লুকোতে চেষ্টা করে, অতীন্দ্র বাবু হটাৎ আদিত্যকে নিজের পিছনে লুকোতে দেখে অবাক হয়ে যান তিনি বোঝেন ছেলেটা কারো থেকে নিজেকে লুকোচ্ছে, তিনি জিজ্ঞেস করায় আদিত্য একজন যুবকের দিকে ইঙ্গিত করে বয়সে অনিকেতের মতোই একটু বড়ো হয়তো, উচ্চতাতেও আদিত্যর থেকে একটু বেশি ওই ছ ফুটের কিছুটা কম রোগা ফর্সা, টিকালো নাক, বর্তমানে গায়ে একটা স্যাণ্ডো গেঞ্জি এবং ধুতি সে একজন মহিলার পাশে বসে তাকে কি যেন বোঝাচ্ছে মহিলার বয়স ৪০-৪২ এর মধ্যে ফর্সা একটু মোটা গায়ে লাল শাড়ি, লাল ব্লাউজ, মাথায় চুল পিছনে খোঁপা করা আছে সিঁথিতে সিঁদুর তিনি একটা চেয়ারে চুপ করে বসে আছেন মুখ গম্ভীর।
"মা" অতীন্দ্র বাবুর পিছন থেকে ডেকে ওঠে আদিত্য যদিও সে ডাক একমাত্র অতীন্দ্র বাবুই শুনতে পান, তিনি বলেন "চলো, তোমার মায়ের কাছে চলো"। কিন্তু আদিত্য আবার কুঁকড়ে যায় তার চশমা পড়া চোখ এবার অন্য একজনের দিকে অতীন্দ্র বাবু দেখেন এক যুবতীকে বয়স ২০-২২ এর মধ্যে, উচ্চতা পাঁচ ফুটের একটু বেশি, গায়ের রঙ একদম ফর্সা না হলেও কালো নয়, কিন্তু দেখার জিনিস তার চোখদুটো অতীন্দ্র বাবু সহজেই বুঝতে পারেন এই মেয়ে সুবিধার নয় এর চোখ দুটোতে চালাকি এবং শয়তানি বুদ্ধির প্রকাশ স্পষ্ট, চোখের কোলে এখন কালির দাগ এবং জলের ছাপ সেগুলো যে মেকআপ সেটা তিনি সহজেই বুঝতে পারেন এবং সাথে এটাও বুঝতে পারেন যে এই মেয়েই সে যাকে আদিত্য ভালোবাসতো মেয়েটিকে দেখে আগের যুবকটি উঠে যায় দুজনে একটা কোণে একাকী গিয়ে কিছু কথা বলে ফিরে আসে যুবকটি আবার আগের মতো মহিলার পাশে গিয়ে বসে।
"কাকে খুঁজছেন?" গুরুগম্ভীর কণ্ঠে প্রশ্নটা শুনেই চমকে ওঠেন অতীন্দ্র বাবু তাকিয়ে দেখেন তাঁরই বয়সী এক ভদ্রলোক, লম্বায়ও তারি সমান ছফুটের উপরে এনারও রঙ ফর্সা ,টিকালো নাকের নীচে পুরুষ্ট গোঁফ, দেখেই বোঝা যায় দারুণ ব্যাক্তিত্ত্ব। "আসলে আমি অন."নামটা নিতে গিয়েও থামতে হয় তার একটা কারণ তার শার্টের পিছনে টান দিয়েছে আদিত্য, আর দুই সেই মুহূর্তে অপর একজন ডাক দেয় "মিস্টার ব্যানার্জি" অতীন্দ্র বাবুর সামনে দাঁড়ানো ভদ্রলোক "এক্সকিউজ মি প্লিজ" বলে সেদিকে এগিয়ে যান, অতীন্দ্র বাবু পিছনে আদিত্যকে জিজ্ঞেস করেন "উনি তোমার বাবা?"।
"হ্যাঁ" ছোট উত্তর দেয় আদিত্য।
"তাহলে তুমি আমাকে থামালে কেন? ওনার তো জানা উচিত যে" কথাটা সম্পূর্ণ করতে পারলেন না অতীন্দ্র বাবু, কারণ আদিত্য বলতে শুরু করেছে "আমি এই চেহারা নিয়ে কিভাবে ওনাদের সামনে যাবো?"
