Thread Rating:
  • 80 Vote(s) - 3.29 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
WRITER'S SPECIAL সৃষ্টি (সমাপ্ত)
(28-11-2022, 07:48 PM)bidur Wrote: মানুষটা মেঘে ঢাকা তারার মতই রইলেন। ভাল লাগে যখন দেখি ওনার নাতি স্থানীয় আত্মীয়রাও উন্নতি করছে। পরমব্রত ভাল অভিনেতা।

Namaskar Namaskar 
[+] 1 user Likes Bumba_1's post
Like Reply
Do not mention / post any under age /rape content. If found Please use REPORT button.
(06-11-2022, 09:21 PM)Bumba_1 Wrote: ঋত্বিক বেঁচে থাকবে স্রষ্টা হয়ে তাঁর সৃষ্টির আলোয়..

কিংবদন্তি পরিচালক ঋত্বিক ঘটকের জন্মদিনে আমার পক্ষ থেকে রইলো বিনম্র শ্রদ্ধাঞ্জলি

-- ★★ --

একদম সত্যি কথা
[+] 1 user Likes Laila's post
Like Reply
(30-11-2022, 06:23 PM)Laila Wrote: একদম সত্যি কথা

Namaskar   Namaskar 
Like Reply
(03-11-2022, 02:08 PM)Bumba_1 Wrote:
চাঁদের সাথে সূর্য যেমন, ভাইয়ের সাথে বোন
সম্পর্ক না ছিন্ন হবে, তারা আপনজন।
চিন্তাধারার ভিন্নতা থাক, হোক না ঝগড়াঝাটি
তবু তাদের মাঝেই পাবে অকৃত্রিম খুনসুটি।
দূরত্বটা যতই থাকুক, অভিন্ন আত্না
আপন মাঝেই তাদের পাওয়া সকল পূর্নতা।
সুসময়ে ছায়ার মতো যদিও থাকে পাশে,
বিপদেতে সবার আগে তারাই কিন্তু আসে।
বায়না তাদের হরেক রকম, আবদারের পসরা
মিললে ভালো, না মিললেও নেই তেমন ঝামেলা।
গ্রহণ লাগুক চন্দ্রে সূর্যে; ভাইয়ে বোনে না
রক্ত তাদের বলে কথা, এক যে তাদের মা।
সম্পর্কটা অটুট থাকুক, অটুট বন্ধন
সুভাষ ছড়ায় ভাইয়ে-বোনে, যেন চন্দন।
পবিত্রতার মানে লোকে শিখুক তাদের থেকে
সম্পর্কের গভীরতা মাপুক বিশ্বলোকে।

mono mugdhukar kabita
[+] 2 users Like dinanath's post
Like Reply
(18-06-2021, 03:03 PM)Bumba_1 Wrote:
[Image: FB-IMG-1624006193855-1.jpg]

 হাল ছেড়ো না বন্ধু 
বরং কণ্ঠ ছাড়ো জোরে

লেখা :- বুম্বা
প্রচ্ছদ :- ব্যক্তিগত পারিবারিক অ্যালবাম থেকে

   আমার জীবনের প্রথম স্টেজ পারফরম্যান্স। তখন আমার নয় বছর বয়স। অনুষ্ঠানটি হয়েছিল চন্দননগর নৃত্যগোপাল স্মৃতিমন্দিরে (যেখানে পরবর্তীকালে পরিচালক সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের জাতিস্মরের কিছু অংশের শুটিং হয়েছিল)।

  ছোটবেলাতে যে আমার গানবাজনার খুব আগ্রহ ছিল তা নয়। একপ্রকার জোর করেই আট বছর বয়সে আমাকে গানের দিদিমণির কাছে ভর্তি করে দেয় আমার মা। অশ্রুকণা পাল সেই সময়ের খুব নাম করা একজন উচ্চাঙ্গসংগীতের বেতার-শিল্পী .. তিনিই আমার প্রথম সঙ্গীতের গুরু।

  গানের গলা যে আমার সেইসময়‌ একেবারে ‌মধুমাখা ছিলো তা হয়তো নয়, তবে দিদিমণি এবং সেই সময়কার  সমসাময়িক কিছু মানুষ বলতেন আমার "তাল সেন্স" নাকি খুব ভালো।  তার মানে হলো তবলার ঠেকা শুনে আমি যখন খুশী গান ধরতে পারতাম।

দিদিমণির কাছে যারা গান শিখতো তাদের কাছে সেটা দুর্বোধ্য ব্যাপার ছিল। তাই কিছুদিনের মধ্যেই অনেকেরই চক্ষুশূল হয়ে উঠলাম আমি। বিশেষত মৃত্তিকা নামের একজন মেয়ের কাছে তো বটেই, সে কথাই বলবো আজ তোমাদের।

তবে দিদিমণি আমাকে খুবই ভালোবাসতেন (এখনও বাসেন)। যাইহোক এবার অনুষ্ঠানের দিনের কথায় আসি..

   দিনটি ছিল ১৮ই নভেম্বর .. প্রখ্যাত উচ্চাঙ্গসংগীত শিল্পী নলিনীকান্ত বাগচীর জন্মদিন। উনি দিদিমণির গুরু ছিলেন তো বটেই, সেই সঙ্গে চন্দননগরের সংগীত জগৎ এর এক উজ্জ্বল নক্ষত্র ছিলেন। উনার সম্মানার্থেই সেদিনের অনুষ্ঠানটি হয়েছিল।

সেদিন সেখানে উপস্থিত ছিলেন আরো কয়েকজন গুনি মানুষ। তনিমা ঠাকুর, কুমার রায়, বুদ্ধদেব দাসগুপ্ত (এদের পরিচয় করিয়ে দেওয়ার দরকার নেই, এরা প্রত্যেকেই নিজ নিজ ক্ষেত্রে সেরা) ইত্যাদি ইত্যাদি আরও কিছু নমস্য ব্যক্তি। এক কথায় সেদিন ওখানে চাঁদের হাট বসেছিল।

   দিদিমণির এতটাই প্রিয় ছাত্র ছিলাম, উনি বলেছিলেন "উদ্বোধনি সংগীত তুই গাইবি।" যেহেতু সন্ধ্যেবেলার অনুষ্ঠান তাই ত্রিতালের উপর ইমনরাগের একটা খেয়াল ঠিক করে দিয়েছিলেন আমার জন্য। আমিও খুব খুশী,  এতো গণ্যমান্য ব্যক্তিরা আসছেন তাদের সামনে গান গাওয়ার একটা সুযোগ পাবো এটা ভেবে।

  বিকেল পাঁচ'টা তে পৌছনোর কথা ছিল আমার। আমার তাড়নার চোটে বিকেল চার'টে তেই মা আমাকে নিয়ে যেতে বাধ্য হলো।

   গ্রিনরুমে এ বসে অপেক্ষা করছি কখন শুরু হবে অনুষ্ঠান, কখন ডাকবে আমাকে। সন্ধ্যে ছ'টা তে অনুষ্ঠান শুরু হলো, কিন্তু কই আমাকে তো ডাকলো না। মা দৌড়ে গেল দিদিমণির কাছে, জানতে চাইলো 'কি হলো'..  দিদিমণি বললেন, "এই তো পরের বারে বুম্বাকেই বসানো হবে" ..

কিন্তু পরের বারেও যে সুযোগ এলো না .. একটার পর একটা গান হয়ে যাচ্ছে আমার ডাক আর আসছে না। রাত আট'টা বেজে গিয়েছে তখনো কোনো খবর নেই। মা আবার গেলেন দিদিমণির কাছে, থমথমে মুখে দিদিমণি যা বললেন তার মানে এই আজ আর আমার গান গাওয়া হবে না। মৃত্তিকা যে আমাকে সবথেকে বেশি ঘেন্না করতো দিদিমণির ক্লাসে, তার বাবা ওখানকার তৎকালীন রুলিং পার্টির লোকাল কাউন্সিলর ছিলেন আর সেই নাকি পুরো অনুষ্ঠানটি স্পন্সর করছে। তাই তিনি আর তার মেয়ে চায় না আমি গান গাই।

 পাবলিক প্লেসে মা'কে সেদিন প্রথম কাঁদতে দেখেছিলাম। সাড়ে আট'টা বেজে গেলো। অনুষ্ঠান ন'টায় শেষ হবে। আমি সেই যে দুপুরবেলা ভাত খেয়েছিলাম তারপর থেকে কিছুই আর খাইনি। ক্ষিদেতে পেট চুঁইচুঁই করছে। শরীর আর বইছে না, সারাদিনের উৎসাহ, সারাদিনের পরিকল্পনা..  সব শেষ।

  মা বললো "চল আমরা চলে যাই,  অপেক্ষা করার আর কোনো মানেই হয়ে না।" 

আমরা বেরিয়ে যাওয়ার মুখে দিদিমণি হঠাৎ এসে মা'র হাত টা চেপে ধরে বললেন "বৌদি, মৃত্তিকার বাবার সঙ্গে কথা হয়েছে, উনি বুম্বাকে গাইতে দিতে রাজি হয়েছেন, তবে সময় মাত্র পনেরো মিনিট পাবে"।

মা বললো "আজ আর ও গাইতে পারবে না, সেই দুপুরের পর থেকে কিছুই খায়নি ছেলেটা, তার উপর এতক্ষণ অপেক্ষা করে সব এনার্জি শেষ। আমরা এখন যাব।" 

দিদিমণি বললেন "ওকে গাইতে দিন বৌদি,  আজ না গাইলে কোনোদিন পারবে না, ওকে বুঝতে দিন বাস্তবটা বড়ই কঠিন, সব কিছু লড়াই করেই পেতে হয়, কি রে বুম্বা পারবি না? সবাইকে দেখিয়ে দিতে হবে তো তুই আমার সেরা ছাত্র, কিরে পারবি তো বল!"

  আমি কি বুঝলাম জানি না, "হ্যাঁ পারবো" বলে দিলাম।

  পৌনে ন'টায় আমার গান শুরু হল। হাতে মাত্র পনেরো মিনিট সময়। আলাপ শুরু করলাম, পাঁচ মিনিট করার পর থেমে গেলাম, কারণ পনেরো মিনিটে পুরো গান'টা তো শেষ করতে হবে। দর্শক আসন থেকে নলিনীবাবু হাত নাড়িয়ে নির্দেশ দিলেন আলাপটা চালিয়ে যেতে,  আলাপ যখন শেষ হলো ঘড়িতে দেখলাম কুড়ি মিনিট হয়ে  গিয়েছে। এরপর আরোহণ-অবরোহণ, তারপর প্রধান রাগ, সব শেষে তান-সারগাম। আমার গান যখন শেষ হলো ঘড়িতে সাড়ে ন'টা বেজে গিয়েছে।

   হাততালি তে ফেটে পড়লো গোটা হল। স্টেজের একপাশে দেখলাম মা আর দিদিমণি দাঁড়িয়ে আছেন, দুজনের চোখেই জল। আর একপাশে দাঁড়িয়ে আছেন মৃত্তিকার বাবা, পাংশুটে মুখে কি যেন বিড়বিড় করছেন।

   অনুষ্ঠান শেষে নলিনীবাবু আমাকে গ্রিনরুমে ডেকে অনেক আশীর্বাদ করলেন। শ্রদ্ধেয়া তনিমা ঠাকুর আমাকে একটা কলম উপহার দিয়েছিলেন। সেটা এখনও যত্ন করে রাখা আছে আমার কাছে।

     জীবনে অনেক খারাপ সময় আসবে, সেটাকে আঁকড়ে না থেকে, জীবনে যা কিছু ভালো .. সেটাকে পাথেয় করে চলতে পারলে তবেই সাফল্য আসবে।

[Image: 20200725-163454.png]

just like a movie, durdanto
[Image: Polish-20231010-103001576.jpg]
[+] 1 user Likes Chandan's post
Like Reply
(28-06-2021, 03:05 PM)Bumba_1 Wrote:
[Image: Polish-20220101-112322308.jpg]

মহালায়া .. দুর্গাপুজো .. এবং 

লেখা এবং প্রচ্ছদ :- বুম্বা

আমার জন্মের পর থেকে প্রায় পঁচিশ'টা বছর কেটেছে বাবার অফিস সংলগ্ন কম্পাউন্ডে। ক্যাম্পাসটি আনুমানিক ২০ একর জমির উপর অবস্থিত। ওখানে একতলা দোতলা মিলিয়ে প্রায় চল্লিশ থেকে পঁয়তাল্লিশটা বিভিন্ন পদাধিকারী অফিসার্সদের কোয়ার্টার তো ছিলোই। তার সঙ্গে কম্পাউন্ডের অন্য প্রান্তে সার্ভেন্টস কোয়ার্টার, দারোয়ানদের কোয়ার্টার, বাগানের মালি এবং সুইপারদের কোয়ার্টার আলাদা করে ছিলো। এছাড়াও তিন কামরার একটি বড়সড় রিক্রিয়েশন ক্লাব, দুটি প্রমাণ সাইজের ফুটবল আর ক্রিকেট খেলার মাঠ এবং বিস্তৃত ফল ও ফুলের বাগান ছিলো .. যেখান থেকে আমি বাতাবিলেবু চুরি করে খেতাম। আর সুইমিং পুলের কথা তো আগের কাহিনীতেই উল্লেখ করেছি। ওহো, ছিলো কেনো বলছি! এখনো সবকিছুই আছে, শুধু আমি আর সেখানে থাকি না।

অত বড় কম্পাউন্ডের এত সংখ্যক পরিবার, তাই ওখানে বারো মাসে তেরো পার্বণ লেগেই থাকতো। যদিও ওখানকার পরিবার গুলোর মধ্যে প্রায় ৮০ শতাংশই অবাঙালি ছিলো। তবুও আমাদের কম্পাউন্ডের সেরা উৎসব ছিলো দুর্গাপুজো এবং হোলি।

দুর্গাপুজোর ওই চারটে দিনের জন্য সারা বছর অপেক্ষা করে থাকতাম আমরা কচিকাঁচারা এবং অবশ্যই বড়রাও। কোথা দিয়ে যে ওই চারটে দিন অতিবাহিত হয়ে যেতো আমরা বুঝতেই পারতাম না। ষষ্ঠীর দিন পুজোয় কেনা নতুন জামা-কাপড় পড়ে মাঞ্জা দেওয়া থেকে শুরু করে, অষ্টমীর পুষ্পাঞ্জলি, ষষ্ঠী থেকে নবমী .. ওই চার দিন দুপুরে ও রাতে রিক্রিয়েশন ক্লাবে পাত পেড়ে মহাভোজ খাওয়া এবং সবশেষে দশমীর বিকেলে সিঁদুরখেলা। এইসব আনন্দ স্মৃতি থেকে কোনোদিনও বিলুপ্ত হওয়া সম্ভবপর নয়।

যেহেতু সাহেবি আমলের কোম্পানি এবং সেই সময়ও মালিকদের অর্থাৎ দণ্ডমুণ্ডের কর্তাদের একাংশ বিদেশি ছিলেন (এখনো আছেন হয়তো) তাই কুৎসিত হোক, কালো হোক, মোটা হোক, বেঁটে হোক - অধঃস্তন কর্মচারীরা সম্পূর্ণ স্বদেশী ঊর্দ্ধতন অফিসারদের 'সাহেব' এবং তাদের স্ত্রীদের 'মেমসাহেব' বলে সম্মোধন করতো .. এটাই ওখানকার রীতি রেওয়াজ ছিল।

যদিও আড়ালে-আবডালে বা সামনেও হয়তো কখনো কখনো এইসব খাঁটি দেশীয় 'সাহেব' এবং 'মেমসাহেব' দের বিশেষ করে 'মেমসাহেব' দের তাদের বাহ্যিক রূপের গঠন অনুযায়ী কিছু সাংকেতিক নামে ডাকা হতো। এই যেমন কালি মেম, নাটি মেম, মোটি মেম, চুড়েল মেম ... ইত্যাদি ইত্যাদি। সেই হিসেবে রূপ এবং গায়ের রঙ অনুযায়ী আমার মাতৃদেবীকে ওরা 'গোরি মেম' (অর্থাৎ ফর্সা মেমসাহেব) বলে সম্মোধন করতো।

প্রতিমা বিসর্জনের আগে দশমীর দিন 'সিঁদুরখেলা' পর্বটি কম্পাউন্ডে উপস্থিত আমাদের সবার কাছে বিশেষ করে আমাদের থেকে বড়ো দাদারা এবং কম বয়সী আর বেশী বয়সী আঙ্কেলদের কাছে ছিল নয়নাভিরাম এবং আনন্দদায়ক একটি অনুষ্ঠান। বিদেশি বড়কর্তার আদেশসূচক অনুরোধে পৃথিবী ওলট-পালট হয়ে গেলেও 'গোরি মেম' এর ওই 'সিঁদুরখেলায়' অংশগ্রহণ আবশ্যক ছিল। যাই হোক, তারপর দশমীর বিকেলে প্রতিমা বিসর্জনের পর থেকে শুরু হতো আমাদের সবার মন খারাপ .. আবার অপেক্ষা সামনের বছরের জন্য।

দুর্গাপুজোর দিন সাতেক আগে মহালায়া আর মহালায়া মানেই দেবীপক্ষের শুরু, রেডিওতে বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের চন্ডীপাঠ দিয়ে ঘুম ভাঙ্গা। মহালয়ার কথা বলতেই অনেক স্মৃতি মনে পড়ে যায়, তার মধ্যে আজ একটা আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করছি।

সাল'টা ঠিক মনে নেই তবে আজ থেকে প্রায় পঁচিশ-ছাব্বিশ বছর আগেকার ঘটনা। তখন আমি খুব ছোটো .. সম্ভবত ক্লাস ফাইভে পড়ি। কাকতালীয়ভাবে ঐদিন আবার আমার জন্মদিন পড়েছিল। সে বার মহালয়ার দিন সকাল থেকে অঝোর ধারায় বৃষ্টি পড়ে যাচ্ছিলো। বৃষ্টির জলের ধারার সঙ্গে আমার চোখ দিয়েও অবিরাম জলের ধারা পড়ছিলো। ছোটোবেলা থেকে কোনোদিনই আমার সুখ বা দুঃখের বহিঃপ্রকাশ নেই, তাই কেউ দেখে ফেলবে এই ভেবে আমি লুকিয়ে লুকিয়ে কাঁদছিলাম। এই কান্নার পেছনে অবশ্য গুটিকয়েক কারণ ছিলো। সিরিয়াস কিছু নয় .. সবই শিশুসুলভ কারণ।

মহালয়ার কিছুদিন আগে থেকে শুরু করে পুজোর পঞ্চমী পর্যন্ত আমাদের কলেজের সেকেন্ডটার্মিনাল পরীক্ষা চলতো। আগের দিন অঙ্ক পরীক্ষা ছিলো, কোনো কারনে পরীক্ষা আশানুরূপ হয়নি .. তাই সেটা মন খারাপ আর কান্নার প্রথম কারণ। দ্বিতীয় কারণ'টা অবশ্য আরেকটু গুরুতর... প্রত্যেকবছর বাবা মহালয়ার দিন "পুজো বোনাস" পেতেন তারপর আমাদের পুজোর শপিং শুরু হতো।

যদিও অনেকেই হয়তো ভাববেন যে সেই সময় তো দোকানে সব ঝাড়াই-বাছাই মাল পাওয়া যায়, চোখে লাগা এবং পছন্দের জিনিসগুলো তো আগেই বিক্রি হয়ে যায়। কিন্তু তবুও ওই সময়ে বাবা-মা'র সঙ্গে পুজোর বাজার করতে যাওয়ার আনন্দের স্মৃতি আমি আজও ভুলতে পারবোনা। খুব মিস করি সেই সব দিনগুলোকে।

যাই হোক, সেবার বাবার কারখানায় লক্-আউট চলছিলো। ঠিক করে প্রতি মাসে বেতন হচ্ছিলো না, 'বোনাস' তো দূরস্থ। "জন্মদিনের জামা তো হবেই না, বোধহয় পুজোর জামাও এবার আর হবেনা" এই ভেবে ভেবে দুই চোখ দিয়ে গঙ্গা-যমুনা বইয়ে দিচ্ছিলাম।

আমার মাতৃদেবী রূপবতী হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এতটাই ব্যক্তিত্বময়ী মহিলা ছিলেন উনাকে কিছু জিজ্ঞেস করার সাহসও পাচ্ছিলাম না। দুপুরবেলা গম্ভীর গলায় মা আমাকে খেতে ডাকলেন। মনে অনেক প্রশ্ন, কিন্তু কিচ্ছু জিজ্ঞেস করতে না পেরে চুপচাপ মাথা নিচু করে খেয়ে নিলাম।

জন্মদিনে মা আমার জন্য পায়েস বানিয়েছিলো। বললো "পায়েস'টা খেয়ে নিয়ে চুপচাপ গিয়ে পড়তে বসবে, কাল জীবন বিজ্ঞান পরীক্ষা, যদি পরীক্ষা খারাপ হয় পিঠের চামড়া তুলে নেবো।"

কি আর করা যাবে, মন খারাপ নিয়েই পড়তে বসতে হলো। কিন্তু পড়া কি আর হয়! শুধু একটাই ভাবনা - এবার আর হলো না।

বিকেল বেলা মাকে বললাম, "মা একটু খেলতে যাবো? এই সামনের মাঠটাতেই খেলবো,বেশি দূরে যাবো না।"  অনেক সাধ্যসাধনার পর মা অনুমতি দিলেন।

তখন বিকেল সাড়ে পাঁচটা হবে.. অনেকক্ষণ ফিল্ডিং খাটার পর সবেমাত্র আমার ব্যাটিংয়ের চান্স এসেছে.. দেখি বাবা কখন যেনো মাঠের ধারে এসে দাঁড়িয়েছে  আর আমাকে হাত নেড়ে ডাকছে।

পুজোতে এবার কিচ্ছু হবে না - এই ভেবে এমনিতেই বাবার উপর গিয়ে সব অভিমান জমে ছিল আমার। তার উপর সবে ব্যাটিং পেয়েছি আর বাবা ডাকছে.. আমি বললাম "কিছুতেই যাবো না আমি, এখন আমি খেলবো।"

মাঠের উল্টো দিকেই আমাদের একতলা কোয়ার্টার ছিলো। হঠাৎ দেখি.. মা দরজায় তালা লাগিয়ে বেরোচ্ছে আর পরনের নাইটিটা ছেড়ে বাইরে যাওয়ার শাড়ি পড়েছে। বাবার দিকে তাকিয়ে দেখলাম.. বাবার পরনেও অফিসের সাদা জামা আর সাদা প্যান্টের বদলে অন্য জামা-প্যান্ট।

আমার কি মনে হলো, আমি ব্যাট ফেলে বাড়ির দিকে দৌড় লাগালাম। আমার এক বন্ধু সৌমিক বললো "কিরে এতক্ষণ ফিল্ডিং দিলি, ব্যাটিংটা করে যা।"

আমি বললাম "আজ আমারটা তুই করে নে, কালকে আমাকে প্রথমে ব্যাটিং দিস তাহলেই হবে, এখন যাই।"

দৌড়ে গিয়ে বাবাকে জিজ্ঞেস করলাম "কি গো তোমরা কোথায় যাচ্ছ?"

বাবা বললো "অফিসের সব ঝামেলা মিটে গেছে রে .. কাল থেকেই ফ্যাক্টরি চালু হচ্ছে। আজ বোনাস পেলাম, তাই ভাবলাম পুজোর বাজারটা করে নি। তুই কি যাবি আমাদের সঙ্গে, না খেলবি এখন?"

"যাবো যাবো যাবো" এই বলে বাবার কোলে ঝাঁপিয়ে পড়লাম।

বাবা বললো "তাহলে ভালই হলো, রাতে এক্কেবারে বাইরে থেকে খাওয়া-দাওয়া করে ফেরা যাবে।"

মা তখন সব শুনে বললো "সকাল থেকে কেঁদে কেঁদে বালিশ ভিজিয়ে ফেলে এখন ছেলের আহ্লাদ দেখো!"

আমরা তিনজন বাজার অভিমুখে রওনা হলাম।।

[Image: 20200725-163454.png]

that's great, eta niye kintu koyekta episodes er golpo hotei parto
[Image: Polish-20231010-103001576.jpg]
[+] 1 user Likes Chandan's post
Like Reply
(23-06-2021, 03:46 PM)Bumba_1 Wrote:
[Image: FB-IMG-1624427500498-1-1.jpg]

পুরানো সেই দিনের কথা 

লেখা :- বুম্বা
প্রচ্ছদ :- আমার মাতৃদেবীর নিজের হাতের সৃষ্টি 

আমার ঠাকুমা আমার জীবনের অনেকটা অংশ জুড়ে ছিলেন, আছেন এবং থাকবেন। উনাকে আমি দিদা বলে ডাকতাম। আমার যখন ১৪ বছর বয়স তখন উনি মারা যান। উনার চলে যাওয়াটা বহুদিন মন থেকে মেনে নিতে পারিনি .. তারপর আস্তে আস্তে সময় যতো গড়িয়েছে, মন ততটাই শক্ত হয়েছে .. time is the best healer.
 
উনি কেমন মানুষ ছিলেন সে কথা বলার অপেক্ষা রাখে না, কারণ সব নাতি-নাতনির কাছেই তাদের দাদু/দিদা'রা সেরা হন। আমার কাছেও উনি ঠিক তাই ছিলেন।

 তবে এমনিতে ভীষণ রকম রাশভারী এবং গম্ভীর প্রকৃতির মানুষ হলেও উনার সম্বন্ধে একটা কথা অবশ্যই বলতে হয়, উনার sense of humour দুর্দান্ত ছিলো আর অসম্ভব সহজ কিন্তু সোজা কথা বলতে পছন্দ করতেন। সেই রকমই একটি ঘটনা আজ শেয়ার করবো আপনাদের সঙ্গে। তবে তার আগে কিছুটা মুখবন্ধের প্রয়োজন ..
 
  আমার মাতৃদেবীর মধ্যে শিল্পসত্তা ছিলো ভরপুর। কিন্তু কোনো জিনিসটাই উনার জীবনে স্থায়ী হয়নি .. কোনো টা নিজের ইচ্ছাতে আবার কোনো টা অপরের আপত্তিতে। তবে আমার মায়ের একটা অদ্ভুত স্বভাব ছিলো .. যে সখগুলো উনি নিজে থেকে মেটাতে পারেননি বা মেটাতে চাননি সেগুলো আমার ইচ্ছে থাক বা না থাক জোর করে আমার উপর চাপিয়ে দিতেন।

এই যেমন ধরুন গান এবং অঙ্কন তো সর্বক্ষণের সঙ্গী ছিলই, বিবাহের আগে উনি একজন নৃত্যশিল্পীও ছিলেন। তবে বিবাহের পর আমার ঠাকুরদার 'বাড়ির বউ ধেই ধেই করে নাচবে না' এইরকম উক্তিসূচক আপত্তিতে উনার নৃত্যকলার ওইখানেই ইতি হয়ে যায়। এ তো গেলো অপরের আপত্তির কথা। এবার নিজের ইচ্ছেতে বেশিদিন কোনো কিছুর মধ্যে আটকে না থাকার কয়েকটা ঘটনা বলি ..

