Posts: 921
Threads: 7
Likes Received: 1,825 in 409 posts
Likes Given: 940
Joined: Sep 2021
Reputation:
621
(05-04-2023, 02:40 AM)Arpon Saha Wrote: কি দাদা কি অবস্থা? লেখা চলছে যদিও সময়ের অভাবে একটু ধীর গতিতে, চেষ্টা করছি গতি বাড়ানোর।
(05-04-2023, 03:16 AM)nextpage Wrote: অনেক দিন ধরে পড়বো পড়বো করেও পড়া হচ্ছিলো না কিন্তু আজ রাত জেগে সবটাই শেষ করলাম
দারুন অনবদ্য একটা গল্প। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত যেভাবে সাসপেন্স টা ধরে রেখেছিৱ সেটা সবাই পারে না। আপনার মুন্সিয়ানার প্রশংসা করতেই হবে। প্রতিটা পর্বের রহস্য উন্মোচনের যে ক্ষুদা সেটা পরের পর্ব অব্দি শুধু বেড়েই গিয়েছে।
হুম এখনো অনেক প্রশ্নের উত্তর বাকি, নকাল আদিত্যের জন্য অদ্রিজা কি অপেক্ষা করে আছে? উমা প্রীতি সবটা জানার পর ও কি অভিমাান করেই বসে আছে? কে এই নকল আদিত্য? তার জীবনের ব্যাথাতুর গল্পটা কি? আগামীতে কি হতে চলেছে সেসবেন উত্তর জানতে চাই...
ধন্যবাদ পাশে থাকার জন্য
পরের পর্বের লেখা শুরু করেছি চেষ্টা করছি যত তাড়াতাড়ি দেওয়া যায়।
I'm the King of Dark
&
I rule over all Devils
Posts: 1,181
Threads: 3
Likes Received: 1,408 in 940 posts
Likes Given: 3,740
Joined: Apr 2022
Reputation:
150
সবার বসে আছে পরবর্তী আপডেটর জন্য।
আমাকে আমার মত থাকতে দাও
Posts: 921
Threads: 7
Likes Received: 1,825 in 409 posts
Likes Given: 940
Joined: Sep 2021
Reputation:
621
(06-04-2023, 12:04 AM)Boti babu Wrote: সবার বসে আছে পরবর্তী আপডেটর জন্য।
হ্যাঁ, লিখছি তবে একটু ধীরে লেখা হচ্ছে সময়ের অভাবে লেখা হলেই আপডেট দেবো।
I'm the King of Dark
&
I rule over all Devils
•
Posts: 508
Threads: 0
Likes Received: 360 in 297 posts
Likes Given: 380
Joined: Aug 2022
Reputation:
8
Update kobe pabo dada?
"The greatest trick the devil ever pulled was convincing the world he didn't exist."
Posts: 921
Threads: 7
Likes Received: 1,825 in 409 posts
Likes Given: 940
Joined: Sep 2021
Reputation:
621
(11-04-2023, 03:07 AM)Patrick bateman_69 Wrote: Update kobe pabo dada?
যত তাড়াতাড়ি সম্ভব দেবো।
I'm the King of Dark
&
I rule over all Devils
•
Posts: 271
Threads: 0
Likes Received: 185 in 163 posts
Likes Given: 133
Joined: Dec 2021
Reputation:
0
Posts: 921
Threads: 7
Likes Received: 1,825 in 409 posts
Likes Given: 940
Joined: Sep 2021
Reputation:
621
(12-04-2023, 02:20 AM)Arpon Saha Wrote: দাদা কেমন আছেন?
ভালো নেই, আসকে, কালকে কোনোদিনই মন ভালো নেই।
আপনি কেমন আছেন??
I'm the King of Dark
&
I rule over all Devils
•
Posts: 18,202
Threads: 471
Likes Received: 65,644 in 27,694 posts
Likes Given: 23,815
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,266
UPDATE ! UPDATE !! UPDATE !!! UPDATE !!!!
Posts: 921
Threads: 7
Likes Received: 1,825 in 409 posts
Likes Given: 940
Joined: Sep 2021
Reputation:
621
I'm the King of Dark
&
I rule over all Devils
Posts: 508
Threads: 0
Likes Received: 360 in 297 posts
Likes Given: 380
Joined: Aug 2022
Reputation:
8
দাদা আর কতো দিন.? আর তর সইছে না যে
"The greatest trick the devil ever pulled was convincing the world he didn't exist."
Posts: 921
Threads: 7
Likes Received: 1,825 in 409 posts
Likes Given: 940
Joined: Sep 2021
Reputation:
621
12-04-2023, 10:15 PM
(This post was last modified: 01-05-2023, 07:56 PM by Monen2000. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
দ্বিতীয় পার্ট
১ম পর্ব
"উমা, ও চলে গেছে আর আসবে না"
সময় প্রবাহমান সে নিজে স্বাধীনভাবে চলতেই থাকে কারো জন্য থামে না, কেউ তাকে থামাতে পারে না সে তার আপন খেয়ালে আপন গতিতে চলতে থাকে চলতেই থাকে তার বিরাম নেই। স্বামীর মুখে শোনা কথাগুলো আজও কানে ভাসে উমাদেবীর স্বামীর কথাটা আজও তাকে কষ্ট দেয়, সে চলে যাওয়ার প্রায় একবছর হতে চললো সামনে থেকে দেখে সবাই ভাববে যে সবকিছুই আবার আগের মতোই চলছে এইজন্যই তো বলে সময় আর জীবন কারো জন্য থেমে থাকে না, যার নাম এতদিন পুরো নর্থবেঙ্গলে সবার মুখে মুখে থাকতো সে চলে যাওয়ার কিছুদিনের মধ্যেই যেন সবাই তাকে ভুলে গেল, সবার জীবন আবার নিস্তরঙ্গভাবে চলতে থাকে এমনকি সিংহ রায় আর চক্রবর্তী পরিবারের সদস্যদেরও আপাতদৃষ্টিতে দেখলে কিছুই পরিবর্তন চোখে পরবে না, কিন্তু এই দুই পরিবারের সদস্যরা জানে তাদের জীবনে কতটা পরিবর্তন এসেছে।
