Thread Rating:
  • 176 Vote(s) - 3.39 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Adultery হেমন্তের অরণ্যে
#81
সত্যিই, একটা যেন অদ্ভুত আকর্ষণ আছে গল্পটায়। এক তো লেখার গুন, তারওপর সবুজে ঘেরা পরিবেশের বর্ণনা, সাথে আবার এক অদ্ভুত পরিস্থিতির সম্মুখীন কাবেরী । আপনার পূর্বের লিখিত গল্পের পাঠক হিসেবে কিছু আসন্ন মুহূর্ত আন্দাজ করতে পারলেও এখানে তা মোটেও বলতে চাইনা। সবটাই আপনার কলম থেকে বেরিয়ে আসুক। ♥️♥️
[+] 2 users Like Baban's post
Like Reply
Do not mention / post any under age /rape content. If found Please use REPORT button.
#82
এবার গল্প মেইন ট্র্যাকে আসতে চলেছে। হেনরি দার লেখার তুলনা নেই।
[+] 2 users Like sudipto-ray's post
Like Reply
#83
Besh bhalo hochhe. Chaliye jaan.
[+] 1 user Likes জীবন পিয়াসি's post
Like Reply
#84
(04-10-2022, 05:08 PM)Henry Wrote: অরুণাভ স্ত্রীর মেজাজ বুঝতে পেরে ঘুরে পড়ল কাবেরীর দিকে। গাল ছাড়িয়ে হাসল,---লাইফটা এনজয় করতে শেখো কাবেরী। তোমার হাতে তো অফুরন্ত সময়। স্বামী নামক বস্তুটির ওপর খামোখা রাগান্বিত হওয়া কমবে বৈকি। এখন আমায় ঘুমোতে দাও।

অরুণাভর এই হাসিটা আজকাল কাবেরীর বড্ড বিরক্তিকর লাগে। এই হাসি যেন তাচ্ছিল্যের হাসি। কাবেরীর আজকাল দেরীতে ঘুম আসে। তাতানের ঘরের টেবিল ল্যাম্পের আলো ছড়িয়ে পড়ছে ড্রয়িং রুমে। আইআইটির প্রিপারেশন নিচ্ছে ও। ছেলেটার একাগ্রতা ভীষণ। চোখে স্বপ্ন। সকলের যেমন থাকে। কাবেরীর নেই। কতক্ষণ এপাশ-ওপাশ হল। এই লাইফ এনজয়ের ব্যাপারটা কাবেরীর মাথায় একেবারেই আসে না। সকাল থেকে কলেজে আর সংসারের একটার পর একটা দিন পেরোতে পেরোতে যখন ছেলেরা বড় হয়ে গেল, তখন দেখতে পেল চারপাশটা কেমন নিঃসঙ্গ হয়ে রয়েছে। অরুণাভর কথাটা তখন থেকে ভাবাচ্ছে তাকে। হয়ত তার নিঃসঙ্গতার এটাও একটা কারণ। তার জীবনটা বড্ড একপেশে, দেওয়ালে আঁটা ক্যালেন্ডারের মতন। ইউনিভার্সিটির বন্ধুদের মধ্যে একমাত্র অসীমকেই তার স্বল্প হলেও ভালো লাগতো। অসীমের কবি কবি ভাবটার জন্যই হয়ত। বাংলায় এমএ করায় অসীমের এটা সহজাত হয়ে গিয়েছিল। কাবেরীকে ওর পছন্দ ছিল। যদিও কাবেরী ওকে তেমন পছন্দ না করলেও, আবার অপছন্দও করত না। তবে অসীমের প্রতি কাবেরীর কোনোদিন প্রেম জেগে না ওঠায় সম্পর্ক গড়ে ওঠেনি। অসীম এখন কলেজে অধ্যাপনা করে। বেশ কয়েকটা কবিতার বইও বেরিয়েছে অসীমের। গড়িয়াতে থাকত কিছুদিন আগে পর্যন্ত। মাত্র ছয় মাস হল বদলি হয়ে চলে গিয়েছে নর্থ বেঙ্গলে, ইউনিভার্সিটিতে। মাঝে মধ্যেই ও কাবেরীদের বাড়ি আসত, কখনো কখনো ওর স্ত্রী ললিতাকেও সঙ্গে নিয়ে আসত। বিশেষ করে ওর নতুন কোনো লেখা ছাপা হলে কাবেরীর হাতে বইটা তুলে দিতে ও একবার আসবেই। অসীমের সাময়িক সাহিত্য চর্চাকেন্দ্রিক আড্ডার কারণে সংসার আর কলেজের শিক্ষিকা জীবনের একঘেয়েমিতার মাঝে কাবেরী স্বল্পকালীন মুক্তি পেত তবুও। সুযোগ পেলে অসীম উপদেশও দিত দেদার। কাবেরীর মধ্যে জীবনের ঘাটতি দেখে একদিন বলেছিল -----দেখ কাবেরী, বার্ধক্য আর বৃদ্ধত্ব এক নয়। বয়স আমাদের বার্ধ্যক এনে দেয়। আর বৃদ্ধত্ব আসে মন থেকে। দেখ না আমরা যে সব সাহিত্য সৃষ্টি করি, চরিত্রগুলোকে সজীব করি, সুন্দর করি, এককথায় যৌবনের দূত তৈরি করি, সেসব আমাদের মনের মধ্যে যৌবন থাকে বলেই। তা নাহলে বয়সের সাথে সাথে আমাদের সাহিত্যের চরিত্রগুলো লোলচর্ম হয়ে লাঠি ধরত।

স্বামী থেকে অন্য পুরুষ, সবাই বিনা চাওয়াতেই উপদেশ দিচ্ছে। ওদের সুপিরিওরিটি কমপ্লেক্স দেখে গা রিরি করে।

খুব ভাল ছবি আঁকছেন, চমৎকার তরতরিয়ে চলেছে গল্প। মন বলছে আরো একজন লেখকের সন্ধান পেলাম যিনি মেয়েদের মনের কথা বলেন।
[+] 3 users Like Tilottama's post
Like Reply
#85
Waiting for next eagerly
Like Reply
#86
খুব সাহসী কাবেরী
আপডেট কি হবে দেরি
[+] 1 user Likes poka64's post
Like Reply
#87
(07-10-2022, 10:37 AM)Henry Wrote: কলকাতার মত এখানেও কাল সারারাত বৃষ্টি হয়েছে। জঙ্গলের বৃষ্টি কেমন হয়, ধারণা ছিল না কাবেরীর। সারারাত অনবরত জলের শব্দ। ঘুম ভাঙলো ভোরে। জানালা খুলে চমকে উঠল কাবেরী। বাড়ীর ঠিক উল্টো দিকেই বিস্তীর্ণ পাহাড় আর ঢাল জুড়ে শাল, মহুয়ার জঙ্গল। সকালে চকচকে রোদ। ধুলোবালি মুছে যাওয়াতে ক্লোরিফিল উজ্জ্বল গাছ যেন আরো চকচকে। বাইরে বেরিয়ে এলো কাবেরী। এই দোতলা বাড়ি সহ ষোল কাঠা বাগানবাড়ি। বাগানবাড়ি বললে ভুল হবে, ঝোপ ঝাড় আর পাহাড়ের ঢালে ইতিউতি কয়েকটা শাল-শিমুল গাছ।
কাবেরী মুগ্ধ হয়ে দেখছিল মায়ের দিক থেকে তার পূর্বপুরুষের এই বসত বাড়ি। এককালে বাড়ির চারপাশে পাঁচিল ছিল বোঝা যায়। কোথাও তার এখনো ভগ্নাংশ রয়ে গেছে। ভোরের বাতাস এসে কাবেরীর গায়ে পড়ছে। বাড়ির সামনেও পাহাড়। চারদিক যেন পাহাড় আর পাহাড়।
অপূর্ব ঝরঝরে লেখা। পুরুষ নারীর সূক্ষ্ম সংঘাত মূর্ত হয়ে ইঠেছে
[+] 2 users Like ayesharashid's post
Like Reply
#88
Update please
Like Reply
#89
Updated please
[+] 1 user Likes misusandwipi's post
Like Reply
#90
[Image: 1a43e97f-d1fb-4f6d-a56f-3c3cd3941343.png]
এতটা পথ পেরিয়ে আসার পরও বুধনের চাহুনি এখনো কাবেরীর দিকে।


একটু আগে জোর বৃষ্টি হয়েছে। এখন একটু কমেছে। বাড়ীটা পাহাড়তলিতে হওয়ায়, সামনে চাপ চাপ ঘাসের জমি ঢাল হয়ে নেমে গেছে অন্য পাহাড়ের নিম্ন প্রান্তে। জলের একটা ছোট খাটো স্রোত এতক্ষণ ছিল রাস্তার ওপরে। আস্তে আস্তে নেমে গিয়ে চলে গেছে মুসানী নদীর দিকে। মুসানী নদীটা বন্য হলেও ওই নদীর পাড়ের একটা ছোট এলাকায় হাট বসে। অসীম আজ কলকাতায় ফিরবে। সেখান থেকে এয়ারপোর্টে ললিতাকে নিয়ে রওনা দেবে জলপাইগুড়ি। কাবেরীর কিছু প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কেনার ছিল। হেমেন রায় বললেন---এখুনি তো রাঁচি যাওয়া হচ্ছে না। তুই যদি পারিস হাটে গিয়ে কিছু কেনাকাটা করে নিস।

গ্রাম্য হাটে কতটুকু জিনিস পাওয়া যাবে তা নিয়ে ধন্দ রয়েছে কাবেরীর। এমনিতে ও ওর প্রয়োজনীয় সাবান, শ্যাম্পু, তেল, প্রসাধনী যা যা লাগে তা কলকাতা থেকেই প্রয়োজন মত সঙ্গে এনেছিল। গৃহস্থালীর কিছু জিনিস কেনার দরকার আছে। কাল কুন্তী বাসন মাজতে গিয়ে জানালো সাবানটা ছোট হয়ে যাচ্ছে।

অরুণাভ সাতসকালে সোফায় হেলান দিয়ে কাগজ পড়ায় মগ্ন। সকালের কাগজ ওর রাতে পড়ার অভ্যাস, আজ রবিবার বলেই এটা সম্ভব। রবিবার যেন বাড়িটাকে আরো বেশি শূন্য মনে হচ্ছে। এক সপ্তাহ পেরোলো কাবেরীর যাওয়াটা। রবিবার মানে কাবেরী একটা হুলুস্থুলু বাধিয়ে ছাড়ত ঘরময়। অগুনতি জামা কাপড় কাচা, বাড়ির ইতিউতি ঝুল ঝাড়া, মালতীকে দিয়ে কোনায় কোনায় ঘর মোছানো, অরুণাভকে বড় একটা ফর্দ করে বাজার পাঠানো ইত্যাদি ইত্যাদি। সেক্ষেত্রে আজ সেই ব্যস্ততা নেই। পড়ার ঘরে পাপানের অঙ্কের গৃহশিক্ষক বসেছেন। তাতানটা এখনো ঘুমোচ্ছে। মধ্যরাত অবধি পড়াশোনা করবে, সকালে কুম্ভকর্ণের মত ঘুমোবে, এই তার ডেইলি রুটিন। কতবার অরুণাভ বলেছে তাতানকে; এ অভ্যেস বদলানো দরকার।

মালতী পাপানের হোম টিউটরকে চা দিয়ে এসে বললে---দাদা, বৌদি কবে আসবে গো?
অরুণাভ কাগজ থেকে মুখ না সরিয়ে মুচকি হেসে বলল---আর আসবে না।
মালতী ঠাট্টা বুঝতে না পেরে বলল---মানে?
---কেন বেশ তো আছিস, বাড়ীতে থাকলে ফাইফরমাশ খাটিয়ে তোকে নাজেহাল করে দিত এতক্ষণে। এই শান্তি ভালো লাগছে না বুঝি?
মালতী এতক্ষণে রসিকতা বুঝতে পারলো, হেসে বলল----বৌদি যাই বকাঝকা করুক বা খাটাক না কেন, বৌদি না থাকলে ঘরটা খাঁ খাঁ লাগে।

অরুণাভ নিজেও টের পাচ্ছে কাবেরী ছাড়া এই সংসারের শূন্য শূন্য ভাবটা। কাবেরীর অনেক গুণ। তবে অরুণাভ বারবার বিস্মিত হচ্ছে কাল ফোনে কাবেরী যা বলল তা ভেবে। তার এত বছরের বিয়ে করা ঘরকুনো, কলেজ আর সংসার করা স্ত্রীর মনে এত দৃঢ়তা, এত সাহস কোন অগোচরে রক্ষিত ছিল! একটা অপরিচিত অরণ্যসংকুল জায়গায় কিভাবে একটা নাবালিকা মেয়েকে উদ্ধার করল সে! অরুণাভর আল্টিমেট মনিস্তাত্বিক ধারণা; বাইশ বছরের দাম্পত্য জীবনে সে কাবেরীকে সবটাই বোঝে, আজ প্রশ্নের মুখে। মধ্যবয়স্কা স্ত্রীর মধ্যে এই সাহসিকতার সঞ্চার, এই জেদী মানসিকতা তাকে কাল রাত থেকে অস্বস্তিতে রেখেছে। কাবেরী তার যৌবনের প্রেমিকা, তার দাম্পত্যের জাঁতাকলে গড়ে ওঠা স্ত্রী, তার দুই সন্তানের মা, নিদেন পক্ষে কলকাতার বস্তি লাগোয়া একটি সরকারী প্রান্তিক প্রাইমারী কলেজের দিদিমণি। কিন্তু ভেতরে কাবেরী যে এক লুক্কায়িত স্রোতস্বিনী নারী, যার অন্তরে অনেক উথালপাথাল ঢেউ আছে, তা অরুণাভ দেখেনি কিংবা দেখার চেষ্টা করেনি বলা ভালো। আর সেই ঢেউ যেন অরুণাভর কাছে নিরীহ বাচ্চা লালন করা গৃহবধূর চেয়ে বিস্ময়ের, সংশয়ের।

কাল রাতে এ নিয়ে এক প্রস্থ ঝগড়া হয়েছে স্বামী-স্ত্রীর। এখন অরুণাভর মনে হচ্ছে আরেকটু বুঝিয়ে বললে পারতো। পরক্ষণেই মনে হল কাবেরী কি কচি খুকি নাকি। অরুণাভ কাবেরীর কাজটাকে বাহবা দিতে পারছে না। বরং কড়া গলায় বলেছে---এই মাতব্বরীটাই তুমি যাতে না করো বলেছিলাম। কোথাকার কোন অজ গ্রামে, চেনা নেই, জানা নেই, একটা অপরিচিত মেয়ের জন্য না বুঝে সুঝে ঝাঁপিয়ে পড়লে?

কাবেরীও প্রত্যুত্তরে বলেছিল---বা রে। একটা মেয়ে পড়াশোনা করতে চায়, নাবালিকা। তার পাশে দাঁড়ানোর জন্য গ্রাম, এলাকা, রাজ্য এসব চিনতে হবে? দেখো, ভদ্র শিক্ষিত শুধুমাত্র গাড়ী-বাড়ী, বড় পোস্টের চাকরীতে প্রমান হয় না।

অরুণাভও কম যায় না। বলেছিল--- তুমি আমাকে অশিক্ষিত বলতে চাইছ? অশিক্ষিতের নমুনা তুমি কী দেখেছ? ওই বিপজ্জ্বনক লোকটা যদি কিছু একটা করে বসে? তোমার হেমেন দা'কেও তো দেখলে কেমন পাশ কাটিয়ে নিল।
---কি করে নেবে? খুন করবে? রেপ করবে? করলে করুক। এখন তো দেখছি কুন্তীর বাবা যেটা ভেবে বসেনি, সেটা তুমি আগে ভাগে ভেবে বসে আছো।
---তুমি এত নিশ্চিত হয়ে বসে আছো কি করে লোকটার এমন কোনো কুমতলব নেই! দেখো কাবেরী আমার ঝগড়া করার সময় নেই। তুমি পুলিশে লোকটার নামে একটা ফাইল করিয়ে রাখো। যাতে একটা নিরাপত্তা পাও। তা নাহলে ওখানে থাকার দরকার নেই। কালকের ট্রেনেই ফিরে এসো।

লোকটার কুমতলব নেই, কাবেরীও এত নিশ্চিত হল কী করে? অরুণাভর এই প্রশ্ন কাবেরীর মনে কোনো দ্বন্দ্ব তৈরী করতে পারল না। নীতীশ মল্লিকের কাছে বুধনের অন্য স্বত্বা কোথাও কাবেরীর অবচেতন মনে দৃঢ় ভাবনা তৈরী করেছে বুধন সাহসী, তবে সে মোটেই দুর্বৃত্ত নয়।

অরুণাভ জানে কাবেরী কথাটাকে আমল দিচ্ছে না। কেমন একটা জেদী হয়ে উঠেছে। শ্যালক হেমেন রায়ের প্রভাবও হতে পারে। অরুণাভর মনে তাই একটা শঙ্কা রয়েছে। অরুণাভর সাথে দাম্পত্য জীবনে কাবেরীর ঝগড়া হয়, মনোমালিন্য হয় কিন্তু কাবেরীর এমন জেদ কখনো অরুণাভ দেখেনি।

মালতী বলল---দাদা দুপুরে কী রাঁধবো?
---আপাতত তুই আরেক কাপ চা দে।

অসীমের ব্যাগ পত্তর গাড়ীতে তুলে দিচ্ছিল আলমগীর। ভেজা হাতে একটা টিফিন বক্স নিয়ে দ্রুত এগিয়ে এলো কাবেরী।
---কী আছে ওটায়? প্রশ্ন করল অসীম।
---ওমা! সারা দুপুর ট্রেনে যাবে, খাবে না কিছুই! ললিতা থাকলে এমনি ছেড়ে দিত?
অসীম মনে মনে ভাবলো--একদিন তোমাকেই তো ললিতার জায়গায় দেখতে চেয়েছিলাম কাবেরী। আজ এই মধ্যবয়সে এসে মনে হয় এমন ভাবেই তোমার প্রতি আমার ভালোবাসা জিইয়ে থাকুক।

হেমেন দা অসীমের পিঠ চাপড়ে বললেন---কী এমন ভাবছিস বলতো? ললিতাকে কবে আনবি বললি না তো!
কাবেরী হেসে বলল---কবিরা এমনই হয়। ভাগ্যিস আমার বর কবিতার ধারপাশ দিয়েও যায় না। গেলে পরে কতগুলো প্রেমিকা থাকতো বলা যায়!
---তার মানে তুমি বলছ, আমার অনেক প্রেমিকা আছে? অসীম স্মিত হেসে বলল।
----হয়ত আছে। ললিতাকে না জানিয়ে তুমি হয়ত অন্য কারো প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছ।
অসীম মৃদু হাসলো। গাড়িটা স্টার্ট নিতে হাত নাড়লো অসীম। পাহাড়ের ঢাল বরাবর নীচের দিকে নামতে নামতে মিলিয়ে গেল গাড়িটা। মিলিয়ে গেল অসীম। কাবেরীর বুকটা কেঁপে উঠল। বাড়িতে কোনো অতিথি এলে, কদিন থেকে ফিরে গেলে যেমন হয়; তেমন।


মুসানী নদীর পারের হাটটা হেমেন দা বলেছিলেন দশ মিনিটের রাস্তা। আলমগীর গাড়ী নিয়ে অসীমকে স্টেশন অবধি ছাড়তে গেছে। কাবেরী তাই হেঁটে একাই বেরিয়েছে। এমন বনে জঙ্গলে একা হাঁটতে বেশ লাগছে তার। একটা ঝাঁকড়া অচেনা গাছ থেকে টি-টি-টি করে পাখিটা উড়ে গেল। কাবেরী মনে মনে ভাবলো এবারও টিয়াটার খবর নেওয়া হল না। বনেই পাখি দেখায় সুন্দর। খাঁচায় কেবল সৌখিন। এবার ফিরে গিয়ে সে টিয়াটাকে ছেড়ে দেবে মনস্থির করল।

আচমকা কাবেরীর মনে হল তাকে কেউ নীরবে পর্যবেক্ষণ করছে। কেউ নয়, স্থির ভাবে দাঁড়িয়ে আছে একজন কাঠুরে; বুধন মুন্ডা। বুধন এবারও নিরস্ত্র নয়, হাতে তার হাত কুঠার। অরণ্যে পাহাড়ী ঢালে ভাস্কর্যের মত দৃঢ়। কাবেরী এক পলক দেখে নিয়ে হাঁটতে লাগলো নিজের গতিপথে। সেই মজবুত বাঁধনের দীর্ঘ আদিবাসী চেহারা। ধাতু পিটিয়ে যেন এ চেহারা নির্মাণ করেছেন অরণ্যের দেবতা বোঙ্গা। হলদেটে রক্তাভ চোখে আজন্ম লালিত ক্রোধ। ভয় করছে কাবেরীর? ভয় তার ঠিক করছেই। কিন্তু অদ্ভুত এক ভয়। চুয়াল্লিশ বছর বয়সে এসে এই ভয় তার কাছে সত্যিই অদ্ভুত ঠেকছে।
বুধন কি এখুনি ঝাঁপিয়ে পড়বে তার উপর? হাত কুঠার দিয়ে ফালাফালা করে তাকে ভাসিয়ে দেবে মুসানীর কোনো নির্জন গতিপথে? নাকি অরুণাভর আশঙ্কা মত...?
এতটা পথ পেরিয়ে আসার পর বুধনের চাহুনী এখনো যে কাবেরীর দিকে, কাবেরী তা অনুমান করতে পারলো। নিষিদ্ধ অরণ্যে কতকিছু ঘটে যেতে পারত। ঘটে গেল কাবেরী কী করত? এই বয়সে তার কী অমন কিছু আকর্ষণ আছে যে বুধন দুর্বৃত্ত হয়ে উঠতে পারে? কাবেরীর মনে এলোমেলো প্রশ্নগুলো অযাচিত হয়ে লড়ে যাচ্ছে। বুধন দুর্বৃত্ত হয়ে উঠুক বা না উঠুক, বুধনের দৃষ্টিতে কাবেরী এমন কিছু দেখেছে, যা তাকে অস্বস্তি যেমন দিয়েছে, তেমন অযাচিত ভাবে নারীত্বের অহংকারও হচ্ছে বৈকি। কাবেরীর পরিণত বয়সের চেতন মন বুঝতে সক্ষম ভাবনাগুলো অস্বচ্ছ, ভাবনাগুলো অযাচিত। এর সাথে লড়তে লড়তে ও হাটের কাছে এসে পৌঁছল।

মস্ত বড় হাট নয়। পসরা মেলে বিকোচ্ছে নানা জিনিস। প্রয়োজন মত মুন্ডারা কিনে নিচ্ছে সে সব। টুকি টাকি ব্যবহার্য জিনিস কিনে কাবেরী রওনা দিল বাড়ীর পথে। ফিরবার সময় বুধনকে আগের জায়গাটায় দেখতে পেল না। না দেখতে পাওয়া কোনো আফসোসের বিষয় নয়। তবে জঙ্গলের বাঘ যেমন ভয়ঙ্কর তবু পর্যটক চাইবে তার একবার দেখা পেতে, ঠিক তেমনই হচ্ছে তার।

ঘরে ফিরে টুক টুক করে কাজ গুছিয়ে রাখছে কাবেরী। গুনগুন করে গাইছে আপন মনে দু' কলি এলোমেলো গান: "সখী ভাবনা কাহারে বলে, সখী যাতনা কাহারে বলে"।
দিনভর বুধনের চাহুনীটা কাবেরীকে অযাচিত আলোড়িত করে তুলছে। সামনে এখনো ছবির মত ভাসতে থাকলো বুধনের সেই দুটো হলদেটে চোখ।যতই সে চোখে আগুন থাক, কাবেরী বুধনের চোখের আগুনকে আজ ভিন্ন রূপে দেখেছে। সেটা যে কী কাবেরী এখনো নিজের অবচেতন থেকে চেতনায় আনতে পারল না।

+++++++

সন্ধে বেলা বিশেষ কিছু কাজ নেই। ঝিঁঝির উচাঙ্গ সঙ্গীতে চারপাশ নীরব কোলাহলপূর্ন। হেমেন দা তার ঘরের চৌহদ্দির মধ্যে পায়চারী করছেন। কাবেরী হ্যারিকেনের হলদে আলোর বৃত্তে একটা গল্প বই পড়ছে। বইটা হেমেন দা'র সেল্ফ থেকেই সংগ্রহ করা; বিভূতিভূষণের 'অপরাজিত'। খানিকটা ঝুঁকে পড়তেই ঘাড়ে ঈষৎ ব্যথা হতে লাগলো কাবেরীর। আনাজগুলো কুচোতে দিয়েছে কুন্তীকে। কুন্তী এখন আর বোবা থাকে না। বেশ কথা বলে কাবেরীর সাথে। 'দিদিমণি' বলে ডাক দিতেই, হেমেন রায় বারান্দা থেকে বললেন---কাবেরী এই তোর ডাক পড়ল দেখ।
অগত্যা কাবেরী রান্না ঘরে রওনা দিল। কুন্তী সব্জীগুলো কেটে ধুয়ে রেখেছে। কাবেরী হালকা আঁচে কড়াই গরম করতে বসিয়ে নুন-হলুদ মাখিয়ে রাখলো। কুন্তী নীরব পর্যবেক্ষকের মত কাবেরীর রান্না দেখছে, যেন শিখে নিতে চায় সেও। কাজ করতে করতে কাবেরী বলল---বাড়ীতে কে রান্না করে তোর?
---আগে মা'টা কইরত। অসুখ হবার পর আমি কইরতাম।
---তাহলে তুই যে এখানে। কে করে তাহলে?
---মা'টাই করে। তবে মা'টার অসুখ আছে কিনা। বাপটা যদি হাড়িয়া না খিয়ে আইসে, বাপটাও পারে।
----তোর বাবা রান্না করে?
বিস্মিত হল কাবেরী। যে লোকটার কঠোর চেহারা আর ক্রোধী আচারণে গোটা হাঁসড়া ভয় পায়, যে লোকটা খুনের চেষ্টার আসামী, সে এতটা সাংসারিক হতে পারে! এমনকি অসুস্থ স্ত্রীর জন্য রান্না করতে পারে! অরুণাভ তো একদিনের জন্য রান্না ঘরে ঢুকতেই নারাজ। কোনো কারণে কাবেরী না পারলে এবং মালতী না এলে দুটো ঘটনাই যদি দৈবাৎ একসাথে ঘটে অরুণাভ বাইর থেকে খাবার আনিয়ে নেয়।
---বাপটা মোর এত খারাপ লয় গো দিদিমণি। আমার মা যখুন পোয়াতি ছিল, তখুনও রেঁধে খাওয়াইতো। লোকটার রাগটাই কাল কইরেছে। তিন তিনটা বিটি হছে বলে, টুনি জন্মাইলে মা'টার উপর রাগ কইরে ঘরে ফিরলনি ক'দিন। তারপর হাড়িয়া খিয়ে এসে টুনির মুখ দেইখে আবার ভুইল গেল। বাপটা হাড়িয়া খিয়ে এসে একদিন মা'টারে মাইরলো, সেটা লোকে দেইখে কইল বুধন মুন্ডা বউটারে মাইরছে। কিন্তু ভালোবাসাটা দেইখলোনি।

এইটুকু মেয়ে তার বাবা-মায়ের ভালোবাসার ব্যাখ্যা দিচ্ছে। হেসে ফেলল কাবেরী। বললে--- তুই কি করে জানলি তোর বাবা তোর মাকে ভালোবাসে? আবার বললি; এই যে তোর বাবা তোর মাকে মারে।
---মাইরে ছিল তো খনিতে কামটার লগে। যেতে না কয়েছিল। তবু মা কামে গেলে বাপটার রাগ চইড়ে গেল। অখুন যে মা'টা অসুখে আছে। বাপটা রাঁধে। পারতডিহির ডাক্তারটার কাছে লয়ে যাওয়া, ওষুধ আইনে দিয়ে খাওয়াইনো সবটাই কইরে। আর যখন মা'টা ভালো ছিল, তখুন...

মুচকি হাসলো কুন্তী। কাবেরী কড়াইতে তেলের মধ্যে সব্জী ছেড়ে বললে---তখন কী?
----মোর ঘরটায় দু'টা কুঠি আছে কিনা। রাত হইলে বাপ মা'টারে আলাদা ঘরটাতে ভালোবাসটার লগে লিয়ে যেত। মংলুর মা'কে মোর মা কইছিল মোর বাপটা তাগড়া আছে, মা'টারে এত ভালোবাসে, সবটা লিতে হলে জোর লাগে।
কাবেরী কুন্তীর এমন নির্বোধের মত অশ্লীল কথা শুনে বলে উঠল---তবে রে! তোর লজ্জা করে না, বাবা-মার সম্পর্কে এমন কথা বলতে?
কুন্তী খুব স্বাভাবিক ভাবেই বলল---লজ্জার কী হইল দিদিমণি। মরদটা তার বৌর লগে ভালোবাসা কইরবে, ইটা খারাপ কিসের!
---তুই এই 'ভালোবাসা' মানে বুঝিস?
---আমি কী কইরে বুঝব? বিয়া হলে তার মরদ ভালোবাইসলে না মেয়েছেলে বুইঝবে!
---তুই এসব ভালোবাসার কথা জানলি কোত্থেকে?
--- গাঁ'টায় মেয়েছেলের আড্ডারে মংলুর মা, মা, এতোয়ার বউটা সব বলে....ভালোবাসা হইলে না বাচ্চা হয়।
---থাক। এসব শুনে শুনেই তুই পেকে গেছিস।

লজ্জায় লাল হয়ে উঠল কাবেরী। আদিবাসী ছেলে-মেয়েরা অল্প বয়সেই পাকা হয়ে যায়, কাবেরীর বুঝতে বাকি রইল না। কাবেরীর কাছে যেটা লজ্জার মুন্ডা সমাজের কাছে সেটা স্বাভাবিক। অরণ্যের মানুষ অরণ্যের কাছাকাছি থাকবে এটাই বোধ হয় স্বাভাবিক। যৌনতাকে তারা নিছক ভালোবাসা হিসেবে দেখায়, এটা অবশ্য কাবেরীর মনে ধরল। অরুণাভ আর কাবেরী যখন মিলিত হয় কত সাবধানতা নেয়, ছেলেরা ঘুমোল কিনা, অপ্রীতিকর কোনো শব্দ করা যাবে না, আরো কত কি। অথচ আদিবাসীরা সন্তানের পাশের ঘরেই মৈথুন করছে। সন্তান জানছে তাদের বাবা-মা এখন ভালোবাসায় লিপ্ত। বিষয়টা কাবেরীর মোটেই শোভনীয় না লাগলেও ইন্টারেস্টিং লাগলো।

খাবার পর পা ছড়িয়ে ঘুমোল কাবেরী। মাঝে একবার বাড়ীতে ফোন করেছিল। অরুণাভ নয় তাতান ফোন ধরেছিল। কাবেরী ভেবেছিল কাল রাতের ঝগড়াটা মিটিয়ে নেবে, অরুণাভ কি একটা হিসাব পত্তর নিয়ে ব্যস্ত। আজ চাঁদের আলো নেই বললে চলে। যেটুকু আছে ক্ষীণ। হ্যারিকেনের সলতেটা কমিয়ে অত্যন্ত মৃদু করা রয়েছে। জানলার উর্ধাংশের পাল্লা দুটো খোলা। ফুরফুরে পাহাড়ি বাতাস এসে পড়ছে কাবেরীর দেহকাণ্ডের উপর।

ঘুমের মধ্যে এসে পড়ছে ভারী মেঘ। অরণ্যে ভেঙে পড়ছে অজস্র ডালপালা। কাবেরী পাহাড়ের ঢাল ধরে এগোনোর চেষ্টায় রত। বাতাসের তোড়ে পারছে না। কাবেরী জানে না কোথায় যেতে চাইছে সে। অদূরে মেঘাচ্ছন্ন পাহাড়ের উপর পাথরের মূর্তির মত দাঁড়িয়ে রয়েছে বুধন। তার হাতে কোনো অস্ত্র নেই। সারা শরীর উজ্জ্বল রূপালী আলোয়। কাবেরী এগিয়ে যাচ্ছে তার দিকে। সেই পাথুরে শরীরটাকে ছুঁতে চাইছে সে। বুধনের গায়ের সর্বত্র পাথরের ন্যায় শক্ত। আচমকা প্যাঁচ দিয়ে বুধনও জড়িয়ে ধরল কাবেরীকে। ঘন জঙ্গলের মধ্যে, ঘাসে, কাদায়, মেঘে ও মাটিতে তারা মিশে যাচ্ছে। মুসানীর স্রোতে ভাসছে বুধনের ল্যাঙ্গট, কাবেরীর শাড়ী, সায়া, ব্লাউজ।
ঘুম ভেঙে গেল। আচমকা নিষিদ্ধ অশ্লীলতার এক স্বপ্নলোক থেকে বেরিয়ে এলো কাবেরী। পিঠে, গলায় ডুমো ডুমো ঘাম। হঠাৎ এমন স্বপ্ন, অযাচিত শিহরণ কাবেরীর চল্লিশোর্ধ্ব বয়সে এসে এ যেন স্বপ্নের মধ্যে পরকীয়া। কাবেরী উঠে বসল। হাঁসফাঁস করে উঠল সে। বুধনের পাথুরে শরীরের প্যাঁচ যেন এখনও শরীরে টের পাচ্ছে। সারা শরীরে অদ্ভুত উত্তেজনা। পরিণত বয়সের নারীর কাছে এই উত্তেজনা অপরিচিত নয়। অপরিচিত শুধু উত্তেজনার জন্য দায়ী এই আদিবাসী লোকটিই কেন। কাবেরীর কি ভালো লেগে যাচ্ছে বুধনকে? এত পুরুষের ভিড়ে স্বতন্ত্র কঠোর সাহসী এই মুন্ডা জনজাতির খনি শ্রমিককে কাবেরী কি কোথাও মনের মধ্যে পৃথক জায়গা দিয়ে ফেলেছে? যে কাবেরী সবসময় পুরুষের মধ্যে সাহস দেখতে চেয়েছে, চেয়েছে যে পুরুষ তার সঙ্গিনীর জন্য নিবেদিত প্রাণ অথচ কঠোর নিয়ন্ত্রক হউক। কাবেরী বুঝতে পারছে তার অবচেতন মন চেয়েছে একজনকে; একজন পুরুষ অফিস যায় না, টাকার নদীতে ডুবে দিয়ে নিরুদ্দেশ না হয়ে বন্য মুসানীর স্রোতে কাছে পিঠেই থাকে সবসময়, কবিতা পড়ে না, ছবি আঁকে না। সে নিজেই শিল্পের মুর্ত প্রতীক হয়ে ওঠে। কাবেরীর ভালো লাগছে মনে ও শরীরে। চুয়াল্লিশ বসন্তের পরে তার যৌবন স্তিমিত হয়ে যায়নি, বরং আগের মতই সাবলীল, শুধু খুঁড়ে নিতে পারলেই বেরোবে অমৃত।
+++++++

কাবেরী আজ অনেকক্ষণ ঘুমোলো। হেমেন দা'র ডাকাডাকিতে ঘুম ভাঙলো। বললেন---আজ যে বড্ড ঘুমোলি? এমন তো ঘুমোনোর মেয়ে নয় তুই। শরীর-টরীর খারাপ নাকি?

ঘড়ির কাঁটা তখন নয় ছাড়িয়েছে। শেষ কবে এত বেলা পর্যন্ত সে ঘুমিয়েছিল মনে করতে পারলো না। বাথরুম থেকে বেরিয়ে নিজে চা করে খেল। সারাদিন এই একবার ওর চা খাবার অভ্যাস। সকাল সকাল বাথরুমে স্নান করে বেশ ফ্রেশ লাগলো কাবেরীর।

দিনটা সিক্ত। ভেজা ভেজা, বৃষ্টির দিন। ঠান্ডা বাতাস বইছে অহরহ। রান্না ঘরে ঢুকে কুন্তীর দেখা পেল না কাবেরী। বাথরুমে ঢোকার আগেও ওকে দেখেতে পায়নি, এই বৃষ্টি মাথায় নিয়ে মেয়েটা যে কোথায় গেল!
কাবেরী বলল---হেমেন দা আজ দুপুরে কী খাবে?
---বৃষ্টিতে খিচুড়ি আর ইলিশ মাছ ভাজা হলে বেশ জমত রে।
---ওমা গো! এই জঙ্গলে ইলিশ মাছ কোথায় পাবে? এখানে তো মাছেরই মুখ দেখি না।
---কি করা যায় বলত, এ তো আর তোর কলকাতা নয়। যে ফ্রিজে মাছ মজুত করে রাখবি। বরং তুই এক কাজ কর; খিচুড়ি আর ডিম ভাজা, দুধের স্বাদ ঘোলে হলেও খারাপ নয়।
----কুন্তীটাকে দেখছি না, মেয়েটা সাত সকালে বৃষ্টি মাথায় গেল কোথায়?
---ওহঃ তোকে বলা হয়নি, ওর মা খুব অসুস্থ। কাজেই ওকে পাঠিয়ে দিয়েছি।
কাবেরী চমকে উঠে বলল---কী! এরপর যদি আবার ওকে আটকে দেয়?
---কী করবি বল! ওর মা'টা যে অসুস্থ। মেয়েটা জোরাজুরি করছিল। তুই ঘুমোচ্ছিলি। আমি আর তোকে ডাকিনি। বাধ্য হয়ে পাঠিয়ে দিলাম।

কাবেরীর মনোবল ভেঙে পড়ল। তার এত প্রচেষ্টা কী পণ্ড হয়ে যাবে! অসহায় বোধ করল সে। এই ক'দিনে কাবেরী যেন কুন্তীর মা হয়ে উঠেছে। এক মুহূর্ত কাছ ছাড়া করতে চায় না।
সারাদিন রান্না ঘরে কাটলো। এর মাঝে ফোনটা বেজে উঠল অকস্মাৎ। পাপানের ফোন। মাত্র কদিন আগেই ছেলেদুটোর সাথে কথা হয়েছে। তবু যেন মনে হচ্ছে কতদিন কথা হয়নি তার সন্তানদের সাথে। মিঃ দত্তের মেয়ে পিঙ্কির আজ বিয়ে। ভুলেই গেছিল কাবেরী। পিঙ্কিকে ছোট থেকে দেখেছে কাবেরী। অরুণাভর কলিগ সুবীর দত্ত বিপত্নীক মানুষ। একা হাতে মেয়েকে মানুষ করেছেন। কাবেরীদের বাড়ীতে পিঙ্কির যাতায়াত ছিল। তাতানের চেয়ে বছর তিনেকের বড়।
পাপান বলল----মা আজ পিঙ্কি দিদির বিয়ে। দত্ত জেঠু এই একটু আগে ফোন করলেন।
---তাতানও যাবে তো?
---যেতে চাইছিল না।
কাবেরী ঝাঁঝিয়ে উঠল--কেন? পিঙ্কি দিদি তোদের কত ভালোবাসে। দে তাতানকে।
বিরক্তি সহকারে ফোন ধরল তাতান---বলো মা।
---কী রে তুই যাবি না কেন?
----কত পড়া আছে বলো দেখি।
---খালি পড়া। এক আধটা দিন তো বাইরের জগৎটাও চিনতে হয় নাকি।
তাতানটা ধীরে ধীরে অসামাজিক হয়ে যাচ্ছে। বইয়ের ভেতর ছাড়া, অন্য জগৎ সম্পর্কে উদাসীন। বাইরের বলতে খেলাটাই যা দেখে। এজন্য অবশ্য অরুণাভ কাবেরীকেই দায়ী করে। তাতানের এই ক্যারিয়ারিস্টিক মনোভাব কাবেরীর বড় ছেলেকে নিয়ে উচ্চাকাঙ্খাই দায়ী। কথাটা খানিকটা হলেও সত্যি। যদিও কাবেরী এটাকে উচ্চাকাঙ্খা নয়, প্রত্যাশা বলেই ধরে নেয়। অবশ্য পাল্টা যুক্তি সেও খাড়া করে; অরুণাভ নিজেই যে ভীষণ ক্যারিয়ারিস্টিক। রক্তের দোষ যাবে কোথায়। এসব নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মাঝে মধ্যে বিতণ্ডা হয়। তবে শেষমেশ প্রতিবারের মত কাবেরীকেই হার মানতে হয়। বরং অরুণাভ একটা হালকা কিছু ঠাট্টা করে ছেলেদের সামনে কাবেরীকে হাসির পাত্র বানিয়ে দেয়।
তাতান মায়ের কথামত গুঁই গুঁই করে অবশেষে রাজি হল। বলল--নাও বাপি কী বলবে বলছে।

অরুণাভ ফোনটা ধরেই বললে---এই আমার ঐ চেক শার্টটা কোথায় গো?
---কোন চেক শার্ট?
---আরে ওই ব্লু হোয়াইট। যেটা সেবার গোয়ালিয়র থেকে কিনে ছিলাম।
---ঐটা? ঐটা তো তুমি গতবারে অফিস পার্টিতেও পরে গেলে। আবার বিয়ে বাড়িতেও যাবে? লোকে কী বলবে?
----আরে সেবার তো শীতকাল ছিল। ব্লেজারের মধ্যে...
---থাক। ওটা না পরে তুমি দেখো আলমারিতে ইস্ত্রি করা একটা নেভি ব্লু শার্ট আছে। একবারও ভাঙা হয়নি, ওটা পরে যাবে।
এই একটা ব্যাপারে অরুণাভ বউয়ের কথা একেবারে পুঙ্খানুপুঙ্খ অনুসরণ করে। পোশাকটা কেনা থেকে পরে যাওয়া, সবটাই কাবেরীর চয়েস। আসলে অরুণাভ কাবেরীর চয়েসকে তারিফ করে। তাই তো মাঝে মধ্যে বলে 'অরুণাভ সেনগুপ্তকে চয়েস করে তুমি কোনো ভুল করোনি কাবেরী'।


খিচুড়িটা খাবার টেবিলে চেঁটেপুটে খেলেন হেমেন রায়---ভারী সুন্দর রান্না করিস কাবেরী। কলেজের চাকরীটা ছেড়ে একটা বাঙালি রেস্টুরেন্ট খুলতে পারিস। নাম রাখিস 'কাবেরীর হেঁশেল'।

রান্নার প্রশংসা শুনতে কাবেরীরও ভালো লাগে। মেয়েরা এই প্রশংসাটা শুনতে সবচেয়ে বেশী ভালোবাসে, বিশেষত কাবেরী। কারণ রান্নার প্রশংসা যখন কেউ যেচে করে তখন নিছক মন রাখার জন্য করে না।
দুপুরের খাবার পর টুকটাক কাজ সেরে যখন ভাবছে একটু গড়িয়ে নেবে, কুন্তী এসে পৌঁছল। তাকে দেখে যেন বুকে বল এল কাবেরীর। মেয়েটার মুখ শুকনো। বিপজ্জনক কিছু হয়েছে নাকি? ভারী অস্থির দেখাচ্ছে মেয়েটাকে।

---কী রে আবার তোর বাবা কিছু বলেছে নাকি?
---না দিদিমনি। বাপটাই তো মোকে পাঠাই দিল। বললে তোর মাকে দিখার জন্য আমি আছি। তুই ইকলেজটার জন্য পড়াশুনা কইরবি যা।
----সত্যি তোর বাবা এ কথা বলল? কাবেরীর মনে যেন এক অফুরন্ত আনন্দ দানা বেঁধেছে।
---হাঁ গো দিদিমণি। তোমাকে বলেইছিলি না, বাপটা মোর এত খারাপ না। কিন্তু আমার মা'টার অসুখ বাড়ছে। বাপটা একা কত কইরবে। খনির কামটাও হারাইছে। বইন দুটা ছোট আছে। টুনি মা'টার মাই খায়। দিদমনি মা'টা বাঁইচবে তো?
----এমন কেন বলছিস! কি হয়েছে বলতো। কুন্তীকে ধরে নিজের ঘরে বিছানায় বসালো কাবেরী।
কুন্তীর গলা ধরে এলো---ডাক্তার কয়েছে খাদানে কামটা করার লগে হছে। ফুসফুসে ধুলা পড়ছে।

হেমেন দা কাবেরী আর কুন্তীর কথার মাঝেই এসে পৌঁছলেন---সিলিকোসিস। খনি শ্রমিকদের আজকাল প্রায়শই হচ্ছে। সরকারী অবহেলায় কোনো নিরাপত্তা ছাড়া কাজ করতে করতে ভারতের বিশ শতাংশ খনি শ্রমিক আজ সিলিকোসিস রোগে আক্রান্ত। খনি থেকে উত্তোলিত এক বিশেষ পাথরের ধুলো...
---তুমি কি কোয়ার্টজ পাথরের কথা বলছ হেমেন দা?
----ঠিক এই নামটাই। মনে করতে পারছিলাম না। তোর ভূগোল বিষয় ছিল নারে খুকী? কলেজে পড়াস বলে এসব মনে থাকে।
কাবেরী হেসে বলল---হাইকলেজে শিক্ষকতা করলে ওসব বিষয়-টিষয়ের গুরুত্ব ছিল। প্রাইমারীতে সবটাই দেখতে হয়, সহজ পাঠ থেকে মিড ডে মিল পর্যন্ত। আসলে পাপান বা তাতানকে পড়াতাম যখন তখন বিষয়গুলো আসতো ঘুরে ফিরে।
হেমেন রায় বললেন---এজন্যই ছেলেগুলো রত্ন হয়েছে। তুই তো কুন্তীটাকেও পড়াতে পারিস, যে কটা দিন আছিস।
---এখন তো কুন্তীই ওর সমস্যার কথা শোনাচ্ছে। ওর মা যে খুব অসুস্থ।
হেমেন দা বললেন---এজন্যই তো মেয়েটাকে কাল বললুম ছোট বোনটাকে এখানে এনে রাখতে।
কাবেরী কুন্তীর মাথায় হাত বুলিয়ে আদর দিতে দিতে বলল---ঠিকই তো। আজই বোনটাকে এখানে নিয়ে চলে আয়।

[Image: 3a872a4c-4f65-43bb-909f-f2026da3337a.png]
অদূরে মেঘাচ্ছন্ন পাহাড়ে পাথরের মূর্তির মত দাঁড়িয়ে রয়েছে বুধন।
++++++++
Like Reply
#91
কি দুর্দান্ত ভাবে এগিয়ে চলেছে কাহিনী। যেন সময় স্রোত নিজের যোগ্য রাস্তা নিজেই খুঁজে নিয়ে এগিয়ে চলেছে বিশেষ এক স্থানের দিকে। যে স্থানে আছে অনেক বিপদ, অনেক সমস্যা, অনেক ঠিক ভুল, অনেক হ্যা না কিন্তু শেষে আছে চরম সুখ। সে লোভ বড়ো সাংঘাতিক।

দারুন লাগলো পর্বটা। অনেক কিছু খেলা করতে শুরু করেছে ওই নারীর অবচেতন মনে। নিজের দেহ যেন কিছু একটা বলতে চাইছে তাকে, যেটা এখন সে শুনতে না চাইলেও একদিন তো ঠিকই............!
[+] 3 users Like Baban's post
Like Reply
#92
Osadharon update.
Like Reply
#93
(13-10-2022, 05:35 PM)Henry Wrote: [Image: 1a43e97f-d1fb-4f6d-a56f-3c3cd3941343.png]
একজন পুরুষ অফিস যায় না, টাকার নদীতে ডুবে দিয়ে নিরুদ্দেশ না হয়ে বন্য মুসানীর স্রোতে কাছে পিঠেই থাকে সবসময়, কবিতা পড়ে না, ছবি আঁকে না। সে নিজেই শিল্পের মুর্ত প্রতীক হয়ে ওঠে। কাবেরীর ভালো লাগছে মনে ও শরীরে। চুয়াল্লিশ বসন্তের পরে তার যৌবন স্তিমিত হয়ে যায়নি, বরং আগের মতই সাবলীল, শুধু খুঁড়ে নিতে পারলেই বেরোবে অমৃত।
+++++++

আগের ছবিগুলোয় কাবেরীকে ৪৪ বছরের দেখতে লাগলেও এই ছবিটা ২৫-২৮ বছরের বলে চালান যায়। আর উপরের লাইনটা মারাত্মক!
Like Reply
#94
ছবির মত বর্ণনা...
পরপর সাজালে সব যেন চোখে ভেসে উঠে আপনাতে...
Shy হাত বাড়িয়ে ছুঁই না তোকে, মন বাড়িয়ে ছুঁই।
 দুইকে আমি এক করি না, এক কে করি দুই।। Shy
Like Reply
#95
অসাধারণ..
Like Reply
#96
হা হা কাবেরীর বাচ্চার বাবা বুধন দা হবে বেশ বেশ দেখি কতগুলো বাচ্চা হয় শেষ পর্যন্ত। দাদা ছবি গুলো দারুণ হচ্ছে । আর রইলো পর্ব তা নিয়ে কি বলবো যেন কোন সিনেমা দেখলাম।
horseride আমাকে আমার মত থাকতে দাও horseride
[+] 2 users Like Boti babu's post
Like Reply
#97
Valo laglo
Like Reply
#98
খুব ভালো হচ্ছে দাদা। ছবিগুলোই যেন গল্পের আকর্ষণ বহুগুনে বাড়িয়ে দেয়। একদম গল্পের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
Like Reply
#99
Awesome and amazing update!
[+] 1 user Likes Archana Gupta's post
Like Reply
ajke update asbe na??
Like Reply




Users browsing this thread: 63 Guest(s)