Posts: 1,391
Threads: 12
Likes Received: 2,352 in 824 posts
Likes Given: 1,054
Joined: Nov 2019
Reputation:
378
চুলা জ্বলছে মোট এগারো টা , তিন রাউন্ড রান্না হবে। মজিদ মিয়াঁ বলেছিলো আরও চুলা বানাতে। জায়গার তো অভাব নাই তাঁর, তিবার হাড়ি চরানোর দরকার কি? কিন্তু বাবুর্চি করিম বক্স কিছুতেই রাজি না। করিম বক্সের উস্তাদ বলে দিয়েছে সব সময় ১১ চুলায় রান্না করতে । তাই হাড়ি একটা হলেও করিম বক্স এগারোটা আগুন জ্বালায় আবার ১০০ হাড়ি হলেও ১১ টা চুলা বানায়। মোট ২০ হাড়ি মাংস হবে , দুই হাজার লোকের খাবার , গ্রাম সুদ্ধ সবাই কে দাওয়াত করা হয়েছে। মজিদ মিয়াঁ নিজে হাঁট থেকে গরু কিনে এনেছে । নিজের মেয়ের বিয়েতে অন্য কারো উপরে এই দায়িত্ব দিতে মনে সায় দেয়নি তাঁর । এমন জিনিস এনেছে যে গ্রামের মানুষ এক মাস পর্যন্ত আঙুল চাটবে । এক মাত্র মেয়ের বিয়েতে এমন খাওয়া খাওয়াবে যে গ্রামের মানুষ সারা জীবন মনে রাখবে। টাকা পয়াসার তো কোন অভাব নেই , খোদার রহমতে সে অনেক আছে মজিদ মিয়ার । গত ১২ বছর যাবত ইউ পি মেম্বার হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন ।
করিম মানুষ জানি আঙুল চাইট্টা ক্ষয় কইরা ফালায় , বাবুর্চি করিম বক্স কে উদ্দেশ্য করে বলে মদিজ মিয়াঁ , তারপর বাবুরচির সহকারি কে হাড়ির ঢাকনা সরাতে বলে । ঢাকনা সরে জেতেই কুন্ডুলি পাকিয়ে ধোয়া ওঠে , মশলা আর মাংসের গন্ধে মম , সেই বাস্পে নিঃশ্বাস নেয় মদিজ । দু চোখ বুজে আসে তাঁর ।
আপনে চিন্তা কইরেন না মেম্বার সাব……। স্বল্প ভাষী করিম উত্তর দেয় । বেশীক্ষণ আর দারায় না সেখানে মজিদ মিয়াঁ । সব দিক তাকেই দেখা শুনা করতে হচ্ছে । এমন নয় যে লোক জনের অভাব , কিন্তু কারুকেই ভরসা করতে পারছে না সে , ঘুরে ঘুরে সব যায়গায় তদারকি করছেন । চেয়ারম্যান সাহেব কে নিয়ে ক্ষোদ এম পি সাহেব এর বাড়ি গিয়েছিলো । এম পি সাহেব আশ্বাস দিয়েছেন আসবেন । তাই কোন কিছুতে ত্রুটি হয়ে দেয়ার অবকাশ নেই ।
দাদা টেকা দেন…… উদল গায়ে লুঙ্গি পরা একটা নাদুস নুদুস ছেলে প্রায় দৌরে আসে , হাঁপাচ্ছে ছেলেটি । থলথলে চর্বি ভরা শরীর থেকে তেলের মত ঘাম ঝড়ছে ।
কিয়ের টেকারে নাক্কির পো ……… সামিয়ানার কাজ তদারকিতে ব্যাস্ত মজিদ মিয়াঁ খেঁকিয়ে ওঠে ,
আমি কি জানি…… প্রথমে মাথা চুল্কে এই উত্তর দিলেও পর মুহূর্তে নিজের উত্তর পরিবর্তন করে ছেলেটি , বলে কন্যা সাজানির মাইয়াগো আনতে জামু গাড়ি ভাড়া লাগবো, বলে মজনু ।
আমারে ফকির বানাইয়া ফালাইবো তর দাদি , কন্যা সাজানির লইগা আবার শহর থেইকা মাইয়া আনন লাগবো ক্যান……… রেগে গিয়ে দাত মুখ খিঁচিয়ে বলে মজিদ মিয়াঁ , তবে পাঁচশো টাকার একটা নোট ঠিক ই লুঙ্গির গাঁট থেকে বের করে দেয়।
এমন সময় হই হুল্লোড় শুনতে পাওয়া যায় বাড়ির ফটকের সামনে , ডজন খানেক বাচ্চা ছেলে পেলে পেছন পেছন হৈ চৈ করতে করতে আসছে , আর সামনে আসছে বজলু , বজলুর হাতে বিশাল এক বোয়াল মাছ , মাছের লেজ মাটিতে ছেঁচরে ছেঁচরে আসছে। মজিদ মিয়াঁ দ্রুত সেদিকে এগিয়ে যায় । এম পি সাহেব এর প্রিয় মাছ হচ্ছে বোয়াল মাছ । তাই এক মাস আগে অর্ডার করে রেখেছিলো মজিদ মিয়াঁ । যেন তেন বোয়াল হলে চলবে না একদম বিলের বোয়াল হতে হবে । আর কম করেও ২০ কেজি ওজন হতে হবে ।
ওই পোলাপান যাহ অহন , যোহর নামাজের পরে আহিস , মজিদ মিয়াঁ কে দেখে পেছনে লাগা বাচ্চার দল কে তাড়ানোর চেষ্টা করে বজলু , কিন্তু এমন অলৌকিক জিনিস এই গ্রামের ছেলে পেলে আগে কখনো দেখেনি , তাই এত সহজে এরা যাবে না। যেমন তেমন জিনিস তো নয় , একদম মানুষ সমান বোয়াল মাছ ।
ওই মান্দার পুত রা গেলি এহন , এবার বজলু ক্ষেপে ওঠে , মেম্বার মজিদ মিয়াঁর অনেক দিনের সঙ্গি এই বজলু , তাই তার মাঝেও মেম্বারি দাপট কিছুটা চলে এসেছে । এরি মাঝে মজিদ মিয়াঁ চলে এসেছে , জহুরির মত খুঁটিয়ে মাছ পরীক্ষা করছেন উনি । আর মজনু যতটা সম্ভব উচু করে ধরে রেখেছে । মজনুর মুখে বিজয় এর হাঁসি , ভাব খানা এমন যে মাছটি ও নিজেই ধরে এনেছে এখন।
বরফ ঘরে কয় মাস আসিলো কে জানে…… বেশ অনেক্ষন খুঁটিয়ে পরীক্ষার পর বিরক্ত মুখে বলে মজিদ মিয়াঁ ,
কাইলকা আইসে , মাছের আড়ৎদার এর বলা কথাটি বলে বজলু ,
তুমি দেখসো ?
এবার বজলু দমে যায় , আসলে এমন জিনিস ও নিজেও কোনদিন চোখে দেখেনাই , তাই আড়ৎদার এর কথা পুর বিশ্বাস করেছে ও । মাছ দেখে বজলু এততাই বিমোহিত যে আড়ৎদার মিথ্যা বলতে পারে এটা বজলুর বিশ্বাস হয়নি । কইলো তো…… মিন মিন করে বলে বজলু ।
এমুন কথা সব হারামির বাচ্চায় ই কয়……… যা ভিতরে লইয়া যা ,
মাছ রান্নার দায়িত্ব পরেছে খোদ মেম্বার গিন্নীর উপর , করিম বক্স নামকরা বাবুর্চি কিন্তু এই মাছ রান্না তার কম্ম নয় । এসব জিনিস রান্নায় পারদর্শী হয় গেরস্থ বাড়ির মেয়েরা । যুগে যুগে এসব রান্নার রেসেপি নানি দাদি মা খালার মাধ্যমে এরা পেয়ে থাকে । তাই কমার্শিয়াল বাবুর্চি তা সে জতই বিখ্যাত হোক , গেরস্থ বাড়ির বউ ঝি দের কাছে এসব খান্দানি রান্নায় এরা গো হারা হারবে , অন্তত মজিদ মিয়াঁ এই বিশ্বাস করেন । তাইতো মেয়ে বিদায় এর শোকে কাতর মেম্বার গিন্নীর উপর জোড় করে এই দায়িত্ব তিনি চাপিয়ে দিয়েছন ।
মাছ দেখে মেম্বার সাহেব আবারো ভেতর দিকে হাঁটা দিলেন , উদ্দেশ্য মেয়ের সাথে একবার দেখা করবেন , গত কয়েকদিন কাজে এত ব্যাস্ত ছিলেন যে মেয়েটাকে ঠিক মত দেখেও নি । আর বিয়ের আয়োজন শুরু হওয়ার পর মেয়েটা লজ্জায় সামনে আসে না। আর মজিদ মিয়াও কন্যা বাৎসল্য তেমন কোনদিন দেখান নি। মনে মনে মমতা থাকলেও সারাজীবন কঠিন শাসনে রেখেছেন মেয়েকে । তাই এমিন্তেও একটা দূরত্ব তৈরি হয়েছে।
মজিদ মিয়াঁ অবশ্য এটাই ভালো মনে করেন । বাপ কে ভয় না পেলে সন্তান ভালো হয় না , এটাই মজিদ মিয়াঁর বিশ্বাস। এমনিতে মজিদ মিয়াঁর মেয়ে একটু চঞ্চল মত। তাই সব সময় মেয়ের মনে ভয় তৈরি করে রাখা দরকার ছিলো ,অবশ্য এই কয়দিনে মজিদ মিয়াঁর মনে একটু অনুশোচনা হচ্ছে । এই যে দূরত্ব তৈরি হয়েছে তাই মেয়ের সাথে বিয়ের আগে একটু বেশি সময় কাটানোর কোন উসিলা খুঁজে পাচ্ছেন না। এই যে এখন দেখা করতে জাবেন সেটার জন্য ও কোন কারন খুঁজে পাচ্ছেন না। মনে মনে মজিদ মিয়াঁ ভাবছেন কি করে মেয়ের সাথে দেখা করা যায়। এমন সময় একজন ডাকল… মেম্বার সাব
বিরক্ত হয়ে পেছন দিকে তাকালেন মজিদ মিয়াঁ , কি চাই … একটা কাম ও কি আমারে ছাড়া হয় না তগো? মজিদ মিয়াঁ ভাব্লেন হয়ত লোকটা বিয়ের কোন কাজের ব্যাপারে এসেছে । তবে সাথে সাথেই লোকটাকে চিনতে পারলো মজিদ মিয়াঁ , না বিয়ের কাজের ব্যাপারে আসেনি , এ হচ্ছে সেদু , ভালো নাম সাইদুর , তবে এই নামে কেউ আর চেনে না সবাই সেদু বলেই ডাকে। সেদু কি কারনে এসেছে সেটা বুঝতে পেরে মজিদ মিয়াঁর মেজেজ খারাপ হয়ে গেলো , ইচ্ছা করছে একটা কষে চড় বসিয়ে দিতে সেদুর গালে । কিন্তু এরকম কিছু করা ঠিক হবে না ভেবে নিজেক কন্ট্রোল করলেন । একটু কাছে এগিয়ে গেলেন , ময়লা ছেড়া লুঙ্গি পরিহিত সেদুর দিকে , দাতে দাত পিষে বললেন ,
দুইটা দিন সহ্য অয় না তগো… আমি কইসি তো বেবস্থা করুম , বিয়া টা শেষ হইতে দে
