Posts: 1,357
Threads: 2
Likes Received: 1,297 in 894 posts
Likes Given: 1,681
Joined: Mar 2022
Reputation:
80
(21-03-2023, 02:28 PM)Bumba_1 Wrote: শিবরাম অর্থাৎ শিব্রাম পেটুক প্রকৃতির মানুষ ছিলেন .. মিষ্টি খেতে ভীষণ ভালোবাসতেন। বিশেষ করে রসগোল্লা, রাবড়ি ইত্যাদি মিষ্টান্ন। খাবারের ব্যাপারে তিনি লাজ-লজ্জার ধার ধারতেন না এই স্বভাবটা অনেকটা তোমার মত। খাওয়ার ব্যাপারে বিশেষ করে নিমন্ত্রণ বাড়িতে তুমিও যেরকম লজ্জা নামক বস্তুটিকে বিসর্জন দিয়ে তবেই পদার্পণ করো।
Posts: 1,221
Threads: 2
Likes Received: 2,154 in 994 posts
Likes Given: 1,603
Joined: Jul 2021
Reputation:
639
(21-03-2023, 02:06 PM)Bumba_1 Wrote:
|| ফার্স্টক্লাস ||
শিবরাম চক্রবর্তীর জীবনেও প্রেম এসেছিল একদিন নীরবে। গ্রামের একটি কিশোরী মেয়ের সঙ্গে শিবরামের হাল্কা প্রেমের পরশ জেগেছিল। মেয়েটির নাম ছিল রিনি। শিবরাম মুখে কোনোদিন বলেননি, রিনি তোকে আমি ভালবাসি। ভালবাসা মুখে বলা হয়নি কোনোদিন। হৃদয় শুধু জেনেছিল।
শিবরাম সেইসময় স্কুলের ছাত্র। গোপনে স্বদেশী আন্দোলনের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছিলেন। রিনিও তখন কিশোরী। সেও সেইসময় শিবরামের সঙ্গে স্বদেশী আন্দোলনে অল্প-বিস্তর জড়িয়ে পড়েছিল। একদিন শিবরামের বাবা কলকাতা থেকে নতুন গুড়ের সন্দেশ আনলেন। শিবরাম বাড়ি থেকে লুকিয়ে রিনির জন্য সন্দেশ নিয়ে গেল, একসঙ্গে দু'জনে বসে খাবে বলে। রিনি শিবরামের হাতে দুটো সন্দেশ দেখেই সোজা মুখে পুরে দিল।
শিবরাম বলে ওঠে, "এ্যাই রিনি কি করলি? দুটোই মুখে পুরে দিলি? আমাকে একটাও দিলি না?"
রিনি তখন মুখের ভেতর থেকে একটা সন্দেশ বার করে শিবরামের মুখে সেই সন্দেশ পুরে দিলো।
হাত দিয়ে নয়। মুখে মুখ লাগিয়ে শিবরামের মুখের ভিতর রিনি সেই সন্দেশ পুরে দিয়েছিল। দুজনের ঠোঁটে ঠোঁট মিলে গেল। এ যেন সেলুলয়েডের বুকে আঁকা এক অপূর্ব রোমান্টিক মুহূর্ত!
শিবরাম আস্তে করে শুধু বলল, "রিনি! এই প্রথম আমি তোকে 'মিষ্টি চুমু' খেলাম।" তবে এই প্রথম আর এই শেষ চুমু। রিনি লজ্জায় দু'হাত দিয়ে মুখ ঢাকল।
শিবরাম বলেছিলেন, “আমার জীবনে তুই একমাত্র মেয়ে। তুই প্রথম আর তুই-ই শেষ”।
এর কিছুদিন পর স্বদেশী করার অপরাধে রিনি কলকাতায় জেলে এলো। শিবরামও একদিন স্বদেশী করার জন্য একই জেলে এলো। জেলে আবার দু'জনের মিলন হলো। কিন্তু কিছুদিন পর রিনি অন্য জেলে স্থানান্তরিত হয়ে গেলো। শিবরামের সঙ্গে আর জীবনে রিনির দেখা হলো না। শিবরামের প্রেম চিরতরে হারিয়ে গেলো!
এজন্যই হয়তো শিবরাম চক্রবর্তী জীবনে কোনোদিন বিয়ে করলেন না .. কে জানে জীবন যে বড়ই বিচিত্র..!
★★★★
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় তখন আনন্দবাজার-এ চাকরি করেন। একদিন বেলার দিকে এক সাহিত্যিক এসে খবর দিলেন শিবরামবাবুকে দেখলাম, অফিসের কাছেই ফুটপাথে চিৎ হয়ে শুয়ে আছেন। মনে হয় শরীরটরির...!’’
সর্বনাশ! সে কী কথা!
সুনীল সদলবলে ছুটলেন। গিয়ে দেখেন, সিল্কের পাঞ্জাবি আর ধুতি পরে শিবরাম টানটান শুয়ে রয়েছেন ফুটপাতে।
‘‘কী হল? শরীর খারাপ লাগছে?’’
‘‘না না, ফার্স্টক্লাস আছি। আসলে যেতে যেতে হঠাৎ মনে হল ফুটপাতে শুয়ে আকাশটাকে কেমন দেখতে লাগে একবার দেখাই যাক।’’
একটা ট্যাক্সি পেলেই চলে যাব..