হঠাৎ করে নাচ ছেড়ে দেওয়ার ফলস্বরূপ বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে স্বভাবতই উনার শরীরের নিম্নভাগে চর্বি জমতে থাকে এবং আস্তে আস্তে চেহারা ভারীর দিকে যেতে থাকে।

বাবা যে কোম্পানিতে চাকরি করতো সেই কোম্পানির সংলগ্ন একটি বড়সড় কম্পাউন্ডে থাকতাম আমরা। সেখানে ফ্যাক্টরির ডাক্তার থেকে শুরু করে মালি, সুইপার, এমনকি বাড়িতে কাজ করার লোকও ফ্রী ছিলো আমাদের।

যাই হোক সেই কোম্পানির ডাক্তার অশোকলাল গুপ্তা আমার মাতৃদেবীকে পরীক্ষা করে বললো "ভাবিজি আভি তাক তো ঠিক হ্যায় .. লেকিন এরপরে শরীর আরো ভারী হয়ে গেলে কষ্ট আপনারই হবে .. ইসি লিয়ে কুছ এক্সারসাইজ করতে হবে আপনাকে .. এই যেমন ধরুন সকালে উঠে জগিং করবেন আমাদের কম্পাউন্ডে, বিকেলে সাইক্লিং করবেন আউর daily সুইমিং করনা তো জরুরি হ্যায়"

ডাক্তারের কথা কি আর অমান্য করা যায়! সেই সময় অর্থাৎ ৯০ দশকের মাঝামাঝি সময়ে মহিলাদের জন্য 'লেডিবার্ড' নামের একটা রেসিং সাইকেল খুব বিখ্যাত ছিলো। পরেরদিন গোলাপি রঙের লেডিবার্ড সাইকেল এলো .. আমার মায়ের সাইকেল শেখার ক্লাস শুরু হলো। চার থেকে পাঁচ দিনের মধ্যে উনি সাইকেল চালানো পুরোপুরি রপ্ত করলেও খুব বেশিদিন স্থায়ী হয়নি উনার সাইক্লিং এর মাধ্যমে এক্সেসাইজ। অগত্যা আমার প্রবল অনিচ্ছা সত্ত্বেও মাত্র ১১ বছর বয়সে একপ্রকার বাধ্য হয়েই ওই লেডিবার্ড সাইকেল দিয়ে আমার সাইকেল চালানো শেখা শুরু।

আমাদের কম্পাউন্ডের মধ্যে একটি বড়োসড়ো সুইমিং পুল ছিলো। ওখানে শুধু কোম্পানির employee এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের ঢোকার অনুমতি ছিলো। একজন পার্সোনাল ট্রেনার রেখে বিদেশিনীদের মতো সাঁতারের পোশাক কিনে শুরু হলো আমার মাতৃদেবীর সুইমিং শেখার ক্লাস। আমার মা অসম্ভব সুন্দরী একজন নারী ছিলেন। তাই হয়তো তাকে খুশি করার জন্যই হোক বা অন্য কোনো কারণে হোক সেটা আমি ঠিক বলতে পারবো না .. আমার বাবা কোনোদিন তার কোনো ইচ্ছাতে বাধা দেয় নি। কিন্তু সাঁতার শেখার ব্যাপারে আমার বাবার প্রবল আপত্তি থাকলেও আমার ঠাকুমার অনুমতিতে তার আপত্তি ধোপে টেকেনি। কিন্তু এখানেও সেই একই ব্যাপার ..  মাসখানেক সাঁতার শিখে দুম করে হঠাৎ একদিন ওখানে যাওয়া বন্ধ করে দিলেন আমার মা। ফলস্বরূপ আমার অনুমতির তোয়াক্কা না করেই আমার উপরে দায়িত্বভার পড়লো মায়ের শখ পূর্ণ করার। সুইমিং ক্লাসে ভর্তি হয়ে গেলাম আমি।

তবে এখন আমার realization হলো ভাগ্যিস জোর করে এই সমস্ত প্রশিক্ষণ আমার উপরে চাপিয়ে দেওয়া হয়েছিল তাই হয়তো অনেক কিছুই পারি এখন আবার অনেক কিছু পারিও না।

যাক সে কথা, একসময় আমার মাতৃদেবী শখ করে 'সন্তুর' নামক একটি বাদ্যযন্ত্র কিনেছিলেন শিখবেন বলে। কিন্তু সময়ের অভাবে শিখতে পারেননি। তাই শেখার দায়িত্বটা পরবর্তীকালে আমার উপরেই বর্তায়।

মায়ের যিনি মাস্টারমশাই ছিলেন তিনি খুব ভালোমানুষ ছিলেন। প্রফেশনালিজমের কিছুই জানতেন না। আমিও উনার কাছেই সন্তুরের তালিম নিতাম, কিন্তু হঠাৎ একদিন শুনলাম উনি দিল্লী চলে যাবেন। ওখানে নাকি বেটার কিছু অফার পেয়েছেন।

যাই হোক, এরপর একদিন আমার নতুন মাস্টারমশাইয়য়ের আগমন ঘটলো। এঁর নাম অরণ্য চৌধুরী। সন্তুর বাদক হিসেবে কেমন ছিলেন ঠিক বুঝতে পারিনি,  তবে সাংঘাতিক প্রফেশনাল ছিলেন।

উনি মাস মাইনের ধার ধারলেন না। উনার বক্তব্য ছিলো প্রত্যেক রবিবার আসবেন আর যেদিন আসবেন ১০০ টাকা নিয়ে বাড়ি যাবেন। শুরু হলো আমার ক্লাস। প্রথম মাসে কথামতো চারদিনই এলেন। কিন্তু পরের মাস থেকে শুধু রবিবাসরীয় ক্লাসে আর সীমাবদ্ধ থাকলো না আমার সন্তুর শেখা। রবিবার ছাড়াও উনি অন্যান্য দিন'ও আসতে লাগলেন।

আমি কিছু বলতে গেলেই উনি বলতেন "আমার অর্ধেক হলে তুমি। আমি যত বেশী করে আসবো ততই পূর্ণতা পাবে তুমি।" এইভাবেই চলতে লাগলো কয়েকমাস। কিন্তু কিছুমাস পরে যখন দেখা গেলো উনি মাসে ৮ দিন আসছেন তখন আমার বাড়ির লোকের সহ্যের সীমা ছাড়ালো।

বাবা বললেন "ঘোড়ারডিম শেখা হচ্ছে, এইসবের জন্য আমি মাসে এতগুলো টাকা দিতে পারবো না।" আর সত্যি তো সেইসময় মাসে ৮০০ টাকা মানে বিশাল ব্যাপার ছিল।

কিন্তু মুশকিল হচ্ছে বেড়ালের গলায় ঘন্টা টা বাঁধবে কে? তার মানে হল কে বারণ করবে মাস্টারমশাই কে! এমনভাবে উনাকে বোঝাতে হবে যে যাতে উনি অপমানিত না হন। বাবা তো আগেই হাত তুলে দিয়েছেন। আমার মাতৃদেবী কোনোদিনই সাংসারিক খুঁটিনাটি এবং বৈষয়িক ব্যাপারে মাথা গলাতেন না। তাছাড়া জানিনা কেনো মাস্টারমশাইকে বারণ করার পক্ষে সায় ছিলো না মায়ের .. তাই তিনিও এই ব্যাপারটার মধ্যে ঢুকতে চাইলেন না। অবশেষে আমার ঠাকুমা দায়িত্ব নিলেন।

   শুক্রবার বিকেল পাঁচ'টা তে উনার আসবার কথা ছিল। সেদিন দিদা আমাকে বললেন "এই শোন, আজ সাড়ে ছ'টার আগে খেলে যদি বাড়ি ঢুকিস তো ঠ্যাং ভেঙ্গে দেবো।"

আমি ভাবলাম - এ আবার কি! রোজ তাড়াতাড়ি না ফিরলে ঠ্যাং ভাঙার হুমকি দেয় যে দিদা আজ উল্টো বলছে কেনো! তারপর ভবলাম আমার অতকিছুতে দরকার কি.. অনেকক্ষণ খেলতে পারবো এই ভেবে বেড়িয়ে গেলাম। এরপর পৌনে সাত'টা তে খেলে ফিরে যা শুনলাম সেটাই বলি আপনাদের...
 
  মাস্টারমশাই আসার পরে দিদাই সেদিন উনাকে চা করে দিয়েছিলেন।  উনি জিজ্ঞেস করাতে বলেছিলেন বাড়িতে কেউ নেই। আসলে বাবা আপিসে ছিলেন ঠিকই কিন্তু মা পাশের ঘরেই ছিলো। দিদা আমার মা'কে বের হতে দেননি।

মাস্টারমশাই :  বুম্বা কখন ফিরবে?

দিদা : বুম্বা পড়তে গেছে, রাত ন'টার আগে ফিরবে না।

মাস্টারমশাই : ও হো,  অতক্ষণ তো বসতে পারবো না। যাগ্গে আজকের টাকা টা দিন, আমি উঠি।

দিদা : কতটাকা যেন বাপু তোমার? ১০০ টাকা তাই না? এই নাও, আর শোনো, বুম্বার এখন বিকেলে রোজই পড়া থাকবে, আর সকালে তো কলেজ থাকে, তাই তোমার এসে আর কাজ নেই। ওই না হয় সময় করে শিখতে যাবে তোমার কাছে। তুমি ওকে ৫০ টাকা করে দিয়ে দিও .. কেমন!

মাস্টারমশাই : না না,  আপনি বুঝতে পারছেন না মাসিমা। আমি কেনো ওকে টাকা দেবো? actually আমি তো গুরু আর ও তো ছাত্র আমার।

দিদা : রাখো তো তোমার একচুয়ালী আর দুইচুয়ালী .. তুমি নিজেই তো বলো বুম্বা নাকি তোমার অর্ধেক ..  তুমি যদি আমাদের বাড়িতে এলে ১০০ টাকা নাও তাহলে বুম্বা তোমার বাড়িতে গেলে ৫০ টাকা পাবে না কেনো?

অরণ্য চৌধুরী তো সেদিন পলায়ন করেছিলেন বটেই, উল্টে আমার ঠাকুমার কথায় এতটাই ভয়ে পেয়ে গিয়েছিলেন যে, যাওয়ার সময় বলে গেছিলেন উনি নাকি আগামীকাল'ই বাইরে কোথাও চলে যাচ্ছেন।  তাই আমাকে আর শেখাতে পারবেন না।

[Image: 20200725-163454.png]

valo lageni , nijer life niye jokhon kono lekha likhcho, tokhon setake aro interesting kora proyojon, otherwise keu porte pochhondo korbe na
[Image: Polish-20231010-103001576.jpg]
[+] 1 user Likes Chandan's post
Like Reply
(28-07-2021, 04:12 PM)Bumba_1 Wrote:
[Image: FB-IMG-1627464849473-1.jpg]

প্রথমে মেঘ পরে রৌদ্র

লেখা :- বুম্বা
প্রচ্ছদ :- আমার মায়ের সৃষ্টি

রাখীর বন্ধন হলো, চাওয়া পাওয়ার আবদার,
রাখীর বন্ধন হলো, ভাই-বোনের ভালোবাসার।
রাখীর বন্ধন হলো, অনেক দুস্টুমির পর,
কুছ মিঠা তো জরুর চাই ..
রাখীর বন্ধন হলো, 
আমার মতো তোকে কে ভালোবাসবে ভাই!!

আগামী ইংরেজি মাসের ২২ তারিখ রাখী-বন্ধন উৎসব পালিত হবে সারা দেশ জুড়ে। গতবছর দেখেছিলাম করোনার আবহাওয়ায় রাখীর বাজারের বিক্রি-বাট্টা অন্যবারের তুলনায় অনেকটাই কম .. তবুও তার মধ্যে বিশেষ ভাবে চোখে পড়ছিলো বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলির জনসাধারণকে রাখী পরানো নিয়ে পরস্পরের সঙ্গে প্রতিযোগিতা।

ওইদিন অফিস থেকে বাড়ি ফেরার পথে এক জায়গায় শুনতে পেলাম একজন তৃণমূল সমর্থক এক বি.জে.পি সমর্থক কে খুব গর্বের সঙ্গে বলছে "তোরা সাড়ে পাঁচশো'টা পরিয়েছিস? আমরা দেড় হাজারের উপর .." বলতে এসেছিলাম এক কথা এখন দেখছি উল্টোপাল্টা বকে আমি বোধহয় অন্য প্রসঙ্গে চলে যাচ্ছি। যাই হোক এবার মূল প্রসঙ্গে আসা যাক। আজ আমার ছোটবেলার একটা রাখীবন্ধনের দিনের ঘটনা তোমাদের কে বলবো ..

ছোটবেলায় এই দিন'টা আমার কাছে খুব স্পেশাল ছিল। রাখী উৎসবের জন্য নয় .. কারণ আমার নিজের কোনো বোন বা দিদি নেই, কাজিন সিস্টার যারা আছেন তারা অনেক দূরে দূরে থাকতেন, তাই তাদের কাছ থেকে রাখী পরার সৌভাগ্য আমার কোনোদিনই হয়েনি। তবে সেই অভাব টা পূরণ করে দিতেন আমার মা আর ঠাকুমা। ওরাই প্রতিবছর আমাকে রাখী পরাতেন। এছাড়াও আর একটা কারণে দিনটি'র গুরুত্ব আমার কাছে বেশী ছিলো, ওইদিন ছিলো আমার ঠাকুমা'র জন্মদিন।

আগেকার দিনের মানুষের বিশেষ করে বাড়ির মহিলাদের নিজের জন্মদিনের তারিখ মনে থাকতো না বা হয়তো তারা মনে রাখার চেষ্টাই করতো না। তাই নির্দিষ্ট তারিখ স্মরণে না থাকলেও যেহেতু উনি এই বিশেষ দিনটিতে জন্মেছিলেন তাই প্রতিবছর রাখীবন্ধন উৎসবের দিনেই উনার জন্মদিন পালিত হতো .. আর জন্মদিন মানেই তো বাড়িতে ভালোভালো খাওয়াদাওয়া।

সেবার আমার দাদু'র প্রস্টেট গ্ল্যান্ডে ক্যান্সার ধরা পড়লো। লাস্ট স্টেজ .. ডাক্তার সময়সীমা বেঁধে দিয়েছেন। সেই সময় তো এখনকার মতো চিকিৎসা ব্যবস্থার এত উন্নতি হয়নি, তাই কেমোথেরাপি দিয়ে যতদিন বাঁচিয়ে রাখা যায় আর কি .. সবার খুব মন খারাপ। দুর্ভাগ্যক্রমে রাখীর দিনই দাদুর কেমোথেরাপির ডেট পড়লো। তাই ঠিক হলো সেইবছর ওইদিন আর আমার দিদা'র (ঠাকুমা) জন্মদিন পালন হবে না।

আগেরদিন রাতে দাদু কে নিয়ে আমার বাবা গাড়ি করে কলকাতা চলে গেলো। তারপর থেকে শুরু হলো বাড়ির সকলের টেনশন।  তখন তো মোবাইল ফোন আবিষ্কার হয়েনি। আমাদের বাড়িতে সেই সময় ল্যান্ডফোনও আসেনি। রাখীর দিন দুপুরে শুধু আলুসিদ্ধ আর ভাত রান্না হয়েছিল আমাদের বাড়িতে।

বিকেলের দিকে বাবার অফিসের বিশ্বাস কাকু খবর নিয়ে আসলেন বাবা অফিসে ফোন করে জানিয়েছে দাদু ভালো আছে, ওরা কলকাতা থেকে রওনা দিয়ে দিয়েছে, সন্ধ্যের মধ্যেই ঢুকে যাবে। হাঁপ ছেড়ে বাঁচলো মা আর ঠাকুমা এইভেবে যে অন্তত এই যাত্রায় তো উদ্ধার পাওয়া গেলো!

বাবা সন্ধ্যাবেলা দাদু কে নিয়ে ফিরলো। আমি তখন খুবই ছোটো .. ৫ - ৬ বছর বয়স হবে হয়তো। তাই রাখী উৎসবের দিনে একটাও রাখী না পাওয়া বা বাড়িতে সেইভাবে কোনো মুখরোচক রান্না না হওয়ার জন্য খুবই মুষড়ে পরেছিলাম।

কিন্তু দাদুকে দেখার পর মনে একটা অদ্ভুতরকমের আনন্দ অনুভব করতে লাগলাম। দাদু কে জড়িয়ে ধরে খুব আদর করলাম। তারপর নালিশ করলাম মা আর দিদা'র নামে এই বলে যে, আমাকে সারাদিন একটুও ভালোমন্দ কিছু খেতে দেয়নি এরা।

দাদু আসাতে  বাড়িতে খুশীর পরিবেশ ফিরে এলো।
রাতে দিদা পায়েস আর গোকুল-পিঠে বানিয়েছিলেন। সেই স্বাদ এখনো মুখে লেগে আছে আমার।

বাবা, মা, ঠাকুরদা, ঠাকুমা....  আজ আর কেউই নেই।  কোথায় যে হারিয়ে গেলো সেই সব সোনালি দিন কে জানে!! তোমরা যেখানেই থাকো ভালো থেকো গো।

[Image: 20200725-163454.png]
                                               

auntyr haater drawing ta just awesome, kintu lekha ta motamuti, khub ekta valo lageni
[Image: Polish-20231010-103001576.jpg]
[+] 1 user Likes Chandan's post
Like Reply
(13-08-2021, 03:06 PM)Bumba_1 Wrote:
[Image: IMG-20210813-115716-451.jpg]

মেশিন মিতাশা

লেখা এবং প্রচ্ছদ :- বুম্বা

মিতাশা ছোটো মেয়ে, সাত বছরের, আজকে সে খুব খুশি .. ওর পিসি আসছে কটক থেকে। পিসিকে এর আগে ও কখনো দেখেনি, এই প্রথম দেখবে। ও তো থাকে বাবা-মায়ের সঙ্গে। ওর নিজেরও কোনো ভাইবোন নেই আর বাবারও কোনো ভাইবোন নেই। উপরের ফ্ল্যাটে থাকে ঠাম্মা আর দাদান। পিসি দাদানের বোনের মেয়ে .. মা বলে দিয়েছেন।

মা অবশ্য এও বলে দিয়েছেন .. "পিসিকে জ্বালাবে না, পড়াশোনা একদম বন্ধ করবে না, কাল কিন্তু নতুন কলেজে যেতে হবে - মনে থাকে যেন।"

মিতাশার ডাকনাম মিতি। সে ঘাড় নেড়ে সম্মতি জানায়।

দোলা পিসি এলো সকাল ন'টার মধ্যেই .. পুরী এক্সপ্রেসে এসেছে। মিতি তখন কলেজে বেরোবার প্রস্তুতি নিচ্ছে। দোলা পিসি আদর করে ওর হাতে একটা প্যাকেট দিলো। মা বললেন "রেখে দাও এখন পিসির গিফ্টটা .. এসে দেখবে।" ঘাড় নেড়ে মিতি চলে গেলো কলেজে।

দোলা এসে পড়লো ফাঁপড়ে। দোতালায় থাকে মামা মামী আর নিচে থাকে ভাই, ভাই বউ আর বাচ্চা মিতি। তাদের পৃথক অন্ন। সে খাবে কার কাছে সেটাই ভাবছিলো .. মামী বললেন - "তুই দিনে এখানে খা, রাতে বৌমার কাছে খাবি.. কারণ ওরা দুজনেই তো সকালে থাকে না ..বেরিয়ে যায়।"

সারাদিন কেটে গেলো মামা-মামীর সাথে নানা রকম গল্প করে। বহুদিন পর দেখা, বেশ ভালই লাগছিলো সবকিছু।

সন্ধ্যাবেলায় নিচের ফ্ল্যাটের বৈঠকখানায় সবাই একসাথে মিলিত হলো। মিতির মা-বাবা আজ দারুণ খুশি। কারন অনেক চেষ্টা করে, বহু কাঠখড় পুড়িয়ে, বলা ভালো মোটা ডোনেশন দিয়ে মিতিকে শহরের একটি নামকরা কলেজে ভর্তি করতে পেরেছে।

দোলা জিজ্ঞাসা করে "এই সময় তো অফ সিজন, এখন ভর্তি নিলো?"

সীমা অর্থাৎ মিতির মা জানায় "নিয়েছে এই আমাদের চোদ্দ পুরুষের ভাগ্য .. তবে ওরা এ'বছর টা ধরবেনা।"

"বলো কি .. এক বছর নষ্ট!" বিস্ময় প্রকাশ করে বলে দোলা।

"একবছর বলছো কি গো.. এইরকম কলেজের জন্য তিন বছর নষ্ট হলেও কিছু বলার নেই.. যুগটা কি দেখো!" সীমা চোখ বড় বড় করে উত্তর দেয়।

দোলা বলে "হয়তো ঠিকই বলছো .. এখনকার পড়াশোনা, কলেজের স্ট্যান্ডার্ড সম্পর্কে জ্ঞান আমার একটু কমই .. তা কলেজটা কোথায়?"

"দক্ষিণ কলকাতায়" সীমা জানায়।

"বাব্বা অতদূর! ওতো সারাদিনের ব্যাপার" বিস্ময় জানায় দোলা।

"সে তো হবেই .. বুঝতেই তো পারছো .. এটা কেরিয়ার তৈরীর যুগ .. এইটুকু তো করতেই হবে .. না হলে পিছনে পড়ে থাকতে হবে" এই কথা বলে সীমা চলে যায়, কারণ কাল সকালেই তাদের বের হতে হবে কলেজের উদ্দেশ্যে।

নতুন কলেজের প্রথম দিন .. মিতির বাবা-মা দুজনেই আজ ছুটি নিয়েছে। যুদ্ধকালীন তৎপরতায় চলছে প্রস্তুতি পর্ব। সব নতুন .. বই, ব্যাগ, জুতা, মোজা, পেন, পেন্সিল, টিফিন বক্স, রাবার, স্কেল, পেন্সিল কাটার, কালার বক্স, ইউনিফর্ম। সাত বছরের মিতি বাবা-মায়ের সঙ্গে বেরিয়ে গেলো সকাল ছ'টা পঁচিশ মিনিটে।

সারাদিন কেটে গেলো .. সন্ধ্যার মুখে ফিরে এলো তিনজন .. যেনো রণক্ষেত্র থেকে ফেরা সৈনিক .. ক্লান্ত অবসন্ন।

দোলার আর তর সয় না। জিজ্ঞাসা করে সীমাকে "সকাল আট'টা থেকে দু'টো পর্যন্ত কলেজ শুনেছিলাম .. ফিরতে সন্ধ্যে হয়ে গেলো কেনো? কোথাও গিয়েছিলে বুঝি?  বিগবাজার?"

সীমা ঢোক গিলে বলে "না না কলেজেই ছিলাম .. ভীষণ ডিসিপ্লিন .. একটা বাংলা কথা বলা যাবে না .. তাই ছুটির পরে দেড় ঘন্টা মতো স্পোকেন ইংলিশ ক্লাস করতে হবে .. আজ থেকেই করতে হলো .. তাই দেরি হলো।"

"তাই বলে এতক্ষণ!" এইরূপ মন্তব্য করে মিতির দিকে তাকিয়ে দোলা পিসি বলে "আয় তোর জামাকাপড় খুলে দি।"

সীমা বলে "তুমি শুধু শুধু টেনশন নিও না .. ও নিজেই খুলবে .. ওর বাবা ওকে হেল্প করবে।"

মেয়ের গা থেকে বাবা এক এক করে যুদ্ধের পোশাক খুলে নিলেন .. পোশাকগুলিকে যথাস্থানে গুছিয়ে রেখে মেয়ে অর্থাৎ মিতি একছুটে দাদু ঠাকুমার কাছে উপরে চলে গেলো।

একটু পরে সকলেই ফ্রেশ হয়ে চায়ের টেবিলে বসলো। সান্ধ্য টিফিন খেতে খেতে মিতি বললো "মামণি আমি একটু পিসির সাথে পার্কে যাবো?"

মা বললেন "না .. আজ থাক .. এখনই তো মিঠুকাকু আসবে .. এখন থেকে এই সময়টাই আঁকা শিখতে হবে .. তাছাড়া আর সময় কই.."

মিতি মুখটা ব্যাজার করে বললো "দূ .... র"

দোলা তার ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে বললো "আমি কিন্তু কাল সকালেই বেরোবো।"

"কেনো? আর দুটো দিন থাকো.." প্রশ্নসূচক ভঙ্গিতে বলল অশোক অর্থাৎ মিতির বাবা।

"না রে .. হাতে ছুটি বেশি বাকি নেই .. তাছাড়া নৈহাটিতে তো দু'দিন থাকতে হবে। মা-বাবা বেঁচে নেই কিন্তু এতদূর এসে আমার পৈতৃক ভিটে একবার ঘুরে যেতেই হবে।"

মিতি কাঁদো-কাঁদো ভাবে বলে ওঠে "না .. পিসি .."

সীমা সঙ্গে সঙ্গে ধমক দিয়ে ওঠে "পিসি নয় আন্টি বলো।"

মিতি "সরি মামণি" বলেই পিসির দিকে তাকিয়ে বলে আর দুটো দিন থাকো না আন্টি.." -- তার দুটি চোখে গভীর হতাশা।

দোলার চোখে মুহূর্তে জল এসে যায়। সামলে নিয়ে বলে "থাকলাম তো সোনা দু'দিন, তুমিতো নতুন কলেজে যাবে, নতুন নতুন মিস'দের কাছে পড়বে, কত নতুন বন্ধু হবে .. তারপর আঁকা শেখা, নাচ শেখা, টেবিল টেনিস খেলা, গান শেখা, কত কি করতে হবে .. কত সুন্দর জীবন তোমাদের, ভাবতেই ভীষণ .."

দোলা কথাটা শেষ করার আগেই ডুকরে কেঁদে উঠলো মিতি "সুন্দর না ছাই .. কলেজটা মোটেই ভালো না .. কত  উঁচু উঁচু দেওয়াল .. আকাশ দেখা যায় না .. ছোট্ট ছোট্ট জানলা। মিস'রা গাদাগাদা লিপস্টিক মাখে .. আমার আগের কলেজ টাই ভালো ছিলো .. এটা পচা কলেজ .. পচা .. পচা।" এই কথা বলে খাওয়া বন্ধ করে ছুটে গিয়ে ঠাকুমার কাপড়ে মুখ ঢেকে কাঁদতে লাগলো।

নির্বাক ঠাকুমা নাতনির পিঠ সাপটে দিতে লাগলেন। এইরকম আকস্মিক ঘটনায় হতচকিত হয়ে আস্তে আস্তে সবাই টেবিল থেকে উঠে গেলো।

সন্ধ্যে থেকেই পরিবেশটা থমথমে। উপরের ছোট্ট বারান্দায় মামা মামীদের সঙ্গে কিছুক্ষণ গল্প করে দোলা নীচে নেমে এলো। ভাই তার অফিসের কাজে ব্যস্ত .. ল্যাপটপ নিয়ে বসেছে। ভাই বউ সীমা মেয়ের কলেজের প্রস্তুতি সেরে নিচ্ছে তার সঙ্গে রাতের রান্নার প্রস্তুতি পর্ব চলছে। নিচের পরিস্থিতি এখন অনেকটাই হালকা। মিতির আঁকার মাস্টারমশাই চলে গিয়েছে .. মনে হয় অন্য একজন এসেছে .. দরজার ফাঁক দিয়ে তার পিঠ দেখা যাচ্ছে .. স্ট্রাইপ দেওয়া জামা গায়ে .. সামনে কম্পিউটার .. মিতি বোধহয়  কম্পিউটার শিখছে।

দোলার মনটা সত্যিই দমে গিয়েছিলো। এখন মনে হচ্ছে একটু হালকা, তাও সংশয় আছে। যদি কাল কলেজে যাওয়ার সময় মিতি কোনো রকম ঝামেলা করে তার আগেই বেরিয়ে পড়তে হবে তাকে।

সীমা ডাকে "দিদি এসো .. বসো।"

দোলা এসে বসে। মিতির কম্পিউটার শেখা শেষ হলো .. স্যার'কে টা টা করে দিয়ে এসে পিসির কাছ ঘেষে দাঁড়িয়ে বললো "আন্টি তুমি কাল তাহলে চলেই যাচ্ছো?"

সীমা কাজ করতে করতেই বললো "যাবে না? তুমি তখন যা ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে কাঁদলে, তোমাকে তো আন্টি চিনেই নিলো।'

মিতি ছুটে গেলো তার মায়ের কাছে "মামণি আর হবে না কোনোদিন .. কক্ষনো করবো না মামণি .. ক্ষমা করে দাও .. বলো মামণি ক্ষমা করবে .. ?''

"থাক হয়েছে.. যাও আন্টির কাছে ক্ষমা চাও।" সীমা উক্তি করলো।

এইবার নিজের ধৈর্য্যের বাঁধ ভেঙে রে রে করে উঠলো দোলা "একদম না .. এসব কি শেখাচ্ছো মেয়েকে? ও এমন কি বলেছে যার জন্য ক্ষমা চাইতে হবে? আমি কিচ্ছু মনে করিনি ..  হ্যাঁ আর একটা কথা আমাকে এবার থেকে আন্টি নয় পিসি বলে ডাকবি .. আয় আমার কাছে আয় .." হাত বাড়িয়ে মিতিকে কোলের কাছে টেনে নেয় তার দোলা পিসি। কি নরম মিতির শরীর .. যেন ছোট্ট একটা পাখির ছানা।

সীমা এবার নিজেকে সামলে নিয়ে বলে "পিসিকে কতগুলো রাইমস শুনিয়ে দাও .. আর কি কি শিখেছো দেখাও ..।"

মন্ত্রমুগ্ধের মত হাত-পা খেলিয়ে মিতি গড় গড় করে একের পর এক রাইমস বলে গেলো। মিউজিক সিস্টেম চালিয়ে নাচ দেখালো গোটা তিনেক। এরই ফাঁকে টিভিতে কার্টুন প্রোগ্রাম দেখলো। কয়েকটা ফোনও ধরলো .. তাকে এবং তার মাকে কেউ কেউ নতুন কলেজে ভর্তির চান্স পাওয়ার জন্য অভিনন্দন জানাচ্ছে .. প্রত্যেকটি ফোন কলের উত্তরও দিলো সে সপ্রতিভভাবে। এ যেন এক মনুষ্যরূপী মেশিন .. মিতিকে দেখতে দেখতে এই মুহূর্তে এই কথাই মনে হচ্ছিলো তার দোলা পিসির।

রাত দশ'টা বেজে গিয়েছে .. খাওয়ার টেবিলে সবাই অপেক্ষা করছে।  সীমা ডাকলো "মিতি আয় .. খেতে বোস।"

মিতি পাশের ঘর থেকে উত্তর দিলো "যাই মামণি .. পুরনো বই খাতা বুকশেল্ফে তুলে রেখে কালকের জন্য নতুন বইপত্র গুছিয়ে রেখে আসছি।"

"আচ্ছা এসো" - বলে সীমা খাবার বাড়তে থাকে।

মিতি এসে বসে তার দোলা পিসির পাশে। আস্তে করে হাতটা ঠেলে দিয়ে বলে "আন্টি .. সরি পিসি .. থাকো না গো কালকে .. কাল ঠিক পার্কে যাবো তোমার সঙ্গে।"

চোখে জল চলে এলো দোলার। অবাক করা জীবনচর্চা .. অভাবনীয় নিয়মানুবর্তিতা .. কি করে শিখলো এইসব সাত বছরের শিশুটি! কাল থেকে ও ঠিকই  কলেজে যাবে .. কারণ ও জানে এটা কেরিয়ার তৈরীর যুগ .. কলেজের জানলাগুলো ছোট হলেও ক'দিনেই ও ভুলে যাবে আকাশ দেখার মনোবাসনা। তার বদলে দেখতে পাবে আকাশ ঢাকা শুধু বড়ো বড়ো অট্টালিকা।

মিতি তার পিসিকে আবার ঠেলা দিয়ে বলে "বলো না গো পিসি .. থাকবে তো?"

মৃদু হেসে ঘাড় নাড়িয়ে তার দোলা পিসি জানায় "থাকবো"।

[Image: Screenshot-20211223-144358-3.jpg]

jerakam tomar anka, serakam asadharon lekha, eta je kono boro potrikaye chapanor joggo
[Image: Polish-20231010-103001576.jpg]
[+] 1 user Likes Chandan's post
Like Reply
(31-08-2021, 03:52 PM)Bumba_1 Wrote:
[Image: IMG-20210830-152435-487.jpg]

বন্যেরা বনে সুন্দর

লেখা এবং প্রচ্ছদ :- বুম্বা

মুখবন্ধ : একেবারে ছোটদের জন্য আমার এই গল্পটি একসময় লিখেছিলাম। এই থ্রেডে বিশেষ করে এই সাইটে হয়তো একেবারেই বেমানান এই গল্পটি। তবুও পোস্ট করলাম। কেমন লাগলো অবশ্যই জানাবেন পাঠক বন্ধুরা।

হর থেকে সংরক্ষিত বন বেশি দূর নয়। বনে থাকে নানা রকমের পশু .. বাঘ, হাতি, শিয়াল, হায়না, নেকড়ে আরো কতো রকমের পশু .. যেমন মাংসাশী পশু থাকে তেমনি আবার তৃণভোজী পশুও থাকে।

তবে মাংসাশী পশু গুলো ছোট ছোট তৃণভোজী পশুগুলোকে খেয়ে ফেলে, ওরা আবার গাছপালা খেতে পারে না। ফলে বনে অনেক সময় ওদের খাবার মতো পশুর আকাল পড়ে যায়। তাই অনেক সময় খাবারের সন্ধানে ওরা বেরিয়ে পড়ে এবং লোকালয়ে চলে আসে। আর তখনই হয় বিপত্তি .. হৈ হৈ রৈ রৈ ব্যাপার।

সেদিন এইরকমই একটা কাণ্ড ঘটে গেলো। আমাদের শহরে হঠাৎ করে একটা চিতাবাঘ খাবার খুঁজতে খুঁজতে বেরিয়ে পড়েছে বন থেকে। এধার ওধার খুঁজে ওর চোখে পড়লো একটা কুকুর।

কুকুরটি কি যেনো একটা খাচ্ছে .. বেশ হৃষ্টপুষ্ট, চকচকে চামড়া .. সঙ্গে সঙ্গে চিতাটার চোখ জ্বলজ্বল করে উঠলো .. মারলো এক লাফ। এক্কেবারে কুকুরটার সামনে।

কুকুরটিও কিছু একটা আন্দাজ করেছিলো, আসলে ওদের ঘ্রাণশক্তি তো ভীষণ প্রখর! চিতাটা কাছে পড়বার আগেই ও দিলো দৌড়। ছুটতে লাগলো প্রানপনে .  চিতাটাও ছুটতে লাগলো পেছন পেছন। ছুট ছুট .. কুকুরটাও ছুটছে চিতাও ছুটছে .. খানাখন্দ মাঠ-ঘাট পেরিয়ে ছুটছে দুজনে।

চিতা বাঘের সঙ্গে কি কুকুর দৌড়ে পারে! তবুও আত্মরক্ষা করার আপ্রান চেষ্টা। কুকুরটি ঢুকে পড়লো লোকালয়ের মধ্যে; চিতাটিও ঢুকলো। ভয় মানুষের প্রাণ উড়ে গেলো .. যে যার ঘরে ঢুকে পড়লো আর দরজায় খিল দিলো।

এদিকে কুকুরটার পথঘাট সবই চেনা। সে জানতো সামনে একটা কুয়ো আছে। কোনো দিকে না তাকিয়ে ও ঝাঁপ দিলো কুয়োতে .. পড়লো গিয়ে জলে ঝপাৎ করে। সঙ্গে সঙ্গে চিতাটাও দিলো ঝাঁপ .. পড়লো গিয়ে একেবারে কুকুরটির ঘাড়ের উপর। কুকুরটি তাল সামলাতে না পেরে জলে ডুবে যেতে লাগলো .. চিতাটা তার উপরেই ঝাপিয়ে পড়লো .. আঁচড়ে কামড়ে অস্থির করে তুললো কুকুরটাকে। চিতার আক্রমণে ক্ষতবিক্ষত হলো কুকুরের দেহটা .. কুয়োর জল লাল হয়ে উঠলো। কুকুরটি আস্তে আস্তে তলিয়ে গেলো কুয়োর জলের মধ্যে দিয়ে একেবারে নিচে পাতালে।

[Image: IMG-20210830-152452-973.jpg]

এদিকে কুকুরের পেছনে চিতাকে ছুটতে দেখে এলাকায় শোরগোল পড়ে গেছে .. তার উপরে দুটোই কুয়োতে পড়েছে জানতে পেরে শহরসুদ্ধ  মানুষ যেনো ভেঙে পড়েছে সেখানে দৃশ্যটি দেখবার জন্য .. কার আগে কে কুয়োতে ঝুঁকবে ভেবে পাচ্ছে না। কুয়োতে জল ছিলো বেশ খানিকটা নিচে, এলাকার মানুষ তা জানতো।

চিতাটা জলে পড়ে হাবুডুবু খাচ্ছে .. হর্ণ দিতে দিতে এসে পড়লো বনবিভাগের কর্মীরা, এলো পুলিশ বাহিনী .. ভিড় সরিয়ে তারা কুয়োর কাছে চলে এলো .. এবার শুরু হলো চিতা উদ্ধারের তোড়জোড়।

কিন্তু চিতা উদ্ধার হলেই তো হবে না .. চিতাবাঘ যা সাংঘাতিক প্রাণী .. সে উঠে যে কার ঘাড়ে পরবে কে জানে। তাই পুলিশ আগে সামলাতে লাগলো লোকজনকে .. সবাইকে সরিয়ে তবে তারা কুয়োর ধারে গেলো।

এদিকে চিতা এখন কুকুরের ভরসা ছেড়ে নিজের প্রাণ বাঁচানোর আশায় উপরের দিকে তাকিয়ে আছে। নিজের দেহটাকে জলের উপর ভাসিয়ে রেখে জুল-জুল করে তাকাচ্ছে। যদিও ওর চোখটা জ্বলছে .. তবুও তার ভাবখানা এমন যদি কেউ দয়া করে তাকে তুলে দেয়।

উদ্ধারের কাজ শুরু হলো .. কত রকমের ব্যবস্থা। প্রথমে জাল ফেলা হলো একটা .. চিতাকে জালে আটকানো হলো। কিন্তু তোলে কার সাধ্য .. কিছুটা জল তো সে খেয়েইছে .. দেহের ওজনও বেড়েছে স্বাভাবিক ভাবেই। খানিকটা উঠেই ঝপাৎ করে জাল ছিঁড়ে আবার জলে পড়ে গেলো চিতাটা। "গোঁ গোঁ" করে মাঝে মাঝেই আওয়াজ তুলছে চিতা। কুয়োর ফাঁকা বাতাসে গমগম করে উঠছে সে আওয়াজ। উপর থেকে ক্যামেরা নিয়ে ছবি তুলে নিচ্ছে ফটোগ্রাফারেরা।

বনবিভাগের কর্মীরাও আপ্রাণ চেষ্টা করছে চিতাকে তোলার জন্য। এবার তারা অন্য একটা উপায় বের করলো .. একটা ছোটখাটো গাছের গুঁড়ির দু'ধারে শক্ত করে দড়ি বেঁধে কুয়োয় নামিয়ে দিলো।

চিতাবাঘের তো দারুন বুদ্ধি .. ও বুঝে গেছে যে, সব আয়োজনই তাকে উপরে তোলবার জন্য .. মনে মনে হয়তো ভাবছে "একবার উঠতে পারলে হয়।"

গাছের গুঁড়িটা যেইনা জলে পড়া চিতাটা এক পলক দেখে নিয়ে সামনে দু'পা দিয়ে ঠিক মানুষের মতো করে গুঁড়িটাকে জাপ্টে ধরলো।‍ বনবিভাগের কর্মীরা খুব সাবধানে দড়িটা ধরে আস্তে করে তোলার চেষ্টা করছে। এতক্ষণ জলে থেকে তার দেহটা হয়েছে ভয়ানক ভারী। কিন্তু এবার আর চিতাটা পড়ে গেলো না, উপরে প্রায় দশ-বারোজন মিলে দড়িটাকে ধরে আছে শক্ত করে। চিতার অর্ধেক দেহ জলে, অর্ধেক গুঁড়িটাকে আঁকড়ে ধরে। উপর থেকে বনকর্মীরা একটু একটু করে টানার চেষ্টা করছে।

গাছের গুঁড়িটা একটুখানি উপরে উঠেছে মাত্র। চিতাটা পেছনের পা দুটো গুঁড়িতে রাখার চেষ্টা করলো। ব্যাস, চোখের পলক কারোর পড়তে পারলো না। চিতাবাঘটা সর্বশক্তি দিয়ে মারলো এক লাফ .. সোজা কুয়োর উপরে। ঠিক ঐ রকমই এক পলকে এক লাফে সোজা গিয়ে পড়লো রাস্তায়। সেখান থেকে গা ঝাড়া দিয়ে উঠে দৌড় দিলো বনের দিকে। দৌড় দৌড় .. শুধু যেন একটা হলদে কালো রেখা তীব্র গতিতে ছুটে যাচ্ছে।

সকলেই হতভম্ব, কেউ কিছু বোঝার আগেই সে একেবারে হাওয়া। তবে যতটুকু বুঝেছিলো কেউ কেউ .. তারা তো ছিটকে পড়েছে হুড়মুড় করে এ ওর ঘাড়ে।

ফটোগ্রাফারেরা চটপট তাদের ক্যামেরায় রেকর্ড করতে থাকেন লোকালয়ে এসে প্রাণভয়ে কেমন দৌড়াচ্ছে চিতাটা .. টিভিতে নিশ্চয়ই এটা দেখানো হবে।

এদিকে বনবিভাগের কর্মীরা আর কি করেন .. চিতা গেলো ফসকে .. আবার কুকুরের দেহটাও গেছে কুয়োর জলে তলিয়ে একেবারে নিচে। অগত্যা এবার কুকুরের দেহটাকেই তুলতে হবে।

বেচারা কুকুর চিতার থাবাও খেলো আবার জলে ডুবে মারাও গেলো।

[Image: Screenshot-20211223-144358-3.jpg]

As usual nice drawing, but lekha ta motamuti
[Image: Polish-20231010-103001576.jpg]
[+] 1 user Likes Chandan's post
Like Reply
(16-09-2021, 04:36 PM)Bumba_1 Wrote:
[Image: IMG-20210915-115024-765.jpg]

বুম্বার হনুমান পোষা

লেখা এবং প্রচ্ছদ :-  বুম্বা

বুম্বাদের বাড়িটা বেশ বড়ো .. আগেকার জমিদার বাড়ি। পুকুর, বাগান সব আছে। আছে পেয়ারা, পেঁপে, জামরুল, ডালিম, কুল, আতা .. মাঝারি মাপের সব গাছ।

দাদু তো সর্বক্ষণই বাগান দ্যাখেন আর তাছাড়া বাগানে বারোমাস কাজ করে বদন দা। নানা রকমের ফল হয় .. পাড়াশুদ্ধ বিলি করে, নিজেরা খেয়েও‌ ফুরায় না। আত্মীয়-স্বজন বেড়াতে এলেই বুম্বাদের বাগানটা ঘুরে ঘুরে দেখে আর প্রশংসা করে।

কিন্তু এই বাগানের হাল বে'হাল হয়ে ওঠে মাঝে মাঝে। এক একদিন দল বেঁধে আসে হনুমান। আসতেই থাকে দশ .. কুড়ি .. ত্রিশ - আসার আর বিরাম নেই। গোটা পাড়াটাকে যেন কাঁপিয়ে দেয়। এ গাছ থেকে ও গাছ, এর বাগান থেকে ওর বাগান, এ বাড়ি থেকে ও বাড়ি .. একেবারে তুর্কি নাচ শুরু করে দেয়। গাছের ডাল ভেঙে, কচি কচি পাতাগুলো ছিঁড়ে, ফলগুলোকে চিবিয়ে চিবিয়ে খেয়ে ফেলে সারা বাগান ছড়ায়। ঘরে-দোরে ঢুকে পড়ে,  বড়গুলো "হুপ হুপ" করে আর ছোটগুলো "চিঁ চিঁ" করে পাড়া মাথায় তোলে।

বদন দা লাঠি নিয়ে আসে ঠিকই, কিন্তু হনুমানগুলো দাঁত খিঁচিয়ে তেড়ে আসার আগেই পালায়।

বুম্বা তো ভয় নিচে নামেই না। রান্নাঘরের জানলা দিয়ে দেখে হনুমানের অঙ্গভঙ্গি। মাঝে মাঝে এটা-ওটা ছুঁড়ে মারে। মা বলেন "ও সব করিস না, ওরা কিন্তু লাফিয়ে এসে থাপ্পর মেরে দেবে।"

সারাদিন অত্যাচার করে ওরা একসময় সবাই চলেও যায়। কিন্তু সবথেকে বেশি বিপদ হয়ে যেদিন বীর হনুমান আসে।

বীর হনুমানগুলো যেমন বড়ো, তেমনি সাহসী। যেদিন আসে পাড়াশুদ্ধ লোকের হৃৎকম্পন ওঠে। আসলে ওরা আসেই মারমুখো হয়ে .. কাউকে মারার উদ্দেশ্য নিয়েই আসে। বুম্বা একদিন দেখেছিলো ক্লাবঘরের পিছনের বাগানে একটা বড় হনুমান একটা বাচ্চা হনুমানের পেট চিরে দিচ্ছে।

বুম্বা চিৎকার করে উঠেছিল "মা .. মা .. ইস্ .. দ্যাখো দ্যাখো।"

মা বললেন "তাড়াতাড়ি সরে আয়.   কি ভয়ঙ্কর জীব রে বাবা .. একদম এসব দেখবি না।"

মেজজেঠু একদিন বলছিলেন "বীর হনুমানরা অন্য বীর হনুমানকে ছোটো অবস্থাতেই মেরে ফেলে মায়ের বুক থেকে টেনে নিয়ে।"

ছোটকাকা বলে "আমিও দেখেছি .. তবে একবার বাগে পাই .. এমন জব্দ করবো ব্যাটাদের।"

"কেমন করে জব্দ করবে ছোটকা? ওদের তো খুব শক্তি।" বড় বড় চোখ করে জানতে চায় বুম্বা।

ছোটকাকা উত্তর দেয় "দ্যাখ না কি করি .. ঘরে একটা ডান্ডা দেখেছিস তো!"

সেদিন ছিলো রিম্পার জন্মদিন। রিম্পা হলো বুম্বার মেজজেঠুর মেয়ে। বেশকিছু আত্মীয়-স্বজন এসেছে বাড়িতে। হঠাৎ "বাবাগো মাগো" বলে পড়িমরি করতে করতে ধুপ ধাপ করে সিঁড়ি দিয়ে নেমে এলো সবাই। নিচ থেকে ঠাকুমা চেঁচিয়ে বললেন "কি হলো রে .. পড়ে যাবি তো .. আস্তে নাম।"

রণি'দা বলে ওঠে "ওরে বাপরে কি বড়ো একটা হনুমান আর একটা হনুমানকে তাড়া করেছে .. বুবুদের বাড়ি থেকে এক লাফে আমাদের ছাদের চিলেকোঠার মাথায় এসে বসেছে।"

ছোটকাকা তক্ষুণি ডান্ডাটা নিয়ে ছাদে উঠতে যাচ্ছিলো। রণি'দা বলে "উঠো না ছোটমামা .. আমাদের ছাদে বসে আছে।"

"থাকুক" এইটুকু বলেই ছোটকাকা ডান্ডাটা সাঁই সাঁই করে ঘোরাতে ঘোরাতে ছাদে গেলো।

হনুমান ততক্ষণে বুম্বাদের ছাদ থেকে এক লাফে বুবুদের বারান্দায় গিয়ে বসেছে। লম্বা ল্যাজখানা ঝুলিয়ে এদিক-ওদিক দেখছে। আবার দেওয়াল বেয়ে তিন লাফে ছাদে উঠে গেলো .. কি যেন খুঁজছে। ওর বিশাল ল্যাজটা ঝুলে নেমে এসেছে বুবুদের ঘরের জানলা পর্যন্ত। বুবু জানালায় দাঁড়িয়ে ছোটকাকাকে দেখতে পেয়েই চেঁচিয়ে বললো "ও ছোটকা .. তোমাদের চিলেকোঠার ঘরে একটা মা হনুমান বাচ্চা নিয়ে ঢুকে পড়েছে।"

"অ্যাঁ .. সেকি রে" বলেই ছোটকাকা পিছন ফিরে দ্যাখে একটা লম্বা ল্যাজ চৌকাঠ পেরিয়ে বাইরে বেরিয়ে আছে। ছোটকাকা কোনো কথা না বলে সিঁড়ির দেয়ালের গা ঘেঁষে গিয়ে প্রথমে খুব ধীরে দরজার ডানদিকের পাল্লাটা বন্ধ করে তারপর "জয় মা কালী" বলে বাঁদিকের পাল্লা টেনে দিয়ে ছিটকানি আটকে দিলো। ততক্ষণে হনুমানটা আস্তে আস্তে ল্যাজটা টেনে নিয়েছে ভেতরে। চিলেকোঠার ঘরে ছাদের দিকটা কোনো বড়ো জানলা নেই। ভিতরের দিকে একটা কুলুঙ্গি ছিলো, সেটা জানলা করা হয়েছে .. খুব ছোটো এবং উঁচুতে .. বাচ্চাদের নাগালের বাইরে। ছোটকাকা সেখান থেকে দেখতে পেলো - মা-হনুমানটা বাচ্চাটাকে বুকের ভেতর জাপ্টে ধরে আছে। ওদিকে বুবুদের ছাদে তখনও বীরহনুমানটা বসেই আছে। ছোটকাকা চুপচাপ নেমে এলো.. কাউকে কিছুই বললো না।

কিন্তু এসব খবর কি গোপন থাকে! দুপুরে বুবু নিমন্ত্রণ খেতে এসেই কথাটা জানিয়ে দিলো সকলকে। সঙ্গে সঙ্গে বুম্বা, রণি, রিম্পা, টুকু সকলে লাফিয়ে উঠলো "আমরা একটু দেখবো .. চলো ছাদে যাই।"

ছোটকাকা ধমক দিয়ে বললো "কিচ্ছু দেখবার নেই ওরা ঠিক আছে।"

সন্ধের আগেই এক এক করে সকলে চলে গেলো। ছোটকাকা বেশিরভাগ সময় চিলেকোঠার ঘরে থাকতো .. পড়াশোনা, আঁকাজোখা করতো। আজকে নিচে ঠাকুরমার ঘরে আছে। ঠাকুমা টিভি দেখছিলেন .. বন্ধ করে দিয়ে বললেন "কি রে হনুমানগুলো ছেড়ে দিসনি?"

"তুমি খেপেছো .. ছেড়ে দেবো! বীর হনুমানটা এখনো বুবুদের ছাদেই আছে। ছারলেই বাচ্চাটাকে পেট চিরে মেরে মেরে দেবে।" বলেই ছোটকাকা পড়ায় মন দেয়।

"এ আবার কি ফ্যাসাদ রে বাবা .. হনুমান কেউ ঘরে আটকে রাখে!" ঠাকুমা চলে যান অন্য ঘরে।

বুম্বার তো কিছুতেই মনে শান্তি নেই .. পড়াতেও মন নেই। দাদুর কাছে গিয়ে বসে, তারপর আস্তে আস্তে জিজ্ঞাসা করে "আচ্ছা দাদু, কেনো বলতো বীর হনুমান বাচ্চা হনুমানগুলোকে মেরে ফেলে?"

দাদু একটা গল্পের বই পড়ছিলেন। বুম্বাকে কোলের কাছে টেনে নিয়ে বলেন "কেনো মারে শুনবি? প্রথমে একটা কথা জানতে হবে যে ওরা কিন্তু সব বাচ্চাকে মারে না। যে বাচ্চাগুলো বড় হলে বীর হনুমান হবে অর্থাৎ সেগুলোকেই শুধু মেরে ফ্যালে।"

বুম্বা কেঁদে ফেলার মতো করে বলে "কেনো গো .. মেরে ফ্যালে?"

দাদু বলেন "ওরা একদমই চায়না যে, আর কোনো বীর হনুমান ওর প্রতিপক্ষ হোক।"

বুম্বা সঙ্গে সঙ্গে বলে ওঠে "প্রতিপক্ষ মানে কি গো দাদু?"

দাদু বলেন "প্রতিপক্ষ মানে বিরুদ্ধপক্ষ .. তোকে তো বোঝানো মুশকিল। আসলে হনুমানরা তো দল বেঁধে থাকে। সব দলেই একটা করে বীর হনুমান থাকে, ওদের দারুন শক্তি। রামায়ণের গল্পে পরিসনি .. বালী আর সুগ্রীব দুজনেই ভীষণ বীর ছিলো। একজন মরলো, তবে আরেকজন রাজা হলো।"

বুম্বা বললো "ওহো, তাই .. বুঝতে পেরেছি .. বাচ্চা হনুমানটাকে রাজা হতে দেবে না, এই তো!"

দাদু বলেন "দ্যাখ .. তোর ছোটকা কি করে।"

সারা দিনের ক্লান্তিতে সন্ধ্যেবেলা বুম্বা ঘুমিয়ে পড়েছিলো। রাত্রে মা ডেকে খাবার টেবিলে নিয়ে বসালেন। বুম্বা মা'কে চুপি চুপি বলে "মা, জানো তো.. ছোটকা হনুমান পুষছে।"

মা বলেন "সেকি রে বিলু .. হনুমান গুলোকে ছাড়িসনি? অবলা জীবকে এভাবে আটকে রেখেছিস কেনো?"

ঠাকুমা বললেন "শুধু কি তাই.. কিছু খেতে দেয়নি দুটোকে.. কোনো সাড়াশব্দ নেই।"

মেজোজেঠি বলেন "মরে যায়েনি তো?"

"হনুমান বা বাঁদর ধরে মেরে ফেললে কিন্তু কেস হবে" খেতে খেতে বললেন বাবা।

ঠাকুমা তৎক্ষণাৎ রেগে গিয়ে বললেন "জানিনা বাপু, এসব উদ্ভট শখ কেনো! ওদিকে ঘরটার কি অবস্থা হচ্ছে কে জানে। - হনুমান মেরে বাড়িসুদ্ধ লোকের হাতে হাতকড়া পরাবে বলে মনে হচ্ছে।"

ছোটকাকা এতক্ষণ চুপচাপ খাচ্ছিলো। এবার বললো "আচ্ছা মা .. তোমার কি মাথা খারাপ হয়েছে! একদিন না খেলে কেউ মরে? তারপরে আবার হনুমান .. মানুষের পূর্বপুরুষ। মানুষই কতদিন না খেয়ে বেঁচে থাকে .. তাছাড়া আমি একটা এক্সপেরিমেন্ট করার জন্য সাইকোলজিকাল ট্রিটমেন্ট করছি .."

সঙ্গে সঙ্গে থামিয়ে দিয়ে মেজজেঠু বললেন "এখানেও তোর সাইকোলজিকাল ট্রিটমেন্ট!! তুই না হয় হিউম্যান সাইকোলজি বুঝিস। কিন্তু এ্যানিমাল সাইকোলজি কি তোর জানা আছে?"

