Posts: 4,428
Threads: 6
Likes Received: 9,218 in 2,849 posts
Likes Given: 4,330
Joined: Oct 2019
Reputation:
3,225
(১৮)
আগের দিন ইন্সপেক্টর সেনগুপ্তর সামনে ওই কথাগুলো বলার পর, গোগোলকে নিজের সঙ্গে করে নিয়ে যান তিনি। "দয়া করে ওকে নিয়ে যাবেন না স্যার, ওকে অ্যারেস্ট করবেন না .." অশ্রুসিক্ত কন্ঠে বারবার সুজাতার অনুরোধেও কোনো লাভ হয়নি। একসময় কাঁদতে কাঁদতে জ্ঞান হারিয়েছিল গোগোলের মামণি। হিয়া একবারের জন্যও কোনো কথা বলেনি, একপ্রকার বাকরুদ্ধ হয়ে গিয়েছিলো। শুধু তার লাটসাহেবকে নিয়ে যাওয়ার সময় অস্ফুটে বলে উঠেছিলো "আমি একটা কথাও বিশ্বাস করি না .. যে একটা মাছি মারতে পারে না, সে নাকি .."
পুলিশ স্টেশনে ডেকে না পাঠিয়ে ইন্সপেক্টর সেনগুপ্ত সবাইকে বিকেলের পর মিউনিসিপাল হসপিটালের ভিআইপি ওয়ার্ডের তিন নম্বর কেবিনে আসতে বলায় কিছুটা অবাক হয়েছিলো সকলে। বিকেলের দিকে আর চেম্বারে যাননি ডাক্তার দাসগুপ্ত। সুজাতারও আজ মর্নিং-শিফট ছিলো .. দু'জনে একসঙ্গেই হসপিটালে এলেন ভারাক্রান্ত মনে। গোগোলের চার বন্ধুকেও ডেকে পাঠানো হয়েছিলো। সুবীর, কাঞ্চন, মধু, আর কালু .. একে একে চারজনে উপস্থিত হলো।
সাড়ে চারটে নাগাদ এলো হিয়া এবং তার মা কাবেরী দেবী। আগের দিনের গোগোলের ওই উক্তিতে পৃথিবীটাই পাল্টে গেছে হিয়ার কাছে। যখন অজানা আশঙ্কা মননকে আষ্টেপৃষ্ঠে আঁকড়ে ধরে, তখন মনুষ্যজাতির বুদ্ধিমত্তা গ্রাস করে দুশ্চিন্তা। তার হৃদয় উদয়স্থ মুক্তি পেতে চাইলেও, বন্দী অবস্থায় থাকতে বাধ্য হয়। আবির্ভূত কষ্টগুলো বাতাসে পথের ধুলো উড়িয়ে যত্ন করে সাজানো বাগান এলোমেলো করে দেয়। তখন ছন্নছাড়া গম্ভীরতা, বুঝতে চায়না প্রাণের ব্যথা। জীবনের হিসেব-নিকেশ শেষ না হতেই নতুন পাতায় আবির্ভূত হয়। মৌনযুদ্ধে বিপর্যস্ত, উৎকণ্ঠার অধীনস্থ মন চিন্তামুক্ত থাকতে চায়। তবু সবাই কেমন ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়ে এবং অপর ব্যক্তিকেও অসহিষ্ণু করে তোলে। ভাবনা বোঝে ভাবের ভাষা, কিন্তু সেই সময় আপন-পর জ্ঞান হারিয়ে ফেলে মানুষ। সেই চিন্তাই বিভোর ঘুমে, ভাবনা নিয়ে জেগে কাটায়। আয়োজনের ঝেড়ে ফেলা, এড়িয়ে যেতে অবহেলা। ভাবনাগুলো আবার ভাবায় দুশ্চিন্তার ছলাকলা। শুধু হিয়া নয়, সুজাতা এবং ডাক্তার দাশগুপ্ত থেকে শুরু করে দুশ্চিন্তা আর উৎকণ্ঠার ছাপ স্পষ্ট ধরা পড়ছিলো গোগোলের চার বন্ধুর মুখেও।
প্রত্যেকেই ভিআইপি ওয়ার্ডের ওয়েটিং রুমে অপেক্ষা করছিলো। পৌনে পাঁচটার কিছু পরে এলেন ইন্সপেক্টর সেনগুপ্ত স্বয়ং আর তার সঙ্গে বছর বাইশের এক যুবতী এবং মধ্যবয়স্ক এক পাঞ্জাবী ব্যক্তি। "সরি, একটা কাজ সেরে আসতে একটু লেট হয়ে গেলো .. আপনারা ভেতরে আসুন .." এই বলে কেবিনের দরজা খুলে ইশারায় সবাইকে ভেতরে ডাকলেন সন্দীপ।
ইন্সপেক্টর সেনগুপ্তর সঙ্গের মেয়েটিকে দেখে কিছুক্ষণ অবাক হয়ে তার দিকে তাকিয়ে থেকে মৃদুকন্ঠে সুজাতা জিজ্ঞাসা করলো "পর্ণা?"
"ভালো আছো, পিসিমণি?" প্রথমে কিছুটা ইতস্তত করে, তারপর সুজাতার পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করলো পর্ণা। এমত অবস্থায় তার স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে ডক্টর দাশগুপ্ত ইশারায় জিজ্ঞাসা করলেন মেয়েটিকে সে কি করে চিনলো! "ও আমার আপন পিসতুতো ভাইয়ের মেয়ে। তবে গোগোলের সঙ্গেও ওর কিন্তু একটা সম্পর্ক আছে। অরুন্ধতী দিদির যিনি মামিমা, তিনিই তো আমার পিসিমা .. গোগোল আর পর্ণা মামাতো-পিসতুতো ভাইবোন। ওকে অনেক ছোটবেলায় দেখেছি। চেহারায় বড়সড়ো হয়ে গেলেও মুখটা একই আছে, একটুও পরিবর্তন হয়নি। তাই এক দেখাতেই চিনতে পারলাম। কিন্তু ওর তো আমাকে চেনার কথা নয়, আমার সঙ্গে ওদের যখন শেষ দেখা হয়, তখন ও খুবই ছোট।"
"তোমার ফটো দেখেছি অনেকবার আমাদের বাড়িতে, তাই একবার দেখেই চিনতে পারলাম। তাছাড়া আমাদের মধ্যে দীর্ঘদিন যোগাযোগ না থাকলেও তোমাদের সব খবর আমরা .. মানে আমি রেখেছি। মনে মনে ভাবতাম আমাদের একদিন ঠিক দেখা হবে। গোগোল দাদার সঙ্গেও তো একদিন ওনার, মানে আলম সাহেবের অফিসে আমার দেখা হয়েছিলো। কিন্তু, আমি .." এটুকু বলেই থেমে গেলো পর্ণা।
এই কথার পরিপ্রেক্ষিতে সুজাতা আরও কিছু বলতে যাচ্ছিলো। কিন্তু কেবিনের ভেতর ঢুকে বিছানার উপর গোগোলকে বসে থাকতে দেখে দ্রুতপায়ে তার কাছে গিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে বললো "তুই আগের দিন সব মিথ্যে বলেছিলিস তাই না? কেউ মনে হয় তোকে ভয় দেখিয়ে এসব বলতে বাধ্য করেছে, তাই তো? বল না এগুলো সব মিথ্যে .. চুপ করে আছিস কেনো? প্লিজ, কিছু তো বল!"
নিঃশ্চুপ গোগোল তার মামণির মাথায় হাত বুলিয়ে সান্তনা দেওয়া ছাড়া একটা কথাও বললো না বা হয়তো বলতে পারলো না।
"আমি আন্দাজ করতে পারছি ইন্সপেক্টর স্যার আমাদের এখানে কেন ডেকে পাঠিয়েছেন। উনার হয়তো তোমাকে ইন্টারোগেশন করা হয়ে গিয়েছে। তাই হয়তো উনি আমাদের সবার সামনে তোমার কি পানিশমেন্ট হবে সেটাই জানিয়ে দেওয়ার জন্য ডেকেছেন। এত জেরার পর তুমি সম্ভবত অসুস্থ হয়ে পড়েছো, তাই হয়তো তোমাকে এখানে এনে রাখা হয়েছে। কাজগুলো করার আগে এর পরিণতির কথা তোমার একবার ভাবা উচিৎ ছিল অনির্বাণ। তবে, কথায় বলে ওস্তাদের মার শেষ রাতে। তুমি যতই নিজের উজ্জ্বল ভাবমূর্তি ধরে রাখার চেষ্টা করো, শেষে তো প্রমাণ হয়েই গেলো তুমি একজন নৃশংস খুনি ছাড়া আর কিছুই নয়। আমার মেয়ের জীবনটা যে শেষ মুহূর্তে বেঁচে গেলো, এটা ভেবেই আমি সব থেকে খুশি হয়েছি।" নিজের স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে গোগোলের উদ্দেশ্যে কথাগুলো বললেন কাবেরী দেবী।
"চুপ করো মা, চুপ করো .. প্লিজ তুমি এইসব কথা আর বলো না। বাড়িতে সারাক্ষণ ধরে বলে চলেছো, আবার এখানে এসেও শুরু করলে। আমি আর সহ্য করতে পারছি না মা। তুমি কি মনে করেছো, এই সমস্ত কথা বলে তুমি আমার মন ভেঙে দেবে? স্বয়ং ভগবান এসে বললেও আমি লাটসাহেবের বলা একটা কথাও বিশ্বাস করবো না। কি হবে? ওর শাস্তি হবে তো? হোক .. আমি অপেক্ষা করবো ওর ফিরে আসা পর্যন্ত।" চিৎকার করে উঠলো হিয়া।
"প্লিজ আপনারা সবাই একটু শান্ত হয়ে বসুন। না একটু ভুল বললাম, এইটুকু কেবিনে তো সবার বসার জায়গা করে দিতে পারবো না। তাই তোমরা চার যুবক দাঁড়িয়ে থাকো.." তারপর তার সঙ্গে আসা মাঝবয়সী পাঞ্জাবী লোকটির দিকে তাকিয়ে বললেন "ধনঙ্গী ভাই .. আপনিও দাঁড়িয়ে থাকুন, আমিও দাঁড়াচ্ছি আর বাকিরা বসুক। এটা একটা হসপিটাল আর আমার ধারণা আমি আপনাদের এখানে ডেকে পাঠিয়েছি। তাই আমার কথাগুলো শান্ত হয়ে মন দিয়ে শুনুন। আপনি যে এতক্ষন আপনার আন্দাজের উপর একটা বিশাল ভাষণ দিয়ে গেলেন তার পরিপ্রেক্ষিতে আপনাকে কয়েকটা কথা বলি কাবেরী দেবী .. অনির্বাণ তো নিজের মুখেই সব স্বীকার করেছে, তাহলে আবার ও নিজের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল রাখার চেষ্টা করলো কখন? আর ওস্তাদই বা শেষ রাতে ওকে মেরে গেলো কি করে? নাহ্ , ও একবারের জন্যও অসুস্থ বোধ করেনি। আমি বরং মেডিকেল টিমকে দিয়ে একটা সার্টিফিকেট বের করে ওকে এখানে ভর্তি করিয়েছি। আর আপনার জ্ঞাতার্থে জানাচ্ছি .. কাউকে পানিশমেন্ট বা সাজা পুলিশ দেয় না বা দিতে পারে না। আদালত তাকে দোষী সাব্যস্ত করে সাজা দেয়। তবে হ্যাঁ, একটা কথা কবেরী দেবী ঠিক বলেছেন .. ইন্টারোগেশন। যেটা কিছুটা আগে হয়েছে অন্যদের সঙ্গে, বাকিটা হবে এখন, এখানে।" খুব স্বাভাবিকভাবে অথচ দৃঢ়কন্ঠে কথাগুলো বললেন ইন্সপেক্টর সেনগুপ্ত।
★★★★
কিছুক্ষণ মৌন থেকে সবাইকে পাশ কাটিয়ে গোগোলের বেডের পাশে এসে দাঁড়িয়ে ইন্সপেক্টর সেনগুপ্ত পুনরায় বলতে শুরু করলেন "মিস্টার আলমের জ্ঞান ফেরার পর তার সাক্ষ্য আমার নেওয়া হয়ে গিয়েছে। যেখানে কামরাজ আর মানিক সামন্ত খুন হয়, অর্থাৎ আলম সাহেবের বাড়িতে উনার সঙ্গে সে রাতে যে উপস্থিত ছিলো, সেই পর্ণা বর্তমানে আমাদের সঙ্গে এই ঘরে রয়েছে। মেয়েটি কেন আলম সাহেবের সঙ্গে অত রাতে উনার বাড়িতে ছিলো, কি করছিলো .. এইসব প্রশ্নবাণে দয়া করে এই মুহূর্তে আপনারা কেউ ওকে বিব্রত করবেন না। যা কথা বলার, যা জিজ্ঞাসা করার পরে করবেন। এবার আমি অনির্বাণ বাবুকে কয়েকটা প্রশ্ন করবো।"
"আমি তো যা বলার বলে দিয়েছি আগেই। নতুন করে আমার আর কিছু বলার নেই, নিজেকে ডিফেন্ড করার কোনো ইচ্ছাও নেই।" গম্ভীরভাবে জানিয়ে দিলো গোগোল।
- "আপনার ইচ্ছা বা অনিচ্ছার উপর এখন আর কিছু নির্ভর করছে না অনির্বাণ। পুলিশ আপনাকে যতবার ইন্টারোগেট করতে চাইবে, আপনাকে ততবার সহযোগিতা করতে হবে তাদের সঙ্গে। তাছাড়া এখানে ডিফেন্ড করার প্রশ্ন আসছে কোত্থেকে? আপনার প্রত্যেকটি কথা জবানবন্দী হিসেবে রেকর্ড হবে বা হচ্ছে। এটাই তো আমরা কোর্টে প্রডিউস করবো আপনার বিরুদ্ধে।
- "ঠিক আছে, বলুন .."
- "তা আপনি কবে, কখন এবং কিভাবে গুরুকুল বিদ্যামন্দিরের হেডমাস্টারকে প্রাক্তন বানিয়েছিলেন, আই মিন তাকে হত্যা করেছিলেন .. মনে আছে?"
ইন্সপেক্টর সেনগুপ্তর প্রশ্ন শুনেই চোখ দুটো জ্বলে উঠলো গোগোলের। কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে সে বলতে শুরু করলো "হ্যাঁ, মনে থাকবে না কেনো? স্পষ্ট মনে আছে। আমাদের কলেজে মানে ওই গুরুকুল বিদ্যামন্দিরে বরাবর চব্বিশে এপ্রিল থেকে গরমের ছুটি পড়ে। দিনটা ছিলো তার আগের দিন, অর্থাৎ তেইশে এপ্রিল। আমি লুকিয়ে ছিলাম কলেজ বিল্ডিংয়ের পেছনের জঙ্গলটায়। অপেক্ষা করছিলাম কলেজ ছুটি হওয়ার মুহূর্তের জন্য। একসময় কলেজ ছুটি হওয়ার ঘন্টা বাজলো .. তারপর .."
"তারপর কি অনির্বাণ? বলুন .." ফিসফিস করে তার কানের কাছে মুখ নিয়ে গিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন ইন্সপেক্টর সেনগুপ্ত।
"তারপর .. তারপর .. আমি কিছু মনে করতে পারছি না কেনো .. সবটা কিরকম গুলিয়ে যাচ্ছে .. যাইহোক আমি কি করে খুন করেছি, কিভাবে খুন করেছি .. সেটা তো বড় কথা নয়। আমি যখন স্বীকার করছি যে আমি নিশীথ বটব্যালকে হত্যা করেছি, সেটাই আসল কথা এবং এর জন্য আমার কোনোরকম অনুতাপ নেই। ইজ দ্যাট ক্লিয়ার?" কথাগুলো বলার সময় কিরকম যেন অন্যমনস্ক হয়ে গেছিলো গোগোল। জোর করে কোনো কিছু মনে করার চেষ্টা করছিলো, অথচ বারবার ব্যর্থ হচ্ছিলো সে।
"সে কি .. লাটসাহেব অফ প্রিন্সেস হিয়া? মাত্র বছর দুই আগের, তাও আবার আপনার জীবনের এত গুরুত্বপূর্ণ একটা ঘটনা আপনি ভুলে গেলেন? মুখে বলছেন আপনি খুন করেছেন, অথচ সেদিনকার ঘটনার কিছুই মনে করতে পারছেন না .. সেটা কি করে সম্ভব? যাইহোক ওসব কথা বাদ দিন, আমরা এবার একটু অন্য প্রসঙ্গে কথা বলি। আপনার বন্ধু কাঞ্চন বলছিলো আপনি নাকি ক্লাস এইটে অঙ্কে একশোয় নিরানব্বই পেয়েছিলেন?" গলার স্বর অত্যন্ত স্বাভাবিক করে, মুখে কিছুটা হাসি এনে জিজ্ঞাসা করলেন ইন্সপেক্টর সন্দীপ।
"ধুর, কাঞ্চন একটা ইডিয়েট .. সব ভুল ইনফরমেশন দিয়েছে আপনাকে। ওটা মোটেও ক্লাস এইট নয়, ক্লাস সেভেন .. আর আমি অঙ্কে ৯৯ নয়, পুরোপুরি ১০০ পেয়েছিলাম .." অবজ্ঞার সুরে বললো গোগোল।
"ব্রাভো ব্রাভো .. আপনি সত্যিই ব্রিলিয়ান্ট স্টুডেন্ট ছিলেন। আমি তো মশাই কোনোদিন অঙ্কে ষাটের উপরেই তুলতে পারলাম না। তবে, এখন মনে পড়লো, আপনি যা বললেন আপনার বন্ধুটিও সেই কথাই বলেছিলো। ওই তো এখানে দাঁড়িয়ে আছে, জিজ্ঞাসা করে নিন। আমিই বলার সময় ঘুরিয়ে না মানে গুলিয়ে ফেলেছিলাম। যাইহোক, শুনে ভালো লাগলো অত বছর আগের কথা আপনার মনে আছে অথচ এই দু'বছরের কথা আপনি ভুলে গেলেন!" গোগোলের কাঁধে হাত রেখে গলার স্বর আরোও কিছুটা নামিয়ে উক্তি করলেন ইন্সপেক্টর সন্দীপ।
"কিন্তু .. কিন্তু আমি দেখেছি .. ওই যে আয়নাতে দেখলাম ওই জানোয়ারটার মুখ .. তারপরই তো .." এইটুকু বলে দু'হাত দিয়ে নিজের মুখ ঢেকে ফেললো গোগোল।
- "দেখেছেন? কি দেখেছেন? কার মুখ দেখেছেন আয়নাতে? কবে নাগাদ দেখেছেন একটু মনে করে বলতে পারবেন আমাকে? প্লিজ একটু মনে করার চেষ্টা করুন অনির্বাণ।"
- "ওই যে ওই যে .. মামণির বোধহয় সেদিন নাইট শিফট ছিলো .. আমি তো ঘুমিয়েছিলাম .. আমার হঠাৎ ঘুম ভেঙ্গে গেলো .. তারপর .. তারপর আর কিছু মনে নেই। হ্যাঁ, মনে পড়েছে .. আমাদের ঘরের ওই বড় আয়নাতেই তো আমি দেখলাম নিশীথ বটব্যালের ওই ভয়ঙ্কর মুখটা। তখনই তো সব জলের মতো মনে পড়ে গেল আমার। তারিখটা .. তারিখটা .. হ্যাঁ মনে পড়েছে .. ২রা সেপ্টেম্বর। এইবার বিশ্বাস করলেন তো যে খুনটা আমিই করেছি?"
"সুজাতা দেবী .. আপনি কিছু মনে করতে পারছেন? হসপিটালের রেজিস্টার খাতাটা একবার দেখলে অবশ্য এখনই বোঝা যাবে অনির্বাণ ঠিক কথা বলছে কিনা। যদিও অতদিন আগেকার কথা আপনার মনে থাকার কথা নয়, তবুও জিজ্ঞাসা করছি .. আপনার কি সত্যিই ওই দিন নাইট শিফট ছিলো আর আপনি পরের দিন যখন বাড়ি ফিরলেন, তখন কি অস্বাভাবিক কিছু লক্ষ্য করেছিলেন?" সুজাতার দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করলেন ইনস্পেক্টর সেনগুপ্ত।
"অফিসিয়াল প্রমাণের জন্য আপনারা নিশ্চয়ই রেজিস্টার খাতা সংগ্রহ করবেন। কিন্তু ব্যক্তিগতভাবে যদি আমাকে জিজ্ঞাসা করেন, তাহলে বলবো আমার স্পষ্ট মনে আছে সেদিনকার কথা। ডক্টর দাশগুপ্ত মানে আমার হাজব্যান্ড তখন এই হসপিটালেই পোষ্টেড ছিলেন। ওনারও হয়তো মনে থাকবে .. একটা ক্রিটিক্যাল কেস এসে যাওয়াতে অনেকদিন পর হঠাৎ নাইট ডিউটি পড়েছিলো আমার। আমি অনেক সকালে ফিরতাম, তখন কলিংবেল টিপলে গোগোলের ডিস্টার্ব হবে, তাই নাইট ডিউটি থাকলে চিরকালই আমি বাইরে থেকে তালা দিয়ে যেতাম। ভোরবেলা ফিরে এসে দেখি ওর ঘরের অ্যাটাচ বাথরুমের দরজার সামনে ঠিক বড় আয়নাটার পাশে মাটিতে শুয়ে আছে গোগোল। প্রথমে তো এই দৃশ্যটা দেখে আমি অবাক হয়ে গেছিলাম। তারপর ভাবলাম আবার নিশ্চয়ই ও দুঃস্বপ্ন দেখেছে। তাই সঙ্গে সঙ্গে চিৎকার করে ডেকে উঠে বললাম .. তুই মাটিতে শুয়ে আছিস কেন? সারারাত কি এখানে এইভাবে শুয়েছিলিস? হায় ভগবান, এত বড় হয়েছে, অথচ এই ছেলেকে নিয়ে আমি কি করবো! এতদিন পর নাইট শিফটে গেলাম আর ফিরে এসে এই দৃশ্য দেখতে হলো আমাকে? একটা দিনের জন্যেও কি তুই আমাকে শান্তিতে থাকতে দিবি না? ওঠ বলছি ওখান থেকে। যা, বিছানায় গিয়ে শুয়ে পর। আমার চিৎকারে ঘুম ভেঙেছিলো সেদিন গোগোলের।" হাঁপাতে হাঁপাতে কথাগুলো বললো সুজাতা।
"আবার নিশ্চয়ই ও দুঃস্বপ্ন দেখেছে .. এই কথার মানে ঠিক বুঝলাম না ম্যাডাম। মানে কোনো দুঃস্বপ্ন দেখে ওই ঘটনার আগেও কি অনির্বাণ অস্বাভাবিক আচরণ করেছিলো? বিষয়টা যদি একটু খুলে বলেন!" সুজাতার উদ্দেশ্যে জানতে চাইলেন ইন্সপেক্টর সেনগুপ্ত।
- "ওই ঘটনার আগে অনেকবার দুঃস্বপ্ন দেখেছে আমার গোগোল, হ্যাঁ ওই ঘটনার পরেও দেখেছে .. তবে মাত্র একবার। আমি বুঝতে পারতাম দুঃস্বপ্নের রাতগুলো ওর কাছে সাংঘাতিক বিভীষিকাময় হয়ে উঠতো। আমাকে কিছুতেই কাছছাড়া করতে চাইতো না ও সেই সময়। কত যে নাইট শিফট ক্যান্সেল করেছি ওর জন্য তা গুনে শেষ করা যাবেনা। আমাকে জড়িয়ে ধরে আমার বুকের মধ্যে মুখ গুঁজে শুয়ে থাকতো। কিন্তু যখন আস্তে আস্তে ও বড় হলো, তখন লজ্জায় আমাকে কিছু বলতো না। আমাকে বাড়িতে থেকে যাওয়ার কথাও বলতে পারতো না। কিন্তু আমি বুঝতাম ওর ভেতরে সাংঘাতিক একটা অস্বস্তি হচ্ছে, একটা অজানা ভয় গ্রাস করছে ওকে। আজ আপনার সামনে ইনফ্যাক্ট আপনাদের সকলের সামনে আমাকে একটা কথা বলতেই হবে। জীবনে ভাবিনি জনসমক্ষে এই কথা বলার প্রয়োজন কোনোদিন হবে। কিন্তু বর্তমানে পরিস্থিতি যে জায়গায় দাঁড়িয়েছে, এই কথাগুলো না বললে বোধহয় অনেক ক্ষতি হয়ে যাবে। ও আগের দিন যে তিনটি হত্যাকাণ্ডের কথা বলেছে। তার মধ্যে বোধহয় আমি একটা জানি। বোধহয় কেনো বলছি .. আমি অবশ্যই একটা ঘটনা জানি। আমার নিজের পিসিমা যে কিনা আবার অরুন্ধতী দিদির মামী, তিনি ওদের বাড়িতেই ছিলেন তার শেষ জীবনটা। অনেক ক্ষতি করেছেন ওদের পরিবারের, বলা ভালো যারা ষড়যন্ত্রের জাল বুনেছিলো ওদের পরিবারটাকে ধ্বংস করে দেওয়ার জন্য, তাদের মধ্যে আমার পিসিমা লতিকা দেবী একজন ছিলেন। উনার মৃত্যুর জন্য যে গোগোল দায়ী এবং এটা সে স্বপ্নের মাধ্যমে অনেকবার দেখেছে .. একথা আমাকে আগেই ও জানিয়েছিলো। কিন্তু অপরিণত মস্তিষ্কের এবং অল্প বয়সের খেয়াল .. এই ভেবে আমি কোনোদিন ওর কথার গুরুত্ব দিইনি, বরং বিষয়টাকে ভুলিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছি চিরকাল। তারপর ও ধীরে ধীরে বড় হলে, এই বিষয়ে আমাদের মধ্যে আর কোনোদিন কোনো কথা হয়নি। তাছাড়া ঘটনাটা যেদিন ঘটেছিল, অর্থাৎ আমার পিসিমা যেদিন ওদের কোয়ার্টারের পাশের সিমেন্টের ওই উঁচু টাওয়ারটা থেকে পড়ে মারা যান .. সেদিন আমি স্বয়ং ওখানে উপস্থিত ছিলাম। আগের দিন রাতে ওর মা এবং পরের দিন ভোরবেলা ওর বাবার মৃত্যুর খবর পেয়ে বৈঠকখানার ঘরে মানসিকভাবে বিধ্বস্ত অবস্থায় বসেছিলাম আমি। তখনই প্রচন্ড জোরে একটা ভারী কিছু পড়ার আওয়াজ কানে আসে আমার এবং তার সঙ্গে একটা আর্তনাদ।"
এতক্ষণ ধরে কথা বলতে বলতে গলা শুকিয়ে গেছিলো সুজাতার। একটু দম নিয়ে, পাশে রাখা জলের জগ থেকে কিছুটা জলপান করে গলাটা ভিজিয়ে নিয়ে আবার বলতে শুরু করল সে "ওইরকম একটা পরিস্থিতিতে ভীষণ ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম আমি। গোগোলকে ডাকতে যাবো এমন সময় বাইরে থেকে দৌড়ে ভেতরে ঢুকে ভয়ার্ত কণ্ঠে হাঁপাতে হাঁপাতে গোগোল বলে উঠলো .. আন্টি জানো তো, আমাদের বাড়ির পাশে যে সিমেন্টের টাওয়ারটা আছে, ওখান থেকে দিদা পড়ে গেছে। কিন্তু ওখানে দিদা কেন উঠলো বলো তো? ওখানে তো কিছুই নেই। আমি বিকেলবেলা খেলতে খেলতে ওদিকটা গেলে মা ভীষণ রাগ করতো, আমি কখনো ওখানে যাই না, দরজা হাট করে খোলা ছিলো, তাই আমি বেরিয়ে একটু সামনেটা দাঁড়িয়েছিলাম বাবা কখন ফিরবে সেটা দেখার জন্য। তখন দেখলাম দিদা উপর থেকে ঝপ করে পড়ে গেলো। না না আমি দেখিনি, মানে পড়ে যাওয়ার পর আওয়াজ শুনে ওদিকে তাকিয়ে দেখে বুঝলাম ওটা দিদা, তুমি শিগগিরি চলো .. এই কথাগুলো শোনার পর এবার আপনি বলুন স্যার ওইটুকু সময়ের মধ্যে কতটুকু একটা ছেলে কি করে অত বড় একটা মানুষকে উপর থেকে ফেলে দিয়ে আবার অত দ্রুত বাড়ি ফিরে এসে স্বাভাবিকভাবে কথাগুলো বলতে পারে? আপনিই এর বিচার করুন।"
ইন্সপেক্টর সেনগুপ্ত কিছু একটা বলতে যাচ্ছিলেন, কিন্তু তার আগেই সুবীর উচ্চকণ্ঠে হেসে উঠে বললো "এখানে অনেক সিরিয়াস আলোচনা হচ্ছে, খুনের ঘটনা নিয়ে কাটাছেঁড়া হচ্ছে। আমাকে মার্জনা করবেন, কিন্তু আমি না হেসে পারলাম না। দু'বছর আগে? ২৩শে এপ্রিল? আর ইউ ক্রেজি গোগোল? এত তাড়াতাড়ি ভুলে গেলি সবকিছু? কলেজে আমাদের ফাইনাল ইয়ার, কলেজের পক্ষ থেকে আমাদের সকলকে দু'দিনের জন্য সুন্দরবন নিয়ে যাওয়া হয়েছিলো। ২২শে এপ্রিল সকালে আমরা রওনা হয়েছিলাম এবং ২৩শে এপ্রিল সন্ধ্যেবেলা ফিরে আসি। সরি, এখানে কাবেরী আন্টি আছেন তবুও বলছি .. দু'দিন তোকে দেখতে না পেয়ে হিয়া কিন্তু ভীষণ অভিমান করেছিলো তোর উপর। মনে আছে .. হলিডে হোমের বারান্দায় ফোনে তুই ওর অভিমান ভাঙাচ্ছিলিস আর আমরা আড়াল থেকে লুকিয়ে লুকিয়ে সব শুনছিলাম? তারপর আমাদের পিকেবি স্যার মজা করে বলেছিলেন - এখন থেকেই 'জরু কা গুলাম' হয়ে গেলে ভায়া? মনে পড়েছে কথাগুলো? কলেজের রেকর্ডবুক চেক করলেই আপনি সব তথ্য প্রমাণ পেয়ে যাবেন ইন্সপেক্টর সাহেব। এরপর ২৩ তারিখ সন্ধ্যেবেলা ফিরে এসে তুই কোন চুলোয় গেছিলিস, সেটা অবশ্য আমি বলতে পারবো না। কিন্তু আমাদের তো ফিরতে ফিরতে অনেকটা সন্দেহ হয়ে গিয়েছিলো, তখন তো কলেজ ছুটি হয়ে যাওয়ার কথা.."
"নিজের বাড়ি যাওয়ার আগে সন্ধ্যেবেলা ও প্রথম আমাদের বাড়িতে এসেছিলো .. আমাকে একবার চোখের দেখা দেখবে বলে। সেদিন ভীষণ বৃষ্টি হচ্ছিলো। পুরোটা মনে আছে আমার।" সুবীরের কথাগুলো শেষ হতেই বলে উঠলো হিয়া।
Posts: 4,428
Threads: 6
Likes Received: 9,218 in 2,849 posts
Likes Given: 4,330
Joined: Oct 2019
Reputation:
3,225
06-02-2023, 09:03 PM
(This post was last modified: 06-02-2023, 09:04 PM by Bumba_1. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
"এক্সকিউজ মি .. মিনিট দশেক আপনারা অপেক্ষা করুন এখানে.. আমি একটু বাইরে থেকে আসছি .." কথাগুলো ঘরে উপস্থিত সবার উদ্দেশ্যে বলে কেবিন থেকে বেরিয়ে গেলেন ইন্সপেক্টর সেনগুপ্ত। প্রথমেই এই হসপিটালের অফিসে গিয়ে রেজিস্টার খাতা চেক করলেন, তারপর কাউকে একটা ফোন করে, কিছুক্ষণ ফোনে কথা বলে পুনরায় কেবিনে প্রবেশ করলেন তিনি।
"পুলিশ ফোর্স ডাকতে গিয়েছিলেন? নিশ্চয়ই ওকে অ্যারেস্ট করার জন্য?" কাবেরী দেবীর এইরূপ উক্তিতে, তার দিকে কিছুক্ষণ অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে গলাটা যতটা সম্ভব গম্ভীর করা যায় ততটা করে ইন্সপেক্টর সেনগুপ্ত বললেন "হুঁ .. তবে সঙ্গে মহিলা পুলিশও আছে .. আর একটাও অতিরিক্ত এবং অপ্রয়োজনীয় কথা বললে সোজা কোর্টে চালান করে দেবো আপনাকে.." থতমতো খেয়ে গিয়ে চুপ করে গেলেন কাবেরী দেবী।
"হসপিটালের রেকর্ড বলছে সুজাতা দেবীর ওইদিন নাইট ডিউটি ছিলো। তারমানে ভোরবেলা বাড়িতে ফিরে উনি অনির্বাণকে যে অবস্থায় দেখেছিলেন বলে এতক্ষণ দাবী করলেন, সেটা সম্পূর্ণ সত্যি। এর থেকে এটা প্রমাণ হয় .. অনির্বাণ রাতে আবার সেই ভয়ঙ্কর স্বপ্ন দেখেছিলো .. যে দুঃস্বপ্ন দেখে ছোটবেলায় সে ভয়ে কুঁকড়ে উঠতো। এরপর অনির্বাণ এবং তার বন্ধু সুবীরের কলেজে ফোন করে খবর নিয়ে জানলাম সুবীর সম্পূর্ণ সত্য কথা বলেছে। দু'বছর আগে বাইশ এবং তেইশে এপ্রিল ওরা সুন্দরবন গেছিলো কলেজ এক্সকারশনে। সেখানে অনির্বাণও ছিলো ওদের সঙ্গে। তিনটে খুন করার যে দাবী আপনি করছেন, তার মধ্যে প্রথম দু'টো ঘটনার কোনো প্রত্যক্ষদর্শীর হদিশ আপনি এখনো দিতে পারেননি। অথচ আপনার দাবীর বিপক্ষে, অর্থাৎ আপনি যে সেইদিন ওখানে উপস্থিত ছিলেন না এবং প্রথম ঘটনার ক্ষেত্রে উপস্থিত থাকলেও সেই কাজ আপনার পক্ষে করা সম্ভব ছিলো না, এর প্রত্যক্ষদর্শী এবং সরকারি প্রমাণ পেয়ে গেছি আমরা। এবার আপনি বলুন তো .. ২২ আর ২৩ তারিখের কথা এই মুহূর্তে আপনার মনে পড়লো কিছু, অনির্বাণ? আর সুজাতা ম্যাডাম যেটা বললেন, অর্থাৎ আপনার দিদিমার মৃত্যুর ঘটনাটা। সেই ব্যাপারে কিছু আলোকপাত করতে পারেন?" গোগোলের বেডের পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞাসা করলেন ইন্সপেক্টর সেনগুপ্ত।
"হ্যাঁ, সুন্দরবনের এক্সকারশনের কথা মনে পড়েছে। কিন্তু দিদার মৃত্যুর সময়কার কোনো ঘটনা আমি এই মুহূর্তে মনে করতে পারছি না। মাথাটা কিরকম যেন ঝিমঝিম করছে আমার। মনে করার চেষ্টা করছি, কিন্তু বিশ্বাস করুন কিছুতেই .. তাছাড়া একটা অন্য প্রশ্ন আমার মাথায় উঁকি দিচ্ছে বারবার .. ঘটনা দুটো যদি আমি না ঘটিয়ে থাকি, তাহলে এই কাজ করলো কে? ইন্সিডেন্টগুলো তো আর মিথ্যে নয়!" কথাগুলো বলে দুই হাত দিয়ে নিজের মাথা চেপে ধরলো গোগোল।
- "আপনি যথার্থ বলেছেন অনির্বাণ .. ঘটনাগুলো আপনি না ঘটিয়ে থাকলে, কে ঘটালো? সে প্রসঙ্গে আমরা পরে আসছি। কিন্তু তার আগে আপনি বলুন .. তৃতীয় এবং চতুর্থ খুন, যেখানে দু'জনকে একসঙ্গে আপনি হত্যা করেছিলেন বলে দাবী করছেন .. এই কথাতে কি এখনো অনড় রয়েছেন?"
- "এখন, এই মুহূর্তে আপনার এই প্রশ্নের আমি কি জবাব দিই বলুন তো! এতদিন ধরে যা ধ্রুব সত্যি বলে জেনে এসেছি, তা যদি হঠাৎ করে মিথ্যে প্রমাণ হয়ে যায়, তাহলে কি পরিমাণ মানসিক চাপ সৃষ্টি হয়, সেটা আপনি বুঝতে পারছেন? আমার মাথা কাজ করছে না। তবে এক্ষেত্রে বোধহয় আমিই সঠিক। যদিও তারিখটা আমার বলে দেওয়ার দরকার নেই, প্রায় সব লিডিং নিউজ পেপারে বেরিয়েছিলো ওসমান আর জাকির মৃত্যুর খবরটা। ২০শে অক্টোবর ছিলো তারিখটা। আর একটু আগে আপনি প্রত্যক্ষদর্শীর কথা বলছিলেন না? তাকে তো আপনি নিজের সঙ্গে করেই নিয়ে এসেছেন। ধনঙ্গী ভাই .. তুমি তো গিয়েছিলে আমার সঙ্গে মায়াবন্দরে। বাকিটা তুমিই না হয় বলো ইন্সপেক্টরকে .."
"আপনি কোথায় গেছেন, কি করেছেন .. সে আপনি জানেন .. মুঝে কিঁউ বিচ মে ঘাসিট রহে হো আপ? এইসব খুনের মধ্যে আমি নেই আর আমি আপনার সঙ্গে কোথাও যাইনি .." তাকে সাক্ষী মানতে যাওয়ায়, গোগোলের দিকে তাকিয়ে বিরক্তি ভরে কথাগুলো বললো ধনঙ্গী ভাই।
"তার মানে, এক্ষেত্রেও আপনার খুন করার স্বপক্ষে কোনো প্রত্যক্ষদর্শী পাওয়া গেলো না। তবে তার থেকে এটা প্রমাণ হয় না যে, ওই দুটো খুন আপনি করেননি। কারণ, যে তারিখটার কথা আপনি বলছেন, ওই নির্দিষ্ট তারিখে গঙ্গানগরে আপনার থাকার কোনো অকাট্য প্রমাণ নেই .. আমি অফিসিয়াল প্রমাণের কথা বলছি। হ্যাঁ, আপনার মামণি বলতেই পারেন যে আপনি ওনার সঙ্গে ছিলেন। তবে কোর্টে কেসটা উঠলে প্রমাণ করতে পারবেন না। কিন্তু .. মায়াবন্দর হত্যাকাণ্ডে যাদের নাম খবরে আসেনি, অথচ যারা বা যিনি এই হত্যাকাণ্ডের প্রকৃত প্রত্যক্ষদর্শী তার সঙ্গে কিছুক্ষণ আগে কথা বলে এলাম। সেই জন্যই তখন বলেছিলাম - একটা কাজ সেরে আসতে কিছুটা দেরি হয়ে গেলো। বর্ণালী রায় .. রেলপাড়ের কলেজের বাংলার দিদিমণি। তবে উনি কি বলেছেন সেটা আমি পরে ডিসক্লোস করবো .. তার আগে মিস পর্ণা বলবেন এক্সাক্টলি সেই রাতে কি হয়েছিলো।" ইন্সপেক্টর সেনগুপ্তর কথাগুলো শুনে বিস্ফোরিত নেত্রে তাকিয়ে থাকলো গোগোল, তার গলা দিয়ে একটা কথাও বের হলো না।
★★★★
এরপর পর্ণার বলা বাকি কথাগুলো ..
সেই রাতে আমি আলম সাহেবের সঙ্গে ওর বাড়ির বেডরুমের বিছানাতেই ছিলাম। আমার মুখে এই কথাগুলো শুনে হয়তো আপনারা আমাকে খুব খারাপ মেয়ে ভাবছেন। কিন্তু তাতে আমার কিছু করার নেই .. একজন বোন হিসেবে না হোক, মানুষ হিসেবে একজন মানুষকে বাঁচানোর জন্য যেটা সত্যি, আমাকে তো সেটা বলতেই হবে। আমরা দু'জনে ঘনিষ্ঠ অবস্থায় ছিলাম, কিছু ব্যক্তিগত কথা বলছিলাম নিজেদের ভবিষ্যৎ নিয়ে। সেই সময় হঠাৎ করেই সাক্ষাৎ যমদূতের মতো ঘরে প্রবেশ করলো কামরাজ। যারা নিজেরা অসৎ হয়, সমাজের জন্য ক্ষতিকারক হয় .. তারা কখনো অন্যের ভালো হয়ে ওঠার প্রচেষ্টাকে সহ্য করতে পারে না। কামরাজের ক্ষেত্রেও সেই একই জিনিস ঘটেছিলো। আলম সাহেবের অনেক অনুনয় বিনয় আমার অনবরত করতে থাকা আকুতি .. কোনো কাজে আসছিলো না।
কামরাজ একসময় পকেট থেকে একটা রিভলবার বের করে আলম সাহেবের দিকে তাক করে বললো - এবার মরার জন্য প্রস্তুত হও। এই কথা বলার পরক্ষণেই গুলি করলো কামরাজ। ঠিক সেই মুহূর্তে ঘরে যে জিরো পাওয়ারের বাল্বটা জ্বলছিলো সেটা হঠাৎ করেই ফিউজ হয়ে গেলো। এই কথা বলছি কারণ লোডশেডিং হয়নি, ঘরের এসি তখনো চলছিলো। আলো নেভার সঙ্গে সঙ্গেই আলম সাহেব বিছানার উপর ঝুঁকে পড়েছিলো, তাই গুলিটা তার বুকে না লেগে কাঁধের উপর লেগেছিলো। আমার তখন সঙ্গীন অবস্থা .. বাড়িতে যারা ছিলো তাদের আগেই খুন করে এসেছে কামরাজ এ কথা সে আগেই জানিয়েছে। বাড়ির নিচে গাড়িতে অপেক্ষা করছিলো আর এক দুর্বৃত্ত মানিক সামন্ত .. তাই পালাবার কোনো পথ ছিলো না আমার। আলম সাহেবের এই অবস্থায় উনাকে বাঁচানোর জন্য চিৎকার করবো, নাকি পরের গুলিটার হাত থেকে নিজেকে বাঁচাবো ঠিক করতে পারছিলাম না।
ঠিক তখনই তিনি এলেন মহা সমারোহে, দীপ্তি ছড়িয়ে প্রলয় তার। কাকে নিতে এলো অজানা তখন, হয়তো যার নামে আছে পরোয়ানার ভার। মৃত্যুর ডাক বদ্ধ কুঠুরিতে, ঠিকানায় নেই আপন-পর। ভেদাভেদে গড়া দূরত্ব আজ, সীমানা শুধুই নিজের ঘর। ধীরে ধীরে চোখ সয়ে এলো সেই ঘন অন্ধকারে। এক অনির্বচনীয় দ্যুতি ছড়িয়ে আমার চোখের সামনে ক্রমশ প্রকাশিত হলেন তিনি। আমি স্পষ্ট দেখলাম বিছানার ঠিক সামনে আমার থেকে এক হাত দূরে দাঁড়িয়ে রয়েছেন এক রমণী। সাদা রঙের লাল পেড়ে শাড়ি জড়ানো তার গায়ে, কপালে চন্দনের ফোঁটা, হাতে দীর্ঘ ধাতব শলাকার মতো ধারালো একটা অস্ত্র .. যেটাকে দেখতে অনেকটা বর্শার মতো। অতঃপর তার মুখের দিকে দৃষ্টি গেলো আমার, জানেন তিনি কে? বিশ্বাস করবেন আপনারা আমাকে? আরে, আপনারা কি বিশ্বাস করবেন .. আমি নিজেই আমার চোখকে বিশ্বাস করতে পারিনি। স্পষ্ট দেখলাম আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছেন দেবী অরুন্ধতী। হ্যাঁ আপনারা ঠিকই শুনেছেন .. আমি তাঁকে দেবী সম্মোধন করলাম। শুধুমাত্র তার নাম নেওয়া বা তাকে পিসি সম্মোধন করার ধৃষ্টতা আমার নেই। যিনি পিসি, মাসি, মা এইসব পারিবারিক সম্পর্ক থেকে অনেক ঊর্ধ্বে বিরাজ করেন। দুষ্টের দমন আর শিষ্টের পালন করতে পুনরায় যার আগমন ঘটেছে এই পৃথিবীতে।
তারপর সেই নরপিশাচটার দৃষ্টি গেলো অস্ত্রধারী দেবী অরুন্ধতীর দিকে। স্পষ্ট লক্ষ্য করলাম কামরাজের নৃশংস-কদাকার মুখে হঠাৎ করেই আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে। ''তু..তুমি মানে আ..আপনি এখানে, এভাবে? কি..কিন্তু সেটা কিভাবে সম্ভব? আপনি তো ..'' কথাগুলো বলতে বলতে এক'পা এক'পা করে পেছচ্ছিলো সে। দৃষ্টি সামনের দিকে থাকায় তার পিছনে কি রয়েছে সেদিকে খেয়াল করতে পারেনি শয়তানটা। পেছাতে গিয়ে হঠাৎ করেই খাটের পাশে রাখা চেয়ারটার পায়ার সঙ্গে তার পা জড়িয়ে মাটিতে পড়ে যায় কামরাজ, তার হাত থেকে ছিটকে পড়ে রিভলভারটা। আরো কয়েক পা এগিয়ে দেবী অরুন্ধতী তখন মাটিতে পড়ে যাওয়া অসুররূপী কামরাজের ঠিক সামনে এসে দাঁড়িয়েছে।
অজানা আতঙ্ক এবং বিস্ময়ের ঘোর কাটিয়ে বাস্তবের মাটিতে তখন ফিরে এসেছে কামরাজ। কথায় বলে অফেন্স ইজ দা বেস্ট ডিফেন্স .. তাই নিজেকে বাঁচানোর তাগিদেই হোক কিংবা 'একজন নারী আমার কি ক্ষতি করতে পারে' এই ভেবেই হোক ''তুমি যেই হও না কেন .. তোমাকে আমি একটুও ভয় পাচ্ছি না। তোমার সাহস বড্ড বেড়ে গেছে, তাই না? ভুলে গেছো সেদিনের কথা, যেদিন তোমাকে আমরা .. ও ভালো কথা, বাড়ির নিচে গাড়িতে তোমার আরেক যম অপেক্ষা করছে। ওর চোখ এড়িয়ে তুমি উপরে এলে কি করে? আর যখন এসেই পড়েছ, তখন আমার হাতেই যে তোমাকে মৃত্যুবরণ করতে হবে ..'' কথাগুলো বলার পরেই মুখটা কিরকম যেন হিংস্র হয়ে উঠলো কামরাজের। হাতে ভর দিয়ে মাটি থেকে উঠে দাঁড়াতে গেলো সে। ঠিক সেই মুহূর্তে কড়কড় করে একটা শব্দ হওয়াতে ওপরের দিকে তাকালো দুর্বৃত্তটা। দেবী অরুন্ধতীর হাতের ধারালো ধাতব দীর্ঘ শলাকার মতো অস্ত্রটা তখন আর তাঁর হাতে ছিলো না, শূন্যে ভাসছিলো সেটা। তারপর হঠাৎ অস্ত্রটার ধারালো ফলার মতো ছুঁচোলো অংশটা কামরাজের অভিমুখে ঘুরে গিয়ে দ্রুতবেগে তার দিকে ধেয়ে এলো। তারপর কিছু বুঝে ওঠার আগেই সেটা গিয়ে বিঁধলো তার বুকের বাঁ দিকে। প্রবলবেগে একটা আর্তনাদ করে উঠলো নরপিশাচটা। অসহ্য যন্ত্রণায় ছটফট করতে করতে চোখদুটো ঠিকরে বেরিয়ে আসতে চাইছিলো কামরাজের।
"তোমার যন্ত্রণার এখনো অনেক বাকি কামরাজ .. নিরীহ অসহায় মানুষদের চিরতরে ধ্বংস করে যে অমানুষ পৈশাচিক আনন্দলাভ করে, তাকে তো এত সহজে মরতে দেওয়া যাবে না। একটু আগে যার কথা বলছিলে, সে আর ইহ জগতে নেই। এখানে আসার আগে তাকেও .." সারা ঘরময় প্রতিধ্বনিত হতে লাগলো দেবী অরুন্ধতীর কন্ঠস্বর। যে কন্ঠে ছিলো মাতৃত্বের মধু-মাখানো পরশ, আবার বিদ্রোহিনী নারীর দৃঢ় শব্দের স্তর। তারপর নিজের একটা পা তুলে দিলেন নরপিশাচটার বুকের উপর। অপরিসীম যন্ত্রণায় ক্ষতবিক্ষত হতে হতে অসুররূপী কামরাজের গগনভেদী চিৎকার ক্রমশ গোঙানিতে পরিণত হলো দেবী অরুন্ধতীর পায়ের পাতার নিচে।
"আজ তোমার মৃত্যু হবে .. এই কথা তুমি নিজেও এখন বুঝতে পারছো। কিন্তু মৃত্যুর আগে অমানুষিক মৃত্যুযন্ত্রণা কি জিনিস এবার তুমি তা বুঝবে। তোমার কাছে তোমার শরীরের সব থেকে গর্বের যে অংশটা, যেটা দিয়ে কত যে অসহায় মহিলার সতীত্ব হরণ করেছো, তা বোধহয় গুনে শেষ করা যাবে না। তাই আজ তোমার মৃত্যুর আগেই চিরতরে বিনাশ হবে তোমার শরীরে সেই অংশটি .." দেবী অরুন্ধতী নিজের কথা শেষ করে কামরাজের বুকের উপর থেকে নিজের পা'টা সরিয়ে নিলেন। তারপর অসুরটা কিছু বুঝে ওঠার আগেই মুহূর্তের মধ্যে প্রবল বেগে পদাঘাত করলেন নরপিশাচটার জঙ্ঘার উপর। ভেঙে গুঁড়িয়ে গেলো কামরাজের জঙ্ঘা .. সঙ্গে তার পৌরষত্ব।
কামরাজের শরীরের উপর থেকে দেবী অরুন্ধতী ততক্ষণে নিজের পা সরিয়ে নিলেও বর্ষার মতো ধারালো অস্ত্রটা তখনও তার বুকে গেঁথে ছিলো। কিন্তু সেই সময় আর বাধা দেওয়া, যন্ত্রণায় দিগ্বিদিক জ্ঞানশূন্য হয় চিৎকার করা .. এর কোনো অবস্থাতেই ছিলো না দুর্বৃত্তটা। এতক্ষণ মৃত্যুভয়ে আতঙ্কিত হয়ে থাকলেও এখন মনে-প্রানে মৃত্যুকেই আহ্বান করে যাচ্ছিলো নরপিশাচ কামরাজ। এই বিভীষিকাময় যন্ত্রণা আর যে তার শরীর নিতে পারছিলো না! দৃষ্টিশক্তি ক্রমশ ঘোলাটে হয়ে যাচ্ছিলো তার। স্পষ্ট ভাবে দেবী অরুন্ধতীর মুখ দেখতে না পেলেও, তাঁর উপস্থিতি অনুধাবন করে সেইদিকে হাতজোড় করে বলে অসুররূপী কামরাজ উঠলো "আমি আমার সব দোষ স্বীকার করছি, আমি মহাপাতক। হে দেবী .. আপনার কাছে আমার একটাই অনুরোধ .. এবার পুরোপুরি শেষ করে দিন আমাকে, জ্বালা জুড়োক শরীরের। এই শারীরিক যন্ত্রণা আমি আর সহ্য করতে পারছি না। একজন মৃত্যু পথযাত্রীর এই অনুরোধ রাখুন দয়া করে .. আপনার কাছ থেকে আমি মৃত্যুভিক্ষা চাইছি।"
এই মুহূর্তটার জন্যই সম্ভবত অপেক্ষা করছিলেন দেবী অরুন্ধতী। ছলে-বলে-কৌশলে বা শক্তি দিয়ে শত্রুর বিনাশ তো অবশ্যই করা যায়, কিন্তু উল্টো দিকের ব্যক্তি যখন মৃত্যুবরণ করার আগে হাতজোড় করে তার সমস্ত দোষ স্বীকার করে মৃত্যুভিক্ষার অনুরোধ করে .. তার মতো তৃপ্তিদায়ক পরিস্থিতি বোধহয় খুব কমই হয়। এমত অবস্থায় দেবী অরুন্ধতী আর সময় নষ্ট না করে অর্ধমৃত কামরাজের একটা হাত ধরে মাটি থেকে কিছুটা তুলে আধশোয়া অবস্থায় নিয়ে এসে "তবে তাই হোক .. মুক্তি লাভ করো তুমি .." এইটুকু বলে অসুরটার বুকের গভীরে তীক্ষ্ণ শলাকাটা ঢুকিয়ে এফোঁড়-ওফোঁড় করে দিয়ে পুনরায় তাকে মাটিতে ফেলে দিলেন।
রাত শেষের ভোরের আকাশে হঠাৎ আগুন শিহরণ, বীভৎস ডঙ্কারে কাঁপে নিস্তব্ধতা। বিস্ফোরণ ঘটিয়ে কে যেন চলে যায় চুপি চুপি। মাটিতে রক্তের তাজা গন্ধ। আবিরে ছোঁয়েনি বসন্ত আকাশ, ভীত নিরাশারা ক্লান্ত, স্তব্ধ। খুশির মুখেরা মুখোশে ঢাকা, আজ দুঃখেরা সব মুক, জব্দ। দেবী দর্শন এবং অসুর বধ .. চোখের সামনে এরকম তৃপ্তিদায়ক, অথচ রোমহর্ষক এবং বীভৎস দৃশ্য বেশিক্ষণ সহ্য করতে পারলো না আমার মতো পাপী-তাপী মানুষ। মাথা ঘুরে পড়ে গেলাম বিছানায় .. পরক্ষণেই জ্ঞান হারালাম। তারপর পুলিশ এসে আমাদের উদ্ধার করে।
★★★★
এতক্ষণ পর্ণার কথাগুলো মন্ত্রমুগ্ধের মতো শুনে যাচ্ছিলো কেবিনে উপস্থিত সকলে। "আমি জানি কথাগুলো শুনে আপনারা অনেকেই নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারেননি এখনো পর্যন্ত। এটাই স্বাভাবিক, কারণ যার কোনো অস্তিত্ব নেই এটা যখন আমরা মনে-প্রাণে বিশ্বাস করতে শুরু করি, ঠিক সেই সময় যদি হঠাৎ করে যদি তার অস্তিত্বের আভাস পাওয়া যায় .. তখন আমরা যারপরনাই বিস্মিত হয়ে যাই। বর্ণালী ম্যাডামের মুখে কথাগুলো শোনার পর আমিও প্রথমে বিস্মিত হয়ে গিয়েছিলাম। পর্ণা এবং বর্ণালী এরা পরস্পরকে চেনে না, অতীতেও এদের কোনোদিন দেখা হয়নি। অথচ শুনলে আপনারা অবাক হয়ে যাবেন .. এদের দু'জনের দেওয়া দুই বিভীষিকাময় রাতের বর্ণনা হুবহু এক। সেক্ষেত্রে স্থান, সময়কাল, দুর্বৃত্তের পরিচয় ভিন্ন হলেও উভয় ক্ষেত্রেই দেবী অরুন্ধতীর উপস্থিতি এবং তাঁর দ্বারা শত্রু বিনাশের যে বর্ণনা আমি পেয়েছি, তার মধ্যে অদ্ভুত সাদৃশ্য রয়েছে। এখন বর্ণালী ম্যাডাম সেখানে কি করে পৌঁছেছিলেন এই প্রসঙ্গ এই মুহূর্তে একেবারেই গুরুত্বহীন। অর্থাৎ মায়াবন্দরে ওসমান মন্ডল এবং জ্যাকির হত্যা অনির্বানের হাতে হয়নি .. এটাও প্রমাণিত হলো।" মৌনতা ভেঙে প্রথম কথাগুলো বললেন ইন্সপেক্টর সেনগুপ্ত।
কিছুটা দম নিলেন ইন্সপেক্টর সেনগুপ্ত, তারপর আবার বলতে শুরু করলেন "অনৈতিক এবং অধর্ম দিন দিন বেড়েই চলেছে। যা খুশি তাই করে যাচ্ছে আধুনিক যুগের অসুররা। জগতের হেন অশুভ কম্ম নেই যা তারা করছে না। চুরি-ডাকাতি, সন্ত্রাস, ;.,, এমনকি হত্যা .. যত ধরণের অনাচার-ব্যাভিচার আছে তার কোনোটাই তাদের অপকর্মের তালিকা থেকে বাদ যাচ্ছে না। একদা সেই লম্পট-দুশ্চরিত্র অসুরেরা কামরাজ আর মানিক সামন্তর রূপ ধারণ করে অরুন্ধতীর সর্বনাশ করেছিলো। তারপর অসুররূপী নিশীথ বটব্যাল ভোগ করেছিলো তার কন্যাসম মৌমিতাকে। মৌমিতার মাতৃদেবী স্বপ্নাকে হত্যা করেছিল সে। একে একে সেই দুর্বৃত্ত অসুরেরা ওসমান আর জ্যাকির মতো পাপিষ্ঠের দেহে ভর করে ধ্বংস করে দেওয়ার চেষ্টা করেছিলো বর্ণালীর জীবন। এই অসুরদের থেকে রক্ষা পায়নি বা রক্ষা পায়না কোনো অবলা নারী। প্রতিমা থেকে রূপসা, কাকলি থেকে বৈশালী সবাই এদের লালসার শিকার হয়েছে।"
Posts: 4,428
Threads: 6
Likes Received: 9,218 in 2,849 posts
Likes Given: 4,330
Joined: Oct 2019
Reputation:
3,225
06-02-2023, 09:07 PM
(This post was last modified: 07-02-2023, 09:28 AM by Bumba_1. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
আবার কিছুটা বিরতি নিয়ে বলতে শুরু করলেন ইন্সপেক্টর সেনগুপ্ত, "কালো টাকার মালিকগুলোর মাথায় ভর করতেও দ্বিধাবোধ করে না এই অসুররা। তারপর সবগুলো জোট বেঁধে হামলে পড়ে শেয়ার বাজারে। বিশাল এক ধ্বস নামিয়ে গরীব মানুষগুলোর আশা-ভরসার বারোটা বাজিয়ে দেয়। কারো পূজো, কারো ঈদ, কারো বা দৈনন্দিন জীবনটাও মাটি হয়ে যায়। অসহায় মানুষগুলো হতাশায় মাথা খুটতে থাকে। সেই সাথে তাদের কন্ঠ থেকে বেরিয়ে আসে প্রবল আর্তনাদ। আসলে ওই অসুরগুলো শুধুমাত্র একজন দুইজন নয়, ছড়িয়ে পড়েছে হাজার হাজার, লাখো লাখো মানুষের মাঝে। ওরা রাস্তার মোড়ে, কলেজ কিংবা কলেজের সামনে দাঁড়িয়ে, অথবা ইন্টারনেটের মাধ্যমে কুৎসিত ইঙ্গিত করে কিশোরী থেকে যুবতী বিদ্যার্থীদের দিকে। ওদেরকে আসুরিক প্রলোভনে জড়িয়ে পথ বিচ্যুত করতে চায়। কখনো বা হামলে পড়ে হিংস্র হায়েনার মতো। ওরা গরল ছুঁড়ে ঝলসে দিতে চায় বিধাতার হাতে গড়া সুন্দরকে। ওদের হায়েনার ন্যায় ধারালো দাঁতের ফাঁক দিয়ে ঝরে পড়ে কামনার লোল। ওদের লোভাতুর চোখের সামনে আমাদের সমাজের ভগিণীরা যেন আজ তীরের নিশানায় থাকা পাখির মতোই।"
"ওরা মানব সভ্যতার বাণীকে বিকৃত করে মানুষকে করে বিভ্রান্ত। মানুষে মানুষে জন্ম দেয় বিভেদ আর হানাহানির। সাম্প্রদায়িকদের শরীরে প্রবেশ করে ওরা ধর্মের নামে আকাশে ওড়ায় হিংসার বিষবাষ্প। ওরা এই পৃথিবীর মঙ্গল চায় না। ওরা চায় মহাতাণ্ডবে মেতে পৃথিবীকে ধ্বংস করে দিতে আর বিকৃত বেলেল্লাপনায় মেতে উঠতে। তাই তোমাকে যে একদিন না একদিন আসতেই হতো হে অরুন্ধতী .. হে মহিষাসুরমর্দিনী .. তুমি তো দেবী দুর্গার আর এক রূপ। তোমাকে তো আসতেই হতো তোমার ত্রিনয়না, দশভূজা, রণরঙ্গিনী রূপে। তোমার খড়্গের প্রতি কোপে ছিন্ন হোক শত শত অসুরের পাপচর্চিত মস্তক। তোমার ত্রিশুল চিরে দিক যত অশুভ কামনার বুক। তোমার পদতলে পিষ্ট হোক অনাচারী দুর্বিত্তেরা। জয় হোক তোমার শুভশক্তির।" শেষের কথাগুলো বলার সময় ইন্সপেক্টর সেনগুপ্তর গলার স্বর একদম অন্যরকম হয়ে গেছিলো।
"ময়নাতদন্তের রিপোর্ট অনুযায়ী যে কটা খুন হয়েছে, সেগুলোর বর্ণনা পুলিশ রেকর্ডে যেভাবে দেওয়া আছে, তার সঙ্গে পর্ণা এবং বর্ণালী ম্যাডামের করা ঘটনার বর্ণনাগুলো হুবহু মিলে যাচ্ছে। আমার স্থির বিশ্বাস এবং এটাই সম্ভবত ধ্রুব সত্য .. অসুর বিনাশের পর কালের নিয়মে এবং হয়তো বা দেবী শক্তির কল্যাণে অনির্বাণের ভেতরের সেই প্রতিশোধের আগুন এখন নিভে গিয়েছে। তাই বর্তমানে তার দেখা সেই স্বপ্নগুলোর কথা কিছুই মনে পড়ছে না। কিন্তু ভবিষ্যতে যদি কোনোদিন সেই দুঃস্বপ্নের কিছু স্মৃতি ফিরে আসে, তাহলে মিলিয়ে দেখলে দেখা যাবে, তার সঙ্গেও ময়নাতদন্তের রিপোর্ট এবং বর্ণালী ম্যাডাম আর পর্ণার বর্ণনার সঙ্গে কি অদ্ভুত সাদৃশ্য রয়েছে। এর পেছনে সঠিক কোনো বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা করা সম্ভব নয়, কিছু সময় অলৌকিক শক্তির উপরেও নির্ভর করতে হয় আমাদের। অতঃপর .. যখন প্রমাণ হয়েই গেছে অনির্বাণ কিছু করেনি, পুরোটাই তার দুঃস্বপ্ন, তখন চিন্তা করবেন না .. এই সম্পর্কে একটা কথাও আমি পুলিশকে বলবো না। না মানে, আমি বলতে চাইছি আমাদের ডিপার্টমেন্টে জানাবো না। যদি পুলিশের তরফ থেকে ভবিষ্যতে কোনো জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় তাহলে, আপনারা প্রত্যেকে নিজেদের মুখ বন্ধ রাখলেই হলো। বর্ণালী ম্যাডামও এই কথা কোনোদিন কোথাও শেয়ার করবে না এই আশ্বাস আমাকে দিয়েছে। আপনারা সবাই এখন নিশ্চিন্তে বাড়ি যেতে পারেন। অনির্বাণকে সঙ্গে নিয়ে যান .. ও এখন সম্পূর্ণ সুস্থ। আমার ডিউটি শেষ .. তাহলে আমি এখন চলি। পরে আবার কোথাও কখনো হয়তো দেখা হয়ে যেতেও পারে। কি বলেছিলাম মনে আছে বন্ধু? সব সন্দীপ সেনগুপ্তরা খারাপ হয় না .. কেউ কেউ ভালোও হয়।" শেষের কথাগুলো গোগোলের উদ্দেশ্যে বলে দ্রুত কেবিন থেকে বেরিয়ে গেলেন সন্দীপ।
★★★★
"কখনো প্রভাতের আকাশে শ্বেতশুভ্র মেঘমালার মধ্যে এখনো খুঁজে বেড়াই আমার মা'কে, আবার কখনো দুর্যোগের রাতে ঘন কালো মেঘের ঘনঘটায় খোঁজার চেষ্টা করি তাকে। জৈষ্ঠ মাস শেষ হয়ে যখন আষাঢ় আসে, তপ্ত হয়ে শুকিয়ে যাওয়া প্রকৃতি যখন অপেক্ষায় থাকে বর্ষার .. আমিও তখন অপেক্ষা করি আমার হারিয়ে যাওয়া মায়ের জন্য। কখন বৃষ্টি আসবে .. কখন সে এসে সবকিছু শান্ত করবে! আমিও অপেক্ষায় থাকি আমার মায়ের .. যে তার হাতের পরশে আমার এতদিনের অপেক্ষা আমার এতদিনের চাপা কষ্ট এক মুহূর্তে মুছিয়ে দেবে। অপেক্ষা করতে করতে করতে মায়ের অপেক্ষায় পার করলাম তেরোটা বছর .. তবুও তো সে আমাকে দেখা দিলো না। তুমি কত মানুষকে দেখা দিলে .. অথচ আমাকে একবারটির জন্যেও দেখা দিলে না মা?" কথাগুলো বলতে বলতে হাউ হাউ করে কেঁদে উঠলো গোগোল। তাকে জড়িয়ে ধরে নিজের বুকের কাছে টেনে নিয়ে সান্তনা দিতে লাগলো সুজাতা।
একে একে বিদায় নিলো গোগোলের চার বন্ধু, ধনঙ্গী ভাই এবং কাবেরী দেবী। সুজাতা, ডক্টর দাসগুপ্ত, হিয়া এবং পর্ণা তখনো কেবিনে উপস্থিত ছিলো। "ভদ্রলোকের ফোন নম্বরটা নেওয়া হলো না। এত বড় উপকার করলেন আমাদের। শুধু উপকার কেনো বলছি .. এমন এক মহাজাগতিক ঘটনার সাক্ষী করে গেলেন আমাদের, যেটা আমৃত্যু মনে থাকবে। কাল দুপুরের দিকে আমাদের বাড়িতে লাঞ্চে ইনভাইট করার ইচ্ছে আছে উনাকে। ঠিক আছে পুলিশ স্টেশনে ফোন করে উনার নম্বরটা নিয়ে নিলেই হবে। তুমি কি বলো সুজাতা?" ডক্টর দাশগুপ্তর এই কথায় মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানালো সুজাতা।
ঠিক সেই মুহূর্তে কেবিনের দরজায় টোকা পড়লো। সুবীর গিয়ে দরজাটা খুলে দিতেই পুলিশ ইউনিফর্মে থাকা ইন্সপেক্টর গোস্বামী ভেতরে প্রবেশ করলেন .. তার সঙ্গে থানার মেজবাবু বিকাশ দত্ত। তারপর পর্ণার দিকে তাকিয়ে বললেন, "হুঁ .. তাহলে আমরা ঠিক জায়গাতেই এসেছি। আপনি তো আচ্ছা বেয়াক্কেলে মেয়ে দেখছি! সেই যে তখন নিজের ওয়ার্ড থেকে বেরিয়ে উপরে উঠে এলেন .. কোথায় যাচ্ছেন, কখন ফিরবেন .. একটা খবর দেওয়ার পর্যন্ত প্রয়োজন বোধ করেননি? পুলিশের অনুমতি ছাড়া এইভাবে যেখানে সেখানে চলে যাওয়া যায় না। আপনি এখনো পুরোপুরি সুস্থ হন নি, তাছাড়া আপনার স্টেটমেন্ট রেকর্ড করা হয়নি এখনো পুলিশের। প্লিজ, কাইন্ডলি নিচে আসুন ম্যাডাম।"
ইন্সপেক্টর গোস্বামীর মুখে কথাগুলো শুনে ঘরে উপস্থিত প্রত্যেকটি মানুষ অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো তার দিকে। "কিন্তু আপনাদের ডিপার্টমেন্টের একজন .. মানে আমি সন্দীপ সেনগুপ্তর কথা বলছি .. তিনি তো .. আচ্ছা উনার ফোন নম্বরটা কি পাওয়া যাবে?" জিজ্ঞাসা করলেন ডক্টর দাসগুপ্ত।
"আপনারা ওনাকে চিনলেন কি করে? হ্যাঁ, উনি কলকাতা থেকে একটি বিশেষ দায়িত্ব নিয়ে নিষিদ্ধ ড্রাগ এবং জাল ওষুধ প্রস্তুতকারী সংস্থার কেসটা সলভ করতে আমাদের এখানে আই মিন গঙ্গানগরে এসেছিলেন। অদ্ভুত ক্ষমতা লোকটির মশাই। যেখানে আমরা এতদিনেও বাস টার্মিনাসে ধরা পড়া লোকটির পেট থেকে একটা কথাও বার করতে পারিনি। সেখানে উনি .. কি আর বলবো আপনাদের .. উপরমহল থেকে ওনাকে এই কেসটা সলভ করার জন্য আটচল্লিশ ঘন্টার সময় দেওয়া হয়েছিলো ঠিকই। কিন্তু উনি কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ওই লোকটাকে ইন্টারোগেশন করে সমস্ত কথা বার করে নেয়। কিন্তু কথায় বলে .. ভগবান ভালো মানুষদের বেশিদিন এই পৃথিবীতে রাখে না। তাই বলে এরকম একটা মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে যাবে, তাও আবার আমাদের এখানে এসে এত দ্রুত একটা বড় কেস সলভ করার পর! এটা আমাদের কাছে শুধু দুঃখের নয়, লজ্জারও বটে।" নিজের স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে কথাগুলো বললেন ইন্সপেক্টর গোস্বামী।
"কি হয়েছে একটু খুলে বলুন তো পুলিশ আঙ্কেল .." ছোটবেলা থেকেই ইন্সপেক্টর গোস্বামীকে দেখে আসছে গোগোল এবং উভয়ের মধ্যে একটা আন্তরিক সম্পর্ক রয়েছে। তাই উনাকে আঙ্কেল বলেই সম্বোধন করে সে।
"সে কি .. তোমরা জানো না? আচ্ছা তার আগে বলো তো, তোমার কি শরীর খারাপ? তুমি হসপিটালে এডমিট হয়েছো কেনো? অবশ্য শরীর খারাপ হওয়াটাই স্বাভাবিক, যা একটা ঝড় বয়ে গেলো তোমাদের উপর দিয়ে। খারাপ লাগে টগরের জন্য।" ইন্সপেক্টর গোস্বামীর এই কথার উত্তরে গোগোল কিছু একটা বলতে যাচ্ছিলো। তাকে ততক্ষণাৎ হাতের ইশারায় থামিয়ে দিয়ে হিয়া বলে উঠলো, "হ্যাঁ, ওর শরীরটা একটু খারাপ হয়েছিলো .. এখন অবশ্য ঠিক আছে। উনিই, আই মিন ইন্সপেক্টর সেনগুপ্তই ওকে ভর্তি করে এখানে। টগর চলে যাওয়ার দিন থেকেই তো উনি আছেন আমাদের সঙ্গে। তবে আপনি ইন্সপেক্টর সন্দীপ সেনগুপ্তর কথা কি যেন বলছিলেন স্যার?"
"আছেন নয় .. ছিলেন বলো মা। গতকাল রাতে নিজের কোয়ার্টারে ফেরার সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছেন ইন্সপেক্টর সন্দীপ সেনগুপ্ত। আমি হান্ডেট পার্সেন্ট সিওর মানিক সামন্তর দল অর্থাৎ রুলিং পার্টির হাইকম্যান্ড থেকে এই কাজ করা হয়েছে। আসলে দুর্নীতির শিকর তো একদম উপর পর্যন্ত পৌছে গেছে। তাই কান টানলে মাথা আসতে পারে .. সেই ভয়ে সরিয়ে দেওয়া হলো সৎ , নির্ভীক , কর্তব্যপরায়ন পুলিশ অফিসারটিকে। তবে আমরা এর শেষ পর্যন্ত দেখে ছাড়বো। ঠিক আছে আপনার এখানে কাজ মিটে গেলে তাড়াতাড়ি নিচে আসুন, আমরা এগোচ্ছি।" শেষ কথাগুলো পর্ণার উদ্দেশ্যে বলে কেবিন থেকে বেরিয়ে গেলেন ইন্সপেক্টর গোস্বামী এবং তার পেছন পেছন মেজবাবু বিকাশ দত্ত।
কিছুক্ষণ স্তম্বিত হয়ে বসে রইলো সবাই। "আমি তাহলে উঠি .." এই বলে উঠে দাঁড়ালো পর্ণা। তৎক্ষণাৎ পর্ণার সামনে এসে তার দুটো হাত ধরে হিয়া মৃদু কন্ঠে বললো "সবকিছুই তো দেখলে, শুনলে এবং অনুধাবন করলে। কি সাঙ্ঘাতিক ঘটনা ঘটে গেলো বা ঘটে চলছিল এতক্ষণ ধরে আমাদের সবার সঙ্গে, সেটা নিশ্চয়ই তুমি বুঝতে পেরেছো। এই নিয়ে এখন বিশ্লেষণ করার সময় আমাদের কারোর নেই। এখন আমাদের দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে হবে এবং প্রথম সিদ্ধান্তটা তোমাকেই নিতে হবে। তবে আমি তোমাকে নিজে থেকে কিছু বলছি না বা কোনো অনুরোধ করছি না। লাটসাহেব আমি মিন তোমার দাদাকে কাল ওখান থেকে সোজা এই হসপিটালে নিয়ে এসেছিলেন ইন্সপেক্টর সেনগুপ্ত। একটা জিনিস লক্ষ্য করলে .. পুলিশ তোমার দাদার সম্পর্কে মার্ডার রিলেটেড একটা কথাও জিজ্ঞাসা করলো না। তোমার দাদার নামে কিন্তু এখনো পর্যন্ত কোনো এফআইআর বা কোনো ডায়েরী হয়নি। বুঝতে পারছো তো আমি কি বলতে চাইছি? এখানে এতক্ষন যা কিছু ঘটলো সেই সম্পর্কে সবকিছু ভুলে যাও। ভেবে নাও এটা একটা দুঃস্বপ্ন ছিলো বা হয়তো সুখের স্বপ্ন। তোমাকে দেখে আমার বুদ্ধিমতী মেয়ে বলেই মনে হয়েছে। তাই নিচে গিয়ে পুলিশকে কি স্টেটমেন্ট দেবে সেটা সম্পূর্ণ তোমার সিদ্ধান্ত।"
তারপর গোগোলকে উদ্দেশ্য করে বললো "কে বলেছে তোমার মা তোমাকে দেখা দেননি? উনি ইন্সপেক্টর সেনগুপ্তর রূপ ধরে এসে তোমাকে বাঁচিয়ে দিয়ে গেলেন .. এটাও বুঝতে পারোনি বকুরাম? তবে এই কথাগুলো শুধুমাত্র আমাদের এই চারজনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকুক। এর বাইরে যেন কেউ না জানে এমনকি আমার মাও নয়।"
"চিন্তা নেই, একটা কথাও বলবো না পুলিশকে। আলম সাহেবের মতো আমিও অজ্ঞান হয়ে গেছিলাম, তাই কিছুই দেখিনি .. শুধু এইটুকুই বলবো। তবে এই কথাগুলো আমাকে না বললেও চলতো হিয়া, নাকি বৌদি বলবো? খুব তাড়াতাড়ি তোমাদের বিয়ের খবরটা শুনতে চাই কিন্তু। অনেক তো সংগ্রাম হলো, এবার একটু সুখের মুখ দেখো তোমরা। বেস্ট অফ লাক .. চললাম .." বিদায় নিলো পর্ণা।
★★★★
একে একে সবাই বিদায় নিলো। বদ্ধ কেবিনে বন্দী হয়ে রয়ে গেলো শুধুমাত্র গোগোল আর হিয়া। এক সময় নিবিড় আলিঙ্গনে বদ্ধ হলো দুজনে।
"আমার মনের জিজ্ঞাসা, আমার মনের ব্যথা বেদনা আমারই থাক। বৃষ্টিগুলো আমার চোখ দিয়েই ঝরুক। ঝর্ণার জল শুধু আমার হৃদয় দিয়েই নির্গত হোক। অশান্ত সমুদ্রের ঢেউ উঠলে আমার মনেই উঠুক। আর সেই অজানা ঠিকানাহীন ঢেউয়ে শুধু আমিই ভেসে যেতে চাই। আমার এই কষ্টের সঙ্গী করতে চাইনা কাউকে। চোখ দিয়ে ঝরা জলের মূল্য যে কতো, তা হয়তো বা কোনোদিন কল্পনাও করতে পারবে না আমি। তাই চাইনা এই নিয়ে ভেবে আমার প্রিয়তমার মাথার উপর পুরো আকাশটাই ভেঙ্গে পড়ুক, মেঘে ঢেকে চোখ দুটি অন্ধ হোক। আমার প্রিয়তমার জন্য সুখের নরম ছোঁয়ায় তার হৃদয়ে আবেগের ঝর্ণা ঝরে পড়ুক। হিয়ার মুখে চাঁদের হাসিতে চারিদিকে আলোকিত হোক। কারণ আমি যে তাকে বড্ড ভালোবাসি। তাই সর্বদা তার হৃদয়ে আনন্দের বন্যা দেখতে চাই। সেই নিয়ন্ত্রণহীন বন্যায় তার সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ুক ভালোবাসার ছোঁয়া। পাখিদের গানে গানে মনটা আনন্দে ভরে উঠুক হিয়ার। হাসনাহেনার গন্ধে তার চারিপাশ শুভাসিত হোক। জ্যোৎস্না রাতের আলোতে হিয়ার চোখ দু’টি পুলকিত হয়ে উঠুক।" অস্ফুটে বলে উঠলো গোগোল।
সেই কবে থেকে মনের গভীরে আগ্নেয়গিরির জলন্ত লাভা ঢেলে সহাবস্থান করেছে গোগোল। মননে আগ্নেয়াস্ত্রের ভান্ডার মজুদ রেখেছে। তবুও তার অন্তরে গোমতীর কোনো ধারা বাহিত হয়নি এতদিন। ধরাধামে বিজয়া দশমী পালিত হয়েছে প্রতিনিয়ত। প্রতিশোধের জ্বলন্ত চোখেও শিশির ভেজা স্বপ্ন দেখেছে সে। যে স্বপ্ন কখনো না পেরেছে হৃদয়ে গজিয়ে ওঠা ঘা শুকিয়ে দিতে, না পেরেছে জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে সবকিছু শেষ করে দিতে। গোলকধাঁধায় পরে রয়েছে তার মন, দেহ আর রোজনামচার ভঙ্গিমা। কখনো মানবতা রক্ষা, আবার কখনো সরীসৃপ হয়ে সমতল দেওয়ালের উপরে উঠে দাঁড়িয়ে পরা। অথচ আজ প্রমাণিত সবই তো ছিলো তার কল্পনা প্রসূত। কখন যে সমাপ্ত সঙ্গীতের সূচনা হবে তাও সে জানেনা। চারিপাশের এত শুভাকাঙ্ক্ষী থাকা সত্ত্বেও, এমনকি তার মনের মানুষ হিয়ার উপস্থিতিতেও পালহীন নৌকা নিয়ে নদীতে দাঁড়িয়ে একা সে।
যদিও কখনো ঘটে যাওয়া এই ঘটনাগুলির উপসংহারের দ্বিধাদ্বন্দ্ব পেরিয়ে আবার সে এগিয়ে যেতে পারে, তাহলে হয়তো চলার পথের শত শত ক্যাকটাস পেরিয়ে, ব্যর্থতার হাতছানি এড়িয়ে সাফল্যের চাবিকাঠি আসবে তার হাতে। প্রেম-ভালবাসা, বিবাহ এবং পরবর্তীতে সন্তান .. এই সবকিছুই তো জীবনের অঙ্গ। তাই যতদিন সে বেঁচে থাকবে, ততদিন তাকে জীবনের রঙ্গমঞ্চের এই নাটক চালিয়ে যেতে হবে। তারপর একদিন যখন আগ্নেয়গিরি ঠান্ডা হয়ে যাবে .. শান্ত হয়ে যাবে এই মনের ব্যাকুলতা, সেইদিন হয়তো মুক্তি পাবে আমাদের গোগোল এই গোলকধাঁধা থেকে।
•• অন্তিম খণ্ডের সমাপ্তি ••
|| পাঠক বন্ধুদের উদ্দেশ্যে ||
এতদিন তোমরা আমার এই উপন্যাসের পাশে থেকেছো
হয়তো কেউ কেউ আমাকে ভালোবেসেছো
আবার হয়তো কেউ কেউ ঘৃণা করেছো
শুধু একটাই অনুরোধ .. আমাকে ভুলে যেওনা কখনো
The following 14 users Like Bumba_1's post:14 users Like Bumba_1's post
• Ahid3, Baban, Bichitro, Boti babu, Chandan, ddey333, Mampi, Monen2000, nextpage, Rinkp219, Sanjay Sen, scentof2019, Somnaath, মহাবীর্য্য দেবশর্ম্মা
Posts: 928
Threads: 9
Likes Received: 1,806 in 406 posts
Likes Given: 939
Joined: Sep 2021
Reputation:
618
শেষ পর্যন্ত ভূত নিয়ে এলে?
তবে পুরো জার্নিটা দারুণ হয়েছে।
I'm the King of Dark
&
I rule over all Devils
Posts: 4,428
Threads: 6
Likes Received: 9,218 in 2,849 posts
Likes Given: 4,330
Joined: Oct 2019
Reputation:
3,225
(06-02-2023, 09:32 PM)Monen2000 Wrote: শেষ পর্যন্ত ভূত নিয়ে এলে?
তবে পুরো জার্নিটা দারুণ হয়েছে।
ভূত তোমার তাই মনে হলো? যাই হোক, প্রায় শুরু থেকে এই উপন্যাসের সঙ্গে থাকার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ।
Posts: 6,108
Threads: 41
Likes Received: 12,075 in 4,138 posts
Likes Given: 5,306
Joined: Jul 2019
Reputation:
3,734
আমি...... আমি ঠিক কি বলবো বুঝতে পারছিনা। মানে কোথা থেকে কোথায় চলে গেলো এই কাহিনী!! লৌকিক আর অলৌকিক এর মাঝের দরজা হালকা ফাঁক করে রেখে যে খেলা তুমি খেললে সেটা দেখে অবাক হয়ে যাচ্ছি। বাস্তব সত্যিই অদ্ভুত। তার থেকে অদ্ভুত কল্পনা হতেই পারেনা। কারণ তারও বোধহয় একটা সীমা আছে। আর সেই সীমায় বাঁধা থেকেই কলম যা সব সৃষ্টি করে গেলো একের পর এক এই গসিপির পাতায় তা ব্যাখ্যাহীন। দারুন ফাটাফাটি চরম এসব কিছুই বলবোনা আমি। এসবের উর্ধে চলে গেছে এটি।
আমি জানিনা শেষ পর্বতে এসে এমন একটা ক্লাইম্যাক্স হজম করতে কারো কারো কষ্ট হবে কিনা কিন্তু আমি মন প্রাণ থেকে চাইছিলাম যেন ওই বাচ্চা ছেলেটা একটা ভবিষ্যত পাক। আজকের গোগোলকে আমরা কতটা ঠিক চিনেছি নাকি বেঠিক আমি আর জানতে চাইনা কিন্তু সেই ছোট্ট গোগোল অনেক কিছু দেখে ফেলেছে ওই বয়সে আর না। এবার একটু মাথা শান্ত করে নতুন করে বাঁচার সুযোগ পাক। হৃদপিন্ড একটা মাংসপিন্ড হলেও তার ভিতরের স্পন্দন অমূল্য। সেই স্পন্দনে মিশে যাক লাল আবিরে মাখা কঠিন ভালোবাসা। আজ আর কারোর ওপর রাগ নয়, আজ শুধুই শান্তি আর শান্তি।
আর সেই সে ফিরে এসে যা সব করে গেলো তা বোধহয় একটা সতর্ক বার্তা পৌঁছে দিলো সকলের মাঝে। অন্তরের অসুরকে নিজের মধ্যেই আটকে রাখার চেষ্টা কোরো। যদি সেই শক্তি মুক্তি পেয়ে বেরিয়ে এসে বিকৃত কামনা চরিতার্থ করে তবে বাস্তব ও সময় একত্রিত হয়ে মহান শক্তিকে জাগিয়ে তুলবে আর আবারো সে ফিরে আসবে সকলের হয়ে প্রতিশোধ নিতে। তাই সাবধান!!
Posts: 412
Threads: 3
Likes Received: 806 in 347 posts
Likes Given: 566
Joined: Oct 2022
Reputation:
284
ঠিক বুঝিতে পারিতেছি না কী লিখিব। অনবদ্য ভাবে শেষ হইল গোলকধাঁধায় গোগোল নামের এই মহাপোন্যাস। বলিতে গেলে একটি মহাখণ্ড তাহার চক্র সম্পূর্ণ করিল। অরুন্ধতী দেবীর দেবীরূপে আগমণ হইতেও বড় ঝটকা ইন্সপেক্টর সেনগুপ্তের বিদেহী হইয়া যাওয়ায়। কিন্তু দুরাত্মা কামরাজের অন্তিম মুহূর্তের কথা শুনিবার সময়ও কেন জানি ওই পাষণ্ডের প্রতি বিন্দুমাত্র করুণা হয় নাই।
মিলনে সমাপ্তি আসিল ইহা সবচাইতে বড় পাওনা। কেন জানি ভয় হইতে ছিল বিরহ না আসে শেষ মুহূর্তের ট্যুইস্ট আনিতে তাহা আসে নাই দেখিয়া হাঁফ ছাড়িয়া বাঁচিলাম। পর্ণার বক্তব্যের বয়ান বেশ সুন্দর লাগিল। সে যে বাস্তবিক অলৌকিক কিছু দেখিয়াছে তাহা বেশ সুন্দরভাবে বুঝাইয়াছে।
আরেকটি বেশ মন কাড়িল গোগোলের শেষের মানসিকতা। সে যদি অনায়াসে ফিরিত অতি নাটকীয় হইত তাহা হয় নাই। ভাষার বুনোট লইয়া বলার কিছু নাই, শব্দ চয়নে অনবদ্য মুন্সীয়ানা প্রতিবারের মত এই পর্ব্বেও রহিয়াছে। সব মিলিয়া আমার মনের মতই ইতি যবনিকা পড়িয়াছে।
গসিপিতে বহু অনন্য কাহিনীর নির্ম্মাণ ঘটিয়াছে, ভবিষ্যতে বহু কাহিনীর নির্ম্মাণ ঘটিবে। কিছু নির্ম্মিত হইবে অখাদ্য কিছু অনবদ্য হিসাবে আর দুয়েকটা হইবে অনন্য! এই কাহিনী সেই অনন্যতার বৃত্ত স্পর্শ করিয়া দিল। আমি জানি নাই সম্ভব নহে কী না কিন্তু যদি এক্সট্রিমের মত একটা আলাদা হল অব্ ফেম বলিয়া বিভাগ খোলা হয় এবং তাহাতে যে সমস্ত কাহিনী এই অনন্য হওয়ার নজির স্পর্শ করে তাঁহাদের ঠাঁই হইবে তো দূর্দান্ত হয়। কোনদিন এই উপন্যাস গুলি হারাইয়া যাইবে না। এই মহাবীর্য্যের মত যে যত পরেই গসিপিতে আসুক সে এক লহমায় গোলোকধাঁধায় ঢুকিয়া যাইবে। পড়িবে গোগোল হিয়ার যাত্রা, মাণিক সামন্তের পাষন্ডতা, কামরাজের ভয়ঙ্করতা। আর ভাবিবে যে একজন বুম্বা নামের সে কী সৃষ্টিই না করিয়াছে। তাহার মসী খুব ঘষিত আর তাহাতে প্রতিটা লাইন জীবনকে স্পর্শ করিয়া মরমে পশিত। ধন্যবাদ হে লেখক এই অধমকে এমন কাহিনী পড়িবার সৌভাগ্য দিবা নিমিত্ত। তোমার সৃষ্টি অমর তুমি মহান বুম্বা তুমি মহান।
Posts: 4,428
Threads: 6
Likes Received: 9,218 in 2,849 posts
Likes Given: 4,330
Joined: Oct 2019
Reputation:
3,225
(06-02-2023, 09:41 PM)Baban Wrote: আমি...... আমি ঠিক কি বলবো বুঝতে পারছিনা। মানে কোথা থেকে কোথায় চলে গেলো এই কাহিনী!! লৌকিক আর অলৌকিক এর মাঝের দরজা হালকা ফাঁক করে রেখে যে খেলা তুমি খেললে সেটা দেখে অবাক হয়ে যাচ্ছি। বাস্তব সত্যিই অদ্ভুত। তার থেকে অদ্ভুত কল্পনা হতেই পারেনা। কারণ তারও বোধহয় একটা সীমা আছে। আর সেই সীমায় বাঁধা থেকেই কলম যা সব সৃষ্টি করে গেলো একের পর এক এই গসিপির পাতায় তা ব্যাখ্যাহীন। দারুন ফাটাফাটি চরম এসব কিছুই বলবোনা আমি। এসবের উর্ধে চলে গেছে এটি।
আমি জানিনা শেষ পর্বতে এসে এমন একটা ক্লাইম্যাক্স হজম করতে কারো কারো কষ্ট হবে কিনা কিন্তু আমি মন প্রাণ থেকে চাইছিলাম যেন ওই বাচ্চা ছেলেটা একটা ভবিষ্যত পাক। আজকের গোগোলকে আমরা কতটা ঠিক চিনেছি নাকি বেঠিক আমি আর জানতে চাইনা কিন্তু সেই ছোট্ট গোগোল অনেক কিছু দেখে ফেলেছে ওই বয়সে আর না। এবার একটু মাথা শান্ত করে নতুন করে বাঁচার সুযোগ পাক। হৃদপিন্ড একটা মাংসপিন্ড হলেও তার ভিতরের স্পন্দন অমূল্য। সেই স্পন্দনে মিশে যাক লাল আবিরে মাখা কঠিন ভালোবাসা। আজ আর কারোর ওপর রাগ নয়, আজ শুধুই শান্তি আর শান্তি।
আর সেই সে ফিরে এসে যা সব করে গেলো তা বোধহয় একটা সতর্ক বার্তা পৌঁছে দিলো সকলের মাঝে। অন্তরের অসুরকে নিজের মধ্যেই আটকে রাখার চেষ্টা কোরো। যদি সেই শক্তি মুক্তি পেয়ে বেরিয়ে এসে বিকৃত কামনা চরিতার্থ করে তবে বাস্তব ও সময় একত্রিত হয়ে মহান শক্তিকে জাগিয়ে তুলবে আর আবারো সে ফিরে আসবে সকলের হয়ে প্রতিশোধ নিতে। তাই সাবধান!!
কত রাত স্বপ্ন দেখা হয়নি গোগোলের
কত রাত চাঁদ ওঠেনি সিন্ধু পারে
স্মৃতির শহর নৌকো বেয়ে ভেসে গিয়ে
দেখা হয়নি তোমার সাথে।
রঙ পেনসিল আর বৃষ্টির গুঁড়ো
আঁকেনি তোমার মুখ
কতদিন আলোয় ফেরা হয়নি আমাদের গোগোলের
Posts: 4,428
Threads: 6
Likes Received: 9,218 in 2,849 posts
Likes Given: 4,330
Joined: Oct 2019
Reputation:
3,225
(06-02-2023, 09:48 PM)মহাবীর্য্য দেবশর্ম্মা Wrote: ঠিক বুঝিতে পারিতেছি না কী লিখিব। অনবদ্য ভাবে শেষ হইল গোলকধাঁধায় গোগোল নামের এই মহাপোন্যাস। বলিতে গেলে একটি মহাখণ্ড তাহার চক্র সম্পূর্ণ করিল। অরুন্ধতী দেবীর দেবীরূপে আগমণ হইতেও বড় ঝটকা ইন্সপেক্টর সেনগুপ্তের বিদেহী হইয়া যাওয়ায়। কিন্তু দুরাত্মা কামরাজের অন্তিম মুহূর্তের কথা শুনিবার সময়ও কেন জানি ওই পাষণ্ডের প্রতি বিন্দুমাত্র করুণা হয় নাই।
মিলনে সমাপ্তি আসিল ইহা সবচাইতে বড় পাওনা। কেন জানি ভয় হইতে ছিল বিরহ না আসে শেষ মুহূর্তের ট্যুইস্ট আনিতে তাহা আসে নাই দেখিয়া হাঁফ ছাড়িয়া বাঁচিলাম। পর্ণার বক্তব্যের বয়ান বেশ সুন্দর লাগিল। সে যে বাস্তবিক অলৌকিক কিছু দেখিয়াছে তাহা বেশ সুন্দরভাবে বুঝাইয়াছে।
আরেকটি বেশ মন কাড়িল গোগোলের শেষের মানসিকতা। সে যদি অনায়াসে ফিরিত অতি নাটকীয় হইত তাহা হয় নাই। ভাষার বুনোট লইয়া বলার কিছু নাই, শব্দ চয়নে অনবদ্য মুন্সীয়ানা প্রতিবারের মত এই পর্ব্বেও রহিয়াছে। সব মিলিয়া আমার মনের মতই ইতি যবনিকা পড়িয়াছে।
গসিপিতে বহু অনন্য কাহিনীর নির্ম্মাণ ঘটিয়াছে, ভবিষ্যতে বহু কাহিনীর নির্ম্মাণ ঘটিবে। কিছু নির্ম্মিত হইবে অখাদ্য কিছু অনবদ্য হিসাবে আর দুয়েকটা হইবে অনন্য! এই কাহিনী সেই অনন্যতার বৃত্ত স্পর্শ করিয়া দিল। আমি জানি নাই সম্ভব নহে কী না কিন্তু যদি এক্সট্রিমের মত একটা আলাদা হল অব্ ফেম বলিয়া বিভাগ খোলা হয় এবং তাহাতে যে সমস্ত কাহিনী এই অনন্য হওয়ার নজির স্পর্শ করে তাঁহাদের ঠাঁই হইবে তো দূর্দান্ত হয়। কোনদিন এই উপন্যাস গুলি হারাইয়া যাইবে না। এই মহাবীর্য্যের মত যে যত পরেই গসিপিতে আসুক সে এক লহমায় গোলোকধাঁধায় ঢুকিয়া যাইবে। পড়িবে গোগোল হিয়ার যাত্রা, মাণিক সামন্তের পাষন্ডতা, কামরাজের ভয়ঙ্করতা। আর ভাবিবে যে একজন বুম্বা নামের সে কী সৃষ্টিই না করিয়াছে। তাহার মসী খুব ঘষিত আর তাহাতে প্রতিটা লাইন জীবনকে স্পর্শ করিয়া মরমে পশিত। ধন্যবাদ হে লেখক এই অধমকে এমন কাহিনী পড়িবার সৌভাগ্য দিবা নিমিত্ত। তোমার সৃষ্টি অমর তুমি মহান বুম্বা তুমি মহান।
সত্যি বলছো? মন থেকে বললে কথাগুলো? আমার মতো একজন সাধারণ মানের লেখকের লেখনী যে তোমার এতটা পছন্দ হয়েছে, তার জন্য আমি যারপরনাই আপ্লুত এবং আনন্দিত। ভালো থেকো
Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,450 in 27,681 posts
Likes Given: 23,741
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,263
একটু তড়িঘড়ি , কিন্তু দারুন লেখা।
আসলে গল্প নয় , গল্পকারের যে অসাধারণ কিছু চিন্তা থাকে তার জন্য ভালো লাগে।
কি বলে প্রশংসা করবো জানিনা , ভাষা হারিয়ে ফেলেছি।
Posts: 6,108
Threads: 41
Likes Received: 12,075 in 4,138 posts
Likes Given: 5,306
Joined: Jul 2019
Reputation:
3,734
(06-02-2023, 10:00 PM)Bumba_1 Wrote: কত রাত স্বপ্ন দেখা হয়নি গোগোলের
কত রাত চাঁদ ওঠেনি সিন্ধু পারে
স্মৃতির শহর নৌকো বেয়ে ভেসে গিয়ে
দেখা হয়নি তোমার সাথে।
রঙ পেনসিল আর বৃষ্টির গুঁড়ো
আঁকেনি তোমার মুখ
কতদিন আলোয় ফেরা হয়নি আমাদের গোগোলের
স্মৃতির অংকে হারিয়ে গিয়ে আজকেও ভাবে যদি না হতো এমন কিছু তবে কেমন হতো? যদি নাই পেতাম অমন বন্ধু কেমন হতো? যদি শুরু থেকেই হাতে পেতাম তোমার হাতখানি তবে কেমন হতো? চিনে নিতে কি পারতাম তোমায় আমার মতো করে? হৃদয় কি জায়গা করে নিতে তুমি স্পন্দন নামে? কে জানে হয়তো এসবের কিছুই হতোনা। হয়তো হতোনা মোদের দেখা যদি না দেখতাম তুফান। সেই তুফান এলোমেলো হয়ে যাওয়া সংসারে ভেসে যাওয়া এক কিশোরের হাত বাড়িয়ে শেষ বাঁচার চেষ্টা আর হাত বাড়িয়ে তাকে বুকে টেনে নেওয়া জননীর সাথে যদি না হতো পরিচয়? যদি না চিনতাম এই দুনিয়া কেমন হতো? সাদা কালোর বাইরেও যদি সবুজ চিনতাম তবে কেমন হতো? আশ্চর্য দেখো আবারো এর মাঝে লাল রঙ ছিটকে এসে লাগলো এ মুখে। আবারো মুছে ফেলতে হবে এটা। যদি কেউ দেখে ফেলে!!
