Posts: 4,428
Threads: 6
Likes Received: 9,218 in 2,849 posts
Likes Given: 4,330
Joined: Oct 2019
Reputation:
3,225
(23-12-2022, 12:21 PM)Monen2000 Wrote: কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে অধর্মীরাই জিতেছিল, কৌরবরা পরাজিত হয়েছিল একজনের অসাধারণ কূটনৈতিক বুদ্ধি ও মায়ার কাছে।
অন্যায় কুরুক্ষেত্রে ঝরলো কৌরবদের রক্ত
অধর্মের জয়গান গেয়ে ঘুমায় কুরুক্ষেত্র
দ্রৌপদীর ইন্ধন জুড়ে চাতুরির জমা ক্লেদ
যুধিষ্ঠির ভীম অর্জুন নকুল সহদেব
জাতিস্মরের ইস্তেহারে এবার লজ্জা মোচন
এক মহাকাশ ঘৃণা বুকে নিয়ে .. ইতি দুর্যোধন
(23-12-2022, 12:33 PM)nextpage Wrote: স্যরি স্যরি স্যরি....
সত্যিই মিস করে গিয়েছিলাম অশনি সংকেত পর্ব টা।
পর্ব টা বাকি পর্বদের মত বৃহৎ না হলেও এর ইম্পেক্ট টা কিন্তু অনেক বেশি। শেষমেশ তুমি টগর কে মেরেই দিলে সেটা হয়তো হবার কথাই ছিল তাই বেশি একটা দুঃখ পাই নি।
তবে সন্দ্বীপের সুজাতা আর গোগোল কে জড়িয়ে নোংরা কথা গুলো মাথায় রক্ত উঠিয়ে দিয়েছিল, হিয়া না মারলেও আমার ইচ্ছে করছিলো কষে কয়েকটা চড় দিয়ে দাঁতে পাটি গুলো এদিক সেদিক করে দিই৷ ওর এই অধঃপতনের কারণ টা জানা বিশেষ দরকার, যে কিনা গোগোলের পাশে থাকার কথা দিয়েছিল আজ সে এতটা নিচে নামলো কি করে?
হিয়া সম্ভবত মেরেছে একটা থাপ্পর। তবে এটুকুই বলতে পারি আজকের পর্বটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হতে চলেছে। অবশ্যই সঙ্গে থেকো
•
Posts: 4,428
Threads: 6
Likes Received: 9,218 in 2,849 posts
Likes Given: 4,330
Joined: Oct 2019
Reputation:
3,225
(১০)
প্রতিটা মুহূর্ত যেন অসহনীয় হয়ে উঠছিলো সুজাতার কাছে। এই দুর্বিষহ সময়ের অপেক্ষা যেন দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছিলো। তার সন্তানতুল্য গোগোল এই কাজ করেছে .. একথা স্বয়ং ভগবান এসে বললেও সে বিশ্বাস করবে না। সে তার অভিজ্ঞতা দিয়ে বুঝতে পারছে চক্রান্তের শিকার হতে চলেছে গোগোল। তার মনে হতে লাগলো বুক ভরা সীমাহীন স্বপ্ন নিয়ে, মিথ্যে আশা দিয়ে .. কেউ রাখেনি প্রতিশ্রুতি। যখনই সে মনে করে একটু সুখের মুখ হয়তো দেখতে চলেছে .. তখনই এত বাধা বিপত্তি আসে কেনো? হে ঈশ্বর .. এই হতাশ জীবন থেকে এবার আমাকে মুক্তি দাও তুমি। আর কতো পরীক্ষা নেবে তুমি আমার! এই ভালোবাসাহীন পৃথিবীর মানুষগুলো বড্ড পাষাণ। মানুষের কি দোষ বলো? তুমিই তো করেছো পাষাণ হৃদয় সৃষ্টি। কারো চোখে আনন্দের তারা জ্বলে, কারো চোখে দুঃখের বৃষ্টি। রাতের আধাঁরে হারাই চাঁদের দেখা, দিনের মেঘলা আকাশে দেখি না সূর্য। স্বপ্নের প্রদ্বীপ আজ নিভুনিভু .. আর কতো ধৈর্যের পরীক্ষা নেবে তুমি আমার হে ঈশ্বর! এইরূপ কঠিন বাস্তবতার কাছে হেরে যাই বারংবার। দুঃখ নদীর কূল খুঁজে পাই না, দেখিনা এপার, দেখিনা ওপার।
কে কার রাখে খোঁজ, নিজ স্বার্থে অর্থ লোভে, বিবেক রয়েছে ঘুমিয়ে। মুখে মিথ্যে হাসি এঁকে, আপন জনের নিষ্ঠুরতা, দেখে যাই নীরবে, আর কত অপেক্ষার প্রহর গুনতে হবে প্রভু! জীবন শুধুই জীবন ধারণে পরিণত হয়েছে, কেউ কারো আপন নয় আজ। শুধু বেঁচে থাকা মিথ্যে মায়ার বন্ধনে .. তাই আর বেঁচে থাকতে চায় না সে। নিভৃতে অভিষিক্ত নয়ন নৈশ-উপাধান, কেনো ছলা-কলা, উদাস হাসি! পাষাণ হৃদয় মিথ্যে অভিলাষ ..অবোধ উদ্ভ্রান্ত বাণী। শুধু অশ্রুজল, নিরব দীর্ঘশ্বাস, আহত হৃদয় না পাওয়ার বেদনায় বয়ে চলে গ্লানি। দিনের আলো হয় ম্লান হতাশার নিঃশ্বাসে। থেমে যায় হাসি গান, ফুরিয়ে যায় বেলা.. মিছে হাসি খেলা। দিন হয় অবসান .. সুখ দিয়ে বলিদান।
গোগোলের বাইকের চেনা আওয়াজ পেয়ে চমকে উঠলো সুজাতা। কোনোরকমে মাটি থেকে উঠে দাঁড়িয়ে দ্রুতপায়ে গোগোলের কাছে গিয়ে আকুতি মিশ্রিত কন্ঠে অথচ মৃদুস্বরে বলে উঠলো "তুই এখানে কেন এলি? চলে যা চলে যা, এক্ষুনি এখান থেকে চলে যা .. কি সব বলছে জানিস ওই পুলিশটা? ও বলছে .. তুই নাকি টগর কে .." এইটুকু বলে হাউ হাউ করে কেঁদে উঠলো সুজাতা। তারপর নিজেকে সামলে নিয়ে আবার বলতে শুরু করলো "আমি অবশ্য .. আমি অবশ্য একটা কথাও বিশ্বাস করিনি। আমি জানি ওই লোকটা মিথ্যা কথা বলছে। আমি বুঝতে পারছি কামরাজ, তারপর মানিক সামন্ত আর ওই পুলিশটা মিলে একটা চক্রান্ত করেছে তোর বিরুদ্ধে। তুই আর এখানে দাঁড়িয়ে থাকিস না সোনা মানিক আমার .. চলে যা চলে যা .."
গোগোল তাকিয়ে দেখলো সুজাতার চোখ-মুখের চেহারার আমূল পরিবর্তন ঘটেছে। কেঁদে কেঁদে চোখ দুটো ফুলিয়ে ফেলেছে তার প্রিয় মামণি। উস্কো খুসকো চুল আর আলুথালু পোশাকে কিরকম যেন একটা পাগলিনীর মতো লাগছে তাকে। তারপর ঘাড় ঘুরিয়ে দেখলো তার পাশে এসে দাঁড়িয়েছে হিয়া। ফ্যাকাশে মুখে ছলছলে চোখে গোগোলকে কিছু একটা বলতে যাচ্ছিলো সে, ঠিক তখনই "এইতো নায়কের আগমন ঘটিয়াছে রঙ্গমঞ্চে .. হাততালি হাততালি .. সবাই হাততালি দেওয়া শুরু করে দাও। না না, এখন না .. আর একটু অপেক্ষা করো তোমরা। আগে তোমাদের নায়ক তার দুই প্রেয়সীর সঙ্গে বিদায় বেলার বার্তালাপ করে নিক। তারপর যখন ওর কোমরে দড়ি বেঁধে এই বস্তির মধ্যে দিয়ে টানতে টানতে নিয়ে যাবো .. তখন না হয় হাততালি দিও সবাই .. হেহেহে .." গা জ্বলানি একটা হাসি হেসে উক্তি করলো সন্দীপ।
"দুই প্রেয়সী মানে, এসব আপনি কি বলছেন? অনেকক্ষণ ধরে দেখছি আপনি যা খুশি তাই বলে যাচ্ছেন। বাড়াবাড়ির কিন্তু একটা সীমা থাকে, কি বলতে চাইছেন কি আপনি?" উত্তেজিত হয়ে জিজ্ঞাসা করলো সুবীর।
"কুল ডাউন বেবি, কুল ডাউন .. আমি এখন তোমাদের নায়ক মানে তোমাদের হিরোর সঙ্গে কথা বলবো। এখন তোমার মতো চুনোপুটিদের চুপ থাকাই শ্রেয়। তুমি তো মাছের ব্যবসা করো .. আমি কি বলতে চাইছি সেটা না হয় পরে কোতোয়ালিতে তোমার আঁশ ছাড়াতে ছাড়াতে তোমাকে বোঝাবো, কেমন?" কথাটা শেষ করে ঘাড় ঘোরাতেই দেখতে পেলো তার ঠিক মুখের সামনে এসে দাঁড়িয়েছে গোগোল। এতটাই কাছে যে, গোগোলের নিঃশ্বাস তার কপালে পড়ছিল। উচ্চতায় সন্দীপের থেকে গোগোল অনেকটাই লম্বা, তাই মাথা উঁচু করে গোগোলের চোখে চোখ রাখতে হচ্ছিলো সন্দীপের।
"কি ব্যাপার? এখানে কি চাই? কি বললেন একটু আগে .. দু'জন প্রেয়সী .. এই কথার মানে কি? আর মামণি একটু আগে কি বলছিলো .. আপনি আবার কি অভিসন্ধি নিয়ে এসেছেন এখানে?" গম্ভীর অথচ শান্ত গলায় প্রশ্ন করলো গোগোল।
"ওলে বাবালে .. আমি না ভীষণ ভয় পেয়ে গেলাম! এই বস্তির বেতাজ বাদশা আমাকে ধমকাচ্ছে .. ওরে ওরে তোরা কে কোথায় আছিস আমাকে বাঁচা .. খুব ভয় করছে আমার .." ব্যঙ্গাত্মক সুরে কথাগুলো বলেই চিৎকার করে উঠলো সন্দীপ "গরম দেখাচ্ছিস আমাকে শুয়োরের বাচ্চা? লকআপে ঢুকিয়ে যখন জামাপ্যান্ট খুলে উল্টো করে ঝুলিয়ে ডান্ডা দিয়ে ক্যালাবো, তখন দেখবো তোর এই গরম কোথায় যায়! দু'জন প্রেয়সী বলতে কি বুঝিয়েছি সেটা পরিষ্কার করে তোকে বলছি শোন। ওই যে দাঁড়িয়ে আছে হিয়া .. যাকে ভুলিয়ে-ভালিয়ে নিজের সম্পর্কে মিথ্যে কথা বলে প্রেমের জলে ফাঁসিয়েছিস! ও হলো তোর প্রেয়সী নাম্বার টু। আর প্রেয়সী নাম্বার ওয়ান কে জানিস? তোর বাঁধা রেন্ডি .. যাকে সবার সামনে মামণি বলে নাটক করছিস। ওই মহিলার সঙ্গে তোর অবৈধ সম্পর্ক আছে। বুঝে নিয়েছিস? আর কিছু জিজ্ঞাস্য আছে?"
সন্দীপের এই উক্তিতে নিজেকে আর নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারলো না রাজু, চিৎকার করে ঝাঁপিয়ে পড়তে গেলো সন্দীপের উপর। তৎক্ষণাৎ তাকে নিজের দুই হাত দিয়ে জাপটে ধরে বিন্দুমাত্র উত্তেজিত না হয়ে অত্যন্ত স্বাভাবিক গলায় গোগোল বলে উঠলো "উঁহু উঁহু .. এখনো সময় আসেনি .. এখনো এই ব্যক্তির পাপের ঘড়া সম্পূর্ণরূপে পূর্ণ হয়নি .. উনি এখানে কেন এসেছেন আর মামণি তখন কি বলছিলো টগরের সম্পর্কে .. সেগুলো সব জানতে হবে তো .. তার আগেই এত উত্তেজিত হয়ে পড়লে চলবে!"
