Thread Rating:
  • 56 Vote(s) - 3.21 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
WRITER'S SPECIAL - জবানবন্দি
#81
উপরের লাল অংশে লেখা আজকের প্রতিটা লাইন সোজা বুকে এসে বিধলো। মানব মন ও মস্তিষ্কের দ্বন্দ্ব নিয়ে লিখতে আমার বরাবার ভালো লাগে। সেটা তুমি আমার লেখা পড়েই বুঝেছো। তাই তেমনি কিছু অন্যের লেখায় পেলে হা করে আমিও পড়ি। মুখে মাছি ঢোকার ভয় ভুলে।

ওপরের ওই লাইনগুলো জসি অসাধারণ। ভালোবাসার মানুষের এতো কাছে থাকা, এতো কাছে আসা কিন্তু তাও একটা বিরাট দূরত্ব। তার মাঝেই একটা উঁচু পাঁচিল যেটা ডিঙিয়ে আসা অসম্ভব না হলেও বিপদজনক। একবার পড়ে গেলে চিরকালের মতো হারিয়ে যেতে পারে অনেক মুহূর্তের মূল্য। হয়তো পুরোটাই ব্রেনের ব্যাপার। কিন্তু তাও তো ঠিক ভুল এর মাঝের পথ। বড্ড সাংঘাতিক!

তবে এমন মুহুর্ত আবার বড্ড পবিত্র। কারণ শরীরী আকর্ষণ থাকলেও তাতে নেই কোনো বিকৃত চাহিদা। শুধুই শরীর নয় সাথে জুড়ে আছে প্রাণ, আত্মা, ভালোবাসা, বন্ধুত্ব আর সবশেষে চাহিদা। এমন মুহূর্তে কোনো সুন্দরী নগ্ন নারী মূর্তি এসে হাতছানি দিলেও সেই পুরুষ ফিরেও তাকাবে না সেদিকে। কারণ অমূল্য সম্পদ যে বুকে মাথা রেখে শুয়ে ♥️
[+] 3 users Like Baban's post
Like Reply
Do not mention / post any under age /rape content. If found Please use REPORT button.
#82
(30-10-2022, 09:17 PM)Bumba_1 Wrote:
এমন যদি হতো..
একটা প্রেমের গল্প হতো,
দূরে থেকেও ভালবাসা হতো।
এমন যদি হতো..
জীবন অনেক ব্যস্ত হতো,
তবুও হাতে তার হাতটা হতো।

এমন যদি হতো..
রাত জেগে ভোর হতো,
তবুও প্রেমালাপ শেষ না হতো।
এমন যদি হতো..
সকাল পেরিয়ে দুপুর হতো,
কেউ হতো অপেক্ষায় অভিমানি ..
আর কে .. ওই তো তোমার দেবযানী।

বরাবরের মতই আমি বাকরুদ্ধ 
তুমি গুরুদেব মহাসনে আসীন 
আর আমি পদতলে ধুলোয় 
হতে চাইবো বিলীন।

এখনো কথাই কিন্তু বাস্তব আর দেবযানী স্পর্শের বাইরের মরীচিকা।
Shy হাত বাড়িয়ে ছুঁই না তোকে, মন বাড়িয়ে ছুঁই।
 দুইকে আমি এক করি না, এক কে করি দুই।। Shy
Like Reply
#83
ddey333 Wrote:নতুন একজন পিনুরামের আগমন ...    নাম যদিও পরের পাতা !! clps

আমার মতামত ... Shy


এই কমেন্ট দেখলে পিনুরাম দা আমাকে পিটবে।

পিনুরাম দা উচ্চ শিখরে বসে আছে আর আমি তো এখনে শিকড় ধরার চেষ্টায় ব্যস্ত।
Shy হাত বাড়িয়ে ছুঁই না তোকে, মন বাড়িয়ে ছুঁই।
 দুইকে আমি এক করি না, এক কে করি দুই।। Shy
[+] 1 user Likes nextpage's post
Like Reply
#84
(30-10-2022, 11:15 PM)nextpage Wrote: এই কমেন্ট দেখলে পিনুরাম দা আমাকে পিটবে।

পিনুরাম দা উচ্চ শিখরে বসে আছে আর আমি তো এখনে শিকড় ধরার চেষ্টায় ব্যস্ত।

পিনু আজকাল সারাদিন নিজের নুনু ধরে বসে থাকে

এই দুদিন আগেও কথা হলো !!!!!


Angry
[+] 2 users Like ddey333's post
Like Reply
#85
(30-10-2022, 10:37 PM)Baban Wrote: উপরের লাল অংশে লেখা আজকের প্রতিটা লাইন সোজা বুকে এসে বিধলো। মানব মন ও মস্তিষ্কের দ্বন্দ্ব নিয়ে লিখতে আমার বরাবার ভালো লাগে। সেটা তুমি আমার লেখা পড়েই বুঝেছো। তাই তেমনি কিছু অন্যের লেখায় পেলে হা করে আমিও পড়ি। মুখে মাছি ঢোকার ভয় ভুলে।

ওপরের ওই লাইনগুলো জসি অসাধারণ। ভালোবাসার মানুষের এতো কাছে থাকা, এতো কাছে আসা কিন্তু তাও একটা বিরাট দূরত্ব। তার মাঝেই একটা উঁচু পাঁচিল যেটা ডিঙিয়ে আসা অসম্ভব না হলেও বিপদজনক। একবার পড়ে গেলে চিরকালের মতো হারিয়ে যেতে পারে অনেক মুহূর্তের মূল্য। হয়তো পুরোটাই ব্রেনের ব্যাপার। কিন্তু তাও তো ঠিক ভুল এর মাঝের পথ। বড্ড সাংঘাতিক!

তবে এমন মুহুর্ত আবার বড্ড পবিত্র। কারণ শরীরী আকর্ষণ থাকলেও তাতে নেই কোনো বিকৃত চাহিদা। শুধুই শরীর নয় সাথে জুড়ে আছে প্রাণ, আত্মা, ভালোবাসা, বন্ধুত্ব আর সবশেষে চাহিদা। এমন মুহূর্তে কোনো সুন্দরী নগ্ন নারী মূর্তি এসে হাতছানি দিলেও সেই পুরুষ ফিরেও তাকাবে না সেদিকে। কারণ অমূল্য সম্পদ যে বুকে মাথা রেখে শুয়ে ♥️

তোমার মন্তব্য পড়ে আমি নিজেও আরেকবার ঐ অংশ টুকু পড়ে নিলাম।
তোমার বিশ্লেষণ মস্তিষ্কের ধার বাড়ায়।

চেষ্টা করেছি মনের চাহিদা আর শরীরের চাহিদা দুটোকেই পাশাপাশি রেখে তার একটা পয়েন্ট অব ভিউ তুলে ধরতে। কতটুকু পারছি সেটা তোমরাই ভালো বলতে পারবে।
Shy হাত বাড়িয়ে ছুঁই না তোকে, মন বাড়িয়ে ছুঁই।
 দুইকে আমি এক করি না, এক কে করি দুই।। Shy
Like Reply
#86
(30-10-2022, 11:19 PM)ddey333 Wrote: পিনু আজকাল সারাদিন নিজের নুনু ধরে বসে থাকে

এই দুদিন আগেও কথা হলো !!!!!


