Posts: 234
Threads: 2
Likes Received: 461 in 146 posts
Likes Given: 165
Joined: Nov 2022
Reputation:
129
27-01-2023, 06:23 PM
(This post was last modified: 10-02-2023, 10:45 PM by কলমচি৪৫. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
আমার প্রথম থ্রেড 'মৌয়ের যৌবনজ্বালা' পাঠকুলের ভালো লাগেনি। তার প্রমাণ তাদের নিরুত্তর থাকা। কিন্তু তা সত্ত্বেও নতুন আর একটা থ্রেড নিয়ে হাজির। এই থ্রেডেও কোনো অশ্লীল গালিগালাজ, ইন্সেস্ট কনটেন্ট - এসব এই থ্রেডে নেই। তাই যাঁরা এই ধরণের গল
প পছন্দ করেন তাঁরা এই থ্রেডে এলে নিরাশ হবেন। ধন্যবাদ।
Posts: 234
Threads: 2
Likes Received: 461 in 146 posts
Likes Given: 165
Joined: Nov 2022
Reputation:
129
গোপন কথাটি রবে না গোপনে
লেখকের স্বীকারোক্তিঃ
এই গল্পে বর্ণিত সমস্ত স্থান, কাল ও পাত্র-পাত্রী সবই কাল্পনিক। বাস্তবের সঙ্গে কোনো মিল নেই। তাই সকল পাঠকের কাছে অনুরোধ কেউ বাস্তবের কোনো চরিত্রের সঙ্গে মিল খোঁজার ব্যর্থ প্রয়াস করবেন না। যদি কোথাও কারুর জীবনের সঙ্গে এই গল্পের কুশি-লবদের কোনো মিল থেকে থাকে তা কাকতালীয়, সেখানে লেখকের কোনো দায়ভার নেই। সকলকে ধন্যবাদ।
গৌরচন্দ্রিকাঃ
কোলকাতায় গঙ্গার ধারে বিগত দেড়শো বছর ধরে অত্যন্ত আভিজাত্যের সঙ্গে দাঁড়িয়ে রয়েছে রাজপ্রাসাদোপম চৌধুরী ভিলা। চৌধুরী ভিলার বর্তমান মালিক রাজনারায়ণ চৌধুরী তাঁর চল্লিশতম বিবাহবার্ষিকী বড়ো ধুমধামের সঙ্গে পালন করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। শুধু এখানেই থেমে থাকলে এই গল্পটা লেখার কোনো প্রয়োজনই পড়তো না , তাঁর ঐকান্তিক ইচ্ছা এই অনুষ্ঠানের একটা ভিডিও অ্যালবাম তৈরি করার যেখানে তাঁর তো বটেই বাড়ির সমস্ত সদস্যের জীবনের জানা-অজানা কাহিনী ধরে রাখা হবে। এই ভিডিও অ্যালবাম ও বাড়ির সকল সদস্যের জীবনের অপ্রকাশিত গোপন কাহিনী নিয়েই এই গল্প নিজস্ব গতিতে তার পথে এগিয়ে যাবে।
Posts: 234
Threads: 2
Likes Received: 461 in 146 posts
Likes Given: 165
Joined: Nov 2022
Reputation:
129
প্রথম অধ্যায়ঃ
ভিডিও অ্যালবামে রূপরেখা তৈরিঃ
পরিচ্ছেদ - ১ঃ চৌধুরী ভিলার ড্রয়িংরুম
বিকেল প্রায় পাঁচটা , চৌধুরী ভিলার বাইরের মহলে সুবিশাল ড্রয়িংরুমে মুখোমুখি বসে আছেন রাজনারায়ণ চৌধুরী ও নীললোহিত ( পরবর্তীতে এঁকে আমরা নীল বলেই ডাকবো ) । রাজনারায়ণবাবু নীলকে বুঝিয়ে দিচ্ছিলেন তিনি ভিডিও অ্যালবামটায় কি কি চান এবং কেমনভাবে চান। নীল সব শুনে ঘাড় নেড়ে বলে -
- " সবইতো বুঝলাম, কিন্তু বাড়ির সকলে বিশেষ করে মহিলারা কি তাঁদের অন্তরের গোপন কথা অকপটে ক্যামেরার সামনে স্বীকার করবেন? তাঁরা সেটা যদি না করেন তাহলে আপনি যেটা চাইছেন সেটা ফুলফিল হবে না।আমি সমস্ত ব্যাপারটাই একটা নতুন অ্যাঙ্গেলে করবো। আমি বা আমার অ্যাসিস্ট্যান্ট যখন তখন আপনার বাড়িতে আসব এবং আপনার বাড়ির সদস্যদের সঙ্গে কথা বলবো। আমার ক্যামেরা যখন কারুর উপর ফোকাস করবো তখন তিনি বাড়িতে প্রতিদিন যেমন কাটান তেমনভাবেই ক্যামেরার সামনে এসে দাঁড়াবেন , কোনো কৃত্রিম অভিনয় করতে পারবেন না।
আমার ভিডিও অ্যালবামটা আর পাঁচটা ভিডিও অ্যালবামের মতো শুধুমাত্র কৃত্রিম হাসির টুকরো দিয়ে সাজানো থাকবে না। তাতে প্রত্যেকের জীবনের হাসি থাকবে , থাকবে চোখের জল , বুকের গভীরে জমে থাকা না বলা অন্ধকার , আরও কত কি ? আপনি যদি রাজী থাকেন তো বলুন , না হলে আমি এই অ্যাসাইনমেন্ট নেবো না।"
সবেমাত্র সত্তর ছাড়ানো রাজনারায়ণবাবু যৌবনে ছবি আঁকা ও ভালো ছবির পিছনে তীব্র প্যাশান নিয়ে ছুটে বেড়িয়েছেন। আজ নীলের চোখে তিনি তাঁর যৌবনের প্রতিচ্ছবি দেখতে পেয়ে এক কথায় রাজী হয়ে যান এবং মুচকি হেসে বলেন ,
-- " আলবাৎ বলবে , আমি এখনই সবাইকে বলে দিচ্ছি।"
-- " থাক্ এখনই বলতে হবে না , সময় মতো অবশ্যই বলে দেবেন। এখন আমাকে আপনার পারিবারিক অ্যালবামটা দিন এবং সেইসঙ্গে পরিবারের সকল সদস্য সম্পর্কে একটা ধারণা দিন। "
কথা বলতে বলতেই এ বাড়ির খাস চাকর রামু দুজনের জন্য চা আর গরম গরম সিঙ্গাড়া দিয়ে গেল।
-- " নাও গরম থাকতে থাকতে চা আর সিঙাড়া খেতে থাকো। আর আমি তোমাকে সকল সদস্য সম্পর্কে একটা আভাস দিই। " - বলে উঠলেন রাজনারায়ণবাবু।
রাজনারায়ণবাবুর কাছ থেকে পারিবারিক অ্যালবাম এবং প্রয়োজনীয় তথ্য ও চৌধুরী ভিলার প্রত্যেক সদস্যের প্রোফাইল নোটডাউন করে নিয়ে নীল যখন নমস্কার জানিয়ে চৌধুরী ভিলা থেকে বিদায় নিল তখন রাত প্রায় আটটা। চৌধুরী ভিলা থেকে বের হয়ে নীল ওর অ্যাসিস্ট্যান্ট বিপাশাকে ফোন করে জানালো আজ অফিস বন্ধ করে বাড়ি চলে যেতে। একটা বড়ো কাজ ও হাতে নিয়েছি, এই কাজটা আমাদের দুজনের কাছেই একটা বড়ো চ্যালেঞ্জের মতো, এটাতে আমাদের সফল হতেই হবে। আগামীকাল সময়ে অফিস চলে এসো তখন সব আলোচনা করে নেব।
Posts: 234
Threads: 2
Likes Received: 461 in 146 posts
Likes Given: 165
Joined: Nov 2022
Reputation:
129
পরিচ্ছেদ - ২ঃ নীললোহিতের অফিস --
সকাল সাড়ে দশটা , নীললোহিত ও বিপাশা ক্রিক রোতে স্টুডিওর অফিসে একটা টেবিলের দুপাশে মুখোমুখি দুটো চেয়ারে বসে রয়েছে। টেবিলে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে কিছু কাগজ , ছবি , আর দুকাপ ব্ল্যাক কফি। নীল তার সহকারিনী ও বন্ধু বিপাশাকে বলে --
