Posts: 338
Threads: 20
Likes Received: 311 in 181 posts
Likes Given: 323
Joined: Jun 2022
Reputation:
42
পর্ব_১
আজ ৭ বছর পর দেশে ফিরছে ইভান। ফ্লাইটে বসে আছে। হাতে একটা পুরোনো খাম। খামটা খুলে খামের ভিতর থেকে একটা পেপার হাতে নিল ইভান। পেপারটার উপরে বড় বড় অক্ষরে লেখা ডিভোর্স। পেপারটার এক কোনে জ্বলজ্বল করছে একটা মেয়ের সাক্ষর। ইভান এক দৃষ্টিতে কতক্ষন সাক্ষরটার দিকে তাকিয়ে চোখ বন্ধ করে নিল।
ইভান : আমি আসছি , আসছি আমি। কেন তুমি আমার সাথে এমনটা করলে? জবাব তোমাকে দিতেই হবে। বি রেডি প্রেয়শী, বি রেডি।
( সম্পূর্ণ নাম মাসুদ আল ইভান। বয়স ২৫, দেখতে বেশ সুদর্শন। লম্বা ৬ ফুট, ফর্সা, মিডিয়াম বডি। হাজারো মেয়েদের ক্রাশ। কিন্তু রাগটা নাকের ডগায়। সব সময় যেন তার মেজাজ বিগড়ে থাকে। কারো সাথে কথা বলে না। মেয়ে তো দূরের কথা তেমন কোনো ছেলেদের সাথেও মেশে না। হাতে গোনা কয়েকজনের সাথে কথা বলে তাও ছেলে। প্রয়োজনের অতিরিক্ত কথা বলে না। সব সময় অন্যদের থেকে নিজেকে গুটিয়ে রাখে। অবশ্য এই সবকিছুর পিছনে একটা কারন আছে। সেটা গল্পের মধ্যে আস্তে আস্তে জানতে পারবেন। )
---------
বাড়িতে ফিরে নিজের প্রয়োজনীয় কিছু জিনিস নিয়ে ১ ঘন্টার মধ্যে বেড়িয়ে গেল ইভান।
পারভিন বেগম ( ইভানের মা ) : কোথায় যাচ্ছিস বাবা? এতদিন পর বাড়িতে ফিরে এখনই কোথায় যাচ্ছিস? বিদেশে থাকতেও একটা দিন ফোনেও আমাদের কারো সাথে কথা পর্যন্ত বলিসনি। তুই এখনও আমাদের উপর রেগে আছিস?
ইভান : আমি এখানে থাকতে আসিনি মিসেস চৌধুরী। আর রাগ? রাগ , অভিমান আপন মানুষদের উপরে আসে আর আমার আপন বলতে কেউ নেই যে তাদের উপর রাগ করব।
পারভিন বেগম : এসব কি বলছিস বাবা?
ইলিয়াস চৌধুরী ( ইভানের বাবা ) : বিদেশে তোমাকে পড়াশোনা করতে পাঠিয়েছিলাম বেয়াদব হতে? তুমি কি ভুলে গেছ মায়ের সাথে কিভাবে কথা বলতে হয়? আর এসেই কোথায় যাচ্ছো তুমি?
ইভান : আপনার স্বামীকে বলে দিন মিসেস চৌধুরী উনি যেন আমার জীবনে কোনো নাক না গলান। এমনিতে উনি আমার জন্য যা যা করেছেন তার জন্য আমি উনার কাছে কৃতজ্ঞ। উনি আজ পর্যন্ত আমার পিছনে যত টাকা খরচ করেছে সব ফেরত দিয়ে দেব টেনশন করতে বারন করুন বলে বাড়ি থেকে বেড়িয়ে গেল।
ইলিয়াস চৌধুরী : দেখলে তোমার ছেলের ব্যবহার দেখলে?
পারভিন বেগম : আমার ছেলেটা কখনই এমন ছিল না। আমার ছেলের এমন হওয়ার পিছনে তুমি দায়ী শুধু তুমি।
-----------
Aap ke pyaar mein hum savarne lage
Dekh ke aap ko hum nikhar ne lage
Is kadar aap se hum ko mohabbat huvi
Is kadar aap se hum ko mohabbat huvi
Toot ke baajuon mein bikharne lage
Aap ke pyaar mein hum savarne lage
Aap jo is tarah se tadapayenge
Aise aalam mein pagal ho jaayenge
Aap jo is tarah se tadapayenge
Aise aalam mein pagal ho jaayenge
বারান্দায় দাঁড়িয়ে গুনগুন করে গান গাইছিলো কথা। ওর এত সুন্দর গানের মধ্যে কর্কশ গলায় বেজে উঠল ওর বজ্জাত ফোনটা। গান থামিয়ে ফোনটা হাতে নিয়েই বিরক্ত হয়ে তাকালো ফোনের স্ক্রীনের দিকে। ফোনের স্ক্রীনে বড় বড় অক্ষরে লেখা চুন্নী। রিসিভ করে কানে ধরতেই ওই পাশ থেকে একটা মেয়ে বলে উঠলো : কিরে কই তুই?
কথা : এইতো বাসায়।
রাফিয়া ( কথার বেস্ট ফ্রেন্ড , ঐ চুন্নীটাই রাফিয়া ) : এখনও বাসায় মানে? ভার্সিটিতে আসবি কখন?
কথা : এই তো আসছি।
রাফিয়া : তাড়াতাড়ি আয় । আমি সেই কখন থেকে এসে বসে আছি। আর আজকের ডেয়ারটা মনে আছে তো?
কথা : হ্যা মনে থাকবে না আবার । এই নিয়ে কালকে রাত থেকে ১০ বার আমাকে আমার ডেয়ারটার কথা মনে করিয়ে দিয়েছিস। শোন না....
রাফিয়া : কি?
কথা : ঐ ডেয়ারটা কি মানতেই হবে? অন্য কোনো খেয়াল দে না।
রাফিয়া : না ঐটাই মানতে হবে। তাড়াতাড়ি করে ভার্সিটিতে চলে আয়।
( কথার সম্পূর্ণ নাম তাজকিয়াতুন কথা। অনার্স তৃতীয় বর্ষে পড়াশোনা করে। কথা আর রাফিয়া একই ক্লাসে পড়ে। কথা দেখতে শুনতেও ভালো। ওর গায়ের রংটা একটু আলাদা যাকে বলে হলদে ফর্সা। লম্বা ৫'১ "। পড়াশোনায় খুব ভালো, ক্লাস টপার। ছেলেদের সাথে মেশে না। ওর কোনো ছেলে বন্ধু নেই। পরিবার থেকেও ওর সাথে ছেলের কথা বলাটা এলাও করে না। যথেষ্ঠ নম্র ভদ্র একটা মেয়ে, বড্ড চুপচাপ থাকে সব সময়। নিজেকে সবকিছু থেকে সব সময় গুটিয়ে রাখে। এই পৃথিবীতে শুধু মাত্র রাফিয়ার সাথেই একটু প্রান খুলে কথা বলে কথা। কথার বড় একটা ভাই আছে নাম কবির। )
---------
ভার্সিটির গেট থেকে গুটি গুটি পায়ে হেঁটে ভিতরে যাচ্ছে কথা। লজ্জায় ওর মাথা নুইয়ে আসছে। অনার্সে পড়ুয়া মেয়ে কিনা বাচ্চাদের মতো মাথার দুই পাশে দুইটা বিনুনি করে ফ্রক পড়ে ভার্সিটিতে এসেছে। এটাই ওর ডেয়ার ছিল যে ওকে কলেজ পড়ুয়া মেয়েদের মতো সেজে ভার্সিটিতে আসতে হবে। যদিও মুখে একটা মাক্স পড়েছে যাতে কেউ চিনতে না পারে তবুও কেমন যেন লজ্জা লাগছে। এর জন্যই এইসব ফালতু গেমস কথা কখনও খেলে না । কিন্তু সেদিন রাফিয়া এক প্রকার জিদ ধরেছিল ওকে ট্রুথ এন্ড ডেয়ার খেলতেই হবে। শেষ পর্যন্ত রাফিয়ার জেদের কাছে হার মেনে ও এই খেলাটায় অংশ নিয়েছিল। আর তারই ফল এখন ভোগ করছে। কথাকে আসতে দেখে রাফিয়া দৌড়ে কথার কাছে গেল।
রাফিয়া : এই পিচ্চি ভার্সিটিতে কি করছো? তোমাদের কলেজ তো ঐ পাশে।
কথা রাগে কটমট করে রাফিয়ার দিকে তাকাতেই রাফিয়া চুপসে গেল।
রাফিয়া : তোকে কিন্তু এই ড্রেসে খুব সুন্দর লাগছে। কিন্তু মাক্স পড়েছিস কেন? ডেয়ারটাতে কি মাক্স পড়তে বলা হয়েছিল নাকি?
