Thread Rating:
  • 32 Vote(s) - 2.66 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Romance অনুভূতিতে_তুমি
#1
গলার টাই টা হাত দিয়ে লুজ করে যথেষ্ঠ রাগ নিবারণ করে শান্ত গলায় বলে উঠে,
"আজ আমার আর কথার এনগেজমেন্ট'র ছিল। ড্যাড তোমার সাথে এনগেজমেন্ট'র অ্যানাউস করল কেন? 

বলেই কিছূ সেকেন্ড'র জন্য থামল নির্ঝর! আশায় আছে উওরের। কিন্তু তাকে অবাক করে দিয়ে সামনে থাকা মেয়েটা কিছু'ই বলল না। সে আগের মতোই দাঁড়িয়ে রইল। নির্ঝরের রাগ বাড়ছে। মেয়েটা তাকে ইগনোর করছে সে বেশ বুঝতে পারছে। রাগে তার হাত কাঁপছে। নির্ঝর মেয়েটার পিছনে থাকায় তাকে দেখতে পারছে না নাহলে বেশ রেগেই কথা বলতো সে! যে মেয়ে তার দিকেই ফিরে তাকাচ্ছে তার আড়ালে রাগ দেখানো অর্নথক। নির্ঝর ঠোঁট ভিজিয়ে আবারো বলে উঠে,

"আমি তোমাকে কিছু বলছি, তুমি কি আমার কথা শুনতে পারছো মিস... 

মেয়েটা সামনে ঘুরে জবাব দিল,
"মেহেরিন বর্ষা খান! 

নির্ঝর চোখ তুলে মেয়েটার দিকে তাকাল। মেয়েটার হরিণী চোখ নজর কাড়ল তার। চোখের পাতা ফেলে ফেলে মেয়েটা দেখছে তাকে। নির্ঝর মুগ্ধ হয়ে দেখছে তাকে। কিন্তু মুগ্ধ হচ্ছে কেন। আজ পর্যন্ত অনেক মেয়ে কেই দেখেছে সে কিন্তু এমন অনুভূতি আর কখনো হয় নি। কিছু কি আছে তাহলে মেয়েটার মাঝে! 

মেহেরিন ধীরে ধীরে হেঁটে নির্ঝরের সামনে দাঁড়াল। নির্ঝর এখনো দেখছে তাকে। যেন কোন এক মেঘকন্যা দাঁড়িয়ে আছে তার সামনে। সাদা রঙের একটা গ্রাউন যেন তাকে মেঘকন্যা বানিয়ে দিয়েছে। মেহেরিন নির্ঝরের মনোযোগ পাবার জন্য হালকা কাশল। নির্ঝরের ঘোর ফিরল। খানিকটা স্বাভাবিক হয়ে বলে উঠল,

"মিস..

"মিস মেহেরিন! মেহেরিন বর্ষা খান! 

"তুমি কি সেই..

"হ্যাঁ আমি'ই সেই যার সাথে আপনার এনগেজমেন্ট অ্যানাউস হয়েছে। কেন অ্যানাউসমেন্ট এ নাম শুনেন নি।

"হ্যাঁ শুনেছি কিন্তু..

"মনে রাখেন নি! কিন্তু রাখতে হবে। নিজের হবু বউ'র নাম মনে রাখতে হবে

"এক্সকিউজ মি! তুমি হয়তো জানো না কথা আমার গার্লফ্রেন্ড। আজ ওর সাথে আমার এনগেজমেন্ট আর পরবর্তীতে ওর সাথেই বিয়ে..

নির্ঝর কে কথা শেষ না করতে দিয়ে মেহেরিন বলে উঠে,
"ভুল করছেন। হয়তো কথা আপনার গার্লফ্রেন্ড ছিল তবে আপনার এনগেজমেন্ট আমার সাথেই হবে আর বিয়েও।

নির্ঝর হেসে বলে উঠে,
"তোমার মনে হয় না তুমি আমাকে জোর করছো? 

"হুম তা তো মনে হয়! 

নির্ঝর খানিকটা ভাব নিয়ে বলে উঠল,
"দেখো মিস মেহে.. Whatever! তোমার যদি আমাকে এতোই পছন্দ হয়ে থাকে তুমি আমাকে প্রপোজ করতে পারতে। সুন্দর করে হাঁটু করে গেড়ে বসে একটা গোলাপ হাতে নিয়ে প্রপোজ করতে। তখন আমি ভেবে চিন্তে দেখতাম তোমাকে হ্যাঁ বলব কি না! 

মেহেরিন ভ্রু কুঁচকে বলল,
"আপনাকে এটা কে বলল আমি আপনাকে পছন্দ করি? 

নির্ঝর থমতম খেয়ে,
"মানে? তাহলে তুমি আমাকে বিয়ে করতে চাও কেন? 

মেহেরিন ছোট করে নিঃশ্বাস ফেলে বলে,
"মিঃ নির্ঝর চৌধুরী মেঘ! ( বলেই মেহেরিন হেঁটে ঘরের কোনে থাকা টেবিলের কাছে গেল। সেখান থেকে কিছু কাগজপত্র নিয়ে নির্ঝরের সামনে দাঁড়িয়ে বলল) মেহেরিন প্রফিট ছাড়া কখনো কিছু দেখে না। তো আমাকে বিয়ে করলে আপনি খান কোম্পানির ৪০% শেয়ার পাবেন। আর আমি..

নির্ঝর কাগজের থেকে মুখ ঘুরিয়ে মেহেরিন'র দিকে তাকিয়ে বলে,
"৫০% ! মানে আর্ধেক! এটা কেন? 

"আমি আগেই বলেছি মেহেরিন প্রফিট ছাড়া কিছু দেখে না। 

নির্ঝর কিছু বলবে তার আগে মেহেরিন তাকে থামিয়ে বলে উঠে,
"রাখুন! আপনার সেই ভালোবাসা আর গার্লফ্রেন্ড কে নিয়ে কোন বাণী শুনতে চাই না। একটা কথা মনে রাখবেন খান কোম্পানি থেকে আপনাদের চৌধুরী কোম্পানি অনেকটা পিছনে। আমার সাথে এই ডিল করলে আপনাদের ক্ষতি না বরং লাভ হবে। তবে হ্যাঁ এখন আপনার সেই ভালোবাসার জন্য যদি আপনি এই ডিল হাত ছাড়া করতে চান তাহলে আমার কিছু করার নেই। কিন্তু সুযোগ বার বার আসে না। এই নিয়ে আপনার বাবার সাথে আমার বিস্তারিত কথা শেষ।

"কিন্তু আমি কথার সাথেই এনগেজমেন্ট করবো। 

"এস ইউর উইস! তবে উইস করা মন্দ না সেটা পূরণ হোক আর না হোক। 

বলেই মেহেরিন নির্ঝরের পাশ দিয়ে বের হতে নিল তখন'ই মিঃ রিদুয়ান চৌধুরী কে দেখে থেমে গেল মেহেরিন। বলে উঠল,

"মিঃ রিদুয়ান চৌধুরী! 

বাবা'র নাম শুনে পিছনে ফিরল নির্ঝর! মেহেরিন বাঁকা হেসে বলে উঠল,

"আমার যা বলার ছিল বলে দিয়েছি বাকিটা আপনি দেখুন! 

বলেই হন হন করে হেঁটে চলে গেল মেহেরিন। নির্ঝর বির বির করে বলে উঠে,
"কি অহংকারী মেয়েরে বাবা! 

রিদুয়ান চৌধুরী ঘরে প্রবেশ করে নির্ঝরের ঘাড়ে হাত রেখে বলে,
"তো কি ভাবলে!

"ভাবাভাবির কি আছে ড্যাড। আমি যখন বলেছি তখন কথার সাথেই এনগেজমেন্ট করবো।

রিদুয়ান চৌধুরী মাথা নাড়িয়ে বলে উঠে,
"আচ্ছা! খুব ভালোবাসিস মনে হচ্ছে কথা কে।

"ড্যাড, সি ইজ মাই গার্লফ্রেন্ড!

"আমি জানি, কিন্তু গার্লফ্রেন্ড কে ভালোবাসো তো।

"ভালো তো আমি ওই মেহু কি জানি যাই হোক তাকেও বাসি না তো!

"আচ্ছা নির্ঝর তোমার লাস্ট গার্লফ্রেন্ড এর নাম কি?

"হঠাৎ এই কথা কেন জিজ্ঞেস করছো? 

"বলো না!

"হাম লাস্ট গার্লফ্রেন্ড কি জানি নাম তমা, ইশা না না না আশা মেবি..

রিদুয়ান নির্ঝরের মাথায় বাড়ি মেরে বলে,
"তমা ইশা আশা লাস্ট গার্লফ্রেন্ড হলে কথার সাথে কেন এনগেজমেন্ট করছিস!

নির্ঝর জিহ্বা কেটে বলে,
"ওহ হ্যাঁ হ্যাঁ কথা। লাস্ট গার্লফ্রেন্ড তো কথা নাহলে আমি ওর সাথে কেন এনগেজমেন্ট করছি। হ্যাঁ হ্যাঁ ঠিক বলেছ! 

বলেই হাসল নির্ঝর। রিদুয়ান ছেলের সাথে হেসে বলে উঠে,
"তা বর্তমান গার্লফ্রেন্ড এর নাম কি? 

নির্ঝর হাসতে হাসতে বলল,
"ওটা তো অনামিকা! 

রিদুয়ান চৌধুরী নির্ঝরের গলার টাই ঠিক করে দিয়ে বলে,
"বাহ লাস্ট গার্লফ্রেন্ড একজন আর বর্তমান গার্লফ্রেন্ড আরেকজন! 

নির্ঝর এবার চুপ হয়ে বাবার দিকে তাকিয়ে বলে,
"তুমি এভাবে কেন কথা পেঁচিয়ে যাচ্ছো ড্যাড। হ্যাঁ মানছি আমার অনেক গার্লফ্রেন্ড কিন্তু আমি তো তোমারই ছেলে বলো। কিন্তু প্লে বয় না। একদম না! 

"না তা হবে কেন? তুমি তো আমার ছেলে। মেয়েরা সবসময় তোর পিছনে পিছনে ঘুরে, ফ্লার্ট করে আর তুমিও পাত্তা দাও।

"তুমি ঠিক কি বলতে চাইছো তাই বলো।

"শোন নির্ঝর, তুমি আমার ছেলে তো। আমি চিনি তোমাকে ভালোমতো। তুমি কথার সাথে এনগেজমেন্ট করছো ঠিক আছে কিন্তু তাকে এই জন্মেও বিয়ে করবে না সেটা আমি ভালো করেই জানি। 

"ড্যাড, তাই তুমি চাইছো আমি এই অহংকারী মেয়ে কে বিয়ে করে ঘর সংসার করি! 

"ঠিক ধরেছো!

"যেমন দাদা করেছিল তোমার সাথে! 

রিদুয়ান সাহেব হেসে ছেলের দিকে তাকাল। নির্ঝর বিরক্ত মুখে বলে উঠল,
"ড্যাড এটা ঠিক না, দাদা তোমার সাথে যা করেছে এটার রাগ তুমি আমার ওপর ঝাড়তে পারো না।

"পারি পারি আরো অনেক কিছুই পারি। আমার বাবা আমাকে যা বলেছিল আমি সেটাও বলছি তোমায়। মেহেরিন কে বিয়ে না করলে আমি তোমাকে ত্যাজ্য পুত্র করব।

বলেই হেসে বেরিয়ে গেলেন রিদুয়ান। নির্ঝর পেছন থেকে অনেকবার ডাকল কিন্তু তার বাবা কিছুই শুনলেন না। 
.
নির্ঝর রেগে ঘর থেকে বের হতেই থেকে কথা দাঁড়িয়ে আছে। তার চোখে অশ্রু ঝলঝল করছে। নির্ঝর কি বলবে বুঝে উঠতে পারছে না। কথা বলে উঠে,
"তুমি তাহলে ওই মেয়ের সাথেই এনগেজমেন্ট করছো। 

"কথা আমি..

"তাহলে আমাকে আর আমার পরিবার কে ডেকে এনে এভাবে অপমান কেন করলে তুমি নির্ঝর! 

"আমি নিজেও জানতাম না ওর সাথে আমার এনগেজমেন্ট হবে।

"তুমি আমাকে এভাবে ঠকালে।

"কথা আমার কথা তো শোন ইয়ার..

কথা কিছু না বলেই দৌড়ে চলে গেল। নির্ঝর তার পিছনে দৌড়াল না। সে সেখানেই দাঁড়িয়ে ভাবতে লাগাল। কি করবে সে? এনগেজমেন্ট করে ফেলবে মেহেরিন কে নাকি করবে না। কিন্তু মেহেরিন কে এনগেজমেন্ট না করলে ড্যাড তাকে ত্যাজ্য পুত্র করবে। তখন এসব গাড়ি, বাড়ি টাকা পয়সা কিছুই পাবে না সে। বিলাসিতা ছাড়া যার এক মুহুর্ত চলে না এসব ছেড়ে সে থাকবে কি করে? 

অনেক ভেবে নির্ঝর একটা সিদ্ধান্তে পৌঁছাল। অতঃপর নিচে নেমে এলো সে। সবাই তার'ই অপেক্ষা করছে। তাকে নামতে দেখে হাততালির আওয়াজে চারদিক মুখরিত। মেহেরিন স্টেজে দাঁড়িয়ে আছে। তার পাশে তার বাবা আর মা। মা কে বেশ খুশি খুশি লাগছে এর মানে তার মাও রাজি। সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামতেই ফরহাদ, ঈশান, আরিফ তার দিকে তাকিয়ে হাসল। এ হাসির মানে সে জানে। বন্ধুরা মজা করছে তাকে নিয়ে। করবে না'ই বা কেন? যে নির্ঝর এতোদিন মেয়েদের কে তার পিছনে ঘুরিয়েছে আজ সেই নির্ঝর কেই একটা মেয়ে এভাবে হারিয়ে দিল। এটা ভাবতেই রেগে যাচ্ছে সে। 
.
নির্ঝর ভেবেছিল কথা চলে গেছে। কিন্তু না এই মেয়ে যায় নি। সে এখনো আছে, শেষটা দেখে তারপর'ই যাবে সে। নির্ঝরের হাতে একটা আংটি যেটা সে পড়িয়ে দিবে মেহেরিন'র হাতে। অদ্ভুত বিষয় ছিল এটা সে আংটি না যেটা সে আর কথা কিনেছিল। নির্ঝর একবার তাকাল কথার দিকে। ভাবছে এখন'ই চলে যাবে তার কাছে। আংটি টা পড়িয়ে দিবে তার হাতে। বেশ হবে এই মেয়েটা তখন অপমানিত হবে। নির্ঝর একপা এগিয়ে স্টেজ থেকে নামতে যাবে ওমনি মেহেরিন ওর হাত ধরে ফেলল। সে হেসে বলে উঠল,

"আংটি টা না হয় আমিই আগেই পরিয়ে দেই! 

বলেই নির্ঝরের অনামিকা আঙ্গুলে আংটি পড়িয়ে দিল। নির্ঝর ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে। মেহেরিন নির্ঝরের ঘাড়ে এক হাত রেখে কানের কাছে গিয়ে বলে,

"আশেপাশে কিন্তু প্রেস এর লোকজন। নিজেকে হাসির পাত্র না করতে চাইলো চুপচাপ আংটি পরাও।

 নির্ঝর কিছু না বলে পাশে তাকিয়ে দেখে কথা নেই। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে মেহেরিন'র অনামিকা আঙ্গুলে পরিয়ে দিল আংটি টা। সবাই হাততালি দিল। মেহেরিন আংটির দিকে তাকিয়ে বাঁকা হেসে নির্ঝরের দিকে তাকাল। নির্ঝরের মনে হলো মেহেরিন যেন তাকে বলছে সে হেরে গেছে। হঠাৎ করেই নির্ঝর হেসে উঠলো। হুট করেই মেহেরিন'র হাত খানা ধরে চুমু খেল। উপস্থিত সবার হইহুল্লোড় বেড়ে গেল। নির্ঝর চোখ টিপ দিয়ে মেহেরিন কে দেখল। মেহেরিন দ্রুত হাত সরিয়ে নিল। অতঃপর পরের মাসে বিয়ের তারিখ অ্যানাউস করল সে।
.
ছাদের গ্রিলে ঠেসে দাঁড়িয়ে বিয়ার খাচ্ছে নির্ঝর। তাকিয়ে আছে অন্ধকার আকাশের দিকে। আরিফ আর ঈশান ওর পাশে দাঁড়িয়ে বিয়ার খাচ্ছে। আরিফ বলে উঠে,

"ব্যাপারটা কি বল তো। তোর বাবা হঠাৎ করে এমন পল্টি মারল কিভাবে? 

নির্ঝর বিয়ারের বোতল মুখে দিয়ে বলে উঠে,
"জানি না। এইসব ওই মেয়ের ধান্দা বাজি বুঝলি। খুব চালাক মেয়েটা।

"তুই কি মেহেরিন'কে বলছিস।

"হ্যাঁ ওই মেহেরিন!  

ঈশান নির্ঝরের ঘাড়ে হাত রেখে বলে,
"আর যাই বল এই মেয়েটা অবশেষে জব্দ করল তোকে। কিভাবে নিজের কাজ করিয়ে নিল দেখলি! 

"নির্ঝর চৌধুরী অবশেষে জব্দ হলো কোন মেয়ের কাছে।

"ধরা খেলো অবশেষে কারো কাছে। 
নির্ঝর রেগে বিয়ারের বোতল মুখে দিল। অতঃপর বলে উঠে,

"দেখো নেবো ওই মেয়েকে। খুব শখ না নির্ঝর চৌধুরী কে বিয়ে করবে। ওর বিয়ের সাধ মিটিয়ে দেব আমি। 

আরিফ বলে উঠে,
"কথাকে নিয়ে কি ভাবলি।

"এতো ভাবার কি আছে। আমি কি ওকে কখনো এনগেজমেন্ট করতে চেয়েছি নাকি। এ তো সারাদিন কানের কাছে ঘ্যান ঘ্যান করছিল বলে রাজি হলাম। ভেবেছিলাম একদিন কিছু একটা করে ব্রেকাপ করে নেবো। ব্যাস কাজ হয়ে যেত। কিন্তু মাঝখানে... 

ঈশান হেসে বলে উঠে,
"মাঝখানে তোর বাড়া ভাতে ছাই ফেলল মেহেরিন বর্ষা খান! 

"এই থাম তো। ফরহাদ কোথায় দেখছি না যে।

"নিচে গেছে আসবে!

বলতে বলতে দৌড়াতে দৌড়াতে ফরহাদ চলে এলো। টেবিলের কাছ থেকে বিয়ারের বোতল টা নিয়ে নির্ঝরের কাছে গেল। অতঃপর বলে উঠল,

"সরি সরি লেট হয়ে গেছে। আচ্ছা নে চিয়ার আপ কর।

"কিসের? 

"আগে করতো বলছি! 

অতঃপর সবাই বোতল একসাথে করল। ফরহাদ বলল,

"চিয়ার! নির্ঝরের বাবা হবার খুশিতে!

নির্ঝর নিজের বোতল মুখের কাছে নিয়ে মুখের ভেংচি কেটে বলে,
"বিয়েই হলো না আসছে বাবা হবার খুশিতে ধ্যাত! 

ফরহাদ বিয়ারের বোতল মুখে দিয়ে বলে,
"এটাই তো! তুমি বিয়ে করার সাথে সাথেই বাবা হচ্ছো। 

আরিফ বলে উঠে,
"এর মানে! 

ফরহাদ নির্ঝরের ঘাড়ে হাত রেখে বলে,
"ব্রো! এখন থেকেই বাবা ডাক শোনার প্রস্তুতি নাও! মেহেরিন বর্ষা খানের অলরেডি একটা ছেলে আছে! 

নির্ঝর সবে বিয়ারের বোতল টা মুখে দিয়েছিল। ফরহাদের কথা শুনে সে বিষম খেল। কোনমতে নিজেকে সামলিয়ে বলে উঠে,

"কিহহহ!

#চলবে..

#অনুভূতিতে_তুমি


#সুচনা_পর্ব
[+] 3 users Like Manjarul Haque's post
Like Reply
Do not mention / post any under age /rape content. If found Please use REPORT button.
#2
#পর্ব_২

বসার ঘরে সোফায় আধশোয়া অবস্থায় নির্ঝর গুনছে,
"১৮, ১৯ , ২০ ,২১..

নীলিমা নির্ঝরের দিকে একবার তাকিয়ে ডাইনিং টেবিলের কাছে গিয়ে বলে,
"এতো পড়াশোনা করছিস তুই বাহ! 

নীলিমার ডাক শুনে নির্ঝর আধশোয়া থেকে উঠে আসন পেতে বসে জিজ্ঞেস করে,
"আচ্ছা মম্ ওই মেয়েটার বয়স কত? 

"কোন মেয়ে? 

"ওই যে মেহু না মেহের?

"মেহেরিন! 

"হুম হুম।

"নিজের হবু বউয়ের নামটা কি মনে রাখতে পারিস না।

"এতো বড় নাম কিভাবে মনে রাখবো। ছোট করে দুই অক্ষরের নাম হলেই তো হতো। এই ধরো মেহু! 

"হ্যাঁ তাই তো, তোকে তো আবার হাজার টা মেয়ের নাম মনে রাখতে হয়।

"মম!

"কি? 

"বলো না ওর বয়স কত? 

"শুনেছি গত মাসে ২৩ এ পা দিল কেন? 

"তাহলে পাঁচ বছরের একটা ছেলে থাকলে ওর বয়স তখন হবে ‌হুমম ১৭ তার মানে কি এই মেয়ে পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করেছিল।

নীলিমা গ্লাসে পানি ঢেলে বলে,
"কি বলছিস এইসব আবোল তাবোল। 

নির্ঝর উঠে টেবিলের কাছে এসে একটা আপেল হাতে নিয়ে বলে,
"তোমার হবু বউ মা পালিয়ে গিয়ে একবার বিয়ে করেছিল বুঝলে! 

"একদম ফালতু কথা বলবি। আমার বউ মা তোর চেয়ে ভালো। লাখে একটা বুঝলি।

নির্ঝর বিড় বিড় করে বলে,
"হ্যাঁ যখন শুনবে পাঁচ বছরের একটা ছেলে আছে তখন'ই হবে

"এই কি বলছিস তুই বিড় বিড় করে।

"তোমার হবু বউ'র কান্ডকারখানা। খুব মাথায় রাখছো না তাকে।

"নির্ঝর! 

"কি মম! আচ্ছা আমাকে এটা বলো তো তুমি তো জানতে না ওর একটা পাঁচ বছরের ছেলে আছে। 

"কি? কি বললি তুই! 

"মানে? তুমি জানো না ওর একটা ছেলে আছে।

"কার ছেলে?

"মেহুর ছেলে! ওর নিজ ছেলে যাকে নিয়ে সে এখন থাকছে! 

মূহুর্তে'ই নীলিমার মুখটা মলিন হয়ে গেল। হাতে থাকা পানির গ্লাস টা ধপ করে পড়ে গেল নিচে। সে বিষ্ময় গলায় বলে উঠল,

"কি বললি তুই! মেহেরিন'র ছেলে!
.
রিদুয়ান চৌধুরী গাড়ি পার্ক করে বাড়িতে সবে ঢুকেছে। নীলিমা বসার ঘরে সোফায় বসে আছে। তার প্রেসার বেড়ে গেছে।‌ ডাক্তার চেকাপ করছে। রিদুয়ান চৌধুরী নীলিমার কাছে বসতেই নীলিমা গরম চোখে তাকাল তার দিকে। নির্ঝর বলে উঠে,

"মম মাথা ঠান্ডা কর, তোমার প্রেসার হাই! 

নীলিমা কিছু না বলে মাথা ঠান্ডা করতে লাগল। রিদুয়ান কিছু জিজ্ঞেস করতে গিয়েও করল না। অতঃপর ডাক্তার যাবার পর রিদুয়ান চৌধুরী নীলিমার হাত ধরতেই নীলিমা হুট করেই হাত সরিয়ে ফেলল। নির্ঝর হেসে বলে উঠে,

"আহ গরম ছ্যাক লাগলো।

নীলিমা রেগে বলে,
"তুই চুপ কর!

"আরে আজব তো, অন্যের রাগ আমাকে দেখাচ্ছ কেন? 

রিদুয়ান ভ্রু কুঁচকে বলে,
"কার রাগ কিসের রাগ! 

নীলিমা বলে উঠে,
"এমন ভাব করছো যেন কিছুই জানো না। 

"কি হয়েছে সেটা তো বলবে!

"ওহ এখন আমাকেই তাহলে বলতে হবে কি হয়েছে?

রিদুয়ান নির্ঝরকে উদ্দেশ্য করে বলে,
"আবার তুমি কি করলে? 

নির্ঝর হতবাক হয়ে বলে উঠে,
"আমি কি করলাম, আমার উপর কেন দোষ দিচ্ছ? আমি কি বলেছি নাকি এই মেয়ে কে বিয়ে করব!

নীলিমা দাঁতে দাঁত চেপে বলে উঠে,
"নির্ঝর করে নি যা করার নির্ঝরের ড্যাড করেছে।

"সেটাই বলো না কি করেছি। 

"কি করেছ? আচ্ছা আমাকে বলো তো আমার ছেলেটার এত বড় ক্ষতি তুমি কিভাবে করলে। ওতো তোমার নিজের ছেলে।

"সেটা তো আমিও জানি। এখন কি ডিএনএ টেস্ট করবো।

"তুমি..

"এই আসল কথা বলো কি হয়েছে? তোমার প্রেসার হাই যখন মাথা ঠান্ডা হবে তখন ঝগড়া করো।

নির্ঝর হেসে নীলিমার কাঁধে হাত রেখে বলে,
"হ্যাঁ মম তুমি আগে মাথা ঠান্ডা করো। তারপর কথা বলো। 

নীলিমা নির্ঝরের দিকে একবার তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে রিদুয়ান'র দিকে তাকিয়ে উষ্ণ গলায় বলে,
"মেহেরিন'র একটা ছেলে আছে তুমি জানতে! 

নীলিমার কথার উওর না দিয়ে রিদুয়ান চৌধুরী উঠে দাঁড়াল। হাতের ঘড়ি খুলতে খুলতে বলে,
"এই কথা! 

"এই কথা! তুমি এই কথা বলছো। শেষমেষ এমন একটা মেয়ের কাছে নিজের ছেলে কে বিয়ে দিবে তুমি! 

নির্ঝর রিদুয়ান চৌধুরী আর নীলিমার এমন কথার ধারায় বুঝতে পারল তার বিয়ে ভাঙতে চলেছে। এসব ভেঙে একটা বাঁকা হাসি হাসলো সে। এদিকে রিদুয়ান কথা না বাড়িয়ে ঘরের দিকে চলে গেল। নীলিমাও রিদুয়ান'র পিছনে পিছনে রেগে রেগে ঘরের দিকে গেল। ধপাস করে দরজা আটকানোর শব্দ পেয়ে নির্ঝরের হাসিল রেখা দীর্ঘ হলো। সে এবার নিশ্চিত বিয়ে ভাঙতে চলেছে। সে আস্তে আস্তে দরজার কাছে গিয়ে কান পেতে শুনতে লাগল নীলিমা বলছে,
"তুমি শুনে রাখ আমার কথা, আমি এই মেয়ের সাথে কখনোই আমার ছেলের বিয়ে দিবো না। এমন মেয়েকে বিয়ে করার চেয়ে আমার ছেলে আজীবন কুমার থাকবে সমস্যা নেই। বুঝলে তুমি! কি তুমি কি শুনছো আমার কথা। এই বিয়ে ভেঙে দাও তুমি! 

নির্ঝর এইসব কথা শুনে খুশিতে নাচতে লাগলো। এক হাত দিয়ে অন্য হাতের ঘাড়ে বাহবা দিয়ে বলতে লাগলো,
"বাহ নির্ঝর বাহ, তুই তো চুটকি বাজিয়ে বিয়ে ভেঙে দিলি। তাও একদিনে! 

অতঃপর আংটির দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে 
বলে,
"তোমার মেয়াদ একদিন'ই ছিল গো! 
বলেই হেসে দিল তবে আওয়াজ করল না। একটা বিয়ারের বোতল নিয়ে ঘরে এসে লাউড স্পিকারে গান ছাড়ল সে। সে গানের তালে তালে বিছানায় দাঁড়িয়ে লাফাতে লাফাতে লাগলো। 

খানিকক্ষণ বাদে দরজার কাছে নীলিমা কে দেখে থামল সে। বিয়ারের বোতল টা রেখে গান বন্ধ করল। নীলিমার কাছে গিয়ে তাকে ধরে ঘুরতে লাগল। ছেলের এমন কর্মকান্ডে চমকে উঠলেন নীলিমা। কোনমতে নির্ঝর কে থামিয়ে বলল,

"ছেলে মানুষী কবে কমবে তোর নির্ঝর, তুই কি এখনো ছোট আসিস।

"মম সব মা বাবা দের কাছে তার ছেলে মেয়েরা ছোট'ই থাকে। আচ্ছা শোন আমি এখন বাইরে যাচ্ছি। 

"এতো রাতে কেন?

"বন্ধুদের পার্টি দিতে হবে না।

"কিসের খুশিতে?

নির্ঝর একগাল হেসে বলে,
"আসলে মানে বিয়ে ভেঙেছে এই খুশিতে!

নীলিমা কোমরে হাত রেখে বলে,
"তোকে কে বলল বিয়ে ভাঙছে। তোর বিয়ে হবে আলবাদ হবে।

নির্ঝর ভ্রু কুঁচকে বলে,
"বিয়ে হবে মানে,‌ অন্য মেয়ের সাথে কি তাহলে বিয়ে হবে। মানে তোমরা মেয়ে দেখছো। না মম প্লিজ আমার এখন বিয়ে করার কোন ইচ্ছে নেই। এখন কি আমার বিয়ের বয়স বলো।

নীলিমা হেসে নির্ঝরের শার্টের কলার ঠিক করে বলে,
"না বিয়ে করার না বরং তোর বাচ্চা দের নিয়ে ঘোরার বয়স। তাদের আইসক্রিম খাওয়াবি, মার্কেটে নিয়ে যাবি, পার্কে গিয়ে খেলবি তখন তো বুঝতে পারবি একজন বাবার কর্তব্য! 

"কি বলছো মম এইসব। 

"যা বলছি ঠিক বলছি। তোর বিয়ে আমার মেহেরিন মা'র সাথেই হবে ঠিক আছে , আর বিয়ের আগে ছেলেদের রাত বেরাতে বাইরে যেতে নেই। তাই তুইও এখন যাবি না বুঝলি ঘরেই থাকবি।

"বিয়ে হবে মানে, তুমি না একটু আগে বললে বিয়ে ভেঙে দিবে। এই বিয়ে হতে দিবে না।

"বলেছিলাম! 

"হ্যাঁ আমি নিজের কানে শুনেছি!

"হতে পারে, কিন্তু এখন মত পাল্টে ফেলেছি। আমার বাড়ির বউ মেহেরিন হবে। 

"মম আমি না তোমার নিজের ছেলে।

"সতীনের ছেলে হলেও ওর সাথেই তোর বিয়ে দিতাম।

"মম আমি বিয়ে করব না।

"করবি করবি...

বলেই ঘর থেকে বের হতে নিল নীলিমা। পেছন থেকে নির্ঝর বলছে,
"মম তুমি আর ড্যাড কিন্তু এসব ঠিক করছো না। আমি বলছি বিয়ে করবো না এই মেয়ে কে। তুমি তোমার ছেলের জীবনটা এভাবে নষ্ট করে দেবে।

নীলিমা কিছু না বলেই চলে যেতে লাগল। নির্ঝর বলে উঠে,
"বিয়ের রাতে কিন্তু আমি পালিয়ে যাবো বলে দিলাম।

নীলিমা পিছনে না ঘুরেই বলে,
"ব্যাংক অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেব।

"মম এটা ঠিক না।

নীলিমা পিছনে ঘুরে বলে,
তোমার বিয়ে মেহেরিন'র সাথেই হবে। আর হ্যাঁ তোমার ছেলের নাম হলো অর্ণব! বাহ নামটা কিন্তু বেশ। নীলিমার গ্রান্ডসন অর্ণব! 

"এই মেহেরিন তোমার মাথা খেয়ে নিয়েছে! 

বলেই ধপাস করে দরজা বন্ধ করে দিল। বিয়ার নিয়ে বিন ব্যাগে বসে রইল। হুট করেই ফোনটা বেজে উঠলো। তাকিয়ে দেখে কথার নাম্বার। ইচ্ছে করেই উঠালো না তবে কাটলোও না। কেটে দিলে হাজারো কাহিনী করবে। তার চেয়ে বরং বাজতে থাকুক। ফোনের রিংটোন শুনতে খারাপ লাগছে না। কিছুক্ষণ বাজার পর'ই থেমে গেল। নির্ঝর উঁকি দিয়ে তাকিয়ে বলে,

"১ , ২ ,৩ .... 

