Posts: 4,428
Threads: 6
Likes Received: 9,218 in 2,849 posts
Likes Given: 4,330
Joined: Oct 2019
Reputation:
3,225
মনে হয় খুব তাড়াতাড়িতে লিখেছো এই পর্বটি। বেশ কিছু জায়গায় বানান ভুল তো আছেই, এছাড়াও কিংশুকের কাছ থেকে অত বড় একটা ধাক্কা খেয়ে শুধু বাড়িতে এসে চিৎকার করে কাঁদা ছাড়া মিত্রার মনের ভেতরের তোলপাড়গুলো আরো প্রকটভাবে দেখালে ভালো হতো। আর শেষে কে সি চৌধুরীর অন্তর্ভুক্তি যে এই কাহিনীতে আলাদা মাত্রা এনে দেবে সেটা বুঝতেই পারছি।
Posts: 6,108
Threads: 41
Likes Received: 12,073 in 4,138 posts
Likes Given: 5,306
Joined: Jul 2019
Reputation:
3,734
কখনো মনে হয় এই আধুনিক জীবনে অভ্যস্ত অস্থির মানুষগুলোর জীবন যাপন থেকে পুরাতন ধারণার স্থির মানুষগুলো অনেক বেশি ভাগ্যবান। অনেক কিছু তারা হয়তো জানেনা, যেমন বিজ্ঞান, প্রগতি কিংবা উল্লাস। হয়তো সবসময় তারাও ঠিক নয়, ভুল তারাও করে কিন্তু অন্তত জীবন বাঁচতে জানে। জীবন কাটাতে জানে, জীবন বুঝতে জানে।
আমি জানিনা এই গল্পের সমাপ্তি তে কি অপেক্ষা করছে। হয়তো কোনো একটা ধাক্কা, হয়তো ঠিক ভুলের বিচার করা এখুনি উচিত হবেনা। অন্তত আজকের পর্বের শেষ লাইন পড়ে সন্দেহ হচ্ছে। কিন্তু উপরুক্ত লাইনগুলো ও আজকের পর্বের শুরুর অংশ বড়োই সত্যি, বড়োই বেদনার। যারা নতুনের খোঁজে পুরাতন মানুষদের ভুলে যায় তারা সত্যিই আধুনিক।
Posts: 1,473
Threads: 7
Likes Received: 2,458 in 929 posts
Likes Given: 2,453
Joined: Mar 2022
Reputation:
512
(06-08-2022, 10:01 PM)Bumba_1 Wrote: মনে হয় খুব তাড়াতাড়িতে লিখেছো এই পর্বটি। বেশ কিছু জায়গায় বানান ভুল তো আছেই, এছাড়াও কিংশুকের কাছ থেকে অত বড় একটা ধাক্কা খেয়ে শুধু বাড়িতে এসে চিৎকার করে কাঁদা ছাড়া মিত্রার মনের ভেতরের তোলপাড়গুলো আরো প্রকটভাবে দেখালে ভালো হতো। আর শেষে কে সি চৌধুরীর অন্তর্ভুক্তি যে এই কাহিনীতে আলাদা মাত্রা এনে দেবে সেটা বুঝতেই পারছি।
হুম একটু তাড়াহুড়ো করেছি বটে।
তবে গল্পের মাঝে এখনো চরিত্র গুলো সঠিক রূপ দেখা যায় নি, হয়তো সেই কারণেই মিত্রার মনের তোলপাড় এখনো দেখার সময় হয় নি। একটু অপেক্ষা করতে হবে।
জানি না ঠিক ভাবে শেষ করতে পারবো কিনা।
হাত বাড়িয়ে ছুঁই না তোকে, মন বাড়িয়ে ছুঁই।
দুইকে আমি এক করি না, এক কে করি দুই।।
•
Posts: 1,473
Threads: 7
Likes Received: 2,458 in 929 posts
Likes Given: 2,453
Joined: Mar 2022
Reputation:
512
(06-08-2022, 10:07 PM)Baban Wrote: কখনো মনে হয় এই আধুনিক জীবনে অভ্যস্ত অস্থির মানুষগুলোর জীবন যাপন থেকে পুরাতন ধারণার স্থির মানুষগুলো অনেক বেশি ভাগ্যবান। অনেক কিছু তারা হয়তো জানেনা, যেমন বিজ্ঞান, প্রগতি কিংবা উল্লাস। হয়তো সবসময় তারাও ঠিক নয়, ভুল তারাও করে কিন্তু অন্তত জীবন বাঁচতে জানে। জীবন কাটাতে জানে, জীবন বুঝতে জানে।
আমি জানিনা এই গল্পের সমাপ্তি তে কি অপেক্ষা করছে। হয়তো কোনো একটা ধাক্কা, হয়তো ঠিক ভুলের বিচার করা এখুনি উচিত হবেনা। অন্তত আজকের পর্বের শেষ লাইন পড়ে সন্দেহ হচ্ছে। কিন্তু উপরুক্ত লাইনগুলো ও আজকের পর্বের শুরুর অংশ বড়োই সত্যি, বড়োই বেদনার। যারা নতুনের খোঁজে পুরাতন মানুষদের ভুলে যায় তারা সত্যিই আধুনিক।
তোমার কথা গুলো সোজা মনে গিয়ে লেগেছে। সত্যিই আধুনিক হতে গিয়ে আমরা বাঁচতে ভুলে গিয়েছি।
আমি নিজেও জানি না সমাপ্তি টা কিভাবে হবে, হাজার ভাবে চিন্তা করেছি কিন্তু কোথাও যেন আটকে যাচ্ছি। দেখি কি হয় শেষ পর্যন্ত।
হাত বাড়িয়ে ছুঁই না তোকে, মন বাড়িয়ে ছুঁই।
দুইকে আমি এক করি না, এক কে করি দুই।।
•
Posts: 250
Threads: 0
Likes Received: 197 in 172 posts
Likes Given: 340
Joined: May 2022
Reputation:
11
Posts: 1,473
Threads: 7
Likes Received: 2,458 in 929 posts
Likes Given: 2,453
Joined: Mar 2022
Reputation:
512
(07-08-2022, 10:57 PM)Jibon Ahmed Wrote: অসাধারণ আপডেট দাদা
অনেক অনেক ধন্যবাদ...
হাত বাড়িয়ে ছুঁই না তোকে, মন বাড়িয়ে ছুঁই।
দুইকে আমি এক করি না, এক কে করি দুই।।
•
Posts: 252
Threads: 0
Likes Received: 184 in 162 posts
Likes Given: 132
Joined: Dec 2021
Reputation:
0
Posts: 1,473
Threads: 7
Likes Received: 2,458 in 929 posts
Likes Given: 2,453
Joined: Mar 2022
Reputation:
512
(08-08-2022, 11:03 AM)Arpon Saha Wrote: আপডেট কি আসবে?
নতুন পর্বের লেখা শুরু করেছি।
হাত বাড়িয়ে ছুঁই না তোকে, মন বাড়িয়ে ছুঁই।
দুইকে আমি এক করি না, এক কে করি দুই।।
•
Posts: 65
Threads: 0
Likes Received: 73 in 49 posts
Likes Given: 167
Joined: Aug 2022
Reputation:
8
Posts: 1,473
Threads: 7
Likes Received: 2,458 in 929 posts
Likes Given: 2,453
Joined: Mar 2022
Reputation:
512
(08-08-2022, 01:41 PM)nalin Wrote: বড় ভাল লাগল
পাশে থেকে উৎসাহ দিয়ে যাবেন।
হাত বাড়িয়ে ছুঁই না তোকে, মন বাড়িয়ে ছুঁই।
দুইকে আমি এক করি না, এক কে করি দুই।।
•
Posts: 1,473
Threads: 7
Likes Received: 2,458 in 929 posts
Likes Given: 2,453
Joined: Mar 2022
Reputation:
512
নতুন পর্বের লেখা শেষ।
আগামীকাল রাতে আসছে অজানা কিছু কথা নিয়ে নতুন পর্ব।
সেই পর্যন্ত সবাই সাথেই থাকুন।
Posts: 1,473
Threads: 7
Likes Received: 2,458 in 929 posts
Likes Given: 2,453
Joined: Mar 2022
Reputation:
512
পর্ব- তিন
কে. সি চৌধুরী বারবার মিত্রা কে বলে দিয়েছে তিনি বা বিচারক যা বলবেন সেটাতেই হ্যাঁ বলার জন্য, আর কিছু বলার দরকার নেই। খুব তাড়াতাড়ি সবটা মিটিয়ে দিবেন। কয়েকটা কাগজে কি সব সই নিলেন উকিল সাহেব।
মিত্রার ডাক পড়লো,
তা আপনি আপনার স্বামীকে ডিভোর্স দিতে চান, কারণ হিসেবে ডমেস্টিক ভায়োলেন্স, মেন্টালি টর্চার, মলেষ্ট আর পরকীয়া সম্পর্কের অভিযোগ করেছেন এটা কি ঠিক - বিচারক মহিলার মুখের কথা শুনে মিত্রা থ হয়ে গেছে, প্রথমত ও তো ডিভোর্স আপিল করে নি আর যেই অভিযোগ গুলোর কথা বলা হচ্ছে ওগুলো তো বহুদূরের কথা। উনি কি বলছেন আর এখানে কি হচ্ছে সেটাই বুঝতে পারছে না, এই প্রথম কোর্টে এসেছে সেটার ভীতি টাই তো এখনো কাটিয়ে উঠতে পারছে না এর মাঝেই এসব। কি বলবে কিছুই বুঝতে পারছে না৷ এর মাঝেই বিচারক মহিলা আবারও জিজ্ঞেস করে উঠলেন থতমত খেয়ে কে. সি চৌধুরীর দিকে তাকায় মিত্রা। কে. সি চৌধুরী মিত্রা কে মাথা নাড়িয়ে সায় দিতে বলে।
হুম, আমিই অভিযোগ গুলো করেছি - কাঁপা কাঁপা গলায় কোনমতে কথা টা শেষে করেই হাঁপ ছেড়ে বাঁচলো মিত্রা। নিজের এখনো বিশ্বাস হচ্ছে না কথা গুলো ও বলেছে, কেন বললো সেটাই ভাবতে থাকে। সব কিছু কেমন একটু একটু করে বদলে যাচ্ছে কিন্তু কিচ্ছু করতে পারছে না সে, ওর তো না করার কথা ছিল সেটা পারলো না কেন।
তা অভিযোগ করলেই তো হবে না অভিযোগের পক্ষে প্রমানও তো থাকতে হবে নাকি, যদি মিউচুয়াল ডিভোর্স হতো তবে না হয় একভাবে হতো এখন তো এটা অন্য একটা ধারায় চলে গেছে। তা চৌধুরী বাবু সব প্রমাণ নিয়েই এসেছেন নাকি সামনের কোন ডেট নিবেন - খড়খড়ে গলায় মহিলার কথা গুলো শুনে মিত্রার গায়ের লোম গুলো দাড়িয়ে গেল, কিসের ধারা টারা বলছে কিছুই তো বুঝতে পারছে না। আর অভিযোগের প্রমান সেটাই কোথায় পাবে ও, ও তো অভিযোগই করে নি। কি হবে এখন?