কিন্তু সেদু কোন উত্তর দেয় না , হাত জোড় করে সুধু চোখের পানি ফেলে , সেটা দেখে মজিদ মিয়াঁ সেদুর পিঠে হাত রাখে । নরম স্বরে বলে , তুই তো জানস আমার কিছুই করন এর নাই , যেইটা নিয়ম সেইটা তো মানতেই হইবো । আর এই কামের লইগা চেয়ারম্যান সাবের চেয়ে ভালা মানুষ আর কে আছে ক? অন্য কারো হাতে দিবি? কার মনে কি আছে কয়ন যায় , যদি নষ্ট কইরা দেয়। আর চেয়ারম্যান সাব আমাগো সবার মুরুগবি আমাগো বাপের লাহান ।
মাম্বার সাব রাগের মাথায় কইয়া হালাইসে , আপনে আমার বাপ , আমি চেয়ারম্যান ফেয়ারমেন চিনি না , আপনে কাউরে কইয়েন না তাইলেই সব ঠিক হইয়া যায় । কথা গুলো বলে সেদু মজিদ মিয়াঁর পায়ের ধরার জন্য নিচু হতে যায় আর সেই সময় মজিদ মিয়াঁ সেদু কে ধরে ফেলে , আশেপাশে তাকিয়ে দেখে কেউ দেখছে কিনা ।
সারা জীবন পাপের তলে থাকতে চাস? এবার একটু কড়া স্বরে বলে মজিদ মিয়াঁ , তারপর আবার নরম স্বরে বলে , কব্বরে গিয়া কি জবাব দিবি , এই ছোট একটা কামের লইগা দোজগ এ জাইতে চাস নি , আর তুই নাইলে দজগ এ গেলি , আমি ক্যান এই পাপের ভাগ লইতে যামু । আর যদি চুপ চাপ কামটা হইয়া জাইতে দেস কেউ কিচ্ছু জানত না , আর চেয়ারম্যান সাবেরে তো চিনস একদম পবিত্র থাকব । অহন যা, জোহর পইরা আইয়া পরিস , খাইয়া জাইস আবার চুপ কইরা তরে এক টুকরা বোয়াল মাছের পেটি দিয়া দিমুনে, এহন যা । এই বলে মজিদ মিয়াঁ আর দাড়ায় না । পেছনে তকালে দেখত সেদুর কাতর চোখ দুটোতে কি অসহায় চাহুনি ।
সেদু কে বিদায় করে দিয়ে মজিদ মিয়াঁ মেয়ের সাথে দেখা করার চিন্তা বাদ দেয় । এমন বিরক্ত মন নিয়ে এই সময় মেয়ের কাছে যাওয়ার মানে হয় না । হয়ত কোন খারাপ ব্যাবহার করে ফেলবে । মেজাজ বিগড়ে আছে এমনিতেই , এই মেজাজ নেয়ে বিয়ে সাঁজে বসে থাকা মেয়ের সামনে যাওয়া যাবে না ।
গ্রাম সুদ্ধ লোক এর ঢল নেমেছিলো মজিদ মিয়াঁর আঙিনায় , সবাই পেট পুরে খেয়েছে , ভাত মাংস ডাল আর পায়েস । যদিও মজিদ মিয়াঁ এদিকে তেমন সময় দিতে পারেনি , উনি বিজি ছিলেন ভি আই পি গেস্ট দের নিয়ে । এম পি সাহেব , পাঁচ ইউনিয়ন এর চেয়ারম্যান মেম্বার রা এসেছিলো । কিন্তু মজিদ মিয়াঁর একটা দুঃখ রয়ে গেলো , বোয়াল মাছ কেউ খায়নি । কেউ একজন রটনা রটিয়ে দিয়েছিলো এটা রাক্ষুসে বোয়াল , এই বোয়াল মানুষ খেকো । যদিও এম পি সাহেব এসব মানেন না , তবুও নাকি ওনার কেমন জানি লেগেছে । আর এম পি সাহেব যখন খাবে না বাকিরাও বোয়াল মাছে হাত দেয়ার সাহস করেনি ।
তবে শত ব্যাস্ততার ফাকে মজিদ মিয়াঁ সেদুর ব্যাপারটা চেয়ারম্যান সাহেব এর কানে তুলতে ভুল করেনি । শুনে চেয়ারম্যান সাহেব এর চোখ দুটো চক চক করে উঠেছিলো , এবং যত দ্রুত সম্ভব এই ব্যাপারে পদক্ষেপ নিতে বলেছে । এসব ব্যাপারে চেয়ারম্যান সাহেব কিছুতেই দেরি করতে চায় না ।
<><><>
Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,410 in 27,674 posts
Likes Given: 23,734
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
(25-01-2023, 09:32 PM)cuck son Wrote: চুলা জ্বলছে মোট এগারো টা , তিন রাউন্ড রান্না হবে। মজিদ মিয়াঁ বলেছিলো আরও চুলা বানাতে। জায়গার তো অভাব নাই তাঁর, তিবার হাড়ি চরানোর দরকার কি? কিন্তু বাবুর্চি করিম বক্স কিছুতেই রাজি না। করিম বক্সের উস্তাদ বলে দিয়েছে সব সময় ১১ চুলায় রান্না করতে । তাই হাড়ি একটা হলেও করিম বক্স এগারোটা আগুন জ্বালায় আবার ১০০ হাড়ি হলেও ১১ টা চুলা বানায়। মোট ২০ হাড়ি মাংস হবে , দুই হাজার লোকের খাবার , গ্রাম সুদ্ধ সবাই কে দাওয়াত করা হয়েছে। মজিদ মিয়াঁ নিজে হাঁট থেকে গরু কিনে এনেছে । নিজের মেয়ের বিয়েতে অন্য কারো উপরে এই দায়িত্ব দিতে মনে সায় দেয়নি তাঁর । এমন জিনিস এনেছে যে গ্রামের মানুষ এক মাস পর্যন্ত আঙুল চাটবে । এক মাত্র মেয়ের বিয়েতে এমন খাওয়া খাওয়াবে যে গ্রামের মানুষ সারা জীবন মনে রাখবে। টাকা পয়াসার তো কোন অভাব নেই , খোদার রহমতে সে অনেক আছে মজিদ মিয়ার । গত ১২ বছর যাবত ইউ পি মেম্বার হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন ।
করিম মানুষ জানি আঙুল চাইট্টা ক্ষয় কইরা ফালায় , বাবুর্চি করিম বক্স কে উদ্দেশ্য করে বলে মদিজ মিয়াঁ , তারপর বাবুরচির সহকারি কে হাড়ির ঢাকনা সরাতে বলে । ঢাকনা সরে জেতেই কুন্ডুলি পাকিয়ে ধোয়া ওঠে , মশলা আর মাংসের গন্ধে মম , সেই বাস্পে নিঃশ্বাস নেয় মদিজ । দু চোখ বুজে আসে তাঁর ।
আপনে চিন্তা কইরেন না মেম্বার সাব……। স্বল্প ভাষী করিম উত্তর দেয় । বেশীক্ষণ আর দারায় না সেখানে মজিদ মিয়াঁ । সব দিক তাকেই দেখা শুনা করতে হচ্ছে । এমন নয় যে লোক জনের অভাব , কিন্তু কারুকেই ভরসা করতে পারছে না সে , ঘুরে ঘুরে সব যায়গায় তদারকি করছেন । চেয়ারম্যান সাহেব কে নিয়ে ক্ষোদ এম পি সাহেব এর বাড়ি গিয়েছিলো । এম পি সাহেব আশ্বাস দিয়েছেন আসবেন । তাই কোন কিছুতে ত্রুটি হয়ে দেয়ার অবকাশ নেই ।
দাদা টেকা দেন…… উদল গায়ে লুঙ্গি পরা একটা নাদুস নুদুস ছেলে প্রায় দৌরে আসে , হাঁপাচ্ছে ছেলেটি । থলথলে চর্বি ভরা শরীর থেকে তেলের মত ঘাম ঝড়ছে ।
কিয়ের টেকারে নাক্কির পো ……… সামিয়ানার কাজ তদারকিতে ব্যাস্ত মজিদ মিয়াঁ খেঁকিয়ে ওঠে ,
আমি কি জানি…… প্রথমে মাথা চুল্কে এই উত্তর দিলেও পর মুহূর্তে নিজের উত্তর পরিবর্তন করে ছেলেটি , বলে কন্যা সাজানির মাইয়াগো আনতে জামু গাড়ি ভাড়া লাগবো, বলে মজনু ।
আমারে ফকির বানাইয়া ফালাইবো তর দাদি , কন্যা সাজানির লইগা আবার শহর থেইকা মাইয়া আনন লাগবো ক্যান……… রেগে গিয়ে দাত মুখ খিঁচিয়ে বলে মজিদ মিয়াঁ , তবে পাঁচশো টাকার একটা নোট ঠিক ই লুঙ্গির গাঁট থেকে বের করে দেয়।
এমন সময় হই হুল্লোড় শুনতে পাওয়া যায় বাড়ির ফটকের সামনে , ডজন খানেক বাচ্চা ছেলে পেলে পেছন পেছন হৈ চৈ করতে করতে আসছে , আর সামনে আসছে বজলু , বজলুর হাতে বিশাল এক বোয়াল মাছ , মাছের লেজ মাটিতে ছেঁচরে ছেঁচরে আসছে। মজিদ মিয়াঁ দ্রুত সেদিকে এগিয়ে যায় । এম পি সাহেব এর প্রিয় মাছ হচ্ছে বোয়াল মাছ । তাই এক মাস আগে অর্ডার করে রেখেছিলো মজিদ মিয়াঁ । যেন তেন বোয়াল হলে চলবে না একদম বিলের বোয়াল হতে হবে । আর কম করেও ২০ কেজি ওজন হতে হবে ।
ওই পোলাপান যাহ অহন , যোহর নামাজের পরে আহিস , মজিদ মিয়াঁ কে দেখে পেছনে লাগা বাচ্চার দল কে তাড়ানোর চেষ্টা করে বজলু , কিন্তু এমন অলৌকিক জিনিস এই গ্রামের ছেলে পেলে আগে কখনো দেখেনি , তাই এত সহজে এরা যাবে না। যেমন তেমন জিনিস তো নয় , একদম মানুষ সমান বোয়াল মাছ ।
ওই মান্দার পুত রা গেলি এহন , এবার বজলু ক্ষেপে ওঠে , মেম্বার মজিদ মিয়াঁর অনেক দিনের সঙ্গি এই বজলু , তাই তার মাঝেও মেম্বারি দাপট কিছুটা চলে এসেছে । এরি মাঝে মজিদ মিয়াঁ চলে এসেছে , জহুরির মত খুঁটিয়ে মাছ পরীক্ষা করছেন উনি । আর মজনু যতটা সম্ভব উচু করে ধরে রেখেছে । মজনুর মুখে বিজয় এর হাঁসি , ভাব খানা এমন যে মাছটি ও নিজেই ধরে এনেছে এখন।
বরফ ঘরে কয় মাস আসিলো কে জানে…… বেশ অনেক্ষন খুঁটিয়ে পরীক্ষার পর বিরক্ত মুখে বলে মজিদ মিয়াঁ ,
কাইলকা আইসে , মাছের আড়ৎদার এর বলা কথাটি বলে বজলু ,
তুমি দেখসো ?
