Thread Rating:
  • 12 Vote(s) - 2.92 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Romance প্রথম_প্রেম_৩
#1
পর্ব-০১


(যারা সিজন ১.২ পড়েননি তারা সিজন ৩ পড়তে পারেন।)

আমি কখনোই তোমাকে নিজের ওয়াইফ হিসেবে মানতে পারবোনা আফরা।তোমার মতো থার্ডক্লাস একটা মেয়ে আমার ওয়াইফ ভাবতেই বিরক্ত লাগে আমার।

আপনি এভাবে কথাটা বলতে পারলেন ।হয়ত আপনার মতো সোনার চামচ মুৃখে নিয়ে জন্মায়নি তাই বলে আমাকে এভাবে অপমান করার অধিকারও কিন্তু আপনাকে দেয়নি। সো নেক্সটটাইম থেকে কিছু বললে ভেবেচিন্তে বলবেন।

জাস্ট সাট আপ ডাফার। একে তো উড়ে এসে জুড়ে বসেছে আবার বড় বড় কথা।

কথাগুলো বলেই পাশে থাকা টেবিলে জোরে একটা লাথি মেরে বেরিয়ে যায় নিবির। মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়ে আফরা। রোজ রোজ এত অশান্তি আর তার ভালোলাগেনা।
আফরা ছিল নিবিরের বাবার বন্ধুর মেয়ে।আফরা মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে হলেও নিবিরের বাড়ির লোকেরা কখনো তাকে সে নজরে দেখেনি।পরিবারের চাপে নিবির আফরাকে বিয়ে করতে বাধ্য হয়েছিল।তবে নিবির যে আফরাকে কখনো মেনে নিবে না এটা আফরা ভালোমতোই জানে।কারণ নিবিরের জীবনে যে অন্যকেউ আছে।

আফরা আর কান্নাকাটি না করে রুম থেকে বেড়িয়ে গেলো।

___________

আফরা সরাসরি রান্নাঘরে চলে যায়।ওখানের নিবিরের মা রান্না করছিলেন।আফরাকে দেখে উনি বললেন

" নিবির আবার কিছু বলেছে তাইনা।আমার ছেলের ব্যবহারে আমারই লজ্জা লাগে আজকাল।মন খারাপ করোনা আফরা।একটু সময় দাও সব ঠিক হয়ে যাবে।"

আফরা চুপচাপ কথা গুলো শোনে।কোনো প্রতিত্তর করে না।নিবিরের মায়ের কিছু কাজে সাহায্য করে রুমে ফিরে আসে সে।দুপুর হয়ে যাওয়ায় গোসলে চলে যায় সে।

কিছুক্ষণ পর নিবির রুমপ আসে।রুমে এসেই সে কিছু একটা খুঁজতে লাগে।হঠাতই তার চোখ পরে তার সামনে দাড়িয়ে থাকা আফরার দিকে।মেয়েটাকে প্রচন্ড মায়াবী লাগছিল।চোখর পাপড়িতে বিন্দু বিন্দু পানি জমে ছিল।চুল থেকে টপটপ করে পানি পরছিল।একদম স্নিগ্ধ লাগছিল আফরাকে।এই মেয়েটা যে এতটা রুপবতী তা জানা ছিল না নিবিরের।
নিবিরকে পাশ কাটিয়ে আফরা বাইরে চলে গেলেও নিবির এখনো একটা ঘোরের মাঝেই আছে।আফরা বাইরে থেকে এসে নিবিরকে এভাবে দাড়িয়ে থাকতে দেখে বপশ অবাক হয়।অনেকবার নিবিরকে ডাকলেও নিবির সাড়া দেয় না।আফরা নিবিরের দিকে একটু এগিয়ে গেলেই আফরার চুলের কিছু পানি নিবিরের গাঁয়ে পড়তেই নিবির বলে উঠে

"এই মেয়ে এখানে কী তোমার।যদি ভেবে থাকো যে তোমার এই রুপ দিয়ে আমাকে বশ করবে তাহলে ভুল ভাবছ।"

কথাগুলো বলে আবারও রুম থেকে বেড়িয়ে গেলো নিবির।সবকিছুই যেন আফরার মাথার ওপর দিয়ে গেলো।আফরা বুঝে উঠতে পারেনা এই লোকটা এত অদ্ভুত কেন।

অজান্তেই হেসে ওঠে উঠে আফরা।এই রহস্যময় মানুষটার সাথে সারাজীবন কাটাতে হবে ভেবেই হেসে উঠে।

___________

বিকেলে চুপচাপ বসে বসে হূমায়ন আহমেদের "নবনী"বইটা পড়ছিল আফরা।নিবির বসে বসে ল্যাপটপে কিছু কাজ করছিল। নিবির একজন ডক্টর।
কাজ করতে করতে আঁড় চোখে তাকাচ্ছিলো নিবির আফরার দিকে।
একটু সিরিয়াস ভাবে নিবির বলল

"বিয়ে হয়ে গেছে বলে কী আপনার পড়াশোনা লাটে উঠেছে মিস আফরা।"

আফরা কিছুক্ষণ নিবিরের দিকে তাকিয়ে বলল

"এক্সকিউস মি মি. ওটা মিস না মিসেস আফরা হবে।আপনি আমায় বউ হিসেবে মানেন আর না মানেন।দুনিয়া কিন্তু মানে।"

নিবির এবার ভ্রু কুঁচকে আফরার দিকে তাকিয়ে বলল

"ফালতু কথা তো খুব বলতে পারো।কাজের কথা বলতে পারোনা।আমার জানা মতে তোমার মেডিকেলে পড়ার শখ ছিল।তো এখন এডমিশনের প্রিপারেশন না নিয়ে সংসার করায় মন দিচ্ছো নাকি।"

এবার আফরা কিছুটা চুপ হয়ে গেলো।মেডিকেলে পড়ার শখটা বরাবরই ছিল আফরার।তবে বিয়ের পর এ বাড়িতে আসার পর কাউকে এ ব্যাপারে বলে উঠার সাহস পায়নি সে।
আফরার মৌনতার কারণ কিছুটা হলেও আন্দাজ করতে পারে নিবির।সে বলে

"কাল তোমকে একটা কোচিং সেন্টারে ভর্তি করিয়ে দিবো।আর এখন সংসার ছেড়ে পড়াশোনায় মন দিবে।তোমাকে নিজের একটা ভালো পজিশন পেতে হবে।মাথায় রেখো কথাটা।"

"হুম।যেন আপনাকে একটা থার্ড ক্লাস মেয়েকে নিজের ওয়াইফ বলে পরিচয় না দিতে হয়।"

"তোমার কী মনে হয়না আফরা তুমি একটু বেশি বোঝো সবকিছু।"

আফরা আর কোনো কথা না বলে আবারও বই পড়ায় মন দেয়।নিবিরের এই ছোট ছোট কেয়ারগুলো খুব ভালো লাগে আফরার।

_____________

 অনেক রাত হয়ে গেলেও আসার নাম নেই নিবিরের।আফরা সেই কখন থেকে নিবিরের জন্য অপেক্ষা করছে।দেরি হলে একবার ফোন করে বলে দিতে তো পারে যে আজ লেট হবে।এই লোকটা যে এত কেয়ারলেস কেন তা জানা নেই আফরার।

আফরার মনে খুব অদ্ভুত একটা খেয়াল এলো।কিছুদিন আগে নিবিরের হাতে একটা ডাইরি দেখেছিল।ভুলবশত নিবিরের হাত থেকে ডাইরির ভিতর থেকে একটা ছবি পরে গিয়েছিল।আফরা ছবিটা দেখতে চাইলে নিবির প্রচন্ড রেগে যায়।

আফরার মনে সেই ছবিটা দেখার কৌতুহল যেন যায় না।আফরা আজ ঠিকই করে নেয় সে ডাইরি খুলে সেই ছবিটা দেখবেই।

কথা মতো কাজের জন্য আফরা নিবিরের টেবিল থেকে ডাইরিটা নিয়ে আসে।খুব সাবধানে ডাইরিটা খোলে আফরা।কিন্তু ডাইরিতে যা দেখে তার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিল না আফরা।ছবিটা দেখা মাত্র আফরার বুকের ধুকপানি কয়েকগুন বেড়ে যায়।আফরা যেন নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছেনা।আফরা কাঁপা কা্পা হাতে ছবিটা তুলে ধরল।তখনই নিবিরের গাড়ির আওয়াজ পেয়ে আফরা দ্রুত ডাইরিটা আবার আগের মতো করে রেখে।দরজা খুলে দিতে গেলো।

" এতরাতে আফরাকে জেগে থাকতে দেখে বিন্দুমাত্রও অবাক হলোনা নিবির।মেয়েটা যে কেমন তা এই কয়দিনে বেশ ভালোই বুঝে গেছে।"
নিবির আফরার দিকে তাকিয়ে বলল

"খাবার তো খাওনি অবশ্যই।আমি ফ্রেশ হয়ে আসি তুমি খাবার রেডি কর।"

কথাগুলো বলেই রুমে চলে গেলো নিবির।আফরাও চুপচাপ খাবার গরম করতে গেলো আফরা।

খাবার টেবিলে চুপচাপ খাচ্ছিল দুজন।তখনই নিবির আফরাকে বলে

"এখনো কী মনে পড়ে তাকে।"

খাওয়া বন্ধ হয়ে যায় আফরার।অবাক নয়নে নিবিরের দিকে তাকিয়ে বলে

" আমাদের জীবনে কিছু মানুষ থাকে।যাদের কখনে ভোলা যায়না।কিন্তু তাদের মনে করাটাও উচিত না।
আর কখনে এ ব্যাপারে প্রশ্ন না করলে খুশি থাকবো।"

কথাগুলো বলে খাওয়া ছেড়ে উঠে যায় আফরা।নিবিরও চুপচাপ বসে থাকে।তার মুখে অসহায়ত্বের চাপ।কিছুটা অপরাধবোধও কাজ করছে নিবিরের মাঝে।