শরীরটা কিন্তু সত্যিই ঠিক যাচ্ছিল না। স্মৃতি কমে আসছিল। কথাবার্তা অসংলগ্ন। শেষ জীবনে প্রায় কপর্দকহীন।
প্রায়ই বলতেন, ‘‘জিনিসপত্র সব বাঁধা হয়ে গেছে এবার একটা ট্যাক্সি পেলেই চলে যাব।’’
চিরকাল লোককে বিশ্বাস করেছেন আর বারবার ঠকেছেন। অনেক প্রকাশক ঠকিয়েছে।
এমনকী শেষদিকে সেই সময়ের রাজ্য সরকার এবং কয়েকটি সংস্থা মিলে তাঁর চিকিৎসা ও ভরণপোষণের জন্য যে মাসিক ছ’শো টাকা তারই এক পাড়াতুতো পরিচিতের কাছে পাঠাত, সেই টাকারও সঠিক ব্যবহার হত না।
শুকনো-রিক্ত চেহারা। অথচ কেমন আছেন জিজ্ঞাসা করলেই উত্তর ‘‘খাসা আছি। ফাইন আছি।’’
কোনও দিন কোনও অভিযোগ নেই কারও কাছে।
তারমধ্যে আবার একদিন ঘরে চোর ঢুকে শেষ পাঞ্জাবিটাও নিয়ে গেছিল, গেঞ্জি পরেই থাকতেন।
মুখে বলতেন, ‘‘দরকার কী? এই তো দিব্বি চলে যাচ্ছে গেঞ্জিতে।’’
হঠাৎ কয়েক দিনের প্রবল জ্বর। দুর্বল শরীরে টলতে টলতে বাথরুমে ঢুকেই সংজ্ঞা হারালেন।
সারারাত পড়ে রইলেন ওখানেই। পরদিন বেলায় খবর জানাজানি হতে ভর্তি করা হল হাসপাতালে।
১৯৮০ সালের ২৮ অগস্ট সকাল। হাসপাতালের বেডে আচ্ছন্ন বাড়ি থেকে পালিয়ে’র নায়ক।
ডাক্তারবাবু জিজ্ঞাসা করলেন, ‘‘শিবরামবাবু, এখন কেমন লাগছে শরীর?’’
‘‘ফার্স্টক্লাস।’’
জড়ানো গলায় তখনও একই উত্তর।
তার ঠিক পাঁচ মিনিট পরেই সেই অপেক্ষার অচেনা ট্যাক্সিতে চেপে বসলেন শিবরাম।
রেডিয়োতে সন্ধেবেলায় যখন সেই খবর ঘোষণা হচ্ছে, তখন হয়তো হর্ষবর্ধন আর গোবর্ধনের সঙ্গে চাঁদে জমি কেনা নিয়ে তুমুল ব্যস্ত তাঁদের স্রষ্টা..!
তথ্যসূত্রঃ- শিবরাম চক্রবর্তীর আত্মজীবনী মূলক উপন্যাস, "ঈশ্বর পৃথিবী ভালবাসা", "ভালবাসা পৃথিবী ঈশ্বর" এবং আরো কিছু লেখা।
সত্যিই মন ছুঁয়ে যাওয়ার মত একটি প্রতিবেদন এটি। কথায় বলে গেঁয়ো যোগী ভিখ পায় না , এই মহান লেখকের ক্ষেত্রেও এই কথাটাই খাটে। ভবিষ্যতে এই ধরনের লেখা আরো চাই।
Posts: 18,201
Threads: 471
Likes Received: 65,140 in 27,626 posts
Likes Given: 23,636
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,258
শিব্রামের গল্প যারা ছোটবেলায় পড়েনি তাদের শুধু বাল্যকাল নয় জীবন বৃথা বলে মনে করি।
Posts: 4,430
Threads: 7
Likes Received: 9,012 in 2,840 posts
Likes Given: 4,330
Joined: Oct 2019
Reputation:
3,216
(21-03-2023, 03:31 PM)Somnaath Wrote: এই স্বভাবটা অনেকটা তোমার মত। খাওয়ার ব্যাপারে বিশেষ করে নিমন্ত্রণ বাড়িতে তুমিও যেরকম লজ্জা নামক বস্তুটিকে বিসর্জন দিয়ে তবেই পদার্পণ করো।
সুগার-প্রেসার-কোলেস্টেরল .. এই ত্রিদেব যতদিন না ধরা পড়বে বা বলা ভালো আমাকে গ্রাস করবে ততদিন এই ভাবেই চলতে থাকবে আমার হ্যাংলামি।
(21-03-2023, 06:14 PM)ddey333 Wrote: শিব্রামের গল্প যারা ছোটবেলায় পড়েনি তাদের শুধু বাল্যকাল নয় জীবন বৃথা বলে মনে করি।
যথার্থ বলেছো দাদা
Posts: 4,430
Threads: 7
Likes Received: 9,012 in 2,840 posts
Likes Given: 4,330
Joined: Oct 2019
Reputation:
3,216
(21-03-2023, 05:12 PM)Sanjay Sen Wrote: সত্যিই মন ছুঁয়ে যাওয়ার মত একটি প্রতিবেদন এটি। কথায় বলে গেঁয়ো যোগী ভিখ পায় না , এই মহান লেখকের ক্ষেত্রেও এই কথাটাই খাটে। ভবিষ্যতে এই ধরনের লেখা আরো চাই।
সে তো বটেই আসলে আমরা কোন কালই গুণের কদর করতে জানি না। সেকালেও না আর একালেও না। তবে এই দুঃখ-কষ্টের মধ্যেও সেন্স অফ হিউমার মারাত্মক ছিলো শিবরামের। মুক্তোরাম স্ট্রিটের মেসে ঘরে থাকলেও শিবরাম দরজার কড়ার ভেতর শেকল দিয়ে তালা ঝুলিয়ে রাখতেন। একজন শিবরাম-ভক্ত দেখা করতে এসেছেন। তালা খুলে দিতে অনুরোধ করায় শিবরাম বললেন, ''এক দিকের কাঁধ ঢুকিয়ে কেতরে কেতরে ঢুকে পড়ো।''
সেইভাবে ঢোকার পর শিবরাম ভক্ত বললেন, ''এ ভাবে তালা লাগিয়েছেন আপনি! চোর তো চাইলেই ঢুকে পড়তে পারে!''