"কিন্তু ওনারা তোমার বাবা মা তুমি ওনাদের কাছে যাবে না তো কার কাছে যাবে?" অবাক স্বরে প্রশ্ন করেন অতীন্দ্র বাবু,কিন্তু আদিত্যর উত্তর দেওয়ার আগেই কেউ জোরে মাইকে গান চালু করে দেয়।
" আপনি আমাকে এখান থেকে নিয়ে চলুন" আদিত্যর স্বরে বোঝা যায় যে ও কান্নাটাকে কোনোমতে আটকে রেখেছে। "কিন্তু এনারা তোমার.." কথা শেষ করতে পারেন না অতীন্দ্র বাবু আদিত্য তাকে থামিয়ে বলতে শুরু করে "প্লিজ আমাকে এখান থেকে নিয়ে চলুন"।
একটা কফি শপে একটু কোনায় একটা টেবিলে আদিত্য আর অতীন্দ্র বাবু মুখোমুখি বসে আছেন সামনে কফির পেয়ালা রাখা সত্ত্বেও দুজনের কেউই মুখে তুলছে না, আদিত্য টেবিলের উপরে দুটো হাত জড়ো করে তার মাঝে মাথা গুঁজে রেখেছে, অতীন্দ্র বাবু বলেন "তুমি ফিরে চলো, তোমার বাবা-মার জানা উচিত সত্যিটা"
"কিভাবে ফিরে যাবো? আমার মুখের অবস্থা দেখেছেন?" মাথা তুলে জিজ্ঞেস করে আদিত্য ওর মুখে এখন মাস্ক নেই, চোখেও চশমা খুলে রেখেছে, অতীন্দ্র বাবু বোঝানোর চেষ্টা করেন "এখন চিকিৎসা বিজ্ঞান অনেক এগিয়ে গেছে, প্লাস্টিক সার্জারির দ্বারা তোমার মুখের এই দাগ মুছে যাবে"।
"আর তারপর?" আদিত্য প্রশ্ন করে, অতীন্দ্র বাবু বলেন "তারপর মানে?"।
"আমি ওনাদের কাছে ফিরে গেলে ওনারা যত খুশি হবেন তার থেকে অনেক বড়ো আঘাত ধেয়ে আসবে"
"এসব কি বলছো তুমি?"
"ঠিকই বলছি স্যার আর আমি কোনোমতেই আমার বাবা মাকে আঘাত দিতে পারবো না, এমনিতেও আমার প্রতি ওনাদের টান বরাবরই কম আমার মৃত্যুটাকে সহজেই ওনারা সহ্য করে নেবেন, ওনাদের কাছে ফিরে গিয়ে তাই ওনাদের ওই আঘাতের সামনে দাঁড় করানোর কোনো মানেই হয় না এর থেকে এটাই ভালো যে আমি তাদের কাছে মৃত হয়েই থাকি"
"কিন্তু তাই বলে যারা তোমাকে মারার চেষ্টা করলো তারা খোলামেলা ভাবে ঘুরে বেড়াবে?"
"তাছাড়া আর উপায় নেই কারণ আমার কথা কেউ বিশ্বাস করবে না আর আমার কাছে তো কোনো প্রমাণ নেই"।
"ওনারা তোমার বাবা-মা এটাই কি যথেষ্ট নয়?" অতীন্দ্র বাবু আবার বোঝানোর চেষ্টা করেন কিন্তু আদিত্যর ওই এক কথা "আমি ফিরে গেলে অনেক সত্যি বেরিয়ে আসবে আর তাতে বাবা মা বেশি কষ্ট পাবে" সে কিছুতেই যেতে রাজী হয় না, শেষে অতীন্দ্র বাবু হাল ছেড়ে দেন তিনি জিজ্ঞেস করেন "বেশ কিন্তু এবার তুমি কি করবে ভেবেছো?"।
"আমি চলে যাবো অনেক দূরে যেখানে কেউ আমার পরিচয় জানবে না, কেউ আমাকে চিনবে না আপনি আমার জন্য যা করেছেন সেটার ঋণ আমি কোনোদিন শোধ করতে পারবো না আপনাকে আজীবন মনে রাখবো" উত্তর দেয় আদিত্য তারপর একটু থেমে বলে "আচ্ছা আপনি আমার জন্য এত কিছু করছেন কিন্তু কেন সেটা জানতে পারি?"