-- " তোমাকে চৌধুরী পরিবারের প্রতিটি সদস্য সম্পর্কে খুঁটিনাটি সব কিছু জানতে হবে, প্রত্যেকটা চরিত্র ভালোভাবে বিশ্লষণ করতে হবে। তবেই তুমি এই কাজে সাফল্য পাবে। "
এই বলে কফির কাপে চুমুক দিতে দিতে নীল বিপাশাকে চৌধুরী মহলের প্রত্যেকটি চরিত্রকে বিশ্লেষণ করে শোনায়। নীলের বিশ্লেষণ এই প্রকারের ---
১) রাজনারায়ণ চৌধুরীঃ
ইনি এই কাহিনীর নায়ক , সবেমাত্র সত্তর অতিক্রমকারী এক পুরুষ। এখনো অনন্ত পৌরুষের গর্ব আছে তাঁর। এখনো তাঁর মনের আকাশ থেকে ঝরে ঝরে ক্লান্ত হয়ে যায়নি বাসনার বৃষ্টিরা। এখনও ইচ্ছে হলে তিনি মধ্যরাতে চাবুক হাঁকাতে পারেন ঘুমন্ত কোলকাতার বুকে। ছবি আঁকার অদম্য ইচ্ছে এবং নারী মাংসের প্রতি অনন্ত লোভ তাঁর চরিত্রের প্রধান বৈশিষ্ট্য। আর এই দুই বাসনাকে চরিতার্থ করতে তিনি বারবার ঘর ছেড়েছেন। এমনকি নিজের নব বিবাহিতা স্ত্রীকে ছেড়ে পাড়ি দিয়েছেন পাশ্চাত্য আর্ট ও কালচারের পীঠস্থান ফ্রান্সে।
বিপাশা চেয়ে চেয়ে দেখে রাজনারায়ণ বাবুর নানা বয়সের অনেকগুলো ছবি -- কৈশোরের উদ্ভাসিত রাজনারায়ণ , যৌবনের উদীপ্ত রাজনারায়ণ , প্রৌঢ়ত্বের মলিন রাজনারায়ণ এবং বার্ধ্যকের ঝলমলে
রাজনারায়ণ।
বিপাশা, এই ছবিগুলো দেখে রাজনারায়ণ বাবু সম্পর্কে একটা স্পষ্ট ছবি নিজের মনে মনে আঁকতে থাকে। রাজনারায়ণ বাবুর চোখ দুটো অসম্ভব উজ্জ্বল। মনে হয় , সবসময় উনি নতুন কিছু করার চেষ্টা করে চলেছেন। এই ভিডিও অ্যালবাম তৈরিও সে কথাকে প্রমাণ করে।
২) চন্দ্রলেখাঃ
একটা বছর ষাটের বৃদ্ধার ছবি দেখিয়ে নীল বলে ওঠে - ইনি চন্দ্রলেখা , রাজনারায়ণ বাবুর বিবাহিতা স্ত্রী। ইনিই এই ভিডিও ফ্লিমের সবচেয়ে কঠিন চরিত্র। দু-এক পলক দেখে নীল যেটুকু বুঝেছে তাতে ইনি বেশ চাপা স্বভাবের। বুক ফাটলেও এনার মুখ ফুটবে না , তাই বিপাশার কাছে এটা সবচেয়ে কঠিন চ্যালেঞ্জ এই পাষাণের বুকে ফাটল ধরিয়ে তাঁর ভেতর থেকে জল বের করার মতো তাঁর সমস্ত রাগ , দুঃখ , অভিমান, অভিযোগ সব বের করে আনতে হবে। আর জানতে হবে তাঁর জীবনের গোপন অভিলাষ , অজানা কোনো কথা।
৩) আশুতোষঃ
নীলের হাতে ধরা আর একটি ছবি - বলে আশুতোষ চৌধুরী। ঝকঝকে ব্যক্তিত্ব। থ্রী পিস স্যুট পড়া , চোখে রোদ চশমা। সমস্ত চেহারায় উচ্চাকাঙ্ক্ষা ঝরে পড়ছে। চল্লিশ বছর বয়সী এই ব্যক্তি মার্কিন মুলুকে বসবাসকারী অনাবাসী ভারতীয়। চল্লিশ ছুঁই ছুঁই এই ব্যক্তির উত্থান এক কাল্পনিক রূপকথার মতো। বর্তমানে তাঁর অবস্থা বেশ স্বচ্ছল , ব্যাংকে ইতিমধ্যে বেশ কিছু ডলার তিনি জমিয়েছেন। সফল একজন ভারতীয় হিসেবে তিনি প্রবাসী বাঙালি মহুয়াকে বিবাহ করেছেন। তাঁদের একমাত্র সন্তান হলো লিসা। বাবার ভিডিও ফ্লিমের এই অদ্ভুত খেয়াল মেটাতে অনেক দিন পর তিনি সপরিবারে ভারতে আসছেন।
৪) মনোতোষঃ
একটি ছবি দেখিয়ে নীল বলে ইনি রাজনারায়ণ বাবুর মেজো ছেলে মনোতোষ চৌধুরী। চৌধুরী ভিলার ইনি সবচেয়ে ট্রাজিক চরিত্র। বংশের ধারা অনুসারে ইনি সুন্দর ও সুঠামদেহী , কিন্তু ছোট্টবেলায় গলার এক জটিল রোগে তিনি কথা বলার শক্তি হারিয়েছেন। আবার মনের মধ্যে যখন কোনো একটা আবেগ হামাগুড়ি দেয় , চেতনা আঁচড় কাটে বা তিনি তাঁর মনের ভাব ও ভালোবাসাকে প্রকাশ করতে যান তখন তিনি একটু অস্বাভাবিক আচরণ করেন। সেই সময় তাঁর স্ত্রী স্বর্ণালী ছাড়া আর কেউ তাঁকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। তবে একটা কথা না বললেই নয় তিনি অদ্ভুত সুন্দর ছবি আঁকেন। রং-তুলি দিয়ে তিনি ছবির মাধ্যমে তাকে প্রকাশ করেন। সেই সময় মনে হয় তাঁর মধ্যে রয়েছে এক অত্যন্ত সংবেদনশীল মন , তাঁর চোখে তখন দূর দিগন্তের ছায়া কিংবা গ্রাম বাংলার কাকবন্ধ্যা সরসীর জল।
তুমি জানো বিপাশা আমি অকারণে কোনো মানুষের প্রশংসা করি না। আমি তাঁর চোখে প্রতিভার যে বিচ্ছুরণ দেখেছি তাতে মনে হয়েছে তাঁর মুখে যদি ভাষা থাকতো তাহলে তিনি আধুনিক ছবির জগতে বিপ্লব এনে দিতে পারতেন।
কথা না বলতে পারার বেদনা থেকে তার মধ্যে জন্মেছে এক আশ্চর্য হীনমন্যতা। তাই তিনি সব সময় নিজেকে গুটিয়ে রাখেন । আমি যতটুকু বুঝেছি তাতে তাঁর একমাত্র ভালোবাসার জায়গাটা হলো এখন স্ত্রী স্বর্নালীর সান্নিধ্য। সেই সান্নিধ্যে সে নিজেকে নিরাপদ মনে করে। তুমি যদি মনোতোষ বাবুকে ঠিকমতো হ্যান্ডেল করতে পারো তাহলে দেখবে এই বোবা মানুষটিই আকারে ইঙ্গিতে, তুলির আঁচড়ে এমন কিছু খবর দেবেন যা তোমাকে হতবাক করে দেবে।
Posts: 234
Threads: 2
Likes Received: 461 in 146 posts
Likes Given: 165
Joined: Nov 2022
Reputation:
129
৫) শিবতোষঃ
এবার বিপাশা নীলের হাতে অত্যন্ত সুদর্শন ও ব্যক্তিত্বময় একজনের ছবি দেখতে পেল। নীল বললো ইনি রাজনারায়ণ বাবুর ছোটো ছেলে। অ্যাকাউন্টেসিতে মাস্টার্স করার পর স্টেট ব্যাংকের ব্রাঞ্চ ম্যানেজার হিসেবে জামশেদপুরে পোস্টেড। সেখানে অফিস থেকে একটা বিশাল বাংলো পেয়েছেন। সেই বাংলোতে তিনি স্ত্রী মোনালি ও পাঁচ বছরের ছেলে সুকান্তের সঙ্গে থাকেন । তিনিও এক সপ্তাহের ছুটি নিয়ে বাবা-মায়ের বিবাহবার্ষিকী অনুষ্ঠানে আসছেন।
৬) চন্দ্রিমাঃ
রাজনারায়ণ বাবুর বড় মেয়ে চন্দ্রিমা , বাড়ির লোক সংক্ষেপে চনু বলে ডাকে। নারীদের সৌন্দর্য্যের সংজ্ঞা নতুন করে দিতে হবে এঁর সামনে দাঁড়ালে। বিপাশা ছবিটার দিকে তাকিয়ে বলে একজন নারীর এতরূপ হতে পারে ? কী সুন্দর শান্ত সমাহিত রূপ। এই রূপ পুরুষকে জ্বালিয়ে ছারখার করে না , বরং স্নিগ্ধতার পরশ বুলিয়ে পুরুষ হৃদয়কে শান্তি প্রদান করে। নিজের রূপের প্রতি কোনোদিনই তাঁর যত্ন নেই , তা সত্ত্বেও ছত্রিশ অতিক্রান্ত চন্দ্রিমাকে দেখলে মনে শিল্পীর ক্যানভাসে আঁকা দুর্গা প্রতিমা। এখনো হাসলে তাঁর দুগালে টোল পড়ে।
তাঁর বিবাহ হয়েছে কোলকাতার নামজাদা ফ্লোরিষ্ট দীপ্তেন্দুর সঙ্গে। দীপ্তেন্দুর প্রপিতামহ দর্পনারায়ণ দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার জয়নগরে গড়ে তুলেছিলেন বিশাল নার্সারিসহ জমিদারি। দীপ্তেন্দুর খ্যাতি ও তাঁর চাষ করা ফুল ভারতের বাইরেও ছড়িয়ে পড়েছে।
তাঁদের একমাত্র ছেলে রীতেশ শুধুমাত্র চন্দ্রিমার জেদের কারণে কার্শিয়াং-এর একটা কনভেন্ট কলেজে পড়ে।
৭) রূপকথাঃ
রাজনারায়ণ বাবুর মেজো মেয়ে রূপকথা। নামটা তাঁর রূপের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। তাঁর দেহে এত রূপ যে তাঁকে পরীদের দেশের রানী বলে মনে হয়। বছর তিরিশের এই নারী চৌধুরী ভিলার খুব ইন্টারেস্টিং চরিত্র। চৌধুরী বাড়িতে কুড়ি পার হলেই মেয়েদের বিয়ে দিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু রাজনারায়ণ বাবু তাঁর মেজাজী ও বাপের আহ্লাদী মেজো মেয়েকে আজ পর্যন্ত পাত্রস্থ করতে পারেন নি। কোনো এক অজ্ঞাত কারণে সে সারাজীবন অবিবাহিতা থেকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
রূপকথা মেয়ে হিসেবে মার্জিত , পরিশীলিত, সংস্কৃতিমনা এবং আশ্চর্যজনকভাবে চৌধুরী ভিলার মতো গোঁড়া পরিবারের সদস্য হলেও ভারত নাট্যমের পাবলিক পারফরম্যান্স করে।
বিপাশা আমার মনে হয় রূপকথার জীবনে কোনো অন্ধকার দিক আছে যার জন্য সে পুরুষ জাতটাকেই বিশ্বাস করে না। তোমাকে তাঁর জীবনের সেই অজানা দিকটা উন্মোচিত করতে হবে।
বিপাশা ভাবে কাজের প্রতি নীলের কি ডেডিকেশন ! প্রতিটি চরিত্র সে সাংঘাতিকভাবে বিশ্লেষণ করে। প্রতিটি ফটো বিভিন্ন অ্যাঙ্গেল থেকে স্টাডি করে মানুষটির কাল্পনিক মূর্তি তৈরি করে , তার সঙ্গে কথা বলে , যতক্ষণ না তাঁর সম্পর্কে একটা স্বচ্ছ ধারণা তৈরি হচ্ছে।
৮) স্বর্ণালীঃ
মনোতোষ বাবুর স্ত্রী স্বর্ণালী চৌধুরী ভিলার সবচেয়ে ট্রাজিক চরিত্র। তাঁর মতো রূপবতী নারীকে শুধুমাত্র দুঃসহ দারিদ্র্য ও বাবার লোভের কারণেই সব জেনেশুনে এক বোবা পুরুষকে স্বামী হিসেবে মেনে নিতে বাধ্য হয়েছে। বিবাহের দশ বছর পরেও সে মাতৃত্বের স্বাদ পায়নি। ডাক্তারি পরীক্ষায় জানা গেছে মনোতোষ বাবু এই পৃথিবীতে কোনো দিন কারুর বাবা হতে পারবেন না।
নীল বলে চলে - বাকরুদ্ধ স্বামী ও নিজের বন্ধ্যাত্ব - এই দুটো অভিশাপ মাথায় নেওয়া সত্ত্বেও তিনি শরতের শিউলির মতো অভিমানিনী। বিপাশা অবাক হয়ে শোনে একটা মানুষ চিত্রনাট্যের কোনো চরিত্রের সঙ্গে কতটা একাত্ম হতে পারলে তবেই এই কথাগুলো বলতে পারে। নীল তখনো বলে চলেছে - বিপাশা তোমাকে মনে রাখতে হবে চৌধুরী ভিলার গোপন চাবিকাঠিটি কিন্তু স্বর্নালীর আঁচলে বাঁধা। তোমাকে সেখানে নিশি কুটম্ব হয়ে প্রবেশ করে খুলে ফেলতে হবে চৌধুরী ভিলার রহস্যময় দ্বার। আর তাহলেই দেখবে এই ভিডিও ফ্লিমটি হিট করার মতো রসদ তুমি পেয়ে যাবে। তোমার ক্যামেরা এই চিত্রনাট্যে প্রথম স্বর্নালীর ওপরেই ফোকাস করবে।
৯) পদ্মাবতীঃ
ইনি রাজনারায়ণ বাবুর আদরের বোন। বিপাশা তুমি এঁর দেখা পাবে চৌধুরী ভিলার একতলার একটা ঘরে , মাঝ দুপুরেও ঘরে আধো অন্ধকার, সূর্য এখানে বোধহয় সলাজ এক বধূ।
এই মহিলা বা বৃদ্ধা যাই বলো না কেন তুমি , তিনি কিন্তু দু দুবার চোখের ছানি অপারেশন করেও চোখে ভালো দেখতে পান না। প্রায় পঞ্চাশ বছর আগে তাঁর বিবাহ হয়েছিলো উত্তর কোলকাতার এক বনেদী পরিবারে। কিন্তু দুঃখের ব্যাপার হলো বিবাহের পাঁচ মাসের মধ্যে এক দুর্ঘটনায় স্বামীকে হারিয়ে বিধবা অবস্থায় ভাইয়ের সংসারে ফিরে আসেন এবং ভাইয়ের সংসারের জোয়াল নিজের কাঁধে তুলে নেন।
নীল বলে বিপাশা এর পিছনেও কোনো রহস্যময় অতীত চাপা পড়ে আছে। তোমাকে সাবধানে খনন করে সেই ইতিহাস বের করে আনতে হবে।
নীল চিত্রনাট্যের সমস্ত চরিত্রকে বিপাশার সামনে যথাযথভাবে উপস্থাপন করে বলে , বিপাশা এই ভিডিও ফ্লিমের চিত্রনাট্য তোমাকে যত্ন নিয়ে লিখতে হবে। তুমি এতোদিন জর্জ টেলিগ্রাফে যা যা শিখেছো বা বই পড়ে যা জেনেছো তার পরীক্ষা এই চিত্রনাট্যের সংলাপ লেখার মাধ্যমে হয়ে যাবে। এই ভিডিও ফ্লিম হবে তোমার সন্তানের মতো , আমি দূর থেকে দেখবো তুমি তোমার সন্তানকে কতটা যত্ন করে হেলদি করে তুলছো। আমি শুধু তোমাকে দূর থেকে গাইড করে যাব , মূল কাজটা তোমাকেই করতে হবে।
একটি সত্তর অতিক্রান্ত মানুষ এই ভিডিও ফ্লিমের মাধ্যমে তার অতীতকে ফিরে দেখতে চেয়েছেন। হয়তো এই শেষবারের মতো সকলের সঙ্গে তিনি মিলিত হচ্ছেন। মৃত্যুর আগে আবার সকলকে একত্রে পাবেন কিনা ঠিক নেই। এই ভিডিও ফ্লিমটার মাধ্যমেই তিনি সকলকে বারবার ছুঁয়ে দেখতে চাইছেন। সুতরাং এই ভিডিও ফ্লিমটি শুধুমাত্র বিনোদনের জন্য নয় , এটা একটা পরিবারের জীবন্ত দলিল , এর সাথে জড়িয়ে থাকবে চৌধুরী ভিলার ইতিহাস , তার ভাব-ভালোবাসা , আশা-নিরাশা , চেতন-অচেতন -- সব কিছু। তাই এই দায়িত্ব আমি ভরসা করে তোমার হাতে ছেড়েছি। আশাকরি তুমি আমার বিশ্বাসের মর্যাদা রাখবে। তোমাকে এই চিত্রনাট্য লেখার জন্য তোমার দৃষ্টিকে দিগন্ত প্রসারী করতে হবে , তোমার মনের ভাবনা সিরাজের কবুতরের মতো অসীম আকাশে ভেসে বেড়িয়ে তোমার জিজ্ঞাসাগুলোর উত্তর খুঁজে নিয়ে আসবে। তোমার সাফল্যের চাবিকাঠি হবে তোমার মনের সংবেদনশীলতা, তুমি সংবেদনশীল হলে তবেই চৌধুরী ভিলার বৈচিত্র্যময় চরিত্রগুলোর সঙ্গে একাত্ম হয়ে যেতে পারবে , আর তাহলেই দেখবে তোমার চিত্রনাট্য তৈরি হয়ে গেছে।
জর্জ টেলিগ্রাফে তোমাদের ব্যাচের মধ্যে তুমিই ছিলে অত্যন্ত প্রমিসিং এবং তোমার কাজের প্রতি ছিলো অসীম ভালোবাসা, কাজটা যতক্ষণ না নিখুঁত হচ্ছে ততক্ষণ তুমি লড়ে যেতে । তোমার এই গুণগুলোই আমাকে মুগ্ধ করেছিলো। তাই আমি তোমাকে আমার সহকারিনী হিসেবে নির্বাচিত করেছি। তুমি নিশ্চয়ই তার মর্যাদা রাখবে। এই বলে নীল বিপাশার দুই কাঁধ ধরে কাছে টেনে ওর কপালে একটা চুমু খায়। দুজনের চোখ পরস্পরের সঙ্গে মিলে গিয়ে যেন এক সেতুবন্ধ তৈরি করেছে।
বিপাশা বোঝে নীল কতটা ভরসা করে ওকে এই গুরুদায়িত্ব দিয়েছে। তাই হরিশ মুখার্জি রোডে তাদের বাড়ির দোতলার চিলেকোঠায় বসে আবেগ , মনের মাধুর্য , বাস্তবের কঠোরতা সব কিছুর মিশেলে সে পাতার পর পাতা কাটাকুটি করে সংলাপ লেখে। লেখার পর নিজেই সেটা ট্রায়াল দেয় কতটা ভালো হয়েছে দেখার জন্য, যে অংশ পছন্দ হয় না সেটা কলমের এক খোঁচায় বাতিল করে আবার লেখে। প্রথমে বিদিশার কাছে চিত্রনাট্যের চরিত্রগুলো আবছা আবছা ভাবে ধরা দিচ্ছিল। এতগুলো চরিত্র, তাদের বৈচিত্র্যময় জীবনযাত্রা ও জীবন দর্শন, নিজস্ব উটাচন ও অন্ধকার, কারুর রিক্ততা তো কারুর উন্নাসিকতা, কেউ জীবনযুদ্ধে পিছিয়ে পড়েছে তো কেউ দুরন্ত গতিতে এগিয়ে চলছে -- এসব কিছু মিলিয়ে মিশিয়ে সুবিশাল এক ক্যানভাসে সংলাপের মাধ্যমে প্রত্যেকটা চরিত্রকে ফুটিয়ে তোলা রীতিমতো এক চ্যালেঞ্জিং কাজ। সাত দিন ধরে লড়াই করে শব্দের নিরন্তর কাটাকুটি ও জাগলারির মাধ্যমে বিপাশা চৌধুরী ভিলার চিত্রনাট্য লেখার কাজ শেষ করে। তারপর সুখবরটা নীলকে জানায়।
নীল তাকে বিকেলে আপাত নির্জন রবীন্দ্র সরোবরের পাড়ে চিত্রনাট্যের খাতা নিয়ে আসতে বলে। ওখানেই লেমনটি খেতে খেতে প্রকৃতির সঙ্গে একাত্ম হয়ে চিত্রনাট্যটা কাটাছেঁড়া করবে।
কথামতো রবীন্দ্র সরোবরের নির্জন এক কোণায় সিমেন্টের এক বেঞ্চে বসে বিপাশা তার চিত্রনাট্য পাঠ করতে শুরু করে। বিষন্নতার প্রতিমূর্তি স্বর্ণালীকে প্রধান চরিত্র করে বিপাশা যে চিত্রনাট্য তৈরি করেছে তা এক কথায় অনবদ্য। নীল এক ঘোরের মধ্যে হাততালি দিতে দিতে বিপাশাকে টুক করে একটা চুমু খেয়ে বসে।
বিপাশা গম্ভীর কন্ঠে বলে -- "এটা কি হলো?'
নীল উত্তর দেয় -- "এটা তোমার পরিশ্রমের পুরস্কার।"
-- " তাহলে এই পুরস্কার তো ভাগ করে নিতে হয় , তোমার সাহায্য ছাড়া এটা সম্পূর্ণ করা আমার সাধ্য ছিল না।"
এই বলে বিপাশাও নীলকে ঠোঁটে টুক করে একটা চুমু খেয়ে বসে। দুজনেই হো হো করে হেসে ওঠে।
নীল বলে -- " এই ভিডিও ফ্লিমটার নাম কি হবে?"
বিপাশা বলে -- " এই ভিডিও ফ্লিম একটা পরিবারের সদস্যদের গোপন জবানবন্দি নিয়ে। তাই আমার মতে এই ভিডিও ফ্লিমের নাম 'গোপন কথাটি রবে না গোপনে' -- এটাই হওয়া উচিৎ।"
নীল বিপাশার কলাপে ছোট্ট একটা চুমু খেয়ে বলে -- " এই জন্যই তোমাকে এত পছন্দ। তোমার চিন্তাধারা আমার সঙ্গে দারুণ ম্যাচ করে। "
এরপর ঠিক হয় অনুষ্ঠানের ঠিক সাত দিন আগে থাকতেই তারা চৌধুরী ভিলায় প্রতিদিন হানা দেবে। প্রথম দিন ভোরবেলায় স্বর্নালীর ওপর ক্যামেরা ফোকাস করে ভিডিও ফ্লিম তৈরির কাজটা শুরু হবে।
The following 13 users Like কলমচি৪৫'s post:13 users Like কলমচি৪৫'s post
• behka, Boss1996, ddey333, incboy29, kapil1989, kenaram, Matir_Pipre, M¡Lf€@TeR, pradip lahiri, raikamol, ray.rowdy, অভিমানী হিংস্র প্রেমিক।, কচি কার্তিক
Posts: 65
Threads: 1
Likes Received: 67 in 37 posts
Likes Given: 3
Joined: Feb 2021
Reputation:
6
Posts: 234
Threads: 2
Likes Received: 461 in 146 posts
Likes Given: 165
Joined: Nov 2022
Reputation:
129
(27-01-2023, 07:40 PM)true man Wrote: দারুন হচ্ছে
ধন্যবাদ।
•
Posts: 546
Threads: 7
Likes Received: 643 in 347 posts
Likes Given: 2,591
Joined: Nov 2019
Reputation:
65
(27-01-2023, 06:23 PM)কলমচি৪৫ Wrote: আমার প্রথম থ্রেড 'মৌয়ের যৌবনজ্বালা' পাঠকুলের ভালো লাগেনি। তার প্রমাণ তাদের নিরুত্তর থাকা। কিন্তু তা সত্ত্বেও নতুন আর একটা থ্রেড নিয়ে হাজির। এই থ্রেডেও কোনো অশ্লীল গালিগালাজ, ইন্সেস্ট কনটেন্ট - এসব এই থ্রেডে নেই। তাই যাঁরা এই ধরণের গলপ পছন্দ করেন তাঁরা এই থ্রেডে এলে নিরাশ হবেন। ধন্যবাদ।
দেখো ভাই, এমনটা নয় যে তোমার "মৌয়ের যৌবনজ্বালা" পাঠক/পাঠিকাদের পচ্ছন্দ হয়নি. হয়েছে, তবে xossipy-তে একটা ব্যাপার তুমি লক্ষ্য করতে পারবে যে এখানে তুমি views ঠিকই আছে, এমনকি likes-এর সংখ্যাও ঠিকঠাক থাকে কিন্তু মন্তব্য সেই অনুপাতে থাকে না. কারণ xossipy-তে কোনো thread access করতে পাঠক/পাঠিকাদের অন্য অনেক এই ধরণের forum-এর মতো মন্তব্য করতে বাধ্য করা হয় না. আমি বেশ কয়েকটা forum-এর কথা বলতে পারি যেখানে পাঠক/পাঠিকাদের একটা নির্দিষ্ট সংখ্যক comments/likes/reactions না হলে thread-এ ঢুকতেই পারবে না. জানি পাঠক/পাঠিকাদের মন্তব্যই লেখক/লেখিকার উৎসাহ ও অনুপ্রেরণার উৎস. লেখক/লেখিকারা লিখে থাকে পাঠক/পাঠিকাদের জন্য. স্বাভাবিকভাবেই তাদের মন্তব্য/প্রতিক্রিয়া না পেলে লেখক/লেখিকাদের পুরো পরিশ্রমই মাটি এরকম মনে হওয়াটা খুবই স্বাভাবিক.
