Thread Rating:
  • 75 Vote(s) - 3.33 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
WRITER'S SPECIAL সৃষ্টি (সমাপ্ত)
(04-09-2022, 04:53 PM)Baban Wrote: একরকম ভাবে ভাবলে এগুলো পড়ে বা জেনে কেমন যেন লাগে। কিন্তু মন পরিষ্কার করে ভাবলে এদের প্রত্যেকের প্রতি শ্রদ্ধা ভক্তি ও সম্মান সর্বদা বজায় থাকে। জীবন স্রোতে ভাসতে ভাসতে মানব সভ্যতাকে অনেক কিছুর সাক্ষী হতে হয় যার কিছু ভালো কিছু মন্দ আবার কিছু বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্য আবার কিছু ব্যাখ্যাহীন। কিন্তু স্রোতের ঢেউ সভ্যতাকে এগিয়ে নিয়ে চলে। এক রূপ থেকে আরেক রূপে, এক যুগ থেকে আরেক যুগে। কিন্তু সময় স্রোত থামেনা। সে বিশাল রূপে কিংবা সরল রূপে ভাসিয়ে নিয়ে চলে। খুব ভালো লাগলো এই ব্যাপারটা আরও ভালো ভাবে জেনে। ♥️

বাহ্ .. খুব সুন্দর করে বললে
Like Reply
Do not mention / post any under age /rape content. If found Please use REPORT button.
যুধিষ্ঠির সেয়ানা মাল ছিল। দ্রৌপদীকে কুমারী অবস্থায় দেওয়ার জন্য অন্য ভাইদের ভুলভাল গল্প শুনিয়েছিল, এদিকে আবার সবাইকে সত্যের জ্ঞান দিয়ে বেড়াতো।  Tongue
[+] 1 user Likes Sanjay Sen's post
Like Reply
(04-09-2022, 06:26 PM)Sanjay Sen Wrote: যুধিষ্ঠির সেয়ানা মাল ছিল। দ্রৌপদীকে কুমারী অবস্থায় দেওয়ার জন্য অন্য ভাইদের ভুলভাল গল্প শুনিয়েছিল, এদিকে আবার সবাইকে সত্যের জ্ঞান দিয়ে বেড়াতো।  Tongue

 না না ..  এটা ঠিক নয়। যুধিষ্ঠির মহাজ্ঞানী ছিলেন, আর কখনো মিথ্যে কথা বলেননি (অশ্বত্থামা হত ইতি গজ ছাড়া)। 
দ্রৌপদীকে কুমারী হিসেবে পাওয়ার সুখ পঞ্চপান্ডদের সকলেই পেয়েছে। কারণ টানা এক বছর একজন স্বামীর কাছে থাকার পর,  পরবর্তী স্বামীর কাছে যাওয়ার আগে দ্রৌপদী  অগ্নিতে প্রবেশ করে নিজেকে শুদ্ধ এবং কুমারী করে নিতো।
Like Reply
বরাবরের মতোই এই পর্বটাও বেশ ভালো লাগলো দাদা। তবে খুবই সংক্ষিপ্ত বলে মনের খিদে রয়েই গেলো।

পঞ্চ পান্ডবের মধ্যে একমাত্র যুধিষ্ঠির মনে হয় দ্বিতীয় স্ত্রী রাখেন নি।

এর পর গান্ধারী কিংবা কুন্তীর জীবন সম্বন্ধে জানবো।তবে আরও বিস্তারিত রূপে।

আপনার এই তথ্য গুলো কিছু খুব মানুষই জানেন।



[+] 1 user Likes Jupiter10's post
Like Reply
(05-09-2022, 07:52 PM)Jupiter10 Wrote: বরাবরের মতোই এই পর্বটাও বেশ ভালো লাগলো দাদা। তবে খুবই সংক্ষিপ্ত বলে মনের খিদে রয়েই গেলো।