"নাটক হচ্ছে এখানে? একটা মেয়েকে রেপ করার পর তাকে খুন করে এখানে এসে বড় বড় ভাষণ দিচ্ছিস তুই? পাপের ঘড়া আমার কি পূর্ণ হবে? তোর অলরেডি পূর্ণ হয়ে গেছে। তাই তোকে এখন এই মুহূর্তে অ্যারেস্ট করে থানায় নিয়ে যাবো আমি। তারপর তোর যা ব্যবস্থা করার অবশ্যই করবো। মিস্টার অনির্বাণ মুখার্জি .. আমি আপনাকে কুমারী টগর সাধুখাঁর রেপ এবং মার্ডারের কেসে প্রধান অপরাধী হিসেবে অ্যারেস্ট করছি।" চিবিয়ে চিবিয়ে কথাগুলো বললো সন্দীপ।
★★★★
"বটে? তা এই কাজ যে আমি করেছি তার প্রমাণ কি? মানে আমি বলতে চাইছি কোনো মেডিকেল রিপোর্ট বা নিদেনপক্ষে সাক্ষী অর্থাৎ কোনো প্রত্যক্ষদর্শী আছে .. যে এই কাজটা আমাকে করতে দেখেছে? নাকি অতিরিক্ত তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে কোনো প্রমাণ ছাড়াই চলে এসেছেন এখানে?" অত্যন্ত ধীর-স্থির ভাবে কথাগুলো বললো গোগোল।
"এইরকম একটা পরিস্থিতিতে পড়েও এতটা স্বাভাবিক হয়ে কথা বলছিস কি করে, আমি সেটা দেখেই অবাক হয়ে যাচ্ছি! তবে তোর কি ধারণা আমি তৈরি না হয়েই এসেছি এখানে?" গোগোলের উদ্দেশ্যে কথাগুলো বলে, ক্লাবঘরের সিঁড়ির উপর বসে থাকা দু'জন কনস্টেবলের মধ্যে একজনের উদ্দেশ্যে গলা তুলে সন্দীপ বললো "শ্যামল .. গাড়ি থেকে ওকে নামিয়ে নিয়ে এসো .."
হিয়া আর সুজাতা সহ রেলপাড়ের বস্তির বাকি আবাসিকদের উৎকণ্ঠায় ভরা মুখগুলো দেখতে পেলো কনস্টেবলের সঙ্গে পুলিশের জিপের ভেতর থেকে নেমে এলো স্বপন সাধুখাঁ। তাকে দেখেই ওখানে উপস্থিত সকলের মধ্যে একটা চাপা গুঞ্জন শুরু হলো .. সেই গুঞ্জন ক্রমে জোরালো কোলাহলে পরিণত হলো। পরিস্থিতি হাতের বাইরে বেরিয়ে যেতে পারে এটা আন্দাজ করতে পেরে সবাইকে চুপ করে থাকার জন্য ইশারা করে সন্দীপ বলে উঠলো "আপনারা এখন একটু শান্ত হয়ে থাকুন। থানাতে নিয়ে গিয়েও আইডেন্টিফিকেশন করাতে পারতাম। কিন্তু আমি একজন অতি দয়ালু পুলিশ অফিসার। মনটা আমার ভীষণ নরম। কেউ কোনো অনুরোধ করলে, সে যদি ক্রিমিনালও হয় .. তবুও তার অনুরোধ ফেলতে পারিনা। তাই আপনাদের হিরো অনির্বাণের কথা অনুযায়ী এখানেই সবার সামনে না হয় অপরাধীকে চিহ্নিতকরণের প্রক্রিয়াটা হোক। তবে আমারও কিন্তু একটা আব্দার আছে, সেটা আপনাদের রাখতেই হবে। স্বপন বাবুর বয়ানের পর অনির্বাণকে কোমরে দড়ি পরিয়ে এখান থেকে হাঁটিয়ে থানায় নিয়ে যাওয়ার আগে আপনারা প্রত্যেকে ওর এই সুন্দর হিরোমার্কা মুখোশের আড়ালে লুকিয়ে থাকা ওই কুৎসিত নোংরা মুখে পায়ের থেকে জুতো খুলে মুখে মারবেন। কি, আপনারা রাজি তো? তবেই কিন্তু এখানে আইডেন্টিফিকেশন হবে .. না হলে নয়।"
ক্লাবের প্রেসিডেন্ট এবং এলাকার সবথেকে সজ্জন ব্যক্তি পঙ্কজ বাবু কিছু একটা বলতে যাচ্ছিলেন, তাকে থামিয়ে দিয়ে গলাটা অতিমাত্রায় স্বাভাবিক করে নিয়ে মুচকি হেসে গোগোল বলে উঠলো "আচ্ছা ঠিক আছে, সে হবে খন .. আগে তো আমার আইডেন্টিফিকেশন হোক, তারপর না হয় .."
হিয়া লক্ষ্য করছিলো এইরকম একটা ভয়ঙ্কর পরিস্থিতিতে যেখানে একজন ব্যক্তির উপর পুলিশের পক্ষ থেকে এত বড় একটা এলিগেশন আনার পর সেই ব্যক্তির দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়ার কথা, লজ্জায়, অপমানে, ভয়ে, দুঃখে .. তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ার কথা। সেখানে তার গোগোল দাদা এতটা স্বাভাবিকভাবে অথচ এইরকম দৃঢ় ভঙ্গিতে কথা বলছে কি করে! এদিকে গোগোলের মুখে এইরূপ উক্তি শুনে মনের ভেতরে যেন আগুন জ্বলে উঠলো সন্দীপের। স্বপন সাধুখাঁর উদ্দেশ্যে চিৎকার করে বলে উঠলো, "কি ব্যাপার? আপনার মেয়ের ধর্ষক এবং খুনি আপনার চোখের সামনে দণ্ডায়মান, আর আপনি চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছেন? বলুন বলুন .. মুখ ফুটে কিছু বলুন। আপনার কোনো ভয় নেই, এই শুয়োরের বাচ্চা আপনার কোনো ক্ষতি করতে পারবে না। আপনি নির্ভয় বলুন কাল আপনি নিজের চোখে যা দেখেছেন .."
"কি বলবো?" অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করলো স্বপন সাধুখাঁ।
"আরে কি মুশকিল .. আপনি হঠাৎ এরকম ইডিয়েটের মতো কথা আচরণ করছেন কেন? একটু আগেই আপনাকে যেগুলো বলতে বললাম, আই মিন .. আই মিন, আপনি আমাকে যে কথাগুলো বললেন .. সেগুলোই এখানে বলুন। দেরি করবেন না .. সময়ের দাম আছে আমার।" বিরক্ত হয়ে কথাগুলো বললো সন্দীপ।
এতক্ষণ স্বপনবাবু সন্দীপের পাশে দাঁড়িয়েছিল। এই মুহূর্তে কয়েক পা এগিয়ে এসে গোগোলের ঠিক পেছনে দাঁড়িয়ে সন্দীপের দিকে ঘুরে অশ্রুসিক্ত কণ্ঠে বলে উঠলো "আপনি তো আমাকে অনেক কিছুই শিখিয়ে পড়িয়ে নিয়ে এসেছেন এখানে, কিন্তু আমি তো এখনো পর্যন্ত আমার মেয়েটাকেই দেখতে পেলাম না .. কাল রাতের ওই ঘটনার পর যে কি হলো, সেটাই তো আমি এখনো পর্যন্ত জানতে পারিনি। আমার মেয়েকে এখনো দেখিনি আমি .."
"একটু আগে এত কথা হলো আপনার সঙ্গে। তখন তো আমার সব কথাতেই রাজি হয়ে গিয়েছিলেন। এখন এসব আপনি কি বলছেন? ন্যাকামি হচ্ছে? আপনার মেয়ের নাগরকে দেখে হঠাৎ তার প্রতি দরদ উথলে উঠলো নাকি? আপনাকে তো তখন বললাম যে আপনার মেয়েকে রেপ করার পর তাকে জ্যান্ত জ্বালিয়ে দিয়েছে আপনার মেয়ের এই নাগর। গায়ে জামাকাপড়ও কিছু ছিলো না আপনার মেয়ের, এখনো পর্যন্ত কোনো জামাকাপড় খুঁজেও পাওয়া যায়নি। ওইরকম একটা সম্পূর্ণ পুড়ে গিয়ে ঝলসে যাওয়া বিকৃত বডি দেখে আপনি চিনতে পারতেন? লাশটা ফরেেন্সিকে পাঠানো হয়েছে, ওখান থেকে একটু পরেই চলে আসবে। তখন প্রাণ খুলে আপনার মেয়েকে দেখে নেবেন। এখন যেটা আপনার বলার কথা, অর্থাৎ অপরাধীকে চিহ্নিত করার কথা সেটা করুন।" উত্তেজিত হয়ে কথাগুলো বললো সন্দীপ।
"বাবা গোগোল, কালকের ওই ঘটনার পর .. সবই তো তুমি জানো, তোমাকে আর নতুন করে কি বলবো! তুমি না থাকলে যে কি হতো! যাইহোক, ডাক্তারবাবুর বাড়িতে আমার ছোট মেয়ে শিউলিকে রেখে ভোররাতে যখন নিজের ফিরছি, তখন রাস্তায় আমাকে ধরে এই পুলিশ ইন্সপেক্টর। তারপর আমাকে থানায় নিয়ে গিয়ে আমার মেয়ের মৃত্যুসংবাদ দেয়। খবরটা শুনে আমি প্রথমে অজ্ঞান হয়ে গেছিলাম .. জানো তো বাবা! কাল সন্ধে থেকেই ছোট মেয়ে শিউলিকে নিয়ে ভীষণ টেনশন যাচ্ছে, তার উপর টগরের খবরটা শুনে .. এতটা চাপ নিতে পারিনি আসলে। জ্ঞান ফেরার পর এই পুলিশটা আমাকে বলে - এখানে এসে সবার সামনে আমাকে বলতে হবে আমার বড় মেয়ে টগরকে তুমি প্রথমে নষ্ট করেছো, তারপর খুন করে জ্বালিয়ে দিয়েছো ওর দেহটাকে। এই কথা যদি আমি বলি তাহলে এই বস্তি অধিগ্রহণের পর এখানে আমার থাকার থাকার বন্দোবস্ত করে দেবে ওরা .. আমাকে পাকা দলিল দেওয়া হবে। সেই সঙ্গে প্রচুর টাকাও দেয়া হবে .. যাতে ভবিষ্যতে আমাকে আর মুদিখানার দোকান চালাতে না হয়। আর যদি না বলি তাহলে আমাকে খুন করার ভয় দেখায় এই পুলিশটা। আমি ভয় তখন কিছু বলতে পারিনি বাবা। খুব অসহায় বোধ করছিলাম একা একা .. তাই ওনার সব কথায় রাজি হয়ে গেছিলাম। কিন্তু আমি একটা কথা উঠতে পারছি না আমার মেয়ে কি সত্যি সত্যি আর নেই? তবে কি ওরা সত্যি বলছে তোমার নামে? কিন্তু এই কথা তো আমি মরে গেলেও বিশ্বাস করতে পারবো না। তাহলে কি ওকে অন্য কেউ! হায় ভগবান, এ কি সর্বনাশ হলো আমার! হ্যাঁ আমি মানছি .. ওদের মা চলে যাওয়ার পর সেই রাগে আমি আমার ছোট মেয়ে শিউলির প্রতি অনেক অন্যায় করেছি, অনেক অবিচার করেছি .. কিন্তু তাই বলে ভগবান আমাকে এত বড় শাস্তি দিলেন!" কথাগুলো বলতে বলতে হাউ হাউ করে কেঁদে মাটিতে বসে পড়লো স্বপন সাধুখাঁ।
"হারামি বজ্জাত বুড়ো কোথাকার .. তোর সাহস তো কম নয় .. তোকে আমি সাহায্য করার চেষ্টা করছি, অপরাধীকে শাস্তি দেওয়ার চেষ্টা করছি, আর তুই এখানে এসেই নিজের স্বরূপ দেখাতে শুরু করে দিয়েছিস? বানিয়ে বানিয়ে মিথ্যা কথা বলছিস এখন আমার নামে? আর একটু আগে কি বললি তোর মেয়ের নাগরকে? 'তুমি না থাকলে যে কি হতো' এই কথার মানে কি? এই কথা তো তখন আমাকে বলা হয়নি। ও ওখানে কি করে পৌঁছলো?" চিৎকার করে উঠলো সন্দীপ।
"বাঃ রে .. কাউকে রেপ করতে গেলে তারপর তাকে খুন করতে গেলে আমাকে তো সেই জায়গায় পৌঁছতেই হবে, তা না হলে কাজগুলো করবো কি করে? এতে এত অবাক হচ্ছেন কেন ইন্সপেক্টর সাহেব?" টগরের বাবাকে মাটি থেকে তুলে সন্দীপের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে কথাগুলো বললো গোগোল।
"টগর কাল রাতে খুন হয়েছে, আর ওকে রেপ করে খুন করেছিস তুই, এটাতো জলের মতো পরিষ্কার। তাই ডোন্ট ট্রাই টু বি ওভার স্মার্ট! এখন মেয়ের মৃত্যুর খবর শুনে মাথার ঠিক নেই এই বুড়োটার। পরে ওকে দিয়ে ঠিক সত্যি কথা বলিয়ে নেবো আমরা। এখন আর সময় নষ্ট না করে থানায় চল আমার সঙ্গে, তোকে এই মুহূর্তে অ্যারেস্ট করলাম আমি।" শশব্যস্ত হয়ে কথাগুলো বললো সন্দীপ।
★★★★
"খামোশ .." হুঙ্কার দিয়ে উঠলো গোগোল। বাঘের গর্জনে যেমন কুকুর ভয় পেয়ে গিয়ে কুঁই কুঁই করে লেজ গুটিয়ে কোণা খোঁজার চেষ্টা করে, ঠিক তেমনি এতক্ষণ ধরে হেসে হেসে অত্যন্ত বিনয়ের সঙ্গে কথা বলতে থাকা গোগোলের হঠাৎ এইরূপ হুঙ্কারে সন্দীপ থতমত খেয়ে দু'পা পিছিয়ে যেতে গিয়ে নিজের গাড়ির সঙ্গে অতর্কিতে ধাক্কা খেয়ে মাটিতে পড়ে গেলো। তারপর আবার এদিক-ওদিক তাকিয়ে গাড়ির দরজা ধরে উঠে দাঁড়ালো।
এলাকায় গোগোলের থেকেও মাথা গরম এবং রাগী স্বভাবের বলে পরিচিত সুবীর এখনো পর্যন্ত সেই অর্থে নিজের স্বরূপ প্রকাশ না করলেও সন্দীপের অবস্থা দেখে অট্টহাসিতে ফেটে পড়ে বললো "গুরুর একটা হুঙ্কারেই মালটা ধপাস করে মাটিতে পড়ে গেলো .. ভাবা যায়! এ আবার নাকি আমার গা থেকে আঁশ ছাড়ানোর কথা বলছিলো একটু আগে। শালা এখন নিজের প্যান্টের ভেতরেই পেচ্ছাপ করে ফেলেছে কিনা সন্দেহ!"
