03-01-2023, 08:25 PM
Indian Private Cams | Porn Videos: Recently Featured XXXX | Most Popular Videos | Latest Videos | Indian porn sites Sex Stories: english sex stories | tamil sex stories | malayalam sex stories | telugu sex stories | hindi sex stories | punjabi sex stories | bengali sex stories
Non-erotic সৌরভ
|
03-01-2023, 08:31 PM
03-01-2023, 08:36 PM
বড় দুলাভাই জেলে আছেন , প্রায় মাস চারেক হলো উনি জেলে । যেদিন বড় দুলাভাই কে ধরে নিয়ে গেলো সেদিন একটা আশ্চর্য ব্যাপার লক্ষ করেছিলাম , সেটা হচ্ছে আমি বড় দুলাভাই এর নাম জানি না । এতো বছর একটা মানুষ এর সাথে আমার আত্মীয়তা অথচ আমি মানুষটার নাম জানি না ব্যাপারটা আমার কাছে খুব আশ্চর্য ঠেকেছে । খুব চেষ্টা তদবির চলেছিলো কিন্তু কোন লাভ হয়নি । শেষ পর্যন্ত শরাফত মিয়াঁ উরফে বড় দুলাভাই কে জেলে যেতেই হয়েছে । সবাই অবশ্য বলাবলি করছিলো উনি নাকি বলীর পাঠা , হোমরা চোমড়া যারা আছেন নিজেররা বাঁচার জন্য উনার বলী চড়িয়ে দিয়েছে ।
আরও আশ্চর্যের ব্যাপার ছিলো যেটা , সেটা হচ্ছে বড় দুলাভাই এর জন্য সবচেয়ে বেশি দৌড়া দৌড়ী করেছেন আমাদের মেজো দুলাভাই । উনি তো খাওয়া নাওয়া ছেড়ে কোমর বেধে নেমেছিলো , অবশ্য লাভ তেমন হয়নি । তবে এই সুবাদে বড় আপা আর মেজো আপার পুরনো ফাটল ধরা সম্পর্ক একটু জোড়া লেগেছে । এরি মাঝে একবার আমি দেখি বড় আপা মেজো আপার কাছে ক্ষমা চাওয়ার স্বরে বলছে “ বুঝলি মানুষ চিনতে কি ভুল করেছি , আপন ভাইয়ের চেয়ে শত গুন বেশি কাজে আসলো” কথা অবশ্য সত্যি আমি তেমন কাজে আসিনি , যেখানে নিয়ে গেছে চুপ করে বসে থাকা ছাড়া তেমন কিছুই করতে পারিনি । হ্যাঁ বিল্ডারস কম্পানির কাছ থেকে কিছু টাকা এনে দিয়েছি সুধু । এ ছাড়া তেমন কোন কাজে লাগিনি । তাও খুব বেশি টাকা দিতে পারিনি । জলের মত যেখানে টাকা খরচ হয়েছে সেখানে আমার এনে দেয়া সাত লক্ষ টাকা আর তেমন কি? বড় আপা এখন আমার সাথেই আছে, ভাগ্য ভালো বিল্ডারস কম্পানি এখনো কাজ শুরু করেনি । ওদের ফেলে রাখা রড গুলো ঝপ জঙ্গল এর আড়ালে হারিয়ে গেছে । তবে বড় আপার আমার এখানে থাকায়, আমার তেমন ডিস্টার্ব হয় না । বড় আপা চুপচাপ মানুষ তার উপর এখন আরও চুপচাপ হয়ে গেছে । সুধু মেঝ আপা এলেই যা একটু কথা বলে । শুনছি ওরা নাকি দুলাভাই এর গ্রামের বাড়ি চলে যাবে। অবশ্য সেখানেও হাঙ্গামা চলছে । বড় দুলাভাই এর ছোট ভাই নাকি জায়গা সম্পত্তি নিয়ে ঝামেলা করছে । সেটা মিটে গেলেই চলে যাবে , আর ঝামেলা মিটতেও বেশি সময় লাগবে না , মেজো দুলাভাই নেমেছে ফিল্ডে বলেছে “ হারামির বাচ্চার পেটে পারা দিয়া নাড়িভুঁড়ি সহ বাইর কইরা ফালামু , আপা আপনি কোন চিন্তা করবেন না” যদিও বড় আপা ওনার চেয়ে বয়সে ছোট তাও সামনা সামনি দারুন সম্মান করে মেজো দুলাভাই আপাকে । দেখলে মনে হয় ছেলে মায়ের সাথে কথা বলছে । আমার খুব হাঁসি পায় এই অবস্থা দেখলে , মনে হয় কেউ কি বিশ্বাস করবে এই লোকটাই নিজের মেয়ের বান্ধবিকে আপত্তিকর ভাবে স্পর্শ করে , বাড়ির কাজের মেয়েদের হয়রানি করে । উনার এতো ভালোমানুষি আমি প্রথম প্রথম বিশ্বাস করতে পারিনি , মনে মনে আমার একটা সঙ্কা কাজ করছিলো । চোখে চোখে রাখছিলাম ওনাকে , মনে মনে পন করেছিলাম এবার যদি কিছু একটা আমার চোখে ধরা পরে তাহলে আর মেজো আপার দিকে তাকাবো না , কিছু একটা করে ফেলবো । তাছাড়া তুবা মেয়েটা খুব চাপা স্বভাব এর মুখ ফুটে কিছু বলবে ও না । হ্যাঁ তুবা আমার ভাগ্নি , ওকে নিয়েই আমার মনে সংসয় এসেছিলো । মেজো দুলাভাই এর চরিত্র যে কেমন সেটা তো আমি জানি । কিন্তু আমাকে অবাক করে দিয়ে মেজো দুলাভাই তেমন কিছু করলো না । মনে হয় আমি একটু হতাশ ই হয়েছিলাম । ভেবে ছিলো কি না করতে পারা এই আমি হয়ত সঠিক পরিমান মোটিভেশন পেয়ে নায়ক হয়ে উঠবো হা হা হা ……। অবশ্য একদিক থেকে ভালোই হয়েছে , কারন আমার অন্তর এর গভির থেকে কে যেন অট্টহাসি হেসে বলেছিলো , যত মোটিভেশন ই আসুক না কেনো , তুই কখনই সোজা হয়ে দাড়িয়ে কোন কিছুর প্রতিবাদ করতে পারবি না । এবং যেই বলুক না কেন তার কথা গুলো আমি বিশ্বাস করেছি । সত্যি হয়ত দুলাভাই কিছু করলে , আমি কোন না কোন অজুহাত দেখিয়ে ঝামেলা থেকে পিছু হঠে জেতাম । যেমনটা আমি সব সময় করে আসি । মাঝে মাঝে তো আমি নিজেকে এসব আচরণ এর জন্য বাহবা দেই , নিজেই নিজের মন কে ভুল ভাল বোঝাই । বলে আমি মনহয় সাধু সন্তদের পর্যায়ে চলে গেছি । এবং আশ্চর্য জনক ভাবেই আমি নিজের এই মিথ্যা আশ্বাস কে কয়েক মুহূর্তের জন্য বিশ্বাস ও করি । তবে সেই বিশ্বাস বেশীক্ষণ স্থায়ী হয় না । ধিরে ধিরে আমার আসল চরিত্র আমি বুঝতে পারি । আচ্ছা এমন তো আমি সব সময় ছিলাম না । হ্যাঁ একটু চুপচাপ ছিলাম , শান্ত শিষ্ট ছিলাম । কিন্তু ঘোড় অন্যায় মেনে নেয়ার মন মানসিকতা আমার মাঝে কবে জন্ম নিলো ? এই প্রশ্ন আজকাল প্রায় মাথায় আসে , বিশেষ করে আরশির ওই ব্যাপারটার পরে। আমি অবশ্য উত্তর খুঁজে বের করার চেষ্টা করছি , বিস্তর সময় আমার হাতে, তাই এসব জিনিস নিয়ে ভাবনা চিন্তার সময়ের অভাব হয় না । অবশ্য এখনো উত্তর খুঁজে পাইনি । কিছুদিন আগেও আমি বলতাম আমি দুনিয়ার সবচেয়ে বড় আশাবাদী মানুষ হয়ে থাকতে চাই । কিন্তু ধিরে ধিরে সেই ইচ্ছাও দূরে সরে যাচ্ছে । আমার কাছে মনে হয় আমি যে নিজেকে আশাবাদী ভাবাতাম সেটা ভুল ভাবতাম , আমি আসলে নিরাশাবাদি, তাই তো আশাবাদি মানুষের মুখোস পরে অনেক কিছু থেকেই পালিয়ে বেড়াতে চাই । আরও একটা ঘটনা আমাকে ভাবতে বাধ্য করছে যে আমি নিরাশাবাদি মানুষ । ঘটনা হচ্ছে কদিন বড় আপা আমাকে নিউমার্কেট পাঠিয়ে ছিলো কিছু জিনিস কেনার জন্য । সচরাচর আমি ওখানে যাই না , সেদিন গিয়ে বিশাল মার্কেটে হারিয়ে গিয়েছিলাম । ইতিউতি ঘুরে বেড়াচ্ছিলাম । হঠাত এক দম্পতির উপর চোখ আটকে যায় । মেয়েটি আমার বয়সী হবে , সাথে আমার চেয়ে বছর দুই তিন বড় একজন পুরুষ । স্বামী স্ত্রী ওরা এতে কোন সন্দেহ নেই । সাথে একটি ফুটফুটে বছর তিনেক এর মেয়ে বাচ্চা । দেখতে মায়ের মতই হয়েছে । দম্পতিটির দিকে কেন এতক্ষন তাকিয়ে ছিলাম বুঝতে পারছিলাম না । শেষে লজ্জায় পরে গিয়েছিলাম , কারন আমার বয়সী মেয়েটি নিজের সঙ্গিকে আমার দিকে ইশারা করে কি যেন দেখাচ্ছিলো । ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম , ভাবছিলাম এতক্ষন তাকিয়ে আছি তাই হয়ত স্বামীর কাছে নালিশ করছে । আরও ভড়কে গিয়েছিলাম যখন দেখলাম ওরা আমার দিকেই এগিয়ে আসছে। এদিক ওদিক দেখছিলাম , ভাবছিলাম কোথায় পালানো যায় , কেমন লজ্জার একটা ব্যাপার হবে , আজকাল নাকি এসব নিয়ে মানুষ খুব প্রতিবাদ করে । আগে তো শুনতাম রাস্তা ঘাটে হেনস্থা হয়ে মেয়েরা আত্মহত্যা করে । আজকাল আর সেরকম নয় এই ধরনের ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ হয় । আমার সাথেও তেমন কিছু হবে কিনা ভাবছিলাম । কিন্তু এগিয়ে আসা দম্পতির মুখে হাঁসি দেখে কিছুটা অবাক ও হয়েছিলাম । “তুমি নিশ্চয়ই আমাকে চিনো নাই” কাছে এসেই হাঁসি মুখে বলল মেয়েটি , সাথের পুরুষটিও হাসছে , তবে পুরুষটির হাঁসি কেমন প্রফেশনাল টাইপ । অপর দিকে মেয়েটি খুব মজা পাচ্ছে বলে মনে হচ্ছিলো । “ তুমি যে একটা ম্যাদা মারা লোক সেটা জানতাম কিন্তু এতটা ম্যাদা মারা সেটা জানতাম না” সাথে সাথেই চিনতে পেরেছিলাম , সত্যি বলতে চিনেছিলাম আগেই , মাত্র কয়েক বছরে কি ভুলা যায় । কিন্তু ঠিক মেলাতে পারছিলাম না । ওজন বেড়েছে কম করে হলেও ত্রিশ কেজি । ছিপছিপে ফিগার পরিবর্তন হয়ে নাদুসনুদুস হয়ে উঠেছে , থুতনির নিচে দ্বিতীয় থুতনি গজিয়েছে , বরফি কাটা মুখ খানা গোলগাল গৃহিণী টাইপ হয়ে উঠেছে । আমার চেনা লীলার সাথে এই লীলার কোন মিল নেই । মিল যেটুকু আছে সেটা ওই হাঁসি , সুধু ঠোঁটের হাঁসি নয় লীলার পুরো মুখমণ্ডল ই হাঁসে । কি বলবো বুঝতে পারছিলাম না , পুরতন প্রেমিকার সাথে স্বামী সহ দেখা হলে কি বলতে হয় আমার জানা ছিলো না । “ এই আসিফ এই হচ্ছে আমার পুরনো প্রেম সৌরভ” লীলাই ভেঙ্গেছিলো নীরবতা , তবে আমাকে ফেলে দিয়েছিলো আরও অস্বস্তিতে , নিজেকে ওর স্বামীর সামনে কেমন জানি অপরাধী অপরাধী মনে হচ্ছিলো । আসিফ নামক লোকটার মাঝে অবশ্য তেমন কোন পরিবর্তন দেখা যায়নি । প্রফেশনাল সেই হাঁসি টেনে রেখেই হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলো । চরম অস্বস্তি নিয়ে আমিও হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলাম , এরি মাঝে লীলা নিজের সভাবসিদ্ধ ভাবে বলে উঠেছিলো “দেখ দেখ কেমন লজ্জা পাচ্ছে হি হিহি……।।যেমন বলেছিলাম ঠিক তেমন না, দেখে মনে হচ্ছে ও নিজে মেয়ে মানুষ স্বামীর সামনে পুরাতন প্রেমিক এর সাথে দেখা হয়েছে হিহ হি হি…?” এবার আসিফ সাহেব ও হাঁসিতে যোগ দিলো , তবে আমাকে বিব্রত হতে দেখে নিজেকে সংবরণ করে নিয়েছিলেন সাথে সাথে । স্ত্রীর হয়ে সাফাই গেয়ে বলেছিলেন “ কিছু মনে করবেন না সৌরভ সাহেব , ও একটু এমন ই” “ ধুর তোমার চেয়ে ও আমাকে কম চেনে না” হাত নেড়ে মাছি তাড়ানোর মত করে বলেছিলো লীলা , তারপর আমাকে উদ্দেশ্য করে বলেছিলো , “ কি করছো আজকাল” আমি তখন মনে মনে ভাবছিলাম লীলার দৈহিক পরিবর্তন ছাড়া অন্য কিছুই পরিবর্তন হয়নি । কিন্তু তক্ষুনি মনে পরেছিলো না না এই লীলার সাথে আগের লীলার আরও কিছু পরিবর্তন আছে , আগের লীলা আমাকে তুই করে বলত তুমি করে নয় । যে লীলা ব্যাগ নিয়ে আমার বাসায় চলে এসেছিলো সে এই লীলা নয় । আর আমি নিজেই এই পরিবর্তন এর জন্য দায়ি । নয়তো আজ হয়ত লীলা আমাকে তুই তুকারি করতো , মাঝে মাঝে বস্তি ভাষায় গালি দিত । আচ্ছা লীলা কি আসিফ সাহেব কে গালি দেয় ? প্রশ্নটা এসেছিলো মাথায় খুব জান্তেও ইচ্ছে হচ্ছিলো , কিন্তু জিজ্ঞাস করার ইচ্ছা বাঁ সাহস হয়নি । প্রায় আধঘণ্টা কথা হয়েছিলো সেদিন । বেশিরভাগ কথা আসিফ সাহেব আর লীলার মেয়ে টুসি কেই নিয়েই হয়েছিলো । আসিফ সাহেব কি করেন , উনার বদ অভ্যাস কি কি এসব কিছুই আমার জানা হয়ে গিয়েছিলো । তাপর হঠাত করে যেমন দেখা তেমন হঠাত করেই বিদায় মুহূর্ত চলে এসেছিলো । যাওয়ার সময় লীলা বলেছিলো “ বাসায় আইসো” তারপর নিজেই বলেছিলো “ আসবা না সেটাও জানি তবুও বললাম” আমি হ্যাঁ না কিছুই বলিনি , সুধু শেষ বারের মত লীলার সুখি গৃহিণী মুখ খানা দেখে নিয়েছিলাম । সেদিন ই আমার মাথায় প্রথম প্রশ্ন এসেছিলো সত্যি কি আমি আশাবাদী মানুষ ? যদি আশাবাদী ই হতাম তাহলে সেদিন লীলাকে ফিরিয়ে দিয়ে আসতাম না , হয়ত বলতাম তুই আমার কাছেই থাক , তুই থাকলে কোন অসুখ আমাকে কাবু করতে পারবে না । আর যদি কাবু করে তুই তোর বিখ্যাত গালি দিয়ে অসুখ কে দূরে ভাগিয়ে দিবি । কিন্তু আমি সেটা করিনি , আমি নিরাশাবাদিদের মত নিজের ভবিষ্যৎ আগেই ঠিক করে ফেলেছি । সেই ভবিষ্যতে আমি একা , আমার সাথে মার্কেটে ঘুরাঘুরি করার জন্য কেউ নেই ।
03-01-2023, 09:09 PM
(03-01-2023, 08:31 PM)ddey333 Wrote: বোকাচোদা, ঐরকম ভাবে হঠাৎ গুগল চ্যাট এ মেসেজ দেখে প্রথমে ভয় পেয়ে গেছিলাম. ফিরে আসলে তাহলে.... খুব মারতে ইচ্ছে করছে। হাত বাড়িয়ে ছুঁই না তোকে, মন বাড়িয়ে ছুঁই।
দুইকে আমি এক করি না, এক কে করি দুই।।
03-01-2023, 09:15 PM
আজ উৎসবের রাত, আমার ভাই কাকসন আবার এসেছে ফিরে.
হয়তো রিকশা চালাচ্ছে , কিন্তু BMW আমার পক্ষ থেকে
04-01-2023, 12:42 PM
04-01-2023, 12:44 PM
(This post was last modified: 04-01-2023, 12:46 PM by cuck son. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
04-01-2023, 02:23 PM
শুরুর থেকে আবার চোখ বোলাতে হলো , চমকপ্রদ আপডেট।
এবার চলতে থাকুক আর যেন না থামে !!
17-01-2023, 06:17 PM
অনেকদিন পর মতিন এসেছে , বড় আপারা চলে যাওয়ার পর কেমন জানি একা একা লাগছিলো । বেশ কিছুদিন বাড়িতে লোকজন থাকায় অভ্যাস পরিবর্তন হয়েগিয়েছিলো । তাই মতিন আসায় একটু খুশি খুশি লাগছে । মতিন কিছু বলছে না , প্রথমে ভেবেছিলাম কোন ঝামেলা হয়েছে বুঝি । কিন্তু খেয়াল করলাম মতিন মিটমিট হাসছে । চেহারাতেও কেমন তেলতেলে একটা ভাব এসেছে , আগের মত বয়স্ক দেখায় না । একটা সুখি সুখি ভাব চলে এসেছে চেহারায় ।
“ কিছু বুঝতে পারতেসো না বন্ধু?” হঠাত প্রশ্ন করে উঠলো মতিন । “ কি বুঝবো?” “তুই বোকাই রয়ে গেলি রে সৌরভ, দারা এইবার তোর চিকিৎসার বেবস্থা করবো” মতিন এর আবল তাবল কথার কিছুই বুঝতে পারলাম না । এখানে বোকা হওয়ার কি আছে , আসার পর থেকে একটা কথা বলেনাই , আবার বলছে আমার চিকিৎসা করাবে।হয়ত আমার রোগের জন্য কোন কবিরাজি অথবা ঝাড় ফুঁকের সন্ধান পেয়েছে , আমি ভাবলাম । “ ঝাড় ফুকে আমার বিশ্বাস নাই তুই তো জানিস” আমার মস্তিষ্ক একটু শিথিল হলো , এতক্ষন মতিন কে নিয়ে সত্যি সত্যি ভাবছিলাম । “ এইটা আসল ঝাড় ফুক দোস্ত , এই ঝাড় আর এই ফুঁকের উপরে দুনিয়ায় আরও কোন ঔষধ নাই” মতিন এর মুচকি হাঁসি পরিবর্তন হয়ে পুরো বত্রিশ পাটি দাত প্রদর্শন শুরু করলো । তারপর নিজের দিকে আঙুল দেখিয়ে বলল “ এই আমারে দেখ , কি ছিলাম আর এখন কি হইসি, সব হইলো ঝাড় ফুঁকের কারসাজী” এটা অবশ্য মতিন ঠিক বলছে , ওর অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে এই ঝাড় ফুক কাজে এসেছে । “ এইবার তোমার পালা বন্ধু , ঝাড় ফুঁকের বেবস্থা হবে তোমার জন্য” হাসতে হাসতে বলল মতিন , এক পায়ের উপর এখন অন্য পা তুলে বসেছে । সত্যি বলতে মতিন এর মাঝে অন্য রকম আত্মবিশ্বাস দেখতে পাচ্ছি । ঠিক যেমনটা কলেজ কলেজে পড়ার সময় ছিলো । কোন কথা মতিন এমন আত্মবিশ্বাস এর সাথে বলত যে আমারা সবাই বিশ্বাস করতে বাধ্য হতাম । পরে গিয়ে দেখতাম আসলে তেমন কিছুই না । আমাদের কলেজের প্রাঙ্গনে একটা নারকেল গাছ ছিলো , সাধারন নারকেল গাছের চেয়ে ওই গাছতা একটু বেশি লম্বা আর চিকন ছিলো । একদিন এক ছেলে বলেছিলো এই গাছে কেউ উঠতে পারবে না । অমনি মতিন বলে উঠেছিলো “আমি পারবো”। সবাই অনেক নিষেধ করেও মতিন কে নিরস্ত্র করতে পারনি । মতিন এর এক কথা “ আমার নানা বাড়িতে এমন অনেক গাছ আছে” শেষে সবাই হাল ছেড়ে দিয়েছিলো । ভেবেছিলো নানা বাড়ি যেহেতু নারকেল গাছ আছে , নিশ্চয়ই মতিন এর নারকেল গাছে ওঠার অভ্যাস আছে । বেশ বড়সড় একটা জটলা হয়েছিলো , ছুটির দিনে মতিন এর নারকেল গাছে ওঠা দেখতে । মনে হয় দশ ফুটের মত উঠেছিলো মতিন । তারপর পা ভেঙ্গে প্রায় দের মাস কলেজে আসতে পারেনি । মতিন এর নানা বাড়িতে নারকেল গাছে আছে সেটা সত্যি কথা ছিলো । কিন্তু মতিন যে কোনদিন সেই গাছে ওঠেনি সেটা ও বলেনি । “ তোর ঝাড় ফুঁক তুই রাখ আমার ওসবে কাজ নেই” আমি বললাম , “ সে হবে না দোস্ত , উপর থেকে নির্দেশ এসেছে , তোর একটা হিল্লা করতেই হবে” উপর থেকে কে নির্দেশ দিলো আবার মতিন কে , মতিন পুরোপুরি ফকিরি লাইনে চলে গেলো নাকি , ভাবতে লাগলাম । মতিন এর মুখ দেখে মনে হচ্ছে ও চাইছে আমি জিজ্ঞাস করি এই উপর থেকে নির্দেশ কে দিয়েছে । কিন্তু এখন আর আমি মতিন এর প্রতি আগ্রহ পাচ্ছি না । মনে হচ্ছে ও চলে গেলেই ভালো । ভবেছিলাম ওর অবস্থার উন্নতি হয়েছে , কিন্তু এখন মনে হচ্ছে ও ধিরে ধিরে পাগল হয়ে যাচ্ছে । কথা বলছে কিন্তু তার কোন আগা মাথা নেই । তাই চুপ করে থাকলাম , হয়ত চুপ করে থাকলে ও নিজেও চুপ থাকবে । “ যা এক কাপ চা খাওয়া , তোকে সব খুলে বলছি” মতিন বুঝতে পারেছে আমি আর কিছু জিজ্ঞাস করবো না তাই নিজে থেকেই বলতে চাইছে । কিন্তু আমি শুনতে চাইছি না । তাই চুপ করে থাকলাম । আর এখন চা বানানোর ইচ্ছাও নেই আমার । “ ধুর তোর তো দেখি , কোন কিউরিসিটি ই নাই , চিকিৎসা অতি দ্রুত করতে হবে তোর , বল চায়ের জিনিস পত্র কই আছে , আমি নিজেই চা বানাই , আজকাল চায়ের নেশা নতুন করে হয়েছে , তুই তো জানিস , তোর ভাবী কত ভালো চা বানায়” রান্না ঘরে , বললাম আমি , তারপ হঠাত করে খেয়াল হলো , মতিন “তোর ভাবী” বলেছে , আবার বলেছে আমি জানি ওর বউ ভালো চা বানায় । এর মানে কি ? ওই মেয়েটি কে কি মতিন খুঁজে পেয়েছে । ওই যে চা ওয়ালার মেয়ে , যাকে নিয়ে মতিন আমাদের বাড়ি উঠেছিলো । মেয়েটি কিছু জিনিস পত্র নিয়ে হাওয়া হয়ে গিয়েছিলো । “তোর ভাবী তোকে নিয়ে যেতে বলসে” রান্না ঘর থেকে উচ্চস্বরে বলল মতিন । তারপর একটু বিরতি নিয়ে বলল “ আজকে নিয়া যাওয়া যাবে না , তোকে এক সপ্তা পরে নিয়া যাবো” মেয়েটির নাম মনে করার চেষ্টা করলাম কিন্তু কিছুতেই নাম মনে আসছে না । তবে মুখটা মনে আছে , দারুন সুন্দর ছিলো মুখটা , তার চেয়েও বেশি সুন্দর ছিলো হাঁসি । মেয়েটি প্রায় বলত “আপনেরে আমার আপন ভাইয়ের মতন মনে হয়” মতিন এর উপর একটু হিংসা হতে লাগলো । <><> মণ্ডি , বড় আজগুবি নাম , কিভাবে এই নাম রাখলো ওর বাবা কে জানে । নিশ্চয়ই অন্য কোন ভালো নাম আছে , কিন্তু জিজ্ঞাস করা ঠিক হবে কিনা বুঝতে পারছি না । হয়ত জিজ্ঞাস করলে মনে করবে ওর এই নামটা সুন্দরা না বলে অন্য নাম খুজছি। এখন আর ১৪-১৫ এর কিশোরী না মণ্ডি । দেখে পাকা গৃহিণীর মত লাগছে , চেহারায় বয়স আর দারিদ্র ছাপ ফেলেছে , তবে হাসিটা এখনো উজ্জ্বল । আমাকে দেখেই বলে “ভাইজান আসছেন? আপনের বন্ধুরে বললাম আরও আগে নিয়া আসতে , তার নাকি সরম করে । কয় বিছানার চাদ্দোর কিনি , জানালার পর্দা কিনি তারপর আনবো” সত্যি সত্যি বিছানায় নতুন চাদর পাতা , জানালায় ও সুন্দর পর্দা ঝুলছে । মণ্ডির কথায় দেখলাম মতিন খুব লজ্জা পেয়েছে । তাই দোকানে জাবার কথা বলে বেড়িয়ে গেলো । আমার সাথে দেখা করার এক সপ্তা পর আমাকে নিজের বাড়ি নিয়ে এসেছে মতিন । বাড়ি বলতে একটা ঘর , টিনশেড একটা ঘর । পরিবেশটা বস্তির মতন । সবাই একটা বাথরুম আর পাশাপাশি তিনটা টয়লেট ব্যাবহার করে । এই জায়গায় মতিন ওর মণ্ডি কে নিয়ে ঘর পেতেছে । কিন্তু মতিন কে দেখে মনে হয় ও স্বর্গে আছে । ওর চারপাশে সেই আনন্দের ধূলিকণা উড়ছে । যাই হোক মতিন এর বউ আমাকে এনে নতুন চাদর বিছানো বিছানায় বসানো হলো , ঘরে কোন চেয়ার নেই । এই এক বিছানা আর একটা আলনা আর একটা বেতের তৈরি বুক শেলফ যার নিচের তিনটে তাক হাড়ি পাতিল রাখার কাজে ব্যাবহার করা হয় । আর উপরের তাকে প্রসাধনী । মণ্ডির আচরণে মনে হচ্ছে না ওর সাথে প্রায় দশ বছর দেখা নেই । বিছানায় বসিয়ে বলল “ পা উঠাইয়া বহেন ভাইজান , আরাম কইরা বহেন , আপনের বন্ধুর এহনো চেয়ার কিনার মুরুদ হয় নাই, আপনের স্বাস্থ্য এহন কেমুন?” আমি মাথা নেড়ে বোঝালাম আমার স্বাস্থ্য এখন ভালো । আসলেই অনেক দিন শরীর খারাপ হয় না । “ ভালো হইলেই ভালো , আপনের বন্ধুর তো আপনের সইল লইয়া মেলা টেনশন , হের বিশ্বাস আপনেরে বিয়া করাইলে আপনের অসুখ চইলা জাইবো” এই কথা বলে মণ্ডি হাসতে লাগলো । মলিন হয়ে আসা মুখে উজ্জ্বল হাঁসি । হাঁ এই কথা মতিন প্রায় বলে আমাকে , কিন্তু মতিন যে অন্য কারো সাথে এই নিয়ে আলোচনা করে সেটা জানতাম না । অবশ্য মণ্ডির কথা আলাদা , আমার মনে হয় না দুনিয়ায় এমন কোন বিষয় আছে যা নিয়ে মতিন মণ্ডির সাথে কথা বলে না । এক দিক থেকে ব্যাপারটা ভালো । মতিন ওর দুনিয়াটা মণ্ডিতে সীমাবদ্ধ করে ফেলেছে । এতে করে দুঃখ কষ্ট কমে গেছে ওর , যার দুনিয়া যত ছোট তার ঝামেলা তত কম । সেই ক্ষেত্রে আমার ঝামেলা সবচেয়ে কম । কারন আমার দুনিয়া সুধু আমিময় । ভাবতে ভাবতে নিজে থেকেই ঠোঁটে হাঁসি খেলে গেলো আমার , মণ্ডি এতক্ষন কি বলছিলো শুনতে পাইনি । কি যেন একটা প্রশ্ন করেছে আমি উত্তর দিলাম হু বলে । “ তাইলে তো ভাইজান হইয়াই গেলো , আমি আপনের বন্ধুরে বইলা দিমু যত তারাতারি সম্ভব বেবস্থা করতে” মণ্ডি হাসতে হাসতে বলল । মেয়েটা সারাক্ষণ হাসে । একটা আট নয় বছরের ছেলে কে সেই প্রথম থেকেই মণ্ডির পেছন পেছন ঘুরতে দেখছি । বেশ কালো নাদুস নুদুস চেহারা , মণ্ডি বাঁ মতিন কারো মতই দেখতে নয় । কোন কিছু নিয়ে কথা শুরু করতে হবে তাই জিজ্ঞাস করলাম । এটা কে ? অমনি মণ্ডির কথার ফোয়ারা শুরু হলো । এক দিক থেকে ভালোই হলো , মণ্ডি এতদিন কোথায় ছিলো , কেন চলে গিয়েছিলো , কিভাবে মতিন এর সাথে আবারদেখা হলো সব জেনে ফেললাম কোন প্রশ্ন না করেই । মণ্ডির কথায় জানা গেলো , মণ্ডি মতিন কে ভালোবেসে বিয়ে করেনি । এক প্রকার কৌতূহল থেকেই বিয়ে করেছিলো । একটা বড়োলোক (যদিও মতিনের বাবা এমন বিত্তশালী ছিলো না , তবে একজন চা ওয়ালার মেয়ের কাছে বিত্তশালী) বাড়ির ছেলে ওর প্রতি দুর্বল সেটা জানার পর নাকি মণ্ডির মনে হয়েছিলো , দেখি কেমন লাগে । আর এই কৌতূহল থেকেই মতিন কে বিয়ে করেছিলো কিশোরী মণ্ডি । কিন্তু বিয়ের পর যখন দেখলো , মতিন আর বড়োলোক নেই , তখন মণ্ডির কৌতূহল এর অবসান হয়েছিলো । তাই মতিন কে ছেড়ে চলে গিয়েছিলো । মতিন এর বাবা মতিন কে আর জায়গা না দিলেও । মণ্ডির চা ওয়ালা বাবার জন্য মেয়ের এই হঠাত করে একজন ছেলের সাথে চলে যাওয়া এবং কিছুদিন পর ফিরে আসা , কোন লজ্জা জনজ ব্যাপার ছিলো না । তাই সাদরে গ্রহন করা হয়েছিলো মণ্ডিকে , তবে মণ্ডি সেখানেও বেশিদিন থাকেনি । এবার সত্যি সত্যি প্রেমে পরেছিলো মণ্ডি। এক হকার এর সাথে পালিয়ে বিয়ে করে মণ্ডি । তার সাথেই ছিলো ছয় সাত বছর , আর এই ছেলে হচ্ছে সেই বিয়ের ফল বাঁ ফুল । এক পর্যায়ে সেই হকার এর সাথে বিচ্ছেদ হয় মণ্ডির । হকার দ্বিতীয় বিয়ে করে চলে যায় , তখন মণ্ডি ছেলে নিয়ে একা একা থাকতো । যখন যে কাজ পেত সেই কাজ করতো । কিন্তু একটা অসুবিধা ছিলো , সেটা মণ্ডির ভাষায় এমন “ একলা মাইয়া মানুষ হইলো খোলা রসের হাড়ি , বুঝলেন ভাইজান , ব্যাটা মানুষ খালি ভন ভন করে” তাই খোলা হাড়ির জন্য একটি ঢাকনা দরকার ছিলো মণ্ডির । আর সেই ঢাকনা হিসেবে আবির্ভাব হয় মতিন এর । মণ্ডির দরকার ছিলো একটি ঢাকনা , আর মতিনের ঢাকনা হতে কোন আপত্তি ছিলো না । তাই দুজনে আবার এক সাথে থাকতে শুরু করে । “ এই দেখ আমি একলা প্যাঁচাল পারতেসি , ভাইজান আপনে বহেন আমি খাবার দেই” এই বলে মণ্ডি ও চলে গেলো । সুধু রয়ে গেলো ছেলেটি । ফেলফেল করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে । আমি জিজ্ঞাস করলাম এই তোমার নাম কি ? কোন উত্তর দিলোনা ছেলেটি ফিক করে হেসে ফেলল । এমনিতে কোন মিল না থাকলেও ছেলেটির হাঁসি একদম মণ্ডির মত । উজ্জ্বল হাঁসি , এই হাঁসি দেখলে মানুষ এর মন থেকে ময়লা আবর্জনা দূর হয়ে যায় । হয়ত মতিন এই হাসির জন্যই মণ্ডির ঢাকনা হতে আপত্তি করেনি । হয়ত এই হাসির কারনেই মতিন এর অকালে বুড়িয়ে যাওয়া চেহারায় তেল চকচকে ভাব ফিরে এসেছে । হয়ত এই হাসির কারনেই মতিন আর ওর বসের দেয়া সাফারি সেট পরে ঘুরে বেড়ায় না ।
17-01-2023, 11:49 PM
আগের পাওয়ার টা পাচ্ছি না কেন?
হয়তো অনেকদিন পর বলে, মাঝে মাঝে একটু কেমন যেন লাগলো। তবে জানি আবার সেই পাওয়ার হিট আসবে সেই অপেক্ষায় রইলাম। হাত বাড়িয়ে ছুঁই না তোকে, মন বাড়িয়ে ছুঁই।
দুইকে আমি এক করি না, এক কে করি দুই।।
18-01-2023, 10:19 AM
13-02-2023, 02:59 PM
(This post was last modified: 15-02-2023, 09:16 PM by cuck son. Edited 2 times in total. Edited 2 times in total.)
বাড়ির কাজ শুরু হয়েছে , আমাকে এখন মেজো আপার বাড়িতে থাকতে হচ্ছে । অন্য কারো বাড়িতে থাকতে বেশ বিরক্ত লাগছে। তবে আমার চেয়ে বেশি বিরক্ত তিতলি , এই বয়সী ছেলে মেয়েরা উটকো ঝামেলা পছন্দ করে না । আর আমি উটকো ঝামেলা ছাড়া কিছুই না । একবার মেজো আপার কাছে বললাম যে আমি আর থাকতে চাই না , শুনে মেজো আপা তেলে বেগুনে জ্বলে উঠেছিলো ।
বলেছিলো , “ এটা কি তোর পরের বাড়ি রে , আমার বাড়ি থাকতে তুই কেনো অন্য জায়গায় একা একা ভাড়া থাকবি?” কথা গুলো মেজো আপা যে মন থেকেই বলেছিলো সেটা আমি নিশ্চিত । কিন্তু আমি কিছুতেই এটা নিজের বাড়ি হিশেবে থাকতে পারছি না । বিশেষ করে ভাগ্নির সামনে পড়লে কেমন জানি অস্বস্তি লাগে । আরশির ঘটনার পর থেকেই তিতিলি আমাকে পছন্দ করে না। কে জানে কি ভেবে নিয়েছে মেয়েটা । আমিও সাহস করে কিছু বলতে যাই না , এই বয়সী ছেলে মেয়ে গুলো আনপ্রেডিক্টেবল। বাড়ির কাজ দেখতে প্রায় রোজ আমাকে পাঠানো হয় । আমিও একটু ঘুরাঘুরি করে শেষে মতিনের ঘরে গিয়ে বসে থাকি । মন্ডি আমাকে নিয়ে তেমন বাড়তি আয়োজন করে না । এই দিকটা আমার ভালো লাগে , নয়তো জেতাম না ওদের ওখানে । বেশিরভাগ সময় মতিন থাকে না , অবশ্য এটাই ভালো থাকলে বাড়াবাড়ি করে খুব । কিন্তু মণ্ডি সম্পূর্ণ ভিন্ন , গল্প গুজব করে তারপর দুপুরের খাওয়ার সময় হলে বলে “ভাইজান গপসপ তো অইলো , ভাত খাইবেন নি , তরকারি অবশ্য বালা না”। বেশিরভাগ সময় আমি খাই না , মণ্ডিও সাধাসাধি করে না । তবে মাঝে মাঝে খাই , ওরা যা খায় তাই দিয়ে খাই । খাওয়া নিয়ে আমার তেমন আগ্রহ ছিলো না কোনদিন ই । তবে মাঝে মাঝে খাওয়ার কথা উঠলে মায়ের দোয়া রেস্তোরার রজবের কথা মনে পরে । শেষ পর্যন্ত আমি রজবের খোঁজ পেয়েছি , একদিন পুরনো মায়ের দোয়া হোটেল খোলা পেয়ে সেখানে ঢুকেছিলাম , দেখি মালিকানা পরিবর্তন হয়েছে । তবে পুরনো বয় একজনকে পেয়ে গেলাম । আমাকে দেখে ছেলেটিই এগিয়ে এসেছিলো । “স্যারের শরীর ভালো নি?” সামনে এসে প্রশ্ন করতে প্রথমে চিনতে পারিনি । “রজব ভাই আপনের কথা জিগায় খুব” এ কথা বলতেই ছেলেটিকে চিনতে পেরেছিলাম । এই ছেলেটি পুরনো মায়ের দোয়া হোটেলে কাজ করতো । রজবের কি হয়েছে জিজ্ঞাস করতেই ছেলেটি আবেগ আপ্লূত হয়ে পরেছিলো । তবে যা বলল তাতে আমি নিজেও বেশ ঘাবড়ে গিয়েছিলাম । রজব আছে জেলে , তাও ছোটখাটো ব্যাপারে না একদম খুনের মামলা চলছে ওর নামে । নিজের মেয়ের জামাই কে খুন করেছে রজব । “ স্যারের একদিন সময় হইলে গিয়া দেখা কইরা আইসেন? আপনে গেলে একটু বল পাইবো ভাইয়ে” ভেজা চোখে বলেছিলো ছেলেটি । আমার মত নির্জীব একটা মানুষকে দেখে রজবের মত কর্ম চঞ্চল মানুষ কেমন করে বল পাবে সেটা আমি বুঝিনা। তবুও ঠিক করেছি একদিন গিয়ে দেখা করে আসবো । কিন্তু যাওয়া ও হয় না , ইচ্ছে করেই যাই না । রজব ছেলেটির ভবিষ্যৎ নিয়ে খুব বড় সপ্ন ছিলো । ঢাকা শহরের সবচেয়ে বড় রেস্তোরার মালিক হওয়ার সপ্ন ছিলো ওর মাঝে । তাই এমন ওকে জেলখানার গারদের পেছনে একজন খুনের আসামি হিশেবে দেখতে আমার ভালো লাগবে না । <><> জেল খানার মুল ফটকে বসে আছি ঘণ্টা খানেক হলো । রজবের সাথে দেখা করার কথা বললে আমাকে জিজ্ঞাস করা হয়েছিলো আমি কি হই। উত্তরে বলেছিলাম বন্ধু , যদিও রজবকে ঠিক বন্ধু বলা যায় কিনা জানি না । তবে এজকে এই শব্দটি ছাড়া অন্য কোন শব্দ খুঁজে পেলাম না । আসলে রজবের সাথে আমার সম্পর্ক কি সেটা আমি নিজেও জানি না । একটা পুলিশ কে দুশো টাকা দিয়েছি । বলেছে দেখা করিয়ে দেবে , আত্মীয়স্বজন ছাড়া নাকি খুনের আসামীর সাথে দেখা করা দুস্কর । আর এই দুস্কর কাজ কে সহজ করার জন্য একশো টাকার দুটো নোট দরকার । আমার মনে হচ্ছে নোট দুটো তেমন কাজ করছে না । তাই আমার দেখা করার চান্স আসছে না । উঠে চলে আসবো ভাবছি ঠিক সেই সময় আমার ডাক এলো । আমি জেল খানার ভেতরে ঢুকলাম , জীবনে ভাবিনি এখানে আসবো । যেমনটা ভেবেছিলাম জেলখানা তেমন নয় , চারিদিকে সুন্দর ছিমছাম ভাবে সাজানো । জায়গায় জায়গায় ফুল গাছ লাগানো । এবং সেই ফুল গাছের যথেষ্ট যত্ন করা হয় দেখেই বোঝা যাচ্ছে । “স্যার আপনে” আমাকে দেখে রজন বেশ আশ্চর্য হয়েছে । আমিও কম আশ্চর্য হলাম না । রজব কে চেনাই যাচ্ছে না , ছক দুটো কোটরে ঢুকে গেছে । স্বাস্থ্য ভেঙ্গে গেছে , এই রজব আর মায়ের দোয়া হোটেলের রজবের মাঝে কোন মিল নেই । দুজনেই কিছুক্ষন চুপ করে ছিলাম , আসলে কি নিয়ে কথা বলবো ভেবে পাচ্ছিলাম না । আগে রজবের সাথে আমার কথা হতো খাওয়া দাওয়া নিয়ে । রজব নানা রকম খাবার রান্না করে আমাকে খাওয়াত আর সেই রান্নার কথা বলত । মাঝে মাঝে অবশ্য নিজের সপ্ন নিয়েও কথা বলত । “ কি হয়েছে রজব , এই অবস্থা কেনো হলো?” কিছুক্ষন চুপ থেকে জিজ্ঞাস করালাম আমি রজব সহসা কোন উত্তর দিলো না , মুচকি হাসল সুধু । তারপর বলল “সবই কপাল স্যার, আমার কথা বাদ দেন , আপনের শরিল কেমন?” রজব কে দেখেই বোঝা যাচ্ছে জীবনের কাছে হেরে গেছে ও । নিজের লালিত সপ্ন গুলি কে কবর দিয়ে ফেলেছে । আশাহত চোখের দৃষ্টি বলে দিচ্ছে সামনে আর কিছুই দেখতে পায়না তারা । মনটা খুব খারাপ হয়ে গেলো , নিজের দল ভারী হতে দেখে খুশি হওয়ার বদলে মুষড়ে পড়লাম । শেষে বিদায় বেলায় এসে রজব নিজেকে মেলে ধরলো , আমার হাত দুটো ধরে কেঁদে ফেলল ,”স্যার যদি পারেন আমার পরিবারের খোঁজ নিয়েন, আপনেরে আমার বড় ভাইয়ের মতন মনে হয়, আপনে আসেন জানলে মইরাও শান্তি পামু” মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে বেড়িয়ে এসেছিলাম , আমার একটা মিথ্যা আশ্বাসে রজবের মুখে হাসি ফুটে উঠেছিলো , সত্যি সত্যি হাসি। বানানো মেকি হাসি নয় । মাঝে মাঝে মনে হয় আমার মত একটা মানুষের উপরও কেউ এমন ভরসা করতে পারে । এসেছিলাম রজবের মনের বল বৃদ্ধি করতে ফিরে যাচ্ছি নিজের মন ভারী করে । বাড়িতে ফিরতে ইচ্ছে হলো না , এমনিতেই হাঁটাহাঁটি করতে লাগলাম । হাটতে হাটতে একটা পার্কার মত জায়গায় চলে এলাম । মধ্য দুপুরে সুন্দর ছায়া ঘেরা জায়গা । একটা নিরবিলি জায়গা দেখে বসে পরলাম । রজবের বর্তমান অবস্থা দেখে মন খারাপ হয়েছে , তবে ভেতর ভেতর একটা অনুসুচনা ও হচ্ছে । আর অনুসুচনা আমাকে আরও বেশি কাবু করে ফেলছে । যদিও অনুসুচনা হওয়ার কারন খুব দুর্বল । আমি চেষ্টা করলেও হয়ত আজ এই দিনকে ফেরাতে পারতাম না । রজব হয়ত আমার কথা শুনত না । তবে চেষ্টা করা উচিৎ ছিলো বলে মনে হচ্ছে । হয়ত আরও একটু কঠিন ভাবে বুঝিয়ে বললে রজব সেদিন আমার কথা শুনত । মেয়ের বিয়ে তখন দিতো না । “ আমার কি এসে যায়” হয়ত এই ভেবে সেদিন আমি কিছু বলিনি । “ কথা বলার জন্য সঙ্গী খুঁজছেন?” আকাশ কুসুম যখন ভাবছিলাম তখন হঠাত কথা গুলো শুনে আমার ধ্যান ভাংলো । দেখি সামনে একটি মেয়ে দাড়িয়ে * পরা । সুধু চোখ দুটো দেখা যাচ্ছে । বেশ অবাক হলাম আমি , হঠাত এমন প্রশ্ন কেনো? “জী আমাকে কিছু বলছেন?” আমি জানতে চাইলাম । বেশ অবাক লাগছে , হঠাত করে মেয়েটি আমাকে কেনো জিজ্ঞাস করছে কথা বলার সঙ্গী খুজছি কিনা। মেয়েটি আমার পাশে বসে পরলো , বলল “জী আপ্নাকেই বলছি , একা একা বোর হচ্ছেন নিশ্চয়ই?” মেয়েটির কণ্ঠ বেশ সুন্দর , কথা বলার ভঙ্গিও বেশ ভালো । এমন কণ্ঠ যার তার সঙ্গে কথা বলতে যে কেউ চাইবে । কিন্তু আমার প্রস্ন হচ্ছে মেয়েটি যেচে এসে কথা বলতে চাইছে কেনো? “ আপনি চাইলে আমার জানা সুন্দর স্পট আছে , দুজনে গল্প করতে পারি, কেউ ডিস্টার্ব করবে না” মেয়েটি আবারো বলল “ জী না মানে , আপনি কি আমাকে চেনেন?” আমি বোকার মত জিজ্ঞাস করলাম । সুন্দর করে হাসল মেয়েটি , বলল “ পরিচিত হতে কতক্ষন লাগে, কথা বলতে বলতেই পরিচয় হয়ে যাবে” “ জী বলুন” আমি বললাম , “ আপনি কতক্ষন বসবেন?” “ ঠিক বলতে পারছি না” আমি এখনো কিছু বুঝতে পারছি না মেয়েটির কথা । “ সন্ধ্যা পর্যন্ত ১০০০ , সন্ধার পর অন্য রেট” মেয়েটি এতো স্বাভাবিক ভাবে বলল যে কয়েক মুহূর্ত লেগে গেলো আমার বুঝতে। আগে জানতাম পার্ক গুলোতে রাতের বেলায় পতিতারা ঘুরে বেড়ায় । কিন্তু এমন ব্যাপার ও যে আছে সেটা জানতাম না । কথা বলে সময় কাটানোর জন্য মানুষ টাকা ব্যয় করে !!! “ ঠিক আছে , আপনি ৫০০ দেবেন, চলুন ভেতরে যাই” মেয়েটি সাবলিল ভাবে বলে উঠলো আমি যত দেখছি তত অবাক হচ্ছি , এরকম ব্যাপার আগে দেখিনি কোনদিন । “ না না এখানেই বসি” আমি বললাম আমতা আমতা করে , “আপনি শিওর? ভেতরে নিরিবিলি ছিলো” মেয়েটির চোখ দুটো বলে দিচ্ছে এবার সে অবাক হচ্ছে । “ না মানে আমি একা বসতে চাচ্ছিলাম” আমি বুঝিয়ে বললাম । “ একা একা কি সময় কাটে? , চলুন খুব সুন্দর কাটবে আপনার সময় , চাইলে বাড়তি কিছু হবে” “ প্লীজ আমার মনটা ভালো নেই একটু একা থাকতে চাচ্ছিলাম” আমি অনুরোধ করলাম সত্যি বলতে মেয়েটার সাথে কথা বলতে ভালোই লাগছিলো আমার , কৌতূহল হচ্ছিলো , কিন্তু ভয় ও হচ্ছিলো এক ধরনের । “ আমার সাথে শেয়ার করবেন , আমি খুব ভালো স্রোতা” মেয়েটি ওঠার নাম নিচ্ছে না । আসলে আশেপাশে আমি ছাড়া আর কেউ নেইও যে মেয়েটি তার কাছে যাবে । “ চলুন , ঠিক আছে আরও দুশো কম দেবেন” মেয়েটি আমাকে চুপ থাকতে দেখে বলল । এমন সময় আরও একজন কে এসে বসতে দেখা গেলো , ২৫-২৬ এর যুবক বয়স । মেয়েটি আমাকে আরও একবার জিজ্ঞাস করে তারপর উঠে গেলো । ধিরে ধিরে ওই ছেলেটির কাছে এগিয়ে যাচ্ছে । হয়ত একি প্রশ্ন করবে তাকে । আমি মেয়েটির চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলাম । কিছুক্ষন পর * পরা মেয়েটি ওই ছেলের সাথে নিরবিলি জায়গায় চলে গেলো । জায়গাটা আবারো ফাকা হয়ে গেলো। সুধু আমি আর কিছু কাক । কাক গুলো এতক্ষন ছিলো না নতুন এসে জুটেছে । মনটা আবার রজবের দিকে চলে গেলো । ভাবলাম ওই মেয়েটার সাথে কিছুক্ষন কথা বললেই মনে হয় ভালো হতো। কিন্তু কি কথা বলতাম , কথা বলার তো কিছুই নেই । কিছুক্ষন পর একটা ছেলে আর মেয়ে এসে বসলো , কলেজ ড্রেস অথবা কলেজ ড্রেস ও হতে পারে । আমাদের সময় কলেজে ড্রেস ছিলো না আজকাল কলেজ ড্রেস আছে । কাধে ব্যাগ ঝুলিয়ে কলেজে যেতে হয় , ঠিক কলেজের মতন । তবে আমার কাছে মনে হচ্ছে এরা কলেজের ছেলে মেয়ে । কলেজ বাঙ্ক করে এখানে এসছে । কিছুক্ষন বসছে আবার উঠে দারাচ্ছে , একে অপরের হাত ধরে হাঁটছে । আবার দুষ্টুমি করছে , ছেলেটা মনে হয় দুষ্টু কোন কথা বলেছে , মেয়েটা তাই মারছে । ছেলেটা দৌরে পালানোর চেষ্টা করছে হাসতে হাসতে । আচ্ছা এই যে মেয়েটা কলেজ বাঙ্ক করে বন্ধুর সাথে ঘুরাঘুরি করছে , এতে কি কেলেঙ্কারি হয়ে যাচ্ছে ? রজব তো এই কেলেঙ্কারির ভয়েই মেয়ে কে বিয়ে দিয়ে দিয়েছিলো । আর ওই * পরা মেয়েটা? অচেনা মানুষের সাথে নিরিবিলিতে কথা বলে টাকা উপার্জন করছে । হয়ত বাড়িতে অসুস্থ পিতা রয়েছে , অথবা অসুস্থ মা । নয়তো অবুঝ সন্তান । এই টাকা নিয়ে তাদের ভরন পোষণ করছে । এটা কি কেলেঙ্কারির মাঝে পরে? হ্যাঁ পরে অন্তত আমার চোখে রজবের চোখে এই জীবন কলঙ্কের । কিন্তু বেঁচে তো আছে । <><><> রজবের ঘটনায় মনটা কয়েদিন খুব খারাপ যাচ্ছিলো , তাই মতিন এসে যখন বলল চল বন্ধু ঘুরে আসি। আমি না করলাম না , কোথায় যাবে সেটাও জিজ্ঞাস করলাম না । এমনিতে মেজো আপার বাড়িতে থেকে হাঁপিয়ে উঠছিলাম । কিন্তু বলতে পারছিলাম না যে চলে যাই । বাসা ভাড়া বাবদ বিল্ডারস কম্পানি থেকে যে টাকাটা পাচ্ছি সেটা মেজো আপার হাতেই যাচ্ছে । মতিন আমাকে কোথায় ঘুরতে নিয়ে যাবে সেই নিয়ে প্রথমে চিন্তা না করলেও বাসে ওঠার পর মন কেমন খুঁত খুঁত করতে লাগলো। কোথাও ঘুরতে যাওয়া হয়না অনেক দিন , সেই ইউনিভার্সিটিতে থাকার সময় বন্ধুরা মিলে ঘুরতে গিয়েছিলাম । এর পর আর যাওয়া হয়নি অনেককাল । মতিন কিন্তু কোনদিন ই এই ঘুরাঘুরি করা ছেলে ছিলো না । আমরা কলেজে যখন সবাই মিলে ঘুরতে গিয়েছিলাম তখন মতিন যায়নি আমাদের সাথে । তাই ঠিক মতিনের উপর ভরসা হচ্ছিলো না । প্রায় সাত ঘণ্টা বাস জার্নি করে মতিন আমাকে একটা গ্রামের বাজারে এনে নামালো । সব দোকানপাট বন্ধ । সুধু একটা দোকানে আলো জ্বলছে । বুঝলাম মতিনের সাথে আসা ভুল হয়েছে । এ কোথায় এনে ফেলল আমাকে । অবশ্য মতিন আমাকে যদি কোন আলো ঝলমলে , কোলাহল যুক্ত টুরিস্ট এলাকায় নিয়ে যেত তারপর ও আমি ভাবতাম , মতিনের সাথে ঘুরতে আসা ভুল হয়েছে । আমার আসলে বেড়ানোর কোন আগ্রহ নেই । জাস্ট মেজো আপার বাসা থেকে কয়েক দিনের জন্য মুক্তি পাওয়ার ইচ্ছা । সেই সাথে রজবের ঘটনা থেকে মন কে দূরে সরিয়ে নেয়া । সেই কানা রাতেই দোকানি একটা ভ্যান যোগার করে দিলো আমাদের । মোবাইল ফোনের কারিশমা সত্যি ই অতল । গ্রাম্য এলাকা হলেও বেশ সুন্দর রাস্তা , ভ্যান কোন রকম ঝাকুনি ছাড়াই এগিয়ে চলছে । মিনিট বিশেক ভ্যান চলার পর একটা বাড়ির সামনে এসে থামল । টিনের বেড়া দেয়া চারিকে , সেই বেড়া ঘেঁষে লম্বা লম্বা নারকেল গাছ রাতের অন্ধকারে প্রহরীর মত দাড়িয়ে আছে যেন । “ তোকে বলেছিলাম না আমার চাচার বাড়িতে নিয়া আসবো , এই হইলো সেই চাচার বাড়ি” সব কটা দাত বের করে হাসছে মতিন। প্রথমে বুঝতে না পারলেও একটু পর বুঝতে পারলাম এটা নিলুফারদের বাড়ি । মতিনের বিশ্বাস নিলুফারের সাথে বিয়ে হলে আমার অসুখ সেরে যাবে । আমি বোবা হয়ে গেলাম , প্রচণ্ড রাগ হলো মতিনের উপর । ইচ্ছে হচ্ছে এখনি ভেনে উঠে ফিরতি পথ ধরি । কিন্তু ততক্ষণে ভ্যান চলে গেছে অনেক দূর । বাড়ি থেকেও কেউ একজন বেড়িয়ে এসেছে “কে রে ঐখানে” “চাচাজি আমি মতিন” মতিন উত্তর দেয় । <><><>
14-02-2023, 11:41 AM
এই তো , আবার ফিরে এসেছে ওই জাদুর লিখন !!
ভ্যালেন্টাইন দিবসের শুভকামনা সবাইকে।
14-02-2023, 12:55 PM
14-02-2023, 01:15 PM
14-02-2023, 07:50 PM
শিবুদার ভ্যালেন্টাইন
শিবুদাকে জিজ্ঞাসা করলাম, তোমার ভ্যালেন্টাইন্স ডে নিয়ে কোনও গল্প নেই? শিবুদা হেসে বলল, জীবনের সবথেকে বড় ঘটনাটাই তো আমার ভ্যালেন্টাইস ডে-তে ঘটেছিল রে। শুনবি? আমি উৎসাহিত হয়ে বললাম, এখনই শোনাও। শিবুদা বলল, তখন আমি কলকাতায় একটি মেসে থাকি আর কলেজে পড়াশোনা করি। কলেজে একটি মেয়েকে ভারি পছন্দ হল। বন্ধুরা বলল ভ্যালেন্টাইন্স ডে-তে একগোছা গোলাপ আর একটা লাভলেটার দিয়ে প্রপোজ কর। তো আমি ভাবলাম সকলে তো গোলাপ দিয়ে প্রপোজ করে, আমি কিছু আলাদা করি। এক চেনা চাষীর কাছ থেকে বেশ কিছু কুমড়োফুল কিনে একটা বোকে বানালাম আর চিঠিতে লিখলাম- মাননীয়া, আপনার সমীপে সবিনয় নিবেদন এই যে, আমি শ্রীমান শিবুদা মাসাধিককাল হইল আপনার প্রেমে পতিত হয়েছি। কিন্তু কী করিয়া জানাইব তাহা বুঝিতে পারিতেছিলাম না, বন্ধুগন বলিল ভ্যালেন্টাইন্স ডে তে প্রপোজ করিলে তাহা বিফলে যায় না, বন্ধুগন আমাকে গোলাপফুলের কথা বলিয়াছিল, কিন্তু আমি ভাবিয়া দেখিলাম , গোলাপ তো দিনের শেষে ফেলিয়া দিতে হয়, আর তাহার মূল্যও অত্যধিক, তাই মাচার একেবারে তাজা কুমড়োফুল একগোছা আপনাকে উপহার দিলাম, এই ফুল দেখিতে সুন্দর তদুপরি ব্যাসন দিয়া ভাজিয়া খাইলে রসনাও তৃপ্ত হয়। আশা করি বড়া খাইয়া আপনি ফুলগুলির সদগতি প্রাপ্তি ঘটাইবেন। গুরুজনদের প্রণাম এবং আপনি আমার সশ্রাদ্ধ ভালবাসা গ্রহণ করিবেন। ইতি ভবদীয় শিবুদা আমি শিবুদার মুখে এমন চিঠির বয়ান শুনে হতবাক। বললাম সর্বনাশ, তুমি কী! নিশ্চয়ই সেই মেয়েটি তারপর দিন থেকে জীবনে তোমার আর মুখদর্শন করেনি? শিবুদা হেসে বলল, তাহলের শোন পরের দিন কী হল। সেই মেয়েটি লাজুকমুখে আমার কাছে এসে একটি টিফিনকৌটো আর একটি চিঠি ধরিয়ে দিয়ে আবার লাজুক হেসে চলে গেল। আমি চিঠি খুলে পড়লাম, আমার প্রাণপ্রিয় শিবুদা, গোলাপ ফুলের বদলে কুমড়ো ফুল দিয়ে যে প্রপোজ করতে পারে সে কোনও সাধারণ মানুষ নয়, মহাপুরুষ, কলিযুগে আপনি যে যুগাবতার হবেন তা আমার মন বলছে, আপনাকে আমার প্রথম দিন থেকেই খুব পছন্দ। কুমড়ো ফুলের বড়া আমরা খুব আনন্দ করে খেয়েছি, আর আমিও আপনাকে আমার বাড়ির সজনে গাছের ফুল দিলাম, যেহেতু আপনি মেসে থাকেন তাই হয়ত রান্নাবান্না সেইভাবে করতে পারেন না, তাই বাড়ি থেকে একেবারে ভেজেই নিয়ে এসেছি। আপনি খেলে খুব খুশি হব। হ্যাপি ভ্যালেন্টাইন্স ডে। লব ইউ শিবুদা। আমি পুরো বোমকে গেলাম। মাথাটা ঘুরছিল। শুধু কোনওমতে জিজ্ঞাসা করলাম, সেই মহীয়ষী নারী কে শিবুদা? শিবুদা মুচকি হেসে বলল, তোর বউদি, আবার কে !!!
15-02-2023, 01:30 AM
পুরনো ভাইবটা ফিরে এসেছে।
আবারও সেই পরের লাইনের প্রতি আগ্রহ টা বেড়ে উঠেছে। দেখে মনে হয় নিতান্তই সহজ সরল জীবন কিন্তু এতোটাও সহজ নয় বাস্তবতা সেটারই যে প্রতিফলন ঘটে যাচ্ছে.. হাত বাড়িয়ে ছুঁই না তোকে, মন বাড়িয়ে ছুঁই।
দুইকে আমি এক করি না, এক কে করি দুই।।
15-02-2023, 02:21 PM
(15-02-2023, 01:30 AM)nextpage Wrote: পুরনো ভাইবটা ফিরে এসেছে। লিখতে গিয়ে কিন্তু আমার কাছে এমন কিছুই মনে হয় না। আমি বুঝতে পারি না কখন ঝুলে গেলো আবার কখন উঠে এলো । তবুও আপনাদের লাস্ট কমেন্ট পড়ার পর চেষ্টা করেছি । মাত্র দুজন পাঠক ই অবশিষ্ট আছেন আপনারা । আপনাদের কথা তো রাখতেই হবে ।
15-02-2023, 04:28 PM
(15-02-2023, 02:21 PM)cuck son Wrote: লিখতে গিয়ে কিন্তু আমার কাছে এমন কিছুই মনে হয় না। আমি বুঝতে পারি না কখন ঝুলে গেলো আবার কখন উঠে এলো । তবুও আপনাদের লাস্ট কমেন্ট পড়ার পর চেষ্টা করেছি । মাত্র দুজন পাঠক ই অবশিষ্ট আছেন আপনারা । আপনাদের কথা তো রাখতেই হবে । লেখার ফন্টের সাইজ একটু বাড়াও, চার হলে ঠিক আছে পাঁচ হলে খুব ভালো। মাইক্রোস্কোপ দিয়ে বহু কষ্টে পড়ছি শুধু একটাই কারণে যে তোমার কলমে জাদু আছে।
09-03-2023, 06:14 PM
সকালে ঘুম থেকে উঠে বাড়ির বিশালত্ব আমার চোখে পরল । বিশাল বলতে সত্যি বিশাল , একটা ফুটবল মাঠের চেয়ে কম হবে না । আমাদের যে ঘরে রাখা হয়েছে সেটা হচ্ছে বাইরের ঘর , চৌচালা টিনের ঘর সামনে বারান্দা । ঘরটা দুই ভাগে ভাগ কড়া , এক ভাগে আমি আর মতিন অন্য পাশে মসজিদের ইমাম সাহেব থাকেন । রাতের বেলাই ইমাম সাহেবেরসাথে দেখা হয়েছে । উনি এই বাড়িতেই থাকেন অবসর সময়ে বাড়ির বাচ্চাদের পড়ান । বয়স আমার চেয়ে কয়েক বছরের কম হবেন , স্বল্প তবে বেশ মিষ্ট ভাষী লোকটা , সেই সাথে মনে হলো একটু লাজুক টাইপ , মাটির দিকে তাকিয়ে কথা বলে সব সময়। ইমাম সাহেব কে আমার বেশ ভালো লেগেছে লোকটাকে দেখলে কেমন জানি মনে এক ধরনের শান্তি চলে আসে ।
মতিনের সাথে রাতে খুব তর্ক হয়েছে , তর্ক বলতে আমি ই একতরফা রাগারগি করলাম ওর সাথে । অবশ্য পাশের ঘরে ইমামা সাহেব থাকায় তেমন উচ্চস্বরে কথা হয়নি আমাদের মাঝে । সিদ্ধান্ত হয়েছে রাতটা থেকে আজ চলে যাবো । কিন্তু সকালে ঘুম থেকে উঠে বারান্দায় দাড়াতেই মনে হলো আরও কিছুদিন থেকে গেলে ভালো হতো ।এতো সকালে আমি ঘুম থেকে উঠি না , তবে এখানে বেলা করে ঘুমানো গেলো না , আলো ফোটার আগেই পাখিদের কিচির মিচিরে ঘুমানো মুশকিল বারান্দা থেকে উঠানে নামার জন্য দুই ধাপের একটা সিঁড়ি আর সেই সিঁড়ির দু পাশে সাড়ি করে ফুলের গাছ লাগানো । কয়েকটা রঙ্গন গাছ , একটা বেলি ফুল গাছ আর দুটো পাতা গাছ । আর এই গাছের যত্ন নিচ্ছে ইমাম সাহেব , একটা লুঙ্গি আর হাফ হাতা সেন্ডো গেঞ্জি ওনার গায়ে , কোমরে গামছা প্যাঁচানো। উনাকে দেখেই আমি সালাম দিলাম । আসলে সচরাচর কাউকে সালাম দেয়া হয় না , তবে একটু হুজুর টাইপ লোক দেখলেই আপনা আপনি সালাম বেড়িয়ে আসে । এটা হয় ছোট বেলা থেকে শিক্ষা পাওয়ার কারনে । ছোট বেলায় বাসায় এই টাইপ মানুষ এলেই মা অথবা বাবা বলতো “সালাম দাও উনাকে” সেই শিক্ষা আমার মগজে বসে গেছে হয়ত । ইমাম সাহবে ঘুরে তাকালেন , লোকটার হাসি বেশ সুন্দর , একটা সরলতা আছে এনার মাঝে । সালামের উত্তর নিলেন দাড়িয়ে। দেখে মনে হচ্ছে উনাকে সালাম দিয়েছি তাই বেশ লজ্জা পাচ্ছেন । “ভাই সাহবে আপনার শরীর ভালো আছে” হাতের মাটি গামছায় মুছতে মুছতে জিজ্ঞাস করলেন উনি । কেউ আমার শরীর ভালো আছে কিনা জিজ্ঞাস করলেই আমার অসুখের কথা মনে হয়ে যায় । আমার কাছে মনে হয় এ বুঝি জানে আমার অসুখের কথা । তাই এই টাইপ প্রশ্ন আমি পছন্দ করি না, সচরাচর উত্তর না দেয়ার চেষ্টা করি । কিন্তু এই লোকটার প্রশ্নের সাথে যে হাসি ঠোঁটে ধরে রেখছে সেটা নেগেটিভ পজেটিভের কাজ করছে , দুটোয় কাটাকাটি গয়ে প্রশ্নটি নর্মাল হয়ে গেছে । তাই উত্তর দিলাম আমি । লোকটা দাড়িয়েই রইলো , আর কোন কথা বলছে না তবে নিজের কাজেও যাচ্ছে না । বুঝলাম আমি বিদায় না বললে উনি যাবেন না । তবে আমার বিদায় নেয়ার কোন জায়গা নেই । মতিন এখনো ঘুমাচ্ছে , তাই যাওয়ার ও কোন জায়গা নেই । মতিন উঠলে অবশ্য ওকে জিজ্ঞাস করে , বাথরুমের সন্ধান নিতে হবে । এখনো প্রাতরাশ সারা হয়নি , ইমাম সাহেব কেও জিজ্ঞাস করা যায় , তবে ইচ্ছে হচ্ছে না । এই ধরনের লোকের কাছে সচরাচর “ভাই বাথরুম কোথায়” টাইপ প্রশ্ন করা যায় না । তাই আমি অন্য কথা জিজ্ঞাস করলাম , “হুজুর আপনার নাম কি?” উনার নাম জানা হয়নি আমার এখনো , কথা বার্তা চালানোর জন্য নাম জানা অনেক জরুরি । প্রশ্নটা শুনেই দাত দিয়ে জিভ কাটলেন উনি , বললেন “ হুজুর বলার দরকার নাই ভাই সাহেব , আমার নাম সফিকুল, আমাকে সফিকুল বলেই ডাকবেন” হুজুর শব্দের অর্থ কি আমি জানি না , তবে ইমান সাহেবদের আমরা হুজুর বলেই ডাকি । এটাই নিয়ম হয়ে গেছে , কিন্তু ইনি দেখছি হুজুর ডাকটা পছন্দ করছেন না । আমি হেসে বললাম “আচ্ছা ঠিক আছে সফিকুল সাহেব , এই বাগান আপনি করেন?” “ জী ভাই সাহেব , ফজরের পর , ছেলে পেলে পড়ানর পর আর কাজ থাকে না , তাই টুকটাক করি” সাফিকুল সাহেব হাসি মুখে উত্তর দিলেন , আমি বেশ অবাক হলাম , একটা মানুষ কি করে এতক্ষন ঠোঁটে হাসি লাগিয়ে রাখতে পারে , ঠোঁট ব্যাথা করে না? “ আপনি এই বাড়িতেই থাকেন?” “ জী ভাই সাহেব” আবারো হাসি “ মসজিদ কি ওনাদের?” “ জিনা ভাই সাহেব” “ তাহলে?” “ মসজিদে থাকার ভালো ব্যাবস্থা নাই , তাই ইনারা জায়গা দিয়েছে , আমি ইনাদের ছেলে মেয়েদের পড়াই” এতো বড় একটা লম্বা লাইন বলার সময় ও লোকটার ঠোঁটে হাসি !!!! এখন বেশ বিরক্ত লাগছে আমার । তবে কথা চালিয়ে যেতে ইচ্ছে করছে , কারন মতিন না উঠলে আমি বাথরুমের খোঁজ পাবো না । “ আরবি পড়ান?” “ জী না ভাই সাহেব , বাংলা ইংরেজি অঙ্ক ও পড়াই” হঠাত করেই যেন আমার কি হলো , আমি জজ্ঞাস করলাম “নিলুরাফর কেও কি আপনি পড়ান?” প্রশ্নটা করে একটু লজ্জায় পরে গেলাম । হয়ত সফিকুল সাহেব জানেন যে কি কারনে আমাকে এই বাড়িতে আনা হয়েছে । বাড়িতে থাকানে যেহেতু জানা থাকাটা অস্বাভাবিক না । তাই ওনার কাছে এমন সরাসরি জানতে চাওয়াটা লজ্জা জনক । প্রশ্নটা করেও যেমন লজ্জা পেয়েছি , ঠিক আবার এই লজ্জা পাওয়ার জন্য নতুন ভাবে লজ্জিত হচ্ছি । এখানে লজ্জা পাওয়ার কি আছে ? বাড়ির একটা মানুষ কে আমি নামে চিনি , তাই তার কথা জিজ্ঞাস করতেই পারি !!! “ জী ভাই সাহেব , আগে পড়াতাম , এখন পড়াই না , বড় ক্লাসের ছাত্রী আমার আয়ত্ত্বের বাইরে,” দেখলাম সফিকুল সাহেবের হাসি একটু মলিন হয়েছে , মনে হয় ঠোঁটে ব্যথা হচ্ছে । এরি মাঝে মতিন চলে এসেছে , “ কি বন্ধু এতো সকালে? অবশ্য এইখানে এসে আরামে ঘুমানো যায় না সকাল বেলা পাখিরা ডাকা ডাকি করে ডিস্টার্ব করে খুব” এই বলে মতিন বড় করে আড়মোড়া ভাংলো , তারপর সফিকুল সাহেবের দিকে তাকিয়ে বলল “আরে সফিক হুজুর , গাছ লাগাইলেন নাকি , সুন্দর গাছ হইসে তো” আমি বেশ আশ্চর্য হলাম সফিকুল সাহেব মতিনের কথার উত্তর দিলো না , নিঃশব্দে নিজের কাজে চলে গেলো । আমাকে ভেতর বাড়ির বাথরুম ব্যাবহার করতে দেয়া হলো , বেশ লজ্জা হচ্ছিলো আমার , বাড়ির বাচ্চা গুলো আমার দিকে হা করে তাকিয়ে আছে । আড়ালে যে কিছু মহিলা আমাকে দেখছে সেটাও বুঝতে পারলাম । দারুন অস্বস্তি হচ্ছিলো , প্রাতরাশ ও ঠিক মত করতে পারলাম না । বাহির ঘোরে এসেই আমি মতিন কে ধরলাম , বললাম “এবার চল যাই” “কই?” মতিন যেন আসমান থেকে পরল , গত রাতের কথা গুলো যেন বেমালুম ভুলে গেছে । “ কই মানে !!! চলে যাবো” এই শুনে মতিন দুই চোখ কপালে উঠালো , বললে “এইটা কোন কথা বললি , এভাবে কেউ যায় , শোন এইটা গ্রামের বাড়ি , এইখানে অনেক নিয়ম কানুন আছে , তুই বিয়ে না করলে না করবি , কিন্তু অন্তত দুইটা দিন থাকতে হবে” আমি মতিনের অবস্থা দেখে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম , মতিনের কণ্ঠ স্বর বলে দিচ্ছে ও দরকার হলে আমার উপর জোড় খাটাবে কিন্তু এই বাড়ি থেকে বের হতে দেবে না । আমি কিছু বলতে জাচ্ছিলাম , কিন্তু বলতে পারলাম না , দুটো কিশোর বয়সী ছেলে এসেছে নাস্তার ট্রে নিয়ে । দুজন মানুষের নাস্তা আনার জন্য দুটো বিশাল ট্রে ব্যবহার করা হচ্ছে দেখে আমি মনে মনে প্রমাদ গুনলাম । জামাই আদর শুরু করেছে ইতিমধ্যে , যেই করেই হোক আমাকে চলে যেতে হবে । নাস্তার বহর দেখে আমি অবাক , পরটা , ভাজি , ডিম , সাথে কয়েক ধরনের পিঠা , এদের বাড়িতে মনে হয় পিঠা সব সময় বানানোই থাকে । খাবার নিয়ে আমার কোন সময় ই কোন আগ্রহ নেই , খেতেও পারি কম । তাই এই সব নাস্তার কিছুই খেতে পারলাম না । ওই দুই কিশোর ছেলের শত আব্দার সত্ত্বেও । <><><> নাস্তা খেয়ে আমি আর মতিন বের হলাম , মাটির উপর ইটা বিছানো রাস্তা , দু পাশে বিশাল বিশাল গাছ । বেশ মনোরম পরিবেশ , অন্য সময় হলে হয়ত আমি এই পথে অনেক্ষন হাটতে চাইতাম , কিন্তু এখন ইচ্ছে হচ্ছে না । মতিনের এমন বিশ্বাস ঘাতকতায় মন বিষিয়ে আছে । “ কিরে কেমন লাগছে? শহরে এমন জিনিস পাবি?” হাটতে হাটতে মতিন জিজ্ঞাস করে । এর কোন উত্তর আমি দেই না । “ ইচ্ছা আছে এই গ্রামে একটা বাড়ি করে তোর ভাবি কে নিয়া আসবো , শহরে ভালো লাগেনা” মতিন উদাস হয়ে বলে , কিন্তু ওর এই উদাস ভাব আমাকে ছোঁয় না । “ মতিন কাজটা কি তুই ঠিক করছিস?” কিছুক্ষন পর আমি বললাম , “ কোন কাজটা” “ এই যে তুই আমাকে এখানে নিয়ে এলি” “ দেখ সৌরভ তুই আসলি আর তোর লগে বিয়া দিয়া দিবে , এমন কিন্তু না ব্যাপারটা , তুই থাক দুইটা দিন , ঘুইরা বেড়া , সময় হইলে বলবি মাইয়া পছন্দ হয় নাই” আমি মতিনের দিকে তাকালাম , রাস্তার পাশে ধান ক্ষেতের দিকে তাকিয়ে আছে মতিন , রস্তাটা ছায়া শীতল হলেও ধান ক্ষেতে ভিন্ন চিত্র , প্রচণ্ড রোদ । সূর্যের সোনালী আলোয় সবুজ ধান ক্ষেতের উপর মায়াময় দৃশ্যের সৃষ্টি হয়েছে । সেই সাথে বাতস এসে কিছুক্ষন পর পর ঢেউ তুলে দিয়ে যাচ্ছে । আশ্চর্য সুন্দর !!! কিন্তু এই সৌন্দর্য কতটা কষ্টকর তা হয়ত ওই উদলা গায়ের কৃষক ভাইটিকে জিজ্ঞাস করলে জানা যাবে । পিঠ পুরে কয়লার মত কালো হয়ে হয়ে গিয়েছে , এমন তেল চকে চকে যে দেখে মনে হচ্ছে সূর্যের আলো প্রতিফলিত হচ্ছে । ছায়ায় দাড়িয়ে আমাদের কাছে রোদ স্নাত ধান ক্ষেত দেখে যতটা আনন্দ হচ্ছে , তার উল্টোটা হচ্ছে সেই কৃষক ভাইয়ের । আমি মতিনের দিকে তাকালাম , বেশ ভালো করেই তাকালাম । আমি ওর মনের অবস্থা বুঝতে চাই , এসব ও কেনো করছে ? আমার জন্য ? নিলুফারের জন্য ? নাকি নিজের জন্য? নিজের জন্য কেনো করবে , এখানে ওর কি লাভ ? ওর লাভ হয়ত সেই কবির মত যে কিনা ছায়া ঢাকা গাছের নিচে দাড়িয়ে , কড়া রোদের সোনালী আলোয় শান্ত ধান ক্ষেত নিয়ে কবিতা লেখে , অথবা সেই শিল্পর মত । যে কিনা রোদ স্নাত ধান ক্ষেতে বাতাসের ঢেউ তোলা তুলির আচরে ক্যানভাস বন্দি করে রাখে তৃপ্তির ঢেকুর তোলে । মতিন নিশ্চয়ই সেরকম কিছুই করতে চাইছে , এই ছন্ন ছাড়া আমিকে একটা ঘর দিতে চাইছে । কিন্তু ও বুঝতে পারছে না কতটা রোদে পুড়তে হবে আমাকে আর আমার জীবন সঙ্গিনী কে এই ছন্নছাড়া খোলা মাঠে ঘর নামক ফসলের অংকুর ফোটাতে । <><><> |
« Next Oldest | Next Newest »
|
Users browsing this thread: 29 Guest(s)