__________

সকাল সকাল আফরাকে তৈরি হতে বলে গাড়ি নিয়ে বেড়িয়ে যায় নিবির।নিবির আজ আফরাকে কোচিং সেন্টারে ভর্তি করাবে বলে ঠিক করেছে।

অনেকক্ষণ করে আফরা তৈরি হয়ে বসে আছে।কিন্তগ নিবিরের আসার নামই নেই।আফরার প্রচন্ড বিরক্ত লাগছিল।আফরা নিবিরের মায়ের দিকে তাকিয়ে বলে

" আচ্ছা মামনি বলো তো তোমাদের মতো এত ভালোমানুষদের পরিবারে এমন একটা রাক্ষস জন্মালো কেমন করে।আচ্ছা তোমার ছেলে হওয়ার আগে তুমি কী রাক্ষসের গল্প খুব পড়তে,,,,

কথাগুলো বলতে গিয়েও থেমে যায় আফরা।নিবিরের মা মিটিমিটি হাসছে দেখে খটকা লাগে  আফরার।আফরা পিছনে তাকিয়ে দেখে নিবির দরজার সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
আফরা নিবিরকে দেখা মাত্রই লাফিয়ে ওঠে।ওকে যে এখন কেউ বাঁচাতে পারবেনা তা ভালোমতোই বুঝেছে।

নিবির রাগী চোখে আফরার দিকেকে তাকিয়ে বলে

"লেট হচ্ছে,বাইরে আসো, কুইক।"

,,,,,  

আফরা ভয়ে ভয়ে বাইরে এসে দেখে নিবির গাড়ির কাছে দাঁড়িয়ে ফোনে কথা বলছে।আফরা চুপচাপ গাড়ির কাছে দাঁড়িয়ে নখ কামড়াচ্ছিল।

নিবির কথা শেষ করে আফরার দিকে তাকিয়ে বলে

" নখ কামড়াচ্ছো কেন ডাফার।বাচ্চারাও এত নখ কামড়ায় না।
তাকিয়ে না থেকে গাড়িতে ওঠো।"

আফরা ভয়ে ভয়ে গাড়িতে উঠে বসে।নিবির ও গাড়িতে উঠে বসে। তারপর আফরাকে উদ্দেশ্য করে বলে

" তুমি যদি ভেবে থাকো আমি রোমান্টিক ভাবে তোমার সিটবেল্ট বেধে দিবো তাহলে ভুল ভাবছে।জলদি সিটবেল্টটা বেঁধে নেও।"

আফরা রাগী দৃষ্টিতে নিবিরের দিকে তাকিয়ে সিটবেল্ট বেঁধে নিলো।

বেশকিছু সময় পর তারা কোচিং সেন্টারে এসে উপস্থিত হলো।ভর্তির সবকিছু ঠিকঠাক করে বাইরে আসে তারা।

রাস্তার কাছাকাছি আসতেই আফরা জেদ ধরে  আইসক্রিম খাবে।আফরার এমন আবদারে সরাসরি না করে দেয় নিবির।
আফরা আবার ও বলে

"দেখুন আপনার কাছ থেকে কিন্তু এই ফাস্ট একটা জিনিস চাইলাম।তাও দিলেন না।"

নিবির প্রচন্ড বিরক্তিতে ভ্রু কুঁচকে বলল 

"সব সময় এত জেদ ভালোনা আফরা।চুপচাপ গাড়িতে গিয়ে বসো।এখন আইসক্রিম খেলে ঠান্ডা লাগবে।"

আফরা চুপচাপ গাড়ির দিকে অগ্রসর হলে সামনে এমন একজনকে দেখে যাতে তার পুরো দুনিয়া থমকে যায়।তবে কী সেই অতীত এখনো তার পিছু ছাড়েনি।

চলবে
[+] 1 user Likes Manjarul Haque's post
Like Reply
Do not mention / post any under age /rape content. If found Please use REPORT button.
#2
পর্ব-০২ 


"প্রহর"

অস্ফূষ্ট স্বরে নামটি উচ্চারণ করতেই মাটিয়ে লুটিয়ে পড়ল আফরা।নিবির দ্রুত দৌড়ে আফরার কাছে এলো।হঠাত এভাবে আফরার জ্ঞান হারানোর কারণ খুঁজে পেলো না নিবির।
আফরাকে নিয়ে বাসায় চলে এলো নিবির।

আফরাকে এমন অবস্থায় দেখে প্রচন্ড বিচলিত হয়ে উঠল নিবিরের মা।
নিবির অনেক চেষ্টার পর আফরার জ্ঞান ফেরাতে সক্ষম হলো।

কেউ কোনো প্রশ্ন করল না আফরাকে।আফরাকে রেস্ট নিতে বলে বাইরে চলে যায় সবাই।

বাইরে আসতেই নিবিরের মা নিবিরকে বলে

"আজ রাহার ফোন এসেছিল। আমি ধরিনি ফোনটা।তোর বাবার ভয়ে।জানিনা আমার মেয়েটা কোথায় আছে।কেমন আছে। "

" তোমার মেয়ের ব্যাপারে  আর কোনো কথা আমি শুনতে চায়না মা।যে চলে গেছে তাকে ভুলে যাওয়াটাই ভালো।"

কথাগুলো বলেই বেলকনিতে চলে যায় নিবির।একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে আবারে সেই পুরোনো স্মৃতিতে ডুব দেয়।

একটা সময় ছিল যখন নিবির আফরাতে মগ্ন ছিল।আর আফরা ডুবে ছিল অন্যকারো মায়ায়।তবে তা যে ছলনার মায়া ছিল তা আন্দাজ করতে পারেনি আফরা।একটা সময় থেকে ধীরে ধীরে আফরাকে ভালোলাগতে শুরু করে নিবিরে।কখন যে নিবির পুরোপুরি আফরাতে মগ্ব হয়ে যায় তা জানা নেই নিবিরের।সে শুধু এটাই জানে যে এই মেয়েটাকে তার দরকার। প্রচন্ড দরকার।

নিবির চায় না আফরার অতীতে যেই মানুষটা ছিলো সেই মানুষটা আবার আফরার লাইফে ফিরে আসুক।
তার জন্য যা করা দরকার সব করতে প্রস্তুত নিবির।আফরাকে তার একান্তই নিজের করে চায়।
আর নিবিরের এই কাজটা যে তার বোনই এত সহজে করে দিবে তা জানা ছিল না তার।তবুও আজ নিবিরের মনে কোথাও একটা রাগ থেকেই গেছে আফরার প্রতি।তাই তো এখনে পিরোপুরি আপন করে নিতে পারেনি সে আফরাকে।

" নিবির"

কারো ডাকে পিছনে ফিরে তাকায় নিবির।পেছনের নিবিরের বাবাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বেশ অবাক হয় সে।নিবিরের বাবা কিছুকাজে দেশের বাইরে গিয়েছিলেন।হঠাত এভাবে সে ফিরে আসায় বেশ অবাক হয় নিবির।
নিবিরকে চুপ থাকতে দেখে নিবিরের বাবা বলে ওঠে

"কোনো প্রবলেম নিবির।তোমাকে চিন্তিত দেখাচ্ছে কেন।"

"না তেমন কোনো প্রবলেম নেই।তুমি হঠাতই ফিরে এলে যে।"

"হুম।কাজ শেষ হয়ে গেলো। চলে এলাম।"

"ওহ।চলো ভিতরে যায়। "

___________

দুপুরবেলা একটা জরুরি ফোন পেয়ে নিবির দ্রুত হসপিটালে চলে আসে।

সে দ্রুত তার কেবিনে বসে কিছু রিপোর্ট চেক করতে থাকে।নিবিরের মুখে ক্রমেই বিষন্নতা চেয়ে যায়।
নিবিরের এখন কী করা উচিত তা সে বুঝতে পারছেনা।তবে এটা সে ভালো মতোই বুঝতে পারছে যে তার সাথে আফরার জীবনটা জড়িয়ে গেলে আফরা কখনো খুশি থাকতে পারবেনা।

 নিবির দ্রুত হসপিটালের কাজ শেষ করে বাসায় চলে আসে।বাসায় এসে দেখে আফরা বিষন্ন মন নিয়ে চুপচাপ বসে আছে।নিবির ও গিয়ে চুপচাপ তার পাশে বসে। আর বললো

"এখনো তাকে খুব মনে পড়ে তাইনা।"

আফরা একপলক নিবিরের দিকে তাকিয়ে মাথা নিচু করে বলল

"যাদেরকে মনে রাখলে নিজে কষ্ট পাওয়ার চান্স থাকে, তাদের মনে না রাখাটাই উত্তম।
তবে জানেন তো কিছু মানুষকে মনে রাখা দরকার।তাদের কষ্টটা তাদের ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য হলেও তাদের মনে রাখা দরকার।"

" যদি কখনো তার কাছে ফিরে যাওয়ার সুযোগ পাও। তাহলে কী করবে আফরা।"

এমন শীতলকন্ঠে নিবিরের বলা কথাটা শুনে বেশ অবাক হয় আফরা। কিছুটা বিষন্নতা নিয়ে বলে

" আমি কখনোই তার কাছে ফিরে যাবোনা।যেই মানুষটা সেদিন আমার মূল্য বোঝেনি সে আজও আমার মূল্য বুঝবেনা।"

আফরাকে আর কোনো প্রশ্ন না করে নিবির চুপ করে রইল।আফরা কিছুটা হলেও আন্দাজ করতে পারলো যে নিবির কোনো কারণে আপসেট।কিছুসময় নিরবতার পর নিবির আবারও আফরাকে উদ্দেশ্য করে বলল

" সকালে তুমি এমন কাকে দেখেছিলে আফরা।"

মুহূর্তেয়য় চমকে উঠলো আফরা।মনে পড়ে গেলো প্রহরের মুখটা মনে পড়ল।কতটা ভালোবাসতো আফরা প্রহরকে।কিন্তু প্রথর তার ভালোবাসার মূল্য দেয়নি।ঠকিয়েছিল তাকে।

আফরাকে এমন ভাবনায় ডুবে থাকতে দেখে নিবির বলে

" এই যে চিন্তামণি এত না ভেবে ফ্রেশ হয়ে আসেন।আপনাকে নিয়ে আজ একটু বেড়োবো।আপনার মুডও ফ্রেশ হয়ে যাবে।"

বিন্দুমাত্র ও অবাক হয়না আফরা।কারণ ও জানে যে নিবির ক্ষণে ক্ষণে রং বদলাতে পারে।এখানে আর একমিনিট বসে থাকলে যে আফরা একটা রাম ধমক খাবে তা জানা আছে তার।তাই সে চুপচাপ উঠে ফ্রেশ হতে গেলো।

______________

নিবির আফরাকে নিয়ে একটা লেজের ধারে এলো।তবে এখানে এসে আফরার মনটা আরো খারাপ হয়ে গেলো।এই খানে যে প্রহরের সাথে অজস্র স্মৃতি জড়িয়ে আছে আফরার।তবুও সেসব ভুলে থাকার চেষ্টা করে সে।

আফরাকে এখনো চুপ থাকতে দেখে নিবির বলে

" চঞ্চল মেয়েগুলো হঠাত খুব বেশি শান্ত থাকলে ব্যাপারটা খুব ভয়ানক হয়।"

আফরা বিরক্তিতে ভ্রু কুঁচকে নিবিরের দিকে তাকাতেই নিবির আবারও বলল

" না মানে বলা তো যায়না মনে মনে আবার কাকে মেরে ফেলার প্ল্যান করছে।"

নিবিরের এমন কথায় বোকা বনে যায় আফরা।বুঝে উঠতে পারেনা তার এখন কী করা উচিত।কিন্তু মনে মনে আফরা প্রচন্ড রেগে যায়।রাগী দৃষ্টিতে নিবিরের দিকে তাকাতেই নিবির বলে

" আমি কিন্তু কোন পিচ্চির রাগকে ভয় পায়না।"

আফরার রাগ এবার সপ্তম আকাশে পৌঁছে যায়।চিতকার করে বলে ওঠে

" আমাকে আপনার পিচ্চি মনে হয়।"

" অবশ্যই।আমার থেকে পুরো নয় বছরের ছোট তুমি।আমার দুর্ভাগ্য যে আমার কপালে একটা বাচ্চা জুটেছে।"

"দু্র্ভাগ্য আপনার না আমার যে আমার কপালে একটা বুড়ো বর জুটেছে।"

" মানে ইনডিরেক্টলি তুমি আমাকে বুড়ো বললে।"

" না তো,,,আমি ডিরেক্টলি আপনাকে বুড়ো বললাম"

কথাগুলো বলে আনমনেই হেসে ওঠে আফরা।আফরার মুখের এ হাসি দেখে কিছুটা শান্তি পায় নিবির।তবুও সেই রিপোর্ট গুলোর চিন্তা রয়েই গেছে তার।

কিছুক্ষণ ঘোরাঘুরি করে ওরা বাড়ি ফিরে এলো।

___________

অন্যদিকে

একটা দেয়ালের পুরোটা জুড়েই আফরার ছবি লাগানো।তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে এক সুদর্শন পুরুষ।তার হাত কেটে রক্ত ধরছে সেদিকে তার কোনো খেয়াল নেই।সে এক ধ্যানে তাকিয়ে আছে আফরার ছবিগুলোর দিকে।আনমনে সে বলে বলে উঠল

" ডাক্তাররা তো পাষাণ হয়।তারা চোখের সামনে কত মানুষের মৃত্যু দেখে।তার তুমিও তোমার চোখের সামনে নিজের আপনজনদের মৃত্যুর মিছিল দেখবে।"
আমার থেকে আমার প্রয়সীকে কেড়ে নিয়েছে তুমি
তোমাকে তো আমি ভালো থাকতে দিবোনা।
দুরত্ব যখন তুমি তৈরি করেই দিয়েছো।তখন না হয় দূর থেকেই ভালোবাসবো আমার শুভ্রপরীকে।"

____________

ভোরের আলো চোখে পড়তেই ঘুম ভেঙে  যায় আফরার।আড়মোড়া ভেঙে উঠে নিবিরকে কোথাও দেখতে পায়না সে। ফ্রেশ হয়ে নিচে চলে যায় সে।সেখানেও নিবিরকে দেখতে পায়না। কাউকে নিবিরের ব্যাপারে জিঙ্গেস করবে কী না সে নিয়ে সংশয়ে পড়ে যায়।
আফরার অবস্থা বুঝতে পেরে নিবিরের মা আফরাকে বলে

" একটা ইমার্জেন্সি আসায় নিবির সকালেই হসপিটালে চলে গেছে।এত ভয় পাওয়ার মতে কিছু হয়নি।"

আফরা খানিকটা লজ্জা পেয়ে যায়।আফরা রান্নাঘরে গিয়ে নিবিরের মায়ের কিছুকাজে সাহায্য করে নিবিরের বাবার জন্য চা নিয়ে আসে।

আফরা নিবিরের বাবার সামনে চা দিয়ে বলে

" আংকেল তোমার চা।"

আফরার কথায় নিবিরের বাবা ওর দিকে গম্ভীরভাবে তাকিয়ে বলল

" তোমার থেকে আমি এটা আশা করিনি।"

নিবিরের বাবার কথায় আফরার মুখটা একদম শুকিয়ে যায়।বিয়ের পর এবাড়ির সাথে মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেছে।তবুও কী  কোথাও খামতি থেকে গেলো।
আফরাকে দেখে নিবিরের বাবা বলল 

"এর পর থেকে আমাকে আংকেল না বাবা বলবে।"

ব্যাপারটা বুঝতে পেরে মুচকি হাসে আফরা।

দুজনে টুকটাক কথা বলছিল তখনই দরজায় বেল বাজলে আফরা দরজা খুলে দেয়।আফরার নামে একটা পার্সেল এসেছে।আফরা পার্সেলটা নিয়ে রুমে যায়।

আফরা কৌতুহল দমাতে না পেরে দ্রুত পার্সেলটা খুলে ফেললো।পার্সেলের ভেতরের কাগজটা দেখে আফরার পুরো দুনিয়া উল্টে গেলো।আফরার চোখগুলো ঝাপসা হয়ে গেলো।আফরার চোখ দিয়ে দুফোটা জল গড়িয়ে পড়ে।অনমনেই বলে ওঠে

"ডিভোর্স পেপার।"

চলবে,,,,,,

( যারা পড়বেন তারা রেসপন্স করবেন প্লিজ। এবার রেসপন্সের ওপর গল্পের এন্ডিং নির্ভর করবে।)


পর্ব-০৩


কাঁপা কাঁপা হাতে ডিভোর্স পেপারস গুলো তুলে ধরল আফরা।নিজের চোখকে যেন বিশ্বাস হচ্ছেনা তার।নিবির যদি ডিভোর্সই চাইত সেটা তো সরাসরি আফরাকে বলে দিতে পারত।এভাবে কাগজটা পাঠানোর কারণ খুজে পেলো না আফরা।তারপর আবার সেখানে নিবিরের সাইনও আছে।

আফরা কাগজগুলো হাতে নিয়ে চুপচাপ বসে ছিল তখনই রুমে আসে নিবির। রুমে ঢুকতে ঢুকতে বলে

" তৈরি হয়ে নাও,আফরা।তোমাকে কোচিংয়ে নামিয়ে দিয়ে আমি আবার হসপিটাল যাবো।"

আফরার কোনো রেসপন্স না পেয়ে নিবির আফরার দিকে এগিয়ে গিয়ে বলে

"আফরা।"

আফরা এবার মাথা তুলে তাকায়য় নিবিরের দিকে। কোনো কথা না বলে কাগজগুলো নিবিরের হাতে দিলো। নিবির কাগজগুলো দেখতেই চমকে উঠল।বিষ্ফোরিত নয়নে আফরার দিকে তাকালো সে।মেয়েটা কেঁদে কেঁদে একদম চোখমুখ লাল করে ফেলেছে।
নিবির কাগজ গুলো রেখে বলল

" বিলিভ নি আফরা।আমি এগুলো পাঠায়নি। আমি জানিনা এটা কে পাঠিয়েছে আর কেন পাঠিয়েছে।তবে একটা কথা মাথায় রেখো এত সহজে আমার থেকে মুক্তি পাবেনা তুমি"

আফরাকে এখনো নিরব থাকতে দেখে নিবির আবারও বলে

" এসব ফালতু চিন্তা মাথা থেকে বের করো আর জলদি তৈরি হয়ে নাও।লেট হচ্ছে।"

আফরা কোনো কথা না বলে চুপচাপ ড্রেস নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো।

নিবির আফরাকে কোচিংয়ের সামনে নামিয়ে দিয়ে হসপিটালে চলে গেলো।

____________

অন্যদিকে,

অন্ধকার ঘরে হাতে সিগারের নিয়ে বসে আছে একজন।সিগারেটটা ফেলে ফোন হাতে কাউকে ফোন করল সে

" আজকের মাঝেই কাজটা শেষ করা চাই আমার।"

কথাটা বলেই ফোনটা রেখে দিলো সে। মুখে তার রহস্যময়ী হাসি।সামনের দেয়ালে লাগানো আফরার ছবির দিকে তাকিয়ে বলল
" তুমি আমার না তো কারো না "

___________

কোচিং শেষে বাইরে এসে দাড়িয়েছে আফরা।নিবিরের নিতে আসার কথা ছিল।কিন্তু অনেকসময় চলে যাওয়ার পরও। নিবির আসেনা।আফরা কয়েকবার ফোন করে নিবিরকে, কিন্তু রিসিভ হয়না । রাস্তাটা আফরার চেনা বলে সে সামনের দিকে এগোতে থাকে। 

কিছুটা রাস্তা এগোনের পর আফরা নিবিরের গাড়ি দেখতে পায়।আফরা গাড়িতে উঠে আসার পর দেখে নিবিরের মাথায় ব্যান্ডেজ। উত্তেজিত হয়ে ওঠে সে।নিবিরের দিকে তাকাতেই নিবির বলে

"  ছোট একটা এসিডেন্ট হয়েছে।তেমন চিন্তার কিছু নেই। "