Posts: 4,428
Threads: 6
Likes Received: 9,218 in 2,849 posts
Likes Given: 4,330
Joined: Oct 2019
Reputation:
3,225
(06-02-2023, 10:09 PM)ddey333 Wrote: একটু তড়িঘড়ি , কিন্তু দারুন লেখা।
আসলে গল্প নয় , গল্পকারের যে অসাধারণ কিছু চিন্তা থাকে তার জন্য ভালো লাগে।
কি বলে প্রশংসা করবো জানিনা , ভাষা হারিয়ে ফেলেছি।
কথাটা একদম ঠিক বলেছো .. একটু তড়িঘড়ি করে ফেলেছি বৈকি। আসলে শারীরিক কারণে উপন্যাসটা শেষ করার জন্য বড়ই ব্যাকুল হয়ে উঠেছিলাম। তবে তোমাদের সকলের যে পছন্দ হয়েছে .. তাতেই আমি খুশি।
Posts: 4,428
Threads: 6
Likes Received: 9,218 in 2,849 posts
Likes Given: 4,330
Joined: Oct 2019
Reputation:
3,225
(06-02-2023, 10:16 PM)Baban Wrote: স্মৃতির অংকে হারিয়ে গিয়ে আজকেও ভাবে যদি না হতো এমন কিছু তবে কেমন হতো? যদি নাই পেতাম অমন বন্ধু কেমন হতো? যদি শুরু থেকেই হাতে পেতাম তোমার হাতখানি তবে কেমন হতো? চিনে নিতে কি পারতাম তোমায় আমার মতো করে? হৃদয় কি জায়গা করে নিতে তুমি স্পন্দন নামে? কে জানে হয়তো এসবের কিছুই হতোনা। হয়তো হতোনা মোদের দেখা যদি না দেখতাম তুফান। সেই তুফান এলোমেলো হয়ে যাওয়া সংসারে ভেসে যাওয়া এক কিশোরের হাত বাড়িয়ে শেষ বাঁচার চেষ্টা আর হাত বাড়িয়ে তাকে বুকে টেনে নেওয়া জননীর সাথে যদি না হতো পরিচয়? যদি না চিনতাম এই দুনিয়া কেমন হতো? সাদা কালোর বাইরেও যদি সবুজ চিনতাম তবে কেমন হতো? আশ্চর্য দেখো আবারো এর মাঝে লাল রঙ ছিটকে এসে লাগলো এ মুখে। আবারো মুছে ফেলতে হবে এটা। যদি কেউ দেখে ফেলে!!
বাহ্ বাহ্ .. কেয়া বাত হ্যায় .. রুলায়েগা কেয়া
•
Posts: 412
Threads: 3
Likes Received: 806 in 347 posts
Likes Given: 566
Joined: Oct 2022
Reputation:
284
06-02-2023, 10:36 PM
(This post was last modified: 06-02-2023, 10:39 PM by মহাবীর্য্য দেবশর্ম্মা. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
(06-02-2023, 10:01 PM)Bumba_1 Wrote:
সত্যি বলছো? মন থেকে বললে কথাগুলো? আমার মতো একজন সাধারণ মানের লেখকের লেখনী যে তোমার এতটা পছন্দ হয়েছে, তার জন্য আমি যারপরনাই আপ্লুত এবং আনন্দিত। ভালো থেকো
একদম মন থেকে বললাম। তুমি কিন্তু সাধারণ নও। তোমার লেখনী সাধারণ নয়। এটা মহাবীর্য্য হয়েও আর মহাবীর্য্য না হয়েও আমি বহুবার তোমায় বলেছি। আমার লিখবার দৌড় তেমন নেই কিন্তু পড়বার দম আছে তাই কার লেখনী ক্ষমতা কতোটা সেটা আমি ঠিকই টের পাই। মহাবীর্য্যের কথা বিশ্বাস করতে না তাই কিছুক্ষণের জন্য তাকে বিদায় দিয়ে এলাম। মন থেকেই বলছি এটা আমার পড়া সেরা উপন্যাসগুলোর একটা এটা শুধু গসিপি মিলিয়ে না, সব মিলিয়েই। কার এই শেষের জায়গা কেমন লাগবে জানি না তবে আমার ভালো লেগেছে। তাই,
হে বুম্বা! তুমি নিশ্চিন্ত থাক এই যুদ্ধে তুমি বিজয়ী আর তোমার কলমও বিজয়ী হইয়াছে। মহাবীর্য্যকে তুমি এক অসাধারণ কাহিনী উপহার দিয়াছ। আমি ধন্য তোমার গোলকধাঁধায় আসিয়া, তোমার এই কাহিনীর ক্ষণগুলিতে সমাহিত হইয়া, প্রতিটি চরিত্রের সহিত মিলিয়া মিশিয়া। আমি গৌরবান্বিত তোমার এই মহাসফরের সঙ্গী হইয়া। আমি মহিমান্বিত তোমার এই জীবনচক্রের অনবদ্য সমাপনে। তাই সহস্র সহস্র ধন্যবাদ এই ',কে তোমার এই অনুপম কাহিনী পাঠ করিবার সৌভাগ্য প্রদান করিবার নিমিত্ত। আজ তুমি জয়ী হইয়াছ! জয়ী হইয়াছে সকল শুভ শক্তিরা! জয় হইয়াছে সেই সমস্ত বর্তমান পাঠককুলের! জয় হইবে সেই সমস্ত ভবিষ্যৎ পাঠকবর্গের। তাই এইবার শুইতে যাও। শ্রান্ত দেহকে বিছানায় এলাইয়া একটা শান্তির ঘুম দাও। এক বিজয়ীর ন্যয় মস্তক উঁচু কর। হে জ্যেষ্ঠ তুমি আজ জিতিয়া গেছ!
Posts: 1,158
Threads: 0
Likes Received: 1,385 in 928 posts
Likes Given: 3,576
Joined: Apr 2022
Reputation:
146
দাদা ঠিক মাথায় সব তালগোল পাকিয়ে দিলেন লৌকিক আলৌকিক সব এক জায়গাতে নিয়ে আসলেন। অনেকের ভালো লাগবে শেষটা আবার অনেকের মনে খুঁত খুত করবে শেষ অংশটা পড়ে। আচ্ছা অরুন্ধতী কি কোনও ভাবে সত্যি বেঁচে ছিল। সে জাই হোক যে ভাবে উপন্যাসের ইতি টানলেন তা অনবদ্য। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত একটা রোলারকোস্টারের ভেতর ছিলাম। অসংখ্য অসংখ্য অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই দাদা। আগামীর সুভেচ্ছা রইলো শরীর সুস্থ রাখবে । অফুরন্ত ভালোবাসা রইলো।
এই গল্পের কারনে আমাদের মত পাঠকরাও ইতিহাসের সঙ্গী হয়ে গেলাম। যত দিন মুঠোফোন ইন্টারনেটে চটি উপন্যাসের ব্যবহার করবে প্রজন্মের পর প্রজন্ম ততদিন এই গল্প থাকবে সাথে আমরা যারা পাঠক ছিলাম তারাও ধন্যবাদ দাদা।
আমাকে আমার মত থাকতে দাও
Posts: 907
Threads: 2
Likes Received: 459 in 407 posts
Likes Given: 830
Joined: Jul 2019
Reputation:
7
পুরো উপন্যাসটাই দুর্দান্ত ছিল আর চিরকাল থাকবে ......
10 মাস 15 দিন বা 321 দিন .....দারুন একটা উপন্যাস এর যাত্রা শেষ হল.........
আর একটা এইরকম উপন্যাস উপহার দেওয়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ ........
পরবর্তী উপন্যাসের অপেক্ষায় রইলাম দাদা ....
Posts: 4,428
Threads: 6
Likes Received: 9,218 in 2,849 posts
Likes Given: 4,330
Joined: Oct 2019
Reputation:
3,225
(06-02-2023, 10:36 PM)মহাবীর্য্য দেবশর্ম্মা Wrote: একদম মন থেকে বললাম। তুমি কিন্তু সাধারণ নও। তোমার লেখনী সাধারণ নয়। এটা মহাবীর্য্য হয়েও আর মহাবীর্য্য না হয়েও আমি বহুবার তোমায় বলেছি। আমার লিখবার দৌড় তেমন নেই কিন্তু পড়বার দম আছে তাই কার লেখনী ক্ষমতা কতোটা সেটা আমি ঠিকই টের পাই। মহাবীর্য্যের কথা বিশ্বাস করতে না তাই কিছুক্ষণের জন্য তাকে বিদায় দিয়ে এলাম। মন থেকেই বলছি এটা আমার পড়া সেরা উপন্যাসগুলোর একটা এটা শুধু গসিপি মিলিয়ে না, সব মিলিয়েই। কার এই শেষের জায়গা কেমন লাগবে জানি না তবে আমার ভালো লেগেছে। তাই,
হে বুম্বা! তুমি নিশ্চিন্ত থাক এই যুদ্ধে তুমি বিজয়ী আর তোমার কলমও বিজয়ী হইয়াছে। মহাবীর্য্যকে তুমি এক অসাধারণ কাহিনী উপহার দিয়াছ। আমি ধন্য তোমার গোলকধাঁধায় আসিয়া, তোমার এই কাহিনীর ক্ষণগুলিতে সমাহিত হইয়া, প্রতিটি চরিত্রের সহিত মিলিয়া মিশিয়া। আমি গৌরবান্বিত তোমার এই মহাসফরের সঙ্গী হইয়া। আমি মহিমান্বিত তোমার এই জীবনচক্রের অনবদ্য সমাপনে। তাই সহস্র সহস্র ধন্যবাদ এই ',কে তোমার এই অনুপম কাহিনী পাঠ করিবার সৌভাগ্য প্রদান করিবার নিমিত্ত। আজ তুমি জয়ী হইয়াছ! জয়ী হইয়াছে সকল শুভ শক্তিরা! জয় হইয়াছে সেই সমস্ত বর্তমান পাঠককুলের! জয় হইবে সেই সমস্ত ভবিষ্যৎ পাঠকবর্গের। তাই এইবার শুইতে যাও। শ্রান্ত দেহকে বিছানায় এলাইয়া একটা শান্তির ঘুম দাও। এক বিজয়ীর ন্যয় মস্তক উঁচু কর। হে জ্যেষ্ঠ তুমি আজ জিতিয়া গেছ!
এরকম মন্তব্য পেলে একসময় সত্যিই মনে হয় .. আমার লেখা সার্থক। ভালো থাকো, সুস্থ থাকো এবং অবশ্যই লিখতে থাকো, আর এই ভাবেই সাথে থেকো এবং পাশে থেকো সবসময়।
Posts: 4,428
Threads: 6
Likes Received: 9,218 in 2,849 posts
Likes Given: 4,330
Joined: Oct 2019
Reputation:
3,225
(07-02-2023, 12:27 AM)Boti babu Wrote: দাদা ঠিক মাথায় সব তালগোল পাকিয়ে দিলেন লৌকিক আলৌকিক সব এক জায়গাতে নিয়ে আসলেন। অনেকের ভালো লাগবে শেষটা আবার অনেকের মনে খুঁত খুত করবে শেষ অংশটা পড়ে। আচ্ছা অরুন্ধতী কি কোনও ভাবে সত্যি বেঁচে ছিল। সে জাই হোক যে ভাবে উপন্যাসের ইতি টানলেন তা অনবদ্য। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত একটা রোলারকোস্টারের ভেতর ছিলাম। অসংখ্য অসংখ্য অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই দাদা। আগামীর সুভেচ্ছা রইলো শরীর সুস্থ রাখবে । অফুরন্ত ভালোবাসা রইলো।
এই গল্পের কারনে আমাদের মত পাঠকরাও ইতিহাসের সঙ্গী হয়ে গেলাম। যত দিন মুঠোফোন ইন্টারনেটে চটি উপন্যাসের ব্যবহার করবে প্রজন্মের পর প্রজন্ম ততদিন এই গল্প থাকবে সাথে আমরা যারা পাঠক ছিলাম তারাও ধন্যবাদ দাদা।
যে উপন্যাসের নামকরণে গোলকধাঁধা রয়েছে, সেই উপন্যাসের অন্তিম পর্বের পর পাঠকেরা যে গোলকধাঁধায় জড়িয়ে গিয়ে কোনো সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারবে না, সেটাই তো স্বাভাবিক এবং এটাই আমি চেয়েছিলাম। মজা করলাম, আসল কথা হলো .. এই জগতে ভালো কিছুর বিনাশ হয় না কোনোদিন। তাই অরুন্ধতীরা বারবার ফিরে আসে/আসবে দুষ্টের দমন করার জন্য। কখনো দেবী রূপে সংহার করবে অসুরকূল আবার কখনো মাতৃরূপে অন্য কোনো মাধ্যমে রক্ষা করবে তার সন্তানকে (হিয়ার মন্তব্যটা ভালো করে দেখো)। প্রায় এই উপন্যাসের শুরু থেকে এইভাবে পাশে থাকার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।
Posts: 4,428
Threads: 6
Likes Received: 9,218 in 2,849 posts
Likes Given: 4,330
Joined: Oct 2019
Reputation:
3,225
(07-02-2023, 06:36 AM)Rinkp219 Wrote: পুরো উপন্যাসটাই দুর্দান্ত ছিল আর চিরকাল থাকবে ......
10 মাস 15 দিন বা 321 দিন .....দারুন একটা উপন্যাস এর যাত্রা শেষ হল.........
আর একটা এইরকম উপন্যাস উপহার দেওয়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ ........
পরবর্তী উপন্যাসের অপেক্ষায় রইলাম দাদা ....
এই মন্তব্য পড়ে আপ্লুত এবং আনন্দিত তো হয়েইছি, তার সঙ্গে গর্বিত বোধ করছি এই ভেবে যে, এই উপন্যাস কবে শুরু হয়েছিলো এবং কতদিন ধরে চলেছে তাও আপনার নখদর্পণে। ভালো থাকুন এবং সুস্থ থাকুন।
Posts: 412
Threads: 3
Likes Received: 806 in 347 posts
Likes Given: 566
Joined: Oct 2022
Reputation:
284
গতকাল রেপুটেশন শেষ হইয়া গিয়াছিল। তাই দিতে পারি নাই আজি চরণতলে তাহা নিবেদিত হইল। অনবদ্য কাহিনীর জন্য পুনরায় ধন্যবাদ।
|