Thread Rating:
  • 176 Vote(s) - 3.39 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Adultery হেমন্তের অরণ্যে
(22-10-2022, 12:45 AM)Henry Wrote: যা হয়েছে আবার হোক, এই জঙ্গলের বুকে কয়েকটা নিষিদ্ধ দিন গোপনে কাটালে কে জানতে পারবে পাপের কথা? বারবার ওই মুগুর দিয়ে ক্রুদ্ধ দানবটা তাকে খুঁড়তে থাকুক। খুঁড়ে জল দিক, রোপিত হোক বীজ। এক অদ্ভুত ভালো লাগায় পাশ বালিশটা বুকে চেপে হাসল কাবেরী। অস্পষ্টভাবে বলল--জন্তু কোথাকার! কয়েকটা দিন বেড়াতে এসে তার বুধনকে দরকার। এক বুক আকাঙ্খা নিয়েই ঘুমিয়ে পড়ল সে।

[Image: 3a54f6d6-12d8-4fa6-a5e4-6c25487d430e.png]
কি বিশাল তার আকার!
++++++

অতিকথন হয়ে গেল বটে, ছবিতে আরও বেশি করে। Smile তবে নারী মাত্রেই জানেন পুরুষাঙ্গের আকারের সঙ্গে কুশলতার কোনও সম্বন্ধ নেই।

এই অসংগতি যদি উপেক্ষা করি তাহলে অপূর্ব এই রচনা। অনবদ্য সৃষ্টি এ। কাবেরী বড় উপেক্ষিতা। শুধু তাইই নয় লাঞ্ছিতা। অরুণাভর কটুক্তি ও তীব্র পরিহাস তাকে দূরে ঠেলে দিয়েছে আগেই। খুঁজে পাক সে নিজের নতুন জীবন।
[+] 2 users Like PramilaAgarwal's post
Like Reply
Do not mention / post any under age /rape content. If found Please use REPORT button.
Apurbo update
Like Reply
আপনার লেখায় এক নারীর মানসিক প্রাত্যহিক বেদনা অপূর্ব ফুটে উঠেছে।
[+] 1 user Likes rubisen's post
Like Reply
(05-10-2022, 01:48 PM)Henry Wrote: অরুণাভ অফিস থেকে ফিরে দেখল বাড়িটা নিঃঝুম হয়ে আছে। ড্রয়িং রুমের আলো নেভানো। তাতান এখনো ফেরেনি। পাপান এখনো ঘুমোচ্ছে। মা থাকলে এতক্ষণ ঘুমানোর জো নেই ওর। বকাঝকা দিয়ে ঠিক ডেকে তুলবেই। অসীম মোজা খুলতে খুলতে গম্ভীর গলায় হাঁক দিল----পাপান!
ধড়ফড় করে উঠে বসল পাপান। ঘড়ির দিকে চেয়ে দেখল রাত্রি ন'টা। চোখ ডলতে ডলতে বেরিয়ে এলো ও।
---এটা ঘুমোবার সময় হল? ধমক দিয়ে উঠল অরুণাভ।---মা ফোন করেছে?
---না তো।
কাবেরীর রোজকার জীবন অসামান্য হয়ে ধরা দিয়েছে
[+] 2 users Like rubisen's post
Like Reply
অনেকদিন পর একজন লেখক অবহেলিতা উপেক্ষিতা মানুষদের নিয়ে গল্প লিখছেন। হোক না সে ফ্যান্টাসি। হোক না সে মুন্ডাদের ৬ ফিটের বাড়াবাড়ি উচ্চতা দেখানো (মুন্ডারা অত লম্বা হন না)। লিখুন আপনার কল্পনায় নারী নামক পিঞ্জরাবদ্ধ পাখিটিকে মুক্তি দিন আপনার লেখায়।
Like Reply
এই লেখাটি সত্যিই ব্যতিক্রমী। মেয়েদের সুখ দুঃখের ও চাওয়া পাওয়ার কথা এখানকার লেখকরা তেমন বলবেন না তেমনি স্বাভাবিক। আপনার এই ব্যতিক্রমী লেখা পড়ে সত্যিই ভালো লাগল। অশেষ ধন্যবাদ।
Like Reply
নতুন পর্ব কবে আসবে Big Grin
[+] 1 user Likes Romantic_Boy's post
Like Reply
darun laglo notun update
Like Reply
(04-11-2022, 01:01 PM)Henry Wrote: কাবেরীকে অন্যমনস্ক দেখালো। অরুণাভ চক্রবর্তীর সাবলম্বীতায় আঘাতটা টের পেল কাবেরী। যে কাবেরীকে ছাড়া সংসারের একটা কাজ হয় না, সেই কাবেরীই না সকলের অলক্ষ্যে সংসারে ছিল এতদিন তার স্বামীটিও টের পায়নি। আজ অরুণাভর জীবনে তাৎক্ষণিক এই স্ত্রীর অনুপস্থিতি, বেশ লাগছে কাবেরীর।
+++++++

কর্পোরেট জগতেও এ আকছার দেখেছি। যে এইচ আর ম্যানেজারটা ছাড়া কোনো কাজই এগোয় না, সেও আবশ্যিক নয়।
[+] 1 user Likes raikamol's post
Like Reply
(03-10-2022, 09:04 PM)Henry Wrote:
এই সন্ধেবেলা কে আসবে? ব্লাউজ, ব্রেসিয়ার ঘামে ভিজে একসা হয়ে রয়েছে, বদল করতে পারলে বাঁচে। তারপরে আবার কে এসে এসময় জুটেছে! 

চলবে

ঝরঝরে গল্প বলার ভঙ্গি। এক ঝলক বাতাস বয়ে নিয়ে এল আপনার লেখা। অসঙ্গখ্য ধন্যবাদ লেখক।
[+] 1 user Likes raikamol's post
Like Reply
Dada update din
Like Reply
পরের পর্বের প্রতীক্ষায় !!
Like Reply
যায় যদিগো বেধে
কুল পাবেনা কেদে
[+] 1 user Likes poka64's post
Like Reply
কবে আসবেন দাদা।
horseride আমাকে আমার মত থাকতে দাও horseride
Like Reply
Waiting boss...
Like Reply
[Image: 4563a0de-5bcf-49fb-a0bd-7521325e55d9.png]
কাবেরীর কোলে মাথা রাখলো শায়িত বুধন।

সন্ধে ঘনিয়ে প্রায়ান্ধকার হয়ে উঠছে চারদিক। কৃষ্ণপক্ষের চাঁদের পূব আকাশে ক্ষীণ আলোকপ্রভা ছড়িয়ে রয়েছে পাশের ইতস্তত মেঘখন্ডগুলিতে। কাবেরী কতক্ষণ আগেই স্নান করে এলো, ঠান্ডা হিম হিম ভাব। শাড়িটার আঁচলটাকে চাদরের মত করে জড়িয়ে নিল বুকে। রান্না ঘরের জানালার পাশ দিয়ে টি-টি-টি করে একটা পাখি ডেকে ফিরল বাসায়। কাবেরীরও গুনগুন করে গাইতে ইচ্ছে করল। সসপ্যানে চা'টা বসিয়ে ওভেনের বাতি কমিয়ে গেয়ে উঠল---"তুমি সন্ধ্যার মেঘমালা তুমি আমার নিভৃত সাধনা, মম বিজনগগনবিহারী। আমি মনের মাধুরী মিশায়ে...
তারপর নিজে নিজেই বলে উঠল--ধ্যাৎ, ভুলে গেলুম।

মানুষের মনে আনন্দ হলে বুঝি এমনই হয়। মনে মনেই হাসলো কাবেরী। কতদিন পর তার মনে হল সে একটা সত্যিকারের পাখী। পোষ্য নয় এমন পাখী, কেয়া পাতার মধ্যে গোধূলী রঙের পাকা ধুধুলের খেয়ায় চন্দনী ঘ্রাণ মেখে চলে যাচ্ছে মুসানীর স্রোতে।
চা নিয়ে ঢুকল ঘরের ভিতর। বনেদী পালঙ্কে তখন পিঠ উল্টে পড়ে আছে বুধন। বেশ শীত করছে বলেই নগ্ন কোমরের কাছে টেনে নিয়েছে বেডশীটটা। কাবেরী মাথার কাছে চা'টা রেখে আলতো করে ধাক্কা দিল। তারপর মৃদু স্বরে বলল---বুধন?
চোখ মেলল বুধন। কাবেরী কিছু বলবার আগেই হ্যাঁচকা টান মেরে খাটের উপর বসলো তাকে। কাবেরীর কোলে মাথা রাখলো শায়িত বুধন। বেশ শিশুসুলভ ভাবেই আদুরে হয়ে কাবেরীর শাড়ির ফাঁকে নগ্ন পেটে মুখ ঘষতে লাগলো। কাবেরী বুঝতে পারছে শরীরটা ভীষণ নির্লজ্জ্ব হয়ে গেছে। সামান্য পুরুষ সান্নিধ্য পেলেই সাড়া দিচ্ছে। কিন্তু এখন আর একটি বারও নয়। কুন্তী-কুশি যে কোনো সময় এসে যেতে পারে। ছাড়ানোর চেষ্টা করতেই বুধন কোমর জড়িয়ে ফর্সা পেটে মুখ গোঁজা অবস্থাতেই গমগমে গলায় বলল---চুপটা করে বসেটা থাক মাগী।

কাবেরী মিইয়ে গেল বেড়ালের মত। বুধন প্রথমবার ধীর অথচ গমগমে গলায় বললে--- পারিস যদি মাফটা কইরে দে।
চুপ করে রইল কাবেরী। তার কোলে তখন মাথা গুঁজে সদ্য স্নাত শুভ্র পেটের ঘ্রাণ নিতে ব্যস্ত বুধন মুন্ডা। বেশ নরম মেদ যুক্ত ফর্সা পেটে নাক-মুখ সেঁধিয়ে এক অন্য খেলায় মত্ত।