"ব্যাস .. হয়েছে .. এবার সবাইকে চুপ করতে অনুরোধ করছি। এতক্ষণ ধরে এই ইন্সপেক্টর আপনাদের অনেক ভাষণ দিয়ে গেছে এবং আপনারা চুপ করে সব কথা শুনেছেন। এবার আমি কাল রাত থেকে আজ ভোর পর্যন্ত ঘটে যাওয়া একটা ঘটনার কথা আপনাদের সামনে বলতে চলেছি। আমি ছাড়াও যে ঘটনার তিনজন প্রত্যক্ষদর্শী এখানেই উপস্থিত আছে। হ্যাঁ তিনজন .. আপনারা ঠিকই শুনেছেন। খুব মন দিয়ে আমার প্রতিটা কথা শুনবেন, তারপর আপনারা যা সিদ্ধান্ত নেবেন, সেটাই আমি মাথা পেতে নেবো।" কথাগুলো বলে সুবীরের দিকে ইশারা করলো গোগোল।গোগোলের ইশারা পাওয়া মাত্রই সুবীর, কাঞ্চন, রাজু আর মধু .. এই চারজনে সন্দীপকে ঘিরে তার দুই পাশে দাঁড়ালো।
এদিকে গোগোল আবার বলতে শুরু করলো "তখন রাত সাড়ে এগারোটা হবে হঠাৎ আমার মোবাইলে মধুর ফোন এলো। আপনারা সবাই জানেন মধুর চায়ের দোকান রেলপাড়ের পশ্চিমদিকের ওই বড় রাস্তার মোড়ে, স্বপন কাকুর বাড়ির কাছেই। দু-একটা কাজের কথার পর মধু বললো - 'সন্ধ্যের দিকে টগর আমার দোকানে এসেছিলো চিনি আর চা পাতা দিতে .. ওদের দোকান থেকেই তো আমি নিই ওগুলো। আমি নিজেই নিয়ে আসি, কিন্তু আজ কাজের চাপে যেতে পারিনি, তাই টগর দিতে এসেছিল। ও বললো কয়েকদিন ধরেই নাকি শিউলির শরীরটা খারাপ যাচ্ছে। তবে আজ বাড়াবাড়ি রকমের পেটের ব্যথা হচ্ছে। ওর ফোনে নাকি সফটওয়্যার আপলোডের জন্য ফরম্যাট করার ফলে সমস্ত নম্বর উড়ে গেছে তাই তোমার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছে না। যদি দরকার হয় তাহলে খবর দেবে .. এই বলে চলে গেলো। আমার দোকানে আজ এত ভিড় ছিলো যে মাথা থেকেই বেরিয়ে গেছিলো ব্যাপারটা। এখন দোকান বন্ধ করতে করতে হঠাৎ মনে পড়লো, তাই তোমাকে জানালাম। একবার খোঁজ নিও তো মেয়েটা কেমন আছে।' কথাগুলো শোনার পর মধুর ফোনটা কেটে দিয়ে আমি তৎক্ষণাৎ টগরকে ফোন করলাম। মধু যা বলেছিলো সেগুলোই ও বললো, তার সঙ্গে এটাও জানালো স্বপন কাকু মানে ওদের বাবা শিউলিকে নিয়ে এইমাত্র বাড়ি থেকে বেরোলো, আর ও জামাকাপড় চেঞ্জ করে এখন ওর বাবার সঙ্গে যাবে হসপিটালের উদ্দেশ্যে। ওর গলা শুনেই আমি বুঝতে পারলাম শিউলির অবস্থা একদমই ভালো নয়। স্বপন কাকু মাঝে মধ্যে একটু খ্যাচ খ্যাচ করে বটে তবে, টগর এবং তার পরিবার সময় অসময় যেভাবে আমার পরিবারের পাশে থেকেছে তাতে ওদের এই বিপদের দিনে আমি যদি ওদের পাশে না দাঁড়াই তাহলে ভগবান কোনদিনও আমাকে ক্ষমা করবে না। তাছাড়া শিউলিকে আমি নিজের বোনের থেকেও বেশি ভালোবাসি, তাই ওর দাদা হিসেবে সব দায়িত্ব তো আমাকেই পালন করতে হবে। আর বিন্দুমাত্র সময় নষ্ট না করে মামণিকে বলে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেলাম।"
একনাগাড়ে কথাগুলো বলতে বলতে কিছুটা দম নিলো গোগোল, তারপর আবার বলতে শুরু করলো "বাড়ি থেকে বেরিয়ে বাইকে স্টার্ট দিতে যাবো, হঠাৎ দেখি পেছনের চাকাটা পাংচার হয়ে গেছে। অথচ সন্ধ্যেবেলা যখন ফিরলাম তখনো একদম ঠিক ছিলো। আমার মাথায় বাজ ভেঙে পড়লো .. এমত অবস্থায় এত রাতে আমি যাবো কি করে অতদূর ওদের বাড়িতে! সুবীর কে ফোন করলাম, ও আমার বাড়ির পাশেই থাকে। আমার ফোন পেয়ে ও সঙ্গে সঙ্গে চলে এলো। দু'জনে মিলে আমাদের বাড়ির সামনের রাস্তাটায় এসে এদিক-ওদিক তাকিয়ে খোঁজার চেষ্টা করছি যদি পথচলতি কোনো গাড়ির থেকে লিফট নেওয়া যায়। কিন্তু জনমানব শূন্য রাস্তায় গাড়ি তো দুরস্ত, রাস্তার কয়েকটা কুকুর ছাড়া কোনো মানুষের দেখা পাওয়া যাচ্ছিলো না। হঠাৎ করেই সেইসময় আমাদের সামনে ধুমকেতুর মতো একটা সবুজ রঙের মারুতি সুজুকি আর্টিগা গাড়ি এসে দাঁড়ালো। আমরা কিছু বলার আগেই গাড়ির কাচ নামিয়ে দাশগুপ্ত আঙ্কেল আমাকে হাতের ইশারায় ওনার কাছে ডাকলেন। হ্যাঁ আমি মিউনিসিপাল হসপিটালের প্রাক্তন সুপার ডক্টর প্রতাপ দাশগুপ্তর কথা বলছি .. যিনি বর্তমানে এখানে উপস্থিত আছেন। আমি গাড়ির কাছে যাওয়ার পর উনি জানালেন একটা এমারজেন্সি কলে পেশেন্টের বাড়িতে গিয়েছিলেন, সেখান থেকেই ফিরছেন এবং জানতে চাইলেন এত রাতে আমরা এখানে দাঁড়িয়ে কি করছি? উনাকে সব কথা বলার পর উনি বললেন 'তাড়াতাড়ি আমার গাড়িতে উঠে এসো তোমরা। আমি তোমাদের নিয়ে যাবো গন্তব্যে।' উনি নিজেই ড্রাইভ করছিলেন গাড়ি। ডাক্তার আঙ্কেলের গাড়িতে বসে স্বপন কাকুর বাড়ি পৌঁছতে মিনিট চারেকের বেশি সময় লাগলো না। কিন্তু ওখানে পৌঁছে দেখলাম ওদের বাড়িতে তালা ঝুলছে। তৎক্ষণাৎ টগরকে ফোন করে জানতে পারলাম ওরা এইমাত্র বাড়ি থেকে বেরিয়ে এত রাতে কোথাও কোনো যানবাহন না দেখে বড় রাস্তার মোড়ের দিকে গেছে। গাড়ি ঘুরিয়ে বড় রাস্তার মোড়ের কাছাকাছি পৌঁছতেই দেখতে পেলাম স্বপনকাকু শিউলিকে কোলে নিয়ে একটা কালো রঙের অ্যাম্বাসেডর গাড়িতে উঠে বসলো, তারপর টগরও উঠলো গাড়িটাতে। ওরা গাড়িতে ওঠার পর অ্যাম্বাসেডরটা ঝড়ের গতিতে বেরিয়ে গেলো .."
Posts: 4,428
Threads: 6
Likes Received: 9,218 in 2,849 posts
Likes Given: 4,330
Joined: Oct 2019
Reputation:
3,225
23-12-2022, 08:55 PM
(This post was last modified: 23-12-2022, 08:56 PM by Bumba_1. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
গোগোল বলে চললো "এই অঞ্চলে বর্তমানে এম্বাসেডর গাড়ি একজনেরই আছে এবং তার রঙটাও আমার জানা, তাই পুরো ব্যাপারটাই আমার অদ্ভুত এবং সন্দেহজনক মনে হলো। ডাক্তার আঙ্কেলকে বললাম ওই গাড়িটাকে ফলো করতে। প্রথমে উনি কিছুটা ইতস্ততঃ করলেও পরে রাজি হয়ে গেলেন। অ্যাম্বাসেডর গাড়িটা বড়বাজার মার্কেট পেরিয়ে গঙ্গানগর রেলস্টেশনের পাশের ফুটব্রিজের তলা দিয়ে গিয়ে হাইওয়ের দিকে অগ্রসর হতে লাগলো। আমরাও পিছন পিছন যেতে লাগলাম। হাইওয়েতে গাড়িটা পৌঁছতেই ডাক্তার আঙ্কেল এর হাত থেকে স্টিয়ারিংটা আমি নিয়ে নিলাম, কারণ এবার ওদের গাড়িটাকে ধরতে না পারলে অনেক দেরি হয়ে যাবে। আমি গাড়ি ড্রাইভ করতে শুরু করলাম। অ্যাম্বাসেডর গাড়িটা পেট্রোলপাম্পকে ডানদিকে আর ধনজ্ঞী ভাইয়ের গ্যারেজটা বাঁ'দিকে রেখে বাঁশবাগানের দিকে এগিয়ে যেতে থাকলো। ঠিক সেই মুহূর্তে আমি গাড়ির গতিবেগ কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিয়ে অ্যাম্বাসেডর গাড়িটাকে অতিক্রম করে ওদের সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম। হঠাৎ করে আমাদের গাড়ি সামনে চলে আসায় কোনোরকমে ব্রেক কষে ওদের গাড়ির অভিমুখ অন্যদিকে ঘোরাতে গিয়ে সামনে থাকা একটি বটগাছে সজোরে ধাক্কা মারে অ্যাম্বাসেডরটা। ওদের গাড়ির ভেতর থেকে সম্মিলিত চিৎকারের শব্দ শোনা যায়। এমত অবস্থায় ওদের গাড়ির ভেতরের আরোহীরা কিছুটা হলেও অবিন্যস্ত এবং অপ্রস্তুত অবস্থায় আছে এটা বুঝতে পেরে আমি আর সুবীর তৎক্ষণাৎ গাড়ি থেকে নেমে ওদের গাড়িটার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ি।"
কালুকে ইশারায় ডেকে, ওর হাতে থাকা বোতল থেকে এক ঢোক জল খেয়ে নিয়ে গোগোল পুনরায় বলতে শুরু করলো "আমি আর সুবীর গাড়ির পিছনের দু'দিকের দরজাটা খুলি। পিছনের সিটে শিউলিকে কোলে নিয়ে বসেছিলো স্বপনকাকু আর তার পাশে জড়োসড়ো হয়ে বসেছিলো টগর। অঝোরধারায় কেঁদে যাচ্ছিলো টগর। দু'জনের চোখেই ছিলো আশঙ্কা এবং মৃত্যুভয়। শিউলি অচৈতন্য অবস্থায় স্বপনকাকুর কোলে এড়িয়ে পড়েছিল। ওদের দু'জনের দুইপাশে ঠাসাঠাসি করে বসেছিলো একজন করে সশস্ত্র দুষ্কৃতী। হঠাৎ করে গাড়িটা গাছের সঙ্গে ধাক্কা লাগার ফলে সম্ভবত ওদের হাত থেকে ak-47 রাইফেল দুটো মাটিতে পড়ে গিয়েছিলো। অতর্কিতে আমাদের দেখে কি করবে কিছু বুঝে উঠতে না পেরে ওরা দু'জন বসা অবস্থাতেই নিচে ঝুঁকে নিজেদের অস্ত্রদুটো তুলতে যাবে সেই মুহূর্তে আমি আর সুবীর ওদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ি তারপর টেনে হিঁচড়ে দুই দুস্কৃতিকে গাড়ি থেকে বের করে নিয়ে আসি। সুবীর আমাকে বলে তুমি ড্রাইভার আর তার পাশে বসে থাকা লোকটাকে সামলাও, আমি এদের দু'জনকে দেখে নিচ্ছি। ওর কথা মতো আমি ততক্ষণাৎ ড্রাইভারের দিকের দরজাটা খুলি, আমাকে দেখতে পেয়েই ড্রাইভার সিটে বসে থাকা এক শীর্ণকায় বয়স্ক ব্যক্তি লাফিয়ে গাড়ি থেকে নেমে দৌড়ে পালিয়ে বাঁশবাগানের মধ্যে অদৃশ্য হয়ে যায়। তারপর ড্রাইভারের পাশের সিটে চোখ যেতেই আমি বাকরুদ্ধ হয়ে যাই। ওখানে কোনো পুরুষমানুষ ছিলো না, ওখানে বসেছিলেন একজন নারী। হ্যাঁ আপনারা ঠিকই শুনেছেন .. ওখানে একজন মহিলা বসেছিলেন। যাকে ওখানে ওই অবস্থায় দেখবো আমি কোনোদিন কল্পনাতেও ভাবতে পারিনি। ড্রাইভারের পাশের সিটে বসে আমার দিকে রিভলবার তাক করে ছিলো মিস্টার কামরাজের মেয়ে রনিতা .. রনিতা দিদি।"
কয়েক মুহূর্ত চুপ থেকে সবার দিকে একবার দৃষ্টি ঘুরিয়ে নিয়ে আবার বলতে শুরু করলো গোগোল "আমি কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম। হাতে রিভলবার ধরা অবস্থাতেই গাড়ি থেকে নেমে আমার আরো কাছে এগিয়ে এসে উচ্চহাসিতে ফেটে পড়ে রনিতা দিদি বললো 'সত্যিই তোমার জবাব নেই। এত সন্তর্পণে কাজটা করলাম, যাতে কাকপক্ষীও টের না পায়। অথচ তুমি ঠিক সময় পৌঁছে গেলে! ঠিক আছে যখন পৌঁছে গেছো তখন আমার হাতেই মৃত্যুবরণ করতে হবে তোমাকে। খুব অবাক হচ্ছো তাই না আমাকে এখানে দেখে? ভাবছো এখানে আমি এই বদমাইশগুলোর সঙ্গে টগর আর তার পরিবারকে কেনো ধরে এনেছি! আমার স্বার্থটা কি .. তাই তো? দ্বিতীয় দিন অপমানিত এবং প্রত্যাখ্যাত হয়ে তোমাদের বস্তি থেকে চলে আসার পর আমি প্রতিশোধের আগুনে জ্বলছিলাম। কারণ আমি বুঝে গেছিলাম হিয়ার প্রতি তোমার ভালোবাসা আর তোমার প্রতি হিয়ার ভালোবাসা এতটাই পবিত্র এবং দৃঢ় .. তার ফাঁক দিয়ে শুধু আমি কেনো, কারোর পক্ষেই ঢোকা সম্ভবপর নয়। তাই মনে মনে চাইছিলাম যেন-তেন প্রকারে তোমার জীবন থেকে হিয়াকে সরিয়ে দিতে। আমি সর্বদা নজর রাখতাম ওর গতিবিধির উপর। কিন্তু ওর ক্ষতি আমি কিছুতেই করতে পারছিলাম না। কারণ ওকে যে সবসময় শুধুমাত্র তুমি আগলে রেখেছিলে তা নয়, আরেকজনেরও সর্বক্ষণ নজর ছিলো ওর গতিবিধির উপর .. তিনি হলেন ইন্সপেক্টর সন্দীপ সেনগুপ্ত। যদিও তিনি আমাকে চেনেন না বা আমি যে মিস্টার কামরাজের মেয়ে, আমার এই অস্তিত্ব সম্পর্কে উনার কোনো ধারনা নেই। যাইহোক, এই দু'জনের নজর এড়িয়ে আমি কিছুতেই হিয়ার কোনো ক্ষতি করতে পারছিলাম না। আর কোনো উপায় না দেখে বাবাকে সব কথা খুলে বললাম। আমার বাবাকে তো তুমি ভালো করেই চেনো একদম ছোটবেলা থেকেই। মানুষের উপকার না করতে পারুক, সর্বদা অপকার করতে তিনি সিদ্ধহস্ত। কাঁটা দিয়েই কাঁটা তুলতে হবে .. এরকম একটা সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো। ঠিক হলো ষড়যন্ত্র করে টগরকে তুলে এনে প্রথমে তার ইজ্জত নষ্ট করে তারপর নৃশংসভাবে হত্যা করে সমস্ত দায় তোমার উপর চাপিয়ে দেওয়া হবে। এর ফলে এক ঢিলে অনেকগুলো পাখি মরবে। প্রথমতঃ পুলিশ তোমাকে অ্যারেস্ট করলে, তোমাকে সরানো যাবে ওই রেলপাড়ের বস্তি থেকে। ফলে রেলপাড়ের বস্তিটা আমার বাবার আর সামন্ত আঙ্কেলের হবে। দ্বিতীয়তঃ হিয়ার জীবন থেকে তোমাকে পুরোপুরি সরিয়ে দেওয়া যাবে। এর ফলে হিয়াকে নিজের করে নেওয়ার অফিশিয়ালি লাইসেন্স পেয়ে যাবে ইন্সপেক্টর সন্দীপ। তৃতীয়তঃ আমার রাস্তা পরিষ্কার হবে। সবকিছু মিটে যাওয়ার পর, বস্তি দখল হয়ে যাওয়ার পর, ওই বস্তির সমস্ত লোককে ওখান থেকে উৎখাত করার পর .. আমি জেলে গিয়ে তোমাকে এই শর্তে ছাড়িয়ে নিয়ে আসবো যে আমাকে বিয়ে করতে হবে তোমায়। তখন নিজেকে মুক্ত করার জন্য আমার শর্তে রাজি হওয়া ছাড়া তোমার পক্ষে আর কোনো উপায় থাকবে না। আর তারপর? তোমাকে বিয়ে করে আমার শরীর এবং মনের ভালোবাসা দিয়ে এমন ভরিয়ে দেবো যে তুমি হিয়াকে ভুলে যেতে বাধ্য হবে। তবে এই মেয়েটাকে আই মিন টগরকে আমরা এখানে একাই আনতে চেয়েছিলাম। কিন্তু ঘটনাক্রমে ওর বাবা আর বোন এসে জুটেছে ওর সঙ্গে। আর ওর সর্বনাশ করে ওকে খুন করার জন্য আমার বাবাকে নতুন করে কোনো লোক ভাড়া করতে হয়নি। স্বয়ং ইন্সপেক্টর সেনগুপ্ত আসছে নিজের কার্যসিদ্ধি করতে। এই পৃথিবীতে যদি তোমাকে সব থেকে বেশি কেউ ঘৃণা করে, তাহলে সে হলো তোমার বন্ধু সন্দীপ, আর তার একমাত্র কারণ হলো হিয়া। তাই তোমার অনুরাগী বা তোমাকে ভালোবাসে এইরকম কোনো মানুষকে ও এই পৃথিবীতে শান্তিতে বাঁচতে দেবে না, যাতে তুমি কষ্ট পাও। সেই জন্যই তো ও টগরের এইরকম পরিণতি নিজের হাতেই করতে চায়। টগর যে তোমায় মনে মনে ভালবাসে, তাই ওর বাঁচার কোনো অধিকার নেই এই পৃথিবীতে .. সেটা সন্দীপ মনে করে। বাবা সমস্ত প্ল্যান করলেও তিনি জানেন না আমি এখানে এসেছি। আসলে নিজের চোখে টগরের এই পরিণতি অর্থাৎ তোমার পরাজয়ের এইরকম একটা সুখকর দৃশ্য দেখার থেকে নিজেকে বঞ্চিত করতে চাইনি আমি। কিন্তু না, তোমার তো তর সইলো না .. তুমি এখানে এসে উপস্থিত হয়ে আমাদের সমস্ত প্ল্যান নষ্ট করে দিলে। এর শাস্তি তো তোমাকে পেতেই হবে .. আমি যখন তোমাকে পাবোই না তখন আর কাউকেই পেতে দেবো না। আমার হাতে মরার জন্য প্রস্তুত হও।' কথাগুলো বলে রনিতা দিদি যখন আমার দিকে রিভলবার তাক করে ফায়ার করতে যাবে, ঠিক সেই মুহূর্তে ঐরকম একটা ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির শিকার হয়ে মানসিকভাবে বিধ্বস্ত টগর মাটি থেকে একটা মাঝারি সাইজের গ্রানাইট পাথর তুলে সর্বশক্তি দিয়ে সেটা ছুঁড়ে মারলো রনিতা দিদির হাত লক্ষ্য করে।"