পঞ্চ পান্ডবের মধ্যে একমাত্র যুধিষ্ঠির মনে হয় দ্বিতীয় স্ত্রী রাখেন নি।

এর পর গান্ধারী কিংবা কুন্তীর জীবন সম্বন্ধে জানবো।তবে আরও বিস্তারিত রূপে।

আপনার এই তথ্য গুলো কিছু খুব মানুষই জানেন।

প্রথমে জানাই অনেক ধন্যবাদ  thanks
দ্রৌপদীকে বাদ দিয়ে যুধিষ্ঠিরের আর একটি মাত্র স্ত্রীর উল্লেখ পাওয়া যায়, যার নাম হলো — দেবিকা এবং তার পুত্রের নাম হলো যৌধ্যেয়
[+] 1 user Likes Bumba_1's post
Like Reply
(05-09-2022, 09:20 PM)Bumba_1 Wrote: প্রথমে জানাই অনেক ধন্যবাদ  thanks
দ্রৌপদীকে বাদ দিয়ে যুধিষ্ঠিরের আর একটি মাত্র স্ত্রীর উল্লেখ পাওয়া যায়, যার নাম হলো — দেবিকা এবং তার পুত্রের নাম হলো যৌধ্যেয়

এটা জানা ছিলো না। আজ জেনে ভালো লাগলো দাদা। সত্যিই মহাভারত এতো গভীর কাব্য যেন প্রত্যেকটা চরিত্র নিয়ে লিখলে পরে এক এক আস্ত মহাভারত হয়ে যাবে। দাদা কংস নিয়েও একটা বড় প্রতিবেদন চাই। কংসের স্ত্রী এবং পুত্রর সম্বন্ধে জানতে চাই।

ধন্যবাদ। Namaskar



[+] 1 user Likes Jupiter10's post
Like Reply
(06-09-2022, 09:05 PM)Jupiter10 Wrote: এটা জানা ছিলো না। আজ জেনে ভালো লাগলো দাদা। সত্যিই মহাভারত এতো গভীর কাব্য যেন প্রত্যেকটা চরিত্র নিয়ে লিখলে পরে এক এক আস্ত মহাভারত হয়ে যাবে। দাদা কংস নিয়েও একটা বড় প্রতিবেদন চাই। কংসের স্ত্রী এবং পুত্রর সম্বন্ধে জানতে চাই।

ধন্যবাদ। Namaskar

অবশ্যই চেষ্টা করবো .. ধীরে ধীরে একটার পর একটা চরিত্র আসবে। 
[+] 1 user Likes Bumba_1's post
Like Reply
তুমি ছিলে বলেই কত কি জানতে পারি।
তোমাকে ধন্যবাদ দিয়ে ছোট করবো না দাদা, তোমার জন্য অন্তরের অন্তস্তল থেকে অনেক অনেক ভালোবাসা আর শ্রদ্ধা।
Shy হাত বাড়িয়ে ছুঁই না তোকে, মন বাড়িয়ে ছুঁই।
 দুইকে আমি এক করি না, এক কে করি দুই।। Shy
[+] 1 user Likes nextpage's post
Like Reply
(06-09-2022, 11:36 PM)nextpage Wrote: তুমি ছিলে বলেই কত কি জানতে পারি।
তোমাকে ধন্যবাদ দিয়ে ছোট করবো না দাদা, তোমার জন্য অন্তরের অন্তস্তল থেকে অনেক অনেক ভালোবাসা আর শ্রদ্ধা।

অফুরান ভালোবাসা তোমার জন্য 
Like Reply
দাদা পুজো আসছে। এই উপলক্ষে কিছু অজানা পৌরাণিক গল্প অথবা প্রতিবেদন চাই।

এই বছর পূজা বার্ষিকী পড়তে পেলাম না। আপনার লেখা দিয়েই তার স্বাদ পূরণ করবো।



[+] 1 user Likes Jupiter10's post
Like Reply
(15-09-2022, 11:47 AM)Jupiter10 Wrote: দাদা পুজো আসছে। এই উপলক্ষে কিছু অজানা পৌরাণিক গল্প অথবা প্রতিবেদন চাই।