ম্যাডাম কেস যখন নিয়েছি তবে তো আটঘাট বেঁধেই নেমেছি, সব প্রমান হাতের মুঠোয় নিয়েই তবে আজ এসেছি৷ এক এক করে সব আপনার সামনে পেশ করবো, প্রথমেই কিছু ছবি দেখাচ্ছি যেগুলো কিংশুক বাবুর পরকীয়া সম্পর্কের প্রমান - কথাটা শুনে মিত্রা যেন আকাশ থেকে পড়লো, কারণ ও তো সেই ছবি গুলো কে সি চৌধুরী কে দেখায় নি তবে উনি কোথা থেকে পেলেন। এ ব্যাপারের তো কোন কথা পর্যন্ত বলে নি।
এছাড়াও কিংশুক বাবু প্রতি রাতে মদ্যপ অবস্থায় বাসায় ফিরে, আর বাসায় ফিরে আমার মক্কেলের উপর মানসিক ও শারীরিক অত্যাচার নিপীড়ন চালায়, সেটার পক্ষের প্রমান হিসেবে আমি কিছু ছবি আর সাক্ষী এনেছি। ছবি গুলো তে দেখতে পারছেন উনি ক্লাবে মদ্যপ অবস্থায় আছে আর উনি বাসায় আসার পর যা যা করেন সে সবের সাক্ষী হিসেবে তাদের পাশের বাসার একজন কে হাজির করছি - ছবি গুলো দেখে আর সাক্ষীর বয়ান অনুযায়ী অভিযোগ গুলো অনেকাংশেই প্রমাণিত হয়ে যায়, এর পরেও বিচারক অভিযোগ কারীর মুখ থেকে কিছু শুনতে চায়।
মিসেস মিত্রা, আপনার উকিল যে যে প্রমাণ গুলো দাখিল করেছে সেগুলোর সাথে কি আপনি একমত, আপনার স্বামীর কি সত্যিই আরেকটা অবৈধ সম্পর্ক আছে আর উনি কি রাতে মদ্যপ অবস্থায় আপনার উপর নির্যাতন করে? - মিত্রা দাড়িয়ে কি বলবে সেটা ঠিক গুছিয়ে উঠতে পারে না, আবার কে সি চৌধুরীর দিকে তাকায়, চৌধুরী তাকে অভয় দেয়।
হ্যাঁ, ও মদ্যপ হয়ে বাসায় ফিরে, কিছুদিন আগেই ওর আরেকটা সম্পর্কের কথা জানতে পেরেছি, হয়তো মাতাল অবস্থায় ও এক দুবার হাত তোলার চেষ্টা করেছে কিন্তু তাই বলে আমি ওকে ডিভোর্স দেবার মত.... - কথাটা শেষ করার আগেই কে সি চৌধুরী বাধা দেয়।
দেখুন ম্যাডাম সব সাক্ষ্য প্রমান এ কিন্তু সবটা পরিষ্কার, এমন একটা মানুষের সাথে আমার মক্কেল নিরাপদ না তাই উনার ডিভোর্স আপিল টা গ্রহন করুন - চৌধুরী বাঁধায় মিত্রার আর কিছুই বলা হয় না একবার শুধু কিংশুকের দিকে তাকায় ও, কিংশুক একাই বসে আছে ভাবলেশহীন ভাবে।
তা মিষ্টার কিংশুক আপনার উকিল কোথায়? আপনি কি নিজেই নিজের হয়ে উকালতি করবেন? - বিচারকের কথা শুনে কিংশুক উঠে দাঁড়ায়, এই প্রথম মিত্রার দিকে তাকিয়ে ছোট্ট একটা হাসি দেয়।
জ্বী ম্যাডাম আমার কেস আমিই দেখবো। সেটার অনুমতির আবেদন আপনার কাছে জমা দেয়া হয়েছে - কিংশুকের আবেদন টা হাতে নিয়ে পড়ে সেটাতে একটা সাইন করে দেয় তাসলিমা খান।
তা আপনি কি আপনার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ গুলো শুনেছেন? আর সেগুলো কি স্বীকার করেন যে আপনার দ্বারা সেগুলো হয়েছে - মিত্রা কিংশুকের দিকে তাকিয়ে আছে, ওর মুখে হাসি ভাব টা দেখে অবাক হয়।
হুম আমি সব স্বীকার করে নিচ্ছি, আর ডিভোর্সে সম্মতি দিচ্ছি। আমিও বিশ্বাস করি আমার সাথে মিত্রার থাকা নিরাপদ না - মিত্রার চোখ জল ভিজে উঠে। কিংশুক এক কথায সব মেনে নিলো, হয়তো ও এমন করেছে তাই বলে আর কিছুই বললো না, সরাসরি ডিভোর্সে রাজি হয়ে গেল।
যদি অভিযোগ স্বীকার করেন তবে আপনার নামে ডমেস্টিক ভায়োলেন্স এর জন্য নারী নির্যাতন মামলা হতে পারে। সেটাও কিন্তু ফেস করতে হবে ডিভোর্স হয়ে গেলেও।
না ম্যাডাম, আমার মক্কেল শুধু ডিভোর্স চাইছে, মি. কিংশুক কে জেল খাটানোর ইচ্ছে তার নেই - কে সি চৌধুরী বাধা দিয়ে কথা গুলো বলে উঠে, এর পক্ষে মিত্রার সমর্থন ও নিয়ে নেয়।
যদি এমনটাই চায় তবে সেটা ভেবে দেখা যাবে, আপাতত আজকের কোর্ট এখানেই শেষ। আগামী সপ্তাহে কোর্ট তার রায় জানিয়ে দিবে, ডিভোর্স হয়ে যাবে শুধু কিছু ফর্মালিটি আছে।
মিত্রা কোর্ট রুম থেকে বেড়িয়ে বাইরে কিংশুক কে দাড়িয়ে থাকতে দেখে ওর দিকে এগিয়ে যায়। কিংশুক মোবাইলে কারও সাথে কথা বলছিলো মিত্রা কে দেখেই মোবাইল টা রেখে দেয়।
তোমার ইচ্ছে মতই সব হচ্ছে, তাই এতো খুশি দেখাচ্ছে তোমাকে - মিত্রার ভারী হয়ে কণ্ঠে আওয়াজে বাতাসটাও ভারী হয়ে আসে, কিংশুক এক মূহুর্তের জন্য অন্যদিকে তাকিয়ে আবার মিত্রা দিকে ফিরে একটা ছোট্ট হাসি দেয়।
আমার মতে সব হলো কই? শুনলে না কি বললো ডিভোর্স তো তুমি ফাইল করেছো আর সাথে কত অভিযোগ, যদিও অভিযোগ গুলো সত্য - কিংশুকের মুখের কথা শেষ হতেই মিত্রা ওর শার্ট টা খামচে ধরে।
ওটা আমিও বুঝিনি, তুমি কিছু করেছো এসবে? আমি তো কখনো এমন অভিযোগ তোমাকে করিনি, কিছু বলার থাকলে তো তোমাকেই বলতাম এভাবে কোর্টে আসতাম না। আর ছবি টা এখনো আমি বিশ্বাস করি না ওসব তুমি ইচ্ছে করে করছো বোধহয় আমার থেকে দূরে যাবার জন্য তাই না। গত কদিন ধরে তো বাসায় পর্যন্ত যাচ্ছো না, আমি না হয় অস্পৃশ্য কিন্তু মেয়েটা? তুমি তো জানো ও বাবা ছাড়া কিছুই বুঝে না, তোমাকে দেখার জন্য প্রতিদিন কান্নাকাটি করে, ঠিকমত খাওয়া দাওয়া পর্যন্ত করে না। কি করেছি আমি যে তুমি আমার সাথে এমন করছে, এভাবে আমাকে, মেয়েটাকে কষ্ট দিচ্ছো। তুমি তো এমন ছিলে না কখনো তোমার কি হয়েছে কিংশুক বলো আমাকে। আমার কোন ভুল থাকলে কোন দোষ করে থাকলে আমাকে বলো প্লিজ তবুও এই সিদ্ধান্ত থেকে ফিরে আসো - মিত্রার দুচোখ বেয়ে জল গড়িয়ে পড়ছে, কিংশুক দুহাতে মিত্রার হাত দুটো ওর শার্ট থেকে ছাড়িয়ে নেয়।
কোনটা ভুল ছিল কি দোষ হয়েছে সেটা তুমিই হয়তো ভালো জানো। ভালো করে ভেবে দেখো উত্তর পেয়ে যাবে আর মেয়ের কথা বলে আমার মন গলাতে চেয়ে লাভ নেই, আমি ওকে আমার মেয়ে বলে স্বীকার করি না, ও আমার মেয়ে না- বাজখাঁই গলায় কথাটা শেষ করেই কিংশুক দ্রুত পায়ে ওখান থেকে চলে যায়, নিমিষেই ভীড়ের মাঝে মিশে গেছে। মিত্রা পিছন থেকে বারবার ওকে ডাকলেও একবারও ফিরে তাকায় নি। এখনো শেষে কি বলে গেল সেটা বুঝার চেষ্টা করছে, কিংশুক এই কথা বলতে পারলো?? না ও হয়তো ভুল শুনেছে কিংশুক কখনো এই কথা বলতে পারে না, ও তো ওর নিজের জীবনের থেকেও মেয়েকে বেশি ভালোবাসে সেই মেয়েকে ও অস্বীকার করতে পারে না। নিজের মন কে বুঝ দেয়ার বৃথা চেষ্টায় মিত্রার ভিজে যাওয়া চোখ নিয়ে অফিসের দিকে বেড়িয়ে যায়।
বাড়ি পৌঁছে মিত্রা মিলির নাম ধরে ডাকতে থাকে কিন্তু কোন সাড়া পায় না। মেয়েটা তো কলেজ থেকে এসে যাবার কথা ওর জুতো গুলো এখানেই আছে তবে মেয়েটা গেল কই, এত ডাকছে কিন্তু কোন কথা বলছে না। এদিক ওদিক খোঁজেও মেয়েকে না পেয়ে ছাদের দিকে এগিয়ে যায় হঠাৎ কান্নার শব্দ পেয়ে বুঝতে পারে মিলি ওখানেই আছে। মিত্রা কে দেখেই মিলি চোখ মুছে নেয়
মা বাবা কবে আসবে? আমার তো বাবাকে দেখতে ইচ্ছে করছে খুব - মায়ের কাছে ছুটে গিয়ে শাড়ি ধরে বায়না করে।
তোমাকে তো বললাম বাবা অফিসের কাজে বাইরে গেছে, যখন আসবে তখন তো প্রথম তোমার সাথেই দেখা করবে- মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে নিজের দাঁতে দাঁত চেপে কথা গুলো বলতে গিয়ে মিত্রার গলাটা কেঁপে উঠে।
