Posts: 4,432
Threads: 6
Likes Received: 9,380 in 2,851 posts
Likes Given: 4,330
Joined: Oct 2019
Reputation:
3,229
(৩)
রাত তখন প্রায় সাড়ে দশ'টা। তার মায়ের অনেক সাধ্য সাধনাতেও আজ রাতে কিচ্ছুটি মুখে তোলেনি হিয়া। এই বাড়িতে তার সব থেকে প্রিয় স্থান দোতালার ঘরের জানালার সামনে দাঁড়িয়েছিল সে। আবার ঝিরঝির করে বৃষ্টি শুরু হলো। এই শরতেও আকাশের মন খারাপ। সেই সঙ্গে তার মনটাও যে ভারাক্রান্ত। মন খারপের কোনো নির্দিষ্ট সময়, কারণ অথবা সঠিক সংজ্ঞা হিয়ার জানা নেই। একই শহরে থেকেও তাদের মনের ব্যবধান এখন বহুদূর। দুটি ভিন্ন মনের দৃষ্টিভঙ্গিতে দুটি ভিন্ন আকাশ হয় কিনা, হিয়ার তা জানা নেই। আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে হিয়া। তার দৃষ্টির অন্তর্নিহিত শক্তি দিয়ে চেষ্টা করছে আকাশে কবিতা লেখার। অস্ফুটে সে বলে উঠলো "তুমিও তো আকাশ দেখো, ওখানে কি কোনো লেখা ভেসে উঠছে? ঠিক আমার মনের সদৃশ বিরহের কোনো মেঘ ভেসে যাচ্ছে গোগোল দা? শরতের আকাশে এখন কালো মেঘের শোকের প্রভাতফেরী অনেক দূর বিস্তৃত। আমার কাজল কালো চুলের মতো ভেসে চলেছে মেঘমালা। আচ্ছা, আমাকে কি বেঁধে রাখবে তুমি ওভাবে .. যেভাবে স্নানের পর আমার চুল থেকে নির্গত সুবাসের বন্ধনে তুমি আটকা পড়ে যেতে! একই আকাশের নিচে থেকেও আমাদের পথ আজ ভিন্ন। তবুও কি তোমার আকাশে আমাকে মুক্ত বিহঙ্গের মতো উড়তে দেবে? হলোই বা সে নিঃসঙ্গ! আকাশের গভীরতা এখানেও একই, আমি তো শুধু তোমার ভালোবাসার গভীরতাকে স্পর্শ করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু তুমি? এটা কি করলে গোগোল দা? শেষে কিনা ওই মেয়েটা? ছিঃ .."
'না হোক দেখা কোনোদিন তোমার সাথে আর এই ভালোবাসাহীন নিষ্ঠুর পৃথিবীতে। মনের আয়নায় খুঁজবো আমি বৃষ্টিভেজা পাতা থেকে পড়া এক ফোঁটা জলের মাঝে। না হোক কথা কোনোদিন আর সামনাসামনি। ওই সুবাসিত ফুলের বাগানে বলবো কথা তোমার সাথে মেঘেঢাকা আকাশে লুকিয়ে
বজ্রপাতের শব্দ হয়ে। ইহকালে না হোক হৃদয়ের আনাগোনা কোনোদিন তোমার সাথে, পরকালে ভালোবাসবো আমি জেগে ওঠা লক্ষ-কোটি
হৃদয় পেরিয়ে।' হিয়ার চমক ভাঙলো ফোনের শব্দে। মোবাইল স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে দেখলো একটি আননোন নম্বর থেকে ফোন এসেছে। কিছুক্ষণ রিং হওয়ার পর ফোনটা রিসিভ করতেই অপর প্রান্তের ব্যক্তিটির সম্ভাষণ শুনে হিয়া বুঝতে পারলো সন্দীপ ফোন করেছে। বেশ কিছুক্ষণ আগে কলকাতার উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছে ওরা। যাওয়ার আগে তার কাছ থেকে ফোন নম্বর চেয়েছিলো সন্দীপ। প্রথমে কিছুটা ইতস্তত করলেও, পরে তাকে নিজের নম্বর দিয়েছিলো হিয়া।
- "হ্যালো ম্যাডাম, আমরা এই একটু আগে পৌঁছালাম। শুয়ে পড়েছিলে নাকি?"
- "নাহ্ .. এবার শুতে যাবো .."
- "বাবা, এত তাড়াতাড়ি শুয়ে পড়ো তুমি?"
- "নাহ্ .. ঠিক তা নয়। পড়াশোনার চাপ থাকলে রাত জেগে পড়তে হয়। এখন তো পুজো, তাছাড়া শরীরটাও ঠিক ভালো নেই, তাই আজ তাড়াতাড়ি শুয়ে পড়বো।"
- "কেন হিয়া, কি হয়েছে তোমার? বৃষ্টিতে ভিজে কি ঠান্ডা লেগেছে? ইশ্ .. এখন তো আমার নিজেকেই অপরাধী মনে হচ্ছে। আমি যদি তোমাকে সঙ্গে করে নিয়ে না বেরোতাম তাহলে তুমি ভিজতে না, আর তোমার ঠান্ডা লেগে জ্বরও আসতো না! সেরকম বাড়াবাড়ি কিছু হলে আমাকে বলো, আমি কালকেই যাবো তোমাদের ওখানে। যদি ওই চত্বরে কোনো ভালো ডাক্তার না থাকে, তাহলে তোমাকে সঙ্গে করে নিয়ে এসে কলকাতায় ভালো ডাক্তার দেখাবো।"
- "আরে না না আপনি ব্যস্ত হবেন না .. আমার জ্বর এসেছে, এ কথা তো আমি বলিনি একবারও। শরীরটা একটু খারাপ, তাই তাড়াতাড়ি শুয়ে পড়বো। আপনি কি কিছু বলার জন্য ফোন করেছেন?"
- "কেনো, specifically কিছু বলার না থাকলে ফোন করতে করতে নেই বুঝি? আর তোমাকে সন্ধ্যা থেকে বলে আসছি প্লিজ আমাকে 'আপনি' করে বলো না। তোমার মা কাবেরী আন্টিও কিন্তু বলেছে আমাকে 'তুমি' করে বলতে।"
- "দেখুন, কাউকে 'তুমি' বা 'আপনি' বলে সম্বোধন করাটা একদম ভেতর থেকেই আসা উচিৎ .. অর্থাৎ অন্তরাত্মা যা বলবে তাই করা বাঞ্ছনীয়। কারোর কথায় বা কেউ বললে সেটা বোধহয় করা ঠিক নয়। আমাকে একটু সময় দিন সন্দীপ বাবু, তারপর না হয় ধীরে ধীরে .."
- "okay okay .. take your time .. আচ্ছা একটা কথা জিজ্ঞাসা করবো হিয়া? তুমি তখন বললে ওই ছেলেটা I mean অনির্বাণকে শুধুমাত্র তোমার মায়ের একজন সহকর্মীর ছেলে হিসেবে চেনো, এর বেশি আর কিছুই নয়। কিন্তু আমার কেন জানি না মনে হচ্ছে .. যাগ্গে, বাদ দাও .. আমি বোধহয় অনধিকার চর্চা করে ফেলছি। প্রথম আলাপেই আজ তুমি যে আমার সঙ্গে ঠাকুর দেখতে বেরোলে, বেশ কিছুক্ষণ সময় কাটালে .. তার জন্য তোমাকে ধন্যবাদ দেবো না। কারণ আমি মনে করি কাছের মানুষদের ধন্যবাদ দেওয়া যায় না, সেই দুর্লভ মুহূর্তগুলো মনের মণিকোঠায় রেখে দিতে হয়।"
এমনিতেই গোগোলের নাম এবং প্রসঙ্গ উঠে আসাতে কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে গিয়েছিল হিয়া, তার উপর সন্দীপের শেষ কয়েকটা কথায় রীতিমতো আড়ষ্ট হয়ে গিয়ে "আচ্ছা ঠিক আছে এখন রাখলাম অনেক রাত হয়ে গিয়েছে .. শুভরাত্রি.." এইটুকু বলে ফোনটা রেখে দিলো হিয়া।
★★★★
ফোনটা পাওয়ার পর রুদ্ধশ্বাসে বাইক চালিয়ে গঙ্গানগর রেল স্টেশনের পশ্চিমপ্রান্ত দিয়ে আরো কিছুটা এগিয়ে স্টেশন রোড আর আলতারা কলিহারি রোড যেখানে একসঙ্গে মিশেছে তার উল্টোদিকের পরিত্যক্ত টাউন-হলটার সামনে নিজের বাইক দাঁড় করালো গোগোল। দিনের বেলাতেই এই জায়গাটা প্রায় জনমানবশূন্য থাকে। এখন ঘড়িতে রাত সাড়ে দশ'টা, দুর্গাপূজার সমারোহের কোনো চিহ্নই নেই এখানে .. এদিক ওদিক তাকিয়ে টাউন-হলের প্রধান ফটক দিয়ে ভেতরে ঢুকে গেলো গোগোল।
"এতদিন ধরে তোমার সব চাহিদা পূরণ করে চলেছি আমি। তোমাকে রেলপাড়ের বস্তির বেতাজ বাদশা বানিয়েছি। নিশীথ বটব্যালের কেসটা ধামাচাপা দিয়ে দিয়েছি। সুপরিকল্পিতভাবে এবং লোকচক্ষুর আড়ালে মায়াবন্দর যাওয়ার আর ফিরে আসার সব ব্যবস্থা করে দিয়েছি। তারপর ওখানে যে অকাজটা করে এসেছো, চেষ্টা করছি সেই কেসটার গতিপ্রকৃতি অন্যদিকে ঘুরিয়ে দেওয়ার। আর তুমি? তুমি কি করেছো আমার জন্য? শুধু কমিটমেন্ট করে যাচ্ছ, অথচ কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। রেলপাড়ের বস্তিটা আমার চাই কিন্তু এবং খুব তাড়াতাড়ি .. আমি আর অপেক্ষা করতে পারছি না। আর মানিক সামন্তর ব্যাপারটা কি হলো? আরে বাবা কতদিন আর দলের সভাপতি হয়ে থাকবো বলো তো? ওকে সরাতে পারলেই বিধায়ক পদটা আমার জন্য বাঁধা। কিছু করো ভাই, কিছু করো। দেখো, আমি 'গিভ এন্ড টেক' পলিসিতে বিশ্বাসী .. এইভাবে চলতে থাকলে আমি কিন্তু .." টাউন-হলের ভেতরে বিশাল গোল টেবিলের অপরপ্রান্তে গদিতে মোরা চেয়ারটায় বসে উক্তিটি করলো মানিক সামন্তর দলের গঙ্গানগরের জেলা কমিটির প্রেসিডেন্ট লালু আলম।
বাইরেটা রঙচটা, জায়গায় জায়গায় প্লাস্টার খসে গিয়ে ইট বেরিয়ে পড়লেও টাউন-হলের ভেতরটা কিন্তু ঝা চকচকে। "কিন্তু? কিন্তু কি করবেন? আমাকে আপনি কোনো বাদশা বানাননি বরং আমাকে ছাড়া রেলপাড়ের বস্তি দখল তো দুরস্ত, ওই বস্তির একটা ইটও খোলা সম্ভব নয় সেটা আপনি ভালো করেই জানেন। আপনি আমার জন্য যা কিছু করেছেন সব নিজের স্বার্থে। আর তার বদলে এলাকায় যে সম্মানটা তৈরি হয়েছে আপনার, সেটাও আমারই সৌজন্যে। আগে তো এলাকাতে ঢুকতেও পারতেন না, লোহা চোর আর কয়লা চোর .. এই দুটো ইমেজ ছিলো আপনার। তাই আপনি আমাকে কোনো দয়া করেননি, যা দিয়েছেন সেটা আমার পারিশ্রমিক।" গম্ভীর গলায় উত্তর দিলো গোগোল।