"কারণ তোমাকে দেখে আমার একজনের কথা মনে পড়ে" উত্তর দেন অতীন্দ্র বাবু, "কে?" আদিত্য প্রশ্ন করে, "আমার অতি প্রিয় একজন, আচ্ছা তোমাকে একটা কথা বলবো?" অতীন্দ্র বাবুর স্বরে সংকোচ। "এতে জিজ্ঞাসা করার কি আছে বলুন" আদিত্য বলে তার স্বর এখন আগের থেকে অনেকটাই সংযত।
"তুমি তো নিজের ফ্যামিলির কাছে ফিরে যেতে চাইছো না অন্য কোথাও যেতে চাইছো তো যদি তুমি রাজী থাকো তাহলে আরেকটা উপায় আছে এতে তুমি যেটা চাইছো সেটাও হবে আর.." অতীন্দ্র বাবু কিছু বলতে গিয়েও থেমে যান। "আর?" আদিত্য জিজ্ঞেস করে, "আর আমারও একটা ছোট্ট উপকার হয়" কথাটা বলেই ফেলেন অতীন্দ্র বাবু। "আপনি আমার প্রাণ বাঁচিয়েছেন আপনার যদি উপকারে লাগতে পারি তাহলে সেটা আমার সৌভাগ্য, বলুন আপনি কি চান?"। "আগে আমার পুরো কথা শোনো তারপর তুমি সিদ্ধান্ত নাও" আবার দোটানায় ভুগতে থাকেন অতীন্দ্র বাবু, সেটা বুঝতে পেরে আদিত্য বলে "আমার এই জীবনের কোনো মূল্য নেই এখন কিন্তু এটা যদি আপনার উপকারে লাগে তাহলে এর থেকে ভালো কিছু আর হয় না আপনি নিঃসংকোচে বলুন"। অতীন্দ্রবাবু একটু গলা খাঁকড়িয়ে বলেন "বেশ তবে বলছি শোনো"।
"বলুন"
"আমি নর্থবেঙ্গলে থাকি ওখানে আমাদের পূর্বপুরুষের তৈরি একটা বিরাট বাড়ি আছে। আমার স্ত্রী এক ছেলে আর এক মেয়েকে নিয়ে থাকতাম"।
"থাকতাম মানে?"
"আমার ছেলে আদিত্য ওর অন্য কোনো বদ নেশা বা শখ না থাকলেও প্রচণ্ড শিকারের শখ, মাঝে মাঝেই আমাদের ওখানের জঙ্গলে ম্যানইটার বেরোয় তখন অনেক সময় বনদপ্তরের লোকেদের সাথে শিকারে যায় শিকার মানে মেরে ফেলে না ওই ঘুমপাড়ানি বুলেট মেরে অজ্ঞান করে বনদপ্তরের লোকেদের হাতে তুলে দেয়"।
কিন্তু মাস ছয়েক আগে ও কোথায় একটা জানোয়ারের খবর পেয়ে ওটাকে শিকার করার জন্য ঘর ছেড়ে চলে যায়, তারপর আর খোঁজ ছিল না। আমি অনেক লোক লাগিয়েছিলাম তাদেরই একজনের মারফত খবর পাই ও নাকি গ্যাংটকে আছে, তাই আমিও চলে যাই ওখানে গিয়ে শুনি ও মনাস্ট্রিতে আছে সেখানেও যাই কিন্তু পাইনি, তারপর খবর পাই যে.."
"যে?"
"অ্যাক্সিডেন্টে আমার ছেলে মারা গেছে" অতীন্দ্রবাবু হাউহাউ করে কেঁদে ওঠেন।
"কিন্তু আপনি শিওর কিভাবে হচ্ছেন যে ও মারাই গেছে?"
"আমি ওর বডি দেখেছি"
"আপনি শিওর যে ওটা আপনার ছেলেই?"
"হ্যা"
"আয়্যাম সরি, কিন্তু আপনি আমার থেকে কি চাইছেন সেটা যদি বলেন?"