কথা : মাক্স পড়তে তো বারনও করা হয়নি।
রাফিয়া : এটা হবে না কিন্তু বেয়ার তো ডেয়ারই।
কথা : হুম আমি তো ডেয়ারই পালন করেছি। তুই কি ডেয়ার দেওয়ার সময় বলেছিলি যে মাক্স পড়তে পারবো না।
রাফিয়া : তোর সাথে কথা বলে কোনো লাভ নেই। এখন একটা লেটেস্ট নিউজ শোন।
কথা : কি?
রাফিয়া : আমাদের ডিপার্টমেন্টে নতুন একজন টিচার এসেছে। শুনেছি স্যারটা নাকি খুব হ্যান্ডসাম সুন্দর।
কথা : তুই তো খুব লুচু মহিলা। আমার ভাই না তোর ক্রাশ এখন আবার তুই অন্য ছেলেদের কথা বলছিস।
রাফিয়া : তোর ভাই বাদ। তোর ভাইয়ের হাতে থাপ্পর খাওয়ার আর ইচ্ছে নেই আমার। ওমন কেন তোর ভাই ? তোর ভাই না যেন একটা রাগী বোম। সব সময় যেন মাথায় আগুন নিয়ে ঘোরে।
কথা : এই একদম আমার ভাইকে নিয়ে বাজে কথা বলবি না। ভাইকে কিন্তু বলে দেব তুই ভাইয়ের সম্পর্কে এইসব বলেছিস।
রাফিয়া : না না আমার এত তাড়াতাড়ি মরার কোনো শখ নেই। আমি কিছু বলিনি কিছু না। চল এখন ক্লাসে যাই, দেরী হয়ে যাচ্ছে।
চলবে....
(ভুল ত্রুটি হলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন)
ধন্যবাদ
===========================
পড়তে থাকুন চটি গল্প এ-র পাশা-পাশি ভিন্ন ধরনের গল্প ✒।
Keep reading chatty stories as well as different types of stories✒.
( Post By- Kam Pagol)
•
Posts: 338
Threads: 20
Likes Received: 311 in 181 posts
Likes Given: 323
Joined: Jun 2022
Reputation:
42
ক্লাসের একদম লাস্ট বেঞ্চে মাথা নিচু করে বসে আছে কথা, যাতে এই সাজে কারো চোখে না পরে। ওর পাশেই বসে আছে রাফিয়া। হঠাৎ ক্লাসে একজন সুদর্শন পুরুষ এসে ঢুকলো। ক্লাসের সব মেয়েরা হা করে পুরুষটির দিকে তাকিয়ে আছে। এমন ভাবে তাকিয়ে আছে যেন ওরা আগে কখনও এত সুন্দর পুরুষ মানুষ দেখেনি। কথা এখনও মাথা নিচু করেই বসে আছে। সবার ভালো লাগার সেই পুরুষ মানুষটি হঠাৎ বলে উঠল : হ্যালো স্টুডেন্ড। আই আ'ম ইউর নিউ টিচার।
মাই নেম ইজ মাসুদ আল ইভান।
নামটা শুনেই তড়িৎ গতিতে মাথা তুলে তাকালো কথা। সামনের মানুষটিকে দেখে চোখ দুটো পানিতে ভরে উঠলো। আজ ৭ বছর পর ওর অতীত ওর সামনে দাঁড়িয়ে আছে। মে অতীতকে পিছনে ফেলার জন্য ওর এত চেষ্টা। সামনের মানুষটাকে দেখেই ঘৃনায় ওর মনটা ফেটে পড়ছে। এই মানুষটার জন্যই ওকে হাজারো মিথ্যা অপবাদ মাথায় নিয়ে ওর শহড় ছাড়তে হয়েছিল। এই মানুষটার জন্যই ওর বাবা মা একদিন অপমানিত হয়েছিল। আজ সেই লোকটা ওর সামনে। নিজের ভয়ংকর অতীতকে সামনে দেখে বসে থাকতে পারছে না। নিজের ভয়ংকর অতীতটা ওর চোখের সামনে ভেসে উঠছে। বুকটা ফেটে যাচ্ছে। এত বছর পর কেন এই মানুষটা আবার ওর সামনে এলো? কেন? তবে মানুষটা বদলে গেছে অনেক। শেষ যখন এই মানুষটাকে কথা দেখেছিল তখন কেবল একটু একটু দাড়ি গজিয়েছিল আর এখন চাপ দাড়ি। আগে এত ফর্সা ছিল না , আগের থেকে অনেক ফর্সা হয়েছে। তখন বডিটাও এমন ছিল না, এখন জিম করা সুঠম বডি।
কথা বলতে বলতে ইভানের হঠাৎ চোখ আটকে যায় ক্লাসের একদম পিছনের বেঞ্চে বসা একটা মেয়ের দিকে। চোখ দুটো বড্ড চেনা চেনা লাগছে। মুখে মাস্ক থাকায় চোখ ছাড়া কিছু দেখা যাচ্ছে না। কোনো একদিন এমনই দুই বিনুনি করা এক কলেজ পড়ুয়া মেয়ের চোখে হারিয়ে গিয়েছিল ইভান। এই মেয়েটির চোখের দিকে তাকিয়ে আজ অতীতের সেই মধুর স্মৃতিগুলো ভেসে উঠছে ইভানের চোখের সামনে। হঠাৎ কিছু একটা ভেবে ইভানের মাথায় ধপ করে আগুন জ্বলে উঠলো। ওর চোখ মুখ দেখেই মনে হচ্ছে ভীষণ রেগে গেছে ও। কিন্তু কি কারনে এত রেগে গেল সবারই অজানা। ইভান আস্তে আস্তে কথার বেঞ্চের কাছে গিয়ে দাঁড়ালো।
ইভান কথার দিকে তাকিয়ে : স্টান্ড আপ।
কথা কাচুমাচু করে উঠে দাঁড়ালো। মস্কটা টেনে মুখটা আর একটু ভালোভাবে ঢেকে নিল । যে করেই হোক এই লোকটার কাছে ধরা পড়া যাবে না। যদিও ইভানের কথাকে চেনার কথা নয় কারন আজকের কথা আর ৭ বছর আগের কথার মধ্যে অনেক তফাৎ তবুও সাবধানের মার নেই।
ইভান : কোন ক্লাসে পড়ো তুমি?
কথা উত্তর না দিয়ে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে ইভানের দিকে। শুধু কথা নয় ক্লাসের সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে ইভানের দিকে। সে কোন ক্লাসে পড়াতে এসেছে সে কি নিজেই জানে না?
ইভান কথার কোনো উত্তর না পেয়ে আবার ধমক দিয়ে বলে উঠলো : কোন ক্লাসে পড়ো তুমি?
ইভানের ধমকে কথাসহ ক্লাস শুদ্ধো সবাই চমকে উঠলো। এতক্ষন যে যে মেয়েরা ইভানের উপর ক্রাশ খেয়েছে তারা নিজেরাই মনে মনে নিজেদের গালি দেওয়া শুরু করেছে। এটা স্যার নাকি কোনো জমদুত?
কথাকে চুপ করে থাকতে দেখতে ইভানের মাথায় আরও আগুন ধরে গেল।
ইভান : স্পিক আপ? অনার্সে পড়া একটা মেয়ে হয়ে এই সব বাচ্চাদের মতো কি পোশাক পড়ে ক্লাসে এসেছো? তুমি কি এখনও বাচ্চা?