কথা বলতে বলতে গোগোল লক্ষ্য করলো হিয়া আর সুজাতা তার দুই কাঁধ ধরে দুইপাশে এসে দাঁড়িয়েছে। ওদিকে সন্দীপ গাড়িতে হেলান দিয়ে অবাক হয়ে তার কথাগুলো শুনে যাচ্ছে। তার মুখে একটা চাপা আশঙ্কার ছাপ স্পষ্ট। গোগোল আবার শুরু করলো "পাথরটা রনিতা দিদির হাতে লাগতেই রিভলভারটা হাত থেকে ছিটকে পড়ে গেলো মাটিতে। ও ওটা তুলতে যাওয়ার আগেই আমি তড়িৎগতিতে বন্দুকটা মাটি থেকে তুলে নিতেই রনিতা দিদি আমার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে এলোপাথাড়ি চর, কিল, ঘুঁষি মারতে লাগলো আমাকে। সুবীর ততক্ষণে ওই দুই দুষ্কৃতীকে ধরাশায়ী করে ফেলেছিল। রাত ক্রমশ গভীর হয়ে আসছে, তারপর শুনলাম সন্দীপ বাবুর আসার কথা ওখানে। তাই বিপদ বাড়ার আগে আমি মনে মনে সিদ্ধান্ত নিলাম ওখান থেকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আমাদের পালাতে হবে। এমত অবস্থায় রনিতা দিদিকে ঠেকাতে নিরুপায় হয়েই একটা থাপ্পড় মারলাম ওর গালে। ভেবেছিলাম এর ফলে ও হয়তো শান্ত হয়ে যাবে। কিন্তু আমার হাতের পাঁচ আঙুলের জোর বোধহয় রনিতা দিদি সেই মুহূর্তে সহ্য করতে পারেনি। দেখলাম মুহূর্তের মধ্যে মাটিতে লুটিয়ে পড়লো সে। ডক্টর আঙ্কেলকে বললাম একবার পরীক্ষা করে দেখতে রনিতা দিদির অবস্থা। আঙ্কেল বললেন হঠাৎ করেই সেন্সলেস হয়ে গেছে, এছাড়া ভয়ের কিছু নেই। সেইসময় ওই বাঁশবাগানে এমন নিশ্চিদ্র অন্ধকারের সৃষ্টি হয়েছিল যে আমরা কেউ কাউকে সামনে থেকে দেখেও চিনতে পারছিলাম না। শুধু মনে হচ্ছিল যেন একটা কালো রঙের অবয়ব সামনে দাঁড়িয়ে আছে। আমাদের ইচ্ছে ছিলো রনিতা দিদিকে আমাদের সঙ্গে নিয়ে আসার। কিন্তু শিউলির অবস্থা তখন অত্যন্ত সংকটজনক থাকার জন্য তাকে ডাক্তার আঙ্কেলের গাড়ির মাঝখানের সিটে শুইয়ে দিতে হয়েছিলো। এদিকে রনিতা দিদিকেও যদি শুইয়ে আনতে হয় তাহলে গাড়িতে আর কারোরই জায়গা হবে না। তাই বাধ্য হয়ে আমরা ওকে ওই কালো রঙের এম্বাসেডরে তুলে দিয়ে ওর চোখে মুখে কিছুটা জল ছিটিয়ে ওখান থেকে বেরিয়ে পড়লাম। ডাক্তার আঙ্কেল বললো ওর জ্ঞান এসে গেছে, এবার ও নিজেই গাড়ি ড্রাইভ করে বাড়ি চলে যেতে পারবে, তাছাড়া ওর বাবার দু'জন শাগরেদ আছেই, তারাই ওকে সাহায্য করবে। তারপর সেখান থেকে ঝড়ের গতিতে গাড়ি চালিয়ে বেরিয়ে গেলাম। ডাক্তার আঙ্কেল বললেন গঙ্গানগর বড়বাজার মার্কেটের কাছে উনি খুব সম্প্রতি একটা বাড়িভাড়া নিয়েছেন .. সেখানেই যেতে বললেন আমাদের।"
★★★★
এতক্ষণ মন্ত্রমুগ্ধের মতো গোগোলের কথাগুলো শুনছিল সুজাতা, হিয়া, পঙ্কজবাবু থেকে শুরু করে এখানে উপস্থিত রেলপাড়ের বস্তির সবাই। খোঁচা খাওয়া বাঘের মতো তো নয়, বলা ভালো হায়নার মতো গর্জন করে উঠে প্রথম নিস্তব্ধতা ভাঙলো সন্দীপ "মিথ্যে মিথ্যে .. এতক্ষণ ধরে যে লম্বা ভাষণ দিলো আপনাদের সবার হিরো মিস্টার অনির্বাণ, পুরোটাই ডাহা মিথ্যে। নিজেকে বাঁচাতে এখন নতুন করে গল্প বানাচ্ছে। ও যে কথাগুলো বললো তার কোনো প্রমাণ আছে ওর কাছে? আর এখানে যে তিনজন প্রত্যক্ষদর্শীর কথা বলা হলো -- তাদের মধ্যে একজন সুবীর, যে ওর নিজের লোক .. ও তো ওর গুরুর জন্য মিথ্যে সাক্ষী দেবেই। আরেকজন হলেন ডক্টর দাশগুপ্ত। খবর নিয়ে জেনেছি এই ভদ্রলোক ওর মামণি অর্থাৎ সুজাতার প্রাক্তন ভাতার .. তাই উনার পক্ষেও মিথ্যে সাক্ষী দেওয়াটাই যুক্তিযুক্ত। আর এই বুড়োভাম স্বপনবাবুর মাথা খারাপ হয়ে গেছে ওর মেয়ের মৃত্যুর শোকে। তাই এখন ভুলভাল বকছে, ওকে দিয়ে আমরা পরে আসল কথাটা কথা বলিয়ে নেবো।"
"এখানে আসার পর থেকেই এই মালটা কিন্তু আমাদের বস্তির গর্ব আমাদের সকলের প্রিয় সুজাতা দিদির সম্পর্কে নোংরা মন্তব্য করে আসছে। আমরা কিন্তু কেউ এটা আর সহ্য করতে পারছি না। গুরু তুমি একবার আদেশ করো মেরে এই লোকটার মুখ ফাটিয়ে দিই এক্ষুনি .." রাগে গরগর করতে করতে কথাগুলো বললো সুবীর।
"এখনো সময় আসেনি বন্ধু, আগে নিজেকে সম্পূর্ণ নিরপরাধ প্রমাণ করি, তারপর তো অন্যের অপরাধের হিসেব করবো সুদে-আসলে। একটু আগে আমার কথাগুলোর সত্যতা যাচাই করার জন্য যে প্রমাণ চাওয়া হয়েছিলো সেই বিষয়ে বলি .. কালকের সমস্ত ঘটনা আমাদের অজান্তেই নিজের মোবাইলে রেকর্ড করে রেখেছিলেন ডক্টর আঙ্কেল .. সো কাইন্ড অফ ইউ ডক্টর আঙ্কেল অ্যান্ড লাভ ইউ। এটা যে তুমি কি ভালো কাজ করেছো, তা তুমি নিজেও জানো না। আর এই সমস্ত প্রমাণ এখানে আসার আগে আমি গোস্বামী আঙ্কেল অর্থাৎ সিনিয়র ইন্সপেক্টর মিস্টার গোস্বামীর হাতে তুলে দিয়ে এসেছি। তিনি এখন অন দ্য ওয়ে, এক্ষুনি এসে পৌঁছবেন এখানে। আর কারোর কিছু বলার আছে এই বিষয়ে?" গম্ভীর গলায় জিজ্ঞাসা করলো গোগোল।
"এবার দয়া করে সবাই চুপ করো, আমাকে কিছু বলতে দাও। আমি এই কথাগুলো বলতেই আজ সুজাতার কাছে ওর বাড়ি এসেছিলাম। তোমার নিশ্চয়ই মনে থাকবে সুজাতা, আমি তোমাকে বলেছিলাম - আমি এখানে থেকেই আমার বাকি জীবনটা কাটাতে চাই। তার উপর কাল রাতের ঘটনার পরে .. এইটুকু বলতেই দেখলাম রাজু হাঁপাতে হাঁপাতে এসে খবর দিলো তোমার ছেলে গোগোলকে নাকি পুলিশ অ্যারেস্ট করতে এসেছে। তারপর তো এখানে আসার পর থেকে একটার পর একটা ঘটনা ঘটেই চলেছে। আমি যে কিছু বলবো সেটার সুযোগই পাচ্ছিনা। হ্যাঁ সমস্ত ঘটনা আমি নিজের সজ্ঞানে রেকর্ডিং করেছি এবং সেটা পুলিশের কাছে জমা দেওয়া হয়েছে কিছুক্ষণ আগে। আমার বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার পর শিউলিকে পরীক্ষা করে দেখলাম ওর পেটের ব্যাথাটা গ্যাস্ট্রিক পেইন ছাড়া আর কিছুই নয়। একটা ইনজেকশন এবং একটা ওরাল মেডিসিন দেওয়ার পর ওর পেটের ব্যথা অনেকটাই কমে গেলো। তারপর ওকে একটা ঘুমের ইনজেকশন দিলাম .. ও ঘুমিয়ে পড়লো। তখন প্রায় ভোর হয়ে এসেছিলো, স্বপনবাবুকে নিশ্চিন্তে বাড়ি যেতে বললাম। উনি যাওয়ার সময় টগরকে নিয়ে যেতে চাইলে নিজের ডিসপেনসারির বেডে যেখানে টগর একটু বিশ্রাম নিচ্ছিলো .. সেখানে এসে দেখলাম ও অকাতরে ঘুমোচ্ছে। আসলে কাল রাত থেকে এতটা অমানুষিক ধকল এবং পরিশ্রম গেছে ওর মন এবং শরীরের উপর দিয়ে তাই ক্লান্তিতে ঘুমিয়ে পড়েছিলো মেয়েটা। আমি বললাম আপনি নিশ্চিন্তে বাড়ি যান, আমি সকালের দিকে আপনার দুই মেয়েকে বাড়িতে পৌঁছে দিয়ে আসবো। তারপর তো এখানে এসে দেখি এই অবস্থা। ওই ইন্সপেক্টর ছোকরাটা এতক্ষণ ধরে যার মৃত্যুর বানানো গল্প সবাইকে শোনাচ্ছিলো সে তো আমার গাড়িতেই বসে আছে। ওর বোন শিউলি অবশ্য এখনো ঘুমোচ্ছে .. বড়ই দুর্বল এখনো বেচারা। আয় মা টগর, তুই নেমে আয় গাড়ি থেকে। তুই নেমে এসে নিজেকে সবার সামনে প্রকাশ করে প্রমাণ কর, যে তুই বেঁচে আছিস।" কথাগুলো বলে কয়েক পা এগিয়ে তার গাড়ির দিকে গিয়ে গাড়ির দরজাটা খুলে দিলেন ডক্টর দাশগুপ্ত। গাড়ি থেকে নামলো টগর .. তার চোখে মুখে তখনো রাতের সেই আতঙ্কের ছাপ।
"এ..এটা কি করে সম্ভব? কি..কিন্তু টগরের লাশটা .. ও..ওটা তো মিথ্যে নয়। ওকে তো আমি নিজে হাতে .." আনমনে কথাগুলো বলে ধপ করে মাটিতে বসে পড়লো সন্দীপ।
★★★★
"এতক্ষণ ধরে আমি ভাবছিলাম আপনি বোধহয় টগরের মৃত্যুর খবরের মতোই একটা মেয়ের রেপ হওয়া এবং তাকে দগ্ধ করে মেরে ফেলার একটা কাল্পনিক গল্প বলছেন। কিন্তু এখন আপনি নিজের মুখে সবার সামনে স্বীকার করলেন যে আপনি নিজে হাতে কাজটা করেছেন! তারমানে আপনি সত্যিই কোন মেয়েকে ;., করে তারপর তাকে জ্যান্ত জ্বালিয়ে দিয়ে হত্যা করেছেন? হায় ভগবান, আমি যেটা ভাবছি তোমরা সবাই কি সেটাই ভাবছো? ওইরকম নিশ্চিদ্র অন্ধকারে যেখানে সামনের পরিচিত মানুষটাকে চেনা যাচ্ছে না, সেখানে জীবনে কোনোদিন তাকে না দেখা বা তার অস্তিত্ব সম্পর্কে না জানা রনিতা দিদিকে কি তুমি টগর ভেবে? হে ঈশ্বর .. এটা যদি সত্যি হয় তাহলে তো প্রলয় ঘটবে। আপনি ভাবতে পারছেন ইন্সপেক্টর সাহেব আপনি কি করেছেন? আপনি কামরাজের মেয়েকে ;., করে খুন করেছেন এবং সেটা সবার সামনে স্বীকার করেছেন। তবে আপনার স্বীকার করা বা না করাতে কিছু যায় আসে না। ডক্টর আঙ্কেলের রেকর্ড করা ভিডিওতে রনিতা দিদির কথাগুলো শুনলেই বোঝা যাবে কালকের ঘটনার মাস্টার প্ল্যান কার ছিলো। বিশ্বাস করুন আমি ভেবেছিলাম আমার মামণির উপর করা আপনার প্রত্যেকটি নোংরা মন্তব্যের জবাব আমি সুদে আসলে উসুল করবো আপনার থেকে। আপনার শরীরের একটা হাড় আজ আস্ত রাখতাম না আমি। কিন্তু এখন এই মুহূর্তে এই কথাটা শোনার পর আমার মাথা কাজ করছে না। কামরাজ নিশ্চয়ই এতক্ষণে খবর পেয়ে গিয়েছে। জানিনা কি অপেক্ষা করে আছে এরপর .." কথাগুলো বলে নিজের মাথায় হাত দিয়ে ক্লাবের সিঁড়িটার উপর বসে পড়লো গোগোল।
"তুমি কোনো অ্যাকশন না নিতেই পারো গুরু। কিন্তু সুজাতা দিদি তো শুধু তোমার একার নয়, উনি আমাদের সকলের .. উনি এই রেলপাড়ের বস্তির গর্ব। সুজাতা দিদির সম্পর্কে, হিয়ার সম্পর্কে, আমাদের ডাক্তারবাবু সম্পর্কে নোংরা কথা তো আমরা কেউ সহ্য করবো না। কামরাজ এসে কি করবে না করবে সেটা উনার ব্যাপার, তার জন্য আমরা চুপ করে বসে থাকবো কেনো? আমরা তো কোনো দোষ করিনি। শাস্তি চাই ওই জানোয়ার সন্দীপের এবং এই মুহূর্তে, এখানেই। বন্ধুগণ তোমরা কি এখনো নীরব দর্শকের মতো দাড়িয়ে থাকবে?" সুবীরের কথাগুলো শেষ হওয়ার আগেই কাঞ্চন, রাজু, কালু, মধু এবং সবশেষে সুবীর ঝাঁপিয়ে পড়লো মাটিতে বসে থাকা সন্দীপের উপর।
মুহূর্তের মধ্যে সন্দীপের পুলিশ ইউনিফর্ম শতচ্ছিন্ন অবস্থায় আলাদা করে দেওয়া হলো তার শরীর থেকে। শুধুমাত্র নিম্নাঙ্গের এবং উর্ধাঙ্গের অন্তর্বাস পরিহিত সন্দীপের উপর শুরু হলো অবিরত কিল, চড়, ঘুঁষি আর লাথির বর্ষণ। ক্রমাগত এইরকম আক্রমণে যখন তার জ্ঞান হারিয়ে ফেলার মতো অবস্থা হলো, সেইসময় সেখানে পুলিশ ফোর্স নিয়ে উপস্থিত হলেন ইন্সপেক্টর গোস্বামী। তার সহকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে সন্দীপের উপর থেকে আক্রমণকারীদের সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করতে লাগলেন তিনি।
ঠিক সেই মুহূর্তে সকলের চেনা সিলভার কালারের Audi গাড়িটা এসে থামলো সেখানে। গাড়িটা থামতেই দরজা খুলে উদ্ভ্রান্তের মতো বেরিয়ে এলো মিস্টার কামরাজ। প্রথমেই তার চোখ গেলো সুজাতার দিকে। কয়েক পা এগিয়ে এসে প্রশ্ন করলো "আচ্ছা আমার মেয়েটা কি আপনাদের বাড়িতে এসেছে? ও যা জেদি মেয়ে .. ও যখন একবার বলেছে আপনার বাড়ির বউ হবে তখন সেটা কেউ আটকাতে পারবে না .. আপনি দেখে নেবেন। আরে বাবা আমি তো মেনে নিয়েছি, তাহলে আপনাদের আপত্তিটা কোথায় বলুন তো? আমি তো সমস্ত পুরনো শত্রুতা ভুলে অনির্বাণকে আমার জামাই হিসেবে গ্রহণ করার কথা বলেছি। কি মুশকিল, কিছু তো বলুন! এইরকম মুখ করে দাঁড়িয়ে আছেন কেনো? ওই দেখো, বোকার মতো কাঁদছে! আচ্ছা ঠিক আছে, আমি কথা দিচ্ছি .. যদি আমার মেয়ের বিয়ে আপনার ছেলের সঙ্গে দেন, তাহলে আমি এই বস্তির দিকে ফিরেও তাকাবো না। এবার খুশি তো?"
সুজাতার কাছ থেকে কোনোরকম উত্তর না পেয়ে তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা হিয়ার কাছে গেলো কামরাজ "দেখো তুমি আমার মেয়ের থেকেও ছোট .. কিন্তু আগের দিন আমি দেখছিলাম তুমি ভীষণ চ্যাটাং চ্যাটাং কথা বলো। সেদিন কিছু বলিনি, তবে আজ বলছি। আমার মেয়ে যখন একবার পছন্দ করেছে অনির্বাণকে, তখন ও কিন্তু ওকে বিয়ে করেই ছাড়বে। তুমি শুধু শুধু এর মধ্যে ঢুকছো কেন আমি তো বুঝতে পারছি না। তুমি বরং ইন্সপেক্টর সেনগুপ্তর সঙ্গে সুখে স্বাচ্ছন্দে সংসার করো। তোমাদের বিয়ে আমি নিজে দাঁড়িয়ে থেকে ধুমধাম করে দেবো। তাহলে তো আর কোনো আপত্তি নেই তোমার? আচ্ছা আমার মেয়েকে কি তুমি দেখেছো? কাল রাতে বন্ধুর বাড়ি যাচ্ছি বলে বেরোনোর পর সেই যে গেলো এখনো বাড়ি ফেরেনি। আরে? একি .. তুমিও এভাবে কাঁদছো কেনো সুজাতার মতো? কিছু হয়েছে নাকি? আমি তো তোমাকে বকিনি .. আমি তো শুধু বলেছি তোমার বিয়েটা অনির্বাণের সঙ্গে হবে না। সেই জন্য কাঁদছো?"
হিয়ার কাছ থেকেও কোনো উত্তর না পেয়ে ক্লাবের সিঁড়ির উপর মাথায় হাত দিয়ে বসে থাকা গোগোলের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো কামরাজ "কি ব্যাপার আমি এখানে এসে এতক্ষণ ধরে সবাইকে জিজ্ঞেস করছি আমার মেয়ের কথা। কেউ কিছু বলছে না, অথচ সবাই কাঁদছে কেনো? ওওওও .. এইবার আমি আসল কথাটা বুঝতে পেরেছি। রনিতা মনে হয় তোমাকে বিয়ের জন্য রাজি করিয়েই ফেলেছে, তাই না? হতেই হবে .. ওইরকম একজন সুন্দরী অ্যাট্রাক্টিভ মেয়েকে রিফিউজ করা তোমার পক্ষে সম্ভব নয়। তার উপর রাজকন্যা এবং রাজত্ব দুটোই একসঙ্গে পাওয়ার লোভ কি কেউ সামলাতে পারে? আচ্ছা ঠিক আছে, সরি সরি এই কথাটা মুখ ফসকে বেরিয়ে গেলো আমার। আমি জানি তুমি ভীষণ সৎ চরিত্রের একজন মানুষ এবং অর্থের উপর তোমার কোনো লোভ নেই। এবার তো বলো আমার মেয়েটা কোথায়! ও কি সত্যিই এখানে আসেনি? কিন্তু আমি তো ওর প্রত্যেকটি বান্ধবীর বাড়িতে ফোন করে খবর নিয়েছি, ও তো কারোর বাড়িতেই যায়নি। ওই দেখো চুপ করে বোকার মত বসে আছে .. আরে বলবে তো আমার মেয়েটা কোথায়! যত খারাপ মানুষই হই না কেনো, আমি তো ওর বাবা .. টেনশন হয় না আমার?"
ততক্ষণে পুলিশ সন্দীপকে রেসকিউ করে নিয়েছে সুবীর এবং তার বন্ধু-বান্ধবদের হাত থেকে। চোখের তলায় গভীর ক্ষতচিহ্ন, ঠোঁটের কোণায় জমাটবাঁধা রক্ত, আর কালশিটে পড়ে যাওয়া সমগ্র মুখমণ্ডল নিয়ে অন্তর্বাস পরিহিত সন্দীপ কোনরকমে ইন্সপেক্টর গোস্বামীর কাঁধে ভর দিয়ে উঠে দাঁড়িয়েছে। কামরাজের কথাগুলো শেষ হওয়ার পর গোগোল তার দিকে তাকিয়ে তারপর নিজের ডানহাতটা উঠিয়ে সন্দীপের দিকে ইশারা করে কম্পিত কন্ঠে বললো "ও জানে আপনার মেয়ের খবর .."
তৎক্ষণাৎ সন্দীপের দিকে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকাতেই চমকে উঠলো কামরাজ, "এ কি? এইরকম অবস্থা কে করলো ওর? তাও আবার পুলিশ ফোর্সের সামনে? আর আমার মেয়ের খবর ও জানবে কি করে? আমার যে মেয়ে আছে, সেটা তো ও জানেই না।"
কামরাজের গলার আওয়াজ শুনে এবং তার রক্তচক্ষুর দিকে তাকিয়ে শরীরের ভেতরে একটা অজানা কাঁপুনি হতে শুরু করলো সন্দীপের। কয়েক মুহূর্তের মধ্যেই নিজের মাথায় হাজারো ভাবনা কিলবিল করতে লাগলো তার। এই পরিস্থিতি থেকে নিজেকে মুক্ত করার কোনো উপায় দেখতে পেলো না সে। তৎক্ষণাৎ তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা ইন্সপেক্টর গোস্বামীর বেল্টের সঙ্গে আটকানো বন্দুকের খাপ থেকে সার্ভিস রিভলভারটা তড়িৎগতিতে বের করে নিলো সন্দীপ। তারপর কাউকে কোনো রিয়্যাকশনের সুযোগ না দিয়ে চোখের পলক পড়ার আগেই নিজের মাথায় রিভলবারটা ঠেকিয়ে গুলি করলো।
মুহূর্তের মধ্যে রক্তাক্ত অবস্থায় মাটিতে ছিটকে পড়লো সন্দীপ। প্রথমে কি ঘটেছে সেটা বুঝতে না পেরে, সবাই কিংকর্তব্যবিমূঢ়ের মতো দাঁড়িয়ে রইলো। তারপর ইন্সপেক্টর গোস্বামী মাটিতে বসে সন্দীপের দেহ পরীক্ষা করে তারপর উঠে দাঁড়িয়ে নিজের মাথা থেকে টুপিটা খুলে নিয়ে ঘাড় নেড়ে বললেন "হি ইজ নো মোর .."
(ক্রমশ)
ভালো লাগলে আপনাদের মূল্যবান মতামত জানাবেন
লাইক এবং রেপু দিয়ে উৎসাহিত করবেন
The following 15 users Like Bumba_1's post:15 users Like Bumba_1's post
• Baban, Bichitro, Boti babu, Chandan, Crushed_Burned, ddey333, Mampi, Monen2000, nextpage, Rinkp219, Roy234, saha053439, Sanjay Sen, Somnaath, tuhin009
Posts: 1,242
Threads: 2
Likes Received: 2,219 in 1,014 posts
Likes Given: 1,615
Joined: Jul 2021
Reputation:
658
আমি মুগ্ধ, আমি হতবাক, আমি অভিভূত তোমার এই পর্ব পড়ার পর। রহস্য-রোমাঞ্চ গল্পে সবথেকে যে জিনিসটা পাঠকদের আকর্ষণ করে সেটা হলো চমক। আর তোমার মতো এইরকম চমক সৃষ্টি করতে আমি আর কাউকে দেখিনি। টিজার দেওয়ার পর যখন আমরা বিভিন্ন রকম মন্তব্য করি তখন কি রকম একটা বোকা বোকা মুখ করে সবার 'হ্যাঁ' তে হ্যাঁ মেলাও। অথচ ভেতরে ভেতরে নিজের প্ল্যানমাফিক কাজ করতে থাকো।
সত্যি, আমি অন্তত ভাবতে পারিনি টগর আবার ফিরে আসবে। রনিতাকে আগে থেকে যতই না চিনুক এবং জঙ্গলের মধ্যে গভীর অন্ধকারে যতই উল্টোদিকের মানুষটার সম্পর্কে কোনও ধারণা না করা যাক (এই দুটো জিনিসই সুকৌশলে উল্লেখ করেছো বারংবার) তবুও রনিতাকে টগর বলে ভুল করাটা উচিত হয়নি সন্দীপের মতো পুলিশ অফিসারের। যদিও গল্পের স্বার্থে এটার প্রয়োজন ছিল বলেই আমি মনে করি। রনিতা যেরকমই স্বভাবের মেয়ে হোক না কেন, এরকম আকস্মিকভাবে তার চলে যাওয়ার খবরটা শুনে খুবই খারাপ লাগছিল। সন্দীপকে বেধারক ঠ্যাঙানি দেওয়া হয়েছে ঠিকই, তবে গোগোলের হাতে কয়েক ঘা খেলে আরো বেশি খুশি হতাম। পিতা-মাতা যতই অসৎ এবং খারাপ মানুষ হোক না কেন তাদের সন্তানকে সর্বদা ভালোবাসে। তার মেয়ে রনিতাকে খুঁজে না পেয়ে বস্তিতে এসে সেখানকার প্রত্যেকটি মানুষের কাছে তার মেয়ের সম্পর্কে জানতে চাওয়ার ব্যাপারটা সত্যিই মন ছুঁয়ে গেল, দুর্দান্তভাবে ফুটিয়ে তুলেছো ওই সিকোয়েন্সটা। আর সবশেষে সন্দীপের আত্মহত্যা -- গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠলো। এইভাবেই এগিয়ে চলো, জয় হোক তোমার
Posts: 4,428
Threads: 6
Likes Received: 9,218 in 2,849 posts
Likes Given: 4,330
Joined: Oct 2019
Reputation:
3,225
(23-12-2022, 10:02 PM)Sanjay Sen Wrote: আমি মুগ্ধ, আমি হতবাক, আমি অভিভূত তোমার এই পর্ব পড়ার পর। রহস্য-রোমাঞ্চ গল্পে সবথেকে যে জিনিসটা পাঠকদের আকর্ষণ করে সেটা হলো চমক। আর তোমার মতো এইরকম চমক সৃষ্টি করতে আমি আর কাউকে দেখিনি। টিজার দেওয়ার পর যখন আমরা বিভিন্ন রকম মন্তব্য করি তখন কি রকম একটা বোকা বোকা মুখ করে সবার 'হ্যাঁ' তে হ্যাঁ মেলাও। অথচ ভেতরে ভেতরে নিজের প্ল্যানমাফিক কাজ করতে থাকো।
সত্যি, আমি অন্তত ভাবতে পারিনি টগর আবার ফিরে আসবে। রনিতাকে আগে থেকে যতই না চিনুক এবং জঙ্গলের মধ্যে গভীর অন্ধকারে যতই উল্টোদিকের মানুষটার সম্পর্কে কোনও ধারণা না করা যাক (এই দুটো জিনিসই সুকৌশলে উল্লেখ করেছো বারংবার) তবুও রনিতাকে টগর বলে ভুল করাটা উচিত হয়নি সন্দীপের মতো পুলিশ অফিসারের। যদিও গল্পের স্বার্থে এটার প্রয়োজন ছিল বলেই আমি মনে করি। রনিতা যেরকমই স্বভাবের মেয়ে হোক না কেন, এরকম আকস্মিকভাবে তার চলে যাওয়ার খবরটা শুনে খুবই খারাপ লাগছিল। সন্দীপকে বেধারক ঠ্যাঙানি দেওয়া হয়েছে ঠিকই, তবে গোগোলের হাতে কয়েক ঘা খেলে আরো বেশি খুশি হতাম। পিতা-মাতা যতই অসৎ এবং খারাপ মানুষ হোক না কেন তাদের সন্তানকে সর্বদা ভালোবাসে। তার মেয়ে রনিতাকে খুঁজে না পেয়ে বস্তিতে এসে সেখানকার প্রত্যেকটি মানুষের কাছে তার মেয়ের সম্পর্কে জানতে চাওয়ার ব্যাপারটা সত্যিই মন ছুঁয়ে গেল, দুর্দান্তভাবে ফুটিয়ে তুলেছো ওই সিকোয়েন্সটা। আর সবশেষে সন্দীপের আত্মহত্যা -- গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠলো। এইভাবেই এগিয়ে চলো, জয় হোক তোমার
তোমার মতো একজন বুদ্ধিদীপ্ত পাঠকের কাছ থেকে এই ধরনের মন্তব্য পাওয়ার পর লেখকের সেই অর্থে কিছু বলার থাকে না। তবে এ কথা অবশ্যই বলবো রনিতাকে দেখেনি বা রনিতার অস্তিত্ব সম্পর্কে যেরকম ওয়াকিবহাল ছিলো না সন্দীপ, ঠিক তেমনিই টগরকেও মাত্র দু'বার দেখেছিলো সন্দীপ .. তাও দুজনের মধ্যে কোনো শারীরিক স্পর্শ হয়নি। তাই অত্যন্ত উত্তেজিত অবস্থায় এবং ভেতরে চাপা ঈর্ষা, ক্ষোভ এবং রাগ নিয়ে কোন নারীকে সে ভোগ করছে সেটা ওই সিচুয়েশনে বোঝা সম্ভবপর ছিলো না সন্দীপের পক্ষে। অসংখ্য ধন্যবাদ সঙ্গে থাকো এবং পড়তে থাকো।
Posts: 6,108
Threads: 41
Likes Received: 12,075 in 4,138 posts
Likes Given: 5,306
Joined: Jul 2019
Reputation:
3,734
একদম সে ওয়াক্ত বাদল দিয়ে, হালাত বদল দিয়ে, জাজবাত বাদল দিয়ে দাদা!!