তুমি মিথ্যে বলছো, আমি তো কলেজ থেকে আসার সময় বাবাকে দেখলাম হেঁটে কোথায় যেন যাচ্ছে। আমি অনেক ডেকেছি কিন্তু একবারও ফিরে তাকায় নি। তুমি আমাকে মিথ্যা বলেছে তুমি খুব পঁচা। তোমার সাথে কথা বলবো না, বাবা যতক্ষণ না আসবে ততক্ষণ আমি কিচ্ছু খাবো না- কাঁদতে কাঁদতে মিলি দৌড়ে নিচে নেমে গেছে, কিন্তু মিত্রা এক পা নড়ার শক্তি পেল না, মেয়েকে কি বলবে সেটা ওর জানা নেই।
দুপুরে কাঁদতে কাঁদতে মিলি ঘুমিয়ে গিয়েছিল খায় নি পর্যন্ত, রাতেও অন্য রুমে গিয়ে বসে আছে আর কান্না করছে। মিত্রা খাবারের প্লেট নিয়ে ঘরে ঢুকে দেখে মিলি জড়োসড়ো হয়ে বিছানায় শুয়ে আছে, কাছে গিয়ে শরীরে হাত রাখতেই টের পায় জ্বরে শরীর পুড়ে যাচ্ছে। ছোট্ট মেয়েটার উপর তো ধকল কম যাচ্ছে না, মিত্রা তাড়াতাড়ি বাথরুম থেকে বালতি ভর্তি জল নিয়ে আসে মাথায় ঢালার জন্য। মিলি জ্বরের ঘোরে বারবার বাবা বাবা বরে বিলাপ করে যাচ্ছে। মিত্রা কিংশুকের নাম্বারে ফোন করে কিন্তু ওর মোবাইল বন্ধ, কিংশুকের বন্ধুদের কাছে ফোন করেও কোন খবর পেল না। ঘন্টা খানেকের মত জল ঢালার পর জ্বর কিছুটা কমতির দিকে, মেয়েকে কোন মতে কিছু খাইয়ে জ্বরের ঔষধ খাইয়ে দেয় মিত্রা। নিজের আর খাবার খাওয়ার মত ইচ্ছে জাগে না, একদিকে কিংশুকের এমন বদলে যাওয়া, ডিভোর্স এসব সামলাতে পারছে না অন্যদিকে মেয়েটা দিনদিন অসুস্থ হয়ে পড়ছে। কি করবে কোনদিকে যাবে কিছুই বুঝে উঠতে পারছে না মিত্রা, শুধু মেয়েকে নিজের বুকের সাথে জড়িয়ে নিঃশব্দে কাঁদতে থাকে সে।
যখন মিলি ওর গর্ভে আসলো তখন এই কিংশুক ওর কত কেয়ার করতো, টাইমে টাইমে খাওয়া দাওয়া করানো, ডাক্তারের কাছে নিয়মিত চেকআপে নিয়ে যাওয়া, হাটতে নিয়ে যাওয়া, কখন কোন ঔষধ খেতে হবে সেটার খেয়াল রাখা সব দিকের নজর রাখতো। কোন কাজ করতে দিতো না মিত্রা কে, সারাদিন অফিস করে এসে সব একা হাতে করতো, সকালে নাস্তা করা দুপুরে মিত্রা কি কি খাবে সেটা রেডি করে রাখা আবার অফিস থেকে এসে রাতে রান্না করা, মিত্রা সাথে গল্প করা, বাইরের খোলা জায়গায় হাটতে নিয়ে যাওয়া সব কিংশুক হাসি মুখে করে যেতো। মোড সুইং এর কারণে মিত্রা মাঝে মাঝে রাগারাগি করতো, এটা ওটা বায়না করতো কিন্তু কিংশুক কখনো একটুও রাগ দেখাতো না বরং উল্টো মিত্রার রাগ ভাঙানোর জন্য উদ্ভট সব দাবি গুলোও মেনে নিতো৷ মিলির জন্মের পর সেই কিংশুক একা হাতেই মিত্রাকেও সামলিয়েছে আবার মিলিকেও সামলিয়েছে। আর মেয়েটাও জন্মের পর থেকে বাবা ছাড়া কিছুই বুঝে না। সারাদিন ঠিক বিছানায় হাত পা ছুড়ে খেলে ঘুমিয়ে কাটিয়েছে কিন্তু যেই কিংশুক অফিস থেকে ফিরেছে তখনি ওর কোলে যে পর্যন্ত না উঠেছে ততক্ষণ আর রক্ষে নেই চিৎকার করে কান্না শুরু করেছে। আর কিংশুক ও মেয়ের কান্না সহ্য করতে পারে না, মেয়েকে কোলে নিয়েই বাড়ির কাজ করেছে, রান্না করেছে, জিনিসপত্র ধোয়ে ঠিক জায়গায় রাখা, ঘর পরিষ্কার করা সব করেছে একটু ক্লান্তি যেন ওর নাগাল পেত না। রাতে আবার মেয়েকে নিজের বুকের উপর নিয়ে ঘুমিয়েছে, আগে যে কিংশুক কাত না হয়ে ঘুমাতে পারতো না সেই কিংশুক চিত হয়ে ঘুমাতে শুরু করেছে মেয়ের জন্য।
সেই সময়ের কথা গুলো ভাবতে ভাবতে মিত্রার চোখ গুলো ভারী হয়ে আসে, মিলির দিকে তাকিয়ে দেখে মেয়েটা ঘুমোচ্ছে ঠিকি কিন্তু আগে কিংশুকের কাছে যে নিশ্চিন্তে ঘুমাতো সেই নিশ্চিন্ত ভাবটা মুখে নেই৷ মেয়ে মুখের দিকে তাকিয়ে ভাবে না এমন করে সব হতে দেয়া যায় না, যে করেই হোক কিংশুক কে বুঝাতে হবে। মিত্রা কে পারতেই হবে, নিজের জন্য না হলেও মেয়ের জন্য হলেও কিন্তু ও নিজেও তো পারছে না কিংশুক কে ছাড়া থাকতে। মিত্রা ঠিক করে কাল সকালেই কিংশুকের অফিসে যাবে, মেয়েটার এমন অবস্থার কথা শুনলে কিংশুক ঠিক চলে আসবে বাড়িতে মেয়েকে খুব ভালোবাসে ও। একবার বাড়ি আসুক তখন যেভাবেই হোক ওকে রাজি করিয়ে নিবে তবু এই ডিভোর্স হতে দিবে না, কিংশুক কে ছাড়া ওরা থাকতে পারবে না।
পরদিন অফিসে গিয়ে জানতে পারে কিংশুক নাকি চাকরি টা ছেড়ে দিয়েছে দুদিন আগেই, অন্য কোথাও চাকরি নিয়েছে কিনা, কোথায় আছে কারও কাছে কোন খবর নেই। ওর বন্ধুরা পর্যন্ত ওর কোন খবর জানে না, সবার একটাই কথা হঠাৎ করেই উধাও হয়ে গেছে। ওর তেমন কোন আত্মীয় নেই মিত্রার জানা মতে যারা আছে তারাও কেউ কিংশুকের কোন খবর দিতে পারলো না, মিত্রাও পারেনি মিলি কে তার বাবার কোন খবর এনে দিতে৷ মেয়েটাও কেমন পাথরের মত হয়ে গেছে এখন আর কান্না করে না, কলেজে যায় আসে খাওয়া দাওয়া করে নিজের মত একা একা পড়তে বসে যায় কিন্তু ওর ভেতরে আগের মিলি আর নেই ঠিক বাবার মত হয়েছে ভিতরের সব তছনছ হয়ে গেছে কিন্তু বাইরে কাউকে বুঝতে দেয় না এখন আর মিত্রার সামনে কিংশুকের কথা জিজ্ঞেস পর্যন্ত করে না, মিত্রা কিছু বলতে চাইলেও এড়িয়ে যায় বছর চারেকের মিলি যেন বড়দের মত আচরন করতে শিখে গেছে। কোর্টে পরের ডেট এ মিত্রা গেলেও কিংশুকের দেখা পায় নি ও আসেনি, বিচারক আবার নতুন ডেট দিয়ে দেয়। মিত্রা ভেবে পায় না এমন হঠাৎ করে কোথায় উধাও হয়ে গেল কিংশুক, ফোনে পাওয়া যায় না, কারও কাছে কোন খবর নেই ওর। কোন বিপদ হয় নি তো ওর, অজানা আশংকায় মিত্রার মন কেঁপে উঠে। কোন কাজে মন বসাতে পারছে না, চিন্তায় আর অঘুমে চোখের নিচে কালো দাগ পড়ে গেছে।
দশদিন হয়ে গেল কিংশুকের কোন খোঁজ নেই, মিত্রা পাগলের মত খোঁজে চলেছে ওকে পরিচিত যারা আছে সবার কাছেই ওর খোঁজ করেছে কিন্তু কোন পাত্তা নেই ওর। দুদিন আগে পুলিশে একটা জিডি করেছে, সেখান থেকেও তেমন কোন রেসপন্স নেই। আজকাল মিত্রা অফিস শেষে পুরনো জায়গা গুলোতে একটু ঘুরতে আসে আগে কিংশুক ওকে এই জায়গা গুলোতে নিয়ে যেত। আজ মিত্রা পুরাতন ফেরী ঘাটে এসেছে, আগে ফেরী চলতো এখন এটা পার্কের মত করা হয়েছে। মিত্রা বড় বট গাছের নিচে বেঞ্চে বসে আগেও এখানে এসে বসতো এখন আরও সুন্দর করে বাঁধানো হয়েছে বেঞ্চ গুলো। খানিক পড়েই একজন লোক চা নিয়ে হাজির
ম্যাডাম আপনার চা - হঠাৎ করে ডাক টা কানে আসতেই চমকে গিয়ে মিত্রা ভ্রু কুঁচকে উপরের দিতে তাকায়।
আমি তো চায়ের কথা বলি নি - মিত্রার কথা শুনে চা-ওয়ালা হাসতে থাকে।
ম্যাডাম আমাকে চিনতে পারেন নি মনে হয়, আমি বিজু আগে এখানে ফ্লাক্সে করে ঘুরে ঘুরে চা বেচতাম। স্যার আর আপনে এখানে আসলে আমার কাছেই চা খেতেন, এখন টং দোকান দিসি ঐখানে - আরেকটু ভালো করে তাকিয়ে মিত্রা বিজু কে চিনতে পারে, হাসি মুখে চা টা ওর হাত থেকে নেয়।
ভালোই হলো দোকান দিয়েছো, তা কত খরচ হয়েছে - চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে মিত্রা জিজ্ঞেস করে।
