মহাযোদ্ধা অচিন্ত্য
© মহাবীর্য্য দেবশর্ম্মা
পর্ব্বঃ দুই ।। অরণ্যে অন্তিম হাহাকার
গভীর রাত। প্রাসাদে খোলা বাতায়নের সম্মুখে নিদ্রা যাইতেছিল মদ্রা। সহসা এক নারীর আর্তনাদ তাহার নিদ্রাভঙ্গ করিয়া দিল! ধড়ফড় করিয়া উঠিয়া বসিল! দুই নেত্রে তখনও তন্দ্রা রহিয়াছে। কী হইয়াছে কী হইয়াছে বুঝিতে না বুঝিতেই পুনরায় সেই নারীর আর্তনাদ শুনাইয়া দিল। কোন নারী যেন নিজের সর্ব্বশক্তি দিয়া পরিত্রাহি চিৎকার করিতেছে প্রাণ বাঁচাইবা নিমিত্ত! চিৎকার সম্মুখের অরণ্য হইতে আসিতেছে। মদ্রা ধীরে ধীরে শয্যা ত্যাগ করিল। ত্রিদিবস হইল, সে এই প্রাসাদে আসিয়াছে! রাজজ্যোতিষী মদ্রার ষোড়শবর্ষীয় জন্মদিবসে নাকি তাহার ললাটে মৃত্যুর করাল ছায়া দেখিয়াছেন। রাজকন্যা মদ্রা! নিজ পিতার দুলালী মদ্রাকে কোন কিছু প্রতিবাদের সুযোগ না দিয়াই মহারাজা এই স্থানে প্রেরণ করিয়া দিয়াছেন! এই স্থানে আসিবার পর হইতেই সম্মুখের গহীন বনের অভ্যন্তরে যাইবার ইচ্ছা বড়ই প্রবল হইয়াছে মদ্রার কিন্তু যতবারই যাইতে চাহে রক্ষীসকল বাধা দেয়! রাজ নির্দ্দেশে তাহারা এক মুহূর্তও মদ্রাকে চক্ষের আড়ালে যাইতে দেয় না।
এখন গভীর রাত্রিতে মদ্রা নিদ্রা টুটিয়া যাওয়ায় এবং গহীন অরণ্য হইতে আগত শব্দ শুনিয়া মদ্রার মনের কৌতূহল আর বাঁধ মানিতেছে না। কে ঐ নারী? সে ওই অরণ্যে কী করিতেছে? কেন ওই অরণ্যে কেহ যাইতে চাহে না? অসংখ্য প্রশ্নেরা মদ্রার চিন্তায় ঘুরপাক খাইতেছে। সবদিক বিবেচনা করিয়া মদ্রা বুঝিল, সকল প্রশ্নের উত্তর ওই অরণ্যের গভীরে গিয়াই মিটিবে! কিন্তু রক্ষীরা কোনমতেই তাহাকে যাইতে দিবে না ইহা বুঝিয়া উহাদিগে ফাঁকি দিয়া পলায়ন করিতে হইবে ঠিক করিল সে। ঘরের দরজায় থাকা প্রহরীকে মদ্রা সহসা শরবত আনিবার জন্য আদেশ দিল। প্রহরী চক্ষের বাহিরে হইবামাত্র মদ্রা কক্ষত্যাগ করিল। বাহিরে আসিয়া দেখিল, গুটিকয় প্রহরী গল্পগুজব করিতেছে। স্তম্ভের অন্ধকারে মিশিয়া উহাদের নজর এড়াইয়া অবশেষে প্রাসাদের বাহিরে আসিল মদ্রা! একটু হাঁফ লইয়া জঙ্গল অভিমুখে দ্রুতগতিতে হাঁটা দিল সে। চন্দ্রের আলোয় আলোকিত রাস্তা! তাই জঙ্গলের পথে যাইতে কষ্ট হইল না মদ্রার! শুধু সে জানিল না, প্রাসাদের মিনারে একজন নীরবে বসিয়া ছিল আর মদ্রা তাহার নজর এড়াইতে পারে নাই! মদ্রাকে জঙ্গল অভিমুখে যাইতে দেখিয়া সেই কায়ার মুখে হাসির উন্মেষ দেখা দিল, "মৃত্যুকে কেহ কভু এড়াইতে পারে নাই রাজকন্যা! তুমিও পারিবে না!" ঝাঁপ দিল মিনার হইতে আর মদ্রার পিছনে নিঃশব্দে গমন করিল।
জঙ্গলের ভিতরে আসিয়া মদ্রা দিশেহারা হইয়া গেল! ইতিপূর্ব্বে সে কভু অরণ্যে আসে নাই দিবালোকেই, এখন তো রাত্তির! চন্দ্রালোকে আলো আঁধারি মিশিয়া এমন ধাঁধা তৈয়ার হইয়াছে যে মদ্রা কোনপথে আসিয়াছিল তাহা অবধি গুলাইয়া গিয়াছে। বার দুয়েক চিৎকার করিল কিন্তু এই শ্বাপদসঙ্কুল বনে কোন বন্য পশুর কর্ণে সে চিৎকার গেলে তাহাকে পশুর ভোজন হইতে হইবে বুঝিয়া চুপ করিয়া গেল। পশুর দল রাজকন্যা বলিয়া তাহাকে কোন ছাড় দিবে না ইহা বুঝিবার বুদ্ধি মদ্রার আছে। এতক্ষণে নিজ কার্য্যের জন্য তাহার মনস্তাপ হইতেছে। কেন সে আসিল! কিন্তু ভাবিয়া লাভ নাই বুঝিয়া অগ্রে গমণ করিল। কিছুদূর গভীরে যাইবার পর মদ্রা কিছু মানুষের কোলাহল পাইল। কৌতূহলী হইয়া ও সাহায্যের আশায় দ্রুত ওই পানে গেল। তথায় গিয়া যাহা দেখিল তাহাতে মদ্রার চক্ষু বিস্ফারিত হইয়া গেল। কয়েকজন লোক, দেখিয়া কোন রাজার প্রহরী বোধ হইতেছে! কিন্তু উহারা সকলে একটী গর্ত কুঁড়িতেছে। সামনে একটী নারীর লাশ রাখা! মদ্রার বুঝিতে ভুল হইল না, এই নারীই চিৎকার করিতেছিল যাঁহার আর্তনাদে তাহার ঘুম ভাঙ্গিয়া গিয়াছিল এবং ইহারা নিশ্চয়ই ওই নারীকে হত্যা করিয়া এক্ষণে পুঁতিয়া দিতেছে। মদ্রা ঘামিয়া গেল। বৃক্ষের আড়ালে দাঁড়াইয়া এই দৃশ্য দেখিতে সে এতই মজিয়া গিয়াছিল যে খেয়াল করে নাই তাহার পিছনে কেহ আসিয়া দাঁড়াইয়াছে! টের পাইবা মাত্র সে ঘুরিয়া দাঁড়াইতে গেল আর পরমুহূর্তেই কেহ তাহার মুখে কিছু চাপিয়া ধরিল! মদ্রা ধস্তাধস্তি করিয়া ছাড়াইবার চেষ্টা করিল কিন্তু পারিল না! তাহার চতুর্দিক অন্ধকার হইয়া আসিল। অনতিকাল পরেই সংজ্ঞা হারাইয়া ফেলিল! মদ্রা সম্পূর্ণ অচেতন হইলে লোকটি প্রহরীদিগে ডাকিল, এবং মদ্রাকে লইয়া যাইবার আদেশ দিল। প্রহরীগণ ও ব্যাক্তিটি মদ্রাকে সাথে লইয়া চলিয়া গেল তাহারা খেয়াল করিল না তাহাদের ঠিক পিছনে কেহ একজন যেইরূপ সিংহ মৃগকে নিঃশব্দে শিকার করিবার ন্যয় পিছু লয় ঠিক সেইরূপ পিছু লইয়াছে। বৃক্ষের এক শাখা হইতে অন্য বৃক্ষের শাখায় সে যেন উড়িয়া বসিতেছিল কিন্তু সামান্য শব্দটুকু নাই। অন্ধকারের সহিত মিশিয়া সে নিজেই যেন অন্ধকার হইয়া গিয়াছে!
★★★
সুরম্য অট্টালিকার অন্তরে একটী দুগ্ধফেননিভ শয্যা প্রস্তুত রহিয়াছে; বিবিধ পুষ্পরাশি তাহার উপর ছড়াইয়া রহিয়াছে। সেই ফুলশয্যার উপর এক বড়ই সুন্দর রমণী শুইয়া আছে, যৌবনের ছটায় তাহার শরীর যেন কামদেবের আশিসধন্য। সুবিশাল দুইটী স্তন যেন কাঁচুলির বাধা মানিতেছে না। বক্ষবিভাজিকায় প্রদীপের আলো ঠিকরাইয়া পড়িতেছে। শ্বেত শুভ্র রঙ গৌরবরন শরীরখানি আজ মিলনের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করিতেছে। প্রৌঢ় ত্রিশক কামরায় প্রবেশিয়া দুইচোখ ভরিয়া অদ্য রাত্রির ভোগ্যাকে দেখিয়া লহিল। প্রদীপের ম্লান আলোয় রমণীর রমণসাজ দেখিয়া তাহার অধরে স্মিত হাসির উদ্রেক ঘটিল এবং চক্ষে কামনার অগ্নি বিম্বিত হইলো। ধীরে ধীরে শয্যাপার্শ্বে উপবিষ্ট হইয়া ত্রিশক রমণীকে আপন বাহুডোরে টানিয়া লহিল। রমণীটী দুইহাতে ত্রিশকের আলিঙ্গনে ধরা দিল, তাহার নিঃশ্বাস ঘন হইতে লাগিল, ত্রিশক আপন অধরে নারীওষ্ঠ ভরিয়া লইল। জ্বিহার সহিত জিহ্বার মিলন লালরসেও যেন কামের আগুন জ্বালাইয়া দিল। দীর্ঘ দুই মুহূর্ত এই গভীর চুম্বনের খেলা চলিতে লাগিল। ধীরে ধীরে ত্রিশক চুম্বনরত অবস্থাতেই রমণীকে লইয়া শয্যায় শুইয়া পড়িল। ইহার পর রমণীর উপরে উঠিয়া তাহার গন্ডদেশে চুম্বন করিতে করিতে নিজ হস্ত রমণীর কাঁচুলির উপরে রাখিয়া স্তন মর্দন করিতে লাগিল। সুবৃহৎ কোমল স্তন ত্রিশকের হাতের স্পর্শ পাইয়া যেন আরই বড় হইয়া গেল। ত্রিশকের লোভী চোখ যেন আর থাকিতে পারিল না। একঝটকায় ত্রিশক নারীটির কাঁচুলি ছিঁড়িয়া দিতেই বৃহদাকার বক্ষদ্বয় লাফাইয়া বাহির হইয়া আসিল। আঙুরের ন্যয় স্তনবৃন্তের চারিপাশে একটী কৃষ্ণবর্ণের বৃহৎ বৃত্ত রহিয়াছে। মুঠোর মধ্যে একটী স্তন ধরিয়া মর্দন করিতে করিতে অপর স্তনবৃন্তটী ত্রিশক মুখমধ্যে ভরিয়া লইল। দুগ্ধ নাই সেই শূন্য স্তনে তবু উহার স্বাদ ত্রিশককে যেন পাগলপারা করিয়া দিল। উন্মত্ততার সহিত সে স্তনদ্বয়ের উপর টুটিয়া পড়িল। উপর্যপরি চোষণ ও মর্দন করিতে লাগিল। দীর্ঘক্ষণ সেই ক্রীড়া করিবার পর যখন থামিল দেখা গেল শুভ্র বক্ষ দুইখানি লাল হইয়া গিয়াছে এবং দীপের আলোয় ত্রিশকের লালায় ভেজা স্তন চকচক করিতেছে। নারীটী এতক্ষণ নীরবে ত্রিশকের খেলা দেখিতেছিল। ত্রিশকের তাহার স্তনের উপর এমন কার্য্য তাহার ওষ্ঠে হাসির উদ্রেক ঘটাইল। "আগে বুঝি কখনও নারীর সান্নিধ্য পান নাই?" প্রশ্ন করিল। ত্রিশক চট করিয়া জবাব দিল না, রমণীর পানে চাহিয়া একটু পরে কহিল, "যতই নারী গমণ করি এ তৃষ্ণা যেন কিছুতেই মেটে না!" নারী হাসিয়া বলিল, "মদ আর নারী! এত সহজে এ তৃষ্ণা যাইবে কীরূপে!" ত্রিশক হাসিয়া বলিল, "এ তৃষা যেন কভু না মেটে!" এইবার ত্রিশকের গতি ধীর হইল। সে নারীর নাভীদেশে চুম্বন করিতে করিতে নিম্নে যাইতে লাগিল। ত্রিশকের আপন শরীরের বিবিধ স্থানে চুম্বন পাইতে পাইতে নারী শরীর তিরতির করিয়া কাঁপিতে লাগিল। ধীরে ধীরে ত্রিশক রমণীর নিম্নাঙ্গের বস্ত্র ধরিয়া টান দিতেই উহা খসিয়া গেল। দুইটি কলাবতী ঊরুর সন্ধি স্থলে ত্রিভুজাকার যোনিদেশ প্রকট হইল। প্রদীপের অন্ধকার আলোয় সেই যোনির অন্ধকার দেখা যাইতে ছিল না। ত্রিশক নিজ মুখ ওই অন্ধকারে নামাইয়া আনিল। যোনির পদ্মপাতার ন্যয় পাপড়ি দুইটী তিরতির করিতেছিল, ত্রিশকের জিহ্বা সেই প্রদেশে প্রবেশিবামাত্র যোনি হইতে রাগরস নির্গত হইতে লাগিল। ত্রিশক, পরম পিপাসু যেইরূপ দীর্ঘতৃষ্ণা মিটাইতে বারিগ্রহণ করে সেইরূপ কাঙালের ন্যয় ওই রাগরস পান করিতে লাগিল। কামগন্ধের দাপটে ত্রিশকের সারা শরীর জুড়িয়া বিদ্যুৎ খেলিতেছে, তীব্র রাগমোচনের আহ্লাদে রমণী ত্রিশকের মাথা দুই ঊরু সন্ধিতে চাপিয়া ধরিয়াছে। কীয়ৎকালাতিপাতের পর ত্রিশক ধীরে ধীরে নারীর যোনিদেশ হইতে সরিয়া উঠিয়া বসিল। তাহার মুখের সর্বত্র নারী যোনির কামরস লাগিয়া রহিয়াছে। নারীর মুখে ত্রিশকের মুখমণ্ডল অবলোকন করিবার পর হাস্য দেখা গেল। লাস্যময়ী সলজ্জ কণ্ঠে কহিল, "আপনি বড়ই নিষ্ঠুর! ওই স্থানে কেহ মুখ দেয়!" ত্রিশক হাসিয়া বলিল, "নষ্টের কবেই বা নষ্টামীর ভয় হইয়াছে!" এই বলিয়া ত্রিশক নিজ বস্ত্র পরিত্যাগে ব্যস্ত হইল। নিম্নাঙ্গের বস্ত্রখানি খুলিতে যাইতেই নারী হস্ত বাধা দিল, হায়া ভুলিয়া মদির চক্ষে কহিল, "উহা আমার নিমিত্তে থাকুক, আমিই খুলিব।" ত্রিশক কৌতুক সহকারে নিরীক্ষণ করিতে লাগিল, নারী হাতের নিপুণ খেলায় তাহার ঊরুবস্ত্র খুলিয়া গেল মুহূর্তেই আর ফণা তুলিয়া ত্রিশকের পুরুষাঙ্গ বাহির হইল। যদিও গণিকা তবুও ত্রিশকের শিশ্নের আকার ও প্রকার দেখিয়া তাহার চক্ষে ভীতি ও বিস্ময় উভয়েরই উন্মেষ ঘটিল! "এত বড়! মহাশয় আমি ইহা লহিতে পারিব না!" মুখে বলিলেও নারীটির চক্ষে লোভের আলো দেখা যাইতেছিল। ধীরে ধীরে সে ত্রিশকের উত্থিত দন্ডে হস্ত রাখিল। কোমল হাতের ছোঁয়া পাইবামাত্র সর্পের ন্যয় ত্রিশকদন্ড ফুঁসিয়া উঠিল। পুরুষাঙ্গের অগ্রের মুণ্ডটির ত্বক রমণী আগুপিছু করিতে লাগিল। একপলক ত্রিশকের পানে লজ্জ্বা সহকারে চাহিয়া রমণী আপন মুখের ভিতরে ত্রিশকের শিশ্ন ঢুকাইয়া লহিল, গরম লালরসের স্পর্শে ত্রিশকের পুরুষাঙ্গ আরওই গর্জিয়া উঠিল। চক্ষু বন্ধ করিয়া রমণীটীর মাথা ধরিয়া ত্রিশক উহার মুখ লিঙ্গ দ্বারা সঙ্গম করিতে লাগিল। এত বৃহদাকার পুরুষাঙ্গ গণিকা হইলেও নারীটি কভু লহে নাই, তাহার যেন দম বন্ধ হইয়া আসিবার উপক্রম হইল, তবুও পেশাদার বারবণিতা সে, ধীরে ধীরে ত্রিশকের অণ্ডকোষদ্বয় সমেত পুরো পুরুষাঙ্গই লেহ্বন করিতে লাগিল। পুরুষাঙ্গ সঙ্গমের জন্য প্রস্তুত হইয়াছে অনুভব করিয়া শয্যায় শায়িত হইল। ত্রিশক উহার উপরে আসিয়া দুই ঊরু ধরিয়া ফাঁক করিয়া যোনিদেশ প্রস্ফুটিত করিয়া আপন পুরুষাঙ্গ রমণীর মধ্যে প্রবেশ করাইল, ধীরে ধীরে ত্রিশকের লিঙ্গ রমণীর অভ্যন্তরে প্রোথিত হইতে লাগিল। যতই বেশ্যাযোনি হউক, ত্রিশকের দৃঢ় পুরুষাঙ্গ রসসিক্ত যোনিতে অর্ধপ্রবেশ হইবা মাত্র ছটপট করিতে লাগিল। ত্রিশকের চক্ষে অগ্নি জ্বলিয়া উঠিল। সঙ্গমকালে বৃষ পুরুষ যেইরূপ আপন লিঙ্গের বৃহৎ হইবার কারণে পদ্মিনী নারীকে কষ্ট পাইতে দেখিলে নিষ্ঠুর হইয়া যায় ত্রিশকও সেইরূপ নিষ্ঠুর হইয়া গেল। আরও কঠোরতার সহিত সে নারীভ্যন্তরে প্রবেশ করিতে লাগিল। সম্পূর্ণ পুরুষাঙ্গ প্রবেশ হইলে বোধ হইল যেন উহা নারীর জরায়ুতে ধাক্কা মারিতেছে। ত্রিশক পরিতৃপ্ত হইয়া নারীর কটিদেশ ধরিয়া কোমর আগুপিছু করিতে লাগিল। পিচ্ছিল গুহাতে গোখরো ক্রমাগত আসা-যাওয়া করিতেছিল। যাতনা ও তৃপ্তি উভয়ের যুগপৎ অনুভবে রমণী রাত্রির নিস্তব্ধতা ভঙ্গ করিয়া শীৎকার করিতেছিল। মেহগনির পালঙ্কে দুই নরনারীর এমন মৈথুনের কেবল প্রদীপের শিখাগুলি সাক্ষী রহিল।
দীর্ঘ সময়ের এই যোনি সঙ্গমে ত্রিশকের মুখমণ্ডলে তৃপ্তির আভা প্রকাশ পাইতেছিল, বিবিধ আসনে সে সঙ্গম করিতে ছিল। সঙ্গমের ঠিক অন্তিমক্ষণে যখন মদনরস বাহির হইবে ত্রিশক সহসা নারীর উপরে শুইয়া গেল, তাহার মুখ খুলিল আর দুইটি শ্বদন্ত বাহির হইল, এবং পরমুহূর্তেই ওই দুই দন্ত নারীটির গলায় দংশন করিল! নারীটিকে ধরিয়া সে তীব্র গতিতে সঙ্গম করিতে করিতে দংশন করিয়া যাইতে লাগিল! বেশ্যা হইলেও প্রাণভয়ে নারীটি শরীরের সর্ব্বশক্তি দিয়া ত্রিশককে সরাইবার চেষ্টা করিল কিন্তু, পারিল না কিছুতেই। মৃত্যু যাতনায় ছটপট করিতে করিতে রমণী মরণ চিৎকার করিতে লাগিল কিন্তু সকলই বৃথা কেহ আসিল না! দেখিতে দেখিতে ত্রিশকের তলে তাহার শরীর নিথর হইয়া গেল। পরমুহূর্তেই ত্রিশক নিজ মদনরস শুষ্ক যোনিতে ঢালিয়া উঠিয়া বসিল। মৃত নারীর পানে চাহিয়া সে প্রচণ্ড জোরে হাসিতে লাগিল। ত্রিশকের চেহারায় বিপুল পরিবর্ত্তন আসিয়াছে। কিছুকাল পূর্ব্বের জ্বরায় বিবর্ণ চেহারা যুবায় রূপান্তরিত হইয়াছে আর যে সুন্দরী নারীকে সে এতক্ষণ ভোগ করিতেছিল তাহার মৃতদেহ এক বৃদ্ধা কঙ্কালসার হইয়া পড়িয়া আছে!
ত্রিশক, ডাক দিল, "রক্ষী!" একজন প্রবেশ করিল, ত্রিশক আদেশ দিল, "ইহাকে জঙ্গলের ভিতরে ফেলিয়া দিয়া আস আর ত্রূবীরকে আমার সহিত সাক্ষাৎ করিতে বল!" রক্ষী আদেশ পাইবামাত্র ঝুঁকিয়া সালাম করিয়া শয্যা হইতে মৃতদেহ লইয়া চলিয়া গেল। ত্রিশক একটী প্রদীপ লহিয়া দর্পণ সম্মুখে গিয়া আপন রূপ দর্শিয়া ক্রূর হাস্য করিতে লাগিল।
বস্ত্র পরিধানের পর ত্রিশক প্রাসাদের প্রাঙ্গণে আসিল। জ্যোৎস্নার আলোয় স্নান করিতে করিতে সে গগনে অম্বরের ভেলার খেলা দেখিতেছিল এমন সময় ত্রূবীর আসিয়া ত্রিশকের সামনে হাঁটু মুড়িয়া অভিবাদন করিয়া বলিল, "আদেশ করুন মহাজেয়!" ত্রিশক ত্রূবীরকে কহিল, "নতুন কাহারও সন্ধান পাওয়া গিয়াছে?" ত্রূবীর নতমস্তকে বলিল, "এক নারীকে আজই আমাদিগের রক্ষী জঙ্গলে পাকড়াও করিয়াছে! কিন্তু… উহার সাজপোশাক দেখিয়া বোধ হইতেছে সম্ভবতঃ কোন রাজকন্যা হইবে!" ত্রিশকের মুখে লোভের হাসি খেলিয়া গেল, "স্বর্ণরুধির স্বাদ পাইব বলিতেছ! উহাকে লইয়া আইস! দেখি কোথাকার কোন রাজকন্যা সে!" ত্রূবীর পুনরায় অভিবাদন করিয়া বাহির হইয়া গেল, একটু পরেই মদ্রাকে লহিয়া ফের আসিল। মদ্রা তখনও অচেতন হইয়া পড়িয়া ছিল, চন্দ্রের আলোতে তাহার রূপ যেন স্বর্গের অপ্সরাদেরও ম্লান করিয়া দেয়। ত্রিশক উহার রূপ দেখিয়া মোহাচ্ছন্ন হইয়া মদ্রার শরীরে স্পর্শ করিবা মাত্র যেন অগ্নিতে হাত রাখিয়া ছ্যাঁকা খাইয়াছে সেইভাবে হাত সরাইয়া লহিল। বিরস কণ্ঠে কহিল, "কুমারী! এ পৌরুষস্পর্শে আসে নাই এ যাবৎ। ইহাকে ভোগ কর, তাহার পর আমা নিকট প্রেরণ করিও।" ত্রূবীরের মুখে ত্রিশকের এইকথা শুনিয়া হাসি খেলিয়া গেল। সে কহিল, "মহাজেয় ত্রিশকের জয় হউক! এই কিশোরীকে অদ্য রজনীতেই ভোগের ব্যবস্থা করিতেছি!" ত্রিশক ও ত্রূবীর উভয়েই সজোরে হাসিয়া উঠিল।
অচেতন মদ্রা জমিনে শায়িত, ত্রূবীর ও ত্রিশক গল্প করিতেছে এমন সময় বাহিরে বিস্তর গোলমালের আওয়াজ পাওয়া গেল। এক প্রহরী হাঁফাইতে হাঁফাইতে আসিয়া বলিল, "মহাজেয় কেহ আক্রমণ করিয়াছে!" ত্রিশক গর্জিয়া উঠিল, "কোন মহামূর্খের মরিবার শখ জাগিয়াছে! কয়জন আছে?" প্রহরী জবাব দিল, "একজনই আছে মহারাজ কিন্তু আমরা তেমন কিছু করিতে পারিতেছি না, কচুকাটার ন্যয় আমাদিগে কাটিয়া দিতেছে তরবারির ঘায়ে!" ত্রিশক দাঁত কিড়মিড় করিয়া ত্রূবীরকে রণসাজে প্রস্তুত হইতে বলিয়া নিজে অন্দরমহলে গেল!
ত্রূবীর নিজ তরবারিখানি কোষমুক্ত করিয়া দরজাভিমুখে চাহিয়া রহিল নিঃশব্দে। চক্ষু বন্ধ করিয়া সে আগন্তুকের মারণ ঊর্যা নিরীক্ষণ করিবার চেষ্টা করিয়া কাঁপিয়া উঠিল, ঊর্যাশক্তির আভাষ এক মহাযোদ্ধার আগমণ বার্ত্তা দিতেছে। ত্রূবীর বুঝিল ইহার সহিত আঁটিয়া উঠিতে পারিবে না কেবল ত্রিশক ব্যতীত অন্য কেউ। কিন্তু ত্রিশককে প্রস্তুত হইবার প্রাপ্ত সময় দিতে হইবে।
সহসা প্রাসাদ প্রাঙ্গণের দ্বার ভাঙ্গিয়া পড়িল। দুইজন রক্ষী ছিটকাইয়া সেই কপাটের সহিত মাটিতে পড়িল। ত্রূবীর চাহিয়া দেখিল, এক সৌম্য কিশোর তরবারি হাতে দাঁড়াইয়া আছে! ত্রূবীরের বিস্ময়ের অবকাশ রহিল না। এই সাধারণ একটা শিশু উহাদের প্রাসাদের সকল রক্ষীকে মারিয়া দিয়াছে! কিন্তু, ত্রূবীরের দেড়শত বৎসরের জীবনে ত্রূবীর জানে, এই আর্য্যভূমিতে বহুবিধ বীর আসিয়াছে এবং এই ভূমি আজও শস্য শ্যামলা। তবুও, এই কিশোর এখনো পঞ্চদশ বৎসরও বুঝি অতিক্রম করে নাই তবুও ইহার মারণ ঊর্যা ত্রিশকের তিনশতকের মারণ ঊর্যার সমান বোধ হইতেছে। ত্রূবীর অদ্যাবধি ত্রিশক ছাড়া কাহাকেও দেখিয়া ভীত হয় নাই, এই কিশোরকে দেখিয়া সে স্মিত হাস্য দিল! "তুমি বীর ইহা স্বীকার করিতেছি কিন্তু তুমি মূর্খ! তুমি কী বাস্তবিক ভাবিয়াছ সিংহ গুহাতে আসিয়া বাঁচিয়া ফিরিবে এত আয়াসে!" কিশোর আগন্তুক সশব্দে অট্টহাস্য করিয়া উঠিল, "সিংহ! আমি তো কোথাও সিংহের লেশমাত্র চিহ্ন দেখিলাম না! দেখিলাম কেবল বাদুড়! রক্তচোষা প্রেত বাদুড়!" ত্রূবীর এমন ভাষণ শুনিয়া ক্রোধে উন্মত্ত হইয়া গেল, মুক্ত তরবারি লহিয়া সে ধাবিয়া গেল আগন্তুক সমীপে। "এত আস্পর্ধা! এই রক্তচোষা বাদুড় আজ তোর রক্ত চুষিবে!" বলিয়া ঝাঁপাইয়া পড়িল। আগন্তুক ত্রূবীরকে সম্মুখপানে আসিতে দেখিয়াও বিন্দুমাত্র বিচলিত হয় নাই। ত্রূবীরের তরবারি তাহার উপর আঘাত করিবা মুহূর্তেই সে দুই পা পিছনে চলিয়া গেল, এত দ্রুত তাহার পদ সঞ্চার ঘটিল যে ত্রূবীরের তরবারি লক্ষ্যভ্রষ্ট হইল আর তাহার অন্তেই আগন্তুকের তরবারি গর্জিয়া উঠিল, "বহ্নিমান পূনর্ভব!" ত্রূবীরের শরীরে যেন কেহ আগুন ধরাইয়া দিল, তীব্র যাতনায় ত্রূবীর চিৎকার করিয়া উঠিল। "তুমি শুধু ভয়াবহ মারণ ঊর্যায় সমৃদ্ধ নহে, সাথে অগ্নিদেবের আশীর্ব্বাদও পাহিয়াছ! আমি বাস্তবিক চমৎকৃত! অদ্যাবধি আমার দেড়শত বৎসরের জীবনকালে এত কম বয়সী মহাযোদ্ধা আমি দেখি নাই স্বীকার করিতেছি কিন্তু ইহা পর্যাপ্ত নহে আমাকে পরাস্ত করিবার জন্য!" ত্রূবীর পিছু হটিয়া মায়াজাল বিস্তার করিল, দেখিতে দেখিতে অম্বর হইতে বজ্রের শিখা আগন্তুকের উপর পড়িল কিন্তু আগন্তুক উহা পাশ কাটাইয়া সরিতেই, সামনের দুইটি লতাগাছ সর্পরূপে আবির্ভূত হইয়া আগন্তুককে বেষ্টন করিল, "সর্ব্বভূক পরিতুষ্টম্!" তরবারি জ্বলিয়া উঠিয়া দুই নাগের গলা কাটিয়া দিল, ছিন্ন সর্প মস্তক দুইটি মাটিতে পড়িবার সাথে সাথেই নেকড়ের রূপ নিল এবং আগন্তুকের দিকে ছুটিয়া আসিল! আগন্তুক একটু বিচলিত হইল, ক্রমাগত হারে ঊর্যার ব্যবহার তাহার ঊর্য্যা শেষ করিয়া দিতেছে কিন্তু, মাটিতে সংজ্ঞাহীন মদ্রাকে সে পূর্ব্বেই দেখিয়াছে, এ স্থলে কোন ভয়াবহ মারণ অস্ত্র প্রয়োগ করিলে মদ্রাও বিপদের সম্মুখীন হইবে! আগন্তুক ভালোই বুঝিতে ছিল, ত্রূবীর উহাকে পরাস্ত করিতে পারিবে না সে কেবল ত্রিশককে প্রস্তুত হইবার সময় করিয়া দিতেছে! পরিস্থিতি উপলব্ধি করিয়া আগন্তুকের ভ্রূতে চিন্তার রেখা পড়িল। নেকড়ে দুইটি কাছে আসিবার সাথে সাথে সে পবনপদের ব্যবহার করিয়া শূণ্যে উঠিয়া গেল, ত্রূবীরকে কোথাও দেখিতে পাওয়া যাইতেছে না! আগন্তুক বুঝিল, মায়াজাল না কাটিলে ত্রূবীরের কেশাগ্র স্পর্শ করা যাইবে না। আগন্তুক অগ্নিদেবকে স্মরণ করিয়া তরবারিকে শূণ্য হইতে বসুধা অবধি টানিয়া দিল, "মহাবহ্নি নিয়তিখণ্ডম্!" ভয়াবহ অগ্নি প্রাসাদকে সমুদ্রের ঊর্মির ন্যয় গ্রাস করিল! এই অস্ত্রের প্রয়োগ সে করিতে চাহে নাই কিন্তু প্রাসাদের শতেক প্রহরীগণ ও ত্রূবীরের সহিত লড়িতে তাহার যে পরিমাণ মারণ ঊর্যা খরচ হইয়াছে তাহাতে যুদ্ধ আরও কিছুক্ষণ চলিলে সে নিজেই সমস্যায় পড়িবে বুঝিয়া এই অস্ত্রের প্রয়োগ করিল। এতক্ষণে মদ্রার জ্ঞান ফিরিয়া আসিয়াছে। সে ফ্যালফ্যাল করিয়া আগন্তুক ও ত্রূবীরের মহাযুদ্ধ দেখিতেছিল, সহসা অগ্নির প্রচণ্ড আস্ফালন তাহার দিকে অগ্রসর হইতেছে দেখিয়া প্রাণভয়ে ভীত মদ্রা চিৎকার করিয়া উঠিল। আগন্তুক মদ্রার চিৎকার শুনিতে পাইয়া সেই দিকে দ্রুতিতে আগুয়ান হইল। অগ্নিঢেউ মদ্রার কাছে পৌঁছাইবার পূর্ব্বেই পবনপদে ভর করিয়া আগন্তুক মদ্রার নিকটে গিয়া উহাকে পৃষ্ঠে লহিয়া পুনরায় আকাশে ভাসিল। দেখিতে দেখিতে অগ্নি সমুদ্র সকল মায়াজাল ভস্মীভূত করিয়া দিল। মুহূর্তক্ষণ পূর্ব্বেও যে প্রাসাদ মহা সজ্জায় সজ্জিত ছিল এখন তাহা কেবলই এক অগ্নিলেহীত পোড়োবাড়ীতে পরিণত হইল। মাটিতে একতাল মাংসপিণ্ড পড়িয়া আছে, কে বলিবে উহা ত্রূবীরের দেহ!
আগন্তুক মদ্রাকে লহিয়া মাটিতে নামিয়া আসিল। মদ্রা ইতিমধ্যে কী হইতেছে উহা সম্পর্কে ধারণা করিয়া লইয়াছে। সে আগন্তুককে প্রাণ বাঁচাইবার হেতু ধন্যবাদ দিতে গেলে, আগন্তুক বাধা দিল, "বিপদ কাটে নাই! আসল দুষ্ট এখনও বাঁচিয়া রহিয়াছে কিন্তু যে পরিমাণ ঊর্যা নিঃশেষ হইয়াছে উহার মুখামুখি হওয়া কঠিন হইবে প্রতীত হইতেছে!" কথা শেষ হইবার পূর্ব্বেই সমগ্র আকাশ অন্ধকার হইয়া গেল! সামান্যকাল পূর্ব্বেও গগনে যে চন্দ্র বিরাজিত ছিল, মুহূর্তেই তাহার আলো সমেত তাহাকে ঘোর অন্ধকার গ্রাস করিল, সে অন্ধকারের তীব্রতা এমন যে নিজ হাত পা অবধি দেখা যাইতেছে না। তীব্র মড়াপঁচার পূঁতিগন্ধ সহসা নাসাতে আসিল, সে দুর্গন্ধের চোটে যেন বমন হইয়া যাইবে! তমসাচ্ছন্ন সেই ঘোর আঁধার ছিন্ন করিয়া কেহ পাশবিক অট্টহাসি দিল, সমগ্র প্রাসাদে উহা গুঁজিতে লাগিল! মদ্রার মনে এক বীভৎস ভয় বাসা বাঁধিল, আপন প্রাণরক্ষাকারীর বাহুমূল সে আঁকড়াইয়া ধরিল। আগন্তুক ফিসফিস করিয়া কহিল, "ভয় নাই! ভয় নাই! ইহা কেবলই মায়া! হেথায় নিশ্চিন্ত থাকুন। আমি দুরাত্মার ছলনা সাঙ্গ করিয়া এখনই আসিতেছি!" মদ্রাকে তথায় রাখিয়া আগন্তুক সামনে অগ্রসর হইল। একঝলক চক্ষু বন্ধ করিয়া নিজ কুণ্ডলীনিতে ধ্যান দিয়া আপন ঊর্যামান মাপিয়া লহিল। যে পরিমাণ ঊর্যা ত্রূবীরকে বধ করিবার পর সে পুনঃসংগ্রহ করিতে সমর্থ হইয়াছে তাহাতে বড়জোর দুইটি মধ্যমস্তরের অস্ত্র অথবা একটী উত্তম স্তরের মহাস্ত্র প্রয়োগ করিতে পারিবে কিন্তু ত্রিশকের মায়ার নমুনা বুঝাইতেছে যে পরিমাণ প্রাণশক্তি উহার মধ্যে রহিয়াছে তাহাতে কমপক্ষে দশটি মহাস্ত্র প্রয়োগ না করিলে তাহাকে পরাস্ত করা যাইবে না। অস্ত্র যদি বিফল হয় তাহা হইলে তো সমূহ বিপদ! এমন ভয়াবহ প্রাণঘাতী পরিস্থিতির সম্মুখীন হইয়াও কিশোর আগন্তুক চঞ্চল হইল না! সে জানে বিপদকালে সেই জয়ী হইতে পারে যে মাথা ঠাণ্ডা রাখিতে পারে! তরবারি দক্ষিণ হস্তে শক্ত করিয়া ধরিল, "আমি ভাবিয়াছিলাম মহাজেয় নামে পরিচিত কেহ বুঝি পরমযোদ্ধা হইবে! কিন্তু আসিয়া দেখিলাম কেবলই বাদুড়তুল্য রক্তচোষার দল, যাহাদের মায়াজাল এত নিম্নমানে! তুমি মহাজেয় নহ তুমি এক নিম্নশ্রেণীর শোনিত লোভী পাপিষ্ঠ বিশেষ!" আগন্তুকের কথা শুনিয়া, ত্রিশক সজোরে হাসিয়া উঠিল, "দুদিনের শিশু মহাজেয় ত্রিশককে নিধন করিবার জন্য আসিয়াছে!" আগন্তুক উত্তর দিল, "তোমার সাধের ত্রূবীরকে নরকে পৌঁছাইয়া জিজ্ঞাসা করিও, সে তাহার হত্যাকারীকে দুদিনের শিশু বলিবে না। অবশ্য তোমার মৃত্যুর পরে তুমিও বলিবে না!" ত্রিশক ক্রোধে উন্মনা হইয়া মায়াজাল ঘন করিল, আগন্তুক যেথায় দাঁড়াইয়া ছিল, তাহার মাটি পঙ্কিল কর্দমায় রূপান্তরিত হইল! আগন্তুক মাটির ভিতরে ঢুকিয়া যাইতে লাগিল। ঘন অন্ধকারে সে কিছুই ঠাহর করিতে পারিতেছিল না। "অগ্নি প্রজ্জ্বলম্!" তরবারি অগ্নি শিখায় জ্বলিয়া অন্ধকার বিনাশ করিল এবং সেই প্রজ্জ্বলিত তরবারীখানি মাটিতে ঠেকাইবামাত্র মাটি শক্ত হইয়া গেল। আগন্তুক ঝুঁকিয়া মাটি ধরিয়া ধরা বিদীর্ণ করিয়া পদযুগল মুক্ত করিল। কিন্তু, উহার ঊর্যাস্তর এই কার্য্যে আরওই কমিয়া গেল। আগন্তুক মনে মনে ঈষৎ শঙ্কিত হইল, মহাস্ত্রের প্রয়োগ সে আর করিতে পারিবে না বড়জোর দুইটী অস্ত্র প্রয়োগ করিতে পারিবে কিন্তু, মায়ার গভীরতা বলিতেছে দুই অস্ত্র ত্রিশকের গায়ে আঁচড় অবধি কাটিতে পারিবে না। কী করা যায়! ভাবিতে ভাবিতে আগন্তুকের স্মরণে আসিল, মদ্রার গলায় একটী হার সে দেখিয়াছিল, যদি ভুল না করে তবে ঐ হারের মধ্যে ঊর্যা সে অনুভব করিয়াছিল। ঘাড় ঘুরাইয়া সে মদ্রাকে দেখিবার চেষ্টা করিল কিন্তু, তাহার তরবারির আগুন ত্রিশকের মায়াজাল ভেদ করিয়া মদ্রা অবধি না পৌঁছাইবার দরুন সে মদ্রাকে দেখিতে পাইল না। সহসা কেহ আগন্তুকের উপর আঘাত হানিল, আগন্তুক মাটিতে আছড়াইয়া পড়িল। তাহার কপাল হইতে রক্তধারা দেখা গেল অগ্নি শিখায়। চোট পাইয়াও আগন্তুক একটুও বিচলিত হইল না। তাহার কেবল একটীই চিন্তা যেকোন প্রকারে মদ্রার কাছে পৌঁছাইয়া হার হইতে ঊর্যা সংগ্ৰহ করিতে হইবে। উঠিয়া সে পুনরায় দাঁড়াইতেই মনে হইল শরীর বরফে জমিয়া গিয়াছে। ত্রিশকের অট্টহাসি আসিল, "কী! মহাবীর! ঠাণ্ডায় ঘামিয়া গিয়াছ বুঝি!" আগন্তুক বুঝিল, ঊর্যার পূনঃপ্রয়োগ করিতে হইবে। "তুষার বিনাশম্!" আগন্তুকের শরীরে তাপের সঞ্চার ঘটিল সে মুহূর্তেই শৈত্যের হাত হইতে পরিত্রাণ পাইল সত্য কিন্তু পুনরায় ঊর্যার ব্যবহারে তাহার ঊর্যাস্তর আরও হ্রাস পাইলো। আগন্তুকের বুঝিতে অসুবিধা হইলো না, ত্রিশক তাহার ঊর্যাস্তরের ক্রমহ্রাসত্ব সম্পর্কে সম্যক অবহিত এবং উহাকে আরওই হ্রাস করিবার জন্যই যাদুর এইরূপ ব্যবহার করিতেছে। "সূর্য্যম্ জ্যোতি দিবা করম্!" আগন্তুকের শেষ নির্দ্দেশ প্রকাশ হইবা মাত্র তরবারি মহা উজ্জ্বল হইয়া গেল! সেই ঔজ্জ্বল্য ত্রিশকের অমাবস্যা স্বরূপ ঘোর অন্ধকার ছিন্ন করিয়া আগন্তুককে মদ্রার অবস্থান দেখাইয়া দিল, আগন্তুক সেই দিকে অগ্রসর হইতে গিয়াই ভূতলে পতিত হইয়া গেল! অন্তিম প্রয়োগ হেতু তাহার ঊর্যা তলানিতে ঠেকিয়া গিয়াছে, শরীরে সামান্যতম শক্তিও অবশিষ্ট নাই! আগন্তুক ইষ্ট স্মরণ করিল, তাহার প্রাণ যাইবে ক্ষতি নাই কিন্তু তাহার মৃত্যুর সাথে সাথে ওই দুরাত্মা ত্রিশক যে মদ্রাকে শোষণ করিবে ইহা ভাবিয়ায় তাহার আক্ষেপ হইতেছিল!
তরবারি মাটিতে পড়িয়া আছে, তাহার আলোয় অন্ধকার দূর হইয়া সকলই দেখা যাইতেছে। মদ্রা নিজ উপকারী আগন্তুককে মাটিতে পড়িতে দেখিয়া ত্বরিত বেগে আসিল। আগন্তুকের পার্শ্বে উপবিষ্ট হইয়া তাহার মস্তক খানি আপন ক্রোড়ে লইয়া বলিল, "হে ক্ষত্রিয়! আমি জানি নাই তুমি কে! আমার নিজ কৌতূহল আমাকে এই পাপিষ্ঠর মুখোমুখি করিয়াছে। তুমি আমার জন্য প্রাণের বাজি ধরিও না। এই হারখানি দেখিতেছ ইহা লইয়া আমার পিতাকে দিও উনি আমাকে এই বিপদ হইতে উদ্ধার করিবেন!" বলিয়া নিজের কণ্ঠহার ছিঁড়িয়া আগন্তুকের হাতে দিল। হস্তে দিবা মাত্র হারখানি উজ্জ্বল আলো বিকিরণ করিতে লাগিল। মৃতপ্রায় আগন্তুকের ওষ্ঠে হাসি দেখা দিল, হারখানি হস্তে লইয়া সে উঠিয়া বসিল। "আমরা দুজনই অদ্য এইখান হইতে জীবিত বাহির হইব দেবী! এই মহাপাপী অরণ্যের অন্তরে বাস করিয়া বহু নারীকে হত্যা করিয়াছে। আজ ইহাকে ছাড়িয়া দিলে সেই সকল হতভাগিনীর আত্মা আমাকে প্রলয় অবধি অভিশাপ দিবে। আপনার এই হারের জন্য সহস্র ধন্যবাদ। আপনি বিশ্রাম লউন আমি ত্রিশককে নরকদ্বার অবধি আগাইয়া দিয়া আসিতেছি।" বলিয়া আগন্তুক তরবারিখানি লইয়া আগাইয়া গেল।
"মহারুদ্র তিমিরভেদ্যম্!" সহস্র অগ্নিরাশি আসিয়া ত্রিশকের মায়াজালকে ছিন্ন বিচ্ছিন্ন করিয়া দিল। পবনপদের ব্যবহারে আগন্তুক শূণ্যে অবস্থান করিল। নিম্নে ত্রিশক দণ্ডায়মান! চারিচোখ মিলিবামাত্র আগন্তুকের অধরে হেয়'র হাসি খেলিয়া গেল, হারের সকল ঊর্যা সে নিজ মধ্যে টানিয়া লহিয়াছে। এখন মহাস্ত্র হইতে দেবাস্ত্র সে সকলই প্রয়োগ করিতে পারিবে!
মহাগ্নি বিনাশম্!" মুহূর্তেই তরবারি দাউদাউ করিয়া জ্বলিয়া উঠিল। অগ্নির উত্তাপ আশেপাশের বাতাসকে গরম করিয়া তুফানের সৃষ্টি করিল। এইবার ত্রিশক ভয় পাইল, সে এতক্ষণ ভাবিতেছিল, আগন্তুককে মারিয়া ফেলিতে পারিবে কিন্তু মহাস্ত্রের প্রচণ্ডতা লক্ষ্য করিয়া সে ভ্রুকুটি পাকাইল। হস্ত বিস্তার করিয়া পুনরায় মায়াজালের ব্যবহার করিতে চাহিল কিন্তু তাহার পূর্ব্বেই, "ভস্মাভি সম্ভুবৎ!" রাশি রাশি অগ্নির ঢেউ আকাশ হইতে ধরার বুকে নামিয়া আসিল! ত্রিশক মায়ার মাধ্যমে শরীরে ডানার উন্মেষ ঘটাইয়া পালাইবার চেষ্টা করিল কিন্তু তাহার আগেই সেই অগ্নি তাহার উপর আছড়াইয়া পড়িল। জ্বলিতে জ্বলিতে ত্রিশক মরণ চিৎকার করিতে লাগিল। পাষণ্ডর সেই আর্তনাদ গগন বিদীর্ণ করিল কিন্তু ওই নারীর অসহায়তার ন্যয় এই স্থলেও ত্রিশকের সাহায্য নিমিত্ত কেহ আসিল না!
অরণ্যরাজির ভিতরে হাঁটিতে হাঁটিতে মদ্রা আগন্তুককে জ্যোৎস্নার আলোয় দেখিতেছিল। সুঠাম পঞ্চদশ-ষোড়শবর্ষের এক কিশোর! দীর্ঘ টিকালো নাক, আয়াত চক্ষু। মুখমণ্ডল গৌরবর্ণের যেন কেহ প্রস্তর কুঁদিয়া এমন সুন্দর ভাস্কর্য তৈয়ার করিয়াছে। পেশীবহুল, দীর্ঘ অবয়ব! কৃষ্ণ বর্ণ রাজপোশাক পরিধানে! পিঠে তরবারি কোষযুক্ত রহিয়াছে। মদ্রাকে এমন ভাবে তাকাইতে দেখিয়া, কিশোর একটু লজ্জিত হইয়া বলিল, "শুভ জন্মদিন দেবী! অমন করিয়া কী দেখিতেছেন? কিছু কি বলিবেন দেবী?" মদ্রা হাসিয়া বলিল, অশেষ ধন্যবাদ! সম্যক বুঝিয়াছি আমার পিতা তোমারে পাঠাইয়াছেন কিন্তু, আমারে যে আজ রক্ষা করিয়াছে তাহার পরিচয় বুঝি পাইব না!"
আগন্তুক একটু হাসিল। তাহার পর সম্মুখ পানে চাহিয়া কহিল, "আমি! আমার নাম… বিম্বিসার! মগধের রাজপুত্র বিম্বিসার!"
(ক্রমশঃ)