আফরা আরও বিচলিত হয়ে বলে

" আপনার একটু কেয়ারফুল হওয়া উচিতত ছিল।"

আফরার চোখগুলো ছলছল করছে।আফরার অবস্থা বুঝতে পারে নিবির।

" দেখো আফরা লাইফে এমন ছোট নড় অনেক সমস্যা আসবে দুর্ঘটনা ঘটবে।তাই বলে কী এভাবে ভেঙে পড়লে চলবে।জীবনে যতসমস্যাই আসুক না কেন নিজের লক্ষ্য থেকে সরে যাওয়া যাবেনা।" 

কথা ঘোরানোর জন্য নিবির আবারও বলে

"লিসেন আফরা,আজ থেকে তোমার স্নপ্ন পূরনের লড়াই শুরু হলো।প্রখম দিন থেকেই ভালোমতো মনোনিবেশ করবে এটাই।চারিদিকের জিনিসে মন কম দিবে।নিজের লক্ষ্যে অটল থাকবে।"

আফরা খুব মন দিয়ে নিবিরের কথাগুলো শুনলো কিন্তু কোনো প্রতিত্তর করলোনা।

বাসায় এসে থেকে আফরা নিবিরের সাথে একটাও কথা বলেনি।নিবিরও খানিকটা আন্দাজ করল ব্যাপারটা।আজকের এক্সিডেন্টটা যে শুধু একটা এক্সিডেন্ট ছিল না তা বেশ বুঝেছে নিবির। তবে সেই ডিভোর্স পেপারটা কে পাঠিয়েছিল এটাই মাথায় ঢুকছেনা তার।

দুপুরে নিবিরের খাবারটা রুমে নিয়ে আসে আফরা।নিবির খানিকটা বিরক্ত হলেও প্রকাশ করেনা।আফরার এই ছোট ছোট কেয়ারগুলো ভালো লাগে তার।
এই মানুষটাকেই তো সে সারাজীবন নিজের করে চেয়েছিল নিবির।তবুও যখন তারর মনে পড়ে আফরা অন্যকাউকে চেয়েছিল তখন না চাইতেও আফরাকে কষ্ট দিয়ে ফেলে সে।

দুপুরের খাবার খেয়ে রেস্ট নিচ্ছিল নিবির।অনেক্ষণ হলো আফরাকে দেখছে না।কোথায় গেলো মেয়েটা।
নিবির জানে আফরার মুড খারাপ।তাই নিবির আফরার মুড ঠিক করার জন্য কিছু করতে চাইল।নিবির বেশ কয়েকবার আফরাকে ডাকল।কিছুক্ষণ পর আফরা রুমে এলো। 
নিবির আফরাকে উদ্দেশ্য করে বলল

" টেবিলের ওপর একটা বই আছে নিয়ে আসো।"

আফরা  খানিকটা অবাক হয়ে ভ্রু কুঁচকে বলে

" বই দিয়ে কী হবে।"

" বই দিয়ে ফুটবল খেলবো ইডিয়েট।"

আফরা আর কোনো কথা না বলে বই নিয়ে আসে।নিবির বই থেকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ টপিক মার্ক করে আফরাকে পড়তে বসিয়ে দেয়।

__________

সন্ধ্যেবেলা নিবিরের জন্য কফি বানিয়ে নিয়ে আসে আফরা।নিবিরের বাবা মা আজ বাসায় নেই।অনেকক্ষন আগেই ছাঁদে গেছে নিবির।তাই আফরাও কফি নিয়ে ছাঁদে নিয়ে যায়। 

নিবিরের হাতে কফি দিয়ে আর পাশে দাঁড়িয়ে যায় আফরা।সন্ধ্যবেলার শীতল বাতাসে আফরার মনটাও ভালো হয়ে যায়।নিবির কফির কাপে চুমুক দিয়ে আফরার দিকে তাকায়।গোধূলির লাল আলো পড়েছে আফরার মুখে।সামনের চুলগুলো বাতাসে উড়ছে।মন্দ লাগছেনা দেখতে।ব্যাপারটা বেশ উপভোগ করল নিবির।
আফরার উদ্দেশ্য বলল

" আফরা।দিনশেষে কী কাউকে মিস করো।"

আফরা মুচকি হেসে জবাব দিল

" হুম।দিনশেষে  পুরোনো আমি টাকে খুব মিস করি। আবারো অনুভব করতে চাই আমার আমিটাকে।"

" সেই পুরোনো তুমিতে তো অন্যকেউ মিশে আছে, তাইনা।"

মুহূর্তেই আফরার মুখের হাসি গায়েব হয়ে গেলো।নিবির আবারও প্রশ্ন করল

" এখনো বুঝি খুব ভালোবাসো তাকে।"

আফরা নিবিরের প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে নিবিরকেই প্রশ্ন করে

" ভালেবাসতেন আমাকে? "

আফরার প্রশ্নে অবাক হয় নিবির।তবুও বলে

" তোমার মতো একটা  থার্ডক্লাস মেয়েকে আমি ভালোবাসবে ভাবলে কী করে।"

কথাগুলো বলেই চলে গেলো নিবি।আফরা আনমনে হেসে উঠল আর বলল " ভালোবাসবে অথচ প্রকাশ করবেনা।"

_____________

রাতের বেলা একটা ইমার্জেন্সি আসায় হসপিটালে চলে যায় নিবির।আফরা অনেকবার মানা করলেও নিবির শোনে না।আফরা এখন বাসায় একা।পড়াতেও মন বসছে না বলে,আফরা আলমারির কাপড় গোছাতে শুরু করে।হঠাতই আফরার হাত লেগে কিছু কাগজ পড়ে যায়। আফরা কাজগগুলো তুলে দেখে কিছু হসপিটালের কাগজ।আর রিপোর্ট গুলো নিবিরের নামে।বেশ অবাক হয় আফরা।রিপোর্টগুলে দেখে কিছু বোঝেনা আফরা।
সে এগুলো নিয়ে অনলাইনে সার্চ দেয় তারপরেও তেমন কিছু বোঝেনা।আফরা রিপোর্ট গুলোর কিছু ছবি তুলে রাখে।

তারপর রিপোর্ট গুলো আগের মতো রেখে দেয়।আফরা বেশ চিন্তিত রিপোর্ট গুলো নিয়ে।কী হয়েছে নিবিরের।আর রিপোর্টগুলে নিবির লুকিয়েই রেখেছিল কেন।

____________

অন্যদিকে ,

অন্ধকার রুমে চারিদিকে অসংখ্য কাচের টুকরো পরে আছে।ওখানে বসে থাকা লোকটার হাত কেটে রক্ত পড়ছে।প্রচন্ড রেগে আছে সে।সামনে থাকা লোকগুলোর উদ্দেশ্য চিতকার করে বলল

" একটা কাজও হয়না তোমাদের দারা।আজকের মাঝে যেভাবেই তোক ঔ নিবিরের লাশ আমার চাই।যে কোনো ভাবে। আমার থেকে আমার ভালেবাসাকে কেড়ে নিছে সে।তার থেকে তার প্রাণটাই কেড়ে নিবো আমি।"

___________

রাত প্রায় ১২ টা বাজে এখনো নিবিরের আসার নাম নেই।কখনো এত দেরি হলে নিবির বাসায় ফোন করে দেয়।কিন্তু আজ সে ফোন ও করেনি। আফরা বেশ কয়েকবার ফোন করেছিল নিবিরকে।নিবিরের ফোন বন্ধ দেখাচ্ছে। 
আফরার কেন জানি খুব টেনশন হচ্ছে।সকালের এমন একটা এক্সিডেন্ট আর এখনো নিবিরের বাড়ি না আসা নিয়ে খুব ভয়ে আছে সে।

আফরা নিবিরের হাসপাতালেও ফোন করে।সেখান থেকে বলে নিবির নাকি অনেকক্ষণ আগেই। হসপিটাল থেকে বেড়িয়ে গেছে। আফরার ভয় আরো কয়েকগুন বেড়ে যায়।টেনশনে মুখ চোখ শুকিয়ে গেছে মেয়েটার।কী করবে কিছু বুঝতে পারছেনা সে।

আফরা নিবিরের একটা বন্ধুকে ফোন দিয়ে নিবিরের কথা জানতে চায়।কিন্তু সে বলে নিবির নাকি বাসায় যাওয়ার জন্য বেড়িয়েছিলো।

আফরার টেনশন যেন দ্বিগুন হারে বেশি হয়ে যায়।হঠাতই আফরার ফোন বেজে উঠল।আফরা যা শুনল   তাতে তার পুরো পৃথিবী উল্টে গেলো।ফোনের ওপরপাশের লোকের বাকি কথাগুলো আর আফরার কানে ঢুকল না।তার আগেই,,,,,,

চলবে,,,,,
[+] 1 user Likes Manjarul Haque's post
Like Reply
#3
পর্ব-০৪


আফরার হাত থেকে ফোনটা পড়ে গেলো।অপর পাশের মানুষটার কথা তার কানে গেলোনা আফরার।তবে লোকটা যে প্রহর ছিল তাতে কোনো সন্দেহ নেই।কিন্তু প্রহর কী করে হবে।প্রহর তো চার ছমাস আগেই
মারা গেছে।

তাহলে কী প্রহর মারা যায়নি।তাহলে কী সবাই মিথ্যে বলেছিল। আফরা আবার পুরোনো স্মৃতিতে ডুব দিলো।সেদিন ছিলো আফরা আর প্রহরের বিয়ে। সারাদিন খুব ধুমধামে চলছিল তাদের বিয়ের প্রস্তুতি।সবাই খুব খুশি ছিল।
নিবিরের বাবার খুব শখ ছিল আফরাকে নিবিরের বউ করার।কিন্তু আফরা প্রহরকে ভালোবাসতো বলে সবাই রাজি হয়ে যায়। বিয়েতে সবাই উপস্থিত থাকলেও নিবির কাজের বাহানা দিয়ে বিয়েতে যায়নি।

সন্ধ্যেবেলা বিয়ের সব প্রস্তুতি শেষ হলেও দেখা মেলেনি প্রহরের।অনেক খোঁজ নিয়েও আর প্রহরকে পাওয়া যায়নি। তার কিছুদিন পরে একটা এক্সিডেন্টে প্রহর মারা গিয়েছিল।প্রচন্ড ভেঙে পড়েছিলে আফরা।তবুও তার বিশ্বাস ছিল যে নিবির মারা যায়নি।

তারপর কিছুদিন পর সবার ইচ্ছামতো নিবির আর আফরার বিয়ে দেওয়া হয়।নিবির প্রথমে অমত করলেও পরে রাজি হয়ে যায়।

আজ এতদিন পর আবারও প্রহরের গলা শুনে প্রচন্ড অবাক হয় আফরা।ওটা যে প্রহর ছিল তা নিয়ে তার বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই।তবে এখন এসব চিন্তা বাদ দিয়ে আফরা আবার নিবিরকে ফোন দেয়।কিন্তু কোনো রেসপন্স নেই।

দরজায় কলিংবেল বেজে ওঠায় আফরা দৌড়ে দরজা খুলতে চলে যায়।আফরার অপেক্ষার অবসান ঘটেছে।নিবির এসেছে।কিন্তু নিবিরকে প্রচন্ড বিদ্ধস্ত লাগছে।ওর মাথায় প্রচন্ড ব্লিডিং হচ্ছে।

আফরা প্রচন্ড ঘাবড়ে যায়। ও খুব সাবধানে নিবিরের মাথায় ব্যান্ডেজ করে দেয়।আর নিবিরকে জিঙ্গেস করে

" কোথায় ছিলেন আপনি।আর আপনার এই হাল কেন।আজ আমার সব প্রশ্নের উত্তর চায়।কার সাথে এত শত্রুতা আপনার।"

নিবির এবার মাথাতুলে আফরার দিকে তাকিয়ে বলে

" আজ তোমাকে কিছু কথা বলারর আছে।আজ তোমার সব সত্যিটা জানা উচিত আফরা।প্রহর মারা যায়নি।"

আফরা প্রচন্ড অবাক হয়।এসব কী বলছে নিবির।
নিবির আবারও বলতে শুরু করে

" তুমি রাহাকে চিনতে।"

" হুম।আপনার বোন ছিলনা।পালিয়ে বিয়ে করেছে বলে যার সাথে আপনাদের কোনো সম্পর্ক নেই।"

ভুল জানো তুমি আফরা।রাহা এই দুনিয়াতে নেই।অনেকদিম আগেই সে এই দুনিয়া ছেড়ে দিয়েছি।কথাটা বাবাও জানে।কিন্তু মাকে বলার সাহস হয়নি আমাদের কারোরই।"

নিবিরের কথাগুলো মাথার ওপর দিয়ে যাচ্ছে আফরার।ও অবাক হয়ে বলল

" সে কীভাবে মারা গেলো।"

" তোমার সাথে প্রহরের সম্পর্ক শুরুর অনেক আগে থেকেই প্রহরের সাথে রাহার সম্পর্ক ছিল।কিন্তু একটা সময় প্রহরের তোমাকে ভালোলেগে যায়।আর ও রাহাকে ইগনোর করতে থাকতে।রাহা এগুলো সহ্য করতে পারছিল না।"

কিছুটা সময় থেমে নিবির আবারও বলে

" প্রচন্ড ডিপ্রেশনে পড়ে গিয়েছিল মেয়েটা।রাহা একদিন সামনাসামনি প্রহরের সাথে কথা বলতে গিয়েছিল।কিন্তু প্রহর স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছিল যে ও শুধু তোমাকে ভালেবাসে।সেদিনই প্রহরের সামনেই আত্মহত্যা করেছিল আমার বোনটা।চারমাসের প্র্যাগনেন্ট ছিল রাহা।"

কথাগুলে শেষ করতে নিবিরের গলা কেপে উঠল।চোখ দিয়ে দুফোঁটা জল গড়িয়ে পড়ল।আফরা যেন এখনো নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছেনা।নিজেকে বড্ড অপরাধী মনে হচ্ছে তার।
কান্নামিশ্রত গলায় নিবিরকে বলল

" প্রহরেরর এক্সিডেন্ট! "

নিবির চোখতুলে আফরার দিকে তাকিয়ে বলল

" আমি করিয়েছিলাম।আমি চাইনি ওরকম একটা লোকের সাথে তোমার বিয়ে হোক।
তবে প্রহর মারা যায়নি।বেঁচে আছেও।আর এখনো ও তোমাকে নিজের করে চায়।"

" প্রহর এতদিন কোথায় ছিল।"

" এক্সিডেন্টের পর ও দেশের বাইরে চলে গিয়েছিল।কিছুদিন আগেই দেশে ফিরেছে।"

" আপনার এই এক্সিডেন্ট গুলো কী তবে সেই করাচ্ছে। "

" হয়তো,,,দেখো আফরা তোমাকে ভালোবাসতাম আমি।তাই চাইনি এরকম একটা লোকের সাথে তোমার বিয়ে হোক।কিন্তু আমি এখন চাচ্ছি যে তুমি প্রহরের কাছে ফিরে যাও।"

রীতিমতো নিবিরের কথায় চমকে ওঠে আফরা।বিচলিত হয়ে বলে

" যেই মানুষটাকে ভুলে যাওয়ার প্রাণপণ চেষ্টা করছি গত কয়েকমাস ধরে আর আপনি আবার তার কাছেই ফিরে যেতে বলছেন।ভালোবাসেন না আমাকে তাহলে কেন তা আগে প্রকাশ করেননি।"

" তোমাকে ভালোবাসতাম ঠিকই কিন্তু যখন মনে পড়ত যে তুমি অন্যকাউকে ভালোবাসো তখনই রাগটা মাথায় উঠে যেতে। "

" এখন কেন চান যে আমি প্রহরের কাছে ফিরে যায়।"

নিশ্চুপ হয়ে থাকে নিবির।কিছুসময় পর শান্তকন্ঠে বলে

" আমি কখনো বাবা হতে পারবোনা আফরা। আমি মা হওয়ার মতো এত সুন্দর একটা অনুভূতি হতে তোমাকে বঞ্চিত করতে চাই না।"

আফরা কোনো প্রতিত্তর না করে চুপচাপ বিছানায় বসে পড়ে।তারপর নিবিরের উদ্দেশ্য বলে

" দুনিয়াতে এমন কোনো মানুষ নেই যার কাছে দুনিয়ার সব সুখ আছে।সব মানুষেরই কিছু না কিছুর অভাব আছে।আমিও নাহয় থাকলাম একটু অভাবে।মাতৃত্বের সুখটা আমার কাছে না থাকুক আমার তো আপনি থাকবেন।"

____________

রাতের শীতল হাওয়ায় স্নিগ্ধ  হয়ে  যায় আফরার মন।কিছুক্ষন আগে নিবিরকে ঔষধ খায়িয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিয়েছে  আফরা।আফরার মাথায় এখনো নিবিরের কথাগুলোই ঘুরছে।প্রহর যদি রাহার সাথে রিলেশনে ছিল তখন আফরারকে কেন বিয়েয়ে করতে চাইছিল।আর ও দেশ ছেড়েই কেন চলে গিয়েছিল।আর এভাবে রাহার নিখোঁজ হয়ে যাওয়া নিয়ে কীকোনো প্রশ্ন করেনি কেউ।

হাজারো প্রশ্ন জট পাকিয়ে যাচ্ছে আফরার মাথায়।ও ঠিক করে নিয়েছে এবার প্রহরের সাথে দেখা করে ওর থেকে সবটা স্পষ্ট জানতে চাইবে।
নিবিরের ব্যাপারটাও আফরার কাছে ক্লিয়ার।কিন্তু আফরার নিজেকে রাহার মৃত্যুর জন্য দায়ী মনে হচ্ছে।সেখানে তো রাহার সাথে আরেকটা প্রাণও জড়িয়ে ছিলো।

_____________

অন্যদিকে সেই অজানা ব্যক্তি গুলি করে তার সামনে দাড়িয়ে থাকা দুটো মানুষকে মেরে ফেললো।চিতকার করে উঠল

" এসব লোক কোনো কাজের না।এদের দিয়ে কিছু হবেনা।যা করার আমাকেই করতে হবে।আমার প্রয়সীকে আমি নিজেই নিজের করে নেবো।
আফরা শুধু আমার। আমি ওকে অন্যকারো হতে দেবোনা।বাঁচতে দেবো না আমি ঐ নিবিরকে।যেভাবে তার বোনকে শেষ করেছি সেভাবে তাকেও শেষ করব।"

______________

সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে আফরা নিবিরর জন্য নাস্তা বানিয়ে নিয়েছে।রান্না খুব ভালো না জানলেও টুকটাক কাজ চালানোর মতো জানে সে।রান্না শেষ করে দ্রুত রান্নাঘরে সব গুছিয়ে রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নেয় আফরা।আজ সে নিবিরকে বাইরে যেতে দেবেনা।আর নিজেও কোচিংয়ে যাবেনা ঠিক করেছে।
নিবিরের মতো রাগী একটা মানুষের ভেতরে যে এত লুকানো কষ্ট তা জানা ছিল না আফরার।
আফরা বুঝতে পারছে যে নিবিরের এখন যথেষ্ঠ মেন্টাল সার্পোট দরকার।

আফরা রুমে এসে নিবিরকে ঘুম থেকে তুলে দেয়।তারপর ফ্রেশ হয়ে নিতে বলে।নিবিরও ফ্রেশ হতে চলে যায়।নিবির ওয়াশরুমপ যাওয়ার পর নিবিরের একটা ফোন আসে।আফরা গিয়ে ফোনটা ধরে।অপরপাশের মানুষটা ফোনটা রিসিভ হতেই বলতে শুরু করে

" কাজ হয়ে গেছে স্যার।এখন সব প্রমাণ আমাদের হাতে।আমরা যে কোনো সময় সবটা ফাঁস করে দওতে পারি।"

আফরা এর পরিপ্রেক্ষিতে কিছু বলার আগেই লোকটা ফোন কেটে দেয়।আফরা এসবের কিছুই বুঝতে পারছেনা।
সবকিছু তার মাথার ওপর দিয়ে যাচ্ছে।নিবির আবার কী করতে চাচ্ছে।আবার কোনো বিপদে পড়বেনা তো সে।আফরাকে সবটা জানতেই হবে।

নিবির ফ্রেশ হয়ে আসলে আফরা ওকে নাস্তা দিয়ে নিজেও নাস্তা করে নেয়।সেই ফোনের ব্যাপারে আর কোনো কথা বলেনা  আফরা।নিবির আফরাকে কালকের ব্যাপারে কিছু বলতে চাইলেও আফরা এড়িয়ে যায়।
নিবির আফরাকে বলে

" অন্যসব চিন্তা মাথা থেকে বের করে নিজের স্বপ্বপূরণের দিকে মন দাও আফরা।সারাদিন এসব নিয়ে ভাবলে তোমার স্বপ্ন পূরণ হবেনা।"

আফরা নিবিরের প্রশ্নের কোনো উত্তর দেয়না। তবে সে মনে মনে ঠিক করে নেয় যে করেই হোক সে নিজেকে নিবিরের যোগ্য করে তুলবে।ভুলে যাবে নিজের জীবনের পুরোনো কালো অধ্যায় আর সেই মানুষটাকে।যদিও সহজ হবেনা তবুও চেষ্টা করবে নতুনভাবে সব শুরু করার।

____________

কেটে গেছে দুটো দিন।সেদিনের পর সেই টপিক নিয়ে আর কোনো কথা হয়নি।নিবির এখন যথাসম্ভব এড়িয়ে চলে আফরাকে। এই ব্যাপারটা মোটেও ভালোলাগেনা আফরার।নিবিরকে সে ভালোবাসেনা ঠিকই তবে নিবিরের ইগনোরটা একদম সহ্য হয়না আফরার।একমুহূর্ত নিবিরের সাথে কথা না বললে দমবন্ধ হয়ে আসে আফরার। এমনটা কেন হয় জানা নেই।তবে কী নিবিরকে ভালোবেসে ফেলেছে আফরা নাকি,,,

আর কিছু ভাবতে পারেনা আফরা।গিয়ে বই নিয়ে বসে
এই দুদিন নিবির আফরাকে নিয়মিত কোচিংয়ে নিয়ে গেছে।কিন্তু প্রহরের সাথে দেখা করার ইচ্ছেটা আফরার থেকেই গেছে।ও প্রহরের থেকেই জানতে চাই সে আফরার সাথে এমনটা কীভাবে করল।

দুদিন আফরার মন খুব খারাপ থাকায় নিবির ঠিক করেছিল আজ আফরাকে নিয়ে তার বাবা মার কাছে যাবে।সেইমতো নিবির আফরাকে নিয়ে বেড়িয়ে যায়।

আফরাদের বাসায় যাওয়ার আগে নিবির আফরাকে নিয়ে একটা শপিংমলে যায়।টুকটাক কিছু কেনাকাটা করার পর নিবিরের একটা ফোন আসায় সে একটু সরে যায়।আফরা একজায়গায় দাঁড়িয়ে ছিল তখনই সামনে একজনকে দেখে প্রচন্ড অবাক হয়।

চলবে,,
[+] 1 user Likes Manjarul Haque's post
Like Reply
#4
পর্ব-০৫


আফরার যেন মনে হলো ওর সামনে প্রহর ছিল।আফরা একটু এগিয়ে দেখতে গেলে সামনে আর কাউকে খুঁজে পায়না।আফরা নিজের মনের ভুল ভেবে ফিরে যায়।

আরও কিছু টুকটাক কেনাকাটা করে নিবির আর আফরা আফরাদের বাড়ির উদ্দেশ্য রওনা দিল।এতদিন পর বাড়ি যেতে পারবে ভেবে আফরার মনটা সত্যিই ভালো হয়ে যায়।

বেশখানিকক্ষণ পর আফরাদের বাসায় পৌছায় ওরা।আফরাদের বাসাটা শহর থেকে কিছুটা দূরেই।বাসায় ঢুকেই আফরা তার বাবা মায়ের সাথে কথা বলতে শুরু করে।আফরার আনন্দ যেন আজকে ধরছেনা।ব্যাপারটা নিবিরের ও বেশ ভালো লাগলো।এতদিন পর সে আফরাকে প্রাণ খুলে হাসতে দেখেছে।

আফরার না খাবার রেডি করছিলেন।আফরা সেখানে গেলে আফরার মা আফরাকে বলেন

" দেখ মা।জানি তোর আর নিবিরের বিয়েটা এক্সিডেন্টলি হয়ে গেছে। তাই বলে কী নিজের অতীত নিয়ে বসে থাকলে হবে।পুরোনো সবকিছু ভুলে নতুন করে শুরু কর নিজের জীবনটা।নিবির তোকে খুব ভালোবাসে।ও তোকে ভালো রাখবে।"

আফরা ওর মায়ের পরিপ্রেক্ষিতে শুধু বলে

" আমি চেষ্টা করব।"

কিছুক্ষণ আফরা দের বাড়িতে থেকে রাতের খাবার খেয়ে নিবির আরর আফরা সেখান থেকে চলে আসে।গাড়িতে উঠার পর নিবির বলে

" তোমার জন্য একটা সারপ্রাইজ আছে আফরা।তোমাকে আজ সবকিছুর প্রমাণ দেবো।"

নিবিরের কোনো কথার মানেই বুঝলো না আফরা। তবে নিবিরের মাথায় যে বেশ বড়কিছু চলছে তা স্পষ্ট বুঝতে পারছে সে।
নিবির আফরাকে বেশ জনশুন্য একটা জায়গায় নিয়ে আসে।আফরার এবার বেশ ভয় লাগল।সে ভয়ে ভয়ে নিবিরকে জিঙ্গেস করল

" আমরা এখানে কেন আসলাম।"

" তোমাকে মেরে এখানে গুম করে দিয়ে যাবো তাই।"

নিবিরের কথায় আফরা একদম হকচকিয়ে গেলো।আফরা কিছু বলার আগেই নিবির আবারও বলল

" এত ভয় পাও কেন ডাফার। একটা কাজে এসেছি।একটু ওয়েট করো। সব বুঝতে পারবে।এত ভয়ের কিছু নেই।"

আফরা আর কোনো কথা বলেনা।কারণ ও জানে এখন বেশি কথা বললে নিবির খুব রেগে যাবে।তারপর ওকে মেরে গুম করেও দিতে পারে।

কিছুসময় পর একজন মাস্ক পড়া লোক এসে নিবিরকে কিছু একটা দেয়।নিবির সেটা চুপচাপ নিয়ে নেয়।আফরা এসবের কিছুই বোঝেনা।কিন্তু ও  এট বোঝে যে নিবির খুব সিরিয়াস একটা কিছু করছে।

____________

সকালের মিষ্টি রোদে ঘুম ভেঙে যায় আফরার।চোখ খুলে চারিদিকে একটু পর্যবেক্ষণ করে নেই।আজকের সকালটা যেন একটু বেশি সুন্দর।কিন্তু কেন তা জানা নেই আফরার।নিবির এখনো ঘুমোচ্ছে।আফরা আলতো হাতে নিবিরের মাথায় হাতবুলিয়ে দেয়।এই শখটা আফরার অনেকদিনের।আজ সাহস করে করেই নিলো।নিবিরের চুলে আলতো ভাবে হাত বুলিয়ে দিতেই মুচকি হেসে উঠে আফরা।নিবির একটু নড়ে উঠতেই আফরা দৌড়ে ওয়াশরুমে চলে যায় ।

আফরা ফ্রেশ হয়ে বাইরে রান্নাঘরে চলে যায়।টুকটাক কাজ শেষে আফরা রুমে এসে নিবিরকে ডেকে দেয়।নিবির ফ্রেশ হয়ে নাস্তা খেয়ে হসপিটালে চলে যায়।

আফরার আজ কোচিং নেই।আফরা বই নিয়ে বসে ছিল।তখনই আফরার ফোন বেজে ওঠে।নিবিরের ফোন ছিল।আফরা বেশ অবাক হয়।নিবির মাত্রই বাড়ি থেকে বেরোলো আবার এখন ফোন করছে।আফরা বেশি কিছু না ভেবে ফোনটা তোলে

" আফরা,জলদি তৈরি হয়ে নাও।তোমাকে নিয়ে এক জায়গায় যাবো"

আফরাক কিছু বলার সময় না দিয়েই নিবির ফেন কেটে দেয়। আফরাও দ্রুত তৈরি হয়ে নেয়।

____________

আফরা বিস্ফোরিত নয়নে তার সামনে দাড়িয়ে থাকা মানুষটার দিকে তাকিয়ে ছিলো।নিবিরযে তাকে এতবড় সারপ্রাইজ দিবে বোঝা ছিল না আফরার।

এতদিন পর চোখের সামনে প্রহরকে পেয়ে নিজের মনের রাগগুলো দমাতে পারলোনা আফরা।ঠাটিয়ে একটা চড় বসিয়ে দিলো প্রহরের গালে।
প্রচন্ড রাগে অভিমানে বলল

" আমার সাথে এমনটা কেন করলে তুমি।কেন নষ্ট করলে রাহা ও তার বাচ্চার জীবন।"
আফরার দুচোখ দিয়ে অঝর ধারায় পানি পড়ছে।
নিবির আফরার উদ্দেশ্যে বলল

" ওকে এসব বলে লাভ নেই আফরা।ও কখনোই তোমাকে ভালোবাসেনি।ও জানতো আমি তোমাকে ভালোবাসতাম।শুধু মাত্র আমার থেকে সবটা কেড়ে নেওয়ার জেদে ও তোমার সাথে এসব করছিল।" 

আফরা যেন কানকে বিশ্বাস করতে পারছেনা।প্রথর কী তবে সত্যি কখনো ভালোবাসেনি ওকে।নিবির আবারও বলতে শুরু করে

" প্রহর আর আমি কলেজ লাইফে একসাথে পরতাম।কোনোকারণ বশত প্রহর প্রচন্ড হিংসা করত আমায়।আমার থেকে সবকিছু কেড়ে নেওয়াটাই তার উদ্দেশ্য ছিল।একারণেই আমার থেকে রাহাকে কেড়ে নিয়েছিল তারপর তোমাকে কেড়ে নিতে চাইল।"

আফরা প্রচন্ড ভেঙে পড়ল।প্রহর এতক্ষণ চুপ থাকলেও এবার বলে

" বিশ্বাস করো আফরা আমি নিবিরের থেকে তোমাকে কেড়ে নিতে চেয়েছিলাম ঠিকই।তবে কখন যে আমি তোমাকপ সত্যি ভালোবাসে ফেলেছিলাম আমি বুঝতেই পারিনি।"

আফরা কিছু বলার আগেই নিবির বলে

" রাহাকে কেন মারলি প্রহর।"

আফরা অবাক হয়ে রইল।প্রহর ছলছল নয়নে তাকিয়ে বলল

" আমি বুঝতে পারিনি রাহা এমন একটা কাজ করে ফেলবে।আমি ওকে বাচ্চাটা নষ্ট করতে বলেছিলাম তাই বলে যে ও আত্মহত্যা করে নিবে আমি বুঝতে পারিনি,,,"

আর কিছু বলার আগেই নিবির প্রহরের গালে দুটো চড় লাগিয়ে দেয়।আফরা নিশ্চুপ হয়ে দাড়িয়ে রয়।তার মাথা কাজ করছেনা।এসব কীভাবে হলো।প্রহর কীভাবে এমনটা করতে পারল ওর সাথে।

__________

কেটে গেছে কিছুদিন।আফরা এখন নিজেকে অনেকটা সামলে নিয়েছে।যতটা সম্ভব ভুলে যাওয়ার চেষ্টা করছে সে প্রহরকে।পড়াশোনায় মনোনিবেশ করেছে আফরা।যে করেই হোক মেডিকেলে চান্স পেতেই হবে আফরাকে।

আজকে নিবির সকাল সকাল হসপিটালে চলে গেছে।আফরা কখন থেকে কোচিংয়ের জন্য রেডি হয়ে বসে আছে অথচ প্রহরের আসার নামই নেই।
আফরার এবার বেশ রাগ হচ্ছে।একদিনে নিবির আর আফরার সম্পর্কটা বেশ ভালো হয়েছে।

বেশ খানিকক্ষণ পর নিবির আসে।আফরা এবার রাগে রাগে চুপচাপ গাড়িতে গিয়ে বসে।পুরো রাস্তা একটাও কথা বলেনা নিবিরের সাথে।নিবিরও কিছু বলেনা।আফরাকে কোচিং এ নামিয়ে দিয়েই নিবির চলে যায়।

কোচিং শেষে আফরা বাইরে এসে দেখে নিবির দাড়িয়ে আছে।আজ সময়ের আগেই চলে এসেছে।ব্যাপারটা আফরার ভালোলাগলেও কিছু বলেনা আফরা।চুপচাপ গিয়েয়ে গাড়িতে বসে।

কিছুসময় পর নিবির আফরাকে উদ্দেশ্য করে বলে

" আমার খুব খিদে পেয়েছে আফরা।" 

আফরা একটু তেজ দেখিয়ে বলে

" তো খাবার খান না। আমাকে বলেন কেন!"

" আসলে,,,আমার সামনে একটা চেরি ফল আছে।ভাবসিলাম সেটাই খাবে।"

আফরা  কিছু না বলে ভ্রু কুঁচকে তাকাতেই নিবির বলে

" রাগলে যে তোমার নাকের গডাটা লাল হয়ে যায় তা কী জানো তুমি। "

আফরা ফিক করে হেসে দেয়।যদিও ঠিক করেছিল আজ নিবিরের ওপর রাগ দেখাবে তা আর হলোনা।

____________

কেটে গেছে অনেক দিন।সময় তার আপন গতিতে চলছে।নিবিরের মাকেও রাহার ব্যাপারে সবটা বলে দেওয়া হয়েছে।উনি একটু ভেঙে পড়লেও নিজেকে সামলে নিয়েছেন।

কাল আফরার এডমিশন টেস্ট। মেয়েটা মন প্রাণ লাগিয়ে পড়ছে।
নিবিরও এখন যথেষ্ট কেয়ার নেয় আফরার।ওদের সম্পর্কটা অনেকটাই নরমাল হয়ে গেছে।

সকালবেলা আফরার পরীক্ষা। নিবির আফরাকে রাতে দ্রুত ঘুমিয়ে যেতে বললেও আফরা ঘুমোয় না।সে এখনো বই নিয়ে বসে আছে। মেয়েটা অসম্ভব রকম টেনশন করছে।রীতিমতো ঘামছে।আফরার এমন অবস্থা দেখে নিবির বলে

" এই মেয়ে।কথা বললে শুনতে মন চায়না।বই রেখে ঘুমাতে আসো,কুইক।তাহলে কাল হলে বেশ ফ্রেশ লাগবে।আর আজ রাতের পড়া দিয়ে বিশ্বজয় করে ফেলবেনা তুমি।সো বই রেখে গুমিয়ে যাও।"

নিবিরের কথাশুনে আফরার মন বেশ খারাপ হয়।ও চুপচাপ বই রেখ ঘুমাতে যায়।

____________

সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে রেডি হয়ে নেয় আফরা।দশটা পরীক্ষা শুরু।এখন সাড়ে আটটা বাজে।
প্রচন্ড  টেনশন হচ্ছে আফরার।যদি চান্স না হয়।নিবিরের বাড়ির সবাই অনেক বুঝিয়েও আফরার টেনশন কমাতে পারেনা।

আফরা তার বাবা মাকে ফোন করে দোয়া চেয়ে নেয়।নটার দিকে ওরা হলে পৌঁছে যায়।

প্রচন্ড টেনশন নিয়ে পরীক্ষা শেষ করে আফরা।খুব একটা ভালো হয়নি তবে খারাপও হয়নি।কিন্তু চান্স হবে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ আছে আফরার।
মেয়েটার। বাইরে এসে এত হাজার হাজার মানুষের মাঝে নিবিরকে খুঁজে পেতে বেশ কষ্ট হয় আফরার।তবুও পেয়েয়ে যায়।এখানে বেশি সময় না থেকে নিবির আফরাকে নিয়ে একটা রেস্টুরেন্টে যায়।

আফরা এখনো অনেক টেনশনে আছে।নিবির অনেক বলেও আফরার টেনশন কমাতে পারছেনা।অবশেষে দুটো কোল্ডকফি অর্ডার দেয় নিবির।আফরা বেশ অবাক হয়।আজকে আবহাওয়া বেশ ঠান্ডা আর নিবির নরমালি কোল্ড কফি খায়না।আফরা কিছু বলার আগেই নিবির বলে

" কোল্ডকফি তোমার জন্যই অর্ডার করেছি।এমন আবহাওয়ায় ও এত ঘামছ কেন তুমি।"

আফরা  চুপচাপ রইল।আশানুরূপ হয়নি পরীক্ষাটা।যদি চান্স না হয় তবে নিবিরকে কী জবাব দেবে সে।

চলবে,,,
[+] 1 user Likes Manjarul Haque's post
Like Reply
#5
পর্ব-০৬(অন্তিম)


প্রচন্ড উচ্ছাসে অপেক্ষা করছে আফরা।আজ তার মেডিকেলের এডমিশন টেস্টের রেজাল্ট দিবে।কেন জানি আজ নেগেটিভ চিন্তাগুলোই আফরার মাথায় আসছে।নিবির অনেকক্ষণ ধরে রেজাল্ট দেখছে।আফরা টেনশনে নখ কামড়াচ্ছে।

খানিকবাদে নিবির আফরার দিকে তাকিয়ে বলল

" তোমার এডমিশনটা হয়নি আফরা।"

চুপ হয়ে রইল আফরা।ও যেন এমন কিছুই আশা করেছিল।নিজের ব্যর্থতা গুলো আজ উপলব্ধি করতে পারছে সে।নিবিরের কথার কোনো উত্তর না দিয়ে নিশ্চুপ হয়ে রইল সে।তার চোখ দিয়ে নিরবে দুফোঁটা জল গড়িয়ে পড়ল।যা দৃষ্টির অগোচার হলোনা নিবিরের।

আফরা একটু মুচকি হেসে বলল

" যেই জিনিসটাকে আমি মন প্রাণ দিয়ে পায় তা কখনোই আমার হয় না।"

নিবির আফরার কথাগুলো শুনলো না।শুধু দেখলো আফরার হাসির পেছনে লুকিয়ে থাকা অজস্র রাতজাগার কষ্টের কথা।
মেয়েটা কতটা পরিশ্রম করেছিল তা অজানা নয় নিবিরের।নিবির বলে

" লিসেন আফরা,,সবজায়গায় যে সবাই সফল হবে তা কিন্তু নয়।জীবনে বড় কিছু করার জন্য ব্যর্থতা প্রয়োজন।এতে ভেঙে পড়লে হবেনা।সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে।"

আফরা নিবিরের কথা কতটা বুঝলো তা জানা নেই নিবিরের।তবে মেয়েটা যে অল্পতেই ভেঙে পড়ার মেয়ে না তা জানে সে।

______________

দিন কাটছে তার আপন নিয়মে।মেডিকেলে এডমিশন হয়নি বলে ভেঙে পড়েনি আফরা।রিএডমিশনের জন্য চেষ্টা করছে।সামনে বার আবারও পরীক্ষা দিবে ঠিক করেছে।

আফরা আর নিবিরের সম্পর্কটা এখন অনেকট নরমাল।নিজেদের অনেকটা মানিয়ে নিয়েছে তারা।হয়তো আফরা ভালোবাসতে শুরু করেছে নিবিরকে।তবুও তার মনের মাঝে কোথাও না কোথাও প্রহরের স্মৃতিগুলো রয়েই গেছে।লোকে বলে প্রথম প্রেম নাকি ভোলা যায়না।কথাটা হয়ত সত্যি।
তবে একটা কথাও আজ আফরার কাছে পরিষ্কার।মন থেকে চাইলে প্রথম প্রেম ভুলেও নতুন করে অন্যকাউকে ভালোবাসা যায়।

এতদিন প্রহরের কোনো খবর পায়নি আফরা।নিজেও নিতে চায়নি।গতদিন প্রহর নিজে আফরাকে ফোন করেছিল। সে নাকি শেষ বারের মতো আফরার সাথে দেখা করতে চায়।আফরা চায়নি প্রহরের সাথে দেখা করতে।কিন্তু নিবির বলেছে শেষবারের মতো যেন সে প্রহরের কথাগুলো শুনে নেয়।

প্রহরের দেওয়া ঠিকানায় পৌঁছে যায় আফরা।আজ সে একাই এসেছে।সে জানে আর যাইহোক প্রহর তার কোনো ক্ষতি করবেনা।

অন্ধকার রুমে মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আছে প্রহর আর আফরা।প্রহরের মনপ জমে আছে আফরাকে না বলা হাজারো অনুভূতি আর আফরার মনে আছে প্রহরের জন্য অসম্ভব ঘৃণা।আজ প্রহরের দিকে তাকাতেও ঘৃণা হচ্ছে আফরার। 

"আফরা।"

প্রহরের দিকে চোখতুলে তাকালো আফরা।এই প্রহর যেন তার বড্ড অচেনা।আফরার নামটা উচ্চারণ করতে যেন বারবার গলা কেঁপে উঠছিল প্রহরের।প্রহরের ভিতরে লুকিয়ে থাকা হাজারো কষ্ট অনুভব করতে পারছে আফরা।তবুও মুখে কিছু বলেনা সে।প্রহর আবারো বলতে থাকে

" জানোতো আফরা প্রতিহিংসার আগুনে জ্বলে পুড়ে ছাই হয়ে গেছি আমি।নিবিরের থেকে তোমাকে কেঁড়ে নেওয়ার লড়াইয়ে নিজে যে কতটা আসক্ত হয়ে গেছি তোমার প্রতি তা বোঝাতে পারবোনা।তোমার জন্য আমি রাহার সাথে অন্যায় করেছি জানি।তবে কবে যে তোমাকে এতটা ভালেবেসে ফেলেছি তা জানা নেই আমার।
কতটা ভালোবাসলে যে তাকে ভুলে থাকা অসম্ভব তা হয়তো তোমার জানা নেই।কিন্তু এটা জেনে রেখো যে আমি তোমাকে এতটাই ভালোবাসি।তোমাকে ছাড়া এখন একমুহূর্তও থাকা আমার পক্ষে সম্ভব নয়।অনেক চেষ্টা করেছি তোমাকে ভুলে যাওয়ার আমি পারিনি।তুমি তো আমার হবেনা তাহলে আমি আর এপৃথিবীতে থেকে কী করব।
যদি সম্ভব হয় তো আমাকে ক্ষমা করে দিও।"

কথাগুলো বলেই আফরাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই প্রহর তার হাতে থাকা বন্দুকটা দিয়ে নিজের মাথায় গুলি করে।
চিতকার করে উঠে আফরা।প্রহরের অবস্থা দেখা হয়না আফরার।তার আগেই সেন্সলেস হয়ে যায়।

____________

চোখখুলতেই নিজেকে হসপিটালে আবিষ্কার করে আফরা।তার হাতে ক্যানোলা করা।পাশেই নিবিরকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে উঠে বসে আফরা।নিবির দ্রুত এসে আবার শুয়িয়ে দেয় সে।প্রহরের ব্যাপারে জানতে চাই আফরা।নিবির বলে

" প্রহর মারা গেছে আফরা।"

নিবিরের কথায় চুপ করে রয় আফরা।সে এখানে কী করে আসলো তা জানা নেই আফরার।হয়ত ঘৃণা করত সে প্রহরে তবুও একটা সময় তো ভালোবাসতো তাকে।প্রহরের মৃত্যুটা মানতে পারছেনা আফরা।নিরবে চোখের পানি ফেলল সে।
আজও কোথাও না কোথাও আফরার মনপ প্রহর রয়েই গেছে।আফরার বারবার এটাই মনে হচ্ছে যে হয়ত তার জন্যই প্রহরের এই অকাল মৃত্যু।

__________

সময়ের সাথে সাথে হালকা হয়ে যায় স্মৃতিও। স্মৃতির অকপটে আজ হালকা হয়ে গেছে প্রহরের স্মৃতি গুলো।হয়তো কোথাও রয়ে গেছে।তবুও আজ সেসব মনে করতে চায়না আফরা।আজ সে নিজেকে একজন সুখী মানুষ বলতে পারে।কতটা পুন্য করে সে নিবিরকে পেয়েছিলল তা জানা নেই আফরার।তবুও নিজেকে খুব ভাগ্যবতী মনে করে সে।হয়ত একটা অভাব থেকে গেছে তার জীবনে তবুও তা অনুভব করতে চায়না আফরা।

নিবির কখনো বাবা হতে পারবেনা সেটা জানে আফরা।তবুও কোনো দ্বিধা নেই আফরার মনে।ভালোবাসার মানুষটা সঠিক হলে যে আর কিছু লাগেনা জীবনে।

সেকেন্ড টাইম এডমিশনে মেডিকেলে চান্স পেয়ে যায় আফরা।মন প্রাণ লাগিয়ে নিজের স্বপ্ন পূরনের জন্য কাজ করছে আফরা।

দেখতে দেখতে কেটে গেছে তিনটে বছর।নিবির একন যথেষ্ট ভালে পজিশনে আছে।আফরাও যথেষ্ট দায়িত্বশীল হয়ে গেছে।তবুও তার বাচ্চামোগুলো রয়েই গেছে।

সবাই আফরাকে বলেছিল একটা বাচ্চা এডপ্ট করতে।কিন্তু আফরা রাজি হয়নি।সে চায়নি নিবিরের ব্যর্থতাটা প্রতি মুহুর্তে ওকে অনুভব করাতে।

___________

সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে টুকটাক কাজ সেরে ফ্রেশ হয়ে মেডিকেল যাওয়ার জন্য তৈরি হয়।নিবির হসপিটালে যাওয়ার সময় আফরাকে নামিয়ে দিয়ে যায়।আজ এতবেলা হলেও নিবির এখনো উঠেনি।আফরা নিবিরকে অনেকবার ডাকলেও সে উঠেনা।একদম ঘুমে বিভোর সে।আফরা এবার নিবিরের গায়ে পানি ছিটিয়ে দিলো কিছুটা।লাফ মেরে উঠল নিবির।আফরার দিকে রাগী দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলল

"  এই মেয়ে সকাল সকাল কী শুরু করেছো।এভাবে কেউ গায়ে পানি দেয় নাকি।মাইর খাবে নাকি।"

" বললেই হলো না । আপনি যে আমায় মারবেন না সেটা আমি জানি।আমাকে মারলে তো ব্যাথ্যাটা আপনি পাবেন।
আচ্ছা এখন কথা না বলে রেডি হয়ে নেন।নয়তো আমার দেরি হয়ে যাবে।"

 " আচ্ছা আমি তৈরি হচ্ছি।তুমি খাবার রেডি করো।"

" হুম"

নিবির ওয়াশরুমে চলে গেলো।আফরা বাইরে যাওয়ার আগে নিবিরের টেবিলের কাছে গিয়ে নিবিরের ডাইরিটা বের করল।ডাইরিতে আফরার একটা ছবি আছে।যেটা নিবির এতগুলো বছর ধরে লুকিয়ে রেখেছিলো।তার পাশে লেখা ছিল "আমার শুভ্রপরী।"

আফরা একবার ডাইরিটায় চোখবুলিয়ে মুচকি হেসে বাইরে চলে গেলো।

___________

আফরার আজ ক্লাস কম থাকায় নিবির আফরাকে নিয়ে একটা পার্কে ঘুরতে এসেছে।আসার পথে আফরাকে কিছু ফুলও কিনে দিয়েছে সে।মেয়েটা ফুল বড্ড পছন্দ করে।আজকাল আফরার ছোট ছোট পছন্দের দিকও খুব খেয়াল রাখে নিবির।
এই মেয়েটা যে কেন এত মায়াবী তা জানা নেই নিবিরের।বিকেল হয়ে এসেছে যে কেনো সময় সন্ধ্যা নামবে।এখনো পার্কে রয়ে গেছে তারা।এত সময় কীভাবে অতিবাহিত হলো জানা নেই তাদের।

গোধুলির আলোয় প্রিয়জনের হাত ধরে রাস্তায় হাঁটাটা হয়ত দুনিয়ার শ্রেষ্ঠ অনুভূতিগুলোর মধ্যে একটা।হঠাতই যেন নিবিরের ইচ্ছে হলো চুপিসারে তার শুভ্রপরীর কানে কানে বলতে

" তুমি মেয়েটা এতটা মায়াবতী কেন হলে বলোতো।"

তা আর বলা হয়না নিবিরের। তার আগেই আফরা দৌড়ে একটা দোকানের কাছে চলে যায়।তারপর সেখান থেকে অনেকগুলো লাল বেলুন কিনে। নিবির অবাক হয়ে বলে

" এতগুলো বেলুন কী করবে।"

আফরা শুধু মুচকি হাসে আর বলে

" নিজের সুখগুলো পুরো পৃথিবীকে দেখাবো।"

আফরা সবগুলো বেলুন একসাথে আকাশে উড়িয়ে দেয়।
নিবির আলতো হাতে তার প্রয়সীকে জড়িয়ে ধরে বলে

" তুমি ছিলে আমার প্রথম প্রেম।আর আমার প্রথম প্রেমকে পূর্ণতা দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ আফরা।"

ক্লান্ত হয়ে দিনশেষে ঘরে ফিরে যায় তারা।তাদের ঠাঁই মিলে একে অপরের মনে।দিনশেষে এটাই জীবনের মহত্ব।সব ভালোবাসার মানুষগুলো এক হোক।রঙিন হোক তাদের পথচলা।

সমাপ্ত
[+] 2 users Like Manjarul Haque's post
Like Reply




Users browsing this thread: