Thread Rating:
  • 57 Vote(s) - 3.09 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
WRITER'S SPECIAL ধুম্রগড় রহস্যে বড়বৌদি (চতুর্থ পর্ব প্রকাশিত)
#1
Wink 
মহাবীর্যের আগমণ বার্তা

২৭শে ফাল্গুন, ১৪২৯



"একটি আছে দুষ্টু মেয়ে, / একটি ভারি শান্ত, / একটি মিঠে দখিন হাওয়া, /  আরেকটি দুর্দান্ত" — ছোটবেলায় এ কবিতা পড়েনি এমন লোক মেলা ভার! কিন্তু সেই কবিতায় বলা একজনেরই ভিন্ন ভিন্ন সত্ত্বা যদি বাস্তবেও আসে তবে কেমন হয়! নাক সিঁটকালে তো হবে না, ভাল হোক বা খারাপ আমার সাথে কিন্তু সেটাই ঘটেছে! একই আমি'র দুই ভিন্ন ভিন্ন সত্ত্বার মহাদ্বন্দ্ব! বৌদির চুমু হামি শীর্ষক একটি আদ্যন্ত যৌন কাহিনী লেখার চেষ্টায় ব্রতী হওয়া থেকেই বোধহয় সেটার সূচনা! তারপর থেকে যতবারই আমি কোন যৌনতা নির্ভর কাহিনী লিখতে গেছি প্রতিবার কেউ হাতটা টেনে ধরেছে। কলম সরতে চাইলেও হাত নড়ে না, এদিকে মাথার ভিতরে প্লট গিজগিজ করছে, নিশপিশ করছে আঙুল লিখবার জন্য! একই অবস্থা হচ্ছে যৌনতাগৌণ কাহিনী লিখতে গেলেও, কেউ যেন মহাবীর্য্যকে এগুতে দিচ্ছে না! নিজের ভিতরের হরি আর হরের এমন দ্বন্দ্বে আমার পাঠককুলের হয়েছে সাড়ে সর্বনাশ! তারাও বুঝে উঠতে পারছে না আমার হলটা কী! একজনের থ্রেডে আরেকজন কমেন্ট করে দিচ্ছে, একজনের না লেখার জন্য আরেকজন পাঠকদের তিক্তরস পান করছে। নিজের মধ্যে নিজের এমন লড়াই আমাকে বিশেষ করে আমার সমগ্র লেখক সত্ত্বাকে বিপন্ন করে দিয়েছে! শেষ অবধি একজন পথ বাতলে দিল, বলল যখন বনিবনা হচ্ছেই না তখন নাহয় হাঁড়ি আলাদা করে দাও। নিজের নিজের মত দুজনে কাহিনী লিখুক। যে ধ্রুপদীতে বিশ্বাসী সেই আদ্যিকালের মহাবীর্য্যও থাকুক আর নবীন হাওয়ায় জন্ম যার সেই রূপও থাকুক। তাই নিয়ে এলাম এক নতুনরূপে আপনাদের সামনে আমার এই আধুনিক সত্ত্বাকেও, যার নাম মহাবীর্য দেবশর্মা! এ কিন্তু মহাবীর্য্য দেবশর্ম্মা নয়। জানিনা, এই নতুন মহাবীর্যের গল্প আপনার কতটা ভাল লাগবে, অচেনা আঙ্গিকের এই মহাবীর্য দেবশর্মাকে নিয়ে আমি নিজেও যথেষ্ট সন্দিহান। তার লেখার মুন্সীয়ানা আদত মহাবীর্য্য দেবশর্ম্মার ধারে ভারে চাপা পড়ে কিনা তা হয়তো পাঠকেরাই বলতে পারবেন। ২০০ এর বেশী রেপুটেশন দিয়ে আপনারা দু'হাত খুলে মহাবীর্য্যের ঝুলি ভরেছেন। আমার দৃঢ় বিশ্বাস এই নতুন মহাবীর্যকেও আপনারা সাদরে গ্রহণ করবেন। তাই শেষ বিচারের দায়িত্ব আমি আপনাদের কাঁধেই রাখলাম। যখন এই আগমনী বার্তা লিখছি,  আমার মার্শালের মিউজিক প্লেয়ারে গান বাজছে,

"এক জনে ছবি আঁকে এক মনে, ও মন
আরেক জনে বসে বসে রঙ মাখে, ও মন
ও আবার সেই ছবিখান নষ্ট করে
কোন জনা, কোন জনা,
সেই ছবিখান নষ্ট করে
কোন জনা, কোন জনা,
তোমার ঘরে বসত করে কয় জনা 
মন জানো না
তোমার ঘরে বসত করে কয় জনা…"




Namaskar Namaskar Namaskar
                                            Namaskar

[Image: 20230928-215610.png]
Like Reply
Do not mention / post any under age /rape content. If found Please use REPORT button.
#2
লেখক দর্শন



বড়বৌদি! আমার ইকলেজ জীবনের সবচেয়ে বড় কামনা! নাহ, কোন রক্তমাংসের জীবন্ত মানুষ নয় বড়বৌদি, বরং নেহাৎ  এক সদ্য কিশোরের প্রথম পানু চটি গল্পের বই পড়ে কল্পনায় তৈরী হওয়া এক চরিত্র বিশেষ! এই বড়বৌদি কিন্তু আজকের আধুনিক জিরোফিগারের তন্বী ছিপছিপে বছর ত্রিশ-পঁয়ত্রিশের  নারী নন যার গালভরা নাম ভাবী হয়েছে। বরং, এই বড়বৌদি হল সেই গৃহবধূ যার বয়েস চল্লিশের কোঠা পার করেছে, সুবিশাল হৃষ্টপুষ্ট মেদবহুল বপু। তিনি পদ্মিনী নন, তিনি হস্তিনী নারী। কামনা এবং মমতা দুইয়ের প্রতিভূ তাঁর সুবিশাল দুই স্তন। যার একটি যদি সন্তান চোষণ করে তো অপরটি প্রেমিক মর্দন করে। একই সাথে মাতৃত্ব ও যৌনতা এই দুই নিয়েই নির্মাণ বড়বৌদির। পেশায় তিনি প্রাইভেট ডিটেকটিভ। বনেদীবাড়ীর বিধবা এই যৌবনবতী নারীর বিবিধ অ্যাডভেঞ্চার নিয়েই এই চরিত্রের কল্পনা আমি করেছিলাম। পার্শ্বচরিত্র কাম্ অ্যাসিসট‍্যাণ্ট হিসাবে তৈরী করেছিলাম বাপানকে। এই দুইজনকে নিয়ে বহু কল্পনা আমি করেছিলাম আমার কৈশোরে। বলা বাহুল্য, বাপান হিসাবে আমি নিজেকেই কল্পনা করতাম। আজ যখন সেই কৈশোর শেষ হয়ে যৌবনে পা দিয়েছি, নজর বদলেছে, দৃষ্টিভঙ্গী বদলেছে, তা বদলেছে সময়ের নিয়মেই। কল্পনার সেই ভারী শরীরের শাড়ী ব্লাউজে ঢাকা মোহময়ী নারীর জায়গা নিয়েছে আজকের আধুনিকা পশ্চিমী পোশাকে সজ্জ্বিত ছিপছিপে স্বাস্থ্য সচেতনা নারীরা! কিন্তু, তবুও যখন ভাবলাম এই নতুন অবতারে কী লেখা যায়, তখন চোখে ভেসে উঠল এক কিশোরের মুখ, যে চুপিচুপি দৈনিক ৫ টাকা ভাড়ায় খবরের কাগজে মুড়ে নিয়ে এসে বাথরুমে ঢুকে রগরগে ভাষায় লেখা চটি বই পড়তে পড়তে নিজের স্বমৈথুনে কামপিপাসা মেটাতো। যে প্রতিদিন ভাবত তার কল্পনার বড়বৌদিকে নিয়ে গল্প লিখবে, কিন্তু কোনদিন আর সেই সাহসটা করে উঠতে পারেনি। যে আফসোস করত কেন তার একটা বড়দাদা নেই, বড়দাদা থাকলে তার বউ বড়বৌদি হত! নিজেকে চুপিচুপি সে বাপান বলে ডাকত, তার একমাত্র নাম যেটা সে নিজে নিজেকে দিয়েছিল, আর সে নামে কেবল সেই নিজেকে ডাকত। আজ যদি মহাবীর্য না হতাম তবে নির্ঘাৎ বাপান হতাম। 

ইকলেজ শেষ হতে না হতে কলেজ তারপর পেশাজীবনে প্রবেশ। হারিয়ে গেল আমার কৈশোর, হারিয়ে গেল কাঁচা মন, হারিয়ে গেল অনাঘ্রাত যৌবনের সহসা প্রাপ্তিতে উদ্বেল হয়ে ওঠা সেই সব মুহূর্তগুলো। আর তার সাথে সাথে হারিয়ে গেল, বড়বৌদিও। আর হারাল বাপান।

আজ যখন কলম ধরলাম, তখন ফেলে আসা একমাথা ঝাঁকড়া চুলের সেই সোজা সরল কিশোর মুখটা মানসপটে ভেসে উঠল, অতীত এসে হাজির হল বর্তমানের কাছে, রাখল এক হারিয়ে যাওয়া স্বপ্নের ভবিষ্যৎ নির্মাণের। আঙুল মটকে ঘাড় নিচু করে সে ফিসফিস করে বলল আমার বড়বৌদিকে নিয়ে লিখবে! আমার না খুব ইচ্ছা আমার বড়বৌদিকে নিয়ে লেখার। লিখবে তুমি? এক বিন্দু চোখের জল মুছে ঘাড় নেড়ে বললাম হ্যাঁ লিখব। আমি তোমার বড়বৌদিকে নিয়ে। সে যেতে যেতে ঘাড় নেড়ে বলল, লিখবে কিন্তু, আর…আর আমার নাম কিন্তু বাপান ভুলে যেও না যেন!


ভুলিনি আমি, লিখে ফেললাম বড়বৌদি আর বাপানকে নিয়ে আমার প্রথম কাহিনী। আজ তার প্রথম পর্ব প্রকাশ করছি। আপনাদের কেমন লাগল পড়ে জানাতে ভুলবেন না কিন্তু!


Namaskar Namaskar Namaskar
                                            Namaskar

[Image: 20230928-215610.png]
Like Reply
#3
ধুম্রগড় রহস্যে বড়বৌদি 
শ্রী মহাবীর্য দেবশর্মা


[Image: 20230307-020945.png]



প্রথম পর্বঃ সুরঞ্জনের অশ্লীল দলিল

প্রথমাংশ

কলিংবেলের আওয়াজটা শুনে দরজাটা খুলতেই দেখি একজন মধ্যবয়স্ক ভদ্রলোক দাঁড়িয়ে। পরনে কটন শার্ট-প্যান্ট, হাতে দামী কালো চামড়ার ব্যাগ, পায়ে ফর্মাল ব্ল্যাক লেদার শু। মাথার চুল কিছুটা উঠে যাওয়ায় তালুতে ইন্দ্রলুপ্তের আবির্ভাব ঘটেছে। চোখে মোটা ফ্রেমের চশমা। বোঝা যায় বনেদিয়ানা ঘরের লোক। আপাদমস্তক লক্ষ্য করে বললাম, "কে আপনি? কাকে চান?" ভদ্রলোক একটু যেন থতমত খেয়ে গেলেন, প্যান্টের পকেটে হাত ঢুকিয়ে একটা সাদা রুমাল বের করে কপালে জমে থাকা ঘাম মুছতে মুছতে বললেন, "ইয়ে এটা কামিনী দেবীর বাসা তো? ওনার সাথে দেখা করা যাবে? আমার খুবই জরুরী দরকার ওনাকে!" বাড়িতে সুন্দরী যুবতী বিধবা বৌদি থাকলে কোনকালেই তীর্থের কাকের অভাব ঘটে না, তাই আমি আজকাল একটু সাবধানতা নিয়েই চলি। ভ্রূ কুঁচকে জিজ্ঞেস করলাম, "অ্যাপয়েণ্টমেণ্ট করা আছে?" ভদ্রলোক দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন, "না! আমার কাছে এত সময় ছিল না। অ্যাপয়েণ্টমেণ্ট ছাড়া কি কোন ভাবেই দেখা করা সম্ভব নয়?" আমি ঘাড় নাড়লাম। এমন সময় বৌদির গলা ভেসে এল, "বাপান! কে এসেছে?" বৌদির গলা শুনেই মনে হয় ভদ্রলোক খুবই আশান্বিত হয়ে আমার দিকে তাকালেন, দুচোখে মিনতি ফুটে উঠল। আমি একটু বিরস গলায় বললাম, "এক ভদ্রলোক এসেছেন, বলছেন খুব জরুরী দরকার তোমার সাথে কিন্তু অ্যাপয়েণ্টমেণ্ট করে আসেন নি।" বৌদির উত্তর এল, "ঠিক আছে! ভিতরে নিয়ে আয় ওনাকে।" আমি দরজা ছেড়ে ভদ্রলোককে বললাম, "আসুন, ভিতরে বসবেন চলুন।"
বৈঠকখানার সোফায় ভদ্রলোক বসে। পাশের সিঙ্গেল সোফাতে আমি বসে সামনের টেবিলে রাখা অর্ধসমাপ্ত পেপারটা টেনে পড়তে থাকলাম। আজকাল খবরের কাগজগুলোয় খবর কম বিজ্ঞাপনের ছড়াছড়ি বেশী! প্রথমের দুটো পাতা জুড়ে শুধুই বিজ্ঞাপন। আমি সকালে একবার পড়ে নিয়েছি, এখন সোজা শব্দছকের পাতায় চলে গেলাম। বৌদি বলে শব্দছক সমাধানের এ খেলা নাকি সবার খেলা দরকার। এতে, ব্রেন খুব শার্প হয়, আর র‍্যাশানালি চিন্তা করার ক্ষমতা যেমন বৃদ্ধি পায় তেমনি অ্যানালিটিক‍্যাল শক্তিও বেড়ে যায়। আজ মাসদুয়েক তাই, ঐ শব্দছকেই জব্দ হচ্ছি। পেনসিল-রাবার সোফাটেবিলের পেনদানিতেই রাখা থাকে। দু-আঙুলে পেনসিল নিয়ে শব্দের চিন্তায় ডোবার চেষ্টা করছি, কিন্তু, চিন্তারা এই মুহূর্তে বাসা বাঁধতে নারাজ। মুহূর্মুহু নজর সমানে ভদ্রলোকের উপর চলে যাচ্ছে! ভদ্রলোক একটানা বসার ঘরের এদিক ওদিক দেখে যাচ্ছেন। একটা অদ্ভুত চঞ্চলতা রয়েছে মানুষটির, বোঝায় যায় খুব টেনশনে আছেন, নইলে, বসার ঘর যথেষ্ট ঠাণ্ডা, মাথার উপরে সিলিং ফ্যান ঘুরছে তারপরেও ভদ্রলোক বারবার রুমাল দিয়ে মুখ মুছছেন কেন!
মিনিট দশেকের মধ্যেই বড়বৌদি রুমে ঢুকল। ঢোকার সাথে সাথেই আমাদের নজর বড়বৌদির বা বলা ভাল বড়বৌদির ভরাট ম্যানাদুটোর উপরে পড়ল! সুবিশাল স্তনযুগল বড়বৌদির চলাফেরার সাথে সাথে যেন রিদমিক্যালি তিরতির করে কাঁপছে, আমার বড়বৌদির সেই বিরাট বক্ষরূপী চালকুমড়োদ্বয়ের কম্পনতীব্রতা এতই বেশী যে চলাফেরার সময় বড় বৌদির আঁচল,ব্লাউস ও ব্রেসিয়ারের সম্মিলিত শক্তিও মাইদুইয়ের উচ্ছ্বলতা থামাতে ব্যর্থ হচ্ছে। নাভীর নীচে পরা শাড়ীর আড়াল থেকে উঁকি দিচ্ছে মেদবহুল সুগভীর উদর, দুধে-আলতা ফর্সা গায়ের রং, ঘোর কালো কুচকুচে মাথার চুল দীঘল হয়ে বড় আদরে চওড়া পিঠ ঢেকে রেখেছে, সুবিশাল প্রচণ্ড ভারী গুরু নিতম্ব, যেন উল্টানো কলসীর মত নিটোল, বড়বৌদির প্রতিটা পদক্ষেপ সেই তানপুরাসদৃশ নিতম্বতে যেন তানসেনের সঙ্গীতের মতই মূর্ছনা সৃষ্টি করে, সে মোহময়ী পদক্ষেপ নিতম্বতে যে পেণ্ডুলামের দোলনের জন্ম দেয় তার থেকে চোখ সরানো খুবই মুশকিল। দীর্ঘাঙ্গী বড়বৌদির কোমরের নীচে শাড়ীর আড়ালে লুকিয়ে থাকা সত্ত্বেও পদযুগল যে মোটা থামের মত বিপুলা তার আভাষ সহজেই মেলে। ঈষৎ স্থূল ওষ্ঠাধরে কালচে লাল রঙের লিপস্টিক ঠোঁটকে যেন চুম্বকের মত আকর্ষণ করে চুম্বনের জন্য। পাতলা ভ্রূযুগলের মাঝে রয়েছে পটলচেরা দুটি চোখ, সে চোখের তেরচা দৃষ্টি অতি সাধু লোকেরও চিত্ত দুর্বল করার ক্ষমতা ধরে। চিবুকের কাছে একটা খুব ছোট তিল যেন বড়বৌদিকে সাক্ষাৎ তিলোত্তমার রূপ দিয়েছে। তিলে তিলে যেন পরম যত্নে স্বয়ং কামদেব আমার মাতৃরূপিনি বড়বৌদিকে তৈরী করেছেন। আমি জানিনা সেকালের মুনিঋষিরা ভবিষ্যদ্রষ্টা ছিলেন কি না, কিন্তু কেন জানি আমার মনে হয় খোদ বাৎস্যায়ন সম্ভবতঃ আমার বড়বৌদির কথা ভেবেই কামিনীর চতুর্থরূপ হস্তিনী নারীর কথা ভেবেছিলেন। নারীর কামরূপে থাকা চার রূপের সর্বশ্রেষ্ঠ রূপ হল হস্তিনী নারী! সে হস্তিনী রূপের চ্ছট্বায় পদ্মিনী নারী অভিমানে মুখ লুকোয়, শঙ্খিনী নারী বিরহে অশ্রুজলে ভাসে, আর চিত্রানী প্রতিনিয়ত হিংসার জ্বলনে পুড়তে থাকে। সেই মহাকামুকীখ্যাতা হস্তিনী নারী, একমাত্র বৃষ ও অশ্বপুরুষ ছাড়া যাকে বিছানায় শান্ত কেউ করতে পারে না আর আমার মাতৃসমা বড়বৌদি সেই সর্বরমণীকুলের সর্বরূপের সর্বশ্রেষ্ঠ রমণী হস্তিনী নারীর যথাযোগ্যা রূপ, যার দুপায়ের মাঝে লুকোনো  অজন্তা গুহায় প্রবেশের তীব্র আকাঙ্খা পুরুষদের সেরকমভাবে টানে যেরকমভাবে প্রজ্জ্বলিত অগ্নিকুণ্ড পতঙ্গদের ডাকে, সে ডাকের আহ্বানে সাড়া না দিয়ে পারা যাবে না, অথচ সেই কামাগ্নি যদি শান্ত না হয় তবে ওই পুরুষের পৌরুষ দগ্ধে দগ্ধে মরবে!


ভদ্রলোক বড়বৌদিকে দেখে উঠে দাঁড়িয়ে প্যান্টের উপর দিয়ে নিজের শিশ্নকে একটু অ্যাডজাস্ট করে নিয়ে হাতজোড় করলেন, "আমি সুকুমার পোদ্দার! পেশায় স্বর্ণকার। নীলদীঘিতে আমাদের অলঙ্কারের দোকান আছে। কামিনী দেবী আমি বড় বিপদে পড়ে আপনার কাছে এসেছি!" বড়বৌদি নিজের ফুলহাতা ব্লাউসে ঢাকা হাতদুটো নিজের বৃহৎ দুগ্ধভাণ্ডারের কাছে জড় করে প্রতি নমস্কার করে বলল, "সে তো বুঝতেই পারছি! বিপদে না পড়লে আমার মত আপদের কেউ শরণাপন্ন হয় না! বসুন সুকুমারবাবু, আপনার কথা আমি শুনব তবে তার আগে আমাকে এটা বলুন, আমার সম্পর্কে আপনাকে কে জানালেন?" সুকুমারবাবু একটু হেসে বললেন, "আসলে নীলদীঘি পুলিশ স্টেশনে আমার একজন ক্লাসমেট আছে, আপনি চিনবেন, ইন্সপেক্টর সুবিমল স্যান্যাল। আমি সবার আগে তার কাছেই ছুটে গিয়েছিলাম, কিন্তু সে সব শুনে বলল পুলিশের পক্ষে এ সমস্যার সুরাহা করা সম্ভব হবে না। কেসটা নাকি খুবই অশ্লীল! উনিই আমাকে আপনার কথা বললেন।" কথাটা শুনে বড়বৌদির মুখে রাগের আভাষ, "আচ্ছা আজকাল পুলিশ অশ্লীল কেস প্রাইভেট ইনভেস্টিগেটর্সদের ঘাড়ে চাপানো দরকার বলে মনে করছে! আপনি আসতে পারেন সুকুমারবাবু! আমি এ কেস নেব না! আর সুবিমলদাকে বলবেন অশ্লীল কাজে পুলিশের দক্ষতার ধারেপাশেও কেউ আসতে পারবে না আমাদের মত শখের ডিটেকটিভদের সাধ্য কী! আপনি আসতে পারেন, ধন্যবাদ!" সুকুমারবাবু প্রচণ্ড ঘাবড়ে গিয়ে বললেন, "বিশ্বাস করুন! সুবিমল আপনাকে অপমান করার জন্য কেসটা নিতে বলেনি, উল্টে আপনার খুবই প্রশংসা করেছে, বলেছে যে সে নাকি আপনার মত বুদ্ধিমতী ডিটেকটিভ এর আগে কখনও দেখেনি। মেখলিবাঁধের ;.,কাণ্ডের পর্দাফাঁস করে দিয়েছিলেন আপনি, তখনই সুবিমল আপনার দক্ষতার পরিচয় পায়। সেই জন্য সে আপনার নাম আমায় বলেছে। ও বলেছে আমার কেসটা এত জটিল যে, পুলিশী ভরসায় ফেলে রাখলে সলভ্ হওয়ার আশা নেই। প্লিজ কামিনী দেবী! আপনি আমার শেষ ভরসা স্থল!" একদমে কথাগুলো বলে থামলেন সুকুমারবাবু। স্তুতি শুনলে দেবতার হৃদয় অবধি গলে যায়, আর আমার বড় বুকের বৌদি তো এমনিতেই কোমলহৃদয়া! একগাল হেসে বলল, "ঠিক আছে! ঠিক আছে! আমি আপনার কেসবিবরণ শুনব কিন্তু কেস নেব কি নেব না সেটা আমিই ঠিক করব।" সুকুমারবাবু যেন ধড়ে প্রাণ পেলেন, "একদম একদম!" তারপর একটু গলা খাঁকারী দিয়ে বুক পকেট থেকে একটা গোল্ডফ্লেক বের করে ঠোঁটে লাগিয়ে আগুন ধরালেন, কী বলবেন না বলবেন পুরোটা ভেবে নিলেন একবার। তারপর ধোঁয়া ছেড়ে নিজের বক্তব্য শুরু করলেন, 

"ধুম্রগড়! এখান থেকে প্রায় শত কিলোমিটার পশ্চিমে  বিহার আর পশ্চিমবঙ্গের ঠিক সীমান্তে গেলে হদিশ পাবেন এ জায়গার। পাহাড়ের কোলে থাকা এ জায়গায় প্রায়শই পাহাড়ী ধোঁয়া দেখতে পাওয়া যায়, তাই মনে করা হয় এইকারণেই এই জায়গার নাম ধুম্রগড় দেওয়া হয়েছে। কেউ কেউ আবার বলে, বখতিয়ার খলজি যখন বাংলা দখল করে, তখন একদল সৈন্য এই অঞ্চলে আসে এবং এখানকার যুবতী রমণীদের সর্বনাশ করার চেষ্টা করে, সম্মানরক্ষার্থে সেই সমস্ত রমণীরা রাজপুত নারীদের মতই জহরব্রত পালন করে। সতীত্ব বাঁচাতে তাদের জীবন্ত জ্বলনের দহনকালে চিতা থেকে এমন ধোঁয়া উঠেছিল যে বহুদিন এই এলাকা ধোঁয়া আর কুয়াশায় ঢেকে গিয়েছিল, তাই এর নাম ধুম্রগড়! ঘটনা যেটায় হোক, এই ধুম্রগড় এখন কার দখলে সে নিয়ে বিতর্কের সীমা নেই। যে দুই রাজ্যের সীমানাঘেঁষে এ জায়গা রয়েছে তাকে বিহার বলে আমাদের, আর পশ্চিমবঙ্গও বলে আমাদের! অথচ দুই রাজ্যের কেউই এখানকার বাসিন্দাদের দায়ভার নেয় না। এখানে এখনও অবধি আইনের শাসন নেই। দিনেমানে খুন, ;.,, কিডন্যাপিং এসব লেগেই আছে। তার সঙ্গে জড়িয়ে আছে অভাব। সাঙ্ঘাতিক অর্থের অভাব এখানকার লোকজনের। চরম অশান্তির বাতাবরণে এই এলাকার লোকেদের প্রতিদিন বেঁচে থাকতে হয়। পুলিশ আছে, বন্দুক নেই। পুলিশ ফাঁড়ির সামনেই জুয়ার আড্ডা, মদের দোকান আর গাঁজার ঠেক! দুই রাজ্যের যত দুষ্কৃতী রয়েছে, তারা এখানে আসে মাথা বাঁচাতে। তাদের ধরতে না বাংলা পুলিশ পাঠায় না বিহার। চারিদিকে পাহাড় ঘেরা থাকায়, স্বাভাবিকভাবেই ধুম্রগড় প্রাকৃতিক দূর্গবেষ্টিত হয়ে রয়েছে, যত ক্রিমিনাল আছে তাদের নিশ্চিন্তবাসের আস্তানা আজ এই ধুম্রগড়, একে দুষ্কৃতীদের স্বর্গরাজ্য বললেও অত্যুক্তি করা হয় না। সোজা বাংলায় বলা যায়, ধুম্রগড় হল আদত নৈরাজ্যের দেশ এবং এই আধুনিককালেও নিজের ধুম্রগড় নামের মহিমা সে বজায় রেখেছে, তার প্রাণঘাতী ধোঁয়ার হাত থেকে এখানকার বসবাসকারীদের পরিত্রাণ নেই।" এই অবধি বলে সুকুমার বাবু একটু থামলেন। তারপর ফের সিগারেটে টান দিয়ে শুরু করলেন, "আমার প্রপিতামহ ৺শ্রী সুরঞ্জন পোদ্দার ছিলেন এই ধুম্রগড়ের শেষ জমিদার। আমাদের জ্ঞাত পূর্বপুরুষদের প্রায় সকলেই পেশাদার স্বর্ণকার ছিলেন। আমাদের তৈরী অলঙ্কার দেশের সব রাজবাড়ীগুলোতে খুঁজলে আপনি একটা না একটা পাবেনই। আমি শুনেছি, খোদ মুঘল সম্রাট আকবরের সম্রাজ্ঞী যোধাবাঈয়ের গলার রত্নসপ্তক কণ্ঠহার আমার এক পূর্বপুরুষ ৺শ্রী সুবীরেন্দ্র পোদ্দার তৈরী করেছিলেন আগ্রাতে। বাংলায় যখন ইংরেজ শাসন শুরু হয় প্রায় তখনই বলতে গেলে আমাদের জমিদারির পত্তন ঘটে ধুম্রগড়ে। দেশ স্বাধীন হওয়ার পরেও সেই জমিদারি চলেছিল কিন্তু ধীরে ধীরে বংশের উত্তরপুরুষরা ধুম্রগড়ে আর থাকতে চায় নি। আমার পিতামহ ভাগ্যান্বেষণ করতে করতে এখানে আসে এবং তারপর থেকে আমরা এখানেই আছি। এতকথা আপনাকে বললাম তার কারণ আছে।" সুকুমারবাবু এতদূর অবধি বলে বেশ কিছুক্ষণ চুপ করে রইলেন। সিগারেটের শেষের দুটো টান দিয়ে সেটা অ্যাশট্রেতে গুঁজে নিভিয়ে দিয়ে, গলা খাঁকারী দিয়ে আবার বলতে লাগলেন,
"যেমনটা বলছিলাম, আমার প্রপিতামহ ছিলেন ধুম্রগড়ের শেষ জমিদার। তাকে আধুনিক ধুম্রগড়ের স্থপতি বলা যেতে পারে, দুর্বৃত্তের স্বর্গরাজ্য হয়ে ওঠার পথ প্রশস্ত হয়েছিল ওনার আমলেই। প্রজাদের থেকে প্রয়োজনেরও বেশী কর আদায় করা, রাজস্ব দিতে ব্যর্থ হলে পোষা লেঠেল লাগিয়ে সেই প্রজাকে মারধর করা, সর্বস্ব আত্মসাৎ করা, কোনটাই বাদ দেন নি উনি। কিন্তু যেটা তাঁর সবচাইতে দোষ ছিল, সেটা হল যুবতী নারীদেহের প্রতি অদম্য টান। প্রায় সমস্ত প্রজাদের বউদের নিজের বিছানায় তুলেছেন উনি। স্বামীদের সামনে তাদের বিয়ে করা বউদের সাথে সঙ্গম করার তীব্র নেশা ছিল তার। ছেলের সামনে মাকে উলঙ্গ করে বাঈজী নাচানো এসব করেই কৈশোর-যৌবন থেকে প্রৌঢ়ত্ব পার করেছেন তিনি। বিহার আর বাংলার দুই রাজ্যের করাপ্টেড অফিসার নেতা মন্ত্রীদের সাথে ওঠাবসা ছিল তাঁর ফলে দেশ স্বাধীনের পরেও সমস্যায় পড়তে হয় নি। বলা হয়, ধুম্রগড়ের স্থায়ী বাসিন্দাদের অর্ধেক জন সুরঞ্জনের অবৈধ সন্তান বা সেই সন্তানদের বংশধর। আমার পিতামহ নিজের বাবার এই রূপ বরদাস্ত করতে পারেননি এটাই নাকি সবচেয়ে বড় কারণ তিনি এখানে পালিয়ে আসেন। তাঁর আসার বছর পাঁচেক পর খবর আসে, এক প্রজার সদ্যবিবাহিত স্ত্রীর সাথে সঙ্গমরত অবস্থাতেই সুরঞ্জনের হার্ট অ্যাটাক হয় এবং তিনি মারা যান।"
"অত্যন্ত গুণী পুরুষ!" বড়বৌদি ঠোঁটের কোণে মুচকি হাসি এনে বলল, "বেঁচে থাকলে একবার সাক্ষাৎ করতাম অবশ্যই। যাইহোক, তারপর বলুন।"
সুকুমারবাবুও একটু মুচকি হেসে ফের বলতে শুরু করলেন, "মোটামুটি আগাগোড়া আমাদের প্রেক্ষাপট পুরোটাই বললাম। এখন ঘটনা হল, ছোট থেকে একটা কথা শুনে আসছি, সুরঞ্জন নাকি পিতামহের গৃহত্যাগের আগে আমার পিতামহীর হাতে একটি দলিল দেন, এবং বলেন, আমাদের বংশের সমস্ত পূর্বপুরুষদের জমানো সম্পত্তির হদিশ এই দলিলে রয়েছে। যদি কখনও আমাদের কেউ প্রবল আর্থিক কষ্টের মুখোমুখি হয় তবে সে যেন এ দলিলের ব্যবহার করে ধনসম্পত্তি খুঁজে বের করে। আমি আমার বাবার কাছ থেকে একথা শুনেছিলাম কিন্তু মাথা ঘামাই নি। কিন্তু সম্প্রতি আমরা বাড়িটা একটু রিনোভেশনের কাজ চালাই তখন জিনিসপত্র এদিক সেদিক করার সময়ই ওই দলিলটা খুঁজে পাই। বিশ্বাস করুন, প্রথমে দলিলটা দেখে আমি হতভম্ব হয়ে গেছিলাম। বুঝতে পারছিলাম না আমার বংশের সম্পত্তির দলিল হিসাবে গণ্য হওয়া বস্তু আদতে এমন বিতিকিচ্ছিরি কোন কাগজ হবে! এত জঘণ্য জিনিস আমি কস্মিনকালেও দেখিনি। প্রথমে ভেবেছিলাম, সুরঞ্জন নিজের বংশপুরুষদের সাথে চরম রসিকতা করেছেন কিন্তু পরে খেয়াল পড়ল সুরঞ্জন নিজের রক্তবাহকদের সাথে কখনও বিশ্বাসঘাতকতা করবেন না, পাশাপাশি সুরঞ্জনের একটা বড় গুণ ছিল হেঁয়ালি করার। তিনি এখানেও সেই হেঁয়ালি করেছেন বলে আমার বিশ্বাস। এত সহজে তিনি কারও হাতে সম্পত্তি তুলে দেবেন না!" 
সুকুমারবাবু থামলে বড়বৌদি জিজ্ঞেস করলেন, "দলিলটা এনেছেন!" সুকুমারবাবু ঘাড় নেড়ে একটা মোটা বই বের করলেন, তার ভেতরে লাল শালুতে ঢাকা দলিলখানি বের করলেন। শালুর মোড়ক খুললে দেখলাম, কোথায় দলিল! এ যে, একটা হলদে জীর্ণ-দীর্ণ-বিবর্ণ কাগজ! দুয়েক জায়গায় ঈষৎ ছিঁড়ে গেছে, কাগজের উপরের দিকের বাম কোণ একটু মুড়ে গেছে। কাগজের উপরে একটি ধনসম্পত্তি ভরা সিন্দুকের ছবি আঁকা আছে, তার নীচে কালো রঙের কালিতে হাতের লেখনীতে একটি ছড়া লেখা রয়েছে। সে ছড়া পড়ার পর আমার চোখ কপালে উঠে গেল। পদ্যের আকারে লেখা আছে,