''তা পারে। কিন্তু বেরোবে কী করে? ভেতরে ঢোকা যায় ঠিকই, কিন্তু শিব্রাম চাবি দিয়ে তালা না খুলে দিলে বেরোনো যায় না, পাল্লাদুটো গায়ে চেপে বসে।" হাসতে হাসতে উত্তর দিয়েছিলেন তিনি।
Posts: 828
Threads: 3
Likes Received: 647 in 422 posts
Likes Given: 1,388
Joined: Dec 2022
Reputation:
50
good one
Posts: 4,430
Threads: 7
Likes Received: 9,012 in 2,840 posts
Likes Given: 4,330
Joined: Oct 2019
Reputation:
3,216
(21-03-2023, 09:12 PM)Chandan1 Wrote: good one
thank you
•
Posts: 445
Threads: 3
Likes Received: 11,639 in 2,448 posts
Likes Given: 4,988
Joined: Jan 2019
Reputation:
2,912
22-03-2023, 01:46 PM
(This post was last modified: 22-03-2023, 06:36 PM by Jupiter10. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
লেখা টা পড়লাম। শিবরাম চক্রবর্তীর যে ক্ষুদ্র প্রেমের মুহূর্ত তুলে ধরেছেন,প্রকৃত রূপে ওটাই আসল প্রেম। এর আগেও এই "সৃষ্টি" থ্রেডেও বহু ব্যক্তিত্বের জীবনের অনুকাহিনী তুলে ধরেছেন। সব ক'টায় হৃদয় বিদারক।অন্তরকে নাড়িয়ে দেয়।
আপনার এই লেখা প্রসঙ্গে একটা কথা বলতে চাই। কেউ একজন আমায় বলেছিল। লেখক হলে কি আর ধনী হওয়া যায়? লেখকদের জীবনই ওই রকম। অভাব,আকাল। কখনও প্রেমের। কখনও অর্থের। কখনও বা সম্মানের।
Posts: 6,108
Threads: 41
Likes Received: 11,938 in 4,125 posts
Likes Given: 5,306
Joined: Jul 2019
Reputation:
3,721
(22-03-2023, 01:46 PM)Jupiter10 Wrote: লেখা টা পড়লাম। শিবরাম চক্রবর্তীর যে ক্ষুদ্র প্রেমের মুহূর্ত তুলে ধরেছেন,প্রকৃত রূপে ওটাই আসল প্রেম। এর আগেও এই "সৃষ্টি" থ্রেডেও বহু ব্যক্তিত্বের জীবনের অনুকাহিনী তুলে ধরেছেন। সব ক'টায় হৃদয় বিদারক।অন্তরকে নাড়িয়ে দেয়।
আপনার এই লেখা প্রসঙ্গে একটা কথা বলতে চাই। কেউ একজন আমায় বলেছিল। লেখক হলে কি আর ধনী যায়? লেখকদের জীবনই ওই রকম। অভাব,আকাল। কখনও প্রেমের। কখনও অর্থের। কখনও বা সম্মানের।
দাদা আপনি কতটা এগ্রি করবেন জানিনা কিন্তু ক্রাইসিস তা সে কম হোক বাঁ বেশি কোথাও না কোথাও বুস্ট দেয় নিজেকে নতুন ভাবে চিনতে এবং অন্যের সামনে নিজের জীবন ফুটিয়ে তুলতে।
Posts: 445
Threads: 3
Likes Received: 11,639 in 2,448 posts
Likes Given: 4,988
Joined: Jan 2019
Reputation:
2,912
(22-03-2023, 02:34 PM)Baban Wrote: দাদা আপনি কতটা এগ্রি করবেন জানিনা কিন্তু ক্রাইসিস তা সে কম হোক বাঁ বেশি কোথাও না কোথাও বুস্ট দেয় নিজেকে নতুন ভাবে চিনতে এবং অন্যের সামনে নিজের জীবন ফুটিয়ে তুলতে।
হ্যাঁ, অবশ্যই সহমত বাবান দা। লেখকের জীবনই ওইরকম। এমন একখান পর্যায় আসে যখন বাহ্যিক দিক দিয়ে কিছুই পাওয়া যায়না। কোনো কিছুই হাসিল হয়না। তখন নিজের অন্তরে উঁকি দিতে হয়। চিন্তনে নিয়োজিত হতে হয়। তখনই নিজেকে নতুন ভাবে চেনা যায় এবং অন্যের সামনে নিজের জীবনকে ফুটিয়ে তোলা হয়।
Posts: 4,430
Threads: 7
Likes Received: 9,012 in 2,840 posts
Likes Given: 4,330
Joined: Oct 2019
Reputation:
3,216
(22-03-2023, 01:46 PM)Jupiter10 Wrote: লেখা টা পড়লাম। শিবরাম চক্রবর্তীর যে ক্ষুদ্র প্রেমের মুহূর্ত তুলে ধরেছেন,প্রকৃত রূপে ওটাই আসল প্রেম। এর আগেও এই "সৃষ্টি" থ্রেডেও বহু ব্যক্তিত্বের জীবনের অনুকাহিনী তুলে ধরেছেন। সব ক'টায় হৃদয় বিদারক।অন্তরকে নাড়িয়ে দেয়।
আপনার এই লেখা প্রসঙ্গে একটা কথা বলতে চাই। কেউ একজন আমায় বলেছিল। লেখক হলে কি আর ধনী যায়? লেখকদের জীবনই ওই রকম। অভাব,আকাল। কখনও প্রেমের। কখনও অর্থের। কখনও বা সম্মানের।
একদম যথার্থ বলেছেন, আপনার কথা শুনে আমার মনটাও ভারাক্রান্ত হয়ে গেলো। তাই কিছুটা হাল্কা করার করছি। শিবরামের বাবা ছোটবেলায় শিবরামের বিভিন্ন রকমের বই পড়ার নেশা দেখে খুশি হয়ে বলেছিলেন, "গ্রন্থি ভবতি পণ্ডিতঃ" অর্থাৎ যারা গ্রন্থ নিয়ে পড়ে থাকে, তারাই পণ্ডিত হয়।
এই শুনে শিবরামের মা বলেন, "ঠিকই বলেছেন তোর বাবা। যারা বই মুখে করে পড়ে থাকে সব সময়, তাদের সবকিছুই পণ্ড হয়ে যায়, সেইজন্যেই তারা পণ্ডিত।"
Posts: 4,430
Threads: 7
Likes Received: 9,012 in 2,840 posts
Likes Given: 4,330
Joined: Oct 2019
Reputation:
3,216
23-03-2023, 10:07 PM
(This post was last modified: 24-03-2023, 10:01 AM by Bumba_1. Edited 2 times in total. Edited 2 times in total.)