Angry

তার লেখা খুব মিস করি।
এইতো দিন বিশেক আগেও তার শেষের পাতায় শুরু টা আরও একবার পড়লাম যতবার পড়ি ততোবারই নতুন লাগে।

বলুন না আবার কিছু লিখতে।
Shy হাত বাড়িয়ে ছুঁই না তোকে, মন বাড়িয়ে ছুঁই।
 দুইকে আমি এক করি না, এক কে করি দুই।। Shy
[+] 1 user Likes nextpage's post
Like Reply
#87
(30-10-2022, 11:21 PM)nextpage Wrote: তার লেখা খুব মিস করি।
এইতো দিন বিশেক আগেও তার শেষের পাতায় শুরু টা আরও একবার পড়লাম যতবার পড়ি ততোবারই নতুন লাগে।

বলুন না আবার কিছু লিখতে।

ধুর !!!

ওই বাল আর কোনোদিন লিখবে না ... Dodgy
Like Reply
#88
অসাধারণ লেখনী দাদা
[+] 1 user Likes Jibon Ahmed's post
Like Reply
#89
(31-10-2022, 05:08 AM)Jibon Ahmed Wrote: অসাধারণ লেখনী দাদা

thanks
Heart
Shy হাত বাড়িয়ে ছুঁই না তোকে, মন বাড়িয়ে ছুঁই।
 দুইকে আমি এক করি না, এক কে করি দুই।। Shy
Like Reply
#90
কারো কাছে ইনচেস্ট টেলিগ্রাম গ্রুপ থাকলে নিচের আইডি যুক্ত করবেন।
@Golpokothok
Like Reply
#91


যাদের এখনো নতুন পর্ব টি পড়া হয়ে উঠে নি পড়ে ফেলতে পারুন ঝটপট। সেই সাথে অতিথি গল্পের আপডেট ও এসে গেছে। চোখ বুলিয়ে নিতে পারেন।



এই গল্পের পরবর্তী আপডেটের জন্য লিখতে বসেছি, আশা করি দ্রুতই দেখা হবে নতুন পর্ব নিয়ে।

[+] 2 users Like nextpage's post
Like Reply
#92

কথা আমার খুব কাছাকাছি চলে এসেছে, ওর লিপস্টিকের রঙে রঙিন হয়ে উঠা ওষ্ঠদ্বয় যেন আমাকেই ডাকছে তার দিকে৷ ওর ছোট হয়ে আসা চোখ গুলো আমাকে মন্ত্রের মত কথা দিকে টানছে৷ আমি আর নিজেকে স্থির করে রাখতে পারছিলাম না, চঞ্চল মন এগিয়ে যেতে চাইছে কথার দিকে। সময়ের অপেক্ষার অবসানে মিলিয়ে দিতে চাইছে দুটো হরাহর আত্মাকে৷ আমি যেন আর নিজের মাঝে নেই সবকিছু ভুলে গিয়েছি ভুলে যেতে চাইছি আশেপাশের সবকিছু কে আর নিজেদের নিয়ে যেতে চাই সবকিছুর উর্ধ্বে৷ আমি এগিয়ে গেলাম আরেকটু কথার দিকে এতোক্ষণ নিষ্প্রভ হয়ে থাকা ঠোঁট গুলো চঞ্চল হয়ে উঠার অপেক্ষায়৷ কথা ওর চোখ বন্ধ করে নিলো, ওর নিঃশ্বাস এলোমেলো হয়ে আছড়ে পড়তে লাগলো আমার চিবুকে। আমার নিষ্প্রাণ ঠোঁট জোড়া আলতো করে ছোঁয়ে গেল কথার সিঁদুরে রাঙা কপাল৷





তৈরী নতুন আপডেটের সবকিছু এবার পরিবেশনের পালা। আগামীকাল রাতেই আসছে গল্পের নতুন পর্ব। সেই পর্যন্ত সঙ্গেই থাকুন...
[+] 3 users Like nextpage's post
Like Reply
#93
পর্ব- ৪





মাঝের একটা দিন কেমন করে কেটে গেল টেরই পেলাম না। শুক্রবার থাকায় ঐ দিন দিপু দা বাসায় ছিল বলে হৈ-হুল্লোড় টা একটু বেশিই হয়েছে। সকাল থেকেই আমি কাব্য আর দিপু দা খুনসুটি তে মেতে ছিলাম কিন্তু কথা কেন জানি আমার উপর বেজায় নাখোশ দেখাচ্ছিল। ও তো আমাকে হাসিখুশি দেখতে ভালবাসে তবে কেন বারবার ওমন রক্তিম চোখে আমার দিকে তাকাচ্ছিল বুঝলাম না। আমার সামনে আসার সময় ওর মুখের অভিব্যক্তি স্পষ্ট করেই জানান দিচ্ছিলো আমার উপর সে যথেষ্টই অখুশি৷ আমি কি আবার কোন ভুল করে ফেললাম নাকি কে জানে নইলে ওমন করে তাকানোর মানেই বা কি। দুপুরে স্নানের সময় সেদিন আর জল তুলে দিলো না খাবার খাওয়ার সময় ছাড়া ছাড়া একটা ভাব আমাকে যথেষ্টই মন খারাপ করার রসদ জুগিয়ে চলছিলো। তবে আমি একটু খুশিই ছিলাম কারণ দিপু দা থাকায় ও আমার কাছে আসার তেমন সুযোগ পাচ্ছিলো না। আগের দিনের দুপুরে ওমন করে আমার বুকে উপর শুয়ে থাকার পর যে ঘটনা ঘটতে যাচ্ছিলো সেটা বেশ বিব্রতকর পরিবেশ তৈরী করেছিলো আমার জন্য। এরপর থেকে কেন জানি ওর সাথে আর চোখ মেলাতে পারছিলাম না। কেন জানি একটা দ্বিধাবোধ আমাকে ভেতর থেকে কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছিলো। আবার ওকে এক নজর না দেখেও আমার ভেতরের উশখুশ ব্যাপারটা ব্যাপক ভাবেই বেড়ে যাচ্ছিলো। কি করবো কিছুই বুঝতে পারছিলাম মনের শুনবো নাকি মস্তিষ্কের সেটার টানাপোড়েনের মাঝে আমি অসহায় ভাবেই আটকে গিয়েছিলাম।

