Posts: 18,186
Threads: 471
Likes Received: 64,100 in 27,387 posts
Likes Given: 23,552
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,246
(23-01-2023, 02:10 PM)Bumba_1 Wrote: নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু ভারত তথা বাঙালির হৃদয়ের এমন একজন মানুষ যার চির উজ্জ্বল প্রতিচ্ছবি এবং স্বার্থহীন দেশ প্রেমের জোয়ারে আজও উদ্বেলিত সমগ্র ভারতবাসীর অন্তর। কিন্তু কি হলো শেষ পর্যন্ত আমাদের প্রিয় নেতাজীর? এই কালজয়ী প্রশ্নের সাথে সাথেই কিভাবে হল এবং কেন হল এই প্রশ্নগুলো কিন্তু একইসাথে উদ্বেলিত হয় আমাদের হৃদয়। এই প্রশ্নগুলোর সঠিক উত্তর আমরা আদৌ কোনদিনও জানতে পারবো কিনা সেটা নিয়েই এখন তৈরি হয়েছে অনেক সংশয়। আমরা সকলেই জানি জাপানের, তাইহোকু সেনা বিমান ঘাঁটিতে নেতাজির বিমান ,দুর্ঘটনার কবলে পড়েছিল বলে প্রচারিত আছে।
কিন্তু আশ্চর্যজনক ভাবে ওই বিমান দুর্ঘটনায় নাকি শুধুমাত্র নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর ই দগ্ধ অবস্থায় মৃত্যু হয়েছিল। অথচ বেঁচে গিয়েছিলেন কিন্তু বিমানে সফররত নেতাজির অনান্য বিশ্বস্ত সহযাত্রীরা।যাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন ক্যাপ্টেন হাবিবুর রহমান। যিনি ছিলেন নাকি নেতাজী র শেষ সময়ে একমাত্র সাথী ।মূলত হাবিবুর রহমান ই সবাইকে জানান নেতাজী মারা গেছেন এবং তার মৃত্যুর কারণ হলো বিমান দুর্ঘটনা।
কে এই হাবিবুর রহমান? যদি পিছনের দিকে তাকাই তাহলে আমরা দেখতে পাব হাবিবুর রহমান জন্মে ছিলেন জম্মু-কাশ্মীরে। শিক্ষা জীবন শেষ করে 15 জুলাই 1936 যোগদান করেন ব্রিটিশ ইন্ডিয়ার 2nd ব্যাটেলিয়ানে একজন সৈনিক হিসেবে। পরে লেফটেন্যান্ট হিসেবে পদোন্নতি হয়। 15th ফেব্রুয়ারি 1942 সালে মালায়াতে ব্রিটিশ সেনা আত্মসমর্পণ করে জাপানি সেনার কাছে। যুদ্ধবন্দী হিসেবে জেলে ছিলেন তিনি।। পরবর্তীকালে তিনি তিনি নেতাজির ভাবধারায় অনুপ্রাণিত হন এবং নেতাজির উদ্যোগে তাকে কারাগার থেকে মুক্ত করে আজাদ হিন্দ ফৌজ এর নিযুক্ত করাহয়। পরবর্তীকালে ধীরে ধীরে তিনি আজাদহিন্দ ফৌজ এর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন হন এবং ক্রমশ নেতাজির ছায়াসঙ্গী হয়ে ওঠেন।
1947 সালে স্বাধীনতার সময় হাবিবুর রহমান পাকিস্তান চলে যান।যুক্ত হন পাকিস্তানের সেন্ট্রাল সুপিরিয়র সার্ভিসে।নিযুক্ত হন মূখ্য অ্যাডমিস্টেটর নর্দান অঞ্চল গিলগীট্ ও বালুচিস্থান, পাকিস্তানের অ্যাডিশনাল ডিফেন্স সেক্রেটারি হিসেবে।গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ছিলেন আজাদ কাশ্মীর কাউন্সিলের ও।তিনি কাশ্মীরকে পাকিস্তানের সাথে যুক্ত করার জন্য বিশেষ দায়িত্ব পালন করেন।আলোচনায় সফল না হলে . সংখ্যাগরিষ্ঠ কাশ্মীরের * রাজা হরি সিংহ কে ক্ষমতাচ্যুত করার ঘোষণা করেন। মূলত তারপরই দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়েছিলেন কাশ্মীরের শেষ * রাজা।
জম্মু ও কাশ্মীর আজাদীর লড়াইয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করার জন্য পাকিস্তান সরকার হাবিবুর রহমান কে 1) ফকর-ই- কাশ্মীর, 2) গাজী-ই-কাশ্মীর, 3) ফতে -ই- ভিমবীর।এবং পাকিস্তান আর্মিতে সাফল্যের জন্য আর্মির পক্ষ থেকে হাবিবুর রহমানকে 1)Sitara-e-Pakistan 2)Nishan-e-Imtiaz 3)Tamgha-e-Imtiaz এবং 4)Tamgha-i-Khidmat এর গুরুত্বপূর্ণ সন্মান দেওয়া হয়েছিল।
নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর অপর একজন বিশ্বস্ত ও বিশেষ আস্থাভাজন ছিল আজাদহিন্দ ফৌজের মেজর জেনারেল শাহ নওয়াজ খান।
ব্রিটিশ স্কুলে পড়াশোনা শেষ করে তিনি যুক্ত হন ব্রিটিশ সেনাবাহিনীতে। এরপর, ক্যাপ্টেন পদে নিয়োগ, সিঙ্গাপুর পোস্টিং এবং জাপানের সাথে যুদ্ধের সময় তিনি 1942 সালে যুদ্ধবন্দি হিসেবে গ্রেপ্তার হন। পরে সুভাষচন্দ্র বসুর ভাবধারায় অনুপ্রাণিত হয়ে 1943 সালে তিনি ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল আর্মি INAতে যোগদান করেন।
এক্ষেত্রেও কারাগার থেকে তার মুক্তির ব্যাপারে নেতাজি হস্তক্ষেপ করেছিলেন এবং তাকে আই এন এ তে সামিল করেছিলেন। আজাদহিন্দ ফৌজ যখন বৃটিশের বিরুদ্ধে লড়াই করছেন তখন মেজর জেনারেল শেহনাজ খান কে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল উত্তর-পূর্ব ভারতের। 1945 সালে INA সৈন্যরা আত্মসমর্পণ করে ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর কাছে। গ্রেপ্তার হওয়ার পর 1946 সালে আজাদহিন্দ ফৌজের মেজর জেনারেল শাহ নাওয়াজ খান সহ বাহিনীর একাধিক গুরুত্বপূর্ণ সদস্যদের ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধাচরণ করার দায়ে লালকেল্লায় প্রকাশ্যেই কোর্ট মার্শাল করা হয়। এই বিচার প্রক্রিয়া চলার সময় মেজর খান সম্পূর্ণরূপে সহিংস পথ ছেড়ে গান্ধীজীর অহিংস পথে চলার কথা ঘোষণা করেন। এরপর জহরলাল নেহেরুর উদ্যোগে মুক্ত হয়ে সক্রিয়ভাবে কংগ্রেসে যোগ দান করেন এবং, সংসদীয় রাজনীতিতে একাধিকবার কেন্দ্রীয় মন্ত্রী এবং বিভিন্ন বিভাগের চেয়ারম্যান নিযুক্ত হন। শাহ নওয়াজ খান চারবার (1951, 1957, 1962 এবং 1971) লোকসভায় নির্বাচিত হন উত্তর প্রদেশের ‘মেরাট’ কেন্দ্র থেকে। 1967 ও 1977 সালের নির্বাচনে তিনি পরাজিত হয়ে ছিলেন কারণ 1965 ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধে তার ছেলে মাহমুদ পাকিস্তান আর্মির দায়িত্বে ছিল বলে বিরোধীরা কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন কমিটির পদ থেকে শাহজাহান খানের পদত্যাগের দাবিতে সোচ্চার হয়েছিল। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী লাল বাহাদুর শাস্ত্রী এই দাবি খারিজ করে দিয়েছিলেন।
এখন প্রশ্ন হলো হঠাৎ করে নেতাজির দুজন ছায়াসঙ্গী হাবিবুর রহমান এবং শাহনওয়াজ খান বদলে গেলেন কি করে ? কি করে তারা সুবিধাবাদী রাজনীতিতে ঢুকে পড়লেন ?তাহলে কি নেতাজীর ভাবধারায় সত্যিই অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন এরা ? নাকি পুরোটাই ছিল জেল থেকে বেরিয়ে এক উন্মুক্ত পৃথিবী দেখার অভিপ্রয়াস?, প্রশ্ন আছে আরো ,যে নেতাজি অখন্ড স্বাধীন ভারতবর্ষের জন্য . ভাইদের নিজের ছায়া সঙ্গী করে রেখেছিলেন, যে নেতাজি * .ের মধ্যে কোনদিনও কোন ভেদাভেদ করেননি, সেই নেতাজির তথাকথিত শেষ মুহূর্তের সঙ্গী হাবিবুর রহমান কেন বিভাজনের পক্ষে ভারত ছেড়ে পাকিস্তান চলে গেলেন? শুধু তাই নয় ,কিভাবে ই বা তিনি . জনসংখ্যা বেশি হওয়ার জন্য জম্মু-কাশ্মীর কে জোড় করে পাকিস্তানের সাথে যুক্ত করার জন্য মূখ্য ভূমিকা পালন করেন? কিভাবেই বা ঘৃণ্য চক্রান্ত করে কাশ্মীরের রাজা হরি সিং কে নিজের জায়গা ছেড়ে যেতে বাধ্য করেছিল?