---বুধন মুন্ডা বাপটা খারাপ লয়। মুন্ডারী মেয়ের বয়স বাইড়লে বিয়ে-শাদী কেউ কইরতে চায় না। বাপ হয়ে কি কইরব? গরীবের বিটি কি আর ইকলেজে পড়ালিখাটা করে কিছু হতে পাইরবে?
গলাটা বেশ গমগমে। চেহারার মত রুক্ষ, ভারী, পুরুষালী ও আদেশপূর্ন।
কাবেরী তখনও নিশ্চুপ। বুধন ঘুরে তাকালো কাবেরীর দিকে। পুনরায় বলল---যেদিন তুই বিটিটারে ইকলেজে দিবি বলে কেড়ে লিয়ে গেলি। রাগটা হইছিল বটে, কিন্তু তোরে দেইখে ভরসাটাও পেয়েছিলি।
কাবেরী এতক্ষণে বললে---এরপর কী হবে? তুমি আবার মেয়েটাকে জোর করে তুলে নিয়ে গিয়ে বিয়ে দেবে, তাই তো?
---তোর কি তাই মনেটা হল? আরো শক্ত করে কাবেরীর কোমরটা জড়িয়ে ধরে বলল---আমারে একটু আদরটা দিতে পারিস লা?
অদ্ভুত ঠেকল কাবেরীর। লোকটা তাকে আদর ভিক্ষা চাইছে, অথচ গলায় এখনো যেন তেজি চিতার স্বর। সবটাই তো পেল কাবেরীর কাছে, তবু লোকটা কেন আদরের কাঙাল।
আলতো করে পিঠে হাত বুলোতে লাগলো কাবেরী। বুধন চোখ মেলে দেখল কাবেরীকে---পারবি যেমনটা কইরে আগলে রাইখছিস আমার বিটি দুটাকে, তেমনটা কইরে আগলেটা রাইখতে তাদের?
কাবেরী জানে না এর উত্তর কী দেবে। তবে তার এখন সত্যিই বুধনকে ভালোবাসতে ইচ্ছে করছে। শরীর তো অনেক আগেই নৃত্যরত, মনের মধ্যেও কোথায় যেন সাড়া দিচ্ছে তার; পারবো বুধন পারবো। অথচ কথাটা মনেই রয়ে গেল। মনে মনেই কথা হল যেন দুজনের। উঠে বসল বুধন। বুকের আঁচলের ভিতর হাত ভরে ব্লাউজের হুক খুলতে লাগলো সে। কাবেরী অস্পষ্ট ভাবে বললে---এখন না বুধন, ওরা...
কিন্তু নিস্পৃহ অসম্মতি বুধনের নিয়ন্ত্রক পৌরুষে কোনো বাধা সৃষ্টি করতে পারলো না। বরং স্তন দুটো বার করেই হাতের মধ্যে মুঠিয়ে ধরে দাঁত খিঁচিয়ে বললে---ঠাসা ওলান দুইটা দেইখলেই লোভ হয়। তোর মরদটা ভাগ্যবানটা আছে।

তারপর মুখ চুবিয়ে দিতেই কাবেরীও বাহু মেলে আদরে আদরে গ্রহণ করল বুধনকে। এখন কুন্তী, কুশি, হেমেন দা যে আসে আসুক। বেপরোয়া মন নিয়ে শরীর তোলপাড় হচ্ছে তার। বুধনের জন্য মেলে ধরল তার প্রিয় শুষ্ক 'ওলান' দুটি ।
শীতল হয়ে যাওয়া চা পড়ে রইল অবহেলায়, বুধন এখন তার কেবল শয্যাসঙ্গীর নারী শরীরটিকে উষ্ণতা প্রদান করতেই আগ্রহী। এলোমেলো বিছানার চাদরে শায়িত কাবেরী তখনও তার প্রকৃতিদেবতাকে স্তন দিয়ে যাচ্ছে। পাহাড়ী অরণ্যের এত বড় শতাব্দী ছুঁই বাড়ীতে এখন তারা দু'জনে প্রেমিক-প্রেমিকা। নিভৃতে শয়নে কাবেরীর যোনিতে ঢুকে যাচ্ছে তার দুধর্ষ মুন্ডারী প্রেমিকের বিকদর লিঙ্গ। কাবেরীই নিবেদন করল--তাড়াতাড়ি করো। ওরা এসে যেতে পারে।
বুধন হাসলো, সে জানে তাড়াতাড়ি মানে সবল গাঁথুনি। এই নিবেদনে শুধু সময় সংকুলানের বার্তা কাবেরী দেয়নি, তার সাথে তাকে কোমরের জোর প্রদর্শন করার পরোক্ষ আহ্বান জানিয়েছে। মান্ধাতার পালঙ্কবিছানা বুঝিয়ে দিল ক্ষণিক মধ্যেই সেই তীব্র জোরের পরিণতি।

বুড়ীপিসির ঘরে কুপি জ্বাললো কুন্তী। সাগিনার দিন দিন পা'গুলো অসাড় হয়ে যাচ্ছে। বুকের কাছে আট মাসের টুনিকে চেপে দুধ দিচ্ছে তখন সে। কুন্তী এসে মায়ের পাশে বসল। সাগিনা বলল---তোর বাপটারে দিখতে পাইলে বইলবি, ডাক্তারটা কি সব ওষুধ লিইখেছে।
---বাপ কি আবার কাজে যোগটা দিইল মা?
পাশ ফিরে সাগিনা বাচ্চাটাকে স্তন পাল্টে দিয়ে কুন্তীর দিকে পেছন ফিরে শুয়ে বলল---তোর বাপটা কি মাথা নামাইবার লোকটা আছে রে?

বুড়ি পিসির ঘাড় নুইয়ে গেছে, ঘরের ভিতর ঢুকে হাতের লাঠিটা রেখে বললে---কুন্তী তোরে কি আজ যাতেই হবে?
---দিদিমণিটা বারণ কইরেছে, সন্ধ্যা হবার আগেই ফিইরেটা যাতে...।
---তাহলে মুখপুড়ি এতক্ষণ বইসে রইলি কেন? মুখ ঝাঁঝিয়ে বকা দিল সাগিনা। তারপর গলা নামিয়ে বলল--হাঁ রে কুন্তী দিদিমণিটা সত্যি তোরে পড়াইবে?
---হাঁ গো মা, দিদিমণিটা ভালোমানুষটা আছে। শুধু আমার লগে না, কুশিরেও ভালোটাবাসে।

সাগিনা কী একটা যেন গভীর ভাবে ভাবলো। তারপর বিষন্ন কন্ঠে বললে---আর দেরী কইরিসনি। যা বইনদুটা সন্ধ্যা থাইকতে থাইকতে চইলে যা।


কাবেরী ঘরগুলোতে এমনিতে সন্ধে হলেই আলো জ্বেলে দেয়। আজ সবকটা ঘর অন্ধকার। কুন্তী কুশির হাত ধরে বড় বারান্দায় পা রাখতেই বুঝল দিদিমনির ঘরটায় শুধু আলো জ্বলছে। দরজাটা ভেজানো মনে করে ধাক্কা দিল সে। তার কাছে পৌছচ্ছে তখন মৈথুনের অজানা তীব্র শব্দ: ঠাপ...ঠাপ...ঠাপ। অনবরত এই শব্দ ঝড় তুলছে চার দেয়ালের মধ্যে। সঙ্গে জুড়ি মিলেছে জমিদার আমলের খাটের ক্রন্দনরত মিনতি। দুটোই কানে আসছে কুন্তীর। ভেতরে আসলে কি হচ্ছে সেটা তার বোধগম্য হল না। কুশি তখন বড় বারান্দায় পাতানো হেমেন রায়ের ইজি চেয়ারে উঠে খেলায় মশগুল। ওই চেয়ারটা ওর বড্ড প্রিয়। হেমেন দা না থাকলে, ওটার ওপর উঠে ওর যতরকমের খেলা।
Like Reply
[Image: 02352e6c-653a-47ae-ac43-315124dbfb60.png]
কাবেরী এখন মাদী কুক্কুরীর মত বিছানায়। পেছন থেকে বুধন ভাদ্রের মদ্দা কুকুরের মত চড়ে উঠে বেশ নৈপুণ্যে মৈথুন করছে।

মৈথুনের ধাক্কা তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে। ঘন ঘন শ্বাস-প্রশ্বাসে মনে হচ্ছে যেন ঘরের মধ্যে প্রবেশ করেছে কোনো প্রকান্ড বনগোখরো। কুন্তী ভয় পেয়ে ডেকে উঠল---দি-দি-ই-মণি!
কাবেরী এখন মাদী কুক্কুরীর মত হাঁটু মুড়ে বিছানায়, পেছন থেকে বুধন ভাদ্রের মদ্দা কুকুরের মত চড়ে উঠে ধাক্কা দিচ্ছে বেশ নৈপুণ্যে। দুজনেই সম্পূর্ন নগ্ন, শরীরী নেশাগ্রস্ততায় আবেগতাড়িত একে অপরের কাছের মানুষ। বগলের তলা দিয়ে কাবেরীর ডান স্তন তখন বুধনের শক্ত হাতে নির্মম ভাবে বন্দী। কারোর কানে ঠেকেনি কুন্তীর গলা।