এই বছর পূজা বার্ষিকী পড়তে পেলাম না। আপনার লেখা দিয়েই তার স্বাদ পূরণ করবো।

আপনি এবং আপনার পরিবারকে শারদীয়ার অগ্রিম শুভেচ্ছা জানাই  Namaskar আমার পছন্দের বিষয় মহাভারত। চেষ্টা করবো এই মহাকাব্যের অন্তর্গত কোন চরিত্রকে সামনে নিয়ে আসার।
ভালো থাকুন .. সুস্থ থাকুন 
[+] 1 user Likes Bumba_1's post
Like Reply
(15-09-2022, 12:21 PM)Bumba_1 Wrote: আপনি এবং আপনার পরিবারকে শারদীয়ার অগ্রিম শুভেচ্ছা জানাই  Namaskar আমার পছন্দের বিষয় মহাভারত। চেষ্টা করবো এই মহাকাব্যের অন্তর্গত কোন চরিত্রকে সামনে নিয়ে আসার।
ভালো থাকুন .. সুস্থ থাকুন 

আপনাকেও শারদীয়ার অগ্রিম শুভেচ্ছা দাদা।

আপনার লেখার অপেক্ষায় থাকলাম। আপনিও ভালো থাকুন। সুস্থ থাকুন। Heart



[+] 1 user Likes Jupiter10's post
Like Reply
[Image: r-Kr-BVk-Nd-Z7zn-Vw9k-54-547206-bhishma-...harata.jpg]

|| পিতামহ ভীষ্ম ||

‘যাহা নাই মহাভারতে, তাহা নাই ভারতে’- প্রবাদটি কমবেশি সবার জানা। মহাভারতের পাঠকেরা এহেন দাবির তৎপর্যও ধরতে পেরেছেন সত্যিকারভাবে। মহাকাব্যটিতে প্রাচীন ভারতের লোকাচার, ধর্ম, রাজনীতি, বাণিজ্য, কৃষি এবং যুদ্ধের মতো বিষয়কে তুলে আনা হয়েছে অতুলনীয় নান্দনিকতায়। পাশ্চাত্য সাহিত্যের দুই মহাগ্রন্থ- ইলিয়াড এবং ওডিসির মোট আয়তন এর আয়তনের এক অষ্টমাংশ। মহর্ষি ব্যাসদেবের হাতে রচিত আখ্যানের পটভূমি আবর্তিত হয়েছে কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধকে কেন্দ্র করে।

[Image: uphm10s0-EHPp-RPWD-18619-8428516729-cd92...1-01-1.jpg]

হস্তিনাপুরের সিংহাসন দখল নিয়ে কৌরব এবং পাণ্ডবদের মধ্যে রেষারেষি অবশেষে পরিণত হয় ভয়াবহ যুদ্ধে। খুড়তুতো ভাইদের মধ্যকার আগুন ছড়িয়ে পড়ে সমগ্র ভারতের রাজাদের মাঝে। যদিও পাণ্ডবেরা বিজয়ী হয়েছে, কিন্তু তাকে ঠিক বিজয় বলা যায় না। সে যা-ই হোক, মহাভারতে সন্নিবেশিত বিচিত্র সব চরিত্রের মাঝে অন্যতম দেবব্রত ভীষ্ম; প্রজ্ঞা, বীরত্ব, স্থিরতা, সংযম এবং দেবভক্তির মতো গুণ মিলিত হয়ে যার চরিত্রকে পরিণত করেছে অন্য সবার চেয়ে আলাদা হিসাবে। যুদ্ধকালে সৈন্যদের উদ্দেশে তার উপদেশ তুলে ধরেছেন কাশীরাম দাস-

“তবে ভীষ্ম কহিলেন চাহি সর্বজনে,
অন্যায় করিয়া যুদ্ধ না করি কখনে;
অস্ত্রহীনে কদাচিত না করি প্রহার
স্মরণাগতেরে নাহি করিব সংহার।”
                            
নাম দেবব্রত হলেও তা হারিয়ে গেছে ভীষ্মদেব নামের কাছে। ভীষ্মদেব আসলে অন্য সবার মতো মানুষ না; ছিলেন দেবতা। মানুষ হয়ে জন্ম নেবার কারণে তাকে বরং দেবমানব বলা যেতে পারে। মানবসমাজে অবতরণ সম্পর্কে মহাভারতেই উদ্ধৃত হয়েছে কাহিনী। 

একবার পৃথুসহ আট বসু নিজ নিজ স্ত্রীসহ সুমেরু পর্বতের পাশে বেড়াতে গেলেন। পাশেই বশিষ্ঠ মুনির আশ্রম। ‘নন্দিনী’ নামে বশিষ্ঠ ‍মুনির একটি কামধেনু ছিলো। যখন যে পরিমাণ দুধ চাওয়া হতো; সে পরিমাণ দুধ দিতে পারতো গাভীটি। আট বসুর একজনের নাম দ্যু-বসু; যার স্ত্রী নন্দিনীকে দেখেই মুগ্ধ হয়ে গেলো। আবদার করলো সখী রাজকন্যা জিতবতীকে সেই কামধেনু উপহার দিতে। পত্নীর অনুরোধে দ্যু-বসু নন্দিনীকে অপহরণ করে নিয়ে গেল।। বশিষ্ঠ মুনি আশ্রমে ফিরে এসে দেখলেন, তার প্রিয় কামধেনুটি নেই।

ঘটনা ক্রুদ্ধ হবার মতোই। মুনিও ক্রুদ্ধ হয়ে অভিশাপ দিলেন। যারা তার কামধেনু অপহরণ করেছে; তারা মানুষ হয়ে জন্ম নেবে। পরে বসুগণ অনুনয় করলে একটু নরম হলেন বশিষ্ঠ। উদার হয়ে সাতজনকে শাপমুক্ত হবার আশ্বাস দিলেন এক বছর পরেই। শুধু দ্যু-বসু নিজ কর্মের ফলে দীর্ঘকাল মানুষের সমাজে থাকবে বলে অটল থাকলেন। এমন অভিশাপ চিন্তায় ফেলে দিলো অষ্টবসুকে। মুনিবাক্য বৃথা যায় না। সুতরাং একযোগে নিজেদের নিবেদন করলেন গঙ্গাদেবীর কাছে। পৃথিবীতে যখন যেতেই হবে; তবে গঙ্গাদেবীকে তারা যেন মা হিসাবে পান। কাতর আবদারে সম্মতি দিলেন গঙ্গাদেবী।

আখ্যানের দ্বিতীয় অংশ হস্তিনাপুর রাজ্যে। রাজা প্রতীপের ছেলের নাম শান্তনু। গঙ্গার ধারে ধ্যানমগ্ন প্রতীপ অপরূপা নারীরূপে গঙ্গাদেবীকে দেখে নিজের পুত্রের সাথে বিয়ে দেবার প্রত্যাশা করেন। কিন্তু তা হয়ে ওঠেনি। তার আগেই পুত্রকে সিংহাসন দিয়ে তপস্যার জন্য অরণ্যে চলে যান। অবশ্য যাবার আগে গঙ্গাতীরের অভিজ্ঞতা জানিয়ে যান পুত্রকে। কিছুদিন পর শান্তনু শিকারে গিয়ে ঘুরে ঘুরে সেই গঙ্গার ধারেই হাজির হন। দেখা হয় সেই পরমা সুন্দরী মেয়ের সাথে। মুগ্ধ রাজা বিয়ের প্রস্তাব দিলে সুন্দরী রাজি হলেন। শুধু শর্ত দিলেন- ‘তার কোনো কাজে অসন্তোষ হওয়া বা প্রশ্ন করা যাবে না। যদি কোনোদিন হয়, তবে তখনই চলে যাবেন।’ মেনে নিলেন রাজা।  

[Image: 5-Sn-OFC2-LKt-F8-Ak7-T-427px-Raja-Ravi-V...u-1890.jpg]

শান্তনু আর গঙ্গাদেবীর সম্পর্ক ভালোই চলছিলো। সমস্যা দাঁড়ালো প্রথম সন্তান জন্ম নেবার পর। অজ্ঞাত কারণে রানী তাকে গঙ্গার জলে গিয়ে ফেলে দিয়ে এলেন। রাজা কষ্ট পেলেও চুপচাপ হজম করে গেলেন ঘটনাটা দেখে। কিন্তু কতদিন মুখ বুঝে থাকা যায়? একে একে সাতটা সন্তানকে জলে ফেলে দেবার পর রানী যখন অষ্টম সন্তানকে ফেলতে যাবেন; শান্তনু তাকে বাধা দিলেন। এবার থামলেন রানী। অষ্টম সন্তানকে তুলে দিলেন রাজার কোলে; আর শর্তভঙ্গের কারণে চলে গেলেন নিজে। শান্তনুর কোলে থেকে যাওয়া সেই সন্তানই দেবব্রত। যিনি বশিষ্ঠ মুণির কাছে সকল বেদ এবং বৃহস্পতি ও শুক্রের কাছে থেকে সকল শাস্ত্রে পাণ্ডিত্য অর্জন করেছেন। যাকে সমস্ত ধনুর্বিদ্যা শিখিয়েছেন স্বয়ং পরশুরাম।

নিয়তির ইচ্ছায় শান্তনু দ্বিতীয়বার আরেকজন নারীর প্রতি আসক্ত হন, যার নাম সত্যবতী। রাজা বলেই তো আর জোর করে ধরে আনতে পারেন না। প্রস্তাব পাঠাতে গেলে এক শর্ত জুড়ে দেয়া হলো। শান্তনু সত্যবতীকে বিয়ে করতে পারবেন; যদি সত্যবতীর ছেলেদের সিংহাসনে বসানো হয়। শর্তটা কঠিন। জীবিত এবং বড় পুত্র দেবব্রতকে বঞ্চিত করে শান্তনু ছোট ছেলেদের সিংহাসনে বসাতে পারেন না। এদিকে সত্যবতীর প্রতি তার আসক্তিও নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না।

পরিণামে অসুস্থ হয়ে পড়লেন শান্তনু। ঘটনা বুঝতে পেরে দেবব্রত নিজে গিয়ে সত্যবতীর পিতাকে রাজি করালেন। নিজেকে এবং নিজের বংশধরদের সরিয়ে নিলেন সিংহাসনের দাবিদার থেকে। আর তার জন্য সিদ্ধান্ত নিলেন বিয়ে না করার। তার এই ভীষণ পণের কারণেই নাম ‘ভীষ্ম’ হিসাবে খ্যাত হয়। পুত্র ভীষ্মের প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে পিতা শান্তনু তাকে ইচ্ছামৃত্যুর বর দিলেন। অর্থাৎ ভীষ্মদেব নিজে ইচ্ছা না করলে কেউ তাকে মারতে পারবে না।

[Image: 6f-Bh-E7se8-RMfewc5-Bheeshma-oath-by-RRV.jpg]

শান্তনু ও সত্যবতীর ঘরে দুই সন্তান জন্ম নেয়- চিত্রাঙ্গদ এবং বিচিত্রবীর্য। শান্তনুর মৃত্যুর পর চিত্রাঙ্গদ রাজা হলেও খুব বেশিদিন থাকতে পারলেন না। মারা গেলেন এক গন্ধর্বের সাথে যুদ্ধে। অপরিণত বিচিত্রবীর্যকে সিংহাসনে বসিয়ে ভীষ্ম অভিভাবকের দায়িত্ব নিলেন। বিচিত্রবীর্যের সাথে বিয়ে দিয়ে দিলেন কাশীরাজের কন্যা অম্বিকা ও অম্বালিকার। এই অম্বিকার ঘরেই জন্ম নেন ধৃতরাষ্ট্র এবং অম্বালিকার ঘরে পাণ্ডু। কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধটা ছিলো মূলত ধৃতরাষ্ট্র আর পাণ্ডুর ছেলেদের মধ্যে উত্তরাধিকার নিয়ে দ্বন্দ্ব। সে যা-ই হোক, ভীষ্মদেবের এমন নিঃস্বার্থ ও মহানুভব আচরণ গোটা মহাভারত জুড়ে দৃশ্যমান। কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের আগে ধৃতরাষ্ট্রের সাথে কথা বলার সময় ভীষ্মদেব বলেছিলেন - "আমার কাছে গান্ধারী (ধৃতরাষ্ট্রের স্ত্রী) সন্তানেরা আর কুন্তি ও মাদ্রীর (পাণ্ডুর দুই স্ত্রী) সন্তানেরা সমান প্রিয়।”       

ভীষ্মদেবের জ্ঞান-বুদ্ধি ও তেজস্বিতা সমসাময়িক বীর বা রাজন্যবর্গের কাছে ছিলেন বিশেষভাবে জনপ্রিয়। এমনকি কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের পরিণতিও তিনি আগে থেকেই আঁচ করতে পেরেছিলেন। দুর্যোধনের সাথে পরামর্শকালে সরাসরি তাই উপস্থাপন করেন শ্রীকৃষ্ণ এবং অর্জুন সম্পর্কে। "আমি নারদ মুনির কাছে শুনেছি, অর্জুন পূর্ববদেব নর এবং ভগবান বাসুদেব পূর্ববদেব নারায়ণ। একমাত্র আত্মা নর ও নারায়ণ হিসাবে দ্বিধাকৃত হয়েছে। দেবগণ, অসুরগণ এবং মানবগণ তাদেরকে পরাজিত করতে সক্ষম হয় না।”

দ্রোণাচার্যেরও সমর্থন ছিল ভীষ্মের কথায়। কিন্তু পাপাত্মা দুর্যোধন তাতে কান না দিয়ে কুরুক্ষেত্রের সংঘাতকে অবশ্যম্ভাবী করে তুললো। অনিচ্ছা সত্ত্বেও কৌরব পক্ষের সেনাপতির দায়িত্বগ্রহণ করেন ভীষ্মদেব। যুদ্ধে দু পক্ষ মুখোমুখি হলে পাণ্ডবপক্ষের জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা যুধিষ্ঠির রথ থেকে নেমে বর্ম ও অস্ত্র ত্যাগ করে পায়ে হেঁটে ভীষ্মের রথের কাছে যান। ভীষ্মদেবকে প্রণাম করে প্রার্থনা করেন আশীর্বাদ। মন খুলে আশীর্বাদ করেন ভীষ্ম। 

“শিবিরে গেলেন যুধিষ্ঠির মহামতি,
সভা করি বসিলেন বিষাদিত অতি।
পিতামহ পরাক্রম অতুল ভুবনে,
কিরূপে হবেন ক্ষয় ভাবেন তা মনে।”

[Image: wy-AOD1nog-XHNBsi-T-0521-bhishma-cover.jpg]

কুরুক্ষেত্রের ময়দানে ভীষ্মের অফুরন্ত বীরত্বে শঙ্কিত হয়ে পড়ে পাণ্ডবেরা। তাই, রাতে কৌরব শিবিরে প্রবেশ করে স্বয়ং ভীষ্মদেবের কাছে গিয়েই তাকে পরাজিত করার উপায় জানতে চায়। বিশ্বাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে সম্ভবত আত্মগ্লানিতে ভুগছিলেন ভীষ্ম। বলে দিলেন তাকে পরাজিত করার উপায়। পরের দিন পাণ্ডবপক্ষের শিখণ্ডিকে পাঠানো হলো ভীষ্মের সামনে। ভীষ্ম জানতেন, শিখণ্ডি পুরুষ নন। তাই বীরধর্ম মোতাবেক তার দিকে অস্ত্র ওঠালেন না।

সে সুযোগে অজস্র তীর এসে তাকে বিদ্ধ করলো। শেষমেশ অর্জুনের বাণে রথ থেকে পড়ে গেলেন তিনি। তীরগুলো এমনভাবে বিদ্ধ হয়েছিলো যে শরীরটা ভূমিতে না, তীরের উপর ভর করে শূন্যে একরকম ভাসমান ছিলো। মাথা ঝুলে পড়ছিলো দেখে অর্জুন আরো তিনটি শর নিক্ষেপ করে শরবালিশ করে দেন। ভূমিতে শরাঘাত করে তৃষ্ণার্ত ভীষ্মের জন্য বের করে দিলেন অমিয় জলধারা।    

[Image: pydt6ls-HTTa5-Eg-AN-800px-Bhisma-on-arrows-bed.jpg]

পিতা শান্তনুর থেকে বর পাওয়ার পর ভীষ্মের ইচ্ছা ছিল উত্তরায়ণে মৃত্যুবরণ করার। অর্থাৎ উত্তরায়ণ আসার আগে পর্যন্ত তার মৃত্যু হবে না। এই জন্যই শরশয্যায় দীর্ঘ আটান্ন দিন কাটাতে হয়েছে তাকে। মহাভারতের ভীষ্মপর্বে তিনি রথ থেকে পড়ে গিয়ে অস্ত্র ত্যাগ করলেও মৃত্যু হয়েছে তেরোতম- অর্থাৎ অনুশাসন পর্বে। সমগ্র মহাভারতে ভীষ্মপর্বই সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ। এই পর্বেই উল্লিখিত হয়েছে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ কর্তৃক অর্জুনের প্রতি উপদেশ গীতা বা শ্রীমদভগবদগীতা। চারবেদের নির্যাস এবং নিষ্কাম কর্মবাদের অমরগ্রন্থ; যা বিশ্বের সর্বাধিক পঠিত গ্রন্থগুলোর একটি হিসাবে স্বীকৃত।

কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের পর যুধিষ্ঠির রাজক্ষমতা গ্রহণ করেন। কৃষ্ণ ও অন্যান্য ঋষি-মহর্ষিদের পরামর্শে পিতামহ ভীষ্মদেবের কাছে আশীর্বাদের জন্য গেলেন তিনি। তখন মাঘমাসের শুক্লপক্ষ সমাগত। সূর্যের উত্তরায়ণের সময়। ভীষ্মের স্বর্গারোহণের সময় টের পেয়ে ছুটে এলেন শ্রীকৃষ্ণ, ধৃতরাষ্ট্র, বিদুর এবং সাত্যকি। চারদিকে ঘিরে রেখেছিলেন ব্যস, নারদ এবং অন্যান্য মুনি-ঋষি।

ভীষ্মদেব চোখ খুলেই চারপাশে আত্মীয় স্বজনদের সবাইকে দেখতে পেলেন। ধর্মরাজ যুধিষ্ঠিরের হাত ধরে তার আচরণে তুষ্টি প্রকাশ করলেন। সৃষ্টিতত্ত্ব, ব্যক্তি, সমাজ, রাষ্ট্র এবং অন্যান্য বিষয় নিয়ে দিলেন নানা দিক নির্দেশনা। কৌরব ভাইগণের পিতা ধৃতরাষ্ট্রকেও উদ্দেশ করে উপদেশ দিলেন। “

সূক্ষ্ম দেবশাস্ত্র ও ধর্ম তোমার অবিদিত না। সুতরাং শোক পরিত্যাগ করা অবশ্যই কর্তব্য। ধর্মানুসারে পাণ্ডবগণ তোমার পুত্রের মত। ধর্মপরায়ণ হয়ে পাণ্ডবগণকে প্রতিপালন করো। যুধিষ্ঠির সর্বদা তোমার আজ্ঞানুবর্তী হয়ে থাকবে। তোমার পুত্ররা লোভী, ঈর্ষাকাতর ও দুরাত্মা ছিল। তাদের জন্য দুঃখ করো না।”

কৃষ্ণকে লক্ষ্য করে বললেন, "আমার দেহত্যাগের সময় সামনে উপস্থিত। আমার যেন স্বর্গপ্রাপ্তি ঘটে।" ক্লান্ত চোখে তাকালেন সকলের দিকেই। বললেন "তোমরা অনুমতি দাও আমি দেহত্যাগ করি। তোমাদের বুদ্ধি যে কখনো সত্যকে পরিত্যাগ না করে। সত্যের তুল্য আর কোন শক্তি নেই।”

[Image: d9ttd0wb-QKLHPA8-P-pitamaha-bhishm-cover-1541.jpg]


তারপর ভীষ্মদেব চুপ হয়ে গেলেন। শরগুলো একে একে শরীর থেকে খসে পড়তে লাগলো। একসময় শরীরে একটা ক্ষতের দাগও রইলো না। অবশেষে তার পুণ্যাত্মা স্বর্গের অভিমুখে যাত্রা করলো। দেবতাগণ পুষ্পবৃষ্টি ও দুন্দুভিবাদ্যের নির্দেশনা দিলেন। কাশীরাম দাসের বর্ণনামতে,

“সাক্ষাতে পদারবিন্দ দেখিয়া নয়নে,
শরীর ত্যজেন ভীষ্ম দেখে দেবগনে;
জয় জয় শব্দ হৈল ইন্দ্রের নগরে
পুষ্পবৃষ্টি কৈল দেব ভীষ্মের উপরে।
দিব্য রথ পাঠাইয়া দিল সুরপতি
পবনের গতি রথ মাতলি সারথি;
রথেতে তুলিয়া স্বর্গে করিল গমন,
বন্ধুগণ সহ গিয়া হইল মিলন।   

বিশেষত্বের দিক থেকে মহাভারতের অন্যতম প্রভাবশালী চরিত্র ভীষ্মদেব। তার নামে একটি বিশেষ পর্ব তো রয়েছেই; আদিপর্ব ও শান্তিপর্ব সহ অন্যান্য নানা অংশে তার প্রবল উপস্থিতি লক্ষ করা যায়। কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে পাণ্ডব এবং কৌরব- উভয়পক্ষ তাকে অভিভাবক জ্ঞানে শ্রদ্ধা ও ভক্তি করে। এজন্যই কৌরবপক্ষের সেনাপতি হিসাবে যুদ্ধ করলেও যুদ্ধ শেষে বিজয়ী পাণ্ডবেরা বিনম্রচিত্তে উপদেশ গ্রহণ করতে যায়। খুব সম্ভবত সমগ্র মহাভারতে শ্রদ্ধাভাজন চরিত্র হিসাবে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের পরেই দেবব্রত ভীষ্মের অবস্থান।

--★★--

তথ্যসূত্রঃ- নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ী সঙ্কলন

[Image: Animation-resize-gif-f3b601eb23d95beeb4e...911ac0.gif]


[+] 8 users Like Bumba_1's post
Like Reply
পুরোটাই জানা, শুধু এই সংস্কৃত শ্লোকগুলো ছাড়া 

[Image: Shocked-Open-Asianpiedstarling-size-restricted.gif]

[+] 1 user Likes Sanjay Sen's post
Like Reply
(21-09-2022, 11:45 AM)Sanjay Sen Wrote:
পুরোটাই জানা, শুধু এই সংস্কৃত শ্লোকগুলো ছাড়া 

সংস্কৃত কোথায়? এ তো নিপাট বাংলা  Big Grin প্রাচীন বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে কতকটা এই ধরনের ভাষা ব্যবহার হতো।
Like Reply
সমৃদ্ধ হলাম  Namaskar
[+] 1 user Likes Somnaath's post
Like Reply
(21-09-2022, 03:42 PM)Somnaath Wrote:
সমৃদ্ধ হলাম  Namaskar

❤️❤️❤️❤️❤️❤️
Like Reply
কিছুটা অবশ্যই জানতাম। কিন্তু এইভাবে জেনে সত্যিই সমৃদ্ধ হলাম ♥️
[+] 1 user Likes Baban's post
Like Reply
(21-09-2022, 04:08 PM)Baban Wrote: কিছুটা অবশ্যই জানতাম। কিন্তু এইভাবে জেনে সত্যিই সমৃদ্ধ হলাম ♥️

❤️❤️❤️❤️❤️❤️
Like Reply
অসাধারণ! কিছুটা জানা এবং অজানার মধ্যে সব থেকে বড় প্রাপ্তি আপনার লেখা। আপনার লেখার মধ্য দিয়ে জানা গল্পও পড়ে সেই একই রকম তৃপ্তি হয় যেমন অজানার ক্ষেত্রে থাকে। মনে হয় যেন আপনি বলছেন আর আমরা শুনছি।

আপনার শব্দ চয়ন এবং লেখন পদ্ধতিতে মনে হচ্ছে যেন চোখের সামনে দেখছি। লেখার শুরুতে আপনি মন্তব্য করেছেন পাণ্ডবরা প্রকৃত রূপে জয় প্রাপ্ত করেনি। বলে "যাইহোক" দিয়ে এড়িয়ে গেছেন। ওই অংশটা "Just awesome" লাগলো। মানে "আমি শুধু উল্লেখ করবো। বিস্তারিত" অপ্রয়োজনে যাবো না।

আপনার এবং বাবান দার এই "non erotic"  থ্রেড দুটো এই ফোরামের রত্ন। তথাকথিত "যৌনতা" মূলক গল্পের সাইটে এই রকম জ্ঞান পূর্ণ এবং পৃথক স্বাদের লেখনি আমাদের পাঠকদের কাছে উপহারের মতো।



[+] 2 users Like Jupiter10's post
Like Reply




Users browsing this thread: 2 Guest(s)