"দ্যাখো মেজদা, সবই এক .. শুধু বুঝে নিতে হয়।" বলে ছোটকাকা খেতে থাকে। আর কেউ কিচ্ছু বলে না।

রাতে সকলেই গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। হঠাৎ মাঝ রাতে চিলেকোঠার ঘর থেকে ভেসে এলো প্রচন্ড জোরে আওয়াজ। "হুপ হুপ" আর তার সঙ্গে নানারকম শব্দ। তার মানে বড় হনুমানটা ক্ষেপে গিয়েছে। খিদে তৃষ্ণায় সে অস্থির হচ্ছে .. একবার চৌকিতে উঠছে, আবার নিচে নামছে। হয়তো জানলার কাছে যাচ্ছে, আবার লাফ দিচ্ছে। আর ঘন ঘন ডাক ছাড়ছে।

বুম্বা ঠাকুমার কাছে শুয়েছে। আজ বাড়িতে লোক আছে তাই ছোটকাও শুয়েছে এই ঘরে। কেউ শুনুক বা না শুনুক, বুম্বার কিন্তু ঘুম ভেঙে গেছে এবং সে সব শুনতে পেয়েছে। ওর ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় সজাগ - অনুভব করছে ছোটকা বিছানায় উঠে বসেছে, মশারি তুললো, বাইরে পা বাড়াচ্ছে।

বুম্বা তৎক্ষণাৎ বিছানায় উঠে বসে। "ছাদে যাচ্ছো ছোটকা?" গলা নামিয়ে জিজ্ঞাসা করে।

অবাক হয়ে ছোটকাকা ফিস্ ফিস্ করে বলে "সেকি রে, তুই জেগে আছিস? চুপচাপ শুয়ে থাক।"

বুম্বা ততক্ষণে বিছানা থেকে নেমে পড়েছে .. অন্ধকার ঘর। "আমাকেও নিয়ে চলো ছোটকা, তোমার দুটি পায়ে পড়ি।"

ঘরে কি ঘটছে ঠাকুরমা বুঝতে পারছেন কিন্তু ঘুমের ওষুধের ঘোরে ব্যাপারটা কি হচ্ছে ধরতে পারছেন না। "বাথরুমে যাবি বুম্বা?" ঘুমচোখে জিজ্ঞাসা করলেন ঠাকুমা।

"ছোটকার সঙ্গে যাচ্ছি।" তৎক্ষণাৎ উত্তর দিলো বুম্বা।

হনুমানটার দাপাদাপি বেড়েই চলেছে। ঘরে একটা জিরো পাওয়ারের আলো জ্বললেও টর্চ জ্বেলে ছোটকাকা দেখলো রাত সাড়ে তিনটে। "আচ্ছা চল .."

 বুম্বা ছোটকাকার সঙ্গে সঙ্গে ছাদে ওঠে। ছোটকার হাতে লাঠি, অন্ধকার চারিদিক। নিঃশব্দে ওরা ছাদে উঠলো। খুব সাবধানে ছোটকা চিলেকোঠার দরজার ছিটকানিটা টেনে ডানদিকের পাল্লাটা খুলে দিলো, তারপর নিজেরা দুজনেই দরজার আড়ালে লুকিয়ে গেলো।

বড় হনুমানটা তখন পাগলের মতো "হিসহিস .. হুপ হুপ" শব্দ করে চৌকিতে উঠছে আর নামছে। যেই না দরজা খোলা দেখেছে - এক লাফে সে এসে বসলো ছাদের মাঝখানে। সেখানে এক মুহূর্ত থেকেই লাফ দিলো বুবুদের ছাদে .. বসলো গিয়ে জল ট্যাঙ্কের উপরে। তারপর ছাদের কার্নিশ দিয়ে হেঁটে হেঁটে একেবারে ক্লাবের পিছনের বাগানে অন্তর্হিত হলো।

[Image: IMG-20210915-115043-615.jpg]


ছোটকাকা বললো "ভয় নেই, ভোরের আগে অন্ধকার একটু গাঢ় হয়, একটু পরেই সকাল হয়ে যাবে। চল শুবি চল .. কাল থেকে শুরু আমাদের হনুমান পোষা। তারপর আস্তে করে দরজাটা টেনে দিয়ে ছিটকিনি বন্ধ করে দেয় ছোটকা।

"ওর মা আর আসবে না?" ব্যাকুল কন্ঠে প্রশ্ন করে বুম্বা।

"ও আর যেচে বন্দী হতে আসবে কি? এখন তো বাঁচুক .. চল।" ছোটকাকা বুম্বাকে নিয়ে নিচে নেমে আসে।

বুম্বার ঘুম ভাঙলো বেশ দেরিতে, মায়ের ডাকে। চোখ কচলে উঠেই দৌড়ে ছাদে গেলো। গিয়ে দ্যাখে .. চিলেকোঠার দরজার ফাঁক দিয়ে ছোটকা বাচ্চা হনুমানটাকে ডাকছে - "আয় আয় .. চুক চুক।"

কিন্তু বাচ্চাটা ভয় চৌকির তলায় ওই যে গিয়ে ঢুকেছে আর বেরোবার নাম নেই। ডাকাডাকির ফলে আরো ভয় একেবারে ঘরের কোণে ঢুকে যাচ্ছে ও। ঘরটা তখনও বেশ অন্ধকার। ছোট কাকা পা টিপে টিপে কোনরকমে চৌকিতে গিয়ে উঠলো। দক্ষিণ-পশ্চিম কোণের জানলাটা খুলে দিয়েই এক লাফে বেরিয়ে এসে দরজা বন্ধ করে দিলো। তারপর বুম্বাকে বললো "থাক খাবারগুলো .. ও ক্ষিদে পেলেই খাবে, ওর ভয় কাটতে দেরি আছে .. চল .." ওরা নিচে নেমে গেলো।

বেশ কয়েক দিন কেটে গেছে। বুম্বা রিম্পি কলেজে যাচ্ছে .. খেলছে বন্ধুদের সঙ্গে .. খাচ্ছে-দাচ্ছে ঘুমোচ্ছে সবই ঠিক আছে - কিন্তু তাদের মনে খুবই দুঃখ নিজেদের পোষাক হনুমানটাকে একটিবার চোখের দেখাও দেখতে পাচ্ছে না। একে তো কুলুঙ্গির জানালাটা বেশ উঁচু, তার উপর বাচ্চা হনুমানটা চৌকির নিচে থেকে বাইরে আসতেই চায় না। কখন যে খেয়ে যায়, তাও কেউ জানতে পারে না।

দক্ষিণ-পশ্চিম কোণের জানলাটা একদম সোজাসুজি পিঙ্কিদের বাড়ির দিকে। মাঝখানে চওড়া রাস্তা, এই যা তফাৎ। একদিন পিঙ্কি বললো "বুম্বা, তোদের পোষা হনুমানটা একটু বড় হয়েছে রে .. জানলার কাছে এসে বসেছে দেখলাম।

বুম্বা খবরটা ছোটকা কে জানায়। ছোটকা বলে "বড় তো হবেই, দেখতে দেখতে দেড় মাস হয়ে গেলো .. এখন আর দরজা খোলা যাবে না .. জানলা দিয়ে খাবার নেবার অভ্যাস করাতে হবে।"

প্রথম প্রথম বাচ্চাটা যখন খুব ছোটো ছিলো .. গায়ের চামড়া ছিলো তুলতুলে পাতলা, কোঁচকানো, লাল-গোলাপী মেশানো রঙের। চোখ দুটো ছিলো লোমে ঢাকা পিটপিটে চাউনি। বদন দা তখন এক ফাঁকে ঘর পরিষ্কার করে দিতো। চিলেকোঠার ঘরের জিনিসপত্র বদন দাই এক এক করে নামিয়ে এনেছিলো।

কিন্তু এখন বদন দা বলে "বাবা রে .. আর ও ঘরে যাতি পারবো নি .. কেমন ডাগর ডাঁসা চেহারা .. কামড় মারে যদি.."

তবুও অতিকষ্টে ঝাড়ু দিয়ে ঘর পরিষ্কার রাখে বদন দা। এখন কুলুঙ্গির জানলার উপরে কলা, পেঁপে, রুটি, বিস্কুট, গাছপাতা .. যাই রাখা যাক না কেনো .. হনুমানটা ঠিক নামিয়ে নেয়। সেদিন ছোটকার হাত থেকেও একটা কলা নিয়েছিলো .. আসলে ছোটকা কে ও চিনে গেছে তো।

ওদিকে পিঙ্কিদের ছাদে প্রায়ই দেখা যায় বাচ্চাদের ভিড় -
"এই হনুমান কলা খাবি / জয় জগন্নাথ দেখতে যাবি" .. হনুমান থোড়াই দ্যাখে! ও কেবল চৌকি থেকে ওঠে আর নামে। মাঝে মাঝে চিলেকোঠার ঘরের ছাদের দেওয়ালটা ধরার জন্য লাফ দেয়।

বুম্বা সেদিন ছোটকাকা কে বললো "ছোটকা ওর কোনো নাম রাখবে না?"

ছোটকা বলে "দেখি .. আর ক'দিন যাক।"

বুম্বা আবার বলে "আচ্ছা ছোটকা, ওকে একটু একটু করে খেলা শেখালে হয় না? ও তো পোষ মেনে গিয়েছে।

ছোটকা বলে "দাঁড়া আর ক'দিন যাক।"

বুম্বা অধৈর্য হয়ে বলে "আর ক'দিন যাবে?"

ছোটকাকা তেমন ভাবলেশহীন ভাবেই বলে "দ্যাখ না আর ক'দিন যায়.."

সেদিন শেষ রাতে .. হয়তো ভোরের দিকেই হবে .. হঠাৎ বাড়ি কাঁপিয়ে ভীষণ রকম শব্দ উঠলো "হুপ হুপ"। বুম্বার ঘুম ভেঙে গেলো .. আবার শব্দ "হুপ হুপ"।  বুম্বা উঠে বসেছে বিছানায় "ছোটকা ছোটকা .. বাচ্চা হনুমানটা ডাকছে .. ওই শোনো।"

ছোট কাকা ততক্ষণে উঠে পড়েছে "শুনেছি শুনেছি.." টর্চ জ্বালিয়ে দ্যাখে চার'টে বাজে .. ভোর হয়ে এসেছে। বুম্বা সেদিনের পর থেকে ঠাকুমার কাছেই শুচ্ছে .. আর মায়ের কাছে শোয় নি এই ক'মাস।

চিলেকোঠার দরজায় আঁচড়ানোর শব্দ .. হনুমানটা দরজাটা আঁচড়াচ্ছে।

ঠাকুমা জেগে গেছেন, দাদুও জেগে গেছে। কাল রাতে পিসি আর রণিদা এসেছে .. ওরাও জেগে গেছে। ছোট কাকা বললো "মা, দেখবে তো এসো .. হনুমানটাকে ছেড়ে দিচ্ছি.."

কাঁদো কাঁদো স্বরে বুম্বা জিজ্ঞাসা করলো "ছেড়ে দেবে?"

ছোটকাকা বলে "হ্যাঁ .. দেবোই তো।"

বুম্বার বিস্ময়ের সীমা রইলো না "ছেড়েই যদি দেবে তাহলে পুষতে গেলে কেনো?"

সিঁড়ি দিয়ে উঠতে উঠতে ছোটকা বললো "আরে বোকা .. ছেড়ে দেবো বলেই তো পুষলাম ওকে .. ওহো .. দাঁড়া .. ক্যামেরাটা নিয়ে আসি, কয়েকটা ছবি তুলে রাখবো।"

ওদিকে হনুমানের দাপাদাপি চরমে উঠেছে, দরজাটা যেনো ভেঙে ফেলবে। তার সঙ্গে "হুপ হুপ" করে অনবরত ডাকছে।

আজকে আর ভয় ভয় নয় .. ছোটকাকা সোজা গিয়ে দরজাটা খুলে দিলো। আর সঙ্গে সঙ্গে বীরদর্পে এক পা এক পা ফেলে ঘর থেকে বের হলো বিশাল এক হনুমান। গিয়ে বসলো ছাদের মাঝখানটায়। একটু এদিক-ওদিক তাকিয়েই দিলো এক লাফ। গিয়ে বসলো বুবুদের চিলেকোঠার ছাদে। বিশাল লম্বা ল্যাজ ঝুলে আছে জানলার কাছ  বরাবর। সেই মুহূর্তে ছোটকাকা ফটাফট কয়েকটা ছবি তুলে নিলো।

হনুমানটা ছাদের কার্নিশ দিয়ে হেঁটে হেঁটে  ক্লাবের পিছনের বাগানের দিকের দেওয়াল বরাবর নেমে গেলো .. তারপর হঠাৎ করেই কোথায় যেনো অদৃশ্য হয়ে গেলো।

অশ্রুসিক্ত কন্ঠে বুম্বা বলে উঠলো "যাঃ .. চলে গেলো!"

রণি বললো "কিরে বুম্বা কাঁদছিস নাকি? তোর চোখে জল.."

বুম্বা আর থাকতে পারলো না, এবার শব্দ করেই কেঁদে ফেললো। ছোটকা এসে জড়িয়ে ধরে বললো "দেখলি তো বলেছিলাম না ব্যাটাদের জব্দ করবো ..  কেমন বীর করে পাঠিয়ে দিলাম হনুমানটাকে।

বুম্বা প্রশ্ন করে ওঠে "ও এবার ঠিক রাজা হবে .. বলো?"

ছোটকা বলে "হতে পারে .. আবার নাও হতে পারে.. হয়তো এখানেই ফিরে আসতে পারে.. কিছুই বলা যায় না।"

"সত্যি!!" বুম্বার চোখ-মুখ আনন্দে উজ্জ্বল হয়ে উঠলো।

ঠাকুমা বললেন "হয়েছে .. এবার সব নিচে নাম। বদন কে দিয়ে ঘরের হাল ফেরাই। তিন মাস ধরে জ্বালিয়ে খেলে।"

সবাই আস্তে আস্তে নিচে নেমে গেলো।

[Image: Screenshot-20211223-144358-3.jpg]

ei golper dharekache keo nei, best of the best
[Image: Polish-20231010-103001576.jpg]
[+] 1 user Likes Chandan's post
Like Reply
(24-12-2021, 03:40 PM)Bumba_1 Wrote:
[Image: IMG-20211223-113509-834.jpg]

সান্টাক্লসের উপহার

লেখা এবং প্রচ্ছদ :- বুম্বা

জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে বড়দিন এখন সকলের উৎসব। আনন্দের উৎসব .. কেক খাওয়া, বেড়াতে যাওয়া - এগুলো তো আছেই, বাচ্চাদের কাছে সবথেকে মজা আগের দিন রাত্রে 'সান্টাক্লসের' উপহার পাওয়া।

অপুর কাছে এটা দারুন আনন্দের দিন। ও জানে বড়দিনের আগের দিন ২৪শে ডিসেম্বর রাত বারোটার পর সান্টাক্লস প্রত্যেকের বাড়িতে যায় আর ছোট ছোট ছেলে-মেয়েদের জন্য উপহার নিয়ে আসে। কখনো ঝোলানো মোজায় ভরে দেয় চকলেট, আবার কখনো বালিশের নিচে রেখে দেয় লজেন্স, ছবির বই।

অপু জানে সান্টাক্লস ওদের বাড়িতেও আসবে। ঝোলানো মোজায় চকলেট রাখবে, বালিশের নিচে ছবির বই, ছড়ার বই, গল্পের বই রাখবে, লজেন্স রাখবে। ঘুম থেকে উঠেই বালিশ উল্টে ও সব দেখতে পাবে। বিকেলে খেলার মাঠে গিয়ে বন্ধুদের সঙ্গে এগুলো ভাগ করে খাবে .. বইয়ের ছবি দেখাবে।

ছোটবেলায় ঘুম থেকে উঠলেই মা বলতেন "অপু .. দ্যাখ তো তোর বালিশটা উল্টে।"

ওপু বালিশ উল্টে দেখেই অবাক হয়ে যেত .. এখন আর বলতে হয় না। এখন সে মাস গুনে, দিন গুনে বুঝে নেয় ২৪শে ডিসেম্বর কবে। আগের দিন বিকেলে বন্ধুদের বলে রাখে "আজ রাতে সান্টাক্লস আসবে .. লাল রঙের ডিলেডালা জোব্বা পড়ে, তার জামার অনেক পকেট .. সব পকেট ভর্তি উপহার। তার মাথায় ঢলঢলে লাল পশমের টুপি .. তাতেও থাকে লজেন্স, চকলেট। সে আসে মাঝরাতে .. আমি কতো রাত অব্দি জেগে থাকি .. কিন্তু কোনোদিন তাকে দেখতে পাইনি .. তবে সকালে উঠেই দেখি কখন যেন দিয়ে গেছে উপহার আমার বালিশের নিচে।"

বন্ধুরা চোখ বড় বড় করে শোনে তার গল্প। ভাবে - ইশশ, আমাদের বাড়িতেও যদি সান্টাক্লস আসতো তাহলে কেমন মজাই না হতো।

বিনু একদিন বাড়ি গিয়ে তার মা-বাবাকে অপুর গল্পটা করলো। বললো "বাবা, যাও না কাকুকে জিজ্ঞেস করে এসো না .. কি করলে সান্টাক্লস আমাদের বাড়িতেও আসবে .. আমি মোজা ঝুলিয়ে রাখবো .. সান্টাক্লস এসে চকলেট রাখবে .. বালিশের নিচে লজেন্স, ছবির বই রেখে দেবে। একবারটি জিজ্ঞেস করে এসো না বাবা.."

বিনুর পেড়াপীড়িতে ওর বাবা গেলেন অপুর বাবার কাছে। সব শুনে অপুর বাবা বলেন "ওহ্ , এই কথা, শোনো তাহলে ...." এই বলে অপুর বাবা ফিসফিস করে হাত নেড়ে কি যেন সব বুঝিয়ে দিতে লাগলেন বিনুর বাবাকে।

বিনুর বাবা মাঝপথে তাঁকে থামিয়ে দিয়ে বলেন "উঁহু .. এটা তুমি ঠিক করছো না, তোমার ছেলেকে ঠকাচ্ছো, মিথ্যে বোঝাচ্ছো .. আসলটা ও জানতে পারছে না। তাছাড়া লজেন্স, চকলেট - এগুলো দাঁতের ক্ষতি করে বইতো নয়। দেখবে বড় হলে তোমার ছেলের দাঁতও যাবে আর কেমন বোকা বোকা বুদ্ধি হবে।"

অপুর বাবা একটু চিন্তা করে বললেন "হয়তো তুমি ঠিকই বলছো .. এরকমভাবে তো আমি ভাবি নি। তবে সান্টাক্লসের গল্প তো মিথ্যে নয় .. পৃথিবীর সব মানুষই প্রায় এই গল্প জানে। সান্টাক্লস বাচ্চাদের অত্যন্ত প্রিয় আর বাচ্চাদের একটা সরল বিশ্বাসের জায়গাও সে অধিকার করে আছে। আমি অপুর মনে কেবলমাত্র সরল বিশ্বাস জন্মানোর জন্যই এই রকম গল্প তৈরি করে রেখেছি। শিশুর প্রথম বিশ্বাসই তো সরলতার মধ্যে দিয়ে আসা উচিত .. আমার অন্তত তাই মনে হয়।

বিনুর বাবা গম্ভীর হয়ে চলে গেলেন। মুখে যাই বলুন ব্যাপারটা কিন্তু তার ভালই লেগেছে। তিনি ভাবলেন সকালবেলা উঠে তার ছেলে যদি বালিশের নিচ থেকে হঠাৎ একটা প্রিয় জিনিস উপহার পায় তাহলে ওর যে কত আনন্দ হবে - সেই মুখটার কথা চিন্তা করেই তিনি একটা উপহার কিনে আনলেন। চুপি চুপি বিনুর মা'কে সব কথা জানিয়ে দিয়ে বললেন "খবরদার, ছেলে যেন জানতে না পারে .. ওর বালিশের নিচে রেখে দেবে, সকালে উঠে বলবে সান্তাক্লস রেখে গেছে। হুঁ হুঁ বাওয়া .. এসব লজেন্স ফজেন্সের ব্যাপার নয় .. এ অন্য জিনিস। ছেলেদের সাহসী করতে হবে, যুগটার কথাও তো ভাবতে হবে।"

পরেরদিন বিনু ঘুম থেকে ওঠে আর না। মায়েরও যেন ধৈর্য আর থাকছে না, গায়ে ঠ্যালা দিয়ে বললেন "ও বিনু, ওঠ না .. কত বেলা হলো.."

বিনু শীতে গুটিসুটি মেরে শুয়ে থাকে। মা আবার ডাকেন "বিনু, ও বিনু .. উঠবি না? দ্যাখ, তোর জন্য বালিশের নিচে সান্টাক্লস কি উপহার রেখে গেছে।"

কথাটা শোনামাত্র বিনু শীতঘুম কাটিয়ে এক লহমায় বিছানায় উঠে বসে আর সঙ্গে সঙ্গে বালিশটা উল্টে দ্যাখে "আঃ কি সুন্দর বন্দুক .. মা, এটা সান্টাক্লস উপহার দিয়েছে? তার মানে সান্টাক্লস আমাদের ঘরে রাত্রে এসেছিল .." চোখ মুখ উজ্জ্বল হয়ে ওঠে বিনুর। বন্দুকটা তুলে নিয়ে বুকের কাছে জাপ্টে ধরে। তারপর লক্ষ্য করে বালিশের পাশে আর একটা উপহার রাখা আছে তার জন্য .. এক প্যাকেট ভর্তি ছোট ছোট মটর দানার মতো গুলি।

[Image: IMG-20211223-113532-837.jpg]

মা বলেন "উপহার তো পেয়েছো .. যাও এবার মুখ চোখ ধোও, দাঁত মাজো।"

কে শোনে কার কথা .. বিনু ততক্ষণে ফরফর করে গুলির প্যাকেট ছিঁড়ে ফেলেছে। বন্দুকটা ধরে এপাশ-ওপাশ করতেই বুঝে নেয় কোনখানটায় গুলিটা ভরতে হবে .. মুহুর্তের মধ্যে ভরেও নেয় একটা গুলি। তারপর বন্দুকটা নিয়ে কিসে মারবে ভাবতে ভাবতে হঠাৎই ট্রিগারে চাপ পড়ে গুলিটা সোজা বেরিয়ে গিয়ে খটাস করে গিয়ে লাগলো ডাইনিং টেবিলের উপর রাখা স্টিলের জগে।

শব্দ শুনে রান্নাঘর থেকে মা বললেন "কি রে, বিনু .. কিসের শব্দ হলো?"

বিনু বলে "কিছু না .. মা।"

মা বলেন "শিগগির আয় .. মুখ ধুয়ে দুধ খেয়ে নে।"

কোনরকমে দাঁত মেজে মুখ ধুয়েই ঢকঢক করে খেয়ে নিলো এক গ্লাস দুধ .. তারপর বিস্কুটগুগো মুখে গুঁজে দিয়ে কুরমুর করে চিবোতে চিবোতে দে-ছুট' সোজা বাগানে।

বিনুর হাতে বন্দুক আর গুলির প্যাকেট .. বন্দুকে গুলি ভরছে আর ছুঁড়ছে। পাখি, ফুল, প্রজাপতি সবকিছুকে তাক করছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই লক্ষ্যভ্রষ্ট হচ্ছে .. গুলিগুলো খুঁজে খুঁজে কুড়িয়ে নিচ্ছে‌ .. আবার কোনো কোনোটা হারিয়েও যাচ্ছে .. মাঝে মাঝে এলোপাথাড়িও গুলি ছুঁড়ছে। বাগানের কোণে সদ্য সদ্য জন্মানো চারটে বাচ্চা নিয়ে গুটিসুটি মেরে শুয়েছিল লালি .. ওদের পোষা কুকুর। হঠাৎ লালি "ক্যাঁও ক্যাঁও" করে আর্তনাদ করে উঠলো। বাচ্চাগুলোর চোখ ফোটে নি, মায়ের আর্তনাদ শুনে আর পালিয়ে যাওয়া বুঝতে পেরে "কুঁই কুঁই" করতে করতে এ ওর ঘাড়ে পড়তে লাগলো।

বিনুর খুব মজা লাগছিলো .. একবার বন্দুকটা তাক করতে ইচ্ছে করলো বাচ্চাগুলোর দিকে। ঠিক সেই সময় মা চিৎকার করে ডাকলেন "কি হলো রে বিনু .. কুকুরটাকে মারলি?"

বিনুর উত্তর "না মা মারিনি .. এমনি ডাকছে লালি।"

মা বলেন "ভেতরে আয় .. পড়তে বোস .  বাবা বাজার থেকে এক্ষুণি এসে পড়বে।"

বিনু ঘরে ঢুকে পড়ার টেবিলে বসে। কিন্তু পড়ায় মন একটুও নেই .. বই সামনে খুলে রেখে আবার বন্দুকে গুলি ভরে নেয় একটা। জানলা দিয়ে দেখা যাচ্ছে লাল্টুদের প্রাচীরে বসে আছে হুলো বিড়ালটা। মাথায় চাপলো দুষ্টুমি বুদ্ধি .. বিড়ালটার দিকে তাক করে ছুঁড়লো গুলি। গুলিটা সত্যি সত্যি লাগলে বিড়ালটার পেট ফুটো হয়ে যেতো। কিন্তু গুলিটা লাগলো জানালার গ্রিলে আর সঙ্গে সঙ্গে বুমেরাং হয়ে দ্বিগুন বেগে ফিরে এসে লাগলো কাঠের আলমারির উপরে রাখা অ্যালার্ম ঘড়িটার কাঁচে। 'টুস' করে শব্দ হয়ে চির খেয়ে গেলো ঘড়ির কাঁচ। ভয় ধরে গেল বিনুর .. মা জানতে পারলে রক্ষা নেই .. দীপুমাসির দেওয়া ঘড়ি। মা হাত মুছতে মুছতে ঘরে ঢুকলে। বিনু তাড়াতাড়ি বইয়ের পাতা উল্টে বসে পড়ার ভান করতে লাগলো।

মা বললেন "দেখি .. কি বই বের করেছিস .. তখন থেকে বসে আছিস, না? নিজে থেকে কিচ্ছু করতে পারিস না?"

বিনু ভয় পেয়েছিল, মা বুঝি সব জানতে পেরে গেলো। আজকে ছুটির দিন, সকালে প্রচুর কাজ। মায়ের ওসব দেখার অবসর নেই। তাড়াতাড়ি বই খাতা বের করে দিয়ে বললেন "দু'পাতা কারসিভ রাইটিং লেখ, আমি আসছি .."

ঘড়িটার কাঁচ ফেটে গেছে দেখে বিনুর খুব দুঃখ হলো। হাতটায় যদি একটু প্র্যাকটিস থাকতো, তাহলে বিড়ালটার গায়ে ঠিকই লাগতো আর ঘড়িটাও ভাঙতো না। বিনু উঠে পড়ে সোফার বালিশগুলো ডিভানের উপর রেখে একের পর এক গুলি ছুঁড়ে 'টিপ' প্র্যাকটিস করতে থাকে। ভারি মজা লাগছে তার .. মনে মনে সান্টাক্লসকে থ্যাঙ্কস্ জানাচ্ছে বারবার।

মা রান্নাঘর থেকে বলেন "কি রে বিনু লিখছিস তো?"

বিনু তাড়াতাড়ি টেবিলে বসে পড়ে - "হ্যাঁ মা .. লিখছি।"

"আচ্ছা লেখ .. আমি বাথরুমে যাচ্ছি" মা বললেন।

এর জন্যই বিনু অপেক্ষা করছিল। সবিতামাসি রান্নাঘরে বাসন মাজছে .. বাইরে ময়লা ফেলতে গেলো .. ফিরে এসে দরজাটা ভেজিয়ে দিলো। এবার ঘর ঝাঁট দিতে এলো .. এখনতো বিনু'কে বাইরে যেতেই হবে, কেননা চেয়ার তুলে দেবে ডিভানে।

ঘর থেকে বেরিয়েই বিনু দেখে ভেজানো দরজাটার পিছনে একটা বড়সড় টিকটিকি লেপ্টে আছে .. দেখেই তার মনটা নেচে উঠলো। সঙ্গে সঙ্গে বন্দুকটা হাতে নিয়ে বেশ কিছুক্ষণ ধরে টিপ করে দিলো ট্রিগার টিপে। ঠিক সেই মুহূর্তেই দরজা ঠেলে ঢুকলো তার বাবা।

"উঃ মা গো .."বলে একটা আর্তনাদ করে কেমন যেন কুঁজো হয়ে গেলো ওর বাবা। দু'হাতে দুই থলি .. বড়দিনের অনেক বাজার। ওখানেই থলি নামিয়ে বসে পড়লেন। চশমার কাঁচ ঝনঝন করে ভেঙে মাটিতে পড়লো। বিনু ততক্ষণে প্রমাদ গুনে পড়ার টেবিলে গিয়ে চুপ করে বসেছে।

বিনুর মা বাথরুম থেকে আর্তনাদ শুনতে পেয়ে তাড়াতাড়ি বেরিয়ে এলেন। "কি হলো .. কি হলো" বলে তাড়াতাড়ি এসে দেখেন বিনুর বাবা বেসিনের কাছে এসে চোখে জলের ঝাপটা দিচ্ছেন।

মা অসহিষ্ণু হয়ে বলেন "চোখে হলোটা কি ..  অমন করছো কেনো? তারপর মাটি থেকে চশমাটা কুড়িয়ে নিয়ে বললেন "চশমা ভাঙলো কি করে? সবিতা, তুই কি কিছু জানিস?"

