Posts: 491
Threads: 0
Likes Received: 351 in 292 posts
Likes Given: 376
Joined: Aug 2022
Reputation:
8
01-05-2023, 03:06 AM
(This post was last modified: 01-05-2023, 03:11 AM by Patrick bateman_69. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.
Edit Reason: Typing mistake
)
Nago dada ar etttu khani boro update dilei to parte go, next update kobe pabo?
Ar dada golpo kintu 1vs infinity hoye jaitesi Aste aste
Btw like repu added
My pain is constant and sharp, and I do not hope for a better world for anyone.
Posts: 1
Threads: 0
Likes Received: 1 in 1 posts
Likes Given: 2
Joined: Sep 2022
Reputation:
0
(30-04-2023, 11:28 PM)Monen2000 Wrote:
দ্বিতীয় পার্ট
৫ম পর্ব
"আর যদি মনোজ মেয়েটাকে মেরে দেয় আর ওর কিছু না হয় তাহলে?"
"সেটা হবে না, মনোজের উপর নজর রাখার জন্য আমার লোক আছে, মনোজের বিরুদ্ধে প্রমাণ আমার হাতে তুলে দেয়"
"কিন্তু তাতে কি হবে? ধরে নিলাম তুমি ওকে ফাঁসিয়ে দিলে তারপর?"
"তুই এখনো বুঝিসনি, মনোজ জেলে গেলে বা কোনোভাবে মারা গেলে মনোজিত বাবুর মেরুদণ্ড ভেঙে যাবে সেক্ষেত্রে ওর পুরো বিজনেসটা আমাদের হাতের মুঠোয় চলে আসবে"।
"ড্যাড তুমি হয়তো অরুণাভ আর মৌমিতার কথা ভুলে যাচ্ছো"
"মোটেই না, মৌমিতাকে নিয়ে আমার ভাবনা নেই ও খুন করতে পারে কিন্তু সেটা রাগে, প্ল্যান করে কিছু করার বুদ্ধি ওর নেই মনে নেই অনিকে মারার প্ল্যানটাও মনোজিত বাবুর বানানো। আমার মেইন চিন্তা অরুণাভকে নিয়ে, এমনিতেও সেদিন ওর সামনে ওর বাবাকে মারার কথা বলায় ও কিছুটা আমাদের এগেনস্টে চলে গেছে, এখন বারবার ওকে ওই ভিডিওর কথা বলে আটকে রাখা যাবে না, ওরও একটা ব্যবস্থা তাড়াতাড়ি করতে হবে"
"আর অভিরূপ মামা?"
"ধাপে ধাপে এগোতে হয় সুশান্ত, তাড়াহুড়ো করলে পুরো প্ল্যানটা ব্যাকফায়ার করতে পারে, এতবছর অপেক্ষা করেছি এবার আমার পালা একদিকে মনোজিত বাবুর সব বিজনেস নিজের হাতে আনবো আর অপরদিকে 'ব্যানার্জী ক্রিয়েশনস্' এর পুরো মালিকানা হস্তগত করবো"
প্রীতমবাবুর দুচোখ লোভে চকচক করতে থাকে সাথে সুশান্তরও চোখ বাবার দেখানো সোনালী ভবিষ্যতের স্বপ্নে বিভোর।
পিয়ালী: আমাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছো?
আদিত্য: সারপ্রাইজের কাছে।
পিয়ালী: কিন্তু চোখ বন্ধ করে রেখেছো কেন? চোখ খোলো।
আদিত্য: উঁহু এখন নয়।
পিয়ালী: কিন্তু না দেখে আমি হাঁটবো কিভাবে?
আদিত্য: হাঁটতে হবে না আমি কোলে তুলে নিচ্ছি।
আদিত্য পিয়ালীকে কোলে তুলে নেয়, সঙ্গে সঙ্গে পিয়ালী ভয়ার্ত গলায় বলে ওঠে "আরে পরে যাবো তো"।
আদিত্য: কেন আমার উপর বিশ্বাস নেই?
পিয়ালী: নিজের থেকেও বেশি বিশ্বাস করি তোমাকে।
কিছুক্ষণ চলার পর পিয়ালীকে কোল থেকে নামায় আদিত্য বলে: আমি তোমার চোখের পট্টিটা খুলছি কিন্তু চোখ খুলবে না যতক্ষণ না আমি বলবো। এবার আস্তে আস্তে আদিত্য পিয়ালীর চোখের পট্টিটা খুলে দেয়।
পিয়ালী: এবার খুলবো?
আদিত্য: খোলো।
পিয়ালী আস্তে আস্তে চোখ খুললো আর তারসঙ্গেই তার মুখ আনন্দে উজ্জ্বল হয়ে ওঠে তার চোখের সামনে একটা ছোট্ট একতলা বাড়ি কিন্তু বাড়িটার চারপাশে নানা রঙের ও নানা প্রজাতির ফুলগাছ দিয়ে সাজানো সে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে সেদিকে।
আদিত্য: এটা আমাদের বাড়ি।
পিয়ালী: সত্যি বলছো?
আদিত্য: সত্যি বলছি।
পিয়ালী: তাহলে চলো বাড়ির ভিতরে যাই
আদিত্য: চলো।
দুজনে বাড়ির দিকে পা বাড়ালো কিন্তু কোথা থেকে যেন একটা আওয়াজ আসছে, পিয়ালী বুঝতে পারছে না কিন্তু আওয়াজটা খুব কাছ থেকেই আসছে 'ট্রিইংট্রিইং ট্রিইংট্রিইং ট্রিইংট্রিইং ট্রিইংট্রিইং' একনাগাড়ে বাজছে।
পিয়ালী: আদিত্য এটা কিসের আওয়াজ?