"আমার বাড়িতেএখনো কেউ জানেনা যে আমার ছেলে মারা গেছে, জানলে ওর মাকে মানে আমার স্ত্রীকে আর বাঁচাতে পারবো না, আমি এই ব্যাপারেই তোমার হেল্প চাইছি"
"কিন্তু এই ব্যাপারে আমি কিভাবে হেল্প করবো?"
"তুমি যদি আদিত্য হয়ে আমার বাড়িতে চলো"
"কিন্তু সেটা কিভাবে সম্ভব? আপনার ছেলে আর আমার চেহারা নিশ্চয়ই এক নয়?"
"না সেটা নয় তবে তোমাদের গায়ের রং, এমনকি হাইট প্রায় একই চট করে ধরা অসম্ভব, তুমি যদি রাজী থাকো তাহলে আমার এক পরিচিত সার্জেনকে দিয়ে তোমার চেহারাটা বদলে আমার ছেলের করে দেবো"
"প্লাস্টিক সার্জারী? সেইজন্যেই একটু আগে এটার কথা বলছিলেন?"
"হ্যাঁ.. মানে তুমি যদি রাজী থাকো"
"সমস্যা তো শুধু চেহারা নয় স্যার, আমি আপনার ছেলের সম্পর্কে কিছুই জানিনা ওর হাবভাব, চালচলন কথাবার্তা কিচ্ছু না এভাবে কাউকে ঠকানো যায় না, বিশেষ করে একজন মাকে"
"ওটা ম্যানেজ করতেই হবে নাহলে আমার স্ত্রীকে বাঁচাতে পারবো না, এটুকু উপকার আমার করবে তুমি?"
"স্যার, উপকার বলবেন না আপনি আমার প্রাণ বাঁচিয়েছেন কিন্তু আপনি বাস্তব সমস্যাটা বোঝার চেষ্টা করুন এগুলোর কোনো উপায় আছে আপনার কাছে?"
"আছে, আমার কাছে আদিত্যর কিছু পুরনো ভিডিও আছে যেগুলো দেখে তুমি ওর ভাবভঙ্গি চলাফেরা কথাবার্তা শিখে নিতে পারবে"
"বেশ, তবে আপনাকে একটা কথা দিতে হবে"
"কি কথা?"
"আমি কে এটা আপনি কোনোদিন কাউকে বলবেন না, যদি কখনো এমন হয় যে সবাই জেনে গেল আমি আদিত্য নই তখনও নয়,এটা আপনকে কথা দিতে হবে"
"বেশ আমি কথা দিচ্ছি"।
I'm the King of Dark
&
I rule over all Devils
Posts: 928
Threads: 9
Likes Received: 1,804 in 406 posts
Likes Given: 939
Joined: Sep 2021
Reputation:
618
দ্বিতীয় পার্ট
৮ম পর্ব
বর্তমান সময়:
এই হলো আমার কাহিনী তারপর আমার চেহারা বদলানো হয়, ভিডিও দেখে আমি নিজেকে আদিত্যর মতো তৈরি করি আর একটা সময় আদিত্য সিংহ রায় হয়ে নর্থবেঙ্গলে যাই।
পিয়ালী এতক্ষণ চুপ করে আদিত্যর কথা শুনছিল এবার সে বলে
"একটা কথা জিজ্ঞেস করবো?"
"করো"
"তুমি ফিরে গেলে না কেন? আইমিন নিজের পরিবারের থেকে দূরে চলে এলে কেন? তোমাকে ফিরে পেয়ে তোমার বাবা-মা নিশ্চয়ই খুশি হতেন"
"হয়তো হতেন কিন্তু আমি ফিরে গেলে অনেকের ভালো মানুষের মুখোশটা খসে গিয়ে আসল চেহারা বেরিয়ে পরতো আর তাতে সবথেকে কষ্ট যে দুজন মানুষের হতো তারা আমার বাবা মা"
"কিন্তু কেন? ওই মেয়েটার চেহারা সবার সামনে আসাই উচিত ছিল, আর তাতে তোমার বাবা-মা কষ্ট পাবেন কেন?"
