Thread Rating:
  • 32 Vote(s) - 2.66 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Romance অনুভূতিতে_তুমি
#41
( লেখনিতে) 
#পর্ব_৩০

মাঝরাতে খুব সাবধানে বিছানা ছেড়ে বসল নির্ঝর! অর্ণবের হাত সরিয়ে উঠতে গেলেই টের পেল অর্ণব ঘুমের মাঝে তার শার্টের পিছনের দিক আকঁড়ে আছে। নির্ঝর প্রায় নিঃশ্বাস বন্ধ করে নিঃশব্দে অর্ণবের হাত সরাল। অতঃপর পা টিপে টিপে বের হলো ঘর থেকে। দরজা আলতো ভাবে লাগিয়ে দিয়ে রওনা দিল রান্না ঘরের দিকে। 

অনেকক্ষণ ধরেই ইচ্ছে করছে আইসক্রিম খাওয়ার জন্য। কিন্তু মেহেরিন তাকে রাতের বেলায় আইসক্রিম খেতে দিবে না। কারণ সে খেলেই অর্ণব খাওয়ার জন্য বায়না ধরবে। এদিকে অর্ণবের শরীর টাও আজ একটু একটু গরম লাগল। ভয় হচ্ছে না জ্বরে পরে যায়! তাই অর্ণব থেকে আড়াল হয়ে এই মাঝরাতে আইসক্রিম খাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্ঝর। সিদ্ধান্ত টা খারাপ বলে মনে হচ্ছে না তার। নির্ঝর ফ্রিজ খুলে তার সামনে বসে রইল। মুখে চামচ নিয়ে ভাবছে কোন আইসক্রিম খাবে। ভ্যানিলা না চকলেট। নির্ঝর চামচ টা হাতে নিয়ে ভ্যানিলা বক্সে বারি দিয়ে বলে,

"ভ্যানিলা খাবো! 

বক্স হাতে নিয়ে সামনে ফিরতেই কানে অর্ণবের আওয়াজ এসে বারি খেলো। "ড্যাডি" বলে ডেকে উঠলো সে। নির্ঝর শুকনো ঢোক গিলে পিছনে ঘুরে দেখল অর্ণব চেয়ারে বসে আছে। তাকে দেখে হাত নাড়াল। নির্ঝর হতচকিয়ে উঠলো। অর্ণব দাঁত বের করে হেসে বলল,

"চকলেট আইসক্রিম! 

দুঃখে কপাল চাপড়াতে ইচ্ছে করছে তার। এই ছেলে কিভাবে জেগে গেল সেটাই ভেবে পাচ্ছে না। তবুও তার মন রাখতে চকলেট আইসক্রিম বক্স টা বের করলো সে। নিজের বাটিতে আইসক্রিম বেশি আর অর্ণবের বাটিতে আইসক্রিম কম নেওয়ায় সে ভ্রু কুঁচকালো। নির্ঝর তার নাক টেনে বলে,

"যখন বড় হবে তখন বেশি আইসক্রিম খেয়ো। এখন আপাতত এতো টুকু খাও, নাহলে তোমার মাম্মি জানলে আমাকে এই মাঝরাতে ঘর থেকে বের করে দেবে! 

মুখ ভেংচি কেটে আইসক্রিম বাটি টা নিজের কাছে নিল। চামচ দিয়ে একটু পর পর হেলেদুলে আইসক্রিম খেতে লাগল। নির্ঝর উঁকি মেরে তাকিয়ে আছে তার আইসক্রিম 'র দিকে। নিজের আইসক্রিম দ্রুত শেষ করে অর্ণবের আইসক্রিম ও ভাগ বসাল। যাতে সবটা সে খেতে না পারে। অর্ণব চোখ দুটো ছোট ছোট করে তাকিয়ে রইল। নির্ঝর দাঁত বের করে বলল,

"তাড়াতাড়ি করে দুজন খেয়ে শেষ করে ফেলি নাহলে মাম্মি এসে পড়ে। 

বলেই আবারো অর্ণবের ভাগের আইসক্রিম খেতে লাগল। দেখতে দেখতে অনেকখানি খেয়ে ফেলল। অর্ণবের বুঝতে বাকি রইল না কি চলছে। হুট করেই সে হাত তুলে ওদিকে ইশারা করল। নির্ঝর সেখানেই নজর দিতেই অর্ণব আইসক্রিম'র বাটি নিয়ে দৌড়। নির্ঝর বেশ কিছুক্ষণ লাগল এটা বুঝতে। তবে সে বুঝতে বুঝতে অর্ণব সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে গেছে। নির্ঝর তার পিছনে ছুটল। 

ঘরে এসে দুজনে ছুটছে। নির্ঝর ভয় পাচ্ছে কখন না মেহেরিন জেগে যায়। আর এই অর্ণব, তার কাছে এটা খেলা ছাড়া কিছু মনে হচ্ছে না। সে এখন মেহেরিন'র কাছে এসে দাঁড়াল। নির্ঝর দম ছেড়ে ফিসফিসিয়ে বলল,

"অর্ণ সোনা মাম্মি জেগে যাবে, এদিকে আসো।

অর্ণব পেছনে তাকিয়ে মেহেরিন কে দেখল। নির্ঝর এই ফাঁকে তার হাত থেকে আইসক্রিম বাটি কেড়ে নিল। অর্ণব তা নিয়ে নির্ঝরের সাথে কাড়াকাড়ি করতে লাগলো। হুট করেই নির্ঝর আইসক্রিম বাটি সহ মেহেরিন'র উপর পড়তে নিল। কিন্তু পরক্ষনেই বিছনায় হাত রেখে সামলে নিল সে। 

মেহেরিন গভীর ঘুমে মগ্ন। নির্ঝর তার ঠিক উপরে। পিছনে তাকিয়ে অর্ণব কে দেখতেই সে ফিক করে হেসে দিল। নির্ঝর আফসোস করে মাথা নাড়িয়ে মেহেরিন'র দিকে তাকাল। ল্যাম্পশ্যাডের নিভো নিভো আলোয় মেহেরিনকে দেখছে সে। চোখের পাতা ফেলে মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। খুব শান্ত ভাবেই ঘুমিয়ে আছে মেহু। নির্ঝরের দৃষ্টি এসে পড়ল তার ঠোঁট জোড়া'র দিকে। মলিন এই ঠোঁট জোড়া'র নেশায় পড়ছে সে। মুচকি হেসে সামনে তাকাতেই তার চক্ষু স্থির, হাতের আইসক্রিম'র বাটি বাঁকা হয়ে আছে, আর তা থেকে আইসক্রিম গলে জড়ো হচ্ছে পড়ার জন্য। সে দ্রুত বাটি সোজা করে নিল। কিন্তু তৎক্ষণাৎ কিছুটা আইসক্রিম মেহেরিন'র ঠোঁটের উপর পড়ল। 

নির্ঝর বিস্ফোরিত চোখে তাকিয়ে আছে। মেহেরিন নড়েচড়ে উঠল। দ্রুত সোজা হয়ে অর্ণব'র হাত ধরে বিছানার এপাশে চলে এলো। আইসক্রির'র বাটি খাটের পেছনে রেখে অর্ণব কে কোন শব্দ ছাড়া বিছানায় বসিয়ে দিয়ে নিজে বসল। মেহেরিন ঘুম ঘুম চোখেই বিছানা ছেড়ে বসলো। অর্ণব আর নির্ঝর দ্রুত দুজনকে জড়িয়ে ধরে ঘুমানোর ভান করল। 

ইচ্ছে না থাকা সত্ত্বেও দু চোখের পাতা মেলল সে। দু"ঠোঁট দিয়ে স্বাদ নিতেই চকলেট'র স্বাদ পেল। হাত দিয়ে ঠোঁট ছুঁতেই কিছু আছে বলে অনুভূতি হলো। মেহেরিন এবার বিরক্ত হলো। পাশ ফিরে তাকাতেই দেখল দুজন দুজনকে জড়িয়ে ঘুমিয়ে আছে। চাদর টাও তাদের গা'য়ে নেই। মেহেরিন বিছানা ছেড়ে উঠলো। কিছু একটা বিরক্ত করছে তাকে। ঘরের দরজাও খোলা। সবাই ঘুমালে বাইরে গেল কে? 

মেহেরিন দরজার কাছে আসতেই নির্ঝর এক চোখ আর অর্ণব দু'চোখ উঁকি দিল। মেহেরিন পিছু ফেরার সাথে সাথেই দুজন আগের অবস্থায় এসে পড়ল। বসার ঘরে এসে পর্যবেক্ষণ করল সে। টেবিলের উপর এক আইসক্রিম বাটি আর দুই আইসক্রিম'র বক্স। ফ্রিজের দরজাও খোলা। মেহেরিন ফ্রিজ থেকে পানির বোতল বের করে খেল। আইসক্রিম বক্স গুলো ফ্রিজে রেখে সিঁড়ির উপরে তাকাল। এই কাজ বাড়ির দুই চোরের। তাদের ছাড়া আর কারো না। রাগ হচ্ছে আর তার সাথে চিন্তা। দিনরাত এমন ভাবে আইসক্রিম খেতে থাকলে অর্ণব অসুস্থ হয়ে পড়বে। কিন্তু কথা হলো এখানে আইসক্রিম কি একজন খাচ্ছিল না দুজন। কারণ বাটি তো একটা। 

এই হিসাব মিলাতে পারল না সে। অর্ণব আর নির্ঝর দুজনেই চোখ বুঝে একে অপরের জরিয়ে ধরে আছে। মেহেরিন ঘরে আসার উপস্থিত দুজনেই পেল। মেহেরিন দরজা বন্ধ করল। তাদের গায়ে চাদর টেনে দিল। নির্ঝর কাছে এসে চাদর ঠিক করে দিতেই খাটের পিছনের বাটি চোখে পড়ল তার। হিসেব মিলে গেছে এতোক্ষণে। এমন বোকামি দেখে না হেসে পারল না‌। নিজের জায়গায় এসে অর্ণবের কপালে চুমু খেল। ওপাশ হয়ে শুয়ে দু চোখ বন্ধ করল। যা করার কাল সকালে করবে। 

অর্ণব চোখ মেলে নির্ঝরের দিকে তাকাল, নির্ঝর তার দিকে তাকাতেই দুজনেই দাঁত বের করে হেসে দিল। মাম্মি কে বোকা বানাতে পেরে দুজনেই খুশি। মেহেরিন ল্যাম্পশ্যাডের আলো নিভিয়ে দিল। নির্ঝর হাসি বন্ধ করে অর্ণবের কপালে চুমু খেয়ে তাকে আলতো করে জরিয়ে ধরল। 

ব্রেকফাস্ট টেবিলে মিস মারিয়া কে আইসক্রিম আনতে বললে, সে উওর দিল,

"বাড়িতে কোন আইসক্রিম নেই স্যার। 

নির্ঝর অবাক কন্ঠে,
"কি বললে? 

মেহেরিনর ইশারায় মিস মারিয়া রান্না ঘরে গেলেন। মেহেরিন জুসের গ্লাস হাতে নিয়ে বলল,
"গতকাল রাতে চোর এসে আইসক্রিম খেয়ে গেছে! 

একথা শুনতেই অর্ণব অবাক হয়ে গেল। তার মুখ লাল হয়ে যাচ্ছিল। নির্ঝর বিষম খেল। মেহেরিন হাতের গ্লাস এগ এগিয়ে দিল। মেহেরিন বলে উঠল,

"আমিও এটাই ভাবছি, এতো কিছু থাকতে শেষে কি না আইসক্রিম। খুব বোকা ছিল চোর গুলো! 

নির্ঝর বিস্ফোরিত চোখে তাকাল। মেহেরিন বলে উঠল,
"মানে বলছি চোর কি একটা এসেছিল নাকি। নিশ্চয়ই দুজন কিংবা তিনজন এসেছিল নাহ! 

নির্ঝর কাশতে কাশতে অর্ণবের দিকে তাকাল। অর্ণব মুখ শক্ত করে বসে আছে। মেহেরিন মুখ টিপে হেসে বলল,

"তো অফিসের সময় হয়ে যাচ্ছে, বের হতে হবে আমাদের। অর্ণব, ব্রেকফাস্ট শেষ করো তাড়াতাড়ি। আর নির্ঝর আপনিও। আমি গাড়ির কাছে অপেক্ষা করছি। 

মেহেরিন যেতেই দুজনেই শব্দ করে দম ফেলল। অর্ণব বলে উঠল,

"ড্যাডি! 

নির্ঝর হেসে বলল,
"আমিও এটাই ভাবছি, তোমার মাম্মি জানলো কিভাবে? এ তো দেখছি আমরা বুনো উল হলে মেহুও বাঘা তেঁতুল!

অর্ণব কিছু না বুঝতে পেরে ভ্রু কুঁচকে তাকাল। নির্ঝর হেসে মাথা নেড়ে বলল,
"তোমার মাম্মি আমাদের থেকে বেশি চালাক বুঝলে! 

অর্ণব হেসে মাথা নেড়ে বলল,
"মাম্মি! 

---

অর্ণব কে কালো রঙের স্যুট পড়িয়ে দিয়ে খাটে বসাল মেহেরিন। খুব সুন্দর লাগছে তাকে। অর্ণবের কপালে চুমু খেয়ে বলল,

"মাম্মি রেডি হবে, তুমি ড্যাডির কাছে যাও!

অর্ণব খুশিতে গদগদ হয়ে ড্যাডির কাছে দৌড় দিল। মেহেরিন শব্দ করে শ্বাস ফেলল। কালো রঙের একটা গাউন পরে আয়নার সামনে এসে দাঁড়াল। খুব করে সাজল আজ। গাঢ় লাল রঙের রাঙালো ঠোঁট দুটো। চোখে হালকা করে কাজল ও দিল। চোখ পড়ল ডেসিন টেবিলে থাকা কার্ডের উপর। হাতে নিয়ে ফাহান আর অদিতি নামের উপর হাত বোলাতে লাগলো। হয়তো এখানে একসময় তার নাম'ই ছিল। বিয়েটাও বোধহয় তার সাথেই হতো। 

অদিতি নামের মেয়েটা হলো ফাহানের এসিস্ট্যান্ট! মেয়েটা প্রথম থেকেই ফাহান কে প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছিল। একদিন ফাহানের কেবিনে গিয়ে দেখল ঘুমন্ত ফাহান কে খুব কাছ থেকে দেখছে সে। মেহেরিন যেতেই সরে গেল সে। ফাহানও হতচকিয়ে উঠলো। সেদিন'ই ফাহান কে বলে কাজ থেকে বের করল তাকে। ফাহানের সাথে অন্য মেয়ে কে সহ্য হতো মেহেরিন'র। 

ফাহান আর মেহেরিন'র ঝগড়ার পর হুট করেই একদিন মেসেজ এলো ফাহানের কাছ থেকে। মেহেরিন খুব সাহস নিয়ে তা চেক করল। ফাহান তাকে হোটেলে আসতে বলেছে। মেহেরিন প্রথমে ভাবলে যাবে না। এটাই মনস্থির করে ফেলল। তবুও রাতের প্রহর শেষে হাজির হলো হোটেলে। হোটেলে এসে রুমের দরজার সামনে দাঁড়াল সে। কিন্তু নক করার সাহস হলো তার। অস্থির লাগছে তার কাছে। অতঃপর দীর্ঘশ্বাস ফেলে রুমের দরজা নক করল। প্রথম বার নক করে আবারো হাত বাড়িয়ে নক করল সে। ওপাশ থেকে দরজা খোলার শব্দ আসছে কানে। মেহেরিন মুখ নিচু করে শ্বাস নিচ্ছে। দরজা খুলতেই এক জোড়া পা চোখে পড়ল তার। পা দুটো কোন ছেলের না মেয়ের। সে ভ্রু কুঁচকে মুখ তুলে সামনে তাকাতেই অদিতি কে দেখে চমকে উঠলো। আরো অবাক হলো এটা দেখে সে ফাহানের শার্ট পড়ে আছে।শার্ট চিনতে কষ্ট হলো না তার। এটা সে নিজেই পছন্দ করে কিনে দিয়েছিল তাকে। পায়ের নিচের মাটি সরে গেল মনে হচ্ছে। এমনকি তার পরনেও পোশাকও ঠিক নেই। খুব শর্ট ধরনেরই প্যান্ট পড়ে আছে সে। অদিতি তাকে দেখে শার্টের কলার টা ঠিক করল। মেহেরিন'র দম মনে হলো বন্ধ হয়ে আসছিল। তার শরীর কাঁপতে লাগল। 

ওপাশ থেকে ফাহানের গলার স্বর পেল সে। ফাহান জিজ্ঞেস করছে, "কে এসেছে? 

অদিতি বাঁকা হেসে বলল,
"হাম একজন খুব পরিচিত মানুষ।

"তোমার! 

"হ্যাঁ বলতে পারো। তোমার কিছু লাগবে বেবি! 

ফাহান বলে উঠল,
"না, আমি নিজেই দেখছি! 

অদিতি হুট করেই দরজা খুলে ফেলল। মেহেরিন তাকিয়ে ফাহান কে দেখল পিছ থেকেই। তার পরণে শুধু একটা প্যান্ট,গা উদাম। মেহেরিন কয়েক পা পিছিয়ে গেল। দ্রুত হেঁটে চলে এলো সেখান থেকে। লিফট'র কাছে এসে বার বার বোতাম টিপতে লাগল।শ্বাস নিতে খুব কষ্ট হচ্ছে তার। মুখ খুলে ঘন ঘন শ্বাস নিচ্ছে সে। মনে হচ্ছে তার পুরো দুনিয়া উল্টে গেছে। লিফট টাও আসছে না দেখে মেহেরিন সেখান থেকে হেঁটে এসে এপাশে এলো। দেওয়ালে হাত রেখে শক্ত হয়ে দাঁড়াল। কিন্তু শক্ত হতে পারছে না। খুব কাঁদতে ইচ্ছে করছে তার। হঠাৎ করেই পেছন থেকে কেউ বলে উঠল,

"খুব কষ্ট হচ্ছে? 

অদিতির স্বর চিনতে কষ্ট হলো না। মেহেরিন নিজেকে সামলে রেখে সামনে ফিরল। অদিতি এবার পোশাকের উপর একটা লং কোট পড়ে এসেছে। অদিতি হেসে বলল,

"ভালোবাসার মানুষ হারিয়ে গেলে কিন্তু অনেক কষ্ট হয়। তবে এখানে তো তুমি নিজে তাকে ছেড়ে দিয়েছ! 

মেহেরিন চোয়াল শক্ত করে নিল।‌ স্থির চোখে তাকিয়ে রইল। অদিতি হেসে বলল,

"তোমার এই এটিটিউড কিন্তু আমার বেশ লাগে মেহেরিন। বলতে হবে ফাহান স্যার কিন্তু তোমার এমন এটিটিউড দেখেই প্রেমে পড়েছিল। 

মেহেরিন মুখ সরিয়ে নিল। অদিতি তার কাছে এসে দাঁড়িয়ে বলল,

"কি হলো বলো আমাকে সরিয়ে দিয়ে, ফাহান স্যার কিন্তু নিজেই এসেছে আমার কাছে। এখন কি করে বলি তোমায় কি কি হয়েছে তখন। ( মেহেরিন'র কানের কাছে ফিসফিসিয়ে বলল ) এখন আমার গায়ের শার্ট দেখেই বুঝে নিত পারো। একটা কথা শুনে রাখো তুমি বরাবরে মতো হারিয়ে ফেলেছ ফাহান স্যার কে। ফাহান স্যার শুধু এখন আমার, শুধু আমার! 

মেহেরিন ঠোঁট ভিজিয়ে হেসে তার দিকে ফিরল। অদিতি ভ্রু কুচকালো। মেহেরিন বলে উঠল,

"কনগ্রেচুলেশন তোমাকে আর তোমার ফাহান স্যার কে।

"আহ ধন্যবাদ! তোমার থেকে এটাই আশা করেছিলাম। খুব তাড়াতাড়ি বুঝে গেলে তুমি! 

"আফসোস আরো আগে বুঝলে একটু বেশিই ভালো হতো! 

বলেই আসতে নিলে অদিতি বলে উঠল,
"তবে হ্যাঁ এটা ভেবো না ফাহান স্যার তোমাকে ডেকেছে। তার ফোন থেকে তোমাকে মেসেজ আমিই করেছিলাম যাতে তুমি.. 

পুরো কথা শোনার ইচ্ছা হলো না তার। হন হন করে হেঁটে চলে এলো। লিফটে না চড়ে সিঁড়ি দিয়ে নামতে লাগল সে। চোখ মুখ শক্ত করে গাড়িতে এসে বসল সে। গাড়ি ড্রাইভ করতে লাগল গতি বাড়িয়ে। কাঁদছে সে, খুব কান্না পাচ্ছে তার। একসময় গাড়ি এসে থামিয়ে দিল। নিজের হাত কামড়ে ধরল কান্না থামানোর জন্য। এতো জোরেই কামড় দিল যে তার হাত থেকে রক্ত পড়তে লাগলো। মেহেরিন হাঁফিয়ে উঠল। হ্যাডেলে মাথা রেখে নিঃশব্দে কাঁদতে লাগলো সে.. 

-----

কাঁধে কারো স্পর্শ পেয়ে হাতের কার্ডটা নিচে পড়ে গেল। মেহেরিন কেঁপে উঠল। তাকে সামনে ঘুরাতেই চোখ থেকে অশ্রু গড়িয়ে পড়ল। মেহেরিন তাকিয়ে দেখল নির্ঝর দাঁড়ানো তার সামনে। চোখের অশ্রু মুছিয়ে দিল সে। মেহেরিন এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে নির্ঝরের দিকে। নির্ঝর নিচে কার্ডের দিকে তাকতেই বুঝল কি হয়েছে। নির্ঝর মেহেরিন'র গালে হাত রাখল। মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল তার দিকে। সেই হরিণী চোখের জল অবাধ্য করে তুলছে তাকে। সে ঠোঁট বাড়িয়ে চুমু খেল তার কপালে। নির্ঝরের ছোঁয়া মেহেরিন'কে অস্থির করে তুলল। নির্ঝরের হাতের উপর হাত রাখল সে। আঁকড়ে ধরল নখ দিয়ে! দম নিতে কষ্ট হচ্ছে এখন তার। খুব ঘন ঘন করে শ্বাস নিচ্ছে সে। নির্ঝর এগিয়ে আসছে তার'ই দিকে। কিছু কি তবে হতে চলেছে। কিন্তু না এটা তো হয় না। তবুও সরে যেতে পারছে না সে। পা দুটো বোধহয় আটকে আছে জমির সাথে। দ্রুত চোখ বুঝে ফেলল সে। হঠাৎ করেই পিছ থেকে অর্ণব ডেকে উঠলো,

"ড্যাডি! 

#চলবে....
[+] 2 users Like Manjarul Haque's post
Like Reply
Do not mention / post any under age /rape content. If found Please use REPORT button.
#42
Baki ta ki ami dia dbo
[+] 2 users Like Jaguar the king's post
Like Reply
#43
লেখনিতে) 
#পর্ব_৩১

নির্ঝর মেহুর কপালে চুমু খেল। অতঃপর তার ঠোঁট জোড়া'র দিকে তাকিয়ে রইল। কেন এমনটা করছে জানা নেই তবুও অগ্রসর হচ্ছে তার ঠোঁটের দিকে। ঠোঁট জোড়া'র অনেক কাছে আসতেই হুট করেই পেছন থেকে অর্ণবের ডাক পেল। দ্রুত মেহু কে ছেড়ে পেছনে চলে এলো। মেহেরিনও দু পা পিছিয়ে গেল। কি হতে যাচ্ছিল এখন এটা ভাবতেই তার শরীর কাঁটা দিয়ে যাচ্ছে। নির্ঝর গলার টাই ঠিক করে ঠিক করে পিছনে ফিরতেই অর্ণব দাঁত বের করে হেসে বলল,

"ড্যাডি! 

অতঃপর উঁকি দিয়ে বলল,
"মাম্মি! 

মেহেরিন ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটিয়ে বলল,
"অর্ণব, সোনা! 

অর্ণব দৌড়ে গেল মেহেরিন'র কাছে এলো। মেহেরিন তার চুল গুলো হাত দিয়ে ঠিক করে দিল। নির্ঝর নিচ থেকে কার্ড টা হাতে নিয়ে মুচকি হেসে বলল,

"তাহলে যাওয়া যাক!

মেহেরিন হেসে মাথা নাড়ল। অর্ণব নির্ঝরের এক হাত আর মেহেরিন'র এক হাত ধরে নিল। অতঃপর হাঁটতে শুরু করল। 

---

বাড়ির সামনে গাড়ি থামাল জন! নির্ঝর প্রথমে বের হয়ে অর্ণব'কে বের করল। অতঃপর মেহেরিন'র হাত ধরে তাকে নামাল। মেহেরিন মানসিক ভাবে নিজেকে প্রস্তুত করছে। অতঃপর সামনে তাকিয়ে দেখল পুরো বাড়ি আজ আলোর রঙে রঙিন। বাড়ি টা দেখতেও খুব সুন্দর। হয়তো অনুষ্ঠানের জন্য ভাড়া নিয়েছে নাকি তাদের! যদিও এসব ভাবতে ইচ্ছে না করছে তবুও মাথায় এসব কথাই উঁকি দিয়ে যাচ্ছে।মেহেরিন বাড়ি টার দিকে তাকিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে দাঁড়িয়ে আছে। নির্ঝর মেহেরিন'র হাত নিজের হাতে মুষ্টিবদ্ধ করে নিল। মেহেরিন তাকিয়ে দেখল অর্ণব নির্ঝরের কোলে। নির্ঝর মেহুর দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসল।

মেহমানে সবাই উপস্থিত। মেহেরিন বাড়ির এক কোনে দাঁড়িয়ে আশপাশ দেখছে। তার চোখ যাকে খুঁজছে তাকেই দেখার চেষ্টা করছে সে। মনের মাঝে কথাটা বিঁধে গেল। এতো কিছুর পরও তাকে দেখার আশা করাটা বিরাট অন্যায় বলে মনে হচ্ছে। অর্ণব তার হাত ধরে সেখানেই দাঁড়িয়ে আছে।‌ নির্ঝর হাতে কোল্ড ড্রিক নিয়ে লক্ষ্য করছে মেহু কে। এই মেয়ে আজও না দুর্বল হয়ে যায়। 

ঘাড়ে কারো স্পর্শ শরীর কাঁপিয়ে দিল। মেহেরিন পিছনে ফিরতেই একটা স্টাফ কে দেখল। নির্ঝর দূর থেকে তাদের কথা বলতে দেখে একটু এগিয়ে এলো। মেহেরিন নির্ঝরের কাছে অর্ণব কে রেখে বলল,

"আমি একটু আসছি!