কুন্তী আরো খানিকটা ভয় পেয়ে পুনরায় ডেকে উঠল---দি...দি...ম..ণি..দরজা খুইলেন।
এবার দুজনেরই কানে গেল। থমকে গেল দুজনে। একে ওপরের দিকে চাওয়াচায়ি করল জোড় লাগা অবস্থায়। কোনোভাবেই তাদের দুজনের শরীরই এখন সায় দিচ্ছে না অর্ধসমাপ্ত কাজ ফেলে রাখতে।
বুধন জানে এরপরেও কাবেরী এখুনি তাকে থামিয়ে উঠে যেতে পারে। তাই আগেভাগে সে কড়া গলায় বলল---কুন্তী?
কুন্তী চমকে উঠল, এ যে তার বাপের গলা। দিদিমণির ঘরে তার বাপটা কী করছে? দিদিমনির ওপর আক্রোশে খুন খারাপি কিছু করে ফেলছে না তো! দুশ্চিন্তায় কাঁদো স্বরে কুন্তী বলে উঠল---বাপ? দিদিমণিটা কুথায়?
---সাথে আছে, তুই এখুন যা।
কুন্তী নিশ্চিন্ত হতে পারলো না। তৎক্ষনাৎ কাবেরী বললে---কুন্তী রান্না ঘরে গিয়ে ভাতটা বসিয়ে দে। আমি আসছি। কাবেরীর গলায় স্পষ্টত কাঁপুনি ধরা অস্থিরতা।
একই সাথে যতটা নিশ্চিন্ত হল কুন্তী তার চেয়ে বেশি বিস্মিত হয়েছে সে। রান্না ঘরের দিকে এগোলো এক রাশ ভয় নিয়ে। কয়েক পা এগোতেই সে শুনতে পেল পুনরায় সেই তীব্র অদ্ভুত শব্দের উত্থান। শব্দটা ধারাবাহিক, একটা অদ্ভুত ছান্দিক সুর আছে। আর কয়েকটা ফিসফাস কথা। যে কথাগুলো এতই ফিসফিসিয়ে, যে বদ্ধ দরজার বাইরে তা শ্রবণযোগ্য নয়।

কাবেরী অনুরোধের সুরে বলল---বুধন, তাড়াতাড়ি কর। মেয়ে দুটো বাইরে...
বুধন ঘোড়া চালানোর ভঙ্গিমায় তীব্র ঠাপুনি দিতে দিতে ফ্যাসফ্যাসে গলায় বলল---চুপ কইরবি মাগী? তোর ভাল্লাইগছে না? উম্ম?
কাবেরী চুপ করে গেল। বুধনের কঠিন পৌরুষে সে যত দূর পারে চলে যেতে চায়। এখন সেও স্বার্থপর মানবী। বুধনকে খুশি করতে পারলেই যে তার সুখ।
কাঁপা কাঁপা গলায় বুধন পুনরায় বলল---কী রে ভাল্লাইগছে না?
কাবেরীও কাঁপন ধরা গলায় প্রত্যুত্তর দিল---হুম্ম।


কুন্তী ভাত বসিয়ে ফিরল যখন তখনও সেই তীব্র শব্দ শোনা গেল দিদিমণির ঘর থেকে। তবে যত সময় পেরোতে লাগলো একটা হাঁসফাঁস শব্দও বাড়তে লাগলো বেশ। হাঁসফাঁসটা যে তার দিদিমনির সেটাও বুঝতে পারছে কুন্তী, আর তাতেই ভয়টা হচ্ছে তার বেশী। বাপটা তার গলা চেপে ধরল না তো দিদিমনির। তাই যদি হয়, দিদিমণিই বা কেন তার সাহায্য চাইছে না। উল্টে তাকেই না চলে যেতে বলল!

শব্দটা থেমেছে অনেকক্ষন। কিন্তু এখনো দরজা উন্মুক্ত হয়নি। দুজনেরই মুখে মৃদু হাসি। কাবেরীরটা লজ্জায়, বুধনের মুখে যুদ্ধ জয়ের। ঘর্মাক্ত গায়ে লুঙ্গিটা পরতে লাগলো কাবেরীর দিকে চেয়ে। তারপর নগ্ন কাবেরীর ঠোঁটে চুমু খেলো। কাবেরীও সঙ্গত দিয়ে চুমুতে অংশ নিল। বুধন ঠোঁট ছোঁয়ালো কাবেরীর একটা স্তনে। মৃদু কামড় দিতেই আঃ করে আঁতকে উঠল সে। লাজুক মুখে বললে---দুস্টু।

শরীরের সব শক্তি নিংড়ে দিয়েছে কাবেরী। বুধনের দিকে চেয়ে রইল ও। হ্যারিকেনের কাচ তুলে আগুনের সলতেটা বাড়িয়ে বিড়ি ধরালো বুধন। ধোঁয়া ছেড়ে বলল---শুয়ে থাইকলি কেন? উইঠে পড়। তা না হইলে মেয়ে দুটা কি ভাইববে।
কথাগুলো বলেই হলদে দাঁত বের করে হেসে ফেলল বুধন। বুধনের তামাশায় কাবেরীও লজ্জা পেল। ইস, বাইরে কুন্তী, কুশি অথচ সে কিনা খিল দিয়ে তাদেরই বাবার সাথে...

উঠে পড়ে খোঁপা করল কাবেরী। শাড়ি, ব্লাউজ সব ক'টা পরে ফেলল ধীরে সুস্থে। বুধনই দরজা খুলল আগে। কুন্তী দেখল তার দীর্ঘ চেহারার পিতা ঠোঁটের ফাঁকে বিড়ি গুঁজে বেরিয়ে এলো দিদিমনির ঘর থেকে। পেছন পেছন বাইরে এলো কাবেরী। বুধনকে দেখেই একক মনে ক্রীড়ারত কুশি দৌড়ে এসে উঠে পড়ল বাপের কোলে। বাপ-মেয়ের খুনসুটি দেখতে লাগলো কাবেরী। বেশ মায়াবী লাগছে তার, বুধন, কুন্তী, কুশি আর এই অরণ্য যেন এক অনন্য সুখানুভুতি। কুন্তী অবশ্য এখনো বিস্ময়ের দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছে তার দিদিমনির দিকে।
++++++
Like Reply
[Image: cf863915-b37d-4762-b5bb-a29e731a5b5c.png]
এ যেন সংহিতার প্রাচীন গান্ধর্ব নিয়ম।

জানালার পর্দা ভেদ করে আলো এসে পড়ছে ঘরে। এই বুঝি রাত শুরু হয়েই শেষ হয়ে গেল। কাবেরীর ভোরে ওঠার অভ্যাসের আজও একচুল এদিক-ওদিক হল না। হলদে আলোয় ভেসে যাচ্ছে পুবের দিকে সিঁড়িখানা। এ যাবৎ একদিনও ছাদে যায়নি কাবেরী। ছাদের ঘরগুলো অব্যবহৃত বলেছিলেন হেমেন দা। আজ যেন সিঁড়িতে পড়া সুষমা কাবেরীকে হাতছানি দিচ্ছে। মুখ হাত ধুয়ে চা খেয়ে ঘড়ি দেখল পাঁচটা চল্লিশ। হেমেন দা সাড়ে ছ'টার দিকেই ওঠেন। কাবেরী সিঁড়ি ধরে উঠে দেখল লম্বা টানা বারান্দায় চারখান ঘর। সবকটার শেকল তোলা। একটা বাদে সবগুলোতেই তালা দেওয়া। তালাহীন দরজাটা খুলে ফেলল সে। কাঠের পুরোনো আসবাব, বেশিরভাগ ভাঙাচোরায় ঠাসা। তার মধ্যে রয়েছে একটা পোট্রেট সাইজ তৈলচিত্র। নির্ঘাত কাবেরীদের কোনো পূর্বজর হবে।
---ওমা! চমকে উঠল কাবেরী। এ যে রবি ঠাকুরের ছবি। কে এঁকেছে, শিল্পীর নাম ছোট ছোট অক্ষরে লেখা; মৃগাঙ্ক রায়চৌধুরী, ১৩৪৮। ঠিক রবীন্দ্রনাথের মৃত্যুর বছরেই আঁকা হয়েছে ছবিটা।

হেমেন রায় ঢুকেছেন তাঁর ঘরের লাগোয়া বাথরুমে। কুন্তী সকালে পড়তে বসেছে। কুশিকে দুদিন আগেই যোগ শিখিয়েছে কাবেরী। একগাদা যোগ খাতায় তুলে দিতেই পেনসিলের পেছনটা মুখে কামড় দিতে দিতে খুব মনোযোগ দিয়েছে ও। কাবেরী হেমেন দার জন্য চা বানিয়ে রাখল ইজি চেয়ারের পাশে।

----দিদিমণি conjugation টা জিগাইবেন না?

কুন্তীর কথায় কথায় এই 'টা' যোগ করাটা মুন্ডা আদিবাসীদের বাংলা উচ্চারণের অঙ্গ। পশ্চিমবঙ্গের পুরুলিয়া, বাঁকুড়ার কিছু অংশের আদিবাসী মানুষদের মধ্যেও এই উচ্চারণ রয়েছে। কাবেরী হেসে বললে---তোর মুখস্ত হয়েছে?

মাথা নাড়লো কুন্তী। কাবেরী ইংলিশ গ্রামার বইটা তুলে ধরে জিজ্ঞেস করতে লাগলো। মধ্য মেধার কুন্তীর বুদ্ধিদীপ্তি খুব একটা খারাপ না। বরং কুশির বুদ্ধি বেশ ক্ষুরধার।
হেমেন দা বাথরুম থেকে বেরিয়ে বললেন----ইস্প্যান্ট নয় রে মা, স্পেন্ট।
কাবেরী হেসে বললে---হেমেন দা, ওর উচ্চারণে ভুল ধরিও না। সেটা ওর দ্বারা হবে না।
কুন্তী লজ্জা পেল। হেমেন রায় চায়ে চুমুক দিয়ে বললেন---হ্যা রে খুকী, তখন কি যেন বলছিলি?
----বলছিলাম বলতে মামাদের পদবী কী রাইচৌধুরী ছিল?
---বাবার পদবী রায়চৌধুরী ছিল না। কারণ দাদুর ছিল না বলে। আসলে দাদু ইচ্ছে করেই রাখেননি। তবে আমার দাদুর বাবা তার মানে তোর প্রমাতামহ ছিলেন রায় চৌধুরী। জমিদারীর শেষ ধারক ও বাহক।
----উনি কি মৃগাঙ্ক রায় চৌধুরী।
----মৃগাঙ্ক রায় চৌধুরী নন। মৃগাঙ্ক মোহন রায় চৌধুরী। উইলে তাই ছিল। অবশ্য 'মোহন'টা তিনি খুব একটা ব্যবহার করতেন না। তা তুই জানলি কী করে?
---উনি কি ছবি আঁকতেন?
ঠেস ছেড়ে উঠে বসলেন হেমেন দা----আঁকতেন মানে! সাংঘাতিক শিল্পী ছিলেন। ছবি আঁকার প্রতিভা আমার বংশে তার থেকেই পাওয়া। তোর থাকার ঘরে যে পোট্রেট আঁকা আছে ওটা তাঁরই আঁকা।
---মানে? বিস্মিত হল কাবেরী।---এদ্দিন ভাবতাম ওটা তোমারই আঁকা।
হাসলেন হেমেন রায়। বললেন--- সে যা হোক, সাত সকালে তুই বা এসব নিয়ে পড়লি কেন?
কাবেরী রবি ঠাকুরের ছবির কথা জানালো হেমেন দাকে। হেমেন রায় বললেন---অনেকদিন ধরেই ভাবছি ওই ছবিখানাকে বৈঠকখানায় রাখবো। কিন্তু বৈঠকখানাটাই যে এখনো ব্যবহার করে উঠতে পারলাম না। পরিত্যাক্ত হয়ে পড়ে রইল।
---ওই বন্ধ বড় ঘরটা? কুছুয়াকে দিয়ে একদিন পরিষ্কার করিয়ে নিলেই তো হয়। দোতলার ঘরগুলোও তো দেখলাম ব্যবহার হয় না বলে তালা দেওয়া।
---ওগুলোর চাবি নেই রে খুকী। এখন তাহলে তালা ভাঙতে হয়।

অরুণাভ ডেস্ক থেকে উঠে ফোন করল কাবেরীকে। অফিস থেকেই ফোন করল সে। কাল রাতের স্বপ্নটার পর অস্থির হয়ে আছে, কাবেরীকে বলতে পারলেই খালাস। অন্যপ্রান্তে কাবেরী হকচকিয়ে গেল। এমনিতে সকালেই ফোন করবে ভেবে রেখেছিল ও। সে আর করা হয়ে ওঠেনি। কিন্তু অমন দুপুরে অরুণাভ! পাশে হিজিবিজি কথায় বোঝা গেল অরুণাভ অফিসে। আকস্মিক অফিস থেকেই বা ফোন করল কেন অরুণাভ।
ফোনটা ধরেই স্বামী-স্ত্রীর মধ্যেকার কোনো কুশলতা বিনিময় না করেই অরুণাভ বলল--- এই শুনছ তুমি যেখানে আছো, ওখানে কোনো ক্যাকটাসের ঝোপ আছে?
---ক্যাকটাস!
---মানে ওই পাহাড় লাগোয়া।
---ধুস! কিসব বলছ? টিফিন বক্স নিয়ে গেছো। মালতী এসেছিল?
---রাখো তো তোমার মালতীকে। যে কথা জিজ্ঞেস করছি বলো।
---আরে ক্যাকটাস কোথা থেকে আসবে? এ কী মরুভূমি নাকি? পাহাড়ী জঙ্গল এলাকা, থাকলেও থাকতে পারে। সে আমি জানবো কি করে।
অরুণাভ খানিক চুপ করে রইল। কাবেরী নীরবতা কাটিয়ে হেসে বলল---হঠাৎ ক্যাকটাসেরই বা খোঁজ করছ কেন?
---না থাক।
---আরে বলবে তো। বিরক্তি প্রকাশ করল কাবেরী।

অরুণাভ ছেলেমানুষী করে না। তবে এবার যেটা বলল তাতে কাবেরীর হেসে কুটোপুটি যাবার মত অবস্থা। বললে---কাল রাতে স্বপ্ন দেখলাম, একটা পাহাড়। সামনে একটা মস্ত গভীর খাদ। অত নীচে তাকাতে ভয় করবে। পাহাড়ের সর্বাঙ্গ ক্যাকটাস ঝোপ। আমি রুখলাম তোমাকে, তুমি না শুনেই চলে গেলে। তারপর আচমকা পা পিছলে! কী অদ্ভুত স্বপ্ন বলো তো।
কাবেরী এবার হো হো করে হেসে উঠল। এমন ভাবেই হাসলো পাশের ঘরে হেমেন রায় অবধি পৌঁছে গেল হাসির শব্দ।
---তা হলে তো তোমার নিশ্চিন্ত হওয়া যেত। কাবেরী ঠাট্টা করেই বলল অরুণাভকে।
অরুণাভ এবার সামলে নিল। স্ত্রীর কাছে ঠাট্টার পাত্র হওয়াটা তার না পসন্দ। বললে---আসলে কাল একটা অফিস পার্টি হয়েছিল। একটু গিলেছিলুম। তার জন্যই বোধ হয় এমন স্ট্রেঞ্জ ড্রিম।

অরুণাভদের এই অফিস পার্টিগুলো বড্ড বিরক্তিকর লাগে কাবেরীর। শুধু শুধু বরগুলোর মদ গেলা আর উগ্র সাজের বৌগুলোর ঢলানি। পরনিন্দা আর পরচর্চাও চলে বেশ। এক আধবার অরুণাভর জোরাজুরিতে গেলেও, কাবেরী যে একেবারেই পছন্দ করে না অরুণাভ তা জানে। তাই ও একাই যায়। যায় বলতে যেতে হয় বলেই যায়। অরুণাভর যে রঙিন পানীয়ের প্রতি কোনো ঝোঁক আছে এমন নয়। তবু ব্রাঞ্চ ম্যানেজার হয়ে এখন এসবে না গেলে মুশকিল। অনেক বড় বড় ডিল ওখানেই হয়। স্থানীয় স্তরে ছোটখাটো শিল্পপতিরা আসেন পার্টিতে। কিছু ক্ষেত্রে নেতাদের সুপারিশ থাকে।

কাবেরী রিসিভারটা নামিয়ে রাখতেই কুন্তীর চিল চিৎকার শুনতে পেল।---দিদিমণি-ই-ই, বিষ্টিটা আইলো, কাপড়গুলান তুইলে লিব?
কাবেরী দ্রুত পায়ে বেরিয়ে এসে দেখল দক্ষিণে কালো বিশাল মেঘ ডানা ঝাপটিয়ে নেমে পড়েছে। স্নানের পর বাগান বরাবর দড়িতে মেলে দিয়েছিল শাড়ি, সায়া, ব্লাউজ। ঝটপট তুলে নিল কুন্তী আর ও দুজনে মিলে।

এখানে বৃষ্টি বড্ড অনিয়মিত। হঠাৎ করে এই নামে তো হঠাৎ করেই উবে যায়। ভেজা কাপড়গুলো বারান্দায় মেলে দিয়ে কাবেরী বসল নিজের ঘরে আয়নার সামনে। স্নানের পর থেকে চুলগুলো উন্মুক্ত। শ্যাম্পু করা চুল শুকিয়েছে বহুক্ষণ আগে। খোঁপা করে নিল পাক দিয়ে। এই বয়সে অনেক মেয়েদেরই চুল পাতলা হয়ে যায়, উঠে যায়। কাবেরীর অবশ্য চুলের ঘের আগের মতই। এখনো একরাশ কালো চুল পিঠের ঢাল বেয়ে গড়িয়েছে।

স্থাণু পাহাড়টার দিকে এক দৃষ্টে চেয়ে সিগারেট ধরিয়েছেন হেমেন রায়। বারান্দায় আনমনে কুশি গান ধরেছে:

আয় বিষ্টি ঝাঁইপে
ধান দিব মাইপে
ধানের ভিতর পকা
দাদাবাবু বুকা
লেবুর পাতা করম চা
যা বিষ্টি চইলে যা।
+++++++

আজও কাবেরী উছ্বল। শেষ বিকেলে পাহাড় কিনারে দাঁড়িয়ে অনেক নীচের জঙ্গল দেখছে সে। দু'পাশে শুধুই শাল সেগুনের হাতছানি। কোথায় ক্যাকটাস? বরং কিছু অপরূপ হলদে বুনো ফুলের গাছ ছড়িয়ে আছে। আজ এখানে আসবার তার একটা কারণ আছে। সকাল বেলা এসেছিল বুধন। কাবেরী তখন রান্না ঘরে কিংবা স্নানে। কুন্তী এদিক ওদিক ছিল না বোধ হয়। কুশির সাথে খুনসুটি করে ও ফিরে গেছে। যাবার সময় ভাঙা ভাঙা অক্ষরে রুলটানা চিরকুটে লিখে গেছে: ''বেকাল বালা, ইতু দেবি র তানে"।

বুধনের পড়াশোনা কদ্দুর জানা নেই কাবেরীর। চিঠির অক্ষরগুলো এলোমেলো। সবকটায় লম্বা মাত্রা একযোগে টানা। তবু কাবেরীর বিষয়টা মজারই লেগেছে। হাঁসড়ার অজ অরণ্যের ক-অক্ষর বুধন মুন্ডাও করতে জানে প্রেম প্রণয়ে চিঠির আদান প্রদান। রগচটা, আপাদমস্তক ক্ষিপ্র মনস্তত্বের বুধনের মধ্যেও কাবেরী ভাবোদ্রেককারী হৃদয়ের জন্ম দিয়েছে, কাবেরীর উছ্বলতার এ এক মস্ত কারণ।
পাহাড়ের গভীরতা তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে দীর্ঘ।---সত্যি যদি অরুণাভর স্বপ্নের মত, আমি যদি এখান থেকে ঝাঁপ দিই। এ কী ভাবছে কাবেরী! কাবেরী মনে মনে ভাবলো তার কীসের এত পিছুটান, তাতান-পাপান? কেন সে মরতে পারবে না।
কাবেরীর মনে হল সে আগে ভাগেই এসে পড়ল বোধ হয়। ইউনিভার্সিটিতে পড়বার সময় অরুণাভর সাথে দেখা করতে তারা যে জায়গাটায় যেত সেখানে একটা সান বাঁধানো দীঘি ছিল। দীঘির পাশেই জোড়ায়-জোড়ায় বসে থাকত কত যুগল। তখনও কাবেরী আগে আসতো।
শুকনো পাতা মাড়ানোর খসখস শব্দে পিছু ফিরে তাকালো কাবেরী। হাঁসুয়া দিয়ে ডালা ছাঁটতে ছাঁটতে এগিয়ে আসছে বুধন।
কাছাকাছি এলো ওরা দু'জনে। পাহাড়ের প্রান্ত দেশে এক খণ্ড পাথরের উপর বসল ওরা। কাবেরীর কাঁধে হাত রাখলো বুধন। কাবেরী লজ্জা পেল। বুধন চিবুক তুলে বললে---তোর লগে একটা জিনিস লিয়ে আসছি।
তারপর কোমরের গামছার কোঁচ খুলে বার করল গোলাপি, লাল নানা রঙের নাম না জানা বুনো ফুল।
দুই হাতে ভরে কাবেরীর মাথার ওপর ছড়িয়ে দিল সে। দুজনে ঘনিষ্ট হল। কাবেরীর কোমল ঠোঁট বুধনের মোটা ঠোঁটের মধ্যে সেঁধিয়ে গেল। সদ্য খাওয়া বিড়ির ঘ্রাণ পাচ্ছে কাবেরী। পোড়া তামাক পাতার এই তীব্র গন্ধ যেন বুধনের প্রতি কাবেরীর আরেক বনজ আকর্ষণ।
আরো কাছে টেনে নিল কাবেরীকে। শাড়ির আঁচলের মধ্যে হাত ভরে ব্লাউজের ওপর দিয়ে স্তন দুটো টিপতে লাগলো। কাবেরী লাজুক দ্বিধাগ্রস্ত পোষা ময়না পাখির মত বলে উঠল--কী করছ কী? কেউ এসে পড়লে?
---কে আইসবে এখুন? ইটা জঙ্গল আছে রে মাগী। কাপড়টা ফেলাই দে, মাই দুটা ভালো কইরে কচলাই।

আয়েশ করে স্তন টিপতে লাগলো বুধন। চুয়াল্লিশ বর্ষীয় নারীর স্তন যৌবনা নয়, তবু ঠাসা চুনোট স্তন জোড়ায় মর্দনে আনন্দ পাচ্ছে বুধন। স্তন টিপতে টিপতেই বলল---তোরে একদিন বেণীকুণ্ডে লিয়ে যাবো।
---ওটা আবার কী?
---ঝর্ণাটা আছে। মুসানী জনম হছে যেখানটা। সকলেটা কি সিখানটা যেতে পারে। সাগিনা কি লিয়ে গেছিলাম, ল্যাংটা হয়ে সিনান করেছিলাম দুজন।
---তুমি সাগিনাকে খুব ভালোবাসো তাই না?
---মরদ তার মাগটারে ভালোটাবাসবেনি তো কারে ভালোবাসবে?
---তাহলে আমাকে কেন ছুঁয়েছ? নিছকই বুধনকে পরীক্ষা করল কাবেরী।
হাসলো বুধন। কাবেরীর বাম স্তনটাকে বেশ কষে খামচে ধরল। কঁকিয়ে উঠল কাবেরী---ওহঃ মাগো!

বুধন কাবেরীর কানের কাছে মুখ ঠেকিয়ে বললে--সাগিনা আমার বউটা আছে। তুই আমার রানীটা আছিস। যখুন ছোটটা ছিলাম শখটা ছিল রাজা হব একদিন। ই হাঁসড়ার জঙ্গলে জংলী জন্তুগুলান আমার প্রজাটা হবে। আমার রানী থাইকবে, একটা ঘোড়া থাইকবে। ঘোড়ার পিঠেটা থাইকবে ঝুমুর গাছটার পাতার চাদরটা। তার উপরে বাপটার মা বুড়ি দিদা সেলাই কইরে দিত যেমনটা কলু ফুল, তেমনটা। চাঁদের আলোটা পইড়লে কলু ফুলের থিকে বারটা হবে হরিণের নাভিটার গন্ধটা। আমি পইরব আড়িয়াংবুরুর উপর বোঙ্গাটা ডুব দিইলে যেমন কমলা রঙটা আসে, তেমন রঙা ল্যাঙট। পিছনটা বইসবে আমার রানী। সে পইরবে বেণীকুণ্ডের জলটার মতটা সাদা ঘাগরা। তার ওলান দুটা হবে ঠাসা, শিমুল ফুলটার মতটা নরম, বনজুঁইর মত বোঁটা। পাহাড় ডিঙ্গাই চইলবো, মুসানীর পরেটা গিয়ে পারটা হব ভৈরববুরু।
মুগ্ধ হয়ে শুনছিল কাবেরী। বুধনের কল্পনার জগতে সে নিজেকে দেখছিল বুধনের ঘোড়ার পেছনে সওয়ারী নারী সঙ্গীনি হিসেবে। হাতের মধ্যে স্তনের দলাইমলাই অথচ একমহূর্তের জন্য থামায়নি বুধন। কাবেরীর নরম পুষ্ট স্তন নিয়ে খেলতে তার বেশ ভালো লাগছে। বুধন এখন কাবেরীর পেছনে, দুই পা মেলে ধরে বুকের আঁচল ফেলে বেশ আরাম করে তার রানীর স্তন হাতড়াচ্ছে। ঘাড়ে গলায় নাক ঘষছে, ঠোঁট স্পর্শ করছে।
কাবেরী হেসে বললে---টিপতে ভালো লাগে তোমার না? অনেক টিপেছ এবার ছাড়ো দেখি আমার বুনো রাজা।
---ছাড়বার লগে কি তোরে আজ ডাইকেটাছি। ইতু দেবীর থানে আজ তোরে রানীটা কইরব। হইবি তো মাগী আমার রানীটা?
বেশ কামঘন গলায় কাবেরী অস্পষ্ট ভাবে বললে---তোমার রানী হতে হলে আমাকে কী করবে হবে?

হাতটা ধরে টেনে তুলল বুধন। বৃদ্ধ গাছের তলায় পাথরের দেবী। একটু আগে যে পুষ্পরাজি বুধন কাবেরীর মাথায় ছড়িয়ে দিয়েছিল, সেই জাতের ফুলে দেবীর পূজা হয়ে থাকে নিত্যদিন। আজও পাথরখণ্ডের পাশে ফুলের ছড়াছড়ি। বেশ বল প্রয়োগ করে কাবেরীকে নুইয়ে দিল দেবীর সামনে। এ যেন সংহিতার প্রাচীন গান্ধর্ব্য নিয়ম। কোমরের ওপর কাপড় উঠে গেল কাবেরীর। উন্মুক্ত ফর্সা নিতম্বদেশের তলে চেরা যোনিগহ্বর খুঁজে নিতে সমস্যা হল না বুধনের। ল্যাঙট লুঙ্গিটা গুছিয়ে ভীষণ উত্থিত লিঙ্গটা ঠেসে ধরল দ্বারের মুখে। তারপর অস্থির গাঁথুনিতে বিদ্ধ করে দেবতাকে সাক্ষী রেখে কাবেরীকে নিজের করে নিল সে। বুধনের ঘোড়ায় ঘোড়সওয়ার হয়ে কাবেরী চলল দুর্লঙ্ঘনীয় ভৈরববুরু জয় করতে।

নিদারুণ সুখে ভাসছে কাবেরী। বন্য বিকেলের পরিবেশে পাহাড়ি অরণ্যের শিখরে পাথুরে দেবীর সামনে তাকে মৈথুন করছে তার দুধর্ষ প্রেমিক। যোনি ভেদ করে বিশাল পুরুষাঙ্গের সবল খোদাইকার্যে কাবেরী ভুলে যাচ্ছে বয়স। নিজেই অনুরোধ করে বলল---উম্ম রাজা আমার...আরো জোরে...
দাঁত খিঁচিয়ে বুধন উন্মাদ হয়ে উঠল। সম্ভোগের সময় ভালো মন্দ বিচার করতে নেই। তাছাড়া তার নিকট কাবেরীর বশবর্তী হয়ে ওঠাটা সে বুঝে গেছে ভালো করে। ইচ্ছে মত কাবেরীকে সে যেমন খুশি ভোগ করতে পারে। ছোটবেলার স্বপ্নজগতের রানী করে বেণীকুণ্ডের ঝর্ণায় দিনরাত উলঙ্গ হয়ে আদিম হয়ে উঠতে পারে।
বেশ কোমর ঝাঁকিয়ে ঝাঁকিয়ে ঘাই মারছে বুধন। দুজনেরই চোখে এখন পরম প্রতিজ্ঞা। দেবী মূর্তির সামনে তারা একে অপরের ভালোবাসার পূর্ণতা প্রমান করতে সমর্পিত হয়েছে।
কাবেরী তৃপ্ত। চতুর্থবার পরপুরুষ ঢুকেছে তার শরীরে। এই চারটি পরপুরুষই তার একজন প্রেমিক: বুধন মুন্ডা। স্বামী ছাড়া আর কাউকে যদি তার সর্বস্ব দিতেই হয়, সেই এই মুন্ডারী মানুষটি। ভালোবাসার গর্ভে তলিয়ে যাচ্ছে কাবেরী। এই গর্ভের গভীরতা অরুণাভর স্বপ্নে দেখা খাদের চেয়েও গভীর।

পেছন থেকে জাপটে ধরে আবার স্তন দুটোকে মুঠিয়ে ধরল বুধন। একদা সন্তানের প্রতি দায়িত্বশীলা কাবেরীর দুই স্তন এখন অবহেলিত। অবহেলিত মধ্যবয়স্কা নারীর স্তনে নিঠুর হাতের টেপন খেলে নারীর অহংকার হতে পারে, যে তার স্তনপদ্ম এখনো প্রস্ফুটিত সম্ভাবনাময় ফুল। কাবেরীরও ভালো লাগছে। এই স্তনের ব্যবহার ফুরিয়ে গেছিল ষোল বছর আগে যেদিন পাপানকে দুধ খাওয়া ছাড়িয়েছিল। অরুণাভর সাথে মিলনে নেহাতই কখনো কখনো নিয়মতান্ত্রিক মৃদু মর্দনে ভূমিকা রাখলেও স্তন দুটি না থাকলেও চলে যেত স্বামী-স্ত্রীর মাত্র হাতে গোনা কয়েকটা রাত্রির মিনিট খানেক। ষোল বছর পরে কারোর নজরে পড়েছে কাবেরীর এই দুটি 'ওলান'। চল্লিশ পেরোনো কলেজ শিক্ষিকা দিদিমনির ডিপনেক ব্লাউজে এই 'ওলান' দুটিই অথচ এতদিন ঠেসে থাকতো একা একা। গ্রীষ্মের দিনগুলিতে ক্লাস রুমের উষ্ণতায় একা একা ঘেমে উঠত, শীতের সোয়েটারে হারিয়ে যেত অপ্রাসঙ্গিক হয়ে। গৃহস্থালী কাজের নিত্যনৈমিত্তিকতায় চল্লিশ পেরোনো গৃহকত্রীর বুক সদ্য যৌবনা নারীর মত আর কোনো আকাঙ্খা রাখেনা। কাবেরীও রাখেনি।কখনো লক্ষ্য করেনি এখনো তার শঙ্খশুভ্র নিৰ্দাগ ফর্সা বুক'দুটি পুরুষ টানতে পারে। এখন তাতে শক্ত কঠিন হাতের দাপট।

বুধনের হাতের জোর আর কোমরের পাশব ধাক্কায় তার মনস্তত্ব প্রকাশিত হচ্ছে: কাবেরীর সদ্ব্যবহার এভাবেই হওয়া দরকার ছিল। মধ্যবয়সে নারী বড় একাকিনী, তার শরীর আরো নতুনত্ব চায়; প্রথমত স্বামীর কাছেই। স্বামীদের নিয়মতান্ত্রিকতায় ভুলে যেতে হয় শরীর। কাবেরীও ভুলে গেছিল। এখন পরকীয়া বাঁশির ডাকে দেহজগতের প্রেম বাহির হয়ে আসছে সলাজ হৃদয় থেকে। তাই তো রক্ষনশীলা কাবেরীও মুখ ফুটে বলছে বুধনকে---আরো জোরে.. রাজা আমার...জোরে... জোরে..উফঃ মাগো...

যোনী গর্ভে এক পেয়ালা বীর্য নিয়ে সন্ধে নাগাদ ফিরল কাবেরী। বুধনের ইচ্ছে ছিল আজ রাত ওরা জঙ্গলে কাটাবে। ঝুপড়ি ঘর থেকে হ্যারিকেন এনে ঝাড়লন্ঠনের মত ঝুলিয়ে দেবে শাল গাছের প্রশস্ত ডালে। তারপর সারারাত তারা উলঙ্গ হয়ে মৈথুন করবে শুকনো পাতার বিছনায়। কাবেরী বুধনের পাগলামীতে হেসেছে কেবল। ওর ঠোঁটে চুমু দিয়ে কথা রেখে এসেছে যতদিন কাবেরী এখানে থাকবে ততদিন সে হবে বুধনের রানী। হাঁসড়ার প্রতিটা রাত বুধনকে সঙ্গ দেবে সে।
++++++
Like Reply
[Image: ed585d0c-3a6e-4fbb-8230-c91d04b1cc6a.png]
image upload
কাবেরী তখন সাগিনার গায়ের চাদরটা টেনে দিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে পাশে।

সকাল থেকেই একটা পাখি একনাগাড়ে ডেকে চলেছে। পাখিটা ঠিক কোথায় বোঝা যাচ্ছে না। কুছুয়া বৈঠকখানার ঘর থেকে ঢাউস আলমারিটা টেনে সরিয়েছে। আলমারির পেছনে মাকড়সার জালবিন্যাস। কোমরে শাড়িটা বেঁধে ওপাশে ঝাঁট দিতে ব্যস্ত কাবেরী। আজই বৈঠকখানাটা ব্যবহারযোগ্য করে তুলতে উদগ্রীব সে। কুছুয়া বলল---দিদিমণি কি পাখিটা বইলতে পাইরেন?
---কোনটা? ওই যে ডাকছে?
---হুম্ম।
---কী পাখি বলতো?
---চুনিমুখা।
---ভারী মিষ্টি ডাকতো। এমন ডাক কখনো শুনিনি।
হেমেন রায় আলমারির মধ্যেকার পুরোনো বইটই নেড়ে দেখছিলেন, বললেন--- দেখবি কি করে, কলকাতা শহরে কী আর পাখি দেখা যায়।

কাবেরীর ঝুঁকে ঝাঁট দিতে দিতে কোমর ধরে এলো। কোমরে হাত রেখে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে বলল সে---আছে বৈকি, সকালবেলা কাকের উৎপাত তো কম হয় না।
---কাকেদেরও দিনকাল শেষ হবে এবার। হেমেন রায় বই থেকে চোখ না সরিয়ে বললেন।
---ওমা! কেন! দিব্যি তো আমাদের বাড়ীর ছাদে ওদের দাপাদাপি দেখি। একবার পাপান ঢিল মেরে পেয়ারা গাছটায় ওদের বাসা ভেঙে দিয়েছিল, সে কী রাগ। কোত্থেকে এক ঝাঁক উড়ে এসে ঘিরে ফেলল ছাদটা।
----ওটাই ওদের বাঁচিয়ে রেখেছে খুকী। কাকেরা শুধু সমাজবদ্ধ নয়, ওরা বুদ্ধিতেও মানুষের পরে শিম্পাঞ্জির নিকটবর্তী।

তৎক্ষনাৎ কুছুয়া জানালার দিকে হুঁশিয়ার হয়ে বলল---এই দেইখেন দিদিমণি...চুনিমুখাটা।

কাবেরী দেখল বড্ড রঙচঙে পাখি। নিম গাছের ডালে বসে গলা ফুলিয়ে গান সেঁধেছে। গাঢ় হলুদ গায়ে সবুজ পাখনা। উঁচু জানলায় কুশি কয়েকবার লাফিয়ে দেখবার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে বললে---আমি দিখতেটা পাই লাই...দিদিমণি আমি দিখব।
কাবেরী কুশিকে কোলে তুলে জানালার কাছে নিয়ে যেতে ও বিস্ময়ে দেখতে লাগলো পাখিটাকে। হেমেন রায় বললেন---পাখিটার নাম আসলে চুনিমুখো মৌটুসী।
কাবেরী বললে---এটাই আসলে মৌটুসী পাখি? বা রে আমি এই নামটা কিন্তু শুনেছি। চুনিমুখো-টুখো বলল বুঝব কী করে।

কাগজে করে ওষুধের নামটা বুধনকে লিখে দিয়েছিল কাবেরী। পারতডিহিতে একটা ছোট ফার্মেসি আছে। সেখান থেকে বুধন কাবেরীকে গোপনে ওষুধটা দিয়ে গেল দুপুর বেলা। হেমেন রায় তখন ভাত ঘুমে। কুন্তী কুশি ওদের ঘরে। বুধন চাইছিল কাবেরীকে পেতে। বুঝিয়ে-সুঝিয়ে বুধনকে ফেরত পাঠিয়েছে কাবেরী। কথা দিয়েছে কাল যাবে বুধনের ঝুপড়িতে। বিকেলটা কাটিয়ে আসবে ওখানে। সুযোগ না পেয়ে ক্ষিপ্ত হয়ে উঠল বুধন। কড়া গলায় তার স্বভাবসুলভ ভঙ্গিমায় বলে গেল---কাল ঝুপড়িতে আইলে এর শাস্তিটা দিব তোরে মাগী। এমন চুদান চুদব তোরে, বুইঝবি মরদের গতরটা কী আছে।
---ইস! লজ্জা পেল কাবেরী। বুধনের মুখের অশালীন ভাষায় বিরক্তি প্রকাশ না করে, প্রশ্রয় দিল লাজুক হাসিতে। কাবেরী জানে ভালগার শব্দ নিম্নবিত্ত পিছিয়ে পড়া জনজীবনে অত্যন্ত স্বাভাবিক একটা বিষয়। কাবেরী যে সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা, সেই কলেজটা বস্তি লাগোয়া। কথায় কথায় লোকেরা পরস্পরের সাথে সেখানে প্রায়শই গালি আওড়ায়। বস্তির শিশুরা শেখে, মাঝে মধ্যে কলেজের গন্ডির মধ্যেও সহপাঠীদের মধ্যে ঝগড়া-মারামারিতে বলে ফেলে। কাবেরী বকা দেয়। বুধনের মুখের ভাষা যাইহোক, কুন্তী বা কুশিকে কিন্তু কাবেরী এ পর্যন্ত কোনো কুচ্ছিত শব্দ উচ্চারণ করতে দেখেনি।


বিকেল বেলা বন্য প্রান্তরের উল্টো দিকে গেছেন হেমেন রায়। যেদিকটা কাবেরীর কখনো যাওয়া হয়নি। হেমেন দা ডেকেছিলেন কাবেরীকে, বলেছিলেন খুকী ওদিকে গেলে অরণ্যের চেহারা অন্যরকম লাগবে। অত ঘন ঘন শাল-মহুয়ার জঙ্গল নেই। বেশ কিছুটা জুড়ে চিরহরিৎ অরণ্য আছে। সারাবছরের বৃষ্টির জল ওদিকে গড়িয়ে যায় বলেই বোধ হয় এমন ব্যতিক্রমীতা। কাবেরীর ইচ্ছে করেনি আজ যাওয়ার। বড্ড ঘুম ঘুম ভাব চোখে।

বেশ খানিকটা ঘুমিয়ে নিল কাবেরী। এখনো সন্ধে নামতে বেশ বাকি। কুন্তী, কুশি এখনো ফেরেনি। কাবেরী সিঁড়ির মুখে বড় জানলার পাশে পশ্চিমমুখো চেয়ারে বসল একটা বই নিয়ে, পাপানের গুছিয়ে দেওয়া হিচকক সমগ্রটা শেষ করতে পারেনি।

----দিদিমণি...দিদিমণি ডাকটা দূর থেকে হলেও কুন্তীর বলে চিনতে অসুবিধে হল না। বেশ ভয়ার্ত হয়ে মেয়েটা ডাকছে। কী হল, অমন করে ডাকছে কেন মেয়েটা!
কাবেরী বইটা বন্ধ করে উঠে পড়ল। কুন্তী ততক্ষণে হাঁকডাক করতে করতে বারান্দায় এসে পৌঁছেছে।
---দিদিমণি! হাঁফাতে লাগলো কুন্তী।
কাবেরী ঠিক বুঝতে পারছে না। ঘটনাটা কি, এত উদ্বিগ্ন কেন কুন্তী।
---দিদিমণি মা'টা আমার জ্ঞান হারাইছে, বাপটা কাঠ কাটতে গিছে অনেকক্ষণটা। কি কইরব দিদিমণি? বুড়ি পিসি জল ঢাইলছে তাও জ্ঞানটা আইলো না।

কাবেরীও বুঝতে পারছে না কী করা দরকার। হেমেন দা'ও কাছেপিঠে নেই। এখুনি যে ডাক্তার ডাকা দরকার বেশ বুঝতে পারছে কাবেরী। আলমগীরও ছুটিতে। তা নাহলে পারতডিহি বনবাংলোর অফিসে টেলিফোন করলে একটা ব্যবস্থা করা যেত।

কাবেরী যখন কী করবে, কী করবে না, কূল কিনারা খুঁজে পাচ্ছে না। তখনই হেমেন রায় ঢুকলেন। ঢুকেই বুঝতে পারলেন কিছু একটা ঘটেছে।

হেমেন দার টেলিফোনে পারত ডিহি স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ডাক্তারবাবু দেখে গেলেন খানিকক্ষণ আগে। জ্ঞান ফিরলেও কার্যত অসাড় হয়ে রয়েছে সাগিনা। কাঠ কেটে ফিরল বুধন। তাকে দেখে বুড়ি পিসি প্রলাপ বকতে লাগলেন ঝুপড়ির দ্বার গোড়ায়।
কাবেরী তখন সাগিনার গায়ে চাদরটা টেনে দিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে পাশে। হেমেন রায় বুধনকে সবটা বললেন খোলসা করে। ডাক্তার কী কী বলেছেন তারও একটা তালিকা করে নিতে বললেন বুধনকে।

সিলিকোসিসের রোগী সাগিনা। খনিতে কাজ করতে করতেই এই রোগের শিকার হয় খনি মজদুররা। ফুসফুস ড্যামেজ হয়েছে অনেকদিন আগেই। চিকিৎসা চালিয়ে যাওয়া বুধনদের মত যে কোনো খনি মজদুর পরিবারের পক্ষে অসম্ভব। ডাক্তার দিবাকর পাসোয়ান এর আগে সাঁওতাল পরগনার এমন বহু খনি শ্রমিকের চিকিৎসা করেছেন। জানেন খনিতে যারা কাজ করে তাদের পক্ষে কতটা কঠিন হয়ে দাঁড়ায় এমন রোগ নিয়ে লড়াই করা। তবু তিনি কিছু প্রয়োজনীয় ওষুধ লিখে পরিবারগুলিকে সাময়িক ক্ষান্ত করেন।
দিবাকর পাসওয়ানের মেডিসিনগুলো লক্ষ্য করল কাবেরী। আয় উপার্জনহীন বুধনের পক্ষে তা কেনাও কঠিন। সেদিন নিজের জন্য ওষুধ কিনতে পাঠানোর সময় বুধনকে পয়সা দিতে চেয়েছিল, সাগিনার ওষুধপত্র কেনার জন্য বুধন এক টাকাও নিতে চায়নি। বুধনের আত্মসম্মানবোধ সাংঘাতিক প্রথম থেকেই বুঝেছে কাবেরী। পয়সা দিলেও নেবে না।
সাগিনার মাথার নীচে শক্ত বালিশটা বুধনের বয়স্কা বুড়িদিদি টেনে সোজা করে ধরল। টুনিকে কোলে নিয়েছিল কুন্তী। ক্ষিদেয় বেচারা ততক্ষণ ধরে কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে পড়েছে। ডঃ পাসোয়ান পই পই করে বলে গেছেন সাগিনা যেন এ'সময় বুকের দুধ না দেয় বাচ্চাকে। আট মাসের টুনি মায়ের দুধটুকু ছাড়া বাইরের খাবার বলতে কিছু চেনে না এখনো। ফলে অভ্যস্ত হয়ে ওঠেনি মাতৃদুগ্ধ ছাড়া অন্যকিছুতে।

বুধন স্থির হয়ে ছিল এতক্ষণ। ওর চোখ দুটো সাগিনার মুখমণ্ডলের ওপর আটকে আছে, ঠিক যেন বিদ্যুৎ প্রবাহে নিস্তেজ হয়ে পড়েছে ও। কাবেরী দেখতে পাচ্ছিল বুধনের চোখে এক ফোঁটা জল নেই, অথচ একটা তীব্র বিষাদ আছে।
কুন্তী এসে বাপের কোলে দিল টুনিকে। পরপর তিনটে মেয়ে হওয়ার জন্য টুনিকে জন্মের পর একদিনও কোলে নেয়নি বুধন। এই প্রথমবার মেয়েটাকে কোলে নিল সে। কালো ফুটফুটে পুতুলের মত শিশুটা বাপের কোল বুঝে ওঠার জন্য জেগে নেই। সে ঘুমোচ্ছে ক্ষুধায়। কাবেরীর বড্ড মায়া পড়েছে বাচ্চাটার ওপর।

দিগা বাবা এসে পড়লেন। কাবেরীর চিনতে অসুবিধে হল না এই সাধুকে। তথাকথিত সাধুদের মত লাগে না এই দিগা বাবাকে। হাঁসড়া গ্রামের মানুষদের শ্রদ্ধার পাত্র এই লোকটি যেন একজন দার্শনিকের মত। গ্রামের দু একটা আদিবাসী বউও ভিড়েছে।

বুধনের আস্থার মানুষ এই দিগা। লাল কাপড় থেকে একটা ফুল বার করে সাগিনার মাথায় ছোঁয়ালেন তিনি। টুনিটার ঘুম ভাঙতেই আবার কেঁদে উঠল।

বুড়ি পিসি রুদালী সুরে বলে উঠলেন---মুখপুড়ির নসিবটা দেখরে বুধন, মা'টার দুধটাও পাইল না।

দিগা বাবা গ্রামের আদিবাসী বৌগুলোর দিকে চেয়ে বললেন----তুরা কেউ তো বাচ্চাটারে কয়টা দিন রাইখতে পারিস। দুধটা না পাইলে বাচ্চাটা বাঁচবেক লাই যে।

আদিবাসী বৌগুলো দাঁড়িয়ে রইল যেমন ছিল। তাদের মধ্যে একজন বলল---চুনু তুর তো বুকে দুধ আছে দ্যা না।
যে বউটিকে উদ্দেশ্য করে বলল, সেই বউটি মুখটা ঘোমটায় ঢেকে বললে---কুথায় আছে, শুকাই গেছে তো।
আরেকটি বউ বলে উঠল---বাবা, সান্দালের বউর বাচ্চা হছে।
দিগা বাবা বললেন----তারে ডাক দিখি।
বউটা তার সঙ্গে থাকা বাচ্চা ছেলেটাকে পাঠালো সান্দালকে ডাকতে।
কম বয়সী যুবক সান্দাল, দিগা বাবার ডাকে পড়িমরি করে ছুটে এলো কিছুক্ষণের মধ্যেই---বাবা, ডাইকছেন।
---তোর বউ নাকি বাচ্চা দিছে?
---হ্ বাবা ব্যাটা হছে। মুখে আনন্দের হাসি সান্দালের।
----বুধনের বিটিটা ছোটটা আছে। বউটা অসুখটায় পইড়েছে। কয়টা দিন তোর বউটারে বাচ্চাটারে দুধ দিতে কইস।

সান্দাল কাঁচুমাচু মুখে অসম্মতির ভাব এনে বললে---বউটার ওলানে দুধটা কম হয় বাবা। বাচ্চাটারে ঠিকঠাক দিতে পারে লাই।

ক্ষেপে উঠলেন দিগা সাধু। অমন শান্ত স্নিগ্ধ মানুষটাকে এই প্রথমবার রাগত দেখল কাবেরী। বলল----যা, যা তা হইলে ইখানটা ভিড় কইরিসনি। ই হাঁসড়াটায় আমিও বড়টা হছি। মা-মাউসির দুধটা খায়ে বড় হলি, এখুন তুরা সব অমানুষটা হছিস।

ভীড়টা আস্তে আস্তে পাতলা হয়ে উঠল। টুনির করুন সুরে কান্না বড্ড অস্থির করে তুলল কাবেরীকে। বুধনের কোল থেকে কেড়ে নিল সে টুনিকে। সকলকে বিস্মিত করে টুনির কান্না থেমে গেল আচমকা। মেয়েলি হাতের কোল পেয়ে সে বোধ হয় নিজের মা বলে ভুল করল। কিছুক্ষণের মধ্যেই হাত-পা ছুঁড়ে খেলা জুড়ে দিল কাবেরীর কোলে।

হেমেন দা বললেন---ভারী দুস্টু মেয়ে তো খুকী, তোর কোলে যেতেই চুপ করে গেল!

দিগা বাবা স্থিরতা ভেঙে হাসলেন। বললেন---মা, তুই বিটিটাকে তুর কাছটা কয়টা দিন রাইখতেটা পারবি?
---সে হলে তো চিন্তা ছিল না বাবা। কিন্তু খিদে পেলে...ঐটুকু মেয়েকে এখুনি বাইরের খাবারে অভ্যস্ত করানো যায় কী করে?

দিগা বাবার মুখে মৃদু এক অদ্ভুত হাসি। যে হাসির মধ্যে একটা ত্রিকালদর্শীতার ছাপ রয়েছে যেন। কাবেরীর মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন---জেনেটা রাইখ, এই গেরামের পাহাড়, গাছ, জন্তু, জানোয়ার, মানুষ সকলেটা ইতু দেবীর বাচ্চাটা আছে। ইতুদেবীর ওলান খেয়ে বড় হছি আমরা। দেবীর থানের পিছনটা যে খাড়া পাহাড়টা আছে, সিখান থেকে নাইমলে বেণীকুণ্ড। বেণীকুণ্ড হইল ইতু মায়ের ওলান। মুসানী জনম হছে সিখানটা। মুসানী হছে ওলানের দুধ। যে দুধ খায়ে বড় হছে হাঁসড়া। ইতু মায়ের মত তুই হইলি গিয়ে আরেকটা মা। চাসটা যদি পাইরবি বাচ্চাটাকে বাঁচাইতে।

দিগা বাবার মুখে হাঁসড়ার উপকথা মুগ্ধ হয়ে শুনছিল কাবেরী। এ গ্রামের সবকিছুই প্রকৃতির সাথে সম্পর্কিত। তার জল-হাওয়া কেবল নয়, উপকথা-লোকাচারও প্রকৃতির সাথে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। কিন্তু সেই গ্রামের মানুষই কিনা একটা ক্ষুধার্ত শিশুকে কয়েকটা দিন রক্ষা করতে পারবে না! আধুনিকতার সাথে সাথে শহুরে যান্ত্রিকতা, স্বার্থপরতা এখানেও গ্রাস করছে তবে কী?

---কী রে পাইরবি না মা? দিগা বাবার কথায় ছেদ পড়ল কাবেরীর ভাবনায়।
---কী করে পারবো বাবা? ঐটুকু বাচ্চাকে...কী করে...
কথা শেষ হবার আগেই দিগা বাবা বললেন---পাইরবি, পাইরবি। আমি তোরে ওষুধ দিব, তোর ওলানটাতে দুধ আইসবে, তুই ই গেরামের সাক্ষাৎ ইতু দেবী মা, সাক্ষাৎ ইতু দেবী।

কাবেরীর কোলে তখনও ক্ষুধার্ত টুনি হাত-পা ছুঁড়ছে। মুখের দিকে চেয়ে আগুপিছু না ভেবেই কাবেরী বললে---আমি দেবী নই, বাবা। আমি সাধারণ একজন মা। আমারও দুটি ছেলে আছে, যদি বাবা সম্ভব হয়, আমি টুনিকে রাখবো।

হেমেন রায় বিস্ময়ে দেখলেন তার পিসতুতো বোন কাবেরী চক্রবর্তীর এক অনন্য মাতৃত্বের রূপ। হেমেন রায় জানেন না সত্যি সত্যিই জংলী সাধুর ওষুধে কাবেরী দুগ্ধবতী হয়ে উঠবে কিনা। আজকাল হরমোন থেরাপির মাধ্যমে যেভাবে ইন্ডিউস ল্যাক্টেশন হয়, দত্তক শিশুর মুখে মা তার দুধ তুলে দেয় কিংবা আগেকার দিনে কবিরাজের হার্বাল ওষুধের মাধ্যমে স্তনে দুগ্ধক্ষরণ বন্ধ হলে মায়েরা পুনরায় দুগ্ধক্ষরণ চালু করত, তেমনই হয়তো কিছু। কাবেরী তার স্তনদুগ্ধ টুনির মুখে তুলে দিতে পারুক না পারুক, শহুরে শিক্ষিতা একজন কলেজ শিক্ষিকা হয়ে তার মাঝে যেভাবে একজন মাতৃরূপী দেবী স্বত্বা বিরাজ করছে, তা মুগ্ধ করল হেমেনকে।

শুধু একজন নীরবে চেয়ে রইল কাবেরীর দিকে। যার মনের মণিকোঠায় তখন কেবল অনাবিল আনন্দ হচ্ছে। রাজার মত ছুটছে তখন সে ঘোড়া নিয়ে। কাবেরী তার হয়ে উঠছে আরো আপন। আপন রানী।
+++++++

সামান্য নড়াচড়া করল সাগিনা। কাবেরী এখনো বসে রয়েছে পাশে। ঝুপড়ির উঠোনে মাদুর পেতে দিগা বাবা আর হেমেন দা বসে রয়েছেন। চাঁদের আলো মুক্তার মত ছড়িয়ে রয়েছে সেখানে। কতগুলি অনুভূতি বা ধারণাকে ভাষায় প্রকাশ করা কঠিন। তেমনই এক মরমীয়াবাদী দর্শনের কথা বলছেন দিগা বাবা। হেমেন রায় এই অরণ্য বৃত্তের সাধুর তত্বকথা মনোযোগ দিয়ে শুনছেন।
দিগা বাবার বিশ্বাসে রয়েছে এই জগতের বাইরে অজানা এক বিমূর্ততায় আস্থা। হেমেন রায় বুঝতে পারছেন প্রাচীন গুহাবাসীদের গুহার ভেতরের ছায়ার মত জগতের বাইরে আরেক জগতের অটল বিশ্বাসের মত দিগা সাধুর বিশ্বাসের দৃঢ়তা। অথচ যে জায়গাটায় হেমেন রায়ের আকর্ষণ তৈরী হচ্ছে, সেটা হল দিগা সাধু লোকাচার, মানবজীবন ও মানবতাকে একসূত্রে গেঁথেছেন তাঁর জীবনদর্শনে। কখনো মানুষকে আলগা করেননি।

সাগিনাকে চিড়ে দলা করে খাওয়াতে লাগলো বুধন। কাবেরী লক্ষ্য করছিল স্ত্রীর প্রতি বুধনের মত কঠিন পুরুষের ভালোবাসা। যার সাথে ঘর করল, সুখে দুঃখে একসাথে পথ হাঁটলো তার প্রতি প্রেম-প্রণয়ের নদীতে অবগাহন হতে কোনো বোঝাপড়ার দরকার হয় না, আপসেই হয়ে যায়। হয়ত অরুণাভর সাথেও কাবেরীর সেই প্রেমজ সম্পর্কটা আছে, হয়ত বুধনের সাথেও সেই সম্পর্কটা জোরালো হচ্ছে দিনকেদিন। তা নাহলে স্ত্রী সেবায় রত বুধনকে দেখে এখন তার সাগিনার ওপর ঈর্ষার জন্ম হত না। এই মুহূর্তে যেমন দায়বদ্ধ পুরুষটিকে চিনতে পারছে কাবেরী, তেমন হৃদয় জর্জরিত হচ্ছে সাগিনার প্রতি বুধনের ভালোবাসা দেখে। কোনো নারীই তার প্রেমিককে ভাগ করে নিতে পারে না, সেই নারী যতই পরিণত বয়সের হোক না কেন। যদি না সেখানে ভালোবাসা শর্তাধীন হয়।

দিগা বাবা উঠে এসে বললেন---বাচ্চাটারে আজ লা হয় মা'টার কাছে রাইখিস বুধন। দুধটা খাক।

তারপর কাবেরীর দিকে চেয়ে বললেন--মা বাচ্চাটারে বুকটায় লাগায় রাখিস সবসময়। ওলানটায় মুখ লাগায় রাখিস। মা'টার ওলানে বাচ্চাটা মুখটা দিলে মা'র শরীরটাই চায় দুধটা তুইলে দিতে।

কাবেরী এ কথা জানে সন্তানের কান্না শুনে মা উতলা হয়ে ওঠে। তার শরীরে দুগ্ধ ক্ষরণ হয়। নারী শরীরে প্রোল্যাকটিন হরমোনই হল স্তনে দুধ আসার কারণ। মেয়েরা গর্ভবতী হলে এই হরমোন বেড়ে যায়। সন্তানের জন্মের পরও সঠিক ভাবে এই হরমোন উৎপাদন ব্যাহত হলে কিংবা কোনো কারণ বশতঃ স্তনে দুগ্ধক্ষরণ কিছুকাল বন্ধ হয়ে গেলে, শিশুর জন্য মায়েদের শরীরে কৃত্রিম ভাবে ওষুধের মাধ্যমেও এই হরমোন তৈরী করা যায়। এছাড়া যে নারী কখনো গর্ভবতী হয়নি, কিংবা বহু বছর তার স্তনে দুধ শুকিয়ে গেছে এমনকি মেনোপজের পর, তার পক্ষেও ওষুধ প্রয়োগে এই হরমোনের আধিক্য ঘটিয়ে দুগ্ধ উৎপাদন সম্ভব। তার জন্য নানারকম হার্বাল ওষুধও আছে। কিন্তু তা একটি কঠিন অধ্যবসায়। নিয়মিত স্তনের উদ্দীপনা এক্ষেত্রে একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সেক্ষেত্রে সময় অনেকখানি লেগে যেতে পারে। কিন্তু কাবেরী এই ক'দিনে কিভাবে শিশুটির মুখে দুধ তুলে দিতে পারবে!

দিগা বাবা অবশ্য ফিরে গিয়েছিলেন খানিক আগে। সন্ধ্যে নামার আগেই পাহাড়ে তার বাসস্থান থেকে নিয়ে এসেছেন এক ধরনের ছোট ছোট গুলি। সঙ্গে কিছু গোলমরিচের মত দানাদার ফল। বলেছেন কাবেরীকে এই গুলিগুলো চারবেলা খেতে, তার সাথে সকালে খালি পেটে দানাদার ফলগুলো বেটে উসুম গরম জলে মিশিয়ে পান করতে। প্রতি চার ঘণ্টা অন্তর শিশুকে তার শুষ্ক স্তন চুষতে দিতে। তাহলেই নাকি কাবেরীর মধ্যবয়স্কা স্তন আবার ভরে উঠবে সুধামৃতে। মরচে পড়া বৃন্তদুটি হতে বইবে ফল্গুধারা। কাবেরী অনিশ্চিত, সে জানে না দিগা বাবার যাদুতে সে আবার স্তন্যদায়িনী হতে পারবে কিনা। তবুও সে উদগ্রীব ক্ষুধার্ত শিশুর ক্ষুধা নিবারণ করতে, অসুস্থ মায়ের বুকের দুধ টুনিকে ক'টা দিন খেতে হবে বলে তার অস্বস্তি হচ্ছে।
Like Reply
একটা কথা বলতেই হবে লেখকের মানুষের মনস্তাত্ত্বিক ধ্যান ধারণা ভাবনার উপর বিশাল দখল আছে।
আর বাকিটা তো লেখকের জাদু....
Shy হাত বাড়িয়ে ছুঁই না তোকে, মন বাড়িয়ে ছুঁই।
 দুইকে আমি এক করি না, এক কে করি দুই।। Shy
Like Reply




Users browsing this thread: 104 Guest(s)