যেমন অতীন্দ্রবাবু ছেলেকে হারিয়েছিলেন অনেক বছর আগে কিন্তু তারপর সেই জায়গা অনেকটাই পূরণ করেছিল সে এমন একজন ছিল যাকে তিনি চোখ বন্ধ করে ভরসা করতেন কিন্তু মুহূর্তের দুর্বলতায় একদিন সেই ভরসার দেয়ালে চিড় ধরলো আর তারপর সেই দেওয়াল ভেঙে পরলো। যেদিন সে চলে গেল সেদিন অনেক চেষ্টা করেও নিজের চোখের জল আটকাতে পারেননি তিনি, একান্তে আজও নিজেকে দোষী ভাবেন অতীন্দ্রবাবু সেদিন যদি তার বিশ্বাসের ভিত দুর্বল না হতো তাহলে হয়তো তাকে আটকাতে পারতেন কিন্তু এখন আর উপায় নেই সে চলে গেছে।
তারপর উমাদেবী, সাত সাতটা বছর তিনি বুঝতেই পারেননি যে তার ছেলে আর নেই যে তার সামনে আছে সে তার ছেলে নয়, যখন তিনি জানলেন তখন বেমালুম সাত বছরের কথা ভুলে গেলেন আর যখন তার ভুলটা ভাঙলো তখন অনেক দেরী হয়ে গেছে সে চলে গেছে। তিনি জানতে চেয়েছিলেন তার বিষয়ে, জানতে চেয়েছিলেন কেন তাকে নিয়ে এসেছিলেন অতীন্দ্রবাবু উত্তরে তার স্বামী অতীন্দ্রবাবু তাকে জানালো যে তাকে তিনিই নিয়ে এসেছিলেন যাতে উমাদেবী ছেলের শোকে অসুস্থ না হয়ে পড়েন। এখন তার খুব ইচ্ছে করে তাকে একবার বুকে টেনে নিতে যেমনটা এই সাতবছর করতেন কিন্তু সেটা হওয়ার নয় কারণ তখন সে চলে গেছে, সে যে তার ছেলে নয় এটা জানার পরে কত কথা শুনিয়েছেন এমনকি থাপ্পড় পর্যন্ত মেরেছিলেন, ছেলেটা মুখ বুজে সব সহ্য করেছে এমনকি প্রীতির কিডন্যাপের পিছনেও তাকে সন্দেহ করেছিলেন অথচ সেই তার মেয়েকে উদ্ধার করে তার কাছে ফিরিয়ে দিয়ে চলে গেল। যাওয়ার আগে একবার দেখা পর্যন্ত করে যায়নি এতটাই অভিমান হয়েছিল তার, উমাদেবী স্বামীর মুখে শুনেছেন যে ছেলেটার খুব অভিমান, সেই অভিমানেই হয়তো সে চলে গেছে আর এখন সেই অভিমান ভাঙিয়ে তাকে ফেরত নিয়ে আসার কোনো উপায় নেই।
পরিবর্তন এসেছে প্রীতি আর নীলাদ্রির জীবনেও, উমাদেবীর মতো প্রীতিও জানতো না যে তার দাদা অনেক আগেই মারা গেছে যখন জানলো তখন তার মনে রাগ আর ঘৃণা স্থান নিল, কত অপমানই প্রীতি করেছে তাকে অথচ আজ সে না থাকলে তাকে হয়তো কোনো নিষিদ্ধপল্লীতে থাকতে হতো, আজ যখন প্রীতি হাসপাতাল থেকে বাড়ি আসে তখন মাঝে মাঝে তার মনে হয় এখনই হয়তো সে এসে বলবে "তোর মুখ শুকনো কেন বলেছি না তুই শুধু হাসবি কোনো সমস্যা থাকলে আমাকে বল আমি আছি তো", কিন্তু না আজ আর কেউ বলে না আর কখনো কেউ বলবে না আর কখনও কেউ তার মাথায় স্নেহ মাখানো ভরসা দেওয়ার হাত রাখবে না কোনোদিনও না। এক দাদাকে তো অনেক আগেই হারিয়েছে কিন্তু এখন এই দাদাকেও হারিয়ে ফেলেছে তার দাদার শূন্যতা সে পূরণ করেছিল কিন্তু তার শূন্যতা পূরণ হবে না।
কেউ তাকে দোষারোপ না করলেও নীলাদ্রি জানে যা হয়েছে সেটা তার জন্যই হয়েছে সেই একজন মায়ের থেকে তার ছেলেকে আর একজন বোনের থেকে তার দাদাকে কেড়ে নিয়েছে, সে চাইলে আলাদাভাবে তার সাথে কথা বলতেই পারতো কিন্তু সেটা না করে তাকে সম্পূর্ণ ভুল বুঝে একের পর এক ভুল করে গেল যেগুলো শোধরানোর কোনো উপায় তার জানা নেই। আজও একটা অপরাধবোধ তাকে কুঁড়ে কুঁড়ে খায় আজও সে অতীন্দ্রবাবু, উমাদেবী আর প্রীতির চোখে চোখ রেখে কথা বলতে পারে না। নিজের বন্ধুর প্রতি ভালোবাসা দেখাতে গিয়ে সে আরেক বন্ধুকে হারিয়ে ফেলেছে, বন্ধুই তো ছিল সে, তার ভালোবাসার মানুষটিকে অক্ষত অবস্থায় তার কাছে তো সেই ফিরিয়ে দিয়েছিল, যাওয়ার আগে মনোহরবাবু আর মলয়ের বিরুদ্ধে সমস্ত প্রমাণ সে নীলাদ্রির হাতে তুলে দিয়ে যায় এমনকি তার "আইনের ফাঁকও আছে" পরামর্শ টার আসল মানে বুঝতে পেরে সেটা মেনে সে মনোহরবাবু আর মলয়ের এনকাউন্টার করে প্রীতি আর সিংহ রায়রা শুধু নয় আরও অসংখ্য লোকের জীবন নিরাপদ করেছে কিন্তু তবুও তার মনে শান্তি নেই, তাকে খোঁজার জন্য নিজস্ব সোর্স কাজে লাগিয়েও তার খবর পায়নি, অতীন্দ্রবাবুকেও জিজ্ঞেস করেছিল তার সম্বন্ধে কিন্তু প্রতিবারই অতীন্দ্রবাবু একই কথা বলেছেন "আমি ওর কাছে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ যে ওর আসল পরিচয় কখনো কাউকে দেবো না, তাই ওর পরিচয় বা ওর অতীত কখনো কাউকে বলতে পারবো না" তবুও নীলাদ্রি চেষ্টা করে যাচ্ছে তাকে খুঁজে বার করার।