আগের দিনও যে আমাকে খাবার দেবার সময় অতি উৎসাহে পরিপূর্ণ ছিল আজ সেই কথা পারে তো আমাকে খেতেই দিতে চাইছিলো না। আমি আমাদের সাথে একসাথেই খেতে বসতে বলতেই সাথে সাথে না বলে দিলো, সে নাকি পড়ে খেয়ে নেবে। কিছু তো একটা হয়েছে তার জন্যই এমন খিটখিটে ভাব দেখাচ্ছে, চোখে মুখের অভিব্যক্তি বলছে কথার মেজাজ যথেষ্ট বিগড়ে আছে। আমার মনে তো কু’ডাক শুরু হয়ে গিয়েছিল মনের মাঝে নানান ভাবনা উঁকি দিচ্ছে, আমাকে নিয়ে কোন সমস্যা হয় নি তো ওদের মাঝে। দিপু দা কি কথা কে কিছু বলেছে কোন ব্যাপারে? নাকি কথাই কিছু বলেছে দিপু দার কাছে। ও যে পাগলামি করে কোন কিছুই সন্দেহের বাইরে রাখা যাচ্ছিলো না।

সেদিন বিকেলে আমরা সবাই ঘুরতে বেড়িয়েছিলাম। ঘুরাঘুরি বলতে পার্কে আর নদীর পাড়ে একটা মেলা বসেছে সেখানেই যাওয়া হয়েছিল। মেলা টা ভালোই বড়সড় ছিল প্রচুর দোকানপাট বসেছে একপাশে সার্কাস পুতুল নাচ সহ বিভিন্ন রাইড আছে, কিন্তু সন্ধ্যার শো তে সিনেমা দেখার প্ল্যান ছিল বলে তেমন একটা ঘুরাঘুরি করা যায় নি। সিনেমা দেখতে গিয়ে সীটে বসা নিয়ে কথার কান্ড দেখে আমি হতবাক আর দিপু দার সামনে অনেকটাই বিব্রতের সামনে পড়ে গিয়েছিলাম। কোথায় আমি চাচ্ছিলাম যতটা পারি দিপু দার সামনে ওকে এড়িয়ে যেতে আর ততোবারই সে উল্টো টা করে যাচ্ছিলো৷ কথা চেয়েছিল ওর একপাশের সীটে আমি বসি কিন্তু সেবারের মত কোন ভাবে সেটাকে এড়িয়ে যেতে পেরেছি। সত্যি বলতে মন থেকে চাইছিলাম না এমন কোন কিছু ঘটুক যেটাতে এমন পরিবেশ সৃষ্টি হোক যাতে করে পরবর্তীতে সেটা খারাপ প্রভাব তৈরী করতে পারে৷ ব্যাপারটা যে কথার পছন্দ হয় নি সেটা ওর দাঁতের কটমট আর চোখ রাঙানো দেখেই বুঝে নিয়েছি, এমন করে বারবার আমার দিকে তাকাচ্ছিল যে এই বুঝি ওর চাহনির তেজে আমি ঝলসে যাবো। ভাগ্যিস দিপু দা পাশেই ছিল নইলে অন্য কাউকে পরোয়া না করেই আমাকে দু চার ঘা নিশ্চিত বসিয়ে দিতো নিজের রাগের উপশম করতে।
যেখানে বাঘের ভয় সেখানেই সন্ধ্যে হয় এই প্রবাদ টার সত্যতা হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছিলাম ইন্টারভালের পর। বাইরে কথা আর দিপু দার মাঝে কি কথা হয়েছে জানি না কিন্তু ইন্টারভালের পর আমার পাশের সীটে যথারীতি কথা তার জায়গা করে নিল। সামনে আমার জন্য কি কি অপেক্ষা করছে সেটা ভাবতেই আমার হাত পা কাঁপতে শুরু করে দিলো৷ আর আশঙ্কা সত্যি করে আমার হাতের নরম চামড়ায় নখ ফুটিয়ে এমন এক চিমটি কাটলো বলার মত না। হল ভর্তি মানুষের সামনে শুধু চিৎকার করাটাই বাকি রয়ে গিয়েছিল। যন্ত্রণায় আমার চোখের কোণে জল জমে গিয়েছিল কোনমতে দাঁতে দাঁত চেপে সেটা সহ্য করে গিয়েছি৷ খানিক বাদেই রক্ত জমে যাওয়া জায়গাটায় আবার কথা নিজেই হালকা করে ফুঁ দিয়ে দিচ্ছিলো৷ আমি শুধু অবাক হয়ে ওর দিকে তাকিয়ে ছিলাম আর মনে মনে ভাবছিলাম ব্যাথা দিলো যে পথ্যও দিচ্ছে সে। হঠাৎ মনে হলো কথার গাল বেয়ে কয়েক ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়লো আমার হাতে৷ হয়তো যে যন্ত্রণা টা আমার হাতে হচ্ছিলো তার চেয়ে বহু বেশি ওর হৃদয়ে যেটা আমি কখনোই বুঝতে পারি নি হয়তো বুঝতেই চাই নি। হঠাৎ ওর বদলে যাওয়া চেহারা আমাকে আরও বেশি কষ্ট দিচ্ছে যার কাছে হাতের যন্ত্রনাটা কিছুই না। 


আজ একটু বেলা করেই ঘুম থেকে উঠেছি আর শুয়ে শুয়ে গতকালের ঘটনা গুলোর স্মৃতিমন্থন করে চলেছি, আমার ঘুম থেকে উঠার আগেই দিপু দা নাস্তা সেড়ে অফিসের জন্য বেড়িয়ে গেছে৷ ফ্রেশ হয়ে খাবার টেবিলে গিয়ে দেখি যাচ্ছে তাই এক অবস্থা, এদিকে ওদিকে জিনিসপত্র ছড়ানো ছিটানো। পুরো টেবিল জুড়ে নুডুলসে মাখামাখি, আর পাশের একটা চেয়ারে হাত মুখে খাবার মাখিয়ে বারোটা বাজিয়ে রাখা কাব্য খিলখিল করে হাসছে আর নতুন করে নুডুলস চামচে নিয়ে পুতুল কে খাওয়াচ্ছে। খানিকটা দূরে দেয়ালে ঠেস দিয়ে দাঁড়ানো কথা কিংকর্তব্যবিমুঢ় অবস্থায় আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি একটা হাসি দিলো। ওর ঐ মিস্টি হাসিতে আমার সকাল টা যেন আরও সুন্দর হয়ে উঠলো।

দেখ কি করেছে বাঁদরটা, ওকে নিয়ে আর পারি না। ওকে সামলাতে সামলাতেই আমার দিন চলে যায় (কটমট করে তাকিয়ে আছে কাব্যের দিকে, কিন্তু কাব্যের সেদিকে কোন খেয়াল নেই সে তার কাজ আপন মনে করে যাচ্ছে)

(কাব্যের মাঝে আমি যেন আমার ছোট বেলা ফিরে পেলাম)
এই বয়সে সবাই ওমন একটু আধটু করেই, তুইও করেছিস এখন আর মনে নেই এই যা। আমি দেখছি কি করা যায়, তুই আমার নাস্তাটা এনে দে আমি আর কাব্য আজ একসাথে খাবো।

কথা আমার আর ওর নাস্তাটা নিয়ে এসে একপাশে বসে চুপটি করে আমার আর কাব্যের কান্ড কারখানা দেখছে আর মুচকি মুচকি হাসছে। আমি কাব্যকে ছড়া বলে ছন্দ বলে নানা মুখ ভঙ্গির কসরতে শেষ পর্যন্ত খাওয়াতে সক্ষম হয়েছি। বাপরে বাপ বাচ্চা পালা কত হ্যাপা সেটা হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছি, আমার কাহিল অবস্থা যেন কথার মুখে চওড়া হাসির যোগান দিয়ে যাচ্ছে। আমি তৃপ্তির সহিত সেই হাসি আস্বাদন করে নিচ্ছি নিজের অন্তরাত্মায়। কথা কাব্য কে নিয়ে যায় পরিষ্কার করার জন্য এই ফাঁকে আমি টেবিল টা যতটা পারি গুছিয়ে নেবার চেষ্টা করতে থাকি। আগে এক গ্লাস জলও নিজে নিয়ে খেতাম না কিন্তু বাড়ির বাইরে বের হবার পর নিজের টা নিজেরই করে নিতে গিয়ে অনেক কিছু শিখে গিয়েছি। মেসে থাকার সময় রান্নাটাও নিজের আয়ত্তে নিয়ে এসেছি এখন মন চাইলে বাসায় মা কে একটু বিশ্রামে দিয়ে রান্নাঘরের দখল নিয়ে নেই আমি। কথা ফিরে এসে গুছানো পরিষ্কার টেবিল দেখে আশ্চর্য হয়ে গেছে

কিরে তোকে এসব কে করতে বলেছে? আমি এসে তো করে নিতাম। যা তুই গিয়ে হাত ধুয়ে নে
(কথা এগিয়ে এসে আমার হাত থেকে খাবারের প্লেট গ্লাস গুলো কেড়ে নিলো)

(শুক্রবারে কথা কে যতটা নিষ্প্রভ নিষ্প্রাণ লাগছিলো আজ যেন ততোধিক প্রাণোচ্ছল চঞ্চল মতি লাগছে। ঐদিন ওর কি হয়েছিল সেটা এখনো আমার কাছে একটা রহস্য হয়ে রয়ে গেল। একবার ভেবেছিলাম জিজ্ঞেস করবো কিন্তু সাহসে কুলিয়ে উঠতে পারি নি)
আমি এতোটাও অকর্মা নই বুঝলি, এতোটুকু কাজ অনায়াসেই করে নিতে পারি। রান্না করতেও শিখে গেছি।

(প্লেট গুলো নিয়ে রান্না ঘরের দিকে যেতে থাকে) 
তুই কেমন রান্না করিস সেটা আমার চেয়ে ভালো কে জানে আর! মেসে থাকতে একদিন তো আমার জন্য রান্না করে নিয়ে এসেছিলি। উফফ সেই স্বাদ টা এখনো মুখে লেগে আছে। যা স্নান করে নে তাড়াতাড়ি আমরা একটু বাইরে যাবো।

(ও যে আমার রান্নার টিটকারি মারছে সেটা বেশ বুঝতে পারছি, সেদিন রান্না টায় সব গড়বড় হয়ে গিয়েছিল৷ আমারও দোষ কি নতুন নতুন রান্না করা শিখছি তখন মাত্র, কিন্তু ও বায়না ধরলো ওতে খাওয়াতেই হবে)
শুন এমন করে ইনসাল্ট করবি না, তুই জোর করে খেতে চেয়েছিলি। তবে এখন রান্না আরও ভালো করে শিখেছি। 
 আচ্ছা কোথায় যাবো?

(পেছন ফেরে একটা রহস্যময় হাসি দিয়ে)
সময় হলেই দেখবি।

ঝটপট স্নান শেষে ঘরে ঢুকেই দেখি এখন কোন জামা কাপড় গুলো পড়বো সেগুলো বিছানায় রেডি করে রাখা আছে। কথা আমার ব্যাগ ধরেছিল, ভাবতেই মাথাটা চক্কর দিয়ে উঠলো। ধ্যাত আমার আগেই বুঝা উচিত ছিল ও যেকোন সময় আমার ব্যাগ ধরতে পারে ওটা কথার অলিখিত অধিকার কিন্তু ব্যাগে একটা জিনিস ছিল সেটাও ওর হাতে চলে গেছে তাহলে। আমি সাথে সাথে ব্যাগটা খুলে দেখি যা ভেবেছিলাম সেটাই ওই জিনিস টা ব্যাগে নেই। আমার দ্বারা কিচ্ছু হবে না, কই ভেবেছিলাম আমি নিজ থেকে দেব সেটাও দিতে পারলাম না। যাই হোক খানিকটা ভারাক্রান্ত মন নিয়েই আমি রেডি হতে থাকি, বাইরে থেকে কথার গলার আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে আমাকে রেডি হবার জন্য তাড়া দিচ্ছে বারবার। ঘর থেকে বেড়িয়েই আমার চোখ ছানাবড়া অবস্থা কথার উপর থেকে চোখ সরাতে পারছি না। 
গাঢ় জাম রঙের শাড়িতে কথাকে রূপকথার গ্রীক দেবীর মতই লাগছে। আমার কালার চয়েজ বরাবরি অখাদ্যের মত এবারও ভয়ে ভয়ে এটা কিনেছিলাম ভাবতে পারিনি শাড়িটা কথা কে এতটা মানাবে। আমি মন্ত্রমুগ্ধের মত ওর দিকে তাকিয়ে আছি পলকবিহীন চোখে, কোনভাবেই দৃষ্টি ফেরাতে পারছি কিংবা আমার হৃদয় হতো এমন গর্হিত কাজটা করতেই চাইছে না। 

কিরে কি দেখছিস এমন করে? কেমন লাগছে আমাকে বল
(আমার পেটের উপর কথার খুঁচা টা আমাকে বাস্তবে ফিরিয়ে আনে)

অপূর্ব, অসাধারণ, মায়াবিনী....

তাই নাকি তাহলে আমাকে না দিয়ে ওটা ব্যাগে রেখে দিয়েছিলি কেন?

ভেবেছিলাম সুযোগ বুঝে দেব, সেটা আর হতে দিলি কই তার আগেই তো...

হুম বুঝেছি চল এখন তাড়াতাড়ি৷ আজ সারাদিন ঘুরাঘুরি করবো দুপুরে আর রাতের খাবার বাইরেই খাবো। মেলায় যাবি??

(আমি আমার নিজের মাঝে নেই, কথার সৌন্দর্যে বুদ করে রেখেছি নিজেকে)
তুই যেখানে নিয়ে যাবি চোখ বন্ধ করে চলে যাবো।


(আমার দিকে একটু এগিয়ে এসে আমার কানের কাছে চুপিসারে বললো)
চল না তাহলে আমি আর তুই পালিয়ে যাই অনেক দূরে এই সব কিছু ছেড়ে।

(আমি ভীমড়ি খেয়ে উঠলাম)
মাআআ..মানে.. কিইই

(খিলখিল করে হেসে উঠলো কথা)
কিচ্ছু না, পাগল একটা।

আজ আবার মেলায় এসেছি, শুরুতেই কথা দোকানপাটের দিকে যেতে চাইলো। আমিও ওর অতি বাধ্য অনুগত্যের মত ছায়ার পিছু নেবার অঙ্গিকার ব্যক্ত করলাম। কিন্তু কথার মনে অন্যকিছু চলছে হয়তো ও আমার সাথে চলার ইচ্ছে পোষণ করলো। ওর চোখের দিকে তাকিয়ে না বলার মতো ভেতর থেকে কোন জোড়ালো আওয়াজ পেলাম বরং হৃদয় তো যেন অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় আছে ওর চোখের গভীরতায় ডুব দেবার জন্য। আমার কোলে কাব্য আর বাম বাজু জড়িয়ে ধরে রাখা কথা মেলার ভেতরে ঢুকতে থাকি। মেলার ভেতরে ঢুকতে গিয়ে মনে হলো সবাই কেমন বিস্ময় চোখে আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে হয়তো ওদের কারো কারও কাছে আমরা একটা হ্যাপি কাপল যারা নাকি স্বামী স্ত্রী সন্তান সহ মেলায় ঘুরতে এসেছি। কেন জানি না আমারও ওমন করে ভাবতে ভালো লাগছে মন বলছে ওর পাশে আমাকে বেশ মানিয়েছে। অদ্ভুত ভাবেই কিংবা কাকতালীয় ভাবে ওর শাড়ির সাথে আমার জামার কালার টা ম্যাচিং করে গেছে। পরক্ষণেই মনে পড়লো আমার পড়নের জামা টা কথারই পছন্দ করা। অসীম সুখ প্রাপ্তির আভাসে মনের ঈষান কোনে ভালোবাসার মেঘ জমতে শুরু করে এই বুঝি এবার বৃষ্টি হয়ে ঝরে পড়বে আমার উপর আর সিক্ত করে দিবে আমার শুষ্ক মরুভূমির মত নিষ্প্রাণ হয়ে থাকা হৃদয় গালিচা। 
কথা বারবার আমার মুখের দিকে তাকাচ্ছে আর তৃপ্তিদায়ক একখানা মিষ্টি হাসির তুড়ে আমাকে ভাসিয়ে দিয়ে যাচ্ছে। আমরা গয়নার দোকান গুলোর দিকে এগিয়ে গেলাম, আমি জানি ও গয়না কিনতে খুব ভালোবাসে। গয়নার দোকানে কাছে গিয়ে কিছু মূহুর্তের জন্য আমার হাত টা ছেড়ে দিয়ে শিশু সুলভ উচ্ছ্বাসে মেতে উঠে। আমি তীর্থের কাকে মত তাকিয়ে আছি কথা মুখের দিকে আর ওর আনন্দের উদ্ভাসিতমুখে ছটায় নিজেকে একটু একটু করে হারিয়ে যেতে দিচ্ছি। ইচ্ছে করছে ওকে জড়িয়ে ধরি নিজের বুকের সাথে ছোট্ট একটা চুমু একে দেই কথার প্রশস্ত সিঁদুরে রাঙা কপালে৷ আমার ধ্যান ভাঙে কথা যখনি আমার বাজু টা জড়িয়ে ধরলো

(সেই স্কুলের মেয়েটি যেন আমার পাশে দাড়িয়ে আছে, ওমন করেই বায়না করছে)
আমাকে কি কি কিনে দিবি বল আগে?

কি চাই তোর?

আমার তো তোকে চাই! দিবি? (চোখের গভীরে ফুটে উঠা কাতরতার পাশ কাটিয়ে স্বভাব সুলভ ভঙ্গিতে খিলখিলিয়ে হেসে উঠে) আপাতত ঐ চুড়ি আর মাটির গয়না আর কিছু এন্টিক গয়না কিনে দিলেই হবে।

তোর পছন্দ মত যা ইচ্ছে কিনে নে৷ 

কাব্য বারবার কোল থেকে নেমে এদিক ওদিকে যাবার পাঁয়তারা করে চলেছে। আমার শক্ত বাঁধন থেকে মুক্ত হতে না পেরে সমানে হাত পা ছুঁড়ে যাচ্ছে। কথা একবার এদিকে ফিরে চোখ রাঙাতেই সব কেমন মূহুর্তেই অদ্ভুত রকমের শান্ত নীরব হয়ে গেল। কাব্য ওর মাকে যথেষ্ট ভয় পায় কেমন একবার চোখ ঘুরাতেই সব বায়না উধাও। আর ভয় পাবেই না কেন আমিই তো এখনো কথা যখন রেগে যায় তখন যমের মত ভয় পাই। কথার গয়না কেনা শেষ হলে আমরা কাব্যের জন্য কিছু জিনিস কেনার জন্য অন্যদিকে এগিয়ে যাই। এখন ওকে অনেক বেশি প্রাণবন্ত লাগছে আগের থেকে আমি ভাবছি এই ভালো সময় আজ জিজ্ঞেস করি ওইদিন আমার সাথে এমন করলো কেন
আচ্ছা একটা প্রশ্ন করবো তোকে?

কর না এটার জন্য আবার অনুমতি নিতে হয় নাকি!

সেদিন কি হয়েছিল তোর? আমার সাথে ওমন করছিলি কেন?

করবো না কেন হুম, দিপুর জন্য তোর সাথে একটু মন খোলে কথা বলতে পারছিলাম না কই তুইও একটু কষ্টে থাকবি না হে হে করে হাসাহাসি করছিলিস। তার উপর হলে আমার পাশে বসলি না আমার যে কষ্ট হয় বুঝিস না।


এমন পাগলি কেন তুই? এটা নিয়েও কেউ রাগ করে কষ্ট পায়? আগেই বলে দিতি তাহলে হলে আমি তোর পাশেই বসতাম।
(বা হাতে কথা কে জড়িয়ে ধরলাম আমার সাথে, ও নিজেও আমার সাথে মিশে দাঁড়ালো। কাব্য কি বুঝলো জানি না তবে হে হে করে হাসতে থাকলো, ওর হাসির সাথে আমরাও তাল মেলালাম)

দুপুরে মেলাতেই একটা রেস্টুরেন্টে খাওয়া দাওয়া করে বিকেল অব্দি সেখানেই ছিলাম। পুতুল নাচ, সার্কাস দেখলাম নাগরদোলা, সান্তা মারিয়া, ম্যাজিক কার্পেট সহ কয়েকটা রাইডে উঠে সময়টা বেশ উপভোগ করলাম। বহু বছর পর আমার জীবনে এমন উৎফুল্ল আর প্রাণোচ্ছল দিনের আবির্ভাব ঘটলো। ভেতরের উচ্ছাস টা আমার প্রতিটা কাজের মাঝেই প্রকাশ পেতে শুরু করলো একটু একটু করে৷ কাব্য ঠিক ওর মায়ের মতই সহজেই মিশে যেতে পারে সবার সাথে, এইতো দিন কয়েকের পরিচয়ে ও আমার সাথে এমন করে মিশে গেছে যেন কত আগের চেনা জানা আমার ওর সাথে। কথা আর কাব্য কে পাশে পেয়ে অদ্ভুত সব জল্পনা কল্পনায় মেতে উঠেছে আমার মস্তিষ্ক, এই কল্পনা গুলো আমি আগেও করতাম তবে তখন আমি সবে কৈশোরে পা দিয়েছি মাত্র সেই আমি আজ পরিপূর্ণ এক যুবক।মেলা থেকে বেড়িয়ে কথা আমাকে নিয়ে শহরের ভেতরে একটা শপিং মলে চলে এলো।

কিরে এখানে কেনো, এখন আবার কি কেনা কাটা করবি?

কিনবো কিছু তবে আমার জন্য না তোর জন্য। এখন আবার বলবি যে তোর কিছু লাগবে না তাই তো, কিন্তু তোর প্যাঁচাল শোনার সময় আমার নেই ভালো ছেলের মত আমার সাথে সাথে আয়।

আমি জানি ওর মতের বিরুদ্ধে যাওয়া আমার জন্য সুখকর হবে না, তাই আর কথা বাড়ালাম না ওর পেছন পেছন হাটতে লাগলাম। এখন আর কাব্য কোলে নেই আমার, শপিং মলে এসেই কোল থেকে নেমে গেছে। তবে আমার হাতটা ওর নরম কচি হাতটা সযত্নে ধরে রেখেছে। আমরা একটা শো রুমের ভেতরে ঢুকলাম। কথা নিজের পছন্দ এটা ওটা নিয়ে আসছে আর আমার গায়ে ধরে কেমন মানাবে সেটা দেখে নিচ্ছে। ওর এমন কাজ আর গা সওয়া কারণ আগেও কতবার ও আমার জিনিস পছন্দ করে দিয়েছে সেটার ইয়ত্তা নেই। অনেক সময় সবকিছুর গন্ডি পেরিয়ে ও আমার আন্ডারওয়্যারের কালার টাও পর্যন্ত চুজ করে দিয়েছে৷ তবে আজ বিব্রতকর লাগছে সেলসম্যানদের আচরণে ওরা বারবার কথা কে বৌদি বৌদি করে ডাকছে আর বলছে দাদাকে এটা মানাবে দাদা কে ওটা মানাবে৷ তাহলে কি ওরা ধরে নিয়েছে আমরা দু'জন স্বামী স্ত্রী! মানে কি স্বামী স্ত্রী ছাড়া কি আর কেউ শপিং করতে আসে না নাকি। কিন্তু মজার ব্যাপার কথার হাবভাব আর মুখের উজ্জ্বল অভিব্যক্তি বলছে ও ব্যাপারটা এনজয় করছে। আমার দিকে তাকি মুচকি মুচকি হাসছে আর সেলসম্যানদের জবাবে হুম হুম করে যাচ্ছে।
আমার কেনাকাটা শেষে আমিও কিছু কিনলাম কাব্য আর দিপু দার জন্য৷ যদিও কথা না করছিলো তবুও চক্ষু লজ্জা বলতে কিছু একটা তো আছে নাকি। শপিংমল থেকে বেরিয়ে আমরা একটা রেস্টুরেন্টে চলে এলাম রাতের খাবার খাওয়ার জন্য৷ বিশাল একটা রেস্টুরেন্ট ইন্টেরিয়র ডেকোরেশনটাও চোখ ধাঁধানো। রুফটপেও ওদের পার্টির ব্যবস্থা আছে, কার্নিশ ঘেসে ফুলের বাগান একপাশে ছোট্ট ওয়াটার ফল, বড় একুরিয়ামে রঙিন মাছের মেলা। সত্যই মনিষীরা সত্যিই বলে চোখের খিদে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় খিদে৷ আমরা খাওয়া দাওয়া করে দিপু দার টা পার্সেল করে নিলাম৷ এবার বাড়ি ফেরার পালা। রাস্তায় মানুষজন কমে এসেছে সঙ্গে পাল্লা দিয়ে গাড়ির সংখ্যাও কমে এসেছে৷ আমি একটা ট্যাক্সি বুক করে নিলাম উবার থেকে মিনিট পাঁচের মাঝেই সেটা এসে হাজির হলো৷ ট্যাক্সিতে উঠার পর থেকে কথা কেমন চুপচাপ হয়ে গেছে, চুপটি করে আমার কাঁধে মাথা রেখে বসে আছে। আমি হাত বাড়িয়ে জড়িয়ে ধরলাম নিজের সাথে। নিস্তব্ধ সময়টাকে পাশ কাটিয়ে পাশের লেন ধরে এগিয়ে যাওয়া গাড়ি গুলোর হেড লাইটের আলো ট্যাক্সির ভেতরটা মূহুর্তের জন্য আলোকিত করে আবার অন্ধকারে নিমজ্জিত করে দিচ্ছিলো এক অদ্ভুত আলো ছাঁয়ার খেলায় মেতে আছে সব৷ মিনিট পঁচিশের মাঝেই কথাদের বাসার কাছে এসে গেলাম। ট্যাক্সির ভাড়া মিটিয়ে পেছন ফেরে দেখি কথা গেটের বাইরেই দাড়িয়ে আছে, আশপাশটা ভীষণ অন্ধকারে ঢেকে আছে সামনের ল্যাম্পপোষ্টের বাতিটা আজ জ্বলছে না৷ এগিয়ে যেতেই কিছু বুঝে উঠার আগেই কথা আমাকে জড়িয়ে ধরলো দু হাতে। আমার দুহাত তখন শপিং ব্যাগ গুলো সামলাতে ব্যস্ত৷ কিছু বলে উঠার আগেই কথার হাত আমার ঠোঁট চেপে ধরলো যেন কিছু বলতে বারণ করছে।

আমি নির্বিকার দৃষ্টিতে ওর চোখের দিকে তাকিয়ে আছি, ওর চোখ গুলো স্থির হয়ে আছে আমার চোখের দিকে। ওর চোখ যেন অনেক কিছু বলতে চাইছে যা এতোদিন ধরে জমে আছে ওর অন্তরে। কথা আমার খুব কাছাকাছি চলে এসেছে, ওর লিপস্টিকের রঙে রঙিন হয়ে উঠা ওষ্ঠদ্বয় যেন আমাকেই ডাকছে তার দিকে৷ ছোট হয়ে আসা চোখ গুলো আমাকে মন্ত্রের মত কথার দিকে টানছে৷ আমি আর নিজেকে স্থির করে রাখতে পারছিলাম না, রিপুর তাড়নায় চঞ্চল মন এগিয়ে যেতে চাইছে কথার দিকে। সময়ের অপেক্ষার অবসানে মিলিয়ে দিতে চাইছে দুটো হরাহর আত্মাকে৷ আমি যেন আর নিজের মাঝে নেই সবকিছু ভুলে গিয়েছি ভুলে যেতে চাইছি আশেপাশের সবকিছু কে আর নিজেদের নিয়ে যেতে চাইছি সবকিছুর উর্ধ্বে৷ আমি এগিয়ে গেলাম আরেকটু কথার দিকে এতোক্ষণ নিষ্প্রভ হয়ে থাকা ঠোঁট গুলো চঞ্চল হয়ে উঠার অপেক্ষায়৷ কথা ওর মায়ার আধার চোখজোড়া বন্ধ করে নিলো, এলোমেলো হয়ে উঠা নিঃশ্বাম গুলো আছড়ে পড়তে লাগলো আমার চিবুকে। আমার নিষ্প্রাণ ঠোঁট জোড়া এগিয়ে এসে আলতো করে ছোঁয়ে গেল কথার সিঁদুরে রাঙা কপাল৷ সাথে সাথেই কথা চোখ মেলে তাকায় আমার দিকে, সেখানে দেখা পেলাম এক রাশ প্রশান্তির।





----------------------



দেবযানী নামটা শুনলেই আমার যে কি হয় জানি না, আমি যেন আর তখন নিজের মাঝেই থাকি না। আমার সবট জুড়ে তখন ঐ একজনের রাজত্ব চলে। বিকাশ যেই বললো দেবযানী আমাকে ডাকছে আমি আগেপিছে কিছু না ভেবেই বোকার মত গাছের আড়াল থেকে বেরিয়ে আসলাম। আর খানিকটা চিৎকার করেই বলে উঠলাম
কোথায় ও? আমাকে ডাকছে কেন?

মূহুর্তের কালক্ষেপণেই টের পেলাম কত বড় বোকামিটা আমি করে ফেলেছি উত্তেজনার বশে। আদতে কেউ তো আমাকে ডাকে নি আর ডাকবেই বা কি করে দেবযানী তো আমার ব্যাপারে কিছুই জানে আর আমাকে চেনে পর্যন্ত না। তাহলে ঘটনা যেটা দাড়ায় সেটা হলো সবটাই বিকাশের দুষ্টামি। আমি চিৎকার করে বেরিয়ে এসে দেখি সামনে কেউ নেই বরং আমার চিৎকারে বাকিরা অদ্ভুত ভাবে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। সেই সবার মাঝে কোন ফাঁকে বান্ধবীদের আড়ালে হয়তো দেবযানীও ছিল যে নাকি বিস্ময়ভরা চোখে আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে যাচ্ছিলো। আচ্ছা ও কি আমাকে একটু হলেও চিনতে পেরেছে আমিই যে সেই ছেলেটা যে নাকি প্রতিদিন ওর চলার পথের দিকে চেয়ে থেকে প্রহন গুনি। মনে তখন অন্যরকম সব চিন্তা ভাবনার উদয় হতে শুরু করলো সুখের কল্পনায় ভেসে যাবার জন্য প্রেম সমুদ্রে ভেলা ভাসাতেও দ্বিধা নেই যেন। আচ্ছা দেবযানী কি আমার দিকে ফিরে তাকিয়েছে? যদি তাকায় তবে কি ও বুঝতে পেরেছে আমি ওর জন্যই এসেছি একটিবার দেখার জন্য এখানে অপেক্ষা করছি। আমার দিকে তাকিয়ে ওর চেহারায় কি অভিব্যক্তি ছিল সেটা দেখার খুব সখ জাগছে মনে। 
স্কুলের ঘন্টা পড়ার শব্দ হচ্ছে, মেয়েরা দল বেঁধে এগিয়ে যেতে শুরু করলো৷ আর আমি হন্যি হয়ে ভীড়ের মাঝে ঐ একটা মুখ দেখার জন্য প্রায় পাগলের মত হয়ে উঠেছি। তবে খুব বেশি অপেক্ষা করতে হলো না ভীড়ের মাঝেও দুদিকে চুলের বেনী করা চিরল দাঁতে হাসিমুখের মেয়েটাকে চোখে আলাদা করেই ধরা দিয়ে গেছে। আর তাতেই আমার ভেতরে বাহিরে প্রেমের পুলকিত বাতাসে আলতো ছোঁয়ায় দোলাতে শুরু করেছে।

পাশ ফিরে তাকিয়ে দেখি বিকাশ দাঁত চেপে হেসে যাচ্ছে আমার দিকে তাকিয়ে, ওমন একটা কাজ করার পর ওর হাসিটা দেখে মেজাজ টা গরম হয়ে গেল। 
(আমি রাগান্বিত হয়েই এগিয়ে গেলাম)
এটা তুই কি করলি সবার সামনে? এমন ভাবে সবাই তাকিয়ে ছিল যেন আমি সার্কাসে জোকার।

(দু হাত বাড়িয়ে আমাকে আটকানোর চেষ্টা করে বিকাশ)
যা করলাম তোর জন্যই তো করলাম। ভেবে দেখ সবাই দেখেছে মানে দেবযানীও তোকে দেখেছে। আর কয়েকদিন দেখলে বুঝতে পারবে তুই ওর জন্যই এসেছিস। ভেবে দেখ আমার কত বুদ্ধি..

(একবার ভাবলাম ও ভুল কিছু বলে নি আবার মনে হলো অন্য কোন ভাবেও সেটা করা যেত। আমি তেড়ে গেলাম ওর দিকে)
শালা সবার সামনে বেইজ্জতি করে বলিস আমার ভালোর জন্য দাঁড়া তোকে মজা দেখাচ্ছি।

বিকাশ দৌড়াতে শুরু করলো পেছন পেছন আমিও। এর মাঝেই আমরা স্কুলে পৌঁছে গেলাম। স্কুলে ভেতরে আর গন্ডগোল করা হলো না। তবে ও ভালো করেই জানে আমার এই রাগ সাময়িক সময়ের জন্যই৷ স্কুল থেকে ফিরার পর থেকেই মনটা বেশ উৎফুল্ল, যে কাজটা কখনো করার কথা ভাবিনি সেটাই করে ফেলার আনন্দে। হয়তো বয়সের কারণেই এমন কাজ গুলো করতে কেমন একটা উৎসাহ কাজ করে সবসময়, যেন কোন এডভেঞ্চারে নেমেছি যেটা জয় করার আগ পর্যন্ত মন অশান্ত হয়ে থাকে। আগে শুধু শুনতাম এখন বুঝতে পারি আসলেই মানুষের নিষিদ্ধ জিনিসের প্রতি আগ্রহ টা বরাবরই বেশি। সকালে যেই কাজ টা নিজের কাছে বোকামি ছাড়া আর কিছুই মনে হচ্ছিলো না সেটাই এখন ডেয়ারিং কিছু একটা বলে মনে হচ্ছে। ভেতর থেকে সাহস জাগাচ্ছে আগামীতেও এমন কিছু করে ফেলার কিংবা তারচেয়েও বেশি কিছু।
দোকানে বসে আছি কিন্তু মন আর দৃষ্টি দুটোই রাস্তার পানে, আজ অনেকটা সময় বয়ে গেল এখনো ওদের কোন পাত্তা নেই। আজকাল দ্রুতই মন অস্থির হয়ে উঠে অশান্ত ঢেউ আছড়ে পরে ভাঙতে থাকে মনের বাঁধ। হঠাৎ খেয়াল হলো কেউ একজন আসছে গার্লস স্কুলের ড্রেস পড়া৷ আমি একটু এগিয়ে গেলাম আরেকটু ভালো করে দেখার জন্য আর চমকে উঠলাম দেবযানী কে আজ একা আসতে দেখে। মন আনন্দে নেচে উঠলো ওকে একা দেখার প্রয়াসে, অন্তরাত্মা খুঁচানো শুরু করেছে আরেকটু এগিয়ে যেতে যদি সম্ভব হয় দেবযানীর সাথে কথা বলে নিতে। কিন্তু সব চিন্তায় জল ঢেলে শান্ত করে দিয়ে হঠাৎ দেখি দেবযানীর পাশেই আরও একজন আসছে পাশাপাশি হাঁটতে হাঁটতে। তবে বয়স বলছে বাবা হতে পারে কিংবা অন্য কেউ। এগিয়ে আসছে আমাদের দোকানের দিকে আমি একটু ভেতরে চলে এলাম। মনে হলো ওরা দোকানের ভেতরই ঢুকেছে দুরুদুরু বুকে আমি ওদের দিকে ফিরে তাকাই৷ 
(দেবযানী ডান হাতে আমার দিকেই ইশারা করে)
বাবা, ঐ যে.... 

[+] 8 users Like nextpage's post
Like Reply
#94
চমৎকার আপডেট দাদা
[+] 1 user Likes Jibon Ahmed's post
Like Reply
#95
এক মাথা চুল, কাজলরেখা
জাপটে ধরি বুকের কাছে,
ছাতিমফুলের আর্দ্রতাতে
দেবযানীতে জড়িয়ে আছে ।

বরাবরের মতোই খুব ভালো একটি পর্ব উপহার পেলাম আমরা, by the way কাব্য এই নামটা আমার খুব পছন্দের। আমার এক ভাইপোর নাম।  Smile
[+] 1 user Likes Bumba_1's post
Like Reply
#96
Darun update dada
[+] 1 user Likes Dushtuchele567's post
Like Reply
#97
দারুন লাগলো !!

লাইক এবং রেপু ..


clps Namaskar
[+] 1 user Likes ddey333's post
Like Reply
#98
(08-11-2022, 06:55 AM)Jibon Ahmed Wrote: চমৎকার আপডেট দাদা

thanks
Shy হাত বাড়িয়ে ছুঁই না তোকে, মন বাড়িয়ে ছুঁই।
 দুইকে আমি এক করি না, এক কে করি দুই।। Shy
Like Reply
#99
(08-11-2022, 08:26 AM)Bumba_1 Wrote:
এক মাথা চুল, কাজলরেখা
জাপটে ধরি বুকের কাছে,
ছাতিমফুলের আর্দ্রতাতে
দেবযানীতে জড়িয়ে আছে ।

বরাবরের মতোই খুব ভালো একটি পর্ব উপহার পেলাম আমরা, by the way কাব্য এই নামটা আমার খুব পছন্দের। আমার এক ভাইপোর নাম।  Smile

by the way কাব্য সত্যি সত্যিই কথার ছেলে। 
বাস্তবেই...
Shy হাত বাড়িয়ে ছুঁই না তোকে, মন বাড়িয়ে ছুঁই।
 দুইকে আমি এক করি না, এক কে করি দুই।। Shy
Like Reply
(08-11-2022, 11:56 AM)ddey333 Wrote: দারুন লাগলো !!

লাইক এবং রেপু ..


clps Namaskar

Heart Heart
Shy হাত বাড়িয়ে ছুঁই না তোকে, মন বাড়িয়ে ছুঁই।
 দুইকে আমি এক করি না, এক কে করি দুই।। Shy
Like Reply




Users browsing this thread: 1 Guest(s)