Posts: 1,473
Threads: 7
Likes Received: 2,457 in 929 posts
Likes Given: 2,453
Joined: Mar 2022
Reputation:
512
হাত বাড়িয়ে ছুঁই না তোকে, মন বাড়িয়ে ছুঁই।
দুইকে আমি এক করি না, এক কে করি দুই।।
Posts: 1,473
Threads: 7
Likes Received: 2,457 in 929 posts
Likes Given: 2,453
Joined: Mar 2022
Reputation:
512
পর্ব- আট
কলেজের মিড টার্ম আসন্ন তাই চাপটাও ধীরে ধীরে বেড়ে চলেছে। টিউশনিতে কোচিং এ নিয়মিত ক্লাস টেস্ট শুরু হয়েছে। কয়েকদিন ধরে দম ফেলার জো পাওয়া যাচ্ছে না। ঘুম থেকে উঠেই কোচিং এ যেতে হয় তারপর সেখান থেকে এসেই নাকে মুখে কিছু একটা খেয়ে নিয়ে কলেজের দিকে ছুটতে হয় আর কলেজ ছুটির পর বাসায় এসে স্নান খাওয়া দাওয়া করে একটু বিশ্রাম তারপর আবার টিউশনির জন্য ছুটতে হয়। হঠাৎ করেই আগের গৎবাঁধা জীবনের রুটিন টা পাল্টে যেতেই আজকাল আত্মাটা কেমন হাসফাস করে উঠছে। আগে বিকেলে খেলার মাঠে ছুটে যেতাম আজকাল তো সেটাও যাওয়া হচ্ছে না, সারাদিনের ব্যস্ততায় হাঁপিয়ে উঠছি খেলার জন্য সময় বের করবো কখন?
মাঝে মাঝে মনে হয় আগের দিনগুলোই ভালো ছিল যত বড় হচ্ছি ততোই যেন বাস্তবতার বেড়াজালে আটকে যাচ্ছি একটু একটু করে। আগের জীবনটা মিস করতে শুরু করেছি এখনি উফফ! আবার কবে আগের মত করে ছুটতে পারবো নিজের ইচ্ছে মতো কে জানে। এদিকে আমিও ধীরে ধীরে একটু একটু করে দেবযানীর মায়া ছেড়ে বেড়িয়ে আসছিলাম, তেমন করে আর আগের মতো ও আমার মস্তিষ্কে চেপে বসে নেই। হয়তো হারিয়েই গেছে সেখান থেকে আর হবেই না কেন পড়াশোনার চাপে নিজেকে ভুলে যেতে বসেছি ঐ দেবযানী কোন ছাড়। তবে একদম যে ভুলেই গেছি তা নয় ওর কথাও মনে পড়ে তবে সেটা ওকে আলাদা করে ভাবতে গিয়ে নয়, ওর চিন্তা জেগে উঠে ঐ শাঁকচুন্নি টা কে দেখে। যতবার শাঁকচুন্নি টা আমার সামনে দিয়ে ঘুরঘুর করে ততোবারই আমার মনে পড়ে দেবযানী বলে কেউ একজন ঝড়ো হাওয়ার মত এসেছিল আমার মন আঙিনায় আর হঠাৎ করেই অনেকটা পাল্টে দিয়ে গেছে আমাকে। নতুন করে ভাবতে শিখিয়েছে, অনেক অনুভূতির নতুন অভিজ্ঞতার সম্মুখীন করেছে, ভেতরের আমিকে বাইরে বের করে এনেছে। সত্যি বলতে দেবযানীর জন্য নয় আমি যেন কথার জন্যই বারবার আমার অতীতে বারবার ফিরে যাচ্ছি।
সেদিনের পর থেকে কথার সাথে সামনাসামনি দেখাই হয় নি আমার। ও চেষ্টা যে কম করেছে সেটা বলা যায় না, তবে আমার ভেতরে মিছে একটা রাগ ধিকিধিকি করে জ্বলছিলো সেটা আমাকে ওর সামনে যেতেই দিচ্ছিলো না। কিন্তু কথা কে এড়িয়ে চলে আসার পর অদ্ভুত একটা কষ্টের আবরণে ঢাকা পড়ে যেত আমার খেয়ালী মন। ইচ্ছে করতো একটু দাড়িয়ে শুনে নেই ও কি বলতে চাইছে কিন্তু ঐ যে আমার হঠাৎ করেই রেগে যাওয়ার রোগটা আমাকে সেটা করতেই দেয় না। এটা আমার বদ অভ্যাস গুলোর মাঝে কিংবা আমার ত্রুটি গুলোর মাঝে সবচেয়ে বিচ্ছিরি একটা। আমি এমনিতে খুব বেশি কারও উপর রেগে থাকতে পারি না, তবে এমনও হয়েছে এই ঠুনকো রাগের বশবর্তী হয়ে অনেক প্রিয় মানুষের সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছি। আর একটু একটু করে দূরে সরে যেতে যেতে নিজেদের মাঝে দূরত্ব টা এতোই বাড়িয়ে ফেলেছি যে এখন চাইলেও আর সেই দূরত্ব টা কমানো সম্ভব না। মাঝে মাঝে ভয় হতো কোন কারণে যদি এমনটা আমার আর কথার সাথেও ঘটে যায় তবে সেটা আমি সহ্য করতে পারবো তো?
আজ কলেজে শেষ ক্লাস ছিল বাংলা, আর সেটাতে আগে থেকেই বলে দেয়া হয়েছিল যে এসাইনমেন্টের গ্রুপ ওয়ার্কিং করতে হবে। স্যার ক্লাসে এসেই সবাইকে গ্রুপে ভাগ করতে থাকলো, ভাগ্যে কখন কি আছে সেটা যদি আগে থেকেই জানা যেত তবে মানুষের হয়তো সুবিধেই হতো। আমি বলবো কাকতালীয় ভাবেই আমার সাথে একই গ্রুপে কথাও পড়েছে। ওর দিকে আড় চোখে তাকাতেই দেখি ও আমার দিকেই তাকিয়ে আছে আর মুচকি হাসি দিচ্ছে, আমার তো সারা গায়ে জ্বালা ধরে যাওয়ান অবস্থা। এতো মানুষ থাকতে আমার ঐ শাঁকচুন্নিটার গ্রুপেই কেন পড়তে হলো ভগবান মালুম। বাংলা স্যার ভীষণ কড়া মানুষ এমনিতে বন্ধুর সাথে মেশে সবার সাথে তবে এ বিষয়ে কোন ধরণের উচ্চবাচ্য করার সাহস আমার কেন ক্লাসের কারও নেই, সেটা কথাও ভালো করেই জানে তাই বুঝি ওর মুচকি হাসিটা একটু একটু করে প্রশস্ত হচ্ছে। কোন হেলদোলে কাজ হবে না তাই আর দেরি না করে আমরা সবাই বেঞ্চ গুলো বদলিয়ে নিজেদের গ্রুপ মেম্বারদের সাথে কোলাজ করে নেই। দৈববাণীকে সত্য করার জন্যই কথা আমার পাশে বসেছে আর ঝকঝকা সাদা দাঁত গুলো বের করে বিশ্রী রকমের একটা হাসি ছুড়ে দিলো আমার দিকে। এটাকে হাসি বলার চেয়ে ভেংচি বলাই উত্তম হবে বলে মনে করি। আমার মেজাজের পারদ টা চড় চড় করে বেড়েই চলেছে যদি পারতাম দু ঘা বসিয়েই দিতাম ওকে। আমার হাত নিসপিস করছে ওকে উত্তমমধ্যম কয়েকটা দেবার জন্য৷ ছোট থাকতে কত মারামারি করেছি দুজনে সেটার ইয়ত্তা নেই, ধুম মারামারি করার খানিক বাদেই দুজন আবার এমন করে মিলে যেতাম যে আমাদের বাবা মা রা হতভম্ব হয়ে যেত। কথার দিকে দাঁত গুলো কটমট করে ফিরে তাকাতেই দেখি ও ড্যাবড্যাব করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে৷ একটু এগিয়ে এসে আমা৷ কানে কানে ফিসফিস করে বললো,
কিরে আমাকে মারতে ইচ্ছে হচ্ছে বুঝি?
আমি অদ্ভুত হয়ে তাকিয়ে থাকি ওর দিকে, খানিকটা ভীষম ও খেয়েছি বটে। ও কি করে জানলো যে আমার মন চাইছে ওকে মেরে রাগটা মেটাতে। আমি ওর প্রশ্নের উত্তর দিতে পারি নি শুধু অবাক নয়নে কথার দিকে তাকিয়ে ছিলাম। কি উত্তর দিবো সত্যি টাই বলবো নাকি সত্যটা ভেতরে চেপে মিষ্টি হাসি হেসে মিথ্যে কিছু বলে দিবো। আমাকে উত্তর দিতে না দেখে হালকা একটা ধাক্কা দিলো,
কিরে মিথ্যে বলার জন্য এতো ভাবতে হচ্ছে? থাক মিথ্যে বলতে হবে না, মন চাইলে ছুটির পর না হয় ইচ্ছে মত মারিস তবুও আমার সাথে ওমন করে কথা না বলে থাকিস না। তুই ইগ্নোর করলে আমি সহ্য করতে পারি না। তুই চাইলে ওমন একটা না দশটা গফ জোগাড় করে দেব তোর জন্য খুশি তো?