"ওই মেয়েটা নয় ওই মেয়েটা যে ছেলেটার সাথে মিলে ও আমাকে মারতে চেয়েছিল যে খাদের ধারে পিছন দিক থেকে প্রথম আমার মাথায় মারে.. সেই ছেলেটার মুখোশ খুলে যাবে, সেই ছেলেটা আর কেউ নয় আমার দাদা, আমার নিজের দাদা"।
"হোয়াট?" পিয়ালী যেন আকাশ থেকে পরলো
"এবার তুমি বলো আমি কিভাবে বাবা মার কাছে গিয়ে বলতাম যে ওনাদের আদরের বড়ো ছেলে আমাকে মারতে চেয়েছে, ওনাদের মনের অবস্থা কি হতো ভেবে দেখেছো? যে ছেলেকে ওনারা এত ভালোবাসেন যাকে একদম আদর্শ ছেলে মনে করেন তার সম্পর্কে এইকথাটা জানলে তাদের কতটা কষ্ট হতো আন্দাজ করতে পারো? আত্মীয় স্বজন পাড়া প্রতিবেশী সবাই দাদাকে দেখে বাবার শেখানো শিক্ষা সংস্কারের কথা বলেন, ওনার সম্মান করেন দাদার সত্যিটা বেরিয়ে এলে সেই সম্মানের কি হবে ভেবেছো?" আদিত্য জিজ্ঞেস করে।
"তাইবলে তুমি একা একা?"
"একা আর কোথায়? কখনো অতীন্দ্রবাবু আর ওনার পরিবার তো কখনো এই আনন্দ নিকেতন কেউ না কেউ ঠিক জুটে যাচ্ছে আর বাদশা তো আছেই"
"সেটাই তাহলে তো আমার না থাকলেও চলবে, তাহলে আমাকে আটকালে কেন আর এতকথা বললেই কেন?"
"অখিল জ্যেঠু বললেন যে মানুষকে তার অতীত ভুলে এগিয়ে যেতে হয়, আমিও ভুলতে চাই কিন্তু এতদিন পারিনি। এখন আরেকবার চেষ্টা করতে চাই তোমার সঙ্গে আমি জানি আমি তোমাকে কষ্ট দিয়েছি তারজন্য ক্ষমাও চাইছি আমি চাই তুমি আমার সঙ্গে থাকো আমাকে একটা চান্স দাও"
"সত্যিই তুমি এটা চাও?"
"চাই কিন্তু আরেকটা বাস্তব হলো আমার কাছে এখন কিছুই নেই, হ্যাঁ শৈলেশবাবু যা ব্যবস্থা করে গিয়েছেন তাতে হয়তো আমার থাকা-খাওয়া আর পরার কোনো অভাব হবে না কখনো কিন্তু তবুও আমার কাছে কিছু নেই কারণ আমার কোনো নাম নেই, কোনো পরিচয় নেই, এবার তুমি বলো আমাকে ক্ষমা করে একটা চান্স দেবে?"
"দিতে পারি তবে কয়েকটা শর্ত আছে?"
"কি শর্ত?"
"প্রথমত মুখের এই জঙ্গল পরিষ্কার করতে হবে"
"অ্যাঁ"
"হ্যাঁ, আমি চাইনা যে তোমার হ্যাণ্ডসাম চেহারাটা এই জঙ্গলে ঢাকা থাকুক, রাজী?"
"রাজী"
"দ্বিতীয়ত ওইসব ছাইপাশ খাওয়া ছাড়তে হবে, এক্ষুনি"
আদিত্য একটু হেসে পকেট থেকে সিগারেটের প্যাকেট বার করে পিয়ালীর হাতে দিয়ে বললো, "কথা দিচ্ছি আর কখনো খাবো না"
"সত্যি বলছো?" পিয়ালী প্যাকেটটা মুড়িয়ে ডাস্টবিনে ফেলে জিজ্ঞেস করলো।
"বলছি, এমনিতেও আমার নেশা বা অ্যাডিকশন ছিল না জোর করে খেয়ে যেতাম"
"তৃতীয়ত.. আমাকে একটু ভালোবাসতে পারবে?"