"আরে কি মুশকিল, আবার ওইসব পুরনো কথা কেনো? ঠিক আছে ঠিক আছে, আমি তো কোনো সিদ্ধান্তের কথা জানাইনি। আসলে অপেক্ষা করতে করতে একটু অধৈর্য হয়ে পড়েছিলাম, তাই হয়তো ওইরকম ভাবে বলে ফেলেছি .." পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য গলার স্বর অনেকটা নামিয়ে আমতা আমতা করে বললো লালু আলম।
"বস্তির ব্যাপারে এখনি কিছু বলতে পারছিনা, তবে আপনাদের দলের বিধায়কের বিষয়ে আপনার থেকে আমার তাড়া এবং তাগিদ দুটোই অনেক বেশি। কিন্তু ফটো ফিনিশের জন্য সবসময় উপযুক্ত সময়ের অপেক্ষা করতে হয়, তা না হলে নিজেকেই ফিনিশ হয়ে যেতে হয়। এইসব কথা ছাড়ুন .. যে খবরটা জানার জন্য আমি উদগ্রীব হয়ে আছি সেটা বলুন।" কিছুটা অসহিষ্ণু হয়ে জিজ্ঞাসা করলো গোগোল।
"কি আর বলি গোগোল বাবু .. কষ্টে বুকটা ফেটে যাচ্ছে আমার। ওইরকম একটা মারকাটারি ফিগারের সেক্সি যুবতী, তার যে এইরকম পরিণতি করবে ওই শুয়োরের বাচ্চা সামন্ত, সেটা যদি আগে থেকে একটু বুঝতে পারতাম ভাই আমার .. তাহলে মেয়েটাকে আমার কাছে নিয়ে এসে রাখতাম। আরে যেদিন বটব্যালের লাশটা উদ্ধার হলো কলেজের বাথরুম থেকে, সেদিন তো কামরাজ আর সামন্তর সঙ্গে আমিও গিয়েছিলাম মাগীটাকে চু... না মানে ওই একটু আলাপ করতে। তারপর তো কামরাজের কাছে মনে হয় থানা থেকে ফোন এলো, ও সঙ্গে সঙ্গে বেরিয়ে গেলো। আমি আর সামন্ত রয়ে গেলাম বাড়িতে। উফফফ .. সে যে কি অভিজ্ঞতা! না মানে আলাপের অভিজ্ঞতার কথা বলছি। ভারী মিষ্টি মেয়ে .. যা বলেছি তাই শুনেছে। কিন্তু মাতৃত্বের টান .. কতদিন আর নিজেকে সামলে রাখতে পারবে! শেষে আর রাজি হচ্ছিলো না ওদের ব্যবসায়িক শর্তে। গোপন সূত্রে জানতে পেরেছি মৌমিতা আর বাচ্চা পয়দা করতে চাইছিল না। ওর বক্তব্য ছিলো - বছরের পর বছর ধরে নিজের 'নাড়ি ছেঁড়া ধনকে' অন্যের কাছে এভাবে বিলিয়ে দিতে পারবে না। এরপর যদি ও মা হয়, তবে সেই বাচ্চাকে নিজের কাছেই রেখে দেবে। ব্যাস আর যায় কোথায়? ওই দুটো হারামি তো টাকা আর মেয়েমানুষ ছাড়া অন্য কিছু বোঝেনা। তাই যখন দেখলো তাদের সোনার ডিম পাড়া হাঁস আর ডিম দেবে না, তখন হাঁসটাকেই কেটে খেয়ে ফেললো। আমার কাছে পাক্কা খবর আছে মানিক সামন্তর নতুন শাগরেদ প্রদীপ এই কাজটা করেছে। ওই তো গাড়ি করে এসে বডিটাকে বাঁশ বাগানে ফেলে দিয়ে গেছে। কিন্তু তুমি একটু আমার ওদিকটা দেখো গোগোল বাবু। কতদিনের শখ ওই বস্তিটা ভেঙে ওখানে টাওয়ার তুলবো। ওইরকম খানদানি জায়গায় চার চারটে টাওয়ার তুলতে পারলে, উফ্ .. লালে লাল হয়ে যাবো .."
আরো কিছু বলতে যাচ্ছিলো লালু আলম, তাকে মাঝপথে থামিয়ে দিয়ে বড় গোল টেবিলটার উপর একটা চাপড় মেরে গোগোল বললো "থাক, যা বোঝার আমি বুঝে নিয়েছি। এবার বাড়ি ফিরতে হবে আমাকে, প্রদীপের খবর কাল নিচ্ছি .. ধনঞ্জী ভাইকে ট্রাকটা রেডি রাখতে বলে দিন, কাল একটা অ্যাক্সিডেন্টের খবর হবে।" গোগোল ভালো করেই জানে আলম সাহেব চরিত্রহীন, অর্থপিশাচ, ক্ষমতালোভী এবং নরকের কীট হলেও মিথ্যে কথা বলে না। তাই ওখানে আর সময় নষ্ট না করে টাউনহল থেকে বেরিয়ে বাইকে করে রওনা হলো নিজের বাড়ির উদ্দেশ্যে।
★★★★
গোগোলের বাড়ি পৌঁছতে প্রায় সোয়া এগারোটা বেজে গেলো। গঙ্গানগরে ছোট-বড় মিলিয়ে বেশ কিছু ফ্যাক্টরি গলিয়ে উঠলেও, এই অঞ্চল এখনো বাণিজ্য নগরী হয়ে উঠতে পারেনি, মফঃস্বল হয়েই রয়ে গিয়েছে। এই চত্বরে হাতেগোনা যে কয়েকটা পূজো হয়, সেখানে স্থানীয় দর্শনার্থীদের ভিড় বেশি থাকে, বাইরে থেকে সচরাচর কেউ আসে না। তাই পূজা মন্ডপ থেকে পূর্ব দিকে ক্লাব আর পশ্চিম দিকে অর্ডিন্যান্স ফ্যাক্টরি পর্যন্ত বিস্তৃত রেলপাড়ের পুজোর বর্ণাঢ্য আলোকসজ্জা তখনো মহা সমারোহে জ্বলতে থাকলেও এই নবমীর রাতেও এলাকা প্রায় জনমানবশূন্য হয়ে গিয়েছে। আজকাল এমনিতেই তার ফিরতে দেরি হয়। সুজাতার নাইট শিফ্ট থাকলে আলাদা কথা, কিন্তু বাড়িতে থাকলে রাতের খাবারটা দু'জনে একসঙ্গে খেতেই চেষ্টা করে। তবে আজ অনেকটাই দেরি হয়ে গিয়েছে। দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকতে গিয়ে দেখলো, ভেতর থেকে খুলে রাখা আছে। গোগোল ভাবলো তার মামণি হয়তো সদর দরজাটা ভেজিয়ে রেখে এতক্ষণে খেয়েদেয়ে শুয়ে পড়েছে।
ভেতরে ঢুকতেই মাটিতে রাখা খাবারের থালার সামনে বসে থাকা তার মামণির গম্ভীর মুখের দিকে তাকিয়ে কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে পড়লো গোগোল। "না মানে একটা ইম্পর্টেন্ট কাজ পড়ে গিয়েছিলো তাই ফিরতে একটু রাত হয়ে গেলো আজকে। এদিকে পুজোর সবকিছু ভালো ভালো মিটে গেছে তো? তুমি আমার জন্য আর অপেক্ষা করো না, খেয়ে দেয়ে শুয়ে পড়ো .. কাল তো আবার তোমার মর্নিং শিফ্ট আছে। আমার ফ্রেশ হতে সময় লাগবে।" নিজেকে সামলে নিয়ে বললো গোগোল।
"এতক্ষণ ধরে যে নোংরাগুলো ঘেঁটে এলি, সেগুলো ধুতে বুঝি সময় লাগবে?" সুজাতার এই উক্তিতে হতচকিত হয়ে ক'য়েক পা পিছিয়ে গেলো গোগোল - "মামণিইইইই .. কি বললে তুমি?"
"কি মামণি হ্যাঁ, কি মামণি? তুই কি মনে করেছিস .. আমার চোখে ধুলো দিয়ে যা খুশি তাই করে যাবি তুই আর আমি কিচ্ছু বুঝতে পারবো না? রেলপাড়ের বস্তিতে সবাই আলোচনা করছে - তুই নাকি ওই কয়লা চোর আর লোহা মাফিয়া লালু আলামের সঙ্গে হাত মিলিয়েছিস! এই বস্তিটাকে ওর হাতে তুলে দিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকা মুনাফা করতে চাস। স্বপন সাধুখাঁ তো বেশ কয়েকদিন আগেই আমাকে কথাটা বলেছিলো, তবে ওই লোকটার কথা আমি বিশ্বাস করিনি। কিন্তু আজ যখন তোদের ক্লাবের প্রেসিডেন্ট পঙ্কজ বাবুর কাছে পুরো ব্যাপারটা শুনলাম .. লজ্জায় আমার মাথা কাটা যাচ্ছিলো। পঙ্কজবাবু সজ্জন ব্যাক্তি, উনি তো আর মিথ্যা কথা বলবেন না! তুই বেরিয়ে যাওয়ার পর ক্লাবের কি একটা কাজের জন্য তোর খোঁজে উনি এসেছিলেন এখানে। প্রথমে কিছুই বলতে চাইছিলেন না, তারপর আমার অনেক অনুরোধে উনি সবটা বললেন। যে মানুষগুলো তোকে আগলে রেখে বড় হতে সাহায্য করলো, তোর প্রাণ রক্ষা করলো .. তাদেরই পথে বসাতে চাইছিস? ছিঃ .. এতটা নিচে নেমে গেছিস তুই!" রাগে-ক্ষোভে ফেটে পড়ে এক নিঃশ্বাসে কথাগুলো বলে গেলো সুজাতা।
"মামণি .. শোনো .. এতটা উত্তেজিত হয়ে যেও না প্লিজ। তোমার হাই-প্রেসার আছে, এত রেগে গেলে যদি ভালো-মন্দ কিছু হয়ে যায় তাহলে আমার কি হবে বলো? আমার তো আর কেউ নেই, আমি কাকে নিয়ে বাঁচবো? তুমি যেটা শুনেছো বা জেনেছো তার পুরোটা সত্যি নয়। আমি কি করছি, কেন করছি .. এর পেছনে অনেক কারণ আছে, অনেক জটিল অঙ্ক আছে। কিন্তু এখন এই মুহূর্তে আমি তোমাকে সবটা খুলে বলতে পারবো না, আমাকে কয়েকটা দিন সময় দাও, তারপর সব ধীরে ধীরে জানতে পারবে।" সুজাতাকে সামলানোর চেষ্টা করতে করতে ব্যাকুলভাবে কথাগুলো বললো গোগোল।
"কেনো, নিজের মামণিকে এখনই, এই মুহূর্তে সব খুলে বলতে পারবি না কেনো? আসলে কিছু বলার থাকলে তো বলবি! আমার আর কিচ্ছু শোনার নেই, কিচ্ছু বোঝার নেই। যা জানার যা বোঝার সবকিছু আমি বুঝে গেছি। তোর এই বাইক, পকেটভর্তি টাকা .. এগুলো কোথা থেকে আসছে, কিছু বুঝিনা মনে করেছিস? ফার্স্টক্লাস সেকেন্ড .. এত ভাল রেজাল্ট করে গ্র্যাজুয়েশন কমপ্লিট করলি, অথচ তারপরে আর পড়াশোনা করলি না। চাকরির কোনো চেষ্টাই করলি না। নাম লেখালি গিয়ে ওই গুন্ডা বদমাইশদের দলে। আমি উপরে গিয়ে কি মুখ দেখাবো বলতো তোর মায়ের কাছে? অনিরুদ্ধদা'র কাছে? যখন ওরা আমাকে বলবে 'তোমার হাতে আমাদের ছেলেটাকে তুলে দিয়েছিলাম এই আশায় যে তুমি ওকে মানুষের মতো মানুষ করবে, কিন্তু তুমি সেই কাজে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছো। একটা ক্রিমিনাল তৈরি করেছো আমার ছেলেকে।' তখন কি উত্তর দেবো আমি? বলে দে আমায়, কি উত্তর দেবো?" ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে কথাগুলো বলছিলো সুজাতা।
"তুমি এত সহজে মরবে না, তাই উপরে গিয়ে ওদের কি কৈফিয়ৎ দেবে, সেটা নিয়ে এখনই অত ভাবতে হবে না। ক'দিন যাক তারপর নিজেই সব বুঝতে পারবে।" কৌতুকের সুরে কথাগুলো বলে গোগোল বাথরুমে ঢুকে গেলো ফ্রেশ হতে।