প্রশ্ন আছে হাবিবুর রহমান কেও নিয়েও। আজ যখন প্রায় প্রমাণ হয়ে গেছে যে তাইহোকু বিমান দুর্ঘটনায় নেতাজির মৃত্যু গুজব ছাড়া অন্য কিছু নয়, সেই জায়গা থেকে ঠিক কি প্রমাণের ভিত্তিতে শাহনওয়াজ খান কমিটি 1945 সালের 18 আগস্ট দিনটিতে নেতাজির বিমান দুর্ঘটনায় মৃত্যু ঘটেছিল বলে মান্যতা দিলেন? তাহলে জহরলাল নেহেরুর মন্ত্রিসভায় গিয়ে তার নেতাজির প্রতি শ্রদ্ধা ভালোবাসা বা সর্বোপরি আবেগ বা প্রেম কি শেষ হয়ে গিয়েছিল ? তিনি কি ভুলে গিয়েছিলেন আজাদ হিন্দ ফৌজের সর্বময় কর্তার দেশের জন্য আত্মত্যাগের ইতিহাস? কেন জহরলাল সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন হয়েও তিনি উপযুক্ত মর্যাদা পাইয়ে দেননি আজাদহিন্দ বাহিনীর হাজার হাজার তার সহ কর্মীদের!
তাহলে কি নেতাজির অন্তর্ধান রহস্য এবং মৃত্যু নিয়ে কোন একটি বিশেষ রাজনৈতিক দলের অসম্ভব চাপের কাছে নতি স্বীকার করেছিলেন তিনি? সেক্ষেত্রে তিনি কি ভুলে গিয়েছিলেন আজাদহিন্দ ফৌজ এর কুড়ি হাজার বীর বিপ্লবীর শহীদ হওয়ার ইতিহাসকে ? এখান থেকে আরও একটা বড় প্রশ্ন কিন্তু উঠে আসে নেতাজির এই হঠাৎ করে অন্তর্ধান এবং তারপর তার কি তাকে জোর করে ভারতবাসীর চোখে তাকে মৃত প্রমাণ করার অপপ্রয়াসের শুরুটা আসলে কবে থেকে ছিল ? তবে কি ষড়যন্ত্রের নিগূঢ় জাল অত্যন্ত সযত্নে বোনা হয়েছিল 1945 সালের 18 আগস্ট এর অনেক আগে থেকেই? জানিনা ভবিষ্যত উত্তর দেবে কিনা, কিন্তু দেশের বীর বিপ্লবী দেশ মায়ের এই বীর সন্তান কে কোন ষড়যন্ত্রী নোংরা হাত শেষ করতে পারেনি বলেই বিশ্বাস করতে আজও বড্ড ইচ্ছা করছে!
তাই কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে একজন অতিসাধারণ নেতাজির একজন ভক্ত, সংগ্রাহক এবং দেশপ্রেমিক হিসেবে দাবি .. দয়া করে আর একটা নিরপেক্ষ কমিশন গঠন করুন ,যারা সঠিকভাবে তদন্ত করে সামনে আনবে নেতাজির অন্তর্ধান আসল রহস্য ।দেশবাসীর সামনে উন্মুক্ত করবে সেই সমস্ত সত্য ,যাকে গলাটিপে হত্যা করার অনেক প্রয়াস হয়েছে হয়ত আমাদের এই ভারত থেকেই ।ভারত মায়ের বিশ্ববন্দিত সেই ছেলের শেষ পর্যন্ত সত্যিই কি হয়েছিল সেটা জানার অধিকার আছে সকল ভারতবাসীর ই। হয় মুখার্জি কমিশনের রিপোর্ট সর্বসমক্ষে উন্মুক্ত করা হোক আর না হলে একটা নতুন কমিটি বা কমিশন গঠন করা হোক যারা সঠিক ভাবে এবং দ্রুততার সাথে নেতাজি সংক্রান্ত সকল ষড়যন্ত্রের রহস্যের উদ্ঘাটন করবে।
Posts: 4,424
Threads: 7
Likes Received: 8,930 in 2,803 posts
Likes Given: 4,330
Joined: Oct 2019
Reputation:
3,211
ভালােবাসা মানে একমুঠো রােদ আর বসন্তের মন মাতানো হাওয়া। ভালােবাসা মানে মনের সাগরে স্বপ্নের তরী বাওয়া। ভালােবাসা মানে শিশির ভেজা সবুজ ঘাসের জমি। ভালােবাসা মানে সব সীমা ছাড়িয়ে শুধু তুমি আর আমি। আজ ১৪ই ফেব্রুয়ারি .. ভালোবাসার দিবস। তাই নিয়ে এলাম দুটি পর্ব সম্বলিত একটি অন্যরকম প্রেমের কাহিনী .. আপনাদের সকলের ভালোবাসা একান্তভাবে কাম্য।
ভায়োলিন এবং ..
কাহিনী এবং প্রচ্ছদঃ- বুম্বা
রূপনগর এয়ারপোর্টে নেমেই শরীরে কাঁপুনি দিয়ে উঠলো শশাঙ্কর .. ঘড়িতে তখন সন্ধ্যে সাতটা। ও ভাবতেই পারেনি এখানে এত ঠাণ্ডা পড়তে পারে। জ্যাকেট পড়েও শীতকে ঠেকানো যাচ্ছে না। হু হু করে হিমেল বাতাস বইছে .. বেশি ঠান্ডা কোনোদিনই সহ্য করতে পারেনা শশাঙ্ক। এখনই একটা আশ্রয় যোগাড় করতে না পারলে এই শীতে তার অবস্থা আরও সঙ্গিন হবে, এটা বেশ বুঝতে পারলো শশাঙ্ক।
সমস্ত ফর্মালিটিস মিটিয়ে এয়ারপোর্টের বাইরে বেরিয়ে শশাঙ্ক সোজা এগিয়ে গেলো ট্যাক্সি স্ট্যান্ডের দিকে। অবাক কান্ড .. সেই মুহূর্তে একটাই টেক্সি দাঁড়িয়েছিল। এর আগে কখনো রূপনগরে আসেনি সে। ওর ছাব্বিশ বছরের জীবনের পুরোটাই কেটেছে সুন্দরপুরে।
সুন্দরপুরের মতো না হলেও, রূপনগর বেশ বড় শহর। মিনিট পনেরো পরে বড় রাস্তা ছেড়ে ট্যাক্সিটা একটা সরু গলির মধ্যে ঢুকলো। তারপর বেশ কিছুক্ষণ এ গলি সে গলি দিয়ে চলার পর, এসে পৌঁছালো আবার একটা চওড়া রাস্তায়। এখানে বেশ অন্ধকার আর অদ্ভুতরকমের একটা নিস্তব্ধতা। শশাঙ্ক জানতে চাইলো "এখানে এত অন্ধকার কেন?"