দুপুরের দিকে বৃষ্টি হলে রাস্তাঘাট কেমন যেন শুনশান হয়ে যায়! আকাশে ভার হয়ে ঝুলে থাকা মেঘ, ভেজা রাস্তা, দুপাশের ঘরবাড়ি, বন্ধ রাখা জানলা .. সবকিছুই যেন নিঃস্তব্ধ। একটা কাক ডেকে উঠলো কোথাও। অনেকক্ষণ ধরে কানের কাছে একটা বাঁশির মতো শব্দ শুনছিলো সঞ্জীব। আকাশের আলো অনেকটাই মরে এসেছে। আষাঢ়ের বড় বেলা, কিন্তু হলে কি হবে! আজ সকাল থেকেই আকাশ মেঘলা ছিলো। সঞ্জীবের মা অঞ্জলি দেবী অনেক করে বলেছিলেন, "পড়াতে যাচ্ছিস সেই ফুলবোনাতে, ছাতাটা নিয়ে যাস মনে করে।"
কিন্তু কে কার কথা শোনে! অকারণে জেদ করেই একরকম, ছাতা ছাড়াই প্যাডেলে চাপ দিয়েছিল সে। 'মাসের দশ তারিখ হয়ে গেলো, তাও শালারা এখনও এমাসের মাইনেটা দিলো না .. এরকম করলে চলে!' কথাগুলো ভাবতে ভাবতে সাইকেল চালাচ্ছিলো সঞ্জীব। এইসময় উত্তর-পশ্চিম থেকে একটা গুমগুম করে শব্দ হলো, আর বৃষ্টিটাও আর একটু চেপে এলো। সাইকেল থেকে নেমে পড়লো সে। আপাতত গোবিন্দদের বাড়ি পড়াতে যাওয়ার ভাবনাটা পাশে রেখে সে ভাবছিলো .. নাহ্ , ভাবা আর গেলো না। কারণ ফের খসখসে বাঁশির শব্দটা শুনলো সে।
আর এবার...! হ্যাঁ ঠিকই তো! একটা মিহি কণ্ঠস্বর যেন! কিন্তু এই নির্জন শেষ বিকেলে একটা পুরোনো বন্ধ দোকানঘরের দাওয়ায় দাঁড়িয়ে সে ভূতের গলা শুনবে নাকি? "হ্যাঁ ছার (পড়ুন স্যার) শুনবেন বই কি .." বেশ কষ্টে কে যেন অত্যন্ত মিহি স্বরে কথাগুলো বলে উঠলো।
এবার অবাক হওয়ার পালা সঞ্জীবের। কারণ সেই বাঁশির মতো শব্দটাও সাথে সাথে যেন শুনলো সে। "হ্যাঁ, ওই বাঁশি বাজাতে গিয়েই তো যত বিপত্তি!" সঞ্জীব আবার শুনতে পেলো সেই আওয়াজ। "তখন থেকে কইচি, ছার এট্টু আগুন দ্যান, এট্টু আগুন দ্যান, শুনতেই পান না নাকি?"
এবার সঞ্জীব বেশ রেগে যায়, "তুমি কে হে? আর আমার কাছে আগুন আছে কি নেই তুমি কি করে জানলে? সর্বোপরি আমার মনের কথাগুলো, অর্থাৎ যেগুলো আমি ভাবছি সেগুলো তুমি অবলীলায় পড়ে নিয়ে বলছো কি করে?"
"জানি ছার, আমরা সব জানি ! ইয়ে পাব্লিক হ্যায় না .. ইয়ে সব জানতা হ্যায়, শোনেন নাই?" পুনরায় শোনা গেলো কণ্ঠস্বরটি।
"বিলক্ষণ শুনেছি ! তবে তুমি কিরকম পাবলিক যে দেখা যায় না?" বিরক্তি প্রকাশ করে জিজ্ঞাসা করলো সঞ্জীব।
"আজ্ঞে ছার,আমরা তো ছায়াছবি নই যে দেকবেন! আমরা হলুম গিয়ে যাকে বলে ইয়ে .." কথাটা শুনে এবার থমকালো সঞ্জীব, "ইয়ে মানে?" তারপর কিছু একটা ভেবে গলাটা একটু ঝেড়ে নিয়ে বললো, "তা তোমাদের তো আগুনে বড় ভয় শুনেছি, আগুন চাইছো যে বড়?"
দু'বার বাঁশি ফুক ফুক করে উঠলো। সঞ্জীব বুঝতে পারলো অশরীরীটি হাসলো বোধহয়! ফের শোনা গেলো "একটা সিগ্রেট খাবো ছার, এখন আমরা বিড়ি-সিগ্রেট সব খাই, আগুনে কিস্যু হয় না"
"বটে?" বিস্ময় প্রকাশ করে উঠলো সঞ্জীব। "হ্যাঁ ছার, এখন তো দেশে সবাই উল্টো নিয়মে চলছে, তা আমরাই বা কমতি কিসে?" উত্তর দিলো অশরীরী।
দেশের কথা, রাজ্যের কথা, রাজনীতির কথা .. পাছে অন্যদিকে ব্যাপারটা ঘুরে যায়, তাই অগত্যা ব্যাগ হাতড়ে লাইটারটা জ্বালালো সঞ্জীব। তারপর অবাক হয়ে দেখলো, আগুন থেকে একটা ফুলকি যেন বেরিয়ে গিয়ে একটু তফাতে গিয়ে স্থির হলো, তারপর মাঝে মাঝে ধোঁয়া উড়তে লাগলো।
এদিকে বৃষ্টি থামেনি এখনও। উপরি পাওনা সন্ধ্যে নামছে দ্রুত। লোকজন সে এরমধ্যে কাছেপিঠে দেখেও নি। ভয় ঠিক নয়, বরং একধরণের অস্বস্তি কাজ করছিলো সঞ্জীবের ভেতর। কয়েকহাত দূরে এইরকম পরিবেশে যদি এমন একজন মনের সুখে সিগারেট খায়, যার শরীর দৃষ্টিগোচর হয় না! তবে সেটা আর যাই হোক, সুখকর হতে পারে না কারও কাছে।
"একটা কথা বলি ছার ?" কণ্ঠস্বরটি শুনে কিছুটা চমকে উঠলো সঞ্জীব। তারপর নিজেকে সামলে নিয়ে বললো "বলো.."
