Thread Rating:
  • 22 Vote(s) - 2.95 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Romance সম্পর্কের মায়াজাল --- ami_keu_noi
#1
সম্পর্কের মায়াজাল


গল্প লিখতে ভালোবাসি, খুব একটা লিখিনি। অনেক আগে 'রওনক আর জিনিয়া' নামের চরিত্রকে কেন্দ্র করে একটি ছোট গল্প লেখার চেষ্টা করেছিলাম, পরে পাপবোধের কারণে সেটা সেই ফোরাম থেকে মুছে দেই। তবে ইন্টারনেটের কল্যাণে তা এই ভার্চুয়াল দুনিয়া থেকে সেটা মুছে যায়নি। এখনও বিভিন্ন চটি সাইটে সেই গল্পটি খুঁজলে হয়তো পাওয়া যাবে। সেই গল্পটি যদি আপনাদের মাঝে কেউ পড়ে থাকেন তবে আপনারা বুঝতেই পারবেন আমি লেখার মধ্যে উত্তেজক শব্দগুলো ব্যবহার করিনা বললেই চলে। আর যেহেতু আমার মধ্যে পাপবোধ কাজ করে অনেক বেশি ইদানীং তাই আমি আমার এই গল্পটিকে আরও বেশি সেই শব্দগুলো থেকে বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করব। তাই, আপনারা যারা হার্ডকোর চটি পছন্দ করেন তারা না পড়লেই ভালো করবেন, পাছে আপনাদের সময় নষ্ট করেছি বলে যদি আবার দোষারোপ শুরু করেন! যাই হোক, আমার জীবনে লেখা তৃতীয় গল্প লিখতে যাচ্ছি। রওনক আর জিনিয়াকে নিয়ে লেখার পর একটি বড় গল্পের ধারাবাহিক শুরু করেছিলাম তবে সেটা দুই পর্বেই থেমে গিয়েছিল নানাবিধ কাজের চাপে, জীবনের অত্যাচারে এবং পাপবোধের কারণেও। তবুও আবারো শুরু করছি। হয়তো আপনাদের চরম উত্তেজনার পর্যায়ে পৌছে দিতে পারবোনা তবে আপনাদের মনে দাগ কাটার একটা চেষ্টা করে দেখব। শুরু করা যাক তাহলে, কি বলেন?
আমার এই গল্পের কাহিনী এবং চরিত্রগুলো সম্পুর্নই কল্পনা থেকে অনুমান করে নেয়া বলতে পারেন। তাই বাস্তবের কোন স্থান-কাল-পাত্রে যদি মিলিয়ে দেখতে চান তবে সেটা আপনার নেহায়েত বোকামি ছাড়া আর কিছুই হবেনা। আর যদি দূর্ভাগ্যক্রমে মিলে যায় তবে আমায় ক্ষমা করে দেবেন।
[+] 1 user Likes ddey333's post
Like Reply
Do not mention / post any under age /rape content. If found Please use REPORT button.
#2
সম্পর্কের মায়াজাল

পর্ব ০১


রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়ানো ছাড়া আমার চারপাশে করার মত কাজ আমি খুঁজে পাইনা ইদানীং। পড়াশোনায় মেধাবী শুধু সারাজীবন মা-খালার মুখেই ছিলাম, যদিও খাতা-কলমে সেই প্রমাণ কখনোই মেলেনি। আর যে কাজে আমি ভালো নই সেটা শুধু গায়ের জোড়েই করে যাচ্ছি বলা চলে। বাবা-মা চান, তাই আমি পড়ি! সেটা নিজের ভবিষ্যতের জন্য কতটা কাজে লাগবে সে বিষয়ে আমি যথেষ্ট সন্দিহান, তবে সেই সন্দেহও প্রকাশ করতে হয় নিজের মনেই! পাছে বাবা-মা না আবার কি বুঝতে কি বুঝে হুলস্থূল কান্ড বাজিয়ে ফেলেন! একমাত্র সন্তান হবার এই এক যন্ত্রণা। আদর-যত্নের পাশাপাশি সব কিছুই বেশিই হয়ে থাকে এক্ষেত্রে। তবে আমি এখন অবশ্য সব কিছুই মেনে নেয়ার চেষ্টা করি! তবে কিছুদিন হল আমার মনে আমার ভবিষ্যতের চিন্তার চাইতে পকেট মানি নিয়ে বেশি চিন্তা করতে হচ্ছে। ভার্সিটির ছুটি চলছে, তাই ভার্সিটি বন্ধ! প্রতিদিনের হাত খরচটা পাচ্ছিনা। যদি আবার বেশি হাতখরচ এবং অযথাই হাত খরচ কোন খারাপ নেশার কারণ হয় - এই ভয়ে মা-বাবাও যেন এই বিষয়ে পাই-টু-পাই হিসেব রাখছেন। তাই, সারাটা দিন প্যান্টের পকেট এক প্রকার খালিই থাকে বলা চলে। মাঝে মধ্যে প্রয়োজন হলে অবশ্য মা সেই প্রয়োজন মিটিয়ে দেন বা যা টাকা লাগে সেই টাকাটা দেন তবে তা পকেটে ওঠার আগেই দোকানদারের হাতে বা ফ্লেক্সিলোড ওয়ালার হাতে চলে যায় আরকি! যাই হোক, এভাবেই যখন দিন কাটছিল কোন রকম তখন একদিন এক বন্ধুর ফোন পেলাম... রাসেল, আমার ছোট বেলার বন্ধু, বেশ কাছের।


রাসেল - মামা, তুই কি ইদানীং ফ্রি আছিস?
আমি - কেন? কোন ট্রিপ প্ল্যান করছিস?
রাসেল - না রে! আমাকে একটু অন্য ব্যাপারে সাহায্য করতে হবে!
আমি - শুনছি...
রাসেল এক নাগাড়ে বলতেই থাকে - আমি আসলে নানুর চিকিৎসার জন্য ওনার সাথে দেশের বাইরে যাচ্ছি। সব ঝামেলা মিলিয়ে এক মাসের মত আমি ব্যস্ত থাকব আর সে সময়টায় আমার টিউশন মিস যাবে। যদি আমি এক মাস টানা কামাই দেই তবে সবগুলো ছাত্রই আমার হাত থেকে ছুটে যাবে! আর এখন টিউশনির বাজার যা মন্দা মামা... কি বলব।

আমি - আমাকে কি করতে হবে? কয়টা পড়াস?
রাসেল - তিনটা পড়াই, দুইটা বাচ্চা, একজন ক্লাস ফাইভ আর একজন এইটে পড়ে। আর আরেকটা হচ্ছে তনিমা, ওকে শুধু ম্যাথটা দেখিয়ে দেই। সামনে ওর এসএসসি পরীক্ষা... এই এক মাসে ওর বড্ড ক্ষতি হয়ে যাবে গাইড লাইন না পেলে...

এখানে বলে রাখা ভালো, তনিমা রাসেলের প্রেমিকা, অবশ্য এখন প্রেমিকার চাইতে 'গার্ল-ফ্রেন্ড' শব্দটাই ব্যবহার করা হচ্ছে যদিও আমি তাতে মাঝে মধ্যে এর ফলে 'ভালো মেয়ে বন্ধু' আর 'প্রেমিকার' মধ্যে তালগোল পাকিয়ে ফেলি। তনিমা আর রাসেলের সম্পর্ক প্রায় দুই বছর হতে চলল, ওরা ঘটা করে সেলিব্রেট করে ওদের অ্যানিভার্সারি (!) আর তাই এভাবে মনে রাখা আর কি...!

আমি - বাচ্চাগুলোকে না হয় বুঝলাম, কিন্তু আমিতো ম্যাথে বরাবরই কাঁচা রে...
রাসেল - ফাইজলামি বন্ধ কর! এসএসসিতে ম্যাথে প্লাস পেয়েছিলি তুই, আমি প্রায় ডাব্বা মারতে মারতে বেঁচে গিয়েছিলাম, মনে নেই? আর সত্যি কথা বলতে অন্য কারও হাতে ছাড়তে আমি রাজী নই! তুই ওকে গাইড দেয়া আর আমি ওকে গাইড দেয়া সমান কথা... তাই এই একটা মাস মামা... প্লিজ? বেটা, তিনটা টিউশনির টাকাইতো পাবি! তখন দেখবি মজা লাগবে...