সবিতামাসি ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে ফুলঝাড়ু হাতে দাঁড়িয়েই আছে মূর্তির মতো  .. বললো "না দিদি আমি কিছু দেখিনি।"

কয়েক মুহুর্ত কেটে গেলো। এবার বিনুর বাবার চোখ ধোওয়া বন্ধ হলো। চিৎকার করে বললেন "কোথায় গেলো রাস্কেলটা .. হতভাগা দাঁড়া .. বলে যেই না বিনুর দিকে এগিয়ে গেলেন। ওমনি বিনু "ও মা গো" বলে এসে মা'কে জড়িয়ে ধরলো।

মা শশব্যস্ত হয়ে বলে উঠলেন "কি হয়েছে .. কি করেছে বিনু?"

"করেছে আমার মাথা আর মুন্ডু .. চশমাটা দেখতে পাচ্ছো না! অল্পের জন্য চোখটা বেঁচে গেলো আমার.." বলে বিনুর দিকে চড় বাগিয়ে এগিয়ে গেলেন। বিনু তখন মায়ের কাছ থেকে পালিয়ে সবিতামাসির পেছনে গিয়ে লুকালো।

বাবা বললেন "এদিকে আয় বিনু .. না এলে আজকে তোকে মেরেই ফেলবো .."

"একদম মারবে না .. তুমিই তো ওকে বন্দুক কিনে দিয়েছো .. ও তো চায়নি।" বাধা দেওয়ার চেষ্টা করে মা বলেন।

"এই হতভাগা .. বন্দুকটা কি তোকে আমাকে মারবার জন্য দেওয়া হয়েছে?" বেদম রেগে গিয়ে বাবা বললেন।

বিনু কাঁদো কাঁদো গলায় বলে "আমি তো টিকটিকিটা কে মারতে যাচ্ছিলাম .. তুমিই তো এসে গেলে.."

"ও .. টিকটিকি মারছিলে? নচ্ছার ছেলে .. নিরীহ একটা প্রাণীকে হত্যা করা .. এইজন্য তোকে বন্দুকটা দিয়েছি!"

বিনু বলে "তুমি তো দাওনি .. দিয়েছে তো সান্টাক্লস .. বালিশের তলা থেকে পেলাম তো সকালে .. কাল রাত্রে দিয়ে গেছে।"

বাবা বললো "ঘোড়ার ডিম দিয়েছে .. বোকা ছেলে। ওটা আমি দিয়েছি .."

এবার বিনু সত্যি সত্যিই কেঁদে ফেললো। বন্দুকটাকে ছুঁড়ে ফেলে দিলো ঘরের এক কোণে। তারপর মায়ের কাছে গিয়ে "তবে কেনো আমাকে বললে সান্টাক্লস দিয়েছে‌ .. কেনো মিথ্যা কথা বললে .. আমি কিচ্ছু নেবো না .. কেনো কাকুর কাছে গিয়ে বললে না - সান্টাক্লসকে আমাদের বাড়িতে পাঠিয়ে দিতে .. আমাকে লজেন্স দিতে, ছড়ার বই দিতে, চকলেট দিতে .. কেনো বাবা বন্দুক দিলো .. কেনো .. কেনো .. কেনো?" এই বলে বিনু সোফায় বসে বালিশে মুখ গুঁজে কাঁদতে লাগলো।

[Image: Screenshot-20211223-144358-3.jpg]

another great story, right now you're the best writer in this forum
[Image: Polish-20231010-103001576.jpg]
[+] 1 user Likes Chandan's post
Like Reply
(28-12-2021, 05:31 PM)Bumba_1 Wrote:
[Image: Screenshot-20211226-122527-2.jpg]

বিল্টুর কেরামতি

লেখা এবং প্রচ্ছদ :- বুম্বা

হুদিন আগের কথা। আমাদের ক্যাম্পাসের পিছনে একটি বস্তি ছিলো (আছে হয়তো এখনও)। সেখানে ছিলো সমাজের নিম্নবিত্ত বিভিন্ন শ্রেণীর খেটে খাওয়া মানুষের বাস। সবাই সকালবেলা যে যার কাজে বেরিয়ে যেত .. সন্ধেবেলা অথবা কেউ কেউ রাত্রিবেলা ফিরে এসে গান-বাজনা হই হট্টগোল সহযোগে মিলেমিশে আনন্দ করে দিন কাটাতো। বিল্টু ছিলো ওদের সকলের নয়নের মণি।

ওহো, বিল্টুর পরিচয়টাই তো দেওয়া হয়নি। বিল্টু হলো মুচির ছেলে। বয়স তার বেশি নয় .. এই দশ কি এগারো হবে। জুতো মেরামত করতে পারে না, কিন্তু কালি লাগিয়ে বুরুশ করতে ওস্তাদ। সকাল না হতেই কালি আর বুরুশের ছোট্ট ঝোলাটা নিয়ে সে বেরিয়ে গান করতে শুরু করে দেয় ..

"একটি টাকা দাও গো বাবু
একটি টাকা দাও -
ময়লা জুতো সয় না পায়ে
পালিশ করে নাও .."

খদ্দের জুটতে দেরি হয় না। সে চটপট জুতোয় কালি লাগায়, বুরুশ করে আর গান গায়। খদ্দের খুশি হয়ে ওর প্রাপ্য একটি টাকার সঙ্গে আরেকটি টাকা বকশিশ দিয়ে যায়।

কিন্তু এই শহরে দুষ্টু লোকেরও তো অভাব নেই! এই তো দিন কয়েক আগে, চশমা পরা একটি বাবু ওকে দিয়ে জুতো পালিশ করিয়ে নিয়ে সরে পড়েন, আর ফেরেন না। বিল্টু মনে মনে সেদিন বুঝে উঠতে পারেনি যে ভদ্রলোকেরও কেন এমন মনোবৃত্তি হয়! তাও সামান্য একটা টাকার জন্য।

এই ঘটনার দিন কয়েক পরের কথা। সেদিন খদ্দেরের অন্ত নেই .. বিল্টু জুতো পালিশ করে যাচ্ছে .. আর গান গেয়ে চলেছে ওর মিষ্টি মধুর গলায়।

একজন বাবু তো ওর গান শুনেই একটি টাকা দিতে যাচ্ছিলেন .. কিন্তু বিল্টু তাকে থামিয়ে বললো "কই .. আপনার জুতো তো পালিশ করিনি বাবু! জুতো পালিশ করিয়ে নিন, তারপর না হয় মনে হলে আরও একটা টাকা বকশিশ দেবেন।"

ওর কথায় খুশি হয়ে ভদ্রলোক জুতো পালিশ করিয়ে নেন, আর যাওয়ার সময় দুটো টাকা বকশিস্ দিয়ে যান। বিল্টু ভাবে এমন লোকও তবে আছে ..

বিল্টুর খদ্দের প্রায় কমে এসেছে .. এমন সময় সে দেখতে পেলো, টাকা না দিয়ে পালিয়ে যাওয়া সেই বাবুটি আসছেন ওদিক থেকে। দেখামাত্রই বিল্টুর মাথায় এক ফন্দি খেলে গেলো। সে গলা উঁচু করে বললো "বাবু, একবারটি পালিশ করিয়ে নিন .. দেখবেন জুতো কেমন ঝকঝক করছে .. টাকা আজ না থাকে আরেকদিন দেবেন .. আসুন।"

বাবুটি ভাবলেন - মন্দ কি! আগে পালিশটা তো করিয়ে নিই তারপর না হয় টাকা .. একবার সরে পড়লে, কে আর ধরে!

ছোট্ট বাক্সটার উপর বাবু নিজের ডান পা'টা রাখেন .. বিল্টুও শুরু করে দেয় পালিশ করা। দক্ষিণ দিকের পর্ব সমাপ্ত হলে পরে বাবু তার  জুতোসুদ্ধ বাঁ পা'টা বাক্সের উপরে তুলে ধরেন .. "নে, এবার এটা পালিশ কর" বিল্টুর দিকে চেয়ে বলেন বাবু।

ঘাড় নেড়ে বিল্টু জবাব দেয় "না বাবু .. একটাই থাক। আগে সেদিনকার টাকা'টা ফেলুন‌.. তারপর না হয় ওটা হবে।"

বিল্টুর কথা শুনে বাবু তো অবাক - ছোঁড়া'টা বলে কি‌ .. আচ্ছা চালাক তো! আরেক পাটি  জুতো পালিশ না করালে যে ব্যাপারটা খুব বিচ্ছিরি দেখাবে তা বলাই বাহুল্য। মহা মুস্কিলে পড়ে গেলো .. বেশি দেরি করলে ছোঁড়া'টা হয়তো লোক জড়ো করতে পারে .. কাজ নেই বাপু অত হাঙ্গামা করে .. তার চেয়ে আগের দিনের বকেয়া মিটিয়ে দু'টো টাকা দিয়ে দেওয়াই ভালো - এই ভেবে বাবুটি তখন বিল্টুকে দু'টো টাকা দিয়ে বললেন "নে বাপু .. খুব আক্কেল হয়েছে, তাড়াতাড়ি এখন এটা পালিশ করে দে।"

পয়সা পেয়ে বিল্টু তখন বাকি জুতোটা পালিশ করে দেয়। আর যাওয়ার সময় বাবুর দিকে চেয়ে বলে ওঠে "মনে রাখবেন বাবু, কাউকে ঠকালে নিজেকেই শেষটায় ঠকতে হয়।"

ছোট্ট ছেলে বিল্টুর মুখে এইরূপ কথা শুনে বাবুটি তখন পালাবার পথ পায় না।

[Image: Screenshot-20211223-144358-3.jpg]

lekata to valoi, kitu ei storyr kichu portion ek jayega theke anupranito hoye lekha, prapti swikar korle aro valo lagto, anyways nice story
[Image: Polish-20231010-103001576.jpg]
[+] 1 user Likes Chandan's post
Like Reply
(02-01-2022, 08:55 PM)Bumba_1 Wrote:
[Image: Polish-20220101-204732499.jpg]

ভীতি

কাহিনী এবং প্রচ্ছদ :- বুম্বা

ক্ষিণপাড়ার চার মন্দিরতলায় মালতীবালা হাইকলেজের উল্টোদিকে নিজস্ব সাইকেলের গ্যারেজ ছিলো শম্ভুর।

মালতীবালা মহাবিদ্যালয়ে দ্বাদশ শ্রেণীতে পড়তো কুসুম। ‌বড়লোক বাড়ির মেয়ে .. তাদের হাতিশালে হাতি আর ঘোড়াশালে ঘোড়া না থাকলেও শহরের পশ্চিমপ্রান্তে একটি বিশাল দোতলা বাড়ি - যা 'রায়চৌধুরী বাড়ি' নামে খ্যাত ছিলো এবং দু'টি বড় চার-চাকার গাড়ি ছিলো। কুসুমের বাবা মনোতোষ বাবু দু'টি তেলকলের মালিক ছিলেন।

পড়াশোনাতে তেমন মেধাবী ছাত্রী না হলেও মুখস্ত বিদ্যার দরুন এবং গৃহশিক্ষকের অধ্যাবসায়ে প্রতি ক্লাসে ভালোভাবেই উত্তীর্ণ হয়ে যেতো কুসুম। শরীর বিশেষ খারাপ না হলে, ‌কলেজে অনুপস্থিত থাকার পক্ষপাতী সে কোনোদিনই ছিল না। বাবার গাড়ি থাকলেও সাইকেল করেই কলেজে আসতো সে।

মূলত সাইকেলে পাম্প দেওয়ার জন্য বা সাইকেলের কোনো কলকব্জা বিকল হয়ে গেলে শম্ভুর গ্যারেজে প্রথম প্রথম সারাতে আসতো কুসুম। ‌ তারপর কলেজের ভিতরে না রেখে পাকাপাকিভাবে শম্ভুর গ্যারেজেই সাইকেল রাখা শুরু করল সে।

অনুরাগের প্রভাবে মনুষ্যজাতি এমন স্থানে গিয়ে পৌঁছেছে, যেখানে সকল মানুষই সমান, যেখানে কারও সঙ্গে কারো এক চুল তফাৎ নেই .. যেখানে সুন্দর, কুৎসিত প্রভৃতি তুলনা যেনো আর খাটেই না .. সীমা এবং তুলনীয়তা কেবল উপরে .. একবার যদি তা ভেদ করে ভিতরে প্রবেশ করতে পারা যায়, তাহলে দেখা যাবে সেখানে সমস্তই একাকার, সমস্তই অনন্ত।

এইরূপ ধারণার বশবর্তী হয়ে কালো, মোটা, কদাকার মুখশ্রীর শম্ভুকে কখন যে সুদর্শনা কুসুম তার মন দিয়ে বসলো তার হিসেব সে বোধহয় নিজেও রাখেনি। দুজনের প্রেম ক্রমে গভীর থেকে গভীরতর হলো .. অবশেষে পরস্পর বিয়ের সিদ্ধান্তে উপনীত হলো।

মনোতোষ বাবু তার কন্যার বিবাহ অন্যত্র স্থির করে রেখেছিলেন। তাই স্বাভাবিক ভাবেই অত বড় বনেদি বাড়ির তার সুদর্শনা কন্যা ঐরূপ কুৎসিত দর্শন সাইকেল গ্যারেজ চালায় এমন একজনকে পালিয়ে গিয়ে শহরের বাইরের মন্দিরে বিবাহ করায় মনোতোষ বাবু একটা বড়সড় আঘাত পেলেন।

মেয়ের বিয়ের রাতেই তার বুকে প্রচণ্ড ব্যথা উঠলো। অনেক রাতে ডাক্তারবাবু এসে পরীক্ষা করে বললেন "মনোতোষ বাবুর হৃদযন্ত্র বিকল হয়েছে .. কৃত্তিম ভাবে তা প্রতিস্থাপন করতে হবে .."। পেসমেকার বসার ফলে  অনিয়ন্ত্রিত হৃদস্পন্দন নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হলেও চিরতরে পক্ষাঘাতে পঙ্গু হয়ে বিছানা নিলেন মনোতোষ বাবু।

পিতার এইরূপ অসহায় অবস্থায় তাকে একবার দেখার জন্য ব্যাকুল হয়ে উঠলো তার কন্যার মন। কিন্তু উপায় কি .. ওই বাড়িতে ঢোকার অনুমতি নেই কুসুমের।

শরীরের সঙ্গে মন অতপ্রতভাবে জড়িত। তাই শরীর যখন দুর্বল হয় তখন মনও অত্যধিক দুর্বল হয়ে পড়ে। তাই কন্যা কুসুমের বারংবার আকুতিকে‌ আর উপেক্ষা করতে পারলেন না মনোতোষ বাবু।

শুধু যে তার জামাতা এবং তার কন্যাকে এই বাড়িতে ঢোকার অনুমতি দিলেন তা নয় .. ওদের জন্য 'রায়চৌধুরী বাড়ির' একতলায় থাকবার স্থায়ী বন্দোবস্ত করে দিলেন .. রক্তের টান বড়ো টান।

বিবাহের পূর্বেই শম্ভুর চারিত্রিক দোষ সম্পর্কে কানাঘুষো শুনলেও প্রেমের অমোঘ আকর্ষণে সেই বিষয়ে কর্ণপাত করেনি কুসুম। বিবাহের পর থেকেই যা ক্রমে স্পষ্ট হতে থাকলো কুসুমের সম্মুখে।

বাইরে একাধিক নারীর সঙ্গে সম্পর্কে লিপ্ত ছিলো শম্ভু। যার মধ্যে কিছু ঘটনা কুসুমের কানে এলে সে প্রতিবাদ করতো। প্রথমদিকে "এইসব হচ্ছে গুজব" এই বলে শম্ভু ব্যাপারটা এড়িয়ে গেলেও। পরবর্তীতে কোনোকিছুই আর ধামাচাপা থাকলো না। মদ এবং মেয়েমানুষের প্রতি শম্ভুর আসক্তি ক্রমশ প্রকট হতে লাগলো কুসুমের সামনে। এমত অবস্থায় অন্যায়ের প্রতিবাদ করলেই কুসুমের কপালে জুটতো প্রহার।

একে তো বাড়ির অমতে সে বিয়ে করেছে। তার উপর বাপের বাড়িতে আসার পর তার স্বামী গ্যারেজের ব্যবসা লাটে তুলে দিয়ে নিষ্কর্মার মতো শ্বশুরের অন্ন ধ্বংস করে চলেছে .. এরূপ অবস্থায় সে যদি প্রতিনিয়ত তার উপর ঘটে চলা অত্যাচারের কথা তার পিতাকে বলে তাহলে শারীরিক এবং মানসিকভাবে দুর্বল হয়ে যাওয়া মনোতোষ বাবু তা সহ্য করতে পারবেন না। তাই মৌন থাকা স্থির করলো কুসুম।

বিবাহের পরবর্তী পর্যায়ে 'রায়চৌধুরী বাড়িতে' প্রায় এক বৎসর অতিক্রান্ত হতে চললো তাদের। শম্ভুর লাম্পট্য এবং উশৃঙ্খলতা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেতে শুরু করলো। একে একে এই বাড়ির বিশ্বস্ত কর্মী এবং ভৃত্যশ্রেণীর লোকেরা অপসারিত হতে শুরু করলো। বলাই বাহুল্য দুষ্ট শম্ভুর এখন একমাত্র লক্ষ্য হয়ে দাঁড়ালো এই বাড়ির সম্পত্তি। স্বভাবতই বাড়িতে একটা ভীতির পরিবেশ সৃষ্টি হলো। কামিনী নামের একটি বাঁধা মেয়েমানুষ ছিলো শম্ভুর। বাড়ির কাজকর্ম করে দেবে, তার সঙ্গে কুসুমের সেবা-শুশ্রূষা করবে - এই অজুহাতে কামিনীকে নিয়ে সে তুললো এই বাড়িতে। কুসুম তখন আট মাসের অন্তঃসত্ত্বা। তার প্রতি স্বামীর অবহেলা এবং স্ত্রীর সামনেই অন্য মহিলার সঙ্গে অবৈধ যৌনক্রিয়ায় লিপ্ত হওয়া - এইসব ঘটনাপ্রবাহে  কুসুমের মন এবং শরীর ক্রমশ ভাঙতে শুরু করলো।

যথা সময় সে একটি ফুটফুটে পুত্রসন্তানের জন্ম দিলো ঠিকই। কিন্তু তার ক্রমবর্ধমান ভগ্ন হতে থাকা শরীর কুসুমকে ধীরে ধীরে মৃত্যু মুখে পতিত করলো। আদর করে ছেলের নাম রেখেছিলো বুবুন .. সেই বুবুন জন্মাবার সাত দিনের মধ্যেই মনোতোষ বাবুকে কাঁদিয়ে তার একমাত্র কন্যা কুসুম মারা গেলো। তবে এই পৃথিবী ছেড়ে চিরতরে চলে যাওয়ার আগে সে তার সন্তানের দিকে তাকিয়ে মনে মনে প্রতিজ্ঞা করেছিলো .. মা হয়ে তার সন্তানকে হয়তো সে রক্ষা করতে পারলো না .. কিন্তু সে যদি জীবনে কোনো পুন্যের কাজ করে থাকে তাহলে ভগবান নিশ্চয়ই তার সন্তানকে রক্ষা করবেন।

জন্মাবার পর থেকেই অবহেলায় বেড়ে উঠতে থাকলো বুবুন। পক্ষাঘাতে পঙ্গু দাদু ছাড়া আর কারো ভালোবাসা তো তার কপালে জুটতোই না .. তার বদলে পান থেকে চুন খসলেই জুটতো নিজের বাবার ভর্ৎসনা  এবং কখনও কখনও প্রহার। এছাড়া কামিনীর বিষ-নজরে তো সে ছিলোই। শিশুমনে ক্রমশ ভীতির সঞ্চার হওয়ার দরুন বুবুন সব সময় ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে থাকতো। এই বাড়িতে তাঁর একমাত্র সম্বল এবং কিছুটা হলেও সাহস জোগানোর মানুষ ছিলো তার দাদু মনোতোষ বাবু।

মনোতোষ বাবু এতদিনে তার জামাতা শম্ভুর স্বভাব চরিত্র এবং কার্যকলাপ সম্পর্কে যথেষ্ট পরিমাণেই অবগত হয়েছেন। একজন বৃদ্ধ, পঙ্গু, অসহায় মানুষের পক্ষে শম্ভুর মতো একজন শক্তিশালী দুর্বৃত্তের বিরুদ্ধে সম্মুখ সমরে যাওয়া তো সম্ভব নয়। তাই বুবুনের যখন পাঁচ বছর বয়স .. তখন তিনি পারিবারিক বন্ধু সলিসিটর রাধানাথ বাবুকে ডেকে একটি উইল তৈরি করালেন। যেখানে তার সমস্ত সম্পত্তির উত্তরাধিকার করে গেলেন তার নাতি বুবুনকে। এই ভাবেই হয়তো কিছুটা শিক্ষা দিতে চেয়েছিলেন তার জামাতাকে।

এরই ফলস্বরুপ কিনা জানা নেই .. উইল করার দিন দশেকের মধ্যেই আকস্মিকভাবে হুইলচেয়ার সমেত দোতলার সিঁড়ি থেকে গড়িয়ে নিচে পড়ে মৃত্যু ঘটলো মনোতোষ বাবুর। সলিসিটরের তৎপরতায় থানা পুলিশ করা হয়েছিল ঠিকই, কিন্তু সেই কেসের কোনো কিনারা হয়নি।

এই ঘটনার পর থেকে বুবুন আরো একা হয়ে গেল ওই বাড়িতে। সবসময় একটা ভয় গ্রাস করতে আসতো ওকে। ক্রমশ ভীতু হয়ে উঠতে থাকলো ছেলেটা। মাঝে মাঝে সলিসিটর রাধানাথ বাবু দেখা করতে আসতেন বুবুনের সঙ্গে। ওই একটি লোককেই সমীহ করতো বলা ভালো ভয় পেতো শম্ভু।

কিন্তু এভাবে আর কতদিন চলবে। যে কারণের জন্য বড়লোক বাড়ির মেয়েকে প্রেমের জালে ফাঁসিয়ে বিয়ে করা, যে কারণের জন্য এত বছর ধরে অপেক্ষা করে থাকা .. সেই সম্পত্তি কি তাহলে এবার হাতছাড়া হয়ে যাবে! তা কি করে সম্ভব .. এই সম্পত্তি আর তার মাঝখানে যে কাঁটা হয়ে আসবে, তাকেই উপড়ে ফেলবে শম্ভু। সে যদি তার পুত্র হয় তাতেও এই পাপ কাজ করতে সে পিছ'পা হবে না।

শম্ভু আর কামিনী মিলে পরামর্শ করলো যা করার এই ক'দিনের মধ্যেই করতে হবে। শুধু বুবুনের মৃত্যুটা যেন স্বাভাবিক মনে হয়। তা না হলে পুলিশ এবং সলিসিটর রাধানাথ বাবুর যাঁতাকলে পড়ে এই সম্পত্তি তাদের চিরতরে হাতছাড়া হয়ে যাবে। পারিবারিক ঘটনাপ্রবাহে এমনিতেই ভীতু প্রকৃতির ছেলে বুবুন। তাই ঠিক হলো তাকে যদি কোনো উপায় ভয়ঙ্কর ভূতের ভয় দেখানো যায় তাহলে নির্ঘাত সে হার্টফেল করে মারা যাবে। তাহলে আর কেউ সন্দেহ করবে না .. ভাববে মৃত্যুটা স্বাভাবিক। ব্যাস তাহলেই কেল্লাফতে .. এই পুরো সম্পত্তির মালিক হবে শম্ভু।

সেদিন গভীর রাতে একটা আওয়াজে ঘুম ভেঙে গেলো শম্ভুর। ঘুম ভেঙে দেখলো পাশে তার রক্ষিতা, রাতের সঙ্গিনী কামিনী নেই।  অনেকক্ষণ থেকে কে যেন ক্ষীণকণ্ঠে ডেকে যাচ্ছে, ‘"বাবা .. বাবা ..'’

বুবুন ভয় পেলে এভাবে অনবরত ডাকতে থাকে। এটা নতুন কিছু নয়। তাই শম্ভু বিছানা ছেড়ে উঠে ধীর পায়ে এগিয়ে গেলো পাশের ঘরের দিকে। এটা বুবুনের ঘর .. তার ইচ্ছার বিরুদ্ধেই তাকে একা থাকতে হয় এই ঘরে। ঘরে ঢুকে শম্ভু দেখলো বুবুন গুটিসুটি মেরে দেয়াল ঘেঁষে বিছানার ওপরে বসে আছে।

শম্ভু মনে মনে ভাবলো তাহলে কি ওদের প্ল্যান মতো আজ রাতেই কামিনী নিজের খেলা শুরু করে দিয়েছে! তারপর বিরক্তির স্বরে বললো "এই .. কি হয়েছে কি? ভয় পেয়েছো নাকি আবার কোনো কারনে?"

চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে বুবুন। কিচ্ছু বলতে পারছে না। ইশারায় দেখালো খাটের নিচে।

"স্বপ্ন দেখেছো?" প্রশ্ন করলো শম্ভু।

"না .." সংক্ষিপ্ত জবাব বুবুনের।

"তাহলে?" এবার অধৈর্য্য হওয়ার পালা শম্ভুর।

বুবুন আবারও খাটের নিচে হাতের ইশারা করে দেখালো শুধু .. তার মুখের কথা যেন আটকে গিয়েছে।

"ভয়ের কিছুই নেই। মিছিমিছি ভয় পাচ্ছো কেন? তুমি এখন বড় হয়েছো। তোমাকে অনেকদিন বলেছি একা ঘুমোবার অভ্যাস করতে হবে। চুপচাপ শুয়ে পড়ো এবার না ঘুমোলে কিন্তু .. আমাকে তো চেনো তুমি.." এইভাবে নিজের ছেলেকে শাসিয়ে ঘর থেকে চলে যাবার উপক্রম করতে লাগলো শম্ভু।

শম্ভু ঘুরে দাঁড়াতেই তার জামার কোনায় টান পড়লো। বুবুন ওর জামা ধরে রেখেছে। মাথা ঘোরাতেই শম্ভু লক্ষ্য করলো তার ছেলে এক দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে আছে। এইরকম শান্ত অথচ তীক্ষ্ণ দৃষ্টি বুবুনের চোখে আগে কখনো দেখেনি সে।

মৃদু অথচ দৃঢ় কণ্ঠে বুবুন বলে উঠলো "খাটের নিচে কে যেন আছে বাবা .. প্লিজ একটু দেখো না .."

কথাটা শুনেই মনের মধ্যে তরঙ্গ খেলে গেলো শম্ভুর। তাহলে কি এই সবকিছুই কামিনীর কেরামতি .. আজ কি তবে ভবলীলা সাঙ্গ হতে চলেছে! মনে মনে এইসব ভাবলেও। মুখে কপট রাগ দেখিয়ে বললো "খাটের নিচে কে থাকবে? যত্তসব আজগুবি কথা .."

শম্ভু মাথা নিচু করলো। আর ঠিক তখনই খাটের নিচে ধুপ করে একটা শব্দ হলো। বিছানার ঝুলে থাকা চাদর সরিয়ে কিছু সময় অন্ধকারে তাকিয়ে থাকলো শম্ভু। কয়েক মুহূর্তের মধ্যে চোখে অন্ধকার কিছুটা সয়ে আসতেই সে লক্ষ্য করলো এক জোড়া জ্বলন্ত চোখ তার দিকে তাকিয়ে আছে ভয়ার্ত দৃষ্টিতে।

শম্ভুর মাথা ঝিমঝিম করে উঠলো। গায়ে কাঁটা দিয়ে ভয়ের একটি শীতল স্রোত তার শিরদাঁড়া বেয়ে নেমে গেলো। নিজের দৃষ্টিকে সে বিশ্বাস করতে পারছে না। এটা কী করে সম্ভব! বিছানার নিচে জ্বলন্ত চোখে ভয়ার্ত দৃষ্টিতে শম্ভুর দিকে দিকে তাকিয়ে আছে আর কেউ নয় .. তারই ছেলে বুবুন।

এখানে বুবুন এলো কীভাবে .. তাহলে বিছানার ওপরে কে .. শম্ভু নিজের হৃৎপিণ্ডের কম্পন শুনতে পাচ্ছে। ক্রমশ উদ্বেলিত হতে শুরু করেছে তার হৃদপিণ্ড।

সেই মুহূর্তে খাটের তলা থেকে কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে ফিসফিস করে বুবুন বলে উঠলো '‘কে যেন আমার বিছানার ওপরে বসে আছে বাবা..'’

শম্ভু ধীরে ধীরে অনুভব করছে তার হৃদকম্পন ক্রমশ ক্ষীণ থেকে ক্ষীণতর হয়ে আসছে। অসহ্য যন্ত্রণা করছে তার বুকের বাঁ দিকে।

পুনশ্চঃ দেখতে দেখতে কুড়ি'টা বছর কেটে গেলো। শহর থেকে পাশ দিয়ে মালতীবালা হাইকলেজের মর্নিং কো-এড সেকশনে প্রধানশিক্ষক হয়ে এসেছে আমাদের বুবুন। রাধানাথ বাবু বিপত্নীক মানুষ .. তাই তার বন্ধু মনোতোষ বাবুর নাতিকে মানুষ করতেই 'রায়চৌধুরী বাড়িতে' কাটিয়েছিলেন তার জীবনের বাকি দিনগুলি। বছর তিনেক আগে তিনি পরলোক গমন করেছেন। বাড়ির প্রকাণ্ড বৈঠকখানার ঘরে দাদু মনোতোষ বাবুর ছবি এক পাশে তার আরেক দাদু রাধানাথ বাবুর ছবি লাগিয়েছে বুবুন .. আর মাঝখানে জ্বলজ্বল করছে তার মাতৃদেবী কুসুমের ফ্রেমে বাঁধানো ছবি।
একটা কথা যে বলাই হয়নি .. বিভীষিকাময় রাতের সেই ঘটনার পরের দিন সকালে 'রায়চৌধুরী বাড়ি' থেকে দু'জন পূর্ণবয়স্ক নর-নারীর মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়।

[Image: Screenshot-20211223-144358-3.jpg]

serar sera ...... sotti asadharon , ekei bole bhoye paowa
[Image: Polish-20231010-103001576.jpg]
[+] 1 user Likes Chandan's post
Like Reply
(06-01-2022, 08:55 PM)Bumba_1 Wrote:
[Image: Polish-20220105-104559277.jpg]

অসমাপ্ত

কাহিনী এবং প্রচ্ছদ :- বুম্বা

দুর্গাপুর 'স্টিল প্ল্যান্টে' একটা সেমিনারে এসেছিলাম .. তারপর সেখান থেকে ওয়ারিয়াতে একটা অ্যাসাইনমেন্টের জন্য। বর্ধমানের দিক থেকে দুর্গাপুরের আগের স্টেশন ওয়ারিয়া .. প্ল্যাটফর্মটা খুব নিচু .. একটুখানির জন্যে ট্রেন'টা মিস হয়ে গেলো।

বছর কয়েক আগে হলেও এক ছুটে ট্রেন'টা ধরে ফেলতে পারতাম। কিন্তু, এই ত্রিশ বছর বয়সে আর ছুটতে ইচ্ছে হলো না, বলা ভালো সামর্থে কুলালো না। বাধ্য হয়ে লাল কাঁকর বসানো প্লাটফর্মের একটা বেঞ্চের উপর এসে বসলাম।

কলকাতায় যাওয়ার পরবর্তী ট্রেন আসতে এখনো প্রায় ঘন্টা খানেক সময় লাগবে। এখানকার স্টিল ফ্যাক্টরির হেড অফিস কলকাতায়। ওখানেই প্রধানত আমি বসি .. মাঝে মাঝে অফিসের কাজে এখানে আসতে হয়। আমার বাসভবন কলকাতাতেই।

তবে এই অঞ্চলে ছোটবেলায় আমার মামারবাড়ি ছিলো .. এখন অবশ্য তারা কেউ বেঁচে নেই। তাই এই এলাকা বিশেষত এই স্টেশন সম্পর্কে একটা নস্টালজিয়া কাজ করে। গ্রীষ্মের পড়ন্ত বিকেল .. দক্ষিণের  শিরশিরে বাতাস ঘর্মাক্ত মুখে যেন বরফের কুচি  ছড়িয়ে দিচ্ছে। প্ল্যাটফর্মের এক ভ্রাম্যমাণ চাওয়ালার কাছ থেকে চা খেতে খেতে দূরের কালো শালবনটাকে দেখছি। হঠাৎ একটি মেয়ের গলা— ''এই  ঋদ্ধি .."

চমকে উঠলাম .. আমার নাম ধরে কে ডাকলো! পাশের বেঞ্চের দিকে তাকালাম, কুড়ি-একুশ বছরের দুটি ছেলেমেয়ে বসে গল্প করছে। মেয়েটি বললো "ঋদ্ধি, কাল কিন্তু সিনেমা দেখতে যাবো .. তারপর সেখান থেকে চাইনিজ খেতে .. কেমন!"

স্টেশনের আপাত শান্ত পরিবেশের জন্য ওদের কথোপকথন কিছু কিছু কানে আসছিলো আমার। বুঝলাম, ওই ছেলেটির নামও ঋদ্ধি। ওদের কথা শুনতে শুনতে কেনো জানিনা আমারও কেমন ইচ্ছে করলো কয়েক বছর আগের আমার ইউনিভার্সিটি জীবনে ফিরে যেতে ..

এই অধমের নাম ঋদ্ধিমান সেন .. এখনো পর্যন্ত অকৃতদার। প্রাণোচ্ছল জীবনের আমি তখন মুক্ত বিহঙ্গের মতো আকাশে উড়ে বেড়াচ্ছি .. কলকাতার একটি নামী বিশ্ববিদ্যালয় পড়তাম। ছাত্র হিসাবে আমি বরাবরই মেধাবী .. তার সঙ্গে খেলাধুলার ব্যাপারেও যথেষ্ট আগ্রহ ছিলো আমার। কিন্তু হঠাৎ করেই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়ে জীবনের লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্যগুলো কিরকম যেন তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছিলো।

অর্পিতা শহুরে স্মার্ট মেয়ে। পড়াশুনার সূত্রেই ওর সঙ্গে পরিচয়, তারপর বন্ধুত্ব। ধীরে ধীরে ওর সান্নিধ্য উপভোগ করতে শুরু করলাম .. ক্রমশ ভালো লাগতে লাগলো ওকে। কিন্তু মুখ ফুটে কথাটা কিছুতেই বলতে পারছিলাম  না ওকে। তবে বুঝতে পারতাম, ওর মনের মনিকোঠায়  কিঞ্চিৎ হলেও বোধহয় জায়গা পেয়েছি আমি।  

ইউনিভার্সিটির একটি আভ্যন্তরীণ ইস্যুতে ছাত্র-ছাত্রীদের অবস্থান বিক্ষোভে সেবার শামিল হয়েছিল আমাদের ডিপার্টমেন্টও। সেদিন একটি বিশেষ কারণে ইউনিভার্সিটিতেই রাতে থাকতে হলো আমাদের। লাইব্রেরীর সামনের বড় 'হল ঘরটাতে' মাটিতে ত্রিপল বিছিয়ে বসেছিলাম আমরা।

সেই দুপুরবেলা রবিদার ক্যান্টিনে একপ্লেট এগচাউ খেয়েছিলাম। তারপর শুধুমাত্র কয়েক ভাঁড় চা ছাড়া পেটে সেই অর্থে কিচ্ছু পরেনি। বুচুমাসির বিয়ে উপলক্ষে মা-বাবা কয়েক দিনের জন্য মামার-বাড়ি গিয়েছিলেন। ইউনিভার্সিটির এই ঝামেলার জন্য আমি যেতে পারিনি। কেউ না থাকায় বাড়ি থেকে যে খাবার নিয়ে আসবো, সেই উপায়ও নেই। পেটে ছুঁচো ডন মারছিলো .. এত রাতে ক্যান্টিন বন্ধ হয়ে গিয়েছে, বাইরে যদি কিছু পাওয়া যায় এই ভেবে বের হতে যাচ্ছিলাম।

এমন সময় হাতে একটি বড়সড় টিফিন ক্যারিয়ার নিয়ে অর্পিতার আগমন। আমাকে চোখের ইশারায় একপাশে নিভৃতে ডেকে নিয়ে গিয়ে টিফিন ক্যারিয়ার খুলতে আরম্ভ করলো। ব্যাপার বুঝে সেই সময় বন্ধুদের প্রতি অত্যাধিক কমিটমেন্টের জন্য বলে বসলাম "আমি একা কেনো খাবো? আমাকে দিলে ওদেরও দিতে হবে.."

আমার কথায় কপট রাগ দেখিয়ে অর্পিতা বললো "আমি উনার জন্য খাবার নিয়ে এলাম আর উনি এই খাবারে ভাগ বসানোর জন্য পাঁচজনকে ডেকে ভালোমানুষ সাজার চেষ্টা করছেন .. তাহলে বসে থাকো পেটে কিল মেরে .. দেখে এলাম বাইরে সব দোকান এখন বন্ধ হয়ে গিয়েছে।"

এইভাবে আমার সঙ্গে আগে অর্পিতা কখনো কথা বলেনি। কখনো জোর দেখায়নি আমার উপর। ওর এইরূপ ব্যবহারে বেশ অবাক হলাম আমি .. তারপর যখন জানতে পারলাম আমার জন্য অর্পিতাও অভুক্ত, তখন আমার এই ডাকাবুকো ইমেজটা ত্যাগ করে ওর বকুনিটাকে মেনে নিয়ে অর্পিতার আনা খাবারগুলি দু'জনে একসঙ্গে ভাগ করে খেতে শুরু করলাম।

সেই রাতের ওই ঘটনার পর থেকে আমরা ক্রমশ পরস্পরের ঘনিষ্ঠ হতে শুরু করলাম। ও আমার থেকে এক বছরের জুনিয়র ছিলো এবং দু'জনের ডিপার্টমেন্টও আলাদা ছিলো .. তাই দু'জনের দেখা হওয়া সব সময় সম্ভবপর ছিলো না। কিন্তু হৃদয়ের টান বড়ো টান .. একে অন্যের সঙ্গে দেখা করার জন্য আমরা পরস্পরের ক্লাস শেষ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতাম অথবা একদিন কোনো বিশেষ কারণে ডিপার্টমেন্ট ছুটি থাকলেও আমরা কিছুক্ষণের জন্য সাক্ষাতের আশায় ইউনিভার্সিটি আসতাম।

সেই দিনটার কথা আমার এখনো মনে আছে। মনে থাকবেই বা না কেনো .. আমার জীবনে‌ ঘটে যাওয়া অতি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাগুলির মধ্যে অন্যতম সেরা একটি ঘটনা ..  কলেজ সোশ্যালের রাতে রবিদার ক্যান্টিনের পাশে কমনরুমের সামনের ছোট্ট ঘেরা জায়গাটিতে অর্পিতা প্রপোজ করলো আমাকে।

তারপর এলো সেই মাহেন্দ্রক্ষণ .. সেই অতি আকাঙ্ক্ষিত চুম্বনের মুহূর্ত .. ঠোঁটে ঠোঁট ছুঁইয়ে পারস্পরিক অস্তিত্বের অনুভব .. এতদিন পরে আজ বুঝি বা প্লাবন এলো .. কিন্তু একি! যে বেগে প্লাবন .. সেই বেগেই কি ভাঁটা! চুম্বকের বিপরীত মেরুর মতো যে বেগে আকর্ষণ তার চেয়েও দ্রুত বেগে দূরে সরে যাওয়া .. যেনো সমমেরুতে তুমুল বিকর্ষণ। তৃষ্ণার এক ফোঁটা জল যেমন স্বস্তির চেয়ে তৃষ্ণাকে আরো বাড়ায় তেমনি অসমাপ্ত সেই চুম্বন যেনো আমাদের অস্থিরতাকে আরো বাড়িয়ে দিলো।‌ এতদিনকার তৃষ্ণার্ত চাওয়া কি আর এই ক’সেকেন্ডে নিবারণ সম্ভব! হয়তো আবার প্লাবন আসবে .. চুম্বনের বন্যায় ছাপিয়ে যাবে দু’কূল .. আবার একথাও মনে হলো, এই অসমাপ্ত চুম্বনের হাহাকার বোধহয় আমাদের এ জন্মে আর ঘুচবে না।

সেই মুহূর্ত থেকে আমরা পরস্পরের সঙ্গে জড়িয়ে গেলাম ওতপ্রোতভাবে .. হয়ে উঠলাম একে অপরের পরিপূরক .. যেখানেই অর্পিতা বাধাপ্রাপ্ত হতো তার মুশকিল আসান করতে সর্বদা প্রস্তুত ছিলো ঋদ্ধিমান .. আবার ঋদ্ধির বিপদেও সে সব সময় পাশে পেয়েছিল তার মনের মানুষ অর্পিতাকে।

দুই পরিবারের সামাজিক অবস্থানে ছিলো বিস্তর ফারাক। ঐশ্বর্য, শিক্ষাদিক্ষা, সামাজিক প্রতিপত্তিতে অর্পিতার পরিবার আমাদের পরিবারের থেকে সহস্র যোজন এগিয়ে ছিলো। আমাদের ইউনিভার্সিটিতে অর্পিতার এক মাসতুতো বোন পড়তো। পবিত্র প্রেম কখনো অন্ধকারে কূপমন্ডুকের মতো থাকতে পারে না, সে তার আলো বিচ্ছুরিত করে চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে .. ঠিক সেইভাবেই ইউনিভারসিটিতে ছড়িয়ে পড়ার ফলে আমাদের সম্পর্কের কথা জানতে পারলো অর্পিতার মাসতুতো বোন‌ এবং পরবর্তীতে তার মাধ্যমে অর্পিতার গোটা পরিবার।

আমাদের বাড়িতে অর্পিতা বারকয়েক এলেও, ওদের বাড়িতে খুব বেশি যাওয়ার সুযোগ ঘটেনি আমার। কারণ আমাদের সম্পর্কটা জানাজানি হওয়ার পর আমার উপস্থিতি ওদের বাড়ির সদস্যগণ একদমই পছন্দ করতো না।

কিন্তু আমাদের দু'জনের চোখে তখন রঙিন স্বপ্ন। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করে বেরিয়ে আমরা দু'জনেই নিজের পায়ে দাঁড়াবো এবং ওদের পরিবারের তোয়াক্কা না করেই আমাদের এই নিঃস্বার্থ ভালোবাসার এক সামাজিক স্বীকৃতি দেবো পরস্পরকে।

সবকিছুই ঠিকঠাক চলছিল, কিন্তু আমাদের সবার মাথার উপর যিনি বাস করেন - জগদীশ্বর .. তাঁর ইচ্ছে বোধহয় অন্যরকম ছিলো। আমার তখন ফাইনাল ইয়ার চলছে .. বাবার 'সিরোসিস অফ লিভার' ধরা পড়লো। আমার পিতৃদেব বরাহনগর জুটমিলে কাজ করতেন। যৎসামান্য সঞ্চয় .. তার সবকিছুই শেষ হয়ে গেলো সেই দুরারোগ্য ব্যাধিতে। কিন্তু বাবাকে বাঁচানো গেলো না। অসুখটা ধরা পড়ার পর উনি মাস ছয়েক বেঁচে ছিলেন .. অকূল পাথারে পড়লাম আমরা।

ততদিনে স্নাতকোত্তর স্তরে আমার বিজনেস এডমিনিস্ট্রেশনের ফাইনাল পরীক্ষা শেষ হয়েছে। চব্বিশ ছুঁই ছুঁই আমার শরীরে তখন 'ছাত্রের' তকমা সরে গিয়ে 'বেকার যুবকের' তকমা পড়তে শুরু করেছে। হঠাৎ করেই সংসারের গুরুদায়িত্ব কাঁধে এসে পড়ায় কিছুটা অবিন্যস্ত এবং দিকভ্রষ্ট আমি .. কিন্তু তার সঙ্গে যথেষ্ট সংযমীও বটে, সেই সময় প্রতিটা পদক্ষেপ হিসেব করে ফেলতে হচ্ছিলো আমাকে। জীবন সংগ্রাম শুরু হয়ে গিয়েছিল আমার ওই বয়সেই।

শুরু হলো বিভিন্ন জায়গায় চাকরির ইন্টারভিউ দেওয়া। ছাত্র হিসেবে বরাবরই মেধাবী ছিলাম .. পরীক্ষার ফলও যথেষ্ট চিত্তাকর্ষক হয়েছিলো। যেখানে বর্তমানে আমি কর্মরত, সেখানেই চাকরিটা হঠাৎ করে পেয়ে গেলাম .. প্রথম পোস্টিং ওড়িশার ভুবনেশ্বরে। এ যেন অনেকটা হাতে স্বর্গ পাওয়া। বাবার অকাল প্রয়াণে যেখানে আমাদের পরিবারটা শেষ হয়ে যেতে বসেছিল সেখানে আমার চাকরি পাওয়াটা যেন মরুভূমিতে মরুদ্যানের মতো।

আমার এই জীবনযুদ্ধে অর্পিতা কিন্তু সর্বদা আমার পাশে থেকে আমাকে সাহস যুগিয়ে গিয়েছে। এতকিছু ঘটনাপ্রবাহের মধ্যে ছয় মাস অতিক্রান্ত হয়ে গিয়েছে। অর্পিতা ইউনিভার্সিটিতে আমার থেকে এক বছরের জুনিয়ার ছিলো। আর মাস ছয়েক পরেই ওর ফাইনাল পরীক্ষা।

আমার চাকরি পাওয়ার খবরে আমার মায়ের মতোই উচ্ছ্বাসিত হয়ে উঠেছিল অর্পিতা। কিন্তু তারপর যখন শুনলো আমাকে ভুবনেশ্বরে যেতে হবে বছর খানেকের জন্য, কিছুটা মুষড়ে পড়েছিল ও। আমি প্রশ্ন করেছিলাম "তুমি খুশি হও নি অর্পু?" ওই নামেই ডাকতাম আমি ওকে।  

অর্পিতা মুখে কিছু বলতে পারেনি, শুধু মৃদু হেসে মাথা নাড়িয়েছিল। ওর মুখে শুনেছিলাম ওদের বাড়ি থেকে নাকি ওর বিয়ের জন্য তোড়জোড় করা শুরু করে দিয়েছে। সেদিন আমাদের বাড়ি থেকে বিদায় নেওয়ার আগে "ঋদ্ধি .. তুমি তাড়াতাড়ি ফিরে এসো প্লিজ .. না হলে কিন্তু সর্বনাশ .. না থাক তুমি ফিরে এসো, তারপরেই বলবো .." করুণ মুখে শুধু এইটুকুই বলে বেরিয়ে গিয়েছিল অর্পিতা।

ওর কথার মাথামুণ্ডু কিছুই বুঝতে পারিনি আমি। কিংবা হয়তো সেই পরিস্থিতিতে বুঝতে চাইনি। হয়তো তখন আমার কাছে আমার পরিবার, আমার কেরিয়ার, আমার চাকরি .. এইগুলোই প্রাধান্য পেয়েছিলো বেশি।

এক সপ্তাহের মধ্যেই চাকরিতে যোগ দেওয়ার জন্য ভুবনেশ্বর চলে গিয়েছিলাম। ম্যানেজমেন্ট ট্রেইনি হিসেবে জয়েন করেছিলাম .. ছয় মাস ট্রেনিং পিরিওড .. কাজের ভীষণ চাপ। কোয়ার্টার থেকে রোজ সকালে অফিস বেরিয়ে যেতাম, ফিরতাম রাত্রিবেলায়। ফিরে এসে অবশ্য নিয়ম করে রোজই মা এবং অর্পিতাকে ফোন করতাম। কিন্তু সেই ফোনে আমার ভেতরের প্রাণবন্ত মানুষটা বোধহয় থাকতো না। আমি মনে করতাম - যা করছি, সব কিছুই তো সংসারের জন্য করছি .. আমার মায়ের জন্য করছি আমার অর্পুর জন্য করছি .. তাই ওরা নিশ্চয়ই আমার মনের এই পরিবর্তনটা বুঝতে পারবে।

আমি মনে করি প্রতিমা তে নয় প্রতি 'মা' তে ঈশ্বর বাস করেন .. যিনি আমাদের হৃদয় জুড়ে থাকেন। তাই আমার মনের অবস্থা মা হয়তো ঠিকই বুঝতে পেরেছিলেন, কিন্তু অর্পিতা .. কি জানি সেও হয়তো বুঝতে পেরেছিল, কিংবা হয়তো পারেনি .. হয়তো তার কাছে অপেক্ষার প্রত্যেকটা প্রহর এক একটা যুগের মতো মনে হচ্ছিলো।

মাসের-পর-মাস এই ভাবেই কাটতে থাকলো। আমিও ভাবতে থাকলাম এই তো আর মাত্র কয়েকটা দিন .. তারপরেই কলকাতায় ফিরে গিয়ে নতুন করে জীবনটা আবার শুরু করবো। একটা বড় বাড়ি কিনবো, আমার মাতৃদেবীকে জীবনের সমস্ত সুখ-শান্তি দেবো যা এতদিন তিনি পাননি, সর্বোপরি আমার মনের মানুষকে নিয়ে ঘর বাঁধতে পারবো।  

দেখতে দেখতে পাঁচ মাস কেটে গেলো। দু'দিন হয়ে গেলো অর্পিতার সঙ্গে কথা হয়নি আমার। ও নিজে থেকে ফোন করেনি আমাকে .. আমি যখন ফোন করলাম, ফোন সুইচড্ অফ বলছে। খুব চিন্তা হচ্ছিলো আমার .. মা'কে ফোন করে বললাম ওর কথা। মা বললো - মাকেও দুদিন ফোন করে নি ও .. মাও যখন ফোন করেছিলো, তখন ওর ফোন বন্ধ পেয়েছে। দুশ্চিন্তা হতে আরম্ভ করলো আমার।

তারপর হঠাৎ একদিন মাঝরাতে ফোন এলো অর্পিতার, "ঋদ্ধি .. তুমি কালকে প্লিজ চলে এসো .. এই ক'দিন তোমাকে ফোন করতে পারিনি .. তুমি নিশ্চয়ই খুব চিন্তা করেছো .. ওরা আমার ফোনটা কেড়ে নিয়েছিল .. কালকে তুমি অবশ্যই এসো সোনা .. না হলে কিন্তু .." হঠাৎ ফোনের ওই প্রান্তে একটা পুরুষকন্ঠ শুনতে পেলাম, তারপরেই কেটে গেলো ফোন'টা।

এইরূপ আকস্মিকতায় চুপচাপ কিছুক্ষণ বিছানার উপর উঠে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে বসে থাকলাম .. ঘুম এলো না, বাকি রাতটা ওইভাবেই কাটিয়ে দিলাম। পরেরদিন সকালে অফিসে গিয়ে আমাদের এডমিনের অফিসে গেলাম ছুটির জন্য দরবার করতে। সকাল থেকে সন্ধ্যে পর্যন্ত উনার চেম্বারের সামনে বসে থাকলাম .. উনার দেখা নেই .. শুনলাম উনার নাকি গলব্লাডার অপারেশন হয়েছে, তাই এই ক'দিন আসতে পারছেন না। এর মাঝেই পাগলের মতো বারবার ফোন করে যাচ্ছি অর্পিতাকে, কিন্তু .. ফোন সুইচড্ অফ।

দিন পাঁচেক পরে এডমিন এলেন .. মায়ের শরীর খারাপের মিথ্যে অজুহাত দিয়ে এপ্লিকেশন করেছিলাম। "ননসেন্স .. এইজন্য বাঙালিদের দ্বারা কিস্সু হয় না .. ট্রেনিং পিরিয়ডে এইভাবে ছুটি চাইলে জীবনে উন্নতি করতে পারবে না .." এইরূপ ভর্ৎসনা করে অবশেষে আমার ছুটি মঞ্জুর করলেন।

পরেরদিন ভোরের ফ্লাইট ধরে ফিরলাম কলকাতায়। তারপর সেখান থেকে নিজের বাড়িতে না গিয়ে সোজা অর্পিতাদের বাড়ি গেলাম। নাহ্ .. এবার আর আগের মতো অপমান বা কটু কথা শুনতে হলো না ওদের বাড়ির সদস্যদের কাছ থেকে। যুদ্ধজয়ের হাসি হেসে অর্পিতার দাদা জানালেন - দিন তিনেক আগে বিয়ে হয়ে গেছে অর্পিতার। ছেলে দিল্লিতে একটি মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে কর্মরত। ওখানেই সেটেল্ড .. তাই বিবাহের পর নববিবাহিতা বধু'কে নিয়ে দিল্লি চলে গিয়েছে। ওরা নাকি আমাকে এক্সপেক্ট করেছিল ওর বোনের বিয়েতে .. ঠিকানা না জানার জন্য নিমন্ত্রণ করতে পারেনি।

বাড়ির সামনের লনে বিয়ের অস্থায়ী মন্ডপটা তখনো খোলা হয়নি। পরাজিত সৈনিকের মতো হাটু গেঁড়ে মন্ডপের সামনেই বসে পড়লাম .. সব শেষ হয়ে গেলো তাহলে .. ৭,২০০ মিনিটের বিলম্ব তছনছ করে দিলো আমার জীবনটা .. চোখ দিয়ে বিরামহীনভাবে জলের ধারা পড়তে লাগলো .. ওদিকে আমার মনের মতো ঈশান কোণেও মেঘ জমেছিলো .. কিছুক্ষণের মধ্যেই বৃষ্টি নামলো।

ট্রেনের এনাউন্সমেন্টে চমক ভাঙলো আমার। ধীরে ধীরে স্মৃতিবিজড়িত অতীত থেকে বর্তমানে ফিরে এলাম। প্লাটফর্মে ট্রেন ঢুকতেই উঠে পড়লাম। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলাম পাঁচটা বেজে গিয়েছে।

এখান থেকে আমার গন্তব্য স্টেশনে পৌঁছাতে প্রায় ঘন্টা দুয়েকের জার্নি। এতক্ষণ বসে থেকে কোমড় ধরে গিয়েছিল। ট্রেনের ভেতরটা বেশ ফাঁকা .. বসার অনেকগুলো সিট আছে। তাই অন্তত একটা স্টপেজ দাঁড়িয়ে যাই, পরে না হয় বসা যাবে - এই ভেবে ট্রেনের দরজার কাছে দাঁড়িয়ে রইলাম।

হঠাৎ পেছন দিক থেকে একটা নারী কন্ঠস্বর ভেসে এলো, "ঋদ্ধি .. দুষ্টুমি করে না, এদিকে এসো।"

এখানে আবার আমার নাম ধরে কে ডাকলো! চমকে উঠে, পিছনে তাকালাম। নাহ্, সেই ছেলে-মেয়ে দুটিকে দেখলাম না কোথাও। তবে কে ডাকলো .. কণ্ঠস্বরটা যে আমার অনেকদিনের চেনা! তবে কি .. না, তা কি করে সম্ভব .. মনটা হঠাৎ করেই উতলা হয়ে উঠলো .. ভিতরে এসে একটা সিট দেখে বসে পড়লাম।

চোখের দৃষ্টি সামনের সিটে যেতেই কিছুক্ষণ মন্ত্রমুগ্ধের মতো তাকিয়ে থাকলাম। তারপর ধীরে ধীরে অনুভব করলাম আমার অনিয়ন্ত্রিত হৃদকম্পন .. উদ্বেলিত হতে থাকলো আমার সারা শরীর। আমার ঠিক সামনের সিটে বসে আছে অর্পিতা .. হ্যাঁ হ্যাঁ, আমার অর্পু।

দীর্ঘ ছয় বছর পরে দেখা .. কোনোদিন দেখা হবে এ কথা ভাবিনি। তবে একবার স্বপ্নে দেখেছিলাম অর্পিতাকে নববধূর সাজে .. শাঁখা-সিঁদুর পরিহিতা অর্পু লাল বেনারসি পড়ে খুব সুন্দর করে সেজেছিল। কিন্তু আজ যখন সত্যি এত বছর পর ওর সঙ্গে দেখা হলো তখন আমার স্বপ্নে দেখা অর্পুর সঙ্গে বাস্তবের অর্পিতার কোনো মিল খুজে পাচ্ছি না। মাথায় সিঁদুর নেই, হাতে শাঁখা-পলা নেই, কোনো প্রসাধনী ছাড়াই রুক্ষ, শুষ্ক মুখের অর্পিতাকে একদম অন্যরকম লাগছিল।

"সেদিন তুমি ফোন করার পর আমি পাগলের মতো তোমাকে বারবার ফোন করেছি .. কিন্তু ফোন বন্ধ ছিল তোমার .. ছুটি পেতে দুটো দিন বেশি সময় লেগেছিল .. তাই আমার আসতে একটু দেরি হয়ে গিয়েছিল .. তারপর কতরকম ভাবে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছি তোমার সঙ্গে কিন্তু তোমার কোনো খোঁজ পাইনি .. তোমার দাদার কাছ থেকে তোমার বিয়ের খবর পেয়েছিলাম .. কিন্তু এ কি অবস্থায় দেখছি আজ তোমাকে! তাহলে কি তোমার হাজব্যান্ড আর.." এক নিশ্বাসে কথাগুলো বলতে বলতে গলা আটকে এলো আমার।

"ও সব কথা থাক ঋদ্ধিমান বাবু .. পুরনো স্মৃতি ঘেঁটে আর কি লাভ ..  আপনি যা ভাবছেন তা নয় .. উনি অর্থাৎ আমার প্রাক্তন স্বামী ভালো আছেন, দিব্যি আছেন .. ওইরকম একটা মানুষের সঙ্গে ঘর করা যায় না .. তাছাড়া ভালোবাসার মানুষকে মন থেকে মুছে ফেলতে না পারলে অন্য কাউকে সুখী করা যায় না .. আমিও সেই চেষ্টা করিনি, তাই বিয়েটা টেকেনি আমাদের .. এখন ইউনিভার্সিটির সেই আমি আর নেই .. এখন আমি মানসিকভাবে অনেক বেশি দৃঢ় এবং সাবলীল .. বর্ধমানের কাছে একটি সরকারি কলেজে চাকরি পেয়েছি .. সেখানেই থাকি .. বছরে দু-তিন বার ফোন করা ছাড়া বাড়ির সঙ্গে সেরকম যোগাযোগ নেই .. যাগ্গে, বাদ দিন আমার কথা .. কাকিমা কেমন আছেন? আপনি বিয়ে করেছেন নিশ্চয়ই .. ছেলে মেয়ে ক'টি?"