কেন স্যার আপনাকে কিছু বলে নি স্যারই তো দোকানের সব টাকা দিসে, স্যার কইসে আপনে যখন এখানে আইবেন তখন যেন টাকা না রাখি আর আপনার চায়ে চিনি কম আদা বেশি লেবু দিয়ে যেন চা দেই - মিত্রা অবাক দৃষ্টিতে বিজুর দিকে তাকিয়ে ওর কথা শুনতে থাকে, টং দোকান টা দেখে মনে হয় সদ্য দেয়া হয়েছে।
তোমার স্যার শেষ কবে এসেছিল - কিংশুকের কোন খবর কি বিজুর কাছে আছে নাকি জানার জন্য কাতর কন্ঠে জিজ্ঞেস করে।
স্যার দশ-বারো দিন আগে আইসিলো যেদিন দোকান টা নিলাম এরপরে আর আসে নাই, কিন্তু স্যার কইসে তোর ম্যাডাম ঠিক আইবো - বিজুর কথা শুনে বুঝতে পারে প্রথম কোর্টের তারিখে কিংশুক এখানে এসেছিল এর পর আর আসে নি। বিজু দোকানের দিকে চলে যায়, মিত্রা বিজুর কথা গুলো আরেকবার নিজের মাঝে আওরাতে থাকে।
আজ যেই কিংশুকের জন্য এত ছটফট করছে মিত্রা পাঁচ বছর আগেও কি এমন ছটফটানি ছিল মিত্রা নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করে। এ্যারেঞ্জ ম্যারেঞ্জ ছিল ওদের, কিন্তু কিংশুক প্রথম থেকেই বন্ধুর মত মিশে গিয়েছিল মিত্রার সাথে, ও মিত্রার খুব খেয়াল রাখতো নিয়ম করে কিছুক্ষণ পরপর খবর নিতো। কিন্তু মিত্রার নিজের কাছে নিজেকে কেমন বন্দী লাগতো, মনে হতো কিংশুক ওর সবকিছুতেই নজর রাখে তাতে করে ওর নিজের স্বাধীনতা বলে কিছুই নেই। কিংশুক হয়তো মিত্রার মনের কথা বুঝতো তাই ও মাঝে মাঝে মিত্রা কে বলতো "এখন তোমার নিজেকে খাঁচায় বন্ধ পাখির মত মনে হয়, কিন্তু যেদিন মুক্ত হবে সেদিন হয়তো আবার বন্দী জীবনটাই আবার খুঁজে বেরাবে"। কিংশুক যে এভাবে মিত্রাকে মুক্ত করে দিবে সেটা কল্পনাও করতে পারে নি। প্রথমে যেই কিংশুক কে ওর সহ্য হতো না এখন সেই কিংশুক ওর অভ্যাস হয়ে গিয়েছিল, ওকে ছাড়া কিছুই ভাবতে পারতো না, ইচ্ছে করতো সবসময় ওর কাছাকাছি থাকতে, নিজের স্বামী সন্তানের বাবাকেো লুকিয়ে দেখার মাঝেও যেন অন্যরকম একটা শান্তি পেত। কিন্তু আজ সেই কিংশুক ওর থেকে দূরে চলে গেল, এমন করে একলা করে দিল যে আজকাল আর এই মুক্ত স্বাধীনতা টা আর মিত্রার কাছে উপভোগের যে বেশি কষ্টদায়ক মনে হয়। মিত্রা এখনো আশায় আছে কিংশুক হয়তো কোন গেম খেলছে ঠিক আবার হয়তো কখনো ফিরে আসবে, এবার কিংশুক কে আর নিজের কাছছাড়া হতে দিবে না মিত্রা। সন্ধ্যা হয়ে আসছে শাড়ির আঁচলে মুখ টা মুছে মিত্রা বাড়ির পথ ধরে।
মেয়েকে খাইয়ে কলেজ বাসে উঠিয়ে মিত্রাও নিজে অফিসের জন্য ট্যাক্সি ধরে। ট্যাক্সি টা সিগনালে পড়েছে অনেক লম্বা জ্যাম, ছোট ছোট কয়েকটা মেয়ে ঘুরে ঘুরে ফুল বিক্রি করছে। মিত্রা ওদের দিকে তাকিয়ে আছে, হঠাৎ ওর দৃষ্টিটা একটা বাইকে আটকে যায়। বাইকের ব্যাক সীটে সেই মেয়েটা বসা যার সাথে কিংশুকের ছবি দেখেছিল আর কোর্টে কথা বলতে দেখেছিল, কিন্তু মেয়েটা যাকে জড়িয়ে ধরে বসে আছে সেই ছেলেটা তো কিংশুক নয়। তাহলে কিংশুক কোথায়, ঐ মেয়েটার কাছ কোন খবর আছে কি মিত্রা ট্যাক্সি থেকে নেমে মেয়েটার কাছে যেতে চায় কিন্তু এর মাঝেই সিগনাল উঠে গেছে গাড়ি চলতে শুরু করেছে, বাইকটাও দ্রুত গতিতে চলে গেল মিত্রা আবার ট্যাক্সি তে উঠে বসে।
অফিস থেকে বাসায় ফিরে দরজা খুলতেই দেখলো মিলি এখানে বসার ঘরেই বসে আছে, মিত্রা কে দেখেই দৌড়ে ওর কাছে জাপ্টে ধরে ফুপিয়ে কাঁদতে থাকে
মামনি কি হয়েছে তুমি এমন করে কাঁদছো কেন - কতদিন পর মেয়েকে আবার এমন করে কাঁদতে দেখে মিত্রা ঘাবড়ে যায়। হাঁটু গেড়ে মেয়ের সারা শরীরে হাত বুলিয়ে দেখার চেষ্টা করে কোন আঘাত পেয়েছে নাকি।
মা, আমি আজ কলেজ থেকে ফেরার সময় বাবাকে দেখেছি। বাবার যেন কি হয়েছে, হাতে মাথায় ব্যান্ডেজ করা আর হুইল চেয়ারে বসা। মা বাবার কি হয়েছে? আমি বাবা কে দেখতে যাবো।
Posts: 6,108
Threads: 41
Likes Received: 12,073 in 4,138 posts
Likes Given: 5,306
Joined: Jul 2019
Reputation:
3,734
10-08-2022, 09:29 PM
(This post was last modified: 10-08-2022, 09:36 PM by Baban. Edited 3 times in total. Edited 3 times in total.)
ঠিকই ধরেছিলাম মনে হয় আমি। আগের পর্ব পড়েই সন্দেহ হয়েছিল, বলেওছিলাম একটা ধাক্কা হয়তো অপেক্ষা করছে। কিন্তু স্পষ্ট করে বলতে চাইনি। আজকের পর্ব শুরুর অংশ পড়েও মনে হচ্ছিলো মানুষটা নিজের সাথে সংঘর্ষ করছে তাই পরিবারকে সুরক্ষিত রাখতে চাইছে। এটাই হয়তো একমাত্র উপায় ছিল তাদের থেকে নিজেকে আলাদা করে নেবার। যাতে তাকে ছাড়াও বাকি দুজন জীবন বাঁচতে শিখে যায়। পথ চলতে সাবলম্বী হয়ে ওঠে। হয়তো বুকে বহু ঝড়কে সামলে অনেক কিছু সাজাতে ও বলতে হয়েছে তাকে। শেষ অংশ পরে সেই ধারণা আরও দৃঢ় হলো আমার
Posts: 4,428
Threads: 6
Likes Received: 9,218 in 2,849 posts
Likes Given: 4,330
Joined: Oct 2019
Reputation:
3,225
10-08-2022, 10:32 PM
(This post was last modified: 10-08-2022, 10:33 PM by Bumba_1. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
নতুন করে বিশ্লেষণে যাওয়ার দরকার নেই, কারণ অন্তর্নিহিত কিছু নেই। পুরোটাই ব্যক্ত করে দিয়েছো তোমার এই পর্বে। শুধু এটুকুই বলবো .. তুমি এত সুন্দর গল্পগুলো লেখো, অথচ নামকরণ মোটেই ভালো হয় না তোমার। এই কাহিনীর নাম রাখা উচিত ছিল .. ভালোবাসা কারে কয়
never mind .. একটু মজা করলাম .. এখনো পর্যন্ত অসাধারণ
Posts: 1,473
Threads: 7
Likes Received: 2,458 in 929 posts
Likes Given: 2,453
Joined: Mar 2022
Reputation:
512
(10-08-2022, 09:29 PM)Baban Wrote: ঠিকই ধরেছিলাম মনে হয় আমি। আগের পর্ব পড়েই সন্দেহ হয়েছিল, বলেওছিলাম একটা ধাক্কা হয়তো অপেক্ষা করছে। কিন্তু স্পষ্ট করে বলতে চাইনি। আজকের পর্ব শুরুর অংশ পড়েও মনে হচ্ছিলো মানুষটা নিজের সাথে সংঘর্ষ করছে তাই পরিবারকে সুরক্ষিত রাখতে চাইছে। এটাই হয়তো একমাত্র উপায় ছিল তাদের থেকে নিজেকে আলাদা করে নেবার। যাতে তাকে ছাড়াও বাকি দুজন জীবন বাঁচতে শিখে যায়। পথ চলতে সাবলম্বী হয়ে ওঠে। হয়তো বুকে বহু ঝড়কে সামলে অনেক কিছু সাজাতে ও বলতে হয়েছে তাকে। শেষ অংশ পরে সেই ধারণা আরও দৃঢ় হলো আমার
কিছুই বলবো না আজ
শুধু শেষ পর্বের অপেক্ষা।
হাত বাড়িয়ে ছুঁই না তোকে, মন বাড়িয়ে ছুঁই।
দুইকে আমি এক করি না, এক কে করি দুই।।
•
Posts: 1,473
Threads: 7
Likes Received: 2,458 in 929 posts
Likes Given: 2,453
Joined: Mar 2022
Reputation:
512
(10-08-2022, 10:32 PM)Bumba_1 Wrote: নতুন করে বিশ্লেষণে যাওয়ার দরকার নেই, কারণ অন্তর্নিহিত কিছু নেই। পুরোটাই ব্যক্ত করে দিয়েছো তোমার এই পর্বে। শুধু এটুকুই বলবো .. তুমি এত সুন্দর গল্পগুলো লেখো, অথচ নামকরণ মোটেই ভালো হয় না তোমার। এই কাহিনীর নাম রাখা উচিত ছিল .. ভালোবাসা কারে কয়
never mind .. একটু মজা করলাম .. এখনো পর্যন্ত অসাধারণ
কি জানি দাদা হতেও পারে।
এই পর্বে সব পেয়ে গেলে তো শেষ পর্বের আকর্ষণ শেষ...