"এটা অফিসপাড়া, স্যার। এখানে দিনের বেলায় জমজমাট থাকে, রাতে সবকিছু নিস্তব্ধ হয়ে যায়।" ট্যাক্সি ড্রাইভারের এই উক্তিতে "বুঝেছি, আমাকে একটা ভালো দেখে হোটেলে নিয়ে চলুন.." গম্ভীরভাবে এটুকুই বললো শশাঙ্ক।
তারপর ট্যাক্সিটা আরেকটু এগিয়ে আবার একটা গলির মধ্যে ঢুকে পড়লো। গলির ভেতর কিছুটা অগ্রসর হয়ে একটি হোটেলের সামনে দাঁড়ালো ট্যাক্সিটা। শশাঙ্ক বুঝতে পারলো এটা একটা ব্লাইন্ড লেন .. হোটেলটা গলির একদম শেষ প্রান্তে।
ট্যাক্সির ভাড়া মিটিয়ে শীতে কাঁপতে কাঁপতে হোটেলটায় প্রবেশ করলো শশাঙ্ক। আগে থেকে বুক করা না থাকলেও, চমৎকার একটা ঘর পেয়ে গেলো সে। রুমে ঢুকে প্রথমেই জামাকাপড় খুলে বাথরুমে গিয়ে গিজার চালিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিলো শশাঙ্ক। কিছুক্ষণের মধ্যেই সান্ধ্যভোজ হিসেবে গরম কফি আর চিকেন পকোড়া এসে গেলো। এখন সবে রাত আটটা .. অথচ রাত বারোটা-একটার আগে ঘুমই আসে না তার। এতক্ষণ সময় কাটবে কি করে .. এটা ভেবেই চিন্তিত হয়ে পড়লো শশাঙ্ক।
শশাঙ্কর হঠাৎ মনে পড়লো ভায়োলিনটার কথা। ওটা তো সঙ্গে করেই এনেছে সে .. ভায়োলিন বাজিয়েই কিছুটা সময় অতিবাহিত করা যাবে। কফিটা শেষ করে খাট থেকে নেমে পড়লো শশাঙ্ক। আগের মতো এখন আর অতটা ঠান্ডা লাগছে না, সেই জুবুথুবু ভাবটাও এখন অনেকটা কেটে গিয়েছে। ভায়োলিনটা বের করে খাটের উপর বসলো সে। ঠিক তখনই খুব চেনা একটা সুর মনে পড়লো শশাঙ্কর .. আবছা একটা মুখও ভেসে উঠলো মনের মধ্যে। ঠিক যেন সেই মুখটা ওর দিকে মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। ভেসে ওঠা সেই মুখটাকে সামনে রেখেই বাজাতে শুরু করলো শশাঙ্ক।
হঠাৎ করেই কিছু একটা মনে পড়ে যাওয়াতে নিজের মনেই হেসে উঠলো সে। বাজনা থামিয়ে দিলো শশাঙ্ক। 'অপর্ণা দি যে রূপনগরেই থাকে, এ কথা তো তার আগে মনে পড়েনি! ওর নম্বরটাও সম্ভবত তার কাছে ছিলো। কিন্তু সেটা এই মুহূর্তে পাওয়া যাবে বলে মনে হয় না। কারণ, নতুন মোবাইলটা নেওয়ার পর পুরনো অনেক ফোন নম্বর এই মোবাইলে তোলা হয়নি। আচ্ছা, সে তো পুরনো ফোনটাও সঙ্গে করে নিয়ে এসেছে। একবার খুঁজে দেখার চেষ্টা করলে কেমন হয়!' এই ভেবে ভায়োলিনটা খাটের উপর রেখে ব্যাগের ভেতর থেকে পুরনো মোবাইলটা বের করে একটু খোঁজাখুঁজি করতেই অপর্ণার নম্বরটা পেয়ে গেলো সে।
প্রথমে কিছুটা ইতস্তত করে, তারপর অবশেষে ওই নম্বরে ফোন করলো শশাঙ্ক। দু'বার রিং হওয়ার পরেই অপরপ্রান্ত থেকে ভেসে এলো একটি মেয়েলি কন্ঠ, "কে?"
"বলো তো .. কে?" কিছুটা কৌতুকের সুরেই বললো শশাঙ্ক।
কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে, "শশাঙ্ক .. তাই না? হোয়াট এ প্লেজেন্ট সারপ্রাইজ! যাক, তাও যে আমাকে এতদিন পর তোর মনে পড়লো, সেটাই বড় কথা .." উচ্ছ্বসিত হয়ে উঠলো ফোনের অপর প্রান্তের নারী কন্ঠটি।
শশাঙ্ক সেই কথার কোনো উত্তর না দিয়ে কিছুটা রহস্য করে বললো "আমি এখন কোথায় বলো তো? এনি গেস? বুঝতে পারলে না তো .. এখন আমি রূপনগরে।"
"বাব্বা .. তুই তো চমকের পর চমক দিয়ে যাচ্ছিস! কিন্তু এখানে কি কোনো কাজে এসেছিস? কোথায় উঠেছিস?" ফোনের অপর প্রান্ত থেকে জিজ্ঞাসা করলো অপর্ণা।
শশাঙ্ক ঠিকানাটা বললো, তার সঙ্গে হোটেলের নামটাও। তারপর আব্দারের সুরে বলে উঠলো "এখানে একবার আসবে .. প্লিজ? এখন .."
কথাটা শুনে অপর্না প্রায় আঁতকে উঠে বললো, "অসম্ভব .. বাইরে প্রচন্ড ঠান্ডা .. আমি এখন ঘরে রুম হিটার জ্বালিয়ে বসে বসে বই পড়ছি, এখন এখান থেকে কোথাও নড়তে পারবো না। তোর হোটেলটা এখান থেকে বেশ কিছুটা দূরে, তাছাড়া এখন অনেকটা রাত হয়ে গিয়েছে। এই সময় এমনিতেই ওই এলাকাটা একদম জনশূন্য হয়ে যায়। যদি সময় সুযোগ করে উঠতে পারি, তাহলে কাল সকালে অবশ্যই দেখা করবো .."
"আমি একটা ইন্টারভিউ দেওয়ার জন্য এখানে এসেছি অপর্ণা দি। কাল সকাল দশটায় ইন্টারভিউ। তারপর, ওখান থেকেই সোজা এয়ারপোর্টে চলে যাবো।" শশাঙ্কর মুখে কথাগুলো শুনে অপর্ণা কিছুক্ষণ চুপ করে রইলো। তারপর জিজ্ঞাসা করলো, "তোর মতো একজন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ীর একমাত্র ছেলে চাকরির জন্য ইন্টারভিউ দিতে এসেছে? সে যাই হোক, আচ্ছা .. তুই এখনো ভায়োলিন বাজাস?"
- "হ্যাঁ, বাজাই তো .."
- "এখানে তো আনিসনি, তাই না?"
- "এনেছি তো .. একবারটি প্লিজ এসো না গো অপর্ণা দি! একা একা ভীষণ বোর হচ্ছি হোটেল রুমে। সবে তো এখন সোয়া আটটা বাজে। তুমি চিন্তা করো না, ফেরার সময় আমি তোমাকে নিজে পৌঁছে দিয়ে আসবো।"
শশাঙ্কর কথা শেষ হওয়া মাত্রই ফোনটা কেটে দিলো অপর্না। তুলতুলে নরম বিছানায় নিজের শরীর এলিয়ে দিয়ে শশাঙ্ক একটা সিগারেট ধরিয়ে ভাবলো .. সত্যিই সে একটা অন্যায় আব্দার করে ফেলেছে। এত রাতে, তার উপর আবার এই ঠান্ডায় খুব এমার্জেন্সি না হলে বাড়ির বাইরে কেউ বেরোয় না। তাও আবার এমন একজনের জন্য, যার সঙ্গে তার সেই অর্থে কোনোদিন কোনো সম্পর্কই গড়ে ওঠেনি। শশাঙ্কর মনে পড়ে গেলো বছর তিনেক আগেকার কথা।
এমবিএর ফাইনাল ইয়ার চলছিলো তখন শশাঙ্কর। ইউনিভার্সিটির পক্ষ থেকে প্রতিবারের মতোই একটা বার্ষিক পিকনিকের আয়োজন করা হয়েছিলো। শশাঙ্ক ভায়োলিনে একটি জনপ্রিয় হিন্দি গানের সুর বাজাচ্ছিলো, আর সবাই তাকে ঘিরে বসেছিলো। কয়েকদিন আগে কলা বিভাগে ভিজিটিং ফ্যাকাল্টি হয়ে এসেছিলো অপর্ণা। সম্পূর্ণ অন্য ডিপার্টমেন্ট এবং পৃথক বিল্ডিং হওয়ার জন্য শশাঙ্ক আগে দেখেননি তাকে। ওই পিকনিকেই সে প্রথম দেখে অপর্ণাকে। হয়তো পুরোটাই কাকতালীয় ব্যাপার। হয়তো বা দু'জনের দেখা হওয়ার কথা ছিলো না .. অথচ দেখা হয়েছিল। আর ওই সামান্য কিছু সময়ের মধ্যেই অপর্ণাকে অসম্ভব ভালো লেগে গিয়েছিল শশাঙ্কর। অপর্ণার মতো এত ঝলমলে এবং প্রাণোচ্ছল মেয়ে সে আগে কখনো দেখেনি। তার হাসিটা যেন জলপ্রপাতের মতো। চুলগুলো পিঠ দিয়ে গড়িয়ে আরো নিচে নেমে ছড়িয়ে পড়েছে ক্রমশ। আলাপচারিতার পর জানা গেলো, অপর্ণা তার থেকে প্রায় বছর চারেকের বড়। "ম্যাডাম" বলে সম্বোধন না করলেও "অপর্ণা দি" বলেই তাকে ডেকেছিল শশাঙ্ক। মন্ত্রমুগ্ধের মতো অপর্ণা তার ভায়োলিনের বাজনা শুনে যাচ্ছিল। একটার পর একটা অনুরোধ করে যাচ্ছিল নতুন গানের সুর বাজানোর জন্য। তারপর একসময় খাওয়া দাওয়া শেষ হলে ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাসের পিছন দিকের চমৎকার বাগানটায় বেশ কিছুক্ষণ ঘুরে বেরিয়েছিল তারা। ফুল উপহার দিয়েছিল একে অপরকে।