"বাদলাটা ঠিক সহ্যি হয় না ছার তাই সিগ্রেটখান ধরালাম .. " ভূতের আবার বৃষ্টি-বাদল সহ্য হয় না! আরোও কত কিই যে দেখতে হবে! হাসি চেপে যতটা পারা যায় গম্ভীর হয়ে সঞ্জীব বললো, "এটা তো আসল কথা নয়! ঝেড়ে কাশো দেখি!"
কণ্ঠ বলতে থাকে " নদী পেরিয়ে পাশের জেলাতে আমার বাড়ি ছার। বৌ মরেছে আঁতুড়ে ছেলেটাকে রেখেই। গেরামের নেতাদের ন্যাজধরা হয়ে ঘুরতুম আর ভোটের সময় ডিউটি ছিলো বাঁধাধরা.."
কথা ফের অন্যদিকে ঘুরে যায় মনে করে সঞ্জীব বললো, "সে না হয় হলো, তারপর?"
অশরীরী বলতে শুরু করলো, " দাঁড়ান ছার, অত তাড়াহুড়ো করলে চলে ? যাই হোক ছার, ওই ডিউটি করতে গিয়েই তো পরাণ বেরিয়ে গেলো। অপোজিছন ছেলেরা ডিউটি দেখতে পেয়ে জানলা দিয়ে গুলি ছুঁড়লো। গলার সাঁকি ফুটো হয়ে গেলো। সেই থেকে হাওয়া হয়ে ঘুরছি .."
বাঁশির আওয়াজের রহস্যটা এতক্ষণে পরিষ্কার হলো সঞ্জীবের কাছে। বৃষ্টির বেগ কমছে, এখানে আর বেশিক্ষণ অপেক্ষা করা যাবে না। "থেমে গেলে যে বড়?" তাড়া দেয় সঞ্জীব।
"ছেলেটার কথা ভেবে কষ্ট হয় ছার, সামনের ভাদ্রে ছ'য়ে পড়বে। একলা দিদিমার কাছে থাকে। নেকাপড়া মোটে করে না ছার ! খালি গুলতানি .." এইটুকু বলে আবার থেমে যায় কণ্ঠ।
"তো আমি কি করবো?" বিস্মিত কন্ঠে জিজ্ঞাসা করে সঞ্জীব।
"বলছিলাম কি ছার, ছেলের আমার মাতা ভালো" বাঁশিকণ্ঠে যেন দ্বিধা জড়ায়। ইঙ্গিতটা কিছুটা পরিষ্কার হয় সঞ্জীবের কাছে। কণ্ঠ এবার বলে ওঠে "ছেলেটাকে পড়ান ছার, এটুকুই বলতে চাইচি। দিদিমাটা মরে গেলে কি হবে জানি না। তবে যদ্দিন আচে নেকাপড়াটা তো করুক। ওই পাশের গেরাম ফুলবোনাতেই আমার শ্বশুরবাড়ি, ওকেনেই তারা থাকে।"
কিছু একটা বলতে গিয়েও থেমে যায় সঞ্জীব। অশরীরী বলতে থাকে, " ছেলেটা বক্কেশ্বর হলে কি হবে .. বুদ্দি আছে। ওর মায়ের বেরেনটা পেয়েচে কিনা! একটা গরিব ছেলেকে বিনি পয়সায় না হয় এট্টু সাহায্যিই করলেন! আমি কতা দিচ্চি ওকে নেকাপড়া করাতে আপনার ভালোই লাগবে। আপনার সোন্দর মুকখান জ্বলজ্বল করবে .."
ছেলেমেয়ের জন্য বাবা-মা যে মরেও শান্তি পায় না, কথাগুলো শোনার পর সেটা উপলব্ধি করতে পারে সঞ্জীব। ঠিক সেই মুহূর্তে পিতৃমাতৃহীন অসহায় ছেলেটির প্রতি একটা অজানা টান অনুভব করে সে। "ঠিক আছে .. পড়াবো।" মুচকি হেসে এইটুকু বলে বাঁশিকণ্ঠকে আশ্বাস দিয়ে সন্ধ্যের অন্ধকারে প্যাডেলে চাপ দিলো সঞ্জীব। আকাশে এখন অনেক তারা। ফুলবোনাতে পৌঁছাতে মিনিট দশ-পনেরো লাগবে।
The following 12 users Like Bumba_1's post:12 users Like Bumba_1's post
• Baban, bad_boy, Bichitro, Chandan, ddey333, indecentindi, Jupiter10, Mampi, Monen2000, Sanjay Sen, Somnaath, sudipto-ray
Posts: 18,201
Threads: 471
Likes Received: 65,140 in 27,626 posts
Likes Given: 23,636
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,258
অসাধারণ , মুড পাল্টে দেয় এসব লেখা।
Posts: 828
Threads: 3
Likes Received: 647 in 422 posts
Likes Given: 1,388
Joined: Dec 2022
Reputation:
50
great concept bhooter golper moddhyeo je erakam fun, humour and social message thakte pare, seta tomar golpo na porle jantei partam na
Posts: 4,430
Threads: 7
Likes Received: 9,012 in 2,840 posts
Likes Given: 4,330
Joined: Oct 2019
Reputation:
3,216
(23-03-2023, 10:55 PM)ddey333 Wrote: অসাধারণ , মুড পাল্টে দেয় এসব লেখা।
অনেক ধন্যবাদ দাদা
(23-03-2023, 11:21 PM)Chandan1 Wrote: great concept bhooter golper moddhyeo je erakam fun, humour and social message thakte pare, seta tomar golpo na porle jantei partam na
তোমার এইরকম মন্তব্য পেয়ে আমি আপ্লুত , অসংখ্য ধন্যবাদ চন্দন ভাইয়া
Posts: 1,221
Threads: 2
Likes Received: 2,154 in 994 posts
Likes Given: 1,603
Joined: Jul 2021
Reputation:
639
(23-03-2023, 11:21 PM)Chandan1 Wrote: great concept bhooter golper moddhyeo je erakam fun, humour and social message thakte pare, seta tomar golpo na porle jantei partam na
ভূত বা অশরীরী যাই বলা হোক না কেন, আমার ধারণা এখানে সেটা শুধুমাত্র symbolic , গল্পটাকে আকর্ষক করার জন্য হয়তো দেওয়া হয়েছে। তাই এখানে ভুতুড়ে গল্পের কোন ব্যাপার নেই। আমার মনে হয় এটি একটি আদ্যোপান্ত সামাজিক গল্প, যেখানে বর্তমান সামাজিক পরিস্থিতির প্রেক্ষাপট তুলে ধরা হয়েছে। রাজনৈতিক হিংসার শিকার হয়ে এরকম কত পরিবার অভিভাবকহীন হয়ে যাচ্ছে। যাদের সন্তান এবং পরিবার খড়কুটোর মত ভেসে যাচ্ছে যত্রতত্র। ক'জন সঞ্জীব আর তাদের খবর রাখে!