কথা এমন করে বলছিলো যেন ও কত দিনের শ্রান্ত ক্লান্ত যার ছাপ ওর চেহারায় স্পষ্ট ফুটে উঠেছে, ভীষণ মায়া ধরা চোখ দুটো ছলছল করছে। ওমন চোখের দিকে তাকিয়ে যত রাগ অভিমানই থাকুক না কেন সেটা গলে জল হতে বেশি সময় নিবে না। আমিও আমার রাগটাকে আর ধরে রাখতে পারি নি, কথার ওমন অসহায় চাহনির কাছে সেটা টিকতেই পারি নি। আমি ফিক করে হেসে দিলাম,
আমার জন্য তোকে আর কষ্ট করে কাউকে খুঁজতে হবে না। কোথা থেকে কানা ল্যাংরা ধরে নিয়ে আসবি কে জানে।
আমার কথা শুনে ও হু হু করে হাসতে শুরু করে দেয়, আর সাথে দু হাতে উপর্যুপরি কিল মারতে থাকে। ওর ওমন হাসিতে আমার মন এমনিতেই ভালো হয়ে গেছে, হৃদয়ের অভিমানের যে কালো মেঘ জমেছিল সেটা খুশির ধারা হয়ে আমাকে সিক্ত করতে থাকলো। আমাদের খুনসুটি স্যারের কান অব্দি পৌছাতে সময় নিলো না। হঠাৎ স্যার ধমকে উঠলো,
কি ব্যাপার এতো আওয়াজ হচ্ছে কেন? চুপচাপ এসাইনমেন্ট শেষ করো।
স্যারের গম্ভীর আওয়াজের ধমক শুনে আমরাও শান্ত শিষ্ট যেন ক্লাসের সবচেয়ে ভদ্র স্টুডেন্টের মত চুপ হয়ে কাজে মনোযোগ দিলাম।
ভালো সময় গুলো খুব দ্রুতই চলতে থাকে যেন চোখের পলকে মূহুর্ত গুলো কাটছে। আমার সাথে কথার আবার প্যাচআপ হয়ে যাওয়াতে আগের মতই হাসিখুশি খুনসুটি ঝগড়া মারামারি এসবের মাঝেই দিনগুলো কাটছিলো। এর মাঝেই মিড টার্মের রেজাল্টও বেড়িয়ে গেছে, আশানুরূপ ফল হওয়াতে আমি যেন উড়ছিলাম। হাই কলেজে ভর্তি হবার পর থেকেই আমার জীবনে বন্ধুদের সংখ্যা ধীরে ধীরে বাড়ছিলো। কলেজ, কোচিং কিংবা টিউশনে নতুন নতুন মুখের সাথে পরিচয় হচ্ছে, প্রতিদিনের দেখা সাক্ষাতের মাঝে একটা বন্ধুত্ব পূর্ণ সম্পর্ক গড়ে উঠেছে।
আমাদের জীবনের প্রতিটা ধাপে অনেক মানুষের সাথে পরিচয় হয় একটা বন্ডিং গড়ে উঠে তবে সেগুলোর মাঝে কে আমাদের জন্য ভালো আর আমাদের জন্য খারাপ সেটা সেই সময় বলাটা খুব মুশকিল। কারণ সেই মূহুর্তে আমাদের জানা থাকে না বিপরীতে লোকটা ভালো নাকি খারাপ আর তখন আমাদের সেই বোধশক্তিটা ততোটাও প্রখর হয় না যে আমরা নিজের ভালো মন্দ টা নিজেই উপলব্ধি করতে পারবো। এমনিতেই বয়ঃসন্ধি কালে পা দেয়া একটা কিশোরের শরীরে মনে যে পরিবর্তন আসতে থাকে সেটা সামলে নিজেকে গুছিয়ে নেয়াটা খুবই কষ্টসাধ্য একটা কাজ।
একই বয়সের একটা ছেলে আর মেয়ের মাঝে এটাই তফাৎ, কৈশোরে চলাকালে দেহের পরিবর্তন গুলো সামাল দেয়ার জন্য একটা মেয়ে তার মা, বড় বোন, বৌদি কিংবা বাড়ির অন্য মেয়েদের পাশে পায়৷ তারা সেই মেয়েটিকে সেই পরিবর্তন সম্পর্কে সচেতন করে তুলে। সেই পরিবর্তন গুলোর সাথে মানিয়ে কিভাবে চলতে হবে সেটা বুঝতে সাহায্য করে। কিন্তু একটা ছেলে তার বিষয় গুলো নিয়ে সচারাচর পরিবারের কারোও সাথে তেমন করেই কথাই বলতে পারে না। আমাদের সমাজে এমনিতেই ছেলেদের সাথে বাবাদের চিরন্তন একটা দূরত্ব তৈরী হয়েই থাকে আর ছেলেটা নিজের শারীরিক পরিবর্তন গুলো নিয়ে মায়ের সাথে খোলামেলা কথা বলার মত পরিবেশ কখনোই পায় না। আর তাতে ছেলেটার ভরসার পাত্র হয়ে একমাত্র তার পাশে থাকা তার মতই অনভিজ্ঞ কোন বন্ধু কে। অনেক সময় প্রকৃতির নিয়মের উল্টো গিয়ে অনেকেই নিজেকে সামলে নিতে পারে আবার অনেকেই গড্ডালিকা প্রবাহে গা ভাসিয়ে নিজের অধপতনের পথ তৈরী করে। এর মাঝে অনেকেই হয়তো আবার ভুল শুধরে ফিরে আসতে পারে আবার অনেকেই কথিত সভ্য সমাজ থেকেই বিচ্যুত হয়ে কাল গহ্বরে হারিয়ে যায়।
তখন হয়তো বুঝতে পারিনি কিন্তু যখন বুঝতে পেরেছিলাম ততোদিনে অনেকটাই দেরি হয়ে গিয়েছিল। বাজে জিনিসটা অনেকাংশেই আমার অভ্যাসে পরিনত হতে চলেছিল। একা সময়ে যতই শান্ত মনে নিজেকে সেই বাজে অভ্যাস থেকে বের করে আনার দৃঢ় প্রতিজ্ঞা নিচ্ছিলাম কিন্তু সঙ্গের প্রভাবে বারবারই সেই প্রতিজ্ঞা এক নিমিষেই উধাও হয়ে যাচ্ছিলো আমার মন থেকে। শুরু টা হয়েছিল সেদিন টিফিনের সময়ে আমি যখন কলেজের পেছনে পুকুর পাড়ে গিয়েছিলাম। ঘাটের সাথেই একটা ছোট্ট ঝুপের আড়াল থেকে থেমে থেমে ধোঁয়ার কুন্ডলী দলা পাকিয়ে উপরের দিকে উঠে যাচ্ছিলো। বিষয়টা কি সেটা জানার জন্য আমার কৌতুহলী মনে জেগে উঠা তীব্র আকর্ষণ থেকে আমি এগিয়ে যায় ঝুপের দিকে৷ কাছাকাছি পৌঁছাতেই কয়েকটা পরিচিত আওয়াজ কানে আসে, সে কারণেই ঘটনার পেছনের ঘটনা জানার জন্য আমি ব্যাকুল হয়ে উঠি। ঝুপের কাছে গিয়ে এক হাতে ঝুপটা একটু সরাতেই দেখি কয়েক জোড়া আতংকিত চোখ আমার দিকে তাকিয়ে আছে। ওরা হয়তো অন্য কাউকে আশা করেছিল তবে আমাকে দেখে কিছুটা শান্ত হয়ে তাদের আগের কর্মকান্ডে মনোযোগ দিতে থাকে। আমি অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকি ওদের দিকে সেদিকে যেন ওদের কোন হেলদোল নেই বললেই চলে। শেষমেশ আমি বলেই উঠলাম,
কিরে তোরা সিগারেট খাচ্ছিস?
আমার কথা শুনে ওরা বিরক্তিকর একটা চাহনিতে আমার দিকে তাকালো,
কেন তুই কখনো সিগারেট খাস নি? কি বলিস একটা টান দিয়ে দেখ পুরাই উরাধুরা পিনিক।
★★★★★
কাব্য আমার কোলে কাঁধে মাথা রেখে ঘুমোচ্ছে, আর ঘুমাবেই না কেন সেই ভোর বেলা সে জেগে বসে আছে বেড়াতে যাবে বলে। এখন বাসের ভেতরের মৃদু বাতাসের শান্ত আবহাওয়া টা ওর চোখে ঘুম ধরে এনেছে। তবে ঘুমানোর আগ পর্যন্ত দুষ্টুমির কোন কমতি ছিল না। আমার কাছে থাকলে সে তো মায়ের চোখ রাঙানি কেউ ভয় পায় না আর সে জন্য কথার কাছে আমাকে বকা শুনতে হয়। কি আর করা যাবে কাব্যর সাথে একটু কোয়ালিটি টাইম কাটানোর জন্য ঐরকম একটু আধটু বকাঝকা খাওয়াতে আমার কোন সমস্যা নেই। আর এমনিতেই কথার কাছে বকা খাওয়ার আমার পুরনো অভ্যাস আছে।
এক কাঁধে কাব্য চুপটি করে ঘুমাচ্ছে আর আমার আরেকটা কাঁধ হাত সহ কথার দখলে। আমার হাতটাকে জড়িয়ে ধরে রেখে চুপটি করে কাঁধে মাথা রেখে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে। মাঝে মাঝে মাথা টা হালকা আমার দিকে ঘুরিয়ে আড় চোখে আমাকে দেখছে, চোখে চোখ পড়তেই মিষ্টি হাসি ছুড়ে দিচ্ছে আমার দিকে। এর মাঝে দিপু দা দুবার ফোন করেছিল কাব্যের খবর নেবার জন্য, তখন জানালো মিনিট ত্রিশের পর গাড়ি একটা রেস্টুরেন্টে দাড়াবে হালকা খাওয়া দাওয়ার জন্য৷ দিপু দা কথার সাথেও আলাপ করতে চেয়েছিল কিন্তু কথা ইশারায় বললো আমি যেন বলে দেই ও ঘুমোচ্ছে। মিথ্যে টা বলতে ইচ্ছে করছিলো না, না এমন নয় যে আমি কখনো মিথ্যে বলি নি কিন্তু এখন ইচ্ছে না থাকলেও বলতে হলো।
হঠাৎ করেই গাড়িটা বেশ ঝাঁকুনি দিয়ে উঠলো, সবাই হই হই করে উঠতেই হেলপার জানালো সামনে কিছুটা সময় রাস্তার অবস্থা খুব বাজে সাথে রাস্তার কাজ চলছে তাই নাকি ঝাঁকুনি হচ্ছে। ভেতর থেকে সবাই বলছে ড্রাইভার যেন দেখে শুনে আস্তেধীরে গাড়িটা চালান। জানালা দিয়ে মাথা বাড়িয়ে দেখলাম যে রকম খানাখন্দ ভর্তি রাস্তা তাতে যতই ধীরে চালাক না কেন এমন ঝাঁকুনি আরও কিছুক্ষন খেতেই হবে। আমি কাব্যকে আরও ভাল করে নিজের সাথে জড়িয়ে ধরলাম, আর ওদিকে কথা আমাকে। এতো কাছাকাছি বসার বিপত্তিও আছে যেটা মিনিট খানেকের মাঝেই টের পেতে শুরু করলাম। গাড়ির সাথে আমরা সবাই বারবার ঝাঁকুনি খাচ্ছিলাম ভেতরে বসে বসে কিন্তু বাকিদের থেকে আমার যেন একটু বেশিই সমস্যা হচ্ছিলো। তবে সমস্যা টা যেন মধুর সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না। আমার যে হাতটা কথা নিজের বুকের সাথে জড়িয়ে রেখে বারবার নড়াচড়ার জন্য সে হাতটা ওর নরম বুকের সাথে ঘসা খেয়ে যাচ্ছিলো বারংবার। না শরীরের সংবেদনশীল অঙ্গে আমার হাতের স্পর্শ লেগে যাচ্ছে ওমন করে তবে সেটা নিয়ে কথার মাঝে কোন হেলদোল দেখলাম না, ও আগে যেমনে করে ছিল তেমন শান্ত হয়েই বসে আছে। কিন্তু আমার তো সোজা বসে থাকার মত অবস্থা নেই। ওর নরম বুকে ছোঁয়া আমার মন না চাইতেও ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য শরীর গরম হয়ে উঠছে। হাতের মুঠ ধীরে ধীরে শক্ত হতে থাকে আপন ক্রিয়ায়। নিজেকে যতটুকু পারছি নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করছি, মন কে বুঝানোর চেষ্টা করছি এই ছোঁয়া আমার কাছে নতুন কিছু নয়। এর আগে কতোবার খেলার ছলে কিংবা কাকতালীয় ভাবে অথবা একান্তের কাটানো সময়টাতে কথার নরম বুক দুটির সাথে আমার শরীরের কত সংঘর্ষ হয়েছে তাতে কখনো হয়তো মস্তিষ্ক জেগে উঠতে চেয়ে তবে অনেক সময় এটাকে তেমন ভাবে উপলব্ধিই করে নি। তবে আজ কেন এমন করে মাথা চাড়া দিতে চাইছে ভেতরের সুপ্ত সত্তা টা। আজ কেন এতো আকর্ষণ জেগে উঠছে মনের ভেতরে, এতো কেন ইচ্ছে করছে নিজের করে পেতে। সবকিছু ছেড়ে গিয়ে আবার কি ফিরে আসা যায় নাকি তাও আবার এমন করে। গত কয়েকদিনের এই কাছাকাছি চলে আসাটাই বুঝি নতুন করে আবার আশা জাগাতে শুরু করেছে। শুষ্ক হয়ে উঠা আমার মনের বিস্তীর্ণ প্রান্তরে যখন ধু ধু বালুচর তখনি কেন সে আবার শ্রাবণের ধারা হয়ে আমাতে নতুন প্রাণের সঞ্চার করতে গেলো। তবে মনে যে ভয় হয় এই কাছে আসা টাই যদি আবার আরও দূরে নিয়ে যায় আমাকে কথার থেকে। তখন আমি সইতে পারবো তো?
এইসব ছাইপাঁশ ভাবনার মাঝেই হঠাৎ আমরা সামনের দিকে হেলে পড়ি বাসটা কড়া ব্রেক কসতেই। স্বাভাবিক হতেই বুঝতে পারলাম আমরা সকালের খাওয়া দাওয়া করার জন্য রেস্টুরেন্টে পৌঁছে গেছি। এর মাঝেই খেয়াল করলাম দিপু দা এদিকেই আসছে, সাথে সাথে আমার অস্বস্তি বাড়তে থাকে। সে যদি এমন করে কথা কে আমার সাথে লেপ্টে থাকতে দেখে তবে অনেক কিছুই ভাবতে পারে। হাত নাড়িয়ে আমি কথা কে সোজা হয়ে বসার জন্য বলতেই ও নিজেও দিপু দা কে দেখে স্বাভাবিক হয়ে বসে। দিপু দা এগিয়ে আসে,
কি ব্যাপার কাব্যের ঘুম এখনো ভাঙে নি (আমি মাথা নাড়িয়ে না বলতেই দিপু দা কথার দিকে তাকিয়ে বললো) চলো খাওয়া দাওয়া করে নেই। বাস এখানে বেশি দেরি করবে না।
আমরা ধীরে সুস্থে গাড়ি থেকে নেমে রেস্টুরেন্টের ভিতরে চলে গেলাম। কথা কাব্য কে ঘুম থেকে জাগিয়ে নিয়ে ওয়াশরুমের দিকে চলে, আমিও ওর পিছু পিছু ওয়াশ রুমে গিয়ে এক দৌড়ে জেন্টস টয়লেটে ঢুকে পড়ি। অনেকক্ষণ ধরে চেপে রাখায় তলপেট টনটন করছিলো, কোন মতে জিপার খুলে আন্ডারওয়্যার থেকে মুক্ত করতেই ফায়ার সার্ভিসের হুস পাইপের মত তীব্র বেগে মূত্রধলি খালি করতে থাকি। অনেকক্ষণ চেপে রাখার পর মূত্রত্যাগে যে শান্তি পাওয়া যায় সেটা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। ওয়াশ রুম থেকে ফ্রেশ হয়ে ডাইনিং এরিয়াতে এসে দেখি দিপু দা কাব্য কথা একটা টেবিলে বসে আছে, সামনে খাবার থাকা সত্ত্বেও আমার জন্যই হয়তো অপেক্ষা করছিলো। আমরা সবাই পরোটা আর মিক্সড সবজি খাচ্ছি আর কথা কাব্যের জন্য বাসা থেকে খাবার নিয়ে এসেছিল সেটাও খাওয়াছে। তবে কাব্য আমাদের সাথে পরোটা সবজি খাওয়ার বায়না করছে, আর এদিকে সেটার জন্য কথা আমাকে বকাঝকা করছে। ওর থিউরিতে এটার দোষও আমার, কাব্য নাকি আমার আশকারাতেই এতো দুষ্টুমি করছে। আমি চেয়ার থেকে উঠে গিয়ে কাব্যকে কোলে করে আমার কাছে নিয়ে আসি,
আমারই যখন এতো দোষ তাহলে ওকে আমিই খাওয়াচ্ছি তোকে আর কষ্ট করতে হবে না।
কথা কিছু একটা বলতে চেয়েছিল তবে দিপু দা ওকে থামিয়ে দেয়,
আচ্ছা কিঞ্জল যদি পারে তাহলে খাওয়াক না ওকে তুমি শুধু শুধু এতো হাইপার হচ্ছো কেন?
আগুনে যেন ঘি ঢেলে দিলো দিপু দা,
ও আমিই হাইপার হয়ে যাই তাই না! সব সমস্যা আমার জন্যই। তাহলে তোমরা এখানে থাকো আমি গাড়িতে চলে যাই।
কথা চেয়ার ছেড়ে উঠে যাচ্ছিলো তৎক্ষনাৎ আমি ওর হাত টা খপ করে ধরে নিয়ে চোখের ইশারায় চেয়ারে বসতে বলি। আড় চোখে তাকিয়ে দেখি দিপু দা কথার হঠাৎ এমন রুক্ষ আচরণে কিছুটা বিব্রত বোধ করছে। আমিও খানিকটা অবাক হঠাৎ করেই এমন কি হলো যে কথা ওভাবে রিয়্যাক্ট করলো। মাঝে মাঝে ওর যে কি হয় কে জানে এই ভালো মুডে আছে তো এই মেজাজ গরম হয়ে যায়৷ আমাদের টেবিল টা একদম চুপচাপ হয়ে আছে সেটা ভাঙার জন্যই আমি কাব্যের সাথে খেজুরে আলাপ শুরু করে দিই আর ফাঁকে ফাঁকে কথার তৈরী করে আনা খাবার কাব্য কে খাওয়াতে থাকি। কাব্যও এমন সব পাকা পাকা কথা বলে যে না হেসে থাকা যায় না, ওমনি একটা কথা বলতেই আমি হেসে উঠি সেই সাথে কথা দিপু দাও হেসে উঠে।
খাওয়া শেষ করে সবাই গাড়ির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, আমাদের একটু দেরি হয়েছে তাই আমরা সবার শেষেই রেস্টুরেন্ট থেকে বেড়িয়েছি। কাব্য এখনো আমার কোলে, কথা আর দিপু দা আগে আগে যাচ্ছে আর আমি ওদের থেকে খানিকটা দূরত্ব রেখে পেছন পেছন যাচ্ছি। কিছু একটা নিয়ে দুজনের মাঝে আলোচনা হচ্ছে আর মুচকি মুচকি হেসে চলেছে দুজনেই। ওদের দুজনকে ওমন হাসিখুশি দেখতে আমার ভালোই লাগছিলো। আমি তো সবসময়ই চেয়েছি কথা যেখানেই থাকুক ভালো থাকুক সবসময় হাসিখুশি আনন্দে থাকুক৷ মনে হচ্ছে আমার ইচ্ছে খানিকটা হলেও পূরণ হয়েছে৷ মাঝে মাঝে আমি নিজেকে দিপু দার জায়গায় বসিয়ে অলীক কল্পনা করতে হয়তো ভালবাসি, সেটা আমাকে সাময়িক আনন্দ দেয় বটে কিন্তু বাস্তবতায় সেটা শুধুই কল্পনা। সেই কল্পনায় মুক্ত আকাশে ভেসে বেড়ানো যায় যেমন, তেমন করেই স্বপ্নের শেষে আকাশ থেকে মাটিতে আছড়ে পড়ার সমূহ সম্ভবনাও থাকে সেটা মগজে রাখতে হয়। আর আমি জানি এখন আর কোন কিছুই সম্ভব নয় যে যেখানে যেমন করে আছে তেমন করেই ভালো থাকুক সবাই।
আমরা বাসে উঠে পড়েছি, যে যার সীটে বসে আছে আগে থেকেই। বাসের মাঝে ঘটে যাওয়া আগের মূহুর্তগুলো মনে পড়তেই আমার কেন জানি মনে হলো এবার আমার থেকে দিপু দারই কথার পাশে বসা উচিত। হয়তো সময়ের প্রভাবে মাঝে মাঝে আমি দুর্বল হয়ে পড়ি তবে এমন দুর্বলতা আমার থেকেও বেশি কথার জন্য প্রবলেম ক্রিয়েট করতে পারে ভবিষ্যতে। আমার কি কোন ঠিক ঠিকানা নেই হয়তো বাস্তবতার মুখোমুখি হওয়ার চেয়ে নিজেকে আড়াল করতে কোথাও গিয়ে লুকিয়ে যাবো বছর কয়েকের জন্য অপেক্ষা করবো সব কিছু ঠিকঠাক হয়ে আসার তারপর হয়তো নিজের শীতনিদ্রা ভেঙে আবারও বেড়িয়ে আসবো কঠিন পৃথিবীতে।
আমি কাব্য কে নিয়ে এগিয়ে যাই ওদের দিকে, কথা আগের মতই জানালার পাশে বসে আছে পাশেই দিপু দা খানিকটা ঝুকে গিয়ে কিছু একটা বলছে। আমি কাব্য কে দিপু দা কোলে দিয়ে বলে উঠি,
দাদা তুমি এখানেই বসো আমি একটু সামনে গিয়ে বসি, হেলপারের সাথে কথা বলতে বলতে রাস্তা ঘাটও চেনা হয়ে যাবে এদিকের।
কথা কিছু একটা বলার চেষ্টা করেছিল কিন্তু তার আগেই দিপু দা বলে উঠে,
আচ্ছা ঠিক আছে তোমার যদি ইচ্ছে হয় সামনে বসার তবে তাই বসো।
বাস চলতে শুরু করেছে, আমিও সামনের দিকে এগিয়ে গিয়ে একটা সিঙ্গেল সীটে বসে পড়ি। সীটে বসার আগে কি মনে করে আমি একবার পেছন দিকে তাকিয়ে ছিলাম। কথা ছলছল চোখে আমার দিকেই তাকিয়ে আছে, জানালার পর্দা ওর শক্ত মুঠোতে দলা পাকিয়ে আছে। মনটা ভীষণ খারাপ হয়ে গেল, তবে একটু আগে থেকেই খারাপ হয়েছিল সেটা এখন যেন আরও বেড়ে গেল। দিপু দা কে যতই বলি না কেন কথার পাশেই বসতে তবুও মনে কোনে কেন জানি আশা জেগেছিল সে হয়তো বারণ করে আমাকেই বসতে বলবে। আমার তো খুশি হবার কথা ছিল কারণ আমি নিজ থেকেই তো সুযোগটা করে দিলাম। তবুও কেন আমার এতোটা খারাপ লাগছে ভেতর থেকে মুষড়ে পড়েছি, মনে হচ্ছে কি যেন হারিয়ে ফেললাম। হারাবার প্রশ্নই বা এখানে উঠছে কেন? ও আমার কি ছিল কখনো যে হারিয়ে ফেলবো। ছিলো তো একটা সময় তো ছিল, শুধু ছিল বললে তো ভুল হবে আমার সবটা জুড়ে ছিল। হেলা ফেলায় অবহেলায়, জানতে অজানতে যতোবারই ওকে কাছে পেয়েছি ততোবারই তো দূরে সরিয়ে দিয়েছি। একবারও কি কথার জন্য ভেবে দেখেছি? ও কি ভাল আছে নাকি কষ্ট পাচ্ছে সেই খোঁজ নিতে গিয়েছি? তবে আজ এখন এতো দূরে চলে গিয়ে ওর ভালো মন্দ ভাবতে বসে গেলাম কেন, সেই অধিকার কি এখনো আমার আছে? তবে কি আমি অনাধিকার চর্চা করে চলেছি বরাবরের মতই।
নাহ এসব নিয়ে আর ভাববো না, ভেবে দেখার সময় আমি তো কেবল উড়নচণ্ডীর মত আচরণ করেছি এখন ভাবতে গেলে কষ্টই বাড়বে এ ছাড়া আর কিছুই নয়। আমার থেকেও বেশি কষ্ট পাবে কথা সেটা হতে দিতে পারি। এতোটুকু তো ও আমার কাছে চাইতেই পারে। নিজেকে শান্ত করতে জানালা একটু খুলে দিলাম, তীব্র হাওয়ার ঝাপটায় আমি চোখ বুজে নিলাম। পেছনের ভাবনা ছেড়ে দিয়ে আমি সামনের দিকে তাকিয়ে ছুটে চলা রাস্তাটার দূরত্ব পরিমাপ করতে লাগলাম রাস্তার পাশে দাড়িয়ে থাকা নিঃসঙ্গ কিলোমিটার পোষ্টে। সবকিছু কত দ্রুত আমাকে অতিক্রম করে পেছনের দিকে চলে যাচ্ছে তবে আমি কেন পারবো না নিজের যা কিছু অতীত সবকিছু কে পেছনে ফেলে সামনের দিকে ছুটতে। কিসের এতো বাঁধা আর এই মায়া হীন জীবনে। তবে চাইলেই কি আর অতীত কে পেছনে ফেলা যায়!
কারও হাঁক এ ড্রাইভার আমাদের বাসটা দাঁড় করিয়ে দিলো, সামনের দিকে তাকিয়ে দেখলাম শুধু আমাদের টা নয় সামনের বাসটাও দাঁড়িয়ে আছে। কি হলো কিছুই বুঝতে পারলাম, এদিক ওদিক তাকাতেই দেখি দিপু দা এগিয়ে আসছে,
স্যার ডাকছে আমাকে সামনের গাড়িতে যেতে হবে, কি যেন দরকার কে জানে। তুমি ওদের দেখে রেখো।
কথাটা শেষ করেই দ্রুত পায়ে বাস থেকে নেমে গেল দিপু দা। আবার বাস চলতে শুরু করলো, কি মনে করে আমি একবার পেছনের দিকে উঁকি দিলাম। কাব্য মোবাইলের পর্দায় মগ্ন হয়ে আছে আর পাশে থাকা কথা জানালার কাঁচে মাথা ঠেকিয়ে রেখেছে। ওর চোখ দুটি ভীষণ স্থির হয়ে আছে যেটা সচারাচর হয় না, চোখ দুটো কেমন ফোলা ফোলা লাগছে। ও কি তাহলে কান্না করছিলো? সেটা ভাবতেই আমার হৃদয়টা কেঁপে উঠলো, ইচ্ছে করছে ছুটে যাই কথার কাছে। কিন্তু কোন কি করে যাবো? ওমন করে চলে আসার পর কি আবার ফিরে যাওয়া যায়?
Posts: 4,428
Threads: 6
Likes Received: 9,178 in 2,849 posts
Likes Given: 4,330
Joined: Oct 2019
Reputation:
3,225
মেয়েটি যদি অভিমানে তার সাথে কথা না বলে, বুঝে নিবে মেয়েটি তাকে অন্তরে অন্তরে মিস করে.. আর মেয়েটি যদি অশ্রুবর্ষণ করে, তাহলে বুঝে নিতে হবে সে তাকে ভীষণ ভালবাসে। যে ভালবাসা বোঝেনা নিঃস্বার্থ .. দাঁড়িপাল্লায় যার ওজন হয় না। সবশেষে বলি ..
আজ ছন্দ মহলে মিলছে দুটি মনে,
মনে মনে বলবে ওরা কথা সঙ্গোপনে..
কথার মাঝে থাকবে গভীর ভালোবাসা,
আর তার মাঝে থাকবে দুটি মনের ব্যাকুলতা।
খুব ভালো একটি পর্ব উপহার পেলাম আমরা জয় হোক তোমার।
Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,410 in 27,674 posts
Likes Given: 23,734
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
কি অদ্ভুত লেখা ,আমার নিজের জীবনের অনেক পুরোনো যন্ত্রনা ফিরিয়ে আনছে এই গল্প।
কিন্তু আমি তো এই পরের পাতা সালাকে কিছু বলিনি , শুধু ওই পিনুরাম জানে।
তাহলে কি পরের পাতা আর পিনুরাম একই লোক ????
Posts: 1,473
Threads: 7
Likes Received: 2,457 in 929 posts
Likes Given: 2,453
Joined: Mar 2022
Reputation:
512
(14-12-2022, 09:48 PM)Bumba_1 Wrote: মেয়েটি যদি অভিমানে তার সাথে কথা না বলে, বুঝে নিবে মেয়েটি তাকে অন্তরে অন্তরে মিস করে.. আর মেয়েটি যদি অশ্রুবর্ষণ করে, তাহলে বুঝে নিতে হবে সে তাকে ভীষণ ভালবাসে। যে ভালবাসা বোঝেনা নিঃস্বার্থ .. দাঁড়িপাল্লায় যার ওজন হয় না। সবশেষে বলি ..
আজ ছন্দ মহলে মিলছে দুটি মনে,
মনে মনে বলবে ওরা কথা সঙ্গোপনে..
কথার মাঝে থাকবে গভীর ভালোবাসা,
আর তার মাঝে থাকবে দুটি মনের চ।
খুব ভালো একটি পর্ব উপহার পেলাম আমরা জয় হোক তোমার।
অনেকেই বলে থাকে মেয়েদের মন বুঝা নাকি বেশ জটিল, তবে আমার কাছে তেমন মনে হয় না। মন বুঝার মত মন থাকতে হয় আর দেখার জন্য চোখ। মেয়েদের চোখেই ওদের মনের খতিয়ান থাকে সেটা যে পড়তে জানে সে মেয়ে টা কেও বুঝতে পারবে।
আমদের মানুষের একটা বড় দোষ আছে, বেশিরভাগ সময়ই আমরা ভুল মানুষকে সবটা দিয়ে ভালোবেসে ফেলি। সেই ভুল মানুষটার তালিকায় যে নিজের নামও থাকতে পারে সেটার হিসেব কজন জানে।
সবিশেষে ভালোবাসার জয় হোক।
হাত বাড়িয়ে ছুঁই না তোকে, মন বাড়িয়ে ছুঁই।
দুইকে আমি এক করি না, এক কে করি দুই।।
Posts: 1,473
Threads: 7
Likes Received: 2,457 in 929 posts
Likes Given: 2,453
Joined: Mar 2022
Reputation:
512
Posts: 145
Threads: 0
Likes Received: 81 in 62 posts
Likes Given: 203
Joined: Nov 2021
Reputation:
4
কি সুন্দর লেখা, পড়তে পড়তে অজান্তে হারিয়ে যাই সুদূর অতীতে
Posts: 1,473
Threads: 7
Likes Received: 2,457 in 929 posts
Likes Given: 2,453
Joined: Mar 2022
Reputation:
512
(16-12-2022, 07:08 AM)Akash88 Wrote: কি সুন্দর লেখা, পড়তে পড়তে অজান্তে হারিয়ে যাই সুদূর অতীতে
হারাতে চাইলেই কি হারানো যায়? হারাতে তো দেবো না।
হাত বাড়িয়ে ছুঁই না তোকে, মন বাড়িয়ে ছুঁই।
দুইকে আমি এক করি না, এক কে করি দুই।।
•
Posts: 6,108
Threads: 41
Likes Received: 12,067 in 4,138 posts
Likes Given: 5,306
Joined: Jul 2019
Reputation:
3,734
দেরীতে মতামত দেবার জন্য দুঃখিত কিন্তু এটা কি লিখেছো ভায়া! এই গল্পের অন্যতম সেরা পর্ব এটি! যেভাবে কথকের মনের দোলাচাল, না বলা কথা, ইচ্ছে কল্পনা গুলো ফুটিয়ে তুলেছো উফফফফ সাংঘাতিক! বিশেষ করে স্ত্রীয়ের পাশে স্বামীকে রেখে নিজকে সরিয়ে নেবার অংশটা তো অসাধারণ ♥️♥️♥️
Posts: 1,473
Threads: 7
Likes Received: 2,457 in 929 posts
Likes Given: 2,453
Joined: Mar 2022
Reputation:
512
(21-12-2022, 06:07 PM)Baban Wrote: দেরীতে মতামত দেবার জন্য দুঃখিত কিন্তু এটা কি লিখেছো ভায়া! এই গল্পের অন্যতম সেরা পর্ব এটি! যেভাবে কথকের মনের দোলাচাল, না বলা কথা, ইচ্ছে কল্পনা গুলো ফুটিয়ে তুলেছো উফফফফ সাংঘাতিক! বিশেষ করে স্ত্রীয়ের পাশে স্বামীকে রেখে নিজকে সরিয়ে নেবার অংশটা তো অসাধারণ ♥️♥️♥️
প্রথমে কিংবা দেরিতে যখনি হোক না কেন তোমার মন্তব্য বরাবরই আমার লেখার শক্তির উৎস।
হাত বাড়িয়ে ছুঁই না তোকে, মন বাড়িয়ে ছুঁই।
দুইকে আমি এক করি না, এক কে করি দুই।।
•
Posts: 1,473
Threads: 7
Likes Received: 2,457 in 929 posts
Likes Given: 2,453
Joined: Mar 2022
Reputation:
512
কিছুদিনের জন্য নিরুদ্দেশ হতে পারি তার আগে এই গল্পের একটা আপডেট দেয়া জরুরি৷
তাই নতুন পর্বের লেখা শুরু করেছি, তেপান্তরের পথ ধরার আগেই আশা করি আপডেট টা দিয়ে যেতে পারবো।
আমার অন্য থ্রেড অতিথি তে নতুন পর্ব এসে গেছে, একবার দেখে আসতে পারেন।
হাত বাড়িয়ে ছুঁই না তোকে, মন বাড়িয়ে ছুঁই।
দুইকে আমি এক করি না, এক কে করি দুই।।
Posts: 1,473
Threads: 7
Likes Received: 2,457 in 929 posts
Likes Given: 2,453
Joined: Mar 2022
Reputation:
512
সেদিন আলোচনা হয়েছিল বলতে গেলে বিস্তর আলোচনা হয়েছিল সেটা কতটুকু ফলপ্রসূ হয়েছে সেটার উত্তর জানতে গেলে অনেক কিছু ঘাটতে হবে। তবে আউটপুট হিসেবে আমরা দুজনেই কৌতূহলের ফাঁদে পড়ে একসাথে সিগারেট ফুঁকার রোমাঞ্চের অংশ হতে চলেছি। সত্যিই পৃথিবীর সবকিছু কতই বিচিত্র, বিচিত্র সব প্রাণীর বিচরণ এই পৃথিবীর বুক জুড়ে, তার মাঝে সবচেয়ে বড় বিচিত্র এই মানুষ। আমার মত আপনার মত কোটি কোটি বিচিত্র মনের, রঙের, ধরণের মানুষের ভারে এই বসুন্ধরা পিষ্ট হয়ে চলেছে প্রতিনিয়ত।
অপেক্ষাটা আরও কয়েক ঘন্টার। আগামীকাল রাতেই আসছে এই গল্পের নতুন পর্বে৷ সঙ্গেই থাকুন....
Posts: 1,473
Threads: 7
Likes Received: 2,457 in 929 posts
Likes Given: 2,453
Joined: Mar 2022
Reputation:
512
পর্ব- নয়
আমি বরাবরই এডভেঞ্চার প্রিয় ছিলাম, কিন্তু সাধ আর সাধ্যের মাঝে আমার মত মধ্যবিত্ত ফ্যামিলিতে বড় হওয়া একজনের অনেক তফাৎ থাকে। ছোট বেলা থেকেই চাওয়ার অনেক কিছুই পাওয়া হয়ে উঠে নি। হয়তো তখন সাময়িক কিছুদিনের জন্য মন খারাপ থাকতো কিন্তু দিন যাবার সাথে সাথে সেই মনেই আবার নতুন কিছুর খেয়াল আসতো আর পুরনোর কষ্ট টা ভুলিয়ে দিয়ে নীরবে নিভৃতেই চলে যেত।
সেই সময়টাতে বাজারে হঠাৎ করে মোবাইল আসতে শুরু করলো, আমার বয়সী অনেকেরই হাতে নানা ধরণের নানা রঙের মোবাইল শুভা পেত। আমারও যে ইচ্ছে হতো না তা নয় কিন্তু আমি যে সেটা চাইলেও বাড়ি থেকে পাবার অনুমতি হবে না সেটা জানতাম। তাই মনের ইচ্ছে টা মনেই একটু একটু করে দমবন্ধ হয়ে মরে যেতে লাগলো। তবে মানুষ নাকি কোন কিছুর অপূর্ণতা অন্য কিছু দিয়ে ঢাকতে চায়। আমিও হয়তো সেটাই চেয়েছিলাম সবচেয়ে সহজ সরল পথ ওটাই ছিল আমার কাছে। কথিত বন্ধুদের ওমন করে সিগারেটে ঠোঁট লাগিয়ে ধোঁয়া উড়ানোর ছবিটা আমার অন্তর চক্ষুতে লেগে গিয়েছিল। আমি যে এই প্রথম কাউকে সিগারেট খেতে দেখছি তেমন নয়, আগেও কত মানুষ কে দেখেছি ওমন করে ধোঁয়া উড়াতে। তবে তারা সবাই বয়সে অনেক বড়, তাই ভাবতাম বড় হলেই হয়তো ওমন করে সিগারেট ফুঁকা যায়। কিন্তু এখন আমার বয়সী কয়েকজন কে ওমন করে সিগারেট ফুঁকতে দেখে মনের ভেতর অতি স্বাভাবিক ভাবেই কৈশোরের কৌতূহল জেগে উঠে।
আমি যে খানিকটা ভয় পায় নি তা কিন্তু নয়, ওখান থেকে চলে আসার পর আমি যেন ফ্যানের তলে বসে থেকেও খানিকটা ঘেমে উঠেছিলাম। নিজের চোখ গুলোকে অবিশ্বাস করতে শুরু করেছি আমি, যা দেখেছি সবটাই ভুল দেখেছি। ওসব আমার মনের খেয়াল হয়তো....
অন্য কোন বিষয় হলে না হয় কথার সাথে শেয়ার করতাম কিন্তু এটা শেয়ার করার মত সাহস মন থেকে পেলাম না। বিষয়টা জানাজানি হলে সেটাতে আমার নামটাও তো জড়িয়ে যাবে কোন না কোন ভাবে। তবে বিকাশের সাথে বলা তো যেতেই পারে। আমার আবার একটা দোষ আছে বেশিক্ষণ কোন গোপন বিষয় নিজের মাঝে চেপে রাখতে পারি না। কারও সাথে সেটা শেয়ার করা না পর্যন্ত শান্তি পাই না, তবে যাদের সাথে বিষয় গুলি শেয়ার করি তাদের সংখ্যা নেহতই খুব কম। আমার পেটের যত গোপন বিষয় সব কিছুই বিষয়ের গুরুত্ব বুঝে মা, কথা আর বিকাশের সাথেই শেয়ার করি। এটা নিয়ে মা বা কথা কারও সাথেই শেয়ার করা যাবে না তাই শেষ ভরসা ছিল বিকাশ। বিকেলে টিউশনি এটা নিয়ে কথা বলবো আগে থেকেই ভেবে রাখলাম। একটু পরেই ক্লাস শুরু হয়ে যাবে তাই নিজেকে বাকিদের কাছে স্বাভাবিক দেখানোর জন্য সব চেষ্টাই করতে লাগলাম।
সেদিন আলোচনা হয়েছিল বলতে গেলে বিস্তর আলোচনা হয়েছিল সেটা কতটুকু ফলপ্রসূ হয়েছে সেটার উত্তর জানতে গেলে অনেক কিছু ঘাটতে হবে। তবে আউটপুট হিসেবে আমরা দুজনেই কৌতূহলের ফাঁদে পড়ে একসাথে সিগারেট ফুঁকার রোমাঞ্চের অংশ হতে চলেছি। সত্যিই পৃথিবীর সবকিছু কতই বিচিত্র, বিচিত্র সব প্রাণীর বিচরণ এই পৃথিবীর বুক জুড়ে, তার মাঝে সবচেয়ে বড় বিচিত্র এই মানুষ। আমার মত আপনার মত কোটি কোটি বিচিত্র মনের, রঙের, ধরণের মানুষের ভারে এই বসুন্ধরা পিষ্ট হয়ে চলেছে প্রতিনিয়ত।
সেদিন টিউশনি শেষে আমি বিকাশের জন্যই অপেক্ষা করছিলাম, ওকে আগে থেকেই ইশারায় জানিয়ে দিয়েছিলাম যে টিউশনি শেষে ওর সাথে জরুরি কাজ আছে। আমাদের একটা গোপন ঢেড়া আছে ওখানে আমার বিকাশের আলোচনা হয়েছে কলেজের ঘটনা নিয়ে। আর সেই আলোচনায় দুজনেরই কিশোর মনের কৌতূহল আর নতুন কিছুর প্রতি জন্মানো আগ্রহটাই প্রবল ভাবে প্রকাশ পেয়েছে৷ আর সেটারই প্রতিফলনে বিকাশ আর আমার সিদ্ধান্ত হলো একবার টেষ্ট করে তো দেখা যাক। ভাল খারাপের সিদ্ধান্ত না হয় পরে কখনো ভেবে দেখা যাবে।
শুরুতেই মহাবিপদ! সিগারেট কেনার মত বাজেট আমাদের কাছে নেই। কারণ যে যৎসামান্য হাতখরচ পাই সেটা থেকে বেঁচে যেটুকু থাকে তা দিয়ে সিগারেট কেনার মত বিলাসিতা আমাদের মানায় না। তাই যুগপৎভাবে সিদ্ধান্ত হলো বিড়িই হবে আমাদের মত বেকার গরীবের ভরসা। তবে সেটা কিনবো কোথা থেকে? এলাকার কারও কাছ থেকে বিড়ি কেনা মানে বিনা খরচে সেই খবর টা সারা বাজারে প্রচার করে দেয়া। আর সেটা যে কত রিস্ক একটা কাজ সেটা আর বলে দেয়ার প্রয়োজন হবে না মনে হয়৷ শুরু হলো নতুন চ্যালেঞ্জ, তাও আবার সেটা কিনা বিড়ি কেনার জন্য। প্রতিদিনই গোপন বৈঠক হয় আমাদের মাঝে কোথা থেকে কেনা যেতো পারে সেই আরাধ্য বিড়ির প্যাকেট৷ শেষমেশ ঠিক হলো আমাদের এলাকা থেকে অনেকটা দূরে একটা বাজার আছে সেখান থেকেই কেনা হবে বিড়ি। তবে সেখানে যাবার মত রিক্সা বা টমটম ভাড়া আমাদের নেই, তাই পথ একটাই হেটে যেতে হবে আমাদের। প্রায় পাঁচ কিলো রাস্তা হেটে গিয়ে কাঙ্ক্ষিত বিড়ি কেনা শেষে আবারও পাঁচ কিলো হেটে ফেরত আসা। এর আগে কখনো এতো পথ একটানা হাটা হয় নি তাও কিনা ওমন একটা গর্হিত কাজের জন্য। তবে এবার বিড়ির রোমাঞ্চে আটকে থাকা মনে পথের দূরত্ব কোন প্রভাব ফেলতে পারে না।
আমাদের বিকেলের আড্ডার জায়গা ফিশারির সেই মোটরঘরের পেছনের মাচায় আমি আর বিকাশ বসে আছি। হাতে আছে অনেক সাধনার পর কাছে পাওয়া বিড়ির প্যাকেট খানা। বিমোহিত হয়ে তাকিয়ে আছি সেটা দিকে তবে খুলে দেখার ইচ্ছে হচ্ছে না, কিঞ্চিৎ ভয় কাজ করছে মনে নতুন কিছু চেখে দেখার অনুভূতিতে। বেশ খানিকক্ষণ অপেক্ষার পর কাঁপা কাঁপা হাতেই প্যাকেট থেকে দুজনে দুটো বিড়ি বের করে তাতে আগুন ধরিয়ে দিলাম। আচমকা শ্বাসের টানে কিঞ্চিৎ ধোয়া শ্বাসনালী পেরুতেই খক খক করে কাশতে শুরু করে দিলাম। বিশ্রী রকমের একটা গন্ধ আর খানিকটা ঝাঁজে বমি হয়ে যাবার মত অবস্থা। কিছুটা রয়ে সয়ে আমি বিকাশ দুজনেই দুজনার দিকে তাকিয়ে খিকখিক করে হাসতে শুরু করলাম। এডভেঞ্চার টা মন্দ হয় নি তাহলে, তিক্ত স্বাদের অপূর্ব অভিজ্ঞতা। ছোট ছোট টানে নিজেকে সইয়ে নেবার প্রচেষ্টায় রত, বিড়ির ধোঁয়ায় চোখ জ্বালা করছে আর উৎকট গন্ধ টা নাকে বেশ পীড়া দিচ্ছে। কিন্তু ঐ মনের রসে মৌমাছি বসেছে, মধুর জন্য খানিক কষ্ট তো করা যেতেই পারে৷
বিকেলের সূর্য পশ্চিম দিগন্তে হেলে পড়েছে, সাদা মেঘ গুলোর পেছনের দিকটা লাল হয়ে উঠেছে। এবার বাড়ি ফিরতে হবে, তার আগে মুখের গন্ধ টা দূর করার জন্য বাজারে নতুন আসা দুটো স্ট্রবেরি ফ্রেভারের চুইংগাম মুখে পুড়ে নিলাম। ঐ ফিশারী থেকে ফেরার পথেই কথাদের বাসা পড়ে। হঠাৎই মনে হলো মা বলেছিল একবার আন্টির সাথে দেখা করে আসতে। বিকাশ কে বিদায় দিয়ে আমি চলে গেলাম ওদের বাসার দিকে।
কলিং বেল বাজালাম কয়েকবার কিন্তু কেউ গেট খুলছে না। আরেকবার বাজাতেই গেট খুলে গেল,
ঐ এতো বার বেল বাজাতে হয় নাকি? সবাই তো তোর মত অকামে ঘুরে বেড়ায় না।(গেট টা খুলেই কথা আমার উপর ঝাঁঝিয়ে উঠে)
আমি ওকে এড়িয়ে বাসার ভেতরে ঢুকতে গিয়ে বললাম,
তুই কবে থেকে কাজ করতে শুরু করলি? আমার জানা মতে তো তুই অকাজই বেশি করিস। আর শুন আমি কাজেই এসেছি, আন্টি আসতে বলেছে। সামনে থেকে সরে দাঁড়া (কথাটা বলেই আমি ওর বিনুনি ধরে হালকা টার মারি)
বাসার ঢুকার সময় ও একদম কাছেই দাড়িয়ে ছিল, কি কারণে হঠাৎ মুখটা কেমন কুঁচকে বলে উঠলো,
কিরে তোর গা থেকে কিসের গন্ধ আসছে রে ওমন, বিড়ির গন্ধ নাকি?(আমার আরও কাছে এসে ভাল করে শুকতে থাকে)
সত্যিই তো মুখের গন্ধ যাতে না থাকে তার জন্য চুইংগাম চিবোচ্ছি কিন্তু জামা কাপড়েও যে গন্ধ টা থেকে যাবে সেটা তো মাথাতেই ছিল না। নিজের নাকটা জামার কাছে নিতেই উৎকট গন্ধ টা বেশ টের পাচ্ছি কিন্তু সেটা নিয়ে ভাবার সময় এখন নেই। কথা কে কোন ভাবে এড়াতে হবে,
কই কিসের গন্ধ? আমি তো কিছু পাচ্ছি না। তোর নাকে সমস্যা মনে হয়।
আমার নাকে কোন সমস্যা নেই, যেটা সত্যি সেটাই বলছি। বিশ্বাস না হলে মা কে জিজ্ঞেস করি, মা বলুক তোর গা থেকে কিসের গন্ধ আসছে!
এই সেরেছে কোথায় ভাবলাম ওর হাত থেকে রেহাই পাবো কি করে ওতো দেখি এখন আন্টি কে ডাকতে চাচ্ছে। কার মুখ দেখে ঘুম থেকে উঠেছিলাম কে জানে যে করেই হোক নিজেকে এখন বাচাতে হবে,
আরে নাহ! আমার মনে হয় জামা টা অনেকদিন আলমারিতে ছিল তো তাই ওমন গন্ধ করছে। তোর ওখান থেকে একটু পারফিউম দিলেই সব ঠিক হয়ে যাবে।
আমি দৌড়ে ওর ঘরের দিকে যেতে লাগলাম, পেছন পেছন কথাও দৌড়াচ্ছে,
ঐ কুত্তা! সাবধান আমার কিছুতে হাত দিবি না বলে দিলাম। তোকে আমি মেরেই ফেলবো...
পেছন থেকে আন্টির গলা পেলাম,
কিরে তোরা দুটো কি একদন্ড শান্ত হয়ে থাকতে পারিস না। এসেই শুরু হয়ে গেছে...
আমি ঘরে ঢুকেই ড্রেসিং টেবিল থেকে কথার পারফিউম টা স্প্রে করে দিলাম। এর মাঝেই কথাও ঘরে ঢুকেছে আর দুড়ুমদুড়ুম আমার পিঠে একের পর এক কিল ঘুসি দিয়ে চলেছে,
(ন্যাকা কান্নার সুর করে) আমার নতুন কেনা পারফিউম টা শেষ দিলি, আমিই তো এখনো দেই নি এটা।
(দু হাতে ওর কিল ঘুসি ফেরাতে ফেরাতে বলে উঠলাম) আমি কি করে জানবো কোনটা তোর নতুন কেনা আর কোনটা পুরাতন। যা যা বৃত্তির টাকা পেলে তোকে আরেকটা কিনে দেব নে।
কিরে কিঞ্জল পাটিসাপটা খাবি? (ঘরে ঢুকে আন্টি আমাকে জিজ্ঞেস করে উঠলো)
মা ওকে কিচ্ছু দিবে না, আমার পারফিউম টা শেষ করে ফেলেছে। আর তুমি কিনা ওকে পিঠা খাওয়ানোর জন্য ডাকছো।
তোদের দুটোর ঝগড়া আর কখনো শেষ হবে না, ঝগড়া শেষ হলে পিঠে খেয়ে যাস (আন্টি ঘর থেকে বেড়িয়ে গেল)
না আন্টি আমি খাবো না, তোমার মেয়ে আমাকে একদম সহ্য করতে পারে না। আমি বাসায় চলে যাচ্ছি, আমার পাটিসাপটা টাও ওকে দিয়ে দিও। (আমি ভাব দেখিয়ে ঘর থেকে বেড়িয়ে যেতে লাগলাম)
কথা ভালো করেই জানে পাটিসাপটা আমার অনেক পছন্দের। তাই ও যে আমাকে যেতে দিবে না সেটা জেনেই ইচ্ছে করে নিজের মুখাবয়বটা যথাসাধ্য গোমড়া করে রাখলাম ওর সামনে,
তোকে কি আমি চলে যেতে বলেছি নাকি? সবটাতে এতো বেশি বুঝিস কেন? বস এখানে আমি পাটিসাপটা নিয়ে আসছি।( আমাকে জোর করে চেয়ারে বসিয়ে দিয়েই গটগট করে বেড়িয়ে গেল)
আন্টির গলার আওয়াজ পাচ্ছি এখান থেকেই,
এর মাঝেই ভাব হয়ে গেল! কখন যে মাথায় কি চলে সেটাই বুঝি না।
ভাব হয়ে গেছে কে বলল! ঐ কুত্তাটার সাথে আমার ভাব করতে বয়ে গেছে। আমি শুধু পিঠে নিতে এসেছি, পাটিসাপটা ওর পছন্দের তাই আর কি।
আমি চেয়ারে বসে সামনে থাকা টেবিলের এটা ওটা নাড়াচাড়া করছি, এর মাঝেই কথা পিঠের প্লেট হাতে ঘরে ঢুকেছে,
এই নে তোর পিঠা।
তুই খাবি না?
খাবো নে পরে।
না! খেলে দুজন একসাথেই খাবো। (আমি ওর হাত ধরে আমার কাছে টেনে নিলাম, আর ওর মুখের সামনে পাটিসাপটা তুলে ধরে ইশারা করলাম খাওয়ার জন্য)
★★★★★★
মনটা খুব করে চাইছে উঠে কথার কাছে যেতে কিন্তু মনে হয় যেন আমার পা দুটো কিসের সাথে আটকে আছে। আমার খুব করে কান্না করতে ইচ্ছে কিন্তু ছেলেদের তো আবার কান্না করতে নেই আর এরকম ভরা বাসে তো সেটা নয়ই। নিজের উপর খুব রাগ হচ্ছে, পারলে হয়তো এখনি বাস থেকে নেমে নিরুদ্দেশ হয়ে যেতাম। তবে সেটা করতে গেলে কথা আরো বেশি কষ্ট পাবে তাই সাহসে কুলিয়ে উঠতে পারি না। লুকিয়ে লুকিয়ে পেছন ফেরে দেখার চেষ্টা করছি ও কি করছে, কিন্তু বারবার একই দৃশ্য চোখে পড়ছে। কথা বিমর্ষ মুখে ফোলা ফোলা চোখে জানালার কাঁচে মাথা ঠেকিয়ে এক দৃষ্টিতে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে।
আমি নিজেকে সীটের সাথে এলিয়ে দিয়ে রাস্তা পাশে দ্রুতগতিতে পেছনের দিকে ছুটে চলা বিভিন্ন জিনিসের দিকে তাকিয়ে থাকি৷ প্রতিটা কিলোমিটার পোষ্ট আমাদের গন্তব্যে নিকটে আসার বার্তা দিয়ে যাচ্ছিলো। আর সেই পোষ্ট গুলোই হয়তো আমাকে কথার থেকে একটু একটু করে দূরে পাঠিয়ে দিচ্ছে। বাসের প্রতিটা গিয়ারে গতি বাড়ছে সেই সাথে আমাদের দূরত্বের বয়ান। আমার নির্বাক দৃষ্টি অনেক কিছুই বলে যাবার চেষ্টা করছে কিন্তু কোথাও গিয়ে বারবার সাজানো পঙক্তি মালা গুলো এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে। আমি সেই আগের মতোই অগোছালো হয়ে যাচ্ছি, নিজের মন আর মস্তিষ্কের নিয়ন্ত্রণ চলে যাচ্ছে নিজের হাত থেকে। আমার কারো কাছে থাকার অধিকার নেই, নেই কারও প্রিয়জন হয়ে উঠার। তাতেই সবার ভালো, এতে করে বারবার কাউকে এমন করে কষ্ট পেতে হবে না। আমি নিজের জন্য কিচ্ছু করতে পারি নি কখনো আর বাকিদের জন্য কিছু করা তো বহুদূর কি বাত। সবকিছু থেকে নিজের মুখ লুকিয়ে ফেলার ইচ্ছে করছে খুব তাই হয়তো সহজ পন্থাতে চোখ বন্ধ করে নিলাম।
হঠাৎ কাঁধে কারোও ছোট্ট হাতের পরশ পেলাম মনে হলো। পাশ ফেরে তাকাতেই দেখি কাব্য এসে দাঁড়িয়েছে আমার পাশে। ওকে টেনে নিলাম নিজের কোলে, ওর মাঝে কথার শরীরের ঘ্রান পাই আমি। তাই হয়তো নিজের সাথে ওকে মিশিয়ে ধরলাম একটু বেশিই শক্ত করে।
কি হলো, তুমি একা একা এখানে এলে কেন? মা কিন্তু বকা দিবে।
মা তো বললো তোমাকে ডাকতে।
তোমার মা বলেছে? কেন?
সীট থেকে উঠে পেছন ফেরে তাকাতেই দেখি কথা রক্তবর্ণ ধারণ করা চোখ দুটো আমার দিকেই তাকিয়ে আছে। না আর বেশি দেরি করা যাবে না, যেখানে আমার নিজ থেকে যাওয়া উচিত ছিল সেখানে কথা যখন ডেকেছে তবে দেরি করা মানে সমূহ বিপদ ডেকে আনা। কাব্য কে কোলে নিয়ে আমি কথার দিকে এগিয়ে গেলাম। কাব্য কে সীটে বসিয়ে আমি এখনো পাশেই দাড়িয়ে আছি।
তোর আঙ্কেলকে এখানে কে আসতে বলেছে? যেখানে ছিল সেখানেই তো ভালো ছিল। (কথা কাব্যের দিকে তাকিয়ে বলতে থাকে। ওদিকে বেচারা কাব্য ঘটনার আদ্যোপান্ত কিছুই বুঝতে না পেরে বোকা বোকা চোখে একবার মায়ের দিকে তাকাচ্ছে আরেকবার আমার দিকে তাকাচ্ছে)
আমিই এসেছি মানে ঐ কাব্য ডেকেছিল আর কি। আর এমনিতেই আমি আসতাম এখন। কিছু লাগবে তোর? মানে কাব্যের কিছু লাগবে কি না তাই দেখতে এসেছি আর কি।
কথা হাতের ইশারায় আমাকে কাছে ডাকলো, আমি এগিয়ে গেলাম ওর দিকে
না কিছুই লাগবে না, তোকেও না (কথাটা শেষ করতে না করতেই বোতল থেকে জল ছিটিয়ে দিল আমার দিকে, জলের স্পর্শ পেতেই হকচকিয়ে উঠলাম আমি)
আমার তন্দ্রাভাব টা কেটে গেল, হকচকিয়ে চোখে মেলে তাকিয়ে দেখি আমি আমার সামনের সীটেই বসা। এদিক ওদিক তাকিয়ে নিজেকে ধাতস্থ করতে কিছুটা সময় নিলাম। পকেটের মোবাইলটা সশব্দে বেজে চলেছে বের করতে করতে কেটে গেল। মোবাইল সার্ভিসের কল ছিল, কিন্তু দেখলাম মা দু বার কল করেছে টের পাই নি হয়তো৷ মার নাম্বারে কল ব্যাক করলাম...
হ্যালো মা কল করেছিলে?
হুম কোথায় তুই? ফোন ধরছিলি না কেন?
গাড়িতেই আছি, চোখটা লেগে এসেছিল তো তাই আর কি টের পাই নি।
কিরে তুই আবার কিছু করেছিস তাই না!
মানে কি করবো আমি? কথা কিছু বলেছে?
ও বললে তো জেনে যেতাম কি করেছিস, কাব্য ফোন করেছিল। বললো তুই নাকি ওদের সাথে নেই, তুই কি অন্য বাসে?
না তো, এই একটু সামনে এসে বসেছিলাম আর কি।
কিছু ঘটিয়ে তবেই তো সামনে চলে গিয়েছিস, তোকে তো আমি হাড়ে হাড়ে চিনি। সে জন্যই মেয়েটা আমার সাথেও কথা বললো না। আরেকবার ফোন দিলে যেন ওর সাথে কথা বলতে পারি, সেটা মনে রাখিস। পৌঁছে ফোন দিস..
মা ফোনটা কেটে দিলো, আমি থ হয়ে বসে আছি এখনো। আমি ভেবেছিলাম কথা হয়তো মা কে মোবাইল করে ঠিকই আমার নামে বিচার দিবে, কিন্তু ও সেটা না করায় আমি অবাকই হলাম। একটু বেশিই কষ্ট দিয়ে ফেলেছি হয়তো। কিন্তু আমার কি করার আছে? ওদের দুজনের মাঝে এভাবে বারবার আমার চলে আসা টা ও হয়তো স্বাভাবিক চোখেই দেখে কিন্তু ওর বিপরীতের মানুষটা সে তো অন্য ভাবে ভাবতেই পারে৷ আর সেটা ভাবার অধিকার কিংবা যথেষ্ট কারণ সবটাই আছে। আমি তো চাইছিলাম আমাকে ছাড়াই কথা ভালো থাকুক, কিন্তু ওর চোখ মুখ এর অভিব্যক্তি বারবার জানান দেয় যে কথা ভাল নেই। শুধু ভালো থাকার অভিনয় করে যায় সবার সামনে। তবে আমার সামনে হয়তো অভিনয় টা ঠিকমত জমাতে পারে তাই কোন রাখঢাক না রেখে যেটা সত্য সেটাই প্রকাশ পায় ওর প্রতিটা কাজে চাল চলনে।
সেটাই আমি বলবো কাকে? নিজেকে বড্ড একা একা লাগে মাঝেমধ্যে। কিন্তু পরক্ষণেই মনে হয় আমি একা হবো কেন? আমার তো অনেকেই আছে, জীবনের প্রতিটা মোড়ে মা কে সবসময় পাশে পেয়েছি। বন্ধু হয়ে ভাইয়ের মত সবসময় বিকাশ আমাকে আগলে রেখেছে আর সবকিছু ছাড়িয়ে যেকোন সম্পর্কের উর্ধ্বে গিয়ে কথা বরাবরই আমার হাতটা শক্ত করে ধরে রেখেছে। আমি হয়তো স্বার্থপরের মত বারংবার ওর হাত ছেড়েছি কিন্তু ও কখনো আমাকে একা ছাড়ে নি। ছায়ার মত আমার পাশে থেকে যখনি দরকার হয়েছে নিজের সবটা দিয়ে আমাকে সাহায্য করেছে। বিনিময়ে কখনো কিচ্ছু চায় নি আমার কাছে, হয়তো ও জানতো আমার কাছে দেবার মত কিছুই নেই।
আমি উঠে পেছনের দিকে চলে গেলাম, কথার দুচোখ বন্ধ। হয়তো ঘুমিয়ে পড়েছে, পাশে বসা কাব্যও মায়ের কোলে মাথা রেখে নিশ্চিন্তে ঘুমোচ্ছে। আমি আলতো করে কাব্য কে কোলে তুলে নিয়ে কথার পাশে বসে পড়লাম। না ও কোন রিয়্যাক্ট করলো না, তাহলে বুঝি সত্যি সত্যিই ঘুমিয়ে পড়েছে। জানালা দিয়ে হালকা রোদ পড়ছে ওর মুখে তাই পর্দা টা টেনে দিলাম। আমি চুপটি করে ওর পাশে বসে আছি আর ওর শান্ত নির্জীব নির্মল মুখটার দিকে একপলকে তাকিয়ে আছি৷ এতো মায়াবী সুন্দর কেমন করে হয় কেউ, যেন ঘুমন্ত পরী বসে আছে আমার পাশে আর আমি মন্ত্রমুগ্ধের মত তাকিয়ে আছি তার দিকে। কয়েক গোছা চুল বারবার ওর মুখে সামনে চলে আসছে আর আমার চোখ গুলোকে বিরক্ত করছে কথাকে দেখার মাঝে। খুব হিংসে হচ্ছে আমার, এভাবে চুল গুলো কেন আমার আর কথা মাঝে চলে আসে নিষেধ করা সত্ত্বেও। আমি এমন কেন? এতটা খাপছাড়া কেউ হতে পারে কি? আমার আর ওর মাঝে কয়েক গোছা চুল আসাটাকে আমি সহ্য করতে পারি না তবে কি করে একটা আস্ত মানুষকে সহ্য করে নেবার বৃথা চেষ্টা করতে চাইছিলাম। না আমি পারবো না কখনোই পারবো না, আমার আর কথার মাঝে তৃতীয় কোন ব্যক্তিকে কখনোই সহ্য করতে পারবো না মানতে পারবো না।
হাত বাড়িয়ে খুব সন্তপর্ণে চুলের গোছা গুলো কানের পাশে গোজে দিলাম। ব্যাস এবার আর কেউ বাঁধা হয়ে দাঁড়াবে না আমার আর ওর মাঝে। ইশশ! কত মিষ্টি দেখাচ্ছে ওকে, যেন সদ্য ফোটে উঠা ফুলের মতই সৌরভ ছড়াচ্ছে ওর মুখ থেকে। চাইলে হয়তো কয়েক জনম কাটিয়ে দিতে পারবো শুধু ওর দিকে তাকিয়ে থেকেই। ওমন ভুবন ভুলানো রূপে আমি আমার সবকিছু ভুলে যেতে চাই, যেমন করেই হোক শুধু ওকে নিয়েই বাঁচতে চাই।
হঠাৎ কিছুটা নড়ে উঠলো কথা, আমি অতি সাবধানে নিজেকে যতটুকু সম্ভব শান্ত করে সীটের সাথে চেপে বসে রইলাম। মনে মনে তো কিছুটা ভয় থেকেই যায়, ও যে আমার উপর ক্ষেপে আছে সেটা তো জানা। জেগে গিয়ে আমাকে দেখলে রাগের মাথায় কি না কি করে বসে কে জানে। কথা যখন রেগে থাকে তখন হুশ থাকে না কিন্তু পরে মাথা ঠান্ডা হলে সব রাগ গলে জল। না এবার তেমন কিছু হয়নি ও শুধু আমার দিকে একটু সরে এসে মাথাটা ভালো করে রাখার চেষ্টা করছে। শেষ অব্দি সেটা আমার কাঁধের যে আর ভালো কি হতে পারে! সেটাই হলো। কথা কাঁধে মাথা রেখে আমার হাতটাকে কোলবালিশের মত জড়িয়ে ধরে প্রশান্তির ঘুম ঘুমাচ্ছে।
আর এইদিকে আমার হৃদয় জুড়ে সুখের ঢেউ প্রবল উচ্ছাসে আছড়ে পড়ছে মনের উঠোন জুড়ে। নিষ্প্রাণ মনে প্রেম জেগে উঠছে কথার স্পর্শে, ওর স্পর্শে আমার ভেতরটা পবিত্র হয়ে উঠে নিখাদ ভালোবাসার বীজ বুনতে থাকি সেখানে। ওর ছোট ছোট খুনসুটি গুলো, আমার খেয়াল রাখা গুলো, আমাকে নিয়ে ভাবনা গুলো সেচের মত কাজ করে৷ তাইতো ওমন অনুর্বর মনে এতো ভালোবাসা জেগে উঠে আপন মহিমায়। তবে কেন আমি কার্পণ্য করি ভালোবাসতে তাও কিনা সেই মানুষটাকে যে সেই ভালোবাসার বীজ বপনে করে গিয়েছে এই হৃদয়ে। আমার তো উচিত নিজের সবটা দিয়ে কথাকে আগলে রাখা। নিঃশর্তে কোন কার্পণ্য না রেখে শুধুই ভালোবেসে যাওয়া।
একটা দীর্ঘশ্বাসে নিজেকে ভেতর থেকে খানিকটা শক্ত করে নিলাম, আমাকে যে লড়তে হবে। বাকিদের সাথে লড়াই করার চেয়েও যে বেশি কষ্টের হয় নিজের সাথে নিজের লড়াইয়ে। পাশ ফিরে তাকালাম কথার মুখখানার দিকে, খুব ইচ্ছে করছে ছোট্ট করে একটা ভালবাসার পরশ বুলিয়ে দেই ওর কপালে। তবে সাহস করে উঠতে পারছি না, এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখলাম প্রায় সবাই যেন নিদ্রাদেবীর কৃপাতে গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে আছে। তবে কথা যদি জেগে যায় তবে আমাকে ওর পাশে দেখলে আর রক্ষে নেই৷ ভীরু ভীরু মনে কাঁপন ধরা শরীরে নিজেকে একটু এগিয়ে নিলাম কথার দিকে। হঠাৎ করেই ঘুম জড়ানো চোখ জুড়া মেলে আমার দিকে বিস্ময় ভরা চোখে তাকিয়ে আছে কথা। আমি খানিকটা থতমত খেয়ে নিজেকে সরিয়ে নেবার চেষ্টা করি কিন্তু আমার কাঁধে যে ও মাথা রেখে আছে। মিনিট খানেক ওমন করে তাকিয়ে থেকে নিজেকে সরিয়ে নিলো আমার কাছ থেকে। আমি কিছু বলতে যাবার আগেই অন্যদিকে ফিরে কথা বলে উঠলো,
তুই কখন এলি এখানে?
Posts: 6,108
Threads: 41
Likes Received: 12,067 in 4,138 posts
Likes Given: 5,306
Joined: Jul 2019
Reputation:
3,734
ওই এক নন্দনাদি ছিল বুকে মোচড় দেওয়া স্পেশালিস্ট, এখন দেখছি আরেকজন এসেছে উফফফফফ!! আগের পর্ব আর এটা মিলে যা খেলা দেখাচ্ছে মাগো! কচি বয়সের দুজন আর আজকের দুজন দুই ভার্সনই কাঁপাচ্ছে বুক। ওটা যে শুধুই ভয়ে কাঁপেনা, ভালোলাগার অনুভূতিতেও ধকপক করে ওঠে সেটা যেই এই গল্প পড়বে অনুভব করবে। ক্যা বাত ♥️
Posts: 1,152
Threads: 0
Likes Received: 1,380 in 926 posts
Likes Given: 3,550
Joined: Apr 2022
Reputation:
145
আমাকে আমার মত থাকতে দাও
Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,410 in 27,674 posts
Likes Given: 23,734
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
পাগল করে ছাড়বে এই পরের পাতা !!
Posts: 4,428
Threads: 6
Likes Received: 9,178 in 2,849 posts
Likes Given: 4,330
Joined: Oct 2019
Reputation:
3,225
one of your best আহা, মন ছুঁয়ে গেলো। তোমার মতো একজন লেখককে পেয়ে এই ফোরাম সমৃদ্ধ হয়েছে, এ কথা বললে একটুও ভুল হবেনা। এগিয়ে চলো, সঙ্গে আছি।
Posts: 1,473
Threads: 7
Likes Received: 2,457 in 929 posts
Likes Given: 2,453
Joined: Mar 2022
Reputation:
512
(25-12-2022, 09:08 PM)Baban Wrote: ওই এক নন্দনাদি ছিল বুকে মোচড় দেওয়া স্পেশালিস্ট, এখন দেখছি আরেকজন এসেছে উফফফফফ!! আগের পর্ব আর এটা মিলে যা খেলা দেখাচ্ছে মাগো! কচি বয়সের দুজন আর আজকের দুজন দুই ভার্সনই কাঁপাচ্ছে বুক। ওটা যে শুধুই ভয়ে কাঁপেনা, ভালোলাগার অনুভূতিতেও ধকপক করে ওঠে সেটা যেই এই গল্প পড়বে অনুভব করবে। ক্যা বাত ♥️
নন্দনাদি আলাদা লেভেলের লেখিকা, তার তুলনা হয় না।
আমার মনে হয় এমন মূহুর্ত গুলো প্রায় অনেকেরই জীবনে আসে তবে কেউ প্রকাশ করতে পারে না, সময় গুলো একত্রে গেঁথে নিতে পারে না। আমি তাদেরই হয়ে হয়তো আমারও জীবনের না বলা কথা গুলো এখানেই বলে দিচ্ছি।
হাত বাড়িয়ে ছুঁই না তোকে, মন বাড়িয়ে ছুঁই।
দুইকে আমি এক করি না, এক কে করি দুই।।
•
Posts: 1,473
Threads: 7
Likes Received: 2,457 in 929 posts
Likes Given: 2,453
Joined: Mar 2022
Reputation:
512
Posts: 1,473
Threads: 7
Likes Received: 2,457 in 929 posts
Likes Given: 2,453
Joined: Mar 2022
Reputation:
512
|