Posts: 4,428
Threads: 6
Likes Received: 9,178 in 2,849 posts
Likes Given: 4,330
Joined: Oct 2019
Reputation:
3,225
(02-11-2022, 09:08 PM)nextpage Wrote: আমার বড় বোন নেই তবে এক গাদা ছোট বোন আছে।
মনে ভেতর কিছুটা খামতির কষ্ট থাকলেও ছোট বোনদের নিয়ে খুনসুটিতে ও উপভোগ করি।
তোমার লেখাতে সবটা দেখতে পারছিলাম আর ভাবছিলাম এমনটাই করি প্রতিবার।
আমি একটু ঘুম কাতুরে বেলা করে উঠি কিন্তু বোন ভাই ফোঁটা দিয়ে আবার শহরে চলে যাবে ভার্সিটির ক্লাস ধরতে তাই আমাকে ভোরে তোলার কত কি কারসাজি করেছিলো ভাবলে এখনো মনটা আনন্দে ভরে উঠে।
ভাই বোনের খুনসুটি পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ অভিব্যক্তির মধ্যে একটি, যা চিরকাল মনের মনিকোঠায় রয়ে যায়।
Posts: 194
Threads: 6
Likes Received: 896 in 159 posts
Likes Given: 130
Joined: May 2019
Reputation:
246
(22-10-2022, 02:01 PM)Bumba_1 Wrote:
|| গল্প হলেও সত্যি ||
আর কয়েকদিন পরে দীপাবলি, তারপরেই ভাইফোঁটা।
ভাইফোঁটা মানেই বাঙালির আবেগ, মধুর স্মৃতিচারণ, দুষ্টু-মিষ্টি খুনসুটি আর তার সঙ্গে মিশে থাকে ভাই-বোনের অন্তরের ভালোবাসা। ওই বিশেষ দিনটির কিছু কথা শেয়ার করবো তোমাদের সঙ্গে .. যা হয়তো অনেককেই নিজেদের নির্ভেজাল অতীতে ফিরিয়ে নিয়ে যাবে।
ভাইফোঁটার দিনে আমার ছোট্ট দিদিও হঠাৎ বড় হয়ে যেত আমাকে আচমকা অবাক করে দিয়ে। ওই একটাই দিন – আগে পরে আবার দিদি ফিরে আসতো আমার নিত্য দেখা দিদিতেই।
সক্কাল সক্কাল আমার পিছনে লেগে, ঘুম ভাঙিয়ে দৌড়ে চলে যেতো স্নান করতে। সদ্য স্নান সারা দিদিকে নতুন শাড়ি পড়িয়ে মা সাজিয়ে তুলতেন .. যদিও একটু আলুথালু, একটু অপ্রস্তুত, তবু অন্যদিনের চেয়ে একদম অন্য এক দিদি উপস্থিত হতো কোন জাদুতে কে জানে। ঘরে ফ্রক পড়া,কলেজে স্কার্ট পড়া আটপৌরে দিদিকে মায়ের মতোই রীতিমত গম্ভীর দেখাতো।
ভিজে খোলা এলোচুল থেকে টপকাতো ফোঁটা ফোঁটা জল। এ ঘর ও ঘর করতে করতে নানান কাজ সারতে সারতে আমাকে মাঝে মাঝেই শোনাত, - "বাথরুমে গরম জল করা আছে, চান করে নে। চান না করে আমাকে ছুঁয়ে ফেলিস না যেন, তোর সব বাসি আকাচা জামা কাপড়..."
পাটায় চন্দন ঘষতে ঘষতে খোলা চুল কতবার চলে আসতো মুখের ওপর, ঘাড় ঝাঁকিয়ে বার বার সরিয়ে তুলতো পিঠে। কখনো নেমে আসত শাড়ির আঁচল, চন্দনে মাখামাখি। দিদির গায়ে মৃদু চন্দনের গন্ধ ভরে উঠতো .. সে এক অন্য দিদি। আজ যে ভাইফোঁটা!
বাবা মিষ্টি কিনতে বের হচ্ছে দেখলে সেদিন দিদির মুখভার। বাবাকে কিছু বলতে পারতো না, মায়ের কাছে ঘ্যানঘ্যান করতো। "আজকের দিনে ওকে দাও না, পছন্দ করে মিষ্টি নিয়ে আসুক – রোজ তো তুমিই আনো.." মা বললেন বাবাকে। বাবার সদাগম্ভীর মুখেও প্রশ্রয়ের উচ্চ হাসি - "হাহাহাহা, তাই তো .. আমার পাগলি মা'টা বড় হয়ে গেছে কতো – বুঝতেই পারিনি!”
দিদি আড় চোখে আমার দিকে তাকায়, ভাবখানা এমন – বাবাকে একটুও ভয় পাই না আমি, উল্টে বাবা আমার কেমন কথা শোনে দেখলি তো?
"মৃত্যুঞ্জয়" মিষ্টান্ন ভাণ্ডারে খুব ভিড়। দিদির মতোই সব খদ্দের, ক্যাচর ম্যাচর, কলর বলর – হরেনকাকুর দম ফেলার অবকাশ নেই। একটু দেরী হলেই দিদিদের অভিমান।
–‘আমি অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে আছি কাকু, আমাকে ছাড়া সব্বাইকে দিচ্ছ কিন্তু, আমি সেই থেকে দেখছি..'
হরেনকাকুর চটজলদি উত্তর –‘তোমারটাই দিচ্ছি, মা..'
-‘বারে, আমি কখন বললাম আমার কি কি চাই?'
-‘বলো না মা .. বলো। আমি শুনছি – সব শুনছি..’ হরেনকাকুর হাত থেমে নেই, অবিরত বাক্স ভরে চলেছে ফরমাস অনুযায়ী।
দিদি বীরদর্পে মিষ্টি কিনে ঘরে ফিরে স্যান্ডালটা পা থেকে এলোমেলো ছেড়ে রাখলো বসার ঘরে। অন্য দিন হলে বাবা বকাবকি করতেন – আজ নয়। আজ অন্য দিদি। আজ যে ভাইফোঁটা!
আমার স্নান সারা, ফুল প্যান্ট আর প্যান্টের ভেতর গুঁজে পড়া রঙীন জামা – জামাটা দিদির পছন্দ করে কেনা(আমারও খুব – কিন্তু দিদিকে বলিনি- বরং দিদিকে মুখ বেঁকিয়ে জানিয়েছি আমার মোটেও পছন্দ হয় নি) মায়ের সঙ্গে দোকানে গিয়ে। তেল চুকচুকে নিখুঁত আঁচড়ানো পাট পাট চুল। মা আমার চিবুক আর গাল চেপে আঁচড়ে দিয়েছেন নিজের হাতে। মায়ের শাড়িতে গোবিন্দভোগ চালের গন্ধ, পায়েস রান্না হয়ে গেছে।
চটের ওপর রঙীন সুতোয় বোনা আসন। সাদা ব্যাকগ্রাউন্ড। তার মধ্যে লাল, সবুজ এবং কালো রঙের সুতোয় বোনা অসাধারণ কারুকার্য। আসনটি আমার মায়ের হাতের বানানো।
সেজেগুজে আসনে বসে আছি, লক্ষ্মী ছেলের মতো। সামনে কাঁসার রেকাবি ভরা দিদির আনা মিষ্টি। পাশে পেতলের ছোট্ট পিলসুজ, তার ওপর তেল ভরা পেতলের প্রদীপ। তেলের মধ্যে ডুবে আছে দুটো সলতে – একটা লম্বালম্বি, অন্যটা আড়াআড়ি। লম্বালম্বি সলতের মুখটা ক্যান্টিলিভার বারান্দার মতো সামান্য ঝুলে আছে প্রদীপের বাইরে।
সব যোগাড় সারা। মা দিদিকে তাড়া লাগাচ্ছেন। আশে পাশের বাড়ি থেকে শাঁখ আর উলুধ্বনি এলেই মা দিদিকে চাপে ফেলছেন বারবার। বাবা চেয়ারে বসে পা দোলাচ্ছেন আর মিটি মিটি হাসছেন দিদির কান্ডকারখানা দেখে। বাবার চোখে প্রশ্রয় আর স্নেহের হাসি চিকমিক করছে।
দিদি এলো। খোলা চুল, কোমরে শাড়ির আঁচল শক্ত করে গোঁজা। হাতে পেতলের রেকাবিতে সুন্দর করে সাজানো দুর্বা, ধান, চন্দন, চুয়া, পানসুপুরি, এক ছড়া কলা।
হাঁটু গেড়ে দিদি বসল সামনে। প্রদীপ জ্বালতে দুটো কাঠি নিভে গেল। তিনটে কাঠি ভেঙে গেলো বাক্সে ঠুকতে গিয়ে। পরেরটায় জ্বলে উঠল প্রদীপ। কাঁপা কাঁপা ছোট্ট শিখা। চারটে ধুপ জ্বালিয়ে নিল প্রদীপের শিখা থেকে। বারবার হাতের ঝাপটা দিয়েও দিদি নেভাতে পারছিল না ধুপগুলো ..
- ‘ফুঁ দে না দিদি, নিভে যাবে..’
- ‘এ মা, তুই কি বোকা রে? ফুঁ দিয়ে ধুপ নেভাতে নেই, এটাও জানিস না? ওতে ধুপ এঁটো হয়ে যায়।’
দিদির হাতের ঝাপটাতেই হোক বা আমার চূড়ান্ত অজ্ঞতার জন্যেই হোক ধুপগুলো নিভে গিয়ে জ্বলতে শুরু করল ধুপের মতোই। চারটে ধোঁয়ার মোটা এলোমেলো ভাঙাচোরা রেখা হয়ে।
মা এসে বসলেন দিদির ঠিক পাশে, হাতে শাঁখ। দিদি ধান আর দুব্বো নিয়ে রাখলো আমার মাথায় – দিদির আশীর্বাদ! বারবার তিনবার। দিদি ঠোঁটদুটো জড়ো করে জিভের সিম্পল হারমনিক মোশনে উলু দিচ্ছিল প্রত্যেকবার। ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক ছিল মায়ের শাঁখের আওয়াজ। যে শঙ্খটা রোজ সন্ধ্যেবেলা বাজে সংক্ষিপ্ত দ্রুত লয়ে – আজ সকালে সেটাই বাজল দীর্ঘ বিলম্বিতে। আজ অন্য এক দিন – আজ যে ভাইফোঁটা!
আশীর্বাদের পর্ব শেষে এবার ফোঁটা। অনামিকায় চন্দন আর চুয়া নিয়ে দিদি তিনবার টিপ লাগিয়ে দিল আমার কপালে – সঙ্গে সেই অমোঘ ছড়া –“ভাইয়ের কপালে দিলাম ফোঁটা...”। টিপ পড়ানোর সময় দিদির অন্য আঙুলগুলো স্পর্শ করছিল আমার চোখে আর নাকে।
-‘দিদিকে প্রণাম কর’ মা বললেন। শুনেই দিদি দেখি চট করে বসে পড়লো পায়ের পাতা দুটো মেলে।
আমার দ্বিধা দেখে মা আবার বললেন -‘কি রে, প্রণাম কর। দিদি বড় হয় না’?
সেরেই ফেললাম প্রণামটা। ছোট্ট ছোট্ট চিমটি কেটে দিদির পায়ের পাতায়। -‘মা দেখলে, কেমন চিমটি কেটে দিল..'চেঁচিয়ে উঠলেও দিদি কিন্তু খুব খুশি। জীবনের প্রথম প্রণাম পাওয়ার আনন্দই আলাদা। আনন্দে আমার চিবুক ধরে চুমো খেয়ে শান্তি হলো না, আমার গালেও একটা চুমো খেয়ে বসলো।
বাবা সব দেখছিলেন চেয়ারে বসে। বিশাল শব্দে হেসে উঠলেন - ‘হাহাহাহা, ঠিক হয়েছে। খুব ভাল হয়েছে’
কি ঠিক হয়েছে? কোনটা খুব ভাল হয়েছে বুঝতে পারিনি সেদিন। আজও কি বুঝেছি, সবটা?
সাবান-ক্রিম-ফোম, এক-দুই-তিন ব্লেড কোনোভাবেই তোর সেই চুমুটা আজও মুছে যেতে দিইনি রে দিদি। গাল ভরা অনেকটা কাঁচা - কিছুটা পাকা দাড়ির আড়ালে ঠিকঠাক আছে – অনুভবে। পৃথুলা, হাঁটুর ব্যাথায় কাতর তুই এক প্রান্তে – আমিও বহু দূরে। আবার যদি সুযোগ পেতাম তোর সেই ছোট্ট ছোট্ট চঞ্চল পায়ের পাতা পরশ করার – নো চিমটি, আই প্রমিস, ওনলি প্রণাম...বিশ্বাস কর, দিদি।
দারুণ লাগলো
Posts: 4,428
Threads: 6
Likes Received: 9,178 in 2,849 posts
Likes Given: 4,330
Joined: Oct 2019
Reputation:
3,225
(02-11-2022, 09:23 PM)sirsir Wrote: দারুণ লাগলো
অনেক ধন্যবাদ
•
Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,410 in 27,674 posts
Likes Given: 23,734
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
দেরিতে হলেও আজ পড়লাম।
আমার নিজের কোনো দিদি বা বোন নেই তবে পাড়াতুতো দুই দিদি ( যাদের একজন আমার গৃহ শিক্ষিকাও ছিল ) প্রত্যেক বছর খুব জাকজমক করে ভাইফোঁটা দিতো। মিষ্টি ছাড়াও দুপুরে এলাহি ভোজনের আয়োজন হতো।
মঞ্জুদি আর ইতিদি দুই বোন !
তাদের মুখগুলো ভেসে উঠলো আজ এতো বছর পরে।
জানিনা আজ কোথায় তারা , বেঁচেও আছে কিনা কে জানে ...
Posts: 4,428
Threads: 6
Likes Received: 9,178 in 2,849 posts
Likes Given: 4,330
Joined: Oct 2019
Reputation:
3,225
(03-11-2022, 12:45 PM)ddey333 Wrote: দেরিতে হলেও আজ পড়লাম।
আমার নিজের কোনো দিদি বা বোন নেই তবে পাড়াতুতো দুই দিদি ( যাদের একজন আমার গৃহ শিক্ষিকাও ছিল ) প্রত্যেক বছর খুব জাকজমক করে ভাইফোঁটা দিতো। মিষ্টি ছাড়াও দুপুরে এলাহি ভোজনের আয়োজন হতো।
মঞ্জুদি আর ইতিদি দুই বোন !
তাদের মুখগুলো ভেসে উঠলো আজ এতো বছর পরে।
জানিনা আজ কোথায় তারা , বেঁচেও আছে কিনা কে জানে ...
চাঁদের সাথে সূর্য যেমন, ভাইয়ের সাথে বোন
সম্পর্ক না ছিন্ন হবে, তারা আপনজন।
চিন্তাধারার ভিন্নতা থাক, হোক না ঝগড়াঝাটি
তবু তাদের মাঝেই পাবে অকৃত্রিম খুনসুটি।
দূরত্বটা যতই থাকুক, অভিন্ন আত্না
আপন মাঝেই তাদের পাওয়া সকল পূর্নতা।
সুসময়ে ছায়ার মতো যদিও থাকে পাশে,
বিপদেতে সবার আগে তারাই কিন্তু আসে।
বায়না তাদের হরেক রকম, আবদারের পসরা
মিললে ভালো, না মিললেও নেই তেমন ঝামেলা।
গ্রহণ লাগুক চন্দ্রে সূর্যে; ভাইয়ে বোনে না
রক্ত তাদের বলে কথা, এক যে তাদের মা।
সম্পর্কটা অটুট থাকুক, অটুট বন্ধন
সুভাষ ছড়ায় ভাইয়ে-বোনে, যেন চন্দন।
পবিত্রতার মানে লোকে শিখুক তাদের থেকে
সম্পর্কের গভীরতা মাপুক বিশ্বলোকে।
Posts: 412
Threads: 3
Likes Received: 806 in 347 posts
Likes Given: 566
Joined: Oct 2022
Reputation:
284
(18-06-2021, 03:03 PM)Bumba_1 Wrote:
হাল ছেড়ো না বন্ধু
বরং কণ্ঠ ছাড়ো জোরে
লেখা :- বুম্বা
প্রচ্ছদ :- ব্যক্তিগত পারিবারিক অ্যালবাম থেকে
আমার জীবনের প্রথম স্টেজ পারফরম্যান্স। তখন আমার নয় বছর বয়স। অনুষ্ঠানটি হয়েছিল চন্দননগর নৃত্যগোপাল স্মৃতিমন্দিরে (যেখানে পরবর্তীকালে পরিচালক সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের জাতিস্মরের কিছু অংশের শুটিং হয়েছিল)।
ছোটবেলাতে যে আমার গানবাজনার খুব আগ্রহ ছিল তা নয়। একপ্রকার জোর করেই আট বছর বয়সে আমাকে গানের দিদিমণির কাছে ভর্তি করে দেয় আমার মা। অশ্রুকণা পাল সেই সময়ের খুব নাম করা একজন উচ্চাঙ্গসংগীতের বেতার-শিল্পী .. তিনিই আমার প্রথম সঙ্গীতের গুরু।
গানের গলা যে আমার সেইসময় একেবারে মধুমাখা ছিলো তা হয়তো নয়, তবে দিদিমণি এবং সেই সময়কার সমসাময়িক কিছু মানুষ বলতেন আমার "তাল সেন্স" নাকি খুব ভালো। তার মানে হলো তবলার ঠেকা শুনে আমি যখন খুশী গান ধরতে পারতাম।
দিদিমণির কাছে যারা গান শিখতো তাদের কাছে সেটা দুর্বোধ্য ব্যাপার ছিল। তাই কিছুদিনের মধ্যেই অনেকেরই চক্ষুশূল হয়ে উঠলাম আমি। বিশেষত মৃত্তিকা নামের একজন মেয়ের কাছে তো বটেই, সে কথাই বলবো আজ তোমাদের।
তবে দিদিমণি আমাকে খুবই ভালোবাসতেন (এখনও বাসেন)। যাইহোক এবার অনুষ্ঠানের দিনের কথায় আসি..
দিনটি ছিল ১৮ই নভেম্বর .. প্রখ্যাত উচ্চাঙ্গসংগীত শিল্পী নলিনীকান্ত বাগচীর জন্মদিন। উনি দিদিমণির গুরু ছিলেন তো বটেই, সেই সঙ্গে চন্দননগরের সংগীত জগৎ এর এক উজ্জ্বল নক্ষত্র ছিলেন। উনার সম্মানার্থেই সেদিনের অনুষ্ঠানটি হয়েছিল।
সেদিন সেখানে উপস্থিত ছিলেন আরো কয়েকজন গুনি মানুষ। তনিমা ঠাকুর, কুমার রায়, বুদ্ধদেব দাসগুপ্ত (এদের পরিচয় করিয়ে দেওয়ার দরকার নেই, এরা প্রত্যেকেই নিজ নিজ ক্ষেত্রে সেরা) ইত্যাদি ইত্যাদি আরও কিছু নমস্য ব্যক্তি। এক কথায় সেদিন ওখানে চাঁদের হাট বসেছিল।
দিদিমণির এতটাই প্রিয় ছাত্র ছিলাম, উনি বলেছিলেন "উদ্বোধনি সংগীত তুই গাইবি।" যেহেতু সন্ধ্যেবেলার অনুষ্ঠান তাই ত্রিতালের উপর ইমনরাগের একটা খেয়াল ঠিক করে দিয়েছিলেন আমার জন্য। আমিও খুব খুশী, এতো গণ্যমান্য ব্যক্তিরা আসছেন তাদের সামনে গান গাওয়ার একটা সুযোগ পাবো এটা ভেবে।
বিকেল পাঁচ'টা তে পৌছনোর কথা ছিল আমার। আমার তাড়নার চোটে বিকেল চার'টে তেই মা আমাকে নিয়ে যেতে বাধ্য হলো।
গ্রিনরুমে এ বসে অপেক্ষা করছি কখন শুরু হবে অনুষ্ঠান, কখন ডাকবে আমাকে। সন্ধ্যে ছ'টা তে অনুষ্ঠান শুরু হলো, কিন্তু কই আমাকে তো ডাকলো না। মা দৌড়ে গেল দিদিমণির কাছে, জানতে চাইলো 'কি হলো'.. দিদিমণি বললেন, "এই তো পরের বারে বুম্বাকেই বসানো হবে" ..
কিন্তু পরের বারেও যে সুযোগ এলো না .. একটার পর একটা গান হয়ে যাচ্ছে আমার ডাক আর আসছে না। রাত আট'টা বেজে গিয়েছে তখনো কোনো খবর নেই। মা আবার গেলেন দিদিমণির কাছে, থমথমে মুখে দিদিমণি যা বললেন তার মানে এই আজ আর আমার গান গাওয়া হবে না। মৃত্তিকা যে আমাকে সবথেকে বেশি ঘেন্না করতো দিদিমণির ক্লাসে, তার বাবা ওখানকার তৎকালীন রুলিং পার্টির লোকাল কাউন্সিলর ছিলেন আর সেই নাকি পুরো অনুষ্ঠানটি স্পন্সর করছে। তাই তিনি আর তার মেয়ে চায় না আমি গান গাই।
পাবলিক প্লেসে মা'কে সেদিন প্রথম কাঁদতে দেখেছিলাম। সাড়ে আট'টা বেজে গেলো। অনুষ্ঠান ন'টায় শেষ হবে। আমি সেই যে দুপুরবেলা ভাত খেয়েছিলাম তারপর থেকে কিছুই আর খাইনি। ক্ষিদেতে পেট চুঁইচুঁই করছে। শরীর আর বইছে না, সারাদিনের উৎসাহ, সারাদিনের পরিকল্পনা.. সব শেষ।
মা বললো "চল আমরা চলে যাই, অপেক্ষা করার আর কোনো মানেই হয়ে না।"
আমরা বেরিয়ে যাওয়ার মুখে দিদিমণি হঠাৎ এসে মা'র হাত টা চেপে ধরে বললেন "বৌদি, মৃত্তিকার বাবার সঙ্গে কথা হয়েছে, উনি বুম্বাকে গাইতে দিতে রাজি হয়েছেন, তবে সময় মাত্র পনেরো মিনিট পাবে"।
মা বললো "আজ আর ও গাইতে পারবে না, সেই দুপুরের পর থেকে কিছুই খায়নি ছেলেটা, তার উপর এতক্ষণ অপেক্ষা করে সব এনার্জি শেষ। আমরা এখন যাব।"
দিদিমণি বললেন "ওকে গাইতে দিন বৌদি, আজ না গাইলে কোনোদিন পারবে না, ওকে বুঝতে দিন বাস্তবটা বড়ই কঠিন, সব কিছু লড়াই করেই পেতে হয়, কি রে বুম্বা পারবি না? সবাইকে দেখিয়ে দিতে হবে তো তুই আমার সেরা ছাত্র, কিরে পারবি তো বল!"
আমি কি বুঝলাম জানি না, "হ্যাঁ পারবো" বলে দিলাম।
পৌনে ন'টায় আমার গান শুরু হল। হাতে মাত্র পনেরো মিনিট সময়। আলাপ শুরু করলাম, পাঁচ মিনিট করার পর থেমে গেলাম, কারণ পনেরো মিনিটে পুরো গান'টা তো শেষ করতে হবে। দর্শক আসন থেকে নলিনীবাবু হাত নাড়িয়ে নির্দেশ দিলেন আলাপটা চালিয়ে যেতে, আলাপ যখন শেষ হলো ঘড়িতে দেখলাম কুড়ি মিনিট হয়ে গিয়েছে। এরপর আরোহণ-অবরোহণ, তারপর প্রধান রাগ, সব শেষে তান-সারগাম। আমার গান যখন শেষ হলো ঘড়িতে সাড়ে ন'টা বেজে গিয়েছে।
হাততালি তে ফেটে পড়লো গোটা হল। স্টেজের একপাশে দেখলাম মা আর দিদিমণি দাঁড়িয়ে আছেন, দুজনের চোখেই জল। আর একপাশে দাঁড়িয়ে আছেন মৃত্তিকার বাবা, পাংশুটে মুখে কি যেন বিড়বিড় করছেন।
অনুষ্ঠান শেষে নলিনীবাবু আমাকে গ্রিনরুমে ডেকে অনেক আশীর্বাদ করলেন। শ্রদ্ধেয়া তনিমা ঠাকুর আমাকে একটা কলম উপহার দিয়েছিলেন। সেটা এখনও যত্ন করে রাখা আছে আমার কাছে।
জীবনে অনেক খারাপ সময় আসবে, সেটাকে আঁকড়ে না থেকে, জীবনে যা কিছু ভালো .. সেটাকে পাথেয় করে চলতে পারলে তবেই সাফল্য আসবে।
জীবনস্মৃতি সততঃ সবার সুখের হয় না কিন্তু তাহাতে কচ্চিৎ এমন সব ঘটনা লিপিবদ্ধ হইয়া যায় যাহা আমৃত্যু স্মৃত থাকে। এবং তাহা পুনঃ পুনঃ স্মরণ করিতেও ইচ্ছা জাগে। আপনার সঙ্গীত প্রতিভার কথা জানিয়াও চমৎকৃত হইলাম। যে রান্ধে সে যদি চুল বান্ধিতে পারে তবে যে লেখে সে গীতও গাহিতে পারে।
আপনি লিখিয়া চলুন, গীত শুনিবার সৌভাগ্য না হউক, পাঠ পঠিবার পরমভাগ্য তো থাকিবে। উহাই কম কীসে!
Posts: 6,108
Threads: 41
Likes Received: 12,067 in 4,138 posts
Likes Given: 5,306
Joined: Jul 2019
Reputation:
3,734
(03-11-2022, 02:31 PM)মহাবীর্য্য দেবশর্ম্মা Wrote: জীবনস্মৃতি সততঃ সবার সুখের হয় না কিন্তু তাহাতে কচ্চিৎ এমন সব ঘটনা লিপিবদ্ধ হইয়া যায় যাহা আমৃত্যু স্মৃত থাকে। এবং তাহা পুনঃ পুনঃ স্মরণ করিতেও ইচ্ছা জাগে। আপনার সঙ্গীত প্রতিভার কথা জানিয়াও চমৎকৃত হইলাম। যে রান্ধে সে যদি চুল বান্ধিতে পারে তবে যে লেখে সে গীতও গাহিতে পারে।
আপনি লিখিয়া চলুন, গীত শুনিবার সৌভাগ্য না হউক, পাঠ পঠিবার পরমভাগ্য তো থাকিবে। উহাই কম কীসে!
এই থ্রেডে একসে বরকে এক অসাধারণ সব ঘটনা কাহিনী ছড়া আছে। সময় করে পড়ে নিও। ছোটবেলা থেকে বড়োবেলা পুরো চক্কর দেওয়া হয়ে যাবে
Posts: 4,428
Threads: 6
Likes Received: 9,178 in 2,849 posts
Likes Given: 4,330
Joined: Oct 2019
Reputation:
3,225
(03-11-2022, 02:31 PM)মহাবীর্য্য দেবশর্ম্মা Wrote: জীবনস্মৃতি সততঃ সবার সুখের হয় না কিন্তু তাহাতে কচ্চিৎ এমন সব ঘটনা লিপিবদ্ধ হইয়া যায় যাহা আমৃত্যু স্মৃত থাকে। এবং তাহা পুনঃ পুনঃ স্মরণ করিতেও ইচ্ছা জাগে। আপনার সঙ্গীত প্রতিভার কথা জানিয়াও চমৎকৃত হইলাম। যে রান্ধে সে যদি চুল বান্ধিতে পারে তবে যে লেখে সে গীতও গাহিতে পারে।
আপনি লিখিয়া চলুন, গীত শুনিবার সৌভাগ্য না হউক, পাঠ পঠিবার পরমভাগ্য তো থাকিবে। উহাই কম কীসে!
অসংখ্য ধন্যবাদ সঙ্গে থাকুন আর পড়তে থাকুন
•
Posts: 4,428
Threads: 6
Likes Received: 9,178 in 2,849 posts
Likes Given: 4,330
Joined: Oct 2019
Reputation:
3,225
06-11-2022, 09:21 PM
(This post was last modified: 06-11-2022, 09:24 PM by Bumba_1. Edited 3 times in total. Edited 3 times in total.)
~ মেঘে ঢাকা কারা ~
তথ্যসূত্রঃ- The Telegraph
পৃথিবীর ইতিহাসে পারমানবিক আগ্নেয়াস্ত্র আবিষ্কার হয়েছিলো ১৯৪৬ সালের ১৬ই জুলাই আর বাংলা ও বাঙ্গালীর ইতিহাসে একজন ঋত্বিক কুমার ঘটক জন্ম গ্রহন করছিলেন ১৯২৫ সালের ৪ই নভেম্ভর, ঢাকা, বাংলাদেশে। গায়ে পাঞ্জাবি, কাঁধে শান্তিনিকেতনী ঝোলা, সদা খোঁচা দাড়ি, আর কালো ফ্রেমের লেন্সের ঝাপসা চোখের নিম্নমধ্যবিত্ত চাঁদরে আবৃত ঋত্বিক। মদ হাতে প্রায় বলতেন” আমি এক মাতাল, ভাঙ্গা বুদ্ধিজীবী, ব্রোকেন ইন্টেল্যাকচুয়াল। কাটার ঊর্ধ্বে কেবল ফুলই হয় সুন্দর যেমন, তেমন বিচিত্র ছিলেন উনার জীবনযাপন চলাচল আর কাজের মধ্যকার সম্পর্ক। চোখ থেকে চশমার দূরত্ব যতটুকু ঠিক ততোটুকু দূরত্বেই বরাবর জীবকে দেখতে চেয়েছিলেন তিনি। তার প্রতিচ্ছবিও দেখা গিয়েছে উনার সকল সৃষ্টিতে। বহরমপুর কৃষ্ণনাথ কলেজ থেকে বিএ ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৫০ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজিতে এমএ কোর্স শেষ করলেও পরীক্ষাটা আর দেওয়া হয়ে ওঠেনি ওনার।
ওনার বড় ভাই মনীশ ঘটকও ছিলেন খ্যাতনামা লেখক। ওনার বাবাও লিখালিখির সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন। সেখান থেকেই সাহিত্য চর্চার পোকাদের সাথে মোটামুটি বসবাস করা শুরু উনার। ৪৭ এর ভারত ভাগের পর সপরিবারে কলকাতা যেতে বাধ্য হয়। নিজ মাতৃভূমি ত্যাগ করে শরণার্থী হবার মর্মবেদনা উনি কোনদিনই ভুলতে পারেননি, সেই ছাপ উনার জীবন দর্শন এবং উনার পরবর্তী সৃষ্টিতে ফুটে উঠেছে।
কলকাতায় এসে যোগ দেন পিপলস থিয়েটারে। তখন পিপলস থিয়েটারই ছিল ভারতের সবচেয়ে জীবন্ত থিয়েটার। সেই থিয়েটারের পশ্চিমবঙ্গ ভিত্তিক সংগঠনে ছিলেন ঋত্বিক কুমার ঘটক। লিখালিখির পোকাদের সাথে জীবন যাপন আস্তে আস্তে স্ব-বন্ধুবান্ধবে পরিণত হতে শুরু করে। অভিনয়ের পাশাপাশি নাটক লিখা শুরু করলেন। যোগ দিলেন সাম্রাজ্যবাদ এবং ব্রিটিশবিরোধী নাট্য আন্দোলনে। আস্তে আস্তে লিখালিখির চেয়ে নাটকে বেশি ঝুঁকে পরলেন উনি, উনার যুক্তি ছিলো গল্প পড়ার চেয়ে মানুষ নাটক বেশি দেখে। ওনার সৃষ্টিকে জনমানুষের বিশাল গভীরতায় পৌঁছে দেয়ার প্রবণতা উনার বরাবরই ছিলো।
লিখেছেন কত ধানে কত চাল, ইস্পাত, জ্বলন্ত এর মত অসাধারণ সব নাটক। নির্দেশনাও দিয়েছেন জ্বলা(১৯৫১),দলিল(১৯৫১) এর মত উল্লেখযোগ্য নাটক। দলিল ছিলো দেশভাগের ফলে বাংলা দু’ভাগ হয়ে যাওয়া সাধারণ মানুষের দুঃখ ভারাক্রান্ত ও বিচলিত হওয়া দীর্ঘ শ্বাস নিয়ে। জ্বালা ছিল ঋত্বিকের নির্দেশনায় সর্বশেষ নাটক যেটা তিনি পরিচালনা করেন ১৯৫৭ সালে।
তার কিছুদিন পরেই চিদানন্দ ও সত্যজিৎ রায়ের সৃষ্ট কলকাতা ফিল্ম সোসাইটির দৌলতে তিনি ডি সিকার বাইসাইকেল থিভস এবং আকিরা কুরোসাওয়ার জাপানি ফিল্ম রশোমন এর মতো ফিল্মগুলো দেখার সুযোগ পান। এরপর তিনি উপলব্ধি করেন যে হয়তো নাটকের চেয়ে সিনেমাতে উনি উনার গল্পগুলোকে বেশি মানুষের কাছে পৌছাতে পারবেন। তার ভাষ্য মতে,
‘'ছবি মানুষ দেখে। ছবি দেখানোর সুযোগ যতদিন থাকবে ততদিন ছবি দেখানোর জন্য আর নিজের পেটের ভাতের জন্য ছবি করবো। কালকে বা দশ বছর পরে যদি সিনেমার চেয়ে ভালো কোন মিডিয়াম বেরোয় আর দশ বছর পর যদি আমি বেঁচে থাকি, তাহলে সিনেমাকে লাথি মেরে আমি সেখানে চলে যাব। সিনেমার প্রেমে নেশায় আমি পড়িনি। আই ডু নট লাভ ফিল্ম।’'
এখন প্রশ্ন হতে পারে, তিনি ফিল্ম ভালোবাসেন না কিন্তু শিল্পচর্চার মাধ্যমে অধিক মানুষের কাছে পৌঁছানোর তাঁর এই তাগিদের উদ্দেশ্যটা কি ? এই বিষয়ে ঋত্বিকের মতামত ছিলো, ‘প্রতিবাদ করা শিল্পীর প্রথম এবং প্রধান দায়িত্ব। শিল্প ফাজলামি নয়। যারা প্রতিবাদ করছে না তারা অন্যায় করছে। শিল্প দায়িত্ব, আমার অধিকার নেই সে দায়িত্ব এড়িয়ে যাওয়ার। শিল্পী সমাজের সঙ্গে আষ্টেপৃষ্ঠে বাঁধা। সে সমাজের দাস। এই দাসত্ব স্বীকার করে তবে সে ছবি করবে।’
তিনি ছিলেন ছিলেন স্ফটিকের মত স্বচ্ছ আয়না। যে আয়নায় সমাজ জীবনের মানুষ তাদের স্পষ্ট চেহারা দেখতে পেতো। হয়তো তখনকার সমাজের কিছু মানুষ তাদের ঐ চেহারাকে এতটা পরিষ্কার দেখতে ভয় পেত। তা উনার প্রথম সিনেমা “নাগরিক” থেকেই বোঝা যায়, যদিও উনার জীবদ্দশায় এই সিনেমা মুক্তি পায় নি। মুক্তি পাওয়া উনার প্রথম ছবি ছিলো “অযান্ত্রিক”। অভাব-অনটন ঝোলায় নিয়েও তৈরি করেছেন মেঘে ঢাকা তারা, যুক্তি তক্ক গপ্প, বাড়ি থেকে পালিয়ে, তিতাস একটি নদীর নাম এর মত কালজয়ী সিনেমা।অযান্ত্রিক এর সময় থেকে ঋত্বিকের অল্প অল্প মদ্যপানের শুরু।১৯৬২ সালে বানালেন স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র সিজর্স, ১৯৬৩ সালে ডকুমেন্টরি ওস্তাদ আলাউদ্দীন খান। এই সময় বগলার বঙ্গদর্শন নামে একটি সিনেমার কাজ শুরু করলেও আর শেষ করতে পারেননি। কোমল গান্ধার ফ্লপ হওয়াটা ছিল কফিনের শেষ পেরেক।
১৯৬৫ সালের দিকে বাংলা মদ ধরলেন, এমনকি স্নান করাও ছেড়ে দিলেন। তাঁর এমন জীবনযাত্রার ফলে অতিষ্ঠ হয়ে তাঁর স্ত্রী ছেলেমেয়েদের নিয়ে বাবার বাড়ি চলে যেতে বাধ্য হলেন। মদ্যপান নিয়ে একটা মজার ঘটনা প্রচলিত আছে। এক রাত্রে ঋত্বিক ফিরছেন, ঠিক হেঁটে ফেরার অবস্থায় নেই তখন আর। ট্যাক্সি, অগত্যা, পকেটে পয়সা না থাকা সত্ত্বেও।
- ভাড়া, স্যার…
“আমার কাছে টাকা নেই। তুমি এক কাজ কর – এখান থেকে সোজা ১/১ বিশপ লেফ্রয় রোডে চলে যাও। সেখানে গিয়ে দেখবে, একটা ঢ্যাঙা লোক দরজা খুলবে। ওকে বোলো, ঋত্বিক ঘটক ট্যাক্সি করে ফিরেছে, সঙ্গে টাকা ছিল না। ও টাকা দিয়ে দেবে।”
সেই দীর্ঘকায় ব্যক্তি, যা শোনা যায়, সেইবার, এবং এরপর বার বার, ভাড়া মিটিয়ে দিয়েছিলেন। ঋত্বিক তাঁকে উত্ত্যক্ত করতেন, কিন্তু মুক্তকণ্ঠে স্বীকার করতেন, ‘ভারতবর্ষে সব থেকে ঠিকঠাক ক্যামেরা বসাতে জানে ঐ ঢ্যাঙা লোকটাই।’ তারপর অবিশ্যি যোগ করতেন, ‘আর হ্যাঁ, আমি খানিকটা জানি।’ দীর্ঘকায় ব্যক্তিটি, যার মতে সিনেমার সম্ভাব্য কোনো বিষয় নিয়ে লিখতে বাদ রাখেননি ঋত্বিক, ছিলেন আরেক কিংবদন্তি চলচ্চিত্রকার। সত্যজিৎ রায় অযান্ত্রিক দেখার পর সত্যজিৎ রায় বলেছিলেন "ঋত্বিক বাবু সময়মত ছবিটি দেখাতে পারলে উনি হতেন পথিকৃৎ।”
সমাজ জীবনের যন্ত্রণা চলাকালীন সময়ে উনি কমিউনিস্ট ভিত্তিক রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন।১৯৬৬ সালে ঋত্বিক পুনের ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন ইন্সটিটিউটে ভিজিটিং প্রফেসর হিসেবে যোগ দেন এবং পরে ভাইস প্রিন্সিপাল হন। উনি সিনেমা বানানোর চেয়েও ওনার শিক্ষকতা পেশাকেই এগিয়ে রাখতেন। কারণ ওনার শত শত ছাত্র ছড়িয়ে পরেন দেশ তথা পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে। তিতাস একটি নদীর নাম সিনেমার কাজ চলাকালীন সময়ে উনি যক্ষ্মায় আক্রান্ত হন। চল্লিশের দশক থেকে শুরু করে সত্তর এর দশক পর্যন্ত সমাজ জীবনের দুঃখ দুর্দশার প্রতিফলন পাওয়া যায় উনার সৃষ্টিতে। সেই প্রতিফলন দেখার জন্য দৃষ্টি ক্ষমতা হয়তো তখন আপামর বাঙ্গালীর ছিল না। উনি একবার রাগ করে এক ইন্টার্ভিউতে বলেওছিলেন,
“ ইদানিং সত্যজিৎ বাবুদের ছবি আর ছবি দেখতে যাওয়া দর্শকদের দেখলে বেশ আনন্দ হয়, একদিন হয়তো বাংলা সিনেমার আরো শিক্ষিত দর্শক হবে হয়তো সেদিন আর ঋত্বিক থাকবে না। ভাবো ভাবো ভাবা প্র্যাকটিস করো..”
এই ইঙ্গিত হয়তো তখন আমাদের বোধের ছিলো না। ব্যক্তিগত জীবনে অভাব-অনটন, ঝড়-ঝঞ্ঝা ছিল, কিন্তু তিনি নিজের দর্শনের সঙ্গে আমৃত্যু আপস করেননি। কাজের স্বীকৃতি সীমিত হলেও তিনি তাঁর সৃষ্টির তাড়না থেকে বিচ্যুত হননি কখনও।
স্ত্রী সুরমা ঘটককে তিনি বলতেন, “লক্ষ্মী, টাকাটা তো থাকবে না, কাজটা থাকবে। তুমি দেখে নিও আমি মারা যাওয়ার পর সব্বাই আমাকে বুঝবে।”
একবার ইন্টার্ভিউতে অনেক বিরতি দিয়ে ছবি বানানো নিয়ে এক সাংবাদিক ওনাকে প্রশ্ন করলে উনি সরাসরি বলেন দেখুন আমি পরিচালক আর স্রষ্টার মধ্যকার একটা পার্থক্য খুব পরিষ্কার চোখে দেখি, একজন পরিচালক যেকোনো একটি বিষয় নির্বাচন করেন বাঁ গল্প নির্বাচন করে সংলাপ চিত্রনাট্য নির্বাচিত চরিত্রদের মাঝে বিপণন করেন শুটিং করেন, এডিটিং করান তারপর ছবিটিকে সবার সামনে নিয়ে আসেন, আর একজন স্রষ্টা জীবন, সমাজ থেকে বিষয়কে তুলে এনে গল্পে রূপ দেন, আস্তে আস্তে নিজের মধ্যে লালন পালন করতে থাকেন, গল্পের চরিত্রদের নিজের সন্তান সুলভ লালন পালন করতে থাকেন, তাদের আচার আচরণ , পোশাক আবরণ, অভ্যাস দিয়ে বড় করে তোলেন গল্পের জন্য তারপর সংলাপ, শুটিং , এডিটিং করে তার নির্মাণকে সবার সামনে নিয়ে আসেন। একজন পরিচালক অনেক কিছু করতে পারেন কিন্তু একজন স্রষ্টা পারেন না। তাই সময় লাগে। আমাদেরও লেগেছে এমন একজন নক্ষত্রকে উনার সময়কে ধরতে না পারার কষ্টকে আগলাতে, ওনাকে বুঝতে। সত্যই হয়তো বাংলা সিনেমার ক্ষণিক শিক্ষিত দর্শক হয়েছে, হয়তো আরো হবে, কেবল একজন ঋত্বিক কুমার ঘটকই তা দেখে যেতে পারলেন না। কিন্তু বাংলা চলচ্চিত্র বা বিশ্ব চলচ্চিত্র আজন্ম দেখবে, মনে রাখবে আপনার নাম তথা আপনার সৃষ্টি স্বর্ণাক্ষরে। ঋত্বিক বেঁচে থাকবে স্রষ্টা হয়ে তাঁর সৃষ্টির আলোয়..
কিংবদন্তি পরিচালক ঋত্বিক ঘটকের জন্মদিনে আমার পক্ষ থেকে রইলো বিনম্র শ্রদ্ধাঞ্জলি
-- ★★ --
Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,410 in 27,674 posts
Likes Given: 23,734
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
Posts: 6,108
Threads: 41
Likes Received: 12,067 in 4,138 posts
Likes Given: 5,306
Joined: Jul 2019
Reputation:
3,734
Posts: 4,428
Threads: 6
Likes Received: 9,178 in 2,849 posts
Likes Given: 4,330
Joined: Oct 2019
Reputation:
3,225
(06-11-2022, 09:36 PM)ddey333 Wrote:
♥️♥️♥️
(06-11-2022, 09:45 PM)Baban Wrote: দারুন দারুন ♥️
♥️♥️♥️
•
Posts: 109
Threads: 1
Likes Received: 150 in 29 posts
Likes Given: 120
Joined: Oct 2022
Reputation:
56
বাহ অসাধারণ। এরম কনসেপ্ট এ কোন সাইটে কারুর লেখা পড়েছি বলে মনে পড়েনা। সময় করে সবকটা পড়বো। আজ শুধু প্রথম টা পড়লাম।
Posts: 1,375
Threads: 2
Likes Received: 1,406 in 973 posts
Likes Given: 1,714
Joined: Mar 2022
Reputation:
81
সমৃদ্ধ হলাম
Posts: 4,428
Threads: 6
Likes Received: 9,178 in 2,849 posts
Likes Given: 4,330
Joined: Oct 2019
Reputation:
3,225
(06-11-2022, 11:14 PM)golpokar Wrote: বাহ অসাধারণ। এরম কনসেপ্ট এ কোন সাইটে কারুর লেখা পড়েছি বলে মনে পড়েনা। সময় করে সবকটা পড়বো। আজ শুধু প্রথম টা পড়লাম।
আচ্ছা, ঠিক আছে
(07-11-2022, 08:25 AM)Somnaath Wrote: সমৃদ্ধ হলাম
you're most welcome ♥️♥️
•
Posts: 1,237
Threads: 2
Likes Received: 2,210 in 1,011 posts
Likes Given: 1,613
Joined: Jul 2021
Reputation:
654
খুব ভালো লাগলো
Posts: 12
Threads: 0
Likes Received: 31 in 20 posts
Likes Given: 74
Joined: May 2022
Reputation:
3
(06-11-2022, 09:21 PM)Bumba_1 Wrote: এই ইঙ্গিত হয়তো তখন আমাদের বোধের ছিলো না। ব্যক্তিগত জীবনে অভাব-অনটন, ঝড়-ঝঞ্ঝা ছিল, কিন্তু তিনি নিজের দর্শনের সঙ্গে আমৃত্যু আপস করেননি। কাজের স্বীকৃতি সীমিত হলেও তিনি তাঁর সৃষ্টির তাড়না থেকে বিচ্যুত হননি কখনও।
স্ত্রী সুরমা ঘটককে তিনি বলতেন, “লক্ষ্মী, টাকাটা তো থাকবে না, কাজটা থাকবে। তুমি দেখে নিও আমি মারা যাওয়ার পর সব্বাই আমাকে বুঝবে।”
-- ★★ --
বড় ভালো লিখেছেন
Posts: 4,428
Threads: 6
Likes Received: 9,178 in 2,849 posts
Likes Given: 4,330
Joined: Oct 2019
Reputation:
3,225
(07-11-2022, 02:44 PM)Sanjay Sen Wrote: খুব ভালো লাগলো
(07-11-2022, 04:03 PM)rubisen Wrote: বড় ভালো লিখেছেন
অসংখ্য ধন্যবাদ দুজনকেই
•
Posts: 4,428
Threads: 6
Likes Received: 9,178 in 2,849 posts
Likes Given: 4,330
Joined: Oct 2019
Reputation:
3,225
26-11-2022, 09:47 PM
(This post was last modified: 27-11-2022, 03:44 PM by Bumba_1. Edited 2 times in total. Edited 2 times in total.)
~ অশনি সংকেত ~
প্রায় পাঁচ ঘন্টার জার্নি। ক্লান্তিতে কিছুটা ঝিমুনি এসে গিয়েছিলো অভীকের। আর মাত্র দুটো স্টেশন, তারপরেই তো নামতে হবে .. তার পিসতুতো ভাই সুব্রত সেরকমই বলেছিলো। এই শীতের রাতে তার চন্দননগরের বাড়ির নরম বিছানা ছেড়ে সুদূর ঝাড়খন্ডের এই প্রত্যন্ত রেলরুটের বকুলতলা গ্রামে আসার কারণ তার রাঙাপিসি।
বকুলতলায় অভীক শেষবার তার মা-বাবার সঙ্গে এসেছিল প্রায় বছর কুড়ি আগে। তারপর থেকে আর কখনও আসা হয় নি। কিছুটা দূরত্বের জন্য তো বটেই আর কিছুটা অবশ্যই তার বাবার জেদ। কোনো এক অজ্ঞাত কারণে পিসেমশাইয়ের সাথে অভীকের বাবার নাকি তুমুল অশান্তি হয়। তারপর থেকেই মা ফোনে যোগাযোগ রাখলেও বাবা এড়িয়েই চলতো রাঙাপিসির পরিবারকে। এখন আর বাবা বেঁচে নেই, পিসেমশাইও গত হয়েছেন। অভীকের বাবার বাড়ির তরফে আর কেউ এই পৃথিবীতে নেই, এই এক রাঙাপিসি ছাড়া। এবার তার মাও আসতে চেয়েছিলো, কিন্তু চিরদিনের অ্যাজমার পেশেণ্ট তার মা ভারতী দেবীকে নিয়ে এই ঠাণ্ডায় এতদূর নিয়ে আসার 'রিস্ক' নেয়নি অভীক।
হঠাৎ একটা ঝাকুনিতে ঝিমুনিটা কেটে যায় অভীকের। কম্পার্টমেন্টের অল্প আলোয় তার চশমার ওপারে কাউকে দেখতে পায় না সে। 'আরে .. কম্পার্টমেন্টের সবাই নেমে গেলো নাকি!' কিছুটা হলেও অবাক হয় অভীক। ভীড় ছিলো না তেমন, তবে সামান্য দু-একজন যারা ছিলো, গেলো কোথায় সব? আরও অবাক হয় এটা ভেবে যে, 'ট্রেন কি তবে কোনো জংশন স্টেশনে পৌঁছে গেলো নাকি?' না, তাও তো নয় ! ট্রেনের জানালা দিয়ে বাইরে আবছায়াতে কোনো এক 'পলাশপুর' রেল স্টেশনের নাম পড়তে পারলো সে। কিন্তু তার পিসতুতো ভাই সুব্রত বারবার তাকে যে বলে দিয়েছিলো দক্ষিণগঞ্জের পরেই বকুলতলা।
তার তো হিসেবমতো একটা স্টেশন পার হওয়ার কথা ! তবে কি সুব্রত ভুল বললো? পকেট থেকে মোবাইলটা বের করে দেখতে পেলো ফোনের চার্জ ২% দেখাচ্ছে। ব্যাগের ভেতর অনেক খুঁজেও সেই মুহূর্তে ফোনের চার্জার পেলো না সে, তবে কি আনতেই ভুলে গেছে চার্জারটা! এবার সামান্য হলেও একটু ভয় পেলো অভীক। আকাশের সিলুয়েটে একটা পাহাড় দেখা যাচ্ছে। ট্রেনের ভেতর পাবলিক টয়লেট ছিলো না। এতক্ষণ ধরে হাল্কা হতে না পারার জন্য ভিতরে প্রচন্ড অস্বস্তি হচ্ছিলো তার। তাই সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতে কিছুটাই ইতস্ততঃ করেই প্ল্যাটফর্মে নেমে পড়লো অভীক।
খুব একটা বড়ো স্টেশন নয়। ঘড়িতে তখন রাত দশটা পঁচিশ। প্লাটফর্মে দু-একটা অল্প পাওয়ারের আলো টিমটিম করে জ্বলছে। একটা গা শিরশির করা ঠাণ্ডা হাওয়া, তার সঙ্গে কিসের যেন চাপা দুর্গন্ধ ভাসছে বাতাসে। আর এর বাইরে শুধুই শ্মশানের নিস্তব্ধতা। কিন্তু এতবড় একটা ট্রেনে কি সে একাই একজন যাত্রী ছিলো! তার থেকেও বড় ব্যাপার হলো তার আগে যারা এখানে নেমেছিলো, তাদের দেখতে পেলো না অভীক। যে কারণের জন্য অর্থাৎ একটু হাল্কা হওয়ার উদ্দেশ্যে এই প্ল্যাটফর্মে নামা .. আবছায়া আলোয় একটা টয়লেট চোখে পড়াতে সেইদিকে দ্রুতপায় এগিয়ে গেলো অভীক। সবে টয়লেট করা শেষ হয়েছে, সেই মুহূর্তে অভীক দেখতে পেলো সাইরেন বাজিয়ে ট্রেনটা আচমকা সরে পড়তে শুরু করেছে প্ল্যাটফর্ম থেকে। হঠাৎ করে ট্রেনের গতি এতটাই বেড়ে গেলো যে দৌড়ে ট্রেনের কামড়ায় উঠতে গিয়ে পা মচকালো তার .. মাটিতে পড়ে গেলো অভীক। ট্রেনের পিছনের লাল আলোটা টিপ টিপ করে জ্বলতে জ্বলতে শেষ আশার মতো দূরের কুয়াশাতে মিলিয়ে গেলো।
সেই মুহূর্তে হঠাৎ করে মাথায় একরাশ দুশ্চিন্তা এসে যাওয়ায় এই শীতেও তার বেশ গরম লাগতে শুরু করলো। ব্যাগে বেশ কিছু টাকা আছে; তাই ব্যাগটাকে চেপে ধরে স্টেশন মাস্টারের ঘরের দিকে এগোলো সে। অবাক কান্ড! এই অদ্ভুতদর্শন স্টেশনে কি কোনো স্টেশন মাস্টারও নেই? পলেস্তারা খসা ঘরটার গায়ে একটা নোটিস দেখে থমকে গেলো অভীক। জংধরা প্রায় ফিকে হয়ে আসা লাল রঙের একটি নোটিশবোর্ডে লেখা আছে 'আ লো নি ভি য়ে রা খু ন'। উপর থেকে নীচে আশ্চর্যজনকভাবে অক্ষরগুলো সাজানো। এমন অদ্ভুত নোটিশ কেনো, এগুলো কি কোনো অশনি সংকেত .. সে ভেবে অবাক হলো। তাই কি স্টেশনটা এমনধারা অন্ধকারাচ্ছন্ন? আর তখনই স্টেশন চত্বরে ধীরে ধীরে অন্ধকারের বুক চিরে একটা ট্রেন এসে থামলো।
যাক, শেষ পর্যন্ত মুক্তি পাওয়া গেলো তাহলে। অভীক লক্ষ্য করলো এই ট্রেনটিও এত রাতে প্রায় জনশূন্য। 'প্রায়' জনশূন্য এই কারণে যে, ট্রেন থেকে কয়েকটা কম্পার্টমেন্ট দূরে গুটিকয়েক ব্যক্তিকে নামতে দেখলো সে। তারপর দেখলো ট্রেন থেকে নামা লোকগুলি হাত নেড়ে তাকে ডাকছে ! ছ্যাঁৎ করে উঠলো তার বুকটা। ডাকাত নাকি ? মুহূর্তের মধ্যে অভীকের পা যেন পাথরের মতো ভারী হয়ে গেলো .. চোখের সামনে দিয়ে বেরিয়ে গেলো ট্রেনটা। চাপা অস্বস্তিকর দুর্গন্ধটা আরো প্রকট থেকে প্রকটতার হতে শুরু করলো। মুহূর্তের মধ্যে লোকগুলো তাকে ঘিরে ফেললো .. মোট আটজন ব্যক্তি। তাদের মুখের দিকে তাকাতেই সে লক্ষ্য করলো সবাইকে যেন হুবহু একরকম দেখতে, কিন্তু কারোর চোখ দেখতে পাওয়া যাচ্ছে না .. ফ্র্যাঙ্কেনস্টাইন শব্দটা মনে পড়লো তার। ভয়, উত্তেজনায় এবং কনকনে ঠান্ডায় ঠকঠক করে কাঁপতে লাগলো অভীক। বিস্ময়ের চরম মুহূর্তে তাকে অতিমাত্রায় বিস্মিত এবং আতঙ্কিত করে সেই অদ্ভুত নোটিশবোর্ডটা চকচক করে উঠলো। সেখানে তখন পাশাপাশি লেখা আছে 'আটজন লোকের নির্জন ভিড় হয়ে খুন হবে নয়'। লোকগুলোর প্রত্যেকের হাতে তখন দড়ির ফাঁস। তারপর ? তারপর সব অন্ধকার।
অভীকের ঘুম ভাঙলো তার রাঙাপিসির বাড়িতে। পিসিমা তার আসার দিন রাতেই বিপদমুক্ত হয়েছিলেন। সুব্রত অনেক খুঁজে সেই রাতের পরেরদিন দুপুরে পরিত্যক্ত 'পলাশপুর' স্টেশনের ধার থেকে তাকে উদ্ধার করে। পরে অভীক জানতে পেরেছিলো, পলাশপুর স্টেশনে বহুকাল আগে ট্রেন থামতো ঠিকই। কিন্তু কোনো এক মড়কে ওই জনপদের বেশীরভাগ লোক মারা যায় আর বাকিরা ঘরবাড়ি ছেড়ে অন্য কোথাও চলে যায়। তারপর থেকে রেল কর্তৃপক্ষ ওই স্টেশন যাত্রী অভাবে বন্ধ করে দেয়। তবে সিগনাল না পেয়ে কখনও কখনও ট্রেন ওখানে দাঁড়িয়ে পড়ে।
রাঙাপিসির বাড়ির বহুদিনের পুরনো বুড়ো চাকর হরি'দা তাকে আরও জানিয়েছিলো বছর পঁচিশ আগে দূরে কোনো এক গ্রামের আটজন ব্যক্তি কোনো একটি বিষয়ের বদলা নিতে তাদের আর এক বন্ধুকে খুন করার উদ্দেশ্যে ডেকেছিলো ওই পরিত্যক্ত স্টেশনে। নবম বন্ধুটি না এলেও সেই আটজনেই রহস্যজনকভাবে মারা পড়ে ওখানে .. যার কারণ আজও অজানা। তবে সেই আটটি অতৃপ্ত আত্মা নাকি সেখানে ঘুরে বেড়ায়। আর নির্জন ওই স্টেশনে রাতে কেউ একা নামলেই তাদের সেই নয় নম্বর বন্ধু ভেবে তাকে খুন করার চেষ্টা করে। কিছুটা ধাতস্থ হওয়ার পর নিজেকে সামলে নিয়ে অভীকের কাছে মোটামুটি সবকিছু পরিষ্কার হলেও সেই অদ্ভুতুড়ে নোটিশবোর্ডের সংকেতগুলো তাকে আজও ভাবায়। আরও একটা ব্যাপারে সে অনেক ভেবেও কোনো কূলকিনারা করতে পারেনি .. সেদিনের ট্রেনে তার সহযাত্রীরা ওই স্টেশনে নেমে গিয়েছিলো কোথায়?
Posts: 6,108
Threads: 41
Likes Received: 12,067 in 4,138 posts
Likes Given: 5,306
Joined: Jul 2019
Reputation:
3,734
আহ্হ্হঃ দারুন দারুন। ছোটোর মধ্যে ভারী সুন্দর..... নানা ভুল বললাম, গা ছমছমে একটা ভৌতিক গল্প উপহার দিলে। অভিক বাবু খুব বাঁচান বেঁচে গেছেন এইবারে। আর ওদিক না মারালেই ভালো।
যদিও আমি
আ
লো
জ্বে
লে
ই
পড়েছি কিন্তু বেশ লাগলো ♥️
|