মিনিট দশের পর বাথরুম থেকে বেরিয়ে গোগোল দেখলো দুজনের খাওয়ার বাড়তে বাড়তে তখনও গজগজ করে যাচ্ছে তার মামণি - "মরবো মরবো আমি খুব তাড়াতাড়িই মরবো। চিরকাল অন্যায়ের প্রতিবাদ করে এসেছে যে মানুষটা, আজ তার ছেলের এইরকম অধঃপতন দেখে তার মরে যাওয়াই ভালো। হে ঈশ্বর .. তুমি আমাকে তুলে নাও।"
"আচ্ছা ঠিক আছে, আমি আজ রাতেই যমরাজকে ফোন করে দেবো, তোমাকে তাড়াতাড়ি এসে তুলে নিয়ে যাবে, খুশি তো? এবার বলো তো তখন যেন কি একটা বলছিলে, যেটা আজ না বললে অনেক দেরি হয়ে যাবে।" তার মামণি সুজাতাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে তার কাঁধে মুখ ডুবিয়ে প্রশ্ন করলো গোগোল।
"ও হো .. ছাড় আমাকে .. এখন মাঝরাতে আর আদিখ্যেতা করতে হবে না, দুটো খেয়ে শুধু উদ্ধার কর আমাকে। আর ওইসব কথা এখন শুনে কাজ নেই। তোর মন এমনিতেই ভালো নেই, এত রাতে এখন আবার ও কথা উঠলে আরো খারাপ হবে মন।" গোগোলের বাহুবন্ধন থেকে নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করতে করতে বললো সুজাতা।
"নাহ্ .. একবার যখন মুখ ফস্কে বলে ফেলেছো, তখন পুরো কথাটা না শুনে তো আমি তোমাকে ছাড়বো না। তুমি ভালো করেই জানো, আমি কতটা জেদি। তুমি যদি না বলো, তাহলে আমি এখানে এইভাবেই বসে থাকব সারারাত।" সুজাতাকে ছেড়ে দিলেও তার সামনে এসে দুটো কাঁধ শক্ত করে ধরে চোখে চোখ রেখে কথাগুলো বললো গোগোল।
সুজাতা ভালো করেই জানে কথাগুলো না বললে গোগোল আজ তাকে ছাড়বে না। হয়তো সত্যি সত্যিই না খেয়ে না ঘুমিয়ে সারা রাত এভাবেই বসে থাকবে। সে হয়তো একটু আগে তাকে অনেক বকাবকি করেছে, কিন্তু সে এটাও মনে মনে জানে তার ছেলে কোনো ভুল করতেই পারে না। তাই মুখে যাই বলুক, মনে মনে সে অপেক্ষা করতে রাজি আসল সত্যিটা জানার জন্য। কিন্তু ছেলেটা যে বড় অভিমানী। বাড়ি থেকে বেরোনোর আগে ওর ওই করুণ ক্রন্দনরত মুখখানি যে তার দৃষ্টি এড়ায়নি। তার চোখে যে হিয়ার প্রতি গভীর ভালোবাসা অবলোকন করেছে সে। কিন্তু সত্য তো অপ্রকাশিত থাকে না কোনোদিন। তাই কালকের কাজ আজকে আর আজকের কাজ এখন করাই হয়তো যুক্তিযুক্ত।
"তুই তো জানিস সোনা .. আমি আর তোর কাবেরী আন্টি সিটি হসপিটালে নার্সিং ট্রেনিং নিয়েছিলাম। তখন থেকেই আমাদের বন্ধুত্ব। তারপর দীর্ঘদিন কোনো যোগাযোগ ছিলো না আমাদের মধ্যে। পরবর্তীকালে তোদের পরিবারের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে গিয়ে আমি এখানে এসে পড়ি এবং মিউনিসিপাল হসপিটালে জয়েন করি। যদিও তোকে এবং তোদের পরিবারকে আমি নিজের পরিবার বলেই মনে করি, কারণ তুই ছাড়া আমি আর কিছুই ভাবতে পারি না এখন। যাক সে কথা, ঘটনাচক্রে কাবেরীর পোস্টিং এই হসপিটালেই হয়। তখন তুই অনেক ছোটো, আর হিয়া তো আরোই ছোটো। আমার চাকরি ততদিনে পার্মানেন্ট হয়ে গিয়েছে, বহুদিন পর নিজের পুরনো বন্ধুকে ফিরে পেয়ে ভাবছিলাম এবার বোধহয় সুখের দিন ফিরতে চলেছে আমাদের। তার উপর তোদের দুজনের নিগূঢ় বন্ধুত্ব দেখে আমার মনে সাধ জাগলো - এই বন্ধুত্ব যদি আত্মীয়তায় রূপান্তরিত করা যায়! একদিন হসপিটাল থেকে ফেরার পথে সাহস করে কাবেরীকে বলেই ফেললাম কথাটা। কিন্তু ও জানালো - হিয়া নাকি বাগদত্তা। কথাটা শুনেই আমি প্রথমে স্তম্ভিত হয়ে গেছিলাম। পরে জানলাম ওদের গ্রামের বাড়ি শিমুলপুরে ওদের পাড়াতেই শশাঙ্কবাবু বলে একজন থাকতেন, যিনি ওর দাদার বন্ধু .. খুব ব্রিলিয়ান্ট স্টুডেন্ট ছিলেন। পরবর্তীতে এই গঙ্গানগরে একটি রাষ্ট্রায়ত্ত্ব ব্যাঙ্কের অফিসার হয়েছিলেন। বর্তমানে কলকাতায় ওই ব্যাঙ্কের একটি ব্রাঞ্চের ম্যানেজার উনি। উনার ছেলে সন্দীপ, যে কিনা এখানেই ছোটবেলায় পড়াশোনা করেছে .. তার সঙ্গেই ছোটবেলা থেকেই বিয়ে ঠিক হয়ে আছে হিয়ার এবং সেটা ওদের দুই পরিবারের সম্মতিতেই। এখানে না থাকলেও কাবেরীর সঙ্গে শশাঙ্কবাবুর যোগাযোগ বহুদিন থেকেই আছে আর হিয়াকে তার এবং তাদের পরিবারের বেশ পছন্দ। তবে সেই সময় কাবেরী বলেছিলো হিয়াকে এইসবের কিছুই এখনো জানানো হয়নি। সব শুনে আমি শুধু একটাই কথা বলেছিলাম - যার জীবনের এত বড় একটা কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছিস তাকে অবশ্যই একবার জানানো দরকার। আজ পঙ্কজবাবুর মুখে শুনলাম হিয়া ওই ছেলেটাকে সঙ্গে করে নিয়ে আমাদের রেলপাড়ের পূজা মন্ডপে এসেছিলো। সেখানে নাকি তোর সঙ্গে কিছু একটা ব্যাপার নিয়ে মনোমালিন্য হয় ওদের। আমি বুঝতে পেরেছি তোর মন খারাপের কারণ। কিন্তু আমি এখন কি করবো বল? তুই আমাকে যতই লুকোস না কেন, আমি কিন্তু সব বুঝতে পেরে গেছি। তোর কষ্ট তো আমি সহ্য করতে পারি না সোনা। আমি একবার ভাবছি কালকেই গিয়ে কাবেরীকে সব কথা খুলে বলবো। প্রয়োজনে ওর পায়ে ধরে অনুরোধ করবো এই সিদ্ধান্ত বদলানোর জন্য। তারপর আবার ভাবছি যদি ওদের কথা অনেক দূরে এগিয়ে গিয়ে থাকে, যদি হিয়াও সবকিছু জেনে বুঝেই .. না না আমি আর কিছু ভাবতে পারছি না। তুই বল সোনা, তুই আমাকে বলে দে আমি কি করবো?" কথাগুলো বলতে বলতে গোগোলকে জড়িয়ে ধরে হাউ হাউ করে কেঁদে ফেললো সুজাতা।
"তোমাকে কিচ্ছু করতে হবে না মামণি, কাউকে এই ব্যাপারে কোনো অনুরোধ করতে হবে না আমার দিব্যি রইলো। যাও গিয়ে শুয়ে পড়ো .. অনেক রাত হলো। কাল আবার মর্নিং শিফ্ট আছে তোমার।" ভারাক্রান্ত গম্ভীর গলায় অথচ অত্যন্ত স্বাভাবিকভাবে কথাগুলো বলে ধীর পায়ে পাশের ঘরে চলে গেলো গোগোল। অশ্রুসিক্ত দৃষ্টিতে সেই দিকে চেয়ে রইলো সুজাতা। তার যে আর কিছুই করার নেই।
'অপেক্ষা' এই ছোট্ট শব্দটা যেনো 'হাওয়াই মিঠাইয়ের' মতো ফুরিয়ে যায় .. অপেক্ষার অন্তরাল খুঁড়ে প্রত্যাশিত হাতটা ধরে আমরা এগিয়ে যাই যুগ যুগ। মানুষের জীবনে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি করে যায় ঘুমন্ত পরীর মতো অপেক্ষা করায়, ঘুম না-আসা রাতে জানিয়ে যায় তার উত্তর। ওই সমুদ্র হতে গাঢ়নীল নিয়ে আকাশের বুকে চাপা চাপা নীল ব্যাথা জমা করে রাখি আর অপেক্ষার প্রহর গুনে চলি আগামীর। ছোট্ট ঘাসফড়িং একটু একটু করে ডানা ঝাপটাতে ঝাপটাতে একদিন মস্ত বড় ঝড়ের জন্ম দিতে পারে। এক মুহুর্তের অনিশ্চিত সিদ্বান্ত জীবনের আমূল পরিবর্তন ঘটিয়ে দিতে সমর্থ হয়। আর যদি সেই সিদ্বান্ত অনিশ্চিত না হয়! অঙ্কের খাতায় লেখা দু-এক লাইনের সেই লেখাটি হাল্কা ভাবে মেনে নিয়ে চললে বাস্তবের মুখোমুখি এতটা কষ্ট জুড়ে হয়তো বসতো না। জীবনের কিছু গল্প কখনোই বলা হয়ে ওঠেনা, শরীরের ভিতর জমছে গাঢ় অন্ধকার .. আজ ইন্দ্রিয়গুলো যেন বেশি সজাগ হয়ে উঠেছে। সোনালী আলো মেখে শুয়ে আছে ইটের রাস্তা .. নিঃশব্দে চলছে পাশাপাশি দুটি সাইকেল কিছু শোনার ব্যাকুলতায়। কিছুক্ষন পর চলে যাবে যে যার গন্তব্যে .. হয়তো পৃথিবীর অনেক রহস্যের সমাধান হয়না। অথচ সব জেনে শুনেও আমরা কল্পনার ট্রাজিক উপন্যাসের প্রেমিক-প্রেমিকা হয়ে উঠি।
শেষ দেখাতেও চেষ্টা করেছি অনেক, যে কথাটা বলতে পারিনি ওটাও শুনে নিও হিয়া। জুড়ে থাকার প্রচেষ্টায় যে হৃদয় ভেঙে চুরমার হয়েছে তার কিছু টুকরো পারো
যদি কুড়িয়ে রেখো। হয়তো তুমি এর কিছুই শোননি আর যদি শুনেই থাকো তাহলে হয়তো অনেকটা দেরি হয়ে গেছে। মৃত কথাকে কফিন থেকে তুলে আনা যায়, তাই বলে মানুষটিকে নয়। কঠিন বরফও গলে যায় উষ্ণতাপের অনুরাগ, প্রবাহমান নদী বয়ে চলে বাসনার স্বপ্ন দেখে মুখথুবড়ে পরে বিষাদে মূর্ছা যায় বারংবার। তোমার নিপুণ অভিনয় বুঝিনি তুমি অন্য ভুলোকের ভিন্ন বিষুবরেখার অধিবাসী। আমি আগে বুঝিনি .. বাকরুদ্ধ থাকাতে বুঝতে পারি আমি বড্ড বেশি বেমানান তোমার কাছে। তোমার সুদক্ষ কথার আঘাতে নিদাগ শরীর মন। বেদনার গহীনে পুষে রেখে আমি আজ একাকী জ্যোৎস্না লোকে জীবনের চাওয়া না-পাওয়ার খসরায়। তবুও কষ্ট বুকে খুঁজে ফিরি দুর্গম পাহাড়ের ঝর্নায় প্রভাবিত হয় আমার বেদনা সরোবরে। জ্বলে পুড়ে হয়েছি কঠিন পাথর অনন্ত যাতনার গহীনে। খোদাই করে নির্মাণ করেছে যে পাথরের বুকে শুধু ভাস্কর্যই জানে গোপন কথা। ভালো থেকো হিয়া।
(ক্রমশ)
ভালো লাগলে আপনাদের মূল্যবান মতামত জানাবেন
লাইক এবং রেপু দিয়ে উৎসাহিত করবেন
The following 16 users Like Bumba_1's post:16 users Like Bumba_1's post
• Baban, Bichitro, bismal, Boti babu, Chandan, Crushed_Burned, ddey333, issan69, Mampi, Monen2000, nextpage, Rinkp219, Sanjay Sen, Somnaath, swank.hunk, Voboghure
Posts: 6,161
Threads: 42
Likes Received: 12,459 in 4,170 posts
Likes Given: 5,340
Joined: Jul 2019
Reputation:
3,800
"তোমাকে কিচ্ছু করতে হবে না মামণি, কাউকে এই ব্যাপারে কোনো অনুরোধ করতে হবে না আমার দিব্যি রইলো। যাও গিয়ে শুয়ে পড়ো .. অনেক রাত হলো। কাল আবার মর্নিং শিফ্ট আছে তোমার।" ভারাক্রান্ত গম্ভীর গলায় অথচ অত্যন্ত স্বাভাবিকভাবে কথাগুলো বলে ধীর পায়ে পাশের ঘরে চলে গেলো গোগোল।
এই কয়েকটা লাইন কিন্তু ভেতরটা মুচড়ে দিতে সক্ষম যেন। সত্যিই! এই চরিত্রটাকে যত জানছি ততই যেন আরও কষ্ট বাড়ছে। যে ঝড় বয়ে গেছে তা আর বলার বাকি নেই, কিন্তু যে ঝড় প্রতি মুহূর্তে গোগোলের মস্তিস্ককে জাগিয়ে রেখেছে, যে চিন্তা বা দুশ্চিন্তা গোগোলকে অনেক আগেই অন্য কিছুতে পরিবর্তন করেছে সেই ঝড়ের পাশাপাশি বুকের বাঁ পাশে স্থান দেওয়া একজনকে পেয়েও হারিয়ে ফেলার কষ্ট যেন আবারো এলোমেলো করে দিলো গোগোলকে। মাথা তো আগেই কৈশোর শরীরটাকে পাল্টে ফেলেছিলো, এবার মনটাও চুরমার করে যেন আরও কঠিন করে তুললো ছেলেটাকে। ভবিষ্যতে কি অপেক্ষা করছে জানিনা কিন্তু অন্তত এই বর্তমান তো তাই স্পষ্ট করছে।
Posts: 966
Threads: 2
Likes Received: 477 in 422 posts
Likes Given: 898
Joined: Jul 2019
Reputation:
8
Superb update...... আমার মনে ছোট্ট একটা প্রশ্ন আছে পাশে এত নারী মাংস লোভী মানুষ থাকতে হিয়ার মত সুন্দরী কীভাবে বেঁচে গেল ওদের হাত ✋ থেকে
Posts: 4,432
Threads: 6
Likes Received: 9,380 in 2,851 posts
Likes Given: 4,330
Joined: Oct 2019
Reputation:
3,229
(05-11-2022, 09:23 PM)Baban Wrote: "তোমাকে কিচ্ছু করতে হবে না মামণি, কাউকে এই ব্যাপারে কোনো অনুরোধ করতে হবে না আমার দিব্যি রইলো। যাও গিয়ে শুয়ে পড়ো .. অনেক রাত হলো। কাল আবার মর্নিং শিফ্ট আছে তোমার।" ভারাক্রান্ত গম্ভীর গলায় অথচ অত্যন্ত স্বাভাবিকভাবে কথাগুলো বলে ধীর পায়ে পাশের ঘরে চলে গেলো গোগোল।
এই কয়েকটা লাইন কিন্তু ভেতরটা মুচড়ে দিতে সক্ষম যেন। সত্যিই! এই চরিত্রটাকে যত জানছি ততই যেন আরও কষ্ট বাড়ছে। যে ঝড় বয়ে গেছে তা আর বলার বাকি নেই, কিন্তু যে ঝড় প্রতি মুহূর্তে গোগোলের মস্তিস্ককে জাগিয়ে রেখেছে, যে চিন্তা বা দুশ্চিন্তা গোগোলকে অনেক আগেই অন্য কিছুতে পরিবর্তন করেছে সেই ঝড়ের পাশাপাশি বুকের বাঁ পাশে স্থান দেওয়া একজনকে পেয়েও হারিয়ে ফেলার কষ্ট যেন আবারো এলোমেলো করে দিলো গোগোলকে। মাথা তো আগেই কৈশোর শরীরটাকে পাল্টে ফেলেছিলো, এবার মনটাও চুরমার করে যেন আরও কঠিন করে তুললো ছেলেটাকে। ভবিষ্যতে কি অপেক্ষা করছে জানিনা কিন্তু অন্তত এই বর্তমান তো তাই স্পষ্ট করছে।
জ্বলে পুড়ে হয়েছি কঠিন পাথর অনন্ত যাতনার গহীনে। খোদাই করে নির্মাণ করেছে যে পাথরের বুকে শুধু ভাস্কর্যই জানে গোপন কথা। ভালো থাকো আর পড়তে থাকো।
(05-11-2022, 09:31 PM)Rinkp219 Wrote: Superb update...... আমার মনে ছোট্ট একটা প্রশ্ন আছে পাশে এত নারী মাংস লোভী মানুষ থাকতে হিয়ার মত সুন্দরী কীভাবে বেঁচে গেল ওদের হাত ✋ থেকে
কারণ হিয়ার সঙ্গে যে গোগোল নামের একজন ছায়াসঙ্গী সর্বদা সশরীরে অথবা অদৃশ্য অবস্থায় বিরাজ করে। তবে পিকচার আভি বাকি হ্যায় মেরে দোস্ত। এই ভয়ঙ্কর গঙ্গানগরে কখন যে কি হয়ে যায় কেউ বলতে পারেনা।
Posts: 925
Threads: 3
Likes Received: 1,966 in 419 posts
Likes Given: 967
Joined: Sep 2021
Reputation:
638
(05-11-2022, 08:56 PM)Bumba_1 Wrote:
(৩)
রাত তখন প্রায় সাড়ে দশ'টা। তার মায়ের অনেক সাধ্য সাধনাতেও আজ রাতে কিচ্ছুটি মুখে তোলেনি হিয়া। এই বাড়িতে তার সব থেকে প্রিয় স্থান দোতালার ঘরের জানালার সামনে দাঁড়িয়েছিল সে। আবার ঝিরঝির করে বৃষ্টি শুরু হলো। এই শরতেও আকাশের মন খারাপ। সেই সঙ্গে তার মনটাও যে ভারাক্রান্ত। মন খারপের কোনো নির্দিষ্ট সময়, কারণ অথবা সঠিক সংজ্ঞা হিয়ার জানা নেই। একই শহরে থেকেও তাদের মনের ব্যবধান এখন বহুদূর। দুটি ভিন্ন মনের দৃষ্টিভঙ্গিতে দুটি ভিন্ন আকাশ হয় কিনা, হিয়ার তা জানা নেই। আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে হিয়া। তার দৃষ্টির অন্তর্নিহিত শক্তি দিয়ে চেষ্টা করছে আকাশে কবিতা লেখার। অস্ফুটে সে বলে উঠলো "তুমিও তো আকাশ দেখো, ওখানে কি কোনো লেখা ভেসে উঠছে? ঠিক আমার মনের সদৃশ বিরহের কোনো মেঘ ভেসে যাচ্ছে গোগোল দা? শরতের আকাশে এখন কালো মেঘের শোকের প্রভাতফেরী অনেক দূর বিস্তৃত। আমার কাজল কালো চুলের মতো ভেসে চলেছে মেঘমালা। আচ্ছা, আমাকে কি বেঁধে রাখবে তুমি ওভাবে .. যেভাবে স্নানের পর আমার চুল থেকে নির্গত সুবাসের বন্ধনে তুমি আটকা পড়ে যেতে! একই আকাশের নিচে থেকেও আমাদের পথ আজ ভিন্ন। তবুও কি তোমার আকাশে আমাকে মুক্ত বিহঙ্গের মতো উড়তে দেবে? হলোই বা সে নিঃসঙ্গ! আকাশের গভীরতা এখানেও একই, আমি তো শুধু তোমার ভালোবাসার গভীরতাকে স্পর্শ করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু তুমি? এটা কি করলে গোগোল দা? শেষে কিনা ওই মেয়েটা? ছিঃ .."
'না হোক দেখা কোনোদিন তোমার সাথে আর এই ভালোবাসাহীন নিষ্ঠুর পৃথিবীতে। মনের আয়নায় খুঁজবো আমি বৃষ্টিভেজা পাতা থেকে পড়া এক ফোঁটা জলের মাঝে। না হোক কথা কোনোদিন আর সামনাসামনি। ওই সুবাসিত ফুলের বাগানে বলবো কথা তোমার সাথে মেঘেঢাকা আকাশে লুকিয়ে
বজ্রপাতের শব্দ হয়ে। ইহকালে না হোক হৃদয়ের আনাগোনা কোনোদিন তোমার সাথে, পরকালে ভালোবাসবো আমি জেগে ওঠা লক্ষ-কোটি
হৃদয় পেরিয়ে।' হিয়ার চমক ভাঙলো ফোনের শব্দে। মোবাইল স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে দেখলো একটি আননোন নম্বর থেকে ফোন এসেছে। কিছুক্ষণ রিং হওয়ার পর ফোনটা রিসিভ করতেই অপর প্রান্তের ব্যক্তিটির সম্ভাষণ শুনে হিয়া বুঝতে পারলো সন্দীপ ফোন করেছে। বেশ কিছুক্ষণ আগে কলকাতার উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছে ওরা। যাওয়ার আগে তার কাছ থেকে ফোন নম্বর চেয়েছিলো সন্দীপ। প্রথমে কিছুটা ইতস্তত করলেও, পরে তাকে নিজের নম্বর দিয়েছিলো হিয়া।
- "হ্যালো ম্যাডাম, আমরা এই একটু আগে পৌঁছালাম। শুয়ে পড়েছিলে নাকি?"
- "নাহ্ .. এবার শুতে যাবো .."
- "বাবা, এত তাড়াতাড়ি শুয়ে পড়ো তুমি?"
- "নাহ্ .. ঠিক তা নয়। পড়াশোনার চাপ থাকলে রাত জেগে পড়তে হয়। এখন তো পুজো, তাছাড়া শরীরটাও ঠিক ভালো নেই, তাই আজ তাড়াতাড়ি শুয়ে পড়বো।"
- "কেন হিয়া, কি হয়েছে তোমার? বৃষ্টিতে ভিজে কি ঠান্ডা লেগেছে? ইশ্ .. এখন তো আমার নিজেকেই অপরাধী মনে হচ্ছে। আমি যদি তোমাকে সঙ্গে করে নিয়ে না বেরোতাম তাহলে তুমি ভিজতে না, আর তোমার ঠান্ডা লেগে জ্বরও আসতো না! সেরকম বাড়াবাড়ি কিছু হলে আমাকে বলো, আমি কালকেই যাবো তোমাদের ওখানে। যদি ওই চত্বরে কোনো ভালো ডাক্তার না থাকে, তাহলে তোমাকে সঙ্গে করে নিয়ে এসে কলকাতায় ভালো ডাক্তার দেখাবো।"
- "আরে না না আপনি ব্যস্ত হবেন না .. আমার জ্বর এসেছে, এ কথা তো আমি বলিনি একবারও। শরীরটা একটু খারাপ, তাই তাড়াতাড়ি শুয়ে পড়বো। আপনি কি কিছু বলার জন্য ফোন করেছেন?"