আমার গলা ক্রমশ শুকিয়ে আসছিলো, এতদিন পর আমার অর্পু'কে দেখে আর ওর কথাগুলো শুনে কয়েক মুহূর্তের জন্য স্তম্ভিত হয়ে গেলাম। ভাবলাম পরিস্থিতি একটা প্রাণোচ্ছল, মোমের পুতুলের মতো মেয়েকে এই ক'দিনে কতটা ম্যাচিওর বানিয়ে দিয়েছে।

ঠিক সেই মুহূর্তে একটি বছর পাঁচেকের বাচ্চা ছেলে ওই পাশের সিটে আরেকটি বাচ্চার সঙ্গে খেলার সমাপ্তি ঘটিয়ে এসে অর্পিতার কোলে বসলো। কৌতূহলবশত জিজ্ঞাসা করলাম, "তোমার ছেলে বুঝি?"

অর্পিতার সংক্ষিপ্ত উত্তর "হ্যাঁ.."

বাচ্চাটিকে কাছে টেনে নিলাম। ওর গাল টিপে জিজ্ঞাসা করলাম, "কি নাম তোমার?"

"ঋদ্ধিমান.." মিষ্টি হেসে উত্তর দিলো বাচ্চাটি।

চমকে উঠলাম আমি .. ভাল করে তাকালাম বাচ্চাটির দিকে .. বুকের ভেতরটা কিরকম যেন হাহাকার করে উঠলো আমার .. ডুকরে কেঁদে উঠতে ইচ্ছা করলো .. এ আমি কাকে দেখছি আমার সম্মুখে .. এ যে হুবহু আমার শৈশবের প্রতিচ্ছবি।

মনে পড়লো অর্পিতার জন্মদিনের কয়েকদিন পরের সেই সন্ধ্যার কথা। সেদিন ও আমাকে বাড়িতে ডেকেছিল। গিয়ে দেখলাম ওদের বাড়িতে কেউ নেই। শুনলাম সবাই নাকি নৈনিতালে ঘুরতে গিয়েছে। রাতের খাবার খেয়ে আমি চলেই আসছিলাম। অর্পিতা হঠাৎ বলে উঠলো "এ কি, আমার গিফ্ট না দিয়েই চলে যাচ্ছো যে!"

অর্পিতার ডান হাতটা আলতো ভাবে ধরেছিলাম আমি - ও বাধা দেয়নি। ওর মধুর প্রশ্রয় আরো লোভী হয়ে ওর হাতের চুড়িগুলো উপর দিকে তুলে এঁটে দিয়েছিলাম। তারপর অর্পিতার ডান হাতটি নিজের দুই হাতের মধ্যে তুলে নিয়ে নিজের হাতের সঙ্গে তুলনা করে বলেছিলাম "এই হচ্ছে কুলির হাত .. আঙুলগুলো ছড়ালে কুলোর সাইজ হয়ে যাবে.. কোনো কোমলতা নেই .. দু'এক জায়গায় কড়াও পড়েছে। আর এই হলো রূপকথার রাজকুমারীর হাত ..নরম তুলতুলে একটু ঠান্ডা একটু গরম।"

তারপরে শার্টের পকেট থেকে লাল রংয়ের একটি বাক্স বের করেছিলাম। বাক্সের মধ্যে থেকে একটি দামী সোনার আংটি .. আস্তে আস্তে গভীর আদরে এবং খুব সাবধানে অর্পিতার হাতে পরিয়ে দিয়েছিলাম। ওর আঙুলে আংটিটা এতোটাই মানিয়েছিল কেনার সময় তা বুঝতেই পারিনি .. আসলে যে জিনিস যেখানে শোভা পায়!

অর্পিতা সলজ্জ হাসিতে মুখ নিচু করে বলেছিল "থ্যাঙ্ক ইউ"। তারপর আংটি পরা হাতটা আমার কপাল ও মুখে ঠেকিয়ে শান্ত ভাবে বলেছিল "তুমি আমাকে এমন সুন্দর উপহার দিলে, অথচ তোমাকে দেওয়ার মতো কিছুই নেই আমার কাছে।"

প্রথমে একমুহূর্ত কিছুটা ইতস্তত করলেও তারপর আর সংকোচ রইলো না আমার মনে। বলে ফেললাম "উঁহু .. দেওয়ার মতো অনেক কিছু আছে তোমার কাছে।" 

ওর ঈষৎ পুরু এবং গোলাপি ঠোঁটের দিকে তাকিয়ে তারপর যা ইঙ্গিত করেছিলাম, তা তৎক্ষণাৎ বুঝতে, সম্মতি জানাতে এবং দান করতে অর্পিতা দ্বিধাবোধ করেনি। 

সেই ভেলভেটের মতো নরম, সামান্য ভিজে অথচ তাজা মিষ্টি ঠোঁটের স্পর্শ এবং সুদীর্ঘ প্রশ্রয় আমার ওষ্ঠে যেন আজও লেগে রয়েছে। শরীরের ওই বিশেষ অংশটা যেন আজও অনির্বচনীয় অক্ষয় স্বর্গলোকে পড়ে রয়েছে।

তারপর আমরা দু'জনে নির্ভয় ছোট্ট একটা স্বপ্নের ডিঙিতে চড়ে কখনো দুরন্ত অভিজ্ঞতার অতলান্ত সমুদ্রে পাড়ি দিয়েছি আবার কখনো প্রশান্ত প্রেমের সরোবরে ভেসে বেরিয়েছি। উত্তাল মুহূর্তে কখনো হারিয়ে ফেলেছি নিজেদের .. কখনো আবার পরস্পরকে খুঁজে সভয়ে খুব কাছাকাছি সরে এসেছি।

কিন্তু সাগরে ভেলা ভাসিয়েও আমরা দুজনে হাঁপিয়ে উঠিনি, ব্যস্তও হইনি .. কারণ বুঝতে পেরেছিলাম, এই যে মিলেমিশে একাকার হয়ে যাওয়ার আদিম আকাঙ্ক্ষা.. তা অনেকটা রাসায়নিক বিপ্লবের মতো - ল্যাবরেটরিতে যে মিলনের চূড়ান্তে পৌঁছে পদার্থ নিজের সত্তা হারিয়ে ফেলে, যে বিপ্লবের পরে পুরানোকে আর পাওয়া যায় না, নিজেকে নিঃশেষ করে সে নূতনের জন্ম দেয়।

"ঋদ্ধি .. তুমি তাড়াতাড়ি ফিরে এসো প্লিজ .. না হলে কিন্তু সর্বনাশ .. না থাক তুমি ফিরে এসো, তারপরেই বলবো .." সেদিন রাতে অর্পিতার এই কথার মানে না বুঝলেও আজ পরিষ্কারভাবে বুঝতে পারছি।

মুখ তুলে চাইলাম অর্পিতার দিকে। লক্ষ্য করলাম সে একদৃষ্টে জানলার বাইরে তাকিয়ে আছে। ট্রেনের সেই হাল্কা আলোয়  পরিষ্কার দেখতে পেলাম তার চোখ দুটি জলে  ভরে উঠেছে। আমি আর কোনো কথা বলতে পারলাম না। ট্রেনের গতি ক্রমশ কমে আসছে .. বর্ধমান জংশনে ঢুকছে ট্রেন ।

উঠে দাঁড়ালো অর্পিতা, আমার দিকে তাকিয়ে বললো,  "এবার নামতে হবে আমাদেরকে .. চলি.." কথাগুলোর মধ্যে কোথাও যেন একটা করুণ আকুতির সুর ছিলো।

প্লাটফর্মে ট্রেন থামতেই ওরা দু'জনে নেমে গেলো। আমি আর বসে থাকতে পারলাম না, ছুটে গেলাম দরজার কাছে। এখনো দেখতে পাচ্ছি ওদের আস্তে আস্তে মিলিয়ে যাচ্ছে ভিড়ের মধ্যে .. ট্রেন ক্রমশ গতি নিচ্ছে .. তবে কি ধীরে ধীরে মিলিয়ে যাবে পৃথিবীর আর একটা প্রেম কাহিনি।

ইউনিভার্সিটি লেভেলে মিডফিল্ড পজিশনে ফুটবল খেলতাম। ১০ নম্বর জার্সি ছিল আমার .. দলটার প্রাণভোমরা ছিলাম আমি। কিন্তু আজ আমার প্রাণভোমরা দেখা দিয়েও যে শেষ পর্যন্ত নিভে যেতে চলেছে। সে তো শুধু আমার অর্পু নয়, আর একজনও যে আছে .. আমাদের ভবিষ্যৎ। মনে পড়লো আমাদের কোচ চিন্ময় স্যারের সেই ভোকাল টনিক, সেই চিৎকার - "come on ঋদ্ধি .. go & get it .. come on .. you can do it .."

চলন্ত ট্রেন থেকে নেমে পড়লাম আমি। পড়তে পড়তেও নিজেকে সামলে নিলাম। অতীতে ফুটবল খেলার সুবাদেই হোক বা যে কোনো কারণেই হোক শরীরের ভারসাম্য এবং মনের সংকল্প একটুও নষ্ট হয়নি .. বরং এখনও অটুট আছে। আমার হারিয়ে যাওয়া ভালোবাসাকে উদ্ধার করতে হবে যে .. জানি রাস্তা কঠিন .. কিন্তু সফল হতেই হবে আমাকে।

[Image: Screenshot-20211223-144358-3.jpg]

anekdin Mone thakbe ei story ta amar, tumi jodi sudhu romantic novel likhte taholeo ei ekirakam somman pete
[Image: Polish-20231010-103001576.jpg]
[+] 1 user Likes Chandan's post
Like Reply
(26-11-2022, 09:47 PM)Bumba_1 Wrote:
[Image: Polish-20221127-152636228.jpg]

~ অশনি সংকেত ~

 প্রায় পাঁচ ঘন্টার জার্নি। ক্লান্তিতে কিছুটা ঝিমুনি এসে গিয়েছিলো অভীকের। আর মাত্র দুটো স্টেশন, তারপরেই তো নামতে হবে .. তার পিসতুতো ভাই সুব্রত সেরকমই বলেছিলো। এই শীতের রাতে তার চন্দননগরের বাড়ির নরম বিছানা ছেড়ে সুদূর ঝাড়খন্ডের এই প্রত্যন্ত রেলরুটের বকুলতলা গ্রামে আসার কারণ তার রাঙাপিসি।

বকুলতলায় অভীক শেষবার তার মা-বাবার সঙ্গে এসেছিল প্রায় বছর কুড়ি আগে।  তারপর থেকে আর কখনও আসা হয় নি। কিছুটা দূরত্বের জন্য তো বটেই আর কিছুটা অবশ্যই তার বাবার জেদ। কোনো এক অজ্ঞাত কারণে পিসেমশাইয়ের সাথে অভীকের বাবার নাকি তুমুল অশান্তি হয়। তারপর থেকেই মা ফোনে যোগাযোগ রাখলেও বাবা এড়িয়েই চলতো রাঙাপিসির পরিবারকে। এখন আর বাবা বেঁচে নেই, পিসেমশাইও গত হয়েছেন। অভীকের বাবার বাড়ির তরফে আর কেউ এই পৃথিবীতে নেই, এই এক রাঙাপিসি ছাড়া। এবার তার মাও আসতে চেয়েছিলো, কিন্তু চিরদিনের অ্যাজমার পেশেণ্ট তার মা ভারতী দেবীকে নিয়ে এই ঠাণ্ডায় এতদূর নিয়ে আসার 'রিস্ক' নেয়নি অভীক।

  হঠাৎ একটা ঝাকুনিতে ঝিমুনিটা কেটে যায় অভীকের। কম্পার্টমেন্টের অল্প আলোয় তার চশমার ওপারে কাউকে দেখতে পায় না সে। 'আরে .. কম্পার্টমেন্টের সবাই নেমে গেলো নাকি!' কিছুটা হলেও অবাক হয় অভীক। ভীড় ছিলো না তেমন, তবে সামান্য দু-একজন যারা ছিলো, গেলো কোথায় সব? আরও অবাক হয় এটা ভেবে যে, 'ট্রেন কি তবে  কোনো জংশন স্টেশনে পৌঁছে গেলো নাকি?' না, তাও তো নয় ! ট্রেনের জানালা দিয়ে বাইরে আবছায়াতে কোনো এক 'পলাশপুর' রেল স্টেশনের নাম পড়তে পারলো সে। কিন্তু তার পিসতুতো ভাই সুব্রত বারবার তাকে যে বলে দিয়েছিলো দক্ষিণগঞ্জের পরেই বকুলতলা।

তার তো হিসেবমতো একটা স্টেশন পার হওয়ার কথা ! তবে কি সুব্রত ভুল বললো? পকেট থেকে মোবাইলটা বের করে দেখতে পেলো ফোনের চার্জ ২% দেখাচ্ছে। ব্যাগের ভেতর অনেক খুঁজেও সেই মুহূর্তে ফোনের চার্জার পেলো না সে, তবে কি আনতেই ভুলে গেছে চার্জারটা! এবার সামান্য হলেও একটু ভয় পেলো অভীক। আকাশের সিলুয়েটে একটা পাহাড় দেখা যাচ্ছে। ট্রেনের ভেতর পাবলিক টয়লেট ছিলো না। এতক্ষণ ধরে হাল্কা হতে না পারার জন্য ভিতরে প্রচন্ড অস্বস্তি হচ্ছিলো তার। তাই সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতে কিছুটাই ইতস্ততঃ করেই প্ল্যাটফর্মে নেমে পড়লো অভীক।

খুব একটা বড়ো স্টেশন নয়। ঘড়িতে তখন রাত দশটা পঁচিশ। প্লাটফর্মে দু-একটা অল্প পাওয়ারের আলো টিমটিম করে জ্বলছে। একটা গা শিরশির করা ঠাণ্ডা হাওয়া, তার সঙ্গে কিসের যেন চাপা দুর্গন্ধ ভাসছে বাতাসে। আর এর বাইরে শুধুই শ্মশানের নিস্তব্ধতা। কিন্তু এতবড় একটা ট্রেনে কি সে একাই একজন যাত্রী ছিলো! তার থেকেও বড় ব্যাপার হলো তার আগে যারা এখানে নেমেছিলো, তাদের দেখতে পেলো না অভীক। যে কারণের জন্য অর্থাৎ একটু হাল্কা হওয়ার উদ্দেশ্যে এই প্ল্যাটফর্মে নামা .. আবছায়া আলোয় একটা টয়লেট চোখে পড়াতে সেইদিকে দ্রুতপায় এগিয়ে গেলো অভীক। সবে টয়লেট করা শেষ হয়েছে, সেই মুহূর্তে অভীক দেখতে পেলো সাইরেন বাজিয়ে ট্রেনটা আচমকা সরে পড়তে শুরু করেছে প্ল্যাটফর্ম থেকে। হঠাৎ করে ট্রেনের গতি এতটাই বেড়ে গেলো যে দৌড়ে ট্রেনের কামড়ায় উঠতে গিয়ে পা মচকালো তার .. মাটিতে পড়ে গেলো অভীক। ট্রেনের পিছনের লাল আলোটা টিপ টিপ করে জ্বলতে জ্বলতে শেষ আশার মতো দূরের কুয়াশাতে মিলিয়ে গেলো।

সেই মুহূর্তে হঠাৎ করে মাথায় একরাশ দুশ্চিন্তা এসে যাওয়ায় এই শীতেও তার বেশ গরম লাগতে শুরু করলো। ব্যাগে বেশ কিছু টাকা আছে; তাই ব্যাগটাকে চেপে ধরে স্টেশন মাস্টারের ঘরের দিকে এগোলো সে। অবাক কান্ড! এই অদ্ভুতদর্শন স্টেশনে কি কোনো স্টেশন মাস্টারও নেই? পলেস্তারা খসা ঘরটার গায়ে একটা নোটিস দেখে থমকে গেলো অভীক। জংধরা প্রায় ফিকে হয়ে আসা লাল রঙের একটি নোটিশবোর্ডে লেখা আছে 'আ লো নি ভি য়ে রা খু ন'। উপর থেকে নীচে আশ্চর্যজনকভাবে অক্ষরগুলো সাজানো। এমন অদ্ভুত নোটিশ কেনো, এগুলো কি কোনো অশনি সংকেত .. সে ভেবে অবাক হলো। তাই কি স্টেশনটা এমনধারা অন্ধকারাচ্ছন্ন? আর তখনই স্টেশন চত্বরে ধীরে ধীরে অন্ধকারের বুক চিরে একটা ট্রেন এসে থামলো।

যাক, শেষ পর্যন্ত মুক্তি পাওয়া গেলো তাহলে। অভীক লক্ষ্য করলো এই ট্রেনটিও এত রাতে প্রায় জনশূন্য। 'প্রায়' জনশূন্য এই কারণে যে, ট্রেন থেকে কয়েকটা কম্পার্টমেন্ট দূরে গুটিকয়েক ব্যক্তিকে নামতে দেখলো সে। তারপর দেখলো ট্রেন থেকে নামা লোকগুলি হাত নেড়ে তাকে ডাকছে ! ছ্যাঁৎ করে উঠলো তার বুকটা। ডাকাত নাকি ? মুহূর্তের মধ্যে অভীকের পা যেন পাথরের মতো ভারী হয়ে গেলো .. চোখের সামনে দিয়ে বেরিয়ে গেলো ট্রেনটা। চাপা অস্বস্তিকর দুর্গন্ধটা আরো প্রকট থেকে প্রকটতার হতে শুরু করলো। মুহূর্তের মধ্যে লোকগুলো তাকে ঘিরে ফেললো .. মোট আটজন ব্যক্তি। তাদের মুখের দিকে তাকাতেই সে লক্ষ্য করলো সবাইকে যেন হুবহু একরকম দেখতে, কিন্তু কারোর চোখ দেখতে পাওয়া যাচ্ছে না .. ফ্র‍্যাঙ্কেনস্টাইন শব্দটা মনে পড়লো তার। ভয়, উত্তেজনায় এবং কনকনে ঠান্ডায় ঠকঠক করে কাঁপতে লাগলো অভীক। বিস্ময়ের চরম মুহূর্তে তাকে অতিমাত্রায় বিস্মিত এবং আতঙ্কিত করে সেই অদ্ভুত নোটিশবোর্ডটা চকচক করে উঠলো। সেখানে তখন পাশাপাশি লেখা আছে 'আটজন লোকের নির্জন ভিড় হয়ে খুন হবে নয়'। লোকগুলোর প্রত্যেকের হাতে তখন দড়ির ফাঁস। তারপর ? তারপর সব অন্ধকার।

অভীকের ঘুম ভাঙলো তার রাঙাপিসির বাড়িতে। পিসিমা তার আসার দিন রাতেই বিপদমুক্ত হয়েছিলেন। সুব্রত অনেক খুঁজে সেই রাতের পরেরদিন দুপুরে পরিত্যক্ত 'পলাশপুর' স্টেশনের ধার থেকে তাকে উদ্ধার করে। পরে অভীক জানতে পেরেছিলো, পলাশপুর স্টেশনে বহুকাল আগে ট্রেন থামতো ঠিকই। কিন্তু কোনো এক মড়কে ওই জনপদের বেশীরভাগ লোক মারা যায় আর বাকিরা ঘরবাড়ি ছেড়ে অন্য কোথাও চলে যায়। তারপর থেকে রেল কর্তৃপক্ষ ওই স্টেশন যাত্রী অভাবে বন্ধ করে দেয়। তবে সিগনাল না পেয়ে কখনও কখনও ট্রেন ওখানে দাঁড়িয়ে পড়ে। 

 রাঙাপিসির বাড়ির বহুদিনের পুরনো বুড়ো চাকর হরি'দা তাকে আরও জানিয়েছিলো বছর পঁচিশ আগে দূরে কোনো এক গ্রামের আটজন ব্যক্তি কোনো একটি বিষয়ের বদলা নিতে তাদের আর এক বন্ধুকে খুন করার উদ্দেশ্যে ডেকেছিলো ওই পরিত্যক্ত স্টেশনে। নবম বন্ধুটি না এলেও সেই আটজনেই রহস্যজনকভাবে মারা পড়ে ওখানে .. যার কারণ আজও অজানা। তবে সেই আটটি অতৃপ্ত আত্মা নাকি সেখানে ঘুরে বেড়ায়। আর নির্জন ওই স্টেশনে রাতে কেউ একা নামলেই তাদের সেই নয় নম্বর বন্ধু ভেবে তাকে খুন করার চেষ্টা করে। কিছুটা ধাতস্থ হওয়ার পর নিজেকে সামলে নিয়ে অভীকের কাছে মোটামুটি সবকিছু পরিষ্কার হলেও সেই অদ্ভুতুড়ে নোটিশবোর্ডের  সংকেতগুলো তাকে আজও ভাবায়। আরও একটা ব্যাপারে সে অনেক ভেবেও কোনো কূলকিনারা করতে পারেনি .. সেদিনের ট্রেনে তার সহযাত্রীরা ওই স্টেশনে নেমে গিয়েছিলো কোথায়?

[Image: 20200725-163454.png]

motamuti hoyeche, sei level er noye
[Image: Polish-20231010-103001576.jpg]
Like Reply
(11-08-2022, 01:54 PM)Bumba_1 Wrote:
[Image: IMG-20220811-122551-150.jpg]

চতুর্থ দৃশ্য

দৃশ্যপট এবং সময় :- বেনু সংঘের মাঠ, সন্ধ্যা ছটা .. মঞ্চ স্বল্পালোকিত। মঞ্চের বাঁদিকে পাগল টাকে দেখা যাচ্ছে, সে নানা রকম কাজে যেন ব্যস্ত। মঞ্চের ডান দিক থেকে ছেলের দল ঢুকছে, বলে ড্রপ দিচ্ছে, ওকে বল ছুঁড়ে দিচ্ছে। (সবই প্রায় অভিনয়ের মাধ্যমে .. অভিনয় হবে মাইমের মাধ্যমে)

(পাগলটারও যেন অন্য মূর্তি। সে একটা মুখোশ পড়েছে। লাঠি হাতে নাটকীয় ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে চেঁচিয়ে ওঠে)
হারে রেরে রেরে রেরে
আসিস কেরে, আসিস কেরে?

সকলে - তুমি এখান থেকে যাও তো .. ভাগো .. আমরা খেলবো এখন।

পাগল - (মাথা নাড়িয়ে) হুঁ .. হুঁ .. হুঁ .. হুঁ .. রে ..
ও আমার চাঁদু রে
দেখবি এবার জাদু রে,
ভ্যানিশ করে উড়িয়ে দেবো
পড়বি গিয়ে মাদুরে।

(ডাক্তার জেঠু আর জগৎ দা মঞ্চের ডান দিকে একটু আড়ালে দাঁড়িয়ে, ইশারায় ছেলেদের এগিয়ে যেতে বলছেন)

রাজু - (জোর দিয়ে) তুমি যাবে কিনা বলো? আবার ছড়া কাটা হচ্ছে! ভালো চাও তো সব গুটিয়ে নিয়ে চলে যাও, মাঠ আমাদের এক্ষুনি চাই।

পাগল - ও .. হো, মাঠ নিবি, মাঠ চাই, বল খেলবি .. আয়, আয়, আয়না .. তবে খেলি চল .. চটপট আয় .. কি হলো খেলবি না? ভয় পাচ্ছিস?
থাকে যদি প্রাণের মায়া
মারাস নে আর মাঠের ছায়া
ঘরে গিয়ে প্রাণ বাঁচা রে
হারে রেরে রেরে রেরে ..