কিন্তু কোথায় আদিত্য? পিয়ালী আশেপাশে কাউকে দেখতে পায় না সে ডাকতে থাকে "আদিত্য.... আদিত্য", ডাকের সাথে যেন আবার আওয়াজটা শুরু হয় আর পিয়ালীর সামনে থেকে সবকিছু কোথায় যেন মিলিয়ে যায় বাড়ি, ফুলগাছ আদিত্য সব কোথায় চলে যায় "আদিত্য" একটা ডাক দিয়ে ঘুম ভেঙে জেগে ওঠে পিয়ালী।
বালিশের পাশে তাকিয়ে দেখে তার মোবাইলে অ্যালার্ম বাজছে হাত বাড়িয়ে সেটা বন্ধ করে কপালের ঘাম মোছে। একটা অদ্ভুত অনূভুতি তাকে ঘিরে ধরে একাধারে খুশির আবার অপরদিকে হতাশার, খুশী হচ্ছে সে যা স্বপ্ন দেখেছে সেটার এটুকুই তো সে চায় একটা ছোট্ট বাড়ি যেখানে সে তার ভালোবাসার মানুষ আদিত্যর সাথে থাকতে পারবে আবার হতাশার এই কারণে যে ঘুম ভাঙার সাথে সাথেই সে বুঝতে পারে ওটা শুধুই স্বপ্ন ছিল কোনোদিন সত্যি হবে না সে কোনোদিনও আদিত্যকে পাবে না, আদিত্য কোনোদিনও তার হবে না।
বিছানা ছেড়ে ফ্রেশ হয়ে একটু চা আর টোস্ট খেল পিয়ালী তারপর একটা ক্যাব বুক করলো সেটা এলে কোর্টের উদ্দেশ্যে রওনা হলো সে বুঝতেও পারলো না যে তার পিছনে আরেকটা গাড়ি তাকে ফলো করে চলেছে।
প্রায় একঘন্টা পরে ওল্ড পোস্ট অফিস স্ট্রিটে নিজের ছোট্ট চেম্বারে ঢুকলো পিয়ালী, সেখানে আধঘন্টার মতো কিছু ফাইল নিয়ে নাড়াচাড়া করে তারপর কোর্ট চত্বরের দিকে গেল।
কোর্টে ঢোকার আগে সেখানে তার কিছু কলিগ বা বান্ধবীর সাথে দেখা হলো তাদের সাথেই একটা কেস নিয়ে কথা বলছে এটা যদিও তাদের কেস নয়, অন্য একটা কেস আজ হাইকোর্টে যেটার রায় বেরোনোর কথা সেটা নিয়েই কথা বলছিল।
"হ্যাপি বার্থডে...... মেনি মেনি হ্যাপি রিটার্নস অফ দ্যা ডে"
বান্ধবীদের সাথে কথা বলতে বলতে হটাৎ পরিচিত কিন্তু অপ্রত্যাশিত কণ্ঠে চমকে উঠলো পিয়ালী, তাকিয়ে দেখে কালো সুতির পাঞ্জাবি, কালো জিনস্, কালো গগলস্ পরিহিত অবস্থায় হাতে একটা ফুলের বুকে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে.. আদিত্য।
পিয়ালী যেন বিশ্বাস করতে পারছে না যে আদিত্য এসেছে, শুধু এসেছে তাই নয় তাকে বার্থডে উইশ করছে যেটা এইমুহূর্তে তার তো জানার কথা নয়ই এমনকি তার কলিগরাও জানে কি না সন্দেহ প্রথমে ভাবলো সে স্বপ্ন দেখছে কিন্তু পরক্ষণেই তার চোখ গেল আদিত্যর পায়ের কাছে একটু পিছনে সেখানে দাঁড়িয়ে আছে আদিত্যর সদাসঙ্গী শ্রীমান বাদশা, পিয়ালী হাঁ করে তাকিয়ে আছে আদিত্য এগিয়ে এসে পিয়ালীর মুখের সামনে একটু তুড়ি মেরে আবার বললো, "হ্যাপি বার্থডে"।
এবারে পিয়ালীর চমক ভাঙলো কিন্তু তার মুখ দেখে মনে হচ্ছে সে এখনো বিশ্বাস করতে পারছে না যে তার সামনে আদিত্য দাঁড়িয়ে আছে। এবারে আদিত্য একটু অপ্রস্তুত বোধ করতে লাগলো সেও চুপ করে থাকে একটু পরে পিয়ালীই মুখ খোলে,
"থ্যাংক ইউ, আপনি এখানে?"
"কেন আসতে নেই?" আদিত্য সহাস্যে উত্তর দেয়।
"না না তা কেন? কিন্তু আপনি জানলেন কিভাবে যে আজ আমার.."
এইসময় পিয়ালীর পাশে থাকা তার বান্ধবীদের উসখুস ভাব দেখে বোঝা যাচ্ছে যে এ বিষয়টা তাদেরও জানা ছিল না। তারাও এবার পিয়ালীকে বার্থডে উইশ করে চলে যায়, ওরা যেতেই আদিত্য আবার একটু হেসে একটা পার্স পিয়ালীর দিকে এগিয়ে দেয় বলে, "এটা আপনি ফেলে এসেছিলেন"
"ওহ মাই গড.. থ্যাংক ইউ ভেরি মাচ, কোথায় হারিয়েছি কিছুতেই মনে পরছিল না আমি ভাবছিলাম আজ আমার ফ্রেণ্ডের থেকে রিসর্টের নাম্বারটা নিয়ে একবার খোঁজ করবো তারপর থানায় একটা ডায়রী করে রাখবো কিন্তু তার আর দরকার হবে না"
"এটা কার আইডেন্টিফাই করার জন্য ভিতরটা একটু খুলেছিলাম সেখানে আপনার কার্ডে আপনার অফিসের অ্যাড্রেসটা পাই, একটু চেক করে নিন ভিতরটা"
"এমা ছিঃ ছিঃ তার দরকার নেই"
"দরকার আছে, একটু দেখে নিন প্লিজ"
পিয়ালী যেন অনিচ্ছাসত্ত্বেও একবার পার্সটা খুলে একটু উঁকিঝুঁকি মেরে বন্ধ করে দিল সেটা দেখে আদিত্য বললো, "একটু ভালো করে দেখে নিন"
"এর থেকে বেশি দেখার প্রয়োজন নেই আপনার প্রতি বিশ্বাস আছে আমার"।
"থ্যাংক ইউ... এই নিন" কথাটা বলে আদিত্য ফুলের বুকেটা এগিয়ে দিল, সেটা নিয়ে পিয়ালীর মুখে একটা খুশীর ভাব ফুটে উঠলো কিন্তু তারপর একটু কপট গাম্ভীর্য ধারণ করে বললো, "শুধু বুকে? আদিত্য বাবু আপনি যে এত কঞ্জুস জানতাম না তো"।
আদিত্য একটু অপ্রস্তুত হয়ে গেল বললো, "সরি আমি বুঝতে পারিনি"
"শুধু সরি বললে তো হবে না"
"বেশ তো তাহলে কি গিফ্ট চান বলুন"
"যা চাইবো দেবেন?"
"যদি আমার দ্বারা সম্ভব হয় তাহলে অবশ্যই দেবো বলুন"
"আপনার প্রমিসটা বাকি আছে সেটা পূরণ করতে হবে"
পিয়ালীর কথা শুনে আদিত্য ক্ষণিকের জন্য ভ্রুদুটো কুঁচকে গেল তারপর মনে পরতে আবার ভ্রুদুটো ঠিক হয়ে গেল, একটু হেসে বললো "ওটা শুনতেই হবে?"
"হ্যাঁ শুনতেই হবে, আপনি আমারটা শুনেছেন কথা ছিল আপনিও বলবেন"
"বেশ, তবে আজ তো আপনার কাজ আছে মনে হচ্ছে"
"উঁহু আজ কোনো এক্সকিউজ চলবে না"
"কিন্তু."
"কোনো কিন্তু নয়, আপনি কিন্তু বলেছেন যে আমাকে আমার পছন্দমতো গিফ্ট দেবেন"।
"এটা কোনো গিফ্ট হলো?"
"আমার বার্থডে তাই গিফ্টও আমার পছন্দের হবে"।
"আচ্ছা ঠিক আছে"
"ঠিক আছে নয়, আজ আপনি সারাদিন আমার সাথে থাকবেন একসাথে লাঞ্চ তারপর ডিনার করে ফিরবেন"
"ওরে বাব্বা এতো.."
"আজ আমার বার্থডে এটুকু দিতে পারবেন না?"
"কিন্তু আপনার কাজ?"
"কাজ বেশী নেই, একঘন্টার মতো লাগবে"
"আচ্ছা ঠিক আছে আপনি কাজটা সেরে আসুন আমি অপেক্ষা করছি"
"আপনি পালিয়ে যাবেন না তো?"
"না, বলেছি যখন থাকবো তখন থাকবো"
"ঠিক আছে আপনার ফোন নাম্বারটা দিন,আমি বেরিয়ে কল করে নেবো" ফোন নাম্বার এক্সচেঞ্জ করে পিয়ালী ভিতরে চলে গেল, আর আদিত্য একটা দোকানে গিয়ে প্রথমে দুটো জলের বোতল কিনলো একটা খুলে বাদশাকে জল খাওয়ালো আর অপরটা থেকে নিজে খেলো তারপর একটা সিগারেট কিনে ধরালো।
একঘন্টা লাগলো না ঠিক পঁয়তাল্লিশ মিনিটের মধ্যে কাজ শেষ করে বেরিয়ে এল পিয়ালী বাইরে এসে আদিত্যকে দেখতে না পেয়ে ফোন করলো কিন্তু আদিত্যর ধরার প্রয়োজন হলো না সে ততক্ষণে পিয়ালীর পিছনে এসে দাঁড়িয়েছে।
"চলুন" শুনে চমকে ফিরে তাকালো পিয়ালী আর সঙ্গে সঙ্গে আবার তার মুখ খুশিতে উজ্জ্বল হয়ে উঠলো, বললো "কোথায় যাবেন?"
"আপনার জন্মদিন আপনি বলুন"
"কফি হাউজে যাবেন?"
"কফি হাউজে? ওখানের আড্ডাটাতো আজ আর নেই"
"মানে?"
"গান শোনেননি? কফিহাউজের সেই আড্ডাটা আজ আর নেই"।
"তাহলে কোথায় যাবেন?"
"কফিহাউজে যাওয়া যেত কিন্তু ওখানে বোধহয় বাদশাকে নিয়ে ঢুকতে দেবে না আর ওকে একা রেখে আমি কোথাও যাই না"
"তাহলে কোথায় যাবেন?"
"ময়দানে গেলে আপত্তি আছে? ওখানে বসার জায়গাও আছে"
"ঠিক আছে দাঁড়ান ক্যাব বুক করি আমার কিন্তু বেশি হাঁটার অভ্যাস নেই"
"তার দরকার নেই, আমার বাইক আছে আসুন"
পার্কস্ট্রিট পার করে একটা দোকান থেকে কিছু খাবার কিনলো দুজনে (অবশ্য বাদশার জন্যও নিল) নিয়ে ময়দানের কয়েকটা ক্লাবের পাশ দিয়ে গিয়ে একটা বড়ো গাছের তলায় ফাঁকা জায়গা দেখতে পেয়ে সেখানে বসলো দুজনে, পিয়ালী বললো "এবার বলুন শুনি"
"কি শুনতে চান বলুন?"
"আপনি নর্থবেঙ্গল ছেড়ে এখানে কেন?"
"সেদিন বললাম তো আসল পরিচয় প্রকাশ পেয়েছে তাই নর্থবেঙ্গল ছাড়তে হয়েছে"
"মানে? এভাবে নয় সবটুকু বলুন আমি কিন্তু কিচ্ছু লুকোইনি তাই আপনিও লুকোবেন না"
"কিছুই লুকোচ্ছি না, আচ্ছা আপনি নর্থবেঙ্গল ছেড়ে চলে আসার পর ওখানের কারো সাথে যোগাযোগ রাখেননি?"
"আপনি কিন্তু কথা ঘোরাচ্ছেন আবার আমার কথা কেন?"
"কথা ঘোরাচ্ছি না, বলুন না কারো সাথে যোগাযোগ নেই?"
"না, যোগাযোগ রাখার মতো কেউ নেই আর তাছাড়া ওই শহরে আমি মা-বাবা-দাদা এমনকি স্যারকেও হারিয়েছি আর কেউ ছিল না ওখানে যোগাযোগ রাখার জন্য, আপনি ছিলেন কিন্তু আপনিও এখন এখানে তাই আর যোগাযোগ রাখার দরকার বা ইচ্ছা কোনোটাই হয়নি, এবার আপনি বলুন"
"যোগাযোগ রাখলে জানতে পারতেন আমি এখানে কেন"
"কিরকম?"
" জানতে পারতেন যে আমি আদিত্য সিংহ রায় নই,আমি নকল আদিত্য সিংহ রায়"
পিয়ালী ঠিক ধরতে পারলো না কথাটা সে হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে রইলো আদিত্য বুঝলো সেটা বললো, "আসল আদিত্য সিংহ রায় অনেক বছর আগেই খুন হয়েছিলেন, অতীন্দ্র স্যার আমাকে ওনার ছেলে সাজিয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন যাতে মা মানে ওনার অসুস্থ স্ত্রীকে ছেলের মৃত্যুশোক না পেতে হয়"
পিয়ালীর মুখ গম্ভীর চুপ করে আছে দেখে সে আবার বললো "আপনিও আমাকে ফ্রড ভাবছেন তাই না? এটাই অবশ্য স্বাভাবিক"
"আমি আপনাকে বিশ্বাস করি, আমি বিশ্বাস করি আপনি কাউকে ঠকাতে পারেন না কিন্তু হটাৎ আপনার পরিচয় বেরিয়ে এলো কিভাবে? আর আপনি যদি আদিত্য না হন তাহলে আপনার আসল পরিচয় কি?"
"আমার আসল পরিচয়টা থাক ওটা সবাই ভুলে গেছে এমনকি আমিও ভুলে যেতে চাই আদিত্য নামটাই এখনো ব্যবহার করি, আর পরিচয় প্রকাশ পেলো কিভাবে? সেটা নীলাদ্রি বাবুর জন্য"
"তিনি কে?"
"আসল আদিত্যর বন্ধু, তিনি ওখানের থানার ইনচার্জ হয়ে এসেছিলেন সেই ধরে ফেললো আর সেই সবাইকে বললো"
"আর অমনি সবাই আপনাকে ভুল বুঝলো?" পিয়ালীর স্বরে উষ্মা।
"সেটাই কি স্বাভাবিক নয় কি?"
"মানে এতবছরের কথা বেমালুম ভুলে গেল সবাই?"
"আমি ওনাদের নিজের ছেলে নয়, এতবছর আদিত্য সেজে ওর অধিকার ভোগ করেছি একজন মাকে, একজন বোনকে ঠকিয়েছি এটা কি অন্যায় নয়?"
"অতীন্দ্রবাবুই তো আপনাকে এনেছিলেন বললেন"
"তাতে তো এই সত্যিটা বদলায় না যে আমি আদিত্য নয়, এই সত্যিটা কোনোদিন বদলাবে না। আমি ওখানে থাকলে মা আরও বেশি অসুস্থ হয়ে পরবে আমি সেটা চাইনা আর তাছাড়া ওনারা সবাই সব জেনে গেছেন তাই ওখানে আমার প্রয়োজন শেষ তাই আমিও ওই শহর ছেড়ে বেরিয়ে পরলাম"।
দুজনেরই খাওয়া হয়ে গিয়েছিল আদিত্য বললো, "এবার তাহলে আমি আসছি"।
"কেন? আপনি কিন্তু আজ পুরো দিন আমার সাথে থাকবেন বলেছিলেন"
"যাকে সবাই ফ্রড, ঠগ জোচ্চোর ভাবছে তার সাথে এখনো টাইম কাটাবেন?"
"সবাই কি ভাবছে না ভাবছে সেটা নিয়ে আমার কোনো মাথাব্যথা নেই"
"থাকা তো দরকার"
"না একদমই না। সবার ভাবনার সাথে আমার ভাবনা মিলবে তার তো কোনো কথা নেই আমার ভাবনা আলাদা হতেই পারে"
"তাহলে আপনি আমাকে কি ভাবছেন?"
"আমি আপনাকে বিশ্বাস করি, আমি বিশ্বাস করি আপনি ফ্রড বা ঠগ জোচ্চোর নন"
"আর এই বিশ্বাস করার কারণটা জানতে পারি?"
কথাটা শুনে পিয়ালী আদিত্যর দিকে তাকালো দুজনে কিছুক্ষণ পরস্পরের চোখের দিকে তাকিয়ে রইলো যেন কিছু কথা যেগুলো মন বলতে চাইছে কিন্তু মুখ বলছে না। খানিকক্ষণ পরে পিয়ালী শুধু একটা কথাই বললো,
"আপনাকে আমি বিশ্বাস করি"
"থ্যাংকস"
"তাহলে এবার আপনি আমার সাথে থাকছেন তো? আইমিন আজকের দিনটা?"
"আজ আপনার বার্থডে আমি থাকলে যদি আপনি খুশী হন তাহলে ঠিক আছে আমি থাকবো"
পিয়ালীর মুখে আবার হাসি ফুটে উঠলো সে বললো,
"এবার বাকিটা বলুন"
"বাকিটা?"
"আপনি আনন্দ নিকেতনে কিভাবে পৌঁছোলেন? পুরোটা বলুন... বলুন" পিয়ালী একটা বাচ্চা মেয়ের মতো কাঁদো কাঁদো স্বরে বললো। আদিত্য বুঝলো পিয়ালী না শুনে ছাড়বে না, সে আবার শুরু করলো,
"ওটা বাদশার জন্য"
"বাদশা?"
"হ্যাঁ, নর্থবেঙ্গল থেকে চলে আসি তারপর বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে থাকি, ঠিকমতো কোথাও আশ্রয় জোটে না, খাওয়া জোটে না কিন্তু তাতে আমার কোনো ভাবনা ছিল না শুধু একটাই চিন্তা ওই বাদশার। ওই অবলা জীবটা তখনও আমার পায়ে পায়ে ঘুরছে ওকে কি খাওয়াবো কিভাবে খাওয়াবো সেটাই আমার একমাত্র চিন্তা আপনি হয়তো বলবেন ওকে কেন রেখে আসিনি? কারণ ও আমাকে এতটাই ভালোবাসে যে আমাকে ছাড়া বাঁচবে না এটা আমি জানতাম কিন্তু কে ভেবেছিল যে ওই আমার প্রাণ বাঁচাবে"
"কি হয়েছিল আপনার?" পিয়ালী যেন আঁতকে ওঠে।
"বাদশাকে নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরছি, বিশেষ করে এই বাংলায় এখনো অনেক অফবিট জায়গা আছে, অনেক অফবিট গ্ৰাম আছে সেরকমই একটা গ্ৰামে গিয়েছিলাম ওখানে একটা পুরনো মন্দির আছে সেটার চাতালে রাতে থেকেছিলাম ইচ্ছা ছিল সকাল হলেই আবার বেরোবো কিন্তু সেটা আর হলো না। একে বেশ কয়েকদিন পেটে খাবার জোটেনি আমারও না আর বাদশারও না ও তবুও আমাকে ছেড়ে যায়নি, যাইহোক যেটা বলছিলাম মনের জোর যতই থাক কিন্তু শরীরটা তো মানুষের একে অভুক্ত পেট তার উপর গ্ৰামের ঠাণ্ডা সকাল হতেই আর উঠতে পারলাম না প্রায় জ্ঞানশূন্য হয়ে পরে রইলাম কিছু হুঁশ রইলো না তারমধ্যে আবছা ভাবে শুনতে পেলাম বাদশা আমাকে ডাকছে কিন্তু আমার সারা না পেয়ে ও যেন কোথায় চলে গেল"।
"তারপর?"
"তারপর কতক্ষণ কেটে গেছে টের পাইনি কিন্তু যখন জ্ঞান ফিরে পেয়ে চোখ খুললাম তখন আমি একটা চৌকিতে শুয়ে আছি সামনে একজন বয়স্ক মানুষ আমার মুখের উপর ঝুঁকে রয়েছেন, আমার জ্ঞান ফিরেছে এটা বুঝতে পেরেই বোধহয় বাদশা ডেকে উঠলো, তখন ওই বয়স্ক মানুষটা বললেন, 'অদ্ভুত সঙ্গী পেয়েছো তুমি, এর জন্যই আজ তুমি বেঁচে গেলে তোমাকে তুমি করেই বলছি তুমি আমার থেকে বয়সে অনেক ছোটো'
'তাই বলুন'
আমি উঠতে চেষ্টা করতে উনি ধরে আমাকে তুলে বসিয়ে দিলেন শরীর তখনও প্রচণ্ড দুর্বল। তারপর ওনার পরিচয় পেলাম উনি ডাক্তার শৈলেশ রায়, ওই গ্ৰামের মোড়লের সাথে ওনার ঘনিষ্ঠ পরিচয় আছে তাই মাঝে মাঝে ওই গ্ৰামে যান বিভিন্ন অনুষ্ঠান উপলক্ষ্যে এবং নিখরচায় ওখানকার গরীব লোকেদের চিকিৎসা করেন এরকমই সময়ে নাকি বাদশা ঘুরতে ঘুরতে ওখানে যায় আর খুব সম্ভবত ওনার সামনে ওষুধের শিশি আর গলায় স্টেথোস্কোপ দেখে বুঝতে পারে যে উনি ডাক্তার তারপর ওনাকে ডাকতে থাকে প্রথমে স্বভাবতই সবাই ভয় পেয়ে যায় কিন্তু ভাগ্য ভালো ওকে গ্ৰামের কয়েকজন মন্দিরে আমার সাথে দেখেছিল আর তাছাড়া ওর হাবভাব দেখে ওদের সন্দেহ হয় যে ও ওনাদের কিছু বলতে বা দেখাতে চাইছে তাই ওনারা ওর পিছু পিছু মন্দিরে এসে আমাকে একেবারে অচৈতন্য অবস্থায় দেখতে পান তারপর তাঁরাই আমাকে মোড়লের বাড়িতে নিয়ে যান, সেখানেই শৈলেশ বাবু আমাকে সুস্থ করে তোলেন।"
"কিন্তু আপনি রিসর্টে..."
"সব বলছি ওয়েট.. আনন্দ নিকেতন টা আসলে শৈলেশ বাবুদেরই ওনার ঠাকুমার নাম ছিল আনন্দময়ী তার নামেই ওটা, ওই রিসর্টা আসলে একপ্রকার এনজিও বলতে পারেন"
"কিরকম?"
"ওখান থেকে যা আয় হয় সেটার অনেকটাই বিভিন্ন অনাথ আশ্রম,বা গরীব দুঃখীদের চিকিৎসা, বাচ্চাদের পড়াশোনা এই জন্য দান করা হয়। আমার অবস্থা দেখে আর আমার কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই শুনে উনি আমাকে এখানে নিয়ে আসেন, আমি ওখানে থাকতে শুরু করি আর কিছু না হোক অন্তত আমার আর বাদশার একটা আশ্রয় খাবারটা তো জুটবে। ধীরে ধীরে রিসর্টের বিভিন্ন কাজও করতে থাকি নর্থবেঙ্গলে অতীন্দ্র স্যারের রিসর্টগুলোর কাজ আমিই দেখতাম তাই একটা আইডিয়া ছিল ফলে অসুবিধা হয়নি। ওখানে একজন ম্যানেজার আছে কিন্তু আমাকে শৈলেশ বাবু সবার ইনক্লুডিং ম্যানেজারের দেখাশোনার দায়িত্ব দিলেন জানিনা উনি আমার মধ্যে কি দেখেছিলেন, এইভাবেই দিন কাটছে আর এখন তো ওখানে আটকা পরে গেছি যদিও বেরোনোর খুব যে ইচ্ছা আছে তা নয়"
"তার মানে আপনি এখন ওখানেই থাকবেন?"
"হ্যাঁ, শৈলেশ বাবু আমাকে বিশ্বাস করে একটা দায়িত্ব দিয়ে গেছেন আর আমি ওনার বিশ্বাসের অমর্যাদা করতে পারবো না"।
"দায়িত্ব?"
"হ্যাঁ, ওই রিসর্টটার দেখাশোনা করা আর রিসর্টের যে মেইন উদ্দেশ্য মানে ওই সোশ্যাল ওয়ার্ক গুলো ওগুলো যাতে বন্ধ না হয় সেগুলো দেখার পুরো দায়িত্ব আমার উপরেই"
"বুঝলাম"
"এই হচ্ছে আমার কথা, তাহলে এবার যাওয়া যাক?"
"কোথায় যাবেন বলুন?"
"বাড়ি"
"এখনই কি? ডিনার করবেন বলেছিলেন মনে আছে তো?"
"আচ্ছা ঠিক আছে"
"তাহলে এখন কোথায় যাবেন বলুন?"
"আপনি বলুন"
"এক কাজ করলে হয় না?"
"কি?
"ভিক্টোরিয়া চলুন"
"ভিক্টোরিয়া?"
"হ্যাঁ যাবেন?"
"বেশ, তাই চলুন"।
ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল হলের ভিতরে ঢুকলো না ওরা কারণ সাথে বাদশা ছিল তাই আদিত্য আর পিয়ালী দুজনে বাইরে আস্তে আস্তে হেঁটে বেড়াতে লাগলো পিয়ালীর মন আজ অত্যন্ত খুশী সে মাঝে মাঝেই আদিত্যকে দেখছে, একটা জিনিস খেয়াল করলো যে মাঝে মাঝে আদিত্য চারপাশে বা পিছনে কিছু একটা দেখছে আর কপালে ভ্রুকুটি দেখা যাচ্ছে শেষে আর থাকতে না পেরে জিজ্ঞেস করেই ফেললো,
"কি হয়েছে বলুন তো? এভাবে কি দেখছেন"
প্রশ্ন শুনে আদিত্য নিজেকে সামলে নিয়ে বললো, "কিছুনা, এমনি চারিদিকে দেখছি"।
পিয়ালী আর কিছু জিজ্ঞেস করলো না কিন্তু সে বুঝতে পারলো আদিত্য কিছু একটা লুকোচ্ছে, ভিক্টোরিয়া থেকে আবার বাবুঘাটে এসে অনেকক্ষণ গঙ্গার ধারে বসে থাকলো দুজনে তারপর একটা রেস্টুরেন্ট থেকে খাবার নিয়ে বাইকের উপরেই ডিনার করলো আদিত্য আর পিয়ালী এবং অবশ্যই বাদশা। ডিনার শেষে যখন কসবায় পিয়ালীর মেসের সামনে এসে বাইক থামালো আদিত্য তখনও পিয়ালী লক্ষ্য করলো তার মুখে কিছু একটা চিন্তার ছাপ, বোধহয় লিমিট ক্রস করা হবে ভেবে কোনো প্রশ্ন করলো না শুধু তার সাথে পুরো দিনটা কাটানোর জন্য থ্যাংক ইউ জানিয়ে ভিতরে চলে গেল।
ফ্রেশ হয়ে বিছানায় শুয়েও পিয়ালীর চোখে ঘুম এলো না অদ্ভুত এক ভালো লাগা আর ঘোরের মধ্যে রয়েছে সে যেটা সে কোনোদিন ভাবতে পারেনি সেটাই আজ সে পেয়েছে যে মানুষটাকে সে ভালোবাসে কিন্তু ভাবতো যাকে কোনোদিন কাছে পাবে না সে আজ প্রায় গোটা দিনটা তার সঙ্গে কাটিয়েছে তার সঙ্গে ঘুরেছে তার সঙ্গে খাবার খেয়েছে এসব ভাবতে ভাবতে তার সারা শরীর পুলকিত হয়ে ওঠে সে মোবাইলে তোলা আদিত্যর ছবিটা যেটা সে নর্থবেঙ্গলে থাকতে একদিন কোর্টে তুলেছিল সেটা মুখের সামনে ধরে দেখতে থাকে, দেখতে দেখতে সে যেন স্বপ্নের মধ্যে ডুবে যায়।
হটাৎ একটা কুকুরের শব্দে সজাগ হয়ে ওঠে পিয়ালী ঘড়ি দেখে বুঝলো মাঝরাত পেরিয়ে গেছে, প্রথমে কিছুটা আমল দিল না কারণ তার মেসটা যে পাড়ায় সেখানে অনেক নেড়িকুত্তা আছে যারা রাতবিরেতে নানা কারনে ডেকে ওঠে, খানিক পরে আবার একটা ডাক আর সাথে একটা মানুষের আর্তনাদ, একটু আশ্চর্য হলো সে কারণ আর্তনাদটা কেউ যেন চাপা দিয়ে দিল মনে হলো পিয়ালীর আর আরেকটা কথা কুকুরের ডাকটা রোজকার নেড়িকুত্তার ডাক নয় তার থেকেও বড়ো কথা এই কুকুরের ডাকটা তার চেনা গতকাল প্রায় সারাদিন সে এই কুকুরটার সাথেই ছিল।
তাড়াতাড়ি বিছানা ছেড়ে উঠে জানালার কাছে গেল সে মেসে তার রুমটা দোতলায় যেদিকে মেসের মেইন গেট সেদিকেই একেবারে রাস্তার ধারেই, জানালা দিয়ে রাস্তার অনেকটা দেখা যায়, জানালা দিয়ে রাস্তার দিকে চাইতেই চমকে গেল সে।
রাস্তার উপরে একেবারে মেসের সামনে মেসের গেটটাকে প্রায় ব্লক করে বাইকের উপরে বসে আছে একজন পিছন থেকে পিয়ালী মুখটা দেখতে না পারলেও তার বুঝতে অসুবিধা হয় না ওটা কে? ওই লম্বা চুল ওই কালো পাঞ্জাবী সে কাল সারাদিন দেখেছে, আদিত্য.... কিন্তু এখনো এতরাতে এখানে কি করছে ও?