জানি লোভ দেখিয়ে আমাকে বাগে আনার চেষ্টা করছে তবে মনে মনে আমি তখন খুশী! যাক মাস শেষে চমৎকার অংকের টাকা আমার মানিব্যাগের শোভা বৃদ্ধি করবে! আর পড়াতে যাবার জন্য কিছু বেশ কিছু যাতায়াত ভাড়াও নেয়া যাবে আম্মুর কাছ থেকে।


আমি - আচ্ছা ঠিক আছে, তুই ঠিকানা গুলো টেক্সট করিস আর বাকীটা আমি সামলে নিচ্ছি... চিন্তার কারণ নেই!
রাসেল - আরে বেটা চিন্তা আমি আগেও করিনাই, আমি আন্টির কাছে তোর ভার্সিটি ছুটির খোঁজ নিয়েই তোকে কল করেছি! তুই মিথ্যা বললেও পার পেতি না বাছাধন...

এভাবে ফোনে আরও কিছুক্ষণ কথা হল রাসেলের সাথে। বাচ্চাগুলোর সিলেবাস কতদূর এগিয়ে নিয়ে গিয়েছে, কোন পর্যায়ে আছে - এমন কিছু তথ্যাদি নিয়ে রেখে দিলাম ফোন। কলেজের লাইব্রেরীতে যেতে হবে। কিছু বই ধার করে আনা যাক, জীবনের প্রথম টিউশনি। বাচ্চাগুলো যেমন তেমন, তবে বন্ধুর প্রেমিকার কাছে লজ্জা পেতে রাজী নই আমি!!

 
[+] 3 users Like ddey333's post
Like Reply
#3
পর্ব ০২


লাইব্রেরী থেকে বই এনে প্রায় ভোর রাত পর্যন্ত বেশ কিছু টপিক কভার করে ক্লান্ত হয়ে অবশেষে সকালের দিকে ঘুমে ঢলে পরছি মাত্র, ওমনি মাসুদের ফোন। মাসুদ ক্লাস ফাইভের ছাত্রটির নাম। আমি আজ কখন যাব সেটা জানার জন্য ফোন দিয়েছে। আমি অবাক হয়ে ঘড়ির দিকে তাকাই, এত সকালে এই পিচ্চি ফোন করেছে! মানে কি! ঘড়ির দিকে তাকিয়ে যেন আমার অবাক হবার মাত্রা আরও বেড়ে যায়, একটু আগের ৬টায় থাকা ঘন্টার কাঁটাটা নির্লজ্জ্বের মত ৬কে ছেড়ে দিয়ে যেন এখন ৯এর গলা ধরে ঝুলছে! কুম্ভকর্ন হয়ে গিয়েছিলাম হয়তো ভেবে নিজের মনেই একটু হেসে মাসুদকে বলে দিলাম, 'এইতো আসছি! এক ঘন্টার মধ্যে পৌছে যাব।' দ্রুত বিছানা ছাড়লাম। প্রচন্ড আলসেমি হচ্ছিল। তিন তিনটে টিউশনির ভার মাথায় নিয়ে বিছানা থেকে নামা কি চাট্টিখানি কথা!

আমি থাকি মিরপুরে। ছোটবেলা থেকেই এই এলাকায় বেড়ে উঠেছি। এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা নই, ভাড়া থাকি। তবুও এলাকার প্রতি এক অদ্ভুত আকর্ষন জন্মে গিয়েছে। যাই হোক, মাসুদের বাসা মিরপুর ১৪তেই, যাওয়া খুব একটা কষ্ট হবেনা। আরও মজার বিষয় হচ্ছে মাসুদের বাসার ওদিকেই তনিমাদের বাসা, তাই এক ঢিলে দুই পাখিই মারা যাবে আজ। বাসা থেকে বের হয়ে মেইন রোড থেকে লেগুনায় উঠে মিরপুর দশের গোল চত্তরে পৌছতেই দেখি খালি বাহন দাঁড়িয়ে আছে। কোন রকম লেগুনার ভাড়া মিটিয়ে বাহনে উঠেই জানলার পাশে থাকা দুই সিটের একটা বসে পড়লাম। বাস ছাড়তে এরা খুবই দেরি করে! পারলে যেন লোক কিছু ছাদেও তোলে তবে কিছু যাত্রীর রক্তচক্ষু প্রদর্শনের কারণেই হয়ত এমনটা করে সাহস পায়নি এরা! বসে থাকতে থাকতে যখন বিরক্তির সীমা তুঙ্গে তখন চিন্তা করলাম খ্যাতা পুরি এই বাসের, এর চাইতে রিক্সা নিয়েই যাওয়া যাক আজ। যেই ভাবা সেই কাজ, বাস থেকে নেমেই দেখি এক রিক্সা ওয়ালা খুব অলস ভঙ্গিতে হুড তুলে রিক্সার সিটে বসে স্যাডেলে পা রেখে বিড়ি টানছেন! আমি জানতাম তিনি যাবেন না, তবুও বৃথা চেষ্টা করলাম।


আমি - মামা যাবেন?
রিক্সাওয়ালা - নাহ!
আমি - মামা আমার খুব তাড়া ছিল, এই এখানেই যাবো। ১৫টাকার ভাড়া ২০ টাকা দিব মামা, চলেন না প্লিজ।

রিক্সাওয়ালা - নাহ! আমি খাইতে যামু...

ধূর বলে প্রচন্ড বিরক্তিতে রিক্সার পাশে দাঁড়িয়ে থাকি অন্য রিক্সার জন্য! দিনের শুরুটাই ছিল অদ্ভুত, আমি আর এর বেশিই কিই বা আশা করতে পারি! ফাকিং রিক্সাওয়ালা ডুড! - এসব হাবিজাবি ভাবছিলাম, হঠাত এক মেয়ে রিক্সাওয়ালাকে জিজ্ঞেস করল,

মেয়েটা - এই খালি যাবেন?
রিক্সাওয়ালা - কই যাইবেন?
মেয়েটা - সাড়ে ১৪।

রিক্সাওয়ালা - ২০ টাকা।
মেয়েটা - ১৫ টাকার ভাড়া, গেলে বলেন।
রিক্সাওয়ালা - দুপুর বেলা... রোইদ মেলা আফা...
মেয়েটা - না গেলে নাই, একটা টাকাও বেশি দিতে পারব না!
রিক্সাওয়ালা - উঠেন...

আমি এতক্ষণে অন্যদিকে তাকিয়ে শুনছিলাম! এখন যখন দেখলাম রিক্সাওয়ালা যেতে রাজী তখন মেজাজটা আর সামলে রাখতে পারলাম না।


আমি - মিয়াঁ, আমি ২০ টাকা দিতে চাইলাম, নামতামও আগে, আপনি কইলেন খাইত যাইবেন। আর এখন মাইয়া মানুষ পাইয়া ১৫ টাকাতেই...

বলতে বলতেই মেয়েটার দিকে আমার চোখ পরে, আমি যেন অনেকটা কুঁচকেই যাই! রিক্সায় তনিমা বসা। উঠে হুড তুলছিল, আমায় আগে দেখেনি। আমতা আমতা করতে থাকি... রিক্সাওয়ালা নির্বিকার...! হঠাত মেয়েটার কন্ঠ যেন কানের পর্দায় এসে বাড়ি খায়...

তনিমা - আরে, রওনক ভাই...
আমি - তু...তুমি? কই যাও?
তনিমা - বাসায় যাইই! আর কই যাবো? আপনি এইখানে কি করেন?
আমি - মাসুদকে পড়াতে যাচ্ছিলাম...
তনিমা - পিচ্চিটা! এরপর কি আমাকে অংক দেখাতে আসবেন নাকি আজকে না?
আমি - না আসব, সমস্যা নেই!
তনিমা - মাসুদদের বাসাতো আমার বাসার আগেই পরে, চলেন আপনাকে নামিয়ে দেই।

আমি - না না থাক...
তনিমা - আরিইই... থাকবে ক্যান! উঠেন বলতেছি...

...
বলেই তনিমা একপাশে সরে আমাকে জায়গা করে দেয়। আমি তখন নিরুপায়, আবার মনে মনেও খুশী! খুশীটা সময়মত রিক্সা পাওয়ার যতটা না তার চাইতেও বেশি রিক্সাওয়ালার রিক্সায় উঠতে পারাটা, তাও আবার ৫টাকা কমে ডাবল ওজন! সাংঘাতিক একটা লুক দিলাম ব্যাটার উপর, এরপর মনে মনে 'মু-হা-হা' হাসি তুলে উঠে পড়লাম রিক্সায়! রিক্সা ছাড়ল।


আমি কখনো, রিক্সায় আমার মা-খালা ছাড়া অন্য কোন মেয়ের সাথে উঠিনি, তাই খুব জড়তা হচ্ছিল আর তার উপর তনিমা রাসেলের প্রেমিকা, তাই জড়তার মাত্রা যেন ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছিল। সেটা বুঝতে পেরেই কিনা, তনিমা আমাকে হাল্কা করার জন্য কথা শুরু করে দিল...