Posts: 1,357
Threads: 2
Likes Received: 1,297 in 894 posts
Likes Given: 1,681
Joined: Mar 2022
Reputation:
80
(24-03-2023, 12:10 PM)Sanjay Sen Wrote:
ভূত বা অশরীরী যাই বলা হোক না কেন, আমার ধারণা এখানে সেটা শুধুমাত্র symbolic , গল্পটাকে আকর্ষক করার জন্য হয়তো দেওয়া হয়েছে। তাই এখানে ভুতুড়ে গল্পের কোন ব্যাপার নেই। আমার মনে হয় এটি একটি আদ্যোপান্ত সামাজিক গল্প, যেখানে বর্তমান সামাজিক পরিস্থিতির প্রেক্ষাপট তুলে ধরা হয়েছে। রাজনৈতিক হিংসার শিকার হয়ে এরকম কত পরিবার অভিভাবকহীন হয়ে যাচ্ছে। যাদের সন্তান এবং পরিবার খড়কুটোর মত ভেসে যাচ্ছে যত্রতত্র। ক'জন সঞ্জীব আর তাদের খবর রাখে!
সহমত দুর্দান্ত বিশ্লেষণ
Posts: 1,357
Threads: 2
Likes Received: 1,297 in 894 posts
Likes Given: 1,681
Joined: Mar 2022
Reputation:
80
(23-03-2023, 10:07 PM)Bumba_1 Wrote:
দুপুরের দিকে বৃষ্টি হলে রাস্তাঘাট কেমন যেন শুনশান হয়ে যায়! আকাশে ভার হয়ে ঝুলে থাকা মেঘ, ভেজা রাস্তা, দুপাশের ঘরবাড়ি, বন্ধ রাখা জানলা .. সবকিছুই যেন নিঃস্তব্ধ। একটা কাক ডেকে উঠলো কোথাও। অনেকক্ষণ ধরে কানের কাছে একটা বাঁশির মতো শব্দ শুনছিলো সঞ্জীব। আকাশের আলো অনেকটাই মরে এসেছে। আষাঢ়ের বড় বেলা, কিন্তু হলে কি হবে! আজ সকাল থেকেই আকাশ মেঘলা ছিলো। সঞ্জীবের মা অঞ্জলি দেবী অনেক করে বলেছিলেন, "পড়াতে যাচ্ছিস সেই ফুলবোনাতে, ছাতাটা নিয়ে যাস মনে করে।"
কিন্তু কে কার কথা শোনে! অকারণে জেদ করেই একরকম, ছাতা ছাড়াই প্যাডেলে চাপ দিয়েছিল সে। 'মাসের দশ তারিখ হয়ে গেলো, তাও শালারা এখনও এমাসের মাইনেটা দিলো না .. এরকম করলে চলে!' কথাগুলো ভাবতে ভাবতে সাইকেল চালাচ্ছিলো সঞ্জীব। এইসময় উত্তর-পশ্চিম থেকে একটা গুমগুম করে শব্দ হলো, আর বৃষ্টিটাও আর একটু চেপে এলো। সাইকেল থেকে নেমে পড়লো সে। আপাতত গোবিন্দদের বাড়ি পড়াতে যাওয়ার ভাবনাটা পাশে রেখে সে ভাবছিলো .. নাহ্ , ভাবা আর গেলো না। কারণ ফের খসখসে বাঁশির শব্দটা শুনলো সে।
আর এবার...! হ্যাঁ ঠিকই তো! একটা মিহি কণ্ঠস্বর যেন! কিন্তু এই নির্জন শেষ বিকেলে একটা পুরোনো বন্ধ দোকানঘরের দাওয়ায় দাঁড়িয়ে সে ভূতের গলা শুনবে নাকি? "হ্যাঁ ছার (পড়ুন স্যার) শুনবেন বই কি .." বেশ কষ্টে কে যেন অত্যন্ত মিহি স্বরে কথাগুলো বলে উঠলো।
এবার অবাক হওয়ার পালা সঞ্জীবের। কারণ সেই বাঁশির মতো শব্দটাও সাথে সাথে যেন শুনলো সে। "হ্যাঁ, ওই বাঁশি বাজাতে গিয়েই তো যত বিপত্তি!" সঞ্জীব আবার শুনতে পেলো সেই আওয়াজ। "তখন থেকে কইচি, ছার এট্টু আগুন দ্যান, এট্টু আগুন দ্যান, শুনতেই পান না নাকি?"
এবার সঞ্জীব বেশ রেগে যায়, "তুমি কে হে? আর আমার কাছে আগুন আছে কি নেই তুমি কি করে জানলে? সর্বোপরি আমার মনের কথাগুলো, অর্থাৎ যেগুলো আমি ভাবছি সেগুলো তুমি অবলীলায় পড়ে নিয়ে বলছো কি করে?"