ইভানের কথা শুনে এতক্ষনে সবাই বুঝতে পারলো ইভান কেন এতক্ষন কথাকে ঝাড়ছিল। কথা এখনও চুপচাপ বসে দাঁড়িয়ে আছে।
ইভান : হে ইউ কোনো ম্যানার্স নেই তোমার? চুপ করে দাঁড়িয়ে আছো কেন? কোনো টিচার কিছু জিজ্ঞেস করলে উত্তর দিতে হয় তা জানো না ? সমস্যা কি তোমার? আচ্ছা বেয়াদব মেয়ে তো তুমি?
ইভান আরও কিছু বলতে যাবে এর মধ্যে ক্লাসের ঘন্টা পড়ে গেল। ইভান ঘন্টার শব্দ শুনে এক মিনিটও দাড়িয়ে না থেকে গটগট করে ক্লাস থেকে বেড়িয়ে গেল । ইভান বেড়িয়ে যেতে কথা যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচলো। একক্ষন ওর নিঃশ্বাসটা যেন ওর গলার কাছে আটকে ছিল।
ইভান বেড়িয়ে যেতেই রাফিয়া : এই কথা স্যার যা জিজ্ঞেস করছিল তার উত্তর না দিয়ে চুপচাপ দাঁড়িয়ে ছিলি কেন?
কথা কটমট করে রাফিয়ার দিকে তাকিয়ে : এই সব হয়েছে তোর জন্য। তুই যদি আমাকে ঐ ফালতু ডেয়ার না দিতি তাহলে আমাকে এত কথা শুনতেই হতো না। আর এই বদমাইশটাও প্রথম দিন আসতে না আসতেই আমাকে ঝেড়ে দিল।
রাফিয়া : এই তুই এত সুন্দর হ্যান্ডসাম একজন স্যারকে বদমাইশ বলছিস?
কথা কটমট করে রাফিয়ার দিকে তাকাতেই ও ভয়ে চুপসে গেল।
----------
কলেজ থেকে ফিরেই কথা কারো সাথে কোনো কথা না বলে রুমে ঢুকে দরজা আটকে দিয়ে ব্যাগটা বিছানায় ছুড়ে মেরে ধপ করে ফ্লোরে বসে পড়লো। ওর মনের মধ্যে আজ ঝড় বয়ে যাচ্ছে। আজ এত দিন পর ওর অতীত ওর সামনে। ওর বুকের মধ্যে পুরোনো ব্যাথা নাড়া দিয়ে উঠছে। ওর চোখের সামনে ভেসে উঠছে সমাজের মানুষ কিভাবে ওর দিকে সেদিন আঙুল তুলেছিল। কিভাবে এই মানুষটার জন্য সমাজের মানুষ ওকে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে তাড়িয়ে দিয়েছলো। বুকের মধ্যে খুব কষ্ট হচ্ছে। পুরোনো কষ্টগুলো আবার ওকে ঘিরে ধরেছে আজ। কিন্তু না ও আর আগের মতো নেই ও এখন অনেক শক্ত। ও এখন নিজেকে নিজে সামলে নিতে জানে। ও আর কাঁদবে না। ওকে শক্ত হতেই হবে। থাকুক এ মানুষটা ওর চোখের সামনে ওকে ভেঙে পড়লে চলবে না। আর বাবা মা কেও কিছু বলা যাবে না। তারা এমনি সারাদিন ওকে নিয়ে চিন্তায় থাকে। তার উপর যদি আবার ইভানের ফিরে আসার খবর শুনতে পায় তাহলে তো হলোই ওর কলেজে যাওয়াই বন্ধ করে দিবে । আর ওর ভাই যদি ইভানের কথা জানতে পারে তাহলে এবার একটা রক্তারক্তি কান্ড ঘটিয়ে ফেলবে। তার থেকে বিষয়টা নিজে হ্যান্ডেল করাই ভালো।
----------
( পরের দিন )
কলেজ ক্যান্টিনে বই মুখে গুজে বসে আছে কথা । আর ওর পাশেই বকবক করেই চলছে রাফিয়া। এই একটা মেয়ে সারাক্ষণ ননস্টপ কথা বলতেই থাকে। এত কথা একটা মানুষ কিভাবে বলতে পারে মাঝে মাঝে ভেবেই পায় না কথা। এর মধ্যে হঠাৎ ক্যান্টিন নিশ্চুপ হয়ে গেল। এতক্ষন তো ক্যান্টিনে ভালোই কোলাহল ছিল হঠাৎ এত নিশ্চুপ হয়ে গেল কেন দেখতে বইটা মুখ থেকে সরাতেই দেখতে পেল ইভান ক্যান্টিনে ঢুকেছে। আর সব মেয়েরা কথা থামিয়ে ইভানের দিকে হা করে তাকিয়ে আছে তাই এত নিশ্চুপ। কথা তাকিয়ে দেখলো এই রাফিয়াটাও হা করে ইভানের দিকে তাকিয়ে আছে। সবাই এমন ভাবে তাকিয়ে আছে যেন মনে হচ্ছে চোখ দিয়েই ইভানকে এখন এক একজন গিলে খেয়ে ফেলবে। ইভানকে দেখেই কথা বই দিয়ে মুখ ঢেকে ফেললো। ইভান তাকিয়ে দেখে সব মেয়েরা ওর দিকে তাকিয়ে আছে শুধু একটা মেয়ে ওর দিকে না তাকিয়ে বই দিয়ে মুখ ঢেকে রেখেছে। ইভান ভ্রু কুঁচকে কথার দিকে তাকিয়ে তারপর কথার দিকে এগিয়ে যেতে লাগলো। কথা বই মুখে দিয়ে রাখলেও বেশ ভালোই বুঝতে পারছে ইভান ওর দিকেই এগিয়ে যাচ্ছে। ইভান যত ওর দিকে এগোচ্ছে ততো কথার বুকের মধ্যে থাকা কলিজাটা তার লাফানোর গতিও বাড়িয়ে দিচ্ছে। ইভান একদম কথার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কথাকে পর্যবেক্ষণ করছে। কেন যেন এই মেয়েটাকে ওর ভীষণ পরিচিত মনে হয় ।
চলবে....
( ভুল ত্রুটি হলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন.ধন্যবাদ)
===========================
পড়তে থাকুন চটি গল্প এ-র পাশা-পাশি ভিন্ন ধরনের গল্প ✒।
Keep reading chatty stories as well as different types of stories✒.
( Post By- Kam Pagol)
•
Posts: 338
Threads: 20
Likes Received: 311 in 181 posts
Likes Given: 323
Joined: Jun 2022
Reputation:
42
এভাবে ইভানকে তাকিয়ে থাকতে দেখে কথার বুকের ভিতরটা ধুকধুক ধুকধুক করছে। ইভান কথাকে কিছু বলতে যাবে এর মধ্যে কোথা থেকে শিলা চলে আসলো ।
( শিলাও এই ভার্সিটিরই প্রফেসর )
শিলা : মিস্টার ইভান এখানে কি করছেন?
শিলার প্রশ্ন শুনে ইভানের বিরক্তিতে চোখ মুখ কুঁচকে এলো।
ইভান : দেখতেই তো পাচ্ছেন হাতে খাবার । আর ক্যান্টিনে মানুষ খেতেই আসে নাচতে নয়। বলে গটগট করে চলে গেল।
ইভানের উত্তর শুনে শিলা ফ্যালফ্যাল করে ইভানের দিকে তাকিয়ে আছে। ও কি এমন বলেছে যাতে ইভান এমন করে কথা বলে গেল। আর ইভান এই শিলার উপর মহা বিরক্ত। যেদিন থেকে এই ভার্সিটিতে জয়েন্ট করেছে সেদিন থেকে এই শিলা নামের ছোটখাটো মহিলা আতঙ্ক ওর পিছনে লেগেই আছে। ইভান যেখানেই যায় সেখানেই কোথা থেকে যে এই শিলা নামক আতঙ্কটা এসে হাজির হয় কে জানে? ইভান কড়া করে কিছু বলতেও পারছে না কারন শিলাও এই ভার্সিটির একজন প্রফেসর তার উপর ইভান মাত্র কিছুদিন হলো এই কলেজে জয়েন্ট করেছে এর মধ্যেই কোনো ঝামেলা করতে চাইছে না।
ইভান চলে যাওয়ার কথা একটা সস্তির নিঃশ্বাস ফেলল। আর একটু হলেই ভয়ে ওর দম আটকে সোজা উপরে চলে যেত।
----------
কথা আজও পিছনের বেঞ্চেই বসেছে, মুখে মাস্ক পড়া। ও কোনো ভাবেই এই ইভান নামক লোকটার সামনে পড়তে চায় না। সামনে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ক্লাস করাচ্ছে ইভান। আর কথার পাশে বসে রাফিয়া বকবক করেই যাচ্ছে। সে কিছুতেই পিছনে বসে চাইছিল না। তার ইচ্ছে ছিল সে একদম সামনে বসে এই হ্যান্ডসাম স্যারের দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে ক্লাস করবে। স্যারকে একটু কাছ থেকে দেখবে। কিন্তু কথা তাকে জোর করে এনে পিছনে বসিয়েছে। আর সেই জন্য সে কথাকে সেই থেকে বকেই যাচ্ছে। কথাও এখন রাফিয়ার বকবকানিতে অতিষ্ঠ।
কথা ( ধমক দিয়ে ) : থামবি তুই ?
কথার ধমকটা একটু জোরেই দেওয়া হয়েছে। ইভান শুদ্ধো ক্লাসের সব স্টুডেন্ট করার দিকে তাকিয়ে আছে। ধমক দিয়ে কথা নিজেও হতভম্ব। ইভানের চোখ মুখ রাগে লাল হয়ে গেছে। দেখেই মনে হচ্ছে ভীষণ রেগে গেছে। মনে হচ্ছে কথাকে এখন চিবিয়ে খাবে।
রাফিয়া কথার কানের কাছে ফিসফিস করে : কথা তু তো গায়া। এমনি স্যার যা রাগী। কাল সামান্য কারনে যে রিয়েক্ট করলো আজ তো তুই শেষ।
কথা একটা ঢোক গিলে ইভানের দিকে তাকিয়ে দেখে ইভান ওর দিকেই এগিয়ে আসছে। ইভানের চোখের দিকে তাকিয়েই আতকে উঠলো কথা। ইভানের চোখের মধ্যে যেন দাবানল ফুটছে।
ইভান ( ধমক দিয়ে ) : স্টান্ড আপ ইউ স্টুপিড গার্ল।
ইভানের ধমক শুনে কথা এক ঢোক গিলে ভয়ে ভয়ে দাঁড়িয়ে গেল।
ইভান : ক্লাসে আসো কি করতে পড়াশোনা করতে নাকি চেহারা দেখাতে? তাও তো চেহারা দেখাও না মাস্ক দিয়ে মুখটা ঢেকে এসেছো। নিজে তো ক্লাস করো না অন্যদেরও ডিস্টার্ব করো? এটা ক্লাস নাকি তোমার নিজের বাড়ি মনে করেছো? এখনই বেড়িয়ে যাও ক্লাস থেকে। গেট আউট ফ্রম মাই ক্লাস।
কথা : সসস্যরি স্যার আর হবে না।
কথার কন্ঠস্বরটা শুনে ইভানের কলিজাটা ধক করে উঠল। এই কন্ঠস্বরটা ওর বড্ড চেনা। এ তো সে চির চেনা কন্ঠস্বর। না না এই কন্ঠস্বর চিনতে ওর কখনও ভুল হবে না। মে কন্ঠস্বর ওর হৃদয়ে গেঁথে আছে সেই কন্ঠস্বর চিনতে ও ভুল করবে? কখনওই না। তবে কি এই সেই ? তার জন্য এত প্রতীক্ষা? যার জন্য নিজের ঠিকানা ছেড়ে এই শহরে এসেছে তাঁকে খুঁজতে।
ইভান : তোমার নাম কি?
ইভানের কথা শুনে কথা চমকে উঠলো। নাম তো বলা যাবে না। কথা চায় না ইভান কোনো ভাবেই ওর পরিচয়টা না জানে। ও কিছুতেই চায় না ওর সেই ভয়ঙ্কর অতীতটা আবার ওর সামনে আসুক। ও আবার নিজেকে ওর অতীতের সেই স্থানে দাড় করাতে চায় না। কথা চুপ করে আছে।
ইভান : চুপ করে আছো কেন? আমার প্রশ্নের উত্তর দেও । তোমার নাম কি?
কথা এবারও চুপ করে আছে।
ইভান ( চিৎকার করে ) : স্পিক আপ স্টুপিড গার্ল। হোয়াট ইজ ইউর নেইম?
ইভানের চিৎকার শুনে ক্লাসের সবাই চমকে উঠলো। কথা কিছু বলতে যাবে এর মধ্যে ক্লাস শেষের ঘন্টা পড়ে গেল। ঘন্টার শব্দ শুনে ইভান চলে গেল। আর কথা একটা স্বস্থির নিঃশ্বাস ফেলে বসে পড়লো।
কথা ( মনে মনে ) : জানি না কতদিন আর এভাবে চলবে। কতদিন আর নিজেকে এভাবে আড়াল করে রাখবো। সে যেহেতু এই ভার্সিটির প্রফেসর এখানেই থাকবে। একদিন না একদিন তো সবকিছু তাঁর সামনে আসবেই। তখন আমি কি করবো? হে আল্লাহ আমি কি কখনও শান্তি পাবো না? যে অতীত থেকে পালাতে এত দূরে এসেছি সেই অতীত আজ সামনে। আর কোথায় পালাবো আমি? আর উনি, আগে তো উনি এতটা ভয়ঙ্কর ছিলেন না এখন এমন কেন? উনাকে দেখলেই তো আমার ভয় লাগে।
----------
কলেজের বাইরে বাইকে হেলান দিয়ে কথার জন্য দাঁড়িয়ে আছে কবির। ওদিক থেকে রাফিয়াকে একা আসতে দেখে রাফিয়ার কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করল : কথা কোথায়?
প্রশ্নটা শুনেই রাফিয়া চোখ তুলে উপরের দিকে তাকালো এতক্ষন ও নিচের দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে হাঁটছিল। মাথা তুলে কবিরকে দেখেই রাফিয়ার মুখে বিস্তর একটা হাসি ফুটে উঠল। কতদিন পর আজ এই মানুষটাকে দেখতে পেল রাফিয়া।
রাফিয়া : ভাইয়া আপনি?
কবির : কথা কোথায় ওকে দেখছি না যে?
রাফিয়া মুখ ফুলিয়ে : এতদিন পর আসলে আগে একটু জিজ্ঞেস করবেন কেমন আছি? কি খবর? তা না এসেই কথার কথা জিজ্ঞেস করছেন।
কবির : তোমাকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে বেশ ভালো আছো। দিন দিন বাপের অন্ন ধ্বংস করে মোটা হচ্ছো , তোমাকে আর কি জিজ্ঞেস করবো?
রাফিয়া রাগে কটমট করে : আপনি আমাকে মোটা বললেন ভাইয়া?
কবির : মোটাকে মোটা বলবো না তো পাতলু বলবো?
রাফিয়া : দেখুন ভাইয়া ভালো হচ্ছে না কিন্তু।
কবির : ভালো না হলে কি করবে তুমি?
রাফিয়া কিছু বলতে যাবে এর মধ্যে কথা এসে গেল।
কথা : এই তোরা আবার শুরু হয়ে গেলি?
রাফিয়া : এই কথা দেখ তোর এই উল্লুক ভাইটা আমাকে মোটা বলেছে।
কবির : এই মোটি তুমি উল্লুক কাকে বললে?
রাফিয়া : কাকে আবার আপনাকে, আপনি আমাকে মোটি বললেন কেন?
কবির : কি আমি উল্লুক?