তনিমা - তারপর ভাইয়া... আপনার সাথে আমার কিন্তু কোন যোগাযোগই হয়না বলতে গেলে, খুব অদ্ভুত, তাইনা?
আমি - হ্যাঁ মানে... পড়াশোনায় বুঝলা...
তনিমা - চাপা মারবেন না একদম!! আপনি আমার এক বান্ধবীর সাথেও ফোনে কথা বলেছেন, শশী, মনে পরে? তখন আপনার পড়াশোনা ছিলোনা না?

শশী যে তনিমার বান্ধবী আমি তা অনেক পরে জানতে পেরেছিলাম। আর জানার পর মেয়েটার সাথে আমি যোগাযোগ বন্ধ করে দেই কেননা, মেয়েটার সাথে আমার কথাবার্তা স্বাভাবিকতা ছাড়িয়েও কিছুটা উগ্রতার, কিছুটা নিষিদ্ধের পর্যায়ে চলে যাচ্ছিল। সেটা সমস্যা নয়, তবে আমি চাইনি তা তনিমা জানুক কেননা তনিমা জানা মানেই রাসেল জানা আর রাসেল জানা মানেই বন্ধুমহলে পচানি খাওয়া...!

আমি - শশী? কই নাহ ... কে এইটা?
তনিমা - আচ্ছা, তাই না? যে, যে মেয়েটার পিঠের মাঝের তিলে আপনি...

এটুকু বলেই ঠোঁটের কোণায় হাসি মাখিয়ে রিক্সার অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে নেয়... চাপা হাসিটা বোঝা না গেলেও রিক্সার ঝাকুনির মাঝেও বুঝে নিতে পারি যেন ওর শরীরের স্পর্শ থেকে! এমনিতেই আজ একের পর এক অদ্ভুত সব কাহিনী ঘটে যাচ্ছে আজ, এরপর আবার এমন একটা কথা বলল যা শুনে আমি লজ্জায় যেন মিশেই যাচ্ছিলাম তখন। শশী মেয়েটা যে কি না! তাহলে কি সব, -- বলে দিয়েছে? আমি যেন শুধু ছুতো খুঁজছিলাম রিক্সা থেকে নেমে তনিমার হাত থেকে বাঁচবার। তাহলে হয়তো রাসেলও জানে এগুলো। আমি যে কারণে শশীর অনেক কাছে গিয়েও কোন রকম অঘটন ঘটাই নি, নিজেকে সাদা রাখতে চেয়েছি... সেই সাদা রঙতো দেখছি কবেই ধূসর রঙ ধারণ করে বসে আছে! আমি মাথা নিচু করে চুপ করে থাকি। বাকি পথ আমাদের মাঝে আর কোন কথা হয়না... একসময় নীরবতা ভেঙে বলে, ভাইয়া আপনার মাসুদের বাসা কিন্তু পার হয়ে যাচ্ছে! আমি সম্বিৎ ফিরে পাই, নেমে যাই রিক্সা থেকে। ওর দিকে তাকিয়ে বলি যে মাসুদের পড়ানো শেষ হলেই আমি আসছি, যেন প্রস্তুত হয়ে থাকে। রাসেল আজ একটা পরীক্ষা নিতে বলেছে ম্যাথের! যা উত্তর দেয় শুনে আমি কিছুটা বোবা হয়ে যাই যেন,... অন্তত ক্ষণিকের জন্যতো বটেই...! বলে ওঠে...

'
পরীক্ষা?! আর কত ভাইয়া... এর চেয়ে আজ বরং শশীকে চেনেন কি না সেটাই জানা যাবে..." বলা শেষেই, রিক্সাওয়ালাকে চালাতে বলে। তনিমার ঠোঁটে আমি তখনও বাঁকা হাসিটা দেখতে পাই যেন...! অদ্ভুত এক হাসি...!

 
[+] 5 users Like ddey333's post
Like Reply
#4
(পর্ব-০৩)



রিক্সা থেকে নেমে মাসুদদের বাসা পর্যন্ত রাস্তাটুকু কীভাবে পার হয়ে গেল আমি বুঝতেও পারলাম না। কেননা মাথা জুড়ে তখন শশী আর তনিমার চিন্তা! না হয় তনিমার বান্ধবীই হয় শশী, তাই বলে সব বিষয়ই শেয়ার করতে হবে এটা আবার কেমন কথা? মানুষের পার্সোনালিটি বলতে একটা বিষয়তো থাকা উচিত। তাও যদি সেটা শুধু শশীর একার ব্যাপার হত তাহলেও না হয় মানতে পারতাম, যা ইচ্ছা ওর ব্যাপারে করতে পারে। কিন্তু এখানেতো আমিও জড়িত, তো যে বিষয়ে আমি জড়িত সেই বিষয়টি কারও সাথে শেয়ার করার আগে আমাকে অন্তত একবার জিজ্ঞাসা করা উচিত! অন্যদিকে যে ঘটনা শেষ হয়ে গিয়েছে সেটা নিয়ে এতদিন পর তনিমাই বা এত আগ্রহী কেন? যখন শশী ওকে এসব কথা বলেছেই সাথে নিশ্চয়ই এও বলেছে যে আমাদের মধ্যে এখন আর কোন যোগাযোগ নেই। তারপরেও কেন তনিমার আগ্রহ হচ্ছে?! এসব সাত পাচ ভাবতে ভাবতে কখন যে মাসুদদের বাসার নিচে গিয়ে দড়িয়েছি বলতেই পারবোনা, হঠাত ওদের বাসার দাড়োয়ানের কথায় আমার চিন্তার বিচ্ছেদ ঘটে..

দাড়োয়াান - কাউরে খুঁজেন?
আমি - কি? হ্যা। আমি উপরে যাবো, মাসুদদের বাসায়।

দাড়োয়ান - তিন তলাত?
আমি - সম্ভভত। আমি আসলে ওর নতুন শিক্ষক, আজই প্রথম এসেছি।

দাড়োয়ান - আইচ্ছা যান। তিন তলায় উইঠা হাতের ডাইনে। বেল আছে।

আমি ধন্যবাদ জানিয়ে সিঁড়ি বেয়ে উঠতে শুরু করলাম। মাথায় তনিমা-শশীতো ছিলোই এখন আবার নতুন একটা বাসায় ঢুকবো, জীবনের প্রথম টিউশনি.... সব মিলিয়ে মনের মাঝে তখন উল্টো-পাল্টা ঝড় বইছে, যে ঝড়ের সাথে আমি পরিচিত নই..

------------

[+] 2 users Like ddey333's post
Like Reply
#5
কলবেল চেপে দাঁড়িয়ে আছি। সময় হিসেব করিনি তবে মনে হল অন্ততকাল পরে দরজার কাছে কেউ এগিয়ে আসছে। শার্ট টার্ট টেনে টুনে ঠিক করলাম, ভালো একটা ইমেজ বজায় রাখার চেষ্টা বলা যেতে পারে। দরজা খুললেন একটা মহিলা, বয়স আন্দাজ করা সম্ভব হলনা আমার পক্ষে। উনি যে ভেতরে কোন কাজে ব্যস্ত ছিলেন তা তার কাপড় পড়ার ধরণ দেখেই বোঝা গেল। চেহারা ঘামে ভিজে আছে। মিষ্টি চেহারাই বলা চলে.. আমি ততক্ষনে এসব ভাবতে ভাবতে আরও এক ভাবনার জগতে ঢুকে গিয়েছি যেন। আবারও আমার ভাবনার জগত ভেঙে গেল মহিলার কথায়..

মহিলা - কি চাই?

চিন্তা-ভাবনা যদি কারও কথায় বা ডাকে ভেঙে যায় তবে মানুষ স্থিত হতে এমনিতেই কিছুটা সময় নিয়ে থাকে তবে মহিলার কর্কশ কন্ঠের কারণে যেন আমার সেই সময়টা আরও কিছুটা বেশিই লাগল। মহিলাটা দেখতে আহামরি সুন্দর না হলেও বিয়ন্ড এভারেজতো হবেই। আর আমরা মানুষ জাতি একটি বিষয়ের সাথে অন্য একটি বিষয়কে মিলিয়ে কিছু ফলাফল আশা করে থাকি বা ভেবে রাখি। যেমন, সুন্দর চেহারা মানে কোকিলকণ্ঠী! আমি এরকমও অবশ্য ভাবার সময় পাইনি তবে এরকম রুক্ষ মেজাজের কোন প্রশ্নও অবশ্যই আশা করিনি তার কাছ থেকে।


আমি - আমি.. মানে, এটা মাসুদদের বাসা না?
মহিলা - তুমি কি ওকে পড়াইতে আসছ?
আমি - জ্বি, এক মাসের টিচা..