কি ছিল এটা!! যদিও আমি একটা শান্তি পেলাম এটা জেনে যে টগর রানী ফরফরানী আজও আমাদেরর মাঝে আছে। যদিও আগের পর্বেই তুমি জানিয়েছিলে পরের পর্বের জন্য অপেক্ষায় থাকতে তখন ভেবেছিলাম সোজা পথেই যাচ্ছি তো আমি? কারণ থ্রিলারের নিয়ম তো ওতো সোজা নয়। বিশেষ করে শেষ অংশে গোগোলের আগমন হতেই মস্তিস্ক নানাকিছু ভাবতে শুরু করেছিল aকিন্তু এমন কিছু গ্রান্ড ভাবে প্রকাশিত হতে চলেছে ভাবিনি।
খলনায়িকা যতই উগ্র হোক না কেন তার এমন পরিণতি মেনে নেওয়া কষ্টকর। এখানে অবশ্য খলনায়ক হলে নিজের মগজের সবচেয়ে ঘৃণ্য শাস্তিটাই যোগ্য ভেবে শান্তি পেতাম কিন্তু একটা নারীর এমন পরিণতি মেনে নিতে অসুবিধা হচ্ছে এই যা..... বিশেষ করে আগের পর্বের সাথে যদি আজকের পর্ব মেলাই তাহলে
ওই শেষ মুহূর্তে নিজের একজনকে কাছে পাবার ইচ্ছেটুকু, নিজের ভেতরের নারী আর তার ভালোবাসার স্বাদ পাবার বিফল চেষ্টা টুকু ভাবলে সত্যিই কষ্ট হয়।
আর সন্দীপ বাবুর অংশটা সবচেয়ে বেশি সুখ দিলো আমায়। তুমি জানোই ওকে আমি কত্ত ভালোবাসতাম।
আর কামরাজের পরিণতি উফফফফফ। আজকের পর্ব নামকরণ সত্যিই যথার্থ। কিন্তু প্রশ্ন একটাই। সবচেয়ে বড়ো শাস্তিটা কে পেলো? সন্তান হারা পিতা? লজ্জায় অপমানে হেয় হয়ে যাওয়া হেরো অফিসার? ভালোবাসার মূল্য না বুঝেও শেষ সময় কাছের কাউকে আঁকড়ে ধরতে চাওয়া এক নারী?
অসাধারণ দাদা ♥️♥️♥️♥️♥️
Posts: 4,428
Threads: 6
Likes Received: 9,218 in 2,849 posts
Likes Given: 4,330
Joined: Oct 2019
Reputation:
3,225
(23-12-2022, 10:43 PM)Baban Wrote: একদম সে ওয়াক্ত বাদল দিয়ে, হালাত বদল দিয়ে, জাজবাত বাদল দিয়ে দাদা!!
কি ছিল এটা!! যদিও আমি একটা শান্তি পেলাম এটা জেনে যে টগর রানী ফরফরানী আজও আমাদেরর মাঝে আছে। যদিও আগের পর্বেই তুমি জানিয়েছিলে পরের পর্বের জন্য অপেক্ষায় থাকতে তখন ভেবেছিলাম সোজা পথেই যাচ্ছি তো আমি? কারণ থ্রিলারের নিয়ম তো ওতো সোজা নয়। বিশেষ করে শেষ অংশে গোগোলের আগমন হতেই মস্তিস্ক নানাকিছু ভাবতে শুরু করেছিল aকিন্তু এমন কিছু গ্রান্ড ভাবে প্রকাশিত হতে চলেছে ভাবিনি।
খলনায়িকা যতই উগ্র হোক না কেন তার এমন পরিণতি মেনে নেওয়া কষ্টকর। এখানে অবশ্য খলনায়ক হলে নিজের মগজের সবচেয়ে ঘৃণ্য শাস্তিটাই যোগ্য ভেবে শান্তি পেতাম কিন্তু একটা নারীর এমন পরিণতি মেনে নিতে অসুবিধা হচ্ছে এই যা..... বিশেষ করে আগের পর্বের সাথে যদি আজকের পর্ব মেলাই তাহলে
ওই শেষ মুহূর্তে নিজের একজনকে কাছে পাবার ইচ্ছেটুকু, নিজের ভেতরের নারী আর তার ভালোবাসার স্বাদ পাবার বিফল চেষ্টা টুকু ভাবলে সত্যিই কষ্ট হয়।
আর সন্দীপ বাবুর অংশটা সবচেয়ে বেশি সুখ দিলো আমায়। তুমি জানোই ওকে আমি কত্ত ভালোবাসতাম।
আর কামরাজের পরিণতি উফফফফফ। আজকের পর্ব নামকরণ সত্যিই যথার্থ। কিন্তু প্রশ্ন একটাই। সবচেয়ে বড়ো শাস্তিটা কে পেলো? সন্তান হারা পিতা? লজ্জায় অপমানে হেয় হয়ে যাওয়া হেরো অফিসার? ভালোবাসার মূল্য না বুঝেও শেষ সময় কাছের কাউকে আঁকড়ে ধরতে চাওয়া এক নারী?
অসাধারণ দাদা ♥️♥️♥️♥️♥️
প্রথমেই জানাই অসংখ্য ধন্যবাদ পাশে থাকার জন্য। তুমি যে তিনজনের শাস্তির কথা বলেছো .. অর্থাৎ পিতা হিসেবে কামরাজ, ব্যর্থ এবং হেরে যাওয়া পুলিশ অফিসার হিসেবে সন্দীপ, আর অবশ্যই last but not the least রনিতা। এরা তিনজনই শাস্তি পেয়েছে একথা তো ধ্রুবসত্য। কিন্তু এই পর্বে এরা তিনজন ছাড়াও আরেকজনের মানসিক শাস্তির কথা আমি হাল্কা করে হলেও ছুঁয়ে গিয়েছি। যদিও সেই ব্যক্তি কোনো অপরাধে অপরাধী নয়। তার নাম আমি করবো না .. তুমি বুদ্ধিমান ব্যক্তি নিজেই বুঝে নাও।
•
Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,450 in 27,681 posts
Likes Given: 23,741
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,263
ভারত জোড়োর ঠেলায় আজ একটু আগে কোনোরকমে বাড়ির সঙ্গে জুড়লাম , কাল পড়বো তবে দেখি যদি রেপু থাকে তবে দিচ্ছি
Posts: 1,473
Threads: 7
Likes Received: 2,458 in 929 posts
Likes Given: 2,453
Joined: Mar 2022
Reputation:
512
শাস্তি টা তো ছিলই তবে বড় ছিল চমক।
পাশার দান কেমন করে পাল্টে যায় সেটাই দেখলাম।
আমার তো খুব করে ইচ্ছে করছিলো গোগোলের হাতে কয়েক ঘা খাক এই সন্দ্বীপ। ওর ঐ পাপী মুখে সুজাতা আর গোগোলে কে নিয়ে যে কথা গুলো বলেছে সেটা শোনার পর তো গোগোলের হাতে দুটো খাওয়া উচিত ছিল।
কর্মফল পর্বের মন্তব্যে বলেছিলাম একটা আশার আলো দেখেছি সেটাতেই বিশ্বাস রেখেছিলাম। আর তার প্রতিদানরূপ আজকের চমৎকার পর্বটা পেলাম। গল্প হয়তো শেষে দিকে চলে এসেছে আরও জমজমাট হবে।
হাত বাড়িয়ে ছুঁই না তোকে, মন বাড়িয়ে ছুঁই।
দুইকে আমি এক করি না, এক কে করি দুই।।
Posts: 1,944
Threads: 10
Likes Received: 2,033 in 876 posts
Likes Given: 1,055
Joined: May 2019
Reputation:
16
ami puro speechless ei update pore..oshadharon
Posts: 1,158
Threads: 0
Likes Received: 1,385 in 928 posts
Likes Given: 3,576
Joined: Apr 2022
Reputation:
146
24-12-2022, 12:08 AM
(This post was last modified: 24-12-2022, 12:52 AM by Boti babu. Edited 2 times in total. Edited 2 times in total.)
না দাদা আজ আর ভাষা খুজে পাচ্ছি না । কি বলব দাদা এমন থ্রিলার পড়ে। যার পরতে পরতে এত চমক। আমার মনে হয় কোনও মুভি দেখেও পাইনি এতো পরিমাণ চমক দাদা । রনিতা সত্যিই মন থেকে গোগোলকে ভালোবেসে ছিল জীবনের শেষ সময়ও গোগোলর কথাই বলছিল। টগরের জন্য যেমন আনন্দ হচ্ছে ঠিক ততটাই আজ রনিতার জন্য কষ্ট হচ্ছে যে দাদা। সন্দীপ এর কর্মের ফলটা ভীষন সহজ হয়ে গেল। একটা মেয়ে হাড়া বাবার কাকুতি মনে কষ্ট দিচ্ছে। একটা মা ছেলেকে ভেগে যেতে বলছে মনে কেমন ভয় ঢুকলে এমন পাগলামি করতে পারে পুলিশের সামনে। এতো কিছুর মাঝে হিয়া আজ আর নেই। মনে হচ্ছে এই পর্ব পড়ে আমার মাথা একদম খারাপ হয়ে গেছে।
বুকের একদিকে যে খুব আনন্দ অনুভব হচ্ছে আর আরেক দিকে খুব কষ্ট।
এমন পর্ব পড়েই লেখকের লেখার প্রমে পড়ে পাঠকরা । আগের পর্ব পড়ে সত্যিই আপনার উপর খুব রাগ হয়েছিল । আজ ভেবেছিলাম আজকের পর্ব পড়ে আপনার সাথে ঝগড়া করবো। কিন্তু এসে দেখি আপনিতো পুরো মাথায় নষ্ট করে দিয়েছেন।
সত্যি ভাবতাম গল্প পড়ে একটা লাইক একটা রেপু দিয়ে লেখকদের আমরা উদ্ধার করে ফেলি কিন্তু আপনার এমন লেখা বারবার চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় আমরা কতটা ভুল। উল্টো আপনারা লেখরা আমাদের এমন সব গল্প উপহার দিয়ে উদ্ধার করেন বরাবর।
কোনও শব্দ নেই আপনার লেখার গুনগান করার আপনার লেখার প্রতিদ্বন্দ্বী এই মুহূর্তে এই ফোরামে কেউ নেই দাদা । আপনার প্রতিদ্বন্দ্বী আপনি নিজেই। একজন পাঠক হিসেবে যা যা আশা করে থাকি আপনি সব সময় তার থেকে বেশিই দেন আমাদের এখন পাঠক হিসেবে আর কি চাইতে পারি আপনার কাছে!!!!!