- "কেনো, specifically কিছু বলার না থাকলে ফোন করতে করতে নেই বুঝি? আর তোমাকে সন্ধ্যা থেকে বলে আসছি প্লিজ আমাকে 'আপনি' করে বলো না। তোমার মা কাবেরী আন্টিও কিন্তু বলেছে আমাকে 'তুমি' করে বলতে।"
- "দেখুন, কাউকে 'তুমি' বা 'আপনি' বলে সম্বোধন করাটা একদম ভেতর থেকেই আসা উচিৎ .. অর্থাৎ অন্তরাত্মা যা বলবে তাই করা বাঞ্ছনীয়। কারোর কথায় বা কেউ বললে সেটা বোধহয় করা ঠিক নয়। আমাকে একটু সময় দিন সন্দীপ বাবু, তারপর না হয় ধীরে ধীরে .."
- "okay okay .. take your time .. আচ্ছা একটা কথা জিজ্ঞাসা করবো হিয়া? তুমি তখন বললে ওই ছেলেটা I mean অনির্বাণকে শুধুমাত্র তোমার মায়ের একজন সহকর্মীর ছেলে হিসেবে চেনো, এর বেশি আর কিছুই নয়। কিন্তু আমার কেন জানি না মনে হচ্ছে .. যাগ্গে, বাদ দাও .. আমি বোধহয় অনধিকার চর্চা করে ফেলছি। প্রথম আলাপেই আজ তুমি যে আমার সঙ্গে ঠাকুর দেখতে বেরোলে, বেশ কিছুক্ষণ সময় কাটালে .. তার জন্য তোমাকে ধন্যবাদ দেবো না। কারণ আমি মনে করি কাছের মানুষদের ধন্যবাদ দেওয়া যায় না, সেই দুর্লভ মুহূর্তগুলো মনের মণিকোঠায় রেখে দিতে হয়।"
এমনিতেই গোগোলের নাম এবং প্রসঙ্গ উঠে আসাতে কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে গিয়েছিল হিয়া, তার উপর সন্দীপের শেষ কয়েকটা কথায় রীতিমতো আড়ষ্ট হয়ে গিয়ে "আচ্ছা ঠিক আছে এখন রাখলাম অনেক রাত হয়ে গিয়েছে .. শুভরাত্রি.." এইটুকু বলে ফোনটা রেখে দিলো হিয়া।
★★★★
ফোনটা পাওয়ার পর রুদ্ধশ্বাসে বাইক চালিয়ে গঙ্গানগর রেল স্টেশনের পশ্চিমপ্রান্ত দিয়ে আরো কিছুটা এগিয়ে স্টেশন রোড আর আলতারা কলিহারি রোড যেখানে একসঙ্গে মিশেছে তার উল্টোদিকের পরিত্যক্ত টাউন-হলটার সামনে নিজের বাইক দাঁড় করালো গোগোল। দিনের বেলাতেই এই জায়গাটা প্রায় জনমানবশূন্য থাকে। এখন ঘড়িতে রাত সাড়ে দশ'টা, দুর্গাপূজার সমারোহের কোনো চিহ্নই নেই এখানে .. এদিক ওদিক তাকিয়ে টাউন-হলের প্রধান ফটক দিয়ে ভেতরে ঢুকে গেলো গোগোল।
"এতদিন ধরে তোমার সব চাহিদা পূরণ করে চলেছি আমি। তোমাকে রেলপাড়ের বস্তির বেতাজ বাদশা বানিয়েছি। নিশীথ বটব্যালের কেসটা ধামাচাপা দিয়ে দিয়েছি। সুপরিকল্পিতভাবে এবং লোকচক্ষুর আড়ালে মায়াবন্দর যাওয়ার আর ফিরে আসার সব ব্যবস্থা করে দিয়েছি। তারপর ওখানে যে অকাজটা করে এসেছো, চেষ্টা করছি সেই কেসটার গতিপ্রকৃতি অন্যদিকে ঘুরিয়ে দেওয়ার। আর তুমি? তুমি কি করেছো আমার জন্য? শুধু কমিটমেন্ট করে যাচ্ছ, অথচ কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। রেলপাড়ের বস্তিটা আমার চাই কিন্তু এবং খুব তাড়াতাড়ি .. আমি আর অপেক্ষা করতে পারছি না। আর মানিক সামন্তর ব্যাপারটা কি হলো? আরে বাবা কতদিন আর দলের সভাপতি হয়ে থাকবো বলো তো? ওকে সরাতে পারলেই বিধায়ক পদটা আমার জন্য বাঁধা। কিছু করো ভাই, কিছু করো। দেখো, আমি 'গিভ এন্ড টেক' পলিসিতে বিশ্বাসী .. এইভাবে চলতে থাকলে আমি কিন্তু .." টাউন-হলের ভেতরে বিশাল গোল টেবিলের অপরপ্রান্তে গদিতে মোরা চেয়ারটায় বসে উক্তিটি করলো মানিক সামন্তর দলের গঙ্গানগরের জেলা কমিটির প্রেসিডেন্ট লালু আলম।
বাইরেটা রঙচটা, জায়গায় জায়গায় প্লাস্টার খসে গিয়ে ইট বেরিয়ে পড়লেও টাউন-হলের ভেতরটা কিন্তু ঝা চকচকে। "কিন্তু? কিন্তু কি করবেন? আমাকে আপনি কোনো বাদশা বানাননি বরং আমাকে ছাড়া রেলপাড়ের বস্তি দখল তো দুরস্ত, ওই বস্তির একটা ইটও খোলা সম্ভব নয় সেটা আপনি ভালো করেই জানেন। আপনি আমার জন্য যা কিছু করেছেন সব নিজের স্বার্থে। আর তার বদলে এলাকায় যে সম্মানটা তৈরি হয়েছে আপনার, সেটাও আমারই সৌজন্যে। আগে তো এলাকাতে ঢুকতেও পারতেন না, লোহা চোর আর কয়লা চোর .. এই দুটো ইমেজ ছিলো আপনার। তাই আপনি আমাকে কোনো দয়া করেননি, যা দিয়েছেন সেটা আমার পারিশ্রমিক।" গম্ভীর গলায় উত্তর দিলো গোগোল।
"আরে কি মুশকিল, আবার ওইসব পুরনো কথা কেনো? ঠিক আছে ঠিক আছে, আমি তো কোনো সিদ্ধান্তের কথা জানাইনি। আসলে অপেক্ষা করতে করতে একটু অধৈর্য হয়ে পড়েছিলাম, তাই হয়তো ওইরকম ভাবে বলে ফেলেছি .." পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য গলার স্বর অনেকটা নামিয়ে আমতা আমতা করে বললো লালু আলম।
"বস্তির ব্যাপারে এখনি কিছু বলতে পারছিনা, তবে আপনাদের দলের বিধায়কের বিষয়ে আপনার থেকে আমার তাড়া এবং তাগিদ দুটোই অনেক বেশি। কিন্তু ফটো ফিনিশের জন্য সবসময় উপযুক্ত সময়ের অপেক্ষা করতে হয়, তা না হলে নিজেকেই ফিনিশ হয়ে যেতে হয়। এইসব কথা ছাড়ুন .. যে খবরটা জানার জন্য আমি উদগ্রীব হয়ে আছি সেটা বলুন।" কিছুটা অসহিষ্ণু হয়ে জিজ্ঞাসা করলো গোগোল।
"কি আর বলি গোগোল বাবু .. কষ্টে বুকটা ফেটে যাচ্ছে আমার। ওইরকম একটা মারকাটারি ফিগারের সেক্সি যুবতী, তার যে এইরকম পরিণতি করবে ওই শুয়োরের বাচ্চা সামন্ত, সেটা যদি আগে থেকে একটু বুঝতে পারতাম ভাই আমার .. তাহলে মেয়েটাকে আমার কাছে নিয়ে এসে রাখতাম। আরে যেদিন বটব্যালের লাশটা উদ্ধার হলো কলেজের বাথরুম থেকে, সেদিন তো কামরাজ আর সামন্তর সঙ্গে আমিও গিয়েছিলাম মাগীটাকে চু... না মানে ওই একটু আলাপ করতে। তারপর তো কামরাজের কাছে মনে হয় থানা থেকে ফোন এলো, ও সঙ্গে সঙ্গে বেরিয়ে গেলো। আমি আর সামন্ত রয়ে গেলাম বাড়িতে। উফফফ .. সে যে কি অভিজ্ঞতা! না মানে আলাপের অভিজ্ঞতার কথা বলছি। ভারী মিষ্টি মেয়ে .. যা বলেছি তাই শুনেছে। কিন্তু মাতৃত্বের টান .. কতদিন আর নিজেকে সামলে রাখতে পারবে! শেষে আর রাজি হচ্ছিলো না ওদের ব্যবসায়িক শর্তে। গোপন সূত্রে জানতে পেরেছি মৌমিতা আর বাচ্চা পয়দা করতে চাইছিল না। ওর বক্তব্য ছিলো - বছরের পর বছর ধরে নিজের 'নাড়ি ছেঁড়া ধনকে' অন্যের কাছে এভাবে বিলিয়ে দিতে পারবে না। এরপর যদি ও মা হয়, তবে সেই বাচ্চাকে নিজের কাছেই রেখে দেবে। ব্যাস আর যায় কোথায়? ওই দুটো হারামি তো টাকা আর মেয়েমানুষ ছাড়া অন্য কিছু বোঝেনা। তাই যখন দেখলো তাদের সোনার ডিম পাড়া হাঁস আর ডিম দেবে না, তখন হাঁসটাকেই কেটে খেয়ে ফেললো। আমার কাছে পাক্কা খবর আছে মানিক সামন্তর নতুন শাগরেদ প্রদীপ এই কাজটা করেছে। ওই তো গাড়ি করে এসে বডিটাকে বাঁশ বাগানে ফেলে দিয়ে গেছে। কিন্তু তুমি একটু আমার ওদিকটা দেখো গোগোল বাবু। কতদিনের শখ ওই বস্তিটা ভেঙে ওখানে টাওয়ার তুলবো। ওইরকম খানদানি জায়গায় চার চারটে টাওয়ার তুলতে পারলে, উফ্ .. লালে লাল হয়ে যাবো .."
আরো কিছু বলতে যাচ্ছিলো লালু আলম, তাকে মাঝপথে থামিয়ে দিয়ে বড় গোল টেবিলটার উপর একটা চাপড় মেরে গোগোল বললো "থাক, যা বোঝার আমি বুঝে নিয়েছি। এবার বাড়ি ফিরতে হবে আমাকে, প্রদীপের খবর কাল নিচ্ছি .. ধনঞ্জী ভাইকে ট্রাকটা রেডি রাখতে বলে দিন, কাল একটা অ্যাক্সিডেন্টের খবর হবে।" গোগোল ভালো করেই জানে আলম সাহেব চরিত্রহীন, অর্থপিশাচ, ক্ষমতালোভী এবং নরকের কীট হলেও মিথ্যে কথা বলে না। তাই ওখানে আর সময় নষ্ট না করে টাউনহল থেকে বেরিয়ে বাইকে করে রওনা হলো নিজের বাড়ির উদ্দেশ্যে।
★★★★
গোগোলের বাড়ি পৌঁছতে প্রায় সোয়া এগারোটা বেজে গেলো। গঙ্গানগরে ছোট-বড় মিলিয়ে বেশ কিছু ফ্যাক্টরি গলিয়ে উঠলেও, এই অঞ্চল এখনো বাণিজ্য নগরী হয়ে উঠতে পারেনি, মফঃস্বল হয়েই রয়ে গিয়েছে। এই চত্বরে হাতেগোনা যে কয়েকটা পূজো হয়, সেখানে স্থানীয় দর্শনার্থীদের ভিড় বেশি থাকে, বাইরে থেকে সচরাচর কেউ আসে না। তাই পূজা মন্ডপ থেকে পূর্ব দিকে ক্লাব আর পশ্চিম দিকে অর্ডিন্যান্স ফ্যাক্টরি পর্যন্ত বিস্তৃত রেলপাড়ের পুজোর বর্ণাঢ্য আলোকসজ্জা তখনো মহা সমারোহে জ্বলতে থাকলেও এই নবমীর রাতেও এলাকা প্রায় জনমানবশূন্য হয়ে গিয়েছে। আজকাল এমনিতেই তার ফিরতে দেরি হয়। সুজাতার নাইট শিফ্ট থাকলে আলাদা কথা, কিন্তু বাড়িতে থাকলে রাতের খাবারটা দু'জনে একসঙ্গে খেতেই চেষ্টা করে। তবে আজ অনেকটাই দেরি হয়ে গিয়েছে। দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকতে গিয়ে দেখলো, ভেতর থেকে খুলে রাখা আছে। গোগোল ভাবলো তার মামণি হয়তো সদর দরজাটা ভেজিয়ে রেখে এতক্ষণে খেয়েদেয়ে শুয়ে পড়েছে।
ভেতরে ঢুকতেই মাটিতে রাখা খাবারের থালার সামনে বসে থাকা তার মামণির গম্ভীর মুখের দিকে তাকিয়ে কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে পড়লো গোগোল। "না মানে একটা ইম্পর্টেন্ট কাজ পড়ে গিয়েছিলো তাই ফিরতে একটু রাত হয়ে গেলো আজকে। এদিকে পুজোর সবকিছু ভালো ভালো মিটে গেছে তো? তুমি আমার জন্য আর অপেক্ষা করো না, খেয়ে দেয়ে শুয়ে পড়ো .. কাল তো আবার তোমার মর্নিং শিফ্ট আছে। আমার ফ্রেশ হতে সময় লাগবে।" নিজেকে সামলে নিয়ে বললো গোগোল।
"এতক্ষণ ধরে যে নোংরাগুলো ঘেঁটে এলি, সেগুলো ধুতে বুঝি সময় লাগবে?" সুজাতার এই উক্তিতে হতচকিত হয়ে ক'য়েক পা পিছিয়ে গেলো গোগোল - "মামণিইইইই .. কি বললে তুমি?"
"কি মামণি হ্যাঁ, কি মামণি? তুই কি মনে করেছিস .. আমার চোখে ধুলো দিয়ে যা খুশি তাই করে যাবি তুই আর আমি কিচ্ছু বুঝতে পারবো না? রেলপাড়ের বস্তিতে সবাই আলোচনা করছে - তুই নাকি ওই কয়লা চোর আর লোহা মাফিয়া লালু আলামের সঙ্গে হাত মিলিয়েছিস! এই বস্তিটাকে ওর হাতে তুলে দিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকা মুনাফা করতে চাস। স্বপন সাধুখাঁ তো বেশ কয়েকদিন আগেই আমাকে কথাটা বলেছিলো, তবে ওই লোকটার কথা আমি বিশ্বাস করিনি। কিন্তু আজ যখন তোদের ক্লাবের প্রেসিডেন্ট পঙ্কজ বাবুর কাছে পুরো ব্যাপারটা শুনলাম .. লজ্জায় আমার মাথা কাটা যাচ্ছিলো। পঙ্কজবাবু সজ্জন ব্যাক্তি, উনি তো আর মিথ্যা কথা বলবেন না! তুই বেরিয়ে যাওয়ার পর ক্লাবের কি একটা কাজের জন্য তোর খোঁজে উনি এসেছিলেন এখানে। প্রথমে কিছুই বলতে চাইছিলেন না, তারপর আমার অনেক অনুরোধে উনি সবটা বললেন। যে মানুষগুলো তোকে আগলে রেখে বড় হতে সাহায্য করলো, তোর প্রাণ রক্ষা করলো .. তাদেরই পথে বসাতে চাইছিস? ছিঃ .. এতটা নিচে নেমে গেছিস তুই!" রাগে-ক্ষোভে ফেটে পড়ে এক নিঃশ্বাসে কথাগুলো বলে গেলো সুজাতা।
"মামণি .. শোনো .. এতটা উত্তেজিত হয়ে যেও না প্লিজ। তোমার হাই-প্রেসার আছে, এত রেগে গেলে যদি ভালো-মন্দ কিছু হয়ে যায় তাহলে আমার কি হবে বলো? আমার তো আর কেউ নেই, আমি কাকে নিয়ে বাঁচবো? তুমি যেটা শুনেছো বা জেনেছো তার পুরোটা সত্যি নয়। আমি কি করছি, কেন করছি .. এর পেছনে অনেক কারণ আছে, অনেক জটিল অঙ্ক আছে। কিন্তু এখন এই মুহূর্তে আমি তোমাকে সবটা খুলে বলতে পারবো না, আমাকে কয়েকটা দিন সময় দাও, তারপর সব ধীরে ধীরে জানতে পারবে।" সুজাতাকে সামলানোর চেষ্টা করতে করতে ব্যাকুলভাবে কথাগুলো বললো গোগোল।
"কেনো, নিজের মামণিকে এখনই, এই মুহূর্তে সব খুলে বলতে পারবি না কেনো? আসলে কিছু বলার থাকলে তো বলবি! আমার আর কিচ্ছু শোনার নেই, কিচ্ছু বোঝার নেই। যা জানার যা বোঝার সবকিছু আমি বুঝে গেছি। তোর এই বাইক, পকেটভর্তি টাকা .. এগুলো কোথা থেকে আসছে, কিছু বুঝিনা মনে করেছিস? ফার্স্টক্লাস সেকেন্ড .. এত ভাল রেজাল্ট করে গ্র্যাজুয়েশন কমপ্লিট করলি, অথচ তারপরে আর পড়াশোনা করলি না। চাকরির কোনো চেষ্টাই করলি না। নাম লেখালি গিয়ে ওই গুন্ডা বদমাইশদের দলে। আমি উপরে গিয়ে কি মুখ দেখাবো বলতো তোর মায়ের কাছে? অনিরুদ্ধদা'র কাছে? যখন ওরা আমাকে বলবে 'তোমার হাতে আমাদের ছেলেটাকে তুলে দিয়েছিলাম এই আশায় যে তুমি ওকে মানুষের মতো মানুষ করবে, কিন্তু তুমি সেই কাজে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছো। একটা ক্রিমিনাল তৈরি করেছো আমার ছেলেকে।' তখন কি উত্তর দেবো আমি? বলে দে আমায়, কি উত্তর দেবো?" ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে কথাগুলো বলছিলো সুজাতা।
"তুমি এত সহজে মরবে না, তাই উপরে গিয়ে ওদের কি কৈফিয়ৎ দেবে, সেটা নিয়ে এখনই অত ভাবতে হবে না। ক'দিন যাক তারপর নিজেই সব বুঝতে পারবে।" কৌতুকের সুরে কথাগুলো বলে গোগোল বাথরুমে ঢুকে গেলো ফ্রেশ হতে।
মিনিট দশের পর বাথরুম থেকে বেরিয়ে গোগোল দেখলো দুজনের খাওয়ার বাড়তে বাড়তে তখনও গজগজ করে যাচ্ছে তার মামণি - "মরবো মরবো আমি খুব তাড়াতাড়িই মরবো। চিরকাল অন্যায়ের প্রতিবাদ করে এসেছে যে মানুষটা, আজ তার ছেলের এইরকম অধঃপতন দেখে তার মরে যাওয়াই ভালো। হে ঈশ্বর .. তুমি আমাকে তুলে নাও।"
"আচ্ছা ঠিক আছে, আমি আজ রাতেই যমরাজকে ফোন করে দেবো, তোমাকে তাড়াতাড়ি এসে তুলে নিয়ে যাবে, খুশি তো? এবার বলো তো তখন যেন কি একটা বলছিলে, যেটা আজ না বললে অনেক দেরি হয়ে যাবে।" তার মামণি সুজাতাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে তার কাঁধে মুখ ডুবিয়ে প্রশ্ন করলো গোগোল।
"ও হো .. ছাড় আমাকে .. এখন মাঝরাতে আর আদিখ্যেতা করতে হবে না, দুটো খেয়ে শুধু উদ্ধার কর আমাকে। আর ওইসব কথা এখন শুনে কাজ নেই। তোর মন এমনিতেই ভালো নেই, এত রাতে এখন আবার ও কথা উঠলে আরো খারাপ হবে মন।" গোগোলের বাহুবন্ধন থেকে নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করতে করতে বললো সুজাতা।
"নাহ্ .. একবার যখন মুখ ফস্কে বলে ফেলেছো, তখন পুরো কথাটা না শুনে তো আমি তোমাকে ছাড়বো না। তুমি ভালো করেই জানো, আমি কতটা জেদি। তুমি যদি না বলো, তাহলে আমি এখানে এইভাবেই বসে থাকব সারারাত।" সুজাতাকে ছেড়ে দিলেও তার সামনে এসে দুটো কাঁধ শক্ত করে ধরে চোখে চোখ রেখে কথাগুলো বললো গোগোল।
সুজাতা ভালো করেই জানে কথাগুলো না বললে গোগোল আজ তাকে ছাড়বে না। হয়তো সত্যি সত্যিই না খেয়ে না ঘুমিয়ে সারা রাত এভাবেই বসে থাকবে। সে হয়তো একটু আগে তাকে অনেক বকাবকি করেছে, কিন্তু সে এটাও মনে মনে জানে তার ছেলে কোনো ভুল করতেই পারে না। তাই মুখে যাই বলুক, মনে মনে সে অপেক্ষা করতে রাজি আসল সত্যিটা জানার জন্য। কিন্তু ছেলেটা যে বড় অভিমানী। বাড়ি থেকে বেরোনোর আগে ওর ওই করুণ ক্রন্দনরত মুখখানি যে তার দৃষ্টি এড়ায়নি। তার চোখে যে হিয়ার প্রতি গভীর ভালোবাসা অবলোকন করেছে সে। কিন্তু সত্য তো অপ্রকাশিত থাকে না কোনোদিন। তাই কালকের কাজ আজকে আর আজকের কাজ এখন করাই হয়তো যুক্তিযুক্ত।
"তুই তো জানিস সোনা .. আমি আর তোর কাবেরী আন্টি সিটি হসপিটালে নার্সিং ট্রেনিং নিয়েছিলাম। তখন থেকেই আমাদের বন্ধুত্ব। তারপর দীর্ঘদিন কোনো যোগাযোগ ছিলো না আমাদের মধ্যে। পরবর্তীকালে তোদের পরিবারের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে গিয়ে আমি এখানে এসে পড়ি এবং মিউনিসিপাল হসপিটালে জয়েন করি। যদিও তোকে এবং তোদের পরিবারকে আমি নিজের পরিবার বলেই মনে করি, কারণ তুই ছাড়া আমি আর কিছুই ভাবতে পারি না এখন। যাক সে কথা, ঘটনাচক্রে কাবেরীর পোস্টিং এই হসপিটালেই হয়। তখন তুই অনেক ছোটো, আর হিয়া তো আরোই ছোটো। আমার চাকরি ততদিনে পার্মানেন্ট হয়ে গিয়েছে, বহুদিন পর নিজের পুরনো বন্ধুকে ফিরে পেয়ে ভাবছিলাম এবার বোধহয় সুখের দিন ফিরতে চলেছে আমাদের। তার উপর তোদের দুজনের নিগূঢ় বন্ধুত্ব দেখে আমার মনে সাধ জাগলো - এই বন্ধুত্ব যদি আত্মীয়তায় রূপান্তরিত করা যায়! একদিন হসপিটাল থেকে ফেরার পথে সাহস করে কাবেরীকে বলেই ফেললাম কথাটা। কিন্তু ও জানালো - হিয়া নাকি বাগদত্তা। কথাটা শুনেই আমি প্রথমে স্তম্ভিত হয়ে গেছিলাম। পরে জানলাম ওদের গ্রামের বাড়ি শিমুলপুরে ওদের পাড়াতেই শশাঙ্কবাবু বলে একজন থাকতেন, যিনি ওর দাদার বন্ধু .. খুব ব্রিলিয়ান্ট স্টুডেন্ট ছিলেন। পরবর্তীতে এই গঙ্গানগরে একটি রাষ্ট্রায়ত্ত্ব ব্যাঙ্কের অফিসার হয়েছিলেন। বর্তমানে কলকাতায় ওই ব্যাঙ্কের একটি ব্রাঞ্চের ম্যানেজার উনি। উনার ছেলে সন্দীপ, যে কিনা এখানেই ছোটবেলায় পড়াশোনা করেছে .. তার সঙ্গেই ছোটবেলা থেকেই বিয়ে ঠিক হয়ে আছে হিয়ার এবং সেটা ওদের দুই পরিবারের সম্মতিতেই। এখানে না থাকলেও কাবেরীর সঙ্গে শশাঙ্কবাবুর যোগাযোগ বহুদিন থেকেই আছে আর হিয়াকে তার এবং তাদের পরিবারের বেশ পছন্দ। তবে সেই সময় কাবেরী বলেছিলো হিয়াকে এইসবের কিছুই এখনো জানানো হয়নি। সব শুনে আমি শুধু একটাই কথা বলেছিলাম - যার জীবনের এত বড় একটা কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছিস তাকে অবশ্যই একবার জানানো দরকার। আজ পঙ্কজবাবুর মুখে শুনলাম হিয়া ওই ছেলেটাকে সঙ্গে করে নিয়ে আমাদের রেলপাড়ের পূজা মন্ডপে এসেছিলো। সেখানে নাকি তোর সঙ্গে কিছু একটা ব্যাপার নিয়ে মনোমালিন্য হয় ওদের। আমি বুঝতে পেরেছি তোর মন খারাপের কারণ। কিন্তু আমি এখন কি করবো বল? তুই আমাকে যতই লুকোস না কেন, আমি কিন্তু সব বুঝতে পেরে গেছি। তোর কষ্ট তো আমি সহ্য করতে পারি না সোনা। আমি একবার ভাবছি কালকেই গিয়ে কাবেরীকে সব কথা খুলে বলবো। প্রয়োজনে ওর পায়ে ধরে অনুরোধ করবো এই সিদ্ধান্ত বদলানোর জন্য। তারপর আবার ভাবছি যদি ওদের কথা অনেক দূরে এগিয়ে গিয়ে থাকে, যদি হিয়াও সবকিছু জেনে বুঝেই .. না না আমি আর কিছু ভাবতে পারছি না। তুই বল সোনা, তুই আমাকে বলে দে আমি কি করবো?" কথাগুলো বলতে বলতে গোগোলকে জড়িয়ে ধরে হাউ হাউ করে কেঁদে ফেললো সুজাতা।
"তোমাকে কিচ্ছু করতে হবে না মামণি, কাউকে এই ব্যাপারে কোনো অনুরোধ করতে হবে না আমার দিব্যি রইলো। যাও গিয়ে শুয়ে পড়ো .. অনেক রাত হলো। কাল আবার মর্নিং শিফ্ট আছে তোমার।" ভারাক্রান্ত গম্ভীর গলায় অথচ অত্যন্ত স্বাভাবিকভাবে কথাগুলো বলে ধীর পায়ে পাশের ঘরে চলে গেলো গোগোল। অশ্রুসিক্ত দৃষ্টিতে সেই দিকে চেয়ে রইলো সুজাতা। তার যে আর কিছুই করার নেই।
'অপেক্ষা' এই ছোট্ট শব্দটা যেনো 'হাওয়াই মিঠাইয়ের' মতো ফুরিয়ে যায় .. অপেক্ষার অন্তরাল খুঁড়ে প্রত্যাশিত হাতটা ধরে আমরা এগিয়ে যাই যুগ যুগ। মানুষের জীবনে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি করে যায় ঘুমন্ত পরীর মতো অপেক্ষা করায়, ঘুম না-আসা রাতে জানিয়ে যায় তার উত্তর। ওই সমুদ্র হতে গাঢ়নীল নিয়ে আকাশের বুকে চাপা চাপা নীল ব্যাথা জমা করে রাখি আর অপেক্ষার প্রহর গুনে চলি আগামীর। ছোট্ট ঘাসফড়িং একটু একটু করে ডানা ঝাপটাতে ঝাপটাতে একদিন মস্ত বড় ঝড়ের জন্ম দিতে পারে। এক মুহুর্তের অনিশ্চিত সিদ্বান্ত জীবনের আমূল পরিবর্তন ঘটিয়ে দিতে সমর্থ হয়। আর যদি সেই সিদ্বান্ত অনিশ্চিত না হয়! অঙ্কের খাতায় লেখা দু-এক লাইনের সেই লেখাটি হাল্কা ভাবে মেনে নিয়ে চললে বাস্তবের মুখোমুখি এতটা কষ্ট জুড়ে হয়তো বসতো না। জীবনের কিছু গল্প কখনোই বলা হয়ে ওঠেনা, শরীরের ভিতর জমছে গাঢ় অন্ধকার .. আজ ইন্দ্রিয়গুলো যেন বেশি সজাগ হয়ে উঠেছে। সোনালী আলো মেখে শুয়ে আছে ইটের রাস্তা .. নিঃশব্দে চলছে পাশাপাশি দুটি সাইকেল কিছু শোনার ব্যাকুলতায়। কিছুক্ষন পর চলে যাবে যে যার গন্তব্যে .. হয়তো পৃথিবীর অনেক রহস্যের সমাধান হয়না। অথচ সব জেনে শুনেও আমরা কল্পনার ট্রাজিক উপন্যাসের প্রেমিক-প্রেমিকা হয়ে উঠি।
শেষ দেখাতেও চেষ্টা করেছি অনেক, যে কথাটা বলতে পারিনি ওটাও শুনে নিও হিয়া। জুড়ে থাকার প্রচেষ্টায় যে হৃদয় ভেঙে চুরমার হয়েছে তার কিছু টুকরো পারো
যদি কুড়িয়ে রেখো। হয়তো তুমি এর কিছুই শোননি আর যদি শুনেই থাকো তাহলে হয়তো অনেকটা দেরি হয়ে গেছে। মৃত কথাকে কফিন থেকে তুলে আনা যায়, তাই বলে মানুষটিকে নয়। কঠিন বরফও গলে যায় উষ্ণতাপের অনুরাগ, প্রবাহমান নদী বয়ে চলে বাসনার স্বপ্ন দেখে মুখথুবড়ে পরে বিষাদে মূর্ছা যায় বারংবার। তোমার নিপুণ অভিনয় বুঝিনি তুমি অন্য ভুলোকের ভিন্ন বিষুবরেখার অধিবাসী। আমি আগে বুঝিনি .. বাকরুদ্ধ থাকাতে বুঝতে পারি আমি বড্ড বেশি বেমানান তোমার কাছে। তোমার সুদক্ষ কথার আঘাতে নিদাগ শরীর মন। বেদনার গহীনে পুষে রেখে আমি আজ একাকী জ্যোৎস্না লোকে জীবনের চাওয়া না-পাওয়ার খসরায়। তবুও কষ্ট বুকে খুঁজে ফিরি দুর্গম পাহাড়ের ঝর্নায় প্রভাবিত হয় আমার বেদনা সরোবরে। জ্বলে পুড়ে হয়েছি কঠিন পাথর অনন্ত যাতনার গহীনে। খোদাই করে নির্মাণ করেছে যে পাথরের বুকে শুধু ভাস্কর্যই জানে গোপন কথা। ভালো থেকো হিয়া।
(ক্রমশ)
ভালো লাগলে আপনাদের মূল্যবান মতামত জানাবেন
লাইক এবং রেপু দিয়ে উৎসাহিত করবেন
আবার শুধুমাত্র একটা পর্ব? ধুর...
যাইহোক কি আর করা যাবে রেপু লাইক দিয়েছি তবে উল্টোটাই করা উচিত ছিল, তাড়াতাড়ি আপডেট নিয়ে ফেরো দাদা।
I'm the King of Dark
&
I rule over all Devils
D:) D:)
Posts: 1,474
Threads: 7
Likes Received: 2,554 in 929 posts
Likes Given: 2,453
Joined: Mar 2022
Reputation:
522
অভিমান যখন তার বিস্তার বড় করে তখনি সেখানে তৃতীয়ার আগমন হয়।
অনাহুত সন্দীপ তার জায়গা করে নেবার ভিত গড়তে শুরু করেছে মাত্র বাকিটা বুম্বাদার কলমের ডগায়।
ক্ষমতায় খুঁটি লাগে তাই হয়তো গোগোলের লালু আলম কে কাজে লাগাতে হচ্ছে। কিন্তু প্রশ্ন একটাই লালু তো কামরাজ সামন্তদের সাগরেদ সে কি কোনভাবেই এটা জানে না ওদের শিকার অরুন্ধতীর ছেলেই গোগোল?
মায়ের মন সন্তানের জন্য যেমন করে কেঁদে উঠে অভিমানে ভার হয় তেমনি করেই সুজাতা তার অনুভূতি প্রকাশ করে যাচ্ছে। কিন্তু গোগোলের ঐ দিব্যি তো অনেক হিসেব এলোমেলো করে দিলো। তবে কি অনির্বাণ ও চায় না তার অনিশ্চিত জীবনের সাথে হিয়া কে জড়িয়ে রাখতে নাকি হিয়ার গোপন বাসনায় মুক্ত বিহঙ্গের মত উড়ে যাবার জন্য সত্যি সত্যিই মুক্ত আকাশ এনে দিলো।
পরবর্তী আপডেটের আগে হৃদয় শান্ত হবার নয়।
:shy: হাত বাড়িয়ে ছুঁই না তোকে, মন বাড়িয়ে ছুঁই।
দুইকে আমি এক করি না, এক কে করি দুই।। :shy:
Posts: 3,081
Threads: 0
Likes Received: 1,370 in 1,218 posts
Likes Given: 45
Joined: May 2019
Reputation:
34
Posts: 1,277
Threads: 3
Likes Received: 1,468 in 968 posts
Likes Given: 3,908
Joined: Apr 2022
Reputation:
153
06-11-2022, 01:47 AM
(This post was last modified: 06-11-2022, 01:51 AM by Boti babu. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
ভালোবাসা যে কি রকম যে কাউকে নিঃশর্ত ভাবে ভালোবেসেছে শুধু সে বলতে পারবে । আজ বেশি কিছু বলবো না অনেক পুরাতন স্মৃতির কথা মনে পড়ে গেছে।কেন জানি আজকের পর্বটা পড়ে বুকের মাঝে যেন ঝড় উঠেছে। লাইক রেপু এডেড দাদা।
আমাকে আমার মত থাকতে দাও
Posts: 4,432
Threads: 6
Likes Received: 9,380 in 2,851 posts
Likes Given: 4,330
Joined: Oct 2019
Reputation:
3,229
(05-11-2022, 10:41 PM)Monen2000 Wrote: আবার শুধুমাত্র একটা পর্ব? ধুর...
যাইহোক কি আর করা যাবে রেপু লাইক দিয়েছি তবে উল্টোটাই করা উচিত ছিল, তাড়াতাড়ি আপডেট নিয়ে ফেরো দাদা।
এ আবার কেমন তর কথা বন্ধুবর? :) এইতো সবেমাত্র আপডেট এলো। এইটা পড়েই আগে আত্মস্থ করুক পাঠকবন্ধুরা, তারপর না হয় পরের আপডেটের কথা ভাবা যাবে।
•
Posts: 4,432
Threads: 6
Likes Received: 9,380 in 2,851 posts
Likes Given: 4,330
Joined: Oct 2019
Reputation:
3,229
06-11-2022, 09:46 AM
(This post was last modified: 06-11-2022, 09:47 AM by Bumba_1. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
(05-11-2022, 11:28 PM)nextpage Wrote: অভিমান যখন তার বিস্তার বড় করে তখনি সেখানে তৃতীয়ার আগমন হয়।
অনাহুত সন্দীপ তার জায়গা করে নেবার ভিত গড়তে শুরু করেছে মাত্র বাকিটা বুম্বাদার কলমের ডগায়।
ক্ষমতায় খুঁটি লাগে তাই হয়তো গোগোলের লালু আলম কে কাজে লাগাতে হচ্ছে। কিন্তু প্রশ্ন একটাই লালু তো কামরাজ সামন্তদের সাগরেদ সে কি কোনভাবেই এটা জানে না ওদের শিকার অরুন্ধতীর ছেলেই গোগোল?
মায়ের মন সন্তানের জন্য যেমন করে কেঁদে উঠে অভিমানে ভার হয় তেমনি করেই সুজাতা তার অনুভূতি প্রকাশ করে যাচ্ছে। কিন্তু গোগোলের ঐ দিব্যি তো অনেক হিসেব এলোমেলো করে দিলো। তবে কি অনির্বাণ ও চায় না তার অনিশ্চিত জীবনের সাথে হিয়া কে জড়িয়ে রাখতে নাকি হিয়ার গোপন বাসনায় মুক্ত বিহঙ্গের মত উড়ে যাবার জন্য সত্যি সত্যিই মুক্ত আকাশ এনে দিলো।
পরবর্তী আপডেটের আগে হৃদয় শান্ত হবার নয়।
তোমার প্রত্যেকটি প্রশ্নই গুরুত্বপূর্ণ এবং তাৎপর্যপূর্ণ। কিন্তু এখানে তোমার একটা প্রশ্নের উত্তর দিলেই রোমাঞ্চটা যে নষ্ট হয়ে যাবে বন্ধুবর। তবে শুধু একটাই কথা বলবো - আমার লেখনীর মতই আমার উপন্যাসের চরিত্রগুলি তাদের মনের দিক থেকে যথেষ্ট mature .. তাই পরস্পরকে ভুল বুঝে বা অভিমান করে তারা এমন কোনো attitude করবে না (এই যেমন একে অপরকে ঠাস করে চড় মেরে দেওয়া বা চুল টেনে দেওয়া .. ইত্যাদি ইত্যাদি) যা পরবর্তীকালে কোনো কোনো পাঠকের কাছে হাস্যস্পদ মনে হবে। বাকি কথা পরের পর্বগুলির জন্য তোলা থাক
Posts: 4,432
Threads: 6
Likes Received: 9,380 in 2,851 posts
Likes Given: 4,330
Joined: Oct 2019
Reputation:
3,229
(06-11-2022, 01:37 AM)chndnds Wrote: Khub valo laglo
অনেক ধন্যবাদ
•
Posts: 4,432
Threads: 6
Likes Received: 9,380 in 2,851 posts
Likes Given: 4,330
Joined: Oct 2019
Reputation:
3,229
(06-11-2022, 01:47 AM)Boti babu Wrote: ভালোবাসা যে কি রকম যে কাউকে নিঃশর্ত ভাবে ভালোবেসেছে শুধু সে বলতে পারবে । আজ বেশি কিছু বলবো না অনেক পুরাতন স্মৃতির কথা মনে পড়ে গেছে।কেন জানি আজকের পর্বটা পড়ে বুকের মাঝে যেন ঝড় উঠেছে। লাইক রেপু এডেড দাদা।
আমি জানি এই পর্ব মনের গভীরে মোচড় দেওয়ার পর্ব, বুকের ভিতর ঝড় ওঠার পর্ব .. দেখা যাক ভবিষ্যতে কোন দিকে অগ্রসর হয় কাহিনীর গতিপ্রকৃতি। সঙ্গে থাকো আর পড়তে থাকো।
Posts: 18,225
Threads: 471
Likes Received: 66,231 in 27,839 posts
Likes Given: 23,871
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,277
Posts: 222
Threads: 0
Likes Received: 406 in 211 posts
Likes Given: 1,185
Joined: Jun 2021
Reputation:
64
এই উপন্যাসের সমৃদ্ধ কাহিনীর গতিপ্রকৃতি নিয়ে সবাই বলছেন। আর একটি দুরন্ত আলগা ব্যাপারটা হয়তো চোখ এড়িয়ে গেছে। তাহল সংলাপ। ছোট ছোট সংলাপ এই উপন্যাসের প্রাণ। গতি এনেছে তুখোড়। অনেক প্রণাম বুম্বাদা।
Posts: 1,409
Threads: 2
Likes Received: 1,436 in 991 posts
Likes Given: 1,761
Joined: Mar 2022
Reputation:
82
এই উপন্যাসের সেরা পর্বগুলোর মধ্যে এটা অবশ্যই থাকবে এই ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই। এত সুন্দর রূপকের ব্যবহার এখানে আর কেউ করতে পারে না তোমার মতো। তোমার লেখনীর শব্দের মূর্ছনায় মাঝে মাঝে হারিয়ে যাচ্ছিলাম। তবে লালু আলমের মুখে মৌমিতার হত্যা পর্ব শুনে, ব্যাপারটা একটু ক্লিশে লাগলো আমার কাছে। চরিত্রটাকে আর উপন্যাসের মধ্যে রাখতে চাও না বলে যেন জোর করে তাকে সরিয়ে দেওয়া হলো। যতই নরপিশাচ হোক, একজন নারীকে ওইরকম নিশংসভাবে হত্যা না করে তাকে ব্রেনওয়াশ করতে পারতো বা তাকে জোর করতে পারতো তাদের নোংরামি চরিতার্থ করার জন্য। কারণ এই সমস্ত কাজে তো তারা সিদ্ধহস্ত। তবে এরপর অনির্বাণ আর সন্দীপের ডুয়েল এই উপন্যাসের ইউএসপি হতে চলেছে - সেটা বেশ বুঝতে পারছি। সব মিলিয়ে দুর্দান্ত একটি পর্ব পেলাম।
Posts: 4,432
Threads: 6
Likes Received: 9,380 in 2,851 posts
Likes Given: 4,330
Joined: Oct 2019
Reputation:
3,229
(06-11-2022, 10:33 AM)ddey333 Wrote: বিকেলে পড়বো :)
আচ্ছা ঠিক আছে :)
(06-11-2022, 10:53 AM)issan69 Wrote: এই উপন্যাসের সমৃদ্ধ কাহিনীর গতিপ্রকৃতি নিয়ে সবাই বলছেন। আর একটি দুরন্ত আলগা ব্যাপারটা হয়তো চোখ এড়িয়ে গেছে। তাহল সংলাপ। ছোট ছোট সংলাপ এই উপন্যাসের প্রাণ। গতি এনেছে তুখোড়। অনেক প্রণাম বুম্বাদা।
অনেক ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য। সঙ্গে থাকুন আর পড়তে থাকুন।
•
Posts: 4,432
Threads: 6
Likes Received: 9,380 in 2,851 posts
Likes Given: 4,330
Joined: Oct 2019
Reputation:
3,229
(06-11-2022, 10:53 AM)Somnaath Wrote: এই উপন্যাসের সেরা পর্বগুলোর মধ্যে এটা অবশ্যই থাকবে এই ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই। এত সুন্দর রূপকের ব্যবহার এখানে আর কেউ করতে পারে না তোমার মতো। তোমার লেখনীর শব্দের মূর্ছনায় মাঝে মাঝে হারিয়ে যাচ্ছিলাম। তবে লালু আলমের মুখে মৌমিতার হত্যা পর্ব শুনে, ব্যাপারটা একটু ক্লিশে লাগলো আমার কাছে। চরিত্রটাকে আর উপন্যাসের মধ্যে রাখতে চাও না বলে যেন জোর করে তাকে সরিয়ে দেওয়া হলো। যতই নরপিশাচ হোক, একজন নারীকে ওইরকম নিশংসভাবে হত্যা না করে তাকে ব্রেনওয়াশ করতে পারতো বা তাকে জোর করতে পারতো তাদের নোংরামি চরিতার্থ করার জন্য। কারণ এই সমস্ত কাজে তো তারা সিদ্ধহস্ত। তবে এরপর অনির্বাণ আর সন্দীপের ডুয়েল এই উপন্যাসের ইউএসপি হতে চলেছে - সেটা বেশ বুঝতে পারছি। সব মিলিয়ে দুর্দান্ত একটি পর্ব পেলাম।
অসংখ্য ধন্যবাদ এরূপ মন্তব্যের জন্য তবে তুমি যেটাকে এই পর্বের দুর্বল দিক হিসেবে তুলে ধরলে অর্থাৎ মৌমিতার মৃত্যুর কারণ .. সেটা পুরোপুরি সঠিক নাও হতে পারে। আবার কিছুটা সঠিক হলেও হয়তো এই ঘটনার মাধ্যমে নতুন কোনো অধ্যায় প্রবেশ করতে পারি আমরা .. দেখা যাক কি হয় :)
•
Posts: 1,255
Threads: 2
Likes Received: 2,311 in 1,023 posts
Likes Given: 1,629
Joined: Jul 2021
Reputation:
666
কিছু দুর্বলতা অবশ্যই আছে এই আপডেটে, কিন্তু তার সবকিছু ছাপিয়ে গিয়েছে তোমার লেখনীর অসাধারণ জাদুতে। এত সুন্দর করেও মানুষের মনের ভাব প্রকাশ করা যায় এটা তোমার লেখা না পড়লে বোধগম্য হতো না। আলাদা করে বিশ্লেষণ করার প্রয়োজন নেই কারণ প্রত্যেকে যা বলার বলে দিয়েছে। শুধু একটাই অনুরোধ থাকবে গোগোল যেন সন্দীপের কাছে কিছুতেই না হেরে যায়, আর যার কাছেই হারুক না কেন। এই ভাবেই চলতে থাকুক আরো দীর্ঘায়িত হোক তোমার উপন্যাস yr):
Posts: 4,432
Threads: 6
Likes Received: 9,380 in 2,851 posts
Likes Given: 4,330
Joined: Oct 2019
Reputation:
3,229
(06-11-2022, 03:58 PM)Sanjay Sen Wrote: কিছু দুর্বলতা অবশ্যই আছে এই আপডেটে, কিন্তু তার সবকিছু ছাপিয়ে গিয়েছে তোমার লেখনীর অসাধারণ জাদুতে। এত সুন্দর করেও মানুষের মনের ভাব প্রকাশ করা যায় এটা তোমার লেখা না পড়লে বোধগম্য হতো না। আলাদা করে বিশ্লেষণ করার প্রয়োজন নেই কারণ প্রত্যেকে যা বলার বলে দিয়েছে। শুধু একটাই অনুরোধ থাকবে গোগোল যেন সন্দীপের কাছে কিছুতেই না হেরে যায়, আর যার কাছেই হারুক না কেন। এই ভাবেই চলতে থাকুক আরো দীর্ঘায়িত হোক তোমার উপন্যাস yr):
হেরে যাওয়া দু'রকমের হয় - একটা লোক চক্ষুর সামনে আপাতদৃষ্টিতে হারা আর একটা জনসমক্ষে আপাতদৃষ্টিতে জিতে গিয়েও অন্তরাত্মার কাছে হেরে যাওয়া। আমি জানিনা তুমি কোন হেরে যাওয়াটার কথা বলছো! তবে আমার এই উপন্যাসে এখনো পর্যন্ত অতিরঞ্জিত করে কিচ্ছু দেখানো হয়নি, ভবিষ্যতেও হবে না। সঙ্গে থাকো এবং পড়তে থাকো
•
Posts: 18,225
Threads: 471
Likes Received: 66,231 in 27,839 posts
Likes Given: 23,871
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,277
যথারীতি কাঁপিয়ে দেওয়া আপডেট !!
clp); clp);
|