তুমি মন খারাপ করো না. তোমার লেখা খুব ভালো হচ্ছে. বরঞ্চ বলা যায় তোমার লেখার মান খবুই উঁচু দরের. গল্পে আরেকটু বেশী মশলাপাতি যোগ করো, বিশেষ করে গল্পের কাহিনীতে; দেখবে আরো বেশী হারে পাঠক/পাঠিকাদের কাছ থেকে response পেতে শুরু করেছো.
আচ্ছা, আমি যে তোমাকে মোট তিনটি গল্প পাঠিয়েছিলাম. পড়েছো কি?
•
Posts: 18
Threads: 0
Likes Received: 14 in 9 posts
Likes Given: 390
Joined: Mar 2022
Reputation:
0
পরবর্তী আপডেটের অপেক্ষায় রইলাম।
Posts: 234
Threads: 2
Likes Received: 461 in 146 posts
Likes Given: 165
Joined: Nov 2022
Reputation:
129
(27-01-2023, 11:26 PM)ray.rowdy Wrote: দেখো ভাই, এমনটা নয় যে তোমার "মৌয়ের যৌবনজ্বালা" পাঠক/পাঠিকাদের পচ্ছন্দ হয়নি. হয়েছে, তবে xossipy-তে একটা ব্যাপার তুমি লক্ষ্য করতে পারবে যে এখানে তুমি views ঠিকই আছে, এমনকি likes-এর সংখ্যাও ঠিকঠাক থাকে কিন্তু মন্তব্য সেই অনুপাতে থাকে না. কারণ xossipy-তে কোনো thread access করতে পাঠক/পাঠিকাদের অন্য অনেক এই ধরণের forum-এর মতো মন্তব্য করতে বাধ্য করা হয় না. আমি বেশ কয়েকটা forum-এর কথা বলতে পারি যেখানে পাঠক/পাঠিকাদের একটা নির্দিষ্ট সংখ্যক comments/likes/reactions না হলে thread-এ ঢুকতেই পারবে না. জানি পাঠক/পাঠিকাদের মন্তব্যই লেখক/লেখিকার উৎসাহ ও অনুপ্রেরণার উৎস. লেখক/লেখিকারা লিখে থাকে পাঠক/পাঠিকাদের জন্য. স্বাভাবিকভাবেই তাদের মন্তব্য/প্রতিক্রিয়া না পেলে লেখক/লেখিকাদের পুরো পরিশ্রমই মাটি এরকম মনে হওয়াটা খুবই স্বাভাবিক.
তুমি মন খারাপ করো না. তোমার লেখা খুব ভালো হচ্ছে. বরঞ্চ বলা যায় তোমার লেখার মান খবুই উঁচু দরের. গল্পে আরেকটু বেশী মশলাপাতি যোগ করো, বিশেষ করে গল্পের কাহিনীতে; দেখবে আরো বেশী হারে পাঠক/পাঠিকাদের কাছ থেকে response পেতে শুরু করেছো.
আচ্ছা, আমি যে তোমাকে মোট তিনটি গল্প পাঠিয়েছিলাম. পড়েছো কি?
তোমার পাঠানো গল্প পড়েছি, কিন্তু এই উপন্যাসটা লিখতে শুরু করে দিয়েছিলাম বলে ওটার কাজ শুরু করতে পারিনি।
•
Posts: 234
Threads: 2
Likes Received: 461 in 146 posts
Likes Given: 165
Joined: Nov 2022
Reputation:
129
31-01-2023, 08:00 AM
(This post was last modified: 10-02-2023, 09:57 PM by কলমচি৪৫. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
দ্বিতীয় অধ্যায়ঃ
স্বর্ণালীর উপাখ্যান
পরিচ্ছেদ - ১ঃ একটা নতুন সকালের জন্ম
কথামতো এক ভোরে নীল ও বিপাশা এসে হাজির চৌধুরী ভিলার ছাদে। ছাদের এক কোণায় কার্নিস ধরে দাঁড়িয়ে আছে স্বর্ণালী। মায়াবী এক সকালের জন্ম হচ্ছে কোলকাতায়। সূর্য তখনও ওঠেনি। পূর্বাকাশে রক্তিম আলোর বন্যা , আর ঘুম ভাঙা পাখিদের কুজন জানান দিচ্ছে আবার একটা সকাল হচ্ছে। ক্যামেরা চলছে , কিন্তু কোনো সংলাপ নেই। এই মুহূর্তে বিপাশা স্বর্ণালীর নানান অভিব্যক্তি ধরে রাখছে।
গঙ্গার দিক থেকে আসা ঠান্ডা হাওয়ায় স্বর্ণালীর চুল উড়ছে। সে হাত দিয়ে বারবার মুখের উপর এসে পড়া চুলগুলোকে সরিয়ে দিচ্ছে। স্বর্ণালী আনমনে আকাশ দেখতে দেখতে ভাবে এখানে যেমন অদূরে বহমান গঙ্গা , ঠিক তেমনই মুর্শিদাবাদে তাদের ঘরের পাশ দিয়ে আঁকাবাঁকা পথে বয়ে যাচ্ছে ময়ূরাক্ষী নদী। বাবা তাকে প্রতিদিন ভোরে তুলে দিতো। সে দেখতো একটা সকালের জন্ম , দেখতো কুঁড়ি থেকে ফুলে পরিণত হওয়া গোলাপটাকে। তারপর পূর্বাকাশে আলোর বন্যা, ঝলমল করে উঠতো চারপাশ।
সেই অভ্যাসটা এখনও রয়ে গেছে। যদিও কোলকাতার সূর্যোদয়টা ওখানকার মতো নয় , তবুও কাশীপুরে গঙ্গার তীরে অবস্থিত এই অট্টালিকার ছাদ থেকে পুণ্যতোয়া গঙ্গা, ঝাঁকে ঝাঁকে পায়রার ওড়াওড়ি - এসব দেখতেও ভালোলাগে।
ভোরের এই সময়টুকু স্বর্ণালী নিজের মতো করে উপভোগ করে। তার মনে এখন অনেক স্মৃতির গুঞ্জন। তবে আজ একটু সতর্ক সে । এই মুহূর্তে তার সমস্ত চলাফেরা, মুখের অভিব্যক্তি - সবই ক্যামেরা বন্দী হচ্ছে। না হলে এই সময় প্রকৃতির স্নেহ পরশে একটু কেঁদে নিয়ে সে হাল্কা করে নিজের বুকের ভেতর জমাট বাঁধা দুঃখ-কষ্টের পাহাড়টাকে।
সেটুকু বাদ দিয়ে স্বর্ণালীর অভিব্যক্তি অন্যান্য দিনের মতোই স্বাভাবিক। নীল ও বিপাশা অবাক হয়ে দেখে পুব আকাশের রং বদলের সঙ্গে সঙ্গে গভীর চিন্তায় মগ্ন স্বর্ণালীর মুখের অভিব্যক্তিও বদলে যাচ্ছে। পরের অধ্যায়ে স্বর্ণালীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হওয়ার সুযোগ করে দিতে নিঃশব্দে ক্যামেরা বিপাশার হাতে ছেড়ে দিয়ে নীল ওখান থেকে সরে যায়।
পরিচ্ছেদ - ২ঃ
স্বর্ণালীর সাক্ষাৎকার
ক্যামেরা নিয়ে বিপাশা স্বর্ণালীর সঙ্গে সঙ্গে যেতে লাগলো। স্বর্ণালীর এক একটি অভিব্যক্তি ধরে রাখছে সেলুলয়েড পর্দা। এরপর এডিটিং এর সময় তার কাটাছেঁড়া করা হবে। অপ্রয়োজনীয় ও বক্তার ক্ষতি করতে পারে এমন বক্তব্য ছেঁটে বাদ দেওয়া হবে।
স্বর্ণালী রান্নাঘর থেকে তাঁর স্বামীর জন্য ও নিজেদের জন্য কয়েক কাপ চা করে নিয়ে এল । শোবার ঘরে এসে দেখে মনোতোষ তখনও ওঠেননি। তাঁর চা টা হটপটে রেখে দিয়ে দুটো কাপে নিজের ও বিপাশার জন্য চা ঢালল। তারপর লাগোয়া পাশের ঘরে (মনোতোষ বাবুর ছবি আঁকার ঘর) বিপাশাকে নিয়ে বসল।
চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে বিপাশা স্বর্ণালীকে বলে - আমি আপনাকে কয়েকটা প্রশ্ন করবো , আপনি ইচ্ছে হলে জবাব দেবেন নাহলে দেবেন না।
স্বর্ণালী বলে - বাবা (শ্বশুর মশাই) হুকুম করেছেন না বলে উপায় আছে। আপনি জিজ্ঞেস করুন।
বিপাশা জিজ্ঞেস করে - আচ্ছা স্বর্ণালী দেবী, এই যে আপনার মতো রুচিশীল, সুন্দরীর বিয়ে প্রতিবন্ধীর সঙ্গে না হয়ে কোনো স্বাভাবিক মানুষের সঙ্গেও তো হতে পারতো ? এই চিন্তা আপনাকে কষ্ট দেয় না ?
স্বর্ণালী একটু ম্লান হেসে উত্তর দেয় - আমি যে দারিদ্র্যতার মধ্যে মানুষ হয়েছি তাতে এই বাড়িতো আমার কাছে স্বর্গ। আমি দরিদ্র ব্রাক্ষণ পরিবারের মেয়ে। আমরা তিন বোন। আমিই ওদের মধ্যে বড়ো। আমাদের দুবেলা ঠিকমতো খাবার জুটতো না। এখানে সে সমস্যা তো নেইই , বরং ব্যাপক প্রাচুর্যের মধ্যে আছি। আর চারদিকে যা শুনছি তাতে অনেকেরই স্বাভাবিক স্বামী নিজের বউকে বাড়িতে রেখে দিয়ে অন্যের বউয়ের সঙ্গে বা বারবনীতার সঙ্গে ফস্টিনস্টি করে। আমার স্বামীর তো সেই দোষ নেই। তিনি কথা বলতে পারেন না এটাতো ঈশ্বরের অভিশাপ। আর তিনি কথা বলতে না পারলেও আকারে ইঙ্গিতে এবং তুলির টানে আমাকে যে কথা বলতে চান সেটা আমার বুঝতে এতটুকু অসুবিধা হয় না। তিনি আমাকে যে কতটা ভালোবাসেন তা বোঝাতে আমাকে মডেল বানিয়ে শকুন্তলা সিরিজ এঁকেছেন এবং নিজেকে দুষ্মন্তের আসনে বসিয়েছেন। এই দেখুন সেই ছবিগুলো।
Posts: 234
Threads: 2
Likes Received: 461 in 146 posts
Likes Given: 165
Joined: Nov 2022
Reputation:
129
31-01-2023, 08:04 AM
(This post was last modified: 10-02-2023, 10:01 PM by কলমচি৪৫. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
বিপাশা ক্যানভাসে মনোতোষের তুলির টানে ফুটে ওঠা শকুন্তলার প্রতি দুষ্মন্তের ভালোবাসার গভীরতা নিরীক্ষণ করে অবাক হয়ে যায়। ছবিগুলো দেখে এটা সে বুঝতে পারে মনোতোষবাবু এই ছবিগুলোর মধ্যে দিয়ে স্বর্ণালীর প্রতি তার ভালোবাসার গভীরতা কতটা সেটা বোঝাতে চেয়েছেন।
স্বর্ণালী বলে চলে - আমার স্বামী কতটা পরিশীলিত ও সংবেদনশীল সেটা আমি বাসর রাতেই টের পেয়েছি। তবে সে রাতে কী হয়েছিল সেটা নিশ্চয়ই শুনতে চাইবেন না ? আর আমিও তা ক্যামেরার সামনে বলবো না। তবে এটুকু বলি সেদিন থেকে আমি প্রতিজ্ঞা করেছি ওঁর সঙ্গে বন্ধুর মতো মিশবো এবং স্ত্রী হিসেবে সব কর্তব্য পালন করবো।
বিপাশা বলে -- না না আপনাকে স্বামী-স্ত্রীর বাসর রাতে কী হয়েছিল সেটা আমার জানার বিষয় নয়। তবে আর একটা প্রশ্ন আমাকে খোঁচা দিচ্ছে, সেটা হলো আপনি যখন জানতে পারলেন আপনার আর এ জীবনে মা হওয়া সম্ভব নয় তখন আপনার অনুভূতি কেমন হয়েছিল?
স্বর্ণালী বলে -- এই পৃথিবীতে সব নারীই কী মা হতে পারে ? তবুও মাঝে মাঝে মনে হয় একটা যদি ছোট্ট ছেলে থাকতো আমার তাহলে কী ভালোই না হতো। জানেন মাঝে মাঝে আমি হাঁফিয়ে উঠি , আর তখন মনে হয় আমি তিরিশ বছরের তরুণী নই , আমার যৌবন অনেক দিন আগেই হারিয়ে গেছে। তবে আমার স্বামীকে নিয়েই দিনের অনেকটা সময় কেটে যায়। সে অণুক্ষণ আমাকে ভালোবাসার চাদরে মুড়ে রেখেছে, আমাকে চোখের আড়াল হতে দেয় না। শুধু যখন ক্যানভাসের সামনে তুলি নিয়ে বসে তখন তিনি একেবারে অন্য মানুষ , তখন তাঁর দেহটাই এঘরে পড়ে থাকে আর মন কোথায় হারিয়ে যায় ঈশ্বর জানেন। তবে যখনই তার অভিমান হয় কিংবা ভেতরে কোনো আবেগ ফুলে ফেঁপে ওঠে ও আমাকে জড়িয়ে ধরে আমার বুকের মধ্যে ছোটো ছেলের মতো মুখ গুঁজে থাকে। এই দেখুন আপনাকে কীসব বলে বসলাম , ছিঃ ছিঃ, মাথাটা একদম গেছে।
বিপাশা দেখে বলতে বলতে স্বর্ণালীর গালদুটো লজ্জায় লাল হয়ে গেছে। বিপাশা স্বামী-স্ত্রীর এই ভালোবাসা দেখে অবাক হয়ে যায়। সে ভাবে নিদারুণ দ্রারিদ্রতার কষাঘাতে জর্জরিতা কুড়ি বছর বয়সে মেয়েটি এক বোবা ছেলেকে মেনে নিয়েছিল স্বামী হিসেবে, হয়তো ভেবেছিল সন্তানবতী হয়ে একদিন সে পল্লবিত হবে। কিন্তু তার সেই স্বপ্ন পূরণ হয়নি , তথাপি সে এতোটুকুও বিষণ্ণবতী হয়নি , তার স্বামীকে সে অত্যন্ত গভীরভাবে ভালোবাসে। এতটুকু অবহেলা করে না তার প্রতিবন্ধী স্বামীকে। এরকম স্ত্রীকেই স্ত্রীরত্ন বলা হয়।
বিপাশার চটকা ভাঙে স্বর্ণালীর ডাকে -- কী এত ভাবছেন ?
বিপাশা বলে -- আপনাকে দেখে শ্রদ্ধায় মাথা নত হয়ে আসছে। বুকের মধ্যে এত কষ্ট জমিয়ে রেখেও কী হাসিখুশি রয়েছেন আপনি! আচ্ছা আর একটা মাত্র প্রশ্ন করে আপনার কাছ থেকে আজকের মতো বিদায় নেবো। স্বামী ছাড়া আর কোনো পুরুষ আপনার জীবনে এসেছিল কী ?
স্বর্ণালীর বলে -- এখন আমার স্বামীই আমার একমাত্র ভালোবাসা। তবে জীবনে আর কেউ আসেনি এটা বলে আপনার কাছে মিথ্যা বলতে পারবো না । আমরা তো অত্যন্ত গরীব ছিলাম। তাই বাবা পড়াশোনা করার জন্য কোনো টিউশন দিতে পারেনি। আমি ইংরেজিতে একটু কাঁচা ছিলাম। আমাদের গ্রামের এক দাদা , পরিমলদা আমাকে বিনা পয়সায় দেখিয়ে দিত। তার জন্যই আমি উচ্চমাধ্যমিক পাশ করতে পেরেছি। তার প্রতি আমার মুগ্ধতা ও ভালোলাগা কাজ করতো । মুখে প্রকাশ না করলেও পরিমলদা আমার প্রতি দুর্বল সেটা বুঝতে পারতাম। তারপর হঠাৎ করে আমার বিয়ে ঠিক হয়ে যাওয়ার পর পরিমলদা একদিন তার বাড়ির পাশের আমবাগানে ডেকে বলেছিলো সে আমাকে ভালোবাসে, আমিও তাকে বলেছিলাম তারজন্য আমার মনেও একটা সফট কর্ণার আছে। কষ্ট হলেও তাকে কিন্তু বলেছিলাম --
-- বিয়ের সব কিছু ঠিক হয়ে যাওয়ার পর বাবার মুখে চুনকালি দিয়ে এখন আমি তার সঙ্গে পালিয়ে বিয়ে করতে পারবো না। সেই সম্পর্কের সেখানেই ইতি।
আর এবাড়িতেই একজন আমার সঙ্গে জোর জবরদস্তি করেছিলো। সেটা আমি আর বলবো না , তিনি যদি নিজের মুখে তাঁর অপরাধের কথা স্বীকার করেন তাহলে জানতে পারবেন।
বিপাশা বলে -- ঠিক আছে আজ উঠি। এখনও পাঁচ- ছদিন আপনাদের বাড়িতে থাকবো। প্রয়োজন পড়লে আপনার সঙ্গে আবার কথা বলবো।
*****দ্বিতীয় অধ্যায় দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ সমাপ্ত*******
Posts: 546
Threads: 7
Likes Received: 643 in 347 posts
Likes Given: 2,591
Joined: Nov 2019
Reputation:
65
খুবই সুন্দর হচ্ছে. এই মানটাই বজায় রেখো শেষ পর্যন্ত. যদিও তোমার আগের গল্পেও মানের কোনো হেরফের ঘটেনি, আশা করি এর ক্ষেত্রেও কোনো ব্যতিক্রম হবে না. খুবই ভালো হচ্ছে.
যদি পারো, তবে পর্বের সঙ্গে মানানসই ছবি যোগ করো, তাতে তোমার লেখার অনুরাগীর সংখ্যা আরো বাড়তে বাধ্য. তবে এ আমার উপদেশ নয়, পরামর্শ মাত্র.
Posts: 1,391
Threads: 12
Likes Received: 2,352 in 824 posts
Likes Given: 1,054
Joined: Nov 2019
Reputation:
378
এই ফোরামে সব ধরনের গল্পের পাঠক আছে। কোন কোন গল্পের পাঠক একটু বেশি একটিভ কোন গল্পের কম । "কম রেসপন্স পেলে মন খারাপ করার কিছু নেই" এই ধরনের কথা বলা সহজ কিন্তু হজম করা কঠিন, তাই বললাম না । তবে আমার একটা নিজস্ব চিন্তা ভাবনা আছে । সেটা বলছি।
পাঠক চাহিদা চিন্তা করে তো আর গল্প লেখা হয় না । ওটা করতে হয় সিনেমা বানানোর সময় , দর্শক না দেখলে প্রচুর টাকা লস হয়ে যাবে না হলে । কিন্তু গল্প লেখার ব্যাপারটা আলাদা । এখানেও সময় খরচ হচ্ছে ঠিক , কিন্তু সময়টা একদম বৃথা যাচ্ছে না । লেখার সময় লেখক নিজেও সময়টা উপভোগ করছেন। তাই পাঠক রেসপন্স না পেলে পুরোটাই যে ফাউ গেলো এমন কিন্তু নয় ।
আপনার গল্পের বেশ কিছু চরিত্র আমার পছন্দ হয়নি । তাই গল্প পড়ার আগ্রহ আরও বেড়ে গেলো । শুভকামনা রইলো ।
•
Posts: 234
Threads: 2
Likes Received: 461 in 146 posts
Likes Given: 165
Joined: Nov 2022
Reputation:
129
01-02-2023, 09:56 PM
(This post was last modified: 01-02-2023, 10:23 PM by কলমচি৪৫. Edited 2 times in total. Edited 2 times in total.)
(01-02-2023, 12:43 PM)cuck son Wrote: এই ফোরামে সব ধরনের গল্পের পাঠক আছে। কোন কোন গল্পের পাঠক একটু বেশি একটিভ কোন গল্পের কম । "কম রেসপন্স পেলে মন খারাপ করার কিছু নেই" এই ধরনের কথা বলা সহজ কিন্তু হজম করা কঠিন, তাই বললাম না । তবে আমার একটা নিজস্ব চিন্তা ভাবনা আছে । সেটা বলছি।
পাঠক চাহিদা চিন্তা করে তো আর গল্প লেখা হয় না । ওটা করতে হয় সিনেমা বানানোর সময় , দর্শক না দেখলে প্রচুর টাকা লস হয়ে যাবে না হলে । কিন্তু গল্প লেখার ব্যাপারটা আলাদা । এখানেও সময় খরচ হচ্ছে ঠিক , কিন্তু সময়টা একদম বৃথা যাচ্ছে না । লেখার সময় লেখক নিজেও সময়টা উপভোগ করছেন। তাই পাঠক রেসপন্স না পেলে পুরোটাই যে ফাউ গেলো এমন কিন্তু নয় ।
আপনার গল্পের বেশ কিছু চরিত্র আমার পছন্দ হয়নি । তাই গল্প পড়ার আগ্রহ আরও বেড়ে গেলো । শুভকামনা রইলো ।
কোন কোন চরিত্র পছন্দ হয়নি এবং কেন হয়নি সেটা জানালে ভালো লাগতো। প্রয়োজন মতো তাহলে পরিবর্তন করতে পারতাম।
•
Posts: 234
Threads: 2
Likes Received: 461 in 146 posts
Likes Given: 165
Joined: Nov 2022
Reputation:
129
(31-01-2023, 11:16 PM)ray.rowdy Wrote: খুবই সুন্দর হচ্ছে. এই মানটাই বজায় রেখো শেষ পর্যন্ত. যদিও তোমার আগের গল্পেও মানের কোনো হেরফের ঘটেনি, আশা করি এর ক্ষেত্রেও কোনো ব্যতিক্রম হবে না. খুবই ভালো হচ্ছে.
যদি পারো, তবে পর্বের সঙ্গে মানানসই ছবি যোগ করো, তাতে তোমার লেখার অনুরাগীর সংখ্যা আরো বাড়তে বাধ্য. তবে এ আমার উপদেশ নয়, পরামর্শ মাত্র.
ধন্যবাদ উৎসাহ দেওয়ার জন্য। তবে ছবি দিতে পারবো কিনা জানি না।
•
Posts: 1,391
Threads: 12
Likes Received: 2,352 in 824 posts
Likes Given: 1,054
Joined: Nov 2019
Reputation:
378
(01-02-2023, 09:56 PM)কলমচি৪৫ Wrote: কোন কোন চরিত্র পছন্দ হয়নি এবং কেন হয়নি সেটা জানালে ভালো লাগতো। প্রয়োজন মতো তাহলে পরিবর্তন করতে পারতাম।
চরিত্র গুলো পছন্দ হয়নি বলেই তো এদের সম্পর্কে জানার আগ্রহ বেড়েছে । এখন যদি আপনি আমার কথা মত পরিবর্তন আনেন , তাহলে কি আগ্রহ থাকবে জনাব ?
আপনি আপনার মত লিখুন আমি আমার মত পড়ে নেবো , বুঝে নেবো , যদিও বা ভুল বুঝি এতে গল্পের কোন ক্ষতি হবে না । কিন্তু পরিবর্তন আনতে গেলেই গল্পের বিরাট ক্ষতি হবে ।
গল্পের জন্য আগাম শুভকামনা রইলো ।
•
Posts: 234
Threads: 2
Likes Received: 461 in 146 posts
Likes Given: 165
Joined: Nov 2022
Reputation:
129
10-02-2023, 09:59 PM
(This post was last modified: 10-02-2023, 10:04 PM by কলমচি৪৫. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
পরিচ্ছেদ - ৩ঃ স্বর্ণালীর স্মৃতিচারণ ( অফ দ্যা ক্যামেরা)
# পর্ব - ১ - স্বর্ণালী ও পরিমলের প্রেম কাহিনী
*১
বিপাশা উঠে চলে যায়। কিন্তু স্বর্ণালী সেখানে বসেই থাকে আনমনা হয়ে। সে মনে মনে ফিরে গেছে তার কলেজের জীবনে, পরিমলদার কাছে পড়তে যাওয়ার দিনগুলোতে। বিপাশার কাছে সে সবটা বলেনি। সত্যের কিছুটা অপলাপ করেছে। সেও পরিমলকে খুব ভালোবাসতো। এমনকি তাদের মধ্যে আংশিক শারীরিক সম্পর্কও হয়েছিল। লজ্জার মাথা খেয়ে সে তার বাবাকে বলেছিলো পরিমলদাকে সে বিয়ে করবে, কিন্তু এবাড়ির বৈভবের কথা পদ্দি নাপতানির কাছে শুনে স্বর্ণালীর বাবার শীর্ণ চোখের তারা লোভের আলোয় চকচক করে উঠেছিল। স্বর্ণালীর গ্রামের পদ্দি মাসীই ওর জন্য এই সম্বন্ধ এনেছিলো। সে বাবাকে বুঝিয়েছিল রাজনারায়ণ বাবুর বড়ছেলে বিদেশে থাকে, ছোটো ছেলে ব্যাংকের বড় অফিসার, আর তাই তিনি মেজ ছেলেকেই তাঁর সম্পত্তির বেশিরভাগটা লিখে দিয়ে যাবেন। অগাধ সম্পত্তির কথা শুনে দারিদ্রতার সঙ্গে যুদ্ধরত ', আর দ্বিমত না করে দিন সাতেকের মধ্যে এক ফাল্গুন সন্ধ্যার কনে দেখা আলোতে স্বর্ণালীকে এখানেই জোর করে বিয়ে দিয়ে দেন। বাবার প্রতি অভিমানে অষ্টমঙ্গলার পর আর কোনদিন সে বাপের বাড়ি যায়নি।
Posts: 234
Threads: 2
Likes Received: 461 in 146 posts
Likes Given: 165
Joined: Nov 2022
Reputation:
129
*২
পরিমলদার সঙ্গে কাটানো এক এক দিন ও এক এক মুহূর্ত স্বর্ণালীর ভালোভাবে মনে আছে। পরিমলদা ইংরেজির খুব ভালো স্টুডেন্ট ছিলো। সে উদাত্ত কন্ঠে যখন ইংরেজি কবিতাগুলো পাঠ করে শোনাতো এবং সহজ করে তাকে বুঝিয়ে দিতো তখন স্বর্ণালী মুগ্ধ হয়ে শুনতো । পড়ার বাইরেও পরিমল স্বর্ণালীকে শেক্সপিয়ারের 'রোমিও - জুলিয়েট' , 'ওথেলো' , ' ম্যাকবেথ' এসব কালজয়ী নাটক পড়ানোর ফাঁকে ফাঁকে শুনিয়েছে। এইসব নাটকের বিষয়বস্তু এবং পরিমলের বাচনভঙ্গি স্বর্ণালিকে মুগ্ধ করতো। আর সেই মুগ্ধতা থেকেই ক্রমশ ভালোলাগা ও ভালোবাসা জন্মায়। স্বর্ণালীর মনে পড়ে গেল পরিমলদার দুষ্টুমি ভরা এক পড়া পড়া খেলার কথা।
তখন দুজনের মধ্যে ভালোবাসা বেশ শক্তপোক্তভাবে বাসা বেঁধেছে। সেই সময় একদিন পড়তে গিয়ে পরিমলদা স্বর্ণালীকে বললো সে যদি আজ ইংরেজি রাইটিং লিখতে গিয়ে কোনো ভুল করে তাহলে যতবার ভুল করবে পরিমলদা ততবার তার শরীরের বিভিন্ন জায়গায় চিমটি কাটবে। স্বর্ণালী তখনও বোঝেনি পরিমলদার মাথায় দুষ্টু বুদ্ধি কাজ করছে। সে সরল বিশ্বাসে রাজী হয়ে গিয়েছিল।
খাতা দেখার সময় যতবার ভুল বের হয়েছে ততবার পরিমল বাহুতে , পেটে, নিতম্বে চিমটি কেটেছে। তারপর তার ঠোঁটে দুই আঙুল দিয়ে সুড়সুড়ি দিয়ে আলতো করে চেপে দেয় । ঠোঁটে আঙুলের স্পর্শে স্বর্ণালী কেঁপে উঠে চোখ বন্ধ করে ফেলে। আর সেই সুযোগে পরিমলের দুই হাত তার অষ্টাদশী স্তনে ব্লাউজের ওপর দিয়ে হাত বুলিয়ে তার স্তনবৃন্ত হাল্কা করে মুচড়ে দেয়। অষ্টাদশী স্বর্ণালীর শরীরে বিদ্যুতের ঝলকের মতো একটা শিহরণ বয়ে যায়। পুরো ঘটনাটা এত দ্রুত ঘটে যে স্বর্ণালী বাধা দেওয়ার সুযোগই পায় না। সে পরিমলকে দুহাতে ঠেলে দিয়ে উঠে দাঁড়ায় তারপর রাগত কন্ঠে বলে--
-- "এটা কী হলো পরিমলদা ? "
পরিমল আতঙ্কিত ও নিশ্চুপ। স্বর্ণালী বই-খাতা গুছিয়ে নিয়ে দৃপ্ত পদক্ষেপে বের হয়ে যায়। পরিমল সারাটা দিনই আতঙ্কের মধ্যে কাটায় -- এই বোধহয় স্বর্ণালী তার বাবাকে নিয়ে হাজির হয়। বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা হয়, সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত্রি , কিন্তু কেউ এলো না দেখে পরিমলের বুক থেকে দুশ্চিন্তার জগদ্দল পাথরটা নেমে যায়।
Posts: 234
Threads: 2
Likes Received: 461 in 146 posts
Likes Given: 165
Joined: Nov 2022
Reputation:
129
*৩
এদিকে রাতে বিছানায় শুয়ে স্বর্ণালীর চোখে আর ঘুম আসে না। পরিমলের স্পর্শ তার দেহে কামনার কালসর্পকে জাগ্রত করে দিয়েছে। তার শরীরটা কেমন যেন করছে , তার মনে নিষিদ্ধ জগতে প্রবেশের হাতছানি। বিছানায় সে উসখুশ করতে থাকে। পাশে শুয়ে থাকা ছোটো বোন বলে ওঠে --
--"এই দিদি তুই না ঘুমিয়ে কেবল এপাশ ওপাশ করছিস কেন ?"
স্বর্ণালী বলে --
--"কিছু না । তুই ঘুমিয়ে পড়।"
এই বলে উঠে বসে ঘটি থেকে জল গড়িয়ে খায়। তারপর দরজা খুলে বাইরে বেরিয়ে আসে। বাইরে তখন পূর্ণিমার চন্দ্রালোকে মায়াবী এক পরিবেশ তৈরি হয়েছে। ঠান্ডা বাতাস বইছে। সেই ঠান্ডা বাতাসে স্বর্ণালীর দেহের উটাচন কিছুটা শান্ত হলেও অশান্ত মনের জ্বালা কিন্তু মেটে না। সকালের ঘটনা তার মনে গভীর প্রভাব রেখে গেছে। বিছানায় চুপচাপ শুয়ে থাকতে থাকতে কখন যেন চোখ লেগে আসে। ঘুমের দেশে তার দুচোখ জুড়ে স্বপ্ন নেমে আসে। স্বর্ণালী দেখে সে এক সুন্দর পার্বত্য উপত্যকায় (বইয়ে বর্ণিত উপত্যকার মতো) দাঁড়িয়ে আছে । চার দিকে রংবেরং এর ফুলের সমাহার এবং বিচিত্র রঙের অসংখ্য প্রজাপতি উড়ে বেড়াচ্ছে । পাখির সুরেলা ডাকে মুখর উপত্যকায় স্বর্ণালীর মনে হয় সে পরীদের দেশে এসে পৌঁছেছে।
হঠাৎ ঘোড়ার খুরের খটাখট আওয়াজে স্বর্ণালী সচকিত হয়ে দেখে এক উজ্জ্বল সাদা ঘোড়ায় এক অশ্বারোহী তার দিকে এগিয়ে আসছে। তারপর চোখের পলক না পড়তেই সে স্বর্ণালীকে কোমর জড়িয়ে ধরে ঘোড়ার উপর তুলে মুখোমুখি বসিয়ে দিল। মুখ কাপড়ের আড়ালে থাকায় স্বর্ণালী চেষ্টা করেও তার মুখ দেখতে পাচ্ছিল না। ঘোড়া ছুটিয়ে আগন্তুক অশ্বারোহী একটা গুহার সামনে এসে থামলো। ঘোড়া থেকে নেমে সে স্বর্ণালীকেও কোলে কোরে ঘোড়া থেকে নামিয়ে হাত ধরে টেনে গুহার ভেতরে নিয়ে যেতে থাকে , স্বর্ণালী বাধা দেওয়ার চেষ্টা করলেও পারে না। আগন্তুক অশ্বারোহী স্বর্ণালীকে গুহার দেওয়ালের সঙ্গে ঠেসে ধরে চুমু খেতে শুরু করে , স্বর্ণালীর দুই হাতই আগন্তুকের হাত দ্বারা গুহার দেওয়ালের সঙ্গে আবদ্ধ থাকায় সে অসহায় হয়ে পড়ে। কিন্তু আগন্তুক এরপর এক হাতে স্বর্ণালীর কোমল স্তন চটকাতে শুরু করে। স্বর্ণালীর এক হাত খোলা থাকায় আগন্তুকের মূহুর্তের অসতর্কতায় সে এক ঝটকায় আগন্তুকের মুখের আবরণ সরিয়ে দেয় , সে অবাক হয়ে বলে --
-- "পরিমলদা তুমি !!!"
|