"জানি ছার, আমরা সব জানি ! ইয়ে পাব্লিক হ্যায় না .. ইয়ে সব জানতা হ্যায়, শোনেন নাই?" পুনরায় শোনা গেলো কণ্ঠস্বরটি।
"বিলক্ষণ শুনেছি ! তবে তুমি কিরকম পাবলিক যে দেখা যায় না?" বিরক্তি প্রকাশ করে জিজ্ঞাসা করলো সঞ্জীব।
"আজ্ঞে ছার,আমরা তো ছায়াছবি নই যে দেকবেন! আমরা হলুম গিয়ে যাকে বলে ইয়ে .." কথাটা শুনে এবার থমকালো সঞ্জীব, "ইয়ে মানে?" তারপর কিছু একটা ভেবে গলাটা একটু ঝেড়ে নিয়ে বললো, "তা তোমাদের তো আগুনে বড় ভয় শুনেছি, আগুন চাইছো যে বড়?"
দু'বার বাঁশি ফুক ফুক করে উঠলো। সঞ্জীব বুঝতে পারলো অশরীরীটি হাসলো বোধহয়! ফের শোনা গেলো "একটা সিগ্রেট খাবো ছার, এখন আমরা বিড়ি-সিগ্রেট সব খাই, আগুনে কিস্যু হয় না"
"বটে?" বিস্ময় প্রকাশ করে উঠলো সঞ্জীব। "হ্যাঁ ছার, এখন তো দেশে সবাই উল্টো নিয়মে চলছে, তা আমরাই বা কমতি কিসে?" উত্তর দিলো অশরীরী।
দেশের কথা, রাজ্যের কথা, রাজনীতির কথা .. পাছে অন্যদিকে ব্যাপারটা ঘুরে যায়, তাই অগত্যা ব্যাগ হাতড়ে লাইটারটা জ্বালালো সঞ্জীব। তারপর অবাক হয়ে দেখলো, আগুন থেকে একটা ফুলকি যেন বেরিয়ে গিয়ে একটু তফাতে গিয়ে স্থির হলো, তারপর মাঝে মাঝে ধোঁয়া উড়তে লাগলো।
এদিকে বৃষ্টি থামেনি এখনও। উপরি পাওনা সন্ধ্যে নামছে দ্রুত। লোকজন সে এরমধ্যে কাছেপিঠে দেখেও নি। ভয় ঠিক নয়, বরং একধরণের অস্বস্তি কাজ করছিলো সঞ্জীবের ভেতর। কয়েকহাত দূরে এইরকম পরিবেশে যদি এমন একজন মনের সুখে সিগারেট খায়, যার শরীর দৃষ্টিগোচর হয় না! তবে সেটা আর যাই হোক, সুখকর হতে পারে না কারও কাছে।
"একটা কথা বলি ছার ?" কণ্ঠস্বরটি শুনে কিছুটা চমকে উঠলো সঞ্জীব। তারপর নিজেকে সামলে নিয়ে বললো "বলো.."
"বাদলাটা ঠিক সহ্যি হয় না ছার তাই সিগ্রেটখান ধরালাম .. " ভূতের আবার বৃষ্টি-বাদল সহ্য হয় না! আরোও কত কিই যে দেখতে হবে! হাসি চেপে যতটা পারা যায় গম্ভীর হয়ে সঞ্জীব বললো, "এটা তো আসল কথা নয়! ঝেড়ে কাশো দেখি!"
কণ্ঠ বলতে থাকে " নদী পেরিয়ে পাশের জেলাতে আমার বাড়ি ছার। বৌ মরেছে আঁতুড়ে ছেলেটাকে রেখেই। গেরামের নেতাদের ন্যাজধরা হয়ে ঘুরতুম আর ভোটের সময় ডিউটি ছিলো বাঁধাধরা.."
কথা ফের অন্যদিকে ঘুরে যায় মনে করে সঞ্জীব বললো, "সে না হয় হলো, তারপর?"
অশরীরী বলতে শুরু করলো, " দাঁড়ান ছার, অত তাড়াহুড়ো করলে চলে ? যাই হোক ছার, ওই ডিউটি করতে গিয়েই তো পরাণ বেরিয়ে গেলো। অপোজিছন ছেলেরা ডিউটি দেখতে পেয়ে জানলা দিয়ে গুলি ছুঁড়লো। গলার সাঁকি ফুটো হয়ে গেলো। সেই থেকে হাওয়া হয়ে ঘুরছি .."
বাঁশির আওয়াজের রহস্যটা এতক্ষণে পরিষ্কার হলো সঞ্জীবের কাছে। বৃষ্টির বেগ কমছে, এখানে আর বেশিক্ষণ অপেক্ষা করা যাবে না। "থেমে গেলে যে বড়?" তাড়া দেয় সঞ্জীব।
"ছেলেটার কথা ভেবে কষ্ট হয় ছার, সামনের ভাদ্রে ছ'য়ে পড়বে। একলা দিদিমার কাছে থাকে। নেকাপড়া মোটে করে না ছার ! খালি গুলতানি .." এইটুকু বলে আবার থেমে যায় কণ্ঠ।
"তো আমি কি করবো?" বিস্মিত কন্ঠে জিজ্ঞাসা করে সঞ্জীব।
"বলছিলাম কি ছার, ছেলের আমার মাতা ভালো" বাঁশিকণ্ঠে যেন দ্বিধা জড়ায়। ইঙ্গিতটা কিছুটা পরিষ্কার হয় সঞ্জীবের কাছে। কণ্ঠ এবার বলে ওঠে "ছেলেটাকে পড়ান ছার, এটুকুই বলতে চাইচি। দিদিমাটা মরে গেলে কি হবে জানি না। তবে যদ্দিন আচে নেকাপড়াটা তো করুক। ওই পাশের গেরাম ফুলবোনাতেই আমার শ্বশুরবাড়ি, ওকেনেই তারা থাকে।"
কিছু একটা বলতে গিয়েও থেমে যায় সঞ্জীব। অশরীরী বলতে থাকে, " ছেলেটা বক্কেশ্বর হলে কি হবে .. বুদ্দি আছে। ওর মায়ের বেরেনটা পেয়েচে কিনা! একটা গরিব ছেলেকে বিনি পয়সায় না হয় এট্টু সাহায্যিই করলেন! আমি কতা দিচ্চি ওকে নেকাপড়া করাতে আপনার ভালোই লাগবে। আপনার সোন্দর মুকখান জ্বলজ্বল করবে .."
ছেলেমেয়ের জন্য বাবা-মা যে মরেও শান্তি পায় না, কথাগুলো শোনার পর সেটা উপলব্ধি করতে পারে সঞ্জীব। ঠিক সেই মুহূর্তে পিতৃমাতৃহীন অসহায় ছেলেটির প্রতি একটা অজানা টান অনুভব করে সে। "ঠিক আছে .. পড়াবো।" মুচকি হেসে এইটুকু বলে বাঁশিকণ্ঠকে আশ্বাস দিয়ে সন্ধ্যের অন্ধকারে প্যাডেলে চাপ দিলো সঞ্জীব। আকাশে এখন অনেক তারা। ফুলবোনাতে পৌঁছাতে মিনিট দশ-পনেরো লাগবে।
ভৌতিক আঙ্গিকে, অথচ একদম অন্য সাধের গল্প এটি। মন ছুঁয়ে গেল বড়ভাই। শুধু একটাই কথা বলব, অশরীরী সঞ্জীবের কাছ থেকে সিগারেট চেয়ে খেয়েছে ঠিক কথা, কিন্তু প্রচ্ছদে সিগারেটের ব্যবহার করাটা বোধহয় উচিত হয়নি। কথাটা বলছি এই কারণে, প্রচ্ছদটা দেখে প্রথমে অনেকেরই মনে হতে পারে গল্পের নাম টান, তার উপর সিগারেট থেকে ভৌতিকরূপী ধোঁয়া নির্গত হচ্ছে! তার মানে সাইকেল চালানো লোকটা নিশ্চয়ই ধোঁয়া টানতে টানতে মরেছে একটু মজা করলাম। তবে ছোট হলেও গল্পটা অসাধারণ।
Posts: 1,221
Threads: 2
Likes Received: 2,154 in 994 posts
Likes Given: 1,603
Joined: Jul 2021
Reputation:
639
(24-03-2023, 02:47 PM)Somnaath Wrote: সহমত দুর্দান্ত বিশ্লেষণ
(24-03-2023, 02:49 PM)Somnaath Wrote: ভৌতিক আঙ্গিকে, অথচ একদম অন্য সাধের গল্প এটি। মন ছুঁয়ে গেল বড়ভাই। শুধু একটাই কথা বলব, অশরীরী সঞ্জীবের কাছ থেকে সিগারেট চেয়ে খেয়েছে ঠিক কথা, কিন্তু প্রচ্ছদে সিগারেটের ব্যবহার করাটা বোধহয় উচিত হয়নি। কথাটা বলছি এই কারণে, প্রচ্ছদটা দেখে প্রথমে অনেকেরই মনে হতে পারে গল্পের নাম টান, তার উপর সিগারেট থেকে ভৌতিকরূপী ধোঁয়া নির্গত হচ্ছে! তার মানে সাইকেল চালানো লোকটা নিশ্চয়ই ধোঁয়া টানতে টানতে মরেছে একটু মজা করলাম। তবে ছোট হলেও গল্পটা অসাধারণ।
নাহ্ , আমি মনে করি একদম perfect poster হয়েছে।
Posts: 4,430
Threads: 7
Likes Received: 9,012 in 2,840 posts
Likes Given: 4,330
Joined: Oct 2019
Reputation:
3,216
(24-03-2023, 12:10 PM)Sanjay Sen Wrote:
ভূত বা অশরীরী যাই বলা হোক না কেন, আমার ধারণা এখানে সেটা শুধুমাত্র symbolic , গল্পটাকে আকর্ষক করার জন্য হয়তো দেওয়া হয়েছে। তাই এখানে ভুতুড়ে গল্পের কোন ব্যাপার নেই। আমার মনে হয় এটি একটি আদ্যোপান্ত সামাজিক গল্প, যেখানে বর্তমান সামাজিক পরিস্থিতির প্রেক্ষাপট তুলে ধরা হয়েছে। রাজনৈতিক হিংসার শিকার হয়ে এরকম কত পরিবার অভিভাবকহীন হয়ে যাচ্ছে। যাদের সন্তান এবং পরিবার খড়কুটোর মত ভেসে যাচ্ছে যত্রতত্র। ক'জন সঞ্জীব আর তাদের খবর রাখে!
bravo bravo কি analysis করলে গুরুদেব! একদম আমার মনের কথাগুলোই লিখেছো।
(24-03-2023, 02:49 PM)Somnaath Wrote: ভৌতিক আঙ্গিকে, অথচ একদম অন্য সাধের গল্প এটি। মন ছুঁয়ে গেল বড়ভাই। শুধু একটাই কথা বলব, অশরীরী সঞ্জীবের কাছ থেকে সিগারেট চেয়ে খেয়েছে ঠিক কথা, কিন্তু প্রচ্ছদে সিগারেটের ব্যবহার করাটা বোধহয় উচিত হয়নি। কথাটা বলছি এই কারণে, প্রচ্ছদটা দেখে প্রথমে অনেকেরই মনে হতে পারে গল্পের নাম টান, তার উপর সিগারেট থেকে ভৌতিকরূপী ধোঁয়া নির্গত হচ্ছে! তার মানে সাইকেল চালানো লোকটা নিশ্চয়ই ধোঁয়া টানতে টানতে মরেছে একটু মজা করলাম। তবে ছোট হলেও গল্পটা অসাধারণ।
অসংখ্য ধন্যবাদ ছোটভাই। পরেরবার থেকে প্রচ্ছদ তৈরি করার আগে তোমাকে অবশ্যই একবার জিজ্ঞাসা করে নেবো।
|