"তিন চোদায় হাততালি
চার চোদনে ঘর খালি
চুদতে চলল নিত্যানন্দ
গাঁড় চোদায় নাই আনন্দ
চোদনকাব্য যার জানা
সেই খুঁজে পাবে ঠিকানা
লুকিয়ে আছে মনের কোণে
ধুম্রগড়ের পদ্মবনে"


[Image: 20230306-121145.png]
                                            Namaskar

[Image: 20230928-215610.png]
Like Reply
#4
[Image: 20230315-190145.jpg]

দ্বিতীয়াংশ


বড়বৌদি কাগজটা সাবধানে উল্টেপাল্টে দেখে বলল, "বড্ড আজব গোছের! কাগজ দেখে তো মনে হচ্ছে কোন খেরোর খাতার একটা পাতা ছিঁড়ে তাতে লেখা হয়েছে। লেখা সম্ভবতঃ ঝরণা কলমে কালো কালিতে। হাতের লেখায় দ্রুততা রয়েছে। যেভাবে কালির রঙ শুকিয়েছে এবং পাতার যা অবস্থা তাতে একশ বছর নিঃসন্দেহে এই কাগজের বয়স তা বলা  যায়। কিন্তু প্রশ্নটা হল এরকম পদ্যের নির্মাণের প্রয়োজনীয়তা কীসের জন্য। আপনার পিতামহ যদি নিজের পিতাকে তাঁর স্বভাবের জন্য এতই পছন্দ করতেন  তাহলে গুপ্তধনের এমন সঙ্কেত পেয়ে তাঁর আরও ক্ষেপে ওঠা উচিৎ তাই নয় কী!" 
সুকুমারবাবু একটু হতচকিত হয়ে বললেন হতে পারে! বললামই তো আমাদের পরিবারের আজ অবধি কেউই গুপ্তধন বিষয়ে নাক গলায় নি, আর্থিক স্বাচ্ছন্দ্য তার সবচেয়ে বড় কারণ। কিন্তু সম্প্রতি ব্যবসা খুব একটা ভাল যাচ্ছে না। মন্দায় পড়েছে বাজার। সোনা খুবই 'ভোলাটাইল' মানে অস্থির মূল্যমানের ধাতু। বাড়া-কমা আছেই কিন্তু এখন সময় খুবই খারাপ যাচ্ছে দেবী হাতে টাকা না এলে লালবাতি জ্বলে যাবে ব্যবসার। তাছাড়া, আমার কানে এসেছে, অনেকেই নাকি এই গুপ্তধনের ব্যাপারে টের পেয়ে একে হাতাবার মতলবে নেমেছে। সুতরাং বুঝতেই পারছেন, আমাদের পরিবারের জিনিস হাতছাড়া করতে চাইছি না।"
বড়বৌদি বেশ কিছুক্ষণ ভেবে বলল, "আমাকে একটু ভেবে দেখতে হবে। এক্ষুণি কথা দিতে পারছি না। আপনার আপত্তি না থাকলে এই কাগজটার একটা  প্রতিলিপি করতে পারি?" সুকুমারবাবু ঘাড় হেলালেন। বড়বৌদি আমার হাতে হলদে কাগজখানি ধরিয়ে বলল, "বাপান পাশের রুমে গিয়ে এটার এক কপি জেরক্স করে নিয়ে যায়।" আমি পাশের রুমে গিয়ে A4 সাইজের পেপারে একটা জেরক্স প্রিন্ট করতে নিয়ে গেলাম, পেপারটা এতটাই পুরনো আর জীর্ণ হয়ে গেছে যে খুব সাবধানে মেশিনে বসিয়ে জেরক্স করতে হল। জেরক্স হয়ে গেলে সেটা এনে বড়বৌদির হাতে দিলাম।

 
[Image: Document-page-0001.png]


বড়বৌদি আসল আর জেরক্স দুটোই দেখে নিয়ে আমার হাতে জেরক্সের কপিটা দিয়ে আসল দলিলটা সুকুমারবাবুকে ফেরৎ দিল। এরপর কিছু সাধারণ কথাবার্তার পর সুকুমারবাবু বিদায় নিলেন। বড়বৌদি আরেকবার জেরক্সটা উল্টেপাল্টে দেখে টেলিফোন ডাইরেক্টরী বের করে কয়েকটা এদিক ওদিক ফোন করল। একটু পরে আমায় বলল, "নীলদীঘি এলাকায় বাস্তবিক সুকুমারবাবুর দোকান আছে এবং এটাও সত্যি যে সুবিমলদা সুকুমারবাবুকে আমার কাছে পাঠিয়েছিলেন। ইন্টারেস্টিং ফ্যাক্ট হল যে ঐ স্যাকরার দোকানের লালবাতি অলরেডি জ্বলে গেছে, দেউলিয়া হওয়ার মুখে দাঁড়িয়ে আছে পুরো পোদ্দার পরিবার আর বাজারেও বিস্তর দেনা। সবই ঠিক আছে, তবে সুকুমারবাবু একটা ভুল তথ্য দিয়েছেন, সুবিমলদার কাছে উনি এই গুপ্তধন উদ্ধারের জন্য যান নি, গিয়েছিলেন ওনার জানা কোন ভাল প্রাইভেট ইনভেস্টিগেটর আছে কিনা সেটা জানার জন্য।" আমি সোফায় বসে পা দোলাতে দোলাতে বললাম, "তাহলে লোকটা মিথ্যে বলল কেন?" বড়বৌদি হেসে উঠল, "পাগল ছেলে! ওই ছড়াটা দেখেও এমনধারা প্রশ্ন! নিজের ইমেজ ধরে রাখা গুরুত্বপূর্ণ নয় কী! তাই পুলিশের কাঁধে বন্দুক রাখা!" আমি ঘাড় হেলালাম, "কথাটা সত্যি কিন্তু বৌদি সত্যিই কী এমনধারা লোকজন থাকে ওই সুরঞ্জনের মত? আমার কিন্তু পুরোটাই সাজানো মনে হচ্ছে।" বড়বৌদি নিজের পেলব দুআঙ্গুলের মাঝে একটা পেনসিল ধরে জেরক্সের ছড়াটা দেখতে দেখতে বলল, "সাজানো হতেও পারে নাও হতে পারে! তবে কাগজটা যে একশ বছরের বেশী পুরোনো সে আন্দাজ করা যায়। নারীদের প্রতি সাঙ্ঘাতিক কামনা থাকা লোকজন তো থাকেই তাই না! এই যেমন তোর আমার বুকের উপর টান! সর্বক্ষণ ফ্যালফ্যাল করে বুভুক্ষু বাসনা নিয়ে চেয়ে থাকিস!" বড়বৌদির মুখে খুনসুটি ফুটে উঠল। আমি অস্বস্তি নিয়ে বলে উঠলাম, "মোটেও না! মাঝে মাঝে চোখ চলে যায়!" বড়বৌদি চোখে ঝিলিক মেরে বলল, "কেন চলে যাবে! সেই ছোটবেলা থেকে রোজ রাতে খাস, মুখে মাই না পুরে ঘুমোস না তারপরেও কেন এমন হ্যাংলার মত চেয়ে থাকবি? বল জবাব দে!" আমি কিন্তু কিন্তু করে বললাম, "কিন্তু মানে আচ্ছা আমাকে একটা কথা বল, আমি তো ইয়ে শুধু তোমার মাই খাই তার সাথে সুরঞ্জনের সম্পর্ক কী?" বড়বৌদি একটু শ্বাস নিয়ে উত্তর দিল, "সম্পর্ক তো আছে! দেখ বাপান! নারীকে ভিন্ন ভিন্ন রূপে কামনা করে সবাই, কেউ মাতৃরূপে, কেউ প্রেমিকা রূপে, কেউ স্ত্রী রূপে, কেউ কন্যা বা বোন রূপেও। কেউ আবার নারীকে কেবল ভোগ্যপণ্য ব্যতিরেকে আর কিছু ভাবে না। সবার ভিন্ন ভিন্ন মানসিকতা। তুই বড় হয়েছিস যথেষ্ট তাই তোকে একটু পরিণত মানসিকতা দিয়েই ভাবতে হবে সবটা। সুরঞ্জনের মত মানুষজন সেই আদ্যিকাল থেকে এই একবিংশ শতকের সভ্যতার পুরো টাইমলাইনে সর্বদা ছিল আছে আর থাকবে যারা নিত্য নতুন নারীদেহের সন্ধান খুঁজে বেড়ায়, এদের কামুক বলা যায় না বরং কামসর্বস্ব মানুষ বলা যায়। দিনান্তে এদের একটাই চিন্তা থাকে কামকে কীভাবে আরও আরও বেশী বেশী করে উপভোগ করা যায়। তাই প্রতিদিন নারীমাংসের সন্ধানে লোলুপের মত হাপিত্যেশ করতে থাকে। সুতরাং গুপ্তধনের সঙ্কেতও ফুটে ওঠে ওই চটুল নিষিদ্ধ বাংলাতে!" এই অবধি বলে বড়বৌদি একটু থামল। আমি একটু কিন্তু কিন্তু করে বললাম, "কিন্তু আমি তো মানে তোমাকে কখনও মানে ওই রাত্তিরে একটু ইয়ে খাওয়া বাদ দিয়ে" কথাটা শেষ করার আগেই বড়বৌদি সজোরে হো হো করে হেসে উঠল, হাসির উচ্ছ্বলতায় বড়বৌদির সুবিশাল বুকদুটো যেন শাড়ীর আঁচলের ওপারে রীতিমতো লাফিয়ে উঠল! বড়বৌদির চোখে দুষ্টুমী ফুটে উঠল, "দেখেছিস! অ্যাই বাঁদর ছেলে! তোর চোখদুটোর উপর কী একটুও স্বনিয়ন্ত্রন নেই। হনুমান একটা! সব সময় আমার বুকের দিকে হ্যাংলার মত চেয়ে থাকিস!" আমি মুখটা ঘুরিয়ে নিলাম। বড়বৌদি উঠে এসে স্বস্নেহে পরম মমতায় আমার মাথাটা নিজের বৃহৎ বক্ষদেশে টেনে নিল, "জানিস তোর দাদার চলে যাওয়ার এত বছর পরেও আমি কেন বিয়ে করিনি, শুধু তোর জন্য। পাগল ছেলে, যেদিন এ বাড়ীতে আমি বউ হয়ে এসেছিলাম সেদিন তুই ওই এত্তটুকু একরত্তি ছেলে ছিলি। আমার শাড়ীর খুঁট ধরে প্রথম কী বলেছিলি জানিস, বলেছিলি 'বউয়ি তোমাল ডুডু খাওয়ো!' তোতলারাম বাড়ীভর্তি সব্বার সামনে লজ্জ্বায় আমার মাথা কাটা গিয়েছিল সেদিন। কিন্তু তুই শুনলে তো, তোর সেই একজিদ 'বউয়ি তোমাল ডুডু খাওয়ো!' শেষে হাত পা ছড়িয়ে কাঁদতে বসে গেলি। আমি তো বুঝে উঠতে পারছি না কী করি। তোর বাবা ধমকাচ্ছে, দাদু ধমকাচ্ছে, তোর মা বেত ধরে দু ঘা বসিয়ে দিয়েছে কিন্তু তোর সেই এক গোঁ! শেষে তোর বড়ভাই বিরক্ত হয়ে আমায় বলে যাও ওঘরে নিয়ে গিয়ে ওকে খাওয়াও নইলে ছাড়ান নেই। শেষে পাশের ঘরে গিয়ে ফুলশয্যার পরের দিন নিজের এইটুকু দেবরকে মাই খাওয়ালাম!" বড়বৌদির সুবিশাল নরম বুকের আদরে ততক্ষণে আমার চোখ আরামে বন্ধ হয়ে এসেছে। বৌদিকে যেন কথায় পেয়েছে, একটু থেমে আবার বলতে শুরু করল, "সেই যে তুই আমার দুধ খাওয়া শুরু করলি, আজ অবধি রোজ রাতে মাই না খেয়ে ঘুমোলি না! তোর চক্করে তোর দাদা অবধি" বড়বৌদি চুপ করে গেল, আমি বড়বৌদির মাইদেশে নাকমুখ গুঁজে বললাম, "বড়দা আর তোমার মিলনে আমি বাধা হয়ে গেছিলাম তাই না!" বড়বৌদি এক গাল হেসে আমার মাথাটা নিজের কোমল স্তনঅঞ্চলে চেপে বলল, "ধুস পাগল! বাধা হবি কেন! তোকে ঘুম পাড়িয়ে যতক্ষণে আমি তোর বড়দার ঘরে যেতাম ততক্ষণে সে ঘুমিয়ে যেত।" আমি শাড়ীর আঁচলের উপরে নাক ঘষতে ঘষতে বললাম, "ওটাকে বাধাই বলে! আচ্ছা বৌদি, আমার কারণেই কি তুমি আর বড়দা বাচ্চা নিলে না?" বড়বৌদি কথাটা শুনেই যেন একটু আনমনা হয়ে গেল, "না না তা কেন! আসলে কী জানিস, সবাই তো আর মা হতে পারে না। তোর বড় দাদার একটু সমস্যা ছিল আর তাছাড়া, তুই তো নিজের মাকে ছেড়ে আমার আঁচলে এসে ঢুকলি। আমার শ্বাশুড়ীমা বলতেন, 'বাপান তো বউমা তোমার ছেলে, ওকে শুধু আমি জন্ম দিয়েছি। দেখ তোমার কেমন ন্যাওটা হয়েছে, দিনরাত তোমার কাছে পড়ে থাকে' কথাটা ভুল ছিল না, কিন্তু আক্ষেপ কী জানিস বাপান, তোকে সারাজীবন শুধু এই শূণ্য বুকই খাওয়ালাম, আমার বুকের দুধ আর তোকে খাওয়াতে পারলাম কই! মা হতে পারলাম না রে বাপান আমি তোর! আমি শুধুই তোর বড়বৌদি হয়েই রয়ে গেলাম, মা হলাম না!" বড়বৌদির হৃদয় থেকে যেন একটা বুকভাঙ্গা হাহাকার বেরিয়ে এল, যেটা ছিন্নভিন্ন করে দিল আমাকে। আমি বড়বৌদিকে প্রাণপনে জাপটে ধরে বললাম, "কে বলেছে, তুমি আমার মা নও! তুমিই আমার মা! বুকের দুধ খাওয়াও নি তো কী হয়েছে, মা কী শুধু দুধ খাওয়ালেই হওয়া যায়! মনে নেই দাদু কী বলত, 'মা হওয়া নয় মুখের কথা/জনম্ দিলেই হয় না মাতা' আমি তোমার গর্ভজাত নই, তোমার বুকের দুধও খাই নি কিন্তু তুমিই আমার মা, আমার মাতৃরূপী বড়বৌদি তুমি!" দুই অসমবয়েসী নরনারীর বাঁধভাঙা আবেগের উছ্বাসে মিশে যাওয়া চোখের জল যেন সেদিন দেবর-বৌদির সম্পর্কের ঊর্দ্ধে উঠে আরেক সম্পর্কের সূচনা করছিল, সে সম্পর্ক মা ছেলের সম্পর্ক! যা রক্তজাত নয়, যা ঔরসজাত নয়, নয় তা গর্ভজাত! তা কেবল হৃদয়ের সাথে হৃদয়ের সম্পর্ক! সে সম্পর্ক সংসারের প্রতিমুহূর্তের ঘাত-প্রতিঘাতে সৃষ্টি! সে সম্পর্ক দৈনন্দিন জীবনের মিথস্ক্রিয়ায় নির্মিত! সে সম্পর্ক সকল সম্পর্কের শ্রেষ্ঠ সম্পর্ক! সে এক দেবররূপী সন্তানের তার বড়বৌদিরূপী মায়ের সম্পর্ক! মিঠে কামনার মৃদু রসে তার সিঞ্চন, আর বুভুক্ষু বাসনার পিপাসায় তার অবলোকন! নিয়তাকার নহে সে, বিমূর্তআয়নায় তার প্রতিনিয়ত প্রতিবিম্ব ফোটে!