কিন্তু তাদের এই সুন্দর সময় কাটানো খুব একটা দীর্ঘ হয়নি। অপর্ণার মোবাইলে একটা কল এসে যাওয়াতে ছন্দপতন ঘটে গিয়েছিল। "আমার বাবার হঠাৎ করেই শরীরটা খারাপ হয়েছে .. আই হ্যাভ টু গো নাও .." মোবাইলে কথা বলার পর শশাঙ্ককে এইটুকু জানিয়ে উদ্ভ্রান্তের মতো বেরিয়ে গিয়েছিলো অপর্ণা। কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়েছিল শশাঙ্ক। তার হয়তো অপর্ণার সঙ্গে যাওয়া উচিৎ ছিলো, বা অনুরোধ করা উচিৎ ছিলো তাকে সঙ্গে করে নিয়ে যাওয়ার জন্য। কিন্তু এই অল্প সময়ের মধ্যে তো এইরকম কিছু বলার বা অনুরোধ করার সেই অধিকারবোধ তৈরিই হয়নি। তাড়াহুড়ায় অপর্ণার ফোন নম্বর এবং ঠিকানা কোনোটাই নিতে পারেনি সে।
সামনেই ফাইনাল পরীক্ষা, তাই কয়েকদিন ছুটি ছিলো শশাঙ্কর। পরীক্ষার দিন ইউনিভার্সিটিতে এসে আর্টস ডিপার্টমেন্টে গিয়ে অপর্ণার খোঁজ করার পর সে জানতে পারে মাসখানেক হলো কয়েকদিনের জন্য কলা বিভাগে ভিজিটিং ফ্যাকাল্টি হয়ে এসেছিলো অপর্ণা। তার সময়কাল উত্তীর্ণ হওয়াতে সে ফিরে গিয়েছে। অনেক চেষ্টা করেও অপর্ণার ফোন নম্বর জোগাড় করতে পারেনি শশাঙ্ক।
তার বছরখানেক পর পিসির বাড়ি থেকে ফেরার সময় মেট্রোর কম্পার্টমেন্টে শশাঙ্কর সঙ্গে হঠাৎ করেই দেখা হয়েছিলো অপর্ণার। অপর্ণার মুখের দিকে তাকিয়ে থমকে গিয়েছিল শশাঙ্ক .. তার মাথায় সিঁদুর জ্বলজ্বল করছিলো। তারপর তার মুখ থেকে সবকিছু জেনেছিলো শশাঙ্ক। তার কোথায় বিয়ে হয়েছে, ছেলে কি করে .. এই সবকিছু। কথাগুলো শুনতে ভালো লাগছিলো না তার, কিন্তু অপর্ণা ননস্টপ কথা বলে যাচ্ছিলো। দু'টো স্টেশন পরেই নেমে গিয়েছিলো অপর্ণা। কৌতুহলবশত শশাঙ্ক তার ফোন নম্বরটা নিয়েছিলো ঠিকই, কিন্তু বিবাহিতা অপর্ণার সঙ্গে যোগাযোগ করার বা তাকে ফোন করার কোনো আগ্রহ দেখায়নি শশাঙ্ক। অথচ অথচ এই ক'বছরে অপর্ণার কথা ওর বারবারই মনে পড়েছে। কিন্তু কাজের চাপে সেই অর্থে কখনো কনসেন্ট্রেট করতে পারেনি পুরো বিষয়টা নিয়ে। তবুও যেনো সর্বদা একটা অদ্ভুত টান অনুভব করেছে অপর্ণার প্রতি।
শশাঙ্কর চোখটা একটু লেগে গিয়েছিল। সেই সময় ওর রুমের ইন্টারকম টেলিফোনটা হঠাৎ বেজে উঠলো। বিছানা থেকে উঠে ফোনটা ধরতেই রিসেপশন থেকে জানালো "একজন মহিলা এসেছেন .. আপনার সঙ্গে দেখা করতে চাইছেন।"
এরকম একটা অচেনা জায়গায় তার সঙ্গে কে দেখা করতে আসতে পারে .. তাও আবার একজন মহিলা! তবে কি .. "নাম কিছু বলেছে?" জিজ্ঞাসা করলো শশাঙ্ক।
"অপর্ণা .." রিসেপশন থেকে জানানো হলো।
নামটা শুনেই চমকে উঠলো শশাঙ্ক। একটা অদ্ভুত রকমের উত্তেজনা হতে থাকলো তার শরীরে। তারপর নিজেকে সামলে নিয়ে বললো, "পাঠিয়ে দিন.."
একটু পরেই অপর্না এসে ঢুকলো শশাঙ্কর রুমে। প্রায় দুই বছর পর আবার দু'জনের দেখা হলো। শশাঙ্কর এখন ছাব্বিশ বছর বয়স, অপর্ণার প্রায় তিরিশ। "বাব্বা .. বাইরে যতটা ঠান্ডা, ভেতরে ততটাই গরম .." এই বলে ঘরে ঢুকেই হাঁটু পর্যন্ত লম্বা উপরের লং-কোটটা খুলে ফেললো সে। শশাঙ্ক দেখলো একটা গাঢ় নীল রঙের জিন্স আর লাল রঙের স্কিন টাইট টি-শার্ট পড়ে এসেছে অপর্ণা। ঘড়িতে তখন রাত প্রায় ন'টা।
আগের চেয়ে কিঞ্চিৎ স্বাস্থ্যবতী হয়েছে সে, সাধারণ বাঙালি মেয়েদের তুলনায় একটু বেশিই লম্বা অপর্ণা। ওর গায়ের রঙটা শশাঙ্কর থেকে তো বটেই, এমনকি যে কোনো খাঁটি মেমসাহেবকে পর্যন্ত প্রতিযোগিতাতে ফেলে দিতে পারে। তার সঙ্গে রয়েছে এক মন মাতানো পশ্চিমী লাবণ্য .. যেটা অবশ্যই পরিবেশ নির্ভর, যা বাংলার মেয়েদের কাছে চিরকাল ঈর্ষার কারণ। স্নিগ্ধ লাবণ্যের সঙ্গে বুদ্ধির দীপ্তি ছড়িয়ে রয়েছে অপর্ণার সমস্ত মুখমন্ডলে। কিন্তু সে দীপ্তি চোখ ধাঁধায়া না - ঠিক যেন দুধ-সাদা পিটার্স ল্যাম্প, যা আলো ছড়ায়, কিন্তু জ্বালা দেয় না। ভারী বক্ষ এবং গুরু নিতম্বিনী না হলেও ক্ষীণ কটির অধিকারিণী অপর্ণার দিক থেকে চোখ ফেরাতে পারছিলো না শশাঙ্কর।
"কি রে .. ওইরকম হাঁ করে কি দেখছিস আমার দিকে? আমি যে আসবো .. এটা ভাবতে পারিস নি, তাই তো?" অপর্ণার কথায় ঘোর কাটলো শশাঙ্কর। "এখনো ভাবতে পারছি না, মনে হচ্ছে যেন স্বপ্ন দেখছি .." আমতা আমতা করে বললো শশাঙ্ক।
কথাবার্তা যত এগোতে থাকলো, ধীরে ধীরে দুজনেই স্বাভাবিক হয়ে উঠলো পরস্পরের কাছে .. বিশেষ করে শশাঙ্ক। "কি খাবে বলো .. মিক্সড ফ্রাইড রাইস আর ড্রাই চিলি-চিকেন অর্ডার দিই?" শশাঙ্কর কথায় হেসে উঠলো অপর্ণা, "অ্যাজ ইউ উইশ .." হাসলে তার গালে এখনও টোল পরে।
Posts: 4,424
Threads: 7
Likes Received: 8,930 in 2,803 posts
Likes Given: 4,330
Joined: Oct 2019
Reputation:
3,211
"তার মানে, আমার সঙ্গে আজ ডিনার করতে তোমার কোনো আপত্তি নেই। আমি খুব খুশি হয়েছি অপর্ণা দি। এরকম একটা অচেনা জায়গায় এসে একা একা কি করে এতটা সময় কাটাবো, এটা ভেবেই ভীষণ বোর লাগছিলো। তারপর মনে পড়লো তোমার তো এখানেই বিয়ে হয়েছে .. তুমি বলেছিলে। তাই তোমাকে কল করলাম। আমার অবশ্য তোমার হাজব্যান্ডকেও ডাকা উচিৎ ছিলো, কিন্তু আমি শুধু তোমার সঙ্গেই দেখা করতে চেয়েছিলাম। বাই দ্য ওয়ে, ফিরতে রাত হলে তোমার বর আবার রাগ করবে না তো?" জানতে চাইলো শশাঙ্ক।
"আমি আমার বরের সঙ্গে থাকলে তো রাগ করবে!" সংক্ষিপ্ত জবাব দিলো অপর্না।
- "মানে?"
