Posts: 928
Threads: 9
Likes Received: 1,804 in 406 posts
Likes Given: 939
Joined: Sep 2021
Reputation:
618
(18-03-2023, 02:17 AM)Boti babu Wrote: Classic just like repu added brother
(18-03-2023, 02:46 AM)Arpon Saha Wrote: কারেন্ট শক খাইলে যেরম লাগে এই পর্বটি প
ইড়া ঠিক সেরম লাগছে।
ধন্যবাদ
I'm the King of Dark
&
I rule over all Devils
•
Posts: 928
Threads: 9
Likes Received: 1,804 in 406 posts
Likes Given: 939
Joined: Sep 2021
Reputation:
618
৯বম পর্ব
"মা, একবার আমার কথাটা শোনো আমি..." বলতে বলতে আদিত্য উমাদেবীর দিকে একপা এগোতে যাচ্ছিল কিন্তু তার আগেই চোয়ালে একটা ঘুষি খেয়ে অন্য দিকে ছিটকে পরলো। "তোর খেলা এবার শেষ" নীলাদ্রি কথাটা বললো কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে আদিত্য ঘুরে চোখের পলকে নীলাদ্রির কলার ধরে ঘুষি মারতে উদ্যত হয়েই থেমে গেল কারণ ওর দৃষ্টি পরলো নীলাদ্রির পিছনে থাকা প্রীতির দিকে যার মুখ পলকে সাদা হয়ে গেছে আতঙ্কে এবং এই আতঙ্ক নীলাদ্রির আঘাত পাওয়ার আশঙ্কায়।
আদিত্য কলার ছেড়ে হাত নামিয়ে নিল আদিত্য থেমে গেলেও নীলাদ্রি কিন্তু থামলো না "একজন অনডিউটি পুলিশ অফিসারের কলার ধরা তোর ক্রাইমের লিস্টে আরো একটা লাইন অ্যাড হলো" কথাটা বলে সে একের পর এক ঘুষি লাথি মারতে শুরু করলো আর আদিত্য চুপচাপ সব আঘাত সহ্য করতে থাকে। "ওকে এখান থেকে নিয়ে যাও নীলাদ্রি" প্রীতির কথা শুনে নীলাদ্রি অবশেষে যখন থামলো তখন আদিত্যর ঠোঁটের কোণ থেকে রক্ত পড়ছে, "হ্যাঁ নীলাদ্রি বাবু ওনাকে অ্যারেস্ট করে নিয়ে যান আর কঠিন শাস্তির ব্যবস্থা করুন" এতক্ষণে আবার অদ্রিজা কথা বললো কথার প্রতিটা উচ্চারণে চরম ঘৃণা আর রাগ প্রতিফলিত হচ্ছে, নীলাদ্রি এবার আদিত্যর জামার কলার ধরে টানতে টানতে ঘরের বাইরে নিয়ে যেতে থাকে আর আদিত্য তার পা পিছনে সরছে ঠিকই কিন্তু তার দৃষ্টি তখনও উমাদেবীর দিকে যিনি তখনও অন্য দিকে মুখ ফিরিয়ে রেখেছেন।
নীলাদ্রি আদিত্যর কলার ধরে ওকে হিড়হিড় করে টানতে টানতে এনে জিপের কাছে আনলো আদিত্য চুপ করে জিপে উঠলো, থানার সামনে জিপ থামিয়েই নীলাদ্রি আবার আদিত্যর কলার ধরে টেনে জিপ থেকে নামিয়ে টানতে টানতে ভিতরে নিয়ে গিয়ে লক্আপের ভিতরে ঠেলে ঢুকিয়ে লক করে, তারপর একজন কনস্টেবলকে কিছু বলতে যাচ্ছিল তখনই ওর ফোন বেজে ওঠে, সেটা কানে দিয়ে "আমি এক্ষুনি আসছি" বলে বেরিয়ে যায়, লক্আপের ভিতরে তখন আদিত্য নীচে বসে দুই হাঁটু মুড়ে তার মাঝে মাথা গুঁজে দেয়।
সত্যিটা জানার পরে উমাদেবীর ভিতরে কি পরিমাণে প্রলয় চলছিল সেটা বাইরে থেকে আন্দাজ করা কারো পক্ষেই সম্ভব ছিল না, তিনি একদম পাথর হয়ে গিয়েছিলেন অপরদিকে চারুলতা দেবীর অবস্থা ক্রমাগত খারাপ হচ্ছিল তিনি তার স্বামীর মৃত্যুর খবর শুনে অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলেন, অদ্রিজা প্রথমে চোখেমুখে জল দিয়ে জ্ঞান ফিরিয়ে আনা মাত্রই আবার কান্নাকাটি শুরু করলেন একটু পরে আবার সংজ্ঞা হারালেন, অপরদিকে নীলাদ্রি যখন আদিত্যকে টানতে টানতে নিয়ে যাচ্ছিল তখন উমাদেবী তার দিকে তাকাননি পর্যন্ত কিন্তু আদিত্য চোখের আড়াল হতেই তিনিও জ্ঞান হারালেন।
প্রীতি আর অদ্রিজা দুজনেই যেহেতু ডাক্তার সেহেতু প্রাথমিক চিকিৎসা শুরু করতে অসুবিধা হয়নি কিন্তু অসুবিধা হলো বাড়িতে কিছু প্রয়োজনীয় ওষুধ নেই, আর সেইমুহূর্তে প্রীতি বা অদ্রিজা কেউই তাদের মাকে ছেড়ে যেতে পারছে না। ঘরে অবশ্য মনোহরবাবু আর মলয় ছিল এবং তারা বলেওছিল যে ওষুধগুলো ওরা এনে দিচ্ছে কিন্তু যেকোনো কারনেই হোক প্রীতির ওদের উপর ভরসা না করে নীলাদ্রিকে হোয়াটস্অ্যাপে ওষুধগুলোর নাম লিখে পাঠিয়ে ফোন করে জানায়।
নীলাদ্রি তখন সবে থানায় গিয়ে আদিত্যকে লক্আপে ঢুকিয়ে এফআইআর করতে যাবে কিন্তু প্রীতির ফোন পেয়ে আর দেরী না করে থানা থেকে বেরিয়ে তাড়াতাড়ি ওষুধ নিয়ে সুবিমলবাবুর বাড়িতে চলে আসে। প্রায় ঘন্টাদুয়েক পরে উমাদেবী কিছুটা ধাতস্থ হন আর চারুলতা দেবীর জ্ঞান ফিরেছে কিন্তু সাথে আবার কান্নাও শুরু হয়েছে, কোনোমতে চারুলতা দেবীকে সামলায় অদ্রিজা যদিও তার নিজের অবস্থাও যে খুব খারাপ সেটা সহজেই অনুমেয়, নীলাদ্রি ওখানে বেশীক্ষণ থাকতে পারে না উমাদেবী আর চারুলতা দেবীর জ্ঞান ফেরার পর সে আবার থানার উদ্দেশ্যে রওনা দেয়।
"নীলাদ্রি এই লোকটাই কি আমার দাদাকে মেরেছে?" নীলাদ্রিকে নীচে ছাড়তে এসে প্রশ্ন করে প্রীতি, নীলাদ্রি গম্ভীর স্বরে বলে "জানিনা আর এতদিন পর প্রমাণ পাওয়া অসম্ভব এক যদি না ও নিজে স্বীকার করে"।
"কিন্তু ও যদি দাদাকে মেরে থাকে তাহলে এখানে দাদা সেজে আসবে কেন?"
"এই প্রশ্নের উত্তর যদি কেউ দিতে পারেন তিনি হলেন অতীন্দ্র আঙ্কেল" নীলাদ্রির কথা শুনে প্রীতি একটু অবাক হয়, বলে "বাপি ফিরলে তার সঙ্গে আমি কথা বলবো, কিন্তু নীলাদ্রি তুমি ওকে ছেড়ো না ওকে কঠিন শাস্তি দাও" কথা বলতে বলতে বাড়ির বাইরে নীলাদ্রির জিপের কাছে চলে আসে দুজনে, এবার নীলাদ্রি প্রীতিকে বলে "আমি পুরো চেষ্টা করবো তবে এবার তুমি যাও আর আন্টির এবং নিজের খেয়াল রেখো, যদি প্রয়োজন হয় তাহলে সঙ্গে সঙ্গে আমাকে জানাবে আমি চলে আসবো" বলে জিপে উঠে থানার উদ্দেশ্যে বেরিয়ে যায়।
প্রীতিকে যদিও বলেছে যে সে এই নকল আদিত্যকে সহজে রেহাই দেবে না, কিন্তু সে জানে এই কবছরে এখানে অত্যন্ত ক্ষমতা অর্জন করেছে এই নকল আদিত্য, যদি চার্জশিটে কোনোরকম ফাক থাকে তাহলে হাত ফসকে বেরিয়ে যাবে তাই ভালো করে আঁটঘাট বেঁধে সবরকম প্রমাণ জোগাড় করে চার্জশিট তৈরি করতে হবে কিন্তু নীলাদ্রির মনে কিছু খটকা কিছু প্রশ্ন রয়ে গেছে যেগুলো তাকে খুব অস্বস্তিতে ফেলেছে তার বারবার মনে হচ্ছে কিছু একটা ফাঁক রয়ে যাচ্ছে,তার পুলিশ ইন্সটিংক্ট বলছে এমন কিছু একটা আছে যেটা সে এখনো ধরতে পারছে না আদিত্য তার সবথেকে কাছের বন্ধু ছিল স্বভাবতই এই নকল আদিত্যর প্রতি তার একটা রাগ প্রথম থেকেই ছিল তাই সে প্রীতির সাথে প্রথমে দেখা করে তাকে সব কথা বলে, প্রীতি তার কথায় প্রথমে বিশ্বাস না করলেও পরে ডিএনএ রিপোর্ট দেখার পরে করে এরপরই প্রীতি সব খবর দিতে থাকে এমনকি ইনফর্মার রাখাটাও প্রীতি জানতো।
নীলাদ্রি একটা ফাঁক একটা প্রমাণ খুঁজছিল যাতে এই নকল আদিত্যকে ধরা যায় আর সেটা দেয় মনোহরবাবু আর মলয়, সেদিন ওদের বয়ান শুনেই তৎক্ষনাৎ স্পটে যান এবং তাদের বয়ানের উপরেই ভিত্তি করে ঘটনার একটা আনুমানিক রূপ তৈরী করেন তার মনে বিশ্বাস ছিল এই নকল আদিত্য সেটা শুনে উত্তেজিত হয়ে আরও কিছু ভুল করবে কিন্তু উল্টে তার এই শান্তভাব নীলাদ্রিকে অত্যন্ত অবাক করে আর তারপর তার মাথায় কয়েকটা প্রশ্ন একে একে উঁকি দিতে থাকে প্রশ্নগুলো নীলাদ্রি নিজের মনেই সাজিয়ে নেয়, প্রথমত অতীন্দ্রবাবু এই নকল আদিত্যর বিষয়ে আদৌ জানেন? যদি জানেন তাহলে কতটা আর কেনই বা ওকে এখানে এনে রেখেছেন? দ্বিতীয়ত ওই দ্বিতীয় লোকটা কে? তাকে নকল আদিত্য মারলো কেন? তৃতীয়ত বডিদুটো কোথায় সরিয়েছে, সবথেকে যেটা আশ্চর্যের লাগছে নীলাদ্রির সেটা হলো নকল আদিত্য খুন করে বডিদুটো সরিয়েছে কিন্তু রক্ত লাগা শার্ট পরেই বাড়িতে ফিরলো? এছাড়া আরো দু একটা প্রশ্ন তার মাথায় অনেকক্ষণ থেকে ঘুরছে মনোহরবাবু আর মলয় কতটা সত্যি বলছে? আর যেটা সবথেকে তাকে ভাবাচ্ছে সেটা হলো এই নকল আদিত্যর ছায়াসঙ্গী বাদশার অনুপস্থিতি, যতটুকু জেনেছে সে তাতে সে জানে এই নকল আদিত্যর সবথেকে কাছের এবং বিশ্বস্ত যদি কেউ থাকে তাহলে সেটা হলো এই পোষা কুকুরটা অথচ এখন সে অনুপস্থিত, কোথায় গেল সে? মন্দিরের পিছনে জায়গাটা শুকনো তাই ওখানে পায়ের ছাপ পাওয়া মুশকিল, অথচ সিংহ রায় প্যালেসে নেই বাদশা আবার সুবিমলবাবুর বাড়িতেও আসেনি তবে কি তাকে আদিত্য কোথাও লুকিয়ে রেখেছে? কিন্তু কেন?কোনো বিশেষ কিছু বা কাউকে গার্ড দেওয়ার জন্য? নাকি অন্য কোনো রহস্য লুকিয়ে আছে এর পিছনে, প্রশ্নগুলো ভাবতে ভাবতেই নীলাদ্রির জিপ থানার সামনে চলে আসে।
"তোমাদের কোনো সমস্যা হচ্ছে না তো, হলে এখনই বলতে পারো" চা-বাগানের কর্মীদের উদ্দেশ্যে প্রশ্নটা করে আদিত্য, এটা সে বরাবরই করে আর প্রতিটা চা-বাগান শুধু নয় ওদের বিভিন্ন রিসর্টে যারা কাজ করে তাদের বা যারা অন্যান্য বিভিন্ন জায়গায় ওদের হয়ে কাজ করে সবাইকেই করে, আর প্রত্যেকে এটাও জানে যে এটা শুধু কথার কথা হিসেবে জিজ্ঞেস করা নয়, যদি কোনো সমস্যা তারা আদিত্য সিংহ রায়কে জানায় তবে সেটর সুরাহা হতে বেশি দেরী হয় না। আজও তেমনি আদিত্য জিজ্ঞেস করলো উত্তরে দু-একজন কয়েকটা ছোটোখাটো সমস্যা জানালো, এবং আদিত্য সেগুলো মিটিয়ে দেবার কথা জানিয়ে কারখানার উদ্দেশ্যে রওনা দিল এখানে যারা জানেনা তাদের বলে রাখা ভালো যে চা কারখানা সবসময় চাবাগানের কাছাকাছি থাকে।
কারখানায় আদিত্য কিছুক্ষণ ঘুরে দেখতে থাকে কিছুক্ষণ থেকে বেরিয়ে আসছে এমন সময় ওর ফোনটা বেজে ওঠে, পকেট থেকে বার করে দেখে সেটা সুবিমলবাবুর,
"হ্যাঁ, স্যার বলুন" বেশ স্বাভাবিক স্বরেই বলে আদিত্য কিন্তু ওপাশে সুবিমলবাবুর কথা প্রচণ্ড ভয়ার্ত এবং উত্তেজিত আওয়াজ ভেসে আসে "আদিত্য হেল্প মি"।
"কি হয়েছে স্যার আর আপনি এরকম করছেন কেন?"
"আদিত্য আই নিড ইওর হেল্প"
"আপনি কোথায়? আমাকে লোকেশন পাঠান আমি এক্ষুনি আসছি" কথা বলার সাথে সাথেই আদিত্য জিপের উদ্দেশ্যে দৌড় লাগায় সাথে জিজ্ঞেস করে "কি হয়েছে স্যার কিছু তো বলুন"
"ওরা আমাদের মেরে ফেলবে আদিত্য, সেভ আস" সুবিমলবাবুর করুন আকুতির সুরে সাহায্য প্রার্থনা করেন, ততক্ষণে আদিত্য জিপে উঠে জিপ স্টার্ট দিয়ে দিয়েছে, সে বলে "কারা মেরে ফেলবে? আপনি লোকেশন পাঠান আমি এক্ষুনি আসছি"।
প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই ফোনের ওপাশ থেকে একটা কানফাটানো আওয়াজ শুনতে পায় তারপর অন্য আরেকটা কণ্ঠস্বর খুবই ক্ষীণভাবে শুনতে পায় সেটা যেন কাকে বলছে আপনি পালান ডাক্তারবাবু আপনি পালান। আদিত্য ক্রমাগত "হ্যালো, স্যার শুনতে পাচ্ছেন?" বললেও ওপাশ থেকে কোনো উত্তর আসে না, একটু পরে সেই অপর গলাটা আবার শুনতে পায় আদিত্য "আ..আদিত্য তাড়াতাড়ি বজরঙবলি মন্দিরে এসে ডাক্তারবাবুকে বাঁচাও" গলাটা শুনে চমকে ওঠে আদিত্য এ গলা সে চেনে রাগে মুখ লাল হয়ে যায় আদিত্যর সে জিপের স্পিড আরও বাড়িয়ে দেয়, খুব বেশিক্ষণ লাগে না পৌঁছাতে আর পৌঁছে একটু এদিক ওদিক দেখতেই মন্দির থেকে কিছুটা দূরে রাস্তার একপাশে ক্যাদরানো অবস্থায় দেখে সুবিমলবাবুর গাড়িটাকে, দৌড়ে সেখানে যায় কিন্তু গাড়ির ভিতরে কাউকে দেখতে পায় না, সে মন্দির সহ আশেপাশে খুঁজতে থাকে খুঁজতে খুঁজতে সে মন্দিরের পিছনে খাড়াই পথ ধরে কিছুটা ফাঁকা জায়গায় চলে আসে সেখানে হটাৎ কারো একটা গোঙানির আওয়াজ সাথে একটা আর্তনাদ শুনতে পেলে সেই আওয়াজ লক্ষ্য করে দৌড়ে গিয়ে দেখে মাটিতে একটা রক্তাক্ত দেহ পড়ে আছে আর জনা পাঁচেক লোক সুবিমলবাবুকে ঘিরে দাঁড়িয়ে আছে এবং একজন ছুরি দিয়ে ওনার পেটে আঘাত করলো সুবিমলবাবু আবার আর্তনাদ করে উঠলেন, আদিত্য এবার তাদের দুজনকে চিনতে পারলো একজন মনোহরবাবু আর অপরজন মলয়, ওরা আদিত্যকে দেখে প্রথমে কিছুটা হতচকিত হয়ে গেলেও পরক্ষনেই মলয়ের হাতে রিভলবার উঠে এল কিন্তু ট্রিগার চাপলেও সেটা থেকে গুলি বার হলো না চেম্বার খালি হয়ে গেছে এবার ওদের সঙ্গীরা সুবিমলবাবুকে ছেড়ে আদিত্যকে আক্রমণ করলো, আর সুবিমলবাবু একটা গোঙানির মতো আওয়াজ করে মাটিতে পড়ে গেলেন।
প্রথমে একজন আগে এগিয়ে এসে আঘাত করতে গেলে এক লাথিতে তাকে ছিটকে দেয় আদিত্য তারপর আরেকজন ছুরি দিয়ে মারতে এলে আদিত্য প্রথমে ওর আঘাতটা এড়িয়ে যায় তারপর লোকটার হাত মুড়িয়ে ধরে পাশে সরে পাঁজরে সজোড়ে লাথি মারে, তৃতীয় জনের বেশ শক্তসমর্থ চেহারা তার একটা ঘুষি আদিত্য এড়াতে পারে না কিন্তু পরক্ষনেই সেটা সামলে লোকটার থুতনিতে একটা আপারকাট পাঞ্চ মারে লোকটা টাল সামলাতে না পেরে কয়েকপা পিছিয়ে পড়ে যায় ইতিমধ্যে প্রথম জন উঠে আবার আক্রমণ করতে গেলে বাদশা তার উপরে ঝাঁপিয়ে পড়ে তার হাতে কামড় বসিয়ে দেয় লোকটা পরিত্রাহি গলায় চিৎকার শুরু করে এটা দেখে বাকি দুজন পালানোর উদ্দেশ্যে দৌড় লাগায় সাথে মনোহরবাবু আর মলয়ও দৌড় লাগায় বাদশার সামনে দাঁড়ানোর সাহস তাদের হয় না প্রথম লোকটাও কোনোমতে বাদশার মুখ থেকে হাত ছাড়িয়ে দৌড় লাগায়, বাদশা আর আদিত্যও ওদের পিছনে যাচ্ছিল কিন্তু "আ...আদিত্য" ডাক শুনে থেমে পিছনে তাকিয়ে দেখে যাকে প্রথমে মাটিতে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেছিল তিনি কোনোমতে একটা হাত তার দিকে বাড়িয়ে ডাকছেন এবং আদিত্য লোকটাকে চিনতে পেরেই চমকে ওঠে সেটা আর কেউ নয় প্রতাপ সরকার, তিনি অতিকষ্টে আদিত্যকে ডাকছেন "আ...দি...ত্য"।
"বাদশা" ডাকটা দিয়েই আদিত্য দৌড়ে প্রতাপ বাবুর কাছে আসে, প্রতাপ সরকার কোনোমতে উচ্চারণ করেন "আ......দি..ত্য আ..ম.মার ম.." কথা শেষ করতে পারেন না তিনি। অসম্পূর্ণ রেখেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন একদা পুরো উত্তরবঙ্গে শাষন করা প্রতাপ সরকার, তার চোখদুটো তখনও আদিত্যর দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে যার একটা চোখের কোণা থেকে শেষবারের মতো একটুখানি জল ঝড়ে পরে। আদিত্য খানিকক্ষণ হতবিহ্বল হয়ে থাকে, প্রতাপ সরকারের সঙ্গে তার শত্রুতা ছিল ঠিকই কিন্তু সেটা শুধু সিংহ রায়দের সাথে ব্যাবসায়িক ক্ষেত্রে আদিত্য কখনোই প্রতাপ সরকারের মৃত্যু চায়নি। আদিত্য আলতো করে প্রতাপ সরকারের চোখদুটো বন্ধ করে দেয় হটাৎ কাছেই আবার একটা ক্ষীণ গোঙানির শব্দ শুনে চমকে উঠে তাকিয়ে দেখে একটু দূরেই সুবিমলবাবু, তার মুখ থেকেই গোঙানির আওয়াজটা আসছে, তিনি তখনও বেঁচে আছেন কিন্তু নাড়ী খুবই ক্ষীণ।
"আদিত্য.....আদিত্য" খুব কাছেই কেউ একজন ডাকছে, আওয়াজটা তার খুবই চেনা, আওয়াজটা আবার ডাকে "আদিত্য" এবার তন্ময়তা ভেঙে বাস্তব জগতে ফিরে আসে আদিত্য, দুই হাঁটুর মাঝ থেকে মাথা তুলে তাকায় আদিত্য, গরাদের ওপারে দাঁড়িয়ে তাকে ডাকছেন অতীন্দ্র সিংহ রায়।
"আপনি?" নিরাসক্ত কণ্ঠে জিজ্ঞেস করে আদিত্য উত্তরে অতীন্দ্রবাবু কিছু বলতে যাচ্ছিলেন কিন্তু তার আগেই তার পিছন থেকে নীলাদ্রির আওয়াজ আসে "এরকম করবেন না আঙ্কেল একজন ক্রিমিনালকে সাহায্য করবেন না"।
"কাকে ক্রিমিনাল বলছো, তুমি কি জানো ওর সম্বন্ধে?" নীলাদ্রির কথায় যে প্রচণ্ড রেগে গেছেন অতীন্দ্রবাবু এটা স্পষ্ট বোঝা যায়, কিন্তু নীলাদ্রি তাতে দমবার ছেলে নয় সে বলে "ও আদিত্য নয় আঙ্কেল, হয়তো ওই আদিত্যকে মেরেছে"।
"জানি নীলাদ্রি, আমিই তো ওকে এখানে এনেছিলাম, আর ও আমার ছেলেকে মারেনি আদিত্য কার অ্যাক্সিডেন্টে মারা গিয়েছিল"
"কিন্তু কেন এনেছিলেন ওকে?"
"সে কৈফিয়ত তোমাকে দিতে বাধ্য নই, এখন তুমি ওকে ছাড়বে নাকি আবার আমাকে তোমার সিনিয়রকে ফোন করতে হবে?"
অতীন্দ্রবাবু এমনিতে খুবই শান্ত ভদ্র নম্র স্বভাবের কিন্তু রেগে গেলে তখন তাকে সামলানো মুশকিল আর এখন তার প্রতিটা কথায় সেই প্রচণ্ড রাগ প্রকাশ পাচ্ছে, কিন্তু তবুও নীলাদ্রি আবার বলে "আরেকবার ভেবে দেখুন আপনি.." এতটা বলেই নীলাদ্রিকে থামতে হয় কারণ ততক্ষণে অতীন্দ্রবাবু আর কোনো কথা না বলে নিজের মোবাইলে কাউকে ফোন করার জন্য নাম্বার খুঁজছেন, নীলাদ্রির বুঝতে বাকি থাকে না যে এই ফোনটা তার বাবা অর্থাৎ পুলিশ কমিশনার শশাঙ্ক বাবুর কাছে যাচ্ছে না যাচ্ছে তারও সিনিয়রের কাছে, তাই আর কথা না বাড়িয়ে সে একজন কনস্টেবলকে লক্আপ খুলে আদিত্যকে ছেড়ে দিতে বলে কনস্টেবলটি অবশ্য সঙ্গে সঙ্গেই সে আদেশ পালন করে।
"আপনি এখানে?" লক্আপ থেকে বেরিয়ে শান্ত স্বরে প্রশ্ন করে আদিত্য,
"তুমি কি ভেবেছিলে আমি আসবো না?"
"সেরকমই ভেবেছিলাম, আমি এখন সুবিমলবাবুর খুনের অভিযোগে অভিযুক্ত আর সুবিমলবাবু আপনার ঘনিষ্ঠ বন্ধু"
"চলো বাড়ি যেতে যেতে কথা হবে" আদিত্যকে ছাড়িয়ে নেওয়ার কিছু ফর্মালিটি বাকি ছিল সেগুলো শেষ করে অতীন্দ্রবাবু আর আদিত্য থানার বাইরে বেরিয়ে আসে সেখানে অতীন্দ্রবাবুর নিজের মারুতি গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে, সেটায় উঠতে উঠতে আদিত্য জিজ্ঞেস করে "মা কেমন আছেন?"
"চলো সেখানে গিয়েই দেখবে"
থানার সামনে থেকে দুজনে বেরিয়ে যায় পিছনে তখনও দাঁড়িয়ে আছে নীলাদ্রি, নিস্ফল রাগে সে ফুঁসছে। সুবিমলবাবুর বাড়ির সামনে যখন অতীন্দ্রবাবু আর আদিত্য পৌঁছালো তখন পুরো বাড়ির আশেপাশে এক থমথমে নীরবতা বিরাজ করছে অবশ্য সেটাই তো স্বাভাবিক বাড়ির কর্তার মৃত্যু হয়েছে। অতীন্দ্রবাবু গাড়ি পার্ক করতে করতে আদিত্য বাড়ির ভিতরে ঢুকলো, বসার ঘরে অদ্রিজা, প্রীতি বসে আছেন আর যিনি আছেন তিনি একজন ', ওদের কথাবার্তা শুনে আদিত্য বুঝলো সুবিমলবাবুর পারলৌকিক কাজের বিষয়ে কথা বলছে ওরা।
"আপনি এখনই আপনার বাবার পারলৌকিক কাজ করতে পারেন না মিস চক্রবর্তী"
আদিত্যর আওয়াজে চমকে উঠলো অদ্রিজা, তারপর দরজায় আদিত্যকে দেখেই প্রথমে অবাক তারপর রাগে ফেটে পড়লো অদ্রিজা, সোজা আদিত্যর কাছে এসে রাগ এবং ঘৃণা ভরে জিজ্ঞেস করলো "হোয়াট দ্যা হেল আর ইউ ডুয়িং হেয়ার? এণ্ড হাউ ডিড ইউ গেট আউট অফ জেল?"
আদিত্য কিন্তু অদ্রিজার প্রশ্নের কোনো উত্তর না দিয়ে সম্পূর্ণ অন্য কথা বললো "এখনো আপনার বাবার ডেডবডি পাওয়া যায়নি বা এমন কোনো অকাট্য প্রমাণ পাওয়া যায়নি যাতে তাকে মৃত বলে ধরে নেওয়া যায় তাই আইনের চোখে তিনি এখনও জীবিত এখন আপনি ভেবে দেখুন তার পারলৌকিক ক্রিয়া করবেন নাকি বন্ধ রাখবেন?" তারপর উপস্থিত ',মশাইকে উদ্দেশ্য করে বলে "আমি কি ভুল বললাম?"
',টি আমতা আমতা করছে দেখে আদিত্য বলে "আপনি এখন আসুন", শুনে ',টি বেড়িয়ে যায়। অদ্রিজার মনে হলো আদিত্য তার সাথে ইয়ার্কি করছে সে রেগে আরও কিছু বলতে যাচ্ছিল কিন্তু হটাৎই আদিত্যর গালে সশব্দে একটা চড় এসে পড়ে, উমাদেবী কখন যে ভিতরের ঘর থেকে বেরিয়ে এসেছেন সেটা কেউই বুঝতে পারেনি, চড় মেরে উমাদেবী কিন্তু শান্ত হননি তিনিও রাগী স্বরে বলতে থাকেন "তোমার সাহস হয় কি করে এখানে আসার?"
"মা, একবার আমার কথাটা শোনো"
"খবরদার, একদম আমাকে মা বলে ডাকবে না আমি তোমার মা নই"
কথাটা শুনে আদিত্যর চোখ ফেটে জল আসতে চাইলো কিন্তু এলো না তার পরিবর্তে ওর ঠোঁটে এক অদ্ভুত হাসির রেখে দেখা গেল, এটা খুশী বা আনন্দের হাসি নয় এটা নিয়তির কাছে অসহায় আত্মসমর্পণ করার হাসি যেন সে অনেক আগে থেকেই জানতো একদিন এটা হবেই কিন্তু তবুও লড়ে যাচ্ছিল ভবিতব্যের বিরুদ্ধে আর আজ সে এই লড়াইতে সম্পূর্ণ পরাস্ত।
আদিত্য হয়তো কিছু বলতে যাচ্ছিল কিন্তু তার আগে তার পিছন থেকে অতীন্দ্রবাবুর আওয়াজ আসে, "এ তুমি কি বলছো উমা, তুমি বুঝতে পারছো কি বলছো?"