আদিত্য এই প্রথম পিয়ালীকে দুহাতে ধরে নিজের বুকের মাঝে টেনে নিল, পিয়ালীও দুহাতে আদিত্যকে জড়িয়ে ধরলো, আদিত্য বললো,
"একটু তো পারবো না তবে কথা দিচ্ছি চেষ্টা করবো আমার অতীত ভুলে সবটুকু দিয়ে তোমাকে ভালোবাসার"
নিজের প্রেমিকের কথা শুনে পিয়ালী তাকে আরও আঁকড়ে ধরে অপরদিকে আদিত্যও নিজের প্রেয়সীকে নিজের বুকের মাঝে আরও টেনে নেয়, দুই সর্বহারা একে অপরকে আঁকড়ে বাঁচতে চাইছে নতুন শুরু করতে চাইছে।
আলিঙ্গনরত অবস্থাতেই একসময় পিয়ালী জিজ্ঞেস করে, "আচ্ছা তুমি তোমার আসল নামটা কিন্তু বললে না?"
"ওটার দরকার কি? আমি নিজেই ওটা ভুলতে চাই, মানুষ যেমন নিজের পূর্বজন্ম ভুলে যায় আমিও তেমনি আমার অতীত আর অতীতের সঙ্গে যুক্ত সবকিছু ভুলে যেতে চাই, আমার নাম আদিত্যই থাকুক না"
"আদিত্যই থাকুক, আমি শুধু জানতে চাইছিলাম তবে তুমি যদি বলতে না চাও দরকার নেই"
একটু চুপ থেকে আদিত্য উত্তর দেয় "অনিকেত.. অনিকেত ব্যানার্জী"।
I'm the King of Dark
&
I rule over all Devils
The following 13 users Like Monen2000's post:13 users Like Monen2000's post
• bad_boy, Boti babu, Bumba_1, kublai, Lajuklata, MNHabib, Naim_Z, nextpage, Patrick bateman_69, ppbhattadt, ratayani, tuhin009, টিক্সি
Posts: 1,473
Threads: 7
Likes Received: 2,437 in 929 posts
Likes Given: 2,452
Joined: Mar 2022
Reputation:
509
অনেক অজানা জানতে পারলাম সেই সাথে নতুন কিছু সুখস্মৃতি। অন্যদিকে শত্রুপক্ষের চক্রবুহ্য তৈরীর কৌশল। সব মিলিয়ে দারুন একটা আপডেট, না না একটা নয় তিনখানা আপডেট।
পিয়ালী নিজের ভালোবাসার কথা জানালো অনিও সম্মতি দিয়েই দিলো প্রায়। তবে আরেকজন যে অপেক্ষায় ছিল তার কি হবে??
হাত বাড়িয়ে ছুঁই না তোকে, মন বাড়িয়ে ছুঁই।
দুইকে আমি এক করি না, এক কে করি দুই।।
Posts: 11
Threads: 0
Likes Received: 8 in 7 posts
Likes Given: 121
Joined: May 2019
Reputation:
0
খুব ভালো, দারুন। লোভ বাড়িয়ে দিচ্ছেন।
Posts: 928
Threads: 9
Likes Received: 1,804 in 406 posts
Likes Given: 939
Joined: Sep 2021
Reputation:
618
(10-05-2023, 01:54 AM)nextpage Wrote: অনেক অজানা জানতে পারলাম সেই সাথে নতুন কিছু সুখস্মৃতি। অন্যদিকে শত্রুপক্ষের চক্রবুহ্য তৈরীর কৌশল। সব মিলিয়ে দারুন একটা আপডেট, না না একটা নয় তিনখানা আপডেট।
পিয়ালী নিজের ভালোবাসার কথা জানালো অনিও সম্মতি দিয়েই দিলো প্রায়। তবে আরেকজন যে অপেক্ষায় ছিল তার কি হবে?? ধন্যবাদ
কার কি হয় সেটা ভবিষ্যৎ বলবে, ততদিন সঙ্গে থাকুন পড়তে থাকুন।
(10-05-2023, 02:46 AM)kublai Wrote: খুব ভালো, দারুন। লোভ বাড়িয়ে দিচ্ছেন।
ধন্যবাদ
I'm the King of Dark
&
I rule over all Devils
•
Posts: 21
Threads: 0
Likes Received: 19 in 19 posts
Likes Given: 1,206
Joined: May 2019
Reputation:
0
10-05-2023, 10:03 AM
(This post was last modified: 10-05-2023, 10:04 AM by bad_boy. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
চমৎকার তিনটি পর্ব ৷ পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায় রইলাম ৷ লাইক ও রেপু added
Posts: 928
Threads: 9
Likes Received: 1,804 in 406 posts
Likes Given: 939
Joined: Sep 2021
Reputation:
618
(10-05-2023, 10:03 AM)bad_boy Wrote: চমৎকার তিনটি পর্ব ৷ পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায় রইলাম ৷ লাইক ও রেপু added
ধন্যবাদ
I'm the King of Dark
&
I rule over all Devils
•
Posts: 18
Threads: 0
Likes Received: 17 in 17 posts
Likes Given: 2
Joined: May 2019
Reputation:
0
Posts: 928
Threads: 9
Likes Received: 1,804 in 406 posts
Likes Given: 939
Joined: Sep 2021
Reputation:
618
(10-05-2023, 01:48 PM)skx1965 Wrote: Fantastic.
