Thread Rating:
  • 159 Vote(s) - 3.41 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
WRITER'S SPECIAL গোলকধাঁধায় গোগোল (সমাপ্ত)
(20-01-2023, 12:06 AM)nextpage Wrote: মন যখন অশান্ত হয়ে উঠে তখন তো ক্ষণে ক্ষণে সংশয় জাগবেই

হক কথা কইসো  clps
Like Reply
Do not mention / post any under age /rape content. If found Please use REPORT button.
[Image: Polish-20230116-172756509.jpg]

(১৫)

টগরকে পৌঁছে দিয়ে বাড়ি ফিরতে ফিরতে রাত প্রায় সাড়ে আটটা বেজে গেলো গোগোলের। এর মাঝে হিয়া দু'বার ফোন করেছে, সুজাতা একবার। একজনের ফোনও ধরেনি গোগোল, শুধু হিয়াকে হোয়াটসঅ্যাপে মেসেজ করে জানিয়ে দিয়েছে .. সে একটি বিশেষ কাজে বাইরে গেছে, বাড়িতে ফিরে এসে ফোন করবে। বাইকটা স্ট্যান্ড করে বাড়ির ভেতর ঢুকতে গিয়ে গোগোল লক্ষ্য করলো সদর দরজার একটা পাল্লা খুব সরু করে ফাঁক করা রয়েছে, ভেতর থেকে একটা ক্ষীণ আলোর রেখা বাইরে এসে পড়েছে।

দরজা ঠেলে ভিতরে ঢুকে সে দেখলো হাল ফ্যাশনের আসবাবপত্র দিয়ে তাদের নতুন করে সাজানো বৈঠকখানার ঘরে সুজাতার পাশে বড় সোফাটায় হিয়া আর তার মা কাবেরী দেবী বসে রয়েছে। একসময় তার হবু জামাই সন্দীপের হয়ে সুজাতার কাছে ওকালতি করা এবং সেটাকে প্রতিষ্ঠিত করার উদ্দেশ্যে বাগ-বিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়ার জন্য তার বান্ধবী সুজাতার কাছে পরে সবিনয় ক্ষমাও চেয়ে নিলেও, তার অতীতের জন্যই হোক বা অন্য কোনো কারণেই হোক, হিয়া আর তার সম্পর্কটা তিনি যে এখনো মন থেকে মেনে নিতে পারেননি .. এটা গোগোল ভালো করে জানে। তাই এই সময়ে হঠাৎ করে কাবেরী দেবীকে তাদের বাড়িতে দেখে কিছুটা হলেও অবাক হলো সে।

"কোথায় গেছিলে? ফিরতে এত দেরি হলো .." প্রথম প্রশ্নটা কাবেরী দেবীর তরফ থেকেই এলো।

সে নিজের বাড়িতে ঢুকছে, এমত অবস্থায় এই বাড়ির কর্ত্রী তার মামণি সুজাতার এই প্রশ্ন করার কথা। যেখানে সে নিঃশ্চুপ রয়েছে, সেখানে কাবেরী দেবীর এইরূপ প্রশ্নে যারপরনাই বিব্রত বোধ করে শান্ত অথচ গম্ভীর গলায় গোগোল বললো "একটু কাজ ছিলো .."

"কি কাজ? কোথায় গেছিলে? সেটাই তো জিজ্ঞাসা করছি .." এবার বেশ উচ্চকন্ঠে কথাগুলো বললেন কাবেরী দেবী।

ডাক্তার বসাকের শেষ কথাগুলো তখনও কানে বাজছিলো গোগোলের, তার সঙ্গে টগরের নিষ্পাপ করুন মুখটা বারবার মনে পড়ছিল তার। কিভাবে এই কঠিন পরিস্থিতি থেকে বের হবে সে, কিভাবে সুস্থ করে তুলবে টগরকে .. এইসব নিয়ে কঠিন মানসিক চাপের মধ্যে ছিলো সে। এমতাবস্থায় কাবেরী দেবীর কর্কশ উচ্চকণ্ঠের কথাগুলোয় ধৈর্যের বাঁধ ভাঙলো গোগোলের। কিছুটা পারদ চড়লো তার গলার স্বরেও "এ কি .. আপনি এভাবে কথা বলছেন কেন? আপনার মেয়েকে আমি মেসেজ করি জানিয়েছি - একটি বিশেষ কাজে আমাকে বাইরে যেতে হচ্ছে, বাড়িতে ফিরে এসে ফোন করবো। ওর কাছ থেকে জেনে নিন।"

"দ্যাখ .. দেখলি তো? তোর সামনে তোর মায়ের সঙ্গে এইভাবে কথা বলছে .. আর তুই এখনো চুপ করে থাকবি? ওকে কিচ্ছু বলবি না?" প্রচন্ড উত্তেজিত হয়ে হিয়ার উদ্দেশ্যে কথাগুলো বললেন কাবেরী দেবী।

এর উত্তরে গোগোল কিছু একটা বলতে যাচ্ছিলো, তাকে ইশারায় থামিয়ে দিয়ে হিয়া বললো "এটা ঠিক যে, ও তোমার সঙ্গে একটু উঁচু গলায় কথা বলেছে। তবে তার আগে ওর সাথে তোমার কথা বলার ভঙ্গি কিন্তু একদমই ঠিক ছিলো না .. সেটাও কিন্তু আমার চোখ এড়ায়নি মা। তাছাড়া যেখানে গোগোলের মামণি উপস্থিত আছে, সেখানে প্রথমে উনাকে কথা বলতে দেওয়াটাই যুক্তিযুক্ত ছিলো।" তারপর গোগোলের উদ্দেশ্যে বললো "হ্যাঁ, তোমার করা মেসেজ আমি দেখেছি। তা এখন তো বাড়িতে ফিরে এসেছো, এবার বলো, কোথায় গিয়েছিলে?"

- "সেই সকালে বাড়ি থেকে বেরিয়েছি, তারপর আমি এইমাত্র বাড়িতে ঢুকলাম হিয়া। বাইরে থেকে কেউ আসার সঙ্গে সঙ্গে তাকে এইভাবে জেরা করা কি ঠিক? একটু সময় দাও, আমি ফ্রেশ হয়ে এসে সব বলছি। তাছাড়া আমি একটা কথা বুঝতে পারছি না, তোমরা এসময় এখানে? না মানে, আমি কাবেরী আন্টির কথা বলতে চাইছি, উনি হঠাৎ এই সময়ে .."

- "কেন, আমার মায়ের এই বাড়িতে আসবার কোনো সময় বেঁধে দেওয়া আছে নাকি? তাছাড়া এটা তো কোনো অসময় নয়। এখন তো খুব বেশি রাত হয়ে যায়নি, সবে সাড়ে আটটা বেজেছে। তবে তোমার যদি অসুবিধা থাকে তাহলে বলো, মাকে আমি চলে যেতে বলছি, তার সঙ্গে আমিও চলে যাচ্ছি। কিন্তু যাওয়ার আগে ওই উত্তরটা যে আমার জানতে হবে। তুমি এতক্ষণ কোথায় ছিলে? এই ছোট্ট একটা কথা বলতে  তোমার এত সময় লাগছে কেন?"

গোগোল, হিয়া আর কাবেরীর পারস্পরিক কথোপকথনে পরিস্থিতি ক্রমশ উত্তপ্ত হয়ে উঠছে এটা বুঝতে পেরে এবার সুজাতা মুখ খুললো "আসলে বাইরে কত রকমের পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়, সেটা তো ঘরের মানুষ জানে না। তাই কেউ বাইরে থেকে আসার সঙ্গে সঙ্গে তাকে প্রশ্নবানে জর্জরিত করে ফেলতে নেই, এটা আমিই ওকে ছোটবেলায় শিখিয়েছিলাম। বাড়িতে কিছু ঘটনা ঘটে গেলে বা কোনো গুরুত্বপূর্ণ খবর দেওয়ার থাকলে আমি ওকে কোনোদিন বাড়িতে ঢোকার সাথে সাথে কিছু বলিনি। সেটাই অভ্যেস হয়ে গেছে গোগোলের। তাই বলছিলাম .. ও ফ্রেশ হয়ে আসুক, তারপর না হয় .."

"এতক্ষণ ও কোথায় ছিলো .. এটা বলার জন্য ফ্রেশ হয়ে আসতে হবে কেন? ও আচ্ছা বুঝেছি .. পুরো ব্যাপারটা যাতে সাজিয়ে গুছিয়ে বলা যায়, সেইজন্য .. তাই না?" কাবেরী দেবীর এই উক্তিতে যেন আগুনে ঘি পড়লো। প্রচন্ড উত্তেজিত হয়ে গোগোল বলে উঠলো "আপনি আমাকে পছন্দ করেন না জানি .. তার মানে এই নয় যে কারণে অকারণে আপনি আমাকে অপমান করবেন! আপনার সাহস হলো কি করে এই ধরনের কথা বলার? কবে, কোথায়, কখন সাজিয়ে গুছিয়ে মিথ্যা কথা বলেছি আপনাকে আমি? আমি আপনাকে আবার বলছি কাবেরী আন্টি .. ডোন্ট টক টু মি লাইক দ্যাট .. আমার মানসিক পরিস্থিতি খুব একটা ভালো নেই .."

"তুই এখনো চুপ করে থাকবি হিয়া? তোর মায়ের অপমান তুই এইভাবে মুখ বুজে সহ্য করবি?‌ আমি তো প্রথমেই বলেছিলাম এই ছেলে তোর জন্য ঠিক নয়। কিন্তু কি করা যাবে .. আমার পছন্দ করা ছেলে আমার মুখে চুন কালি দিয়ে চলে গেলো। তাই এখন তো আমার মুখ বন্ধ রাখতেই হবে, আমার তো কিছু বলার উপায় নেই। তার উপর মেয়ে বড় হয়ে গেছে, এখন ওর মতামতকে প্রাধান্য দিতে হবে।" অভিযোগের সুরে হিয়ার উদ্দেশ্যে কথাগুলো বললেন কাবেরী দেবী।

"তুমি একটু চুপ করো মা, এখন এই সমস্ত কথা বলোনা প্লিজ।" এই বলে তার মা'কে বিরত করে, গোগোলের দিকে তাকিয়ে হিয়া শান্তভাবে বললো "ঠিক আছে তুমি ফ্রেশ হয়ে এসো, তারপর না হয় বলো কোথায় গিয়েছিলে বিশেষ কাজে .."

আর যাই হোক, কাবেরী আন্টি তাদের বাড়ির অতিথি। তাই তিনি যাই বলুন না কেন, নিজের বাড়িতে দাঁড়িয়ে গোগোলের এইভাবে মাথা গরম করা উচিৎ হয়নি। গলার স্বর অনেকটা নরম করে হিয়াকে সে বললো "বলছিলাম, তোমরা কখন এসেছো? মামণি কিছু খাইয়েছে, নাকি শুকনো মুখে শুধু গল্পই হচ্ছে? বড় রাস্তার মোড়ের তারকদার দোকান থেকে চিকেন পকোড়া আর ফিসফ্রাই নিয়ে আসি .. খেতে খেতে গল্প করা যাবে, কেমন!"

"সে কি .. একটু আগেই তো বললে ফ্রেশ হতে ভিতরে যাবে, এখন আবার আমাদের জন্য খাবার আনতে বাইরে যেতে চাইছো। আমাদের সামনে দু-দন্ড দাঁড়াতেই পারছো না যেনো! তুমি হঠাৎ এত ব্যস্ত হয়ে পড়লে কেন? এর আগে তো এতো আতিথেয়তা কখনো দেখিনি! আরে আমি হলাম তোমার মামণির বান্ধবী, আমরা তোমাদের বাড়িতে আসবো আর আমার বান্ধবী আমাকে খাওয়াবে না, তা কি হয়? সুজাতা চা আর মিষ্টি দিয়েছে তো আমাদেরকে। ভালো কথা, তুমি একটু আগে বলছিলে যে তোমার মানসিক পরিস্থিতি ভালো নেই, কেন গো?" এবার
গোগোলের থেকেও গলার স্বর নরম করে কথাগুলো বললেন কাবেরী দেবী।

- "না মানে, সাইটে একটু প্রবলেম হচ্ছে। বুঝতেই পারছেন সরকারি কাজ তো! সবসময় যে মিউনিসিপ্যালিটি থেকে ঠিকঠাক পেমেন্ট আসে তা তো নয়, তাই লেবারদের নিয়ে একটু অসুবিধায় পড়েছি। এইসব নিয়েই নানারকম মানসিক অশান্তি .. সেটাই বলছিলাম।

- "তাই? আচ্ছা, সেই জন্যই ফিরতে এত দেরি হলো আজ?"

- "হ্যাঁ মানে, না মানে .. ঠিক সেইজন্য নয়। তবে কাজের সূত্রেই আমাকে একটু বাইরে যেতে হয়েছিলো। তাই আজ ফিরতে একটু .."

- "কোথায় গিয়েছিলে?"

- "কনস্ট্রাকশনের কিছু জিনিস অর্ডার দেওয়ার প্রয়োজন ছিলো। পেমেন্টের জন্য শহরে যেতে হয়েছিলো আমাকে। সেইজন্যই তো দেরি হলো।"

- "আচ্ছা? তাই? একাই গিয়েছিলে নাকি .. শহরে?"

এতক্ষণ ধরে চলতে থাকা গোগোল আর কাবেরী দেবীর কথোপকথনে তাল কাটলো কাবেরী দেবীর শেষ প্রশ্নে। গলাটা একটু ঝেড়ে নিয়ে আনতে আমতা করে গোগোল বললো "হ্যাঁ .. মানে অফিসিয়াল কাজ যখন, আমার একা যাওয়াটাই তো স্বাভাবিক .."

"মিথ্যে কথা, এতক্ষণ ধরে সাজিয়ে গুছিয়ে সম্পূর্ণ মিথ্যে কথা বলে চলেছো আমাদেরকে তুমি। তুমি মোটেও একা যাওনি, তোমার সঙ্গে আরও একজন ছিলো। হসপিটাল থেকে ফেরার পথে আমি তোমার বাইকের পিছনে টগরকে দেখেছি। আমি দেখলাম তুমি ওকে পেছনে বসিয়ে হাইওয়ের দিকে চলে গেলে, কিন্তু তোমরা কেউই আমাকে দেখতে পাওনি। আমি তোমাকে ঠিকই চিনেছিলাম। কিন্তু আমার দুর্ভাগ্য আমার মেয়েটা তোমার উপরের এই সৎ , ভালোমানুষ, প্রতিবাদী পুরুষের একটা মিথ্যে পর্দার আড়ালে যে একজন অসৎ , মিথ্যাবাদী , চরিত্রহীন পুরুষ লুকিয়ে আছে .. সেটা দেখতে পায়েনি। জানিনা আজ ওর বোধোদয় হবে কিনা .." চিৎকার করে কথাগুলো বলে উঠলেন কাবেরী দেবী।

হিয়া তার মায়ের কাছ থেকে সবকিছুই আগে শুনেছিলো। তবুও সে মনে মনে ভাবছিল তার মায়ের এই কথায় বোধহয় আবার একটা খণ্ডযুদ্ধ বেঁধে যাবে। তার লাটসাহেব তার মায়ের কথার প্রতিবাদ করে বলবে 'না না না এরকম কিচ্ছু হয়নি, কেউ আমার বাইকের পেছনে ছিলো না, আপনি ভুল দেখেছেন ..' এবং সেটাই সে বিশ্বাস করবে, কারণ এই পৃথিবীতে তার লাটসাহেবকে সে চোখ বন্ধ করে ভরসা করে। কিন্তু তাকে ভুল প্রমাণ করে গোগোল অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে দাঁড়িয়ে রইলো, অথচ তার মায়ের একটা কথার প্রতিবাদ করলো না।

★★★★

"লাটসাহেব .. কিছু বলছো না কেনো তুমি? চুপ করে আছো কেনো? দ্যাখো, এই কথাগুলো দুপুরবেলা বাড়িতে ফিরেই মা আমাকে বলেছিলো। কিন্তু মায়ের একটা কথাও আমি বিশ্বাস করিনি। আমার মা যাই দেখুক না কেনো, আমি শুধু তোমার মুখ থেকে শুনতে চাই সত্যিটা। শুধু আমি কেনো, মামণিও শুনতে চায় তোমার মুখ থেকে সবটা। তুমি আমার ফোন রিসিভ করোনি কেনো? তুমি মেসেজে লিখেছিলে বিশেষ কাজে তোমাকে বাইরে যেতে হয়েছে। সেই বিশেষ কাজটা কি লাটসাহেব? আমাকে বলবে না সত্যিটা? তোমার বাইকের পেছনে কি সত্যিই টগর বসেছিলো?" গোগোলের সামনে হাঁটু গেঁড়ে বসে অনুনয় করে কথাগুলো বললো হিয়া।

গোগোলের ইচ্ছা করছিলো এখনই চিৎকার করে সবাইকে সত্যিটা জানিয়ে দেয়। কিন্তু টগরের কাছে সে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ, তার শারীরিক অসুস্থতার কথা কাউকে এমনকি টগরের বাবা স্বপন বাবুকেও জানাতে পারবে না সে। এই মুহূর্তে তার ভিতর একটা পরস্পর বিরোধী সত্তা প্রবলভাবে কাজ করছিলো। কয়েক মুহূর্ত নিজের চোখদুটো বন্ধ করে স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে থাকার পর হিয়ার দুটো কাঁধ ধরে তাকে মাটি থেকে উঠিয়ে দাঁড় করিয়ে ঠিকরে বেরিয়ে আসতে চাওয়া নিজের অনুভূতিগুলোকে অবদমিত করে , "হ্যাঁ, টগর ছিলো আমার বাইকের পেছনে .." এইটুকুই শুধু বলতে পারলো গোগোল।

মুহূর্তের মধ্যে পাল্টে গেলো হিয়ার মুখমণ্ডলের অভিব্যক্তি। চোয়াল দুটো শক্ত করে ভারী গলায় জিজ্ঞাসা করলো "কোথায় গিয়েছিলে ওকে নিয়ে?"

"বললাম তো, কাজ ছিলো .." অত্যন্ত মৃদুস্বরে কথাগুলো বলে মাথা নিচু করে ফেললো গোগোল।

- "কাজ নয় বিশেষ কাজ .. এই কথাটাই লিখেছিলে তুমি আমাকে। অনেকক্ষণ ধরে কিন্তু আমরা সবাই মিলে তোমাকে একটা প্রশ্ন করে যাচ্ছি। এবার কিন্তু আমার ধৈর্যের বাঁধ ভাঙছে ধীরে ধীরে। কি কাজে সরি কি বিশেষ কাজে গিয়েছিলে তোমরা দু'জন?"

- "হিয়া, তুমিও আমার সঙ্গে এইভাবে কথা বলছো? তুমি আমাকে বিশ্বাস করো না? তুমি তো জানো, আমি কোনোদিন কোনো অন্যায় কাজ করিনি, ভবিষ্যতেও করবো না। আমাকে একটু সময় দাও আমি পরে সবকিছু বলবো তোমাদেরকে। কিন্তু এই মুহূর্তে আমি কোনো কথা বলতে পারছি না।"

"হিয়া .. ও কিন্তু তোকে আবারো ভুল বোঝানোর চেষ্টা করছে। ওর কোনো কথা আর বিশ্বাস করিস না। দ্যাখ, আমি তো তোর মা। তুই আমাকে যতই ভুল বুঝিস, আমি সবসময় তোর ভালো চাইবো। আমি বলছি এই ছেলেটা তোকে ঠকাচ্ছে। তুই একটা জিনিস লক্ষ্য করে দেখিস, ও একটার পর একটা মিথ্যে কথা বলে চলেছে। ও কিন্তু প্রথমে টগরের কথা স্বীকার করেনি। প্রথমে গোগোল বলেছিলো, ও নাকি অফিসিয়াল কাজে শহরে গেছে। তারপর আমি যখন চেপে ধরলাম তখন স্বীকার করলো। ওর যদি মনে পাপ না থাকবে, তাহলে টগরের কথা চেপে গেলো কেনো? তোকে মেসেজ করেই বা সেই কথা লিখতে পারলো না কেনো? তাছাড়া এখন বলছে পরে সব কথা নাকি ও বলবে। পরেই যদি বলতে পারে, তাহলে এখন এই মুহূর্তে বলতে আপত্তিটা কোথায়?" আগুনে ঘি ঢালার মতো পাশ থেকে কথাগুলো বললেন কাবেরী দেবী।

দুটি মানুষের মধ্যে সবচেয়ে ভয়ানক দুরত্ব হচ্ছে পরস্পরকে ভুল বোঝা। ভুল বোঝাবুঝির ছোট একটা মুহূর্ত অনেক সময় এতটাই ভয়াবহ হয়ে ওঠে, যা পরস্পরের একসাথে কাটানো অজস্র ভালোবাসার মুহূর্তকেও ভুলিয়ে দেয়। হিয়ার মনে এখন অজস্র অজানা প্রশ্নের সৃষ্টি হচ্ছে, অনেক অচেনা আশঙ্কার আবির্ভাব ঘটছে। গোগোলের দিকে তাকিয়ে অশ্রুসিক্ত কণ্ঠে সে বললো "তুমি আমাকে মিথ্যে বললে লাটসাহেব? আমাকে? কিন্তু কেনো? আমরা তো পরস্পরের কাছে কথা দিয়েছিলাম কেউ আমরা একে অপরের কাছ থেকে কোনোদিন কিচ্ছু লুকাবো না। তবে আজ কেনো তুমি এইভাবে চুপ করে রয়েছো। বলোনা প্লিজ .. কিছু তো বলো। আমি এখনো বিশ্বাস করি .. তুমি কোনো অন্যায় করতে পারো না, কোনো অন্যায় তুমি করোনি। হয়তো এমন কোনো কারণ আছে যেটা তুমি এখন বলতে পারছো না। ঠিক আছে, সবার সামনে তুমি না বলতে পারো, আমাকে আলাদা করে বলো!"

"না না, সবার সামনে বলতে না পারার কি আছে! তোমরা আমাকে ভুল বুঝবে, তাই বলতে চাইনি কথাটা। এখন তো ভুলই ভাবছো আমাকে। এটা সেরকম কোনো ব্যাপারই নয়। আসলে .. আসলে কি জানো তো, আমি শহরেই যাচ্ছিলাম। রাস্তায় হঠাৎ করে টগরের সঙ্গে দেখা হয়ে গেলো, ও বললো ওর একটা কাজ আছে স্টেশনের দিকে, আমি যদি ওকে একটু পৌঁছে দিই। আমি হাইওয়ের দিকে যাচ্ছিলাম, স্টেশনের তলা দিয়েই তো হাইওয়ের দিকে যেতে হয়। তাই ওকে নামিয়ে দিয়ে বেরিয়ে গিয়েছিলাম। দ্যাট'স অল আর কিছুই নয়। তোমরা এতক্ষণ শুধু শুধু আমাকে .." গলাটাকে যতটা সম্ভব স্বাভাবিক করে মুখে অনিচ্ছাকৃত একটা হাসি আনার চেষ্টা করে খুব কষ্ট করে কথাগুলো বললো গোগোল।

"আমি একটা কথাও বিশ্বাস করছি না ওর। এই কথাগুলো তো ও শুরুতেই বলে দিতে পারতো। তাহলে এত বাগবিতণ্ডার সৃষ্টি হতো না। এগুলো সম্পূর্ণ মিথ্যা কথা, এরমধ্যে নিশ্চয়ই অন্য কোনো ব্যাপার আছে।" আবার পাশ থেকে ফোড়ন কেটে কথাগুলো বললেন কাবেরী দেবী।

"আপনার যা খুশি আপনি ভেবে নিতে পারেন, তাতে আমার কিচ্ছু যায় আসেনা। আমার যা বলার আমি বলে দিয়েছি। আর এই নিয়ে একটা কথাও আমি বলবো না .." গম্ভীর গলায় জানিয়ে দিলো গোগোল।

"ঠিক আছে ঠিক আছে এখন সবাই চুপ করো, আমি কথা বলছি তো! টগরকে নিয়ে তুমি কোথায় গিয়েছিলে, কেনো গিয়েছিলে .. সেই সম্পর্কে আমি আর নতুন করে কিছু শুনতেও চাই না, জানতেও চাই না। তুমি যেটা বললে, সেটাই আমি সম্পূর্ণ বিশ্বাস করলাম .. কারণ আমি মনে করি আমাদের সম্পর্কের মধ্যে বিশ্বাসটাই আসল। কিন্তু .. কিন্তু আমার একটা শর্ত আছে। এরপর থেকে, তুমি একা কোনোদিন টগরদের বাড়ি যেতে পারবে না। যদি যেতেই হয় আমার সঙ্গে যাবে, না হলে নয়। আমি যদি কোনোদিন শুনতে পাই তুমি এই কথার অবাধ্য হয়েছো, তাহলে সেই দিনেই আমাদের সম্পর্ক চিরতরে শেষ হয়ে যাবে। বলো রাজি?" গোগোলের চোখে চোখ রেখে অত্যন্ত শান্তভাবে অথচ দৃঢ় কন্ঠে কথাগুলো বললো হিয়া।

সুন্দরী, মিষ্টিভাষী বছরে একুশের হিয়ার এইরকম ব্যক্তিত্বময়ী রূপ আগে কখনো দেখেনি গোগোল। হিয়ার চোখের দিকে তাকিয়ে সে কিছু একটা বলতে যাচ্ছিলো, তার আগেই সুজাতা বলে উঠলো "হ্যাঁ, আমিও হিয়ার সঙ্গে একমত। এই মেয়েটা যখন তার মায়ের বিরুদ্ধে গিয়ে, তোর কথাগুলোই বিশ্বাস করেছে বা করতে চাইছে। তখন তোরও সেই বিশ্বাসের মর্যাদা রাখা উচিৎ। আমিও চাই তুই আর টগরদের বাড়িতে কোনোদিন যাবি না। তাহলেই তো আমরা বুঝতে পারবো আজকে তোর বলা প্রত্যেকটি কথা সত্যি। আমাকে কথা দে গোগোল, তুই আর কোনোদিন ওদের বাড়ি যাবি না।"

যে তার মনের কথা সব থেকে বেশি বোঝে, তার না বলা কথাগুলোর মানে অনায়াসে বুঝতে পেরে যায় .. তার শেষ ভরসা মামণিও তাকে আজ বুঝতেই পারলো না কিংবা হয়তো বুঝতে চাইলো না। গলার কাছটা কিরকম ভারী হয়ে এলো তার। একবার হিয়া আরেকবার সুজাতার দিকে তাকিয়ে বললো "ঠিক আছে .."
[+] 10 users Like Bumba_1's post
Like Reply
 প্রতিটি মানুষের মনের ভিতর লুকিয়ে থাকে অবচেতনে আরও একটি মন। অস্থিরতা ক্রমশঃ তীব্র হলে বিচলিত মন যখন সংশয়ে আত্মসমর্পণ করে, যখন আত্মপ্রত্যয় মুষ্টিবদ্ধ হাতদুটি শূন্যে ছুঁড়ে দেয়, সবার অলক্ষে যখন সময়ের উথালপাতাল অবগাহন আর স্পর্শকাতর মুহূর্ত তারই এলোমেলো হাওয়া চারপাশে, তখন দুটি মনই একসাথে দুলে ওঠে আর পথ জুড়ে উথলে ওঠে আরও দীর্ঘ পথ। দীর্ঘ সেই পথের বুকে নামে মেঘভাঙা রোদ্দুর এবং দু'চোখ ভরে সৃষ্টি হয় জীবনের বিস্ময়কর স্বপ্ন। এইসব চলতে থাকলে বুকের ভেতর মুগ্ধতা জমে, নৈঃশব্দে জ্বলে ওঠে আলোর রোশনাই। মনে মনে তখন খুব সংশয়ে থাকতে হয় এই ভেবে যে, পরস্পরের ভিতরের দু-দুটি মন কিভাবে গ্রহণ করতে সমর্থ হবে সমস্ত শিহরণ! সংশয়ে থাকতে হয় দু-দুটি মনের কার মানসিকতায় কার চেয়ে কে কতটা শ্রেয় .. এই ভেবে। এভাবেই অতিবাহিত হতে থাকে দিনের পর দিন, দু'চোখে ঘন ঘন পলক পড়ে আর সম্ভাব্য সিদ্ধান্তের সম্ভাবনার জন্য অপেক্ষা করতে হয়। যে অপেক্ষার মধ্যে পরতে পরতে ঝরে পড়ে প্রশ্নচিহ্নের মতো তীব্র অবিশ্বাস এবং আশঙ্কা।


সেদিন রাতে গোগোলদের বাড়ি থেকে চলে আসার পর পরস্পরের সঙ্গে আর দেখা হয়নি ওদের দু'জনের। মাঝে মাত্র একটি দিন অতিবাহিত হয়েছে। তবুও হিয়ার কাছে তা প্রায় এক যুগের সমান। তবে ফোনে যোগাযোগ আগের মতোই স্বাভাবিক রয়েছে। সকালে এলার্ম ক্লকের মতো তার প্রেয়সীর ঘুম ভাঙ্গানো থেকে শুরু করে রাতে ঘুমোতে যাওয়ার আগে গুডনাইট কিস দেওয়া .. এই সবকিছু একজন বাধ্য এবং সৎ প্রেমিকের মতো করে গেলেও গোগোলের মনের কোণেও কোথাও যেন একটা সংশয় তৈরি হয়েছিলো। এটা যে শুধু টগরের শারীরিক অবস্থার জন্য সেটা পরিষ্কার করে বলা যায় না। এই সংশয়ের উৎস এবং কারণ তার কাছে স্পষ্ট নয়, তবে সে একটা অদৃশ্য টান অনুভব করছিলো টগরের প্রতি।

  বাতের ব্যথায় কাবু স্বপনবাবু এখন আর আগের মতো সচল নয়। তাই কলেজের মিড-ডে মিলের মালগুলো স্বপন সাধুখাঁর দোকান থেকে কলেজ কর্তৃপক্ষ নিজেই আনার ব্যবস্থা করে। টগর এসে একদিন অন্তর হিসেব দিয়ে যায় আর তার সঙ্গে টাকাও নিয়ে যায় এই কলেজের প্রধানশিক্ষক পঙ্কজ বাবুর কাছ থেকে। গোগোল ভেবেছিলো এখানে টগর এলে তার সঙ্গে তো তার দেখা হবেই, তাই তার মামণি এবং হিয়াকে যখন সে কথা দিয়েছে, তখন আর সে ওদের বাড়ি যাবে না। দিন পনেরো পর ডাক্তার বসাক অবশ্য তার ক্লিনিকে একবার টগরকে নিয়ে যেতে বলেছেন, সেইসময় একটা ব্যবস্থা ঠিক করা যাবে। কিন্তু দিন দু'য়েক টগরকে দেখতে না পেয়ে কোনো কাজে ঠিক মতো মনোনিবেশ করতে পারছিলো না সে। এরপর পঙ্কজ বাবুকে জিজ্ঞাসা করে যখন সে জানতে পারলো - টগর জানিয়ে দিয়েছে, সে আর এর মধ্যে আসবে না, তাই কলেজ থেকে যারা স্বপন সাধুখাঁর দোকানে মাল আনতে যায় তারাই হিসেব নিয়ে টাকা দিয়ে আসে। তখন তার কপালে চিন্তার ভাঁজ দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হলো। সে চিরকাল দায়িত্ব পরায়ণ একজন মানুষ। পরিস্থিতি পরিপ্রেক্ষিতেই হোক অথবা যে কোনো কারনেই হোক একজনের দায়িত্ব যখন সে নিয়েছে, তখন কাউকে কথা দেওয়ার জন্য সেই দায়িত্ব পালন না করতে পারাটা, গুরুতর অপরাধ বলেই সে মনে করে। কয়েক মুহূর্ত কিছু একটা চিন্তা করে সাইটের সহকারী সুপারভাইজারকে কাজ বুঝিয়ে দিয়ে বাইকে করে কলেজ থেকে বেরিয়ে গেলো গোগোল। 

★★★★

বাইকটা টগরদের বাড়ির সামনে স্ট্যান্ড করে রেখে ভিতরে ঢুকতে গিয়ে গোগোল দেখলো স্বপনবাবুর দোকান বন্ধ। সপ্তাহে সাতদিনই খোলা থাকে এই মুদিখানার দোকান। কিছুটা বিচলিত হয়ে বাইরে থেকে দু-একবার "স্বপনকাকু" বলে ডেকেও কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকতে গিয়ে দেখলো দরজা ভেজানো রয়েছে। আলতো ঠ্যালা দিতেই দরজার পাল্লাটা খুলে গেলো। বৈঠকখানার ঘরেও কেউ নেই। "টগর .. কোথায় তুই? তোরা সব কোথায় বলতো .. বাইরের দরজা খুলে বাড়ি ফাঁকা রেখে সব কোথায় গিয়েছিস?" এই কথাতেও কোনো উত্তর না পেয়ে ধীরে ধীরে বেডরুমে প্রবেশ করলো গোগোল।

শোওয়ার ঘরের ঢুকেই চমকে উঠলো গোগোল। বিছানার উপর হাত পা ছড়িয়ে শুয়ে আছে টগর। ঘন ঘন নিঃশ্বাস পড়ছে তার। খাটের সামনে এসে টগরের দিকে তাকাতেই প্রচন্ডরকম অস্বস্তি বোধ করলো সে। তার চোখের সামনে বছর কুড়ির সদ্য যৌবনা ভরাট শরীরের অধিকারিনী টগর কোনোরকমে শুধুমাত্র একটি টাওয়েল জড়িয়ে শুয়ে রয়েছে। বোঝাই যাচ্ছে কিছুক্ষণ আগেই স্নান করে এসেছে সে। ‌সদ্যস্নাতা টগরের ভিজে চুলগুলো তার ফর্সা মুখমন্ডলে অবিন্যস্ত ভাবে ছড়িয়েছিলো, কানের লতি আর নাকের ডগায় কয়েকবিন্দু জল তখনো দৃশ্যমান। টাওয়েল আবৃত ভারী বক্ষযুগল ঘনঘন নিঃশ্বাসের সঙ্গে প্রকটভাবে ওঠানামা করছে। অত্যাধিক ফর্সা সামান্য ফাঁক হয়ে থাকা সুগঠিত দুই নগ্ন উরু যেন আহ্বান জানাচ্ছিলো নিজেদের দিকে। সেদিকে তাকিয়ে মাথাটা কেমন যেন ঝিমঝিম করে উঠলো গোগোলের। তৎক্ষণাৎ নিজের দুই চোখ বন্ধ করে ফেললো সে। কয়েক সেকেন্ড স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে থেকে পরমুহূর্তেই নিজেকে সামলে নিয়ে আলতো করে তার কপালে হাত দিয়ে সে ডাকলো "টগর .. এই টগর .. ঘুমিয়ে পড়েছিস নাকি?" কপালে হাত ছোঁয়াতেই গোগোল বুঝতে পারলো জ্বরে গা পুরে যাচ্ছে টগরের। 

তখনই নিজের মায়াবী চোখদুটো সামান্য খোলার চেষ্টা করে জড়ানো কন্ঠে টগর বলে উঠলো "ওহ্ , তুমি এসেছো গোগোল দাদা! জানো তো বরফের কুচি মাখা মুখে আয়নায় সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে বলেছি আবার আগের মতো ভালো হয়ে গেলে একদিন হেঁটে হেঁটে বাজারে যাবো। তুমি তো ইলিশ মাছ খেতে খুব ভালোবাসো। মেছুনির সাথে দু'একটা আলগা তামাশা করে কিনে নিয়ে আসবো তোমার পছন্দের মাছ। আমি নিজে বাড়িতে মাছ কাটবো, বঁটির আগায় লেগে থাকবে রক্ত আর আঁশ। একদিন মনে মনে ভেবেছি গভীর রাতে, আলোয় আলোয় ভরে যাচ্ছে চারদিক। সেই আলোয় আমি স্পষ্ট দেখতে পেলাম আমার মায়ের মুখ। তবু আমার অসুখ সারে না কেনো গোগোল দাদা?" 

"সারবে .. নিশ্চয়ই সারবে .. আমি আছি তো .. আমি বলেছি না, আমি সব ঠিক করে দেবো .. কিন্তু তোর গায়ে তো এখন খুব জ্বর, আমি যে কি করি! শিউলি কোথায় রে? আর তোর বাবা?" টগরের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে জিজ্ঞাসা করলো গোগোল‌।

"শিউলি কলেজে আর বাবা মহাজনের কাছে গেছে কোনো একটা দরকারে। জানো তো, আজ সকাল থেকে আমি ভালোই ছিলাম। বাবা যখন বেরোলো, আমি তখন স্নান করছিলাম। ভাবলাম স্নান করে বেরিয়ে বাইরের দরজাটা আটকে দিয়ে তারপর ঘরের কাজকর্ম করবো। কিন্তু হঠাৎ করে অসম্ভব কাঁপুনি দিয়ে জ্বর এলো। কোনোরকমে বাথরুম থেকে বেরিয়ে বিছানায় এলাম, তারপর .. তারপর মাথাটা কেমন যেন ঘুরে গেলো আর কিছু মনে নেই .. ভাগ্যিস তুমি এলে .. যদি অন্য কেউ আসতো, তাহলে এই অবস্থায় আমাকে দেখে .. ইশ্ ছিঃ ছিঃ আমি তো ভাবতেই পারছি না। আমি যে উঠে জামা কাপড় পাল্টাবো, সে ক্ষমতাও আমার নেই জানো। শরীরে কোনো জোর পাচ্ছি না।" চোখদুটো পুনরায় বন্ধ করে মৃদুভাবে কথাগুলো বললো টগর।

অন্য কেউ আর সে যে এক নয় টগরের কাছে, তার কথায় সেটা বুঝতে পারলো গোগোল। টগরের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতেই জিজ্ঞাসা করলো "হঠাৎ করে জ্বরটা কেনো এলো বলতো! ডাক্তার বসাককে একটা ফোন করতে হবে। ওষুধ খেয়েছিস?" 

"কি হবে ফোন করে? যা হবার তা হবে। আমি তো জানিও না আমার কি হয়েছে .. জানতেও চাই না। তবে এবার আমার অসুখ সেরে গেলে তোমাদের বাড়ি যাবো একদিন। সরু হচ্ছে রাস্তা, দু-ধারে বেড়েছে ঝোপ। পথের উপর সাজিয়ে রেখো ফুল শুধু আমার জন্য। সেই সরু পথ দিয়ে হেঁটে হেঁটে তোমাদের বাড়ি যাবো, কেমন! খুব গল্প করবো সুজাতা মাসির সঙ্গে। তোমার কথা শুনবো, হিয়া দিদির কথা শুনবো, তোমাদের বিয়ের কথা শু..ন..বো.. তোমরা কবে বিয়ে করছো গো? আমার যে আর শ্যামা সাজা হলো না গোগোল দাদা!" জড়ানো গলায় কথাগুলো বলতে বলতে আবার নিজের দুটো চোখ খোলার চেষ্টা করলো টগর।

চোখের কোণ দুটো হঠাৎ করে জ্বালা করতে শুরু করলো গোগোলের। গলাটা কিরকম যেন ভারী হয়ে এলো তার। অনেক চেষ্টা করেও গলা দিয়ে একটা কথাও বের করতে পারলো না সে। শুধু অশ্রুসিক্ত চোখে তাকিয়ে রইলো টগরের দিকে।

আধো ঘোর আধো জাগরণে টগর বলে চললো "আমার খুব লজ্জা করছে গোগোল দাদা, প্লিজ চাদরটা একটু আমার গায়ে টেনে দেবে? যেভাবে জলের পাত্র থেকে ফোঁটা ফোঁটা জলকণা বাতাসে মিলিয়ে যায়, পাত্রের জল কমে আসে ধীরে ধীরে। যেভাবে একদিন সকল জলাধার আংশিক হয়ে যায় উন্মুক্ত আকাশ নিচে .. ঠিক সেভাবেই আমার প্রাণবায়ু বোধহয় আস্তে আস্তে কমে আসছে। গোগোল দাদা .. তুমি কোথায়! আমার হাতটা ধরবে একটু? জলপান শেষে অংশত আকাশ দেখে পৃথিবীর তৃষ্ণা মিটছে ধীরে ধীরে। মেঘের ভিতরে সযত্নে রাখা জীবনের দুঃস্বপ্নে ভেঙে যায় ঘুম। নিচে মাটিতে ধুলোয় ঝুঁকে থাকা মুখগুলো হারানো খেলনা আর ভাঙা বাসনের কানা যেন প্রেম মাখামাখি করে পড়ে থেকে একত্রে ঘুমায়। সেগুলো কুড়াতে গিয়ে দেখেছো কি আমায়?  সারাদিন হাবিজাবি জড়ো করা মেঘ, আকাশে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা পাহাড় আর অপেক্ষায় আমি। গোগোল দাদা .. তুমি কোথায়! আমি কিছু দেখতে পাচ্ছি না কেনো .." পুনরায় জ্ঞান হারালো টগর।

★★★★

"তুই এখন কোথায়?" অনেকক্ষণ ধরে বাজতে থাকা ফোনটা রিসিভ করার পর ফোনের ওপাশ থেকে সুজাতার কন্ঠ ভেসে এলো। 

"গাড়িতে .. বাড়ি আসছি .." বাইকটা রাস্তার একপাশে দাঁড় করিয়ে উত্তর দিলো গোগোল। 

"এক্ষুনি আয় .. দরকার আছে .." এই বলে ফোনটা তৎক্ষণাৎ কেটে দিলো সুজাতা।

কিছুক্ষণের মধ্যেই বাড়িতে পৌঁছালো গোগোল। সদর দরজা খোলাই ছিলো, ভিতরে ঢুকে দেখলো ড্রয়িংরুমে তার মামণি আর ডাক্তার আঙ্কেল দুজনেই বসে রয়েছে। "বলো .. কি ব্যাপার? জরুরী তলব .."

 গোগোলের এই প্রশ্নে ডাক্তার দাশগুপ্ত কিছু একটা বলতে যাচ্ছিলেন, তাকে থামিয়ে দিয়ে সুজাতা বলে চললো "আজ তুই প্রমাণ করে দিলি, তুই আমাকে ভালোবাসিস না। শুধু আমাকে কেনো, তুই পৃথিবীর কাউকেই ভালবাসতে পারিস না। সেদিন হিয়া তার মায়ের বিরুদ্ধে গিয়ে তোকে সাপোর্ট করলো, কেনো জানিস? ও তোকে নিঃস্বার্থভাবে ভালোবাসে, তাই। আমার কথা তো ছেড়েই দে, তুই ওই মেয়েটারও কথার কোনো মূল্য দিলি না। এতবার বারণ করা সত্ত্বেও তুই আজ আবার গিয়েছিলি টগরদের বাড়ি? তোর বাইক ওর বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেছে কাবেরী নিজে। আমি জানি ওই সর্বনাশী টগর তোকে নিজের ছলাকলায় বশ করেছে। আমি সেদিনকেই বুঝতে পেরে গিয়েছিলাম কথাটা, কিন্তু ওদের সামনে বলতে পারিনি। কাবেরী ঠিকই বলে .. তুই হিয়ার যোগ্য নয়। তুই কোনোদিন কারোর ভালোবাসা পাওয়ার যোগ্য নয়। কেনো জানিস? কারণ তুই হলি স্বার্থপর .. ঠিক তোর বাবার মতো। অনিরুদ্ধদার রক্ত বইছে তোর শরীরে। যে নিজে কোনোদিন সুখে থাকতে পারেনি, তার চারপাশের লোকজনকেও সুখে থাকতে দেয়নি। একটার পর একটা জীবন নষ্ট হয়েছে শুধুমাত্র তোর বাবার ভুলে। তার রক্তই তো তোর শরীরে বইছে .. তুইও একই জিনিস তৈরি হয়েছিস। এত ভালো একটা মেয়েকে পেয়েও তোর মন ভরেনি। এখন টগরের পিছনে দৌড়াচ্ছিস .. ছিঃ ভাবতেও আমার ঘেন্না করে .."

"জাস্ট কিপ ইওর মাউথ শাট সুজাতা .. এইসব কি বলছ তুমি? ওকেও তো কিছু বলার সুযোগ দাও! কিছু না জেনে, না শুনে একটা ছেলেকে এইভাবে কেনো একিউস করছো তুমি?" সুজাতাকে মাঝপথে থামিয়ে দিয়ে বলে উঠলেন ডক্টর দাশগুপ্ত।

"তুমি চুপ করো .. আমি যা বলছি একদম ঠিক বলছি .. কতদিন চেনো তুমি গোগোলকে? যেটুকু চেনার, আমার সূত্রই তো চিনেছো।" তার স্বামীর উদ্দেশ্যে কথাগুলো বলে, আবার গোগোলের দিকে তাকিয়ে বললো "ছোটবেলায় বাবা-মা কারোর ভালোবাসা পেলি না, এখন হিয়াকেও হারালি। কাবেরী আজ আমাকে ফোনে বলে দিলো .. হিয়ার সঙ্গে তোর সম্পর্কের এখানেই ইতি। আর এটা ও হিয়ার মত নিয়েই বলেছে। তুই তো এটাই চেয়েছিলি .. তাই না? তোর বাবা যেরকম তোর মায়ের জীবনটা নষ্ট করে দিয়েছিলো, ঠিক তেমনি ভাবে তুইও আজকে .."

 "মামণি .. তুমি ঠিকই চিনেছো আমাকে .. আমি এই মুহূর্তে বেশি কথা বলার মতো অবস্থায় নেই .. শুধু এটুকুই বলবো, ভালো থেকো তোমরা .. হিয়াকেও বলে দিও, ও যেন ভালো থাকে ..‌" কথাগুলো বলে মুহূর্তের মধ্যে দরজা দিয়ে বেরিয়ে গেলো গোগোল।

 "এটা তুমি কি করলে সুজাতা, কি করলে? কেনো এভাবে কথা বললে ওর সঙ্গে? ও তো চলে গেলো .. আটকাও ওকে.." উত্তেজিত হয়ে কথাগুলো বললেন ডক্টর দাশগুপ্ত।

"এ্যাঁ? চলে গেলো .. কোথায় চলে গেলো? সত্যিই তো, আমি .. আমি রাখতে পারলাম না আমার দিদিকে আর অনিরুদ্ধদাকে দেওয়া কথাগুলো। গোগোল .. গোগোল রে .. সোনা মানিক আমার .. রাগের মাথায় মুখ দিয়ে বেরিয়ে গেছে রে কথাগুলো .. ক্ষমা করে দে তোর মামণিকে .." এই কথাগুলো বলতে বলতে ঘর থেকে বেরিয়ে সুজাতা দেখলো কেউ কোত্থাও নেই।

(ক্রমশ)


ভালো লাগলে আপনাদের মূল্যবান মতামত জানাবেন
লাইক এবং রেপু দিয়ে উৎসাহিত করবেন

[Image: Animation-resize-gif-f3b601eb23d95beeb4e...911ac0.gif]


[+] 12 users Like Bumba_1's post
Like Reply
ঝড় বয়ে গেলো একটা। টগর আর গোগোল এর এই সম্পর্কটা যে কি আমি জানিনা, জানতেও চাইনা। ওটা যে বড্ড পবিত্র। ওটা এতটাই উজ্জ্বল যে ওই রশ্মি অনেকেই সহ্য করতে পারেনা। চোখ বুজে নিতে হয়। আর বন্ধ চোখে তো কালো ছাড়া আর কিছুই বোঝা যায়না। সেই অন্ধকারে অনেক অলীক খারাপ দৃশ্য বাস্তবের রূপ নেয়। এটার যে ভয়ানক আকর্ষণ। সেই কালোয় ডুবে হিয়ার মা মজেছে কিন্তু সুজাতা ম্যাডাম রাগের মাথায় যা সব বললো সেটা বড্ড কষ্ট দিলো।

 সব ভালো মানুষের মধ্যেই একটা অন্ধকার লুকিয়ে থাকে। কখনো অজান্তে, কখনো নিজেই আশ্রয় দেয় সে। বাইরের সাদা চারিদিক আলোয় ভরিয়ে রাখলেও উল্টোদিকে লুকানো সেই অন্ধকার একদিন সুযোগ বুঝে বেরিয়েই আসে। হয়তো সময়ের সাথে দুর্বল হয়ে রূপ পাল্টে যায় কিন্তু সামনের জনকে কষ্ট দিতে সক্ষম। Sad
[+] 2 users Like Baban's post
Like Reply
(21-01-2023, 09:20 PM)Baban Wrote: ঝড় বয়ে গেলো একটা। টগর আর গোগোল এর এই সম্পর্কটা যে কি আমি জানিনা, জানতেও চাইনা। ওটা যে বড্ড পবিত্র। ওটা এতটাই উজ্জ্বল যে ওই রশ্মি অনেকেই সহ্য করতে পারেনা। চোখ বুজে নিতে হয়। আর বন্ধ চোখে তো কালো ছাড়া আর কিছুই বোঝা যায়না। সেই অন্ধকারে অনেক অলীক খারাপ দৃশ্য বাস্তবের রূপ নেয়। এটার যে ভয়ানক আকর্ষণ। সেই কালোয় ডুবে হিয়ার মা মজেছে কিন্তু সুজাতা ম্যাডাম রাগের মাথায় যা সব বললো সেটা বড্ড কষ্ট দিলো।

 সব ভালো মানুষের মধ্যেই একটা অন্ধকার লুকিয়ে থাকে। কখনো অজান্তে, কখনো নিজেই আশ্রয় দেয় সে। বাইরের সাদা চারিদিক আলোয় ভরিয়ে রাখলেও উল্টোদিকে লুকানো সেই অন্ধকার একদিন সুযোগ বুঝে বেরিয়েই আসে। হয়তো সময়ের সাথে দুর্বল হয়ে রূপ পাল্টে যায় কিন্তু সামনের জনকে কষ্ট দিতে সক্ষম। Sad

বাহ্ খুব সুন্দর বললে। অসংখ্য ধন্যবাদ  thanks সঙ্গে থাকো এবং পড়তে থাকো।
[+] 1 user Likes Bumba_1's post
Like Reply
sobkichu ekdike r togorer presence ekdike , gogol r togorer conversations I mean togorer kothagulo porte porte chokhe jol eshe giyechilo amar moto ekjon heartless person er, your writing skill is awesome, stay blessed  Heart
[+] 1 user Likes Chandan's post
Like Reply
(21-01-2023, 10:06 PM)Chandan Ghosh Wrote: sobkichu ekdike r togorer presence ekdike , gogol r togorer conversations I mean togorer kothagulo porte porte chokhe jol eshe giyechilo amar moto ekjon heartless person er, your writing skill is awesome, stay blessed  Heart

I'm overwhelmed , thank you very much ❤️❤️
Like Reply
মনে যখন ক্ষণে ক্ষণে সংশয় ঘুরেফিরে আসে তখন মানসিক দ্বন্দ্বের সূত্রপাতে সূচনা হয়। আর দ্বন্দ্বের দ্বিধা চক্রে যে একবার পা দেয় তার স্বাভাবিক চেতন প্রক্রিয়া কি আর ঠিক মত কাজ করে!!

সংশয় সবার মনেই জেগেছে আর সেটা একদিনে নয় কিন্তু বহুদিনের জমানো ছোট্ট ছোট্ট রাগে অনুরাগে। আমরা যখন মন আর মস্তিষ্কের মাঝের দোলাচলে পড়ে যাই তখন কিন্তু সবকিছুই বেশ গুলমেলে মনে হয়। শুথু পজেটিভ কিছু ভাবতে পারে না প্রকৃতির নিয়মেই নেগেটিভ চিন্তার উদয় হয়।

হিয়া না হয় অল্প বযসের অভিমানি প্রেমিকা ক্রমাগত মায়ের কটু বক্তব্যে মন বিষিয়ে উঠতেই পারে। কিন্তু সুজাতা সে ওটা কেমন করে করলো গোগোলের সাথে, এতোদিনে এই চিনলো??

টগরের সম্পর্কে বেশি কিছু বলতে চাই না কারণ যেটা বলতে চাইছিলাম সেটা বাবান দা বলে দিয়েছে। টগরের জন্য খুব কষ্ট হচ্ছে আমার ও কিন্তু এই উপন্যাসের অন্যতম একটা চরিত্র যার অল্প উপস্থিতিও বেশ শক্তিশালী অবস্থান তৈরী করেছিল ওর গুনের জন্য।

ভুল তো একদিন ভাঙিব ততোদিনে দেরি না হয়ে যায়..
Shy হাত বাড়িয়ে ছুঁই না তোকে, মন বাড়িয়ে ছুঁই।
 দুইকে আমি এক করি না, এক কে করি দুই।। Shy
[+] 1 user Likes nextpage's post
Like Reply
হিয়া বা কাবেরীর তাদের নিয়ে কিছু বলার নেই। ওরা ওদের জায়গাতে একদম ঠিক। তুমি যদি তোমার প্রানের প্রিয় মানুষের কাছে কথা লুকোনোর চেষ্টা করো তা হলে ঐ মানুষ তোমাকে কি ভাবে বিশ্বাস করবে। মা হিসেবে কাবেরীর যা করার তাই করেছে।

টগরের কথা বাবন দা যা বলেছে তারপরে নতুন কিছুই আর অবশিষ্ট নেই

কিন্তু,
জন্ম দেওয়া মা আর পালিত মা এর তফাত টা আজকের পর্ব চোখে আঙ্গুল দিয়ে আমাদের দেখিয়েছেন মশাই। এতো কিছুদিন আগে গোগোলের সম্পর্কে কাবেরী কথা বলছিল তখন কি ভাবেই না সুজাতা প্রতিবাদ করেছিল তখন গোগোল সুজাতার নিজের ছেলে ছিল আর আজকে দিদির ছেলে হয়ে গেল। আসলে আজকে যদি সুজাতা বিয়ে না করতো তা হলে এভাবে সুজাতার মনে জমে থাকা অতীতের আবর্জনার স্তুপ বেরিয়ে আশতো না । এখন সুজাতা একটা শক্ত খুটি আছে তাইতো গোগোলের বাবাকে নিয়ে গোগোলের চরিত্র নিয়ে এত কিছু বলতে পারলো । এখন যদি গোগোল ওর জীবনে নাও থাকে তা হলে কিছু হবে না সুজাতার, কারন তার যে এখন ডাঃ স্বামী আছে ।জানেন তো অনেক ক্ষেত্রে হাতে মাড়ার থেকে মুখের কথাতে অনেক বেশি আঘাত দেওয়া যায়, হাতে মাড়া কষ্ট কিছু সময় পর ঠিক হয়ে যায় কিন্তু মনের কষ্ট সেটা চিতাতে যাওয়ার সময় পর্যন্ত নিজের সাথে থাকে। আজকে যদি সুজাতা টগরদের বাড়ি গিয়েছে বলে গোগোলের গালে একটা চড় দিতো তাহলে মনে হয় না গোগোল এত কষ্ট অনুভব করতো। সুজাতা জানে গোগোলের সুজাতা ছাড়া কেউ নেই তারপরেও সুজাতা এমন বিষাক্ত কথা বলতে পারলো। ওর বাবার কৃত কর্মের ফল গোগোলের বইতে হবে বুঝি, কেন কি কারনে । এত দিন তাহলে মনের কথা গুলি লুকিয়ে রেখেছিল সুজাতা। আজকের সুজাতার এরূপ ব্যবহার এর পর তাদের ভেতর কোনও ভাবেই আর আগের স্বাভাবিক সম্পর্কে ফিরে যাওয়া সম্ভব হবে না যতটুকু গোগোলকে আমারা জানি সে নিজেই সুজাতার সাথের সব মায়ার সম্পর্ক ভেঙ্গে বেড়িয়ে আসবে। হয়তো এতদিন সুজাতার গোগোলের পড়ালেখা থেকে শুরুকরে সব কিছু করেছে একজন প্রকৃত অভিভাবকের মত সে হিসেবে গোগোল আবার তাদের কাছে ফিরে আসতে পারে কিন্তু এতদিনের চেনা পরিবেশটা একরকম থাকবে কি, সুজাতা যে বড্ড বেশি গোগোলের মনে আঘাত দিয়ে ফেলেছে। আজ থেকে যে আমাদের কাছে সুজাতা গোগোলের মামনি থেকে গোগোলের মা এর ছোট বোন হয়ে গেল যে এতোদিন শুধু অনিরুদ্ধর শেষ কথা রেখেছিল আর সেই কারনে গোগোলর সব কিছু দায়িত্বের সাথে লালন পালন করেগেছে মাত্র। যদি সুজাতা সত্যিই গোগোলের মা হতো তাহলে কি এমন সব কথা বলতে পাড়তো এতদিনে বুঝি গোগোলকে এতটুকু চিনেছে। আর এ কারনেই হিয়ার আর কাবেরীর
দোষ দেখছিনা বেশি । আজকে গোগোলের সাথে যেটা হয়েছে সেটাকে শুধুমাত্র ভুল না ভেবে পাপ বলা ভালো কারন এটার ভেতরেতো নিষ্পাপ টগরও জরিয়ে আছে। আর এ কারনে এই পাপের যে ক্ষমা নেই কোনও ভাবেই।

একটা সত্যি কথা স্বীকার করছি দাদা লাস্ট কিছু পর্ব ধরে বড্ড একঘেয়ামি লাগছিল গোগোলেকে। চরিত্রটাতে কোনও ডেভেলপমেন্ট হচ্ছিল না। সুজাতার নতুন সংসারে গোগলকে বড্ড বেমানান লাগছিল। আজকের পর্বের কারনে অনেক অস্ত্র সস্ত্র মাল মশলা চলে এসেছে আপানার কাছে। দিনের শেষে গল্পটা কিন্তু গোলকধাঁধায় গোগোল আর এই ধাঁধা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে গোগলকে তারপরতো দুনিয়া জয় করবে। আর এটার জন্য গোগোলকে তার সব ভালো লাগার মানুষদের ছেড়ে বেড়িয়ে আসতেই হতো। আজ যারা সত্যি না যেন গোগোলকে ঘেন্না করছে তারা ওর সামনে দারাতে পারবে তো ভবিষ্যতে সত্যিটা জানার পর আইনাতে নজর মেলাতে পারবেতো।

অনেক দিন পর এমন একটা পর্ব দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ দাদা।

দাদা গল্পটা থুক্কু উপন্যাসটা এ ভাবেই অনন্ত কাল চলতে থাকুক। লাইক রেপু এডেড দাদা।
horseride আমাকে আমার মত থাকতে দাও horseride
[+] 2 users Like Boti babu's post
Like Reply
বড়ো অদ্ভুত ঘটনাবহুল এই গল্পের অগ্রগতি ,

রাতেই লাইক রেপু দিয়ে রেখেছিলাম কিন্তু পড়লাম এখন। 


clps clps
[+] 1 user Likes ddey333's post
Like Reply
(22-01-2023, 12:27 AM)nextpage Wrote: মনে যখন ক্ষণে ক্ষণে সংশয় ঘুরেফিরে আসে তখন মানসিক দ্বন্দ্বের সূত্রপাতে সূচনা হয়। আর দ্বন্দ্বের দ্বিধা চক্রে যে একবার পা দেয় তার স্বাভাবিক চেতন প্রক্রিয়া কি আর ঠিক মত কাজ করে!!

সংশয় সবার মনেই জেগেছে আর সেটা একদিনে নয় কিন্তু বহুদিনের জমানো ছোট্ট ছোট্ট রাগে অনুরাগে। আমরা যখন মন আর মস্তিষ্কের মাঝের দোলাচলে পড়ে যাই তখন কিন্তু সবকিছুই বেশ গুলমেলে মনে হয়। শুথু পজেটিভ কিছু ভাবতে পারে না প্রকৃতির নিয়মেই নেগেটিভ চিন্তার উদয় হয়।

হিয়া না হয় অল্প বযসের অভিমানি প্রেমিকা ক্রমাগত মায়ের কটু বক্তব্যে মন বিষিয়ে উঠতেই পারে। কিন্তু সুজাতা সে ওটা কেমন করে করলো গোগোলের সাথে, এতোদিনে এই চিনলো??

টগরের সম্পর্কে বেশি কিছু বলতে চাই না কারণ যেটা বলতে চাইছিলাম সেটা বাবান দা বলে দিয়েছে। টগরের জন্য খুব কষ্ট হচ্ছে আমার ও কিন্তু এই উপন্যাসের অন্যতম একটা চরিত্র যার অল্প উপস্থিতিও বেশ শক্তিশালী অবস্থান তৈরী করেছিল ওর গুনের জন্য।

ভুল তো একদিন ভাঙিব ততোদিনে দেরি না হয়ে যায়..

সংশয় এবং তার সঙ্গে পারস্পরিক মনের অবস্থান নিয়ে যে কথাগুলো বললে সেগুলো অনবদ্য ছিলো ভাই। রাগের মাথায় আমরা অনেক সময় এমন অনেক কথা বলে ফেলি, যেগুলো ভবিষ্যতে ফিরিয়ে নিতে আমাদের নিজেদের মনেই লজ্জা সৃষ্টি হয়। কিন্তু মানুষ মাত্রই তো ভুল হয়, সুজাতার ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে .. এটা ভেবে নিয়ে যদি ওকে ক্ষমা করতে পারো তাহলে মনে কিছুটা হলেও শান্তি পাবে সুজাতা। ‌এর বেশি কিছু এই উপন্যাসের ক্লাইম্যাক্সের চমকটাই নষ্ট হয়ে যাবে। অনেক ধন্যবাদ  Namaskar সঙ্গে থাকো আর পড়তে থাকো।
Like Reply
(22-01-2023, 01:37 AM)Boti babu Wrote: হিয়া বা কাবেরীর তাদের নিয়ে কিছু বলার নেই। ওরা ওদের জায়গাতে একদম ঠিক। তুমি যদি তোমার প্রানের প্রিয় মানুষের কাছে কথা লুকোনোর চেষ্টা করো তা হলে ঐ মানুষ তোমাকে কি ভাবে বিশ্বাস করবে। মা হিসেবে কাবেরীর যা করার তাই করেছে।

টগরের কথা বাবন দা যা বলেছে তারপরে নতুন কিছুই আর অবশিষ্ট নেই

কিন্তু,
জন্ম দেওয়া মা আর পালিত মা এর তফাত টা আজকের পর্ব চোখে আঙ্গুল দিয়ে আমাদের দেখিয়েছেন মশাই। এতো কিছুদিন আগে গোগোলের সম্পর্কে কাবেরী কথা বলছিল তখন কি ভাবেই  না সুজাতা প্রতিবাদ করেছিল তখন গোগোল সুজাতার নিজের ছেলে ছিল আর আজকে দিদির ছেলে হয়ে গেল। আসলে আজকে যদি সুজাতা বিয়ে না করতো তা হলে এভাবে সুজাতার মনে জমে থাকা অতীতের আবর্জনার স্তুপ বেরিয়ে আশতো না । এখন সুজাতা একটা শক্ত খুটি আছে তাইতো গোগোলের বাবাকে নিয়ে গোগোলের চরিত্র নিয়ে এত কিছু বলতে পারলো । এখন যদি গোগোল ওর জীবনে নাও থাকে তা হলে কিছু হবে না সুজাতার, কারন তার যে এখন  ডাঃ স্বামী আছে ।জানেন তো অনেক ক্ষেত্রে হাতে মাড়ার থেকে মুখের কথাতে  অনেক বেশি আঘাত দেওয়া যায়, হাতে মাড়া কষ্ট কিছু সময় পর ঠিক হয়ে যায় কিন্তু মনের কষ্ট সেটা চিতাতে যাওয়ার সময় পর্যন্ত নিজের সাথে থাকে। আজকে যদি সুজাতা টগরদের বাড়ি গিয়েছে বলে গোগোলের গালে একটা চড় দিতো তাহলে মনে হয় না গোগোল এত কষ্ট অনুভব করতো। সুজাতা জানে গোগোলের সুজাতা ছাড়া কেউ নেই তারপরেও সুজাতা এমন বিষাক্ত কথা বলতে পারলো। ওর বাবার কৃত কর্মের ফল গোগোলের বইতে হবে বুঝি, কেন কি কারনে । এত দিন তাহলে মনের কথা গুলি লুকিয়ে রেখেছিল সুজাতা।  আজকের সুজাতার এরূপ ব্যবহার এর পর তাদের ভেতর কোনও ভাবেই আর আগের স্বাভাবিক সম্পর্কে ফিরে যাওয়া সম্ভব হবে না যতটুকু গোগোলকে আমারা জানি সে নিজেই সুজাতার সাথের সব মায়ার সম্পর্ক ভেঙ্গে বেড়িয়ে আসবে। হয়তো এতদিন সুজাতার গোগোলের পড়ালেখা থেকে শুরুকরে সব কিছু করেছে একজন প্রকৃত অভিভাবকের মত সে হিসেবে গোগোল আবার তাদের কাছে ফিরে আসতে পারে কিন্তু এতদিনের চেনা পরিবেশটা একরকম থাকবে কি, সুজাতা যে বড্ড বেশি গোগোলের মনে আঘাত দিয়ে ফেলেছে। আজ থেকে যে আমাদের কাছে সুজাতা গোগোলের মামনি থেকে গোগোলের মা এর ছোট বোন হয়ে গেল যে এতোদিন শুধু অনিরুদ্ধর  শেষ কথা রেখেছিল আর সেই কারনে গোগোলর সব কিছু দায়িত্বের সাথে লালন পালন করেগেছে মাত্র। যদি সুজাতা সত্যিই গোগোলের মা হতো তাহলে কি এমন সব কথা বলতে পাড়তো এতদিনে বুঝি গোগোলকে এতটুকু চিনেছে। আর এ কারনেই হিয়ার আর কাবেরীর
দোষ দেখছিনা বেশি । আজকে গোগোলের সাথে যেটা হয়েছে সেটাকে শুধুমাত্র ভুল না ভেবে পাপ বলা ভালো কারন এটার ভেতরেতো নিষ্পাপ টগরও জরিয়ে আছে। আর এ কারনে এই পাপের যে ক্ষমা নেই কোনও ভাবেই।

একটা সত্যি কথা স্বীকার করছি দাদা লাস্ট কিছু পর্ব ধরে বড্ড একঘেয়ামি লাগছিল গোগোলেকে।  চরিত্রটাতে কোনও ডেভেলপমেন্ট হচ্ছিল না। সুজাতার নতুন সংসারে গোগলকে বড্ড বেমানান লাগছিল। আজকের পর্বের কারনে অনেক অস্ত্র সস্ত্র মাল মশলা চলে এসেছে আপানার কাছে। দিনের শেষে গল্পটা কিন্তু গোলকধাঁধায় গোগোল আর এই ধাঁধা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে গোগলকে  তারপরতো দুনিয়া জয় করবে। আর  এটার জন্য গোগোলকে  তার সব ভালো লাগার মানুষদের ছেড়ে বেড়িয়ে আসতেই হতো।  আজ যারা সত্যি না যেন গোগোলকে ঘেন্না করছে তারা ওর সামনে দারাতে পারবে তো ভবিষ্যতে সত্যিটা জানার পর আইনাতে নজর মেলাতে পারবেতো।

অনেক দিন পর এমন একটা পর্ব দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ দাদা।

দাদা গল্পটা থুক্কু উপন্যাসটা এ ভাবেই অনন্ত কাল চলতে থাকুক। লাইক রেপু এডেড  দাদা।

হিয়া, কাবেরী এবং সুজাতা এদের তিনজনকে নিয়ে তুমি যে বিশ্লেষণ করেছো সেটা অনেকাংশেই ঠিক। কাবেরীর কথা তো আমরা শুনেই নিয়েছি। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে হিয়ার ভার্সন কিন্তু আমরা এখনো শুনিনি বা জানিনা। দেখা যাক ভবিষ্যতে ওর অবস্থান কি হয়। আর সুজাতার সম্পর্কে তোমার ধারণা কিছুটা হলেও ঠিক, কারণ বিয়ের আগে সুজাতা আর বিয়ের পরের সুজাতার মধ্যে কিছুটা হলেও পরিবর্তন ঘটেছে। তবে রাগের মাথায় আমরা অনেক সময় এমন অনেক কথা বলে ফেলি, যেগুলো ভবিষ্যতে ফিরিয়ে নিতে আমাদের নিজেদের পক্ষেই লজ্জাজনক হয়ে ওঠে। কিন্তু মানুষ মাত্রই তো ভুল হয়, সুজাতার ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে .. এটা ভেবে নিয়ে যদি ওকে ক্ষমা করতে পারো তাহলে মনে কিছুটা হলেও শান্তি পাবে সুজাতা। আর গোগোল তার মামণিকে ভবিষ্যতে ক্ষমা করবে করে দেবে, নাকি এর থেকেও অন্য কোনো বড় চমক অপেক্ষা করছে .. সেটা জানার জন্য এই উপন্যাসের ক্লাইম্যাক্স পর্যন্ত অপেক্ষা করতেই হবে। সঙ্গে থাকো এবং অবশ্যই পড়তে থাকো।  thanks
[+] 1 user Likes Bumba_1's post
Like Reply
(22-01-2023, 08:33 AM)ddey333 Wrote: বড়ো অদ্ভুত ঘটনাবহুল এই গল্পের অগ্রগতি ,

রাতেই লাইক রেপু দিয়ে রেখেছিলাম কিন্তু পড়লাম এখন। 


clps clps

অনেক ধন্যবাদ দাদা  thanks
Like Reply
যে মানুষটা ওইরকম ভয়ঙ্কর যৌনাত্মক বর্ণনা (এই ফোরামের অন্যতম সেরা বর্ণনা হয় সেগুলো) দিতে পারে, সেই একই মানুষের পক্ষে নারী পুরুষের সম্পর্ক নিয়ে এইরকম লেখা কি করে সম্ভব সেটা ভেবেই মাঝে মাঝে বিস্মিত হই। নতুন করে কিছু বলার নেই, বাকিরা সবাই যা বলার বলে দিয়েছে। এইটুকুই বলবো, কালের নিয়মে এই উপন্যাস একদিন শেষ হয়ে যাবে কিন্তু টগর রয়ে যাবে সকলের মনে।

[Image: Images-2-2-1.jpg]

[+] 1 user Likes Somnaath's post
Like Reply
(22-01-2023, 12:34 PM)Somnaath Wrote: যে মানুষটা ওইরকম ভয়ঙ্কর যৌনাত্মক বর্ণনা (এই ফোরামের অন্যতম সেরা বর্ণনা হয় সেগুলো) দিতে পারে, সেই একই মানুষের পক্ষে নারী পুরুষের সম্পর্ক নিয়ে এইরকম লেখা কি করে সম্ভব সেটা ভেবেই মাঝে মাঝে বিস্মিত হই। নতুন করে কিছু বলার নেই, বাকিরা সবাই যা বলার বলে দিয়েছে। এইটুকুই বলবো, কালের নিয়মে এই উপন্যাস একদিন শেষ হয়ে যাবে কিন্তু টগর রয়ে যাবে সকলের মনে।

যে প্রেমের গল্প লেখে, সে কি রহস্য-রোমাঞ্চ উপন্যাস লিখতে পারে না? যে ছোটদের গল্প লেখে, সে কি আদ্যোপান্ত একটি সিরিয়াস উপন্যাস লিখতে পারে না? অবশ্যই পারে। এর অনেক অনেক অনেক উদাহরণ আছে, তাই এটা কোনো বিষয় নয়। তবে আমার এই উপন্যাসের "টগর" চরিত্রটিকে তোমাদের সকলের যে এত ভালো লেগেছে, তার জন্য আমি যারপরনাই আপ্লুত এবং আনন্দিত। এইটুকু বলতে পারি এই উপন্যাস অনেকদিন মনে রাখবে পাঠকবন্ধুরা। সঙ্গে থাকো এবং পড়তে থাকো।
Like Reply
 সবার মতো হ্যাঁ তে হ্যাঁ মেলাতে পারিনা আমি, তাই ভুল আমি ধরবোই। এই নিখুঁত মাখনের মতো পর্বের একেবারে শেষের দিকে সুজাতার বাড়াবাড়িটা অতি নাটকীয় হয়ে গেছে ওই সমস্ত সস্তার উপন্যাসগুলোর মতো। হয়তো এর পেছনে নিশ্চয়ই কোনো কারণ আছে কিংবা হয়তো সুজাতা রাগের মাথায় কথাগুলো বলে ফেলেছে (যেটা তুমি পর্বের মধ্যেও উল্লেখ করেছ), তবু বলবো - যে ছেলেটাকে ছোটবেলা থেকে মানুষ করলো সুজাতা, আজ একটা মেয়ের সঙ্গে সম্পর্ক নষ্ট হয়ে যাচ্ছে বলে (আদেও নষ্ট হবে বলে মনে হয় না, কারণ ওরা দুজনই নায়ক নায়িকা, যতই টগর নামের একজন অসাধারণ চরিত্র থাকুক না কেন এই উপন্যাসে) কিছু না শুনে গোগোলের অতীত তুলে এত সাংঘাতিক কথাগুলো না বললেও পারতো। তবে পরের পর্বে সাংঘাতিক কিছু ধামাকা হতে চলেছে এটা বেশ বুঝতে পারছি, তাই অপেক্ষায় থাকলাম।  yourock

[Image: Shocked-Open-Asianpiedstarling-size-restricted.gif]

[+] 3 users Like Sanjay Sen's post
Like Reply
(22-01-2023, 09:32 AM)Bumba_1 Wrote: হিয়া, কাবেরী এবং সুজাতা এদের তিনজনকে নিয়ে তুমি যে বিশ্লেষণ করেছো সেটা অনেকাংশেই ঠিক। কাবেরীর কথা তো আমরা শুনেই নিয়েছি। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে হিয়ার ভার্সন কিন্তু আমরা এখনো শুনিনি বা জানিনা। দেখা যাক ভবিষ্যতে ওর অবস্থান কি হয়। আর সুজাতার সম্পর্কে তোমার ধারণা কিছুটা হলেও ঠিক, কারণ বিয়ের আগে সুজাতা আর বিয়ের পরের সুজাতার মধ্যে কিছুটা হলেও পরিবর্তন ঘটেছে। তবে রাগের মাথায় আমরা অনেক সময় এমন অনেক কথা বলে ফেলি, যেগুলো ভবিষ্যতে ফিরিয়ে নিতে আমাদের নিজেদের পক্ষেই লজ্জাজনক হয়ে ওঠে। কিন্তু মানুষ মাত্রই তো ভুল হয়, সুজাতার ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে .. এটা ভেবে নিয়ে যদি ওকে ক্ষমা করতে পারো তাহলে মনে কিছুটা হলেও শান্তি পাবে সুজাতা। আর গোগোল তার মামণিকে ভবিষ্যতে ক্ষমা করবে করে দেবে, নাকি এর থেকেও অন্য কোনো বড় চমক অপেক্ষা করছে .. সেটা জানার জন্য এই উপন্যাসের ক্লাইম্যাক্স পর্যন্ত অপেক্ষা করতেই হবে। সঙ্গে থাকো এবং অবশ্যই পড়তে থাকো।  thanks

আমাদের সবচেয়ে বড় শত্রু হলো আমাদেরই মুখ । একটা বন্দুক থেকে বেড় হওয়া গুলি যেমন ফেরত আসে না তেমনই চামড়ার মুখ থেকে বের হওয়া কথাও ফেরত নেওয়া যায় না না যতটুকু ক্ষতি করার করে ফেলেছে সুজাতার কথা গুলি। যদি বাস্তব জীবনের কথা বলি আমার দিদির সাথে একটা কথা নিয়ে একটু তর্কাতর্কি হয়েছিল আমি রাগের মাথায় কিছু উল্টাপাল্টা কথা বলেছিলাম দিদিকে , তখন আমাকে কিছু বলেনি দিদি  কিন্তু আজ সাত বছর আমাদের মাঝে কথা বন্ধ, আমারও সেই সাহস হয় না দিদির সাথে কথা বলার।  আমার উপরে রাগ করে দিদি অন্য শহরে চাকরি নিয়ে চলে গেছে । ঘরের সবার সাথে কথা বলে শুধুমাত্র আমি বাদ। আমার মত এমন কাহিনী প্রচুর পাবেন আপনার চার পাশে। 

মানুষের মন একদম কাঁচের মতো কোনও কথাতে যদি একবার ঐ কাঁচ ভেঙ্গে যায় তা আর কখনও জোড়া লাগে না । আর একমাত্র এই কাঁচ ভাঙ্গার ক্ষমতা আছে এই চামড়ার মুখের। মানুষে মানুষের মধ্যে বিভেদ এর জন্য দায়ী এই চামড়ার মুখ । কত কত সম্পর্ক শেষ হয়ে যায় এই চামড়ার মুখের জন্য আর রইলো সুজাতার কথা হয়তো গল্পের প্রয়োজনে গোগোল সুজাতাকে ক্ষমা করতে পারে কিন্তু যদি এটা গল্প না হয়ে বাস্তব জীবনের হতো তাহলে মনে হয় না কোনও দিন গোগোল ক্ষমা করতে পারতো সুজাতাকে। আর, রইলো হিয়ার কথা গোগোলের কাছে অবশ্যই হিয়া ভরসার জায়গা কিন্তু এখানেও কিছু কথা আসবে দেখাগেল সুজাতার মতো হিয়াও গোগোলকে ভুল বুঝে টগরের বাড়ি গিয়ে টগরকে অপমান করে বসলো তখন কি হবে গোগোল তখন কি ভাবে নেবে কারন টগর বা গোগোল কেউ এখনই সত্যি কথা প্রকাশ করবে না এত তাড়াতড়ি। 

প্রথম থেকেই তো আছি দাদা
horseride আমাকে আমার মত থাকতে দাও horseride
[+] 2 users Like Boti babu's post
Like Reply
(22-01-2023, 03:06 PM)Sanjay Sen Wrote:  সবার মতো হ্যাঁ তে হ্যাঁ মেলাতে পারিনা আমি, তাই ভুল আমি ধরবোই। এই নিখুঁত মাখনের মতো পর্বের একেবারে শেষের দিকে সুজাতার বাড়াবাড়িটা অতি নাটকীয় হয়ে গেছে ওই সমস্ত সস্তার উপন্যাসগুলোর মতো। হয়তো এর পেছনে নিশ্চয়ই কোনো কারণ আছে কিংবা হয়তো সুজাতা রাগের মাথায় কথাগুলো বলে ফেলেছে (যেটা তুমি পর্বের মধ্যেও উল্লেখ করেছ), তবু বলবো - যে ছেলেটাকে ছোটবেলা থেকে মানুষ করলো সুজাতা, আজ একটা মেয়ের সঙ্গে সম্পর্ক নষ্ট হয়ে যাচ্ছে বলে (আদেও নষ্ট হবে বলে মনে হয় না, কারণ ওরা দুজনই নায়ক নায়িকা, যতই টগর নামের একজন অসাধারণ চরিত্র থাকুক না কেন এই উপন্যাসে) কিছু না শুনে গোগোলের অতীত তুলে এত সাংঘাতিক কথাগুলো না বললেও পারতো। তবে পরের পর্বে সাংঘাতিক কিছু ধামাকা হতে চলেছে এটা বেশ বুঝতে পারছি, তাই অপেক্ষায় থাকলাম।  yourock

সঞ্জয় দার কথা গুলো আমারও মনে হয়েছিল। তাই ওনাকে ভুল বলা যায়না। কারণ হটাৎ করেই যেন এতটা রিয়াক্ট করে ফেললো সুজাতা। এর আগে ঝড় কি কম বয়ে গেছে ওদের ওপর দিয়ে। আজ শেষে এইটা কিনা একটা সব ভেঙে দিয়ে চলে গেলো? নারী হয়ে ওপর নারী যে কিনা তার সন্তানকে মন প্রাণ দিয়ে ভালোবাসে তার কষ্ট সহ্য করতে না পারা অবশ্যই বুঝতে পারছি। সাথে মা হিসেবে সন্তানের ও তার জীবনে আসন্ন হিয়ার সুখ নিয়ে ভাবা স্বাভাবিক আর সেখানে কোনোরকম সমস্যা আসলে মায়ের মন চঞ্চল হয়ে উঠবে সেটাও ঠিক। কিন্তু এইভাবে রিয়াক্ট করে ফেলাটা চোখে লেগেছিলো আমারও।

আমি টগরকে এখানে আনতে চাইনা। ওকে নিয়ে যা বলার আগের মতামতেই বলেছি। কিন্তু এটা ভেবে আমি কালকে এই ব্যাপারটা তুলিনি যে মাও তো নারী ও মানুষ সর্বোপরি। সেও ভুল করতে পারে। মাও তো সামান্য দোষে রেগে গিয়ে সন্তানকে একটু বেশিই শাস্তি দিয়ে দেয়। হয়তো রাগ অন্য কারোর ওপর সেটা বেরিয়ে যায় ছেলের / মেয়ের ওপর। জীবন সংগ্রামে অনবরত লড়তে থাকা সংগ্রামী মানুষটাও হয়তো এমন নিজের অন্তরে লুকানো অন্ধকারকে আজ বেরিয়ে আসতে দিয়েছে। কিন্তু সত্যিই এটা চোখে লেগেছে আমারও।

বাকি বাবা আর কিছু বলবোনা। পরের পর্বে কি একটা বোম্ব ফেলবে কে জানে লেখক  Tongue Big Grin
[+] 3 users Like Baban's post
Like Reply
(22-01-2023, 03:24 PM)Baban Wrote: সঞ্জয় দার কথা গুলো আমারও মনে হয়েছিল। তাই ওনাকে ভুল বলা যায়না। কারণ হটাৎ করেই যেন এতটা রিয়াক্ট করে ফেললো সুজাতা। এর আগে ঝড় কি কম বয়ে গেছে ওদের ওপর দিয়ে। আজ শেষে এইটা কিনা একটা সব ভেঙে দিয়ে চলে গেলো? নারী হয়ে ওপর নারী যে কিনা তার সন্তানকে মন প্রাণ দিয়ে ভালোবাসে তার কষ্ট সহ্য করতে না পারা অবশ্যই বুঝতে পারছি। সাথে মা হিসেবে সন্তানের ও তার জীবনে আসন্ন হিয়ার সুখ নিয়ে ভাবা স্বাভাবিক আর সেখানে কোনোরকম সমস্যা আসলে মায়ের মন চঞ্চল হয়ে উঠবে সেটাও ঠিক। কিন্তু এইভাবে রিয়াক্ট করে ফেলাটা চোখে লেগেছিলো আমারও।

আমি টগরকে এখানে আনতে চাইনা। ওকে নিয়ে যা বলার আগের মতামতেই বলেছি। কিন্তু এটা ভেবে আমি কালকে এই ব্যাপারটা তুলিনি যে মাও তো নারী ও মানুষ সর্বোপরি। সেও ভুল করতে পারে। মাও তো সামান্য দোষে রেগে গিয়ে সন্তানকে একটু বেশিই শাস্তি দিয়ে দেয়। হয়তো রাগ অন্য কারোর ওপর সেটা বেরিয়ে যায় ছেলের / মেয়ের ওপর। জীবন সংগ্রামে অনবরত লড়তে থাকা সংগ্রামী মানুষটাও হয়তো এমন নিজের অন্তরে লুকানো অন্ধকারকে আজ বেরিয়ে আসতে দিয়েছে। কিন্তু সত্যিই এটা চোখে লেগেছে আমারও।

বাকি বাবা আর কিছু বলবোনা। পরের পর্বে কি একটা বোম্ব ফেলবে কে জানে লেখক  Tongue Big Grin

একদমই তাই, আমি exactly এটাই বলতে চেয়েছি 

[Image: Shocked-Open-Asianpiedstarling-size-restricted.gif]

[+] 1 user Likes Sanjay Sen's post
Like Reply
(22-01-2023, 03:08 PM)Boti babu Wrote: আমাদের সবচেয়ে বড় শত্রু হলো আমাদেরই মুখ । একটা বন্দুক থেকে বেড় হওয়া গুলি যেমন ফেরত আসে না তেমনই চামড়ার মুখ থেকে বের হওয়া কথাও ফেরত নেওয়া যায় না না যতটুকু ক্ষতি করার করে ফেলেছে সুজাতার কথা গুলি। যদি বাস্তব জীবনের কথা বলি আমার দিদির সাথে একটা কথা নিয়ে একটু তর্কাতর্কি হয়েছিল আমি রাগের মাথায় কিছু উল্টাপাল্টা কথা বলেছিলাম দিদিকে , তখন আমাকে কিছু বলেনি দিদি  কিন্তু আজ সাত বছর আমাদের মাঝে কথা বন্ধ, আমারও সেই সাহস হয় না দিদির সাথে কথা বলার।  আমার উপরে রাগ করে দিদি অন্য শহরে চাকরি নিয়ে চলে গেছে । ঘরের সবার সাথে কথা বলে শুধুমাত্র আমি বাদ। আমার মত এমন কাহিনী প্রচুর পাবেন আপনার চার পাশে। 

মানুষের মন একদম কাঁচের মতো কোনও কথাতে যদি একবার ঐ কাঁচ ভেঙ্গে যায় তা আর কখনও জোড়া লাগে না । আর একমাত্র এই কাঁচ ভাঙ্গার ক্ষমতা আছে এই চামড়ার মুখের। মানুষে মানুষের মধ্যে বিভেদ এর জন্য দায়ী এই চামড়ার মুখ । কত কত সম্পর্ক শেষ হয়ে যায় এই চামড়ার মুখের জন্য আর রইলো সুজাতার কথা হয়তো গল্পের প্রয়োজনে গোগোল সুজাতাকে ক্ষমা করতে পারে কিন্তু যদি এটা গল্প না হয়ে বাস্তব জীবনের হতো তাহলে মনে হয় না কোনও দিন গোগোল ক্ষমা করতে পারতো সুজাতাকে। আর, রইলো হিয়ার কথা গোগোলের কাছে অবশ্যই হিয়া ভরসার জায়গা কিন্তু এখানেও কিছু কথা আসবে দেখাগেল সুজাতার মতো হিয়াও গোগোলকে ভুল বুঝে টগরের বাড়ি গিয়ে টগরকে অপমান করে বসলো তখন কি হবে গোগোল তখন কি ভাবে নেবে কারন টগর বা গোগোল কেউ এখনই সত্যি কথা প্রকাশ করবে না এত তাড়াতড়ি। 

প্রথম থেকেই তো আছি দাদা

হ্যাঁ, আমার উপন্যাসের চরিত্রগুলি এবং তাদের কথোপকথনের বেশ কিছু অংশ বাস্তব থেকেই তো নেওয়া। তাই আমি জানি এবং মর্ম বুঝি .. যে কটু কথা যে বলে এবং যে সহ্য করে .. এই দুটোরই। উপন্যাসের ক্ষেত্রে আগাম এইটুকুই বলতে পারি .. গোগোল কিন্তু ভীষণ অভিমানী, তার সঙ্গে টগরও .. এটা ভুললে চলবে না আমাদের। আর তোমার ব্যক্তিগত ব্যাপারে বলতে পারি বুক ঠুকে সাহস করে একবার দিদির কাছে গিয়ে বলেই দেখো না .. দিদি আমাকে ক্ষমা করে দে প্লিজ, আমি তোকে বড্ড ভালোবাসি .. ব্যাস, তারপরে দেখো কি হয়।
[+] 1 user Likes Bumba_1's post
Like Reply




Users browsing this thread: 45 Guest(s)