এবার বজলু দমে যায় , আসলে এমন জিনিস ও নিজেও কোনদিন চোখে দেখেনাই , তাই আড়ৎদার এর কথা পুর বিশ্বাস করেছে ও । মাছ দেখে বজলু এততাই বিমোহিত যে আড়ৎদার মিথ্যা বলতে পারে এটা বজলুর বিশ্বাস হয়নি । কইলো তো…… মিন মিন করে বলে বজলু ।
এমুন কথা সব হারামির বাচ্চায় ই কয়……… যা ভিতরে লইয়া যা ,
মাছ রান্নার দায়িত্ব পরেছে খোদ মেম্বার গিন্নীর উপর , করিম বক্স নামকরা বাবুর্চি কিন্তু এই মাছ রান্না তার কম্ম নয় । এসব জিনিস রান্নায় পারদর্শী হয় গেরস্থ বাড়ির মেয়েরা । যুগে যুগে এসব রান্নার রেসেপি নানি দাদি মা খালার মাধ্যমে এরা পেয়ে থাকে । তাই কমার্শিয়াল বাবুর্চি তা সে জতই বিখ্যাত হোক , গেরস্থ বাড়ির বউ ঝি দের কাছে এসব খান্দানি রান্নায় এরা গো হারা হারবে , অন্তত মজিদ মিয়াঁ এই বিশ্বাস করেন । তাইতো মেয়ে বিদায় এর শোকে কাতর মেম্বার গিন্নীর উপর জোড় করে এই দায়িত্ব তিনি চাপিয়ে দিয়েছন ।
মাছ দেখে মেম্বার সাহেব আবারো ভেতর দিকে হাঁটা দিলেন , উদ্দেশ্য মেয়ের সাথে একবার দেখা করবেন , গত কয়েকদিন কাজে এত ব্যাস্ত ছিলেন যে মেয়েটাকে ঠিক মত দেখেও নি । আর বিয়ের আয়োজন শুরু হওয়ার পর মেয়েটা লজ্জায় সামনে আসে না। আর মজিদ মিয়াও কন্যা বাৎসল্য তেমন কোনদিন দেখান নি। মনে মনে মমতা থাকলেও সারাজীবন কঠিন শাসনে রেখেছেন মেয়েকে । তাই এমিন্তেও একটা দূরত্ব তৈরি হয়েছে।
মজিদ মিয়াঁ অবশ্য এটাই ভালো মনে করেন । বাপ কে ভয় না পেলে সন্তান ভালো হয় না , এটাই মজিদ মিয়াঁর বিশ্বাস। এমনিতে মজিদ মিয়াঁর মেয়ে একটু চঞ্চল মত। তাই সব সময় মেয়ের মনে ভয় তৈরি করে রাখা দরকার ছিলো ,অবশ্য এই কয়দিনে মজিদ মিয়াঁর মনে একটু অনুশোচনা হচ্ছে । এই যে দূরত্ব তৈরি হয়েছে তাই মেয়ের সাথে বিয়ের আগে একটু বেশি সময় কাটানোর কোন উসিলা খুঁজে পাচ্ছেন না। এই যে এখন দেখা করতে জাবেন সেটার জন্য ও কোন কারন খুঁজে পাচ্ছেন না। মনে মনে মজিদ মিয়াঁ ভাবছেন কি করে মেয়ের সাথে দেখা করা যায়। এমন সময় একজন ডাকল… মেম্বার সাব
বিরক্ত হয়ে পেছন দিকে তাকালেন মজিদ মিয়াঁ , কি চাই … একটা কাম ও কি আমারে ছাড়া হয় না তগো? মজিদ মিয়াঁ ভাব্লেন হয়ত লোকটা বিয়ের কোন কাজের ব্যাপারে এসেছে । তবে সাথে সাথেই লোকটাকে চিনতে পারলো মজিদ মিয়াঁ , না বিয়ের কাজের ব্যাপারে আসেনি , এ হচ্ছে সেদু , ভালো নাম সাইদুর , তবে এই নামে কেউ আর চেনে না সবাই সেদু বলেই ডাকে। সেদু কি কারনে এসেছে সেটা বুঝতে পেরে মজিদ মিয়াঁর মেজেজ খারাপ হয়ে গেলো , ইচ্ছা করছে একটা কষে চড় বসিয়ে দিতে সেদুর গালে । কিন্তু এরকম কিছু করা ঠিক হবে না ভেবে নিজেক কন্ট্রোল করলেন । একটু কাছে এগিয়ে গেলেন , ময়লা ছেড়া লুঙ্গি পরিহিত সেদুর দিকে , দাতে দাত পিষে বললেন ,
দুইটা দিন সহ্য অয় না তগো… আমি কইসি তো বেবস্থা করুম , বিয়া টা শেষ হইতে দে
কিন্তু সেদু কোন উত্তর দেয় না , হাত জোড় করে সুধু চোখের পানি ফেলে , সেটা দেখে মজিদ মিয়াঁ সেদুর পিঠে হাত রাখে । নরম স্বরে বলে , তুই তো জানস আমার কিছুই করন এর নাই , যেইটা নিয়ম সেইটা তো মানতেই হইবো । আর এই কামের লইগা চেয়ারম্যান সাবের চেয়ে ভালা মানুষ আর কে আছে ক? অন্য কারো হাতে দিবি? কার মনে কি আছে কয়ন যায় , যদি নষ্ট কইরা দেয়। আর চেয়ারম্যান সাব আমাগো সবার মুরুগবি আমাগো বাপের লাহান ।
মাম্বার সাব রাগের মাথায় কইয়া হালাইসে , আপনে আমার বাপ , আমি চেয়ারম্যান ফেয়ারমেন চিনি না , আপনে কাউরে কইয়েন না তাইলেই সব ঠিক হইয়া যায় । কথা গুলো বলে সেদু মজিদ মিয়াঁর পায়ের ধরার জন্য নিচু হতে যায় আর সেই সময় মজিদ মিয়াঁ সেদু কে ধরে ফেলে , আশেপাশে তাকিয়ে দেখে কেউ দেখছে কিনা ।
সারা জীবন পাপের তলে থাকতে চাস? এবার একটু কড়া স্বরে বলে মজিদ মিয়াঁ , তারপর আবার নরম স্বরে বলে , কব্বরে গিয়া কি জবাব দিবি , এই ছোট একটা কামের লইগা দোজগ এ জাইতে চাস নি , আর তুই নাইলে দজগ এ গেলি , আমি ক্যান এই পাপের ভাগ লইতে যামু । আর যদি চুপ চাপ কামটা হইয়া জাইতে দেস কেউ কিচ্ছু জানত না , আর চেয়ারম্যান সাবেরে তো চিনস একদম পবিত্র থাকব । অহন যা, জোহর পইরা আইয়া পরিস , খাইয়া জাইস আবার চুপ কইরা তরে এক টুকরা বোয়াল মাছের পেটি দিয়া দিমুনে, এহন যা । এই বলে মজিদ মিয়াঁ আর দাড়ায় না । পেছনে তকালে দেখত সেদুর কাতর চোখ দুটোতে কি অসহায় চাহুনি ।
সেদু কে বিদায় করে দিয়ে মজিদ মিয়াঁ মেয়ের সাথে দেখা করার চিন্তা বাদ দেয় । এমন বিরক্ত মন নিয়ে এই সময় মেয়ের কাছে যাওয়ার মানে হয় না । হয়ত কোন খারাপ ব্যাবহার করে ফেলবে । মেজাজ বিগড়ে আছে এমনিতেই , এই মেজাজ নেয়ে বিয়ে সাঁজে বসে থাকা মেয়ের সামনে যাওয়া যাবে না ।
গ্রাম সুদ্ধ লোক এর ঢল নেমেছিলো মজিদ মিয়াঁর আঙিনায় , সবাই পেট পুরে খেয়েছে , ভাত মাংস ডাল আর পায়েস । যদিও মজিদ মিয়াঁ এদিকে তেমন সময় দিতে পারেনি , উনি বিজি ছিলেন ভি আই পি গেস্ট দের নিয়ে । এম পি সাহেব , পাঁচ ইউনিয়ন এর চেয়ারম্যান মেম্বার রা এসেছিলো । কিন্তু মজিদ মিয়াঁর একটা দুঃখ রয়ে গেলো , বোয়াল মাছ কেউ খায়নি । কেউ একজন রটনা রটিয়ে দিয়েছিলো এটা রাক্ষুসে বোয়াল , এই বোয়াল মানুষ খেকো । যদিও এম পি সাহেব এসব মানেন না , তবুও নাকি ওনার কেমন জানি লেগেছে । আর এম পি সাহেব যখন খাবে না বাকিরাও বোয়াল মাছে হাত দেয়ার সাহস করেনি ।
তবে শত ব্যাস্ততার ফাকে মজিদ মিয়াঁ সেদুর ব্যাপারটা চেয়ারম্যান সাহেব এর কানে তুলতে ভুল করেনি । শুনে চেয়ারম্যান সাহেব এর চোখ দুটো চক চক করে উঠেছিলো , এবং যত দ্রুত সম্ভব এই ব্যাপারে পদক্ষেপ নিতে বলেছে । এসব ব্যাপারে চেয়ারম্যান সাহেব কিছুতেই দেরি করতে চায় না ।
<><><>
ধুর , কি হচ্ছে এসব।
•
Posts: 1,391
Threads: 12
Likes Received: 2,352 in 824 posts
Likes Given: 1,054
Joined: Nov 2019
Reputation:
378
বাজে একটি সপ্ন দেখে ঘুম ভেঙেছে মজিদ মিয়াঁর , জুম্মা ঘরের ইমাম কে জিজ্ঞাস করবে না করবে না করেও জিজ্ঞাস করে ফেলেছে । যা দেখেসেন ভালোই দেখসেন মেম্বার সাহেব উত্তর দিয়েছে ইমাম সাহেব । কিন্তু মজিদ মিয়াঁর তেমন ভরসা হচ্ছে না, বার বার ঘুরে ফিরে সারাদিন সুধু স্বপ্নটার কথাই ভাবছেন উনি , তেমন ভয়ঙ্কর কিছুই দেখেন নাই কিন্তু যখনি মনে পরছে শরীর কাঁটা দিয়ে উঠছে । এক ইমাম সাহেব ছাড়া কাউকে সপ্নের ব্যাপারে কিছুই বলেন নাই । এমনিতে দিন কাল ভালো জাচ্ছে না, এর মাঝে যদি রটে যায় মেম্বার সাহেব সপ্ন দেখে ভয় পেয়েছে তাহলে লকজন আরও চেপে ধরবে ।
সামনে ইলেকশন , তবে এবার মজিদ মিয়াঁর অবস্থা নড়বড়ে , বেশ বড় একটা ডিসিশন নেয়ার কথা ভাবছে মজিদ মিয়াঁ। কিন্তু ঠিক সাহস পাচ্ছে না । মজিদ মিয়াঁর সবচেয়ে বড় শক্তি প্রাক্তন চেয়ারম্যান সাহেব এখন শয্যা সায়ি , বছর খানেক আগে স্ট্রোক হয়ে শরীর এর নিচের অংশ বিকল । বর্তমানে চেয়ারম্যান তার ছেলে । যুবা চেয়ারম্যান মজিদ মিয়াঁ কে তেমন পছন্দ করে না। নিজের লোকজন বসাতে চাচ্ছে । বাবার আমল এর লোকজন কে ধিরে ধিরে সরিয়ে দিচ্ছে । কেউ কেউ মজিদ মিয়াকে বুদ্ধি দিয়েছে উনি যেন নিজেই চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করে । কিন্তু মজিদ মিয়াঁ ঠিক সাহস করে উঠতে পারছেন না । এক প্রকার এতিম দীনহীন মজিদ মিয়াকে আজ এই অবস্থায় তুলে এনেছে প্রাক্তন চেয়ারম্যান সাহেব । তাই তার ছেলের বিরুদ্ধে নির্বাচন করতে ভয় হচ্ছে । বেইমানি না হয়ে যায় , আর লোকজন যারা এখন ঘি ঢালছে বিপদ এর সময় এদের খুঁজে পাওয়া যাবে না। তাই বর্তমান চেয়ারম্যান এর সাথে তাল মিলিয়ে চলাই ভালো মনে করছেন মজিদ মিয়াঁ। হয় থাকবেন, না হলে সম্মান নিয়ে বিদায় হবেন ।
এসব ই ভাবছিলেন মজিদ মিয়াঁ , বাজার এর চায়ের দোকানের আড্ডায় , ঠিক সে সময় একটা মুখ দেখে উনার কলিজা কেঁপে উঠলো । সপ্নের কথা মনে পরে গেলো , হ্যা এই মুখটাও ছিলো সপ্নে , তখন চিনতে পারেন নি , এখন সামনা সামনি দেখে মনে পরছে । মুখটা হচ্ছে সেদুর , হ্যাঁ সেই সেদু যার আসল নাম সাইদুর ।
সাইদুর মিয়াঁ কিমুন আসো? অনেক দিন পর নিজের আসল নাম শুনে একটু অবাক সাইদুর ওরফে সেদু উত্তর দিতে একটু দেরি করলো , জেমুন রাখসেন আপনেরা ,
মজিদ মিয়াঁর মুখ কালো হয়ে গেলো , সেদুর উত্তর ছিলো বরফ শীতল , মনে মনে ভাব্লেন এই ছোটলোক দের সম্মান দিতে নেই। মুখে বললেন কিরে আমার উপর মনে হয় গোস্বা তর?
কি কন মেম্বার সাব গোস্বা করুম ক্যান আপনেরা বাপ মা, আপনেগো লগে কি গোস্বা করন যায় ,
সেদুর স্বরে তাচ্ছিল্লের একটা টান পেলেন জেনো মজিদ মিয়াঁ , আর অমনি ওনার টান হয়ে থাকা নার্ভ এর উপর কন্ট্রোল হারালেন , তরাক করে লাফিয়ে উথলেন , ফক্কিনির পোলা , তুই আমার লগে ঢং মাড়াস , শুয়ার এর বাচ্চা তুই আমারে চিনস , আমি কে? এই গেরামে আমার লগে বিতলামি করে এমুন কেউ আছ?