I'm the King of Dark
&
I rule over all Devils
•
Posts: 491
Threads: 0
Likes Received: 351 in 292 posts
Likes Given: 376
Joined: Aug 2022
Reputation:
8
10-05-2023, 03:29 PM
(This post was last modified: 10-05-2023, 03:46 PM by Patrick bateman_69. Edited 3 times in total. Edited 3 times in total.)
কি বলবো? বলার মতো ভাষাই পাচ্ছি না। imo(in my opinion) অনি কে ওর অতীতে না ফিরানই ভালো, ওর দাদার ভুলের শাস্তি ওর দাদাকে পেতে দিন এইরকম খারাপ মানুষদের বিনা শাস্তিতে ছেড়ে দিয়েন না। But মনে হচ্ছে অনিকে ওর অতীতে ফিরে যেতেই হবো পিয়ালীর কেস এর জন্যে। imo পিয়ালী কে নিয়ে ওর আদিত্যর দেওয়া জীবনে ফিরে যাওয়াই ভালো। আরও একটি কথা রয়ে গেলো সেইটা হচ্ছে আরও একজন মানুষ যে অপেক্ষা করছে তার অপেক্ষার প্রহর কি শেষ হবে না?
আরও একটি যুক্তি আছে যার জন্য আমি মনে করি যে অনিকে ওর অতীতে ভুলে গিয়ে আদিত্যের মা বাবার কাছে থাকা উচিৎ কারন হলো উনারা অনির নিজের মা বাবার থেকে বেশি ভালোবেসেছে অনিকে হয়তো আদিত্য মনে করে ভালোবেসেছে কিন্তু তার পরও এই ভালোবাসায় কোনো হিংসা, বুদ্ধির পরিচয়ে ভালবাসা,এক ছেলে কে অনেক বেশি ভাল বাসা আর অন্য জনকে কম ভালোবাসা এক কথায় ভালোবাসার বৈষম্য অন্ততঃ ছিলোনা আদিত্যর মা বাবার মনে। এ আপডেট এর দুইটা কথা শুনে খুবই ক্ষত হয়েছি সেইটা হলো
"ধুর ওই ছেলের প্রতি কোনো টান ছিল? ""দুই সর্বহারা একে অপরকে আঁকড়ে বাঁচতে চাইছে নতুন শুরু করতে চাইছে।"
Tbh এই গল্পের অনি "literally me" character hoiya gase.
A lonely, a man without love, a man who betrayed by his own love and family , er theke koster ki hote pare ? Emon akjon jar family thekew nei,
My pain is constant and sharp, and I do not hope for a better world for anyone.
Posts: 491
Threads: 0
Likes Received: 351 in 292 posts
Likes Given: 376
Joined: Aug 2022
Reputation:
8
"দুই সর্বহারা একে অপরকে আঁকড়ে বাঁচতে চাইছে নতুন শুরু করতে চাইছে।"
Plz এদেরকে নতুন করে শুরু করতে দাও, আবার অতীতে ফিরিয়ে নিয়ো না গো মনেন দাদা :"(
My pain is constant and sharp, and I do not hope for a better world for anyone.