কথা : এই তোরা থামবি? কি ঝগরুটে মহিলাদের মতো পায়ে পা লাগিয়ে ঝগড়া করে যাচ্ছিস। চল এখন বাসায় ফিরতে হবে দেরী হয়ে যাচ্ছে।
কবির : হুম চল। এখানে দাঁড়িয়ে এই মোটির সাথে ঝগড়া করে আমার কোনো লাভ নেই।
রাফিয়া কিছু বলতে যাবে এর মধ্যে কথাকে নিয়ে বাইকে স্টার্ট দিয়ে শো করে চলে গেল কবির।
রাফিয়া : এই অপমানের প্রতিশোধ তো আমি নিয়ে ছাড়বো। আমাকে ভোটিং বলা? উল্লুক একটা, বন মানুষ, ছাগলের তিন নাম্বার বাচ্চা , না না আমার শাশুড়ি মোটেও ছাগল নয় উনি অনেক ভালো। কিন্তু ওমন ভালো মানুষের যে কেমনে এমন উল্লুকের মতো একটা ছেলে হলো কে জানে?
----------
ইভান নিজের পকেট থেকে মানি ব্যাগটা বের করে মানি ব্যাগের ভিতরে একটা ছবির দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। দুই পাশে বিনুনি করা কলেজ পড়ুয়া একটি মেয়ের হাস্যজ্জল ছবি।
ইভান : তোমাকে আমার কাছে ফিরতেই হবে , ফিরতেই হবে। কারন তুমিই আমার শেষ ঠিকানা। কোন সাহসে তুমি আমাকে ছেড়ে গিয়েছো? তুমি জানো না তোমাকে না দেখে আমি থাকতে পারি না......
চলবে....
(ভুল ত্রুটি হলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন,ধন্যবাাদ)
===========================
পড়তে থাকুন চটি গল্প এ-র পাশা-পাশি ভিন্ন ধরনের গল্প ✒।
Keep reading chatty stories as well as different types of stories✒.
( Post By- Kam Pagol)
•
Posts: 338
Threads: 20
Likes Received: 311 in 181 posts
Likes Given: 323
Joined: Jun 2022
Reputation:
42
ইভান : তোমাকে আমার কাছে ফিরতেই হবে , ফিরতেই হবে। কারন তুমিই আমার শেষ ঠিকানা। কোন সাহসে তুমি আমাকে ছেড়ে গিয়েছো? তুমি জানো না তোমাকে না দেখে আমি থাকতে পারি না। ডিভোর্স পেপারে সইটা করার সময় তোমার হাতটা কি একটুও কাঁপেনি? হয়তো কাঁপেনি, কাটলে কখনও তুমি ডিভোর্স পেপারে সইটা করতে পারতে না। এই সাতটা বছর কতটা যন্ত্রনায় কেটেছে সেই খবর তুমি রেখেছো রাখোনি? আমার প্রতিটা কষ্টের হিসেব তোমাকে দিতে হবে। আমাকে ডিভোর্স দেওয়ার শাস্তি তোমাকে পেতে হবে। বি রেডি ফর মাই পানিশমেন্ট কথু, বি রেডি।
--------------
বারান্দায় দাঁড়িয়ে আনমনে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে কথা। রুমে এসে মেয়েকে এমন শূন্য চোখে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে মেয়ের মাথায় হাত রাখলেন রিজিয়া বেগম।
রিজিয়া বেগম : মন খারাপ মা?
কথা আকাশের দিকে তাকিয়েই : আমার জীবনটা এমন কেন মা? নিজের করা একটা ভুলের জন্য আর কত শাস্তি পড়ো মা?
রিজিয়া বেগম : এখনও সেই পুরনো কথা ধরে বসে আছিস মা? কতবার বলেছি সব ভুলে যা, ভুলে গিয়ে নতুন করে জীবনটা শুরু কর।
কথা : চাইলেই কি সব ভুলে যাওয়া যায় মা। মানুষ হয়তো নিজের সুখের কথা ভুলে যায় কিন্তু নিজের সবচেয়ে ভয়ংকর সময়গুলো ভুলতে পারে না। আমার করা একটা ভুলের কারনে আজ আমি অপবাদী, ডিভোর্সী। আমার করা একটা ভুলের কারনে তোমাকে আর বাবাকে কতটা অপমানিত হতে হয়েছিল। শেষে শহর ছাড়তে হয়েছিল। আমি কিছুতেই ভুলতে পারছি না মা সেই দিনগুলোর কথা, কিছুতেই না। কেন এমন হলো? মাঝে মাঝে নিজেকে খুব অপরাধী মনে হয় মা, মনে হয় আমি মরে গেলেই হয়তো ভালো হতো।
মা মেয়ের কথার মধ্যেই রুমে ঢুকলো কবির।
কবির : মা তোমার মেয়ে বেশি বড় হয়ে গেছে। খুব বুঝতে শিখেছি, এতই যদি নিজেকে অপরাধী মনে হয়, মরতে ইচ্ছে করে তাহলে এখনও বেঁচে আছে কেন? নাকি কিভাবে মরবে তাও আমাকেই বলে দিতে হবে?
রিজিয়া বেগম : কি হচ্ছেটা কি কবির ? নিজের বোনকে কেউ এমন কথা বলে?
কবির : বলবো না তো কি করবো? আমি কতবার ওকে বলেছি ওর মুখে যেন আর কখনও মরার কথা না আনে। ও কি জানে না ওর এই ভাইটা ওকে কতটা ভালোবাসে। ওর মুখে মারার কথা শুনলে ওর ভাইয়ের দুনিয়াটা অন্ধকার হয়ে যায়।
কথা নিশ্চুপ কোনো কথাই বলছে না। কারন ও জানে ওর ভাই ওকে খুব ভালোবাসে। ওর মুখে মরার কথা শুনলেই এভাবে ক্ষেপে যায় ।
-------------
ভার্সিটির বারান্দা থেকে আনমনে হেঁটে যাচ্ছে কথা। মুখে প্রতিদিনের মতোই মাস্ক পড়া।
রাফিয়া : তুই এখন রোজই মাস্ক পড়ে কলেজে আসিস কেন বল তো?
কথা থতমত খেয়ে : আরে করোনার জন্য।
রাফিয়া : কিন্তু করোনা তো এখন আর আগের মতো নেই। কেউ মানেও না তেমন।
কথা : আরে আমি তো সচেতন নাগরিক তাই তো এখনও মাস্ক ব্যবহার করি কখন আবার করোনা এসে পড়েন বলা যায় না। উনার তো আবার আসার কোনো সময় অসময় নেই।
রাফিয়া : ওরে আমার সচেতন নাগরিক। এখন একটা কথা শোন।
কথা : কি?
রাফিয়া : ৩ দিন পর আমাদের কলেজে নবীনবরণ অনুষ্ঠান।
কথা : হুম তো কি হয়েছে?
রাফিয়া আমতা আমতা করে : আমিনা নাচে নাম দিয়েছি।
কথা : বেশ ভালো তো। তাতে এত আমতা আমতা করার কি আছে?
রাফিয়া : আমিনা আরও একটা কাজ করেছি।
কথা : কি কাজ?
রাফিয়া : বলবো আগে বল রাগ করবি না?
কথা ভ্রু কুঁচকে : কি এমন কথা যাতে আমি রাগ করবো না?
রাফিয়া দুই চোখ বন্ধ করে বড় একটা নিঃশ্বাস নিয়ে : আমি না গানে তোর নাম দিয়ে দিয়েছি।
কথা বিষ্ফোরিত চোখে রাফিয়ার দিকে তাকিয়ে : কিইইই? তুই গানে আমার নাম দিয়েছিস? মাথা গেছে তোর?