আবারো বাজতে লাগাল। কথা'ই কল করেছে আবারো। নির্ঝর এবার রিংটোন'র তালে তালে মাথা নাড়ছে আর বিয়ার খাচ্ছে। নিজেকে পাগল পাগল লাগছে। উফ এই মেহু মেয়েটা পাগল করে ছাড়বে তাকে। কয়েকবার বাজল ফোন কিন্তু নির্ঝর ফোন তুলল না। এরপর'ই মেসেজ'র রিংটোন বাজতে লাগাল। টুং টুং শব্দ হয়েই যাচ্ছে। কথা এক নাগাড়ে মেসেজ দিচ্ছে। দেক তার কি! নির্ঝর একবার চোখ বুলিয়ে দেখল কথার মেসেজ স্কিনে ভেসে উঠেছে। নির্ঝর ফোনটা হাতে তুলে দেখল তাতে লেখা,

"কথা বলতে চাই তোমার সাথে প্লিজ কলটা ধরো! 

নির্ঝর বাঁকা হেসে ফোনটা যেখানে ছিল সেখানেই রেখে দিল। তার বেশ মজা লাগে মেয়েরা এভাবে তার পিছনে ঘুরলে। তার জন্য কষ্ট পেল। কেন জানি খুব আনন্দ পায় সে। আজও পাচ্ছে। সে চোখ বন্ধ ধরে বসে রইল। মেসেজ বা কল কিছুই আসছে না। কি হলো কথা কি তাহলে হাঁফিয়ে উঠল। কিন্তু নির্ঝর হাঁফিয়ে উঠি নি। ভেবেছিল আরো কয়েকবার মেসেজ করবে সে! 

হুট করেই কল বেজে উঠলো। নির্ঝর আবারো বাঁকা হেসে ফোনের দিকে তাকাল। নিশ্চিত কথা ধৈর্য্য হারিয়ে আবারো কল করছে। তার অবশ্য বেশ মজাই লাগছে। কিন্তু না! এবারের কল কথা করে নি। ফোনের স্কিনে বেব নামটা ভেসে উঠলো। নির্ঝর কলটা রিসিভ করার উদ্দেশ্যে ফোনটা হাতে নিল। এটা অনামিকার কল। 
অনামিকা হলো সেই মেয়ে যে কি না সুন্দরী মেয়েদের তালিকা থাকলে ২ - ৫ এর মধ্যে থাকতো বলে নির্ঝরের ধারনা। নির্ঝর আজ পর্যন্ত কোন মেয়েকেই সুন্দরী মেয়ের তালিকায় ১ দেই নি। কখনো দিবে কি না তাও ভাবি নি। যত সুন্দরী হোক না কেন কিন্তু তার কাছে মনে হয় সে ১ এ থাকবার যোগ্যতা নেই। আচ্ছা এই তালিকার মাঝে মেহু কে কি আনবে। তাকে আনলে কত নাম্বারে দিবি সে! সে না হয় পরে ভাবা যাবে এখন অনামিকার কল তুলতে হবে। এই মেয়েটা একটু বেশিই চালাক। তবে তার থেকে না। কিন্তু মেহু কে তার নিজ থেকে একটু বেশিই চালাক বলে মনে হয়। 

"হ্যালো বেব! 

"রাখো তোমার বেব, কল রিসিভ করতে এতোক্ষণ লাগে।

"লাগে লাগে ফোনের কাছে না থাকলে লাগে।

"তা ফোনের কাছে না থেকে কার কাছে ছিলে? নিজের হবু বউয়ের কাছে।

"সেটা কিভাবে হবে? তুমি তো আমার কাছেই নেই।

"ধান্দাবাজি ছাড়ো। আমাকে তো বলেছিলে বাবা জোর করে নাকি কথা'র সাথে তোমার এনগেজমেন্ট করিয়ে দিচ্ছে! তুমি বলেছিলে কিছুদিন তোমাকে সময় দিতে তাহলে এই এনগেজমেন্ট হবার পর ও তুমি তা ভেঙ্গে ফেলবে।

"হ্যাঁ বেব। আমি তো তোমাকে এখনো তাই বলছি! 

"তুমি মিথ্যে বলছো। এনগেজমেন্ট তো কথার সাথে হয় নি। হয়েছে মেহেরিন বর্ষা খান'র সাথে

"সে যার সাথেই হোক না কেন আমি ভেঙে ফেলবো।

"নির্ঝর এটা কাঁচ না যে ফেলে দিবে আর ভেঙে যাবে।

"বেব! তোমার আর আমার মাঝে যা আসবে সেসব দেওয়াল না কাঁচ'ই হবে।

"তবে এই কাঁচ মেহেরিন বর্ষা খান। তুমি ভেঙ্গে ফেললেও তার উপর হাঁটতে পারবে না । তার আগেই তোমার পায়ে ঢুকে ছিন্নভিন্ন করে দিবে তোমায়।

"একটু বেশিই জানো দেখছি ওই মেয়ের ব্যাপারে।

"জানা লাগবে! কারন আমাদের ব্যবসায়িক সম্পর্ক আছে তার সম্পর্কে! আমার বাবা'র সাথে যত'ই ভালো সম্পর্ক থাকূক না কেন আমার বাবা তবুও তাকে ভয় পায়। যখন তখন কোন কিছু করে ফেলতে পারে এই মেয়ে! 

"বেব! ভালো লাগছে না আর আমার। সত্যি একটুও ভালো লাগছে না। সারাদিন এই মেয়ের ঘ্যান ঘ্যান আমি অতিষ্ট! দয়াকরে তুমি চুপ করো।

"তো কি শুনতে চাইছো তুমি!

"আই লাভ ইউ! 

ওপাশ থেকে একটা দীর্ঘশ্বাস'র শব্দ হলো। নির্ঝর অপেক্ষায় আছে অনামিকার গলার স্বর শোনার জন্য। অবশেষে ওপাশ থেকে উওর এলো,

"নির্ঝর! আই ওয়ান্ট টু ব্রেকআপ উইথ ইউ

"ওয়াট! আর ইউ ক্রেজি! 

"না আমি ঠিক'ই আছি।

"তাহলে, তাহলে ব্রেকাপ কেন করতে চাইছো।

"কারন মেহেরিন বর্ষা খান'র সাথে আমি পারবো না।

"আরে বেব তুমি শোন তো আমার কথা।

ওপাশ থেকে ততোক্ষণে কল কেটে গেছে। নির্ঝরের কানে কল কেটে যাবার শব্দ হলো। তবুও সে ডেকেই যাচ্ছে,

"বেব! বেব শোন! 

নির্ঝর বিরক্ত হয়ে বলে উঠল,
"ধ্যাত! 

এর মাঝেই ফোন আবারো বেজে উঠলো। অনামিকা কল করেছে ভেবে নির্ঝর দ্রুত রিসিভ করে কানে দিয়ে বলল,
"বেব, বেব আমার কথাটা একবার শোন..

"কেউ কল করলে আগে চেক করে কল রিসিভ করতে হয় মিঃ নির্ঝর! এটা কি আপনি জানেন না!

"কে? 

"আর যেই হই না কেন আপনার বেব না।

"মেহু...

"বাহ চিনতে পেরেছেন। এতোটা তাড়াতাড়ি চিনবেন আশা করি নি। অনেক মেয়ের সাথে কথা বলার কারনে গলার স্বর একটু এদিক ওদিক হবে ভেবেছিলাম।

"কি জন্য ফোন করেছ তাই বলো!

"আগামীকাল এসে আমার সাথে একবার দেখা করবেন।

"কেন?

"নিশ্চিত দরকার আছে তাই।

"বাসার অ্যাড্রেস দাও!

"বাসার না অফিসের দিচ্ছি, একটু পরেই মেসেজ চেক করবেন। আগামীকাল সকাল ১১ টায় এসে দেখা করবেন। ঠিক সকাল ১১ টায়।

"দেরি হলে? 

"তখন না হয় দেখে নিবেন! 

নির্ঝর কিছু বলতে যাবে টুং টুং শব্দ হলো। লাইন আবারো কেটে গেছে। নির্ঝরের খুব রাগ হচ্ছে। এমনটা কখনো হয় না তার সাথে। আজ পর্যন্ত কোন মেয়ে তার কল এভাবে কাটে নি। আজ প্রথমদিন এটা হলো। তাও দু দুবার। এসবের জন্য মেহেরিন কেই দায়ী করছে সে। মাথা গরম হচ্ছে। মাথা ঠান্ডা করার জন্য কিছুক্ষণের জন্য চোখ বন্ধ করল। 

অতঃপর একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে মেঝেতে শুয়ে পড়ল সে। চোখ বন্ধ করে উষ্ণ কন্ঠে বলে উঠল,
"এই মেহু আমার জীবনে আসতে না আসতেই সব কিছু নষ্ট করে দিচ্ছে। মনে হচ্ছে কোন ঝড় এসে আমার সাজানো জিনিস এলোমেলো করে দিচ্ছে। আর যাই হোক এই মেহু কে আই ছাড়বো না। নির্ঝর চৌধুরী মেঘ কখনো কারো ঋণ রাখে না। শোধে আসলে সমস্ত কিছু ফেরত দেবো তোমায়। আই প্রমিস ইউ দ্যাট মেহেরিন বর্ষা খান! তুমি আমায় যা দিয়েছ তার দ্বিগুণ পাবে তুমি! 
ফোনে আবারো টুং টুং শব্দ। মেহেরিন মেসেজ দিয়েছে তাকে। 

#চলবে....
[+] 1 user Likes Manjarul Haque's post
Like Reply
#3
#পর্ব_৩

সূর্য আকাশে উঁকি দিয়েছে অনেকক্ষণ আগে। ঘরটা পর্দা দিয়ে ঢাকার কারনে আবছা আবছা আলো এসে ঢুকছে রুমে। চারদিক নিরব শান্ত। মালি হয়তো ফুলের গাছে পানি দিচ্ছে। সেই আওয়াজ কানে এসে ভাসছে! রুমটার নিচেই বাগান। ঘুম ভেঙেছে খানিকক্ষণ আগেই কিন্তু চোখ মেলতে চাইছে না। এলার্ম ঘড়ির আওয়াজে চোখ মেলে তাকানোটা এখন অভ্যাস হয়ে গেছে। দু'চোখ বুঝে শুয়ে আছে। কারো নড়াচড়া'র শব্দ আসছে কানে। বিছানা থেকে কেউ নিচে নামছে। কে? অর্ণব বুঝি! সে ছাড়া কে আর আছে এই রুমে! 

পর্দা সরানোর আওয়াজ এলো। আলো এবার সম্পূর্ন ঘরে প্রবেশ করল। চোখের দু পাতা মিন মিন করতে লাগল। অর্ণব আবারো এসে বসল বিছনায়। ছোট ছোট্ট হাত দিয়ে মেহেরিন'র গালে হাত রাখল। চোখ মিনি মিনি করছে তার। নিজের দুই উষ্ণ ছোট ঠোঁট দ্বারা চুমু খেলো মেহেরিন'র মাথায়। বলে উঠল,

"গুড মর্নিং মাম্মি! 

মেহেরিন চোখ না মেলেই হালকা হাসল। ঘড়ির এর্লাম বাজতেই চোখ মেলল সে। চোখ মেলে প্রথমেই তার চোখে পড়ল অর্ণবের স্নিগ্ধ হাসি টা! কি মায়াবী হাসি এটা! মেহেরিন'র মুখেও হাসি ফুটল। সে ওঠে অর্ণব এর মাথায় হাত বুলিয়ে কোলে তুলে নিল তাকে। মাথায় একটা চুমু খেয়ে বলল,

"গুড মর্নিং অর্ণ সোনা! তা আজ তো তুমি মাম্মীর আগে ঘুম থেকে উঠে গেল।

অর্ণব মাথা নাড়ল। মেহেরিন অর্ণবের দু গাল আলতো করে ধরে হাসল। দরজায় কেউ কড়া নাড়ল। মেহেরিন'র অনুমতি পেয়ে ঘরে এলো সে। 

"মিস মারিয়া! 

"ইয়েস ম্যাম! 

"অর্ণব কে নিয়ে ফ্রেস করিয়ে দিন আমি আসছি! 

"ইয়েস ম্যাম! 

মেহেরিন অর্ণবের দিকে তাকিয়ে বলল,
"অর্ণ তুমি মিস মারিয়ার সাথে যাও। মাম্মী আসছি! 

বাধ্য ছেলের মতো আবারো মাথা নাড়ল সে। মিস মারিয়া এসে কোলে করে নিচে নামাল তাকে। তার পড়নে সাদা রঙের নাইট ড্রেস টা বেশ মানিয়েছে তাকে। সাদার মাঝে কার্টুনের বেশ কিছু আঁকাআঁকি করা। 
অর্ণব যেতেই মেহেরিন বিছানা থেকে নামল। ফ্রেস হয়ে নিচে বাগানে গেল। অর্ণব তার আগে থেকে সেখানে দাঁড়িয়ে ছিল। দুজনে একসাথে শরীরচর্চা করল! 
.
অর্ণব শাওয়ার নিয়ে এসে বিছানায় বসে পড়ল। মেহেরিন নিজের মাথা মুচছিল তখন। অর্ণব কে দেখতে পেয়ে এগিয়ে গেল তার কাছে। মাথা বেয়ে পানি পড়ছে। হাতে থাকা তোয়ালে দিয়ে অর্ণবের মাথা মুছতে লাগাল। অর্ণব হেসে তাকিয়ে রইল মেহেরিন'র দিকে। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল অর্ণবের দিকে। কি সুন্দর এই বাচ্চা ছেলেটা। যে কেউ আপন করে নিতে চাইবে তাকে। পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ জীব মানুষ আর সবচেয়ে সুন্দর মানুষ হচ্ছে এই নিষ্পাপ বাচ্চারা। তবুও কিছু লোক কেন এই ছেলেটাকে অবজ্ঞা করবে। ওর মধ্যে কিসের কমতি। কোন কিছুর কমতি নেই। একজন সুস্থ শিশু ও। তবে হ্যাঁ হয়তো সে স্বাভাবিক না তাই বলে অস্বাভাবিকও না। প্রকৃতিতে সবকিছু্ই নিয়মের মাঝে চলে। ব্যতিক্রম এখানে থাকবে তা কি করে হয়। তবে ব্যতিক্রম যে প্রকৃতি নিতে পারে না। কিন্তু ও তো ব্যতিক্রম না। শুধু মিশতে পারে না সবার সাথে। আর পাঁচ টা বাচ্চার মতো ওর মানসিক ক্ষমতা তাদের মতো নয়। 

তাই বলেই কি সে অন্যরকম! না, তা না চিকিৎসা চলছে ওর। ডাক্তার বলেছে ও স্বাভাবিক হবে। না হোক এতে কোন সমস্যা নেই। তাকে নিয়ে জীবন পার দেবার ক্ষমতা আছে তার! তবে সব পথের একটা বিকল্প পথ থাকে কিন্তু সবাই সে বিকল্প পথ বেছে নেয় না। কেউ কেউ সেই রাস্তায় বদলে ফেলে। কিন্তু বদলে ফেললেই বুঝি সব সমস্যার সমাধান হয়। 

হাতের স্পর্শে ধ্যান ভাঙল মেহেরিন'র ! অর্ণব তার হাত ধরে তাকিয়ে আছে তার দিকে। মেহেরিন অর্ণবের মাথার চুল এলোমেলো করে দিয়ে বলে,

"যাও তৈরি হয়ে নাও, অফিসে যেতে হবে আমাদের! 

অর্ণব কিছু না বলে হেঁটে বাইরে চলে গেল। এই ছেলেটা বেশি কথা বলে না। দরকার ছাড়া তো মুখ'ই খুলবে না। শুধু একটা ডাক'ই জানে মাম্মী। কিন্তু কিভাবে বুঝাবে এই মাম্মী ডাকে কতোটা ভালো লাগে তার। মনে হয় তার জীবনটা শুধু ওর জন্য'ই। তার জন্য'ই বরং জীবন  উৎসর্গ করে দিবে সে! 
.
গত এক ঘন্টা যাবত মেহেরিন'র কেবিনের বাইরে বসে আছে নির্ঝর! মেহেরিন বলেছিল ১১ টায় আসতে কিন্তু সে এসেছে ১১.১৫ তে। ১৫ মিনিট দেরি করার কারনে ১ ঘন্টা বসে থাকা তার কাছে একটু বেশিই মনে হচ্ছে। দেরি হবার কথা ছিল না। নির্ঝর অন্য দিনের তুলনায় আজ খুব জলদি উঠেছিল ঘুম থেকে। ভেবেছিল তাড়াতাড়ি এসে মেহেরিন কে দেখিয়ে দেবে টাইমসেন্স তার ভালো। কি তার আর হলো না। কথায় বলে সত্য কখনো ঢাকা পড়ে না। কেন জানি এই কথাই নির্ঝরের মাথায় ঘুরছে। সে আজ পর্যন্ত কখনো টাইমলি পৌঁছাতে পারেনি। এমনকি ভার্সিটিতে পরিক্ষা দেবার দিনও ২০ মিনিট লেট ছিল সে। যার পিছনে কোন যুক্তি'ই কাজে দিবে না। সে ধরেই নেয় তার ভাগ্য'টাই এমন। কিন্তু আজ ভেবেছিল ভাগ্য তার সাধ দিবে কিন্তু না সে কথা রাখল না। 

সকালে তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠার কারনে মম আর ড্যাডের রিয়েকশন দেখেই সে অবাক! তাদের এমন রিয়েকশন নির্ঝর আশা করলেও ভেবেছিল আজ মেহেরিন'র সাথে দেখা করতে যাবে এই শুনে কিছু বলবে না। কিন্তু না এটার জন্য রিয়েকশন আরো বেশি। 

গত এক ঘন্টা শুধু ফোন টিপেই ব্যয় করেছে সে। অনেক মেয়ের মেসেজ আসছে অনেক কিন্তু কথা বলতে ইচ্ছে করছে না কারো সঙ্গে। ভারী রাগ চলছে তার মাথায় মেহেরিন'র জন্য! কয়েকবার ফোন দিয়েছে কিন্তু মেহেরিন ফোন তুলে নি। 
অবশেষে নির্ঝর উঠে দাঁড়াল। রিসেপশনে থাকা মেয়েটা বার বার ঘুরে দেখছিল তাকে। মেয়েটা দেখতে অবশ্য খারাপ না। একজন রিসেপশনিস্ট যেমন হওয়া দরকার ঠিক তেমন। গোছানো পরিপাটি! 

নির্ঝর তার কাছে আসতেই মেয়েটা বলে উঠল,
"জ্বি স্যার, কিছু বলবেন! 

"হুম বলবো তো কিন্তু কিভাবে বলবো সেটাই বুঝতে পারছি না। 

"মানে!

"মানে এই রুপবতী রমনীর কোন গুন আগে বলবো সেটাই ভাবছি। 

নির্ঝরের পটানোর টেকনিক কাজে দিয়েছে। মেয়েটা লজ্জা পেয়ে তাকিয়ে আছে তার দিকে। যদিও মেয়েটা কে পটানোর কোন ইচ্ছে ছিল না তবুও নিজের কাজ হাসিলের জন্য এমনটা করছে সে। টানা দু মিনিট মেয়েটার প্রশংসা'র পর মেয়েটা হেসে দিল। তার হাসি দেখে নির্ঝরের ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটল। পটানো শেষ এবার কাজ হাসিল করবে। নির্ঝর বলে উঠলে,

"তো মিস.. ( মেয়েটার নাম'ই তো মনে পড়ছে না। আরে মনে পড়বে কিভাবে নাম তো জিজ্ঞেস করাই হয় নি.. ) 
নির্ঝর একগাল হেসে বলে রমনী! 

পিছন থেকে কেউ বলে উঠে,
"মিস নিশা! 

মেয়েটা লাফিয়ে উঠে মেহেরিন'র আওয়াজে। নির্ঝর ঘাড় ঘুরিয়ে পেছনে তাকিয়ে দেখে মেহেরিন দাঁড়িয়ে আছে। তার আশেপাশে মানুষজন হলো চারজন। দুটি ছেলে আর দুটি মেয়ে। তাদের হাতে ফাইল। এর মাঝে মেহেরিন! নির্ঝর চোখ ছোট ছোট করে তাকে দেখছে। মেহেরিন কে আজ ভারী অন্য রকম লাগছে। সাদা শার্টের ওপর কালো রঙের স্যুট টা বেশ মানিয়েছে তাকে। হরিনী চোখ দুটো বেশ স্থির! হালকা বাতাসে তার চুল গুলো উড়ছে। তবে যেখানে উড়ছে যেখানে'ই আটকে আছে। এলোমেলো ইচ্ছে না! 

নির্ঝর এবার সোজা হয়ে দাঁড়াল।মেহেরিন তার কাছেই আসছে। নির্ঝর মনে মনে বলতে লাগল,

"এতোক্ষনে এলো এই মেয়েটা। একবার আসুক এখানে কথা বলতে তখন বুঝাব। নির্ঝর কে এতোক্ষণ ওয়েট করানো! 

 কিন্তু মেহেরিন তার দিকে না এসে রাস্তা পাল্টে দিল। চলে গেল অন্য দিকে। নির্ঝর চরম অবাক। তবে এক ঝলক দৃষ্টি ফেলে গেল রিসেপশনে থাকা মেয়েটার উপর। মেহেরিন'র নজরে যেন বেশ ভয় পেলো সে! 
মেহেরিন'র সাথে থাকা দুটো ছেলের মাঝে একজন দৌড়ে এলো নির্ঝরের কাছে। 

"ম্যাম আপনাকে আরো কিছুক্ষণ ওয়েট করতে বলেছে!

"কি আরো অপেক্ষা! 

"জ্বি! ম্যাম একটা মিটিং এটেন্ড করতে যাচ্ছে। সেখান থেকে এসে কথা বলবে।

"মিটিং শেষ করতে কতোক্ষণ লাগবে।

"ঘন্টা দুয়েক! 

"কিহহ, না আমার পক্ষে আর ওয়েট করা সম্ভব না। ম্যাম কোথায়?

"ম্যাম লিফট..

বলার আগেই নির্ঝর দৌড় দিল। তার পিছন পিছন সে ছেলেও। নির্ঝর লিফটের কাছে এসে দেখে মেহেরিন লিফটে অলরেডি ঢুকে পড়েছে। লিফটের দরজা বন্ধ হচ্ছে। কিন্তু তার আগেই নির্ঝর হাত দিয়ে লিফটের দরজা বন্ধ হওয়া থেকে আটকালো। মেহেরিন ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে তার দিকে। তার এসিস্ট্যান্টরা অবাক চোখে দেখছে নির্ঝর কে। পিছনে ছেলেটা দৌড়ে এসে বলল,

"সরি ম্যাম আমি বলেছিলাম স্যার কে আরেকটু অপেক্ষা করতে কিন্তু স্যার...

এর আগেই নির্ঝর সামনে থাকা সবাইকে উদ্দেশ্য করে নিজের হাতের রিং দেখিয়ে বলে,
"নিজের পরিচয় কি এখনো দেওয়া লাগবে আমার! 

একে একে সবাই বের হয়ে গেল লিফট থেকে। নির্ঝর লিফটের ভেতর ঢুকল। দরজা বন্ধ হলো লিফটের! মেহেরিন দাঁড়িয়ে আছে তার মুখোমুখি। নির্ঝরের থেকে চোখ সরিয়ে লিফটের বাটন চেপে ধরার আগেই নির্ঝর হাত ধরল তার। বলে উঠল,

"১৫ মিনিট! শুধু ১৫ মিনিট লেট হবার কারনে তুমি আমাকে ১ ঘন্টা বসিয়ে রাখলে। শুধু তাই না বলছো আরো দু ঘন্টা বসে থাকতে! 

নির্ঝর হুট করেই হাত ধরাটা মোটেও ভালো লাগে নি মেহেরিন'র। সে তৎক্ষণাৎ হাত ছাড়িয়ে নিল। নির্ঝর ও হাত ছেড়ে দিল। খানিকটা অপরাধ বোধ মনে হলো। না বলে কারো হাত ধরাটা যে ভালো কাজ নয় এটা সে জানে। মেহেরিন বলে উঠল,

"আপনার টাইমসেন্স দেখতে চেয়েছিলাম আমি। এলেন তো এলেন তাও ১৫ মিনিট লেট, যেখানে আমি বলে দিয়েছিলাম ঠিক ১১ টায় এসে দেখা করবেন।

"দেখো একটা বাংলাদেশ, আমেরিকা না যে ফট করে বলবে আর এসে পড়বো। বাংলাদেশের রাস্তায় কি পরিমান যানজট হয় তা নিশ্চয়ই তোমাকে বলতে হবে না। 

"পরের বার একটু ভিন্ন কিছু এক্সকিউজ দিয়েন ভালো লাগবে।

"সত্যি বলছি আমি!

"থামুন, এভাবে এখানে আসার মানে কি আর এভাবে আমার স্টাফ এর সাথে কথা বলার'ই বা মানে কি? 

নির্ঝর মনে মনে,
"কি কথা এই মেয়ের, রিসেপশনে থাকা মেয়েটাকে কি বলেছি তা সব শুনে ফেলেছে নাকি। কিন্তু তা কিভাবে হয় সে তো অনেক দূরে ছিল।

মেহেরিন বলে উঠে,
"আমি মোটেও রিসেপশনে থাকা মেয়েটার কথা বলছি না। এখানে যা করলেন সেটার কথা বলছি।

নির্ঝর হেলান দিয়ে,
"ওহ তাই বলো। কিন্তু আমি ভুল কি বলেছি। আমি তোমার ফিয়ান্সে, তোমার সাথে আলাদা ভাবে কথা বলার সুযোগ ঠিক'ই পেতে পারি। তাই নয় কি?

মেহেরিন কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকল কিন্তু কথা বাড়ল না। লিফটের বোতাম চেপে বলল,
"এখান থেকে বের হয়ে কথা বলছি! 

"হ্যাঁ সেটা তুমি বলতেই পারো কোন অসুবিধা নেই! 

মেহেরিন ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে রইল। নির্ঝর তাকিয়ে আছে স্নিগ্ধ চোখে। হুট করেই নির্ঝর হাত বাড়াল মেহেরিন'র দিকে। মেহেরিন নির্ঝরের হাতের দিকে তাকিয়ে বলল,
"কি? 

"কিছু না তোমার চুলে কিছু একটা আছে? 

"আপনার এই সব ফ্লার্ট আমার সাথে চলবে না তাই করার চেষ্টা ও করবেন না। চারদিক আয়না লাগানো আমি নিজেই দেখতে পারছি কোথায় কি আছে? 

নির্ঝর হাত সরিয়ে নিয়ে মাথা নাড়ল। আসলেই এই মেয়েটা ভারী অদ্ভুত! আর অন্যরকম ও বটে। তবে এই মেয়েটার কাছে আসলেই এক অজানা অনুভূতি আকড়ে ধরে তাকে কিন্তু কি সেই অনুভূতি সেটা বুঝতে পারছে না নির্ঝর। নির্ঝর কেমন নেশালো চোখে তাকিয়ে আছে মেহেরিন'র দিকে। এটাকে ঠিক নেশা না মোহ বললে ভালো লাগবে। যতোক্ষন এই মেয়েটাকে দেখে ততোক্ষণ'ই তার উপর থাকা রাগ গুলো যেন অদৃশ্য হয়ে যায়। 

মেহেরিন চোখ ছোট ছোট করে দেখছে নির্ঝর কে। তার এমন চাহনি তার মোটেও সহ্য হচ্ছে না। মুখ ঘুরিয়ে বলে উঠে,

"এমন ভাবে তাকিয়ে আছেন কেন? 

নির্ঝরের হুশ ফিরল। একটু নড়েচড়ে উঠলো সে। নিজেকে একটু সামলে বলে উঠে,

"তোমাকে দেখছিলাম না।

"তাহলে চোখ দুটো কেন আমার দিকে ছিল? 

"না মানে আমি তোমাকে দেখছিলাম ঠিক'ই তবে তুমি যা ভাবছো তা না। আমি একটা কথা ভাবছিলাম তোমাকে নিয়ে।

"কি কথা?

"এটাই যে তুমি আমাকে এখানে কেন ডেকেছো! 

"সেটা একটু পরেই জানতে পারবেন।

"তা না হয় জানতে পারবো কিন্তু আমাকে কেন বিয়ে করতে চাইছো এটা এখনো জানা হয়ে উঠে নি।

"এটা জানতেই ডেকেছি। ধৈর্য্য ধরুন জানবেন!

নির্ঝর কিছুটা মেহেরিন'র দিকে ঝুঁকে বলে,
"কি নিয়ে কথা বলবে বলো তো। তোমার ভাব ভঙ্গি কিন্তু আমার বেল ভালো ডেকছে না। 

মেহেরিন নির্ঝরের দিকে তাকিয়ে রইল। তারা দুজন একটু কাছেই ছিল। তখন'ই দরজা খুলে খেল। মেহেরিন সামনে তাকিয়ে দেখল তার স্টাফ রা সামনে দাঁড়িয়ে তাকে দেখছে। এদিকে নির্ঝরের চোখ ও তার দিকেই মেহেরিন নির্ঝরের পাশ দিয়ে হেঁটে বেরিয়ে আসল। নির্ঝরও আসলো তার পিছন পিছন! 

মেহেরিন'র ঠিক সামনে বসে আছে নির্ঝর! সে তার চেয়ার দুলিয়ে যাচ্ছে। মেহেরিন তার এক স্টাফ থেকে একটা ফাইল নিয়ে তাদের বাইরে যেতে বলল। ফাইল থেকে কাগজ বের করে নির্ঝর কে উদ্দেশ্য করে বলল,

"সাইন করুন? 

"কিসের পেপার! 

"পেপার পড়েই সাইন করতে হয় এটা কি জানেন না! 

নির্ঝর একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে পেপার হাতে নিল। পেপার পড়তে পড়তে তার কপাল কুঁচকে গেল। পেপার রেখে মেহেরিন'র দিকে তাকিয়ে বলল,

"এইসব কি? 

#চলবে....
[+] 3 users Like Manjarul Haque's post
Like Reply
#4
#পর্ব_৪

নির্ঝর একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে পেপার হাতে নিল। পেপার পড়তে পড়তে তার কপাল কুঁচকে গেল। পেপার রেখে মেহেরিন'র দিকে তাকিয়ে বলল,

"এইসব কি? 

"যা পড়ছেন তাই।

"তুমি কি বিয়েটা কে একটা ডিল হিসেবে নিতে চাইছো।

মেহেরিন একটা বাঁকা হাসি দিয়ে খানিকটা উষ্ণ গলায় বলে,

"কেন আপনার কি আমার সাথে সারাজীবন থাকার জন্য!

"কোন ভাবেই না। আর সত্যি বলতে আমি এই বিয়েটাই করতে চাই না।

"তাহলে আর কি, তাহলে এটা তো আপনার জন্য বিরাট সুযোগ তা নয় কি। আমাদের বিয়েটা ১ বছরের একটা কন্ট্রাক হবে। ১ বছর পর আমি নিজেই আপনাকে ডির্ভোস দিয়ে দেবো। তখন আপনি আপনার রাস্তায় আর আমি আমার।

"তাহলে বিয়েটা কেন করতে চাইছো, যদি সেটা ভেঙেই ফেলবে।

মেহেরিন একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে,
"সবকিছুর কারণ জানতে নেই মিঃ নির্ঝর! তবে আপনি নিশ্চিত থাকুন। কোম্পানির শেয়ার যা ছিল তেমনি থাকবে।

"আর ১ বছর! ১ বছর পর কি হবে। আর তুমি কেন'ই বা ১ বছরের জন্য বিয়েটা করতে চাইছো।

"সবকিছুতে খুব আগ্রহ আপনার নির্ঝর! শুনুন আমাদের কোম্পানি তার একটা ব্রাঞ্চ খুব জলদি কানাডা'য় খুলতে যাচ্ছে। তো সেটার জন্য আমার হাতে ১ বছর আছে। ১ বছরের মধ্যে কাজটা শেষ হয়ে গেল আমি কানাডা শিফট করবো। তো তখন আপনি থাকুন আপনার মতো। 

"বিয়েটা কে শুধু একটা নাম!

"ঠিক ধরেছেন! ( বলেই দাঁড়িয়ে নির্ঝর কে উদ্দেশ্য করে বলল... ) নির্ঝর আপনার ব্রেকগাউন্ড সম্পর্কে আমার জানা হয়ে গেছে। আপনি কেমন তা আমি খুব ভালো করেই জানি। সংসার বিয়ে এসবে আপনার কোন আগ্রহ নেই।

"তা তো এখনো নেই! 

"আমি জানি সেটা। আপনি আমাকে বিয়ে করতে চান না তো এই বিয়েটা কে বিয়ে না মনে করে একটা ডিল'ই মনে করুন। এতে আপনার ক্ষতি নেই।

"কিন্তু আমার বাবা মা! 

মেহেরিন হেসে বলে উঠে,
"খুব চিন্তা দেখছি তাদের জন্য। আচ্ছা বাদ দিন সন্তান হিসেবে আপনি চিন্তা করবেন এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু যদি আমি আপনাকে ডির্ভোস দিয়ে চলে যাই তাহলে নিশ্চিত থাকুন আপনার মা বাবা আপনাকে দায়ী করবে না। আমি তাদের বলব দোষটা আমার তখন আর তারা আপনার কাছে কৈফিয়ত চাইবে না আর না জোর করবে দ্বিতীয় বিয়ে করার জন্য। 

নির্ঝর চুপ করে শুনছে মেহেরিন'র কথা। এরকম টা কখনো আশা করে নি সে। খুব অচেনা লাগছে এই মেহেরিন কে। মন বলছে সে যেভাবে তার মেঘকন্যা কে সাজাতে চেয়েছিল এ মোটেও তেমন না। মেহেরিন কেন এমন করছে এটা সম্পর্কে জানতে চায় সে কিন্তু মেহেরিন তাকে কিছুই বলবে এটাও নিশ্চিত সে। যা করবার তার'ই করা লাগবে। নিজের'ই খোঁজা লাগবে সবকিছু! 

"মিঃ নির্ঝর! 

"হুম..

"কি এতো ভাবছেন। আমার মনে হয়েছিল আপনি এই ডিল টা দেখে বেশ খুশি হবেন। আফটার অল এতো বড় সুযোগ কেই'বা হাত ছাড়া করতে চাইবে। 

"ঠিক'ই বলেছ, এতো বড় সুযোগ কে হাত ছাড়া করতে চাইবে। হ্যাঁ তাই তো, তাহলে তুমি কেন আমাকেই বাছলে? 

"নির্ঝর একটা কথা মনে রাখবেন পৃথিবীতে যা কিছুই ঘটে না কেন সব কিছুর পেছনেই কারন থাকে। কারন ছাড়া কেউ কিছু করতে চায় না। প্রকৃতিও কারন ছাড়া চলে না।

"কারন টা কি? 

মেহেরিন হেসে বলে,
"সেটা আপনি না জানলেও হবে। আপাতত আপনাকে যা বলছি তাই বলুন। 

নির্ঝর পেপার টা হাতে নিয়ে বলে,
"১ টা বছর খুব বেশি..

"চিন্তা করবেন না। আপনার পার্সোনাল লাইফে আমি ইন্টারফেয়ার করছি না। 

কলমটা নির্ঝরের দিকে এগিয়ে,
"নিন সাইন করুন! 

"আমার কিছুক্ষণ ভাবার সময় চাই!

"হুম ভাবুন। সময় দিচ্ছি আমি। আগামীকাল অবদি আপনাকে সময় দিচ্ছি এর মধ্যে আপনার মত জানাবেন! 

"হুম! আচ্ছা একটা কথা ছিল?

"বলুন!

"আমি শুনলাম তোমার একটা ছেলে আছে এটা কি সত্যি! 

"ছেলে আছে বলেই তো শুনেছেন। কেন কি হয়েছে?

"কিছু না শুধু এমনেই জিজ্ঞেস করলাম। আমি যাচ্ছি..

বলেই নির্ঝর পেপার টা নিয়ে রুম থেকে বের হয়ে যায়। মেহেরিন চোখ বন্ধ করে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে চেয়ারে বসে। ডাক দেয় তার পিএ কে। 

নির্ঝর বাইরে এসে পেপার'র দিকে তাকিয়ে আছে। ভাবছে কি করবে। পেপার থেকে চোখ সরিয়ে কপালে হাত দিয়ে মাথা ঝাকালো সে। এই মেহেরিন মেয়েটা বেশ জটিল। খুব প্যাচ আছে তার মধ্যে। হঠাৎ করেই মনে হলো কেউ তার হুডি ধরে টানছে। নির্ঝর নিচে তাকিয়ে দেখে একটা ছোট পিচ্চি বাচ্চা তার হুডি ধরে টানছে। নির্ঝর হাঁটু গেড়ে বাচ্চাটার সামনে বসে বলল,

"কি হয়েছে বাবু! 

তখন বাচ্চা টা হাত দিয়ে উপরের দিকে ইশারা করে। নির্ঝর উপরে তাকিয়ে দেখে একটা বেলুন উড়ছে। উড়ছে বলতে উড়েই আকাশে চলে যেত কিন্তু কিছু একটার সাথে আটকে গেছে। নির্ঝর হেসে উঠে দাঁড়িয়ে বেলন টাকে ধরে বাচ্চাটার হাতে দিল। বাচ্চা টাকে বেশ মিষ্টি লাগছে তার। বেলুন পেয়ে তার মুখে স্নিগ্ধ হাসি দেখা গেল। নির্ঝরের খারাপ মন ভালো হলো। সে কি আবারো হাঁটু গেড়ে বসে বাচ্চা টার মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,

"নাম কি তোমার বাবু! 

বাচ্চা কথা না বলে তাকিয়ে রইল নির্ঝরের দিকে। নির্ঝরের কাছে একটু অদ্ভুত লাগলেও সে আবারো জিজ্ঞেস করল,

"তোমার নাম কি? 

"অর্ণ! 
বলেই হেসে দিল! 

"অর্ণ! 

বাচ্চা টা মাথা নাড়াল। 

নির্ঝর হেসে বলল,
"কার সাথে এসেছ মাম্মির সাথে।

বাচ্চা টা আবারো মাথা নাড়ল।

"মাম্মী কোথায় তোমার? 

বাচ্চা টা হাত দিয়ে ইশারা করে অফিস দেখাল। নির্ঝর অর্ণবের গালে টেনে বলল,
"মাম্মীর সাথে থাকো, একা একা খেলো না হারিয়ে যাবে বুঝলে!

বাচ্চা টা আবারো মাথা নাড়ল। নির্ঝর উঠে দাঁড়াল। অর্ণব হেসে বলে উঠে,
"ড্যাডি! 
ড্যাডি ডাক শুনে নির্ঝর হেসে অর্ণবের মাথায় হাত বোলায়। ছোট একটা বাচ্চার ড্যাডি ডাক টা বিশেষ কোন প্রভাব ফেলল না তার উপর! হুট করেই একটা ফোন কল আসে নির্ঝরের ফোনে। নির্ঝর অর্ণব কে ভেতরে চলে যেতে বলল। অর্ণব হাত নাড়িয়ে তাকে টাটা দিল। নির্ঝরও হেসে তাকে টাটা দিল। নির্ঝর চলে যেতেই মেহেরিন'র একজন স্টাফ এসে অর্ণবের পাশে দাঁড়াল। অর্ণব তাকে দেখে খানিকটা ভয় পেয়ে এক পা পিছিয়ে গেল। স্টাফ খুব যত্ন করে অর্ণব কে নিয়ে মেহেরিন'র কেবিনের দিকে গেল! 
.
ল্যাপটবে সিসি টিভি ক্যামেরার মাধ্যমে নির্ঝর আর অর্ণবের প্রতিক্রিয়া দেখছিল মেহেরিন। তার পাশে বসা চাইল্ড স্পেশালিস্ট ডঃ রাহেলা। বর্তমানে অর্ণবের ট্রিটমেন্ট সেই করছে। মেহেরিন ল্যাপটব থেকে চোখ সরিয়ে ডঃ রাহেলাকে উদ্দেশ্য করে বলেন,

"তো কি বুঝলেন ডঃ রাহেলা! 

"হুম! প্রথমে মনে হলো সে গ্রোথ করছে কিন্তু পরক্ষণেই চেনা স্টাফ কে দেখে দূরে সরে যাওয়া টা আবার ভাবাচ্ছে! 

"এটা প্রথমবার না দ্বিতীয় বার! 

"এই লোকটার সাথেই না কি অন্যজন!

"না উনিই ছিল। এটা কয়েকদিন আগের কথা। অর্ণব আর আমি পার্ক থেকে শপিং মলে গিয়েছিলাম...
[ অতীত...
রাস্তায় কাঠ ফাটা রোদ। গাড়ি থেকে বের হয়ে মেহেরিন অর্ণব'র মাথায় একটা টুপি পড়িয়ে দেয়। পার্কে‌ মেহেরিন আর অর্ণব ফুটবল খেলে। অর্ণব দৌড়ে ফুটবল মেরে মেহেরিন কে দেয়। মেহেরিন হেসে বল টা আবারো অর্ণবকে দেয়। অন্য বাচ্চাদের সাথে মিশতে পারে না বলে মেহেরিন অর্ণবের একমাত্র খেলার সঙ্গী! অতঃপর সন্ধ্যার দিকে দু'জনে শপিংমলের দিকে যায়। যদিও ভিড়ের মাঝে যাওয়া টা অর্ণবের মোটেও পছন্দ না তবুও সেদিন মেহেরিন'র সাথে সে গিয়েছিল। হঠাৎ করেই মেহেরিন হারিয়ে ফেলে তাকে। মেহেরিন ব্যাকুল হয়ে খুঁজতে থাকে অর্ণব কে। এদিকে অর্ণব মেহেরিন কে না দেখতে পেয়ে এতো ভিড়ের মাঝে ভয় পেয়ে যায়। এক কোনে চুপটি করে বসে কাঁদতে থাকে সে। 
সেদিন এনগেজমেন্ট এর উদ্দেশ্যে নির্ঝর আর কথা শপিং করতে আসে। কথার শপিং যেন শেষ'ই হচ্ছিল না। এটার পর এটা কিনেই যাচ্ছে। নির্ঝর যেন হাঁফিয়ে উঠে। একটু দম নেবার পর বাইরে ছোট অর্ণব কে বসে থাকতে দেখে। তার কাছে গিয়ে তার সাথে কথা বলার চেষ্টা করে কিন্তু অর্ণব কোন কথাই বলে না। অর্ণব মাথা অবদি তুলে না যার কারণে নির্ঝর তার মুখটা দেখে নি। শুধু কান্না'র আওয়াছ পেতে থাকে। মাঝে মাঝে মাম্মি মাম্মি ডাকটা শুনতে পায়। নির্ঝর ধরেই নেয় অর্ণব হারিয়ে গেছে। অতঃপর নির্ঝর অর্ণব কে কোলে তুলে নেয়। বেচারা অর্ণব নির্ঝরের কোলে উঠে চুপটি করে থাকে। 
মেহেরিন শপিং মলের সিকিউরিটি রুমে এসে সিসি টিভি তে অর্ণব কে খুঁজে চলছে। এসময় খবর আসে অর্ণব কে পাওয়া গেছে। মেহেরিন এসে দেখে অর্ণব নির্ঝরের কোলে। সে একটু দূরেই দাঁড়িয়ে ছিল। খুব শান্ত ভাবে তাকে আকড়ে ধরে আছে। মেহেরিনের এই প্রথম ধাক্কাটা খেতে একটু সময় লাগে। নির্ঝর সিকিউরিটি'র কাজে অর্ণব কে দিয়ে দেয়। তার মাথায় হাত বুলিয়ে সিকিউরিটির সাথে কথা বলে। অর্ণব পিছনে মেহেরিন কে দাঁড়িয়ে ধাকতে দেখে দৌড়ে তার কাছে চলে যায়। মেহেরিন তাকে কোলে নিয়ে আদর করতে থাকে। সামনে তাকিয়ে দেখে নির্ঝর আর কথা দুজনেই একসাথে। কথা বলছে দু'জন। অর্ণব নির্ঝর কে দেখে বলে উঠে,
"ড্যাডি! 

মেহেরিন অবাক চোখে তাকিয়ে থাকে অর্ণবের দিকে। অর্ণব আবারো বলে উঠে ড্যাডি। এদিকে কথা নির্ঝরের হাত ধরে টেনে নিয়ে যায় সেখান থেকে। এখানে পূর্ব পরিচিত হলেও নির্ঝর এখনো জানে না সেই বাচ্চা টা অর্ণব ছিল! ] 

বর্তমান... 
মেহেরিন একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে,
 "এই প্রথম অর্ণব কোন অচেনা লোকের কোলে শান্ত ভাবে ছিল। ব্যাপারটা আমাকে বেশ ভাবিয়েছে! তাই আজ আবার দেখলাম, আর এখনও তাই হলো। অর্ণব তার সাথে মিশতে পারছে! 

"হুম বুঝলাম তোমার কথা। তুমি তো জানোই অর্ণব বাকি বাচ্চাদের মতো না। সম্পূর্ণ আলাদা তবুও ওর মাঝে এই পরিবর্তন টা ভাবাচ্ছে! 

"আপনিই তো বলেছিলেন অর্ণব এর মতো বাচ্চারা সবার সাথে মিশতে পারে না।

"হুম বলেছি সবার সাথে পারবে না। তা বলে ব্যতিক্রম যে হবে না তা না। যদি সে কারো সাথে কমফোর্টেবল ফিল করে তাহলে এটা তোমার জন্য খুশির খবর। 

"তাহলে বলছেন এটা ওর জন্য ভালো।

"অবশ্যই! কিন্তু মেহেরিন একটা কথা?

"হুম..

"এই লোকটা সে না যার সাথে তোমার এনগেজমেন্ট হয়েছে!

মেহেরিন ডঃ রাহেলা'র দিকে তাকিয়ে মাথা নেড়ে বলল,
"হুম! 

ডঃ রাহেলা হেসে বলেন,
"তোমার এমন সিদ্ধান্তে আমি সত্যি'ই অনেক খুশি! অর্ণবের পক্ষে কারো সাথে এতো সহজে
মিশে যাওয়াটা কম আশ্চর্যের নয়। ওর মতো আমি আরো অনেক পেশেন্ট দেখেছি। সবার সাথে আমার মিশতে বেশিদিন লাগে কিন্তু অর্ণবের সাথে মিশতে আমার অনেক সময় লেগেছে। অনেক স্টাডি করেছি ওকে নিয়ে। তবে যেই ছেলে একদিনেই ওর সাথে এতোটা মিশতে পারছে তার সাথে সারাজীবন থাকার চিন্তাটা খারাপ না। এতে অর্ণবের জন্য'ই ভালো। তুমি আসলেই খুব চিন্তা করো তাকে নিয়ে। 

মেহেরিন খানিকক্ষণ'র‌ জন্য চোখ বন্ধ করে মেলে বলে,
"আমার বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বন অর্ণব। ও ছাড়া পৃথিবীতে আর কেউ নেই।

"আমি জানি সেটা..
বলেই ডঃ রাহেলা থামলেন। দরজা নক হলো। মেহেরিন'র অনুমতি পাওয়া মাত্র ঘরে ঢুকল অর্ণব। দৌড়ে এসে মেহেরিন'র কোলে উঠে বসল। মেহেরিন হেসে তাকে জরিয়ে ধরল। ডঃ রাহেলা হেসে জিজ্ঞেস করলেন,

"অর্ণব! কেমন আছো? 

অর্ণব হাসল। যার অর্থ সে ভালো আছে। ডঃ রাহেলা হেসে অর্ণবের মাথায় হাত বোলালেন। অর্ণব হেসে পাশ ফিরিয়ে তাকিয়ে মেহেরিন'র ল্যাপটবে নির্ঝর আর তাকে দেখতে পেলো। অর্ণব হেসে বলে উঠল,

"ড্যাডি! 

ডঃ রাহেলা আর মেহেরিন অবাক হয়ে তাকাল অর্ণবের দিকে। অর্ণব আবারো ল্যাপটবের দিকে তাকিয়ে বলল,

"ড্যাডি! 

মেহেরিনের চোখ গেল ল্যাপটবের স্কিনে। নির্ঝর হাঁটু গেড়ে বসে অর্ণবের মাথায় হাত রেখে আছে। এই দৃশ্য টুকু পজ হয়ে আছে ল্যাবটবে।

#চলবে....
[+] 1 user Likes Manjarul Haque's post
Like Reply
#5
Boss ses koro lekha ta,, ar aktu taratari update diyo parle puro ta aksate amar sei lagse.. ?
[+] 1 user Likes Dragondhideb98's post
Like Reply
#6
#পর্ব_৫

নির্ঝর চোখের পাতা ফেলে ফেলে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে পেপারের দিকে। পেপারের ঠিক নিচে এক কোনে লেখা আছে সিগনেচার। নির্ঝর কে সেখানেই সাইন করতে হবে। এখানে সাইন করলেই তার আর মেহেরিন 'র বিয়েটা একটা ডিল হিসেবে ঠিক হবে। কি করা উচিত তার? সাইন করবে ডিল টা নাকি রেখে দিবে। আচ্ছা রেখে দিবে কেন? আর যাই হোক ঘর সংসার নিয়ে সারাজীবন পার করার ছেলে সে না। তার দরকার নিত্য নতুন সঙ্গী! 
মেহেরিন ঠিক'ই বলেছে, এখানে সাইন করলে তার ক্ষতি না বরং লাভ'ই হবে। এখন তার স্বাধীনতায় তার মা আর বাবা হস্তক্ষেপ করছে কিন্তু ঠিক ১ বছর পর মেহেরিন চলে গেলে তখন আর সেটা পারবে না। নিজের ইচ্ছে মতো চলতে পারবে সে। আর বেশি কিছু না ভেবে কলমটা ধরে সাইন করে ফেলল সে। অতঃপর পেপার টা নিয়ে আলমারিতে রেখে দিল। কাল গিয়ে দিয়ে আসবে মেহেরিন কে। 
.
ল্যাপটবে বসে কাজ করছিল মেহেরিন। হুট করেই একটা নৌটিফিকেশন এলো। মেহেরিন সেটা ক্লিক করতেই ফেসবুক অন হলো। স্কিনে ভেসে উঠলো একটা ছবি। ছবি টা দেখেই বুক টা মোচড় দিয়ে উঠলো। ঘন ঘন শ্বাস নিচ্ছে সে। ছবি টা গত বছরের কক্সবাজারে সমুদ্রে তোলা। সূর্য যেন ডুবে ডুবে। প্রিয় মানুষটির হাত ধরে সেই দৃশ্য দেখছিল সে। সাগরের ঢেউ টা ছিল স্থির মনে হচ্ছে আজও সেটা তেমন'ই আছে। যার হাতে হাত রাখলে একসময় শান্তি'র অনুভব করতে ঠিক ততোখানি কষ্ট এই ছবি টা দেখে হচ্ছে। কিন্তু এই ছবি এখানে এলো কি করে। সব তো শেষ করে দিয়েছিল সে সব কিছু। কিছুই রাখেনি। রাখেনি কতোকিছুর অস্তিত্ব কে তাহলে এটা। পরক্ষনেই চোখ পড়ল এটা তার ফেসবুকের স্টোরির ছবি। এক বছর পূর্তি হবার কারনে আবারো এটা এসেছে। 
মেহেরিন'র মনে পড়ল এইদিনে ঠিক এই সময়ে সেদিন তার সাথে ছিল সে। খোলা আকাশের নিচে তার হাত ধরে প্রতিজ্ঞা করেছিল কখনো যাবে না তাকে ছেড়ে। একা ফেলে রাখবে না তাকে। কিন্তু এসব তো মিথ্যে ছিল। মিথ্যে ছিল বলেই তার হাত ছেড়ে দিল সে। মাঝপথেই হাত ছেড়ে দিয়ে চলে গেল অন্য কারোর জন্য। একবারো জানানোর প্রয়োজন মনে করল না। না বলেই ধরল অন্য কারোর হাত। 
মেহেরিন'র দু চোখ ছলছল করছে অশ্রুতে। কাঁপা কাঁপা হাতে ছবি টা স্পর্শ করতে চাইছে সে। অমনি কানে ভেসে আসলো ছোট বাচ্চাটার নরম স্বর। মাম্মি মাম্মি করতে করতে তার কাছেই আসছে সে। দ্রুত ল্যাপটব বন্ধ করে নিজেকে সামলালো সে। এক অফুরন্ত হাসি নিয়ে এলো ঠোঁটের কোনে। অর্ণব কে দেখে যেন সেই হাসির রেখা আরো বড় হলো। কোলে তুলে নিল তাকে। জড়িয়ে ধরল শক্ত ধরে। মনে হলো তার জীবন ফিরে পেয়েছে। হ্যাঁ এটাই হচ্ছে তার গন্তব্য, তার জীবন! এই কারনেই সে বেঁচে আছে এখন অবদি! 
.
নির্ঝর এসে বসে আছে মেহেরিন'র সামনে। তার সামনে খানিকক্ষণ আগেই একটা কফির মগ রাখা হয়েছে। গরম কফির মগ থেকে ধোঁয়া উড়ছে। তার সামনে থাকা মেয়েটার নজর হচ্ছে ল্যাপটবে। কখন থেকে হাত দিয়ে এটা টিপেই যাচ্ছে। হাতের আঙুল কি ব্যাথা করে না। অদ্ভুত করার বিষয় ছিল তার মুখের কোথাও এতটুকু বিরক্ত'র ছাপ নেই। যেন অক্লান্ত পরিশ্রম করতে পারে এই মেয়ে টা। তবে নির্ঝর বেশ বিরক্ত হচ্ছে। আজ সে ঠিক সময় আসে নি তা না। আসলে তাকে বলাই হয় নি কখন আসবে তাই হঠাৎ করেই এসে উপস্থিত। ভেবছিল যেভাবে হঠাৎ করে এসেছে সেভাবেই চলে যাবে কিন্তু না তা হচ্ছে না। আজও মেহেরিন বসিয়ে রেখেছে তাকে। এতো মনোযোগ দিয়ে কাজ করছে তাই কিছু বলতেও পারছে না। 

নির্ঝর চোখ বুলালো মেহেরিন'র কেবিনে। মেহেরিন'র কেবিন টা খুব সুন্দর সাজানো গোছানো তার সাথে বেশ নিরব। আর নিরব বলেই নির্ঝরের থাকতে অসুবিধা হচ্ছে। নির্ঝর নিরব থাকতে পারে না। তাই চাই হইচই! শেষ কবে নিজের ড্যাডির কেবিনে গিয়েছিল তার মনে নেই। তবে নিশ্চিত সেটা মেহেরিন'র কেবিনের মতো সুন্দর হতো না। এই মেয়ের রুচিবোধ বেশ ভালো বলা যায়। খান কোম্পানির একমাত্র ওনার এখন এই মেয়ে এটা ভাবতেও অবাক লাগে। মেহেরিন'র দুই প্রজন্ম ধরে নিয়ে যাচ্ছে এই কোম্পানির দায়িত্ব। শেষমেষ এখন এসে পড়েছে এই মেয়েটার কাঁধে। মেয়েটাও বেশ ভালো ভাবেই ধরে রেখেছে তার নাম! কোনো আঁচ লাগতে দেই নি এখন অবদি! 

মেহেরিন কাজ শেষ করে সামনে তাকাতেই দেখে নির্ঝর তার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। মেহেরিন ভ্রু কুঁচকে বলে উঠে,

"এতো মনোযোগ দিয়ে আমাকে দেখলেও বুঝতে পারবেন না নির্ঝর!

নির্ঝর একটু নড়েচড়ে বসল। মেহেরিন'র থেকে চোখ সরিয়ে কফির মগ টা হাতে নিল। তাতে চুমুক দিয়ে বলে উঠে,

"তোমাকে আমি যতটুকু বুঝেছি মনে হয় আমার জন্য ততোটুকুই যথেষ্ট!

"তা কি বুঝলেন আমার সম্পর্কে?

"হুম এটাই যে তোমারে মাঝে অনেক রহস্য আছে। একটা রহস্যময়ী তুমি। 

" তো রহস্য উদঘাটন করলেন না। 

"রহস্য উদঘাটন করে আমার কোন লাভ নেই আর যে কাজে লাভ নেই সে কাজ আমি করি না।

"সেটা আমি জানি। নির্ঝর চৌধুরী নিজের প্রোফিট ছাড়া কিছু বুঝে না। এটা শুধু নির্ঝর চৌধুরী না সবাই, প্রত্যেক মানুষ নিজের স্বার্থ টাই বড় করে দেখে। তো পেপার এনেছেন, আমার মনে হয় আপনি পেপার এ সাইন করেছেন।

"এমন মনে হবার কারন?

"ওই যে বললাম প্রোফিট! 

নির্ঝর পেপার টা এগিয়ে মেহেরিন'র হাতে দিল। মেহেরিন পেপারে একবার চোখ বুলিয়ে আরেকটা পেপার বের করল। সেটাও এনে রাখল নির্ঝরের সামনে। নির্ঝর জিজ্ঞেস করল,

"আবার কিসের ডিল?

"এটা কোন ডিল টা, যাস্ট আপনার জন্য একটা উপহার।

"মানে?

"চেক ইট!

নির্ঝর পেপার খানা হাতে উঠিয়ে দেখতে লাগল। খান বাড়ি এখন তার নামে। ব্যাপারটা হজম হচ্ছে না তার। মেহেরিন কে কিছু জিজ্ঞেস করবে তার আগেই মেহেরিন বলল,

"বিয়ের পর আমি আমার বাড়িতেই থাকবো। এখন নিয়ম হিসেবে বরের বাড়ি থাকা উচিত তো আমার এই বাড়ি টা আমি আপনার নামে করছি। সেই দিক দিয়ে হিসেব করলে আমি বরের বাড়ি'ই থাকছি।

নির্ঝর হেসে পেপার টা টেবিলে রেখে বলে উঠে,
"তুমি হয়তো জানো না, ছেলের বউ আসবে শুনে আমার মা কি কি করছে? আর তুমি বলছ বাড়িতেই যাবে না। 

"যে ছেলের বউ এক বছর পর'ই বাড়ি থেকে চলে যাবে তার জন্য এতো তোড়জোড়? 

মেহেরিন'র এমন কথায় নির্ঝর বেশ বিরক্ত হলো। বিরক্ত চোখে তাকাল মেহেরিন'র দিকে। মেহেরিন হেসে বলল,
"থাক বাদ দিন এই ব্যাপার টাও আমি দেখে নেবো। তো আরেক কাপ কফি খাবেন।

"না আমি এখন উঠবো।

"হুম ঠিক আছে! 

নির্ঝর উঠেছে বাইরে যাবার জন্য, ঠিক তখনই দরজা খোলার শব্দে এলো। নির্ঝর পিছন ফিরে তাকিয়ে দেখে অর্ণ আসছে। নির্ঝর একটু অবাক হলো। মেহেরিন হেসে বলল,
"অর্ণ সোনা! 

অর্ণব দৌড়ে এলো মেহেরিন'র কাছে। জরিয়ে ধরল তাকে। ডঃ রাহেলা ইতিমধ্যে ঘরে প্রবেশ করল। মেহেরিন আর নির্ঝর কে দেখে একগাল হেসে বলেন,

"আমি তাহলে আজ আসি মেহেরিন।

"জ্বি! 

ডঃ রাহেলা যেতেই মেহেরিন অর্ণবের মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,
"দিন কেমন কাটল তোমার!

"ভালো!

নির্ঝরের কাছে এতোক্ষণে সবটা পরিষ্কার হলো। নির্ঝর বলে উঠে,

"অর্ণ! 

অর্ণব এতোক্ষণে খেয়াল করে নির্ঝর কে। তাকে দেখে দৌড়ে নির্ঝরের কাছে গিয়ে বলে,

"ড্যাডি! 

নির্ঝর অবাক হয়েই হাঁটু গেড়ে বসে অর্ণবের মাথায় হাত বুলিয়ে মেহেরিন'র দিকে তাকায়। মেহেরিন পিএ কে কল করে বলে আসতে। সে আসতেই মেহেরিন অর্ণব কে বলে,

"মাম্মি একটু কাজ করবে ততোক্ষণ তুমি আন্টি'র সাথে খেলো ঠিক আছে। 

অর্ণব মাথা নেড়ে পিএ হাত ধরে চলে যায়। তার আগে নির্ঝর কে টাটা দেয়। নির্ঝর ও হেসে হাত দোলায়। অর্ণব যেতেই মেহেরিন'র দিকে তাকিয়ে বলে,

"এটাই তোমার ছেলে অর্ণব! 

"হুম!

"তুমি তোমার ছেলে কে শিখিয়ে দিয়েছ আমাকে ড্যাডি বলে ডাকতে।

"না।

"তাহলে...

"ও নিজে থেকেই ডাকে।

"এটা কোন ভাবেই হয় না মেহেরিন। বাচ্চা কে না শিখিয়ে দিলে সে কখনো অন্য জনকে ড্যাডি ডাকে না।

"অর্ণব আর পাঁচ টা বাচ্চার মতো না নির্ঝর, ও সবার থেকে আলাদা।

"মানে!

মেহেরিন চেয়ারে বসে বলে,
"অর্ণব আর বাকি বাচ্চাদের মতো না, তার মানসিক গ্রোথ সবার মতো না। ও মানসিক ভাবে খুব দুর্বল।

"তাহলে আমাকে কেন ড্যাডি বলে ডাকে? 

"সেটা আমি জানি না। তবে আমি ওকে বলি নি।

"আমার কাছে সবটা গুলিয়ে যাচ্ছে।

"গোলাবেন না। আমি বলবো এইসব নিয়ে ভাববেন না। আর দেরি করে হলেও কয়েকদিন পর অর্ণবও আপনার সন্তান হবে তাও ১ বছরের জন্যই! 

মেহেরিন'র কথা শুনে নির্ঝর ভারী বিরক্ত হলো। সে উঠে দাঁড়াল। কিছু না বলেই বের হয়ে গেল। তার মনে হলো তার নিঃশ্বাস যেন বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। বাইরে এসে খোলা আকাশের নিচে শ্বাস নিল সে। 

নির্ঝর চলে যেতেই মেহেরিন এক দীর্ঘ শ্বাস ফেলল। সামনে তাকিয়ে দেখল একটা ফ্রেমে তার আর অর্ণবের ছবি। অর্ণব কে কোলে নিয়ে বসে আছে সে। অর্ণবের মুখে স্নিগ্ধ হাসি। মেহেরিন ছবি টাকে হাতে নিল। সে জানে নির্ঝর এখন কি ভাবছে। এটা কারো পক্ষেই সম্ভব না অন্যের বাচ্চা কে নিজের বাচ্চার চোখে দেখা। কিন্তু অর্ণব নির্ঝর কে নিজের বাবা'র জায়গা দিয়েছে। এখন নির্ঝরের প্রতিক্রিয়া কি হবে সে জানে না। নির্ঝর মানিয়ে নিতে পারবে তো তার অর্ণব কে। না পারলে নিতে হবে। সে সবকিছুই দিচ্ছে নির্ঝর কে। এরপরও কেন মানিয়ে নিবে না সে? 

নির্ঝর খোলা আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। কখনো ভাবে নি অন্যের বাচ্চা তাকে ড্যাডি বলে ডাকবে। গতকাল ডাকলেও সে নিছক মজা বলে ভেবে নিয়েছে। সে জানতো'ই না এটা মেহেরিন'র ছেলে অর্ণব! এইবার যখন অর্ণব তাকে ড্যাডি বলে ডাকলো এতে নির্ঝরের বেশ বিরক্ত লাগছে। তার নিজের কোন সন্তান নেই বউ বাচ্চা নেই কয়েকদিন পর বিয়ে করবে তাকে কেউ ড্যাডি বলে ডাকলে ব্যাপারটা বেশ বিরক্তিকর! অস্বস্তি লাগছে তার! 

নির্ঝর গায়ের জ্যাকেট টা খুলে ফেলল। বেশ গরম লাগছে তার। তার শরীরে কালো রঙের একটা টি শার্ট। সেটা নাড়িয়ে যাচ্ছে সে। গাড়ির ভেতর ঢুকে গাড়ি স্টার্ট দিল। এখন তার মাথা গরম হয়ে আছে। আপাতত কিছু একটা না করলে সে শান্ত হবে না। 
.
নির্ঝর গাড়ি নিয়ে সোজা গেল তার বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে। এখন তারাই পারে তার মন ভালো করতে। সবাই একে একে গল্প করছে। এর মাঝে নির্ঝর শুধু বিয়ারে চুমুক দিচ্ছে আর ভাবছে। ড্যাডি ডাকটা যেন তার শরীরে কাঁটার মতো বিঁধছে। চোখ বন্ধ করতেই অর্ণবের মুখটা ভেসে উঠে। পরক্ষনেই তার শরীর শান্ত হলো। বোধ হলো কি করছে সে? একটা নিষ্পাপ বাচ্চার উপর রাগ করছে। এটা কি ঠিক, কোন মানুষের পক্ষে সম্ভব না একটা বাচ্চার প্রতি রাগ হওয়ার। একজন অমানুষ'ই পারে কিন্তু সে তো আর অমানুষ না। এরকম মানসিক যন্ত্রণা নিতে নিতে এখন ক্লান্ত সে। টেবিলের উপর মাথা রেখে চোখ বন্ধ করে দীর্ঘশ্বাস নিল সে। তার শরীর ছেড়ে দিয়েছে। কেমন এক শান্তির অনুভব করছে। এতোক্ষণের‌ অস্থিরতা যেন এখন কাটল। 

নির্ঝরের এক্স গার্লফ্রেন্ড তমা এলো হুট করেই। নির্ঝর এখনো আগের অবস্থায়। সে এসেই নির্ঝরের মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,

"হ্যান্ডসামের আজ কি হলো? 

ফরহাদ বলে উঠে,
"কিছুই না, হবু বউয়ের সাথে দেখা করে এসেছে।

ঈশান বলে উঠে,
"ভাবী নিশ্চিত ঝাড়ছে ওকে।

আরিফ বলে উঠে,
"ঝাড়ছে না অন্য কিছু কিভাবে বলবো? 

তমা ন্যাকামি করে বলে উঠে,
"এটা তুমি কি করলে নির্ঝর,‌আমি চাইলাম তোমায় বিয়ে করতে আর শেষ মেষ কিনা তুমি মেহেরিন বর্ষা খান কে বিয়ে করছো। এটা কি ঠিক? 

তার কথা বলার ভঙ্গিতে হেসে উঠলো চারপাশ! নির্ঝর এখনো আগের অবস্থায়। শুধু ফরহাদ তাকিয়ে আছে তার দিকে। সে হাসছে না। ফরহাদের চোখ পড়ল, অনামিকা ঢুকছে। ঈশান বলে উঠে,

"আরে অনামিকা! 

অনামিকার নাম শুনে মাথা তুলে নির্ঝর। তাকিয়ে দেখে অনামিকা আসছে। তার সাথে একটা ছেলে তার হাত ধরেই আসছে সে। বেশ সেজেগুজে এসেছে। নির্ঝর একটা জিনিস খেয়াল করে হেসে দিল আর তা হলো অনামিকা তার দেওয়া উপরের ড্রেস টা পড়ে এসেছে তার নিউ বয়ফ্রেন্ড'র সাথে ঘুরতে। তমা ঢং করে বলে,

"মনে হচ্ছে পুরান প্রেম জেগে উঠেছে।

আরিফ বলে উঠে,
"পিরিতি কাঁঠালের আঠা লাগলে পড়ে ছাড়ে না.... 

হো হো হেসে উঠে চারদিক। নির্ঝর তমা'র দিকে এবার তাকায়। তমা বলে উঠে,

"বাহ এতোক্ষনে আমার দিকে চোখ পড়ল। 

নির্ঝর একটু জোরেই বলে,
"আমার হবু বউ কে দেখার পর অন্য মেয়েদের উপর বিশেষ একটা নজর পরে না। 

কথাটা উপস্থিত সবার কানেই গেল। অনামিকাও বাদ পড়ে নি। অনামিকা একটা ড্রিক'র গ্লাস হাতে নিয়ে সামনে ফিরল। চোখ পড়ল নির্ঝরের উপর। অনামিকার নতুন বয়ফ্রেন্ড তার কানে ফিসফিসিয়ে বলল,

"নির্ঝর তোমাকে জ্বালানোর জন্য এসব বলছে। তুমি ওর কথায় কান দিও না।
বলেই অনামিকাকে হাত ধরল। নির্ঝরের চোখ থেকে এটা আড়াল হলো না। সে ভ্রু নাচিয়ে বিয়ারের বোতল মুখে দিল। কিন্তু বিয়ার শেষ। নির্ঝর খুব জোরে ওয়েটার কে বলল আরেক বোতল বিয়ার দিতে। অনামিকা হেসে তার বয়ফ্রেন্ড'র হাত ছেড়ে নির্ঝরের দিকে এলো। তার হাতের গ্লাস সেখানে রেখে নির্ঝরের দিকে তাকাল। অতঃপর সবার উদ্দেশ্যে বলে উঠে,

"নির্ঝরের হবু বউ যে সুন্দরী সেটা তো শুধু সে জানলে হবে না, তাই না গাইস!

চারদিক থেকে সবার চিৎকার শোনা গেল। সবাই চাইছে নির্ঝর যেন তার হবু বউয়ের সাথে সবাইকে পরিচয় করিয়ে দেয়। নির্ঝর উঠে অনামিকার একটু কাছে গিয়ে বলল,

"সুন্দর জিনিস একা দেখার মজাই আলাদা কিন্তু.. বলেই একটা বাঁকা হাসি দিল। অতঃপর অনামিকার হাত থেকে ড্রিক'র গ্লাস টা নিয়ে সবার উদ্দেশ্যে বলল,

"আগামী রবিবার সবাইকে আমার তরফ থেকে ট্রিট। যেখানে আমার হবু বউ মানে জানেমান উপস্থিত থাকবে। সবাইকে দেখাব সেদিন। ( অনামিকার দিকে তাকিয়ে ) 

অনামিকার বয়ফ্রেন্ড এসে অনামিকা'র হাত ধরে তাকে একটু দূরে নিয়ে গেল। চারদিক থেকে হাততালির আওয়াজ। ফরহাদ, ঈশান আরিফ তিন জন'ই বেশ অবাক। নির্ঝর গ্লাসে চুমুক দিয়ে বের হয়ে এলো ক্লাব থেকে। তার পিছন পিছন ফরহাদ, ঈশান আর আরিফ। তিনজন'ই নির্ঝর কে ঘিরে ধরল। নির্ঝর ভ্রু কুঁচকে ৩ জনের দিকে তাকিয়ে বলল,

"এভাবে আমার পথ আটকে দাঁড়িয়ে আছিস যে?

"তুই কি পাগল হলি? 

"কেন পাগল হবো কেন? 

ঈশান বলে উঠে,
"তুই ভাবি কে আনবি তাও এখানে? 

"হ্যাঁ তো! 

ফরহাদ বলে উঠে,
"তুই বুঝতে পারছিস না অনামিকা তোকে জ্বালানোর জন্য করছে।

"হুম জানি! 

বলেই নির্ঝর পাশ কাটিয়ে চলে গেল। পেছন থেকে আরিফ বলে উঠে,
"আমার মনে হয় না ভাবি কখনো এখানে আসতে চাইবে।কোন চিন্তা ভাবনা না করেই এমন একটা ডিসেশন নেওয়া ঠিক হয় নি।

"একবার ভাবি কে জিজ্ঞেস তো করতি, তারপর না হয় সবাইকে বলতি।

"নির্ঝর তোর আরেকবার ভাবা উচিত!

নির্ঝর গাড়ির দরজা খুলে ভেতরে বসে বলল,
"আমি যখন বলেছি মেহু আসবে তার মানে সে আসবে। 

বলেই গাড়ি স্টার্ট দিয়ে নির্ঝর চলে গেল! 

#চলবে....
[+] 4 users Like Manjarul Haque's post
Like Reply
#7
Aktu boro update dite bro... Valo lagche ?
[+] 1 user Likes Dragondhideb98's post
Like Reply
#8
Nice story, keep going bro
[+] 1 user Likes Chandan's post
Like Reply
#9
#পর্ব_৬

অতীত কখনোই মানুষ কে ছেড়ে যায় না। কোন না কোন সময় সে ঠিক'ই ফিরে আসে। অতীত মানুষ যত আকড়ে ধরে ততোই কষ্ট পায় আর মেহেরিন কোন ভাবেই চায় না সে কষ্ট পেতে। তাই সে যত পারে তার অতীত থেকে পালিয়ে যায়। খোঁজে নতুন আশ্রয় যা তার অতীত কে ভুলিয়ে দেবে।‌ কিন্তু দিন শেষে সেই রাতের অন্ধকারে তার কালো অতীত তাকেও আঁধারে নিয়ে যেতে চায়! কোন রাতেই ঘুম হয় না তার। এখন আর স্বপ্ন দেখতে ইচ্ছে করে না। স্বপ্ন যত সুন্দর করে শুরু হয় ততোটাই কষ্টে সেটা শেষ হয়। মাঝে মাঝে সারারাত জেগেই কাটিয়ে দেয় সে। গতকাল রাতেও সারারাত দু চোখের পাতা এক করতে পারে নি মেহেরিন। 

ঘুমের ঔষধ খাবার পরেও তার ঘুম হয় নি। সারারাত কেমন মাতাল মাতাল হয়ে জেগে ছিল সে। ভোর হতেই দু 'চোখের পাতা এক হলো। শান্ত অর্ণব ঘুমের ঘোরে মেহেরিন কে না পেয়ে উঠে পড়ল। চোখ ঢলতে ঢলতে বসে দেখে মেহেরিন ইজি চেয়ারে বসে আছে। তার চোখ বন্ধ। অর্ণব বিছনা ছেড়ে উঠে যায় চেয়ারের সামনে। মেহেরিন'র দিকে খানিকক্ষণ তাকিয়েই বুঝতে পারে সে ঘুমিয়ে আছে। সে তার গুটিগুটি পায়ে আলমারির কাছে যায়। একটা টুল নিয়ে তাতে দাঁড়িয়ে আলমারি থেকে একটা চাদর বের করে। তার ছোট দু হাত খানা দিয়ে চাদর টা বের করতে যায়। চাদরের সাথে সাথে কিছু জামাকাপড় ও পড়ে। অর্ণব পিছন ফিরে দেখে তার মাম্মি একটু নড়ে উঠেছি তবে ঘুম ভাঙেনি। 

চাদরের অর্ধেকটা মেঝেতে আর বাকি অর্ণবের হাতে। এই চাদর এনে মেহেরিন'র কোলে বিছিয়ে দেয় সে। মায়ের প্রতি এই সূক্ষ্ম ভালোবাসার পরিমাণ যে অনেক বেশি। অতঃপর এলার্ম ঘড়ির এলার্ম টা বন্ধ করে দেয় যাতে মায়ের ঘুম না ভাঙে। মেহেরিন চেয়ারে ঘুমিয়ে থাকলে অর্ণব বুঝে যায় মেহেরিন সারারাত ঘুমায় নি। 

একা পায়ে রুম ছেড়ে নিচে চলে আসে অর্ণব। মিস মারিয়া সবে গরম পানিতে চায়ের পাতা দিল। একটু পর'ই এলার্ম বাজবে। ম্যাম উঠেই সবার আগে চা খেতে চাইবে। সিঁড়ি দিয়ে কারো নামার শব্দ শুনে উঁকি মেরে তাকিয়ে দেখে অর্ণব সিঁড়ি দিয়ে আস্তে আস্তে নামছে। তাকে দেখামাত্র চুলার আঁচ কমিয়ে দৌড়ে তার কাছে যায় মিস মারিয়া। 

কোলে তুলে সিঁড়ি থেকে নামিয়ে জিজ্ঞেস করে,

"ম্যাম উঠেনি।

অর্ণব মাথা নাড়িয়ে না বলে।

"এখনো ঘুমাচ্ছে!

অর্ণব মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বলে।

মিস মারিয়া অর্ণব কে কোলে করে সোফায় বসিয়ে দিয়ে বলে,
"তুমি এখানে বসো আমি ম্যাম কে ডেকে আসি! 

বলেই যেতে নেয় মারিয়া। তৎক্ষণাৎ সোফা থেকে নেমে তার দু হাত দিয়ে মারিয়ার এপ্রোন টেনে ধরে অর্ণব।মিস মারিয়া পিছন ফিরে হেসে বলে,

"আমাকে যেতে দাও, ম্যাম কে ডাকতে হবে।

অর্ণব মাথা নাড়িয়ে না বলে।

মিস মারিয়া হাঁটু গেড়ে বসে অর্ণবের মাথায় হাত রেখে বলে,

"ম্যাম কে না ডেকে দিলে যে সে রাগ করবে।

অর্ণব এবারো মাথা নাড়িয়ে না বলে। মিস মারিয়া জিজ্ঞেস করে, 

"কেন? 

অর্ণবের ছোট ঠোঁট দুটো আলতো খুলে ধীরে ধীরে বলে,

"মাম্মি ঘুমাবে!

"তুমি চাও আমি তাকে যেন না ডাকি।

অর্ণব মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বলে। মিস মারিয়া অর্ণব কে সোফায় বসিয়ে দিয়ে বলে,
"ঠিক আছে ডাকবো না। তুমার জন্য কিছু আনবো।

অর্ণব মাথা নেড়ে আবারো সম্মতি জানায়। মিস মারিয়া চলে যায় রান্না ঘরে। অর্ণব সামনে থাকা ম্যাগাজিন থেকে কার্টুন এর ম্যাগাজিন বের করে দেখতে থাকে।
.
মেহেরিন'র ঘুম ভাঙে বেশ বেলা করে। ঘুম ভাঙায় নি কেউ। ঘুম থেকে উঠে সবার আগে চোখ যায় সামনে থাকা দেওয়াল ঘড়ির দিকে। ১১ বাজে, এতোক্ষণ ঘুমালো সে। ভ্রু কুঁচকে বিছানার দিকে তাকাতেই দেখে অর্ণব নেই। তার কোলে একটা চাদর, সামনে তাকাতেই দেখে আলমারি খোলা নিচে পড়ে আছে জামাকাপড়।
। মেহেরিন হেসে উঠে দাঁড়ায়। তার ঘাড় খানিকটা ব্যাথা করছে। এর্লাম ঘড়ি ধরেই বুঝতে পারে এর্লাম বন্ধ ছিল। এটা যেন তার অর্ণবের কাজ এটা বুঝতে দেরি হয় না। 

বাইরে থেকে আওয়াজ আসছে। মেহেরিন কিছু কিছু শুনতে পারছে। হেঁটে বেলকনির দিকে তাকাতেই দেখল বাগানে অর্ণব খেলছে। তার মুখে স্নিগ্ধ হাসি। সকালের ঘুমটা অর্ণবের এই স্নিগ্ধ হাসি ছাড়া তৃপ্তি হয় না। পরক্ষনেই চোখ পড়ল আরেকজনের দিকে। এটা আর কেউ না নির্ঝর। মেহেরিন এখন খেয়াল করল অর্ণব নির্ঝরের সাথে খেলছে। নির্ঝরকে এইসময় এইখানে দেখে অবাক হলো মেহেরিন। তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করল নির্ঝরের দিকে। কারো দৃষ্টি আকর্ষণ পেয়ে নির্ঝর হুট করেই উপরে তাকাল। দেখল মেহেরিন দাঁড়িয়ে আছে। তাকিয়ে আছে তার দিকেই। তার অবাধ্য চুল গুলো উড়ছে আর এবার যখন উড়ছে তখন এলোমেলো হচ্ছে। দুজনেই এই চোখাচোখি রইল না বেশিক্ষণ। হুট করেই অর্ণব ঢেকে উঠল,

"মাম্মি! 

মেহেরিন চোখ সরিয়ে তাকাল অর্ণবের দিকে। 
.
মেহেরিন'র মুখোমুখি বসে আছে নির্ঝর। তাকে খুব নার্ভাস লাগছে। বার বার হাত নাড়াচাড়া করছে সে‌। মেহেরিন চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে বলে,

"কিভাবে জানলেন বাসায় আছি!

নির্ঝর চমকে উঠে,
"হুম!

"বলছি কিভাবে জানলেন আমি বাসায় আছি।

"অফিসে কল করেছিলাম, তারা বলেছে অফিসে আজ যাও নি। বাড়ির ল্যান্ডালাইনে কল করতেই অর্ণব ধরল। 

"তখন বুঝলেন বাসায় আছি।

"হুম! 

"আপনি কি কিছু বলবেন! 

নির্ঝর চমকে মেহেরিন'র দিকে তাকাল। মেহেরিন শান্ত গলায় আবারো বলল,

"বলছি আপনি কি কিছু বলবেন! 

নির্ঝর শুকনো ঠোক গিলল। সব মেয়ের সাথে নির্ঝর স্বাভাবিক হলেও মেহেরিন'র কাছে সে একটু অস্বাভাবিক তার মাঝে ক্লাবের সেই ঘটনা। কিভাবে বলবে তাকে? তবুও একটু সাহস আর দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে উঠে,

"হ্যাঁ, আসলে আমার বন্ধুরা তোমাকে দেখতে চেয়েছে।

"সেই থ্রু আপনি পার্টি অর্গানাইজ করেছেন তাই তো।

"হ্যাঁ তো তুমি কি আসবে?

"পার্টি টা যখন আমাকে নিয়ে তো আমি না আসলে পার্টি কিভাবে হবে। 

"তার মানে তুমি আসবে

"হুম যেতে তো হবে। তা কবে অনুষ্ঠান!

"রবিবার! ঠিকানার লোকেশন তোমাকে আমি পাঠিয়ে দেবো।

"আচ্ছা!

"তাহলে এখন চলি।

"এখন'ই চলে যাবেন, লাঞ্চ করে যান।

"না সে আরেকদিন করব, এখন অনেক কাজ আছে। আমি আসছি! 

বলেই নির্ঝর বের হতে নেয়। তখনই হুট করে দৌড়ে অর্ণব ছুটে আসে। পেছন থেকে ড্যাডি বলে ডাক দেয়। নির্ঝর প্যাকেট থেকে একটা চকলেট'র প্যাকেট অর্ণবের হাতে দিয়ে বলে,

"ড্যাডি আবারো আসবো ঠিক আছে অর্ণ! 

অর্ণব হেসে মাথা নাড়ে। নির্ঝর বিদায় দিয়ে চলে যায়। অর্ণবের ছোট্ট মনটা একটু ব্যাথা পায়। 
.
নির্ঝর বেশ আয়োজন করে চারদিক সাজিয়েছে। তার পরনে কালো রঙের স্যুট! একে একে সব বন্ধু বান্ধবরা আসছে। চারদিকে লাউড স্পিকারে গান বাজছে। কেউ নাচছে কেউ ড্রিক করছে। নির্ঝরের এক্স গার্লফ্রেন্ড তমাও এসে হাজির। নির্ঝর অপেক্ষা করছে অনামিকার। এই মেয়ে আসবে তো। তাকে আসতেই হবে, না এলে রিভেঞ্জ নিবে কিভাবে। ফরহাদ এসে পাশে দাঁড়িয়ে নির্ঝরের কাঁধে হাত রেখে বলে,

"তোর কি মনে হয় ভাবী আসবে।

"মেহু যখন বলেছে সে আসবে তার মানে আসবে।

"তাকে বলেছিস ক্লাবের কথা।

"লোকেশন পাঠিয়েছি!

নির্ঝরের কথায় ফরহাদ দীর্ঘশ্বাস ফেলল। নির্ঝর তার কথা বুঝতে পারছে না। সে চারদিক বার বার চোখ বোলাচ্ছে। অনামিকা কে খুঁজছে। কিন্তু ফরহাদের চিন্তা অন্য জায়গায়, মেহেরিন আদৌও এসব কিছু পছন্দ করবে তো।

নির্ঝর অপেক্ষা অবশেষে শেষ হলো। অনামিকার গাড়ি ঢুকল। গাড়ি থেকে সে বের হতেই ওপাশ থেকে বের হলো তার বয়ফ্রেন্ড। নিজের বয়ফ্রেন্ড'র হাত ধরে এদিকে'ই আসছে সে। নির্ঝর একটা বাঁকা হাসি দিয়ে ক্লাবের ভেতর এলো। সবাই তাকে দেখে মিসেস চৌধুরী'র কথা জিজ্ঞেস করল। নির্ঝর হেসে ফোনের দিকে তাকাল। একটা মেসেজ এসেছে। মেহেরিন আসছে! নির্ঝর ডিজে কে বলল গান টা বন্ধ করতে আর সবার উদ্দেশ্যে জোরে বলল আমার হবু বউ আসছে। অনামিকা ঢুকেই শুনতে পেল এই অন্যাউসমেন্ট! 

চার দিকের লাইট বন্ধ করে দেওয়া হলো। একমাত্র দরজার আলো জ্বালানো। মেহেরিন আসতেই তার উপর আলো পড়বে। সবার মাঝে এক অস্থিরতা! কেউ আসছে। সবার চোখ সেখানে। ছোট্ট ছোট্ট পায়ে দৌড়ে ভেতরে এলো একটি ছেলে। ছেলেটিকে দেখে সবাই অবাক। জ্বলে উঠল সব সময় আলো। আলোর মাঝে নির্ঝর কে দেখে বাঁচ্চা টা ড্যাডি বলে তার কাছে দৌড়ে গেল। নির্ঝর ও কোলে তুলে নিল তাকে। পরক্ষনেই প্রবেশ ঘটল মেহেরিন'র। কালো রঙের ওয়েস্টান ড্রেসে বেশ মানিয়েছে তাকে। তার পায়ের হিলের আওয়াজে চারদিক নিস্তব্ধ। নির্ঝরের কোলে থাকা বাচ্চা টা মেহেরিন'র কে দেখে বলে উঠল,

"মাম্মি! 

মেহেরিন হেসে বলে উঠে,
"অর্ণ! 

বলেই নির্ঝরের কাছে আসে। একটা বাচ্চা নির্ঝর কে ড্যাডি আর মেহেরিন কে মাম্মি বলে ডাকা টা সবার মাঝে নিরবতা তৈরি করেছে। নির্ঝরও বেশ অপ্রস্তুত! তার ধারনা ছিল না মেহেরিন অর্ণব কে নিয়ে আসবে। তারও খানিকটা অবাক লাগছে তার সাথে একটু বিরক্ত। তবুও সবার কৌতূহল মিটাতে নির্ঝর'ই হেসে বলে উঠে,

"আমার হবু বউ মেহেরিন বর্ষা খান যে খুব দ্রুতই মিসেস চৌধুরী হবে আর এই আমাদের ছেলে অর্ণ! 

নির্ঝরের কথায় চারদিক থেকে হাততালির আওয়াজ আসে। এছাড়া দু একটা হাসির শব্দও আসে। কেউ কেউ কটুক্তি করছে নির্ঝর বেশ বুঝতে পারছে। অর্ণব কে এখানে আনা মানে নিজের কে হাসির পাত্র করা এটা সে বুঝলেও মেহেরিন বুঝতে পারে নি। এতো মানুষজন আর চেঁচামেচি শুনে অর্ণব খানিকটা ভয় পেয়ে গেল। আঁকড়ে ধরল নির্ঝর কে। নির্ঝর ব্যাপারটা বুঝতে দেরি করলেও মেহেরিন বুঝতে দেরি করে নি। সে দ্রুত অর্ণব কে নামিয়ে দিল। অর্ণব আকড়ে ধরল তাকে। মেহেরিন হাঁটু গেড়ে বসে অর্ণবের গালে হাত রেখে বলে,

"মাম্মি এখানেই আছি সোনা! 

নির্ঝর ও বসে পড়ল অর্ণবের কাছে। কিছু জিজ্ঞেস করতেই মেহেরিন বলে উঠে,

"এতো লোকজন চেঁচামেচি নিতে পারছে না অর্ণব! 

নির্ঝরের মুখটা মলিন হয়ে গেল। কি করবে বুঝতে পারছে না। ফরহাদ, ঈশান আর আরিফ এসে অর্ণবের কাছে বসে বলে,

"আমার নাম ফরহাদ, আমি তোমার ড্যাডির বন্ধু! তুমি আমাকে আংকেল বলবে ঠিক আছে তো। 

অর্ণব কিছু না বলে শুধু তাকিয়ে রইল। ঈশান বলে উঠে,
"সামনেই একটা আইসক্রিম'র দোকান আছে তুমি কি গিয়ে আইসক্রিম খাবে।

অর্ণব এবারো চুপ। আরিফ বলে উঠে,

"তোমাকে এত্তো গুলো চকলেক দেব। 

অর্ণব এবার তাকায় মেহেরিন'র দিকে। মেহেরিন হেসে অর্ণবের গালে হাত রেখে বলে,

"তুমি যাবে!

অর্ণব কিছু না বলে ফরহাদের দিকে তাকায়। ফরহাদ তার হাত খানা এগিয়ে দিলে অর্ণব হাত টা ধরে নেয়। গুটিগুটি পায়ে সে বেরিয়ে যায় তাদের সাথে। মেহেরিন তাকিয়ে থাকে। নির্ঝর অনেক ভাবনা চিন্তার পর মেহেরিন'র হাত ধরে বলে,

"চিন্তা করো না, ফরহাদ ওরা সবাই অনেক যত্ন নিবে অর্ণবের!

মেহেরিন নিঃশ্বাস ফেলে নির্ঝরের দিকে তাকিয়ে বলে,
"সরি, আমি জানতাম না এরকম পরিবেশ হবে তাহলে অর্ণব কে আনতাম না। ভুলটা আমার!

"দোষ খানিকটা আমারও! তোমাকে বলা উচিত ছিল। 

বলেই নির্ঝর হেসে দিল। মেহেরিন একটু পরেই বুঝতে পারল হুট করেই নির্ঝরের সাথে সে কমফোর্টেবল হয়ে গেছে। বুঝতে পেরে নিজেই একটু অবাক হলো। মুহূর্তে'ই নির্ঝরের হাতের কথা মনে পড়ল। মেহেরিন তাকিয়ে দেখে নির্ঝর তার হাত ধরে আছে। মেহেরিন'র কাছে অস্বস্তি লাগছে। আজ অনেকদিন পর কেউ তার হাত খানা এভাবে ধরল। মনে পড়ছে কারো কথা। মেহেরিন চোখ বন্ধ করতেই মনে পড়ে, কারো মুখ ভেসে উঠলো। হুট করেই কারো আওয়াজ পেয়ে চোখ মেলে তাকাল মেহেরিন। নির্ঝরের হাত টা দ্রুত ছেড়ে নিজের কাছে নিল। সামনে তাকিয়ে দেখে অনামিকা দাঁড়ানো। মেহেরিন হেসে বলে,

"হ্যালো।

"হাই আমি অনামিকা! 

"আমি চিনি তোমায়! 

অনামিকা হেসে বলে,
"তাহলে তো সব জানো আমার সম্পর্কে তাই না। 

মেহেরিন অনামিকার কথার মানে বুঝলেও আর কথা বাড়ালো না। এদিকে নির্ঝর এদের দুজনের কথোপকথন শুনে মেহেরিন কে এক হাত দিয়ে নিজের কাছে টেনে অনামিকার দিকে তাকিয়ে বলে,

"তা আমার হবু বউ কি সুন্দর.. ( সবার উদ্দেশ্যে চিৎকার করে ) গাইস! 

চারদিক থেকে চিৎকারের আওয়াজ এলো। অনামিকা হেসে চলে গেল সেখান থেকে। নির্ঝরের কথায় ডিজে আবারো গান চালু করে। ডিম লাইট জ্বালানো হলো। মেহেরিন এই ফাঁকে নির্ঝরের হাতে চিমটি কাটল। নির্ঝর লাফিয়ে উঠল। মেহেরিন নির্ঝরের দিকে তাকিয়ে বলে,

"নিজের লিমিটের মাঝে থাকুন। 

বলেই মেহেরিন সামনে এগিয়ে গেল। নির্ঝর বিরক্ত হয়ে মেহেরিন'র পিছন পিছন গেল। 

#চলবে....
[+] 2 users Like Manjarul Haque's post
Like Reply
#10
#পর্ব_৭ 

"ওহ আচ্ছা তাহলে এখন তোমার কাছে কি আমার এসব শিখতে হবে। তবে হ্যাঁ তুমি কিছু খুব ভালো একটা টিচার হবে। কিভাবে অন্যের ছেলেকে নিজের ছেলের বাবা বানানো যায় এটা তোমার চেয়ে ভালো আর কে করতে পারবে বলো। 

উপস্থিত সবার সামনে চেঁচিয়ে কথা গুলো বলল তমা। মেহেরিন অবাক হয়ে গেছে তমার কথা শুনে। অর্ণব তমার চেঁচামেচি'র আওয়াজে ভয়ে আকড়ে ধরে আছে মেহেরিন কে। নির্ঝর সবে ভেতরে এসে এসব কথা শুনে থমকে যায়। 

খানিকক্ষণ আগে...

মেহেরিন এসে একটা সফট ড্রিংকস ওর্ডার করল। পরপর'ই নির্ঝর আসলো। সেও একটা সফট ড্রিক অর্ডার করল। মেহেরিন তার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আবারো সামনে ফিরল। সবাই নাচছে! নির্ঝর মেহেরিন'র পাশে দাঁড়িয়ে গানের তালে মাথা নাড়ছে। হঠাৎ মেহেরিন'র কানের কাছে গিয়ে বলল,

"তোমায় দেখতে খুব সুন্দর লাগছে।

মেহেরিন নির্ঝরের দিকে ফিরে বলে,
"আমি জানি আমি সুন্দরী! 

"আমার মতো এতো সুন্দর করে কেউ কখনো বলেছে তোমায়!

"সবার বলা আর আপনার বলার মাঝে পার্থক্য আছে।

"আছে! কেউ কি কখনো তোমায় বলেছে তুমি চাঁদের মতো স্নিগ্ধ, ফুলের পাপড়ির মতো নরম। ( মেহেরিন'র একটু কাছে এসে ) তোমার এই হরিণী চোখ, যা কারো নজর কারতে বাধ্য। যে কেউ তোমার এই চোখের প্রেমে পড়বে! 

মেহেরিন হেসে উঠে। নির্ঝর ভাবে মেহেরিন হয়তো পটে গেছে। কিন্তু না! নির্ঝর কে ভুল প্রমাণ করে মেহেরিন বলে উঠে,

"নির্ঝর একটা কথা মনে রাখবেন , আমি আপনার গার্লফ্রেন্ড না যে আপনার এইসব কথায় এক নিমিষেই পটে যাবো। 

মেহেরিন'র কথায় নির্ঝর চুপ হয়ে গেল। সে বুঝে গেছে মেহু কে এতো সহজে পটাতে পারবে না। আর সবার মতো সে না। তাকে পটাতে গেলে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হবে। এর মাঝেই ড্রিংক এসে পড়ল। নির্ঝর ড্রিংক'র গ্লাস টা নিয়ে মুখে দিল। 

কয়েকজন বন্ধু ইতিমধ্যে এসে পড়ল মেহেরিন'র সাথে কথা বলতে। মেহেরিন আর নির্ঝর কে একসাথে দেখে খুব প্রশংসা করে।তবে তারা মেহেরিন'র ছেলে নিয়ে কোন কথা জিজ্ঞেস করল না। নির্ঝরও হেসে হেসে সামনে তাকাল। কারন তার ঠিক সামনে দাঁড়িয়ে আছে অনামিকা। বেশ লাগছে এভাবে অনামিকা কে জ্বালাতে। 
.
কাপল ডান্স শুরু হলো। একে একে সব কাপল'রা এগিয়ে যাচ্ছে। অনামিকা ও বাদ পড়ে নি। নির্ঝর মেহেরিন কে তার সাথে যাবার কথা বলল। কিন্তু মেহেরিন সাথে সাথে না করে দিল। নির্ঝর মুখ বেজার করে সেখানেই বসে রইল। হুট করেই তমা এলো। তার সাথে নাচার জন্য নির্ঝর কে অফার করল তাও মেহেরিন'র সামনেই। মেহেরিন খানিকটা অবাক হলো। তার মনে হচ্ছে এখানকার প্রত্যেক'ই তাকে অপমান করতে উঠে পড়ে লেগেছে। 

নির্ঝর তমা কে না করে দিয়ে বলে উঠে,

"তমা.. আমার লাইফ পার্টনার আমার সাথে দাঁড়ানো তাকে রেখে তোমার সাথে ডান্স করব কিভাবে! 

নির্ঝরের কথার ধারায় তমা'র রাগ হলো। সে কিছু না বলে সরে গেল সেখান থেকে। নির্ঝর এবার মেহেরিন'র অনুমতি না নিয়েই তাকে নিয়ে চলে গেল নাচার জন্য। নির্ঝর মেহেরিন'র হাত খানা ধরে নিজের কাঁধে রাখতেই মেহেরিন হাত সরিয়ে ফেলতে চাইলো। নির্ঝর শক্ত করে মেহেরিন'র হাত ধরে নিজের কাঁধে রেখে মেহেরিন'র কানের কাছে বলল,

"সিন ক্রিয়েট করো না। আমি আর তুমি এখন না নাচলে অনেক কথা হবে এই নিয়ে! 

"অনেক কথা না বলুন আপনার বন্ধুরা আপনাকে কথা শুনাবে।

"জানো যখন তখন আমাকে হেল্প করো যাতে ওদের কথা শুনতে না হয়।

"কিছু আমি..

"প্লিজ মেহু! 

মেহেরিন কিছু বলতে গিয়েও বলল না। নির্ঝর মেহেরিন'র কোমরে হাত রাখতেই মেহেরিন কেঁপে উঠলো। শক্ত করে নিল নির্ঝরের কাঁধে রাখা হাত খানা।তারা দুজনেই একসাথে নাচল কিন্তু কিছুক্ষণ! কিন্তু সবাই নাচ থামিয়ে ওদের নাচ'ই দেখতে লাগল। তাদের নাচ শেষ হবার পর সবাই একসাথে হাত তালি হলো। মেহেরিন হেসে সেখান থেকে এক কোনে চলে এলো। নির্ঝর ও এলো তার সাথে সাথে। মেহেরিন নির্ঝর কে বলল,

"একটু কল করে অর্ণবের খবর টা জানুন। খুব চিন্তা হচ্ছে অনেকক্ষণ তো হলো। 

"আচ্ছা আমি কল করে আসছি! 
বলেই নির্ঝর বাইরে চলে গেল। মেহেরিন একাই দাঁড়িয়ে রইল সেখানে। তখন'ই অনামিকা এলো সেখানে! তাকে দেখে বলে উঠল,

"মনে হচ্ছে বেশ ভালোই আছো। আসলে কি বলোতো আমি তোমাকেই প্রথম দেখলাম যে কি না অন্যের জিনিস নিয়ে এতোটা ভালো আছে। 

মেহেরিন প্রথম ভাবল কিছু বলবে না। এড়িয়ে যেতে চাইলো কিন্তু পরক্ষণেই অনামিকা আবারো বলে উঠে,

"নিজেকে খুব সুন্দরী ভাবো। 

মেহেরিন হেসে বলে উঠে,
"আমি সুন্দরী, কিন্তু কথা হলো এখানে কে সুন্দর সেটা না। 

"ওহ আচ্ছা এখন তাহলে জ্ঞান দিবা।

"তোমাকে জ্ঞান দেবার প্রশ্ন উঠে না। তুমি যথেষ্ট বুদ্ধিমান তাইতো নিজ থেকেই সরে গেলে। 

"তুমি জানো, আমাকে তুমি বাধ্য করেছ! 

"বাধ্য করি নি, এটা তোমার সিদ্ধান্ত ছিল। ধরতে গেলে আমি এই বিষয় নিয়ে তোমাকে কোন কথাই বলি নি। তুমি নিজের বিলাসিতার কথা ভেবে ভালোবাসার কথা ভুলে গেছ এই তো।

"মেহেরিন! 

"অনামিকা উঁচু গলায় কেউ আমার সাথে কথা বলে না তুমিও সে চেষ্টা করো না। 

হঠাৎ করেই গান বন্ধ হয়ে গেল। মেহেরিন আর অনামিকা খানিকটা অবাক হলো। কারো চিৎকারের আওয়াজ পাওয়া গেল। তমা চেঁচাচ্ছে কিন্তু কার উপর। মেহেরিন উঁকি দিয়ে দেখার চেষ্টা করতেই চমকে উঠে। এটা তো অর্ণব। মেহেরিন দ্রুত সেখানে যায়, অর্ণব মেহেরিন কে দেখেই মাম্মি ডেকে তাকে জরিয়ে ধরে। 

মেহেরিন তাকিয়ে দেখে তমা'র ড্রেসে আইসক্রিম জাতীয় কিছু লেগে আছে। খেয়াল করল অর্ণবের হাতেও আইসক্রিম। তখনই প্রবেশ ঘটল ফরহাদের। ফরহাদ অর্ণবের দিকে তাকিয়ে বলে,

"অর্ণব ঠিক আছো ‌ 

মেহেরিন হাঁটু গেড়ে বসে অর্ণবের কান থেকে ইয়ারফোন সরিয়ে দেয়। মূলত ইয়ারফোন অর্ণবের কানে ছিল বলে এখানকার চিৎকার চেঁচামেচি সে শুনতে পাই নি। এটা ঈশানের প্ল্যান ছিল যাতে এখানে অর্ণব কে নিয়ে আসতে পারে। অর্ণব হাতে আইসক্রিম নিয়ে মেহেরিন'র কাছেই ছুটে আসছিল কিন্তু মাঝখানে তমা চলে আসে। আর তার হাতের আইসক্রিম তমার আইসক্রিম'এ পড়ে। এতেই তমা তুলকালাম কান্ড শুরু করে। 

মেহেরিন অর্ণব'র মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,

"অর্ণ সোনা ঠিক আছো। 

অর্ণব মাথা নাড়ে। তমা কর্কশ গলায় বলে উঠে,
"ওর কি হবে, ও তো ঠিক'ই আছে মাঝখান থেকে আমার ড্রেস'র বারোটা বাজিয়ে দিল। 

তমা কথা বলার ভঙ্গিতে অর্ণব ভয় পেয়ে মেহেরিন'কে জরিয়ে ধরে। মেহেরিন তমা'র দিকে তাকালেই তমা চুপ হয়ে যায়। অর্ণব'র মাথায় হাত বুলিয়ে জিজ্ঞেস করে,

"অর্ণ আন্টির ড্রেসে তুমি আইসক্রিম ফেলেছ? 

তমা বলে উঠে,
"আমি কি মিথ্যে বলছি নাকি। তুমি আর তোমার ছেলে এখন কি আমায় মিথ্যেবাদী প্রমাণ করতে চাও

ফরহাদ বলে উঠে,
"তমা! 

তমা আবারো চুপ হয়ে যায়। মেহেরিন অর্ণব কে আবারো জিজ্ঞেস করে,

"বাবা, বলো!

অর্ণব মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বলে। তমা বলে উঠে,
"যাক স্বীকার তো করল। 

মেহেরিন হেসে অর্ণব'র মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,
"অর্ণ সোনা দোষ করলে সরি বলতে হয়। তুমি দোষ করেছ আন্টি কে সরি বলো। 

অর্ণব তমার কাছে গিয়ে বলে,
"সরি আন্টি! 

তমা বিরক্ত মুখে অর্ণবের দিকে তাকায়। অর্ণব আবারো দৌড়ে চলে আসে মেহেরিন'র কোলে। তমা ভ্রু কুঁচকায়। মেহেরিন দাঁড়িয়ে তমা কে বলে,

"তমা এখন তুমি অর্ণব কে সরি বলো।

"আমি! আমি কেন বলবো।

"ওর সাথে খারাপ ভাবে কথা বলেছ তাই।

"তোমার কোন ধারনা আছে মেহেরিন তোমার ছেলে আমার প্রিয় ড্রেস টার উপর কিভাবে আইসক্রিম ফেলে নষ্ট করে দিয়েছে। দোষ তোমার ছেলে করেছে আর তুমি বলছো আমায় সরি বলতে। 

"আমার ছেলে দোষ করে সরিও বলেছে কিন্তু তুমি হয়তো জানো না একটা বাচ্চার সাথে কিভাবে কথা বলতে হয়।

"ওহ আচ্ছা তাহলে এখন তোমার কাছে কি আমার এসব শিখতে হবে। তবে হ্যাঁ তুমি কিছু খুব ভালো একটা টিচার হবে। কিভাবে অন্যের ছেলেকে নিজের ছেলের বাবা বানানো যায় এটা তোমার চেয়ে ভালো আর কে করতে পারবে বলো। 

মেহেরিন অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে তমার দিকে। ফরহাদ তমা কে একবার থামানোর চেষ্টা করলেও লাভ হয় না। এর মাঝেই নির্ঝর প্রবেশ করে। তার পিছু পিছু ঈশান আর আরিফ। নির্ঝর এসে দাঁড়ায় মেহেরিন'র কাছে। অর্ণব নির্ঝর কে দেখেই ড্যাডি বলে তার কাছে চলে যায়। তমা বলে উঠে,

"বাহ ছেলে কে খুব ভাল ট্রেনিং ও দিয়েছ দেখছি। এটাও শিখতে হবে তোমার কাছে। 

নির্ঝর এসব শুনে রেগে বলে উঠে,
"তমা কি বলছো এসব! 

অর্ণব কেঁপে উঠে। তমা ন্যাকামি করে নির্ঝর কে বলে,
"ও এখন তো সব দোষ আমার। কিন্তু এই ছেলে টা যে কি করলো সেটা কেউই দেখছে না। আমি কি করছি না করছি সবাই দেখছে। 

নির্ঝর তমা'র ড্রেসের দিকে তাকিয়ে বলে,
"তোমার ড্রেস নষ্ট হলে ঠিক করা যাবে কিন্তু একটা বাচ্চা কে কষ্ট দিয়ে কথা বললে সেটা কখনো ঠিক করা যাবে না। 

তমা বলে উঠে,
"তুমিও তো দেখছি এই বাচ্চাটা কে নিজের ছেলে বলে মেনেই নিয়েছ। তা ভালোই করেছ এছাড়া আর কিই বা করতে তুমি। যদি একজন এসে তোমার গলায় ঝুলে পড়ে তাহলে তোমার কি করা উচিত। 

নির্ঝর তমা কে ধমক দিয়ে বলে,
"তমা! আর একটা কথা বলবে না তুমি! 

বেচারা অর্ণব দুজনের এমন কথা বার্তায় ভয়ে কাঁপতে থাকে। মেহেরিন অর্ণব কে নিজের কাছে টেনে তার কানে ইয়ারফোন লাগিয়ে দেয়। অতঃপর অর্ণবের কপালে চুমু খেয়ে বলে,

"অর্ণ সোনা ভয় পেয়ো না আমি এখানেই আছি। মাম্মি! মাম্মি তোমার সাথেই আছি! বাবা টা আমার! 

বলেই অর্ণব কে জরিয়ে ধরে। অর্ণব ও জরিয়ে ধরে তাকে। তমা কিছু বলতে নিলে মেহেরিন তমা'র দিকে তাকিয়ে বলে,

"নিজের মুখ থেকে আর একটা শব্দ বের করলে তোমার জিহ্ব টেনে ছিঁড়ে ফেলবো আমি! 

মেহেরিন'র মুখে এমন কথা শুনে আশপাশের সবাই থমকে যায়। নির্ঝর অবাক হয়ে মেহেরিন কে দেখে। তমা আরো বিরক্ত হয়ে কিছু বলতে নিবে তার আগে মেহেরিন অর্ণব'র গালে হাত কপালে আবারো চুমু খায়। অতঃপর ফরহাদের কোলে অর্ণব কে দিয়ে বলে,

"আপনি ওকে নিয়ে একটু গাড়ির কাছে যান আমি আসছি! ফরহাদ অর্ণব কে নিয়ে বাইরে চলে যায়। মেহেরিন এবার দাঁড়িয়ে তমা'র দিকে তাকায়। তার ড্রেসের দিকে তাকিয়ে হেসে উঠে বলে,

"তোমার ড্রেসের চেয়ে আমার ছেলের পোশাকের দাম ও অনেক বেশি এটা জানো। 

"কি বললে তুমি!

"তুমি যেটা শুনলে ঠিক তাই বলেছি। একটু আগে কি বললে না আমার কাছে তোমার অনেক কিছু শিখার আছে হ্যাঁ আসলেই শিখার আছে। আমার কাছ থেকে তোমার এটা শেখা উচিত কিভাবে নিজের আত্নসম্মান বোধ টিকিয়ে রাখা যায়। 

"হাউ ডেয়ার ইউ! তুমি বলতে চাইছো আমার আত্নসম্মান নেই।

মেহেরিন একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে তমা'র কাছে গিয়ে বলে উঠে,
"এক ছেলের সাথে ব্রেকফাস্ট আবার দুপুরে অন্য ছেলের সাথে লাঞ্চ সাথে আবারো আরেক জনের সাথে ডিনার! এরকম মেয়েদের আত্নসম্মান বোধ থাকে।

"মেহেরিন! 

"চেচাবে না। চেঁচিয়ে কথা বলা আমি পছন্দ করি না। তোমার সম্পর্কে আমি কি জানি আর না জানি সেটা তুমি নিজেও জানো না। তোমার ফুল ব্র্যাকগ্রাউন্ড সম্পর্কে আমি জানি। আসলে কি বলোতো তোমার ব্যাকগ্রাউন্ড না আমার হবু বরের সাথে জড়িত তাই একটু আধটু খোঁজ খবর নিতেই হয়েছে। এতোদিন আমার হবু বরের টাকায় বিলাসিতা করেছ আর এখন যখন দেখছ তা নেই তখন'ই তোমার মাথা খারাপ হয়ে যাচ্ছে।

"তুমি তোমার লিমিট ক্রশ করছ!

"লিমিট ক্রস আমাকে শিখিও না। আমার লিমিট আমি জানি কিন্তু তোমার টা বোধহয় তুমি ভুলে গেছ! 

তমা কিছু বলতে নিবে তখন'ই মেহেরিন হাত দিয়ে তাকে থামিয়ে দিল। হ্যান্ড ব্যাগ থেকে চেক বই বের করে তাতে নিজের সিগনেচার দিয়ে তমার হাতে গুজে দিয়ে বলল,

"টাকার হিসেব টা না হয় তুমিই বসিয়ে নিও যাতে এরকম ড্রেস আরো দশটা কিনতে পারো।

তমা রেগে হাতের চেক টা গুটিয়ে নেয়। মেহেরিন হেসে বলে,
"এই তো গুড গার্ল। তবে তমা তুমি একটা কাজ ভালো পারো সেটা হলো কিভাবে অন্যের টাকার জন্য নাচতে হয় আমি মেহেরিন বর্ষা খান এটা ভালো জানে কিভাবে টাকার জোরে অন্যদের নাচাতে হয়। আকাশ পাতাল তফাৎ তোমার আর আমার মাঝে তাই লাগতে এসো না। নাহলে... ( তমার গাল টেনে বলে ) অনেক সুন্দর কিন্তু দেখতে তুমি! 
বলেই একটা বাঁকা হাসি দেয়! 

অতঃপর মেহেরিন বের হয়ে যায় ক্লাব থেকে। সবাই এতোক্ষণ নিশ্চুপ দর্শকের মতো সবকিছু দেখছিল। নির্ঝর ও তাই! মেহেরিন যেতেই তমা'র দিকে বিরক্ত চোখে তাকিয়ে স্যুট খুলে ঈশানের হাতে রেখে দৌড়ে বের হয়ে যায়। এদিকে তমা রাগে ফুসফুস করতে থাকে। 

মেহেরিন ক্লাব থেকে বের হয়ে এসে গাড়ির দিকে চলে যায়। সেখানে এসে দেখে ফরহাদ অর্ণব কি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। মেহেরিন কে দেখে অর্ণব মাম্মি বলে ডাকে। ফরহাদ তাকে কোল থেকে নিচে নামিয়ে দেয়। অর্ণব দৌড়ে আসে মেহেরিন'র কাছে। মেহেরিন মুচকি হেসে ফরহাদ কে ধন্যবাদ দেয়। অতঃপর গাড়ির দরজা খুলে পিছনের সিটে অর্ণব কে বসিয়ে সিটবেল্ট বেঁধে দেয়। ফরহাদ বলে উঠে,
"চলে যাচ্ছ!

"হুম অনেক রাত হয়ে গেছে এখন চলে যাবো! 
বলেই মুচকি হাসে। অতঃপর মেহেরিন সামনে সিটের দরজা খুলতেই নির্ঝর এসে ডাক দেয়..

"মেহু!

মেহেরিন দরজা বন্ধ করে নির্ঝরের দিকে তাকায়। সাদা শার্টের গলায় খোলা টাই টা ঝুলছে। দৌড়ে আশায় চুলগুলো সব এলোমেলো হয়ে আছে। নির্ঝর কে দেখে ফরহাদ চলে যায় সেখানে থেকে। নির্ঝরের গলা পেয়ে অর্ণব বলে উঠে,

"ড্যাডি! 

"অর্ণ! 

"অর্ণ সোনা ড্যাডি কে টাটা দাও আমরা চলে যাচ্ছি। 

গাড়ির ভেতর থেকেই অর্ণব দু হাত নেড়ে নির্ঝর কে বিদায় দেয়। মেহেরিন গাড়িতে ঢুকতে যাবে নির্ঝর আবারো ডাকে মেহেরিন কে। মেহেরিন গাড়ির দরজা বন্ধ করে নির্ঝরের কাছে হেঁটে আসে। নির্ঝর বলে উঠে,

"মেহু সরি, আই'ম সো সরি। সত্যি জানতাম না তমার এতো ক্ষোভ ছিল তোমার।

"ক্ষোভ থাকা টা অস্বাভাবিক কিছু না। কিন্তু নির্ঝর.. ( একটু থেমে নির্ঝরের দিকে তাকিয়ে ) এইভাবে আমাকে আর আমার ছেলে কে অপমান না করলেও পারতেন!

নির্ঝর মেহেরিন'র এই কথার জন্য একদম প্রস্তুত ছিল না। সে কিছু বলতে যাবে কিন্তু তা শোনার অপেক্ষা মেহেরিন করল না। সে তৎক্ষণাৎ সেখান থেকে হেঁটে গাড়িতে গিয়ে বসল। গাড়ি স্টার্ট দিল , নির্ঝর দূর থেকেই মেহু বলে ডাকল কিন্তু তা মেহেরিন'র কানে পৌঁছাল না। মেহেরিন চলে গেল। অর্ণব হাত নাড়িয়ে আবারো বিদায় জানাচ্ছে নির্ঝরকে। নির্ঝর ঠোঁটের কোনে হাসি রেখে হাত নাড়িয়ে বিদায় দিচ্ছে অর্ণব কে। 

#চলবে....
[+] 1 user Likes Manjarul Haque's post
Like Reply
#11
#পর্ব_৮ 

ঘরটা অন্ধকার তবে বেশি না। আবছা আবছা আলোতে কিছুটা হলেও দেখা যাচ্ছে। এই আলোর মাঝে হেঁটে চলেছে মেহেরিন। তার গন্তব্য কোথায় সে নিজেও জানে না তবে তার পা ঠিক'ই চলছে। ঘরটা বেশ চিনা চিনা লাগছে। মেহেরিন'র শরীর শিউরে উঠছে। ঘেমে একাকার সে কিন্তু এখানে বেশ ঠান্ডা অনুভব করছে সে। অস্থিরতার বাড়ছে তার। ধীরে ধীরে সামনে এগিয়ে যাচ্ছে। মন চাইছে না সামনে যেতে তবুও যাচ্ছে। সামনের একটা ঘর থেকে আলো এসে পড়ছে। এই আলোতেই ঘরের চারদিক আলোকিত। মেহেরিন সেই ঘরের দিকে যত'ই এগিয়ে যাচ্ছে ততোই তার ভয় হচ্ছে। কিছু একটা হতে চলেছে। শুকনো ঢোক গিলে ঘরের দিকে দাঁড়াল সে। মাথা উঁচু করে সামনের দিকে তাকানোর সাহস হয় নি। অনেক সুন্দর ঘ্রাণ আসছে। বেলী ফুলের ঘ্রাণ! ঘ্রাণটা অনেক জোরালো। মনে হচ্ছে আশপাশ বেলি ফুলের গাছ আছে। মেহেরিন চোখ তুলে সামনে তাকাতেই চমকে উঠলো। দুহাত দিয়ে আটকে ধরল মুখ। চেঁচাতে মন চাইছে তবু পারছে না। চোখ গুলো কেমন শক্ত হয়ে আছে। তার সামনে ফ্যানের সাথে ঝুলছে তার প্রিয় মানুষটি। মেহেরিন'র উচিত সেই শোকে কান্না করা কিংবা তাকে গিয়ে জরিয়ে ধরা কিন্তু সে কিছুই করছে না। যেখানে আছে সেখানেই দাঁড়িয়ে আছে। নিঃশ্বাস বন্ধ করে যাচ্ছে পুরো শরীর কাঁপছে তার। মনে হচ্ছে মৃত্যু তার সামনে এসে দাড়িয়ে আছে। তার মৃত্যু আজ অনিবার্য। কিন্তু না, তাকে মরলে তো হবে না। তাকে বাঁচতে হবে। মেহেরিন মুখের হাত ছেড়ে দিয়ে ঘন ঘন শ্বাস নিচ্ছে। মনে হচ্ছে এইবার বেঁচে যাবে সে। পিছনে আগাতেই হুট করেই মেঝেতে পড়ে গেল সে। সামনে তাকিয়ে দেখে লাশটা চোখ খুলে তার দিকেই তাকিয়ে আছে। কি ভয়াবহ দৃশ্য। মেহেরিন কে দেখে সে হাসছে। এই ভয়াবহ দৃশ্য নিমিষেই উধাও হয়ে গেল। তার হাসিটা খুব সুন্দর। খুব সুন্দর মিষ্টি হাসি। মেহেরিন অভিভূত হয়ে দেখছে সেই হাসি। ইশ্ কতোদিন পর আজ দেখলো সেই হাসি। অনুরুপ অর্ণব'র মতো হাসি। কিন্তু সেই হাসিও চলে গেল মুখ থেকে। মেহেরিন'র শরীর আবারো শিউরে উঠলো। কেন জানি মনে হচ্ছে লাশটা তার কাছেই আসছে। না আর না, চট করেই বিছানা ছেড়ে উঠে গেল মেহেরিন। ঘন ঘন শ্বাস নিয়ে সামনে তাকাল। এর্লাম বাজছে। মেহেরিন এর্লাম ঘড়ির দিকে তাকিয়ে এর্লাম বন্ধ করল। ভোর হয়ে গেছে।পর্দার আড়াল থেকে মৃদু আলো এসে পড়ছে বিছানায়। গুটিশুটি মেরে অর্ণব শুয়ে আছে তার পাশে। মেহেরিন ঘেমে একাকার। বিছানা ছেড়ে নিচে নেমে দাঁড়ালো। খুব ভয়ংকর স্বপ্ন দেখলো সে। এমনটা আগেও হয়েছে। যতবার স্বপ্ন টা দেখে ততোবার'ই ভয়ে শিউরে উঠে সে। কিন্তু এতো তার প্রিয়জন। তাকে ভয় পাবার কি আছে! স্বপ্ন থেকে জাগলে মন চায় কেন তাকে একবার ছুঁয়ে দেখলো না‌। কিন্তু ভয়ে তার কাছেই যাওয়া হয় তার। এরকম টা হবার কথা না। বেঁচে থাকাকালীন যাকে ছাড়া এক মুহুর্ত চলতে পারতো না তার লাশ কে দেখে মেহেরিন তার গাঁয়েও ঘেঁসতে চায় না। এ যে অন্যায়। এটাই কি তার ভালোবাসা তার প্রতি! 

সকালের এই তিক্ততা মেহেরিন কে এতোটা ঘাবড়ে দিতে পারে নি। মেহেরিন নিজেকে অনেকটা শান্ত করে ফেলেছে। বেলকনিতে দাঁড়িয়ে সুবিশাল আকাশের দিকে তাকিয়ে চোখ বন্ধ করে শ্বাস নিয়েছে। উপভোগ করেছে ভোরের আগমনেকে। সব ক্লান্তি যেন নিমিষেই কেটে গেল। মেহেরিন এবার হাঁটতে হাঁটতে রুমে এলো। পর্দা সরাতেই আলো এসে পড়ল অর্ণব'র মুখে। অর্ণবের চোখ মিনমিন করছে। তার মানে অর্ণব জেগে গেছে। তবুও চাদর দিয়ে মুখ ঢেকে ওপাশ হয়ে শুয়ে পড়ল সে। মেহেরিন'র ঠোঁটের কোনে এবার হাসি ফুটল। সে খুব জোরে হেঁটে হেঁটে অর্ণবের বিছানার কাছে গেল। অর্ণব মেহেরিন'র আসার আওয়াজ পেল। সে আরো গুটিসুটি হয়ে চোখ বন্ধ করে শুয়ে রইল। খানিকক্ষণ পার হবার পর মেহেরিন কে কিছু করতে না দেখে চাদরের নিচ থেকে উঁকি দিল মুখখানা। আশপাশ তাকিয়ে মেহেরিন কে দেখতে পেলো না। তার ছোট মাথাতে এই রহস্য ঢুকলো না। উঠে বসে পড়ল সে। মাথা ঘুরিয়ে পাশে তাকিয়ে দেখে তার বিছানার পাশে মেহেরিন বসে আছে। তার দিকে তাকাতেই মেহেরিন তাকে চমকে দেবার জন্য বলে উঠলো ,

"ভাউউ! 

বেচারা অর্ণব চমকে উঠলো। ধপাস করে শুয়ে পড়ল বিছানায়। মেহেরিন বিছানায় উঠে অর্ণব কে নিজের কোলে তুলে নিল। অর্ণব দুই বাহু দ্বারা মুখটা ঢেকে নিল। মেহেরিন তার বাহুতে হাত বুলিয়ে শুড়শুড়ি দিতে লাগল। অর্ণব মুখ ঢাকা অবস্থায় হেসে উঠলো। তার হাসির আওয়াজে মুখরিত পুরো ঘর। মেহেরিন তার হাত ধরে মুখখানা সরাতেই অর্ণব বলে উঠে,

"ভাউ! 

মেহেরিন চোখ বড় বড় করে হেসে উঠে। অর্ণব তার হাসির সাথে তাল মিলায়। তার দুঃস্বপ্ন কেটে যায় সকালের এই স্নিগ্ধ মূহূর্তে! 
.
গতকাল রাতে সোফায় ঘুমিয়ে পড়েছিল নির্ঝর। হাতে থাকা বিয়ারের বোতলটা হাত থেকে মেঝেতে কখন পরে গেল মনে নেই। ঘুম থেকে উঠে নিচে তাকিয়ে দেখে বিয়ায়ের বোতল থেকে বিয়ার পরে আছে চারদিকে।

নির্ঝর পাশ দিয়ে সোফা থেকে নেমে বিছানার কাছে যেতে নিল। পরক্ষনেই আয়নায় নিজেকে দেখে গতকালের ঘটনা মনে পড়ল। গতকালের সাদা শার্ট আর টাই এখনো তার গলায় ঝুলছে। মাথার চুল উসকোখুসকো হয়ে আছে। মেহেরিন'র গতকালের কথা মনে পড়তেই মাথায় হাত দিয়ে বিছানায় বসে পড়ল। রাগ হচ্ছে খুব রাগ। মেহু কিভাবে পারল তাকে এই কথা বলতে। এসব কথা তো সে স্বপ্নতেও ভাবিনি। হ্যাঁ এটা ঠিক এমন ঘটনা তার সাথে এই প্রথম ঘটেছে তাই অর্ণব কে মেনে নিতে সময় হচ্ছে তাই বলে কি সে পিছিয়ে পড়ছে। না সে চেষ্টা করছে, কিন্তু তার এই চেষ্টার পরও মেহেরিন কিভাবে তার উপর এই অন্যায় অভিযোগ করে। চোয়াল শক্ত করে বসে রইল নির্ঝর। মন চাচ্ছে এখন গিয়ে মেহুর সাথে ঝগড়া করলে মেজাজ ঠিক হতো তার। দু'চারটে কথা শুনাতে পারলে মাথা ঠান্ডা হতো। বলে দিয়ে আসতো তমা তো ভুল কিছু বলে নি। তবে হ্যাঁ একটু বেশিই বলেছে যা একদম বলা উচিত ছিল না। অন্যের ছেলে প্রথম দেখাতেই তাকে ড্যাডি বলে ডাকে। মেহু এটা শিখিয়ে দেই নি কে বলতে পারে। তারপর বিয়ে করতে চাইছে তাকে তাও একবছরের জন্য সারাজীবনের জন্য না। এর মানে কি তাকে ব্যবহার করতে চাইছে। সে কি পুতুল নাকি যে কেউ তার ইচ্ছে মতো তাকে ব্যবহার করবে। এসব কথা বলা উচিত ছিল। ছিল বলছি কি বলবে! নির্ঝর এসব কথাই মেহেরিন কে বলবে। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে ঝগড়ার সময় এসব পয়েন্ট গুলো মনে থাকবে না। টেবিলে থাকা কলম টা হাতে নিল। পেপার খুঁজতে লাগল এসব কথা পেপারে লিখে রাখবে। দরকার পড়লে কাগজ থেকে পরে পরে মেহুকে শোনাবে তবুও শোনাবে। 

একে একে সব পয়েন্ট পেপারে লিখলো। ভালোই লেগেছে পুরো একটা কাগজ। পুরোটা কথা শোনাবে মেহুকে। মেহু কোনমতে পারে না তাকে কন্ট্রোল করতে। নির্ঝর চৌধুরী কে কেউই পারবে না তার কট্রোলে রাখতে  মেহু তো কোন ছাড়! 

বলেই বাকা হাসি দিল। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে এলোমেলো চুল গুলো কে আরেকটু এলোমেলো করল। এভাবে নিজেকে দেখে হেসে দিল নির্ঝর। বেশ কিউট লাগছে তাকে। এভাবে যে কেউই দেখলে তার প্রেমে পড়বে। শুধু ওই মেহু বাদে! হুহ! 

হুট করেই নিজের ফোনের কথা মনে পড়ল। এখন অবদি কেউই ফোন করল না তাকে। এটা হতে পারে না। নির্ঝর ফোন খোজায় ব্যস্ত হয়ে পড়ল। পুরো ঘর অগোছালো তার। এর মাঝে ফোন কোথায় পড়ে আছে বোঝাবার উপায় নেই। অনেকক্ষণ খোঁজাখুঁজির পর ফোনটা পেল।  ফোন স্ত্রিনে ১৫০ টা মিসকল। কিছু কল কথার আর বাকিটা তমা'র‌। ফোনটা এবার বেজে উঠলে নির্ঝর তা ধরল। তমা'র কল! ফোন কানে দিতেই ওপাশ থেকে তমা বলে উঠে ,

"অবশেষে ধরলে!

"সাইলেন্ট ছিল তাই খেয়াল করি নি। কি হয়েছে?

"জিজ্ঞেস করছো কি হয়েছে? গতকালের ঘটনা কি সব ভুলে গেলে। 

তমা'র কথায় নির্ঝর ঠোঁট কামড়ে ধরল। গতকালের তমা'র সব কথাই মনে আছে। তমা'র উপরেও তার রাগ আছে। থাকবে নাই বা কেন। একটা বাচ্চার সাথে এভাবে কথা বলে কেউ। অর্ণব এভাবেই মানসিক ভাবে সুস্থ না। এরপর তমার এইসব কথা। অর্ণব নিশ্চিত অনেকটা কষ্ট পেয়েছে। নির্ঝর  তবুও কিছুই বলল না। ওপাশ থেকে তমা বলে উঠে,

"কথা বলছো না কেন? তুমি গতকাল ও এভাবে চুপ ছিলে। কিছুই বলো নি। তোমার হবু বউ এতগুলো কথা শোনালো আমায় আর তুমি..

নির্ঝর শান্ত গলায় বলে উঠে,
"আমি কিছু বলে নি এটা তোমার জন্য'ই ভালো হয়েছে। নাহলে পরেরবার নিজের মুখ দেখাতে পারতে না তুমি।

"নির্ঝর!

"কি? কি নির্ঝর! একটা বাচ্চার সাথে কিভাবে কথা বলেছ তুমি সব দেখেছি। এভাবে কেউ বাঁচ্চার সাথে কথা বলে। একটা মেয়ে হবার পরও এতো টুকু দয়া মায়া নেই তোমার মাঝে।

"বাচ্চা টার জন্য খুব দরদ দেখছি।

"আমার ছেলের জন্য আমার দরদ থাকা কি স্বাভাবিক না।

"বাহ তুমি দেখছি নিজের ছেলেও ভেবে নিয়েছ!

"দুঃখের বিষয় এটা তুমি আজ জানলে। 

"নির্ঝর!

"হোয়াট!

"তুমি কিন্তু খুব বুদ্ধিমান তবে এই কাজটা কি ঠিক বোকা বোকা লাগছে না।

"ওহ আচ্ছা তাহলে তুমি এখন আমাকে শিখাবে।

"নির্ঝর আমি বলতে চাইছি..

"রাখো তুমি, তুমি কি বলবে আর বলতে চাও তা জেনে আমার লাভ নেই। আমার ভাবতেও অবাক তোমার সাথে আমি এখনো কথা বলছি কেন?

"তুমি আমাকে অপমান করছো?

"এতোক্ষণ লাগলো বুঝতে! তবে একটা কথা মনে রাখবে তোমার সাথে কথা বলতে আমার রাগ লাগছে। একটা বাচ্চার প্রতি যার মাঝে সামান্য মমত্ববোধ নেই তাকে মানুষ হিসেবে গণ্য করাই ভুল।

"নির....

"এরপর আমাকে আর ফোন করবে না! 
বলেই নির্ঝর ফোন টা কেটে দিল। যত'ই রাগ থাকুক না কেন মেহুর উপর কিন্তু অর্ণব'র উপর রাগ করে থাকতে পারে না সে।‌ এ কদিনে খানিকটা মায়া'য় জরিয়ে গেছে তার। ইচ্ছে করছে খুব অর্ণব কে দেখতে। ভাবছে দেখতে ইচ্ছে করছে তো গিয়ে দেখে আসলেই তো হয়। এখানে বসে থাকার তো কোন মানে নেই। 

নির্ঝর উঠে গেল ফ্রেস হতে। শাওয়ার নিয়ে রুমে এসে তৈরি হলো সে। এর মাঝেই ঘরের দরজায় টোকা পড়ল। নির্ঝর ভেতরে আসতে বলে তাকিয়ে দেখে নীলিমা এসে দাঁড়িয়ে আছে । তার হাতে চায়ের কাপ। নীলিমা অবাক ভঙ্গিতে তাকিয়ে আছে নির্ঝরের দিকে। নির্ঝর হেসে বলে উঠে,

"দেখেছ মম তোমার ছেলে কতো হ্যান্ডসাম! 

নীলিমা চায়ের কাপ টা টেবিলে রেখে হেসে বলে,
"ছেলে হ্যান্ডসাম হলে কি হবে তার ঘরের অবস্থা তো একটা পাগলা গারদের চেয়েও খারাপ।

"মম! 

নীলিমা বিছানা ঠিক করতে করতে বলেন,
"কোথায় যাওয়া হচ্ছে!

"হুম বাইরে যাচ্ছি।

"কোথায় যাচ্ছিস?

"অর্ণবের কাছে! 
বলেই পিছনে ফিরল নির্ঝর। নীলিমা তার দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে আছে। নির্ঝর ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করল,

"এভাবে তাকিয়ে আছো কেন? 

"অর্ণব'র সাথে তুই সত্যি এতোটা মিশে গেছিস।

নির্ঝর চায়ের কাপটা হাতে নিয়ে বলে,
"না মিশার কি কারন আছে। তুমি জানো ও কতো কিউট!

"সত্যি!

"হুম কিউটের একটা ডিব্বা! 

"এই নির্ঝর ওকে একটু আনবি বাসায় দেখবো।

"তুমি এখনো দেখো নি!

"কি করে দেখবো কে আনবে ওকে শুনি!

"আচ্ছা আনবো একদিন।

"একদিন না আজ'ই আন। রাতে ডিনারের জন্য ইনভাইট কর। মেহেরিন আর অর্ণব দু'জনেই আসুক একসাথে ভালো হবে।

নির্ঝর চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে বলে,
"একটু বেশি হচ্ছে না।

"তোকে যেটা বললাম সেটা কর! 

বলেই নীলিমা বের হয়ে গেল ঘর থেকে। 
.
নির্ঝরের গাড়ি এসে পার্ক করে মেহেরিন'র অফিসের সামনে। আজকে তার মুড মারাত্মক। যেভাবেই হোক মেহেরিন'র সাথে ঝগড়া করবেই করবেই। তাকে কথা না শুনালে রাতে তার শান্তিতে ঘুম হবে না। নির্ঝর গাড়ি চাবি হাতে নিয়ে ঘুরাতে ঘুরাতে অফিসের ভেতর ঢুকল। রিসেপশনে যেতেই সেদিনের রমনী কে চোখে পড়ল। মিস নিশা নির্ঝর কে দেখে দাঁড়িয়ে গেল। নির্ঝর তাকে দেখে হেসে বলল,

"হ্যালো মিস নিশা! 

নিশা অবাক হয়ে,
"আপনি আমার নাম কিভাবে জানলেন!

"হুমম বলা যাবে না এটা একটা ট্রিক! তো আমার একটা হেল্প করবেন।

"জ্বি স্যার বলুন। ম্যামের সাথে দেখা করবেন।

"ম্যাম আছে অফিসে।

"জ্বি একটু আগেই এসেছে।

"আর অর্ণব!

"সেও এসেছে, তবে খানিকক্ষণ পরেই ডঃ রাহেলা আসবে তাকে নিতে। 

"ওহ আচ্ছা!

"তাহলে কি আমি ম্যাম কে আপনার কথা জানাবো।

"না দরকার নেই। শুধু কষ্ট করে ডঃ রাহেলা এলে আমাকে জানাবে। আমি বাইরেই আছি। 

"আচ্ছা!

অতঃপর নির্ঝর আবারো বাইরে এলো। গাড়ির ভেতর বসে ডঃ রাহেলা'র আসার অপেক্ষা করতে লাগল। নির্ঝরের মাথায় কিছু একটা ঘুরছিল। সে কিছু একটা করার কথা ভাবছিল। আর তা হলো মেহেরিন কে নাস্তানাবুদ! 

ডঃ রাহেলা গাড়ি থেকে নেমে ভেতরে প্রবেশ করলেন। কিন্তু তখন নির্ঝরের চোখ সেদিকে গেল না কারন তখন তার মন ফোনের দিকে ছিল। হুট করেই গাড়ির কাঁচ এ টোকা দিল কেউ। নির্ঝর তাকিয়ে দেখে মিস নিশা! নির্ঝর হেসে গাড়ির কাঁচ নামিয়ে বলে,

"মিস নিশা!

"জ্বি স্যার!

নির্ঝর গাড়ি থেকে নেমে বলে,
"ডঃ রাহেলা এসেছেন।

"জ্বি খানিকক্ষণ আগেই। এখনই বের হবেন।

"থ্যাংকু! 

"ইট'স ওকে স্যার। এটা আমার দায়িত্ব!

"মিস নিশা!

"জ্বি স্যার!

"ইউ লুকিং সো গর্জিয়াস! 

মিস নিশা হেসে দিল। নির্ঝর আবারো বলে উঠে,

"আহ তোমার হাসিটা তো আরো সুন্দর। ঠিক তোমার নামে মতোই! 

মিস নিশা লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেলে। কিন্তু নির্ঝরের ফ্লার্ট করা যেন থামেই না। হুট করেই কারো ডাকে নির্ঝর চুপ হয়ে যায়। সামনে তাকিয়ে দেখে অর্ণব আসছে। তাকে দেখে দৌড়ে দৌড়ে তার কাছে আসছে। 

"ড্যাডি! 

নির্ঝর হেসে অর্ণব'কে কোলে তুলে বলে,

"অর্ণব সোনা। 

নিশা আর অর্ণব দু'জনেই তাকিয়ে দেখে ডঃ রাহেলা আসছেন। নিশা চলে যায় সেখান থেকে। ডঃ রাহেলা নির্ঝর কে দেখে হেসে বলে,

"কেমন আছেন মিঃ নির্ঝর!

"জ্বি ভালো। আপনি?

"হুম আলহামদুলিল্লাহ! তা মেহেরিন'র সাথে দেখা করতে এসেছেন।

"তা তো এসেছি কিন্তু তার সাথে অর্ণবের সাথেও সময় কাটাতে চেয়েছিলাম।

"ওহ কিন্তু অর্ণব কে তো আমি নিয়ে যাবো।

"হুম বুঝতে পারছি। অর্ণব তুমি যাও ডঃ রাহেলা'র সাথে। 

কিন্তু অর্ণব যেতে চায় না। সে নির্ঝরের কোলেই তাকে আকড়ে ধরে বসে থাকে। ডঃ রাহেলা ব্যর্থ হয়ে বলে,

"অর্ণব মনে হয় আজ যেতে চাইছে না।

"তাহলে আজ অর্ণব তার ড্যাডি'র সাথেই থাকুক।

"আচ্ছা তাহলে আমি মেহেরিন কে একবার ফোন করে বলে দিই বরং..

"না না দরকার নেই!

ডঃ রাহেলা অবাক হয়ে তাকান। নির্ঝর বলে উঠে,
"মানে আমি তো যাচ্ছি এখন ওর কাছে তাই বললাম। আপনি এতো টেনশন করবেন না,আমি আছি!

"আচ্ছা! বিদায় অর্ণব! 

অর্ণব দু হাত নেড়ে টাটা দেয় ডঃ রাহেলা কে। ডঃ রাহেলা চলে যায়‌। নির্ঝর অর্ণবের দিকে তাকিয়ে বলে,

"তাহলে চলা যাক অর্ণব! 

অর্ণব হেসে মাথা নেড়ে সায় দেয়! 

#চলবে....
[+] 3 users Like Manjarul Haque's post
Like Reply
#12
what a great story  clps clps clps
[+] 1 user Likes Chandan's post
Like Reply
#13
#পর্ব_৯

সূর্যের আলো মাথার উপর চড়ে গেছে। পরিবেশ চারদিক শান্ত আর নিরব। দিনের এই সময়টা চারদিক থাকে নিস্তব্ধ। বাইরে কাঠফাটা রোদ্দুর! কোন পাখির সন্ধান অবদি পাওয়া যাবে না এই রোদে। এমন মনে হয় প্রকৃতি যেন ঘুমিয়ে আছে। ক্লান্ত, নিমজ্জিত এই শহরটা যেন উদাসীন। 

মেহেরিন কে খানিকক্ষণ আগেই চায়ের কাপ টা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সেখানে তার খেয়াল নেই। অফিসে এখন লাঞ্চ টাইম চলছে। মেহেরিন ল্যাপটব থেকে চোখ সরিয়ে চেয়ারে হেলান দিয়ে বসল। অনেক ক্লান্ত লাগছে তার। চোখ খুলে সামনে তাকিয়ে দেখে চায়ের কাপ থেকে ধোঁয়া উড়ছে। চা টা এখনো গরম আছে তাহলে। মেহেরিন চেয়ার থেকে এবার উঠে দাঁড়াল। হাতে মুখে পানি ছিটিয়ে আবারো এসে বসল। চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে ফোন বের করল। 

অর্ণবের আসার সময় হয়ে গেছে। মেহেরিন অর্ণবের জন্য অপেক্ষা করতে করতে চা টা শেষ করল। কিন্তু অর্ণব এখনো এলো না। ভাবছে এক বার ফোন করবে। আবার মনে করল হয়তো জ্যামে গাড়ি আটকে আছে।‌জ্যামে গাড়ি আটকে যাওয়া অবাস্তব কিছু না। মেহেরিন দাঁড়িয়ে গেল। হাঁটতে হাঁটতে ফাইল দেখছে। 

সময় নিজ গতিতে বেয়ে চলছে। অর্ণব এখনো এলো না। মেহেরিন'র এবার চিন্তা হতে লাগল। ডঃ রাহেলা আগে কখনো এমনটা করে নি। অস্বস্তি বোধ করতে লাগলো সে। ফোন টা নিয়ে ডায়াল করল ডঃ রাহেলার নাম্বার। কয়েক বার রিং বাজার পর ফোন টা কেটে গেল। কেউই রিসিভ করল না কলটা। মেহেরিন'র কাছে মনে হলো তার গলায় যেন কাঁটা আটকে গেছে। নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে তার। 

কলের উপর কল দিয়েই যাচ্ছে কিন্তু ডঃ রাহেলা কল তুলেছেন না। মেহেরিন'র চিন্তা বাড়তে লাগালো। না এভাবে বসে থাকলে হবে না। গাড়ির চাবি নিয়ে বের হয়ে গেল সে। 

মেহেরিন গাড়ি ড্রাইভ করছে আর একটু পর পর'ই কল করছে ডঃ রাহেলা কে। মেহেরিন মাঝরাস্তায় পৌঁছাতেই ডঃ রাহেলা তার কল ধরল। মেহেরিন গাড়ি ব্রেক করে ফোনটা হাতে নিল।

"হ্যালো! হ্যালো ডঃ রাহেলা!

"মেহেরিন! কি ব্যাপার তোমাকে এতো উত্তেজিত লাগছে কেন? সব ঠিক আছে।

"না ঠিক নেই কিছু ঠিক নেই। কখন থেকে ফোন করছি আপনাকে আপনি তো কল'ই ধরেছিলেন না। 

"আসলে ফোনটা এখানে রেখে একটু বাইরে গিয়েছিলাম কিন্তু হয়েছে টা কে সেটা বল। অর্ণব ঠিক আছে তো!

মেহেরিন অবাক কন্ঠে বলে,
"সেটা তো আপনি বলবেন, তাই না। অর্ণব তো আপনার সাথে।

"মেহেরিন তুমি মজা করছো?

"ডঃ রাহেলা! আপনি কি আমার গলার আওয়াজ শুনে মনে হচ্ছে আমি মজা করছি।

ডঃ রাহেলা থমকে গেলেন। আসলেই মেহেরিন'র গলার আওয়াজ অনেকটা কেঁপে কেঁপে যাচ্ছে। কথা বলার সময় হয়তো কাঁপছে সে। বেশি চিন্তিত হলে মানুষের এরকম হয়। ডঃ রাহেলা শান্ত গলায় মেহেরিন কে বলেন,

"মেহেরিন তুমি স্ট্রেস নিয়ো না আগে শান্ত হও।

"আপনি অর্ণব কে ফোন দিন। ওর সাথে কথা বলবো। 

"দিচ্ছি কিন্তু আগে তুমি শান্ত তো হও। আমার মনে হচ্ছে তুমি অনেকটা টেনশন করছো। এভাবে চলতে থাকলে অসুস্থ হয়ে পড়বে।

"ডঃ রাহেলা আমি একদম ঠিক আছি।

"না তুমি ঠিক নেই। ভুলে যেও না দীর্ঘ ৩ মাস তোমার চিকিৎসা চলেছিল তাও একটানা। একাকিত্বে ভুগছিলে তুমি, তোমার সেই ট্রামা থেকে বের করতে অনেকটা সময় লেগেছিল আমার।

"ডঃ রাহেলা!

"মেহেরিন শোন! অর্ণব আমার কাছেই আছে আর এখানেই আছে। ও খেলছে! আমি ওকে ফোনটা দেবো কিন্তু ও তোমার এই গলা শুনলে চিন্তিত হয়ে পড়বে। তুমি আগে নিজে শান্ত হও। তারপর আমি দিচ্ছি

"তবে একটু আগে যে বললেন আপনার কাছে ও নেই।

"বলছি বলছি সব বলছি। তার আগে একটা কাজ করো। কিছুক্ষণ মাথা ঠান্ডা রাখো। একটু দম নাও। শ্বাস নাও আর নিঃশ্বাস ফেলো। মস্তিষ্ক কে কোনরকম চিন্তা থেকে দূরে রাখো। শান্ত হও! 

মেহেরিন কানের কাছ থেকে ফোনটা সরিয়ে নিল। চোখ বন্ধ করে শ্বাস নিল। অতঃপর চোখ খুলে শীতল গলায় বলল,

"অর্ণব কে ফোন দিন।

"দিচ্ছি তার আগে আমার কথা শোন। পুরো কথা না শুনো রিয়েক্ট করবে না বুঝলে।

"হুম! 

"আমি তোমার অফিস থেকে যখন অর্ণব কে বের হলাম তখন..... [ নির্ঝর অর্ণবের সাথে চলে যাবার সমস্ত ঘটনা ] অতঃপর আমার মনে হচ্ছে নির্ঝর হয়তো তোমাকে কথাটা জানাতে ভুলে গেছে। বুঝলে মেহেরিন...

মেহেরিন ভ্রু কুঁচকে সমস্ত কথা শুনল। সিটের সাথে মাথা হেলান দিয়ে বসে রইল। এদিকে ডঃ রাহেলা বলে যাচ্ছেন,

"হ্যালো মেহেরিন! হ্যালো! তুমি আমাকে শুনতে পারছো!

মেহেরিন সোজা হয়ে বসে কানে ফোনটা ধরে বলে,

"ঠিক আছি! আমি অর্ণবের কাছে যাচ্ছি! 
বলেই কলটা কেটে দিল মেহেরিন। গাড়ি স্টার্ট দিয়ে গাড়ি ঘুরাল। অতঃপর গন্তব্য ঠিক করল চৌধুরী বাড়ি! 

চৌধুরী বাড়িতে পৌঁছাতে পৌঁছাতে মেহেরিন'র প্রায় অনেকটা সময় লাগলো। বাড়িতে পৌঁছানো মাত্র গাড়িটা ব্রেক করে গাড়ি থেকে নামল মেহেরিন। ছুটে গেল বাড়ির ভেতর। সদর দরজা খোলাই ছিল। মেহেরিন বাড়িতে প্রবেশ করেই চারদিক ঘুরতে লাগলো। নীলিমা রান্না ঘর থেকে কারো আসার শব্দ পেয়ে পেয়ে হাত মুছতে মুছতে বাইরে এসে দেখে মেহেরিন। খুব চিন্তিত লাগছিলো তাকে। তাকে দেখে ডেকে উঠল নীলিমা। মেহেরিন নীলিমা'কে কিছু জিজ্ঞেস করার উদ্দেশ্য তার দিকে আগাতেই উপর থেকে অর্ণবের গলার স্বর পেলো। মেহেরিন নীলিমা কে কিছু জিজ্ঞেস না করেই উপরের দিকে দৌড়ে গেল। নীলিমা অবাক ভঙ্গিতে তাকিয়ে রইল! 
.
মেহেরিন দৌড়ে নির্ঝরের ঘরের কাছে এলো। যত'ই ঘরের কাছে আসছে ততোই অর্ণবের গলার হাসির শব্দ আসছে তার কানে। নির্ঝরের ঘরের কাছে যেতেই মেহেরিন শান্ত হলো। ধীরে ধীরে দরজার কাছে এলো সে।  বিছানার চাদর নিচে পড়ে আছে। পুরো ঘর অগোছালো। কয়েকটা বালিশ মেঝেতে পরে আছে। মেহেরিন একটা বালিশ হাতে নিয়ে সামনে তাকাতেই দেখে নির্ঝর আর অর্ণব দু'জনেই বিছানায়। বিছানার চারদিক তুলোয় ভরপুর। অর্ণব নির্ঝরের দিকে তুলো ছুঁড়ে মারছে। মনে হচ্ছে দু'জনেই বালিশ থেকে তুলো বের করে খেলছে। অর্ণবের মাথা থেকে পা অবদি তুলোয় ভরপুর। চুল গুলোতে আটকে আছে তুলো। তার মুখে স্নিগ্ধ হাসি! নির্ঝর ও হাসছে। দু'জনের হাসির শব্দে চারদিক মো মো করছে। 

মেহেরিন শান্ত হয়ে দরজার সাথে মাথা ঠেকাল। শান্ত গলায় বলে উঠে,

"অর্ণ সোনা! 

মাম্মি আওয়াজ পেয়ে অর্ণব থেমে যায়। সামনে তাকিয়ে দেখে মেহেরিন দাঁড়িয়ে আছে। সে মাম্মি ডেকে দ্রুত খাট থেকে নেমে এসে জরিয়ে ধরে মেহেরিন কে। মেহেরিন অর্ণবের কপালে চুমু খেয়ে আকড়ে ধরে তাকে। নির্ঝর অবাক চোখে দেখছে মেহেরিন কে। মেহেরিন'র চোখের কোনে থেকে অশ্রু কণা গড়িয়ে পড়ে। নির্ঝরের চোখ সেটা এড়িয়ে যায় না। মেহেরিন'র এমন অবস্থা দেখে মুখটা মলিন হয়ে যায় তার। মেহেরিন কে নাস্তানাবুদ করতে চেয়েছিল কিন্তু এতে যে মেহেরিন এতোটা ভেঙ্গে পড়বে নির্ঝর তা কখনো ভাবি নি! 
.
অর্ণব কে নিয়ে সোফায় বসে আছে মেহেরিন। তার ঠিক সামনে বরাবর বিপরীতে বসে আছে নির্ঝর। তার হাতে একটা কফি মগ। একটু পর পরই কপি মগে চুমুক দিচ্ছে সে। মেহেরিন অর্ণবের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। অর্ণবের হাতে একটা কিউব পাজল। সেটা ঠিক করার জন্য মন প্রাণ দিয়ে চেষ্টা করছে সে। নীলিমা নাস্তা নিয়ে এসে বসলেন মেহেরিন'র সাথে। 

"মেহেরিন নাও খাও! 

"না আন্টি আমি খেয়ে এসেছি।

"কিন্তু তোমার মুখ দেখে তো এমনটা মনে হচ্ছে না। অর্ণব কে না দেখতে পেয়ে অনেক টেনশনে ছিলে মনে হচ্ছে। 

মেহেরিন হেসে অর্ণব কে আকড়ে ধরে। নীলিমা নির্ঝরের দিকে তাকিয়ে বলে,

"সব দোষ তোর। অর্ণব কে আনলি তো আনলি বলে আনবি না। দেখলি কতোটা চিন্তা করছিলো সে। প্রায় পাগল হয়ে যাচ্ছিল।

নির্ঝর কিছু না বলে চুপ হয়ে যায়। মেহেরিন বলে উঠে,

"বাদ দিন আন্টি। উনি হয়তো ভুলে গিয়েছিলেন। আর অর্ণব ঠিক ছিল এই অনেক।

নীলিমা হেসে অর্ণবের মাথায় হাত বোলাল। অর্ণব অপরিচিত হাতের ছোঁয়া পেয়ে গুটিয়ে গেল। মেহেরিন হেসে দিল। নীলিমা হেসে বলেন,

"মনে হয় অর্ণবের সাথে মিশতে আমার আরো সময় লাগবে। 

মেহেরিন হেসে বলে,
"হুম! 
.
বিকালের দিকে প্রকৃতি যেন নতুন করে জেগে উঠল। বাইরে মিষ্টি রোদ। হইহই একটা ব্যাপার। মেহেরিন অর্ণব কে নিয়ে বাসায় চলে আসতে চাইলে নীলিমা জোর করল আজ রাতে তাদের বাড়িতে ডিনার করতে। এতো আগ্রহ নিয়ে বলায় মেহেরিন না করতে পারে নি। নির্ঝরের পাশে রুমে মেহেরিন আর অর্ণব'র থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। 

অর্ণব কে নিয়ে বিকেল বেলা বের হলো মেহেরিন। খুব কাছেই একটা পার্ক আছে। সেখানে অর্ণব'কে নিয়ে কিছুক্ষণ কাটাতে চায় সে। কিন্তু পার্কে এসে অন্য বাচ্চাদের মতো খেলতে চায় না সে। এতো সবাইকে একসাথে দেখে ঘাবড়ে যায়। ছোট দুহাত দিয়ে আঁকড়ে ধরে মেহেরিন কে। মেহেরিন হেসে অর্ণব'র গাল টেনে বলে,

"আমার অর্ণব কাউকে ভয় পায় নাকি। মাম্মি আছে না সাথে। চলো মাম্মি আর অর্ণব একসাথে খেলবে। খেলবে তো!

অর্ণব মাথা নাড়ায়। অতঃপর মেহেরিন ফুটবল নিয়ে অর্ণবের সাথে খেলতে থাকে। হুট করেই আগমণ ঘটে নির্ঝরের। নির্ঝরের হাতে হাওয়াই মিঠাই দেখে অর্ণব দৌড়ে যায় তার কাছে। নির্ঝর হাতে থাকা হাওয়াই মিঠাই টা অর্ণব'র হাতে দিয়ে তাকে বেঞ্চে বসায়। মেহেরিন ফুটবল টা হাতে নিয়ে আসে বেঞ্চের কাছে। 

অর্ণব নির্ঝরের একপাশে বসে হাওয়াই মিঠাই খেতে থাকে। নির্ঝরের এপাশে বসে থাকে মেহেরিন। কারো সাথে কথা বলছে ফোনে। হয়তো অফিস সংলগ্ন কিছু! নির্ঝর অনেকক্ষণ ধরে অপেক্ষা করছে কখন মেহেরিন'র কথা বলা শেষ হয়। অতঃপর মেহেরিন'র কথা বলা শেষ হলে নির্ঝর বলে উঠে,

"সরি! 

নির্ঝরের সরি বলায় মেহেরিন'র তেমন কোন ভঙ্গিতা দেখা গেল না। আগের মতোই বসে রইল। নির্ঝর আবারো বলে উঠে,

"সরি! আসলে আমি বুঝি নি অর্ণবের জন্য এতোটা দুঃচিন্তা করবে তুমি! 

মেহেরিন আকাশের দিকে তাকিয়ে বলে উঠে,
"কতোই না সুখী আপনি নির্ঝর! 

নির্ঝর অবাক হয়ে তাকায় মেহেরিন'র দিকে। বলে উঠে,

"কি বললে?

"বললাম আপনি অনেক সুখী। সবকিছু আছে আপনার কাছে। একটা সুন্দর পরিবার, আত্মীয় স্বজন, আদর, রাগ, ভালোবাসা সবকিছু।

"এগুলো কি সুখী মানুষের উদাহরণ!

"জানি না। তবে পৃথিবী বলে যার কাছে এসব আছে সেই সুখী।‌ আর যে এসবের মাঝে সুখ খুঁজে পায় না সে কখনো সুখী হতে পারে না।

"তুমি কোন দলের?

"আমি সেই দলের লোক যাদের শুধু একটি মাত্র আকাঙ্ক্ষা থাকে। থাকে একটাই অবলম্বন! একজন কে নিয়েই বাঁচার স্বপ্ন দেখে সে। আমার সেই একজন হলো অর্ণব। আমার বেঁচে থাকার একটিমাত্র আশা। জানেন মানুষ পানি ছাড়া দু সপ্তাহ আর খাবার ছাড়া ১০ দিন বাঁচতে পারে কিন্তু আশা ছাড়া একমুহূর্ত বাঁচতে পারে না। যতদিন একটা মানুষের আশা থাকে ততোদিন'ই সে বাঁচতে পারে। আমার সেই একটিমাত্র আশা অর্ণব! আমার দুনিয়াতে শুধু অর্ণব আর তার মাম্মির আবাসস্থল এছাড়া আর কেউ না! 

বলেই উঠে পরে মেহেরিন। অর্ণবের কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করে,

"তাহলে এবার বাড়ি ফেরা যাক।

অর্ণব হাতে হাওয়াই মিঠাই নিয়ে মাথা নাড়ায়। মেহেরিন কোলে করে নামায় তাকে। অতঃপর তার ছোট হাত খানা নিজের মুঠোতে করে হাটার জন্য অগ্রসর হয়। কিন্তু এক পা আগাতেই মেহেরিন থেমে যায়। পেছনে ফিরে দেখে অর্ণব নির্ঝরের হাত ধরে আছে। নির্ঝর অর্ণবের হাত ধরে উঠে দাঁড়ায়। অর্ণব তার হাতে থাকা নির্ঝরের অন্য হাতে দিয়ে নির্ঝরের এক হাত আঁকড়ে ধরে। এক হাত মাম্মি আর আরেকহাত ড্যাডি ধরে ধারায় তার খুশি যেন থামতে চায় না। একবার এপাশ ফিরে বলে,

"মাম্মি! 

আরেকবার ওপাশ ফিরে বলে,
"ড্যাডি!

দুজনের হাত ধরে এভাবে হাঁটতে চায় সে। মেহেরিন আর নির্ঝর দুজনেই অর্ণবের পায়ের সাথে তাল মিলাতে লাগে। গোধূলির লগ্নে মা বাবার হাত ধরে ছোট একটা বাচ্চা হেঁটে চলছে। এরচেয়ে মুগ্ধকর অন্য কিছু হতে পারে বলে প্রকৃতির জানা নেই। দমকা বাতাস বয়ে যাচ্ছে। গাছের পাতা নিচে ঝড়ে পড়ছে। প্রকৃতি যেন সবটা উজাড় করে দিচ্ছে তাদের! 
.
রিদুয়ান চৌধুরী সাহেব আজ যথেষ্ট চেষ্টা করলেন তাড়াতাড়ি পৌছাবার। কিন্তু ইম্পর্ট্যান্টে মিটিং থাকার কারনে তা কোনভাবেই সম্ভব হলো না। খারাপ লাগছে এই কথা ভেবে আজ প্রথমবার মেহেরিন কে তাদের বাসার অতিথি করেছিল সে। কিন্তু সেই মর্যাদা বোধ হয় রাখতে পারল না। একরাশ হতাশা নিয়ে বাড়ির ভেতর প্রবেশ করল সে। মেহেরিন কে এখনো বাড়িতে দেখে অবাক হলো সে। মেহেরিন সোফায় বসে আছে। তার ছোট কোলের অধিকার নিয়ে ঘুমিয়ে আছে অর্ণব। রাত কম হয় নি। অর্ণব এতোক্ষণে ঘুমিয়ে পড়েছে। রিদুয়ান চৌধুরী'র আসতে দেরি হবে শুনে মেহেরিন অর্ণব কে খাইয়ে দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিয়েছে। 

খাবার দাবারের পর পরই মেহেরিন চলে যাবে। নির্ঝর ঘরে এসে সেই কাগজটা বের করে দেখছে। দু একটা লাইন আবারো পড়ছে। ঝগড়ার পয়েন্ট গুলো মনে রাখতে হবে তার। মেহেরিন কে আজ কথা না শুনাতে পারলে তার রাতে ঘুম হবে না। আজকের এতো কিছুর পরও ঝগড়ার কথা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলেনি নির্ঝর! 

নিচ থেকে ডাক পড়ল তার। কাগজটা পকেটে ঢুকিয়ে বের হলো সে। সবাই খাবার টেবিলে তার জন্য'ই অপেক্ষা করছে। নির্ঝর এসে বসলো মেহেরিন'র পাশে। ঘুমন্ত অর্ণব কে ঘরে শুইয়ে দিয়ে এসেছে মেহেরিন। 

খাবার পর্ব সবে শুরু। নীলিমা নিজ হাতে মেহেরিন কে খাবার বেড়ে দিচ্ছে। হবু বউ কে নিজের হাতে রান্না করে খাওয়াবে এই শখ অনেক দিনের। সবাই খাওয়া শুরু করেছে। মেহেরিন মাত্র খাবার মুখে দিল। নীলিমা জিজ্ঞেস করে,

"খাবার কেমন হয়েছে মেহেরিন? 

"খুব ভালো, অনেক ভালো রান্না করেন আপনি। অর্ণবের খুব ভালো লেগেছে!

নীলিমা হেসে বলে,
"অর্ণব কে অনেক ভালোবাসো তাই না।

মেহেরিন নীলিমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসে। নির্ঝর পাশে বসে চুপচাপ খেতে থাকে আর কিভাবে ঝগড়া শুরু করবে তা ঠিক করতে থাকে। নীলিমা গ্লাসে পানি ঢেলে বলে,

"মেহেরিন বোধহয় তোমার বোন কে অনেক ভালোবাসতে, তাই অর্ণব'কে ও এতো ভালোবাসো তাই না! 

নীলিমা'র কথা শুনে মেহেরিন থমকে গেল। নির্ঝর খাবার খাওয়া বন্ধ করে অবাক চোখে তাকিয়ে রইল। চারদিকের সবাই চুপ। রিদুয়ান চৌধুরী পরিস্থিতি সামলাতে বলে উঠে,

"নীলিমা, খাবারের সময় এতো কথা বলতে হয় না। 

"আমি তো শুধু জিজ্ঞেস করেছি। আচ্ছা মেহেরিন তোমার বোন নাকি আ/ত্ম/হ/ত্যা করেছে! মনে হয় অনেক অ/ত্যা/চা/র করত তোমার বোনের স্বামী। নাহলে এতো সুন্দর একটা বাচ্চা কে রেখে কেউ আ/ত্ম/হ/ত্যা করে। 

নির্ঝর নীলিমার এসব কথা শুনে অবাক চোখে মেহেরিন'র দিকে তাকিয়ে থাকে। মেহেরিন নিস্তব্ধ হয়ে আছে। নির্ঝর ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে। মেহেরিন'র কপাল বেয়ে ঘাম ঝড়ছে। শুকনো ঢোক গিলছে সে। নির্ঝরের কাছে এটা অবাক করার মতো। রিদুয়ান চৌধুরী চোখের ইশারায় নীলিমা কে থামতে বলে। নীলিমা থেমে যায়। রিদুয়ান শান্ত গলায় মেহেরিন কে ডাকে। কিন্তু মেহেরিন যেন একটা ঘোরের মাঝে থাকে। 

কোন সাড়া শব্দ না পেয়ে নির্ঝর মেহেরিন'র হাতে হাত রেখে ডাক দেয়,

"মেহু! 

মেহেরিন চমকে উঠে তার হাত থেকে চামচ টা পড়ে যায়। মেহেরিন দেখে সবাই তার দিকেই তাকিয়ে আছে। মেহেরিন দাঁড়িয়ে যায়। সরি বলে দ্রুত সেখান থেকে চলে যায়। মেহেরিন'র এমন অস্বাভাবিক আচরণ দেখে নির্ঝর ও উঠে পড়ে। মেহেরিন'র পিছু পিছু যেতে থাকে সে। অতঃপর...

#চলবে....
[+] 3 users Like Manjarul Haque's post
Like Reply
#14
Kahinir Modhe kahni
[+] 1 user Likes Ahid3's post
Like Reply
#15
Osadharon
[+] 1 user Likes Kam pujari's post
Like Reply
#16
Hebby taratari update diyo bro.. ?
[+] 1 user Likes Dragondhideb98's post
Like Reply
#17
#পর্ব_১০

মেহেরিন খাবার টেবিল থেকে দাঁড়িয়ে দ্রুত উঠে আসে নির্ঝরদের বাসার পিছনের দিকে। খানিকক্ষণ'র জন্য মনে হচ্ছিল তার দম যেন আটকে যাচ্ছিল। বাইরে এসে বুকভরে শ্বাস নিল সে। মাথা তুলে উপরের আকাশের দিলো। রাতের আকাশ টা ভারী সুন্দর লাগছে আজ। এখনো মনে পড়ে তার দুই বোন রাতে চুরি করে ছাদে উঠে আসতো শুধু আকাশ দেখবার জন্য। আজকের আকাশ টাও সেদিনের মতো সুন্দর। অতীতের কিছু স্মৃতি ভেসে উঠলো মেহেরিন চোখের সামনে। 

ছোট বেলায় রাতের আঁধারে ছাদে বসে আকাশের দিকে তাকিয়ে আইসক্রিম খেতে ভালোবাসতো দুই বোন। বাবা ঘুমিয়ে পড়লে দু'জনে মিলে লুকিয়ে চলে আসতো ছাদে। রাত যত গভীর হতো ততোক্ষণ'ই দুই বোন বসে থাকতো। ঘুম না আসা অবদি উঠতে চাইতো না তারা। রাতের আকাশের তারা গুনতো বসে বসে। মাঝে মাঝেই এলোমেলো হয়ে যেত। আবারো নতুন করে গুনতে থাকতো। একদিন মেহেরিন ছাদে এসে দেখে নিরু দি নেই। মেহেরিন'র বড় বোনের নাম ছিল নিরুপমা! মেহেরিন ছোট করে ডাকতো নিরু দি। নিরু মেহেরিন কে আইসক্রিম আনতে পাঠিয়ে একা একা ছাদে চলে আসে। মেহেরিন'র বয়স তখন ১০ বছর আর নিরুর ১৫। 

মেহেরিন আইসক্রিম নিয়ে ছাদে এসে দেখে নিরু নেই। এই অন্ধকারে একা ছাদে দাঁড়িয়ে থাকতে ছোট মেহেরিন'র বেশ ভয় লাগছিল। মেহেরিন ভয়ে ভয়ে সামনে আগাল আর বলল,

"নিরু দি! নিরু দি!

কিন্তু আশপাশ থেকে কোন আওয়াজ এলো না। বাতাস তখনই জোরে বয়ে গেল। বাতাসের জোরে গাছগুলো পাতায় শো শো আওয়াজ হতে লাগল।এই আওয়াজে ছোট মেহেরিন বেশ ভয় পেল। সে ঢোক গিলে বলল,

"কে কে? 

কিন্তু কেউই কথা বলল না। মেহেরিন আবারো বলল,

"নিরু দি তুমি আমাকে ভয় দেখাচ্ছ নাহ। আমি জানি। আমি কিন্তু ভয় পাবো না বলে দিলাম। 

বলেই উওরের আশা করল কিন্তু উওর পেলো না। আবারো শো শো আওয়াজে কেঁপে উঠলো মেহেরিন। তার শরীরের লোম দাঁড়িয়ে গেল। সে এক পা এক পা করে পিছনে যেতে লাগল। হঠাৎ কারো সাথে ধাক্কা খেল। মেহেরিন ভাবল নিরু। পিছনে ফিরে তাকাতেই মেহেরিন ভয়ে আঁতকে উঠল। সে জোরে চিৎকার দিয়ে মেঝেতে বসে পড়ল। তার সামনে একটা মেয়ে দাঁড়ানো। তার পুরো সামনে চুল দিয়ে মুখ ঢাকা। তার হাতে একটা মোমবাতি! কি ভয়ানক দেখাচ্ছে তাকে। সে এক পা এক পা করে এগিয়ে আসছে মেহেরিন'র দিকে। তার হাঁটাও যেন আরো ভয়ানক। কেমন করে হেলে দুলে আসছিল সে। মেহেরিন কাঁপা কাঁপা গলায় বলে উঠে,

"নিরু দি, নিরু দি এটা তুমি নাহ! আমি জানি এটা তুমি!

সে কিছু না বলে তার দিকেই হেঁটে আসছিল। মেহেরিন এবার জোরে জোরে কেঁদে দিল। তার কান্না দেখে নিরু সামনের চুল গুলো সরিয়ে বলে উঠে,

"মেহের! মেহের এটা আমি!

মেহেরিন কাঁদতে কাঁদতে,
"অ্যা অ্যা তুমি আমাকে আবার ভয় দেখাইছো নিরু দি অ্যা অ্যা।

"মেহের বোন আমার শান্ত হ।

মেহেরিন শান্ত হবার বদলে জোরে জোরে কাঁদতে থাকে। তার কান্নার আওয়াজে শুভ্র খান মানে মেহেরিন'র বাবা আর বাকি সব কাজের লোক দৌড়ে চলে এসে। মেহেরিন'র কান্না তবুও থামে না। সে কাঁদতেই থাকে। নিরু দু হাত দিয়ে জরিয়ে ধরে কান্না থামানোর চেষ্টা করে। খুব মনে পড়ছে আজ সেসব কথা। ইচ্ছে করছে খুব একটু যদি জরিয়ে ধরে বসে থাকতো নিরু দি। নিরু দি যখন ছিল তার জীবনটাও খুব সহজ ছিল। সবকিছু ছিল, কোনোকিছুর অভাব ছিল না। নিরু দি চলে যেতেই এক এক করে তার প্রিয় মানুষ গুলো তাকে ছেড়ে চলে গেল। খুব মনে পড়ছে আজ নিরু দি তোমায়। কেন চলে গেলে তুমি আমায় ছেড়ে। 

"মেহু! মেহু! 

মেহেরিন‌ অতীত থেকে বেরিয়ে এলো। তার পিছনেই নির্ঝর দাঁড়ানো। মেহেরিন চোখের অশ্রু মুছে সামনে ঘুরে বলে,

"হুম!

নির্ঝর একটু এগিয়ে,
"ঠিক আছো তুমি!

"আমার আবার কি হবে? 

"না এভাবে উঠে এলে যে,‌শরীর ঠিক আছে তোমার।

"হুম ঠিক আছি, শুধু একটু দম বন্ধ হয়ে আসছিল তাই...

"এখন কি তবে ঠিক আছো?

"বেশ আছি! 
বলেই মেহেরিন হেসে দিলো। অন্ধকারের মাঝে ক্ষুদ্র আলোর রশ্মি দিয়ে মেহেরিন'র হাসি মাথা মুখটা দেখতে পেল নির্ঝর! মেহেরিন এবার নির্ঝরের পাশ কাটিয়ে চলে যেতে নিল। নির্ঝর তখনই বলে উঠে,

"অর্ণব তাহলে তোমার ছেলে না! 

মেহেরিন দাঁড়িয়ে গেল। উষ্ণ গলায় বলে উঠে,

"অর্ণব আমার ছেলে নির্ঝর!

"তোমার বোনের ছেলে হলেও আমার কোন সমস্যা নেই কিন্তু তুমি মিথ্যে কেন বলছো?

মেহেরিন নির্ঝরের দিকে ফিরে বলে উঠে,

"অর্ণব মেহেরিন বর্ষা খান'র ছেলে। এটাই তার একমাত্র পরিচয়।

"সেই পরিচয় তুমি টাকার জোরে বানাতেই পারো।

মেহেরিন কিছু না বলে মুখ ঘুরিয়ে নিল। নির্ঝর দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে উঠে,

"তুমি এতো উত্তেজিত কেন হচ্ছো মেহেরিন! কেউ তো তোমার থেকে অর্ণব কে কেড়ে নিচ্ছে না।

"অর্ণবকে কেড়ে নিবে, কে নিবে? কেন নিবে? 

নির্ঝর বুঝতে পারছে মেহেরিন এখন একদম'ই সেই অবস্থায় নেই যাতে তাকে কিছু জিজ্ঞেস করা যায়। নির্ঝর আর জোর করল না। বলে উঠে,

"কেউ না এভাবেই বলছি। চলো খেতে যাবে চলো।

নির্ঝরের কথায় মেহেরিন শান্ত হলো। সে শীতল গলায় বলে উঠে,
"আমার খাওয়া হয়ে গেছে। আমি এখন চলে যাবো।

"কিন্তু মেহু...

মেহেরিন এবারও পুরো কথা শুনল না। হন হন করে হেঁটে চল গেল। অর্ণব কে কোলে নিয়ে বের হয়ে গেল। নীলিমা আর রিদুয়ান চৌধুরী মেহেরিন'র অপেক্ষা করছিল। তাকে দেখে দুইজনেই দাঁড়িয়ে গেল। মেহেরিন তাদের দিকে তাকিয়ে বলল,

"রাতের খাবারের জন্য ধন্যবাদ! আমরা আজ আসছি। অনেক রাত হয়ে গেছে।  

বলেই বের হয়ে গেল সেখান থেকে। নীলিমা কিছু জিজ্ঞেস করতে গিয়েও জিজ্ঞেস করল না। কিছুটা হতাশা কাজ করল তার মাঝে! 
.
নির্ঝর হন হন করে হেঁটে তার ড্যাডি'র ঘরে বসল। রিদুয়ান চৌধুরী একবার নির্ঝরের দিকে তাকিয়ে নিজের কাজে মনোযোগ দিলেন। নির্ঝর খানিকক্ষণ বসে থাকার পরেও ড্যাডির মনোযোগ না পাওয়ায় হালকা কাশল। কিন্ত তাও কিছু হলো না। সে উঠে এবার পায়চারি করতে লাগলো। তার মাঝে অস্থিরতা কাজ করছে। সবটা জানা চাই তার। কি হয়েছিল মেহেরিন'র বোনের সাথে, কেন'ই বা সে আ/ত্ম/হ/ত্যা হলো। 

রুমে তখন প্রবেশ ঘটল নীলিমা'র। নির্ঝর কে এভাবে পায়চারি করতে দেখে নীলিমা বলে উঠে,

"কি হয়েছে তোর?

"আমার কি হবে? হয়েছে তো তোমাদের। নিজের ছেলে থেকে এতো বড় সত্যিটা কিভাবে লুকিয়ে রাখলে তোমরা দুজন? 

"কি সত্যি?

"আবার জিজ্ঞেস করছো? অর্ণব যে মেহেরিন'র ছেলে না এই কথাটা কি একবার জানানোর প্রয়োজন মনে করো নি আমায়? 

"অর্ণব কে তো তুই ভালোবাসিস আদরও করিস এরপর আবার কি? এই কথা না জানলে কি হতো?

"ড্যাড তুমি কি এবার কিছু বলবে?

 রিদুয়ান ফাইলের থেকে চোখ সরিয়ে নির্ঝরের দিকে তাকিয়ে বল,
"কি বলবো? 

নির্ঝর এসে রিদুয়ানের কাছে বসে বলে,
"সবটা বলো। আমার সবটা জানা চাই।

"কি জানতে চাস তুই?

"এটাই যে মেহেরিন বড় বোন কে? অর্ণব কার ছেলে? কেন'ই বা তার বোন আ/ত্ন/হ/ত্যা করল। 

"আমি সবটা জানি না?

"যতটুকু জানো ততোটুকুই বলো!

রিদুয়ান চৌধুরী ফাইল বন্ধ করে ছেলের দিকে ঘুরলেন। নীলিমা সোফায় বসে অধীর আগ্রহে তাকিয়ে আছে রিদুয়ান চৌধুরী'র দিকে। এখানে নির্ঝরের আগ্রহ সবচেয়ে বেশি। রিদুয়ান চৌধুরী বলে উঠেন,

"মেহেরিন'র জন্মের সময় তার মা মারা যায়। শুভ্র খান'র তখন বড় মেয়ে নিরুপমা'র তখন বয়স ৫ বছর। শুভ্র খান এই দুই মেয়ের দায়িত্ব নিজেই নিলেন। দ্বিতীয় বিয়ে করলেন না দুই মেয়ের দিকে তাকিয়ে। খুব আদরে মানুষ করলেন তাদের। নিরুপমা ছিল একদম শান্তশিষ্ট মেয়ে। অনেকটা সহজ সরল ছিল সে। একদম শুভ্র খান'র মতো। আর মেহেরিন ছিল বেশ চঞ্চল। তার বাবার ধারনা ছিল মেহেরিন পুরোপুরি অধরার মতো হয়েছে। অধরা হলো মেহেরিন'র মা। মা'র সকল বৈশিষ্ট্য নিয়ে জন্ম এই মেয়ের! 

দুই মেয়েকে খুব ভালো করেই বড় করেছিলেন শুভ্র খান। নিরুপমা পরিণত বয়সেই বিয়ে করল। ছেলে তার নিজ পছন্দ ছিল। শুভ্র খান বরাবরই মেয়েদের খুব ভালোবাসতেন। তাই আর না করেন নি। যাকে বিয়ে করতে চেয়েছিল তার সাথেই বিয়ে দেন। বিয়ের কয়েকবছর বছর বেশ ভালো ভাবেই পার হলেও তার কয়েকদিন পরেই ঘটল আরেক ঘটনা। সেই ছেলের সাথে অন্য মেয়ের সম্পর্ক আছে জানা গেল। নিরুপমা তখন ৫ মাসের প্রেগন্যান্ট! নিরুপমা এই অবস্থায় পুরো ভেঙ্গে যায়। মেহেরিন আর শুভ্র খান দুজনেই মানসিক ভাবে সুস্থ রাখার চেষ্টা করে। 

নিরুপমা ঠিক করে নেয় সে তার স্বামী কে ডিভোর্স দেবে।‌এর মাঝেই তার স্বামী এসে ক্ষমা চায় তার কাছে। নিরুপমা শারীরিক আর মানসিক ভাবে বেশ দুর্বল থাকে। তাই এতো চিন্তা ভাবনা না করে মেনে নেয় স্বামী কে। অতঃপর চলে আসে স্বামীর সাথে স্বামীর বাসায়। সবাই ভেবে নেয় সবকিছু ঠিক হয়ে গেছে। 

কয়েক মাস পরেই জন্ম হয় অর্ণবের। অর্ণব মানসিক ভাবে যে দুর্বল হবে ডাক্তার তখন'ই জানিয়ে দেয়। তবুও নিরুপমা আর তার স্বামী মিলে অর্ণব কে সুস্থ করার প্রস্তুতি নেয়। নিরুপমা'র মনে হয় তার স্বামী হয়তো ভালো হয়ে গেছে। একজন আদর্শ বাবা আর স্বামী হবার দায়িত্ব পালন করছে সে। অতঃপর...

নির্ঝর বলে উঠে,
"তারপর..

রিদুয়ান বলে উঠে,
"তারপর হঠাৎ একদিন মেহেরিন নিরুপমা'র বাসায় গিয়ে দেখল নিরুপমা ফ্যানের সাথে ঝুলছে আর নিচে বসে অর্ণব হামাগুড়ি খাচ্ছে। 

"নিরুপমা আ/ত্ন/হ/ত্যা কেন করেছিল?

"তা জানি না তবে মনে হয় এমন কিছুই হয়েছিল যার কারনে সে এমন কিছু করার চেষ্টা করেছিল। পুলিশ তদন্ত করেছিল এই নিয়ে। মেহেরিন নিরুপমার স্বামীকে এসবের জন্য দায়ী করলেও যথেষ্ট প্রমাণ না থাকায় স্বামী ছাড়া পেয়ে যায়। এর কিছুমাস পরেই শুভ্র খান হার্ট অ্যাটাক করে মারা যায়। এরপর মেহেরিন'র জন্য অর্ণব'ই রয়ে যায়। বোনের শেষ চিহ্ন হিসেবে আগলে রাখে তাকে। নিজের ছেলে হিসেবেই স্বীকৃতি দেয় তাকে।

এতটুকু বলেই থামে রিদুয়ান। নির্ঝর উঠে দাঁড়ায়। চলে আসে সেখান থেকে। নিজের রুমে এসে বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আকাশের দিকে তাকায়। হুট করেই কানে বেজে উঠে মেহেরিন'র বলা কথাগুলো। মেহেরিন বলেছিল,

""আমি সেই দলের লোক যাদের শুধু একটি মাত্র আকাঙ্ক্ষা থাকে। থাকে একটাই অবলম্বন! একজন কে নিয়েই বাঁচার স্বপ্ন দেখে সে। আমার সেই একজন হলো অর্ণব। আমার বেঁচে থাকার একটিমাত্র আশা।"

চোখ বন্ধ করে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল নির্ঝর। পকেটে হাত দিতেই একটা কাগজ পেল। বের করে দেখে এটাতে সেই ঝগড়ার পয়েন্ট গুলোই লেখা। কথাগুলো মোটেও মেহেরিন'র জন্য না। নির্ঝরের নিজের উপরই রাগ হতে লাগালো। যদি এসব কথা সে মেহেরিন কে বলতো তাহলে কি হতো! হয়তো অনেকটা কষ্ট পেয়ে নিশ্চুপ হয়ে থাকতো। নির্ঝর কাগজ টা ছিঁড়ে ফেলো দিলো যাতে তার রাগ টা একটু হলেও কমে। 
.
অর্ণব কে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে তার কপালে চুমু খেলো মেহেরিন। ঘর থেকে বের হয়ে গেল সে। স্টোররুমের দরজার সামনে এসে দাঁড়াল। দু হাত দ্বারা দরজাটা খুলল। পুরো রুম অন্ধকার! মেহেরিন আলো জ্বালাল। সবার প্রথমেই একটা ছবিতে চোখ পড়ল তার। ছবিতে তার বাবা সোফায় বসে আছে। পিছনে মেহেরিন তার গলা জরিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আর নিচে নিরু দি বসা আছে। ছবিটার দিকে আগাতে লাগলো মেহেরিন। যত'ই সামনে আসছে ততোই দুর্বল হয়ে পড়ছে সে। একবার মনে হলো তার পা যেন জমে যাচ্ছে। 

মেহেরিন কাঁপা কাঁপা হাতে ছবিটায় হাত রাখল। ছুঁয়ে দেখল নিরু কে! চোখের কার্নিশ বেয়ে গড়িয়ে পড়ল অশ্রু কণা। মেহেরিন'র গলা ভারী হয়ে যাচ্ছিল। তবুও সে বলে উঠলো,

"আমি পারি নি দি! আমি পারি নি। তোকে বাঁচাতে আমি পারি নি। সেদিনের ফোনটা আমার ধরা উচিত ছিল। সেদিন তোর ফোন ধরলে আজ হয়তো তুই বেঁচে থাকতি। আমার পাশে দাঁড়িয়ে থাকতি। বাবা থাকতো আমাদের সাথে। আমরা সবাই থাকতাম একসাথে। কেন রেখে গেলি আমাকে এখানে, একা রেখে গেলি তো। নিয়ে যেতে তো পারতি। তুই আবারো আমাকে ছেড়ে চলে গেলি। আর এবার একা না বাপি কেও নিয়ে গেলি। কেন দি কেন? কেন তোরা সবাই আমাকে একা ফেলে রেখে চলে যাস। জানিস তো আমি থাকতে পারি না তোদের ছাড়া। একাকিত্ব সহ্য হয় না আমার। আমি পারবো না দি একা থাকতে পারবো না। তোর মেহের এখনো একা থাকতে ভয় পায়। এখনো মাঝরাতে ঘুম থেকে জেগে তোর মুখটা দেখতে ইচ্ছে করে। ইচ্ছে করে তোকে জ্বালাতে। খুব ইচ্ছে করে দি খুব। তুই যাবার পর সবাই ছেড়ে চলে গেছে আমাকে সবাই। 

কাঁদতে কাঁদতে মেঝেতে বসে পড়ে মেহেরিন। খুব কাঁদছে সে। এখনো মনে পড়ে তার সেদিনের রাতের কথা। বৈশাখ মাস! রাতে বেশ জোরেই বৃষ্টি হচ্ছিল। তার সাথে দমকা বাতাস। নেটওয়ার্ক পাওয়াও বেশ মুসকিল। মেহেরিন গাড়ি নিয়ে বের হয়েছিল কিন্তু বাসায় আসার সময়'ই বিপত্তি ঘটল। মাঝরাস্তায় গাড়িটা হুট করেই বন্ধ হয়ে গেল। মেহেরিন ফোন গাড়িতে রেখে ছাতা নিয়ে বের হলো। গাড়িটা তেমন কিছু হয় নি। কিছু খুঁটিনাটি করার পর'ই মেহেরিন আবারো গাড়িতে এসে বসল। গাড়ি স্টার্ট দিলো। গাড়ি চলতে শুরু করল। পাশে তাকিয়ে দেখে ফোনের আলো জ্বালানো। মেহেরিন তাকিয়ে দেখে নিরুর অনেক মিসকল। ফোনটা উঠিয়ে সে কল দিতে লাগল। প্রথম প্রথম নেটওয়ার্ক প্রবলেম এর কারনে কল যেত না। অতঃপর কল গেলেও ফোন কেউ ধরল না। মেহেরিন'র চিন্তা হতে লাগালো। ইদানিং নিরু কে অনেকটা অস্বাভাবিক লাগে তার কাছে। জিজু নিয়ে যাবার পর পরই অনেকটা বদল এসেছে। মেহেরিন নিয়মিত ফোন করে কিন্তু নিরু কিছুই বলে না। অনেকটা অচেনা লাগে এই নিরু কে। আর এখন যে কল করল মেহেরিন ধরতেই পারল না। মেহেরিন ঠিক করল নিরুর বাড়িতে যাবে। একটু দেখে আসবে তাকে।‌

নিরুর বাড়িতে এসে কলিং বাজালো অনেকক্ষণ ধরে কিন্তু কেউই দরজা খুলছে না। মেহেরিন নিরু কে রীতিমতো ফোন করেই যাচ্ছে। ফোন ও কেউ ধরছে না।‌রেগে দরজা ধাক্কানোর কথা ভেবে দরজায় হাত রাখতেই দরজা খুলে গেল।‌ মেহেরিন অনেকটা অবাক হলো। আর বেশি অবাক হলো এটা ভেবে যে ঘরটা বেশ অন্ধকার। মেহেরিন ফোনের আলো জ্বালিয়ে প্রবেশ করল ঘরে। নিরুর রুমের দিকে যেতেই দেখল সেখানে আলো জ্বলছে। মেহেরিন ফোনের আলো বন্ধ করে নিরুর ঘরের দিকে আগাল। বাইরে বৃষ্টি এখনো পড়ছে। কিছু কিছু সময় পড় বাজও পড়ছে। কি ভয়ানক সেই বাজ পরার আওয়াজ। বিদ্যুৎ চমকানি তে পুরো অন্ধকার ঘর কেমন আলোকিত হয়। মেহেরিন'র মনে হয় কোন ভুতের বাড়িতে আছে সে। 

মেহেরিন দীর্ঘশ্বাস ফেলে নিরুর ঘরের দিকে আগায়। দরজার সামনে তাকিয়ে দেখে অর্ণব হামাগুড়ি দিয়ে তার পায়ের কাছেই আসছে। মেহেরিন অর্ণব কে দেখে হেসে তাকে কোলে তুলে। অর্ণবের বয়সের বাচ্চারা এখন টুকটাক হলেও কথা বলার চেষ্টা করে অর্ণব তাও করে না। মেহেরিন অর্ণব কে কোলে তুলে সামনে তাকিয়ে বলল,

"আমার অর্ণ সোনা! দেখলি দি অর্ণব আমাকে চিনে.....

আর কথা বের হলো না তার মুখ দিয়ে। নিরু ঝুলে আছে ফ্যানের সাথে। তার চোখ দুটি বড় বড় করে চেয়ে আছে তার দিকে। নিরুর মুখে একটা বিশেষ মায়া ছিল। মেহেরিন সবসময় দেখতে পেতো সেই মায়া। মনে হতো এটা কোন মায়ের চাহনি। কিন্তু এই প্রথমবার নিরু কে দেখে ভয়ে পিছিয়ে গেল মেহেরিন। হুট করেই মেঝেতে পড়ে গেল সে। তার সমস্ত শরীর কাঁপছে। মুখ দিয়ে শব্দ বের হচ্ছিল না তার। অনেক চেষ্টা করে জোরে চিৎকার করে বলল,

"নিরু দি! 

সাথে সাথেই বিদ্যুৎ চমকালো। 
.
হুট করেই চোখ মেলল মেহেরিন। কেউ তাকে নরম স্বরে ডাকছে। মেহেরিন সামনে তাকাল। কিছুই দেখা যাচ্ছে না। সব ঝাপসা। চোখ ঢলে সামনে তাকাল সে। কানে এসে বাজল একটা শব্দ! 

"মেহের! 

#চলবে....
[+] 2 users Like Manjarul Haque's post
Like Reply
#18
অন্য জায়গার থেকে গল্প copy করলে লেখকের নাম অন্তত দিয়ে দেবেন।
Like Reply
#19
#পর্ব_১১

কাঁদতে কাঁদতে এখন ক্লান্ত মেহেরিন। নিস্তেজ দেহটাকে দেওয়ালের সাথে মিশিয়ে নিচে বসে পড়ল সে। চোখ বুজে যাচ্ছে তার, মেলে রাখা অসাধ্য হয়ে পড়ছে তার পক্ষে। হুট করেই কানে ভেসে আসছে চিরচেনা গলার স্বর তার সাথে বেলী ফুলের জোরালো ঘ্রাণ পাচ্ছে সে। এটা কি করে হতে পারে। স্টোররুমে কোন বেলী ফুলের গাছ নেই। তাহলে সে কেন পাচ্ছে এই ঘ্রাণ। কারো মৃদু গলার স্বর ভেসে আসছে,

"মেহের! মেহের!

মেহেরিন চোখ মেলে সামনে তাকানোর চেষ্টা করছে। কেউ আছে মনে হচ্ছে সামনে। চোখে ঝাপসা দেখছে সে। চোখ বার বার বুঁজে যাচ্ছে তবুও সামনে দেখার চেষ্টা করছে। হাত দিয়ে চোঁখের পানি মুছলো সে। অতঃপর সামনে তাকাতেই সে থমকে গেল। নিরু দাঁড়িয়ে আছে সামনে। মেহেরিন দ্রুত দাঁড়িয়ে গেল। তার চোখের কোনে আবারো অশ্রু জমতে শুরু করল। মেহেরিন কাঁপা কাঁপা গলায় বলল,

"নননিরু দি!

"মেহের! তুই কাঁদছিস কেন? 

"দি তুমি এসেছ! 

"এলাম আবার কখন, আমি তো সবসময় তোর সাথেই থাকি।

"দি! দি আমি খুব একা এখানে, আমার একটুও ভালো লাগছে না এখানে। আমি চলে আসি তোমার কাছে।

নিরু কিঞ্চিত হাসল। মেহেরিন অবাক চোখে তাকিয়ে রইল সেই হাসির দিকে। হাসিটা এখনো খুব মিষ্টি। নিরু হেসে বলে উঠে,

"পাগলী কোথাকার! তুই চলে এলে আমার অর্ণবকে কে দেখবে শুনি।

"দি!

"খুব জ্বালায় বুঝি অর্ণব তোকে। দেখ এখন কেমন লাগে, একসময় তুই ও এভাবে আমাকে জ্বালিয়েছিস। কিন্তু আমার অর্ণব তোর মতো এতোটা দুষ্টু না কিন্তু!

মেহেরিন নিরুর দিকে তাকিয়ে এগিয়ে তার কাছে আসতে লাগল। এদিকে নিরু রাজ্যের কথা শুরু করে দিয়েছে। মেহেরিন হাত বাড়িয়ে যেই না নিরু কে ছুঁতে যাবে তখনই নিরু বলে উঠে,

"ছুবি না মেহের! তোর হাতের ছোঁয়া পেলে আমি হারিয়ে যাবো যে। 

"দি তুমি আবার চলে যাবে।

"ধুর পাগলী একটু আগেই তো বললাম, আমি আছি সবসময় তোর পাশে, তোর সাথে। 

"তাহলে তোমাকে কেন ছুঁতে পারি না আমি। 

"মেহের, বোন আমার! তুই এখনো সেই ছোট্ট মেহের'ই আছিস। যে কিনা আমার প্রিয় বেলী ফুল গুলো গাছ থেকে ছিঁড়ে ফেলতি। আমি খুব রেগে যেতাম তোর উপর। তুই সেই বেলী ফুলের মালা গেঁথে আমার গলায় পরিয়ে দিতি মনে আছে তোর। 

"সব মনে আছে দি, সব আছে। 

নিরু আবারো হেসে দিল। মেহেরিনও এবার হেসে দিল। নিরু বলে উঠে,

"খুব ক্লান্ত লাগছে তোকে মেহের। 

"আমি ঠিক আছি দি।

"না ঠিক নেই তুই,‌ কোনদিন ভালো করে রাতে ঘুমোতে পারিস না তুই। মাঝরাতেই জেগে উঠিস, বসে থাকিস। ঘুমের ঔষধ খাবার পরও তোর ঘুম হয় না। কেন করিস মেহের এসব। এরকম চলতে থাকলে যে তুই অসুস্থ হয়ে যাবি। তখন আমার ছোট্ট অর্ণবের কি হবে বল। কে আছে ওর তুই ছাড়া। আমি তো কবেই চলে গেলাম না ফেরার দেশে। দূর থেকে তোদের দেখতে পারলেও যে তোদের ছোঁয়ায় সাধ্য আমার নেই। তুই কি জানিস না অর্ণবের মাঝে আমি আছি। তোর নিরু দি আছে। এরপরও তুই বলবি তুই চলে আসতে চাস আমার কাছে। 

মেহেরিন'র চোখের জমা অশ্রু দ্রুত'ই কার্নিশ বেয়ে গড়িয়ে পড়ল। মেহেরিন ধপ করে মেঝেতে বসে পড়ল। কাঁদতে লাগল। চেঁচিয়ে বলতে লাগল,

"তোরা সবাই ঠক, সবাই। কেউ ভালোবাসিস না আমায়। 

"মেহের কাদিস না বোন! 

"কথা বলবি না তুই,‌ তোরা সব এক। স্বার্থপর! সবাই স্বার্থপর! মা কে জ্বালাবো বলে মা জন্মের পর'ই চলে গেল আমায় ছেড়ে। তোকে বেশি ভালোবাসতাম বলে তুইও ছেড়ে চলে গেলি। আর বাবা তোকে বেশি ভালোবাসতো বলে তোর সাথে চলে গেলো। আর তুই এখন বলছিস তোর অর্ণবের জন্য আমায় থাকতে। দেখলি তোরা সব স্বার্থপর সব! যাকেই আমি আকড়ে ধরে বেঁচে থাকতে চাই না কেন সেই আমাকে একা রেখে চলে যায়। চলে যায় সে!

"তুমি অভিমান করছিস মেহের।

"অভিযোগ করছি অভিমান না।

নিরু এবার জোরে হাসল। খিলখিলিয়ে হাসল। মেহেরিন নিরুর দিকে তাকাল। তার সামনে আসন পেতে বসে আছে নিরু। সবসময় এভাবেই বসে থাকতো সে। মেহেরিন অবাক চোখে তাকিয়ে বলল,

"তুই হাসছিস!

"হাসবো না আবার! কান্না করতে করতে ঝগড়া করার অভ্যাস তোর এখনো গেল না। এই আমার বোন নাকি বিয়ে করবে কয়েকদিন পর আর এখনো বাচ্চাদের মতো কাঁদে। ছিঃ মেহের তোর বর জানলে কি হবে জানিস। 

"ও তো জেনে গেছে।‌ জেনে গেছে অর্ণব আমার ছেলে না।

"তো, তুই বেশি ভাবছিস মেহের। নির্ঝর অর্ণব কে অনেক ভালোবাসে। সে তোর হোক আর আমার ছেলে!

"তুই ওর নাম জানিস!

"বাহ জানবো না কেন? আমার বোনের বরের নাম জানতে তো হবেই। 

বলেই আবারো হাসর নিরু। মেহেরিন অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল তার দিকে। নিরু মেহেরিন'র এমন চাহনি দেখে বলে উঠে,

"কি ভাবছিস মেহের!

"ছুঁয়ে দেখতে ইচ্ছে করছে তোমায়।

নিরু আবারো হাসল। হেসে বলল,
"তুই ভারী মতলব বাজ বুঝলি মেহের। যখন মরে ফ্যানের সাথে ঝুলছিলাম তখন এসে তো একবার ও ছুঁয়ে দেখলি না আমায়, ভয়ে পিছিয়ে পড়লি আর এখন এলি ছুঁতে বাহ। খুব সুন্দর লাগছে বুঝি এখন আমায়।

"তুমি তো বরাবরই সুন্দর দি।

নিরু আবারো হাসল। অতঃপর মুখটা মলিন করে বলে উঠে,
"জানিস মেহের, আমি চাই নি তোদের ছেড়ে চলে যেতে। কিন্তু যেতে হয়েছে। 

"কেন গেলে দি!

"কি করব বল আমার সময় যে ফুরিয়ে গেল। কিন্তু জানিস মেহের খুব কষ্ট হয় রে তোর জন্য, খুব কষ্ট হয়। তুই একা একা খুব কষ্ট করছিস জানি কিন্তু আমি যে অপারগ!

"থেকে যাও না দি।

"পাগলী একটা! তা কি হয় নাকি। 

"দি! একটা কথা জিজ্ঞেস করব?

"কেন মরে গেলাম তাই..

"না করলেও তো পারতে!

"আমি চাই নি করতে মেহের, আমি চাই নি। তুই জানিস যখন আমার দম বন্ধ হয়ে আসছিল তখন আমার সামনে তোর আর বাবা'র মুখখানা বার বার ভেসে উঠছিল। জানিস অর্ণব তখন আমার দিকে তাকিয়ে ছিল। সে বুঝতেই পারছিল না কি হচ্ছে। ও যদি তখন জানত ওর মা একদম না ফেরার দেশে চলে যাচ্ছে তখন হয়তো খুব কাঁদতো, তাই না। 

কথা গুলো বলার সময় নিরুর গলা ভারী হয়ে আসছিল। নিরুর চোখ থেকে অশ্রু গড়িয়ে পড়ল। মেহেরিন মেঝেতে ঠেসে ঠেসে নিরুর কাছে এলো। নিরু মেহেরিন'র দিকে তাকিয়ে হেসে দিল। নিরু যেন কান্না আর হাসা একসাথে মিলিয়ে ফেলেছ। কাঁদো মাখা মুখে হাসছে। 

"খুব ইচ্ছে করছে বুঝি ছুঁয়ে দেখতে।

"তোমার চোখের পানিটা মুছে দেই দি।

"দিবি, দে! কিন্তু আমাকে ছুলেই যে আমি হারিয়ে যাবো। তবে ভাবিস না আমার অর্ণব কখনো আমার অভাব তোকে বুঝতে দিবে না। আমি সবসময় থাকবো তোর পাশে। যখন মন থেকে আমায় ডাকবি তখনই আমায় পাবি। বুঝলি তো পাগলী। নে এবার জলদি ছুঁয়ে দে তো আমায়। 

"দি, একটিবার বলো না কি হয়েছিল সেদিন।

"সেদিন! অনেককিছুই তো হয়েছিল, অনেককিছুই সহ্য করেছি আমি, সহ্য করেছিস তোরা সবাই। আমিও হাঁপিয়ে উঠলাম এসব থেকে। তাই পরিত্রাণ পেতে চাইলাম আর পেয়েও গেলাম। 

"তুমি মিথ্যে বলছো দি!

"আহ্ মেহের, এবার কিন্তু বেশ যন্ত্রণা করছিস তুই। চোখের পানি কি মুছে দিবি না নাকি চলে যাবো আমি। 

মেহেরিন আর কিছু বলল না। হাত উঠিয়ে নিরুর চোখের পানি মুছতে নিল। আর তখন'ই নিরু যেন হাওয়ায় মিলিয়ে গেল। শুধু কানে একটা কথা বাজল,

"মেহের কাদিস না বোন! 

মেহেরিন'র কানে কথাটা বাজতেই হু হু করে কেঁদে উঠলো সে। এরকম একবার না অনেকবার হয়েছে। যতবার'ই নিরুর কথা ভেবে সে কাঁদে তখন'ই এই কথা শুনতে পায়। নিরু এসে হাজির হয়। অনেক গল্প করে ওর সাথে। আবার চলে যায়। মেহেরিন বার বার জিজ্ঞেস করে, "কি হয়েছিল সেদিন? প্রত্যেকবার'ই নিরু কিছু একটা বলে কথা ঘুরিয়ে ফেলে। মেহেরিন এখনো মনে করে কিছু একটা হয়েছিল সেদিন নিশ্চিত। কিন্তু এসব কাউকে বললে কেউই বিশ্বাস করবে না। সবাই তাকে একটা পাগল ভাববে। কারন এসব যে তার হ্যালুসেশন। এ কথা মেহেরিন নিজেও জানে কিন্তু মানতে চায় না। 
.
নির্ঝর কয়েকদিন যাবত ভাবছে মেহেরিন'র সাথে দেখা করবে কিন্তু কোনভাবেই যেন তা হয়ে উঠছে না। কোথায় না কোথায় গিয়ে আটকে যাচ্ছে সে। নিজেকে একটা গুরুতর আসামি বলে মনে হচ্ছে। যেন মানুষ খুনের চেয়েও আরো বড় কাজ করেছে সে। এইসব ভেবে কয়েকদিন যাবত ঘর থেকেই বের হচ্ছে না সে। 

নীলিমা নির্ঝরের এমন অবস্থা দেখে অনেক চিন্তিত। কিছুদিন ধরে তার ছেলেকে বাইরে যেতে দেখছেন না। ঘর থেকেই বের হচ্ছে না। খাবার অবদি বলছে ঘরে দিয়ে যেতে কি তা ঠিক মতো খাচ্ছেও না। মাঝে মাঝে গিটার বাজানোর শব্দ পায় সে। নির্ঝরের মন খারাপ ছাড়া সে গিটার বাজায় না একথা নীলিমার অজানা না। 

বাড়ির ল্যান্ডলাইন'র ফোনটা বেজে উঠলো। নীলিমা উঠে কল রিসিভ করল। ওপাশ থেকে ফরহাদ বলে উঠে,

"আসসালামুয়ালাইকুম আন্টি আমি ফরহাদ।

"ওয়া আলাইকুমুস সালাম, বাবা। কেমন আছো?

"আমি তো ভালো আছি আন্টি কিন্তু নির্ঝর মনে হয় ঠিক নেই। কয়েকদিন ধরেই ফোন করছি কল কিছু ধরছে না।‌আর ধরছে তো কথা বলছে না। কি হয়েছে আন্টি ওর।

"আমি নিজেও জানি না বাবা। খুব চিন্তা করছি ওকে নিয়ে। এক ছাদের নিচে থেকেও ছেলেটা আমার কথাবার্তা কিছুই বলছে না।

"তেমন গুরুতর কিছু কি হয়েছিল আন্টি?

"হ্যাঁ তা তো হয়েছিল। ফরহাদ তোমরা বরং একটা কাজ করো। একবার বাসায় চলে এসো। সামনাসামনি বলি তোমাদের আর দেখো আমার এই ঘরোয়া ছেলে টাকে যদি একটু বের করতে পারো ঘর থেকে। আমার যে এখন অস্বস্তি লাগছে বাবা।

"আচ্ছা আন্টি আমি দেখছি। আসছি আমরা। 

"আচ্ছা ! 
.
বিকালের দিকে ফরহাদ ওরা সবাই এসে হাজির নির্ঝরের বাসায়। একে একে সব কথা শুনছে তারা। সব কিছু শোনার পর ফরহাদ বলে উঠে,

"তার মানে অর্ণব মেহেরিন'র ছেলে না। 

আরিফ বলে উঠে,
"অপরাধ বোধ তো এখন আমাদের মনেও জাগছে। ইশ এই মেয়েটাকে নিয়ে যে কতো কিছু ভেবেছি আমরা। 

ঈশান বলে উঠে,
"একটা মানুষ সম্পর্কে না জেনে এতো কিছু ভাবা মোটেও উচিত হয় নি আমাদের।

ফরহাদ কিছু না বলে চুপচাপ বসে রইল। সেদিন ক্লাবে ঘটা ঘটনার কথা মনে পড়ল তার। আসলেই সেদিন অনেক কিছু হয়েছিল। নির্ঝর তখন কিছুই বলে নি। আর বলে নি বলেই এখন অপরাধবোধে জাগছে তার মানে। নিজেকে অপরাধী ভাবছে সে। নীলিমা বলে উঠে,

"এখন কি করবে বলো,‌নির্ঝরের তো একটা ব্যবস্থা করতে হবে বলো। 

ফরহাদ উঠে দাঁড়িয়ে বলি,
"দেখছি আমি! 

বলেই বাইরে চলে গেল। তার পিছু পিছু ঈশান আর আরিফ ও গেল। খানিকক্ষণ পর ফিরেও এলো এসে গেল নির্ঝরের ঘরের দিকে। নির্ঝরের ঘর বাইরে থেকে লক করা। ফরহাদ দরজায় নক করে বলে,

"নির্ঝর!

"কে?

*আমি!

"ফরহাদ!

"শুধু ফরহাদ না ঈশান আরিফ আমরা সবাই আছি।

"তো কি হয়েছে?

"দরজা খোল?

"কেন?

"বাইরে যাবো?

"কেন?

"শপিং করতে!

"আমি যাবো না তোরা যা।

"কেন, চল আমাদের সাথে।

"ভালো লাগছে আমার।

"কিন্তু শপিং তো তোর করতে যাবো।

"আমার!

"হ্যাঁ, তোর! তোর আর মেহেরিন'র। তোদের বিয়ের শপিং
 মেহেরিন একটু আগেই ফোন করেছিল আমায়। বলেছে তোকে নিয়ে যেন বের হই।

"সত্যি! 

নির্ঝরের আওয়াজ শুনে ফরহাদ বুঝতে পারল নির্ঝর টোপ গিলেছে। এবার তাকে বের করে আনা যাবে। ফরহাদ বলে উঠে,

"তোকে মিথ্যে কেন বলবো?

নির্ঝর দরজার ওপাশ থেকে বলে উঠে,
"তাহলে আমাকে না ফোন করে তোদের কেন বলল!

নির্ঝর এভাবে তাদের জাল ধরে ফেলবে ফরহাদ ভাবে নি। আরিফ নির্ঝরের ফোন নাম্বার ডায়াল করে দেখে নির্ঝরের ফোন বন্ধ। সে বুদ্ধি করে বলে উঠে,

"কেন বললো তোকে ফোন দেই নি। তোর ফোন তো বন্ধ তাই কথা বলতে পারে নি। 

ঈশান বলে উঠে,
"ফোন করল ল্যান্ড লাইনে। আমরা সবাই তখন নিচে ছিলাম। তাই আমাদের বলল কথাটা।

"বিশ্বাস না হলে আন্টি কে জিজ্ঞেস কর, আন্টি ও ছিল সেখানে!

নীলিমা বলে উঠে,
"নির্ঝর দরজা খোল,‌ ওরা সব সত্যি বলছে!

ওপাশ থেকে আর আওয়াজ এলো না। সবাই ভাবল হয়তো নির্ঝর কথাটা বিশ্বাস করে নি। হুট করেই দরজা খোলার শব্দ পেল সবাই। ফরহাদ হাত দিয়ে দরজা ধরতেই দরজা খুলে গেল। সবাই ভিতরে এসে দেখে নির্ঝর আলমারি থেকে সব জামাকাপড় বের করে আয়নায় দাঁড়িয়ে দেখছে। নির্ঝরের অবস্থা একদম বেহাল। মাথার অগোছানো চুলের মতন তাকেও দেখতে অগোছালো লাগছে। সবাই অবাক হয়ে দেখছে তাকে। নির্ঝর আয়নায় দাঁড়িয়ে বলে উঠে,

"কখন ফোন করেছিল মেহেরিন!

ঈশান বলে উঠে,
"এই ৩০ মিনিট!  

আরিফ বলে উঠে,
"এই ‌২০ মিনিট! 

দু'জনে একসাথে বলায় নির্ঝর ভ্রু কুঁচকে তাকায়। ফরহাদ বলে উঠে,

"আরো ১০ মিনিট। মানে ফোন করেছে ১ ঘন্টা হলো। তোর এভাবে মিনিট করে কেন বলছিস!

নির্ঝর অবাক হয়ে বলে উঠে,
"কি এক ঘন্টা আর তোরা আমায় এখন বলছিস! গাধার দল গুলো! 

বলেই নির্ঝর তাড়াতাড়ি একটা হুডি দিয়ে দৌড়ে ওয়াশরুমে ঢুকে যায়। তার কান্ডকারখানা দেখে সবাই হেসে উঠে! 
.
নির্ঝর তৈরি হবার পরও বারবার আয়নায় দেখছে নিজেকে। ফরহাদ ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করে,

"সুন্দর লাগছে দেখতে, এতোবার দেখার দরকার নেই! 

নির্ঝর মুখ ভেংচি কেটে বলে,
"আমি জানি আমি সুন্দর! 

ঈশান বলে উঠে,
"ঠিক আছে ভাই এখন চল, লেট হচ্ছি আমরা! 

"হুম, চল! 

অতঃপর সবাই বের হলো। নীলিমা ছেলেকে স্বাভাবিক দেখে অনেকটা খুশি। নির্ঝর গাড়ির ড্রাইভিং সিটে বসে গাড়ি ড্রাইভ করছে। তার পাশে ফরহাদ বসা। পিছনের সিটে ঈশান আর আরিফ। ফরহাদ নির্ঝর কে উদ্দেশ্য করে বলে,

"এতো দেখা করার শখ অথচ একবার ফোন করে জিজ্ঞেস করবি না। এটা কেমন কথা বল আরিফ! 

"কি জানি ভাই, যার যার মন তার তার ব্যাপার। আমি আর তুই তো এক নদীর মাঝি! 

ঈশান হেসে বলে উঠে,
"তোরা যে নৌকার মাঝি আমি তার পথিক ঠিক আছে। 

তিন জন'ই হো হো করে হেসে উঠলো। নির্ঝর মুখ ভেংচি কেটে চুপ করে গেল। কিন্তু মনে মনে ঠিক'ই ভাবতে লাগলো। আসলেই এতোদিন তার মন খারাপ ছিল কিন্তু আজ মেহু'র কথা বলতেই মনটা হুট করে ভালো হয়ে গেল। যদি সে জানতো মেহুর সাথে কথা বললে মন ভালো হয়ে যাবে তখনই ফোন করে কথা বলে নিতো। 
.
নির্ঝর গাড়ি থামাল শপিং মলের সামনে। গাড়ি পার্ক করে চারজন নামল একসাথে। ফরহাদ মেহেরিন কে কল করে জিজ্ঞেস করল সে কোথায়? মেহেরিন জানাল সে এসে গেছে। তারা সবাই শপিং মলে ঢুকে মেহেরিন কে খুঁজতে লাগল। হঠাৎ করেই অর্ণবের আওয়াজ পেল। সামনে তাকিয়ে দেখে অর্ণব ‌দৌড়ে তার কাছেই আসছে

"ড্যাডি ড্যাডি! 

"অর্ণ! 

কিঞ্চিত হেসে কোলে নিল অর্ণব কে। সামনে তাকিয়ে দেখে মেহেরিন আসছে। তাকে আজ খানিকটা অন্যরকম লাগছে। কেন লাগছে তার জানা নেই তবুও অন্যরকম লাগছে। মেহেরিন'র ঠোঁটে হালকা হাসি। সে হেসে নির্ঝরের কাছে এলো। বলে উঠে,

"বিয়ের এখনো অনেক দিন বাকি, আপনি এতো তাড়াতাড়ি বিয়ের শপিং করার সিদ্ধান্ত নিলেন যে! 

নির্ঝর অবাক হয়। ভ্রু কুঁচকে ঠোঁটে হাসি রেখে বলে,
"এটা তো আমার না তোমার সিদ্ধান্ত , ফোন করে তো তুমি বললে শপিং করার কথা। আসলে প্রথমে আমিও অবাক হয়েছি এই কথা শুনে! 

"না নির্ঝর আপনি ভুল করছেন। আমি বলি নি। ফোন তো ফরহাদ‌ করলেন। উনি বললেন যে...

দুজনেই চুপ হয়ে গেল। একজন অন্যজনের মুখের দিকে তাকাতে লাগল। অতঃপর পিছনে ফিরে দেখে....

#চলবে....
[+] 2 users Like Manjarul Haque's post
Like Reply
#20
#পর্ব_১২

"বাহ! ভাবা যায়, আমাদের নির্ঝর তাহলে কারো প্রেমে পাগল হলো। এতোটাই পাগল হলো যে ঘর থেকে বের হওয়াই ছেড়ে দিল। থাক ভাবিস না, তোর বন্ধুরা আছে কি করতে। দিয়ে এলাম তোকে তোর জানের আছে। এখন ঠিক থাকবি তুই। ধন্যবাদ দেবার দরকার নাই। ৫ হাজার টাকা দিলেই চলবে দোস্ত। অনেক কষ্টে আছি। একেক জনকে পাঁচ টাকা দিস। হ্যাপি ডেট ডে! অল দা বেস্ট হি হি হি! 

নির্ঝর ভ্রু কুঁচকে মেসেজ টা পড়ে ফোনটা বন্ধ করে রেখে দিল। ফরহাদের মেসেজ ছিল এটা। নির্ঝরের কাছে এখন সবটা পরিষ্কার। চোখ তুলে সামনে তাকিয়ে দেখে মেহেরিন অর্ণব কে আইসক্রিম খাওয়াচ্ছে। অর্ণবের ঠোঁটের কোনে আইসক্রিম লেগে গেল। মেহেরিন টিস্যু দিয়ে আইসক্রিম'র মুছে দিচ্ছে। অর্ণব দাঁত বের করে হেসে দিল। অর্ণবের হাসি মেহেরিন'র ঠোটের কোনের হাসি ফুটাল। মেহেরিন'র হাসি নির্ঝরের কিঞ্চিত হাসির কারন হলো। 

নির্ঝরের দিকে তাকিয়ে মেহেরিন বলে উঠে,
"কোথায় তারা?

"ওদের একটু কাজ ছিল তাই চলে গেছে।

"তাহলে কি আমরা একাই শপিং করবো।

"ঘুরে দেখা যাক, চলো! 

অর্ণব দাঁত বের করে হেসে নির্ঝরের দিকে তাকিয়ে বলল,
"ড্যাডি! 

নির্ঝর উঠে দাড়িয়ে অর্ণব কে কোলে তুলে নিল। মেহেরিন উঠে এসে পাশে দাঁড়াল নির্ঝরের। একসাথে হাঁটা শুরু করল তারা। কেনাকাটা করল কিছু। অর্ণব কিছুক্ষণ নির্ঝরের কোলে ছিল আবার কিছুক্ষণ নির্ঝরের হাত ধরে দাঁড়িয়ে ছিল।‌ পাশ দিয়ে কয়েকজন যাচ্ছিল আর তাদের দেখে নিজেরা নিজেরা'ই বলতে লাগল,

"কিউট ফ্যামিলি নাহ! 

"হুম, অনেক কিউট! 

কথাটা নির্ঝরের কানে বাজল। সে তাকাল তাদের দিকে। দুটো মেয়ে যাচ্ছিল। নির্ঝর কে দেখে তারা দুজনেই হেসে দিল! 

মেহেরিন আর নির্ঝর দোকানে গেল। সেলসম্যান তাদের বসতে বলল। নির্ঝর অর্ণব কে কোলে বসিয়ে বলল, 
"বিয়ের জন্য লেহেঙ্গা দেখাতে! 

তারা অনেক রঙের লেহেঙ্গা দেখাল। সাইজ জানতে চাইলে নির্ঝর মেহেরিন কে দেখাল। লোকটা একটু বিভ্রান্ত হলো। নির্ঝর একটা সাদা রঙের লেহেঙ্গা পছন্দ করল মেহেরিন'র জন্য। তাকে বলল একবার এটা একটু আয়নার সামনে গিয়ে দেখে আসতে। মেহেরিন সেটা নিয়ে উঠে গেল। নির্ঝর অর্ণব'র সাথে কথা বলতে লাগল। সেলসম্যান জিজ্ঞেস করল,

"স্যার ছেলেটা কি আপনার!

নির্ঝর হেসে বলল,
"হুম! 

"উনি কি আপনার ওয়াইফ! 

"হুম।

"ওহ তাহলে আপনাদের ম্যারেজ অনিভার্সেরি! কনগ্রেচুলেশন স্যার! 

নির্ঝর আর কথা বাড়াল না। শুধু মুচকি হেসে বলল,
"ধন্যবাদ! 

দরকার ছিল না কোন কথা বাড়ানো। অর্ণব কে নিজের ছেলে হিসেবে মেনেই নিয়েছে সে। মেহুর প্রতি কোন অভিযোগ নেই। বরং মেহুর জন্য তার সম্মান বেড়ে গেছে। নিজের ভাবনা চিন্তার জন্য সে নিজেই লজ্জিত। কিন্তু এমন একটা পরিবার নিয়ে শুধু ১ বছর'ই হবে তার যাত্রা। হঠাৎ মাঝপথেই থেমে যাবে সবকিছু। তখন নির্ঝর ও আবার আগের মতো হয়ে যাবে। নিজের স্বাধীনতা নিয়ে থাকবে সে! এসব ভেবে ওপাশে তাকিয়ে দেখে মেহু আয়নায় লেহেঙ্গা হাতে দাঁড়িয়ে আছে। তার পাশে একটা মেয়ে তাকে হেল্প করছে। মেহু পেছনে ঘুরে নির্ঝরের দিকে তাকাতেই নির্ঝর ইশারায় বলল,

"সুন্দর! 
.
ফরহাদ, ঈশান আর আরিফ দৌড়াতে দৌড়াতে বেলকনিতে এসে দাঁড়িয়েছে। অনেক কষ্ট করে দরজা আটকানোর চেষ্টা করেছে। কিন্তু আটকানোর সময় দরজার মাঝে হকি স্টিক রেখে দিল। তারা কোনোমতেই দরজা আটকাতে সক্ষম হলো না। দরজা ছেড়ে দিয়ে তিন কোনাই দাঁড়াল তিনজন! 

নির্ঝর বাঁকা হেসে হকি স্টিক টা কাঁধে নাই বলল,
"তোদের পাঁচ হাজার টাকা দিতে এসেছি আর তোরা দেখছি পালিয়ে যাচ্ছিস।

ঈশান বলে উঠে,
"আরে ইয়ার, আমরা তো তোর হেল্প করছিলাম।

"তাই তো নির্ঝর! এতো কিছু করলাম যাতে ভাবির সাথে তুই সময় কাটাতে পারিস।

"তোর কি মনে হয় না তোর আমাদের ট্রিট দেওয়া উচিত!

নির্ঝর তিন জনের দিকে তাকাল।মাথা নাড়িয়ে বলল,
"ট্রিট! হ্যাঁ সেটা তো তোদের দিতেই হবে। 

বলেই হকি স্টিক নিয়ে মারতে লাগল তাদের। তিন জন'ই দৌড়াতে লাগল, বেশ মারামারি চলছে। তিন'জনকেই মারছে নির্ঝর। 
.
মেহেরিন সোফায় বসে কাছ করছে, নিচে অর্ণব আঁকছে। আকাঁ শেষ করে, অর্ণব উঠে এলো মেহেরিন'র কাছে। মেহেরিন কোলটুকু দখল করে কাগজ টা মেহেরিন'র হাতে দিল। মেহেরিন চোখ বুলিয়ে দেখে ছবিতে তিন জনকে দেখা যাচ্ছে। মেহেরিন'র ধারনা এটা মেহেরিন নির্ঝর আর অর্ণব। মেহেরিন কিঞ্চিত হেসে অর্ণব কে জিজ্ঞেস করল,

"এরা কারা অর্ণব! 

অর্ণব হাত দিয়ে দেখাল,
"মাম্মি, অর্ণ আর ড্যাডি!

মেহেরিন মুচকি হেসে অর্ণব'কে জরিয়ে বলে,
"তাই! 

অর্ণব হেসে মাথা নাড়ায়। মেহেরিন তাকিয়ে দেখে ছবিটায়। মাঝখানে অর্ণব! এর একপাশে নির্ঝর আরেকপাশে মেহেরিন। দু'জনের হাত ধরে হেঁটে যাচ্ছে অর্ণব। মেহেরিন একটা চাপা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। ভাবছে, কতোটা সহজে আপন করে নিয়েছে সে নির্ঝর কে। মিশতে পারছে,‌সবার সাথে পারবো তো। ধীরে ধীরে অর্ণব বড় হবে। তখন অন্যদের সাথে না মিশলে যে তাকে অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে। একা একা অর্ণব কিভাবে কি করবে। 

ভাবনার ছেদ ঘটল ফোনের রিংটোনে। মেহেরিন তাকিয়ে দেখে নির্ঝরের কল। অর্ণব নাম্বার দেখেই বলে উঠে,

"ড্যাডি, ড্যাডি। 

মেহেরিন ভ্রু কুঁচকালো। অর্ণব কি করে জানে এটা নির্ঝরের কল। নাকি এইভাবে বলল। এসব নিয়ে বেশি কিছু ভাবল না। মেহেরিন কল টা ধরতেই ওপাশ থেকে নীলিমা'র স্বর ভেসে উঠলো। নীলিমার কন্ঠ অনেকটা অস্থির লাগছিলো তার কাছে। মেহেরিন কি হয়েছে জিজ্ঞেস করতেই নীলিমা একদমে সবটা বলল। মেহেরিন সব টা শুনে শান্ত গলায় বলল,

"আমি আসছি! 

অর্ণব মেহেরিন'র মুখের দিকে তাকিয়ে রইল। মেহেরিন অর্ণবের কপালে চুমু খেয়ে বলল,
"অর্ণ সোনা তুমি বাসায় থাকো। মাম্মি কাজ শেষ করে খুব জলদি চলে আসবো ঠিক আছে। 

অর্ণব বাধ্য ছেলের মতো মাথা নাড়াল। মেহেরিন মিস মারিয়া কে ডেকে অর্ণবকে দেখতে বলল। অতঃপর গাড়ির চাবি নিয়ে বের হয়ে গেল। ছোট্ট অর্ণব মেহেরিন'র  যাবার দিকে তাকিয়ে রইল।
.
মেহেরিন দাঁড়িয়ে আছে নির্ঝরের বেডরুমে। এর আগেও একবার এসেছিল এই রুমে, এনগেজমেন্ট'র দিন! এরপর আজ এই প্রথম বার। তার সামনে বিছনায় আধশোয়া অবস্থায় বসে আছে নির্ঝর। তার হাত ব্যান্ডেজ করা। গুরুত্বর আঘাত পেয়েছে। পাবার'ই কথা! সিঁড়ি থেকে পড়ে গেল ব্যাথা পাবে তা স্বাভাবিক। কিন্তু একইভাবে যদি চারজন পরে যায় আর তিনজন যদি একজনের উপর পড়ে তাহলে গুরুতর ব্যাথা পাওয়া স্বাভাবিক। আর এই কান্ড করেছে নির্ঝর! হাতে আঘাত পেয়েছে, হাতের কনুই অবদি ব্যান্ডেজ করা। বাকিরাও আছে। তারাও চোট পেয়েছে। মেহেরিন ভ্রু কুঁচকে তাদের দিকেই তাকিয়ে আছে। নির্ঝর মাথা নিচু করে একটু পর পর চোখ তুলে তাকাচ্ছে। নিজেকে আসামি মনে হচ্ছে তার। মেহুর চোখের চাহনি মোটেও ঠিক লাগছে না তার। 
এদিকে মেহেরিন ভাবছে তারা পড়লো কিভাবে, বাচ্চা নাকি। এতো বড় বড় ছেলে হয়ে কি না এভাবে পড়ে গেল। এর সাথে কিনা অর্ণব থাকবে আর কয়েকদিন পর। কি হবে তখন...? ভাবতেই মেহেরিন'র মাথা ধরে যাচ্ছে। সে তাদের থেকে চোখ সরিয়ে রিদুয়ান'র দিকে মুখ ঘুরল। জিজ্ঞেস করল,

"ডাক্তার কি বলেছে? 

"বলেছে কয়েকদিন রেস্ট এ থাকতে। হাতের নড়াচড়া একদম বন্ধ! 

"ওহ আচ্ছা! তা কদিন?

"দেড় মাস!

"ওহ!

রিদুয়ান কিছুটা সংকোচ এ বলেন,
"মেহেরিন বলছিলাম কি?

"হুহ!

"বিয়ের ডেট টা পিছিয়ে নিলে কেমন হয়, আসলে নির্ঝরের সাড়তে তো সময় লাগবে। 

মেহেরিন চুপ হয়ে নির্ঝরের দিকে ঘুরল। নির্ঝর তাকিয়ে আছে এবার মেহেরিন'র দিকে। মেহেরিন শান্ত গলায় বলে উঠে,
"না! বিয়ের তারিখ যেদিন ছিল সেদিনই হবে। 

নীলিমা অবাক হয়ে বলে,
"নির্ঝরের এই অবস্থায়!

"বিয়ের কার্ড ছাপা হয়ে গেছে।

"কিন্তু দেওয়া তো হয় নি, গেস্টদের দেবার আগেই ডেট চেঞ্জ করলেই তো হয়।

মেহেরিন এবার শক্ত গলায় বলল,
"না বিয়ে যেদিন হবে বলেছিলাম সেদিন'ই হবে। 

নির্ঝর বলে উঠে,
"আমি এই ভাঙ্গা হাত নিয়ে বিয়ে করবো?

"কবুল বলবেন তো মুখ দিয়ে, হাতের দরকার কি?

"তাই বলে নিজের বিয়েতে কি নাচতেও পারবো না।

মেহেরিন নির্ঝরের চোঁখের দিকে তাকিয়ে বলে,
"হাঁটতে গিয়েই এই অবস্থা, নাচানাচি করে আর হাত পা ভাঙ্গার দরকার নেই! 

বলেই বের হয়ে গেল রুম থেকে। নীলিমা একটু নারাজ হলো। সে কিছু বলতে নিবে তার আগেই রিদুয়ান থামিয়ে দিল। বলে উঠে,

"মেহেরিন কথাটা ভুল বলে নি।

*তুমি এখন ওর সার্পোট টানছ, দেখছ না আমার ছেলেটার কি অবস্থা?

"আমি সার্পোট টানছি না‌। তোমরা হয়তো বুঝতে পারছো না, বিয়ের কথা টা মিডিয়ায় ছড়িয়ে গেছে। খান দের যেমন একটা রেসপেক্ট আছে তেমন চৌধুরীদেরও। এখন বিয়ের তারিখ বদলালে অনেক সমস্যা হবে। তাই দরকার নেই এসবের।

নির্ঝর বলে উঠে,
"কিন্তু ড্যাড?

"আর কোন কথা না নির্ঝর, যা বলেছি তাই!

নীলিমা উঠে রাগে বের হয়ে যায়। তার পিছু পিছু বের হয় রিদুয়ান। ঈশান হেসে বলে,

"কাহিনী কি হলো, ভাবি তো দেখছি ডেট পিছুতে চাইছে না।

আরিফ হেসে বলে,
"শেষমেষ ভাঙা হাত নিয়ে বিয়ে করতে যাবি নির্ঝর!

ফরহাদ বলে উঠে,
"বিয়েতে মেয়েদের পিছনে ফ্লাটিং করা শেষ তোর! 

নির্ঝর রেগে সব গুলোকে লাথি মেরে বিছানা থেকে সরায়। শুয়ে পড়ে বিছানায়, ভাবছে..

"এই মেয়ের মাথায় নির্ঘাত কিছু আছে। কোন কারন ছাড়া কিছু করে না এই মেয়ে। কিন্তু কি সেই কারণ? কি আছে এই তারিখে! 
.
চাঁদের আলো আজ দেখা যাচ্ছে না। কে জানে চাঁদ কোথায় লুকিয়ে গেছে। বেশ গরম পড়ছে ইদানিং। বৈশাখ তো চলে এলো তবুও কেন বৃষ্টি হচ্ছে না মেহেরিন জানে না। বৃষ্টির প্রকোপে গরম কিছুটা হলেও কমতো।অর্ণব ঘুমিয়েছে অনেকক্ষণ। আজও ঘুম আসবে না মেহেরিন'র। ঘর পুরো অন্ধকার, টেবিলের কাছে ল্যাম্পশেডের বাতিটা জ্বলছে শুধু। মেহেরিন একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে টেবিলের ডয়ার খু্ললো। একটা কার্ড এলো তার হাতে। তারিখে বড় বড় করে লেখা ২৭ই বৈশাখ! হ্যাঁ এই দিনেই তার আর নির্ঝরের বিয়ে কিন্তু এটা তারও আগে লেখা। কোন এক বিশেষ কারণে লিখেছিল সে। 

কার্ডের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে মেহেরিন'র কাছে মনে হলো কেউ কথা বলছে। মেহেরিন আশপাশ তাকাল। পুরো ঘর এখন আলোকিত,‌বিছানায় অর্ণব নেই। কারো গলার স্বর তার কানে বাজছে। তার গলার স্বরে মেহেরিন'র শরীর শিউরে উঠলো। মেহেরিন নিজেকে নিজে'ই দেখল। সে দেখছে তার সামনে কেউ দৌড়িয়ে এই ঘরে এলো। পেছন পেছন একজন আসছে আর বলছে,

"মেহেরিন! মেহেরিন দাঁড়াও! 

কিন্তু সে দাঁড়াচ্ছে না। খিলখিলিয়ে হাসছে সে। মেহেরিন দু চোখ ভরে সেই হাসি দেখছে। এই হাসি টা ছিল ভালোবাসার হাসি। কোন খুদ ছিল না এই হাসিতে। কোন একজন কে দেখে তার মুখ লজ্জায় লাল হয়ে যাচ্ছে। মেহেরিন পিছনে তাকিয়ে দেখল কেউ একজন ঘরে প্রবেশ করেছে। ঘরে ঢুকেই দরজা বন্ধ করে দিল সে। মেহেরিন তাকে দেখে আসছে। সে হেসে বলে,

"হুম! এবার কোথায় পালাবে মেহেরিন! 

মেহেরিন হেসে বলে,
"আমাকে ধরে দেখাও আগে! 

বলেই মেহেরিন দৌড়াতে থাকে। সেও তার পিছন পিছন দৌড়ায়। দুজনে পুরো ঘর জুড়ে দৌড়িয়ে যাচ্ছে। মেহেরিন কার্ড টা শক্ত করে ধরে দেখছে দুজনকে। তার চোখের কোনে জল জমতে শুরু করেছে। এক পর্যায়ে সে ধরে ফেলল মেহেরিন কে। দুই বাহু দিয়ে আঁকড়ে ধরল মেহেরিন কে। তার থিতুনি রাখল মেহেরিন'র ঘাড়ে। কানে কানে ফিসফিসিয়ে বলল,

"ভালোবাসি তোমায়, অনেক ভালোবাসি! 

মেহেরিন লজ্জায় লাল হয়ে গেল।‌ মাথা নিচু করে নিল সে!...
এসব দেখে মেহেরিন'র এখন কান্না পাচ্ছে। খুব কান্না পাচ্ছে। কিন্তু সে কাঁদবে না। কোনমতে কাঁদবে। কেন কাঁদবে কার জন্য কাঁদবে। এমন একটা অমানুষের জন্য! মেহেরিন চোখ বন্ধ করে মুখ ঘুরিয়ে নিল। ওমনি সব কিছু হারিয়ে গেল। আর কারো হাসির শব্দ শুনতে পাচ্ছে না মেহেরিন। সামনে তাকিয়ে দেখে সব হারিয়ে গেছে ধোঁয়াশার মাঝে।‌ কিছু নেই আশপাশ। শুধু অন্ধকার! এই আঁধারের মাঝেই তার অতীত যেন তলিয়ে গেছে।‌ মেহেরিন স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে রইল।‌ পর্দা ভেজ করে শীতল বাতাস এসে স্পর্শ করল তাকে। চোখ বন্ধ করে নিল মেহেরিন। এক ফোঁটা নোনা জল গড়িয়ে পড়ল চোখের কার্নিশ বেয়ে। মেহেরিন'র মনে হলো সে হেরে গেছে। অতীতের কাছে হেরে গেছে সে। সে বলেছিল সে কাঁদবে না কিন্তু তার চোখের অশ্রু বেইমানি করল তার সাথে। কাঁদিয়ে ছাড়ল তাকে। কেন এতো বিরহ! কি আছে এতো বিরহের মাঝে। কেন ভালোবাসে মানুষ? শুধুই কি কষ্ট পেতে।‌ কি জানি! আজ পর্যন্ত আমি যা পেয়েছে তা শুধুই কষ্ট। ভালোবেসে একের একের পর এক কষ্ট। এখন তো ভালবাসতেও ভয় হয় আমার। কাকে ভালোবাসব? নিজের চোখের অশ্রু যেভাবে বেইমানি করে তখন আর কোন মানুষের উপর বিশ্বাস কর! 

কথা গুলো বরাবর বাজছে মেহেরিন'র মনে। সে এক পা এক পা করে এগিয়ে এলো বেলকনির দিকে। আহ্ চারদিক কি অন্ধকার। সব কিছু মনে হচ্ছে মিলিয়ে গেছে এই আঁধারে। রাতের চাঁদ টাকেও হারিয়ে ফেলল এই অন্ধকার। অন্ধকার আছে বলেই আলোর এতো দাম! কিন্তু এই অন্ধকারকে কেউ দাম দিচ্ছে না। তুচ্ছ মনে করে সবাই! একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে চোখের অশ্রু মুছে ফেলল মেহেরিন।

#চলবে....
[+] 3 users Like Manjarul Haque's post
Like Reply




Users browsing this thread: 3 Guest(s)