আরেকটু ভালো করে চাইতেই আরেকটা জিনিস চোখে পরে পিয়ালীর আদিত্যর সামনে একটু তফাতে একটা লোক চিত হয়ে শুয়ে আছে আর ওর বুকের উপরে দুটো পা তুলে দাঁড়িয়ে আছে বাদশা এছাড়া আরও কয়েকজন লোক রাস্তার এদিকে সেদিকে ছিটকে পরে রয়েছে, এবার পকেট থেকে একটা সিগারেট বার করে ধরায়আদিত্য তারপর একগাল ধোঁয়া ছেড়ে সামনে বাদশার পায়ের তলায় পরে থাকা লোকটাকে কিছু বলে যেটা উপর থেকে শোনা গেল না পিয়ালীর মনে হলো কিছু জিজ্ঞেস করলো কারণ সামনের লোকটা অন্য দিকে চাইতেই বাদশা ওর গলার কাছে ঝুঁকতেই লোকটা আবার আতঙ্কিত হয়ে হাতজোড় করে কিছু একটা বলতে শুরু করে।
আর থাকতে পারে না পিয়ালী সে মোবাইলটা নিয়ে ফোন করে আদিত্যকে দেখে পকেট থেকেই ফোনটা বার করে না দেখেই কানে দেয় সে,
"আপনাকে কতবার বলতে হবে যে সিগারেট খাবেন না, ওটা ভালো নয় আর আপনি এখনো এখানে কি করছেন?"
আদিত্য এবার ঘাড় ঘুরিয়ে পিছনে একটু এদিক ওদিক তাকিয়ে উপরের দিকে চাইতেই জানালায় পিয়ালীকে দেখতে পায়, পিয়ালী দেখে আদিত্য আবার ঘাড় ঘুরিয়ে বাদশাকে নিজের কাছে ডাকে আর লোকটা ছাড়া পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে কোনোমতে উঠে দৌড় লাগায় সাথে আশেপাশে পরে থাকা লোকগুলোও পালিয়ে যায়, পিয়ালী আবার জিজ্ঞেস করে
"বলুন এত রাতে এখানে কি করছেন? তখন বললেন একবার শরীর খারাপ বাঁধিয়েছিলেন তাহলে? আবার শরীর খারাপ, হলে কি হবে?"
উত্তরে একটা অদ্ভুত প্রশ্ন করে আদিত্য, "আপনি এখন এখান থেকে বেরিয়ে আসতে পারবেন?"
"মানে?"
"কাল থেকে আপনার পিন একটা কথাতেই আটকে গেছে 'মানে', আসতে পারবেন?"
"না এখন সম্ভব নয় ভোরে পারবো, খুব ভোরে মেসের গেট খুলে দেওয়া হয়"
"তাহলে এখনই নিজের সব জিনিস প্যাক করে নিন ভোর হওয়া মাত্র আপনাকে এই মেস ছাড়তে হবে"
"কিন্তু কেন?"
"যা বললাম করুন, আমি নীচেই আছি যখন গেট খোলে তখন নেমে আসবেন কাউকে কিছু বলার প্রয়োজন নেই"
"কিন্তু কেন সেটা তো বলবেন?"
"পরে বলবো আপাতত যা বললাম করুন আর এটা বিশ্বাস করতে পারেন যে আমি চরিত্রহীন বা লম্পট নই আর আপনার ক্ষতি করারও কোনো ইচ্ছা আমার নেই"
"আমি কিন্তু একবারও সেকথা বলিনি"
"তাহলে যান যেটা বললাম করুন"
"লোকগুলো কারা ছিল?"
"বললাম তো পরে বলবো, এখন নিজের জিনিসগুলো প্যাক করে নিন"
পিয়ালী আর কোনো কথা না বলে জানালা দিয়ে সরে এলো আর নিজের জিনিসপত্র একটা স্যুটকেসে প্যাক করতে থাকে।
ভোরে সূর্যোদয়ের একটু পরেই মেসের গেট খুলে যায় এবং একসাথে দুজন মেয়ে বেরিয়ে আসে একজন নিজের মতো মেইনরোডের দিকে চলে যায় আর তার পিছনে পিয়ালী হাতে একটা স্যুটকেস যেটা টানতে টানতে আনছে। গেটের বাইরে এসে কাউকে দেখতে না পেয়ে একটু অবাক হয় কিন্তু বেশিক্ষণ না, একটু পরেই আদিত্য বাইকটা তার সামনে থামায়।
"রাতে কোথায় ঘুমিয়েছিলেন?" আদিত্য সামনে দাঁড়াতেই প্রশ্ন করে পিয়ালী,
"রাতে আমার খুব একটা ঘুম হয় না"
"কোথায় ছিলেন?"
"ওই..ওইদিকে বাইকের উপরেই"
"আপনি সারা রাত বাইকের উপরে ছিলেন?"
"এখানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কথা বলার জন্য এত ভোরে ডাকিনি? তাড়াতাড়ি উঠুন আর হেলমেটটা পরে নিন"
"আমরা কোথায় যাচ্ছি? আর কেন যাচ্ছি?"
"আপনাকে নিয়ে পালিয়ে যাচ্ছি এখন নিজে থেকে চলুন নাহলে কিডন্যাপ করে নিয়ে যাবো"
"কিডন্যাপ করার দরকার কি? আপনি বললে আমি এমনিই আপনার সাথে চলে যাবো" বাইকে আদিত্যর পিছনে বসে বললো পিয়ালী স্যুটকেসটা মাঝে রাখলো, খুব একটা বড়ো নয় তাই অসুবিধা হলো না।
"আমার উপরে এত বিশ্বাস?" আদিত্য হাল্কা স্বরে প্রশ্ন করে,
"হ্যাঁ, সম্পূর্ণ বিশ্বাস করি আপনাকে"।
আদিত্য একবার ঘাড় ঘুরিয়ে পিয়ালীকে দেখলো তারপর বাইক স্টার্ট করলো।
"এত ছোটো স্যুটকেসে আপনার সব জিনিস ধরেছে?" যেতে যেতে প্রশ্ন করলো আদিত্য।
"আপনি তো বলেননি যে কদিনের জন্য যাচ্ছি তাই সব জিনিস কেন নেবো?"
কথাটা শুনে আদিত্য হটাৎই বাইক থামিয়ে দিল বললো "আপনার মাথায় কি গোবর পোড়া আছে নাকি? আপনাকে বললাম না যে মেস ছাড়তে হবে আপনাকে?"
"না মানে আসলে"
"কি মানে মানে করছেন? আপনাকে বললাম তো এই মেস ছাড়তে হবে তাহলে সব জিনিস নেননি কেন?"আদিত্য ধমক লাগায়, পিয়ালী চুপ করে থাকে কিন্তু আদিত্য গজরাতে থাকে "আপনার মাথায় একটুও বুদ্ধি নেই নাকি?"
"সব জিনিস নিলে এইভাবে বাইকে যেতে পারতেন?" পিয়ালী মিনমিন করে জবাব দেয় তাতে যেন আদিত্য আরো রেগে যায় বলে "সেটা আমি বুঝতাম সেটাতো আপনাকে ভাবতে বলিনি"
"ভোরবেলা এত বকছেন কেন? পরে একসময় এসে নাহয় নিয়ে যাবো"
"আপনাকে এখানে আসতে দিতে চাইছি না বলেই তো সব জিনিস নিতে বলেছিলাম"
"ওইভাবে সবজিনিষ নিয়ে গেলে সবাই ভুল ভাববে সন্দেহ করবে পরে একসময় এসে নিয়ে যাবো"
পিয়ালীর কথা শুনে আদিত্য কিছুটা শান্ত হয় বলে "ঠিক আছে তবে একা আসবেন না, আমাকে বলবেন আমিও আসবো"
"ঠিক আছে"
"মনে থাকে যেন"
আবার বাইক স্টার্ট করে আদিত্য সায়েন্স সিটি থেকে বানতলার রাস্তাটা ধরে সে, পিয়ালী জিজ্ঞেস করে "আমরা কি আনন্দ নিকেতনে যাচ্ছি?"
"হ্যাঁ"
"ওই লোকগুলো কারা ছিল? আর আপনি ওদের মেরেছিলেন?"
"আপনি রিসেন্টলি কোনো ক্ষমতাশালী লোকের বিরুদ্ধে কেসে লড়েছিলেন?"
"ক্ষমতাশালী?"
"হ্যাঁ"
"একটা কেস লড়ার কথা ছিল কিন্তু.."
"কিন্তু?"
"কিন্তু কোর্টে ওঠার আগেই একটা অ্যাক্সিডেন্টে ভিক্টিম মারা যায় আর ওর বাড়ির লোক আর কেসটা নিয়ে এগোয়নি, কেন বলুনতো?"
"যাদের বিরুদ্ধে কেস ছিল তারাই আপনার পিছনে লোক লাগিয়েছে?"
"তারমানে ওই লোকগুলো.."
"ওদের পিছনে যে আছে খুব সম্ভবত তাদের বিরুদ্ধে কেসটা ছিল"
"কিন্তু ওরা এসেছিল কি করতে?"
"আপনাকে তুলে নিয়ে যেতে আপনাকে ফলো করছিল কাল সারাদিন আমি ওদের দেখেছি আমাদের পিছনে, সন্দেহ তখনই হয়েছিল খুব সম্ভবত আপনাকে একা পায়নি বলে তখন কাজটা করেনি আমি ওদের ওখানেই ধরতে পারতাম কিন্তু আপনার দিনটা খারাপ করতে চাইনি তাই তখন কিছু বলিনি, আপনার মেসে ছেড়ে ফেরার পথে যখন ওদের দেখলাম তখন ফিরে আসতেই হলো"
"কেন?"
"আপনাকে বিপদে ফেলে যাবো? এতটাও খারাপ লোক নই আমি"
"আপনার কিছু হয়ে গেলে কি হতো?"
"কি আর হতো আমি মারা গেলে বেচারা বাদশা অনাথ হয়ে যেত"
"আদিত্য... আর কখনো মরার কথা বলবেন না"
"আপনার আবার কি হলো?"
"বলবেন না ব্যাস.. আচ্ছা আপনি ওদের পুলিশে না দিয়ে ছেড়ে দিলেন কেন?"
"পুলিশে দিলে লাভ হতো না ওদের পিছনে যে আছে সে নিশ্চয়ই অত্যন্ত ক্ষমতাশালী, পুলিশে তার প্রভাব থাকাটা অস্বাভাবিক নয় তিনি হয় ওদের ছাড়িয়ে নিতেন আর নাহয় ওদের মেরে সরিয়ে দিতেন এইধরনের লোকেরা সাধারণত এটাই করে আর তাছাড়া প্রমাণ কোথায়?"
"তারমানে আমাকে এবার পালিয়ে বেড়াতে হবে তাইতো?"
"ভয় পাচ্ছেন? ভয় পাবেন না আমি আর বাদশা থাকতে আপনার কোনো ক্ষতি হবে না আমরা হতে দেবো না। আমরা সবসময় আপনার পাশে থাকবো তাই না রে বাদশা?"
"ভৌ" বাদশাও একবার ডেকে মনিবকে সমর্থন জানায় সে বাইকে সামনে আদিত্যর কোলের কাছে বসে আছে।
"প্রমিস করছেন?" পিয়ালী প্রশ্ন করে।
"করছি" ছোট্ট উত্তর দেয় আদিত্য।
Posts: 21
Threads: 0
Likes Received: 19 in 19 posts
Likes Given: 1,206
Joined: May 2019
Reputation:
0
অসাধারন দুটো আপডেট ৷ পরবর্তী আপডেটের অপেক্ষায় রইলাম ৷
Posts: 928
Threads: 9
Likes Received: 1,804 in 406 posts
Likes Given: 939
Joined: Sep 2021
Reputation:
618
(01-05-2023, 01:38 AM)Boti babu Wrote: Congratulations brother খুব কম লেখকরা পারে এমন করে গুছিয়ে গল্প লিখতে এই ভাবেই চালিয়ে যাও পাশে সব সময়ই আছি। ধন্যবাদ ভাই
(01-05-2023, 01:58 AM)nextpage Wrote: ঊফফ... এতো তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে গেল কেন
দুটো আপডেট পেয়ে মন এমনিতেই খুশি। সাথে পুরনো চরিত্রদেরও খুঁজে পাচ্ছি।
পিয়ালী মনে নকল আদিত্য মানে অনি আছে কিন্তু অনির মন?? আরও একজন যে অপেক্ষা করে আছে।
পিয়ালী কি আদিত্য কে খুঁজে পেল নাকি আদিত্য ধরা দিল সামনে থেকে প্রটেকশন করবে বলে। ধীরে ধীরে তা প্রকাশিত হবে। তাই এভাবেই সঙ্গে থেকে পড়তে থাকো
(01-05-2023, 03:06 AM)Patrick bateman_69 Wrote: Nago dada ar etttu khani boro update dilei to parte go, next update kobe pabo?
Ar dada golpo kintu 1vs infinity hoye jaitesi Aste aste
Btw like repu added ধন্যবাদ
পরের আপডেট দিতে সময় লাগবে লেখা হলেই দেবো।
(01-05-2023, 07:23 AM)bad_boy Wrote: অসাধারন দুটো আপডেট ৷ পরবর্তী আপডেটের অপেক্ষায় রইলাম ৷
ধন্যবাদ
I'm the King of Dark
&
I rule over all Devils
Posts: 4,429
Threads: 6
Likes Received: 9,079 in 2,845 posts
Likes Given: 4,330
Joined: Oct 2019
Reputation:
3,224
আগেই বলেছি you are one of my favourite writer, সেটা আজ আবার এই দুটি পর্বের মাধ্যমে প্রমাণ করলে তুমি। জয় হোক তোমার, এই ভাবেই এগিয়ে চলো সঙ্গে আছি।
Posts: 928
Threads: 9
Likes Received: 1,804 in 406 posts
Likes Given: 939
Joined: Sep 2021
Reputation:
618
(01-05-2023, 10:13 AM)Bumba_1 Wrote: আগেই বলেছি you are one of my favourite writer, সেটা আজ আবার এই দুটি পর্বের মাধ্যমে প্রমাণ করলে তুমি। জয় হোক তোমার, এই ভাবেই এগিয়ে চলো সঙ্গে আছি।
ধন্যবাদ দাদা
আমিও কিন্তু তোমার বর্তমান গল্পের পরের আপডেটের জন্য অপেক্ষা করছি, তাড়াতাড়ি নিয়ে এসো।
I'm the King of Dark
&
I rule over all Devils
Posts: 74
Threads: 0
Likes Received: 48 in 45 posts
Likes Given: 11
Joined: Dec 2022
Reputation:
0
Posts: 184
Threads: 0
Likes Received: 98 in 92 posts
Likes Given: 1,050
Joined: Mar 2023
Reputation:
2
Posts: 928
Threads: 9
Likes Received: 1,804 in 406 posts
Likes Given: 939
Joined: Sep 2021
Reputation:
618
(01-05-2023, 12:01 PM)Jaguar the king Wrote: Darun cholche dada ধন্যবাদ
(01-05-2023, 12:26 PM)Dodoroy Wrote: খুবই সুন্দর
ধন্যবাদ
I'm the King of Dark
&
I rule over all Devils
•
Posts: 491
Threads: 0
Likes Received: 351 in 292 posts
Likes Given: 376
Joined: Aug 2022
Reputation:
8
গল্পে আদি এর একার পক্ষে এত গুলো শত্রু মোকাবেলা সম্ভব? তাও যদি আবার আদি অস্ত্র, রাজনীতি, প্রশাসনিক সব ছাড়া একজন মানুষ হয়। গল্পে আদির শত্রু হিসেবে অনেক জন। এ অবস্থায় তো সুপারহিরো এর মতন ১ vs অগণিত হয়ে গেলো ।
My pain is constant and sharp, and I do not hope for a better world for anyone.
Posts: 928
Threads: 9
Likes Received: 1,804 in 406 posts
Likes Given: 939
Joined: Sep 2021
Reputation:
618
(02-05-2023, 02:05 AM)Patrick bateman_69 Wrote: গল্পে আদি এর একার পক্ষে এত গুলো শত্রু মোকাবেলা সম্ভব? তাও যদি আবার আদি অস্ত্র, রাজনীতি, প্রশাসনিক সব ছাড়া একজন মানুষ হয়। গল্পে আদির শত্রু হিসেবে অনেক জন। এ অবস্থায় তো সুপারহিরো এর মতন ১ vs অগণিত হয়ে গেলো ।
কিন্তু আদি এখনও শত্রুতা করলো কোথায়? সে তো নিজের মতো আছে। আর ক্ষমতা? সেটা যে কার কখন হয়ে যায় বলা মুশকিল।
সুপারহিরো না অন্য কেউ সেটার জন্য সঙ্গে থাকো আর পড়তে থাকো।
I'm the King of Dark
&
I rule over all Devils
Posts: 491
Threads: 0
Likes Received: 351 in 292 posts
Likes Given: 376
Joined: Aug 2022
Reputation:
8
Update kobe pabo dada?
My pain is constant and sharp, and I do not hope for a better world for anyone.
Posts: 928
Threads: 9
Likes Received: 1,804 in 406 posts
Likes Given: 939
Joined: Sep 2021
Reputation:
618
(03-05-2023, 02:24 AM)Patrick bateman_69 Wrote: Update kobe pabo dada?
একটু দেরী হবে, কাজের চাপে লেখার সময় হচ্ছে না, হলেই দেবো
I'm the King of Dark
&
I rule over all Devils
•
Posts: 491
Threads: 0
Likes Received: 351 in 292 posts
Likes Given: 376
Joined: Aug 2022
Reputation:
8
Dada plz taratari update diben plz :"(
My pain is constant and sharp, and I do not hope for a better world for anyone.
Posts: 928
Threads: 9
Likes Received: 1,804 in 406 posts
Likes Given: 939
Joined: Sep 2021
Reputation:
618
(03-05-2023, 02:16 PM)Patrick bateman_69 Wrote: Dada plz taratari update diben plz :"(
লেখা হলেই দেবো
I'm the King of Dark
&
I rule over all Devils
•
Posts: 491
Threads: 0
Likes Received: 351 in 292 posts
Likes Given: 376
Joined: Aug 2022
Reputation:
8
Update koi dada?
My pain is constant and sharp, and I do not hope for a better world for anyone.
Posts: 928
Threads: 9
Likes Received: 1,804 in 406 posts
Likes Given: 939
Joined: Sep 2021
Reputation:
618
(05-05-2023, 04:20 AM)Patrick bateman_69 Wrote: Update koi dada?
একটু দেরি হবে, কাজের চাপ বেড়েছে।সময় হচ্ছে না লেখার, লেখা হলেই দেবো
I'm the King of Dark
&
I rule over all Devils
•
Posts: 491
Threads: 0
Likes Received: 351 in 292 posts
Likes Given: 376
Joined: Aug 2022
Reputation:
8
Tahole ki bar diben ?
My pain is constant and sharp, and I do not hope for a better world for anyone.
Posts: 928
Threads: 9
Likes Received: 1,804 in 406 posts
Likes Given: 939
Joined: Sep 2021
Reputation:
618
(05-05-2023, 12:58 PM)Patrick bateman_69 Wrote: Tahole ki bar diben ?
বলা শক্ত, লেখার সময় হচ্ছে না। তবুও অল্প অল্প করে লিখছি হলেই দেবো
I'm the King of Dark
&
I rule over all Devils
•
Posts: 491
Threads: 0
Likes Received: 351 in 292 posts
Likes Given: 376
Joined: Aug 2022
Reputation:
8
Dada apni to bujben na dada ami pura obsessed hoye gesi ei story te . Ettu khani boro update diben asha kori :"(
My pain is constant and sharp, and I do not hope for a better world for anyone.
|