অতীন্দ্রবাবুকে দেখে সবাই আরও অবাক হয়, "বাপি তুমি এখানে কখন ফিরলে আর এই ঠগবাজটার সাথে কি করছো?"
"চুপ করো প্রীতি"অতীন্দ্রবাবু মেয়েকে ধমক লাগান "তুমি জানো তুমি কাকে ঠগবাজ বলছো?"
"জানি বাপি, এই ফ্রড ঠগবাজটাকে যে এতদিন আমার দাদা সেজে বসেছিল,
"প্রীতি" অতীন্দ্রবাবু এবার প্রায় গর্জন করে ওঠেন, কিন্তু আদিত্য সঙ্গে সঙ্গে তাকে বাধা দেয় "স্যার, আপনি শান্ত হোন"
"হ্যাঁ বাপি আমি ঠিকই বলেছি আমি এখনই নীলাদ্রিকে ফোন করে জিজ্ঞেস করছি ওকে কেন জেল থেকে ছাড়লো?"
কিন্তু প্রীতি ফোন করার আগেই নীলাদ্রি সেখানে উপস্থিত হয় আর বলে "আমি ছাড়তে বাধ্য হয়েছি কারণ আঙ্কেল উপরমহলে নিজের ইনফ্লুয়েন্স কাজে লাগিয়ে ওকে ছাড়িয়েছেন"
"হোয়াট" নীলাদ্রির কথা শুনে প্রীতি যেন আকাশ থেকে পড়ে অবশ্য অদ্রিজা আর উমাদেবীর মনের অবস্থাও একই, "আঙ্কেল" অতীন্দ্রবাবু কিছু বলতে যাচ্ছিলেন কিন্তু তাকে মাঝপথে থামিয়ে দেয় অদ্রিজা, সে বলে "আমার বাপি আপনার খুব ভালো বন্ধু ছিল, আর আপনি তার খুনীকে জেল থেকে ছাড়িয়ে আনলেন, কেন আঙ্কেল?"
"কারণ ও সুবিমলকে খুন করেনি ও কারো খুন করতে পারে না, কোথাও ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে"
অদ্রিজা আর কিছু না বলে একহাত মুখ চেপে কাঁদতে শুরু করে।
"তুমি আমাকে ঠকালে?" এবার উমাদেবী তার স্বামীকে প্রশ্ন করেন,
"উমা আমার কথাটা আগে শোনো"
"কি করে করলে তুমি এটা? তুমি জানতে ও আমার আদিত্য নয় তবুও"
"উমা.... আমি যা করেছি সেটা"
"মা, এখন তুমি শান্ত হও, পরে কথা বলো" আদিত্য আবার মাঝখানে কথা বলে, কিন্তু উমাদেবী আবার রেগে ঝাঁঝিয়ে ওঠেন, আদিত্য তার দিকে এক পা এগোলে তিনি দুপা পিছিয়ে যান "তোমাকে বলেছি না আমাকে মা ডাকবে না"
"বিশ্বাস করো অন্য কোনো ডাক আসছে না, ওই একটা ডাকই আসছে"
"চলে যাও এখান থেকে, আমি তোমার মুখও দেখতে চাই না চলে যাও"
"উমা তুমি কি বলছো? তুমি আগে আমার পুরো কথা শোনো"
"স্যার." অতীন্দ্রবাবু নিজের স্ত্রীকে কিছু বলতে যাচ্ছিলেন কিন্তু শেষ করার আগেই আদিত্য তাকে ডাকে, অতীন্দ্রবাবু তাকালে সে ঘাড় নেড়ে বারণ করে, তারপর আদিত্য উমাদেবীর উদ্দেশ্যে একদম শান্ত কণ্ঠে বলে "কথা দিচ্ছি চলে যাবো মা, আমি তোমার ছেলে না হতে পারি কিন্তু তুমি তো এটা জানো আমি কখনোই নিজের কথার খেলাপ করি না, শুধু এখানে শেষ একটা ছোট্ট কাজ বাকি রয়ে গেছে সেটা শেষ করেই চলে যাবো"।
কথাটা বলে আদিত্য নীচু হয়ে উমাদেবীকে প্রণাম করতে যাচ্ছিল কিন্তু তিনি আবার পিছিয়ে যান, আদিত্য যে জায়গাটায় উমাদেবী দাঁড়িয়ে ছিলেন সেখানেই হাত স্পর্শ করে আবার মাথায় স্পর্শ করে তারপর ঘর ছেড়ে বেরিয়ে যায়, পিছন থেকে শুনতে পায় অতীন্দ্রবাবু বলছেন "তুমি বুঝতেও পারছো না আজ তুমি কি ভুল করলে"।
কিছুটা এগিয়ে আসার পর পিছন থেকে অতীন্দ্রবাবুর ডাক শুনে দাঁড়িয়ে পড়ে আদিত্য, অতীন্দ্রবাবু তাকে জিজ্ঞেস করেন "কোথায় যাচ্ছো তুমি?"
"বললাম যে একটা ছোট্ট কাজ বাকি আছে"
"আদিত্য তোমার কাছে ক্ষমা চাওয়ার মুখও আমার নেই তবুও"
"আপনি ক্ষমা চাইবেনই বা কেন?"
"দেখো আদিত্য.."
"ওটা আমার আসল নাম নয়, আপনি কিন্তু আমার আসল নাম জানেন"
"তুমি চাও আমি তোমাকে ওই নামে ডাকি?"
"না... তার থেকে এটাই থাক, আমি এখন আসি স্যার আপনি ভিতরে যান ওখানে এখন আপনার থাকা দরকার" কথাটা ফলে আর অপেক্ষা না করে দ্রুত হাঁটা লাগায় আদিত্য।
কিছুতেই নিজের মাথায় ঘুরতে থাকা প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজে পায় না নীলাদ্রি অনেক চেষ্টা করেও উত্তর অধরা থাকে অগত্যা মাথা ঠান্ডা করতে রাতে ডিনারের পর একটু হাঁটতে বেরোয় সে একাই বেরোয়, মূলত চারটে প্রশ্ন তার মাথায় ঘুরছে,
১) সেদিন স্পটে থাকা দ্বিতীয় রক্তের দাগটা কার, আর দুজনের বডিই বা কোথায় গেল?
২) মনোহরবাবু আর মলয় কতটা সত্যি বলছে বা আদৌ কি সত্যি বলছে?
৩) এই নকল আদিত্য এত চুপচাপ কেন, ও কি সত্যিই খুনি নাকি নির্দোষ?
৪) বাদশা কোথায় গেল?
প্রশ্নগুলো নিয়ে চিন্তা করতে করতেই কখন যেন সুবিমলবাবুদের বাড়ির কাছাকাছি চলে এসেছে, এখানেই প্রীতি আছে তার প্রিয় বন্ধু আদিত্যর বোন যাকে সে ছোটোবেলা থেকেই ভালোবাসে প্রীতি অবশ্য জানতো না, নীলাদ্রি নিজের ছোটোবেলায় ফিরে যায়...
আদিত্য আর নীলাদ্রি তখন কিশোর অবস্থা প্রায় শেষ বয়স তখন পনেরো কি ষোলো হবে দুজনে একই কলেজে পড়ে, দুজনের বন্ধুত্বও খুব গভীর। সেইসময় একদিন আদিত্যদের বাড়ি থেকে কিছুটা দূরের নীলকণ্ঠ মন্দিরে পূজো ছিল আদিত্য সেখানে বন্ধুকে আমণ্ত্রন জানিয়েছিল আসার জন্য যথারীতি নীলাদ্রি গিয়েছিল এবং একাই গিয়েছিল, নীলাদ্রির বাড়ি থেকে খুব একটা দূরে নয় সে মন্দির। মন্দিরে গিয়ে বন্ধুর সাথে দেখা করার আগেই একজনের দিকে তার চোখ আটকে গিয়েছিল একটি ১০-১১ বছরের কিশোরী মেয়ে, একটা হলুদ রঙের শাড়ি পড়েছিল কেউ পড়িয়ে দিয়েছিল আর কি, মাথায় চুল খোলা পিঠের উপরে ছড়ানো, মায়ের পাশে পাশে হাঁটছে তাকে দেখে নীলাদ্রির কি হলো সে ঠিক বুঝতে পারলো না একদৃষ্টিতে মেয়েটির দিকে তাকিয়ে ছিল অনেকক্ষণ, যদিও তখনও মেয়েটির পরিচয় জানেনা সে সেটা সেদিনই আরও পরে জেনেছিল যখন আদিত্য মেয়েটিকে নিয়ে এসে পরিচয় করিয়ে দিল নিজের বোন বলে, সেদিন মেয়েটির সাথে ঠিকমতো কথা বলতে পারেনি সে তারপর অবশ্য নীলাদ্রিরা নর্থবেঙ্গল ছেড়ে চলে যায় কিন্তু বন্ধুর সাথে যোগাযোগ থাকলেও সেই মেয়েটিকে আর দেখার সুযোগ হয়নি তবুও মেয়েটি নীলাদ্রির হৃদয়ে চিরস্থায়ী অধিকার করে নিয়েছিল।
আর আবার এতবছর পরে তার সাথে দেখা হয় হিউম্যান অর্গান স্মাগলিংএর কেসে প্রথমে একটু সন্দেহ হয়েছিল কিন্তু অচিরেই সে বুঝতে পারে প্রীতি নির্দোষ, তারপর তাকে নিজের পরিচয় দিয়েছিল প্রীতি প্রথমে চিনতে না পারলেও পরে পেরেছিল তারপর থেকে সে নীলাদ্রির সাথে ছিল কেসটা সলভ করতে সাহায্য করছিল অবশেষে কেস সলভ্ করার পরেই নীলাদ্রি প্রপোজ করে প্রীতিকে, সে অবশ্য আশা করেনি যে প্রীতি সঙ্গে সঙ্গেই হ্যাঁ বলবে।
ভাবতে ভাবতেই কখন যেন সুবিমলবাবুর বাড়ির সামনে চলে এসেছে খেয়ালই করেনি নীলাদ্রি কয়েক মুহূর্ত দাঁড়িয়ে বাড়িটির দিকে তাকিয়ে থাকে বোধহয় প্রীতিকে খুঁজতে থাকে যদিও সে জানে যে বাইরে থেকে প্রীতিকে দেখা সম্ভব নয়, একটু দাঁড়িয়ে থেকে সে আবার হাঁটা শুরু করতে যাবে হটাৎ তার একটা খটকা লাগে যেন কিছু একটা অস্বাভাবিক রয়েছে এখানে এবং প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই লক্ষ্য করে গেটে সিকিউরিটি নেই একটু অবাক হয় সে কারণ এই বাড়িতে ২৪ ঘন্টাই গেটে সিকিউরিটি থাকে, সেটা তো নেই আর মেইন গেটটাও খোলা।
নীলাদ্রি ঠিক করে ভিতরে ঢুকে দেখবে সবাই ঠিক আছে কিনা সে পা বাড়াতে যাবে এমন সময় দেখে বাড়ির ভিতর থেকে কয়েকজন লোক মুখ ঢেকে কি একটা যেন কোলে তুলে নিয়ে আসছে, প্রথমটায় বুঝতে না পারলেও পরে বুঝতে পেরেই তার মাথায় আগুন জ্বলে উঠলো সে তৎক্ষণাৎ ওই লোকগুলোর সামনে গিয়ে দাঁড়ালো।
লোকগুলো প্রথমটায় একটু থমকে গেল তারা এই অবাঞ্ছিত বাধাটা আশা করেনি আর এই সুযোগে নীলাদ্রি ওদের আক্রমণ করলো, হতে পারে সে এখন নিরস্ত্র হতে পারে সে এখন অফডিউটি কিন্তু সে পুলিশ অফিসার। সামনের লোকগুলোর মধ্যে একজন দাঁড়িয়ে রইলো বাকিরা এগিয়ে এলো নীলাদ্রি একা হতে পারে কিন্তু সেও পুলিশের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কাজেই লোকগুলো সহজে পাত্তা পাচ্ছিল না, হয়তো তারা রণে ভঙ্গই দিত কিন্তু হঠাৎ করেই বিপর্যয় নেমে এলো, কেউ একজন পিছন থেকে সজোড়ে নীলাদ্রির মাথার পিছনে আঘাত করলো আর সঙ্গে সঙ্গেই নীলাদ্রি চোখে অন্ধকার দেখলো,সে মাথায় আঘাতপ্রাপ্ত জায়গায় হাত দিয়ে মাটিতে পড়ে গেল, পুরোপুরি অজ্ঞান না হওয়ায় বুঝতে পারলো লোকগুলো চলে যাচ্ছে আর সাথে নিয়ে যাচ্ছে তার ভালোবাসার মানুষটিকে, তার বাগদত্তা প্রীতিকে।
"প্রীতি.." অস্ফুটস্বরে ডাকে নীলাদ্রি কোনোমতে ওঠার চেষ্টা করে কিন্তু মাথার পিছনে প্রচণ্ড যন্ত্রণা হচ্ছে সেখানে হাত বুলিয়ে চোখের সামনে এনেই বুঝতে পারে সেখানে রক্তপাত হচ্ছে তবুও কোনোমতে উঠে যেদিকে লোকগুলো অচেতন প্রীতিকে নিয়ে গেছে সেদিকে যায়, কিছুটা গিয়ে দেখতে পায় লোকগুলো একটা গাড়িতে উঠছে সে আরো দ্রুত পৌঁছাতে চেষ্টা করে কিন্তু পৌঁছনোর আগেই গাড়িটা বেরিয়ে যায় আর দাঁড়াতে পারে না নীলাদ্রি মাটিতে পড়ে যায় তার দুচোখে আবার অন্ধকার নেমে আসে।
চক্রবর্তী হাউজে তখনও কেউ ঘুমায়নি চারুলতা দেবী নিজেকে কিছুটা সামলে নিয়েছেন এগন আর আগের মতো কান্নাকাটি করছেন না বোধহয় মেয়ের কথা চিন্তা করেই নিজেকে শক্ত করেছেন, আর অদ্রিজা সেও মায়ের সামনে নিজেকে কোনোমতে শক্ত রেখেছে কারণ মায়ের সামনে তার ভেঙে পড়া চলবে না সে এখন বিছানায় মায়ের মাথার কাছে বসে তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে, ঘরের ভিতরে আর রয়েছেন উমাদেবী এবং অতীন্দ্রবাবু, সেদিনের পর থেকে তারা এখানেই আছেন। উমাদেবী বান্ধবীকে মানসিকভাবে শক্ত থাকার কথা বললেও অতীন্দ্রবাবু অবশ্য বারবার একটাই কথা বলছেন "চিন্তা কোরো না সুবিমলের কিচ্ছু হয়নি আমার মন বলছে সে ঠিক আছে"।
"আপনার মন বলছে নাকি আপনাকে সেই ফ্রডটা বলেছে?" অদ্রিজার বাঁকা কথায় স্পষ্ট বোঝা যায় যে আদিত্যকে জেল থেকে ছাড়ানোয় সে এখনো অতীন্দ্রবাবুর উপরে রেগে আছে।অতীন্দ্রবাবু কিছুক্ষণ বন্ধুর মেয়ের দিকে তাকিয়ে থাকেন তারপর মৃদুকণ্ঠে বলেন "তুমি.. না তোমরা সবাই ওকে ভুল বুঝছো কিন্তু একদিন এমন আসবে যেদিন দেখবে যে ওই ঠিক ছিল"
"উল্টোটাও হতে পারে আঙ্কেল হয়তো দেখবেন আপনি ভুল করছেন ওই ফ্রডটাকে বিশ্বাস করে"।
অদ্রিজার কথার উত্তরে অতীন্দ্রবাবু কিছু বলতে যাচ্ছিলেন এমন সময় নীচের ড্রয়িংরুম থেকে নীলাদ্রির তীব্র চিৎকার শোনা গেল "অতীন্দ্র আঙ্কেল..... অতীন্দ্র আঙ্কেলসবাই বেশ অবাকই হয় এইসময় নীলাদ্রি এখানে? তাও এরকম ভাবে ডাকছে কেন?
চারুলতা দেবী বাদে সবাই নীচে যায়,আর সঙ্গে সঙ্গে নীলাদ্রি প্রায় অতীন্দ্রবাবুর উপরে হামলে পড়ে "কোথায় আছে ও?"
"কে?" অতীন্দ্র বাবু সত্যিই অবাক হয়েছেন, কিন্তু নীলাদ্রি আবার বলে "কোথায় আছে ওই নকল আদিত্য?"
"ও আবার কি করলো?"
"আমি বলেছিলাম ওকে বিশ্বাস করবেন না কিন্তু আপনি শোনেননি"
"কি হয়েছে সেটা বলবে,কি করেছে ও?"
"প্রীতিকে কিডন্যাপ করে নিয়ে গেছে"
মুহূর্তে যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়লো সবার মাথায়, "কি বলছো তুমি?" অতীন্দ্রবাবুর মুখ রাগে লাল হয়ে ওঠে, কিন্তু নীলাদ্রি তাতে দমে যাওয়ার ছেলে নয়, সে বলে "বিশ্বাস হচ্ছে না তো,তাহলে প্রীতি কোথায় ডাকুন ওকে?"
কথা শুনে অতীন্দ্রবাবু ডাকতে যাচ্ছিলেন কিন্তু তার আগেই অদ্রিজা এসে বললো "প্রীতি নেই"। ইতিমধ্যেই সে প্রীতি আর তার রুমে একবার খুঁজে এসেছে,আর কিচেনে কেউ নেই সেটা দেখাই যাচ্ছে।
"এবার বিশ্বাস হলো তো স্যার? কিছু লোক প্রীতিকে তুলে নিয়ে গেছে আমি বাধা দিতে গিয়েছিলাম কিন্তু পারিনি এবার প্লিজ বলুন ওকে কোথায় পাবো?"
উমাদেবী কান্নায় ভেঙে পড়েন কাঁদতে কাঁদতে স্বামীকে বলেন "তোমার জন্য এইসব হয়েছে, জানিনা আমার মেয়েটাকে নিয়ে ও কোথায় গেছে, আমার মেয়েটা কি অবস্থায় আছে?"
অতীন্দ্রবাবু কি বলবেন ভেবে পাচ্ছেন না তার ভিতরে এখন প্রচণ্ড ঝড় চলছে তার মন একবার বলছে আদিত্য এই কাজ করতে পারে না, আবার পরমুহূর্তেই সেই বিশ্বাস দুর্বল হয়ে পড়ছে,এই দোলাচলের মাঝেই তিনি আদিত্যকে ফোন করলেন, রিং হবার প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই ওপাশ থেকে কথা এলো "স্যার"
"এরকম কেন করলে? আমার মেয়েটাকে তো তুমি বোন বলতে ওকে কিডন্যাপ করলে কেন তুমি?"
"স্যার.." আদিত্যর গলায় এক অদ্ভুত স্বর অতীন্দ্রবাবুর অভিযোগ যেন একদিকে তাকে প্রচণ্ড অবাক এবং আহত করেছে, কিন্তু সে কিছু বলার আগেই উমাদেবী ফোনটা ছিনিয়ে নিয়ে স্পিকার বললেন "তুমি কি চাও টাকা? কত টাকা চাই আমরা দিয়ে দেবো আমার মেয়েটাকে কিছু কোরো না, আমি হাতজোড় করছি তোমার কাছে.. আ...আমি অদ্রিজা আর নীলাদ্রিকে বলে দেবো ওরা তোমার বিরুদ্ধে কোনো কেস করবে না। দয়া করে আমার মেয়েটার কোনো ক্ষতি কোরো না"
উমাদেবী আর কিছু বলতে পারলেন না, হাউহাউ করে কাঁদতে লাগলেন কিন্তু ফোনের ওপাশ থেকে কোনো আওয়াজ এলো না, যেন সে আরো কিছু শোনার জন্য অপেক্ষা করছে, এবার নীলাদ্রি কথা বলে "আমি তোকে ছাড়বো না, প্রীতির যদি কিছু হয়েছে তাহলে আই উইল কিল ইউ"
"শাট্আপ ইউ স্টুপিড, শাট্ ইওর মাউথ এণ্ড লিসন টু মি ভেরি কেয়ারফুলি" এতক্ষণে আদিত্য কথা বলে আর তার স্বরে একটা কর্তৃত্বের ভাব যেটা শুনে নীলাদ্রি তো অবাক হয়ই সাথে চাপ পড়ে অজান্তেই ফোনের স্পিকার অন হয়ে যাওয়ায় সবাই শুনতে পায় এবং অবাক হয়, আদিত্য বলে চলে "নীলাদ্রি তোমার ডিপার্টমেন্টে এমন কেউ তো নিশ্চয়ই আছে যে মোবাইল নম্বর ট্রেস করে লোকেশন বলতে পারবে, তাকে বলো ইমিডিয়েটলি আমার নম্বরটা ট্রেস করতে"।
"সেটা তো আমি করবোই, তোকে খুঁজে বার করবোই যেখানেই লুকিয়ে থাকিস না কেন" নীলাদ্রি কথার মাঝখানে কথা বলে আর তাতে যেন আবার রেগে ওঠে আদিত্য
"শাট্ ইওর মাউথ ইউ ইডিয়ট, তুমি নিজেকে যত বড়ো ইনভেস্টিগেটর ভাবো আসলে তত বড়ো নও, তোমার মাথায় ব্রেণ নেই তাই ওটার লোকদেখানো ব্যবহার কোরো না, যেটা বলছি সেটা শোনো"
"কি?" নীলাদ্রি যেন কিছুটা দমে যায় এবার,
"প্রীতি কিডন্যাপ হয়েছে সেটা আমি জানি, সুবিমলবাবুদের রাতের সিকিউরিটিকে আমি চাকরিটা দিই যারা কিডন্যাপ করেছে তারা ওকে অজ্ঞান করে ভিতরে ঢুকেছে, একটু আগে ওর জ্ঞান ফিরেছে আর তৎক্ষণাৎ ও আমাকে জানিয়েছে"।
"হোয়াট?" নীলাদ্রির গলায় বিস্ময়, আদিত্য বলে চলে "আমি ওকে ট্রেস করে যাচ্ছি কিন্তু হতে পারে যারা ওকে নিয়ে গেছে তারা সংখ্যায় অনেক বা ওদের কাছে অত্যাধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র আছে আমার একার পক্ষে ওদের মোকাবেলা করা সম্ভব নয়, আমি মরতে ভয় পাইনা বাট আই ওয়ান্ট মাই সিস্টার সেফ"।
I'm the King of Dark
&
I rule over all Devils
Posts: 252
Threads: 0
Likes Received: 184 in 162 posts
Likes Given: 132
Joined: Dec 2021
Reputation:
0
গল্পের শেষের দিকে চলে আসছে
Posts: 928
Threads: 9
Likes Received: 1,804 in 406 posts
Likes Given: 939
Joined: Sep 2021
Reputation:
618
(22-03-2023, 03:33 AM)Arpon Saha Wrote: গল্পের শেষের দিকে চলে আসছে
দেখা যাক।
I'm the King of Dark
&
I rule over all Devils
•
Posts: 491
Threads: 0
Likes Received: 351 in 292 posts
Likes Given: 376
Joined: Aug 2022
Reputation:
8
Dada sob kemon ulte gelo. Golpo kisui age theke predict kora possible na. Next update er jonno wait korbo . Kobe ashbe ?
My pain is constant and sharp, and I do not hope for a better world for anyone.
Posts: 18,206
Threads: 471
Likes Received: 65,248 in 27,653 posts
Likes Given: 23,682
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
জমজমাট রোমাঞ্চকর গল্প।
মনে হচ্ছে কোনো ক্রাইম থ্রিলার সিনেমা দেখছি।
Posts: 928
Threads: 9
Likes Received: 1,804 in 406 posts
Likes Given: 939
Joined: Sep 2021
Reputation:
618
I'm the King of Dark
&
I rule over all Devils
•
Posts: 1,129
Threads: 0
Likes Received: 1,349 in 914 posts
Likes Given: 3,519
Joined: Apr 2022
Reputation:
144
আমি অভিভূত ভাই। কেন জানি তোমার এখনকার লেখা পড়ে আমার খুব গর্ব অনুভব হয়। বেশ এভাবেই চালিয়ে যাও।
আমাকে আমার মত থাকতে দাও
Posts: 928
Threads: 9
Likes Received: 1,804 in 406 posts
Likes Given: 939
Joined: Sep 2021
Reputation:
618
(22-03-2023, 11:21 PM)Boti babu Wrote: আমি অভিভূত ভাই। কেন জানি তোমার এখনকার লেখা পড়ে আমার খুব গর্ব অনুভব হয়। বেশ এভাবেই চালিয়ে যাও।
ধন্যবাদ ভাই
I'm the King of Dark
&
I rule over all Devils
Posts: 491
Threads: 0
Likes Received: 351 in 292 posts
Likes Given: 376
Joined: Aug 2022
Reputation:
8
আপডেট দিয়ে দেন দাদা আর তর সইছে না
My pain is constant and sharp, and I do not hope for a better world for anyone.
Posts: 928
Threads: 9
Likes Received: 1,804 in 406 posts
Likes Given: 939
Joined: Sep 2021
Reputation:
618
(23-03-2023, 04:04 PM)Patrick bateman_69 Wrote: আপডেট দিয়ে দেন দাদা আর তর সইছে না
দাদা লেখার জন্য একটু তো সময় দিন
I'm the King of Dark
&
I rule over all Devils
•
Posts: 252
Threads: 0
Likes Received: 184 in 162 posts
Likes Given: 132
Joined: Dec 2021
Reputation:
0
Posts: 928
Threads: 9
Likes Received: 1,804 in 406 posts
Likes Given: 939
Joined: Sep 2021
Reputation:
618
(26-03-2023, 03:02 AM)Arpon Saha Wrote: আপডেট আসতে দেরি হবে?
একটু সময় লাগবে দাদা, তবে চেষ্টা করছি তাড়াতাড়ি দেওয়ার।
সঙ্গে থাকুন
I'm the King of Dark
&
I rule over all Devils
Posts: 928
Threads: 9
Likes Received: 1,804 in 406 posts
Likes Given: 939
Joined: Sep 2021
Reputation:
618
26-03-2023, 11:52 PM
১০ম পর্ব
"কি..কি বল.." নীলাদ্রির গলায় এখনো বিস্ময়, সে কথা শেষ করতে পারে না, আদিত্য আবার বলতে থাকে "তুমি ইমিডিয়েটলি আমাকে ট্রেস করে ব্যাকআপ নিয়ে আসো, আমি জানিনা ওদের মেইন ডেস্টিনেশনে পৌঁছনোর পরে সেখানকার সিচুয়েশন কি থাকবে তবে পসিবল হলে আমি ওখানকার এক্সাক্ট লোকেশন তোমাকে পাঠিয়ে দেবো, তোমার ফোন অন রাখো,ওকে?"
"তুমি মানে আপনি প্রীতিকে খুঁজবেন কিভাবে?" এতক্ষণে হয়তো নীলাদ্রি কিছুটা বিশ্বাস করেছে, আদিত্য বলে "আমি প্রীতিকে একটা লকেট গিফ্ট দিয়েছিলাম ওতে ট্রেসার লাগানো আছে যাতে ও কোনো বিপদে পড়লে আমি পৌঁছাতে পারি তুমি টাইম নষ্ট কোরো না তাড়াতাড়ি এসো"।
"আমি আসছি তবে লোকেশনটা আঙ্কেলের ফোনে পাঠাও আমার ফোন ভেঙে গেছে"
"এই নাকি পুলিশ অফিসার"।
আদিত্যর ব্যাঙ্গাত্মক কথা শুনে উত্তর দেওয়ার আগেই ফোন কেটে যায়, নীলাদ্রি অতীন্দ্রবাবুর ফোন থেকে একজনকে ফোন করে আদিত্যর নম্বরটা ট্রেস করতে বলে এবং নিজে বেরিয়ে যায়, অতীন্দ্রবাবুকে অবশ্যই সাথে যেতে হয় কিন্তু ওদী অবাক করে অদ্রিজাও ওদের সঙ্গী হয় সে বলে "আমার বন্ধু বিপদে আছে নীলাদ্রি বাবু আমি তো যাবোই", কিন্তু নীলাদ্রি ইতস্তত করছে দেখে সে আবার বলে "ঘাবড়াবেন না আমি ডাক্তার প্রাণ বাঁচাই কিন্তু শখের জন্যই পিস্তল চালানো আর একটু হ্যাণ্ড টু হ্যাণ্ড কমব্যাট শিখেছি আর আমার পিস্তলের লাইসেন্স আছে, যাওয়ার আগে নীলাদ্রি আরেকটা কাজ করে উমাদেবীকে সান্ত্বনা দিয়ে সে বলে "আন্টি প্রীতি আমার হবু স্ত্রী, আমি ওকে কিছু হতে দেবো না কথা দিলাম" বলে তিনজনে বেরিয়ে যায়।
আস্তে আস্তে চোখ মেলে তাকায় প্রীতি মাথাটা বড্ডো ভারী মনে হচ্ছে, দুচোখের পাতাও বড্ড ভারী, আস্তে আস্তে চারিদিকে তাকায় একটা ঘরে মেঝেতে শুয়ে আছে কিন্তু এই ঘরটা কেমন যেন আলাদা লাগছে তার কাছে, সে কিন্তু বুঝতে পারে না যে অদ্রিজাদের বাড়িটা রাতারাতি হটাৎ বদলে গেল কিভাবে? একটু ধাতস্থ হতেই মনে পরে সে চারু আন্টি মানে অদ্রিজার মায়ের রুমে ছিল দুই বান্ধবী ছাড়াও প্রীতির বাবা-মাও ছিল, নিজের স্বামী মানে সুবিমলবাবুর মৃত্যুর খবর পেয়ে চারু আন্টি শারীরিক এবং মানসিক উভয়ভাবেই ভেঙে পড়েছিল, সবাই তাকেই বোঝাতে চেষ্টা করছিল।
তারপর সে চারু আন্টির রুম থেকে বেরিয়ে নীচে আসে নীলাদ্রির সাথে কথা বলবে বলে, কিন্তু বেশ কয়েকবার ফোন করার পরেও নীলাদ্রি ফোন কানেক্ট হয় না ভাবে টাওয়ারের প্রবলেম বোধহয় তখন সে আস্তে আস্তে বাড়ির বাইরে এসে একটু পায়চারী শুরু করেছে হটাৎ কেউ একজন পিছন থেকে তার মুখে কিছু একটা চেপে ধরে সে চিৎকার করতে চেষ্টা করলেও পারে না, সাথে তার নাকে একটা মিষ্টি অথচ কড়া গন্ধ আসে তারপর আর কিছু মনে নেই।
"হেল্প... কেউ আছেন" মাথায় ভারী ভাবটা কিছুটা কমে আসতেই সে চিৎকার করতে থাকে, আস্তে আস্তে উঠে দরজার কাছে গিয়ে দরজা টেনে খুলতে গিয়ে বোঝে সেটা বাইরে থেকে বন্ধ। প্রীতি দরজায় ধাক্কা দিতে থাকে আর সাথে সাহায্যের জন্য চিৎকার করতে থাকে কিন্তু কেউ দরজা খোলে না, সে আরো জোরে দরজায় ধাক্কা দিতে শুরু করে এবারে কাজ হয় বাইরে থেকে দরজা খোলার আওয়াজ পায় সে, কিন্তু দরজা খুলেই ভিতরে ঢোকে দুজন গাট্টাগোট্টা চেহারার লোক গালে খোঁচা খোঁচা দাঁড়ি, মাথায় উসখোখুসখো চুল।
"আরে চিড়িয়া উঠে পড়েছে দেখছি" দুজনের একজন কথা বলে আর সঙ্গে সঙ্গেই প্রীতির নাকে মদের বিশ্রী দুর্গন্ধ যায় সে নাক চেপে বলে "তোমরা কারা আমাকে এখানে ধরে এনেছো কেন?"
কিন্তু লোকদুটো উত্তর না দিয়ে বিশ্রীভাবে হাসতে থাকে, হাসতে হাসতে একজন অপরজনকে বলে "বস এবার দারুন মাল এনেছে এই মালটাই বাকিগুলোর থেকে টপ, এর ভালো দাম পাওয়া যাবে"
অপরজন বলে "ঠিকই বলেছিস নেহাত বস বারণ করেছে তাই নাহলে এতক্ষণে মজা লুটে নিতাম"
ওদের কথা শুনে ভয়ে প্রীতির গলা শুকিয়ে যায় তার বুঝতে বাকি থাকে না যে এরা সেই মেয়ে পাচারকারী দলের সাথে জড়িত যাদের ব্যাপারে নীলাদ্রি বলছিল আর এখন এরা ওকে তুলে এনেছে পাচার করার জন্য, এবার দুজনের একজন এগিয়ে আসে তার কাছে আর সঙ্গে সঙ্গে তার নাকে আসতে থাকা মদের গন্ধটা বেড়ে যায়, লোকটা ওকে টাচ করতে গেলে সে সজোড়ে একটা ধাক্কা দেয় এতে লোকটা টাল সামলাতে পারে না পড়ে যায়,কিন্তু এর ফলে দ্বিতীয় লোকটা রেগে যায় সে সজোড়ে একটা থাপ্পড় মারে প্রীতিকে আর থাপ্পড় খেয়ে প্রীতি মেঝেতে পড়ে যায়।
"শালী খুব রস না তোর.. তোর রস কিভাবে কমাতে হয় সেটা জানা আছে" মেঝে থেকে উঠতে উঠতে লোকটা হিংস্র ভাবে বলতে বলতে আবার প্রীতির দিকে এগিয়ে আসতে যেতেই অপরজন বাধা দেয়, "বস কিন্তু বারণ করেছে"।
এতে প্রথম লোকটা অনিচ্ছাসত্ত্বেও থেমে যায় এরপর দ্বিতীয় লোকটা পকেট থেকে একটি ইঞ্জেকশন সিরিঞ্জ বার করে এবং প্রথম লোকটা গিয়ে প্রীতির দুহাত চেপে ধরে, প্রীতি ছাড়ানোর জন্য ছটফট করতে থাকলেও তাতে ফল হয় না হটাৎ সে অনুভব করে যে তার বা হাতের বাহুতে একটা সুঁচ ফুটে গেল আর তারপরেই আবার তার দুচোখে অন্ধকার ঘনিয়ে আসে।
প্রীতির সাথে থাকা ট্রেসার ট্রেস করতে করতে বেশ কয়েকটা গ্ৰাম পার হয়ে আসে আদিত্য রাস্তাঘাট এখনো খুব একটা উন্নত নয়, আলোর ব্যাবস্থাও তেমন নেই তবুও তার মাঝেই অন্ধকার চিরে এগোতে থাকে আদিত্যর গাড়ি, সাথে অবশ্য ড্রাইভার আছে ওর নিজের জিপটা ওর সঙ্গে নেই ফলে গাড়ির খোঁজ করতে হয় সৌভাগ্যবশত একে রাস্তায় পেয়ে যায় এবং মুখচেনা থাকায় সে আদিত্যকে নিয়ে আসতে রাজী হয়ে যায় নাহলে রাতের বেলা এই এলাকায় গাড়ি নিয়ে এদিকে কেউ আসতে চায় না কারণ এই খারাপ রাস্তা।
বেশকিছুক্ষণ পর একটা জায়গায় গিয়ে গাড়িটা থামাতে বললো আদিত্য প্রীতির সাথে থাকা ট্রেসার খুব কাছেই একটা দিকে ইণ্ডিকেট করছে, এবং সেদিকে যে একটা হোমস্টে আছে এটা আদিত্য জানে। নর্থবেঙ্গলে অনেককটা ট্যুরিস্ট স্পট থাকায় এখানে অগুণতি রিসর্ট এবং হোমস্টে তৈরী হয়েছে এটাও এরকমই একটা হোমস্টে যদিও এটা এখনো ট্যুরিস্টদের জন্য পুরোপুরি চালু হয়নি। আদিত্য গাড়ি থেকে নেমে পড়লো, প্রথমে মোবাইলটা পকেট থেকে বের করে দেখলো নেটওয়ার্ক আছে দেখে লোকেশনটা সেন্ড করে এগিয়ে যাচ্ছে এমন সময় পিছন থেকে গাড়ির ড্রাইভার বললো "আমিও আসবো সাব?" আদিত্য ফিরে তাকালো সে বুঝলো ড্রাইভার কিছু একটা অনুমান করেছে যদিও তাকে কিছুই বলেনি আদিত্য তাই সে বললো "আসতে পারো তবে সামনে কিন্তু বিপদ আছে আর সেটা কতটা ভয়ানক সেটা আমি এখনো জানিনা", ড্রাইভারটি গাড়ির দরজা লক করে মুচকি হেসে এগিয়ে এলো।
অল্প একটু হেঁটে এসেই হোমস্টেটা দেখতে পেলো দুজনে, একটা দোতলা কটেজ আর তার পাশাপাশি বেশ কয়েকটা ছোটো ছোটো কুটির টাইপের রুম দাঁড়িয়ে আছে এবং সেগুলোর সামনে দুটো গাড়িও দাঁড়িয়ে আছে কিন্তু আর কাউকে চোখে পড়লো না, একটু খটকা লাগলো আদিত্যর ট্রেসার এখানেই দেখাচ্ছে তাহলে? দুজনে আরো কিছুটা এগিয়ে গেল কিন্তু তবুও কাউকে দেখতে পেলো না, আদিত্য আরও এগিয়ে যাচ্ছিল হটাৎ পাশে দাঁড়িয়ে থাকা ড্রাইভারটি তার হাত টেনে আটকালো, আদিত্য অবাক হয়ে তার দিকে তাকালো তারপর তার দৃষ্টি অনুসরণ করে দেখলো একদিক থেকে একজন টলতে টলতে এগিয়ে আসছে বোঝাই যাচ্ছে সে নেশাগ্ৰস্ত কিছুটা এসে হোমস্টের গেটের কাছে একটা বড়ো গাছের গোড়ায় প্রস্রাব করার জন্য তৈরি হচ্ছে।
আদিত্য আর দেরী করলো না সঙ্গী ড্রাইভারকে ওখানে দাঁড়াতে বলে একাই পা টিপে টিপে এগিয়ে গেলো সামনের লোকটা টেরই পায়নি সে তার কাজ সবে শুরু করেছে এমন সময় পিছন থেকে আদিত্য তার একেবারে কাছে গিয়ে বা-হাতে তার মুখ চেপে ধরে ডানহাতের চেটো দিয়ে লোকটার মাথার পিছনে যেখানে মস্তিষ্ক থাকে সেখানে সজোড়ে আঘাত করলো সঙ্গে সঙ্গে সে জ্ঞান হারালো আদিত্য আসতে আসতে ওকে শুইয়ে দিয়ে ইশারায় ড্রাইভারকে ডেকে এগিয়ে গেলো, একটু এগোতেই একটা অস্পষ্ট আওয়াজ শুনতে পেলো কারা যেন হাসিঠাট্টা করছে।
শব্দ যেদিক থেকে আসছে সেদিকে এগিয়ে গিয়ে আড়াল থেকে দেখলো একটা জায়গায় একটা রুমের সামনে দুজন লোক আগুন জ্বালিয়ে তার সামনে বসে আছে ওদের সামনে কয়েকটা বোতল আর গ্লাস রাখা ওগুলো যে কিসের সেটা বুঝতে বাকি রইলো না আদিত্যর। এবার একটু ফাঁপড়ে পড়লো আদিত্য কারণ একসাথে একসঙ্গে এদের দুজনকে মারতে পারবে না আর একজনকে মারলে অপরজন বেঁচে যাবে আর সঙ্গে সঙ্গেই সে এখানে তার বাকি সঙ্গীদের সতর্ক করার চেষ্টা করবে।
আদিত্য একটু দাঁড়িয়ে ভাবতে লাগলো কি করবে এমন সময় তআর সঙ্গী ড্রাইভারটি তার সমস্যা সমাধান করে দিল সে বললো "সাব আপনি একটাকে ধরুন আমি অপরটাকে ধরছি", আদিত্য প্রথমে তার কথা শুনে একটু অবাক হলো কিন্তু এটাও বুঝলো এইমুহূর্তে এছাড়া উপায় নেই। দুজনে আস্তে আস্তে ওদের কাছে গিয়ে একসাথে দুজনে ঝাঁপিয়ে পড়লো একটা করে মোক্ষম আঘাতেই দুজনে শুয়ে পরলো। দুজনে উঠে একটা হাঁফ ছেড়ে এগোতে যাবে এবার আবার একটা অস্ফুট আওয়াজ এলো তবে এটা কারো কথা বলার নয় কেই যেন ফুঁপিয়ে কাঁদছে একটা মেয়ের গলা চমকে উঠলো আদিত্য তবে কি প্রীতি?
আরেকটু ভালো করে শুনতেই বুঝতে পারলো আওয়াজটা আসছে সামনের রুমগুলোর একটা থেকে যার সামনে ওরা তিনজন বসে মদ খাচ্ছিল, তাড়াতাড়ি সেদিকে এগিয়ে গেল ওরা দুজন প্রতিটা রুমের দরজায় কান পেতে শুনতে থাকে এভাবে একটা দরজায় এসে থেমে যায় আদিত্য, ভালো করে শুনে বুঝতে পারে এটার ভিতর থেকেই আসছে আওয়াজটা, আদিত্য দেখলো দরজা বন্ধ থাকলেও তালা দেওয়া নেই শুধু বাইরে থেকে আটকানো আছে বোধহয় বাইরে পাহারা ছিল বলেই ওরা তালা লাগায়নি।
আদিত্য দরজা খুলে ভিতরে ঢুকতেই কয়েকজন যুবতী মেয়েকে দেখতে পেলো, ঘরের মধ্যে একটা হাল্কা নীল রঙের নাইট বাল্ব জ্বলছে তাতে বুঝলো মেয়েগুলোর প্রত্যেকের বয়স প্রীতির মতোনই এবং ওরাও কোনো কারনে আদিত্যকে দেখে ভয় পেয়ে গুটিসুটি হয়ে একজায়গায় জড়ো হয়ে বসে আছে, এদেরই কেউ কাঁদছিল এখন আদিত্যকে দেখে কান্না থামিয়েছে, খুব ভালো করে দেখেও আদিত্য ওদের মধ্যে প্রীতিকে দেখতে পেলো না।
"তোমরা কারা, আর এখানে কি করছো?" শান্ত আর আস্তে জিজ্ঞেস করে আদিত্য,মেয়েগুলো প্রথমে নিজেদের মধ্যে পরস্পরের মুখ চাওয়াচাওয়ি করলো কিন্তু মুখে কিছু বললো না। আদিত্যর বুঝতে বাকি রইলো না যে ওদের ভয় এখনো কাটেনি তাই সে আবার বললো "দেখো তোমাদের ভয়ের কিছু নেই, তোমাদের কি কেউ এখানে ধরে এনেছে?"
এবার একজন মেয়ে এগিয়ে এলো সেও আস্তে আস্তে বললো "আপনি কে?"
"এখানে আমাকে সবাই আদিত্য সিংহ রায় নামে চেনে"
একথা শোনার পরে মেয়েগুলো আবার পরস্পরের মুখ চাওয়াচাওয়ি করলো তারপর আগের মেয়েটি বললো "আমাদের এখানে ধরে এনে বন্দী করে রেখেছে"
"কে ধরে এনেছে?"
"কয়েকজন লোক তবে ওরা অন্য কারো কথায় করেছে যাকে ওরা বস বলে ডাকে"
"আচ্ছা তোমরা এখানে অন্য কোনো মেয়েকে দেখেছো, তোমাদেরই মতো বয়স ফর্সা আমার বোন ওকে আজকেই ধরে আনা হয়েছে"
"না, আজ আমাদের সাথে কোনো নতুন মেয়ে আসেনি, আপনি আমাদের বাঁচান প্লিজ" বলতে বলতে মেয়েগুলো আবার কান্না শুরু করলো, সঙ্গে সঙ্গে আদিত্য ওদের আওয়াজ করতে বারণ করে, "আচ্ছা আচ্ছা রিল্যাক্স তোমাদের কারো কিচ্ছু হবে না"
এবারে মেয়েগুলো কান্না থামায়,আদিত্য আবার বলে "কিন্তু আমাকে আমার বোনকে খুঁজতে হবে, তোমরা ওর সাথে যাও" বলে পাশে ড্রাইভারকে দেখায়, তারপর তার উদ্দেশ্যে বলে "তুমি ওদের নিয়ে এখান থেকে চলে যাও আর ওদের সবাইকে ওদের ঘরে পৌঁছে দাও"
"কিন্তু সাব আপনি?"
"এখানে বাকিটা আমি সামলে নেবো, যাও"।
প্রত্যেকে আস্তে আস্তে বেরিয়ে এলো তারপর সাবধানে চারপাশে নজর রেখে হোমস্টের গেটের কাছে এসে আদিত্য ওদের চলে যেতে বলে নিজে আবার ভিতরে ঢুকে গেল। মেইন কটেজটার দরজা ঠেলতেই খুলে গেল সে আস্তে আস্তে ভিতরে ঢুকলো এখানেও একইরকম হালকা নীল রঙের আবছা আলোয় ভরে আছে, আবছা আলোতেই আদিত্য বুঝতে পারলো যে জায়গাটা বাইরে থেকে যতটা ভেবেছিল তার থেকে বেশ কিছুটা বড়ো একটা রিসেপশনের মতো ডেস্কও চোখে পরলো কিন্তু কাউকে দেখতে পেলো না সে পা টিপে টিপে আস্তে আস্তে এগিয়ে যাচ্ছে, ডানদিকে তাকাতে দুটো দরজা দেখতে পেলো।
আদিত্য যথাক্রমে দুটো দরজা খুলে ভিতরে ঢুকে মোবাইলের ফ্ল্যাশ জ্বালিয়ে ভালো করে দেখে নিল কেউ নেই এবার আবার মোবাইলে ট্রেসারটা দেখে, হ্যাঁ এখনও এখানেই দেখাচ্ছে কিন্তু কোথায়? দ্বিতীয় রুমটা থেকে বেরিয়ে এসে ভাবছে কোনদিকে যাবে ভাবছে তখনই রিসপশনের পাশে উপরে যাওয়ার সিঁড়ি দেখতে পায় ও সেদিকে এগিয়ে গেল।
দোতলায় উঠে একটা করিডর যেখানে একদিকে বাইরের দৃশ্য দেখার জায়গা আর অপরদিকে কয়েকটা ঘর যেগুলো এখন বন্ধ এরকমই একটা রুমের বাইরে একটা ছোটো টেবিল আর দুটো খালি চেয়ার আছে, টেবিলের উপরে কয়েকটা বোতল আর গেলাস আর একটা জলের জগ। আদিত্য আসতে আসতে রুমটার দিকে এগোতে থাকে হঠাৎ পিছনে একটা হাল্কা পদশব্দ শুনে চকিতে পিছনে ফেরে এবং সঙ্গে সঙ্গে অটোমেটিক রিফ্লেক্সে বাহাতটা উপরে তুলে মাথার সামনে আনে, যদি এটা না করতো বা করতে এক সেকেণ্ড দেরী হতো তাহলে একটা কাঁচের বোতল তার মাথায় লাগতো তার বদলে এখন সেটা আদিত্যর হাতে লেগে ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে ছড়িয়ে পরে, পরক্ষণেই অপর একজনের লাথি খেয়ে কয়েকপা পিছিয়ে আসে আদিত্য, তার হাত থেকে রক্ত পড়ছে কিন্তু সে জানে এখন সেদিকে নজর দেওয়ার সময় নেই কারণ তার সামনে এখন দুজন প্রতিদ্বন্দ্বী দাঁড়িয়ে আছে।
প্রথমে একজন এগিয়ে এলে আদিত্য আঘাতটা এড়িয়ে যেতে সক্ষম হয় এবার দ্বিতীয় জন এলে তার আক্রমণ থেকেও নিজেকে বাঁচিয়ে নেয়, সম্ভবত নেশা করার জন্যই এদের আঘাতগুলো ঠিক হচ্ছে না, এবার আদিত্য ওদের পরের আক্রমণ করতে সুযোগ না দিয়ে নিজেই আক্রমণ চালায় এবং একজনের তলপেটে একটা লাথি আর অপরজনের চোয়ালে একটা পাঞ্চ এতেই দুজন লুটিয়ে পড়ে কিন্তু প্রায় পরক্ষণেই পিঠে একটা লাথি খেয়ে সামনের টেবিলের উপরে হুমড়ি খেয়ে পড়ে আদিত্য,সঙ্গে সঙ্গে সে উঠে ঘুড়ে দাঁড়ানোর সঙ্গে সঙ্গেই একসাথে অনবরত লাথি ঘুষি পড়তে থাকে প্রথমে হাত দিয়ে আটকানোর চেষ্টা করলেও ব্যার্থ হয়, অবশেষে একটা ঘুষি খেয়ে মেঝেতে ছিটকে পড়ে সে।
"আরে আমি তো ভাবতেই পারছি না, দেখো সবাই কে এসেছে এখানে... মিস্টার আদিত্য সিংহ রায় উপস্ সরি নকল আদিত্য সিংহ রায়"
পরিচিত কণ্ঠস্বর শুনেও খুব একটা চমকায় না আদিত্য যেন সে এটাই প্রত্যাশা করেছিল, দুজন শক্ত হাত তাকে টেনে তুলে দাঁড় করায় এবং সে দেখে সামনে মলয় দাঁড়িয়ে আছে ওর মুখে ক্রুর হাসি।
"ওকে নীচে নিয়ে চলো"
কথাটা শুনে যে দুজন আদিত্যকে ধরে আছে তারা টানতে টানতে ওকে নীচে নিয়ে চলে যদিও আদিত্য বাধা দেওয়ার চেষ্টাও করে না। নীচে এসে ঘরের আবছা আলো-অন্ধকারে আদিত্য দেখে সেখানে মনোহরবাবুও আছেন এবং ওকে ঘিরে অ্যাসল্ট রাইফেল হাতে দাঁড়িয়ে আছে আরও জনা চারেক গুণ্ডা প্রকৃতির লোক।
"বাবা দেখো এই আমাদের সব পাখিকে উড়িয়ে দিয়েছে" নীচে এসে মলয় তার বাবার উদ্দেশ্যে বলে,
"তাহলে দেখছিস কি মার ওকে, পেটানো শুরু কর" হিংস্র কণ্ঠে আদেশ করেন মনোহরবাবু। কথাটা বলতে যতক্ষণ লাগলো সঙ্গে সঙ্গেই আদিত্যকে ধরে থাকা দুজন আর মলয় তিনজনে একসাথে মারতে লাগলো একটা সময় আদিত্য নীচে উবুড় হয়ে রইলো আর ওরা ক্রমাগত লাথি মারতে থাকে, একটা সময় থামে ওরা আর দুজন আদিত্যকে তুলে ওদের সামনে হাঁটু মুড়ে বসায়, আদিত্যর ঠোঁটের কোণ থেকে রক্ত পরছে সে কোনোমতে বলে "প্রীতি কোথায়?"
মনোহরবাবু যেন একটু অবাক হন তারপর একটা ক্রুর হাসি হেসে বলেন "তার খবর জেনে কি করবি? তোর কি মনে হয় তুই ওকে এখান থেকে বের করে নিয়ে যেতে পারবি?"
"আপনার লজ্জা করে না, ও তো আপনার দাদার মেয়ে আপনারও মেয়ের মতো"
"বিজনেসে এসব দেখলে চলে না, ওর মতো মেয়েদের খুব ডিমান্ড মার্কেটে ভালো দাম পাওয়া যায়"
"কি ভেবেছেন আপনি এসব করে বেঁচে যাবেন?"
"কে ধরবে আমাকে তুই? তোকে তো আজই মেরে এখানে কোথাও পুঁতে রেখে দেবো আমার ব্যাবসায় কত বড়ো ক্ষতি করেছিস তুই জানিস, যাদের তুই ভাগিয়ে দিয়েছিস তাদের দাম কত ছিল?"
কথাটা শেষ হবার সঙ্গে সঙ্গে একটা লাথি আসে মলয়ের পা থেকে আবার কোনোমতে উঠে বসে আদিত্য, "মনোহরবাবু হিংস্র কণ্ঠে বলেন "তোর জন্য আমার অনেক ক্ষতি হয়েছে তোকে কুচি কুচি করে কাটবো শূয়োর"
"প্রীতি তো আপনার কোনো ক্ষতি করেনি"
"বললাম যে এটা ব্যাবসা আর এই ব্যাবসার জন্য আমি সবকিছু করতে পারি খুনও, তোকেও মারবো ঠিক যেভাবে সুবিমল চক্রবর্তীকে মেরেছি ঠিক যেভাবে আদিত্যকে মেরেছিলাম"
এবার একটু চমকে ওঠে আদিত্য সে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে মনোহরবাবুর দিকে, একটু পরে বলে "আদিত্য তো অ্যাক্সিডেন্টে মারা যায়?"
হো হো করে হেসে ওঠেন মনোহরবাবু তারপর হাসি থামিয়ে বলেন "সেরকমই তো আমি চেয়েছিলাম"
আদিত্যর মনে হয় এই মনোহরবাবু অন্য একজন লোক একজন মনুষ্যরূপী পিশাচ সে বলে "কিন্তু কেন? আদিত্যকে মারলেন কেন?"
"আদিত্য আমাদের সম্পর্কে না জানলেও আমার গ্যাংটকের যে গ্যাংটা ওখানকার কারবার দেখতো সেই গ্যাংএর কয়েকজন লোকের ব্যাপারে জেনে গিয়েছিল আর ওরা ধরা পরলে পুলিশ আমাদের ধরে ফেলতে পারতো তাই ওকে সরানোর দরকার ছিল, আদিত্য জানতো না যে আমি ওই গ্যাংএর হেড তাই ওর কাছে যেতে সুবিধাই হয়েছিল কারণ ও আমাকে চিনতো ও জানতো আমি তো ওর কাকা, তারপর আর কি ওকে মেরে গাড়িটা খাদ থেকে নীচে ফেলতে কতক্ষণ যাতে সবাই ভাবে যে অ্যাক্সিডেন্ট হয়েছে"
"শয়তান" এই আদিত্য প্রায় গর্জন করে ওঠে, কিন্তু আবার একটা লাথি এসে পরে। মনোহরবাবু বলে চলেন "তুই আমার অনেক লোকসান করে দিলি এবার তার ফল ভোগ করবে ওই প্রীতি ওকে আমি নীলামে তুলবো, যদিও তুই দেখতে পারবি না, মলয়" একটা হুংকার ছাড়েন মনোহরবাবু "ওকে শেষ করে দে"
"একটা কথা বলুন" আদিত্য জিজ্ঞেস করে,
"কি কথা?"
"সুবিমলবাবুকে মারলেন কেন?"
"ওই একই কারণ আমাদের ব্যাপারে জেনে গিয়েছিল তাই"
"আমাকে ফাঁসিয়েছিলেন কেন?"
"তোকে রাস্তা থেকে সরানোর জন্য ভেবেছিলাম তোকে নিজের হাতে মারবো না আমি জানতাম নীলাদ্রি তোকে সন্দেহ করছে তাই ওর কাছে তোর ব্যাপারে বলে এলাম কিন্তু তোর কপালে আমাদের হাতেই মরা লেখা আছে কি করা যাবে, মলয়"
কথাটা শুনে মলয় একটা পিস্তল বার করে আদিত্যর কপালে ঠেকায় আর যে দুজন এতক্ষণ আদিত্যর পিছনে দাঁড়িয়ে ছিল তারা ওকে ছেড়ে মলয়ের পিছনে গিয়ে দাঁড়ায়, মলয় পিস্তলের ট্রিগারে চাপ দিতে যাবে এমন সময় দরজার দিকে একটা অস্ফুট আওয়াজ আসে আর মলয় সহ সবাই সেদিকে তাকায় আর এই সুযোগটাকেই কাজে লাগায় আদিত্য চোখের পলকে মলয়ের হাত থেকে পিস্তলটা কেড়ে নিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে একহাতে পিছন থেকে মলয়ের গলাটা ধরে ওর মাথায় পিস্তল ঠেকায়।
"বাবা" মলয়ের মুখ থেকে একটা ভয়ার্ত আওয়াজ বেরিয়ে আসে আর ওদিকে সবাই দরজার দিক থেকে ফিরে মলয়ের দিকে তাকায় অবশ্য সঙ্গে সঙ্গেই মনোহরবাবুর সাথে থাকা চারজন রাইফেল উঁচিয়ে ধরে কিন্তু আদিত্য মলয়কে নিজের গার্ড হিসেবে সামনে ধরে থাকায় ওরা রাইফেল চালাতে পারে না। এইসময় হটাৎই দরজা দিয়ে আদিত্যর সঙ্গে আসা ড্রাইভারটি এবং যেসব মেয়েদের আদিত্য উদ্ধার করেছিল তারা ভিতরে ঢুকে আসে প্রত্যেকের হাতে একটা করে লম্বা চ্যালাকাঠ এবং ওরা ওই চারজন রাইফেলধারীর উপরে আক্রমণ করে এবং চ্যালাকাঠ দিয়ে বেদম পেটাতে শুরু করে এই অতর্কিত আক্রমণে ওই চারজন রাইফেল চালানোর সুযোগ পায় না।
ওদের দেখে আদিত্যও মুহূর্তের জন্য হতবাক হয়ে যায় আর এই সুযোগে মলয় আদিত্যর পেটে কনুই দিয়ে আঘাত করে ফলে আদিত্য দুপা পিছিয়ে যায় আর মলয় আদিত্যর হাতের বন্ধন থেকে মুক্ত হয়ে যায়। এবার মলয়ের পিছনে থাকা দুজনের একজন আদিত্যর হাতে একটা লাথি মারায় হাত থেকে পিস্তলটা ছিটকে পড়ে যায়, এবার দ্বিতীয়জন লাথি মারতে গেলে আদিত্য তার পা ধরে হাঁটুর উপরে নিজের কনুই দিয়ে সজোড়ে আঘাত করে লোকটা একটা আর্তনাদ করে বসে পড়ে, মলয় মারতে এগিয়ে আসলেও নিজের থুতনিতে একটা আপারকাট পাঞ্চ খেয়ে ছিটকে পড়ে আর সঙ্গে সঙ্গে সেই মেয়েগুলোর একজন এসে ওকেও পেটাতে শুরু করে অবশ্য তাদের একজন আগেই মনোহরবাবুকেও পেটানো শুরু করেছে। আর বাকি দুজন উঠে আবার আদিত্যর দিকে এগোয় কিন্তু এবার আদিত্য প্রস্তুত থাকে তাই ওদের সাথে লড়তে খুব একটা বেগ পেতে হয় না, একজন হাঁটুতে আবার লাথি খেয়ে আর্তনাদ করে পরে যায় তবে এবার আঘাতটা আগের থেকে জোরে হয় তাই সে উঠতে পারে না , আর অপরজন লড়াই চালিয়ে গেলেও বেশিক্ষণ থাকতে পারে না হটাৎ আদিত্য লাফিয়ে তার ব্রহ্মতালুতে নিজের কনুই দিয়ে সজোরে আঘাত করে সেও লুটিয়ে পড়ে এবার আদিত্যর সঙ্গে আসা ড্রাইভারটি এগিয়ে আসে এবং সেও এই দুজনকে পেটানো শুরু করে।
বেশ কিছুক্ষণ পরে সবাই শান্ত হয় ততক্ষণে মনোহরবাবু মলয় আর ওদের সঙ্গীরা সবাই নিস্তেজ হয়ে পড়ে থাকে। আদিত্য ড্রাইভারকে জিজ্ঞেস করে "কি ব্যাপার তোমরা এখানে?"
"সাব আমরা চলেই যাচ্ছিলাম কিন্তু দেখলাম ওরা এখানে ঢুকলো তখন আপনাকে একা রেখে যেতে পারলাম না তাই ওদের বুঝিয়ে ভিতরে চলে এলাম বাইরে যে তিনজন ছিল ওদের বেঁধে রেখে এসেছি পালাতে পারবে না"
"থ্যাংকস, এক কাজ করো এদেরও বেঁধে ফেলো, আমি এখানে আসার আগে পুলিশকে জানিয়ে এসেছিলাম পুলিশ যেকোনো সময় চলে আসবে আর দুজন উপরে আছে ওদের কেও বাঁধতে হবে"
"জি সাব"
আদিত্য আবার উপরে চলে গেল সেখানে গিয়ে দেখে দুজন তখনও অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে, ড্রাইভারটি ওদের বাঁধতে থাকে আর আদিত্য একটা রুমের ভিতরে ঢোকে এই রুমের সামনেই ওরা পাহারা দিচ্ছিল। ভিতরে ঢুকেই আদিত্যর ভয়ে বুকটা ধড়াস করে উঠলো সামনে মেঝেতে প্রীতি শুয়ে আছে সে তাড়াতাড়ি ওর কাছে যায়,
"প্রীতি, বোন চোখ খোল.... দেখ তোর দাদা এসেছে"
কিন্তু প্রীতি চোখ খোলে না, তবে আদিত্য দেখে আশ্বস্ত হয় যে প্রীতির নাড়ির স্পন্দন আছে তারমানে ও বেঁচে আছে, আদিত্য দুহাতে ওকে কোলে তুলে বেরিয়ে আসে, সবাই যখন একদম বাইরে বেরিয়ে আসে তখন ভোরের আলো ফুটতে শুরু করেছে আর তখনই হোমস্টের গেটের সামনে এসে দাঁড়ায় একটা গাড়ি আর একটা পুলিশ ভ্যান, গাড়ি থেকে নেমে ওদের দিকে ছুটে আসে নীলাদ্রি, অতীন্দ্রবাবু আর অদ্রিজা আর ওদের পিছনে শশাঙ্ক বাবু আর ভ্যান থেকে বেশ কয়েকজন পুলিশ কনস্টেবল, ওরা এসেই প্রীতির কাছে আসে
"অ্যাজ ইজুয়াল" ওদের দেখে বলে ওঠে আদিত্য।
"মানে" নীলাদ্রি জিজ্ঞেস করে,
"এই যে সবশেষেই পুলিশের আসার রেকর্ড, এটার কথাই বলছি একটু আগে এলে কি ক্ষতি হতো?"
"আসলে, আমরা আগেই আসছিলাম কিন্তু মাঝরাস্তায় গাড়িটা খারাপ হয়ে যায় তাই লেট হয়ে যায়"
"কিন্তু প্রীতি, প্রীতি কেমন আছে?" অতীন্দ্রবাবুর গলায় আতঙ্ক
"প্রীতি ঠিক আছে তবে বোধহয় অজ্ঞান হয়ে আছে, এই তো মিস চক্রবর্তী দেখুন একবার"
আদিত্য গিয়ে গাড়ির সিটে প্রীতিকে শুইয়ে দেয়, তারপর নীলাদ্রির কাছে আসে ততক্ষণে বাকি মেয়েরা ভিতর থেকে সবাইকে বেঁধে টানতে টানতে বাইরে নিয়ে আসে সেটা দেখে নীলাদ্রি জিজ্ঞেস করে "ওরা কারা?"
"যারা বেঁধে আনছে তাদেরও প্রীতির মতো কিডন্যাপ করে আনা হয়েছিল পাচার করার উদ্দেশ্যে আর যাদের আনছে তারাই মেইন কালপ্রিট শশাঙ্ক বাবু আপনি প্লিজ ওই মেয়েদের ওদের বাড়িতে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করুন"
"মনোহর, মলয় তোরা?" অতীন্দ্রবাবু যেন বিশ্বাস করতে পারছেন না, তিনি বলে চলেন "তোমরা একাজ করেছো,বিশ্বাসঘাতক তোমরা আমার মেয়ের ক্ষতি করতে চেয়েছিলে আমি তোমাদের ছাড়বো না"।
"শুধু তাই নয় স্যার আদিত্যকে ওরাই মেরেছিল ওটা অ্যাক্সিডেন্ট ছিল না অ্যাক্সিডেন্টের রূপ দেওয়া হয়েছিল"
"কি?"একসাথে নীলাদ্রি এবং অতীন্দ্রবাবু বলে ওঠেন, "কি বলছেন আপনি" নীলাদ্রি বলে ওঠে।
"হ্যাঁ মিস্টার সান্যাল, এটাই সত্যি, ওরাই আপনার বেস্টফ্রেণ্ডকে মেরেছে আমি নয়"
"কিন্তু.." নীলাদ্রির গলায় তখনও অবিশ্বাস সেটা আন্দাজ করেই বোধহয় আদিত্য বলে "প্রমাণ আছে মিস্টার সান্যাল"
"কি প্রমাণ?" এই কথাটা অবশ্য নীলাদ্রি নয় বলে মনোহরবাবু, ঠেঙানি খেয়ে তার অবস্থা ভালোই কাহিল হয়েছে কিন্তু তবুও তাদের তেজ কমে না, আদিত্য ওদের দিকে ফিরে বলে "প্রমাণ আছে মনোহরবাবু প্রমাণ আছে"
"কি প্রমাণ?"
"কেন আপনার কনফেশন, ভিতরে আমাকে মারতে চাওয়ার আগে আপনি কনফেশ করেছিলেন ভুলে যাচ্ছেন?"
মনোহরবাবু ওই অবস্থাতেও হাসতে থাকেন, তারপর বলেন "কিন্তু সেটা প্রমাণ করবি কিভাবে? কোর্টে আমি বলবো তুই মিথ্যা কথা বলছিস"। নীলাদ্রির আর সহ্য হয় না সে দ্রুত পায়ে মনোহরবাবুর কাছে গিয়ে ওর কলার টেনে ধরে বলে "স্বীকার আমি করাবো, আপনাদের মুখ থেকে"
"চেষ্টা করে দেখুন নীলাদ্রি বাবু"
"রিল্যাক্স মিস্টার সান্যাল আপনার কাজ আমি সহজ করে দিচ্ছি"
আদিত্যর কথা শুনে নীলাদ্রি ঘুরে দাঁড়ায় আদিত্য তখন নিজের পকেট থেকে মোবাইল বার করে একটা ভিডিও চালিয়ে নীলাদ্রির হাতে দেয় সেটা যে মনোহরবাবুর কনফেশনের ভিডিও সেটা বুঝতে কারো বাকি থাকে না এমনকি মনোহরবাবু নিজেও হতবাক হয়ে আদিত্যর দিকে তাকায়, আদিত্য সেটা বুঝতে পেরে নিজের জামার একটা বোতাম খুলে নীলাদ্রির হাতে দেয়,নীলাদ্রি অবাক চোখে দেখে সেটা বোতাম নয় একটা মিনিক্যামেরা, সেটা নীলাদ্রির হাতে দিয়ে আদিত্য বলে " আমি জানতাম প্রীতিকে কিডন্যাপ করার পিছনে এদের হাত আছে তাই আসার সময় ক্যামেরাটা জোগাড় করে নিয়ে এসেছিলাম ভেবেছিলাম এদের বিরুদ্ধে কিছু তো প্রমাণ পাবো কিন্তু যে এতটা পাবো সেটা আশা করিনি যাইহোক ফরেনসিক টেস্টে এটা প্রমাণিত হয়ে যাবে যে এই ভিডিও এডিটেড নয় ওরিজিনাল, মিস্টার সান্যাল এর পরের কাজ আপনার"।
এইসময় অদ্রিজা গাড়ি থেকে বেরিয়ে এলে সবাই তার দিকে তাকায় সে বলে "প্রীতি ঠিক আছে তবে মোস্ট প্রোবাবলি কোনো ড্রাগের এফেক্টে অজ্ঞান হয়ে আছে, ওকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়াটা বেটার হবে" তারপর আদিত্যর দিকে তাকিয়ে বলে "আপনার হাত থেকে তো ব্লিডিং হচ্ছে" বলে এগোতে যেতেই আদিত্য হাত উঁচিয়ে বাধা দেয় বলে "ইটস্ ওকে আয়্যাম ফাইন", আদিত্য পকেট থেকে রুমাল বের করে হাতে জড়িয়ে নেয়।
"আদিত্য" অতীন্দ্রবাবু এগিয়ে আসেন "আমি সত্যিই লজ্জিত কারণ"
"কেন স্যার? আপনার লজ্জা পাওয়ার কিছু হয়নি"
"হয়েছে, আমি মুহুর্তের জন্য হলেও..."
"ওসব কথা এখন থাক, শশাঙ্কবাবু আপনার সাথে যেসব কনস্টেবল এসেছে তারা বিশ্বস্ত?"
"হ্যাঁ, কেন বলতো?"
"তাহলে এক কাজ করুন ওদের বলুন প্রীতি কে হাসপাতালে নিয়ে যেতে সাথে এদেরও পাঠিয়ে দিন আর আপনি, নীলাদ্রি বাবু, স্যার আর মিস চক্রবর্তী একটু আমার সাথে চলুন"
"কোথায়?"
"একটা জায়গায়, আপনি চাইলে কয়েকজন কনস্টেবলকে সঙ্গে নিতে পারেন"
নীলাদ্রি তখন কনস্টেবলগুলোকে অর্ডার করে "তোমরা ওদের নিয়ে যাও আর যদি কেউ কোনো গোলমাল করে বা পালানোর চেষ্টা করে তো এনকাউন্টার করে দেবে বাকিটা আমি বুঝে নেবো"।
হোমস্টে ছেড়ে কিছুদূর একসাথে চলে তারপর আদিত্যরা অন্য একটা রাস্তা নেয় আদিত্য যে গাড়িতে করে এখানে এসেছিল সেটায় আদিত্য, অতীন্দ্রবাবু আর অদ্রিজা আছে, আর তার পিছনে অপর গাড়িতে শশাঙ্ক বাবু এবং নীলাদ্রি। বেশ কিছুক্ষণ চলার পর জঙ্গলের ভিতরে একটা ছোটো কটেজ টাইপের বাড়ির সামনে এসে থামে তারা, গাড়ি থেকে নেমে নীলাদ্রি জিজ্ঞেস করে "এখানে কেন আনলেন আমাদের, কি আছে এখানে?"
কিন্তু আদিত্য কিছু বলার আগেই সবাই একটা কুকুরের ডাক শুনে চমকে ওঠে দেখে একটা বিরাট কালো কুকুর দৌড়ে আসছে ওদের দিকে, সে এসেই পিছনের দুপায়ে ভর দিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে সামনের দুটো পা সোজা আদিত্যর উপরে তুলে দেয়। "বাদশা" নীলাদ্রির অবাকভাব বেড়ে যায়, যাকে সে এতদিন হন্যে হয়ে খুঁজছিল সেই বাদশা এখানে ছিল, এখন সে নিশ্চিত যে এই কটেজে কিছু আছে যাকে পাহারা দেবার জন্যই আদিত্য বাদশাকে এখানে রেখেছিল।
"আমরা এখানে কেন এসেছি আদিত্য?" প্রশ্নটা করেন অতীন্দ্রবাবু,
"বলেছিলাম না স্যার যে নর্থবেঙ্গল ছেড়ে চলে যাওয়ার আগে আমার একটা কাজ বাকী রয়েছে সেটা সারতেই এখানে এসেছি"
"কি কাজ?"
"একটা দায়িত্ব যেটা আমার কাঁধে ছিল এখন সেটা আপনাদের দিয়ে দিলেই আমার ছুটি, আসুন"
সবাই মিলে ভিতরে গেল একটা রুমের সামনে এক প্রৌঢ়কে দেখে অতীন্দ্রবাবু বলেন "হরি দা তুমি এখানে?"
"ওনাকে আমি এনেছিলাম স্যার"
"তুমি?"
"হ্যাঁ"
"কিন্তু কেন?"
"সেটা রুমের ভিতরে গেলেই বুঝতে পারবেন, মিস চক্রবর্তী আপনি আগে ভিতরে যান, তবে শক্ লাগতে পারে তাই নার্ভের উপর নিয়ন্ত্রণ হারাবেন না"।
প্রথমে অদ্রিজা আর তারপর বাকিরা ভিতরে ঢুকলো আর ঢোকামাত্রই সবার চক্ষু চড়কগাছ কারণ রুমের ভিতরে একটা বেডে পিছনে হেলান দিয়ে বসে আছেন ডক্টর সুবিমল চক্রবর্তী, তার পেটের কাছে একটা জায়গায় ব্যাণ্ডেজ বাঁধা।
"বাপি" অদ্রিজা প্রায় পরেই যাচ্ছিল কোনোমতে নিজেকে সামলিয়ে একছুটে নিজের বাপির কাছে যায়,কাঁদতে কাঁদতে বলে "বাপি তুমি বেঁচে আছো"
"হ্যা রে মা তবে আদিত্য না থাকলে বোধহয় বাঁচতাম না"
সবাই আদিত্যর দিকে তাকায় কিন্তু আদিত্যর বদলে সুবিমলবাবুই বলতে থাকেন,
"সেদিন আমার এক পরিচিত পেশেন্টের বাড়ি থেকে ফিরছিলাম হটাৎ রাস্তায় আমার গাড়ির উপরে একজন হুমড়ি খেয়ে পড়ে, ঠিক সময়ে ব্রেক মারায় অ্যাক্সিডেন্ট হয় না তবে লোকটাকে দেখে আমি চিনতে পারি উনি প্রতাপ সরকার দেখে আশ্চর্য হয়ে যাই যে উনি ভয়ার্ত এবং আহত উনিও আমাকে চিনতে পারেন আমার কাছে এসে আমাকে বলেন ওনাকে বাঁচাতে ওনাকে কেউ মারতে চাইছে, ওনার অবস্থা দেখে বুঝতে পারি যে উনি প্রচণ্ড ভয় পেয়েছেন তাই ওনাকে গাড়িতে তুলে নিই, একটু পরেই বুঝতে পারি যে উনি সত্যি কথাই বলছিলেন কারণ আমাদের পিছনে তখন আরও একটা গাড়ি ধাওয়া করে আসছে, আমি কি করবো বুঝতে পারছিলাম না অতীন্দ্রও তখন শহরে ছিল না আর কথা মনে পরা মাত্রই আমি উপায় খুঁজে পাই তখনই আমি আদিত্যকে ফোন করি কিন্তু বেশি কিছু বলার আগেই পিছনের গাড়ি থেকে একটা গুলি এসে আমার গাড়ির টায়ার ফাটিয়ে দেয়,তখন আমি প্রতাপবাবুকে নিয়ে বজরঙবলি মন্দিরের পিছনে পালানোর চেষ্টা করি কিন্তু পারিনা কিছুটা যেতে না যেতেই ওরা ধরে ফেলে ওদের মধ্যে মনোহরবাবু আর মলয়ও ছিল। ওরা প্রথমে প্রতাপবাবুকে খুন করে আর তারপর আমাকে মারার চেষ্টা করে আমার ভাগ্য ভালো যে আদিত্য ওখানে চলে আসে ওখানে"।
"কিন্তু তুমি ওকে হাসপাতালে কেন নিয়ে গেলে না আদিত্য আর আমাদের কাউকে কিছু বললে না কেন?" অতীন্দ্রবাবু প্রশ্ন করেন। "কারণ স্যার হাসপাতালে ওনাদের লোক ছিল তাই আমার ভয় ছিল যে ওখানে গেলে কোনো না কোনো ভাবে ওরা সুবিমলবাবুকে শেষ করে ফেলবে তাই এখানে নিয়ে আসি হরিকাকাকেও নিয়ে আসি কারণ চিকিৎসা বিষয়ে ওনার যথেষ্ট জ্ঞান আছে আর কাউকে না বলার কারনও এটাই ভেবেছিলাম আগে উনি সুস্থ হয়ে উঠুন তারপর সবাইকে বলা যাবে"।
বেশ কিছুক্ষণ পরে যখন অ্যাম্বুলেন্স ডেকে সুবিমলবাবুকে তাতে তুলে হাসপাতালের উদ্দেশ্য নিয়ে যাওয়া হলো তখন আদিত্যর মনে হলো এখন সে সত্যিই ভারমুক্ত হয়েছে, সে একটু দূরে একাকী দাঁড়িয়ে দেখছিল আর একহাতে বাদশার মাথায় বুলোচ্ছিল।
I'm the King of Dark
&
I rule over all Devils
Posts: 928
Threads: 9
Likes Received: 1,804 in 406 posts
Likes Given: 939
Joined: Sep 2021
Reputation:
618
১১তম পর্ব
"আয়্যাম সরি" নীলাদ্রির মুখে সরি শুনে সত্যিই অবাক হলো আদিত্য, সে বললো "সরি, কিসের জন্য?"
"আমি আপনার সাথে যা করেছি তার জন্য"
"ইটস্ ওকে, আপনি নিজের বন্ধুর প্রতি ভালোবাসার জন্য এটা করেছেন আর আজকাল এরকম বন্ধু খুব কম পাওয়া যায়, আপনাকে একটা কথা বলবো রাখবেন?"
"বলুন"
"আদিত্য আর ফিরবে না, এখন থেকে আপনি শুধু শশাঙ্ক বাবুর নন অতীন্দ্রবাবু আর মায়েরও ছেলে ওনাদের খেয়াল রাখবেন, আর প্রীতিকে খুশি রাখবেন"
"সে ঠিক আছে কিন্তু আপনি.."
"এখানে আমার কাজ শেষ এবার আমাকে যেতে হবে"।
"এসব কি বলছো তুমি আদিত্য" কথাটা অবশ্য বললেন অতীন্দ্রবাবু।
"হ্যাঁ স্যার ঠিক বলছি"
"আদিত্য আমি ক্ষমা চাইছি তোমার কাছে, এক মুহূর্তের জন্য হলেও তোমাকে ভুল বুঝেছিলাম তার জন্য'
"স্যার, আপনার ক্ষমা চাওয়ার কিছু নেই, কিন্তু এবার আমাকে সত্যিই যেতে হবে"
"তোমার অভিমান হয়েছে আমি বুঝতে পারছি আমার উপর, উমার উপরে"
"অভিমান" আদিত্যর ঠোঁটের কোণে আবার একটা অদ্ভুত হাসি দেখা যায় যেটা খুশির নয় দুঃখের "আপনি তো আমার ব্যাপারে সব জানেন স্যার, বেঁচে থেকেও আমি এখন মৃত আর মৃতদের রাগ, অভিমান, সুখ, দুঃখ কিছুই থাকে না আর আপনার বা মায়ের উপরে অভিমান করবো কেন? উনি যা করেছেন সেটাই স্বাভাবিক"।
"আমি উমাকে সব বুঝিয়ে বলবো ও নিশ্চয়ই বুঝবে"
"আর তাতে কি হবে? এটা বদলাবে যে আমি ওনার ছেলে নই এটা কোনোদিন বদলাবে না এতদিন ওনার চোখে আমার জন্য যে স্নেহ, ভালোবাসা, মমতা দেখেছি সেটা কি আসবে? আসবে না কিছুই আর বদলাবে না স্যার"।
"আদিত্য একবার ফিরে চলো তুমি, তুমি একবার উমার সামনে দাঁড়ালে ও.."
"না স্যার আমি মায়ের সামনে গেলে উনি আরও হাইপার হয়ে উঠবেন তাতে উনি আরও বেশি অসুস্থ হয়ে যাবেন যেটা আমি চাইনা, মনে আছে আপনি আমাকে এখানে এনেছিলেন যাতে আমি আপনার ছেলের ভূমিকায় অভিনয় করতে পারিযাতে মা সুস্থ থাকেন, কিন্তু এখন সবাই সব সত্যিটা জেনে গেছে তাই এখন আর এই অভিনয়ের দরকার নেই এখন আর আমারও দরকার নেই, এবার আমাকে ছুটি দিন স্যার"।
অতীন্দ্রবাবু কি বলবেন ভেবে পেলেন না তিনি ভালো করেই জানেন একে আর রাজী করানো যাবে না। "আপনি কে, মানে আপনার আসল পরিচয় কি?" নীলাদ্রি এবার প্রশ্ন করে, একটু হেসে আদিত্য বলে "বললাম যে আমি এখন একজন মৃত মানুষ আর মৃতদের নাম পরিচয় থাকে না"
"তাহলে আগের টাই বলুন"
"ওটা জেনেও আপনার কোনো লাভ হবে না আর না জানলেও কোনো ক্ষতি হবে না আমি নিজেও ওটা এখন আর মনে করি না তাই ওটা থাক"।
"তুমি সত্যিই চলে যাবে?" অতীন্দ্রবাবু একবার শেষ চেষ্টা করেন, "যেও না থেকে যাও"।
আদিত্য এবার অতীন্দ্রবাবুর পায়ে হাত দিয়ে একটা প্রণাম করে বলে "এবার আমাকে ছেড়ে দিন স্যার, আর আমাকে আটকে রাখবেন না আমি আর থাকতে পারবো না"
অতীন্দ্রবাবু এবার হাল ছেড়ে দেন "তুমি যখন ঠিকই করে নিয়েছো যে থাকবে না তখন আর আটকাবো না কোথায় যাবে কি করবে কিছু ঠিক করেছো?"
"না স্যার এখনো কিছু ঠিক করিনি দেখি জীবন কোথায় নিয়ে যায়"
"ওখানে যাবে?" ইঙ্গিতপূর্ণ প্রশ্ন করেন অতীন্দ্রবাবু।
"ওখানে আর আমার জায়গা নেই স্যার সেটা আপনি জানেন"
"শোনো তোমার অ্যাকাউন্টে আমি মাসে মাসে টাকা পাঠিয়ে দেবো তাতে."
"ওটি করবেন না, টাকা আমি নিতে পারবো না"
"আদিত্য.. তুমি"
"প্লিজ স্যার, আর ওই অ্যাকাউন্টের সমস্ত ডিটেইলস কার্ড চেক সহ রুমে ড্রয়ারে রাখা আছে, স্যার আপনি আর মা আমার জন্য যা করেছেন সেটা আমি কোনোদিন ভুলবো না কিন্তু আমি তো টাকার জন্য এখানে আসিনি তাহলে টাকা কেন নেবো? শুধু বাদশাকে নিয়ে যাচ্ছি কারণ এই অবলা প্রাণীটা আমাকে ছাড়া থাকতে পারবে না তাই ওকে নিয়ে যাচ্ছি"
"তোমার সাথে কি আর কোনোদিন দেখা হবে না?"
"জীবনে কার সাথে কি হবে সেটা আগে থেকে প্রেডিক্ট করা যায় না, জানি মা হয়তো আমাকে সহ্য করতে পারবেন না তবে উনি সুস্থ হলে ওনাকে আমার প্রণাম জানাবেন.. আরেকটা কথা এখানে আসার পরে আপনাদের সাথে যে ফ্যামিলি ফটোটা তুলেছিলাম সেটার একটা কপি আমি নিয়ে যাচ্ছি"
"যেখানেই থেকো ভালো থেকো, সুখে থেকো"অতীন্দ্রবাবুর চোখে জল আসে।
"ভালো আর সুখে থাকবো কি না জানিনা তবে বেঁচে থাকবো, আপনি আমাকে নতুন জীবন দিয়েছিলেন ওটাকে নিজে শেষ করে আপনাকে অপমান করবো না"
এইসময় শশাঙ্কবাবুকে এগিয়ে আসতে দেখে আদিত্য ওনাকে জিজ্ঞেস করে "স্যার আমি এখন ফ্রি তো?"
"অবশ্যই তুমি ফ্রী আর ওদেরও কঠিন শাস্তি হবে"
"নীলাদ্রি বাবু আপনি একবার বলেছিলেন যে আপনার বন্ধুর খুনীদের আপনি ছাড়বেন না নিজে শাস্তি দেবেন মনে আছে?"
"আছে, কিন্তু আমি আইনের রক্ষক, আইন ভাঙবো কিভাবে?"
"আইনের ফাঁকও আছে আর আপনি যেটা করবেন সেটা অন্যায় নয় বরং ওরা যদি কোনোভাবে বেঁচে যায় তাহলে সেটা আরও অনেক মানুষের জন্য খারাপ হবে" কথাটা বলে আদিত্য হাতটা বাড়িয়ে দেয় নীলাদ্রির উদ্দেশ্যে, দুজনে করমর্দন করে, তারপর অতীন্দ্রবাবুর উদ্দেশ্যে বলে "চলি স্যার, ভালো থাকবেন" বলে গাড়িতে উঠে পড়ে, গাড়িটি তৎক্ষণাৎ রওনা দিয়ে দেয়, পিছনে অতীন্দ্রবাবু, নীলাদ্রি আর শশাঙ্কবাবু তিনজনেই সেদিকে তাকিয়ে থাকেন, একটা সময় দূরে দিগন্তে নকল আদিত্যকে মিলিয়ে যায় গাড়িটা, সাথে অতীন্দ্রবাবুর দুচোখ থেকে জল গড়িয়ে পড়ে।
বি দ্র: "ধূসর পৃথিবী" একটা পার্ট এখানে শেষ, যারা গল্পটা প্রথম থেকে পড়েছেন এবং মনে রেখেছেন তাদের মনে হয়তো কিছু প্রশ্ন আছে যেটার উত্তর এখানে নেই, তাদের বলছি উত্তরগুলো দ্বিতীয় একটা পার্ট লিখে সেখানে দেবো ভেবেছি কিন্তু সেটা তখনই শুরু করবো যখন দেখবো এই পার্টটা ভালো রেসপন্স পাচ্ছে, নাহলে এখানেই ইতি। যদি লাইক রেপু নাও দিতে পারেন তবে অন্তত কমেন্ট করে রিভিউটা দেবেন।
I'm the King of Dark
&
I rule over all Devils
The following 15 users Like Monen2000's post:15 users Like Monen2000's post
• Arpon Saha, bad_boy, Boti babu, Bumba_1, ddey333, Jaguar the king, Jhonboy, kublai, Lajuklata, Matir_Pipre, MNHabib, nextpage, ppbhattadt, Thumbnails, Voboghure
Posts: 1,129
Threads: 0
Likes Received: 1,349 in 914 posts
Likes Given: 3,519
Joined: Apr 2022
Reputation:
144
যৌনতা ছাড়াও একটা ভালো থ্রিলার গল্প লেখা যাই তুমি তা দেখিয়ে দিয়েছো ভাই । কি বলবো যে জায়গাতে এনে প্রথম পর্ব শেষ করলে তা এক কথাই দুর্দান্ত হয়েছে। এক বছর আগের লেখা আর এখনকার লেখা পড়ে যে কেউ বলে দিতে পারবে তোমার লেখার ধার অনেক বেড়ে গেছে। ভালোবাসা রইলো সাথে আশীর্বাদ রইলো ভবিষ্যতে যেন আরো উৎকৃষ্ট মানের লেখা লিখতে পারো । লাস্ট একটা কথা বর্তমান xossipy চলমান থ্রিলার গল্প গুলির মধ্যে অন্যতম বেস্ট ছিল।
আমাকে আমার মত থাকতে দাও
Posts: 252
Threads: 0
Likes Received: 184 in 162 posts
Likes Given: 132
Joined: Dec 2021
Reputation:
0
কি আর বলবো আমার জীবনে পড়া বেস্ট গল্প এটি। অনুরোধ করছি এই গল্পের ২য় পার্ট দিয়েন প্লিজ প্লিজ প্লিজ।আর দাদা আপনি এভাবেই লিখে যান। জনপ্রিয় হবে কি না হবে সেটা ঈশ্বরের হাতে।
Posts: 928
Threads: 9
Likes Received: 1,804 in 406 posts
Likes Given: 939
Joined: Sep 2021
Reputation:
618
(27-03-2023, 01:41 AM)Boti babu Wrote: যৌনতা ছাড়াও একটা ভালো থ্রিলার গল্প লেখা যাই তুমি তা দেখিয়ে দিয়েছো ভাই । কি বলবো যে জায়গাতে এনে প্রথম পর্ব শেষ করলে তা এক কথাই দুর্দান্ত হয়েছে। এক বছর আগের লেখা আর এখনকার লেখা পড়ে যে কেউ বলে দিতে পারবে তোমার লেখার ধার অনেক বেড়ে গেছে। ভালোবাসা রইলো সাথে আশীর্বাদ রইলো ভবিষ্যতে যেন আরো উৎকৃষ্ট মানের লেখা লিখতে পারো । লাস্ট একটা কথা বর্তমান xossipy চলমান থ্রিলার গল্প গুলির মধ্যে অন্যতম বেস্ট ছিল। ধন্যবাদ ভাই
(27-03-2023, 02:59 AM)Arpon Saha Wrote: কি আর বলবো আমার জীবনে পড়া বেস্ট গল্প এটি। অনুরোধ করছি এই গল্পের ২য় পার্ট দিয়েন প্লিজ প্লিজ প্লিজ।আর দাদা আপনি এভাবেই লিখে যান। জনপ্রিয় হবে কি না হবে সেটা ঈশ্বরের হাতে।
ধন্যবাদ পাশে থাকার জন্য
জনপ্রিয় হোক বা না হোক কিন্তু যারা পড়ছেন তারা লাইক রেপু নাই দিল কিন্তু অন্তত কমেন্ট করে রিভিউ তো জানাতেই পারে, এটুকুও যদি না পাই তবে কি লিখতে ইচ্ছে হয় আপনিই বলুন।
I'm the King of Dark
&
I rule over all Devils
•
Posts: 18,206
Threads: 471
Likes Received: 65,248 in 27,653 posts
Likes Given: 23,682
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
গল্প নিয়ে নতুন কিছু বলার নেই।
এটা নিয়ে একটা সিনেমা বানানো হলে ফাটাফাটি হিট হবে !!
Posts: 928
Threads: 9
Likes Received: 1,804 in 406 posts
Likes Given: 939
Joined: Sep 2021
Reputation:
618
I'm the King of Dark
&
I rule over all Devils
•
|