Posts: 1,473
Threads: 7
Likes Received: 2,458 in 929 posts
Likes Given: 2,453
Joined: Mar 2022
Reputation:
512
পর্ব- তেরো
তুমি প্রেম ছুঁয়ে দেখো নি বলে
আমি কি তোমায় ছুঁতে পারি না?
দুচোখ ভরে দেখব বলে,
তোমার দিকে নির্নিমেষে কি তাকিয়ে থাকতে পারি না?
তোমার চুলে যখন রাঙামাটির ফুল গুঁজে থাকে
তখন ভীষণ ঈর্ষা হয় তোমার প্রতি।
নদী যখন তোমায় ডাকে
আমি তখন তোমায় মধুমাধবী রাগে থামিয়ে রাখি!
তা কি তুমি জানো?
আজ বৈশাখের প্রথম প্রহরে
পৃথিবীর সমস্ত মাধুর্যতা যখন তোমার আঁখি নীড়ে!
আর গাছের শাখে শাখে নতুন পাতা।
এ যেন মনে হয় প্রকৃতি
তোমায় নিজ হাতে সাজিয়ে রেখেছে,
তোমায় দুচোখ ভরে দেখব বলে।
বলো,
তোমায় কি ছুঁতে পারি না?
আমিও তো এক ক্লান্ত প্রেমিক!
চাইলে তো পারো ক্লান্ততা মুছে খুব কাছে টেনে নিতে!
না এটা নিখিলের লেখা নয় তবে ওর মনের অভিব্যক্তি টুকুই নিজের মত করে খানিক সাজিয়ে নেবার প্রচেষ্টায় যকটুকু পেরেছি সেটাই তুলে ধরেছি। মানব মন ভীষণ রকমের স্পর্শ কাতুরে, কারণে অকারণে, সুখে-দুঃখে, আনন্দে- বেদনায় প্রিয়জনের সান্নিধ্য খুঁজে বেড়ায়। আরও স্পষ্টতই বললে স্পর্শের অনুসন্ধান করে। স্পর্শের কি যে মায়া কি যে জাদু সেটা কেবল ঐ স্পর্শের দ্বারাই ব্যক্ত করা সম্ভব। অতীব চঞ্চল মনও বশ্যতা মেনে নেয় ঐ স্পর্শের কাছে, প্রচন্ড ক্লান্ত শরীরে নতুন প্রাণশক্তির সঞ্চার হয় প্রিয়র স্পর্শ পেয়ে, কত কষ্ট যন্ত্রণা লাঘবে স্পর্শের কার্যকারিতা যে অব্যর্থ মহা ঔষধ সেটা যুগে যুগে মনীষী রা বারংবার বলে গিয়েছেন।
লোকে বলে কাউকে ভালোবাসা যায় যখন-তখন। চাইলেই নাকি কাউকে নিয়ে লেখা যায় কবিতা, কিংবা প্রেম বা বিরহের গান। হওয়া যায় তার প্রেমে পাগল প্রেমিক। এসব করতে বুঝি প্রেমিক/গায়ক/কবির কোন অনুমতি লাগে না? কিন্তু যদি আরাধ্যের পাশে গিয়ে বসার সাধ জাগে, যদি তার খোঁপার ফুল ঠিক করে দেয়ার ইচ্ছে হয়, যদি তাকে ছুঁয়ে দেখতেই হয় তবে সেই ❝তোমাকে❞ র অনুমতি লাগবেই, মাস্ট। তবে! তখন কি হবে যদি অনুমতির অপেক্ষা দীর্ঘ হয় প্রকৃতির কোন খেয়ালী কারণে? প্রেমিক কি অপেক্ষায় থাকবে নাকি অবাধ্য হয়েই একটু খানি ছুঁয়ে দিবে পরম আরাধ্য কে?
গত সন্ধ্যার পর থেকে নিখিলের মন বড্ড উচাটন হয়ে আছে। কিছুটা সাহসী হয়েই হাতের স্পর্শ ছড়িয়ে দিয়েছিল লক্ষ্মীর কোমল আঙুলের ডগায় খানিক অতি উচ্ছাসে বাঁধা পেড়িয়ে শক্ত কব্জিতে। তখন খুব করে চেষ্টা করেছিল লক্ষ্মীর মনের ভাষা বুঝার জন্য। কিন্তু ঠোঁটের কোণে জেগে উঠা মৃদু হাসির আভাস পাবার আগেই যে চোখের মাঝে আগুন জ্বলে উঠতে দেখেছিল। সেই ভয়টাই ওকে পেয়ে বসেছে তবে কি লক্ষ্মী ওকে অন্যরকম ভাবলো? এরপর কি আর আগের মত লক্ষ্মী ওর সাথে হেসে কথা বলবে না? জেগে উঠা সম্পর্কের ডুবোচর কি তবে মাথা তুলে আকাশ দেখার আগেই আবার হারিয়ে যাবে অতল গভীরে?
আজ অনেকক্ষণ হয়ে গেল নিখিল কলপাড়ে বসে আছে কিন্তু সবাই একে একে এসে আবার চলে গেলেও লক্ষ্মীর কোন দেখা নেই। তবে কি নিখিল এখানে থাকবে জেনেই লক্ষ্মী ওকে এড়িয়ে যেতে চাইছে? এর মাঝেই কল পাড়টা ফাঁকা হয়ে এসেছে, দূর গাছতলায় নিখিল অপেক্ষার প্রহর গোনা শেষ করে এবার ফিরে যাবার তোড়জোড় করতেই কি মনে করে আরেকবার পিছন ফিরতেই হাসি খেলে যায় বিমর্ষ মুখখানায়। ঐ তো লক্ষ্মী দ্রুত পা ফেলে এদিকেই আসছে। ওর উজ্জ্বল মুখ খানা দেখে খানিক আগেই মনের ভেতর আনাগোনা করা সকল আশংকা উড়ে যেতে লাগলো। নিখিল এক দু পা করে এগিয়ে যায় কলপাড়ের দিকে, লক্ষ্মী কাছে আসতেই নিজেই কলটা ছেড়ে দিয়ে কলসিটা নিচে বসিয়ে দেয়। আজ আর আশেপাশে কেউ নেই তাই বুঝি দুজনার চোখের পলক পড়ার নামই নিচ্ছে না। এ যেন দুই কপোত-কপোতী চোখে চোখেই বলে নিচ্ছে অনেক না বলা কথা। হাসি মুখ গুলো বার্তা দেয় সুন্দর আগামীর।
জল ভর্তি কলস খানা হাতে তুলে দেবার বাহনায় নিখিল আরও একটু স্পর্শ বুলিয়ে নিতে চায়। নিখিলের খসখসে পুরুষালী হাতের ছোঁয়ায় খানিক কেঁপে উঠে লক্ষ্মীর মাঝারী গড়নের হালকা ভারী দেহখানা। সারা শরীরের শিহরণের কাঁপন খেলে যায় মূহুর্তেই। ক্রমেই সাহসী হয়ে উঠা নিখিলের হাতটা কলসীর সাথে হালকা করে ছুঁয়ে যায় লক্ষ্মীর উন্মুক্ত পেটের কিয়দাংশ। কিঞ্চিৎ হতবাক হবার সাথে সাথে ঈশৎ রাগান্বিত চোখে তাকায় নিখিলের দিকে। নিখিলের চোখে মুখে তখনো দুষ্টুমি খেলা করে যায়। এ দুষ্টুমি যে ছুটোদের যেনতেন দুষ্টুমি না এ দুষ্টুমি বড়দের গোপনীয় দুষ্টুমি৷ লক্ষ্মীর রাগান্বিত চোখের চাহনিতেও নিখিলের কোন হেলদোল নেই বরং ওর হাতটা এখনো লেগে আছে কলসী সাথে লক্ষ্মীর নরম পেটের কোমল মোলায়ের ত্বকের সাথে। মাঝে মাঝে দুষ্টু অবাধ্য আঙুল গুলো নড়াচড়া করে উঠছে আর সেই সাথে কাঁপিয়ে দিয়ে যাচ্ছে লক্ষ্মীর নরম নধর কে। সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে শ্বাস ভারী হতে থাকে, রক্তের গতি বাড়তে থাকে শিরায় উপশিরায়। পুরুষ হাতের গরম স্পর্শ অনেকদিনের উপোষী শরীরে দাউদাউ করে আগুন ধরিয়ে দিচ্ছে,শুকনো মাংসল পেশীতে রসের বাণ বওয়াচ্ছে। নিখিল যেন একটু এগিয়ে আসে লক্ষ্মীর দিকে আর চতুর চোখ জোড়া আশপাশটা দেখে নেয় ভালো করেই। লক্ষ্মীর এবার বেশ বুঝতে পারে আগের মত শুধু হাত নয় পুরো থাবাটাই চড়ে বেড়ানোর চেষ্টায় আছে ওর হালকা মেদ জমে ভাজ পড়া মোলায়েম পেটের নরম মাংসের উপর। লক্ষ্মীর শরীর সুখে ভেসে যেতে চাইলেও মন যে অন্য কিছু বলছে, দাঁতে দাঁত চেপে নিজেকে রুখার চেষ্টা করে।
তড়িৎ গতিতে লক্ষ্মী নিজেকে সড়িয়ে আনে নিখিলের কাছ থেকে। দু পা পিছিয়ে গিয়ে শ্বাসটাকে শান্ত করে নাঁকি সুরে বলে উঠে,
শয়তান ব্যাডা
এরপরই খিলখিল করে হাসতে হাসতে বাড়ির পথ ধরে। আর নিখিলও সেই হাসিতেই সবুজ সংকেতের আশা খুঁজে নিয়ে উৎফুল্ল হয়ে উঠে।
আজকের সকালটা অন্যদিনের থেকে আলাদা!
