Thread Rating:
  • 159 Vote(s) - 3.41 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
WRITER'S SPECIAL গোলকধাঁধায় গোগোল (সমাপ্ত)
[Image: Polish-20221202-172311778.jpg]

(৮)

সব শব্দ ঘুমিয়ে পড়ার পর, নিঃশব্দরা ঘুমন্ত ঘুমে জেগে ওঠে! এই অমোঘ নিঃসঙ্গ নিঃশব্দ শিশির ভেজা চোখের পাতায় ভীষণভাবে অনিন্দ্য সুন্দর হয়ে ওঠে, যখন প্রেম এসে তাকে এক সমুদ্র ছোঁয়া দিয়ে যায়! হিয়া তার প্রেমকে অহর্নিশ এভাবেই চলতে দেখতে চায়। এই প্রেম তার জীবনধর্মী চেতনায় প্রাণিত শক্তি সঞ্চার করে। কিছু একটা পুড়ে ছাই হবার পর সেখান থেকেই জন্ম নেয় নতুন ভালোবাসা। যা কিনা তাকে নিয়ে সমস্ত সময় আদ্যোপান্ত ভাবে খেলা করে। জীবনবোধের গোপন সূত্রই হলো প্রেম। এই বোধই কোনো কিছু সৃষ্টির জন্য প্রস্তুত হয়ে থাকে। এরই প্রত্যন্তে ডুবে যায় অপ্রমেয় ভালোবাসা, যাকে হিয়া অতি নিজের সবকিছু উজাড় করে ভালোবাসে।

"কি গো .. কি করছো এখন? আমার অ্যালারামের ঘড়ি .. তোমার দায়িত্ব ছিলো না আমার ঘুম ভাঙানোর? ফোন করোনি কেনো? খুব রাগ করেছি কিন্তু আমি .." গোগোলের মোবাইলে ফোন করে আড়মোড়া ভাঙতে ভাঙতে জড়ানো কন্ঠে কথাগুলো বললো হিয়া।

"সরি সরি এক্সট্রিমলি সরি .. কাল হঠাৎ করেই একটা কাজ এসে পড়েছিল, সেটা মিটিয়ে ফিরতে ফিরতে অনেকটাই রাত হয়ে গিয়েছিল, তাই আজ সকালে উঠতে একটু .. আমি তোমাকে ফোন করতেই যাচ্ছিলাম .. তার আগেই তুমি করে দিলে .." হিয়াকে প্রশ্রয় দেওয়ার ভঙ্গিতে উত্তর করলো গোগোল।

"ওসব আমি কিছু জানি না .. আমি এখন ভীষণ রেগে আছি। অন্যায় করেছো তার শাস্তি তো পেতেই হবে .. এখন আমার একটা, দুটো, তিনটে .. না না, লটস এন্ড লটস এন্ড লটস অফ হামি চাই .. তারপর ওখানে গিয়ে বাকিটা দেখে নিচ্ছি। চলো চলো শুরু হয়ে যাও .." আদুরে গলায় বললো হিয়া।

হিয়াকে ওভার ফোন তার দাবি মতো উপর্যুপরি চুম্বন প্রদান করার পর গোগোল জিজ্ঞাসা করলো "অ্যালারামটা আবার কি গো? আমার নতুন নামকরণ নাকি?"

"আরে বকুরাম .. ওটা অ্যালার্ম ..  অ্যালার্ম ক্লক .. আমি আদর করে অ্যালারাম বলেছি .. কিচ্ছু বোঝেনা লাটসাহেব .. এই মানুষটাকে নিয়ে যে আমি কি করি!!" খিলখিল করে হাসতে হাসতে উত্তর দিলো হিয়া।

"আচ্ছা বুঝলাম .. ঠিক আছে শোনো না, এখন রাখছি। একটু কাজ আছে, বেরোতে হবে। বিকেলের দিকে তো দেখা হচ্ছেই .. তখন কথা হবে। লাভ ইউ .. বাই .." এই বলে গোগোল ফোনটা রেখে দেওয়ার আগে "ধুর ভাল্লাগেনা .. একটা আনরোমান্টিক খারুস লোক আমার কপালে জুটেছে।" হিয়ার মুখে এইরূপ দুষ্টু-মিষ্টি ভর্ৎসনা সহ্য করতে হলো তাকে।

★★★★

লাভ অ্যাট ফার্স্ট সাইট কথাটা যদি সত্যি হয় তাহলে সেটা শুধুমাত্র তোমার জন্য .. তোমাকে ভালোবাসি বলে। প্রথম দেখায় য‌দি কা‌ছে পাওয়া যায়, তাহলে আমি তো সবসময় তোমার কাছেই রয়েছি। কাছে থাকতে গেলে বুঝি শারীরিকভাবে থাকতে হয়? মনটাই তো আসল। তোমার সু‌মিষ্ট হা‌সি মাখা ঠোঁট, অপলক চাহনি। ভালো না বেসে কি থাকা যায়! আমার স্বপ্নগুলো বারবার আটকে যায় তোমার রঙিন স্বপ্নের চিলেকোঠায়। মন খারাপের বাতায়নে জানলা খোলা রেখো, পালিয়ে যাবার ইচ্ছে হলেই আমায় কাছে ডেকো। তোমার জন্য এক ফালি চাঁদ .. জ্যোৎস্নামাখা রাত, তোমার জন্য একগুচ্ছ গোলাপ .. হলুদ কিংবা লাল। তুমিই তো আমার সুখ দুঃখের সঙ্গী। তেষ্টা পেলে প্রেমের জোয়ার আনবে ডেকে এই শুষ্ক বুকে। তুমিই তো প্রেমের ফুল ফোটাবে পাথর শিলায়, মিষ্টি প্রেমের রঙ ছড়াবে শিরায় শিরায়। তোমার হাতে হাত রেখে পাড়ি দেবো সব বাধা, তোমার চোখে চোখ রেখে ভুলে যাই সব ব্যথা। তোমার কোলে মাথা রেখে ঘুচে যায় অস্থিরতা, তোমার প্রাণে প্রাণ কাটিয়ে দেবো বাকি জীবনটা।

"গুরু .. ওরা এসে গেছে। সেদিনকার মত আজকেও  ওই মেমসাহেব এসেছে ওর বাবার সঙ্গে। আজ কিন্তু বস্তিতে তোমার মামণি, মানে আমাদের সুজাতা দিদি আছে। খণ্ডযুদ্ধ না বেঁধে যায় .. তুমি শিগগিরই চলো।" রূপকথার রঙিন কল্পনার জগতে গোগোলের অবাধ পদচারণায় বাধাসৃষ্টি করলো কাঞ্চনের এই উক্তি।

কিছুক্ষণের মধ্যেই রেলপাড়ের ক্লাবের সামনে উপস্থিত হলো গোগোল .. তখন দুপুর গড়িয়ে প্রায় বিকেল হয়ে এসেছে। সে মনে মনে ভাবছিলো এখনো তার মামণির গলার আওয়াজ পাচ্ছে না কেনো সে! কিন্তু ওখানে পৌঁছে যা দেখলো, তাতে নিজের দুই চোখকে বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছিলো গোগোলের। সে স্পষ্ট দেখতে পেলো রনিতা দিদি তার মামণির পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করলো। অতঃপর সুজাতা আর থুতনি ধরে আদর করে বললো "ঠিক আছে হয়েছে হয়েছে .. সুখে থাকো মেয়ে, ভালো থাকো। যাক দেখে ভালো লাগছে তোমার বাপের মতো কু'শিক্ষা পাওনি তুমি।"

সুজাতার মুখে এইরূপ উক্তি শুনে শশব্যস্ত হয়ে কামরাজ কিছু একটা বলতে যাচ্ছিলো, তাকে হাতের ইশারায় থামিয়ে দিয়ে রনিতা বলে উঠলো "ওসব পুরনো কথা ছাড়ুন তো। আমি কিন্তু আজ বস্তির ব্যাপারে কথা বলতে আসিনি, এখানকার লোকজনদের ধমকাতে চমকাতেও আসিনি। আমি এসেছি সম্পূর্ণ একটা অন্য কারণে। এই বস্তিটা আমার বাবার পছন্দ সেটা উনি ছলে-বলে-কৌশলে হস্তগত ঠিকই করবেন .. ওই ব্যাপার নিয়ে আমি কিছু ভাবছি না। কিন্তু এখানে এসে আমার যে আরো একটা জিনিস খুব পছন্দ হয়ে গেছে! সেই জন্যই তো আপনাকে প্রণাম করলাম, আপনার আশীর্বাদ নেওয়ার জন্য। শুভ কাজে এগোনোর আগে বড়দের আশীর্বাদের দরকার হয়।"