Posts: 928
Threads: 9
Likes Received: 1,804 in 406 posts
Likes Given: 939
Joined: Sep 2021
Reputation:
618
(10-05-2023, 03:29 PM)Patrick bateman_69 Wrote: কি বলবো? বলার মতো ভাষাই পাচ্ছি না। imo(in my opinion) অনি কে ওর অতীতে না ফিরানই ভালো, ওর দাদার ভুলের শাস্তি ওর দাদাকে পেতে দিন এইরকম খারাপ মানুষদের বিনা শাস্তিতে ছেড়ে দিয়েন না। But মনে হচ্ছে অনিকে ওর অতীতে ফিরে যেতেই হবো পিয়ালীর কেস এর জন্যে। imo পিয়ালী কে নিয়ে ওর আদিত্যর দেওয়া জীবনে ফিরে যাওয়াই ভালো। আরও একটি কথা রয়ে গেলো সেইটা হচ্ছে আরও একজন মানুষ যে অপেক্ষা করছে তার অপেক্ষার প্রহর কি শেষ হবে না?
আরও একটি যুক্তি আছে যার জন্য আমি মনে করি যে অনিকে ওর অতীতে ভুলে গিয়ে আদিত্যের মা বাবার কাছে থাকা উচিৎ কারন হলো উনারা অনির নিজের মা বাবার থেকে বেশি ভালোবেসেছে অনিকে হয়তো আদিত্য মনে করে ভালোবেসেছে কিন্তু তার পরও এই ভালোবাসায় কোনো হিংসা, বুদ্ধির পরিচয়ে ভালবাসা,এক ছেলে কে অনেক বেশি ভাল বাসা আর অন্য জনকে কম ভালোবাসা এক কথায় ভালোবাসার বৈষম্য অন্ততঃ ছিলোনা আদিত্যর মা বাবার মনে। এ আপডেট এর দুইটা কথা শুনে খুবই ক্ষত হয়েছি সেইটা হলো
"ধুর ওই ছেলের প্রতি কোনো টান ছিল? ""দুই সর্বহারা একে অপরকে আঁকড়ে বাঁচতে চাইছে নতুন শুরু করতে চাইছে।"
Tbh এই গল্পের অনি "literally me" character hoiya gase.
A lonely, a man without love, a man who betrayed by his own love and family , er theke koster ki hote pare ? Emon akjon jar family thekew nei,
(10-05-2023, 03:44 PM)Patrick bateman_69 Wrote: "দুই সর্বহারা একে অপরকে আঁকড়ে বাঁচতে চাইছে নতুন শুরু করতে চাইছে।"
Plz এদেরকে নতুন করে শুরু করতে দাও, আবার অতীতে ফিরিয়ে নিয়ো না গো মনেন দাদা :"(
প্রথমেই ধন্যবাদ জানাচ্ছি
একটা কথাই বলবো ভবিষ্যতে কি হবে কে বলতে পারে? সময় এবং জীবন কাকে কখন কোথায় নিয়ে যায় কে জানে? আর বাইরে থেকে লোক তো অনেক কিছুই বলে আসল সত্যি কোনটা সেটা কে জানে?
দেখা যাক কি হয়।
সঙ্গে থাকো পড়তে থাকো।
I'm the King of Dark
&
I rule over all Devils
•
Posts: 74
Threads: 0
Likes Received: 48 in 45 posts
Likes Given: 11
Joined: Dec 2022
Reputation:
0
Posts: 928
Threads: 9
Likes Received: 1,804 in 406 posts
Likes Given: 939
Joined: Sep 2021
Reputation:
618
(10-05-2023, 05:46 PM)Jaguar the king Wrote: Darun hoa6e update ta
I'm the King of Dark
&
I rule over all Devils
Posts: 1,129
Threads: 0
Likes Received: 1,349 in 914 posts
Likes Given: 3,519
Joined: Apr 2022
Reputation:
144
খুব ভালো হয়েছে কিন্তু আরো ভালো করা যেত কিছু কিছু জায়গাতে কাজ করতে হবে লাইক রেপু এডেড ভাই।
আমাকে আমার মত থাকতে দাও
Posts: 928
Threads: 9
Likes Received: 1,804 in 406 posts
Likes Given: 939
Joined: Sep 2021
Reputation:
618
(10-05-2023, 09:22 PM)Boti babu Wrote: খুব ভালো হয়েছে কিন্তু আরো ভালো করা যেত কিছু কিছু জায়গাতে কাজ করতে হবে লাইক রেপু এডেড ভাই।
ধন্যবাদ
I'm the King of Dark
&
I rule over all Devils
|