সূর্যের চেয়ে বালি গরম , সেটা প্রমান করার জন্নই মনে হয় মজিদ মিয়ার সাঙ্গ পাঙ্গ রা সেদু কে বেদম প্রহার শুরু করলো , বয়সে সেদু মজিদ মিয়াঁর চেয়ে কিছু বড় হবে , মজিদ মিয়াঁর এখন ৫১ চলছে , সে ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য হীনতায় ভোগা সেদু কে দেখলে ৬০-৬৫ এর মনে হয় । বেদম প্রহারে সেদু তেমন কোন প্রতিবাদ ই করতে পারলো না । মনের আশ মিটে গেলে মজিদ মিয়াঁ আড্ডা থেকে বেড়িয়ে গেলেন । সাথে সাথে তার সাঙ্গ পাঙ্গ রাও ।
দু বছর আগে হলে সেদু প্রহার ঘটনার কোন প্রতিক্রিয়াই হতো না । তবে এখন দিন কাল আগের মত নেই , দু দিন পর খবর এলো চেয়ারম্যান সাহেব মজিদ মিয়াঁ কে ডেকে পাঠিয়েছেন । না ইউ পি অফিসে নয় , সেদুর বাড়ি । কি ঘটেছে সেটা বুঝতে ঝানু মজিদ মিয়াঁর এক মুহূর্ত ও লাগলো না । ভীষণ ক্ষেপে গেলো সে , হতে পারে সে চেয়ারম্যান হয়েছে , তাই বলে মজিদ মিয়াঁর সাথে এমন বেয়াদবি , মজিদ মিয়াঁ প্রথমে সিধান্ত নিলো যাবে না । কিন্তু খানিক বাদে নিজের সিধান্ত নিজেই বদল করলো । সিধান্ত নিলো সে যাবে এবং নতুন চেয়ারম্যান কে নিজের অবস্থান বুঝিয়ে দেবে ।
নিজের বিশ্বস্ত লোকদের খবর দেয় মজিদ মিয়াঁ । একটা হেস্তনেস্ত করেই ছাড়বে , পাশের ইউনিয়ন এর চেয়ারম্যানের সাথেও যোগাযোগ করে । এম পি সাহেবের সাথে সেই চেয়ারম্যানের ভালো খাতির রয়েছে বলে জানে মজিদ মিয়াঁ । সেই চেয়ারম্যান ও আশ্বস্ত করে মজিদ মিয়াঁ কে ।
নির্ধারিত দিনে সেদুর বাড়ি হাজির হয় মজিদ মিয়াঁ , সঙ্গে বেশ ভারী সংখ্যায় সাঙ্গোপাঙ্গ । ভাতিজা আমারে ডাকসো নিহি ? চেয়ারে বসতে বসতে তাচ্ছিল্য পূর্ণ কণ্ঠে জিজ্ঞাস কে মজিদ মিয়াঁ । কিন্তু ইয়ং চেয়ারম্যান চাচা সম্বোধন এর ধারে কাছ দিয়েও যায় না । বলে , আপনে এইসব কি শুরু করসেন মজিদ মিয়াঁ , যা ইচ্ছা তা করবেন , সেইটা আর চলবো না , অন্তত আমি হইতে দিমু না ।
আসলে নিজের বাবার পুরাতন সাঙ্গোপাঙ্গ দের বেশিরভাগ ছাঁটাই করে ফেলেছে নতুন চেয়ারম্যান , কিন্তু মজিদ মিয়াঁর ক্ষেত্রে তেমন কিছু করতে পারছে না । প্রাক্তন চেয়ারম্যান মানে নতুন চেয়ারম্যান এর বাবার ছায়া সঙ্গী হিসেবে থাকতে থাকতে বেশ ক্ষমতাবান হয়ে উঠেছে এই মজিদ মিয়াঁ । নতুন চেয়ারম্যানের কানে গুজব এসে পৌঁছেছে যে মজিদ মিয়াঁ নাকি আগামি নির্বাচনে টক্কর দিতে চায় । তাই এই মক্ষম সুযোগে মজিদ মিয়াকে ধরাশায়ীয়ই করার প্ল্যান করেছে নতুন যুবা চেয়ারম্যান। তাহলে আর মুখের উপর কথা বলার কেউ থাকবে না । বার বার এই “ভাতিজা” সম্বোধন ভালো লাগে না রক্ত গরম নতুন চেয়ারম্যানের , তাও এক সময় নিজের বাবার ভৃতের মুখে । ছোট বেলা থেকে যাকে দেখে এসেছে সব সময় নিজের বাবার সামনে মাথা নত করে থাকতে ।
তুমুল তর্কাতর্কি হয় দুই পক্ষের , মজিদ মিয়াঁ রাগে ফেটে পরে । গ্রাম বাসির সামনে প্রমান করতে চায় , এই গ্রামে মজিদ মিয়াঁর নামে সালিস ডাকার সাহস কারো না । এই দুধের বাচ্চা চেয়ারম্যানেরও নাই ।
দু পক্ষের তুমুল তর্কাতর্কিতে সালিসে কোন সুরাহা হয় না । তবে মিজিদ মিয়াঁ রাগের মাথায় বলে আসেন উনি আগামি নির্বাচনে অংশ গ্রহন করবেন । হর্ষ ধ্বনিতে ফেটে পরে মজিদ মিয়াঁর সাঙ্গ পাঙ্গ । সাথে সাথে মজা দেখতে আসা গ্রাম বাসিরও একটা বড় অংশ সেই উল্লাস ধ্বনিতে তাল মেলায় । এক প্রকার বিজয়ীবেশে সালিস থেকে বেড়িয়ে আসেন মজিদ মিয়াঁ ।
গ্রামের প্রতিটা চায়ের দোকানে আগামি এক মাস পর্যন্ত সুধু মজিদ মিয়াঁর বীর গাথার আলাপ চলতে থাকে । এবং নির্বাচন আসার এক বছর আগেই গ্রামে নির্বাচনী হাওয়া লেগে যায় । মজিদ মিয়াঁ কয়েক দিন আগে দেখা দুঃস্বপ্নের কথা বেমালুম ভুলে যায় ।
<><><>
Posts: 1,391
Threads: 12
Likes Received: 2,352 in 824 posts
Likes Given: 1,054
Joined: Nov 2019
Reputation:
378
মজিদ মিয়াঁর মেয়ে আর মেয়ের জামাই এসেছে নির্বাচন উপলক্ষে মজিদ মিয়াঁর বাড়ি । তাই কালাম জাউল্লা কে বলে দেয়া আছে বড় একটা কাতল মাছ যোগার করে রাখতে । একদম নদীর মাছ হতে হবে , এমনিতে মজিদ মিয়াঁ আজকাল বড় বড় মাছ প্রায় কিনছে । কিন্তু সেগুলোর কোনটাই নদীর মাছ নয় , চাষ করা মাছ । কিন্তু সরাকারি দলের হোমড়া চোমড়া দের বাড়ি পাঠিয়ে দিয়ে বলে স্যার আপনার জন্য নদীর টাকটা মাছ পাঠিয়েছি । এতে কাজ হয় , একটা টাকার বান্ডেল এর চেয়ে একটি ডাউস সাইজের মাছ মানুষ কে খুশি করে বেশি । মজিদ মিয়াঁ এসব কাজে বেশ পটু , এমনি এমনি তো চুল পাকায় নি ।
তবে মেয়ের জামাই এর সাথে এসব করা যাবে না । এক মাত্র মেয়ের জামাই বলে কথা । তা ছাড়া ছেলেটা বড় মাছের মাথা পেলে খুশি হয় , মজা করে খায় । সেটা দেখে মজিদ মিয়াঁর ও মনটা খুশি হয় । এমনিতে খুব বড় লোক বাড়ির ছেলের কাছে মেয়ে বিয়ে দেয়নি মজিদ মিয়াঁ । টাকা পয়সা দিয়ে কি হবে , টাকা পয়সা দেদার আছে মজিদ মিয়াঁর কাছে । এক মাত্র মেয়ে জামাই নিয়ে সাড়া জীবন সুখে কাটাতে পারবে । এসব ভেবে মোটামুটি সচ্ছল পরিবারের শান্ত শিষ্ট ছেলে দেখে মেয়ে বিয়ে দিয়েছে । একদম হাভাতে পরিবারেও দেয় নি , ওদের স্বভাব ভালো হয় না ।
নির্বাচনের আর মাত্র তিনদিন , ব্যাস্ততা এরি মাঝে খুব বেড়ে গেছে , চারদিকে মিটিং মিছিল চলছে । চেয়ারম্যানের সাথে সমান টেক্কা দিচ্ছে মজিদ মিয়াঁ । দু হাতে টাকা ওড়াচ্ছে , কোন কার্পণ্য করছে না । এই যেমন এখন রাত সাড়ে আটটায় উঠানে বসে মিটিং চলছে । গ্রামের গণ্যমান্য ব্যাক্তিরা এসেছে । এরা সবাই মজিদ মিয়াঁ কে সাপোর্ট দিচ্ছে ।
আউজকার খেইলটা সেইরম হইসে , খালু । অগো মিছিল আর আমাগো মিছিল একদম সামনা সামনি , হালায় কি কমু আমাগো চিল্লান এর সামনে অগো আওয়াজ ই হুনা যায় না । হের পর দিলাম দাবড়ানি , এক দাবড়ানিতে খাল পার । সব লুঙ্গি খুইল্লা খালে গিয়া পরসে হা হা হা …
কথা গুলো বলছে মজিদ মিয়াঁর শালির (বউয়ের ছোট বোন) ছেলে বজলু। গ্রামের ছেলে , থাকে ঢাকা । নির্বাচনে মজিদা মিয়াঁর হয়ে কাজ করতে এসেছে । এমনিতে কথা বেশি বললেও মটামুটি কাজের ছেলে । মিছিল মিটিং এসব বজলু ই দেখাশুনা করছে। মজিদ মিয়াঁ যদিও জানে লুঙ্গি খুলে খালে নামার কথাটা বানানো । কিন্তু ধাওয়া একটা করা হয়েছিলো চেয়ারম্যানের পার্টি কে , এটা সত্য কথা । থানা থেকে ফোন এসেছিলো মজিদ মিয়াঁর কাছে । ওসি সাহেব কে এর জন্য হাজার দশেক টাকা পাঠাতে হয়েছে। অবশ্য টাকা জাওয়াতে মজিদ একটুও মন খারাপ করেনি , বরং খুশি হয়েছে ।
তয় মজিদ ভাই আপনের মার্কা টা কিন্তু সেইরাম হইসে , একদম বাঘ মার্কা । আর কামেও এপনে বাঘের লাহান ই । কলিম শেখ সাইড থেকে বলে । মজিদ মিয়া শুনে খুশি হয় । বলে তা আর কইসো মিয়া , মার্কা দিয়াই তো ওরে শেষ কইরা দিলাম , ওর হইলো হরিন আর আমার বাঘ , হরিন কি কোনদিন বাঘের লগে পারে হা হা হা … হালকা আলাপ চারিতায় মজিদ মিয়াঁ নিজেও অংশ গ্রহন করে । প্রথম প্রথম মনে একটু ভয় থাকলেও এখন আর ভয় পায় না । বরং নতুন এক ক্ষমতার স্বাদ অনুভব করে ।
আলোচনা চলতে থাকে লম্বা সময় ধরে , প্রায় সবাই মজিদ মিয়াঁর গুণগান করে নানা পন্থায় । ব্যাপক আমোদ হয় মজিদ মিয়াঁর, নিজের অতীত মনে পরে যায় । এক সময় কি ছিলো আর এখন কি হয়েছে । ছোট বেলায় বাবা মা মারা গিয়েছিলো নৌকা ডুবিতে। এর পর আশ্রয় হয় তখনকার চেয়ারম্যানের বাড়ি । টুকটাক ফুট ফরমায়েয়েশ খাটতো সে , এর চড় ওর লাথি সহ্য করতে হতো ছোট্ট ছোট্ট ভুলের জন্য ।
এর পর ঘটে এক ঘটনা , এক সালিস থেকে ফিরছিলো তখনকার চেয়ারম্যান, সাথে মজিদ মিয়াঁ । ততদিনে মজিদ মিয়াঁ একটু বড় হয়েছে । ২০ বছরের তাগড়া জোয়ান সে । রাতের বেলা শর্টকাট রাস্তা হিসেবে জমির আইল ধরে হাটছিলো মজিদ মিয়াঁ আর চেয়ারম্যান । মজিদ মিয়াঁর হাতে টর্চ আর বগলে ছাতা । হঠাত করেই আক্রান্ত হয় ওরা , বেশি লোক ছিলো না জনা তিনেক , অর্ধ উলঙ্গ মানুষ পড়নে সুধু লুঙ্গি , তাও কাছা দেয়া । নিজের জানের তোয়াক্কা করেনি মজিদ মিয়াঁ ,ঝাপিয়ে পরেছিলো । না চেয়ারম্যান কে রক্ষা করার কোন তাগিদ অনুভব করেনি মজিদ মিয়াঁ সেদিন । বরং নিজের ভেতর থেকে এক প্রচণ্ড রাগ উঠে এসেছিলো কেনো জানি । হাতের টর্চ দিয়ে ঘায়েল করে তিন হামলা কারিকে । তিনজন যখন পালিয়ে যায় তখন দেখতে পায় থরথর করে কাঁপছে চেয়ারম্যান । তখন চেয়ারম্যান ও খুব বয়সী না ৪০ এর মত হবে বয়স । সেই থেকে মজিদ মিয়াঁ হয়ে যায় চেয়ারম্যানের সবচেয়ে কাছের মানুষ । আর সেই সুবাদে সকল কুকর্মের সাক্ষি । সরকারি টাকা চুরি ছাড়াও প্রাক্তন চেয়ারম্যানের মেয়ে ঘটিত দুর্বলতা ছিলো । আর সেই খায়েস পুরন করতে সাহায্য করতো মজিদ মিয়াঁ ।
এর পর অবশ্য মজিদ মিয়াকে পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি । ধিরে ধিরে বিপুল সম্পদ এর মালিক হয়েছে , নিজে ইউ পি মেম্বার হয়েছে । বিয়ে থা করেছে বড় গেরস্থ বাড়িতে । আর এখন চেয়ারম্যান হওয়ার দ্বারপ্রান্তে দাড়িয়ে । ভাবতে ভাবতে গায়ে কাটা দিয়ে ওঠে মজিদ মিয়াঁর । কি একটা জীবন পার করেছে সে । ধ্যান মগ্ন হয়ে ভাবছিলো মজিদ মিয়াঁ আসে পাশের লোকদের কথা কানে আসছিলো না এতক্ষন । হঠাত কে জেনো ডেকে ওঠে দাদা… ও দাদা …
ধ্যান ভঙ্গ হয় মজিদ মিয়াঁর , সমবেত সবাই হাসছে কি যেন একটা হাসির কথা বলেছে বজলু । মজিদ মিয়াঁ পাশে তাকায় দেখে মজনু দাড়িয়ে , উদলা গায়ে নিজের বিশাল ভুরি বের করে ।
কি হইসে… খেঁকিয়ে জিজ্ঞাস করে মজিদ মিয়াঁ । ফুপু ডাকে আপনেরে , হেরা খাইতে বইসে , আপনেরে ছাড়া খাইবো না।
এই ফুপু হচ্ছে মজিদ মিয়াঁর মেয়ে । বছর দুয়েক আগে যার বিয়ে হয়েছিলো । মেয়েটা বিয়ের পর একটু সাহসি হয়ে উঠছে । আগে বাবার সামনে কথা বলতে ভয় পেত । এখন প্রায়ই হুকুম জারি করে । মজিদ মিয়াঁ অবশ্য এতে আমোদ পায় । বিয়ের আগে মেয়েকে কড়া শাসনে রাখলেও এখন আর শাসন করার কিছু নেই । এখন মেয়ে স্বামীর দায়িত্বে আছে , বাবা হিসেবে সে যতদিন দায়িত্ব পালন করার করে দিয়েছে । তাই এখন বাবা কে ভয় পাওয়ার কিছু নেই , এখন ভয় পাবে স্বামী কে , আর মর্জি করবে বাবার সাথে , এটাই দুনিয়ার নিয়ম । মজিদ মিয়াও মেয়েকে লাই দেয় আজকাল । এই যেমন এখন মিটিং ভেঙ্গে দিয়ে মজনুর পেছন পেছন হাঁটা দেয় । মেয়ে আর জামাই এর সাথে নৈশ ভোজে অংশ গ্রহন করার জন্য ।
জামাইয়ের পাতে বড় কাতল মাছের মাথা দেয়া হয়েছে , মজিদ মিয়াঁ সন্তুষ্ট হয় সাইজ দেখে । তারচেয়ে বেশি সন্তুষ্ট হয় জামাই আর মেয়ের মুখের খুশির ঝলকানি দেখে । যদিও জামাই বার বার বলছে মাথাটা জেনো মজিদ মিয়াঁর পাতে দেয়া হয় । কিন্তু সেটা হবার নয় , মেয়ে বলে আহা খান না আপনে , আব্বা এতো সখ কইরা আনসে আপনের লইগা ।
মজিদ মিয়াঁ আজকাল খুব বেশি খায় না , পেটে সহ্য হয় না । তাই নিজে অল্প ভাত নিয়ে , বসে বসে মেয়ে আর মেয়ের জামাই এর খাওয়া দেখে । জামাই মজা করে কাতল মাছের মাথা খাচ্ছে , তা দেখে মেয়ে খুশি হচ্ছে । আর ওদের আনন্দ দেখে মজিদ মিয়াঁর আনন্দ হচ্ছে ।
আব্বা আপনে এইটুক ভাত নিলেন ? হঠাত প্রশ্ন করে মজিদ মিয়াঁর মেয়ে । আরও ভাত নেন , আর মাছ নেন আরেক টুকরা, মাছটা যা স্বাদ আর কি তেল । মজিদ মিয়াঁর পাতে ভাত দেয়ার জন্য এগিয়ে আসে মেয়ে ।
প্রতিবাদ করে মজিদ মিয়াঁ , আরে না না , জামাই রে আর এক টুকরা দে , একদম টাটকা মাছ , পাক্কা সাত কেজি ওজন ।
জামাইকে জোড় করে আরও এক টুকরা মাছ দেয়া হয় ।
আব্বা পরশু আপনেই জিতবেন , দেইখেন । মেয়ে খেতে খেতে বলে আবার ।
তাই নাকিরে মা? তুই এতো নিশ্চিন্ত হইলি কেমনে রে , তুই কি নির্বাচন কমসন এর লোক নি রে হা হা হা …… আজকাল মজিদ মিয়াঁ মেয়ের সাথে হালকা মশকরা ও করে ।
না আব্বা , আমি স্বপন দেখসি , দেইখেন আপনেই জিতবেন , আর আমি হমু চেয়ারম্যানের মাইয়া হি হি হি ……
মজিদ মিয়াঁর খুব আমোদ হয় , এই দিকটা ভাবেনি মজিদ মিয়াঁ । সুধু নিজে চেয়ারম্যান হবে এটাই ভেবেছিলো সে , কিন্তু তার আশেপাশের মানুষ গুলির ও যে পদোন্নতি হবে সেটা এতদিন ভেবে দেখেনি । তার মেয়ে হবে চেয়ারম্যানের মেয়ে , তার বউ হবে চেয়ারম্যানের বউ , মজনু হবে চেয়ারম্যানের চাকর … ভাবতে ভাবতে মুচকি হেসে ফেলে মজিদ মিয়াঁ ।
<><><>
Posts: 1,391
Threads: 12
Likes Received: 2,352 in 824 posts
Likes Given: 1,054
Joined: Nov 2019
Reputation:
378
মেম্বার সাব , এমনে চললে তো হইবো না , শরিল এর যত্ন নিতে হইবো …… দিন সাতেক হচ্ছে শরীর ভালো যাচ্ছে না মজিদ মিয়াঁর। প্রায় তিন বছর জেল খেটে ফেরার পর থেকে প্রায় অসুস্থ থাকছে । ডাক্তার এসে বার বার বলে যাচ্ছে ঢাকা গিয়ে বড় হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে । কিন্তু মজিদ মিয়াঁ যেতে রাজি নয় । বলে যা হবার এখানেই হবে । পাঁচ বছর আগে নির্বাচনে হারার পর থেকে মজিদ মিয়াঁ আর আগের মত নেই । এখনো মানুষজন তাকে মেম্বার সাব বলে ঠিক । কিন্তু সে এখন তাও নয় । নির্বাচনে হারের পর ধিরে ধিরে আশেপাশে থাকা লোকজন কেটে পড়েছে । কেউ আগের মত পাত্তা দেয় না , বিচার সালিস নিয়ে আসে না ।
সম্পদ আর জমিজমাও আগের মত নেই । অনেক সম্পদ জবরদখল হয়ে গেছে । যা টুকটাক আছে তা দিয়ে যদিও সচ্ছল ভাবে চলে যাচ্ছে , কিন্তু মজিদ মিয়াঁর অহঙ্কারে খুব বড় আঘাত লেগেছে । তার জমি অন্যে ভোগ দখল করছে এটা সে মেনে নিতে পারেনি । সেখান থেকে তৈরি হয়েছিলো ঝগড়া , সেই ঝগরা থেকে মারপিট । আর সেই মারপিট এর আসামি হয়ে জেলে যেতে হয়েছে । যদিও মামলা টেকেনি, কিন্তু তিন বছর বিনা দোষে জেলে থাকতে হয়েছে ।
শইলের যত্ন কইরা আর কি হইবো ডাক্তার সাব , মনঃটাই তো মইরা গেসে …… এই বলে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে মজিদ মিয়াঁ।
আব্বা এমুন কথা কইয়েন না , পাশ থেকে বলে ওঠে মজিদ মিয়াঁর মেয়ে । মজিদ মিয়াঁ মেয়ের দিকে একবার তাকায়, ছয় বছরের ছেলে সাথে নিয়ে বিছানার পাশে দাড়িয়ে মেয়েটি। তবে বেশীক্ষণ তাকিয়ে থাকতে পারে না, চোখ ফিরিয়ে নিতে হয় । আজকাল মেয়ের দিকে তাকালে বুকে কয়েক টন ওজনের চাপ অনুভব করে মজিদ মিয়াঁ । কেমন ছিলো আর কেমন হয়ে গেছে এক মাত্র মেয়ে তার । মুখের দিকে তাকানো যায় না । এক সময় যে মুখের দিকে তাকালে মজিদ মিয়াঁ স্বর্গীয় প্রসান্তি পেত , আজ সে মুখ শুকিয়ে মলিন হয়ে গেছে । মাস তিনেক হলো মজিদ মিয়াঁর মেয়ে তার বাড়িতেই আছে । তালাক হয়ে গেছে জামাই এর সাথে।
মজিদ মিয়াঁ যতটুকু সম্ভব মেয়েকে জিজ্ঞাস করেছিলো , কি হয়েছে , কেনো তালাক হলো । কিন্তু মেয়ে কোন সদুত্তর দিতে পারে না । মেয়ের মা ও জীবিত নেই যে দুটো কথা মেয়ের পেট থেকে বের করে আনবে । আর বাপ হয়ে মেয়ের সাথে কতটুকুই বাঁ ফ্রি হতে পারে মজিদ মিয়াঁ । তবুও লজ্জা সরম এর বালাই খেয়ে জিজ্ঞাস করেছিলো মেয়ে ভুল চুক কিছু করেছে কিনা । কিন্তু তাও নাকি মেয়ে করেনি । তাহলে তালাক কেনো হলো এটাই ভেবে পায়না মজিদ মিয়াঁ । ভালোই তো ছিলো দুজনে , হ্যাঁ গোপনে খবর পেয়েছিলো যে জামাই নাকি নেশা ভাং ধরেছে , অসৎ পাল্লায় পড়েছে । এবং এর পেছনে নাকি চেয়ারম্যানের হাত আছে ।
জমি সম্পদ নিয়ে দুঃখ মজিদ মিয়াঁর আছে , কিন্তু সবচেয়ে বড় দুঃখ এই তালাক প্রাপ্ত মেয়ে । ছয় বছরের পুত্র সন্তান নিয়ে এখন এই মেয়ের কি গতি হবে উপরওয়ালা ছাড়া কেউ বলতে পারে না ।
<><>
মাস খানেক হচ্ছে জামাইটা আবার মজিদ মিয়াঁর বাড়ির সামনে ঘুরঘুর করছে । তাকানো যায় না ছেলেটার দিকে , রাজপুত্রের মত ছিলো দেখতে । মজিদ মিয়াঁ নিজের শ্যামলা মেয়ের জন্য রাজপুত্রের মত ছেলে খুঁজে বিয়ে দিয়েছিলেন । এখন এই ছেলেকে দেখলে কেউ আগের রুপ কল্পনাও করতে পারবে না ।
প্রথম প্রথম কয়দিন মজিদ মিয়াঁর রাগ হতো , তারপর ধিরে ধিরে রাগ কমে । বাস্তবতা মজিদ মিয়াঁকে রাগ কমাতে বাধ্য করে । এতো বড় ছেলে সন্তান সহ এই মেয়েকে আর কে বিয়ে করবে ? যদি জামাই আবার মেয়েকে নিতে চায় তাহলে ঝামেলা মিটে যায়। ভালো হোক মন্দ হোক , মেয়েদের স্বামী হচ্ছে মেয়েদের ঢালের মত । এই ঢাল না থাকলে মেয়েরা শেয়াল শকুন এর শিকারে পরিনত হয় ।
মজিদ মিয়াঁ ভাবে , তিনি আর কতদিন বেঁচে থাকবেন । একদিন না একদিন তাকে যেতে হবে । তখন তো আর মেয়েটাকে বে আব্রু রেখে যাওয়া যাবে না । একদিন দূর থেকে ডাক দেয় জামাই কে । প্রথমে ভয়ে পালাতে চেষ্টা করে জামাই , কিন্তু মজিদ মিয়াঁর অভয়ে মাথা নিচু করে সামনে এসে দাড়ায় ।
কামটা ক্যান করসিলা ? কাঁপা গলায় জিজ্ঞাস করে মজিদ মিয়াঁ ।
জামাই কোন উত্তর না দিয়ে চুপ করে থাকে । ওই মিয়াঁ কথা কও না ক্যান …… খেঁকিয়ে ওঠে মজিদ মিয়াঁ । অনেক ধৈর্য নিয়ে নিজেকে শান্ত রেখেছে সে ।
ভুল হইয়া গেসে আব্বা , মিন মিন করে বলে ।
কিয়ের ভুল , আমার মাইয়ার জীবন টা নষ্ট কইরা দিলা , তোমার কি আর একটা বিয়া করতে পারবা , আমার মাইয়ার কি হইবো। কাতর স্বরে বলে মজিদ মিয়াঁ এবার ।
আব্বা আমারে আর একবার সুজুগ দেন আব্বা ,আমি ওরে আবার ঘরে নিবো … মেয়ের জামাই আবেগ প্রবন হয়ে ওঠে ।
সেদিন রাতে খাওয়ার সময় মজিদ মিয়াঁ মেয়ের সাথে কথা বলে , মারে মাইয়া মানুষের অনেক কিছু সহ্য করতে হয় , জামাই যদি তরে আবার ঘরে নিতে চায় , আমি কি কথা কমু ?
মজিদ মিয়াঁর মেয়ের আঙুল গুলি ভাত মাখতে মাখতে থেমে যায় , কিন্তু মুখে দিয়ে কথা বের হয় না, চুপ করে থাকে । ব্যাপারটা মজিদ মিয়াঁ সম্মতির লক্ষন হিসেবে নিয়ে নেয় । বলে তাইলে কাইল আইতে কই জামাই রে ?
কারে জামাই বলতেসেন আব্বা , সে কি আপনের জামাই আসে আর? এবার কথা বলে ওঠে মজিদ মিয়াঁর মেয়ে ।
কি কস , জামাই থাকবো না ক্যান , রাগের মাথায় কইরা ফালাইসে । ব্যাটা মানুষ খারাপ পাল্লায় পরসিলো , রাগের মাথায় কইসে । আজকা আইসিলো আমার কাছে ।
আব্বা আপনে সব জানেন না , বলে আচলে মুখ ঢেকে কেঁদে ওঠে মেয়ে ।
সেটা দেখে মজিদ মিয়াঁ কিছুক্ষনের জন্য চুপ হয়ে যায় । প্লেটের ভাত নাড়াচাড়া করে । তারপর একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে … জানি রে মা সব জানি , এমনে এমনে তো আর চুল পাঁকে নাই …… ব্যাটা ছেলেরা এমন আরও কত কিছু করে , অগো সব দোষ দেখতে নাই রে মা , মাইয়া গো এইসব একটু আধটু সহ্য করতে হয় । এতো বড় একটা পোলা তোর , স্বামীর ঘর ছাড়া আর গতি আছে নি ।
ক্যান আব্বা আপনের এতো সম্পত্তি , এই দিয়া আমার আর আমার পোলার কি চলবো না ?
সেইটা চলবো রে মা , কিন্তু এই দুনিয়ায় মাইয়া মানুষের একা থাকতে নাই । স্বামী ছাড়া জেনানা হইলো খোলা মিষ্টির দোকান । আমি যতদিন আছি ভালো থাকবি কিন্তু আমি তো আর চিরদিন থাকুম নারে মা । স্বামীর আশ্রয় ছাড়া মাইয়া মানুষ দুনিয়ায় চলতে পারে না । আর রাগের মাথায় তালাক কইলেই কি তালাক হয় । পোলাটার দিকে একটু চাইয়া দেখ , বাপ ছাড়া মানুষ হইবো কেমনে ?
আমি আমার পোলারে মানুষ ঠিক করতে পারবো আব্বা , আপনে টেনশন কইরেন না , এখন খান চুপ কইরা ।
আগের দিন হলে হয়ত মজিদ মিয়াঁকে এভাবে কেউ ধমক দিতে পারত না । নিজের মেয়েও না , কিন্তু এখন আগের তেজ আর নাই । চুপ করে গেলো মজিদ মিয়াঁ , কিছুক্ষন প্লেটের ভাত নাড়াচাড়া করে উঠে গেলো । রাতে ভালো ঘুম হলো না মজিদ মিয়াঁর, পাশের ঘর থেকে মেয়ের মুখ গুজে কান্না করার শব্দ পেলেন ।
দিন দশেক চিন্তা করলেন মজিদ মিয়াঁ । অনেক ভেবে চিনতে বের করলেন এক বুদ্ধি । সম্ভ্রান্ত পরিবারের মেয়ে তার কন্যা , এসব মেয়েরা স্বামী ছাড়া কিছুই বুঝে না । হয়ত এখন রেগে আছে , কিন্তু স্বামী সামনে এসে দারালে এদের রাগ বরফের মত গলে পানি হয়ে যাবে । যে চিন্তা সেই কাজ , জামাই কে এক দুপুরে বাড়িতে ডাকলেন ।
নির্ধারিত দিনের সকাল বেলা , এক বিশাল কাতল মাছ কিনে আনলেন মজিদ মিয়াঁ । এনে মেয়েকে ডাকলেন , কই রে মা , দেখ কি আনসি । সুন্দর কইরা পাকা , মাথাটা আলাদা রান্দবি ।
এইটা কি করসেন আব্বা , এতো বড় মাছ কে খাইবো , মোটে আমরা তিনজন মানুষ , মাছ তো নষ্ট হইবো । মেয়ে মাছ দেখে আঁতকে উঠলো ।
খাওয়ের মানুষের অভাব হইবো না মা , তুই আগে রান্না কর ।
দুপুরে জামাই নিয়ে হাজির মজিদ মিয়াঁ । মেয়ে জামাই কে দেখে কিছুক্ষন চুপ করে দাড়িয়ে থেকে , কিছু না বলে ভেতরে চলে যায় । লক্ষন মজিদ মিয়াঁর কাছে ভালো ঠেকে না । দুপুরে খাওয়ার সময় ও মেয়ে সামনে আসে না । মজিদ মিয়াঁ নাতি আর জামাই কে নিয়ে খায় । মাছের মাথা জামাই এর পাতে তুলে দেয় । অনেক জ্ঞান দেয় জামাই কে , ভবিষ্যতে যেন এমন না হয় সেই দিকে খেয়েল রাখতে বলে ।
খাওয়া শেষে মজিদ মিয়াঁ নাতিকে কাছে ডেকে নেয় । আর জামাই কে বলে মেয়ের মান ভাঙ্গাতে । মজিদ মিয়াঁ গোপনে জুম্মা ঘরের ইমাম এর কাছ থেকে খবর নিয়েছে । রাগের মাথায় তালাক নাকি তালাক না । তাই মেয়ে আর মেয়ের জামাই এক ঘরে একা থাকলে অসুবিধা নাই ।
দুপুর গড়িয়ে বিকেল আসে , মজিদ মিয়াঁ নাতি কে নিয়ে ভাত ঘুম দিয়ে ওঠে । দেখে জামাই আর মেয়ে রান্না ঘরের দাওয়ায় বসে আছে , টুকটাক কথাও হচ্ছে দুজনার মাঝে । আনন্দে মজিদ মিয়াঁর এতদিন রোগে ভোগা শরীরে নতুন শক্তির সঞ্চার হয় ।
<><><>
Posts: 1,391
Threads: 12
Likes Received: 2,352 in 824 posts
Likes Given: 1,054
Joined: Nov 2019
Reputation:
378
আজকাল প্রায় দুপুরে জামাই মজিদ মিয়াঁর বাড়িতে খাবার খায় । মজিদ মিয়াঁ ঠিক করেছে , জামাই এর বাবার সাথে কথা বলে মেয়েকে উঠিয়ে দেয়ার ব্যাবস্থা করবে । জামাই রাতে থাকতে চাইলেও মেয়ে রাজি হয় না । তবে মাঝে মাঝেই দুপুরে খাওয়ার পর নাতি কে নিয়ে বেড়িয়ে পড়েন মজিদ মিয়াঁ ।
আজো জামাই এসেছে , সবাই মিলে খেতে বসেছে দুপুরের খাবার । বড় আনন্দ হচ্ছে মজিদ মিয়াঁর মনে । এমন সময় বাহির বাড়ি থেকে হাক আসে , মজিদ কাকা বাড়িতে নাকি ? ও কাকা ……
কে …… মজিদ মিয়াঁ হাক ছাড়ে উল্টা ,
উত্তর আসে , চেয়ারম্যান সাব আইসে , তারাতারি বাহিরে আহেন
কলিজাটা খপ করে কেউ জেনো খাবলে ধরে মজিদ মিয়াঁর । এমন সময় বাড়িতে চেয়ারম্যান এসেছে কেনো বুজতে পারে না । তবুও বুকটা দূর দূর কাঁপতে থাকে । হাত ধুয়ে বাহির বাড়ি আসে মজিদ মিয়াঁ ।
বুকের ধুকপুকানি কাউকে বুঝতে দিতে চায়না । চেয়ারম্যান যখন জিজ্ঞাস করে , চাচা কিমুন আসেন ? উত্তরতা মজিদ মিয়াঁ একটু বাঁকা করেই দেয় । তা ভাতিজা এজকা কেমনে মনে পড়লো চাচারে , এতদিন তো মজিদ মিয়াঁ আসিলাম তোমার কাছে।
হেসে ওঠে চেয়ারম্যান , বলে ধুর চাচা বাদ দেন তো , তহন পুলাপান আসিলাম , ভুল চুক মাফ কইরা দিয়েন , আপনের পোলার মতন ই তো হমু আমি ।
দিলাম মাফ , আহো বহো । এই বলে মজিদ মিয়াঁ চেয়ারম্যান কে বাইরের ঘরের দাওয়ায় বসতে দেয় । বসে এদিক সেদিক তাকায় চেয়ারম্যান । মজিদ মিয়াঁর কাছে সেই চাউনি ভালো ঠেকে না ।
ভাতিজা কি মনে কইরা আইলা বুড়া চাচার কাছে সেইটা তো কইলা না এহনো ? মজিদ মিয়াঁ অস্বস্তি কাটাতে প্রশ্ন করে ।
কয়েক মুহূর্ত চুপ থাকে চেয়ারম্যান , তারপর বলে , কি কমু চাচা দুক্ষের কথা , আমি তো আপনেরে চিনি , আমার বাপের লগে থাইকা থাইকা যে অন্যায়ের সু বিচার করসেন সব সময় সেই অন্যায় এর অভিযোগ উঠসে আপনের বিরুদ্ধে । আমি কিন্তু চাচা বিশ্বাস করিনাই । আমি কইসি নানা চাচা এমন করতেই পারে না , আমার বাপের আমলে পাঁচ গেরামের মইদ্ধে মজিদ চাচা এই অন্যায় হইতে দেয় নাই ,এহন নিজে এই অন্যায় করবো কেমনে ?
অন্যায় তো কোনটাই হইতে দেইনাই , কোন অন্যায় এর কথা কইতাসো তুমি ? মজিদ মিয়াঁর বুকের ধুকপুকানি বাড়তে থাকে ।
শুনছি চাচার সাবেক মাইয়ার জামাই নাকি প্রায় এই বাড়িতে আসে , মাঝে মাঝে নাকি আপনে বাড়িও থাকেন না , খাইল্লা বাড়িতে মেয়ে আর সাবেক জামাই একলা থাকে । আমি অবশ্য বিশ্বাস করিনাই , বলসি মজিদ চাচার মত মানুষ এমুন দোজখে জাওন এর মতন কাম করতেই পারে না । কিন্তু চাচা লোকজনের মুখ তো বন্ধ করন লাগবো , লোকজন কইতাসে জামাই নাকি এহন এই বাড়িতেই আসে ।
তড়াক করে লাফিয়ে ওঠে মজিদ মিয়াঁ , বাইর হও আমার বাড়ি থাইকা , এই মুহূর্তে বাইর হও , নাইলে সব কয়টারে গলা ধাক্কা দিয়া বাইর করুম । আমি কোন অন্যায় করিনাই , আর আমার সাবেক জামাই হইবো ক্যান । এই পোলার লগে আমার মাইয়ার ধর্ম মতে বিয়া হইসে , গেরামের সব মান্দার পুত হেই বিয়ায় হা ভাইত্তার মতন খাইসে ।
চেয়ারম্যান কোন প্রতিক্রিয়া দেখায় না , শান্ত স্বরে বলে , চাচার বয়স হইসে তো অনেক কিছু ভুইল্লা গেসেন । তালাক ও যে হইসে হেইটাও সব মান্দার পুতে জানে ।
কিসের তালাক , রাগের মাথায় তালাক কইলেই কি তালাক হয় নি , এই তালাক আমি মানি না ।
উহু চাচা , এইটা কইলে তো হইবো না , বুঝলাম আপনে আমাগো মুরুগবি , তাই বইলা ধর্মের কথা তো আপনের লইগা উল্টিয়া জাইবো না । আর সাড়া জীবন আপনে যে ধর্মের রাস্তায় চলসেন , শেষ কালে আমি তো আপনেরে সেই ধর্মের রাস্তা থেইকা দূরে সরতে দিমূ না । চেয়ারম্যান সহানুভুতির সাথে বলে ।
কি কইতে চাও তুমি , কি করবা ? চোখ গরম করে বলে মজিদ মিয়াঁ ।
যেইটা ভালো হয় সেইটা করমু , আপনের খারাপ হয় এমুন কিছু করুম না । চিন্তা করেন চাচা , যদি সমাজ আপনেরে এক ঘইরা কইরা দে তহন কি হইবো , আর আপনে জহন থাকবেন না আপনের মাইয়ার কি হইবো । অন্যায় জহন একটা হইয়াই গেসে , সেইটার প্রায়শ্চিত্ত ও আছে ।
কি প্রায়শ্চিত্ত মজিদ মিয়াঁ একটু শান্ত হয়ে জিজ্ঞাস করে ।
এই পোলার লগে আপনের মাইয়ার আবার বিয়া পড়ামু আমরা । তাইলেই সমাজ থাইকা বহিস্কার হওয়া থাইকা বাঁচবেন ।
শান্ত হয়ে আসে মজিদ মিয়াঁ , মনে মনে ভাবে , আরও একবার বিয়ে করিয়ে যদি লোকজন শান্ত হয়ে তাহলে হোক তাই ।
চেঁচামেচি শুনে মজিদ মিয়াঁর মেয়ে আর জামাই বাইরে এসেছে দাড়ায় । চেয়ারম্যান মজিদ মিয়াঁর জামাই কে সামনে ডাকে ।
মান্দার পুত , আকাম করার সময় মনে আসিলো না , তালাক দিয়া মাইয়ার জীবনটা নষ্ট করসস , এহন আমার চাচার জীবনটাও নষ্ট করতে চাস , আবার বিয়া করতে চাস আমারে গিয়া বলতি আমি বেবস্থা কইরা দিতাম । সামনে ডেকে এনে জামাই কে ধমকে ওঠে চেয়ারম্যান । তারপর আবার নরম স্বরে জিজ্ঞাস করে , সত্যি কইরা ক , আবার ঘরে তুলবি চাচার মাইয়া রে ?
জামাই মাথা নেড়ে সম্মতি জানায় , সেটা দেখে চেয়ারম্যান বলে , আবার চুদুরবুদুর করবি নাতো ?
জামাই মাথা নেড়ে বলে না সে আর ভুল করবে না ।
তাইলে আইজ থাইকা ৪১ দিন পর তগো আবার বিয়া করামূ । ঘোষণা করে চেয়ারম্যান ।
ধপ করে চেয়ারে বসে পরে মজিদ মিয়াঁ , বুকের উপর থেকে একটা পাথর যেন সরে যায় । জামাই কে বিদায় করে দিয়ে চেয়ারম্যান মজিদ মিয়াঁর দিকে ঝুকে আসে বলে , দেখসেন নি চাচা কত সহজ হইয়া গেলো ? এহন খালি একটা কাম বাকি।
মজিদ মিয়াঁ জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকায় , কথা বলার শক্তি নাই তার , পেট ভর্তি ভাত খাওয়ার পর শরীরে যেমন অবসাদ আসে ঠিক তেমনি অবসাদে শরীর দুর্বল লাগছে ।
চুপেচাপে হিল্লাটা সাইরা ফালান লাগবো , ষড়যন্ত্র করার মত ফিসফিস করে বলে চেয়ারম্যান । মজিদ মিয়াঁ আরও বাঁক রুদ্ধ হয়ে পরে । ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে চেয়ারম্যানের দিকে ।
পাশ থেকে কেউ একজন বলে , চাচা আপনে চিন্তা কইরেন না , বিশ্বস্ত মানুষ নিমু , আপনের মাইয়া পুরা পবিত্র থাকবো ।
এইটা কি কও , হিল্লার দরকার কি , আমি জুম্মা ঘরের ইমাম রে জিগাইসি , রাগের মাথায় কইলে হিল্লা লাগে না । মজিদ মিয়াঁ নিজের কথা গুলো নিজেই ঠিক বিশ্বাস করতে পারে না ।
ছিঃ চাচা এইটা কি কোন , এই একটু কামের লইগা দোজখে যাইবেন , আমি থাকতে এইটা হইতে দিমু না । চেয়ারম্যান দৃঢ় কণ্ঠে বলে । কথা গুলো মজিদ মিয়াঁর খুব পরিচিত , জীবনে অনেকবার এই ধরনের কথা সে বলেছে । তাই উত্তর দিতে পারে না , কয়েকবার চেষ্টা করে কিন্তু ঠোঁট দুটো কাঁপে সুধু , কোন শব্দ বের হয় না । বের হবে কোথা হতে এজে অমোঘ সত্য কথা , এই কথার উত্তর কারো জানা নাই । সেদিন সেদুর জানা ছিলো না , আজ মজিদ মিয়াঁর ও জানা নাই , এরকম আরও হাজার হাজার মানুষের এই কথা গুলোর উত্তরে বলার মত কোন কথা জানা নেই ।
সমাপ্ত
Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,410 in 27,674 posts
Likes Given: 23,734
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
দেখা যাবে পরে পড়বো,
সৌরভের কি হলো
•
Posts: 1,391
Threads: 12
Likes Received: 2,352 in 824 posts
Likes Given: 1,054
Joined: Nov 2019
Reputation:
378
(25-01-2023, 10:05 PM)ddey333 Wrote: দেখা যাবে পরে পড়বো,
সৌরভের কি হলো
জোশ ফিরিয়ে আনার জোশিলা চেষ্টা চলছে ।
•
Posts: 435
Threads: 18
Likes Received: 456 in 160 posts
Likes Given: 32
Joined: Jan 2019
Reputation:
8
(25-01-2023, 09:38 PM)ddey333 Wrote: ধুর , কি হচ্ছে এসব।
আপনার এই অভিব্যক্তি দেখে বড্ড হাসি পাচ্ছিল।
•
Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,410 in 27,674 posts
Likes Given: 23,734
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
(25-01-2023, 11:20 PM)NavelPlay Wrote: আপনার এই অভিব্যক্তি দেখে বড্ড হাসি পাচ্ছিল।
আসলে এই ছেলেটা একটা পাগল। সব জিনিয়াস লোকেরাই একটু পাগলাটে হয় সেটা ঠিক।
•
Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,410 in 27,674 posts
Likes Given: 23,734
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
(25-01-2023, 10:07 PM)cuck son Wrote: জোশ ফিরিয়ে আনার জোশিলা চেষ্টা চলছে ।
মুসলি পাওয়ার এক্সট্রা খেয়েছে এই ব্যাটা !!
•
Posts: 466
Threads: 0
Likes Received: 962 in 408 posts
Likes Given: 758
Joined: Aug 2021
Reputation:
171
অনেক দিন পর
পুরনো স্বাদ আবার
Posts: 1,391
Threads: 12
Likes Received: 2,352 in 824 posts
Likes Given: 1,054
Joined: Nov 2019
Reputation:
378
Posts: 1,391
Threads: 12
Likes Received: 2,352 in 824 posts
Likes Given: 1,054
Joined: Nov 2019
Reputation:
378
(26-01-2023, 07:18 AM)ddey333 Wrote: মুসলি পাওয়ার এক্সট্রা খেয়েছে এই ব্যাটা !!
