Thread Rating:
  • 100 Vote(s) - 2.84 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
WRITER'S SPECIAL "ধূসর পৃথিবী"
#41
Good start Monen
[+] 1 user Likes Mehndi's post
Like Reply
Do not mention / post any under age /rape content. If found Please use REPORT button.
#42
(17-12-2022, 01:10 AM)Mehndi Wrote: Good start Monen

Thanks  Namaskar
I'm the King of Dark
                &
I rule over all Devils
               devil2 devil2
Like Reply
#43
শুরুটা তো বেশ ভালোই লাগছে।
[+] 1 user Likes anik baran's post
Like Reply
#44
(17-12-2022, 09:01 AM)anik baran Wrote: শুরুটা তো বেশ ভালোই লাগছে।

Namaskar Namaskar
I'm the King of Dark
                &
I rule over all Devils
               devil2 devil2
Like Reply
#45
আপডেট???????????????
Like Reply
#46
(20-12-2022, 02:40 AM)Arpon Saha Wrote: আপডেট???????????????

একটু সময় লাগবে দাদা।  Namaskar
I'm the King of Dark
                &
I rule over all Devils
               devil2 devil2
Like Reply
#47
Waiting.......................................................
[+] 1 user Likes Arpon Saha's post
Like Reply
#48
নতুন পর্ব কবে আসবে ভাই।
horseride আমাকে আমার মত থাকতে দাও horseride
[+] 1 user Likes Boti babu's post
Like Reply
#49
(22-12-2022, 12:15 AM)Boti babu Wrote: নতুন পর্ব কবে আসবে ভাই।

বুম্বা দা নিজের রিলিজ ডেট ঘোষণা করেছেন, ওনার সামনে কে টিকবে? তাই আমি পিছিয়ে দিলাম। ওনারটা রিলিজ হোক তারপর  Big Grin Tongue
I'm the King of Dark
                &
I rule over all Devils
               devil2 devil2
[+] 1 user Likes Monen2000's post
Like Reply
#50
(22-12-2022, 08:25 AM)Monen2000 Wrote: বুম্বা দা নিজের রিলিজ ডেট ঘোষণা করেছেন, ওনার সামনে কে টিকবে? তাই আমি পিছিয়ে দিলাম। ওনারটা রিলিজ হোক তারপর  Big Grin Tongue

তুমি ভীষন চতুর হয়ে গেছ।  Big Grin
horseride আমাকে আমার মত থাকতে দাও horseride
[+] 1 user Likes Boti babu's post
Like Reply
#51
(22-12-2022, 09:46 AM)Boti babu Wrote: তুমি ভীষন চতুর হয়ে গেছ।  Big Grin

Big Grin Big Grin Big Grin
I'm the King of Dark
                &
I rule over all Devils
               devil2 devil2
Like Reply
#52
মোনেন দাদা মনে হয় মহাকালের গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে
Smile Smile Smile
[+] 1 user Likes Arpon Saha's post
Like Reply
#53
(24-12-2022, 02:34 AM)Arpon Saha Wrote: মোনেন দাদা মনে হয় মহাকালের গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে
Smile Smile Smile

আসলে একে তো কাজের চাপ  তার উপর একটু খালি সময় পেলেই বন্ধুদের সাথে বিশ্বকাপ নিয়ে তর্ক বেধে যাচ্ছে ওই করেই সময় কেটে যাচ্ছে... তবে আসবে এবার ট্রেলার নয় সোজল্প আসবে।
I'm the King of Dark
                &
I rule over all Devils
               devil2 devil2
Like Reply
#54
বিশ্বকাপ নিয়ে তর্ক,,, কি য়েক্টা অবস্থা
Like Reply
#55
(24-12-2022, 08:28 PM)Arpon Saha Wrote: বিশ্বকাপ নিয়ে তর্ক,,, কি য়েক্টা অবস্থা

Big Grin Big Grin
I'm the King of Dark
                &
I rule over all Devils
               devil2 devil2
[+] 1 user Likes Monen2000's post
Like Reply
#56
                                                                                                  [Image: Picsart-22-12-06-20-20-08-119.jpg]


                                  ২য় পর্ব  

নবাগত ছেলেটা এবারে চ্যাংড়া ছেলেগুলোর দিকে এগিয়ে এসে যে ছেলেটা প্রীতি নামের মেয়েটার হাত ধরে আছে তার মুখোমুখি দাঁড়ায়। 

যে ছেলেটা প্রীতি নামের মেয়েটার হাত ধরে ছিল সে প্রীতিকে বলে "তাহলে এ তোমাকে বাঁচাবে মামনি?, ও একা আর আমরা এতজন তুমি সত্যিই মনে করো যে ও তোমাকে ছাড়িয়ে নিয়ে যাবে? কি রে তুই বাঁচাবি?" শেষের প্রশ্নটা অবশ্য প্রীতির পরিচিত ছেলেটিকে করা, পাশের একজন ছেলে বলে "তুই কে বে?"। 
উত্তরটা প্রীতি দেয় "ও আমার দাদা"।
"দাদা?" ছেলেগুলো আবার হাসতে থাকে, লিডার ছেলেটা অর্থাৎ যে ছেলেটা হাত ধরে রেখেছে সে নবাগত ছেলেটিকে উদ্দেশ্য করে বলে "তুই জানিস আমি কে?", এতক্ষণ নবাগত ছেলেটি  চুপ করে থাকলেও এবার মুখ খোলে "তুই যদি এক বাপের ব্যাটা হোস তাহলে ৫ মিনিট এইভাবে ওর হাত ধরে থাক", পাশ থেকে একজন কিছুটা এগিয়ে এসে হুমকির সুরে বলে "কেন বে কি করবি? তুই."
কথাটা শেষ হলো না কারণ চোখের পলকে নবাগত ছেলেটি একপাশে একটু কাত হয়ে একটা পা সোজা মাটি থেকে সমান্তরালে তুলে পাশের ছেলেটার চোয়ালে লাথি চালায়, ছেলেটা ছিটকে মাটিতে পড়ে যায় এবার বাকি কয়েকজন এগিয়ে আসে কিন্তু লিডার ছেলেটি এখনো হাত ধরে রেখেছে, কিন্তু বেশিক্ষণ না কয়েকটা ঘুষি আর লাথি খেয়ে নিজের সঙ্গীদের এখানে ওখানে ছিটকে পড়ে যেতে দেখে পাঁচ মিনিট হবার আগেই প্রীতির হাত ছেড়ে দেয়।
প্রীতি নামের যুবতীটি এবার এতক্ষণ ওর হাত ধরে রাখা ছেলেটিকে বলে "হয়ে গেল? দম শেষ?", বলে উত্তরের অপেক্ষা না করেই দাদার কাছে যায়,
"ওখানে গাড়ি রাখা আছে তোরা যা আমি আসছি" দাদার কথা শুনে প্রীতি ওর বান্ধবীদের নিয়ে দাদার দেখানো দিকে চলে যায়।
যে ছেলেটি এতক্ষণ প্রীতি নামের যুবতীটির হাত ধরে ছিল সে বলতে যায় "আমার ভুল হয়ে গেছে আমাকে.." কিন্তু কথাটা শেষ করার আগেই মুখে সজোড়ে ঘুষি খায়, তার নাক ফেটে গলগল করে রক্ত বেরোতে থাকে, সে নাকে হাত চেপে মাটিতে বসে পড়ে, কিন্তু নবাগতছেলেটা কলার ধরে তুলে আবার তলপেটে পরপর কয়েকটা ঘুষি মেরে মাটিতে ফেলে দেয়।
এতক্ষণে নবাগত ছেলেটা আবার মুখ খোলে বলে "আজ ছেড়ে দিচ্ছি কিন্তু নেক্সট টাইম যদি আদিত্য সিংহ রায়ের বোনের দিকে চোখ তুলে দেখিস তাহলে তোদের আর কেউ জ্যান্ত দেখতে পাবে না, কথাটা মনে রাখিস"। আদিত্য সিংহ রায় নামটা শুনেই ছেলেগুলোর শুধু নয় ওখানে উপস্থিত সবাই ভয়ার্ত চোখে একবার আদিত্যকে একবার পরস্পরের দিকে তাকাতে থাকে।
পুরো উত্তরবঙ্গে এমন হয়তো কেউ নেই যে স্বল্পভাষী, সদাগম্ভীর, সদারাগী আদিত্য সিংহ রায়ের নাম শোনেনি, চেহারার সাথে হয়তো অনেকেই পরিচিত নয় কিন্তু নাম সবাই শুনেছে। আদিত্য ছেলেগুলোকে ছেড়ে পাশের একটা চায়ের দোকানে যায়, দোকানিকে বলে "এক প্যাকেট গোল্ডফ্লেক দিন", দোকানির থেকে প্যাকেট নিয়ে দাম মিটিয়ে প্যাকেট থেকে একটা সিগারেট বার করে মুখে দেয় তারপর পকেট থেকে লাইটার জ্বালিয়ে ধরায়, একটা টান দিয়ে কিছুটা ধোঁয়া ছেড়ে যেদিকে একটু আগে প্রীতি ও তার বান্ধবীরা গেল সেদিকে হাঁটা দেয়।

"তোর দাদা যে এত হ্যাণ্ডসাম সেটা তো বলিসনি কখনো?" গাড়ির দিকে যেতে যেতে এক যুবতী প্রশ্ন করে প্রীতিকে, কিন্তু প্রীতি কিছু বলার আগেই আরেক যুবতী উত্তর দেয় "তোর ওই গোমরামুখোকে হ্যাণ্ডসাম মনে হচ্ছে?"।
"হ্যাঁ সে একটু রাগী আর গম্ভীর অ্যাংরি ইয়াংম্যান টাইপের কিন্তু হ্যাণ্ডসাম হান্ক সাথে অ্যাকশন হিরো, এই প্রীতি তোর দাদার কোনো সেটিং আছে নাকি?
আগের যুবতীটি আবার বলে হাঁটতে হাঁটতে কথাটা বলে তারা সবাই এখন একটা জিপের কাছে চলে আসে কিন্তু জিপে না উঠে বাইরেই জিপে হেলান দিয়ে দাঁড়ায়, "কেনো রে প্রেম করবি নাকি?" আগের যুবতীটির গলায় এবার বিদ্রুপ, একটু থেমে আবার বলে "ওমন গোমরামুখোর সাথে প্রেম করতে পারবি?"।
"আমার দাদার সাথে তোর প্রবলেমটা কি বলতো অদ্রিজা?" প্রীতি একটু অসহিষ্ণুভাবে কথাটা বলে , এই অদ্রিজা নামের যুবতীটিও দেখতে ফর্সা বয়স প্রীতির মতোই ২৫ এর আশেপাশে, ছিপছিপে গড়ন মাথায় লম্বা চুল সেটা গুটিয়ে ছোটো করে ক্লিপ দিয়ে মাথার পিছনে আটকানো, নাকে একটা ছোটো গোল রিং পড়ে আছে, কপালের মাঝখানে একটা ছোট্ট কালো টিপ, দুকানে ঝুমকো, মুখে একটা চুইংগাম চিবোচ্ছে।
"কেনো রে গায়ে লাগছে বুঝি?"
কিছুটা বিদ্রুপের স্বরে প্রত্যুত্তর দেয় অদ্রিজা, জবাবে প্রীতি কিছুটা ক্ষুন্ন স্বরে বলে 
"আমার দাদার নিন্দে করছিস আর আমার গায়ে লাগবে না?"।
"যেটা সত্যি সেটাই বলেছি আজ থেকে তো দেখছি না তোর দাদাকে,  যখনই তোদের বাড়ি এসেছি দেখা হয়েছে প্রতিবারই দেখি সেই এক‌ই রকম রাগী আর গম্ভীর"।
"কিন্তু দাদা যে কত ভালো মনের মানুষ সেটা তুই বুঝবি না"।
"ওরকম গোমরামুখোকে দেখলে কেউই ভালো বলবে না"।
"তুই ফের দাদার নিন্দা করছিস? দেখ অদ্রি এখানে এভাবে দাদার নিন্দে করছিস তাতে তোর‌ই কিন্তু বিপদ হতে পারে"।
"কেন রে তোর দাদার ভয়ে? নাকি তোর ভয়ে? শোন পুরো নর্থ বেঙ্গল তোর ভয় পেলেও আমি পাইনা"।
"ভয় পেলেই ভালো করতি"
"কেন রে মারবি আমাকে? নাকি তোর দাদা মারবে?"
"তুই আমার বেস্টি তার উপর আমাদের প্যারেন্টসরাও একে অপরের অনেক পুরনো বন্ধু কাজেই আমি তোকে কিছু না বললেও তোর পিছনে যে আছে সে ছেড়ে কথা বলবে না"।
অদ্রিজা এবং বাকি মেয়েরা একটু অবাক আর কৌতূহলী হয়ে পিছনে জিপের দিকে চাইলো আর তৎক্ষণাৎ প্রত্যেকেই  "ওরে বাবা রে" বলে দু পা পিছিয়ে এল,সবার চোখেমুখে তখন ভয়ানক আতঙ্ক কারণ জিপের ভিতর থেকে উঁকি মারছে এক ভয়ংকর, হিংস্র কালো সারমেয়র মাথা তার জ্বলজ্বলে দুটো চোখ যেন রাগে আগুনের ভাটার মতো জ্বলছে সে যুবতীদের দিকে বিশেষ করে অদ্রিজা নামক যুবতীটির দিকে তাকিয়েই রগে গররররররর করছে যেন সে বুঝেছে এই মেয়েটি তার মনিবের নিন্দা করছিল আর সে এক্ষুনি তাকে ছিঁড়ে খাবে।
প্রীতি বাদে অদ্রিজা সহ বাকি যুবতীরা তখন আতঙ্কিত চোখে স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে আছেহ প্রীতির ঠোঁটে বাঁকা হাসি। একটা যুবতী কোনোমতে জিজ্ঞেস করে "এএটা কি?"।
"ও বাদশা, দাদার পোষা কুকুর, দাদার একমাত্র বন্ধু বডিগার্ড বিশ্বস্ত  ছায়াসঙ্গী যা বলতে চাস ও তাই, শুধু তাই নয় কেউ দাদার ক্ষতি করতে চাইলে এমনকি নিন্দা পর্যন্ত করলে সেটা ও সহ্য করে না"।
বাদশা তখনও সমানে গর্জন করে যাচ্ছে তার দৃষ্টি সোজা অদ্রিজার দিকে কিন্তু ভাগ্য ভালো বাদশা জিপ থেকে নামছে না নাহলে এতক্ষণে একটা রক্তারক্তি কাণ্ড হয়ে যেত।
"বাদশা" যুবতীদের পিছনে মনিবের ডাকটা শুনে বাদশার গর্জন কমে কিন্তু গরগরানি থামে না, সবাই পিছনে ফিরে দেখে আদিত্য হেঁটে আসছে, কাছে এলে অদ্রিজার সাথে একটা চোখাচোখি হয় তারপর জিপের ড্রাইভার সিটের দরজা খুলে নিজের পোষ্যটির গলায় হাত বোলাতে থাকে "কি হয়েছে ওদের ভয় দেখাচ্ছিলে কেন?"।
বাদশা মনিবের আদর পাওয়ায় কিছুটা শান্ত কিন্তু গরগরানি একেবারে থামেনি অবলা প্রাণীটা যদি কথা বলতে পারতো তাহলে নিশ্চয়ই বলতো "ওরা তোমার নিন্দা করছিল তাই তো আমার রাগ হয়েছিল, তুমি তো জানো তোমার কেউ নিন্দে করলে সেটা আমার সহ্য হয় না"।
"যেমন মনিব তেমন তার কুকুর"।
কথাটা বললো অদ্রিজা, এতক্ষণে কিছুটা স্বাভাবিক হয়েছে সে যদিও গলার স্বরে বোঝা যাচ্ছে যতই রাগ দেখানোর চেষ্টা করুক তাতে এখনো ভয় মিশে আছে সে আবার জিপের কাছে এল একটু থেমে আবার শুরু করে সে "মনিব যেমন সবসময় গম্ভীর আর রাগী,সবসময় সবাইকে ভয় দেখিয়ে বেড়ায়, কুকুরটাও হয়েছে ঠিক তেমনি"।
আদিত্য কোনো উত্তর না দিয়ে নিজের পোষ্যটির গলায় হাত বোলাতে থাকে ওদিকে অদ্রিজার মুখ থেকে কথার মেশিনগান থামার নাম‌ই নিচ্ছে না "সবসময় হাসিখুশি থাকতে হয় আনন্দ করতে হয় তা না গোমরামুখো হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে আরে বাবা পৃথিবীটা কত রঙিন সেটা এই ধরনের মানুষরা জানেই না তা."
অদ্রিজা আরও কিছু বলতে যাচ্ছিল কিন্তু তার আগেই আদিত্য হটাৎ বাদশাকে ছেড়ে অদ্রিজার দিকে ফিরলো তারপর ওর সামনে এগিয়ে গেল, অদ্রিজা পিছনে হটে যাচ্ছিল কিন্তু পারলো না জিপে পিঠ ঠেকে গেল, আদিত্য দুটো হাত অদ্রিজার দুদিকে বাড়িয়ে ওকে নিজের বাহুর ঘেরাটোপে বন্দী করে বললো "আপনার কাছে জীবনটা নিছক মজার বা আনন্দের জিনিস হতে পারে কিন্তু সবার কাছে সেটা নাও হতে পারে, কারো কারো পৃথিবী রঙিন হয় না তাদের পৃথিবী থেকে সব রঙ উবে গেছে তাদের পৃথিবীটা ধূসর হয়ে গেছে যদিও সেটা আপনার বোঝার ক্ষমতা নেই"।
দুজন কিছুক্ষণ পরস্পরের দিকে তাকিয়ে র‌ইলো, দুজনেই সটান একে অপরের চোখের দিকে তাকিয়ে আছে একজনের চোখে আগ্নেয়গিরির উত্তপ্ত আগ্নেয় লাভা থাকলে অপরজনের চোখে সাগরের শীতল ঠাণ্ডা জলরাশি একজন চাইছে সামনের জনকে পুড়িয়ে ছাই করে দিতে তো অপরজন চাইছে আগুনকে নিভিয়ে ঠাণ্ডা করে দিতে।
"দাদা"
প্রীতির ভয়ার্ত স্বর শুনে নিজেকে সামলে নেয় আদিত্য, বাকি যুবতীরাও কিছুটা হকচকিয়ে গিয়েছিল। অদ্রিজাকে নিজের বাহুর ঘেরাটোপ থেকে মুক্ত করে দু পা পিছিয়ে এসে বলে "ছাইয়ের তলায় চাপা পড়ে থাকা লুকোনো আগুনকে খুঁচিয়ে জাগিয়ে তুলতে নেই মিস চক্রবর্তী তাতে নিজের‌ও পুড়ে ছাই হয়ে যাওয়ার চান্স থাকে, আগুন থেকে দূরে থাকুন আমার থেকে দূরে থাকুন জস্ট স্টে অ্যাওয়ে ফ্রম মি আপনাকে আগেও বলেছি আজ আবার বললাম" কথাটা বলে জিপের ড্রাইভার সিটে উঠে বসে আদিত্য সিংহ রায়।
প্রীতি গিয়ে ড্রাইভারের পাশের সিটে দাদার পাশে গিয়ে বসে কিন্তু বাকি মেয়েরা গাড়িতে ওঠে না তারা দাঁড়িয়েই থাকে তাই দেখে আদিত্য প্রীতিকে জিজ্ঞেস করে "তোর বন্ধুরা যাবে না?"
প্রীতি একবার ঘাড় ঘুড়িয়ে বন্ধুদের দিকে তাকিয়ে বলে "কি রে তোরা দাঁড়িয়ে আছিস কেন উঠে আয়", কিন্তু তবুও সবাই দাঁড়িয়ে থাকে, প্রীতি এবার বুঝতে পারে ব্যাপারটা ও একটু হেসে বলে "ভয় পাস না দাদা আছে বাদশা কিছু করবে না উঠে আয়",এবারএকটু ভয়ে ভয়েই সবাই উঠে জিপের পিছনে বসে।
এনজেপি ছেড়ে গাড়ি দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলে গাড়িতে ওঠা ইস্তক সবার মুখ একেবারে বন্ধ হয়ে গেছে এমনকি অদ্রিজার‌ও তারা এখন চুপ করে বসে বাদশার দিকে ভয়ার্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আর বাদশা, সে প্রীতির কোলে বসে কখনো সামনে দেখছে তো আবার কখনো পিছনে বসা অদ্রিজার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখছে। পরপর কয়েকটা গ্ৰাম পেরিয়ে একটা ছোটো নদী পার হয়ে এল ওরা তারপর একটা বাঁক নিয়ে কাঁচা রাস্তা ধরলো, রাস্তাটা একটা জঙ্গলের ভিতর দিয়ে গেছে যেতে যেতে জিপের পিছনের সিটে বসা যুবতীরা যেভাবে ভয়ার্ত দৃষ্টিতে আশেপাশের জঙ্গলের দিকে তাকাচ্ছিল তাতে স্পষ্টতই বোঝা যাচ্ছে তারা কিছু একটার ভয় পাচ্ছে।
সামনের আয়নায় সেটা দেখে প্রীতি আবার একটু হেসে বলে "তোরা কিসের ভয় পাচ্ছিস  ম্যানইটারের? ভয় পাস না আপাতত ওরকম কোনো খবর নেই আর থাকলেও আমার দাদা ক্র্যাকশট ওর হাতের গুলি ফসকায় না"।
যদিও রাস্তায় কয়েকটি ছাগলকে ঘাস খেতে দেখা ছাড়া আর কোনোরকম ইটারের সাথেই সাক্ষাৎ হয়নি নির্বিঘ্নেই জঙ্গল পার হয়ে গ্ৰামে ঢুকলো তারপর কিছুটা যেতেই সিংহ রায় প্যালেসের বিরাট লোহার গেটবন্ধ ফটক চোখে পড়লো সেটা দিয়ে ঢুকে পোর্টিকোর উপর দিয়ে প্যালেসের দরজার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো।
দরজায় দাঁড়িয়ে আছেন এক মহিলা বয়স ৫০ এর আশেপাশেই মাথায় কাঁচাপাকা মেশানো চুল খোপা করে বাঁধা, সিঁথিতে সিঁদুর, কপালে সিঁদুরের টিপ গায়ে হলুদ তাঁতের শাড়ি আর কালো হাফস্লিভ ব্লাউজ, দুহাতে শাখা-পলা, গলায় একটা সোনার হার চোখেমুখে খুশী ঝিলিক মারছে ইনিই অতীন্দ্র বাবুর স্ত্রী উমা দেবী আদিত্য আর প্রীতির মা।
জিপ থামতেই প্রীতি এক লাফে নেমে দৌড়ে গিয়ে মাকে জড়িয়ে ধরলো মা-মেয়ের দুজনের মুখেই আনন্দের বাঁধ ভেঙেছে, তারপর একে একে প্রীতি বন্ধুদের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয় হটাৎ উমাদেবী জিজ্ঞেস করেন "লাটসাহেব আবার কোথাও গেলেন"।
যুবতীরা কিছুটা থতমত খেয়ে যায় কিন্তু প্রীতি হো হো করে হেসে ওঠে কিছু বলার আগেই আদিত্য এসে মায়ের সামনে দাঁড়ায়, ছেলেকে দেখে যেন তেলেবেগুনে জ্বলে ওঠেন উমা দেবী "এইযে লাটসাহেব এতদিনে দর্শন দেবার দয়া করলেন?"
জোঁকের মুখে নুন পড়লে যা হয় তেমনি আদিত্য কোনো উত্তর না দিয়ে চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকে, কিন্তু উমাদেবী বলে চলেন "মুখটা দেখো মনে হচ্ছে পুরো তরাইয়ের জঙ্গল গজিয়ে উঠেছে আজ‌ই ওই জঙ্গল সাফ করবে তুমি"। "মা.." আদিত্য এবার একটু প্রতিবাদ করতে যেতেই আরো গর্জে ওঠেন উমাদেবী "একটা থাপ্পড় মারবো... যা বলছি করবে চুল দাঁড়ি কাটছো না কেন? কেউ মারা গেছে?"
"মা, বলেছি না আমার সামনে এসব বলবে না"
এবার প্রতিবাদ করে আদিত্য আর সঙ্গে সঙ্গে পাশ থেকে বাদশাও একবার ভৌ করে ডেকে ওঠে কিন্তু তার উদ্দেশ্যে উমাদেবী এবং এই ডাক গর্জন বা ধমক কোনোটাই নয় সে যেন বলছে "আমার মনিবকে বকছো কেন?"। উমাদেবী যেন বুঝতে পারলেন এবার তার ধমকের উদ্দেশ্য বাদশা "অ্য্যাই হতচ্ছাড়া বাদশা তুই কাকে কি বলছিস? মনিবের ভক্ত হয়েছে বলি সারাদিন কিছু খেয়েছিস? নাকি মনিব নিজেও খায়নি আর তোকেও খেতে দেয়নি?, চলো এবার খেয়ে আমাকে উদ্ধার করবে চলো আর তুমি আগে চেহারার জঙ্গল সাফ করে এসো, একেবারে ছোটো করে চুল ছাটবে আর দাঁড়ি গোঁফ পুরো পরিষ্কার করে কামাবে"। শেষের কথাটা অবশ্য আদিত্যকে বলা, সে আরেকবার আপত্তি করতে গিয়েছিল কিন্তু মায়ের রাগী দৃষ্টির সামনে আর কিছু না বলে চুপচাপ বেড়িয়ে যায় বাদশাও চুপ করে মনিবের পিছু পিছু চলে যায়।
"দেখো হতচ্ছাড়া কুকুরটা আবার পিছনে যাচ্ছে"
উমাদেবীর এই অগ্নিমূর্তি দেখে প্রীতির সঙ্গের যুবতীরা হতবাক হয়ে গেছে যে লোকটা আর তার পোষ্যকে সবাই ভয় পায় সেই লোকটা যে মায়ের সামনে এরকম নরম হয়ে যায় এটা তারা বিশ্বাস করতে পারছে না, কিন্তু উমাদেবী পরক্ষণেই আবার হাসিমুখে সবাইকে ভিতরে ডাকেন তারপর ওদের মুখের অবস্থা বুঝে বলেন "আমার ছেলে ওরকম‌ই নিজের দিকে খেয়াল নেই, আর কুকুরটাও হয়েছে সেরকম ওকে না ধমকালে নিজের খেয়াল রাখবে না তোমরা কিছু মনে কোরো না"।
"তোমার ধমকেও তো দাদার গোমরামুখ কাটছে না" 
প্রীতি হাসতে হাসতে কথাটা বললো, সঙ্গে সঙ্গে উমাদেবী মেয়েকে ধমক দিলেন "খবরদার প্রীতি একদম দাদাকে গোমরামুখো বলবি না"। "এটা আমার কথা নয় অন্য অনেকের কথা" প্রীতি লক্ষ্য করলো কথাটা শুনে অদ্রিজা লাল হয়ে গেল।
অনেকরাতে বিছানা ছেড়ে উঠে পড়ে আদিত্য আজ‌ও তার চোখে ঘুম নেই অনেকক্ষণ এদিক ওদিক করে বিছানা থেকে নেমে আসে, গায়ে খালি একটা ট্রাউজারস পরা ,এবার তার উপর একটা স্যাণ্ডো গেঞ্জি চাপিয়ে দরজা খুলে বাইরে বেরিয়ে সিঁড়ির দিকে যায় উদ্দেশ্য খোলা ছাদে গিয়ে খানিকক্ষণ খোলা হাওয়া আর একটা সিগারেট খাবে। সিংহ রায় প্যালেসটার বয়স প্রায় ৭০-৮০ বছর হয়ে গেল কিন্তু এখনো যে মাথা উঁচু করে টিকে আছে তার কারণ এবাড়িতে বসবাসকারী সিংহ রায়রা নিয়মিত বাড়ির পরিচর্যা করেন নিয়মিত পরিদর্শন করা হয়, বাড়িটা  পুরনো হলেও অনেক জায়গায় নতুনত্বের ছাপ বাকি জায়গাগুলোতেও অবহেলার চিহ্নমাত্র নেই। প্যালেসের একদম উপরে পুরোটা জুড়েই রেলিং ঘেরা ছাদ, সিমেন্টের গাঁথনির উপরে নানা রকম মূর্তি বসানো আছে সেগুলোর বয়স‌ও বাড়ির সমান, কার্ণিশ ঘেঁষে বেশকিছু ফুলগাছের টব লাগানো ছাদ থেকে চারিদিকে অনেকটাই দৃশ্যমান হয় বাড়ির সামনের দিকে গ্ৰামটা দেখা যায় তেমনি পিছনে দূরে জঙ্গল এবং পাহাড়‌ও দেখা যায়।
আদিত্য একদম উপরে তিনতলার কয়েকটা ঘরের একটায় থাকে একা তার নীচের দোতলায় অতীন্দ্র বাবু।আর।তার স্ত্রী এবং আরেকটা ঘর প্রীতির যেটায় এখন প্রীতি ও তার বন্ধুরা আছে অবশ্য তার জন্য একটা চৌকির ব্যাবস্থাও করা হয়েছে। তিনতলার উপরে আর ঘর নেই ছাদে যাওয়ার সিঁড়ি ছাদে দরজা লাগানো আর সিঁড়ির পাশে কিছুটা জায়গা জুড়ে গুদাম ঘর।
ছাদের কার্ণিশের কাছে গিয়ে একটা সিগারেট ধরায় সে আজকাল রাতে তার তেমন ঘুম হয় না বৃদ্ধ বয়সে অনেকেরই চোখে ঘুম থাকে না এটা সে শুনেছে কিন্তু সে বৃদ্ধ হয় এখনো ৩০ ও হয়নি তবুও। নিদ্রাদেবী তাকে পরিত্যাগ করেননি শুধু তাকে নিয়ে খেলছেন যেমন কোনো অভিমানী প্রেমিকা খেলা করে তার প্রেমিকের সাথে, নিদ্রাদেবীর অভিমান হয়েছে আদিত্যর উপরে কারণ তাকে নিজের কাছে পেতে পেতেও হাতছাড়া করতে হয়েছে।
নিদ্রাদেবী এসেছিলেন আদিত্যকে নিয়ে চিরনিদ্রায় চলে যেতে চিরকালের জন্য নিজের কাছে রেখে দিতে কিন্তু পারেন না কাপ আর ঠোঁটের দূরত্বটা রয়ে গেছে তাই হয়তো আর সহজে ধরা দেননা তিনি, এটা এখন আদিত্যর গা স‌ওয়া হয়ে গেছে। সিগারেটে টান দিতে দিতে কখনো আকাশের চাঁদ তো কখনো বাড়ির পিছনের দূরের পাহাড় জঙ্গলের দিকে তাকিয়ে থাকে ভাবতে থাকে নিজের ফেলে আসা জীবনের কথা।
কি চেয়েছিল সে আর কি হয়েছে আজ পুরো নর্থবেঙ্গল জুড়ে তার নাম ছড়িয়ে আছে অথচ সে তো এই নাম পরিচয় চায়নি একটা সাধারণ জীবন চেয়েছিল সে যেখানে আর পাঁচজন সাধারণ মানুষের মতোই হেসেখেলে জীবন কাটাবে কিন্তু এখন তার জীবনটা ওই দূরের অন্ধকারাচ্ছন্ন জঙ্গলের মতো অন্ধকারে ভরে গেছে, ওখানে যেমন মাঝে মাঝে পূর্ণিমার চাঁদের আলো আলোকিত করে তার জীবনেও কয়েকজন আলোকিত করে রেখেছে তবে জঙ্গল জানে পূর্ণিমার আলো তার প্রতিদিনের নয় মাঝে মাঝে হারিয়ে ফেলবে আবার ফিরে পাবে কিন্তু আদিত্য সেও ভয় পায় তার জীবনের এই আলো প্রদানকারীদের হারিয়ে ফেলতে কারণ সে জানে তার জীবন ওই অন্ধকার জঙ্গলের থেকেও অন্ধকার সে হারিয়ে ফেললে আর ফিরে পাবে না।
হটাৎ পাশে বাদশার গরগরানি শুনে তন্ময়তা ভেঙে জেগে ওঠে আদিত্য তাকিয়ে দেখে বাদশা কার্ণিশের উপরে সামনের দুটো পা তুলে দাঁড়িয়ে আছে তার দৃষ্টি সটান নীচের দিকে হিংস্র দৃষ্টি দিয়ে তাকিয়ে আছে সে যে দৃষ্টি শিকারীর চোখে থাকে শিকারের গন্ধ পেলে।
যেদিকে বাদশা তাকিয়ে আছে সেটা বাড়ির পিছন দিক এদিকে একটা বাগান আছে কিছুটা অংশ জুড়ে বিভিন্ন রকম ফুলগাছ লাগানো কিছুটা জুড়ে সবজি আর কিছুটা ফলের গাছ লাগানো আছে,বাগানের দেখাশোনা করার জন্য দুজন মালি রাখা আছে তারাও ওখানেই থাকে ওদিকে কোয়ার্টার, বাথরুম করা আছে এছাড়া সবসময়ের জন্য কাজের লোক সনাতন যে অতীন্দ্র বাবুর থেকেও বছর কয়েকের বড়ো হবেন তিনি থাকেন একলা মানুষ বিয়ে থা করেননি, সিংহ রায়রাই তার পরিবার অতীন্দ্র বাবু ডাকেন সনাতন দা বলে, আদিত্য আর প্রীতি তাকে সনাতন জ্যেঠু বলে ডাকে
মালিদের আর সনাতন জ্যেঠুর কোয়ার্টারের সামনে ইলেকট্রিক লাইট থাকে কিন্তু এত রাতে নিভিয়ে তারা ঘুমিয়ে পড়েছে বাগানেও কয়েকটা লাইটপোস্ট বসানো আছে কিন্তু তাতে লাইট জ্বলছে না এতক্ষণ আদিত্য দেখলেও অতটা মাথা ঘামায়নি বোধহয় তার অবচেতন মন নিঃসঙ্গ আর অন্ধকার চাইছিল সেও এই অন্ধকারে অন্য জগতে বিচরণ করছিল কিন্তু বাদশার ডাকে সে বাস্তব জগতে ফিরে আসে,প্রথমটায় আদিত্য বুঝতে পারে না বাদশা ওদিকে কি দেখছে,  অন্ধকারে একটু চোখটা সয়ে আসতেই বুঝতে পারে এইজন্যই তো সে বাদশাকে কাছে রেখেছে সে যা বুঝতে পারেনি বাদশা পেরেছে,বাগানের অন্ধকারে কয়েকটা কালো মূর্তি চুপিসারে আস্তে আস্তে এগিয়ে আসছে মূল বাড়িটা লক্ষ্য করে।
লোকগুলোর হাতে টর্চ মাঝে মাঝে সেটা জ্বালিয়ে রাস্তা দেখে নিচ্ছে, মুখে কালো কাপড় বাধা আস্তে আস্তে এগোচ্ছে ,এরা যে বন্ধু বা শুভাকাঙ্ক্ষী নয় সেটা বুঝতে আদিত্যর খুব একটা বেগ পেতে হলো না, বাদশা বোধহয় একটা ডাক ছাড়তে যাচ্ছিল কিন্তু আদিত্য বাঁধা দেয়
"উঁহু কোনো আওয়াজ নয় বাড়ির সবাই জেগে যাবে, চল নীচে চল ওদের সাথে মোলাকাত করে আসি"।
আদিত্য সিঁড়ি দিয়ে দ্রুত নীচে নামতে শুরু করে সাথে বাদশা, নামতে নামতে বাদশাকে বলে "নর্থবেঙ্গলে তোর দাপট কমে যাচ্ছে রে, সবাই জানে যে তুই এই বাড়িতে পাহারা দিস তার পরেও ওরা ঢুকতে সাহস করেছে, তোর আর মানসম্মান র‌ইলো না'।
কথাগুলো এমনভাবে বলে যেমন ভাবে কেউ তার বন্ধু বা পরিচিতকে নিজের শব্দের দ্বারা খোঁচা মেরে রাগীয়ে মজা নেয়, একদম নীচের তলাটা আসলে ড্রয়িংরুম সেখানে দুটো দরজা একটা বাড়ির মেইন গেট অপরটা পিছনদিকে বাগানে যাওয়ার জন্য দুদিকেই দরজার ওপারে বারান্দা এবং তারপর অল্প কয়েকটা সিঁড়ি আছে, আদিত্য পিছনের দরজা দিয়ে বেরিয়ে বারান্দায় আসে তারপর দরজাটা বাইরে থেকে বন্ধ করে বাদশাকে বলে "তুই এখানে থাক কেউ ঢুকতে চাইলে তাকে সামলাবি আমি এগিয়ে যাচ্ছি"।
সিঁড়ির মুখে একপাশে একটা সুইচবোর্ড আছে আদিত্য একটা সুইচ টেপায় সিঁড়ির মুখে উপরে একটা লাইট জ্বলে উঠলো, ফলে আদিত্যর কাউকেই দেখতে অসুবিধা হলো না, জনা পাঁচেক লোক এসেছে। ততক্ষণে আগন্তুকরা প্রায় চলে এসেছে কিন্তু হটাৎ করে লাইট জ্বলে ওঠায় হকচকিয়ে যায় এবং পরক্ষণেই দেখে তাদের সামনে বিকটাকৃতি সারমেয় এবং তার মনিব সাক্ষাৎ যম আদিত্য দাঁড়িয়ে আছে। তারা ভাবতেই পারেনি যে এইভাবে বাঁধা পাবে, ভাবতেই পারেনি যে এতরাতে আদিত্য জেগে থাকবে এবং তাদের সামনে এসে দাঁড়াবে তারা জানে আদিত্যর সামনে তারা পাঁচজন কিছুই না তারসাথে আদিত্যর পিছনে সাক্ষাৎ কালান্তক দাঁড়িয়ে আছে।
লোকগুলো পরস্পরের মুখ চাওয়াচাওয়ি করছে দেখে আদিত্য নীচু স্বরে বলে "কে পাঠিয়েছে তোদের প্রতাপ সরকার?"
কিন্তু লোকগুলো কিছু না বলে চুপ করে আদিত্যর দিকে তাকিয়ে থাকে, আদিত্য আবার কথা বলে "আর তোরাও বোকার মতো চলে এলি মরতে"।
লোকগুলো একথার‌ও উত্তর দেয় না উল্টে তাদের হাতে ধারালো ছুরি, চপার এইসব অস্ত্র চলে আসে, সেটা দেখে বাদশা গরগারানি শুরু করলে আদিত্য বলে "উঁহু বাদশা আওয়াজ নয়", তারপর সামনের লোকগুলোকে উদ্দেশ্য করে বলে "খুব ভালো করেছিস আগ্নেয়াস্ত্র আনিসনি ওতে আওয়াজ হয় তাতে সবার ঘুম ভেঙ্গে যেত আর আমি চাইনা সেটা হোক"।
একজন হটাৎ ছুরি তুলে আক্রমণ করে আদিত্য এরমধ্যেই সিঁড়ি দিয়ে নেমে এসেছে সে চকিতে আঘাতটা এড়িয়ে যায় কিন্তু পরক্ষণেই আরেকজন এগিয়ে আসে চপার নিয়ে এবারে আদিত্য তার বুকে একটা লাথি মারে লোকটা ছিটকে মাটিতে পড়ে, এবারে বাকিরা সবাই একসাথে আক্রমণ করে প্রথমে বেশ কিছুক্ষণ আদিত্য ওদের পাল্টা আঘাত করতে পারে না শুধু ওদের আঘাতগুলো এড়িয়ে নিজেকে বাঁচাতে থাকে।
এরমধ্যেই একজন একটু স্লো হলে সেই সুযোগটা আদিত্য নেয় তাকে এক ঘুষিতে ছিটকে দেয় কিন্তু আরেকজনের ছুরি আড়াআড়িভাবে তার পিঠের একটা জায়গায় লাগলো সঙ্গে সঙ্গে সেখান থেকে রক্ত বেরিয়ে গায়ের গেঞ্জিটা লাল হয়ে গেল।
মনিবের রক্তপাত দেখে বাদশা একবার গর্জন করে ওঠে পরক্ষণেই আদিত্য ধমক লাগায় "বাদশা"। বাদশা চুপ হয়ে যায় আবার লড়াই শুরু হয় কিন্তু এবার আদিত্য আরও বেশী আক্রমণাত্মক লোকগুলোর কয়েকজন আদিত্যর হাতে ঠ্যাঙানি খেয়ে মাটিতে পড়ে আছে এরই মধ্যে একজন ছুরি হাতে আক্রমণ করলো আদিত্য পরপর দুবার এড়িয়ে গেল কিন্তু তৃতীয় বারে মাথাটা এড়িয়ে লোকটাকে ডান পা দিয়ে লাথি মারতে গেলে চকিতে ছুরিটা আদিত্যর হাঁটুর কিছুটা উপরে গেঁথে দেয় ,যন্ত্রনায় আর্তনাদ করতে গিয়েও দাঁতে দাঁত চেপে সহ্য করে সে বা হাঁটু ভাঁজ করে মাটিতে বসে পড়ে অপর পায়ে হাত চেপে ধরে কিন্তু আওয়াজ করে না, তখনই মালিদের কোয়ার্টারের দিক থেকে একজন চিৎকার করে ওঠে,
"ছোটোবাবুকে মেরে ফেললো রে, সনাতন দা বড়ো বাবু..."
চিৎকারে মুহূর্তে কোয়ার্টারের দিকের আলো জ্বলে ওঠে কিন্তু তার আগেই বাদশা লোকটার উপরে ঝাঁপিয়ে পড়েছে তার উদ্দেশ্য আততায়ীর টুঁটি কিন্তু না পেরে প্রথমে লোকটার কবজি ও তারপরে একটা পা কামড়ে ধরেছে, লোকটাও আর্তনাদ করে ওঠে পালাতে চেষ্টা করে কিন্তু পারে না সনাতন আর দুজন মালি লাঠিসোটা নিয়ে বেরিয়ে এসে ওদের ঘিরে ধরে, বেঁধে ফেলেছে এদের মধ্যে যাকে বাদশা আক্রমণ করেছে তার অবস্থা অত্যন্ত খারাপ বাদশা তার পায়ের অনেকটা জায়গা কামড়ে খুবলে নিয়েছে সে আবার কামড়াতে যাবে কিন্তু আদিত্য "বাদশা" ডাক দেওয়ায় ছেড়ে দৌড়ে মনিবের কাছে আসে।
প্যালেসের পিছনের দরজায় দরজায় ঠকঠক আওয়াজ শুনে একজন গিয়ে তাড়াতাড়ি দরজা খুলে দেয় অতীন্দ্র বাবু আর উমাদেবী বেরিয়ে আসেন আর এসেই ছেলেকে জখম ও রক্তাক্ত অবস্থায় দেখে উমাদেবী তাড়াতাড়ি আর্তনাদ করে ছুটে ছেলের কাছে আসেন, অতীন্দ্র বাবুও আসেন আর তাদের পিছনে আসে প্রীতি ও তার বন্ধুরা। অতীন্দ্র বাবু আর সনাতন মিলে আদিত্যকে ধরে ড্রয়িংরুমে নিয়ে এসে বসান, উমাদেবী রীতিমতো কান্নাকাটি শুরু করেছেন।
প্রীতি দাদার পরিচর্যা শুরু করেছে তাকে তার বন্ধুরা হেল্প করছে তারা সবাই ডাক্তারি পাশ করেছে কাজেই এসব নতুন নয়, কোনোমতে ছুরিটা বার করে তুলো চেপে ধরে তারপর আঘাতের জায়গাটা ভালো করে পরিষ্কার করে ব্যাণ্ডেজ বেঁধে দেয়, এরপর এক‌ইভাবে পিঠেও আঘাতের জায়গাটায় ব্যাণ্ডেজ লাগিয়ে দেয় আদিত্য লক্ষ্য করে গম্ভীরমুখে তার শুশ্রূষা করলেও প্রীতির চোখে জল এদিকে উমাদেবীর কান্না থামছেই না, অতীন্দ্র বাবু যদিও নিজেকে সামলে রেখেছেন কিন্তু মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে ছেলেকে এই আহত দেখে তার‌ও কম কষ্ট হচ্ছে না।
ব্যাণ্ডেজ বাঁধা হয়ে গেলে আদিত্য কথা বলে প্রথমে প্রীতির বন্ধুদের উদ্দেশ্যে ধন্যবাদ জানিয়ে তাদের ঘুমাতে যেতে বলে,সবাই চলে গেলেও একজন রয়ে যায় অদ্রিজা, সে রান্নাঘরের দিকে যায়। আদিত্য মায়ের দিকে তাকিয়ে বলে "মা আমি ঠিক আছি তুমি কেঁদোনা"।
"তুই বাইরে গিয়েছিলি কেন? যদি তোর কিছু হয়ে যেত?"
উমাদেবী ধমক লাগান ছেলেকে যদিও কান্না থামেনি, আদিত্য দুহাতে মায়ের চোখের জল মুছে দেয় তারপর বলে "আমি ঠিক আছি আর আমি না গেলে ওরা ভিতরে ঢুকে আসতো"
"তাই বলে একা যাবি?"
এবার প্রীতিও ধমকের সুরে বলে, এর‌ই মাঝে বাদশাও একবার ভৌ করে ডেকে ওঠে সেও আদিত্যকে ধমক দিচ্ছে, অতীন্দ্র বাবুও বলেন যে একা আদিত্যর বাইরে যাওয়া ঠিক হয়নি আদিত্য বোনকে কাছে টেনে বলে "তুইও কাঁদছিস, তোকে বলেছি না তুই কখনো কাঁদবি না"।
"তোর কিছু হয়ে গেলে কি হতো?"
কাঁদতে কাঁদতে কথাটা বলে প্রীতি, আদিত্য বোনের চোখের জল‌ও মুছিয়ে দেয় বলে "আমার বোন ডাক্তার তাহলে আমার কিছু হ‌ওয়া জাস্ট ইম্পসিবল ছিল"। ইতিমধ্যে সনাতন দা এসে জানায় পুলিশ আসছে ওদের নিয়ে যেতে, আদিত্য জানায় বাগানের লাইটগুলো সকালে চেক করে নিতে।
"এই দুধটা খেয়ে নিন আপনার অনেক রক্তপাত হয়েছে"
রান্নাঘর থেকে হলুদ দেওয়া গরম দুধ একটা বড়ো পিতলের গ্লাসে এনে আদিত্যর সামনে ধরে অদ্রিজা বোঝাই যায় যে এ বাড়ির সবকিছু তার অতি পরিচিত, এটা অবশ্য অস্বাভাবিক কিছু নয় অদ্রিজার বাবা সুবিমল চক্রবর্তী আর অতীন্দ্র বাবু দুজনে বাল্যবন্ধু আবার উমাদেবী এবং অদ্রিজার মা চারুলতা দেবীও বান্ধবী ফলে দুই পরিবারের মধ্যে যোগাযোগ অনেক পুরনো, সুবিমল বাবু একজন ডাক্তার তিনি বেশ কিছু বছর দিল্লিতে কাটিয়েছেন তখন দুই পরিবারের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকলেও সম্প্রতি সুবিমল বাবু পরিবার নিয়ে নিজের রাজ্যে ফিরে উত্তরবঙ্গের একটা হাসপাতালে জয়েন করেছেন এবং এখানেই একটা বাড়ি কিনে পাকাপাকি বসবাস শুরু করেছেন ফলে দুই পরিবারের যোগাযোগ আবার শুরু হয়েছে। দুই পরিবারের মেয়ে প্রীতি ও অদ্রিজা প্রায় সমবয়সী দুজনেই ডাক্তারি পড়তে দিল্লিতে গিয়েছিল কিন্তু যখনই ছুটিতে বাড়ি আসতো অদ্রিজার এবাড়িতে নিত্য যাতায়াত ছিল কাজেই এবাড়ির অন্দরমহলের সাথে সে ভালোই পরিচিত।
"কি হলো নিন দুধটা খেয়ে নিন"
আবার আদিত্যকে বলে অদ্রিজা, কিন্তু আদিত্য দুধ নেয় না গম্ভীরমুখে বলে "আমার দরকার নেই আমি ঠিক আছি"। অদ্রিজা কিছু বলার আগেই উমাদেবী আবার ধমক লাগান "চুপচাপ দুধটা খেয়ে নাও নাহলে কিন্তু.."
"মা.."
"চুপচাপ খেয়ে নাও"
আদিত্য আর কোনো কথা না বলে অদ্রিজার হাত থেকে দুধের গ্লাসটা নেয় মা কিছু বললে আদিত্য সেটা ফেলতে পারে না তাই অনিচ্ছা সত্ত্বেও আস্তে আস্তে দুধটা খেতে থাকে। এইসময় বাইরে একটা গাড়ি থামার আওয়াজ শোনা যায় এবং একটু পরেই হন্তদন্ত হয়ে ঢোকেন সুবিমল বাবু এবং চারুলতা দেবী।
সুবিমল বাবুর অবশ্য বিশেষ কিছুই করার ছিল না আঘাতের জায়গাটা পরিষ্কার করা থেকে শুরু করে ব্যাণ্ডেজ বাঁধা সবকিছুই হয়ে গিয়েছিল তবুও উনি একবার চেক করে নিলেন এবং আদিত্যকে একটা ইঞ্জকশন দিলেন টিটেনাসের, সাথে ব্যাথার জন্য পেইনকিলার দুধ খাওয়া শেষে আবার সবাই ধরে আদিত্যকে ওর রুমে নিয়ে এসে বিছানায় শুইয়ে দেয় পিঠে আঘাতের জন্য চিৎ হয়ে না শুয়ে কাত হয়ে শোয়।

গল্পটা কেমন লাগছে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন, এবং যদি ভালো লাগে তাহলে লাইক এবং রেপু দিয়ে উৎসাহিত করবেন, আর যদি খারাপ লাগে তাহলেও সেটা কমেন্ট করে জানাবেন।
I'm the King of Dark
                &
I rule over all Devils
               devil2 devil2
Like Reply
#57
অসাধারণ হচ্ছে। আশারালহি বড় উপন্যাস হবে। পরের পার্ট এর অপেক্ষায়
[+] 1 user Likes Kalobonduk's post
Like Reply
#58
(24-12-2022, 11:46 PM)Kalobonduk Wrote: অসাধারণ হচ্ছে। আশারালহি বড় উপন্যাস হবে। পরের পার্ট এর অপেক্ষায়

ভালো লাগলে একটা লাইক এবং রেপু দিয়ে উৎসাহিত করবেন।
I'm the King of Dark
                &
I rule over all Devils
               devil2 devil2
Like Reply
#59
অসাধারণ আপডেট দাদা
Like Reply
#60
(24-12-2022, 11:50 PM)Jibon Ahmed Wrote: অসাধারণ আপডেট দাদা

Namaskar Namaskar
I'm the King of Dark
                &
I rule over all Devils
               devil2 devil2
[+] 1 user Likes Monen2000's post
Like Reply




Users browsing this thread: 11 Guest(s)