Posts: 928
Threads: 9
Likes Received: 1,804 in 406 posts
Likes Given: 939
Joined: Sep 2021
Reputation:
618
(13-04-2023, 03:59 PM)bappa009 Wrote: দুর্দান্ত শুরু হয়েছে। তাড়াতাড়ি আপডেট চাই। ধন্যবাদ ।
চেষ্টা করবো তাড়াতাড়ি আপডেট দিতে।
(13-04-2023, 05:12 PM)Patrick bateman_69 Wrote: 4-5 din er Modhe update chai dada , btw repu n like added
চেষ্টা করবো তাড়াতাড়ি আপডেট দিতে।
I'm the King of Dark
&
I rule over all Devils
•
Posts: 136
Threads: 0
Likes Received: 108 in 77 posts
Likes Given: 193
Joined: Mar 2020
Reputation:
1
অসাধারণ দাদা দ্বিতীয় প্রচ্ছদের জন্য শুভকামনা।
এইখানে ও দেখি শত্রুরা ওতপেতে আছে, KGF এর সেই Violence ডায়লগ টা মনে করাই দিলেন।
Posts: 928
Threads: 9
Likes Received: 1,804 in 406 posts
Likes Given: 939
Joined: Sep 2021
Reputation:
618
(14-04-2023, 06:31 AM)Thumbnails Wrote: অসাধারণ দাদা দ্বিতীয় প্রচ্ছদের জন্য শুভকামনা।
এইখানে ও দেখি শত্রুরা ওতপেতে আছে, KGF এর সেই Violence ডায়লগ টা মনে করাই দিলেন।
যেকোনো নাটক বা গল্পের প্রাণ হলো নেগেটিভ ক্যারেক্টার তাই ওটা তো থাকবেই।
ধন্যবাদ
I'm the King of Dark
&
I rule over all Devils
•
Posts: 74
Threads: 0
Likes Received: 48 in 45 posts
Likes Given: 11
Joined: Dec 2022
Reputation:
0
Dhannobad dada,update ta khub sundor hoyeche
Posts: 928
Threads: 9
Likes Received: 1,804 in 406 posts
Likes Given: 939
Joined: Sep 2021
Reputation:
618
(14-04-2023, 11:43 AM)Jaguar the king Wrote: Dhannobad dada,update ta khub sundor hoyeche
ধন্যবাদ
সঙ্গে থাকুন, পাশে থাকুন।
I'm the King of Dark
&
I rule over all Devils
•
Posts: 18
Threads: 0
Likes Received: 17 in 17 posts
Likes Given: 2
Joined: May 2019
Reputation:
0
Fantastic start for the new part. Really looking for next part.
Posts: 928
Threads: 9
Likes Received: 1,804 in 406 posts
Likes Given: 939
Joined: Sep 2021
Reputation:
618
(14-04-2023, 01:19 PM)skx1965 Wrote: Fantastic start for the new part. Really looking for next part.
ধন্যবাদ
সঙ্গে থাকুন
I'm the King of Dark
&
I rule over all Devils
•
Posts: 4,429
Threads: 6
Likes Received: 9,079 in 2,845 posts
Likes Given: 4,330
Joined: Oct 2019
Reputation:
3,224
(14-03-2023, 11:45 PM)Monen2000 Wrote:
৮ম পর্ব
বাড়িতে ফিরেও নিজেকে কিছুতেই শান্ত করতে পারে না তার ভিতরে কি যেন একটা অদ্ভুত অনূভুতি হচ্ছে সেটা যে কি সেটা আদিত্য নিজেও ঠিক বুঝতে পারছে না। খোলা ছাদে অস্থিরভাবে পায়চারী করতে থাকে, কিছুতেই নিজেকে শান্ত করতে পারে না খালি ছটফট করতে থাকে একবার পকেট থেকে সিগারেটের প্যাকেট বার করে একটা মুখে নিয়ে ধরাতে যাবে কিন্তু পারলো না থেমে গেল কারণ তখনই তার চোখের সামনে ভেসে উঠলো কিছুদিন আগে কোর্ট চত্ত্বরে দেখা এক যুবতীর মুখ সাথে কানে ভেসে ওঠে তার বলা কথা "স্মোকিং ইজ ইঞ্জুরিয়াস টু হেলথ, শোনেননি?, সিগারেট খাওয়া ছেড়ে দিন ওতে আপনারই ক্ষতি হচ্ছে"। সিগারেটটা আর ধরায়না আদিত্য আবার প্যাকেটে ঢুকিয়ে পকেটে রেখে দেয়, সে বুঝতে পারে না কেন তার খালি পিয়ালীর কথা মনে পড়ছে কেন চোখের সামনে শুধু পিয়ালীর মুখটা ভেসে উঠছে, আদিত্য বুঝতে পারে না পিয়ালীর মৃত্যুর খবর শুনে তার কেন এত খারাপ লাগছে? নিজের মন বলে যে বস্তুটাকে সে এতবছর ধরে নির্জীব পাথরে পরিণত করেছিল সেখানে যেন আবার প্রাণের স্পন্দন দেখা যাচ্ছে শুধু তাই নয় সেখানে এখন যেন একটা চিনচিনে ব্যাথাও অনুভব করছে। শেষে যেন জোর করেই নিজের ভিতর থেকে এই অনূভুতিটা বের করে দেওয়ার জন্যই আবার পকেট থেকে সিগারেট বার করে ধরিয়ে টান দিতে থাকে।
অ্যাক্সিডেন্টে প্রতাপ সরকারের পুরো পরিবারের মারা যাওয়ার ঘটনাটা বেশ কিছুদিন স্থানীয় লোকেদের চর্চার বিষয় থাকলো তার কারণ প্রতাপ সরকারকে এলাকার প্রায় সবাই যত না ভয় পেত তার চেয়ে বেশি ঘেন্না করতো আর হিউম্যান অর্গান স্মাগলিংএর মাথায় তিনি থাকায় সেই ঘেন্না আরও বেড়েছে তাই তার পরিবার মারা যাওয়ায় সবার মনেই "বেশ হয়েছে" গোছের মনোভাব তারা সবাই ধরেই নিয়েছে যে ঘটনায় প্রতাপ সরকারও মারা গেছেন তাই তার হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছেন এই মানসিকতাই সবার মধ্যে।
নিজেদের একটা চায়ের বাগানের পরিদর্শনে গিয়ে ওখানকার কর্মীদের মধ্যে এই ধরনের আলোচনাই কানে আসে আদিত্যর, মুখে তাদের কিছু না বললেও ভিতরে এক অদ্ভুত রাগ অনুভব করে বিশেষ করে যখন তারা প্রতাপ সরকারের পরিবার নিয়ে কথা বলে। তার স্থির বিশ্বাস প্রতাপ সরকার অপরাধী হতে পারে কিন্তু তার পরিবার নির্দোষ ছিল অথচ এখানকার কেউ সেকথা মানতেই চায় না অনবরত তারা প্রতাপ সরকারের পরিবারকে নিয়ে বাজে কথা বলতে থাকে বিশেষ করে তার মেয়েকে নিয়ে আর এতেই যেন আদিত্যর রাগের পারদ চড়তে থাকে, আদিত্য বোঝে বেশীক্ষণ ওখানে থাকলে নিজের রাগটাকে কন্ট্রোল করতে পারবে না তাই কোনোমতে সেখানকার কাজ শেষ করে বেরিয়ে পরে।
প্রকৃতির শান্ত রূপ অনেকসময় আগত ঝড়ের ইঙ্গিত করে অ্যাক্সিডেন্টে সরকাররা পরিবারসহ মারা যাওয়ার পরে নর্থবেঙ্গলে এরকমই শান্তি বিরাজ করছিল যদিও কেউ আঁচও করতে পারেনি যে এটা আগত ঝড়ের পূর্বাভাস যে ঝড়ের প্রভাব সবথেকে বেশি পরবে সিংহ রায়দের উপরে বা বলা ভালো আদিত্য সিংহ রায়ের উপরে আর এই ঝড়ের প্রাথমিক ধাক্কাটা পরলো চক্রবর্তী পরিবারে।
অদ্রিজা আর প্রীতিও তাদের প্যারেন্টসদের মতো বেস্টফ্রেণ্ড তাই মাঝে মাঝেই প্রীতি যেমন অদ্রিজাদের বাড়িতে গিয়ে ওর সাথে রাতে থেকে যায় ঠিক তেমনি মাঝে মাঝে অদ্রিজাও সিংহ রায় প্যালেসে এসে নিজের বান্ধবীর কাছে থাকে আর এখন তো সেটা আরও বেড়ে গেছে কারণ অতীন্দ্রবাবু ব্যাবসার কাজ সেরে শহরে ফিরলেই যে প্রীতির বিয়ের তোড়জোড় শুরু হবে কাজেই এখন দুই বান্ধবী যতটা পারে পরস্পরের সাথে সময় কাটিয়ে নিচ্ছে।
এরকমই একদিন কাজ সেরে দুই বান্ধবী সিংহ রায় প্যালেসে ফিরেছে অদ্রিজা আগেই নিজের মাকে জানিয়ে দিয়েছে এখানে থাকার কথা, রাতে ডিনার সেরে দুজনে প্রীতির রুমে অনেক রাত পর্যন্ত গল্প করছে একসাথে থাকলে এটাই ওদের স্বভাব হটাৎ অদ্রিজার ফোনে মিসেস চক্রবর্তীর ফোন এলো এবং প্রীতি লক্ষ্য করলো ফোনের অপরপ্রান্তের কথা শুনে অদ্রিজার মুখ ভয়ে ছোটো হয়ে গেল সে শুধু একবার বললো "আমি এখনই আসছি'বলেই তাড়াতাড়ি ঘর থেকে বেরিয়ে গেল, প্রীতি বারবার "কি হয়েছে" জিজ্ঞেস করা সত্ত্বেও সে দ্রুতপায়ে নীচে নেমে এলো উমাদেবী তখন ডাইনিং রুমে আদিত্যর সাথে বসে ডিনার করছিলেন, মাঝে মাঝেই আদিত্যর ফিরতে দেরী হয় তখন উমাদেবী ছেলের জন্য অপেক্ষা করেন।
অদ্রিজা আর প্রীতিকে ওইভাবে হন্তদন্ত হয়ে নামতে দেখে উমাদেবী যারপরনাই অবাক হন তিনি জিজ্ঞেস করেন "কি হয়েছে তোদের?", যদিও উত্তরটা প্রীতিই দেয় "দেখোনা মা, আন্টির ফোন এলো তারপরই ও কিছু না বলে এইরকম বেরিয়ে যাচ্ছে"। উমাদেবী এবার অদ্রিজাকে প্রশ্ন করেন "কি হয়েছে অদ্রি?"
"আন্টি মায়ের ফোন ছিল, বাপি এখনো বাড়ি ফেরেননি ওনার ফোনও সুইচড অফ" অদ্রিজা প্রায় কেঁদে ফেলে, কিন্তু উমাদেবী সান্ত্বনা দেওয়ার ভঙ্গিতে বলেন "আরে এতে ঘাবড়াবার কি আছে? অদ্রি তোমার বাপি একজন ডাক্তার কোনো এমার্জেন্সি কেস এসেছে বোধহয়"।
"সেরকম হলে বাপি ফোন করে জানিয়ে দেন"
"আজ হয়তো সুযোগ পাননি"
"জানিনা আন্টি, তবে মা ভয় পাচ্ছেন আমাকে এক্ষুনি যেতে বললেন"
"ঠিক আছে একটু দাঁড়াও আমরাও যাবো"।
অদ্রিজা যখন নিজের বাড়িতে পৌঁছালো তখনও সুবিমলবাবুর কোনো খবর নেই, চারুলতা দেবী সমানে কেঁদে চলেছেন, উমাদেবী এসে নিজের বান্ধবীকে সান্ত্বনা দিতে থাকেন কিন্তু তাতেও তার কান্না থামে না, অদ্রিজা সুবিমলবাবু যেতে পারেন এমন সম্ভাব্য সব জায়গায় ফোন করে খোঁজ নিয়েছে কিন্তু কোথাও খোঁজ পায়নি, শেষপর্যন্ত প্রীতি নীলাদ্রিকে ফোন করে, ঘটনা শোনার আধঘন্টার মধ্যেই নীলাদ্রি অদ্রিজাদের বাড়িতে চলে আসে।
এখানে আসতে আসতে নীলাদ্রি আশেপাশের বেশ কয়েকটা থানায় খবর দিয়ে দিয়েছে সেখানেও খোঁজ চালু হয়ে গেছে। সুবিমলবাবু কোথায় যেতে পারেন ওনার দৈনন্দিন অভ্যাস ইত্যাদি যাবতীয় পুলিশি প্রশ্নের উত্তর অদ্রিজার কাছ থেকে জেনে নিয়ে সেসবও খোঁজ করেন কিন্তু বৃথাই সুবিমলবাবুর কোনো খোঁজ পাওয়া যায় না। শুধু নীলাদ্রিও নয় আদিত্যও সুবিমলবাবুর খোঁজে বেরিয়েছিল কিন্তু ভোরে সেও এসে জানায় সুবিমলবাবুর খোঁজ সে পায়নি, এতে যেন চারুলতা দেবী একেবারে ভেঙে পড়েন, শুধু তিনি একা নন এবার অদ্রিজাও কান্নায় ভেঙে পড়ে প্রীতি তাদের সান্ত্বনা দিতে থাকে "আরে অদ্রি এভাবে ভেঙে পড়লে চলে? এখনো তো নীলাদ্রি আসেনি ও আসুক ও তো কোনো খোঁজ পেলেও পেতে পারে" কিন্তু এই সান্ত্বনায় অদ্রিজা কতটা শান্ত হয় সেটা ওর মুখ দেখে বোঝা যায় না।
দুপুর দুটো বাজার একটু পর অদ্রিজাদের বাড়ির বাইরে একটা গাড়ি থামার আওয়াজ শোনে সবাই এবং মুহূর্ত পরের ভিতরে ঢোকেন নীলাদ্রি সান্যাল তবে এখন পরনে পুরোদস্তুর পুলিশের উর্দি। ওকে দেখে চারুলতা দেবী আশান্বিত হয়ে তাকান অদ্রিজাও জিজ্ঞেস করে "নীলাদ্রি বাবু আমার বাপির কোনো খোঁজ পেলেন?"
নীলাদ্রি কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে পকেট থেকে দুটো এভিডেন্স সংগ্ৰহ করার প্যাকেট বার করে এগিয়ে দিয়ে বলে "দেখুন তো এগুলো চিনতে পারেন কি না?"। একটা প্যাকেটের মধ্যে একটা রিস্ট ওয়াচ রয়েছে যেটার সামনে ডায়ালের উপরের কাঁচ ভাঙা আর ভিতরে কাঁটা বন্ধ হয়ে গেছে, এবং ঘড়িটার চেনে কিছুটা শুকনো রক্তের দাগ লেগে আছে আর অপর প্যাকেটের মধ্যে একটা ভাঙা মোবাইল, স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে কোনো ভারী কিছুর আঘাতে মোবাইলটা ভেঙেছে, অদ্রিজা প্যাকেট দুটোনীলাদ্রির হাত থেকে প্রায় ছিনিয়ে নিয়ে ডুকরে কেঁদে ওঠে কোনোমতে বলে "এটা তো বাপির ঘড়ি, এটা কোথায় পেলেন?"
নীলাদ্রি আবার জিজ্ঞেস করে "আপনি নিশ্চিত যে এটা সুবিমলবাবুর ঘড়ি?"
"হ্যাঁ, নীলাদ্রি বাবু বাপির লাস্ট বার্থডে তে এটা আমিই গিফ্ট দিই বাপিকে, কিন্তু বাপি কোথায়?"
নীলাদ্রি গম্ভীর কণ্ঠে বলে "আর এই মোবাইল?"
"এটাও আমার বাপির, কিন্তু আমার বাপি কোথায় নীলাদ্রি বাবু?"
"ওনার সঠিক হদিশ এখনো আমরা পাইনি, আর হয়তো পাবোও না খুব সম্ভবত তিনি মারা গেছেন আরও স্পষ্ট করে বললে খুন হয়েছেন" কথাটা শুনেই চারুলতা দেবীর মুখ ফ্যাকাশে হয়ে যায়।
"নীলাদ্রি বাবু" একটু চেঁচিয়ে ওঠে অদ্রিজা, তারপর নিজেকে সংযত করে বলে "এসব কি বলছেন আপনি?"
"নিজেকে সামলান মিস চক্রবর্তী কারণ আপনার মাকেও আপনাকেই সামলাতে হবে"
"কিন্তু নীলাদ্রি তুমি বলছো আঙ্কেলের কোনো খোঁজ পাওনি, তাহলে শুধুমাত্র ঘড়ি আর মোবাইলের ভিত্তিতে কিভাবে এই কথা বলছো?" মাঝখানে প্রীতি কথা বলে, নীলাদ্রিও দৃঢ়ভাবে উত্তর দেয় "উপযুক্ত প্রমাণ ছাড়া আমি কিছু বলিনা প্রীতি"
"কিন্তু কে আঙ্কেলকে খুন করবে কেন করবে, আর কি প্রমাণ পেয়েছো?"
"হয়তো তিনি কারো জন্য সমস্যার সৃষ্টি করছিলেন বা কারো কোনো গোপন কথা জেনে ফেলেছিলেন"
"এসব কি বলছেন আপনি নীলাদ্রি বাবু?" অদ্রিজার গলায় তখনও অবিশ্বাস, নীলাদ্রি শান্তভাবে বলে চলে "এগুলো আমরা যেখানে পেয়েছি সেখানে অনেকটা জায়গা জুড়ে রক্তের দাগ পাই যেমনটা কেউ শরীরে গুরুতর আঘাতের পরে রক্তাক্ত অবস্থায় অনেকক্ষণ পরে থাকলে হয়, আমাদের ফরেনসিক এক্সপার্টরা জানায় ওখানে দুজন আলাদা মানুষের ব্লাড স্যাম্পল আছে, আমার অনুমান যদি খুব ভুল না হয় তাহলে একজন সুবিমলবাবু অবশ্য অপরজন কে সেটা এখনো জানিনা"।
এবার আদিত্য কথা বলে " কিন্তু আপনার কাছে এমন কি প্রমাণ আছে যাতে আপনি ওনাকে মৃত বলে ঘোষণা করছেন"
এইসময় চারুলতা দেবী আবার জোরে কেঁদে ওঠেন কিন্তু নীলাদ্রি তাতে কর্নপাত না করে আদিত্যর সামনে এসে বলে "সেসব বলছি তবে তার আগে আদিত্যবাবু আপনাকে কয়েকটা প্রশ্ন করতে পারি?"
"আমাকে?" আদিত্য যে বেশ অবাক হয়েছে সেটা ওর কথাতেই বোঝা যাচ্ছে, তবুও যতটা সম্ভব স্বাভাবিক স্বরে বলে "করুন"।
"গতকাল সারাদিন আপনি কোথায় কোথায় ছিলেন এবং কি কি কাজ করেছেন?"
"হটাৎ এই প্রশ্ন অফিসার?"
"কারন আছে আদিত্য বাবু"
"কারনটা জানতে পারি?"
"যথাসময়েই বলবো, আগে আপনি আমার প্রশ্নের উত্তর দিন"
আদিত্য লক্ষ্য করলো ঘরে উপস্থিত সবার দৃষ্টি সোজা তার দিকে নিবদ্ধ,এমনকি প্রীতি আর উমাদেবীর দৃষ্টিও সটান তার দিকে, আদিত্যকে চুপ থাকতে দেখে নীলাদ্রি আবার জিজ্ঞেস করে "কি হলো বলুন?"
"কাজে ছিলাম"
"কি কাজ?"
"কাজ তো একটা নয় যে ধরে ধরে হিসাব দেবো"
"নীলাদ্রি তুমি কি বলতে চাইছো বলোতো?" কথাটা বললেন উমাদেবী এবং তিনি নীলাদ্রির প্রতি বেশ বিরক্ত হয়েছেন সেটা স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে, তবে নীলাদ্রি উত্তরটা শান্তভাবেই দিল "বলছি তবে আগে আদিত্যবাবু আমার প্রশ্নের পরিষ্কার উত্তর দিক"।
"আমি আমাদের একটা চায়ের বাগান আর ফ্যাক্টরি পরিদর্শনে গিয়েছিলাম"
"সেখানে কতক্ষণ ছিলেন?"