দেখি শেষে কি হয়।
হাত বাড়িয়ে ছুঁই না তোকে, মন বাড়িয়ে ছুঁই।
দুইকে আমি এক করি না, এক কে করি দুই।।
•
Posts: 1,473
Threads: 7
Likes Received: 2,458 in 929 posts
Likes Given: 2,453
Joined: Mar 2022
Reputation:
512
মিত্রা মিলি কিংশুক তিনজনের জীবনে শেষ পর্যন্ত কি ঘটতে পারে, কি ঘটে গিয়েছে আর কিছু আড়ালের রহস্য জানাতে আগামীকাল আসছে এই গল্পের অন্তিম পর্ব।
সবাইকে পাশে থেকে পড়ার আর মন্তব্য করার জন্য অনুরোধ করা হলো।
Posts: 1,473
Threads: 7
Likes Received: 2,458 in 929 posts
Likes Given: 2,453
Joined: Mar 2022
Reputation:
512
অন্তিম পর্ব
মেয়ে কি বলছে সেটা এখনো ঠিক করে বুঝে উঠতে পারছে না মিত্রা, ও ভাবছে সারাক্ষণ বাবা বাবা করছে দেখে অন্য কাউকে দেখে বাবার মত মনে হয়েছে হয়তো। হাটু গেঁড়ে বসে মেয়েকে নিজের বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে মিত্রা,
মামনি তোমার বাবাকে তো আমরা সবাই খুঁজছি, তোমার আঙ্কেল রাও কেউ জানে না তোমার বাবা কোথায় গিয়েছে তুমি হয়তো ভুল দেখেছো - মিলির ভিজে যাওয়া চোখ দুটো হাত দিয়ে মুছে দেয় মিত্রা, কিংশুককে দেখেছে শুনে একটু হলেও ওর মনটা চঞ্চল হয়ে উঠেছিল। কিন্তু হাতে মাথায় ব্যান্ডেজের কথা শুনে সেই চঞ্চলতার জায়গায় ভয় জায়গা নিয়েছে তাই নিজের মন কে বুঝাতে চেষ্টা করছে ওটা হয়তো কিংশুক না অন্য কেউ হবে হয়তো।
না...না.. ওটা বাবাই ছিল, আমি ভুল দেখেনি। আমি সত্যি বলছি ওটা বাবাই ছিল, আমি বাবার কাছে যাবো, বাবার কি হয়েছে আমি বাবা কে দেখবো - ছোট্ট মিলির আকুতি মিত্রার হৃদয় এফোঁড়ওফোঁড় করে দিচ্ছে। কিন্তু কোথায় খুঁজবে কিংশুক কে, গত কয়েকদিন ধরে তো জানা শোনা সব জায়গায় খোঁজ করেছে কেই কিচ্ছু বলতে পারে নি৷
আচ্ছা মামানি তুমি একটু শান্ত হও, আমি আবার খুঁজবো তোমার বাবা কে ঠিক আছে। এখন তুমি কিছু খেয়ে নাও আমি দেখছি কি করা যায় - মেয়েকে কোলে তুলে নিয়ে ঘরের ভিতর চলে যায় জামাকাপড় বদলে দেবার জন্য।
মেয়েকে জোর করে কিছু খাইয়ে দিয়ে ঘুম পাড়ানোর জন্য নিজের বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে রাখে। আজকাল মেয়ের মাঝেই যেন কিংশুকের গায়ের গন্ধটা পায় মিত্রা, আগেও হয়তো ছিল কিন্তু খোঁজে পায় নি নাকি খোঁজার চেষ্টা করে নি। সময় সব কিছু বদলে দেয় মিত্রাকেও দিয়েছে, একটা সময় যেন কিংশুক কে দেখতে না হয় তাই এড়িয়ে চলার চেষ্টা করতো কিন্তু আজ সেই কিংশুক কে একটাবার দেখার জন্য হাপিত্যেশ করে বেড়াচ্ছে। নিয়তি কি খেলা দেখাচ্ছে কে জানে আর কখনো কিংশুকের দেখা পাবে না কি কে জানে, আজকাল কেন এমন হচ্ছে কে জানে আগে তো মিত্রা কে বাহনা খুঁজতে হতো কিংশুকের কাছ থেকে দূরে যাবার জন্য আর আজ কত শত বাহানার কথা ভাবছে হচ্ছে কিংশুক কে দেখার জন্য ওকে কাছে পাবার জন্য।
মেয়ে ঘুমিয়ে পড়তেই মিত্রা উঠে পড়ে কয়েকটা ফোন করার জন্য, কিংশুকের বন্ধুদের কাছে মিলির কথা গুলো খুলে বলে জিজ্ঞেস করে ওরা কেউ কি কিংশুকের খবর পেয়েছে কিনা। কিন্তু কারও কাছেই ওর খবর নেই, ওরা সবটা শোনার পর ওদের মতো করে খোঁজ করবে বলে আশ্বাস দেয়। একে একে সবার কাছেই নিরাশ হয়ে ফিরতে হচ্ছে মিত্রাকে, একটু একটু করে আশার প্রদীপ নিভতে চলেছে। ঘুম থেকে উঠেই তো মেয়ে আবার বাবার কথা জিজ্ঞেস করবে তখন কি বলে মেয়েকে শান্ত করবে সেটা জানা নেই মিত্রা। শেষ আশা হিসেবে পুলিশের কাছে ফোন করে কিংশুকের কোন খবর পেয়েছে কি না জানতে চায়, কিন্তু ওদের কাছে কোন খবর নেই। কে জানে ওরা কি আসলেই খোঁজ করেছিল নাকি, নইলে এমনি করে একটা মানুষ উধাও হয়ে যায় কি করে। মিলি যে কিংশুক কে দেখার দাবি করছে সেটাও পুলিশ কে জানায়, ওরা এবার মনে হয় একটু সিরিয়াস হলেও হতে পারে। ওপাশ থেকে অফিসার বললো, তারা আশেপাশের সব হসপিটালে খোঁজ নিয়ে দেখবে কোন খবর পেলে সাথে সাথে জানাবে।
অফিসে আসার পর থানায় ফোন করে কিংশুকের খবর পেয়েছে কিনা জানতে চেয়েছিল, কিন্তু তারা তেমন ভালো কোন খবর দিতে পারে নি। আগের দিন মিলি ঘুম থেকে উঠেই আবার কান্নাকাটি শুরু করেছিল বাবাকে দেখার জন্য, সেই এক কথা বাবার কিছু হয়েছে ও বাবাকে এখনই দেখতে যাবে। কিন্তু মিত্রা তো নিজেই কোন খবর জানে না কিংশুকের, মেয়ে কে কি বলবে। খুব টেনশন হচ্ছে সত্যিই কিছু হলো না তো ওর, কিছু তো একটা হয়েছেই নইলে হঠাৎ করেই কিংশুকের এমন বদলে যাওয়া, অদ্ভুত আচরণ করা, ডিভোর্স দেওয়া, এর পরেই উধাও হয়ে যাওয়া কিছুতেই হিসেবটা মিলছে না। না আর ভাবতে পারছে মিত্রা মাথাটা কেমন চিনচিন করে ব্যাথা করছে কপালে আঙুল গুলো চেপে ধরেছে, হঠাৎ করেই মিত্রার ফোনটা বেজে উঠে আননোন নাম্বার থেকে ফোনটা এসেছে। কিংশুকের কোন খবর এলো কিনা সেই ভাবনায় তাড়াতাড়ি ফোনটা রিসিভ করে
হ্যালো কে বলছেন, কিংশুকের কোন খোঁজ পেলেন কোথায় আছে ও, ঠিক আছে তো নাকি? ওর খবরটা একটু বলুন - একদমে কথা গুলো বলে যায় মিত্রা।
ম্যাডাম আমি বিজু, স্যারের কি হইসে। আপনেও স্যার রে খোজতাছেন? এইখানে একটা লোক আইসে সে আপনের লগে কথা কইবার চায়, তার কাছে নাকি স্যারের খবর আছে। আপনে তাড়াতাড়ি আহেন - বিজুর কাছে কিংশুকের খবর নিয়ে কে আসলো? মিত্রা কিছুই বুঝে উঠতে পারছে না। এত জন কে জিজ্ঞেস করলো কেউ কোন খবর দিতে পারলো না তাহলে এর কাছে কিংশুকের খবর কোথা থেকে এলো আর বিজুকেই জানাতে গেল কেন।
আমি এখনি আসছি, উনাকে বসতে বলো - ফোনটা কেটেই মিত্রা দৌড়ে বেড়িয়ে গেল অফিস থেকে।
রাস্তায় জ্যামের কারণে মিত্রা পৌঁছাতে একটু দেরি হলো, বিজুর কাছে গিয়ে জানতে পারলো ঐ লোকটা চলে গেছে কিন্তু যাবার আগে ঠিকানা দিয়ে গেছে যোগাযোগ করার জন্য। ঠিকানা লেখা কাগজটা হাতে নিয়ে দেখলো একটা অ্যাড্রেস দেয়া আছে, মিত্রার এখন ভাবাভাবির কোন সময় নেই। কিংশুকের খবর পাওয়া যাবে শুনেই আগে পিছে কিছুই না ভেবে ঐ ঠিকানার উদ্দেশ্যে বেড়িয়ে পড়লো। ঠিকানা অনুযায়ী একটা বড় বাড়ির কাছে এসে ট্যাক্সি থেকে নামলো মিত্রা, রোড আর বাড়ি নাম্বার মিলিয়ে যে বাড়িটার সামনে দাঁড়ালো সেটার গেটের পাশেই বড় নাম ফলক লাগানে "কে. সি চৌধুরী"। মিত্রা ভেবে পায় না, কে. সি চৌধুরী কিংশুকের খবর কোথা থেকে পেল আর পেলে সেটা তাকে সরাসরি না জানিয়ে বিজুর কাছে গেল কেন। কেমন সব গুলিয়ে যাচ্ছে মিত্রার, সবাইকেই কেমন রহস্যময় লাগছে এই কে. সি চৌধুরী নিজ থেকেই ওর কেস টা নিয়েছিল নিজেই সব প্রমান যোগাড় করেছিল এখন আবার কিংশুকের খবর ও পেয়ে গেল কিন্তু ওনার সাথে তো কিংশুকের ব্যাপারে কোন কথাই বলে নি। সন্দেহের দানা বাঁধতে থাকা মন নিয়েই বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করতেই একজন এসে মিত্রা কে অফিস রুমে নিয়ে যায়।