কথা শেষ না হতেই মহিলার চোখ মুখে কিছুটা শিথিলতা দেখতে পাই যেন। দরজা খুলে দিয়ে বলেন,

মহিলা - এসো এসো.. ভিতরে এসে বসো।


বলেই সরে জায়গা করে দিলেন। আমি ঢুকলাম, ঢুকেই বসার রুম দেখতে পেলাম। একটা সোফার কাছে গিয়ে দাঁড়িয়ে আছি, ভাবছি সিংগেল চেয়ারে বসা উচিত না ডাবল চেয়ারে! সিংগেল-ডাবলেও কি কোন প্রকার ভদ্রতা প্রকাশ পায়? জড়তাই জড়তা! মরার জড়তা যেন ক্রমেই আজ জেকে বসছে আমার উপর! এর মধ্যেই মহিলা এসে সিংগেল একটি সোফায় বসে তার সামনের সোফার দিকে ইংগিত করে বসতে বললেন..

মহিলা - ওকি.. দাঁড়িয়ে আছো কেন? বোসো।

আমি - জ্বি.. বসলাম।
মহিলা - আমি মাসুদের আম্মু। আমার নাম সিথি, তুমি আমাকে আপাও বলে ডাকতে পারো আবার সিথি আপা বলেও ডাকতে পারো.. যেটাতে তুমি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করো আরকি..
আমি - আচ্ছা সিথি আপা..
সিথি আপা - আচ্ছা, তাহলে সিথি আপাই তোমার পছন্দ? বেশ। তাহলে সিথি আপাই.. তোমার বন্ধুর কাছ থেকে শুনলাম তুমি নাকি বেশ ভালো ছাত্র, এমনকি ওর চাইতেও কয়েকগুণ ভালো?
আমি - না না.. বাড়িয়ে বলেছে একদমই। আমি একদমই পড়াশোনায় মনযোগী নই। এজন্য আমার আম্মু কত বকে..
সিথি আপা - তুমি দেখি লজ্জায় লাল হয়ে যাচ্ছ একেবারে। তুমি যে এত লাজুক তা তো তোমার বন্ধু বলেনি.. যাই হোক, মাসুদ অনেক পাজি, তোমার মাথা নষ্ট করে দিবে। আর একদমই পড়তে চায়না। পড়তে বসলেই নানা রকম বাহানা দেখাবে.. পানি খেয়ে আসি, বাথরুম পেয়েছে, আম্মু ডাকছে, পেট ব্যাথা আরও কতকি যে বলবে, তুমি কিচ্ছু আমলে নিবা না। আর যদি কথা একদমই না শোনে আমাকে ডাক দিবা, আমি দেখব। আচ্ছা?
আমি - জ্বি, কোন সমস্যা হলে আপনাকে ডাকবো।


সিথি আপা মিষ্টি করে হাসলেন। আমি এই সিথি আপার সাথে প্রথমের সেই রাগি মহিলার কোন মিলই খুঁজে পেলাম না যেন। অদ্ভুত। আপা কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে হয়তোবা বোঝার চেষ্টা করলেন আর কিছু বলার আছে কি না, এরপর বললেন,

সিথি আপা - তাহলে যাও, ঐযে মাসুদের রুম। ঘরেই আছে। একটু আগে একটা প্যারাগ্রাফ লিখতে দিয়ে এসেছিলাম.. যাও। আমার অনেক কাজ বাকি পরে গেছে আজ.. বুয়া আসেনাই জানো!! আমি রান্না ঘরে যাচ্ছি, কিছু দরকার হলে আমাকে ডেকো..

বলেই উনি উঠে চলে গেলেন। উঠতে উঠতে কারও উদ্দেশ্যে বললেন,

সিথি আপা - অ্যাই শেফা, মাসুদের নতুন টিচার এসেছে রে..


Like Reply
#6
আমি বুঝলাম না এই শেফাটা কে আর আমি এসেছি সেটা শেফাকে জানানোরই বা দরকার কি। তবে নিজের এই প্রশ্নের উত্তর পেতে খুব বেশি সময় অপেক্ষা করতে হলনা আমাকে। আমি যখন মাসুদের দরজা দিয়ে ঢুকতে যাবো অমনি পর্দার ওপাশ থেকে একটা মেয়ে দরজা দিয়ে বের হয়ে এসে আমাকে দেখে থমকে দাঁড়িয়ে গেল, আরেকটু হলে হয়তোবা ধাক্কাই লেগে যেত। মেয়েটাকে দেখে আমি যেন পাথরের মুর্তি হয়ে গেলাম।


একটি সুন্দর মেয়ের সৌন্দর্যকে কীভাবে বর্ননা করতে হয় সে সম্পর্কে আমার জানা নেই। আর এমন সুন্দর কোন মেয়েকেও আমি আমার এজীবনে দেখিনি। পর্দার ওপাশ থেকেতো নয়, মনে হল যেন আকাশের মেঘের ভিতর থেকে মেঘের উপরে থাকা রাজ্যের কোন রাজকন্যা এসে দাঁড়াল আমার সামনে। চোখের পলকতো পড়া দূরের কথা, বিমোহিত মুগ্ধ আমি যে শ্বাস নিতে ভুলে গিয়েছি। কোথায় আছি, কেন আছি - এসব যেন সেই মুহুর্তটিতে বেমালুম ভুলে গিয়েছি। আমি শুধু দেখছি দুটি চোখ, কাজল কালো চোখ। যে চোখের স্বচ্ছতায় ডুব দিয়ে মরে গেলেও একটুও আফসোস হবেনা। এমন ঠোঁট... সত্যিই পৃথিবীর কারও কি হতে পারে? গায়ের রঙের নামও যেন আমার ডিকশনারির কোথাও লেখা নেই। হালকা গোলাপি, নাকি ফর্সা? কি নাম এই রঙের! এত সুন্দর মেয়েটা। আমার জীবন যেন দেখেই পূর্নতা পেয়ে গেল। মনের গহীন থেকে অচেনা কিছু চিৎকার করে বলছে, 'আমি পেয়েছি, আমি পেয়েছি'... কি পেয়েছে, কে পেয়েছে জানিনা! তবে সেই নিশ্চুপ চিৎকারেই যেন আমার হৃদ-স্পন্দন বেড়ে গিয়েছে বহুগুণে। ভয় হচ্ছে পাছে এই স্পন্দনের শব্দও না কেউ শুনে ফেলে।

কতক্ষণ সেখানে দাঁড়িয়ে ছিলাম জানিনা, আবারো আমাকে কল্পনার জগত থেকে টেনে নামানো হল যেন! পরীর মত পাথরে গড়া মুর্তি যেন জীবন্ত হয়ে আমার পাশ কাটিয়ে চলে গেল... এতক্ষণ আমি একটা মিষ্টি গন্ধ পাচ্ছিলাম... কীসের আমি বলতে পারব না তবে মেয়েটা চলে যাবার পর সেই গন্ধটা আমি আর পেলাম না... মেয়েটা চলে যাবার পর হঠাত করে সেই 'আমি পেয়েছি' চিৎকারটাও যেন থেমে গেল। বুকের ধুকপুকানিও নেই। হঠাত আমার চারপাশে দিনের আলোতেও অনেক কোলাহলের মাঝেও নেমে এল শূন্যতা... যে শূন্যতা খুব আপন কিছু হারানোর জন্য হৃদয়ে ক্ষতর সৃষ্টি করে। কিন্তু, আমিতো কিছু হারাইনি... তাহলে?! এত কষ্ট কেন হচ্ছে হঠাত! এসব ভাবতে ভাবতেই ঢুকে পড়লাম মাসুদের ঘরে। চেয়ারে বসে সম্ভবত প্যারাগ্রাফ লিখছে পিচ্চিটা, আমি ঢুকেছি এখনও বোঝেনি। আমি দরজায় দাঁড়িয়ে ঘরটায় চোখ বুলালাম, একটা সিঙ্গেল খাট, পাশে পড়ার টেবিল। এরপর জানালা, জানালার নিচে ছোট্ট একটি গোল কাচের অ্যাকুরিয়ামে দুটি গোল্ড-ফিশ, এর পাশেই একটি ওয়্যারড্রোব। ওয়্যারড্রবের উপর কলেজ ব্যাগ, কিছু বই আর... একটা ছবি রাখা! ছবি দেখে আমি আবারও থমকে গেলাম যেন। একটু আগের দেখা মেয়েটার গলা ধরা মাসুদের ছবি...! আবারো বুকের মাঝে সেই চিৎকার... 'আমি পেয়েছি... আমি পেয়েছি...'

Like Reply
#7
update den please
[+] 1 user Likes fuckerboy 1992's post
Like Reply
#8
(02-11-2022, 10:50 PM)fuckerboy 1992 Wrote: update den please

ok
[+] 1 user Likes ddey333's post
Like Reply
#9
পুরো গল্প দিয়ে দেন Big Grin
তাহলে খারাপ হয় না happy
[+] 2 users Like Fardin ahamed's post
Like Reply
#10
(পর্ব-০৪)



হ্যা, যা ভেবেছিলাম তাই। মাসুদের রুম থেকে যে মেয়েটি বের হয়েছিল তার নামই শেফা। মাসুদের একমাত্র ফুপির একটি মাত্রই মেয়ে। ওরাও এই এলাকাতেই কোথাও থাকে, কাছা কাছি বাসা হবার কারণে শেফা ওর ছোট মামার বাসায় এসে থাকে বেশিরভাগ সময়েই। শেফার এই একটাই মামা, তাই হয়তো মামা-ভাগ্নির সম্পর্কটা বেশ ভালোই হবে। নইলেতো আর বেশিরভাগ সময় এই বাসাটায় কাটিয়ে দিত না। শেফা অনেক সুন্দর ছবি আঁকতে পারে অবশ্য ওর এবিষয়ে কোন প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নেই। তবে নাচের কলেজে যায়। কথ্যক। কলেজে এবং কলেজে বেশ কিছু পুরষ্কারও বাগিয়ে নিয়েছে মেয়েটা। শুধু তাই নয়, অসম্ভব মেধাবী এই মেয়ে কলেজের বিতর্ক প্রতিযোগীতায়ও কলেজের মুখ উজ্জ্বল করেছে। কম কথা বলে তবে মাসুদের সাথে অবশ্য অনেক কথা বলে। ভাবছেন এত কিছু আমি কীভাবে জানলাম? সিথি আপা ঠিকই বলেছিলেন, মাসুদ অনেক বেশিই ফাঁকিবাজ! আর তাই আমি যখন পড়ানোর এক ফাকে জিজ্ঞেস করলাম 'রুম থেকে একটু আগে যে মেয়েটা বের হয়ে গেল সে কে', উত্তরে গরগর করে এই সব কথা আমায় বলতে লাগলো। যতটুকু সম্ভব সময় নিয়ে বলতে লাগলো যেন আজ আমার কাছে পড়ার সময়টা শেষ হয়ে যায়। শুধু যে এসব তথ্যই দিয়েছে তাই নয়, ওর শেফাপুর কি পছন্দ না পছন্দ এগুলোও বলেছে। আমি আবার ফাঁকিবাজি একদমই পছন্দ করিনা তবে এটা মেনে নিতে আপত্তি নেই যে পিচ্চিটা ফাঁকিবাজ হওয়াতে অবশ্য একটু লাভই হল। মেঘ থেকে ধরণিতে নেমে আসা রাজকন্যার সম্পর্কে বেশ ভালোই জানতে পেলাম। যাই হোক, মাসুদকে পড়ানো শেষ হয়েছে অনেক আগেই। আমি মাসুদের বাসা থেকে নেমে হেটেই তনিমার বাসার উদ্দেশ্যে রওনা হলাম। খুব বেশিদূর হবেনা এখান থেকে তাই মেঘকণ্যার কথা ভাবতে ভাবতেই হাটতে থাকলাম তনিমার বাসার দিকে। মেঘকণ্যাকে দেখার পর থেকে তনিমা আর শশীর কথা ভূলেই বসেছিলাম কিন্তু যতই তনিমাদের বাসার কাছাকাছি যাচ্ছিলাম ততই যেন মনের মধ্যে কেমন খচখচানি কাজ করছিল, সত্যি বলতে আমার যেতেই ইচ্ছে করছিল না। কিন্তু কি করার.. রাসেলকে কথা দিয়ে ফেলেছি! পিছে হাটবার পথ নেই যে আর।

------------------

তনিমা দরজা খুলে সোজা ওর রুমে নিয়ে এলো। ওর রুমে আসার জন্যে ড্রয়িং এবং ডাইনিং রুম পার হতে হয়। একটু অবাক হলাম কেননা বাসার মধ্যে কোন মানুষজনের সাড়াশব্দ ছিলোনা একদমই। ভাবলাম হয়তো দুপুরে খেয়ে দেয়ে ঘুমিয়েছে তনিমার আম্মু, তবে আমারই বিশ্বাস হচ্ছিল না। যাই হোক, তনিমার রুমে আসার পর টেবিলের চেয়ারটায় আমায় বসতে দিয়ে টেবিলের সাথেই প্রায় লাগানো খাটের উপর বসল। কথা শুরু করলো প্রথমে তনিমাই..

তনিমা - তারপর? মাসুদকে কেমন পড়ালেন?
আমি - এইতো, পিচ্চিটা দুষ্ট।একদমই ফাঁকিবাজ..
তনিমা - জানি.. রাসেলের মাথায় উঠেও বসে থাকে মাঝে মধ্যে! আপনি নতুন দেখে ওরকম করা উচিত কিনা সেটা বুঝে উঠতে পারেননি হয়ত.. দু'দিন পর দেখবেন ঘার থেকে নামতেই চাইছেনা আর!
আমি - সাংঘাতিক তথ্য! ধন্যবাদ.. তবে আশা করি আমার সাথে ওমনটা করে সাহস পাবেনা! রাসেলের মত আমি ওতটা নরম নই।

তনিমা - (মিচকি মিচকি হাসছে..) হ্যা, জানিতো.. আপনি শক্ত! ভীষণ..
আমি - মানে? কীভাবে জানলে? আমিতো তোমাকে আমাকে নিয়ে কিছু বলিনি কখনোই..
তনিমা - না না, আপনি নন.... শশী বলেছে!
আমি - ..মানে?
তনিমা - না মানে কিছুই না.. শুধু বলেছে আপনি নাকি অনেক শক্ত! সব দিক থেকেই..

তনিমার মিচকি হাসির পরিমাণ বেড়ে যায়। তনিমা মেয়েটা সুন্দর, ওর হাসিটাও। কিন্তু কেন যেন এখন ওর হাসিটা একটুও ভালো লাগছেনা। বরং মনে হচ্ছে কোন ডাইনী কালো জাদু করে সফল হবার পর তার সফলতার হাসি হাসছে। হাসতে হাসতেই তনিমা বলে উঠলো..

তনিমা - আচ্ছা ঠিক আছে, অনেক পচাইলাম আপনাকে। আজকের মত আর পচাবো না, পরে দেখা যাবে পচানি খাবার ভয়েই আপনি আর আসছেন না আমাকে পড়াতে, কি বলেন?
আমি - (কথার প্রসংগ পরিবর্তন করে) তারপর তুমি কতটুকু এগুলে বলো..

আমরা পড়াশোনার ব্যাপারে কথা-বার্তা শুরু করলাম এবং শেষ পর্যন্ত রাসেলের বলে দেয়া পরীক্ষাটি দিতে ওকে রাজিও করালাম। একটা খাতায় কিছু অংক তুলে দিলাম আর একমনে করতে শুরু করল। আমি একা বসে আর কি করব, টেবিলে কোন গল্প উপন্যাসের বইও ছিলোনা.. তাই চেয়ারে বসেই ঘার ঘুরিয়ে ওর রুমটাই এক্সপ্লোর করা শুরু করলাম। রুমের এক প্রান্তে একটা সেলফ দেখতে পেলাম, তাতে দূর থেকে মনে হচ্ছে বেশ কিছু গল্প-উপন্যাসের বই রাখা। আমি তনিমার কাছ থেকে অনুমতি নিয়েই সেলফের সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম।


সেলফে বেশ কিছু ভালো ভালো লেখকের বই রাখা তবে সেলফের একটা তাক জুড়েই প্রাধান্য দেয়া হয়েছে হুমায়ুন আহমেদ স্যারকে। হিমু সমগ্রর পুরোটাই আমি দেখতে পেলাম খন্ডাকারে। ভালো লাগলো বিষয়টা। হুমায়ুন স্যার আমার প্রিয় লেখকদের একজন এবং তার সৃষ্টি হিমু আর রুপা আমার প্রিয় দুটি চরিত্র। যদিও রুপার সম্পর্কে খুবই কম লিখেছেন স্যার তবুও.. আসলে ভালো লাগাতো আর কম-বেশি দেখে-জেনে হয়না.. ভালো যা লাগবার তা হঠাত করে লেগে যায়। যাই হোক, সেলফের চারটি তাকের তিন নম্বর তাকে বেশ কিছু বই মলাটে বাধা ছিল। সেই বইগুলোর মাঝে একটা সিডির প্যাকেটের সামান্য মাথা বের হয়ে দেখতে পেলাম। জানিনা কেন তবে আমি সেটা টেনে বের করে হাতেও নিলাম, আর নিয়েই বুঝলাম... এমনটা করা উচিত হয়নি আমার!

--------------

আমার হাতের মধ্যে শোভা পাচ্ছিল এমন একটা ডিভিডির প্যাকেট যার মলাটে আলেট্টা অসিন, জায়েডেন জেমসের ছবি! আমার পছন্দের পর্ণ ক্যারেকটার! আমি থমকে গিয়েছিলান কয়েকটি কারণে।


এক, এই ডিভিডি আমি কিনেছিলাম কেননা কভারের উপর লাল মার্কার দিয়ে আমার লেখা 'R' অক্ষরটিও আমি দেখতে পাচ্ছি!
দুই, এটা আমার কাছ থেকে রাসেল নিয়েছিল এবং সহজ কথা হচ্ছে রাসেলের মাধ্যমেই তনিমার কাছে এসেছে এই জিনিষ।

তিন, এটা তনিমার ঘর এবং তনিমার সেলফ থেকে আমি একটা পর্ণ ডিভিডি হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছি..!

আমি যদি এখন ডিভিডিটা আবার আগের জায়গায় রাখতে চাই তবে আমাকে বেশ কষ্ট করতে হবে কেননা বইগুলো এমন চেপে চেপে রাখা হয়েছে যেখান থেকে টেনে এটা বেরতো করেছি কিন্তু আবার ঢুকিয়ে রাখতে গেলে আমাকে অন্তত একটা বই টেন্ব বের করতে হবে! কিন্তু তাতে আমার যে মুভমেন্ট হবে সেটায় তনিমার সন্দেহ হয়ে যেতে পারে আর আমি মরে গেলেও এই ডিভিডির ব্যপারটা যে আমি দেখেছি তা ওকে জানতে দিতে চাইনা, কক্ষনো না! হঠাত একটা ব্যাপার মাথায় এলো, ভাবলাম হয়ত তনিমা এখানে রেখে বেমালুম ভুলে বসে আছে। নয়তো বুক সেলফে নিশ্চয়ই কেউ এরকম কিছু রাখবেনা! মা-বাবা বা অন্য কেউওতো আমার মত টেনে দেখে নিতে পারে! আর যদি সত্যিই ভুলে গিয়ে থাকে তবে আমি এখন যদি এটা চুরি করে এখান থেকে নিয়ে যাই তবেই না সব ল্যাঠা চুকে যায়। যেই ভাবা সেই কাজ, আমি ডিভিডিটা আমার প্যান্টের পকেটে আস্তে আস্তে রাখতে শুরু করলাম। ভাগ্যিস মোবাইল প্যান্ট পড়া ছিলাম আজ, পকেট টা ঢোলা! জিন্সের প্যান্ট হলে পকেটে আটতই না। যাই হোক, পকেটে ডিস্কটা ঢুকিয়েছি মাত্র ওমনি একদম পেছন থেকে তনিমার গলা শুনে একেবারেই জমে গেলাম যেন!

তনিমা - কি করছেন রওনক ভাইয়া?

[+] 3 users Like ddey333's post
Like Reply
#11
(পর্ব-০৫)



তনিমার খাতা দেখছি। অংকগুলো শেষ করেই আমার কাছে এসে দাঁড়িয়েছিল। ক্ষনিকের জন্য থমকে গেলেও সাত-পাচ বলে আমার প্রচেষ্টা আড়াল করতে সক্ষম হয়েছি। অন্তত আমার মনে হচ্ছে কিছু বুঝতে পারেনি। সেলফের ঘটনাটা কাটিয়ে উঠতে পারলেও বুকের মাঝের ধুকপুকানি এখনও বিদ্যমান! যদি দেখে ফেলত! আমিতো লজ্জায় পেতামই, তনিমাও হয়তো এরপর থেকে পুরোটা সময় বিব্রত ফিল করত। এরকম ভাবছি আর খাতা দেখে চলছি। হঠাত তনিমা বলে উঠল..

তনিমা - আচ্ছা ভাইয়া, শশীর সাথে আপনার এখন কথা হয়?

আবারো সেই শশী! নাহ, মেয়েটার কথা যতই মাথা থেকে বের করে ফেলতে চাই ততই তনিমা ওর প্রসঙ্গ টেনে আনে! মহা মুশকিল। আমি খাতা থেকে চোখ না তুলেই উত্তর দিলাম..

আমি - নাহ..
তনিমা - সে কি? কেন?
আমি - আমি এখন কারও সাথেই আর খুব একটা যোগাযোগ করিনা, ফোনে কথা বলাটা আমার কাছে বিরক্ত লাগে।

তনিমা - কারও সাথেই কথা বলেন না বুঝলাম, তাই বলে ওর সাথেও?
আমি - হ্যা, কেন নয়? সবার মধ্যেতো ওউ পড়ে তাইনা?
তনিমা - আপনি কেমন মানুষ বলুনতো? মানুষ সারা দুনিয়া এক পাশে রাখে আর গার্লফ্রেন্ডকে এক পাশে রাখে! আর আপনি নিজের গার্লফ্রেন্ডকেও সবার সাথে তুলনা করছেন?

আমি কিছুটা অবাক এবং বিরক্ত হয়েই ওর দিকে তাকালাম এবার।


আমি - গার্লফ্রেন্ড?
তনিমা - হ্যা!
আমি - কে?
তনিমা - আহা! ভাজা মাছটি যেন ভাইয়া উলটে খেতে জানেনা! শশী আর আপনার সম্পর্কের কথা আমি জানি..
আমি - দেখ, কোথাও কোন ভুল হচ্ছে। আমার আর শশীর মাঝে কোন সম্পর্ক নেই, আমরা একটা সময় ফোনে যোগাযোগ করতাম এবং সেটা খুবই কম.. আমরা ফোনে সম্ভবত এক সপ্তাহও যোগাযোগ করিনি.. বা তার চাইতেও কিছুটা কম হবে..
তনিমা - ভাইয়া, কেন লুকোচ্ছেন? আমার আর রাসেলের সম্পর্কের কথা কি আমরা কখনো লুকিয়েছি বলুন?
তনিমা - আমি সত্যিই বলছি..
তনিমা - যাহ! মিথ্যুক.. গার্লফ্রেন্ড না হলে কি কেউ ফোন সে..

এটুকু বলেই তনিমা ধুম করে থেমে গেল। রুমটা যেন হঠাত করেই একদম ফাকা হয়ে গিয়েছে। আমি বোধহয় আজ সত্যিই বোবা হয়ে যাব। শশী তনিমাকে এসব কি বলেছে? আমি ওর সাথে কখনোই ফোন সেক্স করিনি। কেন করব? আমি ওকে সত্যিই বন্ধু ভাবতাম, আর যখন বুঝতে পারলাম আমরা ফোনে বন্ধুত্বের সিমা ছাড়িয়ে এক নিষিদ্ধ জগতে পা রাখছি ঠিক সেই মুহুর্তেই আমি যোগাযোগ বন্ধ করে দেই। বন্ধ মানে বন্ধ, এমনকি সিমও চেঞ্জ করে ফেলেছিলাম। কেননা আমি আমার সিমা ছাড়াতে চাইনি, আমি কোন সম্পর্কের মায়াজালে বাধতে চাইনি নিজেকে। কিন্তু তনিমা এসব কি বলছে? শশীকে যতটুকু চিনি ওতো বাড়িয়ে বলার মত মেয়ে নয়। আর যদি এত কিছুও শেয়ার করে থাকে তবে এটাও স্পেসিফিকলিই শেয়ার করার কথা যে টানা মাস হতে চলল আমাদের মধ্যে কোন যোগাযোগ নেই। কিন্তু তনিমার কথা শুনে আমার এখন ভীষণ দুশ্চিন্তা হচ্ছে। আমি যা করিনি, আমি ওর যা নই কেন তাই বলে বেড়াবে এভাবে? কোন দিক দিয়ে এটা সঠিক কেনই বা এমনটা করবে? এতে কি লাভ শশীর?

আমি - শশী বলেছে নিজে এই কথা?
তনিমা - (আমতা আমতা করছে) কোন কথা ভাইয়া?
আমি - তুমি যা বলত্ব নিয়ে থেমে গেলে..
তনিমা - না মানে.. সরাসরি এটা বলেনি কিন্তু..
আমি - আচ্ছা থাক, আমার জানতে হবেনা। তবে তুমি যেহেতু এক পক্ষের কথা শুনেই নিয়েছ তখন আরেক পক্ষ কেনই বা নির্বিকার থাকবে? আমিও বলছি শোনো.. ফ্রাংকলি বলি.. আমি ওর সাথে কথা বলতাম। কথা বেশিই বলা হয়ে গিয়েছিল আর বেশি কথা বলার যা ফল.. সব প্রয়োজনীয় কথা শেষে কাজের কথা খুঁজে না পেলে এলোমেলো কথার সৃষ্টি হয়। আমাদের মধ্যেও এমন হয়েছিল। আমরা কিছু সেক্সুয়াল ম্যাটার নিয়ে আলাপ করতে শুরু করেছিলাম, আর সেটা পার্সোনাল দিকে ঘুরে যেতেও সময় নেয়নি। তবে আমি যখনই বুঝতে পারলাম যে আমি একদমই উচিত করছিনা তখন আমি ওর সাথে যোগাযোগ করা বন্ধ করে দেই। কেননা, কোন কিছুর সিমা অতিক্রম করাই আমার কাছে ফালতু ব্যাপার। আমি চাইনি ওর সাথে এসব ব্যাপারে জড়িয়ে যেতে। ব্যাস। এটুকুই ছিম আমাদের মধ্যে, এখন এটাকেই যদি তুমি ঐটা মিন করো বা শশী যদি মনে করে ফোনে কিছু বিষয় নিয়ে আলাপ করাটাই ফোন সেক্স করা তবে ওর জানার ভুল আছে।
[+] 4 users Like ddey333's post
Like Reply
#12
great writing
[+] 2 users Like Jibon Ahmed's post
Like Reply
#13
(03-11-2022, 12:39 PM)Jibon Ahmed Wrote: great writing

সবই টুকলি দাদা , আমার লেখা নয় !!! Namaskar Smile
[+] 2 users Like ddey333's post
Like Reply
#14
এপর্যন্ত প্রায় এক দমে বলে আমি থেমে গেলাম। আমি সচরাচর রাগিনা তবে হঠাত করে যদি প্রচন্ড আপসেট হয়ে যাই তবে রাগ উঠতেও বেশি একটা সময় লাগেনা। তনিমাকে যে কথাগুলো বললাম তাতে বেশ খানিকটা ঝাজ প্রকাশ পেয়ে গিয়েছে। তনিমার দিকে তাকিয়ে দেখলাম, নিচের দিকে তাকিয়ে আছে। মুহুর্তে ওর কিছু বলার আছে কিনা সেটাই হয়ত ভাবছে। আমি মানুষের সাথে খারাপ আচরণ কখনোই করিনা, এটা আমার স্বভাব বিরোধী কাজ। তাই নিজের উপরে একটু রাগ হল। এখানে দোষ করলে শশী করেছে, তনিমাতো শুধু বিষয়টা সম্পর্কে নিশ্চিত হতে চেয়েছিল। আর একদিক দিয়ে তনিমার মাধ্যমেইতো আমি জানতে পারলাম শশী এরকম উলটো পালটা কথা ছড়িয়ে বেড়াচ্ছে। শশীর সাথে ব্যাপারটা নিয়ে কথা বলা দরকার। হয়ত মেয়েটা না বুঝেই কি না কি বলছে আর পাশ থেকে তনিমা নিজের মত করে বুঝে যাচ্ছে। তবে সত্যিটা জানতে হলে শশী ছাড়া উপায় নেই। তবে সেটা পরে দেখা যাবে, এখন তনিমা মন খারাপ করলো কিনা সেটা দেখা দরকার।


আমি - সরি তনিমা.. আমি আসলে রাগ করে বলিনি কথাগুলো, আর তোমার উপর রাগ করারতো কোন কারণই নেই। আসলে হয় কি জানো, আমি দ্রুত কথা বলতে নিলে আমার কথা এমন ভানে বের হয় যেন মনে হয় আমি রেগে কথা বলছি.... তাই আসলে..

তনিমা - না না, আমি কিছুই মনে করিনি ভাইয়া। আমি শুধু ভয় পেলাম যে আমি বেশিই বললাম কি না..

আমি - আরে নাহ.. পাগল নাকি তুমি! তুমি আমার ছোট্ট বেলার বন্ধুর গার্লফ্রেন্ড, সেই হিসেবে আমারও ফ্রেন্ড.. আর ফ্রেন্ডরা কখনোই বেশি করেনা কিছু..

এই কথাটা শোনার পরেই তনিমার মুখটা যেন উজ্জ্বল হয়ে গেল। এমনিতেই সুন্দর তবে হঠাত করেই যেন ওকে আরও সুন্দর লাগছে! কি যেন, হয়ত মেয়েরা কোন কিছু নিয়ে খুশি হলে বা উত্তেজিত হলে এমনই হয়। বলল,

তনিমা - সত্যিই আমি আপনার ফ্রেন্ড?
আমি - হ্যা, কেন নও! এটাইতো স্বাভাবিক..
তনিমা - তাহলে আপনি কেন আমার সাথে যোগাযোগ করেন না?
আমি - কই?? করিতো..
তনিমা - আপনাকে তুমি করে বলি?

ওর বাচ্চা মানুষের মত চাহনি আর দিতেই হবে টাইপের আবদার শুনে মনে মনে হাসলাম। মেয়েটা কিউট অনেক।


আমি - অনুমতি চাইতে হবে তোমার?
তনিমা - আচ্ছা তুমি সব সময় এমন গুছিয়ে কথা বলো নাকি শুধু মেয়েদের সামনে?
আমি - তোমার কি মনে হয়?
তনিমা - বা-রে! আমার কি মনে হবে? আমিতো তোমার সম্পর্কে খুবই কম জানি..
আমি - আমি আসলে কথা খুবই কম বলি। আর আমি কীভাবে কথা বলি সেটাতো আমি জানিনা.. সেটা তোমরা বুঝবে। তবে সম্ভবত আমি সবসময়ই এভাবে কথা বলি।

তনিমা - হুম! তোমার কথা সুন্দর.. যে কোন মেয়ে তোমার কথা বলার ধরণ শুনেই পাগল হয়ে প্রেমে পরে যাবে।
আমি - হয়েছে! আপনাকে প্রেম নিয়ে গবেষণা করতে হবেনা। আমাকে অংকগুলো দেখতে দিন..

তনিমা গুণগুণ করে গান গাইছে খুবই ধীরে আর আমি খাতা দেখছি। এমন সময় তনিমা আবার বলে উঠলো, 'আমাকে তোমার কেমন লাগে?' আমি অবাক হলাম.. এর উত্তর কীভাবে দেব আমার জানা নেই।


আমি - তুমি মেয়েটা অনেক ভালো, সুন্দর।
তনিমা - ব্যাস?
আমি - হুম.. একটা মানুষ ভালো আর সুন্দরইতো হয়..
তনিমা - আর কিছু হয়না?
আমি - জানিনাতো..
তনিমা - তাহলে হয় তোমার বন্ধু বা তুমি, যে কোন একজন আমায় মিথ্যে বলছ।

আমি - যেমন?
তনিমা - এই যে, তুমি আমাকে বলছ 'ভালো আর সুন্দর', আর তোমার বন্ধু বলে 'কিউট আর সে...'!

তনিমা থেমে যায়, ফর্সা গালে লাল আভাও দেখতে পাই। আমি হাসি। বললাম,

আমি - আচ্ছা! না, ওটাও ঠিক। কিন্তু তোমার বয়ফ্রেন্ড তোমাকে যেভাবে, যে দৃষ্টিকোণ থেকে দেখবে আর যেভাবে ডেসক্রাইব করবে তা তো আমরা করতে পারব না তাইনা?
তনিমা - কেন?
আমি - হইছে! আপনাকে এত ইনোসেন্ট সাজতে হবেনা। কেন সেটা আপনি ভালো করেই জানেন..!

তনিমা মিচকি মিচকি হাসছে। আমিও হয়ত ওর সাথে এসব এলোমেলো আলাপে বেশ মজাই পাচ্ছিলাম তবে মনের কোথাও, কোন এক জায়গায় কেমন যেন একটা অপরাধবোধ কাজ করছিল। আমি জানিনা কেন, তবে বার বার মনে হচ্ছিল আমার ওর সাথে এতটা ফ্রেন্ডলি কথা বলাটাও ঠিক হচ্ছেনা। মন না আবার কখন কি ভেবে বসে কখন কি চিন্তা করে ফেলে কে জানে। তবে আমি দু:স্বপ্নেও বা কল্পনাতেও তনিমাকে নিয়ে কোন কথা চিন্তা করতে চাইনা.. কেননা, ওর সাথে আগে থেকেই আমার একটা সম্পর্কের জাল তৈরি হয়ে আছে। আর রাসেলও ওকে খুব ভালোবাসে.. তাই না ভালো চিন্তা, না খারাপ চিন্তা.. কোন চিন্তাই আমি করতে চাইনা তনিমাকে নিয়ে। তাই প্রসঙ্গ পাল্টালাম..

আমি - আচ্ছা বাসায় কেউ নেই?
তনিমা - নাহ! এই সময়টায় বাসায় কেউ থাকেনা.. মা তো অফিসে থাকে, বাবাও। আর আপুর ক্লাস থাকে। তাই দুপুর আর বিকেলের এই সময়টায় আমি একাই থাকি।

আমি - ওহ সরি.. আচ্ছা তাহলে আমি সময়টা চেঞ্জ করি। খালি বাসায় এসে পড়ানোটা কেমন দেখায় যেন..
তনিমা - না না.. কোন সমস্যা নেই। রাসেলতো এই সময়েই আসত..
আমি - খালি বাসায়?!?!?!?!
তনিমা - হ্যা.. আরও বলত খালি বাসাতেই যেন বেশি ভালো..

আমি মাঝে মাঝে বড্ড বোকামি করে ফেলি। কিছু সময় সম্ভবত আমার কথা বুঝতে সময় লাগে! নইলে কি আর বোকার মত প্রশ্ন করে বসি,

আমি - কেন?


প্রশ্ন করেই আমি বুঝে গিয়েছি প্রশ্নটা করা উচিত হয়নি। তনিমা মাথা নিচু করে বসে আছে। আমি স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি ওর নাক ঘেমেও উঠেছে। অনেক ফালতু একটা অবস্থায় ফেলে দিয়েছি আমি, দুজনকেই! আর দোষ যখন আমার তাই আমিই সীদ্ধান্ত নিলাম পরিস্থিতি সামলে নেবার আর সে সময়ে হয়ত এর চাইতে বেশি বলারও কিছু ছিলনা আমার..

আমি - তনিমা, অংকগুলো দেখলাম। একটাও ভুল হয়নি। চমৎকার। আজ আর তোমাকে না করাই, আরেকটা টিউশনও আছে। আজ ওখানেও যাব।

তনিমা - আচ্ছা ভাইয়া, সমস্যা নেই।


আমি আরর বেশি সময় নষ্ট করলাম না! বেশ কিছু বাজে পরিস্থিতির সামনা সামনি হতে হয়েছে পরপর। নিজেকে ধাতস্থ করতে হবে আগে। এছাড়াও খালি বাসায় রাসেলের আগমন কথাটা আমাকে কিছুটা উত্তেজিত করে তুলেছিল। এটাও একটা বিশ্রি ব্যপার, এখন অপরাধ বোধ কাজ করছে। কেপেই চলছে ভেতরের নিতিমালা সংরক্ষনের বিভাগটা যেন। তাই বিলম্ব না করে আমি উঠে পড়লাম। তনিমার সামনে থেকে সরে যেতে হবে আমাকে, যত দ্রুত সম্ভব!

[+] 5 users Like ddey333's post
Like Reply
#15
(পর্ব - )



সারাদিন পরিশ্রম করে (জীবনের প্রথম টিউশনি করালাম, তাও তিনটা একদিনে) বাসায় এসেই বিছানায় গা এলিয়ে দিলাম। তনিমার পর যে বাসায় পড়াতে গিয়েছিলাম সেই ছেলেটা বেশ মেধাবী, খুব বেশি ধরিয়েও দিতে হয়নি ওকে। এজন্য কিছুটা হলেও হাফ ছেড়ে বেচেছি। বাসায় আসার পথে অবশ্য এলাকার হামিদ ভাইয়ের সাথে কিছুক্ষণ কথা হল। আমি আপাতত কিছু করছিনা শুনে জিমে জয়েন করার কথা বললেন। এখনি নাকি সময় - হ্যান-ত্যান আরও কত কিছু। শুনলাম শুধু। শেষে এও বললেন যে মেয়েরা খুবই পছন্দ করেন পেশিবহুল শরীর, মেদবিহিন পেট আরও কত কিছু। মনে মনে হেসেছি আর ওনার কথায় মাথা নাড়িয়েছি। কেননা প্রেম বা কোন মেয়ে সম্পর্কে আমার ধারণা অনেকটাই সিম্পল। কোন একটা বড়লোক ছেলের সুন্দরি প্রেমিকা হবে এটাই স্বাভাবিক তবে সেক্ষেত্রে সেই ছেলেটার প্রতি মেয়েটার প্রেম কতটুকু সত্যি তা ভেবে দেখবার বিষয়। কেননা, মেয়েরা সিকিউরিটি চায় আর এযুগে টাকার চাইতে বড় সিকিউরিটি আর কিই বা হতে পারে? তাই, টাকা দেখেই বেশিরভাগ মেয়েরা ভবিষ্যৎ সিকিউর করতে ঝুলে পরে বড়লোক ছেলেদের গলায়। ঠিক একই ভাবে, আমি বডি-টডি বানিয়ে একটা মেয়ের সামনে গেলে সে হয়ত আমার বডি দেখে প্রেমে পরে যাবে, কিন্তু তা তো আমি চাইনা! হঠাত করে জিমে যাওয়া ছেড়ে দিলে সেই বডি ধীরে ধীরে ছেড়ে দেবে, তখন সেই ভালোবাসার কি হবে? আমি কোন মেকি প্রলোভন দেখিয়ে আমার জীবনে কাউকে আনতে চাইনা, কখোনই না। তবে হ্যা, স্বাস্থ্য ভালো রাখার জন্য জিমে জয়েন করে হালকা ব্যায়াম করা যেতেই পারে। তাতে কোন ক্ষতি দেখছিনা। শুয়ে শুয়ে এসব ভাবছিলাম আর তখনই মা খেতে ডাকলেন। আমি ফ্রেশ হতে বাথরুমে ঢুকে গেলাম।



------------------------------------



খাবার সময় মা আমার পাশের চেয়ারেই বসে থাকেন সব সময়। কখোনই আমি বাসার টেবিলে বসে খাচ্ছি আর মা পাশে বসে নেই এমনটি হয়নি। মা আমার খাবার সময় বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলেন, আমার এটা ভালো লাগে। বরং কখনো যদি বাইরে কোথাও খেতে বসি তখনই সেই কথাগুলো শুনতে না পেয়ে ক্ষুদা মিটে যায় আমার। মা একনাগাড়ে কথা বলেই চলেছেন, তবে আজ তার কথা বলার একটা ফিক্সড টপিক রয়েছে -

মা - টিউশনি যে করাতে গেলি, খেতে দিয়েছে?
আমি - মা, আমি তো খেতে যাইনি!
মা - বা-রে! তোকে যখন তোর টিচাররা পড়াতে আসতেন তারা কি খেতে আসতেন? আমি কি তাদের খেতে দেইনি?
আমি - সবাই কি আর তোমার মত? অবশ্য এরকম করলে আমারই বিব্রত লাগতো হয়ত। সে হিসেবে ভালোই হয়েছে।

মা - তিন তিনটা বাসায় পড়ালি আজ, কেউ- কিছু খেতে দিলনা? এটাতো ভদ্রতারে।
আমি - আসলে সিথি আপা আজ ব্যস্ত ছিল আর তনিমার মা বাসায় ছিলনা। পরে যে ছেলেটাকে পড়ালাম ওর বড় আপুটা খুবই আন্তরিক, উনি কিছু খাব কি না জিজ্ঞেস করেছিলেন..
মা - মানুষের মাঝ থেকে ভদ্রতা উঠে যাচ্ছে দিন দিন! আচ্ছা, তনিমা মেয়েটাকে তোর ক্যামন লাগেরে?
আমি - কেমন লাগবে আবার?
মা - মানে আমি বলতে চাচ্ছি, মেয়েটা কিন্তু যথেষ্ট সুন্দর..
আমি - হয়তো..
মা - চোখ কি কানা নাকিরে তোর? সুন্দর একটা মেয়ে আর তুই বলছিস 'হয়তো'?!
আমি - মা, ওর বয়ফ্রেন্ড আছে।


মা এবার চুপ হয়ে যায়। তনিমাকে অনেক দিন আগে মা দেখেছিলেন আমার আর রাসেলের সাথে। মা হয়ত আমাদের কমন ফ্রেন্ড ভেবেছিলেন তনিমাকে। মা কিছুক্কণ চুপ করে থেকে হঠাত করে রাগে গজগজ করতে করতে উঠে যায় আমার পাশের চেয়ার থেকে,' টুকু মেয়ের আবার বয়ফ্রেন্ড! ফাইজলামির একটা লিমি....' ততক্ষনে আমারও খাওয়া শেষ, মায়ের চলে যাবার পথের দিকে তাকিয়ে মনে মনে হাসি আর হাত ধুতে যাই.. মা যেন পারলে সব সুন্দর মেয়েকেই আমার বউ বানিয়ে দেন!



------------------------------------

Like Reply
#16
Next please
[+] 1 user Likes Jibon Ahmed's post
Like Reply
#17
no more!
[+] 1 user Likes zaq000's post
Like Reply
#18
Sundor story, onk onk vlo lagse
Like Reply
#19
ভাই আপনার অধিকাংশ story অসম্পূর্ণ থাকে, আশাকরি এত সুন্দর গল্পটা সম্পূর্ন দিবেন।
আর next সব গুলোই পুরো আপডেট দেয়ার চেষ্টা করবেন।
Like Reply
#20
অনেক সুন্দর আপডেট।
[+] 1 user Likes S.K.P's post
Like Reply




Users browsing this thread: