Posts: 1,473
Threads: 7
Likes Received: 2,457 in 929 posts
Likes Given: 2,453
Joined: Mar 2022
Reputation:
512
(16-11-2022, 09:43 AM)ddey333 Wrote: অল্প অল্প জানে !!
এটাই ভালো বেশি জানলে আবার ঝামেলা...
আমার বান্ধবীর মত কথায় কথায় সন্দেহ করবে আবার সন্দেহ ভুল প্রমান হলে গদগদ ভাব নিয়ে মান ভাঙানোর চেষ্টা করতে থাকবে।
হাত বাড়িয়ে ছুঁই না তোকে, মন বাড়িয়ে ছুঁই।
দুইকে আমি এক করি না, এক কে করি দুই।।
Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,410 in 27,674 posts
Likes Given: 23,734
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
(16-11-2022, 01:22 PM)nextpage Wrote: এটাই ভালো বেশি জানলে আবার ঝামেলা...
আমার বান্ধবীর মত কথায় কথায় সন্দেহ করবে আবার সন্দেহ ভুল প্রমান হলে গদগদ ভাব নিয়ে মান ভাঙানোর চেষ্টা করতে থাকবে।
ঠিক ঠিক ঠিক !!!
Posts: 1,473
Threads: 7
Likes Received: 2,457 in 929 posts
Likes Given: 2,453
Joined: Mar 2022
Reputation:
512
(17-11-2022, 10:29 AM)ddey333 Wrote:
ঠিক ঠিক ঠিক !!!
হাত বাড়িয়ে ছুঁই না তোকে, মন বাড়িয়ে ছুঁই।
দুইকে আমি এক করি না, এক কে করি দুই।।
•
Posts: 1,473
Threads: 7
Likes Received: 2,457 in 929 posts
Likes Given: 2,453
Joined: Mar 2022
Reputation:
512
যাদের এখনো গল্পটা পড়া হয়ে উঠেনি তারা খানিকটা সময় বের করে পড়ে নিতে পারেন এই গল্পের নতুন পর্ব টি।
সেই সাথে আমার অন্য থ্রেড অতিথি গল্পেরও নতুন পর্ব এসে গেছে পড়া না হলে পড়ে নিতে পারেন।
এই গল্প এগিয়ে নিতে পরবর্তী আপডেটের লেখার কাজ শুরু হয়েছে, খুব শীঘ্রই নতুন পর্ব সহ দেখা হবে।
Posts: 1,473
Threads: 7
Likes Received: 2,457 in 929 posts
Likes Given: 2,453
Joined: Mar 2022
Reputation:
512
কিরে সত্যিই তো আমি তোকে খুব জ্বালাতন করি তাই নারে!
(করুন মুখাবয়বের সাথে মিষ্টি একটা হাসিও যোগ হয়) হুম! তুই যেমন জ্বালাতন করিস তেমন মনের শান্তিটাও আমি তোর কাছেই পাই রে।
আমার ডান বাজুটা দু'হাতে নিজের নরম বুকের সাথে জড়িয়ে নিয়ে কাঁধে মাথা রাখে চুপচাপ বসে আছে। আর আমি পলকহীন দৃষ্টিতে ওর প্রশান্তিতে ছেয়ে থাকা মুখটার দিকে তাকিয়ে থাকি। ওর ঘন চুলের মাঝে নাক ডুবিয়ে দিয়ে সুরভিত ঘ্রান টা উপভোগ করতে থাকি
নতুন আপডেট একটু সময় নিলাম ফুটবল বিশ্বকাপ চলছে তো বুঝতেই পারেন। তবে এই গল্পের নতুন পর্ব আসতে চলেছে আগামীকাল, সঙ্গেই থাকুন।
Posts: 4,428
Threads: 6
Likes Received: 9,178 in 2,849 posts
Likes Given: 4,330
Joined: Oct 2019
Reputation:
3,225
(23-11-2022, 09:08 PM)nextpage Wrote:
কিরে সত্যিই তো আমি তোকে খুব জ্বালাতন করি তাই নারে!
(করুন মুখাবয়বের সাথে মিষ্টি একটা হাসিও যোগ হয়) হুম! তুই যেমন জ্বালাতন করিস তেমন মনের শান্তিটাও আমি তোর কাছেই পাই রে।
আমার ডান বাজুটা দু'হাতে নিজের নরম বুকের সাথে জড়িয়ে নিয়ে কাঁধে মাথা রাখে চুপচাপ বসে আছে। আর আমি পলকহীন দৃষ্টিতে ওর প্রশান্তিতে ছেয়ে থাকা মুখটার দিকে তাকিয়ে থাকি। ওর ঘন চুলের মাঝে নাক ডুবিয়ে দিয়ে সুরভিত ঘ্রান টা উপভোগ করতে থাকি
নতুন আপডেট একটু সময় নিলাম ফুটবল বিশ্বকাপ চলছে তো বুঝতেই পারেন। তবে এই গল্পের নতুন পর্ব আসতে চলেছে আগামীকাল, সঙ্গেই থাকুন।
সঙ্গে ছিলাম , আছি এবং থাকবো
Posts: 1,473
Threads: 7
Likes Received: 2,457 in 929 posts
Likes Given: 2,453
Joined: Mar 2022
Reputation:
512
(23-11-2022, 09:56 PM)Bumba_1 Wrote: সঙ্গে ছিলাম , আছি এবং থাকবো
হাত বাড়িয়ে ছুঁই না তোকে, মন বাড়িয়ে ছুঁই।
দুইকে আমি এক করি না, এক কে করি দুই।।
•
Posts: 1,473
Threads: 7
Likes Received: 2,457 in 929 posts
Likes Given: 2,453
Joined: Mar 2022
Reputation:
512
পর্ব- ছয়
আমাকে আর কিছু কাবু করতে পারুক বা না পারুক জ্বর উঠলে সেটা আমাকে নাজেহাল করেই ছাড়ে। জ্বরের সাথে আমার আরও কিছু কমপ্লিকেশন দেখা দেয় সেটা সেই জন্মের পর থেকে। বিভিন্ন রোগের সাথে আমার লড়াইটা জন্মের পর থেকেই, আমি জন্মের সময়ই জন্ডিস নিয়ে জন্মে ছিলাম। তবে সেটার ভুল নির্ণয় করে আমাকে ধনুষ্টংকারের চিকিৎসা দেবার তোড়জোড় শুরু করা হয়েছিল। আমার হাত পায়ে শিরা খুঁজে না পেয়ে নরম মাথা সুঁই দিয়ে ফালা করে ফেলেছিল, কিন্তু 'রাখে হরি মারে কে' শেষ মূহুর্তে এক মহিলা ডাক্তার আমার জীবনের ত্রাণকর্তা হয়ে আমাকে ভুল চিকিৎসার হাত থেকে বাঁচিয়ে নেয়। সেই যাত্রায় বেঁচে গেলেও বাকি সাতটা দিন আমার সদ্য ভূমিষ্ঠ হওয়া শরীরটা প্রতিদিনিই ইলেক্ট্রিক থেরাপির ভেতর দিয়ে গিয়েছিল। সেই থেকে শুরু তারপরও অনেকবার আমার মাকে বারবার হাসপাতালে ছুটে যেতে হয়েছে, যাকে গ্রাম্য কথায় 'যমে মানুষে টানাটানি' বলে আর কি। আমার বাবার কিছু চেনা জানা ছিল তাই এই রোগ থেকে আমাকে সারিয়ে তোলার জন্য তিনটে ইঞ্জেকশন আনিয়ে ছিল সুদূর জার্মানি থেকে, তবে সরকারি মাধ্যমে আনার জন্য তেমন কোন খরচ করতে হয় নি। কিন্তু সেই ইঞ্জেকশন পুশ করার জন্য তো রোগী কে লাগবে, বছর দশের ছেলে হয়েও আমি ইঞ্জেকশনে এত ভীত ছিলাম যে সারাদিন বাসায় আসিনি৷ ভাগ্য খারাপ হলে যা হয় আর কি, সন্ধ্যায় তো বাসায় ফিরতেই হতো আর বাসায় ঢুকেই দেখি ডাক্তার আঙ্কেল বারান্দায় বসা। আমি এক দৌড়ে ঘরে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দেই, তারপর অনেক বুঝিয়ে শুনিয়ে আমাকে ইঞ্জেকশন টা দিতে পেরেছিল।
আমার জ্বরের প্রতি এই দুর্বলতা সম্পর্কে কথার সবটাই জানা, এর আগেও এই সমস্যা টাকে ফেইস করেছে। সেটা না হয় আরেকদিন বলবো। গত দুইদিনে যতবার চোখ মেলে তাকিয়েছি ততোবারই ওকে আমার কাছেই পেয়েছি। ও মনে হয় আমাকে ছেড়ে এক পা নড়ে নি। আজ শরীরটা আগের চেয়ে ভালো লাগছে তবে ঘাড় টা ভীষণ ব্যাথা করছে একদম নড়াতে পারছি না। কথার মুখের দিকে তাকিয়ে ওর চোখের নিচে কালো ছাপ পড়া ক্লান্ত চেহারাটা দেখেই ভেতরটা খা খা করে উঠলো। আমাকে চোখ খুলতে দেখতেই কথার মুখে যেন হালকা খুশির ছটা খেলে গেল, যেন ধিমি ধিমি করে জ্বলতে থাকা প্রদীপটা হঠাৎ জ্বালানির নাগাল পেতেই ধপ করে পূর্ণ রূপে জ্বলে উঠলো। খানিকটা এগিয়ে এসে আমার কপালে গলায় হাত রেখে জ্বরের তীব্রতা কেমন আছে, মাত্রই খেয়াল করলাম কাব্য ওর ঘাড়ের কাছেই ঝুলে আছে আর বিড়বিড় করে কিছু একটা বলে যাচ্ছে। কাব্য কি মনে করে মায়ের ঘাড় থেকে নেমে আমার বুকের উপর এসে হামাগুড়ি দিয়ে বসে মায়ের দেখাদেখি কপালে হাত রেখে জ্বর মাপতে থাকে
আঙ্কেল তোমার কি জ্বর হয়েছে? ইশ হাতটা গরম হয়ে গেছে। তোমার জ্বর হয়েছে কেন? তুমি মায়ের কথা শুনো না?
(আমি ডান হাতে কাব্যকে জড়িয়ে ওকে পুরো নিজের বুকের উপর নিয়ে আসলাম)
তোমার এমন মনে হয় কেন?
(কাব্য বিজ্ঞের মুখভঙ্গি করে কথার দিকে তাকিয়ে বলে)
মা বলেছে যারা মায়ের কথা শুনে না তাদের অসুখ হয়। আর মায়ের কথা না শুনলে তাকে পিট্টি খেতে হয়। তুমিও কি আমার মত পিট্টি খাও।
(কাব্যের মিষ্টি কথার জালে আমার মুখে হাসি ফুটে উঠে, খানিকটা জোরালো ভাবেই হেসে উঠি)
হুম ঠিক বলেছে তোমার মা।
(কথার দিকে তাকিয়ে হাসতে হাসতে বলি)
তোমার মা তো আমাকে অনেক পিট্টি দিয়েছে আগে।
(কাব্য খিল খিল করে হাসতে থাকে)
এ মা, তুমি এতো বড় হয়েও পিট্টি খাও।
(মায়ের দিকে তাকিয়ে)
মা দেখেছো আঙ্কেল কত দুষ্টু।
(কথা মুখ চেপে ধরে হাসিটা কোন রকমে হাসিটা কন্ট্রোল করে)
হুম এই আঙ্কেলটা খুব দুষ্টু তোমার চেয়েও বেশি দুষ্টু তাই তো আমি অনেক পিট্টি দিয়েছি আর আজকেও দেব।
(কাব্য খুশিতে আমার বুকের উপর লাফিয়ে উঠে)
কি মজা কি মজা আঙ্কেল মায়ের হাতে পিট্টি খাবে।
(কথা কাব্যকে আমার বুকের উপর থেকে টেনে নিজের কাছে নিয়ে নেয়, চোখ দুটো বড় বড় করে রাগী ভাব করে)
দুষ্টুমি করলে তোমাকেও পিট্টি দেব বলে দিলাম।
(কাব্যের দুগালে চুমো খায় আর আমার দিকে তাকিয়ে মিটি মিটি হাসতে থাকে)
নে উঠার চেষ্টা কর, গা টা একটু ধুয়ে নিলে দেখবি আরাম লাগছে।
হুম, মাথা টা কেমন ভার ভার লাগছে। একটু ধরবি আমাকে মাঝে মাঝে মাথাটা কেমন চক্কর মারছে।
(কাব্য কে কোল থেকে নামিয়ে আমার দিকে এগিয়ে আসে)
চক্কর তো দিবেই দুদিন ধরে পেটে কোন খাবার তো পড়েনি৷ ওঠ তাড়াতাড়ি গা ধুয়ে জামাকাপড় বদলে কিছু খেয়ে নিবি।
কথা আমাকে ধরে ওঠতে সাহায্য করে, ওর কাঁধেই ভর দিয়ে কোনমতে কলপাড়ের দিকে এগিয়ে যাই। আমাকে দাঁড় করিয়ে কথা দৌড়ে গিয়ে কোথা থেকে একটা টুল নিয়ে এসে আমাকে বসিয়ে দেয়। টিউবওয়েল চেপে বালতি ভর্তি জল এনে আমার সামনে রেখে আবার দৌড়ে ঘর থেকে আমার গামছা নিয়ে আসে। প্রথমে মাথায় কিছুক্ষণ জল ঢেলে গামছা দিয়ে মাথাটা ভালো করে মুছিয়ে দেয়।
নে গেঞ্জি টা খোল।
(হঠাৎ ওর কথাটা শুনে ভীমড়ি খাই আমি)
মাআআআনে, গেঞ্জি খুলবো কেন?
(কোমড়ে হাত দিয়ে মুখটা বেজার করে)
আমি বলেছি তাই খুলবি, আরে শরীরটা স্পঞ্জ করে দিতে হবে তো নাকি।
আমাকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে নিজেই গেঞ্জি টা খুলে নিলো। উদোম গায়ে ওর সামনে বসে থাকতে কেমন যেন অস্বস্তি লাগছে আমার, এমনটা যে এখনি হচ্ছে তা নয়। আগেও এমন হতো আমি হয়তো বাসায় উদোম গায়ে ঘরে বসে টিভি দেখছি কিংবা পড়ার টেবিলে বই নিয়ে বসে আছি, হঠাৎ ওর আগমনে আমার দৌড়াদৌড়ি শুরু হয়ে যেত জামা টা কোথায় আছে সেটা নিয়ে গায়ে দেবার জন্য। আর এসব দেখে কথা একটা বিচ্ছিরি রকমের হাসি দিতো যেটা দেখে আমার পিত্তি পর্যন্ত জ্বলে যেত।
বালতির জল টা পাল্টে নিয়ে তাতে গামছাটা ভিজিয়ে আমার সারা শরীর মুছে দিচ্ছিলো। ঠান্ডা জলের শীতলতার স্পর্শে আমার গা শিউরে উঠছিলো সারা শরীরের লোম গুলো এমন ভাবে দাড়িয়ে উঠছিলো যে দেখে মনে হয় যেন শজারুর লাইট ভার্সন। সেই সবকিছুর অনুভূতি ছাপিয়ে ভিন্ন রকমের এক প্রশান্তি সারা দেহ জুড়ে দৌড়ে বেড়াচ্ছে৷ কারণ টা অজানা নয় আমার মস্তিষ্কের কাছে, কথার কোমল হাতের ছোঁয়া বারবরই আমার মনে প্রাণে নতুনের শুভ সূচনা করে। আমার পিঠ জুড়ে এর নরম হাতের ছোঁয়াতে শিরদাঁড়া বেয়ে যে প্রশান্তির ধারা বয়ে যাচ্ছে সেটা মুখে বলে প্রকাশ করা কখনই সম্ভব নয়, তাই মূহুর্ত টা নষ্ট না করে আমি দুচোখ বন্ধ করে প্রতিটা স্পর্শ উপলব্ধি করে চলেছি আর আর সময়টুকুর মর্মার্থ বুঝার প্রয়াস করে চলেছি। কথা আমার সামনের দিকে চলে এসেছে ওর হাতের ভিজে গামছা টা আমার ঘন লোমশ বুকে আলতো পরশ বুলিয়ে যাচ্ছে। হালকা জ্বরের মাঝে ভিজে গামছাটা একটা ঠান্ডা ভাবে অনুভব করাচ্ছে তাতে বারবার আমার শরীরটা হালকা একটা কাঁপন দিয়ে উঠছে। হঠাৎ মনে হলো কথার কোমল হাত আমার বুকের ঘন লোমের মাঝে বিলি কাটছে, তাতে আমার শরীর শিউরে উঠে হালকা কাতুকুতুও লাগছে।
(হালকা ঝটকায় ওর হাতটা মুঠোতে বন্দী করে নিয়ে)
কিরে কি করছিস! আমার কাতুকুতু লাগছে তো।
(আমার মুঠো থেকে নিজের হাতটা ছাড়িয়ে নিয়ে আবার কিছু একটা খোঁজার চেষ্টা করছে)
একটা জিনিস খুঁজছি।
(আমি বুঝতে পারছি ও কি দেখার চেষ্টা করছে)
তুই যেটা খুঁজছিস সেটা ডান দিকে।
ওহহ তাই তো,
(ঘন লোমের আড়ালে ঢাকা পড়া কাঙ্ক্ষিত জিনিস টা খুঁজে পেয়ে)
এই তো পেয়েছি, বাপরে বাপ তোর বুকের লোম তো দিন দিন বেড়েই চলছে মনে হয় আমাজনের জঙ্গল।
আসলে কথা আমার বুকে একটা ট্যাটু খুঁজে চলেছিল, ট্যাটু বললেও ভুল হবে জাস্ট একটা অক্ষর 'K'। ও মনে করে ওটা ওর নামের প্রথম অক্ষর কিন্তু ওটা তো আমারও নামের প্রথম অক্ষর। তাতে আমারও কোন সমস্যা নেই কথারও নেই একজনের হলেই হলো, সত্যি বলতে আমি আজও সেই উত্তর টা খুঁজে বেড়াই যে আমি কেন এই ট্যাটু টা আমার বুকে করিয়েছিলাম তাও আবার ডান দিকে। বুকের ডান দিকে কথার আঙুল দিয়ে যে খেলা খেলে যাচ্ছে তাতে করে বেশিক্ষণ নিজেকে ধরে রাখা অসম্ভব হয়ে পড়েছে, হাত পা গুলো কেমন নিশপিশ করতে শুরু করেছে। মাথার ভেতর আজগুবি নানান খেয়াল আসতে শুরু করেছে, সেসব খেয়ালে নিজেকে ভাসিয়ে দেব নাকি আগের মতই বারবার মঞ্চ ছেড়ে পালাবো সেটাই বুঝতে পারছি না। আমার ভাবনায় ছেদ ফেলে হঠাৎ করেই কথা আমার বুকে ঐ ট্যাটুটার উপর ছোট্ট করে একটা চুমু খায়। আকস্মিক এহেন কর্মকান্ডে আমি খানিকটা আতকে উঠে টুল থেকে পড়েই যাচ্ছিলাম কোন রকমে কথার হাতটা পাকড়ে ধরে নিজেকে সামলে নেই। ওদিকে আমার ভয়ার্ত মুখখানা দেখে তার সে কি যে হাসির বাহার, ওর হাসতে দেখে যতটা রাগ হচ্ছিলো ততোটাই ডুবে যাচ্ছিলাম ওমন মিষ্টি হাসির তুড়ে। না এখানে বসে থাকলে ও আবার এমন অদ্ভুত কান্ডকারখানা করতে পারে তাই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব কেটে পড়াই ভালো৷ আমার শরীর স্পঞ্জ করা শেষ হতেই আমি ঘরের দিকে যেতে থাকি তবে এখনো মাঝে মাঝে মাথাটা চক্কর দিয়ে উঠছে। কিন্তু আমার চিন্তার কিছুই নেই কারণ পেছন থেকে এগিয়ে এসে কথা আমাকে ওর নরম হাতের শক্ত বাঁধনে জড়িয়ে ধরে নেয়। ঘরে ঢুকেই আমাকে বিছানায় বসিয়ে আলনা থেকে আমার জামা কাপড় নিয়ে আসে চেঞ্জ করার জন্য। কিন্তু চেঞ্জ করবো কিভাবে কথা তো সামনে থেকে নড়ছেই না শেষমেশ বাধ্য হয়ে বলেই ফেললাম
তুই একটু বাইরে যা না! আমি চেঞ্জ করি।
(কথা আমার দিকে অদ্ভুত ভঙ্গিতে তাকিয়ে)
কেন আমার সামনে কি তোর লজ্জা করছে নাকি? আমার কি তোর কিছু বাকি আছে দেখার!
(আমি কিছু বলার আগেই)
থাক থাক আমি চলে যাচ্ছি, চেঞ্জ করে তাড়াতাড়ি আয় কিছু খাবি তারপর আবার ঔষধ খেতে হবে।
আমি তাড়াতাড়ি চেঞ্জ করে ডাইনিং রুমে চলে যাই, ওখানে কথা কাব্যকে কোলে নিয়ে ঘুরে ঘুরে কিসব ছড়া বলছে আর খাওয়াছে। আমাকে দেখেই হাত দিয়ে ইশারা করলো চেয়ারে বসতে, আমি চেয়ারে বসে ওদের মা ছেলের মূহুর্ত গুলো উপভোগ করছি। কাব্যর খাওয়া শেষ হতেই ওকে একটা চেয়ারে বসিয়ে রান্না ঘরের দিকে চলে গেল। খানিক বাদেই ফিরে এলো হাতে একটা প্লেট নিয়ে
(আমার কাছে এসে)
নে হা কর, তোকে আর হাত ভরাতে হবে না।
আমিও আর কথা না বাড়িয়ে ওর সিদ্ধান্ত চুপচাপ মেনে নিলাম, এছাড়া আর কোন অপশন আছে নাকি আমিও ওর বিরুদ্ধে যাই আর সাথে সাথে এটার রিঅ্যাকশনও ভোগ করি। কথা গরম গরম ডাল ভাত মাখিয়ে এনেছে সেটাই মুখে তুলে দিচ্ছে। সামনের দিকে তাকাতেই দেখি কাব্য উৎসুক চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে আর দাঁত বের করে হাসছে। আমি মাথা নাড়িয়ে কি হয়েছে জিজ্ঞেস করতেই বলে
আঙ্কেল তুমি কি ছোট বাচ্চা নাকি? মা তোমাকে আমার মত খাইয়ে দিচ্ছে কেন?
(ওর পাকনামি দেখে আমার সাথে কথাও হেসে উঠে)
তোর আঙ্কেল তোর থেকেও ছোট না হলে কি আর মুখে তুলে খাওয়াতে হয়!
পাশেই রেকে রাখা কথার ফোনটা বেজে উঠে, ওর দুহাত বন্ধ দেখে আমিই উঠে গিয়ে ফোনটা নিয়ে আসি। আমার মা ফোন করেছে ফোনটা রিসিভ করে আমি লাউডস্পিকারে দিয়ে দিলাম
কিরে মা ওনার কি খবর? জ্বর কি কমেছে?
হুম আন্টি আগের চেয়ে কম, এইতো একটু আগে গা ধুয়ে সবকিছু চেঞ্জ করেছে এখন খাচ্ছে।
বাঁদরটা তোকে খুব জ্বালাচ্ছে তাই নারে?
(আমি কিছু বলতে চেয়েছিলাম কিন্তু কথা হাতে ইশারা করে না করলো, আর মুখ টিপে হাসতে হাসতে বলতে লাগলো)
সে তো একটু জ্বালাচ্ছেই, আর তোমার গুনধর ছেলে কবে আমাকে শান্তিতে থাকতে দিয়েছে সেটা তো বলো।
(আমার মায়ের সাথে কাব্যের প্রায়ই কথা হয় তাই মায়ের কন্ঠ শুনেই ও চিনতে পেরেছে। কাব্য টেবিলের উপর হামাগুড়ি দিয়ে মোবাইলের কাছে চলে আসে)
দিদুন জানো আঙ্কেল না আমার মত নিজের হাতে খেতে পারে না, মা না খাইয়ে দিচ্ছে (দাঁত বের করে হি হি করে হাসতে থাকে)
(ওর কথা শুনে ওদিকে মা হা হা করে হাসছে)
তাই নাকি? তা দাদুভাই তোমার মা কি তোমার মত আঙ্কেল কেউ পিট্টি দেয়?
(কাব্যের হাসি দেখে কে? হাসির কারণে ঠিকমত কথাও বলতে পারছে না)
না না আমি তো ভালো ছেলে আমাকে পিট্টি দেয় না, কিন্তু মা বলেছে আঙ্কেল কে পিট্টি দেবে।
হুম দেয়া দরকার একদম কথা শুনে না। আচ্ছা মা এখন রাখি রে পরে আবার ফোন দেব।
কথার চোখ রাঙানি দেখে কাব্য মুখচোরার মত নিজের চেয়ারে গিয়ে বসে পড়ে। আমারও খাওয়া শেষে নিজের ঘরে গিয়ে ঔষধ খেয়ে নিয়ে একটু মোবাইলটা নিয়ে ঘাটাঘাটি করতে থাকি৷ মিনিট পনের পরেই কথা আসে ঘরে আমার পাশে বসে মোবাইলের দিকে তাকিয়ে দেখে আমি কি করছি। তেমন কিছুই করছিলাম ঐ একটু ফেইসবুকের নিউজফিডটা স্ক্রোল করা আর কি। ফোনটা পাশে রেখে আমি কথার মুখের দিকে তাকাই আগের মলিনতা ভাবটা এখন আর সেই বেশ ফুরফুরে লাগছে
কিরে সত্যিই তো আমি তোকে খুব জ্বালাতন করি তাই নারে!
(করুন মুখাবয়বের সাথে মিষ্টি একটা হাসিও যোগ হয়) হুম! তুই যেমন জ্বালাতন করিস তেমন মনের শান্তিটাও আমি তোর কাছেই পাই রে।
আমার ডান বাজুটা দু'হাতে নিজের নরম বুকের সাথে জড়িয়ে নিয়ে কাঁধে মাথা রেখে চুপচাপ বসে আছে। আর আমি পলকহীন দৃষ্টিতে ওর প্রশান্তিতে ছেয়ে থাকা মুখটার দিকে তাকিয়ে থাকি। ওর ঘন চুলের মাঝে নাক ডুবিয়ে দিয়ে সুরভিত ঘ্রান টা উপভোগ করতে থাকি
কিরে আজ শ্যাম্পু করেছিস??
আমার দিকে আড় চোখে তাকিয়ে ফিক করে হেসে দেয় কথা।
★★★★★
কলেজ ছুটির সময় ঘনিয়ে এসেছে আর ওদিকে আমারও বুকের ধুকপুকানি বেড়েই চলেছে। লাস্ট ক্লাসের সময় বারবার আমি ওর দিকে তাকাচ্ছিলাম আর ওর রাগী চোখ দেখে ভীমড়ি খাচ্ছিলাম। ছুটির ঘন্টা পড়তেই আমি ক্লাসে থেকে পালিয়ে বিকাশদের সেকশানের সামনে দাঁড়িয়ে ওর জন্য অপেক্ষা করছি। ক্লাস থেকে বেড়িয়েই আমার ভয়ার্ত মুখ দেখে বিকাশ উদ্বিগ্ন হয়ে ছুটে আসে।
কিরে কি হয়েছে?
এখনো হয় নি হবে।
(আমান কথার মাথামুণ্ডু কিছুই বুঝতে পারছে না বিকাশ)
কি হবে? ঘটনা কি?
(নিজেকে একটু শান্ত করে)
টিউটোরিয়ালে রেজাল্ট খারাপ হয়েছে, আবার ঐদিকে কথা বলে রেখেছে ছুটির পর দেখা করতে (আমি হাত দিয়ে ইশারা করে গেটের দিকে দেখাই) ঐযে দাড়িয়ে আছ। তুই একটু আমার সাথে চল মনে শক্তি পাবো।
না না আমি যাবো না (ও আমার চেয়ে বেশি ভয় পায় কথা কে) ওর মুখে যা আসবে বলে দিবে। আমার যেয়ে কাজ নেই।
শেষমেশ অনেক অনুনয় করার পর বিকাশ যেতে রাজি হয়েছে। কলেজ প্রায় ফাঁকা হয়ে এসেছে তবে গেটের কাছে একজন দাড়িয়ে আছে হাতে কিছু একটা আছে তবে পুরোপুরি দেখা এখান থেকে যকটুকু ধীর পায়ে চলা যায় ততোটাই ধীর গতিতে আমি আর বিকাশ গেটের দিকে হেটে যাচ্ছি। মন চাইছে আজ এখানেই সময় থেমে যাক নইলে আসন্ন ঝড় আমার উপরে কি যে তছনছ চালাতে পারে সেটা আমি আচ করতে পারছি। কাছাকাছি যেতেই দেখি কথার হাতে বেতের মত কিছু একটা আছে যেটা দিয়ে দেয়ালে আঁকিবুঁকি করছে। আমাদের দেখেই এদিকে এগিয়ে আসে আর বিকাশের দিকে হাতের বেত টা দেখিয়ে
কিরে তুই ওর সাথে কি করিস? আমি তো ওকে ডেকেছি তুই এলি কেন? তুইও কি ওর মারের ভাগ নিবি?
(বিকাশ কিছু টা থতমত খায়)
কিসের মার! আমি ওর সাথে নেই আমি গেলাম (আমার হাত থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়েই বিকাশ গটগট করে বেড়িয়ে যায়)
(কথা কিছু এগিয়ে এসে)
সত্যি করে বলবি কি হয়েছে তোর? কয়েকদিন ধরেই দেখছি তুই ক্লাসে থাকিস আর তোর মনোযোগ থাকে অন্য কোথাও। সমস্যা টা কোথায়?
না কিছু হয় নাই তো।
তুই বলছিস কিছু হয় নাই? রেজাল্ট টা দেখেও সেটা মনে হয়? বাসায় আন্টি আর মামা জানলে কি হবে বুঝতে পারছিস? একটা কথা জিজ্ঞেস করবো?
(ওর প্রশ্নের উত্তরে কি বলবো জানা নেই)
হুম কর।
তুই প্রায়ই কলেজে এখন দেরি করে আসিস? কোথায় যাস? কোন বাজে কিছুর সাথে জড়িয়ে পড়িসনি তো।
না না তুই আমাকে এমন ভাবলি কেমন করে। ওমন কিছু আমি কখনো করবো নাকি।
তাহলে? তোকে দোলন ঐদিন গার্লস কলেজের ওখানে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেছে। ওখানে তো কলেজের আগে তোর কোন কাজ নেই তাহলে কি করছিলি?
(গার্লস কলেজের নামটা শুনেই আমার আত্মা ধক করে উঠলো। ও এটা জেনে গেল কি করে? ওকে কি তাহলে দেবযানীর কথাটা বলেই দেব, না বললেও কোন ভাবে জেনে গেলে তারপর তো আরও চোটপাট করবে আমার উপর। কি যে করি সেটাই বুঝতে পারছি না)
ওখানে গিয়েছিলাম একটা মেয়ে কে দেখার জন্য।
(চোখ দুটো বড় বড় করে আমার আরও কাছে এসে জিজ্ঞেস করে)
মেয়ে! কোন মেয়ে! কোথাকার মেয়ে? নাম কি?
(আমতা আমতা করে বলেই দিলাম)
দেবযানী
বাহ! নামটা সুন্দর তো। ওয়ান সাইডেড?
হুম।(নিচের দিকে তাকিয়ে কোন মতে ওর প্রশ্নের উত্তর গুলো দিয়ে যাচ্ছি)
মেয়েটা জানে তোর ব্যাপারে?
না তো। বলবো ভাবছি। আমি একে একে একদম শুরু থেকে সবটা ওকে বলতে লাগলাম।
তবে কি এসবের পিছনে দৌড়ে লেখাপড়ার বারোটা বাজাচ্ছিস? (আমি কোন উত্তর না দিয়ে মাথা নিচু করে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছি) মেয়েটাকে দেখিয়ে দিস আমি কথা বলবো কেমন।
(বিষন্ন মনটা মূহুর্তেই উৎফুল্ল হয়ে উঠে)
সত্যিইইইই....