রাফিয়া : মাথা যাবে কেন? তুই তো কি সুন্দর গান করিস। সব সময় নিজের প্রতিভাকে চার দেয়ালের মধ্যে আবদ্ধ রাখলে হয় , বাইরেও একটু প্রকাশ করতে হয়।
কথা : দেখ বাড়িতে বসে গুনগুন করে দুই চার লাইন গান গাওয়া আর ভার্সিটির কোনো একটা অনুষ্ঠানে গান গাওয়া এক কথা নয়। আমি কিছুতেই গান করবো না।
রাফিয়া : তা বললে তো হবে না। গান তোকে করতেই হবে ব্যাস শেষ কথা।
কথা কিছুতেই গান গাইতে রাজি হচ্ছিল না। ও আগে কখনও এই সব অনুষ্ঠানে গান গায়নি। ও কখনও গান শেখেও নি। মাঝে মাঝে যখন মন খুব খারাপ থাকে, নিজের অতীতের স্মৃতিগুলো ভয়ংকরভাবে মনের মধ্যে উঁকি দেয় তখন নিজের মনকে শান্ত করার জন্য একটু গান করে। তেমনই একদিন গান করছিল তখন রাবিয়া শুনে ফেলে তখন থেকে এই মেয়েটা গান গান করে কথাকে জ্বালিয়ে মারছে। কথা তো কিছুতেই গান গাইবে না আর রাফিয়াও নাছোড়বান্দা। শেষ পর্যন্ত বন্ধুত্বের দোহাই দিয়ে কথাকে গান গাইতে রাজি করালো রাফিয়া। কথা গান গাইতে রাজি হতেই একটা বিশ্ব জয়ের হাসি দিল রাফিয়া।
-----------
ক্লাসে বসে আছে কথা। আজ আর প্রতিদিনের মতো পিছনে বসেনি বসেছে মাঝ খানের সাড়িতে চারপাশের স্টুডেন্টের ভীরে ইভানের চোখে না পড়তে হয় কথাকে। কিন্তু এত বুদ্ধি করেও কি শেষ পর্যন্ত লাভ হলো? ফলাফল সেই শূন্যই। তার জন্য এতকিছু সে ক্লাসে এসেই ধরে ফেলেছে।
ইভান : হে ইউ স্টান্ড আপ।
কথা কাচুমাচু করে দাঁড়ালো ।
ইভান : কালকে ক্লাসে কোন টপিকটা নিয়ে আলোচনা করেছিলাম তার বিস্তারিত বলো।
কথা কতক্ষন চুপ করে থেকে বলা শুরু করলো। কথা বারাবরই ভালো স্টুডেন্ট। যত যাই হোক না কেন পড়াশোনার সময় ওর মন সেদিকেই থাকে। যদিও কাল ক্লাসে ইভান ঠিক কি কি পড়িয়েছিল ও তার কিছুই শোনেনি। কিন্তু কোন টপিকটা পড়িয়েছিল সেটা ওর মনে আছে। আর ঐ টপিকটা ওর আগে থেকেই পড়া তাই উত্তর দিতে ওর কোনো অসুবিধা হলো না। এদিকে ওর সঠিক উত্তর পেয়ে ওকে কোনো কথা শোনাতে না পেরে ইভান যেন একটু মনক্ষুণ্ণ হলো। কথার পড়া বলা শেষ হলে শুধু গম্ভীর কন্ঠে কথাকে বলেল : সিট ডাইন।
ক্লাস শেষে ইভান চলে যেতেই মিশমি ( কথার ক্লাসমেট ) এসে কথাকে জিজ্ঞেস করলো : এই কথা স্যারের সাথে তোমার কোনো শত্রুতা তত্রুতা আছে নাকি ? স্যার এসেই সে প্রথম দিন থেকেই মে তোমাকে ধোঁয়া ধুইই শুরু করেছে।
কথাটা শুনেই পাশের সবাই হো হো করে হেসে উঠলো। কথা বেশ ভালোই বুঝতে পেরেছে মিশমি ওকে একটু তিরস্কার করার জন্যই এমন করে কথাগুলো বলছে। কারন কথা ক্লাস টপার আর মিশমি দ্বিতীয় স্থানে তাই এই বিষয় সে কথাকে সব সময়ই একটু হিংসে করে।
চলবে....
( ভুল ত্রুটি হলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।
ধন্যবাদ)
===========================
পড়তে থাকুন চটি গল্প এ-র পাশা-পাশি ভিন্ন ধরনের গল্প ✒।
Keep reading chatty stories as well as different types of stories✒.
( Post By- Kam Pagol)
•
Posts: 338
Threads: 20
Likes Received: 311 in 181 posts
Likes Given: 323
Joined: Jun 2022
Reputation:
42
02-05-2023, 03:22 PM
পর্ব_৫
( অনুমতি ব্যতীত কপি করা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ )
নবীনদের বরন করতে উৎসবের মেতে উঠেছে ভার্সিটির প্রাঙ্গন। বেশিরভাগ মেয়েরাই আজ শাড়ি পড়ে এসেছে আর ছেলেরা পাঞ্জাবি। চারদিকে উৎসবমুখর পরিবেশ। ভার্সিটির মাঠের মধ্যে স্টেজ সাজানো হয়েছে।
কথাও আজ শাড়ি পড়েছে। ওর শাড়ি পড়ার একদম ইচ্ছে ছিল না। শাড়ি পড়তে ভালো লাগে না এমন নয় আসলে ও শাড়ি সামলাতে পাড়ে না। শাড়ি পড়লে শাড়ি সামলাতে সামলাতেই অতিষ্ঠ হয়ে ওঠে। তাই ভেবেছিলো ও শাড়ি পড়বে না কিন্তু এই রাফিয়া তো নাছোড়বান্দা সে সকাল সকাল শাড়ি নিয়ে কথার বাড়িতে হাজির তারপর একসাথে কথাকে শাড়ি পড়িয়ে নিয়ে ভার্সিটিতে এসে হাজির। ওদের সাথে কবিরও এসেছে। কবির এমনিও বোনের বিষয় একটু বেশি প্রটেকটিভ। তার উপর আজ কথা গান গাওয়া বিষয়টা নিয়ে একটু বেশি নার্ভাস ছিল। আগে কখনও ও কোনো অনুষ্ঠানে গান করেনি , এই প্রথম।
স্টেজের এক পাশে একটা চেয়ারে বসেছিল ইভান। এইসব অনুষ্ঠান , ভীরপূর্ন স্থান ওর মোটেও ভালো লাগে না। একটা সময় ছিল যখন ইভান একা থাকতে পারতো না , সব সময় বন্ধু বান্ধবদের নিয়ে মেতে থাকতো। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে সব কিছুরই পরিবর্তন হয় তেমনি ইভানেরও হয়েছে , তবে একটু বেশিই পরিবর্তন হয়েছে। ওর কোনো ইচ্ছে ছিল না এই অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়া কিন্তু ও ভার্সিটির একজন টিচার। ও যদি এই অনুষ্ঠানে না থাকে তাহলে বিষয়টা একটু খারাপ দেখায়। তাই বাধ্য হয়েই এই অনুষ্ঠানে এসেছে।