"তোমার প্রথম কথার উত্তরে বলি .. বস্তিবাসীদের ধমকানো চমকানো তো দূরের কথা, এখানকার আবাসিকদের উপর চোখ তুলে তাকালে সেই চোখ আমি গেলে দেবো, তার জন্য আমার ছেলের এখানে আসার দরকার পড়বে না। তোমার বাবাকে বলো তিনি যত পারেন ছল করে যান, বল প্রয়োগ করুন, একের পর এক কৌশল করতে থাকুন .. কিন্তু এই বস্তি তার দখলে কোনোদিনও আসবে না। তবে তোমার দ্বিতীয় কথার মাধামুণ্ডু আমি কিছুই বুঝতে পারলাম না .. এখানে আর কি পছন্দ হয়েছে তোমার? কিসের জন্য আশীর্বাদের কথা বলছো?" দৃঢ় কন্ঠে কথাগুলো বললো সুজাতা।

"দেখুন .. আমি জানিনা কথাটা কিভাবে বলবো। ইনফ্যাক্ট কথাটা বলতেই আমার ভীষণ অদ্ভুত লাগছে। আমাদের মতো এরকম একটা উচ্চবিত্ত ফ্যামিলির সঙ্গে রেলপাড়ের বস্তি নিবাসী একটা সাব-স্ট্যান্ডার্ড পরিবারের যে বৈবাহিক সম্পর্ক হতে পারে এটাই আমার স্বপ্নের অতীত। কিন্তু কিছু করার নেই .. আমার মেয়ের জেদের সামনে শেষমেষ হার মানতে হলো আমাকে। অ্যাকচুয়ালি আমার মেয়ের অনিতা অনির্বাণ মানে আপনার ছেলেকে ভালোবেসে ফেলেছে .. ওকে বিয়ে করতে চায়। সেই প্রপোজালটা দিতেই আজ আমাদের এখানে আসা। কি সকাল সকাল লটারি লেগে গেলো তো? হাতে চাঁদ পাওয়ার মত একটা খবর আপনাকে দিলাম, তাই না? ঠিক আছে তাহলে আর বেশি কথা না বাড়িয়ে বিয়ের দিনটা আজকেই পাকা করে ফেলতে হবে। আর হ্যাঁ এরপরে আমার আর কোনো জোর জবরদস্তি করার দরকার হবে না। এই খবরটা শোনার পর আপনার ছেলে নিজে থেকে এই বস্তিটা তুলে দেবে আমার হাতে। কি তাই তো?" কামরাজের মুখে কথাগুলো শুনে কিছুক্ষণ অবাক দৃষ্টিতে বাবা আর মেয়ের দিকে হাঁ করে তাকিয়ে থাকলো সুজাতা। তারপর ঘাড় ঘুরিয়ে সুবীরের দিকে তাকিয়ে বললো "ওকে ডাক .."

সুজাতার কথা শেষ হওয়ার আগেই তার পাশে এসে দাঁড়ালো গোগোল। এরপর কামরাজ আর তার মেয়ের দিকে তাকিয়ে কিছুটা তাচ্ছিল্যের সুরে অথচ খুব স্বাভাবিকভাবে বললো "আচ্ছা আপনারা কি পাগল, নাকি এটা আবার নতুন কোনো চাল? আপনাদের কি করে মনে হলো যে এইরকম একটা অবান্তর এবং অদ্ভুত প্রস্তাবে আমার মা বা আমি রাজি হবো?"

"এইভাবে বলছ কেনো সোনা? আমি সত্যিই তোমাকে ভালোবেসে ফেলেছি। নিজেকে অনেক বুঝিয়েছি কিন্তু কিছুতেই তোমার থেকে নিজেকে সরিয়ে আনতে পারিনি। আর যদি তোমার কথা ধরি .. তাহলে এটা তো তোমার কাছে একটা গোল্ডেন অপরচুনিটি হওয়া উচিত। একসঙ্গে এরকম একজন সুন্দরী রাজকন্যা এবং তার সঙ্গে রাজ্য .. স্বপ্নেও ভেবেছিলে কোনোদিন এই দুটো একসঙ্গে পাবে?" গোগোলের আরো কাছে এগিয়ে এসে তার দুটো হাত ধরে কথাগুলো বললো রনিতা।

ততক্ষণে রেলপাড়ের বস্তির প্রায় অনেকেই উপস্থিত হয়েছে সেখানে। কালু থেকে শুরু করে রাজু, কাঞ্চন থেকে শুরু করে সুবীর, নমিতা মাসি থেকে শুরু করে পঙ্কজ কাকু .. সবার দৃষ্টি সুজাতা আর গোগোলের দিকে। লজ্জায় মাথা কাটা যাচ্ছিলো গোগোল আর তার মামণির। হঠাৎ করেই সৃষ্টি হওয়া এইরকম পরিস্থিতিতে তারা কি বলবে বা করবে কিছুই বুঝে উঠতে না পেরে পরস্পরের দিকে তাকিয়ে থাকলো।

গোগোলকে চুপ করে থাকতে দেখে, রনিতা আবার বলে উঠলো "বলো অনির্বাণ .. স্পিক আউট আমার মতো এরকম একজন রাজকন্যা আর রাজ্য দুটো এক সঙ্গে পাবে কোনোদিন ভেবেছিলে?"

"উঁহু উঁহু .. জীবনেও ভাবেনি .. কল্পনাতেও আনেনি কোনোদিন এইরকম ভাবনা .. এ কথা আমি জোর দিয়ে বলতে পারি। কি করে ভাববে বলুন মেমসাহেব .. একজন বয়সে বড় তার ওপর আবার বিয়ে হয়ে যাওয়া মহিলাকে বিয়ে করার স্বপ্ন কেউ দেখে?" রনিতার হাতদুটো গোগোলের হাত থেকে জোর করে ছাড়িয়ে দিয়ে উক্তি করলো হিয়া।

হঠাৎ করেই ওখানে হিয়ার আগমনে জড়ভরতের মতো দাঁড়িয়ে থাকা ওখানকার সকলের মধ্যেই যেন পুনরায় প্রাণ সঞ্চার হলো .. বিশেষ করে গোগোলের। তৎক্ষণাৎ রনিতার থেকে তফাতে গিয়ে কয়েক পা পিছিয়ে এসে দাঁড়ালো গোগোল।

"এই তুমি আগের দিনেও এসেছিলে না? কি প্রবলেম তোমার? ঠিক করে কথা বলো আমার সঙ্গে .. তা না হলে .." ঝাঁঝিয়ে ওঠে কথাগুলো বললো রনিতা।

"শুধু আগের দিন কেনো .. যতবার আপনি এখানে বেহায়াপনা করতে আসবেন ততবার আমি এসে হাজির হবো। ঢলানি মেয়েমানুষ কোথাকার .. আগেরদিন এত অপমান করলাম, তাও শিক্ষা হয়নি দেখছি। আমি তো শুনেছি আপনি একটা ডিফেক্টিভ মাল .. তাই বর এসে বাপের বাড়ি বসিয়ে দিয়ে গেছে। তার ওপর এটাও শুনেছি আপনার চরিত্রের ঠিক নেই .. অল্পবয়সী হ্যান্ডসাম ছেলে দেখলেই ছুকছুক করে ওঠে ভেতরটা, তাই না? কিন্তু এখানে ওইসব সুবিধা হবে না বাপু। আপনার মতো এরকম ডিফেক্টিভ, ডিভোর্সি, বয়স্ক মেয়েকে কেন বিয়ে করবে আমার গোগোল দাদা? তাছাড়া একটা কথা কান খুলে শুনে নিন আপনারা দু'জনেই। যাকে এতক্ষণ ধরে বিয়ের প্রস্তাব দিচ্ছিলেন তাকে আমি ভালোবাসি এবং খুব তাড়াতাড়ি আমরা বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হতে চলেছি। তাই দ্বিতীয় দিন এই ধরনের কথা বললে আমার থেকে খারাপ আর কেউ হবে না।" গর্জে উঠলো হিয়া।

হিয়ার কথায় ফুঁপিয়ে কাঁদতে কাঁদতে তার বাবার কাঁধে মাথা রেখে রনিতা বললো "এই অপমান আমি আর সহ্য করতে পারছি না .. প্লিজ ডু সামথিং ড্যাডি .. হয় আজকে এখান থেকে তুমি পজিটিভ আনসার নিয়ে যাবে, আদারওয়াইজ আমার মরা মুখ দেখবে .. এই কথা বলে দিলাম।"

"দেখুন .. আপনাদের সবার কাছে আমি হাতজোড় করে অনুরোধ করছি। আমি কিন্তু আজ এখানে কোনো ঝামেলা করতে বা ষড়যন্ত্র করতে আসিনি। আমি এসেছিলাম আমার মেয়ের বিয়ের সম্বন্ধ নিয়ে। কিন্তু আপনারা সবাই দেখছেন তো .. আমার মেয়েটা কিভাবে অপমানিত হয়ে কাঁদছে। এটাই কি ওর প্রাপ্য ছিলো? এখানে উপস্থিত আপনাদের অনেকের বাড়িতেই তো মেয়ে আছে .. নিজের মেয়েকে একবার আমার মেয়ের জায়গায় বসিয়ে ভাবলেই বুঝতে পারবেন আমার মনের অবস্থা। আর এই মেয়েটা যে এতক্ষণ ধরে অপমান করলো আমার মেয়েকে .. সে তো গঙ্গানগর পিএসে নতুন জয়েন করা ইন্সপেক্টর সেনগুপ্তর বাগদত্তা। আজ বাদে কাল ওদের বিয়ে হয়ে যাবে। সে এত বড় বড় কথা বলে কি করে? আপনারাই বিচার করুন .. আমি ঠিক না ভুল।" রনিতার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে কম্পিত কন্ঠে কথাগুলো বললো কামরাজ।

★★★★

মিনিট পাঁচেক নিস্তব্ধতার পর প্রথম মুখ খুললেন ক্লাবের প্রেসিডেন্ট এবং রেলেপাড়ের বস্তির সবথেকে শিক্ষিত ও বিচক্ষণ ব্যক্তি পঙ্কজ বাবু , "এখানে অনেকেই আছেন যারা সরল প্রকৃতির মানুষ বা অনেক পরে এখানে এসেছেন। তারা হয়তো আপনার এই কুম্ভীরাশ্রু দেখে বা আপনার বক্তব্য শুনে বিপথে চালিত হতে পারেন। তার আগে আমি কয়েকটা কথা বলে নিতে চাই। আমি এখানকার পুরনো বাসিন্দাদের মধ্যে একজন। এখানে সুজাতা যখন একটা ছোট্ট ছেলের হাত ধরে থাকতে এলো, তখন ভেবেছিলাম এটা ওর নিজের সন্তান। তারপর ধীরে ধীরে সব কিছু শুনলাম, সবকিছু জানলাম ওদের সম্পর্কে। ওদের এখানে যিনি নিয়ে এসেছিলেন .. মিস্টার চক্রবর্তী, যিনি আজ আর এই পৃথিবীতে নেই .. তিনি আমার বিশেষ পরিচিত ছিলেন .. উনার কাছ থেকেই পুরোটা শুনেছি। তারপর তো নিজের চোখেই দেখেছি একজন সামান্যা নারীর অসামান্যা হয়ে ওঠার লড়াই। প্রথমে এক কামরার ঘরে ভাড়া ছিলো ওরা। তারপর আমার বাড়ির পাশে মিত্তিরদের এক চিলতে জমিটা কিনে সেখানে একটা ছোট্ট অথচ সুন্দর একতলা বাড়ি বানালো। ছেলেটাকে লেখাপড়া শিখিয়ে মানুষের মতো মানুষ করে তুললো। সুজাতা আজ আমাদের এই রেলপাড়ের বস্তির গর্ব আর গোগোল আমাদের ভবিষ্যৎ , আমাদের ভরসা। আমরা মাথায় করে রেখেছি ওদের এই বস্তিতে। একটা কথা কান খুলে শুনে নিন .. আজ যদি আপনার প্রস্তাবে সুজাতা বা তার ছেলে রাজি হতো, তাহলে এই বস্তিতে ওদের স্থান হতো না। সর্বপ্রথম আমিই বিরুদ্ধাচারণ করতাম ওদের। আর আপনি হিয়ার কথা বলছেন? জন্ম, মৃত্যু, বিবাহ এ তো বিধাতা ঠিক করে রেখেছে আগে থেকেই। সেক্ষেত্রে কে কার বাগদত্তা বা কার সঙ্গে কার বিয়ে হবে সেটা না হয় ভবিষ্যৎ বলবে। এইটুকুই আমার বলার ছিলো .. আশা করি আমার বক্তব্য আপনাদের সকলকে খুব ভালোভাবে বোঝাতে পেরেছি।"

পঙ্কজ বাবুর কথা শেষ হওয়া মাত্রই দৌড়ে এসে তাকে একটা প্রণাম করলো সুজাতা, তারপর হিয়াকে নিজের কাছে ডেকে নিয়ে তাকে বুকে জড়িয়ে ধরলো। "আচ্ছা এই কথাগুলোই তারমানে সমস্ত বস্তিবাসীর কথা হিসেবে ধরে নেবো? নাকি আপনাদের কারোর অন্য কিছু বলার আছে? আপনারা নির্ভয়ে আমাকে বলতে পারেন।" একটা শেষ চেষ্টা করলো কামরাজ।

"আর কারোর কিছু বলার নেই .. অনেক ফুটেজ খেয়েছেন .. এবার ফুটুন‌ তো এখান থেকে আপনারা দু'জন। ভালো করে আমার মুখের দিকে তাকিয়ে দেখুন .. এই মুখটা বিক্রি হয় না। আমার মা-বাবার হত্যাকারীদের সঙ্গে আমি কোনোরকম সওদা করতে রাজি নই। তাদের এবং তাদের পরিবারকে আমি মনে প্রাণে ঘৃণা করি এবং চিরকাল ঘৃণা করে যাবো। নেহাত আমার প্রাণের চেয়েও প্রিয় মামণির কাছে প্রতিজ্ঞা করেছিলাম, তা না হলে আজকে এই কথাগুলো শোনার পর আপনার লাশ ফেলে দিতাম এখানেই। কোনো মায়ের লাল আমার কিচ্ছু করতে পারতো না। আপনাকে জোর হাত করে অনুরোধ করছি আমার ভেতরের সেই দানবটাকে আর জাগিয়ে তোলার চেষ্টা করবেন না .. এই মুহূর্তে চলে যান এখান থেকে।" চাপা গলায় গর্জন করে উঠলো গোগোল।

"এত বড় অপমান করলে তো তুমি আজ আমাকে? এর ফল কিন্তু তোমাকে ভোগ করতেই হবে। এটা ফাঁকা আওয়াজ নয় .. ইয়েস আই মিন ইট। আমার মেয়েকে আজ যতটা কষ্ট দিলে তুমি, তার থেকে একশো গুণ কষ্ট ফিরিয়ে দেবো তোমাকে এবং তোমার পরিবারকে, তার সঙ্গে এই সমগ্র বস্তিবাসীকে। তুমি ভাবতেও পারছো না কোন অজানা বিপদ আসতে চলেছে তোমার সামনে। ছারখার করে দেবো সবকিছু ছারখার করে দেবো।" কথাগুলো বলে নিজের মেয়েকে নিয়ে গাড়িতে উঠে বসলো কামরাজ।

গাড়ি স্টার্ট দিয়ে বেরিয়ে যাবার আগে গোগোলের দিকে এক অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলো রনিতা। সেই দৃষ্টিতে ছিলো না কোনো ক্ষোভ, ছিলো না কোনো বিদ্বেষ .. নীল নয়নার পাপড়িঘেরা সেই দৃষ্টিতে ছিলো কয়েক মুঠো পড়ন্ত ভোর। যার রৌদ্রছোঁয়া দুই চোখের প্ল্যাটফর্ম ঘেঁষে ছিলো হয়তো কোনো নয়নতলী-শহর। আকাশ থেকে ঝড়ে পড়া রৌদ্রের বৃষ্টি বিষম-অঝোর।
[+] 8 users Like Bumba_1's post
Like Reply
Do not mention / post any under age /rape content. If found Please use REPORT button.
গঙ্গানগর বাস টার্মিনাসে নিষিদ্ধ ড্রাগের ব্রিফকেস সমেত ধরা পড়া লোকটার কাছে থেকে জিজ্ঞাসাবাদ এবং পরবর্তীতে জেরা করে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেলো। এই লাইনে নতুন যোগদান করা কিছুটা দুর্বল-চিত্তের লোকটার পুলিশি জেরার মুখে ভেঙে পড়তে খুব বেশী সময় লাগলো না। তার কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের উপর ভিত্তি করে নারকোটিক্স বিভাগ ও গোয়েন্দা বিভাগের ক্রাইম-ব্রাঞ্চ যৌথভাবে স্পেশাল অপারেশন চালিয়ে দু'দিনের মধ্যেই গঙ্গানগরে ক্রমশ সক্রিয় হয়ে ওঠা অনামী এক ওষুধ প্রস্তুতকারী সংস্থার বেনামী গ্যাংয়ের অনেক সদস্যকেই গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হলো এবং প্রচুর পরিমাণে কোকেন-হেরোইন সম্বলিত নিষিদ্ধ ড্রাগ উদ্ধার হলো। তবে এই নিষিদ্ধ ড্রাগ র‍্যাকেটের যিনি সর্বময় কর্তা অর্থাৎ সবার উপরে যিনি আছেন তার নাম সরকারিভাবে এখনো জানতে পারেনি পুলিশ। ওষুধ প্রস্তুতকারী সংস্থাটির কর্ণধারকে পুলিশি হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। তবে সিনিয়র ইন্সপেক্টর মিস্টার গোস্বামীর ধারণা উপর থেকে ক্রমাগত চাপ না এলে (যেটা ইতিমধ্যেই আসতে শুরু হয়ে গিয়েছে) কান টানলে খুব তাড়াতাড়ি মাথাও আসবে।

"আপনি শুধু আপনার ওই বন্ধুটিকে চব্বিশ ঘন্টার জন্য লকআপে রাখুন। ব্যাস .. তার মধ্যেই কাজ হাসিল হয়ে যাবে আমাদের। একবার শুধু রেলপাড়ের বস্তিটা আমাদের দখলে চলে আসুক, তারপর আপনার প্রত্যেকটি ডিমান্ড মেটানোর দায়িত্ব আমার। ওই শালা বুড়োভাম সিনিয়র ইন্সপেক্টর গোস্বামীর বিদায় ঘন্টা আমার হাতেই বাজবে .. চিন্তা করবেন না। মিউনিসিপাল হসপিটালের সুপারেনটেনডেন্ট ডক্টর দাশগুপ্তর ট্রান্সফার যেমন আমরা করিয়েছি, তেমনই এখান থেকে ওই ইন্সপেক্টরের বদলি এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা।" আজ দুপুরে কামরাজের অফিসের চেম্বারে হঠাৎ করেই জরুরি তলব পাওয়ার পর, তারপর সেখানে গিয়ে তার মুখে কথাগুলো শুনে প্রথমে কিছুটা অবাক হয়ে গিয়েছিলো সন্দীপ।

তারপর কিছুটা উৎকণ্ঠার সঙ্গে কামরাজকে সন্দীপ বলেছিলো "কিন্তু এইভাবে বিনা কেসে অনির্বাণকে লকআপে রাখা শুধু মুশকিলই নয়, প্রায় অসম্ভব একটা ব্যাপার। এতদিনে বুঝে গিয়েছি ও হলো ওই বস্তির বেতাজ বাদশা। ওর উপর অন্যায় হলে থানা ভাঙচুর হয়ে যাবে, এমনকি আমার উপরেও বিপদ নেমে আসতে পারে।"

"আপনি সত্যিই এখনো অনেকে ইম'ম্যাচিওর আছেন সন্দীপ বাবু। এত ভয় নিয়ে পুলিশের চাকরি করতে এসেছেন? একটা কথা ভেবে দেখুন, ও হলো আপনার পথের কাঁটা। সে আপনার পরিবারের সঙ্গে ওদের পরিবারের যতই আগের থেকে কথা হয়ে থাকুক না কেনো, আপনার বন্ধুটিকে সরাতে না পারলে হিয়া ম্যাডামকে কোনোদিনও পাবেন না আপনি। একটা কথা মাথার ভেতর ঢুকিয়ে নিন, ওরা দু'জন দু'জনকে ভালোবাসে। আপনাকে হিয়া ম্যাডাম ঘৃণা করে .. হ্যাঁ ঠিক বলছি .. শুধু ঘৃণা ঘৃণা আর ঘৃণা। কোনোদিন ওকে আপনি পাবেন না। আর হিয়া ম্যাডামের আপনার প্রতি এই ঘৃণা কে তৈরি করেছে জানেন? আপনার ওই বন্ধুটি .. অনির্বাণ।" হাসতে হাসতে অবলীলায় কথাগুলো বলে চললো কামরাজ।

রাগে, ক্ষোভে, হিংসায় চোখ দুটো জ্বলে উঠলো সন্দীপের। ধীরে ধীরে শক্ত হয়ে উঠলো তার চোয়াল, কপালের দুই পাশের শিরাদুটো দপদপ করতে শুরু করলো, "কিন্তু অ্যারেস্ট করার জন্য তো একটা .. মানে আমি বলতে চাইছি .."

"আরে থামুন থামুন ইন্সপেক্টর সেনগুপ্ত। আমি কি আর হোমওয়ার্ক না করে কথাগুলো বলছি! সব খবর থাকে আমার কাছে। রাধা ‌.. আমাদের রাধা হবে আপনার বন্ধু কৃষ্ণ কানাইয়ার জেলে যাওয়ার কারণ। বুঝলেন কিছু?" অট্টহাসিতে ফেটে পড়লো কামরাজ।

"রাধা? হু ইজ শি? এইরকম কোনো নাম তো আমি আগে শুনিনি! তাছাড়া কৃষ্ণ কানাইয়া .. সে আবার কে? এতক্ষণ তো অনির্বাণকে নিয়ে কথা হচ্ছিলো, এর মধ্যে আবার কৃষ্ণ এলো কোথা থেকে?" কিছুটা অসহিষ্ণু ভাবেই কথাগুলো বললো সন্দীপ।

"হাহাহাহা .. আমার লেভেলে পৌঁছতে এখনো অনেক দেরি আছে আপনার .. সেটাই পরীক্ষা করছিলাম। ঠিক আছে ঠিক আছে আপনাকে আর ধাঁধার মধ্যে রাখবো না। কিষাণজি হলো আপনার বন্ধু অনির্বাণ। আর রাধা? যে আপনার বন্ধু কিষানজিকে কোনোদিন নিজের করে পাবে না জেনেও, তাকে নিঃস্বার্থভাবে ভালোবাসে। কে? বুঝতে পারলেন না তো! টগর .. জো লাড়কি ওইদিন আপনাকে আচ্ছা করে রগড়ে দিলো .. ভুলে গেলেন এর মধ্যেই তার কথা? ইচ্ছে করে না ওকে শাস্তি দিতে? ইচ্ছা করে না হিয়া ম্যাডামের থেকে আপনি এখনো পর্যন্ত যা পাননি, তার বদলে ওই মেয়েটার মধ্যে দিয়ে নিজের কাম চরিতার্থ করতে? ভেবে দেখুন .. খুব ঠান্ডা মাথায় ভেবে দেখুন। এতে কিন্তু এক ঢিলে দুই পাখি খতম হবে। মেয়েটাকে তোলার দায়িত্ব আমার। তারপর নিজের কাম খতম করবেন আপনি। একবার যদি ওই অনির্বাণকে রেপ আর মার্ডারের কেসে অ্যারেস্ট করিয়ে দেওয়া যায়, তাহলে শুধু চব্বিশ ঘন্টা কেনো! জীবনেও জেল থেকে বের হতে পারবে না আপনার ওই গুণধর বন্ধু। বস্তি আমার আর হিয়া ম্যাডাম আপনার। এবার বলুন প্ল্যানটা কি রকম সাজিয়েছি .. আপনি রাজি তো?" সন্দীপের চোখে চোখ রেখে নিজের স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে দৃঢ় কন্ঠে কথাগুলো বললো কামরাজ।

"রাজি .. আমি রাজি .." মুখে একটা পৈশাচিক হাসি ফুটে উঠলো সন্দীপের।

★★★★ 

শিউলি একটু বেশি বয়সের সন্তান স্বপন সাধুখাঁর। দিদি টগরের সঙ্গে ওর বয়সের পার্থক্য প্রায় তেরো বছরের। মেয়েটা হতে গিয়েই তো অপারেশন টেবিলে না ফেরার দেশে চলে যায় স্বপনবাবুর স্ত্রী। সেইদিন থেকে রেলপাড়ের বস্তির মুদিখানার দোকানদার স্বপনবাবুর দুই চোখের বিষ ওই শিউলি। "জন্মেই নিজের মা'কে খেয়ে নিলি সর্বনাশী?" এই কথাটা বলে সেদিন মিউনিসিপাল হসপিটাল থেকে বেরিয়ে এসেছিলো স্বপন সাধুখাঁ আর ওইমুখো হয়নি। তারপর সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বরফ হয়তো কিছুটা গলেছে ঠিকই, বাড়িতেও স্থান হয়েছে শিউলির। কিন্তু কনিষ্ঠা কন্যার প্রতি তার পিতার মানসিক অবস্থানের বিশেষ পরিবর্তন হয়নি। আজও শিউলি তার বাবার কাছে ব্রাত্য। দিদি টগরের কাছেই মানুষ হয়েছে সে। দিদিই তার কাছে বাবা, দিদিই তার কাছে মা .. এমনকি 'শিউলি' নামকরণটাও তার দিদির করা।

আজ সন্ধ্যে থেকে কেঁদেই চলেছে শিউলি। ক'দিন ধরে কি যে হচ্ছে মেয়েটার .. এমন প্রবল পেটের যন্ত্রণা .. বিছানায় ছটফট করছে। ছ'য় পেরিয়ে সবে সাতে পড়েছে শিউলি। সন্ধ্যে গড়িয়ে রাত বাড়তে লাগলো, কিন্তু যন্ত্রণা যে ক্রমশ বেড়েই চলেছে মেয়েটার। রাত তখন প্রায় বারোটা বাজতে চললো .. টগর জেগেই বসেছিলো। এত রাতে কাছেপিঠে কোনো ওষুধের দোকান খোলা নেই। তার উপর মোবাইলে সফটওয়্যার আপডেট করতে গিয়ে সমস্ত পুরোনো নম্বর মুছে গেছে। তা না হলে তো গোগোল দাদাকেই এতক্ষণে .. ভীষণ অসহায় বোধ করছিলো টগর।

বিপদ আসন্ন .. এটা বুঝতে পেরে সে উঠে পাশের ঘরে গিয়ে অকাতরে ঘুমোতে থাকা তার বাবাকে ঠেলা দিয়ে বললো "তুমি মানুষ ভালো নয় সেটা আমি জানতাম, কিন্তু এখন যে পুরোপুরি অমানুষে পরিণত হয়েছো সেটা আজ বুঝতে পারছি। নিজের মেয়ে যন্ত্রণায় পাশের ঘরে কাতরাচ্ছে আর তুমি নাক ডেকে ভোঁসভোঁস করে ঘুমোচ্ছ? ওর কি দোষ বলো? তোমরাই তো ওকে এই পৃথিবীতে আনতে গিয়েছিলে .. হ্যাঁ মানছি, ওকে জন্ম দিতে গিয়ে আমার মা আজ পৃথিবী ছেড়ে চলে গিয়েছে। কিন্তু সেই রাগে তুমি তোমার নিজের মেয়েকে আজও কষ্ট দিয়ে চলেছো? আজকে যদি বোনের কিছু হয়ে যায়, তাহলে তোমার একদিন কি আমার একদিন। কোনোদিন ক্ষমা করবো না তোমাকে।"

এই পৃথিবীতে একমাত্র তার বড় মেয়েকেই যমের মতো ভয় পায় স্বপন সাধুখাঁ। তাই মেয়ের কথার ঝাঁঝেই হোক কিংবা হঠাৎ করে বোধদয় হওয়াতেই হোক একমুখ বিরক্তি নিয়ে উঠে বসে পাশের ঘরে গিয়ে তার ছোট মেয়ের মুখের দিকে তাকাতেই রাগটা নিমেষের মধ্যে মিলিয়ে গিয়ে ভেতরে ভেতরে সৃষ্টি হলো একটা অদ্ভুত উৎকণ্ঠার। আলনা থেকে একটা হাওয়াই শার্ট গায়ে দিয়ে স্বপনবাবু সদর দরজা খুলে বেরিয়ে এলো রাস্তায়। 'হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে মেয়েটাকে। কিন্তু তাদের বাড়িটা রেলপাড়ের একদম পশ্চিম প্রান্তে, এখান থেকে মিউনিসিপাল হসপিটাল অনেকটা পথ। কিন্তু তার মেয়ে তো এমত অবস্থায় হেঁটে যেতে পারবে না। এত রাতে গাড়ি পাবে কোথায়! তবে কি তার মেয়েকে কোলে তুলে নিয়ে যাবে? তাই যেতে হবে।' এইসব ভাবতে ভাবতে আবার বাড়ির ভেতর ঢুকে গিয়ে কিছু পরে শিউলিকে দু'হাতে চ্যাংদোলা করে বড়ো রাস্তার মোড়ে এসে দাঁড়ালো স্বপন সাধুখাঁ। তার বাবার পিছনে এক পা এক পা করে আসতে থাকলো টগর। এই মধ্যরাতে চারিদিকে জনমানব শূন্য রাস্তায় ঠিক তখনই একটা কালো রঙের অ্যাম্বাসেডর গাড়ি এসে দাঁড়ালো ওদের সামনে। 

গাড়িটা দেখেই যন্ত্রচালিতের মতো টগর বলে উঠলো "না গো, আমরা যাব না.." ল্যাম্পপোস্টের অল্প আলোয় ড্রাইভারের মুখ ঠিক দেখা গেল না। তবে ভিতর থেকে একটি গম্ভীর গলা ভেসে এলো "মেয়েটাকে নিয়ে তাড়াতাড়ি উঠে পড়ুন, হাসপাতালে তিন মিনিটে নামিয়ে দেবো। টাকার কথা ভাববেন পরে, আগে মেয়েটাকে বাঁচান।" 

'এই গাড়ির অচেনা ড্রাইভারটি কেনো তাদের সাহায্য করবে? তাছাড়া, সে কি করে জানলো তারা হাসপাতালে যাবে?' এইসব সাত পাঁচ ভাবতে ভাবতে দিগ্বিদিক জ্ঞানশূন্য হয়ে ছোট মেয়েকে কোলে নিয়ে, বড় মেয়ের হাত ধরে স্বপনবাবু ধীরে ধীরে উঠে পড়লো গাড়িতে। তৎক্ষণাৎ ধোঁয়া ছেড়ে হুস করে বেরিয়ে গেলো অ্যাম্বাসেডর গাড়িটা।

★★★★

হিয়াকে বিবাহ করার অভিসন্ধি নিয়েও ওই মেয়েটিকে প্রথম দেখেই প্রলুব্ধ হয়েছিলাম তার শারীরিক বিভঙ্গের ছটায়। সে আমাকে অজান্তেই আহ্বান করেছিলো তার কিশোরী সৌন্দর্যের জগতে। আমি দেখেছিলাম আলোর উৎসার, দেখেছিলাম সেই আপেল বুকে ধরেছিলো সে। আমার মনে সাধ হয়েছিলো স্বাদ গ্রহণ করার .. তৃষা জেগেছিলো বুকে। কিন্তু সে অপমানে অপমানে ভরিয়ে দিয়েছিল আমাকে .. যেখানে লুকিয়েছিলো শুধু অন্ধকার। আলো, জল, হাওয়া ছিলো তার সম্পূর্ণ বিপরীতে। সে আমাকে দিয়েছিলো এই পৃথিবীতে নির্বাসন।

সেদিনের পর থেকেই তাকে, বলা ভালো তার নারীত্বকে শেষ করার সংকল্প বুকে নিয়ে নতুন আঙ্গিকে পথ চলা শুরু করেছি অচেনা গন্তব্যে। ভিড়াবো তরী আসমুদ্র হিমাচল পাড়ি দিয়ে। অষ্টপ্রহর পেরিয়ে এক শতাব্দী পর দেখা হলেও আমার প্রতিশোধ অক্ষরে অক্ষরে ফিরিয়ে দেবো স্মৃতিসিক্ত চিরকুটে পুরে। সদ্য যৌবনে পা রাখা তার জন্য ছিলো সুদীপ্ত নগরের বুক জুড়ে আমার হাহাকার , স্পন্দনে ছিলো হৃদপিণ্ডে মেশানো তার বিষাক্ত মধুরতা। বুঝিনি ধবংসের স্তুপে লেগে ছিলো দম বন্ধ করা নিঃশ্বাস। এখন সেই ধবংসের স্তুপে একটা গোলাপ গাছ লাগিয়ে দিয়েছি, শিশিরভেজা পায়ে প্রতিদিন হেঁটে যাই। তার সান্নিধ্য আবছায়া কুহেলিকার সঙ্গে তার নিত্য নতুন বসবাস। শেষ করার আগে তাকে অবশ্যই ফিরিয়ে দেবো আমার স্মৃতিচারণার ইতি কথায় তাকে ছুঁড়ে ফেলা বাস্তবতা।

ফোনের আওয়াজে ঘোর কাটলো সন্দীপের। কলটা রিসিভ করার পর ওই প্রান্ত থেকে ভেসে এলো একটা পুরুষ কণ্ঠস্বর "কাজ হয়ে গেছে স্যার .. প্রসাদ সাজিয়ে রাখা আছে .. এখন শুধুমাত্র আপনার আসার অপেক্ষা।"

"ঠিক আছে .. আমি ওখানে না পৌঁছানো পর্যন্ত ওর গায়ে যদি একটাও আঁচড় লাগে, তাহলে সবকটার হাত কেটে ফেলে দেবো .." এইটুকু বলে নিঃশব্দে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো সন্দীপ .. তখন মাঝরাত।

★★★★

দুর্ভেদ্য অন্ধকারের বুকে আলোর উৎস বলতে শুধু মধ্য গগনের এক ফালি চাঁদ আর অগণিত নক্ষত্ররাজি। মাঝে মাঝে জমাট বাঁধা অন্ধকারের মতো বড় বড় গাছের সারির অস্তিত্ব বোঝা যাচ্ছে। চার পাশে শুধু অনন্ত অন্ধকার আর মৃত্যুপুরীর নিস্তব্ধতা। কখনো কখনো রাত্রির নিস্তব্ধতা ভেদ করে হায়নার হাসি আর আকাশ কাঁপিয়ে নেকড়ের ডাক ভেসে আসছে। এরকম এক মৃত্যুপুরীর হাত থেকে বাঁচার জন্য মেয়েটি নিজের সমস্ত জীবনী শক্তিকে একত্রিত করে ছুটে চলেছে। তার এখন একটাই লক্ষ্য .. জঙ্গল থেকে বেরিয়ে কোনোরকমে হাইওয়েতে গিয়ে উঠবে। কিন্তু পথের যেন আর শেষ নেই। তার মনে হচ্ছে অনন্তকাল ধরে সে শুধু ছুটে চলেছে। এক সময় মেয়েটির মনে হলো তার চলার গতি যেন রুদ্ধ হয়ে যাচ্ছে, কিছুতেই আর সামনের দিকে এগিয়ে যেতে পারছে না। কিন্তু থেমে থাকলে তো হবে না, তাকে চলতেই হবে। সে যখন আপ্রাণ চেষ্টা করে সামনের দিকে ছুটে যেতে চাইছে তখন কোথা থেকে যেন একদল বাদুড় তার মাথার উপর দিয়ে উড়ে গেলো। মেয়েটি তখন ভয়ে দিকবিদিক জ্ঞানশূন্য হয়ে ছুটতে গিয়ে কোনো কিছুর সঙ্গে ধাক্কা খেলো। মেয়েটির ভয়ার্ত কণ্ঠ থেকে শুধু একটা শব্দ উচ্চারিত হলো, "কে?" অন্ধকারের বুক চিরে জঙ্গলের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত শুধু এই একটি শব্দ প্রতিধ্বনিত হতে লাগলো, " কে..... " এই মৃত্যুপুরীতে এইসময় কে আসতে পারে ভেবে মেয়েটি ভয়ে ভয়ে চোখ তুলে যাকে দেখলো, তাকে দেখে তার মনে হলো ওর হৃদপিন্ডের গতি স্তব্ধ হয়ে গেছে। তার সামনে এক জমাট-বাঁধা ঘন অন্ধকার দাঁড়িয়ে আছে। ধীরে ধীরে সেই চোখ সয়ে যাওয়া অন্ধকার যখন মানুষের অবয়ব নিতে লাগলো, তখন সে দেখলো তার দিকে দুটো জ্বলন্ত হিংস্র চোখ নিষ্পলকে তাকিয়ে আছে। মেয়েটি ভয়ে চিৎকার করতে চাইলো, কিন্তু গলা দিয়ে কোনো আওয়াজ বেরোলো না, ছুটে পালাতে চাইলো, কিন্তু মনে হলো তার পা দুটো যেন কোনো অদৃশ্য শক্তি মাটির সঙ্গে আটকে রেখেছে।

সেই মেয়েটি ধীরে ধীরে বুঝতে পারছে আজ সবকিছু দিতে হবে ওই দুর্বৃত্তের অধিকারে। তার দুইহাতের বন্ধনে সারারাত কিংবা হয়তো অনির্দিষ্টকাল ধরে চুষতে হবে সেই দুর্বৃত্তের অভিশপ্ত লিঙ্গ। লম্পটের অশ্লীল উরুতে গাঁথা থাকবে অপার্থিব সৌন্দর্যের নারীত্ব .. লুন্ঠিত হবে তার সতীত্ব। সেই বিভীষিকাময় সাক্ষাৎ ‌যমরাজরূপী দুর্বৃত্ত তার ওষ্ঠরস পান করবে প্রাণভরে। সেইসব গ্রন্থ, শ্লোক, মুদ্রাযন্ত্র, শিশির, বেহালা, ধান, রাজনীতি, দোয়েলের স্বর, গদ্য-পদ্য, রঙীন বুদ্বুদ মাছ, তাজা মাংস, সুপেয় মশলার ঘ্রাণ, তার শৈশব, তার কৈশোর, তার যৌবন, তার রাহুগ্রস্থ সভ্যতার অবশিষ্ট সামান্য আলোক .. এই সবকিছু আজ যাবে ওই দুর্বৃত্তের অধিকারে।

নিজেকে রক্ষা করার শারীরিক যুদ্ধ থেকে দিকভ্রান্ত হয়ে মেয়েটি একসময় আত্মসমর্পণ করে যৌনতার লেলিহান শিখার কাছে। তার নিশ্বাস পড়ে দ্রুত, ঘর্মাক্ত দেহ ক্রমশ উত্তপ্ত হয়ে উঠতে থাকে, কন্ঠে আসে শীৎকার। শুরু হয় পরস্পর বিরোধী ক্রুদ্ধ যুদ্ধ, ঠোঁটে জমাট রক্ত, জঙ্ঘার উত্থান, ভালোবাসা চলে যায় দূর থেকে দূরান্তে, হয়তো অনন্তকাল কেটে যায়, যুগ থেকে যুগান্তর .. সব কিছু অতিক্রম করে ফেলে। সেই নারী এখন নদীর গর্ভের মতো, অজানা তার গোপনাঙ্গের গভীরতা, অথচ ঠান্ডা, শুষ্ক, তথাপি কম্পমান। শিশিরে ধুয়েছে তার বুক, কোমল জ্যোঃস্নার মতো যোনি .. মধুকূপী ঘাসের মতন রোম, কিছুটা লালচে। মৃত মনন অথচ এখনো পর্যন্ত জাগ্রত এই অপবিত্র দেহে জেগে উঠে মেয়েটি দেখে পরমাণু কিছু নয়, স্বপ্ন অপছন্দ হলে পুনরায় দেখবার সুযোগ হয়েছে। তার হৃদয় গিয়েছে মরে, অথচ হৃদপিণ্ড এখনো বেঁচে রয়েছে স্বপ্নের ঘোরে .. হয়তো আর কিছুক্ষণের জন্য।

 সেই সুখ নারীর ভিতরে ছিলো, যখন স্বপ্নে বিভোর এক অবয়বের সঙ্গে গলাগলি শুয়ে অনু অপলাদের স্তন শরীর মুখ ঊরু থেকে অকস্মাৎ ঝিনুকের মতো যোনি। নিজের নারীত্বকে সে যখন খুঁজে পেয়েছে, হরিণের মতো হুররে দাঁত দিয়ে ছিঁড়েছে নিজের নখ, অন্ধকারে হয়তো সেই সুখ ছিলো তার নারীত্বের অন্তরালে। সর্বগ্রাসী মরীচিকাময় যৌনতার কাছে অবশেষে সেই মেয়েটি নিঃশেষে হয়েছে নতজানু। রক্তে অশ্বখুর, স্তনে দাঁত, বাঘের আঁচড় কিংবা ঊরুর শীৎকার। তার সঙ্গে যন্ত্রচালিতের মতো নিতম্ব দুলিয়ে শারীরিক বিভঙ্গ প্রকাশ করলেও শেষবারের মতো মুক্তি চেয়েছিলো সে এই নারকীয় অবাধ সঙ্গম থেকে।

জীবনের রসদের জ্বালানি ক্রমশ ফুরিয়ে যাচ্ছে তার, অমাবস্যা এখনো রাত্রির পাহারায়। আরও কতো আশা দুঃস্বপ্নের শ্রোতে, আরও কতকাল ধরে অবিরত বয়ে চলে যাবে। বিশ্বাসের ধূসর কণা এখন রক্তিম, রক্তমাখা দেহ তার পথের একধারে। তার শরীরের নিচের এই ধরিত্রী যেন নীরব শ্রোতা, এখন আর আগের মতো গল্প শুনতে চায়না। হতাশ কন্ঠে তার নেই কিঞ্চিতমাত্র সুখ .. তার রক্ত শ্রোতে নতুন কিছুই নেই। মরিচিকার হাতছানি ছাড়া অন্যকিছু বার বার পথ ভুলে পড়ে থাকা পথে দুঃস্বপ্নের অপবিত্র দেহখানি নিয়ে। দু’চোখ বেয়ে অসহ্য যন্ত্রণার আগুন ঝরে .. পাংশুটে রাত, রক্তমাখা চাঁদের দেহে জোৎস্না উধাও, উল্টে পড়ে রোদের বাটি, তার আকাশজুড়ে দুঃস্বপ্নের দালানকোঠা। উঠোনে বিষধর সাপ, অবিশ্বাসের ভীষণ কালো রক্তজবা, লকলকে জিভ, এখন তার সমস্তটাই লখিন্দরের লোহার বাসর। আঙুলগুলো দিয়ে ঝ’রে পড়ছে রঙীন সুবাসিত ফুল, তার পাশে লক্ষ্মী প্যাঁচার ধাতব গলা, তার এখন শঙ্খচিলের কান্নাভেজা দুপুরবেলা, শূন্য খা-খা একাকী মাঠ, ঘাসের ডগায় নীল ফড়িং-এর নিমগ্নতা। তার  হৃদয় শুধু হাহাকারের দু’হাত মেলা চাতক পাখি, তার এখন বুকের ভেতর কবর .. শুধু কবর খোঁড়ার ভারী শব্দ। দু’চোখ বেয়ে সকাল ঝরে, উল্টে পড়ে স্বপ্নবাটি। তার যে এখন নিজের মধ্যে নিজের কফিন, সমস্ত রাত করাতকলের কষ্টধ্বনি। 

এই কিছুক্ষণ আগেও থাকা শরীরের অসচ্ছ যন্ত্রণাগুলো এখন অনেকটাই অবশ হয়ে এসেছে। সে বুঝতে পারছে না এত শান্তি কোথা থেকে নেমে এলো তার শরীর জুড়ে! অবাক কান্ড একটুও কষ্ট হচ্ছে না শরীরে তার। চোখ দিয়ে জল পড়ছে না গড়িয়ে .. হয়তো বা শুকিয়ে গেছে। স্মৃতির পাতায় চোখ রাখলে এখন আর নিজেকে হেরে যাওয়া মানুষ বলে মনে হচ্ছে না তার। হয়তো বা অনুভূতিটাই নষ্ট হয়ে গিয়েছে। বড্ড ঘুম পাচ্ছে যে .. স্বপ্নরা কি আসবে আজ তার ঘুমে? নিজেকে কেমন যেন একটা যন্ত্রের মতো মনে হচ্ছে। হাসি, কান্না, স্নেহ, মায়ার কোনো‌ স্বাদ সে আর অনুভব করতে পারছে না। আগের মতো আর ভাঙছে না ধৈর্যের বাঁধ। সবকিছুই যেন কিরকম শান্ত .. ঠাণ্ডা। সে শুনেছিলো মৃত্যু যখন এসে দাঁড়ায়
জীবনের দুয়ারে .. সুখ,শান্তি, দুঃখ, কষ্ট .. সবকিছু এই ভাবেই ধীরে ধীরে বিলীন হতে শুরু করে। নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে তার .. দমটা কিরকম যেন আটকে আসছে। এখন একবার যদি তার হাতটা ধরতে পারতো সে। নেই নেই আর বিন্দুমাত্র শক্তি অবশিষ্ট নেই .. এবার তার যাওয়ার পালা। যাওয়ার বেলায় চোখ দুটো খোলাই রইলো তার, শুধু মুখ দিয়ে অস্ফুটে বেরিয়ে এলো "আমি কিন্তু সত্যিই তোমাকে ভালোবেসে ছিলাম .."

(ক্রমশ)


ভালো লাগলে আপনাদের মূল্যবান মতামত জানাবেন
লাইক এবং রেপু দিয়ে উৎসাহিত করবেন

[Image: Animation-resize-gif-f3b601eb23d95beeb4e...911ac0.gif]


Like Reply
মরক্কো কিন্তু জিতে গেছে, সেই সাথে ফ্রান্স
Like Reply
অসাধারণ
[+] 1 user Likes ambrox33's post
Like Reply
(12-12-2022, 09:13 PM)ambrox33 Wrote: মরক্কো কিন্তু  জিতে গেছে, সেই সাথে ফ্রান্স

হ্যাঁ, জানি তো .. 

(12-12-2022, 09:14 PM)ambrox33 Wrote: অসাধারণ

ছয়় মিনিটের মধ্যে এত বড় বড় দুটো আপডেট পড়া হয়ে গেলো? ভালো ভালো  clps
Like Reply
(12-12-2022, 09:17 PM)Bumba_1 Wrote:
হ্যাঁ, জানি তো .. 


ছয়় মিনিটের মধ্যে এত বড় বড় দুটো আপডেট পড়া হয়ে গেলো? ভালো ভালো  clps

সবটুকু পড়া হয়নি দাদা।
আগে মতামত জানালাম।
[+] 1 user Likes ambrox33's post
Like Reply
মরক্কো জিতবে কে বলেছে দেখতে হবে না। একজন সচ্চরিত্রা পূন্যময়ী।
Like Reply
Darun update...
[+] 1 user Likes Rinkp219's post
Like Reply
অসাধারণ দাদা।
I'm the King of Dark
                &
I rule over all Devils
               devil2 devil2
[+] 1 user Likes Monen2000's post
Like Reply
(12-12-2022, 09:19 PM)ambrox33 Wrote: সবটুকু পড়া হয়নি দাদা।
আগে মতামত জানালাম।

বোঝো কান্ড  Tongue 

(12-12-2022, 09:32 PM)Rinkp219 Wrote: Darun update...

thank you  Smile
Like Reply
যা তা রকমের দুর্ধর্ষ ---- না , দুঃসাহসী লেখা !!

কি হচ্ছে এসব !!??

clps clps
[+] 1 user Likes ddey333's post
Like Reply
(12-12-2022, 09:36 PM)Monen2000 Wrote: অসাধারণ দাদা।

অনেক ধন্যবাদ  thanks
Like Reply
(12-12-2022, 09:45 PM)ddey333 Wrote: যা তা রকমের দুর্ধর্ষ ---- না , দুঃসাহসী লেখা !!

কি হচ্ছে এসব !!??

clps clps

অসংখ্য ধন্যবাদ   Namaskar
Like Reply
একি দিলেন দাদা বুকে যে খুব কষ্ট হচ্ছে আর কত দিন ঘরের লক্ষীরা এমন ভাবে নির্যাতন সহ্য করবে না দাদা এত দিন যা হয়েছে সব কিছু মেনে নিয়েছিলাম কিন্তু আজকের পর্ব না পারলাম না ।
horseride আমাকে আমার মত থাকতে দাও horseride
[+] 1 user Likes Boti babu's post
Like Reply
(12-12-2022, 10:11 PM)Boti babu Wrote: একি দিলেন দাদা বুকে যে খুব কষ্ট হচ্ছে আর কত দিন ঘরের লক্ষীরা এমন ভাবে নির্যাতন সহ্য করবে না দাদা এত দিন যা হয়েছে সব কিছু মেনে নিয়েছিলাম কিন্তু আজকের পর্ব না পারলাম না ।

বুঝতে পারছি তোমার মনের ব্যাকুলতা এবং কষ্ট। সেটাই হওয়া স্বাভাবিক .. বেশি কিছু না বলে শুধু এটুকুই বলবো ধৈর্য রাখো পরের পর্বের জন্য।
[+] 1 user Likes Bumba_1's post
Like Reply
আশা ছিল তোমায় নিয়ে বাঁধবো সুখের ঘর
হাতে হাতটি থাকবে মোদের যতই আসুক ঝড়
বাঁচবো আমি তোমার জন্য বাসবো তোমায় ভালো
অন্ধকারের চাদর সরিয়ে তুমি দেখাবে আমায় আলো
হলোনা তার কিছুই পূরণ একাই রয়ে গেলাম
তোমায় নিয়ে বাঁধা স্বপ্ন একাই বয়ে গেলাম
বিদায় নিলাম আজকে আমি, কিন্তু তুমি ভালো থেকো
এইটুকু চাইবো আমি এই পাগলীকে মনে রেখো

আর বেশি কিছু বলতে পারছিনা দাদা। খুব খারাপ লাগলো। এইটুকুই আজকের পর্বের জন্য আমার তরফ থেকে। নানা আমার না....... সেই রানী ফরফরানীটার পক্ষ থেকে
[+] 1 user Likes Baban's post
Like Reply
(12-12-2022, 10:26 PM)Baban Wrote: আশা ছিল তোমায় নিয়ে বাঁধবো সুখের ঘর
হাতে হাতটি থাকবে মোদের যতই আসুক ঝড়
বাঁচবো আমি তোমার জন্য বাসবো তোমায় ভালো
অন্ধকারের চাদর সরিয়ে তুমি দেখাবে আমায় আলো
হলোনা তার কিছুই পূরণ একাই রয়ে গেলাম
তোমায় নিয়ে বাঁধা স্বপ্ন একাই বয়ে গেলাম
বিদায় নিলাম আজকে আমি, কিন্তু তুমি ভালো থেকো
এইটুকু চাইবো আমি এই পাগলীকে মনে রেখো

আর বেশি কিছু বলতে পারছিনা দাদা। খুব খারাপ লাগলো। এইটুকুই আজকের পর্বের জন্য আমার তরফ থেকে। নানা আমার না....... সেই রানী ফরফরানীটার পক্ষ থেকে

বুঝতে পারছি খুব কষ্ট হচ্ছে মনের মধ্যে তোমার .. সেটা হওয়াই তো স্বাভাবিক। তার সঙ্গে হয়তো ভীষণ রাগ হচ্ছে আমার উপর। কিন্তু আমি তো যা লেখার লিখে দিয়েছি, তাই আমার তরফ থেকে আর কিছুই বলার নেই। তবে একটা কথা অবশ্যই বলবো .. ধৈর্য রাখো পরের পর্বের জন্য।
Like Reply
আজকের পর্ব টা যেমন দু ধাপে দিলে তেমনি গল্পটাও দুটো ভাগে বিভক্ত।এক অংশ জুড়ে শুধুই নিখাদ ভালোবাসা। 
তুমি চাইলে কিন্তু একখানা প্রেমের উপন্যাস লিখতে পারো। যেখানে দেহ নয় মনের দেয়া নেয়া হবে। প্রেম হবে ভালোবাসা হবে, মান অভিমান থাকবে, হারানোর ভয়, প্রাপ্তির উল্লাস থাকবে। 
রনিতার মত একটা ডেঞ্জারাস প্রেমিকা থাকা কিন্তু খারাপ না অনেকাংশেই লাভও আছে, যদিও আমার মতে প্রতিটা প্রেমিকের কাছেই তার ভালবাসার প্রিয়তমা যথেষ্ট ডেঞ্জারাস। রনিতার চলে যাওয়ার সময় ও চোখের যে ভাষার বর্ণনা করলে তাতে তো এখনো ওর বিষয়টা ক্লিয়ার হচ্ছে না। কিছু একটা ঘাপলা আছে।

টিজারে আন্দাজ করেছিলাম আজ তো জেনেই গেলাম টগরের আসন্ন বিপদ সম্পর্কে, তুমি দাদা বড্ড খারাপ একটা মানুষ। মৃত্যু শয্যাশায়ী রোগী যেমন মৃত্যুর আগে খানিকটা সুস্থ হয়ে উঠার লক্ষ্মণ প্রকাশ করে তুমিও তেমনি চরিত্রের সায়াহ্ন কাল আসার আগে তাকে পাঠকের কাছে বেশি করে মহিমান্বিত করো তার পর টুস করে নিজের কাজটা সেরে ফেলো, এটা ভারি অন্যায় দাদা।
তবে কেন জানি মনে হচ্ছে কোথাও একটা আশার ঝিলিক দেখছি, কি জানি অবুঝ মন হয় তো স্বপ্ন বুনার চেষ্টা করছে বাকিটা তো তোমারই হাতে।
Shy হাত বাড়িয়ে ছুঁই না তোকে, মন বাড়িয়ে ছুঁই।
 দুইকে আমি এক করি না, এক কে করি দুই।। Shy
[+] 1 user Likes nextpage's post
Like Reply
(13-12-2022, 01:31 AM)nextpage Wrote: আজকের পর্ব টা যেমন দু ধাপে দিলে তেমনি গল্পটাও দুটো ভাগে বিভক্ত।এক অংশ জুড়ে শুধুই নিখাদ ভালোবাসা। 
তুমি চাইলে কিন্তু একখানা প্রেমের উপন্যাস লিখতে পারো। যেখানে দেহ নয় মনের দেয়া নেয়া হবে। প্রেম হবে ভালোবাসা হবে, মান অভিমান থাকবে, হারানোর ভয়, প্রাপ্তির উল্লাস থাকবে। 
রনিতার মত একটা ডেঞ্জারাস প্রেমিকা থাকা কিন্তু খারাপ না অনেকাংশেই লাভও আছে, যদিও আমার মতে প্রতিটা প্রেমিকের কাছেই তার ভালবাসার প্রিয়তমা যথেষ্ট ডেঞ্জারাস। রনিতার চলে যাওয়ার সময় ও চোখের যে ভাষার বর্ণনা করলে তাতে তো এখনো ওর বিষয়টা ক্লিয়ার হচ্ছে না। কিছু একটা ঘাপলা আছে।

টিজারে আন্দাজ করেছিলাম আজ তো জেনেই গেলাম টগরের আসন্ন বিপদ সম্পর্কে, তুমি দাদা বড্ড খারাপ একটা মানুষ। মৃত্যু শয্যাশায়ী রোগী যেমন মৃত্যুর আগে খানিকটা সুস্থ হয়ে উঠার লক্ষ্মণ প্রকাশ করে তুমিও তেমনি চরিত্রের সায়াহ্ন কাল আসার আগে তাকে পাঠকের কাছে বেশি করে মহিমান্বিত করো তার পর টুস করে নিজের কাজটা সেরে ফেলো, এটা ভারি অন্যায় দাদা।
তবে কেন জানি মনে হচ্ছে কোথাও একটা আশার ঝিলিক দেখছি, কি জানি অবুঝ মন হয় তো স্বপ্ন বুনার চেষ্টা করছে বাকিটা তো তোমারই হাতে।

তুমি যে কথাগুলো বললে তার যদি একটারও উত্তর দিই তাহলেই রহস্য রোমাঞ্চের পুরো ব্যাপারটাই আর থাকবে না। তাই চুপ করে থাকাই শ্রেয় বলে মনে করছি। এই ক'দিন যত পারো আমার উপর রাগ করে নাও, অভিমান করে নাও, মনে মনে গালমন্দ করো। সবশেষে এটুকুই বলবো .. একটু ধৈর্য রাখো পরের পর্বের জন্য।

আর প্রেমের উপন্যাস লেখা নিয়ে এইটুকু বলতে পারি .. আমি হয়তো ভবিষ্যতে নিখাদ প্রেমের উপন্যাস লিখবো না। তবে যারা এই ফোরামে নতুন করে প্রেমের উপন্যাস লেখা শুরু করেছে বা লেখার কথা ভাবছে তাদের জন্য একটা সাজেশন আছে। এই উপন্যাসের কয়েকটি পর্বে যে প্রেমের সিকোয়েন্সগুলি তুলে ধরেছি এবং চরিত্রগুলির কল্পনা ও পারস্পরিক কথোপকথনের বর্ণনা প্রদান করেছি .. সেগুলো যদি ঠিকঠাক অনুসরণ (অনুকরণ নয়) করতে পারে, তাহলে তারা অবশ্যই সফল হবে।  Smile
[+] 2 users Like Bumba_1's post
Like Reply
কর্মফল -- কার কর্মফল? কিসের কর্মফল? কি পাপ করেছিল টগর? কি পাপ করেছিল আমাদের গোগোল? কি পাপ করেছিল সুজাতা? যে ওদের এত বড় সর্বনাশের পথে ঠেলে দিলে তুমি? এতদিন সবকিছু মেনে নিয়েছি, কারণ পুরোটাই বাস্তবসম্মত বলে মনে হয়েছিল আমার কাছে। কিন্তু আজ এই মৃত্যুটা কিছুতেই মানতে পারলাম না ভাই বুম্বা। আর কতদিন নরকের কীটগুলোর হাতে অসহায় নিরপরাধ  ব্যক্তিদের এইভাবে প্রাণ যাবে বলতে পারো? নিজের অসাধারণ লেখনী দিয়ে পাঠকদের মনে যখনই একটি চরিত্রের প্রতি ভালোবাসা সৃষ্টি করো তার পরমুহূর্তেই তাকে কেড়ে নাও। এতটা নিষ্ঠুর তুমি কি করে হতে পারো?  Sad

[Image: Shocked-Open-Asianpiedstarling-size-restricted.gif]

[+] 1 user Likes Sanjay Sen's post
Like Reply




Users browsing this thread: 56 Guest(s)