হুম তবে একটা শর্ত আছে সামনে টিউটোরিয়ালে যদি রেজাল্ট ভালো করতে পারিস তবেই। তুই আগে বাকি সব চিন্তা বাদ মনোযোগ দিয়ে পড়ালেখা টা কর বাকিটা আমি নিজেই দেখবো বলে দিলাম।
(ও হেল্প করলে ব্যাপারটা আরও ইজি হয়ে যাবে তাই আর সাতপাঁচ না ভেবে আমি রাজি হয়ে যাই)
ওকে ডান, সামনের টিউটোরিয়ালে আমি তিনের ভেতরে থাকবো।
গুড, এই না হলে আমার বেস্টফ্রেন্ড। বিষয়টা মাথায় থাকে যেন, এখন চল আমাকে আইসক্রিম খাওয়াবি।
আমার হাতটা নিজের মুঠোতে নিয়ে কলেজের বাইরে বেড়িয়ে যায় আর বাসস্ট্যান্ডের দিকে যেতে থাকে। তবে এখন নিজেকে অনেকটা নির্ভার লাগছে। আমার নিজের চেয়ে বেশি বিশ্বাস কথার উপরে আছে ও যখন বলেছে তবে ব্যাপারটা সেটিং করে দিবে ঠিকই। সো নো টেনশন আপাতত বাকি সব বাদ দিয়ে গত মাসের গ্যাপটা ফিলাপ করতে হবে আর সামনের পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে হবে।
আমার জীবনে অনেক গুলো মানুষের মধ্য যে কজনের প্রভাব খুব বেশি তাদের মাঝে কথা আর বিকাশ অন্যতম। বুঝতে শেখার পর থেকে আমি ওকে দেখে আসছি, বয়সে আমার চেয়ে দিন বিশেকের বড় ও। আর সেটার জন্যই হয়তো বড় হবার অধিকার টা বেশি ফলায় আমার উপর। কথার দাদু আর আমার দাদু রা বন্ধু ছিল সেই থেকে দুই পরিবারের মধ্যে একটা আত্মীয়তা গড়ে ওঠে। কাকতালীয় ভাবে সেই কিন্ডারগার্টেনের প্লে থেকে একসাথে পড়াশোনা করে আসছি, একসাথে খেলাধুলা করে এসেছি এমনকি একই ম্যাডামের কাছে টিউশনি পড়েছি। আর সেখানেই বিকাশের সাথে পরিচয়, ওটা ওর মামার বাড়ি। ক্লাস থ্রি তে থাকার সময় একদিন হঠাৎ দেখি টিউশনে নতুন মুখ, জানতে পারলাম ও দিদিমনির পিসির ছেলে। ওর বাবা মারা যাওয়ায় ওকে মামার বাড়ি নিয়ে এসেছে লেখাপড়া করানোর জন্য৷ বিকাশের মা আর আমার ছোট পিসি ক্লাসমেট ছিল ব্যাস ওর সাথে আত্মীয়তার সাথে সাথে বন্ধুত্ব গড়ে উঠতে বেশি সময় নেয় নি। আমাদের মাঝের বন্ডিং টা এতো ভালো ছিল যে অনেকেই মনে করতো আমরা দু ভাই হয়তো।
সেই থেকে শুরু ধীরে ধীরে যত বড় হয়েছি কথার সাথে আমার বন্ধুত্বটা ততই গাঢ় হয়েছে দিন কে দিন। সেই সাথে আমার উপর ওর প্রভাবটা বিস্তার করে চলেছে। আমার মা বাবার পর যদি কেউ আমাকে বেশি শাসন করে থাকে তবে সেটা কথা৷ আবার ও আমার ভালো মন্দ, পছন্দ অপছন্দের খেয়ালও রেখেছে বেশি৷ মাঝে মাঝে মনে হতো আমাকে আমার চেয়ে যদি বেশি কেউ জানে চিনে তবে সেটা আমার মা আর কথা৷ আমার নাড়ী নক্ষত্র সব কিছু কথার হাতের মুঠোয়। সেই জন্যই আমি কেন জানি কথার কোন মতের বিপরীতে যেতে পারি না৷ এই যে দেখুন গত একমাস যেই দেবযানীর পিছনে আমি পাগলের মত ঘুরে চলেছি সেই দেবযানীর থেকে দূরে থাকতে রাজি হয়ে গেলাম কথার মিনিট দশেকের আলাপচারিতায়। ওর উপর যে ভরসা টা আমি পাই সেটা নিজের উপরও খুঁজে পাই না, অন্য কেউ এই বিষয়টা নিয়ে বললে আমি রাজিই হতাম না৷ কিন্তু কথা'কে আমি কখনো না বলতে পারি না বা এড়িয়ে যেতে পারি না হয়তো আমার অজান্তেই অনেক আগে থেকেই আমার অনেকটা জুড়েই ও নিজের জায়গা করে নিয়েছিল।
ঐদিন বাসায় আসার পর থেকে আমার মাঝে একটা পরিবর্তন এসে গিয়েছিল৷ সন্ধ্যায় সবার আগেই একটা রুটিন করে নিয়েছিলাম নতুন করে পড়াশোনা শুরু করার জন্য। ব্যাগ থেকে বইপত্র বের করতেই হঠাৎ রিপোর্ট কার্ডটা বেড়িয়ে আসে ওটাতে বাবাকে দিয়ে সাইন করাতে হবে। তবে সেটার টেনশন আর আমার নেই, কথা সেই দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছে।
এদিকে আমি আমার কাজ শুরু করে দিয়েছি এখন আর এদিক ওদিক ছোটাছুটি কমিয়ে দিয়ে এতোদিন পড়াশোনায় ফাঁকিবাজিতে যে গ্যাপটা পড়েছিল সেটা মেকাপ করতে লাগলাম। তবে এখনো মাঝে মাঝে দুপুরে দোকানে থাকলে এ পথে যাবার সময় দেবযানীর সাথে দেখা হয়ে যায়। দেখা হয় মানে আমিই দেখতে থাকি আর কি, টেডি টা পেয়ে যাবার পর থেকে ওকে আর দোকানের দিকে তাকাতেই দেখি না। ধীরে ধীরে আমারও হয়তো ওর প্রতি আকর্ষণ টা কমেই যাচ্ছিলো। মাঝে চার/পাঁচ দিন ওকে দেখাই হয় নি তারপরও একবারও ওর কথা আমার মনে নি যতোক্ষন না আরেকদিন ওকে দোকানের সামনে দিয়ে যেতে দেখলাম। হয়তো ও আমার মস্তিষ্ক থেকে একটু একটু করে হারিয়ে যাচ্ছিলো আর সেই জায়গাটা জুড়ে দখল নিয়েছিল সামনের ভালো রেজাল্ট করার প্রতিশ্রুতি টা। ভালো সময়টুকু খুব তাড়াতাড়ি চলে যায় দেখতে দেখতে আবার টিউটোরিয়াল পরীক্ষা এসে গেছে। তবে আমি বেশ কনফিডেন্ট যে এবার পরীক্ষা ভালোই হবে তবে আমার চেয়ে যার কনফিডেন্স বেশি সেটা হলো কথার। এ কয়েকদিন টিউশনি শেষে আমার সাথে বাসায় চলে আসতো। এমনিতেও আমাদের বাসায় ওর অবাধ যাতায়াত, মন চাইলো চলে এলো আবার হঠাৎ করে ফুড়ুৎ হয়ে গেল। সে আমার মায়ের চোখের মনি, তখনো আমি মায়ের একমাত্র সন্তান তাই হয়তো একটা মেয়ের ঘাটতি ওকে দিয়েই পূরণ করতো। বাসায় এসেই আমার কোথায় কি প্রবলেম আছে সেগুলো দুজনে মিলে একসাথে সলভ করতাম। ওর জন্য মায়ের কাছে বকুনি খেতে হতো মাঝে মাঝেই আর ওর মুখ আড়াল করে মিটিমিটি হেসে চলতো। আমার মেজাজটাই গরম হয়ে যেত কিন্তু কেন জানি কিছুই বলতে পারতাম না। ওর মিষ্টি হাসিটাতে সব রাগ অভিমান অভিযোগ গলে জল হয়ে যেত।
মেজর সাবজেক্ট গুলোর টিউটোরিয়াল পরীক্ষা দেখতে দেখতে শেষ হয়ে গেল, আজ রেজাল্ট দিবে সবাইকে নোটিশ বোর্ড থেকে রেজাল্ট কালেক্ট করতে বলা হয়েছে। এতোক্ষণ ভয় না লাগলেও এখন কেন জানি ভয়ভয় করছে মনের ভেতর। আমি ভাবছিলাম সবার শেষে যাব কিন্তু কথা টেনে ধরে ওর সাথেই নিয়ে গেল। ভিড়টা একটু কমতেই আমি আর কথা এগিয়ে গেলাম বোর্ডের দিকে। মনটা আশাহত হলো এক নাম্বারের তফাতে আমি চতুর্থ হলাম আর কথা তৃতীয়। মনটা ভীষণ খারাপ হয়ে গেল আমার, না আমি পজিশনে আসতে পারি নি এই কারণে নয় আমি যে বড়মুখ করে কথাকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম কিন্তু পূরণ করতর পারলাম না সে জন্য। তবে বরাবরের মতই কথা আমাকে সান্ত্বনা দিয়েছে আর মন ভালো করার সব প্রয়াসই করে গেছে।
কলেজ ছুটির পর দেখি কথা ক্লাসে বাইরে দাঁড়িয়ে আছে, আমি কাছে গিয় জিজ্ঞেস করি
কিরে দাঁড়িয়ে আছিস কেন, বাড়ি যাবি না?
তোর জন্যই তো দাঁড়িয়ে আছি, তোর মনে নেই একজন কে দেখিয়ে দেবার কথা ছিল তোর।
কাকে??
দেবযানী!
(আমার মাথায় দেবযানীর ব্যাপারটা একদম ছিলই না, সত্যি বলতে আমি হয়তো ওকে ভুলেই গিয়েছিলাম)
ওহহ হ্যাঁ তো। কিন্তু আমি পজিশনে আসতে পারি নি।
তাতে কি চেষ্টা তো করেছিস, চল মেয়েটাকে দেখিয়ে দিবি। বিকাশ কই? ওকেও সাথে নিয়ে চল ঐ বদমাশ টা তো এসব বিষয়ে এক্সপার্ট।
আমি বিকাশ আর কথা কলেজ থেকে বেড়িয়ে গার্লস কলেজের দিকে চলে গেলাম। যাবার পথে দুটো মিলে আমার বেশ লেগপুল করেছে আর আমাকেও বাধ্য হয়ে সব মুখ বুঝে সহ্য করতে হয়েছে। গার্লস কলেজের কাছে পৌঁছাতে দেখি মেয়েরা দল বেঁধে কলেজ থেকে বেড়োচ্ছে। আমরা মোড়ের বড় গাছটার নিচেই দাঁড়িয়ে আছি হঠাৎ খেয়াল করলাম দেবযানী ওর বান্ধবীদের সাথেই এদিকে আসছে আমি আঙুলের ইশারায় কথা কে দেখিয়ে দিলাম দেবযানী কে। ও আর বিকাশ এগিয়ে ওদের দিকে যেতে থাকে, দেবযানীর কাছে পৌছানোর আগেই পাশ থেকে একটা বড়সড় ছেলে আসতেই দেবযানী ঐ ছেলেটার সাথে হাসি মুখে ওদের থেকে আলাদা হয়ে অন্যদিকে চলে যায়। আমি অবাক নয়নে ওদের চলে যাওয়া রাস্তাটার দিকে তাকিয়ে আছি। কেমন মিশ্র একটা অনুভূতি হচ্ছে সেটা বলে বুঝানো সম্ভব নয়। কেমন একটা ব্যাথা অনুভব হচ্ছে মনের ভেতরে, মনে হচ্ছে কেউ এসে কিছু একটা ছিনিয়ে নিয়ে গেছে আমার কাছ থেকে। ভেতরটা ফেটে যাচ্ছে তবে সেটা প্রকাশ করতে পারছি না। আমি দূর থেকে দেখছি বিকাশ আর কথা ওদের সাথে কিছু একটা নিয়ে আলাপ করছে। খানিক বাদেই ওরা বিষন্ন মনে ফিরে আসছে দেখে আমার মনটা হু হু করে উঠলো, যেখানে দাঁড়িয়ে ছিলাম কোন এক অদৃশ্য ধাক্কায় সেখান থেকে খানিকটা পিছিয়ে গেলাম। কথা এগিয়ে এসে আমার হাতটা শক্ত করে ধরে নেয়,
চল বাসায় যাবি, আমার খুব খিদে পেয়েছে।
Posts: 4,428
Threads: 6
Likes Received: 9,178 in 2,849 posts
Likes Given: 4,330
Joined: Oct 2019
Reputation:
3,225
as usual অনবদ্য লেখনী এবং বর্ণনা। যার সব ভালো তার শেষ ভালো তো হতেই হয়, তাই ..
আমি ডুবে আছি দেবযানীর আকন্ঠ আবেগে
দুষ্টু মিষ্টি প্রেমের আবেশে,
আমি ত্রিশঙ্কু হয়ে আছি হ্যাঁ বোধক ইশারায়
দেবযানীর মায়াবী কোমল হাসিতে।
আমি বাঁধা পড়ে আছি তার প্রচ্ছন্ন ইঙ্গিতে
শত জনমের সন্ধিতে,
আমি জেগে আছি রাত জাগা ভোরে
স্বপ্ন লাগা ঘোরে, জমে আছি প্রেমেতে।
আমি পেয়ে গেছি আমার মন মানবী
ভেসে চলছি দেবযানীর সাথে প্রেম সায়রে,
আমি ছুঁয়ে চলেছি সেই মায়াবী মধুক্ষন
জুড়ে আছে দুটি মন মধু মাখা আবেগে।
Posts: 6,108
Threads: 41
Likes Received: 12,067 in 4,138 posts
Likes Given: 5,306
Joined: Jul 2019
Reputation:
3,734
24-11-2022, 10:15 PM
(This post was last modified: 24-11-2022, 10:18 PM by Baban. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
আবারো মন জয় করা একটা পর্ব উপহার দিলো এই লেখক। যত পৃষ্ঠা পাল্টাচ্ছি ততই ডুবে যাচ্ছি এই মানুষগুলোর অন্তরের জগতে। ছোট বয়সের এমন মিষ্টি সুন্দর মুহূর্ত আর বিশেষ করে ওই মুহূর্তের মাঝে উপস্থিত এক রাজকন্যার সাথে বন্ধুত্ব যেন রাজকুমারকে সত্যিই মানুষ হয়ে উঠতে অনেক সাহায্য করেছিল।
বোধহয় মেয়ে মেয়েতে বন্ধুত্ব থেকে ছেলে মেয়ের বন্ধুত্ব অনেক বেশি গভীর হয়। হ্যা অবশ্যই দুই ছেলে একে ওপরের সাথে অনেক কিছুই ডিসকাস করতে পারে, প্রয়োজনে একে ওপরের জন্য অনেক কিছু করতে পারে কিন্তু একটা মেয়ে বোধহয় ওই বিপরীতে উপস্থিত বন্ধুর মস্তিস্ক ও হৃদয়ের ভেতরে গভীরে ঢুকে তাকে পরিপূর্ণ ভাবে চিনে প্রয়োজনে তাকে পাল্টে ফেলার ক্ষমতা রাখে।
তা সেখান থেকে যদি বন্ধুত্ব আরও গভীর হয়....... ক্ষতি কি? ♥️
Posts: 1,473
Threads: 7
Likes Received: 2,457 in 929 posts
Likes Given: 2,453
Joined: Mar 2022
Reputation:
512
(24-11-2022, 09:20 PM)Bumba_1 Wrote: as usual অনবদ্য লেখনী এবং বর্ণনা। যার সব ভালো তার শেষ ভালো তো হতেই হয়, তাই ..
আমি ডুবে আছি দেবযানীর আকন্ঠ আবেগে
দুষ্টু মিষ্টি প্রেমের আবেশে,
আমি ত্রিশঙ্কু হয়ে আছি হ্যাঁ বোধক ইশারায়
দেবযানীর মায়াবী কোমল হাসিতে।
আমি বাঁধা পড়ে আছি তার প্রচ্ছন্ন ইঙ্গিতে
শত জনমের সন্ধিতে,
আমি জেগে আছি রাত জাগা ভোরে
স্বপ্ন লাগা ঘোরে, জমে আছি প্রেমেতে।
আমি পেয়ে গেছি আমার মন মানবী
ভেসে চলছি দেবযানীর সাথে প্রেম সায়রে,
আমি ছুঁয়ে চলেছি সেই মায়াবী মধুক্ষন
জুড়ে আছে দুটি মন মধু মাখা আবেগে।
তুমি চাইলে কিন্তু দাদা বইমেলায় একটা ছোট্ট কবিতার বই বের করতেই পারো।
ভেবে দেখো।
হাত বাড়িয়ে ছুঁই না তোকে, মন বাড়িয়ে ছুঁই।
দুইকে আমি এক করি না, এক কে করি দুই।।
Posts: 1,473
Threads: 7
Likes Received: 2,457 in 929 posts
Likes Given: 2,453
Joined: Mar 2022
Reputation:
512
(24-11-2022, 10:15 PM)Baban Wrote: আবারো মন জয় করা একটা পর্ব উপহার দিলো এই লেখক। যত পৃষ্ঠা পাল্টাচ্ছি ততই ডুবে যাচ্ছি এই মানুষগুলোর অন্তরের জগতে। ছোট বয়সের এমন মিষ্টি সুন্দর মুহূর্ত আর বিশেষ করে ওই মুহূর্তের মাঝে উপস্থিত এক রাজকন্যার সাথে বন্ধুত্ব যেন রাজকুমারকে সত্যিই মানুষ হয়ে উঠতে অনেক সাহায্য করেছিল।
বোধহয় মেয়ে মেয়েতে বন্ধুত্ব থেকে ছেলে মেয়ের বন্ধুত্ব অনেক বেশি গভীর হয়। হ্যা অবশ্যই দুই ছেলে একে ওপরের সাথে অনেক কিছুই ডিসকাস করতে পারে, প্রয়োজনে একে ওপরের জন্য অনেক কিছু করতে পারে কিন্তু একটা মেয়ে বোধহয় ওই বিপরীতে উপস্থিত বন্ধুর মস্তিস্ক ও হৃদয়ের ভেতরে গভীরে ঢুকে তাকে পরিপূর্ণ ভাবে চিনে প্রয়োজনে তাকে পাল্টে ফেলার ক্ষমতা রাখে।
তা সেখান থেকে যদি বন্ধুত্ব আরও গভীর হয়....... ক্ষতি কি? ♥️
একটা মানুষের জীবনে ছেলে বা মেয়ে দুই বন্ধুই গভীর হয়ে থাকে তবে মেয়ে বন্ধু হয়তো অনেকাংশে কিঞ্চিৎ এগিয়ে থাকে কারন ওদের ভাবনার ধরণ আর অন্যের মন পড়ার থিওরির জন্য।
আমার জীবনে এমন একজনের সান্নিধ্য পেয়েছি বলেই হয়তো আমার এমন মনে হতে পারে।
হাত বাড়িয়ে ছুঁই না তোকে, মন বাড়িয়ে ছুঁই।
দুইকে আমি এক করি না, এক কে করি দুই।।
•
Posts: 4,428
Threads: 6
Likes Received: 9,178 in 2,849 posts
Likes Given: 4,330
Joined: Oct 2019
Reputation:
3,225
(25-11-2022, 12:45 AM)nextpage Wrote:
তুমি চাইলে কিন্তু দাদা বইমেলায় একটা ছোট্ট কবিতার বই বের করতেই পারো।
ভেবে দেখো।
বিভিন্ন ওয়েব পত্রিকায় আমার লেখা কবিতা প্রকাশিত হয়েছে ঠিকই, কিন্তু বইমেলায় .. ঠিক আছে নিশ্চয়ই ভেবে দেখবো।
Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,410 in 27,674 posts
Likes Given: 23,734
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
অসম্ভব সুন্দর লেখা !!
মন প্রাণ ছুঁয়ে গেলো।
Posts: 1,473
Threads: 7
Likes Received: 2,457 in 929 posts
Likes Given: 2,453
Joined: Mar 2022
Reputation:
512
(25-11-2022, 08:47 AM)Bumba_1 Wrote: বিভিন্ন ওয়েব পত্রিকায় আমার লেখা কবিতা প্রকাশিত হয়েছে ঠিকই, কিন্তু বইমেলায় .. ঠিক আছে নিশ্চয়ই ভেবে দেখবো।
হাত বাড়িয়ে ছুঁই না তোকে, মন বাড়িয়ে ছুঁই।
দুইকে আমি এক করি না, এক কে করি দুই।।
•
Posts: 1,473
Threads: 7
Likes Received: 2,457 in 929 posts
Likes Given: 2,453
Joined: Mar 2022
Reputation:
512
(25-11-2022, 09:23 AM)ddey333 Wrote: অসম্ভব সুন্দর লেখা !!
মন প্রাণ ছুঁয়ে গেলো।
হাত বাড়িয়ে ছুঁই না তোকে, মন বাড়িয়ে ছুঁই।
দুইকে আমি এক করি না, এক কে করি দুই।।
•
Posts: 248
Threads: 0
Likes Received: 195 in 171 posts
Likes Given: 340
Joined: May 2022
Reputation:
10
Posts: 1,473
Threads: 7
Likes Received: 2,457 in 929 posts
Likes Given: 2,453
Joined: Mar 2022
Reputation:
512
(25-11-2022, 08:24 PM)Jibon Ahmed Wrote: অসাধারণ আপডেট দাদা
হাত বাড়িয়ে ছুঁই না তোকে, মন বাড়িয়ে ছুঁই।
দুইকে আমি এক করি না, এক কে করি দুই।।
•
Posts: 223
Threads: 0
Likes Received: 184 in 140 posts
Likes Given: 1,923
Joined: Nov 2021
Reputation:
9
Posts: 1,473
Threads: 7
Likes Received: 2,457 in 929 posts
Likes Given: 2,453
Joined: Mar 2022
Reputation:
512
(26-11-2022, 10:42 PM)S.K.P Wrote: Lovely update.
হাত বাড়িয়ে ছুঁই না তোকে, মন বাড়িয়ে ছুঁই।
দুইকে আমি এক করি না, এক কে করি দুই।।
•
|