দুলু - (এগিয়ে যায়) তবে রে।

পাগল - (সঙ্গে সঙ্গে লাফ দিয়ে মঞ্চের মাঝখানে এসে দুলুর দিকে লাঠি বাগিয়ে ধরে, সেই মুহূর্তে ঝড়ের বেগে পিছন থেকে দেবুদা এসে পাগলটাকে জাপটে ধরে। পাগলটা নিজেকে ছাড়াতে চেষ্টা করে, রাজু ওর মুখোশটা খুলে নেয়। ধস্তাধস্তিতে পাগলের গোঁফদাড়ি খুলে যায়, অন্তু তাড়াতাড়ি সেগুলো টেনে খুলে নেয়, ডাক্তার জেঠু ও জগৎ দা চলে আসে।)

দেবু - এই দুলু .. জেঠুর কাছ থেকে গামছা নিয়ে হাত দুটো বাঁধ ওর, তারপর চলতো চ্যাংদোলা করে নিয়ে যাই ক্লাবে।

পাগল - (তারস্বরে চিৎকার করে) বাঁচাও ..  টুনুবাবু বাঁচাও।

দেবু - চুউউউপ .. মারবো এক থাপ্পড় ..  চুপ কর ব্যাটা বদমাইশ, পাগল সেজেছে।

ডাক্তার - মারিস না, মারিস না .. ব্যাপারটা আগে জানা দরকার .. টুনুবাবুটা কে?

পাগল - (হাউমাউ করে কেঁদে ওঠে) ছেড়ে দেন, বাবু ছেড়ে দেন। আমার কোন দোষ নাই, আপনার পায়ে পড়ি .. আমি গরীব মানুষ।

দেবু - (ধমকের সুরে) চুপ .. আগে বল পাগল সাজতে দিয়েছিলি কেন? কে তোকে সাজতে বলেছে?

পাগল - (ঢোক গিলে) বলছি বলছি .. একটু জল খাবো (হাত বাড়িয়ে দেখায়)

জগৎ - আচ্ছা ঠিক আছে .. ওকে একটু জল দে ..

অন্তু - (কোথা থেকে একটা বোতল এনে ওকে দিলো) এই নাও, খাও।

(পাগলটা জল খেয়ে মঞ্চের চারদিকে দেখে)

দেবু - এবার বল .. কে তোকে সাজতে বলেছিল?

পাগল - (কেঁদে ওঠে) বাবু ... নাম বললে ওরা আমাকে মেরে ফেলবে।

জগৎ - চিন্তা করিস না .. তোর কিচ্ছু হবে না, আমরা আছি তো, বল এবার।

পাগল - আমার কিছু হবে না তো? আমাকে বাঁচাবেন তো?

দেবু - (অধৈর্য হয়ে) এবার ঠিক মার খাবি, ধৈর্য চলে যাচ্ছে আমার।

পাগল - না বাবু মারবেন না, টুনুবাবু আমাকে এই কাজ করতে বলেছে।

ডাক্তার - টুনুবাবু আবার কে?

রাজু - ওই যে তখন বললাম, বিন্দা পিসির কে যেন একটা হয়।

পাগল - ভাইপো হয়।

ডাক্তার - এবার বুঝলাম, ও তোকে পাগল সাজতে বলেছে।

জগৎ - আর অমনি তুই পাগল সেজে নিলি! বোকা কোথাকার, এবার তোর কি হয় দ্যাখ‌..

পাগল - (জগৎ দার পায়ে পড়ে) না বাবু পেটের দেয় করেছি। আমি চুরি ডাকাতি করতে পারি না, খুন করতে পারি না, শুধু দিনমজুরি খাটি, হরবোলা হয়ে পাখির ডাক ডাকি আর যাত্রা করি। তাই টুনুবাবু আমাকে পাগল সেজে ছেলেদের ভয় দেখাতে বলেছে। (পাগল কাঁদতে থাকে)

ডাক্তার - তোমার বাড়ি কোথায়?

পাগল - মশাট বাবু, হাওড়া জেলায় ..

জগৎ - নাম কি?

পাগল - আজ্ঞে শিবু .. শিবচরণ দাস।

জগৎ - সেখান থেকে এখানে এলি কি করে?

শিবু - টুনুবাবু নিয়ে এসেছেন। মশাটে টুনুবাবুর শ্বশুরবাড়ি কিনা! টুনুবাবু বলেছে 'সারাদিন পাগল সেজে থাকবি, রাত আটটায় এসে নিয়ে যাবো।'

জগৎ - এর জন্য তোকে কি দেবে?

শিবু -  টাকা দেবে বাবু .. পাঁচশো টাকা (হাতে করে দেখায়)

জগৎ - মাত্র পাঁচশো .. তার জন্য এত কান্ড!

রাজু - তোমাকে যদি এখন থানায় দিই, তাহলে কি হবে জানো?

শিবু - না বাবু থানায় দিও না, মরে যাবো।

জগৎ - আর যদি তোকে ছেড়ে দিই, তাহলে কি হবে?

শিবু - ও বাবা (ভয় সিঁটিয়ে যায়) না না বাবু ছেড়ে দিও না, তাহলে প্রোমোটার বাবু জানে মেরে ফেলবে।

জগৎ - ওহ্ .. এর মধ্যে আবার প্রোমোটারও আছে! (জেঠুর দিকে তাকিয়ে) বাপ রে এ তো আচ্ছা বিপদ .. কেস তো দারুণ প্যাঁচালো দেখছি।

ডাক্তার - (চিন্তিত হয়ে) তাই তো দেখছি, কোথাকার জল কোথায় যে গড়াবে কে জানে !

শিবু - হ্যাঁ বাবু, প্রোমোটার বাবুই তো টুনুবাবুকে বলেছে তার পিসির জমিতে 'ফেলাট' করে দেবে। তাই ...  

দেবু - হ্যাঁ, তাই তুমি পাগল হয়েছো আর আমরা তোমার ভয়ে সুড়সুড় করে মাঠ ছেড়ে দেবো। টুনুবাবুকে মাঠের দখল নেওয়া দেখাচ্ছি (জেঠুর দিকে তাকিয়ে) স্যার চলুন তো বিন্দা পিসির বাড়ি যাই। পিসির মতটা আগে জানা দরকার। (এরপর শিবুর দিকে তাকিয়ে) শোন, তোকে আমরা আরো বেশি টাকা দেবো।  পিসির কাছে সব কথা খুলে বলবি। না হলে এ্যায়সা ধোলাই দেবো না (বলে আবার চড় দেখায়)।

(সকলের প্রস্থান .. মঞ্চে ব্যান্ডের সুর .. ধীরে ধীরে মঞ্চ অন্ধকার হয়)

পঞ্চম দৃশ্য

দৃশ্যপট এবং সময় :- বিন্দা পিসির বাড়ি, সন্ধ্যে সাতটা। (ঘরে জেঠু, জগৎ, দেবু চেয়ারে বসে। ছেলেরা কেউ চেয়ারের পেছনের দিকে দাঁড়িয়ে, কেউ বিন্দা পিসির ঘরে রাখা পত্রপত্রিকা দেখছে, মাঝে মাঝে মুখাভিনয়ে কথা বলছে। মঞ্চের বাঁদিকে বিন্দা পিসির
বাড়ির ভিতর ঢোকার পথ। পিসি দু'হাতে দু কাপ চা নিয়ে ভিতর থেকে আসছেন - মঞ্চে আলো জ্বলে ওঠে)

বিন্দা পিসি - নিন দাদা চা খান। (জেঠু আর জগৎ দার হাতে একটা করে কাপ ধরিয়ে)

দেবু - পিসি আমাকে চা দিও না।

পিসি - কেন? একটুখানি খা.. দাঁড়া আমি আসছি। (পিসি ভেতরে যান একবার দেবুর চা নিয়ে আসেন, তারপর আবার ভেতর থেকে নিজের চা এবং একটা কৌটো আনেন)

দেবু - তুমি বসো, এখন একটা কিছু উপায় বলো।

পিসি - দাঁড়া, ছেলেদের একটা করে বিস্কুট দিই। (ছেলেদেরকে একে একে বিস্কুট দেন .. ছেলেরা বিস্কুট খায় এবং বড়রা চা খায়) সত্যি বলছি, আমি ভাবতেই পারছি না টুনু এতদূর গেছে!

জগৎ - কেন, আপনাকে এ ব্যাপারে কিছু বলেনি কোনোদিন? আপনি কিছু জানতেন না?

পিসি - (উত্তেজিত হয়ে) আমি এ সবের বিন্দু বিসর্গও জানি না। তবে হ্যাঁ, মাঝে মাঝেই মাঠের জমিটা নেওয়ার জন্য উৎপাত করতো। (একটু থেমে কিছু একটা মনে করার চেষ্টা করে) এই কিছুদিন আগের ঘটনা ‌.. প্রায় দিন দশেক আগের কথাই হবে .. সন্ধ্যে সাতটা কিংবা সাড়ে সাতটা তখন .. বৃষ্টি পড়ছিল বাইরে একটা লোককে নিয়ে এলো টুনু ..

(বিন্দা পিসি কথা বলতে বলতে মঞ্চে অন্ধকার হয়ে গেল। একটা গোল স্পটলাইট মঞ্চের বাঁ দিকের কোনে ফেলা হলো। 'ফ্ল্যাশ-ফ্লোরে' ঘটনাটা দেখানো হবে .. সেখানে তিনজন কথা বলছে - দু'জন প্যান্ট শার্ট পরা লোক আর বিন্দা পিসি)

টুনু - পিসি, বলছি তুমি মাঠটা ছেড়ে দাও। এমন সুযোগ আর পাবে না। ওখানে অন্তত দুটো বড় অ্যাপার্টমেন্ট হবে, ৩২ টা ফ্ল্যাট হবে দু-দুটো ফ্ল্যাটের মালিক তুমি হবে .. ভাবো দেখি, কি কান্ডটা হবে। এটা কি একটা ফেলে দেওয়ার কথা?

পিসি - সে তুই যাই বলিস বাপু, ছেলেদের খেলার মাঠ আমি কেড়ে নেবো কি করে? ধর্মে সইবে আমার?

টুনু - উফ্, তোমার এই ধর্ম টর্ম ছাড়ো তো! বলি, ছেলেমেয়েদের খেলার জন্য তোমার কিসের গরজ? তোমার নিজের ছেলেপুলে নেই, নাতি নাতনি নেই, তাহলে ওদের জন্য তোমার মাথাব্যথা কেন? তোমার জমির কি পজিশন তুমি নিজেই জানো না। লুফে নেবে যে কোনো প্রোমোটার, কি বলেন অভয়বাবু? (অন্য ব্যক্তিটির দিকে তাকিয়ে)

অভয় বাবু - হ্যাঁ, টুনুবাবুতো ঠিকই বলেছেন পিসিমা।

পিসি - না বাবা, সে হবার নয়। বাপঠাকুর্দার সময় থেকেই ছেলেরা ওই মাঠে খেলে আসছে, তাদের আশীর্বাদ আছে। আর আমি সেটা বিক্রি করে দেবো, এমন অন্যায় করতে পারবো না।

অভয় বাবু - এই তো .. আপনাদের এই এক সেন্টিমেন্ট! ওসব দিন এখন আর নেই। এখন এক ইঞ্চি জমি কেউ ফেলে রাখে না। কেন না জমি মানেই পয়সা, কলকাতা শহরে দেখুন না - যেদিকে তাকাবেন শুধু ফ্ল্যাট ফ্ল্যাট আর ফ্ল্যাট .. মফস্বলেও তাই। দেশের এত লোকসংখ্যা, তাদের থাকতে জায়গা তো দিতে হবে! এ ব্যাপারে আপনার তো একটা দায়িত্ব থাকবে।

টুনু - (ঘাড় নেড়ে সায় দেয়) হুঁ শুনলে তো, কত বড় কথাটা বললো অভয় বাবু (তারপর একটা কাগজ বের করে) নাও এই কাগজটায় একটা সই করে দাও। তিনজনের পার্টনারশিপে ফ্ল্যাটগুলো তৈরি হবে, এটাই তার প্রমাণ। কেউ তোমাকে ঠকাবে না।

পিসি - না রে সে হয় না, আমি সই করতে পারব না।

টুনু - (স্বগতোক্তি করে) ভালো কথায় দেখছি কাজ হবে না। (প্রকাশ্যে) তাহলে ফ্ল্যাট করাতে তোমার মত নেই, তাই তো?

পিসি - নাঃ একেবারেই না ..

অভয় বাবু - পিসিমা আর একবার ভাবুন। আপনি একা মানুষ, এরপর তো আপনাকে 'ওল্ডহোমে' যেতে হবে। এই ব্যবস্থা হলে আপনার ওখানে যাওয়ার কি দরকার?

পিসি - ওরে বাবা তোরা চুপ কর আমার মাথা ঘুরে যাচ্ছে। মাঠ আমি বেচবো না, বেচবো না, বেচবো না .. হয়েছে তো? এখন যা।

টুনু - ঠিক আছে থাকো তুমি তোমার খেলার মাঠ নিয়ে, চলুন অভয় বাবু।

(মঞ্চ অন্ধকার হয় কয়েক মুহূর্ত, আবার আগের দৃশ্য ফিরে আসে)

পিসি - তাহলে প্রোমোটার আর টুনুই এই কাজ করেছে। (পাগলের দিকে তাকিয়ে) আর তোর এত বড় সাহস, তুই এদের ভয় দেখাচ্ছিস?

শিবু - (পিসির পা ধরে ভেউ ভেউ করে কেঁদে ফেলে) ক্ষমা করো মা, ক্ষমা করো। আমাকে বাঁচাও এই কান মুলছি, এই নাকখৎ দিচ্ছি। আর হবেনা, কক্ষনো না, তুমি আমাকে বাঁচাও মা .. টুনূবাবু মেরে ফেলবে।

(শিবুর কান্না দেখে সকলেই বিচলিত হয়, কেউ কেউ গায়ে হাত দিয়ে সান্ত্বনা দেয়।)

দেবু - চুপ কর, মেরে ফেললেই হলো! কে কাকে মেরে ফেলে দেখছি।

ডাক্তার - কিন্তু দেবু করবে টা কি এখন? এটারই বা কি গতি হবে? আর মাঠের দখলই বা নেবে কি করে? এই সময় কারো সঙ্গে কোনো বিবাদে যাওয়াটাও তো ঠিক নয়। খুবই ভাবনার বিষয়, একেবারে দোটানায় পড়া গেলো।

পিসি - শুনুন দাদা অত চিন্তার কারণ নেই। টুনুর শাস্তি দরকার। আমরা 'কাঁটা দিয়ে কাঁটা তুলবো' ওকে দিয়েই ওদের শায়েস্তা করবো।

ডাক্তার - কি রকম, শুনি একবার। তুমি কি সেরকম কিছু ভেবেছো?

পিসি - ভেবেছি, বলবো আসুন (পিসি .. জেঠু দেবু এবং জগৎদার সঙ্গে কিছু পরামর্শ করে নেন মুখাভিনয়ের মাধ্যমে) ঠিক আছে তো?

(সকলে ঘাড় নেড়ে সম্মতি জানায়)

শিবু - পিসি আমার কি হবে?

পিসি - তোরই তো এখন সব থেকে বেশি কাজ। তুই মাঠে চলে যা, সারাদিন রোদে থেকে তোর মাথা গরম হয়ে গেছে, তুই অজ্ঞান হয়ে গেছিস - এটাই অভিনয় করবি।

শিবু - পিসি তারপর কি হবে?

পিসি - তুই মরার মতো পড়ে থাকবি, ডাক্তারবাবু তোকে দেখবার জন্য চেম্বারে নিয়ে আসবেন, তারপরে যা কাজ হবার হবে। (দেবুর দিকে তাকিয়ে) দেব নাও, চটপট কাজ শুরু করে দাও।

দেবু - নাও সবাই চলো। চলুন জেঠু, জগৎ দা চলুন, আমাদের অপারেশন শুরু করতে হবে। শিবু তুই মাঠে চলে যা। (ছেলেদের দিকে তাকিয়ে) তোরা আমার সাথে আয় জেঠুর চেম্বারে। আচ্ছা পিসি তাহলে আসি, তুমি ঠিক আটটায় চলে এসো।

পিসি - হ্যাঁ, আমি ঠিক সময়েই যাবো। তোমাদের কাজ যেন সিদ্ধ হয়। দুগ্গা দুগ্গা (সকলের প্রস্থান / মঞ্চ অন্ধকার হয়)

ষষ্ঠ দৃশ্য / শেষ দৃশ্য

দৃশ্যপট এবং সময় :- ডাক্তার জেঠুর চেম্বার, রাত আটটা। (মঞ্চ অন্ধকার, দরজা খোলা, কেউ কোথাও নেই। আবছা আলোয় দেখা যাচ্ছে শিবু ঘুমোচ্ছে অঘোরে। দুজন লোক চুপিসারে মঞ্চের ডান দিক থেকে ঢুকছে। একটা টর্চ হাতে নিয়ে মাঝে মাঝে জ্বালছে এবং কি যেন খুঁজছে। তারপর গোটা মঞ্চটাই একবার প্রদক্ষিণ করে নিলো।)

১ম জন - নাঃ কিছু দেখা যাচ্ছে না, ব্যাটা গেলো কোথায়?

২য় জন - কোথায় আর যাবে, এখানেই ওকে এনেছে শুনেছি।

১ম জন - ব্যাটা বদমাইশ, অজ্ঞান হওয়ার আর সময় পেলো না, আমাদের ফাঁসাবে দেখছি। (হঠাৎ টর্চের আলো দিয়ে পড়লো ঘরের কোণে হাইবেঞ্চের উপর শুয়ে থাকা শিবুর উপর) ওই তো শুয়ে আছে .. চলুন চলুন দেখি।

২য় জন - আস্তে আস্তে বেশি হড়বড় করবেন না, কেউ কোথাও টের পেয়ে গেলে বিপদ হবে। (দুজনে কাছে যায়, শিবুর নাকে হাত দিয়ে দেখে) নাহ্ মরে নি, ব্যাটা অজ্ঞান হয়ে আছে। আর না হয় ডাক্তার ঘুমের ওষুধ দিয়েছে।

১ম জন - ঠিক আছে চটপট করুন, বডিটাকে তুলে নিয়ে সোজা আপনার বাড়ি চলে যাবো। কেউ টের পাবে না।

২য় জন - হ্যাঁ, এখন এটাই আমাদের প্রথম কাজ, এখান থেকে নিয়ে গিয়ে ব্যাটাকে গিলিয়ে একেবারে জন্মের মতো ঘুম পাড়িয়ে দিতে পারলেই, ব্যাস .. কেল্লাফতে। তারপর কাল থেকে নতুন প্ল্যান .. টুর্নামেন্ট খেলা দেখাচ্ছি! আমার নাম অভয়চরণ সামন্ত, কেলুপাড়ার ছেলে।

১ম জন - (টরচ ঘুরিয়ে) যাক এখন কেউ কোথাও নেই, আপনি ব্যাটার মুখটা চেপে বাঁধুন, আমি তুলে নিয়ে বাইরে চলে যাবো।
(২য় জন শিবুর মাথার কাছে গিয়ে, তার মুখের উপর একটা কাপড়ের ফেট্টি ধরেছে, আর ১ম জন কোমরের নিচে যেই না হাত দিয়েছে .. সঙ্গে সঙ্গে শিবু তরাক করে লাফিয়ে উঠে বসে পড়েই চিৎকার করে উঠলো 'দেবুদা, জেঠু পিসি ..')

(সঙ্গে সঙ্গে মঞ্চের জোরালো আলো জ্বলে উঠলো। আর মঞ্চের চারদিক থেকে রাজু, রনি, শঙ্কু, দুলু, অন্তু, দেবুদা, জগৎদা ও জেঠু এক পা এক পা এগিয়ে এসে করে ঘিরে ধরলো ওদের দুজনকে। শিবুও বেঞ্চ থেকে নেমে পড়লো তাড়াতাড়ি। ওরা দু'জন পালাবার চেষ্টা করলে সকলেই মঞ্চের ডানদিক থেকে বাঁদিক পর্যন্ত অর্ধ বৃত্তাকারে হাতে হাত ধরে দাঁড়িয়ে থাকলো।)

দেবু - কি টুনুদা পালাচ্ছো কার ভয়ে .  পাগলের ভয়ে না আমাদের ভয়ে?

টুনু - দেবু .. হাত ছার, ভালো হবে না। হাত ছেড়ে কথা বল। (হাত ছাড়াবার চেষ্টা করে)

ডাক্তার - (অভয়ের হাতটা সজোরে ধরেন) ও তুমি এখন এই করছো? ও হলো কেলুপাড়ার অভয়‌। তুমি নিজেও তো একদিন এই মাঠে খেলেছো, তার এই প্রতিদান দিলে? বড় তালেবর হয়েছো, কায়দা করে জমি নেবে?

অভয় - (বিনীত ভাবে) ছাড়ুন ডাক্তার বাবু .. ছাড়ুন ..

ডাক্তার - বয়স্ক বিধবা মানুষকে ঠকাতে লজ্জা করে না? তোমরা কি বলো তো? মানুষ তো?

অভয় - (লজ্জিত ভঙ্গিতে) ভুল হয়ে গেছে ডাক্তারবাবু।

(পিসির প্রবেশ সঙ্গে থানার মেজবাবু)

ডাক্তার - আসুন এই যে দুই মক্কেল। একজনকে পাগল সাজিয়ে ব্ল্যাকমেইল করে, বিধবার সম্পত্তি মারার ধান্দায় ছিলো।

মেজবাবু - (পিছনে কনস্টেবল) আপনারা ওদের হাত ছেড়ে দিন, আমি থানায় নিয়ে যাচ্ছি (কনস্টেবলের দিকে তাকিয়ে) এদের গাড়িতে তোলো।

(কনস্টেবল টুনুবাবু এবং অভয়চরণ দুজনকেই গাড়িতে নেওয়ার জন্য উইংসের কাছে যেতেই, পিসি ওদের দাঁড়াতে বললো)

পিসি - দাঁড়ান মেজবাবু, একটু দাঁড়ান। (চারজনেই ঘুরে দাঁড়ায়) - এই যে (একটা কাগজ দেখিয়ে) এইটা আমার 'দানপত্র' করা কাগজ .. এই কাগজে আমি লিখে দিলাম যে - আমার এই চার বিঘা জমি যুগ যুগ ধরে ছেলেদের খেলার মাঠ হিসেবে ব্যবহৃত হবে। আপনারা (সকলের দিকে তাকিয়ে ( সকলের সাক্ষী থাকলেন .. এবার আসুন।

(ছেলেরা ছুটে এলো সবাই, পিসিকে তুলে ধরলো)

দেবু - থ্রি চিয়ার্স ফর বিন্দা পিসি ..

সকলে - হিপ্ হিপ্ হুররে ..

দেবু - থ্রি চিয়ার্স ফর বিন্দা পিসি ..

সকলে - জিন্দাবাদ জিন্দাবাদ ..

|| সমাপ্ত ||

Multi talented bhai Bumba amader, hats off to you bhai
[Image: Polish-20231010-103001576.jpg]
[+] 1 user Likes Chandan's post
Like Reply
(24-12-2022, 03:28 PM)Chandan Ghosh Wrote: just like a movie, durdanto

অনেক ধন্যবাদ  Namaskar  

(24-12-2022, 03:30 PM)Chandan Ghosh Wrote: that's great, eta niye kintu koyekta episodes er golpo hotei parto

হ্যাঁ হতেই পারতো , কিন্তু তাহলে বানিয়ে বানিয়ে লিখতে হতো  Smile 

(24-12-2022, 03:32 PM)Chandan Ghosh Wrote: valo lageni , nijer life niye jokhon kono lekha likhcho, tokhon setake aro interesting kora proyojon, otherwise keu porte pochhondo korbe na

হ্যাঁ সেটা ঠিক, তবে আমার লিখতে কিন্তু বেশ লেগেছে। 

(24-12-2022, 03:34 PM)Chandan Ghosh Wrote: auntyr haater drawing ta just awesome, kintu lekha ta motamuti, khub ekta valo lageni

লেখার পর আমিও satisfied হতে পারিনি 

(24-12-2022, 03:37 PM)Chandan Ghosh Wrote: jerakam tomar anka, serakam asadharon lekha, eta je kono boro potrikaye chapanor joggo

এইরকম মন্তব্য পেয়ে আমি আপ্লুত  Namaskar  

(24-12-2022, 03:39 PM)Chandan Ghosh Wrote: As usual nice drawing, but lekha ta motamuti

ঠিক কথা 

(24-12-2022, 03:41 PM)Chandan Ghosh Wrote: ei golper dharekache keo nei, best of the best

অসংখ্য ধন্যবাদ  Namaskar

(24-12-2022, 03:42 PM)Chandan Ghosh Wrote: another great story, right now you're the best writer in this forum

না না, একদমই তাই নয়। আমার থেকে অনেক ভালো ভালো লেখক আছেন এই ফোরামে।  Namaskar 

(24-12-2022, 03:45 PM)Chandan Ghosh Wrote: lekata to valoi, kitu ei storyr kichu portion ek jayega theke anupranito hoye lekha, prapti swikar korle aro valo lagto, anyways nice story

আমি এই গল্পের কোনো অংশ কোনো জায়গা থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে লিখিনি। তোমার যদি মনে হয় তাহলে সেই গল্প বা উপন্যাসের নাম বলো, মিলিয়ে দেখতে হবে। 

(24-12-2022, 03:47 PM)Chandan Ghosh Wrote: serar sera ...... sotti asadharon , ekei bole bhoye paowa

চেষ্টা করেছি মাত্র .. তোমাদের ভালো লাগলেই আমার সাফল্য 

(24-12-2022, 03:49 PM)Chandan Ghosh Wrote: anekdin Mone thakbe ei story ta amar, tumi jodi sudhu romantic novel likhte taholeo ei ekirakam somman pete

আমার নিজের অত্যন্ত প্রিয় ছোট গল্পগুলোর মধ্যে এটি একটি। পুরোপুরি রোমান্টিক উপন্যাযাস আমি আর লিখবো না, তবে বর্তমান যে উপন্যাসটি লিখছি, সেখানে রোমান্টিকতার ছোঁয়া অবশ্যই থাকবে/আছে। 

(24-12-2022, 03:55 PM)Chandan Ghosh Wrote: Multi talented bhai Bumba amader, hats off to you bhai

হাহাহাহা  Big Grin  থ্যাঙ্ক ইউ

(24-12-2022, 03:53 PM)Chandan Ghosh Wrote: motamuti hoyeche, sei level er noye

লেখার পরেই বুঝতে পেরেছিলাম .. ব্যাপারটা ঠিক জমেনি। পরেরবার যখন ছোট গল্প নিয়ে ফিরে আসবো সুদে আসলে উসুল করে দেবো।  Smile  



এগুলি ছাড়াও আরো বেশ কিছু গল্প লিখেছি আমি। এছাড়াও অনেকগুলি কবিতা এবং অঙ্কন আছে। আর কয়েকটা প্রতিবেদন আছে .. সময় পেলে সেগুলিও পড়ে দেখতে পারো।
[+] 1 user Likes Bumba_1's post
Like Reply
(24-12-2022, 05:50 PM)Bumba_1 Wrote:

এগুলি ছাড়াও আরো বেশ কিছু গল্প লিখেছি আমি। এছাড়াও অনেকগুলি কবিতা এবং অঙ্কন আছে। আর কয়েকটা প্রতিবেদন আছে .. সময় পেলে সেগুলিও পড়ে দেখতে পারো।

dekhechi, sob dekhechi ...... drawing & poem somporke amar bisesh agroho nei tai na bujhe comment korini, protibedan lekhar modhhye tomar abar credit kothaye! tai montobbyo korini , r chotogolper modhhye ei 13 tai sobtheke valo legeche, that's why comments korlam, bakigulo vulval
[Image: Polish-20231010-103001576.jpg]
Like Reply
(24-12-2022, 06:32 PM)Chandan Ghosh Wrote: dekhechi, sob dekhechi ...... drawing & poem somporke amar bisesh agroho nei tai na bujhe comment korini, protibedan lekhar modhhye tomar abar credit kothaye! tai montobbyo korini , r chotogolper modhhye ei 13 tai sobtheke valo legeche, that's why comments korlam, bakigulo vulval

ভুলভাল? উফ্ বড্ড কঠিন উক্তি  Sad 
[+] 3 users Like Bumba_1's post
Like Reply




Users browsing this thread: 27 Guest(s)