সেদিনের ঝোড়োহাওয়া যে মাদল বাজিয়েছিল তার উত্তাল স্পর্শ সেই রাত্রে বৌদির দুগ্ধহীন তবু অমৃতমিষ্ট কলসকার স্তনের পদ্মবৃন্তে মুখ ডুবিয়ে নিদ্রাযাওয়া পর্যন্ত স্থায়ী ছিল। অন্ধকার বিছানায় আমার পাশে শুয়ে, নিজের বিরাট মাই আমার মুখে পুরে দিয়ে মাথায় হাত বুলোতে বুলোতে আমার চোখে ঘুম এনে দিয়েছিল বড়বৌদি। পরদিন সকালে ঘুম ভাঙলে বন্ধ চোখেই বিছানা হাতড়ে দেখলাম খালি শয্যা! অগত্যা চোখ খুলে চারিদিকে তাকিয়ে দেখলাম ফাঁকা কামরার কোথাও বড়বৌদি নেই! রুম থেকে বেরিয়ে এদিক ওদিক চেয়ে দেখলাম সারা বাড়ীতে বড়বৌদির লেশমাত্র চিহ্ন নেই! দেওয়াল ঘড়ি বলছে, বেলা আটটা বেজে পাঁচ! এত সকালে বড়বৌদি সাধারণত কোথাও যায় না। এদিক ওদিক দেখতে দেখতে চোখে পড়ল, ডাইনিং টেবিলে একটা চিরকুট কাঁচের বাটি দিয়ে ঢাকা আছে, হাতে নিয়ে দেখলাম, বড়বৌদির নোট, "টেবিলে জলখাবার রাখা আছে, খেয়ে নিস, আমার ফিরতে দেরী হতে পারে!" অতএব হাতমুখ ধুয়ে জলখাবার খেয়ে একটু টিভি দেখতে বসলাম। বেলা তখন প্রায় এগারোটা, কলিং বেলের আওয়াজ শুনে দরজা খুলে দেখি বড়বৌদি দাঁড়িয়ে, রোদের তাপে মুখচোখ লাল হয়ে গেছে। ভিতরে ঢুকে চপ্পল খুলতে খুলতে বলল, "জলখাবার খেয়েছিস?" আমি দরজা লাগাতে লাগাতে জবাব দিলাম, "হ্যাঁ খেয়েছি। কিন্তু তুমি গিয়েছিলে কোথায়?" বড়বৌদি বলল, "সব বলছি আগে একটু ঠাণ্ডা হতে দে। কী বিতিকিচ্ছিরি ভ্যাপসা গরম পড়েছে বল দিকিনি! অথচ এখনও ফাগুন মাস শেষ হয়নি!" বলতে বলতে বড়বৌদি সোফায় ধপ করে বিশাল পাছাটা নিয়ে ধপ করে বসে পড়ল। কিছুক্ষণ পর টাওয়েল দিয়ে ঘাম মুছে বলল, "পাখাটা চালা আর ফ্রিজ থেকে ঠাণ্ডা এক গ্লাস জল নিয়ে আয়।" আমি গেলাসভর্তি ঠাণ্ডা জল আর প্লেটে একটু ঢীমা গুড় এনে বড়বৌদির সামনে ধরলাম, "নাও! আজ আনন্দবাজারে লিখেছে, অত্যধিক গরম থেকে ফিরলে আখের গুড় আর জল খুব উপকারী!" বড়বৌদি একগাল হেসে গুড় আর জল খেল। আমি উৎসুক হয়ে তাকিয়ে আছি দেখে বলল, "সাতসকালে ফোন এসেছিল থানা থেকে সুবিমলদা ফোন করেছিল। গতকাল রাতে সুকুমারবাবুর বাসায় নাকি দুর্বৃত্তরা হানা দিয়েছিল, সুকুমারবাবুকে কিডন্যাপিং করেছে ওরা!" আমি হাঁ হয়ে গেলাম শুনে, "কী বলছো! কারা এবং কেন?" বড়বৌদি ফাঁকা গেলাসটা ঠক করে টেবিলের উপর রেখে বলল, "কারা করেছে সেটা যদি জানতাম তবে তো কেস সলভ্ হয়েই গেছিল! তবে কেন করেছে সেটার উত্তর দেওয়া জটিল নয়। বাড়ীর লোহার সিন্দুক খোলা হয়েছিল, তাতে সবকিছু ঠিকঠাক থাকলেও, সুরঞ্জনের দলিলখানা উধাও! সুতরাং বলতে পারিস আপাতত পোদ্দার বাড়ির দুটি বস্তু উধাও হয়েছে, বাড়ীর মালিক নিজে আর দলিলটাও!" আমি একটু ভেবে বললাম, "কিন্তু তাহলেও শিওর হচ্ছো কেন যে সুকুমারবাবু কিডন্যাপ হয়েছে? হতে পারে তিনি দলিল নিয়ে কোথাও নিজেই চলে গেছেন। ওদের বাড়ীর লোকজন কী বলছে?" বড়বৌদি উঠে দাঁড়িয়ে এদিক ওদিক তাকিয়ে বাথ-টাওয়েলটা হাতে নিয়ে বলল, "তার কারণ পুরো রুম জুড়ে ধ্বস্তাধ্বস্তির চিহ্ন আছে, বাড়ীর লোকজন ছিল না, নিমন্ত্রণ রক্ষার জন্য অন্য একজনের বাড়ীতে যায় রাতে, সুকুমারবাবু একাই ছিলেন বাসায়। ফিরতে ফিরতে ওদের অনেক রাত হয়ে যায়, এসে দেখে সদর দরজা হাট করে খোলা, ভিতরে সুকুমারবাবুর ঘরে আসবাবপত্র খোলা, লোহার সিন্দুকও খোলা এবং সুকুমারবাবু অদৃশ্য! আপাতত নীলদীঘি থানা কেসটা দেখছে। যেহেতু সুকুমারবাবু গতকাল আমার এখানে এসেছিলেন তাই তিনি আমার মক্কেল হতে পারেন ভেবেই সুবিমলদা জানায় আমাকে। সব ক্লিয়ার হল?" আমি ঘাড় নাড়লাম, "এবার কী করবে?" বড়বৌদি ঠোঁটটা দাঁত দিয়ে চেপে ধরে বলল, "এবার? এবার আপাতত ব্যাগ গুছাতে হবে। আগামীকাল সকালের ট্রেনেই রওনা দেব।" আমি অবাক হয়ে বললাম, "আমরা কোথায় যাচ্ছি?" বড়বৌদি একটু হেসে বলল, "আমরা না! আমি যাচ্ছি! সেটাও বাথরুমে! স্নান করতে!" আমি বিরক্ত হয়ে বললাম, "আরে ধুর! আগামীকাল ট্রেনে কোথায় যাব আমরা?" বড়বৌদি বাথরুমের দিকে যেতে যেতে উত্তর দিল, "ধুম্রগড়! বাপান! আমরা যাচ্ছি ধুম্রগড়!"


(প্রথম পর্বের সমাপ্তি)


প্রথম প্রকাশঃ ২৭শে ফাল্গুন, ১৪২৯ বঙ্গাব্দ



(ক্রমশঃ)



Namaskar Namaskar Namaskar 

[Image: 20230315-144733.png]
Like Reply
#5
Namaskar Namaskar Namaskar

কেমন লাগছে ধুম্রগড় রহস্যে বড়বৌদি উপন্যাস! অবশ্যই জানাবেন। ভাল লাগলে লাইক ও রেপুটেশন দেবেন। আপনাদের ভাল লাগলে আমার পরিশ্রম সার্থক। বড়বৌদির এই গল্পের পরের পর্ব আসবে খুব তাড়াতাড়ি কোন এক রবিবার সকাল বা শনিবার দুপুরে। 

Namaskar Namaskar Namaskar

                                            Namaskar

[Image: 20230928-215610.png]
Like Reply
#6
এই অংশে ধুম্রগড় রহস্যে বড়বৌদি উপন্যাসের বিভিন্ন পর্বগুলি সুচিপত্র আকারে নতুন পাঠকদের সুবিধার্থে দেওয়া থাকবে।

Namaskar Namaskar Namaskar
                                            Namaskar

[Image: 20230928-215610.png]
Like Reply
#7
মহাবীর্যদাদা তোমার সব গল্পই খুব তোড়জোড় করে পাড়া কাঁপিয়ে শুরু হয় কিন্তু মাঝপথেই মুখ থুবড়ে পড়ে !!

৫ ষ্টার , লাইক আর যত রেপু বাকি ছিল সব দিলাম।   



Smile
[+] 3 users Like ddey333's post
Like Reply
#8
 ছোটবেলায় আমাদের বাড়িতে ঠাকুমার এক বন্ধু, পাড়ারই এক বয়স্ক মহিলা, আসতেন। ঠাকুমা তাকে 'মেজদি' বলে ডাকতেন। আর আমরা সকলে, মানে ছোটরা, তাকে 'বিবিধ ভারতী' অথবা 'বিবিসি' বলতাম। সামনে না অবশ্য, পিছনেই। তিনি প্রায় প্রতিদিনই বিকেলবেলা, পাড়ার সকলের বাড়িতে যেতেন। প্রত্যেক বাড়ির জন্যেই তার বিকেল আর সন্ধ্যার খানিকটা সময় বরাদ্দ করে রাখতেন। আসতেন, চা খেতেন, গল্প করতেন, এক সময়ে চলে যেতেন। খালি হাতে ফিরতেন না। যাবার সময় তাঁর ঝুলিতে জমা পরতো একরাশ 'খবর'। যেমন চলে যাবার আগে দিয়ে যেতেন পাড়ার সব বাড়ির 'হাঁড়ির খবর'। পাড়ার কারো যদি অন্য কোন বাড়ির 'খবর' নেবার ইচ্ছে হতো, তাহলে মেজদির খোঁজ পরতো। 


এখনকার ফ্ল্যাট কালচারের জন্যে পুরনো কলকাতার অনেক কিছুর সাথে সাথে, পাড়া কালচারটাও ধ্বংস হয়ে গেছে। হারিয়ে গেছেন 'মেজদি'রা। এখন আর কেউ কারো বাড়িতে চা খেতে বা গল্প করতে যায় না। 'ইনভাইট' করতে হয়, আমন্ত্রণ জানাতে হয়। আগে থেকে। সে যাক, এটা আসল কথা না। যা বলতে শুরু করেছিলাম।

পুরনো পাড়ার এই 'মেজদি'রাই হলেন গোয়েন্দাদের 'আদি রূপ'। 'গোয়েন্দা' শব্দটা বাড়াবাড়ি মনে হলে 'গুপ্তচর' বলা যেতে পারে। 'ইনফরমেশন' বা 'তথ্য' জিনিসটা গোয়েন্দাদের জন্যে ভীষণ ভাবে জরুরী। তথ্য না থাকলে অনুসন্ধান (ইনভেস্টিগেশন) করতে অসুবিধা হয়, যদিও অনুসন্ধান করেও তথ্যের সন্ধান করতে হয়। আর যার কাছে তথ্য আছে, বিশ্লেষণ করতে পারলে গোয়েন্দা, নয়তো গুপ্তচর। এই গুপ্তচরের কাজ হলো, 'সঠিক জায়গায়' খবর (তথ্য) পৌছেঁ দেওয়া। এদেরকে অবশ্য পুলিশি ভাষায় 'খবরি' বা 'ইনফর্মার' বলা হয়। অন্ধকার জগতের খোঁজখবর নেওয়ার জন্যে পুলিশের নিজস্ব 'খবরি' বা 'ইনফর্মার' থাকে। তারাই সমস্ত চোরছ্যাচোরদের খোঁজ খবর এনে দেয় পুলিশকে। যার 'সোর্স' যত পাকাপোক্ত, নেটওয়ার্ক যত শক্তিশালী, সে তত সফল পুলিশ। আদি অনন্ত কাল ধরে এরা, মানে 'মেজদি'রা বর্তমান।

  মেয়েদের গোয়েন্দা গল্পের নায়ক (অথবা নায়িকা) হয়ে ওঠার পিছনেও অবদান যে মিস মার্পেলের তাতেও সন্দেহ নেই। যদিও এ নিয়ে একটু আধটু তর্ক চলতে পারে, তবে উনিই। সৌরীন্দ্রমোহন মুখোপাধ্যায়ের বিন্দিপিসি ('বিন্দিপিসির গোয়েন্দাগিরি') অথবা প্রতুলচন্দ্র গুপ্তের সদু ঠাকুমা ('ঠাকুমার গোয়েন্দাগিরি') যে মিস মার্পেলের আদলে গড়ে উঠেছে, তা দিব্বি বোঝা যায়। কারণ ওনার মতো করেই ঘরের এক কোণে বসে কাঁথা সেলাই করতে করতে কিংবা কীর্তনের আসরে বসেও অপরাধীকে চিনে নিতে এনাদের অসুবিধা হয়না। যদিও গল্পের বোঝা হয়ে দাঁড়ায়নি। এই পিসি-ঠাকুমা, একান্ত ভাবেই বাঙালী, বাংলার। গ্রামের মানুষের চেনা গন্ধ এদের গাঁয়ে মিশে আছে। বাংলা ভাষার লেখাতে নারী গোয়েন্দার অভাব, অথচ এক নারী যদি না সাহায্য না করতেন তাহলে বাংলাতে গোয়েন্দা গল্প লেখার চর্চাটাই শুরু হতো না ভালো করে। কে? কেন? কিভাবে? এই প্রশ্ন গুলো স্বাভাবিক। আসুন, নীচে তারই উত্তর খুঁজি।

স্বর্ণকুমারী দেবী তখন 'ভারতী' মাসিক সাহিত্য পত্রিকার সম্পাদিকা। স্বর্ণকুমারী দেবী ছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বড় দিদি। তিনিই এই 'ভারতী' পত্রিকার সম্পাদকের ভূমিকা পালন করতেন। গোয়েন্দা গল্পের বিস্তারের শুরুর দিকে, গোয়েন্দা গল্পকে যখন 'বটতলার বই' বলেই দেগে দেওয়াটাই রীতি ছিল, সেই সময়ে, স্বর্ণকুমারী দেবী ও তাঁর 'ভারতী' পত্রিকার অবদানের কথা স্বীকার না করাটা অত্যন্ত অনায্য হবে। তারই উৎসাহে ১৮৮৭ সালে প্রকাশিত হলো নগেন্দ্রনাথ গুপ্তর 'চুরি না বাহাদুরি'। বৈশাখ, ১২৯৪ সংখ্যায়। এই 'চুরি না বাহাদুরি' কেই বাংলা ভাষায় প্রথম গোয়েন্দা গল্প বলে ধরা হয়ে থাকে। শুধু তাই নয়, ঐতিহাসিক হরিসাধন মুখোপাধ্যায়ের 'হত্যাকারী কে?', বাংলা ভাষাতে লেখা প্রথম ধারাবাহিক উপন্যাস, ছাপা হয়েছিল এই 'ভারতী'তেই। দীনেন্দ্রকুমার রায়ের গোয়েন্দা গল্পের হাতেখড়ি হয়েছিল এই 'ভারতী'তেই। শুরুটা অন্য পত্রিকাতে হলেও, 'হেমেন্দ্রকুমার' এর জন্ম 'ভারতী'তেই। এরপর অনেকটা পথ চলতে হবে। আসুন।

বাংলা গোয়েন্দা গল্পে নারীদের স্থান খুবই কম। নারী গোয়েন্দা লেখক বা নারী গোয়েন্দা শুধু নয়। চরিত্র হিসেবেও। গুরুত্বপূর্ণ নারী চরিত্র দীনেন্দ্রকুমার রায়ের পর, শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়ের

'ব্যোমকেশ' ছাড়া আর সেভাবে কারো লেখায় গুরুত্বপূর্ণ নারী চরিত্র পাওয়া যায় না। সম্ভবত সেটা দেখেই, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় তার 'কলকাতার জঙ্গলে' গল্পের এক চরিত্র, দেবলীনা দত্তের মুখ দিয়ে প্রশ্ন করিয়েছিলেন, কাকাবাবুর দুঃসাহসিক অভিযানে কেন মেয়েদের দেখা যায় না? না সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, না কাকাবাবু কেউই উত্তর দেননি। দিতে পারেননি বলা যায়। কাকাবাবু বরং দেবলীনাকে সঙ্গী করেছেন, কয়েকবার, এরপরে তাঁর অ্যাডভেঞ্চারে।

১৩০৬ বঙ্গাব্দে (১৮৯৯ সাল) গোয়েন্দা গল্প লিখে, 'কুন্তলীন পুরস্কার' পেয়েছিলেন রজনীচন্দ্র দত্ত ('অদ্ভুত হত্যা', প্রথম পুরস্কার, ত্রিশ টাকা), দীনেন্দ্রকুমার রায় ('অদল বদল', দ্বিতীয় পুরস্কার, কুড়ি টাকা), জগদানন্দ রায় ('গহনার বাক্স', সপ্তম পুরস্কার) এবং সরলাবালা দাসী ('রেলে চুরি', অষ্টম পুরস্কার)। লক্ষণীয় এর প্রত্যেকটি গল্পই মৌলিক। একটিও বিদেশী গল্পের অবলম্বনে নয়। সরলাবালা দাসী সরকার (১৮৭৫-১৯৬১), অমৃত বাজার পত্রিকার কর্ণধার শিশির কুমার ঘোষের বোন এবং স্বনামধন্য গোয়েন্দা গল্পের লেখক শরচ্চন্দ্র সরকারের স্ত্রী, সম্ভবত বাংলাতে প্রথম মহিলা গোয়েন্দা গল্পের লেখিকা। পরবর্তী সময়ে গোয়েন্দা গল্প আর না লিখলেও কবিতা অনেক লিখেছিলেন। এনার গোয়েন্দা কিন্তু মহিলা নন, পুরুষ, পুলিশের গোয়েন্দা সুধাংশুশেখর বসু। বাঙালী লেখকের কলমে প্রথম মহিলা গোয়েন্দা এসেছে, আরো অনেক পরে। সেই গল্পেই আসছি। ১৮৯৯ সালের পর গোয়েন্দা গল্পের লেখিকা হিসেবে আর কাউকে আমাদের পেতে অপেক্ষা করতে হয়েছে বেশ কিছু বছর।

'এ যুগের দুঃশাসন' আর 'ব্যথার দিন' নামে দুটো গোয়েন্দা গল্প প্রহেলিকা সিরিজে লিখেছিলেন সুষমা সেন। তাঁর গোয়েন্দাও ছিলেন পুরুষ, শৈলেন চৌধুরী। এগারো বছরের ছোট্ট অন্তু আবার 'চুরির তদন্ত' করে গোয়েন্দা হয়ে উঠেছিল প্রতিভা বসুর কলমে। 'প্রাইভেট ডিটেকটিভ' বিমানবিহারীকে দিয়ে 'রহস্যভেদ' করেছিলেন আশালতা সিংহ। কাঞ্চনজঙ্ঘা সিরিজের জন্যে লেখা, 'জয়পতাকা' গল্পে, শৈলবালা ঘোষজায়ার (১৮৯৪-১৯৭৪) নায়ক ছিলো, কিশোর জিমূতবাহন। তবে এই গল্পের বিশেষত্ব, কিশোর 'গোয়েন্দা' নয়, বরং পুলিশকে অপরাধীর আসনে বসানোর মধ্যেই। স্বাধীনতার আগে ইংরেজ পুলিশি ব্যবস্থাকে তুলোধোনা করেছিলেন শৈলবালা ঘোষজায়া। তাঁর লেখা একটা রহস্য উপন্যাস ‘চৌকো চোয়াল’ এর কথা আমি শুনেছি, লেখাটা পড়িনি, প্রকাশিত হয়েছিল ‘বঙ্গশ্রী’ মাসিক পত্রিকায়। কামরুন্নেছা খাতুন ওরফে পান্না বেগম লিখেছিলেন 'গাঙ্গুলীমশায়ের সংসার'।

প্রিয়নাথ মুখোপাধ্যায়ের থেকে দীনেন্দ্রকুমার রায় পর্যন্ত, নারী মানে হয় অত্যাচারিত বা ক্ষতিগ্রস্ত (ভিক্টিম)। অপরাধী হিসেবেও নারীকে ব্যবহার করা হয়েছে বহুবার। প্রিয়নাথ মুখোপাধ্যায়ের লেখায় তৈলোক্যতারিনীর কথা অনেকেই পড়েছেন। পাঁচকড়ি দের খলনায়িকা জুমেলিয়া অথবা দীনেন্দ্রকুমার রায়ের গল্পে মেয়ে দস্যু মিস ওলগা নাসমিথ, উপস্থিত। অথচ সদর্থক ভূমিকায় দেখা যায় না তেমন। নেই নেই করে লেখক হিসেবেও অনেকেই চলে এসেছেন গোয়েন্দা গল্পের দুনিয়ায়। কিন্তু 'তোমার দেখা নাই রে' বলে হাহুতাশ করতে হয়েছে আরো কিছুদিন। কার? নারী গোয়েন্দা। অথচ মেয়েদের মধ্যে সহজাত 'গোয়েন্দা' লুকিয়ে থাকে। মা-স্ত্রী-কণ্যা যে রূপেই আসুক না কেন, এক ঝলক মুখের দিকে তাকিয়ে মন পড়ে নেবার ক্ষমতা এদের মতো আর কারো নেই। আমি দেখিনি।

১৯৪০-৫০ এর দশকে 'প্রহেলিকা' সিরিজে জন্ম হলো গোয়েন্দা কৃষ্ণার, 'গুপ্তঘাতক' গল্পে। প্রভাবতী দেবী সরস্বতীর (১৯০৫-১৯৭২) কলমে। আর, এই কৃষ্ণাই ছিলেন সম্ভবত প্রথম বাঙালী মহিলা গোয়েন্দা। গোয়েন্দা হিসেবে গল্পে এক নারীর উপস্থিতি অবশ্যই অভিনবত্ব এনেছিলেন প্রভাবতী দেবী। যখন রান্নাঘরের বাইরে পা রাখলে, পাঁচ দিক থেকে ত্রিশটা প্রশ্ন ধেয়ে আসতো, তখন এক মহিলাকে গোয়েন্দা চরিত্র হিসেবে কল্পনা করা, অবশ্যই অভিনবত্বের দাবী রাখে। শুধু অভিনবত্ব বললে খুব ভুল হবে, বলা প্রয়োজন সাহস। সাহস লাগে। অবশ্য এতে করে, মহিলা পাঠকের সংখ্যাও বেড়ে গেছিল, মনে হয়। বিপদের সময় ঠান্ডা মাথা আর উপস্থিত বুদ্ধি, মেয়েদের যে কোনটারই অভাব নেই, সেইটাই প্রমাণ করে, কৃষ্ণা। প্রথমে 'প্রহেলিকা' সিরিজে, এরপর 'কাঞ্চনজঙ্ঘা' সিরিজে, 'গুপ্তঘাতক' আর 'হত্যার প্রতিশোধ' নামে দুটি গল্প লেখেন প্রভাবতী দেবী। তারপর পুরোদস্তুর একটি আস্ত সিরিজ (কৃষ্ণা সিরিজ) লিখে ফেলেন। আরো পাচটি গল্প লিখেছিলেন। কৃষ্ণা, দ্রৌপদীর আরেক নাম। যে দ্রৌপদী 'মহাভারত' এর সময় থেকে শৃঙ্খল ভেঙে দিতে উদ্বত হয়েছিল। আবার, স্বাধীনতা সংগ্রামের আঙ্গিনায় ছেলেদের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে যে মহিলারা লড়াই করেছিল, তাদের প্রতিও শ্রদ্ধার্ঘ্য বলা যেতে পারে। ভীষণ জনপ্রিয় হয়েছিল, এই কৃষ্ণা সিরিজের গল্প গুলো। নারী স্বাধীনতার সোচ্চার আহ্বান, মহিলাদের প্রতি সহমর্মিতা এই সিরিজের গল্পের প্রতি পাতায় পাতায় পাওয়া যায়। 

অবশ্য গোয়েন্দা গল্পের চেয়ে বরং বেশী অ্যাডভেঞ্চারের গল্প বললেও অত্যুক্তি হয় না। তবে 'কৃষ্ণা' প্রথম মহিলা গোয়েন্দা হিসেবে বাংলার গোয়েন্দাদের ইতিহাসে সব সময় থেকে যাবে। কৃষ্ণা ছাড়াও, শিখা (অগ্নিশিখা রায়) নামে আরো একজন মহিলা গোয়েন্দা ছিল, প্রভাবতী দেবীর। যদিও ওটা পুরোদস্তুর অ্যাডভেঞ্চারের গল্প। নামেই গোয়েন্দা। তা সেই সিরিজের নাম ছিল 'কুমারিকা'।

এরপর ষাটের দশকে ছোটদের পাতে 'সন্দেশ' পড়তেই, নলিনী দাস 'গন্ডালু' নিয়ে হাজির হলেন। এখানে এক জন নয়, এক গন্ডা গোয়েন্দা'লু'। কালু (কাকলি চক্রবর্তী), মালু (মালবিকা মজুমদার), টুলু (টুলু বোস) আর বুলু (বুলবুলি সেন)। এরা সকলেই এক কলেজ বোর্ডিং এর বাসিন্দা। এনিড ব্লাইটনের ছাপ যেমন পান্ডব গোয়েন্দায় আছে, তেমনই গন্ডালুতেও আছে। সাংকেতিক ভাষার মাধ্যমে খবরের আদানপ্রদান অথবা গুপ্তধনের পিছনে ধাওয়া করা কিংবা নিরুদ্দিষ্ট মানুষকে আবার পরিবারের সাথে মিলিয়ে দেওয়া, ডানপিটেদের পছন্দ না করার কোন কারণ ছিল না।

অদ্রীশ বর্ধনের 'নারায়ণী', আবার 'কঠোর ভাবে প্রাপ্তবয়স্কদের জন্যে' লেখা। মাথা নয়, বুদ্ধি নয়, শরীরের জালে ফেলে, শরীরকে টোপ হিসেবে ব্যবহার করে, অ্যাডভেঞ্চারের গল্প। বলা যায়, বাংলা 'হার্ড বয়েল' নারী গোয়েন্দা। 

অজিতকৃষ্ণ বসু নিয়ে এলেন 'বড়োলোক বাপের' মেয়ে নন্দিনী সোমকে, 'ডিটেকটিভ নন্দিনী সোম ও দানু মামা' গল্পে। সাইকোলজি নিয়ে পড়া নন্দিনী সোম কিন্তু নারায়ণীর থেকে ঠিক ১৮০° ঘুরে ব্যবহার করে নিজের বিচার বিবেচনা, বোধ-বুদ্ধি। একই রকম ভাবে আশাপূর্ণা দেবী যখন 'কাজের লোক' কাজল কে নিয়ে লেখেন মেয়ে গোয়েন্দার বাহাদুরি 'গল্পই কী অল্প', সেই কাজলও আস্থা রাখে নিজের বিচার বিবেচনার উপরেই। সামাজিক অথবা আর্থিক অবস্থান আলাদা হলেও নন্দিনী কিংবা কাজল, নিজেদের বুদ্ধি বিবেচনার ব্যবহার করে, একই মানসিক বিন্দুতে অবস্থান করে। শরীর নয়, ব্যবহার করার জন্যে মেয়েদের 'মাথা' আছে যথেষ্ট পরিমাণে। ছেলেদের মাথা ঘুরিয়ে দেবার জন্যে, শরীরের ব্যবহার করতে হয় না, মাথার ব্যবহার করেই করা যায়। আশাপূর্ণা দেবীর গল্পে পকেটমার ট্যাঁপা আর মদনা কেমন করে গোয়েন্দা হলো, সেটাও বলা আছে। মীরা বালসুব্রহ্মণ্যম এক দক্ষিণ ভারতীয় গোয়েন্দাকে নিয়ে এসেছিলেন, পুল্লা রেড্ডী নামে। এই বই আমার নিজের ছিলোনা। এক দাদার বইয়ের গাদা থেকে খুঁজে বের করেছিলাম। আমি একটাই পড়েছিলাম, আরো কয়েকটা থাকবে হয়তো। প্রদীপ্ত রায় নিয়ে এসেছিলেন জগা পিসিকে।

'মাসিক রোমাঞ্চ'র জন্যে লেখা মনোজ সেনের, দময়ন্তী আবার একদম ঘরোয়া। ইতিহাসের শিক্ষিকা, স্বামী সংসার নিয়ে থাকা দময়ন্তী, ভীষণ ভাবেই মধ্যবিত্ত পরিবারের এক মহিলার প্রতিচ্ছবি। সংসার করতে করতে বুদ্ধিতে যার মোরচে পরে না, বরং ঝিলিক দিয়ে ওঠে। চল্লিশের কৃষ্ণা, ষাটের গন্ডালু কিংবা আশির দশকের দময়ন্তী বা তার পরের গার্গী, প্রজ্ঞাপারমিতার সকলেরই একটা জায়গায় কিন্তু ভীষণ মিল। ছেলে গোয়েন্দারা যেমন অধিকাংশই সংসার বিচ্ছিন্ন, মেয়েরা, মেয়ে গোয়েন্দারা ঠিক এর উল্টো। তাদের গল্পে সংসার ফিরে আসে বারে বারে।

তপন বন্দ্যোপাধ্যায় গার্গীকে প্রথম নিয়ে আসেন 'ঈর্ষার সবুজ চোখ' গল্পে। তার বর্তমান স্বামী সায়নকে নির্দোষ প্রমাণ করলেন এই গল্পে। এর পর বহু গল্পই এসেছে গার্গীকে নিয়ে।

সুচিত্রা ভট্টাচার্যের মিতিন মাসি বা প্রজ্ঞাপারমিতা মুখার্জি পুরোদস্তুর গোয়েন্দা। নারী যে কেবল রান্না ঘরের জোয়াল টানতেই পারে না, তার সঙ্গে বাইরের কাজেও পারদর্শী, এক সাথে সব দিক সামলে যে সব নারীই 'দেবী' হয়ে ওঠে, তারই যেন প্রমাণ স্বরূপ তার গোয়েন্দা সংস্থার নাম, 'থার্ড আই'। কেবল স্বামী পার্থ না, ছেলে বুমবুম, দিদি, জামাইবাবু আর বোনঝি, সাকরেদ টুপুর, সকলকে নিয়েই এক বিশাল সংসার। সুচিত্রা ভট্টাচার্য অত্যন্ত সুলেখিকা ছিলেন, মিতিন মাসির গল্পের মধ্যে দিয়েই আমাদের পরিচয় ঘটিয়ে দিয়েছেন, অ্যাংলো-ইন্ডিয়ান, আর্মেনিয়ান, চীনা অথবা ইহুদি সংস্কৃতির সাথে। 

পারমিতা ঘোষ মজুমদারের রঞ্জাবতী মজুমদার, প্রথমে ছিলেন সাংবাদিক, তার পর বেছে নেন গোয়েন্দা বৃত্তি। তার 'টিম ট্রুথসিকার্স' এর বাকী সদস্যরা হলেন তার সহচর লাজবন্তি গঙ্গোপাধ্যায় আর তার ছেলে পোগো। অঞ্জন মান্নার গল্পের অঝোরঝরা বসু, আরেক নারী গোয়েন্দা। হিমাদ্রী কিশোর দাসগুপ্তর গল্পে এক মেয়ে গোয়েন্দার পরিচয় পাই। রাজেশ বসুর গল্পে দ্যুতি, দিয়ালা, রুদ্রানী তিন জন মহিলা গোয়েন্দা এসেছেন। স্বাতী ভট্টাচার্যের গল্পে মেধা বা মেধাবিনীকে গোয়েন্দা হিসেবে পাওয়া গেছে। অভিজ্ঞান রায়চৌধুরীর অনিলিখাও এই সময়েরই নারী গোয়েন্দা।

এরা সকলেই নারী গোয়েন্দা বলতেই মিস মার্পেলের ভেসে ওঠা ছবিটা ভেঙে দিয়েছেন। নারী গোয়েন্দা বলতে ঘরের মধ্যেই এক কোণে বসে থাকা 'প্রোটোটাইপ' যে ছবিটা দেখতে আমরা অভ্যস্ত তা এখনকার মহিলা গোয়েন্দারা ভেঙেছেন। এনারা ঘরের বাইরে এসেছেন। যুগের সাথে তাল মিলিয়ে ঘরে বাইরে সবেতেই পারদর্শী। মেয়েরা স্বভাব গোয়েন্দা। অপরাধের গন্ধ তারা পুরুষের আগেই পেয়ে যান। তাই স্বাভাবিক নিয়মেই সফল।

অবশ্য সকলেই সমান সৌভাগ্যবান নয়। গোয়েন্দা হয়েও, যেন ঠিক লাইমলাইটের আলোটা পড়েনি, বাচ্চু বিচ্ছুর উপর। 'পান্ডব গোয়েন্দা'র মূল গোয়েন্দা চরিত্র বাবলু আর বিলুর, ভাগ্যেই জুটেছে বেশির ভাগ প্রশস্তি। অবশ্য এছাড়াও আরো কয়েকজন আছেন। যদিও ভূমিকা মূলত সহকারীর। নারায়ণ সান্যালের 'কাঁটা সিরিজ'-এ ব্যারিস্টার পিকে বাসুর গল্পে 'সুকৌশলী'র পরিচয় পেয়েছি। 'সুকৌশলী'র 'সু' মানে সুজাতা বা 'ত্রয়ী সত্যসন্ধানী'র শেলী অথবা গৌরপ্রসাদ বসুর গোয়েন্দা কুশলের, এলা,  সহকারীর ভূমিকা পালন করে। কিন্তু সরাসরি সহকারী না হয়েও, গোয়েন্দা অশোক ঠাকুরের বৌদি কাঞ্চনের কথা বাদ দেবো কেমন করে। গোয়েন্দা অশোক ঠাকুরকে, তার বৌদি কাঞ্চন মাঝে মাঝেই যুক্তির খেই ধরিয়ে দেয়, সমাধানের রাস্তা দেখিয়ে দেয়। একই রকম ভাবেই পরিমল গোস্বামীর গোয়েন্দা হরতনের স্ত্রী কুসুমিতা সাহায্য করে আর অদ্রীশ বর্ধনের ইন্দ্রনাথ রুদ্র এই ধরনের সহায়তা পেয়ে থাকে আবার মৃগাঙ্কর স্ত্রী কবিতার থেকে।

এত কথা বলার কারণ, তোমার এই নতুন গল্পটি .. যা আমাকে মুগ্ধ করেছে। এগিয়ে চলো ভাই, অমর হয়ে থাকুক তোমার এই সৃষ্টি।

[Image: Animation-resize-gif-f3b601eb23d95beeb4e...911ac0.gif]


Like Reply
#9
অসাধারণ
[+] 2 users Like Manofwords6969's post
Like Reply
#10
আপনার এ লেখা । যেমন প্রচন্ড উত্তেজিত করে তোলে, আবার কয়েকটা লাইন বড্ড নস্টালজিক লাগলো।
 








PROUD TO BE KAAFIR  devil2


                                 
[+] 1 user Likes Kallol's post
Like Reply
#11
'তোমার ঘরে বসত করে কয়জনা
               মন জানো না'
 
'সে' আপনি হয়তো জানেন না,,, আপনার ঘরে কয়জন বাস করে....
কিন্তু আমাদের মনের ঘরে যে আপনার জায়গা পাকা,, সে দেবশর্মা হোক আর দেবশর্ম্মা,,, এ বাঁধন কেটে  পালিয়ে যাওয়া সহজ নয়....
                    "হৃদ মাঝারে রাখিবো,
                            ছেড়ে দেবো না"
প্রেম বিনে ভাব নাহি,
ভাব বিনে রস;
ত্রিভুবনে যত দেহ,
প্রেম হস্তে বশ।।
                                                 By: Syealaol(1607-1680)
                                                       Modified
[+] 3 users Like S_Mistri's post
Like Reply
#12
(12-03-2023, 01:51 PM)মহাবীর্য দেবশর্মা Wrote:  আমি বড়বৌদিকে প্রাণপনে জাপটে ধরে বললাম, "কে বলেছে, তুমি আমার মা নও! তুমিই আমার মা! বুকের দুধ খাওয়াও নি তো কী হয়েছে, মা কী শুধু দুধ খাওয়ালেই হওয়া যায়! মনে নেই দাদু কী বলত, 'মা হওয়া নয় মুখের কথা/জনম্ দিলেই হয় না মাতা' আমি তোমার গর্ভজাত নই, তোমার বুকের দুধও খাই নি কিন্তু তুমিই আমার মা, আমার মাতৃরূপী বড়বৌদি তুমি!" দুই অসমবয়েসী নরনারীর বাঁধভাঙা আবেগের উছ্বাসে মিশে যাওয়া চোখের জল যেন সেদিন দেবর-বৌদির সম্পর্কের ঊর্দ্ধে উঠে আরেক সম্পর্কের সূচনা করছিল, সে সম্পর্ক মা ছেলের সম্পর্ক! যা রক্তজাত নয়, যা ঔরসজাত নয়, নয় তা গর্ভজাত! তা কেবল হৃদয়ের সাথে হৃদয়ের সম্পর্ক! সে সম্পর্ক সংসারের প্রতিমুহূর্তের ঘাত-প্রতিঘাতে সৃষ্টি! সে সম্পর্ক দৈনন্দিন জীবনের মিথস্ক্রিয়ায় নির্মিত! সে সম্পর্ক সকল সম্পর্কের শ্রেষ্ঠ সম্পর্ক! সে এক দেবররূপী সন্তানের তার বড়বৌদিরূপী মায়ের সম্পর্ক! মিঠে কামনার মৃদু রসে তার সিঞ্চন, আর বুভুক্ষু বাসনার পিপাসায় তার অবলোকন! নিয়তাকার নহে সে, বিমূর্তআয়নায় তার প্রতিনিয়ত প্রতিবিম্ব ফোটে!


সেদিনের ঝোড়োহাওয়া যে মাদল বাজিয়েছিল তার উত্তাল স্পর্শ সেই রাত্রে বৌদির দুগ্ধহীন তবু অমৃতমিষ্ট কলসকার স্তনের পদ্মবৃন্তে মুখ ডুবিয়ে নিদ্রাযাওয়া পর্যন্ত স্থায়ী ছিল। অন্ধকার বিছানায় আমার পাশে শুয়ে, নিজের বিরাট মাই আমার মুখে পুরে দিয়ে মাথায় হাত বুলোতে বুলোতে আমার চোখে ঘুম এনে দিয়েছিল বড়বৌদি। 

সমস্ত পর্বটা একদিকে, আর এই অংশটা আরেকদিকে  clps
শুরুর ওই রসে মাখানো রহস্য পড়তে পড়তে যখন এই অংশটা এলো ভাবলাম আমি কি ভুল করে অন্য গল্পে ঢুকে গেলাম নাকি? Big Grin

তবে ঢুকেই যখন পড়লাম আর বেরোতে পারিনি। আমরা সেই শুরু থেকেই জেনে আসি বৌদি মায়ের মতন। যে আদরের দেওরকে কাছে টেনে নেয়। সমস্ত সমস্যা থেকে আগলে রাখে মায়ের মতো। পরে যদিও বড়ো হবার পরে বৌদি ব্যাপারটা আরেক ভাবেও পরিচয় পেয়েছে। কিন্তু সেটাতে শুধুই রিপুর দংশন আছে, নেই কোনো শ্রদ্ধা বা ভালোবাসা। বৌদির সহিত ফাঁকা ঘরে দুস্টু খেলার সুখপ্রাপ্তির লোভ যে এড়িয়ে যাওয়া যায় তাও নয় কিন্তু মনের কোনো এক অন্তরে বৌদি নামটা আজও আমাদের কাছে বড্ড পবিত্র।
আর মায়ের কথাই যখন উঠে এলো এই গল্পে তাহলে বলতেই হয় নারী দেহের ওই স্তনজোড়া বড্ড আজব জিনিস। ওর প্রতি লোভ আমাদের সকলের। কিন্তু যতদিন মস্তিষ্কে ময়লা না জমে ততদিন কিন্তু ওই লোভনীয় অংশ দুটো ক্ষুদা থেকে মুক্তির একমাত্র উপায় হয়। ওই অংশে মুখ লাগিয়ে চুক চুক করে টেনে অমৃত পান যে বড্ড পবিত্র। পরে সেই দুটোই সবচেয়ে লোভের বস্তু হয়ে যায়। ওগুলোর প্রতি আলাদা রকমের ক্ষিদে জন্মায়। রিপু ও ক্ষুদা মিলেমিশে জন্ম দেয় অসভ্য পুরুষের। মস্তিস্ক থেকে স্তনকে সরিয়ে ফেলা ওতো সোজা নয়। এ গল্পেও মা ও কামুকি নারীর প্রতি টান এক সময় যেন মিলেমিশে যাবে। হয়তো মাতৃত্ব রূপ পাল্টে প্রেমিকার রূপ নেবে কিন্তু কামিনী যেন নিজ উদ্দেশ্য ভুলে না যায়। তার ওপর নির্ভর করছে সে কিভাবে ওই ছোট্ট ছেলেটাকে আপন করে নেবে।


(ভেবেছিলাম রসিয়ে মজার কিছু লিখবো। এমন সব লাইন লিখলো এ লেখক যে সেন্টু করে দিলো পুরো। কোনো মানে হয়  Dodgy)
[+] 4 users Like Baban's post
Like Reply
#13
(12-03-2023, 02:26 PM)Manofwords6969 Wrote: অসাধারণ

Manofwords6969, অনেক ধন্যবাদ। বড়বৌদির এই রহস্য কাহিনী আপনার ভাল লেগেছে জেনে ভীষণ ভাল লাগল। খুব তাড়াতাড়ি এর দ্বিতীয় পর্ব নিয়ে আসছি। আশা করি সেদিনও আপনাকে এরকম ভাবেই পাশে পাবো।

Namaskar Namaskar Namaskar
                                            Namaskar

[Image: 20230928-215610.png]
Like Reply
#14
(12-03-2023, 02:25 PM)Bumba_1 Wrote:  ছোটবেলায় আমাদের বাড়িতে ঠাকুমার এক বন্ধু, পাড়ারই এক বয়স্ক মহিলা, আসতেন। ঠাকুমা তাকে 'মেজদি' বলে ডাকতেন। আর আমরা সকলে, মানে ছোটরা, তাকে 'বিবিধ ভারতী' অথবা 'বিবিসি' বলতাম। সামনে না অবশ্য, পিছনেই। তিনি প্রায় প্রতিদিনই বিকেলবেলা, পাড়ার সকলের বাড়িতে যেতেন। প্রত্যেক বাড়ির জন্যেই তার বিকেল আর সন্ধ্যার খানিকটা সময় বরাদ্দ করে রাখতেন। আসতেন, চা খেতেন, গল্প করতেন, এক সময়ে চলে যেতেন। খালি হাতে ফিরতেন না। যাবার সময় তাঁর ঝুলিতে জমা পরতো একরাশ 'খবর'। যেমন চলে যাবার আগে দিয়ে যেতেন পাড়ার সব বাড়ির 'হাঁড়ির খবর'। পাড়ার কারো যদি অন্য কোন বাড়ির 'খবর' নেবার ইচ্ছে হতো, তাহলে মেজদির খোঁজ পরতো। 


এত কথা বলার কারণ, তোমার এই নতুন গল্পটি .. যা আমাকে মুগ্ধ করেছে। এগিয়ে চলো ভাই, অমর হয়ে থাকুক তোমার এই সৃষ্টি।

সাধু সাধু বুম্বা দা। আপনার এই লেখাটা পড়েই এত ভাল লাগল যে কি বলব! আপনার অগাধ পড়াশুনোর পরিধি টা পুরো বোঝা গেল।
[+] 2 users Like raktim's post
Like Reply
#15
দারুন শুরু হয়েছে.....
বেশ কিছু ছোট ছোট প্রশ্ন মনে উঁকি দিচ্ছে,,, Big Grin Big Grin গল্পটা আরেকটু এগোলে হয়তো ক্লিয়ার হবে.….
       
প্রেম বিনে ভাব নাহি,
ভাব বিনে রস;
ত্রিভুবনে যত দেহ,
প্রেম হস্তে বশ।।
                                                 By: Syealaol(1607-1680)
                                                       Modified
[+] 1 user Likes S_Mistri's post
Like Reply
#16
(12-03-2023, 10:42 PM)মহাবীর্য দেবশর্মা Wrote: Manofwords6969, অনেক ধন্যবাদ। বড়বৌদির এই রহস্য কাহিনী আপনার ভাল লেগেছে জেনে ভীষণ ভাল লাগল। খুব তাড়াতাড়ি এর দ্বিতীয় পর্ব নিয়ে আসছি। আশা করি সেদিনও আপনাকে এরকম ভাবেই পাশে পাবো।

Namaskar Namaskar Namaskar

সার্বিক এবং/অথবা সর্বজনীন শিক্ষার সফল রূপায়নের ক্ষেত্রে অন্যতম বাধা হলো  - অনুপস্হিতি । আর , তার চাইতেও ভয়ঙ্কর বাধা   - অনিয়মিত উপস্হিতি । - আপনার ক্ষেত্রেও , সম্প্রতি , ওই 'বৈশিষ্ট্য'টি ক্রমাগত দেখা দিচ্ছে । তাই , সিদ্ধান্তই নিয়েছিলাম সমাপ্তির পরেই পড়ার কথা ভাববো । .........  Records are Made to be Broken যেমন  - সিদ্ধান্তও তাই-ই । ব্যাখ্যা প্রয়োজনহীন । - সালাম ।   -  সায়রা ।
[+] 3 users Like sairaali111's post
Like Reply
#17
Khub sundor suru dada... Boroboudi r bornona osadharon.. Kintu bidhoba na korle hoto na?


R suronjon babu r kechya to just mind blowing... Amar omon bibahita komboyosi nari favorite... Golpo samne egole oirokom karor sorbonash hote pare ki?
[+] 1 user Likes Dushtuchele567's post
Like Reply
#18
 গোয়েন্দা গল্প এর আগেও এই ফোরামে লেখা হয়েছে। কিন্তু এইরকম প্লট আর এইরকম লেখনী দৃষ্টিগোচর হয়নি আমার। অসাধারণ বললেও কম বলা হয়। আপনার হাতে জাদু আছে ‌‌‌‌মহাবীর্য বাবু। শুধু একটাই কথা বলার আছে .. একসঙ্গে এতগুলো কাহিনী কেউ কখনো শুরু করেনি, আর যারা শুরু করেছে তারা সবগুলো নিয়ে ডুবেছে। তাই আপনাকে অনুরোধ, অধিক সন্ন্যাসীতে গাজন নষ্ট না করে শুধুমাত্র এই কাহিনীটিতে মনোনিবেশ করুন। প্রয়োজনে আষাঢ়ে গপ্পো থ্রেডটা তুলে নিন, ওটাও সম্ভবত একটা রহস্য রোমাঞ্চ বা গোয়েন্দা কাহিনী হতে যাচ্ছিল। ওখানে যে সিকুয়েন্সগুলো বা কাহিনীর গতি প্রকৃতি ভেবে রেখেছিলেন সেগুলো এখানে ইনপুট করুন। আমার তরফ থেকে আমি সাজেশন দিলাম, এবার বাকিটা আপনার সিদ্ধান্ত। 

লাইক, রেপু (+2), ফাইভ স্টার রেটিং .. সবকিছু উজাড় করে দিলাম আপনার এই থ্রেডে।

[Image: Shocked-Open-Asianpiedstarling-size-restricted.gif]

[+] 2 users Like Sanjay Sen's post
Like Reply
#19
দারুন একটা লেখা শুরু করেছেন মহাবীর্য্য দাদা...অসম্ভব ভালো লেখনী তা বলাই বাহুল্য। আপনার এই পেশাদার লেখাগুলি যে কোনো বিখ্যাত বাঙালী লেখক/লেখিকাদের সমতুল্য, আর এই যৌণগন্ধী রহস্য গল্পটি তো দারুন কৌতূহল জাগ্রত করেছে।
লেখাটি যেন শেষ করবেন এই অনুরোধ রাখছি আপনার কাছে।
অধীর আগ্রহের সঙ্গে অপেক্ষা করছি পরবর্তি অংশের জন্য।
অনেক অনেক ভালোবাসা, শুভেচ্ছা ও ধন্যবাদ জানাই আপনাকে।
[+] 2 users Like pondpaka's post
Like Reply
#20
(12-03-2023, 02:25 PM)Bumba_1 Wrote:  ছোটবেলায় আমাদের বাড়িতে ঠাকুমার এক বন্ধু, পাড়ারই এক বয়স্ক মহিলা, আসতেন। ঠাকুমা তাকে 'মেজদি' বলে ডাকতেন। আর আমরা সকলে, মানে ছোটরা, তাকে 'বিবিধ ভারতী' অথবা 'বিবিসি' বলতাম। সামনে না অবশ্য, পিছনেই। তিনি প্রায় প্রতিদিনই বিকেলবেলা, পাড়ার সকলের বাড়িতে যেতেন। প্রত্যেক বাড়ির জন্যেই তার বিকেল আর সন্ধ্যার খানিকটা সময় বরাদ্দ করে রাখতেন। আসতেন, চা খেতেন, গল্প করতেন, এক সময়ে চলে যেতেন। খালি হাতে ফিরতেন না। যাবার সময় তাঁর ঝুলিতে জমা পরতো একরাশ 'খবর'। যেমন চলে যাবার আগে দিয়ে যেতেন পাড়ার সব বাড়ির 'হাঁড়ির খবর'। পাড়ার কারো যদি অন্য কোন বাড়ির 'খবর' নেবার ইচ্ছে হতো, তাহলে মেজদির খোঁজ পরতো। 


এখনকার ফ্ল্যাট কালচারের জন্যে পুরনো কলকাতার অনেক কিছুর সাথে সাথে, পাড়া কালচারটাও ধ্বংস হয়ে গেছে। হারিয়ে গেছেন 'মেজদি'রা। এখন আর কেউ কারো বাড়িতে চা খেতে বা গল্প করতে যায় না। 'ইনভাইট' করতে হয়, আমন্ত্রণ জানাতে হয়। আগে থেকে। সে যাক, এটা আসল কথা না। যা বলতে শুরু করেছিলাম।

পুরনো পাড়ার এই 'মেজদি'রাই হলেন গোয়েন্দাদের 'আদি রূপ'। 'গোয়েন্দা' শব্দটা বাড়াবাড়ি মনে হলে 'গুপ্তচর' বলা যেতে পারে। 'ইনফরমেশন' বা 'তথ্য' জিনিসটা গোয়েন্দাদের জন্যে ভীষণ ভাবে জরুরী। তথ্য না থাকলে অনুসন্ধান (ইনভেস্টিগেশন) করতে অসুবিধা হয়, যদিও অনুসন্ধান করেও তথ্যের সন্ধান করতে হয়। আর যার কাছে তথ্য আছে, বিশ্লেষণ করতে পারলে গোয়েন্দা, নয়তো গুপ্তচর। এই গুপ্তচরের কাজ হলো, 'সঠিক জায়গায়' খবর (তথ্য) পৌছেঁ দেওয়া। এদেরকে অবশ্য পুলিশি ভাষায় 'খবরি' বা 'ইনফর্মার' বলা হয়। অন্ধকার জগতের খোঁজখবর নেওয়ার জন্যে পুলিশের নিজস্ব 'খবরি' বা 'ইনফর্মার' থাকে। তারাই সমস্ত চোরছ্যাচোরদের খোঁজ খবর এনে দেয় পুলিশকে। যার 'সোর্স' যত পাকাপোক্ত, নেটওয়ার্ক যত শক্তিশালী, সে তত সফল পুলিশ। আদি অনন্ত কাল ধরে এরা, মানে 'মেজদি'রা বর্তমান।

  মেয়েদের গোয়েন্দা গল্পের নায়ক (অথবা নায়িকা) হয়ে ওঠার পিছনেও অবদান যে মিস মার্পেলের তাতেও সন্দেহ নেই। যদিও এ নিয়ে একটু আধটু তর্ক চলতে পারে, তবে উনিই। সৌরীন্দ্রমোহন মুখোপাধ্যায়ের বিন্দিপিসি ('বিন্দিপিসির গোয়েন্দাগিরি') অথবা প্রতুলচন্দ্র গুপ্তের সদু ঠাকুমা ('ঠাকুমার গোয়েন্দাগিরি') যে মিস মার্পেলের আদলে গড়ে উঠেছে, তা দিব্বি বোঝা যায়। কারণ ওনার মতো করেই ঘরের এক কোণে বসে কাঁথা সেলাই করতে করতে কিংবা কীর্তনের আসরে বসেও অপরাধীকে চিনে নিতে এনাদের অসুবিধা হয়না। যদিও গল্পের বোঝা হয়ে দাঁড়ায়নি। এই পিসি-ঠাকুমা, একান্ত ভাবেই বাঙালী, বাংলার। গ্রামের মানুষের চেনা গন্ধ এদের গাঁয়ে মিশে আছে। বাংলা ভাষার লেখাতে নারী গোয়েন্দার অভাব, অথচ এক নারী যদি না সাহায্য না করতেন তাহলে বাংলাতে গোয়েন্দা গল্প লেখার চর্চাটাই শুরু হতো না ভালো করে। কে? কেন? কিভাবে? এই প্রশ্ন গুলো স্বাভাবিক। আসুন, নীচে তারই উত্তর খুঁজি।

স্বর্ণকুমারী দেবী তখন 'ভারতী' মাসিক সাহিত্য পত্রিকার সম্পাদিকা। স্বর্ণকুমারী দেবী ছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বড় দিদি। তিনিই এই 'ভারতী' পত্রিকার সম্পাদকের ভূমিকা পালন করতেন। গোয়েন্দা গল্পের বিস্তারের শুরুর দিকে, গোয়েন্দা গল্পকে যখন 'বটতলার বই' বলেই দেগে দেওয়াটাই রীতি ছিল, সেই সময়ে, স্বর্ণকুমারী দেবী ও তাঁর 'ভারতী' পত্রিকার অবদানের কথা স্বীকার না করাটা অত্যন্ত অনায্য হবে। তারই উৎসাহে ১৮৮৭ সালে প্রকাশিত হলো নগেন্দ্রনাথ গুপ্তর 'চুরি না বাহাদুরি'। বৈশাখ, ১২৯৪ সংখ্যায়। এই 'চুরি না বাহাদুরি' কেই বাংলা ভাষায় প্রথম গোয়েন্দা গল্প বলে ধরা হয়ে থাকে। শুধু তাই নয়, ঐতিহাসিক হরিসাধন মুখোপাধ্যায়ের 'হত্যাকারী কে?', বাংলা ভাষাতে লেখা প্রথম ধারাবাহিক উপন্যাস, ছাপা হয়েছিল এই 'ভারতী'তেই। দীনেন্দ্রকুমার রায়ের গোয়েন্দা গল্পের হাতেখড়ি হয়েছিল এই 'ভারতী'তেই। শুরুটা অন্য পত্রিকাতে হলেও, 'হেমেন্দ্রকুমার' এর জন্ম 'ভারতী'তেই। এরপর অনেকটা পথ চলতে হবে। আসুন।

বাংলা গোয়েন্দা গল্পে নারীদের স্থান খুবই কম। নারী গোয়েন্দা লেখক বা নারী গোয়েন্দা শুধু নয়। চরিত্র হিসেবেও। গুরুত্বপূর্ণ নারী চরিত্র দীনেন্দ্রকুমার রায়ের পর, শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়ের

'ব্যোমকেশ' ছাড়া আর সেভাবে কারো লেখায় গুরুত্বপূর্ণ নারী চরিত্র পাওয়া যায় না। সম্ভবত সেটা দেখেই, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় তার 'কলকাতার জঙ্গলে' গল্পের এক চরিত্র, দেবলীনা দত্তের মুখ দিয়ে প্রশ্ন করিয়েছিলেন, কাকাবাবুর দুঃসাহসিক অভিযানে কেন মেয়েদের দেখা যায় না? না সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, না কাকাবাবু কেউই উত্তর দেননি। দিতে পারেননি বলা যায়। কাকাবাবু বরং দেবলীনাকে সঙ্গী করেছেন, কয়েকবার, এরপরে তাঁর অ্যাডভেঞ্চারে।

১৩০৬ বঙ্গাব্দে (১৮৯৯ সাল) গোয়েন্দা গল্প লিখে, 'কুন্তলীন পুরস্কার' পেয়েছিলেন রজনীচন্দ্র দত্ত ('অদ্ভুত হত্যা', প্রথম পুরস্কার, ত্রিশ টাকা), দীনেন্দ্রকুমার রায় ('অদল বদল', দ্বিতীয় পুরস্কার, কুড়ি টাকা), জগদানন্দ রায় ('গহনার বাক্স', সপ্তম পুরস্কার) এবং সরলাবালা দাসী ('রেলে চুরি', অষ্টম পুরস্কার)। লক্ষণীয় এর প্রত্যেকটি গল্পই মৌলিক। একটিও বিদেশী গল্পের অবলম্বনে নয়। সরলাবালা দাসী সরকার (১৮৭৫-১৯৬১), অমৃত বাজার পত্রিকার কর্ণধার শিশির কুমার ঘোষের বোন এবং স্বনামধন্য গোয়েন্দা গল্পের লেখক শরচ্চন্দ্র সরকারের স্ত্রী, সম্ভবত বাংলাতে প্রথম মহিলা গোয়েন্দা গল্পের লেখিকা। পরবর্তী সময়ে গোয়েন্দা গল্প আর না লিখলেও কবিতা অনেক লিখেছিলেন। এনার গোয়েন্দা কিন্তু মহিলা নন, পুরুষ, পুলিশের গোয়েন্দা সুধাংশুশেখর বসু। বাঙালী লেখকের কলমে প্রথম মহিলা গোয়েন্দা এসেছে, আরো অনেক পরে। সেই গল্পেই আসছি। ১৮৯৯ সালের পর গোয়েন্দা গল্পের লেখিকা হিসেবে আর কাউকে আমাদের পেতে অপেক্ষা করতে হয়েছে বেশ কিছু বছর।

'এ যুগের দুঃশাসন' আর 'ব্যথার দিন' নামে দুটো গোয়েন্দা গল্প প্রহেলিকা সিরিজে লিখেছিলেন সুষমা সেন। তাঁর গোয়েন্দাও ছিলেন পুরুষ, শৈলেন চৌধুরী। এগারো বছরের ছোট্ট অন্তু আবার 'চুরির তদন্ত' করে গোয়েন্দা হয়ে উঠেছিল প্রতিভা বসুর কলমে। 'প্রাইভেট ডিটেকটিভ' বিমানবিহারীকে দিয়ে 'রহস্যভেদ' করেছিলেন আশালতা সিংহ। কাঞ্চনজঙ্ঘা সিরিজের জন্যে লেখা, 'জয়পতাকা' গল্পে, শৈলবালা ঘোষজায়ার (১৮৯৪-১৯৭৪) নায়ক ছিলো, কিশোর জিমূতবাহন। তবে এই গল্পের বিশেষত্ব, কিশোর 'গোয়েন্দা' নয়, বরং পুলিশকে অপরাধীর আসনে বসানোর মধ্যেই। স্বাধীনতার আগে ইংরেজ পুলিশি ব্যবস্থাকে তুলোধোনা করেছিলেন শৈলবালা ঘোষজায়া। তাঁর লেখা একটা রহস্য উপন্যাস ‘চৌকো চোয়াল’ এর কথা আমি শুনেছি, লেখাটা পড়িনি, প্রকাশিত হয়েছিল ‘বঙ্গশ্রী’ মাসিক পত্রিকায়। কামরুন্নেছা খাতুন ওরফে পান্না বেগম লিখেছিলেন 'গাঙ্গুলীমশায়ের সংসার'।

প্রিয়নাথ মুখোপাধ্যায়ের থেকে দীনেন্দ্রকুমার রায় পর্যন্ত, নারী মানে হয় অত্যাচারিত বা ক্ষতিগ্রস্ত (ভিক্টিম)। অপরাধী হিসেবেও নারীকে ব্যবহার করা হয়েছে বহুবার। প্রিয়নাথ মুখোপাধ্যায়ের লেখায় তৈলোক্যতারিনীর কথা অনেকেই পড়েছেন। পাঁচকড়ি দের খলনায়িকা জুমেলিয়া অথবা দীনেন্দ্রকুমার রায়ের গল্পে মেয়ে দস্যু মিস ওলগা নাসমিথ, উপস্থিত। অথচ সদর্থক ভূমিকায় দেখা যায় না তেমন। নেই নেই করে লেখক হিসেবেও অনেকেই চলে এসেছেন গোয়েন্দা গল্পের দুনিয়ায়। কিন্তু 'তোমার দেখা নাই রে' বলে হাহুতাশ করতে হয়েছে আরো কিছুদিন। কার? নারী গোয়েন্দা। অথচ মেয়েদের মধ্যে সহজাত 'গোয়েন্দা' লুকিয়ে থাকে। মা-স্ত্রী-কণ্যা যে রূপেই আসুক না কেন, এক ঝলক মুখের দিকে তাকিয়ে মন পড়ে নেবার ক্ষমতা এদের মতো আর কারো নেই। আমি দেখিনি।

১৯৪০-৫০ এর দশকে 'প্রহেলিকা' সিরিজে জন্ম হলো গোয়েন্দা কৃষ্ণার, 'গুপ্তঘাতক' গল্পে। প্রভাবতী দেবী সরস্বতীর (১৯০৫-১৯৭২) কলমে। আর, এই কৃষ্ণাই ছিলেন সম্ভবত প্রথম বাঙালী মহিলা গোয়েন্দা। গোয়েন্দা হিসেবে গল্পে এক নারীর উপস্থিতি অবশ্যই অভিনবত্ব এনেছিলেন প্রভাবতী দেবী। যখন রান্নাঘরের বাইরে পা রাখলে, পাঁচ দিক থেকে ত্রিশটা প্রশ্ন ধেয়ে আসতো, তখন এক মহিলাকে গোয়েন্দা চরিত্র হিসেবে কল্পনা করা, অবশ্যই অভিনবত্বের দাবী রাখে। শুধু অভিনবত্ব বললে খুব ভুল হবে, বলা প্রয়োজন সাহস। সাহস লাগে। অবশ্য এতে করে, মহিলা পাঠকের সংখ্যাও বেড়ে গেছিল, মনে হয়। বিপদের সময় ঠান্ডা মাথা আর উপস্থিত বুদ্ধি, মেয়েদের যে কোনটারই অভাব নেই, সেইটাই প্রমাণ করে, কৃষ্ণা। প্রথমে 'প্রহেলিকা' সিরিজে, এরপর 'কাঞ্চনজঙ্ঘা' সিরিজে, 'গুপ্তঘাতক' আর 'হত্যার প্রতিশোধ' নামে দুটি গল্প লেখেন প্রভাবতী দেবী। তারপর পুরোদস্তুর একটি আস্ত সিরিজ (কৃষ্ণা সিরিজ) লিখে ফেলেন। আরো পাচটি গল্প লিখেছিলেন। কৃষ্ণা, দ্রৌপদীর আরেক নাম। যে দ্রৌপদী 'মহাভারত' এর সময় থেকে শৃঙ্খল ভেঙে দিতে উদ্বত হয়েছিল। আবার, স্বাধীনতা সংগ্রামের আঙ্গিনায় ছেলেদের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে যে মহিলারা লড়াই করেছিল, তাদের প্রতিও শ্রদ্ধার্ঘ্য বলা যেতে পারে। ভীষণ জনপ্রিয় হয়েছিল, এই কৃষ্ণা সিরিজের গল্প গুলো। নারী স্বাধীনতার সোচ্চার আহ্বান, মহিলাদের প্রতি সহমর্মিতা এই সিরিজের গল্পের প্রতি পাতায় পাতায় পাওয়া যায়। 

অবশ্য গোয়েন্দা গল্পের চেয়ে বরং বেশী অ্যাডভেঞ্চারের গল্প বললেও অত্যুক্তি হয় না। তবে 'কৃষ্ণা' প্রথম মহিলা গোয়েন্দা হিসেবে বাংলার গোয়েন্দাদের ইতিহাসে সব সময় থেকে যাবে। কৃষ্ণা ছাড়াও, শিখা (অগ্নিশিখা রায়) নামে আরো একজন মহিলা গোয়েন্দা ছিল, প্রভাবতী দেবীর। যদিও ওটা পুরোদস্তুর অ্যাডভেঞ্চারের গল্প। নামেই গোয়েন্দা। তা সেই সিরিজের নাম ছিল 'কুমারিকা'।

এরপর ষাটের দশকে ছোটদের পাতে 'সন্দেশ' পড়তেই, নলিনী দাস 'গন্ডালু' নিয়ে হাজির হলেন। এখানে এক জন নয়, এক গন্ডা গোয়েন্দা'লু'। কালু (কাকলি চক্রবর্তী), মালু (মালবিকা মজুমদার), টুলু (টুলু বোস) আর বুলু (বুলবুলি সেন)। এরা সকলেই এক কলেজ বোর্ডিং এর বাসিন্দা। এনিড ব্লাইটনের ছাপ যেমন পান্ডব গোয়েন্দায় আছে, তেমনই গন্ডালুতেও আছে। সাংকেতিক ভাষার মাধ্যমে খবরের আদানপ্রদান অথবা গুপ্তধনের পিছনে ধাওয়া করা কিংবা নিরুদ্দিষ্ট মানুষকে আবার পরিবারের সাথে মিলিয়ে দেওয়া, ডানপিটেদের পছন্দ না করার কোন কারণ ছিল না।

অদ্রীশ বর্ধনের 'নারায়ণী', আবার 'কঠোর ভাবে প্রাপ্তবয়স্কদের জন্যে' লেখা। মাথা নয়, বুদ্ধি নয়, শরীরের জালে ফেলে, শরীরকে টোপ হিসেবে ব্যবহার করে, অ্যাডভেঞ্চারের গল্প। বলা যায়, বাংলা 'হার্ড বয়েল' নারী গোয়েন্দা। 

অজিতকৃষ্ণ বসু নিয়ে এলেন 'বড়োলোক বাপের' মেয়ে নন্দিনী সোমকে, 'ডিটেকটিভ নন্দিনী সোম ও দানু মামা' গল্পে। সাইকোলজি নিয়ে পড়া নন্দিনী সোম কিন্তু নারায়ণীর থেকে ঠিক ১৮০° ঘুরে ব্যবহার করে নিজের বিচার বিবেচনা, বোধ-বুদ্ধি। একই রকম ভাবে আশাপূর্ণা দেবী যখন 'কাজের লোক' কাজল কে নিয়ে লেখেন মেয়ে গোয়েন্দার বাহাদুরি 'গল্পই কী অল্প', সেই কাজলও আস্থা রাখে নিজের বিচার বিবেচনার উপরেই। সামাজিক অথবা আর্থিক অবস্থান আলাদা হলেও নন্দিনী কিংবা কাজল, নিজেদের বুদ্ধি বিবেচনার ব্যবহার করে, একই মানসিক বিন্দুতে অবস্থান করে। শরীর নয়, ব্যবহার করার জন্যে মেয়েদের 'মাথা' আছে যথেষ্ট পরিমাণে। ছেলেদের মাথা ঘুরিয়ে দেবার জন্যে, শরীরের ব্যবহার করতে হয় না, মাথার ব্যবহার করেই করা যায়। আশাপূর্ণা দেবীর গল্পে পকেটমার ট্যাঁপা আর মদনা কেমন করে গোয়েন্দা হলো, সেটাও বলা আছে। মীরা বালসুব্রহ্মণ্যম এক দক্ষিণ ভারতীয় গোয়েন্দাকে নিয়ে এসেছিলেন, পুল্লা রেড্ডী নামে। এই বই আমার নিজের ছিলোনা। এক দাদার বইয়ের গাদা থেকে খুঁজে বের করেছিলাম। আমি একটাই পড়েছিলাম, আরো কয়েকটা থাকবে হয়তো। প্রদীপ্ত রায় নিয়ে এসেছিলেন জগা পিসিকে।

'মাসিক রোমাঞ্চ'র জন্যে লেখা মনোজ সেনের, দময়ন্তী আবার একদম ঘরোয়া। ইতিহাসের শিক্ষিকা, স্বামী সংসার নিয়ে থাকা দময়ন্তী, ভীষণ ভাবেই মধ্যবিত্ত পরিবারের এক মহিলার প্রতিচ্ছবি। সংসার করতে করতে বুদ্ধিতে যার মোরচে পরে না, বরং ঝিলিক দিয়ে ওঠে। চল্লিশের কৃষ্ণা, ষাটের গন্ডালু কিংবা আশির দশকের দময়ন্তী বা তার পরের গার্গী, প্রজ্ঞাপারমিতার সকলেরই একটা জায়গায় কিন্তু ভীষণ মিল। ছেলে গোয়েন্দারা যেমন অধিকাংশই সংসার বিচ্ছিন্ন, মেয়েরা, মেয়ে গোয়েন্দারা ঠিক এর উল্টো। তাদের গল্পে সংসার ফিরে আসে বারে বারে।

তপন বন্দ্যোপাধ্যায় গার্গীকে প্রথম নিয়ে আসেন 'ঈর্ষার সবুজ চোখ' গল্পে। তার বর্তমান স্বামী সায়নকে নির্দোষ প্রমাণ করলেন এই গল্পে। এর পর বহু গল্পই এসেছে গার্গীকে নিয়ে।

সুচিত্রা ভট্টাচার্যের মিতিন মাসি বা প্রজ্ঞাপারমিতা মুখার্জি পুরোদস্তুর গোয়েন্দা। নারী যে কেবল রান্না ঘরের জোয়াল টানতেই পারে না, তার সঙ্গে বাইরের কাজেও পারদর্শী, এক সাথে সব দিক সামলে যে সব নারীই 'দেবী' হয়ে ওঠে, তারই যেন প্রমাণ স্বরূপ তার গোয়েন্দা সংস্থার নাম, 'থার্ড আই'। কেবল স্বামী পার্থ না, ছেলে বুমবুম, দিদি, জামাইবাবু আর বোনঝি, সাকরেদ টুপুর, সকলকে নিয়েই এক বিশাল সংসার। সুচিত্রা ভট্টাচার্য অত্যন্ত সুলেখিকা ছিলেন, মিতিন মাসির গল্পের মধ্যে দিয়েই আমাদের পরিচয় ঘটিয়ে দিয়েছেন, অ্যাংলো-ইন্ডিয়ান, আর্মেনিয়ান, চীনা অথবা ইহুদি সংস্কৃতির সাথে। 

পারমিতা ঘোষ মজুমদারের রঞ্জাবতী মজুমদার, প্রথমে ছিলেন সাংবাদিক, তার পর বেছে নেন গোয়েন্দা বৃত্তি। তার 'টিম ট্রুথসিকার্স' এর বাকী সদস্যরা হলেন তার সহচর লাজবন্তি গঙ্গোপাধ্যায় আর তার ছেলে পোগো। অঞ্জন মান্নার গল্পের অঝোরঝরা বসু, আরেক নারী গোয়েন্দা। হিমাদ্রী কিশোর দাসগুপ্তর গল্পে এক মেয়ে গোয়েন্দার পরিচয় পাই। রাজেশ বসুর গল্পে দ্যুতি, দিয়ালা, রুদ্রানী তিন জন মহিলা গোয়েন্দা এসেছেন। স্বাতী ভট্টাচার্যের গল্পে মেধা বা মেধাবিনীকে গোয়েন্দা হিসেবে পাওয়া গেছে। অভিজ্ঞান রায়চৌধুরীর অনিলিখাও এই সময়েরই নারী গোয়েন্দা।

এরা সকলেই নারী গোয়েন্দা বলতেই মিস মার্পেলের ভেসে ওঠা ছবিটা ভেঙে দিয়েছেন। নারী গোয়েন্দা বলতে ঘরের মধ্যেই এক কোণে বসে থাকা 'প্রোটোটাইপ' যে ছবিটা দেখতে আমরা অভ্যস্ত তা এখনকার মহিলা গোয়েন্দারা ভেঙেছেন। এনারা ঘরের বাইরে এসেছেন। যুগের সাথে তাল মিলিয়ে ঘরে বাইরে সবেতেই পারদর্শী। মেয়েরা স্বভাব গোয়েন্দা। অপরাধের গন্ধ তারা পুরুষের আগেই পেয়ে যান। তাই স্বাভাবিক নিয়মেই সফল।

অবশ্য সকলেই সমান সৌভাগ্যবান নয়। গোয়েন্দা হয়েও, যেন ঠিক লাইমলাইটের আলোটা পড়েনি, বাচ্চু বিচ্ছুর উপর। 'পান্ডব গোয়েন্দা'র মূল গোয়েন্দা চরিত্র বাবলু আর বিলুর, ভাগ্যেই জুটেছে বেশির ভাগ প্রশস্তি। অবশ্য এছাড়াও আরো কয়েকজন আছেন। যদিও ভূমিকা মূলত সহকারীর। নারায়ণ সান্যালের 'কাঁটা সিরিজ'-এ ব্যারিস্টার পিকে বাসুর গল্পে 'সুকৌশলী'র পরিচয় পেয়েছি। 'সুকৌশলী'র 'সু' মানে সুজাতা বা 'ত্রয়ী সত্যসন্ধানী'র শেলী অথবা গৌরপ্রসাদ বসুর গোয়েন্দা কুশলের, এলা,  সহকারীর ভূমিকা পালন করে। কিন্তু সরাসরি সহকারী না হয়েও, গোয়েন্দা অশোক ঠাকুরের বৌদি কাঞ্চনের কথা বাদ দেবো কেমন করে। গোয়েন্দা অশোক ঠাকুরকে, তার বৌদি কাঞ্চন মাঝে মাঝেই যুক্তির খেই ধরিয়ে দেয়, সমাধানের রাস্তা দেখিয়ে দেয়। একই রকম ভাবেই পরিমল গোস্বামীর গোয়েন্দা হরতনের স্ত্রী কুসুমিতা সাহায্য করে আর অদ্রীশ বর্ধনের ইন্দ্রনাথ রুদ্র এই ধরনের সহায়তা পেয়ে থাকে আবার মৃগাঙ্কর স্ত্রী কবিতার থেকে।

এত কথা বলার কারণ, তোমার এই নতুন গল্পটি .. যা আমাকে মুগ্ধ করেছে। এগিয়ে চলো ভাই, অমর হয়ে থাকুক তোমার এই সৃষ্টি।




দাদা, আমার গল্পের মোট লাইকের সংখ্যার প্রায় সমান তোমার এই কমেন্টে পড়া লাইকের সংখ্যা। স্কোরবোর্ড অনেক ক্ষেত্রে গাধা হলেও এই ক্ষেত্রে নয়, বরং প্রকৃত ছবিটাই তুলে ধরেছে কমেন্টে পড়া লাইকগুলো। কতটা পড়াশুনো করলে একটা বুম্বা হওয়া যায় তার বোধহয় একটা যথার্থ ঝলক এই কমেন্ট। গল্পের ভাল মন্দ বিষয় নিয়ে কত মন্তব্য আসে কিন্তু এমন মন্তব্য মনে হয় খুব কম ভাগ্যবানের জোটে। কত অজানা তথ্য পেলাম এই একটা কমেন্টে, কার্যত এই বাংলার আনাচে কানাচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা নারী গোয়েন্দাদের সমস্ত মুক্তোগুলোকে তুমি একটা মালায় গেঁথে আমায় উপহার দিলে। বলা বাহুল্য, এদের কয়েকজনের নাম যেমন আমি শুনেছি, কয়েকজনের কাহিনী আমি পড়েওছি কিন্তু এমন অনেক অজস্র নাম পেলাম যাঁদের সম্পর্কে ন্যূনতম ধারণাও ছিল না। আর সেই নামগুলোকে জানিয়ে দেওয়ার জন্যে অনেক ভালবাসা রইল। নাম ধরে, সাল ধরে এত গভীর লেখা যে পড়ার পর আমার মনে হল তোমার অনন্য সাধারণ সৃষ্টি থ্রেডের থেকেই একটা গোটা পাতা ছিঁড়ে আমায় উপহার দিলে। তুমি বললে আমার এই গল্প তোমায় মুগ্ধ করেছে, কিন্তু তোমার এই অনবদ্য গবেষণা আমায় মন্ত্রমুগ্ধ করেছে! আমি নিজেকে সত্যিই আজ গৌরবান্বিত মনে করছি এমন মন্তব্য পেয়ে! জানিনা, ভবিষ্যতের পর্বগুলোয় কবে আবার এমন মন্তব্যের সাক্ষী থাকবো, তবে আজ থেকেছি এটাই আমার সেরা পাওনা।

আমার এই উপন্যাস নিজের সৃষ্টি লগ্নেই তোমায় মুগ্ধ করতে পেরেছে এটাই আমার শ্রেষ্ঠ প্রাপ্তি। তোমার পদধূলি আর তোমার আশীর্বাদ আজ সত্যিই আমার কুটিরকে আলোকিত এবং মহিমান্বিত উভয়ই করেছে। 


Namaskar Namaskar Namaskar
                                            Namaskar

[Image: 20230928-215610.png]
Like Reply




Users browsing this thread: 2 Guest(s)