না সূর্যও পূব দিকেই উঠেছে, প্রতিদিনের মতই পাখপাখালির কলকাকলিতে মুখরিত চারপাশ, দিব্যি হাওয়া বইছে সবকিছু বাকি প্রতিদিনের মতই আছে। তবুও আজকের দিনটা অন্যদিনের চেয়ে আলাদা অন্য কারও কাছে না হউক মাধুরীর কাছে তো আলাদা বটেই। কাল যে সারারাত ঘুমোতে পারে নি, কোন এক অজানা আকর্ষণে মন চঞ্চল হয়ে আছে। সারারাত অপেক্ষা করেছে কখন সকাল হবে, আর সকালের সূর্য উঠার পর থেকে অপেক্ষা টা এখন বিকেল হবার। বিকেলেই যে আজ সেই সুযোগ আসতে চলেছে মানুষ টাকে কাছ থেকে দেখার, সুযোগের সদ্ব্যবহারে দুটো কথা বলার। আত্মা খানা যে নিসপিস করছে দুটো বাক্য ব্যয় করার। আগে কখনো এমন হয়নি আজকাল কেন এমন হচ্ছে সেটাও জানা নেই। এসবের কথা কারও সাথে বলা যায় না, মায়ের সাথেও কেন জানি সম্পর্ক টা এতোটাও স্বাভাবিক না৷ যদিও নাকি একটা বয়সে এসে মা মেয়ের বন্ডিং টাই সবচেয়ে বড় হয় কিন্তু মাধুরী আর ওর মায়ের মাঝে সেটা কোন এক অজানা কারণে গড়ে উঠেনি। বাবাও কাছে নেই যে তাকে মনের কথা গুলো বলবে, সব কথা তো আর ফোনে বলে বুঝানো যায় না৷
আপন মনেই সেই অজানা অচেনা মানুষটার কথা ভাবতে ভাবতে সকাল টা পার হয়ে যাচ্ছে। মনে যেন নতুন হাওয়া লেগেছে তাতেই বারবার ভেতর টা গুনগুন করে গাইতে শুরু করেছে। ব্যাকুল মনটা তাকে দেখার জন্য এতটাই আকুল হয়ে উঠেছে যে কলেজে যেতেও মন চাইছে না। তবে ইম্পর্ট্যান্ট ক্লাস আছে সেই সাথে সেই মানুষটাকেও এক ঝলক দেখে নিতে পারবে হোক না সেটা দূর থেকে সেই লোভটা সামলানো তো এত সহজ কাজ না। তাই তড়িঘড়ি করেই মাধুরী তৈরী হয়ে ছুট দেয় কলেজের উদ্দেশ্যে।
ক্লাসে ঢোকার আগেও একবার চারদিকে চোখ বুলিয়ে নিলো আলেয়া। গত দুদিনের ব্যস্ততার জন্য সুমনের সাথে তেমন করে কথা বলা হয়ে উঠেনি। সুমন যে ফোন করে নি তা নয়, তবে স্যারের সামনে ফোনে কথা বলার সাহস হয় নি আর বাড়িতে এসে আম্মার সাথে কাজে হাত লাগানো, আব্বার সাথে সারাদিনের ঘটনার আলোচনা করা এসবে আর আলাদা করে সুমনের সাথে কথা বলার সুযোগ হয়ে উঠে নি। তাই আজ কলেজে এসেই আগেই সুমনের খুঁজ করছিলো ওর উৎসুক চোখ জোড়া। মন টা আগেই একটু খারাপ হয়ে গিয়েছিল যখন বাকি দিন গুলোর মত সুমনকে ঐ মোড়ের রাস্তায় দেখতে পায় নি। প্রথমে মনকে বুঝানোর চেষ্টা করেছিল হয়তো কোন কাজে আটকা পড়ে গেছে তাই আসতে পারে নি। কিন্তু কলেজে আসার পরও সুমনে কোথাও দেখতে না পেয়ে মনটা বিমর্ষ হয়ে পড়েছে আলেয়ার।
ক্লাসের ফাঁকে কয়েকবার ফোন করেছিল তবে সুমন রিসিভ করে নি। শেষবারের মাথায় কলটা কেটে যাবার পর ছোট্ট একটা মেসেজ আসে মোবাইলে, কলেজ ছুটির পর দেখা করার জন্য। মেসেজ টা দেখার পর আলেয়াে মন টা শান্ত হয় যাবতীয় দুশ্চিন্তা গুলো দূর হয়ে যায়। তবে যে পর্যন্ত সুমনের সাথে দেখা না হচ্ছে আর দুদিনের জমানো কথা গুলো বলা না হচ্ছে সে পর্যন্ত ব্যাকুলতা কমছে না। আজকের সিডিউলে ক্লাস কমই ছিল তাই খুব বেশি অপেক্ষা করতে হয় নি আলেয়ার, ক্লাস শেষ হতেই ছুটেছিল মুক্তমঞ্চের দিকে। ওটাই ওদের কলেজে দেখা করার জায়গা। আলেয়া পৌঁছে গেলেও সুমনকে দেখতে না পেয়ে একটা কল করে। রিং হয়েই চলেছে কিন্তু রিসিভ করছে না, শেষ মূহুর্তে গিয়ে কলটা রিসিভ হয়। আলেয়া কানের কাছে ফোনটা ধরে,
খুব বেশি কি অপেক্ষা করালাম তোমাকে?
সুমনের কন্ঠস্বরটা আলেয়ার খুব কাছ থেকে কানে বাজলো, মনে হলো মোবাইলে নয় পাশে দাঁড়িয়েই কথা বলছে। কি মনে করে পাশ ফিরতেই দেখে সুমন দাঁড়িয়ে আছে আর মুচকি মুচকি হাসছে।
না তেমন দেরি হয় নি। আমিও মাত্রই আসলাম।
তা হঠাৎ এতো জরুরি তলব! গত দুদিন ধরে তো তোমার নাগাল পাওয়া যাচ্ছে না। তোমার থেকেও তো আমার বেশি কৌতূহল থাকার কথা।
স্যরি স্যরি স্যরি। সত্যিই এমন করাটা উচিত হয় নি। কিন্তু কেন হলো সেটা বলার জন্যই তো তোমাকে ডাকলাম। তোমাকে না বলা পর্যন্ত তো শান্তি পাচ্ছি না।
ওহহ তাই নাকি (একটু গুমড়ো ভাব করে) আমি এতোটাও ইম্পর্ট্যান্ট বুঝি তোমার কাছে।
জানি রাগ করে আছো তাই এমন করে বলছো, তবে সবটা জানলে আর রাগ করে থাকতেই পারবে না।
সে রকম হলে বলে ফেল তাড়াতাড়ি, শুনি তো আগে যে কি এমন ঘটেছে যে আমার ফোনটা ধরার সময় অব্দি পেলে না।
আয়েশা বেশ বুঝতে পারলো বাবু খুব রাগ করে আছে একটু রয়ে সয়ে রাগ ভাঙাতে হবে। আলেয়া সুমনকে নিয়ে এগিয়ে যায় একটু ছায়া দেখে বসার জন্য। সুমন মুখ খানা বেজার করে রাখলেও আয়েশার উপর আগের মত রাগ করে থাকতে পারছে না। একটা বেঞ্চ দেখে বসার আগে সুমন হাঁক ছেড়ে দুটো চায়ের অর্ডার করে দেয়। আলেয়া এক এক করে সেই দিনের দোকানের ঘটনা থেকে শুরু করে কাল অব্দি কি কি ঘটেছে এক এক করে সব বলতে শুরু করলো। সব কিছু শোনার পর সুমন আর আলেয়ার উপর রাগ করে থাকতে পারে না তবে ঐ স্যার কি যেন নাম হ্যাঁ মনে পড়েছে কৌশিক তার উপর কিছুটা বিরক্তই বটে। কলেজে এতো এতো মেয়ে থাকতে শেষমেষ ওর আলেয়ার উপরই নজর পড়লো, একটু নজরে নজরে রাখতে হবে। লোকটার মতলব ভালো ঠেকছে না খুব একটা। দেখতেও হ্যান্ডসাম যথেষ্ট স্মার্ট, মেয়েদের মন কখন যে ঘুরে যায় বলা তো যায় না। ভিতরে ভিতরে ভালোই ইনসিকিউরড ফিল করছে সুমন তবে ভাবসাবে সেটা আলেয়া কে বুঝতে দিচ্ছে না।
চা খাওয়ার ফাঁকে খানিক গল্প সেড়ে আলেয়া উঠে পড়ে, টিউশনি তে যেতে হবে। সুমনও আলেয়ার সাথে পা বাড়ায়, কিছুটা সময় পাশাপাশি কাটানোর অভিলাসে। এমনিতেই তো ওকে চোখের আড়াল করতে ইচ্ছে করছে না ঐ স্যারের জন্য।
আগামী পরীক্ষার আগে আজকের দিনটা গ্যাপ ছিল আর সেই সুযোগেই পুরনো বন্ধুদের সাথে খানিক আড্ডা দেবার উদ্দেশ্যে বেড়িয়েছে অনির্বাণ। পরীক্ষার কারণে গত কয়েকদিন এই সঙ্গ এড়িয়ে চলেছিল তবে রিপুর তাড়নায় চঞ্চল মন কি আর বশ মানে। তাই তো সুযোগ পেতেই ছুটে এসেছে পুরনো রূপে। শুধু রুমার কাছে ব্যাপারটা চেপে গেলেই হলো ব্যাস নো প্রবলেম। আড্ডার কাছাকাছি আসতেই বাকিদের দেখতে পেয়ে হাসিটা বেশ চওড়া হয় অনির্বাণের তবে বাকিরা এতোটাও সহজে সাদরে ওকে গ্রহন করলো না নিজেদের মাঝে। এভাবে হঠাৎ করে সাধু সেজে যাবার কারণে বেশ কিছুক্ষণ লেগপুল করেছে সবাই মিলে। কিঞ্চিৎ মন খারাপ হলেও অনির্বাণ মোটামুটি সহজ ভাবেই হেসে খেলে ব্যাপারটা এড়িয়ে গিয়েছে। হাসি ঠাট্টা-তামাশার মাঝেই ওদের ভিতরের আবহাওয়া ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হয়ে আসে। ক্লাব ঘরে ওদের আড্ডা একটু একটু করে জমতে শুরু করেছে, গল্পের আবহে অতীতের অনেক কথাই উঠে আসে একটু আধটু করে।
বন্ধুদের আড্ডায় যেমনটা হয় আর কি এর ওর যাবতীয় বিষয়াদি নিয়ে ঘাটাঘাটি করা। অনির্বাণের মোবাইলের পাসওয়ার্ড যে ওদের একজনের জানা আছে সেটা খেয়াল ছিল না ওর। গল্পগুজবের ফাঁকে ওর মোবাইলটা কখন যে বেহাত হয়ে গিয়েছে সেদিকের ওর খেয়ালই ছিল না। হঠাৎ প্রচন্ড জোরে হাসি শব্দে পাশ ফিরতেই নিজের মোবাইলটা একজনের হাতে দেখতে পেয়ে বুঝতে পারে ওটা ঘাটাঘাটি করা হয়েছে। তবে বেকায়দায় পড়ে যায় ডিসপ্লেতে ভেসে থাকা ছবিটার জন্য। ছবিটাতে নগ্ন বক্ষ দেখা যাচ্ছে একটা মেয়ের, অনির্বাণের বিষয়টা বুঝতে বেশিক্ষণ না লাগলেও বাকিদের মাঝে হইহই রব পড়ে গিয়েছে।
কিরে শালা দারুণ মাল তো দেখি, কোথা থেকে পটালি এটাকে।
বন্ধুদের মুখে এমন খিস্তি আগে অনেক শুনেছে তবে আজ সেটা ওর কাছে ভালো ঠেকছে না। কিছু বলবে তার আগেই পাশ থেকেই আরেকজন বলে উঠে,
একদম খাসা মাল দেখেছিস যেমন গায়ের রঙ তেমনি ঠাঁসা দুধ গুলো। উফফ ছবি দেখেই মনে হচ্ছে খানিক চটকে দেই।
উফফ কি ভারী বুক দুটো দেখেছিস, কিরে অনু এটার সাইজ এমন হলো কি করে? তুই টিপে এই হাল করিস নি তো।
দেখে তো মনে হচ্ছে দুধভর্তি হয়ে আছে মাই দুটো। হাতের সামনে পেলে একটু চুষে দেখতাম কত স্বাদ দুধের।
কিরে অনির্বাণ তোর প্রেমিকা নাকিরে এটা নাকি পাড়ার কোন রেন্ডী মাল রে। এমন খাসা একটা মাল পেলে সবাই মিলে একটু চটকে খেতাম আর কি। ব্যবস্থা করে দে না।
অনির্বাণ পারছে না শুধু দু হাতে কান চেপে ধরতে, নিজের প্রেমিকার নগ্ন শরীরের সৌন্দর্য নিয়ে বন্ধুদের এমন কুৎসিত সব আলোচনা ওর বুকে শেল হয়ে বিঁধছে। ভাগ্যিস স্ক্রিনশট গুলোতে রুমার মুখ টা দেখা যাচ্ছে না, সেটা দেখে গেলে কি থেকে কি হয়ে যেত সেটা ভাবতে গেলেও গা শিউরে উঠছে অনির্বাণের। কোন মতে মোবাইলটা হাত থেকে কেড়ে নিয়ে উঠে পড়ে, কোন কু-খ্যানে যে আজ এখানে এসেছিল। একটু তাড়া আছে জানিয়ে ওদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে নেয়, বলতে গেলে পালিয়ে আসে সেখান থেকে। সেখানে থাকলে কি জবাব দিতো ওদের প্রশ্নের? বলতে পারতো কি ওটা এর প্রেমিকার ব্যক্তিগত ছবি। নাহ! এসবে আর ভাবতে পারছে না ও, পেছন থেকে বাকিদের অট্টহাসির শব্দ ওর কান ঝালাপালা করে দিচ্ছে। দ্রুত পা বাড়ায় বাড়ির দিকে...
আজ লিলির থেকেও কোচিং এ যাবার বেশি তাড়া অন্যজনের। লিলি তো বটেই বাড়ির বাকি সদস্যরাও সেটা নিয়ে একটু ভাবনায় আছে। কলেজ থেকে ফিরেই ফ্রেশ হয়ে নিচে নেমে এসেছে খাবার জন্য। অন্যদিন হলে তো ম্যাডাম বার কয়েকবার ডাকাডাকি করতে হয়। খেতে বসে বারবার লিলি কে তাড়া দিচ্ছে, ঘটনা টা কেউই বুঝতে পারছে না। তাই হয়তো আড় চোখে একে অন্যের দিকে তাকাচ্ছে। তবে সে দিকে নজর দেবার সময় নেই ম্যাডামের, একটু পরপর ঘড়ির দিকে তাকাচ্ছে। আজ যেন ঘড়ির কাঁটা এগোচ্ছেই না, কখন যে দেখা হবে মানুষটার সাথে।
খাওয়া শেষে মাধুরী চলে যায় লিলির ঘরে, যদি পারতো এখনি ছুটে চলে যেত সামনের বাড়িটায়। তবে একা একা যাওয়ার থেকে কাউকে সাথে নিলে একটা সাপোর্ট হয় এই আর কি। লিলি ঘরে ঢুকে দিদিকে বিছানায় বসে পা দোলাতে দেখে মুচকি হাসতে থাকে।
কিরে দিদি তোর ঘটনা কি একটু খুলে বলতো!
হঠাৎ এমন প্রশ্নে খানিক ভ্যাবাচেকা খায় মাধুরী,
ম...মা..মানে কিসের কি ঘটনা!
ঐ যে তুই বারে বারে আমাকে এতো তাড়া দিচ্ছিস, পড়তে তো আমি যাবো তোর এত তাড়া কিসের??
এই তুই কি নিজেকে আমার থেকে বড় ভাবছিস নাকি?? তোর তো নতুন নতুন স্যার হয়েছে, আমার কিন্তু তোর আগে থেকেই। বুঝলি?
তাহলে তুই নিজেই চলে যা না, আমাকে সাথে নিচ্ছিস কেন? হুম!
তোকে নিয়ে যাচ্ছি কারণ স্যার কে বলবো তোকে আমার বোন হিসেবে যেন স্পেশাল ট্রিটমেন্ট করে।
লিলি তেড়ে আসে মাধুরীর দিকে,
ঐ তোর যেমন স্যার তেমনি আমারও কিন্তু বয়ফ্রেন্ড বুঝলি। আমাকে তো এমনিই স্পেশাল কেয়ার করবে।
দাঁড়া তোর প্রেমিকা হওয়া টা বের করছি।
মাধুরী উঠে গিয়ে আলতো করে লিলির কান ধরে। সাথে সাথে দুজনের মাঝে হাসির রোল পড়ে যায়। খানিক হুড়োহুড়ি শেষে দু বোন মিলে বেড়িয়ে যায় "অতিথি" র উদ্দেশ্যে।
এক দু'পা করে বাড়িটার দিকে এগোচ্ছে আর মাধুরীর বুকের ভেতর যুদ্ধের দামামা বাজচ্ছে। ওর নাকের কাছে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছে, হাত পা গুলোও কেমন ঘামচ্ছে। এতোটা নার্ভাস আগে কখনো ফিল করে নি, মনের ভেতর কিছু শব্দ আনাগোনা করছে....
তোকে খুব দেখতে ইচ্ছে করে;
ইচ্ছে যখন হঠাৎ শিশির,
ঘাসের সবুজ 'পরে,
কিংবা জোড়া শালিক নাঁচন,
মেঠো পথের ধারে।
তোকে খুব দেখতে ইচ্ছে করে;
বদলে যাওয়া বসন্তে আজ,
কুহু মাতম হারা,
ঝরা পাতার পথ মাড়িয়ে,
শ্রান্ত যেন তারা।
অনেক ভিড়ে একলা থাকার,
প্রহর আসে ফিরে,
ব্যর্থ স্বপন বাঁধন ছেড়ার,
ফিরছে পাখি নীড়ে।
তবুও যখন জোছনা মাতাল,
আকাশ ডাকে আয়,
তুই যে ভাসিস মনের মেঘে,
স্মৃতি পিছু ধায়।
চমকে উঠে তন্দ্রা জাগি,
জানি সবই মিছে;
তবুও ছুটি,
ছুটবো জানি,
কল্প মায়ার পিছে
তোকে খুব দেখতে ইচ্ছে করে;
আলতো করে মুখখানি তোর,
ঠোঁট আদরে ছুঁয়ে;
ইচ্ছে করে নেই শুষে;
যাক- কষ্টগুলো ধুয়ে।
তোকে খুব দেখতে ইচ্ছে করে;
টেবিলের উপর পড়ে থাকা মোবাইলটা বার দুয়েক কেঁপে উঠে, শব্দের ভিত্তি আপাতদৃষ্টিতে মনে হচ্ছে কোন মেসেজ এসেছে। একটা হাত টেবিল থেকে মোবাইলটা তুলে নিয়ে কিছু একটা টাইপ করে সেন্ড করে দেয়,
'মাছ টোপে ঠোকর দিয়েছে, এবার বঁড়শিতে আটকানোর অপেক্ষা।'
Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,442 in 27,681 posts
Likes Given: 23,741
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
31-03-2023, 09:02 PM
(This post was last modified: 14-04-2023, 06:33 PM by ddey333. Edited 2 times in total. Edited 2 times in total.)
আজকাল কবিতা লিখতে গেলেই শব্দগুলো হয়ে যায় লতানো গাছ!স্বর্ণলতার মতো জড়িয়ে ওঠে স্তবক থেকে স্তবকে।
কখনও শব্দের ফাঁক থেকে বেরিয়ে আসে নীল জলের নদী –
তোমার শান্ত চোখের মতো।
অরণ্য এসে খেলা করে সাদা পাতায় –
অক্ষরগুলো ঝর্নার মতো সশব্দে প্রবাহিত।
কখনও বা, কবিতা হয়ে যায় একটা মেঘরঙা দুপুর!
ছায়া-মেঘের খুনসুটি –
তোমার এলোমেলো চুলে আঙুল চালায়।
মেঘের দল জলচুরি শাড়ি পরে, কাজল আঁকে চোখে।
আবার, সাদা পাতাগুলো কখনও হয়ে ওঠে জামরঙা রাত!
শব্দগুলো নিছক তারা।
আমি জামদানি, তুমি গিলে করা পাঞ্জাবি – কবিতার রাতে।
শব্দের ফুলদানি রজনীগন্ধায় মাতে।
কোন এক দিন কবিতা হবে নিষ্কলুষ জ্যোৎস্নার রাত –
তোমার চোখ ছুঁয়ে জ্যোৎস্না আসবে স্থবির রাতে;
জানালার কাঁচে বন্দি হবে চাঁদ।
ছায়াপথ, নীহারিকার চোরা স্রোত বইবে পাতায়।
তুমি এসে দাঁড়াবে নিঃশব্দে –
দেখব, তোমার চোখে খেলা করছে কত কবিতা, শব্দ, অক্ষরের এলোমেলো স্বর্ণলতা, নদী, রাত, জ্যোৎস্নার দুপুর।
Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,442 in 27,681 posts
Likes Given: 23,741
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
কি লিখবো ভেবে পেলাম না তাই আমার এক বান্ধবীর লেখা একটা কবিতা দিয়ে দিলাম।
Posts: 1,156
Threads: 0
Likes Received: 1,384 in 928 posts
Likes Given: 3,570
Joined: Apr 2022
Reputation:
146
কবিতা গুলি গল্পের উপরি পাওনা।
আমাকে আমার মত থাকতে দাও
Posts: 1,616
Threads: 3
Likes Received: 1,003 in 873 posts
Likes Given: 1,289
Joined: May 2022
Reputation:
29
Khub sundor lokhkhi r nikhil er ta darun.. R tar sathe anirban also scoring
Posts: 1,473
Threads: 7
Likes Received: 2,458 in 929 posts
Likes Given: 2,453
Joined: Mar 2022
Reputation:
512
(31-03-2023, 09:02 PM)ddey333 Wrote: আজকাল কবিতা লিখতে গেলেই শব্দগুলো হয়ে যায় লতানো গাছ!স্বর্ণলতার মতো জড়িয়ে ওঠে স্তবক থেকে স্তবকে।
কখনও শব্দের ফাঁক থেকে বেরিয়ে আসে নীল জলের নদী –
তোমার শান্ত চোখের মতো।
অরণ্য এসে খেলা করে সাদা পাতায় –
অক্ষরগুলো ঝর্নার মতো সশব্দে প্রবাহিত।
কখনও বা, কবিতা হয়ে যায় একটা মেঘরঙা দুপুর!
ছায়া-মেঘের খুনসুটি –
তোমার এলোমেলো চুলে আঙুল চালায়।
মেঘের দল জলচুরি শাড়ি পরে, কাজল আঁকে চোখে।
আবার, সাদা পাতাগুলো কখনও হয়ে ওঠে জামরঙা রাত!
শব্দগুলো নিছক তারা।
আমি জামদানি, তুমি গিলে করা পাঞ্জাবি – কবিতার রাতে।
শব্দের ফুলদানি রজনীগন্ধায় মাতে।
কোন এক দিন কবিতা হবে নিষ্কলুষ জ্যোৎস্নার রাত –
তোমার চোখ ছুঁয়ে জ্যোৎস্না আসবে স্থবির রাতে;
জানালার কাঁচে বন্দি হবে চাঁদ।
ছায়াপথ, নীহারিকার চোরা স্রোত বইবে পাতায়।
তুমি এসে দাঁড়াবে নিঃশব্দে –
দেখব, তোমার চোখে খেলা করছে কত কবিতা, শব্দ, অক্ষরের এলোমেলো স্বর্ণলতা, নদী, রাত, জ্যোৎস্নার দুপুর।
দারুন অসাধারণ অনবদ্য লা জবাব।
এই কবিতার হাত যথেষ্ট পাকা।
(31-03-2023, 09:05 PM)ddey333 Wrote: কি লিখবো ভেবে পেলাম না তাই আমার এক বান্ধবীর লেখা একটা কবিতা দিয়ে দিলাম।
তা সেটা কেমন বান্ধবী গো?
বৌদি জানে! নাকি লুকিয়ে লুকিয়ে।
হাত বাড়িয়ে ছুঁই না তোকে, মন বাড়িয়ে ছুঁই।
দুইকে আমি এক করি না, এক কে করি দুই।।
Posts: 1,473
Threads: 7
Likes Received: 2,458 in 929 posts
Likes Given: 2,453
Joined: Mar 2022
Reputation:
512
•
Posts: 1,473
Threads: 7
Likes Received: 2,458 in 929 posts
Likes Given: 2,453
Joined: Mar 2022
Reputation:
512
(31-03-2023, 09:22 PM)Dushtuchele567 Wrote: Khub sundor lokhkhi r nikhil er ta darun.. R tar sathe anirban also scoring
নিখিল আর লক্ষ্মীকে আরও কাছাকাছি আনা হবে
হাত বাড়িয়ে ছুঁই না তোকে, মন বাড়িয়ে ছুঁই।
দুইকে আমি এক করি না, এক কে করি দুই।।
Posts: 1,391
Threads: 12
Likes Received: 2,355 in 824 posts
Likes Given: 1,054
Joined: Nov 2019
Reputation:
378
লেখা পড়ে কি মন্তব্য করবো ভেবে পাচ্ছিলাম না । মাথায় বারবার অনেকবার ব্যাবহার করা " দারুন" কথাটাই আসছিলো । আর দুঃখের বিষয় আমার কোন কবি বান্ধবী ও নেই ।
Posts: 1,473
Threads: 7
Likes Received: 2,458 in 929 posts
Likes Given: 2,453
Joined: Mar 2022
Reputation:
512
Posts: 1,391
Threads: 12
Likes Received: 2,355 in 824 posts
Likes Given: 1,054
Joined: Nov 2019
Reputation:
378
(01-04-2023, 08:04 PM)nextpage Wrote: ddey333 দাদার কাছ থেকে একটা বান্ধবী ধার নাও। দাদার অনেক বান্ধবী।
এই জিনিস কেউ দেয় না গো কেউ দেয় না । আর উনার যা স্বভাব শুনেছি , উনি তো আরও আগে দিবেন না , পারলে আরও অন্য কারোটা নিয়ে নেবেন ।
Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,442 in 27,681 posts
Likes Given: 23,741
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
(01-04-2023, 08:08 PM)cuck son Wrote: এই জিনিস কেউ দেয় না গো কেউ দেয় না । আর উনার যা স্বভাব শুনেছি , উনি তো আরও আগে দিবেন না , পারলে আরও অন্য কারোটা নিয়ে নেবেন ।
বাচ্চা ছেলে তোমরা , দিলেও সামলাতে পারবে না।
নানারকমের ব্যাপার থাকে তোমরা বুঝতে পারবে না।
Posts: 412
Threads: 3
Likes Received: 806 in 347 posts
Likes Given: 566
Joined: Oct 2022
Reputation:
284
অনবদ্য বিশেষ করিয়া কবিতাগুলি। কোন এক স্থানে পড়িয়াছিলাম, চিরন্তনী প্রেমের কাহিনীতে আপনার টেক্কা মেলা ভার! এই কাহিনী পুনরায় সেকথা স্মরণ করাইয়া দিতেছে। শেষ পঙ্ক্তিটী চমৎকার, মাছের বঁড়শীতে গাঁথা এখন শুধুই সময়ের অপেক্ষা। তাহার অর্থ রহস্য ঘন হইতেছে। যখন গসিপিতে ধর তক্তা মার পেরেক গোছের লেখনীতে ভরিয়া গিয়াছে তখনও আপনার ন্যয় কয়েকজন এখনও গল্পের মতই গল্প লিখিতেছেন, তাহারা জীবন হইতে উৎসারিত হইয়া জীবনেরই গান গাহিতেছে। ইহাই সম্ভবতঃ এই অতিথির এখনও পর্য্যন্ত সবচাইতে বড় পাওনা। লাইক এবং রেপু চরণে প্রদান করিলাম মহাশয়, আগামী পৃষ্ঠার অপেক্ষায় রহিলাম।
Posts: 1,473
Threads: 7
Likes Received: 2,458 in 929 posts
Likes Given: 2,453
Joined: Mar 2022
Reputation:
512
Posts: 1,473
Threads: 7
Likes Received: 2,458 in 929 posts
Likes Given: 2,453
Joined: Mar 2022
Reputation:
512
(02-04-2023, 12:03 PM)মহাবীর্য্য দেবশর্ম্মা Wrote: অনবদ্য বিশেষ করিয়া কবিতাগুলি। কোন এক স্থানে পড়িয়াছিলাম, চিরন্তনী প্রেমের কাহিনীতে আপনার টেক্কা মেলা ভার! এই কাহিনী পুনরায় সেকথা স্মরণ করাইয়া দিতেছে। শেষ পঙ্ক্তিটী চমৎকার, মাছের বঁড়শীতে গাঁথা এখন শুধুই সময়ের অপেক্ষা। তাহার অর্থ রহস্য ঘন হইতেছে। যখন গসিপিতে ধর তক্তা মার পেরেক গোছের লেখনীতে ভরিয়া গিয়াছে তখনও আপনার ন্যয় কয়েকজন এখনও গল্পের মতই গল্প লিখিতেছেন, তাহারা জীবন হইতে উৎসারিত হইয়া জীবনেরই গান গাহিতেছে। ইহাই সম্ভবতঃ এই অতিথির এখনও পর্য্যন্ত সবচাইতে বড় পাওনা। লাইক এবং রেপু চরণে প্রদান করিলাম মহাশয়, আগামী পৃষ্ঠার অপেক্ষায় রহিলাম।
এমন মন্তব্যে লেখার শক্তি খুঁজে পাই।
এখন ধর তক্তা মার পেরেক এরই ভোক্তা বেশি।
হাত বাড়িয়ে ছুঁই না তোকে, মন বাড়িয়ে ছুঁই।
দুইকে আমি এক করি না, এক কে করি দুই।।
•
Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,442 in 27,681 posts
Likes Given: 23,741
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
(03-04-2023, 12:33 AM)nextpage Wrote: কচি দেখে একটা দিয়েই দেখো সামলে রাখতে পারে কিনা।
নাকি তোমার রাজত্ব হারানোর ভয়
আররে নিজেকেই ভালো সামলে রাখতে পারে না এই কাকসন, ও সামলাবে বান্ধবী !!! ??
•
Posts: 4,428
Threads: 6
Likes Received: 9,218 in 2,849 posts
Likes Given: 4,330
Joined: Oct 2019
Reputation:
3,225
(31-03-2023, 08:50 PM)nextpage Wrote: পর্ব- তেরো
তুমি প্রেম ছুঁয়ে দেখো নি বলে
আমি কি তোমায় ছুঁতে পারি না?
দুচোখ ভরে দেখব বলে,
তোমার দিকে নির্নিমেষে কি তাকিয়ে থাকতে পারি না?
তোমার চুলে যখন রাঙামাটির ফুল গুঁজে থাকে
তখন ভীষণ ঈর্ষা হয় তোমার প্রতি।
নদী যখন তোমায় ডাকে
আমি তখন তোমায় মধুমাধবী রাগে থামিয়ে রাখি!
তা কি তুমি জানো?
আজ বৈশাখের প্রথম প্রহরে
পৃথিবীর সমস্ত মাধুর্যতা যখন তোমার আঁখি নীড়ে!
আর গাছের শাখে শাখে নতুন পাতা।
এ যেন মনে হয় প্রকৃতি
তোমায় নিজ হাতে সাজিয়ে রেখেছে,
তোমায় দুচোখ ভরে দেখব বলে।
বলো,
তোমায় কি ছুঁতে পারি না?
আমিও তো এক ক্লান্ত প্রেমিক!
চাইলে তো পারো ক্লান্ততা মুছে খুব কাছে টেনে নিতে!
না এটা নিখিলের লেখা নয় তবে ওর মনের অভিব্যক্তি টুকুই নিজের মত করে খানিক সাজিয়ে নেবার প্রচেষ্টায় যকটুকু পেরেছি সেটাই তুলে ধরেছি। মানব মন ভীষণ রকমের স্পর্শ কাতুরে, কারণে অকারণে, সুখে-দুঃখে, আনন্দে- বেদনায় প্রিয়জনের সান্নিধ্য খুঁজে বেড়ায়। আরও স্পষ্টতই বললে স্পর্শের অনুসন্ধান করে। স্পর্শের কি যে মায়া কি যে জাদু সেটা কেবল ঐ স্পর্শের দ্বারাই ব্যক্ত করা সম্ভব। অতীব চঞ্চল মনও বশ্যতা মেনে নেয় ঐ স্পর্শের কাছে, প্রচন্ড ক্লান্ত শরীরে নতুন প্রাণশক্তির সঞ্চার হয় প্রিয়র স্পর্শ পেয়ে, কত কষ্ট যন্ত্রণা লাঘবে স্পর্শের কার্যকারিতা যে অব্যর্থ মহা ঔষধ সেটা যুগে যুগে মনীষী রা বারংবার বলে গিয়েছেন।
লোকে বলে কাউকে ভালোবাসা যায় যখন-তখন। চাইলেই নাকি কাউকে নিয়ে লেখা যায় কবিতা, কিংবা প্রেম বা বিরহের গান। হওয়া যায় তার প্রেমে পাগল প্রেমিক। এসব করতে বুঝি প্রেমিক/গায়ক/কবির কোন অনুমতি লাগে না? কিন্তু যদি আরাধ্যের পাশে গিয়ে বসার সাধ জাগে, যদি তার খোঁপার ফুল ঠিক করে দেয়ার ইচ্ছে হয়, যদি তাকে ছুঁয়ে দেখতেই হয় তবে সেই ❝তোমাকে❞ র অনুমতি লাগবেই, মাস্ট। তবে! তখন কি হবে যদি অনুমতির অপেক্ষা দীর্ঘ হয় প্রকৃতির কোন খেয়ালী কারণে? প্রেমিক কি অপেক্ষায় থাকবে নাকি অবাধ্য হয়েই একটু খানি ছুঁয়ে দিবে পরম আরাধ্য কে?
গত সন্ধ্যার পর থেকে নিখিলের মন বড্ড উচাটন হয়ে আছে। কিছুটা সাহসী হয়েই হাতের স্পর্শ ছড়িয়ে দিয়েছিল লক্ষ্মীর কোমল আঙুলের ডগায় খানিক অতি উচ্ছাসে বাঁধা পেড়িয়ে শক্ত কব্জিতে। তখন খুব করে চেষ্টা করেছিল লক্ষ্মীর মনের ভাষা বুঝার জন্য। কিন্তু ঠোঁটের কোণে জেগে উঠা মৃদু হাসির আভাস পাবার আগেই যে চোখের মাঝে আগুন জ্বলে উঠতে দেখেছিল। সেই ভয়টাই ওকে পেয়ে বসেছে তবে কি লক্ষ্মী ওকে অন্যরকম ভাবলো? এরপর কি আর আগের মত লক্ষ্মী ওর সাথে হেসে কথা বলবে না? জেগে উঠা সম্পর্কের ডুবোচর কি তবে মাথা তুলে আকাশ দেখার আগেই আবার হারিয়ে যাবে অতল গভীরে?
আজ অনেকক্ষণ হয়ে গেল নিখিল কলপাড়ে বসে আছে কিন্তু সবাই একে একে এসে আবার চলে গেলেও লক্ষ্মীর কোন দেখা নেই। তবে কি নিখিল এখানে থাকবে জেনেই লক্ষ্মী ওকে এড়িয়ে যেতে চাইছে? এর মাঝেই কল পাড়টা ফাঁকা হয়ে এসেছে, দূর গাছতলায় নিখিল অপেক্ষার প্রহর গোনা শেষ করে এবার ফিরে যাবার তোড়জোড় করতেই কি মনে করে আরেকবার পিছন ফিরতেই হাসি খেলে যায় বিমর্ষ মুখখানায়। ঐ তো লক্ষ্মী দ্রুত পা ফেলে এদিকেই আসছে। ওর উজ্জ্বল মুখ খানা দেখে খানিক আগেই মনের ভেতর আনাগোনা করা সকল আশংকা উড়ে যেতে লাগলো। নিখিল এক দু পা করে এগিয়ে যায় কলপাড়ের দিকে, লক্ষ্মী কাছে আসতেই নিজেই কলটা ছেড়ে দিয়ে কলসিটা নিচে বসিয়ে দেয়। আজ আর আশেপাশে কেউ নেই তাই বুঝি দুজনার চোখের পলক পড়ার নামই নিচ্ছে না। এ যেন দুই কপোত-কপোতী চোখে চোখেই বলে নিচ্ছে অনেক না বলা কথা। হাসি মুখ গুলো বার্তা দেয় সুন্দর আগামীর।
জল ভর্তি কলস খানা হাতে তুলে দেবার বাহনায় নিখিল আরও একটু স্পর্শ বুলিয়ে নিতে চায়। নিখিলের খসখসে পুরুষালী হাতের ছোঁয়ায় খানিক কেঁপে উঠে লক্ষ্মীর মাঝারী গড়নের হালকা ভারী দেহখানা। সারা শরীরের শিহরণের কাঁপন খেলে যায় মূহুর্তেই। ক্রমেই সাহসী হয়ে উঠা নিখিলের হাতটা কলসীর সাথে হালকা করে ছুঁয়ে যায় লক্ষ্মীর উন্মুক্ত পেটের কিয়দাংশ। কিঞ্চিৎ হতবাক হবার সাথে সাথে ঈশৎ রাগান্বিত চোখে তাকায় নিখিলের দিকে। নিখিলের চোখে মুখে তখনো দুষ্টুমি খেলা করে যায়। এ দুষ্টুমি যে ছুটোদের যেনতেন দুষ্টুমি না এ দুষ্টুমি বড়দের গোপনীয় দুষ্টুমি৷ লক্ষ্মীর রাগান্বিত চোখের চাহনিতেও নিখিলের কোন হেলদোল নেই বরং ওর হাতটা এখনো লেগে আছে কলসী সাথে লক্ষ্মীর নরম পেটের কোমল মোলায়ের ত্বকের সাথে। মাঝে মাঝে দুষ্টু অবাধ্য আঙুল গুলো নড়াচড়া করে উঠছে আর সেই সাথে কাঁপিয়ে দিয়ে যাচ্ছে লক্ষ্মীর নরম নধর কে। সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে শ্বাস ভারী হতে থাকে, রক্তের গতি বাড়তে থাকে শিরায় উপশিরায়। পুরুষ হাতের গরম স্পর্শ অনেকদিনের উপোষী শরীরে দাউদাউ করে আগুন ধরিয়ে দিচ্ছে,শুকনো মাংসল পেশীতে রসের বাণ বওয়াচ্ছে। নিখিল যেন একটু এগিয়ে আসে লক্ষ্মীর দিকে আর চতুর চোখ জোড়া আশপাশটা দেখে নেয় ভালো করেই। লক্ষ্মীর এবার বেশ বুঝতে পারে আগের মত শুধু হাত নয় পুরো থাবাটাই চড়ে বেড়ানোর চেষ্টায় আছে ওর হালকা মেদ জমে ভাজ পড়া মোলায়েম পেটের নরম মাংসের উপর। লক্ষ্মীর শরীর সুখে ভেসে যেতে চাইলেও মন যে অন্য কিছু বলছে, দাঁতে দাঁত চেপে নিজেকে রুখার চেষ্টা করে।
তড়িৎ গতিতে লক্ষ্মী নিজেকে সড়িয়ে আনে নিখিলের কাছ থেকে। দু পা পিছিয়ে গিয়ে শ্বাসটাকে শান্ত করে নাঁকি সুরে বলে উঠে,
শয়তান ব্যাডা
এরপরই খিলখিল করে হাসতে হাসতে বাড়ির পথ ধরে। আর নিখিলও সেই হাসিতেই সবুজ সংকেতের আশা খুঁজে নিয়ে উৎফুল্ল হয়ে উঠে।
আজকের সকালটা অন্যদিনের থেকে আলাদা!
না সূর্যও পূব দিকেই উঠেছে, প্রতিদিনের মতই পাখপাখালির কলকাকলিতে মুখরিত চারপাশ, দিব্যি হাওয়া বইছে সবকিছু বাকি প্রতিদিনের মতই আছে। তবুও আজকের দিনটা অন্যদিনের চেয়ে আলাদা অন্য কারও কাছে না হউক মাধুরীর কাছে তো আলাদা বটেই। কাল যে সারারাত ঘুমোতে পারে নি, কোন এক অজানা আকর্ষণে মন চঞ্চল হয়ে আছে। সারারাত অপেক্ষা করেছে কখন সকাল হবে, আর সকালের সূর্য উঠার পর থেকে অপেক্ষা টা এখন বিকেল হবার। বিকেলেই যে আজ সেই সুযোগ আসতে চলেছে মানুষ টাকে কাছ থেকে দেখার, সুযোগের সদ্ব্যবহারে দুটো কথা বলার। আত্মা খানা যে নিসপিস করছে দুটো বাক্য ব্যয় করার। আগে কখনো এমন হয়নি আজকাল কেন এমন হচ্ছে সেটাও জানা নেই। এসবের কথা কারও সাথে বলা যায় না, মায়ের সাথেও কেন জানি সম্পর্ক টা এতোটাও স্বাভাবিক না৷ যদিও নাকি একটা বয়সে এসে মা মেয়ের বন্ডিং টাই সবচেয়ে বড় হয় কিন্তু মাধুরী আর ওর মায়ের মাঝে সেটা কোন এক অজানা কারণে গড়ে উঠেনি। বাবাও কাছে নেই যে তাকে মনের কথা গুলো বলবে, সব কথা তো আর ফোনে বলে বুঝানো যায় না৷
আপন মনেই সেই অজানা অচেনা মানুষটার কথা ভাবতে ভাবতে সকাল টা পার হয়ে যাচ্ছে। মনে যেন নতুন হাওয়া লেগেছে তাতেই বারবার ভেতর টা গুনগুন করে গাইতে শুরু করেছে। ব্যাকুল মনটা তাকে দেখার জন্য এতটাই আকুল হয়ে উঠেছে যে কলেজে যেতেও মন চাইছে না। তবে ইম্পর্ট্যান্ট ক্লাস আছে সেই সাথে সেই মানুষটাকেও এক ঝলক দেখে নিতে পারবে হোক না সেটা দূর থেকে সেই লোভটা সামলানো তো এত সহজ কাজ না। তাই তড়িঘড়ি করেই মাধুরী তৈরী হয়ে ছুট দেয় কলেজের উদ্দেশ্যে।
ক্লাসে ঢোকার আগেও একবার চারদিকে চোখ বুলিয়ে নিলো আলেয়া। গত দুদিনের ব্যস্ততার জন্য সুমনের সাথে তেমন করে কথা বলা হয়ে উঠেনি। সুমন যে ফোন করে নি তা নয়, তবে স্যারের সামনে ফোনে কথা বলার সাহস হয় নি আর বাড়িতে এসে আম্মার সাথে কাজে হাত লাগানো, আব্বার সাথে সারাদিনের ঘটনার আলোচনা করা এসবে আর আলাদা করে সুমনের সাথে কথা বলার সুযোগ হয়ে উঠে নি। তাই আজ কলেজে এসেই আগেই সুমনের খুঁজ করছিলো ওর উৎসুক চোখ জোড়া। মন টা আগেই একটু খারাপ হয়ে গিয়েছিল যখন বাকি দিন গুলোর মত সুমনকে ঐ মোড়ের রাস্তায় দেখতে পায় নি। প্রথমে মনকে বুঝানোর চেষ্টা করেছিল হয়তো কোন কাজে আটকা পড়ে গেছে তাই আসতে পারে নি। কিন্তু কলেজে আসার পরও সুমনে কোথাও দেখতে না পেয়ে মনটা বিমর্ষ হয়ে পড়েছে আলেয়ার।
ক্লাসের ফাঁকে কয়েকবার ফোন করেছিল তবে সুমন রিসিভ করে নি। শেষবারের মাথায় কলটা কেটে যাবার পর ছোট্ট একটা মেসেজ আসে মোবাইলে, কলেজ ছুটির পর দেখা করার জন্য। মেসেজ টা দেখার পর আলেয়াে মন টা শান্ত হয় যাবতীয় দুশ্চিন্তা গুলো দূর হয়ে যায়। তবে যে পর্যন্ত সুমনের সাথে দেখা না হচ্ছে আর দুদিনের জমানো কথা গুলো বলা না হচ্ছে সে পর্যন্ত ব্যাকুলতা কমছে না। আজকের সিডিউলে ক্লাস কমই ছিল তাই খুব বেশি অপেক্ষা করতে হয় নি আলেয়ার, ক্লাস শেষ হতেই ছুটেছিল মুক্তমঞ্চের দিকে। ওটাই ওদের কলেজে দেখা করার জায়গা। আলেয়া পৌঁছে গেলেও সুমনকে দেখতে না পেয়ে একটা কল করে। রিং হয়েই চলেছে কিন্তু রিসিভ করছে না, শেষ মূহুর্তে গিয়ে কলটা রিসিভ হয়। আলেয়া কানের কাছে ফোনটা ধরে,
খুব বেশি কি অপেক্ষা করালাম তোমাকে?
সুমনের কন্ঠস্বরটা আলেয়ার খুব কাছ থেকে কানে বাজলো, মনে হলো মোবাইলে নয় পাশে দাঁড়িয়েই কথা বলছে। কি মনে করে পাশ ফিরতেই দেখে সুমন দাঁড়িয়ে আছে আর মুচকি মুচকি হাসছে।
না তেমন দেরি হয় নি। আমিও মাত্রই আসলাম।
তা হঠাৎ এতো জরুরি তলব! গত দুদিন ধরে তো তোমার নাগাল পাওয়া যাচ্ছে না। তোমার থেকেও তো আমার বেশি কৌতূহল থাকার কথা।
স্যরি স্যরি স্যরি। সত্যিই এমন করাটা উচিত হয় নি। কিন্তু কেন হলো সেটা বলার জন্যই তো তোমাকে ডাকলাম। তোমাকে না বলা পর্যন্ত তো শান্তি পাচ্ছি না।
ওহহ তাই নাকি (একটু গুমড়ো ভাব করে) আমি এতোটাও ইম্পর্ট্যান্ট বুঝি তোমার কাছে।
জানি রাগ করে আছো তাই এমন করে বলছো, তবে সবটা জানলে আর রাগ করে থাকতেই পারবে না।
সে রকম হলে বলে ফেল তাড়াতাড়ি, শুনি তো আগে যে কি এমন ঘটেছে যে আমার ফোনটা ধরার সময় অব্দি পেলে না।
আয়েশা বেশ বুঝতে পারলো বাবু খুব রাগ করে আছে একটু রয়ে সয়ে রাগ ভাঙাতে হবে। আলেয়া সুমনকে নিয়ে এগিয়ে যায় একটু ছায়া দেখে বসার জন্য। সুমন মুখ খানা বেজার করে রাখলেও আয়েশার উপর আগের মত রাগ করে থাকতে পারছে না। একটা বেঞ্চ দেখে বসার আগে সুমন হাঁক ছেড়ে দুটো চায়ের অর্ডার করে দেয়। আলেয়া এক এক করে সেই দিনের দোকানের ঘটনা থেকে শুরু করে কাল অব্দি কি কি ঘটেছে এক এক করে সব বলতে শুরু করলো। সব কিছু শোনার পর সুমন আর আলেয়ার উপর রাগ করে থাকতে পারে না তবে ঐ স্যার কি যেন নাম হ্যাঁ মনে পড়েছে কৌশিক তার উপর কিছুটা বিরক্তই বটে। কলেজে এতো এতো মেয়ে থাকতে শেষমেষ ওর আলেয়ার উপরই নজর পড়লো, একটু নজরে নজরে রাখতে হবে। লোকটার মতলব ভালো ঠেকছে না খুব একটা। দেখতেও হ্যান্ডসাম যথেষ্ট স্মার্ট, মেয়েদের মন কখন যে ঘুরে যায় বলা তো যায় না। ভিতরে ভিতরে ভালোই ইনসিকিউরড ফিল করছে সুমন তবে ভাবসাবে সেটা আলেয়া কে বুঝতে দিচ্ছে না।
চা খাওয়ার ফাঁকে খানিক গল্প সেড়ে আলেয়া উঠে পড়ে, টিউশনি তে যেতে হবে। সুমনও আলেয়ার সাথে পা বাড়ায়, কিছুটা সময় পাশাপাশি কাটানোর অভিলাসে। এমনিতেই তো ওকে চোখের আড়াল করতে ইচ্ছে করছে না ঐ স্যারের জন্য।
আগামী পরীক্ষার আগে আজকের দিনটা গ্যাপ ছিল আর সেই সুযোগেই পুরনো বন্ধুদের সাথে খানিক আড্ডা দেবার উদ্দেশ্যে বেড়িয়েছে অনির্বাণ। পরীক্ষার কারণে গত কয়েকদিন এই সঙ্গ এড়িয়ে চলেছিল তবে রিপুর তাড়নায় চঞ্চল মন কি আর বশ মানে। তাই তো সুযোগ পেতেই ছুটে এসেছে পুরনো রূপে। শুধু রুমার কাছে ব্যাপারটা চেপে গেলেই হলো ব্যাস নো প্রবলেম। আড্ডার কাছাকাছি আসতেই বাকিদের দেখতে পেয়ে হাসিটা বেশ চওড়া হয় অনির্বাণের তবে বাকিরা এতোটাও সহজে সাদরে ওকে গ্রহন করলো না নিজেদের মাঝে। এভাবে হঠাৎ করে সাধু সেজে যাবার কারণে বেশ কিছুক্ষণ লেগপুল করেছে সবাই মিলে। কিঞ্চিৎ মন খারাপ হলেও অনির্বাণ মোটামুটি সহজ ভাবেই হেসে খেলে ব্যাপারটা এড়িয়ে গিয়েছে। হাসি ঠাট্টা-তামাশার মাঝেই ওদের ভিতরের আবহাওয়া ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হয়ে আসে। ক্লাব ঘরে ওদের আড্ডা একটু একটু করে জমতে শুরু করেছে, গল্পের আবহে অতীতের অনেক কথাই উঠে আসে একটু আধটু করে।
বন্ধুদের আড্ডায় যেমনটা হয় আর কি এর ওর যাবতীয় বিষয়াদি নিয়ে ঘাটাঘাটি করা। অনির্বাণের মোবাইলের পাসওয়ার্ড যে ওদের একজনের জানা আছে সেটা খেয়াল ছিল না ওর। গল্পগুজবের ফাঁকে ওর মোবাইলটা কখন যে বেহাত হয়ে গিয়েছে সেদিকের ওর খেয়ালই ছিল না। হঠাৎ প্রচন্ড জোরে হাসি শব্দে পাশ ফিরতেই নিজের মোবাইলটা একজনের হাতে দেখতে পেয়ে বুঝতে পারে ওটা ঘাটাঘাটি করা হয়েছে। তবে বেকায়দায় পড়ে যায় ডিসপ্লেতে ভেসে থাকা ছবিটার জন্য। ছবিটাতে নগ্ন বক্ষ দেখা যাচ্ছে একটা মেয়ের, অনির্বাণের বিষয়টা বুঝতে বেশিক্ষণ না লাগলেও বাকিদের মাঝে হইহই রব পড়ে গিয়েছে।
কিরে শালা দারুণ মাল তো দেখি, কোথা থেকে পটালি এটাকে।
বন্ধুদের মুখে এমন খিস্তি আগে অনেক শুনেছে তবে আজ সেটা ওর কাছে ভালো ঠেকছে না। কিছু বলবে তার আগেই পাশ থেকেই আরেকজন বলে উঠে,
একদম খাসা মাল দেখেছিস যেমন গায়ের রঙ তেমনি ঠাঁসা দুধ গুলো। উফফ ছবি দেখেই মনে হচ্ছে খানিক চটকে দেই।
উফফ কি ভারী বুক দুটো দেখেছিস, কিরে অনু এটার সাইজ এমন হলো কি করে? তুই টিপে এই হাল করিস নি তো।
দেখে তো মনে হচ্ছে দুধভর্তি হয়ে আছে মাই দুটো। হাতের সামনে পেলে একটু চুষে দেখতাম কত স্বাদ দুধের।
কিরে অনির্বাণ তোর প্রেমিকা নাকিরে এটা নাকি পাড়ার কোন রেন্ডী মাল রে। এমন খাসা একটা মাল পেলে সবাই মিলে একটু চটকে খেতাম আর কি। ব্যবস্থা করে দে না।
অনির্বাণ পারছে না শুধু দু হাতে কান চেপে ধরতে, নিজের প্রেমিকার নগ্ন শরীরের সৌন্দর্য নিয়ে বন্ধুদের এমন কুৎসিত সব আলোচনা ওর বুকে শেল হয়ে বিঁধছে। ভাগ্যিস স্ক্রিনশট গুলোতে রুমার মুখ টা দেখা যাচ্ছে না, সেটা দেখে গেলে কি থেকে কি হয়ে যেত সেটা ভাবতে গেলেও গা শিউরে উঠছে অনির্বাণের। কোন মতে মোবাইলটা হাত থেকে কেড়ে নিয়ে উঠে পড়ে, কোন কু-খ্যানে যে আজ এখানে এসেছিল। একটু তাড়া আছে জানিয়ে ওদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে নেয়, বলতে গেলে পালিয়ে আসে সেখান থেকে। সেখানে থাকলে কি জবাব দিতো ওদের প্রশ্নের? বলতে পারতো কি ওটা এর প্রেমিকার ব্যক্তিগত ছবি। নাহ! এসবে আর ভাবতে পারছে না ও, পেছন থেকে বাকিদের অট্টহাসির শব্দ ওর কান ঝালাপালা করে দিচ্ছে। দ্রুত পা বাড়ায় বাড়ির দিকে...
আজ লিলির থেকেও কোচিং এ যাবার বেশি তাড়া অন্যজনের। লিলি তো বটেই বাড়ির বাকি সদস্যরাও সেটা নিয়ে একটু ভাবনায় আছে। কলেজ থেকে ফিরেই ফ্রেশ হয়ে নিচে নেমে এসেছে খাবার জন্য। অন্যদিন হলে তো ম্যাডাম বার কয়েকবার ডাকাডাকি করতে হয়। খেতে বসে বারবার লিলি কে তাড়া দিচ্ছে, ঘটনা টা কেউই বুঝতে পারছে না। তাই হয়তো আড় চোখে একে অন্যের দিকে তাকাচ্ছে। তবে সে দিকে নজর দেবার সময় নেই ম্যাডামের, একটু পরপর ঘড়ির দিকে তাকাচ্ছে। আজ যেন ঘড়ির কাঁটা এগোচ্ছেই না, কখন যে দেখা হবে মানুষটার সাথে।
খাওয়া শেষে মাধুরী চলে যায় লিলির ঘরে, যদি পারতো এখনি ছুটে চলে যেত সামনের বাড়িটায়। তবে একা একা যাওয়ার থেকে কাউকে সাথে নিলে একটা সাপোর্ট হয় এই আর কি। লিলি ঘরে ঢুকে দিদিকে বিছানায় বসে পা দোলাতে দেখে মুচকি হাসতে থাকে।
কিরে দিদি তোর ঘটনা কি একটু খুলে বলতো!
হঠাৎ এমন প্রশ্নে খানিক ভ্যাবাচেকা খায় মাধুরী,
ম...মা..মানে কিসের কি ঘটনা!
ঐ যে তুই বারে বারে আমাকে এতো তাড়া দিচ্ছিস, পড়তে তো আমি যাবো তোর এত তাড়া কিসের??
এই তুই কি নিজেকে আমার থেকে বড় ভাবছিস নাকি?? তোর তো নতুন নতুন স্যার হয়েছে, আমার কিন্তু তোর আগে থেকেই। বুঝলি?
তাহলে তুই নিজেই চলে যা না, আমাকে সাথে নিচ্ছিস কেন? হুম!
তোকে নিয়ে যাচ্ছি কারণ স্যার কে বলবো তোকে আমার বোন হিসেবে যেন স্পেশাল ট্রিটমেন্ট করে।
লিলি তেড়ে আসে মাধুরীর দিকে,
ঐ তোর যেমন স্যার তেমনি আমারও কিন্তু বয়ফ্রেন্ড বুঝলি। আমাকে তো এমনিই স্পেশাল কেয়ার করবে।
দাঁড়া তোর প্রেমিকা হওয়া টা বের করছি।
মাধুরী উঠে গিয়ে আলতো করে লিলির কান ধরে। সাথে সাথে দুজনের মাঝে হাসির রোল পড়ে যায়। খানিক হুড়োহুড়ি শেষে দু বোন মিলে বেড়িয়ে যায় "অতিথি" র উদ্দেশ্যে।
এক দু'পা করে বাড়িটার দিকে এগোচ্ছে আর মাধুরীর বুকের ভেতর যুদ্ধের দামামা বাজচ্ছে। ওর নাকের কাছে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছে, হাত পা গুলোও কেমন ঘামচ্ছে। এতোটা নার্ভাস আগে কখনো ফিল করে নি, মনের ভেতর কিছু শব্দ আনাগোনা করছে....
তোকে খুব দেখতে ইচ্ছে করে;
ইচ্ছে যখন হঠাৎ শিশির,
ঘাসের সবুজ 'পরে,
কিংবা জোড়া শালিক নাঁচন,
মেঠো পথের ধারে।
তোকে খুব দেখতে ইচ্ছে করে;
বদলে যাওয়া বসন্তে আজ,
কুহু মাতম হারা,
ঝরা পাতার পথ মাড়িয়ে,
শ্রান্ত যেন তারা।
অনেক ভিড়ে একলা থাকার,
প্রহর আসে ফিরে,
ব্যর্থ স্বপন বাঁধন ছেড়ার,
ফিরছে পাখি নীড়ে।
তবুও যখন জোছনা মাতাল,
আকাশ ডাকে আয়,
তুই যে ভাসিস মনের মেঘে,
স্মৃতি পিছু ধায়।
চমকে উঠে তন্দ্রা জাগি,
জানি সবই মিছে;
তবুও ছুটি,
ছুটবো জানি,
কল্প মায়ার পিছে
তোকে খুব দেখতে ইচ্ছে করে;
আলতো করে মুখখানি তোর,
ঠোঁট আদরে ছুঁয়ে;
ইচ্ছে করে নেই শুষে;
যাক- কষ্টগুলো ধুয়ে।
তোকে খুব দেখতে ইচ্ছে করে;
টেবিলের উপর পড়ে থাকা মোবাইলটা বার দুয়েক কেঁপে উঠে, শব্দের ভিত্তি আপাতদৃষ্টিতে মনে হচ্ছে কোন মেসেজ এসেছে। একটা হাত টেবিল থেকে মোবাইলটা তুলে নিয়ে কিছু একটা টাইপ করে সেন্ড করে দেয়,
'মাছ টোপে ঠোকর দিয়েছে, এবার বঁড়শিতে আটকানোর অপেক্ষা।'
বেশ কিছুদিন শারীরিকভাবে একটু সমস্যায় ছিলাম। ভেবেছিলাম কাহিনী অনেক দূর এগিয়ে গিয়েছে, কিন্তু না, মাত্র একটি পর্বই এসেছে। তাই ফিরে এসে এক নিঃশ্বাসে পড়ে ফেললাম বাকি থাকা পর্বটি। এই ফোরামে আমি একজন লেখক, তাই যেটুকু সময় পাই তাতে নিজের গল্প নিয়ে ব্যস্ত থাকার জন্য সবার গল্প পড়া হয় না। গুটিকয়েক যে কয়েকজন লেখক আছেন, যারা আমার গল্প পড়ুক আর নাই পড়ুুক আমি কিন্তু তাদের গল্প আমি পড়ি এবং মন্তব্য করি, তাদের মধ্যে তুমি অন্যতম। তার কারণ, তুমি খুব ভালো লেখো। এই ভাবেই চালিয়ে যাও বন্ধু, সঙ্গে আছি।
Posts: 1,473
Threads: 7
Likes Received: 2,458 in 929 posts
Likes Given: 2,453
Joined: Mar 2022
Reputation:
512
(14-04-2023, 05:16 PM)Bumba_1 Wrote: বেশ কিছুদিন শারীরিকভাবে একটু সমস্যায় ছিলাম। ভেবেছিলাম কাহিনী অনেক দূর এগিয়ে গিয়েছে, কিন্তু না, মাত্র একটি পর্বই এসেছে। তাই ফিরে এসে এক নিঃশ্বাসে পড়ে ফেললাম বাকি থাকা পর্বটি। এই ফোরামে আমি একজন লেখক, তাই যেটুকু সময় পাই তাতে নিজের গল্প নিয়ে ব্যস্ত থাকার জন্য সবার গল্প পড়া হয় না। গুটিকয়েক যে কয়েকজন লেখক আছেন, যারা আমার গল্প পড়ুক আর নাই পড়ুুক আমি কিন্তু তাদের গল্প আমি পড়ি এবং মন্তব্য করি, তাদের মধ্যে তুমি অন্যতম। তার কারণ, তুমি খুব ভালো লেখো। এই ভাবেই চালিয়ে যাও বন্ধু, সঙ্গে আছি।
আমারও বিভিন্ন সমস্যার জন্য নিয়মিত লেখা হয়ে উঠছে না। চেষ্টা করছি সবকিছু সামলে স্থিত হবার।
শুরু থেকেই তোমাদের সাপোর্ট পেয়েছি বলেই আজ এতখানি পথ পাড়ি দিতে পেড়েছি। তোমারাই আমার পথের দিশারী
হাত বাড়িয়ে ছুঁই না তোকে, মন বাড়িয়ে ছুঁই।
দুইকে আমি এক করি না, এক কে করি দুই।।
Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,442 in 27,681 posts
Likes Given: 23,741
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
(14-04-2023, 07:50 PM)nextpage Wrote: আমারও বিভিন্ন সমস্যার জন্য নিয়মিত লেখা হয়ে উঠছে না। চেষ্টা করছি সবকিছু সামলে স্থিত হবার।
শুরু থেকেই তোমাদের সাপোর্ট পেয়েছি বলেই আজ এতখানি পথ পাড়ি দিতে পেড়েছি। তোমারাই আমার পথের দিশারী
এতো কিছু তড়িঘড়ির দরকার নেই , আসলে কি হয় আমরা এসব জায়গাতে এসে একটু উত্তেজিত হয়ে যাই।
আমি অনেক পুরোনো পাপী সেই exbii থেকে আছি। সামলে , মা পুরোপুরি স্বাভাকিক হওয়ার খবরের পরেই আপডেট চাইবো।
Posts: 1,156
Threads: 0
Likes Received: 1,384 in 928 posts
Likes Given: 3,570
Joined: Apr 2022
Reputation:
146
আমাকে আমার মত থাকতে দাও
|