কথারা পিছনের সাড়িতে বসে ছিল। একে একে অনুষ্ঠানের এক এক পর্ব শেষ হচ্ছে। একটু পরই কথাকে স্টেজে গান গাওয়ার জন্য ডাকবে। কথার খুব নার্ভাস লাগছে। কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছে। গলা শুকিয়ে যাচ্ছে। ইতমধ্যে ৫ বোতল পানি শেষ করেছে কথা । পানি খেতে খেতে পেট ফুলে গেছে কথার কিন্তু তবুও গলা শুকিয়েই যাচ্ছে। এতক্ষন ধরে কথার হাব ভাব পর্যবেক্ষণ করছিল রাফিয়া। শেষ পর্যন্ত করার কর্মকাণ্ডে বিরক্ত হয়ে বলেই ফেললো : সামান্য একটা গান গাইতে যাচ্ছিস কথা। কিন্তু তোকে দেখে মনে হচ্ছে যেন কোনো যুদ্ধ জয় করতে যাচ্ছিস।
কথা : এটা যুদ্ধের থেকে কম কিছু নয়। আর এই সব কিছু তোর জন্য। আর একটা কথা বলবি কি কানের নিচে একটা মেরে কানের বারান্দা ছুটিয়ে দেব।
কথার ধমক শুনে চুপসে গেল রাফিয়া। এই মেয়ে যা সাংঘাতিক এখন একটা চড় থাপ্পড় মেরেও দিতে পারে। এই ভরা সমাজে চড় থাপ্পর খেলে রাফিয়ার মান সম্মান প্লাস্টিক হয়ে যাবে।
কবির : এত ভয় পাস না কথা। নিজের উপর ভরসা রাখ তুই পারবি। এই সামান্য একটা বিষয় এত ভয় পেলে চলবে বল। নিজের উপর তোর কি কোনো ভরসা নেই? মনে মনে ভাববি তুই বাসায় বসেই গান করছিস যেমন তোর মন খারাপ হলেই করিস। সামনে কে বা কারা আছে দেখার প্রয়োজন নেই। চোখ বন্ধ করে নিজের মনের মতো সুর তুলবি।
কথা : হুম ভাইয়া।
ইভানের বড্ড অস্থির লাগছে। কতক্ষন ধরে এই অনুষ্ঠানে বক্তৃতা শুনেই যাচ্ছে। প্রত্যেকে স্টেজে উঠেই বলে সংক্ষিপ্ত বক্তাব্য দিবে কিন্তু তারপর তো এক একজন রচনা বলা শুরু করে দেয় । ইভান এবার অতিষ্ঠ। এতক্ষন বক্তৃতার মধ্যে উঠে চলে যেতেও পারেনি কারন এতক্ষন সব গন্য মান্য ব্যক্তিরা বক্তাব্য দিচ্ছিলো এদের বক্তৃতার মধ্যে উঠে যাওয়া মানে এদের অপমান করা। অবশেষে বক্তৃতার পর্ব শেষ হলো। ইভান বড়সড় একটা স্বস্থির নিঃশ্বাস ফেলল। একটু পর গানের পর্ব শুরু হবে। ইভানের কোনো ইচ্ছে নেই এখানে বসে বসে গান শোনার। তাই ইভান চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়িয়ে চলে যাওয়ার উদ্দেশ্যে পা বাড়ালো। এর মধ্যে স্টেজে এনাউন্সমেন্ট হলো
" এবার গান গাইবে তাজকিয়াতুন কথা । "
নামটা শুনে ইভান থমকে দাঁড়ালো। ওর পা যেন ওখানেই আটকে গেছে। ওর কানে শুধু একটা কথাই বাজছে " তাজকিয়াতুন কথা " তবে কি এই সে? তবে কি ইভানের সাত বছরের দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান হলো? ইভান তড়িৎ গতিতে পিছন ফিরে স্টেজের দিকে তাকালো। স্টেজে সে মাস্ক পড়া মেয়েটি। গানের প্রস্তুতি নিচ্ছে।
কথা একটা বড় নিঃশ্বাস নিয়ে গান গাওয়া শুরু করলো।
আমার পরান যাহা চায়
তুমি তাই, তুমি তাই গো
আমার পরান যাহা চায়
তোমা ছাড়া আর এ জগতে
মোর কেহ নাই, কিছু নাই গো
আমার পরান যাহা চায়
তুমি তাই, তুমি তাই গো
আমার পরান যাহা চায়
তুমি সুখ যদি নাহি পাও
যাও সুখের সন্ধানে যাও
তুমি সুখ যদি নাহি পাও
যাও সুখের সন্ধানে যাও
আমি তোমারে পেয়েছি হৃদয়মাঝে
আর কিছু নাহি চাই গো
আমার পরান যাহা চায়
আমি তোমার বিরহে রহিব বিলীন
তোমাতে করিব বাস
দীর্ঘ দিবস, দীর্ঘ রজনী, দীর্ঘ বরষ-মাস
আমি তোমার বিরহে রহিব বিলীন
তোমাতে করিব বাস
দীর্ঘ দিবস, দীর্ঘ রজনী, দীর্ঘ বরষ-মাস
যদি আর-কারে ভালোবাস
যদি আর ফিরে নাহি আস
যদি আর-কারে ভালোবাস
যদি আর ফিরে নাহি আস
তবে তুমি যাহা চাও, তাই যেন পাও
আমি যত দুখ পাই গো
আমার পরান যাহা চায়
তুমি তাই, তুমি তাই গো
আমার পরান যাহা চায়
গানটা শেষ করে কথা একটা স্বস্থির নিঃশ্বাস ফেলল। আর এই দিকে এক দৃষ্টিতে একজন তার প্রেয়শীকে দেখতে ব্যস্ত। কত বছর পর সে তার প্রেয়শীকে সামনে থেকে দেখছে। যদিও সে মুখে মাস্ক পড়া কিন্তু তার প্রেয়শী যে তার সামনে সেটাই বা কম কিসে। ইভানের আর বুঝতে বাকি নেই এই কথাই তার কথু। এর জন্যই এই কয়দিন এই মেয়েটা ওর সাথে অস্বাভাবিক আচরন করেছে। ওর থেকে লুকিয়ে বেড়িয়েছে। এই কয়দিন যে কথা ইভানের থেকে লুকিয়ে বেড়াচ্ছিলো এটা ইভানের চোখ এড়ায়নি। আর মূলত এই কারনেই কথার উপর রেগে ছিল ইভান। তবে কি শুধু এই কারনেই কথার উপর ইভান রাগ দেখিয়েছে? নাকি এর মধ্যে অন্য কারন আছে? তা জানা নেই ইভানেরও । তবে একটা ব্যাপার ইভান ভালো ভাবেই বুঝতে পেরেছিল এই অপরিচিত মেয়েটা সামনে আসলেই এক অজানা অনূভুতিতে ছেয়ে যেত ইভানের সম্পূর্ন হৃদয়। তবে আজ ইভান ভালোভাবেই বুঝতে পারছে এই রমনী তার অপরিচিত নয় তার পরিচিত, বড্ড পরিচিত। এই পৃথিবীতে সব থেকে বেশি পরিচিত।
চলবে .........
(ভুল ত্রুটি হলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।
ধন্যবাদ)
===========================
পড়তে থাকুন চটি গল্প এ-র পাশা-পাশি ভিন্ন ধরনের গল্প ✒।
Keep reading chatty stories as well as different types of stories✒.