- "মানে, আমাদের ডিভোর্স হয়ে গিয়েছে। ইনফ্যাক্ট আমিই ওকে মিউচুয়াল ডিভোর্স দিয়েছি। যেহেতু আমার কোনো দাবি-দাওয়া ছিলো না, তাই ওর দিক থেকেও কোনো বাধা আসেনি।"
শশাঙ্ক ভালো করে অপর্ণার মুখের দিকে তাকিয়ে দেখলো,, তার মুখে বিন্দুমাত্র কষ্ট বা আক্ষেপের ছাপ নেই। খুব স্বাভাবিক ভঙ্গিতে কথাগুলো বলছে সে। "যদি অবশ্য বলতে আপত্তি না থাকে তাহলে একটা কথা জিজ্ঞাসা করছি .. হঠাৎ এরকমটা হলো কেনো? আর তোমাদের ছেলেমেয়ে?" জিজ্ঞাসা করলো শশাঙ্ক।
"আমাদের বিয়ের আগে থেকেই ও একটা অন্য মেয়ের সঙ্গে ইনভলভড ছিলো, আই মিন রিলেশনশিপে ছিলো। আমি জানতাম না। যখন জানতে পারলাম, তখন আর এক মুহূর্তও .. আমারও তো একটা আত্মসম্মানবোধ রয়েছে। আমাদের কোনো ইস্যু হয়নি .. তাই পরস্পরের প্রতি সেই অর্থে কোনো টান তৈরিই হয়নি আমাদের .." কথাগুলো বলতে বলতে কিছুটা আনমনা হয়ে গেলো অপর্ণা।
শশাঙ্ক কয়েক মুহূর্ত চুপ করে রইলো, তারপর জিজ্ঞাসা করলো "এখন, কেমন আছো? কাকু কাকিমা কেমন আছেন?"
"মাস ছয়েক হলো রূপনগর ইউনিভার্সিটিতে পার্টটাইমারের একটা চাকরি পেয়েছি .. যদিও এটা কন্ট্রাকচুয়াল। ভাড়া থাকি একটা ওয়ান বিএইচকে ফ্ল্যাটে .. ব্যাস, এই আর কি। বাবা-মা তোদের ওখানে আই মিন সুন্দরপুরেই রয়েছে .. ওখানে আমাদের বাড়ি আছে তো! ওয়াশরুমটা ওইদিকে, তাই না? আমি একটু ওয়াশরুমে যাবো .." কথাগুলো বলে অ্যাটাচ বাথরুমে ঢুকে গেলো অপর্ণা।
ততক্ষণে শশাঙ্ক ফোনে ডিনারের অর্ডার দিয়ে দিলো। বাথরুম থেকে বেরিয়ে ঘরের এদিক ওদিক দেখতে দেখতে অপর্ণা জিজ্ঞাসা করলো "বলেছিলিস ভায়োলিনটা সঙ্গে করে এনেছিস! কোথায় .. দেখতে পাচ্ছি না তো?"
কম্বলের তলা থেকে ভায়োলিনটা বের করে মুচকি হেসে শশাঙ্ক বললো "এটার কথা তোমার এখনো মনে আছে?"
"মনে থাকবে না .. তাই কখনো হয়! সেই ইউনিভার্সিটির পিকনিকের দিন .. একটা বিশেষ কারণে খুব মন খারাপ ছিলো আমার। তোর ভায়োলিনের সুরেই তো আমার মনটা ভালো হয়ে গিয়েছিল। আর সেই দিন থেকেই তো .." অপর্ণার এই কথার পরিপ্রেক্ষিতে জানতে চাইলো শশাঙ্ক, "সেই দিন থেকেই তো .. কি?"
- "নাথিং .. লিভ ইট। আচ্ছা তুই আমাকে একটা কথা বল .. একজন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ীর একমাত্র সন্তান হয়ে তোর হঠাৎ চাকরির ইন্টারভিউ দেওয়ার দরকার হয়ে পড়লো কেনো?"
- "কিছুই না .. নিজের একটা আইডেন্টিটি সৃষ্টি করার চেষ্টা মাত্র। আমি যদি লাইফে ইন ফিউচার কোনো ডিসিশন নিই এবং সেটা যদি ফেয়ার ডিসিশন হয় .. তাহলে আমার পরিবারের লোকজন যেনো অযথা বা অন্যায়ভাবে সেই সিদ্ধান্তের উপর বাধাপ্রদান না করতে পারে। আচ্ছা, একটু আগে যে বলছিলে তোমার নাকি পিকনিকের দিন খুব মন খারাপ ছিলো। কেনো, জানতে পারি?"
- "আসলে তার আগের দিন আমার উড বি হাজব্যান্ড আমাকে দেখতে এসেছিলো। আমি ছোটবেলা থেকেই নাচ শিখেছি, তাই অনিচ্ছা সত্ত্বেও ওদের বাড়ির লোকজন এবং আমার মা-বাবার কথায় বাধ্য হয়ে ওদের সামনে আমাকে নাচতে হয়েছিল। এটা আমার স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করা বলে আমি মনে করি .. এটাও একটা কারণ আমার মন খারাপের। কিন্তু তারপর যেটা হয়েছিলো সেটা আরো খারাপ। পরে আমার মা'কে ওর মা করে জানিয়েছিল .. আমাকে ওনার ছেলের পছন্দ হয়েছে। তবে, উনার ছেলে জানিয়ে দিয়েছে বিয়ের পর আর ধেই ধেই করে নাচা চলবে না। নাচার সময় আমাকে নাকি ভীষণ অড্ লাগছিলো। যে লোকটা নাচের কিছুই বোঝেনা, সে এমন একটা আন-পার্লামেন্টারি কথা বলে দিলো .. এই কথাটা আমি কিছুতেই ভুলতে পারছিলাম না। তাই মন খারাপ ছিলো।"
- "আচ্ছা .. এবার বুঝলাম।"
- "তোর ভায়োলিনের সুর শুনে আমার মনে হয়েছিলো .. এই ছেলেটা যদিও আমার থেকে অনেকটাই ছোট, অন্য ডিপার্টমেন্টের হলেও ও এখনো এই ইউনিভার্সিটি ছাত্র আর আমি শিক্ষিকা। কিন্তু তবুও এই ছেলেটার সঙ্গে সময় কাটাতে আমার বেশ ভালো লাগছে। মনের সব কষ্ট, ব্যথা, বেদনা, রাগ, ক্ষোভ ভুলে থাকতে পারছি। মনটা ধীরে ধীরে খুশিতে ভরে উঠছিল। আসলে সবই ছিল ওই ভায়োলিনের সুরের প্রভাব। তবে তোর কথাবার্তা এবং বডি ল্যাঙ্গুয়েজ আমার খুব ভালো লেগেছিলো। আর মুখের ওই হাসিটা .. ঠিক যেন তোর ভায়োলিনের সুরের মতোই সুন্দর।"
- "আসলে কি জানো তো অপর্ণা দি .. আমার মনে হয়, তুমি একটা সাপোর্ট খুঁজছিলে। এমন একজনের সঙ্গ চাইছিলে, যার সঙ্গে থাকলে তোমার মনের ভার ধীরে ধীরে হাল্কা হয়ে যাবে। তাই না, বলো?"
- "হ্যাঁ রে, ঠিক তাই। আসলে আমি ওই বিয়েটাও করতে চাইনি। আমাদের বাড়ির অবস্থা তো আর তোদের মত নয়। খুবই সাধারণ পরিবারের মেয়ে আমি। তার উপর দীর্ঘ অসুস্থতার জন্য বাবা খুব তাড়াতাড়ি কার্যক্ষমতা হারিয়ে বাড়িতে বসে যাওয়ার ফলে অবস্থা আরও পড়ে যায়। তাই হয়তো তাড়াতাড়ি বিয়ে দিয়ে দিতে চাইছিল আমার। আমার প্রাক্তন শ্বশুরবাড়ি অবস্থাপন্ন ঘরের ছিলো। আমার মা-বাবা দেখলো ওদের টাকা আর ওরা দেখলো আমার রূপ। তবু দুটো বছর বিয়েটা ঠেকিয়ে রেখেছিলাম। তারপর আর পারলাম না। এখন মনে হয়, ওকে আমি কোনোদিনই ভালবাসতে পারিনি। তখন যদি মা-বাবার কথায় চাকরিটা ছেড়ে না দিতাম, তাহলে বিয়েটা হয়তো এড়াতে পারতাম। তুই একদম ঠিক ডিসিশন নিয়েছিস .. তোর বাবা যতই প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী হোক না কেনো, চাকরি করাটা জরুরী। স্বনির্ভর হলে স্বাধীনভাবে জীবনযাপন করা যায়। তা না হলে, অন্যের চাপিয়ে দেওয়া ভুল সিদ্ধান্তের শিকার হতে হয় .. যেমন আমি হয়েছি।"
কথাগুলো বলতে বলতে কান্নায় গলা জড়িয়ে এলো অপর্নার। সেই মুহূর্তে দরজায় টোকা পড়লো। অর্ডার দেওয়া খাবারগুলো চলে এসেছিল। মিক্সড ফ্রাইড রাইস আর ড্রাই চিলি-চিকেন দিয়ে ডিনার শুরু করলো ওরা, ঘড়িতে তখন সাড়ে ন'টা। শশাঙ্কর খাওয়া শেষ হয়ে গিয়েছিল, সে ওয়াশরুম থেকে হাত মুখ ধুয়ে এলো। অপর্ণা ধীরে ধীরে খায় .. সে তখনও খাচ্ছিলো। খেতে খেতেই শশাঙ্কর দিকে তাকিয়ে বললো, "সেই কখন থেকে অপেক্ষা করে আছি .. এবার ভায়োলিনটা বাজা প্লিজ .."
"কোনটা শোনাবো?" বিছানার উপর থেকে ভায়োলিনটা তুলে নিয়ে জিজ্ঞাসা করলো শশাঙ্ক।
অপর্ণা তৎক্ষণাৎ বললো "ওই যে .. পিকনিকের দিন একদম শেষে যেটা বাজিয়েছিলি .. বলতো কোনটা! দেখি তো মনে আছে নাকি তোর .."
"মনে আছে .." এইটুকু বলে, বাজনা শুরু করলো শশাঙ্ক - 'লাগ যা গালে ...."
ততক্ষণে খাওয়া শেষ হয়ে গিয়েছিল অপর্ণার। ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে এসে সোজা বিছানায় এসে শুয়ে পড়লো। ঠিক সেই মুহূর্তে স্কিন টাইট টি-শার্টের বুকের কাছের বোতামটা পটাং করে খুলে খুলে গিয়ে ওর গভীর স্তন বিভাজিকা স্পষ্ট দেখা যেতে লাগলো। অথচ সেই দিকে কোনো ভ্রুক্ষেপই নেই অপর্ণার। বাজনা শেষ হতেই বলে উঠলো "একটা বাউল গানের সুর বাজাবি? ওই যে লালন ফকিরের গান .. মিলন হবে কত দিনে .."
"তুমি বাউল গান পছন্দ করো অপর্ণা দি?" জিজ্ঞাসা করলো শশাঙ্ক।
"হ্যাঁ, আমার খুব পছন্দ বাউল সঙ্গীত। তবে একটা কথা না বলে পারছি না .. মানছি আমি তোর থেকে বয়সে বছর চারেকের বড় আর এক সময় তোর ইউনিভার্সিটিতে পড়িয়েছিলাম বেশ কিছুদিন। তাই বলে আমাকে সবসময় 'দিদি' সম্বোধন করে নিজেকে ছোট প্রমাণ করার তোর এই প্রচেষ্টা মাঝেমাঝে অসহ্য লাগে আমার .." কপট রাগ দেখিয়ে বললো অপর্ণা।
"তুমি যখন অভয় দিয়েছো, তখন আর দিদি বলবো না, নাম ধরেই ডাকবো .." এইটুকু বলে শশাঙ্ক বাজাতে শুরু করলো অপর্ণার ফরমাইস করা গানের সুর।
"তোর বাজানো ভায়োলিনের সুর শুনলে আমার বুকের ভেতরটা কিরকম যেন করে .." অপর্ণার এই উক্তিতে কিছুটা সাহস করেই শশাঙ্ক বলে উঠলো "তোকে দেখলে বা তুই পাশে থাকলে আমার বাজানোর তাগিদটা হাজারগুন বেড়ে যায়। এখন যেমন আমি বাজাচ্ছি আর তুই আমার পাশে শুয়ে আছিস। অদ্ভুত একটা অনুভূতি হচ্ছে আমার শরীরে।"
'তুমি' থেকে হঠাৎ 'তুই' সম্মোধন এবং 'দিদি' থেকে নাম ধরে ডাকাতে বিন্দুমাত্র রিঅ্যাকশন না দেখিয়ে বিছানায় শোয়া অবস্থাতেই অপর্ণা জিজ্ঞাসা করলো, "ওই যে পিকনিকের দিন বলেছিলিস, শনি-রবিবার করে বাউলদের আখড়ায় যাস, এখনো সেটা কন্টিনিউ করিস?"
"হ্যাঁ, এতদিন তো বাবার বিজনেসের কাজ দেখাশোনা করতাম বা করছি এখনো। আমাদের অফিস থেকে শনিবার দুপুরে বেরিয়ে সোজা আখড়ায় চলে যাই। গান বাজনার মধ্যে বেশ কাটে দেড়টা দিন। কখনো বা বাউলদের সঙ্গে কাছেপিঠের কোনো গ্রামেও চলে যাই .. আমার বাজনা শুনিয়ে আসি। ওদের সঙ্গে বেশ ভাব হয়ে গেছে আমার।" উত্তর দিলো শশাঙ্ক।
"হলোই বা তোদের নিজেদের অফিস। তবুও তো কাজের প্রচণ্ড প্রেসার থাকে। সারা সপ্তাহ এত চাপ সামলে, এনার্জি থাকে তোর?" উঠে বসে কথাগুলো বললো অপর্ণা।
"বড় হয়েছি, এমবিএ পাস করেছি, পুরুষ মানুষ, তার ওপর বাবার আদেশ .. তাই দায়িত্ব পালন তো করতেই হবে। সবকিছুই এখন অভ্যাসে দাঁড়িয়ে গেছে বলতে পারিস। তবে মাঝে মাঝে ভীষণ ক্লান্ত এবং বিষন্ন লাগে আমারও .. যখন দেখতে পাই কর্মচারীরা উচ্চ পদ আর টাকা দেখে মানুষকে বিচার করে। সহকর্মীরা কেউ কোনো সাফল্য পেলে নিজেদের মধ্যেই ঈর্ষা করে, কিন্তু তার প্রতিভা বা গুণের কোনো কদর করে না। এই পরিবেশে সারা সপ্তাহ থেকে আমি হাঁপিয়ে উঠি। তাইতো ছটফট করি আখড়ায় ফেরার জন্য। ওখানে গিয়ে বুক ভরে নিশ্বাস নিই, খোলা আকাশের নিচে ঘুমাই, প্রাণ খুলে আমার ভায়োলিন বাজাই .. সুর আমার বেঁচে থাকার রসদ।" কথাগুলো বলতে বলতে কখনো তৃপ্তিতে মন ভরে যাচ্ছিল শশাঙ্কর আবার কখনো দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসছিল তার ভেতর থেকে।
"আচ্ছা একটা কথা জিজ্ঞেস করবো, রাগ করবি না তো? তোর কথা শুনে মনে হচ্ছে বিয়ে তো দুরস্ত, এখনো কোনো গার্লফ্রেন্ড হয়নি তোর। তুই ভীষণ একা, তাই না?" অপর্ণার এই প্রশ্ন শুনে কিছুক্ষণ স্থির দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে থাকলো শশাঙ্ক। তারপর জিজ্ঞাসা করলো "কি করে বুঝলি?"
"তোর প্রতিটা কথায় একাকীত্বের কষ্ট ফুটে উঠেছে, তোর ভায়োলিনে তোলা সুরের প্রতিটা তরঙ্গে স্পষ্ট হয়েছে নিঃসঙ্গতার হাহাকার। কারো ভিতরে বিষাদ আর একাকীত্ব থাকলে তবেই সে এত অসাধারণ বাজাতে পারে।" শশাঙ্কর কাছে এগিয়ে এসে কথাগুলো বললো অপর্ণা।
"আর তুই? তোর মধ্যে একাকীত্ব নেই? নিঃসঙ্গতা অনুভব করিস না তুই?" পাল্টা প্রশ্ন করলো শশাঙ্ক।
অপর্ণা এই মুহূর্তে শশাঙ্কর দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে, চোখের পলক পর্যন্ত পড়ছে না। তারপর শশাঙ্কর ঠিক পেছনে এসে ওকে জড়িয়ে ধরে বললো "যারা যারা বেহেকতা হ্যায় .. এটা একটু বাজাবি প্লিজ?"
এক সময় শেষ হলো বাজনা। অপর্ণা এখন শশাঙ্কর বাহুবন্ধনে। ওকে নিজের বুকের কাছে টেনে নিয়ে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে এক অদ্ভুত ঘোর লাগা স্বরে অপর্ণা বলে উঠলো "নিঃসঙ্গ না হলে এই শীতের রাতে তোর একটা ফোন কলে আমি এখানে, এই হোটেলে আসতাম?" তারপর শশাঙ্কর মুখটা দুই হাত দিয়ে নিজের সামনে তুলে ধরে পাগলের মতো চুমু খেতে খেতে বললো, "বাইরে আজ বরফ পড়লেও আমি আসতাম, কেনো জানিস? তোর ওই ভায়োলিনের সুরের টানে।"
শশাঙ্কর সঙ্গে চুম্বনরত অবস্থাতে নিজের অবশিষ্ট দুর্বলতাটুকু অতিক্রম করলো অপর্ণা। ক্রমে ঘনিষ্ঠ হলো তারা। অপর্ণা ধীরে ধীরে অনুভব করলো .. অন্তিম দুর্বলতাটুকু জয় করতে পেরেছে বলেই জানতে পারছে শরীরে এত সুধা ছিলো, এত শিহরণ লুকিয়ে ছিলো, শরীরের ক্ষুধা এবং তা যথাযথভাবে প্রশমন করার উপায়।
এই রোমাঞ্চকর শরীরি যাত্রায় গা ভাসাতে পেরেছে বলে শরীরের অব্যবহৃত রত্নসমূহ শশাঙ্কর হাতে সঁপে দিয়ে, অন্ধ অতল জোয়ারে - কখনো পরম যত্নবান হয়ে আবার কখনো করাতের মতো চিরে চিরে শশাঙ্ক যখন খেলছিলো তার তিরিশ বর্ষীয় যুবতী শরীর নিয়ে , অপর্ণা বিস্ময়াবিষ্ট হচ্ছিলো শরীরের অনৈসর্গিক সুখের পূর্ণতায়। শরীরি সঙ্গমে মনে হচ্ছিলো সে যেন একটা স্কেলে বাঁধা 'ভায়োলিন' .. আর ওর শরীরের প্রত্যেকটি অঙ্গ যেন এক-একটা 'তার', সেই তারগুলির এদিক ওদিক চাপে ওর শরীরে যেন সঙ্গীতের মূর্ছনা ফুটে উঠছে। শুদ্ধস্বরের মাঝে কখনো কোমল "রে" , কখনো কোমল "গা" , কখনো করি "মা" , আবার কখনো কোমল "ধা" অথবা কোমল "নি" ব্যবহার করে তার শরীরে বিলাবল, খাম্বাজ, কাফী, আশাবরী, ভৈরব হয়ে কল্যাণ, মারওয়া, ভৈরবী, পূর্বী, তোড়ীর .. সম্মিলিত আরোহন অবরোহন হচ্ছে। সুখের আবেশে হারিয়ে যেতে থাকলো অপর্ণা।
তারপর একসময় শশাঙ্কর মাথার চুলে বিলি কেটে দিতে দিতে অপর্ণা বলে উঠলো "কালকে ইন্টারভিউ দিয়ে এখান থেকে চলে গেলে আমার কথা আর মনেই পড়বে না তোর। এই রাতটাকে দুর্ঘটনা মনে করে আজকের সবকিছু ভুলে যেতে চাইবি, তাই তো?"
"চুপ .. এইসব কথা একদম নয়। একটু আগে তোকে বলছিলাম না .. আমি যদি লাইফে ইন ফিউচার কোনো ডিসিশন নিই এবং সেটা যদি ফেয়ার ডিসিশন হয় .. তাহলে আমার পরিবারের লোকজন যেনো অযথা বা অন্যায়ভাবে সেই সিদ্ধান্তের উপর বাধাপ্রদান না করতে পারে। এবার সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় এসে গিয়েছে। আজকের পর আমি বুঝতে পেরে গিয়েছি তোকে ছাড়া আর এক মুহূর্তও চলবে না আমার আর আমার সঙ্গীতের। তাই কালকের ইন্টারভিউতে চাকরিটা পাওয়া আমার জন্য ভীষণ জরুরী এবং চাকরিটা আমি পাবোই .. এই ব্যাপারে আমি একশো শতাংশ নিশ্চিত। আমাদের দু'জনের পরিবার থেকে যদি আমাদের এই সম্পর্কটা মেনে নাও নেয়, তাহলে আমরা দু'জন নিজেদের মতো করে ভালো থাকতে পারবো না?" শশাঙ্কর মুখ থেকে এই কথাগুলো শোনার পর তার বুকে মুখ গুঁজে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে লাগলো অপর্ণা .. তখন মাঝরাত।
Posts: 6,106
Threads: 41
Likes Received: 11,838 in 4,109 posts
Likes Given: 5,306
Joined: Jul 2019
Reputation:
3,696
14-02-2023, 07:11 PM
(This post was last modified: 14-02-2023, 07:18 PM by Baban. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
উফফফফ কেন জানি খুব ভালো লাগলো গল্পটা। না আজ এই প্রথমবার লেখন শৈলীর দিকে চোখ যায়নি। সেটা যতই উন্নত হোক না কেন এই গল্পের প্রেক্ষাপট হলো আসল জয়ী। এমন এক রাত যেন শেষ সুযোগ করে দিলো দুটো একা মানুষকে কাছে নিয়ে আসার। একটা ভরসা যে আমি আজও আছি তোমার জন্য, একটা বিশ্বাস আজও আছি তোমার হাতটিতে নিজের হাতে রাখার জন্য, আজও আছি সেই মধুর ধ্বনি তোমার কাছ থেকে শোনার জন্য। ♥️
তুমি থেকে তুই তে যাওয়ার অংশটা বুকে একটা মোচড় দিলো আমায়। সেটা লেখক হিসেবে ও পুরুষ হিসেবে তুমিও বুঝবে। অসাধারণ
এই রাত শুধু যে গানের
এই ক্ষণ এ দুটি প্রাণের
কুহু কূজনের
এই রাত তোমার আমার
তুমি আছো আমি আছি তাই
অনুভবে তোমারে যে পাই
শুধু দুজনের
এই রাত তোমার আমার
ওই চাঁদ তোমার আমার
Posts: 18,186
Threads: 471
Likes Received: 64,100 in 27,387 posts
Likes Given: 23,552
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,246
Posts: 4,424
Threads: 7
Likes Received: 8,930 in 2,803 posts
Likes Given: 4,330
Joined: Oct 2019
Reputation:
3,211
(14-02-2023, 07:11 PM)Baban Wrote: উফফফফ কেন জানি খুব ভালো লাগলো গল্পটা। না আজ এই প্রথমবার লেখন শৈলীর দিকে চোখ যায়নি। সেটা যতই উন্নত হোক না কেন এই গল্পের প্রেক্ষাপট হলো আসল জয়ী। এমন এক রাত যেন শেষ সুযোগ করে দিলো দুটো একা মানুষকে কাছে নিয়ে আসার। একটা ভরসা যে আমি আজও আছি তোমার জন্য, একটা বিশ্বাস আজও আছি তোমার হাতটিতে নিজের হাতে রাখার জন্য, আজও আছি সেই মধুর ধ্বনি তোমার কাছ থেকে শোনার জন্য। ♥️
তুমি থেকে তুই তে যাওয়ার অংশটা বুকে একটা মোচড় দিলো আমায়। সেটা লেখক হিসেবে ও পুরুষ হিসেবে তুমিও বুঝবে। অসাধারণ
এই রাত শুধু যে গানের
এই ক্ষণ এ দুটি প্রাণের
কুহু কূজনের
এই রাত তোমার আমার
তুমি আছো আমি আছি তাই
অনুভবে তোমারে যে পাই
শুধু দুজনের
এই রাত তোমার আমার
ওই চাঁদ তোমার আমার
এই ধরনের মন্তব্য পেলে লেখার ইচ্ছে হাজারগুন বেড়ে যায়। আর তার সঙ্গে গানের লাইনগুলি উপরি পাওনা। অসংখ্য ধন্যবাদ পাশে থাকার জন্য
•
Posts: 4,424
Threads: 7
Likes Received: 8,930 in 2,803 posts
Likes Given: 4,330
Joined: Oct 2019
Reputation:
3,211
(14-02-2023, 07:38 PM)ddey333 Wrote: রেপু আর নেই বলে পারলাম না দিতে , গুরুদেব !!
ভালো আর সুস্থ থাকাটা খুব দরকার তোমার আমাদের জন্য, যদিও একটু স্বার্থপর এর মতো কথা বললাম।
love you .
তোমাদের আশীর্বাদ এবং ভালোবাসা সঙ্গে আছে বলেই তো টিকে রয়েছি এখনো। এইভাবেই পাশে থেকো সর্বদা
Posts: 1,276
Threads: 2
Likes Received: 1,238 in 858 posts
Likes Given: 1,624
Joined: Mar 2022
Reputation:
80
14-02-2023, 10:13 PM
(This post was last modified: 14-02-2023, 10:13 PM by Somnaath. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
গল্পটা পড়তে পড়তে ভেতরে একটা মোচড় দিয়ে উঠলো। প্রতিদিন তোমার লেখনীশক্তি উন্নত থেকে উন্নততর হয়ে চলেছে। যে ধরনের ভাষার ব্যবহার করছো, তা সত্যিই মনমুগ্ধকর। যেকোনো বড় প্রকাশনায় এই লেখা ছাপার যোগ্য। আর কিছু বলার নেই ভাই এই ভাবেই লিখে সমৃদ্ধ করতে থাকো আমাদের।
Posts: 4,424
Threads: 7
Likes Received: 8,930 in 2,803 posts
Likes Given: 4,330
Joined: Oct 2019
Reputation:
3,211
(14-02-2023, 10:13 PM)Somnaath Wrote: গল্পটা পড়তে পড়তে ভেতরে একটা মোচড় দিয়ে উঠলো। প্রতিদিন তোমার লেখনীশক্তি উন্নত থেকে উন্নততর হয়ে চলেছে। যে ধরনের ভাষার ব্যবহার করছো, তা সত্যিই মনমুগ্ধকর। যেকোনো বড় প্রকাশনায় এই লেখা ছাপার যোগ্য। আর কিছু বলার নেই ভাই এই ভাবেই লিখে সমৃদ্ধ করতে থাকো আমাদের।
এই ধরনের মন্তব্য পাওয়ার জন্যই তো অপেক্ষা করে বসে থাকি বন্ধু। তবে খুব বড় প্রকাশনীতে না হলেও এটা already published .. সঙ্গে থাকো এবং পড়তে থাকো।
Posts: 1,204
Threads: 2
Likes Received: 2,132 in 986 posts
Likes Given: 1,596
Joined: Jul 2021
Reputation:
637
(14-02-2023, 07:11 PM)Baban Wrote: উফফফফ কেন জানি খুব ভালো লাগলো গল্পটা। না আজ এই প্রথমবার লেখন শৈলীর দিকে চোখ যায়নি। সেটা যতই উন্নত হোক না কেন এই গল্পের প্রেক্ষাপট হলো আসল জয়ী। এমন এক রাত যেন শেষ সুযোগ করে দিলো দুটো একা মানুষকে কাছে নিয়ে আসার। একটা ভরসা যে আমি আজও আছি তোমার জন্য, একটা বিশ্বাস আজও আছি তোমার হাতটিতে নিজের হাতে রাখার জন্য, আজও আছি সেই মধুর ধ্বনি তোমার কাছ থেকে শোনার জন্য। ♥️
তুমি থেকে তুই তে যাওয়ার অংশটা বুকে একটা মোচড় দিলো আমায়। সেটা লেখক হিসেবে ও পুরুষ হিসেবে তুমিও বুঝবে। অসাধারণ
এই রাত শুধু যে গানের
এই ক্ষণ এ দুটি প্রাণের
কুহু কূজনের
এই রাত তোমার আমার
তুমি আছো আমি আছি তাই
অনুভবে তোমারে যে পাই
শুধু দুজনের
এই রাত তোমার আমার
ওই চাঁদ তোমার আমার
দারুন বললেন, রেপু রইলো
Posts: 1,204
Threads: 2
Likes Received: 2,132 in 986 posts
Likes Given: 1,596
Joined: Jul 2021
Reputation:
637
you're the best এটা আবার প্রমাণ করে দিলে। যখন তোমার কোনো গল্প বা উপন্যাস পড়তে থাকি, তখন মনে হয় এ লেখা যেন শেষ না হয়। অনন্তকাল ধরে চলতে থাকুক, তোমার হাতে জাদু আছে। ভাই বুম্বা, এইভাবেই তোমার লেখার মধ্যে দিয়ে আনন্দ দিয়ে যাও আমাদেরকে চিরকাল। শুধু এটাই প্রার্থনা
Posts: 412
Threads: 3
Likes Received: 790 in 341 posts
Likes Given: 566
Joined: Oct 2022
Reputation:
284
অনবদ্য প্রেম কাহিনী। সৃষ্টি অনুপম। ভায়োলিন বাজিতেছে কী ভীষণ করুণ সুরে সে বাজিতেছে। মূর্ছনায় মোহিত অপর্ণা শশাঙ্কের বক্ষমাঝে ছায়া খুঁজিতেছে…ভগ্ন স্বাস্থ্য লহিয়াও সৃষ্টি কার্য্যে মাতিয়াছ জ্যেষ্ঠ দিবস কয়েক বিরতি লহিতে পারিতে। কায়া সর্বাগ্রে তাহার পরেই কাম। যাহা হউক, এই কাহিনী অবশ্য দৈহিক প্রেম সর্বস্বতার ঊর্দ্ধে উঠিয়া শ্বাশ্বত প্রেমের জয়গান গাহিয়াছে। আজ রেপুমান শেষ আগামী কাল দক্ষিণা দিয়া যাইব।
Posts: 6,106
Threads: 41
Likes Received: 11,838 in 4,109 posts
Likes Given: 5,306
Joined: Jul 2019
Reputation:
3,696
(15-02-2023, 10:50 AM)Sanjay Sen Wrote: you're the best এটা আবার প্রমাণ করে দিলে। যখন তোমার কোনো গল্প বা উপন্যাস পড়তে থাকি, তখন মনে হয় এ লেখা যেন শেষ না হয়। অনন্তকাল ধরে চলতে থাকুক, তোমার হাতে জাদু আছে। ভাই বুম্বা, এইভাবেই তোমার লেখার মধ্যে দিয়ে আনন্দ দিয়ে যাও আমাদেরকে চিরকাল। শুধু এটাই প্রার্থনা
এবার আমিও বলি - একেবারে সঠিক কথা বলেছেন।
লেখার মাধ্যমে লেখক যখন কিছু সৃষ্টি করে তখন চরিত্র ও গল্পের মাঝে লেখক নিজের কিছু ছাপ ছেড়ে যায় যাতে বোঝা যায় এই লেখা অমুক লেখক দ্বারাই সম্ভব। তাই বলছি এমন ছাপ আরও অনেক গল্পে খুঁজে পেতে চাই আমরা সবাই ❤
Posts: 4,424
Threads: 7
Likes Received: 8,930 in 2,803 posts
Likes Given: 4,330
Joined: Oct 2019
Reputation:
3,211
(15-02-2023, 10:50 AM)Sanjay Sen Wrote: you're the best এটা আবার প্রমাণ করে দিলে। যখন তোমার কোনো গল্প বা উপন্যাস পড়তে থাকি, তখন মনে হয় এ লেখা যেন শেষ না হয়। অনন্তকাল ধরে চলতে থাকুক, তোমার হাতে জাদু আছে। ভাই বুম্বা, এইভাবেই তোমার লেখার মধ্যে দিয়ে আনন্দ দিয়ে যাও আমাদেরকে চিরকাল। শুধু এটাই প্রার্থনা
আর আমার প্রার্থনা কি জানো? যেকদিন লেখালেখি করবো বা লেখালেখির মধ্যে থাকবো সেকদিন যেন তোমার মত একজন বুদ্ধিদীপ্ত পাঠককে আমার পাশে পাই। ভালো থাকো এবং অবশ্যই পড়তে থাকো।
Posts: 4,424
Threads: 7
Likes Received: 8,930 in 2,803 posts
Likes Given: 4,330
Joined: Oct 2019
Reputation:
3,211
(15-02-2023, 11:12 AM)মহাবীর্য্য দেবশর্ম্মা Wrote: অনবদ্য প্রেম কাহিনী। সৃষ্টি অনুপম। ভায়োলিন বাজিতেছে কী ভীষণ করুণ সুরে সে বাজিতেছে। মূর্ছনায় মোহিত অপর্ণা শশাঙ্কের বক্ষমাঝে ছায়া খুঁজিতেছে…ভগ্ন স্বাস্থ্য লহিয়াও সৃষ্টি কার্য্যে মাতিয়াছ জ্যেষ্ঠ দিবস কয়েক বিরতি লহিতে পারিতে। কায়া সর্বাগ্রে তাহার পরেই কাম। যাহা হউক, এই কাহিনী অবশ্য দৈহিক প্রেম সর্বস্বতার ঊর্দ্ধে উঠিয়া শ্বাশ্বত প্রেমের জয়গান গাহিয়াছে। আজ রেপুমান শেষ আগামী কাল দক্ষিণা দিয়া যাইব।
দক্ষিণা না দিলেও চলবে, তোমাদের ভালোবাসাটাই তো আসল। এই ভাবেই পাশে থেকো সর্বদা এবং অবশ্যই ভালো থেকো।
•
Posts: 4,424
Threads: 7
Likes Received: 8,930 in 2,803 posts
Likes Given: 4,330
Joined: Oct 2019
Reputation:
3,211
(15-02-2023, 12:17 PM)Baban Wrote: এবার আমিও বলি - একেবারে সঠিক কথা বলেছেন।
লেখার মাধ্যমে লেখক যখন কিছু সৃষ্টি করে তখন চরিত্র ও গল্পের মাঝে লেখক নিজের কিছু ছাপ ছেড়ে যায় যাতে বোঝা যায় এই লেখা অমুক লেখক দ্বারাই সম্ভব। তাই বলছি এমন ছাপ আরও অনেক গল্পে খুঁজে পেতে চাই আমরা সবাই ❤
হ্যাঁ, এটা ঠিক। উন্নত হোক বা সাধারণ .. প্রত্যেকের লেখার নিজস্ব শৈলী আছে। যেটা বজায় রাখা জরুরী।
•
Posts: 1,648
Threads: 3
Likes Received: 900 in 799 posts
Likes Given: 1,285
Joined: May 2022
Reputation:
28
Pure romantic story.. Ami hoito onno kichu asa korechilam.. Mithya bolbo na... Tobe golpo ta khub valo legeche.. Thnq
Posts: 830
Threads: 3
Likes Received: 632 in 416 posts
Likes Given: 1,388
Joined: Dec 2022
Reputation:
50
You are writing skill is awesome
Posts: 4,424
Threads: 7
Likes Received: 8,930 in 2,803 posts
Likes Given: 4,330
Joined: Oct 2019
Reputation:
3,211
(15-02-2023, 02:28 PM)Dushtuchele567 Wrote: Pure romantic story.. Ami hoito onno kichu asa korechilam.. Mithya bolbo na... Tobe golpo ta khub valo legeche.. Thnq
হ্যাঁ, সেই জন্যই তো তখন বললাম .. আপনার ভালো লাগবে কিনা জানি না।
(15-02-2023, 03:53 PM)Chandan Ghosh Wrote: You are writing skill is awesome
Thank you very much bhaiya
Posts: 1,648
Threads: 3
Likes Received: 900 in 799 posts
Likes Given: 1,285
Joined: May 2022
Reputation:
28
(15-02-2023, 06:36 PM)Bumba_1 Wrote: হ্যাঁ, সেই জন্যই তো তখন বললাম .. আপনার ভালো লাগবে কিনা জানি না।
Valo legeche dada
|