যে কথা গুলো বললাম দাদা সব মন থেকে বলেছি। কুর্নিশ জানাই আপনাকে আপনার লেখাকে। ভালো থাকবেন সব সময় আর এ ভাবেই আপনার পাঠকদের আপনার লেখে দিয়ে বোক বানিয়ে চমৎকৃত করতে থাকবেন। শেষে বুক ভরা ভালোবাসা রইলো।
আমাকে আমার মত থাকতে দাও
Posts: 907
Threads: 2
Likes Received: 459 in 407 posts
Likes Given: 830
Joined: Jul 2019
Reputation:
7
দাদা তোমার লেখার কোনো জবাব নাই একদম ফাটিয়ে দিয়েছো ....... মারাত্মক আপডেট
Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,450 in 27,681 posts
Likes Given: 23,741
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,263
বড়ো , খুব চমকপ্রদ আপডেট !!
গল্প নিয়ে আর কি বলবো , বুম্বা মহারাজের জয় হোক !!!
Posts: 4,428
Threads: 6
Likes Received: 9,218 in 2,849 posts
Likes Given: 4,330
Joined: Oct 2019
Reputation:
3,225
(23-12-2022, 11:19 PM)ddey333 Wrote: ভারত জোড়োর ঠেলায় আজ একটু আগে কোনোরকমে বাড়ির সঙ্গে জুড়লাম , কাল পড়বো তবে দেখি যদি রেপু থাকে তবে দিচ্ছি
দারুন বললে
(24-12-2022, 08:50 AM)ddey333 Wrote: বড়ো , খুব চমকপ্রদ আপডেট !!
গল্প নিয়ে আর কি বলবো , বুম্বা মহারাজের জয় হোক !!!
অনেক ধন্যবাদ
Posts: 4,428
Threads: 6
Likes Received: 9,218 in 2,849 posts
Likes Given: 4,330
Joined: Oct 2019
Reputation:
3,225
24-12-2022, 09:33 AM
(This post was last modified: 24-12-2022, 09:34 AM by Bumba_1. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
(23-12-2022, 11:33 PM)nextpage Wrote: শাস্তি টা তো ছিলই তবে বড় ছিল চমক।
পাশার দান কেমন করে পাল্টে যায় সেটাই দেখলাম।
আমার তো খুব করে ইচ্ছে করছিলো গোগোলের হাতে কয়েক ঘা খাক এই সন্দ্বীপ। ওর ঐ পাপী মুখে সুজাতা আর গোগোলে কে নিয়ে যে কথা গুলো বলেছে সেটা শোনার পর তো গোগোলের হাতে দুটো খাওয়া উচিত ছিল।
কর্মফল পর্বের মন্তব্যে বলেছিলাম একটা আশার আলো দেখেছি সেটাতেই বিশ্বাস রেখেছিলাম। আর তার প্রতিদানরূপ আজকের চমৎকার পর্বটা পেলাম। গল্প হয়তো শেষে দিকে চলে এসেছে আরও জমজমাট হবে।
প্রথমেই জানাই অনেক ধন্যবাদ হ্যাঁ, গোগোলের হাতে মার খেলে এবং সেইসময় কিছু ডায়লগবাজি হলে গ্যালারিতে হাজার হাজার হাততালি পড়তো ঠিকই, কিন্তু সন্দীপ স্বয়ং ভগবানের কাছ থেকে এরকম অপ্রত্যাশিত এবং সাংঘাতিক একটা মার খেলো যে তাকে আত্মহননের পথ বেছে নিতে হলো। কারণ সন্দীপ ভালো করেই বুঝতে পেরেছিল সে নিজের তৈরি করা জালে নিজেই আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে গেছে। এখান থেকে বেরোনোর আর কোনো পথ নেই।
আর উপন্যাস শেষ হতে যাওয়ার প্রসঙ্গে বলি .. এখানে শতকরা ১০০% পাঠকবন্ধুরা মনে করছেন পিতৃমাতৃহীন হওয়ার পর থেকেই তো গোগোল গোলকধাঁধায় ঢুকে পড়েছে এবং আজও তার মধ্যে দিয়েই যাচ্ছে, হয়তো এবার বেরোনোর একটা উপায় পেলেও পেতে পারে সে। তাই এবার উপন্যাস সম্ভবত শেষ হয়ে যাবে। কিন্তু গোলকধাঁধায় গোগোল অর্থাৎ এই উপন্যাসের নামের সার্থকতা এখনো আসেইনি। পিকচার এখনো অনেক বাকি আছে বন্ধুবর। প্রকৃত অর্থে কোনো গোলকধাঁধাতেই পড়েনি আমাদের গল্পের মেন প্রডাগোনিস্ট গোগোল। এখনো অনেক চমক বাকি .. সঙ্গে থাকো এবং পড়তে থাকো।
Posts: 4,428
Threads: 6
Likes Received: 9,218 in 2,849 posts
Likes Given: 4,330
Joined: Oct 2019
Reputation:
3,225
(23-12-2022, 11:59 PM)bumbad663 Wrote: ami puro speechless ei update pore..oshadharon
অনেক ধন্যবাদ সঙ্গে থাকুন
Posts: 4,428
Threads: 6
Likes Received: 9,218 in 2,849 posts
Likes Given: 4,330
Joined: Oct 2019
Reputation:
3,225
(24-12-2022, 12:08 AM)Boti babu Wrote: না দাদা আজ আর ভাষা খুজে পাচ্ছি না । কি বলব দাদা এমন থ্রিলার পড়ে। যার পরতে পরতে এত চমক। আমার মনে হয় কোনও মুভি দেখেও পাইনি এতো পরিমাণ চমক দাদা । রনিতা সত্যিই মন থেকে গোগোলকে ভালোবেসে ছিল জীবনের শেষ সময়ও গোগোলর কথাই বলছিল। টগরের জন্য যেমন আনন্দ হচ্ছে ঠিক ততটাই আজ রনিতার জন্য কষ্ট হচ্ছে যে দাদা। সন্দীপ এর কর্মের ফলটা ভীষন সহজ হয়ে গেল। একটা মেয়ে হাড়া বাবার কাকুতি মনে কষ্ট দিচ্ছে। একটা মা ছেলেকে ভেগে যেতে বলছে মনে কেমন ভয় ঢুকলে এমন পাগলামি করতে পারে পুলিশের সামনে। এতো কিছুর মাঝে হিয়া আজ আর নেই। মনে হচ্ছে এই পর্ব পড়ে আমার মাথা একদম খারাপ হয়ে গেছে।
বুকের একদিকে যে খুব আনন্দ অনুভব হচ্ছে আর আরেক দিকে খুব কষ্ট।
এমন পর্ব পড়েই লেখকের লেখার প্রমে পড়ে পাঠকরা । আগের পর্ব পড়ে সত্যিই আপনার উপর খুব রাগ হয়েছিল । আজ ভেবেছিলাম আজকের পর্ব পড়ে আপনার সাথে ঝগড়া করবো। কিন্তু এসে দেখি আপনিতো পুরো মাথায় নষ্ট করে দিয়েছেন।
সত্যি ভাবতাম গল্প পড়ে একটা লাইক একটা রেপু দিয়ে লেখকদের আমরা উদ্ধার করে ফেলি কিন্তু আপনার এমন লেখা বারবার চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় আমরা কতটা ভুল। উল্টো আপনারা লেখরা আমাদের এমন সব গল্প উপহার দিয়ে উদ্ধার করেন বরাবর।
কোনও শব্দ নেই আপনার লেখার গুনগান করার আপনার লেখার প্রতিদ্বন্দ্বী এই মুহূর্তে এই ফোরামে কেউ নেই দাদা । আপনার প্রতিদ্বন্দ্বী আপনি নিজেই। একজন পাঠক হিসেবে যা যা আশা করে থাকি আপনি সব সময় তার থেকে বেশিই দেন আমাদের এখন পাঠক হিসেবে আর কি চাইতে পারি আপনার কাছে!!!!!
যে কথা গুলো বললাম দাদা সব মন থেকে বলেছি। কুর্নিশ জানাই আপনাকে আপনার লেখাকে। ভালো থাকবেন সব সময় আর এ ভাবেই আপনার পাঠকদের আপনার লেখে দিয়ে বোক বানিয়ে চমৎকৃত করতে থাকবেন। শেষে বুক ভরা ভালোবাসা রইলো।
এত সুন্দর আর মিষ্টি করে বললে যে এরপর আর কোনো কথা বলার থাকে না। এইরকম মন্তব্য পেলে লেখার ইচ্ছা হাজার গুণ বেড়ে যায়। ভালো হোক আর মন্দ সব মানুষেরই মৃত্যু সর্বদা দুঃখের এবং কষ্টের। রনিতার মৃত্যুর সিকোয়েন্স লিখতে লিখতে আমারও হাত কাঁপছিলো। কিন্তু কি করবো বলো .. এটা বোধহয় হওয়ারই ছিলো। সঙ্গে থাকো এবং অবশ্যই পড়তে থাকো।
Posts: 4,428
Threads: 6
Likes Received: 9,218 in 2,849 posts
Likes Given: 4,330
Joined: Oct 2019
Reputation:
3,225
(24-12-2022, 02:49 AM)Rinkp219 Wrote: দাদা তোমার লেখার কোনো জবাব নাই একদম ফাটিয়ে দিয়েছো ....... মারাত্মক আপডেট
অসংখ্য ধন্যবাদ সঙ্গে থাকো এবং পড়তে থাকো
•
Posts: 1,379
Threads: 2
Likes Received: 1,412 in 975 posts
Likes Given: 1,720
Joined: Mar 2022
Reputation:
81
একেই বোধহয় বলে এলাম দেখলাম আর জয় করলাম। এই আপডেটের মাধ্যমে শুধু আমার নয়, তোমার গল্প যারা follow করে, তাদের সবার মন জয় করে নিয়েছো তুমি। আলাদা করে বিশ্লেষণে যাওয়ার প্রয়োজন নেই, এটাই বলার যে একদম প্রকৃত থ্রিলার উপন্যাসের মতোই এগোচ্ছে এটা। শুধু চমকের পর চমক। গোগোলের শত্রুদের মধ্যে এখন শুধু হারাধনের দুটি ছেলে বর্তমান। কামরাজ আর মানিক সামন্ত - বাকিরা সব ধীরে ধীরে ভ্যানিশ। এদের মধ্যে কামরাজ মানসিকভাবে শাস্তি পেলেও শারীরিকভাবে অবশ্য এখনো পায়নি। অপেক্ষা করে আছি এরপরে কোন দিকে এগোয়ে এই উপন্যাস।
Posts: 4,428
Threads: 6
Likes Received: 9,218 in 2,849 posts
Likes Given: 4,330
Joined: Oct 2019
Reputation:
3,225
(24-12-2022, 11:14 AM)Somnaath Wrote: একেই বোধহয় বলে এলাম দেখলাম আর জয় করলাম। এই আপডেটের মাধ্যমে শুধু আমার নয়, তোমার গল্প যারা follow করে, তাদের সবার মন জয় করে নিয়েছো তুমি। আলাদা করে বিশ্লেষণে যাওয়ার প্রয়োজন নেই, এটাই বলার যে একদম প্রকৃত থ্রিলার উপন্যাসের মতোই এগোচ্ছে এটা। শুধু চমকের পর চমক। গোগোলের শত্রুদের মধ্যে এখন শুধু হারাধনের দুটি ছেলে বর্তমান। কামরাজ আর মানিক সামন্ত - বাকিরা সব ধীরে ধীরে ভ্যানিশ। এদের মধ্যে কামরাজ মানসিকভাবে শাস্তি পেলেও শারীরিকভাবে অবশ্য এখনো পায়নি। অপেক্ষা করে আছি এরপরে কোন দিকে এগোয়ে এই উপন্যাস।
খুব ভালো লাগে, এই ধরনের মন্তব্য পেলে। প্রথমেই জানাই অনেক ধন্যবাদ শারীরিক কষ্ট এবং শাস্তির থেকে অনেক সময় মানসিক কষ্ট অত্যাধিক বেদনাদায়ক হয়ে ওঠে। তবে আমি নিজেও জানিনা এই উপন্যাসে কার জন্য কি অপেক্ষা করে আছে। চরিত্ররা নিজেরা যেটা মনে করবে সেটাই হবে। সঙ্গে থাকো এবং অবশ্যই পড়তে থাকো।
|