( Post By- Kam Pagol)
•
Posts: 338
Threads: 20
Likes Received: 311 in 181 posts
Likes Given: 323
Joined: Jun 2022
Reputation:
42
02-05-2023, 03:23 PM
পর্ব_৫
নবীনদের বরন করতে উৎসবের মেতে উঠেছে ভার্সিটির প্রাঙ্গন। বেশিরভাগ মেয়েরাই আজ শাড়ি পড়ে এসেছে আর ছেলেরা পাঞ্জাবি। চারদিকে উৎসবমুখর পরিবেশ। ভার্সিটির মাঠের মধ্যে স্টেজ সাজানো হয়েছে।
কথাও আজ শাড়ি পড়েছে। ওর শাড়ি পড়ার একদম ইচ্ছে ছিল না। শাড়ি পড়তে ভালো লাগে না এমন নয় আসলে ও শাড়ি সামলাতে পাড়ে না। শাড়ি পড়লে শাড়ি সামলাতে সামলাতেই অতিষ্ঠ হয়ে ওঠে। তাই ভেবেছিলো ও শাড়ি পড়বে না কিন্তু এই রাফিয়া তো নাছোড়বান্দা সে সকাল সকাল শাড়ি নিয়ে কথার বাড়িতে হাজির তারপর একসাথে কথাকে শাড়ি পড়িয়ে নিয়ে ভার্সিটিতে এসে হাজির। ওদের সাথে কবিরও এসেছে। কবির এমনিও বোনের বিষয় একটু বেশি প্রটেকটিভ। তার উপর আজ কথা গান গাওয়া বিষয়টা নিয়ে একটু বেশি নার্ভাস ছিল। আগে কখনও ও কোনো অনুষ্ঠানে গান করেনি , এই প্রথম।
স্টেজের এক পাশে একটা চেয়ারে বসেছিল ইভান। এইসব অনুষ্ঠান , ভীরপূর্ন স্থান ওর মোটেও ভালো লাগে না। একটা সময় ছিল যখন ইভান একা থাকতে পারতো না , সব সময় বন্ধু বান্ধবদের নিয়ে মেতে থাকতো। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে সব কিছুরই পরিবর্তন হয় তেমনি ইভানেরও হয়েছে , তবে একটু বেশিই পরিবর্তন হয়েছে। ওর কোনো ইচ্ছে ছিল না এই অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়া কিন্তু ও ভার্সিটির একজন টিচার। ও যদি এই অনুষ্ঠানে না থাকে তাহলে বিষয়টা একটু খারাপ দেখায়। তাই বাধ্য হয়েই এই অনুষ্ঠানে এসেছে।
কথারা পিছনের সাড়িতে বসে ছিল। একে একে অনুষ্ঠানের এক এক পর্ব শেষ হচ্ছে। একটু পরই কথাকে স্টেজে গান গাওয়ার জন্য ডাকবে। কথার খুব নার্ভাস লাগছে। কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছে। গলা শুকিয়ে যাচ্ছে। ইতমধ্যে ৫ বোতল পানি শেষ করেছে কথা । পানি খেতে খেতে পেট ফুলে গেছে কথার কিন্তু তবুও গলা শুকিয়েই যাচ্ছে। এতক্ষন ধরে কথার হাব ভাব পর্যবেক্ষণ করছিল রাফিয়া। শেষ পর্যন্ত করার কর্মকাণ্ডে বিরক্ত হয়ে বলেই ফেললো : সামান্য একটা গান গাইতে যাচ্ছিস কথা। কিন্তু তোকে দেখে মনে হচ্ছে যেন কোনো যুদ্ধ জয় করতে যাচ্ছিস।
কথা : এটা যুদ্ধের থেকে কম কিছু নয়। আর এই সব কিছু তোর জন্য। আর একটা কথা বলবি কি কানের নিচে একটা মেরে কানের বারান্দা ছুটিয়ে দেব।
কথার ধমক শুনে চুপসে গেল রাফিয়া। এই মেয়ে যা সাংঘাতিক এখন একটা চড় থাপ্পড় মেরেও দিতে পারে। এই ভরা সমাজে চড় থাপ্পর খেলে রাফিয়ার মান সম্মান প্লাস্টিক হয়ে যাবে।
কবির : এত ভয় পাস না কথা। নিজের উপর ভরসা রাখ তুই পারবি। এই সামান্য একটা বিষয় এত ভয় পেলে চলবে বল। নিজের উপর তোর কি কোনো ভরসা নেই? মনে মনে ভাববি তুই বাসায় বসেই গান করছিস যেমন তোর মন খারাপ হলেই করিস। সামনে কে বা কারা আছে দেখার প্রয়োজন নেই। চোখ বন্ধ করে নিজের মনের মতো সুর তুলবি।
কথা : হুম ভাইয়া।
ইভানের বড্ড অস্থির লাগছে। কতক্ষন ধরে এই অনুষ্ঠানে বক্তৃতা শুনেই যাচ্ছে। প্রত্যেকে স্টেজে উঠেই বলে সংক্ষিপ্ত বক্তাব্য দিবে কিন্তু তারপর তো এক একজন রচনা বলা শুরু করে দেয় । ইভান এবার অতিষ্ঠ। এতক্ষন বক্তৃতার মধ্যে উঠে চলে যেতেও পারেনি কারন এতক্ষন সব গন্য মান্য ব্যক্তিরা বক্তাব্য দিচ্ছিলো এদের বক্তৃতার মধ্যে উঠে যাওয়া মানে এদের অপমান করা। অবশেষে বক্তৃতার পর্ব শেষ হলো। ইভান বড়সড় একটা স্বস্থির নিঃশ্বাস ফেলল। একটু পর গানের পর্ব শুরু হবে। ইভানের কোনো ইচ্ছে নেই এখানে বসে বসে গান শোনার। তাই ইভান চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়িয়ে চলে যাওয়ার উদ্দেশ্যে পা বাড়ালো। এর মধ্যে স্টেজে এনাউন্সমেন্ট হলো
" এবার গান গাইবে তাজকিয়াতুন কথা । "
নামটা শুনে ইভান থমকে দাঁড়ালো। ওর পা যেন ওখানেই আটকে গেছে। ওর কানে শুধু একটা কথাই বাজছে " তাজকিয়াতুন কথা " তবে কি এই সে? তবে কি ইভানের সাত বছরের দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান হলো? ইভান তড়িৎ গতিতে পিছন ফিরে স্টেজের দিকে তাকালো। স্টেজে সে মাস্ক পড়া মেয়েটি। গানের প্রস্তুতি নিচ্ছে।
কথা একটা বড় নিঃশ্বাস নিয়ে গান গাওয়া শুরু করলো।
আমার পরান যাহা চায়
তুমি তাই, তুমি তাই গো
আমার পরান যাহা চায়
তোমা ছাড়া আর এ জগতে
মোর কেহ নাই, কিছু নাই গো
আমার পরান যাহা চায়
তুমি তাই, তুমি তাই গো
আমার পরান যাহা চায়
তুমি সুখ যদি নাহি পাও
যাও সুখের সন্ধানে যাও
তুমি সুখ যদি নাহি পাও
যাও সুখের সন্ধানে যাও
আমি তোমারে পেয়েছি হৃদয়মাঝে
আর কিছু নাহি চাই গো
আমার পরান যাহা চায়
আমি তোমার বিরহে রহিব বিলীন
তোমাতে করিব বাস
দীর্ঘ দিবস, দীর্ঘ রজনী, দীর্ঘ বরষ-মাস
আমি তোমার বিরহে রহিব বিলীন
তোমাতে করিব বাস
দীর্ঘ দিবস, দীর্ঘ রজনী, দীর্ঘ বরষ-মাস
যদি আর-কারে ভালোবাস
যদি আর ফিরে নাহি আস
যদি আর-কারে ভালোবাস
যদি আর ফিরে নাহি আস
তবে তুমি যাহা চাও, তাই যেন পাও
আমি যত দুখ পাই গো
আমার পরান যাহা চায়
তুমি তাই, তুমি তাই গো
আমার পরান যাহা চায়
গানটা শেষ করে কথা একটা স্বস্থির নিঃশ্বাস ফেলল। আর এই দিকে এক দৃষ্টিতে একজন তার প্রেয়শীকে দেখতে ব্যস্ত। কত বছর পর সে তার প্রেয়শীকে সামনে থেকে দেখছে। যদিও সে মুখে মাস্ক পড়া কিন্তু তার প্রেয়শী যে তার সামনে সেটাই বা কম কিসে। ইভানের আর বুঝতে বাকি নেই এই কথাই তার কথু। এর জন্যই এই কয়দিন এই মেয়েটা ওর সাথে অস্বাভাবিক আচরন করেছে। ওর থেকে লুকিয়ে বেড়িয়েছে। এই কয়দিন যে কথা ইভানের থেকে লুকিয়ে বেড়াচ্ছিলো এটা ইভানের চোখ এড়ায়নি। আর মূলত এই কারনেই কথার উপর রেগে ছিল ইভান। তবে কি শুধু এই কারনেই কথার উপর ইভান রাগ দেখিয়েছে? নাকি এর মধ্যে অন্য কারন আছে? তা জানা নেই ইভানেরও । তবে একটা ব্যাপার ইভান ভালো ভাবেই বুঝতে পেরেছিল এই অপরিচিত মেয়েটা সামনে আসলেই এক অজানা অনূভুতিতে ছেয়ে যেত ইভানের সম্পূর্ন হৃদয়। তবে আজ ইভান ভালোভাবেই বুঝতে পারছে এই রমনী তার অপরিচিত নয় তার পরিচিত, বড্ড পরিচিত। এই পৃথিবীতে সব থেকে বেশি পরিচিত।
চলবে....
(ভুল ত্রুটি হলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।
ধন্যবাদ)
===========================
পড়তে থাকুন চটি গল্প এ-র পাশা-পাশি ভিন্ন ধরনের গল্প ✒।
Keep reading chatty stories as well as different types of stories✒.
( Post By- Kam Pagol)
•
|