মিত্রা বসে আছে এর মাঝেই একজন এসে ওকে চা বিস্কুট জল এসব দিয়ে গেছে। খানিক বাদেই একজনের পায়ের শব্দে পাশ ফিরে তাকাতেই দেখে কে.সি চৌধুরী আসছে
কিংশুক কোথায়? ওর খবর কোথায় পেলেন? আমি ওকে দেখতে চাই, ও ঠিক আছে তো? - কিংশুক কে এক নজর দেখার জন্য ওর খবর পাওয়ার জন্য উৎসুক মন কে শান্ত করতে মিত্রা এক নাগাড়ে প্রশ্ন করতে থাকে।
আরে থামুন থামুন, এত প্রশ্নের উত্তর একসাথে কি করে দেব, একটা একটা করে শেষ করি। আপনার ডিভোর্স পেপারে সই হয়ে গেছে, সামনের ডেটে কোর্টে গেলেই হয়ে যাবে - মিত্রার দিকে ডিভোর্স পেপার এগিয়ে দেয়। মিত্রা হাতে নিয়ে দেখে কিংশুকের সই দেয়া হয়ে গেছে, মিত্রা চোখ অন্ধকার দেখছে এমন মনে হলো। কিংশুক কে এতদিন ধরে পাগলের মত খুঁজছে আর এখানে ডিভোর্স পেপারে সেই কিংশুকের সই দেখতে হচ্ছে।
আমি এখানে কিংশুকের সাথে দেখা করতে এসেছি, কিংশুক কোথায়? ওর কি হয়েছে। আপনি আমাকে ডিভোর্স কাগজ দেখাচ্ছেন কেন? - কে. সি চৌধুরীর উপর মিত্রার রাগ উঠে যায়, কেউ কেন ওর মনের অবস্থা বুঝার চেষ্টা করছে না কেন। বারবার আশপাশে তাকাচ্ছে হয়তো এখানেই কোথাও কিংশুক দাড়িয়ে আছে হয়তো আড়ালে।
আপনার তো ডিভোর্স দরকার ছিল তাই না, তাহলে সেটা তো পেয়েই গেলেন - কে. সি চৌধুরীর মুখের রঙটা হঠাৎ বদলে গেল।
মানে আপনি কি বলতে চাইছেন - মিত্রার যেন মাথা গরম হয়ে গেছে, ও টেবিলে হাত দিয়ে শব্দ করে কথাটা বলে উঠে।
কেন আপনার মনে নেই বছর তিনেক আগে আপনি কিংশুক কে ডিভোর্সের কথা বলেছিলেন - চোখ দুটো ছোট করে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে মিত্রার দিকে তাকিয়ে আছে কে. সি চৌধুরী
মানে সেটা অনেক আগের কথা, ওটা তো মিটেই গেছে এখন সে কথা আসছে কেন? ঐটার সাথে এখন কিংশুকের না পাওয়ার কি যোগাযোগ - এত আগের ঘটনা কে. সি চৌধুরী জানলো কি করে সেটা মিত্রা কে হতবাক করে দেয়।
আছে যোগাযোগ আছে, আচ্ছা একটা প্রশ্ন করি লাস্ট কবে আপনি বাসার বাইরে ছিলেন মনে আছে - এমন অদ্ভুত প্রশ্নে মিত্রা অবাক হয়, তবুও মনে করার চেষ্টা করে।
মাস তিনেক হবে, অফিসের একটা সাকসেস পার্টি ছিল সেদিন, সেটাতেই ছিলাম - ভাঙা ভাঙা কন্ঠে মিত্রা জবাব দেয়।
আপনি জানেন সেদিন রাতে আপনার মেয়ে মিলির জ্বর এসেছিল, প্রচন্ড জ্বরে মিলির অবস্থা খুব খারাপ ছিল কিংশুক বারবার আপনাকে ফোন করছিলো কিন্তু আপনার ফোন বন্ধ ছিল, ঠিক বলছি তো - কে. সি চৌধুরী এসব জানলো কোথা থেকে সেটাই বুঝতে পারছে না। মিলির জ্বর এসেছিল সেটা সেদিন জানতে না পারলেও দিন চারেক পরে জানতে পেরেছিল।
চার্জ শেষ হয়ে গিয়েছিল হয়তো, আর পার্টিতে ছিলাম তাই খেয়াল ছিল না - আমতা আমতা করে উত্তর দেয় মিত্রা।
মিথ্যা বলছেন আপনি, আপনি সেদিন পার্টি থেকে অনেক আগেই বেড়িয়ে গিয়েছিলেন, কিংশুক অফিসের কলিগদের ফোন করে জানতে পারে আপনি সেখানে নেই। কোথায় ছিলেন আপনি সে রাতে - হালকা চিৎকার করে প্রশ্ন করে কে. সি চৌধুরী। মিত্রাও কিছু টা ভড়কে যায় এমন খেপে যেতে দেখে
হ্যাঁ মনে পড়েছে ড্রিংক একটু বেশিই করে ফেলেছিলাম তাই এক বান্ধবীর বাসায় থেকে গিয়েছিলাম - কিছুক্ষণ কি যেন ভেবে মিত্রা উত্তর টা দেয়।
ছোট্ট একটা হাসি দেয় কে. সি চৌধুরী, কাকে মিথ্যা বলবেন। আমাকে মিথ্যা বলে কি লাভ আপনার? যে সত্যি টা জানার সে তো সে দিনই জেনে গিয়েছিল আর আজ আপনার থেকে অনেক দূরে চলে গিয়েছে। সেদিন আপনাকে খুঁজতে খুঁজতে সে একজনের বাড়ি তে চলে গিয়েছিল আন ফরচুনেট। আর সেখানে সে যা দেখার যা শোনার সব দেখে নিয়েছিল, শুনে ফেলেছিল। কিংশুক তো সেদিনই মরে গিয়েছিল, নাকি তোমরা মিলে ওকে মেরে ফেলেছিলে। সত্যি বলতে ও তো আগেও কিছুটা আচ করেছিল সেটা তোমাকে বলেও ছিল কিন্তু তোমরা তোমাদের মতই চলতে লাগলে। শেষ পর্যন্ত এমন এক সত্যের সামনে ওকে দাড় করিয়ে দিলে যে ও আর নিজের মাঝেই থাকতে পারলো না সব দিক থেকে শেষ করে দিলে - গম্ভীর ভাব টা বদলে গিয়ে চৌধুরীর গলায় তখন আক্ষেপের স্বর, এতক্ষণে মিত্রাও বুঝে গিয়েছ কি ঘটেছে এতো দিনে, কেনই বা কিংশুক এমন করে বদলে গেল। সেটার জন্য যে সে নিজেই দ্বায়ী সেটার আর কোন প্রমানের দরকার নেই, সব শেষ হয়ে গিয়েছে নিজের ভুলে সব কিছু হারাতে হয়েছে এখন আর কিছুই গোপন করার নেই।
হ্যাঁ সে রাতে আমি সুজিতের বাড়িতে ছিলাম, ওর সাথে আমার সম্পর্ক টা বিয়ের অনেক আগে থেকেই কিংশুক সেটা জেনে গিয়েছিল, কিন্তু বিশ্বাস করুন মিলি হবার পর সেই সম্পর্ক টা আর আগের মত ছিল না, আমার তরফ থেকে আমি ধীরে ধীরে সরে এসেছিলাম আর সুজিত কে সেটা জানিয়েছিলাম। সেদিন কি হয়েছিল জানি না অনেক দিন পর পার্টিতে ড্রিংক করে আমি নিজের মাঝে ছিলাম না, সুজিত একটু জোর করতেই ওর সাথে চলে গিয়েছিলাম। কিন্তু সে রাতে কি কথা হয়েছিল আমাদের মাঝে কিছুই মনে নেই আমার - মাথা নিচু করে মিত্রা একে একে সব বলতে থাকে, মনে করার চেষ্টা করে কি হয়েছিল সেদিন, ওর তো কিছুই মনে পড়ছে না, মনে থাকার কথাও না সেতো নিজের মাঝেই ছিল না।
সে রাতে কিংশুক পাগলের মত তোমার খুঁজ করছিলো, কিন্তু ও বিশ্বাস করতে পারে নি যে তোমাকে সুজিতের বাড়িতেই পাবে। ও তো তোমাকে চয়েজ দিয়েছিল তুমি তোমার মত করে থাকতে পারো হয়তো সুজিতের সাথে কিংবা কিংশুকের সাথে। তুমিই বেছে নিয়েছিলে তুমি কিংশুকের সাথে থাকবে, এর পরেও তোমাকে ও সুজিতের বাড়িতে পেয়ে ভেঙে পড়েছিল। ও চলেই আসতো কিন্তু তোমাদের একটা কথা শুনে ও আর নড়তে পারছিলো না, ওখানে দাড়িয়ে থেকেই ছেলেটা নিজেকেই নিজে শেষ করে দিয়েছে। যে মিলি কে নিয়ে ও বেঁচে ছিল তোমরা তাকেও ওর কাছ থেকে কেড়ে নিলে - চৌধুরীর কথা শুনতে শুনতে মিত্রার চোখ দিয়ে অঝোরে জল ঝড়ছে, ওর চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছে করছে। সত্যিই কিংশুক ওকে মুক্ত করে দিতে চেয়েছিল কিন্তু সে নিজেই তো কিংশুকের কাছে থেকে যেতে চেয়েছিল, ওর মনের কোনে তখন একটু একটু করে ভালোবাসা বাসা বেঁধে ছিলো কিংশুকের প্রতি। মিত্রাই তো চেয়েছিল বাকিটা জীবন কিংশুকের সাথে কিংশুকের হয়ে বাঁচতে।
কি শুনেছিলো ও সেদিন? - কাতর গলায় জিজ্ঞেস করে মিত্রা।
তখন তোমরা মিলি কে নিয়ে কথা বলছিলে, তুমি মিলির আচরণ স্বভাব কিংশুকের মত হয়ে উঠছে অনেকটা সেটা বলছিলে তখন সুজিত বলে উঠে মিলি তো মনে হয় ওর সন্তান তাহলে কি করে কিংশুকের মত হচ্ছে। আর তখন তুমিও সেটাতে সায় দিয়েছিলে যে হতেও পারে মিলি সুজিতেরই সন্তান। এই কথা টা শোনার পর কিংশুক আর নিজেকে ঠিক রাখতে পারে নি, একটু একটু করে নিজেকে শেষ করে দিয়েছে। তোমার উপর ওর যে বিশ্বাস টা ছিল সেটা শেষ হয়ে গেছে ওর একমাত্র অবলম্বন টাও সেদিন আর ওর ছিল না। আমার সাথে কিংশুকের পরিচয় অনেক আগে থেকে একরাতে রাস্তায় ওকে এলোমেলো ঘুরতে দেখে আমি ওকে নিজের গাড়িতে তুলে নেই তখন ও মদ্যপ অবস্থায় ছিল। ওকে আগে কখনো মদ খেতে দেখেনি তাই আমি অবাক হয়ে গিয়েছিলাম ঐ কিংশুক কে দেখে। পরদিন ওর কাছ থেকেই সব শুনে আমিই বলেছি ওকে ডিভোর্স দিয়ে দিতে বলেছিলাম, কিন্তু ও তখনো তোমার আর মিলির চিন্তা করছিলো, তোমাদের নিয়ে ভাবছিলো। ও তোমাকে ওর জীবন থেকে সরিয়ে না দিয়ে নিজেকেই সরিয়ে নিতে চাইলো। তাইতো তোমাদের চোখে নিজেকে খারাপ দেখানোর জন্য মদ্যপের ভান করে বাড়িতে যাওয়া, অন্য একজনের ছবি ফটোশপ করে তোমার কাছে পাঠানো, তোমাদের এড়িয়ে যেতে শুরু করলো। ও জানতো তোমার মনে একটু হলেও ওর জন্য কিছু একটা আছে আর সেটাই ও ঘৃণাতে বদলে দিতে চাইলো। নিজের প্রাণের চেয়ে প্রিয় মেয়েটার কাছ থেকেও নিজেকে দূরে নিয়ে গেল, এই নাও কিংশুক ওর যা কিছু ছিল সব মিলির নামে করে দিয়ে গেছে - কে. সি চৌধুরী একটা উইল এগিয়ে দেয় মিত্রার দিকে, মিত্রা পাথরের মত বসেছিল চেয়ারে, ওর চোখ গুলো স্থির হয়ে গিয়েছে ঠোঁট দুটো ঈষৎ ফাঁক হয়ে আছে, খুবই ধীর গতিতে নিঃশ্বাস চলছে ওর।
আমি জানি না সেদিন কি হয়েছে, কিন্তু বিশ্বাস করুন আমি বারবার চেয়েছি ওদিন রাত্রে বাইরে থাকার কথাটা কিংশুক কে বলে দিতে কিন্তু পারি নি, ওকে হারিয়ে ফেলার ভয় আমাকে পেয়ে বসেছিল৷ সেদিন আমি স্বাভাবিক অবস্থায় ছিলাম না, নইলে আমি কখনই ওর ওখানে যেতাম না। আমার কাছে এখন কিংশুকই সব, সুজিতের সাথে সব কিছু শেষ হয়ে গেছে অনেক আগেই। আমি জানি না এত কিছুর পর ও আমাকে ক্ষমা করবে কি না, সেটা যোগ্য আমি নই হয়তো। আর একটা কথা মিলি কিংশুকরই সন্তান, আমি সত্যি বলছি ও কিংশুকের মেয়ে। আমার আর সুজিতের মাঝে তখন এমন কোন কিছু হয় নি, দরকার হলে ডিএনএ টেষ্ট করে দেখুন মিলি কিংশুকেরই মেয়ে অন্য কারও নয়। প্লিজ বলুন কিংশুক কোথায় আছে আমি একবার ওকে দেখতে চাই, আমি জানি ও আমার এই মুখ কখনই দেখতে চাইবে না তবু ওকে দূর থেকে দেখতে চাই। ও ঠিক আছে সুস্থ আছে দেখলে আমার আর কিচ্ছু লাগবে না, দরকার হলে ওর মেয়েকে ও নিজের কাছে নিয়ে যাক। প্লিজ বলুন না কিংশুক কোথায় আছে, আপনি নিশ্চয়ই জানেন ও কোথায় আছে, ও কোথায় উধাও হয়ে গিয়েছিল কিছু তো বলুন - মিত্রা পাগলের মত চেয়ার ছেড়ে উঠে গিয়ে কে. সি চৌধুরীর পা ধরে বিলাপ করতে থাকে৷ মিত্রা জানে ও কত বড় ভুল করেছে, সেটার শাস্তি ওকে পেতেই হবে কিন্তু মিলির তো কোন দোষ নেই ঐ মেয়েটা তো শুধু শুধু মিত্রার দোষের সাজা কাটছে।
ও তোমাদের ছেড়ে অনেক দূরে চলে যেতে চেয়েছিল, আর সেই মতেই সব কিছু সাজিয়ে নিয়েছিল। অফিস থেকে রিজাইন করেছিল, টাকা পয়সা সম্পত্তি সব মেয়ের নামে করে দিয়ে এখান থেকে অনেক দূরে চলে গিয়েছিল। আমিও জানতাম না ও কোথায় চলে গেছে, পাগলের মত খুঁজেছি ওকে কিন্তু কোথাও পাই নি। হয়তো ভগবান অন্যকিছু লিখে রেখেছিল ওর ভাগ্যে, ও যেই গাড়িতে করে বাইরে যাচ্ছিলো সেটা এক্সিডেন্ট করে আর বেশির ভাগ যাত্রীই মারা গিয়েছে - কথাটা শুনেই মিত্রা কিছুটা পিছনের দিকে সরে যায়, তাহলে কি সত্যিই কিংশুক ওদের ছেড়ে চলে গেছে। যেটা ও সবসময় বলতো একদিন মুক্তি দিয়ে অনেক দূরে চলে যাবে৷ মিত্রার এখনো বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে, যে কিংশুক হয়তো আর নেই।
ওর কিছু হয় নি তাই না, বলুন না প্লিজ বলুন না যে আপনি মিথ্যে বলছেন কিংশুকের কিছু হয়নি, ও আমার সাথে ইচ্ছে করেই এমন করছে তাই না। কোথায় আছে বলুন না একবার, আমি একটু দেখবো ওকে দূর থেকে দেখেই চলে যাবো। আর কিচ্ছু চাই না - মিত্রা পুরো পাগলের মত হয়ে গেছে, কে. সি চৌধুরীর কথা ওর বিশ্বাস করতে ইচ্ছে করছে না।
ওরও এক্সিডেন্ট হয়েছিল, সাত আট দিন পর্যন্ত কোন জ্ঞান ছিল না। ওর মোবাইল টাও পুলিশ খুঁজে পায় নি তাই কারও সাথে যোগাযোগ করতে পারে নি। জ্ঞান ফেরার পর ও কাছ থেকে আমার নাম্বার নিয়ে আমার সাথে যোগাযোগ করে আমি গিয়ে ওকে নিয়ে আসি তিন দিন আগে। ভগবান হয়তো এটাই চেয়েছিল নয়তো যে মানুষটা ঘর ছেড়ে দূরে অজানায় পালাতে চেয়েছিল তাকেই বা কেন আবার সেখানেই ফিরে আসতে হলো। জানো ওখানে যাবার পর সবার আগে ও তোমাদের কথা জানতে চেয়েছিল, মিলির কথা জানতে চেয়েছিল। আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে ছিলাম যে সারা শরীরের ব্যান্ডেজ করা আর হাত পা ভাঙার যন্ত্রণার মাঝেও ও মিলির কথা তোমার কথা জিজ্ঞেস করতে ভুলে নি, আর সেই ভালোবাসা টাকে তুমি এমন ভাবে ঠকিয়েছো। কিংশুক আমাকে বলতো একদিন ঠিক তুমি ওকে বুঝতে পারবে কিন্তু সেদিন হয়তো ও তোমার সামনেই থাকবে না। গত কয়েকদিন তোমাকে ফলো করে বুঝতে পেরেছি কিংশুক ভুল কিছু বলে নি, কিন্তু তুমি হয়তো দেরি করে ফেলেছো। কিংশুক তোমাকে ভালবাসো ও হয়তো তোমাকে ক্ষমা করেও দিতে পারে কিন্তু আমি তোমাকে ক্ষমা করতে পারবো না - চুপ করে চৌধুরীর কথা গুলো শুনছিলো মিত্রা, ও জানে সত্যিই অনেক দেরি করে ফেলেছে। প্রতিবারই ওর দেরি হয়েছে কিংশুক কে বুঝতে, ওর ভালবাসা বুঝতে আর নিজের মনের কথা বুঝতেও। কিন্তু এখন মিত্রা জানে সে শুধু কিংশুক কেই ভালোবাসে ওকেই চায় আর কিচ্ছু না।