ddey333 পাওয়ার ই যথেষ্ট
Posts: 1,391
Threads: 12
Likes Received: 2,352 in 824 posts
Likes Given: 1,054
Joined: Nov 2019
Reputation:
378
(26-01-2023, 08:54 AM)poka64 Wrote: অনেক দিন পর
পুরনো স্বাদ আবার
পুরনো তো কয়েক ধরনের আছে , এক পুরনো ছিলো যখন ১ টাকায় ৮ মন ধান মিলতো , আরেক পুরনো ছিলো ১ টাকায় ৪ টে লজেন্স । আবার আরেক পুরনো যখন ইউটিউব বলতে কিছু ছিলো না। আপনি কোন পুরনোর কথা বলছেন
Posts: 24,400
Threads: 10
Likes Received: 12,323 in 6,189 posts
Likes Given: 8,024
Joined: Jun 2019
Reputation:
162
repped
(25-01-2023, 09:49 PM)cuck son Wrote: মজিদ মিয়াঁর মেয়ে আর মেয়ের জামাই এসেছে নির্বাচন উপলক্ষে মজিদ মিয়াঁর বাড়ি । তাই কালাম জাউল্লা কে বলে দেয়া আছে বড় একটা কাতল মাছ যোগার করে রাখতে । একদম নদীর মাছ হতে হবে , এমনিতে মজিদ মিয়াঁ আজকাল বড় বড় মাছ প্রায় কিনছে । কিন্তু সেগুলোর কোনটাই নদীর মাছ নয় , চাষ করা মাছ । কিন্তু সরাকারি দলের হোমড়া চোমড়া দের বাড়ি পাঠিয়ে দিয়ে বলে স্যার আপনার জন্য নদীর টাকটা মাছ পাঠিয়েছি । এতে কাজ হয় , একটা টাকার বান্ডেল এর চেয়ে একটি ডাউস সাইজের মাছ মানুষ কে খুশি করে বেশি । মজিদ মিয়াঁ এসব কাজে বেশ পটু , এমনি এমনি তো চুল পাকায় নি ।
তবে মেয়ের জামাই এর সাথে এসব করা যাবে না । এক মাত্র মেয়ের জামাই বলে কথা । তা ছাড়া ছেলেটা বড় মাছের মাথা পেলে খুশি হয় , মজা করে খায় । সেটা দেখে মজিদ মিয়াঁর ও মনটা খুশি হয় । এমনিতে খুব বড় লোক বাড়ির ছেলের কাছে মেয়ে বিয়ে দেয়নি মজিদ মিয়াঁ । টাকা পয়সা দিয়ে কি হবে , টাকা পয়সা দেদার আছে মজিদ মিয়াঁর কাছে । এক মাত্র মেয়ে জামাই নিয়ে সাড়া জীবন সুখে কাটাতে পারবে । এসব ভেবে মোটামুটি সচ্ছল পরিবারের শান্ত শিষ্ট ছেলে দেখে মেয়ে বিয়ে দিয়েছে । একদম হাভাতে পরিবারেও দেয় নি , ওদের স্বভাব ভালো হয় না ।
নির্বাচনের আর মাত্র তিনদিন , ব্যাস্ততা এরি মাঝে খুব বেড়ে গেছে , চারদিকে মিটিং মিছিল চলছে । চেয়ারম্যানের সাথে সমান টেক্কা দিচ্ছে মজিদ মিয়াঁ । দু হাতে টাকা ওড়াচ্ছে , কোন কার্পণ্য করছে না । এই যেমন এখন রাত সাড়ে আটটায় উঠানে বসে মিটিং চলছে । গ্রামের গণ্যমান্য ব্যাক্তিরা এসেছে । এরা সবাই মজিদ মিয়াঁ কে সাপোর্ট দিচ্ছে ।
আউজকার খেইলটা সেইরম হইসে , খালু । অগো মিছিল আর আমাগো মিছিল একদম সামনা সামনি , হালায় কি কমু আমাগো চিল্লান এর সামনে অগো আওয়াজ ই হুনা যায় না । হের পর দিলাম দাবড়ানি , এক দাবড়ানিতে খাল পার । সব লুঙ্গি খুইল্লা খালে গিয়া পরসে হা হা হা …
কথা গুলো বলছে মজিদ মিয়াঁর শালির (বউয়ের ছোট বোন) ছেলে বজলু। গ্রামের ছেলে , থাকে ঢাকা । নির্বাচনে মজিদা মিয়াঁর হয়ে কাজ করতে এসেছে । এমনিতে কথা বেশি বললেও মটামুটি কাজের ছেলে । মিছিল মিটিং এসব বজলু ই দেখাশুনা করছে। মজিদ মিয়াঁ যদিও জানে লুঙ্গি খুলে খালে নামার কথাটা বানানো । কিন্তু ধাওয়া একটা করা হয়েছিলো চেয়ারম্যানের পার্টি কে , এটা সত্য কথা । থানা থেকে ফোন এসেছিলো মজিদ মিয়াঁর কাছে । ওসি সাহেব কে এর জন্য হাজার দশেক টাকা পাঠাতে হয়েছে। অবশ্য টাকা জাওয়াতে মজিদ একটুও মন খারাপ করেনি , বরং খুশি হয়েছে ।
তয় মজিদ ভাই আপনের মার্কা টা কিন্তু সেইরাম হইসে , একদম বাঘ মার্কা । আর কামেও এপনে বাঘের লাহান ই । কলিম শেখ সাইড থেকে বলে । মজিদ মিয়া শুনে খুশি হয় । বলে তা আর কইসো মিয়া , মার্কা দিয়াই তো ওরে শেষ কইরা দিলাম , ওর হইলো হরিন আর আমার বাঘ , হরিন কি কোনদিন বাঘের লগে পারে হা হা হা … হালকা আলাপ চারিতায় মজিদ মিয়াঁ নিজেও অংশ গ্রহন করে । প্রথম প্রথম মনে একটু ভয় থাকলেও এখন আর ভয় পায় না । বরং নতুন এক ক্ষমতার স্বাদ অনুভব করে ।
আলোচনা চলতে থাকে লম্বা সময় ধরে , প্রায় সবাই মজিদ মিয়াঁর গুণগান করে নানা পন্থায় । ব্যাপক আমোদ হয় মজিদ মিয়াঁর, নিজের অতীত মনে পরে যায় । এক সময় কি ছিলো আর এখন কি হয়েছে । ছোট বেলায় বাবা মা মারা গিয়েছিলো নৌকা ডুবিতে। এর পর আশ্রয় হয় তখনকার চেয়ারম্যানের বাড়ি । টুকটাক ফুট ফরমায়েয়েশ খাটতো সে , এর চড় ওর লাথি সহ্য করতে হতো ছোট্ট ছোট্ট ভুলের জন্য ।
এর পর ঘটে এক ঘটনা , এক সালিস থেকে ফিরছিলো তখনকার চেয়ারম্যান, সাথে মজিদ মিয়াঁ । ততদিনে মজিদ মিয়াঁ একটু বড় হয়েছে । ২০ বছরের তাগড়া জোয়ান সে । রাতের বেলা শর্টকাট রাস্তা হিসেবে জমির আইল ধরে হাটছিলো মজিদ মিয়াঁ আর চেয়ারম্যান । মজিদ মিয়াঁর হাতে টর্চ আর বগলে ছাতা । হঠাত করেই আক্রান্ত হয় ওরা , বেশি লোক ছিলো না জনা তিনেক , অর্ধ উলঙ্গ মানুষ পড়নে সুধু লুঙ্গি , তাও কাছা দেয়া । নিজের জানের তোয়াক্কা করেনি মজিদ মিয়াঁ ,ঝাপিয়ে পরেছিলো । না চেয়ারম্যান কে রক্ষা করার কোন তাগিদ অনুভব করেনি মজিদ মিয়াঁ সেদিন । বরং নিজের ভেতর থেকে এক প্রচণ্ড রাগ উঠে এসেছিলো কেনো জানি । হাতের টর্চ দিয়ে ঘায়েল করে তিন হামলা কারিকে । তিনজন যখন পালিয়ে যায় তখন দেখতে পায় থরথর করে কাঁপছে চেয়ারম্যান । তখন চেয়ারম্যান ও খুব বয়সী না ৪০ এর মত হবে বয়স । সেই থেকে মজিদ মিয়াঁ হয়ে যায় চেয়ারম্যানের সবচেয়ে কাছের মানুষ । আর সেই সুবাদে সকল কুকর্মের সাক্ষি । সরকারি টাকা চুরি ছাড়াও প্রাক্তন চেয়ারম্যানের মেয়ে ঘটিত দুর্বলতা ছিলো । আর সেই খায়েস পুরন করতে সাহায্য করতো মজিদ মিয়াঁ ।
এর পর অবশ্য মজিদ মিয়াকে পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি । ধিরে ধিরে বিপুল সম্পদ এর মালিক হয়েছে , নিজে ইউ পি মেম্বার হয়েছে । বিয়ে থা করেছে বড় গেরস্থ বাড়িতে । আর এখন চেয়ারম্যান হওয়ার দ্বারপ্রান্তে দাড়িয়ে । ভাবতে ভাবতে গায়ে কাটা দিয়ে ওঠে মজিদ মিয়াঁর । কি একটা জীবন পার করেছে সে । ধ্যান মগ্ন হয়ে ভাবছিলো মজিদ মিয়াঁ আসে পাশের লোকদের কথা কানে আসছিলো না এতক্ষন । হঠাত কে জেনো ডেকে ওঠে দাদা… ও দাদা …
ধ্যান ভঙ্গ হয় মজিদ মিয়াঁর , সমবেত সবাই হাসছে কি যেন একটা হাসির কথা বলেছে বজলু । মজিদ মিয়াঁ পাশে তাকায় দেখে মজনু দাড়িয়ে , উদলা গায়ে নিজের বিশাল ভুরি বের করে ।
কি হইসে… খেঁকিয়ে জিজ্ঞাস করে মজিদ মিয়াঁ । ফুপু ডাকে আপনেরে , হেরা খাইতে বইসে , আপনেরে ছাড়া খাইবো না।
এই ফুপু হচ্ছে মজিদ মিয়াঁর মেয়ে । বছর দুয়েক আগে যার বিয়ে হয়েছিলো । মেয়েটা বিয়ের পর একটু সাহসি হয়ে উঠছে । আগে বাবার সামনে কথা বলতে ভয় পেত । এখন প্রায়ই হুকুম জারি করে । মজিদ মিয়াঁ অবশ্য এতে আমোদ পায় । বিয়ের আগে মেয়েকে কড়া শাসনে রাখলেও এখন আর শাসন করার কিছু নেই । এখন মেয়ে স্বামীর দায়িত্বে আছে , বাবা হিসেবে সে যতদিন দায়িত্ব পালন করার করে দিয়েছে । তাই এখন বাবা কে ভয় পাওয়ার কিছু নেই , এখন ভয় পাবে স্বামী কে , আর মর্জি করবে বাবার সাথে , এটাই দুনিয়ার নিয়ম । মজিদ মিয়াও মেয়েকে লাই দেয় আজকাল । এই যেমন এখন মিটিং ভেঙ্গে দিয়ে মজনুর পেছন পেছন হাঁটা দেয় । মেয়ে আর জামাই এর সাথে নৈশ ভোজে অংশ গ্রহন করার জন্য ।
জামাইয়ের পাতে বড় কাতল মাছের মাথা দেয়া হয়েছে , মজিদ মিয়াঁ সন্তুষ্ট হয় সাইজ দেখে । তারচেয়ে বেশি সন্তুষ্ট হয় জামাই আর মেয়ের মুখের খুশির ঝলকানি দেখে । যদিও জামাই বার বার বলছে মাথাটা জেনো মজিদ মিয়াঁর পাতে দেয়া হয় । কিন্তু সেটা হবার নয় , মেয়ে বলে আহা খান না আপনে , আব্বা এতো সখ কইরা আনসে আপনের লইগা ।
মজিদ মিয়াঁ আজকাল খুব বেশি খায় না , পেটে সহ্য হয় না । তাই নিজে অল্প ভাত নিয়ে , বসে বসে মেয়ে আর মেয়ের জামাই এর খাওয়া দেখে । জামাই মজা করে কাতল মাছের মাথা খাচ্ছে , তা দেখে মেয়ে খুশি হচ্ছে । আর ওদের আনন্দ দেখে মজিদ মিয়াঁর আনন্দ হচ্ছে ।
আব্বা আপনে এইটুক ভাত নিলেন ? হঠাত প্রশ্ন করে মজিদ মিয়াঁর মেয়ে । আরও ভাত নেন , আর মাছ নেন আরেক টুকরা, মাছটা যা স্বাদ আর কি তেল । মজিদ মিয়াঁর পাতে ভাত দেয়ার জন্য এগিয়ে আসে মেয়ে ।
প্রতিবাদ করে মজিদ মিয়াঁ , আরে না না , জামাই রে আর এক টুকরা দে , একদম টাটকা মাছ , পাক্কা সাত কেজি ওজন ।
জামাইকে জোড় করে আরও এক টুকরা মাছ দেয়া হয় ।
আব্বা পরশু আপনেই জিতবেন , দেইখেন । মেয়ে খেতে খেতে বলে আবার ।
তাই নাকিরে মা? তুই এতো নিশ্চিন্ত হইলি কেমনে রে , তুই কি নির্বাচন কমসন এর লোক নি রে হা হা হা …… আজকাল মজিদ মিয়াঁ মেয়ের সাথে হালকা মশকরা ও করে ।
না আব্বা , আমি স্বপন দেখসি , দেইখেন আপনেই জিতবেন , আর আমি হমু চেয়ারম্যানের মাইয়া হি হি হি ……
মজিদ মিয়াঁর খুব আমোদ হয় , এই দিকটা ভাবেনি মজিদ মিয়াঁ । সুধু নিজে চেয়ারম্যান হবে এটাই ভেবেছিলো সে , কিন্তু তার আশেপাশের মানুষ গুলির ও যে পদোন্নতি হবে সেটা এতদিন ভেবে দেখেনি । তার মেয়ে হবে চেয়ারম্যানের মেয়ে , তার বউ হবে চেয়ারম্যানের বউ , মজনু হবে চেয়ারম্যানের চাকর … ভাবতে ভাবতে মুচকি হেসে ফেলে মজিদ মিয়াঁ ।
<><><>
•
Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,410 in 27,674 posts
Likes Given: 23,734
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
(26-01-2023, 01:02 PM)cuck son Wrote: ddey333 পাওয়ার ই যথেষ্ট
কাল সময় করে ভালো করে পড়ে কমেন্ট দেবো।
•
Posts: 466
Threads: 0
Likes Received: 962 in 408 posts
Likes Given: 758
Joined: Aug 2021
Reputation:
171
(26-01-2023, 01:09 PM)cuck son Wrote: পুরনো তো কয়েক ধরনের আছে , এক পুরনো ছিলো যখন ১ টাকায় ৮ মন ধান মিলতো , আরেক পুরনো ছিলো ১ টাকায় ৪ টে লজেন্স । আবার আরেক পুরনো যখন ইউটিউব বলতে কিছু ছিলো না। আপনি কোন পুরনোর কথা বলছেন
যেমন পুুুুরনো লালসালু
হিল্লা ছিলো আগে চালু
Posts: 328
Threads: 5
Likes Received: 644 in 221 posts
Likes Given: 309
Joined: Jun 2019
Reputation:
87
Posts: 1,391
Threads: 12
Likes Received: 2,352 in 824 posts
Likes Given: 1,054
Joined: Nov 2019
Reputation:
378
(27-01-2023, 09:11 AM)poka64 Wrote: যেমন পুুুুরনো লালসালু
হিল্লা ছিলো আগে চালু
অনর্থক প্রস্ন করা হলো সার্থক ,
ছন্দ লিখলেন পোকা সাহেব চমকপ্রদ
|