Thread Rating:
  • 100 Vote(s) - 2.84 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
WRITER'S SPECIAL "ধূসর পৃথিবী"
এত ভালো একটা আপডেট আর আমার চোখেই পড়েনি এতদিন? এ তো ভীষণ অন্যায়। ক্ষমা করে দিও দাদা। তবে পারস্পরিক কথোপকথনের ঝাঁজ আর একটু বাড়াতে হবে‌ .. তাহলে ব্যাপারটা অতিমাত্রায় দৃষ্টিনন্দন হবে। এত ভালো একটা গল্প শেষ হয়ে যেতে দিও না, লিখতে থাকো।
[+] 2 users Like Bumba_1's post
Like Reply
Do not mention / post any under age /rape content. If found Please use REPORT button.
(24-01-2023, 08:01 PM)Bumba_1 Wrote: এত ভালো একটা আপডেট আর আমার চোখেই পড়েনি এতদিন? এ তো ভীষণ অন্যায়। ক্ষমা করে দিও দাদা। তবে পারস্পরিক কথোপকথনের ঝাঁজ আর একটু বাড়াতে হবে‌ .. তাহলে ব্যাপারটা অতিমাত্রায় দৃষ্টিনন্দন হবে। এত ভালো একটা গল্প শেষ হয়ে যেতে দিও না, লিখতে থাকো।

সাজেশনের জন্য ধন্যবাদ দাদা,
অফিসে প্রচণ্ড কাজের চাপ তাই লেখার সময় হচ্ছে না আর অন্য একটা কারণে কদিন মনটাও খারাপ চলছে তাই লেখা হচ্ছে না‌।
দেখি একটু সময় হোক আপডেট দেবো।  Namaskar thanks
I'm the King of Dark
                &
I rule over all Devils
               devil2 devil2
Like Reply
Kemon acho bhai . Sob kicho thik ache to
horseride আমাকে আমার মত থাকতে দাও horseride
[+] 1 user Likes Boti babu's post
Like Reply
(26-01-2023, 12:23 AM)Boti babu Wrote: Kemon acho bhai . Sob kicho thik ache to

তুমি কেমন আছো?
আমার কাজের প্রচণ্ড চাপ চলছে সাথে একটা অন্য কারনে মনটাও ঠিক নেই।
I'm the King of Dark
                &
I rule over all Devils
               devil2 devil2
Like Reply
(26-01-2023, 08:06 AM)Monen2000 Wrote: একটা অন্য কারনে মনটাও ঠিক নেই।

ব্রেকআপ নাকি
Smile
[+] 1 user Likes ddey333's post
Like Reply
(26-01-2023, 08:59 AM)ddey333 Wrote: ব্রেকআপ নাকি
Smile

না আমার ওসব ঝামেলা নেই আমি সিঙ্গেলদের বেতাজ বাদশা। আমার উসুল আপনা হাত জিন্দাবাদ  Big Grin ।
মনখারাপ অন্য কারনে।
I'm the King of Dark
                &
I rule over all Devils
               devil2 devil2
[+] 1 user Likes Monen2000's post
Like Reply
[Image: Picsart-22-12-06-20-20-08-119.jpg]


                             ৬ষ্ঠ পর্ব

কি বলবে ভেবে পায় না আদিত্য সে ভাবতেও পারেনি যে অদ্রিজা সত্যি সত্যিই সবার সামনে সত্যি কথা বলে দেবে,সবার চোখের দিকে তাকিয়ে দেখে সে স্পষ্টতই সবাই বিরক্ত বিশেষ করে অদ্রিজার বাবা-মা সুবিমল বাবু আর চারুলতা দেবী।
"আদিত্য তুই অদ্রিজাকে জঙ্গলের ভিতরে একা ছেড়ে এসেছিলি?"
উমাদেবীর রাগী স্বরে করা প্রশ্নটার উত্তর দিতে পারে না এর‌ইমাঝে ড্রয়িংরুমে একটা সোফায় হেলান দিয়ে বসা অদ্রিজার ঠোঁটের কোণের বাঁকা হাসিটা চোখ এড়ায় না আদিত্যর, আদিত্য রেগে গেছে অথচ কিছু বলতে বা করতে পারছে না এই জিনিসটায় অদ্রিজা বেশ মজা পেয়েছে।
"কি রে উত্তর দে, অদ্রিজা যা বললো সেটা সত্যি?" আবার প্রশ্ন করেন উমাদেবী, কিন্তু এবারও আদিত্য উত্তর দিতে পারে না,
"মা আসলে আমি.."
"উনি শুনতে পাননি আমার ডাক"
হঠাৎ অদ্রিজা উত্তর দেওয়ার ভঙ্গিতে বলে ওঠে, সবার দৃষ্টি তখন ঘুরে যায় তার দিকে অদ্রিজা বলতে থাকে "আসলে মন্দিরের ভিতরে আমার ভালো লাগছিল না অনেক লোক ছিল তো তাই দম বন্ধ হয়ে আসছিল, একটু খোলা হাওয়ার জন্য বাইরে আসি তখনই একটা পাখির ডাক শুনি ওটাকেই ফলো করতে করতে জঙ্গলের ভিতরে ঢুকে যাই এবং একসময় পথ হারিয়ে ফেলি"
"তারপর?"অদ্রিজা একটু থামতেই প্রীতি জিজ্ঞেস করে।
"হ্যাঁ, তারপর অনেক চেষ্টা করেও পথ খুঁজে পাইনি সেইসময় কিছুটা দূরে ওনাকে যেতে দেখি আমি ওনার নাম ধরে জোরে জোরে ডাকিও কিন্তু উনি শুনতে পাননি তারপর আমি ওনাকে ধরার জন্য দৌড়াতে গিয়ে হোচট খেয়ে পড়ে যাই আর মাথায় লেগে অজ্ঞান হয়ে যাই"।
আদিত্য একটা নিঃশ্বাস ছাড়ে অদ্রিজা তাকে বাঁচিয়েছে যদিও বিপদেও সেই ফেলেছিল। অদ্রিজা থামতেই প্রীতি বলে "সেই বল নাহলে আমার দাদা কাউকে বিপদে ফেলে চলে যেতে পারে না"।
"তবুও বাবু তোর শোনা উচিত ছিল অদ্রিজার ডাক,কিছু একটা হয়ে গেলে?"
"হয়েছে তো আন্টি, দেখুন না পায়ে লেগেছে হাঁটতে পারছি না, কপালেও লেগেছে"
"তাইতো ইসস কতটা কেটে গেছে কপালে, পায়ে এখনো ব্যাথা তাই না মা?"
"হ্যাঁ আন্টি খুব ব্যাথা"
"না এখনই একজন ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়া উচিত" চারুলতা দেবী বললেন।
"ঠিক বলেছো চারু আমারও তাই মত" বান্ধবীকে সমর্থন জানালেন উমাদেবী।
"না আন্টি এখন নয়, এখন আমার খুব ঘুম পাচ্ছে রাতে খুব বাঘের গর্জন শোনা যাচ্ছিল তাই ঠিক ঘুম হয়নি আর তাছাড়া ওষুধ তো লাগানোই আছে"
"ঠিক আছে তাহলে আগে একটু ঘুমিয়ে নাও, অবশ্য হরিদা যখন ওষুধ লাগিয়ে দিয়েছে তখন চিন্তার কিছু নেই"
"বাপি আমি হাঁটতে পারছি না, আমাকে একটু প্রীতির রুমে নিয়ে গিয়ে দিয়ে আসবে?
অদ্রিজার কথা শুনে সুবিমলবাবু কিছু বলতে যাচ্ছিলেন কিন্তু তার আগেই প্রীতি বলে উঠলো "কেন আঙ্কেল কেন দাদা আছে তো আঙ্কেল কি ওকে কোলে তুলতে পারবেন নাকি তারপর কোমরে লেগে গেলে তখন আবার চারু আন্টি বকাবকি করবেন"।
"উমা তোমার মেয়ে কিন্তু বড্ড ফাজিল হয়ে যাচ্ছে" প্রীতির কথার খোঁচাটা শুনে চারুলতা দেবী একটু লজ্জা পেয়েছেন সেটা বোঝা যাচ্ছে, উমাদেবী তার কথার উত্তর না দিয়ে ছেলেকে হুকুম করলেন 'আদিত্য যাও ওকে নিয়ে যাও'
"মা, আমি.."
"তুমি যদি জঙ্গলের ভিতরে একটু কান খোলা রেখে হাঁটতে তাহলে হয়তো অদ্রিজার ডাকটা শুনতে পেতে আর তাহলে ওর এই অবস্থা হতো না, ওর এই অবস্থার জন্য তুমিও একপ্রকার দায়ী ধরে নাও এটা তোমার শাস্তি"
বাধ্য হয়েই আদিত্য আর কোনো কথা না বলে আবার অদ্রিজাকে কোলে তুলে নিল এবং সিঁড়ির দিয়ে উপরে উঠতে থাকে যদিও রাগে তার মুখ থমথমে হয়ে গেছে এবং সেটা যে অদ্রিজাকে বেশ মজা দিয়েছে সেটা ওর মুখের হাসিতেই স্পষ্ট, আদিত্যর এই রাগটা সে বেশ উপভোগ করছে।
"আপনার কিন্তু এখন আমাকে সরি এবং থ্যাংকস দুটোই বলা উচিত"
উপরে উঠে আদিত্য অদ্রিজাকে প্রীতির বিছানায় শুইয়ে দিয়ে বেরিয়ে আসছিল তখনই অদ্রিজা কথাটা বললো।
"আপনাকে বলবো সরি সাথে আবার থ্যাংকস, কোন দুঃখে?"
"এই যে নীচে আপনাকে সবার হাত থেকে বাঁচালাম তার জন্য থ্যাংকস আর জঙ্গলে আমাকে ছেড়ে আসার জন্য সরি"
"স্বপ্ন দেখুন, জঙ্গলে আপনি গিয়েছিলেন আমি নিয়ে যাইনি আর নীচেও আমার নামটা আপনি বলেছেন"
"তাতে কি হয়েছে বাঁচালাম‌ও তো আমিই"
"ফাঁসিয়েছিলেন‌ও আপনি"
"তাতে কি?"
"আপনি  আমার গায়ে হাত তুলেছিলেন ইচ্ছে করছে আপনাকে বাদশার সামনে ফেলে দি‌ই"
"বেশ করেছি তার জন্য কি এখন চুমু দিতে হবে নাকি?, আপনিও তো আমাকে জঙ্গলের ভিতরে একা ছেড়ে এসেছিলেন"
"আপনার লজ্জা করছে না এসব বলতে?"
"লজ্জা কেন? চুমুর কথায়,? আপনি কচি খোকা নাকি যে লজ্জা পাচ্ছেন?"
"আপনি অত্যন্ত নির্লজ্জ মেয়ে"
"আর আপনি বড্ড অহংকারী আর ইগোইস্টিক"
"আপনাকে সাবধান করছি নেক্সট টাইম ভুলেও আমার গায়ে হাত দেবেন না, নাহলে তার ফল ভালো হবে না"
"আন্টি যদি জানতে পারে যে আপনি আমাকে এই কথা বলেছেন তাহলে কি হবে ভেবে দেখেছেন?"
"ভয় দেখাচ্ছেন?"
"আদিত্য সিংহ রায় আবার ভয়‌ও পায়?"
"ঘুম পাচ্ছে বলছিলেন না ঘুমিয়ে পড়ুন"
"আগে সরি আর থ্যাংকস বলুন, আমিও নাহয় দুটো থাপ্পড়ের বদলে আপনার দুগালে দুটো চুমু দিয়ে দেবো নিন এবার বলুন"
"কক্ষনো না"
"আন্টিকে ডাকবো? আ."
"আপনাকে আমি."
অদ্রিজা সত্যি সত্যিই চিৎকার করতে যাচ্ছিল কিন্তু পারলো না কারন তৎক্ষণাৎ আদিত্য ওর মুখ চেপে ধরেছে, তারপর মুখের কথাটাকে পাল্টিয়ে বললো "আপনাকে আবার সাবধান করছি আমাকে বেশি রাগাবেন না সেটা আপনার জন্যই ভালো হবে"।
কথাটা বলে আদিত্য অদ্রিজার মুখ ছেড়ে আর দাঁড়ালো না ঘর থেকে বেরিয়ে গেল,পিছন থেকে অদ্রিজা অস্ফুটস্বরে বললো "না রাগালে তো তুমি কথাই বলতে চাও না, ফিরেও তাকাও না আমার দিকে, তোমাকে মারতে চাইনি তুমি আমাকে একা জঙ্গলে ছেড়ে আসায় রাগ হয়েছিল তাই করে ফেলেছি"। যদিও এইকথা আদিত্যর কানে যায়নি এটা নিশ্চিত।
সময় প্রবাহমান সবসময় বয়েই চলে অদ্রিজা আর আদিত্যর ওই ঘটনার বেশ কয়েকদিন কেটে গেছে অদ্রিজা এখন সম্পূর্ণ সুস্থ, অবশ্য এইকদিন ও সিংহ রায় প্যালেসেই ছিল এবং উমাদেবীর আদেশে অদ্রিজাকে চেকআপ করাতে নিয়ে যাওয়া থেকে শুরু করে এক্স-রে করানো সবকিছুতেই আদিত্যকে যেতে হয়েছে মায়ের মুখের উপর মানা করতে পারেনি একটু গাঁইগুঁই করছিল কিন্তু শেষ পর্যন্ত যেতেই হয়েছে। এটা আলাদা কথা যে অদ্রিজার পায়ের এক্স-রে রিপোর্টেও তেমন কিছু আসেনি,এখন সে সুস্থ তাই আদিত্য‌ও দায়িত্বমুক্ত।
"স্মোকিং ইজ ইঞ্জুরিয়াস টু হেলথ, শোনেননি?"
মেয়েলি কণ্ঠে কথাটা শুনে সিগারেটটা না ধরিয়ে থেমে গেল আদিত্য পিছনে ফিরে দেখে বছর ছাব্বিশের এক যুবতী দাঁড়িয়ে আছে সেই কথাটা বলেছে পরনে সাদা শার্টের উপরে কালো কোট আর কালো ট্রাউজারস্, পায়ে কালো বুট বোঝাই যাচ্ছে যুবতী উকিল।
অতীন্দ্র বাবুর সাথে কোর্টে এসেছে আদিত্য একটা জমির রেজিস্ট্রেশনের কাজে, অতীন্দ্র বাবু আসতে চাননি এইসব কোর্ট কাছারির কাজ তিনি আদিত্যর উপরেই দিয়ে নিশ্চিন্ত থাকেন কিন্তু যখন‌ই নতুন কোনো হোটেল বা জমি বা অন্য কিছু কেনেন তখন আসতেই হয়, আদিত্য জোর করে নিয়ে আসে আজ‌ও এসেছে। 
স‌ইসাবুদের কাজ সাড়ার জন্য অতীন্দ্র বাবু উকিলের সাথে ভিতরে গেছেন বেশ কিছুক্ষণ সময় লাগবে আদিত্য কোর্টের বাইরে দাঁড়িয়ে আছে, একটা সিগারেট ধরাতে যাচ্ছিল অতীন্দ্র বাবু বা উমাদেবীর সামনে খেতে পারে না এই সুযোগে খেয়ে নেবে কিন্তু হটাৎ‌ই মেয়েলি কণ্ঠ শুনে থেমে যায়।
"ওটা ফেলে দিন, ওটা স্বাস্থ্যের জন্য ভালো নয়"
যুবতী আবার কথা বলে কিন্তু আদিত্য কোনো কথা না বলে তার দিকে তাকিয়ে আছে দেখে যুবতীটি বোধহয় ভাবে আদিত্র তাকে চিনতে পারছে না তাই পরিচয় দেওয়ার ভঙ্গিতে বলে "আপনি হয়তো আমাকে চিনতে পারছেন না আমি."
"পিয়ালী সরকার, ডটার অফ প্রতাপ সরকার"
যুবতীকে কথাটা শেষ করতে না দিয়ে নিজে শেষ করে আদিত্য, কথাটা বলে সিগারেটটা ঠোঁটে ধরে জ্বালায় কিন্তু একটা টান দিতে না দিতেই পিয়ালী দ্রুত পায়ে এগিয়ে এসে সিগারেটটা আদিত্যর ঠোঁট থেকে নিয়ে মাটিতে ফেলে পা দিয়ে মাড়িয়ে ফেলে, বলে "আপনি বুঝতে পারছেন না এসব খাওয়া ভালো না"।
"হোয়াট দ্যা হেল."
সিগারেটটা ফেলে দেওয়ায় যারপরনাই আদিত্যর মাথায় রাগ চড়ে যায় কিন্তু তবুও রাগটা নিয়ন্ত্রণ করে বলে "আর কখনো এরকম করবেন না অন্তত আমার সাথে"
"আপনাকে যেখানেই সিগারেট খেতে দেখবো সেখানেই আবার এক‌ই কাজ করবো" যুবতীও সটান ভয়হীন স্বরে উত্তর দেয়, একটু থেমে বলে "আপনার নিজের স্বাস্থ্যের প্রতি চিন্তা নেই? এগুলো তো আপনার ক্ষতি করছে"
"প্রথম কথা কোনো কিছুতেই আমার আর কোনো ক্ষতি হয় না আর দ্বিতীয় কথা যদি ক্ষতি হয়‌ও সেটা আমার হবে আপনার তাতে কি?"
আদিত্যর কথাটায় একটু খারাপ লাগে সেটা বোঝা যায় কারণ পিয়ালীর মুখটা ছোটো হয়ে যায়, তবুও একটু নরম স্বরে বলে "ধরে নিন আমি আপনার একজন শুভাকাঙ্ক্ষী তাই চাইনা আপনার কোনো ক্ষতি হোক"
"আপনার বাবার সাথে আমার শত্রুতা আছে, আর এদিকে আপনি বলছেন আপনি আমার শুভাকাঙ্ক্ষী, ব্যাপারটা ঠিক হজম হচ্ছে না খোলসা করে বলুন তো মতলবটা কি?"
"আমার মতলব? সেটা না হয় অন্য কোনো সময় অন্য কোনো জায়গায় বলবো, কোর্ট চত্ত্বর সেটা বলার জায়গা নয়, তবে ঘাবড়াবেন না আমার কোনো বদ মতলব নেই"
"আপনি উকিল?"
"ল নিয়ে পড়াশোনা করেছি, তবে এখনো নিজে প্র্যাকটিস শুরু করিনি বলতে পারেন ট্রেনিংয়ে আছি একজন সিনিয়র লয়্যারকে অ্যাসিস্ট করছি, আশা আছে খুব তাড়াতাড়ি নিজেই প্র্যাকটিস শুরু করতে পারবো"
"গুড লাক, আপনার বাবার জন্য ভালো হবে"।
"আপনি আমার বাবাকে ঘেন্না করেন তাই না?"
"আমি কাউকেই ঘেন্না করি না তবে এটা ঠিক উনি একজন ক্রিমিনাল"।
"আপনি একজন মেয়ের সামনে তার বাবাকে ক্রিমিনাল বলছেন, আমার বাবাও কিন্তু এই এলাকার একজন গণ্যমান্য লোক"।
"উঁহু, ভুল জানেন একটু খোঁজখবর করুন তাহলেই জানতে পারবেন লোকে পিছনে খিস্তি দেয় আপনার বাবাকে"।
আদিত্য আবার পকেট থেকে সিগারেটের প্যাকেট বার করে সঙ্গে সঙ্গে পিয়ালী বাঁধা দেয় "বললাম না ওসব খাবেন না, ওতে ক্ষতি হয়"
"কিন্তু আপনার কথা আমি কেন শুনবো? মুখে কথাটা বললেও আদিত্য আবার সিগারেটের প্যাকেটটা পকেটে ঢুকিয়ে দেয়।
"কারণ আমি আপনার ভালো চাই তাই"
"আমার ভালো চাইতে কে বলেছে আপনাকে?"
"সবসময় কি সবকিছু কাউকে বলে দিতে হয়? কিছু কিছু জিনিস নিজে থেকেই হয়"
"আপনার কথা আমি ঠিক বুঝতে পারছি না, আপনার উদ্দেশ্যটা ঠিক কি বলুন তো রিভেঞ্জ?"
"রিভেঞ্জ? কেন?"
"এই যে আপনার বাবার সাথে আমার শত্রুতা, সেদিন আপনাদের বাড়িতে গিয়ে একপ্রকার থ্রেট করে এসেছিলাম, আপনি তো সেদিন পারলে আমাকে ওখানেই মেরে পুঁতে রেখে দিতেন"
"আপনাকে আমার বাবার চেয়ারে বসে থাকতে দেখে রাগ হয়েছিল, সেটাই তো স্বাভাবিক ছিল নয়কি? কিন্তু সত্যি বলছি আপনার ক্ষতি করার কোনো উদ্দেশ্য আমার নেই এটুকু বিশ্বাস করতে পারেন"
"আমার ক্ষতি চাইলেও কেউ করতে পারবেও না, এমনকি এই সিগারেট‌ও নয়"
"এত কনফিডেন্স?"
"এটাই সত্যি"
"আপনার এরকম ধারণার কারণটা জানতে পারি?"
আদিত্য বেশ কিছুক্ষণ উত্তর না দিয়ে একদৃষ্টিতে পিয়ালীর দিকে তাকিয়ে র‌ইলো যেন পিয়ালীর একেবারে ভিতর পর্যন্ত দেখতে চাইছে, একসময় পর মুখ খুললো "মৃতরা সব লাভ-ক্ষতির উর্ধ্বে তাই"।
"মৃত,আপনি?"
কথাটা শুনে পিয়ালী খিলখিলিয়ে একটু হেসে ওঠে তারপর হাসি থামিয়ে বলে "আপনি তো অদ্ভুত লোক বেঁচে থাকতে নিজেকে মৃত বানিয়ে নিয়েছেন"।
"শুধু শরীরটা চলাফেরা করলে আর কথা বললেই কেউ জীবিত থাকে না, আমার শুধু শরীরটা চলেফিরে বেরাচ্ছে, ওয়াকিং ডেড বোঝেন? যারা মৃত হয়েও মৃত নয় দিব্যি হাঁটাচলা করে অথচ কেউ জ্যান্ত নয়, আমি তাই"
"ওয়াকিং ডেড" এবারে পিয়ালী হাসতে গিয়েও আদিত্যর গম্ভীর মুখ দেখে থেমে যায় বোঝে আদিত্য মজা করছে না, আদিত্য বলে "হ্যাঁ, পার্থক্য এটাই যে আমি সিনেমার ওয়াকিং ডেডদের মতো কারো রক্ত চুষে খাই না সেই প্রবৃত্তি আমার নেই তবে আমিও একপ্রকার ওয়াকিং ডেড"
দুজনে বেশ কিছুক্ষণ চুপ করে পরস্পরের দিকে তাকিয়ে থাকে কেউ কোনো কথা বলে না তারপর একসময় আদিত্য‌ই নীরবতা ভঙ্গ করে বলে "পারলে নিজের বাবাকে শোধরান, দিনের পর দিন ওনার খারাপ কাজ সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছে, চলি"
"গুড বাই, তবে আমার কথাটা প্লিজ মাথায় রাখবেন"
কথাটা শুনে আদিত্য যেতে গিয়েও থেমে পিয়ালীর মুখের দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকায়,পিয়ালী একটু হেসে উত্তর দেয় "সিগারেট খাওয়া ছেড়ে দিন ওতে আপনারই ক্ষতি হচ্ছে"। কথাটা বলেই সেখান থেকে চলে যায়, আদিত্য কিছুক্ষণ পিয়ালীর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে তারপর সেও গিয়ে নিজের জিপে উঠে বসে।
রাতে কিছুতেই ঘুম আসছিল না পিয়ালীর বারবার চোখের সামনে আদিত্যর মুখটা ভেসে উঠছে কানে বাজছে ওর বলা কথাগুলো "আমি মৃত আমি ওয়াকিং ডেড" কথাগুলোর পিছনে যেন একটা গভীর ব্যাথা, অনেক চাপা কষ্ট লুকিয়ে আছে কিন্তু কি সেটাই ধরতে পারছে না পিয়ালী। কোর্ট থেকে বাড়িতে ফিরেও এমনকি এখনও পর্যন্ত তার মন ভালো হয়নি, বিছানায় শুয়ে শুয়েই মোবাইলের লক খুলে গ্যালারিতে থাকা আদিত্যর ছবিটা বার করে আজ‌ই কোর্টে আদিত্যকে দেখতে পেয়ে তুলেছিল।
"কিসের এত কষ্ট তোমার?"
ছবিটা মুখের সামনে ধরে বলে পিয়ালী যেন ছবিটিকে নয় খোদ আদিত্যকেই প্রশ্ন করছে সে, তারপর নিজের মনেই বলতে থাকে,
"আজ অনেকদিন পর তোমাকে দেখেই জানিনা কেন মনটা খুশিতে ভরে উঠলো, তবে তোমার কিসের দুঃখ এত? একবার তো বলতে পারতে কথায় বলে দুঃখের কথা শেয়ার করলে দুঃখ কমে অবশ্য এটাও ঠিক শেয়ার করতে হলে আমার সাথে কেন করবে? আমি কে হ‌ই তোমার, কেউ না তুমিও তো আমার কেউ হ‌ও না তবে তোমাকে দেখে আমার মনে এত খুশী আসে কেন? তোমাকে কষ্টে দেখে আমার এত কষ্ট হচ্ছে কেন? তবে কি..তবে কি আমি তোমাকে ভালোবেসে ফেলেছি? এর‌ই নাম কি ভালোবাসা? জানিনা কিন্তু যদি হয়‌ও তাহলেই বা কি? তুমি কি কোনোদিন ভালোবাসবে আমাকে? আমি তো তোমার শত্রুর মেয়ে, শত্রুর মেয়েকে কেউ পছন্দ করে না তুমিও করবে না আমিও হয়তো কোনোদিন তোমাকে জানাতে পারবো না আমার মনের কথা তবে সারাজীবন চাইবো তুমি ভালো থাকো কেউ না কেউ নিশ্চয়ই আছে যাকে তুমি তোমার মনের সব কষ্টের কথা বলতে পারবে, আমার মন চাইছে যেন সেইজন আমি হ‌ই কিন্তু জানি সেটা সম্ভব নয়। আমার মনের কথা একান্তই আমার‌ই থাক তুমি কিন্তু নিজের খেয়াল রাখো আর ওসব সিগারেট ফিগারেট ছেড়ে দাও ওতে তোমার‌ই ক্ষতি হবে এই কথাটা অন্তত আমার শুনো লক্ষ্মীটি প্লিজ"।
পিয়ালী এরপর মোবাইলের স্ক্রিনটা ঠোঁটে ছোঁয়ায় যেন আদিত্যকেই চুম্বন করছে তারপর এক কাত হয়ে ছবিটা জুম করে বড়ো করে দেখতে থাকে তার প্রিয়তম পুরুষটিকে।
একটা বিশ্রী দুঃস্বপ্নে ঘুম ভেঙে যায় আদিত্যর আস্তে আস্তে বিছানা থেকে নেমে রুম থেকে বেরিয়ে ছাদে উঠে যায় সে, আজকাল এতে অভ্যাস হয়ে গেছে তার প্রায়দিন‌ই রাতে ঘুম আসে না যেদিন একটু আসে তাও মাঝে মাঝে ঘুম ভেঙে যায় একটাই দুঃস্বপ্ন তাড়া করে বেরাচ্ছে তাকে দুঃস্বপ্ন‌ই বা কোথায় তার অতীতের স্মৃতি সাতবছর আগের একটা ঘটনার স্মৃতি যেটা কোনোদিন তার মন থেকে মুছে যাবে না।
ছাদে ঠাণ্ডা হাওয়ায় কিছুটা শান্ত হয় আদিত্য সিগারেটের প্যাকেটটা বার করেও থেমে যায় মনে পরে একটা কথা "ওতে আপনার ক্ষতি হচ্ছে ওসব খাবেন না", কিন্তু তাও প্যাকেট থেকে সিগারেট বার করে ধরিয়ে একটা টান দিয়ে কিছুটা ধোঁয়া ছাড়ে তারপর স্বগোতোক্তির সুরে বলে "আমার আর কোনো ক্ষতি হবে না, যা হবার সেটা সাতবছর আগেই হয়ে গেছে"।
নীচে কার যেন জোরে জোরে অট্টহাসির শব্দে ঘুমের চটকাটা ভেঙে যায় আদিত্যর মাঝরাতে ঘুম ভেঙে যাওয়ার পরে অনেকক্ষণ ছাদে ছিল, ঠাণ্ডা হাওয়ায় শরীরটা শান্ত করে বেশ কয়েকটা সিগারেট শেষ করে প্রায় ভোররাতে আবার বিছানায় এসে শুয়েছে, হাল্কা ঘুমের আমেজ‌ও এসেছিল কতক্ষণ ওইভাবে ছিল খেয়াল নেই কিন্তু আবার কার যেন হাসির শব্দে ঘুম ভেঙে যায় তাড়াতাড়ি উঠে ফ্রেশ হয়ে নীচে এসে দেখে দুজন অতিথি এসেছেন তারা উমাদেবী আর অতীন্দ্র বাবুর সাথে হাসিঠাট্টা করছেন, একজন মধ্যবয়স্ক অতীন্দ্র বাবুর সমবয়সী পরনে সাধারণ ট্রাউজারস্ আর সবুজ কালো চেক শার্ট, শ্যামলা গায়ের রঙ, অর্ধেক মাথায় টাক,ভুঁড়িসহ পেট সবসময় শরীরের থেকে এগিয়ে চলে মুখে দাড়ি গোঁফের চিহ্ন নেই, মুখের ভিতরে পান খাওয়ার জন্য লাল হয়ে আছে, ঠোঁটের পাশ দিয়ে পানের রস গড়িয়ে পরছে কুতকুতে দুটো চোখে লোভ, ধূর্ততা স্পষ্ট ইনি মনোহর বাবু অতীন্দ্র বাবুর দূরসম্পর্কের ভাই অপরজন তার ছেলে মলয়, আদিত্যর সমবয়সী এর‌ও গায়ের রঙ শ্যামলামাথায় কদমছাট চুল,উচ্চতায় আদিত্যর থেকে একটু কম, মুখে হাল্কা দাড়ি এবং একটি সরু গোঁফ আছে, এর‌ও চোখদুটো বাপের মতো লোভ আর ধূর্ততায় ভরা।
আদিত্যকে সিঁড়ি দিয়ে নীচে নেমে আসতে দেখে মলয় এগিয়ে গেল হ্যাণ্ডশেকের ভঙ্গিতে হাত বাড়িয়ে বললো "কি রে কেমন আছিস?"
আদিত্য যে এদের দেখে খুশি হয়নি সেটা ওর গম্ভীরমুখ দেখেই বোঝা যায় তবুও একবার মায়ের দিকে তাকিয়ে মলয়ের হাতে হাত মেলায় যতটা সম্ভব নরম স্বরে উত্তর দেয় "এই তো চলে যাচ্ছে তুই কেমন আছিস"
"আমারও চলে যাচ্ছে"
"হটাৎ এখানে, এতদিন পর, কোনো বিশেষ কারণ?"
প্রশ্নটায় দুই বাপ-ব্যাটায় একটু হতচকিত হয়ে পরস্পরের চোখাচোখি করে, কিন্তু উমাদেবী উত্তরটা দেন, ছেলেকে ভর্ৎসনার সুরে বলেন "এ কিরকম কথা আদিত্য? বাড়িতে অতিথি এলে তাকে কেউ এই প্রশ্ন করে?"
"সরি মা, আসলে শুনেছিলাম ওনারা বিদেশে সেটল হয়ে গেছেন সেখানে ওনাদের বিজনেস রমরমিয়ে চলছে তাই জিজ্ঞেস করলাম আর কি"।
"আসলে বাবা আদিত্য নেপাল আর ভুটানকে কি ঠিক বিদেশ বলা চলে?
একটা অদ্ভুদ ভঙ্গিতে কথাটা বলেন মনোহর বাবু, কথা শুনে আর তার সাথে ওনার ওই পান খাওয়া মুখের নোংরা হাসি দেখে রাগে গা জ্বলে যায় আদিত্যর তবুও রাগটাকে দমন করে ঠাণ্ডা গলায় বলে "নেপাল ভুটান? দু-দুটো দেশে একসাথে? হ্যাঁ ওইদুটো লজিক্যালি বিদেশ‌ই বটে তা ওখানে কিসের ব্যাবসা ছিল কাকাবাবু?"
"ওই ছিল টুকটাক কিন্তু সেটাও গেল তাই তো দেশে ফিরে এলাম দাদার কাছে ভাবলাম যদি দাদা কোনো গতি করে দেন"
"খুব ভালো করেছেন দাদা, আমরা তো আপনাদের আপন জন‌ই" উমাদেবী সরলভাবে কথা বলেন, মনোহরবাবু আবার নোংরা হাসিটা হেসে বলে "সেইজন্যই তো এলাম বৌদি"।
"তবে আদিত্য বোধহয় আমাদের আসাটা পছন্দ করছে না, তাই না আদিত্য?"
মলয়ের এই কথায় আরো গা জ্বলে উঠলো আদিত্যর কারণ সে সত্যিই এদের সহ্য করতে পারে না এর আগে কয়েকবার এসেছেন এরা তবে নিজের স্বার্থে প্রতিবার টাকা নয়তো অন্য কোনো প্রশাসনিক সাহায্য চাইতে,আর প্রতিবার আদিত্যর বারন সত্ত্বেও অতীন্দ্র বাবু আর উমাদেবী সেই সাহায্য করেছেন ওনারা যে কেন এই দুজনের আসল লোভী চেহারাটা দেখতে পান না সেটা বুঝতে পারে না সে।
"একদমই নয়, আদিত্য ওইরকম‌ই গম্ভীরমুখে থাকে সবসময়"
আদিত্য কিছু বলার আগেই উমাদেবী কথাটা বললেন, এরপর অবশ্য আদিত্য‌ও কথা বললো এবং সেটাও যে দুই বাপ-ব্যাটা আশা করেনি সেটা ওদের ভাবভঙ্গি দেখেই বোঝা গেল,
"কাকাবাবু আপনাদের ঠিক কিসের ব্যাবসা ছিল?
"ওই একটা ছোটোখাটো ব্যাবসা" মনোহর বাবু কিন্তু কিছুতেই খুলে বলতে নারাজ, আদিত্য তবুও জিজ্ঞেস করে "তবুও বলুন না শুনি কিসের ব্যাবসা? ইম্পোর্ট-এক্সপোর্টের?"
কথাটা শুনে দুজনের মুখ শুকিয়ে গেল, মনোহরবাবু তাও কোনোমতে বললেন "ওই আর কি"
"তা কি কি ইম্পোর্ট এক্সপোর্ট করতেন?"
"তুই তো জেরা শুরু করেছিস দেখছি"
আদিত্যর কথার উত্তরে মলয় কথাটা বললো কিন্তু বাপব্যাটার কেউই আদিত্যর প্রশ্নের উত্তর দিল না। আদিত্য আর মলয় কিছুক্ষণ পরস্পরের চোখের দিকে তাকিয়ে র‌ইলো ঠিক যেন দ্বন্দ্বযুদ্ধের আগে দুজন প্রতিদ্বন্দ্বী পরস্পরকে মেপে নেয়।
"দাদা এখানে যদি তুমি মলয়ের কিছু একটা ব্যাবস্থা করে দিতে.."
মনোহরবাবুর কথায় আদিত্য আর মলয় দুজনেই তার দিকে তাকায়, মনোহরবাবু অবশ্য কথাটা অতীন্দ্র বাবুকে বলেছেন কিন্তু এবারেও উমাদেবী আগে কথা বললেন,
"সেসব দেখা যাবে মলয় না হয় আদিত্যর সাথেই থাকবে তবে আগে কিছুদিন বিশ্রাম নিন এতবছর পরে এলেন ভালো করে ঘুরুন খাওয়াদাওয়া করুন"
"আদিত্যর সাথে? তার থেকে ভালো মলয় যদি দাদার সাথে থাকতো"
"না, মা যখন বলেছেন মলয় আমার সাথে থাকবে তখন তাই হবে"
মনোহরবাবুর দিকে সন্দিগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে কথাটা বললো আদিত্য,বলেই আবার সিঁড়ির দিকে যেতেই উমাদেবী ধমক দিলেন "আবার উপরে কোথায় যাচ্ছো, ব্রেকফাস্ট করবে এসো"। ব্রেকফাস্ট টেবিলে মনোহরবাবু উমাদেবী আর অতীন্দ্র বাবুকে বিভিন্ন মজার কথা বলে হাসাতে লাগলেন সাথে প্রীতিও হাসতে লাগলো শুধু আদিত্য‌ই গম্ভীরমুখে ওদের দুই বাপ-ব্যাটাকে নিরীক্ষণ করতে থাকে এমনকি প্রীতিকে দেখামাত্র যে দুজনের চোখে মুহূর্তের জন্য একটা লোভের ঝলক এসেই মিলিয়ে গেল সেটাও আদিত্যর চোখ এড়ায়নি।
সময় দ্রুত এগিয়ে চলেছে মলয় এখন আদিত্যর সহযোগী হয়ে কাজ করছে তবে মাঝে মাঝে মালিকসুলভ ব্যবহার করে বসে সেটা ঠিক পছন্দ করে না আদিত্য বিশেষ করে কর্মচারীদের সাথে প্রায়‌ই খারাপ ব্যবহার করে যেটা একদমই বরদাস্ত করতে পারে না বেশ কয়েকবার সাবধান‌ও করেছে মলয়কে, প্রতিবার মলয়ের চোখের দৃষ্টিতে স্পষ্ট জিঘাংসা দেখতে পায়, আদিত্য বুঝতে পারে যেভাবেই হোক এইদুজন বাপ-ব্যাটাকে যত দ্রুত সম্ভব বিদায় করতে হবে নাহলে যেকোনোদিন বিপদ ঘনিয়ে আসতে পারে বিশেষ করে এখানে আসার প্রথমদিন ব্রেকফাস্ট টেবিলে প্রীতিকে দেখার পরে দুজনের চোখে মুহূর্তের জন্য দেখা লোভের চকচকানিটা কিছুতেই ভুলতে পারছে না অনেক চেষ্টা করেছে কারন বোঝার কিন্তু বুঝতে পারেনি ওদের সম্পর্কে অনেক খোঁজখবর করেছে কিন্তু তেমন কিছুই জানতে পারেনি। দুই বাপ-ব্যাটার লোভী দৃষ্টিটা কাঁটার মতো বিঁধছে তাকে অথচ কিছু করতে পারছে না।
বেশ কিছুদিন নিরুপদ্রবে কেটে যাওয়ায় মাঝে মাঝে আদিত্যর মনে হয় যে তার মনে যে বিপদের আশঙ্কা উঁকি দিচ্ছে সেটা হয়তো অমূলক, কিন্তু পরক্ষণেই তার সেই ব্রেকফাস্ট টেবিলে দেখা দুই বাপ-ব্যাটার দৃষ্টিটা মনে পরে যায়, সবথেকে খারাপ যেটা সেটা হলো এই বিষয়ে সে কাউকে কিছু বলতে পারবে না, না উমাদেবীকে কিছু বলে বোঝাতে পারবে আর না প্রীতিকে অগত্যা সে নিজেই অতীন্দ্র বাবু আর প্রীতির উপর নজর রাখার জন্য লোকের সংখ্যা বাড়িয়ে দেয়, এরা সাধারণ মানুষের মতোই ওদের আশেপাশে থাকবে আর আদিত্যকে খবর দেবে শুধুমাত্র উমাদেবী যেহেতু সবসময় বাড়িতেই থাকেন তাই বাড়ির কাজের লোক, দারোয়ান, সবাইকে সাবধান থাকতে বলেছে সাথে বিশ্বস্ত সনাতন জ্যেঠুকেও বলেছে উমাদেবীর উপর নজর রাখতে।
এত সতর্কতার মধ্যেও বিপদ এলো এবং সেটা একদম অনাকাঙ্ক্ষিত দিক দিয়ে আদিত্য ভাবছিল পারিবারিক বিপদের কথা কিন্তু বিপদ এলো ওদের ব্যাবসায়, পরপর বেশ কয়েকটা চা রপ্তানির কন্ট্রাক্ট তারা পেতে পেতেও পেলো না হাতছাড়া হয়ে গেল, যেটা সবথেকে খারাপ হলো সেটা এই যে কন্ট্রাক্টগুলো পেলেন প্রতাপ সরকার। এতে অতীন্দ্র বাবু ভীষণ মুষড়ে পড়লেন, আদিত্য‌ও চিন্তিত হলো কিন্তু বাইরে কাউকে কিছু বুঝতে দিল না, ওর মনে একটা সন্দেহ বাসা বাঁধছে আর সেটা এই যে এই কন্ট্রাক্টগুলো হাতছাড়া হবার পিছনে কোনো না কোনো ভাবে মনোহরবাবু আর মলয় দায়ী, এই সন্দেহ আরো দৃঢ় হলো যখন সে একসময় হটাৎ করেই ওদের দুই বাপ-ব্যাটাকে প্রতাপ সরকারের সাথে হাসিমুখে কথা বলতে দেখে‌ যদিও সাধারণ দৃষ্টিতে এটা খুব একটা বড়ো।ব্যাপার নয় তবুও সন্দেহের কাঁটাটা আরো বড়ো আকার ধারণ করলো।
ডুয়ার্স অঞ্চলের এক গভীর জঙ্গলের ভিতরে গোডাউনে এইমুহূর্তে প্রচণ্ড ব্যাস্ততা চলছে গোডাউনের সামনের কিছুটা ফাঁকা জায়গায় সারি দিয়ে কয়েকটা ম্যাটাডোর দাঁড়িয়ে আছে যার কয়েকটায় অলরেডি কাঠ বোঝাই হয়ে গেছে বাকিগুলোয় বোঝাই করা চলছে, মাঝে মাঝে ছোটো ছোটো সিলপ্যাক করা বাক্স ধরাধরি করে নিয়ে আসছে কয়েকজন সেগুলো একদম নীচে রেখে তার‌উপরে কাঠগুলো এমনভাবে সাজানো হচ্ছে যাতে বাইরে থেকে কোনোভাবেই নীচের বাক্স দেখা না যায়।
কাজ করতে করতে একজনের নজর পরে কিছুটা দূরে একটু ঝোপের আড়ালে কি যেন নড়ছে প্রথমটায় অতটা গুরুত্ব দিল না, কিন্তু তারপর থেকে মাঝে মাঝেই ওদিকে তাকিয়ে কি যেন দেখতে থাকে একটু পরে হটাৎ‌ই নিজের কোমরের পিছন থেকে রিভলবার বার করে ওদিকে একটা ফায়ার কর আর চিৎকার করে ওঠে "পুলিশ", মুহুর্তের মধ্যে বাকিদের হাতেও আগ্নেয়াস্ত্র উঠে আসে এবং সেগুলো সশব্দে গর্জন করতে থাকে, প্রত্যুত্তরে অবশ্য ওপাশ থেকেও গুলি চলতে থাকে রীতিমতো যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত হয় জায়গাটা মাথার উপরে বিভিন্ন রকম পাখি পরিত্রাহি চিৎকার জুড়ে দিয়েছে তার সাথে পাল্লা দিয়ে চলছে আগ্নেয়াস্ত্রের আওয়াজ এবং গুলি লেগে আহত হ‌ওয়ার আর্তনাদ, একটু পরেই অবশ্য গোডাউনে কর্মরত লোকগুলো পরাজয় স্বীকার করতে বাধ্য হয় তাদের কয়েকজন সরাসরি গুলি লেগে নিহত হয়েছে, আর কয়েকজন আড়ত হয়ে রক্তাক্ত অবস্থায় মাটিতে শুয়ে কাতরাচ্ছে, অবিলম্বে জন্য তিরিশেক সশস্ত্র পুলিশের পুরো দলটা জায়গাটা ঘিরে ফেলে তাদের‌ও কয়েকজন আহত হয়েছে।
যারা অক্ষত অবস্থায় অস্ত্র ফেলে সমর্পণ করেছে তাদের একটা লাইনে মাটিতে হাঁটু মুড়ে দুহাত মাথার উপর তুলে বসানো হয়েছে, কয়েকজন পুলিশ রিভলভার হাতে তাদের ঘিরে রেখেছে বাকিরা তল্লাশি চালাচ্ছে ম্যাটাডোরগুলো থেকে বাক্সগুলো নামিয়ে আনা হয়েছে, গোডাউনের ভিতর থেকেও আরো অনেকগুলো বাক্স পাওয়া গেছে সেগুলো সব বাইরে এনে এক জায়গায় জড়ো করে রাখা হয়েছে। সবকিছু পর্যবেক্ষণ করছিল এক দীর্ঘদেহী গৌরবর্ণ সুঠাম দেহের অধিকারী এক যুবক।
যুবকটির পরনে একটা সাদা ফুলস্লিভ শার্ট যেটা প্রায় কনুই পর্যন্ত গোটানো আর আকাশী নীল রঙের জিন্সের প্যান্ট, পায়ে বাদামি বুট, চোখে কালো গগলস্, মাথায় চুল ছোটো ছোটো করে ছাঁটা, নাকের নীচে ঠোঁটের এমাথা থেকে ওমাথা পর্যন্ত সরু গোঁফ এছাড়া পুরো ক্লিন শেভড্, দুহাতের বাইসেপস্ আর ট্রাইসেপস্ যেন জামা ছিঁড়ে বেরিয়ে আসতে চাইছে, দুহাতেরকবজি থেকে কনুই পর্যন্ত একটি শিরা উঁচু হয়ে নিজের অস্তিত্ব জানান দিচ্ছে।
যুবকটি যে এই পুলিশবাহিনীর নেতৃত্ব করছে সেটা বুঝতে কারো বাকি র‌ইলো না। বাক্সগুলো সব জড়ো করা হলে যুবকটি এগিয়ে গিয়ে একটা বাক্সের ডালা খুলে ফেলে এবং তার ভিতরে অবস্থিত একটা সাদা পাউডারের মতো পদার্থে ভর্তি প্যাকেট তুলে নাকের কাছে ধরে তারপর শুঁকে আবার রেখে দেয়।
"ওয়েলডান নীলাদ্রি ওয়েলডান, তুমি প্রমাণ করে দিয়েছো যে তোমাকে এখানে এনে আমি কোনো ভুল করিনি"
তরুণ অফিসার নীলাদ্রি সান্যালের প্রশংসা যেন থামতেই চায়না পুলিশ কমিশনার শশাঙ্ক সান্যালের মুখে, অবশ্য এটাও ঠিক প্রশংসিত হবার মতোই কাজ করেছেন অফিসার নীলাদ্রি সান্যাল উত্তরবঙ্গে এসেই প্রথম অপারেশনে কয়েক লক্ষ্য টাকার চোরাই কাঠ উদ্ধার করেছেন সাথে লক্ষাধিক টাকার কোকেন উদ্ধার করেছেন যেগুলো এই নর্থবেঙ্গল থেকেই বর্ডার পেরিয়ে বিদেশে রপ্তানি হতো বা দেশের বিভিন্ন রাজ্যে পাচার হতো, মূলত এই চোরাচালান বন্ধ করার জন্যই শশাঙ্ক বাবু উচ্চমহলে কথা বলে নীলাদ্রিকে ডুয়ার্স অঞ্চলে ট্রান্সফার করিয়ে এনেছেন, এবং প্রথম অপারেশনেই এত বড়ো সাফল্য ফলে শুধু শশাঙ্ক বাবুই নন পুরো ডিপার্টমেন্ট উচ্ছ্বসিত নীলাদ্রির এই সাফল্যে, আর এতে যে শশাঙ্ক বাবুর ছাতি গর্বে আরো ফুলে উঠেছে সেটা বলাইবাহুল্য কারণ নীলাদ্রি আসলে তাঁর নিজের ছেলে। ছেলের সাফল্যে বাবা তো গর্বিত হবেনই তবে এই মুহূর্তে দুজনেই ডিউটিতে, তাই ব্যাক্তিগত পরিচয় বাড়িতে রেখে এসেছেন এবং সেটা দুজনেই।
I'm the King of Dark
                &
I rule over all Devils
               devil2 devil2
Like Reply
অনবদ্য রচনা !!!

হ্যাটস অফ টু ইউ !!!

Like & Repu ...
clps
[+] 1 user Likes ddey333's post
Like Reply
(01-02-2023, 11:55 AM)ddey333 Wrote: অনবদ্য রচনা !!!

হ্যাটস অফ টু ইউ !!!

Like & Repu ...
clps

ধন্যবাদ  Namaskar
I'm the King of Dark
                &
I rule over all Devils
               devil2 devil2
Like Reply
It's like an action thriller novel.Keep up the good work
[+] 1 user Likes akashahmed4444's post
Like Reply
(02-02-2023, 03:21 AM)akashahmed4444 Wrote: It's like an action thriller novel.Keep up the good work

ধন্যবাদ  Namaskar
I'm the King of Dark
                &
I rule over all Devils
               devil2 devil2
Like Reply
চমৎকার লেখনী দাদা
[+] 1 user Likes Jibon Ahmed's post
Like Reply
(04-02-2023, 05:46 AM)Jibon Ahmed Wrote: চমৎকার লেখনী দাদা

ধন্যবাদ।
I'm the King of Dark
                &
I rule over all Devils
               devil2 devil2
Like Reply
সকাল সকাল এরকম একটা পর্ব পড়ে মন ভরে গেলো।‌ clps লিখতে থাকো .. সঙ্গে আছি।
[+] 1 user Likes Bumba_1's post
Like Reply
(04-02-2023, 08:46 AM)Bumba_1 Wrote: সকাল সকাল এরকম একটা পর্ব পড়ে মন ভরে গেলো।‌ clps লিখতে থাকো .. সঙ্গে আছি।

ধন্যবাদ দাদা,   Namaskar thanks
I'm the King of Dark
                &
I rule over all Devils
               devil2 devil2
Like Reply
yourock yourock yourock yourock yourock
সত্যিই আগের থেকে অনেক অনেক ভালো হয়েছে চেষ্টা করেও কোনও খুঁত খুজে পেলাম না । এভাবেই চালিয়ে যাও। পাশে সব সময়ই আছি। লাইক রেপু এডেড।  Heart Heart Heart Heart
horseride আমাকে আমার মত থাকতে দাও horseride
[+] 1 user Likes Boti babu's post
Like Reply
(04-02-2023, 02:33 PM)Boti babu Wrote: yourock yourock yourock yourock yourock
সত্যিই আগের থেকে অনেক অনেক ভালো হয়েছে চেষ্টা করেও কোনও খুঁত খুজে পেলাম না । এভাবেই চালিয়ে যাও। পাশে সব সময়ই আছি। লাইক রেপু এডেড।  Heart Heart Heart Heart

ধন্যবাদ  Namaskar
I'm the King of Dark
                &
I rule over all Devils
               devil2 devil2
Like Reply
১ তারিখ গল্প দিয়েছেন,,, পড়াই হয়নি তবে শেষ মেষ পড়ে ফেললাম
বরাবরের মতই দূর্দান্ত হয়েছে। লাইক রেপু এডেড
[+] 1 user Likes Arpon Saha's post
Like Reply
(06-02-2023, 01:19 AM)Arpon Saha Wrote: ১ তারিখ গল্প দিয়েছেন,,, পড়াই হয়নি তবে শেষ মেষ পড়ে ফেললাম
বরাবরের মতই দূর্দান্ত হয়েছে। লাইক রেপু এডেড

ধন্যবাদ  Namaskar thanks
I'm the King of Dark
                &
I rule over all Devils
               devil2 devil2
Like Reply
কিহে ভাই গল্প লেখার কাজ চলছে নাকি বসে বসে ডিম পারছো।
horseride আমাকে আমার মত থাকতে দাও horseride
[+] 1 user Likes Boti babu's post
Like Reply




Users browsing this thread: 3 Guest(s)