মিলি তাহলে ঠিকি ওর বাবাকেই দেখেছিল, ও কি এখানেই আছে আমাকে একটু দেখতে দিবেন ওকে? - হাত জোড় করে অনুরোধ করতে থাকে মিত্রা, ওর মনের ভেতরে তোলপাড় চলছে সেই কখন থেকে।
চৌধুরীর পেছন পেছন মিত্রা অফিস থেকে বেড়িয়ে বারান্দা ধরে হাটতে থাকতে, একটা ঘরের সামনে এসে আঙুল দিয়ে ইশারা করে ওকে। ভেতরের দিকে তাকিয়ে দেখে কিংশুক বিছানায় হেলান দিয়ে বসে আছে আর সামনে বসে থাকা মিলি কিছু একটা বলে বাবাকে শাসাচ্ছে আর তার সাথে ওকে মুখে তুলে কিছু খাইয়ে দিচ্ছে। মিত্রা অবাক চোখে চৌধুরীর দিকে তাকাতেই জানায় কিংশুকের ওকে খুব দেখতে ইচ্ছে হচ্ছিলো তাই কলেজ থেকে নিয়ে এসেছে। দরজার আড়ালে দাড়িয়ে মিত্রা দু চোখ ভরে দেখছে মিলি ওর বাবার কপালের কাটা জায়গায় কোন একটা মলম লাগিয়ে দিচ্ছে আর মেয়ের এমন আদর যত্নে কিংশুক মুচকি হাসছে। মিত্রা নিজেকে নিজে ক্ষমা করতে পারছে না, ওর নিজের ভুলের কারণে মিলি আর কিংশুক কে এতদিন কষ্ট পেতে হয়েছে। এই মূহুর্ত টা দেখে একটু হলেও মিত্রার মনটা শান্ত হয় আনন্দ ভরে উঠে, কতদিন পর আবার বাবা মেয়ে দুজন দুজনকে কাছে পেয়েছে। হঠাৎই মিত্রার নিজের উপর ঘৃনা জেগে উঠতে থাকে, একবার ইচ্ছে ছিল কিংশুকের সামনে যাবার কিন্তু কোন মুখে যাবে সেই সুযোগ তো নিজেই শেষ করে দিয়েছে। চোখ মুছে মিত্রা সেখান থেকে চলে যাবার জন্য পা বাড়ায় তখনি পেছন থেকে কিংশুক ডেকে উঠে
কি ব্যাপার আমার সাথে দেখা না করে কথা না বলেই চলে যাবে - কিংশুকের আওয়াজ টা যেন মিত্রার বুকে এসে বিঁধেছে, ওর সব দ্বিধা দ্বন্দ্ব ভেঙে গেছে মনের সব ভয় কষ্ট যেন নিমিষেই উধাও হয়ে গেছে। আজ আর নিজের মনে কিছু লুকিয়ে রাখবে না যা বলার সব বলে দিবে ওর সামনে, এক দৌড়ে ও রুমের ভিতরে ঢুকেই কিংশুককে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকে। উত্তেজনার বশে মিত্রার খেয়াল ছিল না যে কিংশুকের হাতে ব্যান্ডেজ করা, ও জড়িয়ে ধরতেই ব্যাথায় কিংশুকের মুখ দিয়ে গুঙিয়ে উঠার আওয়াজ শুনেই দূরে সরে যায়। কিছুটা ধাতস্ত হয়ে আবার কাছে এসে ওর হাত ধরে কাঁদতে থাকে।
আমি জানি আমি যা করেছি তা ক্ষমার যোগ্য না, আর তোমার কাছে সেটা চাইবার মত মুখ আমার নেই। তুমি যা শাস্তি দিবে মাথা পেতে নেব, তবুও তোমার থেকে দূরে রেখো না আমাকে। আমি তোমাকে ভালবাসি তোমাকেই ভালো বাসি, জানি অনেক দেরি করে ফেলেছি অনেক ভুল করেছি আমি সেগুলোর হয়তো কেন ক্ষমা নেই। আমি না হয় নিজেই নিজেকে বুঝতে পারি নি কিন্তু আমি জানি তুমি আমাকে আমার চেয়ে ভালো করে জানো চেনো, আমি কোনটা সত্যি বলছি আর কোনটা মিথ্যে সেটাও তোমার অজানা না। তোমাকে অনেকবার বলতে চেয়েও কিছুই বলতে পারি নি ভেবেছি তুমি ভুল বুঝে আমার থেকে দূরে চলে যাবে, এখন দেখো সেই আমার ভুলেই তোমাকে আমার থেকে দূরে পাঠিয়ে দিচ্ছে। আর শুনো ও তোমার মেয়ে আরও কারো নয় ও শুধু তোমরই মেয়ে তোমার ছিল তোমারই থাকবে, আমি হয়তো পাপী কিন্তু ওকে কোন পাপ স্পর্শ করে নি তুমি বিশ্বাস করো মিলি তোমার মেয়ে। মেয়েটা তোমাকে ছাড়া এতদিন খুব কষ্টে কাটিয়েছে ওকে তুমি তোমার থেকে দূর করে দিও না প্লিজ৷ আমি এই ডিভোর্স চাই না, তুমি শুধু তোমার কাছে একটু থাকতে দাও আমাকে আর কিচ্ছু চাই না, তোমাকে ছাড়া আমি থাকতে পারবো না কিংশুক আমি তোমাকেই ভালো বাসি শুধু তোমাকে - মিত্রা অঝোরে কেঁদে চলেছে, আর দুই হাতে কিংশুকের হাত টা চেপে ধরে ধরে আছে। মায়ের এমন অবস্থা দেখে মিলি ভড়কে গিয়েছে ও একবার মায়ের দিকে তাকাচ্ছে একবার বাবার দিতে তাকাচ্ছে। মা কি সব বলছে সেগুলো ওর বুঝ শক্তির বাইরে, তবে এটুকু বুঝতে পারছে মা কোথাও চলে যাবার কথা বলছে হয়তো।
বাবা মায়ের কি হয়েছে, মা কি দূরে কোথায় চলে যাবে আমাদের থেকে। আমাদের সাথে থাকবে না? জানো বাবা এই কয়েকদিন তো তুমি ছিলে না তখন আমি মায়ের কাছে ঘুমিয়েছি এখন তো মাকে ছাড়া আমার ঘুম আসে ন। তোমাকে ছাড়া আমার যেমন কষ্ট হয় তেমন মাকে ছাড়াও আমার কষ্ট হয় - আহ্লাদী কন্ঠে মিলির কথা শুনে কিংশুক ভেজা চোখে মেয়ের দিকে তাকিয়ে ছোট্ট একটা হাসি দেয়।
না মা, তোমার মা কোথাও যাবে না। তাহলে যে আমার মিলি মা কষ্ট পাবে, তোমার মা তো আমাদের সাথেই থাকবে তুমি খুশি তো মা? আর তোমার মা তো তোমাকে ছাড়া থাকতে পারবে না তাই না - বাবার উত্তর শুনে খুশিতে মিলি হাততালি দিতে থাকে। কিংশুকের কথা শুনে মিত্রা মাথা উঁচিয়ে কিংশুকের দিকে তাকায়, সত্যিই কি কিংশুক ওকে রাখবে ওর কাছে। ও কি ঠিক শুনেছে তো।
তুমি সত্যি বলছো তো, আমাকে তুমি ক্ষমা করে দিয়েছো। আমরা একসাথেই থাকবো? আমি আর কখনো তোমাকে কোথায় যেতে দেব না, এমন ভুল আর কখনো করবো না তোমাকে কথা দিলাম। কিন্তু ঐ ডিভোর্স পেপারে যে সাইন হয়ে গেছে, তাহলে? - উৎসুক হয়ে উঠে মিত্রার মন।
ওটা আমি দেখে নিবো, কোন সমস্যা হবে না। তাহলে কিংশুক তুই জিতে গেলি, তুই বলেছিলি আমার লাস্ট কেস টা আমি হেরে যাবো। আমি তো ভেবেছিলাম বাকি গুলোর মত ডিভোর্স স্পেশালিষ্ট হিসেবে এই লাস্ট কেস টাও আমি জিতে যাবো। কিন্তু আমি হেরে গেলাম, তুই তো জিতে গেলি তোর বিশ্বাস তোর ভালোবাসা জিতে গেল - এতক্ষণ একটু দূরে দাড়িয়ে থাকলেও এখন কে. সি চৌধুরী একটু এগিয়ে এসে কথা বলতে বলতে ডিভোর্স পেপার টা ছিড়ে ফেলে। মিত্রা এতোক্ষণ হাটু গেঁড়ে বসা ছিল এখন উঠে কিংশুকের পাশে বসে ওকে জড়িয়ে ধরে আরেক হাতে মিলিকে কাছে টেনে ওর মাথায় চুমু খায়।
Posts: 4,428
Threads: 6
Likes Received: 9,218 in 2,849 posts
Likes Given: 4,330
Joined: Oct 2019
Reputation:
3,225
আমরা দুর্ঘটনাকে অশুভ বলি, কিন্তু এক্ষেত্রে একটা দুর্ঘটনা দুটি বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া মানুষকে আবার পরস্পরের কাছে নিয়ে এলো। খুব সুন্দর কনসেপ্ট আর ক্লাইম্যাক্সটাও দুর্দান্ত। তার সঙ্গে উকিল কে সি চৌধুরীকেও ধন্যবাদ অনুঘটকের কাজ করার জন্য। সবশেষে বলি - শেষ ভালো যার সব ভালো।
Posts: 1,473
Threads: 7
Likes Received: 2,458 in 929 posts
Likes Given: 2,453
Joined: Mar 2022
Reputation:
512
•
|