এদের ছাড়া আরও একজন আছে যার জীবনে বিরাট পরিবর্তন এসেছে যদিও সেটা বাইরে থেকে দেখে বোঝার উপায় নেই আর তিনি হলেন ডক্টর সুবিমল চক্রবর্তীর মেয়ে ডক্টর অদ্রিজা চক্রবর্তী। তার বাবা সুবিমলবাবু ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠেছেন, স্বামীকে ফিরে পেয়ে চারুলতা দেবীও সুস্থ হয়ে উঠেছেন সবকিছু ফিরে পেলেও অদ্রিজার মুখের হাসি ফিরে আসেনি যেটা নিজের বাবার মৃত্যুসংবাদ শুনে চলে গিয়েছিল। কিন্তু এখন বাবাকে ফিরে পেলেও সে তাকে হারিয়ে ফেলেছে যে তার বাবাকে ফিরিয়ে দিয়েছে যাকে সে প্রথম দেখাতেই তার হৃদয় সমর্পণ করেছিল, সেই কবে কিছু বছর আগে প্রথম দেখা সদাগম্ভীর, সদারাগী মানুষটাকে তখন অবশ্য জানতো যে সে প্রীতির দাদা সেই ভালোলাগা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেতে থাকে কিন্তু কখনো বলা হয়নি, বলতে সাহস হয়নি। তার রাগ তার গাম্ভীর্য তার অ্যাটিটিউড সবকিছুই ভালো লাগতো অদ্রিজার। যখন জঙ্গলের ভিতর থেকে কোলে তুলে নিয়ে এলো সে অদ্রিজা একদৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল তার রাগী মুখের দিকে তার মনে হচ্ছিল যদি সময় ওখানেই ওভাবেই থেমে যেত কিন্তু সেটা হয়নি আর তারপর তার বাবার হত্যার অভিযোগ উঠলো তার বিরুদ্ধে, এটাও সামনে এলো যে সে আদিত্য সিংহ রায় নয়, সবার মতো অদ্রিজাও ভুল বুঝলো তাকে এমনকি গায়ে হাত পর্যন্ত তুলেছিল কিন্তু সেই তার বাবাকে তার কাছে ফিরিয়ে দিল, ফিরিয়ে দিয়ে নিজে চলে গেল, আজও নিজের বন্ধ রুমের ভিতরে একাকী নিঃসঙ্গ অবস্থায় বিছানার বালিশে তার কান্নার শব্দ চাপা পরে যায়। আজও অদ্রিজার খালি একটাই চাওয়া একটাই প্রার্থনা জীবনে যেন তার সাথে অন্তত একবার আবার দেখা হয় যাতে সে অন্তত ক্ষমাটুকু চাইতে পারে, অদ্রিজা জানেনা যে তার এই ইচ্ছা কোনোদিন পূরণ হবে কি না। তবে অপেক্ষা করতে দোষ কি? অদ্রিজা জানে সে যা ভুল করেছে তাতে এজীবনে তাকে হয়তো পাবে না কিন্তু সে নিজেকে অন্য কারো হতে দেবে না এইজন্মে না হোক কোনো না কোনো জন্মে তো তাকে পাবেই অদ্রিজা ততদিন অপেক্ষা করবে সে।
সময় যত এগোতে লাগলো নর্থবেঙ্গল থেকে ধীরে ধীরে এই নকল আদিত্য সিংহ রায়ের স্মৃতি ফিকে হয়ে আসতে থাকে তার অস্তিত্ব শুধুমাত্র গুটিকয়েক লোকের স্মৃতিতেই থেকে গেল। সে কোথা থেকে এসেছিল কোথায়ই বা চলে গেল এটা নিয়ে কারো কোনো ভাবনা নেই, যে ছেলেটা সাত সাতটা বছর এখানে কাটিয়ে এদেরই একজন হয়ে উঠেছিল সে যেন এক মূহুর্তেই হারিয়ে গেল।
কলকাতার নিউ আলিপুরের ব্যানার্জি বাড়িতে আজও অন্যান্য দিনের সকালের মতোই ব্যাস্ততার ছাপ বাড়ির কর্তা অভিরূপ ব্যানার্জি আর ছেলে অরুণাভ ব্যানার্জি অফিসে যাবে, অভিরূপ বাবুর বয়স ৫৮ আর অরুণাভর বয়স ৩১ বছর, ছোটোরা অর্থাৎ অরুণাভর ছেলে মেয়ে যাদের বয়স একজনের ৫ বছর আর অপরজনের বয়স ৩ বছর তারা কলেজে যাবে, এছাড়া অভিরূপ বাবুর বোন মণিমালা দেবী এবং তাঁর স্বামী প্রীতমও এই ব্যানার্জি বাড়িতেই থাকেন আর থাকে তাদের ছেলে সুশান্ত যার বয়স অরুণাভর থেকে বছর দুই তিন ছোটো সেও অরুণাভর সাথেই কাজ করে। ব্যানার্জি পরিবারের নিজস্ব বিজনেস ব্যানার্জি ক্রিয়েশনস্এই কাজ করে প্রত্যেকে। অভিরূপ ব্যানার্জি তার নিজের হাতে গড়ে তোলেন কোম্পানিটি এতদিন তিনিই কোম্পানির মাথায় বসে সবকিছু পরিচালনা করেছেন তবে এবার হয়তো নিজের ছেলের হাতে ব্যাটন তুলে দেবেন।
বাড়ির মহিলারাও নিজেদের কাজে ব্যাস্ত বাড়ির কর্ত্রী শ্রীতমা ব্যানার্জি অর্থাৎ অভিরূপ বাবুর স্ত্রী রান্নার দিকটা দেখছেন, মণিমালা দেবী বৌদিকে সাহায্য করছেন এবং বাড়ির বউ মৌমিতা অর্থাৎ অরুণাভর স্ত্রী ছেলে মেয়েকে কলেজের জন্য তৈরি করছে, মৌমিতার বয়স ৩০ এর মতো ছিমছাম চেহারা গায়ের রং খুব ফর্সা না হলেও কালোও না।
শ্রীতমাদেবী কাজ করছেন যদিও কিন্তু ওনার মুখ আজ একটু গম্ভীর এমনিতে বেশ শান্ত হাসিখুশি স্বভাবের মহিলা কিন্তু আজ একটু গম্ভীর, সবার খাবারের ব্যাবস্থা হয়ে যাওয়ায় মণিমালা দেবী কিচেন থেকে বেরিয়ে যাচ্ছেন কিন্তু তিনি থমকে গেলেন এটা দেখে যে শ্রীতমাদেবী তখন গ্যাসের উপরে দুধ জ্বাল দিতে বসালেন এবং সে দুধের পরিমাণ অনেকটাই, একটু অবাক হলেন মণিমালা দেবী জিজ্ঞেস করলেন
"এত দুধ কিসের জন্য বৌদি?"
"পায়েস বানাবো" শান্ত কণ্ঠে উত্তর দেন শ্রীতমাদেবী।
"কেন, কোনো পূজো আছে নাকি?"
"না অন্য দরকার আছে"
"দরকার? দাদা খেতে চেয়েছেন বুঝি?"
"না, ঠাকুরঝি তোমার দাদার জন্য না দরকারটা অন্য, তুমি এক কাজ করো আজ সবাইকে তুমি খেতে দাও আমি এদিকের কাজটা সারি আর তুমিও খেয়ে নিও আমি পরে খেয়ে নেবো"।
"বৌদির কি হয়েছে রে দাদা?" ব্রেকফাস্ট টেবিলে খাবার সার্ভ করতে করতে অভিরূপ বাবুকে প্রশ্নটা করলেন মণিমালা দেবী। গৌরবর্ণ শান্ত সৌম্য প্রকৃতির অভিরূপ বাবু খাবারে হাতও দিলেন না তিনি শান্তস্বরেই বলেন "কি আর হবে, পায়েস করতে ইচ্ছে হয়েছে করছে বোধহয় কোথাও পূজো দিতে যাবে তাই আর তুই তো জানিস পূজো দিতে গেলে ও মন্দিরের বাইরে থাকা মানুষগুলোকে কিছু না কিছু খাইয়ে আসে"।
বাকি সময়টা আর কেউ কোনো কথা বললো না খাওয়া হয়ে গেলে একে একে সবাই বেরিয়ে গেল এমনকি মণিমালা দেবীও তার নাকি কোথায় কি একটা কাজ আছে। সবাই বেরিয়ে গেলে অভিরূপবাবু কিচেনে স্ত্রীর কাছে গেলেন, শ্রীতমাদেবী তখনও পায়েস রান্নায় ব্যাস্ত, স্বামীর দিকে না তাকিয়েই বললেন "কি হলো তুমি তো কিছুই খাওনি, কিছু হয়েছে?"
"তুমিও তো খাওনি"
"আমি পরে খেয়ে নেবো"
"ঠিক আছে তাহলে আমিও তখন খাবো"
শ্রীতমাদেবী আর কিছু না বলে পায়েস তৈরীতে মনোনিবেশ করলেন, একটুক্ষণ চুপ থেকে অভিরূপবাবু স্ত্রীকে ধরে নিজের দিকে ঘুরিয়ে বললেন "শ্রী, তুমি যেমন ওর মা আমিও কিন্তু ওর বাবা আজ যে ওর জন্মদিন সেটা সবাই ভুলে গেলেও তুমি ভোলোনি আর আমিও না"।
কথাটা শুনে কয়েক মুহূর্ত থমকে থাকলেন শ্রীতমাদেবী আর তারপরই স্বামীর বুকে কান্নায় ভেঙে পরলেন, কাঁদতে কাঁদতে বললেন "তোমার মনে আছে?"
"আমি ওর বাবা আমি ভুলে যাবো এটা হতে পারে? প্রতিবছর তুমি ওর জন্মদিনে পায়েস বা কিছু ভালো রান্না করে গরীব মানুষ দের বা কুকুরদের খাওয়াও ঠিক যেমন অনি সবাইকে খাওয়াতো। অনিও তো ওদের পাশে থাকতো দেখাশোনা করতো" অভিরূপ বাবু শান্ত স্বরে বলেন। শ্রীতমা দেবীর কান্না আরও বেড়ে যায় কাঁদতে কাঁদতেই বলেন "আজ ওর জন্মদিন, ছেলেটা পায়েস খেতে খুব ভালোবাসতো ঘুরতে যাওয়ার আগে পায়েস খেতে চেয়েছিল বলেছিলাম ফিরে এলে করে খাওয়াবো কিন্তু আমার ছেলেটা আর ফিরলো না আট বছর হয়ে গেল... কেন ওকে যেতে দিলাম? সেদিন যদি ওকে যেতে না দিতাম তাহলে আমার অনি আমার কাছেই থাকতো" শ্রীতমাদেবী স্বামীকে দুহাতে আঁকড়ে ধরেন, অভিরূপ বাবু স্ত্রীর মাথায় হাত বুলোতে বুলোতে বলেন "কিন্তু ও যদি তোমাকে এইভাবে কষ্ট পেতে দেখতো তাহলে খুব কষ্ট পেতো তাই নিজেকে সামাও"।
"কিভাবে সামলাবো... আমার ছেলে আমার কাছে নেই"।
"তবুও নিজেকে সামলাতে হবে শ্রী, তুমি তো জানো অনি সবসময় তোমাকে হাসিখুশি দেখতে চাইতো"
"আমার ছেলেটা আমাকে ছেড়ে কেন চলে গেল?" শ্রীতমাদেবীর কান্না থামে না, অভিরূপবাবু স্ত্রীর মাথায় হাত বোলাতে বোলাতে বলেন,
"ছিঃ শ্রী এভাবে কেউ কাঁদে? আজ না অনির জন্মদিন ওর জন্মদিনে তুমি কাঁদবে?"
"জানো আমার এখনো কেন যেন মনে হয় সেদিন ওখানে এমন কিছু হয়েছিল যেটা অরু আমাদের থেকে লুকিয়ে যাচ্ছে" ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে বলেন শ্রীতমাদেবী।
"এসব তুমি কি বলছো শ্রী, অরু কেন লুকোবে অনি ওর ভাই তাছাড়া মৌমিতাও তো ছিল ,ও তো অনিকে ভালোবাসতো"।
"ভালোবাসা না ছাই দেখলে না মাস কাটতে না কাটতেই অনিকে ভুলে অরুকে বিয়ে করে নিল" শ্রীতমাদেবীর গলায় ক্ষোভ, অভিরূপবাবু তখনও শান্তস্বরে বলেন "শ্রী এসব কি বলছো তুমি, আমরা সবাই জানি অনিকে হারানোর পরে মৌমিতার অবস্থা কেমন ছিল শেষে অরুই ওকে বুঝিয়ে আবার স্বাভাবিক অবস্থায় ফেরত নিয়ে আসে"।
"আমি ওসব কিছু জানিনা, আমার ছেলে আমার কাছে নেই ওদের সাথে ঘুরতে গিয়েছিল কিন্তু ওদের সাথে ফেরেনি"।
"ওটা একটা অ্যাক্সিডেন্ট ছিল শ্রী"।
"জানো আমার কেমন যেন মনে হয় যে আমার অনি বেঁচে আছে"।
"এ তুমি কি বলছো শ্রী, অনি বেঁচে থাকলে নিশ্চয়ই ফিরে আসতো, ও বেঁচে থাকলে আমিও কম খুশী হতাম না অনি তো আমারও ছেলে কিন্তু এটা আমাদের মেনে নিতেই হবে যে অনি আর নেই"
"না গো আমি ওর মা আমি ওকে দশমাস পেটে ধরেছি আমার ভুল হবে না, আমার এখনো মনে হয় অনি বেঁচে আছে কিন্তু এমন কিছু হয়েছে যার জন্য ও বাড়ি আসছে না তুমি তো জানো ছেলেটা আমার বড্ড অভিমানী, মুখে কাউকে কিছু বলবে না সব সহ্য করবে কিন্তু নিজেকে সরিয়ে নেবে"।
"কিন্তু অভিমান কেন? কার উপরে?"
"আমি জানিনা আমার খালি মনে হয় যে অনি বেঁচে আছে, আমি তো মা আমি বুঝতে পারি ও বেঁচে আছে কিন্তু খুব কষ্টে আছে"।
"শ্রী এটা তোমার মনের ভুল ধারণা, অনি আর নেই যদি থাকতো তাহলে আমিও কম খুশী হতাম না ও তো আমারও ছেলে, কিন্তু ও আমাদের ছেড়ে চলে গেছে যদি ও বেঁচে থাকতো তাহলে কক্ষনো আমাদের ছেড়ে দূরে থাকতো না, ওই দেখো তোমার পায়েস হয়ে গেছে এবার চলো আমিও যাবো তোমার সাথে"। স্ত্রীর কান্না থামাতে কিছুটা সফল হলেও অভিরূপবাবু জানেন তার কান্না থামানোর কেউ নেই যদিও সে কান্না তার ভিতরে সেটা কেউ দেখতে পাবে না, একজন মায়ের কাছে সন্তান হারানোর দুঃখ যতটা একজন পিতার কাছে তার থেকে কিছুমাত্র কম নয়।
দক্ষিণ কলকাতার ঢাকুরিয়া এলাকার বিধান রায় লেন নামে অভিজাত এলাকা হলেও এখানে অনেক মধ্যবিত্তরাও বসবাস করে, তবে খুবই শান্তিপূর্ণ এলাকা প্রত্যেকের সঙ্গেই প্রত্যেকের সদ্ভাব রয়েছে। পুরো পাড়াটার ভিতর দিয়ে রাস্তা চলে গেছে এগুলো পাড়ার ভিতরের রাস্তা বলে গাড়ি চলাচল তেমন নেই তবে পাড়ার বেশ কিছু লোকের নিজস্ব গাড়ি আছে তারাই সেগুলো চালায় আর মাঝে মাঝে কিছু শর্টকাট নেওয়া বাইরের গাড়ি চলে আসে, প্রায়ই রাস্তা দিয়ে বিভিন্ন ফেরিওয়ালা বা ভ্যানে করে সবজিওয়ালারা আসে, এলাকার লোকেরা তাদের থেকে প্রায়শই জিনিস নিয়ে নেয়।
আজও একটা ভ্যানে সবজিওয়ালা এসেছে তার সামনে বেশ ভিড় জমে উঠেছে দরদাম করে সবজি কিনছে, নিজেদের মধ্যে গল্পগুজব করছে এমন সময় হটাৎ একটা ভয়ার্ত চিৎকার শুনে সবাই চমকে উঠলো,
"আরে বাচ্চাটাকে ধরো ধরো"
সবাই চমকে উঠে দেখে একটা ৫-৬ বছরের বাচ্চা মেয়ে একটা লাল বলকে আনতে প্রায় রাস্তার মাঝখানে চলে গেছে আর উল্টোদিক থেকে একটা মারুতি অস্বাভাবিক দ্রুতগতিতে এগিয়ে আসছে, গাড়িটা বাচ্চাটার আরও কাছে চলে এসেছে সবাই চিৎকার করছে কিন্তু কেউ সাহস করে যাচ্ছে না একজন ছাড়া, একটা ৩২-৩৩ বছরের তরুণ সেদিকে এগোতে যাবে কিন্তু ততক্ষণে গাড়িটা একদম গায়ে উঠে এসেছে সবাই আর্তনাদ করে উঠলো কিন্তু চোখের পলকে রাস্তার ওপাশ থেকে আরেক শক্তসমর্থ তরুণ ছেলে এক দৌড়ে বাচ্চাটাকে কোলে তুলে রাস্তার এপাশে চলে এল আর গাড়িটা নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফুটপাতের উপরে কিছুটা উঠে থেমে গেল।
লোকগুলো গাড়িটাকে ধরতে সেদিকে ছুটে গেলেও গাড়িটাকে ধরতে পারলো না গাড়ির চালক ততক্ষণে আবার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে গাড়ি নিয়ে হাওয়া হয়ে গেল। সবাই তখন গাড়িটার পিছনে ধাওয়া করা ছেড়ে দিয়ে তরুণ ছেলেটার কাছে এল সে বাচ্চাটাকে কোলে নিয়ে দুহাতে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে দাঁড়িয়ে আছে, বাচ্চাটিও আকস্মিক এই ঘটনায় ভয় পেয়ে কান্না জুড়ে দিয়েছে। সবার আগে একটু আগের ছেলেটা এগিয়ে এল এসেই বাচ্চাটিকে নিজের কোলে নিয়ে নিল বোঝাই যাচ্ছে ইনিই বাচ্চাটির বাবা।
"বাচ্চাকে সামলে রাখতে পারেন না?"
কথাটা শুনে বাচ্চার কান্না থামানোর চেষ্টা করতে করতে আগন্তুক ছেলেটির দিকে তাকালো সে ছেলেটির বয়স আন্দাজ করতে না পারলেও এটা বুঝলো বয়স বেশি নয় ফর্সা গায়ের রঙ, মাথায় ব্যাকব্রাশ করা লম্বা চুল ঘাড় হয়ে কাঁধ পর্যন্ত নেমে এসেছে এছাড়া মুখ লম্বা দাঁড়ি গোঁফে আবৃত,শরীরে ফোলানো পেশীর আধিক্য না থাকলেও বেশ সুগঠিত চেহারা চুল দাঁড়ি গোঁফ উসখোখুসখো হলেও জামাকাপড় এবং জুতো বেশ পরিপাটি এছাড়া হাতের ঘড়িটাতেও রুচির ছাপ স্পষ্ট।
"থ্যাংক ইউ"
"বাচ্চাকে সামলে রাখতে না জানলে রাস্তায় নিয়ে বের হন কেন?"
আগন্তুকটি আবার গরম স্বরে বলে উঠলো এবার আশেপাশের অন্যান্যরাও তাতে সায় দিল কেউ কেউ গাড়িটির অজ্ঞাত চালকের উদ্দেশ্যে বিশেষ বিশেষ শব্দ প্রয়োগ করতে থাকে ততক্ষণে বাচ্চা মেয়েটির কান্না থেমে গেছে বোধহয় বাবার কোলে আসার পরে তার ভয় অনেকটাই কেটে গেছে।
"আসলে আমি ঠিক খেয়াল করিনি, যদিও করা উচিত ছিল, ভুলটা আমারই, থ্যাংকস অ্যাগেইন"
"এবার থেকে সামলে রাখবেন"
"আপনাকে এই এলাকায় আগে কখনো দেখিনি, এখানে নতুন?"
আগন্তুকটি চলে যাচ্ছিল প্রশ্ন শুনে ঘুরে দাঁড়ালো আশেপাশের ভিড় কিছুটা খালি হয়ে গেছে যে যার মতো উপদেশ দিয়ে চলে গেছে, এবার আগন্তুকটি বললো,
"আমি নতুন এসেছি"
"কোথায় এসেছেন, কাদের বাড়িতে?"
"কারো বাড়িতে নয় ঘুরতে ঘুরতে চলে এসেছি"
"ঘুরতে ঘুরতে?"
"কিছুটা তাই"
"মানে ঠিক বুঝলাম না"
"আসলে একটু দরকারে এসেছিলাম"
"আসুন পাশেই আমার বাড়ি, একটু বসে যান"
"আমি.. মানে"
আগন্তুক ইতস্তত করছে দেখে বাচ্চাটির বাবা বলেন "আপনি আমার মেয়ের প্রাণ বাঁচিয়েছেন তাই আপনার সাথে ওর একপ্রকার আত্মীয়তা হয়ে গেছে তাই আর হেজিটেট করবেন না আসুন"
এবারে আগন্তুক আর ইতস্তত করলো না পাশেই ফুটপাতের উপরেই একটা ছোটো লোহার গেট ঠেলে ভিতরে ঢুকলো তারা। বেশ ছিমছাম বাড়িটা মেইন গেট থেকে ঢুকেই ড্রয়িংরুম তারপর ভিতরে তিনটে রুম একপাশে কিচেন। ড্রয়িংরুমে একটা সোফায় বসলো আগন্তুকটি আর তার সামনে একটা চেয়ারে মেয়েকে কোলে নিয়ে বসলো অপর যুবকটি, বললো
"এবার বলুন এখানে কি দরকারে এসেছিলেন বা কাদের বাড়ি ঘুরতে এসেছেন? দেখি সাহায্য করতে পারি কি না"
"আসলে আমি অনেকবছর পরে কলকাতায় এসেছি এখানে একজনের সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলাম"
"কাদের কথা বলছেন বলুনতো?"
"ব্যানার্জী দের, আপনি বলতে পারবেন তারা কোন বাড়িটায় থাকেন? আসলে অনেক বছর বাদে এসেছি তো এই পাড়াটা মনে আছে এই বাড়িটাই মনে আছে কিন্তু এখন খুঁজে পাচ্ছি না"
"শুধু টাইটেল বললে তো বলা মুশকিল, আরও কিছু ডিটেইলস বলুন"
"ওনাদের একটা ব্যাবসা আছে ব্যানার্জী ক্রিয়েশনস্ নামে"
আগন্তুকের কথা শুনে সামনের যুবকটা একটু সোজা হয়ে বসলো তারপর বললো "ব্যানার্জী ক্রিয়েশনস্? আপনি ওনাদের কিভাবে চেনেন?"
এবার আগন্তুক যুবকটিও একটু চুপ করে গেল তারপর বললো "আমি আগে যখন এসেছিলাম তখন ওনারা আমাকে একটা হেল্প করেছিলেন তাই ভাবছিলাম দেখা করে থ্যাংকস বলবো"
"আচ্ছা, হ্যাঁ আপনি ঠিকই বলেছেন ওনারা আগে এখানেই মানে এই বাড়িতেই থাকতেন ইনফ্যাক্ট এই বাড়িটাও ওনাদের কিন্তু ওনারা তো এখন এখানে থাকেন না"
"ওহ্ কোথায় থাকেন বলতে পারবেন?"
"তুমি আবার কাকে নিয়ে এলে মৈনাক?"
তৃতীয় একটি নারীকণ্ঠ পেয়ে দুজনেই দরজার দিকে তাকিয়ে দেখলো সেখানে এক তন্বী যুবতী দাঁড়িয়ে আছে বয়স ৩০-৩২ হবে, এরও ছিমছাম স্লিম চেহারা পরনে প্রিন্টেড সালোয়ার কামিজ। যুবতীকে দেখেই বাচ্চা মেয়েটি "মাম্মা" বলে একছুটে তার কাছে গেল, যুবতীকে দেখে নবাগত তরুণটি কেমন যেন অদ্ভুদভাবে একদৃষ্টিতে যুবতীটির দিকে তাকিয়ে রইলো।
"এই যে ব্রাদার, মানছি আমার গিন্নী সুন্দরী কিন্তু তাই বলে বাইরের কেউ একদৃষ্টিতে ওকে দেখবে এটা কিন্তু আমি বরদাস্ত করবো না"
নবাগত তরুণটিকে একদৃষ্টিতে নিজের স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে কথাটা বললো মৈনাক নামের তরুণটি, কথাটা শুনে নবাগত তরুণটি নিজেকে সামলে নিল তারপর শান্ত কণ্ঠে বললো,
"দুঃখিত আপনি ভুল বুঝছেন আসলে.."
"আসলে?"
"আসলে ওনাকে দেখে একমুহূর্তের জন্য মনে হলো... মনে হলো আমার দিদি দাঁড়িয়ে আছে তাই একটু হকচকিয়ে গিয়েছিলাম"
যুবতী ঘরে ঢুকে তার স্বামীর পাশে আরেকটা চেয়ারে বসে একদৃষ্টিতে কিছুক্ষণ নবাগত তরুণটিকে নিরীক্ষণ করে তারপর আবার স্বামীকে বললো "ইনি কে?"
"মাম্মা আজ জানো কি হয়েছে? আজ না একটা গাড়ি আমার কাছে চলে এসেছিল"
যুবতীর প্রশ্নে মৈনাক কিছু বলার আগেই বাচ্চা মেয়েটি কথা বললো মেয়ের কথা শুনে যুবতী যেন চমকে উঠলেন ভয়ার্ত স্বরে বললেন "তারপর? তোমার লাগেনি তো?" তারপর রাগী স্বরে স্বামীকে উদ্দেশ্য করে বললেন "মেয়েকে একটু সামলেও রাখতে পারো না?"
যুবতীটির স্বামী চুপ করে আছে কিন্তু বাচ্চা মেয়েটি আবার বলতে থাকে "জানো মাম্মা তারপর এই আংকল সুপারম্যানের মতো আমাকে কোলে তুলে নেয়"
এবার যুবতীটি আবার নবাগত তরুণটির দিকে তাকায় তবে এবার তার দৃষ্টি আগের তুলনায় অনেক শান্ত "অনেক ধন্যবাদ আপনাকে"।
"ইটস্ ওকে, আসলে ওই গাড়িটা যে চালাচ্ছিল খুব সম্ভবত সে ড্রাংক ছিল তাই..তবে বাচ্চাকে সামলে রাখাই উচিত ছিল ওনার"
"হ্যাঁ, আচ্ছা আপনি বলছিলেন আমাকে আপনার দিদি বলে মনে হচ্ছিল..তো...মানে...আসলে আমি বলতে চাইছি যে আপনার দিদি কোথায়? "
"হারিয়ে গেছে"
"ওহ সরি"
"না.. আসলে উনি ঠিকই আছেন কিন্তু আমি ওদের থেকে হারিয়ে গেছি"
স্বামী-স্ত্রী দুজনেই পরস্পরের মুখ চাওয়াচাওয়ি করলো দেখা বোঝা যাচ্ছে ওরা নবাগত তরুণটির কথা ঠিক বুঝতে পারেনি, একটু পরে যুবতী আবার জিজ্ঞেস করলো,
"মানে ঠিক বুঝলাম না"
"ও লম্বা কাহিনী বাদ দিন"
"আপনি ব্যানার্জীদের খুঁজছিলেন কেন?"
"বললাম তো ওনারা একবার আমাকে হেল্প করেছিলেন তাই ধন্যবাদ জানাতাম"
"কিছু মনে করবেন না কিন্তু সবাইকে তো ওনাদের অ্যাড্রেস দেওয়া যায় না কারণ ওনাদের শত্রু কম নেই এই শহরে আর তাছাড়া দিলেও আপনি দেখা করতে পারবেন না সিকিউরিটি ঢুকতে দেবে না"
"আই ক্যান আণ্ডারস্ট্যাণ্ড"
"সুনন্দা তুমিই নিয়ে যাও তোমার তো ঢুকতে বাধা নেই, আফটার অল তোমার পিসির বাড়ি"
এতক্ষণে আবার মৈনাক কথা বললো অবশ্য স্বামীর কথা শুনে সুনন্দা যেভাবে কটমট করে স্বামীর দিকে তাকালো তাতে ওনার মনোভাব বুঝতে বাকি রইলো না নবাগত তরুণটির, সে বললো
"পিসির বাড়ি মানে?"
"হ্যাঁ ব্রাদার, আমার এই গিন্নীটি হলেন ব্যানার্জী ক্রিয়েশনস্ এর মালিক মিস্টার অভিরূপ ব্যানার্জীর ওয়াইফ মিসেস শ্রীতমা ব্যানার্জীর ভাই অ্যাডভোকেট স্বর্ণেন্দু মুখার্জীর মেয়ে"
কথাটা শুনে আবার তরুণটি অবাকদৃষ্টিতে সুনন্দার দিকে তাকায় অবশ্য এবার শুধু সুনন্দার দিকেই নয় একইসাথে বাচ্চা মেয়েটির দিকেও তাকিয়ে থাকে, সে এখন কিছুটা দূরে মেঝেতে একটা খেলনা নিয়ে খেলছে। কিন্তু স্বামীর কথা শুনে সুনন্দা রেগে আবার কটমট করে তার দিকে তাকিয়ে আছে তার পরিচয় দিয়ে দেওয়ার জন্য সে কিছুটা ক্ষুব্ধ কিন্তু ভদ্রতার খাতিরে কিছু বলতে পারছে না, সেটা বুঝতে পেরেই নবাগত তরুণটি বললো
"ঠিক আছে তার দরকার নেই শুনেছি তারা অনেক সময় বাইরে অনেক জায়গায় গিয়ে গরীব দুঃখীদের সাহায্য করেন তেমনই যদি কখনো দেখা হয়ে যায় তাহলে তখন ধন্যবাদ জানিয়ে দেবো, আজ উঠি"
"আপনার নাম টা বলে যান আমি কথা বলে রাখবো"
সুনন্দার কথায় কোনো উত্তর দিল না তরুণটি সে যেন শুনতেই পায়নি এমনভাবে সোফা থেকে উঠে পড়লো, দেখাদেখি উঠলো বেরোনোর সময় নবাগত তরুণটির পা আলতোভাবে সুনন্দার গায়ে লাগায় সঙ্গে সঙ্গে সে বললো "সরি পা লেগে গেল" বলে ঝুঁকে প্রণাম করতে যেতেই সুনন্দা দুপা পিছিয়ে গেল,
"এ মা কি করছেন?"
"আপনার গায়ে পা লেগেছে আমার"
"তাতে কি, ঠিক আছে এসবের দরকার নেই"
"বললাম যে আপনার সাথে আমার দিদির মিল আছে, আপনাকে আমি দিদির চোখে দেখছি আর দিদির পায়ে হাত দিতে লজ্জা কি?"
বলে আবার ঝুঁকে প্রথমে সুনন্দা আর তারপর ভদ্রতার জন্যই মৈনাককে প্রণাম করলো তরুণটি তারপর আর কাউকে কিছু বলার অবকাশ না দিয়েই ঘর ছেড়ে বেরিয়ে গেল দুই স্বামী-স্ত্রী আবারও কিছুটা হতভম্ব হয়ে পরস্পরের দিকে তাকিয়ে রইলো।
রাতে ডিনারের পরে ঘুমানোর আগে বই পড়া অনেকদিনের অভ্যাস মৈনাকের, বই না পড়লে তার ঘুম আসে না আজও সে একটা রোমান্টিক নভেল পড়ছিল। পড়া শেষে ঘুমাতে যাবে কিন্তু তখনও সুনন্দাকে আসতে না দেখে অবাক হলো,বিছানা ছেড়ে বেডরুমের বাইরে ড্রয়িংরুমে আসতেই সে সুনন্দাকে দেখতে পেলো একটা চেয়ারে বিষন্নভাবে একটা হাতে মুখ ঢেকে চুপ করে বসে আছে।
একটু অবাক হলো মৈনাক সুনন্দা এমনিতে খুবই হাসিখুশি থাকে সে সুনন্দার কাছে গিয়ে ও্য সামনে বসলো,
"সুনন্দা, কি হয়েছে?"
ডাক শুনেও সুনন্দা মুখ তুলছে না দেখে মৈনাক আবার ডাক দিল এবারে সুনন্দা মুখ তুললো মৈনাক অবাক হয়ে দেখলো সুনন্দার চোখে জলের দাগ, স্ত্রীর চোখে জল দেখে মৈনাকের অবাকভাবটা আরও বেড়ে গেল সে স্ত্রীর চোখের জল মুছে দিয়ে মোলায়েম স্বরে জিজ্ঞেস করলো, "কি হয়েছে?"
"ওই ছেলেটা.."
"কোন ছেলেটা?"
"ওই যে সকালে এসেছিল"
"তোমার পুরনো অ্যাডমায়ার নাকি?"
স্বামীর ইয়ার্কিটা না বুঝে রেগে স্বামীর দিকে তাকালো সুনন্দা বললো "একটু তো লজ্জা করো, ছেলেটা আমাকে দিদি বলেছে"
মৈনাক বুঝলো তার স্ত্রী এখন ইয়ার্কির মুডে নেই তবুও পরিস্থিতি হাল্কা করার জন্য বললো "আমি তো জানি আমার এই সুন্দরী বউটি শুধু আমারই, আমি তো ইয়ার্কি করছিলাম তো কি হয়েছে ওর?"
"কি যেন নাম বললো?"
"এই রে নামটা তো বলেনি, কেন কি হয়েছে?"
"ওই ছেলেটা যখন আমার পায়ে হাত দিল তখন কেমন যেন একটা অদ্ভুত ফিলিংস হলো, যেন মনে হলো.."
"কি মনে হলো?"
"মনে হলো যেন খুব কাছের একজন পায়ে হাত দিয়েছে"
"কাছের একজন?"
"হ্যাঁ, যেন মনে হলো অনি আমার পায়ে হাত দিয়েছে"
"অনি মানে তোমার ওই কাজিনটি যে ঘুরতে গিয়ে অ্যাক্সিডেন্টে মারা যায়?"
"হ্যাঁ, জানিনা কেন মনে হলো আমার"
"দেখো আমার সাথে কখনো তোমার এই ভাইটির আলাপ হয়নি তাই আমি ওকে চিনি না, কিন্তু ও তো মারা গেছে তাহলে?"
"সেটাই তো ভাবছি"
"হয়তো এটা তোমার মনের ভুল"
"তাই কি?"
"একদমই, এবার চলো ঘুমানোর সময় হয়ে গেছে"।
I'm the King of Dark
&
I rule over all Devils
The following 14 users Like Monen2000's post:14 users Like Monen2000's post
• Arpon Saha, bad_boy, Boti babu, Bumba_1, ddey333, Ilove69, Jhonboy, kublai, MNHabib, nextpage, Patrick bateman_69, ppbhattadt, Thumbnails, অভিমানী হিংস্র প্রেমিক।
Posts: 1,181
Threads: 3
Likes Received: 1,408 in 940 posts
Likes Given: 3,740
Joined: Apr 2022
Reputation:
150
Most awaited story. দারুণ ভাবে শুরু করলে দ্বিতীয় ভাগ একেবারে যাকে বলে এলাম দেখলাম জয় করলাম, আর কি ভাই এভাবেই চালিয়ে যাও।
আমাকে আমার মত থাকতে দাও
Posts: 22
Threads: 0
Likes Received: 19 in 19 posts
Likes Given: 1,206
Joined: May 2019
Reputation:
0
Posts: 921
Threads: 7
Likes Received: 1,825 in 409 posts
Likes Given: 940
Joined: Sep 2021
Reputation:
621
(13-04-2023, 12:25 AM)Boti babu Wrote: Most awaited story. দারুণ ভাবে শুরু করলে দ্বিতীয় ভাগ একেবারে যাকে বলে এলাম দেখলাম জয় করলাম, আর কি ভাই এভাবেই চালিয়ে যাও। ধন্যবাদ ভাই
(13-04-2023, 02:14 AM)bad_boy Wrote: চমৎকার
ধন্যবাদ
I'm the King of Dark
&
I rule over all Devils
•
Posts: 18,202
Threads: 471
Likes Received: 65,644 in 27,694 posts
Likes Given: 23,815
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,266
নতুন অধ্যায় শুরু !!!
খুব সুন্দর হয়েছে।
Posts: 508
Threads: 0
Likes Received: 360 in 297 posts
Likes Given: 380
Joined: Aug 2022
Reputation:
8
Update dada update lagbe , taratari ei story na ses korte parle santi pabo na
"The greatest trick the devil ever pulled was convincing the world he didn't exist."
Posts: 70
Threads: 2
Likes Received: 67 in 43 posts
Likes Given: 199
Joined: Aug 2022
Reputation:
5
Posts: 921
Threads: 7
Likes Received: 1,825 in 409 posts
Likes Given: 940
Joined: Sep 2021
Reputation:
621
I'm the King of Dark
&
I rule over all Devils
•
Posts: 2
Threads: 0
Likes Received: 1 in 1 posts
Likes Given: 0
Joined: Oct 2022
Reputation:
0
দুর্দান্ত শুরু হয়েছে। তাড়াতাড়ি আপডেট চাই।
Posts: 508
Threads: 0
Likes Received: 360 in 297 posts
Likes Given: 380
Joined: Aug 2022
Reputation:
8
4-5 din er Modhe update chai dada , btw repu n like added
"The greatest trick the devil ever pulled was convincing the world he didn't exist."
|