কথার পিঠে প্রশ্ন ছুঁড়ল নির্ঝর,
"কোথায় যাচ্ছ?

মেহেরিন কে অস্থির লাগছে তার কাছে। তার কথায় হতচকিয়ে গেল সে। সামলে বলে উঠে,
"এত'ই তো একটু কাছে। ঢোক গিলে বলল,

"একজন খুব পুরনো বন্ধু ডেকেছে আমায়! 

নির্ঝর কথা বাড়াল না। মেহেরিন অস্থিরতা নিয়েই হেঁটে চলল। নির্ঝরের ভাবনা একটাই ফাহান ডাকে নি তো! 

ঘরের দরজায় কড়া নাড়ল মেহেরিন। আয়নার সামনে সেজে বসে আছে অদিতি। তবে পোশাক পড়ে নি এখনো! অদিতি মেহেরিন কে দেখতে পেয়ে ঘরের বাকি স্টাফ কে বের করে দিল। হাত টেনে ঘরে ঢোকাল মেহেরিন কে। জড়িয়ে ধরল তাকে। মেহেরিন'র গায়ে বোধহয় কাঁটা বেঁধে গেল। এটাই চেয়েছিল সে। হেসে বলল,

"আমি ভাবতেও পারি নি তুমি আসবে।

মেহেরিন শব্দ করে শ্বাস ফেলে বলল,
"ইনভাইট যখন করেছ, তখন তো আসতেই হতো।

অদিতি'র মুখ মলিন হলো। বলে উঠল,
"বিশ্বাস করো আমি চাইনি তুমি আসো! 

কপালে ভাঁজ পড়ল মেহেরিন'র। অদিতি হেসে উঠল,
"আসলে তুমি আসবে, ওকে দেখবে আমার সাথে। খারাপ লাগবে না বলো তোমার। আমি মানা করেছিলাম ফাহান কে। বলেছিলাম তো তুমি আসলে কষ্ট পাবে। কিন্তু আমার কোন কথাই শুনলো না সে। 

মেহেরিন কিঞ্চিত হেসে বলল,
*এজন্য ডেকেছ আমায়! 

"না, দেখো আমি এখনো তৈরি হয় নি। আর একটু পরেই আমার এনগেজমেন্ট। 

"তো! 

মেহেরিন'র হাত ধরে বিছানার কাছে নিয়ে এলো। মেহেরিন তাকিয়ে দেখল পুরো বিছানা জুড়ে জামা ছিটিয়ে আছে। ভ্রু কুন্চিত করে তাকাল অদিতি'র দিকে। অদিতি হেসে বলল,

"অবাক হয়েছ না। আর বলো না, যখন এনগেজমেন্ট'র শপিং করতে গিয়েছিলাম তখন ফাহান এত্ত এত্ত ড্রেস কিনেছে আমার জন্য। বলল এসব ড্রেসে'ই নাকি বানাবে আমাকে। এখন তুমি'ই বলো না এতো ড্রেস কিনার কি দরকার ছিল। 

বলেই মেহেরিন'র দিকে তাকাল। মেহেরিন বিনা বাক্যে সব কিছু শুনছে। অদিতি বলে উঠল,

"কিন্তু সমস্যা এখানে না, সমস্যা হচ্ছে আমার কাজিন দের নিয়ে। আসলে এখানে যা দেখছ তেমনি রঙ মিলিয়ে ফাহানের কাছেও পোশাক গেছে। এখন ওদের কথা হচ্ছে আমরা দু'জনেই যেন কোন একটা পছন্দ করে পোশাক পড়ে যাই। ওরা দেখবে আমাদের পছন্দ এক কিনা। এখন বলো যদি পছন্দ ঠিক না হয় তখন কি বিচ্ছিরি কান্ড ঘটবে। তাই তুমি যদি আমাকে একটু হেল্প করতে...

মেহেরিন বিছানা থেকে লাল রঙের গাউন হাতে তুলে নিল। বলে উঠল,

"এই নাও! 

"তুমি সিউর!

"ইচ্ছে হলে পড়ো , নাহলে পড়ো না। 

"আহ রেগে যাচ্ছ কেন, আচ্ছা আমি পড়ে আসছি। তুমি এখানেই থাকো হুম। ওরা তো চলে গেছে আমাকে একটু তৈরি হতে সাহায্য করো, করবে তো। 

মেহেরিন হেসে মাথা নাড়ল। অদিতি পোশাক নিয়ে হাসতে হাসতে চলে গেল। মেহেরিন জানে অদিতি এখানে শুধু'ই তাকে জ্বালানোর জন্য ডেকেছে আর কিছুই না। তার পুরোনো ক্ষততে আরেকটু আঘাত করতে চায় সে। তবে হয়তো অদিতি জানে না মেহেরিন কষ্ট সহ্য করতে শিখে গেছে। 

মেহেরিন ঘুরে ঘরটা দেখল। দেওয়াল জুড়ে তাদের দুজনের ছবি। একটা ছবিতে তারা খুবই ঘনিষ্ট ভাবে আছে। মেহেরিন'র সে ছবিই হাতে তুলে নিল। দরজা খুলার আওয়াজ পেয়ে সাথে সাথে ছবি টা রেখে দিল। পেছন থেকে অদিতি বলে উঠল,

"মেহেরিন একটু হেল্প করো না। জামার পেছনের পিন টা লাগিয়ে দাও! 

মেহেরিন এগিয়ে এসে পিনটা লাগিয়ে দিল। অদিতি আবারো হাত ধরে তাকে নিয়ে ডেসিন টেবিলের কাছে চলে গেল। একটা চেইন হাতে নিয়ে বলল,

"একটু হেল্প করো না। 

মেহেরিন হাতে নিয়ে এটা তার গলায় পড়িয়ে দিতে লাগল। অদিতি হেসে বলল,

"ও নিজে পছন্দ করেছে এটা। আচ্ছা মেহেরিন আমাকে সুন্দর লাগছে তো। 

মেহেরিন আয়নায় তাকাল। অদিতি কে দেখল! দেখতে খারাপ না মেয়েটা। খুব সুন্দরী সে। বেশি সুন্দরী হওয়াতে মুখে কেমন একটা বিদেশী বিদেশী ভাব চলে এসেছে। সে মুচকি হেসে মাথা নেড়ে বলল,

"হুম লাগছে!

"লাগতেই হবে, আজকের পার্টিতে সবচেয়ে সুন্দর আমাকেই লাগতে হবে। ফাহানের নজর যাতে শুধু আমার দিকেই থাকে..

বলতে বলতে কানের দুল পড়ল সে। মেহেরিন চেইন লাগিয়ে বলল,

"শেষ!

অতঃপর চলে যেতে নিতেই অদিতি খপ করে তার হাত ধরল। মেহেরিন ভ্রু কুঁচকালো। অদিতি দাঁড়িয়ে বলল,
"ফাহানের পছন্দ হবে তো আমায়! 

"হুম! 

"জানো আমরা এই বাড়িটা কয়েকদিন আগেই কিনেছি, সুন্দর না এটা। ভেবেছি বিয়ের পর দুজন একসাথে'ই থাকবো এই বাড়িতে! 

মেহেরিন এবারো বলে উঠল,

"হুম! 

"আচ্ছা আমি শুনলাম তুমি নাকি বিয়ে করেছ, তোমার বর এসেছে সাথে।

"হ্যাঁ!

"পরিচয় করিয়ে দেবে না, জানো আমি খুব খুশি হয়েছি তোমার বিয়েতে। সব ভুলে নতুন করে শুরু করেছে তুমি তাহলে! 

"আমি আসছি! 

দরজার কাছে যেতেই কয়েকজন এসে দাঁড়াল। মেহেরিন তাদের ভেদ করে বাইরে চলে এলো। এসেই মুখ খুলে শ্বাস নিতে লাগল। এতোক্ষণ দম বন্ধ হয়েছিল তার! 

সব আলো মুহূর্তেই নিভে গেল। সিঁড়ির কাছে আলো জ্বলে উঠলো। মেহেরিন এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল সেখানে। আর কেউ না ফাহান দাঁড়িয়ে আছে সেখানে। তাকে দেখেই চোয়াল শক্ত করে নিল সে। হাত দিয়ে আঁকড়ে ধরল দেওয়াল কে। মেহেরিন'র হার্টবিট দ্রুত বাড়ছে। এতোদিন পর তাকে দেখতে পেয়ে অনেকটা খুশি সে। তাকে একজন তৃষ্ণার্তের মতো লাগছিল। যে কি না অনেকদিন পর পানির স্বাদ পেয়েছে। লাল রঙের কোট পড়েছে সে। তার পাশে এসে অদিতি দাঁড়াল লাল রঙের গাউন পড়ে। দুজনের এরঙের পোশাক দেখে হইচই লেগে গেল। মেহেরিন চোখের পলক ফেলে তাকিয়ে রইল। হঠাৎ করেই কানের কাছে"মেহু" ডাকটা শুনে চমকে উঠলো সে। নির্ঝর তার ঘাড়ে হাত রেখে বলল,

"ঠিক আছো! 

মেহেরিন মাথা নেড়ে সায় দিল। নির্ঝর তার হাত ধরে বলল,

"তাহলে এখানে কি করছ? ওখানে চলো! 
বলেই সেখানে নিয়ে এলো। শক্ত করে ধরে রাখল হাতখানা। ফাহানের হাত ধরে সিঁড়ি বেয়ে নামছে অদিতি। মেহেরিন নিজেকে শক্ত করে তাকিয়ে রইল সেখানে। নিচে নেমে মেহেরিন'র মুখটাই সবার প্রথমে দেখল ফাহান। তাকে দেখে এক দৃষ্টিতে সেখানেই তাকিয়ে রইল সে। চোখ গেল কেউ তার হাত ধরে আছে। তার মুখ দেখার চেষ্টা করল ওমনি অর্ণব এসে ডাকল নির্ঝর কে। নির্ঝর নিচু হয়ে অর্ণবের সাথে কথা বলছে তবুও হাত ছাড়ছে না মেহেরিন'র। 

ফাহানের পা নড়ছে না দেখে অদিতি নিজেই টেনে স্টেজের কাছে নিয়ে গেল তাকে। গান শুরু হলো এর মাঝে। একেক জন এসে ফাহান আর অদিতি কে কনগ্রেস করছে। গান বাজছে। সব কাপল একসাথে এসে জড়ো হলো সামনে। মেহেরিন'র চোখ এবার সরল ফাহানের থেকে। সে নির্ঝরের হাত শক্ত করে ধরল। নির্ঝর আন্দাজ করতে পেয়ে মেহেরিন'র দিকে তাকাল। মেহেরিন চোয়াল শক্ত করে বলে উঠলো,

"নির্ঝর নাচবেন আমার সাথে! 

নির্ঝর ধাক্কা টা নিতে পারল না। পরক্ষনেই উওরের আশা না করে নির্ঝর কে টেনে সামনে নিয়ে গেল। ডিজের কাছে এসে গান বন্ধ করতে বলে মাইক নিজের হাতে নিল। গান বন্ধ হওয়াতে সবাই থেমে গেল। মেহেরিন গান শুরু করল, এসে হাত খানা ধরল নির্ঝরের। ফাহান ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে মেহেরিন'র দিকে। কি করতে চলেছে সে। বক্সে গান বেজে উঠল,

মিলে হো তুম হামকো
বডে নাসিবো সে
চুরায়া হ্যায় ম্যানে
কিসমত কি লেকেরোন সে) x2

মিলে হো তুম হামকো
বডে নাসিবো সে
চুরায়া হ্যায় ম্যানে
কিসমত কি লেকেরোন সে

তেরে মহব্বত সে সাসেই মিলি হৈ
সাদা রেহনা দিল মেং কারিব হোকে....

নির্ঝর হাত ধরে খুব ঘনিষ্ঠ ভাবেই নাচল মেহেরিন। নাচের মাঝে একবারও চোখ ফেরায় নি ফাহানের দিকে। পুরোটা সময় তাকিয়ে ছিল নির্ঝরের দিকে। নির্ঝর ও যেন ডুবে গেল সেই চাহনির মাঝে। একে একে আবারো সব কাপলরা এসে উপস্থিত হলো ফ্লোরে।‌ নাচে তাল মিলাতে লাগলো তারা। হুট করেই অর্ণবের ডাক শুনতে পেল। মেহেরিন হেসে অর্ণবের দিকে তাকাল। অর্ণব হাত তালি দিয়ে লাফাচ্ছে। দু'জনেই খানিকটা সরে গিয়ে দাঁড়াল।‌ হাতে হাত ধরে গোল হয়ে গেল। অর্ণব এসে দাঁড়াল তার মাঝে। মেহেরিন'র ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটল। নকল হাসি ছিল না তা। ফাহান বেশ বুঝতে পারল মেহেরিন ভালো আছে। অর্ণবের কপালে ঠোঁটের ছোঁয়া দিয়ে তার হাত ধরে লাফাতে লাগলো। সামনে দাঁড়িয়ে নির্ঝর মা ছেলের কাহিনী দেখতে লাগল। তার ঠোঁটের কোনেও হাসি ছিল। মেহেরিন'র চোখের দিকে তাকিয়ে ছিল সে। মেহেরিন নির্ঝরের দিকে তাকিয়ে আবারো অর্ণবের দিকে তাকাল। 

নাচ শেষ হলো। অর্ণব হাঁফিয়ে নির্ঝরের কোলে বসে পড়ল। মেহেরিন হাতে ক্লোড ড্রিক নিয়ে সামনে দাঁড়িয়ে নির্ঝরের দিকে তাকিয়ে হাসতে লাগলো। নির্ঝর মুগ্ধ চোখে দেখছে সেই হাসি। হঠাৎ করেই অদিতির আবির্ভাব ঘটল। অর্ণবের থিতুনি তে হাত রেখে বলল,

"তোমার ছেলে এ! 

অর্ণব মেহেরিনকে আকঁড়ে ধরে বলল,
"মাম্মি! 

অদিতি হেসে নির্ঝরের দিকে তাকাল। মেহেরিন কে উদ্দেশ্য করে বলল,

"তোমার হাসবেন্ড! 

মেহেরিন বলার জন্য মুখ খুলতেই পাশে ফাহান কে দেখল। সে তার দিকেই তাকিয়ে আছে। তার দৃষ্টি উপেক্ষা করে কিঞ্চিত হেসে বলল,
"আমার হাসবেন্ড মিঃ নির্ঝর চৌধুরী মেঘ আর আমার ছেলে অর্ণব! 

নির্ঝর অদিতির দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসল। অদিতি হেসে মাথা নেড়ে বলল,

"আহ, হ্যাপি ফ্যামিলি! এমন ফ্যামিলি আমাদের কবে হবে ফাহান। 

ফাহান হেসে এক হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরল অদিতি কে। অতঃপর মেহেরিন'র দিকে তাকিয়ে বলল,

"খুব জলদি! 

মেহেরিন ঠোঁট কামড়ে হেসে উঠল। অদিতি ফাহানের হাত ধরে বিদায় নিল। গান আবারো বেজে উঠলো। এবার স্টেজে ফাহান আর অদিতি। অর্ণব নির্ঝরের কোল থেকে নামল। নির্ঝরের হাত ধরে এগিয়ে গেল নাচ দেখার জন্য। নির্ঝরের দৃষ্টি ছিল মেহেরিন'র উপর। মেহেরিন সেই স্থান দ্রুত'ই প্রস্থান করল! 

খোলা বাতাসে নিঃশ্বাস নিতে বাড়ির বেলকনির কাছে দাঁড়াল এসে দাঁড়াল। বাড়ির দোতলায় পেছনের দিকে ভালোই একটা বেলকনির ব্যবস্থা আছে। হাতের ফোনটা কেঁপে উঠলো মুহুর্তে। মেহেরিন তাকিয়ে দেখল নির্ঝরের মেসেজ,

"কোথায় তুমি? অর্ণব খুঁজছে তোমায়? 

মেহেরিন টাইপিং করল,

"এখানেই আছি, আসছি খানিকক্ষণ পর! 

মেসেজ সেনড করার পর'ই কেউ নরম স্বরে বলে উঠল,

"হাসবেন্ড কে মেসেজ করছো বুঝি! 

মেহেরিন'র বুক টা ধুক করে কেঁপে উঠল। তার শরীর কেমন অদ্ভুত রকমের অস্থিরতা দেখা দিল। হতচকিয়ে উঠলো সে। ফাহানের গলা চিনতে কখনো ভুল করবে না সে। কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমে গেছে এর মাঝেই। শুকনো ঢোক গিলে পিছনে তাকাল সে। প্যান্টের প্যাকেটে হাত রেখে তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে ফাহান। মেহেরিন বিস্ফোরিত চোখে দেখতে লাগল তাকে। ফাহান ঠোঁটের কোনে হাসি রেখে বলে উঠল,

"দেখে এলাম, তোমাকেই খুঁজছে সে! 

মেহেরিন কিছু বলতে গিয়েও বলল না। পাশ কাটিয়ে চলে যেতে নিল সে। ফাহান তাকে আটকাবে এটা ধারণা ছিল না তার। একটানে নিজের খুব কাছে টেনে নিয়ে এলো তাকে। মেহেরিন'র পুরো শরীর কাঁপছে এবার। আর কারো কাছে না ফাহানের কাছে খুব দুর্বল সে।ফাহান হাত বাড়িয়ে তাকে ছুঁতে গেলেই মেহেরিন ফাহানের হাত ছাড়িয়ে নিল। বলে উঠল,

"আমার স্বামী খুঁজছে আমাকে! 

ফাহান শব্দ করে শ্বাস ফেলে বলল,
"হ্যাঁ তাই তো, যাও! 

ফাহানের কথা শেষ হতে না হতেই মেহেরিন সেখান থেকে বেরিয়ে এলো। ফাহান এটা থেকে অবাক হলো। মেহেরিন পা বাড়িয়ে ওপাশে যেতে নিবে তার আগেই ফাহান তার হাত ধরে টেনে এপাশে নিয়ে এলো। মেহেরিন হতবাক হয়ে গেল। তবুও কি হচ্ছে তা ভেবে তা হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করতে লাগল। 

"ফাহান হাত ছাড়, আমি কিন্তু চিৎকার করব।

"করো গানের আওয়াজে তোমার চিৎকার কেউ শুনবে না।

"ফাহান, ছাড়ো বলছি! 

ফাহানের কানে কোন কথাই ঢুকল না। ঘরের ভেতর তাকে নিয়ে চলে গেল সে। হাত ছেড়ে দিল তার। মেহেরিন রেগে খুব জোরে চড় মার/ল ফাহানের গালে। ফাহান চোয়াল শক্ত করে তাকাল মেহেরিন'র দিকে। মেহেরিন দাঁতে দাঁত চেপে তাকিয়ে আছে ফাহানের দিকে। বলে উঠল,

"সমস্যা কি তোমার, এমন করছ কেন? 

ফাহান নিজের ক্রোধ রোধ করল। শান্ত গলায় বলে উঠল,
"কেমন আছো? 

মেহেরিন বেশ বিরক্ত ঠোঁট ভিজিয়ে বলে উঠল,
"একথা জিজ্ঞেস করতে এভাবে টেনে আনার কি দরকার ছিল! 

"খুব ভালোবাসে নাহ, ও তোমাকে! 

"ফাহান চুপ কর! 

"আমি দেখেছি কিভাবে তোমার খেয়াল রাখে, খুব সুখে আছো তাহলে।

"ফাহান তোমার থেকে বিন্দু মাত্র কথা শোনার ইচ্ছা নেই আমার। 

"সেদিন'ই কেন বিয়ে টা করলে তুমি মেহেরিন! অন্যদিনও তো করতে পারতে তাই না! 

মেহেরিন বাকরুদ্ধ হয়ে গেল। ফাহান অদ্ভুত ভঙ্গিতে তাকিয়ে আছে ওর দিকে...

ফাহান কে খুঁজতে খুঁজতে ঘরের কাছে চলে এলো অদিতি। ঘরের ভেতর থাকা মেহেরিন আর ফাহান কে আড়াল করল না তার চোখ। বিস্ফোরিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলে সেখানে। দাঁতে দাঁত চেপে বলে উঠে,

"এই লায়লা আর মাজনু এখানে একসাথে কি করছে? পুরনো প্রেম জেগে তুলছে না তো। এজন্য! শুধু এজন্য'ই , বার বার বারণ করেছিলাম ডেকো না মেহেরিন কে ডেকো না। কিন্তু তা না। তবুও ডেকে এনে তুলল। কি এই প্রেম লীলা করার জন্য। আমার এতো দিনের পরিশ্রমে জল ঢেলে দিবে এভাবে। 

অদিতি রেগে চলে এলো সেখান থেকে। রাগে ফেটে যাচ্ছে তার মাথা। হাতে কামড়ে ধরে রাগ নিবারণ করল। শান্ত গলায় বলে উঠে,

"মেহেরিন, মেহেরিন আর মেহেরিন। কি যাদু করেছে এই মেহেরিন। সবসময় সুযোগে ছিলাম কবে এদের ভালোবাসার মাঝে এক ফোঁটা অবিশ্বাস সৃষ্টি হবে, একটু ফাটল ধরে। তাহলে এটা ভেঙে ফেলা সম্ভব হতো আমার পক্ষে। আর সেদিন তাই হয়েছিল। ফাহান রেগে গাড়ি চালিয়ে আসছিল রাস্তা দিয়ে। এক্সিডেন্ট করল। তার কিছু না হলেও তার প্রতি পক্ষ ভ্যান চালক খুব খারাপ ভাবেই আহত ছিল। তাকে দেখেই বুঝলাম মারাত্মক ঝগড়া করেছে মেহেরিন'র সাথে। ভেবেছিলাম ভাগ্য হয়ত আবারো সুযোগ দিচ্ছে আমায়,দিচ্ছে আমার ভালোবাসা কে। ছাড়লাম না তা। লুটে নিলাম। অবিশ্বাসের বীজ তিব্র ভাবে বুনে দিলাম দুজনের মাঝে তা কি আজকের এই দিনটার জন্য। ভাগ্যিস মেহেরিন রেগে বিয়ের মত একটা মস্ত বড় সিদ্ধান্ত নিল নাহলে আমি তো ভেবেছিলাম কিছুই হবে না হয়তো। বার বার ফাহান কে আটকানো সম্ভব ছিল না আমার পক্ষে। তবে কে জানতো শেষমেষ এরা নিজেরাই সরে যাবে। কিন্তু আজ কি করছে এসব? কেন করছে! আহ! সহ্য হচ্ছে না আমার। রাগে ফেটে যাচ্ছে মাথা টা। 

অদিতি রেগে সিঁড়ির কাছে এসে দাঁড়াল। দাঁতে দাঁত চেপে নির্ঝরের দিকে তাকাল। বলে উঠল,

"এই হাসবেন্ড নির্ঝর, কোন চিন্তা নেই কি তার। কোথায় তার বউ, কার সাথে কি করছে খোঁজ খবর নেবার কি প্রয়োজন বোধ করছে না।

অদিতি এবার শান্ত হলো। নিচে নেমে এলো নির্ঝরের কাছে। হাসি মুখে বলে উঠল,

"মিঃ নির্ঝর যে, কাউকে খুঁজছেন? 

"হ্যাঁ মেহেরিন কে খুঁজছি আমি..

"ওহ, মেহেরিন। তাকে তো উপরে যেতে দেখলাম। 

"ওহ আচ্ছা! 

"আপনি এক কাজ করুন, অর্ণব কে আমার কাছে দিয়ে উপরে যান। 

নির্ঝর প্রথমে না বলবে ভেবে কি মনে করে বলল,
"আচ্ছা! 

অর্ণবের মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,
"আন্টি কে জ্বালাবে না, এখানে থাকো। আমি মাম্মি কে নিয়ে আসছি! 

অতঃপর সিঁড়ির দিকে পা বাড়াল নিজের! 

মেহেরিন হেসে বলে উঠল,
"নতুন ভাবে শুরু করলাম আর কি! 

ফাহান মাথা নিচু করে ফেলল। সে এখন শান্ত,‌নিবিড়। মেহেরিন'র চোখের দিকে তাকিয়ে বলল,
"আমি একজন সাইক্রেটিস মেহেরিন, মানুষ কে বুঝতে পারি খুব। তবে কেন আজ তোমায় বুঝতে পারি না।

মেহেরিন হেসে উওর দিল,
"কারণ সেই মনুষ্যত্ব হারিয়ে ফেলেছো তুমি! 

ফাহান নিশ্চুপ দেওয়ালের মতো হয়ে গেল।অনেকটা আবেগ নিয়েই বলে উঠল,

"অনেক খেয়াল রাখে না অর্ণবের! 

মেহেরিন'র কপালে ভাঁজ পড়ল। ফাহান হেসে বলল,
"না, আসলে আমি তো পারি নি। বোধহয় সে পেড়েছে! 

বলছি দীর্ঘশ্বাস ফেলল। তার এই এমন কথাবার্তা ক্ষতবিক্ষত করে দিচ্ছিল‌ মেহেরিন'র মন কে। তার চোখের অশ্রু যেন বাঁধ মানবে না বলেই দিয়েছে। ফাহান মেহেরিন'র একটু কাছে এসেই দাঁড়াল। মেহেরিন নড়ল না। মেহেরিন হাত খানা ধরে বলল,

"সরি! 

মেহেরিন বিষণ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল ফাহানের দিকে। উষ্ণ গলায় বলে উঠল,

"হয়তো কথাটা আগে বললে আজ এতো গুলো জীবন নষ্ট হতো না ফাহান! 

ফাহানের চোখের কোনে অশ্রু জমতে শুরু করল। সে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল মেহেরিন'র দিকে।মেহেরিন'র চোখ বেয়ে অশ্রু কণা গড়িয়ে পড়ল। ফাহান হাত দিয়ে তা মুছে দিয়ে হুট করেই মেহেরিন কে তার বুকে টেনে ধরল। ফাহানের গরম নিঃশ্বাস মেহেরিন'র ঘাড়ে পড়তে লাগলো। 

নির্ঝর বাকরুদ্ধ হয়ে সেখানেই তাকিয়ে রইল। রাগ হচ্ছে খুব! মেহেরিন'র চোখের জল মুছে দেওয়ার আর জরিয়ে ধরার অধিকার তো শুধু তার। ইচ্ছে করছে এখান থেকে চলে যেতে। কিন্তু তা না করে দাঁড়িয়ে রইল। দেখার অপেক্ষা মেহেরিন কি জড়িয়ে ধরবে তাকে। মেহেরিন হাত উঠাল জরিয়ে ধরতে। নির্ঝর তা দেখে দাঁতে দাঁত চেপে চলে এলো সেখান থেকে। কিন্তু মেহেরিন জরিয়ে ধরল না ‌ হাত টা আবারো নামিয়ে নিল। তবে নির্ঝরের চোখে তা পড়ল না। মেহেরিন নিজেকে সামলে নিল। শীতল গলায় বলে উঠল,
"ফাহান ছাড়ো আমায়! 

ফাহান মেহেরিন'র কানের কাছে বলল,

"কি বলো তো মেহেরিন, পৃথিবীতে আমরা এমন একজন কে ভালোবেসে ফেলি যাকে আমরা হয়তো পাবো না। তবুও ভালোবাসি। মনে করি এতো ভালোবাসা কখনো কেউ দিবে না আমায় ‌ কিন্তু এটা কখনো ভেবে দেখি না, যে মানুষটা নিয়ে আমার সারাজীবন থাকতে হবে সে হয়তো তার চেয়েও বেশি ভালোবাসা দিবে আমায়! নাহলে আমার ভাগ্য তার সাথে জুড়ল কেন? 

ফাহানের কথায় মেহেরিন অবাক হলো। ফাহান তার অশ্রু গড়িয়ে পড়া থেকে রোধ করল। নির্ঝর সিঁড়ির কাছে গিয়েও আবারো ফেরত এলো। মেহেরিন'কে ফাহানের কাছে একা রেখে যাবে না সে। এদিকে ফাহান মেহেরিন কে ছেড়ে দিল। মেহেরিন অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল তার দিকে। ফাহান মেহেরিন'র দুই বাহুতে হাত রেখে বলল,

"আমি নির্ঝরের কথা বলছি তোমায়, আমার মনে হচ্ছে দেখো অনেক ভালোবাসবেও তোমায়। সে সব কিছু দেবে‌ যা আমি দিতে অস্বীকার করেছিলাম। মেহেরিন! তোমার জীবনে আমি এক বসন্তের দিনের মতো। আর যেই দিন চলে যায় তা কখনো কিন্তু ফিরে আসে না। নতুন নতুন দিনের আগমণ টা ভিন্ন হয়। সেই ভিন্নতা তোমাকে নির্ঝর দিবে। নির্ঝরের চোখে তোমারে জন্য আমি যে ভালোবাসা দেখেছি তা আসলেই অন্যরকম। এক অন্যরকম অনুভুতি তা! তুমি মিলিয়ে নিও আমার কথা!

মেহেরিন চোখের পাতা ফেলে তাকিয়ে আছে ফাহানের দিকে। ফাহান এক গাল মেহেরিন'র হাতে রেখে বলল,

"ক্ষমা করে দিও আমি কথা রাখতে পারে নি। 

মুহূর্তেই গড়িয়ে জল পড়লো আবারো। ফাহান হাত বাড়িয়ে তা মুছে দিতে চেয়েও হাত সরিয়ে নিল। দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে উঠল,
"না! এই অধিকার আমি হারিয়ে ফেলেছি! 

হুট করেই দরজা খোলার শব্দ এলো। দু'জনেই তাকাল দরজার দিকে। সামনে নির্ঝর কে দেখে অবাক দুজন। ফাহান এক পা পিছিয়ে গেল। নির্ঝর রেগে ঘরের ভিতর প্রবেশ করল। ফাহান কে উপেক্ষা করে মেহেরিন কে বলল,

"কখন থেকে খুঁজছি তোমায়, কোথায় ছিলে? জানো অর্ণব.. বলেই থেমে গেল। মেহেরিন'র চোখের পানি মুছে দিয়ে বলল,
"কাঁদছো কেন তুমি! 

মেহেরিন হতচকিয়ে গেল। বলে উঠল,
"না কাঁদছি না। 

নির্ঝর ভ্রু কুঁচকে ফাহানের দিকে তাকাল। ফাহান হেসে বলল,

"মেহেরিন! তোমার জন্য অনেক ভাবে কিন্তু নির্ঝর! 

নির্ঝর সেই কথা উপেক্ষা করল। মেহেরিন'র পিছনে দাঁড়িয়ে তার ঘাড়ে হাত রেখে বলল,

"চলো! 

মেহেরিন শেষবারের মতো তাকাল ফাহানের দিকে। ফাহান এক মিষ্টি হাসি দিয়ে বিদায় দিল! অতঃপর.... 

#চলবে....
[+] 2 users Like Manjarul Haque's post
Like Reply
#44
( লেখনিতে) 
#পর্ব_৩২

নির্ঝর পেছনে দাঁড়িয়ে মেহেরিন'র ঘাড়ে হাত রেখে বলল,
"চলো! 

মেহেরিন ফাহানের দিকে তাকাল। ফাহান তার দিকে তাকিয়ে মিষ্টি হাসল। মেহেরিন চোখ সরিয়ে নিয়ে বের হলো। নির্ঝর মেহেরিন'র হাত শক্ত করে ধরল। মেহেরিন নিজেকে একটা ঘোরের মতো লাগতে লাগলো। কি হলো এতোক্ষণ তার সাথে এটা নিয়ে কোন হুশ নেই তার। 

অর্ণব দৌড়াতে গিয়ে হঠাৎ করেই মেঝেতে পড়তে নিলো কেউ তার হাত ধরে ফেলল। অর্ণব সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে তাকে দেখতে ভয়ে এক পা পিছিয়ে গেল। সামনের মানুষ টাকে অনেক ভয় পায় সে। কারণ এটা আর কেউ না ফাহান ছিল। ফাহান কিঞ্চিত হেসে অর্ণবের মাথায় হাত বোলাল। অর্ণব ভয়ে গুটিয়ে দাঁড়াল। ফাহান অর্ণবের গালে হাত রেখে বলল,

"যদি আমি তোমাকে আপন করতে পারতাম তাহলে হয়তো আজ সবকিছু্ই অন্যরকম হতো। আফসোস আমি এটা পারলাম না! 

অর্ণব ফাহানের কথা কিছুই বুঝল না। এর মাঝেই নির্ঝরকে দেখতে পেয়ে উচ্চস্বরে "ড্যাডি" বলে ডাক দিয়ে পাশ কাটিয়ে চলে গেল সে। ফাহান মুচকি হেসে উঠে দাঁড়াল। শব্দ করে দম ফেলে প্যান্টের প্যাকেটে হাত দিয়ে সামনে পা বাড়াল। যা হারিয়েছে হয়তো তা আর কখনো ফেরত পাবে না তবে এই আফসোস তার যাবে না। মেহেরিন কে প্রথম দেখায় ভালোবেসে ছিল সে। সেই ভালোবাসা হয়তো থেকে যাবে, থেকে যাবে ভালোবাসার কিছু স্মৃতি তবে এই ভালোবাসা পূর্ণতা পাবে না। ঠিক'ই বলে সবাই সব ভালোবাসা পূর্ণতা পায় না। এখানে মেহেরিন আর আমার মাঝে কোন ঝামেলা না থাকা সত্ত্বেও নিজের দোষেই আজ তাকে হারিয়ে ফেললাম। 
দীর্ঘশ্বাস ফেলে পেছনের অতীত ছেড়ে আসার পরিকল্পনা তার। তবে অতীতের পিছুটান স্বেচ্ছায় নিতে চায় সে। ইশ আর একবার যদি পেতো সেই সময়টা। ভেঙে দিতো মেহেরিন'র অভিমান। কিন্তু শত আফসোস করেও এখন আর তা ফিরে পাবে না সে। 

অদিতি বাহু টেনে নিয়ে গেলো স্টেজের সামনে। আংটিবদল হবে এইবার! ফাহান সেখান থেকে দাঁড়িয়ে চোখ জোড়া মেহেরিন'র দিকে। মেহেরিন'র দেখতে পেয়েও ক্ষনিকের জন্য ব্যাথা লাগল তার বুকের মাঝে। এই ব্যাথা খুব তীব্র। ফাহান তার দিকে তাকিয়ে হাসার চেষ্টা করল। চোখ সরিয়ে নিল দ্রুত। আংটি পড়াল অদিতির অনামিকা আঙ্গুলে। মেহেরিন নিরব দর্শকের মতো চেয়ে রইল শুধু। সেই দৃষ্টি উপেক্ষা করা কষ্টকর হচ্ছে ফাহানের জন্য। তাই অপেক্ষা না করে অদিতি তার অনামিকা আঙ্গুলে আংটি পড়িয়ে দেবার সাথে সাথে চুম্বন খেলো তার কপালে। আরো একবার মেহেরিন'কে বুঝিয়ে দিচ্ছে সে তার না। অদিতি'র খুশি যেন ধরে না। যেই ভালোবাসার জন্য এতো কিছু সেই ভালোবাসা কি তবে পেয়ে যাচ্ছে সে। তবে এর সত্যতা কতোটুকু? সারাজীবন মনে মেহেরিন কে রেখে অদিতি কে কতোটুকু ভালোবাসা দিতে পারবে সে। 

চারদিক হইচই পড়ে গেল। অদিতি কে সবার সামনে এভাবে কিস করবে উপস্থিত কেউ ভাবতে পারে নি। নির্ঝর তৎক্ষণাৎ অর্ণবের চোখে হাত দিয়ে তাকে ঘুরিয়ে নিল। অর্ণব হাত সরিয়ে নির্ঝরের মুখের দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে রইল। পরক্ষনেই মনে পড়ল মেহেরিন'র কথা। নির্ঝর তার দিকে তাকাতেই দেখল সে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সেখানে। দাঁতে দাঁত চেপে তাকিয়ে আছে সেখানে। তার মন যে কতোটা ক্ষতবিক্ষত হচ্ছে এটা বোঝানো সম্ভব না। একটা মৃত দেহ মরার আগে যেমনটা ছটফট করছে তেমনিই হচ্ছে তার মনের মাঝে। নির্ঝর মুহুর্তে তার হাত টেনে বলল,

"আমাদের যেতে হবে, চলো! 

অতঃপর তাকে নিয়ে চলতে লাগল। একহাতে অর্ণব তো অপর হাতে মেহেরিন। পিছন ফিরে চাওয়ার দুঃসাহস করল না কেউই! ফাহান মুখ ঘুরিয়ে তাকিয়ে দেখল মেহেরিন চলে যাচ্ছে। মনটা শান্ত হলো তার। হুট করেই তার বুকে কেউ জায়গা করে নিল। তাকিয়ে দেখে মেহেরিন! ভ্রু কুঁচকে গেল তার। সে তার গালের কোনে হাত রাখল। চারপাশে করতালির শব্দে সেই ভ্রম ভেঙে গেল। এটা অদিতি ছাড়া আর কেউ না। ফাহান কিঞ্চিত হেসে জড়িয়ে ধরল তাকে। 

---- 

গাড়িতে মেহেরিন'র কোলে ঘুমিয়ে পড়ল অর্ণব! অর্ণবের মাথায় হাত বুলিয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে রইল সে। সামনের সিটে নির্ঝর বসে আয়নার দিকে শুধু চেয়ে রইল মেহেরিন'র হরিণী নজরকাড়া চোখ জোড়ার দিকে। এই চোখে অশ্রু এলে ভালো লাগে না তার। 

জন গাড়ি ব্রেক করল খান বাড়ির সামনে। মেহেরিন নিজেই অর্ণব কে কোলে নিয়ে বের হয়ে গেল। নির্ঝর বের হয়ে নিঃশব্দে তার পিছন পিছন আসতে লাগল। অর্ণবকে ঘরে এনে শুইয়ে দিল বিছানায়। চুমু খেল তার কপালে। নির্ঝরের দিকে ফিরে শীতল গলায় বলল,

"আপনি ঘুমিয়ে পড়ুন নির্ঝর, আমার অফিসের কিছু কাজ আছে। দেরি হবে! 

নির্ঝর ঘোরের মাঝে মেহেরিন'র কথা শুনল। তার ঠোঁটের কোনে হাসিও দেখল সে। তবে এই হাসি প্রাণবন্ত ছিল না। তবে কি শুধুই মেহেরিন কে দেখানোর জন্য। 

আকাশে বাজ পড়ল, মুহূর্তে বৃষ্টি নামলো। কখন থেকে বিছানায় বসে আছে নির্ঝর। অপেক্ষা মেহু'র! সে কি আসবে না! বসে থাকবে একা একা! একটু শীত শীত পাচ্ছে। অর্ণব গুটি শুটি মেরে বসল। নির্ঝর তার গায়ে চাদর টেনে কপালে চুমু খেল। ঘড়ির কাঁটায় এখন ১ টা বাজে। রাত তো কম হলো না। মেহেরিন কে করছে এখন?

ঘর থেকে বের হলো নির্ঝর। হাঁটতে হাঁটতে গেল তার স্টাডি রুমে। টেবিলের উপর বন্ধ ল্যাপটব পড়ে আছে, আর তার পাশে পড়ে আছে বন্ধ ফাইল। তবে মেহেরিন নেই এখানে। তাহলে কোথায় ছাদে। সর্বনাশ করেছে! এই বৃষ্টিতে ভিজলে জ্বর আসবে বৈ কি! নির্ঝর দ্রুত ছাদের দিতে রওনা হতেই থেমে গেল তার ঘরের সামনে। ঘরের দরজা হুট করে খুলে রাখা কেন? তবে কি মেহেরিন এখানে! চোরের মতো উঁকি দিল নিজের ঘরেই! হায় একি হাল আমার ঘরের। আলমারির সমস্ত কাপড় পড়ে আছে মেঝেতে। মেহেরিন হাতে ওয়াইনের বোতল নিয়ে খোলার চেষ্টা করছে। কিন্তু কিছুতেই পারছে না। মেহেরিন'র পড়নে এখনো সেই গাউন আর সেই সাজ। চুল গুলো মারাত্মক এলোমেলো। নির্ঝর নিজেই ঢোক গিলে তাকিয়ে রইল। ওয়াইনের বোতল একদিন নিজে এনে রেখেছিল আলমারিতে। মেহু তা জানল কিভাবে বুঝতে পারছে না। ওয়াইনের বোতল খুলতে না পারার কারণে রেগে যাচ্ছে মেহু। এই তো মনে হচ্ছে ওয়াইনের বোতল ছুঁড়ে মারবে। আহ তা হয় কিভাবে। নির্ঝরের অনেক সাধের এটা। অনেক কষ্ট করে বাইরে থেকে আনিয়েছে সে। একবার চেখেও দেখে নি। সে ছুটে গেল মেহুর কাছে। মেহু ছুঁড়ে ফেলতেই ধরে নিল তা। মেহু অবাক আর লজ্জায় থমকে গেল। চেয়ে রইল শুধু। হাতে ওয়াইনের বোতল পেয়ে প্রাণ ফিরে পেল নির্ঝর। শব্দ করে শ্বাস ফেলে বলল,

"মেহু! 

মেহু থতমত খেয়ে গেল। কথা বলতে পারছে না, কথা আটকে যাচ্ছে শুধু। দ্রুত এখান থেকে চলে যাবার সিদ্ধান্তে পা বাড়াতেই নির্ঝর তার হাত খানা ধরে ফেলল। বলে উঠল,

"কোথায় যাচ্ছ, বসো তুমি! 

মেহু কিছু বলার আগেই নির্ঝর নিজেই হাত টেনে বসাল বিছানায়। ওয়াইনের বোতল খুলে দু গ্লাসে ঢাল তা। তার ঠোঁটে কিঞ্চিত হাসি। তা কিসের বুঝতে পারছে না। হাতের গ্লাস টা এগিয়ে দিল মেহেরিন'র হাতে। এসে বসল তার পাশে। মেহেরিন কে বোঝাতে লাগলো ধীরে ধীরে খেতে কিন্তু তার আগেই মেহেরিন পুরো গ্লাস খালি করে আবারো তার হাতে দিল তা। নির্ঝর অবাক হলো। মেহু কে দেখে মনেই হচ্ছে না সে প্রথম এসব খাচ্ছে। নির্ঝর কি আর জেনে মেহু আগেও এসব খেয়েছে। এখন শুধু অর্ণবের জন্য সবকিছু বন্ধ করে দিয়েছে সে। 

নির্ঝর নিজের গ্লাসও এক ঢোকে খেয়ে ফেলল। ভালোই লাগল তার কাছে।‌ গ্লাসে আবারো ঢেলে এগিয়ে দিল মেহুর হাতে। বিকট শব্দে বাজ পড়ল আকাশে। বৃষ্টির গতি বেড়েছে। মেহু আবারো এক ঢোকে খেয়ে গ্লাস হাতে ধরিয়ে দিল। নির্ঝর এবার গ্লাসে ঢেলে মেহুর সামনে গ্লাস আর বোতল দুটোই ধরল। বলে উঠল,

"নাও কোনটা নিবে।

লজ্জা বোধ করল মেহেরিন। কি করছে সে? রাগের মাথায় সব কিছুই উল্টাপাল্টা করছে সে। ধীরে ধীরে গ্লাসের দিকে হাত বাড়াল সে। নির্ঝর হেসে নিজের গ্লাসে চুমুক দিল। তাকাল মেহেরিন'র দিকে। রমনী'রা রাগলে সবসময় তাকে সুন্দরী বলে মনে হয়, এই সত্য আজ প্রমাণ পেলো সে। মেহু আজ তার বাইরে নয়। কিছু বলা উচিত কিন্তু বলবে কি? ফাহান কে নিয়ে কিছু? কিন্তু নির্ঝর চায় না মেহু জানুক সে তার অতীত জানে। মেহু খুব লুকিয়ে রাখে নিজেকে। এটা ভালো লাগে নির্ঝরের কাছে। এখন মেহুর অতীত নিয়ে কিছু বলে তার মন খারাপ করার দরকার নেই। 

মেহেরিন গ্লাসে চুমুক দিচ্ছে আর ফাহানের কথা ভাবছে। তার প্রতিটা কথা কানে বাজছে তার। রাগ হচ্ছে খুব। কিভাবে ভাবল সে তাকে ছাড়া অন্য কাউকে ভালোবাসবে সে? এটা তো কখনো সম্ভব না। নির্ঝর কে সে বিয়ে করেছে বটে তবে তাকে তো আর ভালোবাসে না সে। ভালো তো শুধু তাকেই বাসতো। যতটা না ছেড়ে দেওয়াতে কষ্ট পেয়েছে তার বেশি কষ্ট পেয়েছে ফাহান তাকে অন্য কারো হতে বলেছে বলে! মেহেরিন রাগের বসে আবারো গ্লাসে চুমুক দিল।

নির্ঝর শুধু তাকিয়ে আছে মেহু'র দিকে। মেহু কে রাগতে দেখে বেশ ভালো লাগছে তার। বিছানার উপর থাকা অন্য হাত টা ধরতে ইচ্ছে করছে খুব। নির্ঝর হাত বাড়িয়ে তা ছোঁয়ার চেষ্টা করল। মেহু নির্ঝরের ছোঁয়া পেয়ে চমকে সাথে সাথেই দাঁড়িয়ে গেল। নির্ঝর অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল মেহুর দিকে। মেহু শুকনো ঢোক গিলে তাকিয়ে আছে নির্ঝরের দিকে। কয়েক ঘন্টা আগের ঘটনা এখন আবার মনে পড়ছে তার। কিভাবে তার জানা নেই তবুও সেখানে নির্ঝরের সামনে দুর্বল হয়ে পড়েছিল সে। কিন্তু কিভাবে? তবে কি ফাহানের কথা সত্য হবে। না তা হতে দেওয়া যায় না। মেহু আজ পর্যন্ত যাকেই ভালোবেসেছে তাকেই হারিয়েছে। নতুন করে আর শুরু করার প্রশ্নই উঠে না।

নির্ঝর দাঁড়িয়ে গিয়ে বলল,
"কি হয়েছে মেহু! 

"নননা কিছু না। 

নির্ঝর তার দিকে এগিয়ে আসতে লাগল। নির্ঝরের পা বাড়ানো দেখে পিছিয়ে যাচ্ছে মেহু। ব্যাপারটা স্পষ্ট না নির্ঝরের কাছেও। মেহু তাকে দেখে এমন ঘাবড়ে যাচ্ছে কেন? তাকে দেখে ঘাবড়ে যাচ্ছে তাকে অন্য কোন চিন্তা। নির্ঝর ওয়াইনের গ্লাস টা রেখে বলল,

"মেহু..

"হুম! 

"কি হয়েছে তোমার? অনেকটা অস্থির লাগছে কেন তোমায়!

মেহু এবারো চমকে উঠলো। তার হরিণী চোখ জোড়া অস্থির হয়ে উঠলো। একবার এদিক আরেকবার ওদিক তাকতে লাগল। নির্ঝর তাকিয়ে দেখল মেহু ঘামছে। তার কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম। 

মেহু যত'ই পিছে যাচ্ছে ততোই দেওয়ালের দিকে আগাচ্ছে। দেওয়ালের সাথে বাড়ি খেতে যাবে নির্ঝর তৎক্ষণাৎ দৌড়ে তার কাছে গেল। বাহুদোরে হাত রেখে থামিয়ে দিল তাকে। নির্ঝরের ছোঁয়া আবারো কম্পিত করল মেহু কে। শুকনো ঢোক গিলে তাকিয়ে রইল নির্ঝরের দিকে। সে নিজেও বুঝতে পারছে সবকিছু তার হাতের বাইরে যাচ্ছে। 

নির্ঝর এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তার দিকে। এলোমেলো চুল গুলো কানে গুঁজে দিল সে। মেহু অন্যহাতে তার গাউন খামচে ধরল। নির্ঝরের প্রত্যেকটা ছোঁয়া তার সহ্য হচ্ছে না তবুও তাকে সরাতে পারছে না সে। নির্ঝর ঢোক গিলে তাকিয়ে আছে এই চঞ্চল মুখ খানির দিকে। হরিণী চোখ জোড়া এখনো চঞ্চল। এসব আরো কাছে টানছে নির্ঝর কে! 

মুহূর্তেই নির্ঝর হাত রাখল মেহেরিন'র গালে। মেহু তৎক্ষণাৎ চোখ দু'টো বন্ধ করে নিল।‌ নির্ঝর নেশালো ভাবে তাকিয়ে রইল মেহুর ঠোঁট জোড়া'র দিকে। লাল ঠোঁট জোড়া রীতিমতো কাঁপছে। বাইরে এতো ঝড় বৃষ্টি, ঠান্ডা বাতাস বেলকনির পর্দা সরিয়ে ভেতরে প্রবেশ করছে। নির্ঝরের এই নেশালো ভাবটা যেন তীব্রতা ছড়িয়ে গেল। সে মেহুর ঠোঁটের দিকে আবারো এগিয়ে গেল। মেহু চোখ মেলে তাকিয়ে দেখল নির্ঝর চোখ বন্ধ করে তার দিকেই আগাচ্ছে। মেহু কিছু বলতে গিয়েও বলতে পারছে না। চোখ বন্ধ করে নিল ভয়েতে। ভেসে উঠলো ফাহানের মুখ খানা। অদিতির কপালে তার চুম্বনের দৃশ্য। রাগ চড়ে বসল মাথায়। হাতে ওয়াইনের গ্লাস টাকে শক্ত করে ধরল সে। মুহূর্তেই বিকট শব্দ! নির্ঝর থেমে গেল। কিসের শব্দ এটা! সরে এসে দাঁড়াতেই মেহু দেওয়ালের সাথে মিলে গেল। নির্ঝর পার্শ্বে চোখ বুলাতেই মেহুর রক্তাক্ত হাত দেখতে পেল। চমকে তাকাল মেহুর মুখের দিকে। মেহু চোখ বন্ধ করে দেওয়ালের সাথে মিশে আছে। নির্ঝর অস্থির হয়ে পড়ল। মেহুর হাত ধরে বলে উঠল,

"মেহু, মেহু তুমি কি করছ এইটা? হাত থেকে রক্ত পড়ছে তো। ওহ শিট কি করবো আমি এখন! 

মেহু চোখ মেলে তাকাল। তার হাতের মাঝে এখনো কাচের টুকরা। নির্ঝরের কলার ধরে তাকে ঘুরিয়ে দেওয়ালের সাথে মিশিয়ে কাচটা তার ঘাড়ের কাছে রাখল। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে সবকিছু শেষ হয়ে গেল। নিভে গেল সব আলো। ভয়ংকর শব্দে বাজ পড়লো আকাশে। বিদ্যুৎ চমকালো! তার আলোতে মেহুর মুখ দেখতে পেল সে। মেহু দাঁতে দাঁত চেপে বলে উঠল,

"আমার কাছে আসবেন না নির্ঝর! ( চেঁচিয়ে বলে উঠলো, ) বুঝলেন আমার কাছে আসবেন না আপনি! 

বলেই ছুরি টা জোরে চেপে ধরল। নির্ঝরের ঘাড়ে লেগে কেঁটে গেল তা। নির্ঝর চোখ বন্ধ করে "আহ" করে শব্দ করল। হুট করেই আলো সব জ্বলে উঠলো। মেইন সুইচে সমস্যা হয়েছিল হয়তো, সেদিনের মতো! মেহেরিন থতমত হয়ে তাকিয়ে রইল নির্ঝরের দিকে। সে তার চোখের দিকে তাকিয়ে আছে সমানে। মুখ কান সব লাল হয়ে গেছে তার। মেহু তাকিয়ে দেখল ঘাড়ের কাছ থেকে চুঁইয়ে চুঁইয়ে রক্ত পড়া শুরু হয়েছে। মেহেরিন সরে গেল নির্ঝরের কাছ থেকে। নির্ঝর ঘাড়ে হাত রেখে এক হাঁটু গেড়ে বসে পড়ল। তাকিয়ে দেখল মেহুর পুরো হাত রক্তাক্ত। কাঁচের টুকরো ফেলে দিয়ে দৌড়ে ঘর থেকে বের হয়ে গেল মেহেরিন! 

---

আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে শার্টের আর্ধকে বোতাম খুলল নির্ঝর! রক্ত গড়িয়ে পড়ছে সারা শরীরে। নির্ঝর ক্ষত স্থানে হাত রেখে মুচকি হাসল। বলে উঠল,

"তোমার ভালোবাসার ক্ষত এটা মেহু! এতো তাড়াতাড়ি শুকাবে না এই টা! 

বলেই মাথায় চুল গুলো এলোমেলো করে হেসে দিল। লজ্জায় লাল হয়ে যাচ্ছে সে। নির্ঝর আবারো হাসতে হাসতে আয়নার দিকে তাকিয়ে বলল,

"হ্যাঁ আমি পড়ে গেছি তোমার প্রেমে, আর এই পথ সহজ হবে বলে মনে হচ্ছে না। ভালোবাসার যেই উপহার দিলে তুমি আমায়। 

হাতে তুলো নিয়ে রক্ত পরিষ্কার করতে করতে বলল,
"তবে কথা দিচ্ছি মেহু, তুমি তো আমার'ই হবে। এখন এটাতে যতটা ক্ষত থাকুক না কেন? সব সহ্য করে নেবো। তবুও তোমাকে চাই আমার! 

মাথা সরিয়ে ঘাড় সরিয়ে আবারো দেখল ক্ষতটা। ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটে উঠলো তার। কেন জানি বেশ হাসি পাচ্ছে তার। ঠোঁট ভিজিয়ে বলে উঠল,

"মেহু ! তোমার মতোই একজন কে দরকার ছিল আমার। আর আমি তা পেয়ে গেছি! 

অতঃপর রক্ত বন্ধ করে ক্ষত স্থানে ঔষধ লাগলো সে। ব্যান্ডেজ করে নিল। ফার্স্ট এইড বক্সটা হাতে নিয়ে বের হলো। সে জানে মেহু এখন কোথায় আছে! 

ঘরের সামনে এসে দাড়িয়ে গেল নির্ঝর। তার ধারণা সত্যি হয়েছে। অর্ণবের বিছানার কাছে মেঝেতে হেলান দিয়ে বসে আছে সে। তার চোখ জোড়া বন্ধ। নির্ঝরের ধারণা মেহু এতোক্ষণে ঘুমিয়ে পড়েছে। মেহুর এ ব্যাপারটা বেশ লাগে তার।‌ রাগারাগী'র পর এক ঘুম দিয়ে উঠে সে। হাতটা গুটিয়ে পাশে পড়ে আছে। 
"ঔষধ লাগানো তো দূর রক্ত অবধি বন্ধ করে নি মেহু। কি কেয়ারলেস মেয়েরে বাবা। এটাও কি এখন আমি করে দেবো নাকি।"

মেহুর হাত টা ধরে বলল,
"এখন ভালো যখন বাসি তখন তো করে দিতেই হবে! 

মুচকি হাসল নির্ঝর। হাতের রক্ত পরিষ্কার করে তাতে ঔষধ লাগিয়ে দিল সে। অতঃপর হাত টা ব্যান্ডেজ করে তাকিয়ে রইল মেহেরিন'র দিকে। খুব গভীর ঘুমে আছে,নাকি অন্য কিছু! 

মাথা প্রচন্ড ব্যাথা করছে মেহেরিন'র। চোখ মেলে তাকানোর শক্তি নেই তার। আশেপাশে কারো ছোঁয়া পেয়েও তাকানোর ইচ্ছা জাগল তবু শরীর মানতে চাইছে না। তবুও মিটিমিটি চোখে তাকালো সে। ঝাপসা ঝাপসা চোখে কাউকে বসে থাকতে দেখল। সে হাত বাড়িয়ে তাকে ছুঁতে নিল। মেহেরিন গুটিয়ে নিল। নির্ঝর তার মাথায় হাত বুলিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলল। কোলে তুলে নিল তাকে। বিছানায় শুইয়ে চাদর টেনে নিল। খুব ইচ্ছে করল কপালে একটা চুমু খেতে। নির্ঝর এগুতেই মেহেরিন ওপাশ হয়ে গেল। সে হেসে তার কপালের পাশেই চুমূ খেল। তাকাল অর্ণবের দিকে। হাঁটতে হাঁটতে এসে দাঁড়াল বেলকনিতে। বাইরের বৃষ্টি কমে নি এখনো। বুঝতে পারছে না আজ এতো বৃষ্টি কেন। প্রকৃতি কেন আজ এতো মাতাল। বেলকনির গ্রিলে হাত রেখে দাঁড়াল। বৃষ্টির কণা এসে পড়তে লাগল তার মুখে। নির্ঝর চোখ বন্ধ করে শব্দ করে শ্বাস ফেলল! 

#চলবে....
[+] 2 users Like Manjarul Haque's post
Like Reply
#45
বাহ্ অপূর্ব  clps 

[Image: Images-2-2-1.jpg]

Like Reply
#46
( লেখনিতে) 
#পর্ব_৩৩

খাবার টেবিলে বসে অর্ণব একবার নির্ঝর কে দেখেছ আরেকবার মেহেরিন কে। একজনের ঘাড়ে ব্যান্ডেজ আরেকজনের হাতে। সে কিছুই বুঝতে পারছে না। মেহেরিন খাবার সবে মুখে দিয়েছে। অর্ণব বলে উঠল,
"মাম্মি! 

আরেকবার নির্ঝরের দিকে তাকিয়ে বলল,
"ড্যাডি! 

দু'জনেই অর্ণবের দিকে লক্ষ্য করল। নির্ঝরের হাতের ইশারায় দুজনকে দেখাল। মেহেরিন হেসে বলল,

"কিছু হয় নি অর্ণ সোনা, মাম্মি শুধু একটু ব্যাথা পেয়েছে?

ভ্রু কুঁচকে তাকাল নির্ঝরের দিকে। নির্ঝর হেসে বলল,
"ড্যাডিও ব্যাথা পেয়েছে! 

অর্ণব দুই হাত বাহুতে গুঁজে নিল। তাদের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করল। মেহেরিন আর নির্ঝর বুঝে গেল অর্ণব তাদের কথা বিশ্বাস করছে না। দু'জনেই হাসল। মেহেরিন হেসে বলল,

"তোমার কি মনে হয় আমরা মারামারি করেছি! 

অর্ণব মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বলল। নির্ঝর বিষম খেলো। জুসের গ্লাস হাতে নিয়ে মিনমিনিয়ে বলল,

"ঠিক ধরেছে আমার ছেলে! 

মেহেরিন ভ্রু কুঁচকে নির্ঝরের দিকে তাকাল। দাঁতে দাঁত চেপে বলে উঠল,
"আপনার মনে হয় না এই জন্য আপনি দায়ী! 

নির্ঝর মুখ ভেংচি কেটে খাওয়ায় মনোযোগ দিলো। মেহেরিন উঠে অর্ণবের কাছে এলো। তার মাথায় হাত রেখে বলল,

"তোমার মনে হয় মাম্মি ড্যাডি ঝগড়া করেছে, তুমি দেখছ কখনো ঝগড়া করতে! 

অর্ণব নির্ঝরের দিকে তাকাল। নির্ঝর মাথা ঘুরিয়ে না না করল। অর্ণবও মাথা নাড়িয়ে না না করল। মেহেরিন হেসে হাত বুলিয়ে বলল,

"তাহলে, এটা শুধু একটা এক্সিডেন্ট বুঝলে! 

অর্ণব নির্ঝরের দিকে ফিরল। নির্ঝর হেসে মাথা নেড়ে হ্যাঁ বলল। অর্ণবও মাথা নেড়ে হ্যাঁ বলল। মেহেরিন ভ্রু কুঁচকে বলল,

"তুমি ড্যাডির নকল কেন করছো? আমার কথা বিশ্বাস করো না। 

অর্ণব এবারও মাথা ঘুরিয়ে নির্ঝরের দিকে ফিরতে নিল। তার আগেই মেহেরিন অর্ণবের গাল দুটো ধরে নিজের দিকে ফিরল। বলে উঠল,

"এখানেই বলো, ওখানে তাকাবে না। মাম্মি কে বিশ্বাস করো না তুমি! 

অর্ণব চোখের পাতা ফেলে তাকিয়ে রইল। মেহেরিন কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইল। অর্ণব টু শব্দ করল না। নির্ঝর ফিক করে হেসে দিল। তার হাসির আওয়াজে অর্ণবও হেসে উঠল। মেহেরিন রেগে দাঁড়িয়ে বলল,

"গাড়ির কাছে ওয়েট করছি চলে আসো!

হন হন করে বেরিয়ে গেল সে। নির্ঝর আর অর্ণব দুজনে দুজনের মুখের দিকে তাকিয়ে রইল। হুট করেই ফিক করে হেসে দিলো দুজন! 

অর্ণবের হাত ধরে বাইরে এলো নির্ঝর। মেহেরিন গাড়ির ড্রাইভিং সিটে। জন গাড়ির পাশে দাঁড়ানো। নির্ঝর জিজ্ঞাস করল,

"তুমি এখানে?

"ম্যাম আজ গাড়ি ড্রাইভ করবে। 

নির্ঝর ঢোক গিলল। মেহেরিন'র দিকে তাকাল। রেগে গাড়ির হ্যান্ডেল ধরে আছে সে। মেহেরিন বলে উঠল,

"গাড়িতে উঠুন! 

নির্ঝর পা পিছিয়ে বলল,
"না! 

"কেন?

"রেগে গাড়ি ড্রাইভ করা ঠিক না, মরার শখ নেই আমার। নিজের ছেলের বিয়ে খাওয়া এখনো বাকি! 

মেহেরিন ভ্রু কুঁচকালো। অর্ণবের দিকে তাকাল। সেও পিছিয়ে গিয়ে নির্ঝরের হাত ধরে মাথা নাড়িয়ে না না বলল। মেহেরিন হতাশ গাড়ির হ্যান্ডেলে মাথা রাখল! 

----

ল্যাপটবে কাজ করছে মেহেরিন, মাঝে মাঝেই উঁকি দিচ্ছে সামনের চেয়ারে। অর্ণব বসা আছে তার সামনে। নির্ঝর তার নিজ কেবিনে। তবুও অর্ণব এখানে কেন? কথাটা ভাবাচ্ছে মেহেরিন কে। অর্ণব এখন প্রায় বেশি সময় নির্ঝরের সাথেই থাকে। তার সাথে বেশ ভালো ভাবে মিশে যাচ্ছে। কিন্তু সমস্যা একটাতে আর তা হলো অর্ণবও নির্ঝরের মতো ব্যবহার করছে। এই না নির্ঝরের মতোই হয়ে যায় এই চিন্তা ভর করছে তার মাথায়। মেহেরিন ল্যাপটব বন্ধ করে অর্ণবের দিকে ফিরল। অর্ণবের মুখ মলিন। শীতল চোখে তাকিয়ে আছে মেহেরিন'র দিকে। মেহেরিন এই নিয়ে তৃতীয়বারের মতো জিজ্ঞেস করল,

"কিছু বলবে?

আগের বারের মতোই মাথা নেড়ে না বলল অর্ণব। তাকে কাছে ডাকল, এক হাত দিয়ে তার হাত দুটো ধরল। পরনে লাল রঙের একটা শার্ট আর কালো রঙের প্যান্ট। ফর্সা গায়ের রঙে এসব বেশ মানিয়েছে তাকে। ইশ! মেহেরিন'র ছেলেটা বেশ সুদর্শন হবে বড় হয়ে। একথা ভাবতেই মুখ টিপে হাসল মেহেরিন। অর্ণব বুঝতে না পেরে অদ্ভুত ভাবে তাকিয়ে রইল। মেহেরিন অর্ণবের চুলে হাত দিল। চুল গুলো বেশ হয়ে গেছে। কেটে ছোট করা দরকার। চুল গুলো ঠিক করতে করতে বলল,

"ড্যাডি পাঠিয়েছে এখানে! 

অর্ণব কিছু বলল না। চুপ করে ঢোক গিলল। মেহেরিন বলে উঠল,

"বাইরে যাবে তোমরা! 

অর্ণব ধীরে ধীরে মাথা নাড়ল। মেহেরিন ভ্রু কুঁচকে বলল,
"কোথায় যাবে আর কেন যাবে! 

অর্ণব তার ফোন হাতে নিতে চাইল। মেহেরিন তার হাত খপ করে ধরল। বলে উঠল,

"যদি মুখে বলতে পারো তাহলে যেতে দিবো। 

অর্ণব মুখের ভঙ্গি করে তাকিয়ে রইল। মেহেরিন হেসে তার মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,
"বলতে যখন পারবে না তখন যাওয়া লাগবে না! 

বলেই চেয়ারে সোজা হয়ে বসল। হঠাৎ করেই অর্ণবের দু শব্দ তার কানে এলো! 

"ফরহাদের কাছে যাবো! 

মেহেরিনের কপালে ভাজ পড়ল। সে অর্ণবের কাছে ফিরল। বলে উঠল,

"কথাটা তুমি বললে! 

অর্ণব মাথা নেড়ে হ্যাঁ বলল। মেহেরিন বলে উঠল,
"আরেকবার বল! 

অর্ণব মুখ খুলল। মেহেরিন প্রত্যাশিত চোখে তাকিয়ে আছে সেখানে। অর্ণব ধীরে ধীরে বলল,
"ফরহাদের কাছে যাবো! 

মেহেরিন মুচকি হাসল। মাথার চুলগুলো এলোমেলো করে চুমু খেল ললাটে। বলে উঠল,

"ফরহাদ আংকেল হবে। তিনি তোমার বড় বুঝলে! 

অর্ণব মাথা নাড়ল। মেহেরিন বলে উঠল,
"সন্ধ্যার আগে চলে আসবো ঠিক আছে। ড্যাডি থাকতে চাইলে থাকবে না, বুঝতে পেরেছ! 

অর্ণব ফিক করে হেসে দিল। মেহেরিন'র গালে চুমু খেয়ে বলল,
"ঠিক আছে মাম্মি! 

বলেই এক দৌড়ে বের হয়ে গেল। নিরবের আগমন ঘটল তখন। অর্ণব কে দৌড়ে বের হয়ে যেতে দেখে বলে উঠল,

"বেশ খুশি বলে মনে হচ্ছে! 

"বাইরে ঘুরতে যাবে খুশি হবে না।

"নির্ঝরের সাথে..

"আর নইলে কে আছে? 

নিরব দম ফেলে মাথা নাড়ল! 

----- 
মিনি কফি হাতে নিয়ে বেঞ্চে বসল নির্ঝর। তার পাশে বসা ফরহাদ। দূরে ঈশান আর আরিফ বল খেলছে অর্ণবের সাথে। অর্ণবও খেলছে বেশ। ফরহাদ হাত গুটিয়ে বলে উঠে,

"তাহলে স্বীকার করছিস তুই মেহেরিন'র প্রেমে পড়ে গেছিস! 

"মেহুর প্রেমে না বুঝলি একটা ডাইনির প্রেমে পড়েছি ডাইনি! 

"ডাইনি কেন বলছিস! 

নির্ঝর নিজের ঘাড়ের দিকে একবার তাকিয়ে ফরহাদের দিকে তাকাল। ফরহাদ একটু এগিয়ে এসে ঘাড়ে ব্যান্ডেজ দেখে হেসে ফেলল। বলে উঠল,

"এক দিনে এতো দূরে চলে যেতে নিলে উষ্ঠা খেয়ে পড়তেই হবে। 

নির্ঝর ভ্রু কুচকালো! কফিতে চুমুক দিল। ফরহাদ হেসে বলে উঠল,
"ফাহানের কথা জানিস এটা বলেছিস মেহেরিন কে।

"না!

"যাক জীবনে একটা ভালো কাজ করেছিস! 

বলেই নির্ঝরের হাতের কফি নিজে নিয়ে চুমুক দিল।‌ নির্ঝর রেগে বলে উঠে,
"আরে এটা আমার তো! 

"তো নিয়ে আয় আরেকটা! 

"ধ্যাত! 

ফরহাদ হেসে উঠলো। নির্ঝর বলে উঠে,
"তুই এটা কেন বলছিস ঠিক কাজ করেছি আমি!

ফরহাদ দ্বিতীয় বারের মতো চুমুক দিয়ে বলল,
"কারণ, মেহেরিন খুব সেনসীটিভ পারসন। তুই যদি এখন ওর অতীত জানিস বলে দিস আর তারপর বলিস ওকে ভালো বাসিস তাহলেই কাজ হয়েছে। ও ভাববে তুই ওর প্রতি দয়া করছিস। সিমপ্যাথি দেখাচ্ছিস! 

নির্ঝর ভ্রু কুঁচকে তাকাল। মাথা নেড়ে বলল,
"এভাবে তো কখনো ভেবে দেখে নি। আচ্ছা তুই এতো কিছু কিভাবে জানলি! 

"গাধা! মেহেরিন'র ক্যারেক্টার'ই এমন। অর্ণবের জন্য তোকে বিয়ে করেছে কিন্তু ভেবে দেখেছিস কিভাবে জোর করে। নিজের কোম্পানির শেয়ার দিয়ে তারপর বিয়ে দিয়েছে। কেন পারতো না তোকে এসে অর্ণবের কথা বলে অনুরোধ করতে করেছে! 

"যেই না এটিটিউড! 

"তাহলে.. ভেবে দেখ যেই মেয়ে কারো দয়া নিতে চায় না তুই জেচে তাকে দয়া করলে সে মেনে নিবে! 

নির্ঝর গালে হাত রেখে অর্ণবের দিকে তাকাল। ভলিবল খেলছে তারা। গম্ভীর স্বরে বলে উঠল,
"কি করতে বলছিস! 

ফরহাদ হেসে বলল,
"যা তুই সবসময় করিস! 

ফরহাদের কথায় হেসে দিল নির্ঝর। বল এসে পড়ল তার পায়ের কাছে। আরিফ হাত নেড়ে বল চাইছে। নির্ঝর বল হাতে নিয়ে ফরহাদের দিকে তাকিয়ে বলল,
"তাহলে খেলা শুরু হোক! 

ফরহাদ উঠে দাঁড়িয়ে বলল,
"আজ আমি জিতবো! 

নির্ঝর হেসে দৌড়ে মাঠের কাছে গেল। ফরহাদ কফি মগ টা বেঞ্চেতে রেখে দৌড় দিল মাঠের কাছে! 

---- 

রান্না ঘরে খাবার তৈরি করছে মেহেরিন। হঠাৎ সেখানে উপস্থিত হলো নির্ঝর। ফ্রিজের কাছে এসে পানি বের করল ফ্রিজ থেকে। অতঃপর হাঁটতে হাঁটতে এসে দাঁড়াল মেহেরিন'র কাছে। মেহেরিন সবজি কাটছে। নির্ঝর দাঁড়িয়ে দেখতে লাগল মেহেরিন কে। মেহেরিন একবার নির্ঝরের দিকে ফিরে আবারো কাটায় মনোযোগ দিল। বলে উঠল,

"কিছু বলবেন! 

"হাম না কিছু না! 

মেহেরিন কিছু না বলে আবারো কাজ শুরু করল। হুট করেই নির্ঝর পিছন থেকে এলো। মেহেরিন অবাক হলো। কি চলতে ঘটেছে বোঝার চেষ্টা করল। নির্ঝর মিটিমিটি হেসে মেহেরিন'র হাতের উপর হাত রাখল। মেহেরিন ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করল,

"আমি কি জিজ্ঞেস করতে পারি আপনি কি করছেন নির্ঝর? 

"আমি তোমার হেল্প করছি! 

"হেল্প! 

"হ্যাঁ, নিজের বউয়ের এতো টুকু হেল্প তো আমিই করতেই পারি তাই না! 

মেহেরিন কঠিন কিছু বলার জন্য প্রস্তুত নিল ঠিক তখন'ই অর্ণব হাজির হলো এখানে। মেহেরিন অর্ণবের দিকে ফিরল। নির্ঝর হেসে বলল,
"ড্যাডি সাহায্য করছে তোমার মাম্মি কে! 

মেহেরিন কিছু না বলতে পেরে হেসে দিল। দাঁতে দাঁত চেপে তাকাল নির্ঝরের দিকে। নির্ঝর তার কানের কাছে বলল,

"তুমি এখন চাইলেও কিছু বলতে পারবে না।

"পরে এর শোধ আমি তুলব।

"আহ! আমিও এটার অপেক্ষায় থাকবো! 

দুজন তাকিয়ে রইল দুজনের দিকে। মেহেরিন রেগে দাঁতে দাঁত চেপে আর নির্ঝর হেসে। দু'জনের সেই মুহূর্তে ক্যামারা বন্দি করল অর্ণব। ফোনের মাঝে তুলে রাখল সেই ছবি। মেহেরিন তার দিকে ফিরতেই দাঁত বের করে হেসে দৌড়ে চলে গেল। ব্যাপারটা মেহেরিন বুঝল না। 

তবে অর্ণব যেতেই কনুই দ্বারা ঘুসি মারল নির্ঝরের পেটে। নির্ঝর পেটে হাত দিয়ে সরে গেল। মেহেরিন তার দিকে ফিরে বলল,

"হেল্প করতে এসেছেন না একটু তো ব্যাথা লাগবেই! 

নির্ঝর ভ্রু কুচকালো। মেহেরিন হেঁসে বলল,
"নিন কাটুন এসব, ততোক্ষণে আমি রান্না বসাই। হেল্প করতে এসেছেন না! 

মেহেরিন হেসে চুলোয় কড়াই বসাল। নির্ঝর ঘাড় একবার একপাশ আরেকবার ওপাশে ঘুরাল। ছুরিটা হাতে নিল। সবজি কিভাবে কাটতে হয় এটা তার ধারণার বাইরে। তবুও চেষ্টা করল। ধপাস করে ছুরিটা সবজিতে বসাইতেই তা উড়ে এসে পড়ল মেহেরিন'র গায়ে। মেহেরিন রেগে তার দিকে তাকাল। নির্ঝর দাঁত বের হেসে বলল,

"সরি মেহু! 

খাবার খেতে বসে অর্ণব সবজির দিকে তাকিয়ে রইল। চামচ দিয়ে নেড়ে সবজি দেখছে সে। নির্ঝর নিজেও অবাক হয়ে দেখছে। মেহেরিন হেসে গ্লাসে পানি ঢালতে ঢালতে বলল,

"খেয়ে নাও অর্ণব সোনা, সবজি তোমার ড্যাডি কেটেছে। 

অর্ণব নির্ঝরের দিকে তাকাল। নির্ঝর হেসে বলল,
"সরি অর্ণব! 

অর্ণব মাথা নেড়ে কপালে হাত দিল! মেহেরিন ফিক করে হেসে দিল! 

---

মেহেরিন ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে এসে দেখে দুজনে বিছানায় গড়াগড়ি করে করে। অর্ণব কুটকুটিয়ে হাসছে। নির্ঝর তাকে সমানে শুরশুরি দিয়ে যাচ্ছে। মেহেরিন এসে দাড়াতেই নির্ঝর থেমে গেল। অর্ণব হাসতে হাসতে এবার উঠে বসল। মেহেরিন আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুল আঁচড়াতে লাগল।‌ নির্ঝর মেহেরিন'র দিকে তাকিয়ে রইল। আয়নায় নির্ঝর কে দেখতে পেয়ে মেহেরিন ভ্রু কুঁচকালো। নির্ঝর উঠে একটা চোখ টিপ দিল তাকে। মেহেরিন থতবত খেয়ে গেল। নির্ঝর মুচকি হাসল। অর্ণব উঠে নির্ঝরের দু গালে হাত রেখে নিজের দিকে ফিরিয়ে দু চোখ একসাথে টিপ দিয়ে বলল,

"ড্যাডি!
নির্ঝর অবাক হয়ে হেসে দিল। অর্ণব আবারো দু চোখ একসাথে টিপ। নির্ঝর হেসে তাকে ধরে নিজের সামনে বসিয়ে বলল,
"এভাবে না অর্ণব সোনা, এভাবে! 

বলেই অর্ণবকে চোখ টিপ দিল। অর্ণব দাঁত বের করে হেসে দিয়ে করার চেষ্টা করল। কিন্তু হলো না। সে আবারো চেষ্টা করল তবুও হলো না। অতঃপর এক হাত দিয়ে চোখ বন্ধ অন্য হাত খোলা রাখল। নির্ঝর ওর মাথায় হাত বুলিয়ে হাসতে লাগলো।

"আমার অর্ণব সোনা যখন বড় হয়ে যাবে তখন ঠিক পেরে যাবে।

মেহেরিন দুজন বাপ ছেলের কাহিনী দেখেও না দেখার ভান করল। অতঃপর আয়নার সামনে থেকে সরে যেতেই নির্ঝর অর্ণব কে শিখিয়ে দিল।‌ অর্ণব জোরে ডেকে উঠল,

"মাম্মি! 

মেহেরিন তার দিকে ফিরল। অর্ণব দু চোখ একসাথে টিপ দিল। মেহেরিন ভ্রু কুঁচকালো। অর্ণব আবারো দু চোখ একসাথে টিপ দিল। মেহেরিন হেসে উঠলো। সে অর্ণবের দিকে তাকিয়ে এক চোখ টিপ দিল। অর্ণব চোখ বড় বড় করে ফেলল। নির্ঝর বুকে হাত রেখে বলল,

"হায়! 

মেহেরিন'র কপালে ভাঁজ পড়ল। নির্ঝরের দেখাদেখি অর্ণবও বুকে হাত রেখে ধপাস করে নির্ঝরের কোলে পড়ে গেল। মেহেরিন হাসতে হাসতে রুম থেকে বেরিয়ে গেল। নির্ঝর অর্ণবের গাল টেনে বলল,

"এটা তোমার মাম্মি অর্ণব, এতো সহজে পটবে না বুঝলে! 

অর্ণব বুঝল আর না বুঝল তবুও মাথা নাড়ল! 

#চলবে....
[+] 1 user Likes Manjarul Haque's post
Like Reply
#47
( লেখনিতে) 
#পর্ব_৩৪

নিরব আর নির্ঝর মুখোমুখি। নির্ঝর কে দেখতে বেশ শান্ত'ই লাগছে। এই নিয়ে ৩ কাপ চা শেষ করল সে। নিরব আছে বেশ গম্ভীর ভাবে। তার মুখ চোখ সব গম্ভীর করে বসে আছে নির্ঝরের সামনে। নির্ঝর তা তোয়াক্কা করছে না। নিরব বলে উঠল,

"৬ মাস কিন্তু হয়ে গেল!

নির্ঝর ভ্র কুঁচকে জিজ্ঞেস করল,
"কিসের?

"তোমার আর মেহু'র বিয়ে! 

"ওহ হ্যাঁ তাই বলো। সময় কিভাবে পেরিয়ে গেল বুঝলাম না।‌

"তা কি ভাবলে?

নির্ঝর কিছুক্ষণ গম্ভীর হয়ে রইল। অতঃপর শীতল গলায় নিরবের দিকে তাকিয়ে বলল,
"ভাবছি কি গিফট দেওয়া যায়। আচ্ছা শাড়ি দেবো, কিন্তু মেহু তো শাড়ি পড়তে দেখলাম না।

নিরব তেলে বেগুনে জ্বলে উঠলো। মশকরা হচ্ছে তার সাথে। দাঁতে দাঁত চেপে বলল,

"শাড়ি কেন দেবে?

"বাহ রে! বিয়ের ৬ মাস হয়ে গেল, বউ কে কিছু গিফট দেবো না তা কি করে হয়। 

"কি বউ বউ করছো তুমি? 

"আহ আমার'ই তো বউ, আমি বউ বউ করবে না তো কে করবে শুনি। তুমি!

নিরবের ঠোঁট কাঁপছে। চোখ জোড়া লাল হয়ে যাচ্ছে রাগে। নির্ঝর এখানে বেশ শান্ত। চায়ের কাপটা টা নিচে রেখে বলল,

"সেই সুযোগ তোমাকে দিলে তুমি ছেড়ে দিবে বলে মনে হচ্ছে না।

"নির্ঝর! 

উচ্চস্বরে ডেকে উঠল নিরব। আশেপাশের মানুষজন লক্ষ্য করল তাদের। নির্ঝরের মাঝে এবারও কোন প্রভাব ফেলল না। সে আবারো চায়ের কাপে চুমুক দিল। এই চায়ের কাপও শেষ তার। নিরব নিজেকে শান্ত করল। নির্ঝরের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে উঠল,

"৬ মাস পর তোমাদের কন্ট্রাক শেষ, আর কথা মতো তুমি মেহু কে ছেড়ে চলে যাবে। 

নির্ঝর এবার নড়েচড়ে বসল। কিছু একটা বলবে সে। নিরবও সেই ভাবে প্রস্তুতি নিল। দুই হাত টেবিলে রেখে নিরবের অনেক কাছে এসে বলল,

"আমি তো ছেড়ে দেবো, যদি মেহু না ছাড়তে চায় তখন! 

ভ্রু কুঁচকে গেল নিরবের। নির্ঝর তার সাথে অহেতুক কথাবার্তা বলছে বলে মনে হলো। নিরব হেসে উড়িয়ে দিল সেই কথা। বলে উঠল,

"মেহু কেন তোমাকে ছাড়তে চাইবে না।

নির্ঝর চেয়ারে হেলান দিয়ে বসল। কিঞ্চিত হেসে বলে উঠে,
"যদি ভালোবেসে ফেলে আমায় তো! 

নিরব এবার থমকে গেল। নির্ঝর হেসে বলল,
"কি হলো কথা বন্ধ হয়ে গেল।

"এমনটা কখনো হবে না।

নির্ঝর হেসে উঠে দাঁড়াল। নিরব মুখ কঠিন করে তাকিয়ে আছে তার দিকে। নির্ঝর হেসে তার কানের এসে বলল,

"হবে হবে, মেহু আমার প্রেমে পড়বে, আমাকে ভালো ও বাসবে আর সারাজীবন আমার সাথেই থাকবে। তখন তুমি কিছু করতে পারবে না। 

"নির...

নির্ঝর কথায় ফোড়ন কেটে বলল,
"তুমি চাইলেই মেহুর জীবন থেকে আমাকে বের করতে পারবে তখন আমার জীবন থেকে মেহু কে বের করার সাধ্য তোমার নেই! 

বলেই নির্ঝর হেঁটে চলে গেল। নিরব সেখানেই বসে রইল। নির্ঝরের কথা তার বুকে এসে গেধে গেছে। মেহু কে আরো একবার হারানোর ভয় তাকে শেষ করে দিচ্ছে। জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছে নিরব। শান্ত করতে পারছে না নিজেকে।এই বুঝি হারিয়ে ফেলবে মেহু কে। তার এতো সাহস নেই মেহু কে গিয়ে ভালোবাসার কথাটা বলার। প্রচুর ভয় হয় তার। মেহু যদি রেগে যায় তখন। কিন্তু এখন যেই কষ্ট হচ্ছে তা ওখানে তা তুচ্ছ। ভেবে নিচ্ছে মেহু কে এবার ভালোবাসার কথাটা বলেই দেবে সে! 

----

অফিসে নির্ঝর দাঁড়িয়ে রিসেপশনে থাকা মেয়েটার সাথে এক নাগাড়ে কথা বলেই যাচ্ছে। কিসব কথাবার্তা বলছে মেহেরিন'র জানা নেই। তবে দেখা যাচ্ছে নির্ঝরের বেশিরভাগ কথায় মেয়েটা হেসে একাকার। অফিসে এসব কি শুরু করেছে সে। ল্যাপটব থেকে চোখ সরিয়ে কল করল রিসেপশনিস্ট কে। নির্ঝর কে তার কেবিনে পাঠাতে বলল।‌ নির্ঝর প্রবেশ করল তার কেবিনে। চেয়ারের সামনে বসে বলল,

"আমাকে খুব মনে করছিলে নাকি! 

"অফিসে এসব কি শুরু করেছেন?

"কি করলাম আবার?

"বাহ জিজ্ঞেস করছেন! 

ভ্রু কুঁচকে বলল,
"তুমি আমায় ফলো করছো মেহু!

"কিহ? 

নির্ঝর উঠে দাঁড়াল। মেহেরিন'র কাছে আসল। মেহেরিনের কপালে ভাঁজ পড়ল। মেহেরিন'র অনেক কাছে আসতেই একটু সরে গেল মেহেরিন। নির্ঝর হেসে তার ল্যাপটপ এগিয়ে নিল।‌ লজ্জিত হলো সে। নির্ঝর মুচকি হেসে ল্যাপটব স্ক্রিনের দিকে তাকাল। বলে উঠল,

"এতো ভালোবাসো আমায় বলতেই পারতে।

"ফালতু কথা বন্ধ করুন নির্ঝর!

"ফালতু কথা, এই করছ অফিসে বসে?

"কি করছি আমি!

"কি করছো, এই যে আমাকে দেখছো। আমার প্রতিটি পদক্ষেপ ফলো করছো। কার সাথে কথা বলছি কি করছি, কোথায় যাচ্ছি তা দেখছ!

"?

"আর একটা কথা জানো একটা মানুষ কখন এমনটা করে।

মেহেরিন নির্ঝরের চোখের দিকে তাকিয়ে বলল,
"আপনি ভুল বুঝছেন। একটু বেশিই ভেবে ফেলেছেন।

"তুমি বলতে চাও আমি ভুল ভাবছি, তুমি আমাকে দেখো না।

"আপনাকে এতো দেখার কি আছে বলুন তো। সারাদিন তো থাকেন আমার সামনেই!

নির্ঝর একটু ঝুঁকে গেল মেহেরিন'র কাছে। মেহেনির'র কপালে ভাঁজ পড়ল। নির্ঝর মেহেরিন'র চোখের দিকে তাকিয়ে বলল,

"যদি এই কথাটাই তুমি আমাকে জিজ্ঞেস করতে তাহলে আমি কি বলতাম জানো?

"কি বলতেন?

"বলতাম, তোমাকে দেখার মাঝে অদ্ভুত এক অনুভূতি আছে। তোমার এই হরিণী চোখ দেখলে আমার অন্যরকম অনুভূতি হয়। এমনটা মনে হয় তোমার এই চঞ্চল চোখ কিছু বলতে চায় আমায়। ইচ্ছে তো করে হাজার বছর এভাবে কাটিয়ে দেই তোমাকে দেখে দেখে। শুধু মনে হয় আমার অনুভূতি জুড়ে শুধু তুমি, আমার অনুভূতিতে তুমি! 

বলেই নির্ঝর সেই চোখের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল। মেহেরিন চোখ সরিয়ে বলল,
"ওহ আচ্ছা! 

"ওহ আচ্ছা! এটা কি? এতো রোমান্টিক কথা শোনার পর এই কথা বললে তুমি!

"রোমান্টিক কথা ছিল এগুলো! 
বলেই মেহেরিন চেয়ারে ঘুরিয়ে ওপাশ হলো। নির্ঝর রেগে তার দিকে চেয়ার ঘুরিয়ে বলল,

"মিসেস নির্ঝর চৌধুরী! কি ভাবো তুমি নিজেকে!

"মেহেরিন বর্ষা খান,‌কারণ এটাই আমার পরিচয়! 

"তুমি না মানলে মেনে না সারা দুনিয়া মানে তুমি আমার! 

নির্ঝরের কথার আওয়াজ প্রভাবিত করল মেহু কে। সে শুকনো ঢোক গিলে তাকিয়ে রইল নির্ঝরের দিকে। ফাইল হাতে নিরব সোজা ঢুকে পড়ল তখন। একগাদা বিরক্ত নিয়ে দাঁড়াল নির্ঝর! মেহেরিন নিরব কে বসতে বলল। নির্ঝর হন হন করে বেরিয়ে গেল তখন। কিন্তু এখানকার পরিস্থিতি নিরব কে অনেক কষ্ট দিল। কি হচ্ছিল এখানে! 

অফিস থেকে দুজনে একসাথে বের হলো। নির্ঝর গাড়ির দরজা খুলে দিল মেহুর জন্য। নিরব সেখানেই দাঁড়িয়ে ছিল। নির্ঝর তার দিকে তাকিয়ে বাঁকা হেসে নিজেও উঠে গেল গাড়িতে। নির্ঝর গাড়ি চালাচ্ছে ধীর গতিতে। মেহেরিন তার পাশে বসে আছে চোখ বন্ধ করে। নির্ঝর একটু বাদে বাদেই তাকাচ্ছে তার দিকে। অর্ণব আজ তার দাদু বাড়িতে। নির্ঝর আর মেহেরিন সেখানেই যাচ্ছে তাকে আনতে। হঠাৎ করেই তাদের গাড়ি জ্যামে আটকা পড়ল। নির্ঝর গাড়ি থামিয়ে পাশে তাকাল মেহেরিন'র দিকে। ক্লান্ত শরীর টাকে নিয়ে সিটে আরাম করে বসে আছে সে। জ্যামে আটকা পড়াতে হয়তো ভালোই হলো। নির্ঝর দু চোখ ভরে দেখতে পারছে মেহু কে। খানিকক্ষণের জন্যও চোখ সরাচ্ছে না মেহুর দিকে। 

হুট করেই এগিয়ে যাচ্ছে মেহুর কাছে সে। মেহুর চোখে ঘুমের রেশ কিন্তু এখনো ঘুমিয়ে পড়ে নি সে।‌ কারো কাছে আসার উপস্থিত পাছে সে। কারো গরম নিঃশ্বাস পড়ছে তার মুখে, কেউ খুব কাছে আসছে তার। মেহু দ্রুত চোখ মেলে ফেলল। তাকাতেই নির্ঝরকে তার খুব কাছে দেখল। বিন্দুমাত্র জায়গা নেই তার আর নির্ঝরের মাঝে। মেহু বিস্ফোরিত চোখে তাকিয়ে রইল। সজোরে দুহাত দিয়ে ধাক্কা দিলো নির্ঝর কে। সামলাতে না পেরে ওপাশের‌ দরজার সাথে খুব জোরে বাড়ি খেলো নির্ঝর। হতবাক সে। দাঁতে দাঁত চেপে তাকিয়ে আছে মেহেরিন। বলে উঠল,

"কি করছেন কি আপনি নির্ঝর! আপনি এমনটা কিভাবে করতে পারেন। 

"তুমি ভুল বুঝছো মেহু! 

"কি বললেন আমি, আমি ভুল বুঝছি! 

নির্ঝর একটু এগিয়ে এলো। বলে উঠল,
"মেহু শান্ত হও! 

রাগে ফুসফুস করছে মেহেরিন। নির্ঝর কাছে আসতেই ঝাপিয়ে পড়ল তার দিকে। দু হাত দিয়ে মারতে লাগল তাকে। তাদের গাড়ির চেঁচামেচি শুনে আশপাশের লোকজন দেখতে লাগল। এদিকে মেহেরিন থামছেই না। নির্ঝরের কোন কথা শুনতে প্রস্তুত না সে। নির্ঝর এক পর্যায় তার হাত দুটো শক্ত করে ধরে ফেলল। তাদের পাশের গাড়ির লোক জিজ্ঞেস করে উঠল,

"ম্যাম আপনি ঠিক আছেন তো! কিছু কি হয়েছে।

মেহেরিন রাগ সংবরণ করল। শান্ত গলায় বলে উঠল,
"না কিছু হয় নি।

"কিছু হলে বলতে পারেন। আমরা হেল্প করছি।

নির্ঝরের মেজাজ গেল ভড়কে। বলে উঠল,
"আরে ভাই বলছে তো কিছু হয় নি। আর হলেও আপনার কি? আমাদের স্বামী স্ত্রীর ব্যাপার আমরা সামলে নিচ্ছি! 

নির্ঝরের কথা শুনে লোকটা নিশ্চুপ হয়ে গেল। মেহেরিন রেগে তাকিয়ে আছে নির্ঝরের দিকে। হাত ছুটানোর জন্য ছটফট করছে। নির্ঝর শব্দ করে শ্বাস ফেলে বলল,

"শান্ত হও! আমি কিছুই করে নি।

"নির্ঝর আপনি এখ...

"কথা শুনো আগে। 

"হাত ছাড়ুন।

"আগে বলো চুপচাপ থাকবে তখন ছাড়বো এর আগে না।

"...

"কি হলো বলো!

"হাত ছাড়ুন! 

নির্ঝর হাত ছাড়ল। রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে মেহেরিন সিটে বসল। হুট করেই নির্ঝর আবারো তার কাছে চলে এলো এলো। হঠাৎ এমনটা হওয়ায় ভয়ে চোখ বন্ধ করে নিল মেহেরিন। নির্ঝর বলে উঠল,

"মেহু! 

মেহেরিন তাকাল। নির্ঝর মেহেরিন'র গাড়ির সিটবেল্ট বেঁধে বলল,

*তখন এটার জন্যই এসেছিলাম, তুমি সিটবেল্ট লাগাও নি তাই! 

মেহেরিন মুখ ঘুরিয়ে নিল। নির্ঝর নিজের সিটে বসল। আর কিছুক্ষণ পড়েই জ্যাম ছেড়ে দিবে। মেহেরিন বলে উঠল,

"এটার জন্য আমাকে ডাকা যেত পারতো।

"আমার সম্পর্কে তোমার এমন চিন্তা ভাবনা আমি কি আগে জানতাম!

মেহেরিন তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করল। নির্ঝর হেসে এলোমেলো চুল গুলো কানে গুঁজে দিল। বলে উঠল,

"বলতে হবে তোমার হাতে অনেক শক্তি আছে! 

--- 

চৌধুরী বাড়িতে গাড়ির আওয়াজ শুনে অর্ণব দৌড়ে বের হয়ে এলো। মেহেরিন কে দেখতে পেয়ে জড়িয়ে ধরল তাকে। 

"মাম্মি! 

মেহেরিন হেসে কপালে চুমু খেয়ে বলল,
"অর্ণব! কেমন আছো! 

"গুড! 

মেহেরিন হেসে মাথার চুল গুলো এলোমেলো করে দিল। নির্ঝরের ডাক শুনে ড্যাডি ড্যাডি করতে করতে নির্ঝরের কোলে চড়ে উঠল। নির্ঝর হেসে তার ঘাড়ে হাত দিল। অর্ণব লাফিয়ে উঠল কারণ ঘাড়ে তার শুড়শুড়ি আছে। দু'জনেই হাসতে লাগলো। নীলিমা এসে দাঁড়াল দরজার সামনে। মেহেরিন এগিয়ে এলো। নীলিমা জড়িয়ে ধরল তাকে। মেহেরিন জিজ্ঞেস করল,

"কেমন আছেন আন্টি? 

"আলহামদুলিল্লাহ তুমি! 

"ভালো, অর্ণব বুঝি অনেক জ্বালিয়েছে! 

অর্ণবের দিকে তাকাল। অর্ণব মাথা নাড়িয়ে না না করল।‌নীলিমা হেসে বলল,

"অর্ণব তো লক্ষী ছেলে, সে জ্বালাতে পারে নাকি। 

অর্ণব দাঁত বের করে হেসে দিল। নির্ঝর একটু ভাব গলায় বলল,

"আমার ছেলে তো তাই! 

"আচ্ছা হয়েছে, ছেলে আর ছেলের বাপ দুজনেই ভিতরে আসেন। মেহেরিন মা তুমিও আসো! 

তিনজন'ই একসাথে প্রবেশ করল ঘরে। অতঃপর..

#চলবে....
[+] 1 user Likes Manjarul Haque's post
Like Reply
#48
( লেখনিতে) 
#পর্ব_৩৫

নীলিমার মনটা আজ একটু ক্ষুদ্ধ হয়েছে। তার কারণ মেহেরিন তাকে মা বলে ডাকে নি। নিজের ছেলের বউয়ের মুখ থেকে মা ডাকটা শোনার আশা করাটা কি অপরাধ। সবাই তো মা বলেই ডাকে। এদিকে নির্ঝরের বিয়ের ৬ মাস হয়ে গেল অথচ তার ছেলের বউ আজ অবদি কি না তাকে মা বলে ডাকে নি। একসাথে থাকে না তো কি, এতো টুকু আশা তো করতেই পারতো সে। 

মনটা খারাপ করে রুমে এসে বিছানায় ধপাস করে বসল সে। রিদুয়ান চৌধুরী ওয়াশরুম থেকে মাথা মুছতে মুছতে বের হলেন। নীলিমা কে এভাবে বসে থাকতে দেখে তার পাশে এসে বসলেন। জিজ্ঞেস করলেন,

"রেগে আছো কেন? 

"আমি রেগে নেই! 

"তাহলে, মুখ এতো গম্ভীর করে রেখেছ কেন? 

নীলিমা রিদুয়ানের দিকে মুখ ফিরলেন। নীলিমা'র চোখে জল ছলছল করছে। রিদুয়ান নীলিমা'র মাথায় হাত রেখে বলেন,

"কি হয়েছে? 

"মেহেরিন এসেছে!

"এতে মন খারাপের কি আছে, এতোদিন তো বলতে আসে না কেন? অর্ণব কে একটু পাঠায় না কেন আর আজ এমন করছো! 

নীলিমা মন খারাপ করে মাথা নিচু করে ফেলল। রিদুয়ান মাথায় হাত বোলাতে বোলাতে বলেন,

"মেহেরিন কিছু বলেছে!

নীলিমা মাথা নেড়ে না বলল। রিদুয়ান হেসে বলে,

"তাহলে এমন করছো কেন!

"আচ্ছা তোমার মা কে আমি মা বলে ডাকিনি বলো।

"হ্যাঁ তা তো ডেকেছ, কিন্তু এখানে এটার সম্পর্ক কি!

নীলিমা মুখ ফিরিয়ে নিল। কথাটা কিভাবে বলবে সে, নিজের স্বামী কে এই কথাটা একদমই বাচ্চামি লাগছে তার কাছে। কিন্তু তার মন বুঝছে তার মনে কি চলছে। ছেলের বউ মা বলে না ডাকাতে খুব কষ্ট হচ্ছে তার। আর এই কষ্ট অশ্রু জমাচ্ছে চোখে, কোন একসময় ঝড়ে পড়বে। রিদুয়ান যখন জানবে ছেলের বউ'র মুখে মা ডাক শুনতে না পেরে সে কাঁদছে তখন এক পাটি দাঁত বের করে হাসবে। লজ্জা লাগবে। তাই ঠিক করেছে বলবে না। নিজেকে শক্ত করে উঠে দাঁড়াল। রিদুয়ান বলে উঠল,

"মেহেরিন তোমায় মা বলে ডাকে না দেখে তোমার মন খারাপ নীলিমা! 

থমকে গেল নীলিমা! রিদুয়ান মুচকি হেসে উঠে আসল। তার সামনে দাঁড়াল। আবারো নীলিমা'র মাথায় হাত রেখে বলে,

"ধুর বোকা, এটাতে মন খারাপের কি আছে। আজ ডাকে নি একদিন তো ডাকবে। সময় কি চলে যাচ্ছে নাকি! 

স্বামীর যত্ন পেয়ে ভেঙ্গে পড়ল নীলিমা। জড়িয়ে ধরল রিদুয়ান কে। কেঁদে উঠলো সে। কান্না মাখা গলায় বলল,

"তুমি বুঝতে পারছো না আমার কতোটা কষ্ট হচ্ছে। প্রথমদিন থেকেই নিজের মেয়ে হিসেবে দেখি ওকে। ছেলের বউ না নিজের মেয়ে ভাবি। একবার কি মা ডাক শোনার ভাগ্য হবে না বলো। 

"মেয়ে যখন ভাবো তাহলে মেয়ে কে বুঝতে চেষ্টা করো। মেয়েটা তো ছোট থেকেই মায়ের আদর পায় নি। এখন তার কাছে এসব একটু অন্যরকম তো লাগবেই। 

নীলিমা মুখ তুলল। রিদুয়ান তার চোঁখের জল মুছে দিল। নীলিমা মুখ খুলে বলল,

"তুমি ঠিক বলছো বোধহয়, আমিই একটু তাড়াহুড়ো করছি।

"এই তো বুঝতে পেরেছ! ( কিঞ্চিত হেসে বলল.. ) আমার দেখা তুমি'ই সেই প্রথম শাশুড়ি যে কি না ছেলের বউয়ের মুখে মা ডাক শুনতে পারে নি বলে স্বামী কে জড়িয়ে ধরে কাঁদছে! 

"তুমি মজা নিচ্ছ! 

"হ্যাঁ নিচ্ছি, অর্ণব এসে যদি দেখে তোমাকে এভাবে কাঁদতে তাহলে কথাটা নির্ঝরের কানে পৌঁছাতে সময় লাগবে না। এখন তোমার ছেলে কি চিজ এটা তুমি নিশ্চিত জানো। আচ্ছা কান্না থামাও, মুখ চোখে জল দাও। আমি একটু ওদের সাথে দেখা করে আসি, ঠিক আছে।

নীলিমা মাথা নেড়ে সম্মতি জানাল। রিদুয়ান তার গালে হাত রাখল আশ্বাস দিল। শশুড় শাশুড়ি'র কথা শুনে দরজার আড়ালে দাঁড়িয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলল মেহেরিন। হেঁটে চলে গেল সেখান থেকে। সে অবশ্য আড়ি পাতে নি। এসেছিল নীলিমা'র সাথে কথা বলতে। দরজা খোলা থাকায় কথা গুলো কানে এলো তার। খুব অদ্ভুত লাগছে নিজের কাছে। এমন অনেক মেয়ে আছে যারা কি না শাশুড়ি'র ভালোবাসা পাওয়ার জন্য আকুল হয়ে থাকে সেখানে কি না তার শাশুড়ি তাকে ভালোবাসার জন্য এভাবে কাঁদছে। নিজেকে খুব অপরাধী লাগছে কারণ একদিন তাদের আরো কাঁদিয়ে চলে যাবে সে। তখন তাদের কতোটা কষ্ট হবে এটা সে বুঝতে পারছে। প্রিয় মানুষ হারানোর কষ্ট জানে সে। অভিজ্ঞতা'ই আছে বলা যেতে পারে। তাই নিজে কারো প্রিয় মানুষ হতে চায় না! 

----

নির্ঝর দৌড়ে যাচ্ছে অর্ণবের পিছনে, অর্ণব পুরো ঘর জুড়ে ছোটাছুটি করছে। সোফায় বসা রিদুয়ান তাদের কান্ড দেখে হেসে অস্থির। রান্না ঘরে রাতের খাবার বানাতে ব্যস্ত নীলিমা। ছেলে আর ছেলের বউ এসেছে‌ এতো দিন পর। নিজের হাতেই খাবার বানাবে সে। মেহেরিন এসে দাঁড়াল রান্না ঘরে। হাত বাড়াল নীলিমা'র কাজে। নীলিমা তার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসল। মেহেরিন সবজি কাটতে কাটতে বলে উঠল,

"খুব রাগ হয় না আপনার আন্টি! 

নীলিমা অবাক হয়ে বলল,
"কেন? 

মেহেরিন নিচের দিকে তাকিয়ে বলল,
"এই যে আপনাকে আন্টি বলে ডাকি তাই! 

হাতের খুন্তি টা কড়াইতে রেখে দিল নীলিমা। অবাক চোখে তাকাল মেহেরিন'র দিকে। মেহেরিন তার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসল। অতঃপর খুন্তি হাতে কড়াইয়ের মাছ উল্টে দিল সে। নীলিমা চমকে উঠে সেখান থেকে সরে দাঁড়াল।‌ মেহেরিন চুলোর আঁচ কমিয়ে দিয়ে সামনে তাকিয়ে বলল,

"জন্মের পর থেকে মায়ের ছবি দেখেই কাটিয়েছি। কখনো স্বচোখে দেখার ভাগ্য হয় নি আমার। মা বলতে নিজের দি কেই চিনতাম। কাউকে মা বলে ডাকি নি কখনো! 

নীলিমা অস্থির হয়ে উঠছে মেহেরিন'র এসব কথা শুনে। মেহেরিন কি তাহলে সবকিছু শুনে ফেলেছে। মেহেরিন তার দিকে ফিরল। কিঞ্চিত হেসে বলল,

"আমার মা হলে বোধহয় আপনার মতোই হতো। কারণ পৃথিবীর সব মা তো এক'ই! 

নীলিমা চোখ নামিয়ে ফেলল। মেহেরিন বলে উঠল,
"তবে সব শাশুড়ি নিশ্চিত আপনার মতো হয় না তাই না! 

নীলিমা আবেগ প্রবণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করল মেহেরিন'র দিকে। মেহেরিন চোখ সরিয়ে নিল। এতো আবেগ, ভালোবাসা চায় না সে। হেসে বলে উঠল,

"রাগ করবেন না, হয়তো কোনদিন আপনার এই সাধ পূরণ করার চেষ্টা করবো আমি। কারণ এটা আমার জন্য অনেকটা কঠিন! আপনার আর রান্না করা লাগবে না। ওখানে গিয়ে বসুন। বাকি রান্না আমিই শেষ করছি! 

বলেই রান্নায় মনোযোগ দিল সে। নীলিমা করুণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল মেহেরিন'র দিকে। খুব ইচ্ছে করছে দু হাত তাকে জড়িয়ে ধরতে। কিন্তু সবসময় মন যা চায় তা হয়ে উঠে না। 

অর্ণব হুট করে এসে নীলিমা'র হাত ধরে বলল,

"দাদিমা! 

নীলিমা চমকে উঠল, তার সাথে সাথে সবাই! মেহেরিন মুচকি হাসল। অর্ণব কে সেই শিখিয়ে দিয়েছে দাদিমা বলে ডাকার জন্য। তবে এতেও কম খাটতে হয় নি তাকে। অর্ণব কে টানা দু'দিন আইসক্রিম খেতে দেবে বলেছে। তবুও কাজ হয় নি। অতঃপর বলেছে "তোমার দাদিমা অনেক খুশি হবে, তোমাকে নাড়ু বানিয়ে খাওয়াবে।" একথায় জ্বলজল করে উঠল অর্ণবের চোখ। খুশিতে আত্মহারা সে। নীলিমা'র‌ হাতের নাড়ু বেশ পছন্দ তার। কয়েকদিন আগেই তৈরি করে খাইয়েছিলেন। মেহেরিন অনেক কষ্ট করেই অর্ণব কে শিখাল দাদিমা বলা। যাতে নীলিমা'র অভিমানের কষ্ট কিছুটা হলেও কমে। নীলিমা নিচু হয়ে বসে অর্ণবের দুই গালে হাত রেখে বলল,

"কি বললে, দাদিমা! আরেকবার বলো!

অর্ণব মুখ ফুটে বলল,
"দাদিমা! 

নীলিমা তাঁর কপালে চুমু খেয়ে বলল,
"বলো কি হয়েছে! 

অর্ণব হাত নাড়িয়ে কড়াইয়ের দিকে হাত দিল। নীলিমা বলে উঠল,
"মাছ ভাজা খাবে!

অর্ণব মাথা নাড়ল। নীলিমা খুশিতে আত্মহারা। ভাজা মাছের কাঁটা বেছে নিজের হাতে খাইয়ে দিতে লাগল অর্ণব কে! রিদুয়ান বলে উঠল,
"আমাকে দাদু ডাকো তো অর্ণব! 

অর্ণব মাথা নেড়ে না না করল। নির্ঝর ফিক করে হেসে দিল। রিদুয়ান বলে উঠল,
"আচ্ছা আজ ডাকে নি একদিন ডাকবে! 

নির্ঝর হেসে বলল,
"হ্যাঁ সেই আশায় থাকো তুমি!

---- 

আজকের রাত টা চৌধুরী বাড়িতেই কাটাবে তারা। অর্ণব তার দাদিমার সাথে ঘুমাবে বলে বালিশ নিয়ে তার রুমে চলে গেছে। মেহেরিন ঘরের এক কোনে দাঁড়িয়ে মাছের একুরিয়াম দেখছে। নির্ঝরের ঘরে খুব বড় একটা একুরিয়াম আছে। মেহেরিন তাতে খাবার দিচ্ছে। এটা নির্ঝর'ই করছিল কিন্তু তার একটা কল আসায় ফোন হাতে বাইরে চলে গেছে। মেহেরিন উঠে এসে কাজ টা করতে লাগলো। মাছ'রা সাঁতার কেটে খাবার সন্ধানে ঘুরে যাচ্ছে। নির্ঝর ঘরে এলো। তার আভাস পেল মেহেরিন। তবুও মাছ গুলোর দিকেই তাকিয়ে রইল। নির্ঝর মিটিমিটি পায়ে তার পিছনে এসে দাঁড়াল। পেছন থেকে হাত বাড়িয়ে একটা প্যাকেট ধরল মেহেরিন'র সামনে। মেহেরিন প্যাকেটে একবার চোখ বুলিয়ে আবারো মাছের দিকেই তাকাল। নির্ঝর সামনে এসে বলল,

"এটা তোমার জন্য! 

"কি আছে এতে?

"নিজে দেখো! 

মেহেরিন প্যাকেট হাতে নিল। দেখল খুব সুন্দর একটা শাড়ি আছে তাতে। শাড়িতে একবার হাত বুলিয়ে বলল,

"সুন্দর! 

অতঃপর প্যাকেটে ভরে রেখে নির্ঝরের হাতে দিয়ে দিল। নির্ঝর অবাক হলো! মেহেরিন তার পাশ কাটিয়ে এসে দাঁড়াল বেলকনির দিকে। নির্ঝর তার পাশে এসে দাঁড়াল। বলে উঠল,

"শাড়ি টা কি তুমি নিবে না

"না।

"কেন?

"কারণ আপনি ভুল করছেন নির্ঝর।

"মানে?

"বিয়ের ৬ মাসের পূর্তিতে নিজের স্ত্রী কে এসে শাড়ি উপহার দিচ্ছেন। কিন্তু আপনি জানেন ৬ মাসের সমাপ্তি মানেই আপনার আর আমার সম্পর্কের ইতি টানার সময় চলে এসেছে।

"মেহু আমি তোমাকে..

"ভালোবাসেন! ( নির্ঝরের দিকে তাকিয়ে কিঞ্চিত হেসে বলল.. ) আপনি ভালোবেসে ফেলেছেন আমায়, এটাই তো বলবেন। আমি আপনার ভালোবাসায় প্রশ্ন তুলছি না। ভালো বাসতেই পারেন। ভালোবাসা হুট করেই হয়। সন্দেহ নেই আপনার ভালোবাসায়! 

নির্ঝর এক পা এগিয়ে কাছে এলো মেহুর। চোখের দিকে তাকিয়ে বলল,

"তাহলে কিসের সংশয় তোমার? 

"নিজেকে নিয়ে সংশয়, আপনার কাছে খুব সহজ নতুন করে সবটা শুরু করা। কিন্তু আমার কাছে না। আমার অতীত আপনি জানেন ন...

"জানতে চাই না, আমি জানতে চাই না তোমার অতীত। আমি তোমাকে জানতে চাই। তোমাকে ভালোবাসি আমি! 
বলেই মেহু'র দিকে হাত বাড়াল সে। মেহেরিন নির্ঝরের হাত থামিয়ে দিল। হেসে বলে উঠল,

"আপনি আমার সাথে ১ বছর থাকবেন বলেই অর্ণব এভাবে আগলে নিতে পেরেছেন কারণ আপনি জানেন একবছর পর আর তাকে সহ্য করতে হবে না। তার কাছে সম্পর্ক রাখার জন্য জোরও করতে হবে না। তাই ওর সাথে আপনি এখন এতোটা কমফোর্টেবল। কিন্তু নির্ঝর যদি কথাটা সারাজীবন একসাথে থাকার আসতো তাহলে হয়তো আপনি মানতে নারাজ। কেউ পারে না অন্যের সন্তান কে নিজ সন্তান বলতে।

নির্ঝর গম্ভীর মুখে তাকিয়ে রইল। কথা শেষ হতেই বলে উঠল,
"আমি রাজি! 

মেহেরিন নির্ঝরের দিকে ফিরল। নির্ঝর বলে উঠল,
"আমি রাজি তোমার সাথে সারাজীবন কাটাতে, অর্ণবের সাথে সারাজীবন কাটাতে।কোন শর্ত কোন সংশয় থাকবে না এখানে।

মেহেরিন মুচকি হেসে বলল,
"নির্ঝর বলাটা খুব সহজ। মানুষ যখন ভালোবাসে তখন তার কাছে সবকিছুই সহজ বলে মনে হয়। কিন্তু বাস্তব তার চেয়েও ভয়ানক।

"মেহু তুমি আমাকে এতোটা অবিশ্বাস করো।

"এটা অবিশ্বাস না নির্ঝর এটাই বাস্তব। কাল আপনার আর আমার সন্তান এলে তখন মাঝখানে আমার অর্ণব'ই অনাদর পাবে। আমি তখন না হতে পারব একজন ভালো মা আর না একজন স্ত্রী। এখন লোকদেখানো বলে আমরা এটা খুব ভালো করছি কিন্তু যখন'ই তা সত্যি হবে তখন এটা তার চেয়েও খারাপ হবে। আপনি এখন বলছেন হবে না কিন্তু আমি জানি তখন এটাই হবে। 

অতঃপর মেহেরিন যেতে নিল। নির্ঝর তার সামনে এসে দাঁড়াল। শীতল গলায় বলে উঠল,
"কারণ শুধু এই একটা না আরো আছে।

মেহেরিন শব্দ করে শ্বাস ফেলে বলল,
"ঠিক ধরেছেন আরো আছে, আর তা হলো আমার ভয়াবহ অতীত। যার কারণে আমি ভালোবাসতে ভয় পাই। কাউকে নতুন করে ভালোবাসা এখন আমার পক্ষে আর সম্ভব না। 

বলেই পাশ পেরিয়ে যেতে নিল মেহু। নির্ঝর তার হাত ধরে নিল। বলে উঠল,
"একবার সুযোগ দিয়ে দেখ, আমি কথা দিচ্ছি মেহু।

মেহেরিন শব্দ করে হাসল। নির্ঝরের হাত খানা ছাড়িয়ে দিয়ে বলল,
"সুযোগ! আর না নির্ঝর! 

বলেই চলে এলো সেখান থেকে। নির্ঝর দাঁতে দাঁত চেপে আকাশের দিকে তাকিয়ে রইল। বেলকনির গ্রিল টাকে মুঠো করে নিল হাতে! বুকের পাশে ব্যাথা করতে লাগলো। ঠোঁট কামড়ে দাড়িয়ে রইল নির্ঝর। না এতো সহজে হেরে যাবে না সে। তার ভালোবাসা মেহেরিন কে বোঝাবে সে। বোঝাতেই হবে! 

-----

কনফারেন্স রুমে নিরবের প্রেজেন্টেশন দেখছে মেহেরিন। সে একাই দেখছে, নিরব তাকে সবটা দেখিয়ে তারপর মিটিং এ প্রেজেন্ট করবে। মেহেরিন খুব মনোযোগ দিয়েই দেখছে সবটা। টেবিলে থাকা ফোনটা কেঁপে উঠল। নিরব থেমে গেল।‌ মেহেরিন তাকিয়ে দেখল আননোন নাম্বার! নিরবের দিকে তাকিয়ে হাতে নিল ফোনটা। রিসিভ করে কানে দিল কিন্তু ওপাশ থেকে কোন আওয়াজ'ই পেলো না। মেহেরিন বলে উঠল,

"হ্যালো! 

ওপাশ থেকে এখনো কোন কথার আওয়াজ এলো না। মেহেরিন দাঁড়িয়ে গেল। বলে উঠল,

"কে বলছেন? 

"মেহেরিন বর্ষা খান! 

গলার আওয়াজ শুনে চেয়ার আকড়ে ধরল মেহেরিন। নিরব ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে রইল মেহেরিন'র দিকে। ওপাশ থেকে বলে উঠলো,
"না এখন তো আবার চৌধুরী নামটাও লাগিয়েছো 

মেহেরিন বলে উঠল,
"আপনি!

"যাক চিনতে পেরেছ তাহলে! 

মেহেরিন সোজা হয়ে দাঁড়াল। শক্ত গলায় বলে উঠল,
"আমাকে হঠাৎ মনে পড়ল যে।

"কি করব বলো, তুমি কাজটাই এমন করলে।

মেহেরিন ভ্রু কুঁচকালো। ওপাশ থেকে বলে উঠলো,
"কি ভাবলে আমার হাত থেকে একটা প্রজেক্ট নিয়ে নিলেই আমাকে শেষ করে দিতে পারবে। 

মেহেরিন বাঁকা হাসল। বলে উঠল,
"এটা তো শুরু মিঃ রাফি মল্লিক! এরপর আরো অনেক কিছুই ঘটবে যা আপনার ধারণার বাইরে! 

রাফি মল্লিক নামটা শুনে নিরব চমকে হলো। আকস্মিক ভাবে তাকিয়ে রইল মেহেরিন'র দিকে। 

লাউডস্পিকারে ফোন টেবিলে রেখে একটা সিগারেট ধরাতে ধরাতে রাফি বলল,
"কি দরকার বলো ঝামেলা করে, সংসার আছে সেটা নিয়েই দেখো! 

"মনে হচ্ছে রাফি মল্লিক বেশ ভয় পেয়েছে!

"( শব্দ করে হেসে উঠলো )

মেহেরিন মুচকি হাসল। বলে উঠল,
"এতো বড় ব্যাপার না হলে রাফি মল্লিক নিজে অবশ্য আমায় ফোন করতো না। যাই হোক এটা আপনার সমাপ্তির শুরু রাফি মল্লিক। এটা মাথায় রাখবেন! 

"ভুল করছো মেহেরিন!

"ভুল তো আমি সেদিন করেছিলাম যেদিন দি কে দ্বিতীয় বারের মতো আপনার কাছে পাঠিয়েছিলাম। সেই ভুলের মাসুল এখনো দিতে হচ্ছে আমায়।

"কিন্তু তুরুপের তাস তো আমার কাছে!

"মানে!

"অর্ণব! তোমার সবকিছু, মনে রেখো সে কিন্তু আমার'ই সন্তান। তোমার কাছ থেকে তাকে কেড়ে নিতে সময় লাগবে না আমার।

মেহেরিন দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
"আমার অর্ণব কে একটা কথাও বলবেন না। 

ওপাশ থেকে হাসির আওয়াজ পাওয়া গেল। রাফি শীতল গলায় বলে উঠল,
"আর যাই হোক আদালত কখনো মায়ের খু/নির কাছে তার সন্তান কে রাখতে চাইবে না বলো।

"অর্ণবকে মাঝখানে আনলে আপনার যে কি অবস্থা আমি করবো আপনি ধারণা করতে পারছেন না।

"আচ্ছা যাও ধারণা করবো না।‌ সারপ্রাইজ ভেবে নেবো এমনেতেও আই লাভ সারপ্রাইজ! খেয়াল রেখো নিজের আর অর্ণবেরও! 

টুং টুং শব্দে কেটে গেল ফোনটা। ফোনটা ছুঁড়ে ফেলল মেহেরিন। চিৎকার করে উঠলো। নিরব কাছে এসে থামাতে চাইলো তাকে। মেহেরিন মারাত্মক রেগে আছে। রাগে তার পুরো শরীর কাঁপছে। রাফির প্রত্যেকটা কথা তার গায়ে কাঁটার মতো বাঁধছে। পাশে থাকা চেয়ার টাকে দূরে ছুঁড়ে ফেলল মেহেরিন। নিরব থমকে দাড়িয়ে গেল। টেবিলের সবকিছু উলো/টপালোট করে দিচ্ছে মেহেরিন ।জোরে চিৎকার করে বলছে,

"ছাড়বো না, ছাড়বো না আমি। আমার অর্ণবের কিছু করলে শেষ করে দেবো আমি। সবকিছু শেষ করে দেবো আমি, সবকিছু! 

নিরব দৌড়ে আসল। মেহেরিন আরেকটা চেয়ার ধরতেই তার হাত ধরে ফেলল। তাকে শান্ত করার চেষ্টা করল। মেহেরিন তার দিকে তাকাল। নিরব তাকিয়ে দেখল মেহেরিন'র দু চোখ রাগে লাল হয়ে আছে। পুরো শরীর কাঁপছে তার। শরীরটাও একটু গরম গরম লাগছে। মেহেরিন বলে উঠল,

"অঅ..অর্ণব আমার। শুধু আমার। বল অর্ণব শুধু আমার ছেলে।

"হ্যাঁ হ্যাঁ মেহু অর্ণব শুধু তোর ছেলে, শুধু তোর।

"তুই জানিস, ও ওও আমাকে কি বলছিল। ও নাকি কেড়ে নেবে, কেড়ে নেবে আমার অর্ণব কে। আমি ছেড়ে দেবো না ওকে। আমার অর্ণবের কিছু করলে আমি ছেড়ে দেবো না ওকে। কিভাবে বলল ও এটা, কিভাবে! 

মেহেরিন'র উৎপাত বেড়ে গেল। নিরব তাকে থামানোর জন্য তার দু গালে হাত রাখল। চোখে আশ্বাস দিয়ে বলল,

"কিছু করতে পারবে না, কিছু না। আমি বললাম তো তোকে, রাফি কিছু করতে পারবে না। তুই শান্ত হ! 

মেহেরিন শান্ত হলো। নিরব তাকে আগলে নিল। মেহেরিন'র চিৎকারে বাইরে সব স্টাফ এসে জমলো। নির্ঝর দৌড়ে এসে কেবিনে ঢুকল। এসে দেখল নিরব মেহু কে জড়িয়ে ধরে আছে। নির্ঝর থমকে তাকিয়ে রইল শুধু! 

#চলবে....
Like Reply
#49
( লেখনিতে) 
#পর্ব_৩৬ 

মেহেরিন'র পিএ এসে সব স্টাফ কে সরিয়ে দিল। নিরব মেহেরিন'র কে চেয়ারে বসাল। মাথায় হাত রেখে ভরসা দিল। গ্লাসে পানি ঢেলে তার হাতে দিল। নির্ঝর দাঁতে দাঁত চেপে তাকিয়ে দেখছে। হঠাৎ করেই খেয়াল করল নিরব মেহেরিন'র চুলের দিকে হাত বাড়াচ্ছে। মনে হয় চুল গুলো কানে গুঁজে দিবে। নিরব হাত বাড়াতেই নির্ঝর এসে তার হাত ধরে ফেলল। নিরব নির্ঝরের দিকে তাকাল। নির্ঝর তার হাত সরিয়ে ফেলল। হাটু গেড়ে বসল মেহেরিন'র সামনে। মেহু ঘেমে একাকার। কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম। নির্ঝর তার চুল গুলো কানে গুঁজে দিল। মেহেরিন এখনো ঘন ঘন শ্বাস নিচ্ছে। নির্ঝর বলে উঠল,

"বাসায় যাওয়া যাক! 

মেহেরিন মাথা নাড়ল। নির্ঝর মেহেরিন'র হাত শক্ত করে ধরল। মেহেরিন দাঁড়িয়ে বলল,

"আমার ফোন! 

নিরব হাত বাড়িয়ে ফোন দিল। নির্ঝর রেগে তার হাত থেকে ফোনটা কেড়ে নিল। অতঃপর মেহুর হাত ধরে তাকে বের করিয়ে আনল। মানসিক ভাবে অনেকটা অসুস্থ মেহেরিন। গাড়ির কাছে আসতেই অর্ণবের জন্য জোরাজুরি শুরু করল। নির্ঝর উপায়ন্তর না পেয়ে তাকে চৌধুরী বাড়িতে নিয়ে এলো। নীলিমা আর রিদুয়ান'র সাথে খেলছিল অর্ণব। মেহেরিন যেতেই দৌড়ে তার কাছে চলে এলো সে। মেহু তাকে আকড়ে ধরল। শুধু তাই না কোলে করে একদম গাড়ির কাছে চলে এলো। নীলিমা আর রিদুয়ান দুজনেই অবাক। নির্ঝর বলে উঠল,

"আমি পড়ে বলছি সব, মেহু এখন একদম'ই সুস্থ না! 

বলেই গাড়ির কাছে এসে দেখল পিছনের সিটে অর্ণব কে আকঁড়ে ধরে বসে আছে। বারবার মাথায় হাত বুলিয়ে যাচ্ছে। নির্ঝর জন কে গাড়ি স্টার্ট করতে বলে গাড়ির ড্রাইভিং সিটেই বসল।

বাড়িতে আসতেই অর্ণব কে নিয়ে ঘরে চলে গেল মেহু। বিছানায় বসিয়ে দিল। নির্ঝর দৌড়াতে দৌড়াতে এসে দেখে মেহু অর্ণবের হাত দুটো ধরে হু হু করে কাঁদছে। ছোট অর্ণব ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে দেখছে। বুঝতেই পারছে না কিছু। মনে হয় এখন'ই কেঁদে দেবে। নির্ঝরের চোঁখের কোনো অশ্রু জমল। মেহেরিন কে এভাবে কাঁদতে দেখে খুব কষ্ট হচ্ছে তার। কেন কাঁদছে, কি কারণে কাঁদছে কিছুই জানে না সে। হেঁটে এসে দাঁড়াল মেহেরিন'র কাছে। নির্ঝর কে দেখে অর্ণব বলে উঠল,

"ড্যাডি! 

মেহেরিন'র বোধ হলো। দ্রুত চোখের জল মুছে উঠে দাঁড়াল। কিছু না বলেই দ্রুত চলে গেল। নির্ঝর বসে অর্ণবের কপালে চুমু খেয়ে বলল,

"মাম্মির কিছু হয় নি, শুধু একটা দুঃস্বপ্ন দেখেছে বুঝলে অর্ণব! 

অর্ণব মাথা নেড়ে না না করল। দুঃস্বপ্ন কি তা সে জানে না। অর্ণব তাকে কোলে বসিয়ে বলল,

"কিছু না, যখন তুমি বড় হবে তখন জানবে। কিন্তু একটা কথা মনে রাখবে মাম্মি কে কখনো ক/ষ্ট দেবে না। মাম্মি অনেক ভালোবাসে তোমায় বুঝলে তুমি। 

অর্ণব মাথা নেড়ে সম্মতি জানাল। চুমু খেল নির্ঝরের গালে। দৌড়ে গেল মেহেরিন'র কাছে। 

মেহেরিন আর অর্ণব আজ একসাথে ঘুমিয়েছে। নির্ঝর আজ আলাদা ঘরেই ঘুমাতে গেছে। কিন্তু কিছুতেই তার ঘুম এলো না। সে এসে হাজির হলো মেহুর ঘরে। অর্ণব কে জড়িয়ে ঘুমিয়ে আছে সে। তার ঘুম খুব গভীর। নির্ঝর অনেক কাছে এগিয়ে মেহু কে দেখল। তার স্নিগ্ধ মুখখানা দেখে ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটল তবে হাসির প্রয়াস বেশিক্ষণ রইল না। মেহেরিন'র কান্না মাখা মুখটার কথা মনে করতেই মুখট মলিন হয়ে গেল তার। বিছানায় পাশে মেঝেতে বসে পড়ল সে‌। মেহেরিন'র দিকে তাকিয়ে বলল,

"আমি সত্যি জানি না কি নিয়ে তুমি এতো ভয় পেয়েছ মেহু। কিন্তু কথা দিচ্ছি সেটা যাই'ই হোক না কেন আমি তোমার পাশে থাকবো। 

--- 

নিরব কে গতকালের ঘটনা জিজ্ঞেস করতেই নিরব মুখ ফিরিয়ে নিল। বলল, কিছু হয় নি। নির্ঝর রেগে গেল। আবারো জিজ্ঞেস করল। নিরব বলে উঠল,

"কিছু হয় নি বললাম তো আমি। 

"কিছু না হলে মেহু অবশ্যই এভাবে কাঁদতো না। 

নিরব মুখ ফিরিয়ে নিল। নির্ঝর বেশ বুঝতে পারছে কিছু একটা হয়েছে। নিরবের সামনে দাঁড়িয়ে শক্ত মুখে বলে উঠল,

"ভালো মতো জিজ্ঞেস করছি বলো।

"না বললে কি করবে তুমি, আমি বাধ্য নই তোমাকে কিছু বলার জন্য! 

বলেই পাশ কাটিয়ে চলে যেতে নিল। নির্ঝর রেগে তার জামার কলার চেপে ধরল। দাঁতে দাঁত চেপে বলল,

"খুব বেশি বেড়ে যাচ্ছো, দূরে থাকো আমার মেহু থেকে! 

নিরব মুখ সরিয়ে বলল,
"মেহু তোমার না! 

নির্ঝর চোয়াল শক্ত করে নিল। উঠে ঘু/ষি মারল তার মুখে। নিরব ছিটকে দূরে এসে পড়ল। নিরব বলে উঠল,

"নির্ঝর পা/গল হয়ে গেছো? 

নির্ঝর বলে উঠল,

"হ্যাঁ হয়ে গেছি। সাহস হয় কিভাবে, আমার মেহু কে জড়িয়ে ধরার। কেন জড়িয়ে ধরেছিলে তুমি মেহুকে! 

বলেই রাগে ফুসফুস করতে থাকল সে। পেছন থেকে মেহুর গলার আওয়াজ পেয়ে চমকে উঠলো নির্ঝর। মেহেরিন এসে নির্ঝরের মুখোমুখি দাঁড়াল। পিছনে দাঁড়িয়ে নিরব কে দেখল মেঝেতে পড়ে আছে। মেহেরিন কে দেখে চোখ নামিয়ে ফেলল সে। ভ্রু কুঁচকে নির্ঝর কে জিজ্ঞেস করল,

"আপনি নিরব কে মে/রেছেন নির্ঝর! 

নির্ঝর দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,
"হুম! 

মেহেরিন শব্দ করে শ্বাস ফেলল। নির্ঝরের থেকে চোখ সরিয়ে নিরবের কাছে গেল। নিরব কে উঠালো নিচ থেকে। নির্ঝর অনেকটা জোরেই মেরেছে। বেচারা গাল ফুলে গেছে।মেহেরিন একজন স্টাফ কে ডেকে পাঠাল আইস ব্যাগ আনার জন্য। অতঃপর এসে নির্ঝরের সামনে দাঁড়িয়ে বলল,

"আমি জিজ্ঞেস করতে পারি আপনি এমনটা কেন করছেন?

নির্ঝর চোখ সরিয়ে নিল। দুই হাত প্যান্টের প্যাকেটে ঢুকিয়ে চোয়ার শক্ত করে নিল। মেহেরিন বলে উঠল,

"নির্ঝর আমি জিজ্ঞেস করছি কিছু! 

নির্ঝর এবারও চুপ! মেহেরিন এবার নির্ঝরের সামনে এসে দাঁড়াল। বলে উঠল,

"আমি বলছি কেন? কারণ গতকাল ও আমাকে আগলে রেখেছিল তাই তো! কেন সমস্যা কি আপনার, আমার বন্ধু আমাকে আগলে না রাখলে আর কে রাখবে। 

নির্ঝর চোখ মুখ শক্ত করে তাকিয়ে রইল। রাগে তার শরীর জ্বলে যাচ্ছে। মেহেরিন তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করছে তার উপর। নির্ঝর সেই চোখে ঘৃণাও দেখতে পাচ্ছে। শব্দ করে শ্বাস ফেলল সে। বলে উঠল,

"হ্যাঁ এ কারণেই মেরেছি, কেন জড়িয়ে ধরবে ও তোমায় কেন? 

"কারণ ও আমার বন্ধু, আমার চিন্তা করে কেয়ার করে আমার, তাই! 

"ওহ আচ্ছা! 

"নির্ঝর সরি বলুন ওকে।

"সরি মাই ফুট! 

"নির্ঝর! 

"সরি বলবো না ওকে, যা ইচ্ছে করে নাও।

মেহেরিন কপালে হাত রাখল। কি করবে কিছুই বুঝতে পারছে না সে। শুধু বলে উঠল,

"একটা কথা মনে রাখবেন এসব কিছু করলেই আপনি আমাকে পাবেন না।‌ আমি যখন একবার বলেছি আপনাকে ভালোবাসি না তো বাসি না। এটাকে হ্যাঁ করতে পারবেন না আপনি। তাই শুধু শুধু এসব সিন ক্রিয়েট করে কোন লাভ হবে না। মনে রাখবেন! 

নির্ঝর কিছু বলার জন্য মুখ খুলতেই স্টাফ এসে হাজির হলো। মেহেরিন তার থেকে আইস ব্যাগ টা নিয়ে নিরবের গালে ধরল। নির্ঝর দাঁতে দাঁত চেপে তাকিয়ে রইল।‌ "সরি" শব্দ টা বলেই প্রস্থান করল সে! মেহেরিন দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,

"সরি ইয়ার! 

"ইট'স ওকে, আইম ফাইন! কিন্তু মেহু।

"কি?

"নির্ঝর তোকে ভালোবাসে!

মেহেরিন উঠে দাঁড়াল। ফার্স্ট এইড বক্স নিয়ে এলো। 
শীতল গলায় বলল,
"এটা ওর ভালোবাসা না ওর ভ্রম যা সময়ের সাথে সাথে এক সময় চলে যাবে।

"আর তুই! তুই ভালোবাসিস ওকে! 

মেহেরিন ঔষধ বের করল। নিরবের গালে তা লাগিয়ে দিয়ে বলল,
"না! ভালোবাসা আর আমার পক্ষে সম্ভব না! 

বলেই মুচকি হাসল সে। নিরব ও কিঞ্চিত হাসল। মনের মাঝে বলল,

"তুই শুধু আমার ভালোবাসা!

মেহেরিন ভ্রু নাচিয়ে জিজ্ঞেস করল নিরব মাথা নাড়িয়ে বলল কিছু না। শুধু এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল মেহেরিন'র দিকে! 

নির্ঝর হন হন নিজের কেবিনে আসল। অর্ণব তার টেবিলের উপরে বসে চকলেট খাচ্ছে। ধপাস করে এসে চেয়ারে বসে পড়ল নির্ঝর। নির্ঝর কে রেগে থাকতে দেখে "ড্যাডি" ডেকে চকলেট বাড়িয়ে দিল। নির্ঝর হেসে সেই চকলেট'এ কামড় বসাল। অর্ণব কে কোলে বসিয়ে বলল,

"তোমার মাম্মির সাথে ঝগড়া করার পর তোমার কাছে আসা লাগবে। তাহলেই আমার মন ভালো হয়ে যাবে বুঝলে অর্ণব সোনা। নাও এবার একটু হেসে দাও! 

অর্ণব একগাল হেসে বলল,
"মাম্মি! 

নির্ঝর মাথা নেড়ে বলল,
"হ্যাঁ তোমার মাম্মি, ধানি লঙ্কা! বুঝলে.. 

---- 

গাড়িতে বসে আছে নির্ঝর, তার পাশের সিটে অর্ণব। দু'জনেই অপেক্ষা করছে মেহেরিনের। মেহেরিন বাইরে দাঁড়িয়ে নিরবের সাথে কথা বলছে। তার গালে আবার হাতও দিচ্ছে। নির্ঝর তা দেখে দাঁতে দাঁত বিস্ফোরিত চোখে তাকিয়ে রইল। অর্ণব গাড়ির জানালা দিয়ে ডাক দিল,

"মাম্মি! 

মেহেরিন নিরব কে খেয়াল রাখতে বলে গাড়ির কাছে এগিয়ে গেল। হুট করেই নিরবের ফোনে একটা মেসেজ এলো। মেহেরিন গাড়ির কাছে এগিয়ে যেতেই নিরব তাকে পেছন থেকে ডাক দিল। নির্ঝর রেগে হাত মুঠো করে নিল। অর্ণব কপালে হাত দিল। কিছুক্ষণ পর গাড়ির কাছে এসে মেহেরিন বলল,

"নির্ঝর একটু সমস্যা হয়েছে, আগামীকালের মিটিং নিয়ে কিছুটা ঘোরপাক খেয়ে গেছে। 

নির্ঝর হেসে বলল,
"ঠিক আছে আমি অর্ণব কে নিয়ে চলে যাচ্ছি তাহলে..

"না, আপনি একা যান। অর্ণব কে রেখে যান, ডঃ রাহেলা'র সাথে আজ দেখা করার কথা আছে। অর্ণব কে সাথে করে নিয়ে যাবো। আপনি বরং একাই চলে যান আমাদের ফিরতে লেট হবে। 

বলেই গাড়ির ভিতর থেকে অর্ণব কে বের করে আনল। অর্ণব নির্ঝরের দিকে তাকিয়ে মুখটা মলিন করে বের হয়ে এলো। নিরব মেহু আর অর্ণব কে সাথে নিয়ে আবারো অফিসে ঢুকল। নির্ঝর তা দেখে রেগে অস্থির। জন কে গাড়ি ক্লাবের কাছে নিয়ে যেতে বলল! 

----

"নির্ঝর তুই শুধু শুধু রেগে যাচ্ছিস, এবার বন্ধ কর! 

ঈশানের কথায় নির্ঝর রেগে তার বিয়ারের বোতল ছুঁড়ে মা/রল‌ তার দিকে। একটুর জন্য বেঁচে গেছে সে। দেওয়ালে বাড়ি খেয়ে বিয়ারের বোতলটা টু/করো টু/করো হয়ে নিচে পড়ে গেল। নির্ঝর নিজেও পড়ে যেতে নিল। ফরহাদ এসে তাকে সামলে নিল। নির্ঝর তাকে ঝাড়া দিয়ে ছাড়িয়ে নিয়ে দাঁড়াবার চেষ্টা করল। কিন্তু কিছুতেই তা সম্ভব না। অতিরিক্ত ড্রিংক করে ফেলেছে সে। হেলেদুলে চলছে। ফরহাদ তার সামনে থাকা সত্বেও তার পাশে হাতে আঙুল দিয়ে বলছে,

"ধরবি না আমায়! 

ফরহাদ নির্ঝরের হাত ঘুরিয়ে বলল,
"আমি এখানে!

"ওহ সরি, ধরবি.. 
কথা শেষ না করেই হুট করে নিচে বসে পড়ল নির্ঝর। বলে উঠল,
"তোরা জানিস, মেহু আমাকে দিয়ে ওই নিলব কে সরি বলিয়েছে। আমাকে দিয়ে, ভেবে দেখেছিস! আরো অনেক কথা শুনিয়েছে, কিভাবে পারল ও এমনটা করতে! বল তোরাই বল! 

আরিফ বলে উঠল,
"নির্ঝরের মাথা গেছে, পুরো পা/গল হয়ে গেছে ও! 

নির্ঝর রেগে উঠে দাঁড়াবার চেষ্টা করল। কিন্তু আবারো পড়ে যেতে নিল। ফরহাদ তাকে ধরল। নির্ঝর চিৎকার করে বলল,

"ওই ব্যাডা, তুই পা/গল, তোর গুষ্টি পা/গল। আমাকে পা/গল বলছিস কেন তুই! 

ঈশান মিনমিনিয়ে বলল,
"আমি আর কিছু বলছি না! 

আরিফ ওর দিকে তাকিয়ে আফসোসে মাথা নাড়ল। ফরহাদ নির্ঝর কে টেনে বলল,

"আচ্ছা আমিও পা/গল ভাই। এখন চল! 

"ছাড় আমায়, বলছি আমি যাবো না। আজ আমি কোথাও যাবো না।

বলেই হাত ছাড়িয়ে নিল। ফরহাদ, আরিফ ঈশান ওরা তিনজন কোন কিছু করেই তাকে বের করে আনতে পারল না। নির্ঝর আবারো বিয়ারের বোতল হাতে নিয়েছে। আরিফ ফরহাদ কে ডেকে বলল,

"বাইরে আয় শোন! 

অতঃপর তিনজন বাইরে এলো। ঈশান বলে উঠে,

"নির্ঝর আজ পুরোই গেছে!

আরিফ বলে উঠল,
"মেহেরিন কে কল করবো।

ফরহাদ বলে উঠে,
"পা/গল নাকি তুই, মেহেরিন যদি জানে মে/রে দেবে নির্ঝর কে। না না না মেহেরিন কে কিছু বলা যাবে না।

ঈশান বলে উঠল,
"তাহলে কি করবি?

ফরহাদ বলে উঠে,
"দেখছি, একটুপর আবার যাই। নির্ঝরের মাথা ঠান্ডা হোক তখন নিয়ে আসবো! 

নির্ঝর বিয়ারের বোতলে মুখ দিতেই সামনে এসে বসল দিশা। নির্ঝর ঝাপসা ঝাপসা চোখে তাকাল তার দিকে। দিশা হেসে বলে উঠল,

"হাই হ্যান্ডসাম! 

নির্ঝরের কাছে এটা মনে হলো এটা মেহু। সে ঝাপসা ঝাপসা চোখে দেখতে লাগল। দিশা এসে নির্ঝরের গালে হাত রাখল। নির্ঝর মাথা দুলতে দুলতে বলল,

"মেহু! 

দিশা বাঁকা হাসল। বলে উঠল,
"এখানে একা একা কি করছো তুমি? 

নির্ঝর দিশার হাত সরিয়ে বলল,
"তোমার সাথে কথা নেই, ছাড়ো তুমি! 

"কেন? 

"কেন? তুমি জিজ্ঞেস করছো কেন? আজ কতো কথাআআ শোনালে তুমি আমায়।

"আচ্ছা সরি! 

নির্ঝর মুখ ঘুরিয়ে নিল। দিশা ওর দিকে তাকিয়ে বলল,

"সরি বললাম তো! 

নির্ঝর মাথা নেড়ে বলল,
"না না! 

দিশা বলে উঠল,
"ঠিক আছে, বলো না কথা! 

বলেই উঠে পড়ল। নির্ঝর তার সাথে উঠে দাঁড়িয়ে বলল,
"মেহু, কোথায় যাচ্ছো? 

দিশা বাঁকা হেসে হাঁটতে লাগলো। নির্ঝর উঠে তার পিছে পিছে যেতে লাগল। 

দিশা'র কাজ'ই হচ্ছে বড় লোকের ছেলেদের ফাঁসিয়ে টাকা উপার্জন করা। নির্ঝরের উপর তার নজর ছিল কিন্তু কখনো সুযোগ করে উঠতে পারে নি। আজ যখন নির্ঝর তার মাঝে মেহেরিন কে দেখছে এই সুযোগ হাত ছাড়া করবে না। নির্ঝর কে আজ ফাসাবে। তাই তাকে নিজের পিছু পিছু নিয়ে আসতে লাগল। একটা ঘরের কাছে নিয়ে এলো তাকে। নির্ঝর এর মাঝেই দিশার হাত ধরে দরজার সাথে ঠেকাল। বলে উঠল,

"আমাকে ছেড়ে কোথায় যাচ্ছ তুমি মেহু?

"কোথায় না, এই তো এখানেই আছি আমি নির্ঝর! 

নির্ঝর কথা বলতে বলতে হেলেদুলে পড়ে যেতে নিল। দিশা তার হাত দুটো নিজের কোমরে ধরাল। নির্ঝরের গলায় নিজের হাত জড়িয়ে বলল,

"বলো কি চাও তুমি? 

নির্ঝর নেশালো চোখে তাকিয়ে রইল। হাত দিয়ে স্পর্শ করল দিশার গাল টা। দিশা চোখ বন্ধ করে নিল। নির্ঝর অনেকটা কাছে এগিয়ে এলো দিশার। দিশার গালের হাত রেখে ঠোঁট এগিয়ে নিল সে। কিন্তু দিশার ঠোঁট জোড়া দেখে থমকে গেল‌ সে। ভ্রু কুঁচকে নিল। হাত দিয়ে স্পর্শ করল ঠোঁট দুটো কে। বলে উঠল,

"এটা তুমি নও! এই ঠোঁট তোমার না।

দিশা চোখ মেলে তাকাল। নির্ঝর তার থেকে সরে আসল। বলে উঠল,

"তুমি মেহু নও! 

"নির্ঝর! নির্ঝর আমি মেহেরিন। তোমার মেহু! 
বলেই নির্ঝরের দিকে হাত বাড়িয়ে দিল। নির্ঝর দিশার হাত এক ঝটকায় সরিয়ে দিল। বলে উঠল,

"তুমি মেহু নও, আমার মেহু নও তুমি! 

বলতে বলতে হেলেদুলে চলে আসতে নিল। এদিকে ফরহাদ ওরা সবাই নির্ঝর কে খুঁজে অস্থির। অবশেষে তাকে হেলেদুলে আসতে দেখে তাকে গিয়ে ধরল সবাই। নির্ঝরের মুখে তখন একটা কথাই শুনতে পেল,

"তুমি আমার মেহু নও, আমার মেহু নও তুমি! 

ফরহাদ নির্ঝরের হাত নিজের কাঁধে নিয়ে বলল,
"হ্যাঁ হ্যাঁ তোর মেহুর কাছেই নিয়ে যাচ্ছি চল!

এদিকে দিশা পেছন পেছন এসে দেখে ফরহাদ ওরা নির্ঝর কে নিয়ে যাচ্ছে। রেগে ঠোঁট কামড়ে ধরলে সে। আবারো সুযোই চলে গেল তার। কিন্তু এতো সহজে হার মানবে না সে। 

---

মেহেরিন'র সামনে হেলছে নির্ঝর! এতোক্ষণ নির্ঝরের জন্য'ই অপেক্ষা করছিল। ঘড়িতে ১.৩০ টা বাজে। নির্ঝর কে দরজার কাছ থেকেই মেহেরিন'র কাছে দিয়ে ভেগেছে ওরা। নাহলে মেহু তাদের একজন কেও ছাড়তো না। এদিকে নির্ঝরের অপেক্ষা করতে করতে তার ঘরেই ঘুমিয়ে পড়েছে অর্ণব। ঘুমায় নি শুধু মেহেরিন। একমাত্র নির্ঝরের অপেক্ষাই করছিল সে। এখন সে তার সামনে দাঁড়ানো। দুই হাত বাহুতে গুঁজে ভ্রু কুঁচকে মেহু জিজ্ঞেস করল,

"ড্রিংক করেছেন আপনি! 

নির্ঝর মাথা নেড়ে বলল,
"না! 

"তাহলে দুলছেন কেন? সোজা হয়ে দাড়ান! 

নির্ঝর বলে উঠল,
"আমি দুলছি না বাড়ি দুলছে, ( মেহেরিন'র দিকে আঙুল উঠিয়ে বলল ) তুমি দুলছো! 

মেহেরিন মুখ খুলে শ্বাস নিয়ে বলল,
"কেন করছেন ড্রিংক!

"বলবো না, তার আগে তুমি বলো। কেন ওই নিলবের সামনে আমাকে কথা শুনিয়েছ?

মেহেরিন ভেবে নিল নির্ঝরের সাথে কথা বলে কোন লাভ নেই। নির্ঝরের হাত ধরে বলল,

"নিন এখানে ঘুমান! 

হাত ছাড়িয়ে বলল,
"না, ঘুমাবো না।

"তাহলে কি করবেন নাচবেন!

"না! তোমাকে ভালোবাসবো! 
বলেই মেহেরিন কে জড়িয়ে ধরল সে। মেহেরিন ছোটার জন্য ছটফট করতে লাগলো। কিন্তু কোন কাজ'ই হলো না। নির্ঝর খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আছে তাকে। মেহেরিন বলে উঠল,

"নির্ঝর ছাড়ুন আমায়! 

নির্ঝর মাথা নেড়ে বলল,
"না! 

"রেগে যাচ্ছি কিন্তু আমি! 

নির্ঝর মেহেরিন'র দিকে তাকিয়ে বলল,
"সত্যি! 

মেহেরিন দাঁতে দাঁত চেপে তাকিয়ে রইল। নির্ঝর হেসে বলল,
"ঠিক আছে, আমি রাগ পানি করে দিচ্ছি! 

বলেই চুমু খেল মেহেরিন'র গালে। মেহেরিন থমকে গেল। তার কথার আওয়াজ হারিয়ে গেল। এদিকে নির্ঝর এখনো জড়িয়ে ধরে আছে। মেহেরিন বলে উঠল,,

"নির..

"তুমি জানো মেহু, আমি তোমাকে কতো ভালোবাসি কিন্তু ওই নিলব আছে না। বিরিয়ানির আলাচি সবসময় তোমাকে আমার কাছ থেকে নিয়ে যায়। আচ্ছা মেহু তুমি বুঝো না আমি কততততততোটা ভালোবাসি তোমায়, বলো বুঝো না।

মেহেরিন ঢোক গিলল। বলে উঠল,
"নির্ঝর ছাড়ুন আমায়! 

"মেহু! 

"নির্ঝর ছাড়ুন! ( উচ্চস্বরে)

নির্ঝর চমকে উঠে ছেড়ে দিল। বলে উঠল,
"ছেড়ে দিয়েছি, আমি ছেড়ে দিয়েছি‌। তুমি রেগে যেও না ঠিক আছে! 

মেহেরিন বেশ বিরক্ত। বলে উঠল,
"ঘুমিয়ে পড়ুন। 

বলেই তার পাশ দিয়ে যেতে নিল। হুট করে নির্ঝর মেহুর হাত ধরে ফেলল। বলল,
"আমি তোমার সাথে ঘুমাবো।

"নির্ঝর! 

মেহেরিন'র কথা শোনার আগেই তাকে জড়িয়ে ধরে ধপাস করে বিছানায় পড়ে গেল নির্ঝর! মেহেরিন থতবত খেয়ে গেল। নির্ঝরের মুখ তার কানের কাছে। একই কথা সে বার বার বলে যাচ্ছে,

"তোমাকে ভালোবাসি আমি মেহু, অনেক ভালোবাসি, ভালোবাসি... 

মেহেরিন চোখ বন্ধ করে নিল। নির্ঝরের গরম নিঃশ্বাস পড়ছে তার ঘাড়ে আর কানে বাজছে তার আওয়াজ। ফিসফিসিয়ে বলে যাচ্ছে ভালোবাসার কথা সে। উপেক্ষা করতে পারছে না সে এসব! 

#চলবে....
[+] 1 user Likes Manjarul Haque's post
Like Reply
#50
Next update Kobe diben vai
Like Reply
#51
#অনুভূতিতে_তুমি ?
#মিমি_মুসকান ( লেখনিতে)
#পর্ব_৩৭
Like Reply
#52
#অনুভূতিতে_তুমি ?
#মিমি_মুসকান ( লেখনিতে)
#পর্ব_৩৭


মেহুর স্নিগ্ধ হাসির দিকে তাকিয়ে আছে নির্ঝর! তার হরিণী'র চোখে প্রেমে পড়ছে বার বার। অপলক দৃষ্টিতে সেই চোখের দিকে তাকিয়ে আছে। চোখের ভাষা পড়ার অযথা চেষ্টা করছে। নির্ঝর হাত বাড়িয়ে তার মাথায় হাত বুলাল। চুল গুলো এলোমেলো হয়ে গেল। নির্ঝর হেসে তার কানের কাছে চুল গুলো গুঁজে দিল। চুমু খেল বদ্ধ চোখে। ললাটে উষ্ণ ঠোঁটের ছোঁয়া দিতেই ধপাস করে বিছানা থেকে পড়ে গেল সে। চমকে উঠে বসল, কি হয়েছে তা বুঝতেই খানিকক্ষণ সময় লাগল তার। পাশে মেহুর পরিবর্তে কোলবালিশ কে কোলে তুলে নিল। মাথায় হাত দিয়ে ঠোঁট কামড়ে ধরল লজ্জায়। মুখ লাল হয়ে গেল নির্ঝরের। বালিশ জড়িয়ে ধরে মেঝেতে'ই শুয়ে পড়ল চোখ বন্ধ করে। হুট করেই লাফিয়ে উঠল।

চারদিক তাকিয়ে ভাবতে লাগলো এখানে এলো কিভাবে,? দু'হাত মাথায় দিয়ে ধপাস করে নিচে বসে পড়ল। গতকালের কিছু কিছু কথা তার মনে পড়ছে। মেহু কে বলা সব কথাই মনে পড়ছে ধীরে। এতো কিছু কিভাবে বলল সে। একদম উচিত হয় নি এসব বলার। দাঁড়িয়ে পাইচারি করতে লাগলো।না জানি মেহু কতোটা রেগে আছে। আজ তো তার একদিন করেই ছাড়বে। নির্ঝর বিছানার দিকে তাকাল। বেশ মনে আছে মেহু কে নিয়েই...

না না মানে মেহু তো বিছানায় নেই, কোথায় গেল তাহলে। নির্ঝর মিটিমিটি পায়ে ঘর থেকে বের হলো। আজ মনে হচ্ছে সবার আগে সেই'ই ঘুম থেকে উঠেছে। রান্না ঘর থেকে টুকটাক শব্দ এলো কানে। এর মানে সে আগে উঠেনি। রান্না'র শব্দ মানে মিস মারিয়া চা বানাচ্ছে। সে মেহুর ঘরে ছিল এর মানে মেহু তার ঘরে!

ঢোক গিলে ঘরের দরজা খুলল। বিছানায় ঘুমিয়ে আছে মেহু! তার দেখে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল। হুট করেই কেউ তার শার্ট টেনে ধরল। নির্ঝর নিচে তাকিয়ে দেখল অর্ণব দাঁড়ানো। অর্ণব বলে উঠল,

"ড্যাডি!

নির্ঝর আতঙ্কিত চোখে তাকাল। মেহু নড়েচড়ে উঠল। নির্ঝর দ্রুত অর্ণব নিয়ে ঘর থেকে বের হয়ে গেল!

---

খাবার টেবিলে আর নিশ্চুপতা। মেহু কিছু বলছে না চুপচাপ খাবার খাচ্ছে আর অর্ণবকে খাইয়ে দিচ্ছে। নির্ঝর আতংকে আছে কখন যে মেহু কিছু বলে তাকে। কিন্তু মেহু কিছু না বলেই উঠে গেল। নির্ঝর অর্ণবের দিকে তাকাল।

ঘরে ঢুকল মেহু। পুরো ঘরের দিকে চোখ বুলাল সে। গতকালের ঘটনা তার সম্পূর্ণ মনে আছে। নির্ঝর তাকে জরিয়ে ধরে ঘুমিয়ে পড়েছিল। না একদম গভীর ঘুমে ছিল না সে। তার কন্ঠ দিয়ে শুধু একটা কথাই বাজছিল, আমি তোমাকে ভালোবাসি মেহু, খুব ভালোবাসি! তার গরম নিঃশ্বাস পড়ছিল মেহুর ঘাড়ে। নিজেকে খানিকক্ষণ'র জন্য অসহায় মনে হচ্ছিল তার।‌ অতঃপর নিজেকে শক্ত করে নিল। নির্ঝর সরাল! ছুটে দরজার বাইরে চলে এলো। তখনও নির্ঝরের কন্ঠের মেহু ডাক তার কানে এসে বাজল। মেহেরিন থমকে গেল। পেছনে ফিরে দেখল নির্ঝর বিছনায় মাতাল অবস্থায় পড়ে আছে। এভাবে তাকে ফেলে রেখে চলে যেতে পারল না সে। আবারো পিছুটান নিল। নির্ঝরের গায়ের স্যুট খুলে দিল। তাকে ঠিক করে বিছানায় শুইয়ে দিল। নির্ঝর তখন বলে উঠল,

"তোমাকে ভালোবাসি মেহু, আমি আগলে রাখবো তোমাকে, আমার অর্ণব কে। মেহু! আমার সহ্য হয় না তোমাকে অন্য কারো সাথে মেহু!

কথাটা মেহেরিন'র মনে গাধল। আহ কতোদিন এই মধুর শব্দ শুনি নি সে। এক দৃষ্টিতে তখন তাকিয়ে ছিল নির্ঝরের দিকে। মনের মাঝে প্রশ্ন জাগল"কি করছিস তুই মেহু? এই নাকি ভালোবাসিস তুই ফাহান কে। তোর মনে তাকে ছাড়া আর কাউকে জায়গা দিলেই বা কি ভাবে। তুই কি ভালোবেসে ফেলছিস নির্ঝর কে?

আবার হুট করেই মনে হলো অন্য কেউ বলছে, "ঠিক করছিস না মেহু, দুনিয়ার সব পুরুষ মানুষ'ই এক। একজন যখন তোকে ঠকাতে পেরেছে অন্যজন কি পারবে না। এক বার ভালোবেসে ঠকেছিস আবারো সেই ভুল করবি তুই! ভুলে গেলি অর্ণবের কথা!

মেহু হাত সরিয়ে নিল। বলে উঠল, "না এ কখনো হয় না"
অতঃপর হেঁটে চলে এলো নির্ঝরের ঘরে। অর্ণব চুপটি করে ঘুমিয়ে আছে এক কোনে। মেহেরিন তার পাশে এসে বসল। আঁকড়ে ধরল তাকে। আগে থেকেই ঠিক করে নিয়েছে এই একজন কেই আঁকড়ে ধরে বাঁচবে সে। এছাড়া আর কিছু হয় না!

----

আজ প্রায় তিন দিন হতে চলল, অথচ মেহেরিন নির্ঝর কে একটা প্রশ্ন অবদি করল না। ব্যাপারটা হজম হচ্ছে না তার। তার স্পষ্ট মনে আছে মেহু কে বলা কথা গুলো। এমনকি সিউর হবার জন্য ফরহাদ কে অবদি জিজ্ঞেস করেছে। ফরহাদ ও বলেছে খুব পাগলামি করেছে সেদিন। ঈশান তো বলল তাকে নাকি মেরে ফেলার চেষ্টা'ই করেছিল।

এতো বড় একটা ঘটনা কিন্তু মেহু তাকে একবার কিছু জিজ্ঞেস করল না এমনটা হতেই পারে না। কিছু না কিছুতো ব্যাপার আছেই। কি সেই ব্যাপার। মেহু ভালোবেসে ফেলল না তো আবার তাকে! কথাটা একবার মনে এলো আর নির্ঝর চেপে গেল। কারণ সেও জানে মেহু এতো সহজে মানবার পাত্র নয়। তাহলে কাহিনী কি?
নির্ঝর আর দাঁড়িয়ে রইল না, পা বাড়াল মেহুর কেবিনে। নিরব কে তার কেবিনে মাথা ধরে গেল তার। একগাদা বিরক্ত ভর করল তার মাথায়। তবুও বের হলো না। এসে বসল নিরবের পাশে। নিরব মেহেরিন কে কানাডার কোম্পানি নিয়ে কিছু বলছিল। নির্ঝর উঁকি দিয়ে তা দেখতে লাগল। মেহেরিন তার দিকে তাকাতেই সোজা হয়ে বসে ফোন বের করল।

পুরো ২০ মিনিট হয়ে গেল তবুও এই নিরব বের হওয়ায় নাম নিচ্ছে না। নির্ঝর দাঁতে দাঁত চেপে তার দিকে তাকাল। দেখল মেহু খুব সুন্দর করে হেসে হেসে নিরবের সাথে কথা বলছে। নির্ঝর সেই হাসির দিকে তাকিয়ে রইল।‌ বির বির করে বলল,

"আমার সাথে যখন কথা বলে তখন তো হাসে আর এখন কতো হাসছে !

বলেই মুখ ভেংচি কাটে। মেহেরিন আবার তাকায় তার দিকে। নির্ঝর দ্রুত চোখ নামিয়ে নিয়ে ফোনের দিকে নজর দেয়।‌ অবশেষে নিরব বের হলো কেবিন থেকে। মেহেরিন ল্যাবটপের দিকে নজর দিয়ে নির্ঝরকে উদ্দেশ্য করে বলল,

"কিছু বলবেন?

নির্ঝর উঠে দাঁড়াল। এসে ল্যাবটপ বন্ধ করে দিয়ে বলল,
"হ্যাঁ কথা আছে।

"বলুন!

মেহেরিন'র চেয়ারে হাত দিয়ে তার দিকে ঝুঁকে বলল,
"তুমি কেন আমাকে কিছু বলছো না!

"কোন ব্যাপারে বলুন তো?

"মেহু, দেখো রাগ জমিয়ে রেখো না।

"আমি রাগ করে নেই তো..

নির্ঝর বলতে নিল কিন্তু তৎক্ষণাৎ থমকে গেল। জিজ্ঞেস করল,
"কি বললে তুমি? তুমি রাগ করে নেই, এতো বড় ঘটনার পরও রাগ নেই তুমি!

মেহেরিন নির্ঝর কে সরিয়ে দিল দাঁড়িয়ে গেল। হাঁটতে হাঁটতে কেবিনের ওপাশে গেল। একটা ফাইল চেক করতে করতে বলল,

"হুম!

নির্ঝর এসে মেহেরিন'র সামনে দাঁড়াল! অবাক চোখে দেখছে তাকে। মেহেরিন ফাইল বন্ধ করে বলল,

"ব্যাপার কি বলুন তো, এভাবে কেন দেখছেন আমাকে!

নির্ঝর মুখ টিপে হাসতে লাগলো। মেহেরিন ভ্রু কুঁচকে বলল,

"আপনি লজ্জা কেন পাচ্ছেন, এমন কি ঘটল?

নির্ঝর মুখ খুলে শ্বাস নিল। বলল,
"তুমি জানতে চাও!

"মানে..

নির্ঝর মেহেরিন'র হাত ধরে হুট করেই দেওয়ালের সাথে ঠেকাল। মেহেরিন আতংকে উঠল। নির্ঝর দেওয়ালে এক হাত রেখে মেহেরিন'র কাছে আসল। মেহেরিন ভ্রু কুঁচকে নিল। নির্ঝর ঠোঁট কামড়ে হেসে বলল,

"তুমি এর মানে টা বুঝতে পারছো?

"কিসের মানে?

"তুমি আমার উপর রাগ করো নি!

"হ্যাঁ!

"এতো বড় ঘটনার পরও রাগ করো নি!

মেহুর কপালে ভাঁজ পড়ল। নির্ঝর হেসে বলতে নিল এর মাঝেই নিরব দরজা খুলে বলল,

"মেহু এই ফাইল..

থমকে গেল, তাকিয়ে রইল তাদের দিকে। নির্ঝর বিরক্ত আর রাগের চোটে দাঁতে দাঁত চেপে বলল,

"কথা বলছি, যা বলরা একটু পরে বলো!

নিরব অনিচ্ছা থাকা সত্ত্বেও হেসে দরজা বন্ধ করে দিল। নির্ঝর হালকা কেশে বলল,

"আমি জানি কোথায় ছিলাম?

"ওই একই জায়গায় আটকে আছেন।

"ওহ হ্যাঁ, মনে পড়েছে। তার মানে মেহু তুমি আমার প্রেমে পড়ে গেছো।

"কিহহ?

"হ্যাঁ, তা না হলে এতো বড় ব্যাপার নিয়ে আমাকে কিছু বললে না। এর মানে তো এটাই তাই না! আয়ি ঠিক ধরেছি বলো না। এবার একটু মুখেও বলো দাও ভালোবাসি!

মেহু হাসল। তার দেখাদেখি নির্ঝরও হাসল। মেহেরিন বলে উঠল,

"ভুল ভাবছেন,‌পাগল হয়ে গেছেন।

"হ্যাঁ তা তো তোমার প্রেমে পড়ে অনেক আগেই হয়ে গেছি।

"আসলেই, মাথার তার দু একটা ছিঁড়ে গেছে। নাহলে এতো আলতু ফালতু চিন্তা করেন কিভাবে? মিঃ নির্ঝর চৌধুরী এমন কিছু না যা আপনি ভাবছেন?

নির্ঝর চমকে বলে উঠে,
"মানে!

"মানে এটা আপনি একটা গর্দভ! ( একটু জোরেই বলল)

ওপাশ থেকে আড়িপাতা নিরব হেসে উঠল। মুখ টিপে হাসতে লাগল সে। মেহেরিন নির্ঝর কে বলল,

"শুনুন নির্ঝর, আমি সেই রাতের ঘটনা ভুলে যাই না তা না। শুধু গুরুত্ব দেই নি। কারণ আপনি ড্রিংক করে ছিলেন!

"তো, তুমি জানো ড্রিংক করলে মানুষ সত্যি কথা বলে!

মেহেরিন দাঁত বের করে হেসে বলে,
"না, ভুলভাল বলে। আর আমি তা ভুলভাল ভেবেই নিয়েছি আপনিও তাই করুন। আর যদি চান, সেদিনের রাতের ঘটনার ওপর রিয়েক্ট করি.. ( নির্ঝরের কাছে এসে, চোখে চোখ রেখে বলল ) ভয়ংকর বিপদে পড়বেন। তাই চেষ্টাও করবেন না। ( কানের কাছে চেঁচিয়ে বলল ) বের হন এখান থেকে!
নির্ঝর কেঁপে উঠল। দ্রুত বের হলো কেবিন থেকে। গলার টাই লুজ করে দেওয়ালে লাথি মারল। নিরব তখন ফাইল হাতে সামনে এসে দাঁড়াল। তাকে দেখে মুখ টিপে হাসল। নির্ঝর রেগে তার পাশ কাটিয়ে যেতে নিলে নিরব বলে উঠে,

"এতো সহজ না!

নির্ঝর থমকে গেল। নিরবের দিকে ফিরল। নিরব বলল,
"মেহু'র ভালোবাসা পাওয়া এতো সহজ না।

নির্ঝর কঠিন গলায় বলল,
"সেই কঠিন কেই আমি সহজ করে নেব। আর হ্যাঁ দরজায় আড়ি পাতা বন্ধ করো!

বলেই নির্ঝর হন হন করে চলে গেল। নিরব বিরক্ত কাটিয়ে কেবিনে প্রবেশ করল।

----

নিরব আজ রাতে খাবারের জন্য মেহেরিন, অর্ণব আর নির্ঝর কে ইনভাইট করেছে। নির্ঝর একগাদা বিরক্ত নিয়ে গাড়ি ড্রাইভ করছে। তার কোন সাধ ছিল না এখানে আসার। গাড়ির আয়নায় তাকিয়ে দেখল মেহেরিন বেশ খুশি। অর্ণব কে ধরে বসে আছে সে। অর্ণবের মুখটাও খুব গম্ভীর!

নির্ঝর গাড়ি থামাল নিরবের বাড়ির সামনে। নিরব বাড়িটা বেশ বড় না আবার বেশ ছোটও না। মাঝারি রকমের একটা বাড়ি। তার মা বাবা দুজনেই দেশের বাইরে থাকে তাই থাকতে বলতে নিরব একা। তবে এই বাড়িটা খুব সুন্দর করে সাজানো। বাগান আর ফুল গাছ দিয়ে বাড়িটা খুব ভালো করেই সাজানো। রাতের আঁধারেও চারদিক আলোকিত! ঠান্ডা বাতাস বয়ে যাচ্ছে। নির্ঝর আকাশের দিকে তাকাল। বৃষ্টির সময় এখন না তবুও কেন জানি মনে হচ্ছে বৃষ্টি হবে। লোকে বলে এই বৃষ্টি শীত নামাবে। তবে কি তাই'ই হবে। অতঃপর আবারো এসে পড়বে বৈশাখ! মুহুর্তে তার বুকে তীব্র ব্যাথা অনুভব হলো। মেহু কে হারিয়ে ফেলার সময় এসে পড়ছে। খুব দ্রুত মনে হচ্ছে সময় পেরিয়ে যাচ্ছে।

মেহেরিন অর্ণব কে নিয়ে বের হলো গাড়ি থেকে। বাড়ির দিকে তাকিয়ে অবাক সে। অর্ণবের মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,
"বাড়িটা খুব সুন্দর তাই না অর্ণব!

অর্ণবও মাথা নাড়ল! গাড়ির আওয়াজে সার্ভেন্ট বের হয়ে এলো। তাদের কে ভিতরে আসতে অনুরোধ করল। ভেতরে এসে তার সবাই অবাক। বাড়িটা বেশ সাজানো গোছানো ভেতর থেকে। বাড়ির ভেতর আসতেই স্নিগ্ধ এক ধরনের আভাস পাওয়া গেল। এই অনুভূতি টা দারুন।‌কেমন‌ যেনো মনটা শান্ত হয়ে গেল। অর্ণব এসে নির্ঝরের হাত ধরল। মেহেরিন দেখল নিরব রান্না ঘরে। মেহু কে দেখে হেসে বলল,

"ওয়েলকাম!

"থ্যাংকু, কিন্তু তুই কি করছিস!

"রাধছি তোদের জন্য, রান্না প্রায় শেষ তোরা বস!

নির্ঝর ভ্রু কুঁচকে তাকাল নিরবের দিকে। নিরব তাকেও বেসেও বসার জন্য অনুরোধ করল। মেহু না বসে হাঁটা ধরল রান্না ঘরের দিকে। নিরব কি রাঁধলো তা দেখছে সে। নিরব কে এবার কাছ থেকে দেখে ফিক করে হেসে দিল। নিরব ভ্রু কুচকালো।‌ মেহু হেসে বলল,

"তুই রাধছিস না অন্যকিছু, নিজের কি হাল করেছিস!

বলেই নিজের রুমাল বের করে কপাল মুছতে লাগল। কপালে খানিকটা মসলা লেগে ছিল। নির্ঝর দাঁতে দাঁত চেপে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করল। অর্ণব একবার মেহুর দিকে তাকাল, একবার নির্ঝরের দিকে। নিরব হাসল। মেহু বলে উঠল,

"তুই যেই সুইট, যে তোর বউ হবে না খুব ভাগ্যবতী হবে বুঝলি! তাই না নির্ঝর!

বলেই নির্ঝরের দিকে তাকাল। নির্ঝর হেসে মাথা নাড়ল।

নিরব হেসে বলল,
"আমি ভাগ্যবান হবো না!

মেহু নিরবের কপালে বাড়ি মেরে বলল,
"হ্যাঁ হ্যাঁ খুব সুন্দর আর কিউট বউ জুটবে তোর কপালে দেখিস।
নতুন নতুন রোমান্টিক গল্প পেতে ভিজিট করুন আমাদের ফেসবুক পেজ " নিঃস্বার্থ ভালোবাসা " এবং ফলো করে সাথেই থাকুন।
নিরব নির্ঝরের দিকে তাকিয়ে বলল,
"হুম তা তো জানি!

নির্ঝর দাঁতে দাঁত চেপে হজম করে নিল সব! খাবার টেবিলে বসে পড়েছে সবাই। নির্ঝরের পাশে অর্ণব, তার পাশে মেহেরিন। নিরব এতোক্ষণ সবাইকে খাবার সার্ভ করে নিজে এসে মেহুর পাশে বসল। অর্ণব আর নির্ঝর দুজনেই তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করল।

মেহু খাবার মুখে দিয়ে বললো,
"দারুন হয়েছে খেতে!

অতঃপর অর্ণবের মুখে খাবার দিলো। অর্ণব খাবার খেয়ে হেসে মাথা নাড়ল। নিরব হেসে বলল,

"ধন্যবাদ!

নির্ঝর খাবার মুখে দিয়ে বলল,
"হুম ঠিকঠাক'ই আছে!

নিরব ভ্র কুচকালো। মেহেরিন নির্ঝরের দিকে তাকিয়ে ইশারা করল।‌ হেসে বলল,

"খুব মজা হয়েছে রান্না!

নির্ঝর হেসে মাথা নাড়ল। রাগে'ই পেট ভরে গেছে তার। অর্ণব আর মেহেরিন খুশি মনে খাচ্ছে। আর নিরব! সে তো তাকিয়েই আছে মেহেরিন'র দিকে। নির্ঝর দাঁতে দাঁত চেপে শুধু দেখেই যাচ্ছে!

নিরব এগিয়ে এলো মেহেরিন, অর্ণব আর নির্ঝর কে বিদায় দেবার জন্য। বাড়ি থেকে বের হতে পাড়ায় নির্ঝর যেন হাফ ছেড়ে বাচঁল। মেহেরিন এখনো দাঁড়িয়ে প্রশংসা করে যাচ্ছে নিরবের। অর্ণব নিশ্চুপ দর্শকের মতো শুনে যাচ্ছে।
হঠাৎ নিরব একটু সিরিয়াস হয়ে নির্ঝরের দিকে তাকিয়ে মেহেরিন কে বলল,

"মেহু! তোর সাথে আমার কথা আছে।

"হুম বল!

"না আজ না! কাল বলবো, খুব ইম্পর্ট্যান্টে!

নির্ঝরের কপাল কুঁচকে গেল। নিরবের দিকে তাকিয়ে ভাবতে লাগল কি বলবে সে মেহু কে। মেহু অবাক কন্ঠে বলল,

"খুব ইম্পর্ট্যান্টে হলে বল এখানে, অসুবিধা নেই তো!

নিরব হেসে নির্ঝরের দিকে তাকিয়ে বলল,
"সব কিছুর একটা সময় থাকে আর আমার মতে সেই সময়টা কাল হবে। তুই আমাকে সময় দিতে পারবি না। শুধুমাত্র এক ঘণ্টার জন্য বেশি না! বিকেলে একটু সময় দিবি আমায়!

মেহেরিন হেসে বলল,
"আচ্ছা, ঠিক আছে। তাহলে কাল বিকালে দেখা হচ্ছে!

নিরব বলল,
"হুম!

নির্ঝর দাঁড়িয়ে ভাবতে লাগল,
"কাল অফ ডে! অফিসে পাবে না মেহু কে তাই বিকালে দেখা করতে চাইছে। কিন্তু কেন? কি এমন বলবে? কোন কথা বলার সময় হয় নি তার ? কি হবে কালকে? নিরব কি করবে?

হাজারো প্রশ্ন ঘুরছে মাথায়। নির্ঝর তাকিয়ে আছে নিরবের দিকে। নিরব তাকে চোখে ইশারা করছে কিন্তু কেন? বোধ হলো সবাই গাড়িতে বসে গেছে শুধু সে দাঁড়িয়ে আছে এখানে। মাথা ঝাঁকিয়ে গাড়ির দিকে রওনা দিল। পেছন ফিরে দেখল নিরব মুচকি হাসছে। নিরব কে মোটেও সুবিধার লাগছে না তার কাছে!
"আপনি কি ঠিক আছেন নির্ঝর!

সিটবেল্ট বেঁধে নির্ঝর বলল,
"হুম!

"না অনেকটা অন্যমনস্ক লাগল তাই!

নির্ঝর আয়নায় তাকিয়ে আছে মেহুর দিকে।

অর্ণব ডাকল,
"ড্যাডি!

নির্ঝর হেসে পেছন ফিরে বলল,
"একদম ঠিক আছি অর্ণব সোনা, এখন বাসায় যাওয়া যাক!

অর্ণব হেসে মাথা নাড়ল! বাসায় ফিরতে ফিরতে মাঝপথেই ঘুমিয়ে পড়ল অর্ণব। নির্ঝর গাড়ি থেকে নেমে তাকে কোলে নিল। মেহু বলল, সে নিবে! কিন্তু নির্ঝর হেসে বলল,"অসুবিধা নেই চলো!

মেহু হেসে তার পিছন পিছন যেতে লাগলো। অর্ণব কে বিছানায় শুইয়ে দিল নির্ঝর তার গায়ে চাদর টেনে মেহু কে বলল,

"তুমি ফ্রেস হয়ে নাও!

বলেই নিজের ঘরের দিকে পা বাড়াল। অর্ণবের প্রতি এই স্নেহ দেখে কিঞ্চিত হাসল মেহু!

নির্ঝর বেশ টেনশনে আছে। ফ্রেস হয়ে এসে আয়নায় সামনে দাঁড়াল। বুঝতে পারছে না আগামীকাল কি হতে চলেছে। ফোনটা হাতে নিয়ে ভাবল নিরব কেই জিজ্ঞেস করবে। কিন্তু নিরব তো তাকে কিছুই বলবে না। রেগে ফোনটা বিছানায় ফেলে দিল। বিরক্ত নিয়ে আয়নায় বসে পড়ল। নিরবের কথাটা সিরিয়াস ছিল। তার মানে নিশ্চিত সিরিয়াস কিছু বলতে চলেছে মেহু কে। কি বলবে, ভালোবাসি! আহহ না এটা তো ধরে পারে না। কিন্তু মেহু যদি হ্যাঁ বলে দেয়। নির্ঝর বুকে হাত রাখল। এখন যখন তখন হার্ট অ্যাটাক করবে সে। কিন্তু যদি এমন কিছু না হয় তখন। নির্ঝর মেঝেতে টান টান হয়ে শুয়ে পড়ল। অস্তিত্ব লাগছে আর তার সাথে অস্থিরও‌ ! কি করবে বুঝতে পারছে না। আচ্ছা মেহু কে জিজ্ঞেস করবো,পাগল হলাম নাকি। মেহু কি করে জানবে। যদি জানতো তবে কি নিরব বলতো আগামীকাল বলবে। না নির্ঝর এবার সত্যি পাগল হয়ে যাবে। আর ভাববে না এই নিয়ে। একা ঘুমাবে আজ। ভেবেই বিছানায় শুয়ে পড়ল।
চোখ বন্ধ করতেই নিরবের কথা মাথার মধ্যে ঘুরপাক খেতে লাগল। কি হবে কাল! না নির্ঝর আর পারবে না। উঠে বসল। ঘুম আসবে না আজ রাতে। ঘুম পালিয়ে গেছে তার। এক বালিতে হতাশা নিয়ে ঘর থেকে বের হলো। দেখল মেহু উপরের দিকে পা বাড়াচ্ছে। মানে ছাদের দিকে। এতো রাতে ছাদে!

নির্ঝর পা বাড়াল রান্না ঘরের দিকে। আজ রাত মেহুর সাথে গল্প করে কাটাবে। খুব সুন্দর করে এক কাপ কফি বানাল সে। দুই হাতে কফি মগ নিয়ে পা বাড়াল ছাদের দিকে।

ছাদের গ্রিলের পাশে দাঁড়িয়ে আকাশ দেখছে মেহেরিন। প্রকৃতি বলে দিচ্ছে বৃষ্টি হবে কিন্তু আবহাওয়া বলছে উল্টোটা। শীত শীত একটা ভাব এসে পড়ছে। শীত চলে এলো। এই সময়টা খুব ভালো লাগে তার। হুট করে ঠান্ডা বাতাস ছুঁয়ে গেল তাকে। মেহেরিন'র শরীর কাঁটা দিয়ে গেল। দুই হাত দিয়ে গুটিয়ে নিল শরীর‌। কিঞ্চিত হাসল। বলে উঠল,

"একা কাটানোর জন্য সময় টা দারুন!

পেছন থেকে নির্ঝর বলে উঠল,
"তাহলে তার মধ্যে আমি এক বালতি জল ফেলে দিলাম মনে হচ্ছে!

মেহু চট করেই পিছন ফিরল। নির্ঝর এক গাল হেসে বলল,
"কফি! ঠান্ডা পরিবেশে ভালো লাগবে!

মেহু হেসে হাত বাড়িয়ে নিল। বলে উঠল,
"থ্যাংকু!

নির্ঝর এসে তার পাশে দাঁড়াল। মেহু চুমুক দিল কফিতে। নির্ঝরের নজর তাতে। মেহেরিন বলে উঠল,

"খুব ডালো হয়েছে!

নির্ঝর লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করে ফেলল।‌মেহু হেসে বলল,

"আমি কোন কথা বললেই আপনি এত লজ্জা কেন পান!

"জানি না!

"আপনি আবারো লজ্জা পেলেন নির্ঝর!

নির্ঝর হেসে কফি মগে চুমুক দিয়ে বলল,
"ঘুমাবে না!

"না ঘুম আসছে না, তবে জানেন এই পরিবেশে কিন্তু ঘুম দারুন হয় অথচ আমার ঘুম আসছে না।

"আমারো একি অবস্থা!

মেহেরিন হেসে আকাশের দিকে তাকাল। অতঃপর কফি মগে চুমুক দিল। নির্ঝর মেহুর দিকে তাকিয়ে বলল,

"কতো মিল না তোমার আমার মাঝে!

মেহেরিন চোখ ফিরল নির্ঝরের দিকে। বলে উঠল,
"আমরা দুজন বিপরীত দুটি মানুষ নির্ঝর!

নির্ঝর মুচকি হাসল। নিঃশব্দে দুজনেই কফি মগ টা শেষ করল। মেহেরিন'র কাছে এখন ভালোই লাগছে। একবার ফিরল নির্ঝরের দিকে। নির্ঝর তাকিয়ে আছে এই অসীম আকাশের দিকে। নির্ঝরকে খারাপ লাগে না তার কাছে। তবু সে ভয় পায় নিজের ভাগ্য কে। আর যাই হোক ভাগ্য কে বিশ্বাস করা যায় না। থাকুক না এমন কিছু, যাকে ভালো লাগে সেই ভালো লাগা টা হয়েই থাকুক! ফাহানের কথাটা খুব মনে করছে, সে বলেছিল নির্ঝর নাকি আমার জন্য ঠিক।‌ সত্যি কি তাই!

নির্ঝর এখনো নিশ্চুপ। মেহু দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,
"নির্ঝর আমি যাচ্ছি। আপনিও গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ুন, অনেক রাত হয়ে গেছে।

বলেই পাশ কাটিয়ে চলে যেতে নিল। নির্ঝর তখন তার হাত ধরে বলল। মেহু অবাক হয়ে তাকাল হাতের দিকে। নির্ঝরের দিকে ফিরতেই নির্ঝর তার হাত ছেড়ে দিল। এসে দাঁড়াল তার সামনে। মেহু ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে। নির্ঝর ঢোক গিলল। কিছু বলার প্রয়াস তবু বলতে পারছে না। তবুও উষ্ণ গলায় বলল,

"মেহু আমি ভালোবাসি তোমায়!

মেহু অবাক হলো না। শুধু শব্দ করে শ্বাস ফেলে বলল,
"এরপর এটা নিয়ে আর কখনো কথা হবে না নির্ঝর!

বলেই চলে যেতে নিল। নির্ঝর পিছ থেকে বলে উঠলো,
"আমি তোমার অতীত জানি মেহু!

মেহেরিন থমকে গেল। কথাটা তার কানে এখনো বাজছে। তবুও হেসে পিছন ফিরে বলল,

"ততোটুকু আপনার জন্য যথেষ্ট কি?

নির্ঝর মেহেরিন'র দিকে ফিরল। নিজেকে মানসিক ভাবে শান্ত রাখছে। তার মন অস্থির। ইচ্ছে করছে না বলতে তবুও আজ বলবে সে।‌ হারাতে চায় না মেহু কে। বোঝাতে চায় খুব ভালোবাসে তাকে। নির্ঝর এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে মেহুর দিকে। এক পা এগিয়ে এলো সে। তার মুখ চোখ স্থির। যন্ত্রের মতো বলে উঠল,

"আমি জানি ফাহানের কথা!

মুহূর্তেই মুখটা মলিন হয়ে গেল তার। মেহু বিস্ফোরিত চোখে তাকিয়ে আছে নির্ঝরের দিকে। মনের কোনে পুড়নো ক্ষত যেন জেগে উঠল। কেঁপে উঠলো তার বুক। ঠোঁট জোড়া কেঁপে উঠল। তবুও স্থির চোখে তাকিয়ে রইল নির্ঝরের দিকে। অতঃপর...

#চলবে....
Like Reply




Users browsing this thread: 1 Guest(s)