"আপনার উদ্দেশ্যটা কি একটু বলবেন অফিসার? এবার আদিত্যর গলাতেও বিরক্তি, তবে এবার নীলাদ্রি শান্তভাবে কথাটা বললেও কথায় যথেষ্ট শ্লেষ মেশানো ছিল, "আপনাদের চা ফ্যাক্টরিগুলোতে আমি খোঁজ নিয়েছি, আপনি একটা ফ্যাক্টরিতে ছিলেন ঠিকই কিন্তু বেশীক্ষণ নয় সেখানে যাওয়ার কিছুক্ষণ পরে দুপুরের আগেই একটা ফোন পেয়ে বেরিয়ে আসেন, ফোনটা কার ছিল একটু বলবেন?"
"সেটা আপনার জানার বিষয় নয়" এবার শুধু বিরক্তি নয় চাপা রাগও প্রকাশ পেল আদিত্যর কথায় তবে এবারও নীলাদ্রি নির্ভীকভাবেই উত্তর দিল "অবশ্যই জানার বিষয় কারণ ফোনটা ছিল সুবিমলবাবুর"
নীলাদ্রির এই কথা শুনে শুধু যে আদিত্য চমকে উঠলো তাই নয় ঘরের বাকিরাও চমকে উঠলো, এবার আবার নীলাদ্রি কথা বলা শুরু করলো এবং এবার কথায় শ্লেষের পরিমাণ আরও বেশী "আমি সুবিমলবাবুর কল লিস্ট বার করিয়ে চেক করেছি সেখানে লাস্ট কলটা আপনার নম্বরে করা হয়েছিল, আপনাদের মধ্যে কি কথা হয়েছিল একটু বলবেন?"
আদিত্য উত্তর না দিয়ে চুপ করে একদৃষ্টিতে নীলাদ্রির দিকে তাকিয়ে থাকে, আদিত্যকে চুপ থাকতে দেখে বোধহয় নীলাদ্রির সাহস বেড়ে যায় সে আবার বলে "বলুন"
"নীলাদ্রি এবার কিন্তু তুমি বাড়াবাড়ি করছো, তুমি কি প্রমাণ করতে চাইছো?' উমাদেবী এবার সত্যি সত্যিই রেগে গেছেন, কিন্তু নীলাদ্রি কিছু বলার আগে তাকে অবাক করে দিয়ে প্রীতি বলে ওঠে "মা তুমি একটু শান্ত হও নীলাদ্রি কিছু একটা আন্দাজ করেই কথাগুলো বলছে"।
"শান্ত হবো মানে? ও তোর দাদাকে.."
"আন্টি, আমি যা করছি সেটা একজন পুলিশ অফিসার হিসেবে করছি তাই আপনার খারাপ লাগলেও আমার কিছু করার নেই" উমাদেবীকে কথাটা শেষ করতে না দিয়ে নীলাদ্রি বলে ওঠে, তারপর আবার আদিত্যকে বলে "কি কথা হয়েছিল বলুন? আচ্ছা আপনারা কি দেখা করেছিলেন?"
"না" ছোট্ট উত্তর দেয় আদিত্য, কিন্তু উত্তর শুনে নীলাদ্রির ঠোঁটে বাঁকা হাসি ফুটে ওঠে, এবার সে স্পষ্ট বলে "মিথ্যা বলে ভুল করে ফেললেন"
"মিথ্যা?"
"হ্যাঁ, আদিত্যবাবু মিথ্যা কারণ আমি জানি আপনার সাথে সুবিমলবাবুর দেখা হয়েছিল এবং আমার কাছে তার প্রমাণও আছে আর সাক্ষী আছে"
"কি প্রমাণ আর কে সাক্ষী?"
"প্রমাণটা পরে দেখাচ্ছি আগে সাক্ষীদের ডাকি?" এতটা বলে বাইরে থাকা কারো উদ্দেশ্যে আদেশ দিল নীলাদ্রি "ওদের ভিতরে নিয়ে এসো" একটু পরেই দুজন কনস্টেবলের সাথে ঘরের ভিতরে প্রবেশ করলো মনোহরবাবু আর মলয় এদের একজনের মাথায় ব্যাণ্ডেজ বাধা আরেকজনের হাতে বোঝাই যাচ্ছে গুরুতর আহত দুজন। ঘরে ঢোকার প্রায় সাথে সাথেই মনোহরবাবু আদিত্যকে দেখিয়ে চেঁচিয়ে উঠলেন ওই.. ডাক্তারবাবুকে মেরেছে, ওই মেরেছে, আমাদের ডাক্তারবাবুকে মেরে ফেলেছেন" বলতে বলতে তার চোখ থেকে জল বেরিয়ে আসে।
কথাটা শোনার সঙ্গে সঙ্গেই যেন জ্বলে উঠলো আদিত্য, ক্রুদ্ধ স্বরে "শয়তান কোথাকার" বলে দ্রুতপায়ে ওদের কাছে গিয়ে দুহাতে দুই বাপ-ব্যাটার গলা টিপে ধরলো, সঙ্গে সঙ্গে যদিও নীলাদ্রি ছাড়াতে এলো কিন্তু ব্যর্থ হলো শেষে উমাদেবীর ধমকের সুরে "আদিত্য কি করছিস? ছাড় ওদের" শুনে ছেড়ে পিছিয়ে এলো আদিত্য তারপর উমাদেবীর সামনে দাঁড়িয়ে বললো "মা ওরা মিথ্যা কথা বলছে আমি সুবিমলবাবুকে মারিনি তুমি বিশ্বাস করো"।
"আমরা মিথ্যা বলছি না তুমি বলছো?"আবার মনোহরবাবু বলে উঠলেন, এবার শুধু মনোহরবাবু নয় মলয়ও বলতে শুরু করে "না আমার বাবা মিথ্যা বলছে না আমিও ছিলাম আমার বাবার সাথে"এতটা বলেই মলয়কে থামতে হলো কারণ আদিত্য আবার চিৎকার করে উঠলো "মলয়, শয়তান কোথাকার আমি তোদের শেষ করে ফেলবো" কথাটা বলেই আবার আদিত্য মলয়ের দিকে এগোতে যেতেই নীলাদ্রি ওদের মাঝে এসে আদিত্যকে বাঁধা দেয়, মলয় ভয়ার্ত কণ্ঠে বলে "দেখেছেন কিভাবে থ্রেট করছে আমাদের তাও সবার সামনে তাহলে ভাবুন সুবিমলবাবুর সাথে কি করেছে ও"।
"মলয়" আবার চিৎকার করে ওঠে আদিত্য এবার নীলাদ্রিও চেঁচিয়ে ওঠে "চুপ করুন চেঁচিয়ে নিজের অপরাধকে ঢাকতে পারবেন না"। মলয় আবার শুরু করে "বজরঙবলি মন্দিরে পূজো দিতে গিয়েছিলাম আমরা সেখানে পূজো দিয়ে ফিরছি হটাৎ দেখি আদিত্য মন্দির থেকে কিছুটা দূরে যে খাড়াই জায়গাটা আছে সেদিকে যাচ্ছে আমরা একটু অবাক হই কারণ জানি আদিত্য পূজোআচ্চা করে না আমি ওকে দুবার ডাকিও কিন্তু ও আমাদের পাত্তা দেয় না দেখে আমরা ওর পিছনে যাই আসলে মনে হলো ওর একটু তাড়ায় আছে"এতটা বলে মলয় থামে তারপর একটু ঢোঁক গিলে আবার শুরু করে "কিছুক্ষণ ওকে খুঁজে পাইনা আমরা খুঁজতে খুঁজতে কিছুটা ফাঁকা জায়গায় চলে যাই সেখানে একটা চিৎকার শুনে সেদিকে দৌড়ে গিয়ে দেখি" আতঙ্কে মলয় আবার চুপ করে, আদিত্য তখন রাগে বড়ো বড়ো নিঃশ্বাস ফেলছে কিন্তু নীলাদ্রি ওর সামনে থাকায় কিছু করতে পারে না।
"আমরা দেখি আদিত্য হিংস্রভাবে একটা ছুরি দিয়ে সুবিমলবাবুকে একের পর এক আঘাত করছে আর আরো একজন রক্তাক্ত অবস্থায় মাটিতে পড়ে আছে যাকে আমি ঠিক চিনতে পারিনি ওখানে আরও কয়েকজন ছিল যারা সুবিমলবাবুর দুটো হাত ধরে রেখেছিল, ওর এই রূপ দেখে আমরা ভয়ে...ভয়ে কাঠ হয়ে যাই কিন্তু হটাৎই আ...আদিত্য আমাদের দেখতে পায় আর সঙ্গে সঙ্গে ওরা আমাদের তাড়া করে কিন্তু কোনোমতে আমরা মন্দিরে ফিরে গাড়িতে উঠে তাড়াতাড়ি বেরিয়ে যাই কিন্তু মাঝরাস্তায় একটা ছোটো অ্যাক্সিডেন্ট হয়" মলয়ের কথাটা শেষ হবার সঙ্গে সঙ্গে আবার আদিত্য ওদের দিকে তেড়ে যাচ্ছিল কিন্তু এবার নীলাদ্রি আবার ওদের মাঝখানে এসে দাঁড়ায়। "নীলাদ্রি ওরা মিথ্যা বলছে" আদিত্য বললেও তার কথায় যে নীলাদ্রি বিশ্বাস করেনি সেটা ওর পরের কথাতেই বোঝা যায়,
"উঁহু ওরা নয় মিথ্যা আপনি বলছেন আমার কাছে তার প্রমাণ আছে"
"কি প্রমাণ?" এই কথাটা অবশ্য বলেন উমাদেবী, চারুলতা দেবী আর অদ্রিজা একটা কথাও বলেনি বা বলা ভালো ওনারা বলার অবস্থাতেই নেই এতটাই শক পেয়েছেন।
"ওটা নিয়ে এসো" নীলাদ্রি একজন কনস্টেবলকে আদেশ দিতেই সে বাইরে গিয়ে আবার একটা প্যাকেট হাতে ভিতরে আসে তবে এবারের প্যাকেটটা একটু বড়ো এবং তার মধ্যে একটা সাদা গেঞ্জি এবং একটা কালো শার্ট আছে, শার্টে অতটা বোঝা না গেলেও সাদা গেঞ্জিটা যে লাল রঙে মাখামাখি হয়ে আছে সেটা যে রক্তের সেটা বুঝতে কারোরই বাকি থাকে না, প্যাকেটটা সামনে তুলে ধরে নীলাদ্রি জিজ্ঞেস করে "দেখুন তো এই শার্টটা চিনতে পারছেন কি না?, আদিত্যবাবু চিনতে পারছেন?"
কেউ কোনো কথা না বললেও সবাই একবার প্যাকেটের দিকে এবং আরেকবার আদিত্যর দিকে তাকাচ্ছে, আদিত্যও কোনো কথা না বলে চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকে, নীলাদ্রি বলে চলে "এটা যে আদিত্যর শার্ট আর গেঞ্জি সেটা নিয়ে আশা করি কারো সন্দেহ নেই এবং এতে যে রক্ত লেগে আছে সেটাও পরীক্ষায় প্রমাণিত আরো একটা কথা এই শার্টেও দুটো আলাদা ব্লাডের ট্রেস পেয়েছে আমাদের ফরেনসিক এক্সপার্ট যার একটা এই ঘড়িতে লেগে থাকা রক্তের সাথে ম্যাচ করেছে এবং এই রক্তের গ্ৰুপ এ পজিটিভ যেটা ডক্টর সুবিমল চক্রবর্তীরও ব্লাডগ্ৰুপ যেটা আমি গতকাল রাতে মিস চক্রবর্তীর সাথে কথা বলে জেনেছিলাম আর অপরটা সেই অজানা ব্যাক্তির রক্তের সাথে ম্যাচ করেছে। এবার আপনাদের মনে হয়তো প্রশ্ন জাগছে যে এই শার্ট আমি কোথা থেকে পেলাম? তাহলে বলি সিংহ রায় প্যালেসের আশেপাশে আমি পুলিশের ইনফর্মার নিযুক্ত করেছিলাম একটা বিশেষ কারনে, সেই আমাকে একটা খবর দেয় গতকাল রাতে মিস্টার আদিত্য সিংহ রায় সামনের গেট দিয়ে না পিছনের গেট দিয়ে লুকিয়ে বাড়িতে ঢোকেন মিস্টার আদিত্য ভুল বলছি আমি?" প্রশ্নটা করে নীলাদ্রি বোধহয় আদিত্যর উত্তরের জন্য একটু থামে কিন্তু আদিত্যকে চুপ থাকতে দেখে নিজেই আবার বলতে শুরু করে "যখন তিনি বাড়িতে ঢোকেন তখনও তার শার্টে লাল রঙের কিছু একটা লেগে থাকতে দেখে আমার ইনফর্মার, সনাতন বাবুও এটা লক্ষ্য করেছিলেন যদিও সেটা রক্ত কি না সেটা তারা কেউই কনফার্ম করেনি"
"আজ ভোর ভোর মনোহরবাবু আর মলয় থানায় এসে আমাকে সব বলেন সঙ্গে সঙ্গে আমি স্পটে যাই সেখানে মন্দির থেকে কিছুটা দূরে প্রথমে রাস্তার একপাশে সুবিমলবাবুর গাড়িটা দেখতে পাই যেটার পিছনের একটা টায়ার বুলেট লেগে ফেটে গেছে, তারপর আশেপাশে অনেকটা এলাকায় খোঁজ শুরু করি কিন্তু তন্নতন্ন করে খুঁজেও এই মোবাইল আর ঘড়ি ছাড়া আর কিছু পাইনা যদিও যেখানেগুলো পাই সেখানে কিছুটা জায়গায় রক্তের দাগও ছিল, এটা আগেই বলেছি, এরপর আমি ওই মন্দিরের পুরোহিত এবং ওখানকার আরও কয়েকজন লোকের সাথে কথা বলি তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করি তখন তাদের কয়েকজন জানায় তে গতকাল দুপুরবেলা মন্দিরে লোক সমাগম কিছুটা কম ছিল অল্প কয়েকজন ট্যুরিস্ট ও কয়েকজন ভক্তবৃন্দ ছিল হটাৎই একটা কানফাটানো আওয়াজ শুনতে পায় এবং তারা সেটা লক্ষ্য করে খোঁজ করতে গিয়ে দেখে একটা গাড়ি থেকে দুজন লোক নেমে পালানোর চেষ্টা করছে একজন যে সুবিমলবাবু সেটা তারা ছবি দেখে কনফার্ম করেছে আর অপরজনের মুখে দাঁড়ি গোঁফ থাকায় তারা চিনতে পারেনি, একটু পরেই সেখানে আরো একটা গাড়ি আসে যেটা থেকে কয়েকজন গুণ্ডা প্রকৃতির লোক নেমে আগের দুজনকে ধাওয়া করে আর প্রায় পরপরই একটা জিপে করে আরো একজন আসে সেও ওই কিছুক্ষণ খোঁজাখুঁজি করে আগের লোকগুলোর দিকেই চলে যায়, এবারও আদিত্যর ছবি দেখাতে তারা তাকে আইডেন্টিফাই করেছে"
নীলাদ্রি একটু থেমে আবার বলতে শুরু করে "এরপর আমি সনাতন বাবুর সাথে দেখা করি উনি প্রথমে রাজী হচ্ছিলেন না কিন্তু পরে ওনাকে প্রীতি বলাতে উনি রাজী হন এবং তারপর আদিত্যর রুম থেকে এই শার্ট এবং গেঞ্জি উদ্ধার করি, যেকোনো কারনেই হোক এগুলো তখনও পর্যন্ত লোপাট করেননি বা করার সুযোগ পাননি তাইতো মিস্টার আদিত্য?"।
আদিত্য এবারও চুপ করে থাকে দেখে নীলাদ্রি বিদ্রুপের স্বরে বলে "কি কিছু বলবেন না? অবশ্য আপনার বলার কিছু নেই, শুধু একটা কথা বলুন কেন মারলেন সুবিমলবাবুকে? আর ওনার বডিটার কি করেছেন?"।
আদিত্য তখনও কোনো কথা না বলে চুপ করে থাকে দেখে নীলাদ্রি আবার বলে "আপনি ফেঁসে গেছেন আদিত্য বাবু, অপরাধী অপরাধ করে কখনো পার পায় না, আপনিও পাবেন না একটা ভুল আপনাকে ধরিয়ে দিল এই শার্ট আর গেঞ্জিটা লোপাট করতে ভুলে গিয়েছিলেন তাইতো? অবশ্য লোপাট করলেও আমি খুঁজে বার করতামই"
"আপনি ভুল করছেন অফিসার, আমি সুবিমলবাবুকে মারিনি" এতক্ষণে আদিত্য কথা বলে।
"তাহলে আপনার শার্টে রক্ত এলো কোথা থেকে, বলুন" নীলাদ্রি চিৎকার করে ওঠে, কিন্তু আদিত্য এই কথার কোনো উত্তর দেয় না। নীলাদ্রি বলে "আমি বলি? পুরোটাই যদিও আমার অনুমান তবে আমার অনুমান যে সঠিক সেটা আমি নিশ্চিত। ওই দ্বিতীয় লোকটি কে সেটা আমি না জানলেও অনুমান করতে পারি উনি হয়তো আপনার হয়ে কাজ করা কেউ, বা এমনও হতে পারে যে উনি কোনোভাবে আপনার বিষয়ে কোনো গোপন কথা জেনে গিয়েছিলেন ফলে আপনার লোক তাকে মারার জন্য তাড়া করছিল এখন পালানোর পথে হয়তো সুবিমল বাবুর সাথে লোকটির দেখা হয় সুবিমলবাবু এই এলাকায় শুধু একজন বিখ্যাত ডাক্তারই নন সাথে একজন গণ্যমান্য লোক তাই হয়তো লোকটা তার কাছে বাঁচার জন্য সাহায্য চেয়েছিল কিন্তু সুবিমলবাবু একটা ভুল করলেন তিনি কথাটা আপনাকেই ফোন করে জানালেন, হয়তো সেই লোকটা আপনার নাম বলেনি বা সে আপনাকে অন্য কোনো পরিচয়ে চিনতো যেটা সুবিমলবাবুর জানার কথা নয় তাই তিনি আপনাকে ফোন করেন হাজার হোক আপনার এখানে একটা মানবদরদী ইমেজ আছে, কিন্তু এর ফলে আপনি তাকেও পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেওয়ার প্ল্যান করলেন, ইতিমধ্যে আপনার লোকেরা তার গাড়ির টায়ার ফাটিয়ে দেওয়ায় তিনি পালাতে পারলেন না চেষ্টা করেছিলেন কিন্তু ব্যার্থ হলেন তারপর আর কি ওনাদের নৃশংসভাবে খুন করে বডি গায়েব করে দিলেন"।
"আপনি পুলিশে জয়েন না করে গল্প লেখক হতে পারতেন আপনার কল্পনাশক্তি দারুণ কিন্তু এক্ষেত্রে আপনার গল্পটা একটু ক্লিশে টাইপের শোনাচ্ছে বলে মনে হয় না কি?" নীলাদ্রি চুপ করতেই আদিত্য ব্যাঙ্গাত্মক স্বরে বলে, কিন্তু নীলাদ্রিও সমানভাবে বলে "এটা আমার অনুমান আগেই বলেছি পুরোটা তো আপনি বলবেন জেল কাস্টডিতে, আর প্রমাণ হিসেবে আপনার শার্ট আর গেঞ্জি তো রইলোই।
"হাউ কুড ইউ.. এরকম কেন করলেন কিভাবে করতে পারলেন আপনি?" আদিত্য কিছু বলতে যাচ্ছিল কিন্তু তার।আগেই আদিত্যর সামনে এসে ওর জামার কলারদুটো জোরে টেনে কাঁদতে কাঁদতে এবার কথাটা বললো অদ্রিজা কিন্তু আদিত্য ওকে একটাও কথা বললো না অদ্রিজা আবার একই প্রশ্ন করলো আদিত্যকে তবে এবার আদিত্যর দুগালে ঠাস ঠাস করে চড়ও মারতে শুরু করলো কিন্তু আদিত্য কোনো প্রতিবাদ বা বাধা দেওয়ার চেষ্টা না করে চুপচাপ দাঁড়িয়ে সহ্য করতে থাকে,হটাৎ প্রীতি "চারু আন্টি" বলে আর্তনাদ করে ওঠে এবং সবাই দেখে তিনি অজ্ঞান হয়ে গেছেন সঙ্গে সঙ্গে অদ্রিজা আদিত্যকে ছেড়ে মায়ের কাছে যায়।
"নীলাদ্রি তোমার কোথাও ভুল হচ্ছে" উমাদেবী এতক্ষণে কথা বলেন, উত্তরটা নীলাদ্রি বেশ শান্তভাবেই দেয় "না আন্টি আমার কোনো ভুল হচ্ছে না"।
"আদিত্য এরকম করতে পারে না, কোথাও ভুল বোঝাবুঝি হচ্ছে" উমাদেবী আবার বললেন, তার উত্তরে নীলাদ্রি যেটা বললো সেটার জন্য ঘরের কেউই প্রস্তুত ছিল না এমনকি খোদ আদিত্যও নয়,
"ঠিক বলেছেন আন্টি আদিত্য একাজ করতে পারে না, কিন্তু এই যিনি আমাদের সামনে দাঁড়িয়ে আছেন যাকে আপনারা আদিত্য বলে ভাবছেন সে আসলে আদিত্য নয় সে আসলে একটা ফ্রড"
মুহূর্তে ঘরের মধ্যে যেন বজ্রপাত হলো, উমাদেবী তবুও বলেন "নীলাদ্রি, তুমি কি বলছো সেটা বুঝতে পারছো?"
"আমার কাছে তার প্রমাণ আছে"।
"কি প্রমাণ"
উমাদেবী কথা বললেও আদিত্য সেই যে চুপ করেছে এখনও চুপ করেই আছে, এবার নীলাদ্রি পকেট থেকে তার ওয়ালেটটা বার করে সেটার ভিতর থেকে একটা ছোটো ফটো বার করে উমাদেবীর হাতে দিয়ে বলে "দেখুনতো চিনতে পারছেন কি না?"
উমাদেবী দেখেন ছবিটা বেশ পুরনো তাতে দুটো ১৩-১৪ বছরের ছেলে একে অপরের কাঁধে হাত দিয়ে হাসিমুখে দাঁড়িয়ে আছে তাদের পরনে কলেজ ইউনিফর্ম, উমাদেবী ছবির একজন ছেলেকে ইঙ্গিত করে বলেন "এটা তো আমার আদিত্য আর অপরটা..."
"অপরটা আমি" নীলাদ্রি কথাটা শেষ করে তারপর একটু থেমে বলে "আমি ছোটোবেলায় এই এলাকাতেই থাকতাম, আদিত্য শুধু যে আমার ক্লাসমেট ছিল তাই নয় ও আমার বেস্টফ্রেণ্ড ছিল, এমনকি বাবার ট্রান্সফার হওয়ার পরে যখন আমরা এখান থেকে চলে তাই তারপরেও আমার সাথে আদিত্যর নিয়মিত যোগাযোগ ছিল, মাঝে মাঝেই আমরা বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে গিয়ে মিট করতাম, ও ওর সব শিকারের ঘটনা, অ্যাডভেঞ্চারের ঘটনা আমাকে বলতো কিন্তু ৭ বছর আগে একদিন হটাৎই আমাকে জানায় আমি যেন দেরী না করে বাবাকে নিয়ে গ্যাংটকে যাই খুব দরকার, ডিটেইলস কিছু না বললেও এটা বলে যে ও ওখানে একটা মারাত্মক ক্রাইম আর ক্রিমিনালদের খোঁজ পেয়েছে কিন্তু লোকাল পুলিশের উপরে ভরসা করতে পারছে না, ও জানতো আমার বাবার তখন প্রমোশন হয়েছে তিনি কমিশনার হয়েছেন তাই আমাদের ডেকেছিল কিন্তু আমাদের যেতে দুটো দিন দেরী হয়েছিল যে হোটেলে ওর থাকার কথা ছিল সেখানে গিয়ে শুনি.."
"কি..কি শোনো" উমাদেবীর গলা কাঁপছে, কিন্তু এবার দেখা গেল নীলাদ্রির গলাও কাঁপছে অতিকষ্টে ও কান্নাটাকে চেপে রেখেছে বললো "একটা অ্যাক্সিডেন্টে আদিত্য সিংহ রায় বলে একজনের মৃত্যু হয়েছে"।
"নীলাদ্রি কি আবোলতাবোল বকছো, এই তো আদিত্য আমার সামনে দাঁড়িয়ে" উমাদেবী কথাগুলো বললেন বটে কিন্তু তার গলায় জোর কমে এসেছে, নীলাদ্রি আবার বলে "আমরা হাসপাতালে খোঁজ নিয়েছিলাম ওরা কনফার্ম করেছিল"।
"আমি তোমার কোনো কথা বিশ্বাস করি না নীলাদ্রি"
"ডিএনএ রিপোর্ট তো বিশ্বাস করবেন?" কথাটা বলে নীলাদ্রি আবার একজন কনস্টেবলকে ইশারা করতেই সে বেরিয়ে গিয়ে একটা রিপোর্ট এনে উমাদেবীকে দেয়, নীলাদ্রি বলতে থাকে "এখানে এসে আমি যখন শুনি আদিত্য বেঁচে আছে আমি প্রথমে অবাক হলেও পরে খুব খুশী হই কিন্তু যখন দেখি এই আদিত্য সেজে থাকা ব্যাক্তিটি আমাকে চিনতে পারলেন না তখন আমি নিশ্চিত হলাম যে এ আদিত্য নয় কারণ আদিত্য আমাকে ভুলে যাবে এটা হতে পারে না তাই আমি প্রীতিকে সব কথা বলে ডিএনএ টেস্টের জন্য স্যাম্পল জোগাড় করালাম, ওই জোগাড় করে দিল রিপোর্টটা দেখুন ওতে স্পষ্ট লেখা আছে এই আদিত্যর সাথে অতীন্দ্র আঙ্কেলের ডিএনএ রিপোর্ট ম্যাচ করছে না, এমনকি আমি শিওর যে যদি এর ব্লাড টেস্টও করা হয় তাহলে এর ব্লাডগ্ৰুপও আদিত্যর ব্লাডগ্ৰুপের সাথে ম্যাচ করবে না"।
"চুপ করো তুমি"উমাদেবী চেঁচিয়ে ওঠেন, প্রীতি তাকে শান্ত করতে গেলে তিনি তাকেও সরিয়ে দেন তারপর সোজা আদিত্যর কাছে এসে তার সোজাসুজি দাঁড়িয়ে বলেন "আদিত্য ওরা কি বলছে, তুই নাকি আমার ছেলে নোস আমি বিশ্বাস করি না শুধু তুই একবার বল যে ওরা মিথ্যা বলছে একবার বল" কথাটা বলতে বলতে উমাদেবী আদিত্যর ডানহাত নিয়ে নিজের মাথায় চেপে ধরেন কাঁদতে কাঁদতে বলেন "তোকে আমার দিব্যি একবার বল যে ওরা মিথ্যা বলছে তুই আমার আদিত্য"। আদিত্য কিছু বলে না মাথা নীচু করে থাকে, সেটা দেখে উমাদেবী আবার বলেন "মাথা নীচু করে থাকিস না আদিত্য, একবার শুধু বল যে তুই আমার আদিত্য আমার ছেলে আদিত্য"।
আদিত্য এবার মুখে কিছু বলে না শুধু মাথাটা দুদিকে নাড়িয়ে না বলে, উমাদেবীর মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়ে তিনি আদিত্যর (নাকি আদিত্য বলাটা ঠিক হবে না তবে আপাতত আদিত্যই বলা যাক) হাতটা ছেড়ে দুপা পিছিয়ে গেলেন তিনি আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারেন না প্রায় নীচে পরে যাচ্ছিলেন, আদিত্য তাকে ওই অবস্থায় দেখে "মা" বলে ধরতে গেল কিন্তু তার আগেই প্রীতি নিজের মাকে ধরে ফেললো আর এক হাত আদিত্যর দিকে বাড়িয়ে তাকে বললো "ডোন্ট টাচ হার, ডোন্ট টাচ মাই মাদার ইউ মার্ডারার"। বলে মাকে চারুলতা দেবীর পাশে একটা সোফায় বসিয়ে দেয়।
"প্রীতি, বোন আমার একবার আমার কথাটা শোন" আদিত্য অসহায়ভাবে বলে ওঠে, কিন্তু প্রীতি ঝাঁঝিয়ে ওঠে "ডোন্ট কল মি দ্যাট, আই অ্যাম নট ইওর সিস্টার এণ্ড ইউ আর নট মাই ব্রাদার, ইউ আর আ ফ্রড, আ মার্ডারার" কথাগুলো যে আদিত্যর একদম ভিতরে আঘাত করছে সেটা ওর অসহায়ভাবে তাকিয়ে থাকা দেখেই বোঝা যায়।
" আমি বলেছিলাম না খুনি কখনো আমার হাত থেকে পালাতে পারবে না তা সেটা এখন এই কেসের হোক কিংবা বছর পুরনো কোনো কেসের, একটা খুনের প্রমাণ তো পেয়েছি এবার যদি প্রমাণ পাই যে আমার বন্ধুকে তুই মেরেছিস তাহলে.." চিবিয়ে চিবিয়ে কথাগুলো বললো নীলাদ্রি কিন্তু শেষ করলো না, আদিত্য তার কথার কোনো উত্তর দিল না তার দৃষ্টি উমাদেবীর দিকে উমাদেবী অজ্ঞান হননি কিন্তু তিনি অন্য দিকে মুখ ফিরিয়ে রেখেছেন।
বেশ কিছুদিন শারীরিকভাবে একটু সমস্যায় ছিলাম। ফিরে এসে এক নিঃশ্বাসে পড়ে ফেললাম বাকি থাকা সবকটি পর্ব। এই ফোরামে আমি একজন লেখক, তাই যেটুকু সময় পাই তাতে নিজের গল্প নিয়ে ব্যস্ত থাকার জন্য সবার গল্প পড়া হয় না। গুটিকয়েক যে কয়েকজন লেখক আছেন, যারা আমার গল্প পড়ুক আর নাই পড়ুুক আমি কিন্তু তাদের গল্প আমি পড়ি এবং মন্তব্য করি, তাদের মধ্যে তুমি অন্যতম। তার কারণ, তুমি খুব ভালো লেখো। এই ভাবেই চালিয়ে যাও বন্ধু, সঙ্গে আছি।
Posts: 4,429
Threads: 6
Likes Received: 9,079 in 2,845 posts
Likes Given: 4,330
Joined: Oct 2019
Reputation:
3,224
14-04-2023, 05:02 PM
(This post was last modified: 14-04-2023, 05:05 PM by Bumba_1. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
(22-03-2023, 12:55 AM)Monen2000 Wrote:
৯বম পর্ব
নীলাদ্রি একটা ফাঁক একটা প্রমাণ খুঁজছিল যাতে এই নকল আদিত্যকে ধরা যায় আর সেটা দেয় মনোহরবাবু আর মলয়, সেদিন ওদের বয়ান শুনেই তৎক্ষনাৎ স্পটে যান এবং তাদের বয়ানের উপরেই ভিত্তি করে ঘটনার একটা আনুমানিক রূপ তৈরী করেন তার মনে বিশ্বাস ছিল এই নকল আদিত্য সেটা শুনে উত্তেজিত হয়ে আরও কিছু ভুল করবে কিন্তু উল্টে তার এই শান্তভাব নীলাদ্রিকে অত্যন্ত অবাক করে আর তারপর তার মাথায় কয়েকটা প্রশ্ন একে একে উঁকি দিতে থাকে প্রশ্নগুলো নীলাদ্রি নিজের মনেই সাজিয়ে নেয়, প্রথমত অতীন্দ্রবাবু এই নকল আদিত্যর বিষয়ে আদৌ জানেন? যদি জানেন তাহলে কতটা আর কেনই বা ওকে এখানে এনে রেখেছেন? দ্বিতীয়ত ওই দ্বিতীয় লোকটা কে? তাকে নকল আদিত্য মারলো কেন? তৃতীয়ত বডিদুটো কোথায় সরিয়েছে, সবথেকে যেটা আশ্চর্যের লাগছে নীলাদ্রির সেটা হলো নকল আদিত্য খুন করে বডিদুটো সরিয়েছে কিন্তু রক্ত লাগা শার্ট পরেই বাড়িতে ফিরলো? এছাড়া আরো দু একটা প্রশ্ন তার মাথায় অনেকক্ষণ থেকে ঘুরছে মনোহরবাবু আর মলয় কতটা সত্যি বলছে? আর যেটা সবথেকে তাকে ভাবাচ্ছে সেটা হলো এই নকল আদিত্যর ছায়াসঙ্গী বাদশার অনুপস্থিতি, যতটুকু জেনেছে সে তাতে সে জানে এই নকল আদিত্যর সবথেকে কাছের এবং বিশ্বস্ত যদি কেউ থাকে তাহলে সেটা হলো এই পোষা কুকুরটা অথচ এখন সে অনুপস্থিত, কোথায় গেল সে? মন্দিরের পিছনে জায়গাটা শুকনো তাই ওখানে পায়ের ছাপ পাওয়া মুশকিল, অথচ সিংহ রায় প্যালেসে নেই বাদশা আবার সুবিমলবাবুর বাড়িতেও আসেনি তবে কি তাকে আদিত্য কোথাও লুকিয়ে রেখেছে? কিন্তু কেন?কোনো বিশেষ কিছু বা কাউকে গার্ড দেওয়ার জন্য? নাকি অন্য কোনো রহস্য লুকিয়ে আছে এর পিছনে, প্রশ্নগুলো ভাবতে ভাবতেই নীলাদ্রির জিপ থানার সামনে চলে আসে।
"তোমাদের কোনো সমস্যা হচ্ছে না তো, হলে এখনই বলতে পারো" চা-বাগানের কর্মীদের উদ্দেশ্যে প্রশ্নটা করে আদিত্য, এটা সে বরাবরই করে আর প্রতিটা চা-বাগান শুধু নয় ওদের বিভিন্ন রিসর্টে যারা কাজ করে তাদের বা যারা অন্যান্য বিভিন্ন জায়গায় ওদের হয়ে কাজ করে সবাইকেই করে, আর প্রত্যেকে এটাও জানে যে এটা শুধু কথার কথা হিসেবে জিজ্ঞেস করা নয়, যদি কোনো সমস্যা তারা আদিত্য সিংহ রায়কে জানায় তবে সেটর সুরাহা হতে বেশি দেরী হয় না। আজও তেমনি আদিত্য জিজ্ঞেস করলো উত্তরে দু-একজন কয়েকটা ছোটোখাটো সমস্যা জানালো, এবং আদিত্য সেগুলো মিটিয়ে দেবার কথা জানিয়ে কারখানার উদ্দেশ্যে রওনা দিল এখানে যারা জানেনা তাদের বলে রাখা ভালো যে চা কারখানা সবসময় চাবাগানের কাছাকাছি থাকে।
কারখানায় আদিত্য কিছুক্ষণ ঘুরে দেখতে থাকে কিছুক্ষণ থেকে বেরিয়ে আসছে এমন সময় ওর ফোনটা বেজে ওঠে, পকেট থেকে বার করে দেখে সেটা সুবিমলবাবুর,
"হ্যাঁ, স্যার বলুন" বেশ স্বাভাবিক স্বরেই বলে আদিত্য কিন্তু ওপাশে সুবিমলবাবুর কথা প্রচণ্ড ভয়ার্ত এবং উত্তেজিত আওয়াজ ভেসে আসে "আদিত্য হেল্প মি"।
"কি হয়েছে স্যার আর আপনি এরকম করছেন কেন?"
"আদিত্য আই নিড ইওর হেল্প"
"আপনি কোথায়? আমাকে লোকেশন পাঠান আমি এক্ষুনি আসছি" কথা বলার সাথে সাথেই আদিত্য জিপের উদ্দেশ্যে দৌড় লাগায় সাথে জিজ্ঞেস করে "কি হয়েছে স্যার কিছু তো বলুন"
"ওরা আমাদের মেরে ফেলবে আদিত্য, সেভ আস" সুবিমলবাবুর করুন আকুতির সুরে সাহায্য প্রার্থনা করেন, ততক্ষণে আদিত্য জিপে উঠে জিপ স্টার্ট দিয়ে দিয়েছে, সে বলে "কারা মেরে ফেলবে? আপনি লোকেশন পাঠান আমি এক্ষুনি আসছি"।
প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই ফোনের ওপাশ থেকে একটা কানফাটানো আওয়াজ শুনতে পায় তারপর অন্য আরেকটা কণ্ঠস্বর খুবই ক্ষীণভাবে শুনতে পায় সেটা যেন কাকে বলছে আপনি পালান ডাক্তারবাবু আপনি পালান। আদিত্য ক্রমাগত "হ্যালো, স্যার শুনতে পাচ্ছেন?" বললেও ওপাশ থেকে কোনো উত্তর আসে না, একটু পরে সেই অপর গলাটা আবার শুনতে পায় আদিত্য "আ..আদিত্য তাড়াতাড়ি বজরঙবলি মন্দিরে এসে ডাক্তারবাবুকে বাঁচাও" গলাটা শুনে চমকে ওঠে আদিত্য এ গলা সে চেনে রাগে মুখ লাল হয়ে যায় আদিত্যর সে জিপের স্পিড আরও বাড়িয়ে দেয়, খুব বেশিক্ষণ লাগে না পৌঁছাতে আর পৌঁছে একটু এদিক ওদিক দেখতেই মন্দির থেকে কিছুটা দূরে রাস্তার একপাশে ক্যাদরানো অবস্থায় দেখে সুবিমলবাবুর গাড়িটাকে, দৌড়ে সেখানে যায় কিন্তু গাড়ির ভিতরে কাউকে দেখতে পায় না, সে মন্দির সহ আশেপাশে খুঁজতে থাকে খুঁজতে খুঁজতে সে মন্দিরের পিছনে খাড়াই পথ ধরে কিছুটা ফাঁকা জায়গায় চলে আসে সেখানে হটাৎ কারো একটা গোঙানির আওয়াজ সাথে একটা আর্তনাদ শুনতে পেলে সেই আওয়াজ লক্ষ্য করে দৌড়ে গিয়ে দেখে মাটিতে একটা রক্তাক্ত দেহ পড়ে আছে আর জনা পাঁচেক লোক সুবিমলবাবুকে ঘিরে দাঁড়িয়ে আছে এবং একজন ছুরি দিয়ে ওনার পেটে আঘাত করলো সুবিমলবাবু আবার আর্তনাদ করে উঠলেন, আদিত্য এবার তাদের দুজনকে চিনতে পারলো একজন মনোহরবাবু আর অপরজন মলয়, ওরা আদিত্যকে দেখে প্রথমে কিছুটা হতচকিত হয়ে গেলেও পরক্ষনেই মলয়ের হাতে রিভলবার উঠে এল কিন্তু ট্রিগার চাপলেও সেটা থেকে গুলি বার হলো না চেম্বার খালি হয়ে গেছে এবার ওদের সঙ্গীরা সুবিমলবাবুকে ছেড়ে আদিত্যকে আক্রমণ করলো, আর সুবিমলবাবু একটা গোঙানির মতো আওয়াজ করে মাটিতে পড়ে গেলেন।
প্রথমে একজন আগে এগিয়ে এসে আঘাত করতে গেলে এক লাথিতে তাকে ছিটকে দেয় আদিত্য তারপর আরেকজন ছুরি দিয়ে মারতে এলে আদিত্য প্রথমে ওর আঘাতটা এড়িয়ে যায় তারপর লোকটার হাত মুড়িয়ে ধরে পাশে সরে পাঁজরে সজোড়ে লাথি মারে, তৃতীয় জনের বেশ শক্তসমর্থ চেহারা তার একটা ঘুষি আদিত্য এড়াতে পারে না কিন্তু পরক্ষনেই সেটা সামলে লোকটার থুতনিতে একটা আপারকাট পাঞ্চ মারে লোকটা টাল সামলাতে না পেরে কয়েকপা পিছিয়ে পড়ে যায় ইতিমধ্যে প্রথম জন উঠে আবার আক্রমণ করতে গেলে বাদশা তার উপরে ঝাঁপিয়ে পড়ে তার হাতে কামড় বসিয়ে দেয় লোকটা পরিত্রাহি গলায় চিৎকার শুরু করে এটা দেখে বাকি দুজন পালানোর উদ্দেশ্যে দৌড় লাগায় সাথে মনোহরবাবু আর মলয়ও দৌড় লাগায় বাদশার সামনে দাঁড়ানোর সাহস তাদের হয় না প্রথম লোকটাও কোনোমতে বাদশার মুখ থেকে হাত ছাড়িয়ে দৌড় লাগায়, বাদশা আর আদিত্যও ওদের পিছনে যাচ্ছিল কিন্তু "আ...আদিত্য" ডাক শুনে থেমে পিছনে তাকিয়ে দেখে যাকে প্রথমে মাটিতে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেছিল তিনি কোনোমতে একটা হাত তার দিকে বাড়িয়ে ডাকছেন এবং আদিত্য লোকটাকে চিনতে পেরেই চমকে ওঠে সেটা আর কেউ নয় প্রতাপ সরকার, তিনি অতিকষ্টে আদিত্যকে ডাকছেন "আ...দি...ত্য"।
"বাদশা" ডাকটা দিয়েই আদিত্য দৌড়ে প্রতাপ বাবুর কাছে আসে, প্রতাপ সরকার কোনোমতে উচ্চারণ করেন "আ......দি..ত্য আ..ম.মার ম.." কথা শেষ করতে পারেন না তিনি। অসম্পূর্ণ রেখেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন একদা পুরো উত্তরবঙ্গে শাষন করা প্রতাপ সরকার, তার চোখদুটো তখনও আদিত্যর দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে যার একটা চোখের কোণা থেকে শেষবারের মতো একটুখানি জল ঝড়ে পরে। আদিত্য খানিকক্ষণ হতবিহ্বল হয়ে থাকে, প্রতাপ সরকারের সঙ্গে তার শত্রুতা ছিল ঠিকই কিন্তু সেটা শুধু সিংহ রায়দের সাথে ব্যাবসায়িক ক্ষেত্রে আদিত্য কখনোই প্রতাপ সরকারের মৃত্যু চায়নি। আদিত্য আলতো করে প্রতাপ সরকারের চোখদুটো বন্ধ করে দেয় হটাৎ কাছেই আবার একটা ক্ষীণ গোঙানির শব্দ শুনে চমকে উঠে তাকিয়ে দেখে একটু দূরেই সুবিমলবাবু, তার মুখ থেকেই গোঙানির আওয়াজটা আসছে, তিনি তখনও বেঁচে আছেন কিন্তু নাড়ী খুবই ক্ষীণ।
"আদিত্য.....আদিত্য" খুব কাছেই কেউ একজন ডাকছে, আওয়াজটা তার খুবই চেনা, আওয়াজটা আবার ডাকে "আদিত্য" এবার তন্ময়তা ভেঙে বাস্তব জগতে ফিরে আসে আদিত্য, দুই হাঁটুর মাঝ থেকে মাথা তুলে তাকায় আদিত্য, গরাদের ওপারে দাঁড়িয়ে তাকে ডাকছেন অতীন্দ্র সিংহ রায়।
"আপনি?" নিরাসক্ত কণ্ঠে জিজ্ঞেস করে আদিত্য উত্তরে অতীন্দ্রবাবু কিছু বলতে যাচ্ছিলেন কিন্তু তার আগেই তার পিছন থেকে নীলাদ্রির আওয়াজ আসে "এরকম করবেন না আঙ্কেল একজন ক্রিমিনালকে সাহায্য করবেন না"।
"কাকে ক্রিমিনাল বলছো, তুমি কি জানো ওর সম্বন্ধে?" নীলাদ্রির কথায় যে প্রচণ্ড রেগে গেছেন অতীন্দ্রবাবু এটা স্পষ্ট বোঝা যায়, কিন্তু নীলাদ্রি তাতে দমবার ছেলে নয় সে বলে "ও আদিত্য নয় আঙ্কেল, হয়তো ওই আদিত্যকে মেরেছে"।
"জানি নীলাদ্রি, আমিই তো ওকে এখানে এনেছিলাম, আর ও আমার ছেলেকে মারেনি আদিত্য কার অ্যাক্সিডেন্টে মারা গিয়েছিল"
"কিন্তু কেন এনেছিলেন ওকে?"
"সে কৈফিয়ত তোমাকে দিতে বাধ্য নই, এখন তুমি ওকে ছাড়বে নাকি আবার আমাকে তোমার সিনিয়রকে ফোন করতে হবে?"
অতীন্দ্রবাবু এমনিতে খুবই শান্ত ভদ্র নম্র স্বভাবের কিন্তু রেগে গেলে তখন তাকে সামলানো মুশকিল আর এখন তার প্রতিটা কথায় সেই প্রচণ্ড রাগ প্রকাশ পাচ্ছে, কিন্তু তবুও নীলাদ্রি আবার বলে "আরেকবার ভেবে দেখুন আপনি.." এতটা বলেই নীলাদ্রিকে থামতে হয় কারণ ততক্ষণে অতীন্দ্রবাবু আর কোনো কথা না বলে নিজের মোবাইলে কাউকে ফোন করার জন্য নাম্বার খুঁজছেন, নীলাদ্রির বুঝতে বাকি থাকে না যে এই ফোনটা তার বাবা অর্থাৎ পুলিশ কমিশনার শশাঙ্ক বাবুর কাছে যাচ্ছে না যাচ্ছে তারও সিনিয়রের কাছে, তাই আর কথা না বাড়িয়ে সে একজন কনস্টেবলকে লক্আপ খুলে আদিত্যকে ছেড়ে দিতে বলে কনস্টেবলটি অবশ্য সঙ্গে সঙ্গেই সে আদেশ পালন করে।
"আপনি এখানে?" লক্আপ থেকে বেরিয়ে শান্ত স্বরে প্রশ্ন করে আদিত্য,
"তুমি কি ভেবেছিলে আমি আসবো না?"
"সেরকমই ভেবেছিলাম, আমি এখন সুবিমলবাবুর খুনের অভিযোগে অভিযুক্ত আর সুবিমলবাবু আপনার ঘনিষ্ঠ বন্ধু"
"চলো বাড়ি যেতে যেতে কথা হবে" আদিত্যকে ছাড়িয়ে নেওয়ার কিছু ফর্মালিটি বাকি ছিল সেগুলো শেষ করে অতীন্দ্রবাবু আর আদিত্য থানার বাইরে বেরিয়ে আসে সেখানে অতীন্দ্রবাবুর নিজের মারুতি গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে, সেটায় উঠতে উঠতে আদিত্য জিজ্ঞেস করে "মা কেমন আছেন?"
"চলো সেখানে গিয়েই দেখবে"
থানার সামনে থেকে দুজনে বেরিয়ে যায় পিছনে তখনও দাঁড়িয়ে আছে নীলাদ্রি, নিস্ফল রাগে সে ফুঁসছে। সুবিমলবাবুর বাড়ির সামনে যখন অতীন্দ্রবাবু আর আদিত্য পৌঁছালো তখন পুরো বাড়ির আশেপাশে এক থমথমে নীরবতা বিরাজ করছে অবশ্য সেটাই তো স্বাভাবিক বাড়ির কর্তার মৃত্যু হয়েছে। অতীন্দ্রবাবু গাড়ি পার্ক করতে করতে আদিত্য বাড়ির ভিতরে ঢুকলো, বসার ঘরে অদ্রিজা, প্রীতি বসে আছেন আর যিনি আছেন তিনি একজন ', ওদের কথাবার্তা শুনে আদিত্য বুঝলো সুবিমলবাবুর পারলৌকিক কাজের বিষয়ে কথা বলছে ওরা।
"আপনি এখনই আপনার বাবার পারলৌকিক কাজ করতে পারেন না মিস চক্রবর্তী"
আদিত্যর আওয়াজে চমকে উঠলো অদ্রিজা, তারপর দরজায় আদিত্যকে দেখেই প্রথমে অবাক তারপর রাগে ফেটে পড়লো অদ্রিজা, সোজা আদিত্যর কাছে এসে রাগ এবং ঘৃণা ভরে জিজ্ঞেস করলো "হোয়াট দ্যা হেল আর ইউ ডুয়িং হেয়ার? এণ্ড হাউ ডিড ইউ গেট আউট অফ জেল?"
আদিত্য কিন্তু অদ্রিজার প্রশ্নের কোনো উত্তর না দিয়ে সম্পূর্ণ অন্য কথা বললো "এখনো আপনার বাবার ডেডবডি পাওয়া যায়নি বা এমন কোনো অকাট্য প্রমাণ পাওয়া যায়নি যাতে তাকে মৃত বলে ধরে নেওয়া যায় তাই আইনের চোখে তিনি এখনও জীবিত এখন আপনি ভেবে দেখুন তার পারলৌকিক ক্রিয়া করবেন নাকি বন্ধ রাখবেন?" তারপর উপস্থিত ',মশাইকে উদ্দেশ্য করে বলে "আমি কি ভুল বললাম?"
',টি আমতা আমতা করছে দেখে আদিত্য বলে "আপনি এখন আসুন", শুনে ',টি বেড়িয়ে যায়। অদ্রিজার মনে হলো আদিত্য তার সাথে ইয়ার্কি করছে সে রেগে আরও কিছু বলতে যাচ্ছিল কিন্তু হটাৎই আদিত্যর গালে সশব্দে একটা চড় এসে পড়ে, উমাদেবী কখন যে ভিতরের ঘর থেকে বেরিয়ে এসেছেন সেটা কেউই বুঝতে পারেনি, চড় মেরে উমাদেবী কিন্তু শান্ত হননি তিনিও রাগী স্বরে বলতে থাকেন "তোমার সাহস হয় কি করে এখানে আসার?"
"মা, একবার আমার কথাটা শোনো"
"খবরদার, একদম আমাকে মা বলে ডাকবে না আমি তোমার মা নই"
কথাটা শুনে আদিত্যর চোখ ফেটে জল আসতে চাইলো কিন্তু এলো না তার পরিবর্তে ওর ঠোঁটে এক অদ্ভুত হাসির রেখে দেখা গেল, এটা খুশী বা আনন্দের হাসি নয় এটা নিয়তির কাছে অসহায় আত্মসমর্পণ করার হাসি যেন সে অনেক আগে থেকেই জানতো একদিন এটা হবেই কিন্তু তবুও লড়ে যাচ্ছিল ভবিতব্যের বিরুদ্ধে আর আজ সে এই লড়াইতে সম্পূর্ণ পরাস্ত।
আদিত্য হয়তো কিছু বলতে যাচ্ছিল কিন্তু তার আগে তার পিছন থেকে অতীন্দ্রবাবুর আওয়াজ আসে, "এ তুমি কি বলছো উমা, তুমি বুঝতে পারছো কি বলছো?"
অতীন্দ্রবাবুকে দেখে সবাই আরও অবাক হয়, "বাপি তুমি এখানে কখন ফিরলে আর এই ঠগবাজটার সাথে কি করছো?"
"চুপ করো প্রীতি"অতীন্দ্রবাবু মেয়েকে ধমক লাগান "তুমি জানো তুমি কাকে ঠগবাজ বলছো?"
"জানি বাপি, এই ফ্রড ঠগবাজটাকে যে এতদিন আমার দাদা সেজে বসেছিল,
"প্রীতি" অতীন্দ্রবাবু এবার প্রায় গর্জন করে ওঠেন, কিন্তু আদিত্য সঙ্গে সঙ্গে তাকে বাধা দেয় "স্যার, আপনি শান্ত হোন"
"হ্যাঁ বাপি আমি ঠিকই বলেছি আমি এখনই নীলাদ্রিকে ফোন করে জিজ্ঞেস করছি ওকে কেন জেল থেকে ছাড়লো?"
কিন্তু প্রীতি ফোন করার আগেই নীলাদ্রি সেখানে উপস্থিত হয় আর বলে "আমি ছাড়তে বাধ্য হয়েছি কারণ আঙ্কেল উপরমহলে নিজের ইনফ্লুয়েন্স কাজে লাগিয়ে ওকে ছাড়িয়েছেন"
"হোয়াট" নীলাদ্রির কথা শুনে প্রীতি যেন আকাশ থেকে পড়ে অবশ্য অদ্রিজা আর উমাদেবীর মনের অবস্থাও একই, "আঙ্কেল" অতীন্দ্রবাবু কিছু বলতে যাচ্ছিলেন কিন্তু তাকে মাঝপথে থামিয়ে দেয় অদ্রিজা, সে বলে "আমার বাপি আপনার খুব ভালো বন্ধু ছিল, আর আপনি তার খুনীকে জেল থেকে ছাড়িয়ে আনলেন, কেন আঙ্কেল?"
"কারণ ও সুবিমলকে খুন করেনি ও কারো খুন করতে পারে না, কোথাও ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে"
অদ্রিজা আর কিছু না বলে একহাত মুখ চেপে কাঁদতে শুরু করে।
"তুমি আমাকে ঠকালে?" এবার উমাদেবী তার স্বামীকে প্রশ্ন করেন,
"উমা আমার কথাটা আগে শোনো"
"কি করে করলে তুমি এটা? তুমি জানতে ও আমার আদিত্য নয় তবুও"
"উমা.... আমি যা করেছি সেটা"
"মা, এখন তুমি শান্ত হও, পরে কথা বলো" আদিত্য আবার মাঝখানে কথা বলে, কিন্তু উমাদেবী আবার রেগে ঝাঁঝিয়ে ওঠেন, আদিত্য তার দিকে এক পা এগোলে তিনি দুপা পিছিয়ে যান "তোমাকে বলেছি না আমাকে মা ডাকবে না"
"বিশ্বাস করো অন্য কোনো ডাক আসছে না, ওই একটা ডাকই আসছে"
"চলে যাও এখান থেকে, আমি তোমার মুখও দেখতে চাই না চলে যাও"
"উমা তুমি কি বলছো? তুমি আগে আমার পুরো কথা শোনো"
"স্যার." অতীন্দ্রবাবু নিজের স্ত্রীকে কিছু বলতে যাচ্ছিলেন কিন্তু শেষ করার আগেই আদিত্য তাকে ডাকে, অতীন্দ্রবাবু তাকালে সে ঘাড় নেড়ে বারণ করে, তারপর আদিত্য উমাদেবীর উদ্দেশ্যে একদম শান্ত কণ্ঠে বলে "কথা দিচ্ছি চলে যাবো মা, আমি তোমার ছেলে না হতে পারি কিন্তু তুমি তো এটা জানো আমি কখনোই নিজের কথার খেলাপ করি না, শুধু এখানে শেষ একটা ছোট্ট কাজ বাকি রয়ে গেছে সেটা শেষ করেই চলে যাবো"।
কথাটা বলে আদিত্য নীচু হয়ে উমাদেবীকে প্রণাম করতে যাচ্ছিল কিন্তু তিনি আবার পিছিয়ে যান, আদিত্য যে জায়গাটায় উমাদেবী দাঁড়িয়ে ছিলেন সেখানেই হাত স্পর্শ করে আবার মাথায় স্পর্শ করে তারপর ঘর ছেড়ে বেরিয়ে যায়, পিছন থেকে শুনতে পায় অতীন্দ্রবাবু বলছেন "তুমি বুঝতেও পারছো না আজ তুমি কি ভুল করলে"।
কিছুটা এগিয়ে আসার পর পিছন থেকে অতীন্দ্রবাবুর ডাক শুনে দাঁড়িয়ে পড়ে আদিত্য, অতীন্দ্রবাবু তাকে জিজ্ঞেস করেন "কোথায় যাচ্ছো তুমি?"
"বললাম যে একটা ছোট্ট কাজ বাকি আছে"
"আদিত্য তোমার কাছে ক্ষমা চাওয়ার মুখও আমার নেই তবুও"
"আপনি ক্ষমা চাইবেনই বা কেন?"
"দেখো আদিত্য.."
"ওটা আমার আসল নাম নয়, আপনি কিন্তু আমার আসল নাম জানেন"
"তুমি চাও আমি তোমাকে ওই নামে ডাকি?"
"না... তার থেকে এটাই থাক, আমি এখন আসি স্যার আপনি ভিতরে যান ওখানে এখন আপনার থাকা দরকার" কথাটা ফলে আর অপেক্ষা না করে দ্রুত হাঁটা লাগায় আদিত্য।
কিছুতেই নিজের মাথায় ঘুরতে থাকা প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজে পায় না নীলাদ্রি অনেক চেষ্টা করেও উত্তর অধরা থাকে অগত্যা মাথা ঠান্ডা করতে রাতে ডিনারের পর একটু হাঁটতে বেরোয় সে একাই বেরোয়, মূলত চারটে প্রশ্ন তার মাথায় ঘুরছে,
১) সেদিন স্পটে থাকা দ্বিতীয় রক্তের দাগটা কার, আর দুজনের বডিই বা কোথায় গেল?
২) মনোহরবাবু আর মলয় কতটা সত্যি বলছে বা আদৌ কি সত্যি বলছে?
৩) এই নকল আদিত্য এত চুপচাপ কেন, ও কি সত্যিই খুনি নাকি নির্দোষ?
৪) বাদশা কোথায় গেল?
প্রশ্নগুলো নিয়ে চিন্তা করতে করতেই কখন যেন সুবিমলবাবুদের বাড়ির কাছাকাছি চলে এসেছে, এখানেই প্রীতি আছে তার প্রিয় বন্ধু আদিত্যর বোন যাকে সে ছোটোবেলা থেকেই ভালোবাসে প্রীতি অবশ্য জানতো না, নীলাদ্রি নিজের ছোটোবেলায় ফিরে যায়...
আদিত্য আর নীলাদ্রি তখন কিশোর অবস্থা প্রায় শেষ বয়স তখন পনেরো কি ষোলো হবে দুজনে একই কলেজে পড়ে, দুজনের বন্ধুত্বও খুব গভীর। সেইসময় একদিন আদিত্যদের বাড়ি থেকে কিছুটা দূরের নীলকণ্ঠ মন্দিরে পূজো ছিল আদিত্য সেখানে বন্ধুকে আমণ্ত্রন জানিয়েছিল আসার জন্য যথারীতি নীলাদ্রি গিয়েছিল এবং একাই গিয়েছিল, নীলাদ্রির বাড়ি থেকে খুব একটা দূরে নয় সে মন্দির। মন্দিরে গিয়ে বন্ধুর সাথে দেখা করার আগেই একজনের দিকে তার চোখ আটকে গিয়েছিল একটি ১০-১১ বছরের কিশোরী মেয়ে, একটা হলুদ রঙের শাড়ি পড়েছিল কেউ পড়িয়ে দিয়েছিল আর কি, মাথায় চুল খোলা পিঠের উপরে ছড়ানো, মায়ের পাশে পাশে হাঁটছে তাকে দেখে নীলাদ্রির কি হলো সে ঠিক বুঝতে পারলো না একদৃষ্টিতে মেয়েটির দিকে তাকিয়ে ছিল অনেকক্ষণ, যদিও তখনও মেয়েটির পরিচয় জানেনা সে সেটা সেদিনই আরও পরে জেনেছিল যখন আদিত্য মেয়েটিকে নিয়ে এসে পরিচয় করিয়ে দিল নিজের বোন বলে, সেদিন মেয়েটির সাথে ঠিকমতো কথা বলতে পারেনি সে তারপর অবশ্য নীলাদ্রিরা নর্থবেঙ্গল ছেড়ে চলে যায় কিন্তু বন্ধুর সাথে যোগাযোগ থাকলেও সেই মেয়েটিকে আর দেখার সুযোগ হয়নি তবুও মেয়েটি নীলাদ্রির হৃদয়ে চিরস্থায়ী অধিকার করে নিয়েছিল।
আর আবার এতবছর পরে তার সাথে দেখা হয় হিউম্যান অর্গান স্মাগলিংএর কেসে প্রথমে একটু সন্দেহ হয়েছিল কিন্তু অচিরেই সে বুঝতে পারে প্রীতি নির্দোষ, তারপর তাকে নিজের পরিচয় দিয়েছিল প্রীতি প্রথমে চিনতে না পারলেও পরে পেরেছিল তারপর থেকে সে নীলাদ্রির সাথে ছিল কেসটা সলভ করতে সাহায্য করছিল অবশেষে কেস সলভ্ করার পরেই নীলাদ্রি প্রপোজ করে প্রীতিকে, সে অবশ্য আশা করেনি যে প্রীতি সঙ্গে সঙ্গেই হ্যাঁ বলবে।
ভাবতে ভাবতেই কখন যেন সুবিমলবাবুর বাড়ির সামনে চলে এসেছে খেয়ালই করেনি নীলাদ্রি কয়েক মুহূর্ত দাঁড়িয়ে বাড়িটির দিকে তাকিয়ে থাকে বোধহয় প্রীতিকে খুঁজতে থাকে যদিও সে জানে যে বাইরে থেকে প্রীতিকে দেখা সম্ভব নয়, একটু দাঁড়িয়ে থেকে সে আবার হাঁটা শুরু করতে যাবে হটাৎ তার একটা খটকা লাগে যেন কিছু একটা অস্বাভাবিক রয়েছে এখানে এবং প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই লক্ষ্য করে গেটে সিকিউরিটি নেই একটু অবাক হয় সে কারণ এই বাড়িতে ২৪ ঘন্টাই গেটে সিকিউরিটি থাকে, সেটা তো নেই আর মেইন গেটটাও খোলা।
নীলাদ্রি ঠিক করে ভিতরে ঢুকে দেখবে সবাই ঠিক আছে কিনা সে পা বাড়াতে যাবে এমন সময় দেখে বাড়ির ভিতর থেকে কয়েকজন লোক মুখ ঢেকে কি একটা যেন কোলে তুলে নিয়ে আসছে, প্রথমটায় বুঝতে না পারলেও পরে বুঝতে পেরেই তার মাথায় আগুন জ্বলে উঠলো সে তৎক্ষণাৎ ওই লোকগুলোর সামনে গিয়ে দাঁড়ালো।
লোকগুলো প্রথমটায় একটু থমকে গেল তারা এই অবাঞ্ছিত বাধাটা আশা করেনি আর এই সুযোগে নীলাদ্রি ওদের আক্রমণ করলো, হতে পারে সে এখন নিরস্ত্র হতে পারে সে এখন অফডিউটি কিন্তু সে পুলিশ অফিসার। সামনের লোকগুলোর মধ্যে একজন দাঁড়িয়ে রইলো বাকিরা এগিয়ে এলো নীলাদ্রি একা হতে পারে কিন্তু সেও পুলিশের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কাজেই লোকগুলো সহজে পাত্তা পাচ্ছিল না, হয়তো তারা রণে ভঙ্গই দিত কিন্তু হঠাৎ করেই বিপর্যয় নেমে এলো, কেউ একজন পিছন থেকে সজোড়ে নীলাদ্রির মাথার পিছনে আঘাত করলো আর সঙ্গে সঙ্গেই নীলাদ্রি চোখে অন্ধকার দেখলো,সে মাথায় আঘাতপ্রাপ্ত জায়গায় হাত দিয়ে মাটিতে পড়ে গেল, পুরোপুরি অজ্ঞান না হওয়ায় বুঝতে পারলো লোকগুলো চলে যাচ্ছে আর সাথে নিয়ে যাচ্ছে তার ভালোবাসার মানুষটিকে, তার বাগদত্তা প্রীতিকে।
"প্রীতি.." অস্ফুটস্বরে ডাকে নীলাদ্রি কোনোমতে ওঠার চেষ্টা করে কিন্তু মাথার পিছনে প্রচণ্ড যন্ত্রণা হচ্ছে সেখানে হাত বুলিয়ে চোখের সামনে এনেই বুঝতে পারে সেখানে রক্তপাত হচ্ছে তবুও কোনোমতে উঠে যেদিকে লোকগুলো অচেতন প্রীতিকে নিয়ে গেছে সেদিকে যায়, কিছুটা গিয়ে দেখতে পায় লোকগুলো একটা গাড়িতে উঠছে সে আরো দ্রুত পৌঁছাতে চেষ্টা করে কিন্তু পৌঁছনোর আগেই গাড়িটা বেরিয়ে যায় আর দাঁড়াতে পারে না নীলাদ্রি মাটিতে পড়ে যায় তার দুচোখে আবার অন্ধকার নেমে আসে।
চক্রবর্তী হাউজে তখনও কেউ ঘুমায়নি চারুলতা দেবী নিজেকে কিছুটা সামলে নিয়েছেন এগন আর আগের মতো কান্নাকাটি করছেন না বোধহয় মেয়ের কথা চিন্তা করেই নিজেকে শক্ত করেছেন, আর অদ্রিজা সেও মায়ের সামনে নিজেকে কোনোমতে শক্ত রেখেছে কারণ মায়ের সামনে তার ভেঙে পড়া চলবে না সে এখন বিছানায় মায়ের মাথার কাছে বসে তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে, ঘরের ভিতরে আর রয়েছেন উমাদেবী এবং অতীন্দ্রবাবু, সেদিনের পর থেকে তারা এখানেই আছেন। উমাদেবী বান্ধবীকে মানসিকভাবে শক্ত থাকার কথা বললেও অতীন্দ্রবাবু অবশ্য বারবার একটাই কথা বলছেন "চিন্তা কোরো না সুবিমলের কিচ্ছু হয়নি আমার মন বলছে সে ঠিক আছে"।
"আপনার মন বলছে নাকি আপনাকে সেই ফ্রডটা বলেছে?" অদ্রিজার বাঁকা কথায় স্পষ্ট বোঝা যায় যে আদিত্যকে জেল থেকে ছাড়ানোয় সে এখনো অতীন্দ্রবাবুর উপরে রেগে আছে।অতীন্দ্রবাবু কিছুক্ষণ বন্ধুর মেয়ের দিকে তাকিয়ে থাকেন তারপর মৃদুকণ্ঠে বলেন "তুমি.. না তোমরা সবাই ওকে ভুল বুঝছো কিন্তু একদিন এমন আসবে যেদিন দেখবে যে ওই ঠিক ছিল"
"উল্টোটাও হতে পারে আঙ্কেল হয়তো দেখবেন আপনি ভুল করছেন ওই ফ্রডটাকে বিশ্বাস করে"।
অদ্রিজার কথার উত্তরে অতীন্দ্রবাবু কিছু বলতে যাচ্ছিলেন এমন সময় নীচের ড্রয়িংরুম থেকে নীলাদ্রির তীব্র চিৎকার শোনা গেল "অতীন্দ্র আঙ্কেল..... অতীন্দ্র আঙ্কেলসবাই বেশ অবাকই হয় এইসময় নীলাদ্রি এখানে? তাও এরকম ভাবে ডাকছে কেন?
চারুলতা দেবী বাদে সবাই নীচে যায়,আর সঙ্গে সঙ্গে নীলাদ্রি প্রায় অতীন্দ্রবাবুর উপরে হামলে পড়ে "কোথায় আছে ও?"
"কে?" অতীন্দ্র বাবু সত্যিই অবাক হয়েছেন, কিন্তু নীলাদ্রি আবার বলে "কোথায় আছে ওই নকল আদিত্য?"
"ও আবার কি করলো?"
"আমি বলেছিলাম ওকে বিশ্বাস করবেন না কিন্তু আপনি শোনেননি"
"কি হয়েছে সেটা বলবে,কি করেছে ও?"
"প্রীতিকে কিডন্যাপ করে নিয়ে গেছে"
মুহূর্তে যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়লো সবার মাথায়, "কি বলছো তুমি?" অতীন্দ্রবাবুর মুখ রাগে লাল হয়ে ওঠে, কিন্তু নীলাদ্রি তাতে দমে যাওয়ার ছেলে নয়, সে বলে "বিশ্বাস হচ্ছে না তো,তাহলে প্রীতি কোথায় ডাকুন ওকে?"
কথা শুনে অতীন্দ্রবাবু ডাকতে যাচ্ছিলেন কিন্তু তার আগেই অদ্রিজা এসে বললো "প্রীতি নেই"। ইতিমধ্যেই সে প্রীতি আর তার রুমে একবার খুঁজে এসেছে,আর কিচেনে কেউ নেই সেটা দেখাই যাচ্ছে।
"এবার বিশ্বাস হলো তো স্যার? কিছু লোক প্রীতিকে তুলে নিয়ে গেছে আমি বাধা দিতে গিয়েছিলাম কিন্তু পারিনি এবার প্লিজ বলুন ওকে কোথায় পাবো?"
উমাদেবী কান্নায় ভেঙে পড়েন কাঁদতে কাঁদতে স্বামীকে বলেন "তোমার জন্য এইসব হয়েছে, জানিনা আমার মেয়েটাকে নিয়ে ও কোথায় গেছে, আমার মেয়েটা কি অবস্থায় আছে?"
অতীন্দ্রবাবু কি বলবেন ভেবে পাচ্ছেন না তার ভিতরে এখন প্রচণ্ড ঝড় চলছে তার মন একবার বলছে আদিত্য এই কাজ করতে পারে না, আবার পরমুহূর্তেই সেই বিশ্বাস দুর্বল হয়ে পড়ছে,এই দোলাচলের মাঝেই তিনি আদিত্যকে ফোন করলেন, রিং হবার প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই ওপাশ থেকে কথা এলো "স্যার"
"এরকম কেন করলে? আমার মেয়েটাকে তো তুমি বোন বলতে ওকে কিডন্যাপ করলে কেন তুমি?"
"স্যার.." আদিত্যর গলায় এক অদ্ভুত স্বর অতীন্দ্রবাবুর অভিযোগ যেন একদিকে তাকে প্রচণ্ড অবাক এবং আহত করেছে, কিন্তু সে কিছু বলার আগেই উমাদেবী ফোনটা ছিনিয়ে নিয়ে স্পিকার বললেন "তুমি কি চাও টাকা? কত টাকা চাই আমরা দিয়ে দেবো আমার মেয়েটাকে কিছু কোরো না, আমি হাতজোড় করছি তোমার কাছে.. আ...আমি অদ্রিজা আর নীলাদ্রিকে বলে দেবো ওরা তোমার বিরুদ্ধে কোনো কেস করবে না। দয়া করে আমার মেয়েটার কোনো ক্ষতি কোরো না"
উমাদেবী আর কিছু বলতে পারলেন না, হাউহাউ করে কাঁদতে লাগলেন কিন্তু ফোনের ওপাশ থেকে কোনো আওয়াজ এলো না, যেন সে আরো কিছু শোনার জন্য অপেক্ষা করছে, এবার নীলাদ্রি কথা বলে "আমি তোকে ছাড়বো না, প্রীতির যদি কিছু হয়েছে তাহলে আই উইল কিল ইউ"
"শাট্আপ ইউ স্টুপিড, শাট্ ইওর মাউথ এণ্ড লিসন টু মি ভেরি কেয়ারফুলি" এতক্ষণে আদিত্য কথা বলে আর তার স্বরে একটা কর্তৃত্বের ভাব যেটা শুনে নীলাদ্রি তো অবাক হয়ই সাথে চাপ পড়ে অজান্তেই ফোনের স্পিকার অন হয়ে যাওয়ায় সবাই শুনতে পায় এবং অবাক হয়, আদিত্য বলে চলে "নীলাদ্রি তোমার ডিপার্টমেন্টে এমন কেউ তো নিশ্চয়ই আছে যে মোবাইল নম্বর ট্রেস করে লোকেশন বলতে পারবে, তাকে বলো ইমিডিয়েটলি আমার নম্বরটা ট্রেস করতে"।
"সেটা তো আমি করবোই, তোকে খুঁজে বার করবোই যেখানেই লুকিয়ে থাকিস না কেন" নীলাদ্রি কথার মাঝখানে কথা বলে আর তাতে যেন আবার রেগে ওঠে আদিত্য
"শাট্ ইওর মাউথ ইউ ইডিয়ট, তুমি নিজেকে যত বড়ো ইনভেস্টিগেটর ভাবো আসলে তত বড়ো নও, তোমার মাথায় ব্রেণ নেই তাই ওটার লোকদেখানো ব্যবহার কোরো না, যেটা বলছি সেটা শোনো"
"কি?" নীলাদ্রি যেন কিছুটা দমে যায় এবার,
"প্রীতি কিডন্যাপ হয়েছে সেটা আমি জানি, সুবিমলবাবুদের রাতের সিকিউরিটিকে আমি চাকরিটা দিই যারা কিডন্যাপ করেছে তারা ওকে অজ্ঞান করে ভিতরে ঢুকেছে, একটু আগে ওর জ্ঞান ফিরেছে আর তৎক্ষণাৎ ও আমাকে জানিয়েছে"।
"হোয়াট?" নীলাদ্রির গলায় বিস্ময়, আদিত্য বলে চলে "আমি ওকে ট্রেস করে যাচ্ছি কিন্তু হতে পারে যারা ওকে নিয়ে গেছে তারা সংখ্যায় অনেক বা ওদের কাছে অত্যাধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র আছে আমার একার পক্ষে ওদের মোকাবেলা করা সম্ভব নয়, আমি মরতে ভয় পাইনা বাট আই ওয়ান্ট মাই সিস্টার সেফ"।
তুমি একজ জিনিয়াস এই পর্ব পড়ার পর এ কথা না বলে পারলাম না।
Posts: 4,429
Threads: 6
Likes Received: 9,079 in 2,845 posts
Likes Given: 4,330
Joined: Oct 2019
Reputation:
3,224
(26-03-2023, 11:52 PM)Monen2000 Wrote:
১০ম পর্ব
"কি..কি বল.." নীলাদ্রির গলায় এখনো বিস্ময়, সে কথা শেষ করতে পারে না, আদিত্য আবার বলতে থাকে "তুমি ইমিডিয়েটলি আমাকে ট্রেস করে ব্যাকআপ নিয়ে আসো, আমি জানিনা ওদের মেইন ডেস্টিনেশনে পৌঁছনোর পরে সেখানকার সিচুয়েশন কি থাকবে তবে পসিবল হলে আমি ওখানকার এক্সাক্ট লোকেশন তোমাকে পাঠিয়ে দেবো, তোমার ফোন অন রাখো,ওকে?"
"তুমি মানে আপনি প্রীতিকে খুঁজবেন কিভাবে?" এতক্ষণে হয়তো নীলাদ্রি কিছুটা বিশ্বাস করেছে, আদিত্য বলে "আমি প্রীতিকে একটা লকেট গিফ্ট দিয়েছিলাম ওতে ট্রেসার লাগানো আছে যাতে ও কোনো বিপদে পড়লে আমি পৌঁছাতে পারি তুমি টাইম নষ্ট কোরো না তাড়াতাড়ি এসো"।
"আমি আসছি তবে লোকেশনটা আঙ্কেলের ফোনে পাঠাও আমার ফোন ভেঙে গেছে"
"এই নাকি পুলিশ অফিসার"।
আদিত্যর ব্যাঙ্গাত্মক কথা শুনে উত্তর দেওয়ার আগেই ফোন কেটে যায়, নীলাদ্রি অতীন্দ্রবাবুর ফোন থেকে একজনকে ফোন করে আদিত্যর নম্বরটা ট্রেস করতে বলে এবং নিজে বেরিয়ে যায়, অতীন্দ্রবাবুকে অবশ্যই সাথে যেতে হয় কিন্তু ওদী অবাক করে অদ্রিজাও ওদের সঙ্গী হয় সে বলে "আমার বন্ধু বিপদে আছে নীলাদ্রি বাবু আমি তো যাবোই", কিন্তু নীলাদ্রি ইতস্তত করছে দেখে সে আবার বলে "ঘাবড়াবেন না আমি ডাক্তার প্রাণ বাঁচাই কিন্তু শখের জন্যই পিস্তল চালানো আর একটু হ্যাণ্ড টু হ্যাণ্ড কমব্যাট শিখেছি আর আমার পিস্তলের লাইসেন্স আছে, যাওয়ার আগে নীলাদ্রি আরেকটা কাজ করে উমাদেবীকে সান্ত্বনা দিয়ে সে বলে "আন্টি প্রীতি আমার হবু স্ত্রী, আমি ওকে কিছু হতে দেবো না কথা দিলাম" বলে তিনজনে বেরিয়ে যায়।
আস্তে আস্তে চোখ মেলে তাকায় প্রীতি মাথাটা বড্ডো ভারী মনে হচ্ছে, দুচোখের পাতাও বড্ড ভারী, আস্তে আস্তে চারিদিকে তাকায় একটা ঘরে মেঝেতে শুয়ে আছে কিন্তু এই ঘরটা কেমন যেন আলাদা লাগছে তার কাছে, সে কিন্তু বুঝতে পারে না যে অদ্রিজাদের বাড়িটা রাতারাতি হটাৎ বদলে গেল কিভাবে? একটু ধাতস্থ হতেই মনে পরে সে চারু আন্টি মানে অদ্রিজার মায়ের রুমে ছিল দুই বান্ধবী ছাড়াও প্রীতির বাবা-মাও ছিল, নিজের স্বামী মানে সুবিমলবাবুর মৃত্যুর খবর পেয়ে চারু আন্টি শারীরিক এবং মানসিক উভয়ভাবেই ভেঙে পড়েছিল, সবাই তাকেই বোঝাতে চেষ্টা করছিল।
তারপর সে চারু আন্টির রুম থেকে বেরিয়ে নীচে আসে নীলাদ্রির সাথে কথা বলবে বলে, কিন্তু বেশ কয়েকবার ফোন করার পরেও নীলাদ্রি ফোন কানেক্ট হয় না ভাবে টাওয়ারের প্রবলেম বোধহয় তখন সে আস্তে আস্তে বাড়ির বাইরে এসে একটু পায়চারী শুরু করেছে হটাৎ কেউ একজন পিছন থেকে তার মুখে কিছু একটা চেপে ধরে সে চিৎকার করতে চেষ্টা করলেও পারে না, সাথে তার নাকে একটা মিষ্টি অথচ কড়া গন্ধ আসে তারপর আর কিছু মনে নেই।
"হেল্প... কেউ আছেন" মাথায় ভারী ভাবটা কিছুটা কমে আসতেই সে চিৎকার করতে থাকে, আস্তে আস্তে উঠে দরজার কাছে গিয়ে দরজা টেনে খুলতে গিয়ে বোঝে সেটা বাইরে থেকে বন্ধ। প্রীতি দরজায় ধাক্কা দিতে থাকে আর সাথে সাহায্যের জন্য চিৎকার করতে থাকে কিন্তু কেউ দরজা খোলে না, সে আরো জোরে দরজায় ধাক্কা দিতে শুরু করে এবারে কাজ হয় বাইরে থেকে দরজা খোলার আওয়াজ পায় সে, কিন্তু দরজা খুলেই ভিতরে ঢোকে দুজন গাট্টাগোট্টা চেহারার লোক গালে খোঁচা খোঁচা দাঁড়ি, মাথায় উসখোখুসখো চুল।
"আরে চিড়িয়া উঠে পড়েছে দেখছি" দুজনের একজন কথা বলে আর সঙ্গে সঙ্গেই প্রীতির নাকে মদের বিশ্রী দুর্গন্ধ যায় সে নাক চেপে বলে "তোমরা কারা আমাকে এখানে ধরে এনেছো কেন?"
কিন্তু লোকদুটো উত্তর না দিয়ে বিশ্রীভাবে হাসতে থাকে, হাসতে হাসতে একজন অপরজনকে বলে "বস এবার দারুন মাল এনেছে এই মালটাই বাকিগুলোর থেকে টপ, এর ভালো দাম পাওয়া যাবে"
অপরজন বলে "ঠিকই বলেছিস নেহাত বস বারণ করেছে তাই নাহলে এতক্ষণে মজা লুটে নিতাম"
ওদের কথা শুনে ভয়ে প্রীতির গলা শুকিয়ে যায় তার বুঝতে বাকি থাকে না যে এরা সেই মেয়ে পাচারকারী দলের সাথে জড়িত যাদের ব্যাপারে নীলাদ্রি বলছিল আর এখন এরা ওকে তুলে এনেছে পাচার করার জন্য, এবার দুজনের একজন এগিয়ে আসে তার কাছে আর সঙ্গে সঙ্গে তার নাকে আসতে থাকা মদের গন্ধটা বেড়ে যায়, লোকটা ওকে টাচ করতে গেলে সে সজোড়ে একটা ধাক্কা দেয় এতে লোকটা টাল সামলাতে পারে না পড়ে যায়,কিন্তু এর ফলে দ্বিতীয় লোকটা রেগে যায় সে সজোড়ে একটা থাপ্পড় মারে প্রীতিকে আর থাপ্পড় খেয়ে প্রীতি মেঝেতে পড়ে যায়।
"শালী খুব রস না তোর.. তোর রস কিভাবে কমাতে হয় সেটা জানা আছে" মেঝে থেকে উঠতে উঠতে লোকটা হিংস্র ভাবে বলতে বলতে আবার প্রীতির দিকে এগিয়ে আসতে যেতেই অপরজন বাধা দেয়, "বস কিন্তু বারণ করেছে"।
এতে প্রথম লোকটা অনিচ্ছাসত্ত্বেও থেমে যায় এরপর দ্বিতীয় লোকটা পকেট থেকে একটি ইঞ্জেকশন সিরিঞ্জ বার করে এবং প্রথম লোকটা গিয়ে প্রীতির দুহাত চেপে ধরে, প্রীতি ছাড়ানোর জন্য ছটফট করতে থাকলেও তাতে ফল হয় না হটাৎ সে অনুভব করে যে তার বা হাতের বাহুতে একটা সুঁচ ফুটে গেল আর তারপরেই আবার তার দুচোখে অন্ধকার ঘনিয়ে আসে।
প্রীতির সাথে থাকা ট্রেসার ট্রেস করতে করতে বেশ কয়েকটা গ্ৰাম পার হয়ে আসে আদিত্য রাস্তাঘাট এখনো খুব একটা উন্নত নয়, আলোর ব্যাবস্থাও তেমন নেই তবুও তার মাঝেই অন্ধকার চিরে এগোতে থাকে আদিত্যর গাড়ি, সাথে অবশ্য ড্রাইভার আছে ওর নিজের জিপটা ওর সঙ্গে নেই ফলে গাড়ির খোঁজ করতে হয় সৌভাগ্যবশত একে রাস্তায় পেয়ে যায় এবং মুখচেনা থাকায় সে আদিত্যকে নিয়ে আসতে রাজী হয়ে যায় নাহলে রাতের বেলা এই এলাকায় গাড়ি নিয়ে এদিকে কেউ আসতে চায় না কারণ এই খারাপ রাস্তা।
বেশকিছুক্ষণ পর একটা জায়গায় গিয়ে গাড়িটা থামাতে বললো আদিত্য প্রীতির সাথে থাকা ট্রেসার খুব কাছেই একটা দিকে ইণ্ডিকেট করছে, এবং সেদিকে যে একটা হোমস্টে আছে এটা আদিত্য জানে। নর্থবেঙ্গলে অনেককটা ট্যুরিস্ট স্পট থাকায় এখানে অগুণতি রিসর্ট এবং হোমস্টে তৈরী হয়েছে এটাও এরকমই একটা হোমস্টে যদিও এটা এখনো ট্যুরিস্টদের জন্য পুরোপুরি চালু হয়নি। আদিত্য গাড়ি থেকে নেমে পড়লো, প্রথমে মোবাইলটা পকেট থেকে বের করে দেখলো নেটওয়ার্ক আছে দেখে লোকেশনটা সেন্ড করে এগিয়ে যাচ্ছে এমন সময় পিছন থেকে গাড়ির ড্রাইভার বললো "আমিও আসবো সাব?" আদিত্য ফিরে তাকালো সে বুঝলো ড্রাইভার কিছু একটা অনুমান করেছে যদিও তাকে কিছুই বলেনি আদিত্য তাই সে বললো "আসতে পারো তবে সামনে কিন্তু বিপদ আছে আর সেটা কতটা ভয়ানক সেটা আমি এখনো জানিনা", ড্রাইভারটি গাড়ির দরজা লক করে মুচকি হেসে এগিয়ে এলো।
অল্প একটু হেঁটে এসেই হোমস্টেটা দেখতে পেলো দুজনে, একটা দোতলা কটেজ আর তার পাশাপাশি বেশ কয়েকটা ছোটো ছোটো কুটির টাইপের রুম দাঁড়িয়ে আছে এবং সেগুলোর সামনে দুটো গাড়িও দাঁড়িয়ে আছে কিন্তু আর কাউকে চোখে পড়লো না, একটু খটকা লাগলো আদিত্যর ট্রেসার এখানেই দেখাচ্ছে তাহলে? দুজনে আরো কিছুটা এগিয়ে গেল কিন্তু তবুও কাউকে দেখতে পেলো না, আদিত্য আরও এগিয়ে যাচ্ছিল হটাৎ পাশে দাঁড়িয়ে থাকা ড্রাইভারটি তার হাত টেনে আটকালো, আদিত্য অবাক হয়ে তার দিকে তাকালো তারপর তার দৃষ্টি অনুসরণ করে দেখলো একদিক থেকে একজন টলতে টলতে এগিয়ে আসছে বোঝাই যাচ্ছে সে নেশাগ্ৰস্ত কিছুটা এসে হোমস্টের গেটের কাছে একটা বড়ো গাছের গোড়ায় প্রস্রাব করার জন্য তৈরি হচ্ছে।
আদিত্য আর দেরী করলো না সঙ্গী ড্রাইভারকে ওখানে দাঁড়াতে বলে একাই পা টিপে টিপে এগিয়ে গেলো সামনের লোকটা টেরই পায়নি সে তার কাজ সবে শুরু করেছে এমন সময় পিছন থেকে আদিত্য তার একেবারে কাছে গিয়ে বা-হাতে তার মুখ চেপে ধরে ডানহাতের চেটো দিয়ে লোকটার মাথার পিছনে যেখানে মস্তিষ্ক থাকে সেখানে সজোড়ে আঘাত করলো সঙ্গে সঙ্গে সে জ্ঞান হারালো আদিত্য আসতে আসতে ওকে শুইয়ে দিয়ে ইশারায় ড্রাইভারকে ডেকে এগিয়ে গেলো, একটু এগোতেই একটা অস্পষ্ট আওয়াজ শুনতে পেলো কারা যেন হাসিঠাট্টা করছে।
শব্দ যেদিক থেকে আসছে সেদিকে এগিয়ে গিয়ে আড়াল থেকে দেখলো একটা জায়গায় একটা রুমের সামনে দুজন লোক আগুন জ্বালিয়ে তার সামনে বসে আছে ওদের সামনে কয়েকটা বোতল আর গ্লাস রাখা ওগুলো যে কিসের সেটা বুঝতে বাকি রইলো না আদিত্যর। এবার একটু ফাঁপড়ে পড়লো আদিত্য কারণ একসাথে একসঙ্গে এদের দুজনকে মারতে পারবে না আর একজনকে মারলে অপরজন বেঁচে যাবে আর সঙ্গে সঙ্গেই সে এখানে তার বাকি সঙ্গীদের সতর্ক করার চেষ্টা করবে।
আদিত্য একটু দাঁড়িয়ে ভাবতে লাগলো কি করবে এমন সময় তআর সঙ্গী ড্রাইভারটি তার সমস্যা সমাধান করে দিল সে বললো "সাব আপনি একটাকে ধরুন আমি অপরটাকে ধরছি", আদিত্য প্রথমে তার কথা শুনে একটু অবাক হলো কিন্তু এটাও বুঝলো এইমুহূর্তে এছাড়া উপায় নেই। দুজনে আস্তে আস্তে ওদের কাছে গিয়ে একসাথে দুজনে ঝাঁপিয়ে পড়লো একটা করে মোক্ষম আঘাতেই দুজনে শুয়ে পরলো। দুজনে উঠে একটা হাঁফ ছেড়ে এগোতে যাবে এবার আবার একটা অস্ফুট আওয়াজ এলো তবে এটা কারো কথা বলার নয় কেই যেন ফুঁপিয়ে কাঁদছে একটা মেয়ের গলা চমকে উঠলো আদিত্য তবে কি প্রীতি?
আরেকটু ভালো করে শুনতেই বুঝতে পারলো আওয়াজটা আসছে সামনের রুমগুলোর একটা থেকে যার সামনে ওরা তিনজন বসে মদ খাচ্ছিল, তাড়াতাড়ি সেদিকে এগিয়ে গেল ওরা দুজন প্রতিটা রুমের দরজায় কান পেতে শুনতে থাকে এভাবে একটা দরজায় এসে থেমে যায় আদিত্য, ভালো করে শুনে বুঝতে পারে এটার ভিতর থেকেই আসছে আওয়াজটা, আদিত্য দেখলো দরজা বন্ধ থাকলেও তালা দেওয়া নেই শুধু বাইরে থেকে আটকানো আছে বোধহয় বাইরে পাহারা ছিল বলেই ওরা তালা লাগায়নি।
আদিত্য দরজা খুলে ভিতরে ঢুকতেই কয়েকজন যুবতী মেয়েকে দেখতে পেলো, ঘরের মধ্যে একটা হাল্কা নীল রঙের নাইট বাল্ব জ্বলছে তাতে বুঝলো মেয়েগুলোর প্রত্যেকের বয়স প্রীতির মতোনই এবং ওরাও কোনো কারনে আদিত্যকে দেখে ভয় পেয়ে গুটিসুটি হয়ে একজায়গায় জড়ো হয়ে বসে আছে, এদেরই কেউ কাঁদছিল এখন আদিত্যকে দেখে কান্না থামিয়েছে, খুব ভালো করে দেখেও আদিত্য ওদের মধ্যে প্রীতিকে দেখতে পেলো না।
"তোমরা কারা, আর এখানে কি করছো?" শান্ত আর আস্তে জিজ্ঞেস করে আদিত্য,মেয়েগুলো প্রথমে নিজেদের মধ্যে পরস্পরের মুখ চাওয়াচাওয়ি করলো কিন্তু মুখে কিছু বললো না। আদিত্যর বুঝতে বাকি রইলো না যে ওদের ভয় এখনো কাটেনি তাই সে আবার বললো "দেখো তোমাদের ভয়ের কিছু নেই, তোমাদের কি কেউ এখানে ধরে এনেছে?"
এবার একজন মেয়ে এগিয়ে এলো সেও আস্তে আস্তে বললো "আপনি কে?"
"এখানে আমাকে সবাই আদিত্য সিংহ রায় নামে চেনে"
একথা শোনার পরে মেয়েগুলো আবার পরস্পরের মুখ চাওয়াচাওয়ি করলো তারপর আগের মেয়েটি বললো "আমাদের এখানে ধরে এনে বন্দী করে রেখেছে"
"কে ধরে এনেছে?"
"কয়েকজন লোক তবে ওরা অন্য কারো কথায় করেছে যাকে ওরা বস বলে ডাকে"
"আচ্ছা তোমরা এখানে অন্য কোনো মেয়েকে দেখেছো, তোমাদেরই মতো বয়স ফর্সা আমার বোন ওকে আজকেই ধরে আনা হয়েছে"
"না, আজ আমাদের সাথে কোনো নতুন মেয়ে আসেনি, আপনি আমাদের বাঁচান প্লিজ" বলতে বলতে মেয়েগুলো আবার কান্না শুরু করলো, সঙ্গে সঙ্গে আদিত্য ওদের আওয়াজ করতে বারণ করে, "আচ্ছা আচ্ছা রিল্যাক্স তোমাদের কারো কিচ্ছু হবে না"
এবারে মেয়েগুলো কান্না থামায়,আদিত্য আবার বলে "কিন্তু আমাকে আমার বোনকে খুঁজতে হবে, তোমরা ওর সাথে যাও" বলে পাশে ড্রাইভারকে দেখায়, তারপর তার উদ্দেশ্যে বলে "তুমি ওদের নিয়ে এখান থেকে চলে যাও আর ওদের সবাইকে ওদের ঘরে পৌঁছে দাও"
"কিন্তু সাব আপনি?"
"এখানে বাকিটা আমি সামলে নেবো, যাও"।
প্রত্যেকে আস্তে আস্তে বেরিয়ে এলো তারপর সাবধানে চারপাশে নজর রেখে হোমস্টের গেটের কাছে এসে আদিত্য ওদের চলে যেতে বলে নিজে আবার ভিতরে ঢুকে গেল। মেইন কটেজটার দরজা ঠেলতেই খুলে গেল সে আস্তে আস্তে ভিতরে ঢুকলো এখানেও একইরকম হালকা নীল রঙের আবছা আলোয় ভরে আছে, আবছা আলোতেই আদিত্য বুঝতে পারলো যে জায়গাটা বাইরে থেকে যতটা ভেবেছিল তার থেকে বেশ কিছুটা বড়ো একটা রিসেপশনের মতো ডেস্কও চোখে পরলো কিন্তু কাউকে দেখতে পেলো না সে পা টিপে টিপে আস্তে আস্তে এগিয়ে যাচ্ছে, ডানদিকে তাকাতে দুটো দরজা দেখতে পেলো। কেয়া বাত হ্যায়
Posts: 4,429
Threads: 6
Likes Received: 9,079 in 2,845 posts
Likes Given: 4,330
Joined: Oct 2019
Reputation:
3,224
(26-03-2023, 11:53 PM)Monen2000 Wrote:
১১তম পর্ব
বি দ্র: "ধূসর পৃথিবী" একটা পার্ট এখানে শেষ, যারা গল্পটা প্রথম থেকে পড়েছেন এবং মনে রেখেছেন তাদের মনে হয়তো কিছু প্রশ্ন আছে যেটার উত্তর এখানে নেই, তাদের বলছি উত্তরগুলো দ্বিতীয় একটা পার্ট লিখে সেখানে দেবো ভেবেছি কিন্তু সেটা তখনই শুরু করবো যখন দেখবো এই পার্টটা ভালো রেসপন্স পাচ্ছে, নাহলে এখানেই ইতি। যদি লাইক রেপু নাও দিতে পারেন তবে অন্তত কমেন্ট করে রিভিউটা দেবেন।
অসাধারণ
Posts: 4,429
Threads: 6
Likes Received: 9,079 in 2,845 posts
Likes Given: 4,330
Joined: Oct 2019
Reputation:
3,224
(12-04-2023, 10:15 PM)Monen2000 Wrote:
দ্বিতীয় পার্ট
১ম পর্ব
"উমা, ও চলে গেছে আর আসবে না"
সময় প্রবাহমান সে নিজে স্বাধীনভাবে চলতেই থাকে কারো জন্য থামে না, কেউ তাকে থামাতে পারে না সে তার আপন খেয়ালে আপন গতিতে চলতে থাকে চলতেই থাকে তার বিরাম নেই। স্বামীর মুখে শোনা কথাগুলো আজও কানে ভাসে উমাদেবীর স্বামীর কথাটা আজও তাকে কষ্ট দেয়, সে চলে যাওয়ার প্রায় একবছর হতে চললো সামনে থেকে দেখে সবাই ভাববে যে সবকিছুই আবার আগের মতোই চলছে এইজন্যই তো বলে সময় আর জীবন কারো জন্য থেমে থাকে না, যার নাম এতদিন পুরো নর্থবেঙ্গলে সবার মুখে মুখে থাকতো সে চলে যাওয়ার কিছুদিনের মধ্যেই যেন সবাই তাকে ভুলে গেল, সবার জীবন আবার নিস্তরঙ্গভাবে চলতে থাকে এমনকি সিংহ রায় আর চক্রবর্তী পরিবারের সদস্যদেরও আপাতদৃষ্টিতে দেখলে কিছুই পরিবর্তন চোখে পরবে না, কিন্তু এই দুই পরিবারের সদস্যরা জানে তাদের জীবনে কতটা পরিবর্তন এসেছে।
যেমন অতীন্দ্রবাবু ছেলেকে হারিয়েছিলেন অনেক বছর আগে কিন্তু তারপর সেই জায়গা অনেকটাই পূরণ করেছিল সে এমন একজন ছিল যাকে তিনি চোখ বন্ধ করে ভরসা করতেন কিন্তু মুহূর্তের দুর্বলতায় একদিন সেই ভরসার দেয়ালে চিড় ধরলো আর তারপর সেই দেওয়াল ভেঙে পরলো। যেদিন সে চলে গেল সেদিন অনেক চেষ্টা করেও নিজের চোখের জল আটকাতে পারেননি তিনি, একান্তে আজও নিজেকে দোষী ভাবেন অতীন্দ্রবাবু সেদিন যদি তার বিশ্বাসের ভিত দুর্বল না হতো তাহলে হয়তো তাকে আটকাতে পারতেন কিন্তু এখন আর উপায় নেই সে চলে গেছে।
তারপর উমাদেবী, সাত সাতটা বছর তিনি বুঝতেই পারেননি যে তার ছেলে আর নেই যে তার সামনে আছে সে তার ছেলে নয়, যখন তিনি জানলেন তখন বেমালুম সাত বছরের কথা ভুলে গেলেন আর যখন তার ভুলটা ভাঙলো তখন অনেক দেরী হয়ে গেছে সে চলে গেছে। তিনি জানতে চেয়েছিলেন তার বিষয়ে, জানতে চেয়েছিলেন কেন তাকে নিয়ে এসেছিলেন অতীন্দ্রবাবু উত্তরে তার স্বামী অতীন্দ্রবাবু তাকে জানালো যে তাকে তিনিই নিয়ে এসেছিলেন যাতে উমাদেবী ছেলের শোকে অসুস্থ না হয়ে পড়েন। এখন তার খুব ইচ্ছে করে তাকে একবার বুকে টেনে নিতে যেমনটা এই সাতবছর করতেন কিন্তু সেটা হওয়ার নয় কারণ তখন সে চলে গেছে, সে যে তার ছেলে নয় এটা জানার পরে কত কথা শুনিয়েছেন এমনকি থাপ্পড় পর্যন্ত মেরেছিলেন, ছেলেটা মুখ বুজে সব সহ্য করেছে এমনকি প্রীতির কিডন্যাপের পিছনেও তাকে সন্দেহ করেছিলেন অথচ সেই তার মেয়েকে উদ্ধার করে তার কাছে ফিরিয়ে দিয়ে চলে গেল। যাওয়ার আগে একবার দেখা পর্যন্ত করে যায়নি এতটাই অভিমান হয়েছিল তার, উমাদেবী স্বামীর মুখে শুনেছেন যে ছেলেটার খুব অভিমান, সেই অভিমানেই হয়তো সে চলে গেছে আর এখন সেই অভিমান ভাঙিয়ে তাকে ফেরত নিয়ে আসার কোনো উপায় নেই।
পরিবর্তন এসেছে প্রীতি আর নীলাদ্রির জীবনেও, উমাদেবীর মতো প্রীতিও জানতো না যে তার দাদা অনেক আগেই মারা গেছে যখন জানলো তখন তার মনে রাগ আর ঘৃণা স্থান নিল, কত অপমানই প্রীতি করেছে তাকে অথচ আজ সে না থাকলে তাকে হয়তো কোনো নিষিদ্ধপল্লীতে থাকতে হতো, আজ যখন প্রীতি হাসপাতাল থেকে বাড়ি আসে তখন মাঝে মাঝে তার মনে হয় এখনই হয়তো সে এসে বলবে "তোর মুখ শুকনো কেন বলেছি না তুই শুধু হাসবি কোনো সমস্যা থাকলে আমাকে বল আমি আছি তো", কিন্তু না আজ আর কেউ বলে না আর কখনো কেউ বলবে না আর কখনও কেউ তার মাথায় স্নেহ মাখানো ভরসা দেওয়ার হাত রাখবে না কোনোদিনও না। এক দাদাকে তো অনেক আগেই হারিয়েছে কিন্তু এখন এই দাদাকেও হারিয়ে ফেলেছে তার দাদার শূন্যতা সে পূরণ করেছিল কিন্তু তার শূন্যতা পূরণ হবে না।
কেউ তাকে দোষারোপ না করলেও নীলাদ্রি জানে যা হয়েছে সেটা তার জন্যই হয়েছে সেই একজন মায়ের থেকে তার ছেলেকে আর একজন বোনের থেকে তার দাদাকে কেড়ে নিয়েছে, সে চাইলে আলাদাভাবে তার সাথে কথা বলতেই পারতো কিন্তু সেটা না করে তাকে সম্পূর্ণ ভুল বুঝে একের পর এক ভুল করে গেল যেগুলো শোধরানোর কোনো উপায় তার জানা নেই। আজও একটা অপরাধবোধ তাকে কুঁড়ে কুঁড়ে খায় আজও সে অতীন্দ্রবাবু, উমাদেবী আর প্রীতির চোখে চোখ রেখে কথা বলতে পারে না। নিজের বন্ধুর প্রতি ভালোবাসা দেখাতে গিয়ে সে আরেক বন্ধুকে হারিয়ে ফেলেছে, বন্ধুই তো ছিল সে, তার ভালোবাসার মানুষটিকে অক্ষত অবস্থায় তার কাছে তো সেই ফিরিয়ে দিয়েছিল, যাওয়ার আগে মনোহরবাবু আর মলয়ের বিরুদ্ধে সমস্ত প্রমাণ সে নীলাদ্রির হাতে তুলে দিয়ে যায় এমনকি তার "আইনের ফাঁকও আছে" পরামর্শ টার আসল মানে বুঝতে পেরে সেটা মেনে সে মনোহরবাবু আর মলয়ের এনকাউন্টার করে প্রীতি আর সিংহ রায়রা শুধু নয় আরও অসংখ্য লোকের জীবন নিরাপদ করেছে কিন্তু তবুও তার মনে শান্তি নেই, তাকে খোঁজার জন্য নিজস্ব সোর্স কাজে লাগিয়েও তার খবর পায়নি, অতীন্দ্রবাবুকেও জিজ্ঞেস করেছিল তার সম্বন্ধে কিন্তু প্রতিবারই অতীন্দ্রবাবু একই কথা বলেছেন "আমি ওর কাছে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ যে ওর আসল পরিচয় কখনো কাউকে দেবো না, তাই ওর পরিচয় বা ওর অতীত কখনো কাউকে বলতে পারবো না" তবুও নীলাদ্রি চেষ্টা করে যাচ্ছে তাকে খুঁজে বার করার।
এদের ছাড়া আরও একজন আছে যার জীবনে বিরাট পরিবর্তন এসেছে যদিও সেটা বাইরে থেকে দেখে বোঝার উপায় নেই আর তিনি হলেন ডক্টর সুবিমল চক্রবর্তীর মেয়ে ডক্টর অদ্রিজা চক্রবর্তী। তার বাবা সুবিমলবাবু ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠেছেন, স্বামীকে ফিরে পেয়ে চারুলতা দেবীও সুস্থ হয়ে উঠেছেন সবকিছু ফিরে পেলেও অদ্রিজার মুখের হাসি ফিরে আসেনি যেটা নিজের বাবার মৃত্যুসংবাদ শুনে চলে গিয়েছিল। কিন্তু এখন বাবাকে ফিরে পেলেও সে তাকে হারিয়ে ফেলেছে যে তার বাবাকে ফিরিয়ে দিয়েছে যাকে সে প্রথম দেখাতেই তার হৃদয় সমর্পণ করেছিল, সেই কবে কিছু বছর আগে প্রথম দেখা সদাগম্ভীর, সদারাগী মানুষটাকে তখন অবশ্য জানতো যে সে প্রীতির দাদা সেই ভালোলাগা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেতে থাকে কিন্তু কখনো বলা হয়নি, বলতে সাহস হয়নি। তার রাগ তার গাম্ভীর্য তার অ্যাটিটিউড সবকিছুই ভালো লাগতো অদ্রিজার। যখন জঙ্গলের ভিতর থেকে কোলে তুলে নিয়ে এলো সে অদ্রিজা একদৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল তার রাগী মুখের দিকে তার মনে হচ্ছিল যদি সময় ওখানেই ওভাবেই থেমে যেত কিন্তু সেটা হয়নি আর তারপর তার বাবার হত্যার অভিযোগ উঠলো তার বিরুদ্ধে, এটাও সামনে এলো যে সে আদিত্য সিংহ রায় নয়, সবার মতো অদ্রিজাও ভুল বুঝলো তাকে এমনকি গায়ে হাত পর্যন্ত তুলেছিল কিন্তু সেই তার বাবাকে তার কাছে ফিরিয়ে দিল, ফিরিয়ে দিয়ে নিজে চলে গেল, আজও নিজের বন্ধ রুমের ভিতরে একাকী নিঃসঙ্গ অবস্থায় বিছানার বালিশে তার কান্নার শব্দ চাপা পরে যায়। আজও অদ্রিজার খালি একটাই চাওয়া একটাই প্রার্থনা জীবনে যেন তার সাথে অন্তত একবার আবার দেখা হয় যাতে সে অন্তত ক্ষমাটুকু চাইতে পারে, অদ্রিজা জানেনা যে তার এই ইচ্ছা কোনোদিন পূরণ হবে কি না। তবে অপেক্ষা করতে দোষ কি? অদ্রিজা জানে সে যা ভুল করেছে তাতে এজীবনে তাকে হয়তো পাবে না কিন্তু সে নিজেকে অন্য কারো হতে দেবে না এইজন্মে না হোক কোনো না কোনো জন্মে তো তাকে পাবেই অদ্রিজা ততদিন অপেক্ষা করবে সে।
সময় যত এগোতে লাগলো নর্থবেঙ্গল থেকে ধীরে ধীরে এই নকল আদিত্য সিংহ রায়ের স্মৃতি ফিকে হয়ে আসতে থাকে তার অস্তিত্ব শুধুমাত্র গুটিকয়েক লোকের স্মৃতিতেই থেকে গেল। সে কোথা থেকে এসেছিল কোথায়ই বা চলে গেল এটা নিয়ে কারো কোনো ভাবনা নেই, যে ছেলেটা সাত সাতটা বছর এখানে কাটিয়ে এদেরই একজন হয়ে উঠেছিল সে যেন এক মূহুর্তেই হারিয়ে গেল।
কলকাতার নিউ আলিপুরের ব্যানার্জি বাড়িতে আজও অন্যান্য দিনের সকালের মতোই ব্যাস্ততার ছাপ বাড়ির কর্তা অভিরূপ ব্যানার্জি আর ছেলে অরুণাভ ব্যানার্জি অফিসে যাবে, অভিরূপ বাবুর বয়স ৫৮ আর অরুণাভর বয়স ৩১ বছর, ছোটোরা অর্থাৎ অরুণাভর ছেলে মেয়ে যাদের বয়স একজনের ৫ বছর আর অপরজনের বয়স ৩ বছর তারা কলেজে যাবে, এছাড়া অভিরূপ বাবুর বোন মণিমালা দেবী এবং তাঁর স্বামী প্রীতমও এই ব্যানার্জি বাড়িতেই থাকেন আর থাকে তাদের ছেলে সুশান্ত যার বয়স অরুণাভর থেকে বছর দুই তিন ছোটো সেও অরুণাভর সাথেই কাজ করে। ব্যানার্জি পরিবারের নিজস্ব বিজনেস ব্যানার্জি ক্রিয়েশনস্এই কাজ করে প্রত্যেকে। অভিরূপ ব্যানার্জি তার নিজের হাতে গড়ে তোলেন কোম্পানিটি এতদিন তিনিই কোম্পানির মাথায় বসে সবকিছু পরিচালনা করেছেন তবে এবার হয়তো নিজের ছেলের হাতে ব্যাটন তুলে দেবেন।
বাড়ির মহিলারাও নিজেদের কাজে ব্যাস্ত বাড়ির কর্ত্রী শ্রীতমা ব্যানার্জি অর্থাৎ অভিরূপ বাবুর স্ত্রী রান্নার দিকটা দেখছেন, মণিমালা দেবী বৌদিকে সাহায্য করছেন এবং বাড়ির বউ মৌমিতা অর্থাৎ অরুণাভর স্ত্রী ছেলে মেয়েকে কলেজের জন্য তৈরি করছে, মৌমিতার বয়স ৩০ এর মতো ছিমছাম চেহারা গায়ের রং খুব ফর্সা না হলেও কালোও না।
শ্রীতমাদেবী কাজ করছেন যদিও কিন্তু ওনার মুখ আজ একটু গম্ভীর এমনিতে বেশ শান্ত হাসিখুশি স্বভাবের মহিলা কিন্তু আজ একটু গম্ভীর, সবার খাবারের ব্যাবস্থা হয়ে যাওয়ায় মণিমালা দেবী কিচেন থেকে বেরিয়ে যাচ্ছেন কিন্তু তিনি থমকে গেলেন এটা দেখে যে শ্রীতমাদেবী তখন গ্যাসের উপরে দুধ জ্বাল দিতে বসালেন এবং সে দুধের পরিমাণ অনেকটাই, একটু অবাক হলেন মণিমালা দেবী জিজ্ঞেস করলেন
"এত দুধ কিসের জন্য বৌদি?"
"পায়েস বানাবো" শান্ত কণ্ঠে উত্তর দেন শ্রীতমাদেবী।
"কেন, কোনো পূজো আছে নাকি?"
"না অন্য দরকার আছে"
"দরকার? দাদা খেতে চেয়েছেন বুঝি?"
"না, ঠাকুরঝি তোমার দাদার জন্য না দরকারটা অন্য, তুমি এক কাজ করো আজ সবাইকে তুমি খেতে দাও আমি এদিকের কাজটা সারি আর তুমিও খেয়ে নিও আমি পরে খেয়ে নেবো"।
"বৌদির কি হয়েছে রে দাদা?" ব্রেকফাস্ট টেবিলে খাবার সার্ভ করতে করতে অভিরূপ বাবুকে প্রশ্নটা করলেন মণিমালা দেবী। গৌরবর্ণ শান্ত সৌম্য প্রকৃতির অভিরূপ বাবু খাবারে হাতও দিলেন না তিনি শান্তস্বরেই বলেন "কি আর হবে, পায়েস করতে ইচ্ছে হয়েছে করছে বোধহয় কোথাও পূজো দিতে যাবে তাই আর তুই তো জানিস পূজো দিতে গেলে ও মন্দিরের বাইরে থাকা মানুষগুলোকে কিছু না কিছু খাইয়ে আসে"।
বাকি সময়টা আর কেউ কোনো কথা বললো না খাওয়া হয়ে গেলে একে একে সবাই বেরিয়ে গেল এমনকি মণিমালা দেবীও তার নাকি কোথায় কি একটা কাজ আছে। সবাই বেরিয়ে গেলে অভিরূপবাবু কিচেনে স্ত্রীর কাছে গেলেন, শ্রীতমাদেবী তখনও পায়েস রান্নায় ব্যাস্ত, স্বামীর দিকে না তাকিয়েই বললেন "কি হলো তুমি তো কিছুই খাওনি, কিছু হয়েছে?"
"তুমিও তো খাওনি"
"আমি পরে খেয়ে নেবো"
"ঠিক আছে তাহলে আমিও তখন খাবো"
শ্রীতমাদেবী আর কিছু না বলে পায়েস তৈরীতে মনোনিবেশ করলেন, একটুক্ষণ চুপ থেকে অভিরূপবাবু স্ত্রীকে ধরে নিজের দিকে ঘুরিয়ে বললেন "শ্রী, তুমি যেমন ওর মা আমিও কিন্তু ওর বাবা আজ যে ওর জন্মদিন সেটা সবাই ভুলে গেলেও তুমি ভোলোনি আর আমিও না"।
কথাটা শুনে কয়েক মুহূর্ত থমকে থাকলেন শ্রীতমাদেবী আর তারপরই স্বামীর বুকে কান্নায় ভেঙে পরলেন, কাঁদতে কাঁদতে বললেন "তোমার মনে আছে?"
"আমি ওর বাবা আমি ভুলে যাবো এটা হতে পারে? প্রতিবছর তুমি ওর জন্মদিনে পায়েস বা কিছু ভালো রান্না করে গরীব মানুষ দের বা কুকুরদের খাওয়াও ঠিক যেমন অনি সবাইকে খাওয়াতো। অনিও তো ওদের পাশে থাকতো দেখাশোনা করতো" অভিরূপ বাবু শান্ত স্বরে বলেন। শ্রীতমা দেবীর কান্না আরও বেড়ে যায় কাঁদতে কাঁদতেই বলেন "আজ ওর জন্মদিন, ছেলেটা পায়েস খেতে খুব ভালোবাসতো ঘুরতে যাওয়ার আগে পায়েস খেতে চেয়েছিল বলেছিলাম ফিরে এলে করে খাওয়াবো কিন্তু আমার ছেলেটা আর ফিরলো না আট বছর হয়ে গেল... কেন ওকে যেতে দিলাম? সেদিন যদি ওকে যেতে না দিতাম তাহলে আমার অনি আমার কাছেই থাকতো" শ্রীতমাদেবী স্বামীকে দুহাতে আঁকড়ে ধরেন, অভিরূপ বাবু স্ত্রীর মাথায় হাত বুলোতে বুলোতে বলেন "কিন্তু ও যদি তোমাকে এইভাবে কষ্ট পেতে দেখতো তাহলে খুব কষ্ট পেতো তাই নিজেকে সামাও"।
"কিভাবে সামলাবো... আমার ছেলে আমার কাছে নেই"।
"তবুও নিজেকে সামলাতে হবে শ্রী, তুমি তো জানো অনি সবসময় তোমাকে হাসিখুশি দেখতে চাইতো"
"আমার ছেলেটা আমাকে ছেড়ে কেন চলে গেল?" শ্রীতমাদেবীর কান্না থামে না, অভিরূপবাবু স্ত্রীর মাথায় হাত বোলাতে বোলাতে বলেন,
"ছিঃ শ্রী এভাবে কেউ কাঁদে? আজ না অনির জন্মদিন ওর জন্মদিনে তুমি কাঁদবে?"
"জানো আমার এখনো কেন যেন মনে হয় সেদিন ওখানে এমন কিছু হয়েছিল যেটা অরু আমাদের থেকে লুকিয়ে যাচ্ছে" ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে বলেন শ্রীতমাদেবী।
"এসব তুমি কি বলছো শ্রী, অরু কেন লুকোবে অনি ওর ভাই তাছাড়া মৌমিতাও তো ছিল ,ও তো অনিকে ভালোবাসতো"।
"ভালোবাসা না ছাই দেখলে না বছর ঘুরতে না ঘুরতেই অনিকে ভুলে অরুকে বিয়ে করে নিল" শ্রীতমাদেবীর গলায় ক্ষোভ, অভিরূপবাবু তখনও শান্তস্বরে বলেন "শ্রী এসব কি বলছো তুমি, আমরা সবাই জানি অনিকে হারানোর পরে মৌমিতার অবস্থা কেমন ছিল শেষে অরুই ওকে বুঝিয়ে আবার স্বাভাবিক অবস্থায় ফেরত নিয়ে আসে"।
"আমি ওসব কিছু জানিনা, আমার ছেলে আমার কাছে নেই ওদের সাথে ঘুরতে গিয়েছিল কিন্তু ওদের সাথে ফেরেনি"।
"ওটা একটা অ্যাক্সিডেন্ট ছিল শ্রী"।
"জানো আমার কেমন যেন মনে হয় যে আমার অনি বেঁচে আছে"।
"এ তুমি কি বলছো শ্রী, অনি বেঁচে থাকলে নিশ্চয়ই ফিরে আসতো, ও বেঁচে থাকলে আমিও কম খুশী হতাম না অনি তো আমারও ছেলে কিন্তু এটা আমাদের মেনে নিতেই হবে যে অনি আর নেই"
"না গো আমি ওর মা আমি ওকে দশমাস পেটে ধরেছি আমার ভুল হবে না, আমার এখনো মনে হয় অনি বেঁচে আছে কিন্তু এমন কিছু হয়েছে যার জন্য ও বাড়ি আসছে না তুমি তো জানো ছেলেটা আমার বড্ড অভিমানী, মুখে কাউকে কিছু বলবে না সব সহ্য করবে কিন্তু নিজেকে সরিয়ে নেবে"।
"কিন্তু অভিমান কেন? কার উপরে?"
"আমি জানিনা আমার খালি মনে হয় যে অনি বেঁচে আছে, আমি তো মা আমি বুঝতে পারি ও বেঁচে আছে কিন্তু খুব কষ্টে আছে"।
"শ্রী এটা তোমার মনের ভুল ধারণা, অনি আর নেই যদি থাকতো তাহলে আমিও কম খুশী হতাম না ও তো আমারও ছেলে, কিন্তু ও আমাদের ছেড়ে চলে গেছে যদি ও বেঁচে থাকতো তাহলে কক্ষনো আমাদের ছেড়ে দূরে থাকতো না, ওই দেখো তোমার পায়েস হয়ে গেছে এবার চলো আমিও যাবো তোমার সাথে"। স্ত্রীর কান্না থামাতে কিছুটা সফল হলেও অভিরূপবাবু জানেন তার কান্না থামানোর কেউ নেই যদিও সে কান্না তার ভিতরে সেটা কেউ দেখতে পাবে না, একজন মায়ের কাছে সন্তান হারানোর দুঃখ যতটা একজন পিতার কাছে তার থেকে কিছুমাত্র কম নয়।
দক্ষিণ কলকাতার ঢাকুরিয়া এলাকার বিধান রায় লেন নামে অভিজাত এলাকা হলেও এখানে অনেক মধ্যবিত্তরাও বসবাস করে, তবে খুবই শান্তিপূর্ণ এলাকা প্রত্যেকের সঙ্গেই প্রত্যেকের সদ্ভাব রয়েছে। পুরো পাড়াটার ভিতর দিয়ে রাস্তা চলে গেছে এগুলো পাড়ার ভিতরের রাস্তা বলে গাড়ি চলাচল তেমন নেই তবে পাড়ার বেশ কিছু লোকের নিজস্ব গাড়ি আছে তারাই সেগুলো চালায় আর মাঝে মাঝে কিছু শর্টকাট নেওয়া বাইরের গাড়ি চলে আসে, প্রায়ই রাস্তা দিয়ে বিভিন্ন ফেরিওয়ালা বা ভ্যানে করে সবজিওয়ালারা আসে, এলাকার লোকেরা তাদের থেকে প্রায়শই জিনিস নিয়ে নেয়।
আজও একটা ভ্যানে সবজিওয়ালা এসেছে তার সামনে বেশ ভিড় জমে উঠেছে দরদাম করে সবজি কিনছে, নিজেদের মধ্যে গল্পগুজব করছে এমন সময় হটাৎ একটা ভয়ার্ত চিৎকার শুনে সবাই চমকে উঠলো,
"আরে বাচ্চাটাকে ধরো ধরো"
সবাই চমকে উঠে দেখে একটা ৫-৬ বছরের বাচ্চা মেয়ে একটা লাল বলকে আনতে প্রায় রাস্তার মাঝখানে চলে গেছে আর উল্টোদিক থেকে একটা মারুতি অস্বাভাবিক দ্রুতগতিতে এগিয়ে আসছে, গাড়িটা বাচ্চাটার আরও কাছে চলে এসেছে সবাই চিৎকার করছে কিন্তু কেউ সাহস করে যাচ্ছে না একজন ছাড়া, একটা ৩২-৩৩ বছরের তরুণ সেদিকে এগোতে যাবে কিন্তু ততক্ষণে গাড়িটা একদম গায়ে উঠে এসেছে সবাই আর্তনাদ করে উঠলো কিন্তু চোখের পলকে রাস্তার ওপাশ থেকে আরেক শক্তসমর্থ তরুণ ছেলে এক দৌড়ে বাচ্চাটাকে কোলে তুলে রাস্তার এপাশে চলে এল আর গাড়িটা নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফুটপাতের উপরে কিছুটা উঠে থেমে গেল।
লোকগুলো গাড়িটাকে ধরতে সেদিকে ছুটে গেলেও গাড়িটাকে ধরতে পারলো না গাড়ির চালক ততক্ষণে আবার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে গাড়ি নিয়ে হাওয়া হয়ে গেল। সবাই তখন গাড়িটার পিছনে ধাওয়া করা ছেড়ে দিয়ে তরুণ ছেলেটার কাছে এল সে বাচ্চাটাকে কোলে নিয়ে দুহাতে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে দাঁড়িয়ে আছে, বাচ্চাটিও আকস্মিক এই ঘটনায় ভয় পেয়ে কান্না জুড়ে দিয়েছে। সবার আগে একটু আগের ছেলেটা এগিয়ে এল এসেই বাচ্চাটিকে নিজের কোলে নিয়ে নিল বোঝাই যাচ্ছে ইনিই বাচ্চাটির বাবা।
"বাচ্চাকে সামলে রাখতে পারেন না?"
কথাটা শুনে বাচ্চার কান্না থামানোর চেষ্টা করতে করতে আগন্তুক ছেলেটির দিকে তাকালো সে ছেলেটির বয়স আন্দাজ করতে না পারলেও এটা বুঝলো বয়স বেশি নয় ফর্সা গায়ের রঙ, মাথায় ব্যাকব্রাশ করা লম্বা চুল ঘাড় হয়ে কাঁধ পর্যন্ত নেমে এসেছে এছাড়া মুখ লম্বা দাঁড়ি গোঁফে আবৃত,শরীরে ফোলানো পেশীর আধিক্য না থাকলেও বেশ সুগঠিত চেহারা চুল দাঁড়ি গোঁফ উসখোখুসখো হলেও জামাকাপড় এবং জুতো বেশ পরিপাটি এছাড়া হাতের ঘড়িটাতেও রুচির ছাপ স্পষ্ট।
"থ্যাংক ইউ"
"বাচ্চাকে সামলে রাখতে না জানলে রাস্তায় নিয়ে বের হন কেন?"
আগন্তুকটি আবার গরম স্বরে বলে উঠলো এবার আশেপাশের অন্যান্যরাও তাতে সায় দিল কেউ কেউ গাড়িটির অজ্ঞাত চালকের উদ্দেশ্যে বিশেষ বিশেষ শব্দ প্রয়োগ করতে থাকে ততক্ষণে বাচ্চা মেয়েটির কান্না থেমে গেছে বোধহয় বাবার কোলে আসার পরে তার ভয় অনেকটাই কেটে গেছে।
"আসলে আমি ঠিক খেয়াল করিনি, যদিও করা উচিত ছিল, ভুলটা আমারই, থ্যাংকস অ্যাগেইন"
"এবার থেকে সামলে রাখবেন"
"আপনাকে এই এলাকায় আগে কখনো দেখিনি, এখানে নতুন?"
আগন্তুকটি চলে যাচ্ছিল প্রশ্ন শুনে ঘুরে দাঁড়ালো আশেপাশের ভিড় কিছুটা খালি হয়ে গেছে যে যার মতো উপদেশ দিয়ে চলে গেছে, এবার আগন্তুকটি বললো,
"আমি নতুন এসেছি"
"কোথায় এসেছেন, কাদের বাড়িতে?"
"কারো বাড়িতে নয় ঘুরতে ঘুরতে চলে এসেছি"
"ঘুরতে ঘুরতে?"
"কিছুটা তাই"
"মানে ঠিক বুঝলাম না"
"আসলে একটু দরকারে এসেছিলাম"
"আসুন পাশেই আমার বাড়ি, একটু বসে যান"
"আমি.. মানে"
আগন্তুক ইতস্তত করছে দেখে বাচ্চাটির বাবা বলেন "আপনি আমার মেয়ের প্রাণ বাঁচিয়েছেন তাই আপনার সাথে ওর একপ্রকার আত্মীয়তা হয়ে গেছে তাই আর হেজিটেট করবেন না আসুন"
এবারে আগন্তুক আর ইতস্তত করলো না পাশেই ফুটপাতের উপরেই একটা ছোটো লোহার গেট ঠেলে ভিতরে ঢুকলো তারা। বেশ ছিমছাম বাড়িটা মেইন গেট থেকে ঢুকেই ড্রয়িংরুম তারপর ভিতরে তিনটে রুম একপাশে কিচেন। ড্রয়িংরুমে একটা সোফায় বসলো আগন্তুকটি আর তার সামনে একটা চেয়ারে মেয়েকে কোলে নিয়ে বসলো অপর যুবকটি, বললো
"এবার বলুন এখানে কি দরকারে এসেছিলেন বা কাদের বাড়ি ঘুরতে এসেছেন? দেখি সাহায্য করতে পারি কি না"
"আসলে আমি অনেকবছর পরে কলকাতায় এসেছি এখানে একজনের সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলাম"
"কাদের কথা বলছেন বলুনতো?"
"ব্যানার্জী দের, আপনি বলতে পারবেন তারা কোন বাড়িটায় থাকেন? আসলে অনেক বছর বাদে এসেছি তো এই পাড়াটা মনে আছে এই বাড়িটাই মনে আছে কিন্তু এখন খুঁজে পাচ্ছি না"
"শুধু টাইটেল বললে তো বলা মুশকিল, আরও কিছু ডিটেইলস বলুন"
"ওনাদের একটা ব্যাবসা আছে ব্যানার্জী ক্রিয়েশনস্ নামে"
আগন্তুকের কথা শুনে সামনের যুবকটা একটু সোজা হয়ে বসলো তারপর বললো "ব্যানার্জী ক্রিয়েশনস্? আপনি ওনাদের কিভাবে চেনেন?"
এবার আগন্তুক যুবকটিও একটু চুপ করে গেল তারপর বললো "আমি আগে যখন এসেছিলাম তখন ওনারা আমাকে একটা হেল্প করেছিলেন তাই ভাবছিলাম দেখা করে থ্যাংকস বলবো"
"আচ্ছা, হ্যাঁ আপনি ঠিকই বলেছেন ওনারা আগে এখানেই মানে এই বাড়িতেই থাকতেন ইনফ্যাক্ট এই বাড়িটাও ওনাদের কিন্তু ওনারা তো এখন এখানে থাকেন না"
"ওহ্ কোথায় থাকেন বলতে পারবেন?"
"তুমি আবার কাকে নিয়ে এলে মৈনাক?"
তৃতীয় একটি নারীকণ্ঠ পেয়ে দুজনেই দরজার দিকে তাকিয়ে দেখলো সেখানে এক তন্বী যুবতী দাঁড়িয়ে আছে বয়স ৩০-৩২ হবে, এরও ছিমছাম স্লিম চেহারা পরনে প্রিন্টেড সালোয়ার কামিজ। যুবতীকে দেখেই বাচ্চা মেয়েটি "মাম্মা" বলে একছুটে তার কাছে গেল, যুবতীকে দেখে নবাগত তরুণটি কেমন যেন অদ্ভুদভাবে একদৃষ্টিতে যুবতীটির দিকে তাকিয়ে রইলো।
"এই যে ব্রাদার, মানছি আমার গিন্নী সুন্দরী কিন্তু তাই বলে বাইরের কেউ একদৃষ্টিতে ওকে দেখবে এটা কিন্তু আমি বরদাস্ত করবো না"
নবাগত তরুণটিকে একদৃষ্টিতে নিজের স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে কথাটা বললো মৈনাক নামের তরুণটি, কথাটা শুনে নবাগত তরুণটি নিজেকে সামলে নিল তারপর শান্ত কণ্ঠে বললো,
"দুঃখিত আপনি ভুল বুঝছেন আসলে.."
"আসলে?"
"আসলে ওনাকে দেখে একমুহূর্তের জন্য মনে হলো... মনে হলো আমার দিদি দাঁড়িয়ে আছে তাই একটু হকচকিয়ে গিয়েছিলাম"
যুবতী ঘরে ঢুকে তার স্বামীর পাশে আরেকটা চেয়ারে বসে একদৃষ্টিতে কিছুক্ষণ নবাগত তরুণটিকে নিরীক্ষণ করে তারপর আবার স্বামীকে বললো "ইনি কে?"
"মাম্মা আজ জানো কি হয়েছে? আজ না একটা গাড়ি আমার কাছে চলে এসেছিল"
যুবতীর প্রশ্নে মৈনাক কিছু বলার আগেই বাচ্চা মেয়েটি কথা বললো মেয়ের কথা শুনে যুবতী যেন চমকে উঠলেন ভয়ার্ত স্বরে বললেন "তারপর? তোমার লাগেনি তো?" তারপর রাগী স্বরে স্বামীকে উদ্দেশ্য করে বললেন "মেয়েকে একটু সামলেও রাখতে পারো না?"
যুবতীটির স্বামী চুপ করে আছে কিন্তু বাচ্চা মেয়েটি আবার বলতে থাকে "জানো মাম্মা তারপর এই আংকল সুপারম্যানের মতো আমাকে কোলে তুলে নেয়"
এবার যুবতীটি আবার নবাগত তরুণটির দিকে তাকায় তবে এবার তার দৃষ্টি আগের তুলনায় অনেক শান্ত "অনেক ধন্যবাদ আপনাকে"।
"ইটস্ ওকে, আসলে ওই গাড়িটা যে চালাচ্ছিল খুব সম্ভবত সে ড্রাংক ছিল তাই..তবে বাচ্চাকে সামলে রাখাই উচিত ছিল ওনার"
"হ্যাঁ, আচ্ছা আপনি বলছিলেন আমাকে আপনার দিদি বলে মনে হচ্ছিল..তো...মানে...আসলে আমি বলতে চাইছি যে আপনার দিদি কোথায়? "
"হারিয়ে গেছে"
"ওহ সরি"
"না.. আসলে উনি ঠিকই আছেন কিন্তু আমি ওদের থেকে হারিয়ে গেছি"
স্বামী-স্ত্রী দুজনেই পরস্পরের মুখ চাওয়াচাওয়ি করলো দেখা বোঝা যাচ্ছে ওরা নবাগত তরুণটির কথা ঠিক বুঝতে পারেনি, একটু পরে যুবতী আবার জিজ্ঞেস করলো,
"মানে ঠিক বুঝলাম না"
"ও লম্বা কাহিনী বাদ দিন"
"আপনি ব্যানার্জীদের খুঁজছিলেন কেন?"
"বললাম তো ওনারা একবার আমাকে হেল্প করেছিলেন তাই ধন্যবাদ জানাতাম"
"কিছু মনে করবেন না কিন্তু সবাইকে তো ওনাদের অ্যাড্রেস দেওয়া যায় না কারণ ওনাদের শত্রু কম নেই এই শহরে আর তাছাড়া দিলেও আপনি দেখা করতে পারবেন না সিকিউরিটি ঢুকতে দেবে না"
"আই ক্যান আণ্ডারস্ট্যাণ্ড"
"সুনন্দা তুমিই নিয়ে যাও তোমার তো ঢুকতে বাধা নেই, আফটার অল তোমার পিসির বাড়ি"
এতক্ষণে আবার মৈনাক কথা বললো অবশ্য স্বামীর কথা শুনে সুনন্দা যেভাবে কটমট করে স্বামীর দিকে তাকালো তাতে ওনার মনোভাব বুঝতে বাকি রইলো না নবাগত তরুণটির, সে বললো
"পিসির বাড়ি মানে?"
"হ্যাঁ ব্রাদার, আমার এই গিন্নীটি হলেন ব্যানার্জী ক্রিয়েশনস্ এর মালিক মিস্টার অভিরূপ ব্যানার্জীর ওয়াইফ মিসেস শ্রীতমা ব্যানার্জীর ভাই অ্যাডভোকেট স্বর্ণেন্দু মুখার্জীর মেয়ে"
কথাটা শুনে আবার তরুণটি অবাকদৃষ্টিতে সুনন্দার দিকে তাকায় অবশ্য এবার শুধু সুনন্দার দিকেই নয় একইসাথে বাচ্চা মেয়েটির দিকেও তাকিয়ে থাকে, সে এখন কিছুটা দূরে মেঝেতে একটা খেলনা নিয়ে খেলছে। কিন্তু স্বামীর কথা শুনে সুনন্দা রেগে আবার কটমট করে তার দিকে তাকিয়ে আছে তার পরিচয় দিয়ে দেওয়ার জন্য সে কিছুটা ক্ষুব্ধ কিন্তু ভদ্রতার খাতিরে কিছু বলতে পারছে না, সেটা বুঝতে পেরেই নবাগত তরুণটি বললো
"ঠিক আছে তার দরকার নেই শুনেছি তারা অনেক সময় বাইরে অনেক জায়গায় গিয়ে গরীব দুঃখীদের সাহায্য করেন তেমনই যদি কখনো দেখা হয়ে যায় তাহলে তখন ধন্যবাদ জানিয়ে দেবো, আজ উঠি"
"আপনার নাম টা বলে যান আমি কথা বলে রাখবো"
সুনন্দার কথায় কোনো উত্তর দিল না তরুণটি সে যেন শুনতেই পায়নি এমনভাবে সোফা থেকে উঠে পড়লো, দেখাদেখি উঠলো বেরোনোর সময় নবাগত তরুণটির পা আলতোভাবে সুনন্দার গায়ে লাগায় সঙ্গে সঙ্গে সে বললো "সরি পা লেগে গেল" বলে ঝুঁকে প্রণাম করতে যেতেই সুনন্দা দুপা পিছিয়ে গেল,
"এ মা কি করছেন?"
"আপনার গায়ে পা লেগেছে আমার"
"তাতে কি, ঠিক আছে এসবের দরকার নেই"
"বললাম যে আপনার সাথে আমার দিদির মিল আছে, আপনাকে আমি দিদির চোখে দেখছি আর দিদির পায়ে হাত দিতে লজ্জা কি?"
বলে আবার ঝুঁকে প্রথমে সুনন্দা আর তারপর ভদ্রতার জন্যই মৈনাককে প্রণাম করলো তরুণটি তারপর আর কাউকে কিছু বলার অবকাশ না দিয়েই ঘর ছেড়ে বেরিয়ে গেল দুই স্বামী-স্ত্রী আবারও কিছুটা হতভম্ব হয়ে পরস্পরের দিকে তাকিয়ে রইলো।
রাতে ডিনারের পরে ঘুমানোর আগে বই পড়া অনেকদিনের অভ্যাস মৈনাকের, বই না পড়লে তার ঘুম আসে না আজও সে একটা রোমান্টিক নভেল পড়ছিল। পড়া শেষে ঘুমাতে যাবে কিন্তু তখনও সুনন্দাকে আসতে না দেখে অবাক হলো,বিছানা ছেড়ে বেডরুমের বাইরে ড্রয়িংরুমে আসতেই সে সুনন্দাকে দেখতে পেলো একটা চেয়ারে বিষন্নভাবে একটা হাতে মুখ ঢেকে চুপ করে বসে আছে।
একটু অবাক হলো মৈনাক সুনন্দা এমনিতে খুবই হাসিখুশি থাকে সে সুনন্দার কাছে গিয়ে ও্য সামনে বসলো,
"সুনন্দা, কি হয়েছে?"
ডাক শুনেও সুনন্দা মুখ তুলছে না দেখে মৈনাক আবার ডাক দিল এবারে সুনন্দা মুখ তুললো মৈনাক অবাক হয়ে দেখলো সুনন্দার চোখে জলের দাগ, স্ত্রীর চোখে জল দেখে মৈনাকের অবাকভাবটা আরও বেড়ে গেল সে স্ত্রীর চোখের জল মুছে দিয়ে মোলায়েম স্বরে জিজ্ঞেস করলো, "কি হয়েছে?"
"ওই ছেলেটা.."
"কোন ছেলেটা?"
"ওই যে সকালে এসেছিল"
"তোমার পুরনো অ্যাডমায়ার নাকি?"
স্বামীর ইয়ার্কিটা না বুঝে রেগে স্বামীর দিকে তাকালো সুনন্দা বললো "একটু তো লজ্জা করো, ছেলেটা আমাকে দিদি বলেছে"
মৈনাক বুঝলো তার স্ত্রী এখন ইয়ার্কির মুডে নেই তবুও পরিস্থিতি হাল্কা করার জন্য বললো "আমি তো জানি আমার এই সুন্দরী বউটি শুধু আমারই, আমি তো ইয়ার্কি করছিলাম তো কি হয়েছে ওর?"
"কি যেন নাম বললো?"
"এই রে নামটা তো বলেনি, কেন কি হয়েছে?"
"ওই ছেলেটা যখন আমার পায়ে হাত দিল তখন কেমন যেন একটা অদ্ভুত ফিলিংস হলো, যেন মনে হলো.."
"কি মনে হলো?"
"মনে হলো যেন খুব কাছের একজন পায়ে হাত দিয়েছে"
"কাছের একজন?"
"হ্যাঁ, যেন মনে হলো অনি আমার পায়ে হাত দিয়েছে"
"অনি মানে তোমার ওই কাজিনটি যে ঘুরতে গিয়ে অ্যাক্সিডেন্টে মারা যায়?"
"হ্যাঁ, জানিনা কেন মনে হলো আমার"
"দেখো আমার সাথে কখনো তোমার এই ভাইটির আলাপ হয়নি তাই আমি ওকে চিনি না, কিন্তু ও তো মারা গেছে তাহলে?"
"সেটাই তো ভাবছি"
"হয়তো এটা তোমার মনের ভুল"
"তাই কি?"
"একদমই, এবার চলো ঘুমানোর সময় হয়ে গেছে"।
নির্ভুল , নিখুঁত এবং দুর্দান্ত শুরু
Posts: 1,473
Threads: 7
Likes Received: 2,437 in 929 posts
Likes Given: 2,452
Joined: Mar 2022
Reputation:
509
গল্পের প্রথম ভাগের শুরুর দৃশ্যটার রহস্য এখানে এসে উন্মোচিত হলো। এই অনিই হলো সেই নকল আদিত্য যে এতোদিন সবার অগোচরে ওদের হেল্প করছিলো৷ এতোবছর আবার নিজের ঠিকানায় ফিরে আসার চেষ্টা করছে আর সেই সাথে রহস্যের কূলকিনারা করতেও তো হবে।
ভাই বোনের সম্পর্কটা অনেক মধুর অনেক উঁচু স্তরের সেটা আজ আবারও প্রমান করে দিলেন।
পরবর্তী আপডেটের জন্য অপেক্ষায় থাকলাম
হাত বাড়িয়ে ছুঁই না তোকে, মন বাড়িয়ে ছুঁই।
দুইকে আমি এক করি না, এক কে করি দুই।।
Posts: 928
Threads: 9
Likes Received: 1,804 in 406 posts
Likes Given: 939
Joined: Sep 2021
Reputation:
618
(14-04-2023, 04:59 PM)Bumba_1 Wrote: বেশ কিছুদিন শারীরিকভাবে একটু সমস্যায় ছিলাম। ফিরে এসে এক নিঃশ্বাসে পড়ে ফেললাম বাকি থাকা সবকটি পর্ব। এই ফোরামে আমি একজন লেখক, তাই যেটুকু সময় পাই তাতে নিজের গল্প নিয়ে ব্যস্ত থাকার জন্য সবার গল্প পড়া হয় না। গুটিকয়েক যে কয়েকজন লেখক আছেন, যারা আমার গল্প পড়ুক আর নাই পড়ুুক আমি কিন্তু তাদের গল্প আমি পড়ি এবং মন্তব্য করি, তাদের মধ্যে তুমি অন্যতম। তার কারণ, তুমি খুব ভালো লেখো। এই ভাবেই চালিয়ে যাও বন্ধু, সঙ্গে আছি।
(14-04-2023, 05:02 PM)Bumba_1 Wrote: তুমি একজ জিনিয়াস এই পর্ব পড়ার পর এ কথা না বলে পারলাম না।
(14-04-2023, 05:04 PM)Bumba_1 Wrote: কেয়া বাত হ্যায়
(14-04-2023, 05:07 PM)Bumba_1 Wrote: অসাধারণ
(14-04-2023, 05:08 PM)Bumba_1 Wrote: নির্ভুল , নিখুঁত এবং দুর্দান্ত শুরু ধন্যবাদ দাদা
তোমার শরীর কেমন আছে?
আমার গল্প পড়ছো, পড়ে কমেন্ট করছো তার জন্য ধন্যবাদ
তোমার ছোটোগল্পগুলো আমার পড়া হচ্ছে না, কিন্তু বড়ো গল্পগুলো এখনো বারবার রিপিট করে পড়ি আর যতবার পড়ি ততবার ভালো লাগা বেড়ে যায়।
তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে ওঠো এবং আবার একটা বড়ো গল্প শুরু করো।
(14-04-2023, 08:08 PM)nextpage Wrote: গল্পের প্রথম ভাগের শুরুর দৃশ্যটার রহস্য এখানে এসে উন্মোচিত হলো। এই অনিই হলো সেই নকল আদিত্য যে এতোদিন সবার অগোচরে ওদের হেল্প করছিলো৷ এতোবছর আবার নিজের ঠিকানায় ফিরে আসার চেষ্টা করছে আর সেই সাথে রহস্যের কূলকিনারা করতেও তো হবে।
ভাই বোনের সম্পর্কটা অনেক মধুর অনেক উঁচু স্তরের সেটা আজ আবারও প্রমান করে দিলেন।
পরবর্তী আপডেটের জন্য অপেক্ষায় থাকলাম
প্রথমেই ধন্যবাদ পাশে থাকার জন্য।
রহস্যের কিনারা? সেটা দেখা যাক।
সঙ্গে থাকুন, পাশে থাকুন
I'm the King of Dark
&
I rule over all Devils
Posts: 18,206
Threads: 471
Likes Received: 65,248 in 27,653 posts
Likes Given: 23,682
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
অদ্ভুত এই গল্প , একজন নতুন সুপার ষ্টার জন্ম নিয়েছে , পিনুরামের কথা মনে পড়ছে।
Posts: 491
Threads: 0
Likes Received: 351 in 292 posts
Likes Given: 376
Joined: Aug 2022
Reputation:
8
O dada update diye din na
My pain is constant and sharp, and I do not hope for a better world for anyone.
Posts: 928
Threads: 9
Likes Received: 1,804 in 406 posts
Likes Given: 939
Joined: Sep 2021
Reputation:
618
(14-04-2023, 09:48 PM)ddey333 Wrote: অদ্ভুত এই গল্প , একজন নতুন সুপার ষ্টার জন্ম নিয়েছে , পিনুরামের কথা মনে পড়ছে।
ধন্যবাদ
কিন্তু পিনুরাম দা, বুম্বাদা দা এরা অন্য লেভেলের লেখক ওদের কাছে আমি কিছুই না। আমার লেখা আপনার মতো কয়েকজনের পছন্দ হয়েছে এটাই অনেক।
(14-04-2023, 10:19 PM)Patrick bateman_69 Wrote: O dada update diye din na
এখনো লেখা হয়নি
হলেই দেবো।
I'm the King of Dark
&
I rule over all Devils
•
Posts: 26
Threads: 0
Likes Received: 25 in 22 posts
Likes Given: 10
Joined: Jun 2019
Reputation:
0
14-04-2023, 11:48 PM
Monen2000 super bondu......... যৌনতা ছাড়া কি করে আমাদের মত যৌন গল্প প্রেমিকদের আকর্ষণ করতে হয়। তুমি কিন্তু বেশ ভালই জানো। লেখনি, খুব সুন্দর।।।
চালিয়ে যাও বন্ধু,,,,, best of your efforts........
Posts: 928
Threads: 9
Likes Received: 1,804 in 406 posts
Likes Given: 939
Joined: Sep 2021
Reputation:
618
(14-04-2023, 11:48 PM)Rampu007 Wrote: Monen2000 super bondu......... যৌনতা ছাড়া কি করে আমাদের মত যৌন গল্প প্রেমিকদের আকর্ষণ করতে হয়। তুমি কিন্তু বেশ ভালই জানো। লেখনি, খুব সুন্দর।।।
চালিয়ে যাও বন্ধু,,,,, best of your efforts........
ধন্যবাদ পাশে থাকার জন্য
সঙ্গে থাকুন, পড়তে থাকুন
I'm the King of Dark
&
I rule over all Devils
•
Posts: 1,129
Threads: 0
Likes Received: 1,349 in 914 posts
Likes Given: 3,519
Joined: Apr 2022
Reputation